AHSEC 2020 Political Science Question Paper Solved Bengali Medium | দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান, AHSEC Class 12 Political Science Question Paper Solved PDF Download, দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান 2020 র প্রশ্নপত্র সমাধান করা হয়েছে to each Paper is Assam Board Exam in the list of AHSEC so that you can easily browse through different subjects and select needs one. AHSEC 2020 Political Science Previous Years Question Paper Solved in Bengali can be of great value to excel in the examination.
AHSEC 2020 Political Science Question Paper Solved in Bengali | দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান
AHSEC Old Question Paper provided is as per the 2020 AHSEC Board Exam and covers all the questions from the AHSEC Class 12 Political Science Solved Question Paper 2020 Bengali Medium. Access the detailed Class 12 Political Science 2020 Previous Years Question Paper Solved provided here and get a good grip on the subject. AHSEC 2020 Political Science Question Paper Solved Bengali Medium Access the AHSEC 2020 Political Science Old Question Paper Solved, AHSEC Class 12 Political Science Solved Question Paper 2020 of Bengali in Page Format. Make use of them during your practice and score well in the exams.
POLITICAL SCIENCE
2020
POLITICAL SCIENCE OLD QUESTION PAPER SOLVED
ক—শাখা (সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি)
১। নীচের প্রশ্নগুলির নির্দেশানুযায়ী উত্তর দাওঃ
(ক) NATO-এর সম্পূর্ণ রূপটি লেখ।
উত্তরঃ North Atlantic Treaty Organization.
(খ) ১৯৮৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে …………….. সংস্কারের সূচনা করেছিল। (শূন্যস্থান পূর্ণ কর)
উত্তরঃ মিখাইল গোর্বাচভ।
(গ) কোন সালে ইরাক কুয়েত আক্রমণ করেছিল?
উত্তরঃ ১৯৯০ সালে।
(ঘ) সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতিতে ‘৯/১১’ বলতে কোন ঘটনাটিকে বোঝায়?
উত্তরঃ World Trade Centre বা আমেরিকার বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ।
(ঙ) ‘মরুভূমি ঝড় অভিযান’ মানে কী?
উত্তরঃ ১৯৯০ সালে ইরাক-আক্রান্ত কুয়েতকে ইরাক-মুক্ত করতে রাষ্ট্রসংঘের নেতৃত্ব ৩৪টি রাষ্ট্রের সম্মিলিত বাহিনীর অপারেশনকে অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম বলে।
(চ) সার্ক (SAARC)-এর প্রথম শীর্ষ সম্মিলনটি কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ঢাকায়।
২। নতুন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার দুটি নীতি লেখ।
উত্তরঃ নতুন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার দুটি নীতি হল—
(ক) নূতন আন্তৰ্জাতিক অর্থব্যবস্থা রাষ্ট্রসমূহের সমান সাৰ্বভৌমত্ব,ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও অন্য রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ না করার নীতির উপর প্ৰতিষ্ঠিত।
(খ) নূতন অৰ্থনৈতিক ব্যবস্থা আন্তৰ্জাতিক গোষ্ঠীভুক্ত সকল সদস্য রাষ্ট্রের সহযোগিতার নীতির উপর প্ৰতিষ্ঠিত।
৩। বৃহৎ শক্তির রাষ্ট্রগুলির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে মিত্রতার প্রয়োজন কেন হয়? দুটি কারণ লেখ।
উত্তরঃ ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহ বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহকে নিম্নোক্ত রূপে সাহায্য করেঃ
(ক) ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহ মহাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলিকে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ও খনিজ সম্পদে আধিপত্য বিস্তার করতে সহায়তা করে।
(খ) ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহ মহাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলিকে তাদের ভৌগোলিক এলাকায় প্রবেশাধিকার প্রদান করে যাতে তারা সেখান হতে তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও সেনাবাহিনী ব্যবহার করতে পারে।
৪। সোভিয়েত ইউনিয়ন খন্ডিতকরণের দুটি কারণ লেখ।
উত্তরঃ সোভিয়েত ইউনিয়ন অবলুপ্তির বা খণ্ডিতকরণের কারণ দুটি নিম্নরূপঃ
(ক) ত্রুটিপূর্ণ নেতৃত্ব—দেশের ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক নেতৃত্ব সোভিয়েত ইউনিয়ন অবলুপ্তির জন্য বহুলাংশে দায়ী।
(খ) গোর্বাচতের উদার নীতি—গোর্বাচভের উবার নীতি অবলম্বনের ফলে সোভিয়েত বিরোধী শক্তি সাহসী হয় এবং তারা তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে।
৫। মার্কিন আধিপত্যের ওপরে থাকা দুটি প্রতিবন্ধকতা লেখ।
উত্তরঃ মার্কিন আধিপত্যের ওপরে থাকা দুটি প্রতিবন্ধকতা হল—
(ক) নিজস্ব রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো।
(খ) আভ্যন্তরীণ প্রকৃতির কর্থাৎ মুক্ত সমাজব্যবস্থা।
