AHSEC 2022 History Question Paper Solved | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান

AHSEC 2022 History Question Paper Solved Bengali Medium | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান, AHSEC Class 12 History Question Paper Solved PDF Download, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস 2022 প্রশ্নপত্র সমাধান করা হয়েছে to each Paper is Assam Board Exam in the list of AHSEC so that you can easily browse through different subjects and select needs one. AHSEC 2022 History Previous Years Question Paper Solved in Bengali can be of great value to excel in the examination.

AHSEC 2022 History Question Paper Solved

AHSEC 2022 History Question Paper Solved in Bengali | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান

Join Telegram channel

AHSEC Old Question Paper provided is as per the 2022 AHSEC Board Exam and covers all the questions from the AHSEC Class 12 History Solved Question Paper 2022 Bengali Medium. Access the detailed Class 12 History 2022 Previous Years Question Paper Solved provided here and get a good grip on the subject. AHSEC 2022 History Question Paper Solved Bengali Medium Access the AHSEC 2022 History Old Question Paper Solved, AHSEC Class 12 History Solved Question Paper 2022 of Bengali in Page Format. Make use of them during your practice and score well in the exams.

HISTORY

2022

HISTORY OLD QUESTION PAPER SOLVED

১। নীচে উক্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনো বারোটি):

(a) সিন্ধু সভ্যতা প্রথমে কোথায় আবিষ্কার হয়েছিল?

উত্তরঃ হরপ্পায়।

(b) প্রথম মহাজনপদটির নাম লেখো।

উত্তরঃ অঙ্গ।

(c) হরপ্পা সভ্যতার স্থানসমূহে প্রাপ্ত এক প্রকার শস্যের নাম লেখো।

উত্তরঃ গম।

(d) ‘চক্রী ফেঁটী বুরঞ্জী’ কে প্রণয়ন করেছিলেন?

উত্তরঃ নুমালী বরগোঁহাই।

(e) কোন্ আহোম রাজার রাজত্বকালে গুয়াহাটিতে উমানন্দ মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ গদাধর সিংহ।

(f) প্রথম মহিলা ভিক্ষুণী কে ছিলেন?

উত্তরঃ প্রজাপতি গৌতমী।

(g) আহোম রাজসিংহাসনে আরোহণ করা প্রথম মহিলা কে ছিলেন?

উত্তরঃ সুকাফা।

(h) ‘রিহ্লা’র লেখক কে ছিলেন?

উত্তরঃ ইবন বতুতা।

(i) মুঘল রাজকুমার দারাসিকোর ব্যক্তিগত চিকিৎসক কে ছিলেন?

উত্তরঃ বার্নিয়ে।

(j) আকবরের প্রিয় পাণ্ডুলিপি শৈলীর নাম লেখো।

উত্তরঃ নাস্তালিক।

(k) ভারতবর্ষে প্রথম ইংরাজ উপনিবেশের নাম লেখো।

উত্তরঃ সুরাট।

(l) কোন সালে ইংরাজেরা ভারতবর্ষে সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করেছিল?

উত্তরঃ ১৮২৯ সালে।

(m) কে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম আখ্যা দিয়েছিলেন?

উত্তরঃ বিনায়ক দামোদর সাভারকর।

(n) কোন্ সালে ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯১১ সালে।

(o) ‘জোনাকী’র প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তরঃ চন্দ্র কুমার আগারওয়াল।

(p) ভারতবর্ষে প্রথম রেলপথ নির্মাণ করে আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮৫৩ সালে।

২। নীচে উক্ত প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (যে কোনো বারোটি):

(a) হরপ্পা সভ্যতার যে কোনো দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার দুটি মূল বৈশিষ্ট্য হল—

(ক) হরপ্পা সভ্যতা মূলত নগরকেন্দ্রিক ছিল। ও 

(খ) সুপরিকল্পিত নিকাশী ব্যবস্থা ছিল।

(b) হরপ্পা সভ্যতার যে কোনো দুটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রের নাম লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার দুটি স্থান হল—

(ক) হরপ্পা। ও

(খ) মহেঞ্জোদারো। 

(c) রাজস্থানের ক্ষেত্রী অঞ্চল এবং কর্ণাটকের কোলার থেকে হরপ্পাবাসী কি কি ধাতু সংগ্রহ করেছিল?

উত্তরঃ যথাক্রমে তাম্র (তামা) এবং স্বর্ণ (সোনা)।

(d) অসমের কোথায় এবং কবে প্রথম কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল?

উত্তরঃ অসমের পাথারিঘাটে ১৮৯৪ সালে প্রথম কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল।

(e) মহাযান কী?

উত্তরঃ বৌদ্ধধৰ্মর একটি নতুন ধারা বা ভাবনাকে ‘মহাযান’ বলা হয়। এই ধারায় বিশ্বাসীরা বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বের মূর্তিপূজাকে বিশ্বাস করত। 

(f) মীরজুমলা কৰে অসম আক্রমণ করেছিল? তাঁর সঙ্গে আসা লেখকের নাম কী?

উত্তরঃ মীরজুমলা ১৬৬৩ সালে অসম আক্রমণ করেন। তাঁর সঙ্গে আসা লেখকের নাম ফ্রানজ হেডেন

(g) ক্ষত্রিয়দের আদর্শ জীবিকা কি?

উত্তরঃ যুদ্ধ করা ও শাসন পরিচালনা করা।

(h) লিপিসমূহ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের যে কোনো দুটি সীমাবদ্ধতার বিষয়ে লেখো।

উত্তরঃ কিছু লিপি পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, কিছু লিপি ভগ্ন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে।

(i) আবুল ফজল চিত্রকে কেন ‘ভেলকিবাজি কলা’ বলেছিলেন?

উত্তরঃ আবুল ফজলের মতে চিত্রকলার এমন ক্ষমতা আছে যে তা একটি মৃত বা জড় বস্তুকে জীবন্ত বস্তুর মতো করে তোলে। সুতরাং তিনি চিত্রকলাকে ‘ভেলকিবাজি’ কলা বলেছিলেন।

(j) ‘কিতাবখানা’ বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ কিতাবখানা হল হস্তলিখিত মোগল সম্রাটদের পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ কেন্দ্র। মোগল সম্রাটগণ এই সকল কেন্দ্রে পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতেন।

(k) মধ্যযুগের ভারতবর্ষের যে কোনো দু’জন সফী সন্তের নাম লেখো।

উত্তরঃ (ক) সেলিম চিস্তি। এবং

(খ) নিজামউদ্দিন আউলিয়া।

(l) ‘জিম্মা’ এবং ‘জিজিয়া’ কী?

উত্তরঃ জিম্মা অর্থ দায়িত্ব নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা।

ইসলামিক রাষ্ট্রগুলিতে অমুসলিমরা তাদের নিরাপত্তার জন্য যে কর প্ৰদান করত তাকেই জিজিয়া বলে। 

(m) বিজয় নগর সাম্রাজ্য কে এবং কবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উত্তরঃ হরিহর এবং বুক্কা ১৩৩৬ সালে বিজয় নগর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

(n) শ্বেত নগর এবং কৃষ্ণ নগর কী?

উত্তরঃ ব্রিটিশগণের চামড়ার রঙ সাদা। তারা যে সংরক্ষিত অঞ্চলে থাকতেন তাকে সাদা নগর বলা হত।

অপরদিকে, দেশীয়রা যাদের চামড়ার রঙ খয়েরি বা কালো, তারা যে অঞ্চলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতেন তাকে কালো নগর বলা হত।

(o) মহাত্মা গান্ধী হিন্দুস্তানী ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় ভাষা হতে পারে বলে কেন বিবেচনা করেছিলেন?

