Class 12 Political Science Chapter 18 ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি

Class 12 Political Science Chapter 18 ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 18 ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি Notes and select needs one.

Class 12 Political Science Chapter 18 ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 18 ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 18 ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি Solutions for All Subjects, You can practice these here.

ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি

Chapter: 18

দ্বিতীয় খন্ড (স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি)

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘কংগ্রেস ব্যবস্থা’ বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ ভারতীয় রাজনীতিতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত যে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করেছিল তাকে কংগ্রেস ব্যবস্থা বলে।

প্রশ্ন ২। করসেবা মানে কি?

উত্তরঃ অযোধ্যার বিবাদমান বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে ভারতীয় জনতা পার্টি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ যে সংগ্রাম আরম্ভ করে রামমন্দির নির্মাণের জন্য যে স্বেচ্ছামূলক কার্য আরম্ভ করেছিল, তাই-ই হল করসেবা।

প্রশ্ন ৩। ১৯৮৯ সালে মোর্চা সরকারের প্রধান কে ছিলেন?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

উত্তরঃ ভি. পি. সিং।

প্রশ্ন ৪। ১৯৮৯ সনে কেন্দ্রে কে সরকার গঠন করেছিল?

উত্তরঃ ‘জনতা দল’ ও অন্যান্য আঞ্চলিক দলসমূহ রাষ্ট্রীয় ফ্রন্ট গঠন করে সরকার গঠন করেছিল।

প্রশ্ন ৫। হিন্দুত্ব বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ আক্ষরিক অর্থে হিন্দুত্ব বলতে হিন্দুবাদ বা হিন্দুধর্ম বলে। ভি. ডি. সাভারকর একে ভারতীয় জাতির ভিত্তি বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন।

প্রশ্ন ৬। রাজীব গান্ধীর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে হয়েছিলেন?

উত্তরঃ পি. ভি. নরসিংহ রাও।

প্রশ্ন ৭। রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চায় কোন্ দল নেতৃত্ব দিয়েছিল?

উত্তরঃ ভারতীয় জনতা পার্টি।

প্রশ্ন ৮। আদবানির পর বি. জে. পি. সভাপতি কে হয়েছিলেন?

উত্তরঃ রাজনাথ সিং। 

প্রশ্ন ৯। এন. ডি. এ. কয়টি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিল?

উত্তরঃ ১৩টি।

প্রশ্ন ১০। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দল একক বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসাবে পরিগণিত হয়েছিল?

উত্তরঃ বি. জে. পি.।

প্রশ্ন ১১। মণ্ডল আয়োগের যে-কোন একটি পরামর্শ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সরকারি চাকরিসমূহে অনগ্রসর শ্রেণীর লোকদের জন্য ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা।

প্রশ্ন ১২। মণ্ডল আয়োগ কি?

উত্তরঃ ১৯৭৮ সালে বি. পি. মণ্ডলের নেতৃত্বে অনগ্রসর শ্রেণীর লোকদের শনাক্তকরণ ও তাদের সংরক্ষণের বিষয় বিচার করে পরামর্শ দেওয়ার জন্য যে আয়োগ গঠন করা হয়েছিল তাকে মণ্ডল আয়োগ বলে।

প্রশ্ন ১৩। ইউ. পি. এ. বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ ইউ. পি. এ. হল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন শাসক সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা।

প্রশ্ন ১৪। এন. ডি. এ. সরকারের নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?

উত্তরঃ অটল বিহারী বাজপেয়ী।

প্রশ্ন ১৫। কাসিরাম কে ছিলেন?

উত্তরঃ কাসিরাম বহুজন সমাজ পার্টির প্রতিস্থাপক ছিলেন।

প্রশ্ন ১৬। আঞ্চলিক দলসমূহ বিকাশের জন্য দায়ী একটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ ভাষা ও সংস্কৃতি।

প্রশ্ন ১৭। কোন্ সনে ভারতীয় জনতা দল গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৮৯ সালে।

প্রশ্ন ১৮। কোন্ সনে জনতা পার্টি গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৮০ সালে।

প্রশ্ন ১৯। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মোর্চা সরকারের নেতা কে ছিলেন?

উত্তরঃ অটল বিহারী বাজপেয়ী।

প্রশ্ন ২০। বি. জে. পি-র কোন্ নেতা মহম্মদ আলি জিন্নাকে একজন ধর্মনিরপেক্ষ নেতা বলেছিলেন?

উত্তরঃ লালকৃষ্ণ আডবানি।

প্রশ্ন ২১। ২০০৪ সালের নির্বাচনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে হয়েছিলেন?

উত্তরঃ মনমোহন সিং।

প্রশ্ন ২২। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

(ক) _______ সালে ভারত সরকার মণ্ডল আয়োগ নিযুক্ত করেছিল।

উত্তরঃ ১৯৭৯

(খ) প্রধানমন্ত্রী _______ কে ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর হত্যা করা হয়েছিল।

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী।

(গ) ________ জম্মু ও কাশ্মীরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী।

উত্তরঃ মেহবুবা মুফতি।

(ঘ) ১৯৮৯ সালের নির্বাচন ________  পরিসমাপ্তি ঘটায়।

উত্তরঃ একদলীয় শাসনের।

প্রশ্ন ২৩। ইন্দিরা গান্ধির মৃত্যুর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে হয়েছিলেন?

উত্তরঃ রাজীব গান্ধী।

প্রশ্ন ২৪। ১৯৮০ দশকে ভারতীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে সংকটময় ঘটনা কোনটি?

উত্তরঃ ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস দলের পরাজয়।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২৫। ১৯৯০-এর দশকে ভারতীয় রাজনীতিতে সংঘটিত যে-কোন একটি পরিবর্তন উল্লেখ কর।

উত্তরঃ একদলীয় একাধিপত্যের অবসান।

প্রশ্ন ২৬। মণ্ডল আয়োগ কোন্ সরকারের আমলে নিযুক্ত করা হয়েছিল?

উত্তরঃ জনতা পার্টি সরকারের আমলে।

প্রশ্ন ২৭। নব-অর্থনৈতিক নীতি কখন গ্রহণ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯১ সালে।

প্রশ্ন ২৮। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সর্বপ্রথম কেন্দ্রে কখন ক্ষমতা হারায়?

উত্তরঃ ১৯৭৭ সালে।

প্রশ্ন ২৯। জনতা পার্টি কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭৭ সালে।

প্রশ্ন ৩০। রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা সরকার প্রথম কখন গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯৮ সালে।

প্রশ্ন ৩১। সংযুক্ত গণতান্ত্রিক মোর্চা সরকার কখন গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ২০০৪ সালে।

প্রশ্ন ৩২। এন. ডি. এ. সরকারের সম্পূর্ণ অর্থ কি?

উত্তরঃ ন্যাশন্যাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা)।

প্রশ্ন ৩৩। ভারতীয় জনতা পার্টির সম্মিলিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

উত্তরঃ অটলবিহারী বাজপেয়ী।

প্রশ্ন ৩৪। বর্তমানে কেন্দ্রে ক্ষমতাচ্যুত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের সম্মিলিত সরকারের নাম কি ছিল?

উত্তরঃ ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউ.পি.এ.) (সম্মিলিত প্রগতিশীল মোর্চা)।

প্রশ্ন ৩৫। আসামে বর্তমান জাতীয় কংগ্রেস দলের সঙ্গে সহযোগী দল হিসাবে থাকা রাজনৈতিক দলটির নাম কি?

উত্তরঃ বড়োল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট (বি.পি. এফ.)।

প্রশ্ন ৩৬। নূতন আর্থিক নীতি ভারত সরকার কখন গ্রহণ করেছিলেন?

উত্তরঃ ১৯৯১ সালে।

প্রশ্ন ৩৭। আর্থিক সংস্কার প্রক্রিয়া কোন্ সনে শুরু হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯১ সালে।

প্রশ্ন ৩৮। আর্থিক সংস্কারের প্রক্রিয়া আরম্ভ করার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

উত্তরঃ পি. ভি. নরসিমা রাও।

প্রশ্ন ৩৯। আর্থিক সংস্কার প্রক্রিয়া আরম্ভ হওয়ার সময় ভারতের অর্থমন্ত্রী কে ছিলেন?

উত্তরঃ ড. মনমোহন সিং।

প্রশ্ন ৪০। মণ্ডল আয়োগ কখন নিযুক্ত করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭৯ সালের ১লা জানুয়ারি।

প্রশ্ন ৪১। মণ্ডল আয়োগ মোট কতটি জাতি বা সম্প্রদায়কে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর অন্তর্ভুক্তির জন্য চিহ্নিত করেছিল?

উত্তরঃ ৩২৪৮টি জাতি।

প্রশ্ন ৪২। বাবরি মসজিদ কখন ধ্বংস করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর।

প্রশ্ন ৪৩। গুজরাট দাঙ্গা কোন্ সালে সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ২০০২ সালে।

প্রশ্ন ৪৪। গোধরা স্টেশনে কোন্ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ সবরমতী এক্সপ্রেস ট্রেনে।

প্রশ্ন ৪৫। ২০০৪ সালে কেন্দ্রে কে সরকার গঠন করেছিল?

উত্তরঃ সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা।

প্রশ্ন ৪৬। ২০০৯ সালে কেন্দ্রে কে সরকার গঠন করেছিল?

উত্তরঃ সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। আঞ্চলিক দলসমূহ প্রয়োজনীয় কি? তোমার উত্তরের সমর্থনে দুটি যুক্তি দাও।

উত্তরঃ ভারতের মতো বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের দেশে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল নিম্নলিখিত কারণে প্রয়োজনীয়: 

(ক) আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল প্রান্তিক এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ ও সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।

(খ) আঞ্চলিক দলের মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনগণ অধিক প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পায়।

প্রশ্ন ২। এন. ডি. এ.-র বিষয়ে কি জানো?

উত্তরঃ এন. ডি. এ. হল বর্তমান ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য মোর্চা। এর সম্পূর্ণ নাম হল ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স বা রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা। এন. ডি. এ. ১৩টি দলের দ্বারা গঠিত। ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে এই মোর্চা সরকার গঠন করেছিল এবং বর্তমানে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে।

প্রশ্ন ৩। ২০০৪ সালের নির্বাচনে বি. জে. পি. ও কংগ্রেস কত আসন লাভ করেছিল?

উত্তরঃ বি. জে. পি.—১৩৮টি; কংগ্রেস—১৪৫টি।

প্রশ্ন ৪। নূতন অর্থনৈতিক সংস্কারসমূহ কি ছিল এবং তা কখন ঘোষণা করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯১ সালে অর্থমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর প্রচেষ্টায় ভারতে নূতন আর্থিক সংস্কার গ্রহণ করা হয়। উদারীকরণ, বিশ্বায়ন ও বেসরকারিকরণ আর্থিক সংস্কারের মূল ভিত্তি ছিল। এই সংস্কার ১৯৯১ সাল থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে সরকারি খণ্ড, রাজস্ব নীতি, মূল্য নীতি প্রভৃতির সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন নীতিকে অন্তর্ভুক্ত করে।

প্রশ্ন ৫। রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড বিষয়ে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ ১৯৯১ সালের ২১শে মে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরাম্বুদুর নামক স্থানে এক নির্বাচনী সভায় ভাষণ দিতে গেলে রাজীব গান্ধীকে এল. টি. টি. ই. (LTTE) নামক শ্রীলঙ্কার একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আত্মঘাতী বোমায় হত্যা করে।

প্রশ্ন ৬। মোর্চা সরকারের রাজনীতি কখন আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৮৯ সালের পর থেকে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোন একটি রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার ফলে সব কয়টি সরকার মোর্চাভিত্তিক গঠন করা হয়।

প্রশ্ন ৭। বি. এস. পি. বা বহুজন সমাজ পার্টির বিষয়ে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ বহুজন সমাজ পার্টি হল উত্তরপ্রদেশের প্রধান বিরোধী দল। এই দল ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সালের নির্বাচন পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। ভারতীয় রাজনীতিতে বিশেষ স্থান দখল করা এই দলটি উত্তর প্রদেশের কাসিরামের নেতৃত্বে একটি আঞ্চলিক দল হিসাবে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর মায়াবতী এই দলের নেতৃত্ব দান করছেন। এই দল জাতীয় রাজনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

প্রশ্ন ৮। সংযুক্ত সরকার বা মোর্চা সরকার বলতে কি বোঝ? কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো কখন এই সরকার গঠন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় যখন কোন একটি নির্দিষ্ট দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করতে পারে না, তখন পারস্পরিক বোঝাপড়ার দ্বারা কয়েকটি দল একত্রে সরকার গঠন করে। একে সংযুক্ত সরকার বা মোর্চা সরকার বলে। 

কেন্দ্রে সর্বপ্রথম ১৯৭৭ সালে মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বে মোর্চা সরকার গঠন করা হয়েছিল।

প্রশ্ন ৯। কোন্ নির্বাচন সংযুক্ত সরকার বা মোর্চা সরকার গঠন করেছিল এবং কেন?

উত্তরঃ ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে কোন একটি রাজনৈতিক দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার জন্য মোর্চা সরকার গঠিত হয়েছিল। এই যুগের শুরু হয় ১৯৮৯ সনের নির্বাচনের পর।

প্রশ্ন ১০। ভারতীয় রাজনীতিতে কবে এবং কখন মণ্ডল বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে রাষ্ট্রীয় মোর্চা সরকার মণ্ডল আয়োগের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে যখন অনগ্রসর শ্রেণীর লোকদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার চাকুরিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল তখন তার প্রতিক্রিয়া রূপে মণ্ডল বিষয়টির উদ্ভব হয়েছিল।

প্রশ্ন ১১। কোন্ রাজনৈতিক দল হিন্দুত্ব নীতি অনুসরণ করত?

উত্তরঃ ভারতীয় জনতা পার্টি।

প্রশ্ন ১২। BAMCEF কি? এটা কোন্ সালে গঠন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ Backward and Minority Communities Employees Federation-কে সংক্ষিপ্তভাবে BAMCEF বলা হয়।

BAMCEF ১৯৭৮ সালে গঠন করা হয়েছিল।

প্রশ্ন ১৩। AIADMK-র সম্পূর্ণ নামটি লেখ।

উত্তরঃ All India Anna Dravida Munnetra Kazhagam.

প্রশ্ন ১৪। ভারতে কোয়ালিশন সরকারের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতে কোয়ালিশন সরকারের দুটি বৈশিষ্ট্য হল—

(ক) অস্থির সরকার। ও 

(খ) রাজনৈতিক মতভেদ।

প্রশ্ন ১৫। অর্থনৈতিক গোলকীকরণের উপর সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ বিশ্বায়ন বা গোলকীকরণের অর্থ হল কোনো অর্থব্যবস্থাকে বিশ্ববাজারে উন্মুক্ত করে দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। অন্য কথায় বলা যায়, বিশ্বের উন্নত দেশসমূহের সঙ্গে উৎপাদন, ব্যবসা, বিত্তীয় আদান-প্রদানের মাধ্যমে সম্বন্ধ স্থাপন করাকে বিত্তীয় বা আর্থিক গোলকীকরণ বলে।

প্রশ্ন ১৬। বি. জে. পি.-র প্রধান নির্বাচনী প্রচারসমূহ কি ছিল?

উত্তরঃ বি. জে. পি.-র প্রধান নির্বাচনী প্রচারসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) জাতীয়তাবাদ, ইতিবাচক ধর্মনিরপেক্ষতা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা।

(খ) বিকেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা।

(গ) কৃষি উন্নয়ন, দারিদ্র নির্মূল ও সার্বিক কল্যাণ।

(ঘ) দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা করা। 

প্রশ্ন ১৭। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত কোন্ দল লোকসভায় শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল?

উত্তরঃ ভারতীয় জনতা পার্টি।

প্রশ্ন ১৮। কোন্ বছর কোন্ রাজনৈতিক দল লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে?

উত্তরঃ ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

প্রশ্ন ১৯। কয়টি দল এন. ডি. এ. গঠন করেছিল?

উত্তরঃ ২৪টি দল।

প্রশ্ন ২০। করসেবার বিষয়ে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ অযোধ্যার বিবাদমান বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে ভারতীয় জনতা পার্টি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ যে সংগ্রাম আরম্ভ করে রামমন্দির নির্মাণের জন্য যে স্বেচ্ছামূলক কার্য আরম্ভ করেছিল, তাই-ই হল করসেবা।

প্রশ্ন ২১। ইউ. এফ. (সংযুক্ত মোর্চা) -এর বিষয়ে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ ১৯৯৬ সালে জনতা দলের নেতৃত্বে সংযুক্ত ফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। সমাজবাদী পার্টি, ডি. এম. কে., অসম গণপরিষদ, তামিল মানিলা কংগ্রেস, তেলেগু দেশম, ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি প্রভৃতি দলসমূহ নিয়ে গঠিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ২২। কবে এবং কেন পিছিয়ে পড়া ও সংখ্যলঘু শ্রেণীর কর্মচারী ফেডারেশন গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭৮ সালে গঠিত হয়েছিল পিছিয়ে পড়া ও সংখ্যালঘু শ্রেণীর রাজনৈতিক ক্ষমতা তথা অধিকারের দাবিতে।

প্রশ্ন ২৩। উত্তর ভারতীয় রাজনীতিতে অন্যান্য অনগ্রসর জাতির উত্থানের বিষয়ে লেখ।

উত্তরঃ দলিত সম্প্রদায় ১৯৮০-এর দশক হতে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হতে থাকে। দলিত নেতা কাশীরাম ১৯৭৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকুরি ছেড়ে Backward And Minority Commission Employees Federation (BAMCEF) নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এই সংগঠন সকল অনগ্রসর শ্রেণী—দলিত, অনুসূচীত জাতি ও জনজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী তথা সংখ্যালঘু—সকলের জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতা তথা অধিকারের দাবি উত্থাপন করেছিল। এই সংগঠন হতেই পরবর্তী সময়ে দলিত-শোষিত সমাজ সংঘর্ষ সমিতি গড়ে উঠেছিল। ১৯৮৪ সালে কাশীরাম বহুজন সমাজ পার্টি গঠন করে। বর্তমানে কুমারী মায়াবতী এই দলটি পরিচালনা করেন।

প্রশ্ন ২৪। ভারতীয় জনসংঘ কবে গঠন করা হয়েছিল এবং এই দলের প্রতিষ্ঠাপক সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ ভারতীয় জনসংঘ ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী এই দলের প্রতিষ্ঠাপক সভাপতি ছিলেন।

প্রশ্ন ২৫। ভারতের আর্থিক সংস্কারের পথ প্রদর্শক কে? এটি কখন আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ ভারতের আর্থিক সংস্কারের পথ প্রদর্শক হলেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী পি.ভি. নরসিমা রাও ও তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং।

আর্থিক সংস্কার ১৯৯১ সালে শুরু হয়েছিল।

প্রশ্ন ২৬। কখন এবং কেন মণ্ডল বিষটি ভারতীয় রাজনীতিতে উত্থাপিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে রাষ্ট্রীয় মোর্চা সরকার মণ্ডল আয়োগের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে যখন অনগ্রসর শ্রেণীর লোকদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার চাকুরিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল তখন তার প্রতিক্রিয়া রূপে মণ্ডল বিষয়টির উদ্ভব হয়েছিল।

প্রশ্ন ২৭। ভারতে আঞ্চলিকতাবাদ উত্থানের দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ ভারতে আঞ্চলিকতাবাদ উত্থানের দুটি কারণ হল – 

(ক) ভাষাবাদ। এবং 

(খ) জাতিবাদ।

প্রশ্ন ২৮। AIADMK এর সম্পূর্ণ রূপটি লেখো। এটি কোন রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত?

উত্তরঃ AIADMK এর সম্পূর্ণ রূপটি হল— All India Anna Dravida Munnetra Kazhagam. এই দলটি তামিলনাড়ুর শাসক দল।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২৯। ১৯৯০-এর দশকে ভারতীয় রাজনীতিতে সংঘটিত যে-কোন দুটি পরিবর্তন উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ১৯৯০-এর দশকে ভারতীয় রাজনীতিতে সংঘটিত দুটি পরিবর্তন নিম্নরূপ:

(ক) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একাধিপত্যের অবসান।

(খ) আর্থিক সংস্কারের পথ অবলম্বন।

প্রশ্ন ৩০। মণ্ডল আয়োগের যে-কোন দুটি পরামর্শ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ মণ্ডল আয়োগের দুটি পরামর্শ নিম্নরূপ:

(ক) সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে অনগ্রসর জাতির জন্য ২৭% আসন সংরক্ষণ।

(খ) অনগ্রসর সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য প্রকল্পগুলি অনুসূচীত জাতি ও উপজাতিদের অনুরূপ হতে হবে।

প্রশ্ন ৩১। রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা কি?

উত্তরঃ রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা ১৯৯৯ সালে বি. জে. পি-র নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছিল বি. জে. পি, শিবসেনা, জনতা দল (ইউনাইটেড) ও কয়েকটি আঞ্চলিক দল নিয়ে।

প্রশ্ন ৩২। সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা কি?

উত্তরঃ চতুর্দশ লোকসভা নির্বাচনের পর ২০০৪ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা গঠিত হয়েছিল। এর সহযোগী দলগুলির মধ্যে এন. সি. পি., ডি. এম. কে., এস. পি. ও আর. জে. ডি অন্যতম। এরা ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ছিল।

প্রশ্ন ৩৩। ভারতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল উৎপত্তির যে-কোন দুটি কারণ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল উৎপত্তির দুটি কারণ হল—

(ক) জাতিগত, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক কারণ। ও 

(খ) আর্থিক কারণ।

প্রশ্ন ৩৪। সম্মিলিত সরকারের দুটি গুণ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সম্মিলিত সরকারের গুণ দুটি নিম্নরূপ:

(ক) সম্মিলিত সরকার কয়েকটি দল মিলিত হয়ে গঠিত হয়। ফলে কোন একটি দল স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না।

(খ) একটি দলের মুষ্টিমেয় নেতাদের চেয়ে বহু দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শাসন পরিচালনা সুচারুরূপে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেইজন্য একটি দলের শাসনের তুলনায় বহুদলের শাসন উত্তম হওয়ার আশা থাকে।

প্রশ্ন ৩৫। সম্মিলিত সরকারের দুটি দোষ নির্দেশ কর।

উত্তরঃ সম্মিলিত সরকারের দুটি দোষ নিম্নরূপ:

(ক) সম্মিলিত সরকারের স্থায়িত্ব অপেক্ষাকৃত কম। জোটসঙ্গীদের মধ্যে বিরোধের ফলে সম্মিলিত সরকারের পতন যে-কোন সময় ঘটতে পারে।

(খ) সম্মিলিত সরকার অপেক্ষাকৃত দুর্বল সরকার। জোটের বিভিন্ন দলের নিজস্ব মতামত রক্ষা করতে না পারলে অথবা দলীয় স্বার্থ পূরণ না হলে জোটে ভাঙন হওয়ার ভয়ে সরকার কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না বা দ্বিধাগ্রস্থ হয়।

প্রশ্ন ৩৬। রাষ্ট্রীয় মোর্চা সরকারকে বাইরে থেকে কোন্ কোন্ দল সমর্থন করেছিল?

উত্তরঃ রাষ্ট্রীয় মোর্চা সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করেছিল—

(ক) ভারতীয় জনতা পার্টি। ও 

(খ) বামপন্থী দলসমূহ।

প্রশ্ন ৩৭। রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা (এন. ডি. এ.)-র তিনটি শরিক দলের নাম লেখ।

উত্তরঃ রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা (এন. ডি. এ.)-র তিনটি শরিক দলের নাম হল— 

(ক) বি. জে. পি.।

(খ) শিবসেনা। ও 

(গ) এ. জি. পি।

প্রশ্ন ৩৮। সংযুক্ত প্রগতিশীল জোটের (ইউ.পি.এ.)-র যে-কোন তিনটি দলের নাম লেখ।

উত্তরঃ সংযুক্ত প্রগতিশীল জোটের (ইউ. পি. এ.)-র তিনটি দলের নাম হল- 

(ক) এস. পি.।

(খ) কংগ্রেস। এবং 

(গ) এন. সি. পি.।

প্রশ্ন ৩৯। ভারতীয় জনতা পার্টি কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? এর প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ ভারতীয় জনতা পার্টি ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর প্রথম সভাপতি ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী।

প্রশ্ন ৪০। ভারতের নূতন আর্থিক নীতির দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতের নূতন আর্থিক নীতির দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

(ক) উদারীকরণ, বিশ্বায়ন ও বেসরকারিকরণ।

(খ) বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগ।

প্রশ্ন ৪১। মণ্ডল কমিশনের দুটি সুপারিশ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ মণ্ডল কমিশনের দুটি সুপারিশ হল নিম্নরূপ:

(ক) সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য ২৭% সংরক্ষণ।

(খ) অনগ্রসর শ্রেণীর উন্নতিকল্পে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারি অর্থ তপশীলভুক্ত জাতি ও জনজাতির মতো হবে।

প্রশ্ন ৪২। ভারতে সাম্প্রদায়িকতার দুটি কারণ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতে সাম্প্রদায়িকতার দুটি কারণ নিম্নরূপ:

(ক) রাজনৈতিক সুবিধাবাদ: রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিজেদের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করেন।

(খ) ভোটের রাজনীতি: অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই ভোট অর্জনের জন্য বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িকতাকে চিরস্থায়ী করে রাখেন।

প্রশ্ন ৪৩। সাম্প্রতিককালে ভারতে সংঘটিত যে-কোন দুটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা লেখ।

উত্তরঃ সাম্প্রতিককালে ভারতে সংঘটিত দুটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা হল—

(ক) বাবরি মসজিদ ধ্বংস। ও 

(খ) গুজরাট দাঙ্গা।

প্রশ্ন ৪৪। ভারতে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহমতের যে-কোন দুটি ক্ষেত্র উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহমতের দুটি ক্ষেত্র হল—

(ক) নূতন আর্থিক নীতি। ও 

(খ) অনগ্রসর শ্রেণীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের প্রতি সমর্থন।

প্রশ্ন ৪৫। মণ্ডল কমিশন কখন নিযুক্ত করা হয়েছিল? এর সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ মণ্ডল কমিশন ১৯৭৯ সালের ১লা জানুয়ারি নিযুক্ত করা হয়েছিল। এর সভাপতি ছিলেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি. পি. মণ্ডল।

প্রশ্ন ৪৬। ভারতে নূতন আর্থিক নীতি কখন গৃহীত হয়েছিল? তখন প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

উত্তরঃ ভারতে নূতন আর্থিক নীতি ১৯৯১ সালে গৃহীত হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পি. ভি. নরসিমা রাও।

প্রশ্ন ৪৭। গুজরাট দাঙ্গা কখন ঘটেছিল? কোন্ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগ হয়েছিল?

উত্তরঃ গুজরাট দাঙ্গা ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত হয়েছিল। সবরমতী এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর লোকদের মধ্যে শক্তিশালী ভিত্তি থাকা রাজনৈতিক দলসমূহের নাম লেখ।

উত্তরঃ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর লোকদের মধ্যে শক্তিশালী ভিত্তি থাকা রাজনৈতিক হর নাম হল – 

(ক) বহুজন সমাজ পার্টি। 

(খ) সমাজবাদী পার্টি। 

(গ) জনতা দল।

(ঘ) রাষ্ট্রীয় জনতা দল। 

(ঙ) রিপাব্লিকান পার্টি প্রভৃতি।

প্রশ্ন ২। বি. এস. পি.-র ভূমিকা আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৮৪ সাল থেকে ভারতীয় রাজনীতিতে বহুজন সমাজ পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বহুজন সমাজ পার্টি অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ব্যাপক সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয়েছে। এই দল উত্তর প্রদেশে পাঁচ বৎসর এককভাবে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই পার্টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দলিত সম্প্রদায়ের উন্নতিকল্পে বহুজন সমাজ পার্টি ব্যাপক প্রচেষ্টা করছে। বর্তমানে এই দল ক্ষমতায় নেই এবং তাদের সমর্থনও বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। এই দলের প্রধান মুখ কুমারী মায়াবতী।

প্রশ্ন ৩। ধর্মনিরপেক্ষতার উপর তীব্র বিতর্ক কিভাবে হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর অযোধ্যার বিতর্কিত স্থল ধ্বংস দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার উপর চরম আঘাত হানে, ফলে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন নিয়ে তীব্র বিতর্কের সূচনা হয়। এই ঘটনায় দেশের নানা প্রান্তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও সংঘটিত হয়। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই ধ্বংসলীলাকে ধিক্কার জানায় এবং এই রকম কার্য ধর্মনিরপেক্ষ নীতিবিরোধী বলে ঘোষণা করে। এই সময়ে নির্বাচনে সুবিধা আদায়ের জন্য ধর্মকে কাজে লাগানোর বিতর্কও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

প্রশ্ন ৪। ত্রিশঙ্কু সংসদ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ নির্বাচনের পর কোন দলই যদি আইন সভা বা সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে তখন এই অবস্থাকে ত্রিশঙ্কু সংসদ বা Hang Parliament বলে। ১৯৯১ সালের পর থেকে সাধারণ নির্বাচনে কোন দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় ত্রিশঙ্কু সংসদ সৃষ্টি হয়। এর ফলস্বরূপ কয়েকটি দল সম্মিলিত হয়ে সরকার গঠন করে; উদাহরণ—১৯৮৯ লোকসভা, ১৯৯৬ লোকসভা, ১৯৯৮ লোকসভা ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৫। মণ্ডল আয়োগের প্রতিবেদনের প্রধান সমালোচনাসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ মণ্ডল আয়োগের প্রতিবেদনের প্রধান সমালোচনাসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) মণ্ডল আয়োগের প্রতিবেদনটি সরকার অতি সত্ত্বর রূপায়িত করতে আগ্রহী ছিল। এইরূপ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শীঘ্র বাস্তবায়ন অভিপ্রেত নয়।

(খ) উত্তর ভারতের সাধারণ মানুষ সরকারের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ছিলেন না।

প্রশ্ন ৬। ১৯৯০-এর দশকে উদ্ভব হওয়া চারটি গোষ্ঠীর নাম লেখ।

উত্তরঃ নিম্নলিখিত চারটি গোষ্ঠীর উদ্ভব হয় ১৯৯০-এর দশকে:

(ক) দেবগৌড়ার নেতৃত্বে সংযুক্ত মোর্চা (UF)

(খ) রাষ্ট্রীয় মোর্চা (NF)

(গ) রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা (NDA)

(ঘ) সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (UPA)

প্রশ্ন ৭। বর্তমানে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলসমূহ কেন অধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করছে?

উত্তরঃ সাম্প্রতিককালে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলসমূহের জনপ্রিয়তা ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। তামিলনাড়ুর ডি.এম.কে., অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশম, পাঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দল, জম্মু ও কাশ্মীরে জাতীয় সম্মেলন, উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি বিগত নির্বাচনসমূহে ভাল ফল করেছে। কেবল অসম গণ পরিষদ পূর্বের তুলনায় বিভিন্ন কারণে নিম্নগামী ফলাফল লাভ করেছে। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের এরূপ জনপ্রিয়তা লাভের মূল কারণ হল বিকেন্দ্রীভূত রাজনীতির প্রতি থাকা জনগণের আকাঙ্খা। রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়ার জন্য ভারতীয় জনগণ বর্তমানে স্বশাসন বা স্বায়ত্বশাসনের প্রতি অধিক আগ্রহী হয়েছে। এই সকল কারণে আঞ্চলিক দলসমূহ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

প্রশ্ন ৮। জরুরিকালীন অবস্থার পরবর্তীকালে ভারতীয় জনতা পার্টির এক শক্তিশালী দল হিসাবে উত্থান বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ ভারতীয় জনতা পার্টি বা বি. জে. পি. ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পার্টি পূর্বতন জনসংঘের পরিবর্তিত রূপ। ১৯৭৭ সালে জনসংঘ, সংগঠন কংগ্রেস, ভারতীয় লোকদল ও সমাজতন্ত্রী দল মিলিত হয়ে জনতা পার্টি গঠিত হয়। ১৯৭৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনতা পার্টি সাফল্য লাভ করে এবং কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। কিন্তু ১৯৭৯ সালে দলীয় কোন্দলে জনতা সরকারের পতন ঘটে। রাজনারায়ণ, চরণ সিং প্রভৃতি নেতাগণ জনতা পার্টি ত্যাগ করে জনতা পার্টি (সমাজতন্ত্রী) গঠন করে। এর পর ১৯৮০ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে পূর্বতন জনসংঘ গোষ্ঠী জনতা পার্টি ত্যাগ করে ভারতীয় জনতা পার্টি গঠন করেন।

ভারতীয় জনতা পার্টি—

(ক) জাতীয়তাবাদ।

(খ) জাতীয় সংহতি।

(গ) গণতন্ত্র। 

(ঘ) ইতিবাচক ধর্মনিরপেক্ষতা। 

(ঙ) গান্ধীবাদী সমাজতন্ত্র। এবং 

(চ) মূল্যবোধভিত্তিক রাজনীতি—এই ছয়টি আদর্শে বিশ্বাসী। 

ভারতীয় জনতা পার্টিকে অনেকে সাম্প্রদায়িক দল বলে মনে করেন। কিন্তু তা সর্বাংশে সত্য নয়। এই দল ইতিবাচক ধর্মনিরপেক্ষতায় (Positive Secularism) বিশ্বাসী।

এই সময়ের মধ্যে দল ১৯৯৬, ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে আঞ্চলিক দলগুলির সাহায্য নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। ১৯৮৪ সালে দল লোকসভায় ২টি আসন লাভ করে এবং ২০১৪ সালের লোকসভায় দল ২৮২ আসন লাভ করে সম্পূর্ণ বহুমত নিয়ে সরকার গঠন করে।

প্রশ্ন ৯। গুজরাট দাঙ্গা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ২০০২ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি গুজরাটের গোধরা নামক শহরের রেলস্টেশনে ‘সবরমতী এক্সপ্রেস’-এর কোন একটি কামরায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি অগ্নিসংযোগ করে। সেই কামরায় অযোধ্যা হতে করসেবকগণ ফিরে আসছিল। এই ঘটনায় শিশু ও মহিলা সহ ৫৭জন লোক জীবন্ত দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়। এই কাণ্ড স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায় দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র গুজরাটে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের আগুন জ্বলে ওঠে। সমগ্র গুজরাটে প্রায় ১৫০টি শহর ও এক হাজারেরও অধিক গ্রাম আক্রান্ত হয়। এই সংঘর্ষ প্রায় চার মাস ধরে চলে। সংঘর্ষে প্রায় একহাজার লোকের মৃত্যু হয়। মৃত্যু হওয়া লোকদের মধ্যে ৮০% মুসলমান ও ২০% হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোক। এই ঘটনায় দুইশত লোক নিখোঁজ হয়। প্রায় আড়াই হাজার লোক আহত হয়। একশোরও অধিক মহিলা বিধবা হয় এবং ছয় শতাধিক শিশু পিতা-মাতাকে হারায়।

এই ঘটনার সময় কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় ছিল। উভয় সরকারই এই ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এই সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন আয়োগ গুজরাট বিধানসভার নির্বাচন স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়।

প্রশ্ন ১০। কোন্ নির্বাচন কোয়ালিশন বা মোর্চা সরকারের যুগের সূচনা করে এবং কেন?

উত্তরঃ ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে কোন একটি রাজনৈতিক দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার জন্য মোর্চা সরকার গঠিত হয়েছিল। এই যুগের শুরু হয় ১৯৮৯ সনের নির্বাচনের পর।

প্রশ্ন ১১। করসেবা বিষয়টি সংক্ষেপে অঙ্কন কর।

উত্তরঃ ১৬৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে যে প্রতিষ্ঠানুলি মন্দির নির্মাণে সমর্থন করেছিল, তাঁরা দ্বারসেবা আয়োজন করে। সমগ্র দেশ থেকে হাজার হাজার করসেবক ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ -এ অযোধ্যায় জমায়েত হয় এবং মসজিদটি ধ্বংস করে।

করসেবাকে ঘিরে ভারতীয় রাজনীতিতে দুইটি ব্যাপক বিবাদ সৃষ্টি হয়—প্রথমতঃ বাবরী মসজিদ ধ্বংস ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিরাট প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয় এবং সাবরমতী এক্সপ্রেসের করসেবকদের কামরায় অগ্নিকাণ্ডকে ঘিরে গুজরাট দাঙ্গা।

প্রশ্ন ১২। ১৯৮৯ সালের পরবর্তী সময়ে ভারতীয় রাজনীতির প্রধান বিষয়সমূহ উল্লেখ কর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কি মতাদর্শ এই পার্থক্য সৃষ্টি করেছিল?

উত্তরঃ রাজনীতির প্রধান বিষয়সমূহ নিম্নরূপ:

(ক) ১৯৮৯ সালে কংগ্রেসের পরাজয়।

(খ) মণ্ডল আয়োগ সংক্রান্ত বিষয়।

(গ) সরকারের নব অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ।

(ঘ) রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্ক।

(ঙ) রাজীব গান্ধী হত্যা।

(চ) কোয়ালিশন যুগের সূচনা।

উক্ত বিষয়সমূহে রাজনৈতিক দলের আদর্শগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ১৩। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ চতুর্দশ লোকসভা নির্বাচন ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে কংগ্রেস বৃহদাকারে জোট রাজনীতি বা কোয়ালিশন রাজনীতিতে প্রবেশ করে। রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা (এন. ডি. এ.) এই নির্বাচনে পরাজিত হয় এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বে সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউ. পি. এ.) নামক নূতন জোট কেন্দ্রে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে এই মোর্চা সরকারকে বামপন্থী দলগুলি বাইরে থেকে সমর্থন করে। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের আংশিক পুনরুত্থান ঘটে। কংগ্রেস মোট ১৪৫টি আসন লাভ করে সহযোগী দলগুলিকে নিয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। এইভাবে ভারতীয় রাজনৈতিক অবস্থা নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়। 

প্রশ্ন ১৪। সম্মিলিত সরকার বা মোর্চা সরকারের চারটি বৈশিষ্ট্য লেখ।

অথবা,

ভারতে সম্মিলিত সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ সম্মিলিত বা সংযুক্ত সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) সংযুক্ত বা সম্মিলিত সরকার গঠনকারী দলসমূহ নিজেদের মধ্যে একটি ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচী তৈরি করে কতিপয় সাধারণ লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে।

(খ) সংযুক্ত সরকার গঠিত হয় যখন কোন দলই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে। সমমনোভাবাপন্ন দলসমূহের মধ্যে সাধারণত বোঝাপড়ার মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়।

(গ) সংযুক্ত সরকার সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়। শরিক দলের মধ্যে মতানৈক্যের ফলে দলীয় মোর্চায় ভাঙন দেখা দিলে সরকারের পতন ঘটে।

(ঘ) সংযুক্ত সরকারে রাজনৈতিক দলগুলি জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমান এন. ডি. এ. সরকারে ডি. এম. কে. একটি আঞ্চলিক দল।

প্রশ্ন ১৫। দেশে লক্ষ্য করা ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত যে-কোন চারটি বিষয়ের উপর সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ রাজনীতির প্রধান বিষয়সমূহ নিম্নরূপ:

(ক) ১৯৮৯ সালে কংগ্রেসের পরাজয়।

(খ) মণ্ডল আয়োগ সংক্রান্ত বিষয়।

(গ) সরকারের নব অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ।

(ঘ) রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্ক।

(ঙ) রাজীব গান্ধী হত্যা।

(চ) কোয়ালিশন যুগের সূচনা।

উক্ত বিষয়সমূহে রাজনৈতিক দলের আদর্শগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ১৬। জনতা দলের যে-কোন চারটি প্রধান নীতি লেখ।

উত্তরঃ জনতা দলের প্রধান নীতিসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) জনতা দল গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। এই দল সাধারণ মানুষের সার্বিক বিকাশে বিশ্বাসী।

(খ) জনতা দল সমাজের অনগ্রসর শ্রেণীর লোকদের কল্যাণে অঙ্গীকারবদ্ধ।

(গ) জনতা দল সংরক্ষণ নীতিতে বিশ্বাসী এবং ‘মণ্ডল আয়োগের’ সুপারিশ কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর।

(ঘ) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জনতা দল গোষ্ঠীনিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাসী।

প্রশ্ন ১৭। বর্তমান দিনগুলিতে আঞ্চলিক দলসমূহ অধিক জনপ্রিয় হচ্ছে কেন?

উত্তরঃ সাম্প্রতিককালে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলসমূহের জনপ্রিয়তা ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। তামিলনাড়ুর ডি.এম.কে., অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশম, পাঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দল, জম্মু ও কাশ্মীরে জাতীয় সম্মেলন, উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি বিগত নির্বাচনসমূহে ভাল ফল করেছে। কেবল অসম গণ পরিষদ পূর্বের তুলনায় বিভিন্ন কারণে নিম্নগামী ফলাফল লাভ করেছে। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের এরূপ জনপ্রিয়তা লাভের মূল কারণ হল বিকেন্দ্রীভূত রাজনীতির প্রতি থাকা জনগণের আকাঙ্খা। রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়ার জন্য ভারতীয় জনগণ বর্তমানে স্বশাসন বা স্বায়ত্বশাসনের প্রতি অধিক আগ্রহী হয়েছে। এই সকল কারণে আঞ্চলিক দলসমূহ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

প্রশ্ন ১৮। তেলেগু দেশমের ভূমিকা লেখ।

উত্তরঃ তেলেগু দেশম পার্টি ১৯৮২ সালে গঠিত হয়। এই দলের প্রতিষ্ঠাপক সভাপতি ছিলেন এন. টি. রামারাও। এই দল একটি আঞ্চলিক দল যার কার্যক্ষেত্র হচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা রাজ্য। জন্মলগ্ন থেকেই এই দল ভারতীয় রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই দলের সমর্থনে ১৯৮৯ সালে ভারতে জোট রাজনীতির সূচনা হয় বললে ভুল হবে না।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৯। ভারতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলসমূহের উৎপত্তির কারণসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা,

ভারতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের উদ্ভবের যে-কোন দুটি কারণের বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দলগুলি কোন বিশেষ ধর্ম, ভাষা অথবা এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে। এদের জনপ্রিয়তা নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ। আঞ্চলিক দলগুলির উদ্দেশ্য হল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করা ও তাদের দাবি-দাওয়াসমূহ আইনসভায় উত্থাপন করা। স্বাধীনতার পর হতে বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে ভারতে আঞ্চলিক দল উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

এর কারণসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) স্থানীয় সমস্যা: স্থানীয় নানাবিধ সমস্যা বিশেষত সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল উৎপত্তির একটি প্রধান কারণ। কেন্দ্রীয় সরকার উক্ত সমস্যাগুলি সমানভাবে সমাধানে অনেক সময় সক্ষম হয় না। ফলে এই এলাকার জনসাধারণ নিজেদের অবহেলিত বোধ করে। সুতরাং নিজেদের সমস্যা ও অভাব- অভিযোগের প্রতি আলোকপাত করার উদ্দেশ্যে তাহারা নূতন রাজনৈতিক দল গঠন করে।

(খ) কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক: ভারতের সংবিধান রাজ্য অপেক্ষা কেন্দ্রীয় সরকারকে অধিক ক্ষমতা প্রদান করেছে। রাজ্যগুলির উন্নয়ন অনেকাংশে বিঘ্ন হচ্ছে। রাজ্যগুলির হাতে অধিক ক্ষমতা প্রদানের দাবিতে অনেক সময় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি হয়।

(গ) অসম উন্নয়ন: অসম আর্থিক উন্নয়ন ভারতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গঠনে সহায়তা করে। ভারতের কোন কোন রাজ্য শিল্পক্ষেত্রে অধিক উন্নত আবার কোন কোন রাজ্য শিল্পক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ। কোন কোন রাজনৈতিক নেতা এই বিষয়ে জনমত গঠনের সুযোগ গ্রহণ করেন এবং নূতন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গঠনের প্রেরণা যোগান।

(ঘ) ধর্ম: ধর্ম ভারতের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের উৎপত্তির একটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতে অনেক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব ঘটেছে। পাঞ্জাবে ‘অকালি দল’, জম্মু ও কাশ্মীরে ‘জাতীয় সম্মেলন’ ও মহারাষ্ট্রে ‘শিব সেনা’ ধর্মীয় ভিত্তিতে গঠিত কতিপয় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল।

(ঙ) ভাষা ও সংস্কৃতি: কোন কারণে যখন কোন অঞ্চলের অধিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় উক্ত অঞ্চলের জনগণ নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার্থে নতুন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গঠন করে। অসমীয়া জনগণের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার্থে এবং বাঙালি তথা বাংলা ভাষার প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত মনোভাবের ফলে ১৯৮৫ সালে অসম গণ পরিষদ গঠিত হয়। উপরে উল্লিখিত কারণ এবং অন্যান্য নানাবিধ কারণে ভারতে উত্তরোত্তর আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি হচ্ছে।

প্রশ্ন ২০। সম্মিলিত বা সংযুক্ত সরকার বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ বহুদলীয় ব্যবস্থায় অনেকগুলি দল থাকে ৷ নির্বাচনে বহুদল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়। এই ব্যবস্থায় অনেক সময় কোন দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে কয়েকটি সমমনোভাবাপন্ন দল একত্রিত হয়ে সরকার গঠন করে। এই সরকারকে সম্মিলিত বা সংযুক্ত সরকার বলে। আমাদের দেশে ১৯৭৭ সালে, ১৯৮৯ সালে, ১৯৯৮ সালে, ১৯৯৯ সালে, ২০০৪ সালে ও ২০০৯ সালে কেন্দ্রে সম্মিলিত বা সংযুক্ত সরকার গঠিত হয়। বর্তমানে অনেক রাজ্যে সম্মিলিত সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।

প্রশ্ন ২১। সম্মিলিত সরকারের সপক্ষে চারটি যুক্তি তুলে ধর।

উত্তরঃ সম্মিলিত সরকারের কতকগুলি গুণ বা সুবিধা পরিলক্ষিত হয়। এই প্রকার সরকারের সপক্ষে নিম্নলিখিত যুক্তি দেখানো যায়:

(ক) সম্মিলিত সরকার বলতে একাধিক সরকারকে বোঝায়। এই সরকার গঠন হলে কোন একটি দলের স্বেচ্ছাচারিতা থাকে না। দলীয় বিষয়াদি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়।

(খ) একটি দলের মুষ্টিমেয় নেতাদের তুলনায় বহুদলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সরকার ভাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

(গ) সম্মিলিত সরকার দেশের অপচয় রোধ করতে পারে। কোন একটি দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে পুনরায় নির্বাচন করতে হয়। বারবার নির্বাচনে বিশাল অঙ্কের অর্থের অপচয় হয়। কিন্তু কয়েকটি দল একত্রিত হয়ে সম্মিলিত সরকার গঠন করলে ঘন ঘন নির্বাচন এড়ানো সম্ভব হয় এবং সরকারি অর্থের অপচয় রোধ হয়।

(ঘ) সম্মিলিত সরকারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঞ্চলিক দলসমূহ সরকারে অংশগ্রহণ করতে পারে। ফলে এই সকল দলসমূহের প্রতিনিধিত্ব করা অঞ্চলসমূহের উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখা দেয়।

প্রশ্ন ২২। সম্মিলিত সরকারের চারটি অসুবিধা ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ সম্মিলিত সরকারের কতিপয় দোষ-ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। এই ধরনের সরকারের প্রধান অসুবিধাসমূহ নিম্নরূপ: 

(ক) সম্মিলিত সরকার সাধারণত স্থিতিশীল হয় না। বিভিন্ন দলে গঠিত সম্মিলিত সরকারের মধ্যে আদর্শগত মতানৈক্যের ফলে জোটে ভাঙন দেখা দিতে পারে। এমতাবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হ্রাস পেয়ে সরকারের পতন ঘটতে পারে।

(খ) সম্মিলিত সরকার দুর্বল সরকার। বিভিন্ন দলের মধ্যে মতানৈক্যের ফলে সরকার অনেক ক্ষেত্রে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না। নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বিভিন্ন দলের মধ্যে সহমত দেখা যায় না। ফলে সরকার শক্তিশালী হতে পারে না।

(গ) সম্মিলিত সরকারে সব দলের সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচী থাকলেও তা বাস্তবায়িত না হলে বিভিন্ন দলের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ বৃহৎ জাতীয় স্বার্থকে ব্যাঘাত করে।

(ঘ) সম্মিলিত সরকারে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল-উপদলের সৃষ্টি হতে পারে। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ধারণা এইক্ষেত্রে অবান্তর হয়ে পড়ে। ফলে সরকারের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়।

প্রশ্ন ২৩। সম্মিলিত সরকারের স্থায়িত্ব কি কারণে ক্ষণস্থায়ী হতে পারে?

উত্তরঃ সম্মিলিত সরকার বিভিন্ন দলের দ্বারা গঠিত হয়। বিভিন্ন দলের আদর্শ বিভিন্ন। বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দের নিজ দলের আদর্শের প্রতি থাকা আনুগত্য তথা স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে মতভেদ দেখা দিতে পারে। নিজ দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় কোন দলের মতামত কার্যকরী হয় না। ফলে একত্রিত দলসমূহের মধ্যে ভাঙন দেখা দিতে পারে এবং সরকারের পতন ঘটতে পারে। এইজন্য সম্মিলিত সরকারের স্থায়িত্ব ক্ষণস্থায়ী হতে পারে; উদাহরণ—১৯৭৭ সালের ও ১৯৯৮ সালের জনতা সরকার এবং ১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালের এন. ডি. এ সরকার।

প্রশ্ন ২৪। ১৯৮৯ সালে রাষ্ট্রীয় মোর্চা সরকারের সহযোগী দলগুলির নাম লেখ।

উত্তরঃ রাষ্ট্রীয় মোর্চা সরকারের সহযোগী দলগুলি নিম্নরূপ:

(ক) কংগ্রেস (সমাজবাদী)। 

(খ) তেলেগু দেশম।

(গ) জনতা দল।

(ঘ) লোকদল (বি)। 

(ঙ) ডি. এম. কে.। ও 

(চ) অসম গণ পরিষদ।

প্রশ্ন ২৫। দলিত সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক উত্থান বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ভারতে বিশাল সংখ্যক দলিত সম্প্রদায়ের বাসস্থান। ‘দলিত’ শব্দের অর্থ হল নীচু সম্প্রদায়। ভারতে তারা দীর্ঘকালব্যাপি নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অবহেলিত। তারা আর্থিক, সামাাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত অনগ্রসর। ভারতের সংবিধানে তাদের উন্নতির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকলেও দলিত সম্প্রদায় আজ পর্যন্ত অনগ্রসর, কারণ তাদের দাবীদাওয়া আদায়ের জন্য যথাযোগ্য নেতৃত্বের অভাব।

দলিত সম্প্রদায় ১৯৮০-এর দশক হতে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হতে থাকে। দলিত নেতা কাশীরাম ১৯৭৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকুরি ছেড়ে Backward And Minority Commission Employees Federation (BAMCEF) নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এই সংগঠন সকল অনগ্রসর শ্রেণী—দলিত, অনুসূচীত জাতি ও জনজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী তথা সংখ্যালঘু—সকলের জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতা তথা অধিকারের দাবি উত্থাপন করেছিল। এই সংগঠন হতেই পরবর্তী সময়ে দলিত-শোষিত সমাজ সংঘর্ষ সমিতি গড়ে উঠেছিল। ১৯৮৪ সালে কাশীরাম বহুজন সমাজ পার্টি গঠন করে। এই দল মূলত দলিত সম্প্রদায়ের উন্নতিকল্পে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে মায়াবতী এই দলে উচ্চবর্ণের লোকদের অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।

প্রশ্ন ২৬। ভারতে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভবের প্রধান কারণসমূহ ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভারতে বহু সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে। এই সম্প্রদায়গুলির মধ্যে সদ্ভাব থাকলেও অনেক সময় স্বার্থান্বেষী কিছু দুষ্ট লোকের প্ররোচনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। 

ভারতে সাম্প্রদায়িকতা উদ্ভবের প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) রাজনৈতিক সুবিধাবাদ: সাম্প্রদায়িকতা মূলত একটি রাজনৈতিক সমস্যা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বই একে নির্মূল করতে পারে। পরিতাপের বিষয় এই যে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিজেদের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করেন।

(খ) সাম্প্রদায়িক দল ও সংস্থা: ভারতে কতিপয় দল ও সংস্থা সাম্প্রদায়িকতা উদ্ভবের অন্যতম প্রধান কারণ। এই দলগুলির মধ্যে মুসলিম লীগ, অকালি দল অন্যতম।

(গ) ভোটের রাজনীতি: বর্তমানে ভারতে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলই ভোট অর্জনের জন্য বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িকতাকে চিরস্থায়ী করে রাখেন।

(ঘ) শিক্ষার নেতিবাচক ভূমিকা: আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও আঞ্চলিকতাবাদের আনুগত্য প্রদর্শন করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাম্প্রদায়িকতার ইন্ধন যোগাচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে সাম্প্রদায়িকতা হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

(ঙ) ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা: গ্রামীণ এলাকার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার, গির্জা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এই সকল ধর্মীয় স্থান হতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প বিচ্ছুরিত হচ্ছে। ধর্মীয় নেতাগণ ধর্মীয় উৎসবে ভাষণদানে সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি দিয়ে থাকেন।

সাম্প্রদায়িকতা ভারতীয় সমাজকে ক্ষতবিক্ষত করে দেশের সংহতিকে বিপন্ন করে তুলেছে। যে-কোন মূল্যে সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন।

প্রশ্ন ২৭। অযোধ্যা বিবাদ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিবাদমান স্থানের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ষষ্ঠদশ শতকে মোগল সম্রাট বাবরের সেনাধ্যক্ষ ‘মির বাকি’ অযোধ্যায় এই মসজিদ নির্মাণ করে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী একাংশ লোক বিশ্বাস করে যে বাবরি মসজিদ নির্মাণস্থলে রামচন্দ্রের জন্ম হয়েছিল এবং ভগবান রামকে পূজা করবার জন্য নির্মাণ করা একটি মন্দির ভেঙে এখানে ‘মির বাকি’ মসজিদ নির্মাণ করেছিল। এই বিবাদের মীমাংসা না হওয়ায় বহু দশক পূর্বে তা আদালতে যায়। আদালত কোন রায় না দেওয়ার জন্য বাবরি মসজিদ তালা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১৯৮৬ সালে উত্তর প্রদেশের ফরিদাবাদ জেলা আদালত এক আদেশে বাবরি মসজিদের তালা খুলে দিয়ে সেখানে হিন্দুদের রামচন্দ্রের থাকা বলে বিশ্বাস করা স্থানে পূজা করার অনুমতি প্রদান করে। সঙ্গে সঙ্গে এই বিবাদ এক নূতন রূপ গ্রহণ করে। হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের বিভিন্ন সংগঠন এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ ধর্মের লোককে রাজনৈতিকভাবে সংঘটিত করতে থাকে। ভারতীয় জনতা পার্টি অযোধ্যার এই বিবাদমান স্থানে ‘রাম মন্দির’ নির্মাণকে ইস্যু হিসাবে উত্থান করে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংস্থা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রভৃতি হিন্দু সংগঠন এই প্রশ্নে হিন্দুদের সংগঠিত করে। রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে চলতে থাকা এইরূপ ঘটনা প্রতিঘটনার ফলশ্রুতিতেই ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা সংঘটিত হয়।

প্রশ্ন ২৮। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ফলশ্রুতি কি ছিল?

উত্তরঃ ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর ভারতীয় রাজনীতির এক ‘কালো দিবস’ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই দিন ভারতীয় জনতা পার্টি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাম মন্দির নির্মাণের জন্য করসেবার লক্ষ্যে অযোধ্যার বিবাদমান স্থানে এক বৃহৎ সমাবেশের আয়োজন করে। প্রায় দুই লক্ষ হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক সেই দিন বিবাদমান স্থানে উপস্থিত ছিল। তারা করসেবার নামে বাবরি মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে।

এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র দেশেই ভয়াবহ সাম্প্রদায়িকতা দেখা দেয়। কলকাতা, মুম্বাই, ভূপালে এই সংঘর্ষ সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। মুম্বাইতে দুই সপ্তাহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ চলতে থাকে। সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে সমগ্র দেশে প্রায় তিন হাজার লোক প্রাণ হারায়। 

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর ভারতীয় রাজনীতিতে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সংঘটিত হয়:

(ক) ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন উত্তর প্রদেশ সরকারকে বরখাস্ত করা হয়। বি. জে. পি. শাসিত অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও রাষ্ট্রপতি শাসন বলবৎ হয়।

(খ) উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং-এর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়।

(গ) বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় উপস্থিত থাকা বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানী, ডঃ মুরলী মনোহর যোশী তথা উমা ভারতী এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা অশোক সিংঘল প্রমুখের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দাখিল করা হয়।

(ঘ) এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার একটি তদন্ত আয়োগ নিযুক্ত করেন।

বাবরি মসজিদ ধ্বংস ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের উপর এক বিরাট আঘাতস্বরূপ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরাট বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।

প্রশ্ন ২৯। নূতন আর্থিক নীতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ স্বনির্ভর অর্থনীতি নির্মাণের জন্যই ভারত স্বাধীনতার পর পরিকল্পিত অর্থনীতি গড়ে তুলেছিল। কিন্তু ১৯৮০-এর দশক হতে এবং বিশেষত ১৯৯১ সালে বিকাশ সম্পৰ্কীয় জাতীয় চিন্তা ও চর্চার সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটে। ১৯৯১ সালে পি. ভি. নরসিংহ রাও-এর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে অর্থমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং দেশে নূতন অর্থনৈতিক নীতির সূচনা করেন। এইরূপ সংস্কার অবশ্য তৃতীয় বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই আরম্ভ হয় এবং একে সংক্ষেপে L.P.G.—Liberalization, Privatization and Globalization (উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়ন) বলা হয়।

ভারতের আর্থিক সংস্কার বা নূতন আর্থিক নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) অর্থনৈতিক উদারীকরণ, (খ) অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন, (গ) সরকারি উদ্যোগের বেসরকারিকরণ, (ঘ) সরকারি উদ্যোগের বিলগ্নীকরণ, ও (ঙ) বৈদেশিক পুঁজি লগ্নীকরণ।

অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতি ও কার্যক্রম বিষয়ে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভারতীয় জনতা পার্টি বা বি. জে. পি. ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পার্টি পূর্বতন জনসংঘের পরিবর্তিত রূপ। ১৯৭৭ সালে জনসংঘ, সংগঠন কংগ্রেস, ভারতীয় লোকদল ও সমাজতন্ত্রী দল মিলিত হয়ে জনতা পার্টি গঠিত হয়। ১৯৭৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনতা পার্টি সাফল্য লাভ করে এবং কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। কিন্তু ১৯৭৯ সালে দলীয় কোন্দলে জনতা সরকারের পতন ঘটে। রাজনারায়ণ, চরণ সিং প্রভৃতি নেতাগণ জনতা পার্টি ত্যাগ করে জনতা পার্টি (সমাজতন্ত্রী) গঠন করে। এর পর ১৯৮০ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে পূর্বতন জনসংঘ গোষ্ঠী জনতা পার্টি ত্যাগ করে ভারতীয় জনতা পার্টি গঠন করেন।

ভারতীয় জনতা পার্টি—

(ক) জাতীয়তাবাদ।

(খ) জাতীয় সংহতি। 

(গ) গণতন্ত্র। 

(ঘ) ইতিবাচক ধর্মনিরপেক্ষতা। 

(ঙ) গান্ধীবাদী সমাজতন্ত্র। এবং 

(চ) মূল্যবোধ-ভিত্তিক রাজনীতি—এই ছয়টি আদর্শে বিশ্বাসী। 

ভারতীয় জনতা পার্টিকে অনেকে সাম্প্রদায়িক দল বলে মনে করেন। কিন্তু তা সর্বাংশে সত্য নয়। এই দল ইতিবাচক ধর্মনিরপেক্ষতায় (Positive Secularism) বিশ্বাসী। ভারতীয় জনতা পার্টি সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই দল কোন বিশেষ সম্প্রদায়কে তোষামোদের নীতির বিরোধী। ভারতীয় জনতা পার্টি সাধারণ মানুষের সার্বিক বিকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই দল প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সহিত সুসম্পর্ক স্থাপনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ভারতীয় জনতা পার্টি অযোধ্যার রাম জন্মভূমি পুনরুদ্ধারে কৃতসংকল্পবদ্ধ। ১৯৮৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি রাম জন্মভূমিকে নির্বাচনী ইস্যু করে বিপুল সফলতা অর্জন করে এবং নির্বাচনে মোট ৮৪টি আসন লাভ করে। ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থনে ১৯৮৯ সালে ভি. পি. সিংয়ের নেতৃত্বে কেন্দ্রে ‘জাতীয় মোর্চা’ (National Front) সরকার গঠিত হয়। কিন্তু জাতীয় মোর্চা সরকার রাম জন্মভূমি সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় ১৯৯০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি মোর্চা সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করলে ‘জাতীয় মোর্চা’ সরকারের পতন ঘটে। ১৯৯৮ সালের অন্তর্বর্তী নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। মোট ১৮৪টি আসল দখল করে ভারতীয় জনতা পার্টি কেন্দ্রে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেছে।

১৯৯৯ সালে ত্রয়োদশ লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে কেন্দ্রে সম্মিলিত সরকার বা রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা সরকার গঠিত হয়। ২০০৪ সালের লোকসভার সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে গঠিত রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে। ভারতীয় জনতা পার্টি ও এর সংযোগী দলসমূহ মাত্র ১৮৭টি আসন লাভ করে।

২০০৯ সালের পঞ্চদশ লোকসভার সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা মাত্র ১৮৭টি আসন লাভ করতে সক্ষম হয়। এর মধ্যে বিজেপি মাত্র ১১৬টি আসন লাভ করে।

রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে এই দলের উল্লেখযোগ্য প্রভাব দৃষ্ট হয়। বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টি গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ছত্তিশগড় ও কর্ণাটকে এককভাবে ক্ষমতাসীন। বিহার ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে সহযোগী দলের শরিক হিসাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই দল নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন হয়। 

এই সময়ের মধ্যে দল ১৯৯৬, ১৯৯৮, এবং ১৯৯৯ সালে আঞ্চলিক দলগুলির সাহায্য নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। ১৯৮৪ সালে দল লোকসভায় ২টি আসন লোকসভা এবং ২০১৪ সালের লোকসভায় গল ২৮২ আসন লাভ করে। সরকার গঠন করে।

প্রশ্ন ২। “মোর্চা রাজনীতির নূতন যুগে রাজনৈতিক দলসমূহের আদর্শের উপর ভিত্তি করে মিত্রতা গড়ে না বা ভঙ্গ করে না।” এই উক্তিটির সপক্ষে বা বিপক্ষে তুমি কি যুক্তি দেখাবে?

উত্তরঃ এটা অবশ্যই সত্য ও বাস্তব যে সম্মিলিত রাজনীতির নূতন যুগ হওয়ার ফলে রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ গোষ্ঠী নিরপেক্ষ বা গোষ্ঠীভুক্ত হয়। রাজনৈতিক দলসমূহের গোষ্ঠীভুক্ত হওয়ার মূল ভিত্তি হল নিজেদের স্বার্থরক্ষা করা এবং বিরোধীদের স্বার্থ বিপন্ন করা। কেন্দ্রে মনমোহন সরকারের নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকারকে বামফ্রন্ট সমর্থন জানায়, যদিও কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু এর সাধারণ স্বার্থ ছিল কেন্দ্রে বিজেপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখা। তদ্রুপ বিহার ও ঝাড়খণ্ডে বি. জে. পি. ও জনতা দলের আঁতাতের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল লালু প্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দলকে এই উভয় রাজ্যে ক্ষমতার বাইরে রাখা। ঠিক সেইভাবে পাঞ্জাবে কংগ্রেসকে ক্ষমতার বাইরে রাখার জন্য অকালি দল-বিজেপি আঁতাত গড়ে ওঠে। কেন্দ্রে রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা ও সংযুক্ত গণতান্ত্রিক মোর্চা এই ব্যাপারে উদাহরণস্বরূপ। সুতরাং আমরা এটা বলতে পারি যে সম্মিলিত রাজনীতির যুগে রাজনৈতিক দলসমূহ আদর্শের ভিত্তিতে গোষ্ঠীভুক্ত হয় না।

প্রশ্ন ৩। কংগ্রেস দলের আধিপত্য হ্রাস হওয়া সত্ত্বেও দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এর প্রভাব বিরাজমান। তুমি এই কথায় সম্মত কি? যুক্তি দর্শাও।

উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস হল ভারতের প্রাচীনতম সুসংগঠিত ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। স্বাধীনতার পর কংগ্রেস ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল এবং ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল এবং ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত ভারতের রাজনীতিতে একাধিপত্য বিস্তার করেছিল। কংগ্রেস প্রথমবার ১৯৬৯ সালে, দ্বিতীয়বার ১৯৭৮ সালে এবং তৃতীয়বার ১৯৯৫ সালে বিভাজিত হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে বিভাজনের পর ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত কংগ্রেসকে কংগ্রেস(ই) নামে চিহ্নিত করা হয়। নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের ফলে ভারতের নির্বাচন আয়োগ ১৯৯৬ সালের ১২ই মে কংগ্রেস(ই)-কে প্রকৃত কংগ্রেসের স্বীকৃতি প্রদান করে।

বর্তমানে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা পূর্বের তুলনায় হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কংগ্রেস ভারতীয় রাজনীতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছে। কংগ্রেস এখনও ভারতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। ১৯৯১ সালে দশম লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ২২৫টি আসন লাভ করে। ১৯৯৬ সালে একাদশ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মাত্র ১৪১টি আসন লাভ করে। ১৯৯৮ সালের অন্তর্বর্তী নির্বাচনে কংগ্রেস দ্বাদশ লোকসভায় ১৪২টি আসন লাভ করে। ১৯৯৯ সালে ত্রয়োদশ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মাত্র ১১৪টি আসন লাভ করে। ২০০৪ সালের চতুর্দশ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মোট ১৪৫টি আসন লাভ করে এবং অন্যান্য সহযোগী দলের সঙ্গে মিলিত হয়ে ড. মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা গঠিত হয়। ২০০৯ সালে পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মোট ২০৬টি আসন লাভ করে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে দ্বিতীয় সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা সরকার গঠিত হয়।

কেবল কেন্দ্রেই নয়, রাজ্য রাজনীতিতেও কংগ্রেসের আধিপত্য পরিলক্ষিত হয়। অন্ধ্র প্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর প্রভৃতি রাজ্যে কংগ্রেসের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর প্রভৃতি রাজ্যে কংগ্রেসের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া মহারাষ্ট্র, জম্মু ও কাশ্মীর, কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে কংগ্রেস বিভিন্ন সময়ে কোয়ালিশন সরকারের অন্যতম শরিক।

সুতরাং উপরের আলোচনায় এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে কংগ্রেসের একাধিপত্য হ্রাস হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় রাজনীতিতে তার প্রভাব বিরাজমান।

প্রশ্ন ৪। কঠোর বিষয়সমূহের উপর বুদ্ধিশীল সহমতের বিষয়ে পরীক্ষা কর।

উত্তরঃ বিগত বছরগুলিতে ভারতীয় রাজনীতিতে দুই প্রধান রাজনৈতিক মোর্চা তথা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহমত পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

এই সহমতের প্রধান ক্ষেত্রসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) নূতন আর্থিক নীতি: ১৯৯১ সালে ডঃ মনমোহন সিং-এর অর্থমন্ত্রীত্বের সময় নূতন আর্থিক নীতিকে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিরোধিতা করেছিল। বর্তমানে অবশ্য অধিকাংশ সংগঠন ও রাজনৈতিক দলসমূহের অন্তর্ভুক্ত ট্রেড ইউনিয়নসমূহ এই নীতির বিরোধিতা করে। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় আসে তখনই এই নীতি সমর্থন আরম্ভ করে।

(খ) অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর দাবির প্রতি সমর্থন: সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের দাবির প্রতি সমর্থন করছে।

(গ) আঞ্চলিক প্রত্যাশা: কংগ্রেস অথবা ভারতীয় জনতা পার্টি এককভাবে দেশ শাসনের প্রচেষ্টা করে আসছে। কিন্তু বিগত বছরগুলিতে এটা স্পষ্ট যে তারা সমগ্র দেশের নিজ নিজ রাজনৈতিক স্থিতি সুদৃঢ় করতে পারবে না। সেইজন্য বিভিন্ন রাজ্যে এই দুইটি রাজনৈতিক দল বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তুলেছে।

(ঘ) আদর্শগত অবস্থানের পরিবর্তে ক্ষমতা অধিকারের উপর অধিক গুরুত্ব: বর্তমান বছরগুলিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে আদর্শগত অবস্থানের পরিবর্তে ক্ষমতা দখলের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে। কতিপয় বামপন্থী দল ব্যতীত সকল রাজনৈতিক দল ক্ষমতা দখলের জন্য নিজ নিজ আদর্শ বিসর্জন দিয়ে থাকে।

প্রশ্ন ৫। গুজরাটের হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার বিষয়ে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ ২০০২ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি গুজরাটের গোধরা নামক শহরের রেলস্টেশনে ‘সবরমতী এক্সপ্রেস’-এর কোন একটি কামরায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি অগ্নিসংযোগ করে। সেই কামরায় অযোধ্যা হতে করসেবকগণ ফিরে আসছিল। এই ঘটনায় শিশু ও মহিলা সহ ৫৭জন লোক জীবন্ত দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়। এই কাণ্ড স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায় দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র গুজরাটে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের আগুন জ্বলে ওঠে। সমগ্র গুজরাটে প্রায় ১৫০টি শহর ও এক হাজারেরও অধিক গ্রাম আক্রান্ত হয়। এই সংঘর্ষ প্রায় চার মাস ধরে চলে। সংঘর্ষে প্রায় একহাজার লোকের মৃত্যু হয়। মৃত্যু হওয়া লোকদের মধ্যে ৮০% মুসলমান ও ২০% হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোক। এই ঘটনায় দুইশত লোক নিখোঁজ হয়। প্রায় আড়াই হাজার লোক আহত হয়। একশোরও অধিক মহিলা বিধবা হয় এবং ছয় শতাধিক শিশু পিতা-মাতাকে হারায়।

এই ঘটনার সময় কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় ছিল। উভয় সরকারই এই ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এই সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন আয়োগ গুজরাট বিধানসভার নির্বাচন স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়।

প্রশ্ন ৬। বহু লোক মনে করে যে গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা থাকতে হবে। কুড়ি বছর ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে বর্তমান দল ব্যবস্থার সুবিধার উপর একটি রচনা লেখ।

উত্তরঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য রাজনৈতিক দল অপরিহার্য। অনেকে মনে করেন যে গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য দ্বি-দলীয় প্রথা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার ফলে সেখানে গণতন্ত্র সফল। দ্বি-দলীয় প্রথার প্রধান সুবিধা হল এই ব্যবস্থায় মন্ত্রীসভা গঠন অত্যন্ত সহজ। দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় সরকার স্থায়ী ও দায়িত্বশীল।

ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের একাধিপত্য ছিল। কিন্তু ১৯৬৭ সালের পর ভারতে কোয়াাালিশন রাজনীতির বিকাশ ঘটতে থাকে। ১৯৮৯ সালের পর ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল কোয়ালিশন সরকার। বর্তমানে মোট ৬টি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল এবং বহু আঞ্চলিক ও রাজ্যিক দল বিদ্যমান। 

ভারতে বর্তমান বহুদলীয় ব্যবস্থার প্রধান সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) ভারতে বর্তমানে বহুদলীয় ব্যবস্থার ফলে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের মতামত প্রকাশ ও প্রতিনিধিত্ব লাভ সম্ভব হচ্ছে। দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় সার্থকভাবে জনমতের প্রতিফলন হতে পারে না। ভারতের বহুজাতিক সমাজে বহুদলীয় ব্যবস্থার ফলে বিভিন্ন জাত ও সম্প্রদায় তাদের মতামত প্রকাশ ও প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পাচ্ছে।

(খ) ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থা থাকায় নির্বাচকগণের সামনে অনেক বিকল্প থাকে। তাহাদের স্বাধীনতাও বিস্তৃত হয়। ভারতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাগরিকের পক্ষে প্রার্থী পছন্দ করবার বেশি সুযোগ থাকে।

(গ) ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থা থাকায় বর্তমানে কোন বিশেষ দলের একাধিপত্য নেই। এই ব্যবস্থার ফলে কেন্দ্র ও বহু রাজ্যে জোট রাজনীতি ও জোট সরকার প্রতিষ্ঠিত। জোট রাজনীতিতে কোন বিশেষ দলের একাধিপত্য না থাকায় সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে না।

(ঘ) ভারতের বর্তমানে বহুদলীয় ব্যবস্থায় অগণিত আঞ্চলিক দল থাকার ফলে বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব হচ্ছে।

সুতরাং ভারতের বর্তমান দলব্যবস্থার কিছু অসুবিধা থাকলেও সুবিধাও বহুল পরিমাণে পরিলক্ষিত হয়।

প্রশ্ন ৭। জনতা দলের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তরঃ জনতা দল ১৯৮৯ সালের ১১ই অক্টোবরে গঠিত হয়। এই দলের প্রধান আহ্বায়ক বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীরাজীব গান্ধীর সঙ্গে ভি. পি. সিং-এর মতানৈক্য হওয়ার ফলে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে ১৯৮৮ সালে জনমোর্চা গঠন করেন। তারপর জনতা পার্টি ও লোকদলকে জনমোর্চায় সংযুক্ত করে জনতা দল নামে একটি নূতন দল তিনি গঠন করেন। ১৯৮৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে ‘বোফর্স কেলেঙ্কারি’-কে নির্বাচনে রাজীব গান্ধী তথা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র হিসাবে অবলম্বন করে নির্বাচনে অবতীর্ণ হন এবং অন্যান্য শরিক দলগুলির সহায়তায় কেন্দ্রে ‘রাষ্ট্রীয় মোর্চা’ সরকার গঠন করেন।

জনতা দল গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। এই দল সাধারণ মানুষের সার্বিক বিকাশে বিশ্বাসী। জনতা দল সমাজের অনগ্রসর শ্রেণীর লোকদের কল্যাণে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই দল সংরক্ষণ নীতিতে বিশ্বাসী এবং ‘মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই দল গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাসী।

জনতা দল ১৯৮৯ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থনে কেন্দ্রে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ভি. পি. সিং সরকার অযোধ্যা সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় ভারতীয় জনতা পার্টি ১৯৯০ সালে সমর্থন প্রত্যাহার করে, ফলে ‘রাষ্ট্রীয় মোর্চা’ সরকারের পতন ঘটে। চন্দ্রশেখর কয়েকজন অনুগামীসহ জনতা দল ত্যাগ করে সমাজবাদী জনতা পার্টি গঠন করেন এবং কংগ্রেসের সমর্থনে কিছুদিনের জন্য কেন্দ্রে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করিলে ১৯৯১ সালের মার্চ মাসে চন্দ্রশেখর সরকারের পতন ঘটে। ১৯৯১ সালের অন্তর্বর্তী নির্বাচনে জনতা দলের বিপর্যয় ঘটে। দলীয় কোন্দলে বর্তমানে জনতা দল দুইটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত। বর্তমানে বিহারে জনতা দল ইউনাইটেডের সরকার গঠন করেছে। বর্তমানে জনতা দল জাতীয় দলের মর্যাদা হারিয়েছে।

প্রশ্ন ৮। সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা সরকার সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ২০০৪ সনে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা পরাজিত হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা গঠন করা হয়। এই মোর্চার অংশীদারী গুরুত্বপূর্ণ দলসমূহ হল তামিলনাড়ুর ডি. এম. কে. বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দল, রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি দল, শরদ পাওয়ারের জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস দল প্রভৃতি। ড. মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে গঠন করা এই সরকারকে বামপন্থী দলসমূহ ছাড়াও সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি বাইরে থেকে সমর্থন দেয়। মোর্চা সরকারের কার্যসূচী রূপায়নের জন্য ন্যূনতম সাধারণ কার্যসূচী তৈরি করা হয়। ২০০৯ সনের নির্বাচনে সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা বিজয়ী হয় এবং ড. মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে পুনরায় সরকার গঠন করা হয়। অবশ্যই নির্বাচনের সময় পূর্বের কয়েকটি রাজনৈতিক দল মোর্চা ত্যাগ করে এবং অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল নূতনভাবে অংশগ্রহণ করে। কংগ্রেস সভানেত্রী শ্রীমতী সোনিয়া গান্ধী ইউ. পি. এ.-র অধ্যক্ষ।

প্রশ্ন ৯। ১৯৮০-এর দশক থেকে নীতি নির্ধারকগণকে ভারতের অর্থনীতিতে রাজ্যের গুরুত্ব হ্রাস করতে হয়েছিল কেন?

উত্তরঃ স্বনির্ভর অর্থনীতি নির্মাণের জন্যই ভারত স্বাধীনতার পর পরিকল্পিত অর্থনীতি গড়ে তুলেছিল। কিন্তু ১৯৮০-এর দশক হতে এরং বিশেষত ১৯৯১ সালে বিকাশ সম্পৰ্কীয় জাতীয় চিন্তা ও চর্চার সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটে। ১৯৯১ সালে পি. ভি. নরসিংহ রাও-এর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে অর্থমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং দেশে অর্থনৈতিক সংস্কারের সূচনা করেন। এইরূপ সংস্কার অবশ্য তৃতীয় বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই আরম্ভ হয় এবং একে সংক্ষেপে L.P.G. Liberalization, Privatization and Globalization (উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়ন) বলা হয়।

ভারতের আর্থিক সংস্কার বা নূতন আর্থিক নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) অর্থনৈতিক উদারীকরণ।

(খ) অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন।

(গ) সরকারি উদ্যোগের বেসরকারিকরণ।

(ঘ) সরকারি উদ্যোগের বিলগ্নীকরণ।

(ঙ) বৈদেশিক পুঁজি লগ্নীকরণ।

আর্থিক সংস্কার বা নূতন আর্থিক নীতি সূচনা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় অর্থনীতির প্রকৃতি ও দিকের পরিবর্তন ঘটে। জাতীয় নির্ভরশীলতার পরিবর্তে আত্মনির্ভরশীল বিশ্ব অর্থনীতির দিকে ভারত ধাবিত হয়। আর্থিক ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। 

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

(ক) স্ব-নির্ভর অর্থনীতির পরিবর্তে সরকার আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির উপর গুরুত্ব প্রদান করেছে। এর অংশ হিসাবে দেশের অর্থনীতির উদারীকরণ প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়েছে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্ক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রভৃতি আর্থিক সংস্থার পরামর্শসমূহ গ্রহণ করা হয়েছে। এটাই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মূল সূচনা বলা যায়।

(খ) গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ না করলেও ভারত এখন বিশ্বের প্রথম সারির পুঁজিবাদী দেশসমূহের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ করে তোলার উপর গুরুত্ব প্রদান করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক ও অন্যান্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

(গ) সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার অংশ হিসাবে গৃহীত বহুসংখ্যক কার্যসূচী এখনও প্রাথমিক কার্যসূচী হিসাবে পরিগণিত হয় নি। উদাহরণস্বরূপ, ভূমি সংস্কার এখন ভারত সরকারের প্রাথমিক কার্যসূচী নয়। এর পরিবর্তে এখন নানাবিধ কল্যাণমুখী কাৰ্যসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।

(ঘ) সরকার ব্যক্তিগত খণ্ডের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খণ্ডে দ্রুত হারে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ফলে এইসব ক্ষেত্রে বিকাশের সুযোগ গড়ে উঠেছে।

(ঙ) দেশে এখন অতি-বিত্তশালী শ্রেণী গড়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ মুকেশ আম্বানী বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী ব্যক্তি।

নতূন আর্থিক নীতির ফলশ্রুতি সম্পর্কে ভারতবর্ষে যথেষ্ট বিতর্ক গড়ে উঠেছে। সমালোচকগণের মতে ভারতীয় অর্থনীতি বর্তমানে নব-ঔপনিবেশিক শক্তির কবলে পড়েছে। কিন্তু তাঁদের অভিমত সর্বাংশে সত্য নয়। নূতন আর্থিক নীতি ভারতের অর্থনীতিকে সবল করে তুলেছে।

প্রশ্ন ১০। রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা ১৯৯৮ সাল থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই মোর্চা ১৯৯৮ সাল ও ১৯৯৯ সালে কেন্দ্রে সরকার গঠন করা ছাড়াও কয়েকটি রাজ্যে সরকার গঠন করেছিল। এই মোর্চা সরকারের অংশীদার দলসমূহের মধ্যে অন্যতম হল শিবসেনা, শিরোমণি অকালি দল, অসম গণ পরিষদ, রাষ্ট্রীয় লোকদল ইত্যাদি। কিন্তু ১৯৯৮ সালে এই সরকার থেকে হঠাৎ এ. আই. এ. ডি. এম. কে. দল সমর্থন প্রত্যাহার করার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পতন ঘটে।

১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা সর্বমোট ২৯৬টি আসন দখল করে পুনরায় বাজপেয়ীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে সরকার গঠন করে এবং সম্পূর্ণ পাঁচ বছর শাসন করতে সক্ষম হয়েছিল। ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা পরাজিত হয়। ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এই মোর্চা জয়লাভ করতে পারে নি। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা কেন্দ্রে পুনরায় সরকার গঠন করেছে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১১। জনতা পার্টির উত্থান সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৭৫ সালের আভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা বলবৎকালে বহু সর্বভারতীয় নেতা কারারুদ্ধ হন। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি মাসে শ্রীমতি গান্ধী লোকসভার নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেন এবং আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তি দানের ব্যবস্থা করেন। মুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সচেষ্ট হন। ১৯৭৭ সালের ২০শে জানুয়ারি শ্রীমোরারজী দেশাই সংগঠন কংগ্রেস, ভারতীয় লোকদল, জনসংঘ এবং সমাজতন্ত্রী দলের সম্মেলনে ‘জনতা পার্টি’ গঠনের কথা ঘোষণা করেন। লোকনায়ক শ্রীজয়প্রকাশ নারায়ণ জনতা পার্টি গঠনের ক্ষেত্রে উল্লেখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। শ্রীজগজীবন রামের গণতন্ত্রী কংগ্রেস স্বতন্ত্র অস্তিত্ব রক্ষা করে ও জনতা দলের সহিত জোটবদ্ধ হয়। ১৯৭৭ সালের মার্চ মাসের সাধারণ নির্বাচনে জনতা দল ২৬৩টি আসন এবং তার সহযোগী গণতন্ত্রী কংগ্রেস ২৮টি আসন লাভ করে। নির্বাচনের পর গণতন্ত্রী কংগ্রেস জনতা পার্টির অঙ্গীভূত হয় এবং জনতা পার্টির আসন হয় ২৯৩।

