Class 12 Logic and Philosophy Chapter 1 আগমন এবং এর প্রকার

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 1 আগমন এবং এর প্রকার answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 12 Logic and Philosophy Chapter 1 আগমন এবং এর প্রকার and select needs one.

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 1 আগমন এবং এর প্রকার

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 12 Logic and Philosophy Chapter 1 আগমন এবং এর প্রকার Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

আগমন এবং এর প্রকার

পাঠ:

অতি সংক্ষিপ্ত  উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্ন ১। আগমন কত প্রকারের ? সাগুলি কী কী ?

উত্তরঃ আগমন দুই প্রকারের। 

সেগুলি হল—- 

(১) প্রকৃত আগমন। এবং 

(২) তথাকথিত আগমন বা আগমনাভাস।

প্রশ্ন ২। আগমনের আঁধার বা ভিত্তি কী ?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

উত্তরঃ আগমনের আধার হল প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধি।

প্রশ্ন ৩। প্রকৃত আগমন _________ প্রকারের।

উত্তরঃ তিন।

প্রশ্ন ৪। বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত হ’ল _________।

উত্তরঃ নিশ্চিত।

প্রশ্ন ৫। অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত হ’ল _________।

উত্তরঃ সম্ভাবনামূলক।

প্রশ্ন ৬। ‘সকল গ্ৰহ সূর্যের আলোকে আলোকিত ‘। এটি হল _________ এর একটি উদাহরণ।

উত্তরঃ পূর্ণ আগমনের উদাহরণ।

প্রশ্ন ৭। অবৈজ্ঞানিক আগমন কীসের উপর নির্ভর করে ?

উত্তরঃ অবাধিত অভিজ্ঞতার উপর।

প্রশ্ন ৮। আগমনই নিগমনের সামান্য বচন বা সার্বিক বচনের যোগান দেয়। কথাটি শুদ্ধ কি।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

প্রশ্ন ৯। সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্ত কি নিশ্চিত ?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ১০। আগমন কেবল আকারগত সত্যতার সঙ্গে জড়িত কি ?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ১১। সাদৃশ্যানুমানের ভিত্তি কী ?

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমানের ভিত্তি হল দুটি বস্তুর মধ্যে থাকা কিছু গুণ বা বিষয়ের সাদৃশ্য।

প্রশ্ন ১২। সু-সাদৃশ্যানুমানের একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ পৃথিবী এবং মঙ্গলগ্ৰহের মধ্যে  কিছু সাদৃশ্য আছে। যেমন দুটিই সৌরজগতের গ্ৰহ, দুটিতেই বায়ুমণ্ডল, মাটি সমুদ্র উত্তাপ ইত্যাদি আছে। পৃথিবীতে জীব আছে। সুতরাং মঙ্গল গ্রহেও জীব আছে।

প্রশ্ন ১৩। বৈজ্ঞানিক আগমন কোন প্রকারের বচন প্রতিষ্ঠা করে ?

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমন যথার্থ সার্বিক বচন প্রতিষ্ঠা করে।

প্রশ্ন ১৪। ‘আগমনাত্মক ঝাঁপ’ হল বিশেষ থেকে সামান্যে একটি যাত্রা’_________ শুদ্ধ কি অশুদ্ধ ?

উত্তরঃ শুদ্ধ।

প্রশ্ন ১৫। সাদৃশ্যানুমানের মূল্য কী কী কারকের উপর নির্ভর করে ?

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমানের মূল্য সাদৃশ্য থাকা গুণের সংখ্যা এবং গুণের গুরুত্বের উপর নির্ভর করে।

প্রশ্ন ১৬। সাদৃশ্যমূলক যুক্তির সিদ্ধান্ত হল সম্ভাবনামূলক _________ শুদ্ধ কি ?

উত্তরঃ শুদ্ধ।

প্রশ্ন ১৭। নিচে দেওয়া কোনটি শুদ্ধ 

(ক) আগমন কেবল বস্তুগত সত্যতার সঙ্গে জড়িত।

(খ) আগমন আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতার সঙ্গে জড়িত।

উত্তরঃ (খ) আগমন আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতার সঙ্গে জড়িত। এটি শুদ্ধ।

প্রশ্ন ১৮। বৈজ্ঞানিক আগমন এক বিশ্লেষণাত্মক বা অশাব্দিক বচন/ সংশ্লেষণাত্মক বা শাব্দিক বচন প্রতিষ্ঠা করে।

উত্তরঃ সংশ্লেষণাত্মক বা শাব্দিক বচন প্রতিষ্ঠা করে।

প্রশ্ন ১৯। ‘সকল অনুমানই সাদৃশ্যমূলক’ _________ এই উক্তির সঙ্গে জড়িত তর্কবিদজনের নাম লেখো।

উত্তরঃ জে.এস.মিল।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্ন ২০। বৈজ্ঞানিক আগমনের উদ্দেশ্য কী ?

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমনের উদ্দেশ্য হল একটি যথার্থ সার্বিক বচন প্রতিষ্ঠা করা।

প্রশ্ন ২১। আগমন অনুমান কেবল আকারগত সত্যতার সঙ্গে জড়িত কি ?

উত্তরঃ না ।

প্রশ্ন ২২। ‘নিগমনের আধার বচন হিসাবে ব্যবহৃত সার্বিক বচন আগমনই যোগান দেয়।’এটি সত্য কি ?

উত্তরঃ সত্য।

প্রশ্ন ২৩।  ‘অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত।’ এটি সত্য কি ?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ২৪। সাদৃশ্যানুমানের মূল্য কীভাবে নিরূপণ করা হয় ?

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমানের মূল্য সাদৃশ্য থাকা গুণের সংখ্যা এবং গুরুত্বের উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়।

প্রশ্ন ২৫। তর্কবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়বস্তু কী ?

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় হল অনুমান।

প্রশ্ন ২৬। আগমনের উদ্দেশ্য কী ?

উত্তরঃ আগমনের উদ্দেশ্য হল যথার্থ সামান্য সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা এবং এর বাস্তব সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা।

প্রশ্ন ২৭। ‘আগমন অনুমানে সিদ্ধান্তটি আধার বচনকে অতিক্রম করে যায়’ —- কথাটি সত্য কি ?

উত্তরঃ হ্যাঁ, সত্য।

প্রশ্ন ২৮।  ‘ইংরাজি বর্ষের প্রতিটি মাসেই ৩২ দিন থেকে কম থাকে।’ —– এটি প্রকৃত আগমন/ তথাকথিত আগমনের উদাহরণ।

উত্তরঃ এটি হল তথাকথিত আগমনের উদাহরণ।

প্রশ্ন ২৯। ‘ তাপ পেলে সকল বস্তুর আয়তন বাড়ে’ — এটি বৈজ্ঞানিক আগমন কি ?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৩০। অবৈজ্ঞানিক আগমনকে প্রকৃত আগমনের একটি প্রকার বলার কারণ কি ?

উত্তরঃ অবৈজ্ঞানিক আগমনে  আগমনাত্মক  ঝাঁপ থেকে বলেই এটাকে প্রকৃত আগমনের একটি প্রকার বলা হয়।

প্রশ্ন ৩১। অপূর্ন গণনাভিত্তিক আগমন কখন বৈজ্ঞানিক আগমনে পরিণত হয় ?

উত্তরঃ অপূর্ন গণনাভিত্তিক আগমন দুটি বস্তু বা ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ -সম্বন্ধের আভাস বা ইঙ্গিত দেয়। এই ইঙ্গিত থেকেই সে বিষয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান আরম্ভ করা যায়। যদি এই কার্যকারণ সম্বন্ধ প্রমাণ হয় তবে অপূর্ন গণনাভিত্তিক আগমন বৈজ্ঞানিক আগমনে পরিণত হয়।

প্রশ্ন ৩২। অবৈজ্ঞানিক আগমনের মূল ভিত্তি হল—-

(ক) কার্যকারণ বিধি।

(খ) অবাধিত অভিজ্ঞতা।

(গ) অসম্পূর্ণ সাদৃশ্য।

(ঘ) (ক) এবং (খ) দুইটিই।

উত্তরঃ অবাধিত অভিজ্ঞতা।

প্রশ্ন ৩৩। ঘটনা সংযোজন প্রকৃত আগমনের একটি প্রকার কি ?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ৩৪। অপূর্ন গণনাভিত্তিক আগমন প্রকৃতির একরূপতা বিধির উপর নির্ভর করে/ করে না।

উত্তরঃ করে।

প্রশ্ন ৩৫। অবৈজ্ঞানিক আগমন/পূর্ণ আগমন/যুক্তি সাদৃশ্যানুমান বৈজ্ঞানিক আগমনের সোপানস্বরূপ।

উত্তরঃ অবৈজ্ঞানিক আগমন।

প্রশ্ন ৩৬। ‘পূর্ণ আগমনে আগমনাত্মক ঝাঁপ আছে।’ এটি সত্য কি ?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ৩৭। কার মতে সামান্যকরণেই আগমন পদ্ধতি সম্পূর্ণতা লাভ করে —

(ক) বেকন।

(খ) মিল।

(গ) এরিস্টটল।

(ঘ) জেভনস্।

উত্তরঃ মিল।

প্রশ্ন ৩৮। বৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি কী ?

উত্তরঃ প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধি।

প্রশ্ন ৩৯। সাদৃশ্যানুমানের মূল্য সাদৃশ্য থাকা বিষয়ের সংখ্যা/ গুরুত্ব/ উভয়ের উপর নির্ভর করে।

উত্তরঃ উভয়ের উপর নির্ভর করে।

প্রশ্ন ৪০। অবৈজ্ঞানিক আগমনকে কেন ‘ অবৈজ্ঞানিক ‘ বলা হয় ?

উত্তরঃ অবৈজ্ঞানিক আগমনে কোন কার্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয় না করেই একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়। কার্যকারণ সম্বন্ধে কোন জ্ঞান থাকে না বলেই এই আগমনকে অবৈজ্ঞানিক বলা হয ।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত ‘– কেন ?

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধির উপর ভিত্তি করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে। বস্তুতঃ কার্যকারণ সম্বন্ধের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত।

প্রশ্ন ২। বৈজ্ঞানিক আগমনের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধির উপর ভিত্তি করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে, তাকে বৈজ্ঞানিক আগমন বলে।

প্রশ্ন ৩। অবৈজ্ঞানিক আগমন কী ?

উত্তরঃ যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, কোন কার্যকারণ সম্বন্ধের উপর ভিত্তি না করে কেবলমাত্র অবাধিত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে, সেই আগমনকে অবৈজ্ঞানিক আগমন বলে।

প্রশ্ন ৪। সু-সাদৃশ্যানুমানের দুটি শর্ত লেখো।

উত্তরঃ সু- সাদৃশ্যানুমানের দুটি শর্ত হল—

(ক) দুটি বস্তুর মধ্যে থাকা মৌলিক সাদৃশ্যের জ্ঞান।

(খ) সাদৃশ্য থাকা গুণের গুরুত্ব।

প্রশ্ন ৫। ‘অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত সম্ভাবনা স্বভাবের ‘—– কেন ?

উত্তরঃ অবৈজ্ঞানিক আগমনে কেবলমাত্র অবাধিত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করা হয় এবং কোন কার্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয় করা হয় না বলেই সিদ্ধান্তটি নিশ্চিত হয় না, সম্ভাবনামূলক হয়।

প্রশ্ন ৬। সাদৃশ্যানুমানের মূল্য নির্ধারণের যে কোন একটি শর্ত উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমানের মূল্য নির্ধারণের একটি শর্ত হল—- জ্ঞাত সদৃশ গুণগুলির সংখ্যা এবং গুরুত্ব যত বেশি হবে,সাদৃশ্যানুমানের মূল্য তত বেশি হবে।

প্রশ্ন ৭। আগমনাত্মক পদ্ধতি বা আগমনাত্মক নীতির বিভিন্ন স্তরগুলি কী কী ?

উত্তরঃ আগমনাত্মক পদ্ধতি বা আগমনাত্মক নীতির বিভিন্ন স্তরগুলি হল—–

(১) পর্যবেক্ষণ। 

(২) প্রকল্প গঠন। 

(৩) সামান্যীকরণ। এবং 

(৪) প্রমাণীকরণ।

প্রশ্ন ৮। প্রমাণীকরণ কাকে বলে ?

উত্তরঃ অনুমানে যুক্তির আকারগত এবং বস্তুগত সত্যতা দুইই বিচার করা হয়। তাই সামান্যীকরণের সাহায্য যে সিদ্ধান্তটি প্রতিষ্ঠা করা হয় তা প্রমাণের প্রয়োজন হয়। যে প্রক্রিয়ার সাহায্য এই প্রমাণ পরীক্ষা করা হয় তাকে প্রমাণীকরণ বলে।

প্রশ্ন ৯। উপযুক্ত উদাহরণ সহ আগমন অনুমানের  সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ আগমন অনুমান হল এমন একটি অনুমান যাতে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যে উপনীত হই। এখানে কয়েকটি বিশেষ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সামান্য বা সার্বিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। এখানে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে ব্যাপকতর হয়।

উদাহরণস্বরূপ — 

রাম হয় মরণশীল।

শ্যাম হয় মরণশীল।

যদু হয় মরণশীল।

মদু হয় মরণশীল।

সকল মানুষ হয় মরণশীল।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১০। নিগমন এবং আগমন অনুমানের মধ্যে থাকা দুটি পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ নিগমন এবং আগমনের মধ্যে দুটি পার্থক্য হল——

(ক) নিগমন অনুমানের সিদ্ধান্ত সামান্য সত্য থেকে বিশেষ সত্যে পৌঁছানো কিন্তু আগমন অনুমানের সিদ্ধান্তটি হল বিশেষ সত্য থেকে সামান্য সত্যে পৌঁছানো।

(খ) নিগমন অনুমান আকারগত সত্যতার সঙ্গে জড়িত কিন্তু আগমন অনুমান আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতার সঙ্গে জড়িত।

প্রশ্ন ১১। উপযুক্ত উদাহরণসহ সুসাদৃশ্যানুমানের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ সুসাদৃশ্যানুমান হল সেই সাদৃশ্যানুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে মৌলিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়। 

উদাহরণস্বরূপ —- পৃথিবী এবং মঙ্গলগ্ৰহের মধ্যে সাদৃশ্য হল, দুটিই সৌরজগতের গ্ৰহ, দুটির মধ্যে বায়ুমণ্ডল, মাটি, সমুদ্র, উত্তাপ ইত্যাদি আছে। পৃথিবীতে জনবসতি আছে। সুতরাং মঙ্গলগ্রহেও জনবসতি আছে।

প্রশ্ন ১২। আগমনাত্মক ঝাঁপ বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ আগমনের মূল লক্ষণ হল আগমনাত্মক ঝাঁপ। আগমনাত্মক ঝাঁপ হল জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে, দৃষ্ট থেকে অ-দৃষ্টে বিশেষ থেকে সামান্যে বা ‘কয়েক’ থেকে ‘সকল’ এ যাবার পদ্ধতি। আগমনাত্মক ঝাঁপে ঝুঁকির সংকট থাকে বলে এই ঝাঁপকে আগমনাত্মক সংকটও বলা হয়।

প্রশ্ন ১৩। সাদৃশ্যমূলক অনুমান কী ?

উত্তরঃ সাদৃশ্যমূলক অনুমান হল এমন একটি অনুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে কয়েকটি গুণের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে আমরা অনুমান করি যে, তাদের মধ্যে একটি গুণের ও সাদৃশ্য থাকবে।

প্রশ্ন ১৩‌। আগমনাত্মক অনুসন্ধানের বিভিন্ন স্তরসমূহ কী কী ?

উত্তরঃ আগমনাত্মক অনুসন্ধানের বিভিন্ন স্তরসমূহ হল—–

(১) পর্যবেক্ষণ। 

(২) প্রকল্প গঠন। 

(৩) সামান্যীকরণ। এবং 

(৪) প্রমাণীকরণ।

প্রশ্ন ১৫। আগমনের মূল সমস্যা কী ?

উত্তরঃ আগমনে আমরা কয়েকটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সামান্য যথার্থ বচনকে সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করি। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে,কী করে আমরা কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেখে একটি সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করতে পারি ? অন্যভাবে বলতে গেলে, কী করে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যকে অনুমান করতে পারি ? এটাই হল আগমনের সমস্যা।

প্রশ্ন ১৬। আগমনের প্রয়োজনীয়তা কী ?

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞান আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতার সঙ্গে জড়িত। নিমগ্ন অনুমান আমাদের কেবল আকারগত সত্যতাই দেয়। তাই যুক্তির বাস্তব সত্যতার জন্য আগমন অনুমানের প্রয়োজন। আগমন অনুমান সামান্য বচনের বস্তুগত সত্যতা নিরূপণের জন্য অতি প্রয়োজনীয়।

প্রশ্ন ১৭। প্রকৃত আগমন এবং তথাকথিত আগমনের পার্থক্য দাও।

উত্তরঃ প্রকৃত আগমন এবং তথাকথিত আগমনের মধ্যে পার্থক্য হল—— 

প্রকৃত আগমনে আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে অর্থাৎ জ্ঞাত সত্য থেকে সত্যে, দৃষ্ট থেকে অ-দৃষ্টে, বিশেষ থেকে সামান্যে পৌঁছানোর ঝুঁকি থাকে কিন্তু তথাকথিত আগমনে আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে না।

প্রশ্ন ১৮। তথাকথিত আগমন কয় প্রকার এবং কী কী ?

উত্তরঃ তথাকথিত আগমন তিনপ্রকার, যথা—–

(ক) পূর্ণ আগমন বা পূর্ণ গণনাভিত্তিক অনুমান।

(খ) যুক্তি সাদৃশ্যানুমান। এবং

(গ) ঘটনা সংযোজন বা সামান্যাভিকরণ।

প্রশ্ন ১৯। আগমনের মূল বিধি দুটি কী কী ? বৈজ্ঞানিক কেন এই বিধি দুটির উপর নির্ভর করে ?

উত্তরঃ আগমনের মূল বিধি দুটি হল—-

(১) প্রকৃতির একরূপতা বিধি। এবং

(২) কার্যকারণ বিধি।

বৈজ্ঞানিক আগমনের লক্ষ্য হল একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা। এই দুটি বিধির সাহায্যে সামান্য বচনটি নির্ভুলভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় বলেই বৈজ্ঞানিক আগমন এই বিধি দুটির উপর নির্ভর করে।

প্রশ্ন ২০। বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত কেন ? উদাহরণ সহ কারণ দর্শাও।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয় কারণ এটি কার্যকারণ বিধির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

উদাহরণস্বরূপ — ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল ‘ এই সিদ্ধান্তটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাম, শ্যাম, মধু, হরি ইত্যাদি মানুষদের মৃত্যুর বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে। এখানে কার্যকারণ বিধি ‘মানুষ’ এবং ‘ মরণশীল তার ‘ মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ প্রমাণ করেছে বলে বৈজ্ঞানিক আগমনের এই সিদ্ধান্তটি নিশ্চিত।

প্রশ্ন ২১। ফাউলারের মতে অবৈজ্ঞানিক আগমনের মূল্য কীরূপে নির্ধারণ করিতে পারা যায় ?

উত্তরঃ ফাউলারের মতে অবৈজ্ঞানিক আগমনের মূল্য দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে —–

(১) আমাদের অভিজ্ঞতায় সদর্থক দৃষ্টান্তের সংখ্যা যদি বেশি হয়, অবৈজ্ঞানিক আগমনের মূল্যও তত বেশি হয়, আবার সদর্থক দৃষ্টান্তের সংখ্যা কম হলে, অবৈজ্ঞানিক আগমনের মূল্যও কম হয়। 

(২) অভিজ্ঞতার পরিধি যদি বেশি বিস্তৃত হয় এবং তাতে যদি নঞর্থক দৃষ্টান্ত অনুপস্থিত থাকে,তবে অবৈজ্ঞানিক আগমনের সম্ভাবনার মাত্রাও বেশি হবে।

প্রশ্ন ২২। ‘ সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্ত সম্ভাবনামূলক ।’ কেন ?

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমান দুটি বিষয়ের মধ্যে কয়েকটি গুণের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়,কোন কার্যকারণ সম্বন্ধের ভিত্তিতে নয়। এজন্যই সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্ত সর্বদা সম্ভাব্য হয়।

প্রশ্ন ২৩। বৈজ্ঞানিক আগমন এবং সাদৃশ্যানুমানের মধ্যে থাকা দুটি পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমন এবং সাদৃশ্যানুমানের মধ্যে থাকা দুটি পার্থক্য হল——

(ক) বৈজ্ঞানিক আগমনে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যের জ্ঞানে পৌঁছুই কিন্তু সাদৃশ্যানুমানে আমরা বিশেষ থেকে বিশেষের জ্ঞানে পৌঁছুই।

(খ) বৈজ্ঞানিক আগমন কার্যকারণ সম্বন্ধের জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত কিন্তু সাদৃশ্যানুমানে কার্যকারণ সম্বন্ধে কোন জ্ঞান থাকে না।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। আগমনের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ?

উত্তরঃ আগমনের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল—–

(ক) আগমন অনুমানে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যে উপনীত হই।

(খ) আগমনের সিদ্ধান্ত সব সময় আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপক হয়।

(গ) আগমন অনুমান আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতার সঙ্গে জড়িত।

(ঘ) আগমন অনুমানের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ২। আগমন এবং নিগমনের মধ্যে চারটি পার্থক্য লেখো ।

উত্তরঃ আগমন এবং নিগমনের চারটি পার্থক্য হল——

(১) আগমনে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যে উপনীত হই কিন্তু নিগমনে আমরা সামান্য থেকে বিশেষ উপনীত হই।

(২) আগমন অনুমানের সিদ্ধান্ত সব সময় আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপক হয় কিন্তু নিগমন অনুমানে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপক হতে পারে না। সিদ্ধান্ত হয় আশ্রয়বাক্যের সমব্যাপক হবে না ব্যাপক হবে।

(৩) আগমন অনুমানে, আশ্রয়বাক্যের বস্তুগত সত্যতা বিচার করা হয় কিন্তু নিগমন অনুমানে আশ্রয়বাক্যকে সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়,এর বস্তুগত সত্যতা বিচার করা হয় না।

(৪) নিগমন অনুমান আকারগত সত্যতার সঙ্গে জড়িত কিন্তু আগমন অনুমান আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতার সঙ্গে জড়িত।

প্রশ্ন ৩। আগমনাত্মক ঝাঁপ বলতে কী বোঝ ? আগমনাত্মক ঝাঁপের জটিলতা দূর করার জন্য বৈজ্ঞানিক আগমন কীসের উপর নির্ভর করে ?

উত্তরঃ আগমনে বিশেষ থেকে সামান্যে, দৃষ্ট থেকে অ-দৃষ্টে,জ্ঞাত থেকে অজ্ঞাত সত্যে পৌঁছানোর ঝাঁপকে আগমনাত্মক ঝাঁপ বলে। এই ঝাঁপটি সাধারণ ঝাঁপ নয়। এটি অন্ধকারে ঝাঁপ। এই ঝাঁপকে আগমনের সংকটও বলা হয়। এটি আগমনের অস্তিত্বের প্রমাণ।

বৈজ্ঞানিক আগমন আগমনাত্মক ঝাঁপের জটিলতা দূর করার জন্য দুটি নীতির উপর নির্ভর করে। 

যথা——

(ক) প্রকৃতির একরূপতা বিধি। এবং

(খ) কার্যকারণ বিধি।

প্রশ্ন ৪। বৈজ্ঞানিক আগমন দুটি নীতির উপর নির্ভর করে। এই নীতিগুলি কী কী ? এই নীতি দুটির অর্থ কী ?

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমন দুটি নীতির উপর নির্ভর করে। 

এই নীতি দুটি হল—–

(১) প্রকৃতির একরূপতা বিধি। এবং

(২) কার্যকারণ বিধি।

প্রকৃতির একরূপতা বিধির অর্থ হল —– একই পরিবেশে প্রকৃতি একই রূপে আচরণ করে। অর্থাৎ অনুরূপ পরিস্থিতিতে একই কারণ থেকে একই কার্য উৎপন্ন হয়। কোন আকস্মিক পরিস্থিতির বা কারণের উদ্ভব না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃতি কখনও নিজের নিয়মকে লঙ্ঘন করে না।

কার্যকারণ বিধির অর্থ হল —— প্রতিটি কার্যের একটি কারণ থাকে। অর্থাৎ কারণ ছাড়া কোন ঘটনাই ঘটে না। শূন্যতা থেকে কিছুই ঘটে না। যে ঘটনাই, ঘটুক তার কারণ থাকে।

প্রশ্ন ৫। অবৈজ্ঞানিক আগমন কী ? অবৈজ্ঞানিক আগমনের দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ অবৈজ্ঞানিক আগমন প্রকৃত আগমনের একটি প্রকার। যে আগমনে কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, কোন কার্যকারণ সম্বন্ধের উপর ভিত্তি না করে, কেবলমাত্র অবাধিত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকে অবৈজ্ঞানিক আগমন বলে।

অবৈজ্ঞানিক আগমনের দুটি উদাহরণ হল—–

(ক) সকল কাক হয় কালো।

(খ) সকল বক হয় সাদা।

প্রশ্ন ৬। সাদৃশ্যানুমানের মূল্য কীভাবে নিরূপণ করা যায় ?

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমান দুটি বিষয়ের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়, কোন কার্যকারণ সম্বন্ধের ভিত্তিতে নয়।  সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্ত সর্বদা সম্ভাব্য হয়। মিলের মতে, একটি সাদৃশ্যানুমানের মূল্য নিম্নলিখিত শর্তগুলির উপর নির্ভর করে ——

(ক) জ্ঞাত সাদৃশ্যের পরিমাণ।

(খ) জ্ঞাত বৈসাদৃশ্যের পরিমাণ।

(গ) অজ্ঞাত গুণাবলির পরিমাণ।

ওয়েলটন , বোসাঙ্কে এবং সিজউইক আদি তর্কবিদগণের মতে কেবল সাদৃশ্যানুমূলক গুণের সংখ্যার উপরে সাদৃশ্যানুমানের মূল্য নির্ভর করে না, তাদের গুরুত্বের উপর নির্ভর করে।

একটি সাদৃশ্যানুমানের মূল্য নিম্নলিখিত নিয়মমগুলির উপর নির্ভর করে ——

(১) জ্ঞাত সদৃশ গুণগুলির সংখ্যা এবং গুরুত্ব যত বেশি হবে, সাদৃশ্যানুমানের মূল্য তত বেশি হবে।

(২) জ্ঞাত বৈসাদৃশ্য থাকা গুণের সংখ্যা এবং গুরুত্ব যতই বেশি, সাদৃশ্যানুমানের মূল্য ততই কম হবে।

(৩) বস্তুর জ্ঞাত গুণগুলির তুলনায় অজ্ঞাত গুণসসমূহের সংখ্যা যত বেশি হবে, সাদৃশ্যানুমানের মূল্য তত‌‌‌ কম হবে।

প্রশ্ন ৭। উদাহরণসহ সুসাদৃশ্যানুমান এবং কুসাদৃশ্যানুমান ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ সু-সাদৃশ্যানুমান —– সু সাদৃশ্যানুমান হল সেই সাদৃশ্যানুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে মৌলিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়। 

যেমন —- পৃথিবী এবং মঙ্গলগ্ৰহের মধ্যে সাদৃশ্য হল- 

—- দুটিই সৌরজগতের গ্ৰহ, দুটির মধ্যেই একই বায়ুমণ্ডল, মাটি, সমুদ্র, উত্তাপ ইত্যাদি আছে। পৃথিবীতে জনবসতি আছে। সুতরাং মঙ্গলগ্রহেও জনবসতি আছে।

কু- সাদৃশ্যানুমান—- কু- সাদৃশ্যানুমান হল সেই সাদৃশ্যানুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে গৌণ সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ – মানুষের মতই উদ্ভিদের জন্ম, বৃদ্ধি, এবং ক্ষয় আছে। মানুষের বুদ্ধি আছে। অতএব, উদ্ভিদেরও বুদ্ধি আছে।

প্রশ্ন ৮। আগমন এবং নিগমনের পার্থক্য দর্শাও।

উত্তরঃ আগমন এবং নিগমনের চারটি পার্থক্য হল——

(১) আগমনে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যে উপনীত হই কিন্তু নিগমনে আমরা সামান্য থেকে বিশেষ উপনীত হই।

(২) আগমন অনুমানের সিদ্ধান্ত সব সময় আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপক হয় কিন্তু নিগমন অনুমানে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপক হতে পারে না। সিদ্ধান্ত হয় আশ্রয়বাক্যের সমব্যাপক হবে না ব্যাপক হবে।

(৩) আগমন অনুমানে, আশ্রয়বাক্যের বস্তুগত সত্যতা বিচার করা হয় কিন্তু নিগমন অনুমানে আশ্রয়বাক্যকে সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়,এর বস্তুগত সত্যতা বিচার করা হয় না।

(৪) নিগমন অনুমান আকারগত সত্যতার সঙ্গে জড়িত কিন্তু আগমন অনুমান আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতার সঙ্গে জড়িত।

প্রশ্ন ৯। বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক আগমনের চারটি সাদৃশ্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক আগমনের মধ্যে সাদৃশ্য গুলি হল—-

(১) বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক উভয় প্রকার আগমনের সিদ্ধান্ত একটি যথার্থ সামান্য বচন।

(২) কিছু সংখ্যক বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি।

(৩) বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক, উভয়প্রকার আগমনই আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে।

(৪) বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক উভয়প্রকার আগমনে সামান্যীকরণ করা হয়।

প্রশ্ন ১০। আগমনের স্তর চারটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ আগমনের স্তর চারটি হল—–

(১) পর্যবেক্ষণ —- আগমন পদ্ধতির প্রথম স্তর হল পর্যবেক্ষণ। পর্যবেক্ষণ হল কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অনুযায়ী করা সুনিয়ন্ত্রিত প্রত্যক্ষ। এই পর্যবেক্ষণ পরীক্ষণমূলক বা নিরীক্ষণমূলক হতে পারে।

(২) প্রকল্প—– আগমনের দ্বিতীয় স্তরটি হল প্রকল্প গঠন। অন্বেষণীয় ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তগুলি অতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করলে সেই ঘটনার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে মনে এক একটি ধারণার উদয় হয়। এই সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে কোন একটিকে প্রকৃত কারণ বলে ধরে নেওয়াই হল প্রকল্প গঠন।

(৩) সামান্যীকরণ—— অন্বেষণীয় ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া সম্বন্ধজ্ঞান সম্পর্কে মনে যে ধারণা বা প্রকল্প উদয় হয় তাকে সেই জাতীয় সকল ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত করাই হল সামান্যীকরণ।

(৪) প্রমাণীকরণ—- পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া বিশেষ বিশেষ সম্বন্ধজ্ঞানের ভিত্তিতে মনে যে সামান্য সম্বন্ধের ধারণা জন্মে সেই সামান্য ধারণাটিকে বাস্তব ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে তার সত্যাসত্য নির্ণয় করাই হল প্রমাণীকরণ।

প্রশ্ন ১১। বৈজ্ঞানিক আগমন এবং অবৈজ্ঞানিক আগমনের মধ্যে চারটি পার্থক্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমন এবং অবৈজ্ঞানিক আগমনের মধ্যে চারটি পার্থক্য হল——

(ক) বৈজ্ঞানিক আগমন দুই ধরণের পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে 

—- সকল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ। কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমন কেবল সরল পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে।

(খ) বৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি হল প্রকৃতির একরূপতা নীতি এবং কার্যকারণ বিধি, কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি কেবল অভিজ্ঞতার একরূপতা বা অবাধিত অভিজ্ঞতা।

(গ) বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত সম্ভাবনামূলক।

(ঘ) বৈজ্ঞানিক আগমনের প্রক্রিয়াটি জটিল কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমনের প্রক্রিয়াটি সরল।

প্রশ্ন ১২। সু- সাদৃশ্যানুমান এবং কু- সাদৃশ্যানুমানের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

উত্তরঃ সু-সাদৃশ্যানুমান —– সু সাদৃশ্যানুমান হল সেই সাদৃশ্যানুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে মৌলিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়। 

যেমন —- পৃথিবী এবং মঙ্গলগ্ৰহের মধ্যে সাদৃশ্য হল- 

—- দুটিই সৌরজগতের গ্ৰহ, দুটির মধ্যেই একই বায়ুমণ্ডল, মাটি, সমুদ্র, উত্তাপ ইত্যাদি আছে। পৃথিবীতে জনবসতি আছে। সুতরাং মঙ্গলগ্রহেও জনবসতি আছে।

কু- সাদৃশ্যানুমান—- কু- সাদৃশ্যানুমান হল সেই সাদৃশ্যানুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে গৌণ সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ – মানুষের মতই উদ্ভিদের জন্ম, বৃদ্ধি, এবং ক্ষয় আছে। মানুষের বুদ্ধি আছে। অতএব, উদ্ভিদেরও বুদ্ধি আছে।

প্রশ্ন ১৩। আগমনাত্মক  ঝাঁপের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

উত্তরঃ আগমনাত্মক ঝাঁপ হল প্রকৃত আগমনের প্রধান লক্ষণ। আগমনাত্মক ঝাঁপটি সাধারণ ঝাঁপ নয়। এটি একটি অন্ধকারে ঝাঁপ। আগমনে কয়েকটি বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে দেখা দৃষ্টান্ত থেকে না দেখা- দৃষ্টান্তে, জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে, বিশেষ থেকে সামান্যে পৌঁছানোর ঝাঁপ টিকে আগমনাত্মক ঝাঁপ বলে। এখানে আমরা প্রমাণের বাইরে যাই, ফলে তাতে একটি ঝুঁকি থাকে। এজন্য আগমনাত্মক ঝাঁপকে আগমনের সংকটও বলা হয়। মিল এবং বেইনের মতে এই আগমনাত্মক ঝাঁপটি আগমনের অস্তিত্বের প্রমাণ।

প্রশ্ন ১৪ বৈজ্ঞানিক আগমন কী ? এর তিনটি মূল বৈশিষ্ট্য কী কী ?