উত্তরঃ হিন্দি ও উর্দুর সংমিশ্রণে গঠিত হিন্দুস্থানী ভাষা ভারতের অতি জনপ্রিয় ভাষা ছিল বিশাল সংখ্যক মানুষ এই ভাষা বুঝতে ও বলতে পারত। বিভিন্ন সংস্কৃতির সমন্বয়ে এটি একটি সমৃদ্ধশালী ভাষা হয়ে উঠেছিল। তাই মহাত্মা গান্ধী হিন্দুস্থানী ভাষাকে ভারতবর্ষের জাতীয় ভাষা বলে বিবেচনা করেছিলেন।

(p) ১৮৫৭ খ্রীস্টাব্দের বিদ্রোহের দুইজন মহিলা নেত্রীর নাম লেখো।

উত্তরঃ লক্ষ্মীবাই এবং হজরত মহল।

(q) ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম’-এর আহ্বান কে জানিয়েছিলেন? এর জন্য কোন্ দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছিল?

উত্তরঃ মুসলিম লিগের পক্ষে মহম্মদ আলি জিন্নাহ। ১৬ অগাস্ট, ১৯৪৬।

৩। নীচে উক্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনো দশটি):

(a) হরপ্পায় সভ্যতার নগরকেন্দ্রসমূহের পরিকল্পনার একটি বিবরণ দাও।

উত্তরঃ প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের দ্বারা মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পায় প্রাপ্ত নিদর্শন উন্নতমানের নাগরিক জীবনের সাক্ষ্য বহন করে। মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পায় উভয় নগরের পরিকল্পনা প্রায় একই ধরনের ছিল। দুটি নগরই ছিল জনবহুল এবং সমৃদ্ধশালী। নগরগুলি চতুর্দিক থেকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকায় যথেষ্ট সুরক্ষিত ছিল। উভয় নগরের পশ্চিমদিকে অবস্থিত ৩৪–৫০ ফুট উচ্চতা, ৪০০ গজ লম্বা এবং ২০০ গজ চওড়া আকৃতির দুটি দুর্গ আবিষ্কৃত হয়েছে। সম্ভবত ওই দুর্গের মাধ্যমেই নগরের প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখাশোনা করা হত। এই দুর্গগুলির নীচে গড়ে উঠেছিল প্রকৃত শহর, যেখানে সাধারণ মানুষ বসবাস করত।

নগরের প্রধান রাস্তাগুলি ৯ ফুট থেকে ৩৪ ফুট অবধি চওড়া ছিল। প্রতিটি রাস্তা কোনাকুনি অথবা সোজাসুজি একে অন্যটির সঙ্গে যুক্ত ছিল। আবার বড়ো রাস্তাগুলির থেকে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট রাস্তা বা গলি বেরিয়ে এসেছে। রাস্তার দুই পাশে দূরত্ব বজায় রেখে সাধারণ মানুষের উপযোগী বাড়িঘর নির্মিত ছিল। বাড়িগুলির আয়তনগত পার্থক্য ছিল। কোন কোন বাড়ি ছিল প্রাসাদের মতো, আবার কোনটা বা ছোট ছোট এক-দুই ঘরবিশিষ্ট। এর থেকে বোঝা যায় যে সমাজে ধনী-দরিদ্র উভয় শ্রেণী বসবাস করত। বাড়িগুলি আগুনে পোড়া ইটের দ্বারা নির্মিত হত। ঘরের দেওয়ালে মসৃণতার ছাপ রয়েছে। বায়ু চলাচলের জন্য ঘরগুলিতে জানালা থাকত। প্রতিটি বাড়িতেই কূপ ও স্নানাগার ছিল। নিরাপত্তার কারণে বাড়িগুলি প্রাচীর দ্বারা ঘেরা থাকত।

হরপ্পা সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল এর জলনিকাশি ব্যবস্থা (drainage system)। প্রতিটি বাড়ির নর্দমা রাস্তার নর্দমার সঙ্গে যুক্ত ছিল। রাস্তার নর্দমাগুলি ঢাকনার দ্বারা আবৃত থাকত। রাস্তার নর্দমার সাহায্যে নগরের ময়লা জলসহ আবর্জনা শহরের বাইরে চলে আসার বন্দোবস্ত ছিল। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক এ. এল. ব্যাসাম মন্তব্য করেছেন—“No other ancient civilization until that of the Romans had so efficient system of drains.” হরপ্পা সংস্কৃতির উন্নত জলনিকাশি ব্যবস্থা প্রমাণ করে যে সে যুগের মানুষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ছিল।

মহেঞ্জোদারোয় একটি বিশাল স্নানাগার আবিষ্কৃত হয়েছে। এটির আয়তন ছিল ১৮০ ফুট × ১০৮ ফুট। এর ঠিক মাঝখানে ছিল এক বিশাল জলাশয়, যার পরিধি ৩৯ ফুট লম্বা ও ২৩ ফুট চওড়া। জলাশয়ের গভীরতা ছিল ৮ ফুট। আধুনিক স্নানাগারের মতো জলাশয় থেকে ময়লা জল নির্গত হওয়ার ব্যবস্থা ছিল। আবার ওই পথেই নতুন টাটকা জল জলাশয়ে প্রবেশ করত। জলাশয়টির চতুর্দিকে গ্যালারির অস্তিত্ব থাকায় মনে করা হয় এগুলিতে বসে মানুষ সাঁতার প্রতিযোগিতা দেখত। এছাড়া জলাশয়ের চারিদিক ঘিরে কতকগুলি ছোট ছোট ঘরের অস্তিত্ব আধুনিক যুগের ড্রেসিং রুমের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অনেকে মনে করেন যে ওই স্নানাগারটি ধর্মীয় কাজে মূলত ব্যবহার করা হত।

মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পায় আবিষ্কৃত হয়েছে দুটি শস্যভাণ্ডার। এগুলির আয়তন ছিল যথাক্রমে ২৩০ ফুট × ৭৮ ফুট এবং ১৬৯ ফুট × ১৩৫ ফুট। উঁচু ভিতের উপর ওই দুই শস্যভাণ্ডারের অবস্থান থেকে মনে করা হয় যে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই উঁচু জায়গায় শস্যভাণ্ডার দুটি নির্মিত করা হয়। শস্যভাণ্ডারগুলি অনেকটা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মতো ছিল বলে ঐতিহাসিক এ. এল. ব্যাসাম মন্তব্য করেছেন। মর্টিমার হুইলার ওই শস্যভাণ্ডারকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শস্যভাণ্ডার বলে চিহ্নিত করেছেন।

(b) আহোমদের শাসন ব্যবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ প্রাচীন আসামে প্রাগজ্যোতিষপুর বা কামরূপ সবচেয়ে বৃহৎ রাজ্য ছিল। ডবকা, কাদলী, হিড়িম্বা, ত্রিপুরা, মণিপুর প্রভৃতি ছোট ছোট রাজ্যও ছিল। যোগিনীতন্ত্র মতে কামরূপের অন্তর্ভুক্ত স্থানসমূহ হল সমগ্র ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা, ভূটান, রংপুর (অধুনা বাংলাদেশ) এবং সম্ভবত গারো পাহাড়। যোগিনীতন্ত্রে কামরূপ রাজ্যের চারটি মূল ভাগ থাকার কথা উল্লেখ আছে। সেইগুলি হল রত্নপীঠ, কামপীঠ, সুবর্ণপীঠ এবং সৌমার পীঠ।

পৌরাণিক দুইজন রাজা—ভীষ্মক ও বাণরাজা—যথাক্রমে বিদর্ভ ও শোণিতপুরের রাজা ছিলেন। কোন কোন গবেষকের মতে বিদর্ভ রাজ্য বর্তমান শাদিয়ার চৌদিশ নামক স্থানে ছিল এবং এর রাজধানী ছিল কুণ্ডিলনগর। বাণরাজার শোণিতপুর রাজ্য ছিল সম্ভবত বর্তমান তেজপুর এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহ। বর্মনদের রাজত্ব বঙ্গদেশের একাংশ ও কামরূপের অন্তর্গত ছিল।

রাজ্যটি কয়েকটি ভুক্তি বা ভাগে বিভক্ত ছিল এবং ভাগগুলি শাসনের দায়িত্ব কয়েকজন রাজকোঁয়রের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ বা ভুক্তিসমূহ আবার কয়েকটি ছোট ছোট ভাগ, যেমন—মণ্ডল, পুর এবং আগ্রহ হিসাবে ভাগ করা হয়েছিল। স্থানীয় শাসনের জন্য এইগুলিতে ‘পঞ্চায়েত ব্যবস্থা’ প্রচলিত ছিল। প্রতিটি গ্রামে গাঁওবুড়াও ছিল।

(c) ‘মনুস্মৃতি’র মতে, পুরুষ ও নারী কীভাবে সম্পত্তি আহরণ করতে পারে?

