Class 12 Political Science Chapter 17 আঞ্চলিক প্রত্যাশা Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 17 আঞ্চলিক প্রত্যাশা Notes and select needs one.
Class 12 Political Science Chapter 17 আঞ্চলিক প্রত্যাশা
Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 17 আঞ্চলিক প্রত্যাশা Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 17 আঞ্চলিক প্রত্যাশা Solutions for All Subjects, You can practice these here.
আঞ্চলিক প্রত্যাশা
Chapter: 17
দ্বিতীয় খন্ড (স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি)
অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে থাকা বিষয়সমূহের মধ্যে কোন্ বিষয়টি প্রধান বলে মনে হয়?
উত্তরঃ জম্মু ও কাশ্মীর বিষয়টি।
প্রশ্ন ২। হরি সিং কে ছিলেন?
উত্তরঃ দেশ বিভাজনের সময় কাশ্মীরের মহারাজা ছিলেন।
প্রশ্ন ৩। ভারতীয় সংবিধানের কোন্ অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে?
উত্তরঃ ৩৭০নং অনুচ্ছেদে।
প্রশ্ন ৪। তারা সিং কে ছিলেন?
উত্তরঃ তারা সিং পাঞ্জাবের একজন শিখ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তিনি পৃথক পাঞ্জাবের দাবি সমর্থন করেছিলেন।
প্রশ্ন ৫। কোন্ সালে পাঞ্জাবে অকালি দল গঠন করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯২০ সালে।
প্রশ্ন ৬। MNF-এর সম্পূর্ণ নামটি লেখ।
উত্তরঃ Mizo National Front.
প্রশ্ন ৭। লালডেঙ্গা কে ছিলেন?
উত্তরঃ লালডেঙ্গা মিজো জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের নেতা ছিলেন।
প্রশ্ন ৮। বিদেশি সমস্যার উপর আসাম আন্দোলন কখন আরম্ভ হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৯ সালে।
প্রশ্ন ৯। অগপ (AGP) কোন্ রাজ্যের?
উত্তরঃ আসামের।
প্রশ্ন ১০। কোন্ সালে গোয়া ভারতের একটি রাজ্য হয়?
উত্তরঃ ১৯৮৭ সালে।
প্রশ্ন ১১। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে কখন হত্যা করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর।
প্রশ্ন ১২। নাগা জাতীয় পরিষদের নেতা কে ছিলেন?
উত্তরঃ এ. জেড. ফিজো।
প্রশ্ন ১৩। আনন্দপুর সাহিব প্রস্তাব কখন গৃহীত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৩ সালে।
প্রশ্ন ১৪। ভারত সরকার কখন অপারেশন ব্লু স্টার (Operation Blue Star) প্রয়োগ করেছিল?
উত্তরঃ ১৯৮৪ সালে।
প্রশ্ন ১৫। সিকিমে কখন প্রথম বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৪ সালে।
প্রশ্ন ১৬। MGP-র সম্পূর্ণ রূপটি লেখ।
উত্তরঃ Maharashtra Gomantak Party.
প্রশ্ন ১৭। সিকিমকে কখন ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালে।
প্রশ্ন ১৮। AASU -র সম্পূর্ণ রূপটি লেখ।
উত্তরঃ All Assam Students Union.
প্রশ্ন ১৯। ন্যাশনাল কনফারেন্স কখন গঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৩১ সালে।
প্রশ্ন ২০। কোন্ রাজ্যে অসম গণ পরিষদ সক্রিয়?
উত্তরঃ আসামে।
প্রশ্ন ২১। তেলেগু দেশমের প্রতিষ্ঠাপক সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তরঃ এন. টি. রামারাও।
প্রশ্ন ২২। সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরকে অধিক স্বায়ত্ত্বশাসন প্রদান করা হয়েছে?
উত্তরঃ ৩৭০ অনুচ্ছেদে।
প্রশ্ন ২৩। সিকিম কখন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালে।
প্রশ্ন ২৪। কোন্ বছর নাগাল্যান্ড রাজ্য গঠন করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৬৩ সালে।
প্রশ্ন ২৫। সাত বোন বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যকে সাত বোন বলে।
প্রশ্ন ২৬। আঞ্চলিকতাবাদ সৃষ্টি হওয়ার যে-কোন একটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ আঞ্চলিক বৈষম্য।
প্রশ্ন ২৭। খালী স্থান পূর্ণ কর:
(ক) সিকিম ভাবতের _______ রাজ্য হয়েছিল।
উত্তরঃ ২২তম।
(খ) উত্তর পূর্বাঞ্চলের পুনর্গঠন সম্পূৰ্ণ হয়েছিল_______।
উত্তরঃ ১৯৮৭
(গ) ________ অনুচ্ছেদ জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে।
উত্তরঃ ৩৭০
প্রশ্ন ২৮। শুদ্ধ না অশুদ্ধ লেখ:
(ক) ১৯৪৭ সালের পূর্বে জম্মু ও কাশ্মীর একটি দেশীয় রাজ্য ছিল।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(খ) দ্রাবিড় আন্দোলন ছিল ভারতীয় রাজনীতির আঞ্চলিক আন্দোলনের মধ্যে অন্যতম।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(গ) কাশ্মীরীগণের অনেকে বিশ্বাস করে যে সংবিধানের ৩৭০নং অনুচ্ছেদের দ্বারা প্রদান করা স্বায়ত্বশাসন যথেষ্ট।
উত্তরঃ অশুদ্ধ।
(ঘ) অপারেশন ব্লু স্টার ভারত সরকার দ্বারা ১৯৮৪ সালে আরম্ভ হয়েছিল।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(ঙ) ১৯৬৬ সালে MNF স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন আরম্ভ করেছিল।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(চ) পাঞ্জাব পুনর্গঠনের পর ১৯৭৮ সালে অকালি দল ক্ষমতায় এসেছিল।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(ছ) জাতীয় সম্মেলনের (National Conference) মহম্মদ আলী আবদুল্লা জনপ্রিয় আন্দোলনটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
উত্তরঃ অশুদ্ধ।
(জ) ১৯৬২ সালে নাগাল্যান্ড রাজ্য গঠন করা হয়েছিল।
উত্তরঃ অশুদ্ধ।
(ঝ) এন. টি. রামারাও তেলেগু দেশমের প্রতিস্থাপক সভাপতি ছিলেন।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(ঞ) ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বরে আসাম বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল।
উত্তরঃ অশুদ্ধ।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ২৯। ফিজো কে ছিলেন?
উত্তরঃ নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিলের সভাপতি ও স্বাধীন নাগাল্যান্ড আন্দোলনের নেতা।
প্রশ্ন ৩০। AGP কখন গঠিত হয়?
উত্তরঃ ১৯৮৫ সালে।
প্রশ্ন ৩১। নিজ সংবিধান থাকা ভারতের একমাত্র অঙ্গরাজ্যটির নাম লেখ।
উত্তরঃ জম্মু ও কাশ্মীর।
প্রশ্ন ৩২। দ্রাবিড় আন্দোলনের নেতা কে ছিলেন?
উত্তরঃ রামস্বামী পেরিয়ার।
প্রশ্ন ৩৩। জম্মু ও কাশ্মীরের শেষ রাজা কে ছিলেন?
উত্তরঃ হরি সিং।
প্রশ্ন ৩৪। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তরঃ শেখ আবদুল্লা।
প্রশ্ন ৩৫। সিকিমের ভারতভুক্তি কখন হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালে।
প্রশ্ন ৩৬। গোয়ার ভারতভুক্তি কখন হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৬৬ সালে।
প্রশ্ন ৩৭। মেঘালয় কখন পৃথক রাজ্যের স্বীকৃতি লাভ করে?
উত্তরঃ ১৯৭২ সালে।
প্রশ্ন ৩৮। আসাম আন্দোলন কখন আরম্ভ হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৯ সালে।
প্রশ্ন ৩৯। শিরোমণি অকালি দল কোন্ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ ১৯২০ সালে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ১৯৭২ সালে কোন্ দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে রাজ্যের মর্যাদা প্রদান করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭২ সালে যে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে রাজ্যের মর্যাদা প্রদান করা হয়েছিল তারা হল—
(ক) মণিপুর। ও
(খ) ত্রিপুরা।
প্রশ্ন ২। সিকিমকে কখন ভারতের সঙ্গে সামিল করা হয়েছিল।
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালে।
প্রশ্ন ৩। ‘আঞ্চলিকতাবাদ’ বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ দেশের কোন বিশেষ অঞ্চলের আঞ্চলিক সমস্যার উপর ভিত্তি করে জনগণের মধ্যে যে আদর্শ ও আঞ্চলিক আকাঙ্খা গড়ে ওঠে তাকে আঞ্চলিকতাবাদ বলে। আঞ্চলিকতাবাদ একটি সংকীর্ণ ধারণা।
প্রশ্ন ৪। আঞ্চলিকতাবাদ কিভাবে ভারতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করছে?
উত্তরঃ স্বাধীনতা লাভের পূর্বে আঞ্চলিকতাবাদের বীজ ভারতে দেখা যায়। ভারতে বিভিন্ন ভাষাভাষি, সম্প্রদায়, ধর্ম, সংস্কৃতি, জাতি-উপজাতি প্রভৃতি জাতি বসবাস করার উপরও ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিচিত্রতা আছে। এই সকল কারণে ভারতে আঞ্চলিকতাবাদ শক্তিশালীরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। আঞ্চলিকতাবাদ বহু আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের জন্ম দিয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে, এমনকি কেন্দ্রেও আঞ্চলিক দল সরকারে সামিল হয়েছে।
প্রশ্ন ৫। আঞ্চলিকতাবাদ উৎপত্তির দুটি কারণ লেখ।
উত্তরঃ আঞ্চলিকতাবাদ উৎপত্তির দুটি কারণ নিম্নরূপ:
(ক) কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলা।
(খ) আঞ্চলিক অসমতা।
প্রশ্ন ৬। লালডেঙ্গার বিষয়ে সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ লালডেঙ্গা মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা ছিলেন। ১৯৫৯ সালের দুর্ভিক্ষের পর তিনি বিদ্রোহীতে পরিণত হন। ভারত সরকারের বিরুদ্ধে দু-দশক ধরে সশস্ত্র সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন। পরে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। নবসৃষ্ট মিজোরাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন।
প্রশ্ন ৭। এম. এন. এফ. (MNF) বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ এম. এন. এফ. (MNF)-এর সম্পূর্ণ নাম হল Mizo National Front এবং মিজোরামের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম সংগঠিত করার একটি বিদ্রোহী সংগঠন। ১৯৬০-এর দশকে মিজো পাহাড়ে সৃষ্ট হওয়া ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের প্রতি সরকারের অবহেলার ফলস্বরূপ এই সংগঠনের জন্ম হয়েছিল। এর প্রধান নেতা ছিলেন লালডেঙ্গা।
প্রশ্ন ৮। জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা দুটি ব্যবস্থার নাম লেখ।
উত্তরঃ জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা ব্যবস্থা দুটির নাম হল-
(ক) পৃথক সংবিধান। ও
(খ) অধিক স্বায়ত্বশাসন প্রদান।
প্রশ্ন ৯। সংবিধানের ৩৭০নং অনুচ্ছেদের তাৎপর্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ সংবিধানের ৩৭০নং অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় জম্মু ও কাশ্মীরকে অধিক স্বায়ত্বশাসন প্রদান করেছে। রাজ্যটির একটি নিজস্ব সংবিধান আছে।
ভারতের সংবিধান এই রাজ্যে প্রযোজ্য নহে। সংসদে গ্রহণ করা আইন রাজ্য সরকার মত দিলে কার্যকরী হয়।
প্রশ্ন ১০। কাশ্মীর সমস্যাটির মৌলিক প্রকৃতি কি?
