Class 11 Logic and Philosophy Chapter 2 বচন answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Logic and Philosophy Chapter 2 বচন and select needs one.
Class 11 Logic and Philosophy Chapter 2 বচন
Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Logic and Philosophy Chapter 2 বচন Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.
বচন
প্রথম খণ্ড
ভাগ – ১ পদ
পাঠ: ২
অতি- সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘পদ’ বা ‘Term’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?
উত্তরঃ ‘পদ’ বা ‘Term’ শব্দের উৎপত্তি লাতিন ‘Terminus’ শব্দ থেকে।
প্রশ্ন ২। ‘Terminus’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ ‘Terminus’ শব্দের অর্থ হল (boundary or extreme) সীমা। কারণ Term বা পদ সর্বদাই তর্কবাক্যের দুটি প্রান্তে বা সীমায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
প্রশ্ন ৩। একটি বচনে কয়টি পদ থাকে?
উত্তরঃ দুইটি।
প্রশ্ন ৪। একটি তর্কবাক্যে কয়টি অংশ থাকে?
উত্তরঃ তিনটি।
প্রশ্ন ৫। তর্কীয় বচনের উদ্দেশ্য কি একটি পদ?
উত্তরঃ হ্যাঁ।
প্রশ্ন ৬। তর্কীয় বচনের বিধেয় কি একটি পদ?
উত্তরঃ হ্যাঁ।
প্রশ্ন ৭। তর্কবাক্যের বা তর্কবিজ্ঞানসম্মত বচনের সংযোজকটি কি পদ?
উত্তরঃ না, সংযোজক শুধুমাত্র শব্দ, কিন্তু পদ নয়।
প্রশ্ন ৮। সকল পদই শব্দ, কিন্তু শব্দ পদ নয়।’ উক্তিটি কি সত্য?
উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্তিটি সত্য।
প্রশ্ন ৯। নামবাচক বিশেষ্য পদগুলি লক্ষণার্থক না অলক্ষণার্থক?
উত্তরঃ অলক্ষণার্থক।
প্রশ্ন ১০। গুণবাচক পদগুলি লক্ষণার্থক না অলক্ষণার্থক?
উত্তরঃ গুণবাচক সামান্য পদগুলি লক্ষণার্থক, কিন্তু গুণবাচক বিশিষ্ট পদগুলি অলক্ষণার্থক।
প্রশ্ন ১১। ‘মিলের মতে নামবাচক বিশেষ্য লক্ষণার্থক নয়’- উক্তিটি সত্য?
অথবা,
মিলের মতে, ‘স্বকীয় নাম হল অ-জাত্যর্থক’- উক্তিটি কি সত্য?
উত্তরঃ হ্যাঁ।
প্রশ্ন ১২। ‘ব্যাহতার্থক পদের মধ্যে সদর্থক, নঞর্থক দুই উপাদানই আছে’- এই কথাটিকে সত্য বলে মনে কর কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, কথাটি সত্য।
শুদ্ধ উত্তর দাও:
১। পদের ব্যাচার্থ বস্তুর গুণ/সংখ্যা বোঝায়৷
উত্তরঃ সংখ্যা।
২। পদের লক্ষণার্থ বস্তুর গুণ/বস্তুকে বোঝায়।
উত্তরঃ গুণ।
৩। অলক্ষণার্থক পদের কেবল বাচ্যার্থ আছে/লক্ষণার্থ আছে/বাচ্যার্থ নাই/লক্ষণার্থ নাই/ বাচ্যার্থ বা লক্ষণার্থ আছে।
উত্তরঃ বাচ্যার্থ বা লক্ষণার্থ আছে।
৪। একটি লক্ষণার্থক পদের বাচ্যার্থ/লক্ষণার্থ/বাচ্যার্থ এবং লক্ষণার্থ উভয়ই থাকে।
উত্তরঃ বাচ্যার্থ এবং লক্ষণার্থ উভয়ই থাকে।
৫। কেবল বাচ্যার্থ থাকা পদকে লক্ষণার্থক/অলক্ষণার্থক পদ বলে।
উত্তরঃ অলক্ষণার্থক পদ।
৬। কেবল লক্ষণার্থ থাকা পদকে লক্ষণার্থক/অলক্ষণার্থক পদ বলে।
উত্তরঃ অলক্ষণার্থক পদ।
৭। পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের পরিবর্তন একমুখী/বিপরীতমুখী।
উত্তরঃ বিপরীতমুখী।
৮। পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের হ্রাসবৃদ্ধি নতুন পদের জন্ম দেয় / দেয় না।
উত্তরঃ জন্ম দেয়।
৯। অলক্ষণার্থক পদের বাচ্যার্থ/লক্ষণার্থ/এদের কেবল একটি থাকে।
উত্তরঃ এদের কেবল একটি থাকে।
১০। একটি লক্ষণার্থক পদের লক্ষণার্থ/বাচ্যার্থ/এই দুই-ই থাকে।
উত্তরঃ এই দুই-ই থাকে।
১১। বিপরীত পদদুটির মধ্যে তৃতীয় সম্ভাবনা থাকে/ থাকে না।
উত্তরঃ থাকে।
১২। বিরুদ্ধ পদ দুটির মধ্যে তৃতীয় সম্ভাবনা থাকে/থাকে না।
উত্তরঃ থাকে না।
১৩। দুটি বিরুদ্ধ পদে সম্পূর্ণ বাচ্যার্থ নিঃশেষ হয়ে যায়/যায় না।
উত্তরঃ যায়।
১৪। ‘সাদা এবং কালো’ বিরুদ্ধ পদ/ বিপরীত পদের উদাহরণ।
উত্তরঃ বিপরীত পদের উদাহরণ।
১৫। একটি শব্দ দ্বারা গঠিত পদকে একবাচক/বহুশাব্দিক পদ বলে।
উত্তরঃ একবাচক।
১৬। যে পদ কেবল বস্তু অথবা গুণকে বোঝায়, কিন্তু দুটোকে একসঙ্গে বোঝায় না, তাকে লক্ষণার্থক/অলক্ষণার্থক পদ বলে।
উত্তরঃ অলক্ষণার্থক পদ।
১৭। মিলের মতে, নামবাচক বিশেষ্য পদ লক্ষণার্থক/ অলক্ষণার্থক পদ।
উত্তরঃ অলক্ষণার্থক পদ।
১৮। বিপরীত পদদুটিতে মধ্যবর্তী সম্ভাবনা থাকে/ থাকে না।
উত্তরঃ থাকে।
১৯। জেভনসের মতে, নামবাচক বিশেষ্য পদগুলি লক্ষণার্থক/ অলক্ষণার্থক।
উত্তরঃ লক্ষণার্থক পদ।
২০। স্বতন্ত্রসিদ্ধ/পরতন্ত্রসিদ্ধ / অসিদ্ধ শব্দ নিজে নিজে পদ হতে পারে।
উত্তরঃ স্বতন্ত্রসিদ্ধ।
২১। ব্যাহতার্থক পদ কোন গুণের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে স্বীকার/ অস্বীকার করে।
উত্তরঃ স্বীকার।
২২। লক্ষণার্থক পদ সাধারণ এবং মৌলিক/আকস্মিক গুণকে নির্দেশ করে।
উত্তরঃ সাধারণ এবং মৌলিক।
২৩। সকল পদই শব্দ/বাক্য/অপদ হয়।
উত্তরঃ শব্দ।
২৪। ‘মানুষ’ একটি লক্ষণার্থক/অলক্ষণার্থক পদ।
উত্তরঃ লক্ষণার্থক।
২৫। পদ হল বাক্য/বচন/ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
উত্তরঃ বচন।
শূন্যস্থান পূর্ণ করো:
১। বচনের উদ্দেশ্য একটি ______।
উত্তরঃ পদ।
২। বচনের বিধেয় একটি ______।
উত্তরঃ পদ।
৩। একটি বচনে ______ পদ থাকে?
উত্তরঃ দুটি।
৪। একটি বচনে ______ অংশ থাকে।
উত্তরঃ তিনটি।
৫। _____ একটি বিশিষ্ট পদের উদাহরণ।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ।
৬। ______ একটি সামান্য পদের উদাহরণ।
উত্তরঃ মানুষ।
৭। সামান্য পদ ______ ধারণা প্রকাশ করে।
উত্তরঃ শ্রেণির
৮। সামান্য পদ ______ শব্দকে বোঝায়।
উত্তরঃ শ্রেণিবাচক।
৯। একটি লক্ষণার্থক পদের ______ এবং ______ উভয়েই থাকে।
উত্তর। বাচ্যার্থ, লক্ষণার্থ।
১০। পদের বাচ্যার্থ ______ বোঝায়।
উত্তরঃ বস্তুকে।
১১। নামবাচক বিশেষ্য পদ ______ ।
উত্তরঃ অলক্ষাণার্থক।
১২। পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের পরিবর্তন ______ ।
উত্তরঃ বিপরীতমুখী।
১৩। সকল পদই _____, কিন্তু সকল ______, _______ নয়।
উত্তরঃ শব্দ, শব্দ, পদ।
১৪। সমবাহু ত্রিভুজের বাচ্যার্থ ______।
উত্তরঃ ‘সকল সমবাহু ত্রিভুজ’।
১৫। জেভেনসের মতে নামবাচক পদ ______।
উত্তরঃ লক্ষণার্থক।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। শব্দ কী?
উত্তরঃ এক বা একাধিক বর্ণ বা অক্ষরের সমন্বয় যখন কোনো অর্থবাহক হয়, তখন তাকে ‘শব্দ’ বলে। যেমন- ঐ, বই, মানুষ ইত্যাদি।
প্রশ্ন ২। পদ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে শব্দ বা শব্দসমষ্টি সম্পূর্ণ নিজে নিজেই কোনো তর্কবাক্যের বা তর্কীয় বচনের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তাকে ‘পদ’ বলে।
প্রশ্ন ৩। যুক্তিবিজ্ঞানে শব্দকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় এবং কী কী?