উত্তরঃ পুরুষদের সম্পত্তি আহরণের পথঃ মনুস্মৃতি অনুসারে পুরুষদের সম্পত্তি আহরণের সাতটি পথ নিম্নরূপঃ

(ক) উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত।

(খ) পুরস্কার হিসাবে প্রাপ্ত।

(গ) ক্রয়ের মাধ্যমে।

(ঘ) বিজয়ের মাধ্যমে।

(ঙ) বিনিয়োগের মাধ্যমে।

(চ) কাজের মাধ্যমে।

(ছ) সৎ লোকের থেকে প্রাপ্ত উপহার সামগ্রী।

মহিলাদের সম্পত্তি আহরণের পথঃ মনুস্মৃতি অনুসারে মহিলাদের সম্পত্তি আহরণের সাতটি পথ নিম্নরূপঃ

(ক) বিবাহযজ্ঞকালে প্রাপ্ত উপহার।

(খ) বধূর দখলে থাকা সম্পত্তি।

(গ) ভালোবাসার প্রতীক হিসাবে প্রাপ্ত উপহার। 

(ঘ) পিতা-মাতা-ভ্রাতার নিকট হতে প্রাপ্ত উপহার। 

(ঙ) পরবর্তীকালে প্রাপ্ত উপহারসামগ্রী।

(চ) স্বামীর নিকট হতে প্রাপ্ত সামগ্রী।

এই প্রথা তাদের পরস্পর থেকে পৃথক করেছিল।

(d) মহাভারতে দেখা সমাজব্যবস্থার বিষয়ে লেখো।

উত্তরঃ মহাভারত নিঃসন্দেহে ভারতীয় সমাজ জীবন ও জীবন ঐশ্বর্য প্রতিফলিত করে। তা সমসাময়িক ভারতীয় সমাজের জীবনযাত্রার সার্বিক চিত্র প্রদান করে এবং ভারতীয় জনগণের চিন্তাধারা এবং মনের গভীরতার বর্ণনা দেয়। মহাকাব্যটি ভারতীয় জীবনের নিম্নোক্ত বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করেঃ

(ক) সমাজ জীবনঃ মহাভারত ভারতীয় সমাজ জীবনের নানাদিক তুলে ধরেছে। মহাভারতের সময় ভারতীয় সমাজে বর্ণভেদ প্রথা ছিল। সমাজের লোক ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। সমাজের নারীর মর্যাদা উন্নত ছিল। মহিলাগণ অধিকতর সম্মানিত ছিল। তাদের স্বয়ম্বরা হবার অধিকার ছিল। মহাভারতীয় যুগ ছিল বীরত্ব ও সাহসের যুগ। যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বলে গণ্য করা হত। তখনকার সমাজে অবশ্য নানাপ্রকার সামাজিক কুসংস্কার ছিল। সমাজে বহুবিবাহ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।

(খ) রাজনৈতিক জীবনঃ মহাভারতে ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থারও চিত্র পাওয়া যায়। সেই যুগে বহু বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। পাণ্ড্য, কোশল, পাঞ্চাল প্রভৃতি বিশাল সাম্রাজ্য ছিল। রাজা ছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান এবং সকল ক্ষমতা

তাঁর হাতে ন্যস্ত ছিল। রাজার ক্ষমতার কোন সীমা ছিল না। রাজা বিলাস ও আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করতেন। তাঁরা নানা ধরনের উপাধি গ্রহণ করতেন। তাদের ‘চক্রবর্তী রাজা’ হওয়ার বাসনা ছিল। এই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য তাঁরা অশ্বমেধ যজ্ঞ করতেন। রাজার চরিত্রে অনেক দুর্বলতাও ছিল।

(গ) আর্থিক জীবনঃ মহাভারতীয় যুগে ভারতীয় সমাজ মূলত কৃষিভিত্তিক ছিল। কৃষিই ছিল মানুষের প্রধান পেশা। রাজাগণ নিজেরাও জমি চাষ করতেন। জমি ছিল উর্বর। পশুপালনও সেই যুগের মানুষের একটি প্রধান পেশা ছিল। গোরু, ঘোড়া, মোষ, হাতি প্রভৃতি পশু সেই যুগের মানুষ পালন করত। সেই যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যও বিশেষ প্রসার লাভ করেছিল। বণিকগণ কর্তৃক সংঘ তৈরি হয়েছিল। রাষ্ট্র তাদের নানাপ্রকার সুযোগ সুবিধা দিত। তা ছাড়াও জনগণের এক বিশাল অংশ কাঠমিস্ত্রি, জুয়েলারী, মাটির পাত্র, লৌহসামগ্রী প্রভৃতি কাজে রত ছিল।

(ঘ) ধর্মীয় জীবনঃ মহাভারতের যুগের মানুষ বৈদিক দেব-দেবী ছাড়া অন্যান্য নূতন দেব-দেবীর পূজা আরম্ভ করেছিল। দেব-দেবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন—পার্বতী, দুর্গা, বিষ্ণু, ব্রহ্মা ও শ্রীকৃষ্ণ। মানুষ দেবদেবীর পুনর্জন্মে বিশ্বাস করত। ভগবান বিষ্ণু শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণ রূপে পুনরায় পৃথিবীতে আসেন। মহাভারতীয় যুগের মানুষ ‘কর্মতত্ত্বে’ বিশ্বাসী ছিল। সেই যুগের মানুষ যাগযজ্ঞের উপর বিশ্বাস কলত। 

বস্তুত, অন্যান্য মহাকাব্যের মতো মহাভারতও একটি মহাকাব্য, যা সেইযুগের মানুষের জীবনযাত্রা ও জীবন ঐশ্বর্য প্রতিফলিত করে।

(e) মগধের উত্থানের কারণসমূহ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ মগধ রাজ্য টি নদীও পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় এক ধরনের প্রাকৃতিক সুরক্ষিত বলয় তৈরি হয়েছিল এর চারিধারে। মগধের প্রথম রাজধানী রাজগৃহ ছিল পাহাড় বেষ্টিত। পরবর্তী রাজধানী পাটলিপুত্র গঙ্গা, শোন ও গণ্ডকী নদী বেষ্টিত হয়ে যেন একজন জল দুর্গে পরিণত হয়েছিল। ফলে শত্রুর পক্ষে আক্রমণ সহজ সাধ্য ছিল না।

(f) বুদ্ধের শিক্ষার বিষয়ে একটি টীকা লেখো।

উত্তরঃ গৌতম বুদ্ধ ছিলেন একজন ধর্মসংস্কারক। প্রকৃত অর্থে ভগবান বুদ্ধ কোনো নতুন ধর্মমতের প্রবর্তন করেননি। তিনি কেবলমাত্র প্রচলিত ধর্মমতের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকটি তুলে ধরেছিলেন। এইভাবে তিনি প্রচলিত ধর্মমতকে সুষ্ঠুভাবে পুনঃস্থাপন করতে চেয়েছিলেন। তাঁর প্রচারিত ধর্মমত ছিল যুগোপযোগী। গৌতম বুদ্ধ সারনাথে অবস্থানকালে তাঁর ধর্মীয় নীতিগুলি ব্যাখ্যা করেছিলেন। এগুলি আজও মানুষের কাছে যথেষ্ট গ্রহণীয়। গৌতম বুদ্ধের মূল বক্তব্য ছিল মানুষের জীবন জন্মের থেকে শেষ অবধি দুঃখময়। তিনি বলেছেন এই দুঃখের হাত থেকে মানুষের নিষ্কৃতি পেতে হলে চারটি মূল সত্য যা আর্য সত্য নামে পরিচিত এবং আটটি পথ অনুসরণ করতে হবে। ঐতিহাসিক রিস ডেভিস (Rhys Davis) মন্তব্য করেছেন যে, বৌদ্ধধর্মের সারমর্ম বুদ্ধের চারটি আর্য সত্য এবং অষ্টাঙ্গিক মার্গের (আটটি পথ) মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়।