উত্তরঃ ১৯৪৭ সালের পূর্বে জম্মু ও কাশ্মীর একটি দেশীয় রাজ্য ছিল। স্বাধীনতার সময় তা ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগদান না করে স্বনির্বাচনের সুবিধা দিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ পাকিস্তানী সেনা কাশ্মীর আক্রমণ করলে হরি সিং জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে সামিল করতে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
প্রশ্ন ১১। বৈষম্যের প্রতি ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিক নীতি কি?
উত্তরঃ বৈষম্যের প্রশ্নে ভারত এক গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি আঞ্চলিক প্রত্যাশার রাজনৈতিক প্রকাশকে অনুমোদন জানায়। আঞ্চলিক দাবি বা আকাঙ্খাকে রাষ্ট্রবিরোধী বলে আখ্যা দেওয়া হয় না। তা আঞ্চলিক অস্তিত্ব বজায় রাখার সহায়ক হয়।
ভারতীয় সংবিধান বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’ নীতি মেনে চলে ভাষা, সম্প্রদায়, ধর্ম, সংস্কৃতি প্রভৃতির বিভিন্নতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রশ্ন ১২। আঞ্চলিক আন্দোলনসমূহ কোন্ কোন্ বিষয়ের সঙ্গে জড়িত হয়ে আছে?
উত্তরঃ ভারতে গড়ে ওঠা আঞ্চলিক আন্দোলন প্রধানত ভাষা, সংস্কৃতি, জাতি, আর্থিক অনগ্রসরতা প্রভৃতি অনেক স্থানীয় বিষয়সমূহের সঙ্গে জড়িত হয়ে আছে। এই আন্দোলনসমূহ নির্দিষ্ট রাজ্যের মর্যাদা বা অধিক স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন দাবি করতে দেখা যায়।
প্রশ্ন ১৩। ‘অন্তর্ভুক্তির দলিল’ সম্পর্কে কয়েক লাইন লেখ।
উত্তরঃ কাশ্মীরের শেষ রাজা হরি সিং ১৯৪৭ সালের ২৬শে অক্টোবর ভারত সরকারের সঙ্গে কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি সনদে স্বাক্ষর করেন। এর ফলে কাশ্মীর ভারতের অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা লাভ করে। ভারতীয় সেনা ২৭শে অক্টোবর কাশ্মীর উপত্যকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে এবং পাকিস্তানি সেনাদের বিতাড়ন করতে সক্ষম হয়।
প্রশ্ন ১৪। ১৯৬৭ সালে গোয়ায় কেন ‘মতামত ভোট’ গ্ৰহণ (Opinion Poll) অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকার গোয়ায় ভবিষ্যৎ অস্তিত্বের জন্য অর্থাৎ গোয়া মহারাষ্ট্রের সঙ্গে সামিল হবে, না একটি পৃথক রাজ্য হিসাবে থাকবে তা নির্ধারণ করতে জনগণের মতামত নেওয়ার উদ্দেশ্যে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ১৫। গোয়ার সমস্যা কি ছিল?
উত্তরঃ গোয়া, দমন ও দিউ ষষ্ঠ শতক হতে পর্তুগীজ উপনিবেশিকের কবলে ছিল। দীর্ঘদিন পর্তুগীজরা গোয়ার নাগরিকদের অধিকার দমন করে রাখা ছাড়াও ধর্মান্তকরণে উদ্যোগী হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে গোয়ায় স্বাধীনতার জন্য গণআন্দোলন আরম্ভ হয়।
প্রশ্ন ১৬। আঞ্চলিকতাবাদের সমস্যাসমূহ কিভাবে সমাধান করতে পারা যায়?
উত্তরঃ ছাত্র-ছাত্রীরা নিজে চেষ্টা করো।
প্রশ্ন ১৭। কোন্ বছর সিকিমে প্রথম বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৪ সনে।
প্রশ্ন ১৮। মহারাজার কবল থেকে মুক্ত করতে জম্মু ও কাশ্মীরে জনপ্রিয় আন্দোলনের নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?
উত্তরঃ শেখ আবদুল্লা।
প্রশ্ন ১৯। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:
(ক) _______ সালে ভারত সরকার সেনা প্রেরণ করেছিল, যা ______ কে মুক্ত করেছিল।
উত্তরঃ ডিসেম্বর, ১৯৬১/ গোয়া।
(খ) স্বাধীনতার পর _______ অঞ্চলটিকে _______ স্বশাসিত জেলা গঠন করা হয়েছিল।
উত্তরঃ মিজো পাহাড়/ আসামের।
প্রশ্ন ২০। ভারতীয় সংবিধানের কোন দুটি অনুচ্ছেদ জম্মু ও কাশ্মীরকে অধিক ক্ষমতা প্রদান করেছে?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৭১ অনুচ্ছেদ দুটি জম্মু ও কাশ্মীরকে অধিক ক্ষমতা প্রদান করেছে।
প্রশ্ন ২১। রাজা শাসিত রাজ্য বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ স্বাধীনতার পূর্বে ভারতে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি রাজ্য দেশীয় রাজার অধীনে ছিল। সেখানে ব্রিটিশ শাসন ছিল না। এই রাজ্যগুলিকে রাজা শাসিত রাজ্য বলে।
প্রশ্ন ২২। ভারতে আঞ্চলিকতাবাদ উত্থানের দুটি কারণ উল্লেখ করো।
উত্তরঃ ভারতে আঞ্চলিকতাবাদ উত্থানের দুটি কারণ হল –
(ক) ভাষাবাদ। ও
(খ) জাতিবাদ।
প্রশ্ন ২৩। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ ভারতের কোন কোন অঞ্চলে জঙ্গি সংগঠন বা বিচ্ছিন্নচাবাদী শক্তি কোন নির্দিষ্ট এলাকা ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য আন্দোলন করে। একেই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলে। যেমন—দ্রাবিড় আন্দোলন, পাঞ্জাব আন্দোলন, নাগা আন্দোলন, মিজো আন্দোলন।
প্রশ্ন ২৪। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহ কেন পূর্বতন আসাম থেকে বের হয়ে পৃথক রাজ্য গঠন করেছিল?
উত্তরঃ পূর্বতন আসামে বিভিন্ন জাতীগোষ্ঠী ভাষা-ভাষী, আঞ্চলিক স্বার্থ প্রভৃতির ফলে এই সকলে অঞ্চলে পৃথক পৃথক সম্প্রদায় পৃথক পৃথক রাজ্য গঠন করে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ২৫। ভারতে আঞ্চলিকতাবাদ প্রসারের যে-কোন দুটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতে আঞ্চলিকতাবাদ প্রসারের দুটি কারণ হল—
(ক) ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক কারণ। এবং
(খ) আর্থিক কারণ।
প্রশ্ন ২৬। আঞ্চলিক প্রত্যাশার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সংঘাতের যে-কোন দুটি রূপ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ আঞ্চলিক প্রত্যাশার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সংঘাতের দুটি রূপ হল-
(ক) সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি। এবং
(খ) পৃথক রাজ্যের দাবি।
প্রশ্ন ২৭। কাশ্মীরের ভারতভুক্তি কখন হয়েছিল? জম্মু ও কাশ্মীরের শেষ রাজা কে ছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৪৭ সালের ২৪শে অক্টোবর জম্মু ও কাশ্মীরের ভারত অন্তর্ভুক্তি হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের শেষ রাজা ছিলেন হরি সিং।
প্রশ্ন ২৮। জম্মু ও কাশ্মীরের ভৌগোলিক অঞ্চলসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ জম্মু ও কাশ্মীরের ভৌগোলিক অঞ্চলসমূহ হল—
(ক) কাশ্মীর উপত্যকা।
(খ) জম্মু অঞ্চল। ও
(গ) লাডাক অঞ্চল।
প্রশ্ন ২৯। ভারতবর্ষের যে-কোন দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতবর্ষের দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হল—
(ক) দ্রাবিড় আন্দোলন। ও
(খ) পাঞ্জাব আন্দোলন।
প্রশ্ন ৩০। পাঞ্জাব আন্দোলনের যে-কোন দুইজন নেতার নাম লেখ।
উত্তরঃ পাঞ্জাব আন্দোলনের দুইজন নেতার নাম হল—
(ক) জার্নেল সিং বিন্দ্রানওয়ালা। এবং
(খ) সন্তু হরচাঁদ সিং লঙ্গোয়াল।
প্রশ্ন ৩১। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যে-কোন দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন উল্লেখ কর।
উত্তরঃ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হল—
(ক) নাগা বিদ্রোহ, ও
(খ) মিজো বিদ্রোহ।
প্রশ্ন ৩২। গোয়া কার ঔপনিবেশিক শাসনের অধীন ছিল? কবে কখন তা ভারতভুক্ত হয়?
উত্তরঃ গোয়া পর্তুগীজ শাসনাধীন ছিল। ১৯৬৬ সালে তা স্বাধীন হয়ে ভারতভুক্ত হয়।
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১। সংবিধানের ৩৭০নং অনুচ্ছেদের তাৎপর্যের বিষয়ে লেখ।
উত্তরঃ সংবিধানের ৩৭০নং অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় জম্মু ও কাশ্মীরকে অধিক স্বায়ত্বশাসন প্রদান করেছে। রাজ্যটির একটি নিজস্ব সংবিধান আছে।
ভারতের সংবিধান এই রাজ্যে প্রযোজ্য নহে। সংসদে গ্রহণ করা আইন রাজ্য সরকার মত দিলে কার্যকরী হয়।
প্রশ্ন ২। জম্মু ও কাশ্মীরের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য তিনটি সামাজিক ও রাজনৈতিক অঞ্চল নিয়ে গঠিত।
এইগুলি হল—
(ক) জম্মু।
(খ) কাশ্মীর। ও
(গ) লাড়াক।
কাশ্মীর অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র হইল কাশ্মীর উপত্যকা। এই অঞ্চলের জনগণের অধিকাংশই মুসলমান ও কাশ্মীরি ভাষাভাষী। একটি ক্ষুদ্র হিন্দু সংখ্যালঘু কাশ্মীরি ভাষিক।
জম্মু অঞ্চলটি হিন্দু, মুসলমান ও শিখ অধ্যুষিত পার্বত্য ও সমতলের সংমিশ্রণ। এই অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন ভাষাভাষিক।
লাডাক অঞ্চলটি পর্বতসঙ্কুল। জনগণের সমান অংশ বৌদ্ধ ও মুসলমান।
কাশ্মীর বিষয়টি কেবলমাত্র ভারত ও পাকিস্তানের বিবাদের বিষয় নয়। কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে দেখা দিয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী কাশ্মীরকে পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী কাশ্মীরকে পাকিস্তানে সংযুক্তির পক্ষপাতী। আবার অনেকে জম্মু ও কাশ্মীরে রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের পক্ষপাতী।
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের ধারণা জম্মু ও লাডাকের জনগণকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। এই অঞ্চলের জনগণ তাদের পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে। তারা রাজ্যের মধ্যে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের দাবি উত্থাপন করেছে।
প্রশ্ন ৩। আঞ্চলিকতাবাদ কিভাবে অনৈক্যের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে?
উত্তরঃ দেশের কোন বিশেষ অঞ্চলের আঞ্চলিক সমস্যার উপর ভিত্তি করে জনগণের মধ্যে যে আদর্শ ও আঞ্চলিক আকাঙ্খা গড়ে ওঠে তাকে আঞ্চলিকতাবাদ বলে। আঞ্চলিকতাবাদ একটি সংকীর্ণ ধারণা।
আঞ্চলিকতাবাদ একটি দেশের জাতীয় সংহতি ও ঐক্য শক্তিশালী করার পরিবর্তে এইগুলির প্রত্যাহ্বান হিসাবে দেখা দেয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করা লোকদের একতাবদ্ধ রাখার পরিবর্তে আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ভারতের আঞ্চলিকতাবাদী আদর্শের উপর ভিত্তি করে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এই আদর্শই দেশকে ভাষা, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, সংস্কৃতি প্রভৃতির দ্বারা বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত করে। আঞ্চলিকতাবাদী ভাবধারাই জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অবহেলিত মনোভাবের জন্ম দেয়।
প্রশ্ন ৪। দ্রাবিড় আন্দোলনের প্রকৃতির বিষয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ দ্রাবিড় আন্দোলন বিংশ শতকে ভারতবর্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী আঞ্চলিকতাবাদী আন্দোলন। এই আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন ই. ভি. রামস্বামী নাইকার। তিনি পেরিয়ার নামে খ্যাত ছিলেন। ‘পেরিয়ার’ শব্দের অর্থ হইল ‘মহান ঋষি’ বা ‘অত্যন্ত সম্মানীয়। দ্রাবিড় আন্দোলন এক জাতিবিরোধী, ধর্মবিরোধী ও আত্মসম্মানের আন্দোলন হিসাবে গড়ে উঠেছিল। একটি সময়ে এই আন্দোলনের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতাও গড়ে উঠেছিল। কিন্তু দীর্ঘ যাত্রাকালে এই আন্দোলন রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক ভাবধারা বজায়, রেখেছিল।
১৯৪৪ সালে পেরিয়ার ও আন্নাদুরাই-এর নেতৃত্বে ‘দ্রাবিড় কাজাঘাম’ রাজনৈতিক সংগঠনের জন্ম হয়। এই সংগঠন ব্রাহ্মণ দমনের বিরোধিতা ছাড়াও উত্তর ভারতের আর্থিক, রাজনৈতিক তথা সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরোধিতা করেছিল এবং দক্ষিণ ভারতের গৌরবগাথা তুলে ধরেছিল।
প্রশ্ন ৫। “আসাম আন্দোলন ছিল সাংস্কৃতিক গর্ব ও অর্থনৈতিক অগ্রসরতার সংমিশ্রণ।” ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ এটা অত্যন্ত বাস্তব সত্য যে আসাম আন্দোলন ছিল সাংস্কৃতিক গৌরব ও অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার সংমিশ্রণ।
নিম্নোক্ত বাস্তব সত্যতার উপর এর যৌক্তিকতা প্রমাণ করা যায়:
(ক) উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে বিশাল সংখ্যায় বিদেশি অনুপ্রবেশের ফলে ভয়ানক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। স্থানীয় জনগণ অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। তারা অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ করে, কারণ অনুপ্রবেশকারীগণ দেশীয় জনগণের সংস্কৃতি বিপন্ন করে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করে।
(খ) ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত আসাম আন্দোলন এই প্রকার আন্দোলনের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। বিদেশি যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তারা মূলত বাংলাদেশ হতে আগত শ্রমিক। তারা কাজ ও জীবিকার সন্ধানে ভারতে এসেছিল। আন্দোলনকারীদের এই অভিমত ছিল যে বিদেশি অনুপ্রবেশ রোধ করতে না পারলে সমগ্র আসাম বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা মগ্ন হয়ে যাবে। এই রাজ্যের সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব বিপন্ন হবে ও অর্থনৈতিক স্থিতি বিপন্ন হবে।
(গ) অসমীয়া জনগণ উপলব্ধি করল যে বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের যদি বহিষ্কার না করা হয় তা হলে তারা স্বদেশি জনগণকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করবে। এছাড়া বিদেশিদের জন্যই অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়। আসামে দরিদ্র ও বেকার সমস্যা বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্যই হয়েছে বলে মনে করে।
(ঘ) এর ফলে ১৯৭৯ সালে সারা আসাম ছাত্র সংস্থা বিদেশি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ করে। আন্দোলনরত ছাত্রগণ এই দাবি জানায় যে ভোটার লিস্ট হতে বিদেশিদের নাম বাদ না দিলে আসামে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না।
(ঙ) আন্দোলনকারীগণ দাবি জানায় যে ১৯৫১ সালের পর আসামে আগত বিদেশিদের বহিষ্কার করতে হবে।
অবশেষে ১৯৮৫ সালে আসাম চুক্তির মাধ্যমে আসাম আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে। আসাম চুক্তি আসামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেও তা আসামে অবৈধ বিদেশি অনুপ্রবেশ সমস্যা সমাধান করতে পারে নি। বহিরাগত সমস্যা আসামের রাজনীতিতে সদাপ্রবহমান।
প্রশ্ন ৬। স্বাধীনতার ঠিক পরবর্তী সময়ে ভারতের সম্মুখীন হওয়া উদ্বেগের উল্লেখ কর।
উত্তরঃ স্বাধীনতার ঠিক পরবর্তী সময়ে ভারতে উদ্ভব হওয়া উদ্বেগজনিত বিষয়সমূহ ছিল নিম্নরূপ:
(ক) কাশ্মীর সমস্যা কেবলমাত্র ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদ নয়। এই সমস্যার আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক স্তর রয়েছে। এর মধ্যে বিজড়িত রয়েছে কাশ্মীরী আত্মপরিচয় এবং রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের জন্য জন্মু ও কাশ্মীরের জনগণের উচ্চাকাঙ্ক্ষা।
(খ) ভারতীয় সংবিধানে স্বায়ত্বশাসনের দাবি পূরণের ব্যবস্থা, যেমন— স্বায়ত্বশাসিত পরিষদ গঠন, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন ও পৃথক রাজ্য গঠন প্রভৃতির উল্লেখ থাকলেও ইহা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে নি। ফলে এই অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।
(গ) দ্রাবিড় আন্দোলন বিংশ শতকে ভারতবর্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী আঞ্চলিকতাবাদী আন্দোলন। এই আন্দোলন এক জাতিবিরোধী, ধর্মবিরোধী ও আত্মসম্মানের আন্দোলন হিসাবে গড়ে উঠেছিল। একটি সময় এই আন্দোলনের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতাও গড়ে উঠেছিল।
(ঘ) ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গণ আন্দোলনের এই দেশ সাক্ষী হয়ে আছে।
প্রশ্ন ৭। “আঞ্চলিকতাবাদকে বিচ্ছিন্নতাবাদ বোঝায় না।” ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ দেশের কোন বিশেষ অঞ্চলের আঞ্চলিক সমস্যার উপর ভিত্তি করে জনগণের মধ্যে যে আদর্শ ও আঞ্চলিক আকাঙ্খা গড়ে ওঠে তাকে আঞ্চলিকতাবাদ বলে। আঞ্চলিকতাবাদ একটি সংকীর্ণ ধারণা।
ভারতের কোন কোন অঞ্চলে জঙ্গি সংগঠন বা বিচ্ছিন্নচাবাদী শক্তি কোন নির্দিষ্ট এলাকা ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য আন্দোলন করে। একেই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলে। যেমন—দ্রাবিড় আন্দোলন, পাঞ্জাব আন্দোলন, নাগা আন্দোলন, মিজো আন্দোলন।
আঞ্চলিকতাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ সম্পূর্ণ পৃথক বিষয়। আঞ্চলিকতাবাদ কখনও সার্বভৌমত্ব দাবি করে না। তা কখনও ভবিষ্যতে স্বাধীন দেশে পরিণত হওয়া কামনা করে না। আঞ্চলিকতাবাদ হল একটি স্বাধীন দেশের মধ্যে আবশ্যকীয় অঙ্গ হিসাবে থাকা অঞ্চলটির জন্য কিছু বিশেষ সুবিধা বা মর্যাদার দাবি করে। সেই দাবিসমূহের মধ্যে স্বায়ত্বশাসন, পৃথক রাজ্য প্রভৃতি প্রধান।
আঞ্চলিকতাবাদকে বিচ্ছিন্নতাবাদ বোঝায় না, কারণ—
(ক) আঞ্চলিক আকাঙ্খা গণতান্ত্রিক রাজনীতির অঙ্গ।
(খ) আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করা কোন অবাস্তব ঘটনা হতে পারে না।
(গ) আঞ্চলিক আন্দোলনকে দমন করার পথে না গিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।
(ঘ) আসাম চুক্তির মাধ্যমে আসামের ৮০-র দশকের ছাত্র আন্দোলনের সম্মান জানিয়ে আসামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা গিয়েছে বা মিজোরামের MNF -এর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মিজোরামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে।
প্রশ্ন ৮। ভারতের যে-কোন চারটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নাম লেখ।
উত্তরঃ নিম্নোক্ত চারটি ভারতের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল:
(ক) অসম গণ পরিষদ ১৯৮৫ সালে গঠিত হয়।
(খ) তেলেগু দেশম পার্টি ১৯৮২ সালে গঠিত হয়।
(গ) ডি. এম. কে ১৯৫০ সালে গঠিত হয়।
(ঘ) অকালি দল ১৯২০ সালে গঠিত হয়।
প্রশ্ন ৯। আনন্দপুর সাহিব প্রস্তাবে কেন মতবিরোধ হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৬৬ সালে পাঞ্জাব রাজ্য পুনর্গঠনের পর ১৯৬৭ সালে অকালি দল ক্ষমতায় আসে। ১৯৭০-এর দশকে অকালি দলের একটি শাখা পাঞ্জাবের জন্য রাজনৈতিক সুশাসন দাবি করে। ১৯৭৩ সালে অকালি দল আনন্দপুর সাহিব সম্মেলনে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে যাতে পাঞ্জাবের জন্য রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসন দাবি করা হয়। এর পর হতে আনন্দপুর সাহিব প্রস্তাব অকালি দলের প্রধান নীতি ও কার্যসূচীতে পরিণত হয়।
আনন্দপুর সাহিব প্রস্তাব বিতর্কমূলক ছিল কারণ তা গুরুমুখী অক্ষরে লিখিত হয়েছিল। এই প্রস্তাবটি পরিষ্কার ছিল না কারণ এর কতিপয় শব্দের অর্থ একাধিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এমনকি অকালি দলও এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়ায় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। নরমপন্থীদের মতে এই প্রস্তাবের অর্থ হল পাঞ্জাবের জন্য অধিক স্বায়ত্বশাসন। অন্যদিকে কতিপয় নেতার মতে এই প্রস্তাব পাঞ্জাবের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে।
প্রশ্ন ১০। সকল আঞ্চলিক আন্দোলন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নয়। উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তরঃ এটা যথার্থ সত্য যে সকল আঞ্চলিক আন্দোলন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে পরিণত হয় না। ১৯৬৬ সালে ‘মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র বিপ্লব আরম্ভ করে। এরা মিজো সন্ত্রাসবাদী ও ভারতীয় সেনার মধ্যে দীর্ঘ যুদ্ধ আরম্ভ করে। মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট একপ্রকার গেরিলা যুদ্ধ আরম্ভ করে এবং পাকিস্থান (অধুনা বাংলাদেশ) -এর নিকট হতে সমর্থন লাভ করে এবং পূর্ব পাকিস্থান অর্থাৎ বাংলাদেশে শিবির স্থাপন করে। ভারতীয় সেনা এদের দমন করবার জন্য বল প্রয়োগ করে। তা সাধারণ মানুষের মনে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি করে।
বিচ্ছিন্নতাবাদ যখন বিফল হয়ে যায় তখন মিজো নেতা লালডেঙ্গা পাকিস্তানে নির্বাসন জীবন ত্যাগ করে পুনরায় দেশে এসে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা আরম্ভ করেন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ও লালডেঙ্গার মধ্যে ১৯৮৬ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী মিজোরামকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দান ও বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। মিজো ন্যাশন্যাল ফ্রন্টও ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কার্যসূচী পরিত্যাগ করে।
নাগা আন্দোলন কাহিনিও মিজো আন্দোলনের অনুরূপ। দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পর নাগাদের একটি সম্প্রদায় ভারত সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। যদিও বিদ্রোহী নাগারা তা মেনে নেয়নি।
প্রশ্ন ১১। শিরোমণি অকালি দলের রাজনীতি ও কার্যসূচীর বিবরণ দাও।
উত্তরঃ শিরোমণি অকালি দল ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই দল পাঞ্জাবের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। পাঞ্জাব রাজ্য গঠন করতে এই দল বিশেষ প্রেরণা জুগিয়েছিল। আনন্দপুর সাহিব প্রস্তাবে অকালি দলের কার্যসূচী জড়িত হয়ে আছে।
এইগুলি হল নিম্নরূপ:
(ক) চণ্ডীগড়কে পাঞ্জাবে হস্তান্তর করা।
(খ) পাঞ্জাবী ভাষাগত অঞ্চলসমূহ পাঞ্জাবে সমর্পণ করা।
(গ) পাঞ্জাবীদের সুরক্ষা প্রদান।
(ঘ) পাঞ্জাবের দুর্বল শ্রেণীর লোকদের অধিকার সুরক্ষার সঙ্গে ভূমির সংরক্ষণ ও উদ্যোগীকরণ।
প্রশ্ন ১২। আসাম চুক্তির বিষয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ সারা আসাম ছাত্র সংস্থার নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে অবৈধ বিদেশি নাগরিক সনাক্তকরণ ও বহিষ্কারের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছিল তার ফলস্বরূপ ১৯৮৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঐতিহাসিক অসম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ১৫ই মার্চের পর আসামে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা বাংলাদেশী নাগরিকদের ১৯৪৬ সালের বিদেশি আইনের অধীনে বিতাড়িত করা হে আসাম চুক্তি আসামে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধন করলেও অনুপ্রবেশ সমস্যা সমাধান করতে পারে নি। অবশ্য এই চুক্তির উপর ভিত্তি করে আই. আই. টি. (IIT) সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া ছাড়াও অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকার প্রবর্তন করেছে।
প্রশ্ন ১৩। ভারতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা আছে কি? তোমার উত্তরের সপক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
অথবা,
ভারতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের দুটি কারণ লেখ।
উত্তরঃ প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে ভারতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেছিল।
এই দলসমূহ গড়ে ওঠার দুটি প্রধান যুক্তি নিম্নরূপ:
(ক) আঞ্চলিক বৈষম্য: ভাষা, জাতি, জনজাতি, ধর্ম, সম্প্রদায় প্রভৃতির ক্ষেত্রে ভারতে অনেক বিভিন্নতা আছে। এই বিভিন্নতাকে প্রতিনিধিত্ব করে জীবন্ত রাখার স্বার্থে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হয়েছিল। তা ছাড়াও এই দলসমূহ ভারতে থাকা আঞ্চলিক বৈষম্য এবং সম-উন্নয়নে সহায়তা করেছে।
(খ) কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলা: ভারত একটি বিশাল দেশ। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার দেশের সকল অঞ্চলে সম-উন্নয়ন করতে সফল হতে পারছে না, যার ফলস্বরূপ বিভিন্ন অঞ্চলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি ঘৃণার ভাব দেখা দিয়েছিল। আঞ্চলিক দলসমূহের উত্থানে জনসাধারণের মধ্যে গড়ে ওঠা বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবকে রোধ করে দেশে জাতীয় ঐক্য অর্থাৎ অনৈক্যের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
প্রশ্ন ১৪। ডি. এম. কে. দলের রাজনীতি ও কার্যসূচীর বিষয়ে বিবরণ দাও।
উত্তরঃ দ্রাবিড় আন্দোলন বিংশ শতকে ভারতবর্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী আঞ্চলিকতাবাদী আন্দোলন। এই আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন ই. ভি. রামস্বামী নাইকার। তিনি পেরিয়ার নামে খ্যাত ছিলেন। ‘পেরিয়ার’ শব্দের অর্থ হইল ‘মহান ঋষি’ বা ‘অত্যন্ত সম্মানীয়। দ্রাবিড় আন্দোলন এক জাতিবিরোধী, ধর্মবিরোধী ও আত্মসম্মানের আন্দোলন হিসাবে গড়ে উঠেছিল। একটি সময়ে এই আন্দোলনের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতাও গড়ে উঠেছিল। কিন্তু দীর্ঘ যাত্রাকালে এই আন্দোলন রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক ভাবধারা বজায়, রেখেছিল।
১৯৪৪ সালে পেরিয়ার ও আন্নাদুরাই-এর নেতৃত্বে ‘দ্রাবিড় কাজাঘাম’ রাজনৈতিক সংগঠনের জন্ম হয়। এই সংগঠন ব্রাহ্মণ দমনের বিরোধিতা ছাড়াও উত্তর ভারতের আর্থিক, রাজনৈতিক তথা সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরোধিতা করেছিল এবং দক্ষিণ ভারতের গৌরবগাথা তুলে ধরেছিল।
প্রশ্ন ১৫। উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের পৃথক রাজ্য দাবি করা সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীসমূহের নাম লেখ।
উত্তরঃ স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায় পৃথক রাজ্যের দাবি উত্থাপন করে বিভিন্ন সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে এই দাবির উপর ভিত্তি করে ত্রিপুরা, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ প্রভৃতি বিভিন্ন রাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানেও এই অঞ্চলের অনেক সম্প্রদায় পৃথক রাজ্যের দাবি উত্থাপন করে আসছে। এই সম্প্রদায়গুলি হল—বড়ো, কোঁচ, রাজবংশী, কাঠি, নাগা, খাসি, গারো, ডিমাসা, মিচিং, মিশমি, দালা ইত্যাদি।
প্রশ্ন ১৬। তেলেগু দেশম পার্টির নীতি ও কার্যসূচী আলোচনা কর।
উত্তরঃ তেলেগু দেশম পার্টি জাতীয় ঐক্য ও সংহতির সমর্থক। এর প্রধান নীতি ও কার্যসূচীসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) জনগণকে সৎ ও সুশাসন প্রদান করা হবে। টিডিপি স্বচ্ছ ও স্থায়ী সরকার গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
(খ) সরকারি ব্যয় হ্রাস করা হবে।
(গ) জনগণের অভাব-অভিযোগ দেখতে লোকপাল নিযুক্ত করা হবে।
(ঘ) তেলেগু দেশম রাজ্যের হাতে অধিক ক্ষমতা দানের পক্ষপাতী।
(ঙ) ক্ষমতাশালী কেন্দ্র ও ক্ষমতাশালী রাজ্য ভারতের ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করতে পারে।
(চ) এই দল কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সহযোগিতায় বিশ্বাসী।
(ছ) এই দল স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গণমাধ্যমের সমর্থক।
(জ) টিডিপি মহিলা ও দরিদ্র শ্রেণীর লোকদের উন্নয়নের পক্ষপাতী।
(ঞ) এই দল পঞ্চায়েত সংস্থাগুলিতে অধিক ক্ষমতা প্রদানের পক্ষপাতী।
প্রশ্ন ১৭। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বতন্ত্রতা ও স্বায়ত্বশাসনের দাবি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দুইটি রাজ্য মণিপুর ও ত্রিপুরা ছাড়া মেঘালয়, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড ও মিজোরাম বৃহত্তর আসামের অঙ্গ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এইসব রাজ্য পৃথক রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে। কিন্তু বিভিন্ন পার্বত্য উপজাতিদের আঞ্চলিকতাবাদী মানসিকতার জন্য ১৯৬০ সালে ‘অল পাৰ্টী হিল লিডার্স কনফারেন্স’ নামে একটি সংস্থা গড়ে ওঠে। এই সংস্থার মাধ্যমে পাহাড়ি ও জনজাতি লোকসকল পৃথক রাজ্যের দাবি উত্থাপন করে। এই প্রক্রিয়ার পরিণতিস্বরূপ বৃহত্তর আসাম হতে মেঘালয়, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ গঠন করা হয়। ১৯৬৩ সালে নাগাল্যান্ড রাজ্য গঠন করা হয়। ১৯৭২ সালে মেঘালয়, মণিপুর ও ত্রিপুরা গঠন করা হয়।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বায়ত্বশাসনের দাবি পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করে। সংবিধানের ষষ্ঠ তপশীলের মাধ্যমে উত্তর কাছাড় ও কার্বি আংলং-এ স্বায়ত্বশাসিত পরিষদ গঠিত হয়েছিল। উক্ত অনুসূচী সংশোধনের মাধ্যমে ২০০৩ সালে বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়েল কাউন্সিল নামে স্বায়ত্বশাসিত পরিষদের মর্যাদা দেওয়া হয়। বড়ো সহ আরও অন্যান্য বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বর্তমানে স্বায়ত্বশাসনের দাবি উত্থাপন করছে।
প্রশ্ন ১৮। কাজী লেহন্ডুপ দোর্জি সম্পর্কে যা জানো লেখ।
উত্তরঃ কাজী লেহনডুপ্ দোর্জি খাঙ্গসারপা ছিলেন সিকিমের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা, সিকিম প্রজা মণ্ডলের প্রতিষ্ঠাতা এবং পরে সিকিম রাজ্য কংগ্রেসের নেতা। ১৯৬২ সালে তিনি সিকিম জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর তিনি সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী হন। সিকিমকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্তির জন্য তিনি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হয়েছিলেন। তিনি ২০০৭ সালের ১শে জুলাই পরলোকগমন করেন।
প্রশ্ন ১৯। ই. ভি রামাস্বামী নাইকারের উপর একটি টীকা লেখ।
উত্তরঃ ই. ভি. রামস্বামী নাইকার ‘পেরিয়ার’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি নাস্তিকতার সমর্থক। জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও দ্রাবিড় সম্বন্ধীয় পরিচয় পুনঃআবিষ্কারের জন্য খ্যাত ছিলেন। তিনি শুরুতে কংগ্রেস দলের কর্মী ছিলেন। ১৯৫২ সালে আত্মসম্মান আন্দোলন শুরু করেন ও ব্রাহ্মণ-বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তিনি জাস্টিস পার্টির হয়ে কাজ করেন এবং পরে দ্রাবিড় কাজাঘাম স্থাপন করেন এবং হিন্দী তথা উত্তর ভারতের প্রাধান্য-বিরোধী আন্দোলনকে নেতৃত্ব দেন।
প্রশ্ন ২০। পাঞ্চাব চুক্তির উপর একটি টীকা লেখ।
উত্তরঃ ১৯৮৪ -র নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী মধ্যপন্থী আকালি নেতাদের সঙ্গে কথোপকথন সূচনা করেন। জুলাই ১৯৮৫ সালে তিনি তৎকালীন আকালি দলের সভাপতি হরচাঁদ সিং লাঙ্গোয়াল-এর সঙ্গে এক মতৈনক্যে পৌঁছান। এই চুক্তি রাজীব গান্ধী-লঙ্গোয়াল ঐক্য অথবা পাঞ্জাব ঐক্য নামে বিদিত। এই চুক্তি পাঞ্জাবে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার পথে একটি সঠিক পদক্ষেপ ছিল।
এই চুক্তির বিষয়গুলি নিম্নরূপ:
(ক) চণ্ডীগড় পাঞ্জাবকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
(খ) পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মধ্যে সীমা-সংক্রান্ত বিরোধ মেটানোর জন্য একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করা হবে।
(গ) পাঞ্জাব-হরিয়ানা ও রাজস্থানের মধ্যে বিশাখা নদীর জল ভাগ করে নেওয়া স্থির করার জন্য একটি ট্রাইবুনাল গঠন করা হবে।
(ঘ) যারা পাঞ্জাবে সন্ত্রাসবাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং পাঞ্জাব থেকে সামরিক বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ প্রত্যাহার করা হবে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ২১। ভারতে আঞ্চলিকতাবাদ বিকাশের জন্য দায়ী উপাদান/ কারকসমূহ কি কি?
উত্তরঃ ভারতে আঞ্চলিকতাবাদের জন্য নানাপ্রকার কারণ দায়ী। প্রধান কয়েকটি কারণ নিম্নরূপ:
(ক) ভৌগোলিক কারণ: ভারত একটি বিশাল দেশ। ভৌগোলিকভাবে ভারতবর্ষ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত। প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা পৃথক। তাহাদের আর্থ-সামাজিক চাহিদাও সম্পূর্ণ পৃথক। যখন কোনো একটি অঞ্চলের মানুষ অনুভব করে যে তাদের বিকাশ ও সমৃদ্ধি যথাযথভাবে হচ্চে না তখন তাদের মধ্যে আঞ্চলিকতাবাদের মানসিকতা দেখা দেয়। বিভিন্ন রাজ্যের পার্বত্য এলাকা এইরূপ অনুভূতির উদাহরণ।
(খ) সংস্কৃতি: ভারতের কতিপয় রাজ্যে বিভিন্ন সংস্কৃতির লোক বাস করে। প্রত্যেক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ সংস্কৃতি ও ভাষার জন্য গৌরবান্বিত। এই ভিত্তিতেই স্বাধীনতার পরই তামিল জনগণ ভারত হতে বিচ্ছিন্ন হতে চেয়েছিল।
(গ) অর্থনীতি: ভারতের কতকগুলি রাজ্যে অত্যধিক আর্থিক বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। আবার কতকগুলি রাজ্য অতি পশ্চাদপদ। যার ফলে অগ্রসর এলাকায় আঞ্চলিকতাবাদ দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেঙ্গানা অঞ্চল, মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চল অনগ্রসর থাকায় উভয় অঞ্চলেই আঞ্চলিকতাবাদ দেখা দিয়েছে।
(ঘ) ভাষা: ভারত একটি বহুভাষিক দেশ। উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতের ভাষাসমূহের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ভাষাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার প্রবণতা সাম্প্রতিককালে অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা আঞ্চলিকতাবাদকে প্রশ্রয় দেয়।
(ঙ) জাত ও সম্প্রদায়: জাত ও সম্প্রদায় আঞ্চলিক মানসিকতা বৃদ্ধির সহায়ক। যে এলাকায় কোন একটি সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানেই আঞ্চলিকতাবাদ দেখা দেয়।
প্রশ্ন ২২। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজনৈতিক চরিত্র গড়ে ওঠার কারণসমূহ কি কি?
উত্তরঃ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজনৈতিক চরিত্র গড়ে ওঠার প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ভৌগোলিক দূরত্ব।
(খ) উত্তর-পূর্ব ভারতের বর্ণাঢ্য নৃ-গোষ্ঠীয় কাঠামো।
(গ) এই অঞ্চলের বিকাশের ক্ষেত্রে প্রদর্শন করা দীর্ঘ অবহেলা।
(ঘ) অনিয়ন্ত্রিত প্রব্রজন।
(ঙ) বহিঃরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশাল সীমানা।
প্রশ্ন ২৩। সিকিমের ভারতভুক্তি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ স্বাধীনতার সময় সিকিম ভারতের পূর্ণ রাজ্য ছিল না। তা ভারতবর্ষের রক্ষণাবেক্ষণে থাকা একটি রাজ্য (Protectorate) ছিল। অর্থাৎ সিকিম একটি পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল না। সিকিম ছিল ‘লেপচা ভুটিয়া’ সম্প্রদায়ের রাজা ছোগিয়াল দ্বারা শাসিত একটি রাজ্য। সিকিমের নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতি ভারত দ্বারা পরিচালিত হত। নেপালী লোকের প্রাধান্য থাকা রাজ্যটিতে অতি অল্পকালেই গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা গড়ে উঠেছিল। রাজা ছোগিয়াল এইরূপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়। এই রাজনৈতিক প্রত্যাশা পূরণ করবার জন্যই ছোগিয়াল-বিরোধী লোক ভারতবর্ষের সাহায্য প্রার্থনা করে। ১৯৭৪ সালে সিকিম বিধানসভার প্রথম নির্বাচনে সিকিম কংগ্রেস বিপুলভাবে জয়লাভ করে। নবগঠিত বিধানসভা সিকিমের জন্য ‘সহরাজ্যের’ মর্যাদা দাবি করে। ১৯৭৫ সালে রাজ্যটিকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিধানসভায় একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এর পর গণভোটে সিকিমের জনগণ ভারত অন্তর্ভুক্তির পক্ষে রায় দান করে। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সংসদ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সিকিমকে ভারতের ২২তম রাজ্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে।
প্রশ্ন ২৪। গোয়ার স্বাধীনতা বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ বর্তমান ভারতের অঙ্গরাজ্য গোয়া ও কেন্দ্রীশাসিত অঞ্চল দমন ও দিউ ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনাধীন ছিল না। গোয়া, দমন ও দিউ ষষ্ঠ শতক হইতে পর্তুগীজ উপনিবেশিকের কবলে ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সময় গোয়া দমন দিউ স্বাধীন হয় নি। দীর্ঘকালীন শাসনকালে পর্তুগীজরা গোয়ার নাগরিকদের অধিকার দমন করে রাখা ছাড়াও ধর্মান্তকরণে উদ্যোগী হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে গোয়ায় স্বাধীনতার জন্য গণআন্দোলন আরম্ভ হয়। ভারতও গোয়ার স্বাধীনতার জন্য সাহায্য সহায়তার হাত প্রসারিত করে। পর্তুগাল সরকার এই ব্যাপারে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ হাতে না নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার ১৯৬১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় সৈন্য প্রেরণ করে দুই দিনের মধ্যে গোয়া, দমন ও দিউকে পর্তুগীজ শাসনমুক্ত করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা প্রদান করে। ১৯৮৭ সালে গোয়া পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে।
প্রশ্ন ২৫। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে স্বায়ত্বশাসনের দাবি পূরণের ব্যবস্থা, যেমন— স্বায়ত্বশাসিত পরিষদ গঠন, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন ও পৃথক রাজ্য গঠন প্রভৃতির উল্লেখ থাকলেও ইহা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে নি। ফলে এই অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগ্রামের ক্ষেত্রে নাগা বিদ্রোহীরা অন্যতম। নাগা বিদ্রোহী নেতা ফিজোর নেতৃত্বে নাগাদের একাংশ ১৯৫১ সালে ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তোলে। ন্যাশনাল সোসালিস্ট কাউন্সিল ও ভারত সরকারের মাধ্যমে ১৯৯০ সালে চুক্তির মাধ্যমে এই সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়।
১৯৬০ সালে লালডেঙ্গার নেতৃত্বে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ১৯৬৭ সালের পর এই সংগঠন স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করলে ভারত সরকার সামরিক শক্তি প্রদানের মাধ্যমে এই বিদ্রোহ দমন করে। ১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধীর প্রচেষ্টায় মিজো চুক্তির মাধ্যমে মিজোরামে শান্তি স্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৮৭ সালে মিজোরাম পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে।
আসামে অবৈধভাবে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে ১৯৭৯ সালে আন্দোলন আরম্ভ হয়। ১৯৮৫ সালে ‘আসাম চুক্তি’-র মাধ্যমে এই গণআন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে।
অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। পাঞ্জাব চুক্তির প্রধান বিষয়সমূহ কি ছিল? কিভাবে সেইগুলি পুনরায় পাঞ্জাব ও প্রতিবেশী রাজ্যসমূহের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে?
