Class 12 Political Science Chapter 16 গণ-আন্দোলনের উত্থান

Class 12 Political Science Chapter 16 গণ-আন্দোলনের উত্থান Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 16 গণ-আন্দোলনের উত্থান Notes and select needs one.

Class 12 Political Science Chapter 16 গণ-আন্দোলনের উত্থান

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 16 গণ-আন্দোলনের উত্থান Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 16 গণ-আন্দোলনের উত্থান Solutions for All Subjects, You can practice these here.

গণ-আন্দোলনের উত্থান

Chapter: 16

দ্বিতীয় খন্ড (স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি)

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। চিপকো আন্দোলন কোন্ রাজ্যে আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ উত্তরাখণ্ড।

প্রশ্ন ২। নামদেও ধাসাল কে ছিলেন?

উত্তরঃ একজন মারাঠী বিপ্লবী কবি।

প্রশ্ন ৩। কৃষকদের যে-কোন একটি সংগঠনের নাম লেখ।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

উত্তরঃ ভারতীয় কৃষক সংঘ।

প্রশ্ন ৪। NFF-এর সম্পূর্ণ নাম লেখ।

উত্তরঃ National Fishworkers’ Forum.

প্রশ্ন ৫। আরকবিরোধী বা সুরাবিরোধী আন্দোলন কোন্ জেলায় আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর জেলায়।

প্রশ্ন ৬। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের নেতার নাম লেখ।

উত্তরঃ মেধা পাটেকর।

প্রশ্ন ৭। MKSS-এর সম্পূর্ণ নাম লেখ।

উত্তরঃ Mazdoor Kishan Sakti Sangathan.

প্রশ্ন ৮। তথ্য জানার অধিকার আন্দোলন কখন ও কোথায় আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯০ সালে রাজস্থানে।

প্রশ্ন ৯। দলিত পান্থারদের আদর্শ কি ছিল?

উত্তরঃ জাতিবাদ বা বর্ণবাদের উচ্ছেদ সাধন।

প্রশ্ন ১০। ভারতীয় কিষাণ সংঘের নেতা কে?

উত্তরঃ মহেন্দ্র সিং টিকায়েট।

প্রশ্ন ১১। চিপকো আন্দোলনের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ মহিলাদের অংশগ্রহণ। 

প্রশ্ন ১২। তথ্য জানার অধিকারের জন্য কোন্ সংগঠন আন্দোলন আরম্ভ করেছিল?

উত্তরঃ মজদূর কিষাণ শক্তি সংগঠন।

প্রশ্ন ১৩। সংবিধানের কোন্ সংশোধনী মহিলাদের জন্য রাজনীতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা প্রবর্তন করে?

উত্তরঃ ৭৩-তম ও ৭৪-তম সংশোধনী।

প্রশ্ন ১৪। সর্বভারতীয় কিষাণ সভা কোন্ সনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৩৬ সালে।

প্রশ্ন ১৫। POW বলতে কি বোঝায়?

উত্তরঃ Progressive Organization for Women.

প্রশ্ন ১৬। নেলোর জেলায় কয়বার আরক নিলাম সভা স্থগিত রাখা হয়েছিল?

উত্তরঃ মোট ১৭ বার।

প্রশ্ন ১৭। শুদ্ধ না অশুদ্ধ লেখ:

(ক) বাণিজ্য সংঘের আন্দোলন কতিপয় সামাজিক মতানৈক্যের সঙ্গে জড়িত।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

(খ) কৃষক আন্দোলন দলীয়ভিত্তিক আন্দোলন।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

(গ) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহ দলীয় রাজনীতি থেকে বাইরে থাকা পছন্দ করে নি।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

(ঘ) ড. বি. আর. আম্বেদকর দলিত সম্প্রদায়ের ছিলেন।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(ঙ) ভারতীয় সংবিধান অস্পৃশ্যতা প্রচলন তুলে দিয়েছিল।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(চ) এম. যোধবীর সিং ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের মুখ্য নেতা ছিলেন।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

(ছ) মদ্যপানের কুপ্রভাবের ফলস্বরূপ মহিলারা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ছিল।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(জ) ২০০৫ সালের জুন মাসে তথ্য জানার অধিকার আইন বলবৎ হয়েছিল।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(ঝ) চিপকো আন্দোলন ছিল গাছ কাটা বন্ধ করার জন্য পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(ঞ) আরক বা সুরাবিরোধী আন্দোলনকে একটা মহিলা আন্দোলন হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

প্রশ্ন ১৮। কোন্ বছর সর্বভারতীয় কিষাণ সভা গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৩৬ সালে।

প্রশ্ন ১৯। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা কে?

উত্তরঃ মহেন্দ্র সিং টিকায়েত।

প্রশ্ন ২০। ক্ষেতকারী সংগঠন কোন্ রাজ্যের?

উত্তরঃ মহারাষ্ট্রে।

প্রশ্ন ২১। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?

উত্তরঃ মেধা পাটকর।

প্রশ্ন ২২। ভারতে কৃষক আন্দোলন কখন আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৭৮৩ সালে।

প্রশ্ন ২৪। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন কি?

উত্তরঃ নর্মদা নদীর উপর বাঁধ তৈরি ঠেকাতে আন্দোলন।

প্রশ্ন ২৩। চিপকো আন্দোলন কি?

উত্তরঃ চিপকো আন্দোলন হল বৃক্ষ নিধন বন্ধ করার জন্য পরিবেশ রক্ষার একটি গণ আন্দোলন।

প্রশ্ন ২৫। শূন্যস্থান পূরণ কর:

(ক) চিপকো আন্দোলন আরম্ভ হয়েছিল________ সালে।

উত্তরঃ ১৯৭৪।

(খ) সর্দার সরোবর বাঁধ_______ নদীর উপর নির্মাণ করা হয়েছে।

উত্তরঃ নর্মদা।

(গ) ২০০৪ সালের আর. টি. আই বিধেয়ক সংসদে গৃহীত হয় এবং _______সালে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে।

উত্তরঃ ২০০৫

প্রশ্ন ২৬। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের নেতা কে ছিলেন?

উত্তরঃ মেধা পাটকর।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২৮। যে-কোন একটি গণআন্দোলনের নাম লেখ।

উত্তরঃ চিপকো আন্দোলন।

প্রশ্ন ২৭। ভারতে সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে সমতার অধিকার সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে?

উত্তরঃ ১৪-১৮নং অনুচ্ছেদে।

প্রশ্ন ২৯। চিপকো আন্দোলন কখন শুরু হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭৪ সালে।

প্রশ্ন ৩০। চিপকো আন্দোলনের নেতা কে ছিলেন?

উত্তরঃ সুন্দরলাল বহুগুণা।

প্রশ্ন ৩১। চিপকো শব্দের অর্থ কি?

উত্তরঃ জড়িয়ে ধরা অর্থাৎ বৃক্ষকে জড়িয়ে ধরা।

প্রশ্ন ৩২। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭০ সালে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। কখন এবং কোথায় দলিত প্যান্থার্স গঠন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭২ সালে মহারাষ্ট্রে।

প্রশ্ন ২। দলিত প্যান্থার্স-এর প্রধান দাবি কি ছিল?

উত্তরঃ হিন্দুবর্ণবাদী ব্যবস্থার অবসান ও দলিতদের মুক্তিদান।

প্রশ্ন ৩। চিপকো আন্দোলন কেন আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ বনবিভাগের ঠিকাদারদের দ্বারা বন ধ্বংসের চক্রান্ত রোধ করার জন্য ও বনাঞ্চলের উপর নিজের অধিকার আদায় করার উদ্দেশ্যে উত্তরাখণ্ডের চামোলি গ্রামের মহিলাগণ প্রথম চিপকো আন্দোলন আরম্ভ করেন।

প্রশ্ন ৪। দলিতদের সম্পর্কে কে কবিতা রচনা করেছিলেন? কবিতাটির তাৎপর্য কি?

উত্তরঃ প্রখ্যাত মারাঠি কবি নামদেব ধাসাল দলিতদের সম্পর্কে কবিতা রচনা করেছিলেন।

কবিতাটির মাধ্যমে হিন্দুবর্ণবাদী সমাজের দ্বারা নিপীড়িত দলিতদের কথা প্রকাশ হয়েছে। এর দ্বারা দলিতদের সচেতন হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে বলা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে দলিত প্যান্থার্সের জন্ম হয়েছিল।

প্রশ্ন ৫। চিপকো আন্দোলনের মহান দিকটি কি ছিল?

উত্তরঃ চিপকো আন্দোলনের মহান দিকটি ছিল বনাঞ্চল ধ্বংস বন্ধ করে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা।

প্রশ্ন ৬। নগদভিত্তিক শস্যবাজার কেন সংকটে পড়েছিল?

উত্তরঃ নগদভিত্তিক শস্যবাজার সংকটে পড়ার কারণ নিম্নরূপ:

(ক) উদারীকরণ ও মুক্ত বাণিজ্য নীতি গ্রহণ।

(খ) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খরা, বন্যা, ঝড়ঝঞ্ঝা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের দরুন শস্যহানি।

প্রশ্ন ৭। কৃষকদের দুটি সংগঠনের নাম লেখ।

উত্তরঃ কৃষকদের দুটি সংগঠন হল—

(ক) ভারতীয় কিষাণ সংঘ। এবং 

(খ) ক্ষেতকারী সংগঠন।

প্রশ্ন ৮। সর্দার সরোবর প্রকল্প কি?

উত্তরঃ ‘সর্দার সরোবর’ প্রকল্প হল একটি বহুমুখী বৃহৎ বাঁধ প্রকল্প। এই প্রকল্প ১৯৮০ সালে মধ্য ভারতের নর্মদা উপত্যকায় আরম্ভ হয়েছিল। এই প্রকল্পে ৩০টি বড় বাঁধ, ১৩৫টি মাঝারি বাঁধ ও ৩০০০টি ক্ষুদ্র বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব আছে।

প্রশ্ন ৯। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন কি?

উত্তরঃ নর্মদা নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ ঠেকাতে যে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল তাকে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন বলে। এই আন্দোলন মেধা পাটকরের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ১০। SEWA মানে কি বোঝায়? কখন এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?

উত্তরঃ SEWA মানে হল Self Employed Women Association.

১৯৭২ সালে এটা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

প্রশ্ন ১১। দলীয়ভিত্তিক কয়েকটি আন্দোলনের নাম লেখ।

উত্তরঃ দলীয়ভিত্তিক কয়েকটি আন্দোলনের নাম নিম্নরূপ:

(ক) ১৯৭৪ সালের রেল ধর্মঘট।

(খ) জাতীয়তাবাদী আন্দোলন।

(গ) শ্রমিক সংঘ আন্দোলন।

প্রশ্ন ১২। উত্তর ভারতে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন আন্দোলনের সমান্তরালভাবে দক্ষিণ ভারতে কি আন্দোলন গড়ে উঠেছিল?