উত্তরঃ যুক্তিবিজ্ঞানে শব্দকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
(ক) পদযোগ্য বা স্বতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ।
(খ) পদ-অযোগ্য (পদাযোগ্য) বা পরতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ।
(গ) অ-পদযোগ্য বা অসিদ্ধ শব্দ।
প্রশ্ন ৪। পদযোগ্য বা স্বতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ যে শব্দ নিজে নিজেই অন্য কোনো শব্দের সাহায্য ছাড়াই বচনের উদ্দেশ্য বা বিধেয় পদ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তাকে পদযোগ্য বা স্বতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ বলে। যেমন- মানুষ, ফুল, সুন্দর ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৫। পদ অযোগ্য (পদাযোগ্য) বা পরতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে শব্দ নিজে নিজে কোনো ‘পদ’ হিসেবে কখনো ব্যবহৃত হতে পারে না, কিন্তু অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত হলে ‘পদ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তাকে পদাযোগ্য বা পদ-অযোগ্য বা পরতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ বলে। যেমন- ও, এবং, এর, এই, একটি ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৬। অ-পদযোগ্য বা অসিদ্ধ শব্দ কাকে বলে?
উত্তরঃ অপদযোগ্য বা অসিদ্ধ শব্দ হচ্ছে সেইসব শব্দ, যাদের কখনও পদ হিসেবে ব্যবহার করা যায় না, নিজেও নয়, অন্য কোনো শব্দের সাহায্য নিয়েও নয়। যেমন- অনন্বয়ী শব্দ বা Interjection। আঃ, উঃ, বাঃ, সাবাস্ ইত্যাদি শব্দকে কখনও পদ হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। কাজেই এগুলো অসিদ্ধ শব্দ।
প্রশ্ন ৭। যুক্তিবিজ্ঞানে পদের শ্রেণিবিভাগগুলি কী কী?
উত্তরঃ যুক্তিবিজ্ঞানে পদকে নানা শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যেমন-
(ক) এক শব্দাত্মক পদ ও অনেক শব্দাত্মক পদ।
(খ) সামান্য পদ ও বিশিষ্ট পদ।
(গ) নিরপেক্ষ পদ ও সাপেক্ষ পদ।
(ঘ) সদর্থক পদ, নঞর্থক পদ ও ব্যাহতার্থক পদ।
(ঙ) লক্ষণার্থক পদ ও অলক্ষণার্থক পদ
(চ) বিপরীত পদ ও বিরুদ্ধ পদ।
(ছ) বস্তুবাচক পদ ও গুণবাচক পদ।
(জ) একার্থক পদ ও অনেকার্থক পদ।
(ঝ) সমষ্টিবাচক পদ ও অসমষ্টিবাচক পদ।
প্রশ্ন ৮। এক-শব্দাত্মক পদ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে পদে একটিমাত্র শব্দ থাকে, তাকে এক-শব্দাত্মক পদ বলে। যেমন- ‘মানুষ’, ‘প্রাণী’।
প্রশ্ন ৯। অনেক-শব্দাত্মক পদ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে পদ একাধিক শব্দ দ্বারা গঠিত হয়, তাকে অনেক-শব্দাত্মক পদ বলে।
যেমন- দারুণ খেলোয়াড়, অসুখী মানুষ।
প্রশ্ন ১০। পদের বিরোধিতা বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ দুটি পদকে পরস্পর বিরোধী বলা হয়, যখন তারা এমন গুণ বোঝায়, যা একই বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে একই সঙ্গে প্রযোজ্য হতে পারে না। যেমন- ‘লাল নীল’, ‘সৎ-অসৎ’ ইত্যাদি। পদের বিরোধিতা দুই প্রকারের হয়। যথা- বিপরীত পদ এবং বিরুদ্ধ পদ।
সংজ্ঞা দাও:
১। এক শব্দাত্মক পদ: যে পদে একটি মাত্র শব্দ থাকে, তাকে এক শব্দাত্মক পদ বলে। যেমন- ‘মানুষ’, ‘ফুল’, ‘প্রাণী।
২। অনেক-শব্দাত্মক পদ: যে পদ একাধিক শব্দ দ্বারা গঠিত হয়, তাকে অনেক শব্দাত্মক পদ বলে। যেমন- ‘সুখী মানুষ’, ‘সুন্দর ফুল, ‘মরণশীল জীব’ ইত্যাদি।
৩। সামান্য পদ: সামান্য পদ সেই পদ, যা একই অর্থে অনির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তির যে কোনটিকে বোঝায়। এই সমস্ত অনির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তি বা বস্তু একই শ্রেণিভুক্ত হয়ে থাকে। সামান্য পদ শ্রেণীবাচক শব্দকে বোঝায়। যথা- ‘মানুষ’, ‘প্রাণী’, ‘ফুল’, ‘পুস্তক’ ইত্যাদি।
৪। বিশিষ্ট পদ: বিশিষ্ট পদ হচ্ছে সেই পদ, যা দ্বারা নির্দিষ্ট বা বিশেষ কোনো একজন ব্যক্তি বা গুণকে বোঝায়। যেমন- ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী’ ইত্যাদি।
৫। অর্থযুক্ত বিশিষ্ট পদ: অর্থযুক্ত বিশিষ্ট পদ সেই বিশিষ্ট পদ, যাতে নির্দিষ্ট কোনো একজন ব্যক্তি বা একটি বস্তুর সঙ্গে কোনো বিশেষ গুণের উল্লেখ থাকে। যেমন- ‘ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী’, ‘পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ’ ইত্যাদি।
৬। অর্থহীন বিশিষ্ট পদ: অর্থহীন বিশিষ্ট পদ দ্বারা সুনির্দিষ্ট কোনো একজন ব্যক্তি বা একটি বস্তুকে বোঝায়। কিন্তু তার কোনো গুণের উল্লেখ থাকে না। যথা- ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘রাম’, ‘গঙ্গা’, হিমালয় ইত্যাদি।
৭। নিরপেক্ষ পদ: নিরপেক্ষ পদ সেই পদ, যে নিজের অর্থ নিজেই বহন করে অর্থাৎ অন্য শব্দের সাহায্য ছাড়াই যার অর্থ বোঝা যায়। যেমন- মানুষ, ফুল, ঈশ্বর, প্রাণী ইত্যাদি।
৮। সাপেক্ষ পদ: যে পদ নিজের অর্থ নিজে বহন করে না, যার অর্থ অন্য শব্দের সাহায্য ছাড়া বোঝা যায় না, তাকে সাপেক্ষ পদ বলে। যেমন- ‘পিতা’, ‘মাতা’, ‘ভাই’, ‘শিক্ষক’ ইত্যাদি।
৯। সদর্থক পদ: সদর্থক পদ সেই পদ, যা দিয়ে কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা গুণের উপস্থিতি বোঝায়। যেমন- ‘মানুষ’ বলতে মানুষের উপস্থিতি বা অস্তিত্ব বোঝায়, ‘সুখী’ বলতে সুখের উপস্থিতি বোঝায়। অতএব ‘মানুষ’, ‘সুখী’ ইত্যাদি সদর্থক পদ।
১০। নঞর্থক পদ: নঞর্থক পদ সেই পদ, যা দিয়ে কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা গুণের অনুপস্থিতি বোঝায়। যেমন- ‘অসৎ’ (সততার অভাব বা অনুপস্থিতি), ‘প্রাণহীন’ (প্রাণের অভাব বা অনুপস্থিতি), ‘অসুখী’, ‘অমানুষ’ ইত্যাদি নঞর্থক পদ।
১১। ব্যাহতার্থক পদ: ব্যাহতার্থক পদ সেই পদ, যে পদ দিয়ে কোনো ব্যক্তি, বস্তুর ক্ষেত্রে কোনো গুণের বর্তমান অভাব বা অনুপস্থিতি বোঝায়, যে গুণ উপস্থিত থাকতেও পারত। ব্যাহতার্থক পদের মধ্যে সদর্থক এবং নঞর্থক দুই উপাদানই আছে। যেমন-‘অন্ধ’, ‘বোবা’, ‘খোঁড়া’ ইত্যাদি।
১২। লক্ষণার্থক পদ: যে পদ দ্বারা একাধারে বাচ্যার্থ (denotation) এবং লক্ষণার্থক (connotation) বোঝায়, অর্থাৎ যে পদ বস্তুবাচক এবং গুণবাচক দুই-ই, তাকে লক্ষণার্থক পদ বা জাত্যর্থক পদ বলে। যেমন- ‘মানুষ’ পদটি জাত্যর্থক বা লক্ষণার্থক, কারণ এই পদ একদিকে ‘সমস্ত মানুষ’কে (বাচ্যার্থ বা ব্যক্ত্যর্থ) বোঝায়। সেই সঙ্গে সকল মানুষের মৌলিক ও সাধারণ গুণ ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ (rationality) এবং জীববৃত্তি বা জীবত্ব (animality)। অতএব, এই দুটি গুণ ‘মানুষ’ পদের লক্ষণার্থ বা জাত্যর্থ।
১৩। অলক্ষণার্থক পদ: যে পদ হয় গুণবাচক, না হয় বস্তুবাচক, অর্থাৎ, যে পদ দ্বারা শুধু বাচ্যার্থ অথবা লক্ষণার্থ বোঝায়, কিন্তু একই সঙ্গে বাচ্যার্থ বা লক্ষণার্থ দুই-ই বোঝায় না, তাকে অলক্ষণার্থক পদ বা অ-জাত্যর্থক পদ বলা হয়। যেমন- সততা, সত্যবাদিতা, মমতা ইত্যাদি।
