Class 12 Logic and Philosophy Chapter 8 ধর্ম

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 8 ধর্ম answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 12 Logic and Philosophy Chapter 8 ধর্ম and select needs one.

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 8 ধর্ম

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 12 Logic and Philosophy Chapter 8 ধর্ম Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

ধর্ম

পাঠ:

অতি সংক্ষিপ্ত  উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। কোন ল্যাটিন শব্দ  থেকে ‘Religion’ শব্দটি এসেছে ? 

উত্তরঃ ‘Religare’ থেকে।

প্রশ্ন ২। Religare শব্দটির অর্থ কী ?

উত্তরঃ Religare কথাটির অর্থ বন্ধন।

প্রশ্ন ৩। কোন সংস্কৃত শব্দ থেকে ‘ধর্ম’ শব্দটি এসেছে ?

উত্তরঃ ধর্ম শব্দটি সংস্কৃত ‘ধৃ’ ধাতু থেকে এসেছে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

প্রশ্ন ৪। কার মতে ধর্ম হল জীবাত্মার পরমাত্মারূপে স্বরূপের জ্ঞান ?

উত্তরঃ হেগেলের মতে।

প্রশ্ন ৫। ‘ নৈতিক কর্তব্য এবং দায়িত্বই ঈশ্বরের ধারণার জন্ম দেয় ‘ কে বলেছিলেন ?

উত্তরঃ কাণ্ট।

প্রশ্ন ৬। ‘ ধর্ম থেকে নৈতিকতার উৎপত্তি ‘। কথাটি স্বীকার করো কি ?

উত্তরঃ হাঁ, করি।

প্রশ্ন ৭। ‘ ধর্ম হল নিজেই সমাপ্তি ‘। কথাটি স্বীকার কর কি ?

উত্তরঃ হাঁ, করি।

প্রশ্ন ৮। ‘ ধর্ম ‘ হল এক মানসিক প্রবণতা যার দ্বারা মানুষ অসীমের উপলব্ধি করতে পারে ‘—- এই উক্তিটির সঙ্গে জড়িত দার্শনিকের নাম লেখো।

উত্তরঃ হেগেল।

প্রশ্ন ৯। ‘ ধর্মের নূন্যতম সংজ্ঞা হল আধ্যাতিক সত্ত্বার বিশ্বাস ‘—- এই উক্তিটির সঙ্গে সম্পর্কিত দার্শনিকের নাম লেখো।

উত্তরঃ টাইলার।

প্রশ্ন ১০। ‘ ধর্ম হল এক উচ্চতর শক্তি বা শৃঙ্খলা, যা মানবজীবনের গতিপথ পরিচালিত করে এবং সে গুলো করে।’—- এই উক্তিটির সঙ্গে জড়িত দার্শনিকের নাম লেখো।

উত্তরঃ সার ফ্রেজার।

প্রশ্ন ১১। ধর্ম হল সসীমের মধ্যে অসীমের এক উষ্ণ আন্তরিক, নিকটবর্তী অনুভব ঈশ্বরের উপরে একান্ত নির্ভরযোগ্য।’— এই উক্তিটির সঙ্গে জড়িত দার্শনিকের নাম কী ?

উত্তরঃ শ্লেয়ার মেকার ।

প্রশ্ন ১২। ধর্ম হল এক আবেগের স্পর্শ নৈতিকতা।’— এই উক্তিটির সঙ্গে জড়িত দার্শনিকের নাম কী ?

উত্তরঃ ম্যাথু আর্নল্ড।

প্রশ্ন ১৩। ধর্ম হল এক অস্থিস্তত্বশীল বিশ্বাস, সেটা হল এক স্বর্গীয় মন এবং ইচ্ছা যে বিশ্বব্রক্ষাণ্ডকে শাসন করে এবং মানব জাতির সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে।’— এই উক্তিটির সঙ্গে সম্পর্কিত দার্শনিকের নাম লেখো।

উত্তরঃ মার্টিনিউ।

প্রশ্ন ১৪। ‘ ধর্ম মূল্যের অভিনাশিতাকে বিশ্বাস করে।’– এই উক্তিটির সঙ্গে জড়িত দার্শনিকের নাম লেখো।

উত্তরঃ হেরল হফিডং।

প্রশ্ন ১৫। নৈতিকতা হল ধর্মের উৎস’—- এটা কে সমর্থন করেছিলেন ?

উত্তরঃ কাণ্ট, মার্টিনিউ ইত্যাদি।

প্রশ্ন ১৬। কে ধর্মকে মূল্যের দিক থেকে সংজ্ঞায়িত করেছেন?

উত্তরঃ হফডিং।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্ন ১। ধর্মের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী ?

উত্তরঃ ‘Religion’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ‘ Religare ‘ শব্দ থেকে। Religion শব্দের অর্থ হলো ‘ বন্ধন’। এর অর্থ যে ধর্ম দৃঢ়ভাবে বেঁধে রাখে। যদিও Religion কে বন্ধন রূপে গণ্য করা হয় তবুও ব্যক্তি জীবন ও জাতীয় জীবনে যেটি যথার্থ সংহতি আনে সেটা ধর্ম। সামাজিক জীবনে বৃহত্তর ঐক্যের মধ্যে যে ব্যবস্থা মানুষের জীবনকে ধরে রাখে, সে ব্যবস্থাই ধর্ম।

প্রশ্ন ২। ধর্মের মধ্যে থাকা তিনটি উপাদান কী কী ?

উত্তরঃ ধর্মের উপাদানগুলি হল নিম্নরূপ —

(ক) একজন ব্যক্তি যিনি ধর্ম চর্চা করেন।

(খ) ধর্মের বিষয়বস্তু।

(গ) ধার্মিকের সঙ্গে সেই বিষয়বস্তু সম্পর্ক।

প্রশ্ন ৩। ম্যাথু আর্নল্ডের মতে ধর্ম কী ?

উত্তরঃ ম্যাথু আর্নল্ডের মতে ধর্ম হল আবেগ মিশ্রিত নৈতিকতা ‘। আর্নল্ড বলেন ধর্ম এবং নৈতিকতা অভিন্ন।

প্রশ্ন ৪। ধর্মের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ —-

(ক) ধর্মের ক্ষেত্রে কতকগুলি মানসিক শক্তি প্রেরণা রূপে কাজ করে। যথা —- ব্যক্তি বেঁচে থাকার বাসনা, আত্মবিকাশ এবং কল্যাণ লাভের আগ্ৰহ এবং আত্ম উপলব্ধির আকাংখা।

(খ) ধর্মের একটি বাহ্যিক দিক আছে। এটি হল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এই বাহ্যিক দিকের মধ্য দিয়েই ধর্মীয় অনুভূতি প্রকাশ পায়।

প্রশ্ন ৫। ধর্ম এবং নৈতিকতার মধ্যে সাদৃশগুলি কী কী ?

