Class 10 Social Science Chapter 1 বঙ্গ বিভাজন ( ১৯০৫-১৯১১ ) ও স্বদেশী আন্দোলন Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 10 Social Science Chapter 1 বঙ্গ বিভাজন ( ১৯০৫-১৯১১ ) ও স্বদেশী আন্দোলন and select needs one.
Class 10 Social Science Chapter 1 বঙ্গ বিভাজন ( ১৯০৫-১৯১১ ) ও স্বদেশী আন্দোলন
Also, you can read SCERT book online in these sections Class 10 Social Science Chapter 1 বঙ্গ বিভাজন ( ১৯০৫-১৯১১ ) ও স্বদেশী আন্দোলন Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 10 Social Science Chapter 1 বঙ্গ বিভাজন ( ১৯০৫-১৯১১ ) ও স্বদেশী আন্দোলন These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 10 Social Science Chapter 1 বঙ্গ বিভাজন ( ১৯০৫-১৯১১ ) ও স্বদেশী আন্দোলন for All Subject, You can practice these here..
বঙ্গ বিভাজন ( ১৯০৫-১৯১১ ) ও স্বদেশী আন্দোলন
Chapter – 1
প্রথম খণ্ড – ইতিহাস
অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর
অতি সংক্ষেপে উত্তর দাও
প্রশ্ন ১। বঙ্গ বিভাজন কোন ভাইসরয়ের শাসনকালে সংঘটিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ লর্ড কার্জনের শাসনকালে ।
প্রশ্ন ২। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের কোন তারিখে বঙ্গ বিভাজন কার্য সংঘটিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৬ ই অক্টোবর তারিখে ।
প্রশ্ন ৩। বিদেশী পণ্য বর্জনের প্রস্তাব কোন সভায় গৃহীত হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৯০৫ সালের জুলাই , দিনাজপুরের মহারাজার পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত সভায় ।
প্রশ্ন ৪। স্বদেশী আন্দোলনের সময় “ যুগান্তর ” নামক সংবাদপত্র কে সম্পাদনা করেছিলেন ?
উত্তরঃ ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদনা করেছিলেন ।
প্রশ্ন ৫। বঙ্গদেশে “ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ” নামক অনুষ্ঠান কখন গঠিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৯০৬ সালের ১১ ই মার্চে ।
প্রশ্ন ৬। “ বেঙ্গল কেমিকেলস্ ” নামক শিল্প প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উদ্যোক্তা কে ছিলেন ?
উত্তরঃ আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ।
প্রশ্ন ৭। কার পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে ভারতীয়দের জন্য ‘ স্বরাজ ’ দাবি করে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল ?
উত্তরঃ দাদাভাই নাওরোজীর পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে ।
প্রশ্ন ৮। “ বন্দিনী ভারত ” নামক নাটকটির রচয়িতা কে ?
উত্তরঃ অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী ।
প্রশ্ন ৯। বঙ্গদেশের একত্রীকরণ কখন করা হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৯১১ সালে ।
সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও
প্রশ্ন ১। বঙ্গ বিভাজনের ফলে সৃষ্টি হওয়া “ পূর্ববঙ্গ ও অসম ” নামক প্রদেশটির সঙ্গে সংলগ্ন বঙ্গদেশের প্রধান তিনটি ভৌগোলিক সংমণ্ডল উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ বঙ্গ বিভাজন সৃষ্টি করা “ পূর্ববঙ্গ ও অসম ” নামক প্রদেশটির সঙ্গে সংলগ্ন হওয়া বঙ্গদেশের প্রধান তিনটি ভৌগোলিক সংমণ্ডল হল— ঢাকা , চট্টগ্রাম ও রাজশাহী ।
প্রশ্ন ২। বঙ্গ বিভাজনের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য কী ছিল , তা সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তরঃ বঙ্গ বিভাজনের সপক্ষে লর্ড কার্জনের উন্নত ও দক্ষ প্রশাসন প্রতিষ্ঠার যুক্তি ছিল একটি প্রবঞ্চনা মাত্র । প্রকৃতপক্ষে বঙ্গ বিভাজনের পরিকল্পনা ছিল গভীর ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধির ফল । বাংলা ছিল ভারতের জাতীয়তাবাদের প্রধান কেন্দ্র । বাংলাতেই প্রথম ধ্বনিত হয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ । ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বেও ছিল বাঙ্গালীদের সার্বিক প্রাধান্য । বাংলার ঐক্য ও জাতীয় চেতনার স্ফুরণ ইংরেজদের কাছে বিপদসংকেত বলে মনে হয়েছিল । লর্ড কার্জন বাংলাকে বিভক্ত করে একই সঙ্গে বাংলার জাতীয়তাবোধ ও জাতীয় কংগ্রেসের ভিত্তিকে ভেঙ্গে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন ।
প্রশ্ন ৩। বঙ্গ বিভাজন বিরোধী আন্দোলন কেন “ স্বদেশী আন্দোলন ” নামে পরিচিত হল ।
উত্তরঃ বঙ্গ বিভাজনের পরিকল্পনাটি সরকারিভাবে ১৯০৫ সালের ১৯ জুলাই প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ববঙ্গ , উত্তরবঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী সভার মাধ্যমে প্রবল গণসংগ্রামের জোয়ার ঘটেছিল । জাতি – ধর্ম – বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ এই সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিল । বঙ্গচ্ছেদের পরিণতি হিসাবে সঙ্গবদ্ধভাবে বিদেশী সামগ্রী বর্জন এবং স্বদেশী সামগ্রী গ্রহণের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হওয়ার পর “ স্বদেশী আন্দোলন ” নামে এই আন্দোলন পরিচিতি লাভ করে ।
প্রশ্ন ৪। স্বদেশী আন্দোলন জাতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছে সে বিষয়ে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ শুধুমাত্র বিদেশী পণ্য বর্জনের মধ্যে স্বদেশী আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল না । বঙ্গদেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার উপর এর প্রভাব পড়েছিল । ছাত্রসমাজের মধ্যে দেখা দেওয়া আন্দোলনের প্রবণতার প্রতি লক্ষ্য রেখে বঙ্গপ্রদেশ সরকারের মুখ্য সচিব আর . ডব্লিউ . কার্লাইল এক আদেশ বলে ছাত্রদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করতে হুঁশিয়ারী দেন । সমগ্র বঙ্গদেশে এই আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জোয়ার উঠেছিল। কার্লাইলের আদেশের প্রতিবাদে ছাত্রগণ ক্লাস বর্জন করে । বিপিনচন্দ্র পাল , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , আব্দুল রসুল প্রমুখ নেতা ছাত্রসমাজকে সরকারী শিক্ষানুষ্ঠান ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালের ৫ ই আগস্ট কলকাতায় এক জনসভায় জাতীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দিয়েছিলেন । পরের দিন অর্থাৎ ৬ ই আগস্ট বিশাল জনতার উপস্থিতিতে তিনি “ বঙ্গ জাতীয় বিদ্যালয় ” নামক জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন । রংপুরে ৮ ই নভেম্বর দ্বিতীয় জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপন হয় । রাসবিহারী বসুর নেতৃত্বে কলকাতার টাউন হলে ১৯০৬ সালের গঠিত হয় । ১১ ই মার্চ অনুষ্ঠিত সভায় “ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ” নামে শিক্ষার শীর্ষ প্রতিষ্ঠানটি
প্রশ্ন ৫। স্বদেশী আন্দোলনের সময় বঙ্গদেশের জাতীয় শিল্পের বিকাশ কীভাবে সম্ভবপর হয়েছিল আলোচনা করো ?