৬। বিশ্ব ব্যাঙ্ক কোন সালে স্থাপন করা হয়েছিল? এর যে কোন একটি কার্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ বিশ্ব ব্যাঙ্ক ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরেই গঠিত হয়। একে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের ব্যাঙ্ক বলা হয়। এই ব্যাঙ্কের কার্যকারিতা মূলত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহে প্রতিফলিত হয়।
বিশ্বব্যাঙ্কের একটি কার্যাবলি নিম্নরূপঃ
(ক) মানব উন্নয়ন বিশেষত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য।
৭। পরম্পরাগত এবং অপরম্পরাগত নিরাপত্তার মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তরঃ চিরাচরিত নিরাপত্তায় রাষ্ট্র তার ভৌগোলিক সীমারেখা এবং শাসন সংস্থা বা সরকার হল মূল লক্ষ্যবস্তু। অপরদিকে অচিরাচরিত নিরাপত্তার মূল লক্ষ্য কেবল রাষ্ট্র নয়, ব্যক্তিগোষ্ঠী এমনকি সমস্ত মানুষ।
৮। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিবেশী এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে এক বিবাদমূখর উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। কাশ্মীর সমস্যা, নদীর জল বণ্টন সমস্যা, সামরিক নীতি প্রভৃতি বিষয়ে বিবাদ চলছেই। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে অঘোষিত যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি, সন্ত্রাসবাদে মদত দান, বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে অসহযোগিতা ইত্যাদি সম্পর্ক গঠনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা নেয়। এর ফলে ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষ ঘটে। পাকিস্তানে যেহেতু কখনো গণতান্ত্রিক সরকার কখনো সামরিক শাসন বলবৎ থাকে, তাই আলোচনা খুব একটা ফলপ্রসূ হয় না। যাই হোক গত কয়েক বছরে যেমন সম্পর্কের কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটেছে তেমনি কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দানের ক্ষেত্রে অবনতিও ঘটেছে। বর্তমানে নওয়াজ শরিফ সরকারের সঙ্গে আমাদের মোদী সরকারের কিছু ইতিবাচক আলোচনা শুরু হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাস ও ট্রেন পরিষেবা চালু হয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যা মৌলবাদ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ। পাকিস্তান এর কবল এড়িয়ে কতদূর এগোতে পারবে তার উপর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নীত হওয়া নির্ভর করে। SAARC-কৃষ্ণ অন্যান্য দেশগুলিও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে।
৯। রাষ্ট্রসংঘে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের সনদের ১নং ধারায় বলা হয়েছে— “রাষ্ট্রসংঘ অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং আন্তর্জাতিক সমস্যসমূহ সমাধানে তৎপর হবে এবং জাতি ভাষা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষার বিষয়ে সচেষ্ট হবে।”
এই লক্ষ্যে পৌঁছানর জন্য রাষ্ট্রসংঘের পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা আছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে রাষ্ট্রসংঘের পুনর্গঠনের অর্থ অবশ্যই নিরাপত্তা পরিষদের পুনর্গঠন। নিরাপত্তা পরিষদ রাষ্ট্রসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যার প্রধান কার্য হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। এই সংস্থা মোট ১৫টি সদস্যরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত-৫টি স্থায়ী সদস্য ও ১০টি অস্থায়ী সদস্য। পাঁচটি সদস্যরাষ্ট্র ‘ভেটো ক্ষমতাধিকারী। ‘ভেটো’ ক্ষমতা হল নিরাপত্তা পরিষদের কোন প্রস্তাবে যদি কোন স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র সম্মতি প্ৰদান না করে তখন তা নাকচ হয়ে যায়। কোন দুই দেশ বা দুই-এর অধিক দেশ যদি যুদ্ধে রত হয় তখন নিরিপত্তা পরিষদ শান্তি পঙনরুত্থানের জন্ম ব্যবস্থা গ্ৰহণ করে। যেহেতু নিরাপত্তা পরিষদ সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী অঙ্গ সুতরাং তার সংস্কারই হল বহুলাংশে রাষ্ট্রসংঘর সংস্কার। এর সংস্কার অত্যাবশ্যক, কারণ সংস্কারের মাধ্যমে অধিক রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবে।
রাষ্ট্রসংঘের ভবিষ্যৎ কখনোই একক শক্তিলৈ রাষ্ট্রর কুক্ষিগত হতে পারে না। এতিয়া, আফ্ৰিকা ও লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলি রাষ্ট্রসংঘের সৰ্ববৃহৎ গোষ্ঠী। উন্নয়নশীল বিশ্বের একতার নেতৃত্বর উপরই রাষ্ট্রসংঘের ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। বিশ্বমানব সভ্যতার প্ৰতিনিধি হিসাবে রাষ্ট্রসংঘ অবশ্যই একদিন বিশ্বশান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতিষ্ঠায় সর্বতোভাবে সফল হবে। তখনই সাৰ্থক হবে রাষ্ট্রসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব ড্যাগ হ্যামারশিল্ড-এর বিখ্যাত মন্তব্য, “রাষ্ট্রসংঘ প্ৰতিষ্ঠিত হয়েছিল মানবজাতিকে কোন স্বর্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য নয়, তা প্ৰতিষ্ঠিত হয়েছিল মানুষকে নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য।”
