AHSEC 2020 Advance Bengali Question Paper Solved | দ্বাদশ শ্রেণীর প্রাগ্রসর বাংলা পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান

AHSEC 2020 Advance Bengali Question Paper Solved | দ্বাদশ শ্রেণীর প্রাগ্রসর বাংলা পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান, AHSEC Class 12 Advance Bengali Question Paper Solved PDF Download, দ্বাদশ শ্রেণীর প্রাগ্রসর বাংলা 2020 প্রশ্নপত্র সমাধান করা হয়েছে to each Paper is Assam Board Exam in the list of AHSEC so that you can easily browse through different subjects and select needs one. AHSEC 2020 Advance Bengali Previous Years Question Paper Solved can be of great value to excel in the examination.

AHSEC 2020 Advance Bengali Question Paper Solved

AHSEC 2020 Advance Bengali Question Paper Solved | দ্বাদশ শ্রেণীর প্রাগ্রসর বাংলা পুরনো প্রশ্নপত্র সমাধান

Join Telegram channel

AHSEC Old Question Paper provided is as per the 2020 AHSEC Board Exam and covers all the questions from the AHSEC Class 12 Advance Bengali Solved Question Paper 2020 Bengali Medium. Access the detailed Class 12 Advance Bengali 2020 Previous Years Question Paper Solved provided here and get a good grip on the subject. Access the AHSEC 2020 Advance Bengali Old Question Paper Solved, AHSEC Class 12 Advance Bengali Solved Question Paper 2020 of Bengali in Page Format. Make use of them during your practice and score well in the exams.

ADVANCED BENGALI

2020

ADVANCED BENGALI OLD QUESTION PAPER SOLVED

১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ-

(ক) ‘আস্তর সুখাএ মোর কাহ্ন অভিলাসে।

বাসলী শিরে বন্দী গাইল চণ্ডীদাসে।৷’

– এখানে ‘বাসলী’ শব্দে কাকে নির্দেশ করা হয়েছে?

উত্তরঃ এখানে ‘বাসলী’ শব্দে বাসলী বা বাগুলি নামক লৌকিক দেবীকে নির্দেশ করা হয়েছে।

(খ) ‘মাস্তুল’ অথবা ‘কাফের’ শব্দের অর্থ লেখো।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

উত্তরঃ মাস্তুল — নৌকার পাইল দণ্ড। 

কাফের — বিধর্মী। 

(গ) ‘ভালবাসার অত্যাচার’ পাঠটির রচয়িতা কে?

উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(ঘ) যে লোক ধনী, ঘরের চেয়ে তাহার …………………. বড়ো হইয়া থাকে। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)

উত্তরঃ বাগান। 

(ঙ) ‘কুশীলব’ শব্দের অর্থ লেখো।

উত্তরঃ কুশীলব — যাচক, নট, কবি।

(চ) ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তরং প্রমথ চৌধুরী। 

(ছ) “দিবা দ্বিপ্রহরে’ গল্পের লেখক কে?

উত্তরঃ বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। 

(জ) ‘ছেলেটি যে অতিশয় লাজুক ও ভীরু স্বভাব, হেমাঙ্গিনী তাহা পূর্বেই টের পাইয়াছিলেন।’ – এই ছেলেটি কে?

উত্তরঃ কেষ্ট। 

(ঝ) হেমাঙ্গিনীর বড়ো জায়ের নাম কী?

উত্তরঃ হেমাঙ্গিনীর বড়ো জায়ের নাম কাদম্বিনী।

(ঞ) ‘মুকুট’ কোন শ্রেণীর রচনা?

উত্তরঃ মুকুট একটি নাটক।

(ট) ‘মুকুট’ নাটকের কনিষ্ঠ রাজকুমারের নাম লেখো।

উত্তরঃ রাজধর।

(ঠ) ‘পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’- কোন অলংকার?

উত্তরঃ উৎপ্রেক্ষা।

২। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ-

(ক) ‘বারিরূপ কর তুমি; এ মিনতি গাবে

বঙ্গজ জনের কানে, সথে, সখারীতে’

— ‘সখা’ বলে কবি কাকে সম্বোধন করেছেন? উদ্ধৃতিটি কোন কবিতার অংশ?

উত্তরঃ ‘সখা’ বলে কবি কপোতাক্ষ নদকে সম্বোধন করেছেন।

উদ্ধৃতিটি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার অংশ।

(খ) “ভক্তরা বলে, “নবযুগ-রবি।

যুগের না হই হুজুগের কবি।”

— ‘হুজুগের কবি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তরঃ এখানে রবি হলেন রবীন্দ্রনাথ, আর নবযুগ রবি কাজী নজরুল ইসলাম।

নিজের কাব্য এবং কবি হিসেবে নিজের অবস্থান সম্পর্কে এ হল কাজী নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত মূল্যায়ন। নিজের কবি প্রতিভার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে কবি এখানে ইঙ্গিত দিয়েছেন একটি যুগের সার্বিক বৈশিষ্ট্য আত্মস্থ করে একজন কবি শ্রেষ্ঠ কবিরূপে স্বীকৃত হন। নজরুলের কাব্যের সিংহভাগ জুড়ে আছে সমসাময়িক ঘটনার উত্তালতা। সে যাই হোক নজরুল প্রেমীদের কাছে তিনি নবযুগের আলোক বিতরণকারী সূর্যের মতো। তাঁকে তাঁর ভক্তরা অত্যন্ত শ্রদ্ধা করত। নজরুলের কাছে এটাই ছিল সবচাইতে বড় উপহার। তাই তিনি বলতেন যুগের কবিরূপে স্বীকৃত না হলেও তাঁর দুঃখ নেই। হুজুগের কবি হিসেবে নিজের পরিচয় উপস্থিত করতে পেরেই তিনি গৌরববোধ করছেন।

(গ) “ভুলেছে ভীষণ ভার, ভুলে গেছে প্রত্যহের ভার।” – উদ্ধৃতিটি কোন কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে? কবি কে?

উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

কবি বুদ্ধদেব বসু।

(ঘ) “দুইটি মাত্র মূলসূত্রে সমস্ত মনুষ্যের নীতিশাস্ত্র কথিত হইতে পারে।” – সূত্র দুটি কি কি? 

উত্তরঃ আত্মসম্বন্ধীয় এবং অপরটি হল পরসম্বন্ধীয়। 

(ঙ) “তাঁহারা আমাদিগকে তাড়না করিয়া বলিতেছেন, ‘ওঠো, জাগো, কাজ করো, সময় নষ্ট করিয়ো না।”

— ‘তাঁহারা’ কারা? সময় নষ্ট করিলে কী হবে বলে তাঁরা ভাবেন?

উত্তরঃ তাঁহারা হলেন নীতিবিদরা। সময় নষ্ট করলে তাদের মতে জীবন বৃথা যাবে।

(চ) ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির রচয়িতা কে? তিনি কোন ছদ্মনামে সাহিত্যক্ষেত্রে পরিচিত ছিলেন?

উত্তরঃ ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির রচয়িতা প্রমথ চৌধুরী। তিনি ‘বীরবল’ ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন।

(ছ) “বল্লমবিদ্ধ প্ৰকাণ্ড বিষধর ভয়াবহ ফণা তুলিয়া তর্জন-গর্জন করিতেছে।”

— বল্লমবিদ্ধ প্রকাও বিষধরটি কী? তাকে কে বল্লমবিদ্ধ করেছে?

