Class 11 Logic and Philosophy Chapter 8 জ্ঞানতত্ব : প্রমাণ (প্রত্যক্ষ ও অনুমান)

Class 11 Logic and Philosophy Chapter 8 জ্ঞানতত্ব : প্রমাণ (প্রত্যক্ষ ও অনুমান) answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Logic and Philosophy Chapter 8 জ্ঞানতত্ব : প্রমাণ (প্রত্যক্ষ ও অনুমান) and select needs one.

Class 11 Logic and Philosophy Chapter 8 জ্ঞানতত্ব : প্রমাণ (প্রত্যক্ষ ও অনুমান)

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Logic and Philosophy Chapter 8 জ্ঞানতত্ব : প্রমাণ (প্রত্যক্ষ ও অনুমান) Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

জ্ঞানতত্ব : প্রমাণ (প্রত্যক্ষ ও অনুমান)

পাঠ:

দ্বিতীয় খণ্ড

 অতি- সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘প্রমা’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী?

উত্তরঃ ‘প্রমা’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল প্রকৃষ্ট জ্ঞান। এখানে, প্র = প্রকৃষ্ট, মা = জ্ঞান।

প্রশ্ন ২। ‘প্রমা’ বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ ‘প্রমা’ বলতে সকল রকমের সংশয়মুক্ত বৈধ জ্ঞান, অর্থাৎ যথার্থ জ্ঞানকে বোঝানো হয়।

প্রশ্ন ৩। জ্ঞান কী?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

উত্তরঃ জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় বস্তুর মধ্যে সম্পর্কের উপলব্ধি হল জ্ঞান।

প্রশ্ন ৪। ‘প্রমাণ’ কী?

উত্তরঃ বৈধ জ্ঞানার্জনের উপায়কে প্রমাণ বলে।

প্রশ্ন ৫। অপ্রমা কী?

উত্তরঃ সকল রকম সংশয়পূর্ণ অনুভবই অপ্রমা।

প্রশ্ন ৬। ভারতীয় দর্শনে কয় প্রকার প্রমাণের উল্লেখ আছে? 

উত্তরঃ ছয় প্রকার।

প্রশ্ন ৭। প্রত্যক্ষ কী?

উত্তরঃ ‘প্রত্যক্ষ’ হল সাক্ষাৎ জ্ঞান।

প্রশ্ন ৮। ন্যায়মতে প্রত্যক্ষ কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ দুই প্রকার—লৌকিক ও অলৌকিক।

প্রশ্ন ৯। ‘অনুমান’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী?

উত্তরঃ ‘অনু’ শব্দের অর্থ ‘পশ্চাৎ’ এবং ‘মান’ শব্দের অর্থ ‘জ্ঞান’। সুতরাং, ‘অনুমান’ শব্দটির অর্থ হল ‘পশ্চাৎজ্ঞান’।

প্রশ্ন ১০। ন্যায় অনুমানে কয়টি পদ থাকে? পদগুলির নাম লেখো। 

উত্তরঃ তিনটি—সাধ্যপদ, পক্ষপদ ও হেতুপদ।

প্রশ্ন ১১। ব্যাপ্তি কী?

উত্তরঃ হেতুপদ ও সাধ্যপদের মধ্যে নিয়ত সম্বন্ধকে ব্যাপ্তি বলে।

প্রশ্ন ১২। অনুমানে ব্যাপ্তির ভূমিকা কী?

উত্তরঃ ব্যাপ্তি অনুমানের যৌক্তিক ভিত্তি, যা সিদ্ধান্তের নিশ্চয়তা প্রদান করে। 

প্রশ্ন ১৩। ব্যাপ্তির উপাদান কী? 

উত্তরঃ ব্যাপ্তির উপাদান দুটি হল— সমব্যাপ্তি এবং অসম বা বিষম ব্যাপ্তি।

প্রশ্ন ১৪। ‘ব্যাপ্তি’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ ‘ব্যাপ্তি’ শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে বিস্তৃতি বা ব্যাপকতা।

প্রশ্ন ১৫। অনুমান বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ জ্ঞাত বিষয়ের সাহায্যে অজ্ঞাত বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করাকে অনুমান বলে।

প্রশ্ন ১৬। ব্যাপ্য কী?

উত্তরঃ ব্যাপ্তিতে যে ব্যাপ্ত থাকে, তাকে ‘ব্যাপ্য’ বলে।

প্রশ্ন ১৭। ব্যাপক কী?

উত্তরঃ ব্যাপ্তি যার দ্বারা সূচিত হয়, তাকে ‘ব্যাপক’ বলে।

প্রশ্ন ১৮। সমব্যাপ্তি কী?

উত্তরঃ যখন দুটি বস্তু বা বিষয়ে সমব্যাপকতা থাকে, তখনই সেই সম্বন্ধকে ‘সমব্যাপ্তি’ বলে।

প্রশ্ন ১৯। বিষম বা অসমব্যাপ্তি কাকে বলে?

উত্তরঃ ন্যায় অনুমানে দুটি অসমব্যাপক পদের মধ্যে থাকা সম্বন্ধকে ‘অসমব্যাপ্তি’ বা ‘বিষমব্যাপ্তি’ বলে।

প্রশ্ন ২০। নৈয়ায়িকরা কোন্ কোন্ পদ্ধতিতে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তরঃ অন্বয়, ব্যতিরেক, ব্যাভিচারগ্রহ, উপাধি-নিরাস, তর্ক এবং সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ—এই ছয়টি পদ্ধতি।

প্রশ্ন ২১। বৌদ্ধ দর্শন ব্যাপ্তি সম্বন্ধকে কীভাবে প্রতিষ্ঠা করে?

উত্তরঃ কারণতা নিয়ম এবং তাদাত্ম্যতা দ্বারা।

প্রশ্ন ২২। বৌদ্ধগণ কয় প্রকার অনুমান স্বীকার করেন? 

উত্তরঃ দুই প্রকার—স্বার্থ ও পরার্থ।

প্রশ্ন ২৩। কার্যকারণ সম্বন্ধ অনুসারে ন্যায় অনুমানকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী? 

উত্তরঃ তিন ভাগে ভাগ করা যায়—পূর্ববৎ, শেষবৎ ও সামান্যতোদৃষ্ট। 

প্রশ্ন ২৪। ব্যাপ্তি সম্বন্ধের ভিত্তিতে বিভক্ত ন্যায় অনুমানগুলির নাম লেখো।

উত্তরঃ কেবলান্বয়ী, কেবল ব্যতিরেকী এবং অন্বয়-ব্যতিরেকী অনুমান। 

প্রশ্ন ২৫। পরার্থ অনুমানে কয়টি অবয়ব থাকে?

উত্তরঃ পাঁচটি।

প্রশ্ন ২৬। পরার্থ অনুমানের অবয়বগুলির নাম উল্লেখ করো।

উত্তরঃ প্রতিজ্ঞা, হেতু, উদাহরণ, উপনয় এবং নিগমন।

প্রশ্ন ২৭। সকল ভারতীয় দর্শনেরই নিজস্ব জ্ঞান-উৎপত্তির তত্ত্ব আছে কি?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ২৮। চার্বাক দর্শনে শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ জ্ঞানকে কেন যথার্থ জ্ঞান বলা হয়? 

উত্তরঃ স্পষ্ট এবং সংশয়মুক্ত জ্ঞান প্রত্যক্ষ দ্বারা লব্ধ হয়।

প্রশ্ন ২৯। চার্বাক দর্শন কোন্ প্রমাণকে স্বীকার করে?

উত্তরঃ কেবলমাত্র প্রত্যক্ষকে।

প্রশ্ন ৩০। বৌদ্ধ দর্শনে কোন্ প্রমাণ স্বীকৃত? 

উত্তরঃ প্রত্যক্ষ এবং অনুমান।

প্রশ্ন ৩১। জৈন দর্শন কোন্ প্রমাণকে স্বীকার করে?

উত্তরঃ প্রত্যক্ষ এবং অনুমান।

শুদ্ধ উত্তর দাওঃ

১। চার্বাক মতে প্রত্যক্ষ ও অনুমান উভয়ই বৈধ প্রমাণ।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

২। প্রত্যক্ষ স্বাধীন, জ্ঞান।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

৩। প্রত্যেকেই যোগজ প্রত্যক্ষ অর্জন করতে পারেন।

উত্তরঃ অশুদ্ধ। 

৪। প্রতিটি ভারতীয় দর্শন অনুমানকে প্রমাণ হিসেবে বৈধ বলে স্বীকার করে।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

৫। অনুমান পরোক্ষ জ্ঞান।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

৬। অনুমানে চারটি পদ থাকে।

উত্তরঃ অশুদ্ধ। 

৭। পরার্থ অনুমানে পাঁচটি অবয়ব থাকে।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

৮। হেতুপদ, সাধ্যপদ ও পক্ষপদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

৯। স্বার্থানুমান অপরের মনে বিশ্বাস উৎপাদনের জন্য।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

১০। কেবলাম্বয়ী অনুমানে হেতুপদ এবং সাধ্যপদের মধ্যে নিয়ত সম্বন্ধের উপস্থিতি থাকে।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

শূন্যস্থান পূর্ণ করোঃ

১। ভারতীয় দর্শনে বৈধ জ্ঞানকে  ______ বলা হয়। 

উত্তরঃ প্রমা। 

২। ভারতীয় দর্শনে মোট ______ প্রকার প্রমাণ আছে।

উত্তরঃ ছয়। 

৩। চার্বাক মতে ______ হচ্ছে বৈধ জ্ঞানার্জনের একমাত্র উপায়।

উত্তরঃ প্রত্যক্ষ।

৪। ন্যায় দর্শন ______ রকমের প্রমাণ স্বীকার করে।

উত্তরঃ চার।

৫। ______ অনুমানের যৌক্তিক ভিত্তি।

উত্তরঃ ব্যাপ্তি। 

উদাহরণ দাওঃ

(ক) ‘প্রমা’: সাপকে সাপ বলে অনুভব করাই যথার্থ জ্ঞান বা প্রমা।

(খ) ‘অপ্রমা’: রজ্জুতে সর্পভ্রম অর্থাৎ দড়িকে সাপ বলে অনুভব করাই অযথার্থ জ্ঞান বা অপ্রমা।

(গ) ‘পূর্ববৎ অনুমান’: প্রচণ্ড খরা দেখে ভবিষ্যতে দুর্ভিক্ষের অনুমান হল পূর্ববৎ অনুমানের দৃষ্টান্ত।

(ঘ) ‘শেষবৎ অনুমান’: নদীর জলের মলিনতা ও খরস্রোত দেখে অতীত বৃষ্টির অনুমান হল শেষবৎ অনুমান। 

(ঙ) ‘ব্যাপ্তি সম্বন্ধ’: সকল বটবৃক্ষই বৃক্ষ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্ন ১। ভারতীয় দর্শনের সর্বপ্রকার প্রমাণের নাম উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (ক) প্রত্যক্ষ ৷ 

(খ) অনুমান ৷ 

(গ) শব্দপ্রমাণ ৷ 

(ঘ) উপমান ৷ 

(ঙ) অর্থাপত্তি ৷ এবং 

(চ) অনুপলব্ধি ৷

প্রশ্ন ২। ন্যায়কে ‘প্রমাণ শাস্ত্র’ কেন বলা হয়?

উত্তরঃ ন্যায় দর্শনে প্রমাণের অর্থাৎ জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে অধিক প্রাধান্য দেওয়া হয়। 

প্রশ্ন ৩। ন্যায় মতে যথার্থ জ্ঞানের উৎস কী?

উত্তরঃ ন্যায় মতে যথার্থ জ্ঞানের উৎস হল—

(ক) প্রত্যক্ষ। 

(খ) অনুমান। 

(গ) উপমান। ও 

(ঘ) শব্দ।

প্রশ্ন ৪। যোগ দর্শনে কয়টি প্রমাণ স্বীকৃত এবং সেগুলি কী কী? 

উত্তরঃ তিনটি—প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শব্দ।

প্রশ্ন ৫। ভারতীয় দর্শনে সাধারণত কয় প্রকারের প্রমাণকে স্বীকার করা হয়? সেগুলি কী কী?

উত্তরঃ ছয় প্রকার—

(ক) প্রত্যক্ষ।

(খ) অনুমান। 

(গ) উপমান। 

(ম) শব্দ। 

(ঙ) অর্থাপত্তি। এবং 

(চ) অনুপলব্ধি।

প্রশ্ন ৬। বৈশেষিক দর্শন কয় প্রকার প্রমাণে বিশ্বাস করে ও সেগুলি কী কী? 

উত্তরঃ বৈশেষিক দর্শন দুই প্রকার প্রমাণে বিশ্বাস করে। সেগুলো হল—প্রত্যক্ষ এবং অনুমান।

প্রশ্ন ৭। সাংখ্য দর্শনে স্বীকৃত প্রমাণের সংখ্যা কত এবং সেগুলো কী কী?

উত্তরঃ সাংখ্য দর্শনে—প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শব্দ—এই তিন প্রকার প্রমাণকে যথার্থ জ্ঞানের উৎস বলে স্বীকার করে।

প্রশ্ন ৮। মীমাংসা দর্শনের (প্রভাকর মীমাংসা) মতে প্রমাণ কয় প্রকার এবং সেগুলি কী কী?

উত্তরঃ পাঁচ প্রকার। সেগুলি হল—প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান, শব্দ এবং অর্থাপত্তি। 

প্রশ্ন ৯। মীমাংসা দর্শনের কুমারিল সম্প্রদায়ের মতে প্রমাণ কয় প্রকার ও সেগুলি কী কী? 

উত্তরঃ ছয় প্রকার। সেগুলি হল—প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান, শব্দ, অর্থাপত্তি ও অনুপলব্ধি।

প্রশ্ন ১০। বেদান্ত দর্শনে স্বীকৃত প্রমাণগুলি কী কী?

উত্তরঃ বেদান্ত দর্শনে স্বীকৃত প্রমাণগুলো হল—প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান, শব্দ, অর্থাপত্তি ও অনুপলব্ধি।

প্রশ্ন ১১। জ্ঞান কাকে বলে?

উত্তরঃ জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয় বস্তুর মধ্যে সম্পর্কের উপলব্ধি হল জ্ঞান। জ্ঞাতা হচ্ছে সেই ব্যক্তি যিনি জ্ঞান অর্জন করেন এবং জ্ঞাতা যে বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন, সেটা হল জ্ঞেয়। জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয় বস্তুর মধ্যে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, সেটাই হল জ্ঞান।

প্রশ্ন ১২। জ্ঞান কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ জ্ঞান প্রধানত দুই প্রকারের হয়। যেমন—

(ক) প্রমা বা যথার্থ জ্ঞান। এবং 

(খ) অপ্রমা বা অযথার্থ জ্ঞান।

প্রশ্ন ১৩। প্রমা কী?