ত্রিপিটক হল বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ। এটি পালি ভাষায় লিখিত। এই গ্রন্থে গৌতম বুদ্ধ যে চারটি আর্য সত্যের কথা বলেছেন তা হল—

(ক) মানুষের জীবনে কষ্ট-দুঃখ আছে।

(খ) মানুষের জীবনে দুঃখের কারণ আছে (এর কারণ কামনা, বাসনা ইত্যাদি)।

(গ) মানুষ ইচ্ছা করলে দুঃখ-কষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারত। এবং

(ঘ) দুঃখ-কষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে সঠিক পথ অনুসরণ করা প্রয়োজন।

দুঃখ-কষ্টের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গৌতম বুদ্ধ মানুষকে কেবল অতিরিক্ত ভোগ অথবা কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলেননি, তিনি মানুষকে একটি মাঝামাঝি পথ অনুসরণ করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। এই পথেই মানুষ মুক্তি বা নির্বাণ লাভ করতে পারবে। এই পথকে তিনি বলেছেন মজঝিম পন্থা। এই পথ সঠিকভাবে অনুসরণ করার জন্য আটটি নীতি বা আদর্শ অনুসরণ করতে হবে—

(ক) সৎ বাক্য।

(খ) সৎ কর্ম।

(গ) সৎ জীবন।

(ঘ) সৎ সংকল্প।

(ঙ) সৎ চেষ্টা।

(চ) সৎ স্মৃতি।

(ছ) সম্যক দৃষ্টি। ও

(জ) সম্যক সমাধি।

(g) বিজয় নগরের দুর্গ নির্মাণ সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ উড়িষ্যার বিরুদ্ধে সাফল্যঃ উড়িষ্যার রাজা গজপতি প্রতাপরুদ্র বিজয়নগরের অন্তর্গত উদয়গিরি ও কোণ্ডাভিডু অঞ্চল দুটি আগেই দখল করেছিলেন। কৃষ্ণদেব রায় হৃতরাজ্য

পুনরুদ্ধারে উড়িষ্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অগ্রসর হন। বিজয়নগর বাহিনী পরপর উদয়গিরি (১৫১৩ খ্রিস্টাব্দ) ও কোণ্ডাভিডু (১৫১৪ খ্রিস্টাব্দ) দখল করে। কৃষ্ণা নদীর তীর পর্যন্ত উপকূল অঞ্চল কৃষ্ণদেব রায়ের হস্তগত হয়। কোণ্ডাভিডুর পতনের সাথে সাথে উড়িষ্যার যুবরাজ ও ভাবী রাজা বীরভদ্র ও গজপতির এক রানি কৃষ্ণদেবের হাতে বন্দী হয়ে বিজয়নগরে।আনীত হন। উড়িষ্যার বিরুদ্ধে অন্য দুটি যুদ্ধ দ্বারা কৃষ্ণদেব বেজওয়াদা এবং কোন্দাপল্লী।দুর্গ দুটিও দখল করে নেন। এই অঞ্চল দখল করার ফলে উড়িষ্যার অধীনস্থ তেলেঙ্গানা।ও ভেঙ্গী দখল করার জন্য কৃষ্ণদেব উৎসাহিত বোধ করেন। চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকে তেলেঙ্গানা ভেলমাদের অধীনে ছিল। জনৈক সিতাব খাঁ (সীতাপতি) গজপতির সাহায্য নিয়ে ঐ অঞ্চল দখল করে শাসন করেছিলেন।

(h) সুফী পরম্পরার ইতিহাস পুনঃনির্মাণের উৎসসমূহের বিষয়ে একটি টীকা লেখো।

উত্তরঃ হিন্দু ধর্মের ন্যায় সুফি ধর্মে গুরু-শিষ্যর সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুকে কেন্দ্র করে সুফি সন্ন্যাস-জীবন আবর্তিত হয়। গুরুকে বলা হয় ‘পীর’ বা ‘খাজা’। পীরদের কর্মকেন্দ্রকে বলা হয় ‘দরগা’ বা ‘খানকা’। সুফি ধর্মের অনুগামীদের বলা হয় ‘ফকির’ বা ‘দরবেশ’। দ্বাদশ শতকের মধ্যে সুফিরা প্রায় বারোটি সম্প্রদায় বা সিলসিলায় বিভক্ত হয়ে পড়েনি। তার মধ্যে ‘চিশতি’ ও ‘সুহরাবাদী’ সম্প্রদায় সুলতানি যুগে বিশেষ প্রাধান্য লাভ করেছিল।

বিস্তারঃ ভারতে ‘চিশতি’ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মঈনুদ্দিন চিশতি। তাঁর প্রধান কর্মকেন্দ্র ছিল আজমির। ১২৩৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বখতিয়ার কাকি। কাকির শিষ্য ফরিদউদ্দিন শকর প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। এই সম্প্রদায়ের নিজামউদ্দিন আউলিয়া (১২৩৮–১৩২৫ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন কিংবদন্তী পুরুষ। তাঁর গভীর পাণ্ডিত্য ও উদার মতামতে আকৃষ্ট হয়ে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বহু মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বিখ্যাত কবি আমির খসরু ও ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বরণী তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এমনকী স্বয়ং সুলতান আলাউদ্দিন খলজি নিজামুদ্দিনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ভারতে ধর্মসমন্বয়ের ইতিহাসে এঁদের অবদান আজও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। সুহরাবাদী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শেখ শিবাহউদ্দিন সুহরাবাদী। চিশতি সম্প্রদায়ের সাথে এঁদের নীতিগত ও কার্যপদ্ধতিগত কিছু প্রভেদ ছিল। যেমন, এঁরা রাজ্য রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বা সরকারি পদ গ্রহণ করতেন। চিশতিদের মতো দরিদ্রের জীবনযাপনের এঁরা পক্ষপাতী ছিলেন না। এই গোষ্ঠীর আর এক জনপ্রিয় সাধক ছিলেন হামিদউদ্দিন নাগরী। ‘আল-কাদেরী’ ও ‘ফিরদৌসী’ নামক আরও দুটি সুফি সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ভারতে ছিল।

(i) ‘মহান’ এবং ‘লঘু’ পরম্পরার নামকরণ কে এবং কেন করেছিলেন? ‘মহান’ এবং ‘লঘু’ পরম্পরা দুটি কী বোঝায়?

