Class 11 Logic and Philosophy Chapter 2 বচন

Class 11 Logic and Philosophy Chapter 2 বচন answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Logic and Philosophy Chapter 2 বচন and select needs one.

Class 11 Logic and Philosophy Chapter 2 বচন

Join Telegram channel

Table of Contents

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Logic and Philosophy Chapter 2 বচন Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

বচন

প্রথম খণ্ড

ভাগ – ১ পদ

পাঠ: ২

 অতি- সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘পদ’ বা ‘Term’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?

উত্তরঃ ‘পদ’ বা ‘Term’ শব্দের উৎপত্তি লাতিন ‘Terminus’ শব্দ থেকে।

প্রশ্ন ২। ‘Terminus’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ ‘Terminus’ শব্দের অর্থ হল (boundary or extreme) সীমা। কারণ Term বা পদ সর্বদাই তর্কবাক্যের দুটি প্রান্তে বা সীমায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

প্রশ্ন ৩। একটি বচনে কয়টি পদ থাকে?

উত্তরঃ দুইটি।

প্রশ্ন ৪। একটি তর্কবাক্যে কয়টি অংশ থাকে?

উত্তরঃ তিনটি।

প্রশ্ন ৫। তর্কীয় বচনের উদ্দেশ্য কি একটি পদ?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৬। তর্কীয় বচনের বিধেয় কি একটি পদ?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৭। তর্কবাক্যের বা তর্কবিজ্ঞানসম্মত বচনের সংযোজকটি কি পদ? 

উত্তরঃ না, সংযোজক শুধুমাত্র শব্দ, কিন্তু পদ নয়।

প্রশ্ন ৮। সকল পদই শব্দ, কিন্তু শব্দ পদ নয়।’ উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্তিটি সত্য।

প্রশ্ন ৯। নামবাচক বিশেষ্য পদগুলি লক্ষণার্থক না অলক্ষণার্থক? 

উত্তরঃ অলক্ষণার্থক। 

প্রশ্ন ১০। গুণবাচক পদগুলি লক্ষণার্থক না অলক্ষণার্থক?

উত্তরঃ গুণবাচক সামান্য পদগুলি লক্ষণার্থক, কিন্তু গুণবাচক বিশিষ্ট পদগুলি অলক্ষণার্থক।

প্রশ্ন ১১। ‘মিলের মতে নামবাচক বিশেষ্য লক্ষণার্থক নয়’- উক্তিটি সত্য?  

অথবা,

মিলের মতে, ‘স্বকীয় নাম হল অ-জাত্যর্থক’- উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ১২। ‘ব্যাহতার্থক পদের মধ্যে সদর্থক, নঞর্থক দুই উপাদানই আছে’- এই কথাটিকে সত্য বলে মনে কর কি?

উত্তরঃ হ্যাঁ, কথাটি সত্য।

শুদ্ধ উত্তর দাও:

১। পদের ব্যাচার্থ বস্তুর গুণ/সংখ্যা বোঝায়৷

 উত্তরঃ সংখ্যা।

২। পদের লক্ষণার্থ বস্তুর গুণ/বস্তুকে বোঝায়। 

উত্তরঃ গুণ।

৩। অলক্ষণার্থক পদের কেবল বাচ্যার্থ আছে/লক্ষণার্থ আছে/বাচ্যার্থ নাই/লক্ষণার্থ নাই/ বাচ্যার্থ বা লক্ষণার্থ আছে।

উত্তরঃ বাচ্যার্থ বা লক্ষণার্থ আছে।

৪। একটি লক্ষণার্থক পদের বাচ্যার্থ/লক্ষণার্থ/বাচ্যার্থ এবং লক্ষণার্থ উভয়ই থাকে। 

উত্তরঃ বাচ্যার্থ এবং লক্ষণার্থ উভয়ই থাকে।

৫। কেবল বাচ্যার্থ থাকা পদকে লক্ষণার্থক/অলক্ষণার্থক পদ বলে। 

উত্তরঃ অলক্ষণার্থক পদ।

৬। কেবল লক্ষণার্থ থাকা পদকে লক্ষণার্থক/অলক্ষণার্থক পদ বলে। 

উত্তরঃ অলক্ষণার্থক পদ।

৭। পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের পরিবর্তন একমুখী/বিপরীতমুখী।

উত্তরঃ বিপরীতমুখী।

৮। পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের হ্রাসবৃদ্ধি নতুন পদের জন্ম দেয় / দেয় না।

উত্তরঃ জন্ম দেয়।

৯। অলক্ষণার্থক পদের বাচ্যার্থ/লক্ষণার্থ/এদের কেবল একটি থাকে।

উত্তরঃ এদের কেবল একটি থাকে। 

১০। একটি লক্ষণার্থক পদের লক্ষণার্থ/বাচ্যার্থ/এই দুই-ই থাকে।

উত্তরঃ এই দুই-ই থাকে।

১১। বিপরীত পদদুটির মধ্যে তৃতীয় সম্ভাবনা থাকে/ থাকে না।

উত্তরঃ থাকে।

১২। বিরুদ্ধ পদ দুটির মধ্যে তৃতীয় সম্ভাবনা থাকে/থাকে না।

উত্তরঃ থাকে না।

১৩। দুটি বিরুদ্ধ পদে সম্পূর্ণ বাচ্যার্থ নিঃশেষ হয়ে যায়/যায় না।

উত্তরঃ যায়।

১৪। ‘সাদা এবং কালো’ বিরুদ্ধ পদ/ বিপরীত পদের উদাহরণ।

উত্তরঃ বিপরীত পদের উদাহরণ।

১৫। একটি শব্দ দ্বারা গঠিত পদকে একবাচক/বহুশাব্দিক পদ বলে।

উত্তরঃ একবাচক।

১৬। যে পদ কেবল বস্তু অথবা গুণকে বোঝায়, কিন্তু দুটোকে একসঙ্গে বোঝায় না, তাকে লক্ষণার্থক/অলক্ষণার্থক পদ বলে। 

উত্তরঃ অলক্ষণার্থক পদ।

১৭। মিলের মতে, নামবাচক বিশেষ্য পদ লক্ষণার্থক/ অলক্ষণার্থক পদ। 

উত্তরঃ অলক্ষণার্থক পদ।

১৮। বিপরীত পদদুটিতে মধ্যবর্তী সম্ভাবনা থাকে/ থাকে না।

উত্তরঃ থাকে।

১৯। জেভনসের মতে, নামবাচক বিশেষ্য পদগুলি লক্ষণার্থক/ অলক্ষণার্থক। 

উত্তরঃ লক্ষণার্থক পদ।

২০। স্বতন্ত্রসিদ্ধ/পরতন্ত্রসিদ্ধ / অসিদ্ধ শব্দ নিজে নিজে পদ হতে পারে। 

উত্তরঃ স্বতন্ত্রসিদ্ধ।

২১। ব্যাহতার্থক পদ কোন গুণের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে স্বীকার/ অস্বীকার করে।

উত্তরঃ স্বীকার। 

২২। লক্ষণার্থক পদ সাধারণ এবং মৌলিক/আকস্মিক গুণকে নির্দেশ করে।

উত্তরঃ সাধারণ এবং মৌলিক।

২৩। সকল পদই শব্দ/বাক্য/অপদ হয়।

উত্তরঃ শব্দ। 

২৪। ‘মানুষ’ একটি লক্ষণার্থক/অলক্ষণার্থক পদ।

উত্তরঃ লক্ষণার্থক।

২৫। পদ হল বাক্য/বচন/ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

উত্তরঃ বচন।

শূন্যস্থান পূর্ণ করো:

১। বচনের উদ্দেশ্য একটি ______।

উত্তরঃ পদ।

২। বচনের বিধেয় একটি ______।

উত্তরঃ পদ।

৩। একটি বচনে ______ পদ থাকে?

উত্তরঃ দুটি।

৪। একটি বচনে ______ অংশ থাকে।

উত্তরঃ তিনটি। 

৫। _____ একটি বিশিষ্ট পদের উদাহরণ।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ।

৬। ______ একটি সামান্য পদের উদাহরণ।

উত্তরঃ মানুষ।

৭। সামান্য পদ ______ ধারণা প্রকাশ করে।

উত্তরঃ শ্রেণির

৮। সামান্য পদ ______ শব্দকে বোঝায়।

উত্তরঃ শ্রেণিবাচক।

৯। একটি লক্ষণার্থক পদের ______ এবং ______ উভয়েই থাকে।

উত্তর। বাচ্যার্থ, লক্ষণার্থ।  

১০। পদের বাচ্যার্থ ______ বোঝায়।

উত্তরঃ বস্তুকে।

১১। নামবাচক বিশেষ্য পদ ______ ।

উত্তরঃ অলক্ষাণার্থক।

১২। পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের পরিবর্তন ______ ।

উত্তরঃ বিপরীতমুখী।

১৩। সকল পদই _____, কিন্তু সকল ______, _______ নয়।

উত্তরঃ শব্দ, শব্দ, পদ।

১৪। সমবাহু ত্রিভুজের বাচ্যার্থ ______।

উত্তরঃ ‘সকল সমবাহু ত্রিভুজ’।

১৫। জেভেনসের মতে নামবাচক পদ ______।

উত্তরঃ লক্ষণার্থক।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। শব্দ কী?

উত্তরঃ এক বা একাধিক বর্ণ বা অক্ষরের সমন্বয় যখন কোনো অর্থবাহক হয়, তখন তাকে ‘শব্দ’ বলে। যেমন- ঐ, বই, মানুষ ইত্যাদি।

প্রশ্ন ২। পদ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে শব্দ বা শব্দসমষ্টি সম্পূর্ণ নিজে নিজেই কোনো তর্কবাক্যের বা তর্কীয় বচনের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তাকে ‘পদ’ বলে।

প্রশ্ন ৩। যুক্তিবিজ্ঞানে শব্দকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় এবং কী কী? 

উত্তরঃ যুক্তিবিজ্ঞানে শব্দকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যথা- 

(ক) পদযোগ্য বা স্বতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ।

(খ) পদ-অযোগ্য (পদাযোগ্য) বা পরতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ।

(গ) অ-পদযোগ্য বা অসিদ্ধ শব্দ। 

প্রশ্ন ৪। পদযোগ্য বা স্বতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ যে শব্দ নিজে নিজেই অন্য কোনো শব্দের সাহায্য ছাড়াই বচনের উদ্দেশ্য বা বিধেয় পদ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তাকে পদযোগ্য বা স্বতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ বলে। যেমন- মানুষ, ফুল, সুন্দর ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৫। পদ অযোগ্য (পদাযোগ্য) বা পরতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে শব্দ নিজে নিজে কোনো ‘পদ’ হিসেবে কখনো ব্যবহৃত হতে পারে না, কিন্তু অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত হলে ‘পদ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তাকে পদাযোগ্য বা পদ-অযোগ্য বা পরতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ বলে। যেমন- ও, এবং, এর, এই, একটি ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৬। অ-পদযোগ্য বা অসিদ্ধ শব্দ কাকে বলে?

উত্তরঃ অপদযোগ্য বা অসিদ্ধ শব্দ হচ্ছে সেইসব শব্দ, যাদের কখনও পদ হিসেবে ব্যবহার করা যায় না, নিজেও নয়, অন্য কোনো শব্দের সাহায্য নিয়েও নয়। যেমন- অনন্বয়ী শব্দ বা Interjection। আঃ, উঃ, বাঃ, সাবাস্ ই‌‌ত্যাদি শব্দকে কখনও পদ হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। কাজেই এগুলো অসিদ্ধ শব্দ। 

প্রশ্ন ৭। যুক্তিবিজ্ঞানে পদের শ্রেণিবিভাগগুলি কী কী?

উত্তরঃ যুক্তিবিজ্ঞানে পদকে নানা শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যেমন- 

(ক) এক শব্দাত্মক পদ ও অনেক শব্দাত্মক পদ।

(খ) সামান্য পদ ও বিশিষ্ট পদ।

(গ) নিরপেক্ষ পদ ও সাপেক্ষ পদ। 

(ঘ) সদর্থক পদ, নঞর্থক পদ ও ব্যাহতার্থক পদ।

(ঙ) লক্ষণার্থক পদ ও অলক্ষণার্থক পদ

(চ) বিপরীত পদ ও বিরুদ্ধ পদ। 

(ছ) বস্তুবাচক পদ ও গুণবাচক পদ।

(জ) একার্থক পদ ও অনেকার্থক পদ। 

(ঝ) সমষ্টিবাচক পদ ও অসমষ্টিবাচক পদ।

প্রশ্ন ৮। এক-শব্দাত্মক পদ কাকে বলে? 

উত্তরঃ যে পদে একটিমাত্র শব্দ থাকে, তাকে এক-শব্দাত্মক পদ বলে। যেমন- ‘মানুষ’, ‘প্রাণী’। 

প্রশ্ন ৯। অনেক-শব্দাত্মক পদ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে পদ একাধিক শব্দ দ্বারা গঠিত হয়, তাকে অনেক-শব্দাত্মক পদ বলে।

যেমন- দারুণ খেলোয়াড়, অসুখী মানুষ।

প্রশ্ন ১০। পদের বিরোধিতা বলতে কী বোঝ? 

উত্তরঃ দুটি পদকে পরস্পর বিরোধী বলা হয়, যখন তারা এমন গুণ বোঝায়, যা একই বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে একই সঙ্গে প্রযোজ্য হতে পারে না। যেমন- ‘লাল নীল’, ‘সৎ-অসৎ’ ইত্যাদি। পদের বিরোধিতা দুই প্রকারের হয়। যথা- বিপরীত পদ এবং বিরুদ্ধ পদ।

সংজ্ঞা দাও:

১। এক শব্দাত্মক পদ: যে পদে একটি মাত্র শব্দ থাকে, তাকে এক শব্দাত্মক পদ বলে। যেমন- ‘মানুষ’, ‘ফুল’, ‘প্রাণী।

২। অনেক-শব্দাত্মক পদ: যে পদ একাধিক শব্দ দ্বারা গঠিত হয়, তাকে অনেক শব্দাত্মক পদ বলে। যেমন- ‘সুখী মানুষ’, ‘সুন্দর ফুল, ‘মরণশীল জীব’ ইত্যাদি। 

৩। সামান্য পদ: সামান্য পদ সেই পদ, যা একই অর্থে অনির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তির যে কোনটিকে বোঝায়। এই সমস্ত অনির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তি বা বস্তু একই শ্রেণিভুক্ত হয়ে থাকে। সামান্য পদ শ্রেণীবাচক শব্দকে বোঝায়। যথা- ‘মানুষ’, ‘প্রাণী’, ‘ফুল’, ‘পুস্তক’ ইত্যাদি।

৪। বিশিষ্ট পদ: বিশিষ্ট পদ হচ্ছে সেই পদ, যা দ্বারা নির্দিষ্ট বা বিশেষ কোনো একজন ব্যক্তি বা গুণকে বোঝায়। যেমন- ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী’ ইত্যাদি।

৫। অর্থযুক্ত বিশিষ্ট পদ: অর্থযুক্ত বিশিষ্ট পদ সেই বিশিষ্ট পদ, যাতে নির্দিষ্ট কোনো একজন ব্যক্তি বা একটি বস্তুর সঙ্গে কোনো বিশেষ গুণের উল্লেখ থাকে। যেমন- ‘ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী’, ‘পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ’ ইত্যাদি। 

৬। অর্থহীন বিশিষ্ট পদ: অর্থহীন বিশিষ্ট পদ দ্বারা সুনির্দিষ্ট কোনো একজন ব্যক্তি বা একটি বস্তুকে বোঝায়। কিন্তু তার কোনো গুণের উল্লেখ থাকে না। যথা- ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘রাম’, ‘গঙ্গা’, হিমালয় ইত্যাদি।

৭। নিরপেক্ষ পদ: নিরপেক্ষ পদ সেই পদ, যে নিজের অর্থ নিজেই বহন করে অর্থাৎ অন্য শব্দের সাহায্য ছাড়াই যার অর্থ বোঝা যায়। যেমন- মানুষ, ফুল, ঈশ্বর, প্রাণী ইত্যাদি।

৮। সাপেক্ষ পদ: যে পদ নিজের অর্থ নিজে বহন করে না, যার অর্থ অন্য শব্দের সাহায্য ছাড়া বোঝা যায় না, তাকে সাপেক্ষ পদ বলে। যেমন- ‘পিতা’, ‘মাতা’, ‘ভাই’, ‘শিক্ষক’ ইত্যাদি।

৯। সদর্থক পদ: সদর্থক পদ সেই পদ, যা দিয়ে কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা গুণের উপস্থিতি বোঝায়। যেমন- ‘মানুষ’ বলতে মানুষের উপস্থিতি বা অস্তিত্ব বোঝায়, ‘সুখী’ বলতে সুখের উপস্থিতি বোঝায়। অতএব ‘মানুষ’, ‘সুখী’ ইত্যাদি সদর্থক পদ।

১০। নঞর্থক পদ: নঞর্থক পদ সেই পদ, যা দিয়ে কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা গুণের অনুপস্থিতি বোঝায়। যেমন- ‘অসৎ’ (সততার অভাব বা অনুপস্থিতি), ‘প্রাণহীন’ (প্রাণের অভাব বা অনুপস্থিতি), ‘অসুখী’, ‘অমানুষ’ ইত্যাদি নঞর্থক পদ।

১১। ব্যাহতার্থক পদ: ব্যাহতার্থক পদ সেই পদ, যে পদ দিয়ে কোনো ব্যক্তি, বস্তুর ক্ষেত্রে কোনো গুণের বর্তমান অভাব বা অনুপস্থিতি বোঝায়, যে গুণ উপস্থিত থাকতেও পারত। ব্যাহতার্থক পদের মধ্যে সদর্থক এবং নঞর্থক দুই উপাদানই আছে। যেমন-‘অন্ধ’, ‘বোবা’, ‘খোঁড়া’ ইত্যাদি।

১২। লক্ষণার্থক পদ: যে পদ দ্বারা একাধারে বাচ্যার্থ (denotation) এবং লক্ষণার্থক (connotation) বোঝায়, অর্থাৎ যে পদ বস্তুবাচক এবং গুণবাচক দুই-ই, তাকে লক্ষণার্থক পদ বা জাত্যর্থক পদ বলে। যেমন- ‘মানুষ’ পদটি জাত্যর্থক বা লক্ষণার্থক, কারণ এই পদ একদিকে ‘সমস্ত মানুষ’কে (বাচ্যার্থ বা ব্যক্ত্যর্থ) বোঝায়। সেই সঙ্গে সকল মানুষের মৌলিক ও সাধারণ গুণ ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ (rationality) এবং জীববৃত্তি বা জীবত্ব (animality)। অতএব, এই দুটি গুণ ‘মানুষ’ পদের লক্ষণার্থ বা জাত্যর্থ।

১৩। অলক্ষণার্থক পদ: যে পদ হয় গুণবাচক, না হয় বস্তুবাচক, অর্থাৎ, যে পদ দ্বারা শুধু বাচ্যার্থ অথবা লক্ষণার্থ বোঝায়, কিন্তু একই সঙ্গে বাচ্যার্থ বা লক্ষণার্থ দুই-ই বোঝায় না, তাকে অলক্ষণার্থক পদ বা অ-জাত্যর্থক পদ বলা হয়। যেমন- সততা, সত্যবাদিতা, মমতা ইত্যাদি।

১৪। বিপরীত পদ: বিপরীত পদ সেই দুটি পদ, যারা একই সঙ্গে একই ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে প্রযোজ্য হতে পারে না, অর্থাৎ যারা পরস্পর বিরোধী এবং তাদের বাচ্যার্থের মধ্যে সর্বাধিক পার্থক্য থাকে। যথা ‘লাল এবং নীল’, ‘সাদা এবং কালো’, ‘সুখী এবং দুখী, জ্ঞানী এবং নির্বোধ’ ইত্যাদি।

১৫। বিরুদ্ধ পদ: বিরুদ্ধ পদ সেই দুটি পরস্পর বিরোধী পদ, যারা একই বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে একই সঙ্গে প্রযোজ্য হয় না এবং একত্রে এই দুটি পদ সমগ্র বাচ্যার্থকে নির্দেশ করে। যেমন- ‘লাল এবং না-লাল’, ‘জ্ঞানী এবং ‘অজ্ঞানী’, ‘সুখী এবং ‘অসুখী’ ইত্যাদি।

১৬। বস্তুবাচক পদ: বস্তুবাচক পদ সেই পদ যার দ্বারা কোনো বস্তু, ব্যক্তি, বস্তু বা ব্যক্তির শ্রেণিকে বোঝায়। যেমন- মানুষ, চেয়ার, প্রাণী, ফুল ইত্যাদি।

১৭। গুণবাচক পদ: যে পদ দ্বারা কোনো গুণ বা গুণসমষ্টিমাত্র বোঝায়, কিন্তু সেই গুণ বা গুণসমষ্টিযুক্ত ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায় না, তাকে গুণবাচক পদ বলে। যেমন- ‘মনুষ্যত্ব’, ‘প্রাণীত্ব’, ‘সততা’ ইত্যাদি।

১৮। একার্থক পদ: যে পদের একটিমাত্র সুনির্দিষ্ট অর্থ থাকে, তাকে একার্থক পদ বলে। যেমন- ‘মানুষ’, ‘টেবিল’, ‘ফুল’ ইত্যাদি।

১৯। অনেকার্থক পদ: যে পদের দুই বা ততোধিক অর্থ থাকে, তাকে অনেকার্থক পদ বলে। যেমন- ‘হরি’, ‘অন্ধ’ ইত্যাদি শব্দ। ‘হরি’ পদের অর্থ- 

(১) নারায়ণ। এবং 

(২) হরণ করি।

‘অন্ধ’ শব্দেরও দুটি অর্থ- 

(১) দৃষ্টিহীন। এবং 

(২) নির্বিচার। 

২০। সমষ্টিবাচক পদ: যে পদ এক জাতীয় বহু ব্যক্তি বা বস্তুর সমষ্টিকে বোঝায়, তাকে সমষ্টিবাচক পদ বলে। যেমন- ‘গ্রন্থাগার’ (বই-এর সমষ্টি), ‘সৈন্যবাহিনী’ (সৈন্যদের সমষ্টি) ইত্যাদি।

২১। অসমষ্টিবাচক পদ: যে সমস্ত পদ বহু ব্যক্তি বা বস্তুসমূহের সমষ্টি বোঝায় না, তাকে অসমষ্টিবাচক পদ বলে। যেমন- ‘মানুষ’, ‘ফুল’, ‘বই’ ইত্যাদি।

রচনাভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘সকল পদই শব্দ, কিন্তু সকল শব্দ পদ নয়’- ব্যাখ্যা করো। 

উত্তরঃ এক বা একাধিক বর্ণ বা অক্ষরের সমন্বয় যখন কোনো অর্থবাহক হয়, তখন তাকে পদ বলে। যেমন- ঐ, বই, মন, মানুষ, মরণশীল, নয়, হয় ইত্যাদি।

যে শব্দ বা শব্দসমষ্টি সম্পূর্ণ নিজে নিজেই কোন তর্কবাক্য বা তর্কীয় বচনের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাকে ‘পদ’ বলে। যেমন- ‘মানুষ হয় মরণশীল জীব’। এই তর্কীয় বচনে উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘মানুষ’, যা একটিমাত্র শব্দ দিয়ে গঠিত। বিধেয় হচ্ছে ‘মরণশীল জীব’, যা দুটি শব্দ দিয়ে গঠিত। অতএব, এই বচনে ‘মানুষ’ এবং ‘মরণশীল জীব’ দুইটি পদ। কিন্তু ‘হয়’ শব্দটিকে ‘পদ’ বলা চলে না। কারণ এই শব্দ উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি বা হতে পারে না। ‘হয়’ হচ্ছে সংযোজক।

একটি তর্কীয় বচনের তিনটি অংশ- উদ্দেশ্য, সংযোজক এবং বিধেয়। ‘উদ্দেশ্য’ এবং বিধেয় পদ, কিন্তু সংযোজক পদ নয়, শুধুমাত্র শব্দ। অতএব বলা যায়, সকল পদই শব্দ, কিন্তু সকল শব্দ পদ নয়। যুক্তিবিজ্ঞানে, শব্দকে প্রধানত তিনটি ভগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- পদযোগ্য বা স্বতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ, পদ-অযোগ্য (পদাযোগ্য) বা পরতন্ত্রসিদ্ধ শব্দ ও অপদযোগ্য বা অসিদ্ধশব্দ। এগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র পদযোগ্য বা স্বতন্ত্রসিদ্ধ শব্দই পদ। পরতন্ত্রসিদ্ধ বা অসিদ্ধ শব্দ পদ নয়। অতএব, সকল শব্দই পদ নয়, কিন্তু সমস্ত পদই শব্দ বা শব্দ-সমষ্টি হতে বাধ্য।

প্রশ্ন ২। নামবাচক বিশেষ্য পদ কি লক্ষণার্থক?

