Class 12 Political Science Chapter 9 বিশ্বায়ন Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 9 বিশ্বায়ন Notes and select needs one.
Class 12 Political Science Chapter 9 বিশ্বায়ন
Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 9 বিশ্বায়ন Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 9 বিশ্বায়ন Solutions for All Subjects, You can practice these here.
বিশ্বায়ন
Chapter: 9
প্রথম খন্ড (সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি)
অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। বিশ্বায়ন মানে কি বোঝায়?
উত্তরঃ বিশ্বায়ন বলতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের জনসাধারণ এবং রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে গড়ে ওঠা পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে বোঝায়।
প্রশ্ন ২। বিশ্বায়নের একটি ইতিবাচক ফল উল্লেখ কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের একটি ইতিবাচক ফল হল তথ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি।
প্রশ্ন ৩। হ্যাঁ বা না লেখ:
কারিগরী কৌশল পরিবর্তন বিশ্বায়নের একমাত্র কারণ।
উত্তরঃ হ্যাঁ।
প্রশ্ন ৪। অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন বলতে অধিক পরিমাণে অর্থনৈতিক সামগ্রীর প্রবাহকে বোঝায়।
প্রশ্ন ৫। সাংস্কৃতিক একজাতীয়করণ বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে আদান-প্রদান ও মেলামেশা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণের ফলে একটি নূতন মিশ্র সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। একে সাংস্কৃতিক একজাতীয়করণ বলা হয়।
শূন্যস্থান পূর্ণ কর:
প্রশ্ন ৬। সাংস্কৃতিক সমরূপতা_______ একটি দিক।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের।
প্রশ্ন ৭। ভারত কখন থেকে আর্থিক সংস্কার আরম্ভ করেছিল।
উত্তরঃ ১৯৯১ সন থেকে।
প্রশ্ন ৮। বিশ্ব সামাজিক মঞ্চ কি?
উত্তরঃ ‘বিশ্ব সামাজিক মঞ্চ’ হল মানবাধিকার কর্মী, পরিবেশবিদ, শ্রমিক, যুবক ও মহিলা সক্রিয় কর্মীদের নিয়ে গঠিত উদার বিশ্বায়ন-বিরোধী এক আন্তর্জাতিক মঞ্চ।
প্রশ্ন ৯। ১৯৯৯ সালের WTO-এর সিয়াটেলের সম্মেলনের তাৎপর্য কি?
উত্তরঃ ১৯৯৯ সালের সিটোলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রীস্তরীয় সম্মেলনে আর্থিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্রসমূহ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অন্যায় নীতি অবলম্বন করার দোষারোপ করে বিস্তৃত প্রতিবাদ করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ১০। ভারতে কখন নূতন অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৯১ সালে।
প্রশ্ন ১১। কোন্ ক্ষেত্রে গোলকীয়করণ লাভদায়ক হয় না।
উত্তরঃ ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায়।
প্রশ্ন ১২। বিশ্ব সামাজিক মঞ্চের প্রথম বৈঠকের আয়োজন কখন করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ২০০১ সালে ব্রাজিলের পোর্ট্রো অ্যালেগ্রে।
প্রশ্ন ১৩। গোলীকীয়করণের একটি নেতিবাচক দিক লেখ।
উত্তরঃ গোলকীয়করণ দেশের সার্বভৌমত্বের উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে।
প্রশ্ন ১৪। WTO-র সম্পূর্ণ রূপ কি?
উত্তরঃ World Trade Organization.
প্রশ্ন ১৫। গোলকীয়করণের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ গোলকীয় অর্থনীতি গোলকীকরণের একটি বৈশিষ্ট্য।
প্রশ্ন ১৬। সংরক্ষণের নীতি কি?
উত্তরঃ সংরক্ষণ নীতি হল সরকারি একটি নীতি যার সাহায্যে অন্য দেশ থেকে কোন একটি বিশেষ দ্রব্য আমদানি না করা যাতে দেশে উৎপাদিত উক্ত দ্রব্য মানুষ ব্যবহার বা ভোগ করতে পারে; অর্থাৎ দেশজ দ্রব্যের সংরক্ষণ।
প্রশ্ন ১৭। গোলকীয়করণের একটি সমস্যা লেখ।
উত্তরঃ এইডস্, এইচআইভি, পক্ষীজ্বর প্রভৃতি মারণ রোগের বিস্তার।
প্রশ্ন ১৮। ভারতে আদিবাসী জনগোষ্ঠী কারা?
উত্তরঃ অনুসূচিত উপজাতি।
প্রশ্ন ১৯। গোলকীয়করণ প্রক্রিয়া কখন আরম্ভ হয়েছিল?
উত্তরঃ বিংশ শতকের শেষদিকে।
প্রশ্ন ২০। গোলকীয়করণ কি অন্তর্ভুক্ত করে?
উত্তরঃ গোলকীয়করণ বিশ্ব অর্থব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে।
প্রশ্ন ২১। বহুজাতিক সংস্থা বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ যে সকল প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ২২। কোন্ সালে এবং কোথায় বিশ্ব সামাজিক সংগঠন (WSF)-এর চতুর্থ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ ২০০৪ সালে মুম্বাইতে।
প্রশ্ন ২৩। WSF-এর সম্পূর্ণ রূপটি কি?
উত্তরঃ World Social Forum.
প্রশ্ন ২৪। বিশ্বায়নের যে-কোন একটি উৎস লেখ।
উত্তরঃ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা।
প্রশ্ন ২৫। MNCs-এর সম্পূর্ণ রূপটি কি?
উত্তরঃ Multinational Companies.
প্রশ্ন ২৬। WTO-এর সম্পূর্ণ রূপটি কি?
উত্তরঃ World Trade Organization.
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। বিশ্বায়নের কারণগুলি কি কি?
উত্তরঃ নানা প্রকার কারণের জন্য বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। প্রধান প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সমগ্র বিশ্বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখা যায়। ফলে সমগ্র বিশ্বে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
(খ) কেন্দ্র-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত সাম্যবাদী ব্যবস্থা পতনের ফলে পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহ ও অন্যান্য অনেক দেশ উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ধনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করে। ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
প্রশ্ন ২। বিশ্বায়নের বিভিন্ন দিকগুলি কি কি?
উত্তরঃ বিশ্বায়নের তিনটি দিক হল –
(ক) অর্থনৈতিক।
(খ) রাজনৈতিক। ও
(গ) সাংস্কৃতিক।
প্রশ্ন ৩। বিশ্বায়ন কিভাবে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বে প্রভাব বিস্তার করে?
উত্তরঃ বিশ্বায়ন রাষ্ট্রের পরম্পরাগত সার্বভৌমত্বের ধারণার উপর প্রভাব বিস্তার করে। তা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবক্ষয় করে। রাষ্ট্র স্বাধীনভাবে নিজ ইচ্ছানুসারে অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না।
প্রশ্ন ৪। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত দুটি সংগঠনের নাম উল্লেখ কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত দুটি সংগঠনের নাম হল—
(ক) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। এবং
(খ) আর্ন্তজাতিক মুদ্রানিধি।
প্রশ্ন ৫। তুমি কি মনে কর বিশ্বায়ন বিশ্বের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে হুমকির সৃষ্টি করেছে?
উত্তরঃ বিশ্বায়ন যে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে হুমকির সৃষ্টি করেছে একথা সর্বৈব মিথ্যা নয়। বিশ্বায়নের ফলে বিদেশি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটে এবং স্থানীয় সংস্কৃতির ব্যাপক হানি ঘটে। বিশ্বায়নের মাধ্যমে পশ্চিমী রাষ্ট্রসমূহ তাদের সংস্কৃতি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশসমূহে চালান করে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করছে।
প্রশ্ন ৬। তুমি কি মনে কর বিশ্বায়নের সাংস্কৃতিক প্রভাব সদা নেতিবাচক হয়?
উত্তরঃ বিশ্বায়নের সাংস্কৃতিক প্রভাব সর্বদা নেতিবাচক হয় না। এর ফলে আমরা উন্নত দেশসমূহের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মহান দিকগুলো সম্পর্কে ধারণা করতে পারি। তাদের উন্নত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভালো দিকগুলো গ্রহণ করে নিজেদের ঐতিহ্যের উন্নতি সাধন ও পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারি। বিশ্বায়ন না হলে এগুলো আমাদের কাছে অজানা থেকে যেত।
প্রশ্ন ৭। সাংস্কৃতিক বিবিধতা বলতে কি বোঝায়?
উত্তরঃ যে অবস্থায় বিশ্বায়ন কোন নির্দিষ্ট সংস্কৃতিকে পৃথক করে তার নিজস্ব অস্তিত্ব রক্ষা করে তাকে সাংস্কৃতিক ভিন্ন জাতীয়তা বলে।
প্রশ্ন ৮। প্রযুক্তিবিদ্যা বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে কিভাবে সহায়তা করেছে?
উত্তরঃ বিশ্বায়নের জন্য নানাপ্রকার উপাদান দায়ী।
এই উপাদানসমূহের মধ্যে প্রযুক্তি বিশ্বায়ন প্রসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে:
(ক) সাম্প্রতিককালে দূর সঞ্চার ও তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লবের ফলে এক রাষ্ট্রের উপর অন্য রাষ্ট্রের নির্ভরশীলতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
(খ) প্রযুক্তির প্রসারের ফলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে পৃথিবীর সকল বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রাখতে সমর্থ হয়েছে।
প্রশ্ন ৯। তুমি কি মনে কর বিশ্বায়নের প্রভাব সকল স্থানে এক হয়?
উত্তরঃ বিশ্বায়নের একপ্রকার নীতি সকল স্থানে একপ্রকার ফলাফল দেয় না। যদিও বিশ্বায়ন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সরকারসমূহে গ্রহণ করা এক ধরনের অর্থনৈতিক নীতি মেনে চলে, কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিস্তৃতভাবে বিভিন্ন ফলাফলের সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ১০। গোলকীয়করণের সাম্প্রতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি?
উত্তরঃ গোলকীয়করণের সাম্প্রতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) গোলকীয় অর্থনীতি।
(খ) শিল্পায়ন ও বহুজাতিক কোম্পানির বিস্তার।
প্রশ্ন ১১। গোলকীয়করণের ফলে অনিষ্ঠকারী দুটি ক্ষেত্র কি কি?
উত্তরঃ গোলকীয়করণের ফলে অনিষ্ঠকারী দুটি ক্ষেত্র নিম্নরূপ:
(ক) গোলকীয়করণের ফলে ধনতন্ত্র ও বেসরকারিকরণ বৃদ্ধি পায় এবং আর্থিক বৈষম্য দেখা দেয়।
(খ) গোলকীয়করণের ফলে বাজার অর্থনীতির উদ্ভব ঘটে, ফলে ধনী এবং গরিবের মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন ১২। গোলকীয়করণের ইতিবাচক প্রভাব কি কি?
উত্তরঃ গোলকীয়করণের ইতিবাচক প্রভাব নিম্নরূপ:
(ক) বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য ও পরিষেবার পরিমাণ বৃদ্ধি।
(খ) রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আর্থিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি।
প্রশ্ন ১৩। অসমতার নিরিখে বিশ্বের দুটি ভাগ কি কি?
