AHSEC 2020 Bengali MIL Question Paper Solved | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান

AHSEC 2020 Bengali MIL Question Paper Solved | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান, AHSEC Class 12 Bengali MIL Question Paper Solved PDF Download, দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা 2020 প্রশ্নপত্র সমাধান করা হয়েছে to each Paper is Assam Board Exam in the list of AHSEC so that you can easily browse through different subjects and select needs one. AHSEC 2020 Bengali MIL Previous Years Question Paper Solved can be of great value to excel in the examination.

AHSEC 2020 Bengali MIL Question Paper Solved

AHSEC 2020 Bengali MIL Question Paper Solved | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান

Join Telegram channel

AHSEC Old Question Paper provided is as per the 2020 AHSEC Board Exam and covers all the questions from the AHSEC Class 12 Bengali MIL Solved Question Paper 2020 Bengali Medium. Access the detailed Class 12 Bengali MIL 2020 Previous Years Question Paper Solved provided here and get a good grip on the subject. Access the AHSEC 2020 Bengali MIL Old Question Paper Solved, AHSEC Class 12 Bengali MIL Solved Question Paper 2020 of Bengali in Page Format. Make use of them during your practice and score well in the exams.

BENGALI MIL

2020

BENGALI MIL OLD QUESTION PAPER SOLVED

১। অর্থ লেখো:

(ক) স্পন্দন অথবা ভাটিয়ালি।

উত্তরঃ স্পন্দন – প্রেরণা।

ভাটিয়ালি – ভারত এবং বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলের জনপ্রিয় গান।

(খ) সহিষ্ণুতা অথবা মফস্বল।

উত্তরঃ সহিষ্ণুতা – সহনশীল।

মফস্বল – গ্রামাঞ্চল।

২। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও:

(ক) সেউতী বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ নৌকার জমা জল ছেঁচে ফেলার জন্য কাঠের চারকোনা বিশিষ্ট পাত্রকে সেঁউতী বলা হয়।

(খ) কৃপণ’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত?

উত্তরঃ কৃপণ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ গীতাঞ্জলি ’ কাব্য গ্রন্থের অন্তর্গত। 

(গ) ‘খরা’ কবিতাটির কবি কে?

উত্তরঃ খরা কবিতাটির কবি হলেন শঙ্খ ঘোষ।

(ঘ) কুলিমজুর’ কবিতাটির রচয়িতা কে?

উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলাম।

(ঙ) “কোনোও চেষ্টাই একেবারে ________ হয় না।” (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)

উত্তরঃ x

(চ) দিসাং নদীর উৎস কোথায়?

উত্তরঃ অরুণাচলের পাটকাই পাহাড়ে এর উৎস। 

(ছ) ‘মাস্টার মহাশয়’ গল্পের লেখক কে?

উত্তরঃ মাস্টার মহাশয় ছোট গল্পটির লেখকের নাম প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়। 

(জ) উচ্ছবের প্রকৃত নাম কী?

উত্তরঃ উচ্ছবের আসল নাম উৎসব নাইয়া। 

(ঝ) প্লেটোর মতে শিক্ষার লক্ষ্য কী হওয়া উচিত?

উত্তরঃ বিখ্যাত দার্শনিক তথা শিক্ষাবিদ প্লেটোর মতে আধ্যাত্মিকতার উপলব্ধিই শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত। 

(ঞ) মনোবিজ্ঞান’ বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ মনোবিজ্ঞান হল মানসিক প্রক্রিয়া ও আচরণ সম্পর্কিত বিদ্যা ও অধ্যয়ন। এটি বিজ্ঞানের একটি তাত্ত্বিক ও ফলিত শাখা যাতে মানসিক কর্মপ্রক্রিয়া ও আচরণসমূহ নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করা হয়।

৩। সংক্ষেপে লেখো:

(ক) বরযাত্রায় কার বাহক হওয়ার কথা ছিল এবং শেষ পর্যন্ত কে বাহকের ভূমিকা পালন করেন?

উত্তরঃ গোলাপের বিবাহ যাত্রায় বাতাস বাহক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজের মধ্যে কোথায় লুকিয়েছিল দেখা যায়নি। 

শেষ পর্যন্ত কন্যা পক্ষের কূল রক্ষা করার জন্য স্বয়ং কমলাকান্ত সেই ভার নিয়েছেন এবং বাহক হয়ে সবাইকে মল্লিকাপুরে গিয়েছেন। 

(খ) “কেবল পাঁচুর মা সে দৃশ্য দেখিল না” –

(অ) পাঁচুর মায়ের নাম কী?

উত্তরঃ পাঁচুর মায়ের নাম নারানী। 

(আ) ‘সে দৃশ্য’টি কী, তা বর্ণনা করো।

উত্তরঃ সেদিন দুপুর বেলা যখন নারানী ঘুমাচ্ছিল তখন পাঁচু তার সমবয়সী ছেলে মেয়েদের নিয়ে কাঁঠাল চুরি করে ভেঙে খাচ্ছিল। কাঁঠাল খেতে গিয়ে পাঁচুর সারা শরীরে কাঁঠালের রসে মাখামাখি হলে, পাঁচুকে পুনরায় স্নান করানোর জন্য রতি নদীতে নিয়ে যান। স্নান পর্ব নির্বিঘ্নেই সমাপ্ত হয়। বাড়ি ফেরার পথে পাঁচুর মনে হল তার খেলার ঘটিটি সে ফেলে এসেছে। বাবার অনুমতি নিয়ে পাঁচু সেই ঘটিটা নিয়ে পিছন ফিরতেই নদীর জলে থাকা সেই কুমির পাঁচুকে জলের নীচে টেনে নিয়ে যায়। পাঁচুর বাবা চিৎকারে নদীর পারে ভিড় জমে যায়, কিন্তু পাঁচুর দেহ একবার ভেসে উঠে আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। পাঁচুর মা এই দৃশ্যটি দেখতে পারেননি। 

৪। টীকা লেখো:

(ক) বাকুসা’র অথবা গম্ভীরা।

উত্তরঃ বাবুসাব: বাবুসাহেব। বাবু শব্দের আভিধানিক অর্থ শৌখিন অথবা বিলাসী ব্যক্তি। সঙ্গে সাহেব যুক্ত হয়ে এখানে ধনী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

গম্ভীরা: গম্ভীরা একটি লোকসংগীত ও লোকনাট্য। মালদহ জেলার প্রচলিত গাজন উৎসবে গম্ভীরা গাওয়া হয়।

(খ) শ্রীমন্ত শংকরদেব অথবা বনফুল।

উত্তরঃ শ্রীমন্তশংকরদেবঃ 

বনফুল: বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় নাম। এটি লেখকের ছদ্মনাম। তাঁর আসল নাম হল বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। বনফুলের জন্ম ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুলাই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন বিহারেই। তিনি তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন বিহারে। তিনি ডাক্তারি পড়তে চলে আসেন কলকাতায়। তাঁর পরবর্তী জীবনে তিনি ডাক্তার হিসাবে সুপরিচিত হন। একজন আদর্শ ডাক্তার হিসাবে তিনি দরিদ্র মানুষের সেবা করে সমাজ সেবার যথার্থ পরিচয় দিয়েছেন। আবার চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে তিনি নানা শ্রেণির মানুষের কাছাকাছি, আসতে সমর্থ হয়েছিলেন। বনফুলের লেখা উপন্যাসগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ‘তৃণখণ্ড’, ‘কিছুক্ষণ’, ‘স্থাবর’, ‘জঙ্গম’, ‘অগ্নি’, ‘দ্বৈরথ’ ইত্যাদি। তাছাড়া ছোটগল্প, কাব্য, নাটকও রচনা করেছিলেন। তাঁর লেখা ছোটগল্প সংকলনের মধ্যে হল ‘বৈতরণীর তীরে’, ‘বনফুলের গল্প’, ‘বনফুলের আরোগ্য এই মহান সাহিত্যিক ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে পরলোক গমন করেন।

৫। যে কোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

(ক) “এদিকে তিনি মাটির মানুষ কিন্তু তেজে একেবারে পরিপূর্ণ ছিলেন” — এখানে কার কথা বলা হয়েছে? ‘মাটির মানুষ’ – এর অর্থ কী?

উত্তরঃ এখানে লেখক শ্রদ্ধেয় রাজনারায়ণ বসুর কথা বলেছেন। এখানে মাটির মানুষ বলতে রাজনারায়ণ বসুকে অত্যন্ত সহজ – সরল ও নরম মনের মানুষ হিসাবে বোঝানো হয়েছে। 

(খ) অধ্যাপক ল্যাঙলি কি তৈরি করেছিলেন? তাঁর আকাশযান ফলাফল কী হয়েছিল?

উত্তরঃ  বিজ্ঞানী অধ্যাপক ল্যাঙলি পাখাযুক্ত ওড়ার কল প্রস্তুত করেছিলেন। ল্যাঙলির পাখাসংযুক্ত ওড়ার কলে অতি হালকা একটি এঞ্জিন সংযুক্ত ছিল। পরীক্ষার দিন কর্মকারের কৈথিল্যবশত একটি স্ক্রু ঢিলা হয়েছিল। এঞ্জিন চালানের পর কল আকাশে উঠেই চক্রাকারে ঘুরতে লাগল এবং ঢিলা স্ক্রুটি খুলে গেল এবং কলটি নদীগর্ভে পড়ে যায়। আর এই পরীক্ষায় বিফল হওয়ার দুঃখে ভগ্নহৃদয়ে ল্যাঙলি মৃত্যুবরণ করেন। 

(গ) “উভয় মাস্টারের পরস্পরের প্রতি এই অপবাদ প্রয়োগের ফল এই হইল, উভয় গ্রামই স্ব স্ব মাস্টারের অসাধারণ পাণ্ডিত্য সম্বন্ধে সন্দিহান হইয়া উঠিল”-

(অ) ‘উভয় মাস্টার’ কে কে?