উত্তরঃ নামবাচক বিশেষ্য পদ লক্ষণার্থক কিনা, এ বিষয়ে তর্কবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।

(ক) জন স্টুয়ার্ট মিল এবং কারভেথ রিডের মতে নামবাচক বিশেষ্য লক্ষণার্থক নয়।

(খ) জেভনস-এর মতে নামবাচক বিশেষ্য লক্ষণার্থক।

(গ) ড. প্রফুল্ল কুমার রায়ের মতে নামবাচক বিশেষ্য প্রথমে অলক্ষণার্থক থাকে। পরবর্তীতে লক্ষণার্থক হয়ে যায়।

প্রথমেই আমরা জে. এস. মিল (John Stuart Mill) এবং কারভেথ রিড (Carveth Read)-এর যুক্তিগুলো বিশ্লেষণ করব। জে. এস. মিল বলেছেন, নাম বস্তু বা ব্যক্তির ক্ষেত্রে একটি অর্থহীন চিহ্নমাত্র। একটি নাম দিয়ে কোনো গুণ বোঝায় না। নামের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বা একটি বস্তুকে (বাচ্যার্থ) চেনা সম্ভব। কোনো গুণকে (লক্ষণার্থ) নয় ৷ অতএব, নামবাচক বিশেষ্য অ-লক্ষণার্থক।

জেভনস (Jevons) বলেন যে, নামবাচক বিশেষ্য লক্ষণার্থক। নামের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি বা বস্তুর সঙ্গে তার গুণও প্রকাশ পায়।

ড. প্রফুল্ল কুমার রায়ের মতে, প্রথমে অর্থাৎ জ্ঞানের ক্ষেত্রে শুরুতে নামবাচক বিশেষ্য অলক্ষণার্থক থাকে। পরে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান যত বাড়ে, ততই সেই ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে আমরা গুণগুলোও জানতে পারি। তখনই তাকে লক্ষণার্থক বলা চলে।

জেভনস ও ড. প্রফুল্ল রায়ের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। ‘জিমি’ নামটি মানুষের নামও হতে পারে, আবার কুকুরের নামও হতে পারে। ড. প্রফুল্ল কুমার রায়ের মতটি গ্রহণযোগ্য নয় এই কারণে যে, এই মত মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য হলেও তর্কসম্মত নয়।

অতএব জে. এস. মিল ও কারভেথ রিডের মতটিই সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য। নামবাচক বিশেষ্য অ-লক্ষণার্থক। নামের মধ্য দিয়ে সেই নামধারী কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে বোঝায় কিন্তু তার গুণকে নয়। 

৩। পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের অর্থ ও তাদের সম্পর্ক সম্বন্ধে আলোচনা করো।

অথবা,

উদাহরণসহ পদের বাচ্যার্থ এবং লক্ষণার্থের সম্বন্ধ নির্ণয় করো।

অথবা,

‘পদের বাচ্যার্থ’ ও লক্ষণার্থের সম্বন্ধ বিপরীতমুখী’ উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 

উত্তরঃ অধিকাংশ পদের দুটি দিক থাকে বা দুটি অর্থ থাকে। একটি তার বাচ্যার্থ বা ব্যক্ত্যর্থ এবং অপরটি তার লক্ষণার্থ বা জাত্যর্থ।

একটি পদ একই অর্থে যে বস্তু বা বস্তুগুলির ওপর আরোপিত হয়, ‘বাচ্যার্থ বা ব্যক্ত্যর্থ’ বলতে সেই বস্তু বা বস্তুগুলিকেই বোঝায়। অপরপক্ষে, পদটি যে গুণ বা গুণাবলির উল্লেখ করে সেই গুণ বা গুণাবলিকেই ‘লক্ষণার্থ বা জাত্যর্থ’ বলে।

লক্ষণার্থ বলতে ব্যক্তি বা বস্তুর গুণগত দিকটি বোঝায়। এই বস্তু বা গুণসমূহ পদ-নির্দেশিত সকল ব্যক্তি বা সকল বস্তুর সাধারণ গুণ এবং মৌলিক গুণ।

বাচ্যার্থের দিক থেকে একটি পদ বস্তুবাচক, লক্ষণার্থের দিক থেকে গুণবাচক। যেমন- ‘মানুষ’ পদটির দ্বারা পৃথিবীর যাবতীয় মানুষ, অর্থাৎ সকল মানুষকে বোঝায়। অতএব, ‘সকল মানুষ’ হচ্ছে যথাক্রমে ‘মানুষ’ পদের বাচ্যার্থ। অপরপক্ষে ‘জীববৃত্তি’ এবং ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ সকল মানুষের সাধারণ এবং মৌলিক গুণ। তাই ‘জীববৃত্তি’ এবং ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ ‘মানুষ’ পদের লক্ষণার্থ।

পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের সম্পর্ক সম্বন্ধে বলা যায়, একটি বাড়লে, অপরটি কমে, কিংবা একটি কমলে, অন্যটি বাড়ে। অর্থাৎ, 

(ক) যদি বাচ্যার্থ বাড়ে, তাহলে লক্ষণার্থ কমে।

(খ) যদি বাচ্যার্থ কমে, তাহলে লক্ষণার্থ বাড়ে।

(গ) যদি লক্ষণার্থ বাড়ে, তাহলে বাচ্যার্থ কমে।

(ঘ) যদি লক্ষণার্থ কমে, তাহলে বাচ্যার্থ বাড়ে।

যেমন- ‘মানুষ’ নামক পদের বাচ্যার্থ হল ‘সকল মানুষ’ এবং লক্ষণার্থ হল ‘জীববৃত্তি’ এবং ‘বুদ্ধিবৃত্তি’। এই মানুষ পদটির বাচ্যার্থ বাড়ানোর জন্যে অন্যান্য সমস্ত জীবকেও যদি এর সঙ্গে যোগ করা হয় (মানুষ + অন্যান্য জীব = সমস্ত জীব), যখন তার লক্ষণার্থ বা জাত্যর্থ হবে ‘জীববৃত্তি’ মানুষের লক্ষণার্থ (বুদ্ধিবৃত্তি + জীববৃত্তি)। অতএব, বাচ্যার্থ বৃদ্ধি লক্ষণার্থ হ্রাসের কারণ।

আবার ‘মানুষ’ পদটির বাচ্যার্থ কমাবার জন্য যদি ‘অসভ্য মানুষদের কথা বাদ দিয়ে শুধু ‘সভ্য মানুষদের কথা উল্লেখ করি (মানুষদের বাচ্যার্থ- অসভ্য মানুষ = সভ্য মানুষ) তাহলে ‘সভ্য’ গুণের সংযোগে লক্ষণার্থ বেড়ে যাবে (মানুষের লক্ষণার্থ + সভ্যগুণ = জীববৃত্তি + বুদ্ধিবৃত্তি + সভ্যবৃত্তি) অতএব, বাচ্যার্থ হ্রাস লক্ষণার্থ বৃদ্ধির কারণ।

অতএব একথা বলা যায়, পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের পরিবর্তন (হ্রাস বা বৃদ্ধি) বিপরীতমুখী।

প্রশ্ন ৪। বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের বিপরীতমুখী পরিবর্তনের তিনটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের বিপরীতমুখী পরিবর্তনের তিনটি সীমাবদ্ধতা হল: 

(ক) কোনো একটি পদের বাচ্যার্থ বা লক্ষণার্থকে পরিবর্তিত করলে, অর্থাৎ বাড়ালে বা কমালে, সেই পদটি একটি নতুন পদে পরিণত হয়, পুরানো পদ আর থাকে না।

(খ) বিপরীতমুখী পরিবর্তন কথাটি গণিতশাস্ত্র থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গাণিতিক অর্থ আর যুক্তিবিজ্ঞানসম্মত অর্থের পার্থক্য আছে। গণিতে এককগুলোকে গণনা করা যায় বা মাপা যায়। কিন্তু লক্ষণার্থ গুণবাচক পদ হওয়ায় তাকে গণনা করা যায় না, মাপাও যায় না।

(গ) কোন পদের বাচ্যার্থ বা লক্ষণার্থের হ্রাসবৃদ্ধির সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত জ্ঞানের হ্রাসবৃদ্ধিকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। এই বাড়াকমার সঙ্গে আমাদের জ্ঞান বাড়াকমার কোন সম্বন্ধ নেই।

প্রশ্ন ৫। একটি চিত্রের সাহায্যে পদের বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থের অর্থ ও তাদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ নীচে চিত্রের সাহায্যে পদের বাচ্যর্থ ও লক্ষণার্থের বিষয়টিকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা যায়:

বৃত্ত ‘ক’ হল ‘জীব’ পদের বাচ্যার্থ। বৃত্ত ‘খ’ হল মানুষ পদের বাচ্যার্থ। বৃত্ত ‘গ’ হল জ্ঞানী মানুষ পদের বাচ্যার্থ। ‘ক’ বৃত্তের অন্তর্গত ‘খ’ বৃত্ত ও এবং ‘খ’ বৃত্তের অন্তর্গত ‘গ’ বৃত্ত। এর অর্থ ‘জীব’ পদের বাচ্যার্থ ‘মানুষ’ পদের বাচ্যার্থ থেকে বড় এবং ‘মানুষ’ পদের বাচ্যার্থ ‘জ্ঞানী মানুষ’ পদের বাচ্যার্থ থেকে বড়। এবার, এই তিনটি পদকে ‘জীব’, ‘মানুষ’ এবং ‘জ্ঞানী মানুষ’ যেগুলো বস্তুবাচক সামান্য পদ, তাদের বড় থেকে ছোট বাচ্যার্থের বিচারে নীচের ক্রম অনুযায়ী সাজানো গেল:

এবার আমরা যদি ‘গ’ বৃত্ত থেকে ‘খ’ বৃত্ত এবং ‘খ’ বৃত্ত থেকে ‘ক’ বৃত্তে যাই, তাহলে দেখা যাবে-বাচ্যার্থ ক্রমশ বাড়ছে। কেননা সাধারণ ভাবেই ‘সকল জ্ঞানী’ মানুষের থেকে ‘সকল মানুষের’ সংখ্যা বেশি এবং ‘সকল মানুষের’ থেকে ‘সকল জীবের’ সংখ্যা বেশি। কিন্তু এক্ষেত্রে লক্ষণার্থ কমছে, ‘গ’ এর ক্ষেত্রে লক্ষণার্থতে তিনটি গুণ, ‘খ’ এর ক্ষেত্রে দুটি গুণ এবং ‘ক’ এর ক্ষেত্রে একটি গুণ দেখা যাচ্ছে। 

তাহলে বলা যায়-

(ক) বাচ্যার্থ বাড়লে লক্ষণার্থ কমে।

(খ) কিন্তু ‘ক’ বৃত্ত থেকে ‘খ’ বৃত্তে গেলে, তারপর ‘খ’ বৃত্ত থেকে ‘গ’ বৃত্তে গেলে দেখা যাবে, বাচ্যার্থ ক্রমশ কমছে। কিন্তু লক্ষণার্থ বাড়ছে। 

(গ) আবার লক্ষণার্থ বাড়লে বাচ্যার্থ কমে। বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যাবে ‘ক’ বৃত্ত থেকে ‘খ’ বৃত্তে এবং ‘খ’ বৃত্ত থেকে ‘গ’ বৃত্তে গেলে।

(ঘ) বিপরীতে লক্ষণার্থ কমলে বাচ্যার্থ বাড়ে। যদি ‘গ’ বৃত্ত থেকে ‘খ’ বৃত্তে এবং ‘খ’ বৃত্ত থেকে ‘ক’ বৃত্তে গেলে দেখা যাবে- লক্ষণার্থ কমলে বাচ্যার্থ বাড়ে।

পার্থক্য নির্ণয় করো:

১। শব্দ ও পদ।

উত্তরঃ শব্দ ও পদ-এর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:

(ক) ‘শব্দ’ হচ্ছে এক বা একাধিক বর্ণের অর্থপূর্ণ সংযোজন। অপরপক্ষে, যে শব্দ বা শব্দসমষ্টি সম্পূর্ণ নিজে নিজেই কোনো তর্কবাক্য বা তর্কীয় বচনের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাকে ‘পদ’ বলা হয়।

(খ) সকল পদই শব্দ, কিন্তু সকল শব্দ পদ নয়। যেমন- মানুষ হয় মরণশীল -এখানে ‘মানুষ’ এবং ‘মরণশীল’ পদ এবং সেই সঙ্গে শব্দও। কিন্তু ‘হয়’ শুধুমাত্র শব্দ কিন্তু পদ নয়।

(গ) শব্দ হল যে কোনো ধরনের বাক্যের উপাদান। যেমন- ঘোষক বাক্য, আদেশমূলক বাক্য, প্রশ্নবোধক বাক্য, বিস্ময়সূচক বাক্য, অনুরোধসূচক বাক্য, ইচ্ছামূলক বাক্য। কিন্তু পদ হল শুধুমাত্র ঘোষক বাক্যের উপাদান।

(ঘ) এক একটি ‘শব্দের’ মাধ্যমে আমরা আমাদের চিন্তা, অনুভূতি, অনুরোধ, ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, আদেশ ইত্যাদি প্রকাশ করি। কিন্তু ‘পদের’ মাধ্যমে শুধুমাত্র চিন্তা প্রকাশিত হয়।

২। বিপরীত পদ ও বিরুদ্ধ পদ।

উত্তরঃ বিপরীত পদ ও বিরুদ্ধ পদ-এর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ: 

(ক) বিপরীত পদ সেই দুটি পদ, যারা একই সঙ্গে একই বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে প্রযোজ্য হতে পারে না এবং তাদের বাচ্যার্থের মধ্যে সর্বাধিক পার্থক্য থাকে।

বিরুদ্ধ পদ সেই দুটি পরস্পরবিরোধী পদ, যারা একই বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে একই সঙ্গে প্রযোজ্য হয় না এবং এই দুটি পদ একত্রে সমস্ত বাচ্যার্থকে নির্দেশ করে।

(খ) দুটি বিরুদ্ধ পদ একত্রে সম্পূর্ণ বাচ্যার্থ নির্দেশ করে, কিন্তু দুটি বিপরীত পদ আংশিক বাচ্যার্থ নির্দেশ করে। ‘লাল + না-লাল’ = সব রং (রঙের সম্পূর্ণ বাচ্যার্থ)। কিন্তু লাল + নীল = দুটি রং (রঙের আংশিক বাচ্যার্থ)। 

(গ) দুটি বিরুদ্ধ পদের একটি কোনো ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে মিথ্যা হলে অপরটি সত্য হয়। কিন্তু দুটি বিপরীত পদের একটি মিথ্যা হলে, অপরটি সত্য হাতে পারে, কিংবা সত্য নাও হতে পারে।

(ঘ) বিপরীত পদদুটিতে মধ্যবর্তী সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু বিরুদ্ধ পদদুটিতে মধ্যবর্তী সম্ভাবনা থাকে না।

(ঙ) দুটি বিপরীত পদ সর্বদা সদর্থক হয়, কিন্তু বিরুদ্ধ পদদ্বয়ের মধ্যে একটি সদর্থক এবং অন্যটি নঞর্থক হয়ে থাকে।

৩। লক্ষণার্থক পদ ও অলক্ষণার্থক পদ। 

উত্তরঃ লক্ষণার্থক পদ ও অলক্ষণার্থক পদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:

(ক) যে পদ দ্বারা বাচ্যার্থ এবং লক্ষণার্থ দুই-ই বোঝায়, তাকে লক্ষণার্থক পদ বলে। অপরপক্ষে, যে পদ দ্বারা শুধু বাচ্যার্থ অথবা শুধু লক্ষণার্থ বোঝায়, কিন্তু বাচ্যার্থ ও লক্ষণার্থ উভয়কে একসঙ্গে বোঝায় না, তাকে অলক্ষণার্থক পদ বলে। 

(খ) সকল সামান্য পদ (বস্তুবাচক, গুণবাচক) লক্ষণার্থক। অপরপক্ষে সকল বিশিষ্ট গুণবাচক পদ অলক্ষণার্থক।

(গ) অর্থযুক্ত বিশিষ্ট পদ হল লক্ষণার্থক। অন্যদিকে, সকল নামবাচক বিশেষ্য পদ অলক্ষণার্থক।

৪। নিরপেক্ষ পদ ও সাপেক্ষ পদ। 

উত্তরঃ নিরপেক্ষ পদ ও সাপেক্ষ পদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:

(ক) যে গুণ বা যে বস্তুর স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থ আছে, অর্থাৎ যার কথা বোঝাতে গেলে অন্য কোনো বস্তু বা গুণের সাহায্য নেবার কোনো প্রয়োজন হয় না, সেই বস্তু বা গুণের নাম হল ‘নিরপেক্ষ পদ’। কিন্তু যে বস্তু বা গুণ অন্য কোন পদ-এর সাহায্য ছাড়া একান্তই অর্থহীন, সেই বস্তু বা গুণের নাম ‘সাপেক্ষ পদ’।

(খ) নিরপেক্ষ পদ নিজের অর্থ নিজেই বহন করে কিন্তু সাপেক্ষ পদ নিজের অর্থ নিজে বহন করে না।

(গ) সাপেক্ষ পদ সর্বদাই যুগলভাবে থাকে এবং একটির সম্পর্কে আর একটিকে বলা হয় ‘অন্যোন্য সাপেক্ষ’। কিন্তু নিরপেক্ষ পদ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য যুগলে থাকার প্রয়োজন হয় না।

৫। বস্তুবাচক পদ ও গুণবাচক পদ।

উত্তরঃ বস্তুবাচক পদ ও গুণবাচক পদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:

(ক) যে পদের দ্বারা কোনো বস্তু, ব্যক্তি, বস্তু বা ব্যক্তির শ্রেণিকে বোঝায় তাকে বস্তুবাচক পদ বলে। যেমন- মানুষ, টেবিল, আলমারি ইত্যাদি। 

যে পদের দ্বারা শুধুমাত্র কোনো গুণ অথবা গুণের সমষ্টিমাত্র বোঝায় তাকে গুণবাচক পদ বলে।

(খ) বস্তুবাচক পদে প্রত্যেকটি গুণসহ নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায়, কিন্তু গুণবাচক পদে শুধুই গুণ বোঝায়। গুণসমষ্টিযুক্ত ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায় না।

ভাগ – ২ বিবৃতি

দুটি পদের মধ্যে কোনো সম্বন্ধের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতিকে বচন বলে। প্রতিটি বচনের তিনটি অংশ— উদ্দেশ্য— সংযোজক— বিধেয়। বচনের উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদ হলেও সংযোজক কোনো পদ নয়।

যার সম্বন্ধে কিছু বলা হয়, তাকে বলে ‘উদ্দেশ্য’। উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয়, তাকে বলে বিধেয়। আর উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে সম্বন্ধসূচক চিহ্ন অথবা শব্দটিকে বলে ‘সংযোজক’।

বিভিন্ন নীতি অনুসরণ করে বচনকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন-

নীতিশ্রেণি
(ক) গঠন অনুযায়ীসরল এবং যৌগিক
(খ) গুণ অনুযায়ীসদর্থক এবং নঞর্থক
(গ) পরিমাণ অনুযায়ীসামান্য (সার্বিক) এবং বিশেষ
(ঘ) সম্বন্ধ অনুযায়ীনিরপেক্ষ এবং সাপেক্ষ
(ঙ) নিশ্চয়তা অনুযায়ীঅনিবার্য (বিবরণাত্মক) এবং সম্ভাব্য
(চ) অর্থ বা তাৎপর্য অনুযায়ীশাব্দিক বা বিশ্লেষণাত্মক এবং যথার্থ বা সংশ্লেষণাত্মক

এছাড়াও আরও এক ধরনের বচন আছে। তাকে বলে যথার্থ বচন। যে বচনে বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদের লক্ষণার্থের অন্তর্গত থাকে না এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু নতুন তথ্য দেয়, তাকে যথার্থ বচন বলে।

গুণ এবং পরিমাণের সংযুক্ত বা মিশ্রনীতি অনুসরণ করে বচনের চতুবর্গীয় শ্রেণিবিভাজনও করা হয়—

(ক) সামান্য সদর্থক। 

(খ) সামান্য নঞর্থক।

(গ) বিশেষ সদর্থক।

(ঘ) বিশেষ নঞর্থক।

এই চার ধরনের বচনের জন্য যথাক্রমে A, E, I এবং O—এই চারটি প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন-

বচনপ্রতীক চিহ্ন
(ক) সামান্য সদর্থকA
(খ) সামান্য নঞর্থকE
(গ) বিশেষ সদর্থকI
(ঘ) বিশেষ নঞর্থকO

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বচনের অংশগুলি কী কী?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য, সংযোজক ও বিধেয়।

প্রশ্ন ২। একটি চতুর্বর্গীয় বচনের কয়টি অংশ থাকে?

