AHSEC 2022 Advance Bengali Question Paper Solved | দ্বাদশ শ্রেণীর প্রাগ্রসর বাংলা পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান, AHSEC Class 12 Advance Bengali Question Paper Solved PDF Download, দ্বাদশ শ্রেণীর প্রাগ্রসর বাংলা 2022 র প্রশ্নপত্র সমাধান করা হয়েছে to each Paper is Assam Board Exam in the list of AHSEC so that you can easily browse through different subjects and select needs one. AHSEC 2022 Advance Bengali Previous Years Question Paper Solved can be of great value to excel in the examination.
AHSEC 2022 Advance Bengali Question Paper Solved | দ্বাদশ শ্রেণীর প্রাগ্রসর বাংলা পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান
AHSEC Old Question Paper provided is as per the 2022 AHSEC Board Exam and covers all the questions from the AHSEC Class 12 Advance Bengali Solved Question Paper 2022 Bengali Medium. Access the detailed Class 12 Advance Bengali 2022 Previous Years Question Paper Solved provided here and get a good grip on the subject. Access the AHSEC 2022 Advance Bengali Old Question Paper Solved, AHSEC Class 12 Advance Bengali Solved Question Paper 2022 of Bengali in Page Format. Make use of them during your practice and score well in the exams.
ADVANCED BENGALI
2022
ADVANCED BENGALI OLD QUESTION PAPER SOLVED
১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ-
(ক) “মেদনী বিদার দেউ পসিআঁ লুকাও।” – মেদনী কে?
উত্তরঃ মেদনী – পৃথিবী।
(খ) ‘বাতুল’ অথবা ‘মৌলবী’ শব্দের অর্থ লেখো।
উত্তরঃ বাতুল — পাগল, উন্মত্ত।
মৌলবী — মুসলমান শিক্ষাগুরু।
(গ) জীবনানন্দ দাশ কত সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৫৫ সালে জীবনানন্দ দাশকে (মৃত্যুর পর) সাহিত্য একাদেমী পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
(ঘ) ‘দময়ন্তী’, ‘দ্রৌপদীর শাড়ি’, ‘রূপান্তর’ কাব্যগ্রন্থের কবি কে?
উত্তরঃ বুদ্ধদেব বসু।
(ঙ) ‘হিতাহিত-বেত্তাস্বরূপ’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ মঙ্গল ও অমঙ্গলের জ্ঞাতার মত।
(চ) কিণ্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তরঃ Friedrich Froebel কিণ্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা।
(ছ) “সাহিত্য ছেলের হাতের ……………….. নয়, গুরু হাতের রেতও নয়।” (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ খেলনাও।
(জ) হারু ঘোষের মেজো ছেলের নাম কী?
উত্তরঃ ন্যাপলা।
(ঝ) ‘‘এত বড় আশ্চর্য কথা, শুনলে হঠাৎ বিশ্বাস হয় না যে। এখন কি করলে রাগ থামবে বল?”” – বক্তা কে?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী।
(ঞ) ‘মুকুট’ নাটকটি কোন রাজ্যের ‘ছায়াবলবম্বনে’ রচিত?
উত্তরঃ ত্রিপুরা রাজ্যের।
(ট) ‘মুকুট’ নাটকে জ্যেষ্ঠপুত্র যুবরাজের নাম কী?
উত্তরঃ চন্দ্রমাণিক্য।
(ঠ) উপমা কত প্রকারের?
উত্তৰঃ চার প্রকার।
২। নির্দেশানুযায়ী উত্তর দাওঃ-
(ক) ‘‘বন পোড়ে আগ বড়ায়ি জগজনে জাণী।
মোর মন পোড়ে জেহ্ন কুম্ভারের পণী॥”
— বড়ায়ি কে?
উত্তরঃ বড়ায়ি হলেন শ্রীরাধার মায়ের পিসি এবং ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ কাব্যের একটি বিশিষ্ট চরিত্র। তিনি রাধার সহচরী ও দুতী। বয়সে তিনি অতি বৃদ্ধা কিন্তু অভিজ্ঞতায় তিনি পরিপক্ক। শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে রাধার মিলনে বড়ায়ি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।
(খ) ‘‘বারিরূপ কর তুমি; এ মিনতি গাবে
বঙ্গজ জনের কানে, সথে, সখারীতে,”
—”সখা” বলে কবি কাকে সম্বোধন করেছেন? উদ্ধৃতিটি কোন কবিতার অংশ?
উত্তরঃ ‘সখা’ বলে কবি কপোতাক্ষ নদকে সম্বোধন করেছেন।
বঙ্গজ জন বলতে এখানে বাংলাদেশের মানুষের কথা বলা হয়েছে। কবির অনুরোধ নদী যেমন সাগরকে তার জল দান করে, ঠিক সেভাবে সে তার কুলুকুলু ধ্বনিতে মধুসুদনের নাম গান বঙ্গের মানুষের কাছে করে এবং মনে করিয়ে দেয় কবির কথা।
(গ) “ভক্তরা বলে, নবযুগ-রবি।
যুগের না হই হুজুগের কবি,”
— হুজুগের। কবি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ যে সব মানুষ জীবন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তাদের কথা, তাদের মুক্তির পথ খোঁজাই কবির মূল উদ্দেশ্য। সে কাব্য দুর্যোগ চলে যাওয়ার পর বেঁচে থাকবে কিনা তা নিয়ে কবির কোন চিন্তা নেই। এটাই কবির কাব্য সম্বন্ধে হুজুগের বলার কারণ।
(ঘ) “মনুষ্য যে সকল অত্যাচারের অধীন, সে সকলের ভিত্তিমূল মনুষ্যের প্রয়োজনে।”
– উদ্ধৃতিটি কোন পাঠের অন্তর্ভুক্ত? লেখক কে?
উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি ‘ভালবাসার অত্যাচার থেকে নেওয়া হয়েছে। লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
(ঙ) “তাঁহারা আমাদিগকে তাড়না করিয়া বলিতেছেন,
‘ওগো, জাগো, কাজ করো, সময় নষ্ট করিয়ো না’।”
-“তাঁহারা” কারা? সময় নষ্ট করলে কী হবে বলে তাঁরা ভাবেন?
উত্তরঃ তাঁহারা বলতে নীতিজ্ঞেরা।
সময় নষ্ট করলে সে সময় আর ফিরে যাওয়া যাবে না।
(চ) ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির রচয়িতা কে? তিনি কোন ছদ্মনামে সাহিত্যক্ষেত্রে পরিচিত ছিলেন?
উত্তরঃ ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির রচয়িতা প্রমথ চৌধুরী। তিনি ‘বীরবল’ ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন।
(ছ) “তিক্ত কণ্ঠে সে বলিয়া উঠিল, পাগলা নয় কে? সব্বাইকে ধ’রে পাগলা গারদে পুরুন আপনি”–কে, কাকে একথা বলেছে?
উত্তরঃ উক্তিটি পাড়ার সাহসী ছেলে বিশু বাগদী থানার দারোগাকে বলেছে। উক্তিটি ‘দিবা দ্বিপ্রহরে’ পাঠের।
(জ) ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের লেখকের নাম লেখো। মেজদিদির প্রকৃত নাম কী?
উত্তরঃ ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের লেখকের নাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
মেজদিদির প্রকৃত নাম হেমাঙ্গিনী।
(ঝ) “তিনি দলিতা ভুজঙ্গিনীর মত স্বামীর মুখের পানে একটিবার চাহিয়াই চোখ ফিরাইয়া লইয়া কহিলেন, আর এখানে তুই আসিস্নে যা!” – দলিতা ভুজঙ্গিনীর স্বামীর নাম কী? কাকে তিনি আসতে বারণ করলেন?