উত্তরঃ উভয় মাস্টার হলেন হারান চক্রবর্তী ও ব্রজগোপাল মিত্র। 

(আ) ‘উভয় গ্রাম’ বলতে কোন দুটি গ্রামকে বোঝানো হয়েছে?

উত্তরঃ নন্দীপুর গ্রাম ও গোসাইগঞ্জ গ্রাম।

(ঘ) গণেশ আর পালক গিন্নির বিভিন্ন কাজে কীভাবে সাহায্য করত, তার বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ গণেশ তার পালক গিন্নিকে খুব ভালোবাসত। গণেশ তার পালক গিন্নির জন্য অনেক কাজ করে দিত। পালক গিন্নি যখন স্নান করতে যান তখন গণেশ বালতি – গামছা শুঁড়ে করে নিয়ে দোলাতে দোলাতে পিছু পিছু যেত। আর গরমের দিনে যখন পালক গিন্নি রান্না করেন তখন গণেশ শুঁড়ে করে পাখা ধরে হাওয়া করত। 

(ঙ) “রন্ন হল মা নক্কী” – কার উক্তি? ‘রন্ন’ ও ‘নক্কী’ বলকে কী বোঝ?

উত্তরঃ উক্তিটি ‘ভাত’ গল্পে বর্নিত উচ্ছবের ঠাকুমার। ‘রন্ন’ কথাটির অর্থ হল অন্ন। ‘নক্কী’ কথাটির হল ‘লক্ষ্মী’। আঞ্চলিক উচ্চারনে ‘ল’ পরিবর্তিত হয়ে ‘ন’ হয়েছে এবং ‘ক্ষ্মী’ হয়েছে ‘কী’। 

৬। যে কোনো তিনটি প্রশ্নেৰ উত্তর দাও:

(ক) “অভিমানে সমুদ্রেতে ঝাঁপ দিলা ভাই।” বক্তার ভাই কে? তার সমুদ্রে ঝাপ দেওয়ার পৌরাণিক প্রসঙ্গটি কী?

উত্তরঃ হিমালয় পর্বতের একটি শাখা মৈনাক পর্বত। সেই দিক থেকে বক্তার ভাই বলতে ভগবতী দেবীর ভাই মৈনাক পর্বত। 

সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার পৌরাণিক প্রসঙ্গটি হ’ল – আপাত অর্থে দেবী ভগবতীর ভাই মৈনাক সমুদ্রে ঝাপ দিয়েছেন দুঃখে, কারণ তার প্রিয় ভগিনীকে এমন কুপাত্রে দান করা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে পুরাণে কথিত আছে পূর্বে নাকি পর্বতসমূহের পাখা ছিল। তারা ইচ্ছামত সর্বত্র উড়ে যেতে পারত। যেখানে দিয়ে উড়ে পড়ত , সেখানের অধিবাসীদের ক্ষয় ক্ষতি হত। তখন দেবরাজ ক্রুদ্ধ হয়ে বজ্র দ্বারা এই পর্বতদের পক্ষচ্ছেদ করতে থাকেন। যাতে মৈনাক পর্বত দেবরাজের ভয়ে উড়ে গিয়ে সমুদ্রজলে নিমজ্জিত হল। ভগবতী এখানে এই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন। 

(খ) চতুদর্শপদী কবিতা কাকে বলে?

উত্তরঃ একটি পংক্তিতে চৌদ্দটি অস্তর এবং চৌদ্দটি পংক্তিতে যে কবিতা সম্পূর্ণ হয়। সেই কবিতাকে চতুর্দশপদী কবিতা বোলে। ইংরাজীতে যাকে সনেট (Sonnet) বলা হয়। চতুর্দশপদী কবিতায় দুইটি স্তবক বিভাগ আছে। ‘অষ্টক’ বা ‘ষটক’ আট পংক্তি বিশিষ্ট স্তবককে অষ্টক এবং ছয় পংক্তি বিশিষ্ট স্তবক বা ষট্‌ক।

(গ) “আমাদের খাঁচার ভিতরে একই অচিন পাখির আনাগোনা” – এখানে ‘খাঁচা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ‘অচিন পাখি’টি কী?

উত্তরঃ এখানে খাঁচা বলতে জীবদেহকে বোঝানো হয়েছে। অচিন পাখি মানে মানবাত্মাকে বোঝানো হয়েছে। মানুষ আত্মিকভাবে এক। সকল মানুষের খাঁচার ভিতর একই মানবাত্মা বিবাদ করে, যা মানুষকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। কবি একেই অচিন পাখি বলেছেন।

(ঘ) “এইখানে শেষ নয়, এই সবে শুরু” — বক্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ উক্তিটির তাৎপর্য এই যে, মানুষ আজ প্রকৃতিকে যেভাবে অবহেলা করছে ঠিক তেমনি প্রাকৃতিক সম্পদ সমূহের ধ্বংস করছে। মানুষের এই নির্মমতা প্রাকৃতিক বিপর্যর ডেকে এনেছে ফলে ‘খরা’র সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এতেও যে সব শেষ হয়ে গেছে তা নয়, বলা যায় ধ্বংসের সূচনাই হয়েছে। মানুষ আজ মানবিকতা হারিয়ে ফেলেছে, মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে ক্লেদাক্ত সভ্যতা সৃষ্টির উন্মাদনায় সবকিছু নষ্ট করছে। 

৭। উত্তর দাও:

(ক) মূল্যবোধ শিক্ষা আমাদের কী প্রয়োজন সাধন করে? বিস্তারিত লেখো।

উত্তরঃ প্রথমত মূল্যবোধ শিক্ষা আমাদের মধ্যে মূল্যবোধকে জাগ্রত করে। মূল্যবোধ শিক্ষা একটি নতুন বিষয়। জ্ঞানকে শুধুমাত্র পুঁথিগত করে না করে ব্যবহারিক জীবনে আত্মশক্তি ও আত্মানুশাসনের প্রত্যয়ের সৃষ্টি করা মূল্যবোধ শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য। অন্যায়, অবিচার, হিংসা, বিদ্বেষ মিথ্যাচার ইত্যাদি পরিবার করে সহযোগিতা, সহানুভূতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য এই শিক্ষা উপযুক্ত মানসিকতার সৃষ্টি করে। এই শিক্ষার আরেকটি উদ্দেশ্য হল জাতি – ধর্ম – বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সমান দৃষ্টিতে দেখার ক্ষমতাও সৃষ্টি করে। মূলতঃ এই শিক্ষা মানুষকে দৃঢ় চরিত্র গড়তে সাহায্য করে। আজকের তরুণ তরুণীরাই দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক। 

তাই তাদের সংকীর্ণ মনোভাবকে উদার দৃষ্টিভঙ্গীতে উত্তীর্ণ করাও এই শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য। আমাদের দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, পরম্পরা ইত্যাদির প্রতি ছাত্র – ছাত্রীদের এক শ্রদ্ধাশীল মনোভাব জাগ্রত করতে হবে। মূল্যবোধর অবক্ষয়ের জন্যই আজকের প্রজন্মের তরুণ – তরুণীদের মধ্যে শিষ্টাচারের অভাব, অপরাধ প্রবণতা, অশালীন আচরণ এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এই সমস্ত সমাধানের একমাত্রা পথ মূল্যবোধের প্রসার ঘটানো। এইজন্যই বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় মূল্যবোধ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা একান্ত আবশ্যক। 

অথবা

যে কোনও দুটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করো:

সামাজিক মূল্যবোধ, নন্দনতাত্ত্বিক মূল্যবোধ, নৈতিক মূল্যবোধ।

উত্তরঃ সামাজিক মূল্যবোধ: সামাজিক মূল্যবোধ ব্যক্তিকে সমাজে সঠিক পদক্ষেপে এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে এবং সন্মানের সঙ্গে বসবাস করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এই ধরনের সামাজিক মূল্যবোধগুলি হল – সহযোগিতা, বন্ধুত্বভাব, পরোপকার, সহানুভূতি, সংযম, দয়া, ক্ষমা, প্রেম ইত্যাদি। এই ধরনের মূল্যবোধ সামাজিক রীতি – নীতি, আচার – ব্যবহার ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত। 

নন্দনতাত্ত্বিক মূল্যবোধ: ব্যক্তিভেদে সৌন্দর্যবোধ ভিন্ন। বস্তুত মানসিকতার তারতম্যের উপরই এই মূল্যবোধ নির্ভর করে। সেজন্যই একই জিনিস ভিন্ন জনের কাজে ভিন্নভাবে ধরা দেয়। এই বোধের জন্যই চিত্রকলা, সংগীত, সুকুমার কলা, ভাস্কর্য ইত্যাদি সৃষ্টির দ্বারা মানুষ আনন্দ লাভ করে। 

নৈতিক মূল্যবোধ: সংসারে নিজেকে প্রকৃত মানুষরূপে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নৈতিক মূল্যবোধ আহরণ করা অতি আবশ্যকীয়। আমাদের সততা, নিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা পরোপকারিতা, সহযোগিতা ইত্যাদি এই ধরনের মূল্যবোধ। 

(খ) জীবনের কোন সময়কে কৈশোরকাল বলা হয়? এই বয়সের সময়সীমা উল্লেখ করে বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

উত্তরঃ মানুষের জীবনের বাল্যকাল এবং যৌবনোত্তর কাল এর মধ্যবর্তী সময়কে কৈশোর কাল বলে। মানুষের জীবনের কৈশোরকালের সময়সীমা হল ১২ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত। এই বয়সে মানুষের বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই বয়সের বৈশিষ্ট্যগুলো হ’ল –

শারীরিক বিকাশ: কৈশোর কালের শারীরিক বিকাশ লক্ষণীয় বিষয়। এইসময় শরীরের নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে। এই সময় দেহের আকার, ওজন, দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি গলার স্বরের পরিবর্তনের সঙ্গে নারী পুরুষের দেহ গঠনের পার্থক্য দেখা যায়। প্রজনন ক্ষমতার প্রাপ্তি কিশোর কালের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই সমস্ত পরিবর্তন কিশোর – কিশোরীদের মনে আত্মচেতনার ভাব জাগ্রত করে। যার ফলে মনে অহেতুকে লজ্জা, ভয় বা উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। বিপরীত লিঙ্গকামিকা কৈশোরকালের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। 

আবেগিক বিকাশ: দেহের আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে কিশোর – কিশোরীর মনোজগতে এক বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি হয়। আবেগের প্রবলতার ফলে কিশোর – কিশোরীরা অনেক সময় অতি আশাবাদী বা নিরাশাবাদী হয়ে পড়ে। অনেকের মধ্যে একাকীত্বের ভাব লক্ষ্য করা যায় বা অনেকে বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। ফলে এই সময় নানা জটিলতার সন্মুখীন হতেও দেখা যায়। 

বৌদ্ধিক বিকাশ: শারীরিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কৈশোর অবস্থায় দ্রুত মানসিক বিকাশ ঘটে। মস্তিষ্কের গঠন প্রক্রিয়া পূর্ণতা পাওয়ার ফলে উচ্চস্তরীয় জ্ঞান ও দক্ষতামূলক শিক্ষালাভের জন্য তারা উপযুক্ত হয়ে উঠে। এইকালে কিশোর – কিশোরীদের বিশ্লেষণাত্মক এবং সংশ্লেষণাত্মক -শক্তির পূর্ণ বিকাশ ঘটে। 

সামাজিক বিকাশ: কৈশোর কালে সামাজিক বিকাশ অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমবয়সীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ভাব গড়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে জন্ম হয় প্রতিযোগিতার মনোভাব। চাল – চলন, পোষাক – পরিচ্ছদ, বাকভঙ্গী ধ্যান – ধারণা, বিভিন্ন মতাদর্শের ক্ষেত্রে এই বয়সে কিশোর, কিশোরীর মধ্যে এক স্বাতন্ত্র্য লক্ষ্য করা যায়।

নৈতিক বিকাশ: কৈশোরকালে মানুষের মধ্যে ন্যায় – অন্যায় সত্য – অসত্যের বিচার ক্ষমতা গড়ে উঠে। ধর্মের প্রতি, দর্শনের প্রতি বা জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের প্রতি জিজ্ঞাসা জাগ্রত হবার ফলে মানসিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় প্রচলিত আদর্শ ত্যাগ করে বিবেচনা অনুসারে নৈতিকতা সমৃদ্ধ নতুন সমাজ গড়ার চেষ্টা করে। 

আত্মনির্ভরশীলতা, আত্মসন্মানবোধ ও নিজস্বতার সংঘাত: কৈশোর অবস্থাতেই তারা হয়ে উঠে আত্মনির্ভরশীল। অন্যের উপর নির্ভর না করে এই সময় নিজের শক্তি, সামর্থ্যে আস্থা রেখে নিজের কাজ করতে পছন্দ করে তারা। বাধা নিষেধের সম্মুখীন হলে তারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। কৈশোর কালে আদর্শবাদের সঙ্গে বাস্তবতার সংঘতা ঘটে। এই সংঘাত তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি করে। বীর পূজার প্রবৃত্তি এই বয়সের একটি লক্ষ্য বলা যেতে পারে। যাকে ভালো লাগে তাকে জীবনের আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করার প্রবণতা এই বয়সের ছেলে মেয়েদের মধ্যে দেখা যায়।

অথবা

কী ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা কৈশোরকালের উপযোগী? উদাহরণ সহকারে বর্ণনা করো।

উত্তরঃ কৈশোর কালের উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা হলো মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এই সময় শিক্ষা দেওয়ার জন্য ১৯৫২-৫৩ ত সালে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছিল। সেগুলো হলো— 

(১) দেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক , সামাজিক বা অর্থনৈতিক সমস্যার পটভূমিতে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাহিদা পুরণের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে গঢ়ে তোলা।

(২) ধর্ম নিরপেক্ষ দেশের সুনাগরিক হিসাবে প্রয়োজনীয় গুণাবলি আয়ত্ত করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সহায়তা করা। 

(৩) জাতীয় সংহতির বিকাশ সাধন করা। 

ভারত সরকারে ঘোষিত রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬ সালে মাধ্যমিক শিক্ষাকে নতুন করে ঢেলে সাজাবার জন্য কিছু সুপারিশ করেছিল।

এর মধ্যে প্রধান দুটো হলো – 

(১) মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর একটি উপযুক্ত স্তর যেখানে ছেলে মেয়েদের কলা, বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য বিভাগের উপযোগিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান প্রদান করা সম্ভব, যার ফলে ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন বিভাগ বেছে নিতে পারে। 

(২) এই স্তরেই, ছাত্র – ছাত্রীদের দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জাতীয় সংহতি দেশের প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা যেতে পারে। 

রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক শিক্ষাকে বৃত্তিমুখী করবার জন্য ব্যবস্থা করে দেশের জনশক্তিকে অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য প্রয়াস করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও  আন্তঃরাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগ (১৯৯৬) মাধ্যমিক শিক্ষাকে জীবনের সন্ধিক্ষণ বলে অভিহিত করেছে। কারণ এই স্তরেই ছাত্র – ছাত্রীরা ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও কৌশল আয়ত্ব করে নিজ নিজ যোগ্যতা ও রুচি অনুযায়ী জীবনের পথে অগ্রসর হতে পারে। কেননা শিক্ষাই হলো সমাজ পরিবর্তন করার এক শক্তিশালী মাধ্যম। 

এক কথায় বলা চলে, মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্র – ছাত্রীদের পূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। এই স্তরে কোনো ধরনের বিশেষীকরণ পাঠ্যক্রম নেই। সেই জন্য নানা ধরনের সহপাঠ্য ক্রমিক বিষয়গুলি মধ্য দিয়ে কিশোর – কিশোরীদের পূর্ণাংগ বিকাশ অর্থাৎ শারীরিক, মানসিক, বৌদ্ধিক, সামাজিক, নৈতিক আবেগিক সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটানো সম্ভব। 

৮। সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করোঃ

(ক) “মাতৃ-ভাষা রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে।”

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি কবি মধুসূদনকে ‘বঙ্গভাষা’ শীর্ষক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। ইংরেজি কাব্য রচনা করে প্রতিপত্তি আইন করতে গিয়ে ব্যর্থ কবির মনে নিজ মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধার কথা এখানে বর্ণিত হয়েছে। 

কবি বাল্যকাল থেকেই ইংরেজি ভাষায় আকৃষ্ট হয়েছিলেন। কবির ধারণা ছিল ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করলে তিনি অনেক যশ ও প্রতিপত্তি অর্জন করতে পারবেন। ইংরেজি ভাষাই একমাত্র কবিকে অমরত্ব দিতে পারবে ভেবে কবি সেই ভাষায় অনুসরণ করেন। এবং কঠোর পরিশ্রম করে ইংরেজিতে প্রথম কাব্য ‘ক্যাপটিভ লেডি’ রচনা করেন। কিন্তু কাব্যটির ভাষা উন্নত হলেও কবি এই কাব্য রচনা করে বিশেষ প্রশংসা লাভ করলেন না। কবির পরিশ্রম ব্যর্থ হলে, তিনি পুনরায় মাতৃভাষার প্রতি দৃষ্টি দিলেন। কারণ বঙ্গকুল লক্ষী কবিকে স্বপ্নে বলে দিলেন। কবির চেতনাকে জাগিয়ে তুললেন, যে বঙ্গ ভাঙ্গারে এত অফুরন্ত রত্ন থেকে কবি পরদেশে পরধনে লোভ করে ভিখারির দশা করেছেন। 

তাই কবি কুললক্ষ্মীর আদেশে বঙ্গভাষায় দৃষ্টিনিবদ্ধ করেন। বাংলা যেহেতু কবির মাতৃভাষা কবি তাই খুব অল্প পরিশ্রমেই উক্ত ভাষাকে আয়ত্ত করতে পারেন। যথার্থই কবি বুঝতে পারলেন বঙ্গ ভাণ্ডার মনিমুক্ত রত্নের খনি। এবং এই ভাষাতেই পরবর্তীতে কাব্য সাহিত্য রচনা করে কবি শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করলেন। বঙ্গ সাহিত্যে কবি অনেক সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হলেন। 

অথবা

দিলেম যা রাজ-ভিখারিরে স্বর্ণ হয়ে এল ফিরে –

তখন কাঁদি চোখের জলে দুটি নয়ন ভ’রে, 

তোমায় কেন দিইনি আমার সকল শূন্য করে?

