Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম and select needs one.
Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম
Also, you can read SCERT book online in these sections Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম for All Subject, You can practice these here..
প্রশ্ন ৪। ভারত বিভাজনের কারণসমূহ আলোচনা করো ।
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতের রাজনৈতিক ঘটনাগুলি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলতে থাকে । আন্তর্জাতিক চাপে ব্রিটিশ সরকার ভারতের প্রতি তাদের নীতি পরিবর্তনে বাধ্য হন । অপরদিকে কংগ্রেস ও আজাদ হিন্দ ফৌজের সামরিক কর্মচারীবর্গকে সর্বোতভাবে সাহায্য দান করে দেশবাসীর অধিকতর শ্রদ্ধা অর্জন করে ।
১৯৪৫ সালে আগস্ট মাসে ইংল্যাণ্ডে সাধারণ নির্বাচনে রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের পতন ঘটে । সেই স্থানে শ্রমিক দলের নেতা ক্লিমেণ্ট এট্লী প্রধানমন্ত্রী হন । সঙ্গে সঙ্গে নবগঠিত সরকার ভারতের সমস্যা সমাধানে মনোনিবেশ করেন । ঐ বিৎসর অর্থাৎ ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লর্ড ওয়াভেল ঘোষণা করলেন যে , ঐ বৎসরের শেষের দিকে যে সাধারণ নির্বাচন হবে এতে নির্বাচিত সদস্যবর্গ নিয়ে সংবিধান সভা গঠিত হবে । সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীগণ প্রায় সকল প্রদেশে বেশির ভাগ অ – মুসলমান পদগুলিতে নির্বাচিত হন । ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করতে পারেন যে কংগ্রেসই ভারতীয় জনগণের মুখপাত্র ।
নৌসেনা বিদ্রোহ :- ১৯৬৪ সালের ১৮ ই ফেব্রুয়ারী বোম্বাইতে ( মুম্বাইতে ) “ রয়্যাল ইণ্ডিয়ান নেভি ” -এর ভারতীয় কর্মচারীগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে । ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করলেন যে ভারতে আর বিদেশী শাসন টিকিয়ে রাখা চলবে না। ১৯৪৬ সালের ১৯ শে ফেব্রুয়ারী , অর্থাৎ নৌবিদ্রোহের পরদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এট্লী ঘোষণা করেন যে ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মন্ত্রীবর্গের তিনজন — লর্ড পেথিক লরেন্স , স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপস্ এবং মিঃ এম . ভি . আলেকজাণ্ডারের সঙ্গে ভারতবর্ষে সংবিধান সভা গঠন ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করা হবে ।
ক্যাবিনেট মিশন :- ১৯৪৬ সালের ২৩ শে মার্চ ক্যাবিনেট মিশন ভারতে উপস্থিত হন । বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনার পর ১৯৪৬ সালের ১৬ ই মে তারিখে ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি “ গণপরিষদ ” এবং শাসন পরিচালনার জন্য একটি “ অন্তর্বর্তী সরকার পরিকল্পনার ” ‘ শ্বেতপত্রিকা ’ প্রকাশিত হয় । এটি মন্ত্রী মিশনের “ মে পরিকল্পনা ” । এতে পাকিস্তান প্রস্তাব বাতিল করে ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্য নিয়ে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করা হয় । কংগ্রেস এই প্রস্তাব মেনে নেয়।প্রতিবাদে মুসলিম লীগ প্রত্যক্ষ কার্য দ্বারা মুসলমানগণকে ব্রিটিশ প্রদত্ত উপাধি বর্জন করতে নির্দেশ দেয় । ১৯৪৬ সালের ১৬ ই আগস্ট লীগ “ প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস ” পালন করে কলকাতা , নোয়াখালি , ত্রিপুরা , বিহার , উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি স্থানে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ঘটায়।
অন্তর্বর্তী সরকার :- মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাব অনুসারে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ১৯৪৬ সালের ২ রা সেপ্টেম্বর কেন্দ্রে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় । মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তী সরকার বয়কট করে । ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতিত্বে ৯ ই ডিসেম্বর গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এবং ভারতীয় সংবিধান প্রণয়ন শুরু হয় ।
মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা :- মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ না দেওয়ায় শাসনব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়ে । এদিকে মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাব কার্যকর না হওয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এট্লী ১৯৪৭ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারী এক বিবৃতিতে ভারতের শাসন ক্ষমতা ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতীয়দের হাতে অর্পণ করা হবে বলে ঘোষণা করেন । ১৯৪৭ সালের ২৬ শে মার্চ লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে গান্ধিজি ও জিন্নার এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয় ।
ভারত বিভাগ :- ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে লর্ড মাউন্টব্যাটেন গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন । ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব কার্যকর করার দায়িত্ব তাঁর উপরই দেওয়া হয় । কার্যভার গ্রহণ করেই মাউন্টব্যাটেন বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন । কিন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে আপোসের কোনো সম্ভাবনা না দেখে ১৯৪৭ সালের ৩ রা জুন ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয় । মুসলিম লীগ স্বেচ্ছায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল । কংগ্রেস নিরুপায় হয়ে অনিচ্ছায় ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নিল । মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনা কার্যকর করতে ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে “ ভারতের স্বাধীনতা আইন ” গৃহীত হয়।
এই আইন অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারতীয়গণের হস্তে ভারতের শাসনভার সম্পূর্ণভাবে ন্যস্ত করা হল । এই আইনের ফলে ভারতের দুই স্বতন্ত্র রাষ্ট্র — ভারত ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় । পাঞ্জাবের পশ্চিম ভাগ , উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ , সিন্ধু , বেলুচিস্তান এবং পূর্বপ্রান্তে শ্রীহট্টসহ পূর্ববঙ্গ — এই পাঁচটি বিভিন্ন প্রদেশ নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং ব্রিটিশ শাসিত ভারতের অন্যান্য প্রদেশগুলি নিয়ে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র ( Indian Union) গঠিত হয়। দুইটি পৃথক গণপরিষদ উভয় রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ শাসনপ্রণালী স্থির করবে বলে ধার্য হল । মহম্মদ আলি জিন্না পাকিস্তানের এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বড়লার্ট নিযুক্ত নিজস্ব সংবিধান প্রণয়ন করে ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারী ভারত একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় ।
প্রশ্ন ৫। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজীর ভূমিকা আলোচনা করো ।
উত্তরঃ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৮৯৭ সালের ২৩ শে জানুয়ারী উড়িষ্যার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি প্রসিদ্ধ আইনজীবী জানকীনাথ বসুর পুত্র । রামকৃষ্ণ – বিবেকানন্দের আদর্শে অনুরাগী সুভাষচন্দ্র বাল্য বয়স থেকে অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দান করেন । কটক থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন । প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর সুভাষচন্দ্র কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন । ছাত্রাবস্থাতেই তার মধ্যে দেশপ্রেম জেগে ওঠে । প্রেসিডেন্সী কলেজের জনৈক অধ্যাপক ওটেন সাহেব ভারতবাসীর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করায় তিনি উক্ত অধ্যাপকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন । মাতৃভূমির শৃঙ্খল মুক্তির জন্য তিনি বদ্ধপরিকর হন । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স সহ বি . এ . পাশ করে পিতার ইচ্ছানুযায়ী আই . সি . এস . পরীক্ষার জন্য বিলাত যান ।
জাতীয় আন্দোলনে যোগদান :- আই . সি . এস . পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান লাভ করে সুভাষচন্দ্র স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন । এই সময় ভারতে গান্ধিজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন চলছিল।দেশমাতৃকার একনিষ্ঠ সেবক সুভাষচন্দ্র লোভনীয় সিভিল সার্ভিস ত্যাগ করে দেশমাতৃকার সেবায় আত্মোৎসর্গ করেন । দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের নির্দেশে তিনি বাংলার কংগ্রেসী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেন । ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারে তাঁর কারাদণ্ড হয় । এর পর চিত্তরঞ্জনের স্বরাজ্য পার্টির সংগঠন কার্যের ভারও তাঁর উপরই ন্যস্ত হয়েছিল । সেই সময়ে উত্তরবঙ্গে বন্যার্তদের সেবাকার্যে এবং “ বাংলার কথা ” ও “ ফরোয়ার্ড ” নামক পত্রিকাদ্বয়ের পরিচালনায় তিনি অনন্য সাধারণ ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন ।
সুভাষচন্দ্র চিরকাল ছিলেন একজন নির্ভীক বিপ্লবী । দেশসেবায় দুঃসাহসিকতা , নূতন পন্থা উদ্ভাবন প্রতিভার সঙ্গে এক অসাধারণ সংগঠনী শক্তি তাঁকে অল্পকালের মধ্যেই সমগ্র ভারতের জনপ্রিয় নেতার আসন লাভে সাহায্য করেছিল ।
১৯২৮ সালে কলকাতা কংগ্রেসে সুভাষচন্দ্র ও পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু নরমপন্থীদের “ ডোমিনিয়ন স্টেটাসে ” র পাল্টা পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করেন । ১৯৩৮ সালে সুভাষচন্দ্র হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন । কিন্তু মহাত্মা গান্ধির সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ বাড়তে থাকে । পর বৎসর ত্রিপুরী ( মধ্যপ্রদেশ ) কংগ্রেসে গান্ধিজির মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে পরাজিত করে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন । কংগ্রেসের নরমপন্থীদের সঙ্গে মতবিরোধ তীব্র হওয়ায় তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে “ ফরোয়ার্ড ব্লক ” নামে নূতন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন ।
সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকার বার বার মহান বীর সন্তান নেতাজীকে কারারুদ্ধ করে । ১৯৪০ সালে তাঁকে নিরাপত্তা আইন বলে গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে আটক করে রাখা হয় । কারাগারে বন্দী অবস্থায় ১৯৪০ সালে সুভাষচন্দ্র আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন । জেলে কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর স্বাস্থ্যভঙ্গ হলে তাকে পুলিশ প্রহরায় কলকাতার এলগিন রোডস্থ নিজ বাসভবনে নজরবন্দী করে রাখা হয় ।
আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন :- নজরবন্দী অবস্থায় ১৯৪১ সালে জানুয়ারী মাসে কোনো একসময়ে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখে ধূলা দিয়ে সুভাষচন্দ্র ছদ্মবেশে দেশ থেকে পালান । তারপর তিনি আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশের মধ্য দিয়ে জার্মানীতে গিয়ে উপস্থিত হন । হিটলারের সহায়তায় তিনি জার্মানীর সেনাবাহিনী কর্তৃক ধৃত ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে এক স্বাধীন ভারতের সেনাবাহিনী গঠন করেন । অতঃপর তিনি জাপান এবং তথা হতে জাপান অধিকৃত সিঙ্গাপুরে এসে উপস্থিত হন । সেখানে রাসবিহারী বসু প্রমুখ অনেক ভারতীয় তাঁকে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনে সাহায্য করেন । জাপানের হস্তে বন্দী ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে সুভাষচন্দ্র তাঁর আজাদ হিন্দু বাহিনী গড়ে তোলেন । তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রভাবে হিন্দু – মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সৈনিকগণ তাঁর আহবানে সাড়া দেয় । সাম্প্রদায়িক একতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেন । আজাদ হিন্দ ফৌজের তিনি হলেন “ নেতাজী ” । সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দু সরকারও গঠিত হল ।
আজাদ হিন্দ বাহিনী নিয়ে “ নেতাজী ” আসামের সীমা পার করে ভারতে প্রবেশ করে কোহিমা ও শিলচরের নিকটবর্তী মিতেনপুর অধিকার করতে সমর্থ হন । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত খাদ্যাভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় । ১৯৪১ সালের ১৮ ই আগস্ট এক বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মৃত্যু ঘটেছে বলে প্রচারিত হয়েছে । কিন্তু এই ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে অদ্যাবধি কোনো স্থির এবং সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি । নেতাজী ভারতবাসীর মধ্যে না থাকলে তার কীর্তি ভারতবাসীর হৃদয়ে চির উজ্জ্বল থাকবে ।
প্রশ্ন ৬। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধির অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ জাতির জনক মহাত্মা গান্ধি ১৮৬৯ সালের ২ রা অক্টোবর কাথিয়াবাড়ের অন্তর্গত পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। রাজকোট ও ভাবনগরে স্কুল ও কলেজী শিক্ষা লাভের পর ১৮৮৮ সালে তিনি ব্যারিস্টারী পড়তে লণ্ডন গমন করেন। ব্যারিস্টারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৮৯৯ সালে গান্ধিজি স্বদেশে ফিরে আসেন । গান্ধিজি অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির থাকায় ভারতে আইন ব্যবসায়ে বিশেষ সুবিধা করতে পারেন নি ।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সত্যাগ্রহ :- ১৮৯৩ সালে গান্ধিজি একটি বিশেষ মামলা পরিচালনার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে আইন ব্যবসা শুরু করেন । দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গরা ভারতীয়দের উপর অত্যাচার করে তাদের জীবন ও সম্পত্তি বিপন্ন করার প্রতিবাদে গান্ধিজি সেখানে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে ন্যায় ও সত্যের মর্যাদা রক্ষার জন্য নীরবে সকল অত্যাচার সহ্য করে শত্রু মনোভাব পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। তাঁর চেষ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত নাটালের ভারতীয়গণ ভোটাধিকার লাভ করেন ।
ভারতের সত্যাগ্রহ :- দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে বিহারের চম্পারণ জেলায় কৃষকদের উপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ১৯১৫ সালে ভারতে প্রথম সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন । এর পর আহমেদাবাদের বস্ত্রকল শ্রমিকদের উপর মালিকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সাফল্য অর্জন করেন ।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান :- ১৯১৭ সালে গান্ধিজি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করে প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দের অন্যতম হলেন । ১৯২০ সালে জাতীয় কংগ্রেস গান্ধিজির “ অহিংসা – অসহযোগ ” এবং “ সত্যাগ্রহ ” প্রস্তাব গ্রহণ করে জাতীয় আন্দোলন চালনার পূর্ণ দায়িত্ব তার উপর অর্পণ করে । ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের জন্য তিনি আইনসভার সদস্যগণকে এবং সরকারী কর্মচারীগণকে পদত্যাগ , ছাত্র-ছাত্রীদের ব্রিটিশ সরকার পরিচালিত বিদ্যালয় এবং আইনজ্ঞদের আদালত বর্জনের আহ্বান করেন । অনেক ভারতবাসী বিদেশী দ্রব্য বর্জন করে সত্যাগ্রহে যোগদান করতে থাকেন । কিন্তু শেষপর্যন্ত আন্দোলন অহিংসাচ্যুত হওয়ায় গান্ধিজি আন্দোলন স্থগিত করেন ।
খিলাফৎ আন্দোলন :- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে তুরস্কের খলিফাকে জার্মান পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার অজুহাতে ইংরেজ সরকার সিংহাসনচ্যুত করলে ভারতীয় মুসলমানগণ খলিফার পক্ষে ভারতে আন্দোলন শুরু করেন । গান্ধিজি মুসলমানদের এই আন্দোলনকে কংগ্রেসের অন্তর্ভুক্ত করেন ।
আইন অমান্য আন্দোলন :- ১৯১৯ সালে গান্ধিজির নেতৃত্বে আইন অমান্য ও বরদৌলী সত্যাগ্রহ আন্দোলনে ভারতীয় জনগণ অভূতপূর্ণ সাড়া দেয় । কিন্তু এই আন্দোলন হিংসায় রূপান্তরিত হলে তিনি এটি বন্ধ করে দেন । ১৯৩০ সালে গান্ধিজি দাণ্ডি অভিযান করে লবণ আইন অমান্য করে কারাবরণ করেন ।
গোলটেবিল বৈঠক :- ব্রিটিশ সরকার আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসায় উপনীত হতে ১৯৩০ সালে লণ্ডনে প্রথম গোলটেবিল বেঠক আহবান করেন । কংগ্রেস এটি বয়কট করে । বড়লাট আরউইনের সঙ্গে গান্ধিজির একটি চুক্তি সম্পাদিত হয় । চুক্তির শর্তানুযায়ী গান্ধিজি আন্দোলন প্রত্যাহার করে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করেন । মুসলিম লীগ নেতা জিন্নার চাপে ব্রিটিশ সরকার সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা প্রস্তাবের পক্ষপাতি থাকায় গান্ধিজি ডিসেম্বর মাসে বৈঠক ত্যাগ করে এসে দেখেন যে জাতীয়তাবাদের উপর সরকারী নির্যাতন চলছে । গান্ধিজি বড়লাটের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হন । তাঁকে ও অন্যান্য নেতাকে গ্রেপ্তার করে জাতীয় কংগ্রেসকে বে – আইনি ঘোষণা করা হয়।
কংগ্রেস মন্ত্রীসভার পদত্যাগ :- ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের শর্ত অনুযায়ী ১৯৩৭ সালে কংগ্রেস মোট নয়টি প্রদেশে মন্ত্রীসভা গঠন করে । কিন্তু কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ইংরাজ সরকার ভারতকে যুদ্ধে লিপ্ত করার প্রতিবাদে গান্ধিজির নির্দেশে কংগ্রেসী মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করেন ।
ভারত ত্যাগ আন্দোলন :- ১৯৪২ সালে গান্ধিজি “ ভারত ত্যাগ ” আন্দোলন করলে ভারতের জনগণ তাতে অভূতপূর্ব সাড়া দেন । সরকারী অত্যাচারে অসংখ্য নর – নারী এই আন্দোলনে প্রাণ হারান ।
ভারত বিভাগ :- ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের ভারত বিভাগের প্রস্তাব গান্ধিজি প্রথমে নাকচ করেছিলেন কিন্তু পরে নেতৃবৃন্দের অনুরোধে এতে সম্মতি দান করেন ।
স্বাধীনতার পূজারী ছাড়া অস্পৃশ্যতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধির অবদান অসামান্য । কিন্তু কালের প্রভাবে অহিংসা মন্ত্রের পূজারী মহাত্মা গান্ধিকে ১৯৪৮ সালের ৩০ শে জানুয়ারী আততায়ীর হাতে প্রার্থনা সভায় প্রাণ দিতে হয় ।
ভারতের জাতীয় জীবনে মহাত্মা গান্ধির জীবন একটি বিরাট শিক্ষাস্বরূপ । ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মের শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্যগুলির এক অভূতপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল গান্ধিজির চরিত্রে । মহাত্মা গান্ধি সত্যই মহান আত্মার যুগপুরুষ ছিলেন । তাঁর প্রদর্শিত পথ ধরে চলতে পারলে শুধু ভারত নয়, সমগ্র বিশ্বের মঙ্গল সাধিত হবে । গান্ধিজিকে জাতির জনক বলা হয় ।
প্রশ্ন ৭। কেবিনেট মিশনের “ সমষ্টি পরিকল্পনা ” অনুযায়ী রাজ্যগুলির বিভাগকরণ কিভাবে হয়েছিল ?
উত্তরঃ কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা অনুযায়ী সর্বভারতীয় একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা হবে এবং প্রদেশগুলি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে । ভারতীয় প্রদেশগুলি
ক,খ ও গ ―এই তিনভাগে ভাগ হবে । “ ক ” ভাগে থাকবে হিন্দু – প্রধান মাদ্রাজ ( চেন্নাই ) , বোম্বাই ( মুম্বাই ) , মধ্যপ্রদেশ, যুক্তপ্রদেশ ( উত্তরপ্রদেশ ) , বিহার ও উড়িষ্যা । “ খ ” ভাগে থাকবে মুসলমান প্রধান পাঞ্জাব , উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ , সিন্দু ও বেলুচিস্তান । “ গ ” বিভাগে থাকবে বঙ্গদেশ ও আসাম । প্রত্যেক ভাগ নিজ নিজ এলাকার জন্য সংবিধান স্থির করবে । কিন্তু সকল ভাগ থেকেই প্রতিনিধিগণ এবং যে সকল দেশীয় রাজ্য যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যোগদানে স্বীকৃত হবে সেই সকল রাজ্যের প্রতিনিধিগণ সমবেতভাবে ভারত ইউনিয়নের সংবিধান স্থির করবেন । নূতন সংবিধান অনুযায়ী প্রথম নির্বাচনের পর যে কোনো প্রদেশ এ প্রদেশ এক ভাগ হতে অপর ভাগে যোগদান করতে পারবে ।
সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো
১। জালিয়ানওয়ালাবাগের হতাকা হত্যাকাণ্ড :- ১৯১৯ সালের সংস্কার আইন ভারতীয়দের আশা – আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি । তাছাড়া বিধ্বংসী বিশ্বযুদ্ধের ফলে সমগ্র দেশে খাদ্যাভাব , মহামারী ও দ্রব্যমূল্য বাড়ায় মানুষের দুর্দশা বেড়ে যায় । এমতাবস্থায় ব্রিটিশ সরকার শাসন সংস্কার দূরে রেখে কঠোর দমননীতির আশ্রয় গ্রহণ করে । ১৯১৯ সালের ১৭ ই মার্চ কুখ্যাত রাওলাট আইন প্রবর্তন করে । এই আইনে বিনা বিচারে যে কোনো ব্যক্তিকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আটক রাখা যেত ।
রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশে প্রতিবাদ শুরু হয় । ব্রিটিশ সরকার দমন নীতি অব্যাহত রেখে পাঞ্জাবে সামরিক আইন বলবৎ করে । এই সামরিক আইন , দমন নীতি প্রভৃতি অগ্রাহ্য করে ১৯১৯ সালের ১৩ ই এপ্রিল “ বৈশাখী ” উৎসবের দিন পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় । অমৃতসরের নিকটবর্তী এই স্থানে সেদিন নিরস্ত্র প্রতিবাদীদের উপর ব্রিটিশ সরকারের সেনানায়ক ডায়ার গুলি চালনার নির্দেশ দিয়ে অনেক নর – নারী ও শিশুকে হত্যা করে। এত বড়ো গণহত্যার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসেও খুব পাওয়া যাবে । সারা দেশজুড়ে ইংরেজের এই পাশবিক আচরণের বিরুদ্ধে ধিক্কার ধ্বনিত হয় । রাগে , দুঃখে , অপমানে জর্জরিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদস্বরূপ ‘ নাইট’ উপাধি বর্জন করেন । জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনা ব্রিটিশ সরকারের মুখোশ খুলে দেয় । এই নির্মম হত্যাকাণ্ড বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেয় যে , স্বার্থে আঘাত লাগলে ইংরেজের নৃশংসতা কোন স্তর পর্যন্ত যেতে পারে ।
২। চৌরিচৌরার হিংসাত্মক ঘটনা :- অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন ভারতের তৎকালীন বড়োলাট লর্ড রীলিং – এর নির্দেশ দমনমূলক নীতির প্রয়োগের মাধ্যমে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মানুষের ওপর অকথ্য অত্যাচার শুরু হয় । অনেক নেতা কারারুদ্ধ হন । এই সময় গান্ধিজি ভাইসরয়কে লেখা এক পত্রের দ্বাবা দমনমূলক নীতির অবসান এবং কারারুদ্ধ নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি জানান । তিনি একথাও স্মরণ করিয়ে দেন যে ওই দাবি অবহেলিত হলে সমস্ত দেশ জুড়ে আন্দোলন শুরু হবে । কিন্তু গান্ধিজির এই সিদ্ধান্তের স্বল্পকালের মধ্যেই গোরখপুর জেলার অন্তর্গত চৌরিচৌরা গ্রামের একটি হিংসাত্মক ঘটনাকে কেন্দ্র করে গান্ধিজি তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন ।
১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি এক নিরস্ত্র জনতার শোভাযাত্রার ওপর পুলিশ গোলাবর্ষণ করলে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে চৌরিচৌরায় একটি পুলিশ থানায় আগুন লাগিয়ে দিলে বাইশজন পুলিশ কর্মীর মৃত্যু হয় । জনগণ অহিংসার পথ থেকে সরে গিয়ে হিংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ব্যথিত হয়ে গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন । গান্ধিজির এই সিদ্ধান্তকে সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় বিপর্যয় বলে বর্ণনা করেছেন ।
৩। কেন্দ্রীয় খিলাফৎ কমিটি :- ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্বেষ তুঙ্গে উঠেছিল। তুরস্কের সুলতান ‘ খলিফা ‘ পদের অধিকারী হওয়ায় তুর্কি সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনায় আঘাত করে । মৌলানা আবুল বারি , মৌলানা মহম্মদ আলি , সৌকত আলি , প্রমুখের নেতৃত্বে ভারতে খলিফার সপক্ষে প্রচার শুরু হয় । খিলাফতের সংকট সম্পর্কে ভারতীয় মুসলমানদের কর্তব্যকর্ম নির্দ্ধারণের জন্য মৌলানা আবুল বারির নেতৃত্বে লক্ষ্ণৌতে সর্বভারতীয় মুসলিম সমাবেশ আহবান করা হয় । এখানে কেন্দ্রীয় খিলাফৎ কমিটি গঠন করা হয় । বোম্বাই – এ এর প্রধান দপ্তর স্থাপিত হয় এবং বিভিন্ন প্রদেশে শাখা কার্যলয় গঠিত হয় ।
কেন্দ্রীয় খিলাফৎ কমিটি গঠন করার ক্ষেত্রে মহাত্মা গান্ধি , মতিলাল নেহরু , মদনমোহন মালব্য প্রমুখ কংগ্রেস নেতা প্রত্যক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন । ১৯১৯ সালের ২৪ শে নভেম্বর দিল্লিতে সর্বভারতীয় খিলাফৎ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় । ১৯২০ সালের জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত খিলাফৎ কমিটির সভায় গান্ধিজির উপস্থিতি এবং পরামর্শমতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনের নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় । গান্ধিজি খিলাফৎ আন্দোলনে যোগদান করে মুসলমানদের ভারতীয় আন্দোলনেরর মূলস্রোতে যুক্ত করার উদ্যোগ নেন।
৪৷ গ্রাম – স্বরাজ :- গ্রামের সকল মানুষের অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতাকে গ্রাম – স্বরাজ বলে । গান্ধিজি ছিলেন গ্রাম – স্বরাজের প্রধান প্রবক্তা । ভারতবর্ষ গ্রাম – প্রধান দেশ । দেশের বেশিরভাগ মানুষই গ্রামে বসবাস করে । প্রাচীন ও মধ্যযুগে গ্রামগুলি ছিল আত্মনির্ভরশীল । কিন্তু ব্রিটিশ আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামগুলির অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে । ব্রিটিশ সরকারের শোষণের ফলে গ্রামগুলির আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে । কৃষির অবনতির সঙ্গে সঙ্গে কুটির শিল্পেরও অবনতি ঘটে । গ্রামের অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে অন্তর্হিত হতে থাকে । গান্ধিজি গ্রামগুলির আত্মনির্ভরশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য উৎপাদন পদ্ধতি , শাসনব্যবস্থা ও ব্যবহার পুনরুত্থানের জন্য গ্রাম – স্বরাজের তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন । গ্রামীণ ভারতবর্ষে গ্রাম – স্বরাজ প্রতিষ্ঠা করলে সমগ্র দেশে স্বরাজ লাভ সম্ভব হবে বলে গান্ধিজি মনে করতেন । কুটীর শিল্প তথা হস্তশিল্পের পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি চরকার উপর গুরুত্ব দিয়ে সূতা কাটা ও কাপড় বোনার উপর গুরুত্ব আরোপ করতেন । গান্ধিজির কল্পনাপ্রসূত গ্রাম – স্বরাজের মধ্যমণি ছিল পঞ্চায়েত ।
৫। জেনারেল রেজিনেল্ড ডায়ার :- জেনারেল রেজিনেল্ড ডায়ার ব্রিটিশ সামরিক বিষয়া ছিলেন । পাঞ্জাবের লাট সাহেব স্যার মাইকেল ও ডায়ার ইতিমধ্যে একজন রুক্ষ প্রশাসকরূপে পাঞ্জাবে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন । রাওলাট আইনের প্রতিবাদে ১৯১৯ সালের ১৩ ই এপ্রিল পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে হাজার হাজার লোকের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল । স্যার মাইকেল আশংকা করে অমৃতসরের শাসনভার জেনারেল রেজিনেল্ড ডায়ারের হাতে অর্পণ করেন। জালিয়ানওয়ালাবাগে প্রায় ২০,০০০ লোক সমবেত হয়েছিল । জেনারেল ডায়ার প্রায় ১০৫ জন বন্দুকধারী সৈন্য নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে নিরস্ত্র লোকের উপর গুলির আদেশ দেন । গুলিতে মোট ৩৭৯ জন লোকের মৃত্যু হয়েছিল।
৬। সীমান্ত গান্ধি :- সীমান্ত গান্ধির প্রকৃত নাম ছিল খান আব্দুল গফুর খান । উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে আইন অমান্য আন্দোলনের তিনি নেতা ছিলেন বলে তাঁকে সীমান্ত গান্ধি বলা হত । ১৯২৭ সালে তিনি “ আফগান যুব সংঘ ” নামে একটি দল গঠন করেন । বহু আফগান যুবক এতে যোগদান করে । সমাজসেবার সঙ্গে সঙ্গে এই সংঘের সদস্যরা আফগানদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা জাগায় । এই যুব আন্দোলনের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে তিনি পেশোয়ারে খোদা – ই – খিদ – মৎগার বা “ ঈশ্বরের সেবক ” নামে একটি দল গড়ে তোলেন । এই সংস্থার সদস্যরা সবাই লাল রংয়ের কোর্তা পরতেন ।
সেজন্য তারা ‘ লাল কোর্তা ’ নামে পরিচিত হন এবং সীমান্ত গান্ধিকে “ লাল কোর্তা নেতা ” বলে অভিহিত করা হয় । তাঁর সুমধুর ব্যক্তিত্ব ও দেশপ্রেম সীমান্ত উপজাতিদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগাতে সক্ষম হয় । খান জাফর খান তাঁর অহিংস নীতির জন্য সীমান্ত গান্ধি নামে পরিচিত হন । মহাত্মা গান্ধির অনুগামী এই নেতা মোট ৩০ বৎসর কারাগারে জীবনযাপন করার পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে প্রায় এক দশক আফগানিস্তানে কাটান । ১৯৬৭ সালে তাঁকে নেহেরু পুরস্কার এবং ১৯৮৭ সালে ভারতরত্ন পুরস্কার দেওয়া হয় । ১৯৮৮ সালের ২০ শে জানুয়ারী তিনি পরলোক গমন করেন ।
৭। লবণ আইন ভঙ্গ :- আইন অমান্য আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে গান্ধিজি লবণ আইন ভঙ্গের মধ্য দিয়ে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । লবণ উৎপাদনে ব্রিটিশের একচেটিয়া অধিকার ছিল । বিদেশ থেকে আমদানি করা লবণ ভারতবাসীকে বেশি দামে গ্রহণ করতে বাধ্য করানো হত । গান্ধিজি এই আইন রদ করার জন্য বড়লাটের সাক্ষাৎকার প্রার্থনা করেন । কিন্তু বড়লাট তাঁর প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেন । অতঃপর গান্ধিজি ঐতিহাসিক লবণ সত্যাগ্রহ ও আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন । ১৯৩০ সালের ১২ ই মার্চ গান্ধিজি ৭৮ জন অনুগামীসহ “ সবরমতী ” আশ্রম হতে গুজরাটের দাণ্ডি অভিমুখে লবণ আইন ভঙ্গের জন্য যাত্রা শুরু করেন । এই ঘটনা ইতিহাসে “ দাণ্ডি অভিযান ” নামে খ্যাত । ৬ ই এপ্রিল গান্ধিজি দাণ্ডির সমুদ্রতীরে লবণ তৈরি করে আনুষ্ঠানিক ভাবে লবণ আইন ভঙ্গ করেন । লবণ আইন ভঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সর্বত্র আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয় । লবণ আইন – অমান্যের সিদ্ধান্ত দেশের কৃষক – সম্প্রদায়ের আন্তরিক সমর্থন লাভ করে ।
৮। সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা :- ব্রিটিশ সরকার শুধুমাত্র দমননীতির দ্বারা আইন অমান্য আন্দোলনকে ব্যর্থ করতে চায়নি । ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ আগস্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামজে ম্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারার নীতি ঘোষণার দ্বারা মুসলিম ও অনুন্নত হিন্দু সম্প্রদায়গুলির জন্য আলাদা নির্বাচনের ব্যবস্থার কথা বলেন । এর দ্বারা তিনি চেয়েছিলেন উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি । কিন্তু হিন্দুদের মধ্যেও সরকার বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করলে গান্ধিজি অনশন শুরু করেন । পুনা জেলে থাকাকালীন গান্ধিজি সরকারি বিভেদনীতির বিরুদ্ধে অনশন শুরু করেন । ক্রমশ ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে এবং গান্ধিজির জীবন সংশয় দেখা দেয় ।
এই সময় ড . বি . আর . আম্বেদকর গান্ধিজির সঙ্গে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ২৫ সেপ্টেম্বর পুনা চুক্তি সম্পাদন করেন । চুক্তি অনুযায়ী অনুন্নত সম্প্রদায়ের পৃথক নির্বাচনের দাবি নাকচ করা হয়।তবে আইন সভায় অনুন্নত হিন্দুদের আসন সংখ্যা বাড়ানো হয় । এই চুক্তি ব্রিটিশ সরকার মেনে নেয় এবং গান্ধিজিকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয় । গান্ধিজি জেলে থাকাকালীন ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই নভেম্বর লন্ডনে তৃতীয় গোল – টেবিল বৈঠকে কংগ্রেস যোগদান না করায় এই বৈঠকও ব্যর্থ হয় । জেল থেকে ফিরে এসে গান্ধিজি আবার আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন ।
৯। কেপ্টেন সোহান সিং :- কেপ্টেন সোহান সিং ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের জন্মদাতা । তিনি পূর্বে ব্রিটিশ – ভারত সেনাবাহিনীর একজন কেপ্টেন ছিলেন । ১৯৪১ সালের ডিসেম্বর মাসে জাপান ব্রিটিশ শাসনাধীন মালয় দ্বীপ আক্রমণ করে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে । তখন কেপ্টেন সোহান সিং – এর সঙ্গে একটি ক্ষুদ্র সামরিক দল পালায় । কিন্তু জাপানী সৈন্যের কাছে আত্মসমর্পণ করে । সোহান সিং জাপানী সৈনিকদের পরামর্শ মত যুদ্ধবন্দী ভারতীয় সৈনিকগণকে নিয়ে একটি ব্রিটিশ বিরোধী সেনাবাহিনী গঠন করেন । এই সেনাবাহিনীর নাম ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ ।
১০। আইন অমান্য আন্দোলন :
উত্তরঃ ১৯২৯ সালে জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী উত্থাপন করে । ১৯৩০ সালে গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়রূপে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন । ১৯৩০ সালের ৬ ই এপ্রিল গান্ধিজি তাঁর অনুচরবর্গসহ লবণ আইন ভঙ্গে সমুদ্র উপকূলবর্তী ‘ ডাণ্ডি ’ অভিযান করেন । অনুচরবর্গসহ গান্ধিজিকে গ্রেপ্তার ও কংগ্রেসকে বেআইনী ঘোষণা করে । সারা দেশে আইন অমান্য ও বিদেশী দ্রব্য বর্জন আন্দোলন শুরু হয় । আন্দোলন তীব্র হতে তীব্রতর হয় । ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে পরপর তিনটি গোলটেবিল বৈঠক হলেও এইগুলি নিষ্ফল হওয়ায় গান্ধিজি পুনরায় আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন ।
১১। মন্টেগু – চেমসফোর্ড সংস্কার ( ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন ) :
উত্তরঃ ১৯১৯ সালে লর্ড চেমসফোর্ডের শাসনকালে ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করা হয় । ১৯১৭ সালে ভারত সচিব মিঃ মন্টেগু ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ঘোষণা করেন যে , ভারতবাসীকে স্বায়ত্ত শাসন দেওয়া হবে । পরে ভারত সচিব ও বড়লাট চেমফোর্ড সম্মিলিতভাবে যে ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন সেটি মন্টেগু চেমফোর্ড সংস্কার নামে পরিচিত । ১৯১৯ সালে একে ভিত্তি করে গভর্নমেন্ট অব ইণ্ডিয়া অ্যাক্ট নামে এক আইন পাশ করা হয় । ফলে ভারত শাসন নীতির নিম্নলিখিত উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয় :
( ১ ) সমগ্র ব্রিটিশ ভারতের প্রতি প্রযোজ্য আইন প্রণয়নের জন্য দ্বি – কক্ষ সম্বলিত একটি আইনসভা প্রতিষ্ঠিত হয় । তাদের নাম ব্যবস্থাপক সভা এবং রাষ্ট্রীয় পরিষদ ।
( ২ ) কেন্দ্রীয় আইনসভায় দেশীয় জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত সভ্যের সংখ্যা বাড়ানো হল ।
( ৩ ) প্রত্যেক প্রদেশের শাসনভার একজন গভর্নরের উপর ন্যস্ত করা হল ।
( ৪ ) প্রত্যেক গভর্নরকে সহযোগিতা করবার জন্য এক একটি শাসন পরিষদের সৃষ্টি হল ।
( ৫ ) আইন প্রণয়নের মাধ্যমে প্রত্যেক প্রদেশে একটি করে প্রাদেশিক আইনসভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
( ৬ ) প্রাদেশিক শাসনতন্ত্রকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হল—
( i ) রক্ষিত । এবং
( ii ) হস্তান্তরিত ।
রক্ষিত বিষয়গুলি গভর্নরের শাসন পরিষদের অধীনে থাকল । হস্তান্তরিত বিষয়গুলি দেশীয় মন্ত্রীদের হাতে ন্যস্ত হল । এইরূপ শাসনব্যবস্থা দ্বৈতশাসন বা ডায়াকী নামে পরিচিত হল।
১২। রাওলাট আইন :
উত্তরঃ ১৯১৯ সালের সাংবিধানিক সংস্কার মূলত ভারত শাসন আইন ভারতীয়দের আশা – আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে নি । তাছাড়া বিধ্বংসী বিশ্বযুদ্ধের ফলে সারা দেশে খাদ্যাভাব , মহামারী ও দ্রব্যমূল্য বাড়ায় মানুষের দুর্দশা বেড়ে যায় । এইরূপ অবস্থায় ব্রিটিশ সরকার শাসন সংস্কার দূরে রেখে কঠোর দমনীতির আশ্রয় গ্রহণ করেন । ১৯১৯ সালের ১৭ ই মার্চ কুখ্যাত রাওলাট আইন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত হয়। এই আইন অনুসারে যে কোনো ব্যক্তিকে বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আটক রাখা যায় ।
১৩। ক্রীপসের প্রস্তাব :
উত্তরঃ ১৯৪২ সালে জাপান কর্তৃক ফিলিপাইন , সিঙ্গাপুর , মালয় , ইন্দো চীন , ব্রহ্মদেশ ও ইন্দোনেশিয়া অধিকৃত হয় । জাপানের ভারত আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দেয় । জাপানের সাফল্যে ভীত হয়ে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভা ভারতের জনগণের সাহায্য লাভের জন্য স্যার স্টাফোর্ড ক্রীপকে ভারতে পাঠায় । ১৯৪২ সালে ক্রীপস্ মিশন ভারতে একসঙ্গে ভারতীয় নেতৃবর্গের সঙ্গে আলোচনাক্রমে নিম্নলিখিত প্রস্তাব সুপারিশ করে—
( ১ ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ভারতকে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস দেওয়া হবে ।
( ২ ) ভারতের সংবিধান রচনার জন্য একটি সংবিধান সভা আহ্বান করা হয় ।
( ৩ ) গভর্নর জেনারেল কার্যনির্বাহক সভায় অধিক সংখ্যক ভারতীয় প্রতিনিধি নেওয়া হবে।
( ৪ ) সংবিধান রচনার পূর্ববিধি প্রতিরক্ষার ভার ব্রিটিশ সরকারের উপর ন্যস্ত থাকবে ।
( ৫ ) যুদ্ধের সময় ভারতের নিরাপত্তা রক্ষা করা হবে । ক্রীপসের প্রস্তাবে ভারতের স্বাধীনতা দানের কোনো উল্লেখ না থাকায় কংগ্রেস তা গ্রহণ করেনি । আবার স্বাধীন মুসলীম প্রধান সাম্রাজ্য স্থাপনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মুসলিম লীগও একে প্রত্যাখ্যান করে । এই সমস্ত কারণে ক্রীপস্ মিশন কার্যত ব্যর্থ হয় ।
১৪। মন্ত্রী মিশন বা কেবিনেট মিশন :
উত্তরঃ ১৯৪৬ সালে শ্রমিকদল ইংল্যাণ্ডে ক্ষমতা গ্রহণ করে । প্রধানমন্ত্রী এট্লী ভারত সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৪৬ সালে ভারত সচিব প্যাথিক লরেন্স , বাণিজ্য সচিব স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপস্ , নৌ – সচিব মিঃ আলেকজাণ্ডারকে নিয়ে গঠিত মন্ত্রীমিশন ভারতে প্রেরণ করেন । বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনায় ১৯৪৬ সালের ১৬ ই মে তারিখে ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়নের জন্য একট ‘ গণপরিষদ ’ এবং শাসন পরিচালনার জন্য একটি “ অন্তর্বর্তী সরকার ” গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় । এতে পাকিস্তান প্রস্তাব বাতিল করা হয় । কংগ্রেস এই প্রস্তাব মেনে নেয় । প্রতিবাদে মুসলিম লীগ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় ।
১৫। ভারত ত্যাগ আন্দোলন :
উত্তরঃ ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় । ভারতবাসীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভারতকে যুদ্ধে জড়ানো হয় । ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করার জন্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপকে ভারতে প্রেরণ করে । কিন্তু ক্রীপস্ মিশন ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি । ক্রীপস্ মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৪২ সালের বোম্বাই ( মুম্বাই ) কংগ্রেসে ভারত ত্যাগ প্রস্তাব গৃহীত হয় । সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনও একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে উপনীত হয়। অনেক নেতা কারাবরণ করেন । সমগ্র ভারতে গণবিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে । জনগণ “ করেঙ্গে -ইয়ে – মরেঙ্গে ” ধ্বনি দিতে দিতে গ্রেপ্তার বরণ করেন । বিদ্রোহ দমনের জন্য ব্রিটিশ সরকার জনসাধারণের উপর অমানুষিক অত্যাচার শুরু করে । এই আন্দোলন “ আগস্ট বিপ্লব ” বা “ ভারত ত্যাগ আন্দোলন ” নামে পরিচিত ।
১৬। মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা :
উত্তরঃ লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ছিলেন ভারতের গভর্নর জেনারেল । লর্ড ওয়াভেলকে অপসারিত করে লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ভারতের গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় পদে নিযুক্ত করা হয় । মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে শাসনভার গ্রহণ করে ১৯৪৭ সালের ৩ রা জুন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঘোষণা করলেন । এই ঘোষণায় বলা হল যে—
( ১ ) মুসলমান প্রধান অঞ্চলগুলির বাসিন্দাগণ যদি ইচ্ছা করে তবে তারা পৃথক ডোমিনিয়ন গঠন করতে পারবে , কিন্তু সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও পাঞ্জাব ভাগ করার প্রয়োজন দেখা দেবে।
( ২ ) উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ পাকিস্তানে যোগদান করতে চায় কিনা তা সেখানকার জনগণের গণভোট দ্বারা স্থির হবে ।
( ৩ ) শ্রীহট্ট জেলা পাকিস্তানে যোগদান করতে চায় কিনা তাও গণভোট দ্বারা স্থির হবে ।
( ৪ ) বাংলা ও পাঞ্জাবের কোন্ কোন্ অংশ পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত হতে তা নির্ধারণের জন্য একটি সীমা নির্ধারণ কমিশন নিয়োগ করা হবে ।
( ৫ ) ব্রিটিশ পার্লামেণ্ট অনতিবিলম্বে ভারতবর্ষকে একটি এবং পাকিস্তান গঠনের সপক্ষে মত হলে দুটি ডোমিনিয়নে পরিণত করতে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করবে ।
তখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী মাউন্টব্যাটেন প্ল্যান বা পরিকল্পনা গ্রহণ করা ভিন্ন গত্যন্তর ছিল না ।
১৭। রাসবিহারী বসু :
উত্তরঃ বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ছিলেন একজন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী । তিনি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলনে অবতীর্ণ হন । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাসবিহারী বসু দেশ থেকে পলায়ন করে জাপানে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন । সেখানে তিনি ইণ্ডিয়ান ইণ্ডিপেণ্ডেন্স লীগ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন । তিনি এর সভাপতি নির্বাচিত হন । রাসবিহারী বসু আজাদ হিন্দু ফৌজের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন ।
১৮। ইণ্ডিয়ান ইণ্ডিপেণ্ডেস লীগ :
উত্তরঃ বিপ্লবী রাসবিহারী বসু দেশ থেকে পলায়ন করে জাপানে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন । তিনি ১৯৪২ সালের মার্চ মাসের শেষে টোকিও প্রবাসী ভারতীয় গণের সহায়তায় ইণ্ডিয়ান ইণ্ডিপেণ্ডেন্স প্রতিষ্ঠা করেন । তাঁকে এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় । এই সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতবর্ষকে স্বাধীন করা । একটি অভিবর্তনের মাধ্যমে একটি কার্যকরী পরিষদ গঠন করে রাসবিহারী বসুকে সভাপতি এবং সোহান সিংকে এর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাধ্যক্ষ নিযুক্ত করা হয় ।
১৯। অন্তর্বর্তী সরকার :
উত্তরঃ মন্ত্রী – মিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ১৯৪৬ সালের ২ রা সেপ্টেম্বর কেন্দ্রে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় । মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তী সরকার বয়কট করে । অন্তর্বর্তী সরকারে মোট ১২ জন মন্ত্রী ছিলেন । এর মধ্যে ছিলেন ৬ জন কংগ্রেস , কংগ্রেসের ১ জন ও লীগ বহির্ভূত ২ জন মুসলমান , শিখ , ভারতীয় খ্রিস্টান পার্শী সম্প্রদায়ের ৯ জন করে সদস্য মন্ত্রীসভায় যুক্ত হন । শেষপর্যন্ত মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তী সরকারে যোগদান করে । খিলাফৎ আলি গুরুত্বপূর্ণ অর্থদপ্তরের দায়িত্ব পান । কিন্তু মন্ত্রীসভার মধ্যে কংগ্রেস ও লীগ সদস্যরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে অক্ষম হয় । তাদের মধ্যে বিরোধ ক্রমশ বাড়ে । ফলে সুষ্ঠুভাবে নীতি নির্দ্ধারণ ও শাসন পরিচালনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
শুদ্ধ উত্তরটি বেছে উত্তরটির পাশে টিক্ ( √ ) চিহ্ন দাও :
১। ভারতরক্ষা আইন প্রবর্তিত হয়—
( i ) ১৯৯০ সালে।
( ii ) ১৯১১ সালে।
( iii ) ১৯১৪ সালে।
( iv ) ১৯১৬ সালে।
উত্তরঃ ( iii ) ১৯১৪ সালে ( √ )।
২। গান্ধিজি কত সালে চম্পারণ সত্যাগ্রহ শুরু করেন ?
( i ) ১৯১৭ সালে।
( ii ) ১৯১৯ সালে।
( iii ) ১৯৩০ সালে।
( iv ) ১৯৪২ সালে।
উত্তরঃ ( i ) ১৯১৭ সালে ( √ )।
৩। জওহরলাল নেহেরু সর্বপ্রথম ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন
( i ) ১৯২৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর।
( ii ) ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি।
( iii ) ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি।
( iv ) ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট।
উত্তরঃ ( i ) ১৯২৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর ( √ )।
৪। গান্ধিজির কল্পনা করা গ্রাম – স্বরাজের মধ্যমণি ছিলেন—
( i ) গ্রাম।
( ii ) পঞ্চায়েত।
( iii ) শহর।
( iv ) সংসদ।
উত্তরঃ ( ii ) পঞ্চায়েত ( √ )।
৫। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছিল—
( i ) ১৯২০ সালে।
( ii ) ১৯৩০ সালে।
( iii ) ১৯৪২ সালে।
( iv ) ১৯২৬ সালে।
উত্তরঃ ( i ) ১৯২০ সালে ( √ )।
৬। আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল—
( i ) ১৯২০ সালে।
( ii ) ১৯৩০ সালে।
( iii ) ১৯৩৩ সালে।
( iv ) ১৯৪২ সালে।
উত্তরঃ ( i ) ১৯৩০ সালে ( √ )।
৭। হোমরুল আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা কে ?
( i ) অ্যানি বেসান্ত।
( ii ) মহাত্মা গান্ধি।
( iii ) জওহরলাল নেহেরু।
( iv ) গোপাল কৃষ্ণ গোখলে।
উত্তরঃ ( i ) অ্যানি বেসান্ত ( √ )।
৮। কোন দিনটিকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা দিবস হিসাবে উদ্যাপন করা হয়েছিল ?
( i ) ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট।
( ii ) ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি।
( iii ) ১৯৩০ সালের ১৫ ই আগস্ট।
( iv ) ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি।
উত্তরঃ ( iv ) ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ( √ )।
৯। শের – ই পাঞ্জাব কাকে বলা হয় ?
( i ) চন্দ্রশেখর আজাদ।
( ii ) লালা লাজপত রায়।
( iii ) রঞ্জিত সিং।
( iv ) গুরু গোবিন্দ সিং।
উত্তরঃ ( ii ) লালা লাজপত রায় ( √ )।
১০। “ স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার ; এবং আমি ইহা ― চাই – ই ” উক্তিটি করেছিলেন
( i ) লোকমান্য তিলক।
( ii ) মহাত্মা গান্ধি।
( iii ) গোপাল কৃষ্ণ গোখলে।
( iv ) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।
উত্তরঃ ( i ) লোকমান্য তিলক ( √ )।
১১। গান্ধিজি কত সালে লণ্ডনে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করেন ?
( i ) ১৯৩০ সালে।
( ii ) ১৯৩১ সালে।
( iii ) ১৯৩২ সালে।
( iv ) ১৯৩৩ সালে।
উত্তরঃ ( i ) ১৯৩০ সালে ( √ )।
১২। পুণা চুক্তি কখন সম্পাদিত হয় ?
( i ) ১৯৩১ সালে।
( ii ) ১৯৩০ সালে।
( iii ) ১৯৩৩ সালে।
( iv ) ১৯৩৮ সালে।
উত্তরঃ ( iii ) ১৯৩৩ সালে ( √ )।
১৩। স্বাধীন ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন ―
( i ) মতিলাল নেহেরু।
( ii ) লর্ড মাউন্টব্যাটেন।
( iii ) রাজা গোপালাচারী।
( iv ) ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ।
উত্তরঃ ( ii ) লর্ড মাউন্টব্যাটেন ( √ )।
১৪। ভারতের স্বাধীনতার সময় ইংল্যাণ্ডের প্রধান মন্ত্রী ছিলেন—
( i ) উইনস্টোন চার্চিল।
( ii ) গ্লেডস্টোন।
( iii ) ক্লিমেণ্ট এট্লী।
( iv ) ডিজরেলি।
উত্তরঃ ( iii ) ক্লিমেণ্ট এট্লী ( √ )।
১৫। কোন ভারতীয় মনীষীর পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতে ইংরাজী শিক্ষা প্রবর্তনের ব্যবস্থা করা হয় ?
( i ) পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
( ii ) রাজা রামমোহন রায়।
( iii ) গোবিন্দ রানাডে।
( iv ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
উত্তরঃ ( iii ) গোবিন্দ রানাডে ( √ )।