উত্তরঃ সমাজতাত্ত্বিক রবার্ট রেডক্লিফ।

সমাজতাত্ত্বিক রবার্ট রেডক্লিফ ১২শ শতাব্দীর একটি কৃষক সমাজের সাংস্কৃতিক আচরণের বর্ণনা দিতে ‘মহান’ ও ‘লঘু’ পরম্পরা এই ধারণা দুইটি সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে কৃষকগণ সমাজে প্রভুত্বশালী শ্রেণি, যেমন—পুরোহিত ও শাসকগণের পালন করা কর্মকাণ্ড ও পদ্ধতিকে অনুসরণ করেছিল। এই কর্মকাণ্ডকে রেডক্লিফ মহান পরম্পরা আখ্যা দিয়েছেন। একই সময়ে কৃষকগণ প্রভুত্বশালী শ্রেণীর পালন না করা আরও কিছু সংখ্যক স্থানীয় আচরণবিধি পালন করে। একে তিনি ‘লঘু’ পরম্পরা বলে অভিহিত করেছেন। রেডক্লিফ এটাও মনে করেছিলেন যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাধিত হওয়া পারস্পরিক আদান-প্রদানের জন্য ‘মহান’ ও ‘লঘু’ দুইটি পরম্পরার পরিবর্তন হয়।

(j) মুঘল যুগে জমিদারদের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ জমিদারগণ হল সেই শ্রেণীর লোক যারা প্রত্যক্ষভাবে কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গ জড়িত নন। তারা সমাজে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন।

(ক) জমিদারগণ তাদের জমির মালিক। তারা তাদের জমিকে নিজেদের সম্পত্তি বলে গণ্য করেন। তারা জমি বিক্রি ও বন্ধক দিতে পারত। তারা সমাজে নানাপ্রকার অধিকার ভোগ করত।

(খ) জমিদারগণ সমাজের উচ্চশ্রেণীভুক্ত ছিল, যা সমাজে তাদের মর্যাদায় নূতন মাত্রা দিয়েছিল।

(গ) জমিদারগণ সমাজে পরিমিত সেবাকার্য (খিদমত) প্রদান করত। সুতরাং তারা সমাজে সম্মান ও মর্যাদা পেত।

(ঘ) জমিদারগণ অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ছিল, কারণ তারা রাষ্ট্রের পক্ষে রাজস্ব সংগ্রহ করত। এই কাজের জন্য অবশ্য তারা আর্থিক সাহায্য পেতেন।

(ঙ) জমিদারদের ক্ষমতার অন্য একটি কারণ হল তারা সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করত। তারা একটি দুর্গ, পদাতিক সৈন্য ও অশ্বারোহী সৈন্য রাখত।

(চ) জমিদারগণ কৃষিজ জমির উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করত। তারা প্রয়োজনে কৃষকদের অর্থঋণ দিয়ে সাহায্য করত।

(ছ) মোগল যুগে সমাজের ধাপ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে জমিদারগণ সমাজের শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত ছিল।

জমিদারগণ সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে তারা সমাজের শোষক ছিল। তারা সাধারণ মানুষকে নানাভাবে শোষণ ও অত্যাচার করত।

(k) পাহাড়ীয়ারা জীবন নির্বাহের জন্য অরণ্যগুলিকে কীভাবে ব্যবহার করেছিল?

উত্তরঃ পাহাড়িয়াগণ রাজমহল পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করত। তারা সরকারি বিষয়াদের প্ৰতি ক্ৰুদ্ধ ও ভীত ছিল। তারা বহিরাগত ভ্রমণকারীদের সঙ্গে কথা বলতে অনিচ্ছুক ছিল। 

পাহাড়বাসীদের জীবিকাঃ পাহাড়িয়াগণ নিম্নোক্ত পেশা অবলম্বনের মাধ্যমে জীবিকা সংগ্রহ করতঃ

(ক) তারা পাহাড়ি এলাকায় স্থানান্তর চাষ বা জুমচাষ করে ফসল উৎপাদন করত।

(খ) তারা নানা প্রকার খাদ্যশস্য ও তৈলবীজ উৎপাদন করত।

(গ) তারা খাওয়ার জন্য ‘মাওলা’ নামক একপ্রকার ফুল সংগ্রহ করত।

(ঘ) তারা রেশম পোকা প্রতিপালন করে রেশম সুতা রপ্তানি করত।

(ঙ) তারা রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করত।

(চ) তারা গবাদি পশু খাবারের জন্য তৃণজাতীয় উদ্ভিদের চাষ করত।

(ছ) তারা বন্যপ্রাণী শিকার করত।

(জ) তারা সমতলের স্থায়ী কৃষকদের আস্তানায় হানা দিত।

(ঝ) তারা বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ রোধ করত।

(ঞ) তারা ব্যবসায়ীদের নিকট হতে কর সংগ্রহ করত।

(l) ঊনবিংশ শতকে বৃটিশদের কি কি বিবেচনা ভারতে নগর পরিকল্পনাতে প্রভাবিত করেছিল?

উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পর ব্রিটিশগণ নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে নানা প্রকার বিষয় মনে পোষণ করত। প্রধান বিষয়সমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) বিদ্রোহের অবিরত ভয়ঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পরই রাজগণের মনে বিদ্রোহের সদা ভয় থাকত। সুতরাং তারা সুরক্ষিত ও সুবেষ্টিতভাবে থাকার পরিকল্পনা করেছিল। নিজেদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে তারা দেশীয় জনগণ হতে দূরে থাকতে চেয়েছিল যাতে তারা বিদ্রোহের সম্মুখীন হতে না পারে।

(খ) নিরাপদ আস্তানাঃ মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা তাদের আবাসস্থল অধিক সুরক্ষিত করেছিল। নগরের নিকট পশুপালনভূমি ও কৃষিভূমিতে ‘সিভিল লাইন’ নামে শ্বেতকায় বসবাস করা স্থান সম্প্রসারণ করেছিল।ইউরোপীয় সেনাপতির নেতৃত্বে সেনাশিবিরসমূহ অধিক নিরাপদ করা হয়।

(গ) শ্বেতশহরঃ ব্রিটিশ জাতি শ্বেতকায় অর্থাৎ শ্বেত গাত্রবর্ণের অধিকারী এবং তাদের সংক্ষেপে ‘শ্বেত’ বা ‘সাদা’ বলা হয়। ভারতীয়গণ কৃষ্ণবর্ণ। আর্য ভারতীয়দের গাত্রবর্ণ কৃষ্ণ বা কালো। ইংরেজগণ সর্বদাই কৃষ্ণবর্ণ ভারতীয় অপেক্ষা নিজেদের উন্নত মনে করত এবং কৃষ্ণকায় ভারতীয়দের প্রতি ঘৃণা পোষণ করত। এইরূপ অহংবোধ হতে প্রতিটি প্রধান প্রধান শহরে ‘শ্বেত’ ও ‘কৃষ্ণ’ এই দুইটি ভাগে ভাগ থাকত। ব্রিটিশ জাতিসত্ত্বত লোকেরা শহরের শ্বেত অঞ্চলে বাস করত এবং শ্বেত অঞ্চল ছিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, মসৃণ রাস্তাঘাট, উন্নত জল সরবরাহ ও জল নিষ্কাষণ ব্যবস্থা সম্বলিত। আর শহরে যে কৃষ্ণকায় লোক বাস করত তাদের অঞ্চল ছিল নোংরা, মশামাছির আতুর ঘর এবং সংক্রামক ব্যাধির অবাধ শিকারস্থল।

(m) ভারতীয়রা ভারত ত্যাগ আন্দোলনের কার্যসূচী কীভাবে রূপায়িত করেছিল?

উত্তরঃ ভারত ত্যাগ আন্দোলন বা আগস্ট বিপ্লব ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর শেষ তথা চূড়ান্ত প্রত্যক্ষ বিপ্লব। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির মিত্রশক্তি জাপানের ভারত আক্রমণ করার সম্ভাবনা দেখা দেয়। জাপানের সাফল্যে ভীত হয়ে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভা ভারতের জনগণের সহযোগিতা লাভের জন্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস্‌কে ভারতে পাঠায়। কিন্তু ক্রিপসের প্রস্তাবে ভারতকে স্বাধীনতাদানের কোন উল্লেখ না থাকায় কংগ্রেস তা গ্রহণ করেনি।

ভারত ত্যাগ আন্দোলন প্রস্তাবঃ জাপানি সৈন্য যখন ভারত সীমান্তে উপস্থিত, সেই সময়ে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস্ তাঁর মিশন অকৃতকার্য হয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে গেলেন। ভারতে সর্বত্র এক তীব্র হতাশা দেখা দেয়। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতায় কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ বিস্মিত হলেন। মহাত্মা গান্ধী তাঁর ‘হরিজন’ পত্রিকায় ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগ করে যেতে বললেন। সমগ্র ভারতে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ‘ভারত ছাড়ো’ ধ্বনি উত্থিত হয়। মহাত্মা গান্ধী স্পষ্টভাবে বললেন যে ভারতে ব্রিটিশ শাসন বজায় থাকলেই জাপান থাকবে না। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই জুলাই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ব্রিটিশকে ভারত ত্যাগের জন্য অনুরোধ জানিয়ে এক প্রস্তাব পাস করলেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ই আগস্ট বোম্বাইতে (মুম্বাইতে) কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। পৃথিবীতে শান্তি ও স্বাধীনতা স্থাপন এবং ভারতবাসীদের জাতীয় জীবনের উন্নতি বিধানের জন্য ভারতের স্বাধীনতা স্বীকার করে নেওয়া অপরিহার্য এই কথাও প্রস্তাবে গৃহীত হল। পরদিন অর্থাৎ ৯ই আগস্ট প্রাতঃকালে মহাত্মা গান্ধীসহ কংগ্রেসের গণ্যমান্য নেতাকে গ্রেপ্তার করা হল। ব্রিটিশ সরকারের ধারণা ছিল যে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দকে কারারুদ্ধ করলেই আন্দোলন থেমে।যাবে। এই উদ্দেশ্যে তারা নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি এবং প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটিগুলি বেআইনি বলে ঘোষণা করলেন।

(n) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী ছিল? জমিদাররা নির্ধারিত খাজনা দিতে কেন ব্যর্থ হয়েছিল?

উত্তরঃ লর্ড কর্নওয়ালিশ ইংল্যান্ডের জমিদার বংশের লোক ছিলেন। তাঁর দেশীয় জমিদারগণ জমির বংশগত মালিক। সুতরাং ভারতের রাজস্ব আদায়ের পূর্ব প্রথার অসুবিধা দূর করবার জন্য ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিশ জমিদারগণের সঙ্গে দশ বৎসরের (দশসালা) বন্দোবস্ত করেন। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে এই বন্দোবস্তই বাংলার ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ বলে খ্যাত।

এই বন্দোবস্ত অনুসারে জমিদারদের রাজস্বের পরিমাণ চিরদিনের জন্য ধার্য করে দেওয়া হল। তারা যতদিন নির্দিষ্ট খাজনা দেবেন, ততদিন জমির মালিক থাকবেন। নির্দিষ্ট সময়ে খাজনা দিতে না পারলে ‘সূর্যাস্ত আইন’-এর বিধান অনুযায়ী তাদের জমিদারি প্রকাশ্য নিলামে বিক্রয় করা হত। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়।

(ক) অধিক মাত্রায় খাজনার পরিমাণ থাকায় কৃষকরা যখন গ্রাম ছেড়ে পলায়ন করত, তখন জমিদারদের খাজনা আদায়ের উৎস থাকত না।

(খ) প্রতিনিয়ত জমিদারের ভূমি বদলি হওয়াতে জমিদাররা কোন নির্দিষ্ট জায়গার কৃষিব্যবস্থা উন্নয়নে উৎসাহী হত না। সুতরাং উৎপাদন কম হওয়া এবং খাজনা প্রদানে অসমর্থতা স্বাভাবিক ছিল।

(o) মৌখিক উৎস বলতে কী বোঝ? ভারত বিভাজনের ইতিহাস প্রণয়নে মৌখিক উৎস কীভাবে সহায়তা করে?

উত্তরঃ ঐতিহাসিক কোন ঘটনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ বা প্রত্যক্ষদর্শীর মৌখিক বিবৃতি ইতিহাস রচনার সহায়ক। একে ইতিহাস রচনার মৌখিক উৎস বলে।

মৌখিক উৎস ভারত বিভাজনের ইতিহাস তৈরিতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছিল। বিভাজনের ফলে বহু লোক গৃহহীন হয়ে অন্যত্র উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছিল। বিভাজন সম্পর্কে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল। ঘটনার বাস্তব বিবৃতি মৌখিকভাবে প্রদান ঘটনার অন্যতম উৎস হিসাবে ইতিহাসবিদদের ইতিহাস রচনায় সহায়তা করে। বিভাজনের শিকার দুঃস্থ মানুষের মৌখিক কাহিনিও ইতিহাসবিদদের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অমূল্য সম্পদ হিসাবে গণ্য করা হয়।

(p) মুঘল রাজপরিবারে মহিলাদের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ মোগলগণ পারিবারিক ক্ষেত্রে ‘হেরেম’ শব্দটি প্রায়ই ব্যবহার করত। ‘হেরেম’ শব্দটি পারসি শব্দ ‘হারাম’ হতে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ হল ‘পবিত্রস্থান।’ মোগল পরিবার নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ নিয়ে গঠিত ছিলঃ

(ক) বাদশাহ ও তাঁর পত্নী ও উপপত্নী।

(খ) এর পর দূর ও দুরসম্পর্কীয় লোকগণ, যেমন—মাতা, মাতামহী, ভগ্নী, ছেলে-মেয়ে, খুড়া-খুড়ী প্রভৃতি।

(গ) মহিলা পরিচারিকা ও গোলামবৃন্দ।

মোগল শাসকদের দুইপ্রকার পত্নী থাকত—একজন হলেন বেগম এবং অন্যজন হলেন আখা। 

মোগল রানি ও রাজকন্যাগণ আর্থিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতেন।

মোগল দরবারে মহিলাগণ পাণ্ডুলিপি রচনার কাজও করতেন। বাবর কন্যা গুলবদন বেগম ‘হুমায়ুননামা’ নামক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।

মোগল মহিলাগণ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতেন। তারা রাজা ও রাজপুত্রের মধ্যে বিবাদের মীমাংসা করতেন।

৪। নীচের পাঠ্যাংশগুলি ভাল করে পড়ো এবং প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ

(a) পুরুষ এবং মহিলা কীভাবে সম্পত্তি আহরণ করতে পারে?

মনুস্মৃতি পুরুষদের উপার্জনের ক্ষেত্রে মোট যে সাতটি উপায় ঘোষণা করেছে সেগুলি হল—উত্তরাধিকার সূত্রে, খুঁজে তথা অনুসন্ধান করে বের করা, ক্রয়, বিজয় কোনো কাজে অর্থ নিয়োগ করা, কর্ম এবং সজ্জনের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ।

নারীর ক্ষেত্রে এরূপ মোট ছয়টি উপায়ের অন্যতম হল—(বিবাহের সময়ে) অগ্নিকে সাক্ষী রেখে দেওয়া সম্পদ, শোভাযাত্রা করে কনে আনার সময়ে অথবা স্নেহ-ভালবাসা থেকে দেওয়া উপহার, পিতা-মাতা এবং ভ্রাতার থেকে প্রাপ্ত উপহার এবং ‘স্নেহপরায়ণ’ স্বামী যা দেয় সবকিছুই নারীর সম্পদ বলে ধরা হয়।

প্রশ্নসমূহঃ

(i) পুরুষ এবং নারী কি কি উপায়ে সম্পদ আহরণ করতে পেরেছিল?

উত্তরঃ পুরুষ সাতটি উপায়ে সম্পদ আহরণ করত। সেগুলি হল—উত্তরাধিকার সূত্রে, অনুসন্ধান করে, ক্রয়, বিজয়, কোনো কার্যে অর্থের বিনিয়োগ, কর্ম ও সজ্জন ব্যক্তির থেকে উপহার গ্রহণ। মহিলাগণ ছয়টি উপায়ে সম্পদ আহরণ করত। এগুলির মধ্যে অন্যতম হল–বিবাহের সময় অগ্নিসাক্ষী করে দেওয়া সম্পদ, শোভাযাত্রা করে বধূ আনার সময় বা ভালোবেসে দেওয়া বিভিন্ন উপহার, পিতামাতা ও ভ্রাতা থেকে প্রাপ্ত ধন-সোনা প্রভৃতি। এছাড়াও (বিবাহের পর) প্রাপ্ত উপহার ও স্বামীর ‘স্নেহ-অনুরাগ’-এর উপহারকে নারীর সম্পদ বলে ধরা হয়।

(ii) সম্পদ আহরণের উপায়গুলি পুরুষ এবং নারীকে পৃথক করেছে বলে তুমি কি মনে করো? যদি মনে করো, কীভাবে?