উত্তরঃ যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধির উপর ভিত্তি করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক আগমন বলে।

 বৈজ্ঞানিক আগমনের মূল বৈশিষ্ট্য তিনটি হল—-

(ক) বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্তে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠিত হয়।

(খ) বৈজ্ঞানিক আগমনে একটি আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে।

(গ) বৈজ্ঞানিক আগমনের দুটি পূর্বস্বীকৃত নীতি হল– কার্যকারণ নীতি এবং প্রকৃতির একরূপতা নীতি।

(ঘ) বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয়।

প্রশ্ন ১৫। আগমনের সমস্যার বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

উত্তরঃ আগমন অনুমানে বিশেষ বিশেষ বস্তু বা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সামান্য সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং তার বাস্তব সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই সামান্য সিদ্ধান্ত বচনটি নিগমন অনুমানে আশ্রয়বাক্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কয়েকটি ঘটনার পর্যবেক্ষণ থেকে কী করে একটি সামান্য যথার্থ বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় সেটাই হল আগমনের সমস্যা।

অভিজ্ঞতা আমাদের সামান্য সত্যের জ্ঞান দিতে পারে না। অভিজ্ঞতা কেবল বিশেষ বিশেষ বস্তু বা ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞান দেয়। উদাহরণস্বরূপ —- কয়েকজন মানুষের মরণশীলতা দেখে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছুল যে ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল।’ এখানে প্রশ্ন উঠে, কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেখে আমরা কী করে একটি সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করতে পারি ? অন্যভাবে বলতে গেলে, কী করে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যকে অনুমান করতে পারি ? এটাই হল আগমনের সমস্যা।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৬‌ । বৈজ্ঞানিক আগমন কী ? বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক আগমনের মধ্যে থাকা দুটি পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধির উপর ভিত্তি করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে, তাকে বৈজ্ঞানিক আগমন বলে।

বৈজ্ঞানিক আগমন এবং অবৈজ্ঞানিক আগমনের মধ্যে দুটি পার্থক্য হল——

(ক) বৈজ্ঞানিক আগমন দুই ধরণের পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে 

—- সকল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ। কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমন কেবল সরল পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে।

(খ) বৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি হল প্রকৃতির একরূপতা নীতি এবং কার্যকারণ বিধি, কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি কেবল অভিজ্ঞতার একরূপতা বা অবাধিত অভিজ্ঞতা।

প্রশ্ন ১৭। অবৈজ্ঞানিক আগমন কী ? এই প্রকার আগমনের যে কোন দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, কোন কার্যকারণ সম্বন্ধের উপর ভিত্তি না করে কেবলমাত্র অবাধিত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে, সেই আগমনকে অবৈজ্ঞানিক আগমন বলে।

অবৈজ্ঞানিক আগমনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল—

(১) অবৈজ্ঞানিক আগমন একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে।

(২) অবৈজ্ঞানিক আগমনে একটি আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে।

প্রশ্ন ১৮। অবৈজ্ঞানিক আগমনের মূল্য বিচার করো।

উত্তরঃ কোন কোন তর্কবিজ্ঞানীর মতে অবৈজ্ঞানিক আগমনের কিছুটা মূল্য আছে। অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত স্বভাবের না হলেও তাকে একেবারে মূল্যহীন বলা চলে না। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে অবৈজ্ঞানিক আগমন থেকেই বৈজ্ঞানিক আগমনের আরম্ভ।

ফাউলারের মতে অবৈজ্ঞানিক আগমনের মূল্য দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে —–

(১) আমাদের অভিজ্ঞতায় সদর্থক দৃষ্টান্তের সংখ্যা যদি বেশি হয়, অবৈজ্ঞানিক আগমনের মূল্যও তত বেশি হয়, আবার সদর্থক দৃষ্টান্তের সংখ্যা কম হলে, অবৈজ্ঞানিক আগমনের মূল্যও কম হয়। 

(২) অভিজ্ঞতার পরিধি যদি বেশি বিস্তৃত হয় এবং তাতে যদি নঞর্থক দৃষ্টান্ত অনুপস্থিত থাকে,তবে অবৈজ্ঞানিক আগমনের সম্ভাবনার মাত্রাও বেশি হবে।

প্রশ্ন ১৯। আগমনের সমস্যা কী ? উদাহরণের সাথে লেখো এই সমস্য কীভাবে সমাধান হয় ?

উত্তরঃ আগমন অনুমানে বিশেষ বিশেষ বস্তু বা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সামান্য সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং তার বাস্তব সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই সামান্য সিদ্ধান্ত বচনটি নিগমন অনুমানে আশ্রয়বাক্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কয়েকটি ঘটনার পর্যবেক্ষণ থেকে কী করে একটি সামান্য যথার্থ বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় সেটাই হল আগমনের সমস্যা।

অভিজ্ঞতা আমাদের সামান্য সত্যের জ্ঞান দিতে পারে না। অভিজ্ঞতা কেবল বিশেষ বিশেষ বস্তু বা ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞান দেয়। উদাহরণস্বরূপ —- কয়েকজন মানুষের মরণশীলতা দেখে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছুল যে ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল।’ এখানে প্রশ্ন উঠে, কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেখে আমরা কী করে একটি সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করতে পারি ? অন্যভাবে বলতে গেলে, কী করে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যকে অনুমান করতে পারি ? এটাই হল আগমনের সমস্যা।

প্রশ্ন ২০। বৈজ্ঞানিক আগমন যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে —- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমন একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে। এই উক্তিটি বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই —-

(ক) বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্তটি একটি বচন। বচন হল দুটি পদের মধ্যের সম্বন্ধকে প্রকাশ করার উক্তি।

(খ) বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্তটি একটি বচন, বিশেষ বচন নয়। সামান্য বচন হল সেই বচন, যাতে বিশেষ পদের সমগ্ৰ বাচ্যার্থের ক্ষেত্রে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয়। যেমন —- সকল মানুষ হয় মরণশীল।

(গ) বৈজ্ঞানিক আগমন যে সামান্য বচনটিকে প্রতিষ্ঠা করে,সেটি একটি সংশ্লেষক বা যথার্থ বচন,বিশ্লেষক বা শাব্দিক বচন নয়। যথার্থ বচন হল এমন বচন যার বিধের পদ উদ্দেশ্যপদের সম্পর্কে নতুন জ্ঞান দেয় এবং যা উদ্দেশ্যপদের লক্ষণার্থের মধ্যে থাকে না। যেমন— সকল ধাতু হয় এমন, যা উত্তপ্ত হলে আয়তনে বৃদ্ধি পায়।

প্রশ্ন ২১। আগমনের চারটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ আগমনের চারটি বৈশিষ্ট্য হল —–

(ক) আগমন অনুমানে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যে উপনীত হই।

(খ) আগমনের সিদ্ধান্ত সব সময় আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপক হয়।

(গ) আগমন অনুমান আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতার সঙ্গে জড়িত।

(ঘ) আগমন অনুমানের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ২২। অবৈজ্ঞানিক আগমন কীভাবে বৈজ্ঞানিক আগমনের পথ প্রশস্ত করে দেয়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ অবৈজ্ঞানিক আগমনের প্রধান মূল্য হল— কার্যকারণ সম্বন্ধের আভাস বা ইঙ্গিত দেবার ক্ষমতা। দুটি বস্তু বা ঘটনাকে সর্বদা বা প্রায়ই সম্বন্ধযুক্ত দেখলে, সেই দুটি বস্তু বা ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে, এমন আভাস পাওয়া যায়। এই ইঙ্গিত থেকে সত্যিই তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে কি না, সে বিষয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান আরম্ভ করা যায়। যদি এই কার্যকারণ সম্বন্ধ প্রমাণ হয় তবে অবৈজ্ঞানিক আগমন বৈজ্ঞানিক আগমনের নিশ্চয়তা লাভ করবে এবং বৈজ্ঞানিক আগমনের মর্যাদায় উন্নীত হবে। তাই এটা বলা যায় যে অবৈজ্ঞানিক আগমন বৈজ্ঞানিক আগমনের পথ প্রশস্ত করে। আগমনের প্রাথমিক স্তরে এটা অনেক সাহায্য করে।

প্রশ্ন ২৩। অবৈজ্ঞানিক আগমন এবং সাদৃশ্যানুমানের চারটি সাদৃশ্য লেখো।

উত্তরঃ অবৈজ্ঞানিক আগমন এবং সাদৃশ্যানুমানের চারটি সাদৃশ্য হল—–

(ক) অবৈজ্ঞানিক আগমন এবং সাদৃশ্যানুমান দুটিতেই আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে।

(খ) অবৈজ্ঞানিক আগমন এবং সাদৃশ্যানুমান দুই -ই পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল।

(গ) অবৈজ্ঞানিক আগমন এবং সাদৃশ্যানুমান দুটিতেই কার্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয়ের চেষ্টা করা হয় না।

(ঘ) সাদৃশ্যানুমান এবং অবৈজ্ঞানিক আগমন উভয়েরই সিদ্ধান্ত সম্ভাবনামূলক হয়।

প্রশ্ন ২৪। সাদৃশ্যানুমানের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

উত্তরঃ সাদৃশ্যমূলক অনুমান হল এমন একটি অনুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে কয়েকটি গুণের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে আমরা অনুমান করি যে, তাদের মধ্যে একটি গুণের ও সাদৃশ্য থাকবে।