উত্তরঃ প্রকাণ্ড বিষধরটি হলো একটি গোখরো সাপ। বিশু বাগদী নামে পাড়ার এক সাহসী যুবক তাকে বল্লমবিদ্ধ করেছে।

(জ) “বড় কুটুম যে গো! তাঁকে তার মত রাখতে হবে ত !” – ‘বড় কুটুম’ কে? উক্তিটি কার?

উত্তরঃ বড় কুটুম হলেন কেষ্ট। উক্তিটি কাদম্বিনীর। 

(ঝ) “তিনি দলিতা ভূজঙ্গিনীর মতো স্বামীর মুখের পানে একটিবার চাহিয়াই চোখ ফিরাইয়া লইয়া কহিলেন, আর এখানে তুই আসিস্ নে যা !” – ‘দলিতা ভুজঙ্গিনী’র স্বামীর নাম কী? তিনি কাকে আসতে বারণ করলেন?

উত্তরঃ দলিতা ভুজঙ্গিনীর স্বামীর নাম বিপিন। কেষ্টকে তিনি আসতে বারণ করেন।

(ঞ) “দুর্বল লোকের পক্ষে অপমান পরিপাক করবার শক্তিটাই ভালো, শোধ তোলবার শখটা তাঁর পক্ষে নিরাপদ নয়।”- উক্তিটি কার? কাকে উদ্দেশ্য করে এ-কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ উক্তিটি রাজধরের মামাতো ভাই ধুরন্ধরের।

রাজধরকে উদ্দেশ্য করে একথা বলা হয়েছে।

(ট) “আমার ভাই হামচু রয়েছে। সৈন্যরা তাকেই রাজা করবে, যুদ্ধ যেমন চলছিল তেমনি চলবে।” – হামচু কে? কোন যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ হামচু আরাকান রাজের ভাই।

এখানে আরাকানরাজের যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।

(ঠ) কবিতার ছন্দের আলোচনায় মাত্রা বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ মাত্রাঃ যার দ্বারা ছন্দে ধ্বনির পরিমাপ করা হয় তাকেই বলে মাত্রা। অথবা, একটি অক্ষর উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে, সে সময়টুকুকে আমরা ‘মাত্রা’ বা ‘কলা’ বলতে পারি।

যেমন – ‘আমরা’ শব্দে অক্ষর দুটি আছে – ‘আম’, ‘রা’। ‘আম’ বা ‘রা’ উচ্চারণে যে সময় লেগেছে তা হল ‘মাত্রা’ বা ‘কলা’।

বাংলা ছন্দে দু-প্রকার মাত্রার সন্ধান পাওয়া যায়।

যেমন – একমাত্রা, দু-মাত্রা।

একটি মুক্ত অক্ষরা বা অপ্রসারিত অক্ষর উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে তাকে এক মাত্রা বলে।

একটি রুদ্ধ বা প্রসারিত অক্ষর উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে তাকে দু-মাত্রা বলে।

যেমন – ‘সকল’ শব্দে দুটি অক্ষর রয়েছে- স, কল। লক্ষ্য করা যায় ‘স’ উচ্চারণ করতে যে সময় লেগেছে, কল উচ্চারণে তার থেকে বেশি সময় লাগে ‘স’ মুক্ত অক্ষর। এর উচ্চারণ স্বাভাবিক ও অপ্রসারিত। এটি উচ্চারণ করতে যে সময় লেগেছে, তাকে একমাত্রা বলে। ‘কল’ হলো রুদ্ধ অক্ষর। এটি উচ্চারণ করতে যে সময় লেগেছে, তাকে বলে দু-মাত্রা।

অথবা

সংজ্ঞা লেখোঃ- স্তবক অথবা অক্ষর।

উত্তরঃ স্তবকঃ দুই বা ততোধিক চরণ পর পর সন্নিবিষ্ট হলে সেই চরণ সমষ্টিকে স্তবক বলা হয়। যেমন –

যেদিন আমারে ডেকেছিলে তুমি জানি

বীণাখানি মোর দিন তব হাতে আনি,

ফুলে ফুলে আজ তাই নিয়ে কানাকানি। তিন চরণের স্তবক।

অক্ষরঃ ছন্দের আলোচনায় অক্ষরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমরা মনের ভাব প্রকাশ করে থাকি বাক্য দ্বারা। এই বাক্যকে বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই কতকগুলি পদ বা বিভক্তিযুক্ত ও বিভক্তিহীন শব্দ। আবার এই শব্দকে বিশ্লেষণ করে একেবারে গোড়ায় গেলে পাওয়া যায় কতগগুলি ধ্বনি যার লিখিত রূপ বর্ণ। এখানে একটু সতর্কতার প্রয়োজন আছে। সাধারণতঃ বাংলা ব্যাকরণে ‘বর্ণ’ ও ‘অক্ষর’ সমার্থক বলে বিবেচিত হয়ে থাকে, কিন্তু ছন্দের ক্ষেত্রে এ দুটি শব্দকে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়।

৩। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-

(ক) সম্প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করোঃ

‘বঙ্গ দেশে দেখিয়াছি বহু পদ-দলে,

কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?

দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে।’

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু বাংলা কাব্য জগতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র কবি মধুসূদন দত্তের ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’ নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘কপোতাক্ষ নদ’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গ – কবি প্রবাস জীবনে থাকা সত্ত্বেও তার দেশোয়ালি কপোতাক্ষ নদের কথা যে স্মরণে আছে তাই প্রকাশিত হয়েছে।

কবি তাঁর জন্মভূমি ছেড়ে সুদুর ফ্রান্সে জীবন যাপন করছেন। নানা দেশের নদ-নদী দেখেছেন কিন্তু স্বদেশের নদীর প্রতি কবির প্রাণের টান ছিল গভীর। তিনি বিদেশের বৈভবের মধ্যে শান্তি খুঁজে পান না। তাঁর মনে জেগে থাকে স্বদেশের জন্য এক অপুরণীয় তৃষ্ণা। একমাত্র স্বদেশই পারে তাঁর সেই তৃষ্ণা মেটাতে।

কবি জন্মভূমিকে মাতৃস্তন রূপে কল্পনা করেছেন, আর কপোতাক্ষকে কল্পনা করেছেন মাতৃস্তনে প্রবাহিত স্তন দুগ্ধ রূপে। মা যেমন তার স্তনদুগ্ধ দ্বারা সন্তানকে পুষ্ট করে তুলেন, কবির জন্মভূমি জননীও তেমনি তার কপোতাক্ষ নদের দুগ্ধরূপ বারি দ্বারা কবির মানসিক পুষ্টি সাধন করেছেন।

অথবা

‘‘যদি ক্লান্তি আসে, যদি শাস্তি যায়,

যদি হৃৎপিণ্ড হতাশায় ডম্বরু বাজায়,

রক্ত শোনে মৃত্যুর মৃদঙ্গ শুধু; – তবুও মনের

চরম চূড়ায় থাক সে-অমর্ত্য অতিথি-ক্ষণের চিহ্ন”

উত্তরঃ আলোচ্য ব্যাখ্যানীয় অংশটুকু আধুনিক কবি বুদ্ধদেব বসু রচিত ‘প্রত্যহের ভার’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গ – এখানে কবির আশাবাদী মনের পরিচয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

কবি আপন বৈশিষ্ট্যে ভাস্কর। কবিতার ক্ষেত্রে তিনি যে ভাবে কথা বা ভাষাকে ছন্দোবন্ধ করেছেন তা প্রশংসনীয়। আত্মবিশ্বাসী কবি জানেন কালের আবর্তনে সব কিছুই বিনাশ হয়ে যাবে, কিন্তু তাঁর কবিতার বাণীর বিনাশ নেই। তিনি জানেন নিয়তির নিষ্ঠুর চক্রে, সময়ের বক্রগতিতে শরীরে ক্লান্তি নেমে আসে। মনের শান্তি চলে যায়। জীবন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার হতাশা ব্যঞ্জক ডম্বরু বুকের ভিতর বাজতে থাকে। দেহের রক্ত শুনতে পায় মৃত্যুর পরাস্ত। কারণ কবি তাঁর কবিতার বাণীকে চরম শিখরে স্থান দিয়েছেন। কালের প্রবাহে তা ভাসমান। কালের গতি তাঁর কবিতার কাছে স্তব্ধ, অচল।

(খ) ‘দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে’ – পংক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতার এই ছত্রে কবি নজরুল ইসলামের অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের আনীত অভিযোগগুলির মধ্যে একটি। নজরুলের কবিতায় প্রচুর হিন্দু পুরাণের দেবদেবীর নাম দেখা যায়। তিনি অপূর্ব সব শ্যামা সঙ্গীত, আগমনী, বিজয়া প্রভৃতি রচনা করেছিলেন। মুসলমান মোল্লারা এতে রেগে গিয়ে তাকে মুসলমান সমাজ থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলতেন।

অথবা

‘মেরুর ডাক’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।

উত্তরঃ সাহিত্যে নামকরণ এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই নামকরণ কোন বস্তুর বা ব্যক্তির পরিচয়ের মাধ্যম হয়। সাহিত্যে শিল্পীরা গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা ইত্যাদির নামকরণ করে থাকেন। এই নামকরণ হয়ে থাকে প্রধান চরিত্রের নামানুসারে, কাহিনী বৃত্তের উপর নির্ভর করে। কবি প্রমথনাথ বিশী কবিতাটির নামকরণ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে করেছেন। কবি বাস্তব জগতে উত্তর মেরু ভ্রমণ করেননি। তিনি কল্পনার মধ্যে সে কাজ করেন। কবি কল্পনা তুষারাবৃত উত্তরমেরু তাঁকে মেরু অভিযানে ডাকছে। কবি জানেন সেখানে নানা ধরনের বিপদ রয়েছে, প্রাণ নাশের আশঙ্কা আছে, তা সত্ত্বেও তার ডাক শুনে কীভাবে ঘরের চার দেওয়ালে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। কবি কল্পনায় দেখছেন হিমের বাতাসে অভিযান তরী মরণ সাদা পাল তুলেছে। রিক্ত শাখার মাস্তুলে জাহাজগুলি ডাকছে। বাতাসের গতি এত প্রবল তা যেন দ্রুতগতি সম্পন্ন ঘোড়ার তীক্ষ্ণ হ্রেষার সমতুল্য। প্রবল বাতাসের বেগে অভিযাত্রীর টানানো তাঁবুর কানাৎ উড়ছে। খাদ্যের পুঁজি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এরূপ পরিস্থিতে কবির মনে হচ্ছে মৃত্যু বুঝি মুচকি হাসে।

কবি শেষপর্যন্ত কল্পনার জগত ছেড়ে বাস্তবের জগতে এসে বলছেন, তুষার মেরু দেখার জন্য তার মন ছটফট করছে। আর পৃথিবীর কোমল বাহু ভালো লাগছে না কবির। তিনি বাস্তবে মেরু অভিযানে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। সুতরাং কবিতাটির বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে বলা যায় কবিতাটির নামকরণ সার্থক ও যথাযথ।

(গ) ‘হায় চিল’ কবিতার মধ্যে কবির প্রকৃতি চেতনার যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা আলোচনা করো।

উত্তরঃ কবি জীবনানন্দ দাশের লেখনীর প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রকৃতি চেতনা। তাঁর সাহিত্যে প্রকৃতি ও মানুষের মেলবন্ধনের অপরূপ ছবি দৃষ্টিগোচর হয়। কবি প্রকৃতির নানা রূপ, রঙ, রহস্য ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগ করে একের পর এক আপনভঙ্গীতে করে গেছেন অনবদ্য সৃষ্টি। জীবনানন্দের ‘মহাপৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘হায় চিল’ কবিতার মধ্যে কবির প্রকৃতি চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। ধানসিঁড়ি নদীর পাশে আকাশের চিলকে কেঁদে কেঁদে উড়তে দেখেন কবি। চিলের এই করুণ কান্নার ফলে কবির আপন প্রেমিকার ম্লান চোখ মনে পড়ে যায়। কবির প্রিয়া আজ কবির কাছে নেই। কবির অন্তরে রয়েছে বিচ্ছেদ বেদনা। কবিতার ছন্দের মধ্যে প্রকৃতির স্পর্শে প্রস্ফুটিত হয়েছে কবির অন্তহীন অন্তর বেদনা।

অথবা

‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় নজরুল ইসলাম তাঁর রাজনৈতিক জীবন-সম্পর্কে যে কৈফিয়ৎ দিয়েছেন, তা বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ কবি নজরুল ইসলাম সাম্যবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। মানুষের অন্তরে তিনি ঈশ্বরের দর্শন পেয়েছিলেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না। নজরুল যখন সাহিত্যে বিচরণ করতে আরম্ভ করেন তখন দেশজুড়ে জাতীয় কংগ্রেসের ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন চলছিল। তখন কিছু রাজনৈতিক নেতারা আপন স্বার্থসিদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে স্বরাজের নামে চাঁদা আদায় করছিল। কিন্তু সে চাঁদা কতটুকু স্বরাজের কাজে লেগেছে তা বলা দুঃসাধ্য। সে সময় সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য, অনাহারে দিনযাপন করতে হচ্ছিল। কোনো-কোনো রাজনৈতিক নেতারা আপন স্বার্থের জন্য সাধারণ মানুষকে বিপথে চালনা করে। কবি স্বরাজে এরূপ দৃশ্য দেখে বিদ্রূপ করেছেন। তিনি ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েদের অনাহারে কাঁদতে দেখেছেন। এর ফলে তাঁর স্বরাজের নেশা চলে যায়। স্বরাজের আশায় সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক নেতাদের হাতে তাদের শেষ সম্বলটুকু দান করে দেয়। কিন্তু সেই রাজনৈতিক নেতারা তাদের অভাব-অনটনে একবারও সহযোগিতার হাতে এগিয়ে দেয় না। নজরুল সেই স্বার্থপর ও সুযোগ সন্ধানী নেতাদের আলোচ্য কবিতায় ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ ও নিন্দা করেছেন।

(ঘ) ‘ভালবাসার অত্যাচার’ নিবারণ সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কী বলেছেন, সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ মানুষ চিরকাল ভালবাসার অত্যাচারে পীড়িত।

লেখকের মতে দুটি উপায়ে ভালবাসার অত্যাচার নিবারণ করা যায়।

প্রথমতঃ ভালোবাসার দ্বারা ভালোবাসার অত্যাচার নিবারণ – এক্ষেত্রে ভালোবাসাকে নিঃস্বার্থ হতে হবে। কারণ ভালবাসার স্বরূপই হলো অস্বার্থপরতা। যে মা তার ছেলের সুখের কামনায় ছেলের মুখ দেখার কামনাকে ত্যাগ করতে পারেন তিনিই যথার্থ স্নেহবতী। যে প্রেমিকা প্রেমিকের মঙ্গলের জন্য নিজের প্রেমের সুখ ভোগ ত্যাগ করতে পারে সেই যথার্থ প্রেমিকা।

দ্বিতীয়তঃ ধর্মের অনুশাসনে মনে রাখতে হবে যে ধর্মের মূল কথা হলো ‘পরের অনিষ্ট করিও না, সাধ্যানুসারে পরের মঙ্গল করিও।’ অতএব এই ধর্মনীতির মূলসূত্রগুলিকে অবলম্বন করলেই ভালোবাসার অত্যাচার নিবারণ সম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় – যখন কোন স্নেহশীল ব্যক্তি তাঁর স্নেহের পাত্রের কাজে হাত দিতে যায় তখন তাকে মনে রাখতে হবে যে শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য বা খ্যাতির জন্য‍ অন্যের অনিষ্ট সে করবে না। সেক্ষেত্রে আমার যতই কষ্ট হোক না কেন তবু কারোর খারাপ হয় এমন কাজ করব না। এই মনুষ্য ধর্মই ভালোবাসার অত্যাচারের একমাত্র নিবারক।

উদাহরণ হিসেবে এখানে আমরা রামায়ণের কথা আনতে পারি। সেখানে দেখি রাজা দশরথ রামচন্দ্রকে বনে পাঠাবার পিছনে তার যশবৃদ্ধি (খ্যাতি) লুকায়িত ছিল, কিন্তু তিনি যদি যশের প্রতি লালায়িত না হয়ে রামচন্দ্রকে বনবাসে না পাঠাতেন তাহলে তাঁর অধিক পুণ্য হত। তিনি যদি ধর্মের মূলনীতির প্রতি লক্ষ্য রাখতেন তা হলে ভালোবাসার এই অত্যাচার হতো না। সুতরাং একমাত্র ধর্মের মূল নীতি অনুসরণেই ভালোবাসার অত্যাচার দূর করা সম্ভব।

অথবা

‘চিরকাল মনুষ্য অত্যাচারে পীড়িত।’- মানুষ চিরকাল কোন অত্যাচারে পীড়িত? অত্যাচার থেকে পরিত্রাণের যে উপায় লেখক নির্দেশ করেছেন, সে সম্বন্ধে সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ মানুষ চিরকাল ভালবাসার অত্যাচারে পীড়িত।

লেখকের মতে দুটি উপায়ে ভালবাসার অত্যাচার নিবারণ করা যায়।

প্রথমতঃ ভালোবাসার দ্বারা ভালোবাসার অত্যাচার নিবারণ – এক্ষেত্রে ভালোবাসাকে নিঃস্বার্থ হতে হবে। কারণ ভালবাসার স্বরূপই হলো অস্বার্থপরতা। যে মা তার ছেলের সুখের কামনায় ছেলের মুখ দেখার কামনাকে ত্যাগ করতে পারেন তিনিই যথার্থ স্নেহবতী। যে প্রেমিকা প্রেমিকের মঙ্গলের জন্য নিজের প্রেমের সুখ ভোগ ত্যাগ করতে পারে সেই যথার্থ প্রেমিকা।

দ্বিতীয়তঃ ধর্মের অনুশাসনে মনে রাখতে হবে যে ধর্মের মূল কথা হলো ‘পরের অনিষ্ট করিও না, সাধ্যানুসারে পরের মঙ্গল করিও।’ অতএব এই ধর্মনীতির মূলসূত্রগুলিকে অবলম্বন করলেই ভালোবাসার অত্যাচার নিবারণ সম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় – যখন কোন স্নেহশীল ব্যক্তি তাঁর স্নেহের পাত্রের কাজে হাত দিতে যায় তখন তাকে মনে রাখতে হবে যে শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য বা খ্যাতির জন্য‍ অন্যের অনিষ্ট সে করবে না। সেক্ষেত্রে আমার যতই কষ্ট হোক না কেন তবু কারোর খারাপ হয় এমন কাজ করব না। এই মনুষ্য ধর্মই ভালোবাসার অত্যাচারের একমাত্র নিবারক।

উদাহরণ হিসেবে এখানে আমরা রামায়ণের কথা আনতে পারি। সেখানে দেখি রাজা দশরথ রামচন্দ্রকে বনে পাঠাবার পিছনে তার যশবৃদ্ধি (খ্যাতি) লুকায়িত ছিল, কিন্তু তিনি যদি যশের প্রতি লালায়িত না হয়ে রামচন্দ্রকে বনবাসে না পাঠাতেন তাহলে তাঁর অধিক পুণ্য হত। তিনি যদি ধর্মের মূলনীতির প্রতি লক্ষ্য রাখতেন তা হলে ভালোবাসার এই অত্যাচার হতো না। সুতরাং একমাত্র ধর্মের মূল নীতি অনুসরণেই ভালোবাসার অত্যাচার দূর করা সম্ভব।

(ঙ) ‘এই পনেরো আনা অনাবশ্যক জীবনই বিধাতার ঐশ্বর্য সপ্রমাণ করিতেছে।’ – ‘পনেরো আনা’ কারা? ঐশ্বর্যের প্রমাণ তিনটি উদাহরণের সাহায্যে প্রকাশ করো।

উত্তরঃ লেখক রবীন্দ্রনাথের মতে, সংসারে দুই শ্রেণির মানুষ আছে। একদিকে এক আনা অসাধারণ মানুষ এবং অপরদিকে পনেরো আনা অনাবশ্যক মানুষ। পনেরো আনা সাধারণ মানুষ ঈশ্বরের গৌরব ঘোষণা করে। পনেরো আনা সাধারণ মানুষের ব্যর্থ জীবন প্রমাণ করে ঈশ্বরের সৃষ্ট পৃথিবী যেমন সুন্দর তেমনি তাঁর সৃষ্ট মানুষও সুন্দর। ঈশ্বরের সৃষ্টি যদি সুন্দর হত না তবে পৃথিবীতে তার অজস্র অনাবশ্যক বেঁচে থাকত না। যেমন বাঁশির ছিদ্রের মধ্য দিয়ে সুর ধ্বনিত হয় তেমনি সংসারে পনেরো আনা অনাবশ্যক মানুষদের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের ঐশ্বর্য প্রকাশিত হয়।

ঐশ্বর্যের তিনটি প্রমাণ হলো—

১। নদী- নদীর সব জল আমাদের স্নানে, পানে এবং ধানক্ষেতে ব্যবহৃত হয় না। অধিকাংশ জলই তার প্রবাহ রক্ষা করে।

২। গাছের মুকুল – গাছের সকল মুকুল ফল হয় না।

৩। সূর্যকিরণ – সূর্যের সব কিরণ আমরা পাই না তার অধিকাংশ কিরণই শূন্যে বিকীর্ণ হয়। এইগুলির দ্বারা বিধাতার ঐশ্বর্যের প্রমাণ হয়।

অথবা

‘সাহিত্যের উদ্দেশ্য আনন্দ দান করা – শিক্ষা দান করা নয়।’- উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী তাঁর ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধে শিক্ষা ও সাহিত্যের ধর্ম-কর্ম যে এক নয় তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি মনে করেন কবির মতিগতি শিক্ষকের মতিগতির সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই শিক্ষা ও সাহিত্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। এই পার্থক্যকে লেখক স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। প্রথমতঃ শিক্ষা হল সেই বস্তু, যা লোকে নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও গিলতে চায়, অন্যদিকে কাব্যরস লোকে শুধু স্বেচ্ছায় নয় সানন্দে গ্রহণ করে। দ্বিতীয়তঃ শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মানুষের মনকে বিশ্বের খবর জানানো আর সাহিত্যের উদ্দেশ্য মানুষের মনকে জাগানো। তৃতীয়তঃ অপরের মনের অভাব পূরণের জন্য শিক্ষকের হস্তে শিক্ষা জন্মলাভ করেছে কিন্তু কবির নিজের মনের পরিপূর্ণতা হতেই সাহিত্যের উৎপত্তি।

(চ) “দারোগা আসিয়া প্রবেশ করিলেন।” – এরপর কী হল?

