Class 12 Political Science Chapter 12 পরিকল্পিত বিকাশের রাজনীতি Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 12 পরিকল্পিত বিকাশের রাজনীতি Notes and select needs one.
Class 12 Political Science Chapter 12 পরিকল্পিত বিকাশের রাজনীতি
Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 12 পরিকল্পিত বিকাশের রাজনীতি Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 12 পরিকল্পিত বিকাশের রাজনীতি Solutions for All Subjects, You can practice these here.
পরিকল্পিত বিকাশের রাজনীতি
Chapter: 12
দ্বিতীয় খন্ড (স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি)
অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। POSCO-র সম্পূর্ণ নাম লেখ।
উত্তরঃ Pohang Steel Company.
প্রশ্ন ২। বিকাশের দুটি মানদণ্ড আছে, একটি হল উদার পুঁজিবাদ এবং অন্যটি কি?
উত্তরঃ সমাজবাদী মানদণ্ড।
প্রশ্ন ৩। পরিকল্পনা আয়োগ কখন গঠন করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৫০ সালে।
প্রশ্ন ৪। FYP কি?
উত্তরঃ Five Year Plan (পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা)।
প্রশ্ন ৫। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা কখন আরম্ভ হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৫১ সালে।
প্রশ্ন ৬। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সন্নিবিষ্ট একটি বৃহৎ মাত্রার প্রকল্পের নাম লেখ।
উত্তরঃ ভাখরা-নাঙ্গাল প্রকল্প।
প্রশ্ন ৭। ভারতীয় পরিসাংখ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তরঃ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ।
প্রশ্ন ৮। খাদ্য সংকটের সময় ভারতকে কোন্ দেশের উপর নির্ভর করতে হয়েছিল?
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর।
প্রশ্ন ৯। AMUL-এর সম্পূর্ণ রূপটি কি?
উত্তরঃ Anand Milk Union Limited.
প্রশ্ন ১০। ‘ভারতের দুগ্ধমানব’ কাকে বলা হয়?
উত্তরঃ ভার্গিস কুরিয়েন।
প্রশ্ন ১১। পরিকল্পিত উন্নয়ন বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ দেশের সহায় সম্পদকে পরিকল্পিতভাবে সদ্ব্যবহার করে সমাজের সর্বশ্রেণীর লোকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকেই পরিকল্পিত উন্নয়ন বা বিকাশ বলে।
প্রশ্ন ১২। ভারতে পরিকল্পনার ধারণাটি কোথা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে?
উত্তরঃ সোভিয়েত ইউনিয়ন।
প্রশ্ন ১৩। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ শিল্পের বিকাশ।
প্রশ্ন ১৪। এখন পর্যন্ত কয়টি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সম্পূর্ণ হয়েছে?
উত্তরঃ এগারোটি।
প্রশ্ন ১৫। ভারতে সবুজ বিপ্লবের নায়ক বলে কাকে সম্মান করা হয়?
উত্তরঃ এম. এস. স্বামীনাথন।
প্রশ্ন ১৬। ভারতে পরিকল্পনা কেন গ্রহণ করা হয়েছিল?
উত্তরঃ আর্থিক বিকাশের জন্য।
প্রশ্ন ১৭। পরিকল্পনা আয়োগের কাঠামোটি লেখ।
উত্তরঃ পরিকল্পনা আয়োগ প্রধানমন্ত্রী, উপসভাপতি এবং ৯/১০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। প্রধানমন্ত্রী আয়োগের পদাধিকারি সভাপতি।
প্রশ্ন ১৮। পি. সি. মহলানবীশ কে ছিলেন?
উত্তরঃ পি. সি. মহলানবীশ প্রখ্যাত রাশিবিজ্ঞানী ও দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার স্থপতি।
প্রশ্ন ১৯। কেরালা মডেল কি?
উত্তরঃ কেরালা মডেল বলতে কেরালার বার্ষিক পরিকল্পনাকে বোঝায়।
প্রশ্ন ২০। পরিকল্পনার অবকাশ দিন কি? কোন কোন বছরকে কেন পরিকল্পনার অবকাশ দিন বলে অবহিত করা হয়?
উত্তরঃ ১৯৬২ সালের চীনের ভারত আক্রমণ এবং ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধ এবং প্রতিকূল আর্থিক অবস্থার জন্য ভারত সরকার চতুর্থ পরিকল্পনা যথাসময়ে শুরু করতে পারেনি, ফলে তিন বছর পরিকল্পনা স্থগিত থাকে। এই তিন বছরের (১৯৬২–১৯৬৫) সময়সীমাকে পরিকল্পনা অবকাশ বলে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ২১। পরিকল্পনা কমিশনের সভাপতি কে?
উত্তরঃ প্রধানমন্ত্রী।
প্রশ্ন ২২। কোন্ ভারতীয় চিন্তাবিদ ভারতের পরিকল্পনার প্রয়োজনের কথা বলেছিলেন?
উত্তরঃ এম. বিশ্বেশ্বর।
প্রশ্ন ২৩। এখন পর্যন্ত কতটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সমাপ্ত হয়েছে?
উত্তরঃ এগারোটি।
প্রশ্ন ২৪। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল স্থপতি কে?
উত্তরঃ পি. সি. মহলানবীশ।
প্রশ্ন ২৫। ভারতে খাদ্য সংকট কখন দেখা দিয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৬০-এর দশকে।
প্রশ্ন ২৬। ‘গরীবী হঠাও’ ধ্বনি কে দিয়েছিলেন?
উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। POSCO প্রকল্পের বিরুদ্ধে উড়িষ্যার গ্রামবাসীরা কেন প্রতিবাদ করেছিল?
উত্তরঃ পসকো (POSCO) ইস্পাত কারখানা স্থাপন করার জন্য বাস্তুচ্যুতির আশঙ্কায় উড়িষ্যার জগতসিংহপুর জেলার বাসিন্দারা প্রতিবাদ করে ও বিক্ষোভ দেখায়। তারা কোম্পানি ও উড়িষ্যা সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাতিল করার এবং মানুষের জীবন ও জীবিকার বিনিময়ে কারখানা স্থাপন করতে দেওয়া হবে না বলে দাবি জানায়।
প্রশ্ন ২। বাম ও দক্ষিণ বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ বাম বলতে এমন ব্যক্তিদেরকে বোঝায় যারা দরিদ্র ও নিপীড়িতদের পক্ষে এবং এইসব শ্রেণীর উন্নয়নের জন্য সরকারি প্রচেষ্টা সমর্থন করে। দক্ষিণ বলতে বোঝায় তাদেরকে, যারা বিশ্বাস করে যে কেবলমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বাজার অর্থনীতি উন্নতি আনতে পারে এবং সরকারের অপ্রয়োজনীয়ভাবে অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিৎ নয়।
প্রশ্ন ৩। বিকাশ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ দেশের সহায়-সম্পদের পরিকল্পিতভাবে সদ্ব্যবহার করে সমাজের সর্বশ্রেণীর লোকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকেই পরিকল্পিত উন্নয়ন বা বিকাশ বলে।
প্রশ্ন ৪। আধুনিকীকরণ কার বা কিসের সঙ্গে জড়িত ছিল?
উত্তরঃ কৃষি ও শিল্পের সঙ্গে।
প্রশ্ন ৫। বোম্বে পরিকল্পনা বলতে কি বোঝায়?
উত্তরঃ ১৯৪৪ সনে কতিপয় শিল্পপতি বোম্বাই-এ মিলিত হয়ে ভারতে পরিকল্পিত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি যৌথ প্রস্তাবের খসড়া প্রস্তুত করে। একে ‘বোম্বে পরিকল্পনা’ বলা হয়। এই খসড়ায় উদ্যোগিক ও অন্যান্য অর্থনৈতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে মূল ভূমিকা গ্রহণ করতে বলেছিল।
প্রশ্ন ৬। সরকারি বাজেটকে যে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় তা কি কি?
উত্তরঃ সরকারি বাজেটকে –
(ক) পরিকল্পনাভূত বাজেট। ও
(খ) পরিকল্পনাবহির্ভূত বাজেট এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
প্রশ্ন ৭। কোন্ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আরম্ভ করা হয়েছিল এবং ভারতের বিকাশ তীব্র করতে হবে বলা অর্থনীতিবিদ কে ছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৫১ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আরম্ভ হয়েছিল। প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ বলেছিলেন যে ভারতের বিকাশকে তীব্র করতে হবে।
প্রশ্ন ৮। ‘কেরালা মডেল’ দ্বারা কোন্ প্রকার বিশেষ বস্তুর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল?
উত্তরঃ ‘কেরালা মডেল’ বলতে কেরালার বার্ষিক পরিকল্পনাকে বোঝায়। এই প্রকল্পতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি সংস্কার, খাদ্য বিতরণ ও দরিদ্রতা নিবারণের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন ৯। মিশ্র অর্থনীতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ মিশ্র অর্থনীতি হল সমাজবাদ ও পুঁজিবাদের মধ্যবর্তী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ পাশাপাশি থাকে। ভারতে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান।
প্রশ্ন ১০। খাদ্যের যথোপযুক্ত নিশ্চিত করার জন্য ভারত কি নীতি গ্রহণ করেছিল?
উত্তরঃ খাদ্যসংকট দূরীকরণের জন্য ভারত ১৯৬৮-৬৯ সালে সবুজ বিপ্লবের নীতি গ্রহণ করে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করেছিল।
প্রশ্ন ১১। পরিকল্পনার দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ পরিকল্পনার দুটি উদ্দেশ্য হল—
(ক) আর্থিক বিকাশ। ও
(খ) দারিদ্র দূরীকরণ।
প্রশ্ন ১২। পরিকল্পনার দুটি সুবিধা উল্লেখ কর।
উত্তরঃ পরিকল্পনার সুবিধা দুটি নিম্নরূপ:
(ক) পরিকল্পনার মাধ্যমে আর্থিক বিকাশের লক্ষ অর্জন করা সম্ভব।
(খ) পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাজ থেকে দারিদ্র ও বৈষম্য দূর করা যায়।
প্রশ্ন ১৩। কোন্ বছর পরিকল্পনা আয়োগ গঠন করা হয়েছিল এবং পরিকল্পনা আয়োগের প্রথম অধ্যক্ষ কে ছিলেন?
উত্তরঃ পরিকল্পনা আয়োগ ১৯৫০ সালে গঠন করা হয়েছিল। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু এর প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন।
প্রশ্ন ১৪। ভারতের নূতন আর্থিক নীতি কখন প্রবর্তন করা হয়েছিল এবং এর মুখ্য স্থপতি কে ছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৯১ সালে ভারতে নূতন আর্থিক নীতি প্রবর্তন করা হয়েছিল। ডঃ মনমোহন সিং এর মুখ্য স্থপতি ছিলেন।
প্রশ্ন ১৫। পরিকল্পিত অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলসমূহ কি কি?
উত্তরঃ পরিকল্পিত অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) আর্থিক বনিয়াদ মজবুত।
(খ) ভূমি সংস্কারকরণ।
(গ) সবুজ বিপ্লবের সূচনা।
প্রশ্ন ১৬। কোন্ ভারতীয় চিন্তাবিদ ভারতে পরিকল্পনার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং কখন দিয়েছিলেন?
উত্তরঃ এম. বিশ্বেশ্বর ১৯৩৪ সালে ভারতে পরিকল্পনার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন ১৭। পরিকল্পনা আয়োগকে কেন সংবিধান বহির্ভূত বলা হয়?
উত্তরঃ সংবিধানে উল্লেখ না থাকায় পরিকল্পনা আয়োগকে সংবিধান বহির্ভূত বলা হয়।
প্রশ্ন ১৮। দশম বার্ষিকী পরিকল্পনা কে এবং কেন প্রস্তুত করেছিলেন?
উত্তরঃ মানবেন্দ্রনাথ রায় দশম বার্ষিকী পরিকল্পনার রূপরেখা প্রস্তুত করেছিলেন। এতে তিনি কৃষির বিকাশ ও ভোগ্য পণ্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রশ্ন ১৯। পরিকল্পনা বাজেট কি?
উত্তরঃ পরিকল্পনায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পাঁচ বছরের ব্যয়ভিত্তিক বাজেটকে পরিকল্পনা বাজেট বলে।
প্রশ্ন ২০। বিতরণাত্মক ন্যায় সম্পর্কে কয়েকটি লাইন লেখ।
উত্তরঃ জনগণের মধ্যে সমান এবং যথাযথ সম্পদের বণ্টনকে বিতরণাত্মক ন্যায় বলে। বিতরণাত্মক ন্যায় কার্যকর করতে না পারলে সমাজের সর্ব শ্রেণীর লোকের উন্নয়ন হবে না।
প্রশ্ন ২১। পরিকল্পনার সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের সকল প্রকার সম্পদের সদ্ব্যবহার করে নির্দিষ্ট পরিমাণ উৎপাদন বৃদ্ধি করাকে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বলে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ২২। ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তিনটি দীর্ঘকালীন উদ্দেশ্য উল্লেখ কর।
অথবা,
ভারতের পরিকল্পনার তিনটি উদ্দেশ্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তিনটি উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:
(ক) অর্থনৈতিক বিকাশ।
(খ) দরিদ্রতা দূরীকরণ।
(গ) আত্মনির্ভরশীলতা।
প্রশ্ন ২৩। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তিনটি ত্রুটি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তিনটি ত্রুটি নিম্নরূপ:
(ক) বাস্তবায়নে দুর্বলতা।
(খ) তত্ত্বগত পরিকল্পনা ও অবাস্তবতা।
(গ) দক্ষ লোকের অভাব।
প্রশ্ন ২৪। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে ভারতবর্ষে অর্থনৈতিক উন্নতির হার মন্থর হওয়ার তিনটি কারণ দেখাও।
উত্তরঃ অর্থনৈতিক উন্নতির হার মন্থর হবার তিনটি কারণ নিম্নরূপ:
(ক) দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
(খ) কৃষি উৎপাদনে অনিশ্চয়তা।
(গ) শিল্পক্ষেত্রে অনগ্রসরতা।
প্রশ্ন ২৫। পরিকল্পনা আয়োগ কবে গঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৫০ সালের ২৫শে জানুয়ারি প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং ১৫ই মার্চ গঠিত হয়।
প্রশ্ন ২৬। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা রূপায়ণে তিনটি প্রধান অন্তরায় কি কি?
উত্তরঃ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা রূপায়ণে তিনটি প্রধান অন্তরায় নিম্নরূপ:
(ক) দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
(খ) খরা, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
(গ) মুদ্রাস্ফীতির চাপ।
প্রশ্ন ২৭। ভারতের পরিকল্পনার অর্থ সংগ্রহের তিনটি মুখ্য উৎসের নাম লেখ।
উত্তরঃ ভারতের পরিকল্পনার অর্থ সংগ্রহের তিনটি মুখ্য উৎস হল—
(ক) কর সংগ্রহ।
(খ) বাণিজ্যিক রাজস্ব। ও
(গ) ঋণ সংগ্রহ।
প্রশ্ন ২৮। ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বিফলতার দুটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বিফলতার কারণ দুটি নিম্নরূপ:
(ক) মূলধনের অভাব, ঘাটতি বাজেট এবং পরিণামে মুদ্রাস্ফীতি পরিকল্পনাসমূহের ব্যর্থতার প্রধান কারণ।
(খ) প্রশাসনিক দক্ষতা এবং শিথিলতার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভবপর হয় না।
প্রশ্ন ২৯। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:
(ক) কৃষিখণ্ডের উন্নয়ন সাধন করা।
(খ) পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি।
প্রশ্ন ৩০। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:
(ক) শিল্পের বিকাশ ও সম্প্রসারণ।
(খ) আর্থিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা।
প্রশ্ন ৩১। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:
(ক) বার্ষিক জাতীয় আয় ৫ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি করা।
(খ) খাদ্যশস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্ব-নির্ভরশীলতা অর্জন করা।
প্রশ্ন ৩২। জাতীয় পরিকল্পনা সমিতি কখন গঠিত হয়েছিল? এর সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তরঃ জাতীয় পরিকল্পনা সমিতি ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেছিল। এর সভাপতি ছিলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু।
প্রশ্ন ৩৩। সবুজ বিপ্লব কি?
উত্তরঃ ১৯৬০-এর দশকে ভারতে কৃষিখণ্ডে আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত বীজ ও সার প্রয়োগের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। অতি অল্প সময়ে কৃষিখণ্ডে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য একে সবুজ বিপ্লব আখ্যায়িত করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৩৪। সবুজ বিপ্লবের দুটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ সবুজ বিপ্লবের কারণ দুটি নিম্নরূপ:
(ক) কৃষিকার্যে নূতন প্রযুক্তিতর ব্যবহার।
(খ) উন্নতমানের বীজ ও সার প্রয়োগ।
প্রশ্ন ৩৫। সবুজ বিপ্লবের দুটি ফলাফল উল্লেখ কর।
উত্তরঃ সবুজ বিপ্লবের ফলাফল দুটি নিম্নরূপ:
(ক) কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি।
(খ) গ্রামীণ বিকাশ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি।
প্রশ্ন ৩৬। শ্বেত বা দুগ্ধবিপ্লব কি?
উত্তরঃ ১৯৭০-এর দশকে শুরু করা ‘অপারেশন ফ্লাড’ (Operation Flood) নামক প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। একে শ্বেতবিপ্লব বা দুগ্ধবিপ্লব বলা হয়।
প্রশ্ন ৩৭। স্বাধীনতার পর ভারতের গ্রহণ করা অর্থনৈতিক বিকাশের তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ স্বাধীনতার পর ভারতে গৃহীত অর্থনৈতিক বিকাশের তিনটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
(ক) মিশ্র অর্থনীতি।
(খ) পরিকল্পিত বিকাশ।
(গ) উদ্যোগীকরণ ও কৃষিখণ্ডের বিকাশ।
প্রশ্ন ৩৮। উন্নয়নের দুটি ধাঁচ (মডেল) উল্লেখ কর।
উত্তরঃ উন্নয়নের দুটি ধাঁচ নিম্নরূপ:
(ক) উদারনৈতিক পুঁজিবাদী ধাঁচ বা মডেল।
(খ) সমাজবাদী ধাঁচ বা মডেল।
প্রশ্ন ৩৯। পরিকল্পিত বিকাশকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া যে-কোন দুটি বিতর্ক উল্লেখ কর।
উত্তরঃ পরিকল্পিত বিকাশকেন্দ্রিক বিতর্ক দুটি নিম্নরূপ:
(ক) কৃষি বনাম উদ্যোগ।
(খ) সরকারি খণ্ড বনাম বেসরকারি খণ্ড।
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (১৯৫১–৫২ থেকে ১৯৫৫-৫৬) বিষয়ে ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (১৯৫১–৫২ থেকে ১৯৫৫-৫৬) প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) প্রায় ৮০% ভারতীয়দের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকার্য; অর্থাৎ কৃষিই ভারতের অর্থনীতির ভিত্তি। তাই কৃষি এবং জলসেচের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৬.১ কোটি টাকা (৩১%)।
(খ) পরিবহণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে দেশের সার্বিক উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সেজন্য পরিবহণ এবং যোগাযোগের উন্নয়নে ৫২৩ কোটি টাকা (২৭%) বরাদ্দ করা হয়।
(গ) শিল্পের উন্নয়নের প্রতি প্রয়োজনীয় দৃষ্টি দেওয়ার জন্য শিল্প ও খনিজ উন্নয়নে ৭৪ কোটি টাকা (৪%) বরাদ্দ করা হয়েছিল।
(ঘ) সামাজিক ন্যায় বিচারের প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য ৪৫৯ কোটি টাকা (২৩%) বরাদ্দ করা হয়।
(ঙ) সর্বোপরি ব্রিটিশ শাসনে ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ব্যয় ধার্য করা হয় ১৯৬০ কোটি টাকা।
প্রশ্ন ২। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (১৯৫৬-৫৭ থেকে ১৯৬০-৬১) রূপকার কে ছিলেন? এর লক্ষ্যের বিষয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (১৯৫৬–৫৭ থেকে ১৯৬০–৬১) রূপকার ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে একদল অর্থনীতিবিদ্ দ্বিতীয় পরিকল্পনার মূল খসড়া তৈরি করে করেছিলেন।
দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) ভারী ও শিল্প ও খনি শিল্প এবং গ্রামীণ ও কুটির শিল্প উন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে ১০৭৫ কোটি টাকা (২৪%) বরাদ্দ করা হয়।
(খ) কৃষি এবং সামাজিক উন্নয়ন তথা সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বিশেষত খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন বৃদ্ধির উপরও যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সেজন্য ৯৫০ কোটি টাকা (২০%) বরাদ্দ করা হয়।
(গ) ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য পরিবহণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব আরোপ করে ১৩০ কোটি টাকা (২৮%) ধার্য করা হয়।
(ঘ) জীবনধারণের মান উন্নত করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং গণতান্ত্রিক সমাজবাদ প্রতিষ্ঠার উপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সামাজিক পরিষেবা ও আনুসঙ্গিক খাতে ৮৩০ কোটি টাকা (১৬%) ধার্য করা হয়।
প্রশ্ন ৩। ব্যক্তিগত খণ্ড কি? সরকারি খণ্ডের সঙ্গে এর প্রভেদ কি?
উত্তরঃ ব্যক্তিগত খণ্ড হল বিকাশের একটি পুঁজিবাদী ক্ষেত্র।
যেসব খণ্ডে সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকে না অর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে পুঁজি নিয়োগ করতে পারা যায় সেইসব খণ্ডকে ব্যক্তিগত খণ্ড বলে।
ব্যক্তিগত খণ্ড ও সরকারি খণ্ডের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য দেখা যায়:
(ক) ব্যক্তিগত খণ্ড হল পুঁজিবাদী ক্ষেত্র ও গতি অনুসরণ করা ব্যবস্থা। অন্যদিকে সরকারি খণ্ড হল সমাজবাদী ক্ষেত্র ও নীতি অনুসরণ করা একটি ব্যবস্থা।
(খ) ব্যক্তিগত খণ্ড রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত। কিন্তু সরকারি খণ্ড রাষ্ট্রীয় নীতি-নিয়মের আওতাধীন।
(গ) ব্যক্তিগত খণ্ড কাজ করে মুনাফা অর্জনের জন্য। তাদের কোন সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই। অপরদিকে সরকারি খণ্ডের মুখ্য উদ্দেশ্য হল সমাজকল্যাণ, যেখানে মুনাফা অর্জনের চিন্তা পরে আসে। সরকারি খণ্ড সর্বদা জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকে।
প্রশ্ন ৪। সবুজ বিপ্লব কি? কিভাবে তা আরম্ভ হয়েছিল?
উত্তরঃ খাদ্য সমস্যা সমাধানের জন্য তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হতে এক নূতন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৬০-৬১ সাল থেকে ভারতের সাতটি জেলাকে নিবিড় কৃষি জেলা প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। জলসেচের সুবিধা থাকা জেলাগুলিকেই পছন্দ করা হয়। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল সেচসেবিত এলাকায় উন্নত ধরনের বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ঔষধ ইত্যাদি ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
এই নূতন কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে কৃষি উৎপাদন এত দ্রুত বৃদ্ধি পায় যে অনেকে একে বিপ্লবাত্মক আখ্যা দিয়েছেন। উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার এই ঘটনাকেই সবুজ বিপ্লব বলা হয়।
সবুজ বিপ্লবের প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) উচ্চফলনশীল বীজের প্রবর্তন।
(খ) রাসায়নিক সারের অধিক ব্যবহার।
(গ) পর্যাপ্ত জলসেচের সুযোগ সুবিধা।
(ঘ) আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতির ব্যাপক ব্যবহার।
(ঙ) কৃষিকার্যে নূতন প্রযুক্তির ব্যবহার।
প্রশ্ন ৫। ভারতের দুগ্ধমানব’ কে? শ্বেত বিপ্লবের বিষয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভার্গিস কুরিয়েনকে ভারতের দুগ্ধমানব বলা হয়।
১৯৭০-এর দশকে শুরু করা অপারেশন ফ্লাড (Operation Flood) নামক প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তাকে শ্বেতবিপ্লব বা দুগ্ধবিপ্লব বলা হয়। গুজরাটের আনন্দ শহরকেন্দ্রিক আমূল একটি ডেয়ারি সমবায় আন্দোলন, যাতে প্রায় আড়াই মিলিয়ন গুজরাটের দুগ্ধ উৎপাদক আছেন। আমূল নমুনা গ্রামীণ উন্নয়ন ও দারিদ্র দূরীকরণের একটি অনুপম ও যথাযথ আদর্শ হয়েছিল ও উৎসাহ যুগিয়েছিল যা ‘শ্বেত বিপ্লব’ বলে পরিগণিত হয়েছিল। অপারেশন ফ্লাড কেবল ডেয়ারি কার্যক্রম ছিল না, তা কর্মসৃষ্টি ও গ্রামীণ গৃহস্থালীগুলির জন্য আয় ও দারিদ্র দূরীকরণের মাধ্যমে উন্নয়নের একটি পথ।
প্রশ্ন ৬। সবুজ বিপ্লব ও শ্বেত বিপ্লবের মধ্যে থাকা পার্থক্যসমূহের বিষয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ সবুজ বিপ্লব ও শ্বেত বিপ্লবের প্রধান পার্থক্যসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) সবুজ বিপ্লবের মূল লক্ষ্য হল খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। অন্যদিকে শ্বেত বিপ্লবের মূল লক্ষ্য হল দুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
(খ) সবুজ বিপ্লবের সঙ্গে নর্মান বরলাউগ-এর অবদান জড়িত। কিন্তু শ্বেত বিপ্লবের সঙ্গে ভার্গিস কুরিয়েনের অবদান জড়িত।
(গ) সবুজ বিপ্লব দ্বারা পাঞ্জাব, হরিয়ানা প্রভৃতি রাজ্য উপকৃত হয়েছিল। অন্যদিকে শ্বেত বিপ্লব বিশেষত গুজরাটে প্রসারলাভ করেছিল।
(ঘ) সবুজ বিপ্লব সমবায়ভিত্তিক কৃষির উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করেছিল। অন্যদিকে শ্বেতবিপ্লব সমবায়ভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদনের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছিল।
প্রশ্ন ৭। ভারতে পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ লেখ।
উত্তরঃ ভারতে পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) জাতীয় আয় এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করা।
(খ) অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ।
(গ) দারিদ্র্য দূরীকরণ।
(ঘ) দ্রুত উদ্যোগীকরণ।
(ঙ) বেকার সমস্যা দূরীকরণ।
(চ) খাদ্য ও শিল্পজাত কাঁচামালে স্বাবলম্বী হওয়া।
(ছ) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হওয়া।
প্রশ্ন ৮। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে পরিকল্পনা আয়োগের ভূমিকা কি?
উত্তরঃ পরিকল্পনা আয়োগের মূল ভূমিকা বলতে দেশের জনসাধারণকে সুরক্ষা প্রদান করাই অন্যতম উদ্দেশ্য। পরিকল্পনার মাধ্যমেই দেশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার আর সমউন্নয়ন সম্ভব হয়। পরিকল্পনার মাধ্যমেই সামাজিক ন্যায় প্রদান করা যায়। এই ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জীবিকার প্রয়োজনীয় মাধ্যম প্রদান করাটাই আয়োগের প্রধান কাজ বলে বিবেচনা করা হয়। জনসাধারণের হিতের জন্য উৎপাদিত সম্পদের অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ যথাযথভাবে করা ও রক্ষণাবেক্ষণও অত্যন্ত জরুরি। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অনুযায়ী উচিৎ পদক্ষেপ করাটাও আয়োগের অন্যতম ভূমিকা বলে অভিহিত করা হয়।
প্রশ্ন ৯। মিশ্র অর্থনীতির লক্ষ্যে ১৯৫০ সালের ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত কি ছিল?
উত্তরঃ ১৯৫০ সালের কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের একটা প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে ভারতের পরিকল্পনা আয়োগ গঠন করা হয়েছিল। এই প্রস্তাবেই ভারতের মিশ্র অর্থনীতির বিষয়ে উল্লেখ ছিল—ভারতের সংবিধানে নাগরিকদের জন্য কিছু পরিমাণ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা আছে আর নির্দেশক নীতিতে কিছু পরিমাণ নির্দেশ দেওয়া আছে। বিশেষ করে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়যুক্ত সমাজব্যবস্থার মাধ্যমে নাগরিকদের কল্যাণ সুনিশ্চিত ও সুরক্ষিত করা।
অন্য বিষয়ের উপরেও নিম্নে উল্লিখিত উদ্দেশ্যসমূহে উপনীত হবার জন্য বিধিসমূহ বর্ণিত আছে:
(ক) সকল পুরুষ এবং মহিলা নাগরিকদের জন্য উপযুক্ত জীবন নির্বাহের উপায়ের অধিকার থাকবে।
(খ) সমস্ত সম্পদের মালিকানা স্বত্ত্ব এমনভাবে বিতরণ করা হবে যাতে উৎকৃষ্টভাবে সামুহিক কল্যাণ সাধন হয়।
(গ) অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কার্যকরী করতে যাতে সম্পদ আর উৎপাদনের উপাদানসমূহ কেন্দ্রীভূত হয়ে সামুহিক কল্যাণের পরিপন্থী না হয়।
প্রশ্ন ১০। পরিকল্পনা রূপায়ন করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য কি ধরনের নীতি গ্রহণ করা হবে সেই সম্পর্কে মতভেদ থাকলেও একটা বিষয়ে সকলে সহমত ছিল যে বিকাশের দায়িত্ব ব্যক্তিগত উদ্যোগে অর্পণ করা উচিৎ হবে না। তার পরিবর্তে সরকার বিকাশের নিমিত্ত একটা নীতি বা পরিকল্পনা প্রস্তুত করবে। এই ক্ষেত্রে ভারত পরিকল্পনা রূপায়ণে সোভিয়েত রাশিয়ার বিকাশের নীতি গ্রহণ করে। উল্লেখ্যনীয় যে স্বাধীনতার সময় কিছু বড় উদ্যোগপতি ও ব্যবসায়ী ভারতের পরিকল্পনার ধারণাকে সমর্থন করেছিলেন। ১৯৪৩ সালে কিছু সংখ্যক উদ্যোগপতি বোম্বাইতে মিলিত হয়ে ভারতে পরিকল্পিত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটা খসড়া প্রস্তাব প্রস্তুত করেন। এই প্রস্তাবকে বোম্বাই পরিকল্পনা নামে অভিহিত করা হয়। বোম্বাই পরিকল্পনায় উদ্যোগ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই মূল ভূমিকা গ্রহণে উপদেশ দিয়েছিল। অন্যান্য কিছু ব্যক্তিও স্বাধীন ভারতের পরিকল্পনা নীতি প্রস্তুত করেছিলেন এবং কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর অনুগামী জয়প্রকাশ নারায়ণ গান্ধীবাদী পরিকল্পনার নীতি প্রস্তুত করেছিলেন। মানবেন্দ্র নাথ রায় দশ বৎসরীয় পরিকল্পনার সুপারিশ করেছিলেন এবং সেই অনুসারে একটি খসড়াও পেশ করেছিলেন। ১৯৪৮ সালের এপ্রিল মাসে নেহেরু পার্লামেন্টে ঔদ্যোগিক নীতি প্রস্তাব পাঠ করেন। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে ভারতের মিশ্র অর্থনীতিতে প্রবেশের সুগম হয়। ১৯৫০ সালের ২৫শে জানুয়ারি তীব্র বাদানুবাদের পর এই পরিকল্পনা আয়োগ গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং ১৫ই মার্চ গঠন করা হয়।
প্রশ্ন ১১। “স্বাধীনতার পর প্রথম দশক অনেক বিতর্কের সাক্ষী ছিল।” কেন?
উত্তরঃ উন্নয়ন সম্পর্কে বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন মতামত থাকে। সুতরাং, উন্নয়ন নিয়ে যে-কোন আলোচনায় বিতর্ক স্থান পাবে এটাই স্বাভাবিক। স্বাধীনতার পরে প্রথম দশকে এই প্রশ্নকে ঘিরে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছে যে উন্নয়নের জন্য কৃষিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত না বিভিন্ন ভারী শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, যা স্থাপনের ফলে পরিবেশ দূষণ ঘটবে এবং সেই অঞ্চলের জনগণেরা বাস্তু ও বৃত্তিচ্যুত হতে পারেন। তাছাড়া এটা তখন স্বাভাবিক ছিল, যেমন এখনও আছে। সবাই ‘পশ্চিম’ উল্লেখ করতেন উন্নয়নের মানদণ্ড হিসাবে। সাধারণ মানুষ এমনকি বিশেষজ্ঞরা এমনই ভাবতেন যে উন্নয়ন মানে ‘আধুনিক হওয়া’ এবং আধুনিক বোঝাতে পশ্চিমের শিল্পোন্নত দেশগুলির মতো হওয়া। তারা পুঁজিবাদ ও উদার মানসিকতাবাদকে উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার বলে গণ্য করতেন। আধুনিকতাকে আবার বৃদ্ধি, বস্তুগত প্রগতি এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের ধারণার সাথে জোড়া হত।
অন্যদিকে ভারতে অনেকেই ছিলেন যারা সোভিয়েত উন্নয়নের মানদণ্ড অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক মানদণ্ড নিয়ে খুবই প্রভাবিত ছিলেন। তারা মনে করতেন সরকার নিয়ন্ত্রিত সুষ্ঠ পরিকল্পনার দ্বারাই রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব। এর মধ্যে কেবলমাত্র কমিউনিস্টরাই ছিলেন না, পরন্তু সমাজতান্ত্রিক এবং নেহরুর মতো কংগ্রেস নেতারাও ছিলেন।
যাই হোক, জাতীয় নেতারা খুবই সুষ্পষ্টভাবে জানতেন যে স্বাধীনতা ভারতের সরকারের সঙ্কীর্ণ ব্যবসায়িক কর্মপদ্ধতির চেয়ে আলাদা হবে। এটা সুস্পষ্ট ছিল যে দারিদ্র দূরীকরণ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনর্বণ্টন প্রাথমিকভাবে সরকারের দায়িত্ব হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তাতেই বিতর্ক হচ্ছিল। কারো কারো কাছে শিল্পায়নই মনে হচ্ছিল পছন্দসই পথ আর অন্যদের কাছে কৃষি উন্নয়ন এবং বিশেষ করে গ্রামীণ দারিদ্র দূরীকরণেরই ছিল অগ্রাধিকার।
প্রশ্ন ১২। পরিকল্পনা অবকাশ কি? কেন কিছু সংখ্যক বছরকে পরিকল্পনা অবকাশ বলা হয়?
উত্তরঃ চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ১৯৬৬ সালে চালু হওয়ার কথা ছিল। ঐ সময়ের মধ্যে পরিকল্পনার নতুনত্ব বহু পরিমাণে কমে গিয়েছিল, এবং তদুপরি ভারত চরম আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। তাছাড়া ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৬৭ সালের বছরগুলিতে খরা দেখা দেয়। বিশেষ করে উত্তর ভারতের খরার ফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের ফলে ভারত আর্থিক সংকটে পড়ে। সেই কারণে সরকারকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হয়। পরিবর্তে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল এই তিন বছর তিনটি বার্ষিক পরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করে। এই সময়কালকে ‘পরিকল্পনার অবকাশ বলে অবিহিত করা হয়।
যদিও পরিকল্পনার পদ্ধতি ও অগ্রাধিকার নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছে, ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি সেগুলির মাধ্যমেই দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১৩। ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) পরিকল্পনা আয়োগ পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করে।
(খ) জাতীয় ভিত্তিতে ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা রচিত হয়।
(গ) পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সমবায়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
(ঘ) ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মিশ্র অর্থনীতি স্থান পেয়েছে।
(ঙ) পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ভারী শিল্প ও কুটীর শিল্পের উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
প্রশ্ন ১৪। ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা রূপায়ণের পাঁচটি প্রতিবন্ধকতা বা অন্তরায় উল্লেখ কর।
অথবা,
ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলি অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রগতি লাভ করতে সক্ষম হয় নি কেন?
উত্তরঃ ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা রূপায়ণের পাঁচটি প্রতিবন্ধকতা বা অন্তরায় নিম্নরূপ:
(ক) দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
(খ) উৎপাদনের উপকরণসমূহের অভাব।
(গ) বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি।
(ঘ) দারিদ্র্য ও বেকার সমস্যা।
(ঙ) মুদ্রাস্ফীতির চাপ।
প্রশ্ন ১৫। ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সার্থক করবার উপায়সমূহ কি কি?
উত্তরঃ ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সার্থক করবার উপায়সমূহ নিম্নরূপ:
(ক) পরিকল্পনা রচনার নিমিত্ত দেশের দক্ষ অর্থনীতিবিদ, পরিসংখ্যানবিদ্, বৈজ্ঞানিক, শিল্পবিদ্যা বিশারদ এবং সমাজসেবী নিয়ে একটি পরিকল্পনা আয়োগ গঠন করতে হবে।
(খ) পরিসংখ্যান নির্ভুল থাকতে হবে যেহেতু দেশের মূলধন জনসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদের নির্ভুল হিসাবের উপরই পরিকল্পনার সাফল্য নির্ভর করে।
(গ) দেশের সম্পদ আহরণ করার ক্ষমতার উপরই পরিকল্পনার সাফল্য নির্ভর করে।
(ঘ) পরিকল্পনার সার্থক রূপায়ণের জন্য দক্ষ ও নিষ্ঠাবান প্রশাসন যন্ত্রের প্রয়োজন। দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাগণকে পরিকল্পনা রূপায়ণের ক্ষেত্রে দূরে রাখতে হবে।
(ঙ) দেশের চলতি উৎপাদন শক্তির ভিত্তিতেই ভবিষ্যতের উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে।
প্রশ্ন ১৬। মিশ্র অর্থনীতি বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ মিশ্র অর্থনীতি হল সমাজবাদ ও পুঁজিবাদের মধ্যবর্তী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ পাশাপাশি থাকে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণই মিশ্র অর্থব্যবস্থা। ভারতবর্ষ একটি মিশ্র অর্থনীতির দেশ। মিশ্র অর্থনীতিতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় উদ্যোগের সহাবস্থান থাকে। এই ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানসমূহ এবং সম্পত্তির ব্যক্তি মালিকানাস্বত্ত্ব স্বীকার করা হয়।
প্রশ্ন ১৭। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) বার্ষিক জাতীয় আয় ৫ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি করা।
(খ) খাদ্যশস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্ব-নির্ভরশীলতা অর্জন করা এবং রপ্তানি ও উদ্যোগের প্রয়োজন পূরণার্থে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
(গ) মৌলিক শিল্পের বিস্তার।
(ঘ) জনসম্পদের উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি।
(ঙ) আর্থিক বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা।
অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। বিকাশের ধারণার বিষয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ বিকাশের ধারণাটি বিভিন্ন লোকের নিকট বিভিন্ন ধরনের। এইসব ধারণা এসেছে পশ্চিমী দেশসমূহের অভিজ্ঞতা থেকে। স্বাধীনতার পর সবাই ‘পশ্চিম’ শব্দটি উল্লেখ করতেন উন্নয়নের মানদণ্ড হিসাবে। উন্নয়ন ছিল আরো ‘আধুনিক’ হওয়া এবং আধুনিকতা বোঝাতে পশ্চিমের শিল্পোন্নত দেশগুলির মতো হওয়া। সাধারণ মানুষ, এমনকি বিশেষজ্ঞরা এমনই ভাবতেন। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতের সামনে আধুনিক উন্নয়নের দুটি মানদণ্ড ছিল—একটি পুঁজিবাদী মানদণ্ড যা ইউরোপের অধিকাংশ স্থানে এবং যুক্তরাষ্ট্রে এবং সমাজতান্ত্রিক মানদণ্ড যা সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত ছিল।
বিকাশের ধারণাটিকে নিয়ে যদিও বহু বিতর্কের অবতারণা হয়েছিল, কিন্তু এর সঙ্গে প্রধান কয়েকটি সাধারণ ও সকলের গ্রহণ করা উপাদান জড়িত হয়ে আছে;
সেইগুলি হল—
(ক) আধুনিকীকরণ।
(খ) উদ্যোগীকরণ।
(গ) উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার।
(ঘ) উৎপাদন বৃদ্ধি। ও
(ঙ) প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি।
প্রশ্ন ২। ভারতের পরিকল্পনা আয়োগ কখন গঠন করা হয়েছিল? এর ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভারতে পরিকল্পনা আয়োগ গঠিত হয় প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ১৯৫০ সালে। প্রথম থেকেই দেশের প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা আয়োগের পদাধিকারী সভাপতি। পরিকল্পনা আয়োগের একজন সহ-সভাপতিও আছে। ১৯৮০ সালের আগস্ট মাসে পরিকল্পনা আয়োগ নূতনভাবে গঠন করা হয়। এই নবগঠিত আয়োগে প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীসহ মোট পাঁচজন সদস্য আছে। পরিকল্পনা আয়োগের সাধারণ বিভাগে সর্বমোট ১২টি বিভাগ আছে এবং প্রত্যেক বিভাগের দায়িত্ব একজন উপদেষ্টা অথবা সচিবের হাতে ন্যস্ত থাকে।
ছায় পরিকল্পনা আয়োগের প্রধান কার্যাবলি:
(ক) দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যকে একটি সুসংহত রূপ প্রদান করা।
(খ) দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, মূলধন এবং মানব-সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার।
(গ) দেশের সম্পদের সদ্ব্যবহারের ব্যবস্থা করে অপচয় বন্ধ করা।
(ঘ) উৎপাদিত দ্রব্যসমূহের যথাযথ বণ্টন।
(ঙ) দেশের পরিকল্পনা খসড়া প্রস্তুত করা।
উল্লেখ্য, পরিকল্পনা আয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোন দায়িত্ব বহন করে না। পরিকল্পনা আয়োগ হল একটি পরামর্শদাতা সংস্থা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রস্তুত এবং পরামর্শ প্রদানই হল এর প্রধান কার্য।
প্রশ্ন ৩। বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১৯৮৬ সাল হতে মহকুমা ভিত্তিতে বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনার ব্যবস্থা করা হয়।
বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) মহকুমা ভিত্তিতে পরিকল্পনার বিকেন্দ্রীকরণ।
(খ) আঞ্চলিক সম্পদের উপযুক্ত বণ্টন-ব্যবস্থার মাধ্যমে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ।
(গ) রাজ্যের প্রতিটি অঞ্চলের সমস্যাসমূহ এবং জনসাধারণের অভাব-অভিযোগ – সমূহের উপর গুরুত্ব প্রদান এবং এদের সমাধানকল্পে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ।
(ঘ) আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যসূচীতে স্থানীয় জনসাধারণকে অংশগ্রহণ করার সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কার্যসূচী রূপায়ণ।
(ঙ) রাজ্যের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা।
মহকুমা স্তরে কর্মসূচীর অধীনে নেওয়া বিষয়গুলি হল—কৃষি উৎপাদন; ক্ষুদ্র জলসেচ; মৎস্য পালন; সামাজিক উন্নয়ন; সামাজিক বনানীকরণ; প্রাথমিক শিক্ষা; সুসংহত গ্রামোন্নয়ন কর্মসূচী; জাতীয় গ্রামীণ নিয়োগ কর্মসূচী ইত্যাদি।
পরিকল্পনা রূপায়ণের ব্যবস্থা: রিকেন্দ্রীকৃত পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা প্রয়োজন –
(ক) মহকুমা ভিত্তিতে পরিকল্পনা রূপায়ণ সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ গঠন করা। আমলাতন্ত্রকে এই ব্যাপারে যথাযথ নির্দেশ দান ও শক্তিশালী করা।
(খ) জনগণের অভাব-অভিযোগ গ্রহণ করার জন্য ব্যবস্থাদি নেওয়া বর্তমান সরকারের ‘জনতার দ্বারে জনতার সরকার’ একটি সঠিক পদক্ষেপ।
(গ) আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যসূচীতে স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণের জন্য পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত করে পঞ্চায়েতের হাতে অধিক ক্ষমতা প্রদান।
(ঘ) জেলা গ্রামোন্নয়ন সংস্থা, কৃষি বিভাগ, জেলার সাধারণ প্রশাসন এবং মহকুমা ও জেলা স্তরের অন্যান্য কর্মকর্তাগণকেও দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।
পরিকল্পনার বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা হল—সমাজে প্রত্যেক স্তরের জনগণের কাছে পরিকল্পনার সুফল পৌঁছে দেওয়া যায়। ভারতের মতো বিশাল দেশে বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
পরিকল্পনার বিকেন্দ্রীকরণের অসুবিধা হল—ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যা পরিলক্ষিত হয় সেটি হল রাজনৈতিক রঙ দেখে সুবিধা প্রাপকদের নাম নথিভুক্ত করা, অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দলের সভ্য-সমর্থকদের পরিকল্পনাভুক্ত প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রবণতা যা প্রকৃত হিতার্থীদের বঞ্চিত করে।
প্রশ্ন ৪। ভূমি সংস্কার বলতে কী বোঝ? ভূমি সংস্কারের প্রধান ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তরঃ স্বাধীনতা লাভের পর ভারত সরকার কৃষিভূমির ক্ষেত্রে বৃটিশ সরকারের গ্রহণ করা ব্যবস্থাসমূহের যে সংস্কারসাধন করা হয়েছিল তাকে ভূমি সংস্কার বলা হয়। ভূমি সংস্কার এই সময়কালের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। এই ব্যবস্থার বৃহৎ সাফল্য ছিল উপনিবেশিক শাসনকালে গড়ে তোলা জমিদার ব্যবস্থার বিলোপসাধন। জমিদারগণ কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ মনোনিবেশ করত না, কিন্তু তারা কৃষিভূমিকে নিয়ন্ত্রণ করত। জমিদারি ব্যবস্থার বিলোপসাধন কৃষিভূমিকে তাদের হাত থেকে মুক্ত করেছিল। সঙ্গে সঙ্গে ভূ-পতিগণের রাজনৈতিক শক্তি ও প্রভাব সংকুচিত হয়েছিল।
ভূমি সংস্কারের অন্য তিনটি লক্ষ্য ছিল নিম্নরূপ:
(ক) বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা ভূমিকে একত্রিত করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
(খ) সিলিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করে একজন ব্যক্তির হাতে থাকা ভূমির সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করা এবং উদ্বৃত্ত ভূমিসমূহ ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করা।
(গ) অপরের ভূমিতে ক্ষেত করা কৃষককে নিরাপত্তা প্রদান করা।
উপরোক্ত তিনটি লক্ষ্যের মধ্যে ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে প্রথম লক্ষ্যের ক্ষেত্রে কিছু সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু অন্য দুটি লক্ষ্যের ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ৫। ১৯৬৫ এবং ১৯৬৭ সালের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া বিহারের খাদ্য-সংকটের বিষয়ে ব্যাখ্যা কর। এর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ১৯৬০-এর দশকটি ছিল এক মহাদুর্যোগের সময়। ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া এবং ১৯৬৫-১৯৬৭ সালে ভয়াবহ খরা ভারতীয় অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করেছিল। এই দুর্যোগের ভয়াবহ ফলশ্রুতি ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সৃষ্টি হওয়া দুর্ভিক্ষসম পরিস্থিতি ও ব্যাপক খাদ্য সংকট।
১৯৬৫ এবং ১৯৬৬–এই দুই সালে ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অত্যন্ত কম ছিল। এর ফলে দেশে কৃষিখণ্ডের পরিমাণ ১৭% এবং খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন ২০% হ্রাস পায়। এর ফলে দ্রব্যমূল্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার অভাব থাকায় খাদ্যবস্তু আমদানি করা সম্ভব হয় নি। এইরূপ পরিস্থিতিতে ভারতবর্ষে ভয়াবহ খাদ্যসংকটের চিত্র নিম্নের তথ্য দ্বারা উপলব্ধি করা যায়:
(ক) ভারতবর্ষে খাদ্যসংকট দ্বারা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ রাজ্যটি ছিল বিহার। রাজ্যের মোট ৯টি জেলায় খাদ্যোৎপাদন অর্ধেকেরও কম হ্রাস পেয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচটি জেলায় খাদ্যবস্তুর উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশেরও কম হয়েছিল।
(খ) সাধারণত মাথাপিছু ব্যক্তির প্রতিদিন ২৪৫০ ক্যালরি খাদ্যের প্রয়োজন হয়। দুর্ভিক্ষের পূর্বে বিহারে গড় ক্যালরির পরিমাণ ছিল মাথাপিছু ২২০০। দুর্ভিক্ষের সময় ইহা ১২০০ ক্যালরিতে হ্রাস পায়।
(গ) ১৯৬৭ সালে বিহারে মৃত্যুর হার পরবর্তী বছর থেকে প্রায় ৩৪% বেশি ছিল।
(ঘ) অন্যান্য রাজ্য, বিশেষত পাঞ্জাবের মতো রাজ্যের তুলনায় বিহারে চাল ও গমের দাম দুইগুণের অধিক বৃদ্ধি পেয়েছিল। অঞ্চলভিত্তিক জোট গঠনের নীতির ফলে বিভিন্ন বাজারের মধ্যে খাদ্যের আদান-প্রদানের উপর জারি করা সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও খাদ্যসংকট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে।
ফলশ্রুতি: ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ভারত সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়। ১৯৬৬ সালের নির্ধারিত চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ১৯৬৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে আরম্ভ হয়।
পাক-ভারত যুদ্ধের সময় বিশ্বের উন্নত দেশসমূহ ভারতকে সাহায্য স্থগিত রাখে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক মুদ্রানিধি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অনুসরণ করা ‘আত্মনির্ভরশীলতা নীতি’ পরিবর্তন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
প্রশ্ন ৬। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কি? উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব কি?
উত্তরঃ অর্থনৈতিক কোন লক্ষ্য অনুযায়ী অগ্রসর হতে হলে অথবা কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে হলে পরিকল্পনার প্রয়োজন। উদ্দেশ্যমূলক কোন কার্যই হল পরিকল্পনা। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হল বিশেষ কোন সামাজিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য সফল করবার উপায়। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের সকল প্রকার সম্পদের সদ্ব্যবহার করে নির্দিষ্ট পরিমাণ উৎপাদন বৃদ্ধি করাকে ‘অর্থনৈতিক পরিকল্পনা’ বলে।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনার গুরুত্ব: ভারত প্রাকৃতিক সম্পদে সম্পদশালী দেশ। এর জনসংখ্যাও বিশাল। প্রায় দুইশত বৎসর বৃটিশ শাসনাধীনে থাকবার ফলে দেশে শাসন এবং শোষণ সমপরিমাণে চলেছিল। বিদেশি সরকার দেশের স্বার্থে অর্থনৈতিক উন্নতিসাধন করে নি। তজ্জন্য কৃষি, শিল্প প্রভৃতির পশ্চাদপদতা, কর্মসংস্থানের অভাব, জীবনযাত্রার নিম্নমান প্রভৃতি স্বভাবতই ঘটেছিল। স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের বিশাল জনসংখ্যার শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবং তার পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয়দের আয় বৃদ্ধি করতে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ বাড়াতে, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্যই অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়েছে। এই অর্থনৈতিক উন্নয়নে কেবলমাত্র ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা বা বেসরকারি প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করলেই চলবে না একথা উপলব্ধি করে সরকারি এবং বেসরকারি প্রচেষ্টায় সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেষ্টা হল। সরকারি চেষ্টায় জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা দ্রুত রূপায়ণ করা সম্ভব হয়। কারণ এমন বহু প্রকল্প আছে যেগুলির প্রয়োজনীয় আর্থিক ব্যয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। স্বাধীন ভারতের সরকার সেইজন্য পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে মনোযোগী হন। অনুন্নত দেশে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার গুরুত্ব বেশি। জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নত করে দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব। ভারতের অর্থনৈতিক জীবনযাত্রার মান উন্নত নয়। অন্যদিকে ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক। ভারতের জনসাধারণের মাথাপিছু আয় পৃথিবীর উন্নত দেশগুলির তুলনায় অনেক কম। এই সকল সমস্যাগুলি একমাত্র অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। ভারত কৃষিপ্রধান দেশ। জাতীয় আয়ের প্রায় ৫০ শতাংশ কৃষি হতে অর্জিত। কিন্তু ভারতীয় কৃষিকার্য বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে জড়িত। এই সকল সমস্যাগুলি পরিকল্পনার দ্বারা সমাধান করা সম্ভব। শিল্পোন্নয়নেও ভারত পশ্চাৎপদ। পরিকল্পনার মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে উন্নতিবিধান সম্ভব। ভারতের অধিকাংশ লোক দরিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। একমাত্র পরিকল্পনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
উপরোক্ত আলোচনা হতে এটা সহজে অনুমেয় যে, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন ৭। বাজার অর্থনীতির যুগে পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিকতা কি?
উত্তরঃ বাজার অর্থনীতির মূল কথা হচ্ছে অর্থনীতির এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বৃহৎ দেশী ও বিদেশী বাণিজ্যগোষ্ঠীর হাতে থাকবে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ; অর্থাৎ অর্থনীতির এমন এক ব্যবস্থা যেখানে মুনাফা হবে একমাত্র লক্ষ্য। মুনাফা বলতে ব্যক্তিগত মুনাফা।
আমরা যদি আমাদের দেশের ইংরাজ শাসনকালের দিকে তাকাই তাহলে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হবে না যে ভারতের দারিদ্র, অশিক্ষা, অপুষ্টি, কৃষি উৎপাদনে এবং শিল্পে পশ্চাদপদতা ইত্যাদির মূল কারণ হল ব্রিটিশরা এখানে এসেছিল শুধু মুনাফার লক্ষ্যে।
এবার আমরা যদি উন্নয়ন নিয়ে ভাবি তাহলে প্রশ্ন আসে কার উন্নয়ন হবে। কি হবে সেই উন্নয়ন। যেহেতু অর্থনীতি শব্দটি মানব সমাজের সঙ্গে জড়িত, অতএব উন্নয়ন বা অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে আমরা মানব কল্যাণকেই বুঝি।
একটি রাষ্ট্র কতটা উন্নতি করেছে তার বিচার করতে হয় সেই রাষ্ট্রের মানব উন্নয়নসূচক পর্যালোচনা থেকে। কি সেই মানব উন্নয়ন সূচক—এটি হল একটি রাষ্ট্রের শিক্ষার হার, প্রজাদের স্বাস্থ্য, মাথাপিছু খাদ্যের যোগান, শিশু ও স্ত্রী মৃত্যুর হার, জন্মহার, গড় আয়ু ইত্যাদির মূল্যায়ন। এবার আমাদেরকে ভাবতে হবে এই মানব সূচকের মান উন্নত করার ক্ষেত্রে বেসরকারি বাণিজ্যগোষ্ঠি কি আগ্রহ দেখাবে। আমাদের দেশে আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন বড় মাপের হাসপাতাল ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এসব হাসপাতালে কেবলমাত্র উচ্চবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্তরাই পরিষেবা গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে প্রায় ৭০% লোক দরিদ্র তারা কেবলমাত্র সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করতে পারেন।
উপরের এই উদাহরণ থেকে একটা ব্যাপার খুবই স্পষ্ট যে শিক্ষার হার বৃদ্ধি করা, স্বাস্থ্য সংরক্ষণ করা, খাদ্যের সমবণ্টন, শিশু ও স্ত্রী মৃত্যুর হার কমানো, জন্মহার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া সম্ভব নয়। এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে যে ব্যয় হয় তা রাষ্ট্রকেই বহন করতে হয় কারণ বাণিজ্যগোষ্ঠি এই ব্যয় বহন করার ক্ষমতা রাখে না বা যদি সক্ষম হয়ও তবুও আগ্রহী হবে না। কারণ এই ব্যয়ে শুধু মানব কল্যাণ সাধিত হবে, কোনও মুনাফা করা যাবে না।
পরিশেষে বলা যায় যে বাজার অর্থনীতির যুগ হোক বা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির যুগ হোক মানব কল্যাণের জন্য পরিকল্পনা করা এবং তাকে বাস্তবায়িত করাই একমাত্র পন্থা।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ৮। ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য কি কি?
উত্তরঃ দেশের অর্থনৈতিক কাঠামাকে সুস্থ ও সবল করে গড়ে তুলতে হলে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার প্রয়োজন। একমাত্র পরিকল্পনার মাধ্যমেই দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি করে জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব। বিভিন্ন পরিকল্পনার মুসাবিদায় অর্থনৈতিক পরিকল্পনার দীর্ঘকালীন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ ঘোষণা করা হয়:
(ক) অর্থনৈতিক বিকাশ: ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়কালে অর্থনৈতিক বিকাশ সর্বদা একটি মুখ্য উদ্দেশ্য। কয়েকটি পরিকল্পনার লক্ষ্যের বিশেষ গুরুত্ব থাকলেও বিকাশের দিকটিও প্রাধান্য পেয়েছে। পরিকল্পনাগুলিতে এই নীতির প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে যে, যদি অর্থনৈতিক বিকাশ হয় তাহলে আয়ের অসমতা দূর এবং দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান হবে।
(খ) আত্মনির্ভরশীলতা: ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মুখ্য উদ্দেশ্য হিসাবে আত্মনির্ভরশীলতাকে গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ তথাপি ভারতে খাদ্যশস্যের যোগান দিত অন্যান্য দেশ। পরিকল্পনার ফলে ভারত অনেক ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হয়েছে।
(গ) নিয়োগ বৃদ্ধি: ভারতে দরিদ্রতা দূরীকরণের জন্য বেকার সমস্যা সমাধান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেকার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দরিদ্রতাও বৃদ্ধি পায়। সুতরাং নিয়োগ বৃদ্ধি করা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার একটি মুখ্য উদ্দেশ্য। বিভিন্ন পরিকল্পনায় নিয়োগের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী তৈরি করা হয়েছে।
(ঘ) আয়ের পার্থক্য দূরীকরণ: প্রত্যেক পরিকল্পনাতেই আয়ের পার্থক্য দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে সরকারি আইনের সাহায্যে কৃষিখণ্ডে সকল প্রকার মধ্যস্থতাকারীকে দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে।
(ঙ) দারিদ্র দূরীকরণ: দরিদ্রতা দূরীকরণ কর্মসূচী পঞ্চম পরিকল্পনায় প্রথম বারের মতো মূল লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা হয়। প্রথম দুই দশকে দরিদ্র শ্রেণী বেশি পরিমাণে উপকৃত হতে পারেনি। বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী প্রণয়নের ফলে দারিদ্র্য সীমারেখা অনেকাংশে কমেছে।
প্রশ্ন ৯। ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার যে-কোন চারটি সাফল্যের ক্ষেত্র এবং যে-কোন চারটি অসাফল্যের ক্ষেত্রের উপর অঙ্গুলি নির্দেশ কর।
উত্তরঃ ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সাফল্য ও অসাফল্য উভয়ই পরিলক্ষিত হয়।
সাফল্য: বিভিন্ন পরিকল্পনার সাফল্যের প্রধান প্রধান ক্ষেত্রসমূহ নিম্নরূপ –
(ক) ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য হল অর্থনৈতিক বিকাশ। প্রত্যেক পরিকল্পনাতেই জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।
(খ) বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষির যথেষ্ট উন্নতি সাধন হয়। খাদ্যশস্যে ভারত আজ স্বনির্ভর।
(গ) শিল্পের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন পরিকল্পনায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য পরিলক্ষিত হয়। শিল্পের ক্ষেত্রে সপ্তম পরিকল্পনার সাফল্য উল্লেখযোগ্য।
(ঘ) বিদ্যুৎশক্তি ও পরিবহণের ক্ষেত্রেও অধিকাংশ পরিকল্পনায় প্রভূত উন্নতি বা সাফল্য ঘটে।
(ঙ) দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন পরিকল্পনায় সাফল্য পরিলক্ষিত হয়।
অসাফল্য: নিম্নলিখিত কয়েকটি ক্ষেত্রে অসাফল্য পরিলক্ষিত হয়:
(ক) বেকার সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পরিকল্পনায় বিভিন্ন প্রকল্প চালু হলেও বেকার সমস্যা সমাধান সম্ভব হয়নি।
(খ) পরিকল্পনাসমূহে দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচী গ্রহণ করা হলেও দারিদ্র দূরীকরণ পূর্ণমাত্রায় সম্ভব হয়নি।
(গ) বিভিন্ন পরিকল্পনায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী গ্রহণ করা হলেও তা পূর্ণমাত্রায় সফল হয়নি।
(ঘ) বিভিন্ন পরিকল্পনাকালে আর্থিক বৈষম্যও আশানুরূপ ভাবে হ্রাস পায়নি।
(ঙ) পরিকল্পনাকালে মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ করাও সম্ভব হয়নি।
প্রশ্ন ১০। ভারতে ১৯৬০-এর দশকে খাদ্যসঙ্কট সংক্ষেপে আলোচনা কর। এর পরিণতি কি ছিল?
উত্তরঃ ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ১৯৬০-এর দশকটি ছিল এক মহাদুর্যোগের সময়। ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া এবং ১৯৬৫-১৯৬৭ সালে ভয়াবহ খরা ভারতীয় অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করেছিল। এই দুর্যোগের ভয়াবহ ফলশ্রুতি ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সৃষ্টি হওয়া দুর্ভিক্ষসম পরিস্থিতি ও ব্যাপক খাদ্য সংকট।
১৯৬৫ এবং ১৯৬৬–এই দুই সালে ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অত্যন্ত কম ছিল। এর ফলে দেশে কৃষিখণ্ডের পরিমাণ ১৭% এবং খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন ২০% হ্রাস পায়। এর ফলে দ্রব্যমূল্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার অভাব থাকায় খাদ্যবস্তু আমদানি করা সম্ভব হয় নি। এইরূপ পরিস্থিতিতে ভারতবর্ষে ভয়াবহ খাদ্যসংকটের চিত্র নিম্নের তথ্য দ্বারা উপলব্ধি করা যায়:
(ক) ভারতবর্ষে খাদ্যসংকট দ্বারা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ রাজ্যটি ছিল বিহার। রাজ্যের মোট ৯টি জেলায় খাদ্যোৎপাদন অর্ধেকেরও কম হ্রাস পেয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচটি জেলায় খাদ্যবস্তুর উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশেরও কম হয়েছিল।
(খ) সাধারণত মাথাপিছু ব্যক্তির প্রতিদিন ২৪৫০ ক্যালরি খাদ্যের প্রয়োজন হয়। দুর্ভিক্ষের পূর্বে বিহারে গড় ক্যালরির পরিমাণ ছিল মাথাপিছু ২২০০। দুর্ভিক্ষের সময় ইহা ১২০০ ক্যালরিতে হ্রাস পায়।
(গ) ১৯৬৭ সালে বিহারে মৃত্যুর হার পরবর্তী বছর থেকে প্রায় ৩৪% বেশি ছিল।
(ঘ) অন্যান্য রাজ্য, বিশেষত পাঞ্জাবের মতো রাজ্যের তুলনায় বিহারে চাল ও গমের দাম দুইগুণের অধিক বৃদ্ধি পেয়েছিল। অঞ্চলভিত্তিক জোট গঠনের নীতির ফলে বিভিন্ন বাজারের মধ্যে খাদ্যের আদান-প্রদানের উপর জারি করা সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও খাদ্যসংকট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে।
ফলশ্রুতি: ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ভারত সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়। ১৯৬৬ সালের নির্ধারিত চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ১৯৬৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে আরম্ভ হয়।
পাক-ভারত যুদ্ধের সময় বিশ্বের উন্নত দেশসমূহ ভারতকে সাহায্য স্থগিত রাখে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক মুদ্রানিধি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অনুসরণ করা ‘আত্মনির্ভরশীলতা নীতি’ পরিবর্তন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
প্রশ্ন ১১। সবুজ বিপ্লব বলতে কি বোঝ? এর ফলাফল সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা,
সবুজ বিপ্লব কি? সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ খাদ্য সমস্যা সমাধানের জন্য তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হতে এক নূতন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৬০-৬১ সাল হতে ভারতের সাতটি জেলাকে নিবিড় কৃষি জেলা প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। জলসেচের সুবিধা থাকা জেলাগুলিকেই পছন্দ করা হয়। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল সেচসেবিত এলাকায় উন্নত ধরনের বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ঔষধ ইত্যাদি ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
এই নূতন কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে কৃষি উৎপাদন এত দ্রুত বৃদ্ধি পায় যে অনেকে একে বিপ্লবাত্মক আখ্যা দিয়েছেন। উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার এই ঘটনাকেই সবুজ বিপ্লব বা Green Revolution বলা হয়।
ইতিবাচক ফলাফল:
(ক) উৎপাদন বৃদ্ধি: নূতন প্রযুক্তি গ্রহণ করার ফলে মোট উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল, দেশ খাদ্যশস্যে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছিল। বিদেশ হতে খাদ্যশস্য আমদানি বন্ধ করা হয়েছে।
(খ) কর্মসংস্থান বৃদ্ধি: নূতন প্রযুক্তির ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা বছর একাধিকবার ফসল ফলানোর জন্য শ্রমের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে।
নেতিবাচক ফলাফল:
(ক) বৃহৎ চাষির সুবিধা: নূতন প্রযুক্তির সুফল বৃহৎ চাষি অধিক পরিমাণে ভোগ করেছে। নূতন প্রযুক্তি অধিক ব্যয়সাধ্য বলে ছোট চাষি নূতন প্রযুক্তির সুফল গ্রহণ করতে পারছে না। ফলে গ্রামাঞ্চলে আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(খ) আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধি: সবুজ বিপ্লবের ফলে রাজ্যগত ও অঞ্চলগত বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সবুজ বিপ্লবের প্রথম পর্যায়ে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি গম উৎপাদক এলাকাগুলি অধিক উন্নত হয়। অন্যান্য এলাকাগুলিতে উৎপাদন বৃদ্ধি না পাওয়ায় আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন ১২। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিল্পায়ন ও কৃষির উন্নতিতে কি লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল?
উত্তরঃ প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষিখণ্ডের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিল্পায়নের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হলেও কৃষিখণ্ডকে অবহেলা করা হয়নি। এই বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল যে ভারতের মতো অনগ্রসর অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে কৃষির উন্নতি না শিল্পায়ন কোনটি অধিক কার্যকরী হবে। জে. সি. কুমারাপ্পার মতো গান্ধীবাদী অর্থনীতিবিদরা গ্রামীণ শিল্পায়নের উপর জোর দিয়েছিলেন। কৃষক নেতা চৌধুরী চরণ সিং কৃষিখণ্ডের উন্নতিতে জোর দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। আবার অন্য এক দল শিল্পায়নের পক্ষপাতী ছিলেন। তারা ভেবেছিলেন যে শিল্পায়ন ব্যাপক বৃদ্ধি না পেলে দেশের অর্থনীতি দারিদ্রের চক্র থেকে মুক্তি পাবে না।
তারা শিল্পায়নের স্বপক্ষে নিম্নোক্ত যুক্তি দিয়েছিলেন:
(ক) ভারতের অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষার জন্য, সামরিক শক্তি বৃদ্ধির কারণে শিল্পায়ন একান্ত আবশ্যক এবং তা দ্রুত সম্পাদন করতে হবে।
(খ) বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের উন্নীত করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ দ্বারা শিল্পায়ন করতে হবে। তাতে কৃষিরও উপকার হবে।
(গ) দারিদ্র দূরীকরণ এবং কর্মসংস্থানের জন্যও শিল্পায়নের কোন বিকল্প নেই। আমাদের বর্তমান কৃষিব্যবস্থা সংঘবদ্ধ কর্মসংস্থান করতে অপারগ।
এই সবকিছু বিবেচনা করে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া করেন প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশের নেতৃত্বে একদল অর্থনীতিবিদ। তারা ভারী ও মৌলিক শিল্প গড়ে তোলার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। সাথে সাথে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনের উপরও যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেন ৮০.৫ মিলিয়ন টন। রেল ও সড়ক উন্নয়নেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়। সর্বোপরি জীবনধারণের মান উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের উপর জোর দেওয়া হয়।
প্রশ্ন ১৩। বিশ্বায়নের যুগে পরিকল্পনা কতটা প্রাসঙ্গিক? আলোচনা কর।
উত্তরঃ অর্থনৈতিক কোন লক্ষ্য অনুযায়ী অগ্রসর হতে হলে অথবা কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে হলে পরিকল্পনার প্রয়োজন। উদ্দেশ্যমূলক কার্যই হল পরিকল্পনা। ভারত প্রাকৃতিক সম্পদে সম্পদশালী একটি দেশ। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক পরিকল্পনা একান্ত প্রয়োজন। ভারতে পরিকল্পনা আয়োগ গঠিত হয় প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ১৯৫০ সালে এবং তারপর একের পর এক পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে সুস্থ ও সবল করে গড়ে তোলার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সমগ্র বিশ্বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখা যায়। ফলে সমগ্র বিশ্বে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার যেমন কিছু ইতিবাচক প্রভাব আছে, তেমনই কিছু নেতিবাচক প্রভাবও আছে। বিশ্বায়নের ফলে বহুজাতিক সংস্থা অর্থাৎ কোম্পানীসমূহের সারা বিশ্বে এখন বাড়বাড়ন্ত। বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্রের ক্ষমতা বহুল পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণাটি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
এই প্রক্রিয়ায় আরও কিছু কারক বর্তমান; যথা—IME, WTO, WSF ইত্যাদি। বিশ্বায়ন রাষ্ট্রের পরম্পরাগত সার্বভৌমত্বের উপর প্রভাব বিস্তার করে। তা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবক্ষয় করে। রাষ্ট্র অনেক সময় স্বাধীনভাবে নিজ ইচ্ছানুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ অধিকাংশ রাষ্ট্রে বিধিনিয়ম তৈরি করে দেয়। এমন কোন পরিস্থিতিতে কতিপয় রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধান বেসরকারি খণ্ডের মতানুসারে পরিবর্তিত হয়। কোন কোন রাষ্ট্রের সরকারকে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষাকারী আইন, পরিবেশ সুরক্ষাকারী আইন ইত্যাদি পরিত্যাগে বাধ্য করানো হয়। কোন রাষ্ট্রের পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অতএব বিশ্বায়নের যুগে আর কোন রাষ্ট্রের নিজ মতানুসারে পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ণ প্রায় অসম্ভব। তাদের নির্ভর করতে হয় বিশ্ব ব্যাঙ্ক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ কর্তৃক আরোপিত শর্তাবলীর উপর। অতএব একথা আজ পরিষ্কার যে বিশ্বায়নের যুগে কোন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ণ কিছুটা হলেও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ
প্রশ্ন ১। বম্বে পরিকল্পনা বিষয়ে নীচে দেওয়া কোন্ উক্তিটি অশুদ্ধ:
(ক) ভারতের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির রূপরেখা ছিল।
(খ) উদ্যোগের ক্ষেত্রে রাজ্যের মালিকানাস্বত্বকে সমর্থন করেছিল।
(গ) কয়েকজন প্রথম সারির শিল্পপতি তৈরি করেছিল।
(ঘ) পরিকল্পনার ধারণাটিকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিল।
উত্তরঃ (ক) ভারতের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির রূপরেখা ছিল।
প্রশ্ন ২। নীচের উল্লেখ করা কোন্ ধারণা ভারতের বিকাশ নীতির প্রারম্ভিক সময়ের অংশ ছিল না?
(ক) পরিকল্পনা।
(খ) সমবায় কৃষিখামার।
(গ) উদারীকরণ।
(ঘ) আত্মনির্ভরশীলতা।
উত্তর। (গ) উদারীকরণ।
প্রশ্ন ৩। ভারতের পরিকল্পনার ধারণাটি নেওয়া হয়েছে-
(ক) বোম্বে পরিকল্পনা হতে।
(খ) সোভিয়েত গোষ্ঠীর দেশসমূহের অভিজ্ঞতা হতে।
(গ) সমাজ বিষয়ে গান্ধীর দৃষ্টিভঙ্গি হতে।
(ঘ) কৃষক সংগঠনসমূহের দাবি হতে।
উত্তরঃ (খ) সোভিয়েত গোষ্ঠীর দেশসমূহের অভিজ্ঞতা হতে।
প্রশ্ন ৪। শুদ্ধ করে মেলাও:
(a) চরণ সিং।
(b) পি. সি. মহলানবীশ।
(c) বিহার দুর্ভিক্ষ।
(d) ভার্গিস কুরিয়েন।
(i) উদোগীকরণ।
(ii) মণ্ডলীকরণ।
(iii) কৃষক।
(iv) দুগ্ধ সমবায়।
উত্তরঃ (a) চরণ সিং।
(b) পি. সি. মহলানবীশ।
(c) বিহার দুর্ভিক্ষ।
(d) ভার্গিস কুরিয়েন।
(iii) কৃষক।
(i) উদোগীকরণ।
(ii) মণ্ডলীকরণ।
(iv) দুগ্ধ সমবায়।
প্রশ্ন ৫। স্বাধীনতার সময়ে বিকাশের জন্য গ্রহণ করা পদ্ধতিসমূহের প্রধান পার্থক্যসমূহ কি ছিল? বিতর্কসমূহের সমাধান হইয়াছে কি?
অথবা,
ভারতের স্বাধীনতার প্রারম্ভিককালে পরিকল্পিত বিকাশের সঙ্গে জড়িত মূল বিতর্কসমূহের বিষয়ে আলোচনা কর।
অথবা,
প্রথমদিককার সময়ে ভারতের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত বিতর্ক দুটি আলোচনা কর।
অথবা,
ভারতের স্বাধীনতার শুরুতে পরিকল্পিত বিকাশের সঙ্গে উদ্ভব হওয়া মূল বিতর্কগুলির আলোচনা কর।
উত্তরঃ স্বাধীন ভারতের নেতৃবর্গের কাছে কেবলমাত্র জাতি গঠন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না, দেশের পরিকল্পিত বিকাশ কিভাবে সাধিত হবে তাও প্রধান বিচার্য ছিল। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রভাব যাতে সমাজের সকল স্তরেই জনসাধারণের কাছে পৌঁছায় এমন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা সেই সময় জরুরি ছিল। কোন্ প্রথ অবলম্বন করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়ের মাধ্যমে দ্রুত এবং সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয় সম্ভবপর হবে সেটাই ছিল মূল বিতর্ক। উন্নয়নের পরিভাষা বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন ছিল। অনেকে মনে করতেন পুঁজিবাদী উন্নয়নই প্রকৃত উন্নয়ন; আবার অনেকে মনে করতেন সমাজতান্ত্রিক উন্নয়নই কেবল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে পারে।
স্বাধীনতার সময়ে ভারতের সামনে উন্নয়নের দুইটি মডেল ছিল। একটি হল উদারনৈতিক পুঁজিবাদী মডেল এবং অন্যটি ছিল সমাজতান্ত্রিক মডেল। প্রথম মডেলটি ইউরোপ ও আমেরিকা অনুসৃত এবং দ্বিতীয় মডেলটি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র অনুসৃত। ভারতের নেতৃবৃন্দ ও জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ উন্নয়নের সোভিয়েত মডেল দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টি, সমাজবাদী পার্টি এমনকি পণ্ডিত নেহেরুর মতো কংগ্রেসের মধ্যে গণতান্ত্রিক সমাজবাদীগণও সোভিয়েত উন্নয়ন মডেলের সমর্থক ছিলেন। অতি অল্পসংখ্যক পুঁজিবাদী উন্নয়ন মডেলের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু এই নেতৃবৃন্দ ও চিন্তাবিদদের মধ্যে অনেকে শিল্পায়নের পক্ষপাতী, আবার অনেকে কৃষি উন্নয়নের পক্ষপাতী ছিলেন।
অবশ্য এই পার্থক্য কালক্রমে দূরীভূত হয়ে যায়। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষির উপর এবং দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিল্পের উপর অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়।
প্রশ্ন ৬। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কি বিষয়ের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল? দ্বিতীয় পরিকল্পনা প্রথম পরিকল্পনা হতে কি কি বিষয়ে পৃথক?
উত্তরঃ প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৫১-৫৬) দেশের অর্থনীতিকে দরিদ্রতার চক্র হতে মুক্ত করতে চেয়েছিল এবং তা কৃষিখণ্ড, বিশেষত বাঁধ নির্মাণ ও জলসেচের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছিল। প্রথম পরিকল্পনা দেশের ভূমিবণ্টন ব্যবস্থাকে কৃষির উন্নতির পথে প্রধান অন্তরায় হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। সুতরাং দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসাবে ভূমিসংস্কারের উপর প্রথম পরিকল্পনা আলোকপাত করেছে।
দ্বিতীয় পরিকল্পনার খসড়া মহলানবীশের নেতৃত্বে অর্থনীতিবিদগণ তৈরি করেছিলেন। দ্বিতীয় পরিকল্পনা ভারী শিল্পস্থাপন ও সম্প্রসারণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিল এবং সর্বক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তনের পক্ষপাতী ছিল।
প্রশ্ন ৭। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়ে উদ্যোগীকরণ ও কৃষিখণ্ডে বিকাশের ক্ষেত্রে হওয়া বিতর্কের প্রধান যুক্তিসমূহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা,
দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়ে উদ্যোগীকরণ ও কৃষি বিকাশের বিকাশের মধ্যে উদ্ভুত বিতর্কের বর্ণনা কর।
উত্তরঃ প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষিখণ্ডের উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করলেও দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উদ্যোগীকরণের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কৃষিখণ্ডের উপর অগ্রাধিকার ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। ১৯৫০-এর দশকে সূচনা করা ভূমি সংস্কারের উপর সরকার প্রয়োজনীয় মনোনিবেশ করেনি। অন্যদিকে উদ্যোগীকরণের ক্ষেত্রেও গ্রামাঞ্চলের পরিবর্তে নগরাঞ্চলে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয় যা গান্ধী দর্শনের সম্পূর্ণ বিপরীত। এই পরিস্থিতিতে বিশিষ্ট গান্ধীবাদী অর্থনীদিবিদ জে. সি. কুমারাপ্পা গ্রামাঞ্চলে ঔদ্যোগীকরণের উপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে এক বিকল্প অর্থনৈতিক ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে উত্থাপন করেছিলেন। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও কৃষকনেতা চৌধুরী চরণ সিংও কৃষিখণ্ডে ভারতীয় পরিকল্পনার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিশেষত, রাজনীতিবিদ, অর্থনীদিবিদ, পরিকল্পনা রচয়িতাগণ বিকাশের ক্ষেত্রে উদ্যোগীকরণের স্বপক্ষে নিম্নোক্ত যুক্তিসমূহের অবতারণা করেন:
(ক) ভারতবর্ষের অর্জিত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অপরিহার্য। এই লক্ষ্যে উপনীত হতে উদ্যোগীকরণ একান্ত আবশ্যক।
(খ) বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি মুখ্য স্থান অধিকার করা ভারতের মুখ্য উদ্দেশ্য। এই লক্ষ্যে উপনীত হতে উদ্যোগীকরণ তথা বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিকাশ অপরিহার্য।
(গ) দরিদ্রতার পাকচক্র হতে মুক্তি লাভের জন্য দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজন। এর জন্য উদ্যোগীকরণের উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করা বাঞ্ছনীয়।
(ঘ) দ্রুত উদ্যোগীকরণের মাধ্যমেই দ্রুত মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন ৮। “ভারতীয় নীতি প্রণয়নকারী অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের ভূমিকার উপর ঝোঁক দিয়ে ভুল করেছিলেন। ভারত ভালোভাবে উন্নতি করতে পারত যদি প্রথম থেকে বেসরকারি ক্ষেত্রকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হত।” এই বিবৃতির পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি দেখাও।
উত্তরঃ বেসরকারি ক্ষেত্রকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করা যায়, কারণ—
(ক) বেসরকারি ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পায় এবং দেশের কর্মপ্রার্থী যুবক-যুবতীদের অর্থ উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়; তাতে বেকার সমস্যার চাপ কমে।
(খ) বেসরকারি ক্ষেত্র দ্বারা সম্পদ সৃষ্টি হয় এবং বাণিজ্যিক বিকাশের ফলে সরকারের কোষাগারের শ্রীবৃদ্ধি হয় বিভিন্ন কর এবং রাজস্বের মাধ্যমে, যা সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ করতে পারে।
কিন্তু কেবলমাত্র বেসরকারি ক্ষেত্রকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলেই দেশের প্রভূত উন্নতি হবে এই ধারণা পোষণ করা ঠিক হবে না, কারণ—
(ক) ভারতের মতো দেশে যেখানে শিক্ষার হার খুবই কম, প্রবল দ্রারিদ্র বর্তমান, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ তদুপরি ৭০ শতাংশ লোক গ্রামে বাস করে সেখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা অপরিহার্য। এত জনসংখ্যা যে দেশের সেই দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কল্যাণমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ ইত্যাদি রাষ্ট্র ছাড়া বেসরকারি ক্ষেত্র আগ্রহ দেখাবে না। কারণ এইসব কাজ ব্যয়বহুল এবং এতে বেসরকারি সংস্থার কোন আর্থিক লাভ নেই।
(খ) বেসরকারি ক্ষেত্র সেইসব জায়গাতেই মনোনিবেশ করবে যেখানে তার লাভ আছে এবং এই ‘লাভ’ যার মুখ্য উদ্দেশ্য সমাজকল্যাণ অবশ্যই তার বিচাৰ্যবিশয় হতে পারে না। আমেরিকার মতো দেশে যেখানে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বর্তমান সেখানেও সমাজকল্যাণের জন্য রাষ্ট্রই বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিতে বাধ্য থাকে।