সু-সাদৃশ্যানুমান —–সু সাদৃশ্যানুমান হল সেই সাদৃশ্যানুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে মৌলিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন —- পৃথিবী এবং মঙ্গলগ্ৰহের মধ্যে সাদৃশ্য হল —- দুটিই সৌরজগতের গ্ৰহ, দুটির মধ্যেই একই বায়ুমণ্ডল, মাটি, সমুদ্র, উত্তাপ ইত্যাদি আছে। পৃথিবীতে জনবসতি আছে। সুতরাং মঙ্গলগ্রহেও জনবসতি আছে।

প্রশ্ন ২৫। তালিকাসহ বিভিন্ন প্রকার আগমন অনুমানের নামসমূহের উল্লেখ করো।

উত্তরঃ আগমন অনুমানের বিভিন্ন প্রকারসমূহ হল—

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর 

প্রশ্ন ১। আগমন কী? এর সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

উত্তরঃ আগমন হল সেই অনুমান, যাতে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে ব্যাপকতর হয়। এখানে কয়েকটি বিশেষ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সামান্য বা সার্বিক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

আগমন প্রধানতঃ বিশেষ থেকে সামান্যে উপনীত হওয়ার অনুমান।

আগমনের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল—–

(ক) আগমন অনুমানে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যে উপনীত হই।

(খ) আগমনের সিদ্ধান্ত সব সময় আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপক হয়।

(গ) আগমন অনুমান আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতার সঙ্গে জড়িত।

(ঘ) আগমন অনুমানের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ২। আগমন নীতি বলতে কী বোঝ ? এর বিভিন্ন স্তরগুলি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ যে অনুমানে বিশেষ বিশেষ সম্বন্ধের জ্ঞানের সাহায্যে সামান্য সম্বন্ধের জ্ঞানে উপনীত হওয়া যায় তাকে আগমন অনুমান বা আগমন নীতি বলে । 

আগমনের বিভিন্ন স্তরগুলি হল—–

(১) পর্যবেক্ষণ —- আগমন পদ্ধতির প্রথম স্তর হল পর্যবেক্ষণ। পর্যবেক্ষণ হল কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অনুযায়ী করা সুনিয়ন্ত্রিত প্রত্যক্ষ। এই পর্যবেক্ষণ পরীক্ষণমূলক বা নিরীক্ষণমূলক হতে পারে।

(২) প্রকল্প—– আগমনের দ্বিতীয় স্তরটি হল প্রকল্প গঠন। অন্বেষণীয় ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তগুলি অতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করলে সেই ঘটনার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে মনে এক একটি ধারণার উদয় হয়। এই সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে কোন একটিকে প্রকৃত কারণ বলে ধরে নেওয়াই হল প্রকল্প গঠন।

(৩) সামান্যীকরণ—— অন্বেষণীয় ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া সম্বন্ধজ্ঞান সম্পর্কে মনে যে ধারণা বা প্রকল্প উদয় হয় তাকে সেই জাতীয় সকল ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত করাই হল সামান্যীকরণ।

(৪) প্রমাণীকরণ—- পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া বিশেষ বিশেষ সম্বন্ধজ্ঞানের ভিত্তিতে মনে যে সামান্য সম্বন্ধের ধারণা জন্মে সেই সামান্য ধারণাটিকে বাস্তব ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে তার সত্যাসত্য নির্ণয় করাই হল প্রমাণীকরণ।

প্রশ্ন ৩। বৈজ্ঞানিক আগমন কী? এর বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

উত্তরঃ যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধির উপর ভিত্তি করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক আগমন বলে।

 বৈজ্ঞানিক আগমনের মূল বৈশিষ্ট্য হল—-

(ক) বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্তে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠিত হয়।

(খ) বৈজ্ঞানিক আগমনে একটি আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে।

(গ) বৈজ্ঞানিক আগমনের দুটি পূর্বস্বীকৃত নীতি হল– কার্যকারণ নীতি এবং প্রকৃতির একরূপতা নীতি।

(ঘ) বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয়। 

প্রশ্ন ৪। অবৈজ্ঞানিক আগমন কী? এর বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

উত্তরঃ যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, কোন কার্যকারণ সম্বন্ধের উপর ভিত্তি না করে, কেবলমাত্র অবাধিত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে অবৈজ্ঞানিক আগমন বলে। উদাহরণস্বরূপ সকল কাক হয় কালো।

অবৈজ্ঞানিক আগমনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—–

(ক) অবৈজ্ঞানিক আগমন একটি যথার্থ বচন প্রতিষ্ঠা করে।

(খ) অবৈজ্ঞানিক আগমন বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে।

(গ) অবৈজ্ঞানিক আগমনে আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে।

(ঘ) অবৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি হল অবাধিত অভিজ্ঞতা।

(ঘ) অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয়।

(ঙ)অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয়।

(চ) অবৈজ্ঞানিক আগমন কার্যকারণ বিধির উপর নির্ভর করে না।

প্রশ্ন ৫। সাদৃশ্যানুমান কী? এর বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমান হল এমন একটি অনুমান যাতে দুটি বস্তুর মধ্যে কয়েকটি গুণের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে, আমরা অনুমান করি যে তাদের মধ্যে অপর একটি গুণেরও সাদৃশ্য থাকবে।

সাদৃশ্যানুমানের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—–

(ক) সাদৃশ্যানুমানে আমরা বিশেষ থেকে বিশেষের উপনীত হই।

(খ) সাদৃশ্যানুমানের ভিত্তি হল দুটি বিষয়ের মধ্যে কয়েকটি গুণের সাদৃশ্য।

(গ) সাদৃশ্যানুমান কার্যকারণ সম্বন্ধের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় না।

(ঘ) সাদৃশ্যানুমানে আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে।

(ঙ) সাদৃশ্যানুমানে সিদ্ধান্ত সম্ভাব্যমূলক হয়।

প্রশ্ন ৬। অবৈজ্ঞানিক আগমনের মূল্য কী?

উত্তরঃ কোন কোন তর্কবিজ্ঞানীর মতে অবৈজ্ঞানিক আগমনের কিছুটা মূল্য আছে। অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত স্বভাবের না হলেও তাকে একেবারে মূল্যহীন বলা চলে না। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে অবৈজ্ঞানিক আগমন থেকেই বৈজ্ঞানিক আগমনের আরম্ভ।

অবৈজ্ঞানিক আগমনের মূল্য হলো—–  

(১) আমাদের অভিজ্ঞতায় সদর্থক দৃষ্টান্তের সংখ্যা যদি বেশি হয়, অবৈজ্ঞানিক আগমনের মূল্যও তত বেশি হয়, আবার সদর্থক দৃষ্টান্তের সংখ্যা কম হলে, অবৈজ্ঞানিক আগমনের মূল্যও কম হয়। 

(২) অভিজ্ঞতার পরিধি যদি বেশি বিস্তৃত হয় এবং তাতে যদি নঞর্থক দৃষ্টান্ত অনুপস্থিত থাকে,তবে অবৈজ্ঞানিক আগমনের সম্ভাবনার মাত্রাও বেশি হবে।

প্রশ্ন ৭। নিগমন এবং আগমনের পার্থক্য কেবল এর আরম্ভে, এর পরিণতিতে নয়—- কথাটি তুমি মান কি? ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ নিগমন হল সেই অনুমান যাতে আমরা সামান্য থেকে বিশেষে যাই। নিগমন অনুমানে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্য ভাবে নিঃসৃত হয়। অন্যদিকে আগমন হল সেই অনুমান যাতে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যে উপনীত হই। আগমন অনুমানে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্যকে অতিক্রম করে। অর্থাৎ আগমনে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপকতর হয়।

নিগমন এবং আগমনের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকলেও এই পার্থক্যগুলি কিন্তু মৌলিক পার্থক্য নয়। নিগমন এবং আগমন পরস্পরের সহায়ক বা পরিপূরক। এদের আরম্ভ আলাদা, কিন্তু পার্থক্য নীতিগত নয়। নিগমনে সামান্য সত্য থেকে আরম্ভ করে একটা বিশেষ সত্যে উপনীত হওয়া যায়। কিন্তু আগমনে আমরা বিশেষ সত্য থেকে সামান্য সত্যে উপনীত হই। কিন্তু নীতিগতভাবে বিচার করলে দেখা যায় উভয়েই একই নীতিকে অনুসরণ করে —– সেটা হল, পূর্ণের সঙ্গে খণ্ডের (part & whole), সমগ্ৰের সঙ্গে অংশের সম্পর্ক নির্ধারণ করা।

আসলে নিগমন এবং আগমন অনুমানের মধ্যে পার্থক্য হল ‘ আরম্ভ ‘ এবং ‘ পদ্ধতি ‘র পার্থক্য, মূল নীতির নয়। প্রয়োজন অনুসারে আমরা কখনও নিগমন পদ্ধতি, কখনও আগমন পদ্ধতি অনুসরণ করি। যুক্তির লক্ষ্য হল, একটি সামান্য নিয়ম আবিষ্কার ও প্রতিষ্ঠা করা। নিগমন অনুমানের সামান্য আশ্রয়বাক্যটি আগমন অনুমান দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। অতএব, নিগমন এবং আগমন অনুমান পরস্পরের পরিপূরক এবং পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত প্রক্রিয়া বা অনুমান।

প্রশ্ন ৮। আগমনের প্রয়োজনীয়তা কী?

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞান আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতা বিচার করে। নিগমন অনুমান কেবল আকারগত সত্যতার সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ নিগমনে আশ্রয়বাক্যকে সত্য বলে ধরে নেওয়া হয় কিন্তু তার বস্তুগত সত্যতা বিচার করা হয় না। একটি গ্ৰহনযোগ্য যুক্তির জন্য তার আকার গত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতাই বিচার্য। তাই যুক্তির বাস্তব সত্যতার জন্য আগমন অনুমানের প্রয়োজন।

একটি যুক্তির বস্তুগত সত্যতা নির্ভর করে তার আশ্রয়বাক্যের বস্তুগত সত্যতার উপর। ন্যায় অনুমান তার সামান্য আশ্রয়বাক্যের জন্য আগমন অনুমানের উপর নির্ভরশীল। সামান্য সংশ্লেষক বচনের বস্তুগত সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয় আগমন অনুমানের দ্বারা। ন্যায়  অনুমানের একটি নিয়ম হল যে একটি বৈধ ন্যায় অনুমানে অন্ততঃ একটি আশ্রয়বাক্য সামান্য হতে হবে, কারণ, দুটি বিশেষ আশ্রয়বাক্য থেকে কোন সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় না। এই সামান্য আশ্রয়বাক্যটি আগমন অনুমান থেকে পাওয়া যায়।

অতএব তর্কবিজ্ঞানে আগমনের প্রয়োজনীয়তা অবশ্য স্বীকার্য।

প্রশ্ন ৯। সকল অনুমানই সাদৃশ্যমূলক —- ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ সকল অনুমানই সাদৃশ্যমূলক -এ বিষয়ে তর্কবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে তর্কবিজ্ঞানী মিলের মতে সকল অনুমানই সাদৃশ্য ভিত্তিক।