উত্তরঃ সারাদিনের এইসব রোমহর্ষক ঘটনার পর যখন সন্ধ্যার আর বেশি দেরি নেই, উত্তেজিত জনতা কলরব করছে। হারু ঘোষের ছেলেও আগন্তুকের মৃতদেহ পাশাপাশি পড়ে আছে, সাপটিও চলে গেছে। ঠিক সে সময়ে পুলিশের দারোগা এসে আগন্তুকের মুখটা ভালো করে নিরীক্ষণ করে বললেন যে তারা এই লোকটাকে খুঁজছিলেন। লোকটি একটি পাগল। পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছে। সাহসী বালক বিশু বাগদী বলল যে তারা সবাই পাগল। সবাইকে ধরে যেন পাগলা গারদে ঢুকানো হয়। অতঃপর অন্ধকার ঘনীভূত হলে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল।

অথবা

‘রাগ করছ কেন, চাঁদ, দাও চুমু দাও একটা আমাকে।’ – কে, কাকে চুমু দেবার কথা বলছে? প্রসঙ্গ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ আগন্তুক পাগলটি বিষধর সাপটির উদ্দেশ্যে এই কথা বলেছে। হারু ঘোষের মেজ ছেলেকে সাপ দংশন করলে তাঁকে সুস্থ করে তোলার জন্য ডাক্তার ডাকা হয়। ডাক্তার এসে তিন-চারটে বাঁধন দিয়ে কেটে কুটে ওষুধ-পত্তর লাগিয়ে দেয়। আগন্তুক বলে, ডাক্তারিতে কিছু হবে না, তার কথা শুনে জমায়েত লোকরা মনে করে সে যেন মস্ত বড় ওঝা।

তার কথা মতো ন্যাপলার পায়ের বাঁধন খোলা হয় এবং সাপটাকে বল্লম থেকে মুক্ত করা হয়। এখন সে সাপটি ধরে জোরে হাসতে শুরু করে এবং সাপের উদ্দেশ্যে বলে, “রাগ করছ কেন চাঁদ, দাও চুমু দাও একটা আমাকে।”

(ছ) “ঐ হতভাগাটাকে দিয়ে যত রকমের ছোট কাজ করিয়ে নিয়েও তোমরা আড পর্যন্ত একদিন পেটভরে খেতে দিও না।” – ‘হতভাগা’ কে? তাকে বাড়িতে কী কী কাজ করতে হত।

উত্তরঃ উক্তিটি মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর।

‘হতভাগা’ হল কেষ্ট।

তাকে দিয়ে কাদম্বিনী বাসন মাজাত, কাপড় কাচাতো আর নবীনের আড়তে ধান চাল মাপত এবং রৌদ্রে ঘুরে ধানের নমুনা সংগ্রহগ করত।

অথবা

‘‘প্রস্তুতিতে পুলিশের দারোগার মন ভেজে।কাদম্বিনী মেয়ে-মানুষ মাত্র।”- কাদম্বিনীর চরিত্র সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ কাদম্বিনী হলেন নবীনের স্ত্রী। তিনি হেমাঙ্গিনীর বড় জা ও কেষ্টর সৎদিদি ছিলেন।

‘মেজদিদি’ উপন্যাসে কাদম্বিনী একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি একজন হৃদয়হীনা ও নিষ্ঠুর নারী। মায়ের মৃত্যুর পর কেষ্ট নিরুপায় হয়ে তার বাড়িতে আশ্রয় নিলে তিনি তাকে গলগ্রহ আপদ বলে ভাবতেন অথচ তার সঙ্গে কাদম্বিনীর রক্তের সম্পর্ক। কেষ্টকে দিয়ে তিনি চাকরের কাজ করাতেন। তিনি সবসময়ই কেষ্টর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। কেষ্ট দুমুঠো ভাত বেশি খেত বলে তার খাওয়াকে হাতির খাওয়ার সঙ্গে তুলনা দেন। কেষ্ট মায়ের কথা স্মরণে কাঁদলে তার এ কান্নাকে মায়াকান্না বলে বকুনি দিতেও কার্পণ্য করেন না।

কাদম্বিনী অত্যন্ত কুটিল প্রকৃতির নারী। কেষ্ট ও হেমাঙ্গিনীর একে অন্যের প্রতি ভালোবাসাকে তিনি সহ্য করতে পারতেন না। হেমাঙ্গিনীর সঙ্গে ঝগড়ার সময় কাদম্বিনীর কটু কথা বলতে একটুও বিবেকে বাঁধে না। হেমাঙ্গিনী অসুস্থ হলে তার আরোগ্য কামনায় গ্রামের জাগ্রত দেবী বিশালাক্ষ্মীর পূজা দেওয়ার জন্য কেষ্ট নবীনের দোকান থেকে তিনি টাকা চুরি করার জন্য কাদম্বিনী হেমাঙ্গিনীর উপরে চুরি বিদ্যা শিখানোর অপবাদ দেন। বাড়ি থেকে কাদম্বিনী প্রায়ই কেষ্টকে নিয়ে হেমাঙ্গিনীকে শ্লেষ ও তীক্ষ্ণ বাক্য বাণে জর্জরিত করতেন। কাদম্বিনীর এ ধরনের উক্তি থেকে তার নিচ মনোবৃত্তির পরিচয় পাওয়া যায়।

এককথায় কাদম্বিনী চরিত্র একটি নিষ্ঠুর, নির্দয় ও হীনস্বভাবের চরিত্র।

(জ) ‘‘আমার দুটি সন্তান ছিল, কাল থেকে তিনটি হয়েছে। আমি কেষ্টর মা।”- হেমাঙ্গিনী কোন প্রসঙ্গে কথাটি বলেছে?

উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী জ্বর গায়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে রইলে বিপিন ব্যস্ত হয়ে তাকে বিছানায় তুলতে গেলে হেমাঙ্গিনী বিপিনের কাছ থেকে কেষ্টকে আশ্রয় দেওয়ার কথা আদায় করে নেন। কিন্তু স্ত্রীকে সুস্থ দেখে বিপিন যখন পরদিন সকালবেলা সে কথাকে তুচ্ছ করেছিলেন তখন হেমাঙ্গিনী শান্ত দৃঢ় কণ্ঠে বললেন আমি নিয়ে এলে সংসারে কেউ তাকে আটকাতে পারবে না। আজ থেকে তার তিনটি সন্তান হয়েছে তিনি কেষ্টেরও মা।

(ঝ) “খেলার পরীক্ষা তো চুকেছে, এবার কাজের পরীক্ষা হোক” – বক্তা কে? পরীক্ষার ফলাফল কী হয়েছিল?