উত্তরঃ শিখ সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে গড়ে ওঠা চরমপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব তথা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের এই ক্ষেত্রে গ্রহণ করা তোষামোদ নীতির পরিপ্রেক্ষিতে পাঞ্জাবে ১৯৮০-র দশকে সশস্ত্র বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটে। এই সশস্ত্র বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল সন্ত জে. এস. বিন্দ্রানওয়ালা। বিন্দ্রানওয়ালার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই বিদ্রোহ নিরংকারপন্থীদের বিরুদ্ধে আরম্ভ হয়। ১৯৮২ সালের জুলাই মাসে বিদ্ৰানওয়ালা প্রখ্যাত স্বর্ণমন্দিরের গুরুনানক নিবাসে প্রবেশ করে এবং স্বর্ণমন্দিরকে সশস্ত্র বিদ্রোহের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করতে থাকে। বিন্দ্রানওয়ালা ক্রমে হিন্দুবিরোধী হয়ে ওঠে। স্বর্ণমন্দিরের ভিতরে থেকে বিন্দ্রানওয়ালা বিভিন্ন প্রকার অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয়। এই বিদ্রোহ তিন বছরকাল কেন্দ্রীয় সরকার দমন করতে পারে নি। অবশেষে ১৯৮৪ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় সরকার স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযান চালায়। এই অভিযানকে ‘অপারেশন ব্লুস্টার’ (Operation Blue Star) নামে জানা যায়। অপারেশন ব্লুস্টার-এর পর ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর শিখ দেহরক্ষীর হাতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিহত হন। ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর তাঁর পুত্র রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস বিপুল সাফল্য লাভ করে। তিনি পাঞ্জাব সমস্যা সমাধানের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। ১৯৮৫ সালের জানুয়ারি মাসে কারাগারে বন্দী থাকা অকালি দলের সভাপতি হরচান্দ সিং লঙ্গোয়াল সহ বহু অকালি নেতাকে মুক্তি দেওয়া হয়। হরচাঁদ সিং সন্ত্রাসবাদীদের পথ সঠিক নয় বলে সরকারের সঙ্গে গোপন আলোচনায় মিলিত হন। এই আলোচনার ফলশ্রুতিতেই ১৯৮৫ সালের আগস্ট মাসে রাজীব গান্ধী ও লঙ্গোয়াল পাঞ্জাব চুক্তি (Punjab Ac d) সম্পাদন করেন। এই চুক্তিকে ‘রাজীব-লঙ্গোয়াল’ চুক্তি নামেও জানা যায়। সরকার অকালিদের মুখ্য দাবিসমূহ মেনে নেয়।
পাঞ্জাব চুক্তির প্রধান শর্তসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) চণ্ডীগড়কে পাঞ্জাবে হস্তান্তর করা হবে।
(খ) পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানা বিবাদ নিষ্পত্তিকল্পে একটি পৃথক আয়োগ গঠন করা হবে।
(গ) পাঞ্জাব-হরিয়ানা ও রাজস্থানের মধ্যে নদীর জল-বিবাদ তথা জল বিতরণের সকল দিক পর্যালোচনার জন্য একটি স্বাধীন প্রাধীকরণ (Independent Tribunal) গঠন করা হবে।
(ঘ) সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন পাঞ্জাব হতে তুলে নেওয়া হবে।
(ঙ) পাঞ্জাবে সন্ত্রাসবাদ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হবে।
অধিকন্তু ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্য বিধানসভা তথা সংসদীয় কেন্দ্রসমূহেরও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
পাঞ্জাব চুক্তির শর্তসমূহ যুক্তিপূর্ণ ও সর্বজনগ্রাহ্য না হওয়ার ফলে এইগুলি পাঞ্জাব ও প্রতিবেশী রাজ্যসমূহের মধ্যে ভবিষ্যৎ উত্তেজনার ভিত্তি হতে পারে।
প্রশ্ন ২। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনীতিতে কংগ্রেসের ভূমিকার বিষয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনীতিতে কংগ্রেস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। স্বাধীনতা লাভের পূর্ব থেকে কংগ্রেস জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ করার চেষ্টা করে আসছে। ভারত বিভাজনের সময় মুসলিমগণ জম্মু ও কাশ্মীর স্বাধীনতা প্রদানকে সমর্থন করার পরিবর্তে কংগ্রেস ভারতের মধ্যে রাখতে চেষ্টা করেছিল। সংযুক্তিকরণ চুক্তির সময় কংগ্রেসের ভূমিকা উল্লেখনীয়।
স্বাধীনোত্তর যুগে কংগ্রেস যদিও এককভাবে জম্মু ও কাশ্মীরে সরকার গঠন করতে পারে নি, কিন্তু বর্তমান পর্যন্ত বহুবার জাতীয় সম্মেলন দল এবং পি.ডি.পি.-র সঙ্গে সম্মিলিত সরকার গঠন করেছে। রাজ্যের আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ রোধ করার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভূমিকা উল্লেখনীয়। ইন্দিরা গান্ধী সহ অন্যান্য নেতাগণের প্রভাবের ফলে জম্মু ও কাশ্মীরে বহুবার সরকার গঠন অথবা ভঙ্গ করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৩। পাঞ্জাব সমস্যাকে অধিক জটিল করে তোলা অতি দুঃখজনক ঘটনাটি কি ছিল আলোচনা কর।
উত্তরঃ শিখ সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে গড়ে ওঠা চরমপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব তথা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের এই ক্ষেত্রে গ্রহণ করা তোষামোদ নীতির পরিপ্রেক্ষিতে পাঞ্জাবে ১৯৮০-র দশকে সশস্ত্র বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটে। এই সশস্ত্র বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল সন্ত জে. এস. বিন্দ্রানওয়ালা। বিন্দ্রানওয়ালার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই বিদ্রোহ নিরংকারপন্থীদের বিরুদ্ধে আরম্ভ হয়। ১৯৮২ সালের জুলাই মাসে বিন্দ্রানওয়ালা প্রখ্যাত স্বর্ণমন্দিরের গুরুনানক নিবাসে প্রবেশ করে এবং স্বর্ণমন্দিরকে সশস্ত্র বিদ্রোহের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করতে থাকে। বিন্দ্রানওয়ালা ক্রমে হিন্দুবিরোধী হয়ে ওঠে। স্বর্ণমন্দিরের ভিতরে থেকে বিন্দ্রানওয়ালা বিভিন্ন প্রকার অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয়। এই বিদ্রোহ তিন বছরকাল কেন্দ্রীয় সরকার দমন করতে পারে নি। অবশেষে ১৯৮৪ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় সরকার স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযান চালায়। এই অভিযানকে ‘অপারেশন ব্লুস্টার’ (Operation Blue Star) নামে জানা যায়। অপারেশন ব্লুস্টার-এর পর ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর শিখ দেহরক্ষীর হাতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিহত হন।
এই ঘটনার দুঃখজনক পরিণতি নিম্নরূপ:
(ক) ভারতের রাজধানী দিল্লীসহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে শিখ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলা সংঘটিত হয় এবং প্রায় এক সপ্তাহব্যাপী শিখবিরোধী দাঙ্গা চলে।
(খ) এই দাঙ্গার প্রভাব সবথেকে বেশি হয় দিল্লীতে। প্রায় দু হাজারেরও বেশি শিখকে এই দাঙ্গার বলি হতে হয়।
(গ) ভারতের অন্যান্য অংশেও বিক্ষিপ্তভাবে দাঙ্গা হয়; ফলে শত শত শিখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(ঘ) বহু শিখ পরিবার তাদের পুরুষ রোজগেরে কর্তাকে হারিয়ে নিদারুণ আর্থিক সমস্যায় পড়ে।
প্রশ্ন ৪। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর শিখদের বিরুদ্ধে চালানো হিংসায় কোন্ প্রধানমন্ত্রী দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন?
উত্তরঃ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ২০০৫ সনের ১১ই আগস্ট রাজ্যসভায় ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন—“১৯৮৪ সালে যা হয়েছিল সে সম্বন্ধে কেবলমাত্র শিখ সম্প্রদায় নয় বরং সমস্ত ভারতীয় জাতি সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে আমার কোনো দ্বিধা নাই, কেননা সেদিন যা হয়েছে তা জাতিসত্ত্বা সম্বন্ধে ধারণার এবং আমাদের সংবিধানে যা বর্ণিত হয়েছে তার বিপরীত। আমি কোনো মিথ্যা সম্মানের জন্য সরকারের পক্ষ হতে বা দেশের সমগ্র জনসাধারণের পক্ষ হতে দাঁড়াইনি, আমি লজ্জায় মাথা অবনত করছি যে ঐ রকম ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু মহাশয়গণ, জাতির ব্যাপারে জোয়ার- ভাটা আছে। আমরা অতীতকে বদলাতে পারি না। কিন্তু মানুষ হিসাবে আমাদের ইচ্ছাশক্তি আছে এবং আমাদের সামর্থ আছে আমাদের সবার জন্য সুভবিষ্যৎ তৈরি করার।”
প্রশ্ন ৫। ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদকে ইন্ধন যোগানকারী উপাদানসমূহ কি কি?
উত্তরঃ ভারতের কোন কোন অঞ্চলে জঙ্গি সংগঠন বা বিচ্ছিন্নচাবাদী শক্তি কোন নির্দিষ্ট এলাকা ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য আন্দোলন করে। একেই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলে। যেমন—দ্রাবিড় আন্দোলন, পাঞ্জাব আন্দোলন, নাগা আন্দোলন, মিজো আন্দোলন।
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে ইন্ধন যোগানকারী প্রধান প্রধান উপাদানসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলিত ও দমনমূলক নীতি।
(খ) আঞ্চলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতা।
(গ) সন্ত্রাসবাদী ও মৌলবাদী শক্তিসমূহের প্রভাব।
(ঘ) অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা ও বেকার সমস্যা।
(ঙ) প্রতিবেশী দেশসমূহ বিশেষ করে পাকিস্তানের উস্কানি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিসমূহের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানসহ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষা প্রদান।
প্রশ্ন ৬। আঞ্চলিকতাবাদের সমস্যাটি কিভাবে সমাধান করতে পারা যায়?
উত্তরঃ দেশের কোন বিশেষ অঞ্চলের আঞ্চলিক সমস্যার উপর ভিত্তি করে জনগণের মধ্যে যে আদর্শ ও আঞ্চলিক আকাঙ্খা গড়ে ওঠে তাকে আঞ্চলিকতাবাদ বলে। আঞ্চলিকতাবাদ একটি সংকীর্ণ ধারণা।
আঞ্চলিকতাবাদের সমস্যা নিম্নলিখিতভাবে সমাধান করতে পারা যায়:
(ক) আঞ্চলিকতাবাদ’ যাতে চরম সীমায় উপনীত হয়ে দেশে বিপদ আনতে না পারে তার জন্য অর্থনৈতিক পরিকল্পনার উপর বিশেষ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
(খ) কংগ্রেস সরকারের অঞ্চল বিশেষের প্রতি অবহেলামূলক ও দমনমূলক নীতি ত্যাগ করা।
(গ) সমগ্র দেশের সম-উন্নয়নের উপর গুরুত্ব প্রদান করা। উদ্যোগসমূহ মূলখণ্ডে কেন্দ্রীভূত না করে বিভিন্ন অঞ্চলে বিকেন্দ্রীভূত করা।
(ঘ) বৈচিত্র্য নাশ কর চেষ্টা না করে ওটাকে জাতীয় সংহতির অন্তরায় বলে গণ্য না করে এর মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা উচিত।
(ঙ) হিংসাত্মক বা উগ্র আঞ্চলিকতাবাদকে রোধ করতে আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের বিশেষ তৎপরতা গ্রহণ করা উচিত।
(চ) ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ প্রবণতা রোধ করা ও রাজ্যসমূহকে অধিক স্বায়ত্ব-শাসন প্রদান করা।
প্রশ্ন ৭। ১৯৮০-র দশকে পাঞ্জাব ও আসাম সংকটের মধ্যে একটি সাদৃশ্য ও একটি বৈসাদৃশ্য সনাক্ত কর।
উত্তরঃ ১৯৮০ -র দশকে পাঞ্জাব ও আসাম সংকটের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নিম্নরূপ:
সাদৃশ্য: পাঞ্জাব ও আসাম আন্দোলন উভয়ই ছিল আঞ্চলিকতাবাদী। অঞ্চল দুটির পৃথক অস্তিত্ব বজায় রাখা উভয় আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল।
বৈসাদৃশ্য: পাঞ্জাবের আন্দোলন ছিল প্রধানত একটি পৃথক রাজ্যের দাবি- ভিত্তিক। এর মাধ্যমে পাঞ্জাবীভাষী লোকদের জন্য একটি পৃথক রাজ্য গঠনের জন্য আন্দোলন আরম্ভ হয়েছিল। কিন্তু আসাম আন্দোলন ছিল প্রধানত অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে আসামে প্রবেশ করা বিদেশিদের বহিষ্কার করার দাবি সম্বলিত আন্দোলন।
প্রশ্ন ৮। উত্তর-পূর্ব ভারতে আঞ্চলিক আন্দোলনের আলোচনা কর। এই অঞ্চলে এ-ধরনের আন্দোলনের জন্ম হওয়ার কারণগুলি কী?
উত্তরঃ উত্তর-পূর্ব ভারত বলতে প্রধানত আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা এই সাতটি রাজ্যকে নিয়ে গঠিত অঞ্চলকে বোঝায়। এই অঞ্চলটিকে একত্রে ‘সাত ভগিনী’ নামেও অভিহিত করা হয়। স্বাধীনতার সময় মণিপুর ও ত্রিপুরা ছাড়া মেঘালয়, মিজোরাম, অরুণাচল ও নাগাল্যান্ড বৃহত্তর আসামের অঙ্গ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এইসব রাজ্যের বিভিন্ন পার্বত্য উপজাতিদের আঞ্চলিকতাবাদী মানসিকতার জন্য ১৯৬০ সালে অল পার্টি হিল লিডার্স কনফারেন্স নামে একটি সংস্থা গড়ে ওঠে এবং এই সংস্থার মাধ্যমে পাহাড়ি ও জনজাতিসমূহ পৃথক রাজ্যের দাবি উত্থাপন করে। এই প্রক্রিয়ার পরিণতিস্বরূপ ১৯৬০ সালে নাগাল্যান্ড রাজ্য গঠিত হয়। ১৯৭২ সালে গঠিত হয় মেঘালয়, মণিপুর ও ত্রিপুরা রাজ্য এবং ১৯৮৭ সালে গঠিত হয় অরুণাচল প্রদেশ ও মিজোরাম রাজ্য। ১৯৪৭-এর ভারত বিভাগ উত্তর-পূর্বের অঞ্চলকে একটি স্থলবেষ্টিত ভূখণ্ডে পরিণত করে এবং এর অর্থনীতি ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়। ভারতের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই অঞ্চল উন্নয়নের পরিভাষায় উপেক্ষা বা বঞ্চনার শিকার হয়। উত্তর-পূর্ব ভারতে গড়ে ওঠা আঞ্চলিক আন্দোলন প্রধানত ভাষা, সংস্কৃতি, জাতি, ধর্ম, আর্থিক অনগ্রসরতা, বেকারি, অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রভৃতি বিষয়সমূহের সঙ্গে জড়িত। এই আন্দোলনের মাধ্যমে রাজ্যের মর্যাদা বা অধিক স্থানীয় স্বায়ত্ব-শাসনের দাবি সামনে আসে। একই সঙ্গে এই অঞ্চলের সব রাজ্যই পার্শ্ববর্তী রাজ্য ও দেশসমূহের থেকে প্রব্রজনের সমস্যা ভোগ করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তি আন্দোলনের সময় থেকে এই সমস্যা প্রকট হয় এবং প্রচুর অনুপ্রবেশ ঘটে, যা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিপুল প্রভাব ফেলে। ফলত ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত আসাম আন্দোলন বিদেশী অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে বিতারণের দাবিতে সংগঠিত হয়। আন্দোলনকারীরা দাবি জানায় যে ১৯৫১ সালের পর আসামে আগত বিদেশীদের বহিষ্কার করতে হবে। ১৯৮৫ সালে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর উদ্যোগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে চুক্তি হয় ১৯৭১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে। বর্তমানেও এই অঞ্চলের অনেক সম্প্রদায় পৃথক রাজ্যের দাবি উত্থাপন করে আসছে। এই সম্প্রদায়গুলি হল—বড়ো, কোচ, রাজবংশী, কাঠি, নাগা, খাসি, গারো, ডিমাসা, মিচিং, মিশমি দালা ইত্যাদি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করে। সংবিধানের ষষ্ঠ তপসীলের মাধ্যমে উত্তর কাছাড় ও কার্বি আংলং-এ স্বায়ত্ত্বশাসিত পরিষদ গঠিত হয়েছিল। উক্ত অনুসূচী সংশোধনের মাধ্যমে ২০০৩ সালে বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল নামে স্বায়ত্বশাসিত পরিষদের মর্যাদা দেওয়া হয়।
এই ধরনের আন্দোলনের জন্ম হওয়ার কারণ বিবিধ; যথা—
(ক) দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ভৌগোলিক দূরত্ব।
(খ) উত্তর-পূর্ব ভারতের বর্ণাঢ্য নৃ-গোষ্ঠীর কাঠামো।
(গ) এই অঞ্চলের বিকাশের ক্ষেত্রে অবহেলা।
(ঘ) অনিয়ন্ত্রিত প্রব্রজন।
(ঙ) সাংস্কৃতিক বিভিন্নতা।
(চ) অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা ও বেকারি ইত্যাদি।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ
প্রশ্ন ১। পাঞ্জাব চুক্তির প্রধান শর্তসমূহ কি কি ছিল? এই শর্তসমূহ কিভাবে পাঞ্জাব ও প্রতিবেশী রাজ্যসমূহের মধ্যে উত্তেজনার ভিত্তি হতে পারে?
উত্তরঃ শিখ সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে গড়ে ওঠা চরমপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব তথা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের এই ক্ষেত্রে গ্রহণ করা তোষামোদ নীতির পরিপ্রেক্ষিতে পাঞ্জাবে ১৯৮০-র দশকে সশস্ত্র বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটে। এই সশস্ত্র বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল সন্ত জে. এস. বিন্দ্রানওয়ালা। বিন্দ্রানওয়ালার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই বিদ্রোহ নিরংকারপন্থীদের বিরুদ্ধে আরম্ভ হয়। ১৯৮২ সালের জুলাই মাসে বিদ্ৰানওয়ালা প্রখ্যাত স্বর্ণমন্দিরের গুরুনানক নিবাসে প্রবেশ করে এবং স্বর্ণমন্দিরকে সশস্ত্র বিদ্রোহের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করতে থাকে। বিন্দ্রানওয়ালা ক্রমে হিন্দুবিরোধী হয়ে ওঠে। স্বর্ণমন্দিরের ভিতরে থেকে বিন্দ্রানওয়ালা বিভিন্ন প্রকার অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয়। এই বিদ্রোহ তিন বছরকাল কেন্দ্রীয় সরকার দমন করতে পারে নি। অবশেষে ১৯৮৪ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় সরকার স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযান চালায়। এই অভিযানকে ‘অপারেশন ব্লুস্টার’ (Operation Blue Star) নামে জানা যায়। অপারেশন ব্লুস্টার-এর পর ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর শিখ দেহরক্ষীর হাতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিহত হন। ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর তাঁর পুত্র রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস বিপুল সাফল্য লাভ করে। তিনি পাঞ্জাব সমস্যা সমাধানের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। ১৯৮৫ সালের জানুয়ারি মাসে কারাগারে বন্দী থাকা অকালি দলের সভাপতি হরচান্দ সিং লঙ্গোয়াল সহ বহু অকালি নেতাকে মুক্তি দেওয়া হয়। হরচাঁদ সিং সন্ত্রাসবাদীদের পথ সঠিক নয় বলে সরকারের সঙ্গে গোপন আলোচনায় মিলিত হন। এই আলোচনার ফলশ্রুতিতেই ১৯৮৫ সালের আগস্ট মাসে রাজীব গান্ধী ও লঙ্গোয়াল পাঞ্জাব চুক্তি (Punjab Ac d) সম্পাদন করেন। এই চুক্তিকে ‘রাজীব-লঙ্গোয়াল’ চুক্তি নামেও জানা যায়। সরকার অকালিদের মুখ্য দাবিসমূহ মেনে নেয়।
পাঞ্জাব চুক্তির প্রধান শর্তসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) চণ্ডীগড়কে পাঞ্জাবে হস্তান্তর করা হবে।
(খ) পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানা বিবাদ নিষ্পত্তিকল্পে একটি পৃথক আয়োগ গঠন করা হবে।
(গ) পাঞ্জাব-হরিয়ানা ও রাজস্থানের মধ্যে নদীর জল-বিবাদ তথা জল বিতরণের সকল দিক পর্যালোচনার জন্য একটি স্বাধীন প্রাধীকরণ (Independent Tribunal) গঠন করা হবে।
(ঘ) সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন পাঞ্জাব হতে তুলে নেওয়া হবে।
(ঙ) পাঞ্জাবে সন্ত্রাসবাদ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হবে।
অধিকন্তু ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্য বিধানসভা তথা সংসদীয় কেন্দ্রসমূহেরও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
পাঞ্জাব চুক্তির শর্তসমূহ যুক্তিপূর্ণ ও সর্বজনগ্রাহ্য না হওয়ার ফলে এইগুলি পাঞ্জাব ও প্রতিবেশী রাজ্যসমূহের মধ্যে ভবিষ্যৎ উত্তেজনার ভিত্তি হতে পারে।
প্রশ্ন ২। আনন্দপুর সাহিব প্রস্তাব কেন বিতর্কমূলক হইয়াছিল?
উত্তরঃ ১৯৬৬ সালে পাঞ্জাব রাজ্য পুনর্গঠনের পর ১৯৬৭ সালে অকালি দল ক্ষমতায় আসে। ১৯৭০-এর দশকে অকালি দলের একটি শাখা পাঞ্জাবের জন্য রাজনৈতিক সুশাসন দাবি করে। ১৯৭৩ সালে অকালি দল আনন্দপুর সাহিব সম্মেলনে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে যাতে পাঞ্জাবের জন্য রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসন দাবি করা হয়। এর পর হতে আনন্দপুর সাহিব প্রস্তাব অকালি দলের প্রধান নীতি ও কার্যসূচীতে পরিণত হয়।
আনন্দপুর সাহিব প্রস্তাব বিতর্কমূলক ছিল কারণ তা গুরুমুখী অক্ষরে লিখিত হয়েছিল। এই প্রস্তাবটি পরিষ্কার ছিল না কারণ এর কতিপয় শব্দের অর্থ একাধিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এমনকি অকালি দলও এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়ায় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। নরমপন্থীদের মতে এই প্রস্তাবের অর্থ হল পাঞ্জাবের জন্য অধিক স্বায়ত্বশাসন। অন্যদিকে কতিপয় নেতার মতে এই প্রস্তাব পাঞ্জাবের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে।
প্রশ্ন ৩। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের আভ্যন্তরীণ বিভাজন ব্যাখ্যা কর এবং এইগুলি কিভাবে বিভিন্ন আঞ্চলিক আকাঙ্খার সৃষ্টি করেছে বর্ণনা কর।
উত্তরঃ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য তিনটি সামাজিক ও রাজনৈতিক অঞ্চল নিয়ে গঠিত।
এইগুলি হল—
(ক) জম্মু।
(খ) কাশ্মীর। ও
(গ) লাড়াক।
কাশ্মীর অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র হইল কাশ্মীর উপত্যকা। এই অঞ্চলের জনগণের অধিকাংশই মুসলমান ও কাশ্মীরি ভাষাভাষী। একটি ক্ষুদ্র হিন্দু সংখ্যালঘু কাশ্মীরি ভাষিক।
জম্মু অঞ্চলটি হিন্দু, মুসলমান ও শিখ অধ্যুষিত পার্বত্য ও সমতলের সংমিশ্রণ। এই অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন ভাষাভাষিক।
লাডাক অঞ্চলটি পর্বতসঙ্কুল। জনগণের সমান অংশ বৌদ্ধ ও মুসলমান।
কাশ্মীর বিষয়টি কেবলমাত্র ভারত ও পাকিস্তানের বিবাদের বিষয় নয়। কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে দেখা দিয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী কাশ্মীরকে পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী কাশ্মীরকে পাকিস্তানে সংযুক্তির পক্ষপাতী। আবার অনেকে জম্মু ও কাশ্মীরে রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের পক্ষপাতী।
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের ধারণা জম্মু ও লাডাকের জনগণকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। এই অঞ্চলের জনগণ তাদের পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে। তারা রাজ্যের মধ্যে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের দাবি উত্থাপন করেছে।
প্রশ্ন ৪। কাশ্মীরের আঞ্চলিক স্বতন্ত্রতার বিভিন্ন বিষয়সমূহ কি কি? এদের কোনগুলি ন্যায়সঙ্গত? তোমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তরঃ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনীতি আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে সদাই বিতর্কমূলক। বাহ্যিকভাবে পাকিস্তান কাশ্মীর উপত্যকাকে তাদের অঙ্গ হওয়া উচিত বলে দাবি জানায়। আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও ভারত যুক্তরাষ্ট্রে কাশ্মীরের মর্যাদা বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। সংবিধানের ৩৭০ নং ধারায় জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। উক্ত ধারা জম্মু ও কাশ্মীরকে অন্যান্য রাজ্য অপেক্ষা অধিক স্বায়ত্বশাসন প্রদান করেছে। এই রাজ্যের নিজস্ব সংবিধান আছে। ভারতীয় সংবিধানের সবকয়টি অনুচ্ছেদ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে প্রযোজ্য নয়। সংসদ কর্তৃক প্রণীত কোন আইন জম্মু ও কাশ্মীর সরকার রাজি হলে সেই রাজ্যে প্রযোজ্য হতে পারে।
একশ্রেণীর মানুষ মনে করেন যে সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা প্রদত্ত বিশেষ মর্যাদার ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের ভারত সংযুক্তি সম্পূর্ণ হয় নি। সুতরাং এই ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরকে অন্যান্য রাজ্যের সমমর্যাদা প্রদান করা উচিত।
অপর এক শ্রেণী বিশেষত কাশ্মীরিগণ মনে করেন যে সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা প্রদত্ত বিশেষ মর্যাদাদান পর্যাপ্ত নয়।
দ্বিতীয়ত, ভারত যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্তির সময় জম্মু ও কাশ্মীরকে সংবিধানের ৩৭০ নং ধারায় যে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, বাস্তবে তাহা লঙ্ঘিত হয়েছে। এর ফলে রাজ্যকে অধিক স্বায়ত্বশাসন দানের দাবি উত্থাপিত হয়েছে। তৃতীয়ত,অনুমান করা যায় যে ভারতের সর্বত্র যেভাবে গণতন্ত্র অনুসরণ করা হয়, জম্মু ও কাশ্মীরে সেইরূপ গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করা হয় না।
উপরের আলোচনার ভিত্তিতে এটা পরিষ্কার যে জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কিন্তু ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে একে এক বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা বাতিল করা সম্ভব নয়। একমাত্র সহমতের ভিত্তিতে তা করা সম্ভব।
প্রশ্ন ৫। আসাম আন্দোলন ছিল সাংস্কৃতিক গৌরব ও অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার সংযুক্তি। ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ এটা অত্যন্ত বাস্তব সত্য যে আসাম আন্দোলন ছিল সাংস্কৃতিক গৌরব ও অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার সংমিশ্রণ।
নিম্নোক্ত বাস্তব সত্যতার উপর এর যৌক্তিকতা প্রমাণ করা যায়:
(ক) উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে বিশাল সংখ্যায় বিদেশি অনুপ্রবেশের ফলে ভয়ানক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। স্থানীয় জনগণ অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। তারা অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ করে, কারণ অনুপ্রবেশকারীগণ দেশীয় জনগণের সংস্কৃতি বিপন্ন করে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করে।
(খ) ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত আসাম আন্দোলন এই প্রকার আন্দোলনের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। বিদেশি যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তারা মূলত বাংলাদেশ হতে আগত শ্রমিক। তারা কাজ ও জীবিকার সন্ধানে ভারতে এসেছিল। আন্দোলনকারীদের এই অভিমত ছিল যে বিদেশি অনুপ্রবেশ রোধ করতে না পারলে সমগ্র আসাম বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা মগ্ন হয়ে যাবে। এই রাজ্যের সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব বিপন্ন হবে ও অর্থনৈতিক স্থিতি বিপন্ন হবে।
(গ) অসমীয়া জনগণ উপলব্ধি করল যে বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের যদি বহিষ্কার না করা হয় তা হলে তারা স্বদেশি জনগণকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করবে। এছাড়া বিদেশিদের জন্যই অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়। আসামে দরিদ্র ও বেকার সমস্যা বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্যই হয়েছে বলে মনে করে।
(ঘ) এর ফলে ১৯৭৯ সালে সারা আসাম ছাত্র সংস্থা বিদেশি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ করে। আন্দোলনরত ছাত্রগণ এই দাবি জানায় যে ভোটার লিস্ট হতে বিদেশিদের নাম বাদ না দিলে আসামে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না।
(ঙ) আন্দোলনকারীগণ দাবি জানায় যে ১৯৫১ সালের পর আসামে আগত বিদেশিদের বহিষ্কার করতে হবে।
অবশেষে ১৯৮৫ সালে আসাম চুক্তির মাধ্যমে আসাম আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে। আসাম চুক্তি আসামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেও তা আসামে অবৈধ বিদেশি অনুপ্রবেশ সমস্যা সমাধান করতে পারে নি। বহিরাগত সমস্যা আসামের রাজনীতিতে সদাপ্রবহমান।
প্রশ্ন ৬। সকল প্রকার আঞ্চলিক আন্দোলন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নয়। উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তরঃ এটা যথার্থ সত্য যে সকল আঞ্চলিক আন্দোলন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে পরিণত হয় না। ১৯৬৬ সালে ‘মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র বিপ্লব আরম্ভ করে। এরা মিজো সন্ত্রাসবাদী ও ভারতীয় সেনার মধ্যে দীর্ঘ যুদ্ধ আরম্ভ করে। মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট একপ্রকার গেরিলা যুদ্ধ আরম্ভ করে এবং পাকিস্থান (অধুনা বাংলাদেশ) -এর নিকট হতে সমর্থন লাভ করে এবং পূর্ব পাকিস্থান অর্থাৎ বাংলাদেশে শিবির স্থাপন করে। ভারতীয় সেনা এদের দমন করবার জন্য বল প্রয়োগ করে। তা সাধারণ মানুষের মনে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি করে।
বিচ্ছিন্নতাবাদ যখন বিফল হয়ে যায় তখন মিজো নেতা লালডেঙ্গা পাকিস্তানে নির্বাসন জীবন ত্যাগ করে পুনরায় দেশে এসে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা আরম্ভ করেন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ও লালডেঙ্গার মধ্যে ১৯৮৬ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী মিজোরামকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দান ও বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। মিজো ন্যাশন্যাল ফ্রন্টও ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কার্যসূচী পরিত্যাগ করে।
নাগা আন্দোলন কাহিনিও মিজো আন্দোলনের অনুরূপ। দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পর নাগাদের একটি সম্প্রদায় ভারত সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। যদিও বিদ্রোহী নাগারা তা মেনে নেয়নি।
প্রশ্ন ৭। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আঞ্চলিক দাবিসমূহ অনৈক্যের মধ্যে ঐক্যের আদর্শস্বরূপ। তুমি তা মনে কর কি? কারণ দর্শাও।
উত্তরঃ ভারতীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতি ক্রমাগত আঞ্চলিক রাজনৈতিক চেতনাকে দেশীয় রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে স্বীকার করে নিয়েছে। অর্থাৎ আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রত্যাশাকে জাতীয় সংহতির অন্তরায় না বলে তা সংহতি নির্মাণের এক কৌশল হিসাবে গণ্য করা হয়। বিগত ছয় দশকে ভারতীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতি আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রত্যাশা সংস্থাপনের জন্য অনুশীলন কতকগুলি বিশেষ দিক উন্মোচন করেছে।
এর মধ্যে নিম্নোক্ত দিকসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
(ক) আঞ্চলিক প্রত্যাশা গণতান্ত্রিক রাজনীতির অঙ্গ: আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রত্যাশা ভারতীয় সমাজের বর্ণাঢ্য জনবিন্যাসের প্রকাশ। রাষ্ট্রসংঘের ২০০৪ সালের ‘আজকের বর্ণাঢ্য পৃথিবীতে সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তা প্রকাশিত হয়েছে যে বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি, ভাষা বা প্রত্যাশা গণতন্ত্রের জন্য এক সম্পদ—তা প্রতিবন্ধক নয়। ভারত সরকার প্রথমাবস্থায় একে জাতীয় সংস্কৃতির প্রতিবন্ধক বললেও ১৯৮০ সালের পর থেকে এই দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে।
(খ) গণতান্ত্রিক আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত: সংঘাতের উপায় অবলম্বন না করে গণতান্ত্রিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব। আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রত্যাশাকে আইন শৃঙ্খলার সমস্যা বলে গণ্য করে একে দমন করলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। এই কথা উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পাঞ্জাব অথবা জম্মু-কাশ্মীরের ঘটনাপ্রবাহে ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
(গ) ক্ষমতা বণ্টন: ভারতবর্ষে গড়ে ওঠা আঞ্চলিকতাবাদী প্রত্যাশা ক্ষমতা বহনের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন। অর্থাৎ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বা জনগোষ্ঠী তাদের বিকাশের জন্য অথবা তাদের সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করবার জন্য বিধিগত ক্ষমতার দাবি উত্থাপন করে আসছে। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অতিকেন্দ্রিক প্রবণতাই এই আঞ্চলিক প্রত্যাশা গড়ে ওঠার মূল কারণ।
(ঘ) বিকাশের ক্ষেত্রে হওয়া ভারসাম্যহীন অবস্থা এবং একটি অঞ্চলের সম্পদকে অন্য একটি অঞ্চলের বিকাশের জন্য ব্যবহার করার কৌশল আঞ্চলিকতাবাদী রাজনৈতিক প্রত্যাশাকে তীব্রতর করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ আসামের খনিজ তেল বিহারের বারাউনীতে স্থাপিত শোধনাগারে শোধন করার বিরুদ্ধে আসামে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠা আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রত্যাশা ভারতীয় গণতন্ত্রকে অধিক পরিপক্বতা প্রদান করেছে। এর ভিত্তিতেই ভারত সরকার পূর্বের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রত্যাশাকে ক্ষমতার বিধিগত আঙ্গিকে সংস্থাপিত করেছে।