১৪। বিপরীত পদ: বিপরীত পদ সেই দুটি পদ, যারা একই সঙ্গে একই ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে প্রযোজ্য হতে পারে না, অর্থাৎ যারা পরস্পর বিরোধী এবং তাদের বাচ্যার্থের মধ্যে সর্বাধিক পার্থক্য থাকে। যথা ‘লাল এবং নীল’, ‘সাদা এবং কালো’, ‘সুখী এবং দুখী, জ্ঞানী এবং নির্বোধ’ ইত্যাদি।
১৫। বিরুদ্ধ পদ: বিরুদ্ধ পদ সেই দুটি পরস্পর বিরোধী পদ, যারা একই বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে একই সঙ্গে প্রযোজ্য হয় না এবং একত্রে এই দুটি পদ সমগ্র বাচ্যার্থকে নির্দেশ করে। যেমন- ‘লাল এবং না-লাল’, ‘জ্ঞানী এবং ‘অজ্ঞানী’, ‘সুখী এবং ‘অসুখী’ ইত্যাদি।
১৬। বস্তুবাচক পদ: বস্তুবাচক পদ সেই পদ যার দ্বারা কোনো বস্তু, ব্যক্তি, বস্তু বা ব্যক্তির শ্রেণিকে বোঝায়। যেমন- মানুষ, চেয়ার, প্রাণী, ফুল ইত্যাদি।
১৭। গুণবাচক পদ: যে পদ দ্বারা কোনো গুণ বা গুণসমষ্টিমাত্র বোঝায়, কিন্তু সেই গুণ বা গুণসমষ্টিযুক্ত ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায় না, তাকে গুণবাচক পদ বলে। যেমন- ‘মনুষ্যত্ব’, ‘প্রাণীত্ব’, ‘সততা’ ইত্যাদি।
১৮। একার্থক পদ: যে পদের একটিমাত্র সুনির্দিষ্ট অর্থ থাকে, তাকে একার্থক পদ বলে। যেমন- ‘মানুষ’, ‘টেবিল’, ‘ফুল’ ইত্যাদি।
১৯। অনেকার্থক পদ: যে পদের দুই বা ততোধিক অর্থ থাকে, তাকে অনেকার্থক পদ বলে। যেমন- ‘হরি’, ‘অন্ধ’ ইত্যাদি শব্দ। ‘হরি’ পদের অর্থ-
(১) নারায়ণ। এবং
(২) হরণ করি।
‘অন্ধ’ শব্দেরও দুটি অর্থ-
(১) দৃষ্টিহীন। এবং
(২) নির্বিচার।
২০। সমষ্টিবাচক পদ: যে পদ এক জাতীয় বহু ব্যক্তি বা বস্তুর সমষ্টিকে বোঝায়, তাকে সমষ্টিবাচক পদ বলে। যেমন- ‘গ্রন্থাগার’ (বই-এর সমষ্টি), ‘সৈন্যবাহিনী’ (সৈন্যদের সমষ্টি) ইত্যাদি।
২১। অসমষ্টিবাচক পদ: যে সমস্ত পদ বহু ব্যক্তি বা বস্তুসমূহের সমষ্টি বোঝায় না, তাকে অসমষ্টিবাচক পদ বলে। যেমন- ‘মানুষ’, ‘ফুল’, ‘বই’ ইত্যাদি।
রচনাভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘সকল পদই শব্দ, কিন্তু সকল শব্দ পদ নয়’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ এক বা একাধিক বর্ণ বা অক্ষরের সমন্বয় যখন কোনো অর্থবাহক হয়, তখন তাকে পদ বলে। যেমন- ঐ, বই, মন, মানুষ, মরণশীল, নয়, হয় ইত্যাদি।
যে শব্দ বা শব্দসমষ্টি সম্পূর্ণ নিজে নিজেই কোন তর্কবাক্য বা তর্কীয় বচনের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাকে ‘পদ’ বলে। যেমন- ‘মানুষ হয় মরণশীল জীব’। এই তর্কীয় বচনে উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘মানুষ’, যা একটিমাত্র শব্দ দিয়ে গঠিত। বিধেয় হচ্ছে ‘মরণশীল জীব’, যা দুটি শব্দ দিয়ে গঠিত। অতএব, এই বচনে ‘মানুষ’ এবং ‘মরণশীল জীব’ দুইটি পদ। কিন্তু ‘হয়’ শব্দটিকে ‘পদ’ বলা চলে না। কারণ এই শব্দ উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি বা হতে পারে না। ‘হয়’ হচ্ছে সংযোজক।
একটি তর্কীয় বচনের তিনটি অংশ- উদ্দেশ্য, সংযোজক এবং বিধেয়। ‘উদ্দেশ্য’ এবং বিধেয় পদ, কিন্তু সংযোজক পদ নয়, শুধুমাত্র শব্দ। অতএব বলা যায়, সকল পদই শব্দ, কিন্তু সকল শব্দ পদ নয়। যুক্তিবিজ্ঞানে, শব্দকে প্রধানত তিনটি ভগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- পদযোগ্য বা স্বতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ, পদ-অযোগ্য (পদাযোগ্য) বা পরতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ ও অপদযোগ্য বা অসিদ্ধশব্দ। এগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র পদযোগ্য বা স্বতন্ত্রসিদ্ধ শব্দই পদ। পরতন্ত্রসিদ্ধ বা অসিদ্ধ শব্দ পদ নয়। অতএব, সকল শব্দই পদ নয়, কিন্তু সমস্ত পদই শব্দ বা শব্দ-সমষ্টি হতে বাধ্য।
প্রশ্ন ২। নামবাচক বিশেষ্য পদ কি লক্ষণার্থক?
উত্তরঃ নামবাচক বিশেষ্য পদ লক্ষণার্থক কিনা, এ বিষয়ে তর্কবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।
(ক) জন স্টুয়ার্ট মিল এবং কারভেথ রিডের মতে নামবাচক বিশেষ্য লক্ষণার্থক নয়।
(খ) জেভনস-এর মতে নামবাচক বিশেষ্য লক্ষণার্থক।
(গ) ড. প্রফুল্ল কুমার রায়ের মতে নামবাচক বিশেষ্য প্রথমে অলক্ষণার্থক থাকে। পরবর্তীতে লক্ষণার্থক হয়ে যায়।
প্রথমেই আমরা জে. এস. মিল (John Stuart Mill) এবং কারভেথ রিড (Carveth Read)-এর যুক্তিগুলো বিশ্লেষণ করব। জে. এস. মিল বলেছেন, নাম বস্তু বা ব্যক্তির ক্ষেত্রে একটি অর্থহীন চিহ্নমাত্র। একটি নাম দিয়ে কোনো গুণ বোঝায় না। নামের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বা একটি বস্তুকে (বাচ্যার্থ) চেনা সম্ভব। কোনো গুণকে (লক্ষণার্থ) নয় ৷ অতএব, নামবাচক বিশেষ্য অ-লক্ষণার্থক।
জেভনস (Jevons) বলেন যে, নামবাচক বিশেষ্য লক্ষণার্থক। নামের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি বা বস্তুর সঙ্গে তার গুণও প্রকাশ পায়।
ড. প্রফুল্ল কুমার রায়ের মতে, প্রথমে অর্থাৎ জ্ঞানের ক্ষেত্রে শুরুতে নামবাচক বিশেষ্য অলক্ষণার্থক থাকে। পরে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান যত বাড়ে, ততই সেই ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে আমরা গুণগুলোও জানতে পারি। তখনই তাকে লক্ষণার্থক বলা চলে।
জেভনস ও ড. প্রফুল্ল রায়ের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। ‘জিমি’ নামটি মানুষের নামও হতে পারে, আবার কুকুরের নামও হতে পারে। ড. প্রফুল্ল কুমার রায়ের মতটি গ্রহণযোগ্য নয় এই কারণে যে, এই মত মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য হলেও তর্কসম্মত নয়।
অতএব জে. এস. মিল ও কারভেথ রিডের মতটিই সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য। নামবাচক বিশেষ্য অ-লক্ষণার্থক। নামের মধ্য দিয়ে সেই নামধারী কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে বোঝায় কিন্তু তার গুণকে নয়।
৩। পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের অর্থ ও তাদের সম্পর্ক সম্বন্ধে আলোচনা করো।
অথবা,
উদাহরণসহ পদের বাচ্যার্থ এবং লক্ষণার্থের সম্বন্ধ নির্ণয় করো।
অথবা,
‘পদের বাচ্যার্থ’ ও লক্ষণার্থের সম্বন্ধ বিপরীতমুখী’ উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ অধিকাংশ পদের দুটি দিক থাকে বা দুটি অর্থ থাকে। একটি তার বাচ্যার্থ বা ব্যক্ত্যর্থ এবং অপরটি তার লক্ষণার্থ বা জাত্যর্থ।
একটি পদ একই অর্থে যে বস্তু বা বস্তুগুলির ওপর আরোপিত হয়, ‘বাচ্যার্থ বা ব্যক্ত্যর্থ’ বলতে সেই বস্তু বা বস্তুগুলিকেই বোঝায়। অপরপক্ষে, পদটি যে গুণ বা গুণাবলির উল্লেখ করে সেই গুণ বা গুণাবলিকেই ‘লক্ষণার্থ বা জাত্যর্থ’ বলে।
লক্ষণার্থ বলতে ব্যক্তি বা বস্তুর গুণগত দিকটি বোঝায়। এই বস্তু বা গুণসমূহ পদ-নির্দেশিত সকল ব্যক্তি বা সকল বস্তুর সাধারণ গুণ এবং মৌলিক গুণ।