উত্তরঃ চারটি।

প্রশ্ন ৩। চতুবর্গীয় বচনের অংশগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ পরিমাণ চিহ্ন, উদ্দেশ্য, সংযোজক ও বিধেয় পদ। 

প্রশ্ন ৪। সার্বিক সদর্থক বচনের চিহ্ন কী?

উত্তরঃ ‘A’

প্রশ্ন ৫। সার্বিক নঞর্থক বচনের চিহ্ন কী?

উত্তরঃ ‘E’

প্রশ্ন ৬। বিশেষ সদর্থক বচনের চিহ্ন কী?

উত্তরঃ ‘I’

প্রশ্ন ৭। বিশেষ নঞর্থক বচনের চিহ্ন কী?

উত্তরঃ ‘O’

প্রশ্ন ৮। সংযোজক সবসময় কোন্ কালের রূপ হয়?

উত্তরঃ বর্তমান কালের।

প্রশ্ন ৯। সংযোজক কি সর্বদা সদর্থক হয়?

উত্তরঃ না, সংযোজক সদর্থক এবং নঞর্থক দু-ই রকমেরই হতে পারে।

প্রশ্ন ১০। ‘বচন মাত্রই সত্য কিংবা মিথ্যা হয়’- উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্তিটি সত্য।

প্রশ্ন ১১। ‘বাক্য মাত্রই সত্য কিংবা মিথ্যা হয়’- উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ না, উক্তিটি মিথ্যা।

প্রশ্ন ১২। ‘প্রতিটি বচন বাক্য, কিন্তু প্রতিটি বাক্য বচন নয়’- উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্তিটি সত্য।

প্রশ্ন ১৩। ‘প্রতিটি বাক্য বচন, কিন্তু প্রতিটি বচন বাক্য নয়’- উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ না, উক্তিটি সত্য নয়।

প্রশ্ন ১৪। কোন্ ধরনের বাক্য বচন হিসেবে তর্কবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়? 

উত্তরঃ একমাত্র ঘোষক বাক্য (Assertive Sentence) তর্কীয় বচন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন ১৫। কীসের উপর বচনের গুণ নির্ভর করে?

উত্তরঃ বচনের গুণ, অর্থাৎ বচন সদর্থক না নঞর্থক, তা নির্ভর করে সংযোজকের প্রকৃতির উপর।

প্রশ্ন ১৬। কোনো বচনের পরিমাণ কীসের উপর নির্ভর করে? 

উত্তরঃ বচনের পরিমাণ উদ্দেশ্যের সঙ্গে যুক্ত পরিমাণসূচক চিহ্নের উপর নির্ভর করে।

প্রশ্ন ১৭। সকল্পক বা প্রাকল্পিক বচনের গুণ কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?

উত্তরঃ সকল্পক বচনের ‘অনুবর্তী বা পরবর্তী বা অনুগ’ অংশটির গুণ অনুসারে সমগ্র বচনটির গুণ নির্ধারণ করা হয়।

প্রশ্ন ১৮। বিকল্পক বা বৈকল্পিক বচন কি সর্বদা সদর্থক হয়ে থাকে?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ১৯। বিকল্প কী?

উত্তরঃ বৈকল্পিক বচনের উপাদান বচনগুলোকে বিকল্প বলে। 

প্রশ্ন ২০। সকল্পক বচনের কয়টি অংশ এবং কী কী?

উত্তরঃ সকল্পক বচনের দুটি অংশ। যথা- পূর্ববর্তী অংশ এবং পরবর্তী অংশ।

প্রশ্ন ২১। কীভাবে একটি সকল্পক বচনের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়?

উত্তরঃ সকল্পক বচনের পরিমাণ পূর্ববর্তী অংশের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। 

প্রশ্ন ২২। গুণ অনুযায়ী বিকল্পক বচন সদর্থক না নঞর্থক?

উত্তরঃ সদর্থক।

প্রশ্ন ২৩। যৌগিক বচন কয় রকমের এবং কী কী?

উত্তরঃ যৌগিক বচন দুই প্রকার। যথা- 

(ক) যৌগিক সদর্থক। 

(খ) যৌগিক নঞর্থক। 

প্রশ্ন ২৪। সরল বচনে কয়টি উদ্দেশ্য এবং কয়টি বিধেয় থাকে?

উত্তরঃ একটি উদ্দেশ্য ও একটি বিধেয় থাকে। 

প্রশ্ন ২৫। ব্যাখ্যানির্ভর বচনের কয়টি রূপ? কী কী?

উত্তরঃ দুটি রূপ। ব্যতিরেকী ও ব্যতীতিক।

শুদ্ধ উত্তর দাও:

১। ভাষায় প্রকাশিত অবধারণকে শব্দ/পদ/বচন বলে।

উত্তরঃ বচন।

২। একটি বচনে একটি/দুইটি/তিনটি পদ থাকে। 

উত্তরঃ দুইটি।

৩। একটি বচনে একটি/দুইটি/তিনটি অংশ থাকে।

উত্তরঃ তিনটি।

৪। একটি বচনে যার সম্পর্কে কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য/বিধেয় বলে।

উত্তরঃ উদ্দেশ্য।

৫। কোন্ বচনকে আংশিক বললে তার গুণ/পরিমাণকে বোঝায়। 

উত্তরঃ পরিমাণকে।

৬। বচনের সংযোজক একটি শব্দ/পদ/এর কোনোটাই নয়।

উত্তরঃ শব্দ।

৭। বচনের সংযোজক বর্তমান/অতীত/ভবিষ্যৎ কালে থাকে।

উত্তরঃ বর্তমান।

৮। কোনো বচন সার্বিক না বিশেষ, সেটা বোঝা যায় তার গুণ/পরিমাণ থেকে। 

উত্তরঃ পরিমাণ।

৯। সংযোজক সর্বদা সদর্থক/নঞর্থক/সদর্থক অথবা নঞর্থক থাকে। 

উত্তরঃ সদর্থক অথবা নঞর্থক থাকে।

১০। নিরপেক্ষ বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের সম্বন্ধ শর্তাধীন/ শর্তনিরপেক্ষ।

উত্তরঃ শর্তনিরপেক্ষ।

১১। সাপেক্ষ বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের সম্বন্ধ শর্তাধীন/ শর্তনিরপেক্ষ।

উত্তরঃ শর্তাধীন।

১২। গুণ ও পরিমাণের মিশ্রপদ্ধতি অনুযায়ী বচনের শ্রেণিবিভাগ করলে চার/ পাঁচ/ছয় রকমের বচন পাওয়া যায়।

উত্তরঃ চার।

১৩। I বচন সার্বিক সদর্থক/বিশেষ সদর্থক।

উত্তরঃ বিশেষ সদর্থক।

১৪। A বচন সার্বিক সদর্থক/বিশেষ নঞর্থক।

উত্তরঃ সার্বিক সদর্থক।

১৫। E বচন সার্বিক নঞর্থক/বিশেষ নঞর্থক।

উত্তরঃ সার্বিক নঞর্থক।

১৬। O বচন বিশেষ সদর্থক/বিশেষ নঞর্থক। 

উত্তরঃ বিশেষ নঞর্থক।

১৭। বচনের গুণ নির্ধারিত হয় উদ্দেশ্য/বিধেয়/সংযোজক দ্বারা। 

উত্তরঃ সংযোজক দ্বারা।

১৮। নিরপেক্ষ /সাপেক্ষ বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদের সম্বন্ধ শর্তহীন। 

উত্তরঃ নিরপেক্ষ।

১৯। গুণ/সম্বন্ধ/নিশ্চয়তা অনুযায়ী বচন নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ হয়।

উত্তরঃ সম্বন্ধ।

২০। গুণ/সম্বন্ধ/পরিমাণ অনুযায়ী বচন সার্বিক ও বিশেষ হয়।

উত্তরঃ পরিমাণ। 

২১। গুণ অনুযায়ী বচন সার্বিক ও বিশেষ/সদর্থক ও নঞর্থক/নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ হয়।

উত্তরঃ সদর্থক ও নঞর্থক।

২২। অবধারণ একটি মানসিক প্রক্রিয়া/মানসিক প্রক্রিয়া নয়। 

উত্তরঃ মানসিক প্রক্রিয়া।

২৩। বচনের সংযোজক একটি পদ/একটি গুণ/একটি উদ্দেশ্য/ এগুলোর কোনোটাই নয়।

উত্তরঃ এগুলোর কোনোটাই নয়।

২৪। ‘সকল কুকুর হয় জন্তু’-এটি সদর্থক/আংশিক/বিকল্পক বচন।

উত্তরঃ সদর্থক।

২৫। সকল বিশিষ্ট বচন সার্বিক /আংশিক।

উত্তরঃ আংশিক।

২৬। বচন একটি শব্দ/বাক্যাংশ/ কোনোটাই নয়।

উত্তরঃ বাক্যাংশ।

২৭। সামান্য বচনে উদ্দেশ্যের সমগ্র বাচ্যার্থ/লক্ষণার্থ উল্লেখ করা হয়।

উত্তরঃ বাচ্যার্থ। 

২৮। সামান্য ও বিশেষ বচন গুণের/পরিমাণের বিভাজন।

উত্তরঃ পরিমাণের।

২৯। সদর্থক/নঞর্থক বচনে বিধেয় পদে উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়। 

উত্তরঃ সদর্থক।

৩০। সামান্য/বিশেষ বচনে বিধেয় পদকে সমগ্র উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয়।

উত্তরঃ সামান্য।

শূন্যস্থান পূর্ণ করো:

১। মিশ্রনীতি অনুসারে বচনকে ______ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

উত্তরঃ চার। 

২। বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সংযোগকারী নির্দেশক চিহ্নটিকে ______ বলে।

উত্তরঃ সংযোজক। 

৩। সল্পক বচনের ______ অংশ।

উত্তরঃ দুইটি।

৪। সাপেক্ষ বচনকে  ______ এবং ______ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

উত্তরঃ সকল্পক, বিকল্পক। 

৫। গুণ অনুযায়ী বচন ______ এবং ______ হয়।

উত্তরঃ সদর্থক, নঞর্থক। 

৬। পরিমাণ অনুযায়ী বচন ______ এবং ______ হয়।

উত্তরঃ সামান্য, বিশেষ। 

৭। একটি বচনে ______ অংশ থাকে।

উত্তরঃ তিনটি।

৮। একটি চতুর্বর্গীয় বচনে ______ অংশ থাকে।

উত্তরঃ চারটি। 

৯। কেবল ______ বাক্য বচন হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

উত্তরঃ ঘোষক।

১০। বচনের কোনো ______ বৈশিষ্ট্য নেই।

উত্তরঃ ভাষাগত।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বচন বা বিবৃতি (Proposition) কাকে বলে?

উত্তরঃ দুটি পদের মধ্যে কোনো সম্বন্ধের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতিকে ‘বচন’ বলে। বচন উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের অভ্যন্তরীণ সম্বন্ধ। বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয় দুটি পদ থাকে এবং এই দুটি পদের মধ্যে সম্বন্ধসূচক শব্দও থাকে। অর্থাৎ প্রতিটি বচনে তিনটি অংশ থাকে, যথা- 

(ক) উদ্দেশ্য পদ। 

(খ) বিধেয় পদ। এবং 

(গ) সংযোজক।

বচন মাত্রই সত্য কিংবা মিথ্যা হয়।

প্রশ্ন ২। বচনের দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ বচনের দুটি উদাহরণ নিম্নরূপ-

(ক) ‘ফুল হয় সুন্দর’- এটি একটি তর্কীয় বচন বা তর্কবাক্য। এখানে ‘ফুল’ হল ‘উদ্দেশ্য পদ’, ‘সুন্দর’ হল ‘বিধেয় পদ’ এবং ‘হয়’ হল সংযোজক।

(খ) ‘মানুষ নয় অমর’- এই বচনটিতে ‘মানুষ’ হল ‘উদ্দেশ্য পদ’, ‘অমর’ হল বিধেয় পদ এবং ‘নয়’ হল সংযোজক। প্রথম উদাহরণ- 

(ক) এ উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে স্বীকৃতি সম্বন্ধ। এবং দ্বিতীয় উদাহরণ- 

(খ) এ উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে অস্বীকৃতি সম্বন্ধ রয়েছে।

প্রশ্ন ৩। উদ্দেশ্য (Subject) কাকে বলে?

উত্তরঃ একটি তর্কবাক্যে যে পদ সম্বন্ধে কিছু বলা হয়, সেই পদের নাম হল উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন ৪। বিধেয় (Predicate) বলতে কী বোঝো? 

উত্তরঃ একটি বচনে উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয়, সেই পদের নাম হল বিধেয়।

প্রশ্ন ৫। সংযোজক (Capula) কী?

উত্তরঃ বচনের উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদের অভ্যন্তরীণ সম্বন্ধসূচক শব্দকে সংযোজক বলে।

প্রশ্ন ৬। গুণ (Quality) অনুসারে বচন কয়প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ গুণ অনুসারে শর্তহীন বা নিরপেক্ষ বচনকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা- 

(ক) সদর্থক বচন (affirmative) ও 

(খ) নঞর্থক বচন (negative)

প্রশ্ন ৭। সদর্থক (Affirmative) বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বচনে বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য পদের ক্ষেত্রে স্বীকৃত হয়, অর্থাৎ বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে কিছু স্বীকার করে, তাকে সদর্থক বচন বলে। যথা- ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’। এখানে বিধেয় পদ ‘মরণশীল’ উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ’-এর ক্ষেত্রে স্বীকৃত হয়েছে। 

প্রশ্ন ৮। নঞর্থক (Negative) বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বচনে বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য পদের সম্পর্কে অস্বীকৃত হয়, অর্থাৎ বিধের পদটি উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে কিছু অস্বীকার করে, তাকে নঞর্থক বচন বলে। যথা- ‘কোনো মানুষ নয় অমর’-এখানে বিধেয় ‘অমর’ পদটি উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ’-এর সম্পর্কে অস্বীকৃত হয়েছে।

প্রশ্ন ৯। পরিমাণ (Quantity) অনুসারে বচন কয়প্রকার ও কী কী? 

উত্তরঃ পরিমাণ অনুসারে শর্তহীন বা নিরপেক্ষ বচন দুই প্রকারের হয়। যথা- 

(ক) সামান্য বা সার্বিক বচন (universal) ও 

(খ) বিশেষ বচন (particular) 

প্রশ্ন ১০। সামান্য বা সার্বিক (Universal) বচন বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ যে তর্কীয় বচনে বিধেয় পদটি সমগ্র উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করে, তাঁকে ‘সামান্য বা সার্বিক (universal) বচন’ বলে। যেমন- 

(ক) সকল মানুষ হয় মরণশীল। 

(খ) কোনো মানুষ নয় অমর।

প্রথম উদাহরণ- 

(ক)-এ বিধেয় পদ ‘মরণশীল’ সমগ্র উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষকে স্বীকার করেছে। 

দ্বিতীয় উদাহরণ- 

(খ)-এ বিধেয় পদ ‘অমর’ সমগ্র উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ কে অস্বীকার করেছে।

প্রশ্ন ১১। বিশেষ (Particular) বচন বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ যে তর্কবাক্যে বিধেয় পদটি উদ্দেশ্যের কিছু অংশ সম্পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করে, সেই বচনকে ‘বিশেষ বচন’ বলে। যথা- 

(ক) কোনো কোনো মানুষ হয় জ্ঞানী। 

(খ) কোনো কোনো মানুষ নয় জ্ঞানী। 

প্রথম উদাহরণ- 

(ক)-এ বিধেয় পদ ‘জ্ঞানী’ উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ’-এর কিছু অংশের ক্ষেত্রে স্বীকৃত হয়েছে। 

দ্বিতীয় উদাহরণ- 

(খ)-এ বিধেয়’ পদ ‘জ্ঞানী’ উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ’-এর কিছু অংশ সম্পর্কে অস্বীকৃত হয়েছে।

প্রশ্ন ১২। সম্বন্ধ (Relation) অনুসারে বচন কয়প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য ও বিদেয় পদের মধ্যে সম্বন্ধের ভিত্তিতে বচনকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা- 

(ক) নিরপেক্ষ বা শর্তহীন বচন এবং (categorical) 

(খ) সাপেক্ষ বা শর্তাধীন বচন (conditional)

প্রশ্ন ১৩। নিরপেক্ষ (Categorical) বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্বন্ধ কোনো শর্তের ওপর নির্ভর করে না, সেই বচনকে ‘নিরপেক্ষ বচন’ বলে। এ জাতীয় বচনের সত্যতা কোনো শর্তসাপেক্ষ নয়। যেমন-

(ক) সকল মানুষ হয় মরণশীল। 

(খ) কোনো মানুষ নয় পূর্ণ। 

উদাহরণ- (ক) এবং উদাহরণ (খ) এ উদ্দেশ্যের সঙ্গে বিধেয় পদের সম্বন্ধ কোনো শর্তাধীন নয়।

প্রশ্ন ১৪। সাপেক্ষ (Conditional) বা শর্তাধীন বচন বলতে কী বোঝো? 

উত্তরঃ যে বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্বন্ধ কোনো শর্তের ওপর নির্ভর করে, সেই বচনকে সাপেক্ষ বচন বলা হয়। সাপেক্ষ বচনের সত্যতা বা অসত্যতা শর্তসাপেক্ষ। যেমন— 

(ক) যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে মাটি ভেজে। 

(খ) হয় সে আসবে, নয় আমি যাব।

প্রশ্ন ১৫। সাপেক্ষ (Conditional) বচন কয়প্রকার ও কী কী? 

উত্তরঃ সাপেক্ষ বচন দুই প্রকার। যথা— 

(ক) সকল্পক বা প্রাকল্পিক বচন। ও 

(খ) বিকল্পক বচন বা বৈকল্পিক বচন।

প্রশ্ন ১৬। সকল্পক বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে সাপেক্ষ বচনে শর্তটি ‘যদি … তাহলে …’ জাতীয় শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, তাকে সকল্পক বা প্রাকল্পিক বচন বলে। যথা— 

‘যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে মাটি ভেজে।’

প্রশ্ন ১৭। বিকল্পক বা বৈকল্পিক বচন বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ যে সাপেক্ষ বচনে শর্তটিকে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না করে দুটি বিকল্প বচন ব্যবহার করা হয়, তাকে ‘বিকল্পক বা বৈকল্পিক বচন’ বলে। এই বচনে ‘হয় …. নয় …’ শর্তটি আরোপ করা হয়। যথা—’হয় সে ভালো, নয় সে ধূর্ত’। বিকল্পক বচন সবসময়ই সদর্থক হয়ে থাকে। বিকল্পক বচনের ‘হয়’ এবং ‘নয়’কে বিকল্প বলে।

প্রশ্ন ১৮। গঠন (Composition or Structure) অনুযায়ী বচন কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ গঠন অনুযায়ী বচন দুই রকমের হয়। যথা— 

(ক) সরল বচন (simple)। এবং 

(খ) যৌগিক বচন (compound)।

প্রশ্ন ১৯। সরল বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বচনে একটিমাত্র উক্তি থাকে, তাকে সরল বচন বলে। যথা— সকল মানুষ হয় মরণশীল।

প্রশ্ন ২০। যৌগিক বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বচনে একাধিক উক্তি থাকে, তাকে যৌগিক বচন বলে। যেমন- যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে মাটি ভেজে।

প্রশ্ন ২১। নিশ্চয়তা (Modality) অনুযায়ী বচন কয়প্রকার ও কী কী? 

উত্তরঃ নিশ্চয়তা অনুযায়ী বচন তিন প্রকারের। যথা—

(ক) অনিবার্য (necessary) বচন। 

(খ) বিবরণাত্মক (assertory) বচন। ও 

(গ) সম্ভাব্য বচন (problematic)।

প্রশ্ন ২২। অনিবার্য (necessary) বচন কাকে বলে? 

উত্তরঃ যে বচনে নিশ্চয়তার মাত্রা সবথেকে বেশি থাকে তাকে অনিবার্য বচন বলে। যেমন— রামকে নিশ্চয়ই যেতে হবে, দুই আর দুই অবশ্যই চার হয় ইত্যাদি।

প্রশ্ন ২৩। বিবরণাত্মক ( assertory) বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ বিবরণাত্মক বচন হল সেই বচন, যাতে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদের সম্পর্ক অভিজ্ঞতা ভিত্তিক থাকে এবং অজ্ঞতার সীমাতেই আবদ্ধ থাকে। যেমন— ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’, ‘কোনো কোনো মানুষ হয় সৎ’ ইত্যাদি।

প্রশ্ন ২৪। সম্ভাব্য (problematic) বচন কাকে বলে? 

উত্তরঃ যে বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদের মধ্যকার সম্বন্ধ বস্তুর প্রকৃত স্বরূপ সম্বন্ধে আংশিক জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে সম্ভাব্য বচন বলে। এর ফলে এই বচন সম্ভাব্য হয় মাত্র। যেমন ‘সে হয়তো ভালো’, ‘রাম সম্ভবত সৎ’ ইত্যাদি।

প্রশ্ন ২৫। অর্থ ও তাৎপর্য (Import or Significance) অনুযায়ী বচনকে কয় শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে এবং কী কী? 

উত্তরঃ অর্থ ও তাৎপর্য অনুযায়ী বচনকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যথা— 

(ক) শাব্দিক বচন বা বিশ্লেষক বচন। 

(খ) যথার্থ বচন বা সংশ্লেষক বচন।

প্রশ্ন ২৬। শাব্দিক (Verbal) বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ শাব্দিক বা বিশ্লেষক বচন হচ্ছে সেই বচন যার বিধেয় উদ্দেশ্য পদের সমগ্র বা আংশিক লক্ষণার্থ উল্লেখ করে। যেমন— সকল মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব। 

এই জাতীয় বচনকে বিশ্লেষণাত্মক বচন, ব্যাখ্যামূলক বচন, মৌলিক বচন বলা হয়। বিশ্লেষক বলা হয় কারণ, এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যকে বিশ্লেষণ করলেই বিধেয়কে পাওয়া সম্ভব।

২৭। যথার্থ (Real) বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বচনে বিধেয় পদ উদ্দেশ্যের লক্ষণার্থের অন্তর্গত থাকে না এবং বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে নতুন তথ্য দেয়, তাকে যথার্থ বা সংশ্লেষক বচন বলে। যথা— ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব’, ‘গোরু হল গৃহপালিত জীব’ ইত্যাদি । 

প্রশ্ন ২৮। বিশিষ্ট বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বচনের উদ্দেশ্য একটি বিশিষ্ট পদ, তাকে ‘বিশিষ্ট বচন’ বলে। যেমন— সক্রেটিস হন একজন দার্শনিক।

প্রশ্ন ২৯। ব্যতিরেকী বচনে কী ধরনের শব্দ থাকে? উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বোঝাও।

উত্তরঃ ব্যতিরেকী বচনে ‘মাত্র’, ‘কেবলমাত্র’, ‘একমাত্র’ জাতীয় শব্দ থাকে। যেমন- কেবল জ্ঞানী ব্যক্তিরাই হন দার্শনিক। এই বচন দুটি বচনকে প্রকাশ করে। যেমন-

(ক) কোনো কোনো জ্ঞানী ব্যক্তি হন দার্শনিক। 

(খ) কোনো অ-জ্ঞানী ব্যক্তিরা নয় দার্শনিক।

প্রশ্ন ৩০। কী জাতীয় শব্দ থাকলে আমার সেই বচনকে ব্যতীতিক বচন বলব? উদাহরণের সাহায্যে বোঝাও।

উত্তরঃ ‘ব্যতীত’, ‘ছাড়া’ জাতীয় শব্দ থাকলে আমরা সেই বচনকে ব্যতীতিক বচন বলব। যেমন— পারদ ছাড়া সকল ধাতুই কঠিন। 

এই বচনে দুটি বচনের সংযোগ ঘটেছে।

(ক) সকল ধাতুই কঠিন।

(খ) পারদ কঠিন নয়।

রচনাভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বচন বলতে কী বোঝো? বচনের গঠন সম্পর্কে উদাহরণসহ আলোচনা করো।

উত্তরঃ দুটি পদের মধ্যে কোনো সম্বন্ধের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতিকে বচন বলে। বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় দুটি পদ থাকে এবং এই দুটি পদের মধ্যে সম্বন্ধসূচক শব্দও থাকে। কাজেই প্রতিটি বচনে তিনটি অংশ থাকে; যথা—

(ক) উদ্দেশ্য পদ। 

(খ) বিধেয় পদ। ও 

(গ) সংযোজক।

বচন মাত্রই সত্য কিংবা মিথ্যা হয়।

তর্কবাক্য বা তর্কীয় বচনে যে পদ সম্বন্ধে কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য’ বলে; আর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয়, তাকে ‘বিধেয়’ বলে। বচনের উদ্দেশ্য পদ ও বিধেয় পদের মধ্যে সম্বন্ধসূচক চিহ্ন বা শব্দটিকে ‘সংযোজক’ বলে। বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় দুটি পদ, কিন্তু সংযোজক কোনো পদ নয়। সংযোজক সব সময় ‘ভূ’ ধাতুর বর্তমানকালের রূপে থাকে এবং তা সদর্থক ও নঞর্থক দুই-ই হতে পারে। 

উদাহরণ: 

(ক) ‘মানুষ হয় মরণশীল’। এই বচনটিতে ‘মানুষ’ উদ্দেশ্য পদ। কেননা ‘মানুষ’ সম্পর্কে কিছু বলা হয়েছে। ‘মরণশীল’ বিধেয় পদ, কারণ ‘মরণশীল’ কথাটি ‘মানুষ’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। ‘হয়’ ক্রিয়াপদটি সংযোজক, কারণ এই শব্দটি ‘মানুষ’ ও ‘মরণশীল’-এর মধ্যে সম্বন্ধ বোঝাচ্ছে।

(খ) ‘মানুষ নয় অমর’– এই বচনটিতে ‘মানুষ’ হল উদ্দেশ্য পদ, ‘অমর’ হল বিধেয় পদ এবং ‘নয়’ হল সংযোজক।

বচনের বিন্যাস: উদ্দেশ্য – সংযোজক— বিধেয়’ এই আকারে বচন গঠন করা হয়। 

প্রথম উদাহরণ—

(ক) এ উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে স্বীকৃতি সম্বন্ধ। এবং

দ্বিতীয় উদাহরণ—

(খ) এ উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে অস্বীকৃতি সম্বন্ধ রয়েছে। অর্থাৎ, সদর্থক বচনে স্বীকৃতি সম্বন্ধ এবং নঞর্থক বচনে অস্বীকৃতি সম্বন্ধ থাকে এবং সংযোজক এই সম্বন্ধকে প্রকাশ করে।

প্রশ্ন ২। সংযোজকের প্রকৃতি সম্বন্ধে আলোচনা করো।

উত্তরঃ বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যকার সম্বন্ধসূচক শব্দ বা চিহ্নকে সংযোজক বলে। সংযোজকের প্রকৃতি নিম্নরূপ:

(ক) সংযোজক কোনো পদ নয়, শুধুমাত্র শব্দ।

(খ) পরম্পরাগত যুক্তিবিজ্ঞানে যে বচন ব্যবহার করা হয়, তাতে সংযোজকটিকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়।

(গ) সংযোজক সবসময় ‘হওয়া’ ক্রিয়া (To be verb)-র বর্তমানকালের রূপ হবে, অর্থাৎ ‘ভূ’ ধাতুর রূপ হতেই হবে।

(ঘ) সংযোজক সদর্থক, নঞর্থক দুই রকমেরই হয়। বচনে যদি বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদের সম্পর্কে স্বীকৃত হয়, তাহলে সংযোজক সদর্থক হয়। কিন্তু বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদের ক্ষেত্রে অস্বীকৃত হলে, সংযোজকটি নঞর্থক হয়।

(ঙ) সংযোজক সদর্থক হলে এবং বিধেয়ের সঙ্গে নঞর্থক চিহ্ন যুক্ত থাকলে বচনটি সদর্থক হয়।

(চ) সংযোজক নিম্নোক্ত বিভিন্ন মূর্তি ধারণ করতে পারে— ‘হয়’, ‘নয়’, ‘হলুম’, ‘হলুম না’, ‘হই’, ‘হই না’, ‘হলেন’, হলেন না’, ‘হন’, ‘হন না’, ‘হও’, ‘হও না’, ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৩। সংযোজকের প্রকৃতি সম্বন্ধে তর্কবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন মতবাদগুলি উল্লেখ করো। সংযোজক কী সর্বদাই সদর্থক হবে?

উত্তরঃ সংযোজকের স্বরূপ বা প্রকৃতি ঠিক কীরকম হওয়া উচিত এ বিষয়ে কিছু মতভেদ আছে। মতভেদের কেন্দ্রে প্রধানত দুটি প্রশ্ন: 

(ক) সংযোজক কি শুধুমাত্র ‘ভূ’ ধাতুর লট বিভক্তি, অর্থাৎ বর্তমানের কালের রূপ হবে?

(ক) প্রথম প্রশ্নের উত্তরে হ্যামিলটন্, ম্যানসেল, ফাওলার প্রমুখ তর্কবিজ্ঞানীরা বলেন যে, সংযোজক সবসময় ‘ভূ’ ধাতুর বর্তমানকালের রূপ হবে। কিন্তু জে. এস. মিল বলেন যে, সংযোজক অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তিনটিকালেই হতে পারে।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, নিগমনাত্মক তর্কবিজ্ঞানে সময়ের বিষয়টি আলোচ্য বা বিবেচ্য নয়। সংযোজক সময়-বর্জিত-সম্বন্ধ প্রকাশ করে। বচনে বিধেয় পদে কাল বা সময়সূচক শব্দ থাকে। সংযোজকটি নিছক সম্বন্ধ নির্ণয়কারী সংকেত বলেই বরাবর এটি ‘ভূ’ ধাতুর ‘লট্’ বিভক্তিতে থাকা উচিত।

(খ) দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে হবস এবং অন্যান্য তর্কবিজ্ঞানীরা বলেন, সংযোজক সবসময়েই সদর্থক হবে। অর্থাৎ সংযোজক ‘হয়’ রূপে ব্যবহৃত হবে, ‘নয়’ রূপে নয়।

এই বক্তব্যটি সমর্থনযোগ্য নয়, কারণ বচনে বিধেয় পদ উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে স্বীকৃত বা অস্বীকৃত হয়। এই স্বীকৃত বা অস্বীকৃতি প্রত্যক্ষভাবে প্রকাশ পায় সংযোজকের মাধ্যমে। অতএব, সংযোজক সদর্থক ও নঞর্থক দুই রূপেই থাকতে পারে।

প্রশ্ন ৪। ব্যাকরণসম্মত বাক্য এবং যুক্তিবিজ্ঞানের বচনের মধ্যে পার্থক্য দেখাও। 

অথবা,

‘প্রতিটি বচন বাক্য, কিন্তু প্রতিটি বাক্য বচন নয়। ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ যুক্তিবিজ্ঞানের বচন এবং ব্যাকরণের বাক্যের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। যেমন—

(ক) বচনের তিনটি অংশ থাকে—উদ্দেশ্য, সংযোজক এবং বিধেয়। কিন্তু বাক্যের দুটি অংশ—উদ্দেশ্য এবং বিধেয়।

(খ) বচনে গুণ ও পরিমাণ স্পষ্ট করে লিখতে হয়। কিন্তু বাক্যে তার প্রয়োজন হয় না।

(গ) বচন সবসময় বর্তমানকালে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাক্য অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ যে-কোনো কালেই ব্যবহৃত হতে পারে।

(ঘ) কেবল ঘোষক বাক্য বচন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ব্যাকরণে ঘোষক বাক্য ছাড়াও আদেশমূলক বাক্য, প্রশ্নবোধক বাক্য, বিস্ময়সূচক বাক্য, অনুরোধসূচক বাক্য, ইচ্ছামূলক বাক্যের ব্যবহার হয়।

(ঙ) বচন মাত্রেই সত্য কিংবা মিথ্যা হয়। কিন্তু বাক্যমাত্রই সত্য কিংবা মিথ্যা বলে গণ্য হয় না, শুধু ঘোষক বাক্যই সত্য কিংবা মিথ্যা হয়।

(চ) যুক্তিবিজ্ঞানের বচনের নির্দিষ্ট রূপ হল— ‘উদ্দেশ্য— সংযোজক— বিধেয়’ ব্যাকরণের অধিকাংশ বাক্যকে নিয়ে তর্কবিদ্যায় আলোচনা করার আগে বাক্যটিকে তর্কীয় বচনে রূপান্তরিত করতে হয়।

অতএব বচন এবং বাক্য সমার্থক নয়। প্রতিটি বচন বাক্য, কিন্তু প্রতিটি বাক্য বচন নয়। যদিও প্রত্যেক তর্কীয় বচন ব্যাকরণের ‘বাক্য’ হতে বাধ্য, তবুও ব্যাকরণের প্রত্যেক বাক্য ‘তর্কীয় বচন’ হতে বাধ্য নয়।

প্রশ্ন ৫। গুণ ও পরিমাণের মিশ্র নীতি অনুসারে বচনের শ্রেণিবিভাগ করো। উদাহরণসহ সেই শ্রেণিগুলিকে ব্যাখ্যা করো। 

অথবা,

বচনের চতুর্বর্গীয় পরিকল্পনা বা বিভাজন ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ গুণ অনুসারে, নিরপেক্ষ বচনকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা— 

(ক) সদর্থক বচন। এবং 

(খ) নঞর্থক বচন। 

আবার পরিমাণ অনুসারে, নিরপেক্ষ বচন দুই প্রকারের হয়। যথা—

(ক) সামান্য বা সার্বিক বচন। এবং 

(খ) বিশেষ বচন।

পরম্পরাগত যুক্তিবিজ্ঞানী অ্যারিস্টটলের মতে, গুণ ও পরিমাণের যুগ্ম বা সংযুক্ত বা মিশ্র নীতি অনুসারে নিরপেক্ষ বচনে নিম্নোক্ত চারভাগে ভাগ করা যায়:

(ক) সামান্য সদর্থক বচন (universal affirmative)

(খ) সামান্য নঞর্থক বচন (universal negative) 

(গ) বিশেষ সদর্থক বচন (particular affirmative) 

(ঘ) বিশেষ নঞর্থক বচন (particular negative)

(ক) সামান্য সদর্থক বচন: যে বচনে বিধেয় পদটি সমগ্র উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে কিছু স্বীকার করে, তাকে সামান্য সদর্থক বচন বলে। যেমন—’সকল ফুল হয় সুন্দর’।সামান্য সদর্থক বচনের প্রতীকাত্মক বা সাংকেতিক নাম হল ‘A’।

(খ) সামান্য নঞর্থক বচন: যে বচনে বিধেয় পদটি সমগ্র উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে কিছু অস্বীকার করে, সেই বচনকে সামান্য নঞর্থক বচন বলে। যেমন— ‘কোনো শিশু নয় বৃদ্ধ’। নঞর্থক বচনের প্রতীকাত্মক বা সাংকেতিক নাম হল ‘E’।

(গ) বিশেষ সদর্থক বচন: যে বচনে বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য পদের কিছু অংশ সম্পর্কে স্বীকার করে, সেই বচনটিকে বিশেষ সদর্থক বচন বলা হয়। যেমন—’কোনো কোনো ফুল হয় লাল’।

বিশেষ সদর্থক বচনের প্রতীকাত্মক বা সাংকেতিক নাম হল – ‘I’।

(ঘ) বিশেষ নঞর্থক বচন: যে বচনে বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য পদের কিছু অংশ সম্পর্কে অস্বীকার করে, সেই বচনটিকে বিশেষ নঞর্থক বচন বলে। যেমন— “কোনো কোনো ফুল নয় লাল’।

বিশেষ নঞর্থক বচনের প্রতীকাত্মক বা সাংকেতিক নাম হল—‘O’। 

এই বচন চারটির উদ্দেশ্য পদের পরিবর্তে ‘S’ বর্ণপ্রতীক, বিধেয় পদের পরিবর্তে ‘P’ বর্ণপ্রতীক ব্যবহার করলে A, E, I, O বচনের আকার নিম্নরূপ হয়:

(A) সামান্য সদর্থক বচন– সকল S হয় P

(E) সামান্য নঞর্থক বচন— কোনো S নয় P 

(I) বিশেষ সদর্থক বচন— কোনো কোনো S হয় P

(O) বিশেষ নঞর্থক বচন— কোনো কোনো S নয় P

চার ধরনের বচনের চারটি অংশ থাকে — পরিমাণ-চিহ্ন, উদ্দেশ্য, সংযোজক ও বিধেয় ৷

নিরপেক্ষ বচনের এই চার রকমের অর্থাৎ A, E, I, O বিভাগকে বচনের চতুর্বর্গ পরিকল্পনা বা বিভাজন বলে।

প্রশ্ন ৬। সাপেক্ষ বচন কয়প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ সাপেক্ষ বচন দুই প্রকার — 

(ক) সকল্পক বা প্রাকল্পিক বচন। ও 

(খ) বিকল্পক বা বৈকল্পিক বচন।

(ক) সকল্পক বা প্রাকল্পিক বচন: যে সাপেক্ষ বচনে শর্তটি ‘যদি … তাহলে …’ জাতীয় শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, তাকে সকল্পক বা প্রাকল্পিক বচন বলে। যথা—’যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে মাটি ভেজে’। সকল্পক বচনের দুটি অংশ—একটির নাম পূর্ববর্তী বা পূর্বগ এবং অপরটির নাম পরবর্তী বা অনুবর্তী বা অনুগ। সল্পক বচনে ‘যদি’ অংশটি শর্ত বোঝায় এবং ‘তাহলে’ অংশটি মূল বক্তব্য বোঝায়। প্রাকল্পিক বচনের যে অংশে শর্তটি বর্তমান, সেই অংশকে পূর্ববর্তী অংশ বা ‘পূর্বগ’ বলা হয় এবং যে অংশে মূল বক্তব্যটি বর্তমান সেই অংশকে অনুবর্তী বা ‘অনুগ’ বলা হয়।

সকল্পক বা প্রাকল্পিক বচনে পরবর্তী অংশের গুণ অনুসারে সমগ্র বচনটির গুণ ধরা হয়।

(খ) বিকল্পক বা বৈকল্পিক বচন: যে সাপেক্ষ বচনে শর্তটিকে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না করে দুটি বিকল্প বচন ব্যবহার করা হয়, তাকে ‘বিকল্পক বা বৈকল্পিক’ বচন বলে। যথা—’হয় সে ভালো নয় সে ধূর্ত’। বিকল্পক বচন সবসময়ই সদর্থক হয়ে থাকে। বিকল্পক বচনের ‘হয়’ এবং ‘নয়’কে ‘বিকল্প’ বলে।

সংকল্পক বচনের পরিমাণ পূর্ববর্তী অংশের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ পূর্ববর্তী অংশে সামান্য বচন হলে সমগ্র বচনটি বিশেষ বচন হবে। কিন্তু বিকল্পক বচন সামান্য বা বিশেষ দু’ ধরনেরই হতে পারে।

ভাগ – ৩ সাধারণ বাক্যের তর্কীয় বচনে রূপান্তর

ব্যাকরণসম্মত বাক্যের তর্কীয় বচনে রূপান্তরের নিয়ম

১। যদি কোনো বাক্যে ‘সকল’, ‘প্রত্যেক’, সমস্ত’, ‘যেকোনো’, যে কেউ’, ‘সব’, ‘সর্বপ্রকার’, ‘সর্বদা’, ‘সর্বত্র’, ‘সম্পূর্ণরূপে’, ‘অপরিহার্যভাবে’ ইত্যাদি শব্দ থাকে এবং বাক্যটি সদর্থক হয়, তাহলে সেই বাক্যটিকে ‘A’ বচনে রূপান্তরিত করতে হবে। 

উদাহরণ:

ব্যাকরণসম্মত বাক্যতর্কীয় বচনে রূপান্তরিত রূপ
(ক) সমস্ত ধার্মিক ব্যক্তিই সৎ।(A) সকল ধার্মিক ব্যক্তি হন সৎ।
(খ) সকল ছাত্র কলেজে এসেছিল।(A) সকল ছাত্র হয় এমন ব্যক্তি যারা কলেজে এসেছিল।
(গ) যে-কোনো শিশু খেলায় যোগ দিতে পারে।(A) সকল শিশু হয় এমন যারা খেলায় যোগ দিতে পারে।

২। যদি কোনো বাক্য ‘সকল’, ‘প্রত্যেক’, ‘সমস্ত’, ‘যে-কোনো’, ‘যে কেউ’, ‘সব’, ‘সর্বপ্রকার’, ‘সর্বদা’, ‘সর্বত্র’, ‘সম্পূর্ণরূপে’, ‘অপরিহার্যভাবে’ ইত্যাদি শব্দযুক্ত হয় এবং নঞর্থক হয়, তাহলে সেই বাক্যটি ‘O’ বচন রূপে বিবেচিত হবে।

ব্যাকরণসম্মত বাক্যতর্কীয় বচনে রূপান্তরিত রূপ
(ক) সকল দার্শনিক উন্মাদ নয়।(O) কোনো কোনো দার্শনিক নয় উন্মাদ।
(খ) প্রত্যেকটা চকচকে জিনিস সোনা নয়।(O) কোনো কোনো চকচকে জিনিস নয় সোনা।
(গ) সব দুর্ঘটনা মারাত্মক হয় না।(O) কোনো কোনো দুর্ঘটনা নয় মারাত্মক।

৩। ‘প্রায় সব’, ‘প্রায় সকল’, ‘কয়েকটি’, ‘কিছু কিছু’, ‘কতিপয়’, ‘কোনো কোনো’, ‘অনেক’, ‘অনেকেই’, ‘বেশিরভাগ’, ‘কয়েকজন’, ‘কয়েকটি’, ‘বহু’, ‘একটা ছাড়া’ সব’, ‘মুষ্টিমেয়’, ‘সাধারণত’, ‘প্রায়ই’, ‘প্রায় সকলেই’, ‘সম্ভবত’, ‘প্রায় সব সময়’, ‘কখনো-কখনো’, ‘অনেক সময়’, ‘সংখ্যা’, ‘ভগ্নাংশ’, ‘শতকরা’ ইত্যাদি শব্দযুক্ত সব বাক্যই ‘বিশেষ বাক্য।’ যদি সেই বাক্যগুলি সদর্থক হয়; তাহলে তাদের ‘বিশেষ সদর্থক বচন’ অর্থাৎ ‘I’ বচনে রূপান্তরিত করতে হয়। অন্যদিকে, যদি বাক্যগুলি নঞর্থক নয়, তাহলে তাদের ‘বিশেষ নঞর্থক বচন’ অর্থাৎ ‘O’ বচনে পরিবর্তিত করতে হবে।

উদাহরণ:

ব্যাকরণসম্মত বাক্যতর্কীয় বচনে রূপান্তরিত রূপ
(ক) বেশিরভাগ ছাত্রই তর্কবিজ্ঞান বুঝতে পারে।(I) কোনো কোনো ছাত্র হয় এমন ব্যক্তি যারা তর্কবিজ্ঞান বুঝতে পারে।
(খ) প্রায় সকল মানুষ ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন।(I) কোনো কোনো মানুষ হন এমন ব্যক্তি যারা ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন।
(গ) বহু লোকই সত্যবাদী নয়।(O) কোনো কোনো লোক নয় সত্যবাদী।
(ঘ) দশজন সদস্য ভোট দিতে যাননি।(O) কোনো কোনো সদস্য নয় এমন ব্যক্তি যারা ভোট দিতে গিয়েছিলেন।

৪। যদি কোনো সদর্থক বাক্যে ‘ক্বচিৎ’, ‘কদাচিৎ’, ‘কালেভদ্রে’, ‘প্রায় নাই’, ‘খুব কম’ ইত্যাদি শব্দ থাকে, তাহলে সেই বাক্যকে ‘O’ বচনে রূপান্তরিত করতে হয়। অন্যদিকে, যদি কোনো নঞর্থক বাক্যে ‘ক্বচিৎ’, ‘কদাচিৎ’, ‘প্রায় নাই’, ‘খুব কম’ ইত্যাদি শব্দ উপস্থিত থাকে, তাহলে তাকে ‘I’ বচনে রূপান্তরিত করতে হয়। কারণ, উপরোক্ত শব্দসমূহ নেতিবাচক (নঞর্থক) অর্থ বহন করে। 

উদাহরণ:

ব্যাকরণসম্মত বাক্যতর্কীয় বচনে রূপান্তরিত রূপ
(ক) ধার্মিক ব্যক্তিরা কদাচিৎ সুখী হয়।(O) কোনো কোনো ধার্মিক ব্যক্তিরা নয় সুখী।
(খ) খুব কম ছাত্রই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।(O) কোনো কোনো ছাত্র নয় এমন যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।
(গ) বৈজ্ঞানিকরা ক্বচিৎ কবি হয় না।(I) কোনো কোনো বৈজ্ঞানিকরা হন কবি।

৫। ব্যতিরেকী বচন: ‘মাত্র’, ‘কেবলমাত্র’, ‘কেবল’, ‘একমাত্র’, ‘শুধুমাত্র’ ইত্যাদি শব্দযুক্ত বাক্যগুলিকে ব্যতিরেকী (exclusive) তর্কবাক্য বলে। উপরোক্ত শব্দযুক্ত বাক্যগুলিকে ‘A’ অথবা ‘E’ অথবা ‘I’ বচনে রূপান্তরিত করা যায়। ‘A’ বচনে রূপান্তরিত করতে হলে এইসব বাক্যের উদ্দেশ্যপদ তর্কীয় বচনে বিধেয় হবে এবং বিধেয় পদ তর্কীয় বচনে উদ্দেশ্য পদ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। 

উদাহরণ: 

(ক) কেবল ধার্মিকরাই বিনয়ী। (ব্যাকরণসম্মত বাক্য) (A) সকল বিনয়ীরা হন ধার্মিক। (তর্কীয় বচন) আবার ‘E’ বচনে রূপান্তরিত করতে হলে প্রদত্ত বাক্যের উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধপদ তর্কীয় বচনে উদ্দেশ্য হিসেবে ব্যবহৃত হবে, কিন্তু পদটি তর্কীয় বচনে একই থাকবে।

উদাহরণ:

ব্যাকরণসম্মত বাক্য: কেবল ধার্মিকরাই বিনয়ী।

তর্কীয় বচন: (E) কোনো অ-ধার্মিকরা নয় বিনয়ী। 

কিন্তু ব্যতিরেকী বাক্যকে ‘I’ বচনে রূপান্তরিত করতে হলে প্রদত্ত বাক্যেরও তর্কীয় বচনের উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদ একই হবে। 

উদাহরণ: ব্যাকরণসম্মত বাক্য — কেবল ধার্মিকরাই বিনয়ী। 

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো ধার্মিকরা হয় বিনয়ী। সাধারণত, ব্যতিরেকী বাক্যকে ‘A’ বচনে রূপান্তরিত করা হয়ে থাকে।

৬। যদি কোনো বাক্যে শুধুমাত্র ‘না’, ‘নয়’, ‘কখনওনা’, ‘কিছুই নয়’, ‘কোথাও নহে’, ‘কোনোভাবেই নয়’ ইত্যাদি শব্দ থাকে, তাহলে সেই বাক্যকে ‘E’ বচনে রূপান্তরিত করা হয়। 

উদাহরণ:

(ক) ব্যাকরণসম্মত বাক্য — ত্রিভুজ কখনও বর্গক্ষেত্র হয় না। 

তর্কীয় বচন — (E) কোনো ত্রিভুজ নয় বর্গক্ষেত্র। 

(খ) ব্যাকরণসম্মত বাক্য — কেহই সুখী নয়।

তর্কীয় বচন — কোনো ব্যক্তি নয় সুখী। (E)

৭। বিশিষ্ট বচনে (Singular proposition): এই বচনে যদি উদ্দেশ্য পদটি নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায়, তাহলে তাকে সামান্য বচন বলে ধরতে হবে। অপরপক্ষে, উদ্দেশ্য পদটি যদি অ-নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায়, তখন তাকে বিশেষ বচন হিসেবে ধরতে হবে। সেসব ক্ষেত্রে সদর্থক বা নঞর্থক চিহ্ন অনুযায়ী সেইসব বচন সদর্থক বা নঞর্থক হবে। 

উদাহরণ:

(ক) প্রদত্ত বাক্য: শেক্সপিয়র একজন বিখ্যাত নাট্যকার।

তর্কীয় বচন: (A) শেক্সপিয়র হন একজন বিখ্যাত নাট্যকার। 

(খ) প্রদত্ত বাক্য: শংকরদেব রাজনীতিক ছিলেন না।

তর্কীয় বচন: (E) শংকরদেব নন এমন ব্যক্তি যিনি রাজনীতিক ছিলেন।

(গ) প্রদত্ত বাক্য: কোনো একটি ধাতু কঠিন পদার্থ নয়। 

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো ধাতু নয় কঠিন পদার্থ।

৮। যদি কোনো বাক্যের উদ্দেশ্য পদটি নামবাচক বিশেষ্য, সর্বনাম ও গুণবাচক পদ হয়, তাহলে সেই বাক্যকে সামান্য পদ বলে ধরতে হবে। প্রদত্ত বাক্যটি সদর্থক না নঞর্থক সেই অনুযায়ী বচনটি সদর্থক বা নঞর্থক হবে।

উদাহরণ: 

(ক) প্রদত্ত বাক্য: গৌহাটি একটি বড় নগর।

তর্কীয় বচন: (A) গৌহাটি হয় একটি বড় নগর।

(খ) প্রদত্ত বাক্য: সে সুখী নয়। 

তর্কীয় বচন: (E) সে নয় সুখী।

(গ) প্রদত্ত বাক্য: দরিদ্রতা একটি অভিশাপ।

তর্কীয় বচন: (A) দরিদ্রতা হয় একটি অভিশাপ। 

৯। ব্যতীতিক বচন: ‘ব্যতীত’, ‘ছাড়া’, ‘বিনা’ ইত্যাদি শব্দযুক্ত বাক্যে যাকে বাদ দেওয়া হয়, তা যদি নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা বস্তু হয়, তাহলে তাকে সামান্য বচনে আর অনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা বস্তু হলে, তাকে বিশেষ বচনে রূপান্তরিত করতে হয়। 

উদাহরণ:

(ক) প্রদত্ত বাক্য: পারদ ব্যতীত সকল ধাতুই কঠিন।

তর্কীয় বচন: (A) সকল ধাতু পারদ ছাড়া হয় কঠিন।

(খ) প্রদত্ত বাক্য: একটি ছাড়া সকল ধাতুই কঠিন পদার্থ।

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো ধাতু হয় কঠিন পদার্থ । 

১০। এমন কতকগুলি ‘প্রশ্নবোধক’, ‘আদেশমূলক’ বা ‘ইচ্ছামূলক’ বাক্য আছে, যার উত্তর তাদের ভিতরই থাকে। 

উদাহরণ:

(ক) প্রদত্ত বাক্য: এমন কোনো মা আছেন কি যিনি তাঁর সন্তানকে ভালোবাসেন না? 

তর্কীয় বচন: (A) সকল মা হন এমন ব্যক্তি যিনি তাঁর সন্তানকে ভালোবাসেন।

(খ) প্রদত্ত বাক্য: বাঃ! কী সুন্দর বাগান!

তর্কীয় বচন : (A) বাগানটি হয় সুন্দর। 

১১। কোনো বাক্যে যদি পরিমাণ চিহ্ন না থাকে, কোনো স্থান বা কালের উল্লেখ না থাকে, তাহলে তাদের অর্থ বুঝে তর্কীয় বচনে রূপান্তরিত করতে হয়। 

উদাহরণ:

(ক) প্রদত্ত বাক্য: মানুষ নয় সর্বজ্ঞ।

তর্কীয় বচন: (E) কোনো মানুষ নয় সর্বজ্ঞ।

(খ) প্রদত্ত বাক্য: ফলগুলো পাকা নয়। 

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো ফল নয় পাকা।

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

নিম্নলিখিত বাক্যগুলিকে তর্কবিজ্ঞানসম্মত বচনে রূপান্তরিত করো:

১। সকল রাজহাঁস সাদা হয় না।

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো রাজহাঁস নয় সাদা।

২। প্রত্যেক প্রাণী মাংসাশী নয়।

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো প্রাণী নয় মাংসাশী।

৩। লেখকরা বোকা নয়।

তর্কীয় বচন: (E) কোনো লেখকরা নয় বোকা। 

৪। সৎ ব্যক্তি ব্যতীত কোনো মানুষই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

তর্কীয় বচন: (O) কোনো মানুষ সৎ ব্যক্তি ছাড়া নয় বিশ্বাসযোগ্য। 

৫। কেবল শিক্ষিত ব্যক্তিরাই স্বাক্ষর।

তর্কীয় বচন: (A) সকল স্বাক্ষর ব্যক্তিরা হয় শিক্ষিত।

৬। প্রত্যেক মানুষের ভুল হয়।

তর্কীয় বচন: (A) সকল মানুষের হয় ভুল। 

৭।মানুষ কদাচিৎ শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়। 

তর্কীয় বচন: (O) কোনো মানুষ নয় শারীরিক প্রতিবন্ধী।

৮। কেবল প্রাপ্তবয়স্করাই ভোট দিতে পারে।

তর্কীয় বচন: (A) সকল ব্যক্তি যারা ভোট দিতে পারে হয় প্রাপ্তবয়স্ক। 

৯। জ্ঞানী ব্যক্তিরাই সাধারণত নরমপন্থী হন। 

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো জ্ঞানী ব্যক্তিরা হন নরমপন্থী।

১০। বেশিরভাগ ছাত্ররাই ফুটবল খেলায় পারদর্শী নয়। 

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো ছাত্ররা নয় ফুটবল খেলার পারদর্শী।

১১। কেবল অশিক্ষিত ব্যক্তিরাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়।

তর্কীয় বচন: (A) সকল ব্যক্তি যারা কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয় অশিক্ষিত।

১২। দয়া মহৎ গুণ।

তর্কীয় বচন: (A) দয়া হয় মহৎ গুণ।

১৩। প্রত্যেক ব্যাধি অনারোগ্য হয় না। 

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো ব্যাধি নয় অনারোগ্য।

১৪। শিক্ষকরা সাধারণত জ্ঞানী হন।

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো শিক্ষকেরা হন জ্ঞানী। 

১৫। অসন্তুষ্ট ব্যক্তিরা কি করে সুখী হবে?

তর্কীয় বচন: (E) কোনো অসন্তুষ্ট ব্যক্তি নয় সুখী।

১৬। কে অসৎ ব্যক্তিকে ভালোবাসে? 

তর্কীয় বচন: (E) কোনো অসৎ ব্যক্তি নয় এমন যে ভালোবাসার যোগ্য।

১৭। খুব কম মানুষই যুক্তিপূর্ণ কথা বলে। 

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো মানুষ নয় এমন ব্যক্তি যে যুক্তিপূর্ণ কথা বলে।

১৮। বিদ্বান সর্বত্র পূজিত।

তর্কীয় বচন: (A) সকল বিদ্বান ব্যক্তি হন পূজিত।

১৯। সকল ছাত্র সমান পারদর্শী হয় না।

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো ছাত্র নয় সমান পারদর্শী। 

২০। বেশিরভাগ মানুষ সভায় অনুপস্থিত ছিল।

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো মানুষ হয় তারা যারা সভায় অনুপস্থিত ছিল। 

২১। কেবল পুরুষেরাই মসজিদে প্রবেশ করতে পারে।

তর্কীয় বচন: (A) সকল ব্যক্তি যারা মসজিদে প্রবেশ করতে পারে হয় পুরুষ। 

২২। মানুষই একমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণী। 

তর্কীয় বচন: (A) সকল বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণী হয় মানুষ।

২৩। এভারেস্ট পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ। 

তর্কীয় বচন: (A) এভারেস্ট হয় পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ।

২৪। প্রায় সব ভারতীয়রা ধার্মিক। 

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো ভারতীয়রা হন ধার্মিক। 

২৫। ত্রিভুজ কখনও বর্গক্ষেত্র হয় না।

তর্কীয় বচন: (E) কোনো ত্রিভুজ নয় বর্গক্ষেত্র।

২৬। বর্ণভেদ কখনও ঐক্যসাধন করতে পারে না।

তর্কীয় বচন: (E) কোনো বর্ণভেদ নয় এমন যা ঐক্যসাধন করতে পারে ।

২৭। কেবল জ্ঞানীরাই শান্তি স্থাপন করতে পারেন। 

তর্কীয় বচন: (A) সকল ব্যক্তি যারা শান্তিস্থাপন করতে পারেন হন জ্ঞানী।

২৮। প্রত্যেক মানুষ মরণশীল। 

তর্কীয় বচন: (A) সকল মানুষ হয় মরণশীল।

২৯। সাধুব্যক্তিরা কদাচিৎ সুখী হয়। 

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো সাধুব্যক্তিরা নয় সুখী।

৩০। একমাত্র সাধুব্যক্তিরা সুখী হয়। 

তর্কীয় বচন: (A) সকল সুখী ব্যক্তি হয় সাধু।

৩১। একমাত্র স্নাতকরাই এই পদটির জন্য দরখাস্ত করতে পারে। 

তর্কীয় বচন: (A) সকল ব্যক্তি যারা এই পদটির জন্য দরখাস্ত করতে পারে হয় স্নাতক।

৩২। প্রত্যেক বিদ্যার্থী মূলত ভালো।

তর্কীয় বচন: (A) সকল বিদ্যার্থী হয় মূলত ভালো।

৩৩। সব ভালো লেখক ভালো বক্তা নয়। 

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো ভালো লেখক নয় ভালো বক্তা।

৩৪। কেবল ধার্মিকরাই সুখী।

তর্কীয় বচন: (A) সকল সুখী ব্যক্তি হয় ধার্মিক।

৩৫। অসৎ ব্যক্তিরা কখনো-কখনো জীবনে সফলতা লাভ করে। 

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো অসৎ ব্যক্তিরা হয় এমন যারা জীবনে সফলতা লাভ করে।

৩৬। কোনো মানুষই মূর্খকে ভালোবাসে না। 

তর্কীয় বচন: (E) কোনো মানুষ নয় এমন যারা মূর্খকে ভালোবাসে।

৩৭। প্রশংসা করা সকল ব্যক্তি বন্ধু নয়। 

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো প্রশংসা করা ব্যক্তি নয় বন্ধু।

৩৮। কেবল শীতপ্রধান দেশই মদ তৈরি করে।

তর্কীয় বচন: (A) সকল দেশ যারা মদ তৈরি করে হয় শীতপ্রধান দেশ। 

৩৯। খুব কম লোকই প্রলোভনমুক্ত হয়।

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো লোক নয় প্রলোভনমুক্ত।

৪০। একমাত্র হিন্দুরাই শিবপূজা করে।

তর্কীয় বচন: (A) সকল ব্যক্তি যারা শিবপূজা করে হয় হিন্দু।

৪১। অধিকাংশ সুনাগরিকেরাই দেশপ্রেমিক।

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো সুনাগরিকরা হয় দেশপ্রেমিক।

৪২। ঝড়ের সময় প্রত্যেক গৃহই বন্দরসদৃশ।

তর্কীয় বচন: (A) সকল গৃহই ঝড়ের সময় হয় বন্দরসদৃশ।

৪৩। কেবল দেশপ্রেমিকরা হয় সৈনিক।

তর্কীয় বচন: (A) সকল সৈনিকরা হয় দেশপ্রেমিক।

৪৪। সকল সৈনিক দেশপ্রেমিক নয়। 

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো সৈনিক নয় দেশপ্রেমিক।

৪৫। সকল দার্শনিকরা পাগল নয়।

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো দার্শনিকরা নয় পাগল।

৪৬। বেশিরভাগ ছাত্রই অঙ্ক পরীক্ষায় পাস করে না।

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো ছাত্র নয় এমন যারা অঙ্ক পরীক্ষায় পাস করে।

৪৭। রাজীব ছাড়া সকল ছাত্রই উপস্থিত। 

তর্কীয় বচন: (A) সকল ছাত্র রাজীব ছাড়া হয় উপস্থিত।

৪৮। যে-কোনো শিশু খেলায় যোগ দিতে পারে। 

তর্কীয় বচন: (A) সকল শিশু হয় এমন যারা খেলায় যোগ দিতে পারে।

৪৯। যে-কোনো উত্তরই নির্ভুল হয় না।

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো উত্তর নয় নির্ভুল। 

৫০। প্রতিটি সদস্যই উপস্থিত নয়।

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো সদস্য নয় উপস্থিত। 

৫১। বেশিরভাগ ছাত্রই তর্কবিজ্ঞান বুঝতে পারে।

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো ছাত্র হয় এমন ব্যক্তি যারা তর্কবিজ্ঞান বুঝতে পারে।

৫২। কিছু কিছু বই নষ্ট হয়ে গেছে।

তর্কীয় বচন : (I) কোনো কোনো বই হয় এমন যা নষ্ট হয়ে গেছে। 

৫৩। কোনো কোনো ধার্মিক ব্যক্তি সুখী।

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো ধার্মিক ব্যক্তি হয় সুখী।

৫৪। তিন-চতুর্থাংশ সদস্য উপস্থিত আছেন।

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো সদস্য হয় উপস্থিত। 

৫৫। দশজন সদস্য ভোট দিতে যাননি। 

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো সদস্য নয় এমন ব্যক্তি যারা ভোট দিতে গিয়েছিলেন।

৫৬। প্রায় সকল ছাত্রই ধর্মঘটে সামিল হননি। 

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো ছাত্র নয় এমন ব্যক্তি যারা ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন।

৫৭। কবিরা প্রায় আবেগপ্রবণ হয়। 

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো কবিরা হয় আবেগপ্রবণ।

৫৮। ভারতীয় ছাত্ররা সাধারণত তাদের শিক্ষককে শ্রদ্ধা করে। 

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো ভারতীয় ছাত্ররা হয় এমন ব্যক্তি যারা তাদের শিক্ষককে শ্রদ্ধা করে।

৫৯। পর্যটকরা প্রায়ই এই জায়গাটি দেখতে যান। 

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো পর্যটকরা হন এমন ব্যক্তি যারা এই জায়গাটি দেখতে যান।

৬০। ছাত্রেরা অনেকসময় ভুল করে।

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো ছাত্ররা হয় এমন ব্যক্তি যারা ভুল করে। 

৬১। দার্শনিকেরা অনেকসময় বৈজ্ঞানিক হন না। 

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো দার্শনিকরা নন বৈজ্ঞানিক।

৬২। প্রায় সব সময়ই ভক্তেরা এই মন্দিরে পুজো দিতে যান। 

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো ভক্তেরা হন এমন ব্যক্তি যাঁরা এই মন্দিরে পুজো দিতে যান।

৬৩। এই মন্দিরে সর্বদা ভক্তেরা আসে না। 

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো ভক্তেরা নয় এমন ব্যক্তি যারা এই মন্দিরে আসে। 

৬৪। দার্শনিকরা কদাচ গণিতজ্ঞ হয়।

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো দার্শনিকেরা নয় গণিতজ্ঞ। 

৬৫। একমাত্র কবিরাই কল্পনাপ্রবণ।

তর্কীয় বচন: (A) সকল কল্পনাপ্রবণ ব্যক্তিরা হয় কবি।

৬৬। মাজুলী পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ।

তর্কীয় বচন: (A) মাজুলী হয় পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ।

৬৭। আসাম ভারতের সবচাইতে বেশি জনবহুল রাজ্য নয়।

তর্কীয় বচন: (E) আসাম নয় ভারতের সবচাইতে বেশি জনবহুল রাজ্য। 

৬৮। কোনো একজন বিখ্যাত ব্যক্তি এই সভার প্রধান অতিথি।

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি হন এই সভার প্রধান অতিথি।

৬৯। কোনো একটি ধাতু কঠিন পদার্থ নয়। 

তর্কীয় বচন: (O) কোনো কোনো ধাতু নয় কঠিন পদার্থ।

৭০। কয়েকজন মানুষ নিঃস্বার্থ। 

তর্কীয় বচন: (I) কোনো কোনো মানুষ হয় নিঃস্বার্থ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ব্যাকরণসম্মত সাধারণ বাক্যকে তর্কীয় বচনে রূপান্তরিত করার নিয়মগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ব্যাকরণসম্মত বাক্যকে তর্কীয় বচনে রূপান্তরিত করার নিয়মগুলি নিম্নরূপ:

(ক) রূপান্তরিত বচনটি ক্রম অনুসারে ‘উদ্দেশ্য — সংযোজক — বিধেয়’ — এই রূপে থাকতে হয়।

(খ) বচনের চতুর্বর্গীয় পরিকল্পনায় ‘সকল’, ‘কোনো’, ‘কোনো কোনো’ ছাড়া অন্য কোনো পরিমাণ চিহ্ন স্বীকার করা হয় না।

(গ) যে বাক্যে উদ্দেশ্যের সঙ্গে কোনো পরিমাণ চিহ্ন থাকে না, সেই বাক্যটিকে বচনে রূপান্তরিত করার সময় পরিমাণ চিহ্ন দিতে হয়।

(ঘ) একক বচনের তিনটি অংশ ‘উদ্দেশ্য — সংযোজক —  বিধেয়’ ; সামান্য ও বিশেষ বচনের চারটি অংশ : পরিমাণ চিহ্ন — উদ্দেশ্য — সংযোজক — বিধেয়।

(ঙ) সংযোজকটি ‘হওয়া ক্রিয়া’ অর্থাৎ ‘ভূ-ধাতুর’ বর্তমান কালের রূপে ব্যবহার করতে হয়।

প্রশ্ন ২। ‘বচনের সরলীকরণ’ বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ কোনো সাধারণ বাক্য বা ব্যাকরণসম্মত বাক্যকে তর্কবিজ্ঞানসম্মত বচনে রূপান্তরিত করার পদ্ধতিকে ‘বচনের সরলীকরণ’ বলে। 

পরম্পরাগত তর্ক বিজ্ঞানে গুণ ও পরিমাণের মিশ্রনীতি অনুযায়ী চার রকমের বচন A, E, I, O স্বীকার করা হয়। তর্কবিজ্ঞানসন্মত বচনে রূপান্তরিত করার সময় ‘A’ না ‘E’ না ‘I’ না ‘O’ বচন তা দেখাতে হবে। এই রূপান্তর করার প্রক্রিয়াটির নাম ‘বচনের সরলীকরণ’।

ভাগ – ৪ পদের ব্যাপ্যতা

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘A’ বচনে কোন্ পদ ব্যাপ্ত?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য পদ।

প্রশ্ন ২। ‘A’ বচনে কোন্ পদ অব্যাপ্ত?

উত্তরঃ বিধেয় পদ।

প্রশ্ন ৩। ‘E’ বচনে কোন্ পদ ব্যাপ্ত?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয় পদই ব্যাপ্ত।

প্রশ্ন ৪। ‘I’ বচনে কোন্ পদ ব্যাপ্ত?

উত্তরঃ ‘I’ বচনে কোনো পদ ব্যাপ্ত নয়, উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয় পদই অব্যাপ্ত।

প্রশ্ন ৫। ‘0’ বচনে কোন্ পদ ব্যাপ্ত?

উত্তরঃ বিধেয় পদ।

প্রশ্ন ৬। ‘O’ বচনে কোন্ পদ অব্যাপ্ত?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য পদ।

প্রশ্ন ৭। নঞর্থক বচনে কোন্ পদ ব্যাপ্ত হয়?

উত্তরঃ বিধেয় পদ।

প্রশ্ন ৮। সদর্থক বচনে কোন্ পদ অব্যাপ্ত হয়? 

উত্তরঃ বিধেয় পদ।

প্রশ্ন ৯। সামান্য বচনে কোন্ পদ ব্যাপ্ত হয়?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য পদ।

প্রশ্ন ১০। বিশেষ বচনে কোন্ পদ অব্যাপ্ত হয়?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য পদ।

প্রশ্ন ১১। ‘কোনো বৃক্ষই নয় সর্বভুক’—এই বিবৃতিটিতে দুটি পদই কি ব্যাপ্ত?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ১২। বচনের এমন একটি উদাহরণ দাও যেখানে উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্ত? 

উত্তরঃ ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব’।

প্রশ্ন ১৩। ‘সামান্য বচনে উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্ত হয়’। উক্তিটি কি সত্য? 

উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্তিটি সত্য।

প্রশ্ন ১৪। কোনো সামান্য বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদ সমান বাচ্যার্থসম্পন্ন নির্দিষ্ট বিশিষ্ট পদ হলে তার উদ্দেশ্য পদই কি কেবল ব্যাপ্ত হয়? 

উত্তরঃ না, উদ্দেশ্য এবং বিধেয় উভয় পদই ব্যাপ্ত হয়।

প্রশ্ন ১৫। বিধেয় পদ ব্যাপ্ত কি না, তা বুঝতে হলে কী জানা প্রয়োজন? 

উত্তরঃ বিধেয় পদের গুণগত প্রকৃতি জানা প্রয়োজন।

শুদ্ধ উত্তর দাও:

১। সামান্য বচনের উদ্দেশ্য সামগ্রিক বাচ্যার্থ/লক্ষণার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত।

উত্তরঃ বাচ্যার্থ। 

২। সামান্য/বিশেষ বচনে উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্ত হয়।

উত্তরঃ সামান্য।

৩। সদর্থক বচনে বিধেয় পদ ব্যাপ্ত/অব্যাপ্ত।

উত্তরঃ অব্যাপ্ত।

৪। নঞর্থক বচনে বিধেয় পদ ব্যাপ্ত/অব্যাপ্ত।

উত্তরঃ ব্যাপ্ত।

৫। বিশেষ সদর্থক বচনে (I) উদ্দেশ্য এবং বিধেয় দুই-ই ব্যাপ্ত/অব্যাপ্ত। 

উত্তরঃ অব্যাপ্ত।

শূন্যস্থান পূর্ণ করো:

১। ______ বচনে কোনো পদ ব্যাপ্ত হয় না। 

উত্তরঃ I 

২। নঞর্থক বচনের ______ ব্যাপ্ত।

উত্তরঃ বিধেয় পদ।

৩। উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্ত হয় ______ বচনে।

উত্তরঃ সামান্য বচনে। 

৪। সদর্থক বচনে ______ ব্যাপ্ত হয় না।

উত্তরঃ বিধেয় পদ।

৫ । ______ বচনে উভয় পদই ব্যাপ্ত।

উত্তরঃ E

৬। ‘সকল মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণী।’ বাক্যটি _____ বচনের উদাহরণ।

উত্তরঃ সংজ্ঞামূলক।

৭। ‘সকল অকৃতদার পুরুষ হয় অবিবাহিত।’ বাক্যটি ______ বা ______।

উত্তরঃ সমার্থক, পুনরাবৃত্তি। 

৮। ______ বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় দুই-ই অব্যাপ্ত।

উত্তরঃ I 

৯। O বচনে উদ্দেশ্য _____, কিন্তু বিধেয় _______I

উত্তরঃ অব্যাপ্ত, ব্যাপ্ত।

১০। ______ বচনে উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনো কিছু অস্বীকার করা হয়। 

উত্তরঃ নঞর্থক।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। নিম্নলিখিত বাক্যগুলিকে তর্কীয় বচনে রূপান্তরিত করো এবং প্রত্যেকটিতে ব্যাপ্ত পদের নীচে রেখাচিহ্ন দাও:

(ক) ধনী ব্যক্তিরা সাধারণত শান্ত প্রকৃতির হয় না। 

তর্কীয় বচন—

(O) কোনো কোনো ধনী ব্যক্তিরা নয় এমন ব্যক্তি যারা শান্ত প্রকৃতির হয়। 

(খ) কয়েকজন ব্যতীত সকল সদস্যই সভায় উপস্থিত আছেন। 

তর্কীয় বচন—

(I) কোনো কোনো সদস্য হয় এমন ব্যক্তি যাঁরা সভায় উপস্থিত আছেন। 

(গ) সকল নাগরিকই দেশপ্রেমিক নয়।

তর্কীয় বচন—(O) কোনো কোনো নাগরিক নয় দেশপ্রেমিক। 

(ঘ) কোনো সিংহই দ্বিপদ প্রাণী নয়।

তর্কীয় বচন—(E) কোনো সিংহ নয় দ্বিপদ প্রাণী

(ঙ) কেবল শক্ত মনের মানুষেরাই বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। 

তর্কীয় বচন—

(A) সকল ব্যক্তি যারা বিপদের সম্মুখীন হতে পারে হয় শক্ত মনের মানুষ। 

(চ) কয়েকজন মানুষ নিঃস্বার্থ।

তর্কীয় বচন—(I) কোনো কোনো মানুষ হয় নিঃস্বার্থ। 

(ছ) কদাচিৎ মানুষ অনুশোচনা করে।

তর্কীয় বচন— 

(O) কোনো কোনো মানুষ নয় এমন ব্যক্তি যারা অনুশোচনা করে। 

(জ) প্রত্যেক ব্যক্তিই শান্তি চায়।

তর্কীয় বচন—(A) সকল ব্যক্তি হয় এমন যারা শান্তি চায়।

(ঝ) সত্রের সকল সন্ন্যাসীরা অকৃতদার।

তর্কীয় বচন—(A) সকল সত্রের সন্ন্যাসীরা হয় অকৃতদার। 

(ঞ) বেশিরভাগ ছাত্রই অঙ্ককে কঠিন বিষয় মনে করে। তর্কীয় বচন—

(I) কোনো কোনো ছাত্র হয় এমন ব্যক্তি যারা অঙ্ককে কঠিন বিষয় মনে করে

প্রশ্ন ২। নিম্নলিখিত বাক্যগুলিকে তর্কীয় বচনে রূপান্তরিত করো এবং ব্যাপ্ত ও অব্যাপ্ত পদগুলি উল্লেখ করো। 

(ক) প্রত্যেক মানুষ মরণশীল।

তর্কীয় বচন— (A) সকল মানুষ হয় মরণশীল। ব্যাপ্ত পদ ‘মানুষ’, অব্যাপ্ত পদ ‘মরণশীল’। 

(খ) ছাত্ররা সাধারণত ভালো।

তর্কীয় বচন—(I) কোনো কোনো ছাত্র হয় ভাল। 

অব্যাপ্ত পদ—‘ছাত্র’ এবং ‘ভালো’।

(গ) সাধু ব্যক্তিরা কদাচিৎ সুখী হয়। 

তর্কীয় বচন—(O) কোনো কোনো সাধু ব্যক্তি নয় সুখী। ব্যাপ্ত পদ—‘সুখী’ অব্যাপ্ত পদ – ‘সাধু’ ব্যক্তি।

(ঘ) একমাত্র স্নাতকরাই পদটির যোগ্য।

তর্কীয় বচন—(A) সকল ব্যক্তি যারা এই পদটির যোগ্য হয় স্নাতক। 

ব্যাপ্ত পদ—‘ব্যক্তি’ যারা এই পদটির যোগ্য। 

অব্যাপ্ত পদ— ‘স্নাতক’। 

(ঙ) সকল রাজহাঁস সাদা নয়।

তর্কীয় বচন—(O) কোনো কোনো রাজহাঁস নয় সাদা। ব্যাপ্ত পদ—‘সাদা’। অব্যাপ্ত পদ –‘রাজহাঁস’।

(চ) খুব কম লোকই প্রলোভনমুক্ত হয়। 

তর্কীয় বচন—(O) কোনো কোনো লোক নয় এমন ব্যক্তি যারা প্রলোভনমুক্ত। 

অব্যাপ্ত পদ—লোক, ব্যাপ্ত পদ—এমন ব্যক্তি যারা প্রলোভনমুক্ত।

(ছ) যে কেউ এটা করতে পারে। 

তর্কীয় বচন—(A) সকল মানুষ হয় এমন যারা এটা করতে পারে। 

ব্যাপ্ত পদ—মানুষ, অব্যাপ্ত পদ—এমন যারা এটা করতে পারে।

(জ) এমন কোনো মানুষ নেই, যে সাধারণত ভালো নয়। (A) সকল মানুষ হয় তারা যারা সাধারণত ভালো। 

ব্যাপ্ত পদ — ‘মানুষ’, অব্যাপ্ত পদ-তারা যারা সাধারণত ভালো।

(ঝ) নদী পার হবার চেষ্টা করতে গিয়ে, অনেক লোক ডুবে গিয়েছিল। 

তর্কীয় বচন—(I) কোনো কোনো লোক হয় এমন যারা নদী পার করতে গিয়ে ডুবে গিয়েছিল।

অব্যাপ্ত পদ—‘লোক’, অব্যাপ্ত পদ – ‘এমন যারা নদী পার করতে গিয়ে ডুবে গিয়েছিল।’

(ঞ) সামান্য সংখ্যক বাদে সকলকে বন্দি করা হয়েছিল। 

তর্কীয় বচন —(I) কোনো কোনো মানুষ হচ্ছে তারা যাদের বন্দি করা হয়েছিল।

অব্যাপ্ত পদ—‘মানুষ’ এবং ‘তারা যাদের বন্দি করা হয়েছিল।’ 

(ট) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বর্তমান। 

তর্কীয় বচন—(A) পৃথিবী হচ্ছে এমন গ্রহ যার বায়ুমণ্ডল বর্তমান।

ব্যাপ্ত—‘পৃথিবী’, অব্যাপ্ত পদ—‘এমন গ্রহ যার বায়ুমণ্ডল বর্তমান’।

(ঠ) প্রত্যেক পদের জাত্যর্থ থাকবে না। 

তর্কীয় বচন—(O) কোনো কোনো পদ নয় এমন যাদের জাত্যর্থ আছে। 

ব্যাপ্ত পদ—‘এমন যাদের জাত্যর্থ আছে।’

অব্যাপ্ত পদ—‘পদ’।

(ড) শুধু অজ্ঞ মানুষেরা জাদুবিদ্যায় বিশ্বাসী। 

তর্কীয় বচন—(A) সকল মানুষ যারা জাদুবিদ্যায় বিশ্বাসী হয় অজ্ঞ। 

ব্যাপ্ত পদ—‘মানুষ যারা জাদুবিদ্যায় বিশ্বাসী’। 

অব্যাপ্ত পদ—‘অজ্ঞ’’।

(ঢ) প্রত্যেক ভুলই নিন্দনীয় নয়। 

তর্কীয় বচন—(O) কোনো কোনো ভুল নয় নিন্দনীয়।

ব্যাপ্ত পদ: ‘নিন্দনীয়’, অব্যাপ্ত পদ—‘ভুল’।

(ণ) কেবলমাত্র স্নাতকেরাই বাঞ্ছনীয়।

তর্কীয় বচন—(A) সকল বাঞ্ছনীয় মানুষরা হয় স্নাতক।

ব্যাপ্ত পদ—বাঞ্ছনীয় মানুষরা, অব্যাপ্ত পদ— স্নাতক। 

প্রশ্ন ৩। নিম্নলিখিত বাক্যগুলিকে তৰ্কীয় বচনে রূপান্তরিত করো এবং অব্যাপ্ত পদের নীচে রেখাচিহ্ন দাও:

১। সমস্ত চক্‌চকে বস্তু সোনা নয়।

তর্কীয় বচন—(O) কোনো কোনো চকচকে বস্তু নয় সোনা।

২। পারদ ছাড়া সমস্ত ধাতুই কঠিন। 

তর্কীয় বচন—(A) সকল ধাতু পারদ ছাড়া হয় কঠিন

৩। সিংহ কখনো কফি খায় না।

তর্কীয় বচন—(E) কোনো সিংহ নয় এমন জন্তু যে কফি খায়। 

৪। বিদ্বান সর্বত্র পূজিত।

তর্কীয় বচন—(A) সকল বিদ্বান ব্যক্তি হন পুজিত। 

৫। ধনী লোক সাধারণত ভদ্র হয় না।

তর্কীয় বচন—(O) কোনো কোনো ধনী লোক নয় ভদ্র।

৬। কয়েকজন ছাড়া সকল সদস্য সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তর্কীয় বচন— (I) কোনো কোনো সদস্য হলেন এমন ব্যক্তি যারা সভায় উপস্থিত ছিলেন

৭। সকল নাগরিক দেশপ্রেমিক নয়। 

তর্কীয় বচন—(O) কোনো কোনো নাগরিক নয় দেশপ্রেমিক।

৮। কোনো সিংহ দ্বিপদ নয়। 

তর্কীয় বচন—(E) কোনো সিংহ নয় দ্বিপদ প্রাণী। 

৯। সৎ মানুষ বিশ্বাসযোগ্য হন।

তর্কীয় বচন—(A) সকল সৎ মানুষ হন বিশ্বাসযোগ্য। 

১০। কে অধীনতা ভালবাসে?

তর্কীয় বচন—(E) কোনো লোক নয় এমন ব্যক্তি যে অধীনতা ভালোবাসে। 

প্রশ্ন ৪। পদের ব্যাপ্যতা বলতে কী বোঝো? 

উত্তরঃ একটি পদ যখন তার সমগ্র বাচ্যার্থে ব্যবহৃত হয়, তখন তাকে ব্যাপ্য বা ব্যাপ্ত পদ বলা হয়। অপরপক্ষে, একটি পদ যখন তার আংশিক বাচ্যার্থে ব্যবহৃত হয়, তখন তাকে অব্যাপ্য বা অব্যাপ্ত পদ বলা হয়।

প্রশ্ন ৫। ব্যাপ্ত ও অব্যাপ্ত পদ কাকে বলে?

উত্তরঃ ব্যাপ্ত পদ: কোনো পদ (Term) যখন সেই পদটির দ্বারা নির্ধারিত সকল ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায় অর্থাৎ, পদটিকে সম্পূর্ণ বাচ্যার্থে ব্যবহার করা হয়, তখন সেই পদটি ‘ব্যাপ্ত’ হয়েছে বলা হয়।

অব্যাপ্ত পদ: কোনো পদ যখন সেই পদটির দ্বারা নির্ধারিত বস্তু বা ব্যক্তির একাংশ বোঝায়, অর্থাৎ পদটিকে যখন আংশিক বাচ্যার্থে ব্যবহার করা হয়, তখন সেই পদটি ‘অব্যাপ্ত’ হয়েছে বলা হয়। 

প্রশ্ন ৬। বচনের উদ্দেশ্য পদের ব্যাপ্যতা কীভাবে নির্ধারণ করা যায়?

উত্তরঃ বচনে উদ্দেশ্য পদটি ব্যাপ্য বা ব্যাপ্ত কিনা, তা উদ্দেশ্য পদের সঙ্গে যুক্ত পরিমাণ চিহ্ন দেখে বোঝা যায়। উদ্দেশ্য পদের সঙ্গে যুক্ত পরিমাণ চিহ্ন ‘সকল’, ‘কোনো’, ‘নয়’ পরিমাণ চিহ্ন থাকে, তাহলে বচনে উদ্দেশ্য পদটি ব্যাপ্ত হয়। যেমন – 

(ক) (A) ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’—এখানে ‘সকল’ পরিমাণ চিহ্নটি থাকায় উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ’ ব্যাপ্ত।

(খ) (E) কোনো মানুষ নয় অমর। — এই বচনটিতে ‘কোনো—নয়’ পরিমাণ চিহ্ন থেকে বোঝায় এই উদ্দেশ্য পদটি ব্যাপ্ত হয়েছে। 

অন্যদিকে, উদ্দেশ্য পদের সঙ্গে যদি ‘কোনো কোনো’ পরিমাণ চিহ্ন যুক্ত থাকে, তবে পদটি অব্যাপ্ত হয়। যেমন—

(গ) কোনো কোনো মানুষ হয় সৎ (I)

(ঘ) কোনো কোনো মানুষ নয় সৎ (O)

দুটি বচনে উদ্দেশ্যের আগে পরিমাণ চিহ্ন ‘কোনো কোনো’ থাকায় উদ্দেশ্য ‘মানুষ’ পদটি অব্যাপ্ত।

প্রশ্ন ৭। বচনে বিধেয় পদের ব্যাপ্যতা কীভাবে নির্ধারণ করা যায়?

উত্তরঃ বচনের বিধেয় পদ ব্যাপ্ত কিনা, তা বুঝতে হলে, বিধেয় পদের গুণগত প্রকৃতি জানা প্রয়োজন। গুণগতভাবে বচন দুই প্রকারের হয়—সদর্থক বচন এবং নঞর্থক বচন।

সদর্থক বচনে পরিমাণের দিক থেকে বিধেয় শ্রেণির কোনো অংশ সমগ্র উদ্দেশ্য শ্রেণির অথবা আংশিক উদ্দেশ্য শ্রেণির সমান, সেই কথা বলা হয়; যেমন—

(ক) সকল মানুষ হয় মরণশীল (A) এই বচনটির অর্থ, সমগ্র ‘মানুষ’ শ্রেণি ‘মরণশীল জীব’ শ্রেণির একটি অংশমাত্র। অতএব, ‘মরণশীল’ পদটি অব্যাপ্ত। 

(খ) কোনো কোনো হাঁস হয় সাদা (I) — এখানে ‘হাঁস’ শ্রেণির একটি অংশ ‘সাদা’ শ্রেণির অংশ। অতএব ‘সাদা’ পদটি অব্যাপ্ত।

অপরদিকে নঞর্থক বচনে উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনো কিছু অস্বীকার করা হয় এবং যখন কিছু অস্বীকার করা হয়, তখন তাকে সম্পূর্ণভাবেই অস্বীকার করা হয়। এজন্য নঞর্থক বচনে বিধেয় পদ ব্যাপ্ত হয়।

প্রশ্ন ৮। পদের ব্যাপ্যতা সম্পর্কিত নিয়মগুলো উল্লেখ করো।

উত্তরঃ পদের ব্যাপ্যতা সম্পর্কে আমরা নিম্নোক্ত নিয়মগুলো পাই:

(ক) সামান্য বচনে উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্ত, কিন্তু বিশেষ বচনে উদ্দেশ্য পদ অব্যাপ্ত।

(খ) সদর্থক বচনে বিধেয় পদ অব্যাপ্ত, কিন্তু নঞর্থক বচনে বিধেয় পদ ব্যাপ্ত।

প্রশ্ন ৯। কোন্ শর্তে ‘A’ বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয়পদই ব্যাপ্ত হয়? 

উত্তরঃ কতকগুলি ব্যতিক্রম ‘A’ বচন আছে, যেমন—সংজ্ঞামূলক, যার উদ্দেশ্য এবং বিধেয় নির্দিষ্ট বিশিষ্ট পদ অথবা যার বিধেয় পদ উদ্দেশ্যপদের সমার্থক বা পুনরাবৃত্তি। এই সব ধরনের বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয় পদই ব্যাপ্ত বলা যায়।

উদাহরণ: 

(ক) সংজ্ঞামূলক বচন—সকল মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণী।

(খ) উদ্দেশ্য ও বিধেয় নির্দিষ্ট বিশিষ্ট পদ: নরেন্দ্র মোদি হলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। 

(গ)সমার্থক বা পুনরাবৃত্তি: সকল অকৃতদার পুরুষ হয় অবিবাহিত।

রচনাভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বচনের চতুবর্গীয় বিভাজনে পদের ব্যাপ্যতা সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ বচনের চতুর্বর্গীয় বিভাজনে পদের ব্যাপ্যতা নিম্নে আলোচনা করা হলো 

(ক) সামান্য সদর্থক বচন অর্থাৎ ‘A’ বচনে পদের ব্যাপ্যতা: সামান্য সদর্থক বচনে উদ্দেশ্যপদের সঙ্গে পরিমাণ চিহ্ন থাকায় স্পষ্ট বোঝা যায় যে, উদ্দেশ্য পদ তার সমগ্র বাচ্যার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং ‘A’ বচনে উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্ত। অন্যদিকে ‘A’ বচনে বিধেয় পদের সঙ্গে কোনো পরিমাণ চিহ্ন না থাকায় তার বাচ্যার্থ অস্পষ্ট থাকে। কাজেই ‘A’ বচনে বিধেয় পদ অব্যাপ্ত। যেমন (A) ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব’। —এখানে উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ’ তার সমগ্র বাচ্যার্থ ব্যবহৃত হয়েছে। তাই সেটা ব্যাপ্ত। কিন্তু বিধেয় পদ ‘মরণশীল জীব’ তার সমগ্র না আংশিক বাচ্যার্থে ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা স্পষ্ট নয়। কাজেই এই পদটি অব্যাপ্ত।

(খ) সামান্য নঞর্থক বচন অর্থাৎ ‘E’ বচনে পদের ব্যাপ্যতা: ‘E’ বচনে উদ্দেশ্য সমগ্র বাচ্যার্থে ব্যবহৃত হওয়ায় তা ব্যাপ্ত। অন্যদিকে, বিধেয় পদটি নঞর্থক বচনের বিধেয় হওয়ায় উদ্দেশ্যের সমগ্র বাচ্যার্থের ক্ষেত্রে অস্বীকৃত হয়েছে। কাজেই সেটাও ব্যাপ্ত। যেমন— (E) ‘কোনো গাছ নয় মানুষ’। এখানে উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয় পদই ব্যাপ্ত। উদ্দেশ্য ‘গাছ’, তার সমগ্র বাচ্যার্থে ব্যবহৃত হওয়ায় ব্যাপ্ত। অপরপক্ষে, ‘মানুষ’ এই বিধেয় পদটিকে উদ্দেশ্যে সমগ্র বাচ্যার্থের ক্ষেত্রে অস্বীকার করা হয়েছে। কাজেই এক্ষেত্রে বিধেয় পদও ব্যাপ্ত।

(গ) বিশেষ সদর্থক বচনে অর্থাৎ ‘I’ বচনে পদের ব্যাপ্যতা: 

বিশেষ সদর্থক বচনে উদ্দেশ্যের সঙ্গে যুক্ত পরিমাণ চিহ্ন থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে তা অব্যাপ্ত, অর্থাৎ উদ্দেশ্যকে আংশিক বাচ্যার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। বিধেয় পদটির ক্ষেত্রে পরিমাণগত চিহ্ন না থাকায় তার বাচ্যার্থ সামগ্রিক না আংশিক তা স্পষ্ট নয়। সুতরাং সেটাও অব্যাপ্ত। অতএব, ‘I’ বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় উভয় পদই অব্যাপ্ত। যেমন—

(I) কোনো কোনো মানুষ হয় জ্ঞানী।

(ঘ) বিশেষ নঞর্থক বচনে অর্থাৎ ‘0’ বচনে পদের ব্যাপ্যতা: ‘O’ বচনে উদ্দেশ্য পদের সঙ্গে পরিমাণ চিহ্ন ‘কোনো কোনো’ থাকায় সেটা যে আংশিক বাচ্যার্থে ব্যবহৃত হয়েছে, তা স্পষ্ট। অতএব, উদ্দেশ্য পদ অব্যাপ্ত। কিন্তু ‘O’ বচন নঞর্থক হওয়ায় তার বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য পদের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে অস্বীকৃত। অতএব, বিধেয় পদটি ব্যাপ্ত। অর্থাৎ ‘O’ বচনে উদ্দেশ্য পদ অব্যাপ্ত, কিন্তু বিধেয় পদ ব্যাপ্ত। যেমন ‘কোনো কোনো মানুষ নয় সৎ’। এককথায় বলা যায়।

‘A’ বচনে উদ্দেশ্যপদ ব্যাপ্ত, কিন্তু বিধেয়পদ অব্যাপ্ত।

‘E’ বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় উভয় পদই ব্যাপ্ত। 

‘I’ বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় উভয় পদই অব্যাপ্ত।

‘O’ বচনে উদ্দেশ্য পদ অব্যাপ্ত, কিন্তু বিধেয় পদ ব্যাপ্ত।

প্রশ্ন ২। ছাত্র-ছাত্রীদের অনুশীলনীর জন্য:

নিম্নলিখিত বাক্যগুলিকে যুক্তিবিজ্ঞানসম্মত বচনে রূপান্তরিত করো, গুণ ও পরিমাণ উল্লেখ করো এবং কোন্ পদ ব্যাপ্য এবং কোন্ পদ অব্যাপ্য তা নির্দেশ করো।

১। পরিশ্রমী ব্যতীত কেহই জীবনে সফলতা লাভ করে না।

২। সতর্ক মানুষেরা ভুল করে না।

৩। কোনো বস্তু একসঙ্গে গোল ও বর্গাকার হতে পারে না।

৪। নিরপরাধ ব্যক্তি কখনো-কখনো শাস্তি পায়।

৫। বিদ্বান সর্বত্র সমাদৃত।

৬। কিশোরেরা কদাচিৎ বাধ্য হয়।

৭। একমাত্র আগ্রহী ছাত্ররাই জীবনে সাফল্যলাভ করতে পারে।

৮। খুব কম লোকই প্ৰকৃত সুখী।

৯। শিশু মাত্রই সরল।

১০। কেবলমাত্র বিজ্ঞানীরাই চিন্তাশীল।

১১। একটি উত্তর ভালো নয়।

১২। সব শিক্ষিত ব্যক্তি উদারচেতা নয়।

১৩। কিছু বৃক্ষ ফল দেয়।

১৪। ধনী লোকেরা ক্বচিৎ সুখী হয়।

১৫। মন ছাড়া কোনো দ্রব্য চেতন নয়।

১। ……………………………………………………………………

২। ……………………………………………………………………

৩। ……………………………………………………………………

৪। ……………………………………………………………………

৫।……………………………………………………………………

ভাগ – ৫ আধুনিক তর্কবিজ্ঞানে বছনের শ্রেণিবিভাগ

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বচনের আদিমতম এবং সরলতম রূপ কী?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য পদবিহীন বচন।

প্রশ্ন ২। ‘উদ্দেশ্য বিধেয় আকারের বচনের উদ্দেশ্য পদ একটি বিশিষ্ট পদ’—উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্তিটি সত্য।

প্রশ্ন ৩। উদ্দেশ্য বিধেয় আকারের বচনের প্রতীকাত্মক রূপ কী?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য বিধেয় আকারের বচনকে ‘S—P’ এভাবে প্রকাশ করা হয়। এখানে, ‘S’ হচ্ছে উদ্দেশ্য এবং ‘P’ হচ্ছে বিধেয় পদ।

প্রশ্ন ৪। দ্বয়াত্মক বা দ্বিব্যক্তিক সম্বন্ধ কী?

উত্তরঃ সম্বন্ধবাচক বচনে দুটি পদবিশিষ্টি সম্বন্ধের নাম দ্বয়াত্মক বা দ্বিব্যক্তিক সম্বন্ধ।

প্রশ্ন ৫। উদ্দেশ্য পদবিহীন বচনের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ চোর! চোর !

প্রশ্ন ৬। সম্বন্ধবাচক বা সম্বন্ধাত্মক বচনের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ রাম শ্যামকে হিংসা করে, বিড়াল মাছ খায় ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৭। তিনটি পদবিশিষ্ট সম্বন্ধকে কী বলে? 

উত্তরঃ ‘ত্রয়াত্মক বা ত্রিব্যক্তিক’ সম্বন্ধ।

প্রশ্ন ৮। চার পদবিশিষ্ট সম্বন্ধকে কী বলে? 

উত্তরঃ তুরিয়াত্মক বা চতুর্ব্যক্তিক সম্বন্ধ।

প্রশ্ন ৯। পাঁচ পদবিশিষ্ট সম্বন্ধকে কী বলা হয়?

উত্তরঃ পঞ্চব্যক্তিক সম্বন্ধ।

প্রশ্ন ১০। পাঁচের অধিক পদবিশিষ্ট সম্বন্ধকে কী বলা হয়?

উত্তরঃ বহুব্যক্তিক সম্বন্ধ।

প্রশ্ন ১১। সম্বন্ধসূচক পদ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে সমস্ত উপাদানের মধ্যে সম্বন্ধ প্রকাশ করা হয়, তাকে ‘সম্বন্ধসূচক পদ’ বলে। 

প্রশ্ন ১২। আধুনিক তর্কবিজ্ঞানের শ্রেণিসদস্যতা বচনকে ও উদ্দেশ্য-বিধেয় আকারের পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞানে কী নামে অভিহিত করা হয়?

উত্তরঃ শ্রেণিসদস্যতা বচন বা উদ্দেশ্য বিধেয় আকারের বচনকে পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞানে ‘সামান্য বচন’ নামে অভিহিত করা হয়।

প্রশ্ন ১৩। সম্বন্ধবাচক বচনের প্রতীকাত্মক রূপ কী?

উত্তরঃ সম্বন্ধবাচক বচনের প্রতীকায়িত রূপ হল xRy অথবা R (x, y)

প্রশ্ন ১৪। কোন্ তর্কবিজ্ঞানী শ্রেণিসদস্যতা বচন ও উদ্দেশ্য-বিধেয় আকারের বচনের মধ্যে পার্থক্যের কথা উল্লেখ করেছেন?

উত্তরঃ জার্মান তর্কবিজ্ঞানী ফ্রেজে (Frege) এবং ইতালীয় তর্কবিজ্ঞানী পিয়ানো (Peano)।

প্রশ্ন ১৫। সংযোগী কাকে বলে?

উত্তরঃ সংযৌগিক বচনে যে বচনগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাদের সংযোগী বলে। 

প্রশ্ন ১৬। একটি সংযোজক বচনে সংযোগীর সংখ্যা কয়টি হয়ে থাকে?

উত্তরঃ দুই বা ততোধিক।

প্রশ্ন ১৭। সংযৌগিক বচনের উপাদান বচনগুলি কোন্ শব্দ দ্বারা যুক্ত হয়?

উত্তরঃ ‘এবং’, ‘ও’, ‘আর’, ‘কিন্তু’ ইত্যাদি বা অনুরূপ অর্থযুক্ত শব্দ দ্বারা।

প্রশ্ন ১৮। সংযৌগিক বচনের প্রতীকাত্মক রূপ কী?

উত্তরঃ ‘p . q’

প্রশ্ন ১৯। নিহিতার্থক বা সংশ্লেষক বচনের কয়টি অংশ থাকে?

উত্তরঃ দুটি অংশ।

প্রশ্ন ২০। নিহিতার্থক বচনের দুটি অংশের নাম কী কী?

উত্তরঃ পূর্ববর্তী অংশ এবং পরবর্তী অংশ।

প্রশ্ন ২১। নিহিতার্থক বা সংশ্লেষক বচনের মূল বৈশিষ্ট্য কী? 

উত্তরঃ এই জাতীয় বচনে যদি পূর্ববর্তী অংশ সত্য হয়, তাহলে অনুবর্তী অংশ মিথ্যা হতে পারে না।

প্রশ্ন ২২। নিহিতার্থক বা সংশ্লেষক বা প্রাকল্পিক বচনকে পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞানে কী নামে অভিহিত করা হয়?

উত্তরঃ পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞানে এই জাতীয় বচনকে ‘সকল্পক বচন’ বলা হয়। 

প্রশ্ন ২৩। নিহিতার্থক বচনের প্রতীকী রূপ কী?

উত্তরঃ p ⊃ q

প্রশ্ন ২৪। বিকল্প কাকে বলে?

উত্তরঃ যে যে উপাদান বাক্যগুলি ‘অথবা’ ‘হয়—নয়’ ইত্যাদি শব্দ বা তর্কীয় যোজক দ্বারা পরস্পর যুক্ত হয়, সেইসব অঙ্গ বাক্যকে বিকল্প বলে।

প্রশ্ন ২৫। প্রতীকাত্মক তর্কবিজ্ঞানে বৈকল্পিক বচনের প্রতীকী রূপ কী?

উত্তরঃ p v q

প্রশ্ন ২৬। ‘সমাবেশিত’ বা ‘অভিব্যাপী’ শব্দের অর্থ কী? 

উত্তরঃ অন্তত একটি, সবগুলিও হতে পারে।

প্রশ্ন ২৭। প্রতীকাত্মক তর্কবিজ্ঞানে ‘অথবা’, ‘হয় … নয় ইত্যাদি শব্দ কোন্ অর্থে ব্যবহার করা হয়?

উত্তরঃ সমাবেশিত বা অভিব্যাপী বা অবিসংবাদী অর্থে ব্যবহার করা হয়। 

প্রশ্ন ২৮। নিষেধ বা নঞর্থক বচনের প্রতীকী রূপ কী?

উত্তরঃ ‘~P’

প্রশ্ন ২৯। আধুনিক তর্কবিজ্ঞানীরা কীসের সাহায্যে সামান্য বচনের আকারগত প্রকৃতি নির্দেশ করেছেন?

উত্তরঃ মানকের সাহায্যে (Quantifier)।

প্রশ্ন ৩০। সার্বিক বচনে কী ধরনের মানক ব্যবহার করা হয়?

উত্তরঃ সার্বিক মানক।

প্রশ্ন ৩১। বিশেষ বচনে কী ধরনের মানক ব্যবহার করা হয়?

উত্তরঃ সাত্ত্বিক মান।

প্রশ্ন ৩২। সার্বিক মানকের প্রতীকী রূপ কী?

উত্তরঃ X

প্রশ্ন ৩৩। সাত্ত্বিক মানকের প্রতীকী রূপ কী?

উত্তরঃ (∃x)

প্রশ্ন ৩৪। অ্যারিস্টটল কি একজন আধুনিক তর্কবিজ্ঞানী?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ৩৫। কোন্ কোন্ বিষয়ের ভিত্তিতে আধুনিক তর্কবিজ্ঞানীরা বচনের শ্রেণিবিভাগ করেছিলেন?

উত্তরঃ গঠন এবং উপাদানের ভিত্তিতে আধুনিক তর্কবিজ্ঞানীরা বচনের শ্রেণিবিভাগ করেছিলেন।

প্রশ্ন ৩৬। তর্কবিজ্ঞানে কয়রকম সরল বচনের কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ চার রকমের।

প্রশ্ন ৩৭। তর্কবিজ্ঞানে কয়রকম যৌগিক বচনের কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ চার রকমের। 

প্রশ্ন ৩৮। সামান্য বচনের প্রকৃতি কী?

উত্তরঃ সামান্য বচন হল অমৌলিক বচন।

প্রশ্ন ৩৯। ‘সকল মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন’ —এই বচনটি কোন্ শ্রেণিতে পড়ে?

উত্তরঃ শ্রেণি-সম্বন্ধ সূচক সামান্য বচন।

প্রশ্ন ৪০। বৈকল্পিক বচনে ‘অথবা’ শব্দটি কী অর্থে ব্যবহার করা হয়?

উত্তরঃ অভিব্যাপী বা সমাবেশিত অর্থে।

প্রশ্ন ৪১। যে বচন কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর অস্তিত্ব নির্দেশ করে, তাকে কী ধরনের বচন বলে?

উত্তরঃ অস্তিত্বমূলক সামান্য বচন।

প্রশ্ন ৪২। যে বচনে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু বা বিষয়কে কোনো একটি শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বলে প্রকাশ করা হয়, তাকে কী ধরনের বচন বলে?

উত্তরঃ শ্রেণিসদস্যতা বচন। 

প্রশ্ন ৪৩। যে বচনে কোনো একটি শ্রেণি অন্য আর একটি শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বলে প্রকাশ করা হয়, তাকে কী ধরনের বচন বলে?

উত্তরঃ শ্রেণি-সম্বন্ধসূচক সামান্য বচন। 

প্রশ্ন ৪৪। যে বচনে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর কোনো গুণ আছে বলে বোঝায়, তাকে কী ধরনের বচন বলে?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য-বিধেয় আকারের বচন। 

প্রশ্ন ৪৫। বিবৃতির আধুনিক শ্রেণিবিভাজন অনুসারে বিবৃতি কয় প্রকারের?

উত্তরঃ তিন প্রকারের।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। আধুনিক তর্কবিজ্ঞানে বচন বা বিবৃতিকে (Proposition) কয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে?

উত্তরঃ আধুনিক তর্কবিজ্ঞানে বচনকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা— (অ) মৌলিক বচন এবং (আ) অ-মৌলিক বচন। মৌলিক বচনকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন— 

(ক) সরল বচন। 

(খ) যৌগিক বচন।

অমৌলিক বচনের একটি মাত্র প্রকারই হয়, সেটা হল সামান্য বচন। 

প্রশ্ন ২। সরল বচন (Simple Proposition) কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বচনে একটিমাত্র উক্তি থাকে, তাকে ‘সরল বচন’ বলে। অর্থাৎ সরল বচন হল সেই বচন, যাতে একটির বেশি উপাদান বাক্য থাকে না এবং যে বচনে একটিমাত্র তথ্য পরিবেশিত হয়। যেমন—

(ক) আজ বৃষ্টি পড়ছে। 

(খ) রাম স্কুলে যাবে। 

(গ) রামচন্দ্র দশরথের পুত্র ছিলেন ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৩। সরল বচন কয়প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ সরল বচন চার প্রকারের হয়। যেমন—

(ক) উদ্দেশ্য পদবিহীন বচন (Subjectless Proposition) 

(খ) উদ্দেশ্য-বিধেয় আকারের বচন (Subject Predicate Proposition)

(গ) সম্বন্ধবাচক বা সম্বন্ধাত্মক বচন (Relational Proposition) 

(ঘ) শ্রেণিসদস্যতা বচন (Class-membership Proposition)

প্রশ্ন ৪। উদ্দেশ্য পদবিহীন বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ বচনের আদিমতম এবং সরলতম রূপ হচ্ছে উদ্দেশ্যপদবিহীন বছন। এই জাতীয় বচনে কোনো উদ্দেশ্য পদ থাকে না, যদিও বচনটিতে একটি নির্দিষ্ট অর্থপূর্ণ বক্তব্য থাকে। 

যেমন—(ক) সাপ! সাপ! 

(খ) আগুন! আগুন! 

(গ)এখন অন্ধকার! 

(ঘ) বৃষ্টি পড়ছে ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৫। উদ্দেশ্য পদবিহীন বচন কয় প্রকারের হয় এবং সেগুলো কী কী?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য পদবিহীন বচন দুই রকমের হয়।

যেমন—

(ক) আবেগসূচক বা বিস্ময়সূচক (Exclamatory)

(খ) নৈর্ব্যক্তিক (Impersonal) 

প্রশ্ন ৬। উদ্দেশ্য-বিধেয় আকারের বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বচনে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর কোনো গুণ আছে বলে বোঝায়, তাকে ‘উদ্দেশ্য-বিধেয় আকারের’ বচন বলে। উদাহরণ— 

(ক) সক্রেটিস জ্ঞানী ছিলেন। 

(খ) বলটি গোলাকৃতি। 

(গ) কলমটি নীল রঙের ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৭। সম্বন্ধবাচক বা সম্বন্ধাত্মক বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ যখন কোনো বচনে দুই বা ততোধিক পদের মধ্যে সম্বন্ধ বোঝায়, সেই বচনকে ‘সম্বন্ধবাচক বচন’ বলে।যেমন— 

(ক) মা সন্তানকে ভালোবাসেন। 

(খ) রাম শ্যামকে হিংসা করে। 

(গ) শিক্ষক ছাত্রকে গণিত শেখান। ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৮। শ্রেণিসদস্যতা বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বচনে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু বা বিষয়কে কোনো একটি শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বলে প্রকাশ করা হয়, তাকে ‘শ্রেণি-সদস্যতা বচন’ বলে। যথা— 

(ক) রবীন্দ্রনাথ একজন কবি ছিলেন। 

(খ) অ্যারিস্টটল একজন দার্শনিক। 

(গ) অমর্ত্য সেন একজন অর্থনীতিবিদ।

প্রশ্ন ৯। যৌগিক বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বচনে একাধিক উপাদান বাক্য বা অঙ্গ বাক্য থাকে, তাকে যৌগিক বচন বলে। যেমন ‘রাম বুদ্ধিমান এবং মেধাবী ছাত্র’।

এই বচনটিতে দুটি উপাদান বাক্য আছে—

(১) রাম বুদ্ধিমান। এবং 

(ক) রাম মেধাবী ছাত্র। 

যৌগিক বচনের উপাদান বাক্যগুলি সরল বচন বা যৌগিক বচন হতে পারে। 

যেমন—রাম আসবে অথবা শ্যাম যাবে, কিন্তু যদু যাবে না।

প্রশ্ন ১০। যৌগিক বচন কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ প্রতীকাত্মক যুক্তিবিজ্ঞানে চারপ্রকার যৌগিক বচনের উল্লেখ আছে। 

এগুলো হল—

(a) সংযৌগিক বচন বা সংযোজক বচন (Conjunctive Proposition) 

(b) সংশ্লেষক বচন বা নিহিতার্থক বা প্রাকল্পিক বচন (Implicative Proposition)

(c) বৈকল্পিক বচন বা বিকল্পক বচন (Disjunctive Proposition)

(d) নিষেধ বচন বা নঞর্থক বচন (Negative Proposition)

প্রশ্ন ১১। সংযৌগিক বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ সংযৌগিক বচন এক প্রকার যৌগিক বচন, যার অন্তর্গত সরল বচন বা উপাদান বচনগুলি ‘এবং’ বা অনুরূপ শব্দের দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। বাংলায় ‘ও’, ‘আর’ ‘কিন্তু’, ‘যদিও’, ‘আরও’, ‘তথাপি’ ইত্যাদি শব্দ ‘ষ’, ‘স’ চিহ্ন সংযোজক রূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন—(১) রাম এবং শ্যাম মেধাবী ছাত্র।—এখানে ‘রাম মেধাবী ছাত্র’, ‘শ্যাম মেধাবী ছাত্র’—এই দুটি সরল বচন ‘এবং’ এই সংযোজক দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত।

সংযৌগিক বচনে যে সরল বচনগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাদের ‘সংযোগী’ (conjunct) বলে।

প্রশ্ন ১২। সংশ্লেষক বা নিহিতার্থক বা প্রাকল্পিক বচন বলতে কী বোঝায়? 

উত্তরঃ যে যৌগিক বচনে দুটি উপাদান বচন (সরল বচন) ‘যদি … তাহলে’ অথবা এই জাতীয় কোনো শর্তের দ্বারা যুক্ত হয়, তাকে ‘সংশ্লেষক বচন বা নিহিতার্থক বচন বা প্রাকল্পিক বচন’ বলে। এই ধরনের বচনে প্রথম উপাদান বচনটির পূর্বে ‘যদি’ এবং ‘তাহলে’ শব্দটি দুটি উপাদান বচনের মাঝখানে থাকে। যেমন— ‘যদি বৃষ্টি পড়ে, তাহলে মাটি ভেজে’।

এই জাতীয় বচনের দুটি অংশ থাকে—পূর্ববর্তী এবং অনুবর্তী। উপরোক্ত উদাহরণে ‘বৃষ্টি পড়ে’ হল পূর্ববর্তী অংশ, আর ‘মাটি ভেজে’ হল অনুবর্তী অংশ বা পরবর্তী অংশ বা অনুগ। পূর্ববর্তী অংশে একটি শর্তের উল্লেখ থাকে এবং অনুবর্তী অংশে মূল বক্তব্যটি থাকে। 

প্রশ্ন ১৩। বৈকল্পিক বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ দুটি সরল বচন অথবা (or) বা অনুরূপ অর্থবোধক শব্দের দ্বারা যুক্ত হয়ে যে যৌগিক বচন গঠন করে, তাকে ‘বৈকল্পিক বচন’ বলে। বৈকল্পিক বচনের উপাদান বাক্যগুলি বা অঙ্গ বচনগুলিকে ‘বিকল্প’ (disjunct) বলা হয়।

যেমন—‘রাম আসবে অথবা যদু আসবে’—এই যৌগিক বচন দুটি সরল বচনের বিকল্প দ্বারা গঠিত। বচনটির দুটি বিকল্প হল— 

(i) ‘রাম আসবে’,।

(ii) ‘যদু আসবে’।

বৈকল্পিক বচনের উপাদান বচনগুলো যুক্ত করার জন্য ‘বা’, ‘নচেৎ’ ‘কিংবা’, ‘হয় নয়’, ‘নাহলে’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

প্রশ্ন ১৪। বৈকল্পিক বচনে ‘অথবা’ শব্দ কী কী অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে?

উত্তরঃ বৈকল্পিত বচনে ‘অথবা’, ‘হয় নয়’ ইত্যাদি যোজক দুটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। 

(ক) বিসংবাদী বা ঐকান্তিক বা ব্যাবর্তক অর্থে (Exclusive sense)

(খ) অবিসংবাদী বা অভিব্যাপী বা সমাবেশিত অর্থে (Inclusive sense) 

যখন কোনো বৈকল্পিক বচনের বিকল্প দুটি একসাথে সত্য হতে পারে না, আবার একসাথে মিথ্যা হতে পারে না, তখন ওই বচনের ‘অথবা’কে বিসংবাদী অর্থে ‘অথবা’বলা হয়। যেমন—‘হয় সে শিক্ষিত নয় সে অশিক্ষিত’। এই বচনে বিকল্প দুটি হল—‘সে শিক্ষিত’ এবং (খ) ‘অশিক্ষিত’। এই বিকল্প দুটির মধ্যে একটি সত্য হলে, অপরটি মিথ্যা হবে। একটি মিথ্যা হলে, অপরটি সত্য হবে। দুটি বিকল্প একইসঙ্গে সত্য হতে পারে না, কারণ উভয়েই পরস্পরবিরোধী। এখানে ‘হয় … নয়’ শব্দটি সরল অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

অন্যদিকে যখন কোনো বৈকল্পিক বচনের বিকল্প দুটি একসাথে মিথ্যা হতে পারে না, কিন্তু অন্তত একটি সত্য হতে পারে, তখন সেই বচনের ‘অথবা’কে অবিসংবাদী অর্থে ‘অথবা’ বলা হয়। যেমন— ‘তিনি শিক্ষক অথবা রাজনীতিক’। এই বচনের বিকল্প দুটি হল—

(ক) তিনি শিক্ষক ও (খ) তিনি রাজনীতিক। এই প্রকারের বৈকল্পিক বচন সত্য হবে, যদি কোনো একটি বিকল্প সত্য হয় অথবা উভয় বিকল্প সত্য হয়। ‘অথবা’-র এই অর্থকে দুর্বল অর্থ বলা হয়। এই প্রকারের বচন মিথ্যা হয় যদি উভয় বিকল্প মিথ্যা হয়। 

প্রশ্ন ১৫। নিষেধ বা নঞর্থক বচন বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ একটি মূল বচনের সঙ্গে ‘না’, ‘নয়’ ইত্যাদি শব্দ যোগ করে সাধারণত নঞর্থক বচন গঠন করা হয়। যেমন—রাম মেধাবী ছাত্র নয়।

প্রশ্ন ১৬। আধুনিক তর্কবিজ্ঞানে ‘অথবা’ যোজকটি কোন্ অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে? 

উত্তরঃ ইংরেজিতে (or) ‘অথবা’ কথাটি স্পষ্টভাবে অর্থাৎ একই অর্থে ব্যবহৃত না হলেও, লাতিন ভাষায় দুটি অর্থকে পরিষ্কারভাবে বোঝানোর জন্য দুটি পৃথক শব্দ ব্যবহার করা হয়। লাতিন ভাষায় ‘Vel’ (V) শব্দটির দ্বারা দুর্বল বা অবিসংবাদী অর্থে ‘অথবা’কে বোঝানো হয়। অন্যদিকে ‘out’ (A) শব্দটি দিয়ে বিসংবাদী বা সবল অর্থে ‘অথবা’কে বোঝানো হয়।

আধুনিক প্রতীকী তর্কবিজ্ঞানে ‘অথবা’ (or) যোজকটি অবিসংবাদী অর্থাৎ, দুর্বল অর্থে গ্রহণ করা হয়। এই অর্থে ‘অথবা’র প্রতীক (symbol) হল ‘V’ (Vel)। 

প্রশ্ন ১৭। সার্বিক বচন বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ যে বচনে কোনো একটি শ্রেণি অপর একটি শ্রেণির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত বা বহির্ভূত বলে বোঝায়, সেই বচনকে সার্বিক বচন বলে। 

যেমন—সব ভারতীয়রা এশিয়াবাসী, ‘কোনো সৈনিক কাপুরুষ নয়’ ইত্যাদি।

প্রশ্ন ১৮। বিশেষ বচন কাহাকে বলে?

উত্তরঃ যে বচনে কোনো একটি শ্রেণি অপর একটি শ্রেণির ক্ষেত্রে আংশিকভাবে অন্তর্ভুক্ত বা বহির্ভূত বলে বোঝায়, সেই বচনকে বিশেষ বচন বলে। যথা—’কোনো কোনো দার্শনিক গণিতজ্ঞ’, ‘কোনো কোনো কবি প্রাবন্ধিক নয়’ ইত্যাদি।

প্রশ্ন ১৯। সামান্য বচন ও সার্বিক বচনের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি? যদি থাকে, তাহলে সেটা কী?

উত্তরঃ পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞানে, সামান্য ও সার্বিক বচনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সামান্য বচন ও সার্বিক বচন এক।

কিন্তু আধুনিক তর্কবিজ্ঞানে সামান্য বচন ও সার্বিক বচনের মধ্যে পার্থক্য বর্তমান। কারণ, সামান্য বচন সার্বিক বচনও হতে পারে, আবার বিশেষ বচনও হতে পারে। 

প্রশ্ন ২০। সামান্য বচন বা সাধারণ বচন বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ সামান্য বচনই একমাত্র অমৌলিক বচন। সামান্য বচন শ্রেণিসম্পৰ্কীয় বচন। সামান্য বচন হল সেই বচন, যা কোনো কিছুর অস্তিত্ব বোঝায় অথবা সমগ্র বিশ্বের ক্ষেত্রে কোনো গুণ বা উপলক্ষণ আছে বোঝায় কিংবা দুটি শ্রেণির মধ্যে সম্পর্ক বোঝায়।

প্রশ্ন ২১। সামান্য বচন কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ সামান্য বচন তিন প্রকারের হয়। যেমন—

(ক) অস্তিত্বমূলক সামান্য বচন। 

(খ) এক-বিধেয়যুক্ত সার্বিক বা সামান্য বচন। 

(গ) শ্রেণি-সম্বন্ধসূচক সামান্য বচন।

প্রশ্ন ২২। অস্তিত্বমূলক সামান্য বচন কাকে বলে?

 উত্তরঃ অস্তিত্বমূলক সামান্য বচন হচ্ছে সেই বচন, যাতে কোনো কিছুর অস্তিত্বকে প্রত্যক্ষভাবে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয়। যেমন— 

(১) ‘সমুদ্র আছে’,। 

(২) ‘ভূত বলে কিছু নেই’ ইত্যাদি। 

প্রশ্ন ২৩। এক বিধেয়যুক্ত সার্বিক বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ এই জাতীয় সামান্য বচনে কোনো গুণ বা উপলক্ষণকে সমগ্র বিশ্বের ক্ষেত্রে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয়। যেমন— 

(১) সকল বস্তুই পরিবর্তনশীল।

(২) পৃথিবীতে স্থায়ী বলে কিছু নেই, ইত্যাদি।

প্রশ্ন ২৪। শ্রেণি-সম্বন্ধসূচক সামান্য বচন কাকে বলে?

উত্তরঃ শ্রেণি-সম্বন্ধসূচক সামান্য বচনে কোনো একটি শ্রেণি অপর একটি শ্রেণির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে অন্তর্ভুক্ত বা বহির্ভূত বলে বোঝায়। বেশিরভাগ সামান্য বচনই এই প্রকারের হয়। যেমন— 

(১) সব ভারতীয়রা এশিয়াবাসী। 

(২) কোনো কোনো দার্শনিক গণিতজ্ঞ। 

(৩) কোনো সৈনিকই কাপুরুষ নয়। 

(৪) কোনো কোনো কবি প্রাবন্ধিক নয়।

যে বচনে সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তি বা বহির্ভুক্তি বোঝায় তাদের ‘সার্বিক বচন’ বলে। কিন্তু যে বচনে আংশিক অন্তর্ভুক্তি বা বহির্ভুক্তি বোঝায়, তাকে বিশেষ বচন বলে। উদাহরণ— (১) এবং (৩) সার্বিক বচন। উদাহরণ (২) এবং (৪) বিশেষ বচন।

প্রশ্ন ২৫। শ্রেণি-সদস্যতা বচন এবং সামান্য বচন কি এক? যদি না হয়, তাহলে এদের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ শ্রেণি-সদস্যতা বচন এবং সামান্য বচন এক নয়। সামান্য বচনে দুটি শ্রেণির একটি অপরটির অন্তর্ভুক্ত বা বহির্ভূত বোঝায়। কিন্তু শ্রেণি- সদস্যতা বচনে একজন ব্যক্তি একটি শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বোঝায়।

(১) সব ভারতীয়রা এশিয়াবাসী। (সামান্য বচন)

(২) রবীন্দ্রনাথ একজন কবি। (শ্রেণি সদস্যতা বচন) 

প্রশ্ন ২৬। বচনের আকার সম্পর্কে পরম্পরাগত যুক্তিবিজ্ঞানী ও আধুনিক তর্কবিজ্ঞানীর মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ পরম্পরাগত যুক্তিবিজ্ঞানীরা তর্কীয় বচনের একটি আকারই স্বীকার করেন এবং সেটা হল উদ্দেশ্য—সংযোজক—বিধেয়’ আকার। কিন্তু আধুনিক তর্কবিজ্ঞানীরা উদ্দেশ্য বিধেয় আকারের বচন’কেও বচন বলে স্বীকার করেন, যা হল সরল বচনের একটি প্রকার। 

প্রশ্ন ২৭। সামান্য বচন এবং উদ্দেশ্য-বিধেয় আকারের বচনের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সামান্য বচন এবং উদ্দেশ্য-বিধেয় আকারের বচনের মধ্যে পার্থক্য যে, সামান্য বচনে বিশেষ কোনো ব্যক্তির কথা বলা হয় না, একটি শ্রেণির কথা বলা হয়; কিন্তু বিশেষ বচনে বিশেষ ব্যক্তির কথা বলা হয়। 

প্রশ্ন ২৮। সামান্য বচন ও যৌগিক বচনের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তরঃ সামান্য বচনে একটিমাত্র উপাদান বচন থাকে। যৌগিক বচনে একাধিক উপাদান বাক্য থাকে। 

সামান্য বচনকে একাধিক উপাদানে বিশ্লেষণ করা যায় না। এই জন্যেই সামান্য বচনকে অ-মৌলিক এবং সরল ও যৌগিক বচনকে মৌলিক বচন বলা হয়।

প্রশ্ন ২৯। সম্বন্ধের নিদর্শন বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ একটি সম্বন্ধবাচক বচনে সম্বন্ধ একটি দিক বা পদ থেকে অন্য একটি দিকে বা পদে প্রসারিত হয়। এই দিকটিকে ‘সম্বন্ধের নিদর্শন’ বা বোধ অথবা ‘অভিমুখিতা’ বলে। যে পদ থেকে সম্বন্ধটি শুরু হয়, তাকে ‘নির্দেশ’ এবং যে পদের দিকে সম্বন্ধটি ধাবিত হয়, তাকে ‘সম্বন্ধী’ বলে। 

প্রশ্ন ৩০। একটি সম্বন্ধবাচক বচনের উদাহরণ দিয়ে তাকে ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ‘বিড়াল মাছ খায়’— এটি একটি সম্বন্ধবাচক বচনের উদাহরণ। এখানে সম্বন্ধসূচক পদ ‘বিড়াল’ এবং ‘মাছ’।

বিড়াল—মাছ, সম্বন্ধের এই দিকটিকে ‘সম্বন্ধের নিদর্শন’ বা ‘বোধ’ বলে। বিড়াল = নিৰ্দেশ্য; মাছ = সম্বন্ধী।

প্রশ্ন ৩১। শ্রেণি-সদস্যতা বচন বোঝানোর জন্য কী প্রতীক ব্যবহার করা হয়? 

উত্তরঃ শ্রেণি-সদস্যতা বচনে শ্রেণি বোঝানোর জন্য ইংরেজি বর্ণমালার বড় হাতের বর্ণ A, B, C, D ইত্যাদি এবং ব্যক্তি বোঝানোর জন্য a, b, c, d ইত্যাদি বর্ণপ্রতীকের ব্যবহার হয়। তাছাড়া শ্রেণি সম্বন্ধ বোঝানোর জন্য ‘ᕮ’ (belongs of) চিহ্নটি ব্যবহার করা হয়। যেমন— রবীন্দ্রনাথ একজন কবি ছিলেন (Rabindranath was a poet)— ‘r ᕮ P’

প্রশ্ন ৩২। শ্রেণিসদস্যতা বচন বা উদ্দেশ্য-বিধেয় আকারের বচনকে পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞানে ‘সামান্য বচন’ বলে ধরা হয় কেন?

উত্তরঃ কারণ শ্রেণিসদস্যতা বচন ও উদ্দেশ্য বিধেয় আকারের বচন—উভয়প্রকার বচনই বিশিষ্ট বচন, কারণ দুটি বচনেরই উদ্দেশ্য পদটি বিশিষ্ট পদ। আর যে বচনের উদ্দেশ্য পদ বিশিষ্ট পদ হয়, পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞানে তাকে সামান্য বচন নামে অভিহিত করা হয়।

প্রশ্ন ৩৩। শ্রেণিসদস্যতা বচন ও উদ্দেশ্য বিধেয় আকারের বচনের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ 

সাদৃশ্যবৈসাদৃশ্য
(১) উভয়প্রকার বচনকেই পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞানে ‘সামান্য বচন’ নামে অভিহিত করা হয়।(১) শ্রেণিসদস্যতা বচনে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু বা বিষয়কে কোনো একটি শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বলে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু উদ্দেশ্য বিধেয় আকারের বচনে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর কোনো গুণ আছে বলে বোঝায়।
(২) এই দুটি বচনই বিশিষ্ট বচন, কারণ দুটি বচনেরই উদ্দেশ্যপদটি বিশিষ্ট পদ।(২) সক্রেটিস একজন দার্শনিক ছিলেন—এটি শ্রেণিসদস্যতা বচনের উদাহরণ। অপরপক্ষে, সক্রেটিস জ্ঞানী ছিলেন—এটি উদ্দেশ্য বিধেয় আকারের বচনের উদাহরণ।

প্রশ্ন ৩৪। অভিব্যাপী বা সমাবেশিত শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ অভিব্যাপী অর্থে ‘অথবা’ শব্দটির অর্থ ‘অন্তত একটি’ সবগুলিও হতে পারে। যদি কোনো বৈকল্পিক বচনের অন্তত একটি বিকল্প বচন বা বিয়োজক সত্য হয়, তখন অভিব্যাপী বা সমাবেশিত অর্থ হয়। যেমন—‘তিনি হয় শিক্ষক নয় রাজনীতিক’। 

প্রশ্ন ৩৫। ঐকান্তিক বা ব্যাবর্তক অর্থ কী?

উত্তরঃ ঐকান্তিক অর্থে একটা বিয়োজক সত্য হলে অপরটি সত্য হতে পারে না। অর্থাৎ, একটি সত্য হলে, অপরটি মিথ্যা হবে; একটি মিথ্যা হলে অপরটি সত্য হবে। যেমন ‘হয় সে শিক্ষিত নয় সে অশিক্ষিত’।

প্রশ্ন ৩৬। অস্তিত্বমূলক বচন, এক বিধেয় বিশিষ্ট সামান্য বচন এবং শ্রেণি সম্বন্ধসূচক সামান্য বচনের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তরঃ সামান্য বচনের অন্তর্গত অস্তিত্বমূলক বচন এবং এক বিধেয় বিশিষ্ট সামান্য বচনে একটি শ্রেণির কথা বা একটি গুণের বা উপলক্ষণের কথা বলা হয়। কিন্তু শ্রেণি সম্বন্ধ সূচক সামান্য বচনে দুটি শ্রেণির মধ্যে সম্পর্কের কথা বলা হয়।

রচনাভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। সরল বচনের শ্রেণিবিভাগ সম্বন্ধে আলোচনা করো। 

উত্তরঃ যে বচনে একটিমাত্র উক্তি থাকে, তাকে সরল‌ বচন বলে। সরল বচন চার প্রকার। যেমন—

(ক) উদেশ্য পদবিহীন বচনঃ যে সকল বচনে কোনো উদ্দেশ্য পদ থাকে না, তাকে উদ্দেশ্য পদবিহীন বচন বলে। যথা— সাপ। সাপ !

(খ) উদ্দেশ্য-বিধেয় আকারের বচনঃ যে বচনে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর কোনো গুণ আছে বলে বোঝায়, তাকে উদ্দেশ্য-বিধেয় আকারের বচন বলে। 

যেমন— সক্রেটিস জ্ঞানী ছিলেন।

(গ) সম্বন্ধবাচক বা সম্বন্ধাত্মক বচনঃ যখন কোনো বচনে দুই বা ততোধিক পদের মধ্যে সম্বন্ধ বোঝায়, সেই বচনকে সম্বন্ধবাচক বচন বলে। 

যেমন— মা সন্তানকে ভালোবাসেন।

(ঘ) শ্রেণিসদস্যতা বচনঃ যে বচনে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু বা বিষয়কে কোনো একটি শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বলে প্রকাশ করা হয়, তাকে শ্রেণিসদস্যতা বচন বলে। 

যেমন—সক্রেটিস একজন দার্শনিক ছিলেন।

প্রশ্ন ২। যৌগিক বচন সম্বন্ধে আলোচনা করো।

উত্তরঃ যে বচনে একাধিক উপাদান বাক্য বা অঙ্গবাক্য থাকে, তাকে যৌগিক বচন বলে।

প্রতীকাত্মক যুক্তিবিজ্ঞানে চার প্রকার যৌগিক বচনের উল্লেখ আছে। সেগুলো হল: 

(ক) সংযৌগিক বচনঃ সংযৌগিক বচন একপ্রকার যৌগিক বচন। যার অন্তর্গত সরল বচন বা উপাদান বচনগুলি ‘এবং’ বা অনুরূপ অর্থযুক্ত শব্দের দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। যেমন— ‘রাম এবং শ্যাম মেধাবী ছাত্র’।

(খ) বৈকল্পিক বচনঃ বৈকল্পিক বচন একপ্রকার যৌগিক বচন, যার অন্তর্গত সরল বচন বা উপাদান বচনগুলি ‘অথবা’ বা অনুরূপ অর্থবোধক শব্দের দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন—‘রাম আসবে অথবা যদু আসবে’। 

(গ) সংশ্লেষক বচন বা নিহিতার্থক বা প্রাকল্পিক বচনঃ যে যৌগিক বচনে দুটি উপাদান বচন (সরল বচন) ‘যদি…. তাহলে’ অথবা এই জাতীয় কোনো শর্তের দ্বারা যুক্ত হয়, তাকে নিহিতার্থক বচন বলে। যেমন—‘যদি সূর্য ওঠে, তাহলে পৃথিবী আলোকিত হয়।’

(ঘ) নঞর্থক বচন বা নিষেধ বচনঃ একটি মূল বচনের সঙ্গে ‘না’, ‘নয়’ ইত্যাদি শব্দ যোগ করে সাধারণত নঞর্থক বচন গঠন করা হয়। যেমন—এই জায়গাটা সুন্দর নয়।

প্রশ্ন ৩। সামান্য বচন বা সাধারণ বচন কাকে বলে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো? 

উত্তরঃ সামান্য বচন হল সেই বচন, যা কোনো কিছুর অস্তিত্ব বোঝায় অথবা সমগ্র বিশ্বের ক্ষেত্রে কোনো গুণ বা উপলক্ষণ আছে বোঝায় কিংবা দুটি শ্রেণির মধ্যে সম্পর্ক বোঝায়।

সামান্য বা সাধারণ বচন তিন প্রকারের হয়। যেমন—

(ক) অস্তিত্বমূলক সামান্য বচনঃ অস্তিত্বমূলক সামান্য বচন হচ্ছে সে বচন, যাতে কোনো কিছুর অস্তিত্বকে প্রত্যক্ষভাবে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয়। 

যেমন—‘ভগবান আছেন’, ‘ভূত বলে কিছু নেই’, ইত্যাদি।

(খ) একবিধেয়যুক্ত সামান্য বচনঃ একবিধেয়যুক্ত সামান্য বচনে কোনো গুণ বা উপলক্ষণকে সমগ্র বিশ্বের ক্ষেত্রে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয়। 

যেমন—‘সকল বস্তুই পরিবর্তনশীল’। ‘পৃথিবীতে স্থায়ী বলে কিছু নেই।’ ‘কোনো বস্তু স্থায়ী নয়।’

(গ) শ্রেণি-সম্বন্ধসূচক সামান্য বচনঃ শ্রেণি-সম্বন্ধসূচক সামান্য বচনে কোনো একটি শ্রেণি অপর একটি শ্রেণির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে অন্তর্ভুক্ত বা বহির্ভূত বলে বোঝায়। যেমন—

(১) সব ভারতীয়রা এশিয়াবাসী।

(২) কোনো কোনো দার্শনিক গণিতজ্ঞ।

(৩) কোনো সৈনিকই কাপুরুষ নয়।

(৪) কোনো কোনো কবি প্রাবন্ধিক নন।

উদাহরণ (১)-এ ‘ভারতীয়’ শ্রেণি ‘এশিয়াবাসী’ শ্রেণির মধ্যে সম্পূর্ণরূপে অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণ (২)-এ ‘দার্শনিক’ শ্রেণি ‘গণিতজ্ঞ’ শ্রেণিতে আংশিকভাবে অন্তর্ভুক্ত; উদাহরণ (৩)-এ ‘সৈনিক শ্রেণি ‘কাপুরুষ’ শ্রেণির মধ্যে সম্পূর্ণভাবে বহির্ভুক্ত এবং উদাহরণ (৪)-এ ‘কবি’ শ্রেণি ‘প্রাবন্ধিক’ শ্রেণিতে আংশিক বহির্ভূত বোঝাচ্ছে।

যে বচনে সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তি বা বহির্ভুক্তি বোঝায়, তাদের ‘সার্বিক বচন’ বলে। কিন্তু যে বচনে আংশিক অন্তর্ভুক্তি বা বহির্ভুক্তি বোঝায়, তাদের ‘বিশেষ বচন’ বলে। 

প্রশ্ন ৪। সামান্য বচনের প্রতীকী রূপ সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ আধুনিক যুক্তিবিজ্ঞানীরা মানকের সাহায্যে সামান্য বচনের আকারগত প্রকৃতি নির্দেশ করার চেষ্টা করেছেন। সামান্য বচনও সার্বিক হতে পারে, বিশেষ বচনও হতে পারে। কাজেই সার্বিক বচনের জন্য সার্বিক মানক এবং বিশেষ বচনের জন্য সাত্ত্বিক মানক ব্যবহার করা হয় । 

সার্বিক মানকের প্রতীকী রূপ (x)। (x)-এর অর্থ হল ‘Given any x’। সার্বিক বচনের প্রতীকী রূপে (x) মানকটি ব্যবহৃত হয়। যেমন— 

(ক) All humans are mortal. 

এর প্রতীকী রূপঃ (x)(Hx ᑐ Mx) [Give any x, if x is human. then x is mortal.]

(খ) No humans are perfect.

এর প্রতীকী রূপঃ (x)(Hx ᑐ ~ Px) [Given any x, if x is human. then is not perfect.]

সাত্ত্বিক মানকের প্রতীকী রূপ হল (∃x)

এর অর্থ, অন্তত একজন ‘x’ আছে।

(∃x) প্রতীকটি বিশেষ বচনের প্রতীকী রূপে ব্যবহার করা হয়। যেমন—

(ক) Some humans are wise.

এর প্রতীকী রূপঃ (∃x) (Hx . Wx)

অর্থাৎ অন্তত একজন ‘x’ আছে যে ‘x’ মানুষ কিন্তু জ্ঞানী।

(খ) Some humans are not wise. 

এর প্রতীকী রূপঃ (∃x) (Hx . ~ Wx)

অর্থাৎ অন্তত একজন ‘x’ আছে যে ‘x’ মানুষ কিন্তু জ্ঞানী নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top