উত্তরঃ সম্পদ আহরণের ক্ষেত্র পুরুষ ও মহিলাকে পৃথক করেছে। মহিলাগণ পুরুষের মতো উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ আহরণ করতে পারত না। পুরুষদের সম্পদ আহরণের পদ্ধতিগুলি মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল না। মহিলাগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈবাহিক সূত্রে সম্পদ আহরণ করতে পারত।

(b) ভাষা এবং লিপিঃ

অশোকের বেশিরভাগ লিপির ভাষা প্রাকৃত যদিও উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমের লিপির ভাষা ছিল আরামিক এবং গ্রীক। আরামিক হল প্রাচীন বেবিলনীয় সাম্রাজ্যে বহুলভাবে প্রচলিত ভাষা। অধিক সংখ্যক প্রাকৃত লিপি ব্রাহ্মী অক্ষরে লেখা হয়েছিল যদিও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খরোষ্ঠী অক্ষরও ব্যবহৃত হয়েছিল। আফগানিস্তানের লিপিসমূহে আরামিক এবং গ্রীক অক্ষর দেখা গিয়েছিল।

প্রশ্নসমূহঃ

(i) লিপি ইতিহাসের কোন্ উৎসের অন্তর্ভুক্ত?

উত্তরঃ এই লিপি ইতিহাসের সর্বপ্রাচীন প্রাকৃত ভাষার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

(ii) অশোকের লিপিসমূহ কি কি ভাষায় লেখা হয়েছিল?

উত্তরঃ অশোকের অধিকাংশ শিলালিপি প্রাকৃত ভাষায় লেখা হয়েছিল। এছাড়া আরামিক ও গ্রীক ভাষাতেও লেখা হয়েছিল।

(iii) অশোকের লিপিসমূহে কি কি অক্ষর ব্যবহৃত হয়েছিল?

উত্তরঃ অশোকের অধিকাংশ শিলালিপিগুলোতে ব্রাহ্মী অক্ষরের ব্যবহার হয়েছিল। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খরোষ্ঠী লিপির ব্যবহার হয়েছিল। আফগানিস্থানের লিপিসমূহে আরামিক ও গ্রীক অক্ষর ব্যবহৃত হয়েছিল।

(c) ভূমির খাজনাঃ টাকা না শস্যের মাধ্যমেঃ

ভূমি রাজস্ব সংগ্রহের বিষয়ে আইন-ই-আকবরীঃ

আমিল-ওজারদের শুধু টাকার মাধ্যমেই খাজনা সংগ্রহ না করে শস্যের মাধ্যমেও খাজনা সংগ্রহ করার ব্যবস্থাটি চালু রাখতে বলা হয়েছে। পরের দিকে খাজনা বিভিন্ন উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছিল। প্রথমতঃ, কানকুত হিন্দীতে কানের অর্থ শস্য এবং কুতের অর্থ পরিমাণ নিরূপণ করা …। এই ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকলে তখন শস্য কেটে তাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়—ভাল, মধ্যম এবং নিকৃষ্ট। এই বিভাজন দ্বারা সন্দেহ দূর করা হয়। মাঝে মাঝে আবার ভূমির বেস বা মূল্য নিরূপণ করেও সেটি করা হয়। এই ব্যবস্থা সঠিক খাজনা পেতে সহায়তা করে। দ্বিতীয়টি হল বাতাই বা ভাওলী, শস্য কাটার পর সেগুলো মজুত করে রেখে, চুক্তিমতে অংশীদারের মধ্যে তাদের উপস্থিতিতে ভাগ করা হয়। এই ক্ষেত্রে অবশ্য কয়েকজন চতুর পরিদর্শকের প্রয়োজন হয়। অন্যথা অসৎ প্রবৃত্তির এবং অসৎ লোকের প্রতারণা করার অবকাশ থাকে। তৃতীয়তঃ, খেত-বাতাই, এখানে শস্যের বীজ বপন করা পর শস্য ক্ষেত্র বিভাজন করা হয়। চতুর্থতঃ, লং-বাতাই, এখানে শস্য কাটার পর স্তূপ করে রাখা হয় এবং পরে তাদের মধ্যে ভাগ হয়। এভাবে ভাগ-বাটোয়ারা হওয়ার পর প্রত্যেকে নিজের অংশটুকু লাভ রূপে ঘরে নিয়ে যায়।

প্রশ্নসমূহঃ

(i) আমিল-ওজার কারা?

উত্তরঃ আমিল-গুজার হল খাজনা বা রাজস্ব সংগ্রহকারী।

(ii) ভূমি রাজস্ব কি মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ভূমি রাজস্ব টাকা ও শস্যের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হত।

(iii) কি কি পদ্ধতিতে শস্যে ভূমি রাজস্ব সংগ্রহ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ শস্যের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ বিভিন্ন উপায়ে করা হত। প্রথমে কানকুত, হিন্দিতে ‘কান’ শব্দের অর্থ হল শস্য ও ‘কুত’ হল পরিমাণ নিরূপণ করা। এই ব্যবস্থাই যথাযথ সঠিক খাজনা বা রাজস্ব পেতে সাহায্য করা। দ্বিতীয়টি হল বাতাই বা ভাওলী শস্য ওঠার পর তা মজুত করে রেখে সেটা চুক্তি মতে জড়িত অংশীদারদের মধ্যে তাদের উপস্থিতিতে ভাগ করা হয়। তৃতীয়ত, খেত বাতাই, শস্যের বীজ রোপণের পর শস্যক্ষেত্র বিভাজন করা হয়। চতুর্থত, লাং-বাতাই, শস্য কাটার পর জড়ো করে রাখে ও পরে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।

অথবা

(d) ‘বাদশাহ নামার’ ভ্রমণঃ

মূল্যবান পাণ্ডুলিপি উপহার হিসাবে দান করা মুঘলদের প্রচলিত কূটনৈতিক পরম্পরা ছিল। সেটি অনুসরণ করেই অযোধ্যার নবাব ইংলণ্ডের রাজা তৃতীয় জর্জকে ১৭৯৯ সালে সচিত্র বাদশাহনামাটি উপহার দিয়েছিলেন। তখন থেকে সেটি ইংলণ্ডের রাজকীয় সংগ্রহালয়ে বর্তমান উইন্ডসর রাজপ্রাসাদে সংরক্ষিত আছে। 

১৯৯৪ সালে সংরক্ষণ কার্যের জন্য বাঁধানো পাণ্ডুলিপিগুলি পৃথক করার প্রয়োজন হয়েছিল। সেটি করার সময় সেটিতে সন্নিবিষ্ট চিত্রগুলি প্রদর্শন সম্ভব হয়েছিল এবং এই প্রথমবারের জন্য ১৯৯৭ সালে বাদশাহ নামার চিত্রগুলি নতুন দিল্লী, লণ্ডন এবং ওয়াশিংটনের প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করা হয়েছিল।

প্রশ্নসমূহঃ

(i) ‘বাদশাহানামা’ কে এবং কেন লিখেছিলেন?

উত্তরঃ শাহজাহানের অনুরোধে আব্দুল হামিদ লাহরী ‘আকবরনামা’র অনুসরণে শাহজাহানের রাজত্বকালের কাহিনি অবলম্বনে ‘বাদশাহনামা’ লিখেছিলেন।

(ii) ১৭৯৯ সনে কে, কাকে এবং কেন ‘বাদশাহ নামা’ উপহার দিয়েছিলেন?