১০। মানবীয় নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক কী? সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ যে-কোন ধরনের ভয়-ভীতি থেকে মুক্তি পাওয়াকে নিরাপত্তা বলে। তার-উড়ি সামরিক ও অসামরিক হতে পারে। মানব নিরাপত্তা হল জনগণের নিরাপত্তা। এর প্রাথমিক লক্ষ্য হল ব্যাক্তিকে সুরক্ষা প্রদান করা। মানব জাতির অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে বিশেষ ভাবে জড়িত উদ্দেশ্যকে মানব নিরাপত্তা বলে। মানব জাতির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হওয়া অন্যতম প্রধান প্রত্যাহা হল স্বাস্থ্য।
মানবীয় নিরাপত্তার একটি বিষয়বস্তু বা মহামারী। বিগত কিছু বছর যাবৎ পক্ষীজ্বর, সোয়াইন ফ্লু ইত্যাদি সমগ্র বিশ্ববাসীর জীবনের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাণ্ডবের সৃষ্টি করেছে। এই রোগ এখন এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। পক্ষীজ্বর বা সোয়াইন ফ্লু আরম্ভ হলে প্রতি রাষ্ট্রই সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এইডস্ জাতীয় রোগ একরকন মারাত্মক রোগ। এটি প্রব্রজনের মাধ্যমে এখন এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৩ সালের এক হিসাব মতে বিশ্বের প্রায় ৪ কোটি লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল এবং এর এক-তৃতীয়াংশ রোগী ছিল আফ্রিকার। এই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার হলেও কেবলমাত্র উন্নত দেশগুলির লোকেরাই এর সুবিধা গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছেন, কারণ এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই রোগ প্রব্রজন ছাড়াও ভ্রমণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামরিক অভিযান ইত্যাদির মাধ্যমে এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া আরও কিছু নতুন নতুন রোগ; যেমন- Ebola virus, Hantavirus, Hepatitis C ইত্যাদির প্রাদুর্ভাব বর্তমানে দেখা দিয়েছে, আবার পুরাতন রোগ; যেমন—যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুজ্বর, কলেরা ইত্যাদি অনেক শক্তিশালী হয়ে কোথাও কোথাও আবার ফিরে আসছে। এই সকল মারাত্মক রোগগুলি মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইকে প্রতিনিয়ত কঠিন থেকে কঠিনতর করছে আর যেহেতু এই সকল ব্যাধি বিশ্বজনীন সেই হেতু আন্তর্জাতিকভাবে এর মোকাবিলা বাঞ্ছনীয়।
১১। দেশীয় জনসাধারণের অধিকার এবং পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক কী? সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভারতবর্ষে স্বদেশী জনগোষ্ঠী বলতে সাধারণত পার্বত্য তফসিলি সম্প্রদায়কে বোঝায় যারা দেশের সমগ্র জনসাধারণের ৮ শতাংশের অধিকারী। শিকারী এবং সংগ্রহকারী কিছু গোষ্ঠী ব্যতীত ভারতের স্বদেশী জনজাতি জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষি পালনের উপর নির্ভরশীল। বহু শতক ধরে এদের অবাধ ছাড়পত্র ছিল যত জমি আবাদ করা সম্ভব। ততখানি জমির উপর। পার্বত্য অঞ্চলের বনাঞ্চল পরিষ্কার করে জুমচাষের মাধ্যমে তারা পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করত। এই জনগোষ্ঠী দেশের উন্নতির জন্য বিশাল মূল্য দিয়েছে। কেননা, স্বাধীনতার সময় হতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের স্বার্থে যে সমস্ত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে স্বদেশী জনগোষ্ঠী তাদের মধ্যে অন্যতম।
১২। বিশ্বায়নের স্বপক্ষে দুটি এবং বিপক্ষে দুটি যুক্তি লেখ।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের স্বপক্ষে দুটি এবং বিপক্ষে দুটি যুক্তি হল—
(ক) বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার দ্বারা বিভিন্ন দেশের মধ্যে বৈষম্য, বিশেষত আৰ্থিক বৈষম্য দূরীভূত করতে পারা যায়।
(খ) বিশ্বায়নের ধারণা বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সংকীৰ্ণ জাতীয় সীমারেখা পরিত্যাগ করে বৃহত্তর আন্তর্জাতিকতাবাদের দিকে অগ্ৰসর হতে আবেদন জানায়।
১৩। সোভিয়েত ইউনিয়ন খণ্ডিতকরণের পরিণতিগুলি আলোচনা কর।
উত্তরঃ বিশ্ব রাজনীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের যেসব প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তা নিম্নে বিবৃত হলঃ
(ক) বিরোধের পরিসমাপ্তিঃ সমাজবাদী ব্যবস্থা না পুঁজিবাদী ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য এই বিবাদের সমাপ্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পরিসমাপ্তি ঘটে।
(খ) ক্ষমতার সম্পর্কের পরিবর্তনঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন আমেরিকাকে বিশ্বের একমাত্র মহাশক্তিধর দেশ হিসাবে পরিগণিত করে। আমেরিকাকে প্রত্যাখ্যান জানানোর কোন রাষ্ট্র বর্তমানে নেই।
(গ) নূতন দেশসমূহের উত্থানঃ সোভিয়েত রাশিয়ার ভাঙনের ফলে সৃষ্টি হওয়া দেশসমূহের নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব ও ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ আছে; বাল্টিক গণরাজ্যসমূহে অর্থাৎ ইস্টোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও পূর্ব ইউরোপের গণরাজ্যসমূহ ইউরোপীয় সংঘে যোগদান করার সঙ্গে সঙ্গে ন্যাটোর (NATO) সদস্যভুক্ত হতে চায়। সেইজন্য এই রাষ্ট্রসমূহ একদিকে রাশিয়ার সঙ্গে এবং অন্যদিকে পশ্চিমী দেশের সঙ্গে, আমেরিকা ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়।
অথবা
আমোরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্কের সর্বশেষ ধারার বিষয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ শীতল যুদ্ধের সময় ভারত ছিল বিভাজনের অপর দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে। ঐ বৎসরগুলিতে ভারতের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ভারতবর্ষ সহসা ক্রমাগত শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একাকী ও বন্ধুবিহীন হয়ে পড়ল। তখন ভারত আর্থিক উদারীকরণের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতির সাথে নিজেকে সংযুক্ত করে।
এটি গুরুত্বপূর্ণ যে বর্তমান সময়ে ইন্দো-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুটি কার্য-কারণ প্রকাশ পেয়েছে। একটি হল প্রযুক্তি পরিধি, অপরটি ইন্দো-মার্কিন অভিবাসী ও অধিবাসীদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে মিলিত ভূমিকা। এই উপাদান পরস্পর সম্বন্ধীয়; যেমন—
(ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ‘সফট্ওয়্যাবের’ মোট রপ্তানির ৬৫ শতাংশের গ্রাহক।
(খ) বোয়িং বিমানের ৩৫ শতাংশ প্রায়োগিক কর্মী ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
(গ) ‘সিলিকন উপত্যকায়’ বর্তমানে ৩,০০,০০০ ভারতীয় কাজ করে।
(ঘ) উচ্চপ্রযুক্তিজাত যে-কোন উদ্যোগের ১৫ শতাশের প্রারম্ভই আমেরিকাবাসী ভারতীদের দ্বারা হয়।
১৪। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের রাজনৈতিক এবং কুটনৈতিক প্রভাব পরীক্ষা কর।
উত্তরঃ রাজনৈতিক প্রভাবঃ ইউরোপীয় সংঘ রাষ্ট্রসংঘের নীতি ও কাৰ্যসূচীর উপর প্ৰভাব বস্তার করে। গ্ৰেট ব্ৰিটেন ও ফ্রান্স নিৰাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।
কুটনৈতিক প্রভাবঃ ইউরোপীয় সংঘের কুটনৈতিক প্রভাব অপরিসীম। ইহা রাষ্ট্রসংঘের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৃটেন ও ফ্রান্স নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। তাছাড়া নিরাপত্তা পরিষদে ইউরোপীয় সংঘের কতিপয় অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র আছে। ইউরোপীয় সংঘ কুটনীতি, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ও আলোচনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, কিন্তু সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে পারে না। মানবাধিকার ও পরিবেশ বিষয়ে ইউরোপীয় সংঘ চীনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখে।
অথবা
আসিয়ান (ASEAN)-এর লক্ষ্য এবং সাফল্য বর্ণনা কর।
উত্তরঃ আসিয়ানের লক্ষ্যঃ আসিয়ানের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) আসিয়ান ভুক্ত দেশ সমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
(খ) উক্ত এলাকার রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও আদান-প্রদান বৃদ্ধি করা।
(গ) আসিয়ান ভুক্ত দেশ সমূহের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করা।
আসিয়ানের সাফল্যঃ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আসিয়ান নানা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। আসিয়ান একটি দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্থা হিসাবে গড়ে উঠেছে। এর “ভিশন ২০২০” আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে আসিয়ানের বহিঃ দৃষ্টি সম্পন্ন ভূমিকার সংজ্ঞা নির্দ্ধারিত করেছে। ইহা আলোচনা ও আদান প্রদানের ব্যাপারে উৎসাহিত করে। আসিয়ান কম্বোডিয়ার সংঘর্ষ, পূর্ব টাইমোরের সংকট সমাপ্তিতে মধ্যস্থতা করেছে এবং পূর্ব এশিয়ার দেশ সমূহের সহযোগিতার বিষয়সমূহ আলোচনা নিমিত্ত প্রতিবৎসর বৈঠকে মিলিত হয়। আসিয়ান সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ক্ষমতা, বিশেষকরে, ক্রমবিকাশশীল এশীয় অর্থ নীতিসমূহ যেমন ভারত ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং বিনিয়োগকারী অংশীদার হিসাবে এর অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা একে একটি আকর্ষক প্রস্তাবনা হিসাবে উপস্থাপিত করছে।
খ—শাখা (স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি)
১৫। নীচের প্রশ্নগুলির নির্দেশানুযায়ী উত্তর দাওঃ
(ক) ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থা আছে। (সত্য না অসত্য লেখ)
উত্তরঃ সত্য।
(খ) সংবিধান পরিষদের খসড়া প্রস্তুতি সমিতির অধ্যক্ষ কে ছিলেন?
উত্তরঃ ড. বি. আর. আম্বেদকর।
(গ) সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ভারত এবং ……………… এর মধ্যে। (শূন্যস্থান পূর্ণ কর)
উত্তরঃ পাকিস্তান।
(ঘ) প্রথম গোষ্ঠী নিরপেক্ষ সম্মিলন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ বেলগ্রেড-এ ১৯৬১ সালে।
(ঙ) ভারতীয় সংবিধানের ……………… নম্বর অনুচ্ছেদ জন্ম এবং কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছিল। (শূন্যস্থান পূর্ণ কর)
উত্তরঃ ৩৭০।
(চ) ‘নেদা’ (NEDA)-র সম্পূর্ণ রূপটি লেখ।
উত্তরঃ North East Democratic Alliance.
১৬। ভারতীয় জনসংঘের যে কোন দুটি আদর্শ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতীয় জনসংঘের দুটি আদর্শ নিম্নরূপঃ
(ক) এক দেশ, এক সংস্কৃতি ও এক জাতি।
(খ) ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উপর আস্থা।
১৭। ভারতের নির্বাচনী আয়োগ কবে গঠন করা হয়েছিল? ভারতের প্রথমজন মুখ্য নির্বাচনী আয়ুক্ত কে ছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৫০ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের নির্বাচন আয়োগ গঠিত হয়েছিল। প্রথম নির্বাচন আয়ুক্ত ছিলেন সুকুমার সেন।
১৮। ১৯৭৫ সালের জরুরীকালীন অবস্থার পরিণতি লেখ।
উত্তরঃ জরুরি অবস্থার দুটি ফলশ্রুতি নিম্নরূপঃ
(ক) দেশের বিরোধী নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ করা।
(খ) নাগরিকদের পৌর অধিকার সীমিত করা।
১৯। ভারতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের উদ্ভবের যে-কোন দুটি কারণ লেখ।
উত্তরঃ ভারতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল উৎপত্তির দুটি কারণ হল—
(ক) জাতিগত, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক কারণ। ও
(খ) আর্থিক কারণ।
২০। মণ্ডল আয়োগের দুটি পরামর্শ লেখ।
উত্তরঃ মণ্ডল আয়োগের দুটি পরামর্শ নিম্নরূপঃ
(ক) সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে অনগ্রসর জাতির জন্য ২৭% আসন সংরক্ষণ।
(খ) অনগ্রসর সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য প্রকল্পগুলি অনুসূচীত জাতি ও উপজাতিদের অনুরূপ হতে হবে।
২১। ভারতের নূতন অর্থনৈতিক নীতির দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতের নূতন আর্থিক নীতির দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) উদারীকরণ, বিশ্বায়ন ও বেসরকারিকরণ।
(খ) বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগ।
২২। ভারত বিভাজনের পরিণতিগুলি সংক্ষেপে বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ ভারত বিভাজন ভারতের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তরকারী ঘটনা। ভারত বিভাজনের মাধ্যমেই ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন দুইটি দেশ আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু ভারত বিভাজন সুখদায়ক ছিল না। ভারত বিভাজন নিম্নোক্ত প্রকার সমস্যার সৃষ্টি করেছিলঃ
(ক) জন হস্তান্তর ও গণহত্যাঃ দেশ বিভাজনের প্রথম ফলশ্রুতি হল অপরিকল্পিতভাবে দুই দেশের মধ্যে জন হস্তান্তর। সীমান্তের উভয় পারে বিরাট সংখ্যক মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সংখ্যালঘুদের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে সীমান্তের ওপারে ঠেলে দেওয়া হয়। প্রায় ৮০ লক্ষ লোক সীমান্ত অতিক্রম করেছিল। দেশবিভাগ-সংক্রান্ত হিংসার কার্যকলাপে ৫ থেকে ১০ লক্ষ লোক নিহত হয়েছিলেন।
(খ) শরণার্থী সমস্যাঃ শরণার্থী সমস্যা দেশ বিভাজনের একটি অন্যতম সমস্যা। শরণার্থীগণ এদেশে এসে গৃহহীন হয়ে পড়ে। লক্ষ লক্ষ লোক শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ভারত সরকার অকস্মাৎ শরণার্থী সমস্যার সম্মুখীন হয়। শরণার্থী সমস্যা এমন জটিল ছিল যে সরকারের এই সমস্যা সমাধানে বহু বছর লেগেছিল।
(গ) সংখ্যালঘু সমস্যাঃ বিশাল সংখ্যক মুসলমান পাকিস্তানে চলে গেলেও ভারতের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ মুসলমান। এই বিশাল সংখ্যক মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভারত সরকারের একটি বিরাট সমস্যা ছিল।
(ঘ) সম্পত্তি বিভাজনঃ দেশ বিভাজনের অন্য অর্থ হল সম্পত্তি ও আর্থিক দায়-দায়িত্ব বিভাজন। সরকারী কর্মী ও রেলকর্মীদের বিভাজনেও অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল।
