Class 11 Logic and Philosophy Chapter 1 তর্কবিজ্ঞান

Class 11 Logic and Philosophy Chapter 1 তর্কবিজ্ঞান answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Logic and Philosophy Chapter 1 তর্কবিজ্ঞান and select needs one.

Class 11 Logic and Philosophy Chapter 1 তর্কবিজ্ঞান

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Logic and Philosophy Chapter 1 তর্কবিজ্ঞান Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

তর্কবিজ্ঞান

পাঠ:

প্রথম খণ্ড

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। তর্কবিজ্ঞানের মূল বা প্রধান আলোচ্য বিষয় কী?

উত্তরঃ যুক্তি বা অনুমান।

প্রশ্ন ২। তর্কবিজ্ঞানের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী?

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞানের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল-ভাষায় প্রকাশিত চিন্তার বিজ্ঞান বা চিন্তা-সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

প্রশ্ন ৩। পরম্পরাগত যুক্তিবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা কে?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

উত্তরঃ অ্যারিস্টটল।

প্রশ্ন ৪। ‘তর্কবিজ্ঞান’ শব্দটি সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেছিলেন?

উত্তরঃ গ্রিক তর্কবিদ জেনো (Zeno) সর্বপ্রথম ‘তর্কবিজ্ঞান’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।

প্রশ্ন ৫। তর্কবিজ্ঞান বা ‘Logic’ শব্দটি কোন্ ভাষা থেকে এসেছে?

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞান বা ‘Logic’ কথাটি গ্রিক শব্দ ‘Logike’ থেকে উদ্ভুত। ‘Logike’ কথাটি আবার ‘Logos’ নামক বিশেষ্যের বিশেষণ।

প্রশ্ন ৬। গ্রিক শব্দ ‘Logos’-এর অর্থ কী?

উত্তরঃ ‘Logos’-এর অর্থ ‘চিন্তা’ অথবা এমন শব্দ যা চিন্তার প্রকাশ অর্থাৎ ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা।

প্রশ্ন ৭। ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা কত রকমের হয় এবং সেগুলো কী কী?

উত্তরঃ ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা দুই রকমের হয়। সেগুলো হল-প্রত্যক্ষ চিন্তা এবং পরোক্ষ চিন্তা।

প্রশ্ন ৮। তর্কবিজ্ঞান কীরকম চিন্তার বিজ্ঞান?

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞান পরোক্ষ চিন্তার বিজ্ঞান।

প্রশ্ন ৯। অনুমান কী?

উত্তরঃ অনুমান হল একটি মানসিক প্রক্রিয়া যা দিয়ে জ্ঞাতসত্য থেকে অজ্ঞাতসত্য উপনীত হওয়া যায়।

প্রশ্ন ১০। যুক্তি কী?

উত্তরঃ ভাষায় প্রকাশিত অনুমানকে যুক্তি বলে।

প্রশ্ন ১১। জ্ঞানের দুটি প্রধান বিভাগ কী কী?

উত্তরঃ প্রত্যক্ষ জ্ঞান এবং পরোক্ষ জ্ঞান।

প্রশ্ন ১২। জ্ঞানের উৎস কী কী?

উত্তরঃ (ক) প্রত্যক্ষ। 

(খ) অনুমান। 

(গ) শব্দ।

প্রশ্ন ১৩। সত্যতা কী?

উত্তরঃ সত্যতা বলতে জ্ঞানের যথার্থতা বোঝায়৷

প্রশ্ন ১৪। চিন্তার সত্যতা কত রকমের এবং কী কী? 

উত্তরঃ চিন্তার সত্যতা দুই রকমের-

(ক) আকারগত সত্যতা। 

(খ) বস্তুগত সত্যতা।

প্রশ্ন ১৫। আকারনিষ্ঠ তর্কবিজ্ঞানকে ‘বিশুদ্ধ তর্কবিজ্ঞান’ বা ‘সংগতিপূর্ণ তর্কবিজ্ঞান’ বলা যায় কী?

উত্তরঃ অবশ্যই বলা যায়।

প্রশ্ন ১৬। তর্কবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য কী?

উত্তরঃ হ্যামিলটন বলেন যে, ‘তর্কবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হল, আকারগত সত্যতা বিচার।’

প্রশ্ন ১৭। তর্কবিজ্ঞানের আদর্শ কী?

উত্তরঃ সত্যতা।

প্রশ্ন ১৮। বিজ্ঞান কয়প্রকার ও কী কী? 

উত্তরঃ বিজ্ঞান দুই প্রকারের হয়। যেমন-বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান ও আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

প্রশ্ন ১৯। তর্কবিজ্ঞান আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান না বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান?

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞান আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

প্রশ্ন ২০। নীতিবিজ্ঞান কি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান?

উত্তরঃ হ্যাঁ, নীতিবিজ্ঞান আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

প্রশ্ন ২১। নীতিবিজ্ঞানের আদর্শ কী?

উত্তরঃ নীতিবিজ্ঞানের আদর্শ হল পরম কল্যাণ বা শ্রেয়।

প্রশ্ন ২২। তর্কবিজ্ঞান কি বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান?

উত্তরঃ না, তর্কবিজ্ঞান বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান নয়।

প্রশ্ন ২৩। অনুমান বা যুক্তিকে কয় শ্রেণিতে ভাগ করা যায় এবং কী কী?