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘কৃপণ’ কবিতা থেকে গৃহিত হয়েছে। রাজভিখারি ও ভিখারির চরিত্র দুটিতে রূপকের আড়ালে কবি জীবাত্মা ও পরমাত্মার প্রসঙ্গ এনেছেন। 

ঈশ্বর আসলে ভক্তদের থেকে আড়ম্বরপূর্বক কিছুই চান না, কিন্তু সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পারে না। সাধারণ মানুষের ধারণা ঈশ্বরের পূজা অর্চনা করলেই ঈশ্বর সন্তুষ্ট হয়ে মানুষের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। আসলে ঈশ্বর চান ভক্তের আকুতি, ভক্তের সমর্পণ। কিন্তু মানুষ তা নিঃস্বার্থভাবে তা করতে পারে না। ফলে ঈশ্বরের পূর্ণতা থেকে বঞ্চিত হয়। 

কবিতাটিতে ভিখারির সঙ্গেও তাই হয়েছে। রাজভিখারি যখন ভিখারির কাছে ভিক্ষা চেয়েছে তখন ভিখারি কৃপণতা করে ঝুলি থেকে ক্ষুদ্র এক কণা শস্য দান করেছে। পরে গৃহে ফিরে এসে যখন ঝুলি উজার করে ভিক্ষালব্ধ সামগ্রী দেখছে তখন ভিখারি দেখতে পায় ভিক্ষার সামগ্রীতে এক ক্ষুদ্র স্বর্ণকণা তখন ভিখারি বুঝতে পারে ও অলৌকিক মহিমা একমাত্র স্বয়ং ঈশ্বরই করতে পারেন। তাই ভিখারি আক্ষেপ করে অশ্রুবরণ করে বলতে থাকে সে তার সমস্ত শূণ্য করে অর্থাৎ নিজেকে সমর্পণ কেন করল না। তবে সে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে পারত। 

(খ) দ্বার আমাদের রুদ্ধ, ঘর আমাদের অন্ধকার, দীক্ষা আমাদের ঋক্‌মন্ত্রে, কথা আমাদের চুপিচুপি—ইহাতেই সকলের ৰোমহর্ষণ হইত আর বেশি কিছুই প্রয়োজন ছিল না।

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘স্বাদেশিকতা’ গদ্যাংশ থেকে গৃহীত। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে গঠিত স্বাদেশিক সভা সম্পর্কে লেখক আলোচ্য বিষয়টি ব্যক্ত করেছেন। 

কলকাতার একটি গলির মধ্যে খেলাতচন্দ্র ঘোষের মানিকানাধীন একটি পোড়ো বাড়িতে স্বাদেশিক সভা বসত। ঘরটি অন্ধকার করে, দরজা বন্ধ করে লোকচক্ষুর আড়ালে অত্যন্ত গোপনে এই সভার কাজকর্ম, আলোচনা ইত্যাদি কার্য সমাধা হত। যারা এই সভার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা প্রত্যেকেই ইংরেজ বিরোধী। আর ইংরেজের প্রতি এই বিদ্বেষই তাদের মনে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছিল এবং তারা বীরত্বের সঙ্গে দেশভক্তির যজ্ঞে যোগদান করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিদেশী প্রভাব মুক্ত স্বদেশী সমাজ গড়ে তোলা। এই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য তারা যেসব কাজকর্মে নিয়োজিত করতেন তা অত্যন্ত গোপনে সংঘটিত হয়। তাদের এই গোপন কার্যকলাপ সমাজের আর সাধারণ মানুষের কাজে কৌতূহলের বিষয় ছিল। আর সাধারণ মানুষের এই কৌতুহল সভার সদস্যদের রোমহর্ষণ করত, তাদের উদ্যমকে বাড়িতে তুলতো। 

অথবা

উচ্ছব বলে চলেছিল ভগমান। ভগমান। ভগমান। কিন্তু এমন দুর্যোগে ভগবান ও কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমোন বোধ করি। ভগমান। ভগমান।

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ নামক ছোটগল্প থেকে গৃহিত হয়েছে। গল্পে যে মাতলা নদীর উত্তাল রূপের এবং ভয়ংকর ঝড়-বৃষ্টির বর্ণনা প্রসঙ্গে অসহায় মানুষদের জীবন দুর্দশায়, নিষ্ফল প্রাণ ধারণের প্রচেষ্টার কথা বলতে গিয়ে মন্তব্যটি করা হয়েছে।

এই গল্পের প্রধান চরিত্র উৎসব যার আসল নাম উচ্ছব। সে যে গ্রামে থাকত সেটি মাতলা নদীর তীরে অবস্থিত। উৎসব ও তার মত অনেক গ্রাম্য মানুষ অসীম দারিদ্র্য যন্ত্রণা নিয়ে দিনাতিপাত করত। তাদের মতো মানুষেরা ছিল ভূমিহীন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরের জমিতে মজুর খেটে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হত। আর যখন তারা কোনো কাজ পেত না তখন তাদের না খেয়ে থাকতে হতো। আর এরকমই অকালের দিনে তাদের জল থেকে শাক তুলে এনে নদী থেকে গেঁড়ি ওগণি-শামুক তুলে এনে সেদ্ধ করে খেতে হতো। এরকমই এক অকালের দিনে তাদের জীবনে নেমে এল ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঝড়, বৃষ্টি বিদ্যুৎ চমকের সঙ্গে উত্তাল হয়ে উঠল মাতলা নদী। প্রচণ্ড ঝড়ে যখন উৎসবের ছোট কুটিরটি ভেঙে যাবার উপক্রম তখন উৎসব ও তার পরিবার ভগবানের কাছে কাতর প্রার্থনা করে। কিন্তু ভগবান সে প্রার্থনা শোনেননি। উৎসবের ঘর ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। উৎসবের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা সবাই মাতলা নদীর জলে ভেসে যায়। এইরকম দুঃসহ দুর্যোগের বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখিকা উক্তিটি করেছেন।

৯। ক-অংশ ও খ-অংশ থেকে একটি করে প্রশ্নের উত্তর দাও:

(ক) ‘কৃপণ’ কবিতায় কৃপণ কে— ভিখাৰি না রাজ-ভিখারি? তোমার মন্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তরঃ ‘কৃপণ’ কবিতায় কৃপণ হচ্ছে ভিখারি। কৃপণ কবিতাটিতে দেখা যায় রাজধিরাজ, সোনার রথে চড়ে নগর পরিভ্রমন কালে ভিখারির কাছে এসে দাঁড়ায়। রাজাধিরাজের ধন – দৌলত অর্থের অভাব নেই, তবুও তিনি ভিখারির কাছে ভিক্ষা চাইলেন। রাজাধিরাজ স্বয়ং ঈশ্বর তিনি ভিখারির মানসিকতা ও হৃদয়ের গভীরতা পরীক্ষা করার জন্য পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু ভিখারি তার ঝুলিতে থাকা ভিক্ষালব্ধ সামগ্রী থেকে এক কণা শস্যই রাজভিখারিকে দান করেছে। আর এর থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, রাজা তার ঐশ্বর্য ত্যাগ করতে পেরেছেন কিন্তু ভিখারি তার ভিক্ষালব্ধ সামগ্রী সম্পূর্ণ উজার করে দিতে পারেনি, ভিখারি সামান্য ক্ষুদ্র কণাটুকু দিতে রাজি হয়েছে। তাই এখানে ভিখারিই ‘কৃপণ’ পরিচয়ের অধিকারী। 

অথবা

‘পূব-পশ্চিম’ কবিতাটিতে এক প্রবল আশাবাদ ধ্বনিত হয়েছে। নানা ধরনের বিভেদ ও বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আশাবাদের স্বরূপ ব্যক্ত করো।

উত্তরঃ অখণ্ড বাংলাদেশকে এক শ্রেণির স্বার্থপূরণের জন্য দ্বিখণ্ডিত হয়ে হয়েছিল। কিন্তু কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত এই বিচ্ছেদের মধ্যেও মিলনের সুর শুনতে পেয়েছেন। তাই তার ভাষায় প্রকাশ পেয়েছে যে, দুই বাংলার মাঝে কাঁটা তারের সীমানা তৈরি হলেও সীমানার দুপাশ দিয়ে যে ময়ূরাক্ষী বা শীতললক্ষার জল বয়ে চলেছে, তার স্নিগ্ধতা দুই বঙ্গে একই। দুই বঙ্গে একই সূর্য সমানভাবে আলো প্রদান করছে। একই বাতাস প্রবাহিত হয় দুই বাংলায়। নারিকেল, সুপারি, তাল, খেজুর বিভিন্ন গাছ ফলে ফুলে সজ্জিত হয় দুই বাংলার মাটিতেই। দুই বাংলাতেই লোকগানের সুর ধ্বনিত হয় একই আবেগে। দুই বাংলার লোকসংগীতের মধ্যে রয়েছে ভাটিয়ালি, গম্ভীরা সারি জারি, বাউল ইত্যাদি। 

আবার পোষাক – পরিচ্ছদেও দেখা যায় একইছন্দের মিল। পূর্ববঙ্গে টাঙ্গাইল আর জামদানি এবং পশ্চিমবঙ্গে বালুচরি। দুই বঙ্গেরই শাড়ির সৌন্দর্য একই। দুই বঙ্গের মাটিতে ফসল ফলে একই অভিন্ন। তাই পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উঠেছে প্রতিবেশী। তারা ভৌগলিক বিভেদকে উত্তীর্ণ করে প্রতিবেশী রূপে একে অপরের মঙ্গল কামনায় ব্রতী হয়েছে। উভয়ে উভয়ের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। উভয়ের ভাষাও একই, একই বাংলা ভাষায় উভয় বঙ্গের লোক কথা বলে। এমনকি দুই বঙ্গের শত্রুও একই। যারা দেশকে দ্বিখণ্ডিত করেছেন, তারা দুই বঙ্গেরই শত্রু হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ নজরুলের সম্প্রীতির বন্ধনে দুই বঙ্গ রাখীর সুতায় এক হয়ে উঠেছে। তাই কবির ভাষায় তারা এক বৃত্তের দুটি ফুল। 