সুতরাং দেশ বিভাজন নানা প্রকার সমস্যার সৃষ্টি করেছিল।
২৩। ভারতের পারমাণবিক নীতির বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভারত ১৯৭৪ সালের মে মাসে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পণ্ডিত নেহেরু আধুনিক ভারতের দ্রুত বিকাশের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। ভারতের জন্য পরমাণু প্রকল্প ১৯৪০ সালে হোমি জে. ভাবা সর্বপ্রথম তৈরি করেছিলেন। ভারত শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু শক্তি উৎপাদন করেছিল। নেহেরু পরমাণু শক্তির বিরোধী ছিলেন। সেইজন্য তিনি বৃহৎ শক্তিগোষ্ঠীকে ব্যাপক হারে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রকল্প তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলেন। তথাপি পরমাণু অস্ত্রগ্রহণ করা হয়েছিল। সাম্যবাদী চীন ১৯৬৪ সালের অক্টোবর মাসে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পাঁচটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রসমূহ ১৯৬৮ সালে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু অসম্প্রসারণ চুক্তি সম্পাদনে যত্নবান হয়েছিল। ভারত পরমাণু অসম্প্রসারণ চুক্তি বৈষম্যমূলক ছিল বলে তা স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে। ভারত যখন প্রথম পরমাণু পরীক্ষা করে তখন তাকে শান্তিপূর্ণ অনুসন্ধান বলে অভিহিত করে। ভারত পরমাণু শক্তি শান্তির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেবে বলে যুক্তি প্রদর্শন করেছিল। ১৯৯৮ সালে ভারত পোখরানে দ্বিতীয়বার পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা করেছিল।
২৪। ১৯৬৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত বিতর্কের বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধীর সম্মুখীন হওয়া অপর একটি প্রত্যাহ্বান হল ১৯৬৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ঘোষিত দলীয় প্রার্থী। কংগ্রেস দল সঞ্জীব রেড্ডিকে প্রার্থিত্ব দান করলেও ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে সমর্থন করেন নি। অবশেষে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে তিনি ভি.ভি. গিরিকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি দলীয় সদস্যদের বিবেক ভোটদানের আহ্বান জানান এবং অবশেষে তাঁর সমর্থিত প্রার্থী এই নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
২৫। চিপ্কো আন্দোলনের বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ গাছকে জড়িয়ে ধরে অরণ্য ও গাছ রক্ষার জন্য গড়ে তোলা এক অভিনব আন্দোলন হল ‘চিপকো আন্দোলন’। এই আন্দোলনটি সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে। এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ঐতিহাসিক দিনটি হল ১৯৭৪ সালের ২৬ মার্চ। সেই দিনটিতে উত্তরাখণ্ডের ‘চামেলি’ জেলার ‘বেনি’ গ্রামের মহিলাদের একটি গোষ্ঠী রাজ্যের (তখনকার উত্তরপ্রদেশ) বন বিভাগের ঠিকাদারের দ্বারা বনাঞ্চল ধ্বংসের জন্য চালানো চক্রান্ত রোধ করবার জন্য এবং বনাঞ্চলের উপর নিজের অধিকার সাব্যস্ত করবার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই ঘটনা পরবর্তী সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবেশ সচেতনতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এইভাবেই বিস্তারলাভ করে পরিবেশ রক্ষার এক সামাজিক আন্দোলন— ‘চিপকো আন্দোলন’। এই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন সুন্দরলাল বহুগুণা ও অমৃতা দেবী।
সহজ বাংলায় ‘চিপকো’ কথার অর্থ হল জড়িয়ে ধরো; জড়িয়ে ধরো গাছকে (to hug trees)। জড়িয়ে ধরো গাছকে, জড়িয়ে ধরো জীবনকে (Tree Hugging Movement), কারণ জীবনের অন্য নাম গাছ। বৃক্ষ বাঁচাও আন্দোলন। একে পরিবেশ নারীবাদ (Eco- feminism) নামেও জানা যায়।
এই আন্দোলন প্রাথমিক সভা ডেকে, আলোচনা করে শুরু হয় নি। অরণ্য বা বৃক্ষকে।রক্ষা করলে মানুষের নিজের অস্তিত্ব রক্ষা পাবে এই বিশ্বাসই প্রায় প্রতিটি পাহাড়ি মানুষকে সংগঠিত করেছে। যুক্ত করেছে আন্দোলনের কাজে। এর ফলে এই আন্দোলন হয়ে উঠেছে আরও সুসংহত এবং আন্তরিক।
চিপকো আন্দোলনের মূল দাবি ছিল—
(ক) অরণ্য সংহার বন্ধ।
(খ) বিকল্প অরণ্য সম্পদের সন্ধান। ও