উত্তরঃ ধর্ম এবং নৈতিকতার মধ্যে সাদৃশগুলি হল —

(ক) ধর্ম আত্মার অমরত্ব বিশ্বাস করে। নীতি বিজ্ঞান ও আত্মার অমরত্ব স্বীকার করে।

(খ) নৈতিক আদর্শ হল জীবনের অন্যতম পরম আদর্শ । যাতে একটি ক্ষুদ্র সীমিত জীবন লাভ করা সম্ভব নয় এবং ধর্ম দ্বারা জন্ম জন্মান্তরের প্রচেষ্টায় মানব ধীরে ধীরে এই নৈতিক আদর্শের নিকট পৌঁছায়।

প্রশ্ন ৬। ধর্ম এবং নৈতিকতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ধর্ম এবং নৈতিকতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল—-

(ক) ধর্ম ঈশ্বরকেন্দ্রীক এবং নীতি মানবকেন্দ্রীক।

(খ) ইচ্ছার স্বাধীনতার চেতনা অবিহনে নীতি সম্ভব নয়। অন্যতায় ধর্মের ক্ষেত্র হলো অনিবার্যতার ক্ষেত্র।

প্রশ্ন ৭। ‘ ধর্ম নিজেই এক উদ্দেশ্য বা সমাপ্তি’। একথা তুমি বিশ্বাস করো কি ? তোমার উত্তরের সমর্থনে কারণ দেখাও।

উত্তরঃ হাঁ করি। কারণ মানুষের জীবনে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধর্মের দিক তিনটি বৌদ্ধিক, আবেগমূলক ও ইচ্ছামূলক । ঈশ্বর বা অলৌকিক সত্তা সম্পর্কে চিন্তা- ভাবনা, ভয় ভীতি- ভক্তি এবং ভালোবাসার এক মিশ্র আবেগ, আচার অনুষ্ঠান সব মিলিয়েই ধর্ম। ধর্মকে মানুষ অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মানুষ বিশ্বাস করে যে এই বিশ্বব্রক্ষাণ্ডের মধ্যে মানুষের কোন অধিকার নেই। অর্থাৎ পরম মূল্যের জন্য এক মহত্তর শক্তির প্রয়োজন  আছে,যা মানবিক শক্তির বহু উর্দ্বে। সেই গভীর আস্থাই মানুষের ধর্মীয় আচরণের মূল্য ধর্ম কোন উদ্দেশ্য লাভের উপায় নয়, সে নিজেই এক মহৎ উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন ৮। পৃথিবীর কয়েকটি বিখ্যাত ধর্ম উল্লেখ করো।

উত্তরঃ পৃথিবীর কয়েকটি বিখ্যাত ধর্ম হল —- হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইসলাম এবং জৈন।

প্রশ্ন ৯। ধর্মের প্রকৃতি বা স্বরূপকে আমরা কত প্রকারে বোঝার চেষ্টা করতে পারি এবং কী কী ?

উত্তরঃ ধর্মের স্বরূপ বা প্রকৃতিকে আমরা দুই প্রকারে বুঝাতে চেষ্টা করতে পারি। 

এই গুলি হল—-

(ক) ধর্মের সংজ্ঞা নিরূপণ করে।

(খ) ধর্মের সঙ্গে মানুষের অন্যান্য আচরণ বা ক্রিয়ার সম্পর্ক নিরূপণ করে।

প্রশ্ন ১০। ধর্ম সম্পর্কে ফ্লিণ্টের সংজ্ঞাটি লেখো। 

অথবা, 

ধর্ম সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত সন্তোষজনক সংজ্ঞা কোনটি লেখো।

উত্তরঃ ধর্ম সম্পর্কে ফ্লিণ্টের সংজ্ঞাটিকে অপেক্ষাকৃত সন্তোষজনক সংজ্ঞা বলে বিবেচনা করা হয়। তার মতে,—-‘ ধর্ম হল এমন এক বা একাধিক সত্তাতে মানুষের বিশ্বাস,যে সত্তা মানুষের অপেক্ষাও অধিক শক্তিশালী এবং যে সত্তা ইন্দ্রিয়ের অনিধগম্য , কিন্তু তার আবেগ বা কার্যের প্রতি উদাসীন নয়।’

প্রশ্ন ১১। মেক্সমূলারের দেওয়া ধর্মের সংজ্ঞাটি কী ?

উত্তরঃ মেক্সমূলারের দেওয়া ধর্মের সংজ্ঞাটি হল—-‘ ধর্ম হচ্ছে অসীমের প্রত্যক্ষণ বা উপলব্ধি।’

প্রশ্ন ১২। হার্বাড স্পেস্ণারের দেওয়া ধর্মের সংজ্ঞাটি লেখো।

উত্তরঃ হার্বাড স্পেস্ণারের ধর্মের সংজ্ঞাটি হল—- ‘ধর্ম হলো এক আনুমানিক ধারণা যা এই বিশ্বজগতকে বোধগম্য করে তুলে।’

প্রশ্ন ১৩। হেগেলের মতে, ধর্মের সংজ্ঞাটি কী লেখো।

উত্তরঃ হেগেলের মতে, ‘ ধর্ম হলো জীবাত্মার নিজেকে পরমাত্মার স্বরূপ জ্ঞান।’

প্রশ্ন ১৪। শ্লেয়ার মেকারের দেওয়া ধর্মের সংজ্ঞাটি লেখো।

উত্তরঃ শ্লেয়ার মেকারের দেওয়া ধর্মের সংজ্ঞাটি হল—- ‘ ধর্মের মূল নিহীত থাকে অনুভূতিতে, যে একদিকে চিন্তনের সঙ্গে, অন্যদিকে নৈতিকতা বা ক্রিয়ার সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ধর্ম হলো এক উষ্ণ অন্তরঙ্গ, তাৎক্ষণিক চেতনা, যাতে থাকে, সীমার মধ্যে অসীমকে উপলব্ধি, অস্থায়ীর সঙ্গে চিন্তনের সম্পর্ক এবং সর্বোপরি এক নির্ভরতার অনুভূতি।’