উত্তরঃ অনুমানকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

সেগুলো হল- 

(ক) নিগমন বা অবরোহ অনুমান। এবং 

(খ) আগমন বা আরোহ অনুমান।

প্রশ্ন ২৪। ‘তর্কবিজ্ঞান কলা এবং বিজ্ঞান উভয়ই’।-এই উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্তিটি সত্য। 

প্রশ্ন ২৫। ‘চিন্তা বলতে চিন্তার পদ্ধতি ও পরিণাম দুই-ই বোঝায়’- উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্তিটি সত্য।

প্রশ্ন ২৬। ‘পরম্পরাগত বা প্রতীকাত্মক যুক্তিবিজ্ঞানের মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। বীজের সঙ্গে বৃক্ষের কিংবা ভ্রূণের সঙ্গে প্রাণীদেহের যে সম্পর্ক- এখানেও সেই সম্পর্ক।’-উক্তিটি কার?

উত্তরঃ বেসন এবং কন্নর। (Basson and O’Connor)

প্রশ্ন ২৭। আকারনিষ্ঠ বিজ্ঞান কী প্রকৃতিগতভাবে নিগমনাত্মক?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ২৮। বস্তুনিষ্ঠ বা বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান কী প্রকৃতিগতভাবে আগমনাত্মক?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ২৯। বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানকে প্রায়োগিক বিজ্ঞান বলা যায় কি?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৩০। তর্কবিজ্ঞান কি একটি মানসিক ব্যায়াম?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৩১। ‘চিন্তার বস্তুগত সত্যতা থাকলে আকারগত সত্যতা থাকবেই।’—উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৩২। ‘চিন্তার আকারগত সত্যতা থাকলে, বস্তুগত সত্যতা থাকবেই।’—উক্তিটি কি সত্য? 

উত্তরঃ না। কোনো চিন্তা আকারগতভাবে সত্য হলে, বস্তুগতভাবে সত্য হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে।

প্রশ্ন ৩৩। চরম আদর্শ বা মূল্যের কোনটির সঙ্গে নন্দনতত্ত্ব জড়িত?

উত্তরঃ সৌন্দর্যের সঙ্গে।

প্রশ্ন ৩৪। ‘আধুনিক তর্কবিজ্ঞান’ বা ‘Symbolic Logic’ শব্দটি কে প্রথম ব্যবহার করেছিলেন?

উত্তরঃ জন ভেন।

প্রশ্ন ৩৫। আধুনিক তর্কবিজ্ঞানকে কে প্রথম বিকাশ করার কথা বলেছিলেন? 

উত্তরঃ গণিতজ্ঞ লাইবনিজ।

প্রশ্ন ৩৬। ‘গণিতের বিকাশের সাথে প্রতীকাত্মক তর্কবিজ্ঞানের বিকাশ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।’-এই উক্তিটি কি সত্য? 

উত্তরঃ হ্যাঁ, এই উক্তিটি সত্য।

প্রশ্ন ৩৭। ‘পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞান এবং প্রতীকাত্মক তর্কবিজ্ঞানের মধ্যে থাকা পার্থক্য কেবল ক্রমোন্নতির বিভিন্ন পর্যায়ের পার্থক্য’-এই উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ হ্যাঁ, সত্য। 

প্রশ্ন ৩৮। প্রতীকাত্মক তর্কবিজ্ঞান পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞানের বিকশিত, পরিবর্ধিত রূপ”-উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ হ্যাঁ। উক্তিটি সত্য।

প্রশ্ন ৩৯। আধুনিক বা প্রতীকাত্মক তর্কবিজ্ঞানের ইতিহাস ‘হ্রস্বতর বা সংক্ষিপ্ত, কিন্তু পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞানের ইতিহাস দীর্ঘতর’, একথা কি সত্য বলে বিবেচনা করো?

উত্তরঃ হ্যাঁ, একথা সত্য বলে বিবেচনা করি । 

প্রশ্ন ৪০। ‘পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞান এবং আধুনিক তর্কবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য কেবলমাত্র বিকাশের বিভিন্ন স্তর বা পর্যায়ের পার্থক্য।’-এই উক্তিটি কি সত্য? 

উত্তরঃ হ্যাঁ, এই উক্তিটি সত্য।

শুদ্ধ উত্তর দাও:

১। তর্কবিজ্ঞান চিন্তা/ সৌন্দর্য/সম্পদের বিজ্ঞান।

উত্তরঃ চিন্তা।

২। পদ/বচন/যুক্তি/সত্য/এগুলোর মধ্যে সব তর্কবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু।

উত্তরঃ এগুলোর মধ্যে সব।

৩। তর্কবিজ্ঞান কলা/বিজ্ঞান/কলা বিজ্ঞান উভয়ই। 

উত্তরঃ কলা বিজ্ঞান উভয়ই।

৪। তর্কবিজ্ঞান বস্তুনিষ্ঠ/আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

উত্তরঃ আদর্শনিষ্ঠ।

৫। তর্কবিজ্ঞান সৌন্দর্য/সম্পদ/সত্যের বিজ্ঞান। 

উত্তরঃ সত্যের।

৬। তর্কবিজ্ঞান প্রত্যক্ষ/অনুমান / উপমান-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

উত্তরঃ অনুমান।

৭। তর্কবিজ্ঞান সত্যজ্ঞান অর্জনের কারণে উপযোগী/উপযোগী নয়। 

উত্তরঃ উপযোগী।

৮। তর্কবিজ্ঞান যুক্তির আকার/যুক্তির বিষয়বস্তু/উভয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। 

উত্তরঃ যুক্তির আকার।

৯। তর্কবিজ্ঞানে ব্যবহার করা হয় চিন্তা/যুক্তি শব্দটি। 

উত্তরঃ যুক্তি।

১০। প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ জ্ঞানের সত্যতা নিরূপণের প্রশ্ন থাকে। 

উত্তরঃ পরোক্ষ জ্ঞানের।

শূন্যস্থান পূর্ণ করো: 

১। তর্কবিজ্ঞান ______ বিজ্ঞান৷

 উত্তরঃ আদর্শনিষ্ঠ।

২। তর্কবিজ্ঞান বিজ্ঞান ও কলা ______।

উত্তরঃ উভয়ই।

৩। আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানের উদাহরণ ______ ও নীতিবিজ্ঞান।

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞান।

৪। তর্কবিজ্ঞান ______ চিন্তার বিজ্ঞান।

উত্তরঃ পরোক্ষ।

৫। তর্কবিজ্ঞান বা Logic কথাটি ______ শব্দ ______ থেকে উদ্ভূত।

উত্তরঃ গ্রিক, Logike

৬। নন্দনতত্ত্ব ______ বিজ্ঞান।

উত্তরঃ সৌন্দর্যের।

৭। ______ বলতে জ্ঞানের যথার্থতা বোঝায়। 

উত্তরঃ সত্যতা।

৮। বস্তুনিষ্ঠ তর্কবিজ্ঞানের অপর নাম ______।

 উত্তরঃ Logic of Truth. 

৯। আসলে ______ ও কলাবিদ্যার মধ্যে পার্থক্য সামান্য।

উত্তরঃ বিজ্ঞান।

১০। ______ বৈধ চিন্তার বিজ্ঞান।

 উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞান।

উদাহরণ দাও:

১। বিজ্ঞান: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, প্রাণীবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি।

২। আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান: তর্কবিজ্ঞান, নীতিবিজ্ঞান, সৌন্দর্যবিজ্ঞান বা নন্দনতত্ত্ব ইত্যাদি।

৩। বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান বা বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি।

৪। নিগমন বা অবরোমূলক অনুমান:

৫। আগমন বা অবরোমূলক অনুমান:

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। অনুমান বা যুক্তিকে কয়শ্রেণিতে ভাগ করা যায় এবং কী কী?

উত্তরঃ অনুমানকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। সেগুলো হল- 

(ক) নিগমন বা অবরোহ অনুমান। এবং 

(খ) আগমন বা আরোহ অনুমান।

প্রশ্ন ২। চিন্তার মূল সূত্রাবলির নাম উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ চিন্তার মূল সূত্রাবলির নাম নিম্নরূপ:

(ক) তাদাত্ম্য নিয়ম (The Law of Identity)

(খ) বিরোধ-বাধক নিয়ম (The Law of Contradiction)

(গ) নির্মধ্যম-নিয়ম (The Law of Excluded Middle)

প্রশ্ন ৩। আধুনিক তর্কবিজ্ঞানের অপর নামগুলো কী কী?

উত্তরঃ গাণিতিক বিজ্ঞান, তর্কীয় বীজগণিত, প্রতীকাত্মক তর্কবিজ্ঞান, নতুন বিজ্ঞান ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৪। পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞানের অপর নামগুলো কী কী?

উত্তরঃ অ্যারিস্টটলীয় তর্কবিজ্ঞান, প্রাচীন তর্কবিজ্ঞান, ন্যায়-সম্পর্কিত তর্কবিজ্ঞান, ধ্রুপদি বিজ্ঞান ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৫। ‘চিন্তা’ শব্দটি কী কী অর্থ বোঝায়?

উত্তরঃ ‘চিন্তা’ শব্দটি প্রত্যক্ষ, স্মৃতি, ধারণা, যুক্তিপদ্ধতি ইত্যাদি বোঝায়। তর্কবিজ্ঞানে চিন্তা কেবল যুক্তিপদ্ধতিকেই বোঝায়।

প্রশ্ন ৬। আধুনিক তর্কবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী?

উত্তরঃ আধুনিক তর্কবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ: 

(ক) ধারণাজ্ঞাপক প্রতীকের ব্যবহার।

(খ) নিগমনাত্মক পদ্ধতির ব্যবহার।

(গ) চল বা পরিবর্ত্যের ব্যাপক ব্যবহার।

প্রশ্ন ৭। হেতুবাক্য বা আধারবাক্য বা আশ্রয়বাক্য কাহাকে বলে? 

উত্তরঃ যে বচন বা বচনগুলোর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে ‘হেতুবাক্য’ বা ‘আধারবাক্য’ বা ‘আশ্রয়বাক্য’ বলে।

প্রশ্ন ৮। সিদ্ধান্ত কাকে বলে?

উত্তরঃ আশ্রয়বাক্য বা হেতুবাক্যের ভিত্তিতে যে বচনটিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়, সেই বচনটি হল সিদ্ধান্ত।

প্রশ্ন ৯। চিন্তার প্রকৃতিগত দিকগুলি কী কী? 

উত্তরঃ চিন্তার প্রকৃতিগত দিকগুলি নিম্নরূপ:

(ক) চিন্তার প্রক্রিয়া।

(খ) চিন্তার পরিণাম বা ফল।

প্রশ্ন ১০। চিন্তার আকার ও উপাদানের সম্বন্ধ কীরূপ? 

উত্তরঃ চিন্তার আকার ও উপাদানের সম্বন্ধ নিম্নরূপ:

(ক) আকার এক হলেও উপাদান ভিন্ন।

(খ) উপাদান এক থাকলেও আকার ভিন্ন হতে পারে।

(গ) উপাদান ও আকার দুই-ই ভিন্ন ভিন্ন। 

প্রশ্ন ১১। কয়েকজন আধুনিক তর্কবিজ্ঞানীর নাম লেখো।

উত্তরঃ কয়েকজন আধুনিক তর্কবিজ্ঞানী হলেন:

জন ভেন (John Venn), লাইবনিজ (Leibnity), জর্জ বুল্ (George Boole), রাসেল (Russell), অগাস্টাস (Augustus), ডি. মরগান (De Morgan), ডব্লু, এস জেভনস ( W. S. Jevons) প্রমুখ।

প্রশ্ন ১২। তর্কবিজ্ঞানে বৈধ অনুমানের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কী কী সহায়ক প্রক্রিয়া আছে? 