উত্তরঃ বক্তা মুকুট নাটকে সেনাপতি ইশাখাঁ।

অস্ত্রবিদ্যা পরীক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পর ইশাখাঁ মহারাজকে বলেন যে এবার কাজের পরীক্ষা অর্থাৎ আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধ হোক। এই যুদ্ধে রাজধর পুনরায় ছলনার আশ্রয় নিয়ে রাতের অন্ধকারে আরাকানরাজকে বন্দী করে রাজ মুকুট নিয়ে আসে। তারপর এই মুকুট পরা নিয়ে বিবাদ বাঁধে। ইন্দ্রকুমার দাদার উপর অভিমান করে স্থান ত্যাগ করেন। আর সেনাপতি ইশাখাঁ মুকুট কর্ণফুলি নদীর জলে ফেলে দেন। রাজধর নিজেকে খুবই অপমানিত বোধ করে এর প্রতিশোধ নিতে গোপনে আবার আরাকানরাজের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে এবং পরের দিনের যুদ্ধে ইশা খাঁ এবং যুবরাজের মৃত্যু হয়। শেষ পর্যন্ত ইন্দ্রকুমার এবং রাজধরের মিলন হলেও পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে তাদের দেশে ফিরতে হয়।

(ঞ) “শুধু সন্ধিপত্র দিলে তো হবে না, মহারাজ। আপনি যে পরাজয় স্বীকার করলেন তার কিছু নিদর্শন তো দেশে নিয়ে যেতে হবে।” – মহারাজ কে? কার কাছে পরাজয় স্বীকার করেন তিনি? সন্ধির নিদর্শনস্বরূপ কী দিতে হয় তাঁকে এবং কেন?

উত্তরঃ এখানে মহারাজ হলেন আরাকানরাজ। তিনি রাজধরের কাছে পরাজয় স্বীকার করেন।

আরাকান যুদ্ধে তিন রাজকুমার যোগদান করলেন। কনিষ্ঠ রাজকুমার যুদ্ধক্ষেত্রে না নেমে আলাদা হয়ে যান, এবং রাতের অন্ধকারে আরাকানরাজের শিবিরে আক্রমন করে রাজাকে বন্দী করেন। ব্যাপারটা যুবরাজ, ইন্দ্রকুমার ও ইশা খাঁর জানা ছিল না। সকালে যুদ্ধ আরম্ভ হলে শত্রু সৈন্য হঠাৎ যুদ্ধ থামিয়ে দেয়। ইন্দ্রকুমার এর কারণ ইশাখাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি রাজধরের শৃগালবৃত্তি অবলম্বন করে আরাকানরাজকে বন্দি করার ঘটনা বলেন। ইন্দ্রকুমার কথাটি বিশ্বাস করেন নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইশাখাঁ বলেন, যা মিথ্যা হওয়া উচিত ছিল একেক সময় তাও সত্য হয়ে ওঠে। তিনি আরও বলেন একেক সময় আল্লার দূতরা ঘুমিয়ে পড়েন এবং শয়তান সমস্ত হিসেব উল্টো করে দেয়।

আরাকানরাজ পরাজয় স্বীকার করে সন্ধিপত্র লিখে দিতে চাইলে, রাজধর আরাকানরাজের পরাজয়ের নিদর্শন নিয়ে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আরাকানরাজ ব্রহ্মদেশের পাঁচশো ঘোড়া ও তিনটি হাতি উপহার দেবার কথা বলেন। কিন্তু রাজধর মহারাজের মাথার মুকুট চেয়ে বসেন এবং শেষ পর্যন্ত সেটা আদায় করে ছাড়েন।

অথবা

‘তার সঙ্গে আমার তীর বদল করতে হবে, ভাগ্যও বদল হবে।’- কার সঙ্গে তীর বদলের কথা বলা হয়েছে? ভাগ্য কী বদল হয়েছিল? কাকে, কে কথাটি বলেছিল?

উত্তরঃ ত্রিপুরার মধ্যম রাজকুমারের তিরের সঙ্গে কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধরের তির বদলের কথা বলা হয়েছে।

হ্যাঁ, ভাগ্য বদল হয়েছিল। ধনুর্বিদ্যা পরীক্ষায় রাজধর সফল হয়েছিলেন। এই সফলতা অবশ্য অন্যায় পথে এসেছিল। উপরোক্ত কথাটি রাজধর তার মামাতো ভাই ধুরন্ধরকে বলেছিল।

৪। ‘ক’ এবং ‘খ’ বিভাগ থেকে নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

ক-বিভাগ

(ক) “ছেলেটি যে অতিশয় লাজুক ও ভীরু স্বভাব, হেমাঙ্গিনী তাহা পূর্বেই টের পাইয়াছিলেন। তখন তাহার মাথায়-মুখে হাত বুলাইয়া দিয়া আদর করিয়া ‘দাদা’ বলিয়া ডাকিয়া, আর কত কী কৌশলে তাহার ভয় ভাঙ্গাইয়া অনেক কথা জানিয়া লইলেন।” – ছেলেটি কে? সম্পর্কে হেমাঙ্গিনীর কে হয়? তিনি কৌশল করে তার কাছ থেকে কী কথা জেনে নিলেন?

উত্তরঃ ছেলেটি হল কেষ্ট।

সম্পর্কে হেমাঙ্গিনীর বড় জা কাদম্বিনীর সে বৈমাত্রেয় ভাই অর্থাৎ সম্পর্কে সে হেমাঙ্গিনীরও ভাই। হেমাঙ্গিনী কৌশল করে তার দেশের অর্থাৎ গ্রামের বাড়ির কথা, মায়ের কথা, মা কিভাবে আদর যত্ন করতেন, খাওয়াতেন, মায়ের মৃত্যুর কথা ইত্যাদি জেনে নেন।

এরপর এখানে দিদির বাড়িতে তাকে কী কী কাজ করতে হয়। খাওয়া দাওয়ার কথা, দোকানে ধান-চাল ওজন দেওয়া, গ্রামে গ্রামে ঘুরে ধানের নমুনা সংগ্ৰহ করা ইত্যাদি এমন অনেক কথা জেনে নেন।

অথবা

“শপথ কচ্ছি, আমি বেঁচে থাকতে তোদের দুই ভাই-বোনকে আজ থেকে কেউ পৃথক করতে পারবে না।” কে বলেছেন? ভাই-বোন কারা? উক্তিটির প্রাসঙ্গিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ হেমাঙ্গিনীর স্বামী বিপিন এ উক্তিটি করেছেন।

ভাই-বোন হল হেমাঙ্গিনী ও কেষ্ট।

কেষ্ট নবীনের দোকান থেকে টাকা চুরি করে মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর আরোগ্য কামনায় বিশালাক্ষ্মী মন্দিরে পূজা দিতে যায়। চুরি করার অপরাধে নবীন তাকে মারধর করেন। এতবেশি মার খেয়েও সে কাঁদেনি। সে চণ্ডীমণ্ডপে জ্বরে বেহুঁশ হয়ে পড়লে হেমাঙ্গিনী এ দুঃসহ সংবাদ শুনতে পেরে স্থির থাকতে পারেননি। তখন হেমাঙ্গিনী স্বামীর কাছে কেষ্টর আশ্রয় ভিক্ষে চাইলেন। কিন্তু তাতে বিপিন বিফল হলে হেমাঙ্গিনী অভিমানে কেষ্টকে নিয়ে গৃহত্যাগ করেন। তিনি গরু গাড়ি ধরে যাত্রা করেন। বিপিন পরে হেমাঙ্গিনীর কাছে ক্ষমা চেয়ে শপথ করেন যে তিনি বেঁচে থাকতে তাদের দুই ভাই-বোনকে কেউ পৃথক করতে পারবে না। বিপিন তার বাড়িতে কেষ্টকে আশ্রয় দেয়।

