Class 10 Social Science Chapter 10 ভারতীয় গণতন্ত্র 

Class 10 Social Science Chapter 10 ভারতীয় গণতন্ত্র Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 10 Social Science Chapter 10 ভারতীয় গণতন্ত্র and select needs one.

Class 10 Social Science Chapter 10 ভারতীয় গণতন্ত্র

Join Telegram channel

Also, you can read SCERT book online in these sections Class 10 Social Science Chapter 10 ভারতীয় গণতন্ত্র Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 10 Social Science Chapter 10 ভারতীয় গণতন্ত্র These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 10 Social Science Chapter 10 ভারতীয় গণতন্ত্র for All Subject, You can practice these here..

ভারতীয় গণতন্ত্র

               Chapter – 10

তৃতীয় খণ্ড – রাজনীতি বিজ্ঞান

অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন

প্রশ্ন ১। ১৯৪৫ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইংল্যান্ডের কোন দল জয়ী হয়েছিল ? 

উত্তরঃ শ্রমিক দল । 

প্রশ্ন ২। কত সালে ‘ কেবিনেট মিশন ’ ভারতে এসেছিল ? 

উত্তরঃ ১৯৪৬ সনের মার্চ মাসে ‘ কেবিনেট মিশন ‘ ভারতে এসেছিল । 

প্রশ্ন ৩। ভারতীয় সংবিধান সভার প্রথম সভাপতি কে ছিলেন ? 

উত্তরঃ ড . সদ্ভিদানন্দ সিনহা । 

প্রশ্ন ৪। সংবিধানের খসড়া সমিতির অধ্যক্ষের নাম কী ? 

উত্তরঃ ড . বি . আর . আম্বেদকর । 

প্রশ্ন ৫। ‘ সমাজবাদী ’ এবং ‘ ধর্মনিরপেক্ষ ‘ শব্দ দুটি সংবিধানের কত সংখ্যক সংশোধনে প্রস্তাবনায় সন্নিবিষ্ট হয়েছিল ? 

উত্তরঃ সংবিধানের ৪২ নং সংশোধনী আইনের মাধ্যমে ১৯৭৬ সনে ‘ সমাজবাদী ’ ও ‘ ধর্মনিরপেক্ষ ‘ শব্দ দুটি প্রস্তাবনায় সন্নিবিষ্ট করা হয়েছিল । 

প্রশ্ন ৬। ইংরেজী Federation শব্দটি লেটিন কোন্ শব্দ থেকে আগত ? 

উত্তরঃ ইংরেজী Federation শব্দটি লেটিন শব্দ ‘ Foedus ’ শব্দ হতে এসেছে । 

প্রশ্ন ৭। ‘ যুক্তরাষ্ট্রের গৃহভূমি ’ বললে কাকে বোঝায় ? 

উত্তরঃ আমেরিকাকে ‘ যুক্তরাষ্ট্রের গৃহভূমি ’ বলা হয় ।

প্রশ্ন ৮। ভারতবর্ষে দ্বৈত নাগরিকত্বের ব্যবস্থা আছে কি ? 

উত্তরঃ ভারতবর্ষে দ্বৈত নাগরিকত্বের ব্যবস্থা নাই । 

প্রশ্ন ৯। ভারতবর্ষের সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারণা কোন দেশের সংবিধানের অনুকরণে গঠিত হয়েছে ? 

উত্তরঃ ভারতবর্ষের সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারণাটি কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান থেকে অনুসরণ করা হয়েছে । 

সংক্ষেপে উত্তর দাও 

প্রশ্ন ১। ব্রিটিশ সরকার কেন ভারতবর্ষে ‘ কেবিনেট মিশন ’ প্রেরণ করেছিল ? 

উত্তরঃ ভারতবর্ষের একটি সংবিধান রচনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ এবং প্রস্তুতি চালনার অর্থে ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৬ সনের মার্চ মাসে ‘ কেবিনেট মিশন’কে ভারতবর্ষে পাঠিয়েছিল । এই ‘ কেবিনেট মিশন ’ ইংল্যান্ডের তিনজন কেবিনেট মন্ত্রীর দ্বারা গঠিত একটি দল । এই কেবিনেট মিশনের তৎপরতায় সংবিধান সভা ( Constituent Assembly ) গঠন হয়েছিল এবং এর প্রথম বৈঠকটি বসেছিল ১৯৪৬ সনের ৯ ডিসেম্বর তারিখে । সংবিধান সভার প্রথম বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছিলেন এর জ্যেষ্ঠ সদস্য ড . সদ্ভিদানন্দ সিনহা ।

প্রশ্ন ২। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারী পর্যন্ত ভারতবর্ষের শাসন ব্যবস্থা কোন আইনের ভিত্তিতে চলেছিল এবং আইনটি কে প্রস্তুত করেছিল ? 

উত্তরঃ ১৯৪৭ সনের ১৫ আগস্ট হতে ১৯৫০ সনের ২৬ জানুয়ারী পর্যন্ত ভারতবর্ষের শাসন ব্যবস্থা চলেছিল ১৯৩৫ সনের ভারত সরকার আইন অনুসারে । 

প্রশ্ন ৩। প্রস্তাবনায় ‘ আমরা ভারবাসী জনগণ ’ বলে কেন উল্লেখ করা হয়েছে ? 

