Class 12 History Chapter 6 পর্যটকদের দৃষ্টিতে

Class 12 History Chapter 6 পর্যটকদের দৃষ্টিতে (দশম থেকে সপ্তদশ শতক) Question Answer in Bengali Medium | AHSEC Class 12 History Question Answer, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Assam Board Class Class 12 History Chapter 6 পর্যটকদের দৃষ্টিতে (দশম থেকে সপ্তদশ শতক) Notes and select needs one.

Class 12 History Chapter 6 পর্যটকদের দৃষ্টিতে (দশম থেকে সপ্তদশ শতক)

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 History Chapter 6 পর্যটকদের দৃষ্টিতে (দশম থেকে সপ্তদশ শতক) Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 12 History Chapter 6 পর্যটকদের দৃষ্টিতে (দশম থেকে সপ্তদশ শতক) These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 History Chapter 6 পর্যটকদের দৃষ্টিতে (দশম থেকে সপ্তদশ শতক) Solutions for All Subjects, You can practice these here.

পর্যটকদের দৃষ্টিতে (দশম থেকে সপ্তদশ শতক)

দ্বিতীয় খণ্ড

Chapter: 6

HISTORY

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। আলবেরুণী কোন দেশের লোক ছিলেন?

উত্তরঃ খোয়ারিজম বা বর্তমান উজবেকিস্তানের।

প্রশ্ন ২। আলবেরুণী কখন জন্মগ্রহণ করেন?

উত্তরঃ ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

প্রশ্ন ৩। ‘কিতাব-উল-হিন্দ’ গ্রন্থের লেখক কে?

উত্তরঃ আলবেরুণী।

প্রশ্ন ৪। ‘‘কিতাব-উল-হিন্দ’ গ্রন্থটি কতটি অধ্যায়ে বিভক্ত ছিল?

উত্তরঃ ৪০টি অধ্যায়ে।

প্রশ্ন ৫। ইবন্ বতুতা কোন্ দেশের পর্যটক ছিলেন?

উত্তরঃ মরোক্কোর।

প্রশ্ন ৬। ইবন্ বতুতা কখন ভারত পর্যটনে আসেন?

উত্তরঃ ১৩৩২-৩৩ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৭। ‘রিহ্লা’ গ্রন্থের লেখক কে?

উত্তরঃ ইবন বতুতা।

প্রশ্ন ৮। মেট্রোলজি (Metrology) কি?

উত্তরঃ পরিমাপ-সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান।

প্রশ্ন ৯। বার্নিয়ার কোন দেশের পর্যটক ছিলেন?

উত্তরঃ ফ্রান্সের।

প্রশ্ন ১০। কার রাজত্বকালে বার্নিয়ার ভারত ভ্রমণে আসেন?

উত্তরঃ শাজাহান ও ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে।

প্রশ্ন ১১। দক্ষিণ ভারতের বাণিজ্য ও সমাজ বিষয়ে টীকা লিখনকারী পর্তুগীজ লেখকের নাম কি?

উত্তরঃ ডুরেট বার্বোচা।

প্রশ্ন ১২। Travels in the Mughal Empire নামক গ্রন্থের লেখক কে?

উত্তরঃ বার্নিয়ার ফ্রাঙ্কোস।

প্রশ্ন ১৩। ‘ডল্ফ’ কাকে বলা হত?

উত্তরঃ ঘোড়াচালিত ডাক ব্যবস্থাকে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। আলবেরুণী কোথায় বাস করতেন? তিনি কিভাবে গজনী পৌঁছেছিলেন?

উত্তরঃ আলবেরুণী খোয়ারিজম অর্থাৎ বর্তমান উজবেকিস্তানে বাস করতেন। ১০১৭ খ্রিস্টাব্দে গজনীর সুলতান মামুদ খোয়ারিজম আক্রমণ করেন এবং তিনি অসংখ্য কবি ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের গজনীতে নিয়ে আসেন। আলবেরুণী তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন।

প্রশ্ন ২। আলবেরুণীর রচনার দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ আলবেরুণীর রচনার দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

(ক) আলবেরুণীর আরবি ভাষায় লিখতেন।

(খ) তিনি কোন কিছু লিখতে সমালোচনামূলক পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। প্রত্যেক অধ্যায়ে তিনি একটি প্রশ্ন দিয়ে আরম্ভ করতেন এবং তার বিশদ ব্যাখ্যা দিতেন।

প্রশ্ন ৩। ইবন বতুতা ভ্রমণ অনুরাগী ছিলেন কেন? তার দুটি কারণ দাও।

উত্তরঃ ইবন বতুতার ভ্রমণ অনুরাগী হবার কারণ দুটি নিম্নরূপ:

(ক) ইবন বতুতা ভ্রমণ ভালোবাসতেন। তিনি নুতন জগৎ ও মানুষের খোঁজে দূর-দূরান্ত ঘুরে বেড়াতেন।

(খ) ইবন বতুতা মনে করতেন যে পুঁথিগত জ্ঞান অপেক্ষা ভ্রমণ ও পর্যটনের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন ৪। চতুর্দশ শতকে পর্যটন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কেন? দুটি কারণ দাও।

উত্তরঃ চতুর্দশ শতকে পর্যটন ঝুঁকিপূর্ণ হবার কারণ দুটি নিম্নরূপ:

(ক) সুদীর্ঘ যাত্রাপথে দস্যু-ডাকাতের ভয় ছিল।

(খ) পর্যটকগণ সাধারণত গৃহমুখী ছিলেন। তারা অসুস্থতা বোধ করতেন এবং অসুস্থ হতেন।

প্রশ্ন ৫। “ইবন বতুতা একজন দৃঢ়চিত্ত পর্যটক ছিলেন।” উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ ইবন বতুতা দেশ ভ্রমণে ভীতু ও পরিশ্রান্ত ছিলেন না। তিনি উত্তর আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া, মধ্য এশিয়ার বহু অংশ, ভারত উপমহাদেশ এবং চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দীর্ঘকাল ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। এই কারণে তাঁকে দৃঢ়প্রত্যয়ী পর্যটক বলা হয়।

প্রশ্ন ৬। জীন-ব্যাপটিস্ট টেভারনিয়ার কে ছিলেন?

উত্তরঃ জীন-ব্যাপটিস্ট টেভারনিয়ার একজন ফরাসি স্বর্ণকার ছিলেন। তিনি ছয়বার ভারত ভ্রমণ করেন। তিনি বিশেষত ভারতের বাণিজ্যিক কার্যকলাপ দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। তিনি ভারতবর্ষকে ইরান ও অটোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।

প্রশ্ন ৭। আলবেরুণী কিভাবে গ্রিক দার্শনিকদের রচনাবলী সম্পর্কে জেনেছিলেন?

উত্তরঃ আলবেরুণী গ্রিক ভাষা জানতেন না। তা সত্ত্বেও তিনি গ্রিক দার্শনিকদের রচনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তিনি তাঁদের রচনাসমূহের আরবি অনুবাদ পড়েছিলেন।

প্রশ্ন ৮। ভারতের ভ্রমণ বৃত্তান্ত লিখতে আলবেরুণীর সম্মুখীন হওয়া দুইটি সমস্যা উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতের ভ্রমণ বৃত্তান্ত লিখতে আলবেরণীর সম্মুখীন হওয়া দুটি সমস্যা নিম্নরূপ:

(ক) আলবেরুণী ভাষা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন।

(খ) ভারতীয় ঐতিহ্য বা পরম্পরা এবং ধর্মীয় পদ্ধতিও আলবেরুণীর নিকট একটি বড় সমস্যা ছিল।

প্রশ্ন ৯। সতেরো শতকে ভারতে বিভিন্ন প্রকার নগরের নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সতেরো শতকে ভারতে বিভিন্ন প্রকার নগরসমূহ হল—

(ক) নির্মাণ বা প্রস্তুতকারী নগর। 

(খ) বাণিজ্যিক শহর।

(গ) বন্দর নগর।

(ঘ) ধর্মীয় নগর। 

(ঙ) তীর্থস্থানযুক্ত নগর।

প্রশ্ন ১০। ইবন বতুতার বর্ণনা করা ভারতের দুই প্রকার ডাকব্যবস্থা কি কি ছিল?

উত্তরঃ ইবন বতুতা বর্ণীত ভারতের দুই প্রকার ডাকব্যবস্থা নিম্নরূপ:

(ক) ঘোড়াচালিত ডাকব্যবস্থা বা ‘ডল্ক’।

(খ) পদব্রজে চালিত ডাকব্যবস্থা।

প্রশ্ন ১১। দশম শতক থেকে সতেরো শতক পর্যন্ত ভারতে আগত যে-কোন দুইজন পর্যটকের নাম লেখ।

উত্তরঃ দশম শতক থেকে সতেরো শতক পর্যন্ত ভারতে আগত দুইজন পর্যটকের নাম নিম্নরূপ:

(ক) খোয়ারিজম থেকে আগত আলবেরুণী।

(খ) মরোক্কো থেকে আগত ইবন বতুতা।

প্রশ্ন ১২। ‘হিন্দু’ শব্দের উৎপত্তি লেখ।

উত্তরঃ ‘হিন্দু’ শব্দটি প্রাচীন পারসি শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে সিন্ধু নদীর পূর্ব অঞ্চলে ব্যবহার করা হত। আরবগণ পারসিগণের মতো এই অঞ্চলকে ‘অলহিন্দ’ এবং এর বাসিন্দাগণকে ‘হিন্দু’ বলেছিল। পরবর্তীকালে তুর্কীগণও তাদের ‘হিন্দু’ ও ‘হিন্দুস্থান’ বলেছিল।

প্রশ্ন ১৩। ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থটির অনুবাদক ইংরাজ দুজনের নাম লেখ। তাঁরা এই অনুবাদের কাজটি করে সম্পূর্ণ করেন?

উত্তরঃ আইন-ই-আকবরী গ্রন্থটির ইংরাজ অনুবাদক দুজনের নাম নিম্নরূপ:

(ক) হেনরী ব্লচমেন (১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে)।

(খ) এইচ. এস. জারেট (১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে)।

তাঁরা ১৮৯১-১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অনুবাদের কাজটি সম্পূর্ণ করেন।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। মানুষ কি উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করত? যে-কোন চারটি উদ্দেশ্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ মানুষ সাধারণত নিম্নোক্ত কারণে ভ্রমণ করত:

(ক) কাজের বা কর্মসংস্থানের খোঁজে।

(খ) প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবার জন্য।

(গ) অভিযান মানসিকতাকে সন্তুষ্ট করবার জন্য।

(ঘ) ব্যবসাবাণিজ্য, সেনাবাহিনী, পুরোহিত, তীর্থযাত্রা প্রভৃতি বহুমুখী উদ্দেশ্য সাধনের জন্য।

প্রশ্ন ২। দশম শতক থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে উপমহাদেশ ভ্রমণ করা চারজন পর্যটকের নাম লেখ। তারা কোথা থেকে এসেছিলেন?

উত্তরঃ দশম শতক থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে উপমহাদেশ ভ্রমণকারী চারজন পর্যটকের নাম নিম্নরূপ:

(ক) আব্দুল রজ্জাক সমরখণ্ডী (হীরাট থেকে আগত কূটনীতিবিদ্)।

(খ) আলবেরুণী (উজবেকিস্তান থেকে আগত)।

(গ) ইবন বতুতা (মরোক্কো থেকে আগত)।

(ঘ) ফ্রাঙ্কো বার্নিয়ার (ফ্রান্স থেকে আগত)।

প্রশ্ন ৩। বার্নিয়ারের মতে ভূমির উপর রাজকীয় মালিকানার কুফলসমূহ কি কি ছিল? যে-কোন চারটি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ বার্নিয়ার ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন। ভূমির উপর রাজকীয় মালিকানা রাষ্ট্র ও জনগণ উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। ভূমির রাজকীয় মালিকানা অর্থনীতি ও সমাজের উপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে। এর কুপ্রভাবগুলি নিম্নরূপ:

(ক) জমিদারগণ তাদের জমির মালিকানা সন্তান-সন্ততির উপর অর্পণ করতে পারত না।

(খ) ফলে উন্নত জমিদারশ্রেণীর প্রাদুর্ভাব প্রতিহত করত।

(গ) তা কৃষির বিনাশ করেছিল।

(ঘ) ফলে কৃষকশোষণ বৃদ্ধি করেছিল।

(ঙ) ফলে সমাজের সকল শ্রেণীর জীবনযাত্রার মানদণ্ড হ্রাস করেছিল।

প্রশ্ন ৪। আলবেরুণীর জীবন সংক্ষেপে চিত্রণ কর।

উত্তরঃ আলবেরুণী একজন বিখ্যাত পর্যটক ছিলেন। গজনীর সুলতান মামুদের ভারত আক্রমণের সময় আলবেরুণী তাঁর সহচর ছিলেন। আলবেরুণী ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান উজবেকিস্থানের খোয়ারিজাম নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। অতি অল্পদিনের মধ্যেই তিনি সিরিয়, আরবি, পারসি, হিব্রু ও সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। কিন্তু তিনি গ্রিক ভাষা না জানার জন্য আরবি ভাষায় অনূদিত গ্রন্থের মাধ্যমে প্লেটো ও অন্যান্য গ্রিক দার্শনিকগণের রচনার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। ১০১৭ খ্রিস্টাব্দে গজনীর সুলতান মামুদ খিরা রাজ্য আক্রমণ করেন এবং রাজ্যের বুদ্ধিজীবীগণের সঙ্গে আলবেরণীকেও বন্দী করে গজনী নিয়ে যান। গজনীতে ৭০ বছর বয়সে আলবেরুণীর মৃত্যু হয়।

প্রশ্ন ৫। আলবেরুণীর মতে কি কি প্রতিবন্ধকতা তাঁর উপলব্ধিকে প্রতিহত করেছিল?

অথবা,

আলবেরুনী ভারতের বিবরণ দিতে গিয়ে যে সমস্ত অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলেন তার যে-কোন দুটির উল্লেখ কর।

উত্তরঃ আলবেরুণী তাঁর ভ্রমণকালে সম্ভাব্য সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। তিনি অনুভব করেছিলেন যে তাঁর উপলব্ধিতে নানাপ্রকার বাধাবিপত্তি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। এই প্রতিবন্ধকতাসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) এই দেশের ভাষা ছিল একটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা। তিনি সংস্কৃত এবং আরবি ও পারসি ভাষার মধ্যে বিরাট ব্যবধান দেখতে পেয়েছিলেন। এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ তাঁর পক্ষে দুঃসাধ্য ছিল।

(খ) আলবেরুণী ভারতের বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে বিরাট ব্যবধান দেখেছিলেন।

(গ) তৃতীয় প্রতিবন্ধকতা হল স্থানীয় লোকদের আত্মমগ্নতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা।

প্রশ্ন ৬। ইবন বতুতা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ইবন বতুতা আফ্রিকার মরক্কো দেশের একজন পর্যটক ছিলেন। তিনি মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালে ভারত আক্রমণ করেন। সুলতান তাঁকে কাজী পদে নিয়োগ করেন এবং দূত রূপে চীনদেশে প্রেরণ করেন। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত চরিত্র ভালো ছিল না। তিনি বিচারকের পদে উৎকোচ গ্রহণ করতেন। দেশভ্রমণ তাঁর নেশা ছিল। মরক্কোর তাঞ্জিয়ায় তিনি ১৪০৪ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

ভারত ভ্রমণ বৃত্তান্ত: আরবি ভাষায় লিখিত ইবন বতুতার ভ্রমণ কাহিনি ‘রিহ্লা’ নামক গ্রন্থে ১৪ শতকের ভারতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। স্থলপথে মধ্য এশিয়া ভ্রমণ করে তিনি ১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু প্রদেশে উপস্থিত হন। সেখানে তিনি শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক দিল্লির সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের বিষয়ে শুনে মুলতান ও উচ (Uch) হয়ে দিল্লি যাত্রা করেন। সুলতান তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে ইবন বতুতাকে দিল্লির কাজী পদে নিযুক্তি দেন। কিন্তু উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগে সুলতান তাঁকে কারাদণ্ড দেন।

চতুর্দশ শতকে ইবন বতুতা দিল্লিতে উপস্থিত হওয়ার সময় উপমহাদেশখানি পূর্বে চীন, উত্তর-পশ্চিমে আফ্রিকা ও পশ্চিমে ইউরোপের এক বৃহৎ অঞ্চলে গোলকীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি অংশ হয়ে পড়েছিল। ইবন বতুতা নিজেও এদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মস্থানসমূহ পরিভ্রমণ করেছিলেন। শিক্ষিত মানুষের সঙ্গে থেকে মত বিনিময় করেছিলেন। তাঁর লেখনীতে ধর্মীয় পণ্ডিতগণের কথা, রাজার নিষ্ঠুরতা ও পরোপকারিতা প্রভৃতি থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন রীতিনীতির কথা সন্নিবিষ্ট হয়েছে।

ইবন বতুতা উল্লেখ করেছেন যে, যে-কোন একজন সম্পদশালী দক্ষ পর্যটকের জন্যই উপমহাদেশখানার নগরসমূহ উত্তেজনায় ভরপুর ছিল। তাঁর লিখিত বিবরণে জানা যায় যে, নগরের সকল রাস্তা জনসমাগমপূর্ণ ছিল ও বিভিন্ন জাঁকজমকীয় সামগ্রীতে নগরের বাজারসমূহ পরিপূর্ণ ছিল। তিনি ভারতের মধ্যে দিল্লিই সর্বাপেক্ষা জনবসতিপূর্ণ ছিল বলে জানান। অবশ্য মহারাষ্ট্রের দৌলতাবাদ আয়তনের দিক দিয়ে দিল্লির সমান ছিল।

এদেশের বণিকগণের উৎসাহ দানের জন্য রাজ্য প্রশাসন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। প্রায় সকল বাণিজ্যিক রাস্তায় সুন্দর বিশ্রামঘর ছিল। ইবন বতুতা বণিকগণকে তথ্যাদি, টাকাপয়সা ও দ্রব্যসামগ্রী প্রেরণ করবার জন্য উপযুক্ত ডাকব্যবস্থা দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন। ডাকব্যবস্থা এত দক্ষ ছিল যে চিঠিপত্র সিন্ধু থেকে দিল্লি পৌঁছতে ৫০ দিন সময় লেগেছিল।

প্রশ্ন ৭। জাতিভেদ প্রথা বিষয়ে আলবেরুণীর ব্যাখ্যা কিরূপ ছিল?

উত্তরঃ আলবেরুণী অন্যান্য সমাজের সঙ্গে তুলনা করে ভারতীয় জাতিভেদ প্রথার ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি প্রাচীন পারসি সমাজের চারটি সামাজিক শ্রেণীর কথা উল্লেখ করেছেন। এইগুলি নিম্নরূপ:

(ক) নিট্ ও রাজকোয়রগণ।

(খ) পুরোহিত ও আইনজ্ঞগণ।

(গ) চিকিৎসক, জ্যোতির্বিদ ও অন্যান্য বিজ্ঞানীগণ।

(ঘ) কৃষকগণ।

অন্যদিকে তিনি উল্লেখ করেছেন যে ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় সামাজিক শ্রেণী বিভাজন ছিল। অবশ্য মুসলমান সমাজে সকল মানুষকে সমান বলে গণ্য করা হয়। কেবল ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলার উপর পার্থক্য ছিল।

জাতিভেদ প্রথা সম্পর্কে ব্রাহ্মণ মতবাদকে গ্রহণ করলেও তিনি হিন্দু সমাজে প্রচলিত জাতিভেদ ও বিশেষ করে অস্পৃশ্যতার ধারণা লক্ষ্য করেছিলেন। হিন্দু সমাজে কোন ব্যক্তি যদি ঘটনাক্রমে অশুচি হয়, তাহলে সে নিজ কর্মের দ্বারা পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারত। সূর্যের আলো যেমন বায়ু পরিষ্কার করে, লবণ যেমন জল প্রদূষণ রোধ করে, তা যদি না হয় তবে পৃথিবীতে জীব থাকা কঠিন হয়ে যাবে। আলবেরুণীর মতে অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ প্রথা ইত্যাদি প্রকৃতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

প্রশ্ন ৮। আলবেরুণীর বর্ণব্যবস্থা সম্পর্কে কি ব্যাখ্যা ছিল?

উত্তরঃ বর্ণব্যবস্থায় সবচেয়ে উচ্চবর্ণ হল ব্রাহ্মণ। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুসারে তারা ব্রহ্মার মস্তক থেকে সৃষ্টি। ব্রহ্মার অন্য একটি নাম হল প্রকৃতি এবং মস্তক হল শরীরের সবচেয়ে উচ্চস্থান। সেইভাবে ব্রাহ্মণগণও সকলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। দ্বিতীয় বর্ণ হল ক্ষত্রিয়, যারা ব্রহ্মার কাঁধ ও বাহু হতে সৃষ্টি হয়েছে। তারা ব্রাহ্মণগণের প্রায় সমপর্যায়। ব্রহ্মার উরুদেশ হতে বৈশ্য এবং পা হতে শূদ্রগণের সৃষ্টি হয়েছিল। শেষ বর্ণদ্বয়ের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নেই। উভয় বর্ণই একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ও বসবাস করতে পারে।

প্রশ্ন ৯। ইবন বতুতা প্রদত্ত ভারতীয় নগরসমূহের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ ইবন বতুতা উল্লেখ করেছেন যে দক্ষ পর্যটকের জন্যই ভারতের নগরসমূহ উত্তেজনার খোরাকে ভরপুর ছিল। নগরসমূহ কখনও যুদ্ধ ও আক্রমণে বিধ্বস্ত হলেও তা ঘন জনবসতিপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী ছিল। নগরের প্রায় সকল রাস্তাই জনসমাগমপূর্ণ ছিল। নগরের বাজারসমূহ বিভিন্ন জাঁকজমকীয় সামগ্রীতে পরিপূর্ণ ছিল। নগরসমূহের মধ্যে দিল্লিই সবচেয়ে বৃহৎ ও জনবসতিপূর্ণ ছিল। মহারাষ্ট্রের দৌলতাবাদ আয়তনের দিক থেকে দিল্লির প্রায় সমান ছিল।

প্রশ্ন ১০। ইবন বতুতার বর্ণনানুযায়ী ভারতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ ইবন বতুতার বর্ণনা অনুযায়ী ভারতে অতুলনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। দেশের বণিকগণকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে রাজ্য প্রশাসন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। প্রায় সকল প্রকার বাণিজ্যিক পথেই সুন্দর বিশ্রামাগার ছিল। বণিকগণের তথ্যাদি ও টাকাপয়সা ও বস্তুসামগ্রী প্রেরণ করবার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা দেখে ইবন বতুতা আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন। ডাকব্যবস্থা এত দক্ষ ছিল যে চিঠিপত্রাদি সিন্ধু থেকে দিল্লি আসতে ৫০ দিন সময় লাগত।

প্রশ্ন ১১। ইবন বতুতা বর্ণিত ভারতীয় ডাকব্যবস্থা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ইবন বতুতার বর্ণনানুসারে ভারতে দুই প্রকার ডাকব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। রাজকীয় ঘোড়াচালিত ডাক বা উল্ক যাতে প্রতি চার মাইলের মাথায় একটি ঘোড়া রাখা হত। পায়ে-হাঁটা ডাকব্যবস্থায় প্রতি মাইলে তিনটি ভাগ থাকত। প্রতিটি ভাগকে ‘দাওয়া’ বলা হত। ডাকবহনকারী রওয়ানা দেওয়ার সময় তার একহাতে চিঠিপত্রাদি এবং অন্যহাতে একটি দণ্ডের মাথায় ঘণ্টা বাঁধা থাকত। সে যত দ্রুত পারত তত দ্রুত হেঁটে যেত। বিশ্রামাগারের মানুষ যখন ঘণ্টার শব্দ শুনত তখন তারা প্রস্তুত হয়ে যেত, তাদের মধ্যে একজন তার হাত থেকে চিঠি নিত এবং ঘণ্টা দণ্ডটি নড়িয়ে দ্রুতগতিতে পরবর্তী ‘দাওয়া’ পর্যন্ত চলে যেত। গন্তব্যস্থলে যাওয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চলত। এই পদচালিত ডাক ঘোড়াচালিত ডাকব্যবস্থা অপেক্ষা দ্রুততর ছিল।

প্রশ্ন ১২। মহিলা দাস সম্পর্কে ইবন বতুতা প্রদত্ত বিবরণ সংক্ষেপে ব্যক্ত কর।

উত্তরঃ উপমহাদেশখানির মহিলাগণের স্থিতি সম্পর্কে পর্যটকদের বিবরণ সুরুচিপূর্ণ এবং কখনো কখনো আক্রোশমূলক ছিল। কোন কোন সময় এই সামাজিক অন্যায়কে সাধারণ ঘটনা বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ—

(ক) দাসগণকে পণ্যসামগ্রীর মতো বাজারে ক্রয়-বিক্রয় করা হত। কখনো কখনো উপহার হিসাবেও দান করা হত।

(খ) ইবন বতুতা সিন্ধু হতে মহম্মদ বিন তুঘলককে উপহার দেওয়ার জন্য ঘোড়া, উট ও দাস ক্রয় করেছিলেন।

(গ) ইবন বতুতাকে সুলতানের গভর্নর উপহারস্বরূপ কিচমিচ, বাদাম, দাস ও ঘোড়া দিয়েছিলেন।

(ঘ) ইবন বতুতা উল্লেখ করেছেন যে, মহম্মদ বিন তুঘলক নাসিরুদ্দিন নামে ধর্ম প্রচারকের কথায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে এক লাখ মুদ্রা ও দুইশত দাস দিয়েছিলেন।

ইবন বতুতার লিখিত বিবরণ থেকে জানা যায় যে দাসীগণের মধ্যে কিছু পার্থক্য ছিল। সুলতানের সেবায় নিয়োগ করা দাসীগণ সংগীত ও নৃত্যে নিপুণ ছিল।

প্রশ্ন ১৩। বার্নিয়ার প্রদত্ত কৃষকদের বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ বার্নিয়ার লিখিত বিবরণ থেকে জানা যায় যে, হিন্দুস্থানের বিশাল গ্রাম্য অঞ্চলে কিছু পরিমাণ জমি বালি, নুড়ি ও পাথরে ভরা ছিল। এর কিছু পরিমাণে চাষবাস ভালো ছিল না; এমনকী বহু অঞ্চলে জনবসতিও ছিল না। অনেক উন্নতমানের কৃষিজমি কৃষকের অভাবে অনাবাদী হয়ে পড়েছিল। গভর্নরের অত্যাচারের ফলে বহু শ্রমিকের মৃত্যুও হয়েছিল। লোভী মালিকগণের দাবি পূরণ না করলে চাষিদের জীবনধারণের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করাই নয়, এমনকী তাদের সন্তানগণকেও হারাতে হত। তারা সেই সন্তানগণকে দাস হিসাবে নিয়ে যেত। ফলস্বরূপ মালিকগণের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বহু কৃষক দেশ থেকে পলায়ন করে।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। আলবেরুণী কে ছিলেন? তাঁর ভারত ভ্রমণের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

অথবা,

আলবেরুণীর কিতাব-উল-হিন্দ’ গ্রন্থে ভারত-সংক্রান্ত বিবরণ ব্যাখ্যা কর।

অথবা,

‘কিতাব-উল-হিন্দ’ সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ আলবেরুণী একজন বিখ্যাত পর্যটক ছিলেন। গজনীর সুলতান মামুদের ভারত আক্রমণের সময় আলবেরুণী তাঁর সহচর ছিলেন। আলবেরুণী ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান উজবেকিস্থানের খোয়ারিজাম নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। অতি অল্পদিনের মধ্যেই তিনি সিরিয়, আরবি, পারসি, হিব্রু ও সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। কিন্তু তিনি গ্রিক ভাষা না জানার জন্য আরবি ভাষায় অনূদিত গ্রন্থের মাধ্যমে প্লেটো ও অন্যান্য গ্রিক দার্শনিকগণের রচনার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। ১০১৭ খ্রিস্টাব্দে গজনীর সুলতান মামুদ খিরা রাজ্য আক্রমণ করেন এবং রাজ্যের বুদ্ধিজীবীগণের সঙ্গে আলবেরণীকেও বন্দী করে গজনী নিয়ে যান। গজনীতে ৭০ বছর বয়সে আলবেরুণীর মৃত্যু হয়।

গজনীতে থাকার সময় ভারতের প্রতি তাঁর দুর্নিবার আকর্ষণ জাগ্রত হয়েছিল। কারণ সংস্কৃত ভাষায় লিখিত জ্যোতির্বিদ্যা, গণিতশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পৰ্কীয় গ্রন্থসমূহ খ্রিস্টীয় অষ্টম শতক থেকে আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। আলবেরুণী কিছুদিন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত ও পুরোহিতগণের সঙ্গে থেকে সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার সঙ্গে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ও দর্শন-সম্পৰ্কীয় গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেন।

কিতাব-উল-হিন্দ: আলবেরুণী ভারত ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সহজ, সরল আরবি ভাষায় ‘কিতাব-উল-হিন্দ’ গ্রন্থ রচনা করেন। তা মোট ৪০টি অধ্যায়ে বিভক্ত। গ্রন্থখানার বিষয়বস্তু ছিল ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন, ভূগোল, অঙ্ক, বিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, জ্যোতিষ, জ্যোতির্বিজ্ঞান, রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, অন্ধবিশ্বাস, পরিমাপ প্রভৃতি। তাঁর বর্ণনা থেকে আমরা ভারতীয় সমাজের প্রকৃত স্বরূপ জানতে পারি। আলবেরুণী সাধারণত একটি বিশেষ পদ্ধতিতে প্রতিটি অধ্যায় আরম্ভ করেছিলেন। একটি অধ্যায়ে সাংস্কৃতিক পরস্পরার বর্ণনা দেওয়ার পর অন্য সংস্কৃতির সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা করেছেন।

আরবি ভাষায় লেখা তাঁর রচনায় আলবেরুণী খুব সম্ভব উপমহাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষগণকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত ভাষার গ্রন্থসমূহ অনুবাদ ও আরবি ভাষায় গ্রহণ করতে তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন।

প্রশ্ন ২। ইবন বতুতা কে ছিলেন? তাঁর ভারত ভ্রমণের বৃত্তান্ত দাও।

উত্তরঃ ইবন বতুতা আফ্রিকার মরক্কো দেশের একজন পর্যটক ছিলেন। তিনি মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালে ভারত আক্রমণ করেন। সুলতান তাঁকে কাজী পদে নিয়োগ করেন এবং দূত রূপে চীনদেশে প্রেরণ করেন। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত চরিত্র ভালো ছিল না। তিনি বিচারকের পদে উৎকোচ গ্রহণ করতেন। দেশভ্রমণ তাঁর নেশা ছিল। মরক্কোর তাঞ্জিয়ায় তিনি ১৪০৪ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

ভারত ভ্রমণ বৃত্তান্ত: আরবি ভাষায় লিখিত ইবন বতুতার ভ্রমণ কাহিনি ‘রিহ্লা’ নামক গ্রন্থে ১৪ শতকের ভারতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। স্থলপথে মধ্য এশিয়া ভ্রমণ করে তিনি ১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু প্রদেশে উপস্থিত হন। সেখানে তিনি শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক দিল্লির সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের বিষয়ে শুনে মুলতান ও উচ (Uch) হয়ে দিল্লি যাত্রা করেন। সুলতান তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে ইবন বতুতাকে দিল্লির কাজী পদে নিযুক্তি দেন। কিন্তু উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগে সুলতান তাঁকে কারাদণ্ড দেন।

চতুর্দশ শতকে ইবন বতুতা দিল্লিতে উপস্থিত হওয়ার সময় উপমহাদেশখানি পূর্বে চীন, উত্তর-পশ্চিমে আফ্রিকা ও পশ্চিমে ইউরোপের এক বৃহৎ অঞ্চলে গোলকীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি অংশ হয়ে পড়েছিল। ইবন বতুতা নিজেও এদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মস্থানসমূহ পরিভ্রমণ করেছিলেন। শিক্ষিত মানুষের সঙ্গে থেকে মত বিনিময় করেছিলেন। তাঁর লেখনীতে ধর্মীয় পণ্ডিতগণের কথা, রাজার নিষ্ঠুরতা ও পরোপকারিতা প্রভৃতি থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন রীতিনীতির কথা সন্নিবিষ্ট হয়েছে।

ইবন বতুতা উল্লেখ করেছেন যে, যে-কোন একজন সম্পদশালী দক্ষ পর্যটকের জন্যই উপমহাদেশখানার নগরসমূহ উত্তেজনায় ভরপুর ছিল। তাঁর লিখিত বিবরণে জানা যায় যে, নগরের সকল রাস্তা জনসমাগমপূর্ণ ছিল ও বিভিন্ন জাঁকজমকীয় সামগ্রীতে নগরের বাজারসমূহ পরিপূর্ণ ছিল। তিনি ভারতের মধ্যে দিল্লিই সর্বাপেক্ষা জনবসতিপূর্ণ ছিল বলে জানান। অবশ্য মহারাষ্ট্রের দৌলতাবাদ আয়তনের দিক দিয়ে দিল্লির সমান ছিল।

এদেশের বণিকগণের উৎসাহ দানের জন্য রাজ্য প্রশাসন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। প্রায় সকল বাণিজ্যিক রাস্তায় সুন্দর বিশ্রামঘর ছিল। ইবন বতুতা বণিকগণকে তথ্যাদি, টাকাপয়সা ও দ্রব্যসামগ্রী প্রেরণ করবার জন্য উপযুক্ত ডাকব্যবস্থা দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন। ডাকব্যবস্থা এত দক্ষ ছিল যে চিঠিপত্র সিন্ধু থেকে দিল্লি পৌঁছতে ৫০ দিন সময় লেগেছিল।

প্রশ্ন ৩। বার্নিয়ার কে ছিলেন? তাঁর ভারত ভ্রমণের বৃত্তান্ত দাও।

উত্তরঃ বার্নিয়ার একজন ফরাসি চিকিৎসক ও ভ্রমণকারী ছিলেন। তিনি শাহজাহানের রাজত্বের শেষদিকে ভারতে আগমন করেন।

ভারত ভ্রমণ বৃত্তান্ত: ভারতে দেখা সকল ঘটনাবলী বার্নিয়ারকে উত্তেজিত করলেও তিনি এক পৃথক বৌদ্ধিক পরম্পরার ঘটনাসমূহ প্রকাশ করেছেন। বার্নিয়ারের মতে—

(ক) মোগল রাজসভার ঐশ্বর্য ও জাঁকজমকের তুলনা নেই।

(খ) আওরঙ্গজেব একজন প্রতিভাবান রাজনীতিজ্ঞ ছিলেন।

(গ) দেশে প্রচুর অর্থ থাকলেও তা সাধারণত জমিদার ও ধনী ব্যবসায়ীগণের হাতে ছিল।

(ঘ) প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ অত্যাচারী ছিলেন।

(ঙ) বাংলা অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী প্রদেশ ছিল এবং সেখানে প্রচুর পরিমাণে ধান ও চিনি উৎপন্ন হত।

(চ) সাম্রাজ্যের রাজস্ব ও ব্যয়ের পরিমাণ প্রভূত ছিল।

বার্নিয়ারের মতে ইউরোপ ও মোগল ভারতের মধ্যে একটি প্রধান পার্থক্য হল এই যে ভারতীয়গণ ব্যক্তিগত ভূমিস্বত্বের অধিকারী ছিল না। ব্যক্তিগত সম্পত্তি রাখার পূর্ণ সমর্থক বার্নিয়ার উপলব্ধি করেছিলেন যে ভূমির উপর রাষ্ট্রের অধিকার, রাষ্ট্র ও জনসাধারণ দুই পক্ষের জন্যই হানিকর। মোগল সাম্রাজ্যের সকল ভূমির অধিকার ছিল সম্রাটের এবং সম্রাট এই ভূমি অভিজাতগণের মধ্যে ভাগ করেছিলেন, যা সমাজ ও অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করেছিল।

বার্নিয়ার পূর্বের ধারণা অনুযায়ী মোগল সাম্রাজ্যকে অত্যাচারী বলে উল্লেখ করেছিলেন যদিও তাঁর বর্ণনায় জটিল সামাজিক সত্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ তিনি অনুভব করেছিলেন যে, শিল্পী ও কারিগরগণ তাদের উৎপাদিত সামগ্রীর মান উন্নয়ন ও বৃদ্ধির কারণে উৎসাহিত ছিল না, কারণ উৎপাদিত সামগ্রীর লভ্যাংশ রাষ্ট্রই আত্মসাৎ করত। ফলে ধীরে ধীরে এইসকল শিল্পের অবনতি ঘটেছিল।

সতের শতকে ভারতে মোট জনসংখ্যার ১৫% নগরে বাস করত। গড় হিসাবে তা পশ্চিম ইউরোপের নগর জনসংখ্যার অনুপাত হতে অধিক ছিল। বার্নিয়ার মোগল নগরসমূহকে শিবির নগর (camp town) বলে উল্লেখ করেছেন। এই রাজকীয় শিবিরসমূহ মোগল সম্রাট এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে সঙ্গে নিয়ে যান। শিবিরসমূহ উঠিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরসমূহের পতন ঘটেছিল।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘কিতাব-উল-হিন্দ’ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লেখ।

উত্তরঃ কিতাব-উল-হিন্দ: আলবেরুণী ভারত ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সহজ, সরল আরবি ভাষায় ‘কিতাব-উল-হিন্দ’ গ্রন্থ রচনা করেন। তা মোট ৪০টি অধ্যায়ে বিভক্ত। গ্রন্থখানার বিষয়বস্তু ছিল ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন, ভূগোল, অঙ্ক, বিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, জ্যোতিষ, জ্যোতির্বিজ্ঞান, রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, অন্ধবিশ্বাস, পরিমাপ প্রভৃতি। তাঁর বর্ণনা থেকে আমরা ভারতীয় সমাজের প্রকৃত স্বরূপ জানতে পারি। আলবেরণী সাধারণত একটি বিশেষ পদ্ধতিতে প্রতিটি অধ্যায় আরম্ভ করেছিলেন। একটি অধ্যায়ে সাংস্কৃতিক পরম্পরার বর্ণনা দেওয়ার পর অন্য সংস্কৃতির সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা করেছেন।

আরবি ভাষায় লেখা তাঁর রচনায় আলবেরুণী খুব সম্ভব উপমহাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষগণকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত ভাষার গ্রন্থসমূহ অনুবাদ ও আরবি ভাষায় গ্রহণ করতে তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন।

প্রশ্ন ২। ইবন বতুতা ও বার্নিয়ারের ভারত ভ্রমণ বৃত্তান্তের একটি তুলনামূলক বিচার কর।

উত্তরঃ ইবন বতুতা ও বার্নিয়ার তাঁদের ভারত বৃত্তান্তের বিবরণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যক্ত করেছেন। ইবন বতুতা, প্রতিটি বিষয় যা তাঁকে অভিভূত ও উত্তেজিত করেছিল তাই-ই লিপিবদ্ধ করেছেন। অন্যদিকে বার্নিয়ার ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত ভ্রমণ করেছিলেন। ভারতে দেখা ঘটনাবলী ইউরোপ তথা ফ্রান্সের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে লিপিবদ্ধ করেছেন। ভারতের পরিবেশে ও বাস্তবিক দেখা ঘটনাবলীকে ইউরোপের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বর্ণনা করেছিলেন। অনেক সময় তাঁর মূল্যায়ন সঠিক ছিল না। বস্তুত বার্নিয়ার ভারতীয় সমাজের দুর্বলতাগুলিকে চিহ্নিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি মোগল যুগের ভারতকে ইউরোপীয় সমাজ অপেক্ষা হেয় প্রতিপন্ন করেছিলেন। অন্যদিকে ইবন বতুতা ভারতের নূতন সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও ধর্মীয় বিশ্বাস প্রভৃতি পর্যালোচনা করে তাঁর বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন।

প্রশ্ন ৩। বার্নিয়ারের বিবরণে প্রতিফলিত নগরকেন্দ্রসমূহের চিত্র আলোচনা কর।

উত্তরঃ বার্নিয়ারের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, ১৭ শতকে ভারতে মোট জনসংখ্যার ১৫% নগরে বাস করত। এই গড় হিসাব সমসাময়িক পশ্চিম ইউরোপের গড় হিসাবে নগরের জনসংখ্যার অনুপাতে বেশি ছিল। বার্নিয়ার নগরসমূহকে শিবির নগর (camp town) বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ এই নগরসমূহে রাজকীয় শিবির ছিল। এই রাজকীয় শিবিরসমূহ মোগল সম্রাট একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। শিবিরসমূহ উঠিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরসমূহ পতনমুখী হয়েছিল। তাঁর মতে, এই নগরসমূহ রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতার উপর নির্ভরশীল হওয়ার জন্য এদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় ছিল না। বস্তুত মোগল সাম্রাজ্যে বিভিন্ন প্রকার নগর, যেমন—উৎপাদন কেন্দ্র, ব্যবসায়িক নগর, বন্দর নগর, ধর্মকেন্দ্র, তীর্থস্থান প্রভৃতি ছিল। এই নগরসমূহ সমৃদ্ধশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ও বৃত্তিগত শ্রেণীর অস্তিত্বের সূচনা করে।

প্রশ্ন ৪। ইবন বতুতা প্রদত্ত দাসপ্রথার প্রমাণ বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ ইবন বতুতার মতানুসারে দাসগণকে অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর মতো বাজারে খোলাখুলি বিক্রয় করা হত। তাদের নিয়মিত উপহার হিসাবে বিনিময় করা হত:

(ক) ইবন বতুতা যখন সিন্ধু প্রদেশে পৌঁছেছিলেন তখন তিনি উট ও দাস ঘোড়া, ক্রয় করেছিলেন। তিনি এইগুলিকে মহম্মদ বিন তুঘলককে উপহার হিসাবে দান করতে চেয়েছিলেন।

(খ) ইবন বতুতা যখন মুলতান পৌঁছলেন তখন তিনি কেবল পেস্তা ও বাদাম নয়, দাস এবং ঘোড়াও সুলতানের গভর্নরকে দান করেন।

(গ) সুলতানের সেবায় মহিলা দাসও নিয়োজিত ছিল। তাঁরা সংগীত ও নৃত্যে পারদর্শী ছিলেন। সুলতানের ভগিনীর বিবাহ অনুষ্ঠানে ইবন বতুতা তাঁদের সংগীত ও নৃত্য প্রদর্শন উপভোগ করেছিলেন।

(ঘ) দাসগণকে স্বল্প মজুরিতে গৃহকার্যে নিয়োজিত করা হত। তারা পুরুষ ও মহিলাদের কাঁধে করে বহন করত।

(ঙ) অধিকাংশ পরিবারেই এক-দুই জন দাস থাকত।

প্রশ্ন ৫। সতীপ্রথার কি কি উপাদান বার্নিয়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল?

উত্তরঃ সতীপ্রথার নিম্নোক্ত উপাদানসমূহ বার্নিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল:

(ক) এটা এমন একটি নিষ্ঠুর প্রথা ছিল যাতে স্ত্রী তার মৃত স্বামীর চিতায় উঠে আত্মাহুতি দিতেন।

(খ) মৃত স্বামীর স্ত্রী সতীব্যবস্থার অনিচ্ছুক শিকার ছিলেন। তাকে জোর করে সতী করা হত।

(গ) সতীপ্রথায় বালবধূর প্রতিও মানুষের দয়া ছিল না।

(ঘ) সতী হওয়ার করুণ আর্তনাদ ও চিৎকার কারোকে নাড়া দিতে পারত না।

(ঙ) সতীপ্রথায় ব্রাহ্মণ ও পরিবারের বয়স্ক মহিলাগণও যোগদান করত।

প্রশ্ন ৬। জাতিভেদ প্রথা সম্পর্কে আলবেরুণীর অভিমত আলোচনা কর।

উত্তরঃ আলবেরুণী অন্যান্য সমাজের সঙ্গে তুলনা করে ভারতীয় জাতিভেদ প্রথার ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি প্রাচীন পারসি সমাজের চারটি সামাজিক শ্রেণীর কথা উল্লেখ করেছেন। এইগুলি নিম্নরূপ:

(ক) নিট্ ও রাজকোয়রগণ।

(খ) পুরোহিত ও আইনজ্ঞগণ।

(গ) চিকিৎসক, জ্যোতির্বিদ ও অন্যান্য বিজ্ঞানীগণ।

(ঘ) কৃষকগণ।

অন্যদিকে তিনি উল্লেখ করেছেন যে ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় সামাজিক শ্রেণী বিভাজন ছিল। অবশ্য মুসলমান সমাজে সকল মানুষকে সমান বলে গণ্য করা হয়। কেবল ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলার উপর পার্থক্য ছিল।

জাতিভেদ প্রথা সম্পর্কে ব্রাহ্মণ মতবাদকে গ্রহণ করলেও তিনি হিন্দু সমাজে প্রচলিত জাতিভেদ ও বিশেষ করে অস্পৃশ্যতার ধারণা লক্ষ্য করেছিলেন। হিন্দু সমাজে কোন ব্যক্তি যদি ঘটনাক্রমে অশুচি হয়, তাহলে সে নিজ কর্মের দ্বারা পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারত। সূর্যের আলো যেমন বায়ু পরিষ্কার করে, লবণ যেমন জল প্রদূষণ রোধ করে, তা যদি না হয় তবে পৃথিবীতে জীব থাকা কঠিন হয়ে যাবে। আলবেরুণীর মতে অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ প্রথা ইত্যাদি প্রকৃতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top