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞানে বৈধ অনুমানের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নিম্নলিখিত সহায়ক প্রক্রিয়া আছে- 

(ক) তৰ্কীয় সংজ্ঞা।

(খ) তৰ্কীয় শ্রেণিবিভাজন।

(গ) ব্যাখ্যা।

(ঘ) নামকরণ, ইত্যাদি।

এগুলিকে এক কথায় বৌদ্ধিক প্রক্রিয়া বলে।

সংজ্ঞা দাও:

১। বিজ্ঞান: প্রকৃতির কোনো একটি নির্দিষ্ট বিভাগ সম্পর্কে সুসংগঠিত সুশৃঙ্খল এবং সুনিশ্চিত জ্ঞানকে ‘বিজ্ঞান’ বলে। যেমন – পদার্থবিদ্যা, পদার্থ সম্পর্কে; রসায়নবিজ্ঞান রসায়ন সম্পর্কে; উদ্ভিদবিজ্ঞান উদ্ভিদের প্রকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে।

২। যুক্তি: ভাষায় প্রকাশিত অনুমানকে যুক্তি বলে। যুক্তি হচ্ছে এক বা একাধিক বচনের সমষ্টি, যে বচন বা বচনগুলোর উপরে ভিত্তি করে অন্য একটি বচনকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। যে বচনটি প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে বলে ‘সিদ্ধান্ত’। আর যে বচন বা বচনগুলোর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে বলে ‘হেতুবাক্য’ বা ‘আশ্রয়বাক্য’ বা ‘আধারবাক্য’। কাজেই প্রতিটি যুক্তি হল আশ্রয়বাক্য- সিদ্ধান্ত’- এই প্রক্রিয়া।

৩। বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান: যে বিজ্ঞানে বিষয়বস্তুর যথার্থ প্রকৃতি বা স্বরূপ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়, তাকে বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে। যেমন- পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান ইত্যাদি। 

৪। আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান: আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান সেই বিজ্ঞান যেখানে কোনো আদর্শকে সামনে রেখে বিষয়বস্তুর বিচার করা হয়। যেমন- নীতিবিজ্ঞান, তর্কবিজ্ঞান ইত্যাদি।

৫। জ্ঞান: মনের ধারণাসমূহের সঙ্গে যদি বহির্জগতের বস্তু বা ঘটনার সামঞ্জস্য থাকে এবং সেই সামঞ্জস্য সম্পর্কে বিশ্বাস থাকে, তাহলে তাকে ‘জ্ঞান’ বলে।

৬। প্রত্যক্ষ জ্ঞান: অপর কোনো জ্ঞানের সাহায্য ছাড়াই সরাসরি যে জ্ঞান অর্জিত হয়, তাকে ‘প্রত্যক্ষ জ্ঞান’ বলে। প্রত্যক্ষ জ্ঞান দু’ভাবে অর্জন করা যায়। পঞ্চেন্দ্রিয়ের সাহায্যে বহির্জগৎ সম্পর্কে যে জ্ঞান অর্জিত হয়, তাকে ‘বাহ্য প্রত্যক্ষ জ্ঞান’ বলে। আবার, অন্তরিন্দ্রিয় অর্থাৎ মনের সাহায্যে মানসিক অবস্থা বা প্রক্রিয়াসমূহ সম্পর্কে যে জ্ঞান হয়, তাকে ‘অন্তঃপ্রত্যক্ষ জ্ঞান’ বলে। 

৭। পরোক্ষ জ্ঞান: যে জ্ঞান অন্য কোনো জ্ঞানের মাধ্যমে অর্জিত হয়, তাকে ‘পরোক্ষ জ্ঞান’ বলে। অনুমান, শব্দ ইত্যাদির মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জিত হয়, সেটাই ‘পরোক্ষ জ্ঞান’।

৮। অনুমান: অনুমান একটি মানসিক প্রক্রিয়া যা দিয়ে জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে উপনীত হওয়া যায়। অনুমানে জ্ঞাত বিষয়ের ভিত্তিতে অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়। অনুমান পরোক্ষ জ্ঞান, প্রত্যক্ষ জ্ঞান নয়।

৯। শব্দ: কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, কিংবা প্রামাণ্য গ্রন্থ থেকে যে জ্ঞানলাভ করা যায়, তাকে ‘শব্দ’ বা আপ্তবাক্য বলে।

১০। আকারগত সত্যতা: সংগতিপূর্ণ চিন্তার কারণে যে সত্যতা পাওয়া যায়, তাকে আকারগত সত্যতা বলে। সংগতিপূর্ণ চিন্তার অর্থ আত্মবিরোধমুক্ত চিন্তা। অতএব, কোনো চিন্তার ক্ষেত্রে যখন আত্মসংগতি বা আত্মবিরোধমুক্ততা থাকে, তখন সেই চিন্তা সত্য হয়।

১১। বস্তুগত সত্যতা: চিন্তার বিষয়বস্তুর সঙ্গে যখন বাস্তবের মিল বা সামঞ্জস্য থাকে, তখন বস্তুগত সত্যতা পাওয়া যায়। চিন্তার ‘বাস্তব যথার্থ বা বাস্তব সত্যতা’র অর্থ হল যে চিন্তার সঙ্গে বহির্জগতের মিল আছে। যে চিন্তার সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকে না, সেই চিন্তার বস্তুগত সত্যতাও থাকে না।