আদর্শ ও লক্ষ্য: ১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে ষষ্ঠ লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে জনতা দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে নূতন দলের লক্ষ্য ও আদর্শের কথা ঘোষণা করা হয়। পরস্পরবিরোধী ও বিভিন্ন মতাদর্শের সম্মিলনে গঠিত জনতা পার্টি গান্ধীবাদের আদর্শে প্রতিষ্ঠিত বলে ঘোষণা করে। নির্বাচনে ঘোষিত লক্ষ্য ও আদর্শ গ্রহণে শ্রীজয়প্রকাশ নারায়ণের বিশেষ প্রভাব ছিল। জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, মৌলিক অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মিসা আইন বাতিল, ৪২তম সংবিধান সংশোধন আইন বাতিল, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তিদান, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা, সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের অধ্যায় হতে বাদ দেওয়া, কৃষি এবং ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের উপর গুরুত্ব প্রদান, অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে আয়ের বৈষম্য হ্রাস প্রভৃতি প্রতিশ্রুতির কথা ঘোষিত হয়। 

সরকার গঠনের পর জনতা পার্টি কয়েকটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবে রূপদান করে। ২৮ মাস শাসন ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত থাকবার পর ১৯৭৯ সালের সংসদের বাদল অধিবেশনের পূর্বে মোরারজী সরকারের পতন হয়। জনতা পার্টির মধ্যে ব্যাপক দলত্যাগ হয়। রাজনারায়ণ, চরণ সিং প্রভৃতির নেতৃত্বে জনতা পার্টি (এস) গঠন করে। 

১৯৮০ সালের সপ্তম লোকসভা নির্বাচনে জনতা পার্টির লক্ষ্য ও কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। জনতা পার্টি ‘রুটি ও স্বাধীনতার’ অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। দলত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা, সরকারি ব্যয়ে নির্বাচনী প্রচার, পঞ্চায়েতী রাজ প্রতিষ্ঠা, স্বৈরতন্ত্রের অবসান, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রভৃতি লক্ষ্যের কথা জনতা পার্টি ঘোষণা করে। কিন্তু ১৯৮০ সালের নির্বাচনে পার্টির ভরাডুবি হয়। বর্তমানে জনতা পার্টির অস্তিত্ব ম্রিয়মান।

প্রশ্ন ১২। ভারতের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ স্বাধীনতার পর হতে ভারতে আঞ্চলিক দলের প্রসার ঘটেছে, যা ভারতের একতা ও অখণ্ডতার পক্ষে বিপজ্জনক।

সমাজ বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির মদতেই আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির আবির্ভাব ঘটে। এই শক্তির ফলেই ভারতে অসংখ্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি ঘটেছে। কতকগুলি আঞ্চলিক দলের অবশ্য সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি আছে, কিন্তু তাদের কার্যকলাপ একটি বিশেষ এলাকায় নির্ধারিত থাকায় তাদেরকে আঞ্চলিক দল বলা হয়। কতকগুলি আঞ্চলিক দল অবশ্য আঞ্চলিকতাবাদের উপর গঠিত হয়।

সাম্প্রদায়িকতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতিতে বিশ্বাসী আঞ্চলিক দলগুলি নিঃসন্দেহে দেশের সার্বভৌমত্ব ও সংহতির পরিপন্থী। কিন্তু কোন বিশেষ আঞ্চলের আর্থ-সামাজিক বিকাশের উদ্দেশ্যে আঞ্চলিক দল নিঃসন্দেহে কাম্য।

আঞ্চলিক দলগুলি সাম্প্রদায়িক ও অসাম্প্রদায়িক হতে পারে। সাম্প্রদায়িক আঞ্চলিক দলগুলি হল—পাঞ্জাবের অকালি দল, সংযুক্ত অকালি দল, হিন্দু মহাসভা, মুসলিম লিগ, মহারাষ্ট্রের শিবসেনা ইত্যাদি। পাঞ্জাবের রাজনীতিতে অকালি দল, এবং মহারাষ্ট্রের শিবসেনা দ্রুত প্রভাব বিস্তার করেছে। বিগত বিধানসভা নির্বাচনে শিবসেনা-বি.জে.পি. কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়েছে।

অসাম্প্রদায়িক দলগুলি হল—তামিলনাড়ুতে এ. ডি. এম. কে; ডি. এম. কে; অন্ধ্র প্রদেশে তেলেগু দেশম; মহারাষ্ট্রে মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি; জম্মু ও কাশ্মীরে জাতীয় কনফারেন্স ও প্যান্থার্স পার্টি; আসামে অসম গণ পরিষদ; পশ্চিমবঙ্গে তৃণমুল কংগ্রেস ফরওয়ার্ড ব্লক; এস. ইউ. সি. আই.; আর. এস. পি.; বিপ্লবী কমিউনিস্ট দল; গোর্খা লীগ ইত্যাদি; বিহারে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা; উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি; মণিপুরে মণিপুর পিপলস্ পার্টি; নাগাল্যান্ডে নাগা ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি; মিজোরামে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট; মেঘালয়ে অল পার্টি হিল লিডার্স কনফারেন্স; ত্রিপুরায় ত্রিপুরা উপজাতি যুব সমিতি। তা ছাড়াও অন্যান্য আরও অনেক আঞ্চলিক দল ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বর্তমান।

তামিলনাড়ুতে স্বাধীনতার পর থেকেই ডি. এম. কে. এবং এ. ডি. এম. কে. গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই দুই দল দীর্ঘদিন ধরে পর্যায়ক্রমে এই রাজ্যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। অন্ধ্র প্রদেশে তেলেগু দেশম দীর্ঘদিন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। জম্মু ও কাশ্মীরে জাতীয় সম্মেলন সুদীর্ঘকালব্যাপী ক্ষমতায় ছিল। আসামে অসম গণ পরিষদ পাঁচ বৎসর (১৯৮৫ – ১৯৯০) ক্ষমতায় ছিল। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে আঞ্চলিক দলের প্রভাব অধিক এবং প্রায়ই এই রাজ্যগুলির কোনটিতে আঞ্চলিক দলের সরকার গঠিত হয়।

ভারতে দলীয় ব্যবস্থায় আঞ্চলিক দলগুলির আবির্ভাব মোটেই শোভনীয় নয়। এটা ভারতের ঐক্য ও সংহতির পরিপন্থী। আঞ্চলিক দলগুলির প্রভাবে ভবিষ্যতে কোনদিন হয়তো স্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নাও হতে পারে। সুতরাং আঞ্চলিক দলগুলিকে ভারতীয় জাতীয় সমস্যার প্রতি দৃষ্টিলাভ করতে হবে।

প্রশ্ন ১৩। ভারতে সম্মিলিত সরকারের বিকাশ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা প্রস্তুত কর।

উত্তরঃ ভারতে সম্মিলিত সরকারের সূচনা হয় ১৯৭৭ সালে। এই সালে জনতা পার্টির সম্মিলিত সরকার গঠিত হয়। রাজ্যস্তরে প্রথম সম্মিলিত সরকারের সূচনা হয় ১৯৬৭ সালে কেরালায়। ১৯৭৭ সালে কেন্দ্রে মোরারজি দেশাই-এর নেতৃত্বে জনতা পার্টির সরকার গঠিত হয়। জনতা পার্টি মোট পাঁচটি দল নিয়ে গঠিত হয়। জনতা পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্বে ১৯৭৯ সালে সরকারের পতন ঘটে। ১৯৮৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে জনতা দল, লোক দল (বি), কংগ্রেস (এস), তেলেগু দেশম, ডি. এম. কে. ও অসম গণ পরিষদ প্রভৃতি দলের সহযোগে ‘রাষ্ট্রীয় মোর্চা’ নামক এক সম্মিলিত সরকার গঠিত হয়। ভারতীয় জনতা পার্টি ও বামপন্থী দলসমূহ বাইরে থেকে মোর্চা সরকারকে সমর্থন করে। ১৯৯০ সালে বি. জে. পি. সমর্থন প্রত্যাহার করলে উক্ত জোট সরকারের পতন ঘটে। পরে জনতা দলের একটি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে চন্দ্রশেখর কংগ্রেস (আই)-এর ছত্রছায়ায় সরকার গঠন করেন। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে এই সরকারের পতন ঘটে।

১৯৯৮ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে মোট ১৩টি দলের সহযোগিতায় ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এন. ডি. এ.) বা রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা নামক এক সম্মিলিত সরকার গঠিত হয়। এই সরকার ১৩ মাস ক্ষমতায় থাকে। এ. আই. এ. ডি. এম. কে. দল সমর্থন প্রত্যাহার করলে ১৩ মাস পর এই সরকারের পতন ঘটে। ১৯৯৯ সালের অন্তর্বর্তী নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বে মোট ২৪টি দলের এন. ডি. এ. সম্মিলিত সরকার গঠিত হয়। ২০০৪ সালের নির্বাচনের পর কংগ্রেসের নেতৃত্বে মোট নয়টি দলের ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউ. পি. এ.) বা সম্মিলিত প্রগতিশীল মোর্চা সরকার গঠিত হয়। এই সম্মিলিত সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। ২০০৯ সালের পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রাক্-নির্বাচনী মিত্রতার সহযোগে কেন্দ্রে একটি সম্মিলিত সরকার গঠন করে।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ১৯৮৯ সালের পরবর্তী সময়কালে ভারতীয় রাজনীতির প্রধান বিষয়সমূহ লেখ। রাজনৈতিক দলগুলির পৃথক গঠন কি এই পার্থক্যসমূহ গঠন করে?

উত্তরঃ ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের একাধিপত্য ছিল। ১৯৭৭ সালে প্রথমবার কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতা হারায় এবং জনতা পার্টির সরকার গঠিত হয়। এর পর থেকে ভারতে ঘন ঘন রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হতে থাকে। ১৯৮৯ সালের পর ভারতীয় রাজনীতির প্রধান বিষয়সমূহ নিম্নরূপ:

(ক) বহুদলীয় ব্যবস্থা: ভারতে দীর্ঘকাল কংগ্রেসের একাধিপত্য ছিল। কিন্তু ১৯৮৯ সাল থেকে একদলীয় প্রাধান্যের অবসান প্রথমে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুদলীয় ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটায়।

(খ) কংগ্রেসের একাধিপত্যের অবসান: ভারতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘকাল কংগ্রেসের একাধিপত্য ছিল। কিন্তু ১৯৮৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মাত্র ১৯৭টি আসন লাভ করে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস মোট ২৪৪টি আসন লাভ করে সরকার গঠন করলেও এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে। ১৯৯৬, ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস জয়লাভ করতে পারেনি। ২০০৪ ও ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর কংগ্রেস অন্যান্য দলের সমর্থনে মোর্চা সরকার গঠন করে। সুতরাং ১৯৮৯ সালের পর থেকেই ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থায়ীভাবে জাতীয় কংগ্রেসের একাধিপত্যের অবসান ঘটে।

(গ) মণ্ডল আয়োগের পরামর্শবলির প্রয়োগ ও ইহার ফলাফল: জনতা পার্টি সরকারের আমলে (১৯৭৭–৭৯) নিযুক্ত মণ্ডল কমিশন সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে পশ্চাদপদ জাতিদের জন্য ২৭ শতাংশ পদ সংরক্ষণের সুপারিশ করে। এই পরামর্শ ইন্দিরা গান্ধী বা রাজীব গান্ধী সরকার বাস্তবায়িত করেনি। ১৯৯০ সালের ৭ই আগস্ট বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং-এর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট সরকার মণ্ডল কমিশনের এই প্রস্তাব কার্যকরী করার কথা ঘোষণা করে।

(ঘ) নব-অর্থনৈতিক নীতি: ১৯৯১ সালে নরসিমা রাও-এর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে তাঁর মন্ত্রীসভার অর্থমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং অর্থনৈতিক সংস্কারের সূচনা করেন বিশ্বায়ন, বেসরকারিকরণ ও উদারীকরণ-এর লক্ষ্যে।

(ঙ) বাবরি মসজিদ ধ্বংস: ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর একশ্রেণীর মৌলবাদী হিন্দু অযোধ্যার রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। এই ঘটনাপ্রবাহ ভারতীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় প্রবর্তন করা ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষ চরিত্রের বিষয়ে বিভিন্ন বিতর্কের সূচনা করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top