বাচ্যার্থের দিক থেকে একটি পদ বস্তুবাচক, লক্ষণার্থের দিক থেকে গুণবাচক। যেমন- ‘মানুষ’ পদটির দ্বারা পৃথিবীর যাবতীয় মানুষ, অর্থাৎ সকল মানুষকে বোঝায়। অতএব, ‘সকল মানুষ’ হচ্ছে যথাক্রমে ‘মানুষ’ পদের বাচ্যার্থ। অপরপক্ষে ‘জীববৃত্তি’ এবং ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ সকল মানুষের সাধারণ এবং মৌলিক গুণ। তাই ‘জীববৃত্তি’ এবং ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ ‘মানুষ’ পদের লক্ষণার্থ।
পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের সম্পর্ক সম্বন্ধে বলা যায়, একটি বাড়লে, অপরটি কমে, কিংবা একটি কমলে, অন্যটি বাড়ে। অর্থাৎ,
(ক) যদি বাচ্যার্থ বাড়ে, তাহলে লক্ষণার্থ কমে।
(খ) যদি বাচ্যার্থ কমে, তাহলে লক্ষণার্থ বাড়ে।
(গ) যদি লক্ষণার্থ বাড়ে, তাহলে বাচ্যার্থ কমে।
(ঘ) যদি লক্ষণার্থ কমে, তাহলে বাচ্যার্থ বাড়ে।
যেমন- ‘মানুষ’ নামক পদের বাচ্যার্থ হল ‘সকল মানুষ’ এবং লক্ষণার্থ হল ‘জীববৃত্তি’ এবং ‘বুদ্ধিবৃত্তি’। এই মানুষ পদটির বাচ্যার্থ বাড়ানোর জন্যে অন্যান্য সমস্ত জীবকেও যদি এর সঙ্গে যোগ করা হয় (মানুষ + অন্যান্য জীব = সমস্ত জীব), যখন তার লক্ষণার্থ বা জাত্যর্থ হবে ‘জীববৃত্তি’ মানুষের লক্ষণার্থ (বুদ্ধিবৃত্তি + জীববৃত্তি)। অতএব, বাচ্যার্থ বৃদ্ধি লক্ষণার্থ হ্রাসের কারণ।
আবার ‘মানুষ’ পদটির বাচ্যার্থ কমাবার জন্য যদি ‘অসভ্য মানুষদের কথা বাদ দিয়ে শুধু ‘সভ্য মানুষদের কথা উল্লেখ করি (মানুষদের বাচ্যার্থ- অসভ্য মানুষ = সভ্য মানুষ) তাহলে ‘সভ্য’ গুণের সংযোগে লক্ষণার্থ বেড়ে যাবে (মানুষের লক্ষণার্থ + সভ্যগুণ = জীববৃত্তি + বুদ্ধিবৃত্তি + সভ্যবৃত্তি) অতএব, বাচ্যার্থ হ্রাস লক্ষণার্থ বৃদ্ধির কারণ।
অতএব একথা বলা যায়, পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের পরিবর্তন (হ্রাস বা বৃদ্ধি) বিপরীতমুখী।
প্রশ্ন ৪। বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের বিপরীতমুখী পরিবর্তনের তিনটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো।
উত্তরঃ বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের বিপরীতমুখী পরিবর্তনের তিনটি সীমাবদ্ধতা হল:
(ক) কোনো একটি পদের বাচ্যার্থ বা লক্ষণার্থকে পরিবর্তিত করলে, অর্থাৎ বাড়ালে বা কমালে, সেই পদটি একটি নতুন পদে পরিণত হয়, পুরানো পদ আর থাকে না।
(খ) বিপরীতমুখী পরিবর্তন কথাটি গণিতশাস্ত্র থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গাণিতিক অর্থ আর যুক্তিবিজ্ঞানসম্মত অর্থের পার্থক্য আছে। গণিতে এককগুলোকে গণনা করা যায় বা মাপা যায়। কিন্তু লক্ষণার্থ গুণবাচক পদ হওয়ায় তাকে গণনা করা যায় না, মাপাও যায় না।
(গ) কোন পদের বাচ্যার্থ বা লক্ষণার্থের হ্রাসবৃদ্ধির সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত জ্ঞানের হ্রাসবৃদ্ধিকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। এই বাড়াকমার সঙ্গে আমাদের জ্ঞান বাড়াকমার কোন সম্বন্ধ নেই।
প্রশ্ন ৫। একটি চিত্রের সাহায্যে পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের অর্থ ও তাদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ নীচে চিত্রের সাহায্যে পদের বাচ্যর্থ ও লক্ষণার্থের বিষয়টিকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা যায়:

বৃত্ত ‘ক’ হল ‘জীব’ পদের বাচ্যার্থ। বৃত্ত ‘খ’ হল মানুষ পদের বাচ্যার্থ। বৃত্ত ‘গ’ হল জ্ঞানী মানুষ পদের বাচ্যার্থ। ‘ক’ বৃত্তের অন্তর্গত ‘খ’ বৃত্ত ও এবং ‘খ’ বৃত্তের অন্তর্গত ‘গ’ বৃত্ত। এর অর্থ ‘জীব’ পদের বাচ্যার্থ ‘মানুষ’ পদের বাচ্যার্থ থেকে বড় এবং ‘মানুষ’ পদের বাচ্যার্থ ‘জ্ঞানী মানুষ’ পদের বাচ্যার্থ থেকে বড়। এবার, এই তিনটি পদকে ‘জীব’, ‘মানুষ’ এবং ‘জ্ঞানী মানুষ’ যেগুলো বস্তুবাচক সামান্য পদ, তাদের বড় থেকে ছোট বাচ্যার্থের বিচারে নীচের ক্রম অনুযায়ী সাজানো গেল:

এবার আমরা যদি ‘গ’ বৃত্ত থেকে ‘খ’ বৃত্ত এবং ‘খ’ বৃত্ত থেকে ‘ক’ বৃত্তে যাই, তাহলে দেখা যাবে-বাচ্যার্থ ক্রমশ বাড়ছে। কেননা সাধারণ ভাবেই ‘সকল জ্ঞানী’ মানুষের থেকে ‘সকল মানুষের’ সংখ্যা বেশি এবং ‘সকল মানুষের’ থেকে ‘সকল জীবের’ সংখ্যা বেশি। কিন্তু এক্ষেত্রে লক্ষণার্থ কমছে, ‘গ’ এর ক্ষেত্রে লক্ষণার্থতে তিনটি গুণ, ‘খ’ এর ক্ষেত্রে দুটি গুণ এবং ‘ক’ এর ক্ষেত্রে একটি গুণ দেখা যাচ্ছে।
তাহলে বলা যায়-
(ক) বাচ্যার্থ বাড়লে লক্ষণার্থ কমে।
(খ) কিন্তু ‘ক’ বৃত্ত থেকে ‘খ’ বৃত্তে গেলে, তারপর ‘খ’ বৃত্ত থেকে ‘গ’ বৃত্তে গেলে দেখা যাবে, বাচ্যার্থ ক্রমশ কমছে। কিন্তু লক্ষণার্থ বাড়ছে।
(গ) আবার লক্ষণার্থ বাড়লে বাচ্যার্থ কমে। বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যাবে ‘ক’ বৃত্ত থেকে ‘খ’ বৃত্তে এবং ‘খ’ বৃত্ত থেকে ‘গ’ বৃত্তে গেলে।
(ঘ) বিপরীতে লক্ষণার্থ কমলে বাচ্যার্থ বাড়ে। যদি ‘গ’ বৃত্ত থেকে ‘খ’ বৃত্তে এবং ‘খ’ বৃত্ত থেকে ‘ক’ বৃত্তে গেলে দেখা যাবে- লক্ষণার্থ কমলে বাচ্যার্থ বাড়ে।
পার্থক্য নির্ণয় করো:
১। শব্দ ও পদ।
উত্তরঃ শব্দ ও পদ-এর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:
(ক) ‘শব্দ’ হচ্ছে এক বা একাধিক বর্ণের অর্থপূর্ণ সংযোজন। অপরপক্ষে, যে শব্দ বা শব্দসমষ্টি সম্পূর্ণ নিজে নিজেই কোনো তর্কবাক্য বা তর্কীয় বচনের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাকে ‘পদ’ বলা হয়।
(খ) সকল পদই শব্দ, কিন্তু সকল শব্দ পদ নয়। যেমন- মানুষ হয় মরণশীল -এখানে ‘মানুষ’ এবং ‘মরণশীল’ পদ এবং সেই সঙ্গে শব্দও। কিন্তু ‘হয়’ শুধুমাত্র শব্দ কিন্তু পদ নয়।
(গ) শব্দ হল যে কোনো ধরনের বাক্যের উপাদান। যেমন- ঘোষক বাক্য, আদেশমূলক বাক্য, প্রশ্নবোধক বাক্য, বিস্ময়সূচক বাক্য, অনুরোধসূচক বাক্য, ইচ্ছামূলক বাক্য। কিন্তু পদ হল শুধুমাত্র ঘোষক বাক্যের উপাদান।
(ঘ) এক একটি ‘শব্দের’ মাধ্যমে আমরা আমাদের চিন্তা, অনুভূতি, অনুরোধ, ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, আদেশ ইত্যাদি প্রকাশ করি। কিন্তু ‘পদের’ মাধ্যমে শুধুমাত্র চিন্তা প্রকাশিত হয়।
২। বিপরীত পদ ও বিরুদ্ধ পদ।
উত্তরঃ বিপরীত পদ ও বিরুদ্ধ পদ-এর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:
(ক) বিপরীত পদ সেই দুটি পদ, যারা একই সঙ্গে একই বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে প্রযোজ্য হতে পারে না এবং তাদের বাচ্যার্থের মধ্যে সর্বাধিক পার্থক্য থাকে।
বিরুদ্ধ পদ সেই দুটি পরস্পরবিরোধী পদ, যারা একই বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে একই সঙ্গে প্রযোজ্য হয় না এবং এই দুটি পদ একত্রে সমস্ত বাচ্যার্থকে নির্দেশ করে।
(খ) দুটি বিরুদ্ধ পদ একত্রে সম্পূর্ণ বাচ্যার্থ নির্দেশ করে, কিন্তু দুটি বিপরীত পদ আংশিক বাচ্যার্থ নির্দেশ করে। ‘লাল + না-লাল’ = সব রং (রঙের সম্পূর্ণ বাচ্যার্থ)। কিন্তু লাল + নীল = দুটি রং (রঙের আংশিক বাচ্যার্থ)।
(গ) দুটি বিরুদ্ধ পদের একটি কোনো ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে মিথ্যা হলে অপরটি সত্য হয়। কিন্তু দুটি বিপরীত পদের একটি মিথ্যা হলে, অপরটি সত্য হাতে পারে, কিংবা সত্য নাও হতে পারে।