১২। আকারনিষ্ঠ তর্কবিজ্ঞান: আকারনিষ্ঠ তর্কবিজ্ঞানে কেবল চিন্তার আকারগত সত্যতার বিষয়ে আলোচনা করা হয়, বাস্তব সত্যতা বিষয়ে নয়। আকারনিষ্ঠ তর্কবিজ্ঞান শুধু এটাই বিচার করে যে চিন্তা অন্তঃবিরোধিতামুক্ত কিনা। 

আকারনিষ্ঠ তর্কবিজ্ঞানে আশ্রয়বাক্যগুলোকে সত্য বলে স্বীকার করে নিয়ে তার থেকে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়।

১৩। বস্তুনিষ্ঠ বা বস্তুগত তর্কবিজ্ঞান: বস্তুনিষ্ঠ তর্কবিজ্ঞান চিন্তার ক্ষেত্রে, কেবলমাত্র অন্তঃবিরোধিতামুক্ততা নিয়েই সন্তুষ্ট নয়, যুক্তির বাস্তব সত্যতা বিচারও বস্তুনিষ্ঠ তর্কবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে পড়ে।

১৪। কলা: যে বিদ্যা কোনো একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোনো জ্ঞানকে ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগের বিধি বা রীতি সম্পর্কে শিক্ষা দেয়, তাকে ‘কলাবিদ্যা’ বলে।

১৫। তর্কবিজ্ঞান: ‘তর্কবিজ্ঞান’ বা ‘Logic’ শব্দের উৎপত্তি গ্রিক শব্দ ‘Logike’ থেকে। গ্রিক ভাষায় ‘Logike’ হল ‘Logos’ নামক বিশেষ্যের বিশেষণ। গ্রিক শব্দ ‘Logos’-এর অর্থ ‘চিন্তা’ বা চিন্তার বাহন ‘শব্দ’। ব্যুৎপত্তিগতভাবে, ‘Logic’ বা ‘তর্কবিজ্ঞান’ হল ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা-সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

১৬। নিগমন অনুমান বা অবরোহমূলক অনুমান: নিগমন অনুমানে সিদ্ধান্ত এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য থেকে নিঃসৃত হয়। এর সিদ্ধান্ত কখনই আশ্রয়বাক্য থেকে ব্যাপকতর হতে পারে না এবং নিগমন অনুমানের ক্ষেত্রে সাধারণত সামান্য থেকে বিশেষ বচন যাওয়া হয়।

১৭। আগমন অনুমান বা আরোহমূলক অনুমান: আগমন অনুমানে কিছু সংখ্যক দৃষ্টান্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে একটি সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ধরনের অনুমানে ‘বিশেষ’ থেকে ‘সামান্যে’ যাওয়া হয় এবং সিদ্ধান্ত সব সময় আশ্রয়বাক্য থেকে ব্যাপকতর হয়।

১৮। প্রতীকাত্মক যুক্তিবিজ্ঞান: প্রতীকাত্মক যুক্তিবিজ্ঞান পরম্পরাগত যুক্তিবিজ্ঞানের একটি পরিশোধিত, পরিবর্তিত এবং পরিণত রূপ। একে প্রতীকাত্মক যুক্তিবিজ্ঞান বলা হয় এই কারণে যে, এই যুক্তিবিজ্ঞানে প্রতীকের ব্যাপক এবং বহুল ব্যবহার হয়। শুধু তাই নয়, এতে অবরোহী পদ্ধতিরও অনুসরণ করা হয়েছে। এককথায় অবরোহী যুক্তিবিজ্ঞানের অত্যাধুনিক রূপ এই নব্য বা প্রতীকাত্মক যুক্তিবিজ্ঞান।

১৯। পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞান: অ্যারিস্টটল পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা। পরম্পরাগত তর্কবিজ্ঞান এমন একটি যুক্তিবিজ্ঞান, যেখানে বৈধ চিন্তার সাধারণ নিয়মগুলো আলোচনা করা হয়েছে। এইসব নিয়মাবলি অনুসরণ করে বৈধ বা অবৈধ যুক্তি নির্ধারণ করা যায়। 

২০। হেতু বাক্য: যে বচনটি প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে বলে ‘সিদ্ধান্ত’ আর যে বচন অথবা বচনগুলোর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে বলে হেতু বাক্য।

রচনাভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। তর্কবিজ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করো। (Nature of Logic)

উত্তরঃ যুক্তিবিজ্ঞান বা তর্কবিজ্ঞানকে চিন্তা-সম্পর্কিত বিজ্ঞান বলা হয়। চিন্তা একটি মানসিক প্রক্রিয়া যা ভাষার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা দু’রকমের হয়- প্রত্যক্ষ চিন্তা এবং পরোক্ষ চিন্তা। তর্কবিজ্ঞান পরোক্ষচিন্তার বিজ্ঞান।

চিন্তা বলতে চিন্তার পদ্ধতি ও চিন্তার পরিণাম দুইই বোঝায়। যে পদ্ধতি অনুসারে আমরা মনে মনে ‘সামান্য ধারণা’ তৈরি করি, তাকে বলে ‘Conception’ বা ‘সামান্য ধারণা গঠন পদ্ধতি’, এবং যে জিনিসটি মনে মনে তৈরি হয়, তাকে বলে ‘সামান্য ধারণা’  বা ‘concept’। সামান্য ধারণা (concept) ভাষায় প্রকাশিত হলে তাকে বলে ‘পদ’ বা “Term’ I

দুটি সামান্য ধারণাকে মনে মনে তুলনা করার বা সংযুক্ত করার যে পদ্ধতি তাকে বলে ‘অবধারণ’ বা judgement। অবধারণ ভাষায় প্রকাশিত হলে তার নাম হয় তর্কবাক্য বা তর্কীয় বচন বা বচন বা Preposition.