(খ) “আমি পরাজিত – এ-মুকুট আমার নয়। এ-আমি তোমাকেই পরিয়ে দিলুম – দাদা।” – কে পরাজিত? কার মাথায় মুকুট? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিষয়টি আলোচনা করো।

উত্তরঃ এটা ইন্দ্রকুমারের উক্তি। ইন্দ্রকুমার পরাজিত। মুকুটটি আরাকান রাজের মাথার মুকুট। ইন্দ্রকুমার রাজধরের উদ্দেশ্যে এই উক্তি করেছেন। আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে এসে রাজধর ইন্দ্রকুমার ও যুবরাজকে আড়াল করে রাত্রিবেলা আরকানরাজকে শিবিরে একা আক্রমন করে বন্দী করেন। আরাকানরাজ পরাজয় স্বীকার করে সন্ধিপত্র লিখে দেন রাজধরকে এবং রাজধর পরাজয়ের চিহ্নস্বরূপ আরাকানরাজের মুকুট নিয়ে আসেন। যুদ্ধের নিয়ম ভঙ্গ করায় সবাই রাজধরের উপর ক্রুদ্ধ হলেন। রাজধর প্রতিশোধস্বরূপ পত্র লিখে আরাকানরাজকে দিয়ে আবার আক্রমণ করান। এ যুদ্ধে পরাজয়ের পর একেবারে শেষ দৃশ্যে রাজধর মুকুট ইন্দ্রকুমারের চরণে রেখে বললেন যে তিনি নরাধম। এই মুকুট যেন তিনি গ্রহণ করেন এবং রাজধরকে ক্ষমা করেন। ইন্দ্রকুমার তখন বললেন, তিনি পরাজিত। সুতরাং এ মুকুটের মালিক তিনি নন। ইন্দ্রকুমার মৃত্যুপথযাত্রী দাদা চন্দ্রমাণিক্যের মাথায় মুকুট পরিয়ে দিলেন।

অথবা

‘‘বিচার ! তুমি বিচার চাও! তাহলে যে মুখে চুনকালি পড়বে; বংশের লজ্জা প্রকাশ করব না—অন্তর্যামী তোমার বিচার করবেন।” – কে, কাকে এ -কথা বলেছে, প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সবিশেষ আলোচনা করো।

উত্তরঃ ইন্দ্রকুমার রাজধরের প্রতি একথা বলেছেন।

অস্ত্র পরীক্ষায় জেতার জন্য রাজধর ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালায় ঢুকে নিজের নামাঙ্কিত তীরটি তূণে রেখে আসেন। এভাবে ছল চাতুরির দ্বারা রাজধর জয়ের খেতাব অর্জন করেন। কিন্তু উপস্থিত কেউই সেটা বিশ্বাস করতে পারেন নি যে কীভাবে সেটা সম্ভব হল। এতে রাজধর ছল অপমান বোধ করে মহারাজকে এই অপমানের বিচার করতে বলেন। তখন ইন্দ্রকুমার সকল রহস্য বুঝতে পেরে রাজধরকে বললেন যে বিচার করলে তার ছল-চাতুরি সব ধরা পড়বে এবং তাঁর মুখে চুনকালি পড়বে। এটা রাজবংশের জন্য লজ্জার বিষয়। তাই তিনি এই লজ্জা প্রকাশ করতে চান না।

খ-বিভাগ

(ক) বাংলা ছন্দ কয় প্রকার ও কী কী ও কী কী? যে কোনও একটি ছন্দের চারটি বৈশিষ্ট্য উদাহরণসহ লেখো।

উত্তরঃ বাংলা ছন্দ তিনটি প্রকারঃ

(ক) তান-প্রধান বা অক্ষরবৃত্ত বা পয়ারের ছন্দ।

(খ) ধ্বনি-প্রধান বা মাত্রাবৃত্ত ছন্দ।

(গ) শ্বাসাঘাত-প্রধান বা স্বরবৃত্ত বা ছড়ার ছন্দ।

লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যঃ-

১। অক্ষরবৃত্ত ছন্দের প্রতিটি অক্ষরই একমাত্রার।

২। স্বরের হ্রস্ব বা দীর্ঘ বিচারের কোনো অবকাশ এ ছন্দে নেই।

৩। এই ছন্দে তৎসম, অর্ধ তৎসম শব্দের ব্যবহার হয়।

৪। তানপ্রধান ছন্দ সাধারণত পয়ারের ভিত্তিতেই রচিত হয়।

৫। এই প্রকার ছন্দে ং, ৎ, : প্রভৃতিকে অক্ষর মাত্রা গণনার বাইরে রাখা হয়।

৬। একটানা সুরের প্রবাহ এই ছন্দের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।

৭। তানপ্রধান ছন্দ ধীর লয়ের ছন্দ।

অথবা

ছন্দোলিপি প্রস্তুত করোঃ

কে মেরেছে কে ধরেছে কে দিয়েছে গাল।

তাই তো খুকু রাগ করেছে ভাত খায়নি কাল॥

উত্তরঃ (ক) শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ।

(খ) লয় – দ্রুত।

(গ) চরণ – দুটি।

(ঘ) পর্ব – তিনটি এবং শেষের পর্বটি অপূর্ণ।

(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৪ + ৪ + ৪ + ২।

(খ) যে কোনও দুটি অলংকারের সংজ্ঞা ও একটি করে উদাহরণ দাও।

অনুপ্রাস, উপমা, যমক, রূপক, উৎপ্রেক্ষা।

উত্তরঃ  অনুপ্রাসঃ – একটি বর্ণ বা একগুচ্ছ বর্ণ বারবার ব্যবহৃত হয়ে যে শব্দ বা ধ্বনি সাম্য সৃষ্টি করে, তাকে অনুপ্রাস বলে।

যেমন- ১। ‘গুরু গুরু মেঘ গুমরি-গুমরি গরজে গগনে গগনে।’

এখানে ‘গু’ বর্ণটি ৪ বার এবং ‘গ’ বর্ণটি ৫ বার ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে ‘গু’ ও ‘গ’ অপরূপ ধ্বনি সাম্য সৃষ্টি করেছে। তাই এটি হল অনুপ্রাস।

২। ‘চল চপলার চকিত চমকে করিছে চরণ বিচরণ।’

এখানে ‘চ’ ধ্বনিটি ৬ বার ব্যবহৃত হয়ে ধ্বনি সাম্য সৃষ্টি করেছে। তাই এটি হল একটি অনুপ্রাস অলংকার।

অনুপ্রাস পাঁচ প্রকার। যথা- 

১। অন্ত্যানুপ্রাস।

২। বৃত্তানুপ্রাস।

৩। ছেকানুপ্রাস।

৪। শ্রুত্যনুপ্রাস।

৫। লাটানুপ্রাস।

উপমাঃ উপমা কথাটির সাধারণ অর্থ তুলনা। দুটি ভিন্ন জাতীয় বস্তুর মধ্যে কোনো সমান ধর্ম বা গুণ হেতু তুলনা করা। হলে তাকে উপমা অলংকার বলে।

