Class 12 Political Science Chapter 15 গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকট Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 15 গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকট Notes and select needs one.
Class 12 Political Science Chapter 15 গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকট
Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 15 গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকট Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 15 গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকট Solutions for All Subjects, You can practice these here.
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকট
Chapter: 15
দ্বিতীয় খন্ড (স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি)
অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। জয়প্রকাশ নারায়ণ কোন্ রাজ্যের লোক ছিলেন?
উত্তরঃ বিহার রাজ্যের।
প্রশ্ন ২। ভারতের সাম্যবাদী দল (মার্ক্সবাদী – লেনিনবাদী) কে গঠন করেছিলেন?
উত্তরঃ চারু মজুমদার।
প্রশ্ন ৩। ভারতে সর্বপ্রথম কখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৬২ সালে।
প্রশ্ন ৪। কার নেতৃত্বে শাহ কমিশন গঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ জে. সি. শাহ।
প্রশ্ন ৫। গুজরাট ও বিহারের ছাত্র আন্দোলনে কে নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন?
উত্তরঃ জয়প্রকাশ নারায়ণ।
প্রশ্ন ৬। ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক ঘোষিত বিশ দফা কার্যসূচীর যে-কোন একটি বিষয় উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভূমি সংস্কার ও বণ্টন।
প্রশ্ন ৭। জনতা সরকার কখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৭ সালে।
প্রশ্ন ৮। কোন্ সরকারের সময় মণ্ডল আয়োগ নিয়োগ করা হয়েছিল?
উত্তরঃ জনতা সরকারের সময়।
প্রশ্ন ৯। ১৯৭৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে কোন্ দল জয়লাভ করেছিল?
উত্তরঃ জনতা পার্টি।
প্রশ্ন ১০। ভারতে কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমলাতন্ত্র ও ন্যায়ালয় প্রবর্তন করেছিলেন?
উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী।
প্রশ্ন ১১। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা রাষ্ট্রপতির নাম কি?
উত্তরঃ ফকরুদ্দিন আলী আহমেদ।
প্রশ্ন ১২। গণতন্ত্র সংরক্ষণের প্রতীক কে হয়েছিলেন?
উত্তরঃ জয়প্রকাশ নারায়ণ।
প্রশ্ন ১৩। চারু মজুমদার কে ছিলেন?
উত্তরঃ চারু মজুমদার একজন প্রখ্যাত সমাজবাদী নক্শাল নেতা ছিলেন। তিনি ভারতে সাম্যবাদী দল (মার্ক্সবাদ/ লেনিনবাদ) -এর প্রতিস্থাপক ছিলেন।
প্রশ্ন ১৪। ‘গণতন্ত্রের জন্য কংগ্রেস’ দলের নেতা কে ছিলেন?
উত্তরঃ জগজীবন রাম।
প্রশ্ন ১৫। ভারতের কোন্ অঞ্চলে মার্ক্সবাদ – লেনিনবাদ শক্তিশালী ছিল?
উত্তরঃ পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়িতে।
প্রশ্ন ১৬। শুদ্ধ উত্তরটি বেছে লেখ:
১৯৭১ সালের নির্বাচনে (কংগ্রেস দল/ জনতা দল) গরিবী হটাও স্লোগান দিয়েছিল।
উত্তরঃ কংগ্রেস দল।
(খ) (১৯৬৬/ ১৯৬৭) সালে দার্জিলিং পাহাড়ের নক্সালবাড়ি আরক্ষী থানা অঞ্চলে একটি কৃষক বিদ্রোহ্ হয়েছিল।
উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে।
(গ) ১৯৭৫ সালে ভারতীয় সংবিধানের (৩৫২/ ৩৫৬) নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল।
উত্তরঃ ৩৫২নং অনুচ্ছেদ।
(ঘ) ১৯৭৭ সালের নির্বাচনের পর (মোরারজী দেশাই/ চরণ সিং) জনতা দল সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
উত্তরঃ মোরারজী দেশাই।
(ঙ) ১৯৭৪ সালের রেল আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন (জয়প্রকাশ নারায়ণ/ জর্জ ফার্নান্ডেজ)।
উত্তরঃ জর্জ ফার্নান্ডেজ।
(চ) শাহ আয়োগের নিযুক্তি দেওয়া হয়েছিল (১৯৭৫/ ১৯৭৭/ ১৯৮০) সালে।
উত্তরঃ ১৯৭৭ সালে।
(ছ) নকশালবাড়ি আন্দোলন আরম্ভ হয়েছিল (১৯৬৭/ ১৯৬৯/ ১৯৭৪) সালে।
উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে।
(জ) ইন্দিরা ভারত, ভারত ইন্দিরা’ স্লোগান দিয়েছিলেন (চরণ সিং/ জগজীবন রাম/ দেবকান্ত বড়ুয়া।
উত্তরঃ দেবকান্ত বড়ুয়া।
(ঝ) ‘সর্বাত্মক বিপ্লবের’ আহ্বান জানিয়েছিলেন (মোরারজী দেশাই/ জর্জ ফার্নান্ডেজ/ জয়প্রকাশ নারায়ণ)।
উত্তরঃ জয়প্রকাশ নারায়ণ।
প্রশ্ন ১৭। নব-নির্মাণ আন্দোলন কোন্ রাজ্যে আরম্ভ হয়েছিল?
উত্তরঃ গুজরাটে।
প্রশ্ন ১৮। যে-কোন একটি সামাজিক স্বতন্ত্রতা সংগঠনের নাম লেখ।
উত্তরঃ ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর রেলওয়েমেনস স্ট্রাগল।
প্রশ্ন ১৯। ‘মহামোর্চা’ কখন গঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭১ সালে।
প্রশ্ন ২০। জনতা পার্টি কখন গঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৭ সালে।
প্রশ্ন ২১। জনতা পার্টির প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তরঃ জয়প্রকাশ নারায়ণ।
প্রশ্ন ২২। দায়বদ্ধ আমলাতন্ত্র’-র একটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তরঃ দায়বদ্ধ আমলাতন্ত্র সরকারের অনুগত ও দায়বদ্ধ থাকে।
প্রশ্ন ২৩। ১৯৭৫ সালে জরুরিকালীন অবস্থা ঘোষণা করা ভারতের রাষ্ট্রপতির নাম লেখ।
উত্তরঃ ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ।
প্রশ্ন ২৪। ১৯৭৪ সালের রেল ধর্মঘটের নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?
উত্তরঃ জর্জ ফার্নান্ডেজ।
প্রশ্ন ২৫। জয়প্রকাশ নারায়ণ কে ছিলেন।
উত্তরঃ জয়প্রকাশ নারায়ণ সর্বাত্মক আন্দোলনের নেতা ছিলেন।
প্রশ্ন ২৬। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:
(ক) মোরারজী দেশাই________ দলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
উত্তরঃ জনতা।
(খ) ১৯৭৭ সালের মে মাসে জনতা পার্টি সরকার_______ নেতৃত্বে একটি তদন্ত আয়োগ নিযুক্ত করেন।
উত্তরঃ জে. সি. শাহর।
(গ) ________ নেতৃত্বে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে পদত্যাগের জন্য চাপ দিয়েছিল।
উত্তরঃ জয়প্রকাশ নারায়ণের।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। কে এবং কেন বিশ দফা কার্যসূচী প্রবর্তন করেছিলেন?
উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী বিশ দফা কার্যসূচী প্রবর্তন করেছিলেন।
গরিব লোকদের কল্যাণ সাধনের জন্য ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৫ সালে বিশ দফা কাৰ্যসূচী ঘোষণা করেছিলেন।
প্রশ্ন ২। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যসমূহে কংগ্রেসের জয়লাভ করবার দুটি কারণ তুলে ধর।
উত্তরঃ দক্ষিণ ভারতের রাজ্যসমূহে কংগ্রেসের জয়লাভের দুটি কারণ নিম্নরূপ:
(ক) দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে জরুরি অবস্থার প্রভাব ক্ষীণ ছিল।
(খ) উত্তর ভারতের তুলনায় দক্ষিণ ভারতে বিরোধী দলসমূহ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়নি।
প্রশ্ন ৩। ১৯৭৪ সালের রেল ধর্মঘটের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ ১৯৭৪ সালের দীর্ঘ রেল ধর্মঘট দেশের রেল কর্মচারি সংস্থার ইতিহাসে সংঘটিত একটি বিরল ঘটনা। ১৯৭৪ সালের মে মাসে জর্জ ফার্নান্ডেজের নেতৃত্বে ‘দ্য ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর রেলওয়েমেনস্ স্ট্রাগল’ নামক সংগঠনটি রেল কর্মচারীদের জন্য অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা ও কাজের পরিবেশ উন্নীতকরণের দাবি জানিয়ে সরকারকে চাপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সমগ্র দেশব্যাপী রেল ধর্মঘটের কার্যসূচী গ্রহণ করে। এই আন্দোলনের ফলে দেশে এক অস্থির পরিবেশ দেখা দেয়। সরকার আন্দোলন দমনের জন্য সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ করে এবং বহু আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে। ধর্মঘট আরম্ভ হওয়ার ২০ দিন পর আন্দোলনকারীগণ ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
প্রশ্ন ৪। সমগ্র দেশব্যাপী কে এবং কেন সত্যাগ্রহ আরম্ভ করেছিলেন?
উত্তরঃ জয়প্রকাশ নারায়ণ দেশব্যাপী সত্যাগ্রহ আরম্ভ করেছিলেন।
তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সমগ্র দেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং ইন্দিরা গান্ধীর একনায়কত্ববাদী শাসন থেকে দেশকে রক্ষা করা।
প্রশ্ন ৫। সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ সংবিধানের প্রস্তাবনার লক্ষ্য ও আদর্শের উপর ভিত্তি করে মণ্ডল, কার্যপালিকা, ন্যায়পালিকা, মৌলিক অধিকার, নির্দেশাত্মক নীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রভৃতি বিষয়সমূহকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বলে।
প্রশ্ন ৬। ভারতের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমলাতন্ত্রের (Committed bureaucracy) দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তরঃ ভারতের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমলাতন্ত্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
(ক) ভারতের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমলাতন্ত্র শাসকদলের কার্যসূচীর রূপায়ণে জড়িত।
(খ) সংবিধানের নীতি ও আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করা ছাড়াও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ।
প্রশ্ন ৭। কংগ্রেস সরকার দ্বারা কেন ও কি কি ভিত্তিতে জরুরিকালীন অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল?
উত্তরঃ দেশের আর্থিক সংকট, গুজরাট ও বিহারের ছাত্র আন্দোলন, দীর্ঘদিনের রেল ধর্মঘট, ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচন বাতিল বলে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়, ইন্দিরা গান্ধীর পদত্যাগ দাবি এবং দেশের আভ্যন্তরীণ অস্থিরতার জন্য কংগ্রেস সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল।
কংগ্রেস সরকার নিম্নোক্ত ভিত্তিতে জরুরীকালীন অবস্থা ঘোষণা করেছিল:
(ক) জরুরি অবস্থার সময় সরকার ক্ষমতা প্রয়োগ করে মৌলিক অধিকার সম্পূর্ণ বা আংশিক রূপে খর্ব করতে পারে।
(খ) একবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা হলে পরে যুক্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বণ্টন প্রকৃতপক্ষে বরখাস্ত করা হয় এবং সকল ক্ষমতা কেন্দ্র সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে।
প্রশ্ন ৮। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন ভারতকে সকল সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছিল? দুটি যুক্তি দাও।
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সকল সাহায্য বন্ধ করার যুক্তি দুটি হল নিম্নরূপ:
(ক) বাংলাদেশের যুদ্ধে ভারতের নৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থনে পাকিস্তান ক্ষুব্ধ হয়েছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সমর্থনে ভারতকে সকল প্রকার সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছিল।
(খ) ভারতে বৃদ্ধি পাওয়া বামপন্থী আন্দোলনের কার্যকলাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অসন্তুষ্ট হয়েছিল।
প্রশ্ন ৯। জরুরি অবস্থা প্রয়োগের বিষয় উল্লেখ কর।
উত্তরঃ জরুরি অবস্থা প্রয়োগের বিষয়গুলি নিম্নরূপ:
(ক) ১৯৭৫ সালের ১২ই জুন এলাহাবাদ উচ্চ ন্যায়ালয় কর্তৃক ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচিত হওয়া অবৈধ ঘোষণা।
(খ) ১৯৭৪ সালের ২৪শে জুন এলাহাবাদ উচ্চ ন্যায়ালয়ের রায়দানের উপর উচ্চতম ন্যায়ালয় দ্বারা আংশিক স্থগিতাদেশ জারি।
(গ) ১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলী আহমেদ কর্তৃক জরুরি অবস্থা ঘোষণা।
প্রশ্ন ১০। আরক্ষী বাহিনী ও আমলাতন্ত্রের কার্যের উপর জরুরি অবস্থার প্রভাব সম্পর্কে লেখ।
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারির সঙ্গে সঙ্গে আরক্ষী বাহিনী ও আমলাতন্ত্র বিশেষ ক্ষমতাশালী হয়ে পড়েছিল। আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা আইন ও নিবারক আটক আইনের অধীনে আরক্ষী বহু নিরাপরাধ ব্যক্তি তথা বিরোধী দলের নেতা ও সদস্যদের আটক করেছিল। রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী আমলাতান্ত্রিক বিষয়ীর হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। সমস্ত শাসনব্যবস্থা তাদের ইচ্ছানুসারে পরিচালিত হত।
প্রশ্ন ১১। সংবাদ মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ সংবাদপত্রসমূহে যে-কোন সংবাদ প্রকাশের পূর্বে সরকারের নিকট থেকে অনুমোদন নেওয়াকে সংবাদ মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা বলা হয়। এর দ্বারা সরকার সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বাতিল করে। এই ব্যবস্থা ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর প্রবর্তিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ১২। প্রতিরোধক আটক (Preventive Detention) বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ নিবারক আটক হল জরুরি অবস্থার সময় প্রবর্তন করা একটি আইন। এই আইনের অধীনে সরকার সেই সময়ে বহু নিরপরাধ লোককে ভবিষ্যতে তাদের দ্বারা সরকারবিরোধী কার্যকলাপ সংঘটিত হতে পারে বলে আটক করে।
প্রশ্ন ১৩। অকংগ্রেসী দলসমূহ কেন কংগ্রেস সরকারের বিরোধিতা করেছিল?
উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে কংগ্রেস দল অনেক অগণতান্ত্রিক ও বেআইনি কার্যকলাপ করেছিল। ভারতের অধিকাংশ বিরোধী দলের নেতা ও কর্মীকে জরুরি অবস্থার সময় আটক করা হয়েছিল। এজন্য ইন্দিরা গান্ধীর স্বৈরাচারী শাসন থেকে রক্ষা করবার জন্য এবং ভারতে পূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলন করবার জন্য বিরোধী দলসমূহ একজোট হয়ে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল।
প্রশ্ন ১৪। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে গঠিত নূতন রাজনৈতিক দলসমূহের নাম লেখ।
উত্তরঃ ১৯৭৭ সালের নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে গঠিত নূতন রাজনৈতিক দলসমূহ হল—
(ক) জনতা পার্টি।
(খ) গণতন্ত্রের জন্য কংগ্রেস।
প্রশ্ন ১৫। ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনের যে-কোন দুটি ফলাফল লেখ।
উত্তরঃ ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দুটি নিম্নরূপ:
(ক) কংগ্রেস দলের আধিপত্যের সমাপ্তি ও জনতা পার্টি সরকার গঠন।
(খ) কেন্দ্রে প্রথম অকংগ্রেসী সরকার গঠন।
প্রশ্ন ১৬। সামাজিক স্বতন্ত্রতা সংগঠন বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক প্রবর্তিত জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় জনগণের ব্যক্তি স্বাধীনতা বা স্বতন্ত্রতা বিপন্ন হয় এবং অনেক বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে আটক করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি স্বতন্ত্রতা রক্ষার্থে দেশে নানাবিধ সামাজিক স্বতন্ত্রতা সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৬ সালের ১৭ই অক্টোবর একটি জাতীয় আলোচনা চক্র অনুষ্ঠিত হয় যেখানে নাগরিকদের সামাজিক স্বতন্ত্রতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার সংস্থা নামে একটি সংগঠন গঠিত হয়। ১৯৮০ সালের নভেম্বর মাসে এইরূপ আরেকটি সংগঠন গঠিত হয়।
প্রশ্ন ১৭। জরুরিকালীন অবস্থান থেকে সমাজের বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন আকাঙ্ক্ষাসমূহ কি ছিল?
উত্তরঃ জরুরিকালীন অবস্থান থেকে সমাজের বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন আকাঙ্ক্ষাসমূহ ছিল নিম্নরূপ:
(ক) দরিদ্র ও গ্রামাঞ্চলের লোকেরা আশা করেছিলেন যে কার্যকরীভাবে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচী যা সরকার করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন, কার্যে পরিণত করা হবে।
(খ) শহর অঞ্চলের মধ্যবিত্ত শ্রেণী খুশি হয়েছিলেন কেননা বিক্ষোভের সমাপ্তি ঘটেছিল এবং সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে শৃংখলা বলবৎ হয়েছিল।
প্রশ্ন ১৮। জনতা পার্টি প্রতিষ্ঠার জন্য দায়ী কারণসমূহ কি কি?
উত্তরঃ জনতা পার্টি প্রতিষ্ঠার জন্য দায়ী কারণসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) জরুরিকালীন অবস্থার সময় বিরোধী নেতৃবর্গের প্রতি দমনমূলক নীতি।
(খ) ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দল।
(গ) কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কোন্দল।
(ঘ) কংগ্রেসের একচ্ছত্র শাসনের অবসান।
প্রশ্ন ১৯। ৪২তম সংবিধান সংশোধনী আইনের দুটি মূল বিধানের বিষয়ে লেখ।
উত্তরঃ ৪২তম সংবিধান সংশোধনী আইনের দুটি মূল বিধান নিম্নরূপ:
(ক) সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দুটির সংযোজন।
(খ) লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার মেয়াদ ৬ বছর করা।
প্রশ্ন ২০। বিহার আন্দোলনের বিষয়ে একটি টীকা লেখ।
উত্তরঃ ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে বিহারের ছাত্ররা মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যাভাব, বেকারত্ব এবং দুর্নীতির প্রতিবাদে মিলিত হয়। কিছু সময়ের পরে তারা জয়প্রকাশ নারায়ণ, যিনি কার্যকরী রাজনীতি ত্যাগ করে সমাজসেবার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁকে এই ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ২১। ভারতীয় সংবিধানে কয় প্রকার জরুরি অবস্থার উল্লেখ আছে এবং কি কি?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে নিম্নোক্ত তিন প্রকার জরুরি অবস্থার উল্লেখ আছে:
(ক) জাতীয় জরুরি অবস্থা (ধারা ৩৫২)
(খ) রাজ্যিক জরুরি অবস্থা (ধারা ৩৫৬)
(গ) আর্থিক জরুরি অবস্থা (ধারা ৩৬০)
প্রশ্ন ২২। ১৯৭৪ সালে কোন্ দুটি রাজ্যে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৪ সালে-
(ক) বিহার। ও
(খ) গুজরাটে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ২৩। জয়প্রকাশ নারায়ণ কে? তিনি কোন্ আন্দোলনের প্রবক্তা?
উত্তরঃ জয়প্রকাশ নারায়ণ সর্বাত্মক নেতা ছিলেন। তিনি সর্বাত্মক বিপ্লবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
প্রশ্ন ২৪। জয়প্রকাশ নারায়ণ কোন্ দুটি রাজনৈতিক দলের প্রতিস্থাপক সম্পাদক ছিলেন?
উত্তরঃ জয়প্রকাশ নারায়ণ যে দুটি রাজনৈতিক দলের প্রতিস্থাপক সম্পাদক ছিলেন তাদের নাম—
(ক) কংগ্রেস সমাজবাদী পার্টি। ও
(খ) সমাজবাদী পার্টি।
প্রশ্ন ২৫। ১৯৭৪ সালের কোন মাসে রেল ধর্মঘট হয়েছিল? এই আন্দোলন কতদিন চলেছিল? এই আন্দোলনের নেতা কে ছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৭৪ সালের মে মাসে রেল ধর্মঘট হয়েছিল। এই ধর্মঘট ২০ দিন চলেছিল।
এই আন্দোলনের নেতা ছিলেন জর্জ ফার্নান্ডেজ।
প্রশ্ন ২৬। ১৯৭৫ সালের কোন্ মাসে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়? এর সমাপ্তি কখন ঘটে?
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে সমাপ্ত হয়।
প্রশ্ন ২৭। ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার তিনটি পরিণতি বা ফলশ্রুতি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ জরুরি অবস্থার তিনটি ফলশ্রুতি নিম্নরূপ:
(ক) দেশের বিরোধী নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ করা।
(খ) নাগরিকদের পৌর অধিকার সীমিত করা।
(গ) সংবাদপত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ।
প্রশ্ন ২৮। জরুরি অবস্থা চলাকালীন সময়ে সংঘটিত যে-কোন দুটি অপ্রীতিকর ঘটনা উল্লেখ কর।
উত্তরঃ জরুরি অবস্থা চলাকালীন নিম্নোক্ত দুটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল:
(ক) দিল্লীর তুর্কমেন গেটে ধ্বংসলীলা।
(খ) আরক্ষীর জিম্মায় রাজনের মৃত্যু।
প্রশ্ন ২৯। মোরারজী দেশাই কোন্ রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলেন? তিনি কখন প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন?
উত্তরঃ মোরারজী দেশাই কংগ্রেস (সংগঠন)-এর নেতা ছিলেন। তিনি ১৯৭৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৩০। চরণ সিং কোন্ দলের নেতা ছিলেন? তিনি কখন প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন?
উত্তরঃ চরণ সিং ভারতীয় লোকদলের নেতা ছিলেন। তিনি ১৯৭৯ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হন।
প্রশ্ন ৩১। জগজীবন রাম কে ছিলেন? তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে কোন্ দল গঠন করেন?
উত্তরঃ জগজীবন রাম বিশিষ্ট হরিজন নেতা ছিলেন। তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে ‘গণতন্ত্রের জন্য কংগ্রেস’ (Congress for Democracy, CFD) নামে একটি দল গঠন করেন।
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ১৯৮০ সালে মধ্যবর্তীকালীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার কারণসমূহ কি ছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে জনতা পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে। নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মোরারজী দেশাই, চরণ সিং ও জগজীবন রামের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী তিনজন নেতাই রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক ছিলেন। অবশেষে দলের সিদ্ধান্তক্রমে মোরারজী দেশাই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কার্যভার গ্রহণ করেন। কিন্তু দলের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের সমাপ্তি হয়নি। জরুরি অবস্থার বিরোধিতায় জনতা পার্টি গঠিত হলেও এই দলের নিজস্ব একতা ও স্থায়িত্ব রক্ষায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। দলের মধ্যে সুনেতৃত্ব, নিয়মানুবর্তিতা ও অভিন্ন কার্য্যসূচীর অভাবের ফলে আশানুযায়ী জনতা পার্টি ভারতীয় রাজনীতিতে কোন পরিবর্তন সাধনে সক্ষম হয়নি। এর ফলস্বরূপ দলের মধ্যে বিভাজন দেখা দেয় এবং সরকার গঠনের আঠারো মাস সম্পূর্ণ হতে না হতেই মোরারজী দেশাই নেতৃত্বাধীন সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়। একটি পর্যায়ে মোরারজী দেশাই সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। দেশাই সরকারের পতনের পর কংগ্রেসের আশ্বাস লাভ করে চরণ সিং কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। কিন্তু পরে অনিবার্য কারণে চরণ সিং সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করলে চরণ সিং সরকার চার মাস পর ভেঙে যায়। এইরূপ রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে নূতন লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হয়েছিল। এই নির্বাচনে জনতা পার্টি যথেষ্ট বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত কংগ্রেস সর্বমোট ৩৫৩টি আসন লাভ করে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসে।
প্রশ্ন ২। জরুরি অবস্থা (১৯৭৫-১৯৭৭) ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের উপর কি প্রভাব বিস্তার করেছিল?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ৩৫২নং ধারায় বলা হয়েছে যে—যুদ্ধ, বহিরাগত আক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র বিদ্রোহের কারণে রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে সমগ্র দেশে বা দেশের কোন অংশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে বা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাহলে তিনি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত জরুরি অবস্থাকালে ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব হয়েছিল। জনগণের মৌলিক অধিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছিল। এমনকি ন্যায়ালয় কর্তৃক মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করার ব্যবস্থাও বরখাস্ত করা হয়েছিল। সংবাদপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আভ্যন্তরীণ শান্তিরক্ষা আইন ও নিবারক আইনের দ্বারা বিরোধী নেতা ও কর্মী, এমনকী অনেক নিরাপরাধ লোককে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন বন্দী করে রাখা হয়েছিল।
প্রশ্ন ৩। জরুরি অবস্থা মানে কি? আভ্যন্তরীণ অশান্তির জন্য ঘোষণা করা জরুরি অবস্থার যে-কোন একটি প্রভাব লেখ।
উত্তরঃ ভারতের সংবিধান ভারতের রাষ্ট্রপতিকে একটি বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করেছে যা তিনি একমাত্র বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োগ করতে পারেন। একে জরুরি অবস্থা বলে। সংবিধানের ৩৫২ থেকে ৩৬০নং অনুচ্ছেদে তিন প্রকার জরুরি অবস্থা উল্লেখ আছে। এইগুলি হল—জাতীয় জরুরি অবস্থা, রাজ্যিক জরুরি অবস্থা ও আর্থিক জরুরি অবস্থা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের লিখিত সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। এর ফলস্বরূপ নাগরিকগণ সংবিধান প্রদত্ত সকল প্রকার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় এবং এক দুর্দশাপূর্ণ জীবনধারণে বাধ্য হয়।
প্রশ্ন ৪। কে এবং কেন বিশ দফা কাৰ্যসূচী প্রবর্তন করেছিলেন?
উত্তরঃ শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বিশ (কুড়ি) দফা কর্মসূচী প্রবর্তন করেছিলেন।
জরুরি অবস্থার সমালোচকেরা বলেন যে ইন্দিরা গান্ধী সংবিধানিক বন্দোবস্ত, যা দেশকে বাঁচানোর জন্য উদ্দিষ্ট, তা তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষমতা বাঁচানোর জন্য অপব্যবহার করেছিলেন। সরকারের বক্তব্য ছিল যে আইন-শৃংখলা, দক্ষতা আনয়ন এবং সর্বোপরি দরিদ্র-সহায়ক কর্মসূচী কার্যকরী করার জন্য জরুরীকালীন ক্ষমতা ব্যবহার করতে চাওয়া হয়েছিল। এইজন্য ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন সরকার এক কুড়ি দফা কর্মসূচী ঘোষণা করে এবং এই কর্মসূচী কার্যে পরিণত করবার দৃঢ় সংকল্পের কথা প্রচার করে। এই কর্মসূচীর মধ্যে ছিল ভূমি সংস্কার, ভূমি পুনর্বণ্টন, কৃষি-সংক্রান্ত বেতন পুনর্বিবেচনা, পরিচালনার ক্ষেত্রে কর্মীদের অংশগ্রহণ, দাস শ্রমের উচ্ছেদ ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৫। কার আবেদনের উপর ভিত্তি করে ন্যায়ালয় ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল?
উত্তরঃ সোসালিষ্ট নেতা রাজনারায়ণ ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি এলাহাবাদ উচ্চ আদালতে এই ফলাফলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাঁর যুক্তি ছিল ইন্দিরা গান্ধী তাঁর নির্বাচনী প্রচারে সরকারি কর্মচারীদের ব্যবহার করেছিলেন। মামলার সত্যতা বিচার করে ১৯৭৫ সালের ১২ই জুন এলাহাবাদ উচ্চ আদালতের বিচারপতি জগমোহন লাল সিন্হা লোকসভায় ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচনকে অবৈধ বলে রায় দেন। এই রায়ের অর্থ ছিল যে তিনি আর লোকসভার সদস্য নন এবং সেইজন্য প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারেন না, যদিনা তিনি ছয় মাসের মধ্যে সাংসদ হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হন। ২৪শে জুন উচ্চতম আদালত উচ্চ আদালতের রায়ের উপর আংশিক স্থগিতাদেশ দিয়ে বলেন যে যতদিন পর্যন্ত শ্রীমতী গান্ধীর আপীল সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে ততদিন তিন সাংসদ থাকতে পারবেন, কিন্তু লোকসভার কার্যাবলীতে অংশ নিতে পারবেন না।
প্রশ্ন ৬। “জরুরিকালীন অবস্থা হল ভারতীয় রাজনীতির সর্বাপেক্ষা মতানৈক্যের বিষয়।” যুক্তি দাও।
উত্তরঃ জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত বাদ-প্রতিবাদ ভারতীয় রাজনীতিতে একটি অন্যতম প্রধান বিতর্কিত বিষয়। একটি কারণ হচ্ছে জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দৃষ্টিকোণের বিভিন্নতা। তা ঘোষণা করা হয়েছিল ৩৫২নং ধারা অনুসারে আভ্যন্তরীণ অশান্তির জন্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উক্ত অনুচ্ছেদে দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব প্রভৃতির সংকটের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণার ব্যবস্থা আছে। এইসময় নাগরিকদের সকল প্রকার অধিকার খর্ব করা হয়েছিল। সংবাদ মাধ্যমের উপর সকল প্রকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এমনকি আদালতে বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ ব্যবস্থাও রদ করা হয়েছিল। দেশে অশান্তি দমনে ও বিরোধী দমনের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। এর জন্য বিরোধী পক্ষকে স্বৈরাচারী শাসক দমন ও অত্যাচার চালিয়েছিল।
প্রশ্ন ৭। জরুরি অবস্থার সময় কি ঘটেছিল সেই সম্পর্কে সমালোচনামূলকভাবে পরীক্ষা কর।
উত্তরঃ জরুরি অবস্থার সমালোচকরা মতপ্রকাশ করেন যে সরকার প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিগুলির বেশিরভাগই অপূর্ণ রয়ে গিয়েছে এবং এগুলো কেবলমাত্র নিম্নলিখিত বাড়াবাড়ি থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য:
(ক) কুড়ি দফা কর্মসূচী ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মসূচী রূপায়ণের কাজ পুরনো কলুষিত এবং অদক্ষ আমলাতন্ত্র এবং যোগ্যতাহীন রাজনীতিবিদদের হাতে ন্যস্ত ছিল।
(খ) শাহ কমিশনের গননা অনুযায়ী ৬৭৬ জন বিরোধী নেতা এবং প্রায় লক্ষাধিক মানুষ নিবর্তনমূলক আটক আইনগুলির অধীনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কখনো কখনো সংবাদপত্রের উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছিল উপযুক্ত আইনি অনুমোদন ছাড়াই।
(গ) প্রধানমন্ত্রীর ছোট ছেলে সঞ্জয় গান্ধী সেই সময় কোন সরকারি পদে না থেকেও শাসনব্যবস্থার উপর কর্তৃত্ব হাসিল করেন ও অভিযোগ মতে সরকারের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করতে থাকেন। দিল্লীতে ধ্বংসকার্যে ও জোর করে নীর্বিজকরণে তাঁর ভূমিকা খুবই বিতর্কিত হয়ে ওঠে।
(ঘ) রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেপ্তার এবং মুদ্রণযন্ত্রের উপর বিধিনিষেধ ছাড়াও জরুরি অবস্থা অনেক ক্ষেত্রে দেশের সাধারণ মানুষকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে নিপীড়ন ও জিম্মাকালীন মৃত্যু জরুরি অবস্থায় ঘটেছে। যথেচ্ছভাবে দরিদ্র লোকেদের পুনঃসংস্থাপনের ঘটনা হয়েছে এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণের অত্যুৎসাহে জোর করে নির্বীজ করার ঘটনাও ঘটেছে। এই ঘটনাগুলো দেখায় যে স্বাভাবিকভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া স্থগিত থাকলে কি হতে পারে।
প্রশ্ন ৮। জরুরি অবস্থার পরও শেষ হয়ে না যাওয়া বিষয়সমূহ তালিকাবদ্ধ কর।
উত্তরঃ ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার হলেও কিছুসংখ্যক বিষয় এর পরও শেষ হয়ে যায় নি। সেইসকল বিষয়ের কয়েকটি নিম্নরূপ:
(ক) সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করা দলের একচেটিয়া মনোভাব।
(খ) সরকারের বিরুদ্ধে করা প্রতিবাদ ও আন্দোলন।
(গ) কার্যপালিকা ও ন্যায়পালিকার মধ্যে চলা সংঘাত।
(ঘ) সরকার গঠন করা ও বিরোধী দলের মধ্যে থাকা খারাপ সম্পর্ক।
(ঙ) আরক্ষী ও আমলাদের শাসকদলের প্রতি থাকা বিশেষ পক্ষপাতিত্ব।
প্রশ্ন ৯। জরুরি অবস্থা থেকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোক কি কি ভিন্ন আশা করেছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সময় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বিভিন্ন আশা-আকাঙ্খা তথা সমর্থন ও বিরোধীতার সূচনা হয়েছিল। কংগ্রেস দলকে সমর্থনকারীদের মতে জরুরি অবস্থা সমাজের উন্নতির সহায়ক হবে। সরকার গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পসমূহ কার্যকরণের জন্য ও আভ্যন্তরীণ অশান্তি দূরীকরণ করার জন্য জরুরি অবস্থার প্রয়োজন হয়েছিল। উপরন্তু এই অবস্থাকে সমর্থনকারী ভারতের সাম্যবাদী দলের নেতাগণ বিশ্বাস করেছিল যে সেই সময় ভারতে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করবার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গভীর ষড়যন্ত্র তৈরি করা হয়েছিল। এরূপ পরিস্থিতিতে দেশের আভ্যন্তরীণ গোলযোগ দমন করার জন্য জরুরি অবস্থা প্রয়োজন হয়েছিল। বিরোধী দলের নেতা ও জরুরি অবস্থার বিরোধিতাকারীদের মতে এর দ্বারা ভারতীয় গণতন্ত্র ম্লান হয়ে পড়বে এবং সাধারণ লোকের কোন ধরনের স্বাধীনতা থাকবে না।
প্রশ্ন ১০। জরুরি অবস্থার পরে ভারতের রাজনীতি সম্বন্ধে একটি টীকা লেখ।
উত্তরঃ আঠারো মাসের জরুরি অবস্থার পর ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি মাসে সরকার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধান বিরোধী দলগুলি জরুরি অবস্থার আগেই কাছাকাছি আসতে শুরু করেছিল। এখন নির্বাচনের প্রাক্কালে তারা জনতা দল বলে পরিচিত একটি দল গঠন করে। জয়প্রকাশ নারায়ণকে দলের নেতা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৭ সালের মার্চে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন জরুরি অবস্থার অভিজ্ঞতার ব্যাপারে অন্তত উত্তর ভারত যেখানে জরুরি অবস্থার প্রভাব খুব জোড়ালোভাবে অনুভূত হয়েছিল, সেখানে এটি গণভোটে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পরে প্রথমবারের মতো কংগ্রেস দল লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়। জনতা দল এবং এর সহযোগীরা ৩৩০টি আসনে জয়লাভ করে প্রথমবার অ-কংগ্রেসী সরকার গঠন করে।
জনতা দলে লক্ষহীনতা, নেতৃত্বের অভাব এবং নেতৃত্ব লাভের লড়াই ও সাধারণ কর্মসূচীর অভাবের ফলে ১৮ মাসেই সরকারের পতন ঘটে এবং ১৯৮০ সালে আবার লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে কংগ্রেস ৩৫৩টি আসনে জয়লাভ করে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসে।
প্রশ্ন ১১। কেশবানন্দ ভারতী মামলা সম্বন্ধে কি জানো লেখ।
উত্তরঃ নিন্মোক্ত তিনটি বিষয়ে সরকার এবং বিচার বিভাগের সংঘাত চরমে ওঠে এবং জটিলাবস্থা তৈরি হয়:
(ক) সংসদ মৌলিক অধিকার সংকোচন করতে পারে।
(খ) সংসদ সংশোধনের মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকার সংকোচন করতে পারে।
(গ) সংবিধান সংশোধন করে নির্দেশক নীতিসমূহ কার্যকরী করার জন্য মৌলিক অধিকারগুলি সংকোচন করা যায়।
উচ্চতম আদালত এই বিষয়গুলি নিয়ে সরকারের সঙ্গে একমত হতে পারে না। প্রতিটি ক্ষেত্রে উচ্চতম আদালত সরকারের মনোভাবকে অগ্রাহ্য করে। এর ফলে সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংকটের সৃষ্টি হয়। এই সংকট চরমে ওঠে বিখ্যাত কেশবানন্দ ভারতীর মামলায়। এই মামলায় আদালত এই সিদ্ধান্ত দেয় যে সংবিধানের বুনিয়াদী বৈশিষ্ট্য আছে এবং সংসদ সেই বুনিয়াদী বৈশিষ্ট্যগুলি সংশোধন করতে পারে না। দুটি পরিণতি বিচারবিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি করে। ১৯৭৩ সালে কেশবানন্দ ভারতী মামলায় উচ্চতম আদালতের রায়ের পর ভারতের প্রধান বিচারপতি পদটি খালি হয় ৷ প্রথা অনুযায়ী সর্বজ্যেষ্ঠ বিচারপতিই উচ্চতম আদালতের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন। কিন্তু ১৯৭৩ সালে সরকার তিনজন বিচারপতির জ্যেষ্ঠতা অগ্রাহ্য করে বিচারপতি এ এম রায়কে ভারতের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত করে, কেননা যাঁদের অতিক্রম করা হয় তাঁরা সরকারের অবস্থানের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন ১২। ১৯৭৪ সালের রেল ধর্মঘট-এর উপর একটি টীকা লেখ।
উত্তরঃ রেল কর্মীদের বোনাস ও চাকুরির শর্তাবলী-সংক্রান্ত দাবী আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে ১৯৭৪-এ জর্জ ফার্নান্ডেজের নেতৃত্বাধীন রেলকর্মী সংগ্রামের জাতীয় সমন্বয় কমিটি রেলের সব কর্মীদের ধর্মঘট করার আহ্বান জানান। সরকার এই দাবীগুলির বিরোধী ছিল। সুতরাং রেল কর্মচারীরা ধর্মঘটের পথ অবলম্বন করেন। রেলকর্মীদের ধর্মঘট দেশে শ্রমিক অসন্তোষের আবহ বৃদ্ধি করে এবং বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
সরকার ধর্মঘটকে বেআইনি ঘোষণা করে। ধর্মঘটী কর্মচারীদের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রেলপথ রক্ষা করার জন্য আঞ্চলিক সেনা নামানো হয়। এই অবস্থায় ২১ দিন পর কোন সমঝোতা ছাড়াই ধর্মঘটীরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
প্রশ্ন ১৩। ৪২তম সংবিধান সংশোধনের ৪টি মূল বিধানের বিষয়ে লেখ।
উত্তরঃ জরুরিকালীন অবস্থায় ৪২তম সংবিধান সংশোধন গৃহীত হয়। এই সংবিধান সংশোধনী আইনের ৪টি মূল বিধান নিম্নরূপ:
(ক) সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দুটির সংযোজন।
(খ) লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার মেয়াদ ৬ বছর করা।
(গ) প্রথমবার মৌলিক কর্তব্যের [Art 51A] উপর এক অধ্যায়ের সূচনা করা।
(ঘ) মৌলিক অধিকারগুলির অবমূল্যায়ন [Art 31 C] করা।
অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন ঘোষিত জরুরি অবস্থার যে-কোন ছয়টি ফলাফলের বিবরণ দাও।
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন ঘোষিত জরুরি অবস্থার ফলাফলের মধ্যে ছয়টি নিম্নরূপঃ
(ক) নাগরিকদের পৌর অধিকারের উপর প্রভাব: জরুরিকালীন অবস্থার সময় নিবারক আটক আইন-এর অধীন সরকার বহু লোককে গ্রেপ্তার করে। কিছু লোককে বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়। সাধারণ মানুষের বাস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়। সংবিধানে প্রদত্ত মানুষের কতিপয় মৌলিক অধিকারও ক্ষুণ্ন হয়।
(খ) কার্যপালিকা ও ন্যায়পালিকার উপর প্রভাব: জরুরিকালীন অবস্থার সময় নাগরিকের অধিকার বিশেষত পৌর অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। বহু লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে নিরপরাধ সাধারণ লোকও যেমন ছিল, তেমনি ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীগণ, সংবাদপত্রের মালিক ও সাংবাদিক। কয়েকটি উচ্চ ন্যায়ালয় রায় দিয়েছিল যে জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হওয়া লোক ন্যায়ালয়ের দ্বারস্থ হলে ন্যায়ালয় তাকে বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ -এর অধীন ন্যায় প্রদান করতে পারে। কিন্তু সরকার যুক্তি দেখিয়েছিল যে জরুরি অবস্থার সময় এইপ্রকার অভিযোগ মূল্যহীন হয়ে পড়ে এবং এইক্ষেত্রে ন্যায়ালয় সম্পূর্ণ কর্তৃত্বহীন। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে উচ্চতম ন্যায়ালয়ের সাংবিধানিক পীঠ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে ঘোষণা করে যে জরুরিকালীন অবস্থায় সরকার নাগরিক জীবন ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে।
(গ) গণমাধ্যমের কার্যাবলির উপর প্রভাব: জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর গণমাধ্যমসমূহের স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে লোপ পায়। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদপত্রসমূহকে সরকারের পূর্ব অনুমোদন নিতে হত। এইভাবে সরকার সংবাদপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা (Press Censorship) জারি করে। বহু সংবাদপত্রের মালিক ও সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে জেলবন্দি করা হয়।
(ঘ) পুলিশ ও আমলাদের কার্যাবলির উপর প্রভাব: পুলিশ ও আমলাগণ স্বাধীনভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারে নি। তারা শাসক দলের রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল। শাসক দল ও তার নেতাদের অঙ্গুলি নির্দেশেই তাদের কাজ করতে হত। ফলে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হত এবং তারা সুবিচার পেত না।
(ঙ) মৌলবাদী সংগঠনের উপর নিষেধাজ্ঞা: সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক বিভেদের আশঙ্কায় সরকার রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ, জামাত-ই-ইসলামী প্রভৃতি মৌলবাদী সংগঠনের ক্রিয়াকলাপের উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করে।
(চ) সরকারবিরোধী আন্দোলনের উপর প্রভাব: জরুরি অবস্থার ফলে সরকার- বিরোধী আন্দোলন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। কোন ন্যায্য কারণেও কোন প্রকার আন্দোলন, ধর্মঘট ইত্যাদি নিষিদ্ধ হয়। বহু নেতা ও কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারারুদ্ধ করা হয়। এর ফলস্বরূপ শ্রমিক শ্রেণী এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
প্রশ্ন ২। ১৯৮০ সালে মধ্যবর্তীকালীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণসমূহ কি কি ছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে জনতা পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে। নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মোরারজী দেশাই, চরণ সিং ও জগজীবন রামের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী তিনজন নেতাই রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক ছিলেন। অবশেষে দলের সিদ্ধান্তক্রমে মোরারজী দেশাই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কার্যভার গ্রহণ করেন। কিন্তু দলের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের সমাপ্তি হয়নি। জরুরি অবস্থার বিরোধিতায় জনতা পার্টি গঠিত হলেও এই দলের নিজস্ব একতা ও স্থায়িত্ব রক্ষায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। দলের মধ্যে সুনেতৃত্ব, নিয়মানুবর্তিতা ও অভিন্ন কার্য্যসূচীর অভাবের ফলে আশানুযায়ী জনতা পার্টি ভারতীয় রাজনীতিতে কোন পরিবর্তন সাধনে সক্ষম হয়নি। এর ফলস্বরূপ দলের মধ্যে বিভাজন দেখা দেয় এবং সরকার গঠনের আঠারো মাস সম্পূর্ণ হতে না হতেই মোরারজী দেশাই নেতৃত্বাধীন সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়। একটি পর্যায়ে মোরারজী দেশাই সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। দেশাই সরকারের পতনের পর কংগ্রেসের আশ্বাস লাভ করে চরণ সিং কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। কিন্তু পরে অনিবার্য কারণে চরণ সিং সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করলে চরণ সিং সরকার চার মাস পর ভেঙে যায়। এইরূপ রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে নূতন লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হয়েছিল। এই নির্বাচনে জনতা পার্টি যথেষ্ট বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত কংগ্রেস সর্বমোট ৩৫৩টি আসন লাভ করে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসে।
প্রশ্ন ৩। ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টি সরকার কর্তৃক শাহ আয়োগের নিযুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কেন এই নিযুক্তি দেওয়া হয়েছিল এবং এর প্রতিবেদনে কি ছিল?
উত্তরঃ জরুরিকালীন অবস্থা ঘোষণার পরবর্তীকালে (১৯৭৭ সালের মে মাসে) নবগঠিত জনতা পার্টি সরকার অনুসন্ধানমূলক শাহ কমিশন নিযুক্ত করে। ১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন সমগ্র দেশের ঘোষিত জরুরি অবস্থা চলাকালীন সময় সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার, গণতন্ত্র বিরোধী কঠোর নীতি-নিয়ম প্রবর্তন প্রভৃতি অনুসন্ধান করার উদ্দেশ্যে সুপ্রীম কোর্টের প্রাক্তন মুখ্য বিচারপতি জে. সি. শাহর নেতৃত্বে এই আয়োগ গঠন করা হয়। এই কমিশন বিভিন্ন প্রকার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ঘটনার অনুসন্ধান করেছিল এবং এই উদ্দেশ্যে সাক্ষীগণ তাদের নিজ নিজ প্রমাণ দাখিল করবার নির্দেশ দিয়েছিল। এই সাক্ষীগণের মধ্যে ইন্দিরা গান্ধীও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। উল্লেখ্য যে ইন্দিরা গান্ধী কমিশনের সামনে হাজির হলেও কোন প্রকার প্রশ্নের উত্তর দিতে অসম্মতি প্রকাশ করেন।
শাহ কমিশন হিসাব দিয়েছিল যে প্রায় এক লক্ষ এগারো হাজার লোককে গ্রেপ্তার করে কারাবাস দেওয়া হয়েছিল। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে দিল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিগমের জেনারেল ম্যানেজারকে ১৯৭৫ সালের ২৬শে জুন রাত ২টার সময় সকল সংবাদপত্র প্রেসে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। দুই-তিন দিন পর বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা হয়েছিল। জরুরি অবস্থার সময় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র সঞ্জয় গান্ধী দিল্লীতে বলপূর্বক নির্বীজকরণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। বস্তুত সঞ্জয় গান্ধী জরুরিকালীন অবস্থার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
প্রশ্ন ৪। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বিরোধীরা সরকার গঠন করে। এর কারণ তুমি কি বলে মনে কর?
উত্তরঃ ১৯৭৭ সালে লোকসভা নির্বাচনে স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো কেন্দ্রে বিরোধীরা ক্ষমতা দখল করে।
এই ঘটনার প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) কংগ্রেস বিরোধী প্রধান দলসমূহের মধ্যে প্রাক্-জরুরি অবস্থার সময় থেকেই এক ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। নির্বাচনের প্রাক্-মুহূর্তে এই দলসমূহ একসঙ্গে ‘জনতা পার্টি’ নামে একটি নূতন দল গঠন করে। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ।
(খ) জনতা পার্টি নির্বাচনী প্রচারে বিশেষ করে জরুরি অবস্থার সময় কংগ্রেস সরকারের গ্রহণ করা অগণতান্ত্রিক নিয়মনীতি এবং সাংবিধানিক ক্ষমতার অপব্যবহার প্রভৃতি বিষয়সমূহের উপর গুরুত্ব প্রদান করে। যেহেতু জরুরি অবস্থার সময় হাজার হাজার লোককে গ্রেপ্তার, সংবাদপত্রের উপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রভৃতি কারণে জনসাধারণ ইতিমধ্যে সরকারের উপর অসন্তুষ্ট হয়েছিল, সাধারণ মানুষ জয়প্রকাশ নারায়ণকে একজন যোগ্য নেতা হিসাবে গ্রহণ করতে আরম্ভ করে। এইরূপ পরিস্থিতিতে সেই সময় নির্বাচনী হাওয়া কংগ্রেস দলের বিপক্ষে প্রবাহিত হতে থাকে।
(গ) জয়প্রকাশ নারায়ণের নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার ফলে কংগ্রেস (সং), ভারতীয় জনসংঘ, ভারতীয় লোক দল এবং সমাজবাদী পার্টি এই চারটি দল মিলিত হয়ে একটি নূতন দল গঠন করে ভারতীয় রাজনীতিতে এক তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন সাধনে সক্ষম হয়। মোহন ধাড়িয়া, চন্দ্রশেখর, রামধন প্রমুখ বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস সদস্য জনতা পার্টিতে যোগদান করে। জনতা পার্টি মোরারজী দেশাইকে সভাপতি ও চরণ সিংকে উপ-সভাপতি নিযুক্ত করে। দলের ২৭ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় কমিটি ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
১৯৭৭ সালের নির্বাচন ভারতীয় রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সূচনা করে। এই নির্বাচনে কংগ্রেস লোকসভায় মাত্র ১৫৪টি আসন লাভ করে। অন্যদিকে জনতা পার্টি ও এর মিত্র দলসমূহ মোট ৫৪২টি আসনের মধ্যে ৩৩০টি আসন লাভ করে। জনতা পার্টি এককভাবেই ২৯৫টি আসন দখল করে। সমগ্র উত্তর ভারতে কংগ্রেস বিপর্যস্ত হয়। রায়বেরিলি কেন্দ্রে ইন্দিরা গান্ধী এবং তার পুত্র সঞ্জয় গান্ধী আমেথি কেন্দ্রে পরাজয বরণ করেন। দক্ষিণ ভারতে কংগ্রেস অবশ্য উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করে।
প্রশ্ন ৫। আমাদের দেশের রাজনীতিতে নীচের দেওয়া বিষয়সমূহের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি অবস্থার প্রভাব আলোচনা কর:
(ক) নাগরিকদের পৌর অধিকার।
(খ) কার্যপালিকা ও ন্যায়পালিকা।
(গ) গণমাধ্যমের কার্যাবলি।
(ঘ) পুলিশ ও আমলাদের কার্যপ্রণালী।
উত্তরঃ (ক) নাগরিকদের পৌর অধিকারের উপর প্রভাব: জরুরিকালীন অবস্থার সময় নিবারক আটক আইন-এর অধীন সরকার বহু লোককে গ্রেপ্তার করে। কিছু লোককে বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়। সাধারণ মানুষের বাস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়। সংবিধানে প্রদত্ত মানুষের কতিপয় মৌলিক অধিকারও ক্ষুণ্ন হয়।
(খ) কার্যপালিকা ও ন্যায়পালিকার উপর প্রভাব: জরুরিকালীন অবস্থার সময় নাগরিকের অধিকার বিশেষত পৌর অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। বহু লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে নিরপরাধ সাধারণ লোকও যেমন ছিল, তেমনি ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীগণ, সংবাদপত্রের মালিক ও সাংবাদিক। কয়েকটি উচ্চ ন্যায়ালয় রায় দিয়েছিল যে জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হওয়া লোক ন্যায়ালয়ের দ্বারস্থ হলে ন্যায়ালয় তাকে বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ -এর অধীন ন্যায় প্রদান করতে পারে। কিন্তু সরকার যুক্তি দেখিয়েছিল যে জরুরি অবস্থার সময় এইপ্রকার অভিযোগ মূল্যহীন হয়ে পড়ে এবং এইক্ষেত্রে ন্যায়ালয় সম্পূর্ণ কর্তৃত্বহীন। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে উচ্চতম ন্যায়ালয়ের সাংবিধানিক পীঠ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে ঘোষণা করে যে জরুরিকালীন অবস্থায় সরকার নাগরিক জীবন ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে।
(গ) গণমাধ্যমের কার্যাবলির উপর প্রভাব: জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর গণমাধ্যমসমূহের স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে লোপ পায়। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদপত্রসমূহকে সরকারের পূর্ব অনুমোদন নিতে হত। এইভাবে সরকার সংবাদপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা (Press Censorship) জারি করে। বহু সংবাদপত্রের মালিক ও সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে জেলবন্দি করা হয়।
(ঘ) পুলিশ ও আমলাদের কার্যাবলির উপর প্রভাব: পুলিশ ও আমলাগণ স্বাধীনভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারে নি। তারা শাসক দলের রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল। শাসক দল ও তার নেতাদের অঙ্গুলি নির্দেশেই তাদের কাজ করতে হত। ফলে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হত এবং তারা সুবিচার পেত না।
প্রশ্ন ৬। জরুরি অবস্থা প্রয়োগ ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থায় কি প্রভাব বিস্তার করেছিল? উদাহরণসহ তোমার উত্তরটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তরঃ ভারতে জরুরি অবস্থা প্রয়োগ ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থার উপর নানা প্রভাব বিস্তার করেছিল। সেইগুলি নিম্নরূপ:
(ক) প্রতিহিংসামূলক মনোবৃত্তি: জরুরি অবস্থার সময় ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দল বিরোধী দলের নেতা তথা দলীয় সদস্যদের উপর যে প্রকার হিংসাত্মক কার্যকলাপ সংঘটিত করেছিল এর পরিণামস্বরূপ পরবর্তী সময় সেই দলসমূহকে কংগ্রেসের উপর প্রতিহিংসাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা গেছে।
(খ) ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দল: বিরোধী দলের সকল নেতাই উপলব্ধি করেছিল যে নেতাদের প্রধান শত্রু হল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসকে পরাজিত করতে হলে সকল বিরোধী দলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। সেজন্য বহুদল আদর্শগত প্রভেদ থাকা সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধভাবে জনতা পার্টি গঠন করেছিল।
(গ) কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ কোন্দল: কংগ্রেসের সকল সদস্য জরুরি অবস্থাকে সমর্থন করেনি। অর্থাৎ কংগ্রেসের মধ্যে একটি আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। তারা অবশেষে জগজীবন রামের নেতৃত্বে ‘গণতন্ত্রের জন্য কংগ্রেস’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে।
(ঘ) কংগ্রেসের একচ্ছত্র শাসনের অবসান: জরুরি অবস্থাই কংগ্রেসের একচ্ছত্র শাসনব্যবস্থার সমাপ্তি ঘটাতে সহায়তা করেছে। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো একটি অকংগ্রেসী সরকার গঠিত হয়।
প্রশ্ন ৭। জনতা পার্টির নীতি ও কার্যসূচীর বিষয়ে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ জনতা পার্টি ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে।
এই দলের গ্রহণ করা প্রধান নীতি ও কার্যসূচী নিম্নরূপ:
(ক) সংবিধানের ৪৪নং সংশোধনীর মাধ্যমে কংগ্রেস সরকার জরুরি অবস্থার সময় ৪২তম সংশোধনীর নেতিবাচক দিক বাতিল করা।
(খ) সম্পত্তির অধিকার মৌলিক অধিকার থেকে বাদ দিয়ে এই অধিকারকে আইনগত অধিকারের মর্যাদা প্রদান করা।
(গ) লোকসভা ও রাজ্যিক বিধানসভার কার্যকাল ছয় বছরের থেকে পুনরায় পাঁচ বছরে হ্রাস করা।
(ঘ) উচ্চতম ন্যায়ালয় ও উচ্চ ন্যায়ালয়সমূহের রক্ষিত ক্ষমতা ও পদমর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
(ঙ) জরুরি অবস্থায় প্রবর্তন করা কঠোর ও বিতর্কমূলক আইনসমূহ বাতিল করা।
(চ) নির্দেশাত্মক নীতির তুলনায় মৌলিক অধিকারকে অগ্রাধিকার প্রদান করা।
প্রশ্ন ৮। ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনের যে-কোন তিনটি প্রধান ফলাফল বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ ১৯৭৭ সালের লোকসভার সাধারণ নির্বাচন ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি নূতন যুগের সূচনা করে।
এই নির্বাচনের প্রধান প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য প্রভাব হল শাসক কংগ্রেস দলের একাধিপত্যের সমাপ্তি। উক্ত নির্বাচনে শাসনাধীষ্ঠ কংগ্রেস মাত্র ১৫৩টি আসন দখল করে। ১৯৭১ সালের নির্বাচনে এই দল ৩৫২টি আসন দখল করেছিল। ইন্দিরা গান্ধী নিজ নির্বাচনী ক্ষেত্র উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলীতে রাজনারায়ণের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।
(খ) ১৯৭১ সালের নির্বাচনের অপর উল্লেখযোগ্য ফলশ্রুতি হল জনতা পার্টির আবির্ভাব। এই দল লোকসভায় মোট ২৭২টি আসন দখল করেছিল।
(গ) এই নির্বাচন উত্তর ও দক্ষিণে পার্থক্য আরও বৃদ্ধি করে। উত্তর ভারতে জনতা পার্টি অধিকাংশ আসন লাভ করে। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের জনগণ জনতা পার্টিকে প্রত্যাখ্যান করে কংগ্রেসের পক্ষে ভোটদান করে। উত্তর-দক্ষিণ বিভেদ ভারতীয় রাজনীতিতে একটি নূতন ঘটনা। জাত বর্ণ, আঞ্চলিকতাবাদ প্রভৃতি এই নির্বাচনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে নি।
প্রশ্ন ৯। ১৯৭৩ সালে ন্যায়পালিকা ও সংসদের মধ্যে চলা সংঘাতের বিষয় ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ১৯৬৭ সালের নির্বাচনের পর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে কার্যপালিকা ও ন্যায়পালিকার মধ্যে সংঘাত তীব্ররূপ ধারণ করেছিল। ন্যায়পালিকার কতিপয় রায় কংগ্রেসকে অসন্তুষ্ট করেছিল। কংগ্রেসের দৃষ্টিতে তা ছিল গণতন্ত্রের নীতি ও সংসদীয় প্রাধান্যতার প্রতি ন্যায়পালিকা থেকে আসা প্রত্যাহ্বান। কংগ্রেস অভিযোগ উত্থাপন করে যে, ন্যায়পালিকা একটি রক্ষণশীল প্রতিষ্ঠান এবং এজন্য এই প্রতিষ্ঠান কংগ্রেসের দরিদ্রপন্থী কল্যাণমূলক কার্যসূচী রূপায়ণে বাধা সৃষ্টি করছে।
ইন্দিরা গান্ধীর স্বৈরাচারী চরিত্রকে নিয়ন্ত্রণ করবার জন্য ন্যায়পালিকাসমূহে নিম্নোক্ত সাংবিধানিক প্রশ্নের উদয় হয়েছিল:
(ক) সংসদ মৌলিক অধিকার বাতিল করতে পারে কি?
(খ) সংবিধান সংশোধনী সম্পত্তির অধিকার সংকুচিত করতে পারে কি?
(গ) নির্দেশক নীতি রূপায়ণে মৌলিক অধিকার সংকুচিত করতে পারে কি?
ফলস্বরূপ ন্যায়পালিকা ও সংসদের মধ্যে তীব্র সংঘাত আরম্ভ হয়।
প্রশ্ন ১০। ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার প্রভাব বিষয়ে পরীক্ষা কর।
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থা ঘোষণা দেশের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর উপর নিম্নলিখিত বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে:
(ক) জরুরি অবস্থা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা আইন দ্বারা আন্দোলনকারী বহু নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নেতৃবৃন্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ, মোরারজী দেশাই, অটলবিহারী বাজপেয়ী, চন্দ্রশেখর প্রমুখ।
(খ) জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর দেশের গণমাধ্যমগুলির স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে লোপ পায়। সংবাদপত্রসমূহের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
(গ) জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর নাগরিকদের সকলপ্রকার অধিকার বাতিল করে দেওয়া হয়। এমনকি নাগরিকদের অধিকার রক্ষার জন্য বিচারালয়ের ক্ষমতাও হ্রাস করা হয়।
(ঘ) জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর সংসদের সকল ক্ষমতা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। রাজ্য সরকারসমূহকেও কেন্দ্র সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।
(ঙ) জরুরি অবস্থার সময়ে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন করা হয়। এই সংশোধন দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপর আঘাত হানে।
প্রশ্ন ১১। কংগ্রেস দল ও জনতা দলের বিভাজনের কারণগুলি কি কি?
উত্তরঃ ১৯৬৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে ইন্দিরা গান্ধী ও সিন্ডিকেটের মধ্যে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। ইন্দিরা গান্ধী তাঁর পছন্দের প্রার্থী ভি ভি গিরিকে বিজয়ী করতে সমর্থ হন এবং কংগ্রেস দল দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়—সিন্ডিকেট নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস (অ) এবং ইন্দিরা গান্ধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস (আর)। ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস (আর) ৩৫২টি আসন লাভ করে কংগ্রেস (অ)-কে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বহীন করে দেয়। ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। তাঁর এই পদক্ষেপকে দলের ভিতরের অনেক নেতাই সমর্থন করতে পারেন নি। জরুরি অবস্থার সময় সরকারের দমন ও পীড়ন নীতির যাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন তাঁরা জগজ্জীবন রামের নেতৃত্বে ‘গণতন্ত্রের জন্য কংগ্রেস’ নামে একটি আলাদা দল গঠন করেন।
১৯৭৭ সালের জানুয়ারি মাসে আঠারো মাসের জরুরি অবস্থার পর সরকার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধান বিরোধী দলগুলি জরুরী অবস্থার পূর্বেই কাছাকাছি আসতে শুরু করেছিল। এবার নির্বাচনের প্রাক্কালে তাঁরা একসঙ্গে আসে ও জনতা দল নামে একটি দল গঠন করে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ জিগির তুলে নির্বাচনে লড়াই করে। জনসাধারণের রায় বিশেষ করে উত্তর ভারতে জরুরী অবস্থার বিরুদ্ধে ছিল। জনতা দল এবং এর সহযোগীরা ৩৩০টি আসনে জয়লাভ করে। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো কেন্দ্রে অ-কংগ্রেসী সরকার গঠিত হয়।
জনতা দল ও তার সহযোগীরা পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করলেও তাদের কাছে কোন সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী ছিল না। বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের দ্বারা গঠিত এই দলের মধ্যে মতাদর্শগত তফাত ছিল। আর ছিল প্রধানমন্ত্রীত্ব লাভের স্পৃহা। জরুরী অবস্থার বিরোধিতা কিছু দিনের জন্য জনতা দলকে একসঙ্গে রাখে, কিন্তু এই দলে লক্ষ্যহীনতা, নেতৃত্বের অভাব এবং সাধারণ কর্মসূচীর অভাব ইত্যাদি কারণে জনতা দল বিভাজিত হয়। এইরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছিল ১৯৮৯ সালে যখন ভি পি সিংহের নেতৃত্বাধীন অ-কংগ্রেসী সরকার কেন্দ্রে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতা অর্জন করেছিল।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১২। ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রীত্বের কালে ভারতে সংঘটিত হওয়া কার্যপালিকা ও ন্যায়পালিকার মধ্যে সংঘাতের বিষয়ে সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ জরুরিকালীন অবস্থার সময় নাগরিকের অধিকার বিশেষত পৌর অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। বহু লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে নিরাপরাধ সাধারণ লোকও যেমন ছিল, তেমনি ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীগণ, সংবাদপত্রের মালিক ও সাংবাদিক। কয়েকটি উচ্চ ন্যায়ালয় রায় দিয়েছিল যে জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হওয়া লোক ন্যায়ালয়ের দ্বারস্থ হলে ন্যায়ালয় তাকে বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ-এর অধীন ন্যায় প্রদান করতে পারে। কিন্তু সরকার যুক্তি দেখিয়েছিল যে জরুরি অবস্থার সময় এইপ্রকার অভিযোগ মূল্যহীন হয়ে পড়ে এবং এই ক্ষেত্রে ন্যায়ালয় সম্পূর্ণ কর্তৃত্বহীন। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে উচ্চতম ন্যায়ালয়ের সাংবিধানিক পীঠ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে ঘোষণা করে যে জরুরিকালীন অবস্থায় সরকার নাগরিক জীবন ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে।
প্রশ্ন ১৩। ১৯৭৫ সালে সরকার কি কারণে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) আর্থিক সংকট: ১৯৭১ সালে পঞ্চম লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারের মূল বিষয় ছিল ‘গরিবী হঠাও’ অর্থাৎ দারিদ্র দূরীকরণ। কিন্তু নির্বাচনের অনেক পরেও দেশের আর্থিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের যুদ্ধ ভারতের আর্থিক অবস্থার উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) হইতে ৮-৯ লক্ষ শরণার্থী ভারতে চলে আসে। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শেষের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সকল প্রকার সাহায্য সহায়তা বন্ধ করে দেয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায় ৷ ১৯৭২-৭৩ সালে খরা ও অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। ফলে কৃষি উৎপাদন দারুণ হ্রাস পায়। তাছাড়া শিল্পোৎপাদন অস্বাভাবিক হ্রাস পায়। বেকার সমস্যা তীব্রতর হয়। সুতরাং আর্থিক অবস্থার উপর সাধারণ জনগণের অসন্তোষ দেখা দেয়। আর্থিক অবস্থার উন্নতির কোন লক্ষণ দেখা দেয়নি।
(খ) গুজরাট ও বিহার আন্দোলন এবং রেল ধর্মঘট: কংগ্রেস শাসিত গুজরাট্ ও বিহার উভয় রাজ্যে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন উভয় রাজ্য ও সমগ্র ভারতের রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৭৪ সালে এই দুই রাজ্যের ছাত্র সম্প্রদায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খাদ্যবস্তু ও রান্নার তেল, বেকার সমস্যা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। বিহারে লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হতে থাকে। জনগণ রাজ্যের কংগ্রেস সরকার বরখাস্তের দাবি জানান। জয়প্রকাশ নারায়ণ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সর্বাত্মক বিপ্লবের ডাক দিলেন। বিহার সরকার পদত্যাগ না করলেও তা জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রধান কারণ ছিল। ১৯৭৪ সালের দীর্ঘদিনের রেল ধর্মঘট রেল পরিষেবা বিপর্যস্ত করে তোলে, ফলে দেশে শ্রমিক সমস্যা ও শ্রমিক অস্থিরতা দেখা দেয়।
(গ) এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়: ১৯৭৫ সালের ১২ই জুন এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৭১ সালের লোকসভায় তাঁর নির্বাচন বাতিল বলে রায় দান করেন। এই রায় দান ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনারায়ণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়েছিল। নির্বাচনে রাজনারায়ণ ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এই রায়ের তাৎপর্য হল যে শ্রীমতী গান্ধী আর লোকসভার সদস্য নন এবং এই কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর কার্য সম্পাদন করতে পারবেন না।
(ঘ) ইন্দিরা গান্ধীর পদত্যাগ দাবি: এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে বিরোধী দলসমূহ ইন্দিরা গান্ধীর পদত্যাগ দাবি করে। দলগুলি দিল্লীর রামলীলা ময়দানে ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে। জয়প্রকাশ নারায়ণ দেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ, সরকারি কর্মচারী সবাইকে অবৈধ এবং অনৈতিক সরকারের আদেশ মান্য করতে বারণ করেন।
দেশের এইরূপ রাজনৈতিক অস্থির অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন সারা দেশে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
প্রশ্ন ১৪। জরুরিকালীন অবস্থা থেকে ভারতের গ্রহণ করা শিক্ষার বিষয়ে ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ভারতীয় গণতন্ত্রে জরুরিকালীন অবস্থার প্রভাব দুই দিকে লক্ষ্য করা যায়। কতিপয় রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের মতে জরুরি অবস্থার সময় ভারতীয় গণতন্ত্র অধিক শক্তিশালী রূপ ধারণ করেছিল। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে এইসময় সকল ক্ষমতা কেন্দ্র সরকারের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই গণতান্ত্রিক কার্যাবলীর সংকোচন ঘটে। এই অভিজ্ঞতা থেকে ভারতীয় গণতন্ত্রে জরুরি অবস্থা বলবৎ করা যে সুস্থ গণতান্ত্রিক পরম্পরার উপরে আঘাত এটা সকলেই উপলব্ধি করেছিল।
দ্বিতীয়ত ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর সংসদ ও রাষ্ট্রপতির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা হয়। সংবিধান স্বীকৃত জরুরিকালীন ক্ষমতার বিষয়ে বিভিন্ন মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। জরুরি অবস্থা শেষ হওয়ার পর গঠিত জনতা সরকারের আমলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে কেবল সশস্ত্র বিদ্রোহ দ্বারা জাতীয় ঐক্য বিপন্ন হলে দেশে আভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারা যাবে।
তৃতীয়ত, জরুরি অবস্থা ঘোষণা নাগরিকদের নিজেদের স্বাধীনতার প্রতি সচেতন করে তোলে। জরুরি অবস্থার সময় নাগরিকদের স্বাধীনতা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ন্যায়িক ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে অসহায় হয়ে পড়ে। তথাপি রাজ্যসমূহের উচ্চ ন্যায়ালয়সমূহে নাগরিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তদুপরি জরুরি অবস্থায় লভ করা অভিজ্ঞতার ফলে নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংস্থা গড়ে উঠেছিল।
প্রশ্ন ১৫। বিহার আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে বিহারের ছাত্র সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দুর্নীতি ও বেকার সমস্যা প্রভৃতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন সর্বাত্মক আন্দোলনের নেতা লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে দেশে প্রকৃতার্থে গণতন্ত্র গড়ে তুলতে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অর্থাৎ সর্বাত্মক আন্দোলনের দ্বারাই প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এই উদ্দেশ্যে তিনি বিহারের শাসনাধীন কংগ্রেস সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। কিন্তু জয়প্রকাশ নারায়ণ অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে বিহারে শুরু হওয়া এই আন্দোলন সমগ্র দেশে বিস্তার লাভ করে। জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে প্রায় এক বছরের অধিক সময় চলা এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক পরিভাষায় ‘সর্বাত্মক আন্দোলন’ নামে অভিহিত করা হয়।
বিহার আন্দোলনের প্রতি সেই সময় বিভিন্ন সংগঠন ও দল সমর্থন জানায়। আন্দোলনকারীদের সাহায্যের জন্য অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘বিহার ছাত্র সংঘর্ষ সমিতি’ গঠন করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, যেমন—ভারতীয় জনসংঘ, ভারতীয় লোকদল, ইন্দিরা বিরোধী কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি প্রভৃতি বিহার আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়।
প্রশ্ন ১৬। গুজরাট আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা,
গুজরাটের নবনির্মাণ আন্দোলনের উপরে একটি টীকা লেখ।
উত্তরঃ দ্রব্যসামগ্রীর অভাব তথা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি প্রভৃতি সমস্যার বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে গুজরাটের ছাত্রসমাজের মধ্যে এক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এর প্রতি বিরোধী দলসমূহ পূর্ণ সমর্থন ও সহায়তা প্রদান করে। এই আন্দোলনকে ‘নবনিৰ্মাণ’ বা ‘সামাজিক পুনর্নির্মাণ’ আন্দোলন বলে অভিহিত করা হয়। এই আন্দোলন আড়াইমাস ব্যাপী চলে। কংগ্রেস দলের প্রধান বিরোধী দলসমূহ রাজ্য বিধানসভার নূতন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবার দাবি উত্থাপন করে। কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা মোরারজী দেশাই দেশে নূতন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি দেন। তাছাড়াও দুর্নীতির প্রতিবাদে গুজরাটের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী চিমন ভাই প্যাটেলের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলনকারীগণ ধীরে ধীরে বন্ধ, হরতাল প্রভৃতি ঘোষণা করে। এইভাবে গুজরাট আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করলে সরকার উপায়ান্তর হয়ে ১৯৭৫ সালের জুন মাসে নূতন করে বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে। বলাবাহুল্য এই নির্বাচনে কংগ্রেস দল ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং গুজরাটে মোর্চা সরকার গঠিত হয়।
প্রশ্ন ১৭। নকশাল আন্দোলন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য জেলা দার্জিলিং সংলগ্ন নকশালবাড়ি পুলিশ স্টেশন এলাকায় স্থানীয় সি পি এম. নেতৃবৃন্দের সহায়তায় ১৯৬৭ সালে কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। শীঘ্রই এই বিদ্রোহ অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরালা প্রভৃতি রাজ্যেও বিস্তারলাভ করে। এই আন্দোলনকেই নকশাল আন্দোলন বলা হয়। ১৯৬৯ সালে আন্দোলনকারীগণ সি. পি. এম. থেকে বের হয়ে আসে এবং কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী – লেনিনবাদী) CPI(ML) নামে দল গঠন করে। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন চারু মজুমদার। তারা ভারতীয় গণতন্ত্রকে একটি প্রহসন বলে মনে করে এবং বিপ্লব ঘটানোর উদ্দেশ্যে তারা গেরিলা যুদ্ধকৌশল অবলম্বন করে। নকশাল আন্দোলন বলপূর্বক ধনী জমিদারদের জমি দখল করে তা গরিব ভূমিহীন জমিদারদের মধ্যে বণ্টন করার পক্ষপাতী। নকশাল আন্দোলন বিস্তৃত অধিকাংশ এলাকাই অত্যন্ত পশ্চাদপদ এবং আদিবাসী অধ্যুষিত। এইসময় এলাকায় ভাগচাষীদের তাদের ন্যায্য পাওনা ও মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত করা হত। অধিকন্তু তারা ঋণদাতাদের দ্বারাও শোষিত ও অত্যাচারিত হত।
প্রশ্ন ১৮। জরুরিকালীন অবস্থা প্রকৃতপক্ষে অপরিহার্য ছিল কি? সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালে সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে ইন্দিরা গান্ধী সরকার জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রাক্কালে ভারতবর্ষে ধীরে ধীরে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ তথা আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এইরূপ পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য রেখে সরকার দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।
সেইসময় সমগ্র দেশ জুড়ে জনসাধারণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল যে সেই বিশেষ মুহূর্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা অপরিহার্য ছিল কি? সরকার এর সমর্থনে এই যুক্তি দেখিয়েছিল যে একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে বিরোধী দলসমূহের সরকারি কাজকর্ম পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ সাহায্য ও সমর্থন করা উচিত এবং সরকারের নীতি অনুযায়ী কার্য করবার সম্মতি প্রদান করতে হয়। কিন্তু এর পরিবর্তে বিরোধী দলসমূহ সরকারবিরোধী আন্দোলন বা বিদ্রোহে লিপ্ত হলে গণতন্ত্র কখনও সফল হতে পারেনা। ইন্দিরা গান্ধীর সমর্থকগণও এই মত প্রকাশ করেছিল যে জনসাধারণ অ-সাংবিধানিক তথা সরকার- বিরোধী কার্যে লিপ্ত হলে প্রশাসন ব্যবস্থায় অস্থিরতা দেখা দেয়। সরকারকে এই ধরনের কার্যকলাপ রোধ করবার জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় তথা অর্থ ব্যয় করতে হয়। তা দেশের বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এইরূপ প্রশাসনের ক্ষেত্রে সৃষ্টি করা জটিল তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ
প্রশ্ন ১। জরুরি অবস্থার সময়ে নীচে দেওয়া কোন্ কোন্ বাক্য শুদ্ধ বা অশুদ্ধ লেখ:
(ক) ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা ১৯৭৫ সালে ঘোষণা করেছিলেন।
উত্তরঃ অশুদ্ধ।
(খ) জরুরি অবস্থা মৌলিক অধিকার রহিত করেছিল।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(গ) জরুরি অবস্থা আর্থিক মন্দাবস্থার জন্য ঘোষণা করা হয়েছিল।
উত্তরঃ অশুদ্ধ।
(ঘ) জরুরি অবস্থার সময় বহু বিরোধী নেতাকে আটক করা হয়েছিল।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(ঙ) সি.পি.আই. দল জরুরি অবস্থাকে সমর্থন করেছিল।
উত্তরঃ অশুদ্ধ।
প্রশ্ন ২। নিম্নোক্তগুলি মিলিয়ে লেখ:
(a) সর্বাত্মক বিপ্লব।
(b) গরীবী হঠাও।
(c) ছাত্র আন্দোলন।
(d) রেল ধর্মঘট।
(i) ইন্দিরা গান্ধী।
(ii) জয়প্রকাশ নারায়ণ।
(iii) বিহার আন্দোলন।
(iv) জর্জ ফার্নান্ডেজ।
উত্তরঃ (a) সর্বাত্মক বিপ্লব।
(b) গরীবী হঠাও।
(c) ছাত্র আন্দোলন।
(d) রেল ধর্মঘট।
(ii) জয়প্রকাশ নারায়ণ।
(i) ইন্দিরা গান্ধী।
(iii) বিহার আন্দোলন।
(iv) জর্জ ফার্নান্ডেজ।
প্রশ্ন ৩। ইন্দিরা গান্ধী আভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা কোন্ বছর প্রয়োগ করেছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালে।
প্রশ্ন ৪। ১৯৭৫ সালে আভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?
উত্তরঃ ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ।
প্রশ্ন ৫। ১৯৭১ সালের নির্বাচনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে হয়েছিলেন?
উত্তরঃ শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী।
প্রশ্ন ৬। ভারতের প্রথম অকংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তরঃ মোরারজী দেশাই।
প্রশ্ন ৭। নকশালবাদী আন্দোলনের নেতা কে ছিলেন?
উত্তরঃ চারু মজুমদার।
প্রশ্ন ৮। সর্বাত্মক আন্দোলনের নেতা কে ছিলেন?
উত্তরঃ জয়প্রকাশ নারায়ণ।
প্রশ্ন ৯। ১৯৭৪ সালে রেল ধর্মঘট কতদিন চলেছিল?
উত্তরঃ ২০ দিন।
প্রশ্ন ১০। শাহ কমিশন কখন গঠন করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৭ সালের মে মাসে।
প্রশ্ন ১১। মোরারজী দেশাই কখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে।
প্রশ্ন ১২। জনতা পার্টি সরকারের পতন কখন হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৯ সালের জুলাই মাসে।
প্রশ্ন ১৩। ভারতীয় ক্রান্তি দল কে গঠন করেছিলেন?
উত্তরঃ চরণ সিং।