(খ) ‘মন্ত্রের সাধন’ প্রবন্ধের মূল বক্তব্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ বিফল হয়ে পিছিয়ে পড়া নয়, বিফলতার মধ্যেই সাফল্যের বীজ নিহিত থাকে। আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর ‘মন্ত্রের সাধন’ পাঠাংশ্যে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের অসাধ্য সাধনের বর্ণনা করা হয়েছে। বিশিষ্ট কয়েকজন বিজ্ঞানীর স্বপ্ন সফলতার কর্মকাণ্ড থেকে তা নেওয়া হয়েছে। যেমন ইতালির বিজ্ঞানী গ্যালভানি লোহা ও তামার তারের স্পর্শে মরা ব্যাংকে নড়ে উঠতে দেখে তাঁর গবেষণা শুরু করেন। বিজ্ঞানীর এই কর্মকাণ্ডকে দেখে লোকে উপহাস করে তাকে ‘ব্যাং নাচানো’ অধ্যাপক নামাকরণ করেন। কিন্তু এই সামান্য ঘটনার ফলশ্রুতি একশ বছর পর বিদ্যুতের আবিষ্কারে ও মানুষ নানা সুবিধা উপভোগ করতে পারছে। 

এরপর জার্মান দেশের বিজ্ঞানী সোয়ার্জ অ্যালুমিনিয়াম বেলুন তৈরি করেন। রেশমের বেলুন থেকে গ্যাস বের হয়ে যায় বলে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তাই তাঁর সমস্ত সম্পত্তি ব্যয় করে আজীবন পরীক্ষা করে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু দ্বারা বেলুন নির্মান করেন। তাঁর মৃত্যুর পর জেপেলিন নামে একজন ইঞ্জিনিয়ার পুণরায় চেষ্টা করে দশ বছরের মধ্যে ব্যোমযান নির্মাণ করেন। 

জার্মানির লিলিয়েনথালও পাখির মতো আকাশে উড়ার জন্য বিভিন্ন বিপদের ঝুঁকি নিয়েও চেষ্টা করেন। আকাশে উড়ার জন্য বাহুতে পাখা সংযুক্ত করে উড়ার চেষ্টা করেন। এরপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যখন উড়ার যন্ত্র তৈরি করেন এবং সেই যন্ত্র নিয়ে আকাশে উড়ার চেষ্টা করেন তখন দুর্ভাগ্যক্রমে বাতাসের ঝাপটায় পাখা ভেঙে যায়। এবং তিনি সেই দুর্ঘটনায় মারা যান। তাঁর এই তত্ত্বের সাহায্যে ল্যাঙলি পাখা সংযুক্ত উড়ার কল প্রস্তুত করেন। তাঁর মৃত্যুর পর উইলবার রাইট উড়োজাহাজের প্রাথমিক রূপ নির্মাণে সফল হন। 

অথবা

“পরদিন শোনা গেল হারান মাস্টার নন্দীপুর ত্যাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছে।” — যে ঘটনা এই পরিণতি ডেকে এনেছে, তা সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

উত্তরঃ নন্দীপুর ও গোঁসাইগঞ্জ এই দুই গ্রামের মধ্যে বরাবর প্রতিযোগিতা চলে এসেছে এই নিয়ে কোন গ্রাম বেশি অগ্রগণ্য। এক গ্রামে স্কুল বসালে আরেক গ্রামেও স্কুল বসাতেই হবে। প্রতিযোগিতা করে দুই গ্রামের কর্তা মহাশয়েরা ইংরাজী জানা শিক্ষকও আনল। এবার দুই মাস্টারের মধ্যেও ইংরাজী জ্ঞান নিয়ে প্রতিযোগিতা হল। ঠিক করা দুই মাস্টার পরস্পরকে একটি ইংরাজী কথার মানে জিজ্ঞাসা করবে এবং অপরজনকে তার মানে বলতে হবে। যদি দুজনেই উত্তর দিতে পারে তবে দুজনকেই সমান জ্ঞানী মানা হবে আর একজন অপরজনকে প্রতিযোগিতায় হারাতে পারলে তিনি জয়মাল্য পাবেন।

এরপর বৈশাখী পূর্ণিমার দিন দুই গ্রামের সংযোগস্থলে বট গাছের নিচে বিচার সভা বসল। নন্দীপুরের হারান মাস্টার প্রথমে জিজ্ঞাসা করলেন ব্রজ মাস্টারকে ‘Horns of a Dilemma’ এর মানে কি? গোসাইগঞ্জ ব্রজ মাস্টার উত্তরটি জানতেন তাই চিৎকার করে বলে দিলেন ‘উভয় সংকট’। তখন গোঁসাইগঞ্জের গ্রামবাসীরা সোল্লাসে ‘পেরেছে পেরেছে’ আমাদের মাস্টার পেরেছে বলে জয়ধ্বনি করলেন। এরপর এল গোঁসাইগঞ্জের মাস্টারের প্রশ্ন জিজ্ঞাসার পালা। ব্রজ মাস্টার কূটবুদ্ধি সম্পন্ন চতুর মানুষ, তাই তিনি হারান মাস্টারকে বললেন তিনি খুব একটি সহজ প্রশ্ন করবেন যার উত্তর তাঁকে চেঁচিয়ে দিতে হবে বলে তিনি প্রশ্ন করলেন – I don’t know এর মানে কি? নন্দীপুরের হারান মাস্টার সহজ ভাবে সঠিক উত্তরটি ‘আমি জানি না’ বলে দিলেন। এরপরই গোঁসাইগঞ্জের গ্রামবাসীরা সমস্বরে ঘোষণা করে দিল নন্দীপুর জানে না, নন্দীপুর জানে না – গ্রামবাসীদের চিৎকারের নন্দীপুরের হারান মাস্টারের প্রতিবাদের সুর ঢাকা পড়ে যায়। তাই এর পরদিন নন্দীপুরের হারান মাস্টার গ্রাম ত্যাগ করে চলে গেলেন। 

১০। নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও:

(ক) নিচের যে কোনো চারটি প্রবাদ-প্রবচনের অর্থ লেখো:

কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানো, খাল কেটে কুমির আনা, ঘুষের টাকা ফুস, নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়, মরা হাতি লাখ টাকা, হক কথার মার নেই।

উত্তরঃ কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানো: অসম্ভবকে সম্ভব করার বৃথা চেষ্টা।

খাল কেটে কুমির আনা: বাইরের বিপদ ঘরে টেনে আনা।

ঘুষের টাকা ফুস: অন্যায় উপায়ে উপার্জিত অর্থ সহজেই খরচ হয়ে যায়।

নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়: আগুনের মতো অপরাধ ভালমন্দ সব কিছুকেই গ্রাস করে।

মরা হাতি লাখ টাকা: যোগ্যতার মূল্য সর্বাবস্থায়।

হক কথার মার নেই: সত্য কথা বললে লাভবান হওয়া যায়।

(খ) নিচের যে কোনো চারটি বাগ্বিধির অর্থ লেখো ও বাক্য রচনা করো:

অকাল কুষ্মাণ্ড, আষাঢ়ে গল্প, ঊনপঞ্চাশ বায়ু, কেঁচো খুড়তে সাপ, মগের মুল্লুক, যক্ষের ধন।

উত্তরঃ অকাল কুষ্মাণ্ড: (অযোগ্য ব্যক্তি) রামের মতো একটা অকাল কুষ্মাণ্ড আর নেই।

আষাঢ়ে গল্পঃ (অবিশ্বাস্য কাহিনি) নিজের অন্যায় ঢাকার জন্য রাধা বেশ আষাঢ়ে গল্প ফেঁদেছে।

কেঁচো খুড়তে সাপঃ (সামান্য ব্যাপার থেকে গুরুতর ব্যাপারের জন্ম) দেখুন আমায় আপনি ঘাঁটাবেন না, বেশি কথা বললে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে যাবে।

মগের মুল্লুক: (বিশৃঙ্খল অবস্থা) মগের মুলুক পেয়েছো নাকি যা ইচ্ছা তাই করবে।

যক্ষের ধন: (অতিশয় কৃপণ) গোপাল পোদ্দার মৃত্যু মুহূর্তেও যক্ষের দন আগলে রেখেছে।

(গ) নিচের যে কোনো তিনটির ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয় করো:

অহোরাত্র, উইপোকা, নিখরচা, বিলাত ফেরত, সপ্তর্ষি।

উত্তরঃ অহোরাত্রঃ অহঃ ও রাত্র (দ্বন্দ্ব সমাস)।

উইপোকা: উইয়ে যে পোকা (উপপদ সমাস)।

নিখরচা: হীন খরছ যা (বহুব্রীহি সমাস)।

বিলাত ফেরত: বিলেত থেকে ফেরত (পঞ্চমী তৎপুরুষ)।

সপ্তর্ষি: সপ্ত ঋষির সমাহার (দ্বিগু সমাস)।

(ঘ) নিচের যে কোনো দুটি শব্দের দুটি করে প্রতিশব্দ লেখো:

অটল, ঈর্ষা, জগৎ।

উত্তরঃ অটল: অচঞ্চল, স্থির, দৃঢ়।

ঈর্ষা: দ্বেষ, বিদ্বেষ, হিংসা, রেষারেষি, বৈরিতা।

জগৎ: ভুবন, পৃথিবী, ধরণী, ধরা, বিশ্ব।

১১। যে কোনো একটি বিষয়ে রচনা লেখো:

(ক) অসমের প্রাকৃতিক সম্পদ।

উত্তরঃ ভূমিকা: “ধন ধান্যে পুষ্পেভরা আমাদেরই বসুন্ধরা তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা।”

এই ধন ধান্যে ও পুষ্পে ভরা সুজলা সুফলা ধরণীর উত্তর পর্ব সীমান্তে ক্ষুদ্র রাজ্য আসাম । প্রকৃতিদেবী নিজের কনিষ্ঠা কন্যাকে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যে পূর্ণ করে দিয়েছেন। যাতায়াত ও পরিবহনের সুবিধার জন্য এই রাজ্য শিল্প-কারখানা দিক দিয়ে উন্নত না হলেও প্রাকৃতিক সম্পদে এই রাজ্যটিকে ধনী বলা যায়। পাহাড় পর্বত ও অরণ্যে পরিবেষ্টিত এই রাজ্যটি যেন প্রকৃতি দেবীর স্নেহ আঁচলের ছায়ায় আবৃত হয়ে রয়েছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে অসমের ভূমি বৎসরের বেশ কিছটা বর্ষণসিক্ত অবস্থায় থাকে। যার ফলে নানান সম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছে আসাম। 

প্রাকৃতিক সম্পদের প্রকার: প্রকৃতি জাত সম্পদকেই প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। প্রকৃতিবিদেরা এই সম্পদকে বনজ, খনিজ এবং প্রাণীজ এই তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। কৃষিজাত সম্পদগুলিও প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে পড়ে।

বনজ সম্পদ: সকল সম্পদের মধ্যে আসামের বনজ সম্পদ বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। রাজ্যের ৩৫ শতাংশ বিস্তৃত এই বনাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে শাল, সেগুন, চাম, সুন্দী, শিশু, গামাই প্রভৃতি মূল্যবান বৃক্ষরাজি আসামের অর্থনীতির মূল চাবি কাঠি। এই রাজ্যের অরণ্য বাঁশ ও বেত উৎপাদনেও উল্লেখযােগ্য। আসামের বাঁশ-বেত আসামের কুটির শিল্পকে উন্নত করে তুলেছে। আসামের কাগজ কলগুলি চালু রাখতে আসামের বাঁশই যথেষ্ট। তুলা, লাক্ষা প্রভৃতিও আসামের বনজ সম্পদকে সমৃদ্ধ করে রেখেছে।

কৃষিজ সম্পদ: দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আসাম একটি বৃষ্টিবহুল রাজ্য বলে পরিচিত তাই এই অঞ্চলটি কৃষি প্রধান। ধান, পাট, কার্পাস, তিল, সরিষা, আলু, মাসকালাই, মুগ প্রভৃতি এই অঞ্চলের প্রধান কৃষিজাত দ্রব্য। তাছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল কমলা, কলা, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা প্রভৃতি। অসমের চা জগৎ বিখ্যাত। উৎপাদনের প্রাচুর্যের জন্য পাট ও কার্পাস বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। এণ্ডি ও মুগা প্রভৃতি গাছগুলি কেবলমাত্র অসমে জন্মে। তাই এ দুটি শিল্প আসামের একান্ত নিজস্ব সম্পদ। আসামের অনেক নদী, বিল, হাওরও আছে। এগুলির জলে নানা জাতের মাছ পাওয়া যায় ।

প্রাণীজ সম্পদ: প্রাণীজ সম্পদের মধ্যে অরণ্যজাত পশু-পাখিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হাতী, বাঘ, ভাল্লক, হরিণ, বানর, গণ্ডার প্রভৃতি নিয়ে আসামের প্রাণী জগত গঠিত। এক খড়্গ বিশিষ্ট গণ্ডার আসামের অমূল্য সম্পদ। এই শ্রেণির গণ্ডার আসাম ছাড়া অন্য রাজ্যে দুর্লভ। তাই আসাম সরকার এদের সংরক্ষণের জন্য কাজিরাঙ্গার অভয়ারণ্যকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। তাছাড়া আসামের বনভূমিতে প্রায় ৭৫০ প্রজাতির পাখি আছে। এদের মধ্যে ময়না, টিয়া, তােতা, শালিক, কিংগার, ধনেশ, শকুনী, বক প্রভৃতি পাখিই প্রধান।

খনিজ সম্পদ: খনিজ সম্পদে আসাম একটি সমৃদ্ধ রাজ্য। আসামের প্রধানতম সম্পদ তার খনিজ তৈলের ভাণ্ডার। ভারতবর্ষে উত্তোলিত খনিজ তৈলের প্রায় সমস্তটুকুই আসাম হতে গৃহিত হয়। উত্তর আসামের ডিগবয় তৈলক্ষেত্রেই ভারতের বৃহত্তম তৈলক্ষেত্র। স্বাধীন ভারতে আসামের ডিগবয়েই প্রথম তৈল শােধনাগার স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমানে আসামে চারটি তৈল শােধনাগার আছে। এগুলি হলাে ডিগবয়, নাহারকাটিয়া, মরিয়ানী ও নৃমলিগড়। খনিজ তৈল শােধন করে বিভিন্ন প্রকার প্রয়ােজনীয় সামগ্রী যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপন্ন করা হয়েছে। আসামে খনিজ কয়লার সম্পদ সুপ্রচুর। ডিগবয়ের পূর্বে অবস্থিত লিড়, শিবসাগর জিলার নাজিরা আসামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কয়লাক্ষেত্র।

উপসংহার: আসামের প্রকৃতির ভাণ্ডারে যে অমূল্য সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে, পরিবহনের অসুবিধার জন্য সেগুলি সম্পূর্ণরূপে বিনিয়ােগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করা যায় হয়তাে অদূর ভবিষ্যতে সকল প্রতিকূলতা, বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে আসামের সম্পদগুলি পূর্ণ বিনিয়ােগ হবে। ফলস্বরূপ: আসাম শিল্পে উন্নত হবে এবং আসামবাসী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাবলম্বী হয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে। সেদিন কবির স্বপ্ন স্বার্থক হবে এবং আমরা বলে উঠব – এমন দেশটি কোথাও খােজে পাবে না গাে তুমি সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।

(খ) তোমার প্রিয় গ্রন্থ।

উত্তরঃ আমার প্রিয় গ্রন্থ: গ্রন্থ পাঠ আমার প্রধান শখ। কারণ বই পড়ে আমি যে আনন্দ খুঁজে পাই, তা আর অন্য কোনাে কিছুতে পাই না। আমার এ যাবৎ বেশ কিছু ভালাে ভালাে বই পড়ার সুযােগ হয়েছে। যেমন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখের বালি, নৌকাডুবি, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দত্তা, পথের দাবি, চরিত্রহীনা এরকম আরাে বেশ কিছু বই। কিন্তু এসব বইয়ের মধ্যে আমার সবচেয়ে বেশি ভালাে লেগেছে জহির রায়হান রচিত উপন্যাস “হাজার বছর ধরে”। এ গ্রন্থটি আমি যতবারই পড়ি, ততবারই ভালাে লাগে। এ গ্রন্থটি আমার প্রিয় গ্রন্থ।

প্রিয় গ্রন্থ হওয়ার কারণ: ‘হাজার বছর ধরে’ গ্রন্থটি আমার অত্যন্ত প্রিয় হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ গ্রন্থে আবহমান পূর্ববাংলার তথা বর্তমান বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। জহির রায়হান তাঁর লেখনীর মাধ্যমে গ্রাম বাংলার নিম্নবিত্ত মানুষের হাসি-কান্না, মান-অভিমান, রােগ-শােক, জরা-মৃত্যু, হিংসা-দ্বেষ প্রেম-প্রীতির বাধনে আবদ্ধ জীবনের চিত্র অত্যন্ত সুন্দরভাবে অঙ্কন করেছেন। এখানে গায়ে গা লাগিয়ে মানুষের বসবাস, এতটুকুতেই শত্রুতা আবার প্রয়ােজনে মিত্রতা ও ঐক্যবদ্ধতা। 

সংস্কারে আবদ্ধ, দুর্যোগে সর্বস্বান্ত অসহায় পূর্ব বাংলার গ্রামীণ জীবন কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তারপরও স্বাভাবিক নিয়মে দিন যায়, রাত আসে আবার দিন আসে। সে পুরনােকে নিয়েই মূলতঃ এ উপন্যাসে আবহমান বাংলার গ্রামীণ জীবনের যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে আজও এর প্রতিফলন আমরা বাংলার পল্লি অঞ্চলে দেখতে পাই। আমি গ্রামে বাস করি। এ উপন্যাসটি পড়ার সময় আমার মনে হয় এই তাে সেদিন অমকের ঘরে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেল , অমুক চাচার বাড়িতে না এমন কিছুই হলাে কয়েকদিন আগে। এটি পড়ে আমার মনে হয় আমার গ্রামে, আমার আশেপাশে ঘটে যাওয়া নিত্যদিনের ঘটনার প্রতিরূপ হলাে এ উপন্যাস। আমি বিমােহিত হয়ে গ্রন্থটি পড়ি, আর এ সময় পারিপার্শ্বিকতা, চরিত্র সবকিছু মনের গভীরে একান্ত আপন অনুভূতিতে উপলব্ধি করি। আর এ জন্যই ‘হাজার বছর ধরে’ গ্রন্থটি আমার এত প্রিয়।

