AHSEC 2022 Political Science Question Paper Solved | দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান

AHSEC 2022 Political Science Question Paper Solved Bengali Medium | দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান, AHSEC Class 12 Political Science Question Paper Solved PDF Download, দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান 2022 প্রশ্নপত্র সমাধান করা হয়েছে to each Paper is Assam Board Exam in the list of AHSEC so that you can easily browse through different subjects and select needs one. AHSEC 2022 Political Science Previous Years Question Paper Solved in Bengali can be of great value to excel in the examination.

AHSEC 2022 Political Science Question Paper Solved

AHSEC 2022 Political Science Question Paper Solved in Bengali | দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান

Join Telegram channel

AHSEC Old Question Paper provided is as per the 2022 AHSEC Board Exam and covers all the questions from the AHSEC Class 12 Political Science Solved Question Paper 2022 Bengali Medium. Access the detailed Class 12 Political Science 2022 Previous Years Question Paper Solved provided here and get a good grip on the subject. AHSEC 2022 Political Science Question Paper Solved Bengali Medium Access the AHSEC 2022 Political Science Old Question Paper Solved, AHSEC Class 12 Political Science Solved Question Paper 2022 of Bengali in Page Format. Make use of them during your practice and score well in the exams.

POLITICAL SCIENCE

2022

POLITICAL SCIENCE OLD QUESTION PAPER SOLVED

ক–শাখা (সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি)

১। নীচের প্রশ্নগুলির নির্দেশানুযায়ী উত্তর দাওঃ

(ক) NIEO-এর সম্পূর্ণ রূপটি লেখ।

উত্তরঃ New International Economic Order.

(খ) কোন্ রাষ্ট্রের পতন ‘দ্বিতীয় বিশ্বের’ পতন হিসাবে পরিচিত?

উত্তরঃ সোভিয়েত ইউনিয়ন।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

(গ) কোন্ সালে ইরাক কুয়েত আক্রমণ করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৯০ সালে।

(ঘ) SAFTA-এর সম্পূর্ণ রূপটি লেখ।

উত্তরঃ South Asian Free Trade Agreement.

(ঙ) বসুন্ধরা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল _______ সালে। (শূন্যস্থান পূর্ণ কর)

উত্তরঃ ১৯৯২।

(চ) দেশীয় জনসাধারণের বিশ্বপরিষদ গঠিত হয়েছিল ১৯৭৪/১৯৭৫/১৯৭৬ সালে।

উত্তরঃ ১৯৭৫ সালে।

২। সোভিয়েত ইউনিয়নে মিখাইল গর্বাচেভ দ্বারা প্রবর্তিত দুটি সংস্কার উল্লেখ কর।

উত্তরঃ গোর্বাচভ কর্তৃক আরম্ভ করা সংস্কার দুটি হল—পেরেস্ত্রৈকা ও গ্লাসনস্ত।

৩। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলির নাম লেখ।

উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি হল—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও চীন।

৪। সমগ্র বিশ্বে মানব অধিকার সুরক্ষার সঙ্গে জড়িত দুটি বেসরকারী সংগঠনের নাম লেখ।

উত্তরঃ দুটি বেসরকারি সংস্থা (NGO)-র নাম নিম্নরূপঃ

(ক) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

(খ) হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ।

৫। রাষ্ট্রসংঘের প্রধান সাংগঠনিক বিভাগগুলির নাম লেখ।

উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের প্রধান সাংগঠনিক বিভাগগুলির নাম নিম্নরূপঃ

(ক) সাধারণ সভা।

(খ) নিরাপত্তা পরিষদ।

(গ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ।

(ঘ) ন্যাসরক্ষী বা অছি পরিষদ।

(ঙ) আন্তর্জাতিক বিচারালয়।

(চ) সচিবালয়।

৬। মানবজাতির প্রতি ভীতি প্রদর্শনের দুটি উৎসের উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভয়-ভীতির দুটি নূতন উৎস হল—

(ক) গোলকীয় দরিদ্রতা। এবং

(খ) আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ।

৭। জল দূষণের দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ জল প্রদূষণের দুটি কারণ নিম্নরূপঃ

(ক) জলাশয়ে ঘরোয়া আবর্জনা নির্গমন ও নিক্ষেপ।

(খ) ঔদ্যোগিক বর্জিত পদার্থ নির্গমন ও নিক্ষেপ।

৮। বৃহৎশক্তির রাষ্ট্রগুলিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে মিত্রতার প্রয়োজন কেন হয়? চারটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহ বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহকে নিম্নোক্ত রূপে সাহায্য করেঃ

(ক) ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহ মহাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলিকে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ও খনিজ সম্পদে আধিপত্য বিস্তার করতে সহায়তা করে।

(খ) ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহ মহাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলিকে তাদের ভৌগোলিক এলাকায় প্রবেশাধিকার প্রদান করে যাতে তারা সেখান হতে তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও সেনাবাহিনী ব্যবহার করতে পারে।

(গ) মহাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলি গোয়েন্দা কাজের প্রয়োজনীয় অবস্থান ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলিতে অতি সহজে পেয়ে থাকে।

(ঘ) ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহ একত্রে সামরিক ব্যয়ভার দিতে সাহায্য করে।

৯। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমূহের বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ শক্তির ভারসাম্যের যুক্তির নিরিখে আধিপত্যবাদ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের শক্তির সমতা স্থাপন আজ প্রধান বিচার্য বিষয়। শক্তির সমতার এই যুক্তি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইতিহাস বিরাটভাবে সমর্থন করছে। ইতিহাস আরও বলে যে আধিপত্যবাদ তার শীর্ষ সীমায় ভয়ানক বা দুধর্ষ হয়ে ওঠে, কিন্তু এটি চিরন্তন নয়। বরঞ্চ উল্টোভাবে বলতে গেলে ক্ষমতার রাজনীতির ভারসাম্য ধীরে ধীরে অধিপতির বা আধিপত্যকারীর আপেক্ষিক ক্ষমতা খর্ব করে দেয়। তার সর্বোত্তম উদাহরণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য।

আমেরিকার একাধিপত্যের তিনটি প্রধান অন্তরায় নিম্নরূপঃ

(ক) আমেরিকার একাধিপত্যের প্রথম অন্তরায় হল আমেরিকার নিজস্ব রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো। সরকারের তিনটি অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন আমেরিকার নির্বিচারে সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগের উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

(খ) আমেরিকার একাধিপত্যের দ্বিতীয় অন্তরায় হল আভ্যন্তরীণ প্রকৃতির এবং এর মূল কারণ আমেরিকার মুক্ত সমাজব্যবস্থা। এই ব্যাপারে গণমাধ্যমের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।

(গ) আমেরিকার একাধিপত্যের তৃতীয় এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অন্তরায় হল ন্যাটো (NATO)। এই ন্যাটো শক্তিগোষ্ঠী আমেরিকার একাধিপত্য বিস্তারে কিয়দংশে বাধার সৃষ্টি করে।

১০। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান সম্পর্কের বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিবেশী এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে এক বিবাদমূখর উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। কাশ্মীর সমস্যা, নদীর জল বণ্টন সমস্যা, সামরিক নীতি প্রভৃতি বিষয়ে বিবাদ চলছেই। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে অঘোষিত যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি, সন্ত্রাসবাদে মদত দান, বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে অসহযোগিতা ইত্যাদি সম্পর্ক গঠনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা নেয়। এর ফলে ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষ ঘটে। পাকিস্তানে যেহেতু কখনো গণতান্ত্রিক সরকার কখনো সামরিক শাসন বলবৎ থাকে, তাই আলোচনা খুব একটা ফলপ্রসূ হয় না। যাই হোক গত কয়েক বছরে যেমন সম্পর্কের কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটেছে তেমনি কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দানের ক্ষেত্রে অবনতিও ঘটেছে। বর্তমানে নওয়াজ শরিফ সরকারের সঙ্গে আমাদের মোদী সরকারের কিছু ইতিবাচক আলোচনা শুরু হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাস ও ট্রেন পরিষেবা চালু হয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যা মৌলবাদ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ। পাকিস্তান এর কবল এড়িয়ে কতদূর এগোতে পারবে তার উপর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নীত হওয়া নির্ভর করে। SAARC-কৃষ্ণ অন্যান্য দেশগুলিও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে।

১১। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ গোলকীয় দারিদ্র মানব নিরাপত্তার বিপদের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। গরীব রাষ্ট্রসমূহে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। অন্যদিকে ধনী দেশসমূহে ঘাটতি অনুভব করা হয়। চীন, ভারত, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে উত্তরোত্তর জনসংখ্যা বৃদ্ধি মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করছে। গরীব রাষ্ট্রসমূহ সাধারণ নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে না। এই রাষ্ট্রসমূহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পরিবেশ প্রদূষণ প্রতিরোধ, ব্যাধি প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করতে পারে না। কোন কোন রাষ্ট্র যদিও জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে কিছুটা সফল হয়েছে কিন্তু অধিকাংশ রাষ্ট্রই এই ব্যাপারে সফল হয় নি। বিশ্বের অধিকাংশ বিরোধ এই সকল দরিদ্র এলাকায় সংঘটিত হয়ে থাকে। একবিংশ শতকের প্রথম দিকেও এই সকল অঞ্চলে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় জীবনহানি ঘটতে দেখা যায়।

১২। বিশ্বায়নের রাজনৈতিক পরিণতিসমূহের বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ রাজনৈতিক প্রভাবঃ রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বিশ্বায়নের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অদ্যাবধি রাজনীতি কেবল জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করত। জনগণের নিরাপত্তা ও আর্থিক কল্যাণ, মানবাধিকার এবং পরিবেশ রক্ষায় নিজ নিজ রাষ্ট্রের সরকারের দায়বদ্ধতা ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায়, রাজনীতি রাষ্ট্রের বাইরেও ইউরোপীয় সংঘ, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, বিশ্বব্যাঙ্ক, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা প্রভৃতি রাজনৈতিক সমন্বয় সাধনকারী প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। বিশ্বায়নের যুগে রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ গোলকীয় আন্দোলন ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে জাতীয় সীমানা অতিক্রম করতে পারে। 

বিশ্বায়ন বিষয়টিকে কোন একটি নির্দিষ্ট বাক্যে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। বিশ্বায়ন একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া, তবে বিশ্বায়ন কোন আকস্মিক প্রক্রিয়া নয়, তা বহু পূর্ব থেকেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল। বিশ্বায়নকে এমন একটি বিশ্বব্যাপী প্রক্রিয়া বলে চিহ্নিত করা যায়, যাতে রাষ্ট্রসংক্রান্ত ধারণার অবসান ঘটিয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী অবাধ আদান-প্রদান চালানো সম্ভব হবে। ফলে কোন রাষ্ট্র নিজ ইচ্ছানুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ অধিকাংশ রাষ্ট্রের বিধিনিয়ম তৈরি করে দেয়। ফলত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবক্ষয় ঘটে। এমন কোন পরিস্থিতিতে কতিপয় রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধান বেসরকারি খণ্ডের মতানুসারে পরিবর্তন করা হয়। কোন কোন রাষ্ট্রের সরকারকে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষাকারী আইন, পরিবেশ সুরক্ষাকারী আইন ইত্যাদি পরিত্যাগে বাধ্য করানো হয়। ফলে তা নিশ্চিতভাবে কোন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে প্রভাবিত করে।

১৩। সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন বিভাজিত হয়েছিল? তিনটি কারণ আলোচনা কর।

উত্তরঃ সোভিয়েত ইউনিয়ন অবলুপ্তির জন্য নিম্নোক্ত কারণসমূহ বহুলাংশে দায়ীঃ

(ক) সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তির প্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল সোভিয়েত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসমূহের দুর্বলতা যা সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণ করতে পারেনি। বহু বছরের আর্থিক স্থবিরতার ফলে দেশে ভোগ্যপণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। জনগণের এক বিরাট অংশের মধ্যে সোভিয়েত রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দেয়। সাধারণ নাগরিকগণ পশ্চিমী দেশসমূহের উন্নতি লক্ষ্য করে অনুপ্রাণিত হয়। এইভাবে সোভিয়েত রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি তাদের মোহভঙ্গ হয়।

(খ) সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তির আরেকটি প্রধান কারণ হল ত্রুটিপূর্ণ নেতৃত্ব। সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিস্ট পার্টি ও সরকারের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। কমিউনিস্ট পার্টির নেতাই ছিলেন সরকারের প্রধান। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম বছরগুলিতে লেনিন, স্ট্যালিন, ক্রুশ্চেভ প্রভৃতি নেতাগণ জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন এবং তাঁহাদের কার্যপ্রণালীর দ্বারা সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করতেন, কিন্তু পরবর্তীকালে নেতাগণ তাদের বিলাসবহুল জীবন, স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির জন্য মানুষের শ্রদ্ধা ও সমর্থন হারান। এর ফলে সোভিয়েত রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে ও ধীরে ধীরে অবলুপ্তির দিকে অগ্রসর হয়।

(গ) প্রেসিডেন্ট গোর্বাচভের সংস্কার নীতিও সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ। তিনি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু স্বাধীনতা, সমতা, আর্থিক স্বনির্ভরতা এবং একতার পরিবেশ তৈরি না করে তিনি গ্লাসনস্ত (Glasnost) ও পেরেস্ত্রৈকা (Perestroika) নামক দুইটি সংস্কার কর্মসূচী বাস্তবায়িত করতে আরম্ভ করেন। ‘গ্লাসনস্ত’-এর অর্থ ‘মুক্ত বা অবাধ নীতি’ এবং ‘পেরেস্ত্রৈকা’র অর্থ হল ‘পুনর্গঠন’। এই নীতির দ্বারা জনগণকে অত্যাধিক স্বাধীনতা প্রদান করা হয়। ফলে বিভিন্ন গণরাজ্য অধিক পরিমাণে স্বশাসনের দাবি উত্থাপন করে।

অথবা

অর্থনৈতিক মহাশক্তি হিসাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিশদভাবে আলোচনা কর।

উত্তরঃ বর্তমান মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য সর্বত্র এবং অপরিসীম। বর্তমানে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্যে ১৫%, বিশ্ব অর্থনীতির সকল খণ্ডে ২৮% এবং প্রযুক্তির সকল দিকে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে যে ব্রিটন উডস্ পদ্ধতি চালু করে তা আজ বিশ্ব অর্থনীতির মূল কাঠামো। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা মার্কিন অর্থনৈতিক আধিপত্যের ফলশ্রুতি।

অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিফলিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বময় সার্বজনীন ভোগ্যদ্রব্য যোগদানের ভূমিকার মধ্য দিয়ে। সার্বজনীন ভোগ্যদ্রব্য বা ভোগ্যপণ্য হল যা কোন একজন উপভোগ করতে পারে অন্যজনের ভোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে। উদাহরণ হিসাবে মুক্তবায়ু ও রাস্তাঘাটের কথা উল্লেখ করা যায়। বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষিতে সার্বজনীন ভোগ্যপণ্যের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হলো, সমুদ্রপথ বা সি লেন্স অব্ কমুনিকেশন (Sea Lanes of Communication, SLOC)। ইহা সমুদ্রে চলাচলের নির্দিষ্ট পথ যা সকল দেশের বাণিজ্যিক জাহাজসমূহ ব্যবহার করে থাকে। এই সমুদ্রপথ ব্যতীত অবাধ বিশ্ববাণিজ্য সম্ভব নয়। অধিপতি বা অধিকর্তার নৌশক্তি সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ব্রিটিশ নৌসেনা বাহিনীর অধোগতির পর থেকেই মার্কিন মহাসাগরীয় নৌবাহিনী এই ভূমিকা পালন করে আসছে।

বিশ্ব অর্থনীতির এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে আমেরিকার ভাগ বা অংশ নেই, অর্থাৎ আমেরিকার কোন ভূমিকা নেই। বিশ্ব অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্র প্রযুক্তি বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে; এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক বিশাল অংশ অর্থাৎ ২৮ শতাংশের অংশীদার বা ভাগীদার। উল্লেখ্য যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক আধিপত্য এর কাঠামোগত শক্তি থেকে অনবিচ্ছেদ্য যা বিশ্ব অর্থনীতিকে একটি বিশেষ আকার দেয়। ব্রিটন উডস্ পদ্ধতি যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চালু করে তা আজও বিশ্ব অর্থনীতির মূল কাঠামো। 

১৪। ASEAN-এর মূল স্তম্ভগুলি কী কী? বিশদভাবে আলোচনা কর।

উত্তরঃ আসিয়ানের প্রধান তিনটি সংস্থা হল—

(অ) আসিয়ান নিরাপত্তা সংস্থা।

(আ) আসিয়ান আর্থিক সংস্থা। এবং

(ই) আসিয়ান সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা।

(অ) আসিয়ান নিরাপত্তা সংস্থাঃ এই সংস্থার প্রধান লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। নিরাপত্তা-বিষয়ক এই রাষ্ট্রসমূহ প্রায়ই মিলিত হয়ে নিজ নিরাপত্তাজনিত সমস্যাসমূহ সমাধান করে।

(খ) এই রাষ্ট্রসমূহ তাহাদের এই অঞ্চলকে শান্তির অঞ্চল হিসাবে গড়ে তুলতে চায়। সেজন্য সন্ত্রাসবাদী ও উগ্রপন্থী সমস্যাসমূহ দমন করার জন্য তারা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করে।

(আ) আসিয়ান আর্থিক সংস্থাঃ এই সংস্থার প্রধান লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহের জন্য একটি সাধারণ বাজার ও উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং এই অঞ্চলের সামাজিক ও আর্থিক উন্নতির জন্য সাহায্য ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা।

(খ) এর অন্য একটি লক্ষ্য হল মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল স্থাপন করা যাতে মূলধন, শ্রমিক ও বিভিন্ন প্রকার সেবার বিনিয়োগ সম্ভব হয়।

(ই) আসিয়ান সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থাঃ এই সংস্থার প্রধান লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) আসিয়ান দেশসমূহ পৃথিবীর সকল অঞ্চলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করতে চায়। আসিয়ান এবং আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে খেলার দল, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর আদান-প্রদান করা হয়।

(খ) আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহের মতে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সম্বন্ধই আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন অধিক শক্তিশালী করবে। 

অথবা

চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভারত ও চীনের মধ্যে প্রথমাবস্থায় সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালে চীন হঠাৎ ভারত আক্রমণ করে এবং ভারতের প্রতি বৈরিভাবাপন্ন হয়। ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করিতে অধিক আগ্রহী।

ভারত প্রথম থেকেই চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী ছিল। ভারত প্রথমে চীনকে স্বীকৃতি দেয় এবং পরে রাষ্ট্রসংঘে চীনকে সমর্থন জানায়। ১৯৫৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই সময় চীন পঞ্চশীল নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়। কিন্তু ১৯৬২ সালের ২রা অক্টোবর চীন ভারত আক্রমণ করে। ২১শে নভেম্বর।দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটে। চীন ভারতের কয়েক হাজার মাইল এলাকা দখল করে। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর শাসনকালে চীন-ভারত সম্পর্ক উন্নতি লাভ করে নি। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে চীন।পাকিস্থানকে সমর্থন জানায়। বাংলাদেশের আন্দোলনে ভারতের সমর্থনকে চীন পছন্দ করে নি। চীন পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসককে সমর্থন জানায়। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত চীন-ভারত সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ ছিল।

১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে তিন দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি ১৯৮৮ সালে চীন সফর করেন। ফলে দুই।দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হ্রাস পায়। যৌথ কার্যকরী গোষ্ঠী গঠিত হয়। এই গোষ্ঠী মোট ৬ দফা বৈঠক করে।

১৯৯৬ সালের ২৮শে নভেম্বর চীনের প্রধানমন্ত্রী জিয়াং জেমিন চারদিনের ভারত সফরে আসেন। দুই দেশের মধ্যে নানা বিষয়ে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০২ সালের মে মাসে ভারতের রাষ্ট্রপতি কে. আর. নারায়ণনের চীন সফরের মাধ্যমে চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি শুরু হয়। দুই দেশ যুক্তিসঙ্গতভাবে সীমানা বিরোধ সমাধানের একটি কমিটি গঠন করতে স্থির করে। ভারত এবং চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৯৯২ সালের ৩৩.৮ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০০৬ সালে ১৮০ কোটি ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং চীন সফর করেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীগণ A Shared Vision for the 21st Century নামে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন। এইভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নতিকল্পে একটি বিরাট পদক্ষেপ। এটা আশাব্যঞ্জক যে আগামী বছরগুলিতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অধিকতর উন্নতি লাভ করবে।

খ—শাখা (স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি)

১৫। নীচের প্রশ্নগুলির নির্দেশানুযায়ী উত্তর দাওঃ

(ক) ভারতে প্রথম সাধারণ নির্বাচন কোন্ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫২ সালে।

(খ) ভারতের প্রথম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কে ছিলেন?

উত্তরঃ সুকুমার সেন।

(গ) NEFA-এর সম্পূর্ণ রূপটি লেখ।

উত্তরঃ North-East Frontier Agency.

(ঘ) পঞ্চশীল নীতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ________ এবং চীনের প্রধান জৌ এনলাই যৌথভাবে ঘোষণা করেছিলেন। (শূন্যস্থান পূর্ণ কর)

উত্তরঃ জওহরলাল নেহরু।

(ঙ) সর্বাত্মক বিপ্লব কে আরম্ভ করেছিলেন?

উত্তরঃ জয় প্রকাশ নারায়ণ।

(চ) MNF-এর সম্পূর্ণ রূপটি কী?

উত্তরঃ Mizo National Front.

১৬। ভারতীয় জনসংঘ কবে গঠিত হয়েছিল? ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ ভারতীয় জনসংঘ ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী এই দলের প্রতিষ্ঠাপক সভাপতি ছিলেন।

১৭। ভারতের যেকোন দুটি রাষ্ট্রীয় দলের নাম এবং প্রতীক লেখ।

উত্তরঃ দুটি রাষ্ট্রীয় দলের নাম ও প্রতীক নিম্নরূপঃ

(ক) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস—প্রতীক (হাত)

(খ) ভারতীয় জনতা পার্টি—প্রতীক (পদ্মফুল)

১৮। ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনের দুটি পরিণতি লেখ।

উত্তরঃ ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দুটি নিম্নরূপঃ

(ক) কংগ্রেস দলের আধিপত্যের সমাপ্তি ও জনতা পার্টি সরকার গঠন।

(খ) কেন্দ্রে প্রথম অকংগ্রেসী সরকার গঠন।

১৯। ভারতের যৌথ সরকারের যেকোন দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ।

উত্তরঃ ভারতের যৌথ সরকারের যেকোন দুটি বৈশিষ্ট্য হল—

(ক) সংযুক্ত বা সম্মিলিত সরকার গঠনকারী দলসমূহ নিজেদের মধ্যে একটি ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচী তৈরি করে কতিপয় সাধারণ লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে।

(খ) সংযুক্ত সরকার গঠিত হয় যখন কোন দলই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে। সমমনোভাবাপন্ন দলসমূহের মধ্যে সাধারণত বোঝাপড়ার মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়।

২০। ভারতে সাম্প্রদায়িকতা উদ্ভবের দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ ভারতে সাম্প্রদায়িকতার দুটি কারণ নিম্নরূপঃ 

(ক) রাজনৈতিক সুবিধাবাদঃ রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিজেদের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে।

(খ) ভোটের রাজনীতিঃ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই ভোট অর্জনের জন্য বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িকতাকে চিরস্থায়ী করে রাখেন।

২১। ভারতের আঞ্চলিকতাবাদের উৎপত্তির দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ ভারতে আঞ্চলিকতাবাদ উত্থানের দুটি কারণ হল—

(ক) ভাষাবাদ। ও

(খ) জাতিবাদ।

২২। ‘দ্বি-জাতি তত্ত্ব’ সম্পর্কে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া মুসলিম লীগ ‘দ্বি-জাতিতত্ত্ব’ উত্থাপন করেছিল। এই তত্ত্ব মতে ভারতবর্ষে প্রধানত দুটি জাতির লোক বসবাস করে—হিন্দু ও মুসলমান। এই তত্ত্বের সমর্থকদের মতে, ইংরেজগণকে ভারতবর্ষকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে। তারা মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলকে নিয়ে পাকিস্তান গঠনের দাবি উত্থাপন করেছিল এবং ইংরেজ সরকার এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে স্বাধীনতা প্রদান করেছিল। ‘ফ্রন্টিয়ার গান্ধী’ বা ‘সীমান্ত গান্ধী’ খান আব্দুল গফ্ফর খান দ্বিজাতি তত্ত্বের সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন।

২৩। ভারত কেন গোষ্ঠী-নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছিল? সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ বৈদেশিক নীতি অনুসরণের ক্ষেত্রে ভারতের জোট নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করার প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) ভারতের মতো বিশাল দেশ কোন শক্তিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করে বিশ্ব রাজনীতিতে সম্মানজনক আসন গ্রহণ করতে পারবে বলে নেতৃবৃন্দের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। সেই কারণেই তারা জোট নিরপেক্ষ নীতির পক্ষপাতী ছিল।

(খ) অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশের প্রয়োজন। এই জন্য ভারত কোন বিশেষ গোষ্ঠীর সঙ্গে মিত্রতা রক্ষার পরিবর্তে সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার উপর গুরুত্ব প্রদান করে।

(গ) অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজন। গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে দুই শক্তিগোষ্ঠী হতে অর্থনৈতিক সাহায্য লাভ করা সম্ভব হবে বলে ভারতের নেতাগণের দৃঢ়বিশ্বাস ছিল।

(ঘ) স্বাধীনতা লাভ করার সময় ভারত সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী ছিল না। গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ দ্বারা যুদ্ধের ভয়াবহতা হতে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়।

(ঙ) স্বাধীনতা লাভের পর একমাত্র পাকিস্তান ব্যতীত অন্য কোন রাষ্ট্র হতে ভারতের বিপদের কোন সম্ভাবনা ছিল না। ফলে নিরাপত্তার দিকে বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব না দিয়ে গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করা সঙ্গত ছিল।

২৪। কংগ্রেস দলের অবনতির কারণসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ কংগ্রেস ১৯৫২ পরবর্তী সময়ে সমস্ত দেশ জুড়ে প্রাধান্যকারী রাজনৈতিক শক্তি ছিল। এই প্রবণতা ১৯৬৭ সালের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধনের সূচনাা করে। সেই সময় থেকেই কংগ্রেসের অবনতি শুরু হয়। এর প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বছরগুলিতে দেশ নিদারুণ অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত ছিল।অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি, খাদ্যাভাব, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব প্রভৃতির ফলে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়।

(খ) অ-কংগ্রেসী দলগুলি এই সুযোগে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। কংগ্রেস-বিরোধী জোট গড়ে তোলে ও নির্বাচনী আসন ভাগাভাগির সমঝোতায় অংশ নেয়।

(গ) ইন্দিরা গান্ধী ও সিন্ডিকেটের মধ্যে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব ১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রকাশ্যে আসে, যা দলকে দুর্বল করে।

(ঘ) ১৯৭৫ সালের দীর্ঘকালীন জরুরি অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার বিরোধী দলসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা হ্রাস করে। ফলে ১৯৭৭ সালে কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতা হারায়। এই সকল নানা কারণে কংগ্রেসের অবনতি ঘটতে থাকে।

২৫। সামাজিক আন্দোলনের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ গণআন্দোলন বলতে সেই সকল আন্দোলন বোঝায় যা বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠী, যথা—কৃষক, মহিলা, ছাত্র ও দলিত সম্প্রদায় কর্তৃক শুরু হয় যারা উপলব্ধি করতে পারে যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা পরিপূরণ করতে পারে না। কতিপয় গণআন্দোলন হল–চিপকো আন্দোলন, নারী আন্দোলন এবং কৃষক আন্দোলন।

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘটিত গণআন্দোলনসমূহ ভারতীয় গণতন্ত্রে এক নূতন মাত্রা প্রদান করেছে। ভারতের প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ রজনী কোঠারী এই গণআন্দোলনসমূহকে ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল আধার তথা ভবিষ্যৎ বলে উল্লেখ করেছেন। এই আন্দোলনসমূহ সাধারণত কোন রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করাও এই আন্দোলনসমূহের লক্ষ নয়। কিন্তু জনসাধারণের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ রাজনৈতিক দল তথা সরকার সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব না করবার জন্য এই আন্দোলনসমূহ গজিয়ে উঠেছে। এইজন্য এই আন্দোলনসমূহ জনসাধারণের মধ্যে সক্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে। সরকার গৃহীত বিভিন্ন নীতি বা কাৰ্যসূচী জনসাধারণের উপর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়েও এই গণআন্দোলনসমূহ ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করেছে। তথ্য জানার অধিকার আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন প্রভৃতি ভারতের গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী করেছে।

২৬। ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংযুক্ত বা জোটের রাজনীতি উদ্ভবের যে-কোনো দুটি কারণ ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংযুক্ত বা জোট রাজনীতি উদ্ভবের প্রধান দুটি কারণ নিম্নরূপঃ

(ক) একদলীয় ব্যবস্থার অবসান ও বহুদলীয় ব্যবস্থার উদ্ভবঃ কংগ্রেসের একাধিপত্যের আবহমান কালে বহুদলীয় ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। কোনো দলের পক্ষে সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সম্ভব না হওয়ার ফলে কেন্দ্রে বহুবার সংযুক্ত সরকার গঠিত হয়।

(খ) আঞ্চলিক দলের উদ্ভবঃ রাজ্যস্তরে বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ঘটে। ফলে অনেক রাজ্যে কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনা। এর ফলস্বরূপ একাধিক দলের সম্মিলিত সরকার গঠিত হয়। যেমন ১৯৬৭ সালে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ সহ আটটি রাজ্যে সম্মিলিত সরকার গঠিত হয়েছিল। এর পরেও বহু রাজ্যেই একাধিকবার সংযুক্ত সরকার গঠিত হয়েছে।

২৭। ভারতের স্বাধীনতার গোড়ার দিকে পরিকল্পিত উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত মূল বিতর্কগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর?

উত্তরঃ স্বাধীন ভারতের নেতৃবর্গের কাছ কেবলমাত্র জাতি গঠন ও গণতন্ত্ৰ প্ৰতিষ্ঠা করাই একমাত্ৰ উদ্দেশ্য ছিল না, দেশের পরিকল্পিত বিকাশ কিভাবে সাধিত হবে তাও প্ৰধান বিচাৰ্য ছিল। দেশের অৰ্থনৈতিক উন্নয়নের প্রভাব যাতে সমাজের সকল স্তরেই জনসাধারণের কাছে পৌঁছায় এমন একটি পরিকল্পনা গ্ৰহণ করা সেই সময় জরুরি ছিল। কোন্ প্রথ অবলম্বন করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়ের মাধ্যমে দ্ৰুত এবং সার্বিক অৰ্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভবপর হবে সেটাই ছিল মূল বিতর্ক। উন্নয়নের পরিভাষা বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন ছিল। অনেকে মনে করতেন পুঁজিবাদী উন্নয়নই প্ৰকৃত উন্নয়ন; আবার অনেকে মনে করতেন সমাজতান্ত্রিক উন্নয়নই কেবল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে পারে।

স্বাধীনতার সময়ে ভারতের সামনে উন্নয়নের দুইটি মডেল ছিল। একটি হল উদারনৈতিক পুঁজিবাদী মডেল এবং অন্যটি ছিল সমাজতান্ত্রিক মডেল। প্রথম মডেলটি ইউরোপ ও আমেরিক অনুসৃত এবং দ্বিতীয় মডেলটি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র অনুসৃত। ভারতের নেতৃবৃন্দ ও জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ উন্নয়নের সোভিয়েত মডেল দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টি, সমাজবাদী পার্টি এমনকি পণ্ডিত নেহেরুর মতো কংগ্রেসের মধ্যে গণতান্ত্রিক সমাজবাদীগণও সোভিয়েত উন্নয়ন মডেলের সমর্থক ছিলেন। অতি অল্পসংখ্যক পুঁজিবাদী উন্নয়ন মডেলের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু এই নেতৃবৃন্দ ও চিন্তাবিদদের মধ্যে অনেকে শিল্পায়নের পক্ষপাতী, আবার অনেকে কৃষি উন্নয়নের পক্ষপাতী ছিলেন।

অবশ্য এই পার্থক্য কালক্রমে দূরীভূত হয়ে যায়। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কৃষির উপর এবং দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিল্পের উপর অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। 

অথবা

পরিকল্পিত উন্নয়ন বলতে তুমি কি বোঝ? ভারতের উন্নয়নে পরিকল্পনা আয়োগের ভূমিকা আলোচনা কর।

উত্তরঃ দেশের সহায়-সম্পদ পরিকল্পিতভাবে সদ্ব্যবহার করে সমাজের সর্বশ্রেণীর জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়নকেই পরিকল্পিত বিকাশ বলে।

পরিকল্পনা আয়োগের প্রধান কার্যাবলিঃ

(ক) দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যকে একটি সুসংহত রূপ প্রদান করা।

(খ) দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, মূলধন এবং মানব-সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার।

(গ) দেশের সম্পদের সদ্ব্যবহারের ব্যবস্থা করে অপচয় বন্ধ করা।

(ঘ) উৎপাদিত দ্রব্যসমূহের যথাযথ বণ্টন।

(ঙ) দেশের পরিকল্পনা খসড়া প্রস্তুত করা।

উল্লেখ্য, পরিকল্পনা আয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোন দায়িত্ব বহন করে না। পরিকল্পনা আয়োগ হল একটি পরামর্শদাতা সংস্থা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রস্তুত এবং পরামর্শ প্রদানই হল এর প্রধান কার্য।

২৮। ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন ঘোষিত জাতীয় জরুরী অবস্থার পরিণতিসমূহ আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন ঘোষিত জরুরি অবস্থার ফলাফলের মধ্যে ছয়টি নিম্নরূপঃ

(ক) নাগরিকদের পৌর অধিকারের উপর প্রভাবঃ জরুরিকালীন অবস্থার সমযয় নিবারক আটক আইন-এর অধীন সরকার বহু লোককে গ্রেপ্তার করে। কিছু লোককে বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়। সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়। সংবিধানে প্রদত্ত মানুষের কতিপয় মৌলিক অধিকারও ক্ষুণ্ণ হয়।

(খ) কার্যপালিকা ও ন্যায়পালিকার উপর প্রভাবঃ জরুরিকালীন অবস্থার সময় নাগরিকের অধিকার বিশেষত পৌর অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। বহু লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে নিরপরাধ সাধারণ লোকও যেমন ছিল, তেমনি ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীগণ, সংবাদপত্রের মালিক ও সাংবাদিক। কয়েকটি উচ্চ ন্যায়ালয় রায় দিয়েছিল যে জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হওয়া লোক ন্যায়ালয়ের দ্বারস্থ হলে ন্যায়ালয় তাকে বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ-এর অধীন ন্যায় প্রদান করতে পারে। কিন্তু সরকার যুক্তি দেখিয়েছিল যে জরুরি অবস্থার সময় এইপ্রকার অভিযোগ মূল্যহীন হয়ে পড়ে এবং এইক্ষেত্রে ন্যায়ালয় সম্পূর্ণ কর্তৃত্বহীন। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে উচ্চতম ন্যায়ালয়ের সাংবিধানিক পীঠ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে ঘোষণা করে যে জরুরিকালীন অবস্থায় সরকার নাগরিক জীবন ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে।

(গ) গণমাধ্যমের কার্যাবলির উপর প্রভাবঃ জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর গণমাধ্যমসমূহের স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে লোপ পায়। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদপত্রসমূহকে সরকারের পূর্ব অনুমোদন নিতে হত। এইভাবে সরকার সংবাদপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা (Press Censorship) জারি করে। বহু সংবাদপত্রের মালিক ও সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে জেলবন্দি করা হয়।

(ঘ) পুলিশ ও আমলাদের কার্যাবলির উপর প্রভাবঃ পুলিশ ও আমলাগণ স্বাধীনভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারে নি। তারা শাসক দলের রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল। শাসক দল ও তার নেতাদের অঙ্গুলি নির্দেশেই তাদের কাজ করতে হত। ফলে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হত এবং তারা সুবিচার পেত না।

(ঙ) মৌলবাদী সংগঠনের উপর নিষেধাজ্ঞঃ সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক বিভেদের আশঙ্কায় সরকার রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ, জামাত-ই-ইসলামী প্রভৃতি মৌলবাদী সংগঠনের ক্রিয়াকলাপের উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করে।

(চ) সরকারবিরোধী আন্দোলনের উপর প্রভাবঃ জরুরি অবস্থার ফলে সরকার-বিরোধী।আন্দোলন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। কোন ন্যায্য কারণেও কোন প্রকার আন্দোলন, ধর্মঘট ইত্যাদি নিষিদ্ধ হয়। বহু নেতা ও কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারারুদ্ধ করা হয়। এর ফলস্বরূপ শ্রমিক শ্রেণী এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।

অথবা

উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনগুলি সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে স্বায়ত্বশাসনের দাবি পূরণের ব্যবস্থা, যেমন— স্বায়ত্বশাসিত পরিষদ গঠন, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন ও পৃথক রাজ্য গঠন প্রভৃতির উল্লেখ থাকলেও ইহা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে নি। ফলে এই অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগ্রামের ক্ষেত্রে নাগা বিদ্রোহীরা অন্যতম। নাগা বিদ্রোহী নেতা ফিজোর নেতৃত্বে নাগাদের একাংশ ১৯৫১ সালে ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তোলে। ন্যাশনাল সোসালিস্ট কাউন্সিল ও ভারত সরকারের মাধ্যমে ১৯৯০ সালে চুক্তির মাধ্যমে এই সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়।

১৯৬০ সালে লালডেঙ্গার নেতৃত্বে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ১৯৬৭ সালের পর এই সংগঠন স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করলে ভারত সরকার সামরিক শক্তি প্রদানের মাধ্যমে এই বিদ্রোহ দমন করে। ১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধীর প্রচেষ্টায় মিজো চুক্তির মাধ্যমে মিজোরামে শান্তি স্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৮৭ সালে মিজোরাম পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে।

আসামে অবৈধভাবে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে ১৯৭৯ সালে আন্দোলন আরম্ভ হয়। ১৯৮৫ সালে ‘আসাম চুক্তি’-র মাধ্যমে এই গণআন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top