উত্তরঃ স্বদেশী আন্দোলনের পটভূমিতে আত্মশক্তি বিকাশের মানসিকতাই বঙ্গদেশের জাতীয় শিল্প – কারখানা গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল । স্বদেশী পণ্যের চাহিদা বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন কুটির শিল্প এবং কতিপয় বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল । সূতা কাটার কল , ক্ষুদ্র ও মাঝারি তাঁতশাল , সরিষার তেল , সাবান , চিনি , দেশলাই , বিস্কুট প্রভৃতির কারখানা গড়ে উঠেছিল । এর সঙ্গে জাতীয় ব্যাঙ্ক ও স্বদেশী বীমা কোম্পানীও গড়ে উঠেছিল । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত ১৮৯৭ সালের স্বদেশী ভাণ্ডার একটি বৃহৎ বস্ত্র প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল । যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও কৃষ্ণবিহারী সোলের প্রচেষ্টায় – কলকাতার বউবাজারে গড়ে উঠেছিল “ ইণ্ডিয়ান স্টোর্স ” নামক প্রতিষ্ঠান । ঠাকুর পরিবারের কন্যা সরলাদেবী ১৯০৩ সালে কর্নওয়ালিশ ষ্ট্রীটে ( বর্তমান বিধান সরণী ) “ লক্ষ্মী ভাণ্ডার ” প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । জগদীশচন্দ্র বসু , প্রফুল্লচন্দ্র রায় , নীলরতন সরকার প্রমুখ অসাধারণ ব্যক্তি বঙ্গদেশে বৃহৎ শিল্প গড়ে তোলার চিন্তা করেছিলেন । নীলরতন সরকারের উদ্যোগে “ বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিল ” এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের “ বেঙ্গল কেমিকেলস্ ” নামক উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ।
প্রশ্ন ৬। স্বদেশী আন্দোলন দমন করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার কী কী আন্দোলনবিরোধী কার্যসূচি গ্রহণ করেছিল ?
উত্তরঃ বঙ্গভঙ্গের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতাগণের সহযোগিতা আশা করেছিল । লর্ড কার্জন এই নেতৃবৃন্দকে হাতের মুঠিতে রাখার উদ্দেশ্যে তাঁদের প্রদান করেছিলেন নানাপ্রকার উপাধি , পদক ও পদ । উদারপন্থী কংগ্রেস সদস্যগণকে উচ্চন্যায়ালয়ে বিচারপতির পদ , ব্রিটিশ সংসদের সদস্য পদ , ভাইসরয় পদপর্যায়ের লোভনীয় সদস্য পদের প্রস্তাব দিয়ে বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনায় তাঁদের সমর্থন আশা করেছিল । তবুও কার্জন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন দুর্বল করতে পারেনি ।
কঠোর আইন প্রয়োগ করে ব্রিটিশ জনমত প্রকাশে বাধা আরোপ করেছিল । ব্রিটিশ সরকার ১৯০৭ সালের ৩ রা জুন দেশীয় সংবাদপত্রের উপর সতর্কীকরণ জারি করেছিল । ১৯০৭ সালের ১৫ ই আগস্ট “ বন্দেমাতরম্ ” সঙ্গীতটি নিষিদ্ধ করা হয় ।
বিভেদকামী নীতির প্রশ্রয় দিয়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণ অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করেছিল । হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে মুসলমানদের থেকে বঙ্গ বিভাজনের তারা সহযোগিতা আদায় করতে চেষ্টা করেছিল ।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী গণ আন্দোলনকে খর্ব করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার পুলিশ ও সৈন্যবাহিনীর সাহায্যে হিংসা ও সন্ত্রাস চালিয়েছিল । ব্রিটিশ সরকার ১৯০৮ সালের ১১ ই ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের শীর্ষ নেতা কৃষ্ণকুমার দত্ত , মনোরঞ্জন গুহঠাকুরতা , সুবোধচন্দ্র মল্লিক , সতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় , শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী , শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু , ভূপেন্দ্রনাথ নাগ , পুলিনবিহারী দাস , অশ্বিনীকুমার দত্তকে নির্বাসন দিয়েছিল ।
প্রশ্ন ৭। স্বদেশী আন্দোলনের তিনটি ফলাফল উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ স্বদেশী আন্দোলনের ফলাফল তিনটি হল—
( ক ) জাতীয় সাহিত্য :- স্বদেশানুভূতির জোয়ারে সাহিত্য সৃষ্টিতে বিশেষ প্রেরণা জুগিয়েছিল । স্বদেশী আন্দোলনের পটভূমিতে বিভিন্ন সংবাদপত্র , আলোচনা , গ্রন্থ , গান , নাটক, প্রবন্ধ প্রভৃতি প্রকাশিত হওয়ায় জাতীয় সাহিত্য সমৃদ্ধি ও উৎকর্ষতা লাভ করে ।
( খ ) জাতীয় শিক্ষা :- স্বদেশী আন্দোলন শুধুমাত্র বিদেশী পণ্য বর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না । বঙ্গদেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার উপরও এর প্রভাব পড়েছিল । ছাত্রসমাজের মধ্যে দেখা দেওয়া আন্দোলনের একতার প্রতি লক্ষ্য রেখে বঙ্গদেশের সরকারের মুখ্য সচিব আর . ডব্লিউ . কার্লাইল এক আদেশজারির মাধ্যমে ছাত্রগণকে আন্দোলনে যোগদান না করার নির্দেশ দেন । বিপিনচন্দ্র পাল , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , আব্দুল রসুল প্রমুখ ছাত্রসমাজকে সরকারী শিক্ষানুষ্ঠান ত্যাগ করার আহ্বান জানান । বিভিন্ন মনীষি বিভিন্ন স্থানে স্বদেশী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ফলে জাতীয় শিক্ষার প্রসার ঘটে ।
( গ ) স্বদেশী শিল্পোদ্যোগ :- স্বদেশী আন্দোলনের পটভূমিতে আত্মশক্তির বিকাশের মানসিকতা বঙ্গদেশে জাতীয় শিল্প – কারখানা গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল । স্বদেশী পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন কুটির শিল্প ও কতিপয় বৃহৎশিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল । সূতাকাটার কল , ক্ষুদ্র ও মাঝারি তাঁত শিল্প , সরিষার তেল , সাবান , চিনি , দেশলাই , বিস্কুট প্রভৃতির কারখানা গড়ে উঠেছিল ।
প্রশ্ন ৮। স্বদেশী আন্দোলনের তিনটি অবদান উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থায় স্বদেশী আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এর প্রধান অবদানগুলো নিম্নরূপ—
( ক ) ভারতবাসীকে গণ আন্দোলন সম্পর্কে স্বদেশী আন্দোলন একটি রাজনৈতিক শিক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছিল । দেশের বেশিরভাগ মানুষ আন্দোলনে সমবেত হলে যে গণ আন্দোলন জয়যুক্ত হওয়া সুনিশ্চিত , সেকথা ভারতবাসী স্বদেশী আন্দোলনের মাধ্যমে আয়ত্ত করতে পেরেছিল ।
( খ ) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সূচনালগ্নে আবেদন নিবেদনের মাধ্যমে সহনশীল চিন্তায় বিশ্বাস রেখে ব্রিটিশ সরকারের উপর ভারতীয়দের উন্নতি আশা করেছিল । কিন্তু বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে জাতীয় কংগ্রেসের চিন্তা কর্মে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল ।
( গ ) স্বদেশী আন্দোলনের মাধ্যমেই ভারতবাসী ব্রিটিশ সরকারের নিকট স্বরাজ দাবি করার সুযোগ লাভ করেছিল । স্বদেশী আন্দোলনের তীব্র উত্তেজনা জাতীয় কংগ্রেসকে দাদাভাই নৌরোজীর পৌরোহিত্যে ১৯০৬ সালে অনুষ্ঠিত কলকাতার অধিবেশনে সর্বপ্রথম ভারতবাসীর জন্য স্বরাজ দাবি করার প্রস্তাব গ্রহণ করতে বাধ্য করেছিল ।
সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো
( ১ ) কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর :- ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ ( ১৮৬১ সালের ৭ ই মে ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন । বাল্যকাল থেকে রবীন্দ্রনাথ কবিতা লিখতে শুরু করেন । সমস্ত জীবন ধরে তিনি কবিতা , গান , গল্প , প্রবন্ধ , নাটক , উপন্যাস প্রভৃতি রচনা করেন । ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘ গীতাঞ্জলি’র জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন । কিছুদিনের জন্য রবীন্দ্রনাথ সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন ।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে অর্থাৎ স্বদেশী আন্দোলনে তিনি ঝাপিয়ে পড়েন । তাঁর রচিত গান “ বাঙ্গালির প্রাণ বাঙ্গালির মন , এক হউক হে ভগবান ….. … .. ” হিন্দু – মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যবন্ধন করে । জালিয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১৯১৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশ প্রদত্ত ‘ নাইট ’ উপাধি ত্যাগ করেন । বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শে শ্রাবণ ( ইং ১৯৪১ সালের ৭ ই আগস্ট ) রাখীপূর্ণিমার দিন ৮০ বৎসর বয়সে বিশ্বকবির মহাপ্রয়াণ হয় ।
( ২ ) মার্গারেট এলিজাবেথ নোবল ( ভগিনী নিবেদিতা ) :- ঊনবিংশ শতকে স্বামী বিবেকানন্দ ভারতবর্ষের নবজাগরণের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরোধা ছিলেন । আর ভারতমাতার পায়ে তাঁরই শ্রেষ্ঠ উপহার মার্গারেট এলিজাবেথ নোবল বা ভগিনী নিবেদিতা । উত্তর আয়ারল্যান্ডের টাইরন প্রদেশের ডানগ্যানন নামক একটি ছোট শহরে ১৮৫৭ সালের ২৮ শে অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ১৮৯৮ সালের ২৮ শে জানুয়ারি ভারতভূমিতে পদার্পণ করেন । কলকাতায় অবস্থান করে তিনি নারী , যুবক – যুবতীগণের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টিতে অনুপ্রেরণা জোগান ।
তিনি কলকাতায় অবস্থানকালে ইয়ংমেনস্ হিন্দু ইউনিয়ন , বিবেকানন্দ সোসাইটি , ডন সোসাইটি এবং অনুশীলন সমিতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে নারী ও যুবক – যুবতীগণকে দেশীয় শিল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভরশীল হতে আবেদন জানিয়েছিলেন । ১৯০৫ সালের ১১ ই ফেব্রুয়ারী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ভাইসরয় লর্ড কার্জনের প্রাচ্যবাসীর প্রতি কটুক্তি নিবেদিতাকে আঘাত দিয়েছিল । এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে নিবেদিতা রাসবিহারী বসুর পৌরোহিত্যে কলকাতার টাউন হলে ১৯০৫ সালে ১১ ই মার্চ এক প্রতিবাদী সভা অনুষ্ঠিত করেন । মাত্র ৪৪ বছর বয়সে ১৯১১ সালের ১৩ অক্টোবর নিবেদিতা দেহত্যাগ করেন।
( ৩ ) নবাব সলিমউল্লা :- নবাব সলিমউল্লা ছিলেন ঢাকার নবাব । ১৯০৬ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর তাঁর নেতৃত্বে ঢাকায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় ।
“ সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ ” নামক রাজনৈতিক দল স্থাপনের নেতৃত্ব বহন করা ব্যক্তি সলিমউল্লা সেদিন নবগঠিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঘোষণা করেছিলেন। তা হল—
( ক ) ব্রিটিশ সরকারের প্রতি মুসলমান সম্প্রদায়ের আনুগত্যের প্রসার ঘটবে ।
( ৪ ) অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী :- ১৮৮৫ সালে অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন । তিনি আসামের বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী । “ অসমকেশরী ” নামে তিনি পরিচিত । তিনি আসামে স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন । অসমবাসীর মধ্যে তিনি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রচার চালিয়েছিলেন । অম্বিকাগিরি “ বন্দিনী ভারত ” নামক একখানা বিদ্রোহাত্মক নাটক রচনা করেছিলেন । ১৯০৬ সালের ৩১ শে জুলাই কটন কলেজিয়েট হাইস্কুলে নাটকখানা অভিনয় চলাকালে পুলিশ মঞ্চ হতে নাটকের পাণ্ডুলিপি বাজেয়াপ্ত করেছিল ।
অম্বিকাগিরি , ক্ষুদিরাম বসু , বারীন ঘোষ ও উল্লাসকর দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করে “ সেবা সমিতি ” নামে একটি বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন । ১৯০৬ সালের ৭ ই সেপ্টেম্বর র্যামফিল্ড ফুলারকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুয়াহাটি শিলং পথে তিনি একটি বোমা পুতেছিলেন । পুলিশ এ ব্যাপারে তাঁকে জেরা করে এবং ১৯১৪ সাল পর্যন্ত তাঁকে বরপেটায় অন্তরীণ বন্দী হিসাবে রাখে । অম্বিকাগিরি ১৯৬৭ সালে পরলোক গমন করেন ।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা কখন হয় ?
উত্তরঃ ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট ।
প্রশ্ন ২। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে আন্দোলনকারীরা কোন গান গেয়েছিলেন ?
উত্তরঃ বন্দেমাতরম্ ।
প্রশ্ন ৩। অবিভক্ত বঙ্গদেশের মোট জনসংখ্যা কত ছিল ?
উত্তরঃ ৫৪ নিযুত ।
প্রশ্ন ৪। পূর্ববঙ্গ ও আসামের মোট আয়তন কত বর্গমাইল ছিল ?
উত্তরঃ ১,০৬ , ৫৪০ বর্গমাইল ।
প্রশ্ন ৫। ‘ বন্দেমাতরম্ ‘ সংগীতের রচয়িতা কে ছিলেন ?
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।
প্রশ্ন ৬। স্বদেশী আন্দোলনের যেকোন একটি কার্যসূচী লেখো ।
উত্তরঃ বয়কট ।
প্রশ্ন ৭। জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৯০৬ সালের ১৫ ই আগস্ট ।
প্রশ্ন ৮। ১৯০৫ সালে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ বারাণসীতে ।
প্রশ্ন ৯। ১৯০৫ সালের জাতীয় কংগ্রেসের বেনারস অধিবেশনের সভাপতি কে ছিলেন ?
উত্তরঃ গোপালকৃষ্ণ গোখলে ।
প্রশ্ন ১০। ১৯০৬ সালে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ কলকাতায় ।
প্রশ্ন ১১। ১৯০৬ সালে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনের সভাপতি কে ছিলেন ?
উত্তরঃ দাদাভাই নৌরোজী ।
প্রশ্ন ১২। লাল – বাল – পাল কে কে ছিলেন ?
উত্তরঃ লালা লাজপত রায় , বাল গঙ্গাধর তিলক ও বিপিনচন্দ্র পাল ।
প্রশ্ন ১৩। কোন তারিখে ব্রিটিশ সরকার দিল্লিতে বৈঠক ডেকে বঙ্গভঙ্গ প্রকল্প বাতিল করে ?
উত্তরঃ ১৯১১ সালের ২ ডিসেম্বর ।
প্রশ্ন ১৪। কোন সালে মুসলিম লীগের সংগঠন গড়ে উঠেছিল ?
উত্তরঃ ১৯০৬ সালে ।
প্রশ্ন ১৫। ব্রিটিশ – ভারত সরকার ঢাকার নবাব সালিমউল্লাকে কত টাকার ঋণ দিয়ে সরকারের পক্ষে এনেছিলেন ?
উত্তরঃ ১৪,০০,০০০ টাকা ।
প্রশ্ন ১৬। ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর ব্যক্তিগত সচিবের নাম কী ছিল ?