(গ) বৃক্ষরোপণ করে নূতন অরণ্য সৃজন।
এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে গান রচিত হয়েছে এবং তৈরি হয়েছে লোকনাট্য। পদযাত্রা, মিছিল, বিক্ষোভ প্রভৃতি তো আছেই। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন দুইজন। একজন সাংবাদিক সুন্দরলাল বহুগুণা এবং অন্যজন চণ্ডীচরণ ভাট যিনি পাহাড়ী জনপদের শ্রমজীবী মানুষদের একজন। চিপকো আন্দোলন শুধু ভারতেই নয়, বিদেশেও যথেষ্ট পরিচিতি ও সমর্থন লাভ করেছে।
২৬। ভারতের সম্মিলিত সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ সম্মিলিত বা সংযুক্ত সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) সংযুক্ত বা সম্মিলিত সরকার গঠনকারী দলসমূহ নিজেদের মধ্যে একটি ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচী তৈরি করে কতিপয় সাধারণ লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে।
(খ) সংযুক্ত সরকার গঠিত হয় যখন কোন দলই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে। সমমনোভাবাপন্ন দলসমূহের মধ্যে সাধারণত বোঝাপড়ার মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়।
(গ) সংযুক্ত সরকার সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়। শরিক দলের মধ্যে মতানৈক্যের ফলে দলীয় মোর্চায় ভাঙন দেখা দিলে সরকারের পতন ঘটে।
(ঘ) সংযুক্ত সরকারে রাজনৈতিক দলগুলি জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমান এন. ডি. এ. সরকারে ডি. এম. কে. একটি আঞ্চলিক দল।
২৭। সবুজ বিপ্লবের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ফলাফলগুলি আলোচনা কর।
উত্তরঃ ইতিবাচক ফলাফলঃ
(ক) উৎপাদন বৃদ্ধিঃ নুতন প্রযুক্তি গ্রহণ করার ফলে মোট উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল, দেশ খাদ্যশস্যে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছিল। বিদেশ হতে খাদ্যশস্য আমদানি বন্ধ করা হয়েছে।
(খ) কর্মসংস্থান বৃদ্ধিঃ নূতন প্রযুক্তির ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা বছর একাধিকবার ফসল ফলানোর জন্য শ্রমের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে।
নেতিবাচক ফলাফলঃ
(ক) বৃহৎ চাষির সুবিধাঃ নূতন প্রযুক্তির সুফল বৃহৎ চাষি অধিক পরিমাণে ভোগ করেছে। নূতন প্রযুক্তি অধিক ব্যয়সাধ্য বলে ছোট চাষি নূতন প্রযুক্তির সুফল গ্রহণ করতে পারছে না। ফলে গ্রামাঞ্চলে আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(খ) আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধিঃ সবুজ বিপ্লবের ফলে রাজ্যগত ও অঞ্চলগত বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সবুজ বিপ্লবের প্রথম পর্যায়ে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি গম উৎপাদক এলাকাগুলি অধিক উন্নত হয়। অন্যান্য এলাকাগুলিতে উৎপাদন বৃদ্ধি না পাওয়ায় আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।
অথবা
দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়ে উদ্যোগীকরণ এবং কৃষি বিকাশের মধ্যে উদ্ভুত বিতর্কের বর্ণনা কর।
উত্তরঃ প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষিখণ্ডের উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করলেও দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উদ্যোগীকরণের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়।কৃষিখণ্ডের উপর অগ্রাধিকার ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। ১৯৫০-এর দশকে সূচনা করা ভূমি সংস্কারের উপর সরকার প্রয়োজনীয় মনোনিবেশ করেনি। অন্যদিকে উদ্যোগীকরণের ক্ষেত্রেও গ্রামাঞ্চলের পরিবর্তে নগরাঞ্চলে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয় যা গান্ধী দর্শনের সম্পূর্ণ বিপরীত। এই পরিস্থিতিতে বিশিষ্ট গান্ধীবাদী অর্থনীদিবিদ জে. সি. কুমারাপ্পা গ্রামাঞ্চলে ঔদ্যোগীকরণের উপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে এক বিকল্প অর্থনৈতিক বুপ্রিন্ট তৈরি করে। উত্থাপন করেছিলেন। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও কৃষকনেতা চৌধুরী চরণ সিংও কৃষিখণ্ডে ভারতীয় পরিকল্পনার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিশেষত, রাজনীতিবিদ, অর্থনীদিবিদ, পরিকল্পনা রচয়িতাগণ বিকাশের ক্ষেত্রে উদ্যোগীকরণের স্বপক্ষে নিম্নোক্ত যুক্তিসমূহের অবতারণা করেনঃ
