Class 12 Political Science Chapter 13 ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক

Class 12 Political Science Chapter 13 ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 13 ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক Notes and select needs one.

Class 12 Political Science Chapter 13 ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 13 ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 13 ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক Solutions for All Subjects, You can practice these here.

ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক

Chapter: 13

দ্বিতীয় খন্ড (স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি)

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতীয় জাতীয় সৈন্যবাহিনী (Indian National Army)-র প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

উত্তরঃ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।

প্রশ্ন ২। ভারতের সংবিধানের কোন্ অনুচ্ছেদে ভারতে বৈদেশিক নীতির উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ ৫১নং অনুচ্ছেদে।

প্রশ্ন ৩। ভারতের বৈদেশিক নীতির প্রধান স্থপতি কে?

উত্তরঃ পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু।

প্রশ্ন ৪। বিশ্ব পর্যায়ে দুটি শিবিরকে নেতৃত্ব দানকারী বিশ্বের শক্তিশালী দেশ দুটি কি কি?

উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন।

প্রশ্ন ৫। কোন্ সালে চীন তিব্বত অধিগ্রহণ করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৬০ সালে।

প্রশ্ন ৬। NEFA বলতে কি বোঝায়?

উত্তরঃ North Eastern Frontier Agency (বর্তমান অরুণাচল প্রদেশ)।

প্রশ্ন ৭। চীন কখন ভারত আক্রমণ করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৬২ সালে।

প্রশ্ন ৮। নেহেরুর পর চীন ভ্রমণকারী অপর প্রথম প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

উত্তরঃ রাজীব গান্ধী (১৯৮৯ সালে)।

প্রশ্ন ৯। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও জেনারেল আয়ুব খানের মধ্যে স্বাক্ষরিত ১৯৬৬ সালের চুক্তিটিকে কি বলে জানা যায়?

উত্তরঃ তাসখণ্ড চুক্তি।

প্রশ্ন ১০। কোন্ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭১ সালে। 

প্রশ্ন ১১। সিমলা চুক্তি কোন্ সালে হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭২ সালে।

প্রশ্ন ১২। কোন্ সালে ম্যাকমোহন লাইনকে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমারেখা বলে নির্ধারণ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯১৪ সালে।

প্রশ্ন ১৩। কাশ্মীর বিভাজনের প্রস্তাব কে করেছিল?

উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘ।

প্রশ্ন ১৪। গোষ্ঠীনিরপেক্ষ সম্মেলন প্রথম কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ বেলগ্রেড-এ ১৯৬১ সালে।

প্রশ্ন ১৫। বৈদেশিক নীতি বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ একটি স্বাধীন দেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে যে নীতি গ্রহণ করে তাকে বৈদেশিক নীতি বলে।

প্রশ্ন ১৬। ভারতীয় বৈদেশিক নীতির একটি মৌলিক নীতি লেখ।

উত্তরঃ গোষ্ঠীনিরপেক্ষতা।

প্রশ্ন ১৭। শুদ্ধ উত্তরটি বেছে লেখ:

(ক) বেলগ্রেডে অনুষ্ঠিত প্রথম গোষ্ঠীনিরপেক্ষ সম্মেলন (অ) ১৯৬০ সালে, (আ) ১৯৬১ সালে, (ই) ১৯৬২ সালে হয়েছিল।

উত্তরঃ (আ) ১৯৬১ সালে।

(খ) পঞ্চশীল চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ভারত ও (পাকিস্তান/ চীন/মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)-এর মধ্যে।

উত্তরঃ চীন-এর মধ্যে।

(গ) ১৯৯৮/১৯৯৯/২০০০ সালের মে ও জুন মাসের মধ্যে কার্গিল বিবাদ হয়েছিল।

উত্তরঃ ১৯৯৯ সালের।

(ঘ) জনতা পার্টির সরকার ক্ষমতায় আসে (১৯৭৬/১৯৭৭/১৯৭৮) সালে।

উত্তরঃ ১৯৭৭ সালে।

(ঙ) সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল (ইন্দিরা গান্ধী ও মিঃ ভুট্টোর/দলাই লামা ও ইন্দিরা গান্ধীর/জওহরলাল নেহরু ও মিঃ ভুট্টোর) মধ্যে।

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী ও মিঃ ভুট্টোর মধ্যে।

প্রশ্ন ১৮। বৈদেশিক নীতির উপাদানসমূহ কি কি?

উত্তরঃ বৈদেশিক নীতির উপাদানসমূহ হল—

(ক) দেশের ভৌগোলিক উপাদান। 

(খ) দেশের আয়তন। 

(গ) প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতা। ও 

(ঘ) জাতীয় স্বার্থ।

প্রশ্ন ১৯। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদের একটি প্রধান বিষয় কি?

উত্তরঃ কাশ্মীর সমস্যা।

প্রশ্ন ২০। সিমলা চুক্তি কোন্ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭২ সালে।

প্রশ্ন ২১। বান্দুং সম্মেলনের তাৎপর্য কি?

উত্তরঃ এই সম্মেলনের প্রধান তাৎপর্য হল গোষ্ঠী নিরপেক্ষ আন্দোলনের সূচনা।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২২। সিমলা চুক্তিতে কে স্বাক্ষর করেছিলেন?

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী ও জুলফিকার আলি ভূট্টো।

প্রশ্ন ২৩। ভারতের বিদেশ নীতির একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ।

প্রশ্ন ২৪। ভারতের বৈদেশিক নীতির একটি কারক উল্লেখ কর।

উত্তরঃ পঞ্চশীল নীতি।

প্রশ্ন ২৫। বৈদেশিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে নেহরু কোন্ বিষয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করতেন?

উত্তরঃ জাতীয় স্বার্থরক্ষা করা।

প্রশ্ন ২৬। পঞ্চশীল নীতি কখন ঘোষিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫৪ সালে।

প্রশ্ন ২৭। পঞ্চশীল নীতি কে ঘোষণা করেন?

উত্তরঃ জওহরলাল নেহেরু।

প্রশ্ন ২৮। বান্দুং সম্মেলন কখন অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫৫ সালে।

প্রশ্ন ২৯। এশিয়া মৈত্রী সম্মেলন কখন অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে।

প্রশ্ন ৩০। দালাই লামা কে?

উত্তরঃ তিব্বতের ধর্মীয় নেতা।

প্রশ্ন ৩১। বাংলাদেশ কখন স্বাধীনতা লাভ করে?

উত্তরঃ ১৯৭১ সালে।

প্রশ্ন ৩২। ভারত-রুশ শান্তিচুক্তি কখন স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭১ সালে।

প্রশ্ন ৩৩। ভারত প্রথম কখন পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়?

উত্তরঃ ১৯৭৪ সালে।

প্রশ্ন ৩৪। ভারত দ্বিতীয়বার পরমাণু বিস্ফোরণ কখন ঘটায়?

উত্তরঃ ১৯৯৮ সালে।

প্রশ্ন ৩৫। ভারত কোথায় পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়?

উত্তরঃ রাজস্থানের মরু অঞ্চল পোখরানে। 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতের বৈদেশিক নীতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ মূল নীতি ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভারতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মূল বৈদেশিক নীতি নিম্নরূপ:

(ক) গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি ভারতের বিদেশ নীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য যা ভারত স্বাধীনতার পর থেকেই অনুসরণ করছে।

(খ) ভারতের বিদেশনীতির অপর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল উপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা।

প্রশ্ন ২। পঞ্চশীল বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ প্রধানমন্ত্রী নেহরু বিশ্বশান্তি রক্ষার্থে সম্রাট অশোকের আদর্শ ও ঐতিহ্য অনুসারে যে পাঁচটি নীতি ঘোষণা করেন সেগুলি পঞ্চশীল নামে পরিচিত। ১৯৫৪-এ চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর মধ্যে পঞ্চশীল-এর ভিত্তিতে ভারত-চীন মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

প্রশ্ন ৩। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের দুটি উদ্বিগ্নতা বা মতানৈক্যের বিষয় উল্লেখ কর।

উত্তরঃ পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের মতানৈক্যের দুটি বিষয় হল— 

(ক) জম্মু ও কাশ্মীর। ও 

(খ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

প্রশ্ন ৪। নেহেরুর বৈদেশিক নীতির যে-কোন দুটি প্রধান উদ্দেশ্য লেখ।

উত্তরঃ নেহেরুর বৈদেশিক নীতির দুটি প্রধান উদ্দেশ্য হল—

(ক) দেশের সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ। এবং 

(খ) দেশের দ্রুত আর্থিক বিকাশ সাধন।

প্রশ্ন ৫। NPT ও CTBT-র সম্পূর্ণ নাম দুটি লেখ।

উত্তরঃ NPT – Nuclear Non-Proliferation Treaty

CTBT – Comprehensive Test Ban Treaty

প্রশ্ন ৬। চীনের সঙ্গে চলতে থাকা ভারতের দুটি প্রধান বিবাদের উল্লেখ কর।

উত্তরঃ দুটি প্রধান বিবাদ হল—

(ক) সীমানা বিরোধ। ও 

(খ) দলাই লামার আশ্রয়।

প্রশ্ন ৭। ভারত কখন প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭৪ সালের মে মাসে ভারত সর্বপ্রথম পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। এই বিস্ফোরণকে শান্তিপূর্ণ বিস্ফোরণ বলা হয়।

প্রশ্ন ৮। একটি দেশের বৈদেশিক নীতিতে প্রভাব বিস্তারের উপাদানসমূহ কি কি?

উত্তরঃ বৈদেশিক নীতির প্রধান উপাদানসমূহ হল- 

(ক) দেশের ভৌগোলিক অবস্থান। 

(খ) দেশের আয়তন।

(গ) প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতা। 

(ঘ) জাতীয় স্বার্থ।

(ঙ) দেশের আর্থিক বিকাশ।

প্রশ্ন ৯। সিমলা চুক্তির দুটি শর্ত উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সিমলা চুক্তির শর্ত দুটি নিম্নরূপ:

(ক) ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই তাদের বিরোধ দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করবে।

(খ) উভয় রাষ্ট্রই একে অন্যের প্রতি বলপ্রয়োগ করবে না।

প্রশ্ন ১০। ভারতের বৈদেশিক নীতি তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে কতটুকু সক্ষম হয়েছে?

উত্তরঃ ভারতের বৈদেশিক নীতির মূল লক্ষ্য হল ভারতের জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষা ও পূরণ করা। গোষ্ঠীনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে একদিকে ভারত নিজের স্বাধীনতা রক্ষা ছাড়াও দুটি পরস্পরবিরোধী শক্তিশালী রাষ্ট্র থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা আদায়ের চেষ্টা করেছিল। ভারত বৈদেশিক নীতির উপর ভিত্তি করে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে যেসব চুক্তি সম্পাদন করেছে সেগুলিও ভারতের জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের সহায়ক।

প্রশ্ন ১১। ভারতবর্ষে স্বাধীনভাবে গ্রহণ করা যে-কোন দুটি আন্তর্জাতিক বিষয়ের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ ভারতবর্ষে স্বাধীনভাবে গৃহীত দুটি আন্তর্জাতিক বিষয় হল—

(ক) পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র-সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদন। ও 

(খ) গোষ্ঠীনিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন।

প্রশ্ন ১২। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ভারতের বৈদেশিক নীতির অন্তর্গত পঞ্চশীল নীতির একটি অন্যতম নীতি। ভারত বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার পক্ষপাতী। সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে আভ্যন্তরীণ ও বহিঃসার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা করে নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখাকে সহাবস্থান বলা হয়।

প্রশ্ন ১৩। বান্দুং সম্মেলনের তাৎপর্য কি?

উত্তরঃ ১৯৫৫ সালে আফ্রো-এশিয়ার এক সম্মেলন ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এশিয়া ও আফ্রিকার মোট ২৯টি দেশের প্রতিনিধি এতে অংশগ্রহণ করেছিল। এই সম্মেলনকে গোষ্ঠীনিরপেক্ষ দেশসমূহের প্রথম সম্মেলন বলে অভিহিত করা যায়। বান্দুং সম্মেলনই পরে গোষ্ঠীনিরপেক্ষ আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল।

প্রশ্ন ১৪। কোন্ পদক্ষেপকে ভারত-চীন সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু (cornerstone) বলা হয়?

উত্তরঃ ১৯৫৪ সালে তিব্বত সম্পর্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই-এর মধ্যে হওয়া চুক্তিমর্মে যে পঞ্চশীল নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তাকে ভারত-চীন সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু বলে বিবেচনা করা হয়।

প্রশ্ন ১৫। কোন্ সালে এবং কে পঞ্চশীলের পাঁচটি নীতি ঘোষণা করেছিলেন?

উত্তরঃ ১৯৫৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই পঞ্চশীলের পাঁচটি নীতি ঘোষণা করেছিলেন।

প্রশ্ন ১৬। ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে গড়ে তোলা সম্পর্কের ভিত্তিস্বরূপ দুটি নীতি লেখ।

উত্তরঃ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিস্বরূপ নীতি দুটি নিম্নরূপ:

(ক) প্রতিবেশী কোন দেশকে আক্রমণ না করা।

(খ) প্রতিবেশী কোন দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা।

প্রশ্ন ১৭। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের উদ্বিগ্নতার দুটি দিক উল্লেখ কর।

উত্তরঃ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের উদ্বিগ্নতার দুটি দিক হল— 

(ক) কাশ্মীর সমস্যা। ও 

(খ) সীমান্ত পারে উগ্রপন্থী কার্যকলাপ।

প্রশ্ন ১৮। সিমলা চুক্তির দুটি শর্ত উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সিমলা চুক্তির দুটি শর্ত নিম্নরূপ:

(ক) ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই তাদের বিরোধ দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করবে।

(খ) উভয় রাষ্ট্রই একে অন্যের প্রতি বলপ্রয়োগ করবে না।

প্রশ্ন ১৯। বৈদেশিক নীতি সম্পর্কিত রাষ্ট্রের নির্দেশাত্মক নীতির যে-কোন একটি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ রাষ্ট্রের নির্দেশাত্মক নীতি হল – আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।

প্রশ্ন ২০। জাতীয় স্বার্থের অত্যাবশ্যক উপাদানগুলি কি কি?

উত্তরঃ জাতীয় স্বার্থের অত্যাবশ্যক উপাদানগুলি হল—জাতীয় একতা এবং অখণ্ডতা, জাতীয় সুরক্ষা এবং সামাজিক ও আর্থিক মঙ্গলসাধন। এই উপাদানগুলির ভিত্তিতে অন্যদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২১। ভারতের বৈদেশিক নীতির যে-কোন দুটি কারণ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতের বৈদেশিক নীতির দুটি কারণ হল –

(ক) ভৌগোলিক অবস্থান। ও

(খ) ঐতিহাসিক পটভূমি।

প্রশ্ন ২২। ভারতের বৈদেশিক নীতির যে-কোন দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতের বৈদেশিক নীতির দুটি বৈশিষ্ট্য হল—

(ক) গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ। এবং 

(খ) উপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা।

প্রশ্ন ২৩। ভারতীয় বৈদেশিক নীতির যে-কোন দুটি উপাদান উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতীয় বৈদেশিক নীতির দুটি উপাদান হল—

(ক) পঞ্চশীল নীতি। ও 

(খ) গোষ্ঠী নিরপেক্ষতা।

প্রশ্ন ২৪। ভারতের সংবিধানে নির্দেশাত্মক নীতিতে বিধিবদ্ধ বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত যে-কোন দুটি নির্দেশনামা উল্লেখ কর।

উত্তরঃ নির্দেশনামা দুটি হল—

(ক) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। এবং 

(খ) রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ন্যায়সংগত ও সম্মানজনক সম্বন্ধ অটুট রাখা।

প্রশ্ন ২৫। পঞ্চশীল নীতির যে-কোন দুটি নীতি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ পঞ্চশীল নীতির মধ্যে দুটি নীতি হল—

(ক) অন্য দেশ আক্রমণ না করা। এবং 

(খ) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

প্রশ্ন ২৬। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদের যে-কোন দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদের দুটি কারণ হল—

(ক) কাশ্মীর সমস্যা। এবং 

(খ) সন্ত্রাসবাদকে পাকিস্তানের মদত দান।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বৈদেশিক সম্পর্কের জন্য ভারতের গ্রহণ করা নীতির মৌলিক লক্ষ্য কি?

উত্তরঃ ভারতের বৈদেশিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।

(খ) আন্তঃরাষ্ট্রীয় শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা।

(গ) ভারতের চতুঃসীমার মধ্যে অবস্থিত লোকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

(ঘ) প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক স্থাপন করা।

(ঙ) অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি করা।

(চ) আন্তর্জাতিক বিবাদসমূহ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা।

(ছ) আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ বিশেষ করে রাষ্ট্রসংঘের উপর আস্থা রাখা ও সহযোগিতা করা।

প্রশ্ন ২। ভারতের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণকারী যে-কোন চারটি উপাদানের নাম লেখ।

উত্তরঃ ভারতের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে প্রভাবকারী চারটি উপাদান নিম্নরূপ:

(ক) ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন।

(খ) ভারতের ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক সম্পদ।

(গ) ভারতের আর্থ-সামাজিক পরিবেশ।

(ঘ) সমসাময়িক আন্তর্জাতিক পরিবেশ।

প্রশ্ন ৩। নিরপেক্ষতা ও গোষ্ঠীনিরপেক্ষতার মধ্যে পার্থক্যসমূহ বিবৃত কর।

উত্তরঃ নিরপেক্ষতা ও জোট নিরপেক্ষতার মধ্যে প্রধান পার্থক্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) নিরপেক্ষ শব্দটি সাধারণত বা মূলত যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু জোট নিরপেক্ষতা যুদ্ধ ও শান্তি পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

(খ) নিরপেক্ষতা শব্দটি সাধারণত আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু জোট নিরপেক্ষ শব্দটি মূলত পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। জোট নিরপেক্ষতার অর্থ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা নয়। 

(গ) নিরপেক্ষতা হল এমন একটি বিষয় যা প্রায় স্বাতন্ত্র্যবাদের মতো। অন্যদিকে জোট নিরপেক্ষতার অর্থ বিজড়িত না করা নয়।

(ঘ) নিরপেক্ষতা একটি নেতিবাচক ধারণা, কারণ তা কোন পক্ষ অবলম্বন করা এড়াতে সাহায্য করে। অন্যদিকে জোট নিরপেক্ষতা হল একটি ইতিবাচক ধারণা, কারণ তা স্বাধীন বৈদেশিক নীতি অবলম্বনে অঙ্গীকারবদ্ধ।

প্রশ্ন ৪। নেহরুর যুগে আফ্রো-এশীয় ঐক্যের উপর ভারতের ভূমিকার বিষয়ে আলোচনা কর।

উত্তরঃ বিশ্ব রাজনীতিতে পণ্ডিত নেহেরু ভারত তথা সমগ্র এশিয়ার পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিয়াছিলেন। তাঁর যুগ বিশেষত নব-স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা স্থাপন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চল্লিশ ও পঞ্চাশ দশকের সময়সীমার মধ্যে নেহেরু এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে একতা স্থাপনের ঘোর সমর্থক ছিলেন। তাঁহার নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে এশীয় মৈত্রী সম্মেলনের আহ্বান করা হয়েছিল। ডাচ উপনিবেশিক শাসনের কবল হতে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা লাভ করার জন্য ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করে ১৯৪৯ সালে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আহ্বান করা হয়। ১৯৫৫ সালে আফ্রো-এশিয়ান সম্মেলন ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তা বান্দুং সম্মেলন নামে খ্যাত। এশিয়া ও আফ্রিকার মোট ২৯টি দেশের প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন। বর্ণবৈষম্য নির্মূল, উপনিবেশিক শাসনের অবসান, পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ প্রভৃতি বিষয়ে এই সম্মেলনে আলোচনা করা হয়েছিল।

প্রশ্ন ৫। সিমলা চুক্তির উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ১৯৭২ সালের জুন মাসে ভারত ও পাকিস্তানের সমস্যাসমূহ আলোচনার জন্য সিমলায় একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সম্মেলনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলি ভুট্টো ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। 

একে সিমলা চুক্তি বলা হয়। এই চুক্তির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত নিম্নরূপ:

(ক) দুই দেশই দ্বি-পাক্ষিক শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে তাদের বিবাদ ও সংঘাতের সমাধান করবে।

(খ) দুই দেশই পরস্পর জাতীয় ঐক্য, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে।

(গ) দুই দেশই পরস্পর ভৌগোলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে না।

প্রশ্ন ৬। কাশ্মীর সমস্যা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ কাশ্মীর সমস্যাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাধীনতার পর তিক্ত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এর সঙ্গে কাশ্মীরি লোকদের আত্মপরিচয়ের বিষয়টিও জড়িত। ভারত বিভাজনের সময় জম্মু ও কাশ্মীর একটি দেশীয় রাজ্য ছিল। মহারাজা হরি সিং ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গে সামিল হওয়ার পরিবর্তে জম্মু-কাশ্মীরের স্বতন্ত্র স্থিতি বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ১৯৪৭ সালের জুন মাসে পাকিস্তানের সৈন্য কাশ্মীর অধিগ্রহণের উদ্দেশ্যে অঞ্চলটিতে প্রবেশ করে। এই আক্রমণে সন্ত্রস্ত হয়ে মহারাজা হরি সিং ভারতের শরণাপন্ন হন। অবশ্য হরি সিং ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর ভারতীয় সৈন্য কাশ্মীরকে পাকিস্তানী সৈন্য থেকে মুক্ত করে। সেই থেকেই কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে আছে। এই বিষয়ে রাষ্ট্রসংঘে পাকিস্তান অভিযোগ উত্থাপন করে। পরবর্তীকালে নিয়মিতভাবে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দ্বারা সরকার গঠিত হলেও কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে বহু বিবাদ, বিশেষ করে কার্গিল যুদ্ধ সংগঠিত হয়।

প্রশ্ন ৭। রাষ্ট্রসংঘে ভারতের ভূমিকার বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভারত তার ওপর আস্থা বিকাশ করেছে এবং এর বিভিন্ন কার্যসূচীতে অংশগ্রহণ করে আসছে। উপনিবেশিক শাসন থেকে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহকে মুক্ত করা, বর্ণ বৈষম্যতাবাদের উচ্ছেদ করা, মানবাধিকারকে জোরদার করা প্রভৃতি কার্যসূচী ও উদ্দেশ্যসমূহে ভারতের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বর্তমানকাল পর্যন্ত ভারত কয়েকবার রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য হিসাবে কয়েকবার মনোনীত হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘে ভারতের ভূমিকার উপর ভিত্তি করে বর্তমানে ভারত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের দাবি উত্থাপন করেছে এবং ইতিমধ্যে ভারত পৃথিবীর অনেক দেশের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও চীন এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রসংঘে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের বিরোধিতা করছে।

প্রশ্ন ৮। তিব্বত মালভূমি কিভাবে ভারত ও চীনের মধ্যে থাকা সম্পর্কে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে?

উত্তরঃ মধ্য এশিয়া অঞ্চলের উপত্যকাকে তিব্বত বলা হয়। ঐতিহাসিকভাবে যা ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনার অন্যতম প্রধান কারণ। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে চীন তিব্বতের উপর শাসনতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে। তিব্বত স্বাধীনও ছিল ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে। ১৯৬০ সালে চীন তিব্বতের দখল নেয়। ভারত তিব্বতের স্বাধীনতার দাবিকে মেনে নেবার জন্য চীনকে বোঝাতে চেষ্টা করে। ১৯৫৬ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই এর সরকারি ভারত ভ্রমণের সময় তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দলাই লামা এসেছিলেন। তিনি নেহরুকে তিব্বতের ক্রমশ খারাপ হওয়া অবস্থার কথা বলেছিলেন। চীন ইতিমধ্যেই ভারতকে আশ্বস্ত করেছিল যে তিব্বতকে চীনের যে-কোন অঞ্চল যে ধরনের স্বায়ত্বশাসন ভোগ করে তার থেকে বেশি দেওয়া হবে। ১৯৫৮ সালে চীনা দখলদারীর বিরুদ্ধে তিব্বতে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘটে। চীনা বাহিনী তা দমন করে। দলাই লামা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে তা অনুমোদিত হয়। চীন সরকার এর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ জানায়। এভাবে তিব্বত চীন-ভারত মতানৈক্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়ে।

প্রশ্ন ৯। বান্দুং সম্মেলনের তাৎপর্য কি ছিল?

উত্তরঃ ১৯৫৫ সালে আফ্রো-এশিয়ার এক সম্মেলন ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এশিয়া ও আফ্রিকার মোট ২৯টি দেশের প্রতিনিধি এতে অংশগ্রহণ করেছিল। এই সম্মেলনকে গোষ্ঠীনিরপেক্ষ দেশসমূহের প্রথম সম্মেলন বলে অভিহিত করা যায়। বান্দুং সম্মেলনই পরে গোষ্ঠীনিরপেক্ষ আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল।

প্রশ্ন ১০। অসম্প্রসারণ চুক্তির মতো আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান কি?

উত্তরঃ ভারতবর্ষ আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহের ক্ষেত্রে সদাই নিজস্ব ভূমিকা পালন করে আসছে। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যসমূহের যেগুলি ইতিমধ্যে পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয়েছিল সেই সকল রাষ্ট্র ১৯৬৮ সালে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের উপর আণবিক চুক্তি চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারত এই চুক্তিটি বৈষম্যমূলক চুক্তি বলে বিবেচনা করে এবং তা স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে। এই চুক্তি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির উপর লাগু করার জন্য ছিল না।

উক্ত বিষয়টি থেকে স্পষ্ট যে ভারত সদা আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সমতার উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক পরীক্ষার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হলেও ভারত নিজের স্বাধীনচেতা অস্তিত্বকে বিসর্জন দেয়নি।

প্রশ্ন ১১। রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিভাবে একটি দেশের বৈদেশিক নীতিতে প্রভাব বিস্তার করে? উদাহরণসহ ভারতের বৈদেশিক নীতির বিষয়ে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ কোন দেশের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর যেভাবে দেশটির আভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহ নির্ভর করে ঠিক সেইভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বৈদেশিক নীতি রচনাতে তাঁদের আদর্শগত ও ব্যক্তিত্বের প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ ভারতের বৈদেশিক নীতি তার মহান নেতাগণের বুদ্ধিমত্তা দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিল। নেহেরুর ব্যক্তিগত প্রভাব ভারতের বৈদেশিক নীতি রচনায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল। নেহেরু ছাড়াও রাধাকৃষ্ণন, কৃষ্ণমেনন, পানিকর প্রমুখ নেতাগণ ভারতের বৈদেশিক নীতিকে প্রভাবিত করেছিল। নেহরুকে ভারতের বৈদেশিক নীতির প্রধান স্থপতি বলা হয়।

প্রশ্ন ১২। ভারত কেন গোষ্ঠীনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছিল? আলোচনা কর।

উত্তরঃ বৈদেশিক নীতি অনুসরণের ক্ষেত্রে ভারতের জোট নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করার প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) ভারতের মতো বিশাল দেশ কোন শক্তিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করে বিশ্ব রাজনীতিতে সম্মানজনক আসন গ্রহণ করতে পারবে বলে নেতৃবৃন্দের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। সেই কারণেই তারা জোট নিরপেক্ষ নীতির পক্ষপাতী ছিল।

(খ) অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশের প্রয়োজন। এই জন্য ভারত কোন বিশেষ গোষ্ঠীর সঙ্গে মিত্রতা রক্ষার পরিবর্তে সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার উপর গুরুত্ব প্রদান করে।

(গ) অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজন। গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে দুই শক্তিগোষ্ঠী হতে অর্থনৈতিক সাহায্য লাভ করা সম্ভব হবে বলে ভারতের নেতাগণের দৃঢ়বিশ্বাস ছিল।

(ঘ) স্বাধীনতা লাভ করার সময় ভারত সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী ছিল না। গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ দ্বারা যুদ্ধের ভয়াবহতা হতে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়।

(ঙ) স্বাধীনতা লাভের পর একমাত্র পাকিস্তান ব্যতীত অন্য কোন রাষ্ট্র হতে ভারতের বিপদের কোন সম্ভাবনা ছিল না। ফলে নিরাপত্তার দিকে বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব না দিয়ে গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করা সঙ্গত ছিল।

প্রশ্ন ১৩। ভারতের বৈদেশিক নীতির প্রধান লক্ষ্যসমূহের একটি তালিকা প্রস্তুত কর।

উত্তরঃ ভারতের বৈদেশিক নীতির প্রধান লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) গোষ্ঠী-নিরপেক্ষ নীতি: গোষ্ঠী-নিরপেক্ষ নীতি ভারতের বিদেশ নীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। পণ্ডিত নেহেরু এই নীতির প্রধান প্রবক্তা। তাঁহার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন গোষ্ঠী ও সোভিয়েত গোষ্ঠীর কোনটিতে যোগ না দেওয়া। এই নীতি ভারতের জাতীয় স্বার্থের অনুকূল। স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত গোষ্ঠী-নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করছে।

(খ) উপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা: উপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ভারতের বিদেশনীতির অপর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। ব্রিটিশ উপনিবেশের তিক্ত অভিজ্ঞতার ফলস্বরূপ ভারত এই নীতি গ্রহণ করে ৷ স্বাভাবিকভাবেই ঔপনিবেশিক দেশের প্রতি ভারতের সহানুভূতি থাকবে।

প্রশ্ন ১৪। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া তাসখণ্ড চুক্তির বিষয়ে লেখ।

উত্তরঃ ১৯৬৫ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানী সৈন্য গুজরাটের ‘কচ্ছের রণ’ অঞ্চলে ও ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর আক্রমণের প্রত্যুত্তর হিসাবে যখন ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করে এর পরিপ্রেক্ষিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও পাক রাষ্ট্রপতি আয়ুব খানের মধ্যে তাসখণ্ডে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি অনুসারে দুটি দেশ ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পূর্বাবস্থায় চলে যেতে সম্মত হয়। উভয় নেতা জম্মু ও কাশ্মীরের বিভাজনের সীমারেখায় যুদ্ধবিরতি পালন করতে একমত হয়েছিল। তাঁরা স্বীকার করেছিল যে তাঁরা সমস্যাসমূহ শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারে। উভয় নেতাই ঘোষণা করেন যে দুই দেশের লোকদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে ও স্বাভাবিক তথা শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করতে চেষ্টা করবে।

প্রশ্ন ১৫। পঞ্চশীলের মুখ্য নীতিসমূহ লেখ।

উত্তরঃ তিব্বত সম্পর্কে ভারত ও চীনের মধ্যে ১৯৫৪ সালে স্বাক্ষরিত হওয়া চুক্তির সময় পঞ্চশীল নীতি অর্থাৎ পাঁচটি নীতি রচনা করা হয়েছিল। 

এই পাঁচটি নীতি নিম্নরূপ:

(ক) প্রত্যেক দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।

(খ) অন্য দেশ আক্রমণ করা হইতে বিরত থাকা।

(গ) অন্য রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা।

(ঘ) সকল দেশকে সমভাবে বিবেচনা করা ও পারস্পরিক সাহায্য করা।

(ঙ) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি সমর্থন জানানো।

এই পাঁচটি নীতির ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টি করলে বিশ্বশান্তি রক্ষা করা সম্ভব হবে।

প্রশ্ন ১৬। ভারত কিভাবে স্বাধীনোত্তর যুগে চীনকে সমর্থন করেছিল?

উত্তরঃ স্বাধীন ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক অতি বন্ধুত্বপূর্ণভাবে শুরু করে। ১৯৪৯ সালের বিপ্লবের পর ভারত ছিল কমিউনিস্ট চীনকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে একটি। নেহেরু এই প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে প্রবল অনুভূতিসম্পন্ন ছিলেন এবং নতুন সরকারকে আন্তর্জাতিক স্তরে সাহায্য করেন। নেহেরু চীনের প্রতি এতটাই আস্থাবান ছিলেন যে চীন ভারত আক্রমণ করতে পারে এমনটাকে ‘চরম অসম্ভাব্য’ বলে মনে করেছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে চীনা সীমান্তে সামরিক বাহিনীর পরিবর্তে আধা-সামরিক বাহিনীর পাহারায় ছিল।

ভারতে প্রধানমন্ত্রী নেহেরু ও চীনা প্রধানমন্ত্রী ঝাউ-এন লাই কর্তৃক ১৮৫৪ সালের ২৯শে এপ্রিল পঞ্চশীল ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির যৌথ ঘোষণা দুটি দেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্কের পথে সঠিক পদক্ষেপ ছিল। চীন এবং ভারতীয় নেতাদের পরস্পরের দেশভ্রমণ বন্ধুভাবাপন্ন জনতার দ্বারা অভিনন্দিত হয়েছিলেন।

প্রশ্ন ১৭। ১৯৬৫ এবং ১৯৭১-এর যুদ্ধের দৃষ্টিকোণ থেকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ দেশ বিভাজনের পর পরই দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। কাশ্মীর বিবাদ ভারত-পাকিস্তান সরকারের মধ্যে সহযোগিতা বন্ধ করেনি। ১৯৬০ সালে সিন্ধু জল চুক্তির মাধ্যমে নদীর জল বণ্টনের ব্যাপারে দীর্ঘকালীন বিবাদের নিষ্পত্তি হয়। ১৯৬৫ সালে দুই দেশের মধ্যে সশস্ত্র বিবাদ শুরু হয় যখন পাকিস্তান গুজরাটের অন্তর্গত কচ্ছের রণ অঞ্চলে সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করে। পরে পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরে আরও বড় ধরনের আক্রমণ চালায়। কাশ্মীর যুদ্ধক্ষেত্রের উপর চাপ কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী পাঞ্জাব সীমান্ত দিয়ে প্রতি-আক্রমণ চালানোর আদেশ দেন। এক ভয়াবহ যুদ্ধের পর ভারতীয় বাহিনী লাহোরের কাছে পৌঁছে যায়। রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপে শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে দুই দেশের মধ্যে ১৯৬৬ সালে তাসখণ্ড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ দেশের স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে প্রায় ৮০ লক্ষ উদ্বাস্তু ভারতে প্রবেশ করে। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নৈতিক ও বৈষয়িক সাহায্য দেয়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয় এবং দশ দিনের মধ্যে প্রায় ৯০,০০০ পাকিস্তানী সৈন্য আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারত একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। পরে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তির মাধ্যমে শান্তির পুনঃস্থাপন নিশ্চিত হয়।

প্রশ্ন ১৮। আফ্রো-এশীয় সংহতি সম্পর্কে টীকা লেখ।

উত্তরঃ ভারতের জাতীয় আন্দোলন একটি বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম ছিল না। এটি বিশ্বব্যাপী ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনেরই অংশ ছিল। এটি এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশের মুক্তি আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিল। নেহেরু আফ্রিকা এবং এশিয়ার ব্যাপারে ভারতের বিশেষ ভূমিকার কথা ভাবতেন, তাই তাঁর যুগ ভারত ও এশিয়া এবং আফ্রিকার নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ গড়ে ওঠার জন্য চিহ্নিত। ১৯৪০ এবং ১৯৫০-এর দশকগুলো জুড়ে নেহেরু ছিলেন এশীয় সংহতির উৎসাহী প্রবক্তা এবং তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীনতা পাওয়ার পাঁচ মাস আগে ভারত এশিয়ার সম্পর্ক সম্মেলন ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে আহ্বান করে। ভারত ওলন্দাজ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ইন্দোনেশিয়ার সত্ত্বর মুক্তির জন্য এবং এর স্বাধীনতার সংগ্রামের সমর্থনে আন্তরিক প্রচেষ্টাস্বরূপ ১৯৪৯ সালে একটি আন্তর্জাতিক বৈঠক আহ্বান করে। ভারত ঔপনিবেশিকতা অবসানের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিল এবং দৃঢ়তার সঙ্গে জাতিবৈষম্য বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতিবিদ্বেষের বিরোধীতা করে। ইন্দোনেশিয়ার শহর বান্দুং-এর আফ্রো-এশিয়ান সম্মেলন ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণভাবে পরিচিত বান্দুং সম্মেলন সদ্যস্বাধীন এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উচ্চতম পর্যায় চিহ্নিত করে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৯। ভারতের বৈদেশিক নীতির উপাদানসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতের বৈদেশিক নীতির প্রধান উপাদানসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) পঞ্চশীল নীতি অনুসরণ করা।

(খ) গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ।

(গ) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

প্রশ্ন ২০। ভারতের বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত সাংবিধানিক নীতিসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে ৫১নং অনুচ্ছেদে আন্তর্জাতিক শান্তি, মৈত্রী ও নিরাপত্তার উৎকর্ষ সাধন করিবার জন্য কয়েকটি রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি সন্নিবিষ্ট করা হয়েছিল। 

এইগুলি হল নিম্নরূপ:

(ক) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার উন্নতিসাধন।

(খ) জাতিসমূহের মধ্যে ন্যায়সংগত ও সম্মানজনক সম্পর্ক অটুট রাখা।

(গ) আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।

(ঘ) মধ্যস্থতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিবাদ নিষ্পত্তি করা।

প্রশ্ন ২১। ভারতের বৈদেশিক নীতির পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতের বৈদেশিক নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) গোষ্ঠী নিরপেক্ষতা নীতি অনুসরণ ভারতের বৈদেশিক নীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।

(খ) উপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ভারতের বৈদেশিক নীতির অপর একটি বৈশিষ্ট্য।

(গ) বর্ণবৈষম্যের বিরোধিতা করা ভারতের বৈদেশিক নীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।

(ঘ) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি অনুসরণ করা ভারতের বৈদেশিক নীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

(ঙ) এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহের মধ্যে সহযোগিতা সৃষ্টি ভারতের বৈদেশিক নীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

প্রশ্ন ২২। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ ও শান্তি বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। একই সঙ্গে ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে পাকিস্তানের জন্ম হয়। পাকিস্তান জন্মলগ্ন থেকেই কাশ্মীর বিষয় নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয়। ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে ভারত ও পাকিস্তানের সেনার মধ্যে ছায়াযুদ্ধ (Proxy War) আরম্ভ হয়। কিন্তু তা চোরাগোপ্তা আক্রমণে সীমিত থাকে, প্রকৃত যুদ্ধে পরিণত হয়নি।

কাশ্মীর সংঘাতে ভারত সরকার ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে সহযোগিতায় কোন বাধা সৃষ্টি করা হয়নি। দুই দেশের সরকারই দেশবিভাগের সময়ের বকেয়া সমস্যার আশু সমাধানে একসঙ্গে কাজ করেছিল। দীর্ঘদিনের বকেয়া নদীর জলসংক্রান্ত বিবাদ বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় সমাপ্ত হয়েছিল। ১৯৬০ সালে নেহেরু এবং পাকিস্তানের শাসক জেনারেল আয়ুব খানের মধ্যে ভারত পাকিস্তান সিন্ধু-জল সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষরও করেছিল। দুই দেশের মধ্যে বাদ-বিবাদের মধ্যে এই চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬৫ সালে একটি সংঘাতপূর্ণ সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। ১৯৬৫ সালে এপ্রিল মাসে পাকিস্তান গুজরাটের কাছে উপকূলবর্তী অঞ্চল আক্রমণ করে। সেই বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে জম্মু ও কাশ্মীরে পাকিস্তান তীব্র আক্রমণকারীরূপে অবতীর্ণ হয়। তীব্র সংঘর্ষে অবতীর্ণ হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী লাহোর সীমান্তে উপনীত হয়েছিল। রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপে এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী ও পাকিস্তানের জেনারেল আয়ুব খানের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি মাসে তাসখণ্ড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

প্রশ্ন ২৩। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যুদ্ধ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে আভ্যন্তরীণ সংকট চরম পর্যায়ে উপনীত হয়। দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তানে বৃহত্তম দল হিসাবে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ একক বৃহত্তম দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালি জনগণকে পশ্চিম পাকিস্তান দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলে গণ্য করত। পাকিস্তানী শাসক যারা গণতান্ত্রিক মতামত মেনে নেয় নি, তারা আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার দাবি মেনে নেয় নি। এর পরিবর্তে ১৯৭১ সালের প্রথম দিকেই পাকিস্তানী সেনা শেখ মুজিবর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর অমানুষিক অত্যাচার আরম্ভ করে। এর পরিণতিস্বরূপ জনসাধারণ বাংলাদেশ স্বাধীন করার লক্ষ্যে ব্যাপক গণ আন্দোলন গড়ে তোলে। প্রায় ৮০ লক্ষ শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। বাংলাদেশের ‘মুক্তি সংগ্রামে’ ভারত নৈতিক সমর্থনের সঙ্গে আর্থিক সাহায্যও প্রদান করেছিল। পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে দেশ বিভাগের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছিল।

১৯৭১ সালের জুলাই মাসে আমেরিকার বিদেশ সচিব হেনরি কিসিঞ্জার গোপনে পাকিস্তান হয়ে চীন সফর করেন। ফলে ভারত ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ২০ বছরের জন্য শান্তি ও বন্ধুত্বতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। কয়েক মাস পর কূটনৈতিক উত্তেজনা ও সামরিক সমরসজ্জার ফলস্বরূপ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এক পূর্ণ পর্যায়ের যুদ্ধ আরম্ভ হয়। পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর পাঞ্জাব ও রাজস্থানে আক্রমণ করে এবং জম্মু ও কাশ্মীরের দিকে অগ্রসর হয়। পশ্চিম ও পূর্ব দিকে ভারতীয় স্থলবাহিনী, জলবাহিনী ও বিমানবাহিনী সাহায্যে এই আক্রমণ প্রতিরোধ করে। দশদিন পর ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানের প্রায় ৯০ হাজার সেনা আত্মসমর্পণ করে। এই দিনই স্বাধীন দেশ হিসাবে ‘বাংলাদেশের’ জন্ম হয়।

প্রশ্ন ২৪। কার্গিল যুদ্ধ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ১৯৯৯ সালের প্রথম ভাগে পাকিস্তানের মোজাহিদীন নামক উগ্রপন্থী সংগঠন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে মাসকহ, ড্রাস, কাকসার ও বাটালিক প্রভৃতি কয়েকটি ভারতীয় সীমান্ত চৌকি দখল করে নেয়। পাকিস্তানী সেনা এতে জড়িত ছিল এইরূপ ভেবে ভারতীয় সেনাবাহিনী সেই অঞ্চলগুলির দিকে অগ্রসর হয়। ফলে দুই পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একে ‘কার্গিল যুদ্ধ’ বলে জানা যায়। এই যুদ্ধ ১৯৯৯ সালের মে-জুন মাসে সংঘটিত হয়। ১৯৯৯ সালের ২৬শে জুলাই ভারত হারানো অধিকাংশ চৌকী উদ্ধার করে নেয়। কার্গিল যুদ্ধ সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, কারণ এই যুদ্ধের মাত্র এক বছর পূর্বে পাকিস্তান পরমাণু শক্তির অধিকারী হয়। এই যুদ্ধ অবশ্য কার্গিল অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে। এই যুদ্ধ পাকিস্তানে আভ্যন্তরীণ মতবিরোধের সৃষ্টি করেছিল। যুদ্ধ শেষ হবার কিছুদিন পর সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মুশারফ পাকিস্তানের শাসনভার সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গ্রহণ করেন।

অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বৈদেশিক নীতি বলতে কি বোঝ? সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ বিদেশ নীতি বলতে আমরা সাধারণত এটাই বুঝি যে কেন এবং কিভাবে একটি দেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। অন্যভাবে বলা যায় যে, বিদেশ নীতি হল সেই নীতি যার দ্বারা একটি দেশ জাতীয় লক্ষ্য ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ক রক্ষা করে। দেশের বিদেশ নীতি জাতীয় সরকার দ্বারা নির্ধারিত হয়।

বিদেশনীতির উপাদান: একটি দেশের বিদেশ নীতি সাধারণত কতকগুলি উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। প্রধান উপাদানসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) আয়তন: দেশের আয়তন বিদেশ নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিশাল আয়তনবিশিষ্ট দেশ সাধারণত বিদেশ নীতিতে তীব্র প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়।

(খ) ভৌগোলিক উপাদান: দেশের ভৌগোলিক উপাদান, যথা—জলবায়ু, দেশের অবস্থান, নদী, পর্বত, মাটির উর্বরতা প্রভৃতি বিদেশ নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(গ) সংস্কৃতি ও ইতিহাস: দেশের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক রীতি-নীতি বিদেশ নীতিকে বহুলাংশে প্রভাবিত করে। সাধারণত একই সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ভাবধারাবিশিষ্ট দেশ বৈদেশিক সম্পর্কে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।

(ঘ) আর্থিক রিকাশ: একটি দেশের আর্থিক অবস্থা বিদেশ নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিল্পোন্নত দেশসমূহ বিদেশ নীতিতে গভীরভাবে নিমগ্ন থাকে।

(ঙ) প্রযুক্তি: প্রযুক্তির উন্নতি দেশের সামরিক ও আর্থিক শক্তি বৃদ্ধি করে যার ফলে দেশ বৈদেশিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(চ) সামাজিক কাঠামো: সামাজিক পরিকাঠামোও বিদেশ নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের সামাজিক কাঠামো ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত থাকলে স্বাভাবিকভাবেই সেই দেশ কার্যকরীভাবে বিদেশ নীতি পরিচালিত করতে পারে।

(ছ) রাজনৈতিক সংগঠন: রাজনৈতিক সংগঠনও বিদেশ নীতির একটি প্রধান উপাদান। একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দ্রুত বৈদেশিক নীতি নির্ধারিত হয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিদেশ নীতি স্থির হয়। ফলে তা স্বভাবতই সময়সাপেক্ষ।

(জ) নেতৃত্ব: দেশের সুনেতৃত্ব বিদেশ নীতির একটি প্রধান উপাদান। সুদক্ষ নেতৃত্ব দেশের সঠিক বিদেশ নীতি পরিচালনা করতে পারে।

অধিকন্তু আন্তর্জাতিক শক্তি বিন্যাস, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক আঁতাত বিদেশ নীতির উপাদান বলিয়া বিবেচিত হয়। সুতরাং স্পষ্টই প্রতীয়মান যে, বিভিন্ন উপাদান দ্বারা কোন দেশের বিদেশ নীতি নির্ধারিত হয়।

প্রশ্ন ২। ভারত ও চীনের সীমা বিবাদ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ চীন ১৯৫০ সালে তিব্বতকে চীনের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রথমাবস্থায় ভারত সরকার তাতে আপত্তি করেনি। ১৯৫৯ সালে তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামাকে ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় দান করে। ফলে চীন অভিযোগ করে যে ভারতের সরকার চীনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

কিছুদিন পূর্বে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমা বিবাদ আরম্ভ হয়। ভারত দাবি করে যে উপনিবেশিক শাসনকালে সীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে, কিন্তু উপনিবেশিক কোন সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হয়নি। প্রধান বিবাদ হল পশ্চিম ও পূর্ব সীমান্তের এক বিশাল অঞ্চল। চীন ভারতের দুইটি অঞ্চল দাবি করে। এইগুলি হল ‘আকসাই চীন’ অঞ্চল এবং জম্মু-কাশ্মীরের লাডাক অঞ্চল ৷ তাছাড়াও তখনকার নেফা (North East Frontier Agency, NEFA) ও বর্তমান অরুণাচল প্রদেশের বহু অঞ্চল চীন দাবি করে। ১৯৫৯ সালে চীন আকসাই অঞ্চল দখল করে একটি সড়কও তৈরি করে।

১৯৬২ সালের অক্টোবর মাসে চীন হঠাৎ এই বিবাদগ্রস্থ অঞ্চল দুইটিতে আক্রমণ চালায়। প্রথম আক্রমণ এক সপ্তাহ চালিয়ে অরুণাচলের অনেক এলাকা জবর দখল করে। পরের মাসে দ্বিতীয় পর্যায়ের আক্রমণ আরম্ভ হয়। ভারতীয় সেনা পশ্চিমাঞ্চলের লাডাকে চীনের সেনাকে বাধা দেয়। কিন্তু পূর্বদিকে চীনের সেনাবাহিনী আসামের দিকে এগোতে থাকে। পরে চীন একপাক্ষিকভাবে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে। 

চীনের আক্রমণ স্বদেশে ও বিদেশে ভারতের ভাবমূর্তি ম্লান করেছিল। ভারত আমেরিকা ও বৃটেনের সামরিক সাহায্য চেয়েছিল। চীনের আক্রমণের দায় স্বীকার করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভি. কে. কৃষ্ণমেনন মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন।

প্রশ্ন ৩। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের পরিবর্তনশীল সম্পর্কের বিষয়ে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর হতেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। দুইটি দেশ শত্রু সম্পত্তি, নদীর জল বণ্টন প্রভৃতি বিষয়, হায়দ্রাবাদ ও জম্মু ও কাশ্মীরের মতো রাজ্যের সমস্যা, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টি প্রভৃতি সমস্যা হেতু দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বস্তুত, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক হইল বিবাদ ও সংঘাতের কাহিনি।

কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসন ও শান্তি স্থাপনে বেশ কিছু প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। দুইটি দেশ ভবিষ্যতে যাতে যুদ্ধে নিমগ্ন না হয় তার উপর আস্থা জ্ঞাপন করে। দুইটি দেশের মধ্যে শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরির উদ্দেশ্যে সমাজসেবী, জ্ঞানী ব্যক্তি ও বুদ্ধিজীবি সহযোগিতা করেন। উভয় দেশই ১৯৯৮ সালে পরমাণু পরীক্ষা চালায় যার ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। কিন্তু উভয় দেশ সাম্প্রতিককালে একে অন্যের পরমাণু সংক্রান্ত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার অঙ্গীকার করে। উভয় রাষ্ট্রই জন্মু ও কাশ্মীরের মতো দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলি আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিষ্পত্তি করতে আগ্রহী। ২০০৭ সালে উভয় দেশ পরমাণু অস্ত্র হতে সংঘটিত ঝুঁকি হ্রাস করতে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। উভয় দেশের নেতৃবৃন্দ দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহ নিরসনে বহুবার আলোচনায় বসেন। দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি বাস পরিষেবা এবং ‘সমঝোতা এক্সপ্রেস’ নামক ট্রেন চলাচল শুরু করে। ভারত ও পাকিস্তান দুইটি দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক বৃদ্ধি হয়েছে।

প্রশ্ন ৪। ভারতের বৈদেশিক নীতিতে আশানুরূপভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে প্রতিবিম্বিত হয়েছে কি? ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের যুদ্ধকে একটি উদাহরণ হিসাবে ধরে তোমার যুক্তি দাও।

উত্তরঃ গোষ্ঠী নিরপেক্ষতা বা জোট নিরপেক্ষতা হল ভারতের বিদেশ নীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই নীতি অবলম্বন করে ভারত এশিয়া ও আফ্রিকার নবস্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশসমূহকে গোষ্ঠীনিরপেক্ষ আন্দোলনে যোগদানের আহ্বান করেছে। ভারত সকল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। ভারত পাকিস্তানকে বাংলাদেশ স্বাধীনের জন্য চাপ দেয়নি। একান্ত বাধ্য হয়েই পাকিস্তান বাংলাদেশের স্বাধীনতা মঞ্জুর করে। লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু ভারতে আসলে ভারতে খাদ্যসমস্যা দেখা দেয়। এর পর পাকিস্তানই বাংলাদেশ যুদ্ধের সূচনা করে। ভারত অবশ্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সমর্থন জানায়। সুতরাং এটা বলা যায় যে এই যুদ্ধে ভারতের কোন ইচ্ছাই ছিল না। পাকিস্তানই ভারতের উপর জোর করে যুদ্ধ চাপিয়েছিল।

প্রশ্ন ৫। শান্তি ও সহযোগিতার ভিত্তিতে ভারতের বৈদেশিক নীতি রচিত। কিন্তু ভারত ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যবর্তী দশ বছর সময়ে তিনবার যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছিল। এটাকে কি তুমি বৈদেশিক নীতি অকৃতকার্য হওয়া বলে মনে কর?

উত্তরঃ শান্তি ও সহযোগিতার ভিত্তিতে নিঃসন্দেহে ভারতের বৈদেশিক নীতি রচিত। কিন্তু ভারত ১৯৬২, ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে তিনবার যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছিল। এটা নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ফল। ১৯৬২ সালে চীন ভারত আক্রমণ করে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে। ভারত যুদ্ধের মাধ্যমে তা পুনরুদ্ধার করে। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করলে ভারত এই আক্রমণ প্রতিহত করে। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ দেশের স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে বিশাল সংখ্যক উদ্বাস্তু ভারতে প্রবেশ করে, যা ভারতে বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। এই অনুপ্রবেশ রোধের জন্য ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। সুতরাং এটা বলা যায় যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ভারতকে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়।

প্রশ্ন ৬। ভারতীয় বৈদেশিক নীতির আভ্যন্তরীণ ও বহিঃ উপাদানসমূহের বিবরণ দাও।

উত্তরঃ ভারতের বৈদেশিক নীতি রচনায় নিম্নোক্ত বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ ও বহিঃউপাদানসমূহ বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে:

(ক) ভৌগোলিক অবস্থান: রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা হল বৈদেশিক নীতির প্রধান লক্ষ্য। ভারত তার চারদিকে বিস্তৃত পাকিস্তান, চীন, মায়ানমার, বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষার জন্য গোষ্ঠীনিরপেক্ষ নীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি গ্রহণ করেছে।

(খ) ঐতিহাসিক পটভূমি: ভারতের বৈদেশিক নীতি রচনার ক্ষেত্রে সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক পটভূমি প্রভাব বিস্তার করেছে।

(গ) জাতীয় স্বার্থ: ভারতের জাতীয় স্বার্থ বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে মুখ্যভূমিকা পালন করেছে। ভারতীয় নেতৃবৃন্দ দেশের সম্মুখীন হওয়া বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে বৈদেশিক নীতি রচনা করেছিল।

(ঘ) আদর্শগত দিকঃ ভারতবর্ষ সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, বর্ণবাদ প্রভৃতির স্বীকার হয়েছিল এবং সেজন্য স্বাধীনতার পর ভারত এগুলির বিরোধিতা করেছে এবং বিশ্ব শান্তি ও সহাবস্থানের উপর বিশ্বাস রেখেছে।

(ঙ) জাতীয় আন্দোলন: ইংরেজদের বিরুদ্ধে চালিত সুদীর্ঘ জাতীয় আন্দোলন ভারতের বৈদেশিক নীতির উপর বহুলাংশে প্রভাব বিস্তার করেছে। প্রকৃতপক্ষে ভারতের বৈদেশিক নীতির খসড়া জাতীয় আন্দোলনের সময়কালে রচিত হয়েছিল।

(চ) ব্যক্তিগত উপাদান: অন্যান্য দেশের মতো ভারতের বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করা লোকেদের ব্যক্তিত্ব ও আদর্শের প্রভাব পড়েছিল।

প্রশ্ন ৭। “শুরু থেকেই প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক চাপে পড়েছিল।” ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভারতের প্রতিবেশী দেশ বলতে প্রধানত চীন, পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান, মায়ানমার, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে বোঝানো হয়। চীন ও পাকিস্তান ছাড়া অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কখনও খারাপ হয়নি। কিন্তু পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে শুরু থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভারতের সঙ্গে সংঘাত হয়ে আসছে। এমনকি দুই দেশের সঙ্গে ভারতকে তিনটে যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।

পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সংঘাতের সূত্রপাত ঘটেছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। ধর্মের উপর ভিত্তি করে যখন ইংরেজরা ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম দেয় শুরু থেকেই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, ভৌগোলিক সীমা, শরণার্থী প্রভৃতি অনেক সমস্যা দুটি দেশের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের সৃষ্টি করে। এর অন্যতম বিবাদমান বিষয় হল—জম্মু ও কাশ্মীর ও পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এই দুটি বিষয়কে নিয়ে ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ সৃষ্টি হয়েছে।

১৯৪৯ সালে চীনে সাম্যবাদী শাসনব্যবস্থাকে জন্মলগ্নতেই ভারত স্বীকৃতি প্রদান করলেও চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মধুর ছিল না। ভৌগোলিক সীমারেখা, তিব্বতের স্বীকৃতি, চীন-অকসাই অঞ্চল, লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশ প্রভৃতি নিয়ে ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধ হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এই সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর জন্য দুই পক্ষই চেষ্টা চালায়। যদিও তাদের মধ্যে থাকা পারস্পরিক সন্দেহ অদ্যাবধি শেষ হয়নি।

প্রশ্ন ৮। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ:

(ক) ভারতের পারমাণবিক নীতি।

(খ) বৈদেশিক নীতিতে সহমত।

উত্তরঃ (ক) ভারতের পারমাণবিক নীতি: ভারত ১৯৭৪ সালের মে মাসে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পণ্ডিত নেহেরু আধুনিক ভারতের দ্রুত বিকাশের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। ভারতের জন্য পরমাণু প্রকল্প ১৯৪০ সালে হোমি জে. ভাবা সর্বপ্রথম তৈরি করেছিলেন। ভারত শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু শক্তি উৎপাদন করেছিল। নেহেরু পরমাণু শক্তির বিরোধী ছিলেন। সেইজন্য তিনি বৃহৎ শক্তিগোষ্ঠীকে ব্যাপক হারে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রকল্প তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলেন। তথাপি পরমাণু অস্ত্রগ্রহণ করা হয়েছিল। সাম্যবাদী চীন ১৯৬৪ সালের অক্টোবর মাসে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পাঁচটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রসমূহ ১৯৬৮ সালে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু অসম্প্রসারণ চুক্তি সম্পাদনে যত্নবান হয়েছিল। ভারত পরমাণু অসম্প্রসারণ চুক্তি বৈষম্যমূলক ছিল বলে তা স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে। ভারত যখন প্রথম পরমাণু পরীক্ষা করে তখন তাকে শান্তিপূর্ণ অনুসন্ধান বলে অভিহিত করে। ভারত পরমাণু শক্তি শান্তির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেবে বলে যুক্তি প্রদর্শন করেছিল। ১৯৯৮ সালে ভারত পোখরানে দ্বিতীয়বার পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা করেছিল।

(খ) বৈদেশিক নীতিতে সহমত: ভারতবর্ষে বহুদলীয় প্রথা প্রচলিত এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে তারা দলীয় রাজনীতিতে অতি নগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৬২-১৯৭২ এই দশকে ভারত যখন তিনটি যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছিল এবং এমনকি পরবর্তীকালে বিভিন্ন দলসমূহের মধ্যে জোট নিরপেক্ষ নীতি, কাশ্মীর সমস্যা, আন্তর্জাতিক সীমানা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা সম্পর্কিত ব্যাপারে সহমত পরিলক্ষিত হয়েছে। কাশ্মীর সমস্যা যদিও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার প্রধান কারণ, কিন্তু সাধারণ জনমত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পক্ষে। দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও সীমান্তে নাগরিকদের চলাচল বিষয়ে সকলের মধ্যেই সহমত পরিলক্ষিত হয়।

প্রশ্ন ৯। ভারতের বৈদেশিক নীতির স্থপতি কে? জওহরলাল নেহেরুর বৈদেশিক নীতির তিনটি মৌলিক উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভারতের বৈদেশিক নীতির প্রধান স্থপতি পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু।

পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজে ভারতের বিদেশমন্ত্রীও ছিলেন। এই জন্য তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রী ও বৈদেশিক মন্ত্রী হিসাবে ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক নীতি রচনা ও কার্যকরী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। 

নেহেরুর বিদেশ নীতির তিনটি মূল উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:

(ক) কঠোর পরিশ্রম দ্বারা উপার্জিত সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।

(খ) দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করা।

(গ) দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন লাভ করা।

গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করিয়া নেহেরু এই উদ্দেশ্য সাধন করতে চেয়েছিলেন। কিছু রাজনৈতিক দল অবশ্য আমেরিকার সঙ্গে অধিক ঘনিষ্ঠভাবে সুসম্পর্ক স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন। এইরূপ চিন্তাধারার ব্যক্তিগণের মধ্যে আম্বেদকরের নাম উল্লেখযোগ্য।

প্রশ্ন ১০। ভারতের প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যাবেন এবং তোমাকে তাঁর জন্য একটি টীকা লিখতে বলা হল। ভারত এবং চীনের সীমানা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার অবস্থানের উপর একটি করে দিক্ নির্দেশ কর।

উত্তরঃ ভারত এবং চীন এই দুই দেশের সভ্যতা এশিয়ার প্রাচীনতম সভ্যতা বলে গণ্য করা হয়। এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অতি প্রাচীনকাল থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল এবং সেটা সম্ভব হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও বাণিজ্যের মাধ্যমে। ১৯৪৯ সালে বিদেশী শাসন মুক্ত কমিউনিস্ট চীনকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলির মধ্যে ভারত ছিল অন্যতম। ভারত চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতি এতই আস্থাবান ছিল যে দীর্ঘ সময় ধরে চীনা সীমান্ত সামরিক বাহিনীর পরিবর্তে আধা-সামরিক বাহিনীর পাহারায় ছিল। ১৯৬২ সালের চীনের ভারত আক্রমণের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তবে উভয় দেশের নেতৃবৃন্দ দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক সহজ করার প্রয়াস করে যাচ্ছেন।

ভারত ও চীনের সীমানা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার অবস্থানের উপর নীচে বর্ণিত বিষয়গুলির ওপর আলোকপাত করা যেতে পারে:

(ক) দুই দেশের পারস্পরিক মঙ্গলার্থে ভারত ও চীন বিরোধ মেটানোর দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারে। উভয় দেশের সম্পর্কের স্বাভাবিকতা কেবলমাত্র শান্তি বিঘ্নিত হওয়াকে প্রশমিত করবে না, অধিকন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার উন্মুক্ত করবে।

(খ) লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে ভারত এবং চীনের মধ্যে বিবাদের বিষয়গুলির সমাধান সূত্র বের করতে হবে। এতে দুই দেশের সীমানা সমস্যার সমাধান হবে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১১। ভারতের পারমাণবিক নীতির পথপ্রদর্শক হিসাবে কোন্ ব্যক্তিকে আখ্যা দেওয়া যায়? ভারতের পারমাণবিক নীতির আলোচনা কর।

উত্তরঃ ডঃ হোমি জাহাঙ্গির ভাবা-কে ভারতের পারমাণবিক নীতির পথপ্রদর্শক হিসাবে আখ্যা দেওয়া যায়।

ভারতের পারমাণবিক নীতি: ভারত ১৯৭৪ সালের মে মাসে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পণ্ডিত নেহেরু আধুনিক ভারতের দ্রুত বিকাশের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। ভারতের জন্য পরমাণু প্রকল্প ১৯৪০ সালে হোমি জে. ভাবা সর্বপ্রথম তৈরি করেছিলেন। ভারত শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু শক্তি উৎপাদন করেছিল। নেহেরু পরমাণু শক্তির বিরোধী ছিলেন। সেইজন্য তিনি বৃহৎ শক্তিগোষ্ঠীকে ব্যাপক হারে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রকল্প তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলেন। তথাপি পরমাণু অস্ত্রগ্রহণ করা হয়েছিল। সাম্যবাদী চীন ১৯৬৪ সালের অক্টোবর মাসে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পাঁচটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রসমূহ ১৯৬৮ সালে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু অসম্প্রসারণ চুক্তি সম্পাদনে যত্নবান হয়েছিল। ভারত পরমাণু অসম্প্রসারণ চুক্তি বৈষম্যমূলক ছিল বলে তা স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে। ভারত যখন প্রথম পরমাণু পরীক্ষা করে তখন তাকে শান্তিপূর্ণ অনুসন্ধান বলে অভিহিত করে। ভারত পরমাণু শক্তি শান্তির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেবে বলে যুক্তি প্রদর্শন করেছিল। ১৯৯৮ সালে ভারত পোখরানে দ্বিতীয়বার পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা করেছিল।

প্রশ্ন ১২। ভারতের বিদেশ নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভারতবর্ষ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জন করলেও বৃটিশ শাসনকালেই ভারতের বিদেশ নীতি নির্ধারিত হয়েছিল। ১৯৩৮ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনে প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ভারতের বিদেশ নীতির আদর্শ এবং মূল কথাই হল বিশ্বশান্তি রক্ষা করা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। সঠিকভাবে বলা যায় যে, ভারতের বিদেশ নীতি পণ্ডিত নেহরু প্রবর্তিত ‘পঞ্চশীল নীতির’ উপর প্রতিষ্ঠিত। 

এই নীতিগুলি হল—

(ক) প্রত্যেক রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।

(খ) কোন রাষ্ট্রকে আক্রমণ না করা।

(গ) অন্য রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।

(ঘ) পারস্পরিক সহযোগিতা সৃষ্টি করা। ও 

(ঙ) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

বৈশিষ্ট্য: ভারতের বিদেশ নীতি পণ্ডিত নেহেরু কর্তৃক রচিত হয়েছিল। সময়ের পরিবর্তনের ফলে সামগ্রিক পরিবর্তন করা হলেও বিদেশ নীতির মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ অপরিবর্তিত থাকে। 

ভারতের বিদেশ নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হল:

(ক) গোষ্ঠী-নিরপেক্ষ নীতি: গোষ্ঠী-নিরপেক্ষ নীতি ভারতের বিদেশ নীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। পণ্ডিত নেহেরু এই নীতির প্রধান প্রবক্তা। তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন গোষ্ঠী ও সোভিয়েত গোষ্ঠীর কোনটিতে যোগ না দেওয়া। এই নীতি ভারতের জাতীয় স্বার্থের অনুকূল। স্বাধীনতার পর হইতেই ভারত গোষ্ঠী-নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করছে।

(খ) উপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা: উপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ভারতের বিদেশনীতির অপর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। ব্রিটিশ উপনিবেশের তিক্ত অভিজ্ঞতার ফলস্বরূপ ভারত এই নীতি গ্রহণ করে। স্বাভাবিকভাবেই ঔপনিবেশিক দেশের প্রতি ভারতের সহানুভূতি থাকবে।

(গ) বর্ণবৈষম্যের বিরোধিতা: ভারত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির সমান মর্যাদা ও সমান অধিকারে বিশ্বাসী। জাতি, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ বিষয়ে বৈষম্যে ভারত তীব্র বিরোধী। দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ভারত তীব্র প্রতিবাদ করেছে।

(ঘ) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সহযোগিতা: শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভারতের বিদেশ নীতির মূল লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্যে ভারত বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে।

(ঙ) কমনওয়েলথের সহিত সম্পর্ক: কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন ভারতের বিদেশ নীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতার পর এমনকি সংবিধান বলবৎ হওয়ার পরও ভারত কমনওয়েলথের সক্রিয় সদস্য হিসাবে বহাল থাকে। বিভিন্ন কমনওয়েলথ সম্মেলনে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(চ) রাষ্ট্রসংঘের প্রতি পূর্ণ আস্থা: ভারত রাষ্ট্রসংঘের গোঁড়া সমর্থক। রাষ্ট্রসংঘের কার্যকলাপ ভারতের সহায়ক না হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রসংঘের প্রতি ভারতের পূর্ণ আস্থা আছে। রাষ্ট্রসংঘের জন্যই কাশ্মীর সমস্যা সমাধান সম্ভব হয় নি। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করা সত্ত্বেও রাষ্ট্রসংঘ পাকিস্তানকে আক্রমণকারী ঘোষণা করেনি। তা সত্ত্বেও ভারত বিশ্বাস করে যে, রাষ্ট্রসংঘই বিশ্বের স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারে। রাষ্ট্রসংঘের প্রতি ভারতের আস্থা অটুট।

উপরের আলোচনায় তা স্পষ্টত প্রতীয়মান যে, ভারতের বিদেশ নীতি উচ্চ আদর্শ ও নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। নীচে উল্লেখ করা বাক্যসমূহ ‘শুদ্ধ’ না ‘অশুদ্ধ’ লেখ:

(ক) গোষ্ঠী নিরপেক্ষতা ভারতকে আমেরিকা ও রাশিয়া হইতে সাহায্য পাওয়ার অনুমতি দেয়।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(খ) প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক প্রথম হইতেই মন্দ।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(গ) শীতল যুদ্ধ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কে অধিক প্রভাব বিস্তার করেছে।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(ঘ) ১৯৭১ সালের শান্তি ও মৈত্রী চুক্তি হল ভারতের আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ফল।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

প্রশ্ন ২। নিম্নোক্তগুলি মিলিয়ে লেখ:

(a) ১৯৫০ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ভারতের বৈদেশিক আগমন নীতির লক্ষ্য/ উদ্দেশ্য হল-

(b) পঞ্চশীল

(c) বান্দুং সম্মেলন

(d) দালাই লামা

(i) তিব্বতের ধর্মীয় নেতার ভারত আগমন।

(ii) রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখণ্ডতা সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক বিকাশ সংরক্ষণ করা।

(iii) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি।

(iv) NAM প্রতিষ্ঠা করা।

উত্তরঃ (a) ১৯৫০ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ভারতের বৈদেশিক আগমন নীতির লক্ষ্য/ উদ্দেশ্য হল-

(b) পঞ্চশীল।

(c) বান্দুং সম্মেলন।

(d) দালাই লামা।

(ii) রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখণ্ডতা সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক বিকাশ সংরক্ষণ করা।

(iii) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি।

(iv) NAM প্রতিষ্ঠা করা।

(i) তিব্বতের ধর্মীয় নেতার ভারত আগমন।

প্রশ্ন ৩। নেহেরু কেন বৈদেশিক নীতি পরিচালনাকে স্বাধীনতার একটি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বলে মনে করেছিলেন? তোমার সমর্থনের সপক্ষে যে-কোন দুটি কারণ দর্শাও। 

উত্তরঃ নেহেরু বৈদেশিক নীতি পরিচালনাকে স্বাধীনতার একটি প্রয়োজনীর নির্দেশনা বলে মনে করেছিলেন নিম্নোক্ত কারণে:

(ক) নেহেরু যে-কোন শক্তিগোষ্ঠীর সঙ্গে গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতির পক্ষপাতী ছিলেন। এই নীতি অনুসরণের প্রধান কারণ হল দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং অর্থনৈতিক বিকাশ সাধন করা।

(খ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হতে ভারত অন্য কোন শক্তিগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলিত হওয়া অথবা কোনপ্রকার বৈরিতার মোকাবিলা করা অথবা কোন গোষ্ঠী হতে সাহায্য বা সমর্থন আদায় করতে চাননি।

প্রশ্ন ৪। “বৈদেশিক নীতি পরিচালনা হল আভ্যন্তরীণ বাধ্যবাধকতা ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এই দুটির ফল।” তোমার উত্তরের সপক্ষে ৬০-এর দশকের ভারতের বৈদেশিক সম্পর্কের একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ বিদেশ নীতি বলতে আমরা সাধারণত এটাই বুঝি যে কেন এবং কিভাবে একটি দেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। অন্যভাবে বলা যায় যে, বিদেশ নীতি হল সেই নীতি যার দ্বারা একটি দেশ জাতীয় লক্ষ্য ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ক রক্ষা করে। দেশের বিদেশ নীতি জাতীয় সরকার দ্বারা নির্ধারিত হয়।

বৈদেশিক নীতি পরিচালনা নিঃসন্দেহে আভ্যন্তরীণ বাধ্যবাধকতা ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এই দুইটির ফল। ১৯৬০-এর দশকে চীনের ভারত আক্রমণ এবং ভারত-পাক যুদ্ধ এই বিষয়টির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

প্রশ্ন ৫। তুমি যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হও তাহলে ভারতের বৈদেশিক নীতির তোমার পছন্দমতো দুটি কারক এবং পরিবর্তনসাপেক্ষ দুটি কারক চিহ্নিত কর। তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তরঃ আমি ভারতের বৈদেশিক নীতির নিম্নোক্ত দুইটি দিক অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষপাতী:

(ক) বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করা।

(খ) জোট নিরপেক্ষ বা গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি।

আমি যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হই তাহলে ভারতের বৈদেশিক নীতির নিম্নোক্ত দুইটি দিক পরিবর্তনে উদ্যোগী হব:

(ক) ভারতের ক্ষুদ্র কুটীর শিল্পের উপর বিশ্বায়নের বিরূপ প্রতিক্রিয়া অনুভব করে আমি বিশ্বায়ন নীতি পরিবর্তনে সক্রিয় হব।

(খ) আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমন ও নির্মূলকরণে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

প্রশ্ন ৬। নীচের দেওয়া বিষয়গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ:

(ক) ভারতের পরমাণু নীতি।

(খ) বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে ঐক্যমত।

উত্তরঃ (ক) ভারতের পারমাণবিক নীতি: ভারত ১৯৭৪ সালের মে মাসে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পণ্ডিত নেহেরু আধুনিক ভারতের দ্রুত বিকাশের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। ভারতের জন্য পরমাণু প্রকল্প ১৯৪০ সালে হোমি জে. ভাবা সর্বপ্রথম তৈরি করেছিলেন। ভারত শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু শক্তি উৎপাদন করেছিল। নেহেরু পরমাণু শক্তির বিরোধী ছিলেন। সেইজন্য তিনি বৃহৎ শক্তিগোষ্ঠীকে ব্যাপক হারে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রকল্প তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলেন। তথাপি পরমাণু অস্ত্রগ্রহণ করা হয়েছিল। সাম্যবাদী চীন ১৯৬৪ সালের অক্টোবর মাসে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পাঁচটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রসমূহ ১৯৬৮ সালে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু অসম্প্রসারণ চুক্তি সম্পাদনে যত্নবান হয়েছিল। ভারত পরমাণু অসম্প্রসারণ চুক্তি বৈষম্যমূলক ছিল বলে তা স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে। ভারত যখন প্রথম পরমাণু পরীক্ষা করে তখন তাকে শান্তিপূর্ণ অনুসন্ধান বলে অভিহিত করে। ভারত পরমাণু শক্তি শান্তির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেবে বলে যুক্তি প্রদর্শন করেছিল। ১৯৯৮ সালে ভারত পোখরানে দ্বিতীয়বার পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা করেছিল।

(খ) বৈদেশিক নীতিতে সহমত: ভারতবর্ষে বহুদলীয় প্রথা প্রচলিত এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে তারা দলীয় রাজনীতিতে অতি নগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৬২-১৯৭২ এই দশকে ভারত যখন তিনটি যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছিল এবং এমনকি পরবর্তীকালে বিভিন্ন দলসমূহের মধ্যে জোট নিরপেক্ষ নীতি, কাশ্মীর সমস্যা, আন্তর্জাতিক সীমানা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা সম্পর্কিত ব্যাপারে সহমত পরিলক্ষিত হয়েছে। কাশ্মীর সমস্যা যদিও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার প্রধান কারণ, কিন্তু সাধারণ জনমত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পক্ষে। দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও সীমান্তে নাগরিকদের চলাচল বিষয়ে সকলের মধ্যেই সহমত পরিলক্ষিত হয়।

প্রশ্ন ৭। শান্তি ও সহযোগিতার ভিত্তিতে ভারতের বৈদেশিক নীতি রচিত। কিন্তু ভারতে ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যবর্তী দশ বছর সময়ে ভারত তিনবার যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছিল। এটা কি তুমি বৈদেশিক নীতি অকৃতকার্য হওয়া বলে মনে কর? অথবা একে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বলে মনে কর? তোমার উত্তরের সপক্ষে কারণ দর্শাও।

উত্তরঃ শান্তি ও সহযোগিতার ভিত্তিতে নিঃসন্দেহে ভারতের বৈদেশিক নীতি রচিত। কিন্তু ভারত ১৯৬২, ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে তিনবার যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছিল। তা নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ফল। ১৯৬২ সালে চীন ভারত আক্রমণ করে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে। ভারত যুদ্ধের মাধ্যমে তা পুনরুদ্ধার করে। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করলে ভারত এই আক্রমণ প্রতিহত করে। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ দেশের স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে বিশাল সংখ্যক উদ্বাস্তু ভারতে প্রবেশ করে যা ভারতে বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। এই অনুপ্রবেশ রোধের জন্য ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ভারতকে এই যুদ্ধে বাধ্য হয়ে অবতীর্ণ হতে হয়েছিল।

প্রশ্ন ৮। ভারতের বৈদেশিক নীতিতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে কি? ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যুদ্ধ সম্পর্কে তোমার যুক্তি তুলে ধর।

উত্তরঃ গোষ্ঠী নিরপেক্ষতা বা জোট নিরপেক্ষতা হল ভারতের বিদেশ নীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই নীতি অবলম্বন করে ভারত এশিয়া ও আফ্রিকার নবস্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশসমূহকে গোষ্ঠীনিরপেক্ষ আন্দোলনে যোগদানের আহ্বান করেছে। ভারত সকল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। ভারত পাকিস্তানকে বাংলাদেশ স্বাধীনের জন্য চাপ দেয়নি। একান্ত বাধ্য হয়েই পাকিস্তান বাংলাদেশের স্বাধীনতা মঞ্জুর করে। লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু ভারতে আসলে ভারতে খাদ্যসমস্যা দেখা দেয়। এর পর পাকিস্তানই বাংলাদেশ যুদ্ধের সূচনা করে। ভারত অবশ্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সমর্থন জানায়। সুতরাং এটা বলা যায় যে এই যুদ্ধে ভারতের কোন ইচ্ছাই ছিল না। পাকিস্তানই ভারতের উপর জোর করে যুদ্ধ চাপিয়েছিল।

প্রশ্ন ৯। রাজনৈতিক নেতৃত্ব একটি দেশের বৈদেশিক নীতি কিভাবে প্রভাবিত করে? ভারতের বৈদেশিক নীতি সহযোগে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে কোন দেশের বৈদেশিক নীতির উপর প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৪৭ ইংরেজিতে স্বাধীনতা লাভের পর হাতে ১৯৬৪ সালে নেহেরুর মৃত্যু পর্যন্ত ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেহেরুর হস্তে মুষ্ঠিবদ্ধ ছিলেন। এই সময়কালে নেহেরু ছিলেন ভারতের বিদেশ নীতির প্রধান স্থপতি। তাঁহার বিদেশ নীতির প্রভাব এখনও ভারতের বিদেশ নীতিতে পরিলক্ষিত হয়। নেহেরু অনুসৃত বিদেশ নীতির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ভারতের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা এবং দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করা। নেহেরু এই উদ্দেশ্যসমূহ গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। সেই সময় আম্বেদকর ও অন্যান্য কয়েকজন নেতা এবং ভারতীয় জনসংঘ ও অন্যান্য কিছু রাজনৈতিক দল আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন। কারণ আমেরিকা গোষ্ঠী গণতন্ত্র সমর্থক ছিলেন। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বৈদেশিক দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসাবে নেহেরু বিদেশ নীতি রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।

প্রশ্ন ১০। ভারত-রুশ মৈত্রী চুক্তি গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি ভঙ্গ করেছে কি না? তোমার উত্তরের যুক্তি দাও।

উত্তরঃ আমাদের মতে ১৯৭১ সালে স্বাক্ষরিত ভারত-রুশ মৈত্রী চুক্তি জোট নিরপেক্ষতার নীতিকে ভঙ্গ করেছে। 

এই চুক্তির কতকগুলি অনুবিধি হল নিম্নরূপ:

(ক) উভয় দেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় সমস্যা আলোচনা করবে এবং যুগ্মভাবে এই সমস্যাগুলির সমাধানার্থে প্রচেষ্টা করবে।

(খ) উভয় দেশই একে অন্যের ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং একে অন্যের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না।

(গ) উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে কেউ যদি তৃতীয় কোন রাষ্ট্র কর্তৃক আক্রান্ত হয় তা হলে উভয়ই এই আক্রমণের মোকাবিলা করতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

(ঘ) উভয় রাষ্ট্রই একে অপরকে আক্রমণ করবে না এবং উভয় দেশই একে অপরের ভৌগোলিক এলাকাকে আক্রমণের জন্য ব্যবহার করতে পারবে না।

এই চুক্তি সম্প্রতি আরও ২০ বছরের জন্য নবীকরণ করা হয়েছে।

সুতরাং এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে এই চুক্তি জোট নিরপেক্ষ বা গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি লঙ্ঘন করে।

প্রশ্ন ১১। যদি সামরিক শিবির না থাকে তাহলে গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি অপ্রয়োজনীয় বলে তুমি মনে কর কি?

উত্তরঃ এই মন্তব্য যুক্তিসঙ্গত নয়। গোষ্ঠী নিরপেক্ষতা স্বাধীনতা ও নিজস্ব মত গ্রহণের উপর প্রতিষ্ঠিত। যদি কোন সামরিক শিবির না থাকে তাহলে গোষ্ঠী নিরপেক্ষতা একটি আদর্শ নীতিতে পরিণত হবে। ভারত নিজ উন্নয়নের জন্য যে-কোন দেশ থেকে সাহায্য গ্রহণ করতে পারবে। কোন রাষ্ট্র কর্তৃক আক্রান্ত হলে ভারত যে-কোন রাষ্ট্রের সাহায্য ও সহযোগিতা লাভ করবে।

প্রশ্ন ১২। নেহরু কেন সামরিক শিবির হতে দূরে থাকতে চেয়েছিলেন?

উত্তরঃ ভারতের স্বাধীনতার সময় সমগ্র বিশ্ব দুইটি সামরিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল। আমেরিকার নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী এবং সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে অপর গোষ্ঠী। নেহেরু স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৪৬ সালে পরিষ্কার করে বলেছিলেন যে স্বাধীনতার পর ভারত কোন সামরিক শিবিরে যোগদান করবে না এবং বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে কর্তৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করবে। যখন একটি দেশ কোন অন্য কোন দেশ বা গোষ্ঠীভুক্ত হয় তখন সেই দেশ বা গোষ্ঠীর কতকগুলি দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা থেকে যায়। সে তখন সেই দেশ বা গোষ্ঠীকে প্রত্যক্ষ সমালোচনা করতে পারে না। কোন গোষ্ঠীভুক্ত বা জোটভুক্ত দেশ স্বাধীনভাবে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। অথবা কোন স্বাধীন বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করতে পারে না। স্বাধীনতার পর ভারতে একটি বড় সমস্যা ছিল আর্থিক পুনর্গঠন। এটা একমাত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্ভব। ভারত যদি কোন গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত হত তাহলে আর্থিক উন্নতি সম্ভব হত না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top