উত্তরঃ ১৭৯৯ সালে অযোধ্যার নবাব ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় জর্জকে কূটনৈতিক পরম্পরা হিসাবে ‘বাদশাহনামা’ উপহার দিয়েছিলেন।

(iii) ‘বাদশাহ নামার’ চিত্রগুলি কোথায় কোথায় প্রদর্শিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ‘বাদশাহ নামার’ চিত্রগুলি নতুন দিল্লী, লন্ডন এবং ওয়াশিংটনে প্রদর্শিত হয়েছিল।

(e) প্রকৃত সংখ্যালঘুরা এই দেশের জনসাধারণঃ

জওহরলাল নেহরুর দ্বারা উত্থাপিত উদ্দেশ্যমূলক প্রস্তাবটিকে অভিনন্দন জানিয়ে এন. জি. রাঙ্গা বলেছিলেন, “স্যার, সংখ্যালঘুর বিষয়ে অনেক কথাবার্তা হল। প্রকৃত সংখ্যালঘু কে? তথাকথিত পাকিস্তান প্রদেশের হিন্দুগণ, শিখগণ এমনকি মুসলমানেরাও নয়, প্রকৃত সংখ্যালঘু হল দেশের জনসাধারণ। এই মানুষেরা এখন পর্যন্ত অবহেলিত এবং নিষ্পেষিত এবং অবদমিত। সেই জন্য সাধারণ সামাজিক অধিকারের সুবিধাটুকুও গ্রহণ করতে তারা অসমর্থ। অবস্থাটি কিরকম? আপনি জনজাতি অঞ্চলে যান—আইনমতে, তাদের নিজস্ব পরম্পরাগত নিয়ম-কানুন, তাদের জনজাতীয় আইনমতে, তাদের মাটি তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। তবুও আমাদের সদাগরেরা এই জনজাতি এলকাগুলোতে গিয়ে মুক্ত বাজারের নামে তাদের জমি কেড়ে নেয়। এভাবে যদিও তাদের জমি কেড়ে নেওয়া আইন বিরোধী, তবু ব্যবসায়ীরা জনজাতীয় লোকেদের বিভিন্ন ধরনের চুক্তিপত্রের মাধ্যমে প্রকৃত দাস হিসাবে ব্যবহার করছে, এবং তাদের বংশানুক্রমে চুক্তিবদ্ধ দাসত্বে রূপান্তরিত করছে। এখন আমরা সাধারণ গ্রামবাসীর কাছে যাই। সেখানে টাকা ধার দেওয়া লোকেরা পকেটে টাকা নিয়ে যায় এবং গ্রামবাসীদের তাদের পকেটে রাখতে সক্ষম হয়। সেখানে স্বয়ম্ভু জমির মালিক, জমিদার এবং মালগুজারের সঙ্গে বিভিন্ন লোকেরা আছে, যারা এই গরীব গ্রামবাসীদের শোষণ করতে সমর্থ হয়েছে, যাদের এমনকি, প্রাথমিক শিক্ষাটুকুও নেই। এরাই প্রকৃত সংখ্যালঘু, যাদের সুরক্ষা এবং সুরক্ষার জন্য আশ্বাস দরকার। তাদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমাদের এই প্রস্তাবটির থেকেও জরুরী সক্রিয় কর্মপন্থার।

প্রশ্নসমূহঃ

(i) এন. জি. রাঙ্গার মতে প্রকৃত সংখ্যালঘু কারা?

উত্তরঃ এন জি রঙ্গার মতে দেশের জনসাধারণ হল প্রকৃত সংখ্যালঘু।

(ii) তারা কেন প্রকৃত সংখ্যালঘু?

উত্তরঃ দেশের জনসাধারণ তখনও অবহেলিত ও নিষ্পেষিত এবং অবদমিত। তারা সামাজিক অধিকারের সুবিধা গ্রহণে অসমর্থ। আইনমতে জনজাতিদের নিজস্ব পরম্পরাগত নিয়মকানুন তাদের জনজাতীয় আইন, তাদের জমি থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে নিতে পারে না। কিন্তু বাস্তবে তারা অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তুচ্যুত হন। ব্যবসায়ীরা জনজাতীয় লোকদের বিভিন্ন প্রকারের চুক্তিপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের দাস হিসাবে ব্যবহার করেছে।

(iii) তাদের কেন সুরক্ষার প্রয়োজন?

উত্তরঃ প্রকৃত সংখ্যালঘুরা নানাভাবে শোষিত, নিষ্পেষিত ও অত্যাচারিত, সংখ্যালঘুরা চুক্তিবদ্ধ দাস। জমির মালিক, জমিদার ও মালগুজারের সঙ্গে অন্যান্য লোক এই সমস্ত দরিদ্র গ্রামবাসীদের শোষণ করেন। এই মানুষগুলির এমনকি প্রাথমিক শিক্ষাও নেই। এই সকল কারণে এদের সুরক্ষার প্রয়োজন।

অথবা

(f) অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে পরিবর্তনের একটি নতুন পর্যায় আরম্ভ হয়েছিল। ব্যবসায়-বাণিজ্য অন্যান্য স্থানে স্থানান্তরিত হওয়াতে সপ্তদশ শতকে গড়ে ওঠা সুরাট, মুসলিপটনম এবং ঢাকার মতো বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলির অবনতি ঘটল। ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে ব্রিটিশেরা ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে। তদুপরি ইংরাজদের ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ব্যবসায়-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটল। এগুলির সঙ্গে সঙ্গে নতুন অর্থনৈতিক রাজধানীরূেেপ মাদ্রাজ, কলকাতা এবং বোম্বের মতো উপনিবেশিক বন্দর মহানগরের দ্রুত উত্থান ঘটল। সেগুলি উপনিবেশিক প্রশাসন এবং সামরিক শক্তিরও কেন্দ্রস্থল হয়ে পড়ল। নতুন নতুন ঘর-বাড়ি এবং প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠল এবং শহরের অঞ্চলগুলি নতুনভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে তোলা হল। নতুন নতুন বৃত্তি গড়ে উঠল এবং উপনিবেশিক মহানগরগুলিতে দলে দলে মানুষের আগমন ঘটলো। ১৮০০ সালে এই স্থানগুলি জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের বৃহত্তম মহানগরে পরিণত হল।

প্রশ্নসমূহঃ

(i) সপ্তদশ শতকে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলির কেন অবনতি ঘটেছিল?

উত্তরঃ ব্যবসা-বাণিজ্য স্থানান্তরিত হওয়াতে সপ্তদশ শতকে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর অবনতি ঘটেছিল।

(ii) নতুন অর্থনৈতিক রাজধানীসমূহের উত্থানের কারণগুলি কি কি ছিল?

উত্তরঃ ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে বৃটিশদের ক্রমান্বরে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আহরণ এবং কোম্পানীর ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের ফলে নতুন অর্থনৈতিক রাজধানীগুলোর উত্থান ঘটে।

(iii) নতুন করে গড়ে ওঠা মহানগরগুলির বৈশিষ্ট্য কি কি ছিল?

উত্তরঃ নতুন গড়ে ওঠা মহানগরগুলোর বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(অ) এগুলো ঔপনিবেশিক প্রশাসন এবং সামরিক শক্তির কেন্দ্রস্থল ছিল।

(আ) মহানগরগুলো শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল।

(ই) মহানগরগুলোতে নতুন বৃত্তি গড়ে ওঠে ও জনসমাগম হতে থাকে।

৫। (a) ভারতবর্ষের একটি ম্যাপ এঁকে নিন্মোক্ত স্থানগুলি চিহ্নিত করোঃ

গুয়াহাটি, দিল্লি, কলকাতা

উত্তরঃ

অথবা

(b) ভারতবর্ষের একটি ম্যাপ এঁকে যে কোনো তিনটি মহাজনপদের স্থান চিহ্নিত করোঃ

উত্তরঃ 

কালী— বারানচীর ওচরে-পাজরে এটি অঞ্চল।

অগনা — এইটো আছিল গাংগেয় সমভূমির ওচরত। এই রাজ্যটো মালিনী নামে পরিচিত।

কুরু — কুরু মূলত পূর্ব-ভারত পরিয়ালর অন্তর্ভুক্ত। তেওঁলোক কুরুক্ষেত্রর পরা উদ্ভূত মানুহ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top