উত্তরঃ দর্শনের প্রধান উদ্দেশ্য হল সত্যকে উপলব্ধি করা ও সত্য জ্ঞান অর্জন করা। ভারতীয় দর্শনে বৈধ জ্ঞানকে প্রমা বলে। ‘প্রমা’ শব্দের অর্থ সকল রকমের সংশয়মুক্ত বৈধ জ্ঞান।

প্রশ্ন ১৪। অপ্রমা কী?

উত্তরঃ যে অনুভব সংদিগ্ধ এবং অযথার্থ, সেই অনুভবই হল অপ্রমা বা অযথার্থ জ্ঞান। সকল রকম সংশয়পূর্ণ অনুভবই অপ্রমা।

প্রশ্ন ১৫। প্রমাণ কাকে বলে?

উত্তরঃ প্রমাণ হচ্ছে সেই পদ্ধতি যার দ্বারা যথার্থ জ্ঞান অর্জন করা যায়। অর্থাৎ বৈধ জ্ঞান অর্জনের উপায়কে প্রমাণ বলে। প্রমাণকে প্রমার কারণও বলা হয়।

প্রশ্ন ১৬। প্রত্যক্ষ কী?

উত্তরঃ ‘প্রত্যক্ষ’ হল সাক্ষাৎ জ্ঞান। আমাদের ইন্দ্রিয় যখন কোনো বস্তুর সংস্পর্শে আসে, তখন প্রত্যক্ষ বা সাক্ষাৎ জ্ঞান লাভ হয়।

প্রশ্ন ১৭। ন্যায়ের মতে প্রত্যক্ষ কয় প্রকার ও সেগুলি কী কী? 

উত্তরঃ প্রত্যক্ষ প্রধানত দুই প্রকার হয়; যেমন—লৌকিক এবং অলৌকিক প্রত্যক্ষ। লৌকিক প্রত্যক্ষ দুই প্রকারের হয়; যথা—

(ক) বাহ্য। এবং 

(খ) আন্তর বা মানস প্রত্যক্ষ।

অলৌকিক প্রত্যক্ষ তিন প্রকারের হয়।

যথা—

(ক) সামান্য লক্ষণ।

(খ) জ্ঞান লক্ষণ। এবং 

(গ) যোগজ।

প্রশ্ন ১৮। লৌকিক প্রত্যক্ষ কাকে বলে?

উত্তরঃ চক্ষু, কর্ণ ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে যে প্রত্যক্ষ হয়, তাকে লৌকিক প্রত্যক্ষ বলে। লৌকিক প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে বিষয়ের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের লৌকিক সন্নিকর্ষ বা সংযোগ ঘটে।

প্রশ্ন ১৯। বাহ্য প্রত্যক্ষ কাকে বলে?

উত্তরঃ চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা এবং ত্বক—এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে যখন বস্তু বা বিষয়ের সংযোগ ঘটে, তখন তাকে ‘বাহ্য প্রত্যক্ষ’ বলা হয়; যেমন—আমাদের চোখের সঙ্গে যখন একটি ঘটের সংযোগ হয়, তখন ঘটটি সম্পর্কে আমাদের বাহ্য প্রত্যক্ষ হয়।

প্রশ্ন ২০। মানস বা আন্তর প্রত্যক্ষ কাকে বলে?

উত্তরঃ মনের সঙ্গে যখন চিন্তা, অনুভূতি, ইচ্ছা ইত্যাদির মানসিক সংযোগ ঘটে, তখন তাকে ‘মানস বা আন্তর প্রত্যক্ষ’ বলে।

প্রশ্ন ২১। অলৌকিক প্রত্যক্ষ বলতে কী বোঝো? 

উত্তরঃ কোনো বস্তু বা বিষয়ের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের সন্নিকর্ষ যখন লৌকিক হয় না, তখন সেই প্রত্যক্ষকে অলৌকিক প্রত্যক্ষ বলা হয়। এখানে জ্ঞাতব্য বিষয়ের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের সংযোগ অলৌকিক।

প্রশ্ন ২২। সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে প্রত্যক্ষে কোনো জাতির অন্তর্ভুক্ত একটি বস্তু বা ব্যক্তির লৌকিক প্রত্যক্ষ থেকে সেই জাতির অন্তর্ভুক্ত সকল বস্তু বা ব্যক্তির প্রত্যক্ষ হয়, তাকে সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ বলে। ‘সামান্য’ শব্দের অর্থ যে গুণ বা ধর্ম একটি জাতির প্রত্যেকের মধ্যে থাকে; যেমন—’মানুষ’ একটি জাতি। একজন মানুষকে প্রত্যক্ষ করার ক্ষেত্রে আমরা সামান্য ধর্ম ‘মনুষ্যত্ব’কে তার মধ্যে প্রত্যক্ষ করি। 

প্রশ্ন ২৩। জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কী?