উত্তরঃ অসমতার নিরিখে বিশ্বের দুটি ভাগ নিম্নরূপ:
(ক) গোলকীয় উত্তর।
(খ) গোলকীয় দক্ষিণ।
প্রশ্ন ১৪। উদারীকরণের ফলাফল কি?
উত্তরঃ উদারীকরণের ফলাফল হল মুক্ত বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ, মুক্ত বাণিজ্য এলাকা সৃষ্টি, আভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস প্রভৃতি।
প্রশ্ন ১৫। বিশ্বায়নের দুটি সংজ্ঞা লেখ।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের দুটি সংজ্ঞা নিম্নরূপ:
(ক) এডওয়ার্ড এস. হার্মেন এর মতে—“বিশ্বায়ন হল আন্তর্জাতিক পরিসীমা অতিক্রম করে সংঘটিত পরিচালনা ও পদ্ধতির সম্প্রসারণের জন্য পরিবর্তিত হয়ে থাকা সুযোগ-সুবিধা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক।”
(খ) বিশ্বায়ন বলতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের জনসাধারণ এবং রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে গড়ে ওঠা পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে বোঝায়।
প্রশ্ন ১৬। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:
(ক) গোলকীয়করণ হল এক_______।
উত্তরঃ বিশ্ব অর্থনীতির একীকরণ
(খ) অর্থনৈতিক ______ সমগ্র ______ মতভেদের সৃষ্টি করেছে।
উত্তরঃ গোলকীয়করণ/বিশ্বে।
(গ) বিশ্ব সামাজিক_______ হল আরেকটি _______ মঞ্চ।
উত্তরঃ মঞ্চ/গোলকীয়করণ বিরোধী
প্রশ্ন ১৭। গোলকীয়করণের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিণতিসমূহ কি কি?
উত্তরঃ বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্রের ক্ষমতা বহুল পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণাটি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। জনসেবার দায়িত্ব বহুজাতিক কোম্পানিসমূহের হাতে অর্পণ করা হয়েছে, যা একইসঙ্গে জনসাধারণের স্বার্থের পরিপন্থী এবং বিপজ্জনক বর্তমানে বিশ্বে সর্বত্র বিভিন্ন প্রকার বহুজাতিক কোম্পানি নানাবিধ সামগ্রী উৎপাদন করে এই সকল সামগ্রী অত্যধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিভিন্ন দেশের সরকার এই সংস্থাগুলির স্বার্থ রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর। এই উৎপাদিত সামগ্রীর সহজলভ্যতার ফলে শিল্পে উৎপাদিত সামগ্রীসমূহের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে দেশী শিল্পের, বিশেষত ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগের, প্রভূত ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। এই কোম্পানিগুলি প্রতিটি রাষ্ট্রের সরকারের আর্থিক নীতির উপর প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের উৎপাদিত সামগ্রীর প্রচার, প্রসার ও বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে। এদের স্বার্থরক্ষার্থে সরকার অনেক ক্ষেত্রে জনস্বার্থবিরোধী নীতিও গ্রহণ করে। ফলে সাধারণ জনগণের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটে।
প্রশ্ন ১৮। ভারতের গোলকীয়করণ বিরোধিতার অভিজ্ঞতা কিরূপ?
উত্তরঃ ভারতে অনেকেই বিশ্বায়ন প্রতিরোধ করেছে। বামপন্থীগণ আর্থিক বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে বিশ্বায়ন প্রতিরোধ করবার প্রচেষ্টা করেছে। অধিকন্তু সামাজিক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন, শ্রমিক সংঘ ও কৃষক আন্দোলন বহুজাতিক সংস্থা ও বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। আমেরিকান ও ইউরোপীয় কোম্পানীর দ্বারা ‘নিম’ এবং অন্যান্য উদ্ভিদের স্বত্ব মালিকানার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ সংগঠিত হয়েছিল। বিদেশি টিভি চ্যানেল, পোশাক-পরিচ্ছদের পশ্চিমীকরণ, প্রেমিক-প্রেমিকা দিবস (Valentine Day) প্রভৃতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠেছে।
প্রশ্ন ১৯। এটা বলা কতদূর সত্য যে বিশ্বায়ন প্রকৃতার্থে রাষ্ট্রের কার্যকলাপ বৃদ্ধি করেছে?
উত্তরঃ বিশ্বায়ন রাষ্ট্রের পরম্পরাগত সার্বভৌমত্বের ধারণার উপর প্রভাব বিস্তার করে। ফলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবক্ষয় ঘটে। রাষ্ট্র স্বাধীনভাবে নিজ ইচ্ছানুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। বিশ্বব্যাঙ্ক, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ অধিকাংশ রাষ্ট্রের বিধিনিয়ম তৈরি করে দেয়। এমন কোন পরিস্থিতিতে কতিপয় রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধান বেসরকারি খণ্ডের মতানুসারে পরিবর্তন করা হয়। কোন কোন রাষ্ট্রের সরকারকে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষাকারী আইন, পরিবেশ সুরক্ষাকারী আইন পরিত্যাগে বাধ্য করানো হয়। বিশ্বায়নের প্রভাবে ও বহুজাতিক সংস্থাগুলির কাজকর্মের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধির কারণে জাতীয় রাষ্ট্রগুলির স্বাতন্ত্র্য ও সার্বভৌম ক্ষমতার হ্রাস হয়েছে এবং কর্মপরিধি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে।
প্রশ্ন ২০। বিভিন্ন প্রকার বিশ্বায়ন কি কি?
উত্তরঃ বিভিন্ন প্রকার বিশ্বায়ন হল—
(ক) রাজনৈতিক বিশ্বায়ন।
(খ) অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন। এবং
(গ) সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন।
প্রশ্ন ২১। অসমতার নিরিক্ষে বিশ্বের দুটি ভাগ কি কি?
উত্তরঃ অসমতার নিরিক্ষে বিশ্বের দুটি ভাগ হল—
(ক) গোলকীয় উত্তর। এবং
(খ) গোলকীয় দক্ষিণ।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ২২। বিশ্বায়নের দুটি ক্ষেত্র উল্লেখ কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের দুটি ক্ষেত্র হল—
(ক) উদারীকরণ। ও
(খ) বেসরকারিকরণ।
প্রশ্ন ২৩। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহের উপর বিশ্বায়নের যে-কোন দুইটি প্রভাব উল্লেখ কর।
উত্তরঃ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহের উপর বিশ্বায়নের দুইটি প্রভাব নিম্নরূপ:
(ক) ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প একটি নূতন শক্তি পায়।
(খ) প্রস্তুত করা পণ্যসামগ্রীর আমদানির ফলে স্থানীয় শিল্পোদ্যোগ বিপদের সম্মুখীন হয়।
প্রশ্ন ২৪। বিশ্বায়নে ভারতের ভূমিকা লেখ।
উত্তরঃ বিশ্বায়নে ভারতের ভূমিকা নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বায়নে ভারত উদারীকরণ নীতি গ্রহণ করেছে। ফলে অনেকগুলি পণ্যসামগ্রী আমদানি ও রপ্তানির তালিকা করা হয়েছে।
(খ) ভারত সরকার অনাবাসী ভারতীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলিকে ভারতে লগ্নী করার জন্য উৎসাহিত করছে। ফলে বহু বিদেশি কোম্পানী ভারতে তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠা করেছে।
প্রশ্ন ২৫। বিশ্বায়নের দুটি রাজনৈতিক ফলশ্রুতি বা প্রভাব উল্লেখ কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের দুটি রাজনৈতিক ফলশ্রুতি বা প্রভাব নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বায়ন রাষ্ট্রের চিরাচরিত সার্বভৌমত্বের ধারণার উপর প্রভাব বিস্তার করেছে।
(খ) বহুজাতিক কোম্পানিগুলির ক্রমবর্ধমান ভূমিকা কোন রাষ্ট্রের সরকারের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস করেছে।
প্রশ্ন ২৬। বিশ্বায়নের যে-কোন দুটি ইতিবাচক অর্থনৈতিক ফলশ্রুতি/প্রভাব উল্লেখ কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের দুটি ইতিবাচক অর্থনৈতিক ফলশ্রুতি/প্রভাব নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য ও পরিষেবার পরিমাণ বৃদ্ধি হয়।
(খ) রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি।
প্রশ্ন ২৭। বিশ্বায়নের দুটি নেতিবাচক অর্থনৈতিক ফলশ্রুতি/প্রভাব লেখ।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের দুটি নেতিবাচক অর্থনৈতিক ফলশ্রুতি/প্রভাব নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বায়ন পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
(খ) বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলির লাভ করার অভিপ্রায় উৎসাহিত করেছে।
প্রশ্ন ২৮। বিশ্বায়নের দুটি ইতিবাচক সাংস্কৃতিক ফলশ্রুতি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের দুটি ইতিবাচক সাংস্কৃতিক ফলশ্রুতি নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বায়ন বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতির উৎকর্ষ বৃদ্ধি করেছে।
(খ) বিশ্বায়ন সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটিয়েছে।
প্রশ্ন ২৯। বিশ্বায়নের দুটি নেতিবাচক সাংস্কৃতিক ফলশ্রুতি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের দুটি নেতিবাচক সাংস্কৃতিক ফলশ্রুতি নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বায়ন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন জাতির সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব বিপন্ন করেছে।
(খ) বিশ্বায়ন বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির বিপদস্বরূপ।
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। বিশ্বায়নের ফলাফল কি কি?
উত্তরঃ বিশ্বায়নের প্রধান রাজনৈতিক প্রভাব বা ফলশ্রুতিসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বায়ন রাষ্ট্রের পরম্পরাগত সার্বভৌমত্বের ধারণার উপর প্রভাব বিস্তার করে। ফলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবক্ষয় করে। রাষ্ট্র স্বাধীনভাবে নিজ ইচ্ছানুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না।
(খ) বিশ্বব্যাঙ্ক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ অধিকাংশ রাষ্ট্রে বিধিনিয়ম তৈরি করে দেয়।
(গ) কোন কোন পরিস্থিতিতে কতিপয় রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধান বেসরকারি খণ্ডের মতানুসারে পরিবর্তন করা হয়।
(ঘ) কোন কোন রাষ্ট্রের সরকারকে শ্রমিক স্বার্থরক্ষাকারী আইন, পরিবেশ সুরক্ষাকারী আইন পরিত্যাগে বাধ্য করানো হয়।
বিশ্বায়নে অর্থনৈতিক ফলশ্রুতি বা প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পণ্যসামগ্রীর অবাধ ও নিরবচ্ছিন্ন চলাচল সম্ভব হয়।
(খ) বিশ্বায়নের ফলে অন্যান্য রাষ্ট্রে বিদেশি পুঁজির মুক্ত বিনিয়োগ সম্ভব হয়।
(গ) বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার ফলে শ্রমিক ও মানবশক্তির অবাধ আদান-প্রদান করা হয়।
(ঘ) বিশ্বায়নের ফলে বেসরকারিকরণ ও বহুজাতিক সংস্থার বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর কর্মসংস্থান হয়।
প্রশ্ন ২। বিশ্বায়ন সার্বজনীনতা বা সামূহিক কিন্তু পৃথক দায়বদ্ধতা কি?
