Class 11 Logic and Philosophy Chapter 7 জ্ঞানতত্ব : বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদ

Class 11 Logic and Philosophy Chapter 7 জ্ঞানতত্ব : বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদ answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Logic and Philosophy Chapter 7 জ্ঞানতত্ব : বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদ and select needs one.

Class 11 Logic and Philosophy Chapter 7 জ্ঞানতত্ব : বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদ

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Logic and Philosophy Chapter 7 জ্ঞানতত্ব : বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদ Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

জ্ঞানতত্ব : বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদ

পাঠ:

দ্বিতীয় খণ্ড

 অতি- সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। “বুদ্ধিতে এমন কোনো জিনিস বা উপাদান নেই, যাকে ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আগে লাভ করা যায় না।” (There is nothing in the intellect which was not previously in the senses.) উক্তিটি কার? 

উত্তরঃ জন লক্ (John Locke )।

প্রশ্ন ২। “বুদ্ধিতে এমন কোনো জিনিস বা উপাদান নেই, যাকে ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আগে লাভ করা যায় না, শুধুমাত্র বুদ্ধি ছাড়া।” (There is nothing in the intellect which was not previously in the senses, except the intellect itself.) উক্তিটি কার? 

উত্তরঃ লাইবনিজ বা লিবনিৎজ (Leibnitz)।  

প্রশ্ন ৩। দুজন বুদ্ধিবাদী গ্রিক দার্শনিকের নাম লেখো। 

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

উত্তরঃ সক্রেটিস এবং প্লেটো।

প্রশ্ন ৪। তিনজন বুদ্ধিবাদী আধুনিক দার্শনিকের নাম লেখো। 

উত্তরঃ ডেকার্ত, স্পিনোজা এবং লাইবনিজ।

প্রশ্ন ৫। আধুনিক পাশ্চাত্য দার্শনিকের নাম কী? 

উত্তরঃ রেনে ডেকার্ত (Rene Descartes)।

প্রশ্ন ৬। তিনজন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকের নাম লেখো। 

উত্তরঃ লক্, বার্কলে, হিউম।

প্রশ্ন ৭। বুদ্ধিবাদীদের মতে যথার্থ জ্ঞানের উৎস কী?

উত্তরঃ বুদ্ধি।

প্রশ্ন ৮। অভিজ্ঞতাবাদীদের মতে যথার্থ জ্ঞানের উৎস কী?

উত্তরঃ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতা।

প্রশ্ন ৯। “ইন্দ্রিয়তে যা থাকে না, বুদ্ধিতে তা থাকে না।” উক্তিটি কার?

উত্তরঃ জন লক্।

প্রশ্ন ১০। “ইন্দ্রিয়তে যা থাকে না, বুদ্ধিতে তা থাকে না, একমাত্র বুদ্ধি ছাড়া।” উক্তিটি কার?

উত্তরঃ লাইবনিজ।

প্রশ্ন ১১। “জন্মের সময় মানুষের মন থাকে অলিখিত সাদা কাগজের মতো”। উক্তিটি কার?

উত্তরঃ জন লক্।

প্রশ্ন ১২। “জন্মের সময় ঈশ্বর মানুষের মনে কিছু ধারণা মুদ্রিত করে দেন—এগুলোকে বলে অন্তর্জাত ধারণা।” উক্তিটি কার?

উত্তরঃ রেনে ডেকার্ত।

প্রশ্ন ১৩। ডেকার্তের মতে, মানুষের মনে কয় প্রকারের ধারণা থাকে এবং সেগুলি কী কী?

উত্তরঃ তিন প্রকারের—আগন্তুক ধারণা, কাল্পনিক ধারণা এবং অন্তর্জাত বা সহজাত ধারণা।

প্রশ্ন ১৪। অভিজ্ঞতাবাদ মতটি সর্বপ্রথম কে প্রবর্তন করেছিলেন?

উত্তরঃ গ্রিক পরমাণুবাদী সফিস্টরা।

 প্রশ্ন ১৫। হিউমকে কেন সংশয়বাদী দার্শনিক বলা হয়?

উত্তরঃ হিউম-এর মতে, সকল জ্ঞানই সম্ভাব্য, এজন্য হিউমকে সংশয়বাদী দার্শনিক বলা হয়।

প্রশ্ন ১৬। কে প্রথম সন্দেহবাদকে দর্শনে প্রয়োগ করেছিলেন?

উত্তরঃ রেনে ডেকার্ত।

প্রশ্ন ১৭। কে ‘মোনাড়’ শব্দটি তাঁর দর্শনে ব্যবহার করেছিলেন?

উত্তরঃ লাইবনিজ।

প্রশ্ন ১৮। ‘মোনাড়’ কী?

উত্তরঃ আধ্যাত্মিক সত্তা বা আত্মা বা মন।

প্রশ্ন ১৯। মোনাডের সংখ্যা কত?

উত্তরঃ অগণিত বা অসংখ্য।

প্রশ্ন ২০। ডেকার্ড কি একজন গণিতজ্ঞ দার্শনিক?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ২১। ডেকার্ত দর্শনে কোন্ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন? 

উত্তরঃ গাণিতিক পদ্ধতি।

প্রশ্ন ২২। কে অভিজ্ঞতাবাদকে প্রণালীবদ্ধভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন? 

উত্তরঃ দার্শনিক বেকন্।

প্রশ্ন ২৩। লকে্র মতে দুই প্রকার অভিজ্ঞতা কী কী?

উত্তরঃ সংবেদন এবং অন্তর্দর্শন।

প্রশ্ন ২৪। কে বা কারা স্বীকার করেছিলেন, মানুষের মনের কিছু কিছু ধারণা অন্তর্জাত?

উত্তরঃ ডেকার্ত এবং স্পিনোজা।

প্রশ্ন ২৫। কার মতে মানুষের মনের সকল ধারণা অন্তর্জাত?

উত্তরঃ লাইবনিজ।

প্রশ্ন ২৬। অভিজ্ঞতা কয় প্রকারের হয় এবং কী কী?

উত্তরঃ দুই প্রকারের—সংবেদন এবং অন্তর্দর্শন।

প্রশ্ন ২৭। ‘Essay Concerning Human Understanding’ (মানবীয় বুদ্ধি-বিষয়ক প্রবন্ধ) গ্রন্থটি কার লেখা?

উত্তরঃ জন লক্।

প্রশ্ন ২৮। সংবেদন কী?

উত্তরঃ সংবেদন আমাদের বাইরের জগতের বস্তুসমূহের অর্থাৎ বর্ণ, গন্ধ ইত্যাদির জ্ঞান দেয়।

প্রশ্ন ২৯। অন্তদর্শন কী?

উত্তরঃ অন্তদর্শন আমাদের নিজের অন্তরের সুখ, দুঃখ, ভয়, আনন্দ ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান দেয়। 

প্রশ্ন ৩০। লাইবনিজের মতে সত্তা কী?

উত্তরঃ সত্তা হল শাশ্বত অস্তিত্বশীল এবং অবিভাজ্য।

প্রশ্ন ৩১। অবিভাজ্য সত্তাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লাইবনিজ কোন্ মতবাদের সাহায্য নিয়েছেন?

উত্তরঃ গ্রিক পরমাণুবাদীদের। 

প্রশ্ন ৩২। গ্রিক পরমাণুবাদীদের মতে পরমাণু কী?

উত্তরঃ অবিভাজ্য ভৌতিক কণা। 

প্রশ্ন ৩৩। লাইবনিজের মতে, আদর্শ পরমাণুর নাম কী?

উত্তরঃ চিৎ পরমাণু বা ‘মোনাড’। 

প্রশ্ন ৩৪। লাইবনিজের মতে, সর্বশ্রেষ্ঠ চিৎ পরমাণু বা সর্বশ্রেষ্ঠ মোনাড কী?

উত্তরঃ ঈশ্বর। ঈশ্বরকে ‘মোনাডদের মোনাড়’ বলা হয়। 

প্রশ্ন ৩৫। কে মন বা আত্মাকে ‘মোনাড়’ বলেছেন?

উত্তরঃ লাইবনিজ।

প্রশ্ন ৩৬। লাইবনিজের মতে, “মোনাড় পরিবর্তনশীল এবং সংখ্যায় অগণিত”।—উদ্ভি কি সত্য?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৩৭। লক্ ছাড়া আর কোন্ কোন্ দার্শনিক মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের পৃথকীক স্বীকার করেন?

উত্তরঃ ডেকার্ত, হবস্, স্পিনোজা।

প্রশ্ন ৩৮। “আত্মা সতত সক্রিয় এবং বুদ্ধি তার সহজাত ক্ষমতা।” উক্তিটি কার?

উত্তরঃ গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর। 

প্রশ্ন ৩৯। কোন্ মতবাদ বিশ্বাস করে যে, জ্ঞান পূর্বতঃ সিদ্ধ (a priori)।

উত্তরঃ বুদ্ধিবাদ।

প্রশ্ন ৪০ বুদ্ধিবাদীরা যে দুই ধরনের বচন স্বীকার করেন, সেগুলো কী কী? 

উত্তরঃ (ক) পূর্বতঃ সিদ্ধ বিশ্লেষক বচন। এবং 

(খ) পূর্বতঃ সিদ্ধ সংশ্লেষক বচন।

শুদ্ধ উত্তর দাও:

১। বুদ্ধিবাদ মতে, বুদ্ধি/অভিজ্ঞতা জ্ঞানের উৎস।

উত্তরঃ বুদ্ধি।

২। অভিজ্ঞতাবাদ মতে, বুদ্ধি/অভিজ্ঞতা জ্ঞানের উৎস। 

উত্তরঃ অভিজ্ঞতা।

৩। ডেকার্ত একজন বুদ্ধিবাদী/অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক।

উত্তরঃ বুদ্ধিবাদী। 

৪। স্পিনোজা একজন বুদ্ধিবাদী/অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক।

উত্তরঃ বুদ্ধিবাদী।

৫। লাইনিজ একজন বুদ্ধিবাদী/অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক। 

উত্তরঃ বুদ্ধিবাদী।

৬। লক্ একজন বুদ্ধিবাদী/অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক। 

উত্তরঃ অভিজ্ঞতাবাদী।

৭। বার্কলে একজন বুদ্ধিবাদী/অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক। 

উত্তরঃ অভিজ্ঞতাবাদী।

৮। হিউম একজন বুদ্ধিবাদী/অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক। 

উত্তরঃ অভিজ্ঞতাবাদী।

৯। বুদ্ধিবাদের মতে স্বতঃসিদ্ধ অন্তর্জাত ধারণা থেকে বুদ্ধি/অভিজ্ঞতা জ্ঞান গঠন করে।

উত্তরঃ বুদ্ধি। 

১০। অভিজ্ঞতাবাদের শেষ পরিণতি বুদ্ধিবাদ/সংশয়বাদ।

উত্তরঃ সংশয়বাদ।

১১। “বুদ্ধিতে এমন কোনো জিনিস বা উপাদান নেই, যাকে ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আগে লাভ করা যায় না।” উক্তিটি লকের/লাইবনিজের। 

উত্তরঃ লকের।

১২। “বুদ্ধিতে এমন কোনো জিনিস বা উপাদান নেই, যাকে ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আগে লাভ করা যায় না, একমাত্র বুদ্ধি ছাড়া।” উক্তিটি লকের/লাইবনিজের।

উত্তরঃ লাইনিজের। 

১৩। বুদ্ধিবাদের মতে, জ্ঞান প্রত্যক্ষপূর্ব/প্রত্যক্ষোত্তর।

উত্তরঃ প্রত্যক্ষপূর্ব।

১৪। “জন্মের সময় মানুষের মন একটি পরিষ্কার স্লেট বা টেবুলা রাশার মতো থাকে।” উক্তিটি ডেকার্তের/লকের/হিউমের। 

উত্তরঃ লকের।

১৫। ডেকার্তের/লকের মতে, মানুষ জন্ম থেকেই কতকগুলি সহজাত ধারণা নিয়ে জন্মায়। 

উত্তরঃ ডেকার্তের।

১৬। অভিজ্ঞতাবাদের মতে, সকল জ্ঞানই পরতঃসাধ্য/পূর্বতঃ সিদ্ধ।

উত্তরঃ পরতঃসাধ্য।

শূন্যস্থান পূর্ণ করো:

১। বুদ্ধিবাদ মতে ______ হল জ্ঞানের উৎস।

উত্তরঃ বুদ্ধি।

২। অভিজ্ঞতাবাদ মতে ______ হল জ্ঞানের উৎস।

উত্তরঃ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতা। 

৩। ডেকার্ত একজন ______ দার্শনিক ছিলেন।

উত্তরঃ বুদ্ধিবাদী।

৪। লকের মতে জন্মের সময় মানুষের মন থাকে ______ মতো।

উত্তরঃ একটি সাদা কাগজের।

৫। অভিজ্ঞতাবাদের শেষ পরিণতি ______।

উত্তরঃ সংশয়বাদ।

৬। অভিজ্ঞতাবাদের মতে মন সংবেদনের ______ গ্রহীতা।

উত্তরঃ নিষ্ক্রিয়। 

৭। স্পিনোজা একজন ______ দার্শনিক।

উত্তরঃ বুদ্ধিবাদী। 

৮। লাইবনিজ একজন ______ দার্শনিক।

উত্তরঃ বুদ্ধিবাদী।

৯। বার্কলে একজন ______ দার্শনিক।

উত্তরঃ অভিজ্ঞতাবাদী।

১০। হিউম একজন ______ দার্শনিক।

উত্তরঃ অভিজ্ঞতাবাদী।

উদাহরণ দাওঃ

১। সহজাত বা অন্তর্জাত ধারণাঃ

উত্তরঃ কার্য-কারণ ধারণা, অসীমতার ধারণা, ঈশ্বরের ধারণা, পরমসত্তার ধারণা, পূর্ণতা ধারণা ইত্যাদি।

২। পূর্বতঃসিদ্ধ বচনঃ

উত্তরঃ ৭ + ৫ = ১২ 

৩। মুখ্য গুণঃ

উত্তরঃ বস্তুর আকার, আকৃতি, ওজন, বিস্তৃতি। 

৪। গৌণ গুণঃ

উত্তরঃ বর্ণ, স্বাদ, গন্ধ, উষ্ণতা, শীতলতা।

৫। ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ দ্বারা অর্জিত ভ্রান্ত জ্ঞান। 

উত্তরঃ জলে ডোবানো লাঠিকে বাঁকা দেখা।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বুদ্ধিবাদ কী?

উত্তরঃ যে মতবাদ বুদ্ধিই যথার্থ জ্ঞানের উৎস বলে স্বীকার করে, তাকে বুদ্ধিবাদ বলে।

প্রশ্ন ২। অভিজ্ঞতাবাদ বা আগন্তুকবাদ কী? 

উত্তরঃ যে মতবাদ ‘ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতা’-ই যথার্থ জ্ঞানের একমাত্র উৎস বলে স্বীকার করে, তাকে অভিজ্ঞতাবাদ বলে। যেমন—গাছের ধারণা।

প্রশ্ন ৩। অন্তর্জাত ধারণা কী?  

উত্তরঃ যে সমস্ত ধারণা মানুষের মনের মধ্যে জন্মগতভাবে থাকে, তাকে অন্তর্জাত বা সহজাত ধারণা বলে।

প্রশ্ন ৪। সংবেদন কী?

উত্তরঃ সংবেদন আমাদের বাইরের জগতের বস্তুসমূহের গুণ অর্থাৎ রূপ, বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান দেয়।

প্রশ্ন ৫। অন্তর্দর্শন কী?

উত্তরঃ অন্তর্দর্শন আমাদের নিজের অন্তরের সুখ, দুঃখ, ভয়, আনন্দ ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান দেয়।

প্রশ্ন ৬। মুখ্য গুণ কাকে বলে?

উত্তরঃ মুখ্য গুণ বা মৌলিক গুণ হল বস্তুর সেইসব গুণ, যা বস্তুর মধ্যে থাকে এবং যা প্রত্যক্ষ নির্ভর নয়।

প্রশ্ন ৭। গৌণ গুণ কাকে বলে?

উত্তরঃ গৌণ গুণ হল বস্তুর সেইসব গুণ, যা বস্তুর মধ্যে থাকে না, এই গুণগুলি ব্যক্তির প্রত্যক্ষ বা জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল।

প্রশ্ন ৮। ডেকার্তের মতে ধারণা কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ উৎপত্তি অনুসারে ডেকার্ত ধারণাকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। যেমন—

(ক) ইন্দ্রিয়জাত ধারণা বা আগন্তুক ধারণা (Adventitious ideas)। 

(খ) কৃত্রিম ধারণা বা কাল্পনিক ধারণা (Fictitious ideas)। এবং

(গ) অন্তর্জাত বা সহজাত ধারণা (Innate ideas )। 

প্রশ্ন ৯। ইন্দ্ৰিয়জাত ধারণা বা আগন্তুক ধারণা কাকে বলে?

উত্তরঃ যেসব ধারণা ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে বাহ্যজগৎ থেকে অর্জন করা হয়, সেসব ধারণাকে ইন্দ্ৰিয়জাত বা আগন্তুক ধারণা বলে; যেমন—পাহাড়, নদী, আকাশ, গাছপালা, ফুল ইত্যাদির ধারণা আগন্তুক ধারণা। আগন্তুক ধারণা স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ নয়।

প্রশ্ন ১০। কৃত্রিম বা কাল্পনিক ধারণা কাকে বলে?

উত্তরঃ দুই বা ততোধিক ধারণার সংযোগে কল্পনার মাধ্যমে মনে যেসব ধারণার সৃষ্টি হয়, সেগুলোকে কৃত্রিম ধারণা বলে; যেমন— ‘সোনার পাহাড়’, ‘ক্ষীর সাগর’, ‘ডানাযুক্ত ঘোড়া’ ইত্যাদি। কল্পনাপ্রসূত বলে এই ধারণাগুলো স্পষ্ট ও স্বচ্ছ নয়। 

প্রশ্ন ১১। অন্তর্জাত বা সহজাত ধারণা বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ জন্মের সময় ঈশ্বর মানুষের মনে কিছু ধারণা মুদ্রিত করে দেন। এইসব ধারণাকে অন্তর্জাত বা সহজাত ধারণা বলে। বুদ্ধিবাদী দার্শনিক ডেকার্তের (Descartes) মতে, মানুষ জন্ম থেকেই কতকগুলি সহজাত (innate ideas) ধারণা নিয়ে জন্মায়। এই সহজাত ধারণাগুলি সুনিশ্চিত জ্ঞানের উৎস; যেমন কার্যকারণের ধারণা, অসীমতার ধারণা, পূর্ণতার ধারণা, ঈশ্বরের বা পরমসত্তার ধারণা, নৈতিকতা ইত্যাদি। এই সহজাত ধারণা মনের অভ্যন্তরে সুপ্ত বা প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে। বুদ্ধি এইসব প্রচ্ছন্ন ধারণাকে প্রকাশ করে। এই ধারণাগুলোর বৈশিষ্ট্য হল, এরা স্বচ্ছ, সুস্পষ্ট, সংশয়াতীত এবং স্বতঃসিদ্ধ।

প্রশ্ন ১২। জ্ঞানতত্ত্ব কী?

উত্তরঃ মানুষের মৌলিক গুণ বুদ্ধিবৃত্তি মানুষকে জ্ঞানলাভ করতে প্ররোচিত করে। তাই মানুষ জানতে চায়, জ্ঞানের প্রকৃতি কী, জ্ঞানের উৎস কী, জ্ঞানের সীমাই-বা কী, বৈধ জ্ঞান কীভাবে লাভ করা যায় ইত্যাদি। দর্শনশাস্ত্রের একটি প্রধান অঙ্গ জ্ঞানতত্ত্ব বা জ্ঞানবিজ্ঞান। জ্ঞানতত্ত্বের মুখ্য আলোচ্য বিষয় হল জ্ঞানের প্রকৃতি, জ্ঞানের উৎপত্তি, জ্ঞানের সীমা, জ্ঞানের বৈধতা, জ্ঞানের শর্ত ইত্যাদি। 

প্রশ্ন ১৩। জ্ঞানের উৎস বা উৎপত্তি বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ দর্শনশাস্ত্রের একটি প্রধান অঙ্গ জ্ঞানতত্ত্ব বা জ্ঞান-বিজ্ঞান। জ্ঞানতত্ত্বের মুখ্য আলোচ্য বিষয় হল জ্ঞানের প্রকৃতি, জ্ঞানের উৎপত্তি, জ্ঞানের সীমা, জ্ঞানের বৈধতা, জ্ঞানের শর্ত ইত্যাদি।

জ্ঞানের উৎপত্তি সম্বন্ধে বিভিন্ন মতবাদ পাওয়া যায়। যার মধ্যে চারটি মতবাদ— 

(ক) বুদ্ধিবাদ বা Rationalism. 

(খ) অভিজ্ঞতাবাদ বা Empiricism.

(গ) বিচারবাদ বা Criticism. এবং 

(ঘ) স্বজ্ঞাবাদ বা Intuitionism উল্লেখযোগ্য।

প্রশ্ন ১৪। ‘ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতা থেকে আমরা যে জ্ঞানলাভ করি, তা অসম্পূর্ণ এবং অসঙ্গতিপূর্ণ’—উদাহরণ দাও। 

উত্তরঃ এরোপ্লেনের কাছে যে মানুষটি থাকে, তার কাছে এরোপ্লেন বিরাট। কিন্তু ওই একই এরোপ্লেন যখন উঁচু আকাশ দিয়ে উড়ে যেতে যে দেখে, তার কাছে এরোপ্লেন অতি ক্ষুদ্র। 

প্রশ্ন ১৫। বুদ্ধিবাদের অন্যতম গুণ কী?

উত্তরঃ এই মতবাদ অনুযায়ী সার্বিক এবং অনিবার্য জ্ঞান অর্জন সম্ভব। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আমরা যে জ্ঞান অর্জন করি, বুদ্ধি তাকে ব্যাখ্যা করে, যোগসূত্র স্থাপন করে, সুবিন্যস্ত এবং সুসংহত করে।

রচনাভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বুদ্ধিবাদ কী?

উত্তরঃ বুদ্ধিবাদ মতে বুদ্ধিই হচ্ছে যথার্থ জ্ঞানের উৎস। মানুষ বুদ্ধির দ্বারাই সঠিক জ্ঞান অর্জন করে। বুদ্ধিবাদীরা অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান অর্থাৎ ইন্দ্ৰিয়জাত জ্ঞানকে জ্ঞান বলে স্বীকার করেন না। তাঁদের মতে, ইন্দ্রিয়জাত জ্ঞান অসম্পূর্ণ, অনিশ্চিত এবং পরিবর্তনশীল। কারণ, কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন লোকের অভিজ্ঞতা দেশ, কাল এবং পাত্রভেদে বিভিন্ন প্রকারের হয়। প্রকৃত জ্ঞান শাশ্বত, চিরন্তন, সার্বিক এবং অনিশ্চিত।

বুদ্ধিবাদী সকলের মতে, মন প্রকৃততে সক্রিয় এবং বুদ্ধি মনের স্বাভাবিক ধর্ম। মনের ভিতরে অনেক ধারণা আছে। এই ধারণাগুলো অভিজ্ঞতাপূর্ব অন্তর্জাত ধারণা। এই ধারণাগুলো স্বতঃসিদ্ধ এবং সেই কারণেই নিঃসন্দিগ্ধ।

প্রাচীন বুদ্ধিবাদী দার্শনিকদের মধ্যে সক্রেটিস ও প্লেটো বিখ্যাত। তাঁরা বুদ্ধিকে জ্ঞানের অন্যতম উৎস বলে স্বীকার করেন। আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনে খ্যাতনামা বুদ্ধিবাদীরা হলেন ডেকার্ত (Descartes), স্পিনোজা (Spinoza), উলফ্ (Wolf) এবং লাইবনিজ (Leibnitz)। ডেকার্তকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক অর্থাৎ ‘Father of Modern Philosophy’ বলা হয়।

প্রশ্ন ২। জ্ঞানের উৎপত্তি-সম্পর্কিত মতবাদ বুদ্ধিবাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ বুদ্ধিবাদের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ

(ক) বুদ্ধিবাদীরা বলেন যে, যথার্থ জ্ঞান বুদ্ধিজাত। বুদ্ধিবাদীরা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতাকে জ্ঞানের উৎস বলে স্বীকার করেন না।

(খ) সকল বুদ্ধিবাদীরা বলেন যে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতা থেকে আমরা যে জ্ঞান করি তা অসম্পূর্ণ এবং অসঙ্গতিপূর্ণ। 

(গ) বুদ্ধিবাদীদের মতে, মন প্রধানত সক্রিয় এবং বুদ্ধি মনের স্বাভাবিক গুণা।

(খ) বুদ্ধিবাদী দার্শনিক ডেকার্তের মতে, মানুষ জন্ম থেকেই কতকগুলি সহজাত ধারণা নিয়ে জন্মায়। এই সহজাত ধারণাগুলি সুনিশ্চিত মনের উৎস। এই ধারণাগুলির বৈশিষ্ট্য হল এরা সুস্পষ্ট এবং সংশয়াতীত।

প্রশ্ন ৩। জ্ঞানের উৎপত্তি-সম্পর্কিত মতবাদ বুদ্ধিবাদের সমালোচনা বা ত্রুটি আলোচনা করো। 

উত্তরঃ জ্ঞানের উৎপত্তি-সম্পর্কিত মতবাদ বুদ্ধিবাদের ত্রুটি বা ভুল বা সমালোচনা নিম্নরূপঃ 

(ক) জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার কোনো ভূমিকা নেই, বুদ্ধিবাদীদের এই মত গ্রহণযোগ্য নয়। অভিজ্ঞতাকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে কেবল বৌদ্ধিক অনুশীলন দ্বারা জ্ঞান অর্জন করা যায়, এই মতটি ভ্রান্ত।

(খ) বুদ্ধিবাদীদের মতে, সকল যথার্থ জ্ঞান সহজাত বা অন্তর্জাত ধারণা থেকে উদ্ভূত। কথাটি সঠিক নয়। ‘আগুন দহন করে’—এই কথাটি অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, সহজাত ধারণা থেকে নয়।

(গ) যেগুলিতে স্বতঃসিদ্ধ সত্য বলা হয়, সেগুলি প্রকৃতই স্বতঃসিদ্ধ কি না, সে-কথা সংশয়াতীত নয়। বিনা বিচারে কোনো ধারণাকে সত্য বলে স্বীকার করা উচিত নয়।

(ঘ) জ্ঞানলাভের ক্ষেত্রে বুদ্ধির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না, একথা যেমন সত্য, তেমনই শুধুমাত্র সহজাত ধারণাকে জ্ঞানের উৎস বলে স্বীকার করলে জ্ঞানের অগ্রগতি সম্ভব হয় না। আর যে জ্ঞানে অগ্রগতি হয় না, সেই জ্ঞানকে যথার্থ জ্ঞান বলা যায় না। 

জ্ঞানোৎপত্তির ক্ষেত্রে বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা—উভয়ের সমান প্রয়োজন আছে। অভিজ্ঞতা জ্ঞানের উপকরণ জোগায় এবং বুদ্ধি অভিজ্ঞতালব্ধ এই উপকরণগুলোকে সুসংবদ্ধ এবং সুসংহত আকার প্রদান করে জ্ঞানে পরিণত করে।

সুতরাং, বুদ্ধিবাদ একদেশদর্শী এবং বিচারহীন মতবাদ। একে গ্রহণযোগ্য বলা যায় না। 

প্রশ্ন ৪। জন লক্ কীভাবে ডেকার্তের অন্তর্জাত ধারণাকে খণ্ডন করেছেন তা আলোচনা করো।

অথবা,

অন্তর্জাত ধারণা বিষয়ে লকের সমালোচনা কী ছিল? 

উত্তরঃ বুদ্ধিবাদী দার্শনিক ডেকার্ত বলেন যে, আমাদের মন বা বুদ্ধিতে কয়েকটি ধারণা প্রচ্ছন্নভাবে থাকে। এই সমস্ত ধারণা কখনও ইন্দ্রিয়- অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া যায় না। এইগুলি সহজাত বা অন্তর্জাত। জন্মের সময় ঈশ্বর মানুষের মনে এই ধারণাগুলো মুদ্রিত করে দেন।

অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক জন লক্ অন্তর্জাত ধারণার অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। তিনি কতকগুলো যুক্তি দিয়ে অন্তর্জাত ধারণাগুলোকে খণ্ডন করেছেন। সেগুলো নিম্নরূপঃ 

(ক) যদি মানুষ অন্তর্জাত ধারণা নিয়ে জন্মাত, তবে সকল মানুষের মধ্যেই এইসব ধারণার অস্তিত্ব থাকত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, শিশু, মূর্খ, উন্মাদ, অশিক্ষিত, বর্বর ব্যক্তিরা কারণতা, অসীমতা প্রভৃতির ধারণা সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নয়।

(খ) যদি প্রকৃতই অন্তর্জাত ধারণার অস্তিত্ব থাকে, তাহলে প্রতিটি মানুষের মনে তা একরকম হবে। কিন্তু দেখা যায়, ঈশ্বর, নৈতিকতা ইত্যাদি তথাকথিত অন্তর্জাত ধারণা বিভিন্নকালে, বিভিন্ন সমাজে, এমনকি, একই সমাজে বিভিন্ন কালে ভিন্ন ভিন্ন হয়৷

(গ) গাণিতিক পদ্ধতি এবং দার্শনিক পদ্ধতি এক নয়। অভিজ্ঞতা থেকে অর্জিত জ্ঞানকে বুদ্ধি দ্বারা সুসংগঠিত করা দার্শনিকের কাজ। 

(ঘ) যেগুলিকে সহজাত ধারণা বলা হয়, সেগুলি আসলে অভিজ্ঞতালব্ধ। ‘আগুন দহন করে’—একথা অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, সহজাত ধারণা থেকে নয়। অতএব, তথাকথিত অন্তর্জাত নিয়ম বা সূত্রগুলো অভিজ্ঞতা থেকে সামান্যীকরণের মাধ্যমেই প্রাপ্ত হয়। অতএব, লকের সিদ্ধান্ত এই যে, কোনো ধারণাই অন্তর্জাত নয়। সকল ধারণাই অভিজ্ঞতাপ্রসূত ৷ 

প্রশ্ন ৫। অভিজ্ঞতাবাদ বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ অভিজ্ঞতাবাদ মতে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের একমাত্র উৎস। অভিজ্ঞতাবাদীরা অভিজ্ঞতাপূর্ব কোনো জ্ঞানের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। তাঁদের মতে, জ্ঞান অভিজ্ঞতালব্ধ । ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে নানারকম অভিজ্ঞতা আমাদের মনে জন্মায় এবং এই অভিজ্ঞতা থেকে সকল জ্ঞানের উৎপত্তি হয়।

প্রাচীনকালে গ্রিক এটমিস্ট (Atomist) এবং সফিস্ট (Sophist) সর্বপ্রথমে এই মতবাদের প্রবর্তন করেন।

আধুনিককালে দার্শনিক বেকন্ (Bacon) অভিজ্ঞতাবাদকে সুসংবদ্ধভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনে অভিজ্ঞতাবাদী হিসাবে জন লক্ (John Locke), বার্কলি (Berkeley) এবং হিউম (Hume)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁদের মধ্যে ব্রিটিশ দার্শনিক জন লক্ অভিজ্ঞতাবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। 

প্রশ্ন ৬। জ্ঞানের উৎপত্তি-সম্পর্কিত মতবাদ অভিজ্ঞতাবাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ অভিজ্ঞতাবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) অভিজ্ঞতাবাদীদের মতে, অভিজ্ঞতাই যথার্থ জ্ঞানার্জনের একমাত্র উৎস। অভিজ্ঞতা বলতে তাঁরা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতাকে বুঝিয়েছেন। সকল জ্ঞানই পরতঃসাধ্য অর্থাৎ অভিজ্ঞতাপ্রসূত।

(খ) অভিজ্ঞতাবাদীরা বুদ্ধিবাদীদের সহজাত ধারণার‌ অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। লক্‌ বলেন যে, জন্মের সময় মানুষের মন থাকে একটি সাদা কাগজের মতো (Tabula rasa), যাতে কিছু লেখা থাকে না। অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে সেই সাদা কাগজে লেখা হতে থাকে।

(গ) সাধারণভাবে অভিজ্ঞতাবাদীরা জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে মনকে সংবেদনের নিষ্ক্রিয় গ্রহীতা বলে বিবেচনা করেন। লকের মতে মৌলিক ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে মন নিষ্ক্রিয় থাকে। তারপর মৌলিক ধারণাগুলি যুক্ত করে যখন যৌগিক ধারণা তৈরি হয়, তখন মন সক্রিয় হয়ে উঠে।

(ঘ) লক্ বলেছিলেন, ইন্দ্রিয়ের মধ্যে যা নেই, বুদ্ধিতে তা নেই।’ অর্থাৎ জ্ঞান অর্জনে বুদ্ধির চেয়ে অভিজ্ঞতার ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রশ্ন ৭। অভিজ্ঞতাবাদের ভুল বা ত্রুটি বা সমালোচনা সম্বন্ধে আলোচনা করো। 

উত্তরঃ অভিজ্ঞতাবাদের ভুল বা ত্রুটি বা সমালোচনা নিম্নরূপঃ 

(ক) বুদ্ধিকে বর্জন করে অভিজ্ঞতাকেই জ্ঞানের একমাত্র উৎস বলে স্বীকার করে অভিজ্ঞতাবাদীরা বিচারহীন, যুক্তিহীন মতবাদ প্রচার করেছেন। জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে বুদ্ধির প্রয়োজনীয়তাকে সম্পূর্ণভাবে অবহেলা করায় অভিজ্ঞতাবাদ একদেশদর্শী অর্থাৎ একপক্ষীয় চরম মতবাদে পরিণত হয়েছে।

(খ) ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের একমাত্র উৎস নয়। ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষের মাধ্যমে জ্ঞানের উপকরণ পাওয়া যায়। বুদ্ধি সেই উপকরণগুলিকে বিন্যস্ত এবং সংগঠিত করে জ্ঞানে পরিণত করে।

(গ) ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষ দ্বারা অর্জিত জ্ঞান অনেক ক্ষেত্রেই ভ্রান্ত হয়। তাছাড়া অভিজ্ঞতা থেকে যে জ্ঞান পাওয়া যায়, তা সম্ভাব্য হয় মাত্র, সুনিশ্চিত হয় না। বুদ্ধিই পারে সার্বিক এবং অনিবার্য জ্ঞান দিতে।

(ঘ) অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ঠিক না ভুল, সেই বিচার একমাত্র বুদ্ধির দ্বারা করা সম্ভব। যথার্থ জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার প্রয়োজনীয়তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু অভিজ্ঞতাই জ্ঞানার্জনের একমাত্র উপায় বলে উল্লেখ করে অভিজ্ঞতাবাদ নানা দোষে দোষযুক্ত হয়ে পড়েছে।

প্রশ্ন ৮। লকের মুখ্য গুণ এবং গৌণ গুণ কাকে বলে? 

উত্তরঃ লকের মতে, বস্তুমাত্রই কতকগুলি গুণের সমষ্টি। তিনি গুণগুলিকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন— 

(ক) মুখ্য গুণ। এবং 

(খ) গৌণ গুণ।

মুখ্য গুণ হল বা মৌলিক গুণ হল বস্তুর সেইসব গুণ, যা বস্তুর মধ্যে থাকে, এবং যা প্রত্যক্ষনির্ভর নয়। কেউ প্রত্যক্ষ করুক বা না-ই করুক মুখ্য গুণ বস্তুর মধ্যে থাকবে। এই মুখ্য গুণগুলি হল—বস্তুর আকার, আকৃতি, ওজন, গতিশীলতা, স্থিরতা, উচ্চতা ইত্যাদি। 

অপরপক্ষে গৌণগুণগুলি বস্তুর মধ্যে থাকে না, এই গুণগুলি ব্যক্তির প্রত্যক্ষ বা জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। বস্তুর গৌণগুণগুলি হল—বর্ণ, স্বাদ, গন্ধ, উষ্ণতা, শীতলতা ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৯। মুখ্য গুণ এবং গৌণ গুণের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ মুখ্য গুণ এবং গৌণ গুণের পার্থক্য নিম্নরূপঃ

(ক) মুখ্য গুণ বা মৌলিক গুণ হল বস্তুর সেইসব গুণ, যা বস্তুর মধ্যে থাকে এবং যা প্রত্যক্ষ-নির্ভর নয়। অপরপক্ষে, গৌণ গুণগুলি বস্তুর মধ্যে থাকে না, সেই গুণগুলি ব্যক্তির প্রত্যক্ষ বা জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল।

(খ) মুখ্য গুণের বস্তুসত্তা আছে, গৌণ গুণের মন-নির্ভর বা প্রত্যক্ষনির্ভর সত্তা আছে।

(গ) যে সমস্ত গুণ জ্ঞাতার মন-নিরপেক্ষ, তাদের মুখ্য গুণ বলা হয়। অন্যদিকে, যে সমস্ত গুণ জ্ঞাতার মন-নিরপেক্ষ নয়, তাদের গৌণ গুণ বলা হয়। 

(ঘ) মুখ্য গুণগুলি ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হয় না; যেমন- বস্তুর আকৃতি, বিস্তৃতি ইত্যাদি। সেগুলি সকল অবস্থায় অপরিবর্তনীয় থাকে। কিন্তু গৌণগুলি ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হয়, স্থান থেকে স্থানান্তরে পরিবর্তিত হয়; যেমন— বস্তুর স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদি।

প্রশ্ন ১০। লকের মুখ্য ও গৌণ গুণগুলিকে বার্কলে কীভাবে সমালোচনা করেছেন উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বার্কলে লকের মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের পার্থক্য স্বীকার করেন না। এই বিষয়ে বার্কলের যুক্তি নিম্নরূপঃ 

(ক) মুখ্য গুণগুলিকে আমরা ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষের মাধ্যমে জানতে পারি; যেমন— বস্তুর আকৃতি, বিস্তৃতি ইত্যাদি ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষর বিষয়। যাকে প্রত্যক্ষ করা যায়, তা হচ্ছে ধারণা। কাজেই গৌণ গুণের মতো মুখ্য গুণও প্রত্যক্ষ-নির্ভর বা মন-নির্ভর। 

(খ) গৌণ গুণের মতো মুখ্য গুণগুলিও একেক জনের কাছে একেক রকম। একই খাদ্যবস্তু যেমন কারও কাছে সুস্বাদু, কারও কাছে নয়; তেমনি একই ওজনের বস্তু কারও কাছে ভারি, কারও কাছে হালকা।

(গ) বস্তুকে প্রত্যক্ষ করার সময় মুখ্য ও গৌণ গুণগুলিকে আলাদাভাবে প্রত্যক্ষ করা যায় না। কোনো বস্তুর আকার আছে অথচ রং নেই, তা হয় না। কাজেই বর্ণ যদি মনের ধারণা হয়, আকারও তাই হবে। তাই বার্কলে বলেছেন, মুখ্য ও গৌণ—সকল গুণই মনের ধারণা। 

সুতরাং বার্কলের মতে, বস্তু হল গুণের সমষ্টি এবং গুণ মনের ধারণা ছাড়া আর কিছু নয়। প্রত্যক্ষ করার উপরেই বস্তুর অস্তিত্ব নির্ভর করে। 

প্রশ্ন ১১। বুদ্ধিবাদ এবং অভিজ্ঞতাবাদের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

উত্তরঃ বুদ্ধিবাদ এবং অভিজ্ঞতাবাদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ 

(ক) বুদ্ধিবাদ মতে, বুদ্ধিই হচ্ছে যথার্থ জ্ঞানের উৎস। অন্যদিকে, অভিজ্ঞতাবাদ মতে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের একমাত্র উৎস।

(খ) বুদ্ধিবাদীদের মতে, অভিজ্ঞতা থেকে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। আবার কোনো কোনো বুদ্ধিবাদী বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞানলাভ হয় বটে, তবে তা সর্বজনস্বীকৃত বা নিশ্চিত হয় না। অপরপক্ষে, অভিজ্ঞতাবাদীরা বিশুদ্ধ বুদ্ধি বলে কিছু আছে বলে স্বীকার করেন না।

(গ) বুদ্ধিবাদীদের মতে, মন প্রকৃতই সক্রিয় এবং বুদ্ধি মনের স্বাভাবিক ধর্ম, কিন্তু অভিজ্ঞতাবাদীদের মতে, অভিজ্ঞতা গ্রহণের ক্ষেত্রে মন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। 

(ঘ) বুদ্ধিবাদীদের মতে, যথার্থ জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতি হল অবরোহ বা নিগম পদ্ধতি। অভিজ্ঞতাবাদীরা জ্ঞান অর্জনের তিনটি পদ্ধতির উল্লেখ করেছেন—পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ এবং আগমন বা আরোহ পদ্ধতি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top