(ঘ) বিপরীত পদদুটিতে মধ্যবর্তী সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু বিরুদ্ধ পদদুটিতে মধ্যবর্তী সম্ভাবনা থাকে না।
(ঙ) দুটি বিপরীত পদ সর্বদা সদর্থক হয়, কিন্তু বিরুদ্ধ পদদ্বয়ের মধ্যে একটি সদর্থক এবং অন্যটি নঞর্থক হয়ে থাকে।
৩। লক্ষণার্থক পদ ও অলক্ষণার্থক পদ।
উত্তরঃ লক্ষণার্থক পদ ও অলক্ষণার্থক পদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:
(ক) যে পদ দ্বারা বাচ্যার্থ এবং লক্ষণার্থ দুই-ই বোঝায়, তাকে লক্ষণার্থক পদ বলে। অপরপক্ষে, যে পদ দ্বারা শুধু বাচ্যার্থ অথবা শুধু লক্ষণার্থ বোঝায়, কিন্তু বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থ উভয়কে একসঙ্গে বোঝায় না, তাকে অলক্ষণার্থক পদ বলে।
(খ) সকল সামান্য পদ (বস্তুবাচক, গুণবাচক) লক্ষণার্থক। অপরপক্ষে সকল বিশিষ্ট গুণবাচক পদ অলক্ষণার্থক।
(গ) অর্থযুক্ত বিশিষ্ট পদ হল লক্ষণার্থক। অন্যদিকে, সকল নামবাচক বিশেষ্য পদ অলক্ষণার্থক।
৪। নিরপেক্ষ পদ ও সাপেক্ষ পদ।
উত্তরঃ নিরপেক্ষ পদ ও সাপেক্ষ পদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:
(ক) যে গুণ বা যে বস্তুর স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থ আছে, অর্থাৎ যার কথা বোঝাতে গেলে অন্য কোনো বস্তু বা গুণের সাহায্য নেবার কোনো প্রয়োজন হয় না, সেই বস্তু বা গুণের নাম হল ‘নিরপেক্ষ পদ’। কিন্তু যে বস্তু বা গুণ অন্য কোন পদ-এর সাহায্য ছাড়া একান্তই অর্থহীন, সেই বস্তু বা গুণের নাম ‘সাপেক্ষ পদ’।
(খ) নিরপেক্ষ পদ নিজের অর্থ নিজেই বহন করে কিন্তু সাপেক্ষ পদ নিজের অর্থ নিজে বহন করে না।
(গ) সাপেক্ষ পদ সর্বদাই যুগলভাবে থাকে এবং একটির সম্পর্কে আর একটিকে বলা হয় ‘অন্যোন্য সাপেক্ষ’। কিন্তু নিরপেক্ষ পদ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য যুগলে থাকার প্রয়োজন হয় না।
৫। বস্তুবাচক পদ ও গুণবাচক পদ।
উত্তরঃ বস্তুবাচক পদ ও গুণবাচক পদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:
(ক) যে পদের দ্বারা কোনো বস্তু, ব্যক্তি, বস্তু বা ব্যক্তির শ্রেণিকে বোঝায় তাকে বস্তুবাচক পদ বলে। যেমন- মানুষ, টেবিল, আলমারি ইত্যাদি।
যে পদের দ্বারা শুধুমাত্র কোনো গুণ অথবা গুণের সমষ্টিমাত্র বোঝায় তাকে গুণবাচক পদ বলে।
(খ) বস্তুবাচক পদে প্রত্যেকটি গুণসহ নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায়, কিন্তু গুণবাচক পদে শুধুই গুণ বোঝায়। গুণসমষ্টিযুক্ত ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায় না।
ভাগ – ২ বিবৃতি
দুটি পদের মধ্যে কোনো সম্বন্ধের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতিকে বচন বলে। প্রতিটি বচনের তিনটি অংশ— উদ্দেশ্য— সংযোজক— বিধেয়। বচনের উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদ হলেও সংযোজক কোনো পদ নয়।
যার সম্বন্ধে কিছু বলা হয়, তাকে বলে ‘উদ্দেশ্য’। উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয়, তাকে বলে বিধেয়। আর উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে সম্বন্ধসূচক চিহ্ন অথবা শব্দটিকে বলে ‘সংযোজক’।
বিভিন্ন নীতি অনুসরণ করে বচনকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন-
নীতি | শ্রেণি |
(ক) গঠন অনুযায়ী | সরল এবং যৌগিক |
(খ) গুণ অনুযায়ী | সদর্থক এবং নঞর্থক |
(গ) পরিমাণ অনুযায়ী | সামান্য (সার্বিক) এবং বিশেষ |
(ঘ) সম্বন্ধ অনুযায়ী | নিরপেক্ষ এবং সাপেক্ষ |
(ঙ) নিশ্চয়তা অনুযায়ী | অনিবার্য (বিবরণাত্মক) এবং সম্ভাব্য |
(চ) অর্থ বা তাৎপর্য অনুযায়ী | শাব্দিক বা বিশ্লেষণাত্মক এবং যথার্থ বা সংশ্লেষণাত্মক |
এছাড়াও আরও এক ধরনের বচন আছে। তাকে বলে যথার্থ বচন। যে বচনে বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদের লক্ষণার্থের অন্তর্গত থাকে না এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু নতুন তথ্য দেয়, তাকে যথার্থ বচন বলে।
গুণ এবং পরিমাণের সংযুক্ত বা মিশ্রনীতি অনুসরণ করে বচনের চতুবর্গীয় শ্রেণিবিভাজনও করা হয়—
(ক) সামান্য সদর্থক।
(খ) সামান্য নঞর্থক।
(গ) বিশেষ সদর্থক।
(ঘ) বিশেষ নঞর্থক।
এই চার ধরনের বচনের জন্য যথাক্রমে A, E, I এবং O—এই চারটি প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন-
বচন | প্রতীক চিহ্ন |
(ক) সামান্য সদর্থক | A |
(খ) সামান্য নঞর্থক | E |
(গ) বিশেষ সদর্থক | I |
(ঘ) বিশেষ নঞর্থক | O |
অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। বচনের অংশগুলি কী কী?
উত্তরঃ উদ্দেশ্য, সংযোজক ও বিধেয়।
প্রশ্ন ২। একটি চতুর্বর্গীয় বচনের কয়টি অংশ থাকে?
উত্তরঃ চারটি।
প্রশ্ন ৩। চতুবর্গীয় বচনের অংশগুলি উল্লেখ করো।
উত্তরঃ পরিমাণ চিহ্ন, উদ্দেশ্য, সংযোজক ও বিধেয় পদ।
প্রশ্ন ৪। সার্বিক সদর্থক বচনের চিহ্ন কী?
উত্তরঃ ‘A’
প্রশ্ন ৫। সার্বিক নঞর্থক বচনের চিহ্ন কী?
উত্তরঃ ‘E’
প্রশ্ন ৬। বিশেষ সদর্থক বচনের চিহ্ন কী?
উত্তরঃ ‘I’
প্রশ্ন ৭। বিশেষ নঞর্থক বচনের চিহ্ন কী?
উত্তরঃ ‘O’
প্রশ্ন ৮। সংযোজক সবসময় কোন্ কালের রূপ হয়?
উত্তরঃ বর্তমান কালের।
প্রশ্ন ৯। সংযোজক কি সর্বদা সদর্থক হয়?
উত্তরঃ না, সংযোজক সদর্থক এবং নঞর্থক দু-ই রকমেরই হতে পারে।
প্রশ্ন ১০। ‘বচন মাত্রই সত্য কিংবা মিথ্যা হয়’- উক্তিটি কি সত্য?
উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্তিটি সত্য।
প্রশ্ন ১১। ‘বাক্য মাত্রই সত্য কিংবা মিথ্যা হয়’- উক্তিটি কি সত্য?
উত্তরঃ না, উক্তিটি মিথ্যা।
প্রশ্ন ১২। ‘প্রতিটি বচন বাক্য, কিন্তু প্রতিটি বাক্য বচন নয়’- উক্তিটি কি সত্য?
উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্তিটি সত্য।
প্রশ্ন ১৩। ‘প্রতিটি বাক্য বচন, কিন্তু প্রতিটি বচন বাক্য নয়’- উক্তিটি কি সত্য?
উত্তরঃ না, উক্তিটি সত্য নয়।
প্রশ্ন ১৪। কোন্ ধরনের বাক্য বচন হিসেবে তর্কবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়?
উত্তরঃ একমাত্র ঘোষক বাক্য (Assertive Sentence) তর্কীয় বচন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন ১৫। কীসের উপর বচনের গুণ নির্ভর করে?
উত্তরঃ বচনের গুণ, অর্থাৎ বচন সদর্থক না নঞর্থক, তা নির্ভর করে সংযোজকের প্রকৃতির উপর।
প্রশ্ন ১৬। কোনো বচনের পরিমাণ কীসের উপর নির্ভর করে?
উত্তরঃ বচনের পরিমাণ উদ্দেশ্যের সঙ্গে যুক্ত পরিমাণসূচক চিহ্নের উপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন ১৭। সকল্পক বা প্রাকল্পিক বচনের গুণ কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?
উত্তরঃ সকল্পক বচনের ‘অনুবর্তী বা পরবর্তী বা অনুগ’ অংশটির গুণ অনুসারে সমগ্র বচনটির গুণ নির্ধারণ করা হয়।
প্রশ্ন ১৮। বিকল্পক বা বৈকল্পিক বচন কি সর্বদা সদর্থক হয়ে থাকে?
উত্তরঃ হ্যাঁ।
প্রশ্ন ১৯। বিকল্প কী?
উত্তরঃ বৈকল্পিক বচনের উপাদান বচনগুলোকে বিকল্প বলে।
প্রশ্ন ২০। সকল্পক বচনের কয়টি অংশ এবং কী কী?