উত্তরঃ দলিতা ভুজঙ্গিনীর স্বামীর নাম বিপিন। তিনি কেষ্টকে আসতে বারণ করলেন।
(ঞ) ”অসম্মান কেউ করে না, অসম্মান তুমি করাও।” – কে, কাকে একথা বলেছেন?
উত্তরঃ সেনাপতি ইশা খাঁ রাজধরকে একথা বলেছিলেন।
(ট) রাজসেনাপতি, অস্ত্রশিক্ষাগুরু ইশা খাঁর প্রতি ত্রিপুরা-রাজকুমারদের মধ্যে কে বা কারা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
উত্তরঃ যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য এবং মধ্যমকুমার ইন্দ্রকুমার।
(ঠ) ছন্দে ছেদ কত প্রকারের ও কী কী?
উত্তরঃ ছন্দে ছেদ দু-প্রকারের—
১। অর্ধচ্ছেদ।
২। পূর্ণচ্ছেদ।
৩। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-
(ক) ‘বংশীনাদে’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তরঃ নবজাতকের জন্মের পর যেভাবে তাঁর পিতা-মাতা বা দাদু-ঠাকুরমা তার নামকরণ করে থাকেন ঠিক সেভাবে শিল্প সাহিত্যেও নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সাহিত্যে নামকরণের কোন বাধাধরা নিয়ম বা রীতি নেই। তবে নামকরণকে হতে হয় কখনও বিষয়মুখি, আবার কখনও বা কাহিনি নির্ভর। আবার শিরোনামের মধ্যে কখনও চরিত্র কখনও মুখ্য ঘটনা প্রধান হয়ে উঠে।
‘বংশীনাদে’ কবিতাটির নামকরণ বিষয়ভিত্তিক। শ্রীকৃষ্ণের মনোমুগ্ধকর বংশীধ্বনি শ্রবণ করে শ্রীমতি রাধিকার যে চিত্ত চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছিল তাই এখানে বর্ণিত।
মনমোহিনী বাঁশির আওয়াজ প্রেম পাগলিনী রাধাকে কতটা বিপর্যস্থ করে তুলেছিল তা কবিতাটিতে উপস্থাপিত হয়েছে। বাঁশির শব্দে রাধার দেহমন উতলা, তাঁর গৃহের রন্ধন কার্যে গোলমাল ঘটেছে। তিনি দাসী হয়ে কৃষ্ণের চরণে আত্মসমর্পণ করতে চান। তাঁর দুচোখ হতে ঝর্ণাধারার মতো অশ্রু নির্গত হচ্ছে। তাঁর মনে হচ্ছে তিনি যদি পাখি হতেন তবে তখনই উড়ে যেতেন কৃষ্ণের কাছে। কখনওবা বিষণ্ণ রাধা ধরণীর ফাটলেও প্রবেশ করতে চান। শ্রীকৃষ্ণের বংশীধ্বনি শ্রবণেই তার এই আত্মহারা অবস্থা। সুতরাং বলা যেতে পারে যে বিষয়বস্তু বা কথা বস্তুর দিক হতে বিচার করলে বলতে হয় ‘বংশীনাদে’ নামকরণটি সার্থক হয়েছে।
অথবা
‘বিপ্রবেশে অর্জুন’ কবিতাটিতে রাজসভায় বিপ্রবেশে অর্জুনকে দেখে ক্ষত্রিয়দের মধ্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল, সংক্ষেপে বিবৃত করো।
উত্তরঃ পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ-কন্যা দ্রৌপদির স্বয়ংবর সভায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্ষত্রিয় রাজপুত্ররা এসে যখন পরাস্ত হয়ে বসে আছেন ঠিক সেই সময়ে ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে অর্জুনকে সভায় প্রবেশ করতে দেখে রাজপুত্ররা উপহাস ও বিদ্রূপ করতে লাগলেন এরূপ অসম্ভব কাজে এ ব্রাহ্মণ কেন চেষ্টা করতে এলো? স্বয়ংবর সভায় কেবলমাত্র ক্ষত্রিয়দের উপস্থিত হওয়ার কথা, তবে এ সভায় ব্রাহ্মণ এলেন কেন? তার কি কোন লজ্জা নেই! রাজকন্যার রূপ দেখে বোধ হয় সে পাগল হয়ে গেছে! তারা সহজে এ ব্রাহ্মণকে ছাড়বে না। লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হলে তার উচিত শাস্তি দিবে।
আবার এই ক্ষত্রিয়দের মধ্যে কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন এ ব্রাহ্মণকে এরূপ অপমান করা উচিত নয়। তাকে দেখলে সামান্য মানুষ বলে মনে হয় না। তার সৌন্দর্য কামদেবকেও হার মানায়। তাঁর অনুপম তনু নীলপদ্মের সৌন্দর্যের সমান। সিংহের মতো উদ্ধৃত ঘাড় নিয়ে অর্জুন মদমত্ত হাতির গতিতে হেঁটে চলেছেন। বাঁধুলি ফুলের মতো তাঁর দুটি ঠোঁট, গরুড়ের নাকের চেয়েও তার নাক উঁচু। তার বাহু দুটি আজানুলম্বিত। অর্জুনের তেজ মেঘে ঢাকা সূর্যের মতো। মনে হয় যেন তিনি লক্ষ্যভেদ করতে পারবেন।
(খ) সম্প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করোঃ-
“মাথার ওপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে।
প্রার্থনা করো – যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটীর মুখের গ্রাস
যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ।”
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আমার কৈফিয়ৎ’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ – যারা ভারতবাসীর মুখের অন্ন কেড়ে খাচ্ছে কবির এই রক্ত ঝরা লেখায় তাদের সর্বনাশ চাইছেন।
এখানে কবি তাদেরই সর্বনাশ কামনা করছেন যাদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এরা তখনকার দিনের অত্যাচারী বিদেশি শাসক।
কবিতার সমকালীন যুগে সাধারণ মানুষের উপর অন্যায় অবিচার উৎপীড়ন শাসন ও শোষণে মনের তীব্র যন্ত্রণাবোধ করেছেন। তিনি দেশবাসীকে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য সংগ্রামের প্রস্তুতিতে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি কবি হবেন না অকবি হবেন, তা নিয়ে তাঁর মনে বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই। তিনি জানেন, মাথার উপরে রবীন্দ্রনাথ সূর্যের মতো বিরাজমান। আর রয়েছে শত শত তরুণের দল। তারাই নতুন কাল নিয়ে আসবেন। যারা অত্যাচার আর শোষণে তখনকার যুগের ভারতের তেত্রিশ কোটি মানুষের মুখের অন্ন কেড়ে খেয়েছে, কবির এই রক্তলেখায় যেন তাদের উপর সর্বনাশের অভিশাপ নেমে আসে।
অথবা
“শ্যামল ধরার কোমল বাহু লাগছে না আর মোর ভাল,
মেরুর পানে ভাসব এবার মরণ-শাদা পালভরে।”