(ক) ভারতবর্ষের অর্জিত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অপরিহার্য। এই লক্ষ্যে উপনীত হতে উদ্যোগীকরণ একান্ত আবশ্যক।
(খ) বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি মুখ্য স্থান অধিকার করা ভারতের মুখ্য উদ্দেশ্য। এই লক্ষ্যে উপনীত হতে উদ্যোগীকরণ তথা বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিকাশ অপরিহার্য।
(গ) দরিদ্রতার পাকচক্র হতে মুক্তি লাভের জন্য দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজন। এর জন্য উদ্যোগীকরণের উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করা বাঞ্ছনীয়।
(ঘ) দ্রুত উদ্যোগীকরণের মাধ্যমেই দ্রুত মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়।
২৮। জরুরীকালীন অবস্থা থেকে ভারতের লাভ করা শিক্ষার বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ ভারতীয় গণতন্ত্রে জরুরিকালীন অবস্থার প্রভাব দুই দিকে লক্ষ্য করা যায়। কতিপয় রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের মতে জরুরি অবস্থার সময় ভারতীয় গণতন্ত্র অধিক শক্তিশালী রূপ ধারণ করেছিল। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে এইসময় সকল ক্ষমতা কেন্দ্র সরকারের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই গণতান্ত্রিক কার্যাবলীর সংকোচন ঘটে। এই অভিজ্ঞতা থেকে ভারতীয় গণতন্ত্রে জরুরি অবস্থা বলবৎ করা যে সুস্থ গণতান্ত্রিক পরম্পরার উপরে আঘাত এটা সকলেই উপলব্ধি করেছিল।
দ্বিতীয়ত ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর সংসদ ও রাষ্ট্রপতির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা হয়। সংবিধান স্বীকৃত জরুরিকালীন ক্ষমতার বিষয়ে বিভিন্ন মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। জরুরি অবস্থা শেষ হওয়ার পর গঠিত জনতা সরকারের আমলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে কেবল সশস্ত্র বিদ্রোহ দ্বারা জাতীয় ঐক্য বিপন্ন হলে দেশে আভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারা যাবে।
তৃতীয়ত, জরুরি অবস্থা ঘোষণা নাগরিকদের নিজেদের স্বাধীনতার প্রতি সচেতন করে তোলে। জরুরি অবস্থার সময় নাগরিকদের স্বাধীনতা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ন্যায়িক ব্যবস্থা। সম্পূর্ণভাবে অসহায় হয়ে পড়ে। তথাপি রাজ্যসমূহের উচ্চ ন্যায়ালয়সমূহে নাগরিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তদুপরি জরুরি অবস্থায় লভ করা অভিজ্ঞতার ফলে নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংস্থা গড়ে উঠেছিল।
অথবা
উত্তর-পূর্বের রাজনীতি এবং অঞ্চলটিতে স্বায়ত শাসনের দাবীর বিষয়ে বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দুইটি রাজ্য মণিপুর ও ত্রিপুরা ছাড়া মেঘালয়, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড ও মিজোরাম বৃহত্তর আসামের অঙ্গ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এইসব রাজ্য পৃথক রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে। কিন্তু বিভিন্ন পার্বত্য উপজাতিদের আঞ্চলিকতাবাদী মানসিকতার জন্য ১৯৬০ সালে ‘অল পাৰ্টী হিল লিডার্স কনফারেন্স’ নামে একটি সংস্থা গড়ে ওঠে। এই সংস্থার মাধ্যমে পাহাড়ি ও জনজাতি লোকসকল পৃথক রাজ্যের দাবি উত্থাপন করে। এই প্রক্রিয়ার পরিণতিস্বরূপ বৃহত্তর আসাম হতে মেঘালয়, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ গঠন করা হয়। ১৯৬৩ সালে নাগাল্যান্ড রাজ্য গঠন করা হয়। ১৯৭২ সালে মেঘালয়, মণিপুর ও ত্রিপুরা গঠন করা হয়।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বায়ত্বশাসনের দাবি পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করে। সংবিধানের ষষ্ঠ তপশীলের মাধ্যমে উত্তর কাছাড় ও কাৰ্বি আংলং-এ স্বায়ত্বশাসিত পরিষদ গঠিত হয়েছিল। উক্ত অনুসূচী সংশোধনের মাধ্যমে ২০০৩ সালে বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়েল কাউন্সিল নামে স্বায়ত্বশাসিত পরিষদের মর্যাদা দেওয়া হয়।
বড়ো সহ আরও অন্যান্য বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বর্তমানে স্বায়ত্বশাসনের দাবি উত্থাপন করছে।