উত্তরঃ মানবসভ্যতার ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে মনুষ্যজাতি তার সৃষ্টি লগ্ন থেকেই বুদ্ধিমত্তার দ্বারা বেঁচে থাকার উপায়কে সহজতর করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই চেষ্টাতেই মনুষ্যজাতি প্রত্নপ্রস্তর যুগ থেকে লাখো বছর পেরিয়ে আজ যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে অবতীর্ণ হয়েছে। আর এই দীর্ঘ যাত্রাপথে মানুষ প্রকৃতিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার অপচেষ্টা করে গেছে এবং এখনও করছে। যার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পরিবেশ দূষিত হয়। যেহেতু এই পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী সমগ্র মানবজাতি তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের দায়ও মানবজাতির উপর বর্তায়।
রিও সম্মেলনের ঘোষণাপত্র পৃথিবীর পরিবেশ সংরক্ষণ, রক্ষা করা এবং এর স্বাস্থ্য ও বিশুদ্ধতা পুনরুত্থান করতে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রকে সম-অংশদারীত্বের ভিত্তিতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানায়। গোলকীয় পরিবেশ হানির বিভিন্নতার নিরিখে রাষ্ট্রের সমান কিন্তু ভিন্ন দায়িত্বশীলতা বিদ্যমান। উন্নত দেশসমূহ হতে অতীতে এবং বর্তমানে অধিকাংশ গোলকীয় প্রদূষণের উৎপত্তি হয়। উন্নয়নশীল দেশসমূহের মাথাপিছু প্রদূষণের পরিমাণ এখনও অপেক্ষাকৃত কম। এই কারণে ভারত, চীন এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশসমূহ কিওটো প্রোটোকলের বিধিনিষেধের আওতাভুক্ত নয়। কিওটো প্রোটোকল অনুযায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলিকে সবুজঘর গ্যাসের পরিমাণ হ্রাস করতে হয়। সমভোগ্য কিন্তু ভিন্ন দায়িত্বশীলতা নীতি অনুযায়ী ভারতের মতে প্রদূষক নির্গমন হ্রাসের প্রধান দায়িত্ব উন্নয়নশীল দেশসমূহের। এই দেশগুলি দীর্ঘকাল ধরে প্রদূষক মজুত করে রেখেছে।
প্রশ্ন ৩। ভারতবর্ষে বিশ্বায়নের প্রভাব আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভারতের উপর বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়:
(ক) উৎপাদনের ক্ষেত্রে নানা প্রকার উৎপাদন প্রতিষ্ঠান, যেমন— মোটরগাড়ি, তথ্য প্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিকস্, খাদ্য প্রক্রিয়া শিল্প প্রভৃতি।
(খ) বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী, যেমন—টেলিভিশন, রেডিও, শীততাপ-নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, কম্পিউটার প্রভৃতির দাম বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।
(গ) বিশ্বায়নের ফলে ভারতে দূরসঞ্চার খণ্ডে ব্যাপক উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। জনগণ এখন টিভির অনেকগুলি চ্যানেল দেখতে পায়। মোবাইলে ফোন পরিষেবা ভারতের প্রায় সর্বত্রই বিস্তৃত হয়েছে।
(ঘ) বিশ্বের বাজারে ভারতের পণ্যসামগ্রী ও সেবার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রশ্ন ৪। বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক তাৎপর্য কি?
উত্তরঃ বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক তাৎপর্য হল –
(ক) বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পণ্যসামগ্রীর অবাধ ও নিরবচ্ছিন্ন চলাচল সম্ভব হয়।
(খ) বিশ্বায়নের ফলে অন্যান্য রাষ্ট্রে বিদেশি পুঁজির মুক্ত বিনিয়োগ সম্ভব হয়।
(গ) বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার ফলে শ্রমিক ও মানবশক্তির অবাধ আদান-প্রদান করা হয়।
(ঘ) বিশ্বায়নের ফলে বেসরকারিকরণ ও বহুজাতিক সংস্থার বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর কর্মসংস্থান হয়।
প্রশ্ন ৫। “বিভিন্ন দিক থেকে ভারতবর্ষে বিশ্বায়নকে রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ভারতে অনেকেই বিশ্বায়ন প্রতিরোধ করেছে। বামপন্থীগণ আর্থিক বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে বিশ্বায়ন প্রতিরোধ করবার প্রচেষ্টা করেছে। অধিকন্তু সামাজিক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন, শ্রমিক সংঘ ও কৃষক আন্দোলন বহুজাতিক সংস্থা ও বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। আমেরিকান ও ইউরোপীয় কোম্পানীর দ্বারা ‘নিম’ এবং অন্যান্য উদ্ভিদের স্বত্ব মালিকানার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ সংগঠিত হয়েছিল। বিদেশি টিভি চ্যানেল, পোশাক-পরিচ্ছদের পশ্চিমীকরণ, প্রেমিক-প্রেমিকা দিবস (Valentine Day) প্রভৃতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠেছে।
প্রশ্ন ৬। “সংস্কৃতি স্থবির নয়।” ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ সংস্কৃতি সর্বদা গতিশীল। তা স্থবির হতে পারে না। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সংস্কৃতিরও পরিবর্তন হওয়াটা স্বাভাবিক। এর সাথে সাথে পরিবর্তনশীল সংস্কৃতির বিস্তারও ঘটে। বিশ্বায়ন নিঃসন্দেহে সাংস্কৃতিক বৈচিত্রতা সৃষ্টি করেছে। বিশ্বায়ন সহজে এবং বিনা ব্যয়ে জনপ্রিয় সংস্কৃতিকে উন্নত দেশসমূহ হতে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে বিস্তারে সহায়তা করেছে। জাতীয়তাভিত্তিক গণমাধ্যমের স্থানীয় টেলিভিশন মাধ্যমকে উন্নত করার প্রয়াস সত্ত্বেও এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহে বহু প্রচার মাধ্যমের বাজার আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার পণ্যসামগ্রীতে পরিপূর্ণ। স্থানীয় সমালোচক অনুতাপ প্রকাশ করেন যে এর ফলে স্থানীয় সংস্কৃতির হানি হবে এবং বিদেশী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটবে। অন্যদিক থেকে বলা যায়, এর ফলে প্রত্যেকের নিজের সংস্কৃতি কতটা সমৃদ্ধ তারও যাচাই করা যায়।
প্রশ্ন ৭। বিশ্ব সংস্কৃতিতে বিশ্বায়নের প্রভাব কিভাবে দেখা যায়, অঙ্গুলি নির্দেশ কর।
উত্তরঃ বিশ্ব সংস্কৃতিতে বিশ্বায়নের প্রভাব বা ফলশ্রুতিসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বায়ন সামাজিক আদান-প্রদান বৃদ্ধি করেছে এবং সার্বজনীন সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন শক্তিশালী করেছে। এর ফলে সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
(খ) বিশ্বায়ন প্রায় সকল সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধশালী করেছে। নূতন নূতন সংযোজনের দ্বারা প্রত্যেক সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।
(গ) সংস্কৃতি স্থায়ী নয়, তা গতিশীল। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে তা পরিবর্তিত হয়। বিশ্বায়নের ফলে এক সংস্কৃতি অন্য সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে।
(ঘ) বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে মতামত বিনিময়ের মাধ্যমে আমাদের পছন্দ ও অপছন্দ বিস্তৃত করে।
প্রশ্ন ৮। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের সঙ্গে কি জড়িত?
উত্তরঃ অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের হার বৃদ্ধির জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কল্যাণসাধনের উদ্দেশ্যসমূহ স্পষ্টরূপে প্রকাশ পায়। যার ফলে ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আদান-প্রদান তথা মূলধন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে গড়ে ওঠা ব্যবসা-বাণিজ্যর পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন প্রকার বস্তু নিজ দেশে উৎপাদন করলে লাভজনক হয়, আবার কোন প্রকার বস্তু অন্য রাষ্ট্রকে কারিগরী জ্ঞান ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করে তাদের দিয়ে উৎপাদন করালে লাভজনক হয়। আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহ এ বিষয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। তদুপরি প্রতিযোগিতামূলক দৃষ্টিকোণের বিচারে এই ব্যবস্থা বেশ কার্যকর হয়। জ্ঞান, যুক্তি এবং বুদ্ধি প্রয়োগের দ্বারা বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে সকল পক্ষের সহযোগিতা বিশ্বায়নকে সফল করে তুলবে।
প্রশ্ন ৯। বিশ্বায়নে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রাধিকারসমূহের নির্ধারক কি কি?