উপন্যাসের বিচার: ঔপন্যাসিক জহির রায়হান (Zahir Raihan) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিপুণ শিল্পীর হৃদয় কল্পরসে জারিত করে আমাদের সামনে আবহমান গ্রাম-বাংলার নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাপনের এক অনবদ্য ভাষাচিত্র উপস্থাপন করেছেন। আমরা প্রতিনিয়ত এসব ঘটনা আমাদের চোখের সামনে ঘটতে দেখি। জহির রায়হান উপন্যাসের নাম ‘হাজার বছর ধরে’ দিয়ে এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের জীবনধারার হয়তাে পরিবর্তন ঘটতে পারে কিন্তু ঘটনার পরম্পরা কিংবা জীবনবােধের পরিবর্তন খুব একটা হয় না। আর অদূর ভবিষ্যতে যে এ পরিবর্তন হবে তারও নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। আর এ গ্রন্থটির এসব দিক আমাকে আলােড়িত করেছে। আমি একাত্ম হয়ে গেছি এর বক্তব্যের সাথে। তাই এটি আমার প্রিয় গ্রহে পরিণত হয়েছে।

উপসংহার: আমি বই পড়তে ভালােবাসি। বই আমাকে আনন্দ দেয়, এক অকৃত্রিম বন্ধুর মতাে আমাকে সত্য ও সুন্দরের পথ দেখায়। যেমন আমার প্রিয় গ্রন্থটি আমাকে জীবনের প্রকৃত চিত্র উপলদ্ধি করতে শিখিয়েছে। আমি মনে করি প্রত্যেকটি মানুষের ভালাে বই পড়া উচিত। কারণ বই পড়ার অভ্যাস জীবন সম্পর্কে এমন কিছু ধারণা দিয়েছে যা অন্য কিছুই আমাকে দিতে পারেনি।

1. হাজার বছর ধরে প্রখ্যাত বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান রচিত একটি কালজয়ী সামাজিক উপন্যাস। ১৯৬৪ সালে এ উপন্যাসটির জন্য তিনি আদমজী পুরষ্কারে সম্মানিত হন। (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)

2. জহির রায়হান একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, এবং গল্পকার। বাংলা সাহিত্যের গল্প শাখায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৭৭ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। চলচ্চিত্রে তার সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে ১ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে মরণোত্তর বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

(গ) আধুনিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়োজনীয়তা।

উত্তরঃ ভূমিকা: আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি ওতঃপ্রোতভাবে জড়িত। যেমন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরস্পরের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত, ঠিক তেমনি। বিজ্ঞান হচ্ছে আবিষ্কার, তার নানা তত্ত্ব ও সূত্রের প্রয়োগিক দিককেই বলা হয় প্রযুক্তি। অন্য কথায় উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, শক্তি ও উপাদনকেই বলা হয় প্রযুক্তি। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে, প্রযুক্তির দ্বারা তৈরি নানা পণ্যদ্রব্য ভোগ করে, আর নানা কলা-কৌশল ব্যবহার করে মানুষ হয়ে উঠেছে আধুনিক। প্রযুক্তির কল্যাণেই কৃষিতে ফলন বাড়লে, বাস, ট্রেন, বিমন-জাহাজের সাহায্যে স্থলে-জলে-আকাশে ভ্রমণ করতে পারছি আমরা। টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, রেডিও, কৃত্রিম উপগ্রহ, কম্পিউটার, মোবাইলের সাহায্যে অভাবনীয় যোগাযোগ কিংবা বিনোদনের সুযোগ পাচ্ছি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, কাপড় ধোয়া, রান্না করা, সিঁড়ি না ভেঙ্গে বহতল দালানে ওঠানামা করা- সবই মানুষের কাছে সহজ করে দিয়েছে প্রযুক্তি। তাই প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে আধুনিক জীবনের কথা চিন্তাই করা যায় না। প্রযুক্তিবিদ্যার কল্যাণেই মাবন জীবনের যাবতীয় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সম্পাদিত হচ্ছে। যা কিছু ধ্বংসাত্মক তাও প্রযুক্তিরই কল্যাণে। প্রযুক্তির চরিত্র বৈশ্বিক। এ কারণেই সমগ্র বিশ্ব আজ একটা ’গ্লোবাল সিটি’তে পরিণত হয়েছে। এ যেন আধুনিক জীবন- আধুনিক মানুষ- আধুনিক বিশ্ব।

প্রযুক্তির উদ্ভব: জীবনের প্রয়োজনে-স্বাচ্ছন্দ বিধানে বিজ্ঞানকে কাজে লাগানোর প্রয়াস মানুষের দীর্ঘদিনের কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিদ্যার বয়স দু’শ বছরের বেশি নয়। ইংল্যান্ডই প্রথম এই বিদ্যাকে, প্রযুক্তি তথা প্রয়োগ বিজ্ঞানকে আত্মস্থ করে এবং কাজে লাগায়। প্রযুক্তির প্রসারের ফলে সেখানে শিল্প বিপ্লব ঘটে। নানা প্রকার যন্ত্রপাতি মানুষষের জীবনধারা বদলে দেয়। অন্যান্য দেশেও এর ব্যবহার শুরু এবং তার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোই শিল্প বিপ্লবের প্রধান ধারক ও বাহক। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে দেশ যত অগ্রগামী, সে দেশ তত উন্নত, তত আধুনিক জীবনের অধিকারী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হাতে হাত ধরে চলছে ক্রমাগত। আজও তার চলার বিরাম নেই। নব নব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে এবং ব্যবহারিক জীবনে তাকে কাজে লাদিয়ে আধুনিক মানুষ হয়ে উঠেছে আরো আধুনিক।

ক্রমবিকাশ: প্রযুক্তির প্রথম যুগ ছিল বাষ্পীয় যন্ত্রের। এর মাধ্যমে ধীর গতির পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় পালাবদল ঘটে। ফসলাদি উৎপাদনের কাজেও প্রযুক্তি ব্যবহৃত হত। স্বল্প মূল্যে, স্বল্প শ্রমে, স্বল্প ফসল এই ছিল প্রথম যুগের অবস্থা।

দ্বিতীয় যুগ: বিদ্যুতের আবিষ্কারের পর প্রযুক্তির ইতিহাসের সৃষ্টি হয় নবযুগ। বিদ্যুতের ব্যাপর প্রায়োগিক কৌশলে শিল্পক্ষেত্রে বিপ্লব সংঘটিত হয়। শুরু হয় দ্বিতীয় যুগের। নব নব শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং তার উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী মানুষের জীবন প্রণালীতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটায়। প্রকৃত অর্থে বিদ্যুতের যুগ তথা দ্বিতীয় যুগ থেকেই পৃথিবীর মানুষ আধনিক মানুষের পরিণত হয়। বিদ্যুতের পরশে শিল্প-কারখানার চাকা চলতে লাগল, পাখা ঘুরল, বিমান উড়ল, স্টিমার, মোটর চলল। মানুষ নতুন এক জীবন- আধুনিক জীবন লাভ করল। অবশ্য মানুষের কল্যাণকর উপকরণ ও দ্রব্যাদির পাশাপাশি এ গুগে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় সমরাস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রেও। মহাযুদ্ধগুলোতে ব্যবহারের জন্যে এবং রাষ্ট্র সমূহের পারস্পরিক বিরোধ দমন ও আধিপত্য বিস্তারের জন্যে এবং সীমান্ত রক্ষার জন্যে এ যুগে পশ্চিমা দেশগুলো সমরাস্ত্র কারখানা নির্মাণে এবং সমরাস্ত্র উৎপাদনে প্রতিযোগিতায় নামাল।

তৃতীয় যুগ: তৃতীয় যুগ ইলেকট্রন, প্রোটোন ও সৌরশক্তির যুগ। প্রযুক্তি এসে এ যুগকে শক্তিশালী করে তুলেছে। শুধু শক্তিশালী নয়, আধুনিক বিশ্বের আধনিক মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তিই এখন আধুনিক মানব জীবনের নিয়ামক। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নির্মাণ, স্থাপত্য, ব্যাংকিং, যোগাযোগ, পরিবহন, তথ্য- সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির জয়জয়কার। নিদ্রায়, জাগরণে, যুদ্ধে, শান্তিতে- এককথায় জীবনে এবং মরণে আধুনিক প্রযুক্তি এখন মানুষের নিত্য সঙ্গী। 

আধুনিক জীবনে প্রযুক্তি: এই একুশ শতকের মানুষের জীবন-জীবিকার সর্ব ক্ষেত্রে প্রযুক্তি-নির্ভর। শহরে নগরে যে আকাশচুম্বী বহুতল দালান গড়ে উঠেছে, আমরা যে বাস, কার, ট্যাক্সিতে যাতায়ত করছি তা প্রযুক্তিবিজ্ঞানের আশির্বাদ। বাষ্প, বিদ্যুৎও পারমাণবিক শক্তিচালিত রেল ও স্টিমার পরিবহণ ব্যবস্থায় এনেছে যুগান্তর। প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে, পাখা, হিটার, রেডিও, টিভি, ফ্রিজ, ভিসি আর. ভিসিপি, লিফট, এয়ারকুলার, কম্পিউটার চলছে। অফিসে, আদালতে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে, সংবাদপত্রের অফিসে যে ক্যালকুলেটর, টাইপরাইটার, ফটোকপিয়ার, ফ্যাক্স, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবহৃত হচ্ছে তাও সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণে। শিল্পাঞ্চলে উৎপাদনের প্রধান চালিকাশক্তিই হচ্ছে প্রযুক্তি, গ্রামাঞ্চলে কুটির শিল্পেও এখন প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। কৃষিতে কর্ষণ, বীজ বপন, নিড়ানো, ফসল কাটা, ফসল তোলা, ঝাড়াই, মাড়াই ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হচ্ছে কলের লাঙল থেকে শুরু করে নানা কৃষি যন্ত্রপাতি। জলসেচের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্র। চিকিৎসা ব্যবস্থাও এখন বহুলাংশে হয়ে পড়েছে প্রযুক্তিনির্ভর। জ্বালানী শক্তির বিকল্প যেসব শক্তি বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করছে সেগুলোকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। এক কথায় আদুনিক যুগের মূল ভিত্তি ও সহায় হচ্ছে প্রযুক্তি। অটোমেশিন বা সংয়ংক্রিয় যন্ত্র আধুনিক কালে মানুষের জীবনে নতুন অ্যায়ের সূচনা করেছে। ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তি বিজ্ঞানের মেলবন্ধনে সৃষ্টি হয়েছে কম্পিউটার ও রোবটের মত অভাবনীয় যন্ত্র। বিনোদন থেকে শরু করে যুগান্তকারী সব সাফল্যের পেছনেও রয়েছে প্রযুক্তি বিজ্ঞানের ভূমিকা।