উত্তরঃ নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন দক্ষিণ ভারতে উত্তর ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের আন্দোলনের সমান্তরালভাবে গড়ে উঠেছিল। কারণ দক্ষিণ ভারতে তিনটি রাজ্য নর্মদা নদী ও তার উপনদীসমূহে নির্মাণ করবার জন্য সরকার গৃহীত প্রকল্পের ফলস্বরূপ অগণিত হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা ছিল।

প্রশ্ন ১৩। গণআন্দোলন বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ গণআন্দোলন বলতে সেই সকল আন্দোলন বোঝায় যাহা বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠী, যথা—কৃষক, মহিলা, ছাত্র ও দলিত সম্প্রদায় কর্তৃক শুরু হয় যারা উপলব্ধি করতে পারে যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা পরিপূরণ করতে পারে না। কতিপয় গণআন্দোলন হল—চিপকো আন্দোলন, নারী আন্দোলন এবং কৃষক আন্দোলন।

প্রশ্ন ১৪। দলীয়ভিত্তিক ও দলীয়ভিত্তিহীন আন্দোলনের বিষয়ে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ রাজনৈতিক দলের সংগঠন দ্বারা পরিচালিত সামাজিক আন্দোলন বা গণ আন্দোলনকে দলীয়ভিত্তিক আন্দোলন বলে; যেমন—ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন। আন্দোলন রাজনৈতিক দল বা দলীয় সংগঠন দ্বারা পরিচালিত হয় না বা রাজনৈতিক কোন দলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না, তাকে দলীয়ভিত্তিহীন আন্দোলন বলে; যেমন—চিপকো আন্দোলন, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন।

প্রশ্ন ১৫। সর্বভারতীয় কিষাণ সংঘের বিষয়ে কি জানো?

উত্তরঃ আশির দশকে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন কৃষক আন্দোলনের একটি অগ্রবর্তী প্রতিষ্ঠান ছিল। পাঞ্জাব ও পশ্চিম উত্তর প্রদেশে চিনি ও গম প্রধান অর্থকরী ফসল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে অর্থনৈতিক উদারীকরণের ফলে অর্থকরী ফসলের বাজার সংকটের সম্মুখীন হয়। বিকেইউ (BKU) আখ ও গমের জন্য উচ্চতর সরকারি সংগ্রহ মূল্য দাবী করে। তাছাড়া বিদ্যুতের মূল্য হ্রাস, কৃষক ঋণ পরিশোধ মুকুব এবং কৃষকদের জন্য সরকারী পেনসন দাবী করে।

প্রশ্ন ১৬। দলিত প্যান্থার্স কি কি বিষয় উত্থাপন করেছিল?

উত্তরঃ দলিত প্যান্থার দলিত তরুণদের এক সংগ্রামী সংগঠন, যা ১৯৭২ সালে মহারাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা প্রধানত চিরায়ত জাতিভিত্তিক বৈষম্য এবং বৈষয়িক অবিচার, সংরক্ষণ ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছিল। দলিত প্যান্থার ও সমভাবাপন্ন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আন্দোলনের ফলে সরকার একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করে যাতে দলিতদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণকারীকে কড়া শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়।

প্রশ্ন ১৭। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের বিষয়ে তুমি কি জানো?

উত্তরঃ ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন ১৯৮৬ সালে মহেন্দ্র সিং টিকায়েত প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি অরাজনৈতিক সংস্থা। এটি কৃষক শ্রেণীর স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। এর অন্যতম দাবি ছিল—আখের মূল্য হ্রাস, কৃষকদের ঋণ মুকুব করা।

প্রশ্ন ১৮। আদি ধর্ম আন্দোলনের বিষয়ে তুমি কি জানো?

উত্তরঃ পাঞ্জাবে শ্রী মাঙ্গুরাম-এর নেতৃত্বে আদি ধর্ম আন্দোলন আরম্ভ হয়েছিল। এই আন্দোলন ভিলি, সংঘী, চুরাস, চারমাস এবং ভাঙ্গী সম্প্রদায়ভুক্ত লোকই ভারতের আদিম জনজাতি বলে প্রচার করে। হিন্দু আক্রমণের ফলে আদি ধর্ম আন্দোলন ধ্বংস হয়।

প্রশ্ন ১৯। ১৯ শতকের সামাজিক ধর্মীয় আন্দোলনের বিষয়ে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ১৯ শতকে নিম্নোক্ত সামাজিক ধর্মীয় আন্দোলন আরম্ভ হয়েছিল:

(ক) রাজা রামমোহন রায় ১৮২৮ সালে ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করে ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলন শুরু করেন।

(খ) এনি বেসান্ত থিওসোফিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করে সমাজ সংস্কারে রত হন।

(গ) স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠাকল্পে সমাজ সংস্কারে রত হন।

প্রশ্ন ২০। BKU দ্বারা উত্থাপন করা দুটি দাবি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে আখ ও গমের বাজার ভারতীয় অর্থনীতিতে উদারীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার দরুণ সংকটের সম্মুখীন হয়। 

এই পরিপ্রেক্ষিতে BKU দাবী উত্থাপন করে—

(ক) আম ও গমের জন্য উচ্চতর সরকারি সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। ও 

(খ) কৃষকদের ঋণ মুকুব করতে হবে।

প্রশ্ন ২১। মহিলার সামাজিক মর্যাদার বিষয়ে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ আমাদের দেশে পুরুষ এবং মহিলাদের সামাজিক অবস্থান সমান নয়। মহিলারা অনেককাল ধরেই অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার। মহিলারা পারিবারিক হিংসা, পণপথা, কর্মস্থল ও প্রকাশ্যে যৌন হয়রানির সম্মুখীন হন। ১৯৬০-এর দশক থেকে মহিলারা তাঁদের সামাজিক প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে আসছেন। এই আন্দোলনসমূহ মহিলাদের সমস্যা সম্পর্কে সর্বমোট সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রচুর অবদান যোগায়।

প্রশ্ন ২২। সুরাবিরোধী আন্দোলন কি?

উত্তরঃ আরক বা সুরা (মদ) বিরোধী আন্দোলন ১৯৯০-এর দশকে অন্ধ্রপ্রদেশের মহিলা সংগঠন দ্বারা আরম্ভ হয়েছিল। এই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মদ তৈরি ও মদ বিক্রি সম্পূর্ণ নিষেধ করা। পুরুষদের মদ্যপানের ফলে পরিবারের শান্তি বিঘ্নিত হওয়া থেকে মুক্তি পেতে মহিলারা এই আন্দোলন করেছিলেন।

প্রশ্ন ২৩। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

(ক) _______ আখ্যা পাওয়া একটি আন্দোলনে নর্মদা নদীর উপর _______ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল।

উত্তরঃ নর্মদা বাঁচাও/ ৩০টি।

(খ) ড. বি. আর আম্বেদকর ________ ছিলেন।

উত্তরঃ দলিত নেতা।

(গ) ভারতের সংবিধান ________ র পরম্পরা ________ করেছে।

উত্তরঃ অস্পৃশ্যতা/ নিষিদ্ধ৷

(ঘ) চিপকো আন্দোলন গাছকাটা বন্ধ করার একটি ________আন্দোলন।

উত্তরঃ সামাজিক।

(ঙ) সুরার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে_________ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

উত্তরঃ মহিলা আন্দোলন।

প্রশ্ন ২৪। কৃষকদের দুটি সংগঠনের নাম লেখ।

উত্তরঃ কৃষকদের দুটি সংগঠন হল—

(ক) ভারতীয় কিষাণ সংঘ। এবং 

(খ) ক্ষেতকারী সংগঠন।

প্রশ্ন ২৫। সর্দার সরোবর প্রকল্প কি?

উত্তরঃ ‘সর্দার সরোবর’ প্রকল্প হল একটি বহুমুখী বৃহৎ বাঁধ প্রকল্প। এই প্রকল্প ১৯৮০ সালে মধ্য ভারতের নর্মদা উপত্যকায় আরম্ভ হয়েছিল। এই প্রকল্পে ৩০টি বড় বাঁধ, ১৩৫টি মাঝারি বাঁধ ও ৩০০০টি ক্ষুদ্র বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব আছে।

প্রশ্ন ২৬। অদলীয় আন্দোলন কি?

উত্তরঃ যে আন্দোলন রাজনৈতিক দল বা দলীয় সংগঠন দ্বারা পরিচালিত হয় না বা রাজনৈতিক কোন দলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। তাকে দলীয় ভিত্তিহীন আন্দোলন বলে, যেমন—চিপকো আন্দোলন, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন ইত্যাদি।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২৭। যে-কোন দুই প্রকার গণআন্দোলন উল্লেখ কর।

উত্তরঃ দুই প্রকার গণআন্দোলন হল—

(ক) তথ্য জানার অধিকার আন্দোলন।ও 

(খ) নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন। 

প্রশ্ন ২৮। সামাজিক আন্দোলন মানে কি? সামাজিক আন্দোলনের একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ যে আন্দোলনের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যাসমূহ সমাধান করতে বা সমাজের স্বার্থ সুরক্ষা করতে প্রতিবাদী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাকে সামাজিক আন্দোলন বলে।

চিপকো আন্দোলন একটি সামাজিক আন্দোলন।

প্রশ্ন ২৯। ১৯৮০–১৯৯০-এর দশকে ভারতে সংঘটিত যে-কোন দুটি গণ আন্দোলনের উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ১৯৮০-১৯৯০-এর দশকে ভারতে সংঘটিত দুটি গণ আন্দোলন হল— 

(ক) চিপকো আন্দোলন। ও 

(খ) নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন।

প্রশ্ন ৩০। গণআন্দোলনগুলিকে কয়টি এবং কি কি ভাগে ভাগ করা যায়?

উত্তরঃ গণআন্দোলনগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

(ক) রাজনৈতিক দলভিত্তিক গণআন্দোলন।

(খ) দলীয় ভিত্তিবিহীন গণআন্দোলন।

প্রশ্ন ৩১। যে-কোন দুটি রাজনৈতিক দলভিত্তিক গণআন্দোলনের উল্লেখ কর।

উত্তরঃ রাজনৈতিক দলভিত্তিক দুটি গণআন্দোলন নিম্নরূপ:

(ক) ভারতীয় জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস পরিচালিত আন্দোলন।

(খ) সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস পরিচালিত আন্দোলন।

প্রশ্ন ৩২। যে-কোন দুটি প্রকার দলীয় ভিত্তিবিহীন গণআন্দোলনের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ দুই প্রকার দলীয় ভিত্তিবিহীন গণআন্দোলনের উপহার নিম্নরূপ:

(ক) তথ্য জানার অধিকার আইন।

(খ) নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন।

প্রশ্ন ৩৩। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন কে কখন প্রতিষ্ঠা করেছিল?