উত্তরঃ রাজনৈতিক প্রভাব: রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বিশ্বায়নের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অদ্যাবধি রাজনীতি কেবল জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করত। জনগণের নিরাপত্তা ও আর্থিক কল্যাণ, মানবাধিকার এবং পরিবেশ রক্ষায় নিজ নিজ রাষ্ট্রের সরকারের দায়বদ্ধতা ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায়, রাজনীতি রাষ্ট্রের বাইরেও ইউরোপীয় সংঘ, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, বিশ্বব্যাঙ্ক, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা প্রভৃতি রাজনৈতিক সমন্বয় সাধনকারী প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। বিশ্বায়নের যুগে রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ গোলকীয় আন্দোলন ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে জাতীয় সীমানা অতিক্রম করতে পারে।
অর্থনৈতিক প্রভাব: বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক দিকটিকেই এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বলা হয়। কারণ এর উপরই বিশ্বায়নের মূল নিহিত আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রযুক্তির অগ্রসরতা এবং মুক্ত বাণিজ্য ও বাজার অর্থনীতির ফলে পণ্যসামগ্রী, পুঁজি ও পরিষেবার অভাবনীয় আদান-প্রদান সম্ভব হয়েছে। উন্নত দেশসমূহের পণ্যসামগ্রী এবং সস্তা শ্রমিকদের জন্য মুক্ত বিশ্ববাজার প্রয়োজন। তারা দরিদ্র ও অনুন্নত দেশগুলিকে বিশ্ব বাজারে সংযুক্ত করবার জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির নিকট হতে অর্থ ঋণ নিতে বাধ্য করে। সরকার ও জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষাকারী ও পরিবেশ-সংক্রান্ত কিছু নিয়মাবলি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
সাংস্কৃতিক প্রভাব: বিশ্বায়নের প্রভাব শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রও বিশ্বায়নের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। বিশ্বগ্রাসী পাশ্চাত্য সংস্কৃতি উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সিংহভাগ অধিকার স্থাপন করে ফেলেছে। সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রথার মাধ্যমে নিজেদের গতিসমৃদ্ধ চকচকে ও রগরগে সংস্কৃতিকে তৃতীয় বিশ্বের অঙ্গনে প্রবেশ করিয়ে চলেছে। যার ফল হল তৃতীয় বিশ্বের যুব সমাজ নিজেদের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে তাৎক্ষণিক উল্লাসে নিজেদের অস্তিত্বকে বিলীন করে তুলছে। অন্যদিকে, বিশ্বায়ন বিভিন্ন জাতি সংস্কৃতিকে আরও বেশি বৈচিত্র্যময় করেছে এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রসার ঘটিয়েছে।
প্রশ্ন ১০। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াটি উদ্ভবের জন্য দায়ী কারকসমূহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ নানা প্রকার কারণের জন্য বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। প্রধান প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সমগ্র বিশ্বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তনের ফলশ্রুতিতে সমগ্র বিশ্বে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
(খ) কেন্দ্র-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত সাম্যবাদী ব্যবস্থা পতনের ফলে পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহ ও অন্যান্য অনেক দেশ উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ধনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করে। ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
(গ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশেষত সাম্যবাদী নীতিতে প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংসের ফলে বিশ্বের অনেক দেশ এই ব্যবস্থার উপর আস্থা হারায় যার ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পেতে থাকে।
(ঘ) ১৯৯০ সালের পর তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব-এর ফলে জনগণের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশ লাভ করে, যা আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের দূরত্ব হ্রাস করে। সমগ্র বিশ্ব একটি ক্ষুদ্র গ্রামে পরিণত হয়। ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় গতি সঞ্চার হয়।
(ঙ) যুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী দারিদ্র ও দুর্দশা, বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া প্রচেষ্টা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, নূতন বিশ্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা প্রভৃতি বিষয়সমূহ বিশ্বায়নকে উৎসাহিত করে।
প্রশ্ন ১১। বিশ্বায়নের সমালোচনা লেখ।
উত্তরঃ সামাজিক ন্যায়ের প্রবক্তাগণ বলেন যে বিশ্বায়নের দ্বারা জনসাধারণের একটা ক্ষুদ্র অংশেরই লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। অন্যদিকে নিযুক্তি, শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ইত্যাদি কল্যাণমূলক বিষয়ে সরকারের উপর নির্ভরশীল সমাজের গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষের আরও সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা। প্রতিষেধক ব্যবস্থা হিসাবে সেইসব দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকের জন্য আনুষ্ঠানিক সংরক্ষণ অথবা সামাজিক নিরাপত্তা জালি (safety net)-এর আবশ্যক। কি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এইসব লোকেদের দুঃখ-দুর্গতি লাঘব করা যায় তা ভাবা দরকার।
বিশ্বের বহু আন্দোলনের ফলাফল বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা নিরাপত্তা জালের কার্যকারিতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন যে, নিরাপত্তা জাল ব্যবস্থা খুব একটা ফলপ্রসূ হয় না, ফলত সেইসব দরিদ্র লোকেরা ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলে। কিছু কিছু লোক বিশ্বায়নকে নব উপনিবেশবাদ বলেও আখ্যায়িত করেন।
প্রশ্ন ১২। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ:
(ক) বিশ্ব সামাজিক মঞ্চ (WSF)
(খ) বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন (WTO)
(গ) আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিত্তীয় নিধি (IMF)
উত্তরঃ (ক) বিশ্ব সামাজিক মঞ্চ: উদারনৈতিক গোলকীকরণের বিরোধিতা করার আন্তর্জাতিক মঞ্চ হল বিশ্ব সামাজিক মঞ্চ। ২০০১ সালে ব্রাজিলে এই সংগঠন গঠন করা হয়েছিল। এই মঞ্চর মূল উদ্দেশ্য হল সমগ্র বিশ্বে বিভিন্ন দেশসমূহে পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করা গোলকীকরণ ব্যবস্থার বিরোধিতা করা। বিশেষত, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দেশসমূহের যে পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তার বিরোধিতা করাই এই মঞ্চের উদ্দেশ্য।
(খ) বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন: গোলকীকরণের কারণে সমগ্র বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যর ক্ষেত্রসমূহে আমূল পরিবর্তন ঘটছে। মুক্ত অর্থনৈতিক নীতির জন্যই সমগ্র বিশ্বের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যসমূহ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে অবাধ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে লক্ষ্য স্থির করে সময়োচিত আন্তর্জাতিক সংগঠন গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। ফলে ১৯৪৫ সালে গঠিত হয় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। এই সংস্থা বিভিন্ন দেশের মধ্যে যে অর্থনৈতিক লেনদেন হয় বা ব্যবসা-বাণিজ্য হয় তা নিরূপণে গুরুত্ব প্রদান করে।
(গ) আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিত্তীয় নিধি: ১৯৪৫ সালে স্থাপিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিত্তীয় নিধি এক আন্তর্জাতিক বিত্তীয় প্রতিষ্ঠান। সমগ্র বিশ্বের দেশসমূহের বিত্তীয় লেনদেন এই বিত্তীয় প্রতিষ্ঠানটি পর্যালোচনা করে ও বিভিন্ন দেশকে তাদের প্রয়োজন অনুসারে বিকাশের জন্য ঋণ প্রদান করে।
প্রশ্ন ১৩। তোমার পরিবারের সদস্যদের দ্বারা ব্যবহৃত বহুজাতিক কোম্পানীর তৈরি সামগ্রীর একটি তালিকা তৈরি কর।
উত্তরঃ যে-কোন পরিবারের সদস্যদের দ্বারা ব্যবহৃত প্রধান কয়েকটি সামগ্রী হল—
(ক) পেপ্সি।
(খ) কোকোকোলা।
(গ) জিন্স প্যান্ট।
(ঘ) মোবাইল ফোন। ও
(ঙ) জেরক্স মেশিন।
প্রশ্ন ১৪। প্রযুক্তিবিদ্যা বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে কিভাবে সহায়তা করেছে?
উত্তরঃ বিশ্বায়নের জন্য নানাপ্রকার উপাদান দায়ী।
এই উপাদানসমূহের মধ্যে প্রযুক্তি বিশ্বায়ন প্রসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে:
(ক) সাম্প্রতিককালে দূর সঞ্চার ও তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লবের ফলে এক রাষ্ট্রের উপর অন্য রাষ্ট্রের নির্ভরশীলতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
(খ) প্রযুক্তির প্রসারের ফলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে পৃথিবীর সকল বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রাখতে সমর্থ হয়েছে।
(গ) আধুনিক প্রযুক্তি জনগণকে পুঁজি, পণ্যসামগ্রী, ভাবধারা, আদর্শ প্রভৃতি এক স্থান হতে অন্য স্থানে অর্থাৎ এক দেশ হতে অন্য দেশে আদান-প্রদান করা সম্ভবপর করেছে।
(ঘ) প্রযুক্তি প্রসারের ফলে বিশ্বের এক প্রান্তে ঘটে থাকা ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে অন্য প্রান্তের মানুষ জানতে পারে।
প্রশ্ন ১৫। বিশ্বব্যাপী আন্তঃসম্পর্ক কি? এর উপাদানসমূহ কি কি?
উত্তরঃ জোসেফ স্টিগলিৎজ তাঁর গ্রন্থ Globalization and its Discontents-এ লিখেছেন, “বিশ্বায়ন হল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এক নিবিড় সংযোগসাধনের প্রক্রিয়া।” তাঁর সূত্র ধরে আমরা বলতে পারি বিশ্বায়ন একটি ধারণা যা মূলত ব্যাখ্যা করে ‘প্রবাহ’ বা ‘স্রোতধারাকে’। এই প্রবাহ নানান ধরনের হতে পারে—বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চিন্তাধারার বিকাশ, দুই বা ততোধিক স্থানে মূলধনের প্রবাহ, সীমান্ত অতিক্রম করে অন্য দেশের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি বৃদ্ধি, উন্নততর জীবনযাত্রার খোঁজে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের যাতায়াত এসবই বিশ্বায়নের জন্য। বিশ্বায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিশ্বজুড়ে একে অন্যের সাথে সম্পর্কিত হয়ে থাকা।
বিশ্বায়নের উপাদানসমূহ হল—ভাবধারা, পুঁজি, পণ্যসামগ্রী ও মানুষ।
প্রশ্ন ১৬। বিশ্বায়ন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা সৃষ্টি করেছে। তুমি কি এই যুক্তিতে একমত?
উত্তরঃ বিশ্বায়নকে আমরা এইভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি যেমন, বিশ্বায়ন হল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এক নিবিড় সংযোগসাধনের প্রক্রিয়া। সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন হল বিশ্বায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের লক্ষ্য হল সারা বিশ্বে এক সমজাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কর্পোরেশনগুলি ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাহায্যে এরূপ সংস্কৃতি গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেছে।
বিশ্বায়ন নিঃসন্দেহে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা সৃষ্টি করেছে। বিশ্বায়ন সহজে এবং বিনা ব্যয়ে জনপ্রিয় সংস্কৃতিকে উন্নত দেশসমূহ হতে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে বিস্তার করেছে। জাতীয়তাভিত্তিক গণমাধ্যমের স্থানীয় টেলিভিশন মাধ্যমকে উন্নত করার প্রয়াস সত্ত্বেও এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহে বহু প্রচার মাধ্যমের বাজার আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার পণ্যসামগ্রীতে পরিপূর্ণ। স্থানীয় সমালোচক অনুতাপ প্রকাশ করেন যে এর ফলে স্থানীয় সংস্কৃতির হানি ঘটবে বিদেশি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটবে।
প্রশ্ন ১৭। বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব বা ফলাফল বের কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের ইতিবাচক দিক যেমন আছে তেমনি নেতিবাচক দিকও কিছু আছে। বিশ্বায়নের নেতিবাচক দিকগুলি নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বায়নের ফলে উন্নত দেশগুলি অনুন্নত দেশগুলিকে নানাভাবে শোষণ করে। তা এক প্রকার সাম্রাজ্যবাদ বলে সমালোচকরা মনে করেন।
(খ) বিশ্বায়নের ফলে অপেক্ষাকৃত উন্নয়নশীল দেশসমূহে ধনী শ্রেণী অধিকতর ধনী এবং গরিব শ্রেণী অধিকতর গরিব হচ্ছে। ফলত সমাজে ধনবৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে।
(গ) বিশ্বায়নের মাধ্যমে পশ্চিমী রাষ্ট্রসমূহ তাদের সংস্কৃতি সমগ্র বিশ্বে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, বিস্তার করে এই সকল দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনষ্ট করছে।
(ঘ) বিশ্বায়নের দ্বারা উন্নত দেশসমূহ উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলিকে তাদের প্রযুক্তি গ্রহণ করতে বাধ্য করছে।
প্রশ্ন ১৮। বিশ্বায়ন কিভাবে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে প্রভাবিত করে?