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু প্রমথনাথ বিশী রচিত ‘মেরুর ডাক’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবি বাংলাদেশের শ্যামল স্নিগ্ধ পরিবেশ থাকতে উত্তরমেরুর তুষারময় পরিবেশের প্রতি একান্ত আকাঙ্ক্ষী হয়ে ওঠেন। উত্তরের তুষার মেরু বার বার ডাক দিতে থাকে। সেই ডাকে অভিযাত্রী ভ্রমণ পিপাসু কবি অভিযানে অংশগ্রহণ করতে চান। তাঁর কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে নিস্তব্ধ, শীতলতম তুষারময় উত্তরমেরু। সেই পরিবেশে মৃত্যু অনিবার্য সে বিষয়ে সন্দেহ নেই, তা জেনেও কবি সেখানে যেতে বিশেষভাবে আগ্রহী।বাংলাদেশের সুস্নিগ্ধ, সুশ্যামল, সুকোমলতা কবির আর প্রার্থিত্ব নয়। বাংলাদেশের সবুজ গাছপালা মাঠ প্রান্তর তাঁর কাছে একঘেঁয়েমি মনে হয়। তাই তিনি আবহাওয়া বদলি করে শুভ্র তুষারময় উত্তর মেরুতে যেতে চান। এতে সাদা পতাকা তোলা হবে, যা মৃত্যুর প্রতীক। শত বাধা বিঘ্নেও কবি মেরু অভিযানে বদ্ধ পরিকর।
(গ) ‘হায় চিল’ কবিতার মধ্যে কবির প্রকৃতিচেতনার যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা আলোচনা করো।
উত্তরঃ কবি জীবনানন্দ দাশের লেখনীর প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রকৃতি চেতনা। তাঁর সাহিত্যে প্রকৃতি ও মানুষের মেলবন্ধনের অপরূপ ছবি দৃষ্টিগোচর হয়। কবি প্রকৃতির নানা রূপ, রঙ, রহস্য ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগ করে একের পর এক আপনভঙ্গীতে করে গেছেন অনবদ্য সৃষ্টি। জীবনানন্দের ‘মহাপৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘হায় চিল’ কবিতার মধ্যে কবির প্রকৃতি চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। ধানসিঁড়ি নদীর পাশে আকাশের চিলকে কেঁদে কেঁদে উড়তে দেখেন কবি। চিলের এই করুণ কান্নার ফলে কবির আপন প্রেমিকার ম্লান চোখ মনে পড়ে যায়। কবির প্রিয়া আজ কবির কাছে নেই। কবির অন্তরে রয়েছে বিচ্ছেদ বেদনা। কবিতার ছন্দের মধ্যে প্রকৃতির স্পর্শে প্রস্ফুটিত হয়েছে কবির অন্তহীন অন্তর বেদনা।
অথবা
‘প্রত্যহের ভার’ কবিতাটিতে কবির আশাবাদী মনের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ কবির কবিতাটি ভবিষ্যৎ মানুষ স্মরণে রাখবে কিনা তা নিয়ে কবির মন আশা নিরাশার ছন্দে আচ্ছন্ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর মনে আশার ভাব জেগেছে।
কালের প্রবাহে পৃথিবীর সব কিছুই বিনাশ প্রাপ্ত হয়। সেক্ষেত্রে কবি বাণী বন্দনাকারী। তিনি মুখের কথাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। তাকে ছন্দোবদ্ধ করেছেন।
এই বাণী ব্যর্থ হবে না। কালের নিয়মে মৃত্যু সব কিছু গ্রাস করলেও তাঁর কবিতাকে গ্রাস করতে পারবে না। কবি জানেন নিয়তির নিষ্ঠুর চক্রে, সময়ের বজ্রগতিতে শরীরে ক্লান্তি নেমে আসে। মনের শান্তি চলে যায়। জীবনসন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার হতাশা ব্যঞ্জক ডম্বরু বুকের মধ্যে বাজতে থাকে। দেহের রক্ত শুনতে পায় মৃত্যুর পদধ্বনি। কিন্তু কবিতার কাছে মৃত্যু পরাস্ত। মানুষ হিসেবে কবি মরণশীল কিন্তু স্রষ্টা হিসেবে তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। তাঁর কবিতা চিরজীবি। বস্তুতপক্ষে কবিগণ ভবিষ্যৎ স্রষ্টা। তাই কবির আশাবাদী মনের তীব্র ব্যাকুলতা কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে, এই আশাবাদী কবির কবিতাকে ঘিরেই।
(ঘ) “এ অত্যাচারে প্রবৃত্ত অত্যাচারী অনেক।”-এখানে কোন অত্যাচারের কথা বলা হয়েছে? অত্যাচারী কারা, তাদের বিষয়ে একটি করে বাক্য লেখো।
উত্তরঃ এখানে ভালোবাসার অত্যাচারের কথা বলা হয়েছে।
ভালোবাসার অত্যাচারের অত্যাচারীরা হলেন— বাবা, মা, ভাই-বোন, পুত্র-কন্যা, স্বামী-স্ত্রী এছাড়াও যে ভালোবাসে সেই অত্যাচার করে।
সুন্দরী ও সুলক্ষণা কন্যাকে বিবাহে ইচ্ছুক এমন অনেক পুত্রকে পিতার ইচ্ছায় কালকূটরূপিনী ধনী পাত্রী বিবাহ করে অশান্তির মধ্যে পড়তে হয়। এটি পিতার অত্যাচার।
দূরদেশে গিয়ে অর্থ উপার্জন করে দারিদ্র্য দূর করতে ইচ্ছুক এমন অনেক পুত্রকে মায়ের ইচ্ছায় গৃহে থেকে দারিদ্র্য কষ্ট পেতে হয় এটি পুত্রের প্রতি মায়ের অত্যাচার।
অপদাৰ্থ ভ্রাতা পরিশ্রমী কৃর্তী-ভ্রাতার উপার্জিত অৰ্থ ধ্বংস করে। এটি ভ্রাতার উপর ভ্রাতার অত্যাচার।
অথবা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘পনেরো-আনা’ কাদের বলেছেন? সংসারে এদের সার্থকতা বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের অভিমত ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ সাধারণ মানুষকে পনেরো আনা বলেছেন।
সমাজের তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা সমাজের সাধারণ মানুষের জীবনকে ব্যর্থতার স্বরূপে দেখেন। সাধারণের জীবনটা বৃথা গেল বলে রব উঠে। কিন্তু জীবন পথিক রবীন্দ্রনাথের এক্ষেত্রে ভিন্ন মত, তিনি প্রকৃত দার্শনিকের চোখে দেখেছেন সাধারণের জীবন বৃথা যাওয়াটাই একটা সার্থকতা। জীবন স্রোতের বয়ে যাওয়াটাই সভ্যতার শেষ কথা তা ব্যর্থ কি সার্থক তা বড়ো ব্যাপার নয়। যেমন একটি নদীর চলা, তার সব জল কি আমাদের কাজে লাগে? লাগে না, কিন্তু সব জল মিলিতভাবে একটা কাজ করে তা হল নদীর গতিকে রক্ষা করা। নদীর যে জল আমরা খাল কেটে পুকুরে আনি তাতে স্নান করা চলে কিন্তু খাওয়া চলে না, আবার নদীর যে জল খাবার জন্য আমরা জালায় ভরে রাখি তাতে পুকুরের মতো আলো ছায়া খেলে না। তাই লেখক প্রকৃতির সমস্ত কিছু সৃষ্টিকে শুধু প্রয়োজনের ভিত্তিতে দেখতে নারাজ। তার মতে উপকারটাই কোন ব্যক্তির সাফল্যের মাপকাঠি হতে পারে না। তা শুধু কৃপণতার কথা, কারণ শুধুমাত্র কোনো এক উদ্দেশ্যকেই জীবনের একমাত্র পরিণাম বলে গণ্য করা মানসিক দীনতাকে বহন করে।
(ঙ) “সাহিত্যের উদ্দেশ্য আনন্দ দান করা শিক্ষা দান করা নয়।”- উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী তাঁর ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধে শিক্ষা ও সাহিত্যের ধর্ম-কর্ম যে এক নয় তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি মনে করেন কবির মতিগতি শিক্ষকের মতিগতির সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই শিক্ষা ও সাহিত্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। এই পার্থক্যকে লেখক স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। প্রথমতঃ শিক্ষা হল সেই বস্তু, যা লোকে নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও গিলতে চায়, অন্যদিকে কাব্যরস লোকে শুধু স্বেচ্ছায় নয় সানন্দে গ্রহণ করে। দ্বিতীয়তঃ শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মানুষের মনকে বিশ্বের খবর জানানো আর সাহিত্যের উদ্দেশ্য মানুষের মনকে জাগানো। তৃতীয়তঃ অপরের মনের অভাব পুরণের জন্য শিক্ষকের হস্তে শিক্ষা জন্মলাভ করেছে কিন্তু কবির নিজের মনের পরিপূর্ণতা হতেই সাহিত্যের উৎপত্তি।
অথবা
“পৃথিবীতে একমাত্র খেলার ময়দানে ব্রাহ্মণ-শূদ্রের প্রভেদ নেই।” – ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধ অবলম্বনে উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ লেখক প্রমথ চৌধুরী সাধারণের শিল্প সৃষ্টি ও তার অধিকার বিষয়ে কৈফিয়ৎ দিতে গিয়েই আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
খেলার মাঠ প্রকৃত অর্থেই ভেদাভেদ শূন্য। জাতি-ধর্ম ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই একযোগে খেলার মাঠে অংশ গ্রহণ করতে পারে। সাহিত্য সৃষ্টিকেও, শিল্প সৃষ্টিকেও মানুষ যদি নিষ্ফল আনন্দস্বরূপ খেলার মতো গ্রহণ করে তার সেখানেও কোন ভেদাভেদ থাকে না। বড়ো বড়ো শিল্পীরা যেমন ছোট বড়ো সমস্ত ধরনের সৃষ্টির মধ্যেই নিজেদের নিবৃত করে তেমনি সাধারণেরও সে অধিকার, কারণ গান গাইতে গেলে ভালো গলা থাকাটাই যেমন জরুরি নয়, তেমনি লিখতে গেলেও উচ্চস্তরের মননশীলতা থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। মানুষ তার আপন আনন্দেই উদ্দেশ্যহীন ভাবেই, কোন উচ্চাশা না নিয়েই নিজেকে সৃষ্টি কর্মের মধ্যে নিযুক্ত করতে পারে। সে অধিকার তার অবশ্যই আছে।
(চ) “ডাক্তারিতে কিচ্ছু হবে না, কিৎসু হবে না।” – কথাটি কে বলেছে? তোমার নিজের ভাষায় প্রসঙ্গটি বিবৃত করো।
উত্তরঃ কথাটি পাগল আগন্তুক বলেছে।
আগন্তুক হলো পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে আসা এক পাগল।
গ্রামবাসী যখন সাপটাকে ভিড় করে আছে তখন পাশে একটি বৃক্ষের নিচে বসে এই আগন্তুকটি ছাতু খাচ্ছিল। কলরবে আকৃষ্ট হয়ে ভিড়ের দিকে এগিয় একজন লোককে ভিড়ের কারণ জিজ্ঞাসা করে। কারণ জেনে সে সহাস্যে দক্ষিণ হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুলিটি উন্নত করে বলে ডাক্তারিতে কিছু হবে না, তার কথাবার্তাতে কুসংস্কারে বিশ্বাসী গ্রামবাসীরা মনে করে যে এক মস্ত বড় ওঝার আগমন হয়েছে এবং সে ন্যাপলাকে মন্ত্র পড়ে ঝাড়িয়ে সুস্থ করে তুলবে। কারণ তারা জানে যে সাপে কাটলে ওঝাই লাগে এবং একথাটাই আগন্তুক পাগল লোকটি গ্রামবাসীদের বুঝিয়েছিল।
অথবা
“একেই তো আমরা খুঁজছি।” – বক্তা কে? কাকে খুঁজছিলেন এবং খোঁজ পেয়েও তাকে কেন ধরতে পারেননি?
উত্তরঃ এখানে বক্তা থানার পুলিশের দারোগা। তিনি পাগলা-গারদ থেকে পালিয়ে আসা এক পাগলকে খুঁজছিলেন। তিনি যখন পাগলটির খোঁজ পেয়েছিলেন তখন সব খেলা শেষ হয়ে গেছে। অর্থাৎ এই পাগলটি সাপের ওঝা সেজে যখন সর্পাঘাতে আহত হারুঘোষের মেজ ছেলে নেপলাকে ভালো করতে লেগেছিল তখন পরপর সর্বের ছোবলে সেও পটল তুলে ছিল, তাই দারোগাবাবুর পালানো পাগলটাকে ধরা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
(ছ) “তোমার মত নিষ্ঠুর, তোমার মতো বেহায়া মেয়েমানুষ আর সংসারে নেই।” – কে, কাকে এ মন্তব্য করেছেন? প্রসঙ্গটির বিস্তারিত উল্লেখ করো।
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী কাদম্বিনীকে নিষ্ঠুর ও বেহায়া বলে উল্লেখ করেছিলেন।
হেমাঙ্গিনী জ্বরে অসুস্থ হলে কেষ্ট নবীনকে না বলে হেমাঙ্গিনীর জন্য অসময়ের পেয়ারা জোগাড় করতে দোকান ছেড়ে চলে আসে। কেষ্টর এই দোকান পালানোর অপরাধের জন্য কাদম্বিনী তার রাতের আহার বন্ধ করে দেন। হেমাঙ্গিনী পরের দিন একথা জানতে পেরে কেষ্টকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। কাদম্বিনী তা জানতে পেরে হেমাঙ্গিনীর সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেন। তখন হেমাঙ্গিনী বলেন কাদম্বিনী যেন তার ছেলেকে অনাহারে রেখে পরের ছেলেকে শাসন করেন। একথার উত্তরে কাদম্বিনী বলেন যে দেবতার সঙ্গে বাঁদরের তুলনা হয় না। তখন হেমাঙ্গিনী এই উক্তিটি কাদম্বিনীর প্রতি করেছিলেন।
অথবা
‘‘এ স্তুতিতে পুলিশের দারোগার মন ভেজে। কাদম্বিনী মেয়ে মানুষ মাত্র।” – কাদম্বিনীর চরিত্র সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ কাদম্বিনী হলেন নবীনের স্ত্রী। তিনি হেমাঙ্গিনীর বড় জা ও কেষ্টর সৎদিদি ছিলেন।
‘মেজদিদি’ উপন্যাসে কাদম্বিনী একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি একজন হৃদয়হীনা ও নিষ্ঠুর নারী। মায়ের মৃত্যুর পর কেষ্ট নিরুপায় হয়ে তার বাড়িতে আশ্রয় নিলে তিনি তাকে গলগ্রহ আপদ বলে ভাবতেন অথচ তার সঙ্গে কাদম্বিনীর রক্তের সম্পর্ক। কেষ্টকে দিয়ে তিনি চাকরের কাজ করাতেন। তিনি সবসময়ই কেষ্টর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। কেষ্ট দুমুঠো ভাত বেশি খেত বলে তার খাওয়াকে হাতির খাওয়ার সঙ্গে তুলনা দেন। কেষ্ট মায়ের কথা স্মরণে কাঁদলে তার এ কান্নাকে মায়াকান্না বলে বকুনি দিতেও কার্পণ্য করেন না।
কাদম্বিনী অত্যন্ত কুটিল প্রকৃতির নারী। কেষ্ট ও হেমাঙ্গিনীর একে অন্যের প্রতি ভালোবাসাকে তিনি সহ্য করতে পারতেন না। হেমাঙ্গিনীর সঙ্গে ঝগড়ার সময় কাদম্বিনীর কটু কথা বলতে একটুও বিবেকে বাঁধে না। হেমাঙ্গিনী অসুস্থ হলে তার আরোগ্য কামনায় গ্রামের জাগ্রত দেবী বিশালাক্ষ্মীর পূজা দেওয়ার জন্য কেষ্ট নবীনের দোকান থেকে তিনি টাকা চুরি করার জন্য কাদম্বিনী হেমাঙ্গিনীর উপরে চুরি বিদ্যা শিখানোই অপবাদ দেন। বাড়ি থেকে কাদম্বিনী প্রায়ই কেষ্টকে নিয়ে হেমাঙ্গিনীকে শ্লেষ ও তীক্ষ্ণ বাক্য বাণে জর্জরিত করতেন। কাদম্বিনীর এ ধরনের উক্তি থেকে তার নিচ মনোবৃত্তির পরিচয় পাওয়া যায়।
এককথায় কাদম্বিনী চরিত্র একটি নিষ্ঠুর, নির্দয় ও হীনস্বভাবের চরিত্র।
(জ) ‘মেজদিদি’ গল্পে নবীনের ভূমিকা বিষয়ে আলোচনা করো।
উত্তরঃ ‘মেজদিদি’ উপন্যাসে নবীন কাদম্বিনীর স্বামী ও বিপিনের বড় ভাই। নবীন ধনী ও বুদ্ধিমান লোক। উপন্যাসটিতে নবীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কেষ্ট দোকান থেকে তিন টাকা চুরি করে বিশালাক্ষ্মী দেবীর মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রসাদ নিয়ে আসার পর কেষ্টর প্রতি অমানুষিক আচরণের ফলে নবীন কাহিনিতে গতি সঞ্চার করেছে। কাদম্বিনীর মতো তিনিও কেউকে অন্তর দিয়ে মোটেই ভালবাসতেন না। তিনি তার দোকানে কেউকে দিয়ে ধান-চাল মাপাতেন। প্রচণ্ড রৌদ্রের মধ্যে কেষ্টকে তিনি কয়েক ক্রোশ দূরে ধান-চালের নমুনা সংগ্রহ করতে পাঠাতেন। বাড়িতে গিয়ে স্নানাহার ও বিশ্রাম নেওয়ার পর যখন নবীন দোকানে ফিরতেন তখন কোনো কোনো দিন বেলা তিনটা বাজে। তিনি কখনও ভাবেননি চৌদ্দ বছরের ছেলেটি এত বেলা অবধি না খেয়ে রয়েছে।
কেষ্টকে নিয়ে যখন হেমাঙ্গিনী ও কাদম্বিনীর কলহ যখন চরম আকার ধারণ করে তখন নবীনই তাতে ইন্ধন জোগায়। কেষ্টকে নিয়ে তিনি ছোটভাই বিপিন ও হেমাঙ্গিনীকে অনেক কটুকথা বলতেও কার্পণ্যবোধ করেননি। নবীনের অমানুষিক প্রহারের ফলে প্রচণ্ড জ্বর আসে। সে চণ্ডীমণ্ডপে জ্বরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শেষপর্যন্ত হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে নিয়ে গৃহত্যাগ করলে বিপিন তার বাড়িতে কেউকে আশ্রয় দেয়। সুতরাং এটা স্পষ্ট বোঝা যায় নবীনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপন্যাসটির পরিণতিদানে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
(ঝ) ত্রিপুরার মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমারের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ ত্রিপুরাধিপতি অমরমাণিক্যের দ্বিতীয় পুত্র ইন্দ্রকুমার ‘মুকুট’ নাটকের এক শক্তিশালী চরিত্র। নাটকের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। তিনি রাজপরিবারের প্রকৃত যোগ্য রাজকুমার। তাঁর চরিত্রের দৃঢ়তা, অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শিতা, যুদ্ধের ময়দানে ক্ষত্রিয়ের বীরত্ব ও অগ্রজ যুবরাজ ও সেনাপতির প্রতি থাকা ভক্তি, শ্রদ্ধা তাকে এক আদর্শ রাজপুত্ররূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি ছিলেন অস্ত্রগুরু ইশাখার প্রিয় পাত্র। ধনুর্বিদ্যায় ও অস্ত্র পরিচালনায় অদক্ষ কনিষ্ঠ ভ্রাতা রাজধরের ধূর্ত স্বভাব ও ছল-চাতুরির জন্য ইন্দ্রকুমার তাকে ঘৃণা করতেন। কিন্তু যুবরাজের প্রতি ছিল অগাধ শ্রদ্ধা। ধনুর্বিদ্যা পরীক্ষার সময় ইন্দ্রকুমার যুবরাজকে বলেছিলেন, “দাদা আজ তোমাকে জিততে হবে, তা না হলে চলবে না।” এই পরীক্ষায় প্রকৃতপক্ষে ইন্দ্রকুমার জিতলেও রাজধরের ছল চাতুরিতে তা প্রমাণ করতে পারেন নি। কিন্তু পরে রাজধর মহারাজের নিকট হতে পাওয়া পুরস্কারের হীরা বাঁধানো তলোয়ারখানা ইন্দ্রকুমারকে দিতে চাইলে ইন্দ্রকুমার ঘৃণায় তা প্রত্যাখ্যান করেন।
ইন্দ্রকুমার ছিলেন অত্যন্ত জেদী এবং দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, তাই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে মহারাজকে কম্পিত স্বরে বলেছিলেন যে কাজের পরীক্ষায় পার্শ্ববর্তী রাজ্য আরাকান জয় করে তিনি পুরস্কার নিয়ে আসবেন। এইযুদ্ধে রাজধর ক্ষাত্রধর্ম বিসর্জন দিয়ে গোপণে রাতের অন্ধকারে আরাকানরাজ যখন শিবিরে বিশ্রাম নিচ্ছেন তখন তাকে আক্রমন করে বন্দী করেন। তারপর মুক্তির জন্য সন্ধিপত্র লিখিয়ে হস্তিদন্ত নির্মিত মুকুট জয়োপহার হিসেবে নিয়ে আসেন তখন ইন্দ্রকুমার প্রথমে সে কথা বিশ্বাসই করতে পারেননি। এই মুকুটের অধিকার নিয়ে পরে যখন দুজনের মধ্যে বিবাদ বাধে এবং যুবরাজ রাজধরের পক্ষ অবলম্বন করেন তখন ইন্দ্রকুমার দাদার অন্যায় সমর্থনে অভিমানাহত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করেন।
নাটকের শেষ অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যে দাদার অন্তিম পরিণতির জন্য এক সৈনিকের কাছে ইন্দ্রকুমার নিজেকেই দায়ী করেন। তৃতীয় দৃশ্যে কর্ণফুলি নদীর তীরে জ্যোৎস্না রাতে অর্জুন গাছের ছায়ায় যুবরাজের মৃত্যুশয্যার পাশে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রকুমার নিজেকে ধিক্কার দিয়ে দাদার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেন।
সুতরাং এটা স্পষ্ট যে নাটকের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ইন্দ্রকুমার সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্দ্রকুমার চরিত্র চিত্রণে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
(ঞ) “শুধু সন্ধিপত্র দিলে তো হবে না, মহারাজ। আপনি যে পরাজয় স্বীকার করলেন তার কিছু নিদর্শন তো দেশে নিয়ে যেতে হবে।” – মহারাজ কে? কার কাছে পরাজয় স্বীকার করেন তিনি? সন্ধির নিদর্শনস্বরূপ কী দিতে হয় তাঁকে এবং কেন?
উত্তরঃ এখানে মহারাজ হলেন আরাকানরাজ। তিনি রাজধরের কাছে পরাজয় স্বীকার করেন।
আরাকান যুদ্ধে তিন রাজকুমার যোগদান করলেন। কনিষ্ঠ রাজকুমার যুদ্ধক্ষেত্রে না নেমে আলাদা হয়ে যান, এবং রাতের অন্ধকারে আরাকানরাজের শিবিরে আক্রমন করে রাজাকে বন্দী করেন। ব্যাপারটা যুবরাজ, ইন্দ্রকুমার ও ইশা খাঁর জানা ছিল না। সকালে যুদ্ধ আরম্ভ হলে শত্রু সৈন্য হঠাৎ যুদ্ধ থামিয়ে দেয়। ইন্দ্রকুমার এর কারণ ইশাখাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি রাজধরের শৃগালবৃত্তি অবলম্বন করে আরাকানরাজকে বন্দি করার ঘটনা বলেন। ইন্দ্রকুমার কথাটি বিশ্বাস করেন নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইশাখাঁ বলেন, যা মিথ্যা হওয়া উচিত ছিল একেক সময় তাও সত্য হয়ে ওঠে। তিনি আরও বলেন একেক সময় আল্লার দূতরা ঘুমিয়ে পড়েন এবং শয়তান সমস্ত হিসেব উল্টো করে দেয়।
আরাকানরাজ পরাজয় স্বীকার করে সন্ধিপত্র লিখে দিতে চাইলে, রাজধর আরাকানরাজের পরাজয়ের নিদর্শন নিয়ে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আরাকানরাজ ব্রহ্মদেশের পাঁচশো ঘোড়া ও তিনটি হাতি উপহার দেবার কথা বলেন। কিন্তু রাজধর মহারাজের মাথার মুকুট চেয়ে বসেন এবং শেষ পর্যন্ত সেটা আদায় করে ছাড়েন।
অথবা
কর্ণফুলি নদীতটে তরুমূলে জ্যোৎস্নার ক্ষীপালোকে মৃত্যুন্মুখ যুবরাজ স্বগতোক্তিতে কী বলেছেন?
উত্তরঃ মুকুট নাটকের তৃতীয় অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে কর্ণফুলি নদীর তীরে গাছের নাচে জ্যোৎস্নার ক্ষীণালোকে যুদ্ধে আহত যুবরাজ তার সৈন্যদের স্বগতোক্তিতে বলে, ওরে, সরিয়ে একটি সরিয়ে দে। গাছের ডালগুলো একটু সরিয়ে দে, আজ আকাশের চাঁদকে একটু দেখে নেই।’ তার চারপাশে আজ আপন বলতে কেউ নেই। দুই ভাই ইন্দ্রকুমার ও রাজধর রাগ করে তাকে ছেড়ে গেছে, সেনাপতি ইশাখাঁ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ অবস্থায় গাছের ছায়া না মৃত্যুর ছায়ায় তার চোখ জুড়ে আসছে তা যুবরাজ বুঝতে পারছে না। শুধু শুনতে পাচ্ছে কর্ণফুলির স্রোতের শব্দ। এই শব্দটিকে সে পৃথিবীর শেষ বিদায় সম্ভাষণরূপে শুনতে চায় না, তাই প্রাণাধিক প্রিয় ভাই ইন্দ্রকুমারের প্রতীক্ষায় যুবরাজের কণ্ঠে এরূপ আক্ষেপ প্রকাশ হয়েছে।
৪। ‘ক’ অথবা ‘খ’ বিভাগ থেকে নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর লেখোঃ-
ক-বিভাগ
(ক) ‘মেজদিদি’ গল্পের নামকরণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ গল্প, উপন্যাস, নাটক প্রভৃতির নামকরণ করা হয় চরিত্র, বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গের উপর ভিত্তি করে। বলা বাহুল্য, আলোচ্য উপন্যাসটির নামকরণ করেছেন শরৎচন্দ্র প্রধান চরিত্রের নামানুসারে। ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের উপজীব্য হল পিতৃ-মাতৃহীন বালক কেষ্টর দুঃখ-দুর্দশাপূর্ণ করুণ অবস্থা। মেজদিদি হলেন কেষ্টর সৎদিদি কাদম্বিনীর মেজ জা হেমাঙ্গিনী। তাঁকে সবসময়ই কেষ্টর প্রতি কাদম্বিনীর অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যায়। মায়ের মৃত্যুর পর চৌদ্দ বছরের কেষ্টকে সৎদিদি কাদম্বিনীর বাড়িতে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
কাদম্বিনী কেষ্টকে গলগ্রহ মনে করতেন। তিনি সবসময়ই কেষ্টকে গালিগালাজ করতেন। কেষ্টকে দিয়ে তিনি বাড়ির চাকরের কাজ করিয়ে নিতেন। বাড়িতে দুটি চাকর ছিল, কেষ্ট যাওয়ার পর একটি চাকরকে ছেড়ে দেন। কাদম্বিনীর মেজ-জা হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। মেজদিদি অসুস্থ হলে তার আরোগ্য কামনায় কেষ্ট বিশালাক্ষ্মীর মন্দিরে পূজা দিতে যায় নবীনের দোকান থেকে তিন টাকা চুরি করে। এই টাকা চুরির জন্য নবীন ও কাদম্বিনী কেষ্টর উপর অত্যন্ত খৰ্গ হস্ত হলেন। তারা হেমাঙ্গিনীকে কেষ্টর এই অপরাধের জন্য দায়ী করে যায় এবং কেষ্টকে এত বেশি প্রহার করে। কিন্তু সবকিছু সহ্য করে ক্ষোভে পাথর হয়ে পড়ে। সে মার খেয়ে চণ্ডীমণ্ডপে জ্বরে বেহুঁশ হয়ে পড়েছিল। কেষ্টর এ দুঃসহ সংবাদে মেজদিদি স্থির থাকতে পারেননি। তিনি স্বামীর কাছে কেষ্টর জন্য আশ্রয় ভিক্ষা চাইলেন। বিপিন প্রতিশ্রুতি দিলেন কিন্তু হেমাঙ্গিনী সুস্থ হয়ে উঠলে প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে দেন। তখন স্বামীর প্রতি অভিমানে হেমাঙ্গিনী বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হন। বিপিন এসে বাধা দিলে তিনি বললেন কেষ্টকে আশ্রয় না দিলে তিনি ফিরবেন না। তখন বিপিন কেষ্টকে তার বাড়িতে চিরদিনের জন্য আশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হেমাঙ্গিনীকে গৃহে ফিরিয়ে আনেন।
উপরোক্ত বিষয়বস্তু থেকে সহজেই বোঝা যায় সমগ্র উপন্যাসে মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর ভূমিকা প্রধান। তাঁর সহৃদয়তা, স্নেহশীলতা ও সাহসিকতার জন্য অনাথ কেষ্ট স্থায়ী আশ্রয় পায়। সুতরাং বিষয়ের উপর ভিত্তি করে উপন্যাসের ‘মেজদিদি’ নামকরণ সার্থক হয়েছে।
অথবা
‘‘আঘাত যতই গুরুতর হোক, প্রতিহত হইতে না পারিলে লাগে না।” – শরৎচন্দ্রের ‘মেজদিদি’ অবলম্বনে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ কেষ্টর উপর কাদম্বিনীর শাসন প্রসঙ্গে এই উক্তিটি করা হয়েছে।
কেষ্ট হেমাঙ্গিনীকে খুবই ভালোবাসত। তাই হেমাঙ্গিনীর জ্বর হলে কেষ্ট দোকান হতে পালিয়ে গিয়ে হেমাঙ্গিনীর জন্য অসময়ের দুটি পেয়ারা এনে দেয়। কাদম্বিনী একথা জানতে পেরে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে। হেমাঙ্গিনীকে পেয়ারা দিয়ে ফিরে আসতেই কাদম্বিনী কেষ্টকে চেপে ধরল – দোকান পালিয়ে সে কোথায় গিয়েছিল। কেষ্ট কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল। তখন কাদম্বিনী পুত্র পাঁচু-গোপালকে দিয়ে কান মলিয়ে দিলেন এবং রাতের আহার বন্ধ করে দিলেন। ক্ষোভে ও অপমানে কেউ কাঁদতে লাগল। হেমাঙ্গিনীর স্নেহ ও ভালোবাসা না পেলে সে হয়তো কাঁদত না। হেমাঙ্গিনীর স্নেহ ও ভালোবাসা কেষ্টর অবলম্বন। তাই আঘাত যতই কঠিন হোক না কেন কেউ যদি তা প্রতিহত না করে তাহলে গায়ে আঘাত লাগে না। পর্বত শিখর হতে পড়লেই হাত পা ভাঙ্গে না। মাটিতে পড়লেই হাত পা ভেঙ্গে যায়। মাটি পতন বেগকে প্রতিহত করে বলেই এরকমটি হয়। কেষ্ট হেমাঙ্গিনীর স্নেহ ভালোবাসা পেয়েছিল বলেই তার নাম করে নিজের ঘরে বসে কাঁদতে লাগল।
(খ) “ঠাণ্ডা হও ভাই, ঠাণ্ডা হও। তোমার বুদ্ধি তোমারই থাক্, তার প্রতি আমার কোনো লোভ নেই।” – কে, কাকে একথা বলেছেন? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিষয়টি আলোচনা করো।
উত্তরঃ মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমার কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধরকে একথা বলেছেন। নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে দেখা যায় ত্রিপুরার সেনাপতি ইশাখাঁকে রাজধর নিজের নাম ধরে ডাকতে বারণ করে তার প্রতি অসম্মানের অভিযোগ করে। ইশাখাঁ রাজধরের থেকে বয়সে বড়ো এবং তার অস্ত্রগুরু এই অভিমানে তিনি অভিযোগ খণ্ডন করেন। এসময় মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমারের প্রবেশ করে রাজধরকে একটু ব্যঙ্গ করলে রাজধর রাগান্বিত হয়ে যখন ইন্দ্রকুমারকে অত্যন্ত নির্বোধ বলে তখন তাকে শান্ত করার জন্য ইন্দ্রকুমার একথার অবতারণা করেছিলেন।
অথবা
টীকা লেখোঃ (যে কোনো দুটি)
চন্দ্ৰমাণিক্য; প্রতাপ; ভাট; ধুরন্ধর।
উত্তরঃ যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যঃ ত্রিপুরাধিপতি অমর মাণিক্যের জ্যেষ্ঠ পুত্র হলেন যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য। তিনি কনিষ্ঠ ভ্রাতা রাজধরের মতো চতুর ও সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী নন। ইন্দ্রকুমারের মতো ধনুর্বিদ্যায়ও পারদর্শী ছিলেন না। তিনি তাঁর ভ্রাতাদের ভীষণ ভালবাসতেন। পিতাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। পিতার কথায় দ্বিতীয় বার তিনি আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন এবং সেই যুদ্ধে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
প্রতাপঃ মুকুট নাটকের প্রথম অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যে আমরা প্রতাপ চরিত্রের সঙ্গে পরিচিত হই। প্রতাপ মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালার দ্বার রক্ষক। রাজধর যখন অস্ত্র পরীক্ষার পূর্বদিন তীর বদল করতে ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালায় প্রবেশ করে, তখন মধ্যম বউ রাণীমার আদেশে রাজধরকে অস্ত্রশালার বাইরে বন্দি করে রাখে। তারপর ইন্দ্রকুমারকে খবর দিতে যায়। ইন্দ্রকুমার দরজা খুলে দিলে রাজধর কাজ হাসিল করে অস্ত্রধার নেওয়ার কথা বলে বাহির হয়ে যায়। তখন প্রতাপ ইন্দ্রকুমারকে রাজধর সম্বন্ধে তামাসা না করে সাবধান থাকার পরামর্শ দেয়।
ভাটঃ মুকুট নাটকের প্রথম অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে নিশানধারী ও ভাট চরিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়। এরা নাটকের অতি ক্ষুদ্র চরিত্র। যখন রাজকুমারদের অস্ত্রবিদ্যা পরীক্ষার জন্য পূর্ণিমার রাতে গোমতী নদীর ঘাটে বাঘ শিকারে যাওয়া হয় তখন ভাটরা তাদের কর্মচারী রূপে সেখানে গিয়েছিল।
ধুরন্ধরঃ ধুরন্ধর রাজকুমারদের মামাতো ভাই। নাটকে সবসময় কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধরের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে ধুরন্ধরের অবস্থান। রাজধর ধুরন্ধরের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করতেন। ধুরন্ধর রাজধরের ছল-চাতুরি ও অসৎ কাজে সহযোগিতা করতো।
খ-বিভাগ
(ক) স্বরবৃত্ত বা শ্বাসাঘাত ছন্দ কাকে বলে? এই ছন্দের চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ যে ছন্দের প্রতি পর্বের আদিতে একটি প্রবল শ্বাসাঘাত বা ঝোক পড়ে তাকে শ্বাসাঘাত-প্রধান বা স্বরবৃত্ত অথবা ছড়ার ছন্দ বলে।
স্বরবৃত্ত বা শ্বাসাঘাত-প্রধান হন্দের বৈশিষ্ট্যঃ-
১। এই ছন্দে একটা হালকা ভাব থাকে।
২। প্রত্যেক পর্বের গোড়ায় একটি করে শ্বাসাঘাত বা Stress পড়ে।
৩। শ্বাসাঘাত থাকায় এর লয় দ্রুত।
৪। প্রত্যেক অক্ষরকে একমাত্রা হিসেবে গণনা করা হয়।
অথবা
ছন্দোলিপি প্রস্তুত করোঃ
পাখি সব করে রব / রাতি পোহাইল।
কাননে কুসুম কলি / সকলি ফুটিল।।
উত্তরঃ (ক) তানপ্রধান বা অক্ষরবৃত্ত ছন্দ।
(খ) চরণ – দুটি।
(গ) লয় – ধীর।
(ঘ) পর্ব সংখ্যা – দুই।
(ঙ) মাত্ৰা সংখ্যা – ৮ + ৬।
(খ) যে কোনো দুটি অলংকারের সংজ্ঞা ও একটি করে উদাহরণ দাও।
অভঙ্গ শ্লেষ; উপমা; কাকু-বক্রোক্তি; যমক; সমাসোক্তি।
উত্তরঃ অভঙ্গ শ্লেষঃ শব্দকে না ভেঙ্গে যে শ্লেষ অলংকারের বিভিন্ন অর্থ পাওয়া যায় তাকে অভঙ্গ শ্লেষ বলে।
যেমন – পূজা শেষে কুমারী বলল, ঠাকুর
আমাকে একটি মনের মত বর দাও।
এখানে ‘বর’ একটি শব্দ; একবার মাত্র ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু দুরকম অর্থ প্রকাশ করেছে।
১। বর – আশীর্বাদ।
২। বর – স্বামী।
উপমাঃ উপমা কথাটির সাধারণ অর্থ তুলনা। দুটি ভিন্ন জাতীয় বস্তুর মধ্যে কোনো সমান ধর্ম বা গুণ হেতু তুলনা করা। হলে তাকে উপমা অলংকার বলে।
যেমন – মুখখানি চাঁদের ন্যায় সুন্দর।
ব্যাখ্যা- এখানে মুখ ও চাদ এই দুই বিজাতীয় বস্তুর মধ্যে তুলনা করা হয়েছে, সুন্দর’ এদের সমান ধর্ম বা সাধারণ গুণ। এবং ‘ন্যায়’ এই সাদৃশ্যবাচক শব্দের সাহায্যে উভয়ের তুলনা করা হয়েছে।
উপমার চারটি উপাদান থাকে—
১। উপমেয়।
২। উপমান।
৩। সাধারণ ধর্ম।
৪। সাদৃশ্য বাচক শব্দ।
১। উপমেয়- যে বস্তুকে অন্য কোনো বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হয়।
২। উপমান যার সঙ্গে তুলনা করা হয়।
৩। সাধারণ ধর্ম – যে ধর্ম বা গুণ উপমেয় এবং উপমান উভয় বস্তুতে বর্তমান।
(৪) সাদৃশ্যবাচক শব্দ – যে শব্দের দ্বারা তুলনা বা সাদৃশ্য দেখানো হয়।
যেমন- ন্যায়, মত, সম, যেমন, সাদৃশ্য, তুল্য ইত্যাদি।
উদাহরণ – ১। “মুখখানা চাঁদের ন্যায় সুন্দর।”
উপমেয় উপমান সাদৃশ্যবাচক শব্দ সাধারণ ধর্ম।
২। এও যে রক্তের মতো রাঙা দুটি জবাফুল
উপমান সাদৃশ্যবাচক শব্দ সাধারণ ধর্ম উপমেয়
ব্যাখ্যা – এখানে জবাফুল ও রক্ত দুই বিজাতীয় বস্তু। রাঙা এদের সাধারণ ধর্ম। এ কারণে এখানে উপমা অলংকার হয়েছে।
উপমালংকার চার প্রকার।
যেমন- ১। পূর্ণোপমা।
২। লুপ্তোপমা।
৩। মালোপমা।
৪। প্রতিবস্তুপমা।
কাকু-বক্রোক্তিঃ যখন বক্তার কণ্ঠস্বরের বিশেষ ভঙ্গির জন্য ‘না’ বাচক কথার ‘হ্যা’ বাচক অর্থ হয়, অথবা ‘হ্যাঁ’ বাচক কথার ‘না’ বাচক অর্থ হয়, তখন তাকে কাকু-বক্রোক্তি অলংকার বলে।
যেমন – কে ছেঁড়ে পদ্মের পূর্ণ?
এখানে বক্তার কণ্ঠস্বরের ভঙ্গিতেই উত্তরটি রয়েছে। এবং বিপরীত গুণেই তা প্রকাশিত হচ্ছে। ‘পদ্মের পণ’ কে ছেঁড়ে? এই প্রশ্নের সঙ্গেই উত্তর বোঝা যাচ্ছে-সুতরাং একি একটি ‘কাকু বক্রোক্তি’।
যমকঃ যে শব্দ বাক্যের মধ্যে বার বার ব্যবহৃত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে তাকে যমক বলে।
উদাহরণঃ- (ক) “ভারত ভারত খ্যাত আপনার গুণে।”
ব্যাখ্যা- এখানে ভারত শব্দটি দুবার দুটি অর্থে বসেছে। ১ম ভারত = কবি ভারতচন্দ্র, ২য় ভারত দেশ ভারতবর্ষ।
(খ) “আনা দরে আনা যায় কত আনারস।”
ব্যাখ্যা- এখানে ১ম আনা = ৪ পয়সা, ২য় আনা = আনয়ন করা।
যমক চার প্রকার –
১। আদ্যযমক।
২। মধ্যযমক।
৩। অন্ত্য যমক।
৪। সর্ব যমক।
১। আদ্যযমকঃ চরণের আদিতে যে যমক তাই আদ্য যমক।
যেমন- ভারত ভারত খ্যাত আপনার গুণে। এখানে ১ম ভারত = কবি ভারতচন্দ্র, ২য় ভারত = দেশ ভারতবর্ষ।
২। মধ্যযমকঃ চরণের মধ্যে যে যমক থাকে তাকে মধ্য যমক বলে।
যেমন- পাইয়া চরণ তরী তরি ভবে আশা। এখানে ১ম তরী = নৌকা, ২য় তরি = পার হওয়া বা মুক্তি লাভ করা।
৩। অন্ত্যযমকঃ চরণের শেষে যে যমক, তাই অন্ত্য যমক।
যেমন – ‘যত কাঁদে বাছা বলি সর সর
আমি অভাগিনী বলি সর সর।’
এখানে প্রথম পংক্তিতে ‘সর’ শব্দের অর্থ দুধের সর এবং দ্বিতীয় লাইনের ‘সর’ শব্দের অর্থে সরে যাওয়া।
৪। সর্বযমক- দুই বা ততোধিক চরণের আদি-মধ্য-অন্ত্য শব্দগুলিতে যমক হলে, সর্বযমক হয়।
যেমন- কান্তার আমোদ পূৰ্ণ কান্ত সহকারে।
কান্তার আমোদ পূর্ণ কান্ত সহকারে। (ঈশ্বরগুপ্ত)
এখানে প্রথম চরণের – অর্থ বনভূমি বসন্ত সমাগমে সৌরভময় হয়।
দ্বিতীয় – চরণের অর্থ – দয়িতা দয়িত সঙ্গে আনন্দপূর্ণ হয়।
সমাসোক্তিঃ উপমেয়ের উপর উপমানের ব্যবহার আরোপিত হলে সমাসোক্তি অলংকার হয়। অথবা, নির্জীব পদার্থের উপর সজীব পদার্থের ব্যবহার আরোপ করলে তাকে সমাসোক্তি অলংকার বলে।
যেমন- ১। “তটিনী চলেছে অভিসারে”
ব্যাখ্যা- এখানে নির্জীব তটিনীর উপর (রাধিকার) নারীর ব্যবহার আরোপ করা হয়েছে।
২। “সন্ধ্যা আসিছে অতি ধীর পায়ে দু’হাতে প্রদীপ নিয়ে।”
ব্যাখ্যা – উপমেয় – সন্ধ্যা (অচেতন বস্তু, উপমান – অনুলেখ্য। কাব্যের অংশটি পাঠ করলেই বোঝা যায়, সে হবে একজন গৃহবধূ। এখানে মনুষ্যধর্মের আরোপ হয়েছে।