উত্তরঃ ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন মহেন্দ্র সিং টিকায়েত ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রশ্ন ৩৪। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের যে-কোন দুটি দাবি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের দুটি দাবি নিম্নরূপ:

(ক) কুশিয়ারের মূল্য বৃদ্ধি করা।

(খ) কৃষকগণের উপর ঋণ মুকুব করা।

প্রশ্ন ৩৫। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

(ক) একটি বিশেষ শ্রেণী অর্থাৎ কৃষক শ্রেণীর স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেছিল।

(খ) একটি অরাজনৈতিক সংস্থা।

প্রশ্ন ৩৬। ‘আরক’ বা ‘সুরা’ বিরোধী আন্দোলন কখন কোথায় আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ ‘আরক’ বা ‘সুরা’ বিরোধী আন্দোলন প্রথম ১৯৯০-এর দশকে অন্ধ্র প্রদেশে আরম্ভ হয়েছিল। এই আন্দোলন মহিলাদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ৩৭। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন কখন ও কার নেতৃত্বে আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন ১৯৮৯ সালে মেধা পাটকরের নেতৃত্বে আরম্ভ হয়েছিল।

প্রশ্ন ৩৮। তথ্য জানার অধিকার আন্দোলন কোথায় ও কখন আরম্ভ হয়েছিল? এই আন্দোলন কে পরিচালনা করেছিল?

উত্তরঃ তথ্য জানার অধিকার আন্দোলন ১৯৯০ সালে রাজস্থানে প্রথম আরম্ভ হয়েছিল। এই আন্দোলন মজদুর কিষাণ শক্তি সংগ্রাম পরিচালনা করেছিল।

প্রশ্ন ৩৯। চিপকো আন্দোলন কি?

উত্তরঃ চিপকো শব্দের অর্থ হল বৃক্ষকে জড়িয়ে ধরা। বৃক্ষকে জড়িয়ে ধরে তা রক্ষা করার আন্দোলনকে চিপকো আন্দোলন বলে। ১৯৭৪ সালে উত্তর প্রদেশের (বর্তমান উত্তরাখণ্ড) দুই-তিনটি স্থানে চা আরম্ভ হয়েছিল। এই আন্দোলনের নেতা ছিলেন সুন্দরলাল বহুগুণা৷

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। দলিত প্যান্থার্স কেন গণমুখী কার্যসূচী গ্রহণ করেছিল?

উত্তরঃ ‘প্যান্থার’ শব্দের বাংলা অর্থ হল ‘কালো বাঘ’। এই বাঘ তার অদম্য সাহস ও আক্রমণাত্মক শক্তির জন্য বিখ্যাত। এরা কখনও কারও অধীনস্ত হয়ে থাকে না। ভারতবর্ষে দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত লোক শতাব্দী ব্যাপি ভারতীয় বর্ণব্যবস্থার বলি হয়ে আসছে। এই দলিতগণের মুক্তির জন্যই দলিত শিক্ষিত শ্রেণী ‘দলিত প্যান্থারস’ প্রতিষ্ঠা করেছিল। সংগঠনের নামকরণেই তা উপলব্ধি করা যায় যে দলিত সম্প্রদায় বর্ণবাদী হিন্দু সমাজের অধীনস্থ হয়ে থাকবে না। সাহস ও আত্মবিশ্বাস তথা দৃঢ়ভাবে নিজ অধিকার আদায় করতে চায়।

দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা করবার জন্য ১৯৭২ সালে মহারাষ্ট্রে দলিত প্যান্থারস নামে বিদ্রোহী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দু বর্ণবাদী ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া। এই লক্ষ্যে উপনীত হবার জন্য সমাজের সকল নিপীড়িত লোক, বিশেষত ভূমিহীন কৃষক ও শহরাঞ্চলের উদ্যোগখণ্ডের শ্রমিকগণকে দলিতগণের সঙ্গে সংগঠিত করাও প্যান্থার্সদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করবার জন্য দলিত প্যান্থাস দলিতগণের উপর বৃদ্ধি হওয়া উৎপীড়নের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল। দলিত প্যান্থার্সদের আন্দোলনের ফলে সরকার ১৯৮৯ সালে এক বিস্তৃত আইন প্রণয়ন করে। এতে দলিতগণের উপর যে-কোন প্রকার নির্যাতনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রশ্ন ২। ভারতীয় কৃষক সংঘের (BKU) দাবিসমূহের তালিকা প্রস্তুত কর।

উত্তরঃ কৃষিখণ্ডে সংঘটিত সবুজ বিপ্লব ভারতবর্ষের কৃষিখণ্ডে একটি শক্তিশালী শ্রেণীর সৃষ্টি করেছিল। এই শ্রেণীটি হল কৃষক শ্রেণী। ১৯৭০-এর দশক হতে এই শ্রেণীটি সংগঠিত হতে থাকে। ভারতবর্ষের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিং এই কৃষক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারসমূহের কৃষিনীতি এই কৃষক শ্রেণীটির স্বার্থে নেতিবাচক প্রভাবের ফলশ্রুতিতেই ১৯৮৬ সালে মহেন্দ্র সিং টিকাইতের নেতৃত্বে ‘ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রীয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। সেই বছর প্রায় বিশ হাজার কৃষক উত্তর প্রদেশের মীরাট শহর অবরোধ করে। 

তাদের প্রধান দাবিসমূহ হল—

(ক) খাদ্যশস্যের চলাচলের উপর আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত করা।

(খ) কুশিয়ারের মূল্য বৃদ্ধি করা।

(গ) কৃষকদের উপর থাকা ঋণ বাতিল করা।

(ঘ) পানীয় যোগান তথা বিদ্যুৎ যোগানের মাশুল হ্রাস।

(ঙ) প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

(চ) কৃষি পণ্যসামগ্রী বিক্রির দায়িত্ব সরকারের হাতে থাকবে।

ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের অনেকগুলি দাবিই সরকার গ্রহণ করেছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকার কৃষকদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছিল। ইউনিয়ন কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে সক্ষম হয়েছিল এবং কৃষকদের কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্রশিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করেছিল।

প্রশ্ন ৩। চিপকো আন্দোলনের দাবিসমূহ কি ছিল?

অথবা,

চিপকো আন্দোলনের বিষয়ে লেখ। এই আন্দোলনের প্রভাব কি ছিল?

উত্তরঃ গাছকে জড়িয়ে ধরে অরণ্য ও গাছ রক্ষার জন্য গড়ে তোলা এক অভিনব আন্দোলন হল ‘চিপকো আন্দোলন’। এই আন্দোলনটি সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে। এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ঐতিহাসিক দিনটি হল ১৯৭৪ সালের ২৬ মার্চ। সেই দিনটিতে উত্তরাখণ্ডের ‘চামেলি’ জেলার ‘বেনি’ গ্রামের মহিলাদের একটি গোষ্ঠী রাজ্যের (তখনকার উত্তরপ্রদেশ) বন বিভাগের ঠিকাদারের দ্বারা বনাঞ্চল ধ্বংসের জন্য চালানো চক্রান্ত রোধ করবার জন্য এবং বনাঞ্চলের উপর নিজের অধিকার সাব্যস্ত করবার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই ঘটনা পরবর্তী সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবেশ সচেতনতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এইভাবেই বিস্তারলাভ করে পরিবেশ রক্ষার এক সামাজিক আন্দোলন—‘চিপকো আন্দোলন’। এই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন সুন্দরলাল বহুগুণা ও অমৃতা দেবী।

সহজ বাংলায় ‘চিপকো’ কথার অর্থ হল জড়িয়ে ধরো; জড়িয়ে ধরো গাছকে (to hug trees)। জড়িয়ে ধরো গাছকে, জড়িয়ে ধরো জীবনকে (Tree Hugging Movement), কারণ জীবনের অন্য নাম গাছ। বৃক্ষ বাঁচাও আন্দোলন। একে পরিবেশ নারীবাদ (Ecofeminism) নামেও জানা যায়।

এই আন্দোলন প্রাথমিক সভা ডেকে, আলোচনা করে শুরু হয় নি। অরণ্য বা বৃক্ষকে রক্ষা করলে মানুষের নিজের অস্তিত্ব রক্ষা পাবে এই বিশ্বাসই প্রায় প্রতিটি পাহাড়ি মানুষকে সংগঠিত করেছে। যুক্ত করেছে আন্দোলনের কাজে। এর ফলে এই আন্দোলন হয়ে উঠেছে আরও সুসংহত এবং আন্তরিক।

চিপকো আন্দোলনের মূল দাবি ছিল—

(ক) অরণ্য সংহার বন্ধ। 

(খ) বিকল্প অরণ্য সম্পদের সন্ধান। ও 

(গ) বৃক্ষরোপণ করে নূতন অরণ্য সৃজন।

এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে গান রচিত হয়েছে এবং তৈরি হয়েছে লোকনাট্য। পদযাত্রা, মিছিল, বিক্ষোভ প্রভৃতি তো আছেই। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন দুইজন। একজন সাংবাদিক সুন্দরলাল বহুগুণা এবং অন্যজন চণ্ডীচরণ ভাট যিনি পাহাড়ী জনপদের শ্রমজীবী মানুষদের একজন। চিপকো আন্দোলন শুধু ভারতেই নয়, বিদেশেও যথেষ্ট পরিচিতি ও সমর্থন লাভ করেছে।

প্রশ্ন ৪। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন নিজের দাবিপূরণ করার জন্য কোন্ প্রকার কৌশল অবলম্বন করেছিল?

অথবা,

নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনটি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর। এই আন্দোলনটি তুমি যুক্তিসঙ্গত মনে কর কি? তোমার যুক্তির কারণ দেখাও।

উত্তরঃ নর্মদা নদীর উৎস মধ্যপ্রদেশের মহাদেও পাহাড়ের অমরকণ্টকে। তারপর ক্রমাগতই এর যাত্রা। ১৩১২ কিলোমিটার পরে এর প্রবাহের সমাপ্তি ঘটেছে গুজরাটের উপকূলের আরব সাগরে। এই নর্মদাকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক ও আন্দোলন শুরু হয়েছে। নর্মদার বুকে কয়েকটি বাঁধ গড়ে তুললে এর জলসম্পদ হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং সেচের জলও পাওয়া যাবে। কিন্তু এর ফলে এই অঞ্চলের পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা অনেকে করেছেন।

নর্মদা প্রকল্পের পরিকল্পনা ১৯৪৯ সালে হলেও খুব বেশিদিন কাজ শুরু হয় নি। এই নদীর বিভিন্ন অংশে ৩০টি বড় বাঁধ ও ৩০০টির মতো ছোটো ও মাঝারি বাঁধ তৈরি করা হবে। বড় বাঁধগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইন্দিরা সাগর বা নর্মদা সাগর ও সর্দার সরোবর। এই প্রকল্প হতে মোট ২৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে এবং প্রায় ৫০ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচের জলের যোগান হবে। সম্পূর্ণ প্রকল্পটির জন্য খরচ হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে এই প্রকল্পের ফলে জলমগ্ন হবে সাড়ে তিনলক্ষ হেক্টর জমি। এর মধ্যে আছে ৪৫ হাজার হেক্টর বিরল ও মূল্যবান বৃক্ষশোভিত অরণ্য, আর ৫৬ হাজার হেক্টর অতি উর্বর কৃষিজমি। এই কৃত্রিম প্লাবন বহু অরণ্যচারী প্রাণীর মৃত্যু ঘটাবে এবং প্রায় ১০ লক্ষ লোক বাস্তুহারা হবে। প্লাবনের ফলে হারিয়ে যাবে বিবর্তনের অসংখ্য সাক্ষ্য ও প্রমাণ। নর্মদা সাগরের জন্যই ৩০২৯৩ কোটি টাকার অরণ্য সম্পদ নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়াও সর্দার সরোবর নির্মিত হয়েছে ভূকম্পমান জনিত চ্যুতির উপর, যার ফলে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পাবে। এইসব তথ্যের ভিত্তিতেই সচেতন কিছু মানুষ আন্দোলন শুরু করেছেন। উল্লেখযোগ্যরা হলেন মেধা পাটকর, বাবা আমতে, সতীশ ধাওয়ান, কৃষ্ণ আয়ার, কৃপালিনী সারাভাই প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

প্রশ্ন ৫। NFF বলতে কি বোঝায়? মৎস্য কর্মীদের জীবন কি প্রকার হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল?