এক বা একাধিক অবধারণ থেকে এবং এই অবধারণের ওপর নির্ভর করে অন্য এক অবধারণে পৌঁছনোর নাম হল ‘তর্কপদ্ধতি’ বা অনুমান (Reasoning)। ভাষায় প্রকাশিত তর্কপদ্ধতিকে যুক্তি বা Argument বলে।

তর্কবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হল, যে যুক্তি বা অনুমান আমরা করেছি, তা আশ্রয়বাক্য থেকে সঠিকভাবে নি:সৃত হয়েছে কি না। যদি হয়ে থাকে, সিদ্ধান্ত বৈধ হবে, না-হলে অবৈধ হবে। 

কাজেই বলা যায়, তর্কবিজ্ঞান আমাদের বৈধ যুক্তির নিয়ম সম্পর্কে জ্ঞান দেয় এবং সেই সব নিয়ম অনুসারে, অশুদ্ধ ও অবৈধ যুক্তি পরিহার করে শুদ্ধ ও বৈধযুক্তি কীভাবে লাভ করা যায় সেই জ্ঞান দেয়। নির্ভুল ও সঠিক চিন্তার মাধ্যমে শুদ্ধ জ্ঞান অর্জনই তর্কবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য।

প্রশ্ন ২। তর্কবিজ্ঞানের পরিসর সম্বন্ধে আলোচনা করো। (Scope of Logic)

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞানের পরিসর বলতে বোঝায় তর্কবিজ্ঞানের আলোচনার পরিধি অর্থাৎ, তর্কবিজ্ঞান যে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, সেগুলোকে বোঝায়। তর্কবিজ্ঞান মূলত যে সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, সেগুলো নিম্নরূপ:

(ক) তর্কবিজ্ঞান মূলত চিন্তার বিজ্ঞান। তর্কবিজ্ঞান বিভিন্ন প্রকারের বৈধ চিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করে।

(খ) তর্কবিজ্ঞান বৈধ চিন্তার বিজ্ঞান। বৈধ চিন্তা তখনই সম্ভব হয় যখন চিন্তার কতকগুলো মৌলিক নিয়মকে স্বীকার করা হয়। এইসব মৌলিক নিয়ম বা বিধি তর্কবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়ের অন্তর্গত।

(গ) বৈধ অনুমানের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন কিছু সহায়ক প্রক্রিয়া; যেমন- তর্কীয় সংজ্ঞা, তর্কীয় শ্রেণিবিভাজন, ব্যাখ্যা, নামকরণ ইত্যাদি। এইসব প্রক্রিয়াসমূহ তর্কবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়।

(ঘ) তর্কবিজ্ঞান প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষ চিন্তার বিজ্ঞান। তর্কবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় পরোক্ষ জ্ঞান। 

(ঙ) পদ, বচন, যুক্তি ইত্যাদি তর্কবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্ভুক্ত।

(চ) তর্কবিজ্ঞান একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। তর্কবিজ্ঞানের আদর্শ হল সত্যতা। সত্যতা দুই রকমের হয়- আকারগত সত্যতা ও বস্তুগত সত্যতা। এই উভয় সত্যতাই তর্কবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়।

প্রশ্ন ৩। তর্কবিজ্ঞানের উপযোগিতা সম্বন্ধে আলোচনা করো। (Utility of Logic) 

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞানের উপযোগিতা নিম্নরূপ:

(ক) তর্কবিজ্ঞানের সাধারণ উপযোগিতা হল, তর্কবিজ্ঞান আমাদের শুদ্ধভাবে চিন্তা করতে শেখায়। তর্কবিজ্ঞান আমাদের বৈধ যুক্তির নিয়ম সম্পর্কে জ্ঞান দেয় এবং সেইসব নিয়ম অনুসারে, অশুদ্ধ বা অবৈধ যুক্তি পরিহার করে শুদ্ধ বা বৈধ যুক্তি কীভাবে লাভ করা যায় সেই জ্ঞান দেয়। 

(খ) তর্কবিজ্ঞান আমাদের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে, বোধশক্তিকে তীক্ষ্ণতর করে এবং বিমূর্ত চিন্তার শক্তি বৃদ্ধি করে।

(গ) তর্কবিজ্ঞান মানুষের মনের আবেগ-প্রবণতাকে বিনাশ করে যুক্তিসংগত বিচারের দিক নির্দেশ করে।

(ঘ) তর্কবিজ্ঞান যুক্তির সাহায্যে জ্ঞান অর্জন করতে শেখায়। ফলে মানুষের মনের কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস দূর করতে তর্কবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে। 

(ঙ) তর্কবিজ্ঞান কেবল বৈধ যুক্তির নিয়মাবলি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে না। অনুশীলনের মাধ্যমে তাদের প্রয়োগ করারও শিক্ষা দেয়। তাই তর্কবিজ্ঞান একটি মানসিক ব্যায়াম।

(চ) তর্কবিজ্ঞান আমাদের বিচারক্ষমতা উন্নত করে।

প্রশ্ন ৪। তর্কবিজ্ঞান বিজ্ঞান এবং কলাবিদ্যা উভয়ই-আলোচনা করো।

অথবা,

তর্কবিজ্ঞান বিজ্ঞান না কলা ? আলোচনা করো।

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞান একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। তর্কবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য সত্য জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে শুদ্ধ চিন্তার নিয়মাবলি প্রণয়ন। আদর্শ চিন্তা কী, শুদ্ধ চিন্তার নিয়মনীতি কী, চিন্তা কীভাবে বৈধ বা শুদ্ধ হবে- এসবই তর্কবিজ্ঞানে আলোচিত হয়। কোন নিয়ম অনুসরণ করলে চিন্তা বৈধ হতে পারে, কীভাবে যথার্থ অনুমান সম্ভব, সেই নিয়মনীতি তর্কবিজ্ঞান নির্ধারণ করে।

যে বিদ্যা কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোনো জ্ঞানকে ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার বিধি বা নীতি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে, তাকে কলাবিদ্যা বলে। 

তর্কবিজ্ঞান শুদ্ধ চিন্তার নিয়মাবলির প্রয়োগ কৌশল শেখায় বলে তার ব্যাবহারিক মূল্য আছে এবং সেই কারণে তর্কবিজ্ঞান একটি কলাবিদ্যা। তর্কবিজ্ঞানী জে. এস. মিল এবং হোয়েটলি মনে করেন যে, তর্কবিজ্ঞান বিজ্ঞান ও কলাবিদ্যা দুইই। তর্কবিজ্ঞান বিজ্ঞান হিসেবে শুদ্ধচিন্তার নিয়মনীতি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান দেয় এবং কলা হিসেবে সেই জ্ঞানকে ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে কীভাবে প্রয়োগ করতে হয়, তা শেখায়।

এককথায় তর্কবিজ্ঞান সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান এবং সকল কলাবিদ্যার কলাবিদ্যা।

প্রশ্ন ৫। ‘তর্কবিজ্ঞান বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান, না আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান’- আলোচনা করো। 

উত্তরঃ প্রকৃতির কোনো একটি নির্দিষ্ট বিভাগ সম্পর্কে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং সুনিশ্চিত জ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা হয়। বিজ্ঞান দুই রকমের হয়- বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান এবং আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। যে বিজ্ঞানে বিষয়বস্তুর স্বরূপ বা প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, তাকে বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে। যেমন- পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি। আর যে বিজ্ঞানে কোনো আদর্শের মানদণ্ডে বিষয়বস্তুর মূল্য বিচার করা হয়, তাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে।

তর্কবিজ্ঞান একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। তর্কবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য সত্য জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে শুদ্ধ চিন্তার নিয়মাবলি প্রণয়ন। তর্কবিজ্ঞান সত্যের আদর্শকে সামনে রেখে বিষয়বস্তুর পর্যালোচনা করে। কোন নিয়ম অনুসরণ করলে চিন্তা বৈধ বা শুদ্ধ হতে পারে, কীভাবে যথার্থ অনুমান সম্ভব, সেই নিয়মনীতি তর্কবিজ্ঞান নির্ধারণ করে। তর্কবিজ্ঞান ভুলভ্রান্তি পরিহার করে শুদ্ধচিন্তায় উপনীত হবার জন্য সত্যতা নিরূপক সূত্রাবলি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান দেয়। সত্যের আদর্শের সঙ্গে জড়িত বলে তর্কবিজ্ঞানকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে।

প্রশ্ন ৬। প্রতীকাত্মক তর্কবিজ্ঞানে প্রতীকের উপযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা করো। 

উত্তরঃ প্রতীকাত্মক তর্কবিজ্ঞান যেহেতু তুলনামূলক আধুনিক চিন্তার ফসল, তাই পরম্পরাগত যুক্তিবিজ্ঞানকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই প্রতীকাত্মক তর্কবিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে প্রতীকের ব্যবহার করা হয়।

(ক) প্রতীকের ব্যবহার করার ফলে পরম্পরাগত যুক্তিবিজ্ঞানের পরিসর বিস্তৃত হয়। 

(খ) প্রতীকের ব্যবহার করা ফলে যুক্তিবিজ্ঞানে ন্যায় ছাড়াও অন্যান্য বহু যুক্তির আলোচনাও করা যায়।

(গ) প্রতীকের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বিশ্লেষণ এবং অবরোহণ- এই দুই পদ্ধতিই সার্থকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে।

(ঘ) প্রতীক ব্যবহারে যুক্তির আকার স্পষ্ট হয়। ফলে যুক্তিগুলোর আকার অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ করতে সুবিধে হয় এবং নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী যুক্তির বৈধতা-অবৈধতা নির্ণয় করা সম্ভব হয়।

(ঙ) প্রতীক ব্যবহারের ফলে ভাষার অস্পষ্টতা দূর হয়, সময় এবং শ্রমের লাঘব হয়। অতি অনায়াসে যুক্তির বৈধতা নির্ণয় করা যায়।

(চ) প্রতীক ব্যবহারের ফলে যুক্তির বাস্তব সত্যতা নির্ণয়জনিত অসুবিধাগুলো দূর হয় এবং আকারগত সত্যতার দিক থেকে যুক্তির বৈধতা ও অবৈধতা বিচার সহজসাধ্য হয়।

পার্থক্য নির্ণয় করো:

১। বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান ও আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান (Positive and Normative Science)

উত্তরঃ বস্তুনিষ্ঠ (বা বিষয়নিষ্ঠ বা বর্ণনামূলক) বিজ্ঞান ও আদর্শনিষ্ঠ (বা আদর্শমূলক) বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:

(ক) যে বিজ্ঞান কোনো বিষয় বা বস্তুর যথার্থ স্বরূপ বা প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে, তাকে বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে। অপরপক্ষে যে বিজ্ঞান কোনো একটি আদর্শকে মানদণ্ড হিসেবে রেখে বিষয়বস্তুর মূল্য নির্ধারণ করে, তাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে।

(খ) কোনো বস্তু আসলে ঠিক কীরকম তা আবিষ্কার করা হল বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। কিন্তু একটি বিষয় বা বস্তু ঠিক কী রকম হওয়া উচিত সে আলোচনা করে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

(গ) বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানে পর্যবেক্ষক তার নিজের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষকের নিজস্ব মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে।

(ঘ) বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান তথ্যের বিচারের সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে, আদর্শগত বিজ্ঞানে মূল্যের বিচারের উপরে অধিক জোর দেওয়া হয়।

২। আকারগত সত্যতা ও বস্তুগত সত্যতা (Formal Truth and Material Truth) 

উত্তরঃ আকারগত সত্যতা (আকারগত যাথার্থ্য) ও বস্তুগত সত্যতার (বা বাস্তব যাথার্থ্য) পার্থক্য নিম্নরূপ:

(ক) সংগতিপূর্ণ চিন্তার কারণে যে সত্যতা পাওয়া যায়, তাকে আকারগত সত্যতা বলে। অপরপক্ষে, চিন্তার বিষয়বস্তুর সঙ্গে যখন বাস্তবের মিল বা সামজস্য থাকে, তাকে বস্তুগত সত্যতা বলে।

(খ) চিন্তার ‘আকারগত যাথার্থ্য’র অর্থ হচ্ছে যে চিন্তার মধ্যে আত্মসংগতি আছে, কোনো রকম আত্মবিরোধ নেই। অন্যদিকে, চিন্তার ‘বাস্তব যাথার্থ্য’র অর্থ হচ্ছে যে চিন্তার সঙ্গে বহির্জগতের মিল আছে।

(গ) কোনো চিন্তা বস্তুগতভাবে সত্য হলে, তার আকারগত সত্যতা থাকবেই। কিন্তু কোনো চিন্তা আকারগতভাবে সত্য হলে, তা বস্তুগতভাবে সত্য নাও হতে পারে।

(ঘ) তর্কবিজ্ঞানের আদর্শ লক্ষ্য হল সত্যতা। নিগমন অনুমান আকারগত সত্যতার সঙ্গে জড়িত। অপরপক্ষে, আগমন অনুমানে আকারগত ও বস্তুগত সত্যতা দুই-ই থাকে।

৩। বিজ্ঞান ও কলা (Science and Arts ) 

উত্তরঃ বিজ্ঞান ও কলার মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য দেখা যায়:

(ক) প্রকৃতির কোনো একটি নির্দিষ্ট বিভাগ সম্পর্কে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং সুনিশ্চিত জ্ঞানকে ‘বিজ্ঞান’ বলে। অন্যদিকে, যে বিদ্যা কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোনো জ্ঞানকে ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার বিধি বা নীতি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে, তাকে ‘কলাবিদ্যা’ বলে।

(খ) বিজ্ঞান আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে শেখায়, কিন্তু কলাবিদ্যা আমাদের প্রয়োগকৌশল শেখায়।

(গ) বিজ্ঞান শেখায় জানতে, কলা শেখায় কাজ করতে।

(ঘ) বিজ্ঞান ঘটনার ব্যাখ্যা করে। কিন্তু কলাবিদ্যা সূত্র বা ব্যাখ্যার প্রায়োগিক কৌশল শেখায়।

৪। নিগমন অনুমান ও আগমন অনুমান (Deductive and Inductive Interference)

উত্তরঃ নিগমন ও আগমনের মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়ে প্রভেদ বর্তমান:

(ক) প্রথমত, নিগমনের বেলায় আশ্রয়বাক্যগুলিকে সত্য বলে মেনে নেওয়া হয়, কিন্তু আগমনের ক্ষেত্রে আশ্রয়বাক্য হল দৈনন্দিন জীবনের বিশিষ্ট অভিজ্ঞতা। থেকে পাওয়া।

(খ) নিগমনের লক্ষ্য শুধু আকারগত সত্যতা, কিন্তু আগমনের লক্ষ্য আকারগত এবং বস্তুগত, উভয়ই সত্যতাই।

(গ) নিগমন অনুমানে সিদ্ধান্ত কখনও আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপক হতে পারে না, কিন্তু আগমন অনুমানে সিদ্ধান্ত সবসময় আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপক হতে বাধ্য।

(ঘ) নিগমন অনুমানে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়। অন্যদিকে, আগমন অনুমানে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় না।

৫। প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও পরোক্ষজ্ঞান (Direct and Indirect knowledge) 

উত্তরঃ প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও পরোক্ষজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:

(ক) অপর কোনো জ্ঞানের সাহায্য ছাড়াই সরাসরি যে জ্ঞান অর্জিত হয়, তাকে ‘প্রত্যক্ষজ্ঞান’ বলে। অপরপক্ষে, যে জ্ঞান অপর কোনো জ্ঞানের মাধ্যমে অর্জিত হয়, তাকে ‘পরোক্ষ জ্ঞান’ বলে। 

(খ) প্রত্যক্ষ জ্ঞান দুইভাবে অর্জন করা যায়। সেগুলো হল- ‘বাহ্যপ্রত্যক্ষ’ ও ‘আন্তঃপ্রত্যক্ষ’। অন্যদিকে, ‘অনুমান’, শব্দ’ ইত্যাদির মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জিত হয়, সেটাই পরোক্ষ জ্ঞান।

(গ) বহির্জগতের বস্তুসমূহের রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শ ইত্যাদি সম্পর্কে যে জ্ঞান লাভ হয়, তাই ‘বাহ্যপ্রত্যক্ষ জ্ঞান’। মনের চিন্তা, সুখ, দুঃখ, ভয়, আনন্দ, ইচ্ছা ইত্যাদি সম্পর্কে আমরা যে জ্ঞান অর্জন করি, তাকে আন্তঃপ্রত্যক্ষ জ্ঞান বলে। অন্যদিকে, দূরের পাহাড়ে ধোঁয়া দেখে আমরা যখন বলি, ‘পাহাড়ে আগুন আছে’, তখন আমরা অনুমানভিত্তিক অর্থাৎ পরোক্ষ জ্ঞান অর্জন করি। কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, অনুষ্ঠান, গ্রন্থাদির মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানকে শব্দ বলে, সেটাও পরোক্ষ জ্ঞান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top