উত্তরঃ সকল্পক বচনের দুটি অংশ। যথা- পূর্ববর্তী অংশ এবং পরবর্তী অংশ।
প্রশ্ন ২১। কীভাবে একটি সকল্পক বচনের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়?
উত্তরঃ সকল্পক বচনের পরিমাণ পূর্ববর্তী অংশের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন ২২। গুণ অনুযায়ী বিকল্পক বচন সদর্থক না নঞর্থক?
উত্তরঃ সদর্থক।
প্রশ্ন ২৩। যৌগিক বচন কয় রকমের এবং কী কী?
উত্তরঃ যৌগিক বচন দুই প্রকার। যথা-
(ক) যৌগিক সদর্থক।
(খ) যৌগিক নঞর্থক।
প্রশ্ন ২৪। সরল বচনে কয়টি উদ্দেশ্য এবং কয়টি বিধেয় থাকে?
উত্তরঃ একটি উদ্দেশ্য ও একটি বিধেয় থাকে।
প্রশ্ন ২৫। ব্যাখ্যানির্ভর বচনের কয়টি রূপ? কী কী?
উত্তরঃ দুটি রূপ। ব্যতিরেকী ও ব্যতীতিক।
শুদ্ধ উত্তর দাও:
১। ভাষায় প্রকাশিত অবধারণকে শব্দ/পদ/বচন বলে।
উত্তরঃ বচন।
২। একটি বচনে একটি/দুইটি/তিনটি পদ থাকে।
উত্তরঃ দুইটি।
৩। একটি বচনে একটি/দুইটি/তিনটি অংশ থাকে।
উত্তরঃ তিনটি।
৪। একটি বচনে যার সম্পর্কে কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য/বিধেয় বলে।
উত্তরঃ উদ্দেশ্য।
৫। কোন্ বচনকে আংশিক বললে তার গুণ/পরিমাণকে বোঝায়।
উত্তরঃ পরিমাণকে।
৬। বচনের সংযোজক একটি শব্দ/পদ/এর কোনোটাই নয়।
উত্তরঃ শব্দ।
৭। বচনের সংযোজক বর্তমান/অতীত/ভবিষ্যৎ কালে থাকে।
উত্তরঃ বর্তমান।
৮। কোনো বচন সার্বিক না বিশেষ, সেটা বোঝা যায় তার গুণ/পরিমাণ থেকে।
উত্তরঃ পরিমাণ।
৯। সংযোজক সর্বদা সদর্থক/নঞর্থক/সদর্থক অথবা নঞর্থক থাকে।
উত্তরঃ সদর্থক অথবা নঞর্থক থাকে।
১০। নিরপেক্ষ বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের সম্বন্ধ শর্তাধীন/ শর্তনিরপেক্ষ।
উত্তরঃ শর্তনিরপেক্ষ।
১১। সাপেক্ষ বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের সম্বন্ধ শর্তাধীন/ শর্তনিরপেক্ষ।
উত্তরঃ শর্তাধীন।
১২। গুণ ও পরিমাণের মিশ্রপদ্ধতি অনুযায়ী বচনের শ্রেণিবিভাগ করলে চার/ পাঁচ/ছয় রকমের বচন পাওয়া যায়।
উত্তরঃ চার।
১৩। I বচন সার্বিক সদর্থক/বিশেষ সদর্থক।
উত্তরঃ বিশেষ সদর্থক।
১৪। A বচন সার্বিক সদর্থক/বিশেষ নঞর্থক।
উত্তরঃ সার্বিক সদর্থক।
১৫। E বচন সার্বিক নঞর্থক/বিশেষ নঞর্থক।
উত্তরঃ সার্বিক নঞর্থক।
১৬। O বচন বিশেষ সদর্থক/বিশেষ নঞর্থক।
উত্তরঃ বিশেষ নঞর্থক।
১৭। বচনের গুণ নির্ধারিত হয় উদ্দেশ্য/বিধেয়/সংযোজক দ্বারা।
উত্তরঃ সংযোজক দ্বারা।
১৮। নিরপেক্ষ /সাপেক্ষ বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদের সম্বন্ধ শর্তহীন।
উত্তরঃ নিরপেক্ষ।
১৯। গুণ/সম্বন্ধ/নিশ্চয়তা অনুযায়ী বচন নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ হয়।
উত্তরঃ সম্বন্ধ।
২০। গুণ/সম্বন্ধ/পরিমাণ অনুযায়ী বচন সার্বিক ও বিশেষ হয়।
উত্তরঃ পরিমাণ।
২১। গুণ অনুযায়ী বচন সার্বিক ও বিশেষ/সদর্থক ও নঞর্থক/নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ হয়।
উত্তরঃ সদর্থক ও নঞর্থক।
২২। অবধারণ একটি মানসিক প্রক্রিয়া/মানসিক প্রক্রিয়া নয়।
উত্তরঃ মানসিক প্রক্রিয়া।
২৩। বচনের সংযোজক একটি পদ/একটি গুণ/একটি উদ্দেশ্য/ এগুলোর কোনোটাই নয়।
উত্তরঃ এগুলোর কোনোটাই নয়।
২৪। ‘সকল কুকুর হয় জন্তু’-এটি সদর্থক/আংশিক/বিকল্পক বচন।
উত্তরঃ সদর্থক।
২৫। সকল বিশিষ্ট বচন সার্বিক /আংশিক।
উত্তরঃ আংশিক।
২৬। বচন একটি শব্দ/বাক্যাংশ/ কোনোটাই নয়।
উত্তরঃ বাক্যাংশ।
২৭। সামান্য বচনে উদ্দেশ্যের সমগ্র বাচ্যার্থ/লক্ষণার্থ উল্লেখ করা হয়।
উত্তরঃ বাচ্যার্থ।
২৮। সামান্য ও বিশেষ বচন গুণের/পরিমাণের বিভাজন।
উত্তরঃ পরিমাণের।
২৯। সদর্থক/নঞর্থক বচনে বিধেয় পদে উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়।
উত্তরঃ সদর্থক।
৩০। সামান্য/বিশেষ বচনে বিধেয় পদকে সমগ্র উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয়।
উত্তরঃ সামান্য।
শূন্যস্থান পূর্ণ করো:
১। মিশ্রনীতি অনুসারে বচনকে ______ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
উত্তরঃ চার।
২। বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সংযোগকারী নির্দেশক চিহ্নটিকে ______ বলে।
উত্তরঃ সংযোজক।
৩। সল্পক বচনের ______ অংশ।
উত্তরঃ দুইটি।
৪। সাপেক্ষ বচনকে ______ এবং ______ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
উত্তরঃ সকল্পক, বিকল্পক।
৫। গুণ অনুযায়ী বচন ______ এবং ______ হয়।
উত্তরঃ সদর্থক, নঞর্থক।
৬। পরিমাণ অনুযায়ী বচন ______ এবং ______ হয়।
উত্তরঃ সামান্য, বিশেষ।
৭। একটি বচনে ______ অংশ থাকে।
উত্তরঃ তিনটি।
৮। একটি চতুর্বর্গীয় বচনে ______ অংশ থাকে।
উত্তরঃ চারটি।
৯। কেবল ______ বাক্য বচন হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
উত্তরঃ ঘোষক।
১০। বচনের কোনো ______ বৈশিষ্ট্য নেই।
উত্তরঃ ভাষাগত।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। বচন বা বিবৃতি (Proposition) কাকে বলে?
উত্তরঃ দুটি পদের মধ্যে কোনো সম্বন্ধের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতিকে ‘বচন’ বলে। বচন উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের অভ্যন্তরীণ সম্বন্ধ। বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয় দুটি পদ থাকে এবং এই দুটি পদের মধ্যে সম্বন্ধসূচক শব্দও থাকে। অর্থাৎ প্রতিটি বচনে তিনটি অংশ থাকে, যথা-
(ক) উদ্দেশ্য পদ।
(খ) বিধেয় পদ। এবং
(গ) সংযোজক।
বচন মাত্রই সত্য কিংবা মিথ্যা হয়।
প্রশ্ন ২। বচনের দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ বচনের দুটি উদাহরণ নিম্নরূপ-
(ক) ‘ফুল হয় সুন্দর’- এটি একটি তর্কীয় বচন বা তর্কবাক্য। এখানে ‘ফুল’ হল ‘উদ্দেশ্য পদ’, ‘সুন্দর’ হল ‘বিধেয় পদ’ এবং ‘হয়’ হল সংযোজক।
(খ) ‘মানুষ নয় অমর’- এই বচনটিতে ‘মানুষ’ হল ‘উদ্দেশ্য পদ’, ‘অমর’ হল বিধেয় পদ এবং ‘নয়’ হল সংযোজক। প্রথম উদাহরণ-
(ক) এ উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে স্বীকৃতি সম্বন্ধ। এবং দ্বিতীয় উদাহরণ-
(খ) এ উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে অস্বীকৃতি সম্বন্ধ রয়েছে।
প্রশ্ন ৩। উদ্দেশ্য (Subject) কাকে বলে?
উত্তরঃ একটি তর্কবাক্যে যে পদ সম্বন্ধে কিছু বলা হয়, সেই পদের নাম হল উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন ৪। বিধেয় (Predicate) বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ একটি বচনে উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয়, সেই পদের নাম হল বিধেয়।
প্রশ্ন ৫। সংযোজক (Capula) কী?
উত্তরঃ বচনের উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদের অভ্যন্তরীণ সম্বন্ধসূচক শব্দকে সংযোজক বলে।
প্রশ্ন ৬। গুণ (Quality) অনুসারে বচন কয়প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ গুণ অনুসারে শর্তহীন বা নিরপেক্ষ বচনকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা-
(ক) সদর্থক বচন (affirmative) ও
(খ) নঞর্থক বচন (negative)
প্রশ্ন ৭। সদর্থক (Affirmative) বচন কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বচনে বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য পদের ক্ষেত্রে স্বীকৃত হয়, অর্থাৎ বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে কিছু স্বীকার করে, তাকে সদর্থক বচন বলে। যথা- ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’। এখানে বিধেয় পদ ‘মরণশীল’ উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ’-এর ক্ষেত্রে স্বীকৃত হয়েছে।
প্রশ্ন ৮। নঞর্থক (Negative) বচন কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বচনে বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য পদের সম্পর্কে অস্বীকৃত হয়, অর্থাৎ বিধের পদটি উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে কিছু অস্বীকার করে, তাকে নঞর্থক বচন বলে। যথা- ‘কোনো মানুষ নয় অমর’-এখানে বিধেয় ‘অমর’ পদটি উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ’-এর সম্পর্কে অস্বীকৃত হয়েছে।
প্রশ্ন ৯। পরিমাণ (Quantity) অনুসারে বচন কয়প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ পরিমাণ অনুসারে শর্তহীন বা নিরপেক্ষ বচন দুই প্রকারের হয়। যথা-
(ক) সামান্য বা সার্বিক বচন (universal) ও
(খ) বিশেষ বচন (particular)
প্রশ্ন ১০। সামান্য বা সার্বিক (Universal) বচন বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ যে তর্কীয় বচনে বিধেয় পদটি সমগ্র উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করে, তাঁকে ‘সামান্য বা সার্বিক (universal) বচন’ বলে। যেমন-
(ক) সকল মানুষ হয় মরণশীল।
(খ) কোনো মানুষ নয় অমর।
প্রথম উদাহরণ-
(ক)-এ বিধেয় পদ ‘মরণশীল’ সমগ্র উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষকে স্বীকার করেছে।
দ্বিতীয় উদাহরণ-
(খ)-এ বিধেয় পদ ‘অমর’ সমগ্র উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ কে অস্বীকার করেছে।
প্রশ্ন ১১। বিশেষ (Particular) বচন বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ যে তর্কবাক্যে বিধেয় পদটি উদ্দেশ্যের কিছু অংশ সম্পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করে, সেই বচনকে ‘বিশেষ বচন’ বলে। যথা-
(ক) কোনো কোনো মানুষ হয় জ্ঞানী।
(খ) কোনো কোনো মানুষ নয় জ্ঞানী।
প্রথম উদাহরণ-
(ক)-এ বিধেয় পদ ‘জ্ঞানী’ উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ’-এর কিছু অংশের ক্ষেত্রে স্বীকৃত হয়েছে।
দ্বিতীয় উদাহরণ-
(খ)-এ বিধেয়’ পদ ‘জ্ঞানী’ উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ’-এর কিছু অংশ সম্পর্কে অস্বীকৃত হয়েছে।
প্রশ্ন ১২। সম্বন্ধ (Relation) অনুসারে বচন কয়প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ উদ্দেশ্য ও বিদেয় পদের মধ্যে সম্বন্ধের ভিত্তিতে বচনকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা-
(ক) নিরপেক্ষ বা শর্তহীন বচন এবং (categorical)
(খ) সাপেক্ষ বা শর্তাধীন বচন (conditional)
প্রশ্ন ১৩। নিরপেক্ষ (Categorical) বচন কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্বন্ধ কোনো শর্তের ওপর নির্ভর করে না, সেই বচনকে ‘নিরপেক্ষ বচন’ বলে। এ জাতীয় বচনের সত্যতা কোনো শর্তসাপেক্ষ নয়। যেমন-
(ক) সকল মানুষ হয় মরণশীল।
(খ) কোনো মানুষ নয় পূর্ণ।
উদাহরণ- (ক) এবং উদাহরণ (খ) এ উদ্দেশ্যের সঙ্গে বিধেয় পদের সম্বন্ধ কোনো শর্তাধীন নয়।
প্রশ্ন ১৪। সাপেক্ষ (Conditional) বা শর্তাধীন বচন বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ যে বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্বন্ধ কোনো শর্তের ওপর নির্ভর করে, সেই বচনকে সাপেক্ষ বচন বলা হয়। সাপেক্ষ বচনের সত্যতা বা অসত্যতা শর্তসাপেক্ষ। যেমন—
(ক) যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে মাটি ভেজে।
(খ) হয় সে আসবে, নয় আমি যাব।
প্রশ্ন ১৫। সাপেক্ষ (Conditional) বচন কয়প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ সাপেক্ষ বচন দুই প্রকার। যথা—
(ক) সকল্পক বা প্রাকল্পিক বচন। ও
(খ) বিকল্পক বচন বা বৈকল্পিক বচন।
প্রশ্ন ১৬। সকল্পক বচন কাকে বলে?
উত্তরঃ যে সাপেক্ষ বচনে শর্তটি ‘যদি … তাহলে …’ জাতীয় শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, তাকে সকল্পক বা প্রাকল্পিক বচন বলে। যথা—
‘যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে মাটি ভেজে।’
প্রশ্ন ১৭। বিকল্পক বা বৈকল্পিক বচন বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ যে সাপেক্ষ বচনে শর্তটিকে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না করে দুটি বিকল্প বচন ব্যবহার করা হয়, তাকে ‘বিকল্পক বা বৈকল্পিক বচন’ বলে। এই বচনে ‘হয় …. নয় …’ শর্তটি আরোপ করা হয়। যথা—’হয় সে ভালো, নয় সে ধূর্ত’। বিকল্পক বচন সবসময়ই সদর্থক হয়ে থাকে। বিকল্পক বচনের ‘হয়’ এবং ‘নয়’কে বিকল্প বলে।
প্রশ্ন ১৮। গঠন (Composition or Structure) অনুযায়ী বচন কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ গঠন অনুযায়ী বচন দুই রকমের হয়। যথা—
(ক) সরল বচন (simple)। এবং
(খ) যৌগিক বচন (compound)।
প্রশ্ন ১৯। সরল বচন কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বচনে একটিমাত্র উক্তি থাকে, তাকে সরল বচন বলে। যথা— সকল মানুষ হয় মরণশীল।
প্রশ্ন ২০। যৌগিক বচন কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বচনে একাধিক উক্তি থাকে, তাকে যৌগিক বচন বলে। যেমন- যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে মাটি ভেজে।
প্রশ্ন ২১। নিশ্চয়তা (Modality) অনুযায়ী বচন কয়প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ নিশ্চয়তা অনুযায়ী বচন তিন প্রকারের। যথা—
(ক) অনিবার্য (necessary) বচন।
(খ) বিবরণাত্মক (assertory) বচন। ও
(গ) সম্ভাব্য বচন (problematic)।
প্রশ্ন ২২। অনিবার্য (necessary) বচন কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বচনে নিশ্চয়তার মাত্রা সবথেকে বেশি থাকে তাকে অনিবার্য বচন বলে। যেমন— রামকে নিশ্চয়ই যেতে হবে, দুই আর দুই অবশ্যই চার হয় ইত্যাদি।
প্রশ্ন ২৩। বিবরণাত্মক ( assertory) বচন কাকে বলে?
উত্তরঃ বিবরণাত্মক বচন হল সেই বচন, যাতে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদের সম্পর্ক অভিজ্ঞতা ভিত্তিক থাকে এবং অজ্ঞতার সীমাতেই আবদ্ধ থাকে। যেমন— ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’, ‘কোনো কোনো মানুষ হয় সৎ’ ইত্যাদি।
প্রশ্ন ২৪। সম্ভাব্য (problematic) বচন কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদের মধ্যকার সম্বন্ধ বস্তুর প্রকৃত স্বরূপ সম্বন্ধে আংশিক জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে সম্ভাব্য বচন বলে। এর ফলে এই বচন সম্ভাব্য হয় মাত্র। যেমন ‘সে হয়তো ভালো’, ‘রাম সম্ভবত সৎ’ ইত্যাদি।
প্রশ্ন ২৫। অর্থ ও তাৎপর্য (Import or Significance) অনুযায়ী বচনকে কয় শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে এবং কী কী?
উত্তরঃ অর্থ ও তাৎপর্য অনুযায়ী বচনকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যথা—
(ক) শাব্দিক বচন বা বিশ্লেষক বচন।
(খ) যথার্থ বচন বা সংশ্লেষক বচন।
প্রশ্ন ২৬। শাব্দিক (Verbal) বচন কাকে বলে?
উত্তরঃ শাব্দিক বা বিশ্লেষক বচন হচ্ছে সেই বচন যার বিধেয় উদ্দেশ্য পদের সমগ্র বা আংশিক লক্ষণার্থ উল্লেখ করে। যেমন— সকল মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব।
এই জাতীয় বচনকে বিশ্লেষণাত্মক বচন, ব্যাখ্যামূলক বচন, মৌলিক বচন বলা হয়। বিশ্লেষক বলা হয় কারণ, এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যকে বিশ্লেষণ করলেই বিধেয়কে পাওয়া সম্ভব।
২৭। যথার্থ (Real) বচন কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বচনে বিধেয় পদ উদ্দেশ্যের লক্ষণার্থের অন্তর্গত থাকে না এবং বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে নতুন তথ্য দেয়, তাকে যথার্থ বা সংশ্লেষক বচন বলে। যথা— ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব’, ‘গোরু হল গৃহপালিত জীব’ ইত্যাদি ।
প্রশ্ন ২৮। বিশিষ্ট বচন কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বচনের উদ্দেশ্য একটি বিশিষ্ট পদ, তাকে ‘বিশিষ্ট বচন’ বলে। যেমন— সক্রেটিস হন একজন দার্শনিক।
প্রশ্ন ২৯। ব্যতিরেকী বচনে কী ধরনের শব্দ থাকে? উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বোঝাও।
উত্তরঃ ব্যতিরেকী বচনে ‘মাত্র’, ‘কেবলমাত্র’, ‘একমাত্র’ জাতীয় শব্দ থাকে। যেমন- কেবল জ্ঞানী ব্যক্তিরাই হন দার্শনিক। এই বচন দুটি বচনকে প্রকাশ করে। যেমন-
(ক) কোনো কোনো জ্ঞানী ব্যক্তি হন দার্শনিক।
(খ) কোনো অ-জ্ঞানী ব্যক্তিরা নয় দার্শনিক।
প্রশ্ন ৩০। কী জাতীয় শব্দ থাকলে আমার সেই বচনকে ব্যতীতিক বচন বলব? উদাহরণের সাহায্যে বোঝাও।
উত্তরঃ ‘ব্যতীত’, ‘ছাড়া’ জাতীয় শব্দ থাকলে আমরা সেই বচনকে ব্যতীতিক বচন বলব। যেমন— পারদ ছাড়া সকল ধাতুই কঠিন।
এই বচনে দুটি বচনের সংযোগ ঘটেছে।
(ক) সকল ধাতুই কঠিন।
(খ) পারদ কঠিন নয়।
রচনাভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। বচন বলতে কী বোঝো? বচনের গঠন সম্পর্কে উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উত্তরঃ দুটি পদের মধ্যে কোনো সম্বন্ধের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতিকে বচন বলে। বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় দুটি পদ থাকে এবং এই দুটি পদের মধ্যে সম্বন্ধসূচক শব্দও থাকে। কাজেই প্রতিটি বচনে তিনটি অংশ থাকে; যথা—
(ক) উদ্দেশ্য পদ।
(খ) বিধেয় পদ। ও
(গ) সংযোজক।
বচন মাত্রই সত্য কিংবা মিথ্যা হয়।
তর্কবাক্য বা তর্কীয় বচনে যে পদ সম্বন্ধে কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য’ বলে; আর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয়, তাকে ‘বিধেয়’ বলে। বচনের উদ্দেশ্য পদ ও বিধেয় পদের মধ্যে সম্বন্ধসূচক চিহ্ন বা শব্দটিকে ‘সংযোজক’ বলে। বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় দুটি পদ, কিন্তু সংযোজক কোনো পদ নয়। সংযোজক সব সময় ‘ভূ’ ধাতুর বর্তমানকালের রূপে থাকে এবং তা সদর্থক ও নঞর্থক দুই-ই হতে পারে।
উদাহরণ:
(ক) ‘মানুষ হয় মরণশীল’। এই বচনটিতে ‘মানুষ’ উদ্দেশ্য পদ। কেননা ‘মানুষ’ সম্পর্কে কিছু বলা হয়েছে। ‘মরণশীল’ বিধেয় পদ, কারণ ‘মরণশীল’ কথাটি ‘মানুষ’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। ‘হয়’ ক্রিয়াপদটি সংযোজক, কারণ এই শব্দটি ‘মানুষ’ ও ‘মরণশীল’-এর মধ্যে সম্বন্ধ বোঝাচ্ছে।
(খ) ‘মানুষ নয় অমর’– এই বচনটিতে ‘মানুষ’ হল উদ্দেশ্য পদ, ‘অমর’ হল বিধেয় পদ এবং ‘নয়’ হল সংযোজক।
বচনের বিন্যাস: উদ্দেশ্য – সংযোজক— বিধেয়’ এই আকারে বচন গঠন করা হয়।
প্রথম উদাহরণ—
(ক) এ উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে স্বীকৃতি সম্বন্ধ। এবং
দ্বিতীয় উদাহরণ—
(খ) এ উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে অস্বীকৃতি সম্বন্ধ রয়েছে। অর্থাৎ, সদর্থক বচনে স্বীকৃতি সম্বন্ধ এবং নঞর্থক বচনে অস্বীকৃতি সম্বন্ধ থাকে এবং সংযোজক এই সম্বন্ধকে প্রকাশ করে।
প্রশ্ন ২। সংযোজকের প্রকৃতি সম্বন্ধে আলোচনা করো।
উত্তরঃ বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যকার সম্বন্ধসূচক শব্দ বা চিহ্নকে সংযোজক বলে। সংযোজকের প্রকৃতি নিম্নরূপ:
(ক) সংযোজক কোনো পদ নয়, শুধুমাত্র শব্দ।
(খ) পরম্পরাগত যুক্তিবিজ্ঞানে যে বচন ব্যবহার করা হয়, তাতে সংযোজকটিকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়।
(গ) সংযোজক সবসময় ‘হওয়া’ ক্রিয়া (To be verb)-র বর্তমানকালের রূপ হবে, অর্থাৎ ‘ভূ’ ধাতুর রূপ হতেই হবে।
(ঘ) সংযোজক সদর্থক, নঞর্থক দুই রকমেরই হয়। বচনে যদি বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদের সম্পর্কে স্বীকৃত হয়, তাহলে সংযোজক সদর্থক হয়। কিন্তু বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদের ক্ষেত্রে অস্বীকৃত হলে, সংযোজকটি নঞর্থক হয়।
(ঙ) সংযোজক সদর্থক হলে এবং বিধেয়ের সঙ্গে নঞর্থক চিহ্ন যুক্ত থাকলে বচনটি সদর্থক হয়।
(চ) সংযোজক নিম্নোক্ত বিভিন্ন মূর্তি ধারণ করতে পারে— ‘হয়’, ‘নয়’, ‘হলুম’, ‘হলুম না’, ‘হই’, ‘হই না’, ‘হলেন’, হলেন না’, ‘হন’, ‘হন না’, ‘হও’, ‘হও না’, ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৩। সংযোজকের প্রকৃতি সম্বন্ধে তর্কবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন মতবাদগুলি উল্লেখ করো। সংযোজক কী সর্বদাই সদর্থক হবে?
উত্তরঃ সংযোজকের স্বরূপ বা প্রকৃতি ঠিক কীরকম হওয়া উচিত এ বিষয়ে কিছু মতভেদ আছে। মতভেদের কেন্দ্রে প্রধানত দুটি প্রশ্ন:
(ক) সংযোজক কি শুধুমাত্র ‘ভূ’ ধাতুর লট বিভক্তি, অর্থাৎ বর্তমানের কালের রূপ হবে?
(ক) প্রথম প্রশ্নের উত্তরে হ্যামিলটন্, ম্যানসেল, ফাওলার প্রমুখ তর্কবিজ্ঞানীরা বলেন যে, সংযোজক সবসময় ‘ভূ’ ধাতুর বর্তমানকালের রূপ হবে। কিন্তু জে. এস. মিল বলেন যে, সংযোজক অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তিনটিকালেই হতে পারে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, নিগমনাত্মক তর্কবিজ্ঞানে সময়ের বিষয়টি আলোচ্য বা বিবেচ্য নয়। সংযোজক সময়-বর্জিত-সম্বন্ধ প্রকাশ করে। বচনে বিধেয় পদে কাল বা সময়সূচক শব্দ থাকে। সংযোজকটি নিছক সম্বন্ধ নির্ণয়কারী সংকেত বলেই বরাবর এটি ‘ভূ’ ধাতুর ‘লট্’ বিভক্তিতে থাকা উচিত।
(খ) দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে হবস এবং অন্যান্য তর্কবিজ্ঞানীরা বলেন, সংযোজক সবসময়েই সদর্থক হবে। অর্থাৎ সংযোজক ‘হয়’ রূপে ব্যবহৃত হবে, ‘নয়’ রূপে নয়।
এই বক্তব্যটি সমর্থনযোগ্য নয়, কারণ বচনে বিধেয় পদ উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে স্বীকৃত বা অস্বীকৃত হয়। এই স্বীকৃত বা অস্বীকৃতি প্রত্যক্ষভাবে প্রকাশ পায় সংযোজকের মাধ্যমে। অতএব, সংযোজক সদর্থক ও নঞর্থক দুই রূপেই থাকতে পারে।
প্রশ্ন ৪। ব্যাকরণসম্মত বাক্য এবং যুক্তিবিজ্ঞানের বচনের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
অথবা,
‘প্রতিটি বচন বাক্য, কিন্তু প্রতিটি বাক্য বচন নয়। ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ যুক্তিবিজ্ঞানের বচন এবং ব্যাকরণের বাক্যের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। যেমন—
(ক) বচনের তিনটি অংশ থাকে—উদ্দেশ্য, সংযোজক এবং বিধেয়। কিন্তু বাক্যের দুটি অংশ—উদ্দেশ্য এবং বিধেয়।
(খ) বচনে গুণ ও পরিমাণ স্পষ্ট করে লিখতে হয়। কিন্তু বাক্যে তার প্রয়োজন হয় না।
(গ) বচন সবসময় বর্তমানকালে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাক্য অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ যে-কোনো কালেই ব্যবহৃত হতে পারে।
(ঘ) কেবল ঘোষক বাক্য বচন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ব্যাকরণে ঘোষক বাক্য ছাড়াও আদেশমূলক বাক্য, প্রশ্নবোধক বাক্য, বিস্ময়সূচক বাক্য, অনুরোধসূচক বাক্য, ইচ্ছামূলক বাক্যের ব্যবহার হয়।
(ঙ) বচন মাত্রেই সত্য কিংবা মিথ্যা হয়। কিন্তু বাক্যমাত্রই সত্য কিংবা মিথ্যা বলে গণ্য হয় না, শুধু ঘোষক বাক্যই সত্য কিংবা মিথ্যা হয়।
(চ) যুক্তিবিজ্ঞানের বচনের নির্দিষ্ট রূপ হল— ‘উদ্দেশ্য— সংযোজক— বিধেয়’ ব্যাকরণের অধিকাংশ বাক্যকে নিয়ে তর্কবিদ্যায় আলোচনা করার আগে বাক্যটিকে তর্কীয় বচনে রূপান্তরিত করতে হয়।
অতএব বচন এবং বাক্য সমার্থক নয়। প্রতিটি বচন বাক্য, কিন্তু প্রতিটি বাক্য বচন নয়। যদিও প্রত্যেক তর্কীয় বচন ব্যাকরণের ‘বাক্য’ হতে বাধ্য, তবুও ব্যাকরণের প্রত্যেক বাক্য ‘তর্কীয় বচন’ হতে বাধ্য নয়।