উত্তরঃ NFF-এর অর্থ হল National Fishworkers Forum.

সাগর উপকূল অঞ্চলে বসবাসকারী ভারতের বহু অংশের জীবিকার প্রধান উৎস মাছ। সাগরে মৎস্য শিকার করেই তারা জীবন নির্বাহ করে। পুরুষানুক্রমে ও পরম্পরাগতভাবে তারা মৎস্যজীবি সম্প্রদায়। কিন্তু তাদের মাছ ধরার কৌশল পরম্পরাগত ধরনের। কোন বিশেষ মৎসশিকারীর একক কর্তৃত্ব চলে না। সকলে মিলে যৌথভাবে মৎস্য শিকার করে জীবনযাপন করে। দেশের আর্থিক নীতির পরিবর্তন ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রে মাছ ধরবার জন্য বৃহৎ ব্যবসায়ীরা আসে। এই ব্যবসায়ীগণ যন্ত্রচালিত বৃহৎ সামুদ্রিক জাল ব্যবহার করে মৎস্য শিকার করে। এর ফলে সাধারণ মৎস্যশিকারী সম্প্রদায় গভীর সঙ্কটে পড়ে। তাদের জীবন জীবিকার প্রতি প্রত্যাহ্বান দেখা দেয়। ১৯৭০ তথা ১৯৮০-এর দশকে এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে তারা রাজ্য সরকার-সমূহের সঙ্গে দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হয়। মীন বা মাছ রাজ্যিক বিষয়সূচী হওয়ার জন্য এই সংকটের ভিত্তিতে আঞ্চলিক মৎস্যজীবি সংগঠিত হতে আরম্ভ করে। দেশের অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যসূচী শুরু হওয়ার পর এই সংকট আরও গভীর হতে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে মৎস্যজীবি রাষ্ট্রীয় মীন শ্রমিক মঞ্চ (National Fishworkers’ Forum) গঠন করে। কেরালার মৎস্যজীবিগণের উদ্যোগে বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠিত মীন শ্রমিকগণ ১৯৯১ সাে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রণয়ন করা। গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকারের নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে সাফল্য লাভ করে। ২০০২ সালে সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলিকে সমুদ্রে মাছ ধরার অনুমতি দিলে রাষ্ট্রীয় মীন শ্রমিক মঞ্চ দেশব্যাপি ধর্মঘটের ডাক দেয়।

প্রশ্ন ৬। মহিলাদের সামাজিক মর্যাদার উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ আধুনিক ভারতে যদিও মহিলাগণকে পুরুষের সমান সকল অধিকার প্রদান করা হয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মহিলাগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষের সমান মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হয় নি। মধ্যযুগ থেকে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার প্রভৃতি মহিলাগণকে স্বাধীনভাবে জীবনধারণ করতে বাধার সৃষ্টি করে আসছে। আধুনিক ভারতে সতীদাহ প্রথা, কন্যাশিশু হত্যা, বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা প্রভৃতি নিষিদ্ধকরণ হলেও ভারতীয় মহিলাগণ এখনও পশ্চিমীদেশের মহিলাদের মতো মুক্ত ও স্বাধীন হতে পারে নি। এখনও যৌতুকের জন্য অধিকাংশ নারী স্বামীর দ্বারা শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা ছাড়াও হত্যার হুমকি অথবা হত্যাও করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হলেও ভারতীয় মহিলাগণ এখনও সম্পূর্ণ অর্থাৎ সবলীকরণ হয়ে ওঠে নি। অবশ্য পূর্বের তুলনায় বর্তমানে তারা উচ্চ মর্যাদা লাভ করেছে। 

বিভিন্ন মহিলা সংগঠনগুলি মহিলাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে। এই আন্দোলনসমূহ মহিলাদের সমস্যা সম্পর্কে সর্বমোট সামাজিক সচেতনা বৃদ্ধি করতে প্রচুর অবদান যোগায়। সংবিধানের ৭৩তম এবং ৭৪তম সংশোধন স্থানীয় রাজনৈতিক পদের ক্ষেত্রে মহিলাদের সংরক্ষণ প্রদান করে। এই ধরনের সংরক্ষণ রাজ্য ও কেন্দ্র আইনসভাগুলির ক্ষেত্রে প্রসারণ করার দাবী ওঠে। মহিলাদের সামাজিক মর্যাদার উন্নতির জন্য ভারত সরকার ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ নামক প্রচার অভিযান গ্রহণ করেছে।

প্রশ্ন ৭। মহিলা সবলীকরণ রাষ্ট্রীয় নীতি, ২০০১-এর চারটি প্রধান উদ্দেশ্যের বিবরণ দাও।

উত্তরঃ মহিলা সবলীকরণ রাষ্ট্রীয় নীতির প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) মহিলাগণের সামাজিক, আর্থিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পৌর অধিকারের আইনগত ও বাস্তবিক প্রয়োগ।

(খ) মহিলাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য নির্মূলকরণ এবং এক কার্যাদক্ষ ন্যায়িক ব্যবস্থার সৃষ্টি।

(গ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতির মাধ্যমে মহিলাদের পূর্ণ বিকাশের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করা।

(ঘ) মহিলাগণকে সম্পত্তি, স্বাস্থ্য, নিয়োগ, সামাজিক নিরাপত্তা ও সুবিধা প্রদান করা।

প্রশ্ন ৮। মহিলা সবলীকরণের জন্য সংসদ ও রাজ্যিক বিধানমণ্ডলে আসন সংরক্ষণের দাবিটি পরীক্ষা কর।

উত্তরঃ মহিলা সবলীকরণের জন্য মহিলাগণকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করা ছাড়াও রাজনৈতিকভাবে তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা উচিত। কারণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সমাজের অর্ধাংশ লোকের সম্পূর্ণ সহযোগিতা ছাড়া গণতন্ত্র কখনও কৃতকার্যতা লাভ করতে পারে না। ভারতে পুরুষের মতো মহিলাগণকে সমান রাজনৈতিক অধিকার প্রদান করলেও সংসদে ও রাজ্যিক বিধানমণ্ডলে শতকরা দশ শতাংশ মহিলাও নির্বাচিত হতে দেখা যায় নি। এটা নিশ্চিত যে যদি মহিলাগণ পুরুষের মতো সমানভাবে দেশের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করে তাহলে মহিলাগণ সামগ্রিকভাবে বিকাশলাভ করতে পারবে না। সেজন্য সংবিধানের ৭৩তম ও ৭৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে পঞ্চায়েত ও পৌরসংস্থাসমূহে মহিলাদের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ (বর্তমানে ৫০%) আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী সংসদ ও রাজ্যিক বিধানমণ্ডলে দুই-তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে, যদিও এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে সংসদ দ্বারা তা অনুমোদিত হয়নি।

প্রশ্ন ৯। আরক বিরোধী আন্দোলনকে তুমি মহিলাদের আন্দোলন বলে ভাবো কি? কেন?

উত্তরঃ আরক বিরোধী আন্দোলন নিঃসন্দেহে একটি নারী আন্দোলন। ৯০-এর দশকে অন্ধ্রপ্রদেশের নেলোর জেলার মহিলাগণ মিলিতভাবে আরক বা মদ তৈরি এবং মদ বিক্রির বন্ধের দাবী উত্থাপন করেছিল। এই সংবাদ যখন ছড়িয়ে পড়ল তখন প্রায় পাঁচ হাজার মহিলা গ্রামবাসী অনুপ্রাণিত হয়। তারা সভায় মিলিত হয়ে সুরা বিরোধী প্রস্তাব গ্রহণ করে জেলা শাসকের নিকট উত্থাপন করে। এর ফলে নেলোরে অন্তত ১৭ বার ‘আরক’ নিলাম বন্ধ হয়। পরবর্তীকালে রাজ্যের সর্বত্রই এই আন্দোলন ধীরে ধীরে বিস্তারলাভ করে। সর্বত্রই মহিলাগণ আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন।

প্রশ্ন ১০। দলিত প্যান্থার্স কি কি বিষয় উত্থাপন করেছিল?

উত্তরঃ ‘প্যান্থার’ শব্দের বাংলা অর্থ হল ‘কালো বাঘ’। এই বাঘ তার অদম্য সাহস ও আক্রমণাত্মক শক্তির জন্য বিখ্যাত। এরা কখনও কারও অধীনস্ত হয়ে থাকে না। ভারতবর্ষে দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত লোক শতাব্দী ব্যাপি ভারতীয় বর্ণব্যবস্থার বলি হয়ে আসছে। এই দলিতগণের মুক্তির জন্যই দলিত শিক্ষিত শ্রেণী ‘দলিত প্যান্থারস’ প্রতিষ্ঠা করেছিল। সংগঠনের নামকরণেই তা উপলব্ধি করা যায় যে দলিত সম্প্রদায় বর্ণবাদী হিন্দু সমাজের অধীনস্থ হয়ে থাকবে না। সাহস ও আত্মবিশ্বাস তথা দৃঢ়ভাবে নিজ অধিকার আদায় করতে চায়।

দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা করবার জন্য ১৯৭২ সালে মহারাষ্ট্রে দলিত প্যান্থারস নামে বিদ্রোহী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দু বর্ণবাদী ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া। এই লক্ষ্যে উপনীত হবার জন্য সমাজের সকল নিপীড়িত লোক, বিশেষত ভূমিহীন কৃষক ও শহরাঞ্চলের উদ্যোগখণ্ডের শ্রমিকগণকে দলিতগণের সঙ্গে সংগঠিত করাও প্যান্থার্সদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করবার জন্য দলিত প্যান্থাস দলিতগণের উপর বৃদ্ধি হওয়া উৎপীড়নের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল। দলিত প্যান্থার্সদের আন্দোলনের ফলে সরকার ১৯৮৯ সালে এক বিস্তৃত আইন প্রণয়ন করে। এতে দলিতগণের উপর যে-কোন প্রকার নির্যাতনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রশ্ন ১১। মণ্ডল আয়োগের প্রধান সুপারিশসমূহ লেখ।

উত্তরঃ জনতা পার্টি সরকার ১৯৭৯ সালের ১লা জানুয়ারি মণ্ডল আয়োগ নিযুক্ত করেন। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি. পি. মণ্ডলের নেতৃত্বে মণ্ডল আয়োগ গঠিত হয়েছিল। মণ্ডল আয়োগকে সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীগুলিকে নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আয়োগকে পশ্চাদপদ শ্রেণীর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মণ্ডল আয়োগ মোট ৩৭৪৩টি অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী চিহ্নিত করেছিল। 

মণ্ডল আয়োগের প্রধান সুপারিশসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) সরকারি চাকুরিতে ২৭ শতাংশ পদ অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে। অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মোট জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ, কিন্তু তাদের জন্য সংরক্ষণ কোটা তাদের জনসংখ্যার অনুপাতে নয়।

(খ) অনগ্রসর শ্রেণীর কল্যাণমুখী প্রকল্পগুলিকে ভারত সরকার অর্থ মঞ্জুর করবে এবং অর্থের অনুপাত তপশীলভুক্ত জাতি ও তপশীলভুক্ত জনজাতির মতো জনসংখ্যার অনুপাতের ভিত্তিতে হবে।

(গ) ক্ষুদ্র ভূমি মালিকদের স্বার্থে উদারনৈতিক সংস্কার ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে।

(ঘ) অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়গুলিকে ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনের জন্য উৎসাহিত সহায়তা করতে হবে।

(ঙ) তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষা কার্যসূচী বিশেষত বৃত্তিমুখী শিক্ষা প্রদান করা উচিত।

প্রশ্ন ১২। নামদেও ধাসাল কে ছিলেন? শ্রেণী সংগ্রামের উপর সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ নামদেও ধাসাল বিশিষ্ট মারাঠী বিপ্লবী কবি ছিলেন। তিনি ভারতের দলিত সম্প্রদায়কে হিন্দু ব্যবস্থায় থাকা উচ্চ জাতি প্রাধান্যতার ও উৎপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি পদ্মশ্রী পান।

শ্রেণী সংগ্রামের ধারণাটি কার্ল মার্ক্স উদ্ভাবন করেছিলেন। এই তত্ত্ব অনুযায়ী সমাজে প্রধানত ধনী ও গরীব অর্থাৎ মালিক ও শ্রমিক দুটি শ্রেণী আছে। মালিকগণ সদাই শ্রমিকদের শোষণ করে। মার্ক্সের মতে শ্রমিক বা শোষিত শ্রেণী একদিন মালিক শ্রেণীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে। এই শ্রেণী সংগ্রামের মাধ্যমে মালিক অর্থাৎ পুঁজিবাদী অর্থাৎ শাসক শ্রেণী ক্ষমতাচ্যুত হবেন।

প্রশ্ন ১৩। নব্য সামাজিক আন্দোলন এবং বৈপ্লবিক ভাবধারার মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তরঃ বৈপ্লবিক ভাবধারা সাধারণত সামাজিক কাঠামো সম্পর্কিত। এর লক্ষ্য হল বিদ্যমান সামাজিক কাঠামোকে পালটে ফেলা। এর একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আদর্শ থাকে। এই সম্পর্কযুক্ত আন্দোলন রাজনৈতিক দল কর্তৃক পরিচালিত হয়। উদাহরণস্বরূপ আমরা রাশিয়ার বিপ্লবকে নিতে পারি।

নব্য সামাজিক আন্দোলন হল এমন একটি আন্দোলন যার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যাসমূহ সমাধান করতে বা সমাজের স্বার্থ সুরক্ষা করতে প্রতিবাদী কাৰ্যব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই আন্দোলনগুলির কোন প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে না। সামাজিক আন্দোলনের কিছু উদাহরণ হল—চিপকো আন্দোলন, দলিত আন্দোলন, এনএফটি আন্দোলন, আরক বিরোধী আন্দোলন, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন, আরটিআই আন্দোলন ইত্যাদি।

প্রশ্ন ১৪। সর্দার সরোবর প্রকল্পের উপর একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ সর্দার সরোবর প্রকল্প হচ্ছে একটি বহুমুখী বৃহদাকার বাঁধ। এই প্রকল্পের দ্বারা গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ইত্যাদি রাজ্যের বিস্তৃত অঞ্চল পানীয় জল এবং সেচের জল প্রাপ্তির দিক থেকে, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং কৃষি উৎপাদান বৃদ্ধির দিক থেকে উপকৃত হবে। আরো অনেক সহায়ক সুবিধা; যেমন—এই অঞ্চলে কার্যকরী বন্যা এবং খরা নিয়ন্ত্রণ; এই বাঁধের সাফল্যের সঙ্গে জড়িত ছিল। বাঁধ নির্মাণকালে তিনটি রাজ্যের ২৪৫টি গ্রামের নিমজিত হওয়ার আশঙ্কা। এর ফলে গ্রামের প্রায় ২৫০০০ লোকের পুনঃস্থাপনের প্রয়োজন হবে। স্থানীয় সক্রিয় গোষ্ঠীসমূহ প্রকল্প প্রভাবিত লোকদের পুনঃস্থাপন ও পুনর্বাসনের সমস্যা নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ১৯৮৮-৮৯ সালে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠীগুলির দ্বারা সংগঠিত হয়।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৫। রাজনৈতিক দলভিত্তিক গণআন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ খাদ্যজাত সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি প্রভৃতি প্রশ্নে বিগত সময়ে ভারতবর্ষে বিভিন্ন প্রকার আন্দোলন বা প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সর্বভারতীয় ভিত্তিতে পালন করা ধর্মঘট বা দিনব্যাপি ঢাকা বন্ধের কার্যসূচীসমূহ কয়েকটি ট্রেড ইউনিয়ন আরম্ভ করে। কারণ এই ট্রেড ইউনিয়নসমূহের সর্বভারতীয় ভিত্তি থাকে। তদুপরি এই ট্রেড ইউনিয়নসমূহ বিশেষ রাজনৈতিক দলের অংশ। উদাহরণস্বরূপ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ট্রেড ইউনিয়নের নাম—ভারতীয় জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (Indian National Trade Union Congress, INTUC)। এই ট্রেড ইউনিয়নসমূহের বিভিন্ন সরকারি খণ্ড, যেমন—ব্যাঙ্ক, জীবনবীমা, রেল প্রভৃতি কর্মচারীদের মধ্যে যথেষ্ট প্রভাব আছে। এইজন্য এই ট্রেড ইউনিয়নগুলির ভিত্তি ব্যাপক ও সংঘটিত। এই ট্রেড ইউনিয়নসমূহের দ্বারা পরিচালিত আন্দোলনকে রাজনৈতিক দলভিত্তিক গণআন্দোলন বলা যায়। রাজনৈতিক দলের আদর্শের দ্বারা এই আন্দোলন প্রভাবান্বিত, কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তগত করা এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য নয়।

প্রশ্ন ১৬। দলীয় ভিত্তিবিহীন গণআন্দোলনের বিষয় সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৭০ এবং ১৯৮০ দশক থেকে ভারতবর্ষে দলীয় ভিত্তিবিহীন অনেকগুলি গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল। স্বাধীনতার পর গ্রহণ করা বিকাশনীতি সর্বস্তরের জনসাধারণের উপকার সাধন করবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয় নি। সরকার গৃহীত পরিকল্পিত বিকাশ বা সবুজ বিপ্লবের কার্যসূচী দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি করে। কিন্তু এর সুফল সকলে ভোগ করতে পারে নি। দেশে নানা সমস্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

এইরূপ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় অথচ রাজনৈতিক দলের অংশ না হওয়া বিভিন্ন সংগঠন জনসাধারণকে সংগঠিত করে থাকে। ছাত্র তথা যুব সংগঠনসমূহ এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উদাহরণস্বরূপ ১৯৭৯–১৯৮৫ সালে আসামে বিদেশি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন, নর্মদা উপত্যকায় সর্দার সরোবর বাঁধের বিরুদ্ধে মেধা পাটকরের নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক নেই।

প্রশ্ন ১৭। তথ্য জানার অধিকার আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভারতীয় সংসদ ২০০৫ সালে তথ্য জানার অধিকার আইন অনুমোদন করে। এই আইন বর্তমান সময়ে ভারতীয় জনসাধারণের জন্য এক শক্তিশালী গণতান্ত্রিক অস্ত্র হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী যে-কোন নাগরিক সরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা সরকারি অর্থের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের যে-কোন তথ্য আহরণ করতে পারে। সরকারি লেনদেনে কোন গোপনীয়তা থাকবে না। এটাই হল এই আইনের মূল কথা।

নাগরিকের লাভ করা এই অধিকার সুদীর্ঘ গণআন্দোলনেরই ফলশ্রুতি। এই আন্দোলন ১৯৯০ সালে রাজস্থানে প্রথম শুরু হয়েছিল। মজদুর কিষাণ শক্তি সংগ্রাম নামক সংগঠনটি এই আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল। ১৯৯৬ সালে এই সংগঠন তথ্য জানার অধিকার আন্দোলনকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য দিল্লীতে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিপল্স রাইট টু ইনফরমেশন (National Council for People’s Right to Information) গঠন করে। ২০০২ সালে তথ্যের স্বাধীনতা (Freedom of Information) শীর্ষক এক আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু এই আইন ত্রুটিপূর্ণ থাকায় তা প্রয়োগ করা হয় নি। অবশেষে ২০০৫ সালে তথ্য জানার অধিকার আইন প্রণীত হয়। এই আইন অনুযায়ী প্রতিটি সরকারি বিভাগে এক একজন সরকারি তথ্য যোগানকারী বিষয়ক আধিকারিক (Public Information Officer) থাকে। যে-কোন নাগরিক নির্দিষ্ট বিষয়ে তার নিকট তথ্যাদি জানার আবেদন করতে পারেন। 

অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন কেন নর্মদা উপত্যকার নদীবাঁধ প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিল?