সাদৃশ্যানুমানের ভিত্তি  হল দুটি বিষয় বা বস্তুর মধ্যে কয়েকটি গুণের সাদৃশ্য। সাদৃশ্যানুমানে , দুটি বিষয়ের মধ্যের সাদৃশ্য জ্ঞানের ভিত্তিতে একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত থেকে অন্য একটি বিশেষ দৃষ্টান্তে উপনীত হই। মিলের মতে, সাদৃশ্যানুমানের মত আগমন অনুমান এবং নিগমন অনুমানও সাদৃশ্য ভিত্তিক। নিগমন এবং আগমন উভয় প্রকার অনুমানেই আমরা সাদৃশ্য জ্ঞানের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করি। অতএব সকল অনুমানই সাদৃশ্যমূলক।

আবার সকল অনুমানকে সাদৃশ্যমূলক বলা যায় না। এর কারণ হল —– যদিও সাদৃশ্যানুমানের মত আগমন এবং নিগমনও সাদৃশ্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় তবুও এদের মধ্যে একটি পার্থক্য আছে। সাদৃশ্যানুমানের সাদৃশ্য হল অপূর্ন সাদৃশ্য কিন্তু আগমন এবং নিগমনের সাদৃশ্যজ্ঞান হল সম্পূর্ণ সাদৃশ্যজ্ঞান। সুতরাং সকল অনুমানকে সাদৃশ্যমূলক বলা যায় না।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১০। ‘ নিগমন এবং আগমন পরস্পর নির্ভরশীল ‘——– আলোচনা করো।

উত্তরঃ নিগমন হল সেই অনুমান যাতে আমরা সামান্য থেকে বিশেষে যাই। নিগমন অনুমানে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্য ভাবে নিঃসৃত হয়। অন্যদিকে আগমন হল সেই অনুমান যাতে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যে উপনীত হই। আগমন অনুমানে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্যকে অতিক্রম করে। অর্থাৎ আগমনে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপকতর হয়।

নিগমন এবং আগমনের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকলেও এই পার্থক্যগুলি কিন্তু মৌলিক পার্থক্য নয়। নিগমন এবং আগমন পরস্পরের সহায়ক বা পরিপূরক। এদের আরম্ভ আলাদা, কিন্তু পার্থক্য নীতিগত নয়। নিগমনে সামান্য সত্য থেকে আরম্ভ করে একটা বিশেষ সত্যে উপনীত হওয়া যায়। কিন্তু আগমনে আমরা বিশেষ সত্য থেকে সামান্য সত্যে উপনীত হই। কিন্তু নীতিগতভাবে বিচার করলে দেখা যায় উভয়েই একই নীতিকে অনুসরণ করে —– সেটা হল, পূর্ণের সঙ্গে খণ্ডের (part & whole), সমগ্ৰের সঙ্গে অংশের সম্পর্ক নির্ধারণ করা।

আসলে নিগমন এবং আগমন অনুমানের মধ্যে পার্থক্য হল ‘ আরম্ভ ‘ এবং ‘ পদ্ধতি ‘র পার্থক্য, মূল নীতির নয়। প্রয়োজন অনুসারে আমরা কখনও নিগমন পদ্ধতি, কখনও আগমন পদ্ধতি অনুসরণ করি। যুক্তির লক্ষ্য হল, একটি সামান্য নিয়ম আবিষ্কার ও প্রতিষ্ঠা করা। নিগমন অনুমানের সামান্য আশ্রয়বাক্যটি আগমন অনুমান দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। অতএব, নিগমন এবং আগমন অনুমান পরস্পরের পরিপূরক এবং পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত প্রক্রিয়া বা অনুমান।

প্রশ্ন ১১। সামান্য সংশ্লেষক বচনগুলির বস্তুগত সত্যতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য আগমন অনুমানের প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞান আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতা বিচার করে। নিগমন অনুমান কেবল আকারগত সত্যতার সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ নিগমনে আশ্রয়বাক্যকে সত্য বলে ধরে নেওয়া হয় কিন্তু তার বস্তুগত সত্যতা বিচার করা হয় না। একটি গ্ৰহনযোগ্য যুক্তির জন্য তার আকার গত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতাই বিচার্য। তাই যুক্তির বাস্তব সত্যতার জন্য আগমন অনুমানের প্রয়োজন।

একটি যুক্তির বস্তুগত সত্যতা নির্ভর করে তার আশ্রয়বাক্যের বস্তুগত সত্যতার উপর। ন্যায় অনুমান তার সামান্য আশ্রয়বাক্যের জন্য আগমন অনুমানের উপর নির্ভরশীল। সামান্য সংশ্লেষক বচনের বস্তুগত সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয় আগমন অনুমানের দ্বারা। ন্যায়  অনুমানের একটি নিয়ম হল যে একটি বৈধ ন্যায় অনুমানে অন্ততঃ একটি আশ্রয়বাক্য সামান্য হতে হবে, কারণ, দুটি বিশেষ আশ্রয়বাক্য থেকে কোন সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় না। এই সামান্য আশ্রয়বাক্যটি আগমন অনুমান থেকে পাওয়া যায়।

অতএব তর্কবিজ্ঞানে আগমনের প্রয়োজনীয়তা অবশ্য স্বীকার্য।

প্রশ্ন ১২। উদাহরণ সহ অবৈজ্ঞানিক আগমন বুঝিয়ে লেখো। এই আগমনের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, কোন কার্যকারণ সম্বন্ধের উপর ভিত্তি না করে, কেবলমাত্র অবাধিত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে অবৈজ্ঞানিক আগমন বলে। উদাহরণস্বরূপ সকল কাক হয় কালো।

অবৈজ্ঞানিক আগমনের চারটি বৈশিষ্ট্যগুলি হল—–

(ক) অবৈজ্ঞানিক আগমন একটি যথার্থ বচন প্রতিষ্ঠা করে।

(খ) অবৈজ্ঞানিক আগমন বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে।

(গ) অবৈজ্ঞানিক আগমনে আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে।

(ঘ) অবৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি হল অবাধিত অভিজ্ঞতা।

প্রশ্ন ১৩। বৈজ্ঞানিক আগমন কাকে বলে? বৈজ্ঞানিক আগমন এবং সাদৃশ্যানুমানের মধ্যে থাকা দুটি সাদৃশ্য এবং দুটি অসাদৃশ্য লেখো।

উত্তরঃ যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধির উপর ভিত্তি করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে তাকে বৈজ্ঞানিক আগমন বলে।

বৈজ্ঞানিক আগমন এবং সাদৃশ্যানুমানের মধ্যে দুটি সাদৃশ্য হল——

(১) বৈজ্ঞানিক আগমন এবং সাদৃশ্যানুমান দুটিই প্রকৃত অনুমান। দুটির মধ্যেই আগমনাত্মক ঝাঁপ আছে।

(২) বৈজ্ঞানিক আগমন এবং সাদৃশ্যানুমান দুটিই পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল।

বৈজ্ঞানিক আগমন এবং সাদৃশ্যানুমানের মধ্যে দুটি অসাদৃশ্য হল——

(১) বৈজ্ঞানিক আগমনে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যের জ্ঞানে পৌঁছুই কিন্তু সাদৃশ্যানুমানে আমরা বিশেষের জ্ঞান থেকে বিশেষের জ্ঞানে পৌঁছুই।

(২) বৈজ্ঞানিক আগমন কার্যকারণ সম্বন্ধের উপর প্রতিষ্ঠিত কিন্তু সাদৃশ্যানুমানে কার্যকারণ সম্বন্ধে কোন জ্ঞান থাকে না।

প্রশ্ন ১৪। প্রকৃত আগমন কয়ভাগে ভাগ করা যায় ? প্রত্যেকটির উদাহরণ সহ সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ প্রকৃত আগমন তিন প্রকারের হয়। যথা —–

(ক) বৈজ্ঞানিক আগমন।

(খ) অবৈজ্ঞানিক আগমন বা অপূর্ণগণনাভিত্তিক আগমন। এবং

(গ) সাদৃশ্যানুমান।

(ক) বৈজ্ঞানিক আগমন —– যেমন আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধির উপর ভিত্তি করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে তাকে বৈজ্ঞানিক আগমন বলে। উদাহরণস্বরূপ

রাম হয় মরণশীল।

শ্যাম হয় মরণশীল।

যদু হয় মরণশীল।

মধু হয় মরণশীল।

সকল মানুষ হয় মরণশীল।

(খ) অবৈজ্ঞানিক আগমন — যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, কোন কার্যকারণ সম্বন্ধের উপর ভিত্তি না করে, কেবলমাত্র অবাধিত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে তাকে অবৈজ্ঞানিক আগমন বলে। যেমন —– সকল কাক হয় কালো।

(গ) সাদৃশ্যানুমান —– সাদৃশ্যানুমান হল এমন একটি অনুমান যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে কয়েকটি গুণের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে আমরা অনুমান করি যে তাদের মধ্যে অপর একটি গুণেরও সাদৃশ্য থাকবে। যেমন—- পৃথিবী এবং মঙ্গলগ্ৰহের মধ্যে কতগুলি সাদৃশ্য আছে। পৃথিবী এবং মঙ্গল দুটিই সৌরজগতের গ্ৰহ, দুটিতেই বায়ুমণ্ডল, মাটি, সমুদ্র, উত্তাপ ইত্যাদি আছে। পৃথিবীতে জনবসতি আছে। অতএব মঙ্গলগ্ৰহেও জনবসতি আছে।

পাঠ্যপুস্তকের সম্ভাব্য প্রশ্নাবলির উত্তর

প্রশ্ন ১। সংজ্ঞা দাও:

(ক) বৈজ্ঞানিক আগমন।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমন —- যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধির উপর ভিত্তি করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে, তাকে বৈজ্ঞানিক আগমন বলে।

(খ) অবৈজ্ঞানিক আগমন।

উত্তরঃ অবৈজ্ঞানিক আগমন—- যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, কোন কার্যকারণ সম্বন্ধের উপর ভিত্তি না করে কেবলমাত্র অবাধিত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে, সেই আগমনকে অবৈজ্ঞানিক আগমন বলে।

(গ) সাদৃশ্যানুমান।

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমান—- সাদৃশ্যমূলক অনুমান হল এমন একটি অনুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে কয়েকটি গুণের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে আমরা অনুমান করি যে, তাদের মধ্যে একটি গুণের ও সাদৃশ্য থাকবে।

(ঘ) আগমনাত্মক ঝাঁপ।

উত্তরঃ আগমনাত্মক ঝাঁপ —- আগমনের মূল লক্ষণ হল আগমনাত্মক ঝাঁপ। আগমনাত্মক ঝাঁপ হল জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে, দৃষ্ট থেকে অ-দৃষ্টে বিশেষ থেকে সামান্যে বা ‘কয়েক’ থেকে ‘সকল’ এ যাবার পদ্ধতি। আগমনাত্মক ঝাঁপে ঝুঁকির সংকট থাকে বলে এই ঝাঁপকে আগমনাত্মক সংকটও বলা হয়।

(ঙ) প্রকৃত আগমন।

উত্তরঃ প্রকৃত আগমন —– প্রকৃত আগমন হল সেই আগমন যেখানে আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে অর্থাৎ জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে, বিশেষ থেকে সামান্যে পৌঁছানোর ঝুঁকি থাকে।

(চ) যথার্থ বচন।

উত্তরঃ যথার্থ বচন —– যথার্থ বচন হল সেই বচন যার বিধেয়পদ উদ্দেশ্যপদের সম্পর্কে নতুন জ্ঞান দেয় এবং যা উদ্দেশ্যপদের লক্ষণার্থের মধ্যে থাকে না।

(ছ) সু-সাদৃশ্যানুমান।

উত্তরঃ সু-সাদৃশ্যানুমান – সু – সাদৃশ্যানুমান হল সেই সাদৃশ্যানুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে মৌলিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়।

(জ) কু- সাদৃশ্যানুমান।

উত্তরঃ কু- সাদৃশ্যানুমান—– কু- সাদৃশ্যানুমান হল সেই সাদৃশ্যানুমান যেখানে দুটি জিনিসের মধ্যে গৌণ সাদৃশ গুণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করা হয়।

প্রশ্ন ২। উদাহরণ দাও ——

(ক) বৈজ্ঞানিক আগমন।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমনের উদাহরণ —-

রাম হয় মরণশীল।

শ্যাম হয় মরণশীল।

যদু হয় মরণশীল।

মধু হয় মরণশীল।

সকল মানুষ হয় মরণশীল।

(খ) অবৈজ্ঞানিক আগমন।

উত্তরঃ অবৈজ্ঞানিক আগমনের উদাহরণ-

সকল কাক হয় কালো।

(গ) শাব্দিক বচন।

উত্তরঃ শাব্দিক বচনের উদাহরণ —–

সকল মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন।

(ঘ) সু – সাদৃশ্যানুমান।

উত্তরঃ সু- সাদৃশ্যানুমানের উদাহরণ ——

পৃথিবী এবং মঙ্গলগ্ৰহের মধ্যে কতগুলি সাদৃশ্য যেমন —‘ দুটি একই সৌরজগতের গ্ৰহ, দুটির মধ্যে বায়ুমণ্ডল,তাপ, মাটি, সমুদ্র আছে ‘ দেখে অনুমান করা হয় যে পৃথিবীতে জনবসতি আছে অতএব মঙ্গলগ্ৰহেও জনবসতি আছে।

প্রশ্ন ৩। পার্থক্য দেখাও —-

(ক) নিগমন এবং আগমন।

উত্তরঃ নিগমন এবং আগমনের পার্থক্য হল—-

(১) আগমনে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যে উপনীত হই কিন্তু নিগমনে আমরা সামান্য থেকে বিশেষ উপনীত হই।

(২) আগমন অনুমানের সিদ্ধান্ত সব সময় আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপক হয় কিন্তু নিগমন অনুমানে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপক হতে পারে না। সিদ্ধান্ত হয় আশ্রয়বাক্যের সমব্যাপক হবে না ব্যাপক হবে।

(৩) আগমন অনুমানে, আশ্রয়বাক্যের বস্তুগত সত্যতা বিচার করা হয় কিন্তু নিগমন অনুমানে আশ্রয়বাক্যকে সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়,এর বস্তুগত সত্যতা বিচার করা হয় না।

(৪) নিগমন অনুমান আকারগত সত্যতার সঙ্গে জড়িত কিন্তু আগমন অনুমান আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতার সঙ্গে জড়িত।

(খ) বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক আগমন।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমন এবং অবৈজ্ঞানিক আগমনের মধ্যে পার্থক্য হল——

(১) বৈজ্ঞানিক আগমন দুই ধরণের পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে —- সকল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ। কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমন কেবল সরল পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে।

(২) বৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি হল প্রকৃতির একরূপতা নীতি এবং কার্যকারণ বিধি, কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি কেবল অভিজ্ঞতার একরূপতা বা অবাধিত অভিজ্ঞতা।

(৩) বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত সম্ভাবনামূলক।

(৪) বৈজ্ঞানিক আগমনের প্রক্রিয়াটি জটিল কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমনের প্রক্রিয়াটি সরল।

(গ) সাদৃশ্যানুমান এবং বৈজ্ঞানিক আগমন।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমন এবং সাদৃশ্যানুমানের মধ্যে পার্থক্য হল——

(ক) বৈজ্ঞানিক আগমনে আমরা বিশেষ থেকে সামান্যের জ্ঞানে পৌঁছুই কিন্তু সাদৃশ্যানুমানে আমরা বিশেষ থেকে বিশেষের জ্ঞানে পৌঁছুই।

(খ) বৈজ্ঞানিক আগমন কার্যকারণ সম্বন্ধের জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত কিন্তু সাদৃশ্যানুমানে কার্যকারণ সম্বন্ধে কোন জ্ঞান থাকে না।

(ঘ) সাদৃশ্যানুমান এবং এবং অবৈজ্ঞানিক আগমন।

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমান এবং অবৈজ্ঞানিক আগমনের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল——

(১) সাদৃশ্যানুমানে আমরা একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত থেকে অপর একটি বিশেষ দৃষ্টান্তে যাই কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমনে আমরা বিশেষ দৃষ্টান্ত থেকে সামান্যে যাই।

(২) সাদৃশ্যানুমানের ভিত্তি হল অপূর্ণ সাদৃশ্য কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি হল অবাধিত অভিজ্ঞতা।

(৩) সাদৃশ্যানুমান, পদের লক্ষণার্থ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করে কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমন, পদের বাচ্যার্থ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করে।

(৪) সাদৃশ্যানুমানে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা নির্ভর করে জ্ঞাত সদৃশ গুণের সংখ্যা এবং গুরুত্বের উপর কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আগমনে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা নির্ভর করে অবাধিত অভিজ্ঞতার উপর।

(ঙ) প্রকৃত অনুমান এবং তথাকথিত আগমন।

উত্তরঃ প্রকৃত আগমন এবং তথাকথিত আগমনের মধ্যে পার্থক্য হল—— প্রকৃত আগমনে আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে অর্থাৎ জ্ঞাত সত্য থেকে সত্যে, দৃষ্ট থেকে অ-দৃষ্টে, বিশেষ থেকে সামান্যে পৌঁছানোর ঝুঁকি থাকে কিন্তু তথাকথিত আগমনে আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে না।

(চ) সু-সাদৃশ্যানুমান এবং কু- সাদৃশ্যানুমান।

উত্তরঃ সু-সাদৃশ্যানুমান —– সু সাদৃশ্যানুমান হল সেই সাদৃশ্যানুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে মৌলিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন —- পৃথিবী এবং মঙ্গলগ্ৰহের মধ্যে সাদৃশ্য হল —- দুটিই সৌরজগতের গ্ৰহ, দুটির মধ্যেই একই বায়ুমণ্ডল, মাটি, সমুদ্র, উত্তাপ ইত্যাদি আছে। পৃথিবীতে জনবসতি আছে। সুতরাং মঙ্গলগ্রহেও জনবসতি আছে।

কু- সাদৃশ্যানুমান—- কু- সাদৃশ্যানুমান হল সেই সাদৃশ্যানুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে গৌণ সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ – মানুষের মতই উদ্ভিদের জন্ম, বৃদ্ধি, এবং ক্ষয় আছে। মানুষের বুদ্ধি আছে। অতএব, উদ্ভিদেরও বুদ্ধি আছে।

প্রশ্ন ৪। টীকা লেখো —–

(ক) প্রকৃত আগমন।

উত্তরঃ প্রকৃত আগমন হল আগমনের প্রধান দুটি ভাগের একটি। প্রকৃত আগমন হল সেই আগমন যে আগমনে আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে অর্থাৎ এখানে আমরা জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে, দৃষ্ট থেকে অ-দৃষ্টে, বিশেষ থেকে সামান্যে, বা ‘কয়েক’ থেকে ‘সকল’ এ পৌঁছুই। এখানে কয়েকটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে একটি সামান্য বা সার্বিক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

প্রকৃত আগমন তিন প্রকারের হয়। যথা —–

(ক) বৈজ্ঞানিক আগমন।

(খ) অবৈজ্ঞানিক আগমন বা অপূর্ণগণনাভিত্তিক আগমন। এবং

(গ) সাদৃশ্যানুমান।

(খ) আগমনাত্মক ঝাঁপ।

উত্তরঃ আগমনাত্মক ঝাঁপ হল প্রকৃত আগমনের প্রধান লক্ষণ। আগমনাত্মক ঝাঁপটি সাধারণ ঝাঁপ নয়। এটি একটি অন্ধকারে ঝাঁপ। আগমনে কয়েকটি বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে দেখা দৃষ্টান্ত থেকে না দেখা- দৃষ্টান্তে, জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে, বিশেষ থেকে সামান্যে পৌঁছানোর ঝাঁপ টিকে আগমনাত্মক ঝাঁপ বলে। এখানে আমরা প্রমাণের বাইরে যাই, ফলে তাতে একটি ঝুঁকি থাকে। এজন্য আগমনাত্মক ঝাঁপকে আগমনের সংকটও বলা হয়। মিল এবং বেইনের মতে এই আগমনাত্মক ঝাঁপটি আগমনের অস্তিত্বের প্রমাণ।

(গ) তথাকথিত আগমন।

উত্তরঃ আগমনের প্রধান দুটি ভাগ হল—–

(ক) প্রকৃত আগমন। এবং 

(খ) তথাকথিত আগমন বা আগমনাভাস। 

তথাকথিত আগমন হল সেই আগমন অনুমানে ‘ আগমনাত্মক ঝাঁপ ‘ থাকে না। এই আগমনাত্মক ঝাঁপটি হল বিশেষ থেকে সামান্যে,জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে যাবার পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া। তথাকথিত আগমনে এই ঝাঁপটি থাকে না বলেই একে ‘ তথাকথিত ‘ বলা হয়। আবার তথাকথিত আগমনকে আগমন বলার কারণ হল এটি আকারগতভাবে আগমনই।

তথাকথিত আগমন আবার তিন প্রকারের হয়। যথা —-

(ক) পূর্ণ আগমন বা পূর্ণগণনাভিত্তিক আগমন।

(খ) যুক্তি সাদৃশ্যানুমান বা সদৃশ যুক্তিভিত্তিক অনুমান। এবং

(গ) ঘটনা সংযোজন বা সামান্যাভিকরণ।

(ঘ) আগমনের প্রয়োজনীয়তা।

উত্তরঃ তর্কবিজ্ঞান আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতা বিচার করে। নিগমন অনুমান কেবল আকারগত সত্যতার সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ নিগমনে আশ্রয়বাক্যকে সত্য বলে ধরে নেওয়া হয় কিন্তু তার বস্তুগত সত্যতা বিচার করা হয় না। একটি গ্ৰহনযোগ্য যুক্তির জন্য তার আকার গত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতাই বিচার্য। তাই যুক্তির বাস্তব সত্যতার জন্য আগমন অনুমানের প্রয়োজন।

একটি যুক্তির বস্তুগত সত্যতা নির্ভর করে তার আশ্রয়বাক্যের বস্তুগত সত্যতার উপর। ন্যায় অনুমান তার সামান্য আশ্রয়বাক্যের জন্য আগমন অনুমানের উপর নির্ভরশীল। সামান্য সংশ্লেষক বচনের বস্তুগত সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয় আগমন অনুমানের দ্বারা। ন্যায়  অনুমানের একটি নিয়ম হল যে একটি বৈধ ন্যায় অনুমানে অন্ততঃ একটি আশ্রয়বাক্য সামান্য হতে হবে, কারণ, দুটি বিশেষ আশ্রয়বাক্য থেকে কোন সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় না। এই সামান্য আশ্রয়বাক্যটি আগমন অনুমান থেকে পাওয়া যায়।

অতএব তর্কবিজ্ঞানে আগমনের প্রয়োজনীয়তা অবশ্য স্বীকার্য।

প্রশ্ন ৫। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও:

(ক) আগমন কয় প্রকারের হয়? সেগুলি কী কী?