উপসংহার: প্রযুক্তি-জ্ঞানের প্রসার ব্যতীত উন্নয়ন ও আধুনিক জীবন সম্ভব নয়। কাজেই বাংলাদেশকেও প্রযুক্তির পথে দ্রুত ধাবিত হতে হবে। আর নয় পেছনে পড়ে থাকা। আমাদের তরুণ ছাত্রসমাজকে এ বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিণামে প্রযুক্তিবিদরাই দেশকে আধুনিকতার সোপানে দাঁড় করিয়ে দেবে।

(ঘ) ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

উত্তরঃ ভূমিকা: মানুষ জ্ঞান আহরণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জীবনের যে মূল্যবান সময় ব্যয় করে থাকে এককথায় তাকে বলে ছাত্রজীবন । ছাত্রজীবন জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণের সময়। এ সময়টিকে জীবনের উজ্জ্বলতম সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ছাত্রজীবনই একটি সফল জীবনের বীজ বপনের সময় বলে এ সময়টির রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য।

ছাত্রজীবনের স্বরূপ: ছাত্রজীবনে জ্ঞান ও বিদ্যা অর্জনের জন্যে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। পরীক্ষা নামক সুকঠিন প্রাচীর পেরিয়ে একজন ছাত্র লাভ করে বিজয়ের আনন্দ। ছাত্রজীবনে মেনে চলতে হয় শৃঙ্খলা, গ্রহণ করতে হয় অধ্যবসায়ের মূলমন্ত্র । কঠোর অধ্যবসায়ী হতে পারার মধ্যেই ছাত্রজীবনের প্রধান লক্ষণ প্রকাশ পায়। অলস-উদ্যমহীন জীবন ছাত্রজীবনের প্রকৃত পরিচয়কে তুলে ধরতে পারে না। ছাত্রজীবনে নানা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণির বােম্বা গবেষক ও খ্যাতিমান শিক্ষকদের সান্নিধ্য লাভ করে ছাত্রছাত্রীরা। ফলে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরেও শিক্ষার্থী লাভ করে জ্ঞান অর্জনের সুযােগ । ছাত্রজীবনে অর্জিত জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেচনা পরবর্তী জীবনে ব্যাপকভাবে প্রয়ােগ হয় বলে ছাত্রজীবনই জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে বিবেচিত।

দায়িত্ব ও কর্তব্য: ছত্রাণং অধ্যয়নং তপঃ- অধ্যয়নই ছাত্রজীবনের পরম কর্তব্য। ছাত্রজীবনের সর্বপ্রথম এবং সর্বপ্রধান দায়িত্ব হচ্ছে অধ্যয়ন করা। কারণ পরিশ্রম ও অধ্যবসায় ব্যতীত কোনাে ছাত্র তার জীবনকে আলােকিত করতে পারে না। পৃথিবীর বুকে যারা বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে খ্যাতির স্বর্ণতােরণে আসীন হয়েছেন তাঁদের জীবন পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, তারা ছাত্রজীবনে ছিলেন কঠোর অধ্যবসায়ী। অর্থাৎ তাদের ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে তাঁরা ছিলেন সদা সচেতন। ছাত্রজীবনের মূল দায়িত্ব অধ্যয়ন হলেও সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবােধ, আদব-কায়দা ইত্যাদি মানবিক গুণগুলাে এ সময়েই চর্চা করতে হয়। ছাত্রজীবনের সমস্ত সঞ্চয়ই ব্যক্তি জীবনের পরবর্তী সকল পদক্ষেপে কাজে লাগে। তাই সৎ চরিত্রবান হতে হলে সততার চর্চা করা, সত্যবাদী হওয়া, নিজ কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া ইত্যাদি সৎ গুণগুলাে ছাত্রজীবনে অনুশীলন করা ছাত্রদের কর্তব্য। স্বাস্থ্যই সুখের মূল। তাই ছাত্রজীবনে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়াও ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য। কেননা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হলে তার পক্ষে অধ্যয়ন অনুশীলন কোনােটাই সম্ভব নয়।

ছাত্রজীবনের মূল উদ্দেশ্য: ছাত্রজীবনের মূল কাজ অধ্যয়ন হলেও মূল উদ্দেশ্য তা নয়। প্রত্যেকটি মানুষের কাজই একটি লক্ষ্য নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া। তেমনি ছাত্রজীবনেরও একটি লক্ষ্য থাকা প্রয়ােজন। শুধু পরীক্ষার পর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একগাদা সনদ অর্জন ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। ছাত্রজীবনের প্রধান লক্ষ্য হবে জ্ঞানার্জন। জ্ঞানার্জন না হলে মানুষ মুক্তচিন্তার অধিকারী হতে পারে না ফলে সংকীর্ণ ও অনুদার দৃষ্টিভঙ্গি হয় তাদের। যা কিনা কোনাে সুশিক্ষিত মানুষের ভূষণ হতে পারে না। তাই ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য হবে নিজেকে জ্ঞানে গুণে বিকশিত করে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তােলা।

দেশের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব: আজকের ছাত্রছাত্রীরা আগামী দিনে জাতির নেতৃত্ব দান করবে। এ নেতৃত্ব দান নিছক দায়িত্ব মাত্র নয়। এ গুরুদায়িত্ব পালনে সক্ষম হতে হলে আজকের ছাত্রকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যথাযথ যােগ্যতা অর্জন করতে হবে। তাদের নৈতিক চরিত্র হতে হবে সর্বজন। ছাত্রদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। জাতিকে সঠিক এবং উন্নয়নের পথে পরিচালনা করার জন্যে তাদের হাতেই একদিন দায়িত্ব বর্তাবে। তাই ছাত্রদের দেশের কর্ণধার হিসেবে নিজকে প্রস্তুত করতে হবে।

সমাজ সচেতনতা: একজন ছাত্রকে সমাজ সচেতন হতে হবে। ছাত্র যদি তার দেশ, কাল, সমাজ সম্পর্কে সচেতন না হয় তাহলে তার দ্বারা সমাজের হিত কাজ অসম্ভব । সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কোনাে অন্যায়, অনাচার দুর্নীতি যদি প্রকট আকার ধারণ করে তখন ছাত্রদের বসে থাকলে চলবে না। এর প্রতিকার প্রতিরােধের জন্যে সােচ্চার প্রতিবাদ করাও ছাত্রদের দায়িত্ব। ছাত্রসমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সমাজ-সংসারের কুসংস্কার দূরীভূত হয়ে, অন্যায়-অবিচার তিরােহিত হয়ে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ হতে পারে। তাই ছাত্রজীবনে হতে হবে দেশ, কাল ও সমাজসচেতন, সমাজহিতৈষী।

পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি কর্তব্য: পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা ছাত্রদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মনােভাব তাদের নৈতিক দিক থেকে আদর্শবান করে তােলে। গুরুজনের আদেশ-নিষেধ মেনে না। চললে জীবনে উন্নতি অসম্ভব। তাই তাদের দিক নির্দেশনা যথাযথ পালনে ছাত্রদের ব্রতী হতে হবে। পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি সম্মান ও কর্তব্য সম্পাদনের মধ্য দিয়ে ছাত্ররা শিষ্টাচার চর্চার সুযােগও লাভ করে।

রাজনৈতিক দায়িত্ব: ছাত্ররা একটি দেশের জাগ্রত অংশ। তাদের কখনাে কখনাে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ছাত্রদের দেখা গিয়েছে অগ্রণী ভূমিকায়। আমাদের বাংলাদেশের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। অধিকার আদায়েও ছাত্রদের থাকে একটি বড় ভূমিকা। আমাদের মাতৃভাষা হবে আমাদের রাষ্ট্রভাষা— এ অধিকার আদায়ে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে একদিন কেঁপে উঠেছিল দেশ। ছাত্ররা অধিকার আদায়ে প্রাণ দিয়েছিল। এটি পৃথিবীর একটি উল্লেখযােগ্য ঘটনা। তাই ছাত্রদের রাজনীতি সচেতন হতে হবে, প্রয়ােজনে যেন তারা রাজনৈতিক কর্তব্য পালন করতে পারে।

উপসংহার: আজ যারা বিদ্যালয়গামী শিশু, কিশাের, তরুণ, তারাই আগামী দিনের দেশের পরিচালক। দেশ ও জাতি তাদের কাছে প্রত্যাশা করে অনেক কিছু। তাই ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে ছাত্রদেরই হতে হবে অগ্রণী, তাদের হাতেই দেশের ভবিষ্যৎ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top