Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম

Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম Question Answer | AHSEC Class 12 History Question Answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Assam Board Class Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম Notes and select needs one.

Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম Solutions for All Subjects, You can practice these here.

প্রশ্ন ৩৫। কার নামে আসামে প্রথম চিকিৎসা বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ বেরী হোয়াইট।

প্রশ্ন ৩৬। ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা প্রথম অহোম রাজার নাম লেখ।

উত্তরঃ গোমধর কোঁয়র।

প্রশ্ন ৩৭। মটক রাজার উপাধি কি ছিল?

উত্তরঃ বড় সেনাপতি।

প্রশ্ন ৩৮। মণিরাম দেওয়ানকে কোন্ খ্রিস্টাব্দে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৩৯। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে অসমে সংঘটিত হওয়া কৃষক বিদ্রোহের জনপ্রিয় নামটি কি?

উত্তরঃ ফুলগুড়ি ধাওয়া।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। অহোম রাজ্যের পতনের যে-কোন দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ অহোম রাজ্যের পতনের দুটি কারণ নিম্নরূপ:

(ক) পরবর্তী অহোম রাজাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা অহোম সাম্রাজ্যের পতনের একটি প্রধান কারণ।

(খ) মোগলদের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুদ্ধবিগ্রহের ফলে অহোম রাজকোষের শূন্যতা অহোম রাজ্যের পতনের মূল কারণ।

প্রশ্ন ২। ইয়াণ্ডাবুর সন্ধির দুটি শর্ত লেখ।

উত্তরঃ ইয়াণ্ডাবুর সন্ধির দুটি শর্ত নিম্নরূপ:

(ক) বর্মী রাজা অহোম, কাছাড়ী, জয়ন্তিয়া ও মণিপুর রাজ্যের উপর তার অধিকার ত্যাগ করেন।

(খ) এই সন্ধির ফলে আসামে বর্মী শাসনের অবসানক্রমে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রশ্ন ৩। অহোম সমাজে কয় শ্রেণীর লোক ছিল এবং কি কি?

উত্তরঃ অহোম সমাজে তিন শ্রেণীর লোক ছিল—

(ক) অভিজাত।

(খ) কৃষক। ও 

(গ) দাস।

প্রশ্ন ৪। আসামে প্রাক্-ব্রিটিশবিরোধী যে-কোন দুটি বিদ্রোহের উল্লেখ কর।

উত্তরঃ আসামে প্রাক-ব্রিটিশবিরোধী দুটি বিদ্রোহ হল—

(ক) গোমধর কোঁওরের বিদ্রোহ। এবং 

(খ) খাসি বিদ্রোহ।

প্রশ্ন ৫। আসামে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহের যে-কোন দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ আসামে সিপাই বিদ্রোহের দুটি কারণ নিম্নরূপ:

(ক) ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে আসামে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর হতেই ইংরেজ – বিরোধী নানা ষড়যন্ত্র গড়ে উঠতে থাকে।

(খ) অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশ-বিরোধী অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে।

প্রশ্ন ৬। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে আসামে দুইজন শহীদের নাম লেখ।

অথবা,

সিপাহী বিদ্রোহে আসামের দুইজন শহীদের নাম লেখ।

উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে বা সিপাহী বিদ্রোহে আসামের দুইজন শহীদ হলেন- 

(ক) মণিরাম দেওয়ান। ও 

(খ) পিয়লী বরুয়া।

প্রশ্ন ৭। আসামে সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ আসামে সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার দুটি কারণ নিম্নরূপ:

(ক) আসামে ব্রিটিশ সরকার মণিরাম দেওয়ানের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন।

(খ) আসামের সাধারণ মানুষ বিদ্রোহের কারণ হৃদয়ঙ্গম করতে পারেনি।

প্রশ্ন ৮। ঊনবিংশ শতকে আসামে নবজাগরণ বা রাজনৈতিক চেতনা বিকাশে দুটি সামাজিক সংস্থার নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ঊনবিংশ শতকে আসামে নবজাগরণ বা রাজনৈতিক চেতনা বিকাশে দুটি সামাজিক সংস্থার নাম – 

(ক) রাইজ মেল। এবং 

(খ) সার্বজনীন সভা।

প্রশ্ন ৯। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ফুলগুড়ি যুদ্ধের দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ফুলগুড়ি যুদ্ধের দুটি কারণ নিম্নরূপ:

(ক) ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পপি চাষ নিষিদ্ধকরণ।

(খ) ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পান-সুপারির উপর কর আরোপ।

প্রশ্ন ১০। ডেভিড স্কট ও রবার্টসন কোন দেশের লোক ছিলেন?

উত্তরঃ ডেভিড স্কট ও রবার্টসন ইংল্যান্ডের লোক ছিলেন।

প্রশ্ন ১১। ঊনবিংশ শতাব্দীতে সংগঠিত ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আসামে দুটি উপজাতি বিদ্রোহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ঊনবিংশ শতাব্দীতে সংগঠিত ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আসামে দুটি উপজাতি। বিদ্রোহ—

(ক) জয়ন্তিয়া বিদ্রোহ (১৮৬০–৬২ খ্রিস্টাব্দ)। এবং 

(খ) নাগা বিদ্রোহ (১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ)।

প্রশ্ন ১২। আসাম অ্যাসোসিয়েশনের যে-কোন দুটি লক্ষ্য লেখ।

উত্তরঃ আসাম অ্যাসোসিয়েশনের দুটি লক্ষ্য নিম্নরূপ:

(ক) জনগণকে রাজনৈতিক সচেতন করে তোলা।

(খ) বেআইনি আফিং ব্যবসা নিষিদ্ধকরণের জন্য দাবি জানানো।

প্রশ্ন ১৩। প্রথম গোলটেবিল বৈঠক কখন হয়? এই বৈঠকে আসামের প্রতিনিধি কে ছিলেন?

উত্তরঃ প্রথম গোলটেবিল বৈঠক ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে হয়। আসামের প্রতিনিধি ছিলেন চন্দ্রধর বরুয়া।

প্রশ্ন ১৪। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে আসামের দুইজন মহিলা শহীদের নাম লেখ।

উত্তরঃ ভারত ছাড়ো আন্দোলনে আসামের দুইজন মহিলা শহীদ হলেন— 

(ক) কনকলতা। ও 

(খ) ডোগেশ্বরী দেবী।

প্রশ্ন ১৫। ক্যাবিনেট মিশনের ‘সমষ্টি পরিকল্প’ অনুযায়ী আসামকে কোন্ ভাগে ও কোন প্রদেশের সংগে সংযুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়?

উত্তরঃ ‘গ’ ভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে।

প্রশ্ন ১৬। স্বদেশী আন্দোলনে আসামের দুইজন নেতার নাম লেখ।

উত্তরঃ স্বদেশী আন্দোলনে আসামের দুইজন নেতা হলেন –

(ক) বিষ্ণুরাম মেধি। এবং

(খ) বিপিন চন্দ্র পাল।

প্রশ্ন ১৭। অসহযোগ আন্দোলনে আসামের দুইজন নেতার নাম লেখ।

উত্তরঃ অসহযোগ আন্দোলনে আসামের দুইজন নেতা হলেন—

(ক) তরুণরাম ফুকন। এবং 

(খ) নবীনচন্দ্র বরদলৈ।

প্রশ্ন ১৮। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে আসামের দুইজন নেতার নাম লেখ।

উত্তরঃ ভারত ছাড়ো আন্দোলনে আসামের দুইজন নেতা হলেন-

(ক) জ্যোতিপ্ৰসাদ আগরওয়ালা। এবং 

(খ) মহেন্দ্র নাথ হাজারিকা।

প্রশ্ন ১৯। ঊনবিংশ শতাব্দীতে আসামে জাতীয় চেতনা বিকাশে অবদানকারী দুটি পত্রিকার নাম লেখ।

উত্তরঃ ঊনবিংশ শতাব্দীতে আসামে জাতীয় চেতনা বিকাশে অবদানকারী দুটি পত্রিকার নাম হল— 

(ক) অরুণোদই। এবং 

(খ) জোনোকী।

প্রশ্ন ২০। আসামে ব্রিটিশ শাসনের যে-কোন দুটি ফল লেখ।

উত্তরঃ আসামে ব্রিটিশ শাসনের দুটি ফল নিম্নরূপ:

(ক) ব্রিটিশ শাসনের সর্বশ্রেষ্ঠ ফল হল আসামের দ্রুত বৈষয়িক উন্নতি।

(খ) ব্রিটিশ শাসনে পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রবাহের মাধ্যমে আসামে এক নূতন সমাজ গঠন আরম্ভ হয়।

প্রশ্ন ২১। ১৮১৯ ও ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মানেরা যে কয়জন অহোমকে অসমের রাজা করেছিল তাঁদের নাম লেখ।

উত্তরঃ ১৮১৯ ও ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মানেরা যে কয়জন অহোমকে অসমের রাজা করেছিলেন তাঁরা হলেন— 

(ক) চন্দ্রকান্ত সিং। এবং 

(খ) যোগেশ্বর সিং।

প্রশ্ন ২২। ব্রিটিশের জয়ন্তিয়া রাজ্য অন্তর্ভুক্ত করার দুটি কারণ প্রদান কর।

উত্তরঃ ব্রিটিশের জয়ন্তিয়া রাজ্য অন্তর্ভুক্ত করার দুটি কারণ নিম্নরূপ:

(ক) জয়ন্তিয়া রাজা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন।

(খ) জয়ন্তিয়া রাজার আদেশে গোভার রাজা জয়ন্তেশ্বরীর নিকট বলি দেবার জন্য চারজন ব্রিটিশ প্রজাকে অপহরণ করে ও তিনজনকে বলি দেয়।

প্রশ্ন ২৩। ব্রিটিশদের আসামে আফিং চাষ বন্ধ করার দুটি কারণ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ব্রিটিশদের আসামে আফিং চাষ বন্ধ করার দুটি কারণ নিম্নরূপ:

(ক) ব্রিটিশদের মজুদকৃত আফিং বিক্রি করার জন্য।

(খ) ব্রিটিশগণ নিজেরা আফিং চাষ করার জন্য আসামের আফিং চাষিদের আফিং চাষ বন্ধ করে।

প্রশ্ন ২৪। ১৮৫৮ ও ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আসামে জারি করা দুই প্রকার করের উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ১৮৫৮ ও ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আসামে জারি করা দুই প্রকার কর হল— 

(ক) লাইসেন্স কর। এবং 

(খ) পেশা কর।

প্রশ্ন ২৫। ব্রিটিশের খাসি রাজ্য অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ ব্রিটিশের খাসি রাজ্য অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে দুটি কারণ নিম্নরূপ:

(ক) উপজাতি এলাকায় ব্রিটিশ আধিপত্য স্থাপন করা।

(খ) ব্রহ্মপুত্র ও সুরমা উপত্যকার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা।

প্রশ্ন ২৬। কোন্ খ্রিস্টাব্দে এবং কোথায় আসামের প্রথম ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় স্থাপিত হয়?

উত্তরঃ ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে গুয়াহাটীতে প্রথম ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

প্রশ্ন ২৭। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে আসামে প্রবর্তিত দুটি করের নাম লেখ।

উত্তরঃ ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে আসামে প্রবর্তিত দুটি কর হল— 

(ক) লাইসেন্স কর। এবং 

(খ) আয়কর।

প্রশ্ন ২৮। কাদের দেওলীয়া পাইক বলা হত?

উত্তরঃ যে সকল পাইক মন্দির বা কোন দেবস্থানের কার্যে নিয়োজিত ছিল তাদের দেওলীয়া পাইক বলা হত।

প্রশ্ন ২৯। কোন্ সন্ধি অনুযায়ী এবং কখন আসামে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ বর্মীরাজা ও ইংরেজের মধ্যে ইয়াণ্ডাবুর সন্ধি অনুযায়ী ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে আসামে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রশ্ন ৩০। পুরন্দর সিংহকে কি শর্তে কোন্ কমিশনারের শাসনকালে সিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়?

উত্তরঃ ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৮শে এপ্রিল কমিশনার রবার্টসনের শাসনকালে নিম্নলিখিত শর্ত অনুযায়ী আসামের সিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়:

(ক) বার্ষিক ৫০ হাজার টাকা কর হিসাবে ইংরেজ সরকারকে দিতে হবে।

(খ) দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করা হবে এবং কোন বিদেশি রাজার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে না।

প্রশ্ন ৩১। ঊনবিংশ শতকের অসমের কৃষক বিদ্রোহের দুটি কারণ দেখাও।

উত্তরঃ ঊনবিংশ শতকের অসমের কৃষক বিদ্রোহের কারণগুলি নিম্নরূপ:

(ক) কৃষকদের ভূমিকর বৃদ্ধি।

(খ) প্রচলিত করসমূহ ছাড়াও স্ট্যাম্প কর, লাইসেন্স কর, আয়কর প্রভৃতি নূতন কর আরোপিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ৩২। অসম ছাত্র সম্মিলনের গঠন কবে হয়েছিল এবং প্রথম অধিবেশনের সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে অসম ছাত্র সম্মিলন গঠিত হয়েছিল। লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া প্রথম অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। পুরন্দর সিংহের সিংহাসনে পুনঃস্থাপন ও সিংহাসন – চ্যুতি সম্বন্ধে কি জানো?

অথবা,

পুরন্দর সিংহ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ পুরন্দর সিংহ শেষ স্বাধীন অহোম রাজা। তিনি ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি বর্মী কর্তৃক সিংহাসনচ্যুত হন। ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ইয়াণ্ডাবুর সন্ধির মাধ্যমে বর্মী শাসনের অবসান ঘটে এবং সমগ্র আসামে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অহোম অভিজাতদের মধ্যে অসন্তোষ ও নানা বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করে ডেভিড স্কট সমগ্র উত্তর-পূর্ব আসামকে কোন অহোম রাজপুত্রকে প্রত্যর্পণ করবার সুপারিশ করেন। স্কটের পর রবার্টসন আসামের কমিশনার ও গভর্নর- জেনারেলের এজেন্ট নিযুক্ত হন। তিনি স্কটের উক্ত প্রস্তাবে সহমত হন। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে রবার্টসন আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর-পূর্ব আসাম পুরন্দর সিংহকে প্রত্যর্পণ করেন। কিন্তু পুরন্দর সিংহের শাসনে রাজ্যের অধিবাসীদের চরম দুর্গতি আরম্ভ হয়। অধিকন্তু তিনি প্রতিশ্রুত বার্ষিক কর পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতেও অক্ষম হন। অবশেষে জেনারেল জেনকিনসের প্রস্তাব অনুসারে ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে এক ঘোষণায় পুরন্দর সিংহকে সিংহাসনচ্যুত করা হয়।

প্রশ্ন ২। গোমধর কোঁয়রের ব্রিটিশবিরোধী বিদ্রোহ সম্পর্কে কি জানো?

অথবা,

গোমধর কোঁয়র সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ গোমধর কোঁয়রের বিদ্রোহ: ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মার্চ ব্রিটিশ সরকার নিম্ন আসামকে ইংরেজদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলে ঘোষণা করে এবং উজান আসাম হতে ব্রিটিশ সৈন্য অপসারণ করে। এই অবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে গোমধর নিজেকে স্বৰ্গদেও হিসাবে ঘোষণা করে স্থানীয় রাজকর্মচারীদের তার সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে মরিয়াণী অভিমুখে সসৈন্যে যাত্রা করেন। গোমধরের ঐ অভিযান ব্যর্থ করবার জন্য ব্রিটিশ লেফটেন্যান্ট বুথার ফোর্ড নাগা পাহাড়ে অবস্থিত গোমধর সহ অন্যান্য বিদ্রোহীদের বন্দী করলে ব্রিটিশ কমিশনার ডেভিড স্কট গোমধর সহ অন্যান্য বন্দীদের সাত বৎসরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। কিন্তু হরনাথের সহায়তায় গোমধর শীঘ্রই কারাগার হতে পলায়ন করেন। তবে গোমধর আবার ব্রিটিশ হস্তে বন্দী হন এবং বঙ্গদেশের রংপুর জেলে তাকে সাত বৎসর রাখা হয়। প্রথমে ইংরেজ সরকার গোমধরকে ফাঁসী দেওয়ার চিন্তা করলেও তার অল্প বয়স বিবেচনা করে কারাগারে রাখারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। রংপুর জেল হতে গোমধর কোথায় গিয়েছিলেন তা জানা যায়নি।

প্রশ্ন ৩। তিরৎ সিংহের ব্রিটিশবিরোধী বিদ্রোহের সম্পর্কে কি জানো?

অথবা,

ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে খাসি বিদ্রোহ সম্পর্কে কি জানো?

অথবা,

তিরৎ সিংহ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ তিরুৎ সিংহের বিদ্রোহ: ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আধিপত্য স্থাপনের পর ইংরেজ খাসিয়া পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সুরমা উপত্যকার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে রানির নিকট হতে নংঘৌর-এর মধ্য দিয়ে এক রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রথমে খাসি সিয়েম তিরুৎ সিংহ তাতে অনুমতি দান করলেও ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা এপ্রিল তিরুৎ সিংহ তার খাসিয়া অনুচর নংঘৌতে কোম্পানীর জনগণের উপর আক্রমণ চালিয়ে দুইজন ইংরেজ এবং ৬০ জন ভারতীয় সিপাহীর মৃত্যু ঘটান এবং খাসিয়া পাহাড়ে ইংরেজদের প্রবেশে বাধাদানের জন্য প্রচুর সৈন্য মোতায়েন করেন। কিন্তু ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই জানুয়ারি তিরুৎ সিংহ পরাজিত হয়ে ইংরেজদের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। এর ফলে খাসিয়া পাহাড় ব্রিটিশের হস্তগত হয়ে যায়।

প্রশ্ন ৪। আসামে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মণিরাম দেওয়ানের ভূমিকা কি ছিল?

অথবা,

মণিরাম দেওয়ান সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

অথবা,

মণিরাম দেওয়ান বৃটিশবিরোধী মনোভাব কেন প্রকাশ করেছিলেন? এর ফলাফল লেখ।

উত্তরঃ মণিরাম দেওয়ান ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একজন দক্ষ ও বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিলেন। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন নিউফডিল এই দক্ষ ও প্রতিভাশালী অসমীয়া অভিজাতকে যোড়হাটে সেরেস্তাদার নিযুক্ত করেছিলেন। এই কার্যে তিনি বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করেন। অহোম অভিজাতদের মধ্যে যখন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষের আগুন বিস্তার লাভ করছিল তখন মণিরাম তাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে পুরন্দর সিংহ সিংহাসনচ্যুত হলে মণিরাম ইংরাজের উপর অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন এবং তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে কোন কার্য করতে অসম্মত হন। তিনি পুরন্দর সিংহের পৌত্র কন্দর্পেশ্বর সিংহের রাজ্য প্রাপ্তির জন্য চেষ্টা করে বিফল হন। মণিরাম তখন ষড়যন্ত্র ও বিদ্রোহের পথই বেছে নিলেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে উত্তর ভারতে সিপাহী বিদ্রোহের বিস্তার লক্ষ্য করে মণিরাম উৎসাহিত হন। তিনি তাঁর বাঙালি বন্ধু মধু মল্লিকের সহায়তায় কন্দর্পেশ্বর সিংহের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করেন এবং তাঁকে স্থানীয় সিপাহীদের সাহায্যে বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুত হতে উৎসাহিত করেন। কন্দর্পেশ্বর সিংহ যোড়হাট ও গোলাঘাটের সিপাহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কন্দর্পেশ্বর সিংহ ও মণিরামের বিদ্রোহের প্রচেষ্টা বেশি দূর অগ্রসর হবার পূর্বেই ধরা পড়ে। ধৃত হওয়ার পর কন্দর্পেশ্বর সিংহকে বর্ধমানে অন্তরীণ করা হয় এবং মণিরাম দেওয়ানকে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে ফেব্রুয়ারি যোড়হাটে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়।

প্রশ্ন ৫। আসামে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহ সফল না হওয়ার কারণসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ আসামে সিপাহী বিদ্রোহ সফল না হওয়ার কারণসমূহ নিম্নরূপ: 

(ক) ব্রিটিশ সরকার মণিরাম দেওয়ানের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন।

(খ) আসামের ইংরেজ মালিকানাধীন চা বাগানের কর্তৃপক্ষ মণিরামের উপর দৃষ্টি দেবার জন্য ইংরেজ সরকারকে অনুরোধ করেছিল।

(গ) হরনাথ পর্বতীয়া দারোগা এবং তাহার সহকর্মী কতিপয় ব্যক্তি মণিরামের কার্যকলাপের উপর সতর্ক দৃষ্টি রেখে তার ষড়যন্ত্র বিফল করেছিল।

(ঘ) শিবসাগরের অধিকর্তা হলরইদ বিদ্রোহীদের বিচার তাড়াতাড়ি করে পিয়লী বরুয়া এবং মণিরামকে ফাঁসি এবং অন্যান্যদের হয় নির্বাসন অথবা কারাদণ্ড দেওয়ায় সিপাহী বিদ্রোহের বীজ বেশি দূর ছড়াতে পারেনি।

(ঙ) সিপাহী বিদ্রোহে গোর্খারা সিপাহীদের বিরোধিতা করেছিল।

(চ) বিদ্রোহীদের বিচারকার্য একতরফা হয়েছিল।

(ছ) আসামের সাধারণ লোকেরা বিদ্রোহের কারণ হৃদয়ঙ্গম করতে পারেনি।

প্রশ্ন ৬। ফুলগুড়ি বিদ্রোহ সম্পর্কে কি জানো?

অথবা,

ফুলগুড়ি বিদ্রোহ (ধাওয়া) সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ছাত্র-ছাত্রীরা নিজে করো।

প্রশ্ন ৭। রঙ্গিয়ার বিদ্রোহ সম্পর্কে কি জানো?

অথবা,

রঙ্গিয়া বিদ্রোহ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ছাত্র-ছাত্রীরা নিজে করো।

প্রশ্ন ৮। পাথারুঘাটের বিদ্রোহ সম্পর্কে কি জানো?

অথবা,

পাথারুঘাটের বিদ্রোহ (রণ) সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ছাত্র-ছাত্রীরা নিজে করো।

প্রশ্ন ৯। আসাম ছাত্র সম্মিলন সম্পর্কে কি জানো?

অথবা,

আসামে রাজনৈতিক চেতনা বিকাশে আসাম ছাত্র সম্মেলন এর ভূমিকা বর্ণনা কর।

অথবা,

‘আসাম ছাত্র সম্মেলন’ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

অথবা,

আসাম ছাত্র সম্মিলন কিভাবে আসামের ছাত্রছাত্রীর এবং সমাজের সেবা, করেছিল আলোচনা কর।

উত্তরঃ আসাম ছাত্র সম্মেলন ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রথম অধিবেশন গুয়াহাটীতে অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া। স্বদেশী আন্দোলনে বাংলার ছাত্রদের যোগদান, শ্রীমতি অ্যানি বেসান্তের নেতৃত্বে হোমরুল আন্দোলন, তিলক, গোখলে প্রমুখ জাতীয় নেতাদের বক্তৃতা, ভারত ও বিশ্বের সমসাময়িক ঘটনাবলী আসামের ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়কে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। ফলে তাদের মধ্যে নবচেতনার উন্মেষ ঘটে। এই নবচেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে আসাম ছাত্র সম্মেলন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। সারা ভারতে যখন সংগঠিত ছাত্র সংস্থার অভাব তখন আসামে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান গঠন নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কিন্তু আসাম ছাত্র সম্মেলন কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয়। কিন্তু সারা ভারতের ছাত্র সমাজের আবেদনেও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রয়োজনে ছাত্র সম্মেলন নানা ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় এবং আসামের জনগণের রাজনৈতিক চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চন্দ্রকান্ত শর্মা, অমিয় কুমার দাস, হেমচন্দ্র বরুয়া, পদ্মধর চলিহা প্রভৃতি যুব নেতাগণ আসাম ছাত্র সম্মেলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ছাত্র সম্মেলনের মাধমে আসামের ছাত্রসমাজ শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে জাতি গঠনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন ১০। কানিংহাম সার্কুলার সম্বন্ধে কি জানো?

অথবা,

কানিংহাম সার্কুলার সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

অথবা,

কানিংহাম সার্কুলারের তাৎপর্য বর্ণনা কর।

অথবা,

অসমের ছাত্রছাত্রীগণকে আইন অমান্য আন্দোলন থেকে বিরত রাখবার জন্য বৃটিশ সরকার কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল? এর ফলাফল কি হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে আসামের শিক্ষাধিকর্তা কানিংহাম এক নির্দেশনামায় ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকদের হরতাল, পিকেটিং, রাজনৈতিক শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া নিষেধ করা এবং সব ধরনের সরকারি অনুশাসন মেনে চলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দানের কথা ঘোষণা করেন। ফলে আসামে ছাত্রছাত্রীগণ প্রতিবাদমুখর হয়ে দলে দলে স্কুল-কলেজ ত্যাগ করে। এই সময়ে করিমগঞ্জে পাবলিক হাইস্কুল, গুয়াহাটীতে কামরূপ একাডেমি স্কুল প্রভৃতি স্থাপিত হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা স্কুল ছেড়ে ঐগুলিতে ভর্তি হয়েছিল। জাতীয় স্কুলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং অসহযোগ আন্দোলনের তীব্রতা হ্রাস করবার জন্য সরকার বাধ্য হয়ে পরবর্তীকালে এই সার্কুলার প্রত্যাহার করেন।

প্রশ্ন ১১। আসামে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রভাব বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রভাব আসামে ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। আসামে এই আন্দোলন স্থানে স্থানে সহিংস সংগ্রামে পরিণত হয়। ব্রিটিশ সরকারের অফিস – আদালত, থানা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নিরস্ত্র দৃঢ়সংকল্প জনতা আক্রমণ আরম্ভ করে। ব্রিটিশ সরকারও নির্মম নির্যাতন চালায়। এই গণঅভ্যুত্থান দমন করবার জন্য, ব্রিটিশ সরকার স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে গুলি করে হত্যা, পিটুনি ট্যাক্স আরোপ প্রভৃতি অত্যাচার করেন। আগস্ট আন্দোলনে আসামে যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য নিহত হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ভোগেশ্বরী ফুকনানী, বীরবালিকা কনকলতা ও তিলকডেকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই সময়েই অহোম যুবক কুশান কোঁয়র ব্রিটিশ কারাগারে ফাঁসিকাষ্ঠে আত্মত্যাগ করেন। তাঁদের চরম ত্যাগ ছাড়াও ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় আসামের বহু বীরসন্তান অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন।

প্রশ্ন ১২। ব্রিটিশ শাসনের সময় আসামে শিক্ষাবিস্তার সম্পর্কে কি জানো?

অথবা,

ব্রিটিশ শাসনকালে আসামে শিক্ষা-ব্যবস্থা কিরূপ ছিল?

উত্তরঃ ব্রিটিশ আমলে আসামে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। শিক্ষা বিস্তারে আমেরিকান ব্যাপটিস্ট মিশন এক মহান ভূমিকা পালন করে। তারা আসামের বহুস্থানে অনাথ আশ্রম ও বিদ্যালয় স্থাপন করেছিল। ব্যাপটিস্ট মিশন অসমীয়া সাহিত্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাঁরাই অসমীয়া ভাষায় ‘অরুণোদই’ নামক প্রথম পত্রিকা প্রকাশ করেন। ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে শিবসাগর ও গুয়াহাটীতে দুটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। জেন্‌কিসের পৃষ্ঠপোষকতায় বহু প্রাথমিক স্কুলও প্রতিষ্ঠিত হয়। খ্রিস্টান মিশনারীদের উদ্যোগেও আসামে বহু স্কুল-কলেজ স্থাপিত হয়। ব্রিটিশ আমলে আসামে বাংলার পরিবর্তে অসমীয়া ভাষা শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে পুনরায় প্রবর্তিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে শিক্ষার আরও প্রসার ঘটে। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে গুয়াহাটীতে বিখ্যাত কটন কলেজ স্থাপিত হয়। প্রায় একই সময়ে ডিব্রুগড়ে বেরী হোয়াইট মেডিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্ন ১। আসামে উপনিবেশ স্থাপনের জন্য বৃটিশগণ কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন? এইগুলি গ্রাম্যজীবনে কি প্রভাব বিস্তার করেছিল?

উত্তরঃ বৃটিশ শাসনের শুরুতেই গুয়াহাটিতে একজন কমিশনার নিযুক্ত করে আসামকে বঙ্গদেশের শাসনাধীন করা হয়। ডেভিড স্কট ছিলেন আসামের প্রথম কমিশনার। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে কমিশনারকে শাসনকার্যে সাহায্য করবার জন্য একজন ডেপুটি কমিশনার নিযুক্ত করা হয় এবং ছয়টি জেলা গঠন করা হয়। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গের লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্যার জর্জ ক্যাম্পবেল অসমিয়া ভাষাকে পুনরুদ্ধার করে কোর্ট-কাছারিতে সরকারি ভাষার মাধ্যম হিসাবে প্রবর্তন করেন। শ্রীহট্টকে আসামের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে আসাম প্রদেশ গঠন করা হয়। এইভাবে সকল পাহাড়ী অঞ্চলকে একটির পর অন্যটি একত্রিত করে বৃটিশ শাসনে অন্তর্ভুক্ত করেন।

১৭১৯ খ্রিস্টাব্দে স্বৰ্গদেও গৌরীনাথ সিংহের অনুরোধক্রমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ক্যাপ্টেন ওয়ালেসকে আসামে মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ দমন করবার জন্য পাঠান। ওয়ালেস কোম্পানীর নির্দেশমতো আসামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। কিন্তু তিনি অহোম রাজার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদন করতে পারেননি।

গ্রামাঞ্চলে বৃটিশ শাসনের প্রভাব: বৃটিশগণ আসামে আগমনের সময় কৃষিই মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল। অধিকাংশ লোকই গ্রামে বাস করত। কিন্তু বৃটিশ উপনিবেশকতাবাদ তাদের উপর নানাপ্রকার প্রভাব বিস্তার করেছিল। বৃটিশ সরকার প্রবর্তিত জমির নূতন খাজনা ব্যবস্থা ‘পাইক’ ও ‘খেল’ প্রথার উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। উপনিবেশিক সরকার পূর্বের সকল করবিহীন ভূমিতে কর আরোপ করে এবং মন্দির ও দেবালয়সমূহে অহোম রাজা প্রদত্ত সকল প্রকার অনুদান বন্ধ করে দেয়। সস্তা মূল্যের বিভিন্ন প্রকার বিদেশি বস্তুর বাজারে আগমনের ফলে গ্রামাঞ্চলের কুটির শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সর্বসাধারণের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে চা-বাগান ও মাটির নীচে খনিজ সম্পদ উদ্ঘাটনে আসামের পরিবেশের উপর চাপ পড়ে। ছোট ছোট শহর গড়ে ওঠার ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষের মনে ব্যবসায়িক মানসিকতা সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন ২। আসামে ব্রিটিশ শাসন কিভাবে বিস্তার লাভ করেছিল সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা,

আসামে ইংরেজ শাসনের প্রসার সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

উত্তরঃ আসামে ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে সামরিক শাসন অবসান হওয়ার পর ডেভিড স্কট আরও তিন বৎসর কমিশনার ও গভর্নর-জেনারেলের পদে এজেন্ট রূপে কার্য করেছিলেন। এই সময়ে তিনি নিম্ন আসামে কয়েকটি শাসন সংস্কার করেন। তিনি অহোম আমলের ‘খেল’ প্রথার আমূল পরিবর্তন করেন। স্কট ব্যক্তিগত ‘বেগার’ খাটা বিলোপ করে, প্রত্যেক পাইকের উপর কেবল একটি নির্দিষ্ট কর ধার্য করেন। পরে ভূমির পরিমাণ অনুসারে, পাইকদের উপর কর ধার্য হয়। সাধারণ বিচারকার্য পঞ্চায়েতের হাতেই রাখা হয়। গুরুতর অপরাধের বিচার কমিশনারের প্রধান সহকারীগণ পঞ্চায়েতের সাহায্যে করতেন। উত্তরপূর্ব আসামে কিন্তু কোনরূপ সংস্কার করা হয়নি। স্কট অহোম অভিজাত শ্রেণীকে সন্তুষ্ট করবার জন্য বহু চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইংরেজ রাজত্ব প্রতিষ্ঠার পর অভিজাতদের নানাবিধ সুবিধা ও অধিকার লুপ্ত করা হয়। ফলে তাঁদের মধ্যে এক গভীর অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। স্কটের শাসনকালে গোমধরের বিদ্রোহ, খাসি বিদ্রোহ ও তীরুৎ সিংহের বিদ্রোহ হয়। স্কট কঠোর হাতে এইসব বিদ্রোহ দমন করেন। অহোম অভিজাতদের মধ্যে অসন্তোষ ও নানা বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করে মৃত্যুর পূর্বে স্কট উত্তর-পূর্ব আসামকে কোন অহোম রাজপুত্রকে প্রত্যর্পণ করবার সুপারিশ করেন। এর কিছুকাল পরেই ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে স্কটের মৃত্যু হয়।

ডেভিড্ স্কটের পর রবার্টসন আসামের কমিশনার ও গভর্নর- জেনারেলের এজেন্ট নিযুক্ত হন। উত্তর-পূর্ব আসাম সম্বন্ধে স্কটের প্রস্তাবের সহিত রবার্টসনও একমত হন। গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কও এই প্রস্তাব অনুমোদন করেন। রবার্টসন ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর-পূর্ব আসাম পুরন্দর সিংহকে প্রত্যর্পণ করেন। কিন্তু পুরন্দর সিংহের রাজত্বকাল বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

রবার্টসনের পর জেনারেল জেকিস কমিশনার নিযুক্ত হন। জেন্‌কিসের শাসনকাল নানা কারণে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই সময় ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের সরাসরি শাসন আসামের আরও বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত হয়। জেনারেল জেকিসের সময়ে ব্রিটিশ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানী আসামে রাজ্যবিস্তার নীতি প্রকাশ্যেই গ্রহণ করেন। এই নীতির ফলে প্রথমেই জয়ন্তিয়া রাজ্য জেকিস্ অধিকার করেন। ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে পুরন্দর সিংহকে সিংহাসনচ্যুত করে উত্তর-পূর্ব আসাম অধিকার করা হয়। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে মাটক ও সদিয়া, ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে উত্তর কাছাড়, ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে দুয়ার অঞ্চল ব্রিটিশ অধিকৃত হয়।

জেন্কিসের পরবর্তী কমিশনার কর্নেল হপকিনসনের সময়ের উল্লেখযোগ্য দুটি ঘটনা হল জয়ন্তিয়ার সিনটেংদের বিদ্রোহ ও ভুটিয়াদের সহিত যুদ্ধ। তাঁর সময় কর ধার্য করার বিরুদ্ধে জয়ন্তিয়ার সিনটেংগণ বিদ্রোহ করে। চার বৎসর পর এই বিদ্রোহ দমন করা হয়েছিল। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ভূটানের সঙ্গেও ইংরেজ গভর্নমেন্টের এক যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধের ফলে ইংরেজ গভর্নমেন্ট কোচবিহার ও গোয়ালপাড়া জেলার দুয়ার’গুলি অধিকার করেন। ইংরেজ গভর্নমেন্ট ভুটানকে প্রদত্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণও এইজন্য বৃদ্ধি করেন। এইভাবে বিভিন্ন গভর্নর-জেনারেলের বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ে আসামে ইংরেজ শাসন বিস্তার লাভ করে।

প্রশ্ন ৩। আসাম প্রশাসনের জন্য ব্রিটিশ সরকার কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল?

অথবা,

বর্মীযুদ্ধ হতে সিপাহী বিদ্রোহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী কালের ব্রিটিশ শাসন সম্বন্ধে যা জানো লেখ।

উত্তরঃ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর প্রথম দিকে আসাম আক্রমণের বিশেষ আগ্রহ ছিল না। মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের সময় পর্যন্ত আসামে আসলেও নিজেরাই যে আসাম শাসন করবে তা তারা চিন্তা করেনি। কিন্তু ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ইয়াণ্ডাবুর সন্ধির পর তাদের মনের পরিবর্তন হয় এবং আসামকে তারা তাদের সাম্রাজ্যভুক্ত করতে চেষ্টা চালাতে থাকে।

প্রথমে আসামের প্রশাসনের ভার রংপুর জেলার একজন বেসরকারি আয়ুক্তের উপর ন্যস্ত করা হয়েছিল। সেই আয়ুক্ত গভর্নর-জেনারেলের প্রতিনিধি হিসাবে কার্য পরিচালনা করতেন। যোড়হাটে অবস্থিত একজন সহকারী বিষয়া উজান আসামে শাসনকার্যে তাকে সাহায্য করতেন। পরে গুয়াহাটিতেও একজন সহকারী বিষয়াও নিযুক্ত হয়েছিলেন।

বর্মীদের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর নায়ক লেঃ কর্নেল রিচার্ডস্ বিশ্বনাথের পূর্ব হতে পাটকে পর্বত পর্যন্ত সমগ্র উত্তর-পূর্ব আসামের (Upper Assam) জয়েন্ট কমিশনার নিযুক্ত হন। স্কট ও রিচার্ডস্ এইরূপে যথাক্রমে নিম্ন আসাম ও উত্তর-পূর্ব আসামের শাসনভার প্রাপ্ত হন এবং রাজস্ব তিন লক্ষেরও অধিক জানতে পেরে ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড স্কট নিম্ন আসামে ইংরেজদের সরাসরি শাসন স্থাপন করেন। এই বৎসরই উত্তর-পূর্ব আসামে সামরিক শাসনের বিলোপ করা হয়। ক্যাপ্টেন নিউফভিল উত্তর-পূর্ব আসামে এজেন্ট ও শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।

১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে আসামের প্রায় ৩০ হাজার বর্গ মাইল এলাকার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল একজন কমিশনারের উপর। তখন আসামে যে সকল জেলা প্রতিষ্ঠিত তাহল কামরূপ, শিবসাগর, গোয়ালপাড়া, দরং, নগাঁও এবং লক্ষ্মীপুর। প্রত্যেক জেলার একজন মুখ্য বিষয়া নিযুক্ত হতেন। কাছাড়ের শাসনভার একজন সুপারিন্টেন্ডেন্টের এবং পাবর্ত্য অঞ্চলের ভার একজন রাজনৈতিক প্রতিনিধির উপর ছিল। শেষ দিকে প্রত্যেক জেলার শাসনভার একজন আয়ুক্ত, উপায়ুক্ত, ছয়জন মুখ্য বিষয়া, ৩ জন নিম্নবর্গের সহকারী এবং ৮ জন উপসহকারী নিযুক্ত করা হত। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম আনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকন উপ-সহকারী বিষয়াপদ লাভ করেন।

জেনারেল জেকিসের সময়ে শাসন-ব্যবস্থার আরও উন্নতি সাধন করা হয়। তিনি নিম্ন আসামকে গোয়ালপাড়া, দরং, কামরূপ ও নগাঁও এই চারটি জেলায় বিভক্ত করেন। সমস্ত প্রদেশের শাসনভার একজন কমিশনার, একজন ডেপুটি কমিশনার, ছয়জন প্রিন্সিপাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, তিনজন জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ও আটজন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্টের উপর ন্যস্ত হয়। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ডেপুটি কমিশনারের পদ ‘জুডিশিয়াল কমিশনার’ নামকরণ করা হয়; এবং প্রিন্সিপাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ও সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর পদের নাম দেওয়া হয় যথাক্রমে ডেপুটি কমিশনার (D.C.), অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও এক্সট্রা-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (E.A.C.)। প্রথমে আসাম বঙ্গদেশের সঙ্গেই যুক্ত ছিল। ১৮৭৪ সালে আসামকে পৃথক প্রদেশে রূপান্তরিত করে একজন চীফ কমিশনারের হাতে এর শাসনভার অর্পণ করা হয়েছিল। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদেশ হতে পূর্ববঙ্গকে পৃথক করে আসামের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়।

প্রশ্ন ৪। আসামের ব্রিটিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রারম্ভিক বিদ্রোহ স্বর্ণনা কর।

অথবা,

আসামে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিক্রিয়া বর্ণনা কর।

অথবা,

আসামে ব্রিটিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে গোমধর কোঁয়র, পিয়লী বরগোঁহাই, পিয়লী ফুকন ও তিরুৎ সিংহের বিদ্রোহ সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা,

যে সকল ঘটনার কারণে গোমধর কোঁয়র এবং তিরুৎ সিংহ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন তা বর্ণনা কর।

অথবা,

গোমধর কোঁয়রের বিদ্রোহের কারণ এবং ফলাফল আলোচনা কর।

উত্তরঃ বর্মী অপশাসনে অতিষ্ঠ অহোম জনগণ প্রথমাবস্থায় মনে করেছিল যে আসামে চিরস্থায়ীভাবে ব্রিটিশ শাসন কায়েম করবে না। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের সেই মোহভঙ্গ হয়। অহোম জনগণের মনে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে। ফলে আসামের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন জাতির মধ্যে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বিদ্রোহ দেখা দেয়।

গোমধর কোঁয়রের বিদ্রোহ: ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মার্চ ব্রিটিশ সরকার নিম্ন আসামকে ইংরেজদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলে ঘোষণা করে এবং উজান আসাম হতে ব্রিটিশ সৈন্য অপসারণ করে। এই অবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে গোমধর নিজেকে স্বৰ্গদেও হিসাবে ঘোষণা করে স্থানীয় রাজকর্মচারীদের তার সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে মরিয়াণী অভিমুখে সসৈন্যে যাত্রা করেন। গোমধরের ঐ অভিযান ব্যর্থ করবার জন্য ব্রিটিশ লেফটেন্যান্ট বুথার ফোর্ড নাগা পাহাড়ে অবস্থিত গোমধর সহ অন্যান্য বিদ্রোহীদের বন্দী করলে ব্রিটিশ কমিশনার ডেভিড স্কট গোমধর সহ অন্যান্য বন্দীদের সাত বৎসরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। কিন্তু হরনাথের সহায়তায় গোমধর শীঘ্রই কারাগার হতে পলায়ন করেন। তবে গোমধর আবার ব্রিটিশ হস্তে বন্দী হন এবং বঙ্গদেশের রংপুর জেলে তাকে সাত বৎসর রাখা হয়। প্রথমে ইংরেজ সরকার গোমধরকে ফাঁসী দেওয়ার চিন্তা করলেও তার অল্প বয়স বিবেচনা করে কারাগারে রাখারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। রংপুর জেল হতে গোমধর কোথায় গিয়েছিলেন তা জানা যায়নি।

তিরুৎ সিংহের বিদ্রোহ: ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আধিপত্য স্থাপনের পর ইংরেজ খাসিয়া পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সুরমা উপত্যকার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে রানির নিকট হতে নংঘৌর-এর মধ্য দিয়ে এক রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রথমে খাসি সিয়েম তিরুৎ সিংহ তাতে অনুমতি দান করলেও ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা এপ্রিল তিরুৎ সিংহ তার খাসিয়া অনুচর নংঘৌতে কোম্পানীর জনগণের উপর আক্রমণ চালিয়ে দুইজন ইংরেজ এবং ৬০ জন ভারতীয় সিপাহীর মৃত্যু ঘটান এবং খাসিয়া পাহাড়ে ইংরেজদের প্রবেশে বাধাদানের জন্য প্রচুর সৈন্য মোতায়েন করেন। কিন্তু ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই জানুয়ারি তিরুৎ সিংহ পরাজিত হয়ে ইংরেজদের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। এর ফলে খাসিয়া পাহাড় ব্রিটিশের হস্তগত হয়ে যায়।

অন্যান্য বিদ্রোহ: এদিকে রংপুর কারাগার হতে পলায়ন করে ধনঞ্জয় পিয়লী বরগোঁহাই মটক রাজ্যে প্রবেশ করে পুনরায় ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আয়োজন করে। বদন ফুকনের পুত্র পিয়লী বরফুকন তার সঙ্গী হন। ঐ বিদ্রোহে তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন রূপচাঁদ কোয়র, দেওরাম দিহিঙ্গীয়া বরুয়া প্রমুখ। বিদ্রোহীরা মোরামারিয়া, চিংফৌ, গারো, খামতি, খাসিয়া, নাগা ও মণিপুর পাহাড়ের লোকদের বিদ্রোহে সামিল হতে আহ্বান জানায়। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে তাদের বিদ্রোহ আরম্ভ হয় কিন্তু ক্যাপ্টেন নিউভেলের নিকট পরাজিত হয়ে চিংফৌরা পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়। অতঃপর বিদ্রোহীরা রংপুরের দিকে অগ্রসর হবার চেষ্টা করে সফল হতে পারেনি। প্রায় চারশত বিদ্রোহী রংপুর আক্রমণ করে, কিন্তু রংপুরের নিকট তারা ব্রিটিশের হাতে ধরা পড়ে। বিচারে পিয়লী বরফুকন, জিউরাম, রূপচাঁদ কোঁয়র, দেওরাম দিহিঙ্গীয়া ডেকা এবং হরনাথের ফাঁসীর আদেশ হয়। চেরাপুঞ্জির কমিশনার আদালতে পিয়লী বরকুফন এবং জিউরামের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে, অবশিষ্ট দুইজনকে চৌদ্দ বছরের জন্য নির্বাসন দণ্ড দেওয়া হয়। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে শিবসাগরে পিয়লী বরফুকন এবং জিউরামের ফাঁসী হয়।

প্রশ্ন ৫। আসামে প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিক্রিয়া সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা,

আসামে স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে যা জানো লেখ।

অথবা,

আসামে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের (সিপাহী বিদ্রোহের) জন্য দায়ী উপাদানসমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা,

আসামে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহে মণিরাম দেওয়ান এবং অন্যান্য নেতৃবর্গের ভূমিকা আলোচনা কর।

উত্তরঃ গভর্নর-জেনারেল লর্ড ডালহৌসীর স্বত্ববিলোপ নীতির বিরুদ্ধে ভারতের বহু করদ রাজ্যের রাজারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ আরম্ভ করেছিল। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহকে অনেকে ঐতিহাসিক ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ আখ্যা দিয়েছিলেন। এই সিপাহী বিদ্রোহের প্রভাব আসামের উপরও পড়েছিল।

১৮২৬ খ্রিস্টাব্দের ইয়াণ্ডাবুর সন্ধির দ্বারা আসামে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর হতেই ইংরেজ-বিরোধী নানা ষড়যন্ত্র গড়ে উঠতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে অভিজাত সম্প্রদায়ের কিছুসংখ্যক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি; যেমন — গোমধর কোঁয়র, পিয়লী ফুকন প্রমুখ এর নেতৃত্ব দান করেন।

নববিজিত আসাম রাজ্যের সুবিধার্থে অহোম বংশের পুরন্দর সিংহকে ১৮৩৩ সালে উত্তর-পূর্ব আসামের শাসনভার অর্পণ করা হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে জেনারেল জেকিন্সের আমলে পুরন্দর সিংহকে সিংহাসনচ্যুত করে উত্তর-পূর্ব আসামকে কোম্পানীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আনা হয়। পুরন্দর সিংহের সিংহাসনচ্যুতি আসামের জনমানসে এক বিরাট অসন্তোষের সৃষ্টি করে। অসন্তুষ্ট অভিজাতগণ তখন ভূতপূর্ব রাজা চন্দ্রকান্ত সিংহ ও পুরন্দরের উত্তরাধিকারীদের নেতৃত্বে ইংরেজ-বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

অহোম অভিজাতদের মধ্যে যখন অসন্তোষের আগুন বিস্তার লাভ করছিল তখন মণিরাম বরুয়া তাদের নেতৃত্ব দান করেন। তিনি ব্রিটিশ প্রদত্ত দেওয়ান পদ পরিত্যাগ করেন। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সদর আদালতের ইংরেজ বিচারপতি মিঃ এ. জে. মিলস্ আসামে আসেন। মণিরাম আসামের তৎকালীন অবস্থা বর্ণনা এবং কন্দর্পেশ্বর সিংহকে রাজ্য প্রত্যর্পণ করার অনুরোধ করে এক স্মারকলিপি প্রদান করে ব্যর্থ হন। এই ঘটনার পর মণিরাম ইংরেজদের শত্রুতে পরিণত হন।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মে মিরাটে ভারতীয় সিপাহীরা মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহকে ভারতের সম্রাট বলে ঘোষণা করে। মণিরাম তখন কলকাতায় ছিলেন। এই ঘটনা তাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করে। তিনি সঙ্কল্প করলেন যে, সশস্ত্র বিদ্রোহের দ্বারা তিনি ব্রিটিশকে আসাম হতে বিতাড়িত করবেন। তিনি কলকাতা হতে কন্দর্পেশ্বর সিংহ, পিয়লী বরুয়া এবং আরও কয়েকজনের কাছে আসামেও অনুরূপ বিদ্রোহের আয়োজন করতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখলেন। এদিকে মধু মল্লিক এবং কন্দর্পেশ্বর সিংহও যোড়হাট ও গোলাঘাটস্থিত সিপাহীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। কন্দর্পেশ্বর সিংহকে তার বাসগৃহে বন্দী করা হয়। মণিরামকে কলকাতায় বন্দী করা হয়। পিয়লী বরুয়াকেও বন্দী করা হয়। কন্দর্পেশ্বর সিংহকে বর্ধমানে অন্তরীণ করা হয় এবং মণিরাম দেওয়ান ও পিয়লী বরুয়াকে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে ফেব্রুয়ারি যোড়হাটে প্রকাশ্যে ফাঁসী দেওয়া হয়। এইরূপে আসামে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহ বিফল হয়ে যায়।

প্রশ্ন ৬। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে আসামে মণিরাম দেওয়ানের ভূমিকা বর্ণনা কর।

অথবা,

মণিরাম দেওয়ান সম্বন্ধে যা জানো লেখ।

অথবা,

আসামের প্রতি মণিরাম দেওয়ানের প্রদর্শিত কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদান কর।

অথবা,

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে মণিরাম দেওয়ান কি ভূমিকা পালন করেছিলেন?

উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের সময় আসামে বিদ্রোহের নায়ক ছিলেন পূর্বতন রাজার দেওয়ান বরবরুয়া মণিরাম দেওয়ান। তিনি প্রথমে তহশীলদার এবং পরে সেরেস্তাদার হয়েছিলেন। মণিরাম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একজন কর্মঠ বিষয়া ছিলেন। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি আসাম চা কোম্পানীর বিষয়া নিযুক্ত হয়েছিলেন। পরে ঐ কাজ ত্যাগ করে যোড়হাটের চেনিমরাতে নিজে একখানি চা বাগান আরম্ভ করেন। শিবসাগরের ব্রিটিশ অধিকর্তা টোডী মণিরামকে অন্যান্য ইউরোপীয়দের ন্যায় চা বাগানের জমির ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা দিতে অস্বীকার করে এবং প্রাচীনকালের ভোগ করা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাতিল করে। ফলে মণিরামের পরিবার অত্যন্ত অসুবিধায় পড়ে। আর্থিক সংকট দূর করবার জন্য মণিরাম ইংরেজদের স্মরণাপন্ন হন এবং কন্দর্পেশ্বর সিংহকে আবার অহোম রাজা করবার আবেদন জানান।

মণিরামের আবেদন আসামে নাকচ হলে তিনি ব্রিটিশ সরকারের উচ্চমহলে আর্জি পেশ করবার জন্য কলকাতায় গমন করে গভর্নর-জেনারেলের নিকট আবেদন করেন। ইতিমধ্যে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মে মিরাটে সিপাহী বিদ্রোহ আরম্ভ হলে মণিরাম আসামকে স্বাধীন রাজ্যে পরিণত করার চিন্তা করতে লাগলেন। দূত মারফত আসামে তাঁর অনুচরদের খবর প্রেরণ করেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল সিপাহীদের সহযোগে আসামে মুষ্টিমেয় ইংরেজ শাসককে শেষ করে তিনি কন্দর্পেশ্বর সিংহকেই আসামের রাজা করবেন। এই মর্মে তিনি কন্দর্পেশ্বর সিংহ ও পিয়লী বরুয়াকে পত্র লেখেন। এর পরই আসামের গুয়াহাটী, যোড়হাট, ডিব্ৰুগড়, গোয়ালপাড়ায় সিপাহীদের মধ্যে বিদ্রোহের ভাব জেগে ওঠে। সর্বপ্রথম গোলাঘাটের সিপাহীদের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দিলে কলকাতা হতে ইংরেজ সামরিক অফিসারগণ এসে বিদ্রোহ দমন করেন। এদিকে পিয়লী বরুয়া এবং কন্দর্পেশ্বর সিংহকে লিখিত মণিরামের চিঠি উদ্ধার করে হরনাথ পর্বতীয়া তা শিবসাগরের উপায়ুক্ত ক্যাপ্টেন হলরইদকে প্রদান করলে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৭ই সেপ্টেম্বর মধ্যরাত্রিতে কন্দর্পেশ্বর সিংহকে বন্দী করে বর্ধমানে নির্বাসন দেওয়া হয়। মণিরাম দেওয়ানকেও কলকাতায় বন্দী করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে পিয়লী বরুয়া, মায়ারাম নাজির, পতিরাম বরুয়া, মধু মল্লিক, বাহাদুর গাঁওবুড়া, মরঙ্গীঘোরা গোঁহাই, করমুদ আলী প্রমুখকেও বন্দী করা হয়। বিদ্রোহী সিপাহীদের বরখাস্ত করা হয় এবং কয়েকজনকে নির্বাসনও দেওয়া হয়। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্রোহীদের বিচারকার্য সম্পন্ন হয়। শিবসাগরের উপায়ুক্ত ক্যাপ্টেন চার্লস হলরইদ মণিরাম দেওয়ান এবং পিয়লী বরুয়াকে ফাঁসির আদেশ দেন। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে ফেব্রুয়ারি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই যোড়হাটে মণিরাম দেওয়ান ও পিয়লী বরুয়াকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়।

প্রশ্ন ৭। ব্রিটিশ শাসনে আসামে নূতন রাজস্ব বন্দোবস্তের ফলাফল বর্ণনা কর।

অথবা,

ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে সংঘটিত আসামের বিভিন্ন গণবিদ্রোহের প্রভাব বিস্তার কর।

অথবা,

আসামে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কৃষক বদ্রোহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা,

ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে- 

(ক) ফুলগুড়ি। 

(খ) রঙ্গিয়া।

(গ) লাচিমা। ও 

(ঘ) পাথারুঘাটের কৃষক বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

অথবা,

ঊনবিংশ শতকে আসামে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহসমূহের কারণগুলি আলোচনা কর। এদের ফলাফল কি ছিল?

উত্তরঃ সিপাহী বিদ্রোহের পর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে কোম্পানী শাসনের অবসানক্রমে ভারতে সরাসরি ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ হতে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এক নূতন অধ্যায়ের সূচনা হয়। জনস্বার্থ-বিরোধী ব্রিটিশ সরকারের রাজস্ব নীতি ও কর নীতির বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয়। এই বিদ্রোহ কালক্রমে গণবিদ্রোহের রূপ ধারণ করে। এই সকল বিদ্রোহে ‘রাজমেল’ নামক সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

(ক) ফুলগুড়ি বিদ্রোহ (১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ): ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে নওগাঁ জেলার ফুলগুড়ি অঞ্চলের কৃষক জনগণ পপি চাষ নিষিদ্ধকরণ ও পান-সুপারির উপর কর আরোপের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ আরম্ভ করে। পপি চাষ নিষিদ্ধকরণের পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জনগণের মানসিকতার উপর নজর দেয়নি। অধিকন্তু কৃষক জনগণের আর্থিক অবস্থার উন্নতিকল্পে কোনরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে ফুলগুড়ি অঞ্চলের কৃষক জনগণ ‘রাজমেল’-এর মাধ্যমে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে বিদ্রোহন্মুখ হয়ে পড়ে। তারা ইংরেজ অফিসার লেফটেন্যান্ট সিঙ্গারকে নিহত করে। এই ঘটনাকে ‘ফুলগুড়ি ধাওয়া’ বলা হয়।

(খ) রঙ্গিয়া বিদ্রোহ (১৮৯৩-৯৪): ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে আসামের চীফ কমিশনার স্যার উইলিয়াম ওয়ার্ড রাজস্ব কর ৭০ শতাংশ হতে ৮০ শতাংশ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। ফলে রঙ্গিয়া, লাচিমা ও পাথারুঘাটের রাইয়তগণ করবিরোধী অভিযান আরম্ভ করে। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে ডিসেম্বর রাত্রে প্রায় তিন হাজার বিদ্রোহীর দল রঙ্গিয়ার পুলিশ থানা ঘেরাও করে এবং থানা ধ্বংস করবার হুমকি দেয়। কিন্তু সময়মতো সেনা মোতায়েনের ফলে অবস্থা সামাল দেওয়া হয়। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৬ই জানুয়ারি কামরূপের জেলাশাসক জোকারা পুলিশবাহিনী সহ রঙ্গিয়ায় উপস্থিত হন এবং অনেক বিদ্রোহীকে গ্রেপ্তার করেন। ১০ ডিসেম্বরও তদ্রূপ ঘটনা ঘটে। সমগ্র রঙ্গিয়ার সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয় এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ফলে অবস্থা স্বাভাবিক হয়।

(গ) লাচিমা বিদ্রোহ (১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ): ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২১শে জানুয়ারি বরপেটা জেলার সরুক্ষেত্রি মৌজার লাচিমায় একদল মারমুখী রায়ত কর – সংগ্রহকারী একজন মৌজাদার ও একজন মণ্ডলকে প্রহার করে। বরপেটার মহকুমা শাসক মাধবচন্দ্র বরদলৈ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি অন্তত ৭৫ জন বিদ্রোহীকে গ্রেপ্তার করে ক্যাম্পে আনলে প্রায় তিন হাজার বিদ্রোহী বন্দীদের মুক্তির দাবিতে ক্যাম্প ঘেরাও করে এবং ক্যাম্প ও রেস্ট হাউস পুড়িয়ে দেবার হুমকি দেয়। বরপেটার মহকুমা শাসক মধ্যরাত্রে ক্যাম্প পরিত্যাগ করেন এবং জেলাশাসকের সাহায্য প্রার্থনা করেন। পরদিন সন্ধ্যায় জেলাশাসক মেক ক্যাব সিপাহী ও সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ৫৯ জন বিদ্রোহী নেতাকে গ্রেপ্তার করেন। পরে প্রায় ৬ হাজার মানুষ নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে জেলাশাসকের ক্যাম্পে সমবেত হন। জেলাশাসক গুলির আদেশ দিলে সমবেত জনতা ছত্রভঙ্গ হয়।

(ঘ) পাথারুঘাটের বিদ্রোহ (১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দ): ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮শে জানুয়ারি দরং জেলার মঙ্গলদৈ মহকুমার পাথারুঘাট নামক স্থানে এইরূপ একটি বিদ্রোহ সংগঠিত হয়েছিল। জেলাশাসক এই অঞ্চল সফরে আসবেন জেনে বিরাট সংখ্যক জনতা পাথরুঘাটে সমবেত হন। তারা জেলাশাসককে করে তাদের অভাব-অভিযোগ জানায়। কিন্তু জেলাশাসক তাদের ছত্রভঙ্গ করবার আদেশ দেন। জনতা মারমুখী হয়ে ওঠে। জেলা প্রশাসনের চেষ্টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

ফলাফল: কৃষক বিদ্রোহের প্রধান ফলাফলসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) কৃষক বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকার কৃষিকর হ্রাস করতে বাধ্য হয়।

(খ) এই সকল বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকার আইন-শৃঙ্খলা দূর করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ফলে আসামের আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি ঘটে।

(গ) ব্রিটিশ সরকার ভবিষ্যতে যাতে এইরূপ বিদ্রোহ না ঘটে এই উদ্দেশ্যে ‘মেল’ – গুলিকে নানা প্রকারে নিষ্ক্রিয় করতে আরম্ভ করে।

প্রশ্ন ৮। আসামে অসহযোগ আন্দোলন সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা,

অসহযোগ আন্দোলনের কার্যসূচী কি ছিল? আসামে এর প্রভাব সম্পর্কে লেখ।

উত্তরঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪-১৯ খ্রিস্টাব্দ) ব্রিটিশের সংকটজনক পরিস্থিতি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময় মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসে কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের জালিয়ানওয়ালাবাগের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন ও বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভের জন্য বহু সত্যাগ্রহী বিভিন্ন রকম শাস্তিও পেয়েছিলেন। অবশেষে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন।

মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন আসামেও ছড়িয়ে পড়ে। আসাম অ্যাসোসিয়েশন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ডাকে সাড়া দিয়ে আসামবাসীকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করতে আবেদন জানায়। এই আন্দোলন আরম্ভ করবার জন্য গান্ধীজি ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে আসাম ভ্রমণ করেন। গান্ধীজির আহ্বানে সমগ্র ব্রহ্মপুত্র ও সুরমা উপত্যকার স্কুল, কলেজ প্রভৃতি বর্জন করা হয়। গুয়াহাটীতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলাতি বস্ত্র দাহ করে বিদেশি বস্ত্র বর্জন আরম্ভ হয়। তরুণরাম ফুকন, নবীনচন্দ্র বরদলৈ, রোহিণী চৌধুরী ও মোহম্মদ তায়েবউল্লা প্রমুখ নেতাগণ আসামে এই সময়ে আন্দোলন পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন। মহিলা নেত্রীবৃন্দের মধ্যে তরুণরাম ফুকনের পত্নী এবং তাঁহার বিধবা ভগ্নী গিরীজা দেবী এবং নবীনচন্দ্র বরদলৈয়ের পত্নী হেমন্তকুমারী দেবী এবং তাঁহার বিধবা ভগ্নী ধর্মদাসুন্দরী দেবী আসামের অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন। উল্লিখিত নেতৃবৃন্দের প্রায় সকলেই কারাবরণ করেন।

১৯২১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে আসামের ছাত্রগণ নিখিল ভারত ছাত্র সংস্থার প্রস্তাব অনুসারে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বয়কট করে। অধিক সংখ্যক ছাত্র স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামাঞ্চলে অহসযোগ আন্দোলন বিস্তার করা। অসহযোগ আন্দোলনে আসামের ছাত্রসমাজের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। বিদেশি দ্রব্য বয়কট, বিলাতি কাপড় বর্জন, খদ্দর গ্রহণ, মদ ও আফিং নিষিদ্ধকরণ প্রভৃতি হল অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান কর্মসূচী। এই আন্দোলন বহুলাংশে সফল হলেও ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধী আন্দোলন স্থগিত রাখলে আসামেও আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু এই আন্দোলন আসামবাসীর মনে স্বাধীনতার স্পৃহা জাগরিত করেছিল।

প্রশ্ন ৯। আসামে আইন অমান্য আন্দোলন সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে সারা দেশে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়। এই বৎসর আসামেও আইন অমান্য আন্দোলন আরম্ভ হয়। আন্দোলনকারীগণ লবণ এবং আসামের বনাঞ্চলের উপর থাকা নিষেধাজ্ঞাসহ সকল প্রকার দমন নীতির প্রতিবাদ করেছিলেন। আন্দোলনকারীগণ সরকারি অফিস-আদালত বয়কটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। আসামে আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত্বদান করেন অমিয় কুমার দাস, সিদ্ধিনাথ শৰ্মা, দেবেশ্বর শর্মা, চন্দ্রপ্রভা শইকিয়া, দুর্গাপ্রভা বরা প্রমুখ। ব্রিটিশ সরকার বিষ্ণুরাম মেধিসহ অনেক নেতৃবর্গকে বন্দী করেন।

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আসামের শিক্ষা অধিকর্তা ব্যানিংহামের নির্দেশের প্রতিবাদে দলে দলে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল-কলেজ বর্জন করে। এই সময় স্বদেশ অনুরাগীরা গুয়াহাটীতে কামরূপ একাডেমি এবং করিমগঞ্জে পাবলিক হাইস্কুল স্থাপন করেন। তেজপুর, ডিব্রুগড় প্রভৃতি স্থানেও স্বদেশী স্কুল স্থাপিত হয়। তথাপি ছাত্র আন্দোলন চলতে থাকে। কালক্রমে ছাত্র আন্দোলন এবং আইন অমান্য আন্দোলন একাকার হয়ে যায়। আইন অমান্য আন্দোলন ছিল অধিক বিপ্লবাত্মক এবং সরকারকে অচল করে দেওয়ার প্রচেষ্টা।

১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারতের সঙ্গে আসামেও দ্বিতীয় পর্যায়ের আইন অমান্য আন্দোলন আরম্ভ হয় এবং ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলেছিল। কংগ্রেস সেবাদল কর্মীরা ঐ আইন অমান্য আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। আইন অমান্য আন্দোলন কার্যত ব্যর্থ হলেও এই আন্দোলন আসামবাসীর মনে স্বাধীনতা-স্পৃহা জাগরিত করেছিল।

মানচিত্র অঙ্কনকার্য

প্রশ্ন ১। আসামের একখানা মানচিত্র অঙ্কন করে ঐতিহাসিক স্থানসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ 

ঐতিহাসিক স্থানসমূহের সংকেত:

১। গড়গাঁও — মধ্যযুগে আসামের রাজধানী।

২। চরাইদেও — অহোমদের প্রথম রাজধানী।

৩। হাজো — হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ ঐক্যের প্রতীক।

৪। ফুলগুড়ি — কৃষক বিদ্রোহ।

৫। লাচিমা — কৃষক বিদ্রোহ।

৬। পাথারুঘাট — কৃষক বিদ্রোহ।

৭। রঙ্গিয়া — কৃষক বিদ্রোহ।

৮। খাসপুর — কাছারী রাজার রাজধানী।

৯। লাতু — সিপাহী বিদ্রোহ আবির্ভূত স্থান।

১০। মোহনপুর — সিপাহী বিদ্রোহ আবির্ভূত স্থান।

প্রশ্ন ২। আসামের একখানা মানচিত্র অঙ্কন করে পুরাতত্ত্ব নমুনা আবিষ্কার হওয়া স্থানসমূহ দেখাও।

উত্তরঃ 

পুরাতত্ত্ব আবিষ্কৃত স্থানসমূহের সংকেত:

১। কামাখ্যা মন্দির — অহোম স্থাপত্য নিদর্শন।

২। আমবাড়ি (গুয়াহাটি) —পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন।

৩। কুন্ডলনগর (সদিয়ার নিকট) — প্রাচীন ইটের দেয়াল।

৪। জয়সাগর — অহোম রাজাদের স্থাপত্যকীর্তি।

৫। শিবসাগর — শিবমন্দির, রংঘর, কেরেংঘর, তলাতলঘর।

৬। তেজপুর — দহপার্বতী মন্দির (স্থাপত্যকীর্তি)।

৭। গোয়ালপাড়া — সূর্যপাহাড় (স্থাপত্য নিদর্শন)।

প্রশ্ন ৩। আসামের একটি রেখা মানচিত্র আঁক এবং শদিয়া, হাজো, কোকরাঝার, ডিফু এবং শিলচরের স্থান নির্ণয় কর।

উত্তরঃ 

১। শদিয়া।

২। হাজো।

৩। কোকরাঝাড়।

৪। ডিফু।

৫। শিলচর।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top