উত্তরঃ আমাদের কোনো ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে যখন কোনো বস্তু বা ব্যক্তির সংস্পর্শ ঘটে, তখন যদি আমরা সেই বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে পূর্বে লব্ধ কোনো জ্ঞানকে প্রত্যক্ষ করি, তখন সেই প্রত্যক্ষকে ‘জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ’ বলে। দূর থেকে আমরা যখন চন্দ্রন কাঠকে দেখে বলি তা সুগন্ধ বা বরফকে দেখে বলি তা ঠান্ডা, তখন ‘জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ’ হয়। কারণ, এখানে আমরা আগে থেকে জানতাম ‘চন্দন কাঠের গন্ধ সুন্দর’ বা ‘বরফ ঠান্ডা’। 

প্রশ্ন ২৪। যোগজ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?

উত্তরঃ তৃতীয় প্রকার অলৌকিক প্রত্যক্ষের নাম হল যোগজ প্রত্যক্ষ। নৈয়ায়িকগণ যোগীদের একপ্রকার অলৌকিক প্রত্যক্ষ স্বীকার করেন। যোগাভ্যাসের দ্বারা লব্ধ শক্তির মাধ্যমে ভূত, ভবিষ্যৎ, প্রচ্ছন্ন ও অতি সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রত্যক্ষই হল যোগজ প্রত্যক্ষ। 

এই জাতীয় প্রত্যক্ষ সকলের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। কেবল যে সমস্ত যোগীরা যোগাভ্যাস দ্বারা অসাধারণ বা অলৌকিক শক্তির অধিকারী, তাদের পক্ষেই যোগজ প্রত্যক্ষ সম্ভব। 

প্রশ্ন ২৫। যোগজ প্রত্যক্ষ কয় রকমের হয় এবং কী কী?

উত্তরঃ যোগজ প্রত্যক্ষ দুই রকমের হয়; যথা— 

(ক) যুক্ত। এবং 

(খ) যঞ্জাজ্ঞান। 

যেসব যোগীরা যোগ সাধনায় পূর্ণতা লাভ করেছেন, তারা হলেন মুক্তযোগী। এইসব যোগীরা সিদ্ধপুরুষ। আর যেসব যোগীরা যোগ সাধনায় রত এবং ঈশ্বরের কাছে পৌঁছোবার চেষ্টা করে চলেছেন এবং পূর্ণতা লাভের পথে অগ্রসরমান তারা হলেন যঞ্জাজ্ঞান বা বিযুক্তযোগী। যঞ্জাজ্ঞানযোগী পূর্ণসিদ্ধপ্রাপ্ত নন।

প্রশ্ন ২৬। অপর নীতির ভিত্তিতে নৈয়ায়িকেরা লৌকিক প্রত্যক্ষকে কয় ভাগে ভাগ করেছেন ও কী কী? 

উত্তরঃ অপর একটি নীতির ভিত্তিতে নৈয়ায়িকেরা লৌকিক প্রত্যক্ষকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। 

সেগুলি হল— 

(ক) নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ। 

(খ) সবিকল্পক প্রত্যক্ষ। এবং 

(গ) প্রত্যভিজ্ঞা।

প্রশ্ন ২৭। নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে প্রত্যক্ষে আমরা বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করি, কিন্তু বস্তুটি কী, তার নাম, গুণ, প্রকার সম্পর্কে কোনো জ্ঞান হয় না, তাকে নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ বলে; যেমন—আমরা যখন একটি ঘরে ঢুকে টেবিলের উপরে একটি বস্তু দেখতে পাই, কিন্তু সেটি যে একটা সুমিষ্ট আম তা বুঝতে পারি না, তখন আমাদের ‘নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ’ হয়। নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ হল সহজ উপলব্ধি।

প্রশ্ন ২৮। সবিকল্পক প্রত্যক্ষ বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ যে প্রত্যক্ষে কোনো বস্তু ‘এইরূপ’ বা ‘এই প্রকার’ এমন জ্ঞান হয়, অর্থাৎ বস্তুটি কি, তার নাম, গুণ ইত্যাদি জানতে পারি, তখন আমাদের ‘সবিকল্পক প্রত্যক্ষ’ হয়। যেমন— কোনো বস্তুকে দেখে যখন আমরা সেটি যে একটি সুমিষ্ট আম তা বুঝতে পারি, তখন আমাদের ‘সবিকল্পক প্রত্যক্ষ’ হয়। নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষকে বাদ দিয়ে সবিকল্পক প্রত্যক্ষ হয় না।

প্রশ্ন ২৯। প্রত্যভিজ্ঞা বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ প্রত্যভিজ্ঞা হল বস্তুকে কেবল জানা নয়, তাকে পূর্বপরিচিত বলে চিনতে পারা, অর্থাৎ পূর্বে পরিচিত কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে পুনরায় দেখে চিনতে পারা; যেমন—কোনো একজন ব্যক্তিকে দেখে যখন আমি বলি, ইনি আমাদের দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন, তখন তাকে প্রত্যভিজ্ঞা বলা হবে। এই জ্ঞান কিন্তু স্মৃতি নয়, এটা হল প্রত্যক্ষ জ্ঞান।

প্রশ্ন ৩০। অনুমান কী?

উত্তরঃ ‘অনুমান’ শব্দটি ‘অনু’ এবং ‘মান’ এই দুটি শব্দ থেকে এসেছে। ‘অনু’ শব্দের অর্থ ‘পশ্চাৎ’ অর্থাৎ ‘পরে’ এবং ‘মান’ শব্দের অর্থ ‘জ্ঞান’। কাজেই আক্ষরিক অর্থে ‘অনুমান’ মানে হচ্ছে, যে জ্ঞান পূর্বে লব্ধ কোনো জ্ঞানের মাধ্যমে অর্জিত হয়। তাই অনুমান প্ৰত্যক্ষ জ্ঞান নয়, অপ্রত্যক্ষ জ্ঞান।

প্রশ্ন ৩১। স্বার্থ অনুমান ও পরার্থ অনুমান বলতে কী বোঝো? 

উত্তরঃ শুধু নিজের জ্ঞানের জন্য আমরা যে অনুমান করি, তা স্বার্থ অনুমান বা স্বার্থানুমান। 

অপরকে বুঝানোর জন্য বা অপরের জন্য আমরা যে অনুমান করি, তা পরার্থ অনুমান বা পরার্থানুমান।

প্রশ্ন ৩২। পরার্থ অনুমানে কয়টি বাক্য থাকে? সেগুলো কী কী? 

উত্তরঃ পরার্থ অনুমানের অবয়বে পাঁচটি বাক্য থাকে। এগুলোর নাম— প্রতিজ্ঞা, হেতু, উদাহরণ, উপনয় এবং নিগমন।

উদাহরণ:

(ক) এই পর্বতে আগুন আছে। (প্রতিজ্ঞা) 

(খ) কারণ, এই পর্বতে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। (হেতু)

(গ) যেখানে ধোঁয়া থাকে, সেখানে আগুন থাকে। যথা—রান্নাঘর (উদাহরণ) 

(ঘ) পর্বতে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। (উপনয়)

(ঙ) অতএব, পর্বতে আগুন আছে। (নিগমন বা সিদ্ধান্ত

প্রশ্ন ৩৩। পূর্ববৎ অনুমান কী?

উত্তরঃ আমরা যখন দৃশ্য বা দেখা বা দৃষ্ট কারণ থেকে অদৃশ্য বা অদেখা বা অদৃষ্ট কার্য অনুমান করি, তখন তাকে পূর্ববৎ অনুমান বলে; যেমন—আকাশে ঘন মেঘ দেখে আমরা যখন বলি বৃষ্টি হবে। এখানে কারণ প্রত্যক্ষ করে আমরা ভবিষ্যৎ কার্য অনুমান করি। 

প্রশ্ন ৩৪। শেষবৎ অনুমান কী?

উত্তরঃ আমরা যখন প্রত্যক্ষ বা দৃশ্য কার্য থেকে অপ্রত্যক্ষ বা অদৃশ্য কারণ অনুমান করি, তাকে শেষবৎ অনুমান বলে; যেমন— ঘুম থেকে উঠে মাটি ভেজা দেখে যখন বলি যে, রাত্রে বৃষ্টি হয়েছিল, তখন তাকে শেষবৎ অনুমান বলে। এখানে, ‘ভেজা মাটি’ প্রত্যক্ষ কার্য এবং ‘রাত্রির বৃষ্টি’ অপ্রত্যক্ষ কারণ। 

প্রশ্ন ৩৫। সামান্যতো-দৃষ্ট অনুমান কী?

উত্তরঃ একই রকমের অভিজ্ঞতা থেকে যখন দুটি বিষয়ের মধ্যে সর্বদা একই ধরনের সম্পর্ক দেখা যায় এবং এই দুটি বিষয়ের মধ্যে একটিকে দেখে অপরটিকে অনুমান করা হয়, তখন তাকে সামান্যতো-দৃষ্ট অনুমান বলে। যেমন—আমাদের অভিজ্ঞতায় সর্বদাই আমরা দেখি যে, শিংওয়ালা জন্তুর পায়ের খুর দ্বিখণ্ডিত হয়। যেমন—গোরু, মোষ ইত্যাদি। আমরা অরুণাচল প্রদেশে বেড়াতে গিয়ে ‘মিথুন’ নামক এক ধরনের জন্তুর মাথায় শিং দেখে অনুমান করলাম যে, মিথুনেরও পায়ের ক্ষুর দ্বিখণ্ডিত হবে। 

প্রশ্ন ৩৬। ব্যাপ্তি কী?

উত্তরঃ হেতুপদ ও সাধ্যপদের মধ্যে নিয়ত সম্বন্ধকে ব্যাপ্তি বলে। অর্থাৎ যেখানে যেখানে হেতু উপস্থিত থাকবে, সেখানে সাধ্যও উপস্থিত থাকবে। যেখানে ধোঁয়া থাকবে, সেখানে আগুনও থাকবে। ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যে নিয়ত সম্বন্ধের নাম ব্যাপ্তি। ব্যাপ্তি দুই রকমের হয়; যথা— 

(ক) সমব্যাপ্তি। ও 

(খ) বিষম ব্যাপ্তি।

প্রশ্ন ৩৭। সমব্যাপ্তি কী? 

উত্তরঃ যখন দুটি বস্তুতে বা বিষয়ে নিয়ত সাহচর্য সম্পর্ক থাকে, তাকে সমব্যাপ্তি বলে; যেমন—সকল জ্ঞাত বস্তুর নাম থাকে। এখানে ‘জ্ঞাত বস্তু’ এবং ‘নাম থাকা’ দুটি বিষয়ের মধ্যে সমব্যাপ্তি বিদ্যমান।

প্রশ্ন ৩৮। অসমব্যাপ্তি কী?

উত্তরঃ অসম বা বিষম ব্যাপ্তিতে দুটি বিষয় বা বস্তুর মধ্যে সদা সাহচর্য ব্যাপ্তি সম্বন্ধকে নিয়ন্ত্রণ করে না; যেমন—ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যেকার ব্যাপ্তি সম্বন্ধ।

প্রশ্ন ৩৯। ন্যায় অনুমানে কয়টি পদ আছে এবং কী কী? 

উত্তরঃ ন্যায় অনুমানে তিনটি পদ আছে; যথা—সাধ্যপদ, পক্ষপদ এবং হেতুপদ।

প্রশ্ন ৪০। কেবলাম্বয়ী অনুমান বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ হেতু এবং সাধ্যপদের মধ্যে সদর্থক সম্পর্কের ভিত্তিতে যে অনুমান করা হয়, তাকে কেবলান্বয়ী অনুমান বলে। এই জাতীয় অনুমানে হেতুপদ এবং সাধ্যপদের মধ্যে নিয়ত সম্বন্ধের উপস্থিতি থাকে; যথা— 

সব ক্ষেত্রেই ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকে। 

পর্বতে ধোঁয়া আছে।

∴ পর্বতে আগুন আছে।

এখানে ‘ধোঁয়া’ হেতুপদ এবং ‘আগুন’ সাধ্যপদ। 

প্রশ্ন ৪১। কেবল ব্যতিরেকী অনুমান কাকে বলে?

উত্তরঃ হেতুপদ এবং সাধ্যপদের মধ্যে নিয়ত সম্বন্ধের অনুপস্থিতির ভিত্তিতে যে অনুমান করা হয়, তাকে কেবল ব্যতিরেকী অনুমান বলে। এখানে হেতুপদ এবং সাধ্যপদের মধ্যে নঞর্থক সম্বন্ধ থাকে। যেমন— 

কোথাও ধোঁয়া না থাকলে আগুন থাকে না।

পর্বতে ধোঁয়া আছে। 

∴ পর্বতে আগুন আছে।

প্রশ্ন ৪২। অন্বয় ব্যতিরেকী অনুমান কাকে বলে?

উত্তরঃ এই জাতীয় অনুমানের ভিত্তি হেতুপদ এবং সাধ্যপদের মধ্যে সদর্থক, নঞর্থক  দুই রকমের সম্পর্কই থাকে। এই অনুমানে হেতুপদ এবং সাধ্যপদের মধ্যে নিয়ত সম্বন্ধের উপস্থিতি এবং দুই-ই থাকে। যেমন— 

(১) সব ক্ষেত্রেই ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকে।

পর্বতে ধোঁয়া আছে।

∴ পর্বতে আগুন আছে।

(২) কোথাও ধোঁয়া না থাকলে আগুন থাকে না।

পর্বতে ধোঁয়া আছে।

∴ পর্বতে আগুন আছে।

রচনাভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। উদাহরণ সহকারে সাধ্য, পক্ষ, হেতু পদকে ব্যাখ্যা করো। 

উত্তরঃ ন্যায় অনুমানে পদ তিনটি—সাধ্য, পক্ষ এবং হেতু। হেতু বা লিঙ্গ হচ্ছে সেই পদ যার সাহায্যে সাধ্য ও পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক স্থির করা যায়। উদাহরণ—

এই পর্বতে আগুন আছে। (প্রতিজ্ঞা) 

কারণ, এই পর্বতে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। (হেতু)

যেখানে ধোঁয়া থাকে, সেখানে আগুন থাকে; যথা—রান্নাঘর। 

পর্বতে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। (উপনয়) 

অতএব, পর্বতে আগুন আছে। (নিগমন)

এই উদাহরণে ‘ধোঁয়া’ হল হেতুপদ যার সাহায্যে পর্বতে আগুনের অস্তিত্ব প্রমাণ করা হয়েছে। হেতুর সাহায্যে আমরা ‘সাধ্য’কে জানতে পারি। এখানে ‘আগুন’ হল ‘সাধ্য’। যেখানে বা যে পদে সাধ্যের অস্তিত্ব স্থির করা হয়, তাকে বলে ‘পক্ষ’। এই উদাহরণে ‘পর্বত’ হল ‘পক্ষ’।

প্রশ্ন ২। পরার্থ অনুমানের বাক্যগুলিকে ব্যাখ্যা করো। 

উত্তরঃ পরার্থ অনুমানের অবয়বে পাঁচটি বাক্য থাকে। এগুলোর নাম প্রতিজ্ঞা, হেতু, উদাহরণ, উপনয় এবং নিগমন।

উদাহরণ—

(ক) এই পর্বতে আগুন আছে। (প্রতিজ্ঞা)

(খ) কারণ এই পর্বতে ধোঁয়া আছে। (হেতু)

(গ) যেখানে ধোঁয়া থাকে, সেখানে আগুন থাকে; যথা—রান্নাঘর।

(ঘ) পর্বতে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। (উপনয়)

(ঙ) অতএব পর্বতে আগুন আছে। (নিগমন) 

প্রথম বাক্যে ‘প্রতিজ্ঞা’ অর্থ ‘আমি প্রমাণ করব যে, পর্বতে আগুন আছে।’ ‘প্রতিজ্ঞা’ হল সাধ্য-জ্ঞাপক অবয়ব। দ্বিতীয় বাক্যে ‘হেতু’ হল কেন ‘পর্বতে আগুন আছে—তার কারণ নির্দেশ করা। হেতু জ্ঞাপক অবয়বের নাম ‘হেতু’। পরিচিত দৃষ্টান্ত সহযোগে সাধ্যপদের সঙ্গে হেতুপদের সার্বিক সম্পর্কজ্ঞাপক অবয়ব হল ‘উদাহরণ’। সাধ্যের সঙ্গে সার্বিক সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত হেতুপদের ও পক্ষপদের সম্বন্ধজ্ঞাপক অবয়বই উপনয়। উপনয় বা চতুর্থ বাক্যে আমরা প্রত্যক্ষ জ্ঞানকে উপস্থিত করি। পঞ্চম বাক্য ‘নিগমনে’ আমরা সিদ্ধান্ত বা নবলব্ধ জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠা করি। এই সিদ্ধান্ত পূর্ববর্তী চারটি অবয়ব থেকে নিঃসৃত।

প্রতিজ্ঞার সঙ্গে নিগমনের পার্থক্য এই যে, প্রতিজ্ঞাতে যা অপ্রমাণিত, নিগমনে তাই প্রমাণিত হয়।হেতু অবয়বের সঙ্গে উপনয় অবয়বের পার্থক্য এই যে, হেতু অবয়বে যে হেতুপদের কথা বলা হয় সেই হেতুপদের সঙ্গে সাধ্যের সম্বন্ধ আছে কিনা তা অজ্ঞাত থাকে; কিন্তু উপনয় অবয়বে যে হেতুপদের কথা বলা হয় সেই হেতুপদের সঙ্গে সাধ্যের যে সার্বিক সম্বন্ধ আছে তা আমাদের জ্ঞাত। অবয়ব সমষ্টি যখন যুক্তির আকারে প্রকাশিত হয়, তখন তাকে ন্যায় বলে।

প্রশ্ন ৩। স্বার্থানুমান ও পরার্থানুমানের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ স্বার্থানুমান ও পরার্থানুমানের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ 

(ক) স্বার্থানুমান সেই অনুমান যা নিজের জন্য করা হয়।আমি যখন পর্বতে ধোঁয়া দেখে নিজের মনে জানি পর্বতে আগুন আছে, তখন তাকে স্বার্থানুমান বলে। অন্যদিকে, যখন অপরকে বোঝানোর জন্য বা অপরের জানবার জন্য কোনো অনুমান করা হয়, তখন তাকে পরার্থানুমান বলে।

(খ) স্বার্থানুমানে থাকে তিনটি অবয়ব, কিন্তু পরার্থানুমানে থাকে পাঁচটি অবয়ব।

(গ) পরার্থানুমানের পাঁচটি অবয়ব হল—প্রতিজ্ঞা, হেতু, উদাহরণ, উপনয় এবং নিগমন। স্বার্থানুমানের ত্রি-অবয়ব পরার্থানুমানের এই পঞ্চাবয়বেরই প্রথম বা শেষ তিনটি অবয়ব।

(ঘ) স্বার্থানুমানকে ‘ত্রি-অবয়বী ন্যায়’ এবং পরার্থানুমানকে ‘পঞ্চাবয়বী ন্যায়’ বলা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top