প্রশ্ন ১৫। ডেকার্টের মতে , ‘ ধর্ম থেকে নৈতিকতার উৎপত্তি । ‘ কথাটি তুমি যদি স্বীকার না করো, তাহলে কারণ দেখাও।

উত্তরঃ ডেকার্ট , লক এবং প্যালে প্রমুখ দার্শনিকরা বলেন, ‘ ধর্ম হলো নৈতিকতার উৎসস্থল।’ নীতির এবং নৈতিক আদর্শ ঈশ্বরের অবদান। ঈশ্বর যা আদেশ করেন সেটাই ন্যায়, এবং তিনি যা নিষেধ করেন সেটাই অন্যায়। ঈশ্বর নৈতিকতার সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষের আচার আচরণের উপর বিধি- নিষেধ আরোপ করেন। ঈশ্বরের নৈতিক বিধান মানুষের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বিধান। 

এই মতবাদ সত্য নয়। কারণ —-

(ক) এই মতবাদ অনুসারে ঈশ্বরের নৈতিক চরিত্র নেই। নৈতিক পার্থক্যগুলি ঈশ্বরের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে এবং এদের পারস্পরিক পরিবর্তন ঈশ্বরের ইচ্ছাধীন। কিন্তু মানুষ ঈশ্বরকেই নৈতিকতার আধার হিসাবে বিবেচনা করে, মানুষ বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর নৈতিক আদর্শের উপর নির্ভর করেন।

(খ) এই মতবাদ অনুযায়ী ঈশ্বর সর্বশক্তিমান । তিনি নিয়ম পালন করলে পুরস্কার দিবেন এবং নিয়ম লংঘন করলে শাস্তি দেবেন। কিন্তু, পুরস্কারের আশায় বা শাস্তির ভয়ে কোন কাজ করলে কখনও সেই কাজের নৈতিক মূল্য থাকে না।

প্রশ্ন ১৬।  ‘ ধর্ম হল এক ধরনের আবেগ, যা বিশ্বাস করে যে মানুষ ও জগতের মধ্যে একটি সামঞ্জস্য আছে।’

ধর্মের এই সংজ্ঞাটি কে প্রদান করেছিলেন ? এই সংজ্ঞাটির একটি ক্রটি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ মেকটেগার্ট।

এই সংজ্ঞার দ্বারা তিনি ধর্মের ভিতরে থাকা আবেগ এবং অনুভূতির দিকটিকে কেবল প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ধর্মের ভিতরে যে ক্রিয়ামূলক দিকটি আছে, কিংবা বৌদ্ধিক দিক আছে, সেগুলোকে প্রকাশ করেননি। সুতরাং এই সংজ্ঞা ক্রটিপূর্ণ।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ ——

(ক) ধর্মের লক্ষ্য এবং চালিকাশক্তি হল, মানুষের মৌলিক অভাববোধ এবং আকাঙ্ক্ষা। যেমন— ব্যক্তি বেঁচে থাকার বাসনা, আত্মবিকাশ এবং কল্যাণ লাভের আগ্ৰহ এবং আত্ম উপলব্ধির আকাংখা।

(খ) ধর্মে নিহীত থাকে এক বা একাধিক শক্তিতে বিশ্বাস, যার উপরে তার কল্যাণ নির্ভর করে।

(গ) ধর্মের একটি বাহ্যিক দিক আছে। এটি হল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এই বাহ্যিক দিকের মধ্য দিয়েই ধর্মীয় অনুভূতি প্রকাশ পায়।

(ঘ) ধর্মের একটি সামাজিক ও আনুষ্ঠানিক দিকও আছে।

প্রশ্ন ২। কাণ্টের ধর্মের সংজ্ঞাটি উল্লেখ করো। এর ক্রটিগুলি কী কী ?

উত্তরঃ কাণ্ট তাঁর ধর্মের সংজ্ঞায় বলেছিলেন —-‘ আমাদের সকল কর্তব্যকে ঈশ্বরের আদেশ বলে মেনে নেওয়াই ধর্ম।

কাণ্টের সংজ্ঞাটির ক্রটি হল এই যে তাদের সংজ্ঞাতে তিনটি মানসিক ক্রিয়া —— চিন্তা, অনুভূতি এবং ইচ্ছার মধ্যে সকল ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তার মতে, ধর্ম কেবল ইচ্ছার বিষয়। তিনি নৈতিক ইচ্ছার পরিপেক্ষিতে ধর্মের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন এবং ধর্মীয় চেতনাকে নৈতিক চেতনার সঙ্গেও ভিন্ন বলে মনে করেন। ঈশ্বরের সঙ্গে সহচর্যের অলৌকিক অভিজ্ঞতা, প্রার্থনা, পূজা, উপাসনা, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি —– যেগুলি ধর্মীয় অভিজ্ঞতার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। সেই বৈশিষ্ট্যগুলি কাণ্টের সংজ্ঞায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

প্রশ্ন ৩। নৈতিকতা এবং ধর্মের মধ্যে পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ নৈতিকতা এবং ধর্মের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল নিম্নরূপ —–

(ক) ধর্ম ঈশ্বরকেন্দ্রীক এবং নীতি মানবকেন্দ্রীক।

(খ) ইচ্ছার স্বাধীনতার চেতনা অবিহনে নীতি সম্ভব নয়। অন্যতায় ধর্মের ক্ষেত্র হলো অনিবার্যতার ক্ষেত্র।

(গ) নৈতিকতা হলো অসীমের লক্ষ্যে অগ্ৰগতি এবং ধর্ম হলো অসীমের মধ্য দিয়ে অগ্ৰগতি।

(ঘ) নীতির তুলনায় ধর্মের পরিসর অনেক ব্যাপক। কারণ, নীতি কেবল কল্যাণ সম্পর্কিত বিষয় আলোচনা করে। কিন্তু, ধর্ম কল্যাণ ছাড়া সত্য ও সুন্দরের আলোচ্য বিষয়।

প্রশ্ন ৪। ‘ ধর্ম এবং নৈতিকতা পরস্পর সম্পৃক্ত। ‘— কথাটি আলোচনা করো অথবা ‘ধর্ম এবং নৈতিকতা পরস্পর নির্ভরশীল। ‘ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ যদি নীতি ও ধর্মের মধ্যে কোন কোন বিষয়ে অমিল আছে তবুও নীতি ও ধর্মের সম্বন্ধ অতি গভীর। নীতি এবং ধর্ম পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। ধর্মের জন্য নীতি এবং নীতির জন্য ধর্ম আবশ্যক । নীতি ধর্মের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়। ধর্মীয় জীবনে নৈতিক চেতনার অবদানের মূল্য অসীম। যারা ধর্ম প্রবর্তক তারা ধর্মীয় জীবনে ঈশ্বরের গুণ হিসাবে সাধুতা এবং প্রেম এইগুলির কথা বলেছেন। নীতি ধর্মকে সংশোধিত করে এবং উন্নত করে। ধার্মিক ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে বিবেক- বুদ্ধি সম্পন্ন যিনি সম্মতভাবে তাঁর কর্তব্য সম্পাদন করেন এবং নৈতিক আদর্শকে অনুসরণ করে জীবন যাপনের সংকল্প করেন।

আবার, ধর্ম নীতির জন্য অপরিহার্য। ধর্ম নীতির উপরে প্রভাব বিস্তার করে তাকে অনুপ্রাণিত করে। নীতির শেষ পরিণতি আসলে ধর্ম। ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্বতা লাভ করাই ধর্মের মূল উদ্দেশ্য। তাই ধর্ম এবং নীতি পরস্পর নির্ভরশীল।

প্রশ্ন ৫। হেগেলের মতে, ধর্ম কী ? তাঁর সংজ্ঞার ক্রটি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ হেগেলের মতে, ধর্ম হল —– জীবাত্মার নিজেকে পরমাত্মার স্বরূপ জ্ঞান।’

ঐশ্বরিক দিক থেকে হেগেল ধর্মের সংজ্ঞায় বলেছেন —- ‘ ধর্ম হচ্ছে সসীম আত্মার নিজের ঐশ্বরিক আত্মার সম্পর্কে জ্ঞান। ধর্ম জ্ঞানের বিষয়। যে অদ্বৈতবাদে সসীম এবং অসীমের ঐক্য সাধিত হয়েছে, ধর্ম তারই জ্ঞান।’

হেগেলের এই সংজ্ঞাটি ক্রটিপূর্ণ। তিনি ধর্মের বুদ্ধিগত দিকটির উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর সংজ্ঞায় ধর্মের আবেগ ও ইচ্ছার দিকগুলো উপেক্ষিত হয়েছে।

প্রকৃত পক্ষে, ধর্মীয় অভিজ্ঞতায় আমরা ঈশ্বরকে জানি তা নয়। আমরা আমাদের অদৃষ্টের বাইরে কোন অলৌকিক সত্তা বা শক্তির সঙ্গে নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছি। ভক্তি, পূজা, অর্চনা ছাড়া ধর্ম ধর্মই নয়। তাছাড়া সেই অলৌকিক সত্তার সম্পর্কে ভয়,শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ছাড়া ধর্ম শূন্যগর্ভ হয়ে যায়।

প্রশ্ন ৬। ধর্ম এবং নৈতিকতার মধ্যে চারটি সাদৃশ লেখো।

উত্তরঃ ধর্ম এবং নৈতিকতার মধ্যে চারটি সাদৃশ বা মিল হল নিম্নরূপ ——

(ক) ধর্ম আত্মার অমরত্ব বিশ্বাস করে। নীতি বিজ্ঞান ও আত্মার অমরত্ব স্বীকার করে।

(খ) নৈতিক আদর্শ হল জীবনের অন্যতম পরম আদর্শ। যাতে একটি ক্ষুদ্র সীমিত জীবন লাভ করা সম্ভব নয় এবং ধর্মদ্বারা জন্মজন্মান্তরের প্রচেষ্টায় মানব ধীরে ধীরে এই নৈতিক আদর্শের নিকট পৌঁছায়।

(গ) ধর্মীয় আদর্শ ও নৈতিক আদর্শ অনেক ক্ষেত্রে এক। ধর্মীয় আদর্শ হলো সৎ কাজ করে, সৎ জীবন যাপনের আদর্শ। নৈতিকতার আদর্শ হলো সদজীবন- যাপন।

(ঘ) ধর্ম ও নীতিবিদ্যা দুইয়েরই উদ্দেশ্য মানব কল্যাণ।

প্রশ্ন ৭। ধর্ম কী? ধর্মের প্রকৃতি কী ?

উত্তর ধর্মের প্রকৃতি আলোচনা করতে হলে দুই রকমের আলোচনা করতে হয়। আমরা ধর্মের সংজ্ঞা নিরূপণ করে বা ধর্মের সঙ্গে মানুষের অন্যান্য আচার আচরণ বা ক্রিয়ার সম্পর্ক নিরূপণ করে ধর্মের প্রকৃতি বুঝতে পারি। যা তুলনামূলক ভাবে অপরিবর্তনশীল এবং স্থিরতার তুলনায় যা ক্রমবিকাশ এবং গতিমূল তাঁর সংজ্ঞা দেওয়া খুবই কঠিন। অর্থাৎ ধর্মের এমন কিছু নিয়ম আছে যা বিশ্বজনীন এবং অনুপম। এই নিয়মগুলির আবিষ্কারের প্রচেষ্টা ধর্মের রূপ বা প্রকৃতি বোঝা যায়।

প্রশ্ন ৮। শ্লেয়ার মেকারের মতে ধর্ম কী? তাঁর সংজ্ঞার গুণ এবং দোষ গুলি কী কী ?

উত্তরঃ শ্লেয়ার মেকারের দেওয়া ধর্মের সংজ্ঞাটি হল—-‘ধর্মের মূল নিহীত থাকে অনুভূতিতে, যে অনুভূতি একদিকে চিন্তনের সঙ্গে অন্যদিকে নৈতিকতা বা ক্রিয়ার সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ধর্ম হল এক উষ্ণ অন্তরঙ্গ, তাৎক্ষণিক চেতনা যাতে থাকে, সীমার মধ্যে অসীমকে উপলব্ধি, অস্থায়ীর সঙ্গে চিন্তনের সম্পর্ক এবং  সর্বোপরি এক নির্ভরতার অনুভূতি।

শ্লেয়ার মেকারের এই সংজ্ঞার গুণগুলি হল, আসার  বুদ্ধিবাদ ও শূন্যগর্ভ নৈতিকতা থেকে ধর্মকে রক্ষা করেছে। ধর্ম কেবল জ্ঞানের বিষয় নয় , আবেগ বা অনুভূতি তার অন্যতম উপাদান, এই সত্যটি শ্লেয়ার মেকারের সংজ্ঞায় পাওয়া যায়। কারণ ধর্ম চিন্তা বা ভাবনার বিষয়, কেবল অনুভূতি দিয়ে ধর্মকে বিচার করা যায় না।

শ্লেয়ার মেকারের দেওয়া ধর্মের সংজ্ঞার দোষ গুলি হল, তিনি ধর্ম থেকে বৌদ্ধিক এবং ঐচ্ছিক উপাদানকে নির্বাসন দিয়েছেন। শুদ্ধ অনুভূতি ধর্ম নয়। শ্রদ্ধা, ভক্তি, প্রেম ইত্যাদির সঙ্গে ঈশ্বর চেতনার সম্পর্ক আছে। আবার ধর্মীয় আচরণকে বাদ দিয়েও ধর্মের ব্যাখ্যা করা যায় না। ঈশ্বর চেতনার সঙ্গে যেমন শ্রদ্ধা , ভক্তি আবেগ যুক্ত থাকে, তেমন ই ধর্মীয় রীতি নীতি আচার অনুষ্ঠানের ব্যাপার থাকে না। তাই শ্লেয়ার মেকারের সংজ্ঞাটি এক দেশদর্শী।

প্রশ্ন ৯। ‘ নৈতিকতা থেকে ধর্মের জন্ম বা সৃষ্টি ‘— উক্তিটির সমালোচনামূলক ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ কাণ্ট, মার্টিন্যুর  মতেৎ, ধর্ম নৈতিকতার উৎস নয়, নৈতিকতা ধর্মের উৎস ।কাণ্ট বিশ্বাস করেন যে, সততা বা সদগুণ আনন্দের সঙ্গে জড়িত। সাধারণ মানুষ মনে করেন সৎ কাজ করলে আনন্দ পাওয়া যায় এবং অসৎ কাজ করলে দুঃখ পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতায় এমনটি দেখা যায় না। আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখতে পাই সৎ ব্যক্তিরা জীবনে অনেক দুঃখ ভোগ করে এবং অসৎ ব্যক্তিরা সুখে জীবন কাটায়। এসব অভিজ্ঞতা আমাদের মনে সংশয়ের সৃষ্টি করে এবং বিবেকের সংঘাত ঘটাই। কাণ্টের মতে, বিশ্বপৃথিবীর পেছনে এমন কোন ব্যক্তি বা নৈতিক শক্তি থাকে,যে ভালো কাজের সঙ্গে আনন্দ এবং মন্দ কাজের সঙ্গে দুঃখকে সংপৃক্ত করে। এই নৈতিক শক্তিই ঈশ্বর। যিনি সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞ। অতএব, কাণ্টের মতে, নৈতিকতা থেকে ঈশ্বরের ধারণা সৃষ্টি হয়, যার ফলে জন্ম‌ হয় ধর্মের।

মার্টিন্যুর মতে, নৈতিকতা থেকে ধর্মের উৎপত্তি। মানুষের মনে নৈতিক বাধ্যবাধকতাবোধ সৃষ্টি হয়, তার থেকে ঈশ্বরের ধারণা জন্মায়। আমরা ন্যায় সঙ্গত কাজ করতে বাধ্য। এই বাধ্যতার অর্থ কোন মহত্তর শক্তির বা সত্তার প্রতি আনুগত্য। আমরা বিশ্বাস করি যে , ঈশ্বর সর্বজ্ঞ আছেন,যাকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। তিনি আমাদের সকল কাজ, সকল বিষয় প্রত্যক্ষ করে থাকেন এবং কোন কিছুই তার অজ্ঞাত নয়। অতএব, মার্টিন্যুর মতে, নৈতিক বাধ্যবাধকতাবোধ থেকেই ঈশ্বরের ধারণার উৎপত্তি এবং ধারণা থেকে ধর্মীয় অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হয়।

কাণ্ট এবং মার্টিন্যু এবং অন্য যারা মনে করেন নৈতিকতা থেকে ধর্মের সৃষ্টি তারা ভুল করেন। তাদের মতে, আংশিক সত্যকে প্রকাশ করে, সম্পূর্ণ সত্যকে নয়। ধর্ম একদিকে নীতি অনুযায়ী চলমান প্রক্রিয়া, যা অনন্ত জ্ঞান , অনন্ত পূর্ণতা এবং যার অবস্থান ঈশ্বর প্রাপ্তিতে। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস জন্মে সৎ কাজ করার এবং সৎ জীবন যাপন করার প্রেরণা দেয়। ধার্মিক ব্যক্তিরা সবসময় সাধু ব্যক্তি হয়ে থাকেন। তাই বলা যায় যে, ধর্ম এবং নৈতিকতা পরস্পর নির্ভরশীল।

প্রশ্ন ১০। ‘ নৈতিকতা ধর্মের উৎস ‘—— কথাটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ কাণ্ট, মার্টিন্যুর  মতেৎ, ধর্ম নৈতিকতার উৎস নয়, নৈতিকতা ধর্মের উৎস ।কাণ্ট বিশ্বাস করেন যে, সততা বা সদগুণ আনন্দের সঙ্গে জড়িত। সাধারণ মানুষ মনে করেন সৎ কাজ করলে আনন্দ পাওয়া যায় এবং অসৎ কাজ করলে দুঃখ পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতায় এমনটি দেখা যায় না। আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখতে পাই সৎ ব্যক্তিরা জীবনে অনেক দুঃখ ভোগ করে এবং অসৎ ব্যক্তিরা সুখে জীবন কাটায়। এসব অভিজ্ঞতা আমাদের মনে সংশয়ের সৃষ্টি করে এবং বিবেকের সংঘাত ঘটাই। কাণ্টের মতে, বিশ্বপৃথিবীর পেছনে এমন কোন ব্যক্তি বা নৈতিক শক্তি থাকে,যে ভালো কাজের সঙ্গে আনন্দ এবং মন্দ কাজের সঙ্গে দুঃখকে সংপৃক্ত করে। এই নৈতিক শক্তিই ঈশ্বর। যিনি সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞ। অতএব, কাণ্টের মতে, নৈতিকতা থেকে ঈশ্বরের ধারণা সৃষ্টি হয়, যার ফলে জন্ম‌ হয় ধর্মের।

মার্টিন্যুর মতে, নৈতিকতা থেকে ধর্মের উৎপত্তি। মানুষের মনে নৈতিক বাধ্যবাধকতাবোধ সৃষ্টি হয়, তার থেকে ঈশ্বরের ধারণা জন্মায়। আমরা ন্যায় সঙ্গত কাজ করতে বাধ্য। এই বাধ্যতার অর্থ কোন মহত্তর শক্তির বা সত্তার প্রতি আনুগত্য। আমরা বিশ্বাস করি যে , ঈশ্বর সর্বজ্ঞ আছেন,যাকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। তিনি আমাদের সকল কাজ, সকল বিষয় প্রত্যক্ষ করে থাকেন এবং কোন কিছুই তার অজ্ঞাত নয়। অতএব, মার্টিন্যুর মতে, নৈতিক বাধ্যবাধকতাবোধ থেকেই ঈশ্বরের ধারণার উৎপত্তি এবং ধারণা থেকে ধর্মীয় অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হয়।

কাণ্ট এবং মার্টিন্যু এবং অন্য যারা মনে করেন নৈতিকতা থেকে ধর্মের সৃষ্টি তারা ভুল করেন। তাদের মতে, আংশিক সত্যকে প্রকাশ করে, সম্পূর্ণ সত্যকে নয়। ধর্ম একদিকে নীতি অনুযায়ী চলমান প্রক্রিয়া, যা অনন্ত জ্ঞান , অনন্ত পূর্ণতা এবং যার অবস্থান ঈশ্বর প্রাপ্তিতে। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস জন্মে সৎ কাজ করার এবং সৎ জীবন যাপন করার প্রেরণা দেয়। ধার্মিক ব্যক্তিরা সবসময় সাধু ব্যক্তি হয়ে থাকেন। তাই বলা যায় যে, ধর্ম এবং নৈতিকতা পরস্পর নির্ভরশীল।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলির উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও —-

(ক) কোন শব্দ থেকে ‘Religion’ শব্দটি এসেছে ?

উত্তরঃ  ‘Religare’ থেকে।

(খ) ‘Religare’ কথাটির অর্থ কী ?

উত্তরঃ Religare কথাটির অর্থ বন্ধন।

(গ) ‘ ধর্ম ‘, শব্দটি সংস্কৃতের কোন ধাতু থেকে উৎপন্ন ?

উত্তরঃ ধর্ম শব্দটি সংস্কৃত ‘ধৃ’ ধাতু থেকে এসেছে।

(ঘ) ধর্ম কী ?

উত্তরঃ ‘Religion’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ‘ Religare ‘ শব্দ থেকে। Religion শব্দের অর্থ হলো ‘ বন্ধন’। এর অর্থ যে ধর্ম দৃঢ়ভাবে বেঁধে রাখে। যদিও Religion কে বন্ধন রূপে গণ্য করা হয় তবুও ব্যক্তি জীবন ও জাতীয় জীবনে যেটি যথার্থ সংহতি আনে সেটা ধর্ম। সামাজিক জীবনে বৃহত্তর ঐক্যের মধ্যে যে ব্যবস্থা মানুষের জীবনকে ধরে রাখে, সে ব্যবস্থাই ধর্ম।

(ঙ) ধর্মের সঙ্গে জড়িত তিনটি উপাদান কী কী ?

উত্তরঃ ধর্মের উপাদানগুলি হল নিম্নরূপ —

(ক) একজন ব্যক্তি যিনি ধর্ম চর্চা করেন।

(খ) ধর্মের বিষয়বস্তু।

(গ) ধার্মিকের সঙ্গে সেই বিষয়বস্তু সম্পর্ক।

প্রশ্ন ২। উত্তর দাও—-

(ক) ধর্মের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ?

উত্তরঃ ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ ——

(ক) ধর্মের লক্ষ্য এবং চালিকাশক্তি হল, মানুষের মৌলিক অভাববোধ এবং আকাঙ্ক্ষা। যেমন— ব্যক্তি বেঁচে থাকার বাসনা, আত্মবিকাশ এবং কল্যাণ লাভের আগ্ৰহ এবং আত্ম উপলব্ধির আকাংখা।

(খ) ধর্মে নিহীত থাকে এক বা একাধিক শক্তিতে বিশ্বাস, যার উপরে তার কল্যাণ নির্ভর করে।

(গ) ধর্মের একটি বাহ্যিক দিক আছে। এটি হল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এই বাহ্যিক দিকের মধ্য দিয়েই ধর্মীয় অনুভূতি প্রকাশ পায়।

(ঘ) ধর্মের একটি সামাজিক ও আনুষ্ঠানিক দিকও আছে।

(খ) কাণ্টের দেওয়া ধর্মের সংজ্ঞাটি কী এবং ক্রটিগুলি কী কী ?

উত্তরঃ কাণ্ট তাঁর ধর্মের সংজ্ঞায় বলেছিলেন —- ‘ আমাদের সকল কর্তব্যকে ঈশ্বরের আদেশ বলে মেনে নেওয়াই ধর্ম।

কাণ্টের সংজ্ঞাটির ক্রটি হল এই যে তাদের সংজ্ঞাতে তিনটি মানসিক ক্রিয়া —— চিন্তা, অনুভূতি এবং ইচ্ছার মধ্যে সকল ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তার মতে, ধর্ম কেবল ইচ্ছার বিষয়। তিনি নৈতিক ইচ্ছার পরিপেক্ষিতে ধর্মের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন এবং ধর্মীয় চেতনাকে নৈতিক চেতনার সঙ্গেও ভিন্ন বলে মনে করেন। ঈশ্বরের সঙ্গে সহচর্যের অলৌকিক অভিজ্ঞতা, প্রার্থনা, পূজা, উপাসনা, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি —– যেগুলি ধর্মীয় অভিজ্ঞতার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। সেই বৈশিষ্ট্যগুলি কাণ্টের সংজ্ঞায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

(গ) হেগেলের ধর্ম সম্পর্কিত সংজ্ঞাটি লেখো। এই সংজ্ঞার ভিত্তি কী ?

উত্তরঃ হেগেলের মতে, ধর্ম হল —– জীবাত্মার নিজেকে পরমাত্মার স্বরূপ জ্ঞান।’

ঐশ্বরিক দিক থেকে হেগেল ধর্মের সংজ্ঞায় বলেছেন —- ‘ ধর্ম হচ্ছে সসীম আত্মার নিজের ঐশ্বরিক আত্মার সম্পর্কে জ্ঞান। ধর্ম জ্ঞানের বিষয়। যে অদ্বৈতবাদে সসীম এবং অসীমের ঐক্য সাধিত হয়েছে, ধর্ম তারই জ্ঞান।’

হেগেলের এই সংজ্ঞাটি ক্রটিপূর্ণ। তিনি ধর্মের বুদ্ধিগত দিকটির উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর সংজ্ঞায় ধর্মের আবেগ ও ইচ্ছার দিকগুলো উপেক্ষিত হয়েছে।

প্রকৃত পক্ষে, ধর্মীয় অভিজ্ঞতায় আমরা ঈশ্বরকে জানি তা নয়। আমরা আমাদের অদৃষ্টের বাইরে কোন অলৌকিক সত্তা বা শক্তির সঙ্গে নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছি। ভক্তি, পূজা, অর্চনা ছাড়া ধর্ম ধর্মই নয়। তাছাড়া সেই অলৌকিক সত্তার সম্পর্কে ভয়,শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ছাড়া ধর্ম শূন্যগর্ভ হয়ে যায়।

(ঘ) ধর্ম ও নৈতিকতার কয়েকটি সাদৃশ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ধর্ম এবং নৈতিকতার মধ্যে চারটি সাদৃশ বা মিল হল নিম্নরূপ ——

(ক) ধর্ম আত্মার অমরত্ব বিশ্বাস করে। নীতি বিজ্ঞান ও আত্মার অমরত্ব স্বীকার করে।

(খ) নৈতিক আদর্শ হল জীবনের অন্যতম পরম আদর্শ। যাতে একটি ক্ষুদ্র সীমিত জীবন লাভ করা সম্ভব নয় এবং ধর্মদ্বারা জন্মজন্মান্তরের প্রচেষ্টায় মানব ধীরে ধীরে এই নৈতিক আদর্শের নিকট পৌঁছায়।

(গ) ধর্মীয় আদর্শ ও নৈতিক আদর্শ অনেক ক্ষেত্রে এক। ধর্মীয় আদর্শ হলো সৎ কাজ করে, সৎ জীবন যাপনের আদর্শ। নৈতিকতার আদর্শ হলো সদজীবন- যাপন।

(ঘ) ধর্ম ও নীতিবিদ্যা দুইয়েরই উদ্দেশ্য মানব কল্যাণ।

(ঙ) ধর্ম ও নৈতিকতার কয়েকটি পার্থক্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ নৈতিকতা এবং ধর্মের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল নিম্নরূপ —–

(ক) ধর্ম ঈশ্বরকেন্দ্রীক এবং নীতি মানবকেন্দ্রীক।

(খ) ইচ্ছার স্বাধীনতার চেতনা অবিহনে নীতি সম্ভব নয়। অন্যতায় ধর্মের ক্ষেত্র হলো অনিবার্যতার ক্ষেত্র।

(গ) নৈতিকতা হলো অসীমের লক্ষ্যে অগ্ৰগতি এবং ধর্ম হলো অসীমের মধ্য দিয়ে অগ্ৰগতি।

(ঘ) নীতির তুলনায় ধর্মের পরিসর অনেক ব্যাপক। কারণ, নীতি কেবল কল্যাণ সম্পর্কিত বিষয় আলোচনা করে। কিন্তু, ধর্ম কল্যাণ ছাড়া সত্য ও সুন্দরের আলোচ্য বিষয়।

(চ ) ধর্ম নৈতিকতার উৎস ‘। আলোচনা করো।

উত্তরঃ ডেকার্ট , লক, প্যালে বলেন যে, ধর্ম নৈতিকতাকে সৃষ্টি করে। নীতি এবং নৈতিকতার আদর্শ ঈশ্বর তাঁর ইচ্ছায় সৃষ্টি করেছেন। ঈশ্বর যা আদেশ করেন, সেটাই ন্যায় বা ভালো, এবং তিনি যা নিষেধ করেন, সেটাই অন্যায় বা মন্দ। সুতরাং ঈশ্বরের আদেশ করা কাজ ন্যায়, এবং নিষেধ করা কাজ অন্যায়। তাই ধর্ম থেকে নৈতিকতার উৎপত্তি।

কিন্তু এই মতবাদটির বিরুদ্ধেও নিম্নলিখিত সমালোচনা করা যায় —–

(ক) এতে ঈশ্বরের চরিত্র হানি ঘটে। এই মতবাদ মতে, নৈতিক পার্থক্যগুলি ঈশ্বরের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে এবং এদের পরিবর্তনও ঈশ্বরের ইচ্ছাধীন। কিন্তু প্রকৃত সত্য এই যে, ঈশ্বর এক পূর্ণসত্তা এবং ন্যায় নীতি তাঁর প্রকৃতিরই অংশ। যা ন্যায় বা শুভ, তা তাঁর প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যা অন্যায় বা মন্দ তা তাঁর প্রকৃত বিরুদ্ধ। তিনি তাঁর নৈতিক বিরুদ্ধ কিছু করতে পারেন না। সুতরাং নৈতিক পার্থক্যগুলি তাঁর খেয়াল খুশির ওপরে নির্ভর করে না, বরং নির্ভর করে তাঁর নৈতিক প্রকৃতির ওপর।

(খ) মানুষ নৈতিক নিয়ম নীতি মেনে চলে এই কারণে যে, ঈশ্বর সর্বশক্তিমান তিনি সেইসব নিয়ম পালন করলে পুরস্কার দিবেন এবং নিয়ম অমান্য করলে শাস্তি দিবেন। কিন্তু, পুরস্কারের আশায় বা শাস্তির ভয়ে কোন কাজ করলে সেই কাজের নৈতিক মূল্য থাকে না।

(ছ) ‘ নৈতিকতা ধর্মের উৎস।’ আলোচনা করো।

উত্তরঃ কাণ্ট, মার্টিন্যুর  মতেৎ, ধর্ম নৈতিকতার উৎস নয়, নৈতিকতা ধর্মের উৎস ।কাণ্ট বিশ্বাস করেন যে, সততা বা সদগুণ আনন্দের সঙ্গে জড়িত। সাধারণ মানুষ মনে করেন সৎ কাজ করলে আনন্দ পাওয়া যায় এবং অসৎ কাজ করলে দুঃখ পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতায় এমনটি দেখা যায় না। আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখতে পাই সৎ ব্যক্তিরা জীবনে অনেক দুঃখ ভোগ করে এবং অসৎ ব্যক্তিরা সুখে জীবন কাটায়। এসব অভিজ্ঞতা আমাদের মনে সংশয়ের সৃষ্টি করে এবং বিবেকের সংঘাত ঘটাই। কাণ্টের মতে, বিশ্বপৃথিবীর পেছনে এমন কোন ব্যক্তি বা নৈতিক শক্তি থাকে,যে ভালো কাজের সঙ্গে আনন্দ এবং মন্দ কাজের সঙ্গে দুঃখকে সংপৃক্ত করে। এই নৈতিক শক্তিই ঈশ্বর। যিনি সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞ। অতএব, কাণ্টের মতে, নৈতিকতা থেকে ঈশ্বরের ধারণা সৃষ্টি হয়, যার ফলে জন্ম‌ হয় ধর্মের।

মার্টিন্যুর মতে, নৈতিকতা থেকে ধর্মের উৎপত্তি। মানুষের মনে নৈতিক বাধ্যবাধকতাবোধ সৃষ্টি হয়, তার থেকে ঈশ্বরের ধারণা জন্মায়। আমরা ন্যায় সঙ্গত কাজ করতে বাধ্য। এই বাধ্যতার অর্থ কোন মহত্তর শক্তির বা সত্তার প্রতি আনুগত্য। আমরা বিশ্বাস করি যে , ঈশ্বর সর্বজ্ঞ আছেন,যাকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। তিনি আমাদের সকল কাজ, সকল বিষয় প্রত্যক্ষ করে থাকেন এবং কোন কিছুই তার অজ্ঞাত নয়। অতএব, মার্টিন্যুর মতে, নৈতিক বাধ্যবাধকতাবোধ থেকেই ঈশ্বরের ধারণার উৎপত্তি এবং ধারণা থেকে ধর্মীয় অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হয়।

কাণ্ট এবং মার্টিন্যু এবং অন্য যারা মনে করেন নৈতিকতা থেকে ধর্মের সৃষ্টি তারা ভুল করেন। তাদের মতে, আংশিক সত্যকে প্রকাশ করে, সম্পূর্ণ সত্যকে নয়। ধর্ম একদিকে নীতি অনুযায়ী চলমান প্রক্রিয়া, যা অনন্ত জ্ঞান , অনন্ত পূর্ণতা এবং যার অবস্থান ঈশ্বর প্রাপ্তিতে। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস জন্মে সৎ কাজ করার এবং সৎ জীবন যাপন করার প্রেরণা দেয়। ধার্মিক ব্যক্তিরা সবসময় সাধু ব্যক্তি হয়ে থাকেন। তাই বলা যায় যে, ধর্ম এবং নৈতিকতা পরস্পর নির্ভরশীল।

(জ) ধর্ম এবং নৈতিকতা পরস্পর থেকে স্বতন্ত্র।’ আলোচনা করো।

উত্তরঃ ধর্ম এবং নৈতিকতা পরস্পর থেকে স্বতন্ত্র, অর্থাৎ পরস্পর নির্ভরশীল নয়। ধর্ম নৈতিকতা থেকে সৃষ্টি নয়, নৈতিকতাও ধর্ম থেকে সৃষ্টি নয়। কিন্তু এদের প্রত্যেকেরই উৎস স্থল মানুষের মন। ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে এক বা একাধিক শক্তির ওপরে, আত্মরক্ষা বা কল্যাণের জন্য মানুষের নির্ভরতাবোধের অনুভূতি থেকে। আবার নৈতিকতা সৃষ্টি হয়েছে আত্মার পূর্ণতা প্রাপ্তির ধারণা বা আদর্শ থেকে। যদিও ধর্ম ও নৈতিকতা স্বতন্ত্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে, তবুও আমরা দেখতে পাই, মানুষের বৌদ্ধিক এবং নৈতিক বিকাশ শেষ পর্যন্ত দুইয়ের সমন্বয়ে লাভ করা যায়।

(ঝ) ‘ ধর্ম ও নৈতিকতা পরস্পর নির্ভরশীল ‘—- ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ যদি নীতি ও ধর্মের মধ্যে কোন কোন বিষয়ে অমিল আছে তবুও নীতি ও ধর্মের সম্বন্ধ অতি গভীর। নীতি এবং ধর্ম পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। ধর্মের জন্য নীতি এবং নীতির জন্য ধর্ম আবশ্যক । নীতি ধর্মের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়। ধর্মীয় জীবনে নৈতিক চেতনার অবদানের মূল্য অসীম। যারা ধর্ম প্রবর্তক তারা ধর্মীয় জীবনে ঈশ্বরের গুণ হিসাবে সাধুতা এবং প্রেম এইগুলির কথা বলেছেন। নীতি ধর্মকে সংশোধিত করে এবং উন্নত করে। ধার্মিক ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে বিবেক- বুদ্ধি সম্পন্ন যিনি সম্মতভাবে তাঁর কর্তব্য সম্পাদন করেন এবং নৈতিক আদর্শকে অনুসরণ করে জীবন যাপনের সংকল্প করেন।

আবার, ধর্ম নীতির জন্য অপরিহার্য। ধর্ম নীতির উপরে প্রভাব বিস্তার করে তাকে অনুপ্রাণিত করে। নীতির শেষ পরিণতি আসলে ধর্ম। ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্বতা লাভ করাই ধর্মের মূল উদ্দেশ্য। তাই ধর্ম এবং নীতি পরস্পর নির্ভরশীল।

প্রশ্ন ৩। মার্টিন্যুর মতে ধর্মের সংজ্ঞা লেখো।

উত্তরঃ ধর্ম হল এক অস্তিত্বশীল বিশ্বাস, সেটা হল এক স্বর্গীয় মন এবং ইচ্ছা যে বিশ্বব্রক্ষাণ্ডকে শাসন করে এবং মানব জাতির সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে।

প্রশ্ন ৪। মূল্যের দিক দিয়ে ধর্মের সংজ্ঞা দাও। এই সংজ্ঞা কে দিয়েছে ?

উত্তরঃ ‘ধর্ম মূল্যের অভিনাশিতাকে বিশ্বাস করে.”

এই সংজ্ঞাটি দিয়েছেন হেরল হফিডং।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top