Class 12 Logic and Philosophy Chapter 2 আগমনের ভিত্তি

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 2 আগমনের ভিত্তি answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 12 Logic and Philosophy Chapter 1 আগমন এবং এর প্রকার and select needs one.

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 2 আগমনের ভিত্তি

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 12 Logic and Philosophy Chapter 2 আগমনের ভিত্তি Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

আগমনের ভিত্তি

পাঠ:

অতি সংক্ষিপ্ত  উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ 

অতি সংক্ষিপ্ত  উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। আগমনের ভিত্তি কত প্রকারের ?

উত্তরঃ আগমনের ভিত্তি দুই প্রকারের।

প্রশ্ন ২। ‘ প্রকৃতির একরূপতা বৈচিত্র্য নেই ‘—- কথাটি তুমি মানো কি ?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ৩। কার্যকারণ নীতি হল আগমনের এক বস্তুগত ভিত্তি ‘—– তুমি একমত কি ?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ৪। —– পরিস্থিতির অধীনে প্রকৃতি একইভাবে আচরণ করে।

উত্তরঃ একই।

প্রশ্ন ৫। ‘ কারণ হল সদর্থক এবং নঞর্থক উপকারণের সমষ্টি—–কে বলেছিলেন ?

উত্তরঃ জে.এস.মিল।

প্রশ্ন ৬। কার মতে ‘ কারণ হল কার্যের নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা ‘ ?

উত্তরঃ ডেভিড হিউম।

প্রশ্ন ৭। যদি একটি ঘটনাকে যে কোন পূর্ববর্তী ঘটনার কারণ বলা হয়, তবে ——- সৃষ্টি হয়।

উত্তরঃ কাকতালীয় দোষের।

প্রশ্ন ৮। কার মতে ‘ নিরীক্ষণ হল ঘটনার আবিষ্কার এবং পরীক্ষণ হল ঘটনার সৃষ্টি’ ?

উত্তরঃ বেইন।

প্রশ্ন ৯। কে বলেছিলেন—  ‘ নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের পার্থক্য প্রকারে নয়, কেবল মাত্রায় ভিন্ন’ ?

উত্তরঃ জেভনস্।

প্রশ্ন ১০। নিরীক্ষণের বিভিন্ন দোষগুলি কী কী ?

উত্তরঃ অনবেক্ষণ দোষ এবং ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ।

প্রশ্ন ১১। যে কোন ঘটনার কারণ গুণগতভাবে কার্যের সমান কি ?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ১২। কার্যকারণের নীতি এবং প্রকৃতির একরূপতা বিধি- কোনটি আগমনের ভিত্তি ?

উত্তরঃ আগমনের আকারগত ভিত্তি।

প্রশ্ন ১৩। ‘ আগমনের বিরোধাভাস প্রকৃতির একরূপতা নীতির সাথে সংযোজিত’— শুদ্ধ কি ?

উত্তরঃ শুদ্ধ।

প্রশ্ন ১৪। ‘ আগমনের ভিত্তিই আগমনের সিদ্ধান্ত’— কোন তর্কশাস্ত্রবিদ এমন বলেছিলেন ?

উত্তরঃ জে. এস. মিল।

প্রশ্ন ১৫। ‘গুণগত দিক থেকে কারণ কার্যের শর্তহীন, অপরিবর্তনীয়, অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনা এবং পরিমাণগতভাবে কারণ এবং কার্য সমান ‘ —- এই উক্তির সাথে জড়িত তর্কশাস্ত্রবিদের নাম লেখো।

উত্তরঃ কারভেথ রীড।

প্রশ্ন ১৬। ‘ নিরীক্ষণ হল নিষ্ক্রিয় অভিজ্ঞতা অন্যদিকে পরীক্ষণ হল সক্রিয় অভিজ্ঞতা ‘— কার উক্তি ?

উত্তরঃ ষ্টকের উক্তি।

প্রশ্ন ১৭। ‘ কার্যকারণের নীতি হল আগমনের বস্তুগত ভিত্তি ‘– শুদ্ধ কি ?

উত্তরঃ না।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১৮। কোন তর্কবিদের মতে, ‘ কারণ অনুকূল এবং প্রতিকূল উপকারণের সমষ্টি’?

উত্তরঃ কারভেথ রীড।

প্রশ্ন ১৯। প্রকৃতির একরূপতা বিধি সম্পর্কে মিলের পরস্পর বিরোধী উক্তিতে উদ্ভব হওয়া তর্কীয় দোষটির নাম কী ?

উত্তরঃ চক্রক দোষ।

প্রশ্ন ২০। প্রকৃতির একরূপতা বিধি আগমনের আকারগত ভিত্তি/ বস্তুগত ভিত্তি ?

উত্তরঃ আকারগত ভিত্তি।

প্রশ্ন ২১। ‘ নিরীক্ষণ ঘটনার আবিষ্কার এবং পরীক্ষণ ঘটনার সৃষ্টি ‘—— উক্তিটি কার ?

উত্তরঃ বেইনের উক্তি।

প্রশ্ন ২২। আগমনের আকারগত ভিত্তি কী কী ?

উত্তরঃ প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধি।

প্রশ্ন ২৩। আগমনের বস্তুগত ভিত্তি কী কী ?

উত্তরঃ পরীক্ষণ এবং নিরীক্ষণ।

প্রশ্ন ২৪। আগমনের বিরোধাভাসের সাথে জড়িত থাকা তর্কবিদজনের নাম হল—–

(ক) বেইন।

(খ) মিল। 

(গ) ফাওলার। এবং 

(ঘ) মিঃ ষ্টক।

উত্তরঃ মিল।

প্রশ্ন ২৫। আগমনের বিরোধাভাস প্রকৃতির একরূপতা বিধি/ কার্যকারণ বিধির সাথে জড়িত।

উত্তরঃ আগমনের বিরোধাভাস প্রকৃতির একরূপতা বিধির সাথে জড়িত।

প্রশ্ন ২৬। পর্যবেক্ষণ শব্দটির ব্যু্ৎপত্তিগত অর্থ কী ?

উত্তরঃ প্রাকৃতিক ঘটনার পরিদর্শন।

প্রশ্ন ২৭। ‘ নিরীক্ষণের স্থান পরীক্ষণের আগে ‘ এটা সত্য কি ?

উত্তরঃ হ্যাঁ , সত্য।

প্রশ্ন ২৮। ‘ সূর্য পূর্বদিকে উদিত হয় এবং পশ্চিমদিকে অস্ত যায় ‘—- এই পর্যবেক্ষণ ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণের/ সার্বজনীন ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণের উদাহরণ।

উত্তরঃ এটি সার্বজনীন‌ ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণের উদাহরণ।

প্রশ্ন ২৯। ‘ যাত্রাকালের পূর্বে হাঁচি মারার ফলে কার্য সিদ্ধি হয় না ‘—– এটা অ- পর্যবেক্ষণ দোষ/ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ।

উত্তরঃ এটি অপর্যবেক্ষণ দোষ।

প্রশ্ন ৩০। ইন্দ্রিয় সংবেদনের ভুল ব্যাখ্যার ফলে যে দোষ ঘটে সেই দোষটি কী ?

উত্তরঃ ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ।

প্রশ্ন ৩১। ‘ জগতের ক্রম কেবল একটি নিয়মের অধীন নয়, এটি বিভিন্ন নিয়মের অধীন ‘—- কে বলেছেন ?

উত্তরঃ জে.এস.মিল।

প্রশ্ন ৩২। ‘ নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের মধ্যে পার্থক্য মাত্র পরিমাণগত, মূলগত কোনো পার্থক্য নেই ‘—- এটা সত্য কি ?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৩৩। প্রকৃতির একরূপতা বিধিটি প্রকৃতিতে থাকা বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে/ করে না।

উত্তরঃ প্রকৃতির একরূপতা বিধিটি প্রকৃতিতে থাকা বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে না।

প্রশ্ন ৩৪। ‘ নানাকারণবাদ কারণ সম্পর্কীয় এক ভ্রান্ত ধারণা ‘। এটি সত্য কি ?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। আগমনের ভিত্তি বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ যে সমস্ত প্রক্রিয়া এবং বিধি – নিয়মের উপর ভিত্তি করে আগমন অনুমানের সিদ্ধান্তে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাদেরকে আগমনের ভিত্তি বলা হয়। আগমনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল—আগমনে যুক্তির আকারগত এবং বস্তুগত সত্যতা দুইই বিচার্য। তাই, আগমন অনুমান দুই প্রকার ভিত্তির উপর নির্ভর করে। যথা — আকারগত ভিত্তি এবং বস্তুগত ভিত্তি। আকারগত ভিত্তি হল — প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধি। বস্তুগত ভিত্তি হল নিরীক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণ।

প্রশ্ন ২। প্রকৃতির একরূপতা নীতি বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ প্রকৃতির একরূপতা নীতির অর্থ হল একই পরিস্থিতিতে প্রকৃতি একই রূপ আচরণ করে। প্রকৃতি নিয়মের রাজত্ব। প্রকৃতিতে একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। কোন আকস্মিক পরিস্থিতির বা কারণের উদ্ভব না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃতি কখনও নিজের নিয়মকে লংঘন করে না।

প্রশ্ন ৩। কারণ কী ?

উত্তরঃ বিভিন্ন তর্কবিজ্ঞানী কারণের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। মিল কারণের দুটি সংজ্ঞা দিয়েছেন। প্রথমত :—- কারণ হল কার্যের অপরিবর্তনীয়, শর্তহীন, পূর্ববর্তী ঘটনা। দ্বিতীয়ত :— কারণ হল সদর্থক এবং নঞর্থক উপকারণসমূহের সমষ্টি। বেইনের মতে, কারণ হল কার্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় উপকারণ বা পরিস্থিতির সম্পূর্ণ সমষ্টি।

প্রশ্ন ৪। উপাদানগত কারণের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ যে উপাদান বা বস্তুর দ্বারা কোন কার্য উৎপাদন করা হয়, তাকে উপাদানগত বা বস্তুগত কারণ বলে। যেমন —- মাটি দিয়ে একটি পাত্র বানানো হল, এখানে মাটি হল পাত্রের বস্তুগত বা উপাদানগত কারণ।

প্রশ্ন ৫। কারণের নানাকারণবাদ মত বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ কারণের নানাকারণবাদ মতটির অর্থ হল এই যে বিভিন্ন কারণ থেকে বিভিন্ন সময়ে একই উৎপন্ন হতে পারে। যেমন, সূর্য,বাতি, মোমবাতি, বিজলী বাতি, টর্চলাইট ইত্যাদি থেকে আলো সৃষ্টি হয়। এখানে আলোটা যদি কার্য হয় তবে বিভিন্ন কারণগুলি হল সূর্য, বাতি, মোমবাতি, বিজলী বাতি , টর্চলাইট ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৬। এরিষ্টটলের মতে কারণ কত প্রকারের ? সেগুলি কী কী ?

উত্তরঃ এরিষ্টটলের মতে কারণ চার প্রকার। যথা — 

(১) বস্তুগত কারণ।

(২) আকারগত কারণ। 

(৩) নিমিত্ত কারণ। এবং 

(৪) চূড়ান্ত বা পরিণাম কারণ।

প্রশ্ন ৭। উপকারণের সংজ্ঞা দাও। বিভিন্ন প্রকারের উপকারণগুলি কী কী ?

উত্তরঃ কার্য উৎপাদনে কারণের মধ্যে যে গুলি ঘটনা অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে সেগুলির প্রত্যেকটি এক একটি উপকারণ। কারভেথ রীডের মতে , উপকারণ হচ্ছে, কারণের অপরিহার্য অংশ।

উপকারণ দুই প্রকারের–

(১) অনুকূল বা সদর্থক উপকারণ

(২) প্রতিকূল বা নঞর্থক উপকারণ।

প্রশ্ন ৮। কারণের সংযোজন বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ যখন কয়েকটি কারণ সংযুক্তভাবে একটি জটিল কার্য সম্পাদন করে তখন সেই কারণগুলিকে কারণ সংযোজন বা কারণ সমন্বয় বলে। উদাহরণস্বরূপ— একটি ফুটবল ম্যাচ জিততে গেলে অনেকজন (১১ জন) খেলোয়াড়ের প্রয়োজন।

প্রশ্ন ৯। নিমিত্ত কারণের উদাহরণসহ সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ একটি কার্য সৃষ্টির জন্য পরিশ্রম, নৈপুণ্য ও শক্তির প্রয়োজন হয়। সেই পরিশ্রম ও শক্তিই হল কার্যের নিমিত্ত কারণ। যেমন একটি কাপড় তৈরি করতে তাঁতী যে শক্তি বা নিপুণতা প্রয়োগ করে তা হল কাপড়ের নিমিত্ত কারণ।

প্রশ্ন ১০। সরল পর্যবেক্ষণের দুটি সুবিধা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সরল পর্যবেক্ষণের বা নিরীক্ষণের দুটি সুবিধা হল—

(ক) নিরীক্ষণে আমরা কারণ থেকে কার্যে এবং কার্য থেকে কারণে যেতে পারি। অর্থাৎ নিরীক্ষণে ,কার্য জানা থাকলে কারণ অনুসন্ধান করতে পারি এবং কারণ জানা থাকলে কার্যও নির্ণয় করতে পারি।

(খ) নিরীক্ষণের স্থান পরীক্ষণের আগে। কোন ঘটনার পরীক্ষণের জন্য নিরীক্ষণের সাহায্যে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়।

প্রশ্ন ১১। প্রকৃতির একরূপতার অর্থ কত প্রকারের আছে ? সেগুলি কী কী ?

উত্তরঃ প্রকৃতির একরূপতা দুই প্রকারের—-

(১) সহ- অবস্থানগত একরূপতা। এবং

(২) পরম্পরাগত বা অনুক্রমিতার একরূপতা।

প্রশ্ন ১২। কার্য সংমিশ্রণের প্রকার কতটি এবং সেগুলি কী কী ?

উত্তরঃ কার্য সংমিশ্রণ দুই প্রকারের — 

(ক) সমগুণসম্পন্ন কার্য সংমিশ্রণ।

(খ) ভিন্নগুণসম্পন্ন কার্য সংমিশ্রণ।

প্রশ্ন ১৩। নানাকারণবাদ এবং কারণ সংযোজনের দুটি পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ নানাকারণবাদ এবং কারণ সংযোজনের দুটি পার্থক্য হল——

(১) নানাকারণবাদ মতে, কতগুলি কারণ স্বাধীনভাবে কাজ করে বিভিন্ন সময়ে একই কার্য উৎপাদন করে। অপরদিকে কারণ সমন্বয়ের মতে কতগুলি কারণ স্বাধীনভাবে কাজ করে একটি মিশ্র কার্য উৎপন্ন করতে পারে না।

(২) কার্যকারণ সম্বন্ধের ক্ষেত্রে নানা কারণবাদ একটি ভ্রান্ত ধারণা। কিন্তু কারণ সমন্বয় ভ্রান্ত ধারণা নয়।

প্রশ্ন ১৪। আগমনের বিরোধাভাস বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ মিলের মতে, প্রকৃতির একরূপতা নীতি, আগমনের একটি পূর্বস্বীকৃত সত্য, একটি স্বতঃসিদ্ধ, মৌলিক নিয়ম, আগমনের ভিত্তি। মিল আবার বলেছেন,এই একরূপতা নীতি অবৈজ্ঞানিক আগমনের ফল। অর্থাৎ আগমনের ভিত্তি আগমনের সিদ্ধান্ত। মিলের এই  পরস্পর বিরোধী মতবাদকে আগমনের বিরোধাভাস বলে।

প্রশ্ন ১৫। প্রযোজক এবং সংস্থার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো।

উত্তরঃ প্রযোজক এবং সংস্থার মধ্যে পার্থক্য হল —–

যে শক্তি কোন ক্রিয়া বা কার্যকে সৃষ্টি করে তাকে প্রযোজক বলে। অপরদিকে প্রযোজকের কার্য উৎপাদন করার জন্য যে পারিপার্শ্বিক ঘটনার সমাবেশ হয় তাকে সংস্থা বলে।

উদাহরণস্বরূপ — একটি খড়ের গাদায় যদি একটি জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি ছুঁড়ে ফেলা হয়, তাহলে আগুন জ্বলবে। এখানে ‘জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি ‘ হল প্রযোজক এবং খড়ের গাদায় হল সংস্থা।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১৬। কারণের দুটি গুণগত লক্ষণ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ কারণের দুটি গুণগত লক্ষণ হল—-

(ক) কারণ কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনা।

(খ) কার্য এবং কারণ দুটি সাপেক্ষ ঘটনা। কার্য এবং কারণ পরস্পর সম্পর্কিত।

প্রশ্ন ১৭। আবশ্যকীয় অনবেক্ষণ দোষ বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ পর্যবেক্ষণের সময় কখনও কখনও আমরা প্রয়োজনীয় দৃষ্টান্ত অবেহলা করি কিংবা কখনও আমরা আবশ্যিক পরিস্থিতি বা পারিপার্শ্বিক অবস্থাও লক্ষ্য করি না। এমতাবস্থায় কার্যকারণ নির্ণয় করতে যে দোষটি ঘটে তাকে আবশ্যীয় দোষ বলে।

প্রশ্ন ১৮। এরিষ্টটলের কারণের শ্রেণিবিভাগসমূহ কী কী ?

উত্তরঃ এরিষ্টটলের মতে কারণের শ্রেণিবিভাগসমূহ চার প্রকার। যথা — 

(১) বস্তুগত কারণ। 

(২) আকারগত কারণ।

(৩) নিমিত্ত কারণ। এবং

(৪) চূড়ান্ত বা পরিণাম কারণ। 

প্রশ্ন ১৯। আগমনের আকারগত ভিত্তি বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ আগমন দুই ধরনের ভিত্তির উপর নির্ভর করে,যথা —- আকারগত এবং বস্তুগত। যে নিয়ম আগমনের আকারগত সত্যতা নিশ্চিত করে, তাদের আগমনের আকারগত ভিত্তি বলে। 

আগমনের ভিত্তি হল দুটি,যথা —- 

(১) প্রকৃতির একরূপতা বিধি। এবং

(২) কার্যকারণ বিধি।

প্রশ্ন ২০। আগমনের বস্তুগত ভিত্তি বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ আগমন অনুমান দুই ধরণের ভিত্তির উপর নির্ভর করে, যথা—– আকারগত ভিত্তি এবং বস্তুগত ভিত্তি। যে মসস্ত প্রক্রিয়া আগমনের বস্তুগত সত্যতা নিশ্চিত করে, তাদের আগমনের বস্তুগত ভিত্তি বলে। 

আগমনের বস্তুগত ভিত্তি হল দুটি,যথা —-

(ক) পরীক্ষণ। এবং

(খ) নিরীক্ষণ।

প্রশ্ন ২১। আগমনের বিরোধাভাসে থাকা মিলের পরস্পর বিরোধী মতবাদ দুটি কী কী ?

উত্তরঃ আগমনের বিরোধাভাসে থাকা মিলের পরস্পর বিরোধী মতবাদ দুটি হল—–

(ক) মিলের মতে প্রকৃতির একরূপতা বিধি প্রত্যেক আগমনের ক্ষেত্রে পূর্বস্বীকার্য সত্য। এটি একটি স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম যা আগমনের ভিত্তি।

(খ) মিল আবার বলেছেন যে প্রকৃতির একরূপতা বিধিটি অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ এটি অভিজ্ঞতা থেকে লব্ধ।

প্রশ্ন ২২। মিল প্রদত্ত কারণের সংজ্ঞা দুটি কী কী ?

উত্তরঃ মিলের দেওয়া কারণের সংজ্ঞা হল—– প্রথম সংজ্ঞা অনুসারে “কারণ হল কার্যের অপরিবর্তনীয়, শর্তান্তরহীন, পূর্ববর্তী ঘটনা।” দ্বিতীয়ত —— কারণ হল সদর্থক এবং নঞর্থক উপকারণসমূহের সমষ্টি।”

প্রশ্ন ২৩। ‘ কারণের অন্তর্গত সর্বদা চারটি উপাদান থাকে ‘—– কে বলেছেন ? এই চারটি উপাদান কী কী ?

উত্তরঃ এরিষ্টটল বলেছেন —– ‘কারণের অন্তর্গত সর্বদা চারটি উপাদান থাকে।’ 

এই চারটি উপাদান হল—- 

(১) বস্তুগত কারণ। 

(২) আকারগত কারণ।

(৩) নিমিত্ত কারণ। এবং 

(৪) চূড়ান্ত কারণ।

প্রশ্ন ২৪। লৌকিক দৃষ্টিভংগীর দিক থেকে কারণ কী ?

উত্তরঃ লৌকিক বা সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে কারণ হল, ‘ কতগুলি মিলিত উপকারণের মধ্যে একটি, যা বস্তুতঃ সেই মুহূর্তে পরিবর্তনের সূচক।’

প্রশ্ন ২৫। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কারণ বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কারণ ‘ কার্যের অপরিবর্তনীয়, শর্তহীন,অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনা কিংবা সদর্থক এবং নঞর্থক উপকারণের সমষ্টি’।

প্রশ্ন ২৬। নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের মধ্যে দুটি সাদৃশ্য লেখো।

উত্তরঃ নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের মধ্যে দুটি সাদৃশ্য হল——

(ক) নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণ দুই -ই উদ্দেশ্যমূলক প্রত্যক। দুটিতেই আমরা জ্ঞাতব্য বিষয়ের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করি।

(খ) নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণ দুটিই নির্বাচনাত্মক প্রক্রিয়া। উভয়ক্ষেত্রেই আমরা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবলি নির্বাচন করে প্রত্যক্ষ করি এবং অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বর্জন করি।

প্রশ্ন ২৭। ‘ পর্যবেক্ষণ নির্বাচনাত্মক ‘—- কেন ?

উত্তরঃ পর্যবেক্ষণে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। সেই উদ্দেশ্য অনুযায়ী আমরা পর্যবেক্ষণের বিষয় নির্বাচন করি। পর্যবেক্ষণ নির্বাচনাত্মক এই অর্থে যে পর্যবেক্ষণে বস্তুর গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ বা প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলি নির্বাচন করতে হয় পর্যবেক্ষককে, তা ভাল করে প্রত্যক্ষ করার জন্য।

প্রশ্ন ২৮। ‘ পরীক্ষণ নিরীক্ষণের উপর নির্ভরশীল ‘– কীভাবে ?

উত্তরঃ পরীক্ষণ সম্ভব হয় তখনই যখন আগে থেকে নিরীক্ষণের সাহায্যে কিছুটা জ্ঞান অর্জন সম্ভব হয়। পরীক্ষণের সার্থক প্রয়োগের জন্য নিরীক্ষণের সাহায্যে সযত্নে পূর্বপ্রস্তুতি থাকে। কোন ঘটনার পরীক্ষণের জন্য, নিরীক্ষণের দ্বারা প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। তাই বলা যেতে পারে যে পরীক্ষণ নিরীক্ষণের উপর নির্ভরশীল।

প্রশ্ন ২৯। ‘ নানা কারণবাদ গ্ৰহণ করলে কারণ সম্পর্কীয় বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞার বিপরীতে যেতে লাগবে ‘—– কারণ বলেছেন ?

উত্তরঃ কারণের সংজ্ঞানুসারে কারণ হল কার্যের অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা,যার সঙ্গে নানাকারণবাদ অসঙ্গতিপূর্ণ। এই সংজ্ঞানুযায়ী, একই কারণে একই কার্য উৎপন্ন হয়। কিন্তু আমরা যদি একটি উদাহরণ হিসাবে মানুষের মৃত্যুর কারণগুলো দেখি তবে ভিন্ন ভিন্ন কারণ পাই যেমন রোগ, আঘাত,বিষ পান, বার্ধক্য, দুর্ঘটনা, মানসিক যন্ত্রণা ইত্যাদি। অতএব মৃত্যুর পূর্ববর্তী ঘটনা কখনও রোগ, কখনও আত্মহত্যা, আবার কখনও বার্ধক্য ইত্যাদি। কাজেই রোগ বা আত্মহত্যা কোনটাকেই অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা বলা চলে না। অতএব কারণের সংজ্ঞা এবং নানাকারণবাদ দুটি অসঙ্গতিপূর্ণ।

প্রশ্ন ৩০। কার্যসংমিশ্রণকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ? ভাগগুলি কী কী ?

উত্তরঃ কার্যসংমিশ্রণকে দুইভাবে ভাগ করা যায়। ভাগগুলি হল——

(১) সমগুণসম্পন্ন কার্যসংমিশ্রণ। এবং

(২) ভিন্নগুণসম্পন্ন কার্যসংমিশ্রণ।

প্রশ্ন ৩১। পরিণাম কারণ কী ? উদাহরণের সাহায্যে লেখো।

উত্তরঃ যে উদ্দেশ্যে একটি কার্য সৃষ্টি হয় এবং কারণটি কার্যে পরিণত হয়, সেই উদ্দেশ্যকে পরিণাম কারণ বা চুড়ান্ত কারণ বলে। চূড়ান্ত কারণ প্রথমে বস্তুগত কারণের মধ্যে একটি ধারণা হিসাবে নিহিত থাকে। যেমন, যে উদ্দেশ্যে একটি কাপড় বোনা হয়, সেই উদ্দেশ্যই তার চূড়ান্ত বা পরিণাম কারণ। কাপড় বোনার উদ্দেশ্য হল, কাপড়টি ব্যবহার করা।

প্রশ্ন ৩২। ‘স্থায়ীকরণ ‘ বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ যে ঘটনাকে সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা সম্ভব হয় না, মিল তাদের নাম দিয়েছেন স্থায়ী কারণ। যেমন —- উত্তাপ, বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, মাধ্যাকর্ষণ ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৩৩। দ্রব্য ও শক্তির অবিনশ্বরতার সূত্রটির অর্থ লেখো।

উত্তরঃ দ্রব্য ও শক্তির অবিনশ্বরতার সূত্রটির অর্থ হল —– পৃথিবীতে জড় বস্তুর পরিমাণ স্থির। তা বাড়েও না, কমেও না যদিও তার আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। জড়বস্তুর ক্ষেত্রে রূপ ভিন্ন হলেও ওজন একই থাকে। একইভাবে শক্তির অবিনাশিতা নিয়ম অনুসারে পৃথিবীতে শক্তির পরিমাণ একই থাকে। সেটা স্থির, বাড়েও না,কমেও না। যদি ও একরূপ শক্তি অন্যরূপে রূপান্তরিত হতে পারে। পৃথিবীর সমগ্ৰ শক্তির পরিমাণ স্থিরই থাকে।

প্রশ্ন ৩৪। ” আগমনের ভিত্তি আগমনের ফল”—- Mill- এর এই উক্তি কেন গ্ৰহণযোগ্য নয় তার দুটি কারণ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ‘ আগমনের ভিত্তি আগমনের ফল’—- মিলের এই উক্তিটি গ্ৰহণযোগ্য নয় কারণ ——

(ক) মিলের মতে, প্রকৃতির একরূপতা বিধি প্রত্যেক আগমনের ক্ষেত্রে পূর্বস্বীকার্য সত্য। এই নীতি সাহায্য ছাড়া কোন সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সেইদিন থেকে এই নীতি আগমনের ভিত্তি।

(খ) মিল প্রকৃতির একরূপতা নীতিটিকে অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত বলেছিলেন। কিন্তু এই নিয়ম কখনও অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত হতে পারে না। বস্তুতঃ সকল আগমনের ক্ষেত্রে এই নীতি ভিত্তিস্বরূপ।

একই নিয়ম বা নীতি একই সঙ্গে আগমনের ভিত্তি এবং আগমনের সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এখানে মিল চক্রীয় দোষ ঘটিয়েছেন।

প্রশ্ন ৩৫। আগমনের বস্তুগত ভিত্তি হিসাবে নিরীক্ষণের দুটি সুবিধা লেখো।

উত্তরঃ আগমনের বস্তুগত ভিত্তি হিসাবে নিরীক্ষণের দুটি সুবিধা হল—–

(ক) আগমনে বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ দ্বারাই পাওয়া যায়।

(খ) আগমনে পর্যবেক্ষণ থেকেই আশ্রয়বাক্যগুলি পাওয়া যায় যা থেকে বস্তুগত ভাবে সত্য সিদ্ধান্তে পৌছুঁনো রায।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। নিরীক্ষণের সাধারণ শর্তগুলি কী কী ?

উত্তরঃ নিরীক্ষণের সাধারণ শর্তগুলি হল——

(ক) বৌদ্ধিক শর্ত—– নির্ভুল পর্যবেক্ষককে বৌদ্ধিকভাবে সক্ষম হতে হবে।

(খ) দৈহিক শর্ত—– পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি অন্যতম দৈহিক শর্ত।

(গ) নৈতিক শর্ত—– পর্যবেক্ষণের নৈতিক শর্ত‌ হল নিরপেক্ষতা।

প্রশ্ন ২। নানাকারণবাদ হল কারণের প্রকৃতি সম্পর্কীয় একটি ভুল ধারণা। কেন ? 

উত্তরঃ নানাকারণবাদ কার্যকারণ সম্পর্কীয় একটি ভ্রান্ত ধারণা। নানাকারণবাদ মতে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ একই কার্য উৎপাদন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ —- মৃত্যুর নানাবিধ কারণ থাকে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুর বিভিন্ন কারণ থাকলেও প্রকৃতিগতভাবে এগুলি এক নয়। বিষক্রিয়া জনিত মৃত্যু,বার্ধক্যজনিত মৃত্যু থেকে প্রকৃতিগত ভাবে আলাদা। ব্যাধিজনিত কারণে মৃত্যু, আঘাতজনিত মৃত্যু থেকে পৃথক। প্রতিটি মৃত্যুর কতগুলি বৈশিষ্ট্য থাকে,যেগুলি অন্যান্য মৃত্যুর ক্ষেত্রে থাকে না। যদি প্রতিটি ক্ষেত্রে, মৃত্যুর প্রকৃতি এক‌‌‌ হত তাহলে ময়নাতদন্ত দ্বারা মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব হত না। অতএব কারণের প্রকৃতি বিচার করলে দেখা যায় নানাকারণবাদ একটি ভ্রান্ত ধারণা।

প্রশ্ন ৩। প্রযোজক শক্তি এবং সংস্থার উদাহরণসহ সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ শক্তির অবিনাশিতার সূত্র অনুযায়ী কোন একটি ঘটনার কারণের মধ্যে দুটি উপাদান থাকে —— 

(ক) প্রযোজক। এবং 

(খ) সংস্থা। 

যে শক্তি কোন ক্রিয়া বা কার্যকে সৃষ্টি করে, তাকে প্রযোজক বলে। অন্যদিকে কার্য উৎপাদন করার জন্য প্রযোজকের যে পারিপার্শ্বিক ঘটনার সমাবেশ হয় তাকে সংস্থা বলে। উদাহরণস্বরূপ — একটি জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি যদি একটি খড়ের গাদায় ছুঁড়ে ফেলা হয় তবে আগুন জ্বলবে। এখানে জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি হল প্রযোজক এবং খড়ের গাদা হল সংস্থা।

প্রশ্ন ৪। কারণ সংযোজন বলতে কী বোঝ ? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

অথবা

একটি উদাহরণসহ কারণ সমন্বয়ের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ যখন একাধিক কারণ সংযোজিত হয়ে একসাথে ক্রিয়া করে কোনো একটি জটিল কার্য সম্পাদন করে তখন সেই কারণগুলিকে কারণ সংযোজন বা কারণ সমন্বয় বলে। উদাহরণস্বরূপ — জল ,চাপাতা,চিনি ,দুধ, আগুন, কেটলি ইত্যাদি উপাদান মিলিয়ে একসাথে চা প্রস্তুত করা হয়। এদের কোন একটি এককভাবে চা তৈরি করতে পারে না।

প্রশ্ন ৫। পরীক্ষণের তুলনায় নিরীক্ষণের তিনটি সুবিধা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ পরীক্ষণের তুলনায় নিরীক্ষণের সুবিধাগুলো হল—

(১) পরীক্ষণের তুলনায় নিরীক্ষণের পরিসর অধিক ব্যাপক । সকল বিষয়ে সকল ক্ষেত্রেই নিরীক্ষণ সম্ভব।

(২) নিরীক্ষণে আমরা কারণ থেকে কার্যে এবং কার্য থেকে কারণে যেতে পারি।

(৩) নিরীক্ষণের স্থান পরীক্ষণের আগে। কোন ঘটনার পরীক্ষণের জন্য নিরীক্ষণের সাহায্যে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়।

প্রশ্ন ৬। নিরীক্ষণের তুলনায় পরীক্ষণের চারটি সুবিধা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ নিরীক্ষণের তুলনায় পরীক্ষণের চারটি সুবিধা হল—–

(১) পরীক্ষণের পুনরাবৃত্তি সম্ভব এবং এজন্য যতবার প্রয়োজন, ততবার একই বিষয়ে পরীক্ষণ করা যায়।

(২) পরীক্ষক পরীক্ষণীয় বিষয়কে পৃথকভাবে পরীক্ষা করতে পারেন।

(৩) পরীক্ষণে স্থিরভাবে ও শান্ত মনে পরীক্ষণ সম্ভব।

(৪) পরীক্ষণে যতবার প্রয়োজন পরিবেশের পরিবর্তন সম্ভব।

প্রশ্ন ৭। অনবেক্ষণ দোষ এবং ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষের মধ্যে দুটি পার্থক্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ অনবেক্ষণ দোষ এবং ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণের মধ্যে পার্থক্য হল—–

(ক) অনবেক্ষণ বা অ- পর্যবেক্ষণ দোষে প্রাসঙ্গিক দৃষ্টান্ত বা পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করা হয় না, কিন্তু ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণে ভুল পর্যবেক্ষণ অর্থাৎ একটি বস্তুর জায়গায় অন্য একটি বস্তু পর্যবেক্ষণ করা হয়।

(খ) অনবেক্ষণে প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ অজ্ঞাতসারেই থেকে যায় কিন্তু ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণে একটি তথ্যের জায়গায় অন্য তথ্য পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ৮। সরল পর্যবেক্ষণ সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় অভিজ্ঞতা ‘— ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ষ্টক এবং অন্যান্য তর্কবিদেরা এমন মন্তব্য করেন যে সরল পর্যবেক্ষণ একটি নিষ্ক্রিয় অভিজ্ঞতা আর পরীক্ষণ হল সক্রিয় অভিজ্ঞতা। তবে এ কথাটি সত্য নয় যে সরল পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষক সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থাকেন। সরল পর্যবেক্ষণ হল বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক প্রত্যক্ষ। নিরীক্ষণ নিয়ন্ত্রণাত্মক এবং সেজন্য নিরীক্ষক সেই সমস্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন, যেগুলির সঙ্গে জ্ঞাতব্য বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতা আছে এবং তিনি অপ্রয়োজনীয় এবং অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বর্জন করেন। কাজেই নিরীক্ষককে মানসিকভাবে সক্রিয় হতে হয়। অতএব নিরীক্ষণেও সক্রিয়তা থাকে যদিও এই সক্রিয়তার মাত্রা পরীক্ষণের ক্ষেত্রে আরো বেশি।

প্রশ্ন ৯। নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণকে কেন আগমনের বস্তুগত ভিত্তি বলা হয় ?

উত্তরঃ আগমন অনুমানে আমরা কেবল আকারগত সত্যতা নয়, বস্তুগত সত্যতাও বিচার করি। তাই আগমনের বস্তুগত সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করি।‌পর্যবেক্ষণ দুই রকমের হয় —- সরল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ। সরল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ এমন দুটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে আগমনের সামান্যীকরণের বিষয় এবং আশ্রয় বাক্যগুলি পাওয়া যায়। তাই সরল পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণকে আগমনের বস্তুগত ভিত্তি বলা হয়।

প্রশ্ন ১০। অনবেক্ষণ দোষের বিভিন্ন প্রকারগুলি কী কী ? উদাহরণসহ প্রত্যেকটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ অনবেক্ষণ দোষ বা অপর্যবেক্ষণ দোষ দুই প্রকারের হয় —–

(১) প্রাসঙ্গিক দৃষ্টান্ত অপর্যবেক্ষণের দোষ এবং

(২) প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি অপর্যবেক্ষণের দোষ।

(১) প্রাসঙ্গিক দৃষ্টান্ত অপর্যবেক্ষণের দোষ —- দৃষ্টান্ত অপর্যবেক্ষণের দোষ তখনই ঘটে,যখন আমাদের জ্ঞাতব্য বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রাসঙ্গিক দৃষ্টান্তগুলিকে আমরা অবহেলা করি। উদাহরণস্বরূপ, একটি ছেলে দেখল, পরীক্ষা দিতে যাবার ঠিক আগে সে যদি ডিম খেয়ে যায় , তাহলে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না। ছেলেটি তখন সেই সিদ্ধান্তে পৌছুঁলো যে ‘ পরীক্ষার আগে ডিম খাওয়াটা ‘ তার পরীক্ষায় অসফল হবার কারণ। এখানে সেইসব নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলি যেমন, যারা ডিম খেয়ে গিয়েছিল তারা পরীক্ষায় পাশ করেছে আর যারা ডিম না খেয়ে গিয়েছিল তারা ফেল করেছে, সম্পূর্ণভাবে অবহেলিত হয়েছে।

(২) প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি অপর্যবেক্ষণের দোষ — আগমন সম্পর্কিত অনুসন্ধান বিষয়ে আমরা যখন প্রাসঙ্গিক অবস্থাগুলিকে অবহেলা করি, তখনই প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি অপর্যবেক্ষণ দোষ ঘটে। উদাহরণ —- যেমন, একজন লোকের জণ্ডিস হয়েছে। চিকিৎসক তাকে ঔষধ দিলেন। সেই ঔষধ খেয়ে সে ভালো হয়ে গেল। সেই লোকটির মতে তার জণ্ডিস রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার কারণ কেবল ঐ ঔষধ। এখানে লোকটি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবস্থাগুলি অবহেলা করেছে। যেমন, সেদ্ধ খাবার, রোগীর সেবা , বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম করা ইত্যাদি। এখানে প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি অপর্যবেক্ষণের দোষ ঘটেছে।

প্রশ্ন ১১। কাকতালীয় দোষ বলতে কী বোঝ ? একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ কারণ কার্যের পূর্বে ঘটে বলে, কারণ কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনা। কিন্তু কেবলমাত্র অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনাই একটি কার্যের কারণ হতে পারে। যে কোন পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলে মনে করলে যে দোষটি ঘটে, তাকে কাকতালীয় দোষ বলে। উদাহরণস্বরূপ —- একটি কাক একটি তালগাছের উপর বসল, সঙ্গে সঙ্গে একটি তাল মাটিতে পড়ে গেল। অতএব, গাছের ডালে কাকের বাসটা তাল মাটিতে পড়ার কারণ।

প্রশ্ন ১২। আকারগত ভিত্তি এবং বস্তুগত ভিত্তির মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

উত্তরঃ আগমনের আকারগত ভিত্তি এবং বস্তুগত ভিত্তির মধ্যে পার্থক্য হল—-

(ক) যে নিয়ম আগমনের আকারগত সত্যতা নিশ্চিত করে, তাদের আগমনের আকারগত ভিত্তি বলে। অন্যদিকে যে সমস্ত প্রক্রিয়া আগমনের বস্তুগত সত্যতা নিশ্চিত করে, তাদের আগমনের বস্তুগত ভিত্তি বলে।

(খ) আগমনের আকারগত ভিত্তি দুটি হল—- প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধি। অন্যদিকে আগমনের বস্তুগত ভিত্তি দুটি হল—- নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণ।

প্রশ্ন ১৩। কার্যকারণের বিধিকে কেন আগমনের আকারগত ভিত্তি বলা হয় ?

উত্তরঃ কার্যকারণ বিধি অনুসারে, প্রতিটি ঘটনার একটি কারণ থাকে। কোন ঘটনাই আকস্মিকভাবে ঘটে না। শূন্যতা থেকে কিছুই ঘটে না। প্রাথমিক বিচারে যদি কোন ঘটনার কারণ প্রকাশিত হয় না, তবুও একথা মানতে হবে যে সেই ঘটনার একটি নির্দিষ্ট কারণ আছে। আবার কোন ঘটনার একাধিক কারণও থাকতে পারে, কিন্তু কারণ থাকবেই। কাজেই ‘ কার্যকারণ বিধি ‘ মতে যা ঘটে তার কারণ থাকে এবং কারণটি নিয়ম উপস্থিত থাকে। আকারগত ভাবে সত্য হবার জন্য আগমনে এই নিয়ম অনুসারণ করেই সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়। অর্থাৎ কার্যকারণ বিধি আগমনের সামান্যীকরণের আকারগত সত্যতা প্রতিষ্ঠা করে। তাই কার্যকারণ বিধিকে আগমনের আকারগত ভিত্তি বলা হয়।

প্রশ্ন ১৪। কারণের পরিমাণগত লক্ষণগুলি উল্লেখ করো এবং ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ কারণের পরিমাণগত লক্ষণ হল—-

পরিমাণগত ভাবে কারণ কার্যের সমান। এর অর্থ, পরিমাণের দিক থেকে কারণের অন্তর্গত উপাদান এবং শক্তি,কার্যের অন্তর্গত উপাদান এবং শক্তির সমান। কার্য – কারণের এই লক্ষণটি জড়বস্তুর অবিনাশিতা এবং শক্তির অবিনাশিতা নিয়ম দুটি থেকে পাওয়া যায়।

এই নিয়ম দুটি অনুসারে পৃথিবীতে জড়বস্তুর পরিমাণ স্থির‌‌‌। তা বাড়েও না কমেও না যদিও তার আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ হাইড্রজেনের সঙ্গে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন মেশানো হয়, তখন আমরা একটি নতুন বস্তু পাই — জল। এখানে অক্সিজেন এবং হাইড্রজেন দুটিই গ্যাস কিন্তু তাদের মিশ্রণের ফল জল, যা একটি তরল পদার্থ। সুতরাং এখানে দুটি গ্যাসেরই রূপ নিশ্চিত পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু জলের ওজন এই দুটি সংমিশ্রিত বস্তুর ওজনের সমান। কাজেই জড় বস্তুর ক্ষেত্রে রূপ ভিন্ন হলেও ওজন একই।

আবার, শক্তির অবিনাশিতা নিয়ম অনুসারে কার্যে যে পরিমাণ শক্তি থাকে, কারণে সম্পূর্ণভাবে একই পরিমাণ শক্তি থাকে। পৃথিবীতে শক্তির পরিমাণ একই থাকে। সেটা স্থির,কমেও না,বাড়েও না। যদিও একরূপ শক্তি অন্যরূপে রূপান্তরিত হতে পারে। কিন্তু কার্যের মধ্যে যে পরিমাণ শক্তি থাকে, কারণের সমপরিমাণ শক্তি থাকে।

অতএব কারণের পরিমাণগত লক্ষণ কার্যের পরিমাণের সমান।

প্রশ্ন ১৫। উপকরণ কী ? বিভিন্ন প্রকারের উপকারণগুলি কী কী ?

উত্তরঃ কারণ হল উপকারণসমূহের সমষ্টি । অতএব, উপকরণ কারণের অংশমাত্র নয়, আবশ্যিক অংশ। কারভেথ রীডের মতে, উপকারণ হচ্ছে , কারণের অপরিহার্য অংশ।

উপকারণ দুই প্রকারের হয়,যথা ——

(১) অনুকূল বা সদর্থক উপকারণ। এবং

(২) প্রতিকূল বা নঞর্থক উপকারণ।

(১) অনুকূল বা সদর্থক উপকারণ —- যে উপকারণের সহায়তার কার্যটি ঘটে, তাকে সদর্থক অনুকূল উপকারণ বলে।

(২) প্রতিকূল বা নঞর্থক উপকারণ —- যে উপকারণের সাহায্য না নিয়েই কার্যটি ঘটে, তাকে নঞর্থক বা প্রতিকূল উপকারণ বলে।

প্রশ্ন ১৬। কারণ এবং  উপকারণের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

উত্তরঃ কারণ এবং উপকারণের মধ্যে পার্থক্য হল —-

কারণ হল কার্যের অব্যবহিত , অপরিবর্তনীয়, শর্তহীন, নিয়ম পূর্ববর্তী ঘটনা। কার্য উৎপাদনের জন্য কারণ কখনও অন্য কোন শর্তের উপর নির্ভর করে না। কারণ কোন বিশেষ ঘটনা নয়। কারণ উপকারণসমূহের সমষ্টি।

উপকারণ হল কারণের অংশ। কারভেথ রীডের মতে উপকারণ হচ্ছে কারণের অপরিহার্য অংশ। কারণ, অন্য শর্তের উপর নির্ভর করে না বলে কার্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকারণ কারণের মধ্যে উপস্থিত থাকতে হয়।

কারণ এবং উপকারণের সম্পর্ক হল, সমগ্ৰ এবং তার অংশের সম্পর্ক। সমগ্ৰের মধ্যেই তার অংশ থাকে। সেভাবেই, কারণের মধ্যে উপকারণ থাকে। কারণের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে উপকারণকে উপকারণই বলা যায় না।

প্রশ্ন ১৭। নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের মধ্যে পার্থক্য হল—

(ক) নিরীক্ষণে প্রাকৃতিক ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করা হয় কিন্তু পরীক্ষণ হল কৃত্রিম ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করা।

(খ) নিরীক্ষণ প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে উদ্ভুত ঘটনার প্রত্যক্ষ। অন্যদিকে পরীক্ষণ হচ্ছে কৃত্রিম পরিবেশে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা ঘটনার প্রত্যক্ষ।

(গ) নিরীক্ষণের ঘটনাবলি পর্যবেক্ষকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। কিন্তু পরীক্ষণে ঘটনা সর্বদাই পরীক্ষকের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে।

প্রশ্ন ১৮। কারণ সংযোজন এবং নানাকারণবাদের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ কারণ সংযোজন এবং নানাকারণবাদের মধ্যে পার্থক্য হল—-

(ক) নানাকারণবাদ মতে, কতগুলি কারণ স্বাধীনভাবে কাজ করে বিভিন্ন সময়ে একই কার্য উৎপাদন করে। অন্যদিকে কারণ সংযোজন মতে কতগুলি কারণ স্বাধীনভাবে নয় যৌথভাবে কাজ করে একটি মিশ্র কার্য উৎপন্ন করে।

(খ) কার্যকারণ সম্বন্ধের ক্ষেত্রে নানাকারণবাদ একটি ভ্রান্ত ধারণা কিন্তু কারণসমন্বয় ব্যাপারটি কোন ভ্রান্ত ধারণা নয়।

প্রশ্ন ১৯। আগমনের বিরোধাভাসের বিষয়ে এটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

উত্তরঃ প্রকৃতির একরূপতা বিধি সম্পর্কে মিলের দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদকে আগমনের বিরোধাভাস বলে। এর অর্থ এই যে আগমনের ভিত্তিটি নিজেই আগমনের ফল/ সিদ্ধান্ত। মিল বলেছেন, প্রকৃতির একরূপতা বিধি একটি মৌলিক নীতি বা আগমনের ক্ষেত্রে পূর্বস্বীকৃত একটি সাধারণ সত্য প্রতিটি আগমনের ক্ষেত্রে নিহিত থাকে। মিল আবার বলেছেন, প্রকৃতির একরূপতা বিধিটি অবৈজ্ঞানিক আগমন বা অপূর্ণগণনাভিত্তিক আগমনের সিদ্ধান্ত অবৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি হচ্ছে অবাধিত অভিজ্ঞতা। কোন কার্যকারণ সম্পর্ক ছাড়াই অবৈজ্ঞানিক আগমন সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করে। অতএব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ‘ বিশেষ একরূপ তার দৃষ্টান্ত পাই আর বিশেষ একরূপতা গুলি থেকে আমরা সামান্য একরূপতা প্রতিষ্ঠা করি। যখন প্রকৃতির একরূপতা সামান্য নীতিটি প্রতিষ্ঠিত হয় তখন সেটা হয় সকল আগমনের ভিত্তি। অতএব আগমনের ভিত্তি হল আগমনের ফল।

প্রশ্ন ২০। কারণ সংযোজন এবং কার্যসংমিশ্রণের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

উত্তরঃ কারণ সংযোজন এবং কার্যসংমিশ্রণের মধ্যে পার্থক্য হল—-

যখন কয়েকটি কারণ সংযুক্তভাবে একটি জটিল বা মিশ্র কার্য উৎপাদন করে তখন তাকে ‘কারণ সমন্বয়’ বলে। অপরদিকে সংযোজিত কারণ দ্বারা উৎপাদিত বিভিন্ন কার্যের মিশ্রণকে কার্যসংমিশ্রণ বলে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ফুটবল ম্যাচ জিততে গেলে কয়েকজন (১১ জন) খেলোয়াড়ের প্রয়োজন হয়। একজন মাত্র খেলোয়াড় কখনও একটি ফুটবল ম্যাচ জিততে পারে না। এখানে কয়েকজন খেলোয়াড়ের ‘যৌথ প্রচেষ্টা’ হল কারণ সমন্বয় এবং ম্যাচ জেতার কাজটি হল কার্যসংমিশ্রণ।

সুতরাং কারণ সমন্বয় হল, কতগুলি কারণের যৌথ ক্রিয়া যার ফলে একটি মিশ্র কার্য উৎপাদিত হয়েছে। অন্যদিকে তাদের ভিন্ন ভিন্ন কার্যের মিশ্রণ হল, কার্য সংমিশ্রণ।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২১। কার্যকারণ বিধি কী ? এই বিধিকে কেন আগমনের আকারগত ভিত্তি বলা হয় ?

উত্তরঃ কার্যকারণ বিধি অনুসারে, প্রতিটি ঘটনার একটি কারণ থাকে। কোন ঘটনাই আকস্মিকভাবে ঘটে না। শূন্যতা থেকে কিছুই ঘটে না। প্রাথমিক বিচারে যদি কোন ঘটনার কারণ প্রকাশিত হয় না, তবুও একথা মানতে হবে যে সেই ঘটনার একটি নির্দিষ্ট কারণ আছে। আবার কোন ঘটনার একাধিক কারণও থাকতে পারে, কিন্তু কারণ থাকবেই। কাজেই ‘ কার্যকারণ বিধি ‘ মতে যা ঘটে তার কারণ থাকে এবং কারণটি নিয়ম উপস্থিত থাকে। আকারগত ভাবে সত্য হবার জন্য আগমনে এই নিয়ম অনুসারণ করেই সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়। অর্থাৎ কার্যকারণ বিধি আগমনের সামান্যীকরণের আকারগত সত্যতা প্রতিষ্ঠা করে। তাই কার্যকারণ বিধিকে আগমনের আকারগত ভিত্তি বলা হয়।

প্রশ্ন ২২। নিরীক্ষণ কী ? পরীক্ষণের তুলনায় নিরীক্ষণের যে- কোন চারটি সুবিধা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক ঘটনার উদ্দেশ্যমূলক সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণকে নিরীক্ষণ বলে।

পরীক্ষণের তুলনায় নিরীক্ষণের সুবিধাগুলো হল—

(১) পরীক্ষণের তুলনায় নিরীক্ষণের পরিসর অধিক ব্যাপক । সকল বিষয়ে সকল ক্ষেত্রেই নিরীক্ষণ সম্ভব।

(২) নিরীক্ষণে আমরা কারণ থেকে কার্যে এবং কার্য থেকে কারণে যেতে পারি।

(৩) নিরীক্ষণের স্থান পরীক্ষণের আগে। কোন ঘটনার পরীক্ষণের জন্য নিরীক্ষণের সাহায্যে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়।

প্রশ্ন ২৩। কারণ সমন্বয় কী ? কারণ সমন্বয় এবং নানাকারণবাদের মধ্যে থাকা পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ কারণ সমন্বয় হল কার্যকারণ সম্বন্ধের এক মতবাদ। কারণ সমন্বয় তত্ত্ব অনুসারে, কয়েকটি কারণ যৌথভাবে কাজ করে একটি কার্য উৎপন্ন করে। এই কারণগুলির মধ্যে কোন একটি কারণ এককভাবে কাজ করে কার্যটি সৃষ্টি করতে পারে না।

কারণ সম্বন্বয় এবং নানাকারণবাদের মধ্যে পার্থক্য হল—-

(ক) নানাকারণবাদ মতে, কতগুলি কারণ স্বাধীনভাবে কাজ করে বিভিন্ন সময়ে একই কার্য উৎপাদন করে। অন্যদিকে কারণ সংযোজন মতে কতগুলি কারণ স্বাধীনভাবে নয় যৌথভাবে কাজ করে একটি মিশ্র কার্য উৎপন্ন করে।

(খ) কার্যকারণ সম্বন্ধের ক্ষেত্রে নানাকারণবাদ একটি ভ্রান্ত ধারণা কিন্তু কারণসমন্বয় ব্যাপারটি কোন ভ্রান্ত ধারণা নয়।

প্রশ্ন ২৪। ‘ নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের মধ্যে পার্থক্য পরিমাণগত, মূলগত নয়’ —- পরীক্ষা করো।

উত্তরঃ নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের মধ্যে পার্থক্য মাত্র পরিমাণগত, মূলগত নয়। এদের মধ্যে গুণগত কোন পার্থক্য নেই। নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের মধ্যে সত্যকারের কোন বিরোধিতা নেই। এদের মধ্যে তীক্ষ্ণ কোন শ্রেণি বিভাজন করা যায় না। কারণ দুটি ক্ষেত্রেই আমরা আগমনের বিষয়বস্তু সংগ্ৰহ করতে চেষ্টা করি এবং বস্তুগত ভাবে সত্য একটি সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করি। এই উদ্দেশ্যে আমরা উভয়ক্ষেত্রেই আমাদের ইন্দ্রিয়গুলির স্বাভাবিক ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখি এবং প্রাকৃতিক ঘটনাবলিকে প্রত্যক্ষ করি। উভয়ক্ষেত্রেই শারীরিক এবং মানসিক শক্তির ব্যবহার হয়।

জেভনসের মতে, সরল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণের পার্থক্য শুধু মাত্রাগত। সরল পর্যবেক্ষণ পরীক্ষণ অপেক্ষা অধিক স্বাভাবিক। তার পরীক্ষণ নিরীক্ষণের অপেক্ষা অধিক কৃত্রিম। যেহেতু নিরীক্ষণ স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া, নিরীক্ষণে আমরা পরীক্ষণের অপেক্ষা কম সক্রিয়। পরীক্ষণে আমরা নিরীক্ষণের অপেক্ষা অধিক সক্রিয়।

প্রশ্ন ২৫। প্রকৃতির একরূপতা বিধির বিষয়ে বিস্তারিত লেখো।

অথবা

” একই অবস্থায় প্রকৃতি সর্বদা একই আচরণ করে”– কথাটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞানীরা প্রকৃতির একরূপতা বিধিকে বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেছেন। যেমন, ‘প্রকৃতি একরূপী,’ ‘ প্রকৃতিতে পুনরাবৃত্তি ঘটে,’ ‘ প্রকৃতিতে সমান্তরাল ঘটনা ঘটে ‘ ইত্যাদি। এইসব ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যের অর্থ একই,আর সেটা হল, ‘ একই পরিস্থিতিতে প্রকৃতি একই রূপ আচরণ করে ‘। কোন আকস্মিক পরিস্থিতির বা কারণ উদ্ভব না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃতি কখনও নিজের নিয়মকে লংঘন করে না।

পৃথিবীর সকল বস্তুর আচরণের ক্ষেত্রে প্রকৃতির একরূপতা লক্ষ্য করা যায়। অতীতে যা কিছু ঘটেছিল, বর্তমানেও যা ঘটেছে, ভবিষ্যতেও তা ঘটবার সম্ভাবনা। প্রকৃতির একরূপতা দুই ধরণের হয় —– সহ- অবস্থানগত একরূপতা এবং পরম্পরাগত বা অনুক্রমিতার একরূপতা। কিন্তু প্রকৃতির একরূপতার অর্থ এই নয় যে প্রকৃতিতে কোন বৈচিত্র্য নেই। যেমন মিল বলেছেন, প্রকৃতি বাস্তবে শুধু একরূপী নয়। বিশ্ব- পৃথিবীর বৈচিত্র্য অসীম।

প্রকৃতির একরূপতা বিধি হল আগমনের আকারগত ভিত্তি।

প্রশ্ন ২৬। প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধিকে আগমনের আকারগত ভিত্তি বলার কারণ কী ?

উত্তরঃ প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধি -এ দুটিকে আগমনের আকারগত ভিত্তি বলা হয়। আগমনে কিছুসংখ্যক বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের ভিত্তিতে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করি। উদাহরণস্বরূপ —- রাম, হরি , যদু,মধু,করিম,যোশেফ এদের মৃত্যু হতে দেখে আমরা ‘ সকল মানুষ হয় মরণশীল ‘ এই সামান্য বচনটি অনুমান করি। কিন্তু প্রশ্ন হল অভিজ্ঞতালব্ধ কয়েকটি বিশেষ দৃষ্টান্তের ভিত্তিতে আমরা কী করে ‘ সকল মানুষ হয় মরণশীল’ এই সামান্য বচনটি প্রতিষ্ঠা করি ? একজন মানুষের পক্ষে সকল মানুষের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করা অসম্ভব। কারণ সেটা অভিজ্ঞতার সীমার বাইরে। কাজেই পর্যবেক্ষণ দ্বারা এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণবিধিই কেবল এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। এই দুটি নীতির উপর ভিত্তি করে, কয়েকজন মানুষের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারি যে সকল মানুষ হয় মরণশীল। অতএব এই দুটি নীতিকে আগমনের আকারগত ভিত্তি বলা হয়।

প্রশ্ন ২৭। ‘ কারণ কার্যের নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা ‘— বিস্তারিত লেখো।

উত্তরঃ প্রত্যেক কার্যের একটি কারণ থাকে। কারণ কার্যের পূর্বে ঘটে বলে, কারণ পূর্ববর্তী ঘটনা, কিন্তু কখনও উপস্থিত, কখনও বা অনুপস্থিত কোন ঘটনা কারণ হতে পারে না।নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনাকেই কারণ বলা হয়। নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা বলতে সেই ঘটনাকেই বুঝায় যা সবসময়ে কার্যের পূর্বে ঘটে। একেই কার্যকারণের একরূপতা বলে অর্থাৎ একই কারণে একই ঘটনা ঘটে।

একটি ঘটনার পরিবর্তনীয় এবং অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা থাকতে পারে। কিন্তু কেবলমাত্র অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনাই একটি কার্যের কারণ হতে পারে। যে কোন পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলে মনে করলে কাকতালীয় দোষ ঘটে।

প্রশ্ন ২৮। কারণ এবং উপকারণের সম্বন্ধ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ কারণ এবং উপকারণের মধ্যে পার্থক্য হল —-

কারণ হল কার্যের অব্যবহিত , অপরিবর্তনীয়, শর্তহীন, নিয়ম পূর্ববর্তী ঘটনা। কার্য উৎপাদনের জন্য কারণ কখনও অন্য কোন শর্তের উপর নির্ভর করে না। কারণ কোন বিশেষ ঘটনা নয়। কারণ উপকারণসমূহের সমষ্টি।

উপকারণ হল কারণের অংশ। কারভেথ রীডের মতে উপকারণ হচ্ছে কারণের অপরিহার্য অংশ। কারণ, অন্য শর্তের উপর নির্ভর করে না বলে কার্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকারণ কারণের মধ্যে উপস্থিত থাকতে হয়।

কারণ এবং উপকারণের সম্পর্ক হল, সমগ্ৰ এবং তার অংশের সম্পর্ক। সমগ্ৰের মধ্যেই তার অংশ থাকে। সেভাবেই, কারণের মধ্যে উপকারণ থাকে। কারণের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে উপকারণকে উপকারণই বলা যায় না।

প্রশ্ন ২৯। কার্যসংমিশ্রণের ভাগ কটির উদাহরণ সহ সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ কার্যসংমিশ্রণের ভাগ দুটি হল—–

(১) সমগুণসম্পন্ন কার্যসংমিশ্রণ — যখন দুই বা ততোধিক সমজাতীয় কারণের সংযুক্ত ক্রিয়ার ফলে একটি একজাতীয় কার্য উৎপাদিত হয় তখন সেই এক জাতীয় কার্যের সংমিশ্রণকে সমগুণসম্পন্ন কার্যসংমিশ্রণ বলে। উদাহরণস্বরূপ —‌দুটি ৫০ শক্তির মোমবাতি জ্বালানোয় আমরা ১০০ মোমবাতি শক্তির বৈদ্যুতিক আলো পেলাম।

(২) ভিন্নগুণসম্পন্ন কার্য সংমিশ্রণ — যখন দুই বা ততোধিক ভিন্ন কারণ থেকে একটি কার্য সংমিশ্রণ উৎপন্ন হয় এবং সেই কার্যসংমিশ্রণের গুণ প্রতিটি ক্রিয়াশীল কারণের থেকে ভিন্ন প্রকৃতির হয়, তখন সেই কার্যসংমিশ্রণকে ভিন্নগুণসম্পন্ন কার্য সংমিশ্রণ বলে। উদাহরণস্বরূপ হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনকে বিশেষ অনুপাতে মিশিয়ে তাতে বিদ্যুৎ প্রয়োগ করে জল তৈরি করা হল। এখানে মিশ্রণের ফলে উৎপন্ন দ্রব্যটি তরল পদার্থ, তাতে দুটি গ্যাসের ভিন্ন ভিন্ন গুণ পাওয়া যায় না। অতএব এটি হল ভিন্নগুণসম্পন্ন কার্যসংমিশ্রণ।

প্রশ্ন ৩০। নানাকারণবাদ বলতে কী বোঝ ? এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে গ্ৰহণযোগ্য কি ? দুটি কারণ দাও।

অথবা

বহুকারণবাদ বা নানাকারণবাদ বলতে কী বোঝ ? বহুকারণবাদ বিজ্ঞান সম্মত নয় কেন ?

উত্তরঃ নানাকারণবাদ কার্যকারণ সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা। নানাকারণবাদ মতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ একই কার্য উৎপাদন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ — ব্যাধি, আঘাত, বিষ, বার্ধক্য ইত্যাদি নানা কারণে মৃত্যু হতে পারে।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে কারণ এবং কার্য দুইই জটিল ঘটনা। ঘটনার সংগে জড়িত সকল কারণ বা কার্যকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এর ফলে, আমাদের মনে কতগুলি ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয় এবং নানাকারণবাদের জন্ম হয়।

 বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে নানাকারণবাদ গ্ৰহণযোগ্য নয়। এর দুটি কারণ হল —–

(১) প্রথমতঃ যদি আমরা কোন কার্যের বিভিন্ন কারণকে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাবো যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যের একটি সাধারণ লক্ষণ থাকে। কারণের এই সাধারণ বৈশিষ্ট্য বিচার করলে দেখা যায় নানাকারণবাদের ধারণা ভ্রান্ত।

(২) দ্বিতীয়তঃ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে নানাকারণবাদ গ্ৰহণযোগ্য নয়। কারণের সংজ্ঞানুসারে, কারণ হল কার্যের অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা,যার সঙ্গে নানাকারণবাদ অসঙ্গতিপূর্ণ।

প্রশ্ন ৩১। ‘ আগমনের ভিত্তিই আগমনের ফল’– কথাটি বিস্তারিতভাবে লেখো।

উত্তরঃ আগমনের ভিত্তি নিজেই আগমনের ফল — মিলের এই মতবাদকে আগমনের বিরোধাভাস বলা হয়। প্রকৃতির একরূপতা বিধি সম্পর্কে মিলের দুটি উক্তি পরস্পর বিরোধী। মিল একে বলেছেন, এই নীতিটি আগমনের ভিত্তি। একে অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া যায় না। এর অর্থ, এটি একটি পূর্বস্বীকৃত, স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম যাকে প্রতিটি আগমনের ক্ষেত্রে আগে থেকে সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়। আবার তিনি বলেছেন, প্রকৃতির একরূপতা বিধি অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ অভিজ্ঞতা থেকে লব্ধ। অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ‘ বিশেষ একরূপতা’র দৃষ্টান্ত পাই আর বিশেষ একরূপতাগুলি থেকে আমরা সামান্য একরূপতা প্রতিষ্ঠা করি। যখন প্রকৃতির একরূপতার সামান্য নীতিটি প্রতিষ্ঠিত হয় তখন সেটা হয় সকল আগমনের ভিত্তি। অতএব আগমনের ভিত্তি হল আগমনের ফল।

প্রশ্ন ৩২। পর্যবেক্ষণের চারটি বৈশিষ্ট্য লিখো

অথবা

নিরীক্ষণের চারটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ পর্যবেক্ষণের চারটি বৈশিষ্ট্য হল—-

(১) পর্যবেক্ষণ হল প্রত্যক্ষ।

(২) পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সুনিয়ন্ত্রিত প্রত্যক্ষ।

(৩) পর্যবেক্ষণ একটি নির্বাচনাত্মক প্রক্রিয়া।

(৪) পর্যবেক্ষণ একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়া।

প্রশ্ন ৩৩। পর্যবেক্ষণের শর্তগুলির উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লিখো।

উত্তরঃ নির্ভুল পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষককে কতগুলি সাধারণ নিয়ম বা শর্ত মানতে হয়। শর্তগুলি তিন রকমের হয় —-

(ক) বৌদ্ধিক শর্ত—– নির্ভুল পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষককে বৌদ্ধিকভাবে সক্ষম হতে হবে। জ্ঞান পিপাসা হচ্ছে পর্যবেক্ষণের একটি অতি আবশ্যকীয় শর্ত।

(খ) দৈহিক শর্ত—– পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি অন্যতম দৈহিক শর্ত সাধারণতঃ পঞ্চেন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা পর্যবেক্ষণ করি। অতএব, সুস্থ ইন্দ্রিয়গুলি পর্যবেক্ষণের দৈহিক শর্ত।

(গ) নৈতিক শর্ত‌ —– পর্যবেক্ষণের নৈতিক শর্ত‌ হল নিরপেক্ষতা।

প্রশ্ন ৩৪। ‘ নিরীক্ষণ এক নিষ্ক্রিয় অভিজ্ঞতা এবং পরীক্ষণ এক সক্রিয় অভিজ্ঞতা ‘—- কে বলেছেন ? এটি গ্ৰহণযোগ্য কি ?

উত্তরঃ ষ্টক এবং অন্যান্য তর্কবিদেরা বলেন —- সরল পর্যবেক্ষণ একটি নিষ্ক্রিয় অভিজ্ঞতা এবং পরীক্ষণ হল সক্রিয় অভিজ্ঞতা। সরল পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণে আমরা প্রকৃতির উপর সর্বতোভাবে নির্ভরশীল। প্রকৃতিতে স্বাভাবিক ভাবে যে সব ঘটনা বা পরিবর্তন ঘটে, প্রকৃতির কাজে হস্তক্ষেপ না করে, তাদের নিয়ন্ত্রণ না করে আমরা তাদের লক্ষ্য করি। কিন্তু পরীক্ষণে, পরীক্ষক নিজে ঘটনা সৃষ্টি এবং পরিবর্তন ঘটাবার জন্য বিশেষ পরিবেশ তৈরি করেন। নিরীক্ষণের চাইতে পরীক্ষণে পর্যবেক্ষক বেশি সক্রিয়। কিন্তু এ কথা সত্য নয় যে সরল পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষক সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থাকেন।‌সরল পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণ নিয়ন্ত্রণাত্মক । নিরীক্ষণে ঘটনার প্রাসঙ্গিক বিষয় নির্বাচনের জন্য এবং অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলি বর্জনের জন্য নিরীক্ষককে মানসিক ভাবে সক্রিয় হতে হয়।

কাজেই নিরীক্ষণ একটি নিষ্ক্রিয় অভিজ্ঞতা —- কথাটি সম্পূর্ণরূপে গ্ৰহণযোগ্য নয়।

প্রশ্ন ৩৫। ‘ পরীক্ষণের তুলনায় নিরীক্ষণের পরিসর অতি ব্যাপক ‘—– বর্ণনা করো।

উত্তরঃ পরীক্ষণের তুলনায় নিরীক্ষণের পরিসর অধিক ব্যাপক, কারণ সকল বিষয়ে সকল ক্ষেত্রেই নিরীক্ষণ সম্ভব। এমন কতগুলি বিষয় বা ঘটনা আছে, যাদের ক্ষেত্রে পরীক্ষণ সম্ভব নয়। এই সমস্ত বিষয় বা ঘটনাকে জানতে গেলে আমাদের কেবল নিরীক্ষণের উপর নির্ভর করতে হয়। যেমন, আমরা পরীক্ষণের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারি না। দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে তার ফলাফল নির্ণয় করতে পারি না। কিংবা, আকাশ থেকে টেনে এনে ধূমকেতুর গবেষণাগারে পরীক্ষণের জন্য হাজির করতে পারি না। এমন কিছু ঘটনা আছে, যেগুলিকে নিয়ে গবেষণাগারে পরীক্ষণ সম্ভব নয়। এসব ক্ষেত্রে আমাদের নিরীক্ষণের উপর নির্ভর করতে হয় এবং অপেক্ষা করে থাকতে হয় কবে স্বাভাবিকভাবে ঘটনাটি ঘটবে। তাই পরীক্ষণ অপেক্ষা নিরীক্ষণের পরিসর অধিক বিস্তৃত।

প্রশ্ন ৩৬। পরীক্ষণের তুলনায় নিরীক্ষণের দুটি সুবিধা এবং নিরীক্ষণের তুলনায় পরীক্ষণের দুটি সুবিধা লেখো।

উত্তরঃ পরীক্ষণের তুলনায় নিরীক্ষণের দুটি সুবিধা হল—–

(ক) পরীক্ষণের তুলনায় নিরীক্ষণের পরিসর অধিক ব্যাপক। কারণ, সকল বিষয়ে সকল ক্ষেত্রেই নিরীক্ষণ সম্ভব।

(খ) নিরীক্ষণে আমরা কারণ থেকে কার্যে এবং কার্য থেকে কারণে যেতে পারি। 

নিরীক্ষণের তুলনায় পরীক্ষণের দুটি সুবিধা হল—–

(ক) পরীক্ষণের পুনরাবৃত্তি সম্ভব এবং এজন্য যতবার প্রয়োজন, ততবার একই বিষয়ে পরীক্ষণ করা যায়।

(খ) পরীক্ষকের নিয়ন্ত্রণাধীন হওয়ায় পরীক্ষণে স্থির এবং শান্তভাবে বিষয়বস্তুকে বিচার করা সম্ভব হয়।

প্রশ্ন ৩৭। পর্যবেক্ষণের দোষ বলতে কী বোঝ ? অপর্যবেক্ষণের দোষ এবং ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষের উদাহরণ সহ সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ সঠিক পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষককে কিছু শর্ত মেনে চলতে হয়, যেমন —- বৌদ্ধিক, দৈহিক এবং নৈতিক শর্ত‌। এই শর্তগুলি না মানায় বা কখনও আমাদের অমনোযোগিতায় বা অন্য কোন পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষণে দোষ বা ভ্রান্তি ঘটৈ।

পর্যবেক্ষণের দোষ দুই রকমের —

(ক) অপর্যবেক্ষণ দোষ। এবং

(খ) ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ।

(ক) অপর্যবেক্ষণ দোষ —- পর্যবেক্ষণের সময় যা যা লক্ষ্য করা বা দেখা উচিত তাকে লক্ষ্য না করা বা না দেখার ফলে পর্যবেক্ষণে যে দোষ ঘটে তাকে অপর্যবেক্ষণ দোষ বা অনবেক্ষণ দোষ বলে। উদাহরণ —- যাত্রার পূর্বে হাঁচি দুর্ঘটনার কারণ।

(খ) ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ —– ইন্দ্রিয় সংবেদনের ভুল ব্যাখ্যার ফলে পর্যবেক্ষণে যে দোষ ঘটে তাকে ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ করে বলে। ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণে একটি জিনিসকে সেটা যা নয় তাই বলে প্রত্যক্ষ করি। উদাহরণ — অন্ধকারে দড়িকে সাপ বলে ভুল করি।

প্রশ্ন ৩৮। উপকারণ কাকে বলে ? উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে লেখো।

উত্তরঃ কারণ হল উপকারণসমূহের সমষ্টি । অতএব, উপকরণ কারণের অংশমাত্র নয়, আবশ্যিক অংশ। কারভেথ রীডের মতে, উপকারণ হচ্ছে , কারণের অপরিহার্য অংশ।

উপকারণ দুই প্রকারের হয়,যথা ——

(১) অনুকূল বা সদর্থক উপকারণ। এবং

(২) প্রতিকূল বা নঞর্থক উপকারণ।

(১) অনুকূল বা সদর্থক উপকারণ —- যে উপকারণের সহায়তার কার্যটি ঘটে, তাকে সদর্থক অনুকূল উপকারণ বলে।

(২) প্রতিকূল বা নঞর্থক উপকারণ —- যে উপকারণের সাহায্য না নিয়েই কার্যটি ঘটে, তাকে নঞর্থক বা প্রতিকূল উপকারণ বলে।

প্রশ্ন ৩৯। উদাহরণসহ কারণের পরিমাণগত লক্ষণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ কারণের পরিমাণগত লক্ষণ হল—-

পরিমাণগত ভাবে কারণ কার্যের সমান। এর অর্থ, পরিমাণের দিক থেকে কারণের অন্তর্গত উপাদান এবং শক্তি,কার্যের অন্তর্গত উপাদান এবং শক্তির সমান। কার্য – কারণের এই লক্ষণটি জড়বস্তুর অবিনাশিতা এবং শক্তির অবিনাশিতা নিয়ম দুটি থেকে পাওয়া যায়।

এই নিয়ম দুটি অনুসারে পৃথিবীতে জড়বস্তুর পরিমাণ স্থির‌‌‌। তা বাড়েও না কমেও না যদিও তার আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ হাইড্রজেনের সঙ্গে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন মেশানো হয়, তখন আমরা একটি নতুন বস্তু পাই — জল। এখানে অক্সিজেন এবং হাইড্রজেন দুটিই গ্যাস কিন্তু তাদের মিশ্রণের ফল জল, যা একটি তরল পদার্থ। সুতরাং এখানে দুটি গ্যাসেরই রূপ নিশ্চিত পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু জলের ওজন এই দুটি সংমিশ্রিত বস্তুর ওজনের সমান। কাজেই জড় বস্তুর ক্ষেত্রে রূপ ভিন্ন হলেও ওজন একই।

আবার, শক্তির অবিনাশিতা নিয়ম অনুসারে কার্যে যে পরিমাণ শক্তি থাকে, কারণে সম্পূর্ণভাবে একই পরিমাণ শক্তি থাকে। পৃথিবীতে শক্তির পরিমাণ একই থাকে। সেটা স্থির,কমেও না,বাড়েও না। যদিও একরূপ শক্তি অন্যরূপে রূপান্তরিত হতে পারে। কিন্তু কার্যের মধ্যে যে পরিমাণ শক্তি থাকে, কারণের সমপরিমাণ শক্তি থাকে।

অতএব কারণের পরিমাণগত লক্ষণ কার্যের পরিমাণের সমান।

প্রশ্ন ৪০। ‘ অনুকূল এবং প্রতিকূল উপকারণের সমষ্টিতেই কোনো একটি কার্য সংঘটিত হয় ‘— উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ কার্য উৎপাদনের জন্য কারণ কখনও অন্য কোন শর্তের ওপরে নির্ভর করে না। কারণ,অন্য শর্তের ওপরে নির্ভর করে না বলে কার্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকারণ কারণের মধ্যে উপস্থিত থাকতে হয়। কারণ হল উপকারণ সমূহের সমষ্টি। 

উপকারণ দুই প্রকারের হয় —–

(১) অনুকূল বা সদর্থক উপকারণ। এবং 

(২) প্রতিকূল বা নঞর্থক উপকারণ। কার্য, যাবতীয় সদর্থক এবং নঞর্থক উপকারণের সম্মিলিত ফল।

উদাহরণস্বরূপ —- কোন একজন শ্রমিক একটি বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে মারা গেল।

সাধারণতঃ ছাদ থেকে পড়ে যাওয়াকে তার মৃত্যুর কারণ বলা হবে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে যাওয়াই মৃত্যুর কারণ একমাত্র কারণ নয়, অন্যান্য কিছু কারণও থাকতে পারে। যেমন, ছাদের উচ্চতা, মাটির কাঠিন্য , বুকে আঘাত লাগা, ইত্যাদি হল সদর্থক বা অনুকূল উপকারণের উদাহরণ। অন্যদিকে, মানুষটি শারীরিকভাবে সুস্থ না হওয়া, অন্য লোকের সাহায্য না পাওয়া, চিকিৎসার অভাব  ইত্যাদি হল নঞর্থক বা প্রতিকূল উপকারণের উদাহরণ।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। প্রকৃতির একরূপতা নীতি বলতে কী বোঝ ? এটাকে কেন আগমনের আকারগত ভিত্তি বলা হয় ?

উত্তরঃ প্রকৃতির একরূপতা নীতির অর্থ হল একই পরিস্থিতিতে প্রকৃতি একই রূপ আচরণ করে। প্রকৃতি নিয়মের রাজত্ব। প্রকৃতিতে একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। কোন আকস্মিক পরিস্থিতির বা কারণের উদ্ভব না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃতি কখনও নিজের নিয়মকে লংঘন করে না।

প্রকৃতির একরূপতা বিধি হল আগমনের আকারগত ভিত্তি। মিলের মতে, প্রকৃতির একরূপতা বিধি প্রত্যেক আগমনের ক্ষেত্রে পূর্বস্বীকার্য সত্য। এই নীতির সাহায্য না নিয়ে কোন সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আগমনের সকল সামান্যীকরণের ভিত্তি হল এই একরূপতা নীতি। এই নীতিকে সত্য বলে না ধরলে আমরা জানা থেকে অজানায়, দৃষ্ট থেকে অ-দৃষ্টে বিশেষ থেকে সামান্যে যেতে পারবো না। এই নিয়মের ভিত্তিতেই কিছু সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা দেখে অনুমান করি ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল ‘। মিলের মতে, প্রকৃতির একরূপতা নীতি, একটি স্বতঃসিদ্ধ, মৌলিক নিয়ম যা আগমনের একটি পূর্বস্বীকৃত সত্য , অর্থাৎ আগমন অনুমানে সামান্যীকরণ প্রক্রিয়ার শুরুতেই এই নীতিটি কে স্বীকার করা হয়। প্রকৃতির একরূপতা নীতি আগমনের আকারগত সত্যতা প্রতিষ্ঠা করে বলে এই নীতিকে আগমনের আকারগত ভিত্তি বলা হয়।

প্রশ্ন ২। কারণ কী ? কারণের পরিমাণগত লক্ষণগুলি কী কী ?

উত্তরঃ বিভিন্ন তর্কবিজ্ঞানী কারণের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। মিল কারণের দুটি সংজ্ঞা দিয়েছেন। প্রথমত :—- কারণ হল কার্যের অপরিবর্তনীয়, শর্তহীন, পূর্ববর্তী ঘটনা। দ্বিতীয়ত :— কারণ হল সদর্থক এবং নঞর্থক উপকারণসমূহের সমষ্টি। বেইনের মতে, কারণ হল কার্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় উপকারণ বা পরিস্থিতির সম্পূর্ণ সমষ্টি।

কারণের পরিমাণগত লক্ষণগুলি হল—-

পরিমাণগত ভাবে কারণ কার্যের সমান। এর অর্থ, পরিমাণের দিক থেকে কারণের অন্তর্গত উপাদান এবং শক্তি,কার্যের অন্তর্গত উপাদান এবং শক্তির সমান। কার্য – কারণের এই লক্ষণটি জড়বস্তুর অবিনাশিতা এবং শক্তির অবিনাশিতা নিয়ম দুটি থেকে পাওয়া যায়।

এই নিয়ম দুটি অনুসারে পৃথিবীতে জড়বস্তুর পরিমাণ স্থির‌‌‌। তা বাড়েও না কমেও না যদিও তার আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ হাইড্রজেনের সঙ্গে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন মেশানো হয়, তখন আমরা একটি নতুন বস্তু পাই — জল। এখানে অক্সিজেন এবং হাইড্রজেন দুটিই গ্যাস কিন্তু তাদের মিশ্রণের ফল জল, যা একটি তরল পদার্থ। সুতরাং এখানে দুটি গ্যাসেরই রূপ নিশ্চিত পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু জলের ওজন এই দুটি সংমিশ্রিত বস্তুর ওজনের সমান। কাজেই জড় বস্তুর ক্ষেত্রে রূপ ভিন্ন হলেও ওজন একই।

আবার, শক্তির অবিনাশিতা নিয়ম অনুসারে কার্যে যে পরিমাণ শক্তি থাকে, কারণে সম্পূর্ণভাবে একই পরিমাণ শক্তি থাকে। পৃথিবীতে শক্তির পরিমাণ একই থাকে। সেটা স্থির,কমেও না,বাড়েও না। যদিও একরূপ শক্তি অন্যরূপে রূপান্তরিত হতে পারে। কিন্তু কার্যের মধ্যে যে পরিমাণ শক্তি থাকে, কারণের সমপরিমাণ শক্তি থাকে।

অতএব কারণের পরিমাণগত লক্ষণ কার্যের পরিমাণের সমান।

প্রশ্ন ৩। নানাকারণবাদ মতবাদ বলতে কী বোঝ ? এটি বিজ্ঞানসম্মতভাবে গ্ৰহণযোগ্য কি ?

উত্তরঃ  নানাকারণবাদ কার্যকারণ সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা। নানাকারণবাদ মতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ একই কার্য উৎপাদন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ — ব্যাধি, আঘাত, বিষ, বার্ধক্য ইত্যাদি নানা কারণে মৃত্যু হতে পারে।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে কারণ এবং কার্য দুইই জটিল ঘটনা। ঘটনার সংগে জড়িত সকল কারণ বা কার্যকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এর ফলে, আমাদের মনে কতগুলি ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয় এবং নানাকারণবাদের জন্ম হয়।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে নানাকারণবাদ গ্ৰহণযোগ্য নয়। এর দুটি কারণ হল —–

(১) প্রথমতঃ যদি আমরা কোন কার্যের বিভিন্ন কারণকে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাবো যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যের একটি সাধারণ লক্ষণ থাকে। কারণের এই সাধারণ বৈশিষ্ট্য বিচার করলে দেখা যায় নানাকারণবাদের ধারণা ভ্রান্ত।

(২) দ্বিতীয়তঃ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে নানাকারণবাদ গ্ৰহণযোগ্য নয়। কারণের সংজ্ঞানুসারে, কারণ হল কার্যের অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা,যার সঙ্গে নানাকারণবাদ অসঙ্গতিপূর্ণ।

প্রশ্ন ৪। এরিষ্টটলের মতে কারণ কত প্রকার ? উদাহরণসহ প্রত্যেকটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ এরিষ্টটলের মতে কারণ চার প্রকার। যথা —-

(ক) বস্তুগত কারণ —- যে পদার্থ বা বস্তু দ্বারা কোন কার্য  উৎপাদন করা হয়, তাকে ‘ বস্তুগত কারণ’ বলে। যখনই কোন কার্য সৃষ্টি হয়, সেটা কোন দ্রব্য বা পদার্থ দিয়েই সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ —- মাটির তৈরি একটি পাত্রের বস্তুগত কারণ হল মাটি।

(খ) আকারগত কারণ —– কার্যসৃষ্টির পর কার্যের মধ্যে যে নতুন রূপ দেখতে পাওয়া যায় তাকে ঐ কার্যের আকারগত কারণ বলে। অর্থাৎ একটি কার্য উৎপন্ন করতে দ্রব্য বা উপাদানের উপর যে নতুন রূপ দেওয়া হয় তাকে আকারগত কারণ বলে। উদাহরণস্বরূপ —- তাঁতী সুতা দিয়ে একটি কাপড় বোনলো। সেই কাপড়ের বিশেষ রূপ বা আকারটি হল কাপড়ের আকারগত কারণ।

(গ) নিমিত্ত কারণ —- একটি কার্য উৎপন্ন করতে যে শ্রম বা শক্তির প্রয়োজন হয় তাকে সেই কার্যের নিমিত্ত কারণ বলে। উদাহরণস্বরূপ —- একটি কাপড় তৈরি করতে তাঁতী যে শক্তি বা নিপুণতা প্রয়োগ করে, তাকে কাপড়টির নিমিত্ত কারণ বলে।

(ঘ) চূড়ান্ত বা পরিণাম কারণ —– যে উদ্দেশ্যে নিয়ে একটি কার্য সৃষ্টি করা হয় সেই উদ্দেশ্যকে কার্যটির পরিণাম কারণ বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ —- কাপড়টি ব্যবহার করাই হল কাপড় তৈরির পরিণাম কারণ।

প্রশ্ন ৫। নিরীক্ষণ কী ? এর বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ?

উত্তরঃ প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক ঘটনার উদ্দেশ্যমূলক সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণকে নিরীক্ষণ বলে।

নিরীক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—–

(ক) নিরীক্ষণে সব সময় কোন একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। উদ্দেশ্যবিহীন প্রত্যক্ষকে নিরীক্ষণ বলা চলে না।

(খ) নিরীক্ষণে প্রাকৃতিক ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করা হয়। নিরীক্ষণে ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হয়।

(গ) নিরীক্ষণ প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে উদ্ভুত ঘটনার প্রত্যক্ষ। নিরীক্ষণ সবসময় প্রাকৃতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।

(ঘ) নিরীক্ষণে ঘটনাবলি পর্যবেক্ষকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কারণ নিরীক্ষণযোগ্য ঘটনা প্রকৃতিই সৃষ্টি করে। পর্যবেক্ষক এগুলি সৃষ্টি করেন না,পরিবর্তনও করেন না।

প্রশ্ন ৬। পরীক্ষণ কী ? নিরীক্ষণের তুলনায় পরীক্ষণের সুবিধাগুলি কী কী ?

উত্তরঃ কৃত্রিম পরিবেশে, কৃত্রিমভাবে কোন ঘটনাকে গবেষণাগারে প্রস্তুত করে তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রত্যক্ষ করার নাম পরীক্ষণ।

নিরীক্ষণের তুলনায় পরীক্ষণের সুবিধাগুলি হল—–

(১) পরীক্ষণের পুনরাবৃত্তি সম্ভব এবং এজন্য যতবার প্রয়োজন, ততবার একই বিষয়ে পরীক্ষণ করা যায়।

(২) পরীক্ষক পরীক্ষণীয় বিষয়কে পৃথকভাবে পরীক্ষা করতে পারেন।

(৩) পরীক্ষণে স্থিরভাবে ও শান্ত মনে পরীক্ষণ সম্ভব।

(৪) পরীক্ষণে যতবার প্রয়োজন পরিবেশের পরিবর্তন সম্ভব।

প্রশ্ন ৭। নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের মধ্যে পার্থক্য মাত্র পরিমাণগত, মূলগত নয় ‘—- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের মধ্যে পার্থক্য মাত্র পরিমাণগত, মূলগত নয়। এদের মধ্যে গুণগত কোন পার্থক্য নেই। নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের মধ্যে সত্যকারের কোন বিরোধিতা নেই। এদের মধ্যে তীক্ষ্ণ কোন শ্রেণি বিভাজন করা যায় না। কারণ দুটি ক্ষেত্রেই আমরা আগমনের বিষয়বস্তু সংগ্ৰহ করতে চেষ্টা করি এবং বস্তুগত ভাবে সত্য একটি সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করি। এই উদ্দেশ্যে আমরা উভয়ক্ষেত্রেই আমাদের ইন্দ্রিয়গুলির স্বাভাবিক ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখি এবং প্রাকৃতিক ঘটনাবলিকে প্রত্যক্ষ করি। উভয়ক্ষেত্রেই শারীরিক এবং মানসিক শক্তির ব্যবহার হয়।

জেভনসের মতে, সরল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণের পার্থক্য শুধু মাত্রাগত। সরল পর্যবেক্ষণ পরীক্ষণ অপেক্ষা অধিক স্বাভাবিক। তার পরীক্ষণ নিরীক্ষণের অপেক্ষা অধিক কৃত্রিম। যেহেতু নিরীক্ষণ স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া, নিরীক্ষণে আমরা পরীক্ষণের অপেক্ষা কম সক্রিয়। পরীক্ষণে আমরা নিরীক্ষণের অপেক্ষা অধিক সক্রিয়।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ৮। কারণের এক উপযুক্ত সংজ্ঞা দাও। কারণের গুণগত লক্ষণসমূহ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ বিভিন্ন তর্কবিজ্ঞানী কারণের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। মিল কারণের দুটি সংজ্ঞা দিয়েছেন। 

প্রথমত: কারণ হল কার্যের অপরিবর্তনীয়, শর্তহীন, পূর্ববর্তী ঘটনা। 

দ্বিতীয়ত: কারণ হল সদর্থক এবং নঞর্থক উপকারণসমূহের সমষ্টি। বেইনের মতে, কারণ হল কার্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় উপকারণ বা পরিস্থিতির সম্পূর্ণ সমষ্টি।

কারণের গুণগত লক্ষণগুলি হল—–

(ক) কারণ এবং কার্য দুই সাপেক্ষ ঘটনা। কারণ ও কার্য পরস্পর সম্পর্কিত। দুইই পরস্পরের উপর নির্ভরশীল।

(খ) কারণ ও কার্য সব সময়ে কালিক ঘটনা। কালিক ঘটনা হল প্রকৃতির পরিবর্তনশীলতা সূচক।

(গ) কারণ হচ্ছে কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনা। দুটি ঘটনা পরপর ঘটলে তার মধ্যে পূর্বের ঘটনাটিকে পূর্ববর্তী ঘটনা এবং ঘটনাকে অনুবর্তী ঘটনা বলে। কারণ সবসময়েই পূর্ববর্তী ঘটনা এবং কার্য অনুবর্তী ঘটনা।

(ঘ) কারণ কার্যের নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা। নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা বলতে সেই ঘটনাকেই বুঝায় যা সবসময়ে কার্যের পূর্বে ঘটে।

(ঙ) কারণ কার্যের শর্তহীন নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা। কারণ হল কার্যের নিয়ত অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা।

(চ) কারণ কার্যের শর্তহীন, নিয়ত অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনা। কারণ কার্যের অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনা, দূরবর্তী পূর্ববর্তী ঘটনা নয়।

প্রশ্ন ৯। প্রকৃতির একরূপতা বিধিটির অর্থ ব্যাখ্যা করো। এই সাহায্যে অনুকূল এবং প্রতিকূল উপকারণের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা লেখো।

উত্তরঃ প্রকৃতির একরূপতা নীতির অর্থ হল একই পরিস্থিতিতে প্রকৃতি একই রূপ আচরণ করে। প্রকৃতি নিয়মের রাজত্ব। প্রকৃতিতে একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। কোন আকস্মিক পরিস্থিতির বা কারণের উদ্ভব না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃতি কখনও নিজের নিয়মকে লংঘন করে না।

প্রকৃতির একরূপতা বিধি হল আগমনের আকারগত ভিত্তি। মিলের মতে, প্রকৃতির একরূপতা বিধি প্রত্যেক আগমনের ক্ষেত্রে পূর্বস্বীকার্য সত্য। এই নীতির সাহায্য না নিয়ে কোন সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আগমনের সকল সামান্যীকরণের ভিত্তি হল এই একরূপতা নীতি। এই নীতিকে সত্য বলে না ধরলে আমরা জানা থেকে অজানায়, দৃষ্ট থেকে অ-দৃষ্টে বিশেষ থেকে সামান্যে যেতে পারবো না। এই নিয়মের ভিত্তিতেই কিছু সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা দেখে অনুমান করি ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল ‘। মিলের মতে, প্রকৃতির একরূপতা নীতি, একটি স্বতঃসিদ্ধ, মৌলিক নিয়ম যা আগমনের একটি পূর্বস্বীকৃত সত্য , অর্থাৎ আগমন অনুমানে সামান্যীকরণ প্রক্রিয়ার শুরুতেই এই নীতিটি কে স্বীকার করা হয়। প্রকৃতির একরূপতা নীতি আগমনের আকারগত সত্যতা প্রতিষ্ঠা করে বলে এই নীতিকে আগমনের আকারগত ভিত্তি বলা হয়।

প্রশ্ন ১০। উপকারণ মানে কী ? উপযুক্ত উদাহরণের সাহায্যে অনুকূল এবং প্রতিকূল উপকারণের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা লেখো।

উত্তরঃ কারণ হল উপকারণসমূহের সমষ্টি । অতএব, উপকরণ কারণের অংশমাত্র নয়, আবশ্যিক অংশ। কারভেথ রীডের মতে, উপকারণ হচ্ছে , কারণের অপরিহার্য অংশ।

উপকারণ দুই প্রকারের হয়,যথা ——

(১) অনুকূল বা সদর্থক উপকারণ। এবং

(২) প্রতিকূল বা নঞর্থক উপকারণ।

(১) অনুকূল বা সদর্থক উপকারণ —- যে উপকারণের সহায়তার কার্যটি ঘটে, তাকে সদর্থক অনুকূল উপকারণ বলে।

(২) প্রতিকূল বা নঞর্থক উপকারণ —- যে উপকারণের সাহায্য না নিয়েই কার্যটি ঘটে, তাকে নঞর্থক বা প্রতিকূল উপকারণ বলে।

উদাহরণস্বরূপ —- কোন একজন শ্রমিক একটি বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে মারা গেল।

সাধারণতঃ ছাদ থেকে পড়ে যাওয়াকে তার মৃত্যুর কারণ বলা হবে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে যাওয়াই মৃত্যুর কারণ একমাত্র কারণ নয়, অন্যান্য কিছু কারণও থাকতে পারে। যেমন, ছাদের উচ্চতা, মাটির কাঠিন্য , বুকে আঘাত লাগা, ইত্যাদি হল সদর্থক বা অনুকূল উপকারণের উদাহরণ। অন্যদিকে, মানুষটি শারীরিকভাবে সুস্থ না হওয়া, অন্য লোকের সাহায্য না পাওয়া, চিকিৎসার অভাব  ইত্যাদি হল নঞর্থক বা প্রতিকূল উপকারণের উদাহরণ।

প্রশ্ন ১১। পর্যবেক্ষণ কী ? নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণকে কেন আগমনের বস্তুগত ভিত্তি বলা হয় ?

উত্তরঃ একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কোন ঘটনা বা পরিস্থিতির সুনির্বাচিত এবং সুনিয়ন্ত্রিত প্রত্যক্ষকে পর্যবেক্ষণ বলে।

পর্যবেক্ষণ দুই প্রকারের — 

(ক) সরল পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণ। এবং 

(খ) পরীক্ষণ।

আগমন অনুমানে আমরা কেবল আকারগত সত্যতা নয়, বস্তুগত সত্যতাও বিচার করি। তাই আগমনের বস্তুগত সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করি।‌পর্যবেক্ষণ দুই রকমের হয় —- সরল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ। সরল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ এমন দুটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে আগমনের সামান্যীকরণের বিষয় এবং আশ্রয় বাক্যগুলি পাওয়া যায়। তাই সরল পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণকে আগমনের বস্তুগত ভিত্তি বলা হয়।

প্রশ্ন ১২। আগমনের বিরোধাভাস বলতে কী বোঝ ? দুটি সমালোচনার সাথে আগমনের বিরোধাভাস বিস্তারিত লেখো।

উত্তরঃ প্রকৃতির একরূপতা বিধি সম্পর্কে মিলের দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদকে আগমনের বিরোধাভাস বলে। এর অর্থ এই যে আগমনের ভিত্তিটি নিজেই আগমনের ফল/ সিদ্ধান্ত। মিল বলেছেন, প্রকৃতির একরূপতা বিধি একটি মৌলিক নীতি বা আগমনের ক্ষেত্রে পূর্বস্বীকৃত একটি সাধারণ সত্য প্রতিটি আগমনের ক্ষেত্রে নিহিত থাকে। মিল আবার বলেছেন, প্রকৃতির একরূপতা বিধিটি অবৈজ্ঞানিক আগমন বা অপূর্ণগণনাভিত্তিক আগমনের সিদ্ধান্ত অবৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি হচ্ছে অবাধিত অভিজ্ঞতা। কোন কার্যকারণ সম্পর্ক ছাড়াই অবৈজ্ঞানিক আগমন সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করে। অতএব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ‘ বিশেষ একরূপ তার দৃষ্টান্ত পাই আর বিশেষ একরূপতা গুলি থেকে আমরা সামান্য একরূপতা প্রতিষ্ঠা করি। যখন প্রকৃতির একরূপতা সামান্য নীতিটি প্রতিষ্ঠিত হয় তখন সেটা হয় সকল আগমনের ভিত্তি। অতএব আগমনের ভিত্তি হল আগমনের ফল।

সমালোচনা ——

(১) মিলের মতে, প্রকৃতির একরূপতা বিধি আগমনের ভিত্তি, আবার অন্য প্রসঙ্গে মিল বলেছেন এই নীতিটি অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত। কিন্তু একই নীতি একই সঙ্গে আগমনের ভিত্তি এবং আগমনের সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এখানে মিল একটি তর্কীয় দোষ ঘটিয়েছেন যাকে বলা হয় চক্রক দোষ।

(২) মিল একজন অভিজ্ঞতা বাদী দার্শনিক ছিলেন বলে তিনি এই নীতিকে আগমনের ভিত্তি হিসাবে পূর্ব স্বীকার্য বলে মানতে পারেননি। তাই তিনি এই নীতিকে অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত বলেছিলেন।

বস্তুতঃ প্রকৃতির একরূপতা বিধি একটি পূর্বস্বীকার্য সত্য। তা না মানলে আগমনের সামান্যীকরণ প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব।

প্রশ্ন ১৩। কার্যকারণ বিধি বলতে কী বোঝ ? কার্যকারণ বিধিকে আগমনের আকারগত ভিত্তি বলার কারণ কী ?

উত্তরঃ কার্যকারণ বিধি অনুসারে, প্রতিটি ঘটনার একটি কারণ থাকে। কোন ঘটনাই আকস্মিকভাবে ঘটে না। শূন্যতা থেকে কিছুই ঘটে না। প্রাথমিক বিচারে যদি কোন ঘটনার কারণ প্রকাশিত হয় না, তবুও একথা মানতে হবে যে সেই ঘটনার একটি নির্দিষ্ট কারণ আছে। আবার কোন ঘটনার একাধিক কারণও থাকতে পারে, কিন্তু কারণ থাকবেই। কাজেই ‘ কার্যকারণ বিধি ‘ মতে যা ঘটে তার কারণ থাকে এবং কারণটি নিয়ম উপস্থিত থাকে। আকারগত ভাবে সত্য হবার জন্য আগমনে এই নিয়ম অনুসারণ করেই সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়। অর্থাৎ কার্যকারণ বিধি আগমনের সামান্যীকরণের আকারগত সত্যতা প্রতিষ্ঠা করে। তাই কার্যকারণ বিধিকে আগমনের আকারগত ভিত্তি বলা হয়।

প্রশ্ন ১৪। কারভেথ রীডের মতে কারণ কী ? কারণের গুণগত লক্ষণ সমূহ কী কী ?

উত্তরঃ কারভেথ রীডের মতে, কারণ হল, ” গুণের দিক থেকে কার্যের অব্যবহিত , শর্তান্তরহীন, অপরিবর্তনীয়, পূর্ববর্তী ঘটনা” এবং পরিমাণের দিক থেকে ” কারণ কার্যের সমান।”

কারণের পরিমাণগত লক্ষণ হল—-

পরিমাণগত ভাবে কারণ কার্যের সমান। এর অর্থ, পরিমাণের দিক থেকে কারণের অন্তর্গত উপাদান এবং শক্তি,কার্যের অন্তর্গত উপাদান এবং শক্তির সমান। কার্য – কারণের এই লক্ষণটি জড়বস্তুর অবিনাশিতা এবং শক্তির অবিনাশিতা নিয়ম দুটি থেকে পাওয়া যায়।

এই নিয়ম দুটি অনুসারে পৃথিবীতে জড়বস্তুর পরিমাণ স্থির‌‌‌। তা বাড়েও না কমেও না যদিও তার আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ হাইড্রজেনের সঙ্গে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন মেশানো হয়, তখন আমরা একটি নতুন বস্তু পাই — জল। এখানে অক্সিজেন এবং হাইড্রজেন দুটিই গ্যাস কিন্তু তাদের মিশ্রণের ফল জল, যা একটি তরল পদার্থ। সুতরাং এখানে দুটি গ্যাসেরই রূপ নিশ্চিত পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু জলের ওজন এই দুটি সংমিশ্রিত বস্তুর ওজনের সমান। কাজেই জড় বস্তুর ক্ষেত্রে রূপ ভিন্ন হলেও ওজন একই।

আবার, শক্তির অবিনাশিতা নিয়ম অনুসারে কার্যে যে পরিমাণ শক্তি থাকে, কারণে সম্পূর্ণভাবে একই পরিমাণ শক্তি থাকে। পৃথিবীতে শক্তির পরিমাণ একই থাকে। সেটা স্থির,কমেও না,বাড়েও না। যদিও একরূপ শক্তি অন্যরূপে রূপান্তরিত হতে পারে। কিন্তু কার্যের মধ্যে যে পরিমাণ শক্তি থাকে, কারণের সমপরিমাণ শক্তি থাকে।

অতএব কারণের পরিমাণগত লক্ষণ কার্যের পরিমাণের সমান।

প্রশ্ন ১৫। পরীক্ষণ কাকে বলে ? পরীক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

উত্তরঃ কৃত্রিম পরিবেশে, কৃত্রিমভাবে কোন ঘটনাকে গবেষণাগারে প্রস্তুত করে তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রত্যক্ষ করার নাম পরীক্ষণ।

পরীক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—–

(ক) সরল পর্যবেক্ষণের ন্যায় পরীক্ষণও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যমূলক প্রত্যক্ষ। এই উদ্দেশ্যই আমরা পরীক্ষণের বিষয়ে নির্বাচন করি এবং সেই বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হই।

(খ) পরীক্ষণ হল কৃত্রিম ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করা। পরীক্ষণে আমরা কৃত্রিমভাবে ঘটনাকে সৃষ্টি করি। তাই প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে ঘটনা সৃষ্টি হবার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয় না।

(গ) পরীক্ষণ হচ্ছে কৃত্রিম পরিবেশে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা ঘটনার প্রত্যক্ষ। পরীক্ষণে আমরা আমাদের প্রয়োজনমত পরিবেশের পরিবর্তন করতে পারি কারণ যে সব পরিবেশে ঘটনা ঘটে,যে সব আমরাই আগে থেকে তৈরি করে নেই।

(ঘ) পরীক্ষণে ঘটনা সর্বদাই পরীক্ষকের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে। পরীক্ষণে পরীক্ষক ঘটনাকে গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করেন। তাই বিষয়বস্তু এবং পরিবেশ সম্পূর্ণভাবে পরীক্ষকের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ সম্পূর্ণভাবে সেটা পরীক্ষকের নিয়ন্ত্রণাধীন।

প্রশ্ন ১৬। কারণ হল অনুকূল এবং প্রতিকূল উপকারণসমূহের সমষ্টি ‘— কে বলেছেন ? উক্তিটি আলোচনা করো।

উত্তরঃ কারভেথ রীডের মতে, ‘কারণ হল, অনুকূল এবং প্রতিকূল উপকারণসমূহের সমষ্টি ‘। 

কারণ হল কার্যের অব্যবহিত , অপরিবর্তনীয়, শর্তহীন, নিয়ম পূর্ববর্তী ঘটনা। কার্য উৎপাদনের জন্য কারণ কখনও অন্য কোন শর্তের উপর নির্ভর করে না। কারণ কোন বিশেষ ঘটনা নয়। কারণ উপকারণসমূহের সমষ্টি।

উপকারণ হল কারণের অংশ। কারভেথ রীডের মতে উপকারণ হচ্ছে কারণের অপরিহার্য অংশ। কারণ, অন্য শর্তের উপর নির্ভর করে না বলে কার্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকারণ কারণের মধ্যে উপস্থিত থাকতে হয়।

কারণ এবং উপকারণের সম্পর্ক হল, সমগ্ৰ এবং তার অংশের সম্পর্ক। সমগ্ৰের মধ্যেই তার অংশ থাকে। সেভাবেই, কারণের মধ্যে উপকারণ থাকে। কারণের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে উপকারণকে উপকারণই বলা যায় না।

পাঠ্যপুস্তকের সম্ভাব্য প্রশ্নাবলির উত্তর

প্রশ্ন ১। শূন্যস্থান পূর্ণ করোঃ

(ক) নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের ওপরে আগমনের ———- সত্যতা নির্ভর করে।

উত্তরঃ বস্তুগত।

(খ) ‘ নিরীক্ষণে ঘটনাকে আবিষ্কার করা হয় এবং পরীক্ষণে ঘটনাকে ————- হয়।

উত্তরঃ সৃষ্টি করা।

(গ) নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের পার্থক্য ————।

উত্তরঃ মাত্রাগত, মূলগত নয়।

(ঘ) নিরীক্ষণের স্থান পরীক্ষণের ————-।

উত্তরঃ আগে।

(ঙ) সরল পর্যবেক্ষণের পরিসর পরীক্ষণের তুলনায় ———–।

উত্তরঃ অধিক ব্যাপক।

প্রশ্ন ২। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখোঃ

(ক) সুনিরীক্ষণের শর্ত।

উত্তরঃ নির্ভুল পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষককে কতগুলি সাধারণ নিয়ম বা শর্ত মানতে হয়। শর্তগুলি তিন রকমের হয় —-

(ক) বৌদ্ধিক শর্ত—– নির্ভুল পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষককে বৌদ্ধিকভাবে সক্ষম হতে হবে। জ্ঞান পিপাসা হচ্ছে পর্যবেক্ষণের একটি অতি আবশ্যকীয় শর্ত।

(খ) দৈহিক শর্ত—– পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি অন্যতম দৈহিক শর্ত সাধারণতঃ পঞ্চেন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা পর্যবেক্ষণ করি। অতএব, সুস্থ ইন্দ্রিয়গুলি পর্যবেক্ষণের দৈহিক শর্ত।

(গ) নৈতিক শর্ত‌ —– পর্যবেক্ষণের নৈতিক শর্ত‌ হল নিরপেক্ষতা।

(খ) ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ।

উত্তরঃ পর্যবেক্ষণ দোষ দু-রকমের হয় —– অপর্যবেক্ষণ দোষ এবং ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ । যে পর্যবেক্ষণে আমরা একটা জিনিস যা তাকে সে ভাবে না দেখে, অন্যকিছু বলে ভুল করি তাকে ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ বলে। ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণে আমরা এই দোষটি করি, কারণ আমাদের ইন্দ্রিয়গ্ৰাহ্য প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভুল ব্যাখ্যা আমরা করি। যেমন, অন্ধকারে দড়িকে সাপ বলে ভুল করি। ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দুই প্রকারের হয়। 

(ক) ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ —- ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে যে ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ হয়, তাকে ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ বলে। উদাহরণস্বরূপ —– দড়িকে সাপ বলে ভুল করা, একটি ল্যাম্পপোষ্টকে মানুষ বলে ভুল করা ইত্যাদি।

(খ) সার্বজনীন ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ —– সকল মানুষের ক্ষেত্রে হওয়া ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণকে সার্বজনীন ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ বলে। উদাহরণস্বরূপ —– ছুটন্ত রেলগাড়ি থেকে বাইরে তাকালে আমরা কখনও কখনও কল্পনা করি, রেলগাড়িটি স্থির অবস্থায় রয়েছে আর দূরের গাছপালা, পাহাড়গুলি উল্টোদিকে ছুটছে।

(গ) অপর্যবেক্ষণ দোষ।

উত্তরঃ অপর্যবেক্ষণ দোষ —- যখন আমরা যা পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল,তা পর্যবেক্ষণ করি না, বা তাকে অবহেলা করি, তখন অপর্যবেক্ষণ দোষ ঘটে। সকল পর্যবেক্ষণই নির্বাচনাত্ম এবং নির্বাচন করার সময় কখনও কখনও আমরা হয় ঘটনাকে অবহেলা করি কিংবা আবশ্যিক পরিস্থিতি বা অবস্থাকে অবহেলা করি। অতএব অপর্যবেক্ষণের দুই ধরণের দোষ ঘটে, যথা—–

(ক) দৃষ্টান্ত অপর্যবেক্ষণের দোষ —- পর্যবেক্ষণের সময় যখন আমরা আমাদের জ্ঞাতব্য বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রাসঙ্গিক কোন দৃষ্টান্তকে অবহেলা করি, তখনই দৃষ্টান্ত অপর্যবেক্ষণের দোষ ঘটে। উদাহরণস্বরূপ —- পরীক্ষায় যাবার আগে ডিম খাওয়া পরীক্ষায় অসফলতার কারণ, যাত্রার পূর্বে হাঁচি দুর্ঘটনার কারণ ইত্যাদি।

(খ) প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি অপর্যবেক্ষণের দোষ —- পর্যবেক্ষণের সময় সবগুলি প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। কিন্তু, আমরা যখন প্রাসঙ্গিক অবস্থাগুলিকে অবহেলা করি, তখনই প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি অপর্যবেক্ষণের দোষ ঘটে। উদাহরণস্বরূপ —- জণ্ডিস আক্রান্ত একজন লোক ঔষধ খেয়ে সুস্থ হওয়ার পর ভাবল জণ্ডিস রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার কারণ কেবল ঐ ঔষধ। এখানে অন্যান্য কিছু প্রাসঙ্গিক অবস্থা যেমন —- সেদ্ধ খাবার খাওয়া, রোগীর সেবা, বিছানায় বিশ্রাম করা ইত্যাদি অবহেলা করা হয়েছে। তাই প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি অপর্যবেক্ষণের দোষ ঘটেছে।

প্রশ্ন ৩। সংজ্ঞা দাওঃ

(ক) নিরীক্ষণ।

উত্তরঃ নিরীক্ষণ —- প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক ঘটনার উদ্দেশ্যমূলক সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণকে নিরীক্ষণ বলে।

(খ) পরীক্ষণ।

উত্তরঃ পরীক্ষণ —– কৃত্রিম পরিবেশে, কৃত্রিমভাবে কোন ঘটনাকে গবেষণাগারে প্রস্তুত করে তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রত্যক্ষ করার নাম পরীক্ষণ।

(গ) অপর্যবেক্ষণ দোষ।

উত্তরঃ সকল পর্যবেক্ষণই নির্বাচনাত্মক এবং নির্বাচন করার সময় কখনও কখনও আমরা হয় ঘটনাকে অবহেলা করি কিংবা আবশ্যিক পরিস্থিতি বা অবস্থাকে অবহেলা করি, তখনই অপর্যবেক্ষণ দোষ ঘটে। অপর্যবেক্ষণে আমরা যা অবহেলা করা উচিত ছিল না, তাকে অবহেলা করি।

(ঘ) ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ।

উত্তরঃ ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ —- ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে যে ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ হয়, তাকে ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ বলে।

প্রশ্ন ৪। পার্থক্য নির্ণয় করোঃ

(ক) সরল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ।

উত্তরঃ নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণের মধ্যে পার্থক্য হল—

(ক) নিরীক্ষণে প্রাকৃতিক ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করা হয় কিন্তু পরীক্ষণ হল কৃত্রিম ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করা।

(খ) নিরীক্ষণ প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে উদ্ভুত ঘটনার প্রত্যক্ষ। অন্যদিকে পরীক্ষণ হচ্ছে কৃত্রিম পরিবেশে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা ঘটনার প্রত্যক্ষ।

(গ) নিরীক্ষণের ঘটনাবলি পর্যবেক্ষকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। কিন্তু পরীক্ষণে ঘটনা সর্বদাই পরীক্ষকের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে।

(খ) অপর্যবেক্ষণ দোষ এবং ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ।

উত্তরঃ অপর্যবেক্ষণ দোষ —- যখন আমরা যা পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল,তা পর্যবেক্ষণ করি না, বা তাকে অবহেলা করি, তখন অপর্যবেক্ষণ দোষ ঘটে। সকল পর্যবেক্ষণই নির্বাচনাত্ম এবং নির্বাচন করার সময় কখনও কখনও আমরা হয় ঘটনাকে অবহেলা করি কিংবা আবশ্যিক পরিস্থিতি বা অবস্থাকে অবহেলা করি। অতএব অপর্যবেক্ষণের দুই ধরণের দোষ ঘটে, যথা—–

(ক) দৃষ্টান্ত অপর্যবেক্ষণের দোষ —- পর্যবেক্ষণের সময় যখন আমরা আমাদের জ্ঞাতব্য বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রাসঙ্গিক কোন দৃষ্টান্তকে অবহেলা করি, তখনই দৃষ্টান্ত অপর্যবেক্ষণের দোষ ঘটে। উদাহরণস্বরূপ —- পরীক্ষায় যাবার আগে ডিম খাওয়া পরীক্ষায় অসফলতার কারণ, যাত্রার পূর্বে হাঁচি দুর্ঘটনার কারণ ইত্যাদি।

(খ) প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি অপর্যবেক্ষণের দোষ —- পর্যবেক্ষণের সময় সবগুলি প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। কিন্তু, আমরা যখন প্রাসঙ্গিক অবস্থাগুলিকে অবহেলা করি, তখনই প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি অপর্যবেক্ষণের দোষ ঘটে। উদাহরণস্বরূপ —- জণ্ডিস আক্রান্ত একজন লোক ঔষধ খেয়ে সুস্থ হওয়ার পর ভাবল জণ্ডিস রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার কারণ কেবল ঐ ঔষধ। এখানে অন্যান্য কিছু প্রাসঙ্গিক অবস্থা যেমন —- সেদ্ধ খাবার খাওয়া, রোগীর সেবা, বিছানায় বিশ্রাম করা ইত্যাদি অবহেলা করা হয়েছে। তাই প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি অপর্যবেক্ষণের দোষ ঘটেছে।

পর্যবেক্ষণ দোষ দু-রকমের হয় —– অপর্যবেক্ষণ দোষ এবং ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ । যে পর্যবেক্ষণে আমরা একটা জিনিস যা তাকে সে ভাবে না দেখে, অন্যকিছু বলে ভুল করি তাকে ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ বলে। ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণে আমরা এই দোষটি করি, কারণ আমাদের ইন্দ্রিয়গ্ৰাহ্য প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভুল ব্যাখ্যা আমরা করি। যেমন, অন্ধকারে দড়িকে সাপ বলে ভুল করি। ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দুই প্রকারের হয়। 

(ক) ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ —- ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে যে ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ হয়, তাকে ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ বলে। উদাহরণস্বরূপ —– দড়িকে সাপ বলে ভুল করা, একটি ল্যাম্পপোষ্টকে মানুষ বলে ভুল করা ইত্যাদি।

(খ) সার্বজনীন ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ —– সকল মানুষের ক্ষেত্রে হওয়া ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণকে সার্বজনীন ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ বলে। উদাহরণস্বরূপ —– ছুটন্ত রেলগাড়ি থেকে বাইরে তাকালে আমরা কখনও কখনও কল্পনা করি, রেলগাড়িটি স্থির অবস্থায় রয়েছে আর দূরের গাছপালা, পাহাড়গুলি উল্টোদিকে ছুটছে।

(গ) ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ এবং সার্বজনীন ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ।

উত্তরঃ পর্যবেক্ষণ দোষ দু-রকমের হয় —– অপর্যবেক্ষণ দোষ এবং ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ । যে পর্যবেক্ষণে আমরা একটা জিনিস যা তাকে সে ভাবে না দেখে, অন্যকিছু বলে ভুল করি তাকে ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ বলে। ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণে আমরা এই দোষটি করি, কারণ আমাদের ইন্দ্রিয়গ্ৰাহ্য প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভুল ব্যাখ্যা আমরা করি। যেমন, অন্ধকারে দড়িকে সাপ বলে ভুল করি। ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দুই প্রকারের হয়। 

(ক) ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ —- ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে যে ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ হয়, তাকে ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ বলে। উদাহরণস্বরূপ —– দড়িকে সাপ বলে ভুল করা, একটি ল্যাম্পপোষ্টকে মানুষ বলে ভুল করা ইত্যাদি।

(খ) সার্বজনীন ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ —– সকল মানুষের ক্ষেত্রে হওয়া ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণকে সার্বজনীন ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ বলে। উদাহরণস্বরূপ —– ছুটন্ত রেলগাড়ি থেকে বাইরে তাকালে আমরা কখনও কখনও কল্পনা করি, রেলগাড়িটি স্থির অবস্থায় রয়েছে আর দূরের গাছপালা, পাহাড়গুলি উল্টোদিকে ছুটছে।

প্রশ্ন ৫। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ

(ক) আগমনের বস্তুগত ভিত্তি কয়টি এবং সেগুলি কী কী ?

উত্তরঃ আগমনের বস্তুগত ভিত্তি দুটি যথা—-

(ক) সরল পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণ। এবং

(খ) পরীক্ষণ।

(খ) নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষণকে কেন আগমনের বস্তুগত ভিত্ত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top