উত্তরঃ নর্মদা নদীর উৎস মধ্যপ্রদেশের মহাদেও পাহাড়ের অমরকণ্টকে। তারপর ক্রমাগতই এর যাত্রা। ১৩১২ কিলোমিটার পরে এর প্রবাহের সমাপ্তি ঘটেছে গুজরাটের উপকূলের আরব সাগরে। এই নর্মদাকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক ও আন্দোলন শুরু হয়েছে। নর্মদার বুকে কয়েকটি বাঁধ গড়ে তুললে এর জলসম্পদ হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং সেচের জলও পাওয়া যাবে। কিন্তু এর ফলে এই অঞ্চলের পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা অনেকে করেছেন।

নর্মদা প্রকল্পের পরিকল্পনা ১৯৪৯ সালে হলেও খুব বেশিদিন কাজ শুরু হয় নি। এই নদীর বিভিন্ন অংশে ৩০টি বড় বাঁধ ও ৩০০টির মতো ছোটো ও মাঝারি বাঁধ তৈরি করা হবে। বড় বাঁধগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইন্দিরা সাগর বা নর্মদা সাগর ও সর্দার সরোবর। এই প্রকল্প হতে মোট ২৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে এবং প্রায় ৫০ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচের জলের যোগান হবে। সম্পূর্ণ প্রকল্পটির জন্য খরচ হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে এই প্রকল্পের ফলে জলমগ্ন হবে সাড়ে তিনলক্ষ হেক্টর জমি। এর মধ্যে আছে ৪৫ হাজার হেক্টর বিরল ও মূল্যবান বৃক্ষশোভিত অরণ্য, আর ৫৬ হাজার হেক্টর অতি উর্বর কৃষিজমি। এই কৃত্রিম প্লাবন বহু অরণ্যচারী প্রাণীর মৃত্যু ঘটাবে এবং প্রায় ১০ লক্ষ লোক বাস্তুহারা হবে। প্লাবনের ফলে হারিয়ে যাবে বিবর্তনের অসংখ্য সাক্ষ্য ও প্রমাণ। নর্মদা সাগরের জন্যই ৩০২৯৩ কোটি টাকার অরণ্য সম্পদ নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়াও সর্দার সরোবর নির্মিত হয়েছে ভূকম্পমান জনিত চ্যুতির উপর, যার ফলে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পাবে। এইসব তথ্যের ভিত্তিতেই সচেতন কিছু মানুষ আন্দোলন শুরু করেছেন। উল্লেখযোগ্যরা হলেন মেধা পাটকর, বাবা আমতে, সতীশ ধাওয়ান, কৃষ্ণ আয়ার, কৃপালিনী সারাভাই প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

প্রশ্ন ২। আন্দোলন ও প্রতিবাদ একটি দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে কি? উদাহরণ সহকারে তোমার উত্তরের যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন কর।

অথবা,

ভারতে সামাজিক আন্দোলনের গুরুত্ব আছে বলে তুমি মনে কর কী? তোমার উত্তরের যুক্তিযুক্ততা প্রদর্শন কর।

উত্তরঃ গণআন্দোলন বলতে সেই সকল আন্দোলন বোঝায় যা বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠী, যথা—কৃষক, মহিলা, ছাত্র ও দলিত সম্প্রদায় কর্তৃক শুরু হয় যারা উপলব্ধি করতে পারে যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা পরিপূরণ করতে পারে না। কতিপয় গণআন্দোলন হল—চিপকো আন্দোলন, নারী আন্দোলন এবং কৃষক আন্দোলন। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘটিত গণআন্দোলনসমূহ ভারতীয় গণতন্ত্রে এক নূতন মাত্রা প্রদান করেছে। ভারতের প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ রজনী কোঠারী এই গণআন্দোলনসমূহকে ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল আধার তথা ভবিষ্যৎ বলে উল্লেখ করেছেন। এই আন্দোলনসমূহ সাধারণত কোন রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করাও এই আন্দোলনসমূহের লক্ষ নয়। কিন্তু জনসাধারণের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ রাজনৈতিক দল তথা সরকার সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব না করবার জন্য এই আন্দোলনসমূহ গজিয়ে উঠেছে। এইজন্য এই আন্দোলনসমূহ জনসাধারণের মধ্যে সক্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে। সরকার গৃহীত বিভিন্ন নীতি বা কার্যসূচী জনসাধারণের উপর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়েও এই গণআন্দোলনসমূহ ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করেছে। তথ্য জানার অধিকার আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন প্রভৃতি ভারতের গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী করেছে।

প্রশ্ন ৩। ভারতে মহিলাদের আন্দোলন সম্পর্কে একটি রচনা লেখ।

উত্তরঃ ভারতীয় পরম্পরাগত সমাজ পুরুষপ্রধান হওয়ার দরুণ মহিলাগণ সমাজের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে বিবেচিত হয়ে আছে এবং তাদের উপর বিভিন্ন প্রকার নির্যাতন চলে আসছে। এইগুলির প্রতিবাদে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিগত চার দশক ধরে মহিলাগণ দ্বারা বিভিন্ন আন্দোলন আরম্ভ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮০-এর দশকে মণিপুরের মহিলাগণের সুরাবিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৯০ দশকের অন্ধ্র প্রদেশের আরকবিরোধী আন্দোলন অন্যতম। ক্রমাগতভাবে এই আন্দোলনসমূহে মহিলাদের আর্থসামাজিক তথা রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্নও সংগঠিতভাবে উত্থাপন করেছে। পারিবারিক হিংসা, কর্মরত মহিলার সমস্যা, ধর্ষণ, নারী পাচার, যৌন নির্যাতন, স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিভিন্ন সমস্যার দ্বারা জর্জরিত মহিলা সমাজ এই সমস্যাসমূহ নির্মূল করার জন্য এগিয়ে এসেছে। ভারতে মহিলা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী মহিলাদের মধ্যে মেধা পাটেকর, ইলা ভাট, অরুন্ধতী রায়, ইরম শর্মিলা, কিরণ বেদী উল্লেখযোগ্য।

মহিলাগণ দ্বারা পরিচালিত এই আন্দোলন অনেকাংশে কৃতকার্য হয়েছে। মহিলাগণের অধিকার সুরক্ষার্থে রাষ্ট্রীয় মহিলা আয়োগ গঠন করা হয়েছে। ২০০১ সালে রাষ্ট্রীয় মহিলা সরলীকরণ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং ২০০৫ সালে ঘরোয়া হিংসা প্রতিরোধ আইন প্রবর্তিত হয়েছে।

প্রশ্ন ৪। ভারতের গণ বা সামাজিক আন্দোলনসমূহ কিভাবে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে? সেইগুলির সীমাবদ্ধতা কি?

উত্তরঃ গণআন্দোলন বলতে সেই সকল আন্দোলন বোঝায় যা বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠী, যথা—কৃষক, মহিলা, ছাত্র ও দলিত সম্প্রদায় কর্তৃক শুরু হয় যারা উপলব্ধি করতে পারে যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা পরিপূরণ করতে পারে না। কতিপয় গণআন্দোলন হল—চিপকো আন্দোলন, নারী আন্দোলন এবং কৃষক আন্দোলন। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘটিত গণআন্দোলনসমূহ ভারতীয় গণতন্ত্রে এক নূতন মাত্রা প্রদান করেছে। ভারতের প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ রজনী কোঠারী এই গণআন্দোলনসমূহকে ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল আধার তথা ভবিষ্যৎ বলে উল্লেখ করেছেন। এই আন্দোলনসমূহ সাধারণত কোন রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করাও এই আন্দোলনসমূহের লক্ষ নয়। কিন্তু জনসাধারণের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ রাজনৈতিক দল তথা সরকার সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব না করবার জন্য এই আন্দোলনসমূহ গজিয়ে উঠেছে। এইজন্য এই আন্দোলনসমূহ জনসাধারণের মধ্যে সক্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে। সরকার গৃহীত বিভিন্ন নীতি বা কার্যসূচী জনসাধারণের উপর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়েও এই গণআন্দোলনসমূহ ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করেছে। তথ্য জানার অধিকার আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন প্রভৃতি ভারতের গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী করেছে।

প্রশ্ন ৫। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন কি ছিল? এর বিরুদ্ধে থাকা সমালোচনা কি?

উত্তরঃ নর্মদা নদীর উৎস মধ্যপ্রদেশের মহাদেও পাহাড়ের অমরকণ্টকে। তারপর ক্রমাগতই এর যাত্রা। ১৩১২ কিলোমিটার পরে এর প্রবাহের সমাপ্তি ঘটেছে গুজরাটের উপকূলের আরব সাগরে। এই নর্মদাকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক ও আন্দোলন শুরু হয়েছে। নর্মদার বুকে কয়েকটি বাঁধ গড়ে তুললে এর জলসম্পদ হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং সেচের জলও পাওয়া যাবে। কিন্তু এর ফলে এই অঞ্চলের পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা অনেকে করেছেন।

নর্মদা প্রকল্পের পরিকল্পনা ১৯৪৯ সালে হলেও খুব বেশিদিন কাজ শুরু হয় নি। এই নদীর বিভিন্ন অংশে ৩০টি বড় বাঁধ ও ৩০০টির মতো ছোটো ও মাঝারি বাঁধ তৈরি করা হবে। বড় বাঁধগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইন্দিরা সাগর বা নর্মদা সাগর ও সর্দার সরোবর। এই প্রকল্প হতে মোট ২৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে এবং প্রায় ৫০ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচের জলের যোগান হবে। সম্পূর্ণ প্রকল্পটির জন্য খরচ হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে এই প্রকল্পের ফলে জলমগ্ন হবে সাড়ে তিনলক্ষ হেক্টর জমি। এর মধ্যে আছে ৪৫ হাজার হেক্টর বিরল ও মূল্যবান বৃক্ষশোভিত অরণ্য, আর ৫৬ হাজার হেক্টর অতি উর্বর কৃষিজমি। এই কৃত্রিম প্লাবন বহু অরণ্যচারী প্রাণীর মৃত্যু ঘটাবে এবং প্রায় ১০ লক্ষ লোক বাস্তুহারা হবে। প্লাবনের ফলে হারিয়ে যাবে বিবর্তনের অসংখ্য সাক্ষ্য ও প্রমাণ। নর্মদা সাগরের জন্যই ৩০২৯৩ কোটি টাকার অরণ্য সম্পদ নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়াও সর্দার সরোবর নির্মিত হয়েছে ভূকম্পমান জনিত চ্যুতির উপর, যার ফলে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পাবে। এইসব তথ্যের ভিত্তিতেই সচেতন কিছু মানুষ আন্দোলন শুরু করেছেন। উল্লেখযোগ্যরা হলেন মেধা পাটকর, বাবা আমতে, সতীশ ধাওয়ান, কৃষ্ণ আয়ার, কৃপালিনী সারাভাই প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

প্রশ্ন ৬। অরাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ অরাজনৈতিক বা অনাদলীয় আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) এই আন্দোলনসমূহের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই।

(খ) এই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য নির্বাচনমুখী নয়। আন্দোলনের নেতাগণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিবর্তে সদা জনগণের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে।

(গ) এই আন্দোলন নিজ দাবিসমূহ কোন রাজনৈতিক দলের দ্বারা পূরণ করার পরিবর্তে জনগণ দ্বারা সুস্থ ও শক্তিশালী জনমত গঠনের দ্বারা চেষ্টা করে।

(ঘ) অরাজনৈতিক আন্দোলনসমূহ প্রধানত সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক চরিত্রের হয়।

(ঙ) এই আন্দোলন জনসাধারণের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ সরকারের নিকট পেশ করে।

(চ) এই আন্দোলনসমূহ অধিকাংশক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ।

প্রশ্ন ৭। অন্ধ্র প্রদেশের আরকবিরোধী আন্দোলন দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। এই সমস্যাসমূহ কি ছিল?

উত্তরঃ অন্ধ্রপ্রদেশে ১৯৯০-এর দশকে মদ্যপান তথা মদের ঘাটির বিরুদ্ধে মহিলাগণ প্রবল প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ১৯৯২ সালের অক্টোবর মাসের কোন একদিনে চিত্তুর জিলার কালিবারী মণ্ডলের গুন্দলেরি নামক গ্রামে মহিলাগণ তাদের গ্রামে সুরা বা মদ বিক্রির বিরুদ্ধে মিলিত হন। তারা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রামের মদ বিক্রেতাগণকে জানায় এবং মদ বহনকারী জীপ গাড়িখানা ঘুরিয়ে দেয়। মদ বিক্রেতাগণ মদের ঠিকাদারদের মহিলাদের এই প্রতিবাদের কথা জানানোর পর একদল ঠিকাদার গ্রামে একদল গুণ্ডা পাঠায়। কিন্তু মহিলাগণ তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। মহিলাগণ সংঘটিতভাবে গুণ্ডাদের আক্রমণ প্রতিহত করলে তারা মহিলাদের পক্ষ অবলম্বন করে।

১৯৮০ বা ১৯৯০-এর দশকে মণিপুর ও অন্ধ্র প্রদেশে গড়ে ওঠা সুরাবিরোধী আন্দোলন ভারতবর্ষে মহিলা আন্দোলনের এক অংশবিশেষ। ব্যক্তিগত জীবনে মহিলাগণের সম্মুখীন হওয়া অত্যাচার নির্যাতন সামাজিক ও সংগঠিতভাবে প্রতিরোধ করার জন্যই এইরূপ আন্দোলন ভারতবর্ষের অনেক রাজ্যে গড়ে উঠেছিল।

চিত্তুর জেলার মতো অন্ধ্র প্রদেশের নেলোর জিলার ডুরাগুন্টার অতি প্রত্যন্ত এক গ্রামে ১৯৯০-এর দশকের প্রথমদিকে প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতা অভিযানে মহিলাগণ অধিক সংখ্যায় যোগদান করে। এই সাক্ষরতা অভিযান উপলক্ষে অনুষ্ঠিত শ্রেণীসমূহে মহিলাগণ তাদের পরিবারের পুরুষগণ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুরা বা ‘আরক’ সেবন করার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তোলে। স্থানীয় মানুষের মধ্যে মদ্যপান কিভাবে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যহানি ঘটায় সে কথাও ব্যক্ত করেছিল। মদ্যপানের ফলে গ্রামের পুরুষরা কাজকর্ম ছেড়ে ঘরে বসে মদ্যপান করে এবং মদ কিনবার জন্য ঋণগ্রস্ত হয়। যার ফলে গ্রামের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এরূপ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই নেলোরের মহিলাগণ সংগঠিত হয়ে আরকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলে সুরা বিক্রি করা দোকান বন্ধ করে দেওয়ার দাবি উত্থাপন করে।

প্রশ্ন ৮। সামাজিক আন্দোলন বলতে কি বোঝ। সামাজিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

উত্তরঃ সামাজিক আন্দোলন হল এরূপ একটি আন্দোলন যার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যাসমূহ সমাধান করতে বা সমাজের স্বার্থ সুরক্ষা করতে প্রতিবাদী কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এই আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে না।

সামাজিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য বর্তমান:

(ক) সামাজিক আন্দোলনের কোনও দলীয় ভিত্তি থাকে না। বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্য এই আন্দোলনগুলি গড়ে ওঠে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। অপরদিকে রাজনৈতিক আন্দোলন প্রধানত দলীয় আন্দোলন এবং গড়ে ওঠে রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে।

(খ) সামাজিক আন্দোলনের মূল লক্ষ্য সমাজের হিতসাধন ও শুভ পরিবর্তন আনয়ন। অপরদিকে রাজনৈতিক আন্দোলনে থাকে দলীয় ভিত্তি মজবুত করার স্বার্থ এবং রাজনীতিতে কিছু পরিবর্তন আনার লক্ষ্য।

প্রশ্ন ৯। কৃষক বা চাষি শ্রেণীর উপর সংক্ষেপে লেখ। ভারতে তাদের ভূমিকার বিষয়ে বিবরণ দাও।

উত্তরঃ কৃষক বা চাষিদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য যখন সংঘবদ্ধভাবে কোনো গোষ্ঠী বা সংগঠন চেষ্টা করে তখন তাকে কৃষক গোষ্ঠী বলে। 

ইংরেজ শাসনের সময় ভারতের কৃষকগণ তাদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। ১৮৫৮ সাল থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত অনেকগুলি কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়। স্বাধীনতার পূর্বে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। এদের মধ্যে বিহার প্রাদেশিক কিষাণ সভা (১৯২৯), সর্বভারতীয় কিষাণ সভা (১৯৩৬) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ১৯৪৬-এর তেভাগা আন্দোলন, তেলেঙ্গানা আন্দোলন প্রভৃতি কৃষক স্বার্থেই সংগঠিত হয়েছিল। স্বাধীন ভারতে তাদের বিভিন্ন গোষ্ঠী পরিলক্ষিত হয়। বিশেষত সবুজ বিপ্লবের সময় ভারতের কৃষিখণ্ডে একটি শক্তিশালী শ্রেণীর উদয় হয়েছিল। ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে এই শ্রেণীটি সংগঠিত হয় এবং ১৯৮০-এর দশকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কৃষিনীতি কৃষক শ্রেণীর স্বার্থে নেতিবাচক প্রভাবের ফলেই ১৯৮৬ সালে ভারতীয় কৃষক সংঘের জন্ম হয়। বর্তমানে আসামে অখিল গগৈর নেতৃত্বে ‘কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি’ নামে একটি সংগঠন কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বিংশ শতকের সত্তর দশকের শুরুতে উত্তরপ্রদেশে চিপকো আন্দোলন আরম্ভ হওয়ার কারণসমূহ চিহ্নিত কর। এই আন্দোলনের প্রভাব কি ছিল?

উত্তরঃ গাছকে জড়িয়ে ধরে অরণ্য ও গাছ রক্ষার জন্য গড়ে তোলা এক অভিনব আন্দোলন হল ‘চিপকো আন্দোলন’। এই আন্দোলনটি সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে। এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ঐতিহাসিক দিনটি হল ১৯৭৪ সালের ২৬ মার্চ। সেই দিনটিতে উত্তরাখণ্ডের ‘চামেলি’ জেলার ‘বেনি’ গ্রামের মহিলাদের একটি গোষ্ঠী রাজ্যের (তখনকার উত্তরপ্রদেশ) বন বিভাগের ঠিকাদারের দ্বারা বনাঞ্চল ধ্বংসের জন্য চালানো চক্রান্ত রোধ করবার জন্য এবং বনাঞ্চলের উপর নিজের অধিকার সাব্যস্ত করবার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই ঘটনা পরবর্তী সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবেশ সচেতনতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এইভাবেই বিস্তারলাভ করে পরিবেশ রক্ষার এক সামাজিক আন্দোলন—‘চিপকো আন্দোলন’। এই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন সুন্দরলাল বহুগুণা ও অমৃতা দেবী।

সহজ বাংলায় ‘চিপকো’ কথার অর্থ হল জড়িয়ে ধরো; জড়িয়ে ধরো গাছকে (to hug trees)। জড়িয়ে ধরো গাছকে, জড়িয়ে ধরো জীবনকে (Tree Hugging Movement), কারণ জীবনের অন্য নাম গাছ। বৃক্ষ বাঁচাও আন্দোলন। একে পরিবেশ নারীবাদ (Ecofeminism) নামেও জানা যায়।

এই আন্দোলন প্রাথমিক সভা ডেকে, আলোচনা করে শুরু হয় নি। অরণ্য বা বৃক্ষকে রক্ষা করলে মানুষের নিজের অস্তিত্ব রক্ষা পাবে এই বিশ্বাসই প্রায় প্রতিটি পাহাড়ি মানুষকে সংগঠিত করেছে। যুক্ত করেছে আন্দোলনের কাজে। এর ফলে এই আন্দোলন হয়ে উঠেছে আরও সুসংহত এবং আন্তরিক।

চিপকো আন্দোলনের মূল দাবি ছিল—

(ক) অরণ্য সংহার বন্ধ। 

(খ) বিকল্প অরণ্য সম্পদের সন্ধান। ও 

(গ) বৃক্ষরোপণ করে নূতন অরণ্য সৃজন।

এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে গান রচিত হয়েছে এবং তৈরি হয়েছে লোকনাট্য। পদযাত্রা, মিছিল, বিক্ষোভ প্রভৃতি তো আছেই। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন দুইজন। একজন সাংবাদিক সুন্দরলাল বহুগুণা এবং অন্যজন চণ্ডীচরণ ভাট যিনি পাহাড়ী জনপদের শ্রমজীবী মানুষদের একজন। চিপকো আন্দোলন শুধু ভারতেই নয়, বিদেশেও যথেষ্ট পরিচিতি ও সমর্থন লাভ করেছে।

প্রশ্ন ২। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন কৃষকের দুর্দশায় আলোকপাত করা একটি অগ্রণী সংগঠন। নব্বই দশকে তাদের উত্থাপন করা বিষয়সমূহ কি ছিল এবং তা কতটুকু সফল হয়েছিল?

উত্তরঃ কৃষিখণ্ডে সংঘটিত সবুজ বিপ্লব ভারতবর্ষের কৃষিখণ্ডে একটি শক্তিশালী শ্রেণীর সৃষ্টি করেছিল। এই শ্রেণীটি হল কৃষক শ্রেণী। ১৯৭০-এর দশক হতে এই শ্রেণীটি সংগঠিত হতে থাকে। ভারতবর্ষের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিং এই কৃষক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারসমূহের কৃষিনীতি এই কৃষক শ্রেণীটির স্বার্থে নেতিবাচক প্রভাবের ফলশ্রুতিতেই ১৯৮৬ সালে মহেন্দ্র সিং টিকাইতের নেতৃত্বে ‘ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রীয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। সেই বছর প্রায় বিশ হাজার কৃষক উত্তর প্রদেশের মীরাট শহর অবরোধ করে। 

তাদের প্রধান দাবিসমূহ হল—

(ক) খাদ্যশস্যের চলাচলের উপর আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত করা।

(খ) কুশিয়ারের মূল্য বৃদ্ধি করা।

(গ) কৃষকদের উপর থাকা ঋণ বাতিল করা।

(ঘ) পানীয় যোগান তথা বিদ্যুৎ যোগানের মাশুল হ্রাস।

(ঙ) প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

(চ) কৃষি পণ্যসামগ্রী বিক্রির দায়িত্ব সরকারের হাতে থাকবে।

ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের অনেকগুলি দাবিই সরকার গ্রহণ করেছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকার কৃষকদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছিল। ইউনিয়ন কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে সক্ষম হয়েছিল এবং কৃষকদের কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্রশিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করেছিল।

প্রশ্ন ৩। অন্ধ্র প্রদেশের আরকবিরোধী আন্দোলন দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। এই সমস্যাসমূহ কি ছিল?

উত্তরঃ অন্ধ্রপ্রদেশে ১৯৯০-এর দশকে মদ্যপান তথা মদের ঘাটির বিরুদ্ধে মহিলাগণ প্রবল প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ১৯৯২ সালের অক্টোবর মাসের কোন একদিনে চিত্তুর জিলার কালিবারী মণ্ডলের গুন্দলেরি নামক গ্রামে মহিলাগণ তাদের গ্রামে সুরা বা মদ বিক্রির বিরুদ্ধে মিলিত হন। তারা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রামের মদ বিক্রেতাগণকে জানায় এবং মদ বহনকারী জীপ গাড়িখানা ঘুরিয়ে দেয়। মদ বিক্রেতাগণ মদের ঠিকাদারদের মহিলাদের এই প্রতিবাদের কথা জানানোর পর একদল ঠিকাদার গ্রামে একদল গুণ্ডা পাঠায়। কিন্তু মহিলাগণ তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। মহিলাগণ সংঘটিতভাবে গুণ্ডাদের আক্রমণ প্রতিহত করলে তারা মহিলাদের পক্ষ অবলম্বন করে।

১৯৮০ বা ১৯৯০-এর দশকে মণিপুর ও অন্ধ্র প্রদেশে গড়ে ওঠা সুরাবিরোধী আন্দোলন ভারতবর্ষে মহিলা আন্দোলনের এক অংশবিশেষ। ব্যক্তিগত জীবনে মহিলাগণের সম্মুখীন হওয়া অত্যাচার নির্যাতন সামাজিক ও সংগঠিতভাবে প্রতিরোধ করার জন্যই এইরূপ আন্দোলন ভারতবর্ষের অনেক রাজ্যে গড়ে উঠেছিল।

চিত্তুর জেলার মতো অন্ধ্র প্রদেশের নেলোর জিলার ডুরাগুন্টার অতি প্রত্যন্ত এক গ্রামে ১৯৯০-এর দশকের প্রথমদিকে প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতা অভিযানে মহিলাগণ অধিক সংখ্যায় যোগদান করে। এই সাক্ষরতা অভিযান উপলক্ষে অনুষ্ঠিত শ্রেণীসমূহে মহিলাগণ তাদের পরিবারের পুরুষগণ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুরা বা ‘আরক’ সেবন করার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তোলে। স্থানীয় মানুষের মধ্যে মদ্যপান কিভাবে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যহানি ঘটায় সে কথাও ব্যক্ত করেছিল। মদ্যপানের ফলে গ্রামের পুরুষরা কাজকর্ম ছেড়ে ঘরে বসে মদ্যপান করে এবং মদ কিনবার জন্য ঋণগ্রস্ত হয়। যার ফলে গ্রামের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এরূপ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই নেলোরের মহিলাগণ সংগঠিত হয়ে আরকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলে সুরা বিক্রি করা দোকান বন্ধ করে দেওয়ার দাবি উত্থাপন করে।

প্রশ্ন ৪। আরক বিরোধী আন্দোলনকে কি তুমি নারী আন্দোলন বলে মনে কর? কেন?

উত্তরঃ নামদেও ধাসাল বিশিষ্ট মারাঠী বিপ্লবী কবি ছিলেন। তিনি ভারতের দলিত সম্প্রদায়কে হিন্দু ব্যবস্থায় থাকা উচ্চ জাতি প্রাধান্যতার ও উৎপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি পদ্মশ্রী পান।

শ্রেণী সংগ্রামের ধারণাটি কার্ল মার্ক্স উদ্ভাবন করেছিলেন। এই তত্ত্ব অনুযায়ী সমাজে প্রধানত ধনী ও গরীব অর্থাৎ মালিক ও শ্রমিক দুটি শ্রেণী আছে। মালিকগণ সদাই শ্রমিকদের শোষণ করে। মার্ক্সের মতে শ্রমিক বা শোষিত শ্রেণী একদিন মালিক শ্রেণীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে। এই শ্রেণী সংগ্রামের মাধ্যমে মালিক অর্থাৎ পুঁজিবাদী অর্থাৎ শাসক শ্রেণী ক্ষমতাচ্যুত হবেন।

প্রশ্ন ৫। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন নর্মদা উপত্যকায় বাঁধ প্রকল্পের বিরোধিতা কেন করেছিল?

উত্তরঃ নর্মদা নদীর উৎস মধ্যপ্রদেশের মহাদেও পাহাড়ের অমরকণ্টকে। তারপর ক্রমাগতই এর যাত্রা। ১৩১২ কিলোমিটার পরে এর প্রবাহের সমাপ্তি ঘটেছে গুজরাটের উপকূলের আরব সাগরে। এই নর্মদাকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক ও আন্দোলন শুরু হয়েছে। নর্মদার বুকে কয়েকটি বাঁধ গড়ে তুললে এর জলসম্পদ হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং সেচের জলও পাওয়া যাবে। কিন্তু এর ফলে এই অঞ্চলের পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা অনেকে করেছেন।

নর্মদা প্রকল্পের পরিকল্পনা ১৯৪৯ সালে হলেও খুব বেশিদিন কাজ শুরু হয় নি। এই নদীর বিভিন্ন অংশে ৩০টি বড় বাঁধ ও ৩০০টির মতো ছোটো ও মাঝারি বাঁধ তৈরি করা হবে। বড় বাঁধগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইন্দিরা সাগর বা নর্মদা সাগর ও সর্দার সরোবর। এই প্রকল্প হতে মোট ২৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে এবং প্রায় ৫০ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচের জলের যোগান হবে। সম্পূর্ণ প্রকল্পটির জন্য খরচ হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে এই প্রকল্পের ফলে জলমগ্ন হবে সাড়ে তিনলক্ষ হেক্টর জমি। এর মধ্যে আছে ৪৫ হাজার হেক্টর বিরল ও মূল্যবান বৃক্ষশোভিত অরণ্য, আর ৫৬ হাজার হেক্টর অতি উর্বর কৃষিজমি। এই কৃত্রিম প্লাবন বহু অরণ্যচারী প্রাণীর মৃত্যু ঘটাবে এবং প্রায় ১০ লক্ষ লোক বাস্তুহারা হবে। প্লাবনের ফলে হারিয়ে যাবে বিবর্তনের অসংখ্য সাক্ষ্য ও প্রমাণ। নর্মদা সাগরের জন্যই ৩০২৯৩ কোটি টাকার অরণ্য সম্পদ নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়াও সর্দার সরোবর নির্মিত হয়েছে ভূকম্পমান জনিত চ্যুতির উপর, যার ফলে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পাবে। এইসব তথ্যের ভিত্তিতেই সচেতন কিছু মানুষ আন্দোলন শুরু করেছেন। উল্লেখযোগ্যরা হলেন মেধা পাটকর, বাবা আমতে, সতীশ ধাওয়ান, কৃষ্ণ আয়ার, কৃপালিনী সারাভাই প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

প্রশ্ন ৬। আন্দোলন ও প্রতিবাদসমূহ একটি দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে কি? উদাহরণ সহকারে তোমার উত্তরের যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন কর।

উত্তরঃ গণআন্দোলন বলতে সেই সকল আন্দোলন বোঝায় যা বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠী, যথা—কৃষক, মহিলা, ছাত্র ও দলিত সম্প্রদায় কর্তৃক শুরু হয় যারা উপলব্ধি করতে পারে যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা পরিপূরণ করতে পারে না। কতিপয় গণআন্দোলন হল—চিপকো আন্দোলন, নারী আন্দোলন এবং কৃষক আন্দোলন। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘটিত গণআন্দোলনসমূহ ভারতীয় গণতন্ত্রে এক নূতন মাত্রা প্রদান করেছে। ভারতের প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ রজনী কোঠারী এই গণআন্দোলনসমূহকে ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল আধার তথা ভবিষ্যৎ বলে উল্লেখ করেছেন। এই আন্দোলনসমূহ সাধারণত কোন রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করাও এই আন্দোলনসমূহের লক্ষ নয়। কিন্তু জনসাধারণের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ রাজনৈতিক দল তথা সরকার সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব না করবার জন্য এই আন্দোলনসমূহ গজিয়ে উঠেছে। এইজন্য এই আন্দোলনসমূহ জনসাধারণের মধ্যে সক্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে। সরকার গৃহীত বিভিন্ন নীতি বা কার্যসূচী জনসাধারণের উপর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়েও এই গণআন্দোলনসমূহ ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করেছে। তথ্য জানার অধিকার আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন প্রভৃতি ভারতের গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী করেছে।

প্রশ্ন ৭। দলিত প্যান্থারগণ কি কি বিষয় উত্থাপন করেছিল?

উত্তরঃ ‘প্যান্থার’ শব্দের বাংলা অর্থ হল ‘কালো বাঘ’। এই বাঘ তার অদম্য সাহস ও আক্রমণাত্মক শক্তির জন্য বিখ্যাত। এরা কখনও কারও অধীনস্ত হয়ে থাকে না। ভারতবর্ষে দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত লোক শতাব্দী ব্যাপি ভারতীয় বর্ণব্যবস্থার বলি হয়ে আসছে। এই দলিতগণের মুক্তির জন্যই দলিত শিক্ষিত শ্রেণী ‘দলিত প্যান্থারস’ প্রতিষ্ঠা করেছিল। সংগঠনের নামকরণেই তা উপলব্ধি করা যায় যে দলিত সম্প্রদায় বর্ণবাদী হিন্দু সমাজের অধীনস্থ হয়ে থাকবে না। সাহস ও আত্মবিশ্বাস তথা দৃঢ়ভাবে নিজ অধিকার আদায় করতে চায়।

দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা করবার জন্য ১৯৭২ সালে মহারাষ্ট্রে দলিত প্যান্থারস নামে বিদ্রোহী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দু বর্ণবাদী ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া। এই লক্ষ্যে উপনীত হবার জন্য সমাজের সকল নিপীড়িত লোক, বিশেষত ভূমিহীন কৃষক ও শহরাঞ্চলের উদ্যোগখণ্ডের শ্রমিকগণকে দলিতগণের সঙ্গে সংগঠিত করাও প্যান্থার্সদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করবার জন্য দলিত প্যান্থাস দলিতগণের উপর বৃদ্ধি হওয়া উৎপীড়নের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল। দলিত প্যান্থার্সদের আন্দোলনের ফলে সরকার ১৯৮৯ সালে এক বিস্তৃত আইন প্রণয়ন করে। এতে দলিতগণের উপর যে-কোন প্রকার নির্যাতনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top