যেমন – মুখখানি চাঁদের ন্যায় সুন্দর।

ব্যাখ্যা- এখানে মুখ ও চাদ এই দুই বিজাতীয় বস্তুর মধ্যে তুলনা করা হয়েছে, সুন্দর’ এদের সমান ধর্ম বা সাধারণ গুণ। এবং ‘ন্যায়’ এই সাদৃশ্যবাচক শব্দের সাহায্যে উভয়ের তুলনা করা হয়েছে।

উপমার চারটি উপাদান থাকে—

১। উপমেয়।

২। উপমান।

৩। সাধারণ ধর্ম।

৪। সাদৃশ্য বাচক শব্দ।

১। উপমেয়- যে বস্তুকে অন্য কোনো বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হয়।

২। উপমান যার সঙ্গে তুলনা করা হয়।

৩। সাধারণ ধর্ম – যে ধর্ম বা গুণ উপমেয় এবং উপমান উভয় বস্তুতে বর্তমান।

(৪) সাদৃশ্যবাচক শব্দ – যে শব্দের দ্বারা তুলনা বা সাদৃশ্য দেখানো হয়।

যেমন- ন্যায়, মত, সম, যেমন, সাদৃশ্য, তুল্য ইত্যাদি।

উদাহরণ – ১। “মুখখানা চাঁদের ন্যায় সুন্দর।”

উপমেয় উপমান সাদৃশ্যবাচক শব্দ সাধারণ ধর্ম।

২। এও যে রক্তের মতো রাঙা দুটি জবাফুল

উপমান সাদৃশ্যবাচক শব্দ সাধারণ ধর্ম উপমেয় ব্যাখ্যা – এখানে জবাফুল ও রক্ত দুই বিজাতীয় বস্তু। রাঙা এদের সাধারণ ধর্ম। এ কারণে এখানে উপমা অলংকার হয়েছে।

উপমালংকার চার প্রকার-

যেমন- ১। পূর্ণোপমা। 

২। লুপ্তোপমা।

৩। মালোপমা।

৪। প্রতিবস্তুপমা।

পূর্ণোপমাঃ যে উপমা অলংকারের উপমেয়, উপমান, সাধারণ ধর্ম ও তুলনাবাচক শব্দ – এই চারটি অঙ্গই বর্তমান, তাকে বলে পূর্ণোপমা।

যেমন – মুখখানা চাঁদের ন্যায় সুন্দর।

এখানে উপমেয় – মুখ, উপমান – চাঁদ, সাধারণ ধর্ম – সুন্দর এবং সাদৃশ্যবাচক শব্দ – ন্যায়।

যমকঃ যে শব্দ বাক্যের মধ্যে বার বার ব্যবহৃত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে তাকে যমক বলে।

উদাহরণঃ- (ক) “ভারত ভারত খ্যাত আপনার গুণে।”

ব্যাখ্যা- এখানে ভারত শব্দটি দুবার দুটি অর্থে বসেছে। ১ম ভারত = কবি ভারতচন্দ্র, ২য় ভারত দেশ ভারতবর্ষ।

(খ) “আনা দরে আনা যায় কত আনারস।”

ব্যাখ্যা- এখানে ১ম আনা = ৪ পয়সা, ২য় আনা = আনয়ন করা।

যমক চার প্রকার – 

১। আদ্যযমক।

২। মধ্যযমক।

৩। অন্ত্য যমক।

৪। সর্ব যমক।

১। আদ্যযমকঃ চরণের আদিতে যে যমক তাই আদ্য যমক।

যেমন- ভারত ভারত খ্যাত আপনার গুণে। এখানে ১ম ভারত = কবি ভারতচন্দ্র, ২য় ভারত = দেশ ভারতবর্ষ।

২। মধ্যযমকঃ চরণের মধ্যে যে যমক থাকে তাকে মধ্য যমক বলে।

যেমন- পাইয়া চরণ তরী তরি ভবে আশা। এখানে ১ম তরী = নৌকা, ২য় তরি = পার হওয়া বা মুক্তি লাভ করা।

৩। অন্ত্যযমকঃ চরণের শেষে যে যমক, তাই অন্ত্য যমক।

যেমন – ‘যত কাঁদে বাছা বলি সর সর

আমি অভাগিনী বলি সর সর।’

এখানে প্রথম পংক্তিতে ‘সর’ শব্দের অর্থ দুধের সর এবং দ্বিতীয় লাইনের ‘সর’ শব্দের অর্থে সরে যাওয়া।

৪। সর্বযমক- দুই বা ততোধিক চরণের আদি-মধ্য-অন্ত্য শব্দগুলিতে যমক হলে, সর্বযমক হয়।

যেমন- কান্তার আমোদ পূৰ্ণ কান্ত সহকারে।

কান্তার আমোদ পূর্ণ কান্ত সহকারে। (ঈশ্বরগুপ্ত)

এখানে প্রথম চরণের – অর্থ বনভূমি বসন্ত সমাগমে সৌরভময় হয়।

দ্বিতীয় – চরণের অর্থ – দয়িতা দয়িত সঙ্গে আনন্দপূর্ণ হয়।

রূপকঃ উপমেয় এবং উপমানের মধ্যে অভেদ কল্পনা করলে রূপগ অলংকার হয়। 

যেমন- ১। ‘বাছার মুখচন্দ্র মলিন হয়ে গেছে।’

ব্যাখ্যা – এখানে মুখ উপমেয় ও চন্দ্র উপমানের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয়েছে।

২। ‘চন্দ্রমুখী বালিকা হাসে নিরবধি।

ব্যাখ্যা – বালিকার মুখ ও চাঁদের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয়েছে।

উৎপ্রেক্ষাঃ উৎপ্রেক্ষ্য অর্থ সংশয়। প্রবল সাদৃশ্যবশতঃ উপমেয়কে যদি উপমান বলে সংশয় হয় তাহলে তাকে উৎপ্রেক্ষা অলংকার বলে।

উদাহরণঃ- (ক) “পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।”

ব্যাখ্যা – এখানে উপমেয় পূর্ণিমার চাঁদ। উপমান রুটি। সাধারণ ধর্ম ঝলসানো। সাদৃশ্য বাচক শব্দ যেন। দুটির মধ্যে প্রবল সংশয় দেখা দিয়েছে এবং উপমান ‘রুটি’ যেন প্রাধান্য পাচ্ছে।

(খ) “সীতা হারা রাম যেন মনিহারা ফণী।”

ব্যাখ্যা – এখানে উপমেয় রাম, উপমান ফণী। ‘রাম’ ও ‘ফণী’তে প্রবল সাদৃশ্য। ‘যেন’ সাদৃশ্যবাচক শব্দ।

উৎপ্রেক্ষা দুই প্রকার-

যথা- ১। বাচ্যোৎপ্রেক্ষা। 

২। প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা।

যে উৎপ্রেক্ষা অলংকারে সংশয়সূচক শব্দ ‘যেন’ থাকে না তাকে প্রতীয়মান উৎপ্রেক্ষা এবং যেখানে সংশয়সূচক শব্দ ‘যেন’ থাকে তাকে বাচ্যোৎপ্রেক্ষা অলংকার বলে।

যেমনঃ- ‘সাধ্বী রমণীর দৃষ্টি সমুদ্যত বাজী।’

উপমেয় = দৃষ্টি, উপমান = বাজ, সংশয়সূচক শব্দ ‘যেন’ নেই।

বাচ্যোৎপ্রেক্ষার উদাহরণ-

“ফেনিল সলিল রাশি বেগভরে পড়ে আসি।

চন্দ্রালোকে ভেঙে যেন পড়ে পৃথিবীতে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top