উত্তরঃ কর্ণেল ডানলপ্ স্মিথ ।
প্রশ্ন ১৭। ক্ষুদিরাম বসুর ফাসি কখন হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৯০৮ সালে ।
প্রশ্ন ১৮। স্বদেশী আন্দোলনকালে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বদেশী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নাম লেখো ।
উত্তরঃ বেঙ্গল কেমিকেলস্ ।
প্রশ্ন ১৯। মর্লি – মিন্টো সংস্কার আইন কখন প্রণীত হয় ?
উত্তরঃ ১৯০৯ সালে ।
প্রশ্ন ২০। স্বদেশী আন্দোলনকালে প্রকাশিত একটি দৈনিক বাংলা পত্রিকার নাম লেখো ।
উত্তরঃ যুগান্তর ।
সঠিক উত্তরটি বের করে উত্তরটির পাশে টিক্ ( √ ) চিহ্ন দাও :
প্রশ্ন ১। বঙ্গভঙ্গ রদ ( বাতিল ) করা হয়—
( i ) ১৯০৯ সালে
( ii ) ১৯১০ সালে
( iii ) ১৯১১ সালে
( iv ) ১৯১২ সালে ।
উত্তরঃ ( iii ) ১৯১১ সালে ( √ ) ।
প্রশ্ন ২। কত সালে কংগ্রেস বিভক্ত হয় ?
( i ) ১৯০৯ সালে
( ii ) ১৯০৭ সালে
( iii ) ১৯১১ সালে
( iv ) ১৯১৭ সালে ।
উত্তরঃ ( ii ) ১৯০৭ সালে ( √ ) ।
প্রশ্ন ৩। স্বদেশী আন্দোলন আরম্ভ হয়
( i ) ১৮৫৭ সালে
( ii ) ১৮৫৮ সালে
( iii ) ১৯০০ সালে
( iv ) ১৯০৫ সালে
উত্তরঃ ( iv ) ১৯০৫ সালে ( √ ) ।
প্রশ্ন ৪। কোন অধিবেশনে কংগ্রেস বিভাজন হয় ?
( i ) সুরাট অধিবেশনে
( ii ) নাগপুর অধিবেশনে
( iii ) লাহোর অধিবেশনে
( iv ) কলকাতা অধিবেশনে
উত্তরঃ ( i ) সুরাট অধিবেশনে ( √ ) ।
প্রশ্ন ৫। মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা হলেন—
( i ) স্যার সৈয়দ আহমেদ
( ii ) আবুল কালাম আজাদ
( iii ) নবাব সলিমউল্লা
( iv ) মহম্মদ আলী জিন্না
উত্তরঃ ( iii ) নবাব সলিমউল্লা ( √ ) ।
প্রশ্ন ৬। মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন—
( i ) মহম্মদ আলী জিন্না
( ii ) নবাব সালিউউল্লা
( iii ) স্যার সৈয়দ আহমেদ
( iv ) আবুল কালাম আজাদ
উত্তরঃ ( i ) মহম্মদ আলী জিন্না ( √ ) ।
প্রশ্ন ৭। কত সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল ?
( i ) ১৯২০ সালে ১০ ই এপ্রিল
( ii ) ১৯২১ সালের ২১ শে এপ্রিল
( iii ) ১৯১৯ সালের ১৩ ই এপ্রিল
( iv ) ১৯৩০ সালের ১৫ ই এপ্রিল ।
উত্তরঃ ( iii ) ১৯১৯ সালের ১৩ ই এপ্রিল ( √ ) ।
রচনাভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন কাকে বলে ? সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ বাংলা ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উৎসকেন্দ্র । রাজনৈতিক সচেতনতা ও জাতীয়তাবোধে বাঙালী ছিল অগ্রগণ্য । পাশ্চাত্য শিক্ষায় অগ্রণী এবং জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাঙালীর স্বাধীকার চেতনা ব্রিটিশ সরকারের কাম্য
ছিল না । সেই কারণে রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন বাঙালীকে বিচ্ছিন্ন করে ভারতের জাতীয়তাবাদী ঐক্যের মূলে কুঠারাঘাত করতে উদ্যত হয় ব্রিটিশ সরকার । লর্ড কার্জনের আমলে বাংলাদেশকে দ্বিখণ্ডিত করে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বকে সুনিশ্চিত করার এক জঘন্য ষড়যন্ত্র করা হয় । এই ঘৃণ্য প্রয়াসের প্রতিবাদে সমগ্র বাংলা তথা ভারতে যে আন্দোলনের উদ্ভব হয় , তাকে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন বা স্বদেশী আন্দোলন বলা হয় ।
লর্ড কার্জনের আমলে বঙ্গবিভাগ হলেও , তিনি এর উদ্ভাবক ছিলেন না । এর আগে ১৮৫৪ , ১৮৭৪ ও ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে নানা অজুহাতে বাংলাকে ভাগ করার পরিকল্পনা হয়েছিল । তবে সেগুলি গণবিক্ষোভের ফলে কার্যকরি হয় নি । এখন লর্ড কার্জন গভীর রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি নিয়ে বাংলাকে বিভক্ত করতে তৎপর হন । তাঁর নির্দেশে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যান্ড্রু ফ্রেজার নতুনভাবে বঙ্গ ভঙ্গের প্রস্তাব দিলে স্বরাষ্ট্র সচিব হাবার্ট রিজলে’র অনুমোদনক্রমে এটি ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের ৩ রা ডিসেম্বর ‘ রিজলে নোট ’ নামে প্রকাশিত হয়। শেষ পর্যন্ত স্থির হয় যে , সমগ্র চট্টগ্রাম বিভাগ , ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলাকে আসামের সঙ্গে যুক্ত করে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হবে ।
এই পরিকল্পনা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠে । সরকার নিরুপায় হয়ে এই প্রস্তাবও রদ করে এবং গোপনে বঙ্গভঙ্গের একটি নতুন পরিকল্পনা তৈরি করে । নতুন পরিকল্পনা অনুসারে স্থির হয় যে , ঢাকা বিভাগ , চট্টগ্রাম বিভাগ , রাজশাহি বিভাগ , পার্বত্য ত্রিপুরা ও মালদহ জেলা , দার্জিলিংকে আসামের সঙ্গে যুক্ত করে ‘ পূর্ববঙ্গ ও অসম ’ নামে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হবে । নবগঠিত প্রদেশের শাসন – দায়িত্বে থাকবেন একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর বা ছোটলাট এবং এর রাজধানী হবে ঢাকা । অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গ , বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হবে বাংলা প্রদেশ এবং এর রাজধানী হবে কলকাতা । লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সপক্ষে যুক্তি দেখান যে ,
( ১ ) একজন গভর্নরের পক্ষে বাংলা – বিহার – উড়িষ্যার মতো এত বড়ো প্রদেশে সুষ্ঠু শাসন প্রবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না ।
( ২ ) পূর্ববাংলা কলকাতার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকলে ঐ অঞ্চলের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে ।
( ৩ ) পূর্ববাংলার মুসলিম অধিবাসীরা হিন্দু সংখ্যাগুরু পশ্চিমবাংলা থেকে মুক্ত হয়ে ন্যায়সঙ্গত অধিকার পাবে ।
( ৪ ) চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন করে এবং অসম – চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণ করে চট্টগ্রাম বন্দর মারফত সস্তায় চা রপ্তানি সম্ভব হবে । এতে শ্রম ও অর্থ জীবিত থাকবে ।
বলা বাহুল্য , লর্ড কার্জনের উন্নত ও দক্ষ প্রশাসন প্রতিষ্ঠার যুক্তি ছিল একটি প্রতারণা মাত্র । প্রকৃতপক্ষে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা ছিল গভীর ষড়যন্ত্র ও দূরভিসন্ধির ফল ।
বাংলা ছিল ভারতের জাতীয়তাবাদের প্রধান কেন্দ্র । বাংলাতেই প্রথম ধ্বনিত হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ । ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বেও ছিল বাঙালীদের সার্বিক প্রাধান্য । বাংলার ঐক্য ও জাতীয় চেতনার স্ফূরণ ইংরেজদের কাছে বিপদসংকেত বলে মনে হয় । লর্ড কার্জন বাংলাকে ভাগ করে একই সঙ্গে বাংলার জাতীয়তাবোধ ও জাতীয় কংগ্রেসের ভিত্তি ভেঙ্গে ফেলার পরিকল্পনা করেন ।
