Class 9 Bengali Chapter 7 ছুটি

Class 9 Bengali Chapter 7 ছুটি Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 9 Bengali Chapter 7 ছুটি and select needs one.

Class 9 Bengali Chapter 7 ছুটি

Join Telegram channel

Also, you can read SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 9 Bengali Chapter 7 ছুটি for All Subject, You can practice these here…

ছুটি

               Chapter – 7

ক-বিভাগ পদ্যাংশ

ক্রিয়াকলাপ-

১। শুদ্ধ উত্তরটি খুঁজে বের করাে।

(ক) ছুটি’ গল্পের লেখক হলেন—

১। বনফুল।

২। শরৎচন্দ্র।

৩। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

৪।সত্যজিৎ রায়।

উত্তরঃ ৩। ছুটি’ গল্পের লেখক হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

(খ) বালকদের সর্দার ছিল—

১। মাখনলাল।

২। ফটিক।

৩। সুশান্ত।

৪। রমেশ।

উত্তরঃ ২। বালকদের সর্দার ছিল ফটিক।

(গ) মাখনলাল ফটিক চক্রবর্তীর কে ছিল ?

১। কাকা।

২। বড়ভাই।

৩। মেজভাই।

৪। ছােটভাই।

উত্তরঃ ৪। মাখনলাল ফটিক চক্রবর্তীর ছােটভাই।

(ঘ) ফটিকের মা, ফটিককে কোথায় চড় মেরেছিল ?

১। পিঠে।

২। কপালে।

৩। গালে।

৪। গণ্ডদেশে।

উত্তরঃ ১। ফটিকের মা, ফটিককে পিঠে চড় মেরেছিল।

(ঙ) ফটিকের মামার নাম ছিল-

১। রায়বাবু।

২। কমলবাবু।

৩। বিশ্বম্ভ রবাবু।

৪। আবীরবাবু।

উত্তরঃ ৩। ফটিকের মামার নাম ছিল বিশ্বম্ভরবাবু।

২। শূন্যস্থান পূর্ণ করাে।

(ক) নদীর ধারে একটা প্রকাণ্ড ……………………….. মাস্তুলে রূপান্তরিত হইবার প্রতীক্ষায় পড়িয়াছিল।

উত্তরঃ নদীর ধারে একটা প্রকাণ্ড শালকাষ্ঠ মাস্তুলে রূপান্তরিত হইবার প্রতীক্ষায় পড়িয়াছিল।

(খ) বিশেষত …………………………. বৎসরের ছেলের মতাে পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই।

উত্তরঃ বিশেষত তেরাে-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতাে পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই।

(গ) মামির স্নেহহীন চক্ষে সে যে একটা দূরগ্রহের মতাে …………………..হইতেছে।

উত্তরঃ মামির স্নেহহীন চক্ষে সে যে একটা দূরগ্রহের মতাে প্রতিভাত হইতেছে।

(ঘ) স্কুলে এত বড়াে নির্বোধ এবং ……………………….বালক আর ছিল না।

উত্তরঃ স্কুলে এত বড়াে নির্বোধ এবং অমনােযােগী বালক আর ছিল না।

৩। শুদ্ধ ও অশুদ্ধ বাক্য খুঁজে বের করাে।

(ক) কার্তিক মাসে পূজার ছুটি, সে এখনাে ঢের দেরি।

উত্তরঃ কার্তিক মাসে পূজার ছুটি, এখনাে ঢের দেরি। (শুদ্ধবাক্য)।

(খ) একদিন ফটিক তাহার মামির কাছে নিতান্ত সাহসী হইয়া গিয়া কহিল, “বই হারিয়ে ফেলেছি।”

উত্তরঃ একদিন ফটিক তাহার মামির কাছে নিতান্ত সাহসী হইয়া গিয়া কহিল, “বই হারিয়ে ফেলেছি।” (শুদ্ধবাক্য)।

(গ) “এরূপ প্রত্যাশা করিতে তাহার লজ্জাবােধ হইতে লাগিল।”

উত্তরঃ “এরূপ প্রত্যাশা করিতে তাহার লজ্জাবােধ হইতে লাগিল।” (শুদ্ধবাক্য)।

(ঘ) ডাক্তারবাবু আনন্দমনে জানাইলেন, অবস্থা বড়ােই খারাপ।

উত্তরঃ ডাক্তারবাবু আনন্দমনে জানাইলেন, অবস্থা বড়ােই খারাপ। (অশুদ্ধ বাকা)।

৪। ভাববিষয়ক অনুশীলন-

(ক) অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন।

১। ‘ছুটি’ গল্পের লেখক কে ?

উত্তরঃ ‘ছুটি’ গল্পের লেখক হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

২। ‘ছুটি’ গল্পের প্রধান চরিত্রটির নাম উল্লেখ করে।।

উত্তরঃ ‘ছুটি’ গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক।

৩। ‘ছুটি’ গল্পটি লেখকের কোন গ্রন্থের অন্তর্গত ?

উত্তরঃ ছুটি’ গল্পটি লেখকের ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থের অন্তর্গত।

৪। ফটিকের মামার নাম কী ছিল ?

উত্তরঃ ফটিকের মামার নাম ছিল বিশ্বম্ভর।

৫। বালকদের সর্দার কে ছিল ?

উত্তরঃ বালকদের সর্দার ছিল ফটিক।

৬। ফটিকের মামা ফটিককে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন ?

উত্তরঃ ফটিকের মামা ফটিককে নিজের বাড়িতে কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন।

৭। ফটিকের বয়স কত ছিল ?

উত্তরঃ ফটিকের বয়স তেরাে-চোদ্দ বছর ছিল।

৮। ফটিকের মামা ফটিককে কখন ওর মায়ের কাছে নিয়ে যাবেন বলে কথা দিয়েছিলেন ?

উত্তরঃ ফটিকের মামা ফটিককে কার্তিক মাসে পূজার ছুটিতে মায়ের কাছে নিয়ে যাবেন বলে কথা দিয়েছিলেন।

৯। মাখনলাল এবং ফটিকের মধ্যে কী সম্পর্ক ছিল ?

উত্তরঃ মাখনলাল এবং ফটিকের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক ছিল।

১০। ফটিক মাখনলালকে চড় মেরেছিল কেন ?

উত্তরঃ মাখনলাল পড়ে গিয়েছিল বলে ফটিক মাখনলালকে চড় মেরেছিল।

১১। বিশ্বম্ভ রবাবুর কয়টি সন্তান ছিল ?

উত্তরঃ বিশ্বম্ভরবাবুর তিনটি সন্তান ছিল।

৫। সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন-

(ক) “মামা, মার কাছে কবে যাব ?”- উক্তিটি কার? কখন কাকে এই উক্তি করা হয়েছে ?

উত্তরঃ উক্তিটি ফটিকের।ফটিক তার মামা বিশ্বম্ভরবাবুকে এই উক্তিটি করেছিল। ফটিক নগর পরিবেশ 

এবং বিদ্যালয় পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি। মুক্ত জীবনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়ে সে হাঁপিয়ে উঠেছিল। তখন তার মামাকে এই উক্তিটি করেছিল।

(খ) ফটিকের মামা কোথায় কী করতেন ?

উত্তরঃ ফটিকের মামা পশ্চিমে কাজ করতেন। অনেকদিন তিনি সেখানে ছিলেন।

(গ) ফটিকের প্রতি ওর মামির ব্যবহার কীরূপ ছিল ?

উত্তরঃ ফটিকের মামি ফটিকের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করতেন। তিনি কারণে অকারণে ফটিককে কথা শােনাতেন। ভদ্রমহিলার স্নেহশূন্য বিরাগ ফটিককে পদে পদে কাটার মতাে বিধতাে। ফটিকের মাতৃভবন ছাড়া মামার বাড়ি নরক বলে মনে হতাে। ফটিকের মামি ফটিককে নিদারুণভাবে উপেক্ষা করতেন। সারাক্ষণ ফটিকের প্রতি তার মামির নিষ্ঠুর অবিচার….।

(ঘ) মা, ফটিককে কেন ওর মামার সঙ্গে কলকাতায় পাঠিয়ে দিলেন, তা সংক্ষেপে লেখাে।

উত্তরঃ ফটিকের পাঠে অমনােযােগিতা ও দুষ্টুমি ফটিকের মায়ের পক্ষে অসহ্য হয়ে উঠেছিল। তাছাড়া ফটিকের মায়ের আশংকা ছিল হয়তাে ফটিক তার ভাই-এর শারীরিক ক্ষতিও করে দিতে পারে। এইসব ভেবে ফটিকের মা ফটিককে ওর মামার সঙ্গে কলকাতায় পাঠিয়ে দিলেন।

(ঙ) ফটিক মাখনলালকে সশব্দে চড় মেরেছিল কেন বুঝিয়ে লেখাে।

উত্তরঃ ফটিকের ছােটো ভাই মাখনলাল খেলতে গিয়ে ভূপতিত হয়েছিল। সে সময় মাখনলাল তার মায়ের কাছে গিয়ে যখন মিথ্যা অভিযােগ করলাে যে দাদা তাকে মেরেছে তখন ফটিক প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠে। তবুও মাখন যখন বারবার বলতে থাকে তাকে মেরেছে, তখন ফটিক আর আর সহ্য করতে না পেরে সশব্দে মাখনের গালে এক চড় মেরেছিল।

(চ) নদীতীরে বালকদের খেলা বন্ধ হয়ে গেল কেন ?

উত্তরঃ ছেলের দল যখন নতুন খেলায় মেতে ওঠে, তখন ফটিকের ছােট ভাই মাখন কাঠের গুড়ির উপর নির্বিকারে বসে। তাকে দেখে মনে হয় যেন সে গভীর দার্শনিক চিন্তায় মগ্ন। ছেলের দল কোমর বেঁধে কাঠের গুড়িটি ঠেলতে শুরু করে। গুড়ি একপাক ঘুরতেই মাখন তার গাম্ভীর্য গৌরব ও তত্ত্বজ্ঞান সমেত ভূপতিত হয়ে যায়। মাখন কাঠের গুড়ি থেকে পড়ে যায়। মাখন তৎক্ষণাৎ ভূমিশয্যা ছেড়ে ফটিকের উপর গিয়ে পড়ে একেবারে অন্ধভাবে মারতে শুরু করে। ফটিকের নাকে মুখে আঁচড় কেটে কাদতে কাদতে বাড়ির দিকে যায়। তখনই নদীতীরে বালকদের খেলা বন্ধ হয়ে যায়।

(ছ) ফটিকের মামা এতদিন কোথায় ছিলেন ?

উত্তরঃ ফটিকের মামা এতদিন পশ্চিমে ছিলেন। তিনি পশ্চিমে কাজ করতে গিয়েছিলেন।

(জ) কোন অবস্থায় ফটিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থতার কারণ লেখাে।

উত্তরঃ স্কুল থেকে ফিরে সেই রাতেই ফটিকের মাথা ব্যথা করতে থাকে এবং গা সিরসির করে উঠে। ফটিক বুঝতে পারে তার জ্বর আসছে। সেদিনই আবার রাত্রি থেকে মুষলধারে শ্রাবণের বৃষ্টি পড়ছিল। স্কুলের ছুটির জন্য অপেক্ষা করতে না পেরে সে একাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে বৃষ্টিতে ভিজে ফটিক অসুস্থ হয়ে পড়ে।

(ঝ) ফটিকের মাকে কেন বিশ্বম্ভ রবাবু কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছিলেন ? মা এসে কী করলেন ?

উত্তরঃ ফটিকের মাকে বিশ্বম্ভরবাবু কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছিলেন ফটিকের শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে। ফটিকের মা ঝড়ের মতাে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেই উচ্চৈঃস্বরে শােