AHSEC 2021 Advance Bengali Question Paper Solved | দ্বাদশ শ্রেণীর প্রাগ্রসর বাংলা পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান

AHSEC 2021 Advance Bengali Question Paper Solved | দ্বাদশ শ্রেণীর প্রাগ্রসর বাংলা পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান, AHSEC Class 12 Advance Bengali Question Paper Solved PDF Download, দ্বাদশ শ্রেণীর প্রাগ্রসর বাংলা 2021 প্রশ্নপত্র সমাধান করা হয়েছে to each Paper is Assam Board Exam in the list of AHSEC so that you can easily browse through different subjects and select needs one. AHSEC 2021 Advance Bengali Previous Years Question Paper Solved can be of great value to excel in the examination.

AHSEC 2021 Advance Bengali Question Paper Solved

AHSEC 2021 Advance Bengali Question Paper Solved | দ্বাদশ শ্রেণীর প্রাগ্রসর বাংলা পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান

Join Telegram channel

AHSEC Old Question Paper provided is as per the 2021 AHSEC Board Exam and covers all the questions from the AHSEC Class 12 Advance Bengali Solved Question Paper 2021 Bengali Medium. Access the detailed Class 12 Advance Bengali 2021 Previous Years Question Paper Solved provided here and get a good grip on the subject. Access the AHSEC 2021 Advance Bengali Old Question Paper Solved, AHSEC Class 12 Advance Bengali Solved Question Paper 2021 of Bengali in Page Format. Make use of them during your practice and score well in the exams.

ADVANCED BENGALI

2021

ADVANCED BENGALI OLD QUESTION PAPER SOLVED

১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ-

(ক) ‘‘খগরাজ পায় লাজ নাসিকা অতুল॥”

— এখানে ‘খগরাজ’ শব্দে কাকে নির্দেশ করা হয়েছে?

উত্তরঃ গরুড় পাখিকে।

(খ) ‘যবন’ অথবা ‘ফতোয়া’ শব্দের অর্থ লেখো।

উত্তরঃ যবন — ম্লেচ্ছ বা অহিন্দু। 

ফতোয়া — নিৰ্দেশ।

(গ) ‘হায় চিল’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত?

উত্তরঃ ‘মহাপৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।

(ঘ) মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কর্তা কে?

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক নিউটন।

(ঙ) ‘সাহিত্যের উদ্দেশ্য মানুষের ………………….. জাগানো।’ (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)

উত্তরঃ মনকে। 

(চ) ন্যাপলা কে?

উত্তরঃ হারুঘোষের মেজছেলে। 

(ছ) “এই সেদিনও ঘুড়ি লাটাই কিনিবার জন্য দু-মুঠো ভাত বেশী খাইয়া পয়সা আদায় করিয়া লইয়াছিল।” – কার সম্বন্ধে এ কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ কেষ্টর সম্বন্ধে। 

(জ) “আমি কি কোন সর্বনাশীর নাম মুখে এনেচি?” – বক্তা কে?

উত্তরঃ কাদম্বিনী। 

(ঝ) কত সালে ‘মুকুট’ নাটকটি লেখা হয়েছে?

উত্তরঃ ১৯০৮ সালে। 

(ঞ) ‘মুকুট’ নাটকে সর্বমোট কতগুলো দৃশ্য আছে?

উত্তরঃ ১২ টি দৃশ্য আছে। 

(ট) পর্বাঙ্গ কী?

উত্তরঃ পর্বাঙ্গ বলতে পর্বের অন্তর্গত পৃথক পৃথক শব্দকে বুঝায়। (কয়েকটি পর্বাঙ্গ মিলে একটি পর্ব গঠিত হয়। অর্থাৎ একটি পর্বের অনেকগুলি পর্বাঙ্গ থাকতে পারে।)

(ঠ) “চাঁদের মত সুন্দর মুখ।” – কোন অলংকার?

উত্তরঃ উপমা অলংকার। 

২। নির্দেশানুযায়ী সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ-

(ক) টীকা লেখোঃ কাশীরাম দাস

উত্তরঃ মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কাশীরাম দাস সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে কাটোয়ার নিকটবর্তী ইন্দ্রানী পরগণার সিঙ্গীগ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মণী নদীর তীরে এই গ্রাম। তাঁর পিতার নাম কমলাকান্ত দেব। তাঁরা জাতিতে কায়স্থ ছিলেন। কবি নিজে বৈষ্ণবধর্মে আকৃষ্ট হয়ে এই ধর্ম গ্রহণ করেন এবং দাস পদবী লাভ করেন। কাশীরাম দাস মেদিনীপুরে আওয়াম গড়ের রাজার আশ্রয়ে থেকে পাঠশালায় পড়াতেন। কাশীরাম গুরু অভিরাম মুখুটীর আর্শীবাদে ও নির্দেশে ‘ভারত পাঁচালী’ রচনা করেন। সেটি হল সংস্কৃত ‘মহাভারত’-এর অনুবাদ। কাশীরাম দাসকে ‘মহাভারতে’র শ্রেষ্ঠ অনুবাদক বলা হয়। তাঁর অনুবাদিত ‘মহাভারত’ গ্রন্থটি আজও বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে সযত্নে রক্ষিত।

কাশীরাম দাসের ‘মহাভারত’ বেদব্যাসের মূল সংস্কৃত মহাভারতের আক্ষরিক অনুবাদ নয়। বরং বলা যেতে পারে ব্যাসদেব কৃত মহাভারতের ছায়া অনুসরণে বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অনুসারী বাঙালি মাপের। ১টি মহাভারত রচনা করেছেন। বাঙালি চরিত্রের কোমলতা ও ভাবপ্রবণতা মিশিয়ে এবং সেই সঙ্গে বৈষ্ণব ভক্তিরস মিশ্রণ করে এক অপরূপ কাব্য রচনা করেছেন যা বাংলার হৃদয় হরণ করেছে সার্থকভাবে। কবি মধুসূদন লিখেছেন- ‘মহাভারতের কথা অমৃত সমান। হে কাশী, কবীশ দলে তুমি পুণ্যবান।’ সুতরাং কাশীরাম দাস হলেন বাংলা সাহিত্যে সফলতম কবি। বর্তমানে বর্ধমান জেলার সিঙ্গি গ্রামে প্রতি বছর কাশীরাম দাসের স্মৃতিবার্ষিকী সাড়ম্বরে পালিত হয়।

(ঠ) “তব কলকলে

জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।”

– মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘ভ্রান্তির হলনে’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ এখানে ‘কপোতাক্ষ নদের’ কলধ্বনির কথা বলা হয়েছে। কবি ফরাসি দেশের ভার্সাই নগরে বসে কপোতাক্ষ নদের কলধ্বনি শুনতে পান। কিন্তু বাস্তবে এ ব্যাপারটি ছিল কবির স্মৃতিমাত্র। যার জন্য কবি একে ‘ভ্রান্তির ছলনা’ বলেছেন।

(গ) ‘‘বোঝেনাক’ যে সে চারণের বেশে ফেরে দেশে দেশে গান গেয়ে,

গান শুনে সবা ভাবে, ভাবনা কি! দিন যাবে এবে পান খেয়ে

রবেনাক’ ম্যালেরিয়া মহামারী।”

– উদ্ধৃতিটি কোন কবিতার অংশ? কবির নাম কী?

উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতার অংশ।

কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম।

(ঘ) ‘‘এই ভিজে মেঘের দুপুরে

তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে।”

– ‘ধানসিঁড়ি নদী’ কোথায় অবস্থিত? এখানে ‘তুমি’ কে?

উত্তরঃ ধানসিঁড়ি বর্তমান বাংলাদেশের বরিশালে অবস্থিত।

এখানে তুমি বলতে চিলকে বোঝানো হয়েছে।

(ঙ) শূন্যস্থান পূর্ণ করোঃ-

“পনেরো আনা শান্ত এবং এক আনা অশান্ত। পনেরো আনা ……………. এবং এক আনা ………..।”

উত্তরঃ অনাৱশ্যক, আবশ্যক। 

(চ) শিক্ষাদান ও সাহিত্যের ‘ধর্মকর্ম’ এক নয়, স্বতন্ত্র। এ নিয়ে প্রমথ চৌধুরী যে যুক্তি দিয়েছেন, তার একটি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ একটি যুক্তি হলো – শিক্ষা হচ্ছে সেই বস্তু, যা লোকে নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও গলধঃকরণ করতে বাধ্য হয়, অপরপক্ষে কাব্যরস লোকে শুধু স্বেচ্ছায় নয়, সানন্দে পান করে, কেননা শাস্ত্রমতে সে রস অমৃত।

(ছ) বনফুলের প্রকৃত নাম কী? তাঁর যে কোনও একটি উপন্যাসের নামোল্লেখ করো।

উত্তরঃ বনফুলের প্রকৃত বা আসল নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়।

তাঁর একটি উপন্যাসের নাম হলো ‘তৃণখণ্ড’।

(জ) ‘‘আড়াল হইতে জবাব আসিল, আমি।” – এই ‘আমি’ কে? বিষয়টি বিস্তারিত করো।

উত্তরঃ এই আমি হলো কেষ্ট।

একদিন সন্ধ্যার জ্বর বোধ হওয়ায় হেমাঙ্গিনী বিছানায় একা পড়ে রয়েছিলেন, তখন তিনি দেখলেন কে যেন অতি সন্তর্পণে কৰাটের আড়ালে দাঁড়িয়ে উঁকি মারছে তখন হেমাঙ্গিনীর ২য় ডাকে সাড়া দিয়েছিল।

(ঝ) “বড় কুটুম যে গো! তাঁকে তার মত রাখতে হবে ত!’ – ‘বড় কুটুম’ কে? উক্তিটি কার?

উত্তরঃ বড় কুটুম কেষ্ট। উক্তিটি কাদম্বিনীর। 

(ঞ) “ওর বুদ্ধিটা সম্প্রতি বড়োই বেড়ে উঠেছে।” – কে, কার প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন?

উত্তরঃ ইশা খাঁ রাজধর সম্বন্ধে একথা বলেছেন। 

(ট) ‘মুকুট’ নাটকে ত্রিপুরারাজ ও তাঁর সেনাপতির নাম কী?

উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটকের ত্রিপুরারাজের নাম অমরমাণিক্য এবং সেনাপতির নাম ইশাখাঁ।

(ঠ) যতি কাকে বলে?

উত্তরঃ সাধারণত কাব্য পাঠকালে ধ্বনি তরঙ্গ সৃষ্টির জন্য নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বাগ্যন্ত্র যে সাময়িক বিরতি লাভ করে তাকে যতি বলে। অথবা, একটি বাক্য এক নিঃশ্বাসে পাঠ করা যায় না। কথা বলবার সময় মধ্যে মধ্যে আমাদের থামতেই হয়। সুতরাং জিহ্বা যেখানে স্বেচ্ছায় বিশ্রাম করে তাকেই বলে যতি। অথবা এক কথায় বলা যায় জিহ্বার বিশ্রামের জন্য যেখানে থামতে নয় তাকে যতি বলে।

যেমন – আকাশ জুড়ে/ মেঘ করেছে/ সূর্য্যি গেছে/ পাটে

খুকু গেছে/ জল আনতে/ পদ্মদিঘির ঘাটে ৷৷

যতি দুই প্রকার – অর্ধ যতি ও পূর্ণ যতি।

অর্ধযতিঃ কবিতার লাইনে ছন্দ তরঙ্গ সৃষ্টিতে স্বল্পক্ষণের জন্য যে বিরতি; তা অর্ধযতি বা হ্রস্বযতি। যেমন – আকাশ জুড়ে/

পূর্ণযতিঃ কবিতার লাইনের শেষে যে পরিপূর্ণ বিরতি; তা পূর্ণযতি।

যেমন – খুকু গেছে/ জল আনতে/ পদ্মদিঘির ঘাটে ।।

অথবা

সাঙ্গ রূপক কী?

উত্তরঃ উপমেয় ও উপমানের অঙ্গী ও অঙ্গে পরস্পর অভেদ কল্পিত হলে সাঙ্গ রূপক হয়। যেমন – দেহদীপাধারে জ্বলিত লেলিহ যৌবনজয় শিখা।

এখানে উপমেয় দেহ অঙ্গী, এবং তার অঙ্গ যৌবন।

৩। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-

(ক) সম্প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করোঃ

‘‘গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কনফুসি।

স্বরাজীরা ভাবে নারাজী, নারাজীরা ভাবে তাহারে অঙ্কুশি।”

উত্তরঃ আলোচ্য কবিতাংশটি বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের সর্বহারা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আমার কৈফিয়ৎ’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গ – কবি সম্বন্ধে মানুষের যে ধারণা, সে সম্বন্ধে তাঁর অন্তর্জালার বিস্ফোরণ ঘটেছে পংক্তিদ্বয়ের মধ্যে।

কবি মানবতায় বিশ্বাসী। ইসলাম ও হিন্দুধর্ম সম্পর্কে কবির শ্রদ্ধা থাকলেও তিনি ধর্মের গোঁড়ামিকে ঘৃণা করতেন। কবির মতে মানবিক গুণধর্মই মানুষের শ্রেষ্ঠ পরিচয়পত্র। সেই পরিচয়পত্রের কষ্টিপাথরে বিচার না করে মানুষকে তার বহিরঙ্গের ধর্মাচার দিয়ে বিচার করা কবি নজরুলের চিন্তা ও মূল্যবোধের বিরোধী।

‘গোঁড়া-রাম’ অর্থাৎ গোঁড়া রক্ষণশীল সাম্প্রদায়িকগণ কবিকে ভাবেন, তিনি ঈশ্বরে অবিশ্বাসী নাস্তিক, কারণ তাঁর কবিতায় তিনি অনেক সময় ঈশ্বরকে গালাগালি দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ভাবে কবি বিখ্যাত চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াস পন্থী। আবার স্বাধীনতা চান না। আবার যারা স্বাধীনতা চায় না তারা ভাবে কবি তাদের শত্রু অর্থাৎ তিনি স্বাধীনতা চান না।

অথবা

‘‘আবার তাহারে কেন ডেকে আনো? কে হায় হৃদয় খুঁজে বেদনা জাগাতে ভালোবাসো।”

উত্তরঃ আলোচ্য কবিতাংশটি বাংলার রূপ সুধাপানে মগ্ন কবি জীবনানন্দ দাসের ‘মহাপৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘হায়চিল’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গ – কবি তাঁর বিরহি হৃদয়ের পুরোনো ব্যথাকে যে ভুলে থাকতে চান সে কথাটিই এখানে ব্যক্ত করেছেন।

বিষণ্ণ এক বৃষ্টি ভেজা দুপুরে ধানসিঁড়ি নদীর পাশে উড়ন্ত চিলের ডাক কবির কাছে কান্নার মতো মনে হয়। চিলের এই করুণ সুরের ডাক কবির অতীত দিনে হারিয়ে যাওয়া প্রেয়সীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কবির প্রেয়সীর ম্লান চক্ষু তাঁর সামনে ভেসে ওঠে। পৃথিবীর অন্যান্য রাজকন্যাদের মতো সে রূপসী কিন্তু আজ সে জীবিত নয়। চিলের কান্না আবার তাঁর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই কবি চিলকে ওইভাবে কাঁদতে নিষেধ করেছেন। তিনিও তাঁর অতীতকে জাগিয়ে তুলে বেশি ব্যথা পেতে চান না।

(খ) ‘বিপ্রবেশে অর্জুন’ কবিতাটির বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ পরমা সুন্দরী পাঞ্চালরাজ কন্যা দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরসভা বসেছে। তাঁর পাণিগ্রহণ করার জন্য সেখানে ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ক্ষত্রিয় রাজকুমারদের আগমন হয়েছে। ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে অর্জুনও আসেন দ্রৌপদীকে পত্নীরূপে লাভের আশায়। স্বয়ংবর সভায় ঘোষিত হয়েছিল, যে রাজকুমার জলের ছায়া লক্ষ্য করে উপরে টাঙানো মাছের চোখ বিদ্ধ করতে পারবেন তিনিই রাজকন্যার পাণিগ্রহণ করবেন। ক্ষত্রিয় রাজকুমাররা একের পর এক এই লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হলেন। এমন সময় ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশধারী অর্জুন সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। ব্রাহ্মণের এই আস্পর্ধা দেখে রাজকুমারগণ উপহাস করতে আরম্ভ করলেন। রাজপুত্রদের মধ্যে কেউ কেউ ভাবলেন এই ব্রাহ্মণ রাজকন্যার রূপে পাগল হয়ে এরকম প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। অর্জুনের বীরসুলভ আচরণ দেখে কোনো কোনো রাজকুমার বুঝতে পারলেন অর্জুন সাধারণ ব্রাহ্মণ নন। তারা উপলব্ধি করলেন তাঁর চেহারায় কামদেবজয়ী মূর্তি। তাঁর চোখ দুটি পদ্মপাতার মতো কর্ণ পর্যন্ত প্রসারিত। তাঁর অনুপম শ্যামল গাত্র নীল পদ্মের মতো শোভা দিচ্ছে। সিংহের ঘাড়ের মতো তাঁর ঘাড়। তাঁর ঠোঁট দুটি বাঁধুলি ফুলের মতো রাঙ্গা। নাক গরুড় পাখির নাকের চেয়েও উন্নত। হাত দুখানি জানু পর্যন্ত লম্বা। জানু দুখানি তাঁর হাতির শুঁড়ের মতো শক্তিশালী। তাঁর মহাবীর্য মেঘে টাকা সূর্যের মতো। তাঁর হাঁটা চলা মদমত্ত হাতির মতো ধীর লয়ের। তাঁকে দেখে মনে হয় তিনিই মাছের চোখে শর নিক্ষেপ করতে পারবেন। কবি কাশীরাম দাস পাঠক-পাঠিকাদের উদ্দেশ্যে জানাচ্ছেন যে, অর্জুনের পক্ষে কোনো কাজই অসম্ভব নয়।

অথবা

‘কপোতাক্ষ নদ’ সম্পর্কে কবি হৃদয়ের উপলব্ধির পরিচয় দাও।

উত্তরঃ বাংলা কাব্য জগতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র কবি মধুসুদন দত্তের ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটিতে তাঁর মাতৃভূমি ও কপোতাক্ষ নদের প্রতি অন্তরের যথার্থ আকর্ষণ ও ভালবাসার কথাই প্রকাশিত হয়েছে।

সুদূর ফরাসি দেশের ভার্সাই শহরে একাকী বসে কবি তাঁর জন্মভূমির প্রতিটি জিনিসকে স্মরণে এনেছেন। বন্ধু-বান্ধবহীন বিদেশে কবির মনে পড়েছে গ্রাম বাংলার মাঠ, ছায়া শীতল সাগরদাড়ী গ্রাম এবং বাল্য সখা কপোতাক্ষ নদের কথা। তিনি যেন দিব্যকর্ণে শুনতে পান কপোতাক্ষ নদের কলধ্বনি। কবি জানেন যে, এই নদের কলধ্বনি শোনা তাঁর ভ্রান্তি মাত্র।

কবি বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন, বহু নদ-নদীও তিনি দেখেছেন কিন্তু কপোতাক্ষের জল তাঁর নিকট মাতৃ দুগ্ধের ন্যায় মনে হয়েছে। এ জলে তাঁর মনের পিপাসা যেভাবে মিটেছে, তা অন্য কোন নদীর জল মেটাতে পারেনি, কারণ এই নদের সাথে কবির অন্তরের বন্ধন রয়েছে। তাই কপোতাক্ষের কথা স্মরণে আসামাত্র কবি হৃদয়ে বিষাদের সৃষ্টি হয়েছে। নিজের দেশে ফিরে আসা ছিল দরিদ্র কবির চিন্তার বাইরে। তাই কপোতাক্ষ নদকে কবির অনুরোধ, সে যেন তার সমুদ্রগামী জলধারায় মধুসুদনের নাম প্রচার করতে করতে যায়, বঙ্গবাসীর নিকটে প্রবাসী বাঙ্গালী কবির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কপোতাক্ষ নদ যদি বাঙ্গালীর নিকট মধুসুদনের যশোগান করে তবে তিনি তার নিকট চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

(গ) ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় সাধারণ দরিদ্র মানুষের প্রতি কবির যে সহানুভূতি ও দরদের পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ কবি নজরুল ইসলাম ছিলেন মানবতাবাদে বিশ্বাসী কবি। তাঁর কবিতাতে দরিদ্র মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও দরদের পরিচয় পাওয়া যায়। নজরুল আলোচ্য কবিতায় সর্বস্তরের নিপীড়িত মানুষের যন্ত্রণাকে তুলে ধরেছেন এবং সামাজিক শোষণের বিরুদ্ধেও বক্তৃতা দান করেন তাদেরকে ব্যঙ্গ করে পকেটে লঙ্কা গুড়া রাখতে বলেছেন। যাতে দরিদ্র মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা বলে চোখে লঙ্কার গুড়ো দিয়ে জল আনতে পারেন।কবি জানেন সর্বহারা মানুষের জন্য একান্না মায়াকান্না ছাড়া আর কিছু নয়। এই নেতাদের উদ্দেশ্য নিজেদের পকেট ভারি করা।

চাঁদা তুলে স্বরাজ আসবে এই মিথ্যাচারে কবি বিশ্বাসী নন। দেশের দরিদ্র জনসাধারণ সন্তানের ক্ষুধার অন্ন চাঁদা হিসেবে তুলে দিয়েছে। ক্ষুধার্ত শিশুর কান্নায় ভরে গেছে আকাশ-বাতাস। মৃত শিশুকে ঘরে রেখে মা তার সৎকারের জন্য ভিক্ষায় বেরিয়েছে। এসব নির্মম দৃশ্য দেখে কবি অস্থির হয়ে পড়েছেন। তাই তার কলমে প্রকাশিত হয়েছে – ‘প্রার্থনা করো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটির মুখের গ্রাস। যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ।’

অথবা

‘মেরুর ডাক’ কবিতাটিতে মেরুর হাতছানিতে কবি যেভাবে উতলা হয়ে পড়েছেন, তার পরিচয় দাও।

উত্তরঃ পৃথিবীর একেবারে উত্তর প্রান্তে উত্তর মেরু অবস্থিত। শীতলতম পৃথিবীর এই অংশে জীবনধারণ করা অসম্ভব। ভ্রমণ পিপাসু, দুঃসাহসিক অভিযান প্রিয় কবি গ্রীষ্মপ্রধান বাংলাদেশ থেকে এই উত্তর মেরুর ডাক শুনতে পান। এই ডাক তাঁর কাছে বারবার আসে কেননা তিনি এই মেরুকে ভালোবাসেন। মেরুর এইবারের ডাক কবি আর উপেক্ষা করতে পারেন না।

নিসর্গ প্রেমী কবি পৃথিবীর উত্তর মেরুর তুষারময় প্রকৃতিকে স্বচক্ষে দেখতে চান। কল্পনার চোখে কবি সেখানকার পরিবেশটি লক্ষ্য করেছেন। অভিযানে বেরিয়ে কবির অবস্থা বড়ই শোচনীয়। ঝড়ে তাঁর তাবু উড়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে, তার খাবার ফুরিয়ে এসেছে, তার পোষাক জীর্ণ হয়ে গেছে মৃত্যু তার সামনে এসে হাজির তবু তিনি বিন্দুমাত্র ভীত নন। তিনি মেরুর জয়গানও গেয়েছেন। কল্পনার মধ্যে দেখেছেন সেখানে সিন্ধুঘোটক বিশাল দাঁত দিয়ে তুষার মাটি খুড়ে খায়, পেঙ্গুইন পাখির জল ডানার বরফ ঝাপটে উড়ে যায়। সেখানে এক নিস্তব্ধ পরিবেশে মনে হয় কেউ যেন বসে শব সাধনা করছে দিন রাত ধরে। কবি এই পরিবেশ পছন্দ করছেন। তাঁর নৌকার কাছি এবার তীরে বাঁধা থাকতে চাইছে না। তীরের কাছ থেকে মুক্তি চাইছে। মেরুর ডাকে তাঁর যদি মৃত্যুও হয় তথাপি তিনি পিছপা হবেন না। কোনো ভয়কেই তিনি আর ভয় মনে করেন না। 

(ঘ) “আমাদের একমাত্র রক্ষা এই যে, ইহাদের সংখ্যা অল্প।”- এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে? উক্তিটি বিশদ করো।

উত্তরঃ এখানে এক আনা অর্থাৎ মহান ব্যক্তি বা খ্যাতনামা ব্যক্তির সংখ্যা অল্প। এদের সংখ্যা অল্প হওয়ায় লেখক স্বস্তিবোধ করছেন। লেখক সংসারের মানুষকে দুভাগে ভাগ করেছেন – এই দু ভাগ হল এক আনা মহৎ লোক আর পনেরো আনা সাধারণ মানুষ। এক আনা মহৎ লোক মারা গেলে তাদের পাথরের মূর্তি তৈরী করা হয়। সমাধি স্তম্ভের জন্য অধিক জায়গা দখল করা হয়। ফলে এই এক আনার দলের সংখ্যা বেশি হত তাহলে পৃথিবীটা বাসযোগ্য হত না। কারণ সমাধি স্তম্ভে সাধারণ মানুষের কুটির তৈরির স্থান থাকত না।

অথবা

‘‘ছাগলের যতটুকু শিঙ আছে তাহাতে তাহার কাজ চলিয়া যায়, কিন্তু হরিণের শিঙের পনেরো আনা অনাবশ্যকতা দেখিয়া আমরা মুগ্ধ হইয়া থাকি।” – “পনেরো আনা অনাবশ্যকতা’ বলতে রবীন্দ্রনাথ কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তরঃ আলোচ্য সাধারণ সত্যটি রবীন্দ্রনাথ তাঁর পনেরো আনা প্রবন্ধে ব্যক্ত করেছেন। প্রকৃতির সৃষ্টিলীলার মধ্যে যা কিছু অনাবশ্যক, বহুল্য তথা বাড়তি (Extra) তাই যে সুন্দর এ দর্শন ব্যাখ্যা প্রসঙ্গেই আলোচ্য উক্তি।

রবীন্দ্রনাথ নিজের পরিশীলিত আত্মদর্শনের সপক্ষে উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন যে ধনী লোকের ঘরের চেয়ে বাগান বড়ো। ঘর আমাদের অত্যাবশ্যক – এ না থাকলেই নয়। কিন্তু বাগান অতিরিক্ত না হলেও চলে, তবু সেটা অত্যন্ত বড়ো করতে হয়। কিংবা আমরা দেখি ছাগলের ছোটো শিং-এই তার প্রয়োজন মিটে এমন ছোট শিং-এ হরিণের প্রয়োজন মিটতে পারে, অথচ হরিণের শিং অকারণে বড়ো। তাই আমাদের জীবনে বেশি বেশি এবং সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত।

(ঙ) “অতএব সাহিত্যে আর যাই কর না কেন, পাঠক সমাজের মনোরঞ্জন করবার চেষ্টা কোরো না।” – প্রসঙ্গটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ সাহিত্যের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়েই ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধের লেখক এরূপ মন্তব্য করেছেন।

আজকালকের সাহিত্যিকরা নিজেদের সৃষ্টিকে মনোরঞ্জন করে তোলে অন্যের হাতের খেলনা রূপে। সমাজের মনোরঞ্জন করতে গিয়ে সাহিত্য যে তার নিজ বৈশিষ্ট্যকেই হারাতে বসে তার প্রমাণ আমাদের সমাজে প্রচুর আছে কিন্তু সাহিত্যের ধর্ম তা নয়। সাহিত্য ভাণ্ডার যত তথ্য তত্ত্ব আর জ্ঞানে পরিপূর্ণ হচ্ছে ততই যেন তার মধ্যেকার আনন্দ বিসর্জিত হচ্ছে। বিজ্ঞান-ধর্ম-রাজনীতি-দর্শনের কৃত্রিমতা জনপ্রিয়তার মোড়কে সন্তুষ্ট করে না। কারণ পাঠক সমাজ যে উদ্দেশ্য, যে নীতি যে মতামতের জনপ্রিয়তাকে আজ প্রশংসা করছে কাল তাকেই ছুঁড়ে ফেলবে। যারা প্রকৃত সাহিত্য সাধনায় ব্রতী তাঁরা পাঠকের মনোরঞ্জন করবার বিষয়টি থেকে শত হাত দূরে থাকেন।

অথবা

“সাহিত্যে খেলা” প্রবন্ধটির মধ্য দিয়ে লেখক প্রমথ চৌধুরী সাহিত্য সম্বন্ধে যে ধারণাটি তুলে ধরেছেন, তা ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ মানুষের দেহমনের সকল প্রকার ক্রিয়ার মধ্যে ক্রীড়া অর্থাৎ খেলা শ্রেষ্ঠ। কারণ খেলার মধ্যে কোনো স্বার্থ বা উদ্দেশ্য থাকে না। মানুষ আনন্দ পাওয়ার জন্য খেলা করে। কিন্তু যে খেলা থেকে কিছু পাওয়ার থেকে যায় তাকে বলে জুয়া খেলা। এ ব্যাপার সাহিত্যে দেখা যায় না। কারণ ধর্মমতে, লক্ষ্মী পূজার অঙ্গ জুয়া খেলা, সরস্বতী পূজার নয়। সাহিত্যের রস আস্বাদন করার সকলের সমান অধিকার রয়েছে। এ পৃথিবীতে একমাত্র সাহিত্য জগতে খেলার জন্য ব্রাহ্মণ-শূদ্রের মধ্যে কোনো প্রভেদ নেই। সেখানে ধনী-গরীব, উঁচু-নিচু সকলের জন্য প্রবেশের অধিকার আছে। সকলেই শিল্প সাহিত্য জগতে আপন প্রতিভার পরিচয় দিতে পারেন।

সাহিত্যের উদ্দেশ্য আনন্দ দান করা – শিক্ষা দান করা নয়। শিক্ষকের হাতে শিক্ষা অপরের মনের অভাব পূর্ণ করবার উদ্দেশ্যে জন্মলাভ করেছে। আর সাহিত্যের উৎপত্তি ঘটে কবির নিজের মনের পরিপূর্ণতা থেকে। সাহিত্য-বস্তু হল জ্ঞান অনুভূতি সাপেক্ষ, তর্ক সাপেক্ষ নয়। সাহিত্য ছেলের হাতের খেলনাও নয়, গুরুর হাতের বেতও নয়। সাহিত্যে মানবাত্মা খেলা করে এবং সে-ই খেলায় আনন্দ উপভোগ করে।

(চ) “ডাক্তারিতে কিচ্ছু হবে না, কিৎসু হবে না। – বলিয়া আগন্তুক সহাস্যে দক্ষিণ হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুলিটি উন্নত করিয়া আন্দোলিত করিতে লাগিল।” – ‘আগন্তুক’ কে? তিনি কেন এবং কী প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন?

উত্তরঃ আগন্তুক হলো পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে আসা এক পাগল।

গ্রামবাসী যখন সাপটাকে ভিড় করে আছে তখন পাশে একটি বৃক্ষের নিচে বসে এই আগন্তুকটি ছাতু খাচ্ছিল। কলরবে আকৃষ্ট হয়ে ভিড়ের দিকে এগিয় একজন লোককে ভিড়ের কারণ জিজ্ঞাসা করে। কারণ জেনে সে সহাস্যে দক্ষিণ হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুলিটি উন্নত করে বলে ডাক্তারিতে কিছু হবে না, তার কথাবার্তাতে কুসংস্কারে বিশ্বাসী গ্রামবাসীরা মনে করে যে এক মস্ত বড় ওঝার আগমন হয়েছে এবং সে ন্যাপলাকে মন্ত্র পড়ে ঝাড়িয়ে সুস্থ করে তুলবে। কারণ তারা জানে যে সাপে কাটলে ওঝাই লাগে এবং একথাটাই আগন্তুক পাগল লোকটি গ্রামবাসীদের বুঝিয়েছিল।

অথবা

অন্ধবিশ্বাস ও কু-সংস্কার মানুষকে যে কত দুর্ভোগ ও বিপদে ফেলতে পারে, ‘দ্বিবা দ্বিপ্রহরে’ গল্পের মধ্য দিয়ে বনফুল সেটিই বোঝাতে চেয়েছেন – আলোচনা করো।

উত্তরঃ পেশায় চিকিৎসক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় একজন বিজ্ঞানের উপাসক, তাই তিনি তাঁর বিভিন্ন ছোট গল্পে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, যাদুটনা, মন্ত্র ইত্যাদি মানুষকে যে কত বিপদে ফেলতে পারে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। আমাদের আলোচ্য ‘দিবা দ্বিপ্রহবে’ গল্পটিও তার ব্যতিক্রমী নয়।

গল্পটিতে দেখা যায় জনৈক ব্যক্তি হারু ঘোষের মেজ ছেলে ন্যাপলাকে সাপে কামড় দিয়েছে। ডাক্তার এসে কামড়ানো জায়গার উপরে তিন-চারটি জায়গায় বাঁধন দিয়েছে যাতে বিষ মাথায় উঠতে না পারে, তাছাড়া ঔষধ পত্রও দিয়েছে। এতে হয়তো ন্যাপলা সুস্থ হয়ে উঠত। কিন্তু হঠাৎ কোথা থেকে এক পাগল এসে বলে সে মন্ত্রের দ্বারা বিষ ঝাড়িয়ে রোগীকে সুস্থ করে তুলবে। সাধারণ মানুষ এই সাপের বিষ ঝাড়িয়ে নামানো কু-সংস্কারে খুব বেশি বিশ্বাসী। তাই তারি আনন্দে রাজী হয়ে গেল। আনা হল হারু ঘোষের ছেলে ন্যাপলাকে, খোলা হল পায়ের উপরের সব বাধন। এতে বিষ তাঁর সমস্ত শরীর ও মাথায় ছড়িয়ে পড়ে ন্যাপলার মৃত্যু হলো।

সুতরাং, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারে বশীভূত হয়ে মানুষ যে কীরূপ বিপদে পড়তে পারে আলোচ্য গল্পটি তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।

(ছ) ‘মেজদিদি’ অবলম্বনে বিপিন চরিত্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ ‘মেজদিদি’ উপন্যাসে বিপিন চরিত্রটি একটি অন্যতম চরিত্র। তিনি মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর স্বামী ও নবীনের মধ্যম ভাই। বিপিন মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি। তিনি শান্তি প্রিয় মানুষ। নিজের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শান্তিতে থাকতে পছন্দ করেন তিনি। কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত দুই ভাইয়ের পরিবার একই পরিবার ভুক্ত ছিল। পরে পারিবারিক কলহে আলাদা হয়ে যান।

বিপিনের স্ত্রী হেমাঙ্গিনী অত্যন্ত হৃদয়বান মহিলা। তিনি অসহায় সন্তানদের আপন সন্তান হিসেবে কাছে টেনে নিতেন। অন্যদিকে বিপিন হলেন আলাদা ধাঁচের লোক। তিনি ছিলেন আত্মকেন্দ্রিক স্বভাবের লোক। তাই কেষ্টর প্রতি তার কোনো সহানুভূতি ছিল না। কেষ্টকে নিয়ে যখন দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়াঝাটি আরম্ভ হয় তখন বিপিন কেষ্টকে বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছিলেন।

বিপিনের মধ্যে অপরের ধনের প্রতি লোভ লক্ষ্য করা যায়। একবার বিপিন মতি কামারের ভাগ্নের বাগান আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হেমাঙ্গিনীর বিরোধিতার জন্য তা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

বিপিনের মধ্যে সুবিধাবাদী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। হেমাঙ্গিনী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মানসিক শান্তি প্রদানের জন্য বিপিন কেষ্টকে তার বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন হেমাঙ্গিনী সুস্থ হয়ে উঠেন তখন তিনি সেই প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে দেন। হেমাঙ্গিনী বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার কথা বললেও বিপিন তা গ্রাহ্য করেননি। যখন সত্যি সত্যি হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে নিয়ে গৃহত্যাগ করে তখন বিপিন তার কৃতকর্মের জন্য হেমাঙ্গিনীর কাছে ক্ষমা চান এবং শপথ করে বললেন তিনি জীবিত থাকতে তাঁরা দুই ভাই-বোন অর্থাৎ হেমাঙ্গিনী-কেষ্টকে কেউ পৃথক করতে পারবে না। তারপর বিপিন দিদিকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে কেষ্টকে বললেন।

লেখক বিপিন চরিত্রের মধ্য দিয়ে দোষে গুণে মেশানো এক সাধারণ মানুষের বাস্তব চিত্র অঙ্কন করেছেন।

অথবা

‘‘আর দুটি ভাত দাও গো”- কে, কাকে কোন্ প্রসঙ্গে একথা বলেছে?

উত্তরঃ চোদ্দো বছর বয়সে মাকে হারিয়ে অনাথ কেষ্ট বৈমাত্রের বড়ো বোন কাদম্বিনীর সংসারে এসে উঠে। লোকলজ্জার ভয়ে অনিচ্ছার মধ্যেও দিদি তাকে তার সংসারে ঠাঁই দেয়। সৎদিদির সংসারে তার আপ্যায়নটি ছিল অত্যন্ত কদর্য তবু নিরুপায় বলে নারিকেলের খোলায় করে এনে দেওয়া সামান্য তেল মেখে চান করে সে জামাইবাবুর সঙ্গে ভাত খেতে বসে। কেষ্ট গ্রামের ছেলে বিশেষত মায়ের এক ছেলে তাই ভাতটা একটু বেশি খায়। তার ওপর আগের দিন বিকেল থেকে না খেয়ে পরদিন পথটা অনেক হেঁটে এসেছে। বেলাও হয়েছে। এই নানা কারণে সে তার পাতের ভাতগুলো খেয়ে শেষ করেও তার ক্ষুধা মিটে না। তার জামাইবাবু নবীন মুখুজ্জে সামনেই যাচ্ছিল, তা দেখে কাদম্বিনীকে বলে কেষ্টকে আর একটু ভাত দিতে।

(জ) “এই পনেরো-ষোলো বছরের ঘর-কমায় স্বামীর এত বড় ভ্রাতৃভক্তি তিনি ইতিপূর্বে দেখেন নাই।” – কার এবং কোন ভ্রাতৃভক্তির কথা এখানে বলা হয়েছে?

উত্তরঃ এখানে মেজদিদির স্বামী বিপিনের ভ্রাতৃপ্রীতির কথা বলা হয়েছে। বিপিন বড় শান্তিপ্রিয় মানুষ। তিনি নিজের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শান্তিতে থাকতে পছন্দ করেন। কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত বড় ভাই নবীন ও বিপিনের পরিবার একান্নবর্তী পরিবার ছিল।পরে দুই জা-এর মধ্যে কলহের ফলে আলাদা হয়েছেন। বিপিন স্ত্রীকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসতেন। কিন্তু যখন কেষ্টকে নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া ঝাটি বাড়তে থাকে তখন হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে নিজ সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে শুরু করলে, বিপিন তা মোটেই পছন্দ করতেন না। তিনি কেষ্টকে মোটেই ভালো পেতেন না। যখন কেষ্টকে নিয়ে ঝগড়া চরমে পৌঁছে তখন তিনি কেষ্টকে তার বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছিলেন। এবং দুই পরিবারের ঝগড়া বাঁধলে বিপিন স্ত্রীকে ছেড়ে বড় ভাই নবীনের পক্ষ অবলম্বন করে খলভ্রাতৃভক্তির পরিচয় দেখিয়েছেন। এখানে সেই ভ্রাতৃভক্তির কথাই বলা হয়েছে হেমাঙ্গিনীর মুখ দিয়ে। কারণ হেমাঙ্গিনী স্বামীর সঙ্গে ঘরকন্না করছেন প্রায় পনেরো ষোল বছর যাবৎ।

(ঝ) ‘‘হার-জিত তো আল্লার ইচ্ছা, কিন্তু ক্ষত্রিয়ের মনে স্পর্ধা থাকা চাই।”- উক্তিটি কার? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আলোচনা করো।

উত্তরঃ উক্তিটি ত্রিপুরাধিপতি অমরমাণিক্যের সেনাপতি ইশাখাঁর।

রাজধর অস্ত্রগুরু ইশাখাকে তার ব্যবহারের দ্বারা কিংবা অস্ত্রশিক্ষায় সন্তুষ্ট করতে না পারার কথা মহারাজের মুখে শুনে রাজধর যখন অস্ত্রবিদ্যার পরীক্ষা নেওয়ার কথা মহারাজকে প্রার্থনা করেন, তখন মহারাজ খুশি হয়ে তাঁর তিনপুত্রের মধ্যে যিনি পরীক্ষায় বিজেতা হবেন তাঁকে তাঁর হীরে বাঁধানো তলোয়ার পুরষ্কার দিবেন। এই সময়ে রাজধর যখন বলেন- ‘আমাদের অস্ত্র পরীক্ষা নেন’। একথা শ্রবণ করে অত্যন্ত খুশিতে সেনাপতি ইশাখাঁ উপরোক্ত কথাগুলি বলেছিলেন।

(ঞ) “ঠাণ্ডা হও ভাই, ঠাণ্ডা হও। তোমার বুদ্ধি তোমারই থাক্, তার প্রতি আমার কোনো লোভ নেই।” – কে, কাকে একথা বলেছেন? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিষয়টি আলোচনা করো।

উত্তরঃ মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমার কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধরকে একথা বলেছেন।

নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে রাজধর ইশাখাঁকে নিজের নামধরে ডাকতে বারণ করে তার প্রতি অসম্মানের অভিযোগ করে। ঠিক সে সময় মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমার সেখানে এসে প্রবেশ করেন। রাজধরের ঔদ্বত্যকে অস্বীকার করে তাকে ব্যঙ্গ করলে রাজধর ইন্দ্রকুমারের উপর রাগ করে যখন তাকে নির্বোধ বলে উল্লেখ করেন তখন ইন্দ্রকুমার উপরোক্ত কথাগুলি বলেন।

অথবা

“তবে তো সর্বনাশ হবে” – কোন সর্বনাশের কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটকের তৃতীয় অঙ্কে নাটক ধীরে ধীরে অন্তিম পরিণতির দিকে অগ্ৰসর হয়। তার পূর্বের অঙ্কে রাজধর বিশ্বাসঘাতকতা করে ধুরন্ধরের মারফৎ ভাইদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আরাকানরাজের নিকট চিঠি পাঠান। এর ফলস্বরূপ আরাকান বাহিনী দ্বিতীয়বার যুদ্ধ আরম্ভ করে। ইন্দ্রকুমারও তখন এ যুদ্ধ ক্ষেত্ৰ ছিলেন না। যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য বীরের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করে, শক্রসৈন্যের হাতে ক্ষত-বিক্ষত দেহে হাতির উপর হতে লুটিয়ে পড়েন। তখন এর তৃতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে সৈন্যরা যুবরাজের বিপর্যয়ের বিষয়ে আন্তরিক আলোচনা কৰা। তাঁদের মধ্যে গুজব রটে যায় যে যুবরাজকে খঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তিনি আর জীবিত নেই। যুদ্ধক্ষেত্রে তার মৃত্যু হয়েছে। তাই প্রথম সৈনিক দ্বিতীয় সৈনিককে উপরোক্ত উক্তিটি করেছে। 

৪। ‘ক’ এবং ‘খ’ বিভাগ থেকে নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর লেখোঃ

ক-বিভাগ

(ক) মেজদিদি কে? তার চরিত্র বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের কেন্দ্ৰীয় চৰিত্ৰ ‘মেজদিদি’ অর্থাৎ হেমাঙ্গিনী। উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদ থেকে শেষ পরিচ্ছেদ অবধি মেজদিদির সক্রিয় ভূমিকা প্রধান ছিল।

কেষ্টর সৎদিদি কাদম্বিনীর মেজ-জা হলেন হেমাঙ্গিনী। এই সূত্রি কেষ্ট হেমাঙ্গিনীকে মেজদিদি ডাকত। উপন্যাসে কেষ্টর প্রতি অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে সবসময়ই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় মেজদিদি হেমাঙ্গিনীকে। অনাথ কেউ যখন নিরুপায় হয়ে সৎদিদি কাদম্বিনীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়, তখন কাদম্বিনী কেষ্টকে গলগ্রহ বলে মনে করতেন। তিনি কেষ্টর সঙ্গে কখনো ভালো কথা বা ভালো ব্যবহার করেন না – সবসময়ই গালিগালাজ করে থাকেন। কেউ আসার পর দিনই কাদম্বিনী দুটি চাকরের মধ্যে একটিকে বিদায় করে দেন। কেষ্টকে দিয়ে চাকরের কাজ করিয়ে নিতেন। অন্যদিকে হেমাঙ্গিনী অত্যন্ত হৃদয়বান ও স্নেহময়ী নারী। তিনি যেভাবে নিজের সন্তানকে ভালোবাসতেন ঠিক সেভাবে এই অনাথ বালক কেউকেও ভালোবাসেন। মাতৃহীন কেষ্টকে শুকনো ভাত খেতে দেখে হেমাঙ্গিনী সে স্থানে তিনি তার নিজের ছেলে ললিতের কথা ভাবেন। হেমাঙ্গিনীকে বাড়ি থেকে কেউকে এক বাটি দুধ এনে দিতে তখন দেখা যায়। হেমাঙ্গিনী শুধু কেউকে নয়, এর আগেও দেখা যায় বাড়ির রাখাল ছেলেকে স্নেহের সঙ্গে পালন করেন। মতি কামারের ভাগ্নের বাগানখানা তার স্বামীকে অসৎ উপায়ে নিতে দেননি। হেমাঙ্গিনীর কাছ থেকে ছেলে-মেয়েরা স্নেহ-মমতা পেত বলেই সকলেই তাঁকে ভীষণভাবে ভালোবাসত।

কোনো প্রকার অন্যায়ের কাছে হেমাঙ্গিনী মাথা নত করেন নি। তিনি সমস্ত শক্তি দিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করেন। কাদম্বিনীর ন্যায় নির্দয় ও নিষ্ঠুর নারী ও হেমাঙ্গিনীকে মনে মনে ভয় করত। তাঁর প্রতিবাদী ও প্রতিবোধ ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায় কেউকে নিয়ে স্বামী বিপিনের গৃহত্যাগের ব্যাপারে। স্বামী যখন কেষ্টকে চিরদিনের জন্য গৃহে আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন, তখনই হেমাঙ্গিনী সগৃহে ফিরে আসেন। স্নেহশিলা, সহৃদয়তায়; আদর্শ নিষ্ঠায় ও সাহসিকতায় মেজদিদি নিঃসন্দেরে একজন অসামান্য নারী।

অথবা

‘‘আগেকার দিনে যেমন যবনেরা গরু সম্মুখে রাখিয়া রাজপুত সেনার উপর বাণ বর্ষণ করিত, বড়বৌ মেজবৌকে আজকাল প্রায় তেমনি জব্দ করিতেছিলেন।”- উক্তিটির প্রাসঙ্গিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘মেজদিদি’ উপন্যাসে হেমাঙ্গিনী ছিলেন অত্যন্ত হৃদয়বান ও কোমল হৃদয়ের নারী। অপরদিকে তারই বড় জা কাদম্বিনী একজন হৃদয়হীনা কুটিল প্রকৃতির নারী। মেজদিদি অনাথ কেষ্টকে সন্তানের ন্যায় দেখতেন এবং স্নেহ করতেন। কেষ্টকে সব সময় কাদম্বিনীর অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাবার চেষ্টা করতেন, তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার দিতেন। কেষ্ট ও হেমাঙ্গিনীর একে অন্যের প্রতি ভালোবাসাকে কাদম্বিনী মোটেই সহ্য করতে পারতেন না। কেষ্টর প্রতি গালিগালাজ, নিপীড়ন হেমাঙ্গিনীকে ভীষণভাবে আঘাত করত।

কেষ্ট হেমাঙ্গিনীকে খুবই ভালোবাসত, তাই হেমাঙ্গিনীর জ্বর হলে সে দোকান হতে পালিয়ে গিয়ে হেমাঙ্গিনীকে অসময়ের দুটি পেয়ারা এনে দেয়। কাদম্বিনী একথা জানতে পেরে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে এবং পুত্র পাঁচু গোপালকে দিয়ে কেষ্টর কান মলিয়ে দিলেন এবং রাতের আহার বন্ধ করে দিলেন। এ ব্যাপারে হেমাঙ্গিনী সব জানলে দুই জার মধ্যে বিবাদ তুঙ্গে উঠে। কাদম্বিনী হেমাঙ্গিনীর স্বামী বিপিনের কান ভারি করে তুলেন। বাড়ি থেকে কাদম্বিনী প্রায়ই কেউকে নিয়ে হেমাঙ্গিনীকে শ্লেষ ও তীক্ষ্ণ বাক্যবানে জর্জরিত করতেন। একদিন বিকেল বেলা বিপিন ঘরে এসে স্ত্রীকে কিছু কথা শুনিয়ে বললেন, ‘দাদা পর্যন্ত ভারী রাগ করেছেন। তার কিছু সময় পূর্বে কাদম্বিনী স্বামী নবীনকে উপলক্ষ্য করে এবং হেমাঙ্গিনীকে লক্ষ্য করে চিৎকার করে যেসব অপভাষার তীর ছুঁড়ে দিলেন তা মেজদিদি দেখলেন একটিও নিষ্ফল হয়নি। সবকটি বাক্যবাণ হেমাঙ্গিনীকে বিদ্ধ করেছিল, কিন্তু মধ্যখানে ভাসুর থাকায় হেমাঙ্গিনীর সে বাক্যবাণ সহ্য করা ছাড়া উপায় ছিল না।

এই বাক্যবাণকে লেখক একটি উপমার সাহায্যে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আগেকার দিনে যখন মোঘল-পাঠানের সাথে রাজপুতদের যুদ্ধ হত তখন পাঠানরা গরু সম্মুখে রেখে রাজপুত সেনাদের উপর তীর ছুঁড়ত। কারণ রাজপুত সেনারা গরুর উপর তীর ছুঁড়ত না কেননা এটা তাদের ধর্মে আঘাত হানে, তাই পাঠানরা যুদ্ধে জয়ী হত। এখানে কাদম্বিনী ও হেমাঙ্গিনীকে জব্দ করার জন্য স্বামী নবীনকে উপলক্ষ্য করে বাক্যবাণ ছুঁড়েছিলেন।

(খ) “এর মধ্যে একটা রহস্য আছে।” – “মুকুট’ নাটকের প্রাসঙ্গিক ঘটনাবলির বিবরণ দিয়ে ‘রহস্য’টির সুলুকসন্ধান করো।

উত্তরঃ রহস্যটা হলো ‘মুকুট’ ‘নাটকের প্রথম অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যের। অস্ত্র পরীক্ষা শুরু হলে সেনাপতি মনোযোগ সহকারে প্রথমেই যুবরাজকে তীর ছোড়ার আদেশ দেন। তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তারপর কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজঘরের তীরও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কিন্তু রাজাধর এর প্রতিবাদ করে বলে, তার তীর লক্ষ্যবিদ্ধ করেছে অনেকটা দূরে বলে কেউ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না। এরপর ইন্দ্রকুমারের তীর যখন লক্ষ্যবিদ্ধ করে তখন চারদিকে জয় জয় ধ্বনি ওঠে। ইশা খাঁ মহারাজকে জয়ের পুরস্কার ইন্দ্রকুমারের হাতে তুলে দিতে বললে অকস্মাৎ তুমুল প্রতিবাদী হয়ে ওঠে রাজধর বলে, সেই নাকি যথার্থ পুরস্কারের প্রাপক। রাজধরের কথায় ইশা খাঁ লক্ষ্য থেকে তীর এনে দেখেন তীরের ফলার রাজধরের নাম লেখা। ইন্দ্ৰকুমারও তা স্বীকার করেন। চোখের সামনে এতো বড়ো ভুলে মহারাজ বিস্মিত হন। ইশা খাঁ অবিশ্বাস করেন, কিন্তু রাজধর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইন্দ্ৰকুমার সমস্ত কিছু বুঝে নিজের হার স্বীকার করে বলেন বিচার করলে রাজধরের মুখে চুন কালি পড়বে তিনি বংশের লজ্জা প্রকাশ করবেন না। ঈশ্বর এর বিচার করবেন। ইশা খাঁ ইন্দ্ৰকুমারকে তার অস্ত্রশালায় কোন ঘটনা ঘটেছিল কি না তা জানতে চান। আর এই জানার মধ্যেই রহস্যের যবনিকাটুকু লুকিয়ে আছে, অর্থাৎ তীর বদলানোর আসল ঘটনা।

অথবা

টীকা লেখোঃ- (যে কোনও দুটি)

আরাকানরাজ, ইশাখঁ, কর্ণফুলির তীর, গোমতী।

উত্তরঃ আরাকানরাজঃ স্বাধীন ত্রিপুরার প্রতিবেশী রাজ্য আরাকানের রাজাকে বলা হয় আরাকানরাজ। নাটকে জানা যায় মহারাজ অমরমাণিক্য তাঁকে বারবার শিক্ষা দিলেও অর্থাৎ যুদ্ধে পরাস্ত হলেও তিনি ত্রিপুরা আক্রমণে নাছোরবান্দার মতো লেগেছিলেন। রাজধর তাঁকে রাতে তাঁর শিবিরে বন্দী করে। পরে রাজধরের হঠকারিতার জন্য আরাজানরাজের জয় হয়।

ঈশা খাঁঃ ত্রিপুরাধিপতি অমরমাণিক্যের সেনাপতি এবং অমরমাণিক্যের পূত্রগণের অস্ত্রগুরুও ছিলেন ঈশা খাঁ। তিনি ন্যায়পরায়ণ, সত্যনিষ্ঠ, সম্বিবেচক ও দেশপ্রেমিক ছিলেন। আরাকান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কর্ণফুলিঃ কর্ণফুলি একটি নদী। এই নদী বর্তমানে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত। মুকুট নাটকে কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধরের আরাকান রাজের সেনাপতি ইশাখাঁ মুকুটটি কর্ণফুলির জলে ফেলে দেন। এরই প্রতিশোধ নিতে রাজধর দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হন। তিনি ধুরন্ধরকে বলেন তার মুকুটের মতো যুদ্ধজয়কেও তিনি কর্ণফুলি নদীতে নিক্ষেপ করলেন। তাছাড়া নাটকের তৃতীয় অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে যখন যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য মৃত্যুপথযাত্রী তখন এই কর্ণফুলি তীরে অর্জুন বৃক্ষতলায় ইন্দ্রকুমারের অপেক্ষায় প্রহর গুণতে দেখা যায়।

গোমতীঃ গোমতী মুকুট নাটকে উল্লেখিত ত্রিপুরা রাজ্যের একটি নদী। এই নদীতে নাকি পূর্ণিমার রাতে বাঘ জল খেতে আসে। ইশাখাঁ ত্রিপুরারাজ অমরমাণিক্যের সেনাপতি ও রাজকুমারদের অস্ত্রিবিদ্যাশিক্ষা দাতা গুরু। মহারাজ যখন সেনাপতি ইশাখাঁকে পুত্রদের অস্ত্রবিদ্যা পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেন কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধর সহ সকলে পূর্ণিমার রাতে গোমতীতে বাঘ জল খেতে আসবে তখন এই বাঘটিকে শিকার করে তাদের অস্ত্রবিদ্যার পারদর্শিতার প্রমাণ দিবে বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হন। পরিশেষে রাজধর ছল-চাতুরীর দ্বারা মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমারকে পরাজিত করেন।

খ-বিভাগ

৫। (ক) মাত্রাবৃত্ত ছন্দ কাকে বলে? এই ছন্দের চারটি বৈশিষ্ট্য উদাহরণসহ লেখো।

উত্তরঃ যে ছন্দে চরণের পর্বগুলিতে অক্ষরধ্বনি বিশেষ রূপে প্ৰাধান্য পায়া তাকে ধ্বনি প্রধান ছন্দ বলে। বিশেষভাবে মাত্রার পরিমিপের উপর এই ছন্দ নির্ভরলীল বলে এই এবং অন্যান্য সকল একমাত্রার হয়।

উদাহরণ —

বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণঃ-

১। ধ্বনি-প্রধান ছন্দ সর্বদাই গীতিধর্মী।

২। ধ্বনি প্রধান ছন্দের শোষণ শক্তি নাই, পয়ারে রয়েছে।

৩। ধ্বনি-প্রধান ছন্দ বিলম্বিত লয়ের ছন্দ, এজন্য যৌগিক অক্ষরকে দুইমাত্রার ধরা হয়।

৪। এই ছন্দে মূল পর্ব চার, পাঁচ, ছয় বা সাত মাত্রার হয়।

৫। যুক্ত ব্যঞ্জনের পূর্ব স্বরটি দুই মাত্রার হয়।

৬। ধ্বনি প্রধান ছন্দ মূলত সংস্কৃত ও প্রাকৃত ছন্দের আদর্শে গঠিত।

৭। ং ও : এর পূর্বের স্বর দীর্ঘ হয়।

৮। হলন্ত বা ব্যঞ্জনান্ত অক্ষরের স্বর দীর্ঘ।

অথবা

ছন্দোলিপি প্রস্তুত করোঃ

সাগর জলে সিনান করি সজল এলো চুলে

বসিয়াছিলে উপল উপকূলে।

উত্তরঃ (ক) ধ্বনিপ্রধান ছন্দ।

(খ) চরণ – দুটি।

(গ) লয় – বিলম্বিত।

(ঘ) পর্ব সংখ্যা – তিনটি পূর্ণ পর্ব ও একটি অপূর্ণ পর্ব।

প্রথম চরণে এবং দ্বিতীয় চরণে দুটি পূর্ণ পর্ব ও একটি অপূর্ণ পর্ব।

(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৫ + ৫ + ৫ + ২ এবং ৫ + ৫ + ২।

(খ) যে কোনও দুটি অলংকারের সংজ্ঞা ও একটি করে উদাহরণ দাওঃ-

শ্লেষ, ব্যজন্তুতি, বিরোধাভাস, ছেকানুপ্রাস, লুপ্তোপমা।

উত্তরঃ শ্লেষঃ – শেষ হলো শব্দালংকার। যখন একটি শব্দ মাত্র একবার ব্যবহার হয়, অথচ ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে শ্লেষ অলংকার বলে।

যেমন – কে বলে ঈশ্বরগুপ্ত ব্যপ্ত চরাচর।

যাহার প্রভায় প্রভা পায় প্রভাকর।৷ (ঈশ্বরগুপ্ত)

ব্যাখ্যা – ১। এখানে প্রথম ঈশ্বরগুপ্ত – কবি ঈশ্বরগুপ্ত

দ্বিতীয় ঈশ্বরগুপ্ত – ভগবান লুক্কায়িত।

২। প্রথম প্রভাকর – পত্রিকার নাম।

দ্বিতীয় প্রভাকর – সূর্য।

শ্লেষ দু-প্রকার। যেমন- সভঙ্গ শ্লেষ, অভঙ্গ শ্লেষ।

সভঙ্গ শ্লেষঃ যে শ্লেষ অলংকারে শব্দটি অক্ষুণ্ণ থাকে এবং তাকে ভাঙলে ভিন্ন।অর্থ প্রকাশ করে তাকে সভঙ্গ শ্লেষ বলে।

যেমন – “পৃথিবীটা কার বশ? পৃথিবী টাকার বশ।”

এখানে ‘পৃথিবী’ ও ‘টা’ বিশ্লেষিত করে ‘টা’-র সঙ্গে কার যোগে উত্তর পাওয়া যাচ্ছে। এখানে সভঙ্গ শ্লেষ।

অভঙ্গ শ্লেষঃ শব্দকে না ভেঙ্গে যে শ্লেষ অলংকারের বিভিন্ন অর্থ পাওয়া যায় তাকে অভঙ্গ শ্লেষ বলে।

যেমন – পূজা শেষে কুমারী বলল, ঠাকুর

আমাকে একটি মনের মত বর দাও।

এখানে ‘বর’ একটি শব্দ; একবার মাত্র ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু দুরকম অর্থ প্রকাশ করেছে।

১। বর – আশীর্বাদ।

২। বর – স্বামী।

অর্থালংকারঃ- যে অলংকার অর্থের আশ্রয়ে সৃষ্ট, যা অর্থের উপরই সম্পূৰ্ণ নির্ভরশীল, তাকেই অর্থালংকার বলে। 

অর্থালংকারকে মোটামুটি পাঁচ ভাগে ভাগ কৰা যায়। যেমন—

১। সাদৃশ্যমূলক। 

২। বিরোধমূলক।

৩। শৃঙ্খলামূলক।

৪। ন্যায়মচলক। 

৫। গূঢ়ার্থমূলক।

ব্যাজম্ভুতিঃ ব্যাজস্তুতি একটি গূঢ়ার্থমূলক অর্থালঙ্কার। যে অলঙ্কারে নিন্দার ছলে স্তুতি ও স্তুতির ছলে নিন্দা প্রকাশ পায়, তাকে ব্যাজস্তুতি বলে। ব্যাজ শব্দের অর্থ – ছল, কপট।

যেমন- ১। “অতি বড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ।

কোন গুণ নাহি তার কপালে আগুন।”

ব্যাখ্যা – এখানে মহাদেবের নিন্দার ছলে স্তুতি করা হয়েছে।

২। সভাজনশুন জামাতার গুণ বয়সে বাপের বড়।

কোন গুণ নাই, যেথা সেথা ঠাই, সিদ্ধিতে নিপুণ বড়।

ব্যাখ্যা – এখানে বক্তা দক্ষ নিন্দা অর্থেই বাক্যগুলি প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু কবি অপর অর্থ ইঙ্গিত করে শিব নিন্দার ভাগী হতেছেন না। এইভাবে নিন্দাচ্ছলে স্তুতি হওয়ায় ব্যস্তৃতি অলংকার হয়েছে।

বিরোধাভাসঃ বিরোধাভাস একটি বিরোধমূলক অলংকার। যদি দুটি বস্তুকে আপাত দৃষ্টিতে পরস্পর বিরোধী মনে হয়, অথচ তাৎপর্য বিশ্লেষণে সে বিরোধ থাকে না। তখন তাকে বিরোধাভাস অলঙ্কার বলে।

যেমন- ১। বড় যদি হতে চাও ছোট হও তবে।

ব্যাখ্যা – এখানে বড় অর্থে মহান এবং ছোট অর্থে বিনয়ী সুতরাং প্রকৃত কোন বিরোধ বিরোধ নেই।

২। ‘মক্ষিকাও গলে না গো পড়িলে অমৃত হ্রদে।’

ব্যাখ্যা – হ্রদে পড়া এবং মল্লিকা গলে না যাওয়া পরস্পর বিরোধী ব্যাপার। কিন্তু এখানে হ্রদটি অমৃতের, অমৃত ধ্বংস করে না, অমর করে, সুতরাং এখানে বিরোধের অবসান ঘটেছে।

হেকানুপ্রাসঃ দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি, একইক্রমে, যদি দুবার মাত্র ধ্বনিত হয়, তবে তাকে ছেকানুপ্রাস বলে।

যেমন- এখনি অন্ধ বন্ধ করো না পাখা।

ব্যাখ্যা- এখানে ‘ন্ধ’ একটি যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ। এটি একই ক্রমে দুবার মাত্র ধ্বনিত হয়েছে, এবং শব্দ সাম্য সৃষ্টি করেছে। তাই চরণটি হয়েছে ছেকানুপ্রাস।

লুপ্তোপমাঃ যে উপমা অলংকারকে উপমার চারটি অঙ্গের মধ্যে উপমেয় ছাড়া অন্য একটি বা দুটি অঙ্গ অনুল্লেখিত থাকে, তাকে লুপ্তোপমা বলে।

যেমন – বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।

এখানে সাদৃশ্যবাচক শব্দ ‘যেমন’ লুপ্ত আছে বলিয়া লুপ্তোপমা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top