উত্তরঃ বিশ্বায়ন বিষয়টিকে কোন একটি নির্দিষ্ট বাক্যে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। বিশ্বায়ন একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া, তবে বিশ্বায়ন কোন আকস্মিক প্রক্রিয়া নয়, তা বহু পূর্ব থেকেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল। বিশ্বায়নকে এমন একটি বিশ্বব্যাপী প্রক্রিয়া বলে চিহ্নিত করা যায়, যাতে রাষ্ট্রসংক্রান্ত ধারণার অবসান ঘটিয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী অবাধ আদান-প্রদান চালানো সম্ভব হবে। ফলে কোন রাষ্ট্র নিজ ইচ্ছানুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ অধিকাংশ রাষ্ট্রের বিধিনিয়ম তৈরি করে দেয়। ফলত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবক্ষয় ঘটে। এমন কোন পরিস্থিতিতে কতিপয় রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধান বেসরকারি খণ্ডের মতানুসারে পরিবর্তন করা হয়। কোন কোন রাষ্ট্রের সরকারকে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষাকারী আইন, পরিবেশ সুরক্ষাকারী আইন ইত্যাদি পরিত্যাগে বাধ্য করানো হয়। ফলে তা নিশ্চিতভাবে কোন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে প্রভাবিত করে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১৯। বিশ্বায়নের অর্থ ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়ন হল প্রতিটি রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যান্য সকল রাষ্ট্রের বাহ্যিক পরিষেবা, মূলধন, মেধা স্বত্ত্ব সম্পত্তি প্রভৃতির অবাধ চলাচল থাকবে। বিশ্বায়ন তখনই সাফল্যলাভ করে যখন কোন রাষ্ট্র এই সকল অবাধ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না এবং তা যখন অধিকাংশ রাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্য কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত করবে। যখন সকল রাষ্ট্র তাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে কোন একটি বিষয়ের উপর পরিচালনা করবে তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা একই পন্থা অনুসরণ করে চলবে এবং তাই-ই বিশ্বায়ন।
সাধারণভাবে বিশ্বায়ন বলতে নিম্নোক্তগুলিকে বোঝায়:
(ক) দেশ হতে দেশান্তরে পণ্যসামগ্রীর অবাধ ও মুক্ত চলাচলের জন্য সকলপ্রকার বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ প্রত্যাহার।
(খ) বিদেশি পুঁজির মুক্ত বিনিয়োগ।
(গ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবাধ বিনিময়।
(ঘ) শ্রমিক ও মানব শক্তির অবাধ বিনিময়।
প্রশ্ন ২০। বিশ্বায়নের পরিসীমা কয়টি এবং কি কি?
উত্তরঃ বিশ্বায়নের পরিসীমা চারটি। এইগুলি নিম্নরূপ:
(ক) দেশ হইতে দেশান্তরে পণ্যসামগ্রীর মুক্ত চলাচলের জন্য সকল প্রকার বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ প্রত্যাহার।
(খ) বিদেশি পুঁজির মুক্ত বিনিয়োগ।
(গ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবাধ আদান-প্রদান।
(ঘ) শ্রমিক ও মানবশক্তির অবাধ আদান-প্রদান।
প্রশ্ন ২১। বিশ্বায়নের চারটি গুণ বা সুবিধা উল্লেখ কর।
অথবা,
বিশ্বায়নের সপক্ষে চারটি যুক্তি দেখাও।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের কতিপয় গুণ বা সুবিধা আছে। এর সপক্ষে প্রধান যুক্তিসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার দ্বারা বিভিন্ন দেশের মধ্যে বৈষম্য, বিশেষত আর্থিক বৈষম্য দূরীভূত করতে পারা যায়।
(খ) বিশ্বায়নের ধারণা বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সংকীর্ণ জাতীয় সীমারেখা পরিত্যাগ করে বৃহত্তর আন্তর্জাতিকতাবাদের দিকে অগ্রসর হতে আবেদন জানায়।
(গ) দারিদ্র, অনশন প্রভৃতি বৃহৎ সমস্যা দূরীকরণের মাধ্যমে শান্তি ও সমতা প্রতিষ্ঠা করা বিশ্বায়নের মাধ্যমে সম্ভব।
(ঘ) বিশ্বায়নের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের সমান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করতে সক্ষম হবে।
প্রশ্ন ২২। বিশ্বায়নের চারটি দোষ-ত্রুটি বা অসুবিধা উল্লেখ কর।
অথবা,
বিশ্বায়নের বিপক্ষে চারটি যুক্তি দেখাও।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের কতিপয় দোষ-ত্রুটি দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বায়নের বিপক্ষে নিম্নোক্ত যুক্তি প্রদর্শন করা যায়:
(ক) বিশ্বায়নের ফলে উন্নত দেশগুলি অনুন্নত দেশগুলিকে নানাভাবে শোষণ করে। তা এক প্রকার সাম্রাজ্যবাদ বলে সমালোচকরা মনে করেন।
(খ) বিশ্বায়নের ফলে অপেক্ষাকৃত উন্নয়নশীল দেশসমূহে ধনী শ্রেণী অধিকতর ধনী এবং গরিব শ্রেণী অধিকতর গরিব হচ্ছে। ফলত সমাজে ধনবৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে।
(গ) বিশ্বায়নের মাধ্যমে পশ্চিমী রাষ্ট্রসমূহ তাদের সংস্কৃতি সমগ্র বিশ্বে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, বিস্তার করে এই সকল দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনষ্ট করছে।
(ঘ) বিশ্বায়নের দ্বারা উন্নত দেশসমূহ উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলিকে তাদের প্রযুক্তি গ্রহণ করতে বাধ্য করছে।
প্রশ্ন ২৩। বিশ্বায়নের সপক্ষে এবং বিপক্ষে দুটি যুক্তি প্রদর্শন কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের কতিপয় গুণ বা সুবিধা আছে। এর সপক্ষে প্রধান যুক্তিসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার দ্বারা বিভিন্ন দেশের মধ্যে বৈষম্য, বিশেষত আর্থিক বৈষম্য দূরীভূত করতে পারা যায়।
(খ) বিশ্বায়নের ধারণা বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সংকীর্ণ জাতীয় সীমারেখা পরিত্যাগ করে বৃহত্তর আন্তর্জাতিকতাবাদের দিকে অগ্রসর হতে আবেদন জানায়।
বিশ্বায়নের কতিপয় দোষ-ত্রুটি দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বায়নের বিপক্ষে নিম্নোক্ত যুক্তি প্রদর্শন করা যায়:
(ক) বিশ্বায়নের ফলে উন্নত দেশগুলি অনুন্নত দেশগুলিকে নানাভাবে শোষণ করে। তা এক প্রকার সাম্রাজ্যবাদ বলে সমালোচকরা মনে করেন।
(খ) বিশ্বায়নের ফলে অপেক্ষাকৃত উন্নয়নশীল দেশসমূহে ধনী শ্রেণী অধিকতর ধনী এবং গরিব শ্রেণী অধিকতর গরিব হচ্ছে। ফলত সমাজে ধনবৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রশ্ন ২৪। বিশ্বায়ন প্রতিহতকরণ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ বিশ্বায়নকে নিম্নোক্ত প্রকারে প্রতিহত বা সমালোচনা করা হয়:
(ক) বিশ্বায়ন হল বিশ্ব ধনতন্ত্রের একটি পর্যায়। তা ধনী রাষ্ট্রকে অধিক ধনী এবং গরিব রাষ্ট্রকে অধিক পরিমাণে গরিব করে তোলে।
(খ) বিশ্বায়ন রাষ্ট্রের ভূমিকা হ্রাস করে। এই কারণে রাষ্ট্র দরিদ্রদের স্বার্থে কোন কাজ করতে পারে না।
(গ) বিশ্বায়ন রাজনৈতিকভাবে রাষ্ট্রকে দুর্বল করে তোলে।
(ঘ) বিশ্বায়ন আর্থিকভাবে রাষ্ট্রসমূহকে দাসত্বে পরিণত করে।
অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতা হ্রাসের বিষয়ে লেখ।
উত্তরঃ বিশ্বায়ন উন্নয়নশীল দেশসমূহের সরকারের ভূমিকা প্রভাবিত অর্থাৎ সরকার কি করতে চায় তার উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল বলে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়। যখন কোন রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হয় তখন সেই রাষ্ট্রের সরকার তার সঙ্গে বোঝাপড়ায় রত হয় এবং বিশ্ব বাণিজ্যিক সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সকল রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য বিধিনিয়ম রচনা করে। অনেক সময় এইসব রাষ্ট্র এই প্রকার জনহিতকারী নিয়মাবলি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণার পরিবর্তে বাজার অর্থনীতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বহুজাতিক কোম্পানির অনুপ্রবেশ কোন রাষ্ট্রের সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস করে। অনেক সময় সরকার বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে এমন কাজ করতে বাধ্য হয় যা জনস্বার্থবিরোধী।
অবশ্য লক্ষ্য করা গেছে যে বিশ্বায়ন সর্বদাই রাষ্ট্রের ক্ষমতা হ্রাস করে না। উন্নয়নশীল দেশসমূহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা প্রভৃতি অত্যাবশ্যক কার্যাবলি স্বাধীনভাবে নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী সম্পন্ন করতে পারে। সুতরাং রাষ্ট্রের গুরুত্ব সদা প্রবাহমান এবং বিশ্বায়নের আলোকে এমনকি উন্নয়নশীল দেশসমূহ অনেকক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়াও উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা রাষ্ট্র তার নাগরিকদের নানা প্রকার তথ্যাদি সংগ্রহ করতে পারে। এর ফলে নিয়মাবলি পূর্বের তুলনায় অধিক ক্ষমতাশালী। এর কারণস্বরূপ উন্নত প্রযুক্তির উল্লেখ করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ২। “বিশ্বায়ন আমাদের ঘরে, খাদ্যাভাসে, পোশাক-পরিচ্ছদে এবং আমাদের চিন্তনে প্রভাব বিস্তার করে।” বিশ্বায়নের সাংস্কৃতিক প্রভাব চিহ্নিত কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়নকে আমরা এইভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি যেমন, বিশ্বায়ন হল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এক নিবিড় সংযোগসাধনের প্রক্রিয়া। সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন হল বিশ্বায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের লক্ষ্য হল সারা বিশ্বে এক সমজাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কর্পোরেশনগুলি ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাহায্যে এরূপ সংস্কৃতি গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেছে।
বিশ্বায়ন নিঃসন্দেহে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা সৃষ্টি করেছে। বিশ্বায়ন সহজে এবং বিনা ব্যয়ে জনপ্রিয় সংস্কৃতিকে উন্নত দেশসমূহ হতে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে বিস্তার করেছে। জাতীয়তাভিত্তিক গণমাধ্যমের স্থানীয় টেলিভিশন মাধ্যমকে উন্নত করার প্রয়াস সত্ত্বেও এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহে বহু প্রচার মাধ্যমের বাজার আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার পণ্যসামগ্রীতে পরিপূর্ণ। স্থানীয় সমালোচক অনুতাপ প্রকাশ করেন যে এর ফলে স্থানীয় সংস্কৃতির হানি ঘটবে বিদেশি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটবে।
প্রশ্ন ৩। বিশ্বায়নের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব কি কি ছিল?
উত্তরঃ রাজনৈতিক প্রভাব: রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বিশ্বায়নের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অদ্যাবধি রাজনীতি কেবল জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করত। জনগণের নিরাপত্তা ও আর্থিক কল্যাণ, মানবাধিকার এবং পরিবেশ রক্ষায় নিজ নিজ রাষ্ট্রের সরকারের দায়বদ্ধতা ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায়, রাজনীতি রাষ্ট্রের বাইরেও ইউরোপীয় সংঘ, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, বিশ্বব্যাঙ্ক, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা প্রভৃতি রাজনৈতিক সমন্বয় সাধনকারী প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। বিশ্বায়নের যুগে রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ গোলকীয় আন্দোলন ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে জাতীয় সীমানা অতিক্রম করতে পারে।
অর্থনৈতিক প্রভাব: বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক দিকটিকেই এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বলা হয়। কারণ এর উপরই বিশ্বায়নের মূল নিহিত আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রযুক্তির অগ্রসরতা এবং মুক্ত বাণিজ্য ও বাজার অর্থনীতির ফলে পণ্যসামগ্রী, পুঁজি ও পরিষেবার অভাবনীয় আদান-প্রদান সম্ভব হয়েছে। উন্নত দেশসমূহের পণ্যসামগ্রী এবং সস্তা শ্রমিকদের জন্য মুক্ত বিশ্ববাজার প্রয়োজন। তারা দরিদ্র ও অনুন্নত দেশগুলিকে বিশ্ব বাজারে সংযুক্ত করবার জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির নিকট হতে অর্থ ঋণ নিতে বাধ্য করে। সরকার ও জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষাকারী ও পরিবেশ-সংক্রান্ত কিছু নিয়মাবলি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
সাংস্কৃতিক প্রভাব: বিশ্বায়নের প্রভাব শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রও বিশ্বায়নের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। বিশ্বগ্রাসী পাশ্চাত্য সংস্কৃতি উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সিংহভাগ অধিকার স্থাপন করে ফেলেছে। সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রথার মাধ্যমে নিজেদের গতিসমৃদ্ধ চকচকে ও রগরগে সংস্কৃতিকে তৃতীয় বিশ্বের অঙ্গনে প্রবেশ করিয়ে চলেছে। যার ফল হল তৃতীয় বিশ্বের যুব সমাজ নিজেদের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে তাৎক্ষণিক উল্লাসে নিজেদের অস্তিত্বকে বিলীন করে তুলছে। অন্যদিকে, বিশ্বায়ন বিভিন্ন জাতি সংস্কৃতিকে আরও বেশি বৈচিত্র্যময় করেছে এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রসার ঘটিয়েছে।
প্রশ্ন ৪। বিশ্বব্যাপী আন্তঃসম্পর্ক কি? এর উপাদানসমূহ কি কি?
উত্তরঃ জোসেফ স্টিগলিৎজ তাঁর গ্রন্থ Globalization and its Discontents-এ লিখেছেন, “বিশ্বায়ন হল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এক নিবিড় সংযোগসাধনের প্রক্রিয়া।” তাঁর সূত্র ধরে আমরা বলতে পারি বিশ্বায়ন একটি ধারণা যা মূলত ব্যাখ্যা করে ‘প্রবাহ’ বা ‘স্রোতধারাকে’। এই প্রবাহ নানান ধরনের হতে পারে—বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চিন্তাধারার বিকাশ, দুই বা ততোধিক স্থানে মূলধনের প্রবাহ, সীমান্ত অতিক্রম করে অন্য দেশের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি বৃদ্ধি, উন্নততর জীবনযাত্রার খোঁজে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের যাতায়াত এসবই বিশ্বায়নের জন্য। বিশ্বায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিশ্বজুড়ে একে অন্যের সাথে সম্পর্কিত হয়ে থাকা।
বিশ্বায়নের উপাদানসমূহ হল—ভাবধারা, পুঁজি, পণ্যসামগ্রী ও মানুষ।
প্রশ্ন ৫। বিশ্বায়নের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের প্রধান প্রধান বৈশিষ্টসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বায়ন একটি বহুমুখী তত্ত্ব। এটি একটি বিশাল প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
(খ) বিশ্বায়ন বিভিন্ন রাষ্ট্রের জাতীয় অর্থনীতিকে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে।
(গ) বিশ্বায়ন বিদেশি পুঁজির মুক্ত বিনিয়োগ, বিজ্ঞান প্রযুক্তির অবাধ আদান-প্রদান এবং শ্রমিক ও মানবশক্তির বিনিয়োগ করে থাকে।
(ঘ) বিশ্বায়নের দুইটি প্রধান উপাদান হল–বেসরকারিকরণ ও উদারীকরণ। বেসরকারিকরণ হল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেসরকারি খণ্ডের ভূমিকা। উদারীকরণের অর্থ হল শিল্প ও অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ হ্রাস।
(ঙ) বিশ্বায়নের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও বহুজাতিক কোম্পানিসমূহের অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করা।
প্রশ্ন ৬। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবার জন্য দায়ী কারণগুলি পরীক্ষা কর।
উত্তরঃ নানা প্রকার কারণের জন্য বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। প্রধান প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সমগ্র বিশ্বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তনের ফলশ্রুতিতে সমগ্র বিশ্বে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
(খ) কেন্দ্র-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত সাম্যবাদী ব্যবস্থা পতনের ফলে পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহ ও অন্যান্য অনেক দেশ উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ধনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করে। ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
(গ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশেষত সাম্যবাদী নীতিতে প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংসের ফলে বিশ্বের অনেক দেশ এই ব্যবস্থার উপর আস্থা হারায় যার ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পেতে থাকে।
(ঘ) ১৯৯০ সালের পর তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব-এর ফলে জনগণের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশ লাভ করে, যা আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের দূরত্ব হ্রাস করে। সমগ্র বিশ্ব একটি ক্ষুদ্র গ্রামে পরিণত হয়। ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় গতি সঞ্চার হয়।
(ঙ) যুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী দারিদ্র ও দুর্দশা, বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া প্রচেষ্টা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, নূতন বিশ্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা প্রভৃতি বিষয়সমূহ বিশ্বায়নকে উৎসাহিত করে।
প্রশ্ন ৭। বিশ্বায়ন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা সৃষ্টি করেছে?
উত্তরঃ বিশ্বায়নকে আমরা এইভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি যেমন, বিশ্বায়ন হল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এক নিবিড় সংযোগসাধনের প্রক্রিয়া। সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন হল বিশ্বায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের লক্ষ্য হল সারা বিশ্বে এক সমজাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কর্পোরেশনগুলি ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাহায্যে এরূপ সংস্কৃতি গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেছে।
বিশ্বায়ন নিঃসন্দেহে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা সৃষ্টি করেছে। বিশ্বায়ন সহজে এবং বিনা ব্যয়ে জনপ্রিয় সংস্কৃতিকে উন্নত দেশসমূহ হতে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে বিস্তার করেছে। জাতীয়তাভিত্তিক গণমাধ্যমের স্থানীয় টেলিভিশন মাধ্যমকে উন্নত করার প্রয়াস সত্ত্বেও এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহে বহু প্রচার মাধ্যমের বাজার আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার পণ্যসামগ্রীতে পরিপূর্ণ। স্থানীয় সমালোচক অনুতাপ প্রকাশ করেন যে এর ফলে স্থানীয় সংস্কৃতির হানি ঘটবে বিদেশি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটবে।
প্রশ্ন ৮। বিশ্বায়নের আলোকে উন্নয়নশীল দেশসমূহের সরকারের পরিবর্তনশীল ভূমিকার প্রভাব বিষয়ে সমালোচনামূলক মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়ন উন্নয়নশীল দেশসমূহের সরকারের ভূমিকা প্রভাবিত অর্থাৎ সরকার কি করতে চায় তার উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল বলে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়। যখন কোন রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হয় তখন সেই রাষ্ট্রের সরকার তার সঙ্গে বোঝাপড়ায় রত হয় এবং বিশ্ব বাণিজ্যিক সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সকল রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য বিধিনিয়ম রচনা করে। অনেক সময় এইসব রাষ্ট্র এই প্রকার জনহিতকারী নিয়মাবলি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণার পরিবর্তে বাজার অর্থনীতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বহুজাতিক কোম্পানির অনুপ্রবেশ কোন রাষ্ট্রের সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস করে। অনেক সময় সরকার বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে এমন কাজ করতে বাধ্য হয় যা জনস্বার্থবিরোধী।
অবশ্য লক্ষ্য করা গেছে যে বিশ্বায়ন সর্বদাই রাষ্ট্রের ক্ষমতা হ্রাস করে না। উন্নয়নশীল দেশসমূহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা প্রভৃতি অত্যাবশ্যক কার্যাবলি স্বাধীনভাবে নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী সম্পন্ন করতে পারে। সুতরাং রাষ্ট্রের গুরুত্ব সদা প্রবাহমান এবং বিশ্বায়নের আলোকে এমনকি উন্নয়নশীল দেশসমূহ অনেকক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়াও উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা রাষ্ট্র তার নাগরিকদের নানা প্রকার তথ্যাদি সংগ্রহ করতে পারে। এর ফলে নিয়মাবলি পূর্বের তুলনায় অধিক ক্ষমতাশালী। এর কারণস্বরূপ উন্নত প্রযুক্তির উল্লেখ করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ৯। বিশ্বায়ন কিভাবে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা হ্রাস করেছে?
উত্তরঃ বিশ্বায়ন উন্নয়নশীল দেশসমূহের সরকারের ভূমিকা প্রভাবিত অর্থাৎ সরকার কি করতে চায় তার উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল বলে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়। যখন কোন রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হয় তখন সেই রাষ্ট্রের সরকার তার সঙ্গে বোঝাপড়ায় রত হয় এবং বিশ্ব বাণিজ্যিক সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সকল রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য বিধিনিয়ম রচনা করে। অনেক সময় এইসব রাষ্ট্র এই প্রকার জনহিতকারী নিয়মাবলি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণার পরিবর্তে বাজার অর্থনীতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বহুজাতিক কোম্পানির অনুপ্রবেশ কোন রাষ্ট্রের সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস করে। অনেক সময় সরকার বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে এমন কাজ করতে বাধ্য হয় যা জনস্বার্থবিরোধী।
অবশ্য লক্ষ্য করা গেছে যে বিশ্বায়ন সর্বদাই রাষ্ট্রের ক্ষমতা হ্রাস করে না। উন্নয়নশীল দেশসমূহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা প্রভৃতি অত্যাবশ্যক কার্যাবলি স্বাধীনভাবে নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী সম্পন্ন করতে পারে। সুতরাং রাষ্ট্রের গুরুত্ব সদা প্রবাহমান এবং বিশ্বায়নের আলোকে এমনকি উন্নয়নশীল দেশসমূহ অনেকক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়াও উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা রাষ্ট্র তার নাগরিকদের নানা প্রকার তথ্যাদি সংগ্রহ করতে পারে। এর ফলে নিয়মাবলি পূর্বের তুলনায় অধিক ক্ষমতাশালী। এর কারণস্বরূপ উন্নত প্রযুক্তির উল্লেখ করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ১০। উদারীকরণের ফলাফল কি?
উত্তরঃ বিশ্বায়নের ফলে উন্মুক্ততা এবং উদারীকরণ বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে; অর্থাৎ অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন বিষয়ের পরিচালনার দায়িত্ব কোন একটি দেশ বা সংস্থার উপর থাকবে না।
উদারীকরণের ফলাফল নিম্নরূপ:
(ক) উদারীকরণের ফলে মুক্ত বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা অপেক্ষা আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়।
(খ) উদারীকরণের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।
(গ) উদারীকরণের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা সৃষ্টি হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়।
(ঘ) উদারীকরণের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করে। ফলে অর্থনীতির প্রসার ঘটে।
(ঙ) ভিসা নীতির দ্বারা আন্তঃরাষ্ট্রীয় রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে যোগাযোগ তথা আসা-যাওয়া করার সুবিধা নিশ্চিত করেছে।
প্রশ্ন ১১। বিশ্বায়নের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ফলাফল বা প্রভাব কি কি? আলোচনা কর।
উত্তরঃ রাজনৈতিক প্রভাব: রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বিশ্বায়নের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অদ্যাবধি রাজনীতি কেবল জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করত। জনগণের নিরাপত্তা ও আর্থিক কল্যাণ, মানবাধিকার এবং পরিবেশ রক্ষায় নিজ নিজ রাষ্ট্রের সরকারের দায়বদ্ধতা ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায়, রাজনীতি রাষ্ট্রের বাইরেও ইউরোপীয় সংঘ, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, বিশ্বব্যাঙ্ক, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা প্রভৃতি রাজনৈতিক সমন্বয় সাধনকারী প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। বিশ্বায়নের যুগে রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ গোলকীয় আন্দোলন ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে জাতীয় সীমানা অতিক্রম করতে পারে।
অর্থনৈতিক প্রভাব: বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক দিকটিকেই এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বলা হয়। কারণ এর উপরই বিশ্বায়নের মূল নিহিত আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রযুক্তির অগ্রসরতা এবং মুক্ত বাণিজ্য ও বাজার অর্থনীতির ফলে পণ্যসামগ্রী, পুঁজি ও পরিষেবার অভাবনীয় আদান-প্রদান সম্ভব হয়েছে। উন্নত দেশসমূহের পণ্যসামগ্রী এবং সস্তা শ্রমিকদের জন্য মুক্ত বিশ্ববাজার প্রয়োজন। তারা দরিদ্র ও অনুন্নত দেশগুলিকে বিশ্ব বাজারে সংযুক্ত করবার জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির নিকট হতে অর্থ ঋণ নিতে বাধ্য করে। সরকার ও জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষাকারী ও পরিবেশ-সংক্রান্ত কিছু নিয়মাবলি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
সাংস্কৃতিক প্রভাব: বিশ্বায়নের প্রভাব শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রও বিশ্বায়নের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। বিশ্বগ্রাসী পাশ্চাত্য সংস্কৃতি উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সিংহভাগ অধিকার স্থাপন করে ফেলেছে। সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রথার মাধ্যমে নিজেদের গতিসমৃদ্ধ চকচকে ও রগরগে সংস্কৃতিকে তৃতীয় বিশ্বের অঙ্গনে প্রবেশ করিয়ে চলেছে। যার ফল হল তৃতীয় বিশ্বের যুব সমাজ নিজেদের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে তাৎক্ষণিক উল্লাসে নিজেদের অস্তিত্বকে বিলীন করে তুলছে। অন্যদিকে, বিশ্বায়ন বিভিন্ন জাতি সংস্কৃতিকে আরও বেশি বৈচিত্র্যময় করেছে এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রসার ঘটিয়েছে।
প্রশ্ন ১২। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া আবির্ভাবের জন্য দায়ী উপাদানসমূহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ নানা প্রকার কারণের জন্য বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। প্রধান প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সমগ্র বিশ্বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তনের ফলশ্রুতিতে সমগ্র বিশ্বে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
(খ) কেন্দ্র-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত সাম্যবাদী ব্যবস্থা পতনের ফলে পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহ ও অন্যান্য অনেক দেশ উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ধনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করে। ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
(গ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশেষত সাম্যবাদী নীতিতে প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংসের ফলে বিশ্বের অনেক দেশ এই ব্যবস্থার উপর আস্থা হারায় যার ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পেতে থাকে।
(ঘ) ১৯৯০ সালের পর তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব-এর ফলে জনগণের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশ লাভ করে, যা আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের দূরত্ব হ্রাস করে। সমগ্র বিশ্ব একটি ক্ষুদ্র গ্রামে পরিণত হয়। ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় গতি সঞ্চার হয়।
(ঙ) যুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী দারিদ্র ও দুর্দশা, বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া প্রচেষ্টা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, নূতন বিশ্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা প্রভৃতি বিষয়সমূহ বিশ্বায়নকে উৎসাহিত করে।
প্রশ্ন ১৩। আন্তর্জাতিক মুদ্রানিধি (অর্থ তহবিল) বিষয়ে একটি টীকা লেখ। একটি রাষ্ট্রে বহুজাতিক সংস্থার ভূমিকা কি?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল: ১৯৪৫ সালের ২৭শে ডিসেম্বর ব্রেটন উড্স চুক্তি অনুসারে এই সংস্থাটি ২৯টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত হয়। বর্তমানে ১৮৯টি রাষ্ট্র এই সংস্থার সদস্যভুক্ত। প্রত্যেক সদস্যরাষ্ট্রের একজন প্রতিনিধি নিয়ে এই সংস্থার সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পরিচালক সভা (Board of Governors) গঠিত। ২০ জন সদস্য নিয়ে এর একটি কার্যকরী অধিকর্তামণ্ডলী (Executive Directors) আছে। অধিকর্তামণ্ডলী কর্তৃক নির্বাচিত একজন কর্মকর্তা পদাধিকার বলে (Managing Director) এই সংস্থার দৈনন্দিন কার্য পরিচালনা করেন। এই সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্য হল আন্তর্জাতিক সদস্য সম্পর্কে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। বিভিন্ন দেশের মধ্যে দেনা-পাওনার অসাম্য দূর করবার জন্য এই সংস্থা সদস্যগণকে ঋণ দান করে। এই সংস্থার প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটনে অৱস্থিত।
বহুজাতিক সংস্থার ভূমিকা: বিশ্বায়নের ফলে বহুজাতিক সংস্থা অর্থাৎ কোম্পানিসমূহের সারা বিশ্বে বাড়বাড়ন্ত। বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্রের ক্ষমতা বহুল পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণাটি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। জনসেবার দায়িত্ব বহুজাতিক কোম্পানিসমূহের হাতে অর্পণ করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে সর্বত্র বিভিন্ন প্রকার বহুজাতিক কোম্পানি নানাবিধ সামগ্রী উৎপাদন করে। এই সকল সামগ্রী অত্যধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিভিন্ন দেশের সরকার এই সংস্থাগুলির স্বার্থ রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর। এই উৎপাদিত সামগ্রীর সহজলভ্যতার ফলে শিল্পে উৎপাদিত সামগ্রীসমূহের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে দেশী শিল্প বিশেষত ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগের প্রভূত ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। এই কোম্পানিগুলি প্রতিটি রাষ্ট্রের সরকারের আর্থিক নীতির উপর প্রভাব বিস্তার করে। এদের স্বার্থরক্ষার্থে সরকার অনেক ক্ষেত্রে জনস্বার্থবিরোধী কাজও করে। ফলে সাধারণ জনগণের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটে।
প্রশ্ন ১৪। বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাব আলোচনা কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়নের কতিপয় গুণ বা সুবিধা আছে। এর সপক্ষে প্রধান যুক্তিসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার দ্বারা বিভিন্ন দেশের মধ্যে বৈষম্য, বিশেষত আর্থিক বৈষম্য দূরীভূত করতে পারা যায়।
(খ) বিশ্বায়নের ধারণা বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সংকীর্ণ জাতীয় সীমারেখা পরিত্যাগ করে বৃহত্তর আন্তর্জাতিকতাবাদের দিকে অগ্রসর হতে আবেদন জানায়।
(গ) দারিদ্র, অনশন প্রভৃতি বৃহৎ সমস্যা দূরীকরণের মাধ্যমে শান্তি ও সমতা প্রতিষ্ঠা করা বিশ্বায়নের মাধ্যমে সম্ভব।
(ঘ) বিশ্বায়নের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের সমান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করতে সক্ষম হবে।
প্রশ্ন ১৫। ভারতে বিশ্বায়নের গুরুত্বের বিষয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভারতবর্ষে বিশ্বায়নের গুরুত্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং জ্ঞান ও বিজ্ঞানের প্রত্যেক শাখায় বর্তমান।
ভারতবর্ষে বিশ্বায়নের গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হল:
(ক) বিশ্বায়নের ফলে ভারতবর্ষের ব্যবসা – বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
(খ) ভারতীয় জনগণের অভিবাসন ও স্থানান্তকরণ ঘটবে।
(গ) অন্যান্য দেশের সঙ্গে মুদ্রা ও অন্যান্য বিনিময় সামগ্রীর মুক্ত প্রবাহ ঘটবে।
(ঘ) অন্য দেশ থেকে মূলধন আমদানির সুযোগ ঘটবে, এবং সেই মূলধনের সাহায্যে প্রস্তুত কৃষি ও শিল্প উৎপাদন সেই দেশে বা অন্যান্য দেশে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
(ঙ) বাণিজ্য, মূলধন এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানিগুলির সহযোগিতা পাওয়া যাবে।
(চ) কারিগরী ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির দ্বার খুলে যাবে।
(ছ) আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি দ্বারা আমাদের বৈদ্যুতিন মাধ্যম অনেক আধুনিক হবে।
তাই ভারতবর্ষের মতো উন্নয়নশীল দেশের স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ
প্রশ্ন ১। বিশ্বায়ন সম্পর্কে নিম্নোক্ত উক্তিগুলির কোনটি শুদ্ধ?
(ক) বিশ্বায়ন হইল সম্পূর্ণরূপে একটি অর্থনৈতিক বিষয়।
(খ) বিশ্বায়ন ১৯৯১ সালে আরম্ভ হয়েছিল।
(গ) বিশ্বায়ন পশ্চিমীকরণের মতো একই বিষয়। বিশ্বায়ন একটি বহুমুখী বিষয়।
উত্তরঃ (ঘ) বিশ্বায়ন একটি বহুমুখী বিষয়।
প্রশ্ন ২। বিশ্বায়নের প্রভাব সম্পর্কে নিম্নোক্ত উক্তিগুলির কোনটি শুদ্ধ?
(ক) রাষ্ট্র ও সমাজের উপর বিশ্বায়নের অসম প্রভাব ছিল।
(খ) রাষ্ট্র ও সমাজের উপর বিশ্বায়নের সমান প্রভাব ছিল।
(গ) বিশ্বায়নের প্রভাব রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল।
(ঘ) বিশ্বায়ন অনিবার্যভাবে সাংস্কৃতিক একজাতীয়তায় পরিণত করেছিল।
উত্তরঃ (ক) রাষ্ট্র ও সমাজের উপর বিশ্বায়নের অসম প্রভাব ছিল।
প্রশ্ন ৩। বিশ্বায়নের কারণ সম্পর্কে নিম্নোক্ত কোন্ উক্তিটি শুদ্ধ?
(ক) প্রযুক্তি বিশ্বায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
(খ) বিশ্বায়ন একটি বিশেষ গোষ্ঠীর লোক দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল।
(গ) অর্থনৈতিক পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বিশ্বায়নের কারণ।
(ঘ) বিশ্বায়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছিল।
উত্তরঃ (ক) প্রযুক্তি বিশ্বায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
প্রশ্ন ৪। বিশ্বায়ন সম্পর্কে নিম্নোক্ত কোন্ উক্তিটি শুদ্ধ?
(ক) বিশ্বায়ন হল কেবলমাত্র পণ্যসামগ্রীর চলাচল।
(খ) বিশ্বায়ন মূল্যবোধের সংঘাত অন্তর্ভুক্ত করে না।
(গ) পরিষেবাসমূহ বিশ্বায়নের একটি তাৎপর্যহীন অংশ।
(ঘ) বিশ্বায়ন হল বিশ্বব্যাপী আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ক।
উত্তরঃ (ঘ) বিশ্বায়ন হল বিশ্বব্যাপী আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ক।
প্রশ্ন ৫। বিশ্বায়ন সম্পর্কে নিম্নোক্ত কোন্ উক্তিটি শুদ্ধ?
(ক) বিশ্বায়নের প্রবক্তাগণ অভিমত ব্যক্ত করেন যে তা অধিক আর্থিক বিকাশ ঘটাবে।
(খ) বিশ্বায়নের সমালোচকগণ অভিমত ব্যক্ত করেন যে তা অধিক আর্থিক বৈষম্য ঘটাবে।
(গ) বিশ্বায়নের প্রবক্তাগণ অভিমত ব্যক্ত করেন যে তা সাংস্কৃতিক সমজাতীয়করণ করবে।
(ঘ) বিশ্বায়নের সমালোচকগণ অভিমত ব্যক্ত করেন যে তা সাংস্কৃতিক সমজাতীয়করণ করবে।
উত্তরঃ (খ) বিশ্বায়নের সমালোচকগণ অভিমত ব্যক্ত করেন যে তা অধিক আর্থিক বৈষম্য ঘটাবে।
প্রশ্ন ৬। প্রযুক্তি কিভাবে বিশ্বায়নে অবদান যুগিয়েছিল?
উত্তরঃ বিশ্বায়নের জন্য নানাপ্রকার উপাদান দায়ী।
এই উপাদানসমূহের মধ্যে প্রযুক্তি বিশ্বায়ন প্রসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে:
(ক) সাম্প্রতিককালে দূর সঞ্চার ও তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লবের ফলে এক রাষ্ট্রের উপর অন্য রাষ্ট্রের নির্ভরশীলতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
(খ) প্রযুক্তির প্রসারের ফলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে পৃথিবীর সকল বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রাখতে সমর্থ হয়েছে।
(গ) আধুনিক প্রযুক্তি জনগণকে পুঁজি, পণ্যসামগ্রী, ভাবধারা, আদর্শ প্রভৃতি এক স্থান হতে অন্য স্থানে অর্থাৎ এক দেশ হতে অন্য দেশে আদান-প্রদান করা সম্ভবপর করেছে।
(ঘ) প্রযুক্তি প্রসারের ফলে বিশ্বের এক প্রান্তে ঘটে থাকা ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে অন্য প্রান্তের মানুষ জানতে পারে।
প্রশ্ন ৭। বিশ্বায়নের আলোকে উন্নয়নশীল দেশসমূহের সরকারের পরিবর্তনশীল ভূমিকার প্রভাব বিষয়ে সমালোচনামূলক মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ বিশ্বায়ন উন্নয়নশীল দেশসমূহের সরকারের ভূমিকা প্রভাবিত অর্থাৎ সরকার কি করতে চায় তার উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল বলে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়। যখন কোন রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হয় তখন সেই রাষ্ট্রের সরকার তার সঙ্গে বোঝাপড়ায় রত হয় এবং বিশ্ব বাণিজ্যিক সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সকল রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য বিধিনিয়ম রচনা করে। অনেক সময় এইসব রাষ্ট্র এই প্রকার জনহিতকারী নিয়মাবলি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণার পরিবর্তে বাজার অর্থনীতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বহুজাতিক কোম্পানির অনুপ্রবেশ কোন রাষ্ট্রের সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস করে। অনেক সময় সরকার বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে এমন কাজ করতে বাধ্য হয় যা জনস্বার্থবিরোধী।
অবশ্য লক্ষ্য করা গেছে যে বিশ্বায়ন সর্বদাই রাষ্ট্রের ক্ষমতা হ্রাস করে না। উন্নয়নশীল দেশসমূহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা প্রভৃতি অত্যাবশ্যক কার্যাবলি স্বাধীনভাবে নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী সম্পন্ন করতে পারে। সুতরাং রাষ্ট্রের গুরুত্ব সদা প্রবাহমান এবং বিশ্বায়নের আলোকে এমনকি উন্নয়নশীল দেশসমূহ অনেকক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়াও উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা রাষ্ট্র তার নাগরিকদের নানা প্রকার তথ্যাদি সংগ্রহ করতে পারে। এর ফলে নিয়মাবলি পূর্বের তুলনায় অধিক ক্ষমতাশালী। এর কারণস্বরূপ উন্নত প্রযুক্তির উল্লেখ করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ৮। বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক তাৎপর্যসমূহ কি কি? বিশ্বায়ন কিভাবে এই ব্যাপারে ভারতের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে?
উত্তরঃ বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক তাৎপর্যসমূহ হল –
(ক) বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পণ্যসামগ্রীর অবাধ ও নিরবচ্ছিন্ন চলাচল সম্ভব হয়।
(খ) বিশ্বায়নের ফলে অন্যান্য রাষ্ট্রে বিদেশি পুঁজির মুক্ত বিনিয়োগ সম্ভব হয়।
(গ) বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার ফলে শ্রমিক ও মানবশক্তির অবাধ আদান-প্রদান করা হয়।
(ঘ) বিশ্বায়নের ফলে বেসরকারিকরণ ও বহুজাতিক সংস্থার বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর কর্মসংস্থান হয়।
ভারতের উপর বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়:
(ক) উৎপাদনের ক্ষেত্রে নানা প্রকার উৎপাদন প্রতিষ্ঠান, যেমন— মোটরগাড়ি, তথ্য প্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিকস্, খাদ্য প্রক্রিয়া শিল্প প্রভৃতি।
(খ) বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী, যেমন— টেলিভিশন, রেডিও, শীততাপ- নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, কম্পিউটার প্রভৃতির দাম বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।
(গ) বিশ্বায়নের ফলে ভারতে দূরসঞ্চার খণ্ডে ব্যাপক উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। জনগণ এখন টিভির অনেকগুলি চ্যানেল দেখতে পায়। মোবাইলে ফোন পরিষেবা ভারতের প্রায় সর্বত্রই বিস্তৃত হয়েছে।
(ঘ) বিশ্বের বাজারে ভারতের পণ্যসামগ্রী ও সেবার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রশ্ন ৯। বিশ্বব্যাপী আন্তঃসম্পর্ক কি? এর উপাদানসমূহ কি কি?
উত্তরঃ জোসেফ স্টিগলিৎজ তাঁর গ্রন্থ Globalization and its Discontents-এ লিখেছেন, “বিশ্বায়ন হল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এক নিবিড় সংযোগসাধনের প্রক্রিয়া।” তাঁর সূত্র ধরে আমরা বলতে পারি বিশ্বায়ন একটি ধারণা যা মূলত ব্যাখ্যা করে ‘প্রবাহ’ বা ‘স্রোতধারাকে’। এই প্রবাহ নানান ধরনের হতে পারে— বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চিন্তাধারার বিকাশ, দুই বা ততোধিক স্থানে মূলধনের প্রবাহ, সীমান্ত অতিক্রম করে অন্য দেশের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি বৃদ্ধি, উন্নততর জীবনযাত্রার খোঁজে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের যাতায়াত এসবই বিশ্বায়নের জন্য। বিশ্বায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিশ্বজুড়ে একে অন্যের সাথে সম্পর্কিত হয়ে থাকা।
বিশ্বায়নের উপাদানসমূহ হল — ভাবধারা, পুঁজি, পণ্যসামগ্রী ও মানুষ।
প্রশ্ন ১০। বিশ্বায়ন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা সৃষ্টি করেছে। তুমি কি এই যুক্তিতে একমত?
উত্তরঃ বিশ্বায়নকে আমরা এইভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি যেমন, বিশ্বায়ন হল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এক নিবিড় সংযোগসাধনের প্রক্রিয়া। সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন হল বিশ্বায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের লক্ষ্য হল সারা বিশ্বে এক সমজাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কর্পোরেশনগুলি ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাহায্যে এরূপ সংস্কৃতি গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেছে।
বিশ্বায়ন নিঃসন্দেহে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা সৃষ্টি করেছে। বিশ্বায়ন সহজে এবং বিনা ব্যয়ে জনপ্রিয় সংস্কৃতিকে উন্নত দেশসমূহ হতে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে বিস্তার করেছে। জাতীয়তাভিত্তিক গণমাধ্যমের স্থানীয় টেলিভিশন মাধ্যমকে উন্নত করার প্রয়াস সত্ত্বেও এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহে বহু প্রচার মাধ্যমের বাজার আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার পণ্যসামগ্রীতে পরিপূর্ণ। স্থানীয় সমালোচক অনুতাপ প্রকাশ করেন যে এর ফলে স্থানীয় সংস্কৃতির হানি ঘটবে বিদেশি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটবে।
প্রশ্ন ১১। বিশ্বায়ন কিভাবে ভারতকে প্রভাবিত করেছিল এবং ভারত কিভাবে বিশ্বায়নকে প্রভাবিত করেছিল?
উত্তরঃ ভারতের উপর বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়:
(ক) উৎপাদনের ক্ষেত্রে নানা প্রকার উৎপাদন প্রতিষ্ঠান, যেমন— মোটরগাড়ি, তথ্য প্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিকস্, খাদ্য প্রক্রিয়া শিল্প প্রভৃতি।
(খ) বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী, যেমন— টেলিভিশন, রেডিও, শীততাপ- নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, কম্পিউটার প্রভৃতির দাম বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।
(গ) বিশ্বায়নের ফলে ভারতে দূরসঞ্চার খণ্ডে ব্যাপক উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। জনগণ এখন টিভির অনেকগুলি চ্যানেল দেখতে পায়। মোবাইলে ফোন পরিষেবা ভারতের প্রায় সর্বত্রই বিস্তৃত হয়েছে।
(ঘ) বিশ্বের বাজারে ভারতের পণ্যসামগ্রী ও সেবার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারতে অনেকেই বিশ্বায়ন প্রতিরোধ করেছে। বামপন্থীগণ আর্থিক বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে বিশ্বায়ন প্রতিরোধ করবার প্রচেষ্টা করেছে। অধিকন্তু সামাজিক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন, শ্রমিক সংঘ ও কৃষক আন্দোলন বহুজাতিক সংস্থা ও বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। আমেরিকান ও ইউরোপীয় কোম্পানীর দ্বারা ‘নিম’ এবং অন্যান্য উদ্ভিদের স্বত্ব মালিকানার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ সংগঠিত হয়েছিল। বিদেশি টিভি চ্যানেল, পোশাক-পরিচ্ছদের পশ্চিমীকরণ, প্রেমিক-প্রেমিকা দিবস (Valentine Day) প্রভৃতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠেছে।