Class 10 Social Science Chapter 9 অসমের ভূগোল

Class 10 Social Science Chapter 9 অসমের ভূগোল Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 10 Social Science Chapter 9 অসমের ভূগোল and select needs one.

Class 10 Social Science Chapter 9 অসমের ভূগোল

Join Telegram channel

Also, you can read SCERT book online in these sections Class 10 Social Science Chapter 9 অসমের ভূগোল Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 10 Social Science Chapter 9 অসমের ভূগোল These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 10 Social Science Chapter 9 অসমের ভূগোল for All Subject, You can practice these here..

অসমের ভূগোল

               Chapter – 9

দ্বিতীয় খণ্ড – ভূগোল

অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। অসমের আয়তন , জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের বিষয়ে তথ্য সহকারে সংক্ষেপে লেখো । 

উত্তরঃ অসমের আয়তন —৭৮,৪৩৮ বর্গ কিলোমিটার । 

অসমের মোট জনসংখ্যা – ৩১২.০৫ লক্ষ । 

জনসংখ্যার ঘনত্ব –২০১১ সালে অসমে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৯৮ জন । 

প্রশ্ন ২। অসমের শিক্ষিতের হার কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সংক্ষেপে উল্লেখ করো । 

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

উত্তরঃ অসমে শিক্ষিতের হার ২০০১ সালে ছিল ৬৩-২৫ শতাংশ এবং ২০১১ সালে ৭২-১৯ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় ।

অসমের জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য ( ২০০১-২০১১ ) 

জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য২০০১২০১১
( ক ) শিক্ষিত হার ( শতাংশ )৬৩.২৫৭২.১৯
( খ ) লিংগ অনুপাত ( প্রতি ১০০০ পুরুষের বিপরীতে মহিলার সংখ্যা )৯৩৫৯৫৮
( গ ) গ্রামের জনসংখ্যা ( শতাংশ )৮৭.১০৮৫.৯০
( ঘ ) নগরের জনসংখ্যা ( শতাংশ )১২.৯০১৪.০৯
( ঙ ) অনুসূচীত জাতির জনসংখ্যা (শতাংশ)৭.৪০৭.১৫
( চ ) অনুসূচীত জনজাতির জনসংখ্যা (শতাংশ )১২.৮৩১২.৪৫

প্রশ্ন ৩। ২০১১ সালের তথ্য অনুসারে অসমে কয়টি প্রথম শ্রেণির এবং কয়টি দ্বিতীয় শ্রেণির শহর আছে ? 

উত্তরঃ ২০১১ সালের অসমে প্রথম শ্রেণির শহরের সংখ্যা ৭ টি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির শহরের সংখ্যা ৬ টি । 

প্রশ্ন ৪। ১৯০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অসমের জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করো। 

উত্তরঃ অসমের মোট জনসংখ্যা ৩১২-০৫ লক্ষ । এর মধ্যে ১৫৯.৩৯ লক্ষ পুরুষ এবং ১৫২.৬৬ লক্ষ মহিলা । লিঙ্গ অনুপাতে ১০০০ পুরুষের বিপরীতে মহিলার সংখ্যা ২০০১ সালে ছিল ৯৩৫ এবং ২০১১ সালে ৯৫৮ – তে বৃদ্ধি পায় । 

২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ী , অসমের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৭ শতাংশ লোক গ্রামে বাস করত । কিন্তু ২০১১ সালে গ্রামে বাস করা লোকের সংখ্যা ৮৫.৯০ শতাংশ পর্যন্ত কম হয় । এর বিপরীতে নগরের জনসংখ্যা ২০০১ সনের ১২.৯০ শতাংশ থেকে ২০১১ সালে ১৪-০৯ শতাংশতে বৃদ্ধি পায় । এর থেকে স্পষ্ট যে , অসমে গ্রাম থেকে নগরে জন প্রবজন ঘটছে যার ফলে গ্রামে বাস করা লোকের সংখ্যা কমেছে এবং নগরে বাস করা লোকের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে । অসমে অনুসূচীত জাতি ও জনজাতির জনসংখ্যা প্রায় সমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । 

প্রশ্ন ৫। ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে উপযুক্ত মানচিত্রের সাহায্যে অসমের জনসংখ্যার বিতরণ পর্যালোচনা করো । 

উত্তরঃ অসমের জনসংখ্যা বিতরণের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে রাজ্যটিতে সকল অঞ্চল বা সকল স্থানে জনবসতি ও জনসংখ্যার বিতরণ সমান নয় । কোন অঞ্চলে জনবসতি ঘন আবার কোন অঞ্চলে পাতলা । অসমের বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুসারে রাজ্যটিতে জনসংখ্যা সকল অঞ্চলে সমান নয় । কাজেই অঞ্চলভেদে জনসংখ্যার ঘনত্ব সমান নয় । প্রাকৃতিক পরিবেশ বসবাসের অনুকূল হলে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হয় আবার পরিবেশ অনুকূল না হলে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম হয় ।

ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় সমতলভূমি , সারযুক্ত মাটি এবং সহজ কৃষিকার্য ও যাতায়াত ব্যবস্থার ফলে সেখানে জনবসতি ঘন । ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় অসমের মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ লোক বসবাস করে । এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব ২০০১ সালে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২২০ জন এবং ২০১১ সালে ১৫০২ জনে বৃদ্ধি পায় । ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার উচ্চ অংশে উপত্যকাটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ২১ শতাংশ লোক বসবাস করে এবং ২০১১ সালের তালিকা অনুযায়ী জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৭১ জন । মধ্য উপত্যকা অঞ্চলে জনসংখ্যার প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৫০০ জন । নিম্ন উপত্যকা অঞ্চলে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৬৩১ জন । 

বরাক উপত্যকায় ২০১১ সালের তথ্য অনুসারে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৫৪৫ জন । অপরদিকে কাৰ্বি আংলং ও ডিমা হাসাও অঞ্চলে ২০০১ সালের তথ্য মতে পার্বত্য অঞ্চলটিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র ৫৮ জন এবং ২০১১ সালে ৬৮ জন । 

অসমের কামরূপ জেলায় জেলাসমূহের মধ্যে ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ২,৫২২,৩২৪ জন লোক বাস করে । কিন্তু ডিমা হাসাও জেলাটিতে ১,৮৮,০২৯ জন লোক বাস করে । ২০১১ সালের ভিত্তিতে ২,৮২৬,০০৬ জন জনসংখ্যার নগাঁও অসমের মধ্যে অধিক জনসংখ্যার জেলা । ২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ী কামরূপ ( মেট্রো ) জেলা সর্বাধিক ঘন জনবসতিপূর্ণ জেলা হিসাবে বিবেচিত হয়েছে । এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২০১০ জন । 

এক্ষেত্রে গুয়াহাটী মহানগরীর জনসংখ্যা বিশেষ প্রভাব ফেলেছে । এর বিপরীতে ডিমা – হাসাও পার্বত্য অঞ্চলে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র ৪৪ জন লোক বাস করে । লখিমপুর ও শিবসাগরের জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪৩১ জন ( ২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী ) । মরিগাঁও , নগাঁও , দরং , ওদালগুড়ি , ধুবরী , বঙাইগাঁও , গোয়ালপাড়া , বরপেটা , নলবারী , বাক্সা , কামরূপ ও কামরূপ মেট্রো জেলাগুলোয় জনসংখ্যার ঘনত্ব রাজ্যটির গড় ঘনত্ব অপেক্ষা বেশি । বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ , হাইলাকান্দি ও কাছাড় জেলায় জনসংখ্যা অসমের গড় ঘনত্ব অপেক্ষা বেশি ।

প্রশ্ন ৬। অসমের জনসংখ্যা বিতরণের ভিন্নতার কারণগুলি উদাহরণসহ সংক্ষেপে আলোচনা করো ।

উত্তরঃ অসমের বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুযায়ী রাজ্যটির জনসংখ্যা সকল অঞ্চলে সমান নয় । কাজেই অঞ্চলভেদে জনসংখ্যার ঘনত্বও এক হয় না । যে সকল অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূল নয় , যাতায়াত ও অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত নয় , সে সকল স্থানে জনবসতি কম এবং জনসংখ্যাও কম। অপরদিকে , অনুকূল প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিরাজ করে সে সকল অঞ্চলে জনবসতি ঘন হয় । উদাহরণস্বরূপ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সমতলভূমি উর্বর মাটি , সহজ কৃষিকার্য ও যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য সেখানে জনবসতি ঘন । সেজন্য ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় অসমের মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ লোক বসবাস করে । ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার উচ্চ , মধ্য ও নিম্ন অঞ্চলে জনসংখ্যার ঘনত্বের তারতম্য লক্ষণীয় । উচ্চ অঞ্চল অপেক্ষা মধ্য অঞ্চলে আবার মধ্য অঞ্চল অপেক্ষা নিম্ন অঞ্চলে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি । 

বরাক উপত্যকার উর্বর সমভূমি অঞ্চলটি কৃষিকার্য ও যাতায়াতের জন্য এই অঞ্চলে জনবসতি ঘন । ২০১১ সালের তথ্য অনুসারে এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৫৪৫ জন । কার্বি আংলং ও ডিমা হাসাও পার্বত্য জেলা দুটোতে প্রতিকূল ভূপ্রাকৃতিক অবস্থার জন্য সেখানে জনবসতি অতিকম এবং জনসংখ্যাও কম । ২০০১ সালের তথ্য মতে পার্বত্য অঞ্চলটিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র ৫৮ জন এবং ২০১২ সালে সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৬৮ জন দাঁড়ায় ।

অতএব দেখা যায় যে জনসংখ্যা বিতরণের তারতম্য নির্ভর করে কৃষিকার্য , যাতায়াত ব্যবস্থা , পরিবেশ শিক্ষিতের হার ইত্যাদির ওপর ।

প্রশ্ন ৭। ২০১১ সালের তথ্যানুসারে অসমের জিলাগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং কম জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব , রয়েছে সেই জিলার নাম উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ ২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ী কামরূপ মেট্রো জেলাতে সর্বাপেক্ষা বেশি জনসংখ্যা । এই জেলাতে সর্বাপেক্ষা বেশি জনসংখ্যা । এই জেলাতে মোট জনসংখ্যা ১,২৬০,৪১৯ জন এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২০১০ জন । সর্বাপেক্ষা কম জনসংখ্যা উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা ( ডিমা হাসাও ) । এখানে মোট জনসংখ্যা ১৮৮,০৭৯ জন এবং ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪৪ জন । 

প্রশ্ন ৮। অসমের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো । 

উত্তরঃ অসমে উচ্চহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ মূলত দুটি । একটি হল জনসংখ্যার প্রাকৃতিক বৃদ্ধি ও অপরটি হল রাজ্যের বাইরে থেকে রাজ্যটিতে অধিক মাত্রায় জনপ্রব্রজন । গত শতিকার আরম্ভ থেকেই অধিক সক্রিয়রূপে রাজ্যটিতে জন প্ৰব্ৰজন ঘটতে আরম্ভ করেছিল । ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের ফলে বহু সংখ্যক হিন্দু শরণার্থী পূর্ব পাকিস্তান ( বর্তমানে বাংলাদেশ ) থেকে অসমে প্রব্রজন করে । 

ভারতের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ( ১৯৫১-২০০১ ) অসমের জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায় । এই সময়ে দেশে ১৮৫ শতাংশ বৃদ্ধির বিপরীতে অসমের জনসংখ্যা প্রায় ২৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায় ।জনসংখ্যার এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির মূল কারণ হল বাংলাদেশ থেকে অবাধ অনুপ্রবেশ। এছাড়া আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগে মৃত্যুর হার কমার জন্যও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে । বর্তমানে এই বৃদ্ধির হার কিছুটা কম । এর কারণ হল , বর্তমান সময়ে জন্মের হার কিছুটা কম হয়েছে এবং বাংলাদেশ থেকে অবাধ অনুপ্রবেশ হ্রাস পেয়েছে । 

প্রশ্ন ৯। অসমে প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় অবধি যে জনপ্ৰব্ৰজন ঘটেছে সেই স্রোতগুলি একাদিক্রমে উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ ভারতের উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সাথে অসম রাজ্যটির বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য এর উত্তর , পূর্ব , দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক থেকে নানা জনগোষ্ঠী ও ভাষা – ভাষীর লোকেদের প্রাচীনকাল থেকেই বর্তমান সময় পর্যন্ত এই রাজ্যটিতে আগমন ঘটছে । অসমে নানা স্থান থেকে বিভিন্ন সময়ে ঘটা জন প্রব্রজনকে এক একটি জনস্রোত ( Human Stream ) বলা যেতে পারে । সমাজ বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে সম্ভবত অসমে আগমন ঘটা প্রথম জনস্রোতটি ছিল অষ্ট্রিক ( Austric ) জনগোষ্ঠীর । এরা দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া থেকে এসেছিল । মেঘালয়ে বিস্তৃতভাবে বসবাস করা খাসিয়াও জয়ন্তীয়াগণ এই অষ্ট্রিক গোষ্ঠীর লোক । এদের কিছু সংখ্যক অসমের কার্বি আলং ও ডিম – হাসাও জেলাতে বসবাস করছে । আবার কিছু সংখ্যক কাছাড় জেলাতেও পাওয়া যায় । 

দ্বিতীয় জনস্রোতটি ছিল তিব্বতীয় বর্মণ ভাষা বলা মংগোলীয় সকল (Tibeto – Burman ) । এরা মধ্য এশিয়া থেকে হিমালয় পর্বত অতিক্রম করে অসমে এসেছিল এবং অসমের বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপন করেছে । বর্তমানে খাসিয়া জনগোষ্ঠীয় লোক ছাড়া প্রায় সকল জনজাতি মূলত মংগোলীয় গোষ্ঠীর অন্তর্গত । এই মংগোলীয় জনগোষ্ঠীর প্রধান জনজাতিগণ হল — বোড়ো , মিচিং , রাভা , তিওয়া , দেউরী , সোনোয়াল , কাছারী , মেচ , কাছাড়ের বর্মণ , কার্বি , ডিমাসা কছারী , গারো , কুকি , মার ( Hmar ) , হাজং , রেংমা নাগা ও জেমি নাগা । অসমে মংগোলীয় জনগোষ্ঠীর লোকেরা সমভূমিতে , নদ – নদীর পারে , পাহাড়ের পাদদেশে এবং পাহাড়ে বসবাস করে । 

খুব সম্ভবত মংগোলীয় জনগোষ্ঠীর লোকেদের আসার পর সিন্ধু আর্যমূলের ভাষা – ভাষী ( Indo – Aryan ) লোক সকল গঙ্গা সমভূমি অঞ্চল থেকে অসমে এসেছিল । এরা মূলত ককেশীয় জনগোষ্ঠীর লোক । প্রথমে স্থানীয় রাজা বা শাসনকর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই লোক সকল অসমে এসেছিল । পরবর্তীকালে ব্রহ্মপুত্র ও বরাক সমভূমির অর্থনৈতিক সম্পদ রাজির দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে অসমে আসতে আরম্ভ করে এবং এই ধারা বর্তমানেও চলছে । বেশির ভাগ অজন জাতীয় লোকই ককেশীয় জনগোষ্ঠীর । কলিতা , কায়স্থ , ব্রাহ্মণ ইত্যাদি জাতির লোক সকল এই জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত । অসমের হিন্দু জনসংখ্যার এক বৃহৎ অংশকে এই জনগোষ্ঠীর লোকেরা প্রতিনিধিত্ব করে । এরা ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকাতে বৈদিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির ভিত্তি স্থাপন করে ।

প্রায় ১৩ শতিকার প্রারম্ভে সিন্ধু আর্যমূলের ইসলাম ধর্মাবলম্বী একদল লোক ( সৈন্য ) কুতুবুদ্দিনের সেনাপতি মহম্মদ – বিন – বখতিয়ার খিলজীর নেতৃত্বে তিব্বতের দিকে অগ্রসর হবার পথে প্রথমে অসমে প্রবেশ করে । মোগল সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতায় আক্রমণ করতে আসা ইসলামধর্মী লোক সকল ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকাতে মুসলমান সম্প্রদায়ের সমাজ ও সংস্কৃতি গড়ে তোলে । 

অসমে আগমন ঘটা অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠী হল আহোমগণ । আহোম সকল মূলত মংগোলীয় জনগোষ্ঠীর লোক । ১২২৮ খ্রিস্টাব্দে চু – কা – ফার নেতৃত্বে উত্তর ম্যানমারের সান মালভূমি থেকে পাটকাই পর্বত পার হয়ে আহোম সকল অসমে আসে । এরা প্রথমে উপরি অসমে বসতি স্থাপন করে আহোম রাজ্য স্থাপন করে । পরবর্তী কালে সমস্ত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা নিজেদের শাসনে আনে । 

ব্রিটিশগণ অসমের শাসনভার গ্রহণ করার পর প্রশাসনীয় , অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাজ – কর্ম চালানোর জন্য বাংলা , বিহার , উত্তরপ্রদেশ , রাজস্থান প্রভৃতি স্থান থেকে দক্ষ লোকেদের এনেছিল । এমনকি নেপাল থেকেও কিছু নেপালী সম্প্রদায়ের লোকেদের আনা হয়েছিল । ব্রিটিশগণ মধ্যভারতের ছোট নাগপুর মালভূমি অঞ্চলের লোকেদের চা শ্রমিক হিসেবে অসমে এনেছিল । এই চা জনগোষ্ঠীর লোকেরা মূলত অষ্ট্রিক জনগোষ্ঠীর লোক । 

অপর একটি জনস্রোত হল পূর্ববঙ্গ ( বর্তমান বাংলাদেশ ) থেকে আসা ভূমিহীন মুসলমান কৃষকগণ । প্রথমে অসমের অবিভক্ত গোয়াল পাড়া জেলার জমিদার গণের পৃষ্ঠপোষকতায় ও পরে শাসকদের অনুগ্রহে অসমের বিস্তীর্ণ উর্বর জমি ও কম জনবসতির অঞ্চল গুলোতে পূর্ববঙ্গের ভূমিহীন কৃষকদের অবাধ প্ৰব্ৰজন ঘটেছিল । দেশ স্বাধীন হবার পর দেশ বিভাজনের ফলে বহু সংখ্যক হিন্দু শরণার্থী সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশ করে এবং বসতি স্থাপন করে । 

ভারতের রাজ্যসমূহের মধ্যে আভ্যন্তরীণ প্রব্রজন প্রক্রিয়া চলেছে । এই আন্তঃরাজ্যিক প্রব্রজন বিশেষত সামাজিক , অর্থনৈতিক ও শৈক্ষিক কারণে অব্যাহত আছে । রাজস্থান , পাঞ্জাব , বিহার , পশ্চিমবঙ্গ , মণিপুর ইত্যাদি রাজ্য থেকে যথেষ্ট সংখ্যক প্রব্রজনকারী অসমে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে । 

প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নানা স্থান থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর লোকের আগমন ঘটেছে। 

প্রশ্ন ১০। অসমের আহোমদের জনগোষ্ঠীয় পরিচয় বিশদ করো৷ 

উত্তরঃ অসমে আগমন ঘটা একটি গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠী হল আহোমগণ । আহোমগণ মূলত মংগোলীয় জনগোষ্ঠীর লোক । ১২২৮ খ্রিস্টাব্দে চ্যু – কা – ফার নেতৃত্বে উত্তর ম্যানমারের সান মালভূমির নিকটস্থ মউলং রাজ্য হতে পাটকাই পর্বত পার হয়ে আহোমগণ অসমে আসে । আহোমগণ নিজেদেরকে ‘ টাই ’ বলতেন । এরা প্রথম ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় পরিভ্রমণের পর ‘ ‘ চরাইদেউ ’ নামক স্থানে ১২৫৩ খ্রিস্টাব্দে রাজধানীর গোড়াপত্তন করে স্থায়ীভাবে রাজ্যশাসন আরম্ভ করে । পরবর্তী সময়ে প্রায় সম্পূর্ণ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা নিজেদের শাসনে আনে। আহোমগণ প্রায় ছয়শ বৎসর রাজত্ব করে অসমের সমাজ – সংস্কৃতিতে বলিষ্ঠ অবদান জুগিয়েছে । 

বুড়ি – দিহিং , ব্রহ্মপুত্র ও দিখৌ নদী এবং নাগা পাহাড়ের মধ্যবর্তী অংশ জুড়ে ছিল আহোম রাজ্যের আদি বাসস্থান । সম্প্রতি আহোমগণ উপরি অসমের তিনসুকীয়া , ডিব্ৰুগড় , শিবসাগর , যোরহাট , গোলাঘাট , লখিমপুর ও ধেমাজি জেলা ছাড়াও মরিগাঁও , নগাঁও ও শোণিতপুর জেলায় বসবাস করছে । 

প্রশ্ন ১১। পরিবহণ ব্যবস্থা অসমের অর্থনৈতিক উন্নতিতে কীভাবে সাহায্য করেছে সংক্ষেপে আলোচনা করো । 

উত্তরঃ পরিবহণ ব্যবস্থাকে অর্থনৈতিক উন্নতির এক মূল বুনিয়াদী উপাদান বলা যায় । ভাল পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হওয়া ছাড়াও সম্পদ , জ্ঞান ও সভ্যতা – সংস্কৃতির আদান – প্রদান হয় । পরিবহণ ব্যবস্থাসমূহ হল — রেলপথ , জলপথ , স্থলপথ ও বিমান পথ উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা দেশের বৈষম্য , ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যতার মধ্যে রাষ্ট্রীয় সংহতি ও ঐক্য স্থাপন করে । নীচে অসমের অর্থনীতিতে পরিবহণের গুরুত্ব আলোচনা করা হলঃ 

( ১ ) রাস্তা – ঘাট , রেল ইত্যাদি নির্মাণের জন্য এবং জল পরিবহণ ব্যবস্থার জন্য অনেক দূরে থাকা খুব শীঘ্র নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিস উৎপাদন করা সহজ হয় , কারণ এই সকল পচনশীল জিনিস খুব কম সময়ে বাজারে পাঠানো যায় । পরিবহণের সুবিধা না থাকলে দুধ , শাক- সবজি , ফলমূল , ডিম , মাছ ইত্যাদি অনেক জিনিস নষ্ট হয়ে যেত । 

( ২ ) পরিবহণের উন্নতি কৃষিখণ্ডেরও উন্নতি সাধন করে । পথ ও রেল ব্যবস্থার দ্বারা কৃষকেরা উপকৃত হয় । কৃষকেরা সহজেই সার , উচ্চ উৎপাদনক্ষম বীজ , কীটনাশক ঔষধ , পম্পিং সামগ্রী , ট্রেক্টর ইত্যাদি পায় । পরিবহণের সুবিধে থাকার জন্যই কৃষিজাত দ্রব্যের বেচা – কেনা সহজেই হয় । 

( ৩ ) অসমের মত নদ – নদী , পাহাড় – পর্বতে আবৃত স্থানে খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে পরিবহণ ব্যবস্থা এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে । 

( ৪ ) ঔদ্যোগিক উন্নতি পরিবহণ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল । উদ্যোগ গড়ে তুলতে হলে কাঁচামাল সরবরাহের দরকার হয় , মেশিন শ্রমিক লাগে , উৎপাদিত সামগ্রী বাজারে পাঠাতে হয় । এজন্য পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি বিশেষ প্রয়োজন । 

( ৫ ) দেশের আর্থিক ও নৈতিক বিকাশ পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির ওপর নির্ভর করে । পরিবহণ ব্যবস্থা দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা , চিকিৎসা ইত্যাদির সুবিধে প্রদান করে । 

( ৬ ) সামাজিক – সংস্কৃতির বিকাশের জন্যও পরিবহণের উন্নতি আবশ্যক । 

( ৭ ) দেশের দুর্যোগের সময় পরিবহণ ব্যবস্থা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে। 

প্রশ্ন ১২। অসমের জলপরিবহণ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো । 

উত্তরঃ অসমের জল পরিবহণ ব্যবস্থা মূলত আভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ ব্যবস্থা । অসমে ৯,৬০০ কিলোমিটার আভ্যন্তরীণ জলপথ আছে । দুটি সরকারী প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় আভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ নিগম এবং আভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ সঞ্চালকালয় । অসম একটি নদীপ্রধান রাজ্য । ভারতের মোট জলসম্পদের অধিকারী ব্রহ্মপুত্র , বরাক ও এদের অসংখ্য উপনদী । ব্রহ্মপুত্রের  ৮৯১ কিলোমিটার পথ নাব্য জলপথ এবং বরাকের ১২১ কিলোমিটার নাব্য জলপথ আছে । এই জলপথে চলাচল করা জাহাজের সাহায্যে কম খরচে মালপত্র পরিবহণ করে সমগ্র উত্তর – পূর্ব ভারত বিশেষ করে অসম , নাগাল্যাণ্ড , মিজোরাম , মণিপুর , ত্রিপুরা ও অরুণাচল প্রদেশের উন্নতি হচ্ছে । পাণ্ডুকে ধরে ব্রহ্মপুত্রের বেশ কয়েকটি ছোট নদী বন্দর আছে । 

এছাড়াও যাত্রী ও জিনিস – পত্র পরিবহণের জন্য ব্রহ্মপুত্রের দুই পারে ৩০ জোড়ারও বেশি ফেরীঘাট আছে । বর্তমানে আভ্যন্তরীণ জলপরিবহণ বিভাগের তিনটি মণ্ডলে ৯৬ টি ফেরী চলছে । এগুলো ছাড়াও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বেশ কিছু সংখ্যক ফেরীসেবা ও ভূটভূটী চলাচল করে । অসমের আভ্যন্তরীণ জল পরিবহণের সুবিধাসমূহ হল— 

( ক ) অসম নদীমাতৃক রাজ্য হওয়ায় এখানে জল পরিবহণ ব্যবস্থার প্রসারের জন্য অনেক সুযোগ ও সুবিধা আছে । 

( খ ) অন্য পরিবহণের তুলনায় জল পরিবহণে ইন্ধনের খরচ কম । 

( গ ) ভারী মালপত্র পরিবহণের ক্ষেত্রে জল পরিবহণ ব্যবস্থা অতি উপযোগী । 

( ঘ ) আভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ রাজ্যের অভ্যন্তরে মানুষ ও জিনিসপত্র পরিবহণের ক্ষেত্রে সুবিধে প্রদান করে আসছে । 

( ঙ ) পথ পরিবহণের মত জল পরিবহণে বায়ু প্রদূষণের সমস্যা নেই । 

( চ ) পথ পরিবহণের ক্ষেত্রে অনগ্রসর স্থানের জনসাধারণের যাতায়াত ও মালপত্র আনা নেওয়ার জন্য জলপরিবহণ ব্যবস্থা সাহায্য করে । 

( ছ ) অসমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে বন্যার সময় জল পরিবহণ ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় ।

( জ ) প্রাকৃতিক নদ – নদীর জলপথসমূহ ব্যবহার করার জন্য জল পরিবহণ ব্যবস্থা মেরামতি , পথ নির্মাণ ইত্যাদির সমস্যা থাকে না । 

উল্লেখযোগ্য যে ভারত সরকার ইতিমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদীকে রাষ্ট্রীয় জলপথ হিসেবে ঘোষণা করেছে , যার ফলে ধুবরি – কলকাতা জলপথ প্রবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশ পর্যন্ত জল পরিবহণের পথ প্রশস্ত হয়েছে । 

প্রশ্ন ১৩। অসমের পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নের অন্তরায়ের পাঁচটি প্রধান কারণ উল্লেখ করো ।

উত্তরঃ অসমের পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে দেখা দেওয়া পাঁচটি প্রধান কারণ হল— 

( ১ ) ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার চারদিকে পাহাড়ীয়া হওয়ার জন্য এবং বর্ষাকালে এই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে এর নদীগুলিতে বন্যার সৃষ্টি হয় । বন্যার জলে রাস্তা – ঘাট ডুবে যায় এবং যাতায়াতের প্রতিবন্ধকের সৃষ্টি করে । 

( ২ ) অসম – নদ – নদী , পাহাড় – পর্বত – বন – জঙ্গলে পরিপূর্ণ । বর্ষা , বন্যা অসমের জনজীবনের চিরসঙ্গী । রেল পরিবহণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় । বন্যা , অত্যধিক বৃষ্টির ফলে কালভার্ট ব্রীজ ( পুল ) ইত্যাদি মেরামত করতে প্রচুর টাকা খরচ হয় ।

( ৩ ) বর্ষাকালে অনবরত বৃষ্টির ফলে কখনও কখনও রাস্তা – ঘাট , রেলপথ এবং এইগুলির উপরের ব্রীজ ( পুল ) খসে পড়ে বা ভেঙ্গে যায় । এর ফলে যাতায়াতে প্রতিবন্ধকের সৃষ্টি করে । 

( ৪ ) বন্যা , অধিক বৃষ্টিপাত ইত্যাদির ফলে রেল লাইন হঠাৎ উড়িয়ে নিয়ে যায় । প্রায়ই দুর্ঘটনা ইত্যাদি ঘটে । 

( ৫ ) নদীর জলে রাস্তা – ঘাট , ব্রীজ ( পুল ) , কালভার্ট ইত্যাদি উড়িয়ে নিয়ে রাস্তা – ঘাটের বিস্তর ক্ষতিসাধন করে । অপরদিকে বৎসরের প্রায় ছয়মাস , অসমের বেশির ভাগ অঞ্চলই জলে ডুবে থাকে । ফলে এই সময়ে রাস্তা – ঘাট মেরামত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে । 

প্রশ্ন ১৪। সম্পদ বলতে কী বোঝায় ? অসমের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদগুলো কী কী ? 

উত্তরঃ সম্পদ বলতে আমাদের পরিবেশে থাকা সেই সমস্ত দ্রব্য বা জিনিসকে বোঝায় যেগুলো ব্যবহার করে আমরা আমাদের অভাব ও অভিলাষ পূরণ করতে পারি । অসমের প্রধান প্রাকৃতিকসমূহ হল— 

( ১ ) ভূমি সম্পদ ।

( ২ ) বনজ সম্পদ ।

( ৩ ) খনিজ সম্পদ । এবং 

( ৪ ) জল সম্পদ । 

( ১ ) ভূমি সম্পদ :- ভূমি সম্পদ জীব জগতের জন্য অতি অপরিহার্য সম্পদ । ভূমি প্রাণী ও উদ্ভিদকে বাঁচিয়ে রেখেছে । আমরা ভূমির ওপর বসবাস করি এবং কৃষি , শিল্প , বাণিজ্য , যাতায়াত ইত্যাদি অর্থনৈতিক কার্যকলাপ করে থাকি । ভূমি সম্পদের বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ সকল অঞ্চলে একই নয় । ভূমি চার প্রকারের মৃত্তিকা দ্বারা গঠিত । এগুলো হল— 

( ক ) নদী সমভূমির পলিমৃত্তিকা ।

( খ ) গিরিপদ মৃত্তিকা ।

( গ ) পাহাড়ীয়া মৃত্তিকা । এবং 

( ঘ ) কংকর মৃত্তিকা । 

এ সমস্ত মৃত্তিকার মধ্যে পলিযুক্ত মৃত্তিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । পলি মৃত্তিকা আবার দুই প্রকারের — নতুন পলি মৃত্তিকা এবং পুরোনো পলি মৃত্তিকা । নতুন মৃত্তিকাতে ধান , পাট , ডাল জাতীয় শস্য ও শাক – সবজির উৎপাদনের জন্য উপযোগী । পুরানো পলি মৃত্তিকা তুলনামূলকভাবে উঁচু অঞ্চলে পাওয়া যায় । এই মাটি প্রধানত চা ও ধান চাষের উপযোগী । 

( ২ ) বনজ সম্পদ :- বনজ সম্পদে অসম উন্নত ছিল । বর্তমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে এবং ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে । অসমের সমভূমি , মালভূমি , পাহাড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলোতে কয়েক প্রকারের অরণ্য দেখা যায়— 

( ক ) ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য ।

( খ ) ক্রান্তীয় অর্ধ চিরহরিৎ অরণ্য ।

( গ ) নদী তীরবর্তী অরণ্য ।

( ঘ ) ক্রান্তীয় আর্দ্র পর্ণপাতী অরণ্য । এবং 

( ঙ ) ক্রান্তীয় শুষ্ক পর্ণপাতী অরণ্য । 

অরণ্যভেদে উচ্চমূল্যবান উদ্ভিদ , যেমন — নাহার , বনসোম , শিরীষ , শাল , শিমূল , অগরু , খয়ের , পমা , গন্ধসরৈ , তিতাচাপা ইত্যাদি । আবার ছোট ছোট উদ্ভিদ ও ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ , যেমন — বাঁশ , বেত, নন , খাগড়া , বিরিনা , তরা , কৌপাত , ঢেঁকিয়া , ঝাউ , কাশ ইত্যাদি পাওয়া যায় । এছাড়া খের , শাকসবজি , ফলমূল , ঔষধি উদ্ভিদ ইত্যাদি পাওয়া যায় । 

অসমের বনাঞ্চলে পৃথিবীর এক খড়্গাযুক্ত গণ্ডার , হাতী , বাঘ , ভালুক , বন্য মহিষ , নানা প্রকারের হরিণ , বিভিন্ন প্রজাতির বানর ও নানা প্রকারের সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী পাওয়া যায় । 

( ৩ ) খনিজ সম্পদ :- অসম খনিজ সম্পদে অতি উন্নত । অসমের প্রধান খনিজসমূহ হল — কয়লা , খনিজ তেল , প্রাকৃতিক গ্যাস ও চূনাপাথর । খনিজ তেল সম্পদে অসম উন্নত । খনিজ তেলকে তরল সোনা ( Liquid Gold ) বলে । অসমে সর্বপ্রথম ডিগবয়তে তেলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল । ভারতের মধ্যে ডিগবয় তৈলক্ষেত্র অতি পুরোনো । অসমের প্রধান তৈল ক্ষেত্রসমূহ হল নাহারকাটীয়া , মরাণ – গ্রীজান , রুদ্র সাগর , লাকোয়া , গেলেকী , বরহোলা ও আমগুড়ি তৈলক্ষেত্র । প্রাকৃতিক গ্যাসেও অসম উন্নত । রুদ্রসাগর , মরাণ , লাকোয়া , নাহারকাটীয়া তৈলক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস সঞ্চিত আছে । 

খনিজ সম্পদের মধ্যে কয়লা অন্যতম । অসমের কয়লাতে সালফারের পরিমাণ বেশি থাকায় রেল পরিবহণ , জাহাজ পরিবহণ ও বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনে প্রধানত ব্যবহার করা হয় । এছাড়া চুনাপাথর , লৌহ আকর, ফেলষ্পার , কোয়ার্টজ ও খনিজ মৃত্তিকা প্রভৃতি খনিজ পদার্থ অসমে পাওয়া যায় । এগুলো ছাড়া চীনা মাটি কাৰ্বি আংলং জেলার শিলভেটা , চিলনীজান দেওপানী অঞ্চলে এবং নলবাড়ী জেলার পাগলাদিয়া নদীর পারের সুয়নখাটা ও ভূটান খুঁটি অঞ্চলে পাওয়া যায় । 

( ৪ ) জল সম্পদ :- অসম জলসম্পদে বেশ উন্নত । অসমে অপর্যাপ্ত পরিমাণে পৃষ্ঠজল সম্পদ ( Surface water resource ) ও ভূতল জলসম্পদ ( Under ground water resource ) আছে । প্রচুর বৃষ্টিপাত , সারা বৎসর ধরে প্রবাহিত নদ – নদীর জলপ্রবাহ , খাল , বিল , আর্দ্রভূমি ( Wetlands ) ইত্যাদির জলরাশি অসমের পৃষ্ঠ জলসম্পদ সমৃদ্ধ করেছে । রাজ্যটির দুই প্রধান নদী— ব্রহ্মপুত্র বরাক ও এদের অসংখ্য উপনদী দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জলসম্পদ বহণ করছে । খাল – বিল ও অন্যান্য জলাশয়ে অসংখ্য মাছ পাওয়া যায় । সমগ্র ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকাতে ভূতল জলসম্পদ প্রচুর পরিমাণে সঞ্চিত হয়ে আছে । ভূতল জলরাশি কৃষিকার্য ছাড়াও গৃহকর্মে ও ঔদ্যোগিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় । 

প্রশ্ন ১৫। অসমের প্রধান তৈল ক্ষেত্রগুলো উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ অসমের প্রধান তৈল ক্ষেত্রসমূহ হল — নাহারকাটিয়া , মরাণ – হুগ্রীজন , রুদ্রসাগর , লাকোয়া , গেলেকী , বরহোলা , আমগুড়ি ইত্যাদি। 

প্রশ্ন ১৬। অসমের জলসম্পদের বিষয়ে সংক্ষেপে লেখো । 

উত্তরঃ জল সম্পদ :- অসম জলসম্পদে বেশ উন্নত । অসমে অপর্যাপ্ত পরিমাণে পৃষ্ঠজল সম্পদ ( Surface water resource ) ও ভূতল জলসম্পদ ( Under ground water resource ) আছে । প্রচুর বৃষ্টিপাত , সারা বৎসর ধরে প্রবাহিত নদ – নদীর জলপ্রবাহ , খাল , বিল , আর্দ্রভূমি ( Wetlands ) ইত্যাদির জলরাশি অসমের পৃষ্ঠ জলসম্পদ সমৃদ্ধ করেছে । রাজ্যটির দুই প্রধান নদী— ব্রহ্মপুত্র বরাক ও এদের অসংখ্য উপনদী দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জলসম্পদ বহণ করছে । খাল – বিল ও অন্যান্য জলাশয়ে অসংখ্য মাছ পাওয়া যায় । সমগ্র ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকাতে ভূতল জলসম্পদ প্রচুর পরিমাণে সঞ্চিত হয়ে আছে । ভূতল জলরাশি কৃষিকার্য ছাড়াও গৃহকর্মে ও ঔদ্যোগিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় । 

প্রশ্ন ১৭। অসমের প্রাকৃতিক সম্পদগুলির অবক্ষয়ের কারণ কী কী ? 

উত্তরঃ প্রকৃতিতে অবস্থিত গাছ – পালা , জীব – জন্তু , পশু – পাখি , ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী , শিলা , খনিজ পদার্থ প্রভৃতিকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলে গণ্য করা হয় । 

জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাবার ফলে এর কুপ্রভাব বনাঞ্চলে পড়েছে । জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হয়েছে । বনাঞ্চল ধ্বংস করে বসতি স্থাপন করছে এবং বনাঞ্চল ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হচ্ছে । বনজ সম্পদ ধ্বংসের ফলে পরিবেশের ওপর কু – প্রভাব পড়েছে। জনবসতি সম্প্রসারণের ফলে বনাঞ্চল , জলাশয় , আর্দ্রভূমি , কৃষিভূমি ইত্যাদি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে । বর্তমানে মানুষ অরণ্যভূমি ও আর্দ্রভূমি কৃষিভূমিতে পরিবর্তন করে কৃষিকার্যের সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে । 

রাসায়নিক সার প্রয়োগে কৃষিভূমির প্রাকৃতিক গুণ নষ্ট হচ্ছে । অসমের বনজ সম্পদ মানুষের কার্যকলাপের ফলে আক্রান্ত হয়েছে । বনাঞ্চল ধ্বংস হলে গুরুতর পারিবেশিক সমস্যার সৃষ্টি হবে । রাজ্যটিতে পরিবহণ , উদ্যোগ ও শক্তিখণ্ডের উন্নয়নের অর্থে খনিজ সম্পদগুলো অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে আসছে । অসমে নগরীকরণ ও ঔদ্যোগীকরণ প্রক্রিয়া ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে ফলস্বরূপ প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের উপর এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে । উপযুক্ত পরিকল্পনার দ্বারা সম্পদ সংরক্ষণ করে সম্পদের অবক্ষয় রোধ করা আবশ্যক । 

প্রশ্ন ১৮। বর্ধিত জনসংখ্যা প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলেছে ? 

উত্তরঃ জল সম্পদ :- অসম জলসম্পদে বেশ উন্নত । অসমে অপর্যাপ্ত পরিমাণে পৃষ্ঠজল সম্পদ ( Surface water resource ) ও ভূতল জলসম্পদ ( Under ground water resource ) আছে । প্রচুর বৃষ্টিপাত , সারা বৎসর ধরে প্রবাহিত নদ – নদীর জলপ্রবাহ , খাল , বিল , আর্দ্রভূমি ( Wetlands ) ইত্যাদির জলরাশি অসমের পৃষ্ঠ জলসম্পদ সমৃদ্ধ করেছে । রাজ্যটির দুই প্রধান নদী— ব্রহ্মপুত্র বরাক ও এদের অসংখ্য উপনদী দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জলসম্পদ বহণ করছে । খাল – বিল ও অন্যান্য জলাশয়ে অসংখ্য মাছ পাওয়া যায় । সমগ্র ব্রহ্মপুত্র , ও বরাক উপত্যকাতে ভূতল জলসম্পদ প্রচুর পরিমাণে সঞ্চিত হয়ে আছে । ভূতল জলরাশি কৃষিকার্য ছাড়াও গৃহকর্মে ও ঔদ্যোগিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় । 

প্রশ্ন ১৯। অসমের বৃহৎ জনসংখ্যা রাজ্যের বোঝা ( সমস্যা ) নাকি সম্পদ ? আলোচনা করো । 

উত্তরঃ অনেকের মতে অসমের জনসংখ্যা অত্যাধিক হয়েছে । অসমের জনসাধারণের অভাব অনটন , দরিদ্রতা , জীবন নির্বাহের মান , জন্মের হার ইত্যাদি পর্যালোচনা করে বলা যায় যে জনসংখ্যার বৃদ্ধি অসমে চরমসীমা পার করেছে । গত ৩০ বৎসরে জনসংখ্যা যত বেড়েছে সেই হিসেবে ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়নি । এর ফলে জীবন – নির্বাহের মান নীচে নেমেছে । 

অর্থনীতিবিদ মালথাসের মতে জনসংখ্যা খাদ্যসামগ্রীর সাথে তুলনা করে এর সংখ্যা অধিক হয়েছে কিনা সেটা বলা যায় । যে দেশের উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী সেই দেশের জনসংখার ভরণ – পোষণ যোগান দিতে পারে না সেই দেশে জনসংখ্যা অত্যাধিক বলা হয় । 

আবার কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্ব অনুযায়ী দেশের সমগ্র ধন – সম্পদ উৎপাদনের সাথে তুলনা করে দেখতে হয় । জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যদি দেশের সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধি পায় , তখন সেই দেশের জনসংখ্যা কম বলে ধরা হয় । 

অসমে জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয়ের সমতা রক্ষা হয়নি । জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে অর্থনৈতিক প্রগতির উন্নতি পরিলক্ষিত হয়নি । বর্তমানের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে অসমের জাতীয় আয়ের গড় হিসাবে বাৎসরিক শতকরা ১৪ হতে হবে । কিন্তু অসমে জনসংখ্যার বৃদ্ধির অনুপাতে জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি হয়নি । সেই দৃষ্টিভঙ্গীতে অসমে জনসংখ্যা অধিক বলা যায় । 

কিন্তু পরিকল্পনাকালে অবশ্য একটি শুভলক্ষণ দেখা গেছে । অসমের প্রাকৃতিক সম্পদরাজির ধীরে ধীরে ব্যবহার হতে আরম্ভ হয়েছে । কৃষিজাত ও শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানব সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে অসমের আয় বৃদ্ধি করার যথেষ্ট অবকাশ আছে । বর্তমান সময়ে মানুষের অর্থনৈতিক কাজের পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে । অসমে নগরীকরণ ও ঔদ্যোগীকরণ প্রক্রিয়া ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে । 

এর ফলস্বরূপ প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের ওপর এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে । এই কথা ঠিক যে প্রাকৃতিক সম্পদের উপযুক্ত ও বিবেচনাপূর্ণ ব্যবহার হতে হবে । পরিকল্পনার দ্বারা সম্পদ সংরক্ষণ করে সম্পদের অপচয় রোধ করতে হবে। রাজ্যটিতে থাকা প্রচুর সম্পদ উৎঘাটন ও যথাযথ ব্যবহারের দ্বারা দেশের আর্থিক বিকাশ ঘটলে অসমের জাতীয় উৎপাদনের আয় জনসংখ্যা বৃদ্ধি অপেক্ষা অগ্রগতি লাভ করবে এবং বৰ্দ্ধিত জনসংখ্যা সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে ।

প্রশ্ন ২০। অসমে মানব সম্পদ গড়ার জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ? 

উত্তরঃ মানুষ প্রকৃতি থেকে আহরণ করে অনেক সামগ্রীকে প্রয়োজন সাপেক্ষে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে রূপান্তর করে নিজেদের ব্যবহারোপযোগী করে তোলে । যেমন — বাঁশ থেকে কাগজ , কার্পাস থেকে কাপড় , খনিজ তেল থেকে নানা প্রকারের রঙ , ন্যাপথা , কৃত্রিম কাপড় , রাসায়নিক সার , কীটনাশক দ্রব্য , সাবান , প্লাস্টিক , কৃত্রিম রবার , মোম ইত্যাদি । গাছ – পালা থেকে নানাপ্রকারের ঔষধ , কাঠ , গৃহনির্মাণ সামগ্রী ইত্যাদি । মানুষের প্রচেষ্টাতে উৎপাদিত এ সমস্ত সামগ্রীগুলোকে মানব – সৃষ্ট সম্পদ বলে । 

সম্পদের উৎপাদক বা সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মানুষ একপ্রকারের সম্পদ — যাকে মানব সম্পদ বলে । জনসংখ্যা , বুদ্ধি , পেশীশক্তি প্রভৃতিকে মানব সম্পদের অন্তর্গত ধরা হয় । বিভিন্ন সম্পদের মত মানুষ একটি মূল্যবান সম্পদ । জনসম্পদ বা মানব সম্পদ একটি দেশের সম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । জনসম্পদের সঠিক ব্যবহার ঘটলে দেশ সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে । মানব সম্পদের প্রাচুর্য থাকলে শিল্পের জন্য শ্রমিক সুলভ হয় । সস্তায় শ্রমিকের সরবরাহ থাকার ফলে শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায় এবং স্বল্পমূল্যে শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানী করা যায়। দেশের প্রকৃত মানব সম্পদের হিসেব সংখ্যা দিয়ে হয় না , হিসেব করতে হয় গুণগত মান দিয়ে । 

প্রশ্ন ২১। অসমের অর্থনীতিতে কৃষিখণ্ডের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো । 

উত্তরঃ অসম একটি কৃষিপ্রধান রাজ্য । অসমের প্রায় ৭৫ শতাংশ লোক কৃষিকর্মে নিযুক্ত । অসমের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হল কৃষি এবং কৃষিখণ্ডই হল অসমের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি । অসমের অর্থনৈতিক উন্নতিতে কৃষিখণ্ডই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে । অসমের মোট কর্ম নিয়োজিত লোকের মধ্যে ৫৩ শতাংশেরও বেশি লোক কৃষিখণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত । 

অসমের কৃষি জরীপের তথ্য মতে ২০১০-১১ বর্ষে অসমে মোট ২৮-১১ লক্ষ হেক্টর মাটিতে কৃষিকাজ করা হয়েছিল । ভারতের অন্য রাজ্যের মত অসমেও কৃষকগণ অধিকাংশই অতি কম মাটিতে চাষাবাদ করে । রাজ্যটির প্রায় ৮৫ শতাংশ চাষী ক্ষুদ্র ও উপাত্ত শ্রেণির ( Marginal Class ) কৃষক । অসমে আবশ্যকীয় সকল ধরনের চাষ করা হয় । কিন্তু এই রাজ্যের চাষীদের অবস্থা ভাল নয় । মাটি হিসেবে যত শস্য উৎপাদন হওয়া উচিৎ ছিল সেই পরিমাণে হয় না । ধান অসমের প্রধান শস্য । রাজ্যের প্রায় প্রতি জেলাতেই ধান চাষ করা হয় । ধান ছাড়াও অসমের প্রধান খাদ্যশস্য হল— গম , ভুট্টা ও ডাল জাতীয় শস্য । অন্যান্য শস্যের মধ্যে আলু , শাক – সবজি , মশলা জাতীয় শস্য , ফলমূল , আখ ও পাট ।

প্রশ্ন ২২। অসমের কৃষি – জলবায়বীয় অঞ্চল কয়টি কী কী ? এগুলোর বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ মাটির প্রকার ও গুণাগুণ , পৃষ্ঠভূমির বৈশিষ্ট্য , বৃষ্টিপাত ও উত্তাপের বিতরণের ভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে অসমকে মোট ছয়টি কৃষি – জলবায়বীয় ( Agroclimatic ) অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে— 

( ১ ) নিম্ন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অঞ্চল ।

( ২ ) উত্তর পারের সমভূমি অঞ্চল ।

( ৩ ) মধ্য ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অঞ্চল ।

( ৪ ) উচ্চ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অঞ্চল ।

( ৫ ) বরাক উপত্যকা অঞ্চল । এবং 

( ৬ ) পার্বত্য অঞ্চল । 

( ১ ) নিম্ন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অঞ্চল :- নিম্ন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অঞ্চলটির অন্তর্গত কামরূপ জেলাকে ধরে দশটি জেলাতে মোট ৯৩০ লক্ষ হেক্টর মাটিতে চাষ করা হয়েছে এবং এর ৪-৬৯ হেক্টর মাটিতে একাধিক শস্যের চাষ করা হয়েছে । 

( ২ ) উত্তর পারের সমভূমি অঞ্চল :- উত্তর পারের সমভূমি অঞ্চলের অন্তর্গত দরং জেলাকে নিয়ে পাঁচটি জেলায় মোট ৫-৩৭ লক্ষ হেক্টর মাটিতে চাষ করা হয়েছে এবং এর ৩৩৬ লক্ষ হেক্টর ( ৬২.৫৭ শতাংশ ) মাটিতে একাধিক শস্যের চাষ করা হয়েছে । 

( ৩ ) উচ্চ ও মধ্য ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অঞ্চল :- মধ্য ও উচ্চ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অঞ্চল দুটোয় ক্রমে ৩২৮ লক্ষ হেক্টর এবং ৬.২০ লক্ষ হেক্টর মাটিতে কৃষি করা হয়েছে । এর মধ্যে মধ্য উপত্যকা অঞ্চলে ০.৮৬ লক্ষ হেক্টর ( ২৬.২১ শতাংশ ) এবং উচ্চ উপত্যকা অঞ্চলে ১.৯৪ লক্ষ হেক্টর ( ৩১-২৯ শতাংশ ) মাটিতে একাধিক শস্যের চাষ করা হয় । 

( ৪ ) বরাক উপত্যকা অঞ্চল :- কাছাড় , করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলাকে নিয়ে বরাক উপত্যকা অঞ্চলটিতে মোট ২.৪২ লক্ষ হেক্টর মাটিতে চাষ করা হয়েছে । ১.০২ লক্ষ হেক্টর মাটিতে একাধিক শস্যের চাষ করা হয়েছে । 

( ৫ ) পার্বত্য অঞ্চল :- কাৰ্বি আংলং ও ডিমা হাসাও জেলা সহ পার্বত্য অঞ্চলটিতে মোট ১.৫৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে । এর মধ্যে ১০১ লক্ষ হেক্টর ( ৬৫.৫৮ শতাংশ ) মাটিতে একাধিক শস্যের চাষ করা হয়েছে ।

প্রশ্ন ২৩। অসমে কী কী ধানের চাষ করা হয় ? এদের বিষয়ে সংক্ষেপে লেখো । 

উত্তরঃ ধান অসমের প্রধান খাদ্যশস্য । অসমে তিন প্রকারের ধানের চাষ করা হয়— 

( ১ ) আউস ধান ।

( ২ ) শালিধান । এবং 

( ৩ ) বোরো ধান । 

এদের মধ্যে শালিধানের চাষ বিস্তৃতভাবে করা হয় । অসমের মোট ধান চাষের জমির প্রায় ৭০ শতাংশ মাটিতে শালিধানের চাষ করা হয় । ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকার উর্বর পলিযুক্ত মাটিতে শালিধানের চাষ ভাল হয় । এই চাষ রোপণ পদ্ধতিতে জুলাই – আগস্ট মাসে আরম্ভ করে নভেম্বর – ডিসেম্বর মাসে কাটা হয় ।

আউস ধানের চাষ সমভূমির উর্বর মাটিতে করা হয় এবং বিশেষ করে নিম্ন অসমে এই ধানের চাষ বিস্তৃতভাবে করা হয় । আউস ধানের চাষ রোপণ ও সিঞ্চন দুই প্রকারে করা হয় । ফেব্রুয়ারী – মার্চ মাসে আরম্ভ করে জুন – জুলাই মাসে কাটা হয় ৷ 

বোরো ধান কম বেশি পরিমাণে অসমের প্রায় জেলাগুলোতেই উৎপাদন করা হয় । এই ধানের চাষ প্রধানত নীচু স্থানগুলোতে শীতকালে আরম্ভ করে জুন জুলাই মাসে বন্যার জল আসার পূর্বেই কাটা হয় । বান পীড়িত অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে বোরো ধানের চাষ বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে পড়েছে , কারণ বন্যাতে শালিধানের ক্ষতি সাধিত হয় ।

প্রশ্ন ২৪। ধান কেন অসমের প্রধান শস্য হিসেবে পরিগণিত হয়েছে ?

উত্তরঃ খাদ্যশস্যের মধ্যে অসমে ধান চাষই অধিক প্রাধান্য পেয়েছে । অসমের মানুষের প্রধান খাদ্য হল ভাত । কাজেই ধান চাষ অসমের জাতীয় জীবনের প্রাণকেন্দ্র । উপত্যকা অঞ্চলের প্রায় সব জেলাতেই ধানের চাষ করা হয় । এদের মধ্যে কামরূপ জেলায় সর্বাধিক ধান হয় । কামরূপের পর গোয়ালপাড়া , কোকরাঝার , বরপেটা , নলবারী , ধুবরী , মরিগাঁও , নগাঁও , শিবসাগর , যোরহাট , লক্ষীমপুর , ধেমাজি , গোলাঘাট , শোণিতপুর , দরং , কাছার , করিমগঞ্জ ইত্যাদি জেলাতে ধান চাষ হয় । নলবারীর বাক্সা অঞ্চল , নগাঁওর ধিং , হোজাই ; দরং জেলার কালাইগাঁও , ওদালগুড়ি অঞ্চলে প্রচুর ধানের চাষ হয় । অসমের চাষীরা সাধারণত তিন প্রকারের ধানের চাষ করে — আউস , শালিধান ও বোরো ধান । এগুলোর মধ্যে শালিধানের চাষ বিস্তৃতভাবে করা হয় । 

প্রশ্ন ২৫। অসমে কী কী ডালজাতীয় শস্যের চাষ করা হয় ? 

উত্তরঃ অসমে ডালজাতীয় শস্যের মধ্যে কলাই , মুগ , মশুর , মটর , অড়হর , ছোলা বা বুট ইত্যাদির চাষ করা হয় ।

প্রশ্ন ২৬। অসমের জুম চাষের বিষয়ে সংক্ষেপে লেখো । 

উত্তরঃ সাধারণত পাহাড়ীয়া অঞ্চলের সুবিধা জনকস্থানে ঝুম চাষ করা হয় । পাহাড়ের জঙ্গল পুড়িয়ে চাষ করার জায়গা বের করে এবং পরম্পরাগত পদ্ধতিতে জনজাতীয় লোক ঝুম চাষ করে । এক টুকরো মাটিতে কয়েক বৎসর ঝুম চাষ করার পর মাটির উর্বরাশক্তি হ্রাস পেলে অন্য একটি স্থান নির্বাচন করে সেখানে নতুন করে ঝুম চাষ করা হয় । ঝুম চাষ একপ্রকার মিশ্রিত কৃষিপদ্ধতি হলেও এর থেকে ভাল উৎপাদন পাওয়া যায় না । এই ঝুম চাষে ধান , ভূট্টা , বিভিন্ন শাক – সবজি , মরিচ , আদা , কার্পাস , আনারস ইত্যাদি চাষ করা হয় । 

প্রশ্ন ২৭। ২০১৪ সালের অসমের শিল্পীয় এবং বিনিয়োগ নীতির প্রধান লক্ষ্যগুলি কী কী ?

উত্তরঃ অসম সরকার ২০১৪ সালে অসম ঔদ্যোগিক ও বিনিয়োগ নীতি ( Industrial and Investment Policy , Assam , 2014 ) ঘোষণা করে । এই উদ্যোগ ও বিনিয়োগ নীতির প্রধান লক্ষ্যগুলো হল— 

( ক ) রাজ্যটিতে পণ্য উৎপাদনকারী খণ্ড ও সেবাখণ্ডের সাথে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যকলাপের বিকাশ ঘটিয়ে রাজ্যের মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করা । 

( খ ) রাজ্যটিতে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে মাথাপিছু আয় ও নিয়োগের সুবিধা বৃদ্ধি করা । 

( গ ) রাজ্যটির অতিক্ষুদ্র ( micro ) , ক্ষুদ্র ( small ) ও মধ্যম ( medium ) , উদ্যোগের বিকাশের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা । 

( ঘ ) বৃহৎ সংখ্যক দক্ষ লোক ( Skilled Personnel ) সৃষ্টি করা । 

প্রশ্ন ২৮। পরিসেবা খণ্ডের শিল্প বলতে কী বোঝায় ? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে লেখো । 

উত্তরঃ সেবাখণ্ড বলতে কিছু সংখ্যক বে – সরকারী সংস্থা , যেগুলোতে অধিক সংখ্যক কর্ম সংস্থাপন হতে পারে , যেমন — নির্মাণ কার্য , পর্যটন উদ্যোগ , পরিবহণ , ক্ষুদ্র উদ্যোগ , তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ইত্যাদি । অবশ্য এর মধ্যে কিছু সংখ্যক সরকারী ও ব্যক্তিগত মালিকানা ভুক্ত । সেবাখণ্ডের মধ্যে ব্যাংক ও বীমা সেবা , সকল ধরনের ব্যবসায় , লোক প্রশাসনও অন্তর্ভুক্ত । 

অসমে ব্যাঙ্ক ব্যবসায় ও বীমা সংস্থাগুলো জনসাধারণকে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই সাহায্য করছে । কৃষকদের ঋণ দিয়ে তাদের কৃষিকার্যে সাহায্য করছে । এ ব্যাপারে ভারতীয় ষ্টেট ব্যাঙ্ক , বিভিন্ন গ্রামীণ ব্যাঙ্ক যথেষ্ট অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে । 

পর্যটনের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন পর্যটনক্ষেত্রে বহু দেশী ও বিদেশী পর্যটক আসে।এজন্য অসম ট্যুরিজম সেন্টার খোলা হয়েছে । কাজিরাঙা , মানস, জাতিঙ্গা ইত্যাদি স্থানে প্রতি বৎসরই বিভিন্ন পর্যটকের সমাগম ঘটে । এই পর্যটনকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে পরিবহণ ব্যবস্থা , হোটেল ব্যবসা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্র হতে প্রচুর অর্থাগম হচ্ছে এবং স্থানীয় যুবকদের বিভিন্ন সংস্থাতে কর্মসংস্থান হচ্ছে । এতে বেকার সমস্যার অনেকটা সমাধান হচ্ছে । রাজ্যটিতে পণ্য উৎপাদনকারী খণ্ড ও সেবাখণ্ডের সাথে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের বিকাশ ঘটিয়ে রাজ্যের মোট গৃহস্থালির উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে । গ্রামের প্রত্যন্ত লোকেরাও বিভিন্ন সেবা পাওয়াতে পূর্বের অজ্ঞানতা থেকে অনেক উন্নত হয়েছে । এই সেবাখণ্ড থেকে সরকারের প্রচুর অর্থাগম হচ্ছে । 

প্রশ্ন ২৯। অসমের প্রধান কৃষিভিত্তিক শিল্পগুলো কী কী ? 

উত্তরঃ অসমে কৃষিজাত শস্যগুলোকে কাঁচা সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করে বহু ধরনের উদ্যোগ স্থাপন করার সুযোগ আছে । বর্তমানে অসমের প্রধান কৃষিভিত্তিক উদ্যোগগুলো হল — বন পালন উদ্যোগ , চা উদ্যোগ, রবার উদ্যোগ , খাদ্য প্রস্তুতকরণ উদ্যোগ ও কাগজ উদ্যোগ । 

প্রশ্ন ৩০। অসমের চা শিল্পের বিষয়ে সংক্ষেপে লেখো । 

উত্তরঃ চা উদ্যোগ অসমের সর্ববৃহৎ কৃষিভিত্তিক উদ্যোগ । সমগ্র পৃথিবীতে অসমের চা উদ্যোগের একটি সুনাম আছে । অসমের অর্থনীতিতে চা উদ্যোগ একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে । অসম একাই ভারতের মোট চা উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি উৎপাদন করে । চা চাষের জন্য প্রয়োজনীয় অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্যই অসমে চা উদ্যোগ গড়ে উঠেছে । ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী অসমে মোট ৭৬৫ টি চা বাগান ও ৭৮০৯১ টি ক্ষুদ্র ( ১০-১২ হেক্টর অপেক্ষা কম আয়তনের ) চা বাগান আছে । ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী অসম প্রায় ৫৯০ হাজার টন চা উৎপাদন করেছিল । চা উদ্যোগ বহুসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান দেয় । অসমের চা উদ্যোগে গড়ে দৈনিক ৬.৮৬ লক্ষেরও বেশি লোক নিয়োজিত হয়ে আছে । চা উৎপাদনে অসম গৌরব অর্জন করেছে । 

প্রশ্ন ৩১। অসমে মীন শিল্পের বর্তমান অবস্থা কেমন আলোচনা করো ? 

উত্তরঃ অসমের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মৎস্য উদ্যোগ ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করছে । অসমে মৎস্য পালনের যথেষ্ট ভূমিকা আছে । অসম রাজ্য নদী – উপনদীতে ভরা । ব্রহ্মপুত্র ও বরাক নদীর বিস্তৃত সমভূমি ও প্লাবনভূমিতে থাকা বিল ও জলাশয়গুলোতে প্রাকৃতিক ভাবেই অনেক মাছ পাওয়া যায় । অসমে মাছের প্রচুর চাহিদা ও মাছ উৎপাদনের প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রাজ্যটির বিল – জলাশয় গুলোর উপযুক্ত ব্যবহার হয়নি । জেলা ভিত্তিতে ২০১১-১২ সালে বরপেটা জেলা সর্বাধিক সংখ্যক মাছের পোনা উৎপন্ন করেছে । যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করেছে করিমগঞ্জ ও নগাঁও জেলা । মাছ উৎপাদনে নগাঁও জেলা প্রথম স্থানে এবং কাছাড় ও ধুবরী জেলা যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে । 

মৎস্য উদ্যোগ খণ্ড রাজ্যটির নিজস্ব উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ উৎসাহ জনক নয় । রাজ্যের নিজস্ব উৎপাদনে মৎস্য উদ্যোগ খণ্ডের অবদান মাত্র দুই শতাংশ । মাছ উৎপাদনের প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অসমে মাছ উৎপাদন মোটেই সন্তোষ জনক নয় । অসমে বাৎসরিক যত মাছের প্রয়োজন হয় সেই অনুপাতে নিজের রাজ্যের উৎপাদন ও বহির্রাজ্য থেকে রপ্তানি করা মাছের পরিমাণ পর্যাপ্ত নয় । এর ফলে রাজ্যটিতে বৎসরে ০.৫২ লক্ষ টন মাছের ঘাটতি হয় এবং সে কারণে মাছের দামও অধিক হচ্ছে । 

প্রশ্ন ৩২। অসমের কৃষি উন্নয়নের সমস্যাগুলি উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ অসমের কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা আছে । সেগুলো হ’ল –

( ক ) অসমের কৃষির উৎপাদন ক্ষমতা অতি নিম্ন । জনসংখ্যার তুলনায় ভূমির পরিমাণ সীমিত । জনসংখ্যা বেশি হওয়ার ফলে ভূমিতে আধুনিক কৃষিপদ্ধতি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দিয়েছে । অসমের কৃষি ব্যবস্থায় নিয়োজিত থাকা শতকরা ২০ জন কৃষি শ্রমিক ছদ্মবেশী বেকার । কৃষিখণ্ডে মূলধন গঠন এবং কৃষি উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে ছদ্মবেশী বেকারগণ সক্রিয়ভাবে জড়িত । 

( খ ) অসমের অধিকাংশ কৃষক পুরানো কৃষি পদ্ধতিতে কৃষিকার্য সম্পাদন করে । কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োগ , উন্নত বীজ , সার ইত্যাদির ব্যবহার নগণ্য কৃষকের মধ্যে সীমিত হয়ে আছে । কৃষকের আর্থিক দুরবস্থা , নিরক্ষরতা ইত্যাদি আধুনিক কৃষিপদ্ধতি প্রয়োগের প্রধান অন্তরায় । 

( গ ) অসমের অধিকাংশ কৃষকের মূলধনের অভাবের জন্য কৃষকদের অবস্থার অধিক অবনতি ঘটেছে এবং এর ফলে কৃষি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়েছে ।

( ঘ ) অসমের কৃষি ব্যবস্থার একটি প্রধান সমস্যা হল কৃষি জমিতে জলসেচনের অনিশ্চয়তা , এখানকার কৃষি ব্যবস্থা মৌসুমী বায়ুর উপরে নির্ভরশীল । কিন্তু এই বায়ুর অনিশ্চয়তা সময়ের বন্যা ও খরার ফলে কৃষি উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হয় । অধিকাংশ কৃষি জমিতে জলসেচের কোন সুবিধা না থাকায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সমস্যা দেখা দিয়েছে । 

( ঙ ) শীতল ঘরের অভাব ।

( চ ) কৃষি খণ্ডের উন্নতির জন্য আন্তঃগাথনির অভাব । 

প্রশ্ন ৩৩। অসমের শিল্পের বিকাশ এখনও কেন মন্থর হয়ে আছে তার কারণগুলি লেখো । 

উত্তরঃ অসমের ঔদ্যোগিক বিকাশের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ঔদ্যোগীকরণ প্রক্রিয়া এখনো মন্থর হয়ে আছে । এর প্রধান কারণগুলো নীচে দেওয়া হল— 

( ক ) অসমের প্রাকৃতিক সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে ঔদ্যোগিক উন্নয়ন ঘটানোর জন্য সুসংহত পরিকল্পনার অভাব । 

( খ ) প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কৃষি ভিত্তিক উদ্যোগ খণ্ডের সীমিত ও ধীরগতি সম্পন্ন বিকাশ । 

( গ ) অনুন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা । 

( ঘ ) মূলধনের অভাব । 

( ঙ ) রাজ্যটিতে শক্তির চাহিদা অনুপাতে এর যোগান ও বিতরণ নিয়মিত ও পর্যাপ্ত নয় ৷ এবং

( চ ) স্থানীয় লোকের মধ্যে উদ্যোগী স্পৃহা ( Enterprising Zeal ) বৃদ্ধি করার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাব । 

প্রশ্ন ৩৪। অসমের পর্যটন শিল্পের সমস্যাগুলো উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ অসমে পর্যটন উদ্যোগের উন্নয়নে অনেক সমস্যা আছে । সেগুলো হল— 

( ১ ) রাস্তাঘাটের জরাজীর্ণ অবস্থা । 

( ২ ) অনুন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা । 

( ৩ ) উপযুক্ত হোটেল বা যাত্রী নিবাসের অভাব । 

( ৪ ) কারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব । 

( ৫ ) বন্যার সমস্যা । 

( ৬ ) পর্যটকদের মধ্যে নিরাপত্তা হীনতার অভাব । এবং

( ৭ ) পর্যটন কেন্দ্রে উপযুক্ত চিকিৎসকের অভাব ।

প্রশ্ন ৩৫। অসমের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনাগুলি কী কী ? 

উত্তরঃ অসমের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক । অসমের প্রায় ৭৫ শতাংশ লোক কৃষিকে প্রধান জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেছে । অসমের কৃষিখণ্ডের অনেক সমস্যা আছে তথাপি সম্প্রতিকালে সীমিত পরিসরে কৃষিখণ্ডে কিছু সংখ্যক আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে । এর ফলস্বরূপ কৃষি উৎপাদন কিছু পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে । রাজ্যটিতে প্রায় তিন চতুর্থাংশ কৃষিভূমিতে খাদ্যশস্যের চাষ করা হয় । বিভিন্ন খাদ্যশস্যের মধ্যে ধানের চাষ বিস্তৃতভাবে করা হয়। 

অতএব ধান চাষের উন্নতির ওপর রাজ্যটির কৃষি অর্থনীতির উন্নতি নির্ভর করে । অসম বীজ নিগম উন্নত বীজের সরবরাহ করছে ; সরকারী সাহায্যে সার বিতরণ করা হচ্ছে , ট্র্যাক্টর ও পাম্পসেট ইত্যাদি বিতরণ করা হচ্ছে , পাওয়ার টিলার বিতরণ করা হচ্ছে । সুখের কথা এই যে যুব সম্প্রদায় উন্নত পদ্ধতি গ্রহণ করে অধিক ফসল ফলাচ্ছে । বর্তমানে ফল – মূল ও শাক – সবজির উৎপাদন প্রসার লাভ করতে দেখা যাচ্ছে । চা অসমের অর্থনীতির একটি প্রধান উৎস । এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র পরিসরে চা চাষের ভূমিকা অনবদ্য । 

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর

● অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। ব্রহ্মপুত্র সমতলের দৈর্ঘ্য কত ? 

উত্তরঃ প্রায় ৭২০ কিলোমিটার । 

প্রশ্ন ২। ব্রহ্মপুত্র সমতলের প্রস্থ কত ? 

উত্তরঃ ৯০ কিলোমিটার ৷ 

প্রশ্ন ৩। মেঘালয় হতে কয়টি উপনদী ব্রহ্মপুত্রে এসে পড়েছে ?

উত্তরঃ প্রায় ৪০ টি । 

প্রশ্ন ৪। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ নদী – দ্বীপটির নাম কী ? এটি কোথায় অবস্থিত ? 

উত্তরঃ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ নদী – দ্বীপটির নাম মাজুলী । এটি যোড়হাট জেলার উত্তরাংশে অবস্থিত । 

প্রশ্ন ৫। অসমের কোন অঞ্চল সর্বাপেক্ষা উন্নত ? 

উত্তরঃ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ।

প্রশ্ন ৬। অসমের প্রধান যাতায়াত ব্যবস্থা কী কী ? 

উত্তরঃ স্থলপথ , রেলপথ , জলপথ ও বিমান পথ । 

প্রশ্ন ৭। ভারতের প্রথম তেল শোধনাগার কোথায় স্থাপিত হয়েছিল ? 

উত্তরঃ ১৯০৭ সালে অসমের ডিগবয়ে ভারতের প্রথম তেল শোধনাগার স্থাপিত হয়েছিল । 

প্রশ্ন ৮। অসমে কয়টি অভয়ারণ্য আছে ? 

উত্তরঃ বর্তমানে অসমে ছোট – বড় ১০ টি অভয়ারণ্য আছে । 

প্রশ্ন ৯। অসমের কোন্ উদ্যানকে বিশ্ব ঐতিহ্যস্থলী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে ? 

উত্তরঃ অসমের কাজিরাঙা রাষ্ট্রীয় উদ্যানকে ‘ বিশ্বঐতিহ্যস্থলী ’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে । 

প্রশ্ন ১০। কাজিরাঙা রাষ্ট্রীয় উদ্যান কীজন্য পৃথিবী বিখ্যাত ? 

উত্তরঃ কাজিরাঙা রাষ্ট্রীয় উদ্যান এক শিং গণ্ডারের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। 

প্রশ্ন ১১। বরাক সমতলে কয়টি জেলা আছে ও কী কী ? 

উত্তরঃ বরাক সমতলে তিনটি জেলা আছে । এই জেলা তিনটি হল— কাছার , হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জ জেলা । 

প্রশ্ন ১২। বরাক সমতলের পূর্বদিকে কয়টি সংরক্ষিত বন আছে ও কি কি ? 

উত্তরঃ বরাক সমতলের পূর্বদিকে মণিপুরের পাহাড়গুলির পাদদেশে তিনটি সংরক্ষিত বন আছে । এই সংরক্ষিত বন তিনটি হল — উজনিজিরি , নামনিজিরি ও বরাক । 

প্রশ্ন ১৩। বরাক সমতলের দক্ষিণে কী কী সংরক্ষিত বন আছে ? 

উত্তরঃ বরাক সমতলের দক্ষিণে মিজোরামের পাহাড়গুলির পাদদেশে ইনার লাইন , সোনাই , কাটাখাল , ছিংলা ও লংগাই সংরক্ষিত বন আছে। 

প্রশ্ন ১৪। বরাক সমতলের পশ্চিমে কী কী সংরক্ষিত বন আছে ? 

উত্তরঃ বরাক সমতলের পশ্চিমে বাদশাহ টিলা , দোহালীয়া ও তিলরাম পাহাড় নামক তিনটি সংরক্ষিত বন আছে । 

প্রশ্ন ১৫। উত্তর কাছার জেলার কোন্ স্থানে সুড়ঙ্গ রেলপথ আছে ? 

উত্তরঃ মাহুর ।

প্রশ্ন ১৬। উত্তর কাছার জেলার কোন্ স্থানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে ? 

উত্তরঃ উমরাংচুতে কপিলী জলবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প আছে । 

প্রশ্ন ১৭। কাৰ্বি আংলং জেলার কোন্ স্থানে সিমেন্টের কারখানা আছে ? 

উত্তরঃ বোকাজান । 

প্রশ্ন ১৮। হাইলাকান্দি জেলার কোন্ স্থানে কাগজের কল আছে ?

উত্তরঃ পাঁচ গ্রামে । 

প্রশ্ন ১৯। বরাক সমতলের সর্ববৃহৎ নগর কোন্‌টি ? 

উত্তরঃ শিলচর । 

প্রশ্ন ২০। কাৰ্বি আংলং জেলার সদর স্থান কোথায় ?

উত্তরঃ ডিফু । 

প্রশ্ন ২১। পলিয়েস্টার সূতা উৎপাদন করা খনিজ সম্পদটি কী ? 

উত্তরঃ খনিজ তেল । 

প্রশ্ন ২২। যে উপাদানের উপর নির্ভর করে পেট্রো- রাসায়নিক শিল্প গড়ে উঠে তার নাম কী ? 

উত্তরঃ প্রাকৃতিক গ্যাস । 

প্রশ্ন ২৩। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিখ্যাত নগদী ফসল কী ? 

উত্তরঃ চা । 

প্রশ্ন ২৪। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কোন্ কোন্ জেলায় প্রচুর পরিমাণে নারিকেল হয় । 

উত্তরঃ মরিগাঁও , কামরূপ , দরং ও নলবারী জেলায় প্রচুর পরিমাণে নারিকেল হয় । 

প্রশ্ন ২৫। অসমের খনিজ সম্পদসমূহের নাম লেখো । 

উত্তরঃ ( ১ ) খনিজ তেল ।

( ২ ) কয়লা ।

( ৩ ) চুনাশিলা । 

প্রশ্ন ২৬। ব্রহ্মপুত্র সমতলের গুরুত্বপূর্ণ কুটির শিল্প কী ? 

উত্তরঃ ব্রহ্মপুত্র সমতল অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ কুটির শিল্প হল তাঁত শাল । এগুলিতে কাপড় , এড়ি , মুগা ও পাটের কাপড় তৈরি করা হয় ।

প্রশ্ন ২৭। কি উৎপাদনে ব্রহ্মপুত্রের সমতল অঞ্চল পৃথিবী বিখ্যাত ? 

উত্তরঃ এড়ি ও মুগা উৎপাদনে পৃথিবী বিখ্যাত । 

প্রশ্ন ২৮। কাৰ্বি আংলং জেলার প্রশাসন কে পরিচালনা করে ? 

উত্তরঃ কার্বি আংলং জেলার প্রশাসন স্বায়ত্ব এই জেলাটি স্বায়ত্ব শাসিত পরিষদের দ্বারা পরিচালিত হয় । 

প্রশ্ন ২৯। অসমের দীর্ঘতম রেলপথের সুড়ঙ্গটি কোন্ জেলায় আছে ? 

উত্তরঃ উত্তর কাছার জেলার মাহরে । 

প্রশ্ন ৩০। করিমগঞ্জ জেলার কোন্ স্থানে চিনির কল আছে ? 

উত্তরঃ চারগোলায় । 

প্রশ্ন ৩১। শিলচরের কোন স্থানে বিমান ঘাঁটি আছে ? 

উত্তরঃ কুম্ভীর গ্রাম । 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর 

প্রশ্ন ১। কাজিরাঙা রাষ্ট্রীয় উদ্যান কী জন্য বিখ্যাত ? 

উত্তরঃ কাজিরাঙা রাষ্ট্রীয় উদ্যান এক শিং গণ্ডারের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত।এছাড়া এখানে নানা প্রকারের পাখী , বিভিন্ন জীবজন্তু ও হাতী দেখতে পাওয়া যায় । 

প্রশ্ন ২। আসামে কয়টি তেল শোধনাগার আছে ? তাদের নাম লেখো । 

উত্তরঃ আসামে ৪ টি তেল শোধনাগার আছে । যথা— 

( ১ ) নুনমাটি ( গুয়াহাটি ) শোধনাগার । 

( ২ ) ডিগবয় শোধনাগার । 

( ৩ ) বঙ্গাইগাঁও শোধনাগার । এবং

( ৪ ) নুমলীগড় শোধনাগার । 

প্রশ্ন ৩। খনিজ তেল হতে কী কী প্রয়োজনীয় সামগ্রী উৎপাদন হয় । 

উত্তরঃ খনিজ তেল শোধন করে কেরোসিন , ডিজেল , পেট্রোল , মোম , ন্যাপথা , ফারনেস অয়েল , তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস ও রান্নার গ্যাস ইত্যাদি অনেক প্রয়োজনীয় সামগ্রী উৎপাদন করা হয় । 

প্রশ্ন ৪। প্রাকৃতিক গ্যাস হতে কী কী জিনিস উৎপাদন হয় ? 

উত্তরঃ রাসায়নিক সার , পেট্রোরাসায়নিক উদ্যোগ , বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয় ।

প্রশ্ন ৫। বঙ্গাইগাঁও জেলায় কী কী কারখানা আছে ? 

উত্তরঃ বঙ্গাইগাঁও জেলার ঢালিগাঁওতে একটি পেট্রোকেমিকেল কারখানা আছে । বঙ্গাইগাঁও শহরে একটি রেল ইঞ্জিন মেরামত করার কারখানা আছে । এখানে একটি অ্যালুমিনিয়ামের কারখানা আছে । একটি ছোট ইস্পাত কারখানাও বঙ্গাইগাঁও শহরে আছে । বঙ্গাইগাঁও জেলার যোগীখোপাতে অসমের প্রথম কাগজ কল ‘ অশোক কাগজ কল ’ অবস্থিত । 

প্রশ্ন ৬। বনাঞ্চলের কয়েকটি উপকারিতা উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ ( ১ ) বনাঞ্চল পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে । 

( ২ ) বনাঞ্চল বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে । 

( ৩ ) বনাঞ্চল ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ করেতে সাহায্য করে । 

( ৪ ) বনাঞ্চলে সূর্যের প্রখর তাপ , বাতাসের প্রবল বেগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে । 

( ৫ ) বনাঞ্চল বৃষ্টিপাত , নদীর জল , বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ , মাটির উর্বরতা ও সার ইত্যাদি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । 

প্রশ্ন ৭। প্রাকৃতিক গ্যাস তিনটির ব্যবহার লেখো । 

উত্তরঃ বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস ( এইচ . এস . এণ্ড . সি . ২০০০ ) নানা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে — যেমন 

( ১ ) রাসায়নিক সার উৎপাদন করবার জন্য অসমের নামরূপ সার কারখানায় প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয় । 

( ২ ) রন্ধন গ্যাস হিসাবে , গ্যাসের ল্যাম্প , শিল্পোদ্যোগ এবং গার্হস্থ্য কাজে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয় । 

( ৩ ) প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ভিত্তি করে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র , পেট্রো রাসায়নিক শিল্প এবং চা বাগান ও গার্হস্থ্য ব্যবহারের জন্যও তেল ক্ষেত্রের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলিতে গ্যাস সরবরাহ করা হয় । 

প্রশ্ন ৮। বনাঞ্চল হ্রাসের কু – ফল কী কী ? 

উত্তরঃ ( ১ ) বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায় । 

( ২ ) দেশে আয় ব্যাহত হয় । 

প্রশ্ন ৯। অসমের অর্থনীতিতে তেল শিল্পের দুটি অবদান উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ অসমের অর্থনীতিতে তেল উদ্যোগের দুটি অবদান হল— 

( ১ ) রাজ্যটির যথেষ্ট সংখ্যক মানুষকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়োগ এবং উপার্জন আহরণের সুবিধা প্রদান করেছে । 

( ২ ) তেল শিল্পের ভিত্তিতেই রাজ্যটিতে দুটি পেট্রো রাসায়নিক শিল্প গড়ে উঠেছে । 

প্রশ্ন ১০। বরপেটা জেলার কোন স্থানে কাঁসার বাসন তৈরি করা হয় ? 

উত্তরঃ সার্থেবাড়ী । 

প্রশ্ন ১১। কামরূপ জেলার কোন্ স্থানে পিতলের বাসন তৈরি করা হয় ?

উত্তরঃ হাজোতে । 

প্রশ্ন ১২। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় কোন্ কোন্ স্থানে কাগজ প্রস্তুত করার কারখানা বা কাগজের কল আছে ? 

উত্তরঃ মরিগাঁও জেলার জাগীরোডে হিন্দুস্থান পেপার করপোরেশনের একটি কাগজ প্রস্তুত করার কারখানা আছে । যোগী খোপাতে আর একটি কাগজের কল আছে । 

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর 

প্রশ্ন ১। অসমের শিল্পোন্নয়নে অসম আর্থিক নিগম ও উত্তর – পূর্ব উন্নয়ন অর্থনিগমের ভূমিকা বর্ণনা করো । 

উত্তরঃ অসম আর্থিক নিগম :- অসম সরকার ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে আর্থিক বিত্তীয় নিগম প্রতিষ্ঠা করেছিল । এর প্রধান উদ্দেশ্য হল ক্ষুদ্র এবং মধ্যম শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহকে অর্থ যোগান দেওয়া এবং এই শিল্পগুলির বিকাশ ঘটানো । এই আর্থিক সাহায্যে বহুসংখ্যক ক্ষুদ্র , অতিক্ষুদ্র , মধ্যম শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বহু বেকার যুবক আত্মনিয়োজন শিল্পীর কর্মসংস্থান হয়েছে । বর্তমানে এর কার্যক্ষেত্র অঞ্চলের ভিতরে অসম ছাড়াও মেঘালয় , মণিপুর ও ত্রিপুরাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । ১৯৯৯-২০০০ সালে ৩৪ টি ঋণের প্রস্তাবের বিপরীতে মোট ৩৭৫.৯৫ লাখ টাকা মঞ্জুর করেছিল এবং ২৮৭.২১ লাখ টাকা এই আর্থিক নিগম দিয়েছিল । 

পূর্ব উন্নয়ন নিগমভারতের শিল্প বিকাশ ব্যাঙ্কের নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারী তারিখে উত্তর – পূর্ব উন্নয়ন অর্থ নিগম ( NEDFI ) স্থাপন করা হয় । এই নিগমের সদর কার্যালয় গুয়াহাটিতে অবস্থিত । এই নিগমের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল উত্তর – পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহে শিল্পের বিকাশ ঘটানো বা শিল্পোন্নয়ন ত্বরান্বিত করা । নিগমের অনুমোদিত পুঁজির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা । ভারতের ঔদ্যোগিক বিকাশ ব্যাঙ্ক ভারতের ঔদ্যোগিক বিত্ত নিগম , ইউনিট ট্রাষ্ট অব ইণ্ডিয়া , ভারতীয় জীবন বীমা নিগম ও সাধারণ বীমা নিগমে এর প্রারম্ভিক মূলধন ১০০ কোটি টাকার যোগান দিয়েছিল । অসম ও উত্তর – পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যসমূহে এই অর্থ নিগম কিছু সংখ্যক শিল্প – কারখানায় আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছে । ক্ষুদ্র শিল্প ও হস্ত শিল্পজাত সামগ্রীসমূহের বিক্রী ও বাজার সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে । 

প্রশ্ন ২। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার যাতায়াত পরিবহণের একটি বিবরণ দাও । 

উত্তরঃ উত্তর – পূর্ব ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ব্রহ্মপুত্র সমতলের যাতায়াত পরিবহণ ব্যবস্থা অল্প উন্নত । পূর্বে এই উপত্যকায় মানুষেরা যাতায়াত ও বাণিজ্যের জন্য ব্রহ্মপুত্র এবং এর উপনদীগুলিতে নৌকা ব্যবহার করত । বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র সমতল ভূমিতে রাস্তা – ঘাট , রেলপথ , নৌ – পরিবহণ এবং বিমান পরিবহণের ব্যবস্থা হয়েছে । ১৮২৬ সালে ব্রিটিশ এই অঞ্চলটি অধিকার করার পর এখানকার রাস্তা – ঘাট এবং পাহাড়ীয়া অঞ্চলের রাস্তা – ঘাট কিছু প্রসারিত হয়েছিল । সেই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ পারে মেঘালয়ের তুরা হতে গোয়ালপাড়া , গুয়াহাটি , নগাঁও , যোড়হাট , শিবসাগর ও ডিব্রুগড় হয়ে পূর্বে চৈখোয়াঘাট পর্যন্ত ‘ আসাম ট্রাঙ্ক রোড ’ একটি রাস্তা এবং ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পারে ধুবড়ি হতে বাইহাটা চারি আলি , মঙ্গলদৈ , তেজপুর , বালিপাড়া , বিশ্বনাথ চারি আলি হয়ে লক্ষিমপুর পর্যন্ত ‘ নর্থ ট্রাঙ্ক রোড ’ আর একটি রাস্তা ছিল । এই প্রধান পথ দুটি হতে উত্তর – দক্ষিণদিকে কিছু সংখ্যক ছোট রাস্তা বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছিল । দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যাতায়াত- পরিবহণ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে । 

ব্রহ্মপুত্রের সমতলে বর্তমান ৩১ নং রাষ্ট্রীয় প্রধান পথ পশ্চিম সীমান্তের শ্রীরামপুরহাট হতে আমিনগাঁও পর্যন্ত এসেছে । বাইহাটা চারি আলি থেকে পূর্বে মঙ্গলদৈ , তেজপুর , লক্ষিমপুর ও ধেমাজি হয়ে জোনাই পর্যন্ত ৫২ নং রাষ্ট্রীয় প্রধানপথ গিয়েছে । ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ পারে পঞ্চরত্ন থেকে গুয়াহাটি , নগাঁও , যোড়হাট , শিবসাগর ও ডিব্রুগড় হয়ে ডাঙরী পর্যন্ত গিয়েছে ৩৭ নং রাষ্ট্রীয় প্রধান পথ । এই ৩৭ নং পথ হতে আবার গুয়াহাটির নিকটে জোরাবাট হতে শিলং হয়ে শিলচর পর্যন্ত ৪০ নং রাষ্ট্রীয় পথ , নগাঁও হতে ডবকা হয়ে ডিমাপুর পর্যন্ত ৩৬ নং রাষ্ট্রীয় পথ, নুমুলীগড় হতে ডিমাপুর , কোহিমা ও ইম্ফল হয়ে মোরে পর্যন্ত ৩৯ নং রাষ্ট্রীয় পথ এবং তিনসুকীয়া হতে ডিগবয় হয়ে বড় গোলাই পর্যন্ত ৩৮ নং রাষ্ট্রীয় সড়ক পথ আছে । বর্তমানে সমতলটিতে প্রায় ১৭০০ কিমি . রাষ্ট্রীয় সড়ক পথ এবং প্রায় ২৪,০০০ কিমি , রাজ্যিক গড়কপ্তানী পথ আছে । এ ছাড়াও বেশি দৈর্ঘ্যের ছোট ছোট গ্রামাঞ্চলের পথও আছে । 

ব্রহ্মপুত্র সমতলে ১৮৮৪ সাল হতে রেলসেবা আরম্ভ হয় । বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র সমতলটিতে প্রায় ২০০০ কি.মি . দৈর্ঘ্যের রেলপথ আছে । শ্রীরামপুরহাট থেকে গুয়াহাটি হয়ে পূর্বে লিডুবর গোলাই এবং উত্তর পারে রঙিয়া হয়ে পূর্বে মুকং চেলেক পর্যন্ত রেলপথ আছে । নিউ – বঙ্গাইগাঁও হতে নরনারায়ণ সেতু দিয়ে ( যোগীঘোপা – পঞ্চরত্ন দিয়ে ) দক্ষিণ গোয়ালপাড়া ও দক্ষিণ কামরূপ হয়ে গুয়াহাটি পর্যন্ত একটি নতুন পথ নির্মাণ করা হয়েছে । গুয়াহাটি তিনসুকীয়া রেলপথ থেকে চাপরমুখ জংশন থেকে নগাঁও পর্যন্ত , লামডিং জংশন থেকে উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলার মধ্য দিয়ে বরাক উপত্যকা পর্যন্ত গোলাঘাট জেলার ফারকাটিং জংশন থেকে যোড়হাট হয়ে মরিয়ানি পর্যন্ত এবং শিবসাগর জেলার শিমুলগুরি জংশন থেকে উত্তরে খোয়াঙ পর্যন্ত এবং বিহুবর পর্যন্ত শাখা রেলপথ আছে । আবার তিনসুকীয়া থেকে পশ্চিমে ডিব্ৰুগড় পর্যন্ত উত্তর পূর্বে মাকুম হয়ে ডাঙরী পর্যন্ত এবং দক্ষিণ – পূর্বে ডিগবয় , মার্ঘেরিটা ও লিডু হয়ে বরগোলা পর্যন্ত রেলপথ প্রসারিত হয়েছে । ব্রহ্মপুত্রের উত্তরে বালিপারা থেকে তেজপুর পর্যন্ত একটি শাখা রেলপথ আছে। 

ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ব্রহ্মপুত্র নদ ব্যতীত বহু সংখ্যক বড় বড় উপনদী আছে । ১৮৪৯ সালে কলকাতা হতে ব্রহ্মপুত্র দিয়ে এই সমতলে প্রথম জাহাজ চলাচল আরম্ভ করেছিল । এই জাহাজ দিয়ে অসমে বিভিন্ন সামগ্রী এবং চা বাগিচার কাজ করার শ্রমিক আনা হয়েছিল এবং অসম হতে চা- পাতা রপ্তানি করা হয়েছিল । বর্তমানে এই সমতলটিতে আন্তর্দেশীয় জল – পরিবহণ বিভাগে নৌ পরিবহণ সেবা আরম্ভ হয়েছে । ব্রহ্মপুত্রের উত্তরপার ও দক্ষিণপার সংযোগ করে প্রায় ৩০ টি স্থানে পার – ঘাট আছে।এইগুলির মধ্যে জাহাজ ও যন্ত্রচালিত ফেরী নৌকা , যাত্রী ও মাল- পত্র পরিবহণ করে । বর্তমানে সরকারের পর্যটন আকর্ষণ করবার জন্য কয়েকটি জাহাজ সুসজ্জিত করে নৌকা – বিহারের ব্যবস্থা করেছে । বর্তমানে সরকারের নৌ – পরিবহণ বিভাগের প্রায় ১৭০ টি বিভিন্ন প্রকারের জাহাজ ও যন্ত্রপাতি ফেরী নৌকা আছে । 

ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় বিমান পরিবহণ আরম্ভ হয়। বিমান বন্দরগুলি দেশ স্বাধীন হবার পর মেরামতি ও উন্নীত করে অসামরিক পরিবহণের জন্য ব্যবহর করবার জন্য নেওয়া হয় । বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাটির বরঝার ( গুয়াহাটি ) , শালনিবারী ( তেজপুর ) , লীলাবারী ( লখিমপুর ) , রবৈয়া ( যোড়হাট ) ও মোহনবারী ( ডিব্ৰুগড় ) এই পাঁচটি বন্দর হতে বারতের বিভিন্ন মহানগরীতে যাতায়াত করা যায় । গুয়াহাটির বিমানবন্দরটি লোকপ্রিয় গোপীনাথ বন্দর নামক আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উন্নীত করা হয়েছে । বিমান চলাচলই অঞ্চলটির যাতায়াত পরিবহণ বহু সুগম করেছে । 

প্রশ্ন ৩। বরাক সমতলের একটি সংক্ষিপ্ত ভূ – প্রাকৃতিক বিবরণ দাও । 

উত্তরঃ অসমের দক্ষিণ অংশে বরাক সমতল অবস্থিত । ইহা পূর্ব – পশ্চিমে প্রায় ৮৫ কি.মি. দীর্ঘ এবং উত্তর – দক্ষিণে গড়ে প্রায় ৭৫ কি.মি প্রস্থ । এইভাবে মোট ৬৯৬২ বর্গ কি.মি আয়তনের এটি একটি মধ্যম রকমের সমতল । এখানে কাছাড় , হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জ এই তিনটি প্রশাসনিক জেলা আছে । এই অঞ্চলটির উত্তরে উত্তর কাছার পাহাড় , পূর্বে মণিপুরের পাহাড়গুলি ও দক্ষিণে মিজোরামের পাহাড়গুলি অবস্থিত। পশ্চিমে এটি বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকার সঙ্গে সংলগ্ন । 

তিনদিকে পাহাড়ে ঘেরা বরাক সমতলটি একটি নিম্নসমভূমি । পূর্বের জিরিরামের নিকটে সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে সমতলটির উচ্চতা ৭৫ মিটার এবং করিমগঞ্জের নিকটে এর উচ্চতা ৫১ মিটার । এই নিম্নভূমির মধ্য দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে আঁকা – বাঁকা অতি মন্থরগতিতে প্রবাহিত হয়ে গিয়েছে বরাক নদী । উত্তরের মণিপুর ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য অঞ্চল হতে প্রবাহিত হয়ে আসা জিরি , লাবাক , মাধুরা , দালু , জাটিঙ্গা , লারাং প্রভৃতি উপনদীগুলি এখানে এসে পড়েছে । বরাকের দক্ষিণে মিজোরাম থেকে আসা উপনদীগুলি হল সোনাই , কাটাখাল , ধলেশ্বরী , শিংলা ও লংগাই । বরাক এবং এই উপনদীগুলিতে বহু অশ্বখুরা হ্রদ সমতলটিতে দেখা যায় ; এইগুলি বিল , ঝিল ইত্যাদির সৃষ্টি করেছে । সমতলটির উত্তর – দক্ষিণে বহু টিলা ছড়িয়ে আছে । সমতলের অঞ্চলগুলি বনজঙ্গলে ভরা ।

প্রশ্ন ৪। ব্রহ্মপুত্র সমতলের একটি সংক্ষিপ্ত ভূ – প্রাকৃতিক বিবরণ দাও । 

উত্তরঃ অসমের উত্তরাংশে ভূটান ও অরুণাচল হিমালয়ের পাদদেশে ব্রহ্মপুত্র সমতল অবস্থিত । পূর্বে তিনসুকিয়া জেলার শদিয়া মহকুমা হতে পশ্চিমে ধুবড়ি জেলায় ধুবড়ি মহকুমা পর্যন্ত এই সমতলটিতে ১৮ টি প্রশাসনিক জেলা আছে । ইহার মোট মাটির কালি প্রায় ৫৪,৪০০ বর্গ কিলোমিটার । এটি অসমের শতকরা ৬৯.৫ শতাংশ জুড়ে আছে । 

এটি একটি বৃহৎ সমতল । পূর্ব হতে পশ্চিমে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭২০ কিমি . এবং উত্তর হতে দক্ষিণে এটা গড়ে ৯০ কিমি . প্রস্থ । এই সমতলের ভিতরে উত্তরের হিমালয় ও দক্ষিণের নাগা পাহাড় , কার্বি পাহাড় , উত্তর কাছাড় পাহাড় ও মেঘালয় হতে প্রায় ৪০ টি বড় উপনদী এসে ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়েছে । ব্রহ্মপুত্র নদীর পারে বহু চরচাপরি , দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। 

ব্রহ্মপুত্র সমতলের উত্তর বাহিনী উপনদীগুলি হল সোবনশিরি , রাঙা নদী , ডিক্রং , বুরৈ , বরগাং , জীয়া ভরলু , গারু , জীয়া ধনশিরি , বরনদী , পাগলা দিয়া , মানস , চম্পামতী , সরল ভাগা , গদাধর ও সোনকোষ । ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণবাহিনী উপনদীগুলি হল — ডিব্ৰু , বুড়ীদিহিং , দিশাং , দিখৌ , জাঁজী , ভোগদৈ , কাকডোঙা , ধনশিরি , কলং , কপিলী , ডিগারু , কুলসী , দধনৈ , কৃষ্ণাই , জিনারী ও জিঞ্জিরাম। 

ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার ভূ – প্রকৃতির একটি চরিত্র হল বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে ক্ষেত মাঠ , ঘরবাড়ী , রাস্তা – ঘাট ইত্যাদির বিস্তর ক্ষতিসাধন করে । 

ব্রহ্মপুত্র নদীর যোড়হাট জেলার উত্তরাংশে মাজুলী নামক একটি নদী – দ্বীপ আছে । এটি পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম নদী – দ্বীপ । পূর্বে এর কালি প্রায় ১২০০ বর্গ কিমি ছিল । বর্তমানে এর কালি কমে প্রায় ৮০০ বর্গ কিমি হয়েছে । 

ব্রহ্মপুত্রের পূর্বে বিশ্বনাথ হতে পশ্চিমে মানকাচর পর্যন্ত দুই পারে স্থানে স্থানে কিছু সংখ্যক অতি প্রাচীন টিলা ও পাহাড় আছে । 

ব্রহ্মপুত্র সমতলের আর একটি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হল এর উত্তর অংশের হিমালয়ের পাদদেশে থাকা অঞ্চলে গভীর অরণ্য । এর মাটি উর্বর নয় বলে এখানে শস্য ভাল হয় না । এই অরণ্য অঞ্চলের দক্ষিণ অঞ্চলে উঁচু ঘাস বন দেখা যায় । এই ধরনের অঞ্চলকে ‘ টেরাই ’ অঞ্চল বলা হয় । ব্রহ্মপুত্র সমতলের দক্ষিণের নাগাপাহাড় , কার্বি পাহাড় ও মেঘালয়ের পাহাড়গুলির পাদদেশে অরণ্য এবং মাঝে মাঝে জলাভূমি দেখা যায় ।

প্রশ্ন ৫। ব্রহ্মপুত্র সমতলের বনজ সম্পদ সম্পর্কে আলোচনা করো। 

উত্তরঃ ব্রহ্মপুত্র সমতল ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত । এই সমতলটিতে পর্ণমোচী বৃক্ষ অধিক পরিমাণে দেখা যায় । এগুলোর মধ্যে শাল , সেগুন , শিঙরি , বনসোম , উরিয়াম , আজার , পমা , গামারি , শিমূল , কাঁঠাল , হরিতকী , খয়ের , শিরিষ , চালতা , কদম প্রধান । ব্রহ্মপুত্র সমতলের পূর্ব ও উত্তর অংশে অর্থাৎ নাগাপাহাড় ও অরুণাচল হিমালয়ের পাদদেশে ক্রান্তীয় চিরসবুজ অরণ্য দেখা যায় । ডিব্রুগড় এবং তিনসুকিয়া জেলার জয়পুর ও বুড়ীদিহিং সংরক্ষিত বন , লখিমপুর জেলার দুলুং সংরক্ষিত বন এবং শোণিতপুর জেলার সোনাই – রূপাই সংরক্ষিত বনে চিরসবুজ গাছের আধিক্য দেখা যায় । এগুলোর মধ্যে হলং , নাহর , হলক , মারি শাল , শিশু , তিতাচাপা , আম , অর্জুন , অগুরু ইত্যাদি প্রধান । উঁচু গাছগুলোতে অর্কিড জাতীয় গাছ দেখা যায়। 

ব্রহ্মপুত্র সমতলে ঘাস – বনের উদ্ভিদ দেখা যায় । উত্তর সমতলে খড় , কাঁশ , উলু ইত্যাদি পাওয়া যায় । ব্রহ্মপুত্র ও তার উপনদী সমূহের নিকটবর্তী অঞ্চলের জলাভূমি , বিল , চর ইত্যাদি অঞ্চলে ঝাউ , নল , খাগড়া , ইকরা , বেত , বাঁশ ইত্যাদি নানাবিধ তৃণজাতীয় উদ্ভিদ দেখা যায় । 

ব্রহ্মপুত্র সমতলের মূল্যবান গাছগুলোর মধ্যে শাল , সেগুন , গামারি , শিশু , তিতাচাপা , আজার , বনসোম , অগুরু , বাঁশ , বেত , ইকরা প্রধান । কোমল কাঠ থেকে প্লাইউড প্রস্তুত করা হয় । বনজ সম্পদ থেকে অসম সরকার বৎসরে প্রায় ১৬ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করে । অরণ্যভূমিতে বনৌষধির গাছ , যেমন— নিম , তুলসী , দ্রোণ , সর্পগন্ধা, অপরাজিতা , নয়নতারা , অশোক , অর্জুন ইত্যাদি বনৌষধির গাছ পাওয়া যায় । 

বন্যপ্রাণীর মধ্যে এক খড়্গাযুক্ত গণ্ডার , হলৌ বানর , বন্য মহিষ , হাতী, বাঘ , ভালুক , বন্য শূকর ইত্যাদি প্রধান । এছাড়া সজারু , হরিণ, বিভিন্ন প্রকারের সাপ , কুমীর ইত্যাদি পাওয়া যায় । 

জলাভূমি ও নদীতে বিভিন্ন প্রকারের মাছ পাওয়া যায় । ব্রহ্মপুত্র সমতলে কিছু সংখ্যক সংরক্ষিত বন , রাষ্ট্রীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্যও আছে ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top