উত্তরঃ প্রস্তাবনায় ‘ আমরা ভারতবাসী জনগণ ‘ বলে উল্লেখ করে সংবিধানের প্রণেতাগণ স্পষ্ট করেছেন যে সংবিধানটি রচনা করে ভারতীয় জনগণ , সংবিধানটি ভারতীয় জনগণের এবং ভারতীয় জনগণই সংবিধানের মূলে থাকা বৃহৎ শক্তি । উল্লেখযোগ্য যে সংবিধান প্রণেতাগণ সংবিধান প্রস্তুতের সময়ে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিকটির প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং সেই আদর্শ সংবিধানের পাতায় প্রস্ফুটিত হওয়া চেয়েছিলেন । 

প্রশ্ন ৪। ‘ সার্বভৌম ’ কথার মানে কী ? 

উত্তরঃ রাষ্ট্র গঠনের সর্বপ্রধান উপাদান হল সার্বভৌমিকতা । এটি রাষ্ট্রের প্রাণস্বরূপ । সার্বভৌমিকতা বলতে চূড়ান্ত ক্ষমতাকে বুঝায় । এর অর্থ : রাষ্ট্রের হাতে এমন এক ক্ষমতা থাকবে যা রাষ্ট্রের অন্তর্গত সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে আনুগত্য লাভে সক্ষম হবে এবং যা বৈদেশিক প্রভাব মুক্ত হবে । ভারতবর্ষ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র । সার্বভৌমত্ব হল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা । অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে ভারতবর্ষ কোনো বিদেশী শক্তির অধীনে নয় এবং আভ্যন্তরীণভাবে ভারতবর্ষ কোনো শক্তির দ্বারা পরিচালিত হয় না । 

প্রশ্ন ৫। কোন সালের কত সংখ্যক সংশোধন অনুসারে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ সমাজবাদী ’ এবং ‘ ধর্মনিরপেক্ষ ‘ শব্দ দুটি সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে ? 

উত্তরঃ ১৯৭৬ সনের সংবিধানের ৪২ নম্বর সংশোধনী আইনের মাধ্যমে ভারতবর্ষে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ সমাজবাদী ’ ও ‘ ধর্মনিরপেক্ষ ’ শব্দ দুটি সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে । 

সমাজবাদীর মাধ্যমে ভারতবর্ষের মানুষের মধ্যে আয় , মর্যাদা এবং জীবন ধারণের মানদণ্ডের বিষয়ে বৈষম্য অথবা অসমতা থাকবে না । উৎপাদনের বস্তুসমূহ জাতীয়- করণ হবে । জাতীয় আয়ের সমবিতরণের ব্যবস্থা এবং মিশ্র অর্থনীতির মাধ্যমে সমাজবাদ প্রতিষ্ঠা হবে । 

ধর্মনিরপেক্ষ বলতে ভারতের কোনো রাষ্ট্রীয় ধর্ম নাই । এখানে সরকারী ধর্ম ( official religion বা state religion ) বলে কোনো ধর্ম থাকবে না । সরকার সকল ধর্মের প্রতি সমান ব্যবহার , সকল ধর্মের লোককে সমান সুবিধা ও অধিকার দিয়েছে। 

প্রশ্ন ৬। ‘ অর্ধ – যুক্তরাষ্ট্র ’ কাকে বলে ? 

উত্তরঃ ভারতবর্ষের যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত চরিত্র অথবা বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে একটি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও আমাদের ব্যবস্থাটি প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা হয় নি । এখানে এককেন্দ্রীয় সরকারের বহু বৈশিষ্ট্য একাত্ম হয়ে আছে । সেইজন্য সংবিধান প্রণেতা পণ্ডিতগণ আমাদের শাসন ব্যবস্থাটিকে ‘ অর্ধ – যুক্তরাষ্ট্র ‘ বলে অভিহিত করেছেন । আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মত আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গ রাজ্যসমূহের বিলগ্ন হওয়া বা পৃথক বা আলাদা হয়ে যাওয়ার অধিকার নাই । অন্য যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গ রাজ্যসমূহের পৃথক বা আলাদা সংবিধান আছে । 

আমাদের যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গ রাজ্যসমূহের পৃথক বা আলাদা সংবিধান নাই । সমগ্র ভারত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি সংবিধান এবং সেইটি হল ‘ ভারতীয় সংবিধান ’ । অন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় সরকার অধিক শক্তিশালী । অঙ্গ রাজ্যগুলিতে থাকা রাজ্যপালগণের নিযুক্তির প্রক্রিয়াই ভারতবর্ষকে যুক্তরাষ্ট্রীয় চরিত্র প্রদান করা হয় নি । রাজ্যপাল প্রতিটি রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে।আমেরিকার মত ভারতবর্ষে ‘ দ্বৈত নাগরিকত্ব ’ ব্যবস্থা নাই । ভারতবর্ষে একক নাগরিকত্বের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । উপরোক্ত কারণগুলির জন্য ভারতবর্ষকে ‘ অর্ধ – যুক্তরাষ্ট্র ‘ বলা হয় । 

প্রশ্ন ৭। কোন আইন ভারতবর্ষে সীমিত সংসদীয় শাসন – পদ্ধতির প্রবর্তন করেছিল ? 

উত্তরঃ ১৯৩৫ সনের ভারত সরকার আইনটি সীমিতরূপে পরাধীন ভারতবর্ষে সংসদীয় সরকারের পদ্ধতির প্রবর্তন করেছিল । যদিও ইংল্যান্ডের সংসদীয় পদ্ধতির প্রভাব আমাদের সংবিধানে পড়েছে তথাপি সংবিধান প্রণেতাগণ অন্ধভাবে ইংল্যান্ডের সংবিধান অনুকরণ না করে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা তথা পরিবেশের প্রতি লক্ষ্য রেখে সকল কথাকে ভারতীয়করণ করে সংবিধানের পাতায় স্থাপন করেছিলেন । ফলস্বরূপ ভারতের সংসদীয় পদ্ধতি কিছু ব্যতিক্রমধর্মী হয়েছে । 

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্ন 

প্রশ্ন ১। ভারতবর্ষের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সংবিধানের আদর্শ কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে আলোচনা করো । 

উত্তরঃ প্রস্তাবনার অর্থ হল ভূমিকা । প্রস্তাবনাকে মূল সংবিধানের প্রহরী, বিবেক বা আত্মা বলে বলা হয় । প্রস্তাবনায় সংবিধানের আদর্শ , দর্শন , লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে । প্রস্তাবনায় সংবিধানের উদ্দেশ্য , মূলনীতি ও আইনগত ভিত্তি নির্দেশ থাকে । ভারতের সংবিধানেরও একটি প্রস্তাবনা আছে । 

‘ আমরা ভারতীয় জনসাধারণ ‘ ( We the people of India ) বলে আরম্ভ হওয়া প্রস্তাবনায় থাকা প্রতিটি শব্দে নিহিত হয়ে আছে নির্দিষ্ট আদর্শ । উল্লেখযোগ্য যে সংবিধান প্রণেতাগণ প্রস্তুতকালীন ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিকটির প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং সেই আদর্শ সংবিধানের পাতায় প্রস্ফুটিত হোক চেয়েছিলেন । 

প্রস্তাবনায় ‘ আমরা ভারতীয় জনসাধারণ ’ বলে উল্লেখ করে সংবিধান প্রণেতাগণ স্পষ্ট করেছেন যে সংবিধানটির রচক ভারতীয় জনগণ , সংবিধানটি ভারতীয় জনগণের এবং ভারতীয় জনগণই সংবিধানের মূলে থাকা বৃহৎ শক্তি । প্রস্তাবনায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ শব্দ কয়টি হ’ল – ‘ সার্বভৌম ‘ ( Sovereign ) , ‘ সমাজবাদী ’ ( Socialist ) , ‘ ধর্মনিরপেক্ষ ’ ( Secular ) , ‘ গণতান্ত্রিক ’ ( Democratic ) ও ‘ প্রজাতন্ত্র ‘ ( Republic ) । এই সবগুলি শব্দের মধ্যে সংবিধানের আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে । 

তদুপরি প্রস্তাবনায় উল্লেখ আছে যে ভারতের জনগণই দেশটিতে ন্যায় , স্বাধীনতা , সমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করবে । ন্যায় , স্বাধীনতা , সমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে সংবিধান প্রণেতাগণ সংবিধানের আদর্শ ও লক্ষ্যকে বিশেষভাবে প্রতিফলিত করেছেন । 

প্রশ্ন ২। ‘ সার্বভৌম ’ , ‘ সমাজবাদী ’ , ‘ ধর্মনিরপেক্ষ ’ , ‘ গণতান্ত্রিক ’ এবং ‘ গণরাজ্য ’ বলতে কী বোঝ , বিশদভাবে বর্ণনা করো । 

উত্তরঃ সার্বভৌম ( Sovereign ) :- ভারতবর্ষ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র।সার্বভৌমত্ব হল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা । অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে ভারতবর্ষ কোনো বিদেশী শক্তির অধীনে নয় এবং আভ্যন্তরীণভাবেও ভারতবর্ষ কোনো শক্তির দ্বারা পরিচালিত হয় না । 

সমাজবাদী ( Socialist ) :- ভারতবর্ষ একটি সমাজবাদী রাষ্ট্র । ১৯৭৬ সনের ৪২ তম সংশোধনী আইনের মাধ্যমে ‘ সমাজবাদী ‘ শব্দটি প্রস্তাবনায় সংযোজন করা হয়েছে । কারণ এর দ্বারা জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠার সংকল্প সূচিত হয়েছে । উৎপাদনের বস্তুসমূহ জাতীয়করণ হবে । জাতীয় আয়ের সমবিতরণের ব্যবস্থা ও মিশ্র অর্থনীতির মাধ্যমে সমাজবাদ প্রতিষ্ঠা হবে । দেশের অর্থনীতি জনসাধারণ নির্ধারণ করবে । কোনো পুঁজিপতির দ্বারা দেশের অর্থনীতি নির্ধারিত হবে না । 

ধর্মনিরপেক্ষ ( Secular ) :- ভারতবর্ষ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র । এখানে কোনো সরকারী ধর্ম নেই । সরকারের দৃষ্টিতে সকল ধর্ম সমান এবং ধর্মের নামে কোনো বৈষম্য থাকবে না । সরকার কোনো ধর্মের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করবে না । ‘ ধর্মনিরপেক্ষ ’ শব্দটি প্রস্তাবনার ৪২ নং সংশোধনী মতে সন্নিবিষ্ট হয়েছে । 

গণতান্ত্রিক ( Democratic ) :- ভারতবর্ষ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র । দেশের শাসন ব্যবস্থা জনসাধারণের প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হয় । জনসাধারণ দেশের শাসন নিজের জন্য নিজেই চালাবে এবং প্রশাসন জনসাধারণের নিকট দায়বদ্ধ হবে । 

গণরাজ্য ( Republic ) :- ভারতবর্ষ একটি গণরাজ্য । ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপ্রধানজন ( রাষ্ট্রপতি ) পরোক্ষভাবে জনসাধারণের দ্বারা নির্বাচিত ব্যক্তি হবে । রাষ্ট্রপ্রধানের পদবীটি বংশানুক্রমিক হবে না অথবা কোনো নির্ধারিত ব্যক্তি হবে না । 

প্রশ্ন ৩। নেহেরুর উদ্দেশ্য সম্পর্কিত প্রস্তাবসমূহ আলোচনা করো। 

উত্তরঃ জওহরলাল নেহেরুর উল্লেখ করা উদ্দেশ্য সম্পর্কিত প্রস্তাবের মূল বিষয়সমূহ হল— 

( ১ ) গণপরিষদে ভারতবর্ষকে স্বাধীন , সার্বভৌম , প্রজাতন্ত্র ( Independent , Sovereign , Republic ) হিসেবে ঘোষণা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ । পরে স্বাধীন শব্দটি বাদ দেওয়া হয় । 

( ২ ) ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের ভূখণ্ড ও ভারতের অন্তর্ভুক্ত হতে চাওয়া দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে রাজ্যসমূহের সংঘ ( Union of states ) গঠিত হবে । 

( ৩ ) ভারতবর্ষের জনসাধারণের সামাজিক , অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায় , সমতা , ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা , চিন্তা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি প্রদান করা হবে ।

( ৪ ) অনুসূচিত জাতি , জনজাতি , অনুন্নত সম্প্রদায় এবং সংখ্যালঘু জনসাধারণের সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে । 

( ৫ ) দেশের স্বাধীনতা , সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা করার উপরে গুরুত্ব প্রদান করা হবে । 

( ৬ ) আন্তর্জাতিক সু – সম্পর্ক , বিশ্বশান্তি রক্ষা এবং জনগণের কল্যাণের জন্য ভারতবর্ষই সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে । 

( ৭ ) জনসাধারণই হবে সকল ক্ষমতার উৎস । সার্বভৌম দেশটির সরকার এবং সকল অঙ্গই জনসাধারণ হতে বা থেকে ক্ষমতা লাভ করবে। 

( ৮ ) সংঘে যোগ দেওয়া সহযোগী দেশীয় রাজ্যসমূহ অবশিষ্ট ক্ষমতার সঙ্গে স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা লাভ করবে । 

নেহেরুর উপরিউক্ত উদ্দেশ্য সম্পর্কিত প্রস্তাব সমূহকে মূল আধার করে নিয়ে এবং দেশের হাজার বছরের সভ্যতা – সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে সংবিধান প্রণেতাগণ সংবিধানের আদর্শকে প্রতিফলিত করেছিলেন । 

প্রশ্ন ৪৷ ভারতবর্ষের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করো । 

উত্তরঃ ভারতবর্ষের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ নীচে উল্লেখ করা হল— 

( ১ ) একটি কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি পাশাপাশি অবস্থান করে । 

( ২ ) কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্ষমতার ভাগ বণ্টন হয়েছে । 

( ৩ ) ভারতের সংবিধান লিখিত ও অনমনীয় । কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার সংবিধান মেনে চলতে বাধ্য থাকে । 

( ৪ ) সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের অনুমোদন নেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে । ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গ রাজ্যগুলিকে স্বাধীন হয়ে , আলাদা হয়ে যাওয়ার অধিকার দেওয়া হয়নি। 

( ৫ ) সংবিধান অনুসারে সাধারণ বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্থানীয় বিষয়গুলি রাজ্য সরকার শাসন করে থাকে । 

( ৬ ) ভারতবর্ষে শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে বিরোধ মীমাংসার জন্য একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সুপ্রীম কোর্ট আছে ।

( ৭ ) ভারতবর্ষে সংবিধানের প্রাধান্য যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য । কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার সংবিধান অনুসরণ করে শাসনকার্য পরিচালনা করেন । 

( ৮ ) ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকগণ এক নাগরিকত্ব লাভ করে । 

( ৯ ) অন্যান্য যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় সরকার অধিক শক্তিশালী । 

( ১০ ) ভারতের অঙ্গ রাজ্যগুলিতে থাকা রাজ্যপালগণকে কেন্দ্রীয় সরকার নিযুক্ত করে । রাজ্যপাল রাজ্যটিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে । 

প্রশ্ন ৫। ভারতবর্ষের সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে একটি আলোচনা প্রস্তুত করো । 

উত্তরঃ ভারতবর্ষের সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য সমূহের ব্যাখ্যা নীচে উল্লেখ করা হল— 

( ১ ) ভারতবর্ষের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন । সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান হলেও তিনি নিজে কোনো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না । প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রীপরিষদ রাষ্ট্রের প্রকৃত শাসন ক্ষমতার অধিকারী । 

( ২ ) ভারতবর্ষের সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে মন্ত্রীসভার সব সদস্যদের আইন সভার সদস্য হতে হবে । মন্ত্রীপরিষদ তাঁদের নীতি ও কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকেন । 

( ৩ ) ভারতবর্ষের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃবর্গের দ্বারা মন্ত্রীপরিষদ গঠিত হয় । 

( ৪ ) ভারতবর্ষের সংসদীয় গণতন্ত্র প্রধানত একটি গণরাজ্য । 

( ৫ ) ভারতবর্ষের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা পাশ হলে সকল যন্ত্রীকে একসঙ্গে পদত্যাগ করতে হয় । এই ধরনের সরকারের মন্ত্রীসভার গর্যকাল সুনির্দিষ্ট থাকে না । 

( ৬ ) ভারতবর্ষের সংসদের উচ্চ সদন হল রাজ্যসভা । ভারতের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় আইন সভার সাথে শাসন বিভাগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে । ভারতে আইন সভার অর্থাৎ রাজ্যসভার সম্মতি ও অনুমোদন নিয়ে মন্ত্রীসভাই আইন – কানুন রচনা করেন । 

( ৭ ) ভারতবর্ষের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রাধান্য দেখা যায় । কেবিনেট বা মন্ত্রীপরিষদ তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত হয় । তিনি তাঁর ইচ্ছামত যে কোনো মন্ত্রীকে নিয়োগ বা বরখাস্ত করতে পারেন । 

( ৮ ) ভারতবর্ষের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভার বা কেবিনেটের পরামর্শ অনুযায়ী আইনসভা ভেঙ্গে দিয়ে পুনরায় নির্বাচনের নির্দেশ দিতে পারেন । 

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর 

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। ভারতীয় সংবিধান কখন হতে কার্যকরি হয় ? 

উত্তরঃ ১৯৫০ সনের ২৬ শে জানুয়ারী থেকে ভারতের সংবিধান কার্যকরি হয়েছে । 

প্রশ্ন ২। ২৬ শে জানুয়ারী দিনটি ভারতের কি দিবস হিসেবে পালন করা হয় ? 

উত্তরঃ ২৬ শে জানুয়ারী দিনটি ভারতে ‘ গণরাজ্য দিবস ‘ হিসেবে পালন করা হয় । 

প্রশ্ন ৩। ভারতে রাষ্ট্রের প্রধান কে ? 

উত্তরঃ রাষ্ট্রপতি । 

প্রশ্ন ৪। ভারতের জনসাধারণকে কি নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে ?

উত্তরঃ একক নাগরিকত্ব ।

প্রশ্ন ৫। ভারতের খসড়া সংবিধান কখন গৃহীত হয় ? 

উত্তরঃ ১৯৪৯ সনের ২৬ শে নভেম্বর তারিখে খসড়া সংবিধান গৃহীত হয় । 

প্রশ্ন ৬। ভারতবর্ষে কয় ধরনের সরকার আছে ও কী কী ? 

উত্তরঃ ভারতবর্ষে দুই ধরনের সরকার আছে । যথা— 

( ১ ) কেন্দ্রীয় সরকার । ও 

( ২ ) রাজ্য সরকার । 

প্রশ্ন ৭। কোন সনে ‘ কেবিনেট মিশন ’ ভারতে এসেছিল ? 

উত্তরঃ ১৯৪৬ সনের মার্চ মাসে । 

প্রশ্ন ৮। সংবিধান সভা কোন সনে খসড়া কমিটি গঠন করেছিল ? 

উত্তরঃ সংবিধান সভা ১৯৪৭ সনের ২৯ শে আগষ্ট একটি খসড়া কমিটি গঠন করেছিল ।

প্রশ্ন ৯। খসড়া কমিটির অধ্যক্ষ কে ছিলেন ? 

উত্তরঃ ড . বি . আর . আম্বেদকর ।

প্রশ্ন ১০। ভারতীয় সংবিধানের রচনা কখন সম্পূর্ণ হয়েছিল ? 

উত্তরঃ ১৯৪৯ সনের ২৬ শে নভেম্বর তারিখে ভারতীয় সংবিধানের রচনা সম্পূর্ণ হয়েছিল । 

প্রশ্ন ১১। ভারত ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র কি না ? 

উত্তরঃ হ্যা , ভারত ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র । 

প্রশ্ন ১২। সংবিধান অনুসারে ভারত কি ধরনের রাষ্ট্র ? 

উত্তরঃ সংবিধান অনুসারে ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র । 

প্রশ্ন ১৩। ভারতে ক্ষমতার উৎস কে ?

উত্তরঃ ভারতে ক্ষমতার উৎস হল জনসাধারণ । 

প্রশ্ন ১৪। ভারতকে গণরাজ্য বলা হয় কেন ? 

উত্তরঃ যে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপ্রধান জনসাধারণের দ্বারা নির্বাচিত হন তাকে গণরাজ্য বলা হয় । ভারতের রাষ্ট্রপতি জনসাধারণের দ্বারা নির্বাচিত হন বলে ভারতকে গণরাজ্য বলা হয় । 

প্রশ্ন ১৫। ভারত পুঁজিবাদী না সমাজবাদী রাষ্ট্র ? 

উত্তরঃ ভারত সমাজবাদী রাষ্ট্র । 

প্রশ্ন ১৬। ভারতবর্ষে কি প্রকার সরকার স্থাপিত হয়েছে ? 

উত্তরঃ সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার । 

প্রশ্ন ১৭। পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ কোনটি ? 

উত্তরঃ ভারতবর্ষ । 

প্রশ্ন ১৮। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোথায় যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতির প্রবর্তন হয়েছিল ? 

উত্তরঃ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে । 

প্রশ্ন ১৯। কোন সনে ‘ সাকারিয়া আয়োগ ‘ গঠন করা হয়েছিল ? 

উত্তরঃ ১৯৮৩ সনে ।

প্রশ্ন ২০। স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন ? 

উত্তরঃ ড . রাজেন্দ্র প্রসাদ । 

প্রশ্ন ২১। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন ? 

উত্তরঃ জওহরলাল নেহেরু । 

প্রশ্ন ২২। ‘ খসড়া কমিটি ’ কতজন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় ? 

উত্তরঃ ‘ খসড়া কমিটি ’ সাতজন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় । 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর 

প্রশ্ন ১। ভারতকে কেন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে ? 

উত্তরঃ ভারতের কোনো রাষ্ট্রিয় ধর্ম নেই । ভারতের নাগরিকদের ধর্মের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে । সরকার সকল ধর্মের প্রতি সমান ব্যবহার , সকল ধর্মের লোককে সমান সুবিধা ও অধিকার দিয়েছে । ভারতে কোনো ধর্মের লোককে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি । উপরোক্ত কারণে ভারতকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে । 

প্রশ্ন ২। ভারতকে কেন গণরাজ্য বলে ?

উত্তরঃ ভারতে উত্তরাধিকারী সূত্রে কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারে না । ভারতের রাষ্ট্রপ্রধানকে দেশের জনগণ নির্বাচিত করে । সেজন্য ভারতকে গণরাজ্য বলে । 

প্রশ্ন ৩। সংবিধান বলতে কী বুঝ ? এই সংবিধান ভারতে কখন গৃহীত হয়েছিল ? 

উত্তরঃ একটি দেশের বা জাতির শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করবার জন্য সর্বসাধারণের গ্রহণীয় লিখিত উদ্দেশ্য , কর্মপন্থা , আদর্শ ও নিয়মাবলীকে সংবিধান বলে । 

ভারতের সংবিধান প্রণয়নের জন্য স্বাধীনতার পূর্বেই একটি সংবিধান সভা গঠন করা হয়েছিল । প্রাদেশিক বিধানসভাগুলি সংবিধান সভার সদস্যগণকে নির্বাচিত করে পাঠিয়েছিল । এই সভার সভাপতি ছিলেন ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ । ড . আম্বেদকরের নেতৃত্বে খসড়া প্রস্তুত কমিটি সংবিধানের খসড়া তৈরি করেছিল । ১৯৪৯ সনের ২৬ শে নভেম্বর এই খসড়া সংবিধানটি সংবিধান সভায় গৃহীত হয় । ১৯৫০ সনের ২৬ শে জানুয়ারী থেকে ভারতের এই সংবিধান বলবৎ করা হয় । 

প্রশ্ন ৪। ভারতকে একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বলা হয় কেন ? 

উত্তরঃ ( ১ ) ভারতবর্ষ আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। 

( ২ ) ভারতীয় নাগরিকগণ পরোক্ষভাবে শাসন ব্যাপারে অংশগ্রহণ করে। 

( ৩ ) ভারতে প্রতি পাঁচ বৎসর অন্তর নির্বাচন হয় । ভারতীয় নাগরিকগণ এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে । এই নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সরকার গঠন করে এবং যথাযথ আইন প্রয়োগ করে দেশ শাসন করে । 

( ৪ ) ভারতের রাষ্ট্রপতির পদ বংশানুক্রমিক নয় । জনসাধারণ পরোক্ষ নির্বাচন মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগ করে । 

প্রশ্ন ৫। ‘ খসড়া কমিটির সদস্যদের নাম উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ ‘ খসড়া কমিটির সাত জন সদস্যের নাম নীচে উল্লেখ করা হল— 

( ১ ) ড . ভীমরাও আম্বেদকর __ সভাপতি । 

( ২ ) এন . গোপাল স্বামী আয়েংগার __সদস্য । 

( ৩ ) আল্লাড কৃষ্ণস্বামী আয়ার __সদস্য । 

( ৪ ) কে . এম . মুন্সি ___ সদস্য । 

( ৫ ) সৈয়দ মহম্মদ সাদুল্লা ___ সদস্য । 

( ৬ ) এন . মাধব রাও ___ সদস্য । 

( ৭ ) ডি.পি. খায়তান ___সদস্য । 

প্রশ্ন ৬। ২৬ শে জানুয়ারী গণরাজ্য দিবস পালন করা হয় কেন ? 

উত্তরঃ ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারী ভারতে সংবিধান সম্পূর্ণভাবে কার্যকরী হয়েছিল বলে প্রতি বৎসর ২৬ শে জানুয়ারী ‘ গণরাজ্য দিবস ’ হিসাবে পালন করা হয় । 

প্রশ্ন ৭। সংসদীয় গণতন্ত্র কী ? 

উত্তরঃ যে গণতান্ত্রিক সরকার সংসদ বা পার্লামেন্টকে সার্বভৌম ক্ষমতার‘ অধিকারী বলে স্বীকৃতি দেয় এবং সংসদের মাধ্যমে সরকারের সমস্ত কার্য পরিচালনা করে তাকে সংসদীয় গণতন্ত্র বলা হয় । 

প্রশ্ন ৮। ভারত সম্পূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্র কি না ? 

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতবর্ষ হল কতগুলি রাজ্যের একটি সংঘ । এখানে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার পাশাপাশি অবস্থান করে । ভারতীয় সংবিধানে অনেকগুলি যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি সংযোজিত হয়েছে , যেমন কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে , একটি লিখিত এবং দৃঢ় সংবিধান , কেন্দ্রীয় সরকারকে অধিক ক্ষমতা দান ইত্যাদি । তদুপরি কিছু সংখ্যক একাত্মক রাষ্ট্রনীতি , যেমন— একক নাগরিকত্ব , একক ন্যায়বিচার বিভাগ ইত্যাদি আমাদের সংবিধানে সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে । ভারতবর্ষের সংবিধান আকৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় হলেও বিষয়বস্তুর দিক হতে এককেন্দ্রিক । 

প্রশ্ন ৯। সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা তিন প্রকার ন্যায় এবং দুই প্রকার স্বাধীনতার নাম লেখো । 

উত্তরঃ সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা তিন প্রকার ন্যায় হল— 

( ক ) সামাজিক ন্যায় ।

( খ ) অর্থনৈতিক ন্যায় । ও 

( গ ) রাজনৈতিক ন্যায় । 

দুইপ্রকার স্বাধীনতা হল— 

( ক ) ধর্মীয় স্বাধীনতা । ও 

( খ ) চিন্তা এবং অভিব্যক্তির স্বাধীনতা । 

প্রশ্ন ১০। আমরা সকলেই ভারতীয় ‘ — এই উক্তির অন্তনির্হিত অর্থ তিনটি বের করো । 

উত্তরঃ ( ১ ) ভারতে বিভিন্ন ধর্ম , ভাষা , জাতি – উপজাতি থাকা সত্ত্বেও প্রাচীন কাল হতেই আমরা নিজেদের ভারতীয় বলে আসছি । 

( ২ ) ভারতের বিভিন্ন স্থানের ভৌগোলিক অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি থাকলেও প্রাচীন কাল হতে ভারতবর্ষ এক অখণ্ড দেশ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে । 

( ৩ ) ভারতে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মিলন হয়ে বিশাল ভারতীয় জাতির সৃষ্টি হয়েছে । 

প্রশ্ন ১১। জাতীয় সংহতি রক্ষার্থে ভারতের নাগরিকদের এক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে — এই উক্তিটি সত্য কী ? 

উত্তরঃ ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্র । ভারতের সংবিধান অনুসারে ভারতে যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা হয়েছে । যুক্তরাষ্ট্র হিসাবে ভারতে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা দরকার— রাজ্যিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় । একজন নাগরিক যুক্তরাষ্ট্র ও রাজ্যে উভয়েরই পৃথক নাগরিকত্ব পায় । কিন্তু ভারতের সংবিধানে মাত্র এক নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করা হয়েছে । সকল নাগরিকই ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক । নাগরিকদের মধ্যে জাতীয় সংহতি রক্ষার জন্য এক নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এই ব্যবস্থার ফলে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম , ভাষা , সংস্কৃতির সকল ভারতীয় নাগরিককে এক ভারতীয় বলে ঐক্যবদ্ধ করতে সাহায্য করেছে । সকল ভারতবাসীর মধ্যে সংহতি ও ভ্রাতৃভাব গড়ে উঠেছে । সুতরাং উপরের উক্তিটি সত্য বলে প্রমাণিত হল। 

প্রশ্ন ১২৷ ‘ জাতীয় সংহতি পরিষদ ‘ কখন ও কার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল ? 

উত্তরঃ ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ১৯৬১ সালে রাষ্ট্রীয় সংহতির সমস্যাগুলি আলোচনা করার জন্য আহ্বান করা জাতীয় সম্মিলনে ‘ জাতীয় সংহতি পরিষদ ‘ গঠন করা হয়েছিল । 

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর 

প্রশ্ন ১। ইংল্যান্ডের সংসদীয় গণতন্ত্রের সঙ্গে ভারতবর্ষের সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল পার্থক্যগুলি উল্লেখ কর ।

উত্তরঃ ইংল্যান্ডের সংসদীয় গণতন্ত্রের সঙ্গে ভারতবর্ষের সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল পার্থক্যগুলি নীচে উল্লেখ করা হল —

( ১ ) ভারতবর্ষের সংসদীয় গণতন্ত্র প্রধানত একটি গণরাজ্য । কিন্তু ইংল্যান্ডের গণতন্ত্র গণরাজ্য নয় । ইংল্যান্ডের মত আমাদের দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান পুরুষানুক্রমে হওয়া ব্যক্তি নয়। ইংল্যান্ডের রাজা অথবা রানির বিপরীতে আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান (রাষ্ট্রপতি) জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হওয়া ব্যক্তি । 

( ২ ) ভারতবর্ষের সংসদের উচ্চসদন রাজ্যসভার গঠন ও ক্ষমতা ইংল্যান্ডের উচ্চসদন হাউস অব লর্ডস্ থেকে বহু পৃথক । 

( ৩ ) ইংল্যান্ডের সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদটি অত্যন্ত শক্তিশালী । কিন্তু ভারতবর্ষের সংসদ এইরূপ শক্তিশালী নয় । 

ভারতবর্ষের পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে সংবিধানটি প্রবর্তন করা সংসদীয় গণতন্ত্রই আমাদের দেশটিকে বিশ্বের একটি মর্যাদা সম্পন্ন সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছে । 

প্রশ্ন ২। ন্যায় , স্বাধীনতা ও ভ্রাতৃত্ব বোধের ভাবধারা আমাদের সমাজে না থাকলে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে তা বিস্তারিতভাবে লেখো । 

উত্তরঃ ন্যায় বলতে সংবিধানে নাগরিকদের সামাজিক , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়ের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ।

( ক ) সামাজিক ন্যায় :- ভারতের সকল জনগণ যাতে সম অধিকার ভোগ করে এক মর্যাদাপূর্ণ জীবন অতিবাহিত করতে পারে তার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে । 

( খ ) রাজনৈতিক ন্যায় :- সকল নাগরিকই সমানভাবে রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে পারে । যেমন — সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকই নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোটাধিকার প্রয়োগ করে রাষ্ট্রের কার্যপ্রণালিতে অংশগ্রহণ করতে পারে । 

( গ ) অর্থনৈতিক ন্যায় :- অর্থনৈতিক ন্যায়ের মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজে থাকা অর্থনৈতিক অসমতা দূর করার বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে । পুরুষ মহিলার সম মজুরি , বৃদ্ধদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান , রাষ্ট্রীয় সম্পদের সমবিতরণ ইত্যাদি এই ন্যায়ের অন্তর্গত । 

স্বাধীনতা :- স্বাধীনতা কথাটির মধ্য দিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের চিন্তা, মত প্রকাশ , বিশ্বাস , নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী ধর্মগ্রহণ , চর্চা এবং প্রচার করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে । 

সমতা :- ভারতের জনসাধারণ যাতে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ভোগ করতে পারে ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । ভারতবর্ষে আইনের চোখে সবাই সমান । আইনের ক্ষেত্রে সবাইকে সমান অধিকার ও সম রক্ষণাবেক্ষণ দেওয়ার কথাটি ‘ সমতা’র মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে । ভ্রাতৃত্ববোধ ভ্রাতৃত্ববোধের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমান সুযোগ ও সম মর্যাদা প্রদান করার বিষয়টি রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে । বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা সংস্কৃতির মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার জন্য আমাদের সবাইকে একে অন্যের জানাতে । ভাষা – ধর্ম – সংস্কৃতিকে সম্মান জানাতে হবে । তবেই সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগানো সম্ভব হবে । 

উপরোক্ত বিষয়গুলো বা আদর্শগুলো আমাদের সমাজে না থাকলে ভারতবর্ষ কোনো দিনই কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। এই আদর্শগুলো না থাকলে সমাজ , দেশ , জাতি ইত্যাদি সমস্তই ধ্বংস হয়ে যাবে এবং জনসাধারণ সুখে – শান্তিতে বসবাস করতে পারবে না ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top