উত্তরঃ আগমন দুই প্রকারের ——

(ক) প্রকৃত আগমন। এবং

(খ) তথাকথিত আগমন।

(খ) আগমনের মূল লক্ষণ কী?

উত্তরঃ আগমনের মূল লক্ষণ হল আগমনাত্মক ঝাঁপ।

(গ) সাদৃশ্যানুমানের মূল্য কীভাবে নিরূপণ করা যায়?

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমানের মূল্য নিম্নলিখিত নিয়মগুলির উপর নির্ভর করে —–

(১) জ্ঞাত সদৃশ গুণগুলির সংখ্যা এবং গুরুত্ব যত‌‌‌ বেশি হবে, সাদৃশ্যানুমানের মূল্য তত‌‌‌ বেশি হবে।

(২) জ্ঞাত বৈসাদৃশ্য থাকা গুণের সংখ্যা এবং গুরুত্ব যত‌‌‌ বেশি হবে সাদৃশ্যানুমানের মূল্য তত‌‌‌ কম হবে।

(৩) বস্তুর জ্ঞাত গুণগুলির তুলনায় অজ্ঞাত গুণসসমূহের সংখ্যা যত বেশি হবে, সাদৃশ্যানুমানের মূল্য তত‌‌‌ কম হবে।

(ঘ) বৈজ্ঞানিক আগমন কোন প্রকারের বচন প্রতিষ্ঠা করে?

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমন যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে।

(ঙ) সাদৃশ্যানুমান কয় প্রকারের হয়? নাম করো।

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমান দুই প্রকারের —- 

১। সু- সাদৃশ্যানুমান। এবং

২। কু- সাদৃশ্যানুমান।

(চ) আগমন কি কেবল আকারগত সত্যতার সঙ্গে জড়িত?

উত্তরঃ না, আগমন আকারগত এবং বস্তুগত উভয়প্রকার সত্যতার সঙ্গে জড়িত।

(ছ) ‘ আগমন,নিগমন অনুমানের আশ্রয়বাক্য সামান্য বচনটিকে প্রতিষ্ঠা করো।’—– কথাটি কি সত্য।

উত্তরঃ হ্যাঁ , এটা সত্য।

(জ) আগমনে জ্ঞাত বিষয় থেকে অজ্ঞাত বিষয়ে যাবার গতিকে কী বলে?

উত্তরঃ আগমনাত্মক ঝাঁপ।

(ঝ) সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্তটি কি সম্ভাবনামূলক?

উত্তরঃ হ্যাঁ, সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্তটি সম্ভাবনামূলক।

প্রশ্ন ৬। উত্তর দাও:

(ক) বৈজ্ঞানিক আগমন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধির উপর ভিত্তি করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে, তাকে বৈজ্ঞানিক আগমন বলে।

(খ) বৈজ্ঞানিক আগমনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমনের মূল বৈশিষ্ট্য  হল—-

(১) বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্তে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠিত হয়।

(২) বৈজ্ঞানিক আগমনে একটি আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে।

(৩) বৈজ্ঞানিক আগমনের দুটি পূর্বস্বীকৃত নীতি হল– কার্যকারণ নীতি এবং প্রকৃতির একরূপতা নীতি।

(ঘ) বৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয়।

(গ) অবৈজ্ঞানিক আগমন কাকে বলে? অবৈজ্ঞানিক আগমনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

উত্তরঃ যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, কোন কার্যকারণ সম্বন্ধের উপর ভিত্তি না করে, কেবলমাত্র অবাধিত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে অবৈজ্ঞানিক আগমন বলে। উদাহরণস্বরূপ সকল কাক হয় কালো।

অবৈজ্ঞানিক আগমনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—–

(ক) অবৈজ্ঞানিক আগমন একটি যথার্থ বচন প্রতিষ্ঠা করে।

(খ) অবৈজ্ঞানিক আগমন বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে।

(গ) অবৈজ্ঞানিক আগমনে আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে।

(ঘ) অবৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি হল অবাধিত অভিজ্ঞতা।

(ঙ) অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয়।

(চ)অবৈজ্ঞানিক আগমনের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয়।

(ছ) অবৈজ্ঞানিক আগমন কার্যকারণ বিধির উপর নির্ভর করে না।

(ঘ) বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক আগমনের সাদৃশ্য নিরূপণ করো।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক আগমনের মধ্যে সাদৃশ্য গুলি হল—-

(১) বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক উভয় প্রকার আগমনের সিদ্ধান্ত একটি যথার্থ সামান্য বচন।

(২) কিছু সংখ্যক বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তি।

(৩) বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক, উভয়প্রকার আগমনই আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে।

(৪) বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক উভয়প্রকার আগমনে সামান্যীকরণ করা হয়।

(ঙ) সাদৃশ্যানুমানের প্রকৃত সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমানের প্রকৃত বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই —–

(১) সাদৃশ্যানুমান এমন একটি অনুমান, যাতে আমরা একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত থেকে অপর একটি বিশেষ দৃষ্টান্তে যাই।

(২) সাদৃশ্যানুমানের ভিত্তি হল দুটি বিষয়ের মধ্যে কয়েকটি গুণের সাদৃশ্য। এই সাদৃশ্য বা মিল অপূর্ণ সাদৃশ্য।

(৩) সাদৃশ্যানুমানে আগমনাত্মক ঝাঁপ থাকে। সেহেতু সাদৃশ্যানুমান প্রকৃত আগমনের একটি রূপ।

(৪) সাদৃশ্যানুমানে কার্যকারণ সম্বন্ধের উপর ভিত্তি করা হয় না।

(৫) সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্যমূলক হয়।

(চ) সাদৃশ্যানুমান কী? সাদৃশ্যানুমানের বিভিন্ন প্রকারগুলি কী? আলোচনা করো।

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমান হল এমন একটি আগমন যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে কয়েকটি গুণের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে আমরা অনুমান করি যে তাদের মধ্যে অপর একটি গুণেরও সাদৃশ্য থাকবে।

সাদৃশ্যানুমান দুই প্রকারের হয়। যথা ——

(১) সু- সাদৃশ্যানুমান। এবং

(২) কু- সাদৃশ্যানুমান।

(১) সু- সাদৃশ্যানুমান—– সু- সাদৃশ্যানুমান হল সেই সাদৃশ্যানুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে মৌলিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন—- পৃথিবী এবং মঙ্গলগ্ৰহের মধ্যে সাদৃশ্য হল, দুটিই সৌরজগতের গ্ৰহ, দুটির মধ্যে একই বায়ুমণ্ডল, মাটি, সমুদ্র, উত্তাপ ইত্যাদি আছে। পৃথিবীতে জনবসতি আছে। অতএব মঙ্গলগ্ৰহেও জনবসতি আছে।

(২) কু- সাদৃশ্যানুমান — কু- সাদৃশ্যানুমান হল সেই সাদৃশ্যানুমান, যাতে দুটি জিনিসের মধ্যে গৌণ সাদৃশ গুণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করা হয়। যেমন — মানুষের মত‌‌‌ উদ্ভিদের জন্ম, বৃদ্ধি, এবং ক্ষয় আছে। মানুষের বুদ্ধি আছে অতএব, উদ্ভিদের বুদ্ধি আছে।

(ছ) বৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তিগুলি কী কী?

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক আগমনের ভিত্তিগুলি হল—- প্রকৃতির একরূপতা বিধি এবং কার্যকারণ বিধি।

(জ) তথাকথিত আগমনের বিভিন্ন প্রকারগুলি কী কী?

উত্তরঃ তথাকথিত আগমন তিন প্রকারের হয়। যথা — 

(১) পূর্ণ আগমন বা পূর্ণগণনাভিত্তিক অনুমান। 

(২) যুক্তিসাদৃশ্যানুমান বা সদৃশ যুক্তিভিত্তিক অনুমান। এবং

(৩) ঘটনা সংযোজন বা সামান্যাভিকরণ।

(ঝ) অবৈজ্ঞানিক আগমন কাকে বলে? অবৈজ্ঞানিক আগমন কোন অর্থে বৈজ্ঞানিক আগমনের পথ প্রশস্ত করে?

উত্তরঃ যে আগমন কোন বস্তু বা ঘটনার বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে, কোন কার্যকারণ সম্বন্ধের উপর ভিত্তি না করে কেবলমাত্র অবাধিত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে একটি যথার্থ সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করে, সেই আগমনকে অবৈজ্ঞানিক আগমন বলে।

অবৈজ্ঞানিক আগমনের প্রধান মূল্য হল— কার্যকারণ সম্বন্ধের আভাস বা ইঙ্গিত দেবার ক্ষমতা। দুটি বস্তু বা ঘটনাকে সর্বদা বা প্রায়ই সম্বন্ধযুক্ত দেখলে, সেই দুটি বস্তু বা ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে, এমন আভাস পাওয়া যায়। এই ইঙ্গিত থেকে সত্যিই তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে কি না, সে বিষয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান আরম্ভ করা যায়। যদি এই কার্যকারণ সম্বন্ধ প্রমাণ হয় তবে অবৈজ্ঞানিক আগমন বৈজ্ঞানিক আগমনের নিশ্চয়তা লাভ করবে এবং বৈজ্ঞানিক আগমনের মর্যাদায় উন্নীত হবে। তাই এটা বলা যায় যে অবৈজ্ঞানিক আগমন বৈজ্ঞানিক আগমনের পথ প্রশস্ত করে। আগমনের প্রাথমিক স্তরে এটা অনেক সাহায্য করে।

(ঞ) সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্ত কেন সম্ভাবনামূলক হয় ?

উত্তরঃ সাদৃশ্যানুমান দুটি বিষয়ের মধ্যে কয়েকটি গুণের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়,কোন কার্যকারণ সম্বন্ধের ভিত্তিতে নয়। এজন্যই সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্ত সর্বদা সম্ভাব্য হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top