Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম

Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম Question Answer in Bengali Medium | AHSEC Class 12 History Question Answer, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Assam Board Class Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম Notes and select needs one.

Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম

Join Telegram channel

Table of Contents

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম, These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 History Chapter 5 যুগে যুগে আসাম Solutions for All Subjects, You can practice these here.

যুগে যুগে আসাম

প্রথম খণ্ড

Chapter: 5

HISTORY

(ক) প্রাগৈতিহাসিক যুগ — ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। প্রাগৈতিহাসিক যুগে আসাম রাজ্যের নাম কি ছিল?

উত্তরঃ প্রাগজ্যোতিষপুর।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

প্রশ্ন ২। আসাম রাজ্যের নাম কখন হতে আসাম হয়?

উত্তরঃ ত্রয়োদশ শতকের পর হতে।

প্রশ্ন ৩। প্রাগজ্যোতিষপুর রাজ্যের রাজধানী কোথায় ছিল?

উত্তরঃ প্রাগজ্যোতিষপুর।

প্রশ্ন ৪। ব্রাহ্মণগণকে দান করা ভূমিকে কি বলা হত?

উত্তরঃ ব্রহ্মোত্তর ভূমি।

প্রশ্ন ৫। মন্দিরের জন্য দান করা ভূমিকে কি বলা হত?

উত্তরঃ ধর্মোত্তর।

প্রশ্ন ৬। প্রাচীন আসামের যে-কোন একপ্রকার নিষ্কর ভূমির নাম লেখ।

উত্তরঃ ব্রহ্মোত্তর ভূমি।

প্রশ্ন ৭। অগ্রহার কাকে বলা হত?

উত্তরঃ প্রাচীন আসামে কখনও কখনও সম্পূর্ণ একটি গ্রাম ব্রাহ্মণকে দান করা হত; একে অগ্রহার বলা হত।

প্রশ্ন ৮। ভাস্কর বর্মার রাজত্বকাল উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ৫৯৪ – ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ।

প্রশ্ন ৯। ‘কালিকাপুরাণ’ কোন ভাষায় লিখিত হয়েছিল?

উত্তরঃ সংস্কৃত ভাষায়।

প্রশ্ন ১০। গুয়াহাটির নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত তীর্থস্থানটির নাম কি?

উত্তরঃ মহাতীর্থ কামাখ্যা।

প্রশ্ন ১১। সূর্যপাহাড় কোথায় অবস্থিত?

উত্তরঃ গোয়ালপাড়ায়।

প্রশ্ন ১২। ভাস্কর বর্মার রাজত্বকালে বাংলার কোন বন্দরের সঙ্গে ব্যবসা – বাণিজ্য চলত?

উত্তরঃ তাম্রলিপ্ত।

প্রশ্ন ১৩। অসমের রাজনৈতিক ইতিহাস কখন থেকে আরম্ভ হয়?

উত্তরঃ খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক থেকে।

প্রশ্ন ১৪। প্রাগৈতিহাসিক যুগে কামরূপে রাজত্বকারী রাজাদের নাম ক্রমান্বয়ে লেখ।

উত্তরঃ প্রাগৈতিহাসিক যুগে কামরূপে রাজত্বকারী রাজাদের নাম হল ক্রমান্বয়ে — মহিরঙ্গ দানব, হটকাসুর, সরম্বাসুর, রত্নাসুর, ঘটক, কিরাত, নরকাসুর, ভগদত্ত ও ব্রজদত্ত।

প্রশ্ন ১৫। কামাখ্যা মন্দিরে যাওয়ার পুরানো পথটি কে নির্মাণ করেন?

উত্তরঃ পথটি নরকাসুর নির্মাণ করেন।

প্রশ্ন ১৬। মহিরঙ্গ দানব কে ছিলেন?

উত্তরঃ মহিরঙ্গ দানব প্রাগৈতিহাসিক যুগে প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা ছিলেন।

প্রশ্ন ১৭। নরকাসুর কে ছিলেন?

উত্তরঃ নরকাসুর প্রাচীন কামরূপের রাজা ছিলেন।

প্রশ্ন ১৮। ভগদত্ত কে ছিলেন?

উত্তরঃ ভগদত্ত নরকাসুরের পুত্র ও প্রাগ্‌জ্যোতিষপুরের রাজা ছিলেন।

প্রশ্ন ১৯। ভগদত্তের কন্যার নাম কি ছিল?

উত্তরঃ ভগদত্তের কন্যার নাম ছিল ভানুমতী।

প্রশ্ন ২০। প্রাগৈতিহাসিক যুগে কামরূপ রাজ্যের পূর্বদিকে কোন্ রাজ্য ছিল?

উত্তরঃ রাজ্যটির নাম ছিল কুণ্ডিল বা বিদর্ভ।

প্রশ্ন ২১। কুণ্ডিল বা বিদর্ভ রাজ্যের রাজধানী কোথায় ছিল?

উত্তরঃ কুণ্ডিলনগর।

প্রশ্ন ২২। তেজপুরের প্রাচীন নাম কি ছিল?

উত্তরঃ শোণিতপুর।

প্রশ্ন ২৩। বাণরাজা কে ছিলেন?

উত্তরঃ বাণরাজা শোণিতপুরের রাজা ছিলেন।

প্রশ্ন ২৪। ভাস্কর বর্মার রাজত্বকালে কোন্ চীনা পরিব্রাজক কামরূপ ভ্রমণ করেছিলেন?

উত্তরঃ হিউয়েন সাঙ।

প্রশ্ন ২৫। প্রাগৈতিহাসিক যুগ কাকে বলা হয়?

উত্তরঃ ইতিহাসে প্রাপ্ত যুগের আগের সময়কে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়।

প্রশ্ন ২৬। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

(ক) প্রাগজ্যোতিষ রাজ্যের রাজধানী ছিল ___________।

উত্তরঃ প্রাগজ্যোতিষপুর।

(খ) ___________ প্রাজ্যোতিষপুরে রাজ্য স্থাপন করেন।

উত্তরঃ অমূর্তরাজ।

(গ) কামাখ্যা মন্দির ___________ পাহাড়ে অবস্থিত।

উত্তরঃ নীলাচল।

(ঘ) নরকাসুরের পর ___________ প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা হন।

উত্তরঃ ভগদত্ত।

(ঙ) কামাখ্যা মন্দিরে যাওয়ার পুরানো পথটি ___________ নির্মাণ করেন।

উত্তরঃ নরকাসুর।

(চ) নরকাসুরের বংশকে ___________ বংশ বলা হয়।

উত্তরঃ ভৌম।

(ছ) নরকাসুরের রাজ্য ছিল ___________।

উত্তরঃ প্রাগজ্যোতিষপুর।

(জ) কুণ্ডিল রাজ্যের রাজা ছিলেন ___________।

উত্তরঃ ভীষ্মক।

(ঝ) ___________ ‘রুক্মিনীহরণ’ নাটক রচনা করেন।

উত্তরঃ শ্রীমন্ত শংকরদেব।

(ঞ) বিদর্ভ রাজ্যের রাজধানী ছিল ___________।

উত্তরঃ কুণ্ডিলনগর।

(ট) তেজপুরের প্রাচীন নাম ছিল ___________।

উত্তরঃ শোণিতপুর।

(ঠ) ___________ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খিলজি কামরূপ আক্রমণ করেন।

উত্তরঃ ১২০৬।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে আসামের বিভিন্ন নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ প্রাগৈতিহাসিক যুগে প্রাগজ্যোতিষপুর, প্রাচীন ও মধ্যযুগে কামরূপ এবং আধুনিক যুগে আসাম বা অসম।

প্রশ্ন ২। ‘প্রাগজ্যোতিষপুর’ শব্দের অর্থ কি?

উত্তরঃ ‘প্রাগ’ মানে ‘প্রাচীন’, ‘জ্যোতিষ’ মানে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান সম্পর্কিত অধ্যয়ন, ‘পুর’ মানে নগর; অর্থাৎ প্রাগজ্যোতিষপুর মানে প্রাচীনযুগের জ্যোতিষচর্চার নগর।

প্রশ্ন ৩। প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিষয়ে জানতে কিসের সহায়তা নিতে হয়?

উত্তরঃ প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিষয় জানতে হলে পুরাণশাস্ত্র, রামায়ণ, মহাভারত, তন্ত্রশাস্ত্র, প্রাচীন সাহিত্য, তাম্রলিপি, শিলালিপি, স্থাপত্য-ভাস্কর্য, বিদেশি ভ্রমণকারীর বিবরণী প্রভৃতির সহায়তা নিতে হয়।

প্রশ্ন ৪। প্রাগৈতিহাসিক যুগে কামরূপে রাজত্বকারী রাজাদের নাম ক্রমান্বয়ে লেখ।

উত্তরঃ ক্রমান্বয়ে রাজাদের নাম হল — মহিরঙ্গ দানব, হটকাসুর, সমরাসুর, রত্নাসুর, ঘটক কিরাত, নরকাসুর, ভগদত্ত ও ব্রজদত্ত।

প্রশ্ন ৫। নিম্নলিখিতদের মধ্যে কে, কার সমসাময়িক ছিলেন লেখ:

ভাস্কর বর্মা, বাণরাজা, নরকাসুর, হিউয়েন সাং

উত্তরঃ ভাস্কর বর্মা সমসাময়িক ছিলেন হিউয়েন সাং-এর।

বাণরাজা সমসাময়িক ছিলেন নরকাসুরের।

প্রশ্ন ৬। ‘প্রাগজ্যোতিষপুর’ নামটি কোথায় পাওয়া যায়?

উত্তরঃ প্রাগজ্যোতিষপুর নামটি রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণে পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ৭। আসামের উপত্যকা দুটির নাম লেখ।

উত্তরঃ আসামের উপত্যকা দুটির নাম-ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও বরাক উপত্যকা।

প্রশ্ন ৮। আসামের প্রাচীন বাসিন্দাগণকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি?

উত্তরঃ আসামের প্রাচীন বাসিন্দাগণকে চার ভাগে ভাগ করা যায়; যথা – 

(ক) অস্ট্রো-এশিয়াটিক। 

(খ) নেগ্রীটস।

(গ) দ্রাবিড়িয়ান। ও 

(ঘ) মঙ্গোলিয়ান ও আর্য।

প্রশ্ন ৯। প্রাচীন আসামে কয় শ্রেণীর লোক ছিল এবং কি কি?

উত্তরঃ প্রাচীন আসামে তিন শ্রেণীর লোক ছিল, যথা-

(ক) অভিজাত।

(খ) কৃষক। ও 

(গ) দাস।

প্রশ্ন ১০। আসামে আদিপ্রস্তর যুগের সামগ্রীসমূহের কয়েকটি নাম উল্লেখ কর। সে যুগের মানুষ ইটের ব্যবহার জানত কি?

উত্তরঃ প্রাচীন আসামে প্রাচীন সামগ্রীগুলির অন্যতম হল পাথরনির্মিত সামগ্রী, বিভিন্ন প্রকার পাথর, পাথরনির্মিত ক্ষুর, চাবনী প্রভৃতি।

আসামে প্রাচীন যুগের মানুষ ইটের ব্যবহার জানত।

প্রশ্ন ১১। প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের চারটি ভাগের উল্লেখ কর।

উত্তরঃ প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের চারটি ভাগ হল – 

(ক) রত্নপীঠ। 

(খ) কামপীঠ। 

(গ) সুবর্ণপীঠ। ও 

(ঘ) সৌমারপীঠ।

প্রশ্ন ১২। বিদর্ভ ও শোণিতপুরের রাজা কে কে ছিলেন?

উত্তরঃ ভীষ্মক বিদর্ভ রাজ্যের এবং বাণরাজা শোণিতপুরের রাজা ছিলেন।

প্রশ্ন ১৩। প্রাচীন আসামে কোন্ কোন্ ভূমি করবিহীন ছিল?

উত্তরঃ প্রাচীন আসামে- 

(ক) ব্রহ্মোত্তর ভূমি। এবং 

(খ) ধর্মোত্তর ভূমি করবিহীন ছিল।

প্রশ্ন ১৪। প্রাচীন আসামের কয়েকটি লিখনসামগ্রীর নাম লেখ।

উত্তরঃ অগরু বা সাঁচী গাছের পাতা ও বাকল, তাম্রফলক, পাথর, কাঠের ফালি প্রভৃতি। পাখির পালক, বাঁশ, নলখাগড়া প্রভৃতি কলম হিসাবে ব্যবহার করা হত।

প্রশ্ন ১৫। প্রাচীন আসামের দুটি তন্ত্রশাস্ত্রের নাম লেখ।

উত্তরঃ প্রাচীন আসামের দুটি তন্ত্রশাস্ত্র হল – 

(ক) যোগিনীতন্ত্র। ও 

(খ) কালিকাপুরাণ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। আসাম নামের উৎপত্তি সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ ‘আসাম’ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বহু মতবাদ আছে। কোন কোন পণ্ডিতের মতে ত্রয়োদশ শতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ‘টাই’ জাতির একটি শাখা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বসতি করতে আসেন। তারা নিজ সাহস, বল ও বুদ্ধিতে স্থানীয় মানুষদের পরাভূত করে। তাদের পরাক্রমে মুগ্ধ হয়ে স্থানীয় লোকেরা অ-হ-ম অর্থাৎ সমান কেউ নেই বলে সম্বোধন করত। কালক্রমে অহোম শব্দটি অহম এবং পরে ‘অসম’ হয়ে পড়ে। অহোমরা যেখানে রাজত্ব করত সেই ভূখণ্ডই অতঃপর ‘অসম’ নামে পরিচিত হয়। অন্য একটি মত অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা পাহাড়-পর্বতে ভরা অর্থাৎ অসমান (অসম)। সেইজন্য রাজ্যটির নাম হয় অসম।

প্রশ্ন ২। প্রাচীন আসামের সাহিত্য সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ প্রাচীন আসাম বা কামরূপ সাহিত্যে সমৃদ্ধ ছিল। কামরূপে সকল প্রকার শিলালিপি ও তামার ফলক সংস্কৃত ভাষায় লেখা হয়েছিল। এগারো শতকে রচিত কালিকাপুরাণ সংস্কৃত ভাষাতেই লেখা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে ১২ শতকের পূর্বে বহু সংস্কৃত সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছিল।

প্রশ্ন ৩। প্রাচীন আসামের ভাষা সম্পর্কে যা জানো লেখ।

উত্তরঃ সপ্তম শতকে কামরূপ পরিভ্রমণকারী চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ-এর মতে কামরূপের কথিত ভাষা ভারতের অন্য ভাষা হতে পৃথক ছিল। সম্ভবত এই ভাষার মৈথিলী ভাষার সঙ্গে সম্বন্ধ ছিল। নবম ও দশম শতকের বৌদ্ধ দোহাসমূহ জনপ্রিয় ছিল। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক বা তার কিছু পূর্বে অসমীয়া ভাষা স্বাধীনভাবে একটি নির্দিষ্ট আকার গ্রহণ করে।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। প্রাগৈতিহাসিক যুগে আসামে প্রস্তরসামগ্রী, হাড়, বাসনপত্র ও ইটের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

অথবা,

আসামের আদি প্রস্তর যুগের সামগ্রীসমূহের একখানা তালিকা প্রস্তুত কর। তখনকার লোক ইটের ব্যবহার জানত কি?

উত্তরঃ প্রাগৈতিহাসিক যুগে অর্থাৎ আদি প্রস্তর যুগের কিছু পরিমাণ পাথরের সামগ্রী তখনকার আসামের বিভিন্ন অঞ্চল, যেমন—গারো পাহাড়, অরুণাচল প্রদেশ ও মণিপুরে পাওয়া গিয়েছিল। নব্যপ্রস্তরযুগের কৃষির সামগ্রীসমূহ খনন কার্যকারীগণ উত্তর কাছাড় পাহাড়ের দেউদালি হার্ভিং, কামরূপ জেলার সরু তারো এবং গারো পাহাড়ের শিবলগিরি হতে সংগ্রহ করেছিলেন। এই সামগ্রীসমূহের মধ্যে প্রস্তরনির্মিত সামগ্রী, নানাবিধ পাথর ও হাড়ের টুকরো, প্রাচীন প্রস্তরজাত সামগ্রী শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে আবিষ্কারের অভাবে আসামের মানব ক্রমবিকাশের ইতিহাস অধ্যয়ন করা অত্যন্ত জটিল।

প্রাচীন আসামে ইটের ব্যবহার ছিল। ফাতিহাই-ইব্রিয়ার মতে ইট তৈরিতে আসাম পিছনে ছিল না। কতিপয় শিলালিপি ও সাহিত্য-বিষয়ক রচনায় ইট-নির্মিত ঘরের বিষয়ে উল্লেখ আছে। ইটের মন্দির বা ইটের দেওয়ালযুক্ত মন্দিরও আবিষ্কৃত হয়েছে। গুয়াহাটীর আমবাড়িতে আবিষ্কার হওয়া ২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৪৫ সেন্টিমিটার প্রশস্ত একখানি ইটের দেওয়ালে ইটের ব্যবহার প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমান শদিয়ার অন্তর্গত কুণ্ডিলনগরে প্রাচীন ইটের দেওয়ালের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।

ইতিহাসের পরবর্তী সময়ের উৎসসমূহে সোনা, রুপা, লোহা এবং হাড়ের অলংকার বিষয়ে উল্লেখ আছে। সেইযুগে আসামে সোনা যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যেত এবং মুদ্রার প্রচলনও পরিলক্ষিত হয়। পুরুষ ও মহিলা উভয়ই অলংকার পরিধান করত। ধাতুনির্মিত অলংকার, মণিমালা, গলার হার, ডুগডুগি, কুন্দল, হাতের খাড়ু, বালা, আংটি, কানের দুল প্রভৃতি প্রাচীন আসামের নারীপুরুষ পরিধান করত।

প্রশ্ন ২। প্রাচীন আসামের রাজ্য ও রাজ্যশাসন প্রণালী সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ প্রাচীন আসামে প্রাগজ্যোতিষপুর বা কামরূপ সবচেয়ে বৃহৎ রাজ্য ছিল। ডবকা, কাদলী, হিড়িম্বা, ত্রিপুরা, মণিপুর প্রভৃতি ছোট ছোট রাজ্যও ছিল। যোগিনীতন্ত্র মতে কামরূপের অন্তর্ভুক্ত স্থানসমূহ হল সমগ্র ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা, ভূটান, রংপুর (অধুনা বাংলাদেশ) এবং সম্ভবত গারো পাহাড়। যোগিনীতন্ত্রে কামরূপ রাজ্যের চারটি মূল ভাগ থাকার কথা উল্লেখ আছে। সেইগুলি হল রত্নপীঠ, কামপীঠ, সুবর্ণপীঠ এবং সৌমারপীঠ।

পৌরাণিক দুইজন রাজা—ভীষ্মক ও বাণরাজা—যথাক্রমে বিদর্ভ ও শোণিতপুরের রাজা ছিলেন। কোন কোন গবেষকের মতে বিদর্ভ রাজ্য বর্তমান শাদিয়ার চৌদিশ নামক স্থানে ছিল এবং এর রাজধানী ছিল কুণ্ডিলনগর। বাণরাজার শোণিতপুর রাজ্য ছিল সম্ভবত বর্তমান তেজপুর এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহ। বর্মনদের রাজত্ব বঙ্গদেশের একাংশ ও কামরূপের অন্তর্গত ছিল।

রাজ্যটি কয়েকটি ভুক্তি বা ভাগে বিভক্ত ছিল এবং ভাগগুলি শাসনের দায়িত্ব কয়েকজন রাজকোয়রের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ বা ভুক্তিসমূহ আবার কয়েকটি ছোট ছোট ভাগ, যেমন—মণ্ডল, পুর এবং আগ্রহ হিসাবে ভাগ করা হয়েছিল। স্থানীয় শাসনের জন্য এইগুলিতে ‘পঞ্চায়েত ব্যবস্থা’ প্রচলিত ছিল। প্রতিটি গ্রামে গাঁওবুড়াও ছিল।

প্রশ্ন ৩। প্রাচীন আসামের আর্থিক অবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ প্রাচীন আসাম বা প্রাগৈতিহাসিক যুগের আসামের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্যাদি অপেক্ষাকৃত কম। এই তথ্যসমূহের উৎস হল সাহিত্যিক বর্ণনা ও প্রাচীন লিপিসমূহ। কামরূপ রাজ্যে শস্যের বিস্তৃত ক্ষেত ছিল। ভাস্কর বর্মার শাসনকালে আগত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং তার লিখিত বিবরণে কামরূপে জলসেচের ব্যবস্থা থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। পাহাড়ের মানুষ জুম পদ্ধতিতে চাষবাস করত। সমভূমিতে চাষবাষ যথেষ্ট ভালো হত। ধান, পাট, কাঁঠাল, আমলকি, রুদ্রাক্ষ ও কুশিয়ার ছাড়াও বিভিন্ন গাছের ফলমূল, শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত।

আসামের বাইরে মুগা, পাট ও এন্ডি মুগার কাপড়ের যথেষ্ট চাহিদা ছিল। সোনোয়াল বা সোনার সম্প্রদায়গণ সুবর্ণশিরি নদীতে বালি হতে সোনা সংগ্রহ করত। আসামের বন উন্নত মানের কাঠ ও বনাঞ্চলে উৎপাদিত বিভিন্ন বনজাত সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত ছিল।

প্রাচীন আসামে বিনিময় প্রথা প্রচলিত ছিল। পরে কড়ি ও মুদ্রা প্রভৃতির মাধ্যমে মানুষ কেনাবেচা করত। বহির্বাণিজ্য ও আভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের জন্য জলপথ ও স্থলপথ উভয়ই ব্যবহার করা হত। ভূটান, তিব্বত, নেপাল, চীন, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রভৃতি দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চলত। ভাস্কর বর্মন বঙ্গদেশের তাম্রলিপ্ত নামক বন্দরটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ব্যবহার করেছিলেন বলে জানা যায়। প্রাচীন কামরূপের রাজাগণ মগধ, গুজরাট ও কাশ্মীরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।

প্রশ্ন ৪। প্রাগৈতিহাসিক যুগে আসামে রাজতন্ত্র বিষয়ে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ প্রাচীন আসামে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল। রাজক্ষমতা বংশানুক্রমে লাভ করতে পারত। কিন্তু কখনও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হতে রক্ষা পাবার জন্য রাজাকে বাছাই করা হত। রাজা ভূমিকর, আয়কর ও বিক্রয়কর হতে খাজনা সংগ্রহ করতেন।

ব্রাহ্মণগণকে দান করা ব্রহ্মোত্তর’ ভূমি এবং মন্দিরের জন্য দান করা ‘ধর্মোত্তর’ ভূমির উপর কোন কর আরোপ করা হত না। কোথাও কোথাও কোন কোন সময় একটি সম্পূর্ণ গ্রাম ব্রাহ্মণকে দান করা হত। একে ‘অগ্রহার’ বলা হত। অগ্রহারসমূহ খাজনামুক্ত ছিল। রাজা শিক্ষা, কলা ও স্থাপত্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। বিভিন্ন অট্টালিকা ও মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, অন্যান্য কির্তিচিহ্ন, চিত্রকলা ও সাহিত্যসমূহ রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রমাণ দেয়।

মহীরঙ্গ দানব প্রাগজ্যোতিষপুরের প্রথম রাজা বলে অনুমান করা হয়। প্রাচীন ও কিংবদন্তী রাজাগণ, যেমন-নরকাসুর, ভগদত্ত, ব্রজদত্ত, ভীষ্মক, বাণরাজার বিষয়ে বিভিন্ন লিপিসমূহ এবং প্রাচীন সাহিত্যে বিস্তারিত উল্লেখ পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক যুগের প্রাচীন কামরূপে অনেক রাজাই রাজত্ব করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ভাস্কর বর্মন একজন বিখ্যাত রাজা ছিলেন এবং তিনি ৫৯৪-৬৫০ খ্রিস্টাব্দের সময়সীমায় কামরূপে রাজত্ব করেছিলেন। বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ভাস্কর বর্মনের রাজ্যে এসে এই প্রতাপী রাজার বিষয়ে উচ্চ প্রশংসা করেছেন।

প্রশ্ন ৫। প্রাচীন আসামে কৃষকগণের অবস্থার বিষয়ে এক ছবি তুলে ধর।

অথবা,

প্রাচীন আসামে কৃষকদের অবস্থা সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ প্রাচীন আসামের গ্রামাঞ্চলে ভূমির স্বত্ত্বাধিকার ও কর্তৃত্ব রাজ্যের মানুষের হাতে ন্যস্ত ছিল। জনজাতি অঞ্চলের জমি সাধারণত একটি সম্প্রদায়ের হাতে সমর্পণ করা হয়েছিল। সেই জমি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের মধ্যে মালিকি স্বত্বে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল।

পূর্বের প্রথামত অধিকাংশ কৃষকই গ্রামে বাস করত। কৃষিকার্যের পদ্ধতি সম্বন্ধে কোন স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। নারদের মতে, গ্রামাঞ্চলে কৃষকগণ গুরুত্ব অনুসারে দ্বিতীয় স্থান দখল করে। কৃষিকার্যের জন্য নিয়োজিত বানিয়াগণ ক্ষেতের দশভাগের একভাগ বা তিন বা পাঁচভাগের একভাগ শস্য ভিন্ন ভিন্ন হারে মজুরি হিসাবে লাভ করেছিল। মহিলা কৃষিশ্রমিক অপেক্ষা পুরুষ কৃষিশ্রমিকের সংখ্যা অধিক দেখা যায়। রঘুবংশে উল্লেখ আছে যে কামরূপে মহিলা চাষিগণ চাষের কাজ নিজেরাই তদারকি করত।

ধানই ছিল প্রধান শস্য এবং শালি, আউস ও বরো—এই তিনপ্রকার ধান চাষ করা হত। ক্ষেত না হওয়া সময়ে কৃষকগণ সুতা কাটা, কাপড় বোনা, মৌমাছি পালন, বাঁশ-বেতের কাজ, কাঠের কাজ প্রভৃতি শিল্পমূলক কাজ করে অতিরিক্ত উপার্জন করত।

সকল কৃষক সাধারণ পোশাক পরিধান করত। স্বভাবতই তারা ধর্মীয় ভাবাপন্ন ছিল। গান, নাচ, খেলাধুলা, নানাপ্রকার উৎসব-পার্বণ প্রভৃতি তারা উপভোগ করত।

প্রশ্ন ৬। প্রাচীন আসামের সাংস্কৃতিক উন্নতি ও বিকাশ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ প্রাচীন আসামের নগরসমূহ সাধারণত নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। কারণ এই স্থানসমূহের মধ্যে কখনও জলের অভাব ছিল না এবং যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক ছিল। এই নগরসমূহ দ্বার, চৌকিঘর (পাহারা দেওয়ার ঘর), ওখ জাতীয় গাছের বেড়া এবং মাটির গুণাগুণ অনুসারে নির্মাণ করা বিভিন্ন ধরনের দুর্গ দ্বারা সুরক্ষিত করা হয়েছিল। নগরসমূহ বিশাল অট্টালিকায় ভরপুর ছিল। শাদিয়া ও ডিমাপুরে অবস্থিত ভগ্নাবশেষ এবং কামাখ্যা মন্দির প্রভৃতি আসামের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থান। এই স্থানসমূহ এখনও সকল বয়স্ক সকল শ্রেণীর মানুষকে আকর্ষণ করে। তেজপুরের দো পর্বতীয়া এবং বামুনী পাহাড়ের পাথরে কাটা দরজার চৌকাঠ, মন্দিরের ভগ্নাবশেষ, বিভিন্ন দেব-দেবীর পাথরে কাটা মূর্তি প্রাচীন আসামের স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসাবে পরিগণিত হয়েছে।

অন্যান্য মন্দিরসমূহের মধ্যে শিব ও বিষ্ণুমন্দির অধিক দেখা যায়। এই মন্দিরসমূহের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন। তেজপুরের দো পর্বতীয়ার উপরে বিষ্ণু ভৈরব, হরগৌরীর মূর্তি পাওয়া গিয়েছে।

প্রাচীন আসামের স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হল গোয়ালাপাড়ার সূর্য পাহাড়। যোগীঘোপা, ডেক ধোয়া, পঞ্চরত্ন প্রভৃতিতে পাওয়া বহু মন্দির ও দেবদেবীর মূর্তি অহোম যুগের পূর্বের বলে ধারণা করা হয়েছে। নবম ও দশম শতকের বলে অনুমান হওয়া কিছু সংখ্যক মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ শিবসাগরে পাওয়া গিয়েছে। গুয়াহাটির আমবাড়িতে বহু প্রাচীন ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। এইগুলিতে গুপ্তযুগের শিল্পকলার প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে।

(খ) পর্যটকদের দৃষ্টিতে

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। মধ্যযুগে আসামে আসা বৃটিশ পর্যটকের নাম লেখ।

উত্তরঃ রাম্ফ ফি।

প্রশ্ন ২। সিহাবুদ্দিন তালিস কে ছিলেন?

উত্তরঃ মিরজুমলার আসাম অভিযানে আগত কালানুক্রমিক বিবরণকারী।

প্রশ্ন ৩। রাল্ফ ফিটস্ কে ছিলেন?

উত্তরঃ ১৬ শতকে আসামে আগত যেসুইট মিশনারী।

প্রশ্ন ৪। নরনারায়ণ কে ছিলেন?

উত্তরঃ কোঁচ রাজ্যের রাজা।

প্রশ্ন ৫। রাল্ফ ফিস্ কোন্ কোঁচ রাজার কথা তাঁর বিবরণে উল্লেখ করেছেন?

উত্তরঃ শুকেল কাউস (শুক্ল কোঁচ বা শুক্লব্রজ)।

প্রশ্ন ৬। বঙ্গদেশের টান্দ্রা হতে কোঁচ দেশে আসতে রাল্ফ ফিল্য়ে কতদিন সময় লেগেছিল?

উত্তরঃ ২৫ দিন।

প্রশ্ন ৭। স্যার এডওয়ার্ড গেইট কে ছিলেন?

উত্তরঃ বিশিষ্ট ইংরেজ ইতিহাসবিদ।

প্রশ্ন ৮। A History of Assam গ্রন্থের লেখক কে?

উত্তরঃ স্যার এডওয়ার্ড গেইট।

প্রশ্ন ৯। ‘ফাতিয়াহ-ই-ইব্রিয়াহ’ গ্রন্থের লেখক কে?

উত্তরঃ সিহাবুদ্দিন তালিস।

প্রশ্ন ১০। কোন্ যুদ্ধে অহোমগণ মোগলদের হাতে পরাজিত হয়েছিল?

উত্তরঃ খিলাধিঘাটের যুদ্ধে।

প্রশ্ন ১১। হাবজার মসজিদ কে নির্মাণ করেছিলেন?

উত্তরঃ গিয়াসুদ্দিন আউলিয়া।

প্রশ্ন ১২। রামসিং কে ছিলেন?

উত্তরঃ প্রখ্যাত মোগল সেনাপতি।

প্রশ্ন ১৩। আসামে ভক্তি আন্দোলনের পুরোধা কে ছিলেন?

উত্তরঃ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব।

প্রশ্ন ১৪। শঙ্করদেব কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?

উত্তরঃ ১৪৪৯ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ১৫। শঙ্করদেবের জন্মস্থান কোথায়?

উত্তরঃ নগাঁও জেলার আলিপুখুরী গ্রামে।

প্রশ্ন ১৬। নামঘোষা কে রচনা করেছিলেন?

উত্তরঃ শঙ্করদেব।

প্রশ্ন ১৭। মধ্যযুগে আসামের রাজধানী কোথায় ছিল?

উত্তরঃ গড়গাঁও-এ।

প্রশ্ন ১৮। গড়গাঁও-এ আসামের রাজধানী কে প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তরঃ অহোম রাজা চুক্লেন মুংগ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। মধ্যযুগে আসামে আগত দুইজন পর্যটকের নাম লেখ।

উত্তরঃ মধ্যযুগে আসামে আগত দুইজন পর্যটক হলেন—

(ক) রাল্ফ ফিস্‌। এবং 

(খ) সিহাবুদ্দিন তালিস।

প্রশ্ন ২। আজান পিরের প্রকৃত নাম কি? তিনি কখন আসামে এসেছিলেন?

উত্তরঃ আজান পিরের প্রকৃত নাম ছিল শাহ মিলন। তিনি ১৭ শতকে আসামে আসেন।

প্রশ্ন ৩। মোগল সম্রাটের সেনাপতি রাজা রামসিংহের সঙ্গে আসামে আসা পাঁচজন পিরের নাম লেখ।

উত্তরঃ মোগল সম্রাটের সেনাপতি রাজা রামসিংহের সঙ্গে আসামে আসা পাঁচজন পির হলেন — শাহ আকবর, শাহ বাগমার, শাহ চারণ, শাহ সূফী ও শাহ কামাল।

প্রশ্ন ৪। ভক্তিবাদ বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ ঈশ্বরের প্রতি অগাধ প্রেম তথা ভক্তির উপর গুরুত্ব দিয়ে পণ্ডিতগণ যে মতবাদ সৃষ্টি করেছিলেন তাই হল ভক্তিবাদ।

প্রশ্ন ৫। সুফিবাদ কাকে বলে?

উত্তরঃ হিন্দুধর্মের ভক্তিবাদের মতো ইসলামেও এক উদারনৈতিক মতবাদ গড়ে উঠেছিল। তা ‘সুফিবাদ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। সুফিবাদের মতে প্রেম ও ঐকান্তিক ভক্তির মাধ্যমে ভগবানকে লাভ করা যায়।

প্রশ্ন ৬। ভক্তি আন্দোলনের দুইজন ধর্মগুরুর নাম লেখ।

উত্তরঃ ভক্তি আন্দোলনের দুইজন ধর্মগুরুর নাম—

(ক) শ্রীচৈতন্যদেব। এবং 

(খ) শ্রীমন্ত শঙ্করদেব।

প্রশ্ন ৭। ‘কীর্তন’ ও ‘দশম’ ছাড়াও শংকরদেব রচিত গ্রন্থরাজির একটি তালিকা প্রস্তুত কর।

উত্তরঃ ‘কীর্তন’ ও ‘দশম’ ছাড়াও শঙ্করদেব রচিত গ্রন্থসমূহ হল— 

(ক) ভক্তিপ্রদীপ।

(খ) কালিয়দমন। 

(গ) রুক্মিনীহরণ। 

(ঘ) গুণমালা। 

(ঙ) পারিজাতহরণ।

(চ) হরিশ্চন্দ্র উপাখ্যান। 

(ছ) সিদ্ধসংবাদ। 

(জ) অনাদিপতন। 

(ঝ) কেলিগোপাল। 

(ঞ) রামবিজয়।

প্রশ্ন ৮। পিরপাল মাটি কি?

উত্তরঃ পিরগণের দরগা বা মসজিদসমূহের মাটি রাজা খাজনা হতে রেহাই দিয়েছিলেন। এইপ্রকার মাটিকে ‘পিরপাল মাটি’ বলা হত।

প্রশ্ন ৯। সাতসরী অসম বুরঞ্জীসমূহের নাম লেখ।

উত্তরঃ দেওধাই অসম বুরঞ্জী, শ্রীনাথ বেজবরুয়া বুরঞ্জী, তুঙ্গাখুঙ্গী বুরঞ্জী, কাশীনাথ তামুলী বুরঞ্জী, ফুকনের অসম বুরঞ্জী, কালিভারত বুরঞ্জী ও বেলিমার বুরঞ্জী।

প্রশ্ন ১০। চকরী ফেটি বুরঞ্জী’-র লেখক কে ছিলেন? কির্তিচন্দ্র বরবরুয়া এই বুরঞ্জীগুলি কেন ধ্বংস করেছিলেন?

উত্তরঃ ‘চকরী ফেটি বুরঞ্জী’-র লেখক হলেন নুমালী বরগোঁহাই।

কীর্তিচন্দ্র বরুয়া এটি ধ্বংস করেছিলেন কারণ তাঁকে নকল আহোম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।

প্রশ্ন ১১। দরং রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় এক নূতন শ্রেণীর রাজবংশাবলীর বা রাজকীয় কালানুক্রমিক বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। তাদের নাম লেখ।

উত্তরঃ বলদেব সূর্যখরি দৈবদত্ত, রতিকান্ত দ্বিজ এবং সূর্যদেব সিদ্ধান্তবাগীশ।

প্রশ্ন ১২। নরনারায়ণ তাঁর রাজ্যের সেনাপতি কাকে নিযুক্ত করেছিলেন? তিনি অন্য কোন্ নামে পরিচিত ছিলেন?

উত্তরঃ শুক্লধ্বজকে নরনারায়ণ তাঁর রাজ্যের সেনাপতি হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি চিলপাখির মতো ক্ষিপ্রগতিতে পদচারণা করতেন বলে তিনি চিলারায় নামেও পরিচিত ছিলেন।

প্রশ্ন ১৩। কোন্ মোগল সেনাপতির হাতে ও কোন্ যুদ্ধে অহোমগণ পরাজিত হয়েছিলেন?

উত্তরঃ মোগল সেনাপতি মিরজুমলার কাছে খিলাধিঘাটের যুদ্ধে অহোমগণ পরাজয় বরণ করেছিলেন।

প্রশ্ন ১৪। আজান পির কে ছিলেন? তাঁর দরগা কোথায় অবস্থিত?

উত্তরঃ আজান পির একজন মুসলমান ধার্মিক পির ছিলেন। শিবসাগর জেলার সরাগুড়ি চাপরি নামক স্থানে তার দরগা অবস্থিত।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। রাল্ফ ফিট্স্ অথবা সিহাবুদ্দিন তালিসের কাহিনিতে অতিরঞ্জিত কথা তুমি দেখতে পেয়েছ কি?

উত্তরঃ রাল্ফ ফিরে কাহিনিতে শুক্লধ্বজকে কোঁচ রাজ্যের রাজা বলে বর্ণনাটিতে দেখানো হয়েছে যে সম্ভবত রাজ্যের প্রকৃত ক্ষমতা তাঁর উপরই ন্যস্ত ছিল। রাজ্যের মানুষ পশু-পক্ষীর প্রতি যে মমতা দেখিয়েছিল, তা ব্যাখ্যা করা কঠিন। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এডওয়ার্ড গেইট বলেছিলেন—একটি কিংবদন্তী মতে কোন এক বছর জ্যোতিষী পণ্ডিতগণ মহারাজা নরনারায়ণের উপর শনির প্রভাব পড়বে বললে নরনারায়ণ তাঁর ভাই শুক্লধ্বজের হাতে সমস্ত দেশের শাসনভার অর্পণ করে সম্পূর্ণ একবছর সময় ছদ্মবেশে ঘুরেফিরে কাটিয়েছিলেন। রাল্ফ ফিস্ হয়তো এই সময়কালে কোঁচ রাজ্য পরিভ্রমণ করেছিলেন এবং শুক্লধ্বজকে সিংহাসনে বসে থাকতে দেখেছিলেন।

তদুপরি নরনারায়ণ নিজে একজন গভীর ধর্মানুরাগী ছিলেন বলে জৈনধর্ম বা বৈষ্ণবধর্মের প্রভাবে পশু-পক্ষীর জন্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

প্রশ্ন ২। আসামে ভক্তিবাদ আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে আসামে শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের নেতৃত্বে ভক্তি আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। সেই সময়ে আসামে ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায় পরস্পরাগত ভাবে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজার্চনা করত। সামাজিক নীতি-নিয়ম মানে না এমন লোকজনও সমাজে বৃদ্ধি পেয়েছিল। সামাজিক অনাচারে প্রবৃত্ত লোকজন জনজীবনে অশান্তি সৃষ্টি করতে শুরু করে। শাক্তপন্থীরা বলি-পূজার সমর্থক ছিলেন। পুরোহিত শ্রেণীর প্রাধান্য এবং জাতিভেদ প্রথা সাধারণ মানুষের ধর্ম-সাধনায় যথেষ্ট বাধার সৃষ্টি করেছিল। সমস্ত মানুষের মুক্তির পথ সুগম করার জন্য এক সহজ সরল ধর্ম আবশ্যক হয়ে পড়েছিল, এই পটভূমিতে ১৪৪৯ খ্রিস্টাব্দে শঙ্করদেবের জন্ম হয়। তাঁর নেতৃত্বেই আসামে ভক্তি আন্দোলন আরম্ভ হয়।

প্রশ্ন ৩। শ্রীমন্ত শঙ্করদেব সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ১৪৪৯ খ্রিস্টাব্দে আসামের নগাঁও জেলার অন্তর্গত আলিপুখুরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কুসুম্বর ভূঁইয়া এবং মাতার নাম সত্যসন্ধ্যা দেবী। মহেন্দ্রকদলী নামে এক পণ্ডিতের নিকট শঙ্করদেব নানা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি সত্যবর্তী নামে এক মহিলাকে বিবাহ করেন। এক কন্যাসন্তান রেখে সত্যবতী পরলোকগমন করলে শঙ্করদেব গৃহত্যাগ করে প্রায় বারো বৎসর বিভিন্ন তীর্থস্থান ভ্রমণ করেন। কবীর ও অন্যান্য সাধু-সত্তদের সঙ্গে ধর্ম বিষয়ে আলোচনা করে তিনি উপলব্ধি করেন যে ধর্মচর্চার জন্য সংসার ত্যাগের কোন প্রয়োজন নেই। গৃহে ফিরে তিনি দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন। শঙ্করদেব প্রবর্তিত ধর্মকে ভাগবতী বৈষ্ণবধর্ম বা একশরণ ধর্ম বলা হয়। এই ধর্মের মূল কথা হল ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। শঙ্করদেব তাঁর ধর্মমত প্রচার করতে থাকেন। অসমীয়া সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে শঙ্করদেবের দান অপরিসীম। তিনি গীত, কির্তন, কাব্য, নাটক প্রভৃতি রচনা করেন। ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে শঙ্করদেব স্বর্গারোহণ করেন।

প্রশ্ন ৪। আসামে শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের ধর্মমত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ দর্শাও।

উত্তরঃ পঞ্চদশ শতকে আসামে শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের নেতৃত্বে ভক্তি আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। সেই সময়ে আসামে ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায় পরম্পরাগতভাবে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা-অর্চনা করত। সামাজিক নীতি-নিয়ম মানে না এমন লোকজনও সমাজে বৃদ্ধি পেয়েছিল। সামাজিক অনাচারে প্রবৃত্ত লোকজন জনজীবনে অশান্তি সৃষ্টি করতে শুরু করে। এ-হেন পটভূমিতে ১৪৪৯ খ্রিস্টাব্দে অসমিয়া কলা-সংস্কৃতির প্রাণস্বরূপ শঙ্করদেবের জন্ম হয়। ভারতবর্ষের প্রসিদ্ধ তীর্থস্থানগুলো ভ্রমণ করে শঙ্করদেব হিন্দুধর্মের মূল শাস্ত্রগুলো গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি একেশ্বরবাদী ছিলেন। তাঁর ভক্তিবাদ আসামের সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে প্রসারলাভ করে। ভক্তিবাদের ধারণা দিয়ে তিনি অসমিয়া সমাজটি নতুন করে গড়ে তোলেন। অসমিয়া সামাজিক জীবন সংঘবদ্ধ করতে তিনি সমতা, সহিষ্ণুতা ও অহিংসার বাণী প্রচার করেছিলেন। এই সকল কারণে শঙ্করদেবের ধর্মমত জনপ্রিয় হয়।

প্রশ্ন ৫। অসমিয়া সংস্কৃতিতে শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের অবদান লেখ।

উত্তরঃ অসমিয়া সংস্কৃতিতে শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের অবদান অপরিসীম। অসমিয়া ভাষা ও সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধনের জন্য তিনি আজীবন প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। সংস্কৃত ভাষা থেকে অসমিয়া ভাষায় বেশ কয়েকটি গ্রন্থ অনুবাদ করে তিনি অসমিয়া ভাষা সমৃদ্ধ করেছেন। অঙ্কীয়া নাট ও ভাওনা রচনা করে তিনি অসমিয়া কলা-সংস্কৃতিতে নতুন ধারার সংযোজন ঘটান। নামঘর স্থাপনের মাধ্যমে তিনি আসামে সংগীত ও নাট্যচর্চার কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন। সামাজিক একতা ও সম্প্রীতির সেতু সুদৃঢ় করার জন্য তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মসূচীর ব্যবস্থা করেছিলেন। শঙ্করদেব শুধু ধর্ম প্রচারকই নন, তিনি হলেন প্রকৃত অর্থে অসমিয়া জাতির কাণ্ডারি। অসমিয়া ভাষা ও কলা-সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাতা।

প্রশ্ন ৬। আজান পিরের বিষয়ে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ আজান পির মুসলমান সুফিবাদের একজন গুরু। তাঁর প্রকৃত নাম শাহ মিলন। তিনি ১৭ শতকে আসামে এসেছিলেন। তিনি মুসলমানগণকে আজান দিয়ে ভগবানের প্রার্থনা করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন যার জন্য তিনি আজান পির নামে জনপ্রিয় ছিলেন। অহোম রাজা গদাধর সিংহ আজান পিরকে শাস্তি প্রদান করেছিলেন। কিন্তু পরে তাঁর অসাধারণ ঐশ্বরিক শক্তির কথা জানতে পেরে ১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে পিরকে শাস্তি হতে রেহাই দিয়ে তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। শিবসাগর জেলা সদর হতে ২২ কিলোমিটার দূরে শরাগুড়িতে আজান পিরের দরগাহ আছে। অসমিয়া ভাষায় জিকির গীতসমূহ রচনাকারী তিনিই প্রথম মুসলমান ধর্মগুরু।

প্রশ্ন ৭। মধ্যযুগে আসামের রাজধানী গড়গাঁওয়ের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ অহোম রাজা চুকেন মুং গড়গাঁও-এ অহোম রাজ্যের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সিহাবুদ্দিন তালিস তাঁর ‘ফতিয়াহ-ই-ইব্রিয়াহ’ নামক গ্রন্থে এই রাজধানী নগর গড়গাঁও – এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করেছেন।

গড়গাঁও নগরের চারিদিকে চারখানা পাথরের দরজা আছে। প্রতিটি দরজা হতে রাজপ্রাসাদের দূরত্ব তিন কিলোমিটার। নগরের চারিদিকে প্রাচীরের পরিবর্তে দুই কিলোমিটার বা ততোধিক প্রস্থবিশিষ্ট সারি সারি বাঁশগাছ লাগানো আছে। কিন্তু নগরের ভিতরে বাড়িগুলি শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে সাজানো নয়। ঘরবাড়িগুলি যত্রতত্র এলোমেলোভাবে তৈরি। প্রত্যেক বাড়ির সামনে একটি ফুলবাগান আছে। রাজপ্রাসাদের নিকটে দিঘৌ নদীর দুই পারে অসংখ্য ঘর আছে।

সাধারণভাবে আমরা দেখতে পাই যে গড়গাঁও নগরখানি গোলাকৃতি, বিস্তৃত ও বহু গ্রামের একত্রিত সমষ্টি। রাজার রাজসভা বসার ঘরটিকে চোলোং ঘর বলা হত। তা দৈর্ঘ্যে ১২০ হাত ও প্রস্থে ৩০ হাত ছিল। ঘরটি নির্মিত ছিল ৬৬টি খুঁটির উপর। প্রতিটি খুঁটি প্রায় ৪ হাত গোলাকার। প্রতিদিন ১২,০০০ মানুষ কাজ করে অট্টালিকাখানা তৈরি করতে এক বছর সময় লেগেছিল।

প্রশ্ন ৮। অহোম রাজত্বকালে আসামের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে কি জানো?

উত্তরঃ অহোম রাজত্বকালে অহোম সমাজে উদার সমাজ নীতি প্রচলিত ছিল। তারা জাতিভেদ মানতেন না। এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অপর সম্প্রদায়ের বিবাহাদি সম্পন্ন হত। কোন কোন সামাজিক বিষয়ে অহোমদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল উদার। খাদ্যাদি সম্বন্ধেও কোন বাধানিষেধ ছিল না। অহোমগণ মাছ, মাংস প্রভৃতি সকল খাদ্য অন্যান্য জাতির সহিত একত্রে গ্রহণে কোন বাধা ছিল না। অহোম সমাজে নারীর স্থান ছিল উচ্চে। পর্দা প্রথার বিশেষ প্রচলন ছিল না। প্রাচীন অহোম সমাজে খেলাধূলাও প্রচলিত ছিল।

প্রশ্ন ৯। অহোম রাজত্বকালে আসামের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে কি জানো?

উত্তরঃ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অহোমদের অবস্থা যথেষ্ট স্বচ্ছল ছিল। কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারা স্বনির্ভর ছিল। অহোমদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি। বস্ত্র শিল্প, রঞ্জন শিল্প, মৃৎশিল্প, ধাতুশিল্প হাতির দাঁতের শিল্প, বাঁশ ও বেত শিল্পে সে যুগে আসাম বেশ নিপুণতা লাভ করেছিল। সেই যুগে আসামে, এণ্ডি, মুগা, পাট প্রভৃতি দ্বারাও কাপড় প্রস্তুত করা হত। তাছাড়া নানা ধরনের মাটির বাসনও প্রস্তুত করা হত। পাট শিল্পেও আসাম উন্নত ছিল। অহোম রাজত্বে সিকি, আধুলি প্রভৃতি ধাতুর মুদ্রার প্রচলন ছিল। ভারতের অন্যান্য রাজ্য ছাড়াও চীন, তিববত, ভূটান প্রভৃতি দেশের সঙ্গে অহোম রাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য চলত। বঙ্গদেশের সঙ্গেও অহোমদের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রচলিত ছিল।

প্রশ্ন ১০। অহোম রাজত্বকালে আসামে কৃষির অবস্থা সম্পর্কে কি জানো?

অথবা,

আহোম শাসনকালে কৃষকদের স্থান কেমন ছিল?

উত্তরঃ অহোমদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি। ব্রাহ্মণ ছাড়া সকলেই কৃষিকাজ করতেন। কৃষি ছিল একটি সম্মানজনক বৃত্তি। পাইকের সাহায্যে কৃষিকাজ করানো হত। সামরিক বিভাগে নিযুক্ত ১৫–৫০ বৎসরের প্রত্যেকটি লোককে ‘পাইক’ বলা হত। তারা বিনা করে ক্ষেতের জমি ভোগ করত। তবে জমির পর তাদের কোন স্বত্ব ছিল না। পাইকরা বৎসরে ৩-৪ মাস রাজার কাজ করে অন্য সময় করমুক্ত জমিতে কৃষিকার্য করত। পাইকের বয়স ৫০ বৎসর হলে তার জমি অন্য পাইককে দেওয়া হত। অহোম যুগে আসামে ধান, পাট, গম, শস্য প্রভৃতি প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হত। যুদ্ধবিগ্রহের সময় শস্য উৎপাদনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত।

প্রশ্ন ১১। পাইক প্রথা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

অথবা,

‘পাইক প্রথা’ বলতে কি বোঝায়?

উত্তরঃ অহোম যুগে সামরিক বিভাগে ১৫-৫০ বৎসরের প্রত্যেকটি লোককে ‘পাইক’ বলা হত। রাজেশ্বর সিংহের সময় তিনজন পাইক নিয়ে একটি ‘গোট’ সৃষ্টি হয়। এদের মূল, দেরাল এবং তেরাল বলা হত। তারা পালাক্রমে রাজগৃহে ৩/৪ মাস বেগার খাটত। পাইকরা বিনা করে ক্ষেতের জমি ভোগ করত। পাইক প্রথার ফলে সৈন্যদের চাহিদাও পূরণ হত। ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে মোমাই তামুলী পাইকদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করেন। তিনি বিশ জন পাইকের উপর এক জন বরা, একশ জন পাইকের উপর এক জন শইকীয়া, একহাজার জন পাইকের উপর এক জন হাজারিকা, তিন হাজারের উপর এক জন রাজখোয়া এবং ছয় হাজারের উপর এক জন ফুকন নিযুক্ত করেছিলেন। অহোম রাজ্যে নিয়মিত সৈন্যবাহিনী না থাকাতে পাইক প্রথা দ্বারা যুদ্ধ চালানো হত। পাইকরা করমুক্ত জমি ভোগ করলেও জমির উপর তাদের কোন স্বত্ব ছিল না। পাইকের বয়স ৫০ বৎসর হলে তার জমি অন্য পাইককে দেওয়া হত।

প্রশ্ন ১২। অহোম রাজত্বে আসামে নারীজাতির স্থান কিরূপ ছিল?

উত্তরঃ অহোম সমাজে নারীর স্থান উচ্চে ছিল। পর্দা প্রথার কোন প্রচলন ছিল না। মহিলাদের লেখাপড়া শিখতে কোন বাধা ছিল না। বররাজা ফুলেশ্বরী, সর্বেশ্বরী, অম্বিকা প্রভৃতি রমণীগণ সেই যুগে রাজকার্য পর্যন্ত চালিয়েছিলেন। মূলা-গাভরু, রাধা, রুক্মিণী যুদ্ধক্ষেত্রেও পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। অহোম রমণীগণ উৎকৃষ্ট ধরনের ‘বোয়া-কাটার’ কাজ জানতেন। যারা তা জানত না তাদের ‘থুপুরী’ বলে উপহাস করা হত এবং এইরূপ রমণীর বিবাহ হত না। মন্দিরে যে সকল মহিলা কাজ করত তাদের ‘নটী’ বলা হত। তা সম্মানজনক বলে গণ্য হত।

প্রশ্ন ১৩। অহোমদের স্থাপত্য শিল্প সম্বন্ধে কি জানো লেখ।

উত্তরঃ অহোমরা প্রথমে কাঠের ঘর প্রস্তুত করেছিল। পরবর্তীকালে তারা ইটের ঘর প্রস্তুত করেন। ইটগুলি ছিল লম্বা ও বিভিন্ন কোণী। অহোম যুগের বিখ্যাত মন্দিরসমূহের অন্যতম হল গৌরী সাগরের তীরে দেবীদোল, জয়দোল, উমানন্দ মন্দির, কামাখ্যা মন্দির, কামেশ্বর মন্দির, জনার্দন মন্দির, প্রতাপ সিংহের আমলের দেরগাঁও মন্দির, বিশ্বনাথের শিব মন্দির, রাজেশ্বর সিংহের আমলের তৈরি নবগ্রহ মন্দির, দীর্ঘেশ্বরী মন্দির, বশিষ্ঠো-শ্রমের মন্দির, কমলেশ্বরের সময়ে তৈরি ছত্রাকার মন্দির। তাছাড়া গড়গাঁওয়ের কারেং ঘর, রংপুরের রং ঘর, তলাতল মন্দির অহোম স্থাপত্য শিল্পের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রুদ্র সিংহের সময় হতে অহোম স্থাপত্য শিল্পে মোগল-পারসি স্থাপত্যের নিদর্শন দেখা যায়।

প্রশ্ন ১৪। শঙ্করদেব প্রচারিত ধর্মকে ‘ভাগবতী’ ধর্ম কেন বলা হয়? তিনি সত্রঘর এবং নামঘরসমূহ কেন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উত্তরঃ শঙ্করদেব প্রবর্তিত ধর্মকে ভাগবতী বৈষ্ণবধর্ম বা এককারণ ধর্ম বলা হয়। কারণ এই ধর্মের মূল কথা হল ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর অভিমত ছিল বিষ্ণুর উপর নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করা। নাম-কীর্তনের মাধ্যমে নিজের অন্তর উজাড় করে বৈষ্ণবধর্মে নিজেকে বিলীন করে দেওয়াই হল শঙ্করদেবের ধর্মের মূল কথা।

বৈষ্ণবধর্ম অর্থাৎ একশরণ বা ভাগবতী ধর্ম প্রচারের জন্য শঙ্করদেব সত্র নির্মাণ করেন। নামঘর স্থাপনের মাধ্যমে তিনি আসামে সংগীত ও নাট্যচর্চার কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। রাল্ফ ফিট্স্ কে ছিলেন? আসাম সম্পর্কে তার প্রদত্ত তথ্যাদি সংক্ষেপে বর্ণনা কম।

উত্তরঃ রাল্ফ ফিস্ একজন যেসুইট মিশনারী ছিলেন। তিনি ১৬ শতকের আসামের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে বহু সরকারি তথ্য প্রদান করেছেন।

রাল্ফ ফিট্স বলেছিলেন যে বঙ্গদেশের টান্দ্রা হতে উত্তরদিক হয়ে কোঁচ দেশ পর্যন্ত আসতে তাঁর ২৫ দিন সময় লেগেছিল। কোঁচ দেশের রাজা অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের ছিলেন। তাঁর নাম শুকেল কাউস (শুক্ল কোঁচ বা শুক্ল-ধ্বজ)। তাঁর রাজ্যখানি অতিবৃহৎ ছিল। সম্পূর্ণ রাজ্যটি বাঁশের খুঁটি বেতে মাটিতে পুঁতে বেষ্টন করে রাখা হত। শত্রুর আক্রমণ হলে নদীর বাঁধ কেটে আক্রান্ত স্থানসমূহ প্লাবিত করে রাখা হত যাতে মানুষ বা ঘোড়া অতিক্রম করতে না পারে। যুদ্ধ হলে তারা জলে বিষ মিশিয়ে দিত। এতে অনেক কস্তুরী পাট এবং কার্পাস কাপড় উৎপন্ন হয়। রাল্ফ-এর মতে মানুষের কানসমূহ অদ্ভূত ধরনের বৃহৎ ছিল। প্রায় এক বিঘৎ লম্বা ছিল। কেঁাঁচ রাজ্যে সকল মানুষ হিন্দু ছিল। তারা কোন পশু বধ করত না। ভেড়া, ছাগল, কুকুর, বিড়াল, চড়ুই ও সকল প্রকার জীবিত প্রাণীর জন্য এখানে চিকিৎসালয় ছিল। কোন প্রাণী যখন বৃদ্ধ ও পঙ্গু হয়ে পড়ে তখন এইসকল হাসপাতালে এদের রাখা হত। রাল্ফ এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কোঁচ রাজ্যের মহারাজা নরনারায়ণ একজন পরোপকারী, দয়ালু ও গুণী রাজা ছিলেন।

প্রশ্ন ২। সিহাবুদ্দিন তালিস কে ছিলেন? আসাম সম্পর্কে তার প্রদত্ত তথ্যাদি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ সিহাবুদ্দিন তালিস একজন পরিব্রাজক ও ঐতিহাসিক ছিলেন। মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে বঙ্গদেশের শাসক মিরজুমলা আসামের বিরুদ্ধে অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মিরজুমলা তার আসাম আক্রমণ অভিযানে সিহাবুদ্দিন তালিস নামে একজন কালানুক্রমিক বিবরণকারীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন।

সিহাবুদ্দিন তালিস তার ভ্রমণকাহিনি ‘ফাতিয়াহ-ই-ইব্রিয়াহ’-তে সেই সময়কার আসামের বিষয়ে একটি বিস্তৃত বিবরণ লিখেছেন। তার বিবরণ অনুযায়ী দেশখানি বিশাল ও দুর্গম ছিল। তা পশ্চিম হতে পূর্বদিকে ২০০ মাইল দীর্ঘ ছিল। বৃহৎ নদী ব্রহ্মপুত্রের উত্তর তীরকে ‘উত্তর কোল’ ও দক্ষিণ তীরকে ‘দক্ষিণ কোল’ বলা হত। উত্তর তীর জনবসতিপূর্ণ, উর্বর ও ক্ষেতকৃষিতে ভরপুর ছিল। এর জলবায়ু বিদেশিদের উপযুক্ত ছিল না। বৎসরের আটমাসই বৃষ্টিপাত হত। নদীতীরের জলবায়ু কিছুটা ভালো ছিল। ধান ছিল প্রধান শস্য। এখানে নানা ধরনের ফলমূল, যেমন—আনারস, লেবু ও কুশিয়ার পাওয়া যেত। আমসমূহ পোকা-আক্রান্ত ছিল। নারিকেল বাগান কদাচিৎ দেখা যায়। নিমগাছের খুবই আকাল ছিল। স্থানীয় মানুষ কলাগাছ কেটে রৌদ্রে শুকিয়ে এক প্রকার বস্তু তৈরি করত যা নিম হিসাবে ব্যবহার করা হত। তালিস উল্লেখ করেছিলেন যে তখনকার দিনে আসামে হাতি এবং নানা প্রকার পক্ষী যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যেত। আসামের জলবায়ু ও ভৌগোলিক অবস্থা অস্বাভাবিক ছিল।

রাজা ও রাজতন্ত্র প্রসঙ্গে সিহাবুদ্দিন লিখেছিলেন—সেরা বলে রাজা অত্যন্ত দাম্ভিক ও অহংকারী ছিলেন। তাঁর উত্তরসূরীগণ রক্তপাতের প্রতি অধিক আসক্ত ছিল। সামান্য দোষে একটি পরিবারকে শেষ করে দিত।

এই দেশের মানুষ একই ধর্ম গ্রহণ করেনি। খাওয়া-দাওয়া ও জাতিবিশ্বাসে তাদের কোন বাধা ছিল না। তারা ঘি খেত না। নরমাংস ব্যতীত সকল প্রকার মাংস তারা খেত। এখানকার মুসলমান মানুষকে স্থানীয় আচার-ব্যবহার ও রীতিনীতি গ্রহণ করতে দেখা যায়। এখানকার মানুষ নদী হতে বালি সংগ্রহ করে তা ধৌত করে সোনা সংগ্রহ করত। সোনার মান এটি ছিল না।

আসামে দুর্ধর্ষ পদাতিক সৈন্য ছিল। এখানে অসংখ্য যুদ্ধের নৌকা দেখা যায়। অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে দা, কুঠার, তির-ধনুক, তরোয়াল, লাঠি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। রাজা ও অভিজাতগণকে তাঁদের পত্নী, দাসদাসী ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কবর দেওয়া হত। বহু মূল্যবান অলংকার, খাদ্যবস্তু, বাসনপত্র ইত্যাদি শবাধারের মধ্যে রাখা হত।

প্রশ্ন ৩। অহোম রাজ্যের পতনের প্রধান কারণসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ নিম্নলিখিত কারণে অহোম রাজ্যের পতন ঘটেছিল:

(ক) সব জাতির প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী কালক্রমে অবনতিগ্রস্ত হয় এবং অহোমদের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছিল।

(খ) পরবর্তী অহোম রাজাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা অহোম সাম্রাজ্যের পতনের জন্য বিশেষভাবে দায়ী।

(গ) অহোম রাজাগণের অক্ষমতা এবং বিলাসিতার সুযোগে অভিজাত শ্রেণী প্রবল পরাক্রান্ত হয়ে ওঠে। তাদের অত্যাচারে জনজীবনে অসন্তোষ ও বিক্ষোভ দেখা দেয় যা অহোম সাম্রাজ্যের ভিত্তি শিথিল করে দেয়।

(ঘ) মোগলদের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুদ্ধবিগ্রহের ফলে অহোম রাজকোষের শূন্যতা অহোম রাজ্যের অবনতির জন্য অনেকাংশে দায়ী।

(ঙ) অহোম রাজের অবনতি ও পতনের মূল কারণ প্রকৃতপক্ষে অহোম জাতির চরিত্রের অবনতি ও যোগ্যতার হ্রাস।

(চ) অহোম সামরিক বাহিনীর দুর্বলতা ও অক্ষমতা অহোম রাজ্যের পতনের জন্য বহুলাংশে দায়ী।

প্রশ্ন ৪। বুরঞ্জী গ্রন্থসমূহ আসামের ইতিহাসের প্রকৃত ও নির্ভরশীল উপাদান বলে তুমি মনে কর কি?

অথবা,

মধ্যযুগীয় অসমের ইতিহাসের উৎস হিসাবে ‘বুরঞ্জী’ গ্রন্থসমূহের গুরুত্ব আলোচনা কর।

উত্তরঃ অহোমদের আগমনের পর আসামে ‘বুরঞ্জী’ বা ইতিহাস লেখার নিয়ম প্রচলিত হয়। বুরঞ্জীসমূহ অহোমদের এক বহুমুল্য অবদান। আসামের রাজাগণ কালানুক্রমিক বিবরণ লিখতে প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। কারণ এইগুলি একটি ঘটনার বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদান করে যা মূল্যবান ও নির্ভরযোগ্য বলে গণ্য করা হয়। উল্লেখ্য বহু অহোম পরিবারে বুরঞ্জী লেখার নিয়ম প্রচলিত ছিল।

বুরঞ্জীসমূহকে ‘জ্ঞানের ভাণ্ডার’ আখ্যা দেওয়া হয়; অর্থাৎ তা অজানা কথা জানাটাকে বোঝায়। বুরঞ্জী লিপিবদ্ধ করা ঘটনাসমূহ, তারিখ ও কালানুক্রমিক তারিখসমূহ, শিলালিপি, তাম্রপত্র, মুদ্রা প্রভৃতির বর্ণনা প্রদান করে। কিছুসংখ্যক বুরঞ্জীতে রাজপুরুষগণের ঘনিষ্ঠ কথাবার্তা, রাজদরবারের ঘটনা ও বিচার-সম্পর্কীয় গোপন নথিপত্রের বিবরণ থাকে। বুরঞ্জী কেবলমাত্র রাজা ও রাজবংশের বিবরণই নয়, সেই সময়ের সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিষয়েও অনেক তথ্য সংগ্রহ করে।

(গ) ঔপনিবেশিকতাবাদ ও গ্রামাঞ্চল

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। আসামের শেষ অহোম রাজা কে ছিলেন?

উত্তরঃ পুরন্দর সিংহ।

প্রশ্ন ২। কত খ্রিস্টাব্দে পুরন্দর সিংহের সিংহাসনচ্যুতি ঘটে?

উত্তরঃ ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৩। কোন্ সন্ধির ফলে আসামে ব্রিটিশ শাসন আরম্ভ হয়?

উত্তরঃ ইয়াণ্ডাবুর সন্ধি।

প্রশ্ন ৪। ইয়াণ্ডাবুর সন্ধি কত খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তরঃ ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৫। দেশপ্রেমিক ইউ তিরুৎ সিং কোন্ রাজ্যের লোক ছিলেন?

উত্তরঃ খাসিয়া রাজ্যের।

প্রশ্ন ৬। টিকেন্দ্রজিৎ কোন্ রাজ্যের বীর সেনাপতি ছিলেন?

উত্তরঃ মণিপুর।

প্রশ্ন ৭। গোমধর কোঁয়র কোন রাজ্যের বিদ্রোহী নেতা ছিলেন?

উত্তরঃ আসাম।

প্রশ্ন ৮। কত খ্রিস্টাব্দে শিলং আসামের রাজধানী হয়?

উত্তরঃ ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৯। আসামে সিপাহী বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক কে ছিলেন?

উত্তরঃ মণিরাম দেওয়ান।

প্রশ্ন ১০। মণিরাম দেওয়ানের ফাঁসি কত খ্রিস্টাব্দে হয়?

উত্তরঃ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ২৮। NEFA-র বর্তমান নাম কি?

উত্তরঃ অরুণাচল প্রদেশ।

প্রশ্ন ২৯। ইয়াণ্ডাবুর সন্ধি কবে স্বাক্ষর করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৩০। কোন্ খ্রিস্টাব্দে উজান আসাম ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়?

উত্তরঃ ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৩১। প্রথম অসমীয়া ছায়াছবি ‘জয়মতী’ কে প্রযোজনা করেছিলেন?

উত্তরঃ জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা।

প্রশ্ন ৩২। আসামে কোন্ খ্রিস্টাব্দে চা আবিষ্কার হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৩৩। পুরন্দর সিংকে বৎসরে কত টাকা কর হিসাবে শোধ করতে হয়েছিল?

উত্তরঃ বার্ষিক ৫০,০০০ টাকা।

প্রশ্ন ৩৪। আসামের প্রথম ইংরেজি স্কুলটির নাম কি ছিল?

উত্তরঃ গুয়াহাটী মিশনারি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top