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ শে জুলাই বাঙালীর সমস্ত আবেগ ও যুক্তিকে অগ্রাহ্য করে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয় এবং ১৬ ই অক্টোবর থেকে বঙ্গভঙ্গ কার্যকরি হবে বলে স্থির হয় । ‘ বঙ্গমায়ের অঙ্গছেদ ‘ – এর প্রতিবাদে এক প্রবল আন্দোলন শুরু হয় , যা ‘ স্বদেশী আন্দোলন ‘ নামে খ্যাত । ১৯০৫ থেকে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ , বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহার পর্যন্ত এই আন্দোলনের ঢেউ সমগ্র বাংলা এবং ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে উত্তাল করে ।
প্রশ্ন ২। স্বদেশী আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল বাংলা ও বাঙালী জাতি । ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্বে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাংলাদেশেই ছিল সমস্ত চিন্তানায়ক ও জাতীয় আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিবর্গ । বাঙালী তার জাতীয় সাহিত্যে স্বাধীনতা লাভের প্রেরণা পায় । ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের “ আনন্দমঠ ” , নবীনচন্দ্র সোলের “ পলাশীর যুদ্ধ ” , দীনবন্ধু মিত্রের “ নীলদর্পণ ” প্রভৃতি গ্রন্থ পাঠে বাঙালীর মনে জাতীয়তাবোধের বিকাশ হয় ।
বাংলাদেশে এই জাতীয়তাবোধের বিকাশ দেখে ইংরেজ সরকার ভয় পায় । সেই সময় লর্ড কার্জন ছিলেন ভারতের ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল । তিনি ছিলেন কূটনীতিতে খুব পাকা ও ঘোর সাম্রাজ্যবাদী । বাঙালীর শক্তিকে নষ্ট করতে তিনি সুশাসালের অজুহাতে ১৯০৫ সালে বাংলাদেশকে দুই ভাগে ভাগ করেন । অসম ও পূর্ববঙ্গ নিয়ে একটি এবং পশ্চিমবঙ্গ , বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে আর একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ গঠিত হয় । লর্ড কার্জনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালী জাতির ঐক্য বিনাশ করে তাদের জাতীয়তাবোধের উপর আঘাত হানা। জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ বাঙালী জাতিকে বিচ্ছিন্ন করে তাদের সংহতি ও জাতীয়তাবাদী ঐক্য বিনাশ করা ছিল বঙ্গভঙ্গের মূল উদ্দেশ্য । এছাড়া বঙ্গভঙ্গের অন্তর্নিহিত অপর উদ্দেশ্য ছি ছিল সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষকে লালন করা । এইভাবে ১৯০৫ সালের ১৬ ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হবে বলে ঘোষণা করা হয় ।
ফলাফল ( স্বদেশী আন্দোলন ) :- লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ বাঙালীর ঐক্য ও জাতীয়তাবোধের উপর যে কঠিন আঘাত হেনেছিল তাতে বাঙালী জাতি এক অভূতপূর্ব দৃঢ়তা ও শক্তি নিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অপকৌশলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল । বাঙালী জাতির কাছে বিবেচিত হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ মায়ের অঙ্গছেদনের মতই শোকাবহ , মর্মাহত ঘটনা বলে । বঙ্গভঙ্গ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বাংলার সর্বত্র গ্রামে – গঞ্জে , শহরে – নগরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সোচ্চার হয়ে উঠে ।
লোকমান্য তিলক , গোখলে , রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় , দেশপ্রেমিক অশ্বিনীকুমার দত্ত , বক্তা বিপিনচন্দ্র পাল , আনন্দমোহন বসু , কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ প্রাতঃস্মরণীয় দেশনায়কগণের নেতৃত্বে দেশব্যাপী বঙ্গ ভঙ্গের বিরুদ্ধে এক তুমুল আন্দোলন শুরু হয় । ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের রচিত মন্ত্র “ বন্দেমাতরম্ ” হল এই জাতীয় আন্দোলনের মন্ত্র । স্বামী বিবেকানন্দের প্রচারিত নির্ভীকবাণী এবং রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান জনসাধারণকে অনুপ্রাণিত করল । বাঙালীর মিলিত কণ্ঠে ধ্বনিত হল—
“ বাঙালীর প্রাণ বাঙালীর মন ,
বাঙালীর ঘরে যত ভাই বোন ,
এক হউক , এক হউক , এক হউক
হে ভগবান । ”
দেশময় বিলাতী দ্রব্য বর্জনের আন্দোলন চলতে থাকল । এটা স্বদেশী আন্দোলন নামে খ্যাত । ইংরেজ সরকার এই আন্দোলন দমন করতে কঠোর নীতি অবলম্বন করলেন । এর ফলে বিপ্লবীগণ স্থানে স্থানে হিংসাত্মক কার্য শুরু করলেন । এই বিপ্লবীদের নেতা ছিলেন শ্রীঅরবিন্দ ঘোষ , বারীন ঘোষ প্রমুখ দেশপ্রেমিকগণ ৷ গুপ্তভাবে ইংরেজ হত্যা শুরু হল । ক্ষুদিরাম , কানাইলাল , প্রফুল্ল চাকী প্রমুখ বাংলার বীরগণ সরকারের ফাঁসির কাঠে প্রাণ দিলেন । ফাঁসি আর দ্বীপান্তর হল বিপ্লবীদের ভাগ্যলিপি । বাঙালী যুবকদের মধ্যে তাদের নির্ভীক মৃত্যুবরণ নতুন প্রেরণার সৃষ্টি করল । ইংরেজ সরকারের এই নির্যাতন নীতিতে সারা ভারতে প্রবল উত্তেজনা ও উন্মাদনার সৃষ্টি হল । নির্মম রাজকর্মচারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে বিপ্লবীরা বাংলাদেশে “ অনুশীলন ” , “ আত্মোন্নতি ” প্রভৃতি অনেকগুলি গুপ্ত সমিতি শ্রীঅরবিন্দের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশে অগ্নিযুগের সূচনা করে ।
স্বদেশী আন্দোলন প্রশমিত করতে ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীকে কিছু রাজনৈতিক অধিকার ছেড়ে দিতে ১৯০৯ সালে এক নতুন সংস্কার আইন প্রবর্তন করেন । এটা মর্লি মিন্টো সংস্কার নামে পরিচিত । কিন্তু এই সংস্কারে ভারতবাসী সন্তুষ্ট হয় নি । গণ – আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝতে পেরে ব্রিটিশ সরকার ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয় ।
প্রশ্ন ৩। স্বদেশী আন্দোলনের মূল কার্যসূচি কী ছিল ? প্রতিটি কার্যসূচির বিষয় উল্লেখ করে সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করা হয় । সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সমগ্রদেশ উত্তাল হয়ে উঠে । সমগ্র দেশব্যাপি হরতাল ও ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয় । “ জাতীয় শোকদিবস ” হিসাবে দিনটি পালিত হয়। ১৬ ই অক্টোবর রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে ‘ রাখি বন্ধন ’ পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । আন্দোলনের অস্ত্র হিসাবে স্বদেশী , বয়কট ও জাতীয় শিক্ষা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে ।
( ক ) বয়কট :- ১৯০৪ সালের ১৩ ই জুলাই কৃষ্ণকুমার মিত্র সম্পাদিত “ সঞ্জীবনী ” পত্রিকায় সরকারের বিরুদ্ধে বয়কটের আহ্বান করা হয় । আগামী একবছর কাল জাতীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । সরকারি দপ্তর , বিদ্যালয় , বিচারালয় , পঞ্চায়েত থেকে বাঙালী সদস্যরা পদত্যাগ করা অঙ্গীকার করেন । বয়কট আন্দোলনে যুব ও ছাত্রসমাজ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
( খ ) স্বদেশী :- স্বদেশী আন্দোলনের প্রথম ধারাটি ছিল ‘ গঠনমূলক স্বদেশী ‘ । স্বদেশী শিল্প , জাতীয় শিক্ষা , গ্রামোন্নয়ন ও সংগঠনের মাধ্যমে আত্মশক্তি অর্জন করাই ছিল এই ধারার লক্ষ্য । প্রফুল্ল রায় , নীলরতন সরকার , জে . চৌধুরী প্রমুগের ব্যবসায়িক উদ্যোগে , রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত ‘ স্বদেশী ভাণ্ডার ’ প্রভৃতির মাধ্যমে এই ধারার প্রকাশ ঘটে । গ্রাম বাংলায় স্বদেশী চেতনা প্রসারে সমিতিগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে । ঢাকা , ফরিদপুর , ময়মনসিংহ ও বাখরগঞ্জে ‘ অনুশীলন সমিতি ’ , ‘ ব্রতী ’ , ‘ সুহৃদ ’ ও ‘ সাধনা ’ এবং ‘ স্বদেশী বান্ধব ’ সমিতি ভীষণ সক্রিয় ছিল ।
( গ ) জাতীয় শিক্ষা :- দেশের চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ শিক্ষাপ্রসারের ধারা রক্ষা করতে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলবার উদ্যোগ গ্রহণ করেন । জাতীয় শিক্ষা রূপায়ণের জন্য অনেকেই উদার হাতে অর্থ সাহায্য করেন । ১৯০৬ সালের ১৪ আগস্ট “ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ” প্রতিষ্ঠা করা হয় । এই পরিষদের উদ্যোগে কলকাতায় গড়ে উঠে ‘ বেঙ্গল ন্যাশানাল কলেজ ‘ । সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও শিক্ষার বিকাশও জাতীয় শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য ছিল । এই উদ্দেশ্যে ‘ বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ’ স্থাপিত হয় । বর্তমানে এটা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে । জাতীয় শিক্ষা পরিষদের তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিক্ষা দ্রুত প্রসার লাভ করতে থাকে ।
স্বদেশী আন্দোলন ভারতীয় জাতীয় জীবন ও আন্দোলনের ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করে । এই আন্দোলন সর্বপ্রথম ভারতের জাতীয়তাবোধকে প্রাণবন্ত ও গতিশীলরূপে উপস্থাপিত করে । আন্দোলনের সংগ্রামী কর্মসূচি ভারতীয় জনমতকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ‘ স্বরাজ ’ অর্জন করা যায় ।
প্রশ্ন ৪। রাজনৈতিক দল হিসাবে মুসলিম লিগের পটভূমি সম্পর্কে সংক্ষেপে উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১ লা অক্টোবর আগা খাঁর নেতৃত্বে ৩৫ জন সদস্যবিশিষ্ট এক মুসলিম প্রতিনিধি দল সিমলায় বড়োেলাট মিন্টোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন । এই প্রতিনিধি দল মুসলমানদের জন্য –
( ১ ) সরকারি ও বেসরকারি চাকুরিতে সংরক্ষণ ।
( ২ ) পৌরসভা ও জেলাপরিষদগুলিতে বেশি সংখ্যায় মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বের প্রতিশ্রুতি ।
( ৩ ) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভা গুলিতে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা । এবং
( ৪ ) একটি পৃথক মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করেন। লর্ড মিন্টো এই প্রস্তাবগুলি সহানুভূতির সাথে বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দেন । ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তারে সিমলা বৈঠকের গুরুত্ব অসীম ।
সিমলা বৈঠকে –
( ১ ) ব্রিটিশ সরকার এই প্রতিনিধি দলকে ‘ ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতিভূ ’ বলে স্বীকৃতি দেয় । এবং
( ২ ) মুসলমানদের পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দ্বারা সরকার মুসলমান সম্প্রদায়কে ভারতে একটি ‘ স্বতন্ত্র জাতি ’ বলে মেনে নেয় ।
সিমলা বৈঠকের সাফল্য অভিজাত মুসলমানদের একটি নিজস্ব রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে । সিমলায় মুসলিম প্রতিনিধি দলের নেতা নিজ আত্মজীবনীতে স্পষ্ট লিখেছেন যে , তার একান্ত ইচ্ছা হল মুসলমানদের জন্য একটি আলাদা রাজনৈতিক সংস্থা গড়ে তোলা এবং ভারতের মধ্যে মুসলমানদের স্বতন্ত্র জাতি হিসাবে ব্রিটিশ সরকারের স্বীকৃতি আদায় করা । সিমলা বৈঠকের পর এই কাজে প্রধান ভূমিকা নেন ঢাকার নবাব সলিমউল্লা খাঁ ।
প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ‘ সর্বভারতীয় মুসলিম মৈত্রী সংঘ ‘ গঠনের প্রস্তাবসহ একটি চিঠি মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করেন । ১৯০৬ – এর ৩০ শে ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত মহামেডান শিক্ষা সম্মেলনে তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিম নেতাদের আহ্বান করেন । এখানে সভাপতির ভাষণে ভিকার উল – মূলক মুসলমানদের জন্য পৃথক সংগঠনের প্রস্তাব তোলেন এবং হাকিম আজমল খাঁ সেই প্রস্তাব সমর্থন করেন । প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ মুসলিম লিগ ’ । মহসিন উল – মূলক ও ভিকার – উল – মূলক – এর যুগ্ম সম্পাদক মনোনীত হন । মুসলিম লিগ চারটি মূল লক্ষ্য ঘোষণা করে –
( ১ ) ব্রিটিশ সরকারের প্রতি মুসলমানদের আনুগত্য সুনিশ্চিত করা ।
( ২ ) ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক স্বার্থ ও অধিকারগুলি রক্ষা করা ও বৃদ্ধি করা ।
( ৩ ) জাতীয় কংগ্রেসের প্রভাব প্রতিপত্তি খর্ব করা । এবং
( ৪ ) উপযুক্ত উদ্দেশ্যগুলি ক্ষুণ্ণ না করে অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সদ্ভাব ও মৈত্রী রক্ষা করা । মুসলিম লিগের গঠনতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় ।
( ১ ) কংগ্রেসের মতন লিগও ছিল উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিত শ্রেণির সংগঠন । জমিদার ও জোতদার শ্রেণির স্বার্থে স্থাপিত এই সংগঠন সাধারণ মানুষ বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির সুখদুঃখ সম্পর্কে আগ্রহী ছিল না ।
( ২ ) নবাবদের প্রাধান্য ছিল নিরঙ্কুশ । এর সদর কার্যালয় প্রথম স্থাপিত হয় আলিগড়ে এবং পরে লক্ষ্ণৌতে । পশ্চিম বাংলায় লিগের কোনো শাখা কার্যালয় পর্যন্ত ছিল না । লিগ বাংলা ও বাঙালীর প্রকৃত স্বার্থরক্ষা সম্পর্কে প্রথম থেকেই উদাসীন ছিল ।
সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো :
১। জাতীয় শিক্ষা ।
২। লর্ড মিন্টো ।
৩। কর্ণেল ডানলপ্ স্মিথ ।
৪। মুসলিম লিগ ।
৫। স্বদেশী ।
৬। বয়কট ।
উত্তরঃ ১। জাতীয় শিক্ষা :- দেশের চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ শিক্ষাপ্রসারের ধারা রক্ষা করতে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন । শচীন্দ্রনাথ বসুর উদ্যোগে কলকাতায় গঠিত হয় ‘ অ্যান্টি – সাকুলার সোসাইটি ‘ । এই সংস্থা সরকারি আদেশে বিতাড়িত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করে । প্রায় একই উদ্দেশ্যে সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘ ডন সোসাইটি ’ । স্বদেশী শিক্ষাপ্রসারের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বদেশপ্রেম জাগ্রত করাও ছিল এই সমিতির লক্ষ্য ।
জাতীয় শিক্ষা রূপায়ণের জন্য অনেকেই উদার হস্তে অর্থ সাহায্য করেন । প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘ জাতীয় শিক্ষাপরিষদ ’ ( ১৪ আগস্ট , ১৯০৬ খ্রিঃ ) । এই পরিষদের উদ্যোগে কলকাতায় গড়ে ওঠে ‘ বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ ‘ । এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ ছিলেন শ্রীঅরবিন্দ ঘোষ । সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার বিকাশও জাতীয় শিক্ষা অন্যতম লক্ষ্য ছিল । এই উদ্দেশ্যে স্থাপিত হয় ‘ বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ’ ; বর্তমানে এটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে । জাতীয় শিক্ষাপরিষদের তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিক্ষা দ্রুত প্রসার লাভ করতে থাকে । ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলায় কয়েকশো মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠে ।
২। লর্ড মিন্টো :- লর্ড মিন্টো ছিলেন ভারতের ভাইসরয় । তিনি লর্ড কার্জনের পর ভাইসরয় নিযুক্ত হন । ভাইসরয় হিসাবে কার্যভার গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষ ও ইংল্যান্ডের মধ্যে দেশের শাসন সংস্কারের প্রশ্নটি বিশেষ অগ্রাধিকার লাভ করে । এর আগেই জন মর্লি ভারত পরিক্রমা মন্ত্রীরূপে কার্যভার গ্রহণ করেছিলেন । উভয়ের সম্মিলিত চেষ্টায় ১৯০৯ সালে একটি আইন বিধিবদ্ধ হয় । এটি মর্লি – মিন্টো সংস্কার আইন নামে পরিচিত ।
এই আইন দ্বারা ভারতে ব্যাপক সাংবিধানিক সংস্কারের সাধন করা হয় । কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভায় বেসরকারী সভ্যসংখ্যা বাড়ানো হয় । কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাসন পরিষদে ভারতীয় সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয় । হিন্দু ও মুসলমানদের পৃথক নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন করা হয় । ফলে এই দেশের সুপ্তপ্রায় সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে পুনঃ জাগরিত করার পক্ষে সহায়ক হয় । এতে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের প্রভূত ক্ষতি হয় । হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে আত্মঘাতী রাজনৈতিক বিরোধের সূত্রপাত হয় ।
৩। কর্ণেল ডানলপ্ স্মিথ :- কর্ণেল ডানলপ্ স্মিথ ভাইসরয় ছিলেন লর্ড মিন্টোর ব্যক্তিগত সচিব । স্মিথ ও মিন্টো উভয়ের প্রধান লক্ষ্য ছিল — প্রথমত , মুসলমানগণকে স্বদেশী আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা এবং দ্বিতীয়ত , মুসলমানগণকে নিয়ে ভারতবর্ষে একদিকে কংগ্রেসের সমান্তরাল প্রতিদ্বন্দ্বী এবং অপরদিকে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগীরূপে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলা ।
কর্ণেল ডানলপ্ স্মিথের প্রত্যক্ষ উস্কানি এবং সহযোগিতায় বোম্বাই – এ আগা খাঁর নেতৃত্বে ১৯০৬ সাল ১ লা অক্টোবর তারিখে একটি মুসলিম দল সিমলাতে ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর সঙ্গে গোপনে আলোচনায় মিলিত হয় । এর ফলস্বরূপ ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
৪। মুসলিম লিগ :- নবাব সলিমউল্লার নেতৃত্বে ১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে মুসলিম লিগের জন্ম হয় । ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে
নিজ সম্প্রদায়ের স্বার্থ ও সুযোগ সুবিধা আদায় করা এবং কংগ্রেসের প্রভাব ও প্রতিপত্তি খর্ব করার উদ্দেশ্যে মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা করা হয় ।
মুসলিম লিগের মাধ্যমেই ব্রিটিশ সরকার দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপনের চেষ্টা করেছিল । মহম্মদ আলি জিন্না ছিলেন মুসলিম লিগের সভাপতি । শুরুতেই মুসলিম লিগ পাকিস্তানের দাবি উত্থাপন করে । দেশ বিভাজনের মাধ্যমে নতুন পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন ছিল মুসলিম লিগের একমাত্র উদ্দেশ্য । ১৯৪৬ সালে ক্যাবিনেট মিশন মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবী প্রত্যাখ্যান করে । ফলে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দেয় । ১৯৪৬ সালের ১৬ ই আগস্ট ‘ প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস ‘ পালন করা হয় । অবশেষে লিগের দাবি মতো ১৯৪৭ সালে ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয় ।
৫। স্বদেশী :- স্বদেশী আন্দোলনের প্রথম ধারাটি ছিল ‘ গঠনমূলক স্বদেশী ’ । ড. সুমিত সরকার লিখেছেন , “ নিষ্ফল ও আত্ম – অবমাননাকর ‘ ভিক্ষাবৃত্তির ’ রাজনীতি বর্জন করে স্বদেশী শিল্প , জাতীয় শিক্ষা , গ্রামোন্নয়ন ও সংগঠনের মাধ্যমে ” আত্মশক্তি অর্জন করাই ছিল ওই ধারার লক্ষ্য । ৯০ – এর দশক থেকেই এই ধারার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় । প্রফুল্লচন্দ্র রায় , নীলরতন সরকার , জে . চৌধুরী প্রমুখের ব্যবসায়িক উদ্যোগ , রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত ‘ স্বদেশী ভাণ্ডার ’ ( ১৮৯৭ ) , ১৯০৩ – এ স্থাপিত সরলাদেবীর ‘ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ’ এবং ডন সোসাইটির ‘ স্বদেশী বিপণি ’ ইত্যাদির মাধ্যমে এই ধারার প্রকাশ ঘটে । ১৮৯০-১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কবিগুরু রচিত একাধিক প্রবন্ধে বাংলায় আত্মশক্তি অর্জন মানসিকতার প্রমাণ পাওয়া যায় ।
এই ধরনের কয়েকটি রচনা হল , ‘ মন্ত্রী অভিষেক ’ ( ১৮৯০ ) , ‘ শিক্ষার হেরফের ’ ( ১৮৯২ ) , ‘ ইংরেজ ও ভারতবাসী ’ ( ১৮৯৩ ) , ‘ অপমানের প্রতিকার ’ ( ১৮৯৪ ) , ‘ অপরপক্ষের কথা ’ ( ১৮৯৮ ) ইত্যাদি । এগুলিতে তিনি নরমপন্থীদের আবেদন – নিবেদন রাজনীতি বর্জন করে দেশবাসীকে আত্মশক্তি অর্জন দ্বারা বিদেশির অপশাসন রোধের আহ্বান জানান । ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ‘ স্বদেশী সমাজ ’ নামক বিখ্যাত বক্তৃতায় তিনি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ‘ আত্মশক্তি’র ধারণাকে স্পষ্ট রূপ দেন । গ্রামবাংলায় স্বদেশী চেতনা প্রসারে সমিতিগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় । সমিতিগুলির মুখ্য কাজ ছিল দেশাত্মবোধক যাত্রা , গান , নাটক , লোকউৎসব , শরীরচর্চা ইত্যাদির মাধ্যমে গণসংযোগ ও স্বদেশচেতনা বৃদ্ধি করা । বাখরগঞ্জে মুকুন্দদাসের যাত্রাগানের আবেদন ছিল অত্যন্ত গভীর । ঢাকা , ফরিদপুর , ময়মনসিংহ ও বাখরগঞ্জে ‘ অনুশীলন সমিতি ’ , ‘ ব্রতী ’ , ‘ সুহৃদ ও সাধনা ’ এবং ‘ স্বদেশ বান্ধব ’ সমিতি ছিল খুবই সক্রিয় ।
৬। বয়কট :- ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ই জুলাই কৃষ্ণকুমার মিত্র সম্পাদিত ‘ সঞ্জীবনী ’ পত্রিকায় সরকারের বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক দেওয়া হয় । ১৬ ই জুলাই খুলনা জেলার বাগেরহাটে এবং ২১ শে জুলাই দিনাজপুরে আয়োজিত একটি সভাতে বয়কটের প্রস্তাব গৃহীত হয় । এই সকল প্রস্তাবে আগামী একবছর কাল জাতীয় শোকপালনের সিদ্ধান্ত এবং সরকারি দপ্তর , বিদ্যালয় , বিচারালয় , পঞ্চায়েত থেকে বাঙালী সদস্যরা পদত্যাগ করার অঙ্গীকার করেন । খুলনা , বরিশাল , ফরিদপুর , কলকাতা প্রভৃতি স্থানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বয়কট আন্দোলনে ব্যাপক স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা দেয় ।
ভূস্বামীশ্রেণির নায়েব গোমস্তা প্রমুখ বয়কট আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা নেন । তাঁদের প্ররোচনায় সমাজের . নিম্নস্তরের বিভিন্ন কর্মী বয়কট আন্দোলনে অংশ নেয় । ময়মনসিংহ , বরিশাল , ফরিদপুর , কালিঘাট প্রভৃতি অঞ্চলে , চর্মকার , ধোপা , নাপিত , পাচক , পুরোহিত প্রমুখ ইউরোপীয়দের সেবা করতে অস্বীকার করে । স্বদেশী শপথ গ্রহণের জন্য কালিঘাট মন্দিরে বিশেষ পূজা হোমে সাধারণ মানুষ অংশ নেন ।
১৯০৫-০৭ সময়কালে নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে । ছাত্র , যুবা , কৃষক প্রমুখ দলে দলে প্রতিরোধ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে । ‘ স্বদেশী ’ প্রচারের মতো বয়কট আন্দোলনেও ছাত্র ও যুবসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলকাতা ও পূর্ববাংলায় জেলাগুলিতে দলে দলে ছাত্ররা বিদ্যালয় বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় । বিলাতি বস্ত্র , মদ ও অন্যান্য দ্রব্যের দোকানের সামনে পিকেটিং – এর কাজে স্বেচ্ছাসেবী ভূমিকা পালন করে ছাত্রসমাজ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১। স্বদেশী আন্দোলনকালে বঙ্গদেশে গড়ে ওঠা দুটি স্বদেশী উদ্যোগের নাম উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ ( ক ) বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিল । এবং
( খ ) বেঙ্গল কেমিকেল ।
প্রশ্ন ২। স্বদেশী আন্দোলনের সন্ত্রাসবাদী ধারার চারজন মুখ্য প্রবক্তার নাম উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ বিপিনচন্দ্র পাল , বাল গঙ্গাধর তিলক , লালা লাজপত রায় , অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখ ।
প্রশ্ন ৩। স্বদেশী আন্দোলনের প্রধান কার্যসূচি তিনটি কী কী ছিল ?
উত্তরঃ স্বদেশী আন্দোলনের প্রধান কার্যসূচি ছিল—
( ক ) স্বদেশী ।
( খ ) বয়কট । এবং
( গ ) জাতীয় শিক্ষা ।
প্রশ্ন ৪। স্বদেশী আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ ( ক ) ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করা ।
( খ ) ১৯০৭ সালে কংগ্রেস বিভাজনের ফলে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে ।
প্রশ ৫ । স্বদেশী আন্দোলনকালে বঙ্গদেশ হতে প্রকাশিত তিনটি সংবাদপত্রের নাম উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ ( ক ) যুগান্তর ।
( খ ) বন্দেমাতরম্ । এবং
( গ ) সন্ধ্যা ।
প্রশ্ন ৬। ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনের ( মর্লি – মিণ্টো সংস্কার আইন ) দুটি শর্ত ( বৈশিষ্ট্য ) উল্লেখ করো।
উত্তরঃ ( ক ) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভায় বেসরকারি সভ্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা । এবং
( খ ) হিন্দু মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন প্রথার প্রবর্তন ।
প্রশ্ন ৭। কংগ্রেসের যে কোন তিনজন নরমপন্থী নেতার নাম উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ কংগ্রেসের তিনজন নরমপন্থী নেতাগণ হলেন— ফিরোজ শাহ মেহতা , সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও গোপালকৃষ্ণ গোখলে ৷
প্রশ্ন ৮। বঙ্গভঙ্গ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো ।
উত্তরঃ ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল বাংলা ও বাঙালী জাতি । ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাংলাদেশেই ছিল সমস্ত চিন্তানায়ক ও জাতীয় আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ । বাঙালীর শক্তি নষ্ট করার জন্য লর্ড কার্জন সুশাসালের অজুহাতে ১৯০৫ সালে বাংলাদেশকে দুভাগে ভাগ করেন । অসম ও পূর্ববঙ্গ নিয়ে একটি এবং পশ্চিমবঙ্গ , বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে আর একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ গঠিত হল । লর্ড কার্জনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালী জাতির ঐক্য বিনাশ করে তাদের জাতীয়তাবোধের উপর আঘাত হানা । জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ বাঙালী জাতিকে বিচ্ছিন্ন করে তাদের সংহতি ও জাতীয়তাবাদী ঐক্য বিনাশ করাই ছিল বঙ্গভঙ্গের মূল উদ্দেশ্য । এছাড়া বঙ্গভঙ্গের অন্তর্নিহিত অপর উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ রোপণ করা ।
প্রশ্ন ৯। মর্লি – মিন্টো সংস্কার ( ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইন ) সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো ।
উত্তরঃ ১৮৯২ সালের পরিষদ আইন ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি । ভারতের জাতীয় কংগ্রেস শক্তিলাভ করে ভারতবাসীগণের রাজনৈতিক অধিকার বিস্তারের জন্য দাবী করতে লাগল । ব্রিটিশ সরকার এই দাবী উপেক্ষা করতে পারল না । তখন ভারত সচিব জন মর্লি এবং বড়লাট লর্ড মিন্টোর সম্মিলিত চেষ্টায় একটি আইন বিধিবদ্ধ হয় । এটি তৃতীয় ভারতীয় পরিষদ আইন বা মর্লি মিন্টো সংস্কার নামে পরিচিত।
এই আইন দ্বারা—
( ১ ) কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভায় বেসরকারী সভ্যসংখ্যা বাড়ানো হয় ।
( ২ ) সভ্যগণকে বাৎসরিক আয় – ব্যয় এবং শাসনকার্য পরিচালনা সম্বন্ধে প্রস্তাব উপস্থিত করার এবং উত্থাপিত প্রস্তাব সম্বন্ধে ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয় ।
( ৩ ) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাসক পরিষদে ভারতীয় সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয় ।
( ৪ ) হিন্দু ও মুসলমানদের পৃথক নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন করা হয় । এই আইনটি রচনার পশ্চাতে ইংরেজ শাসকগণের একটি মারাত্মক কূটনৈতিক দূরভিসন্ধি নিহিত ছিল । হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য পৃথক পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা এই দেশের সুপ্তপ্রায় সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে পুনঃ জাগরিত করবার পক্ষে সহায়ক হল । এর ফলে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের প্রভূত ক্ষতি হয় , এবং হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে আত্মঘাতী রাজনৈতিক বিরোধের সূত্রপাত হয় ।

Hi! my Name is Parimal Roy. I have completed my Bachelor’s degree in Philosophy (B.A.) from Silapathar General College. Currently, I am working as an HR Manager at Dev Library. It is a website that provides study materials for students from Class 3 to 12, including SCERT and NCERT notes. It also offers resources for BA, B.Com, B.Sc, and Computer Science, along with postgraduate notes. Besides study materials, the website has novels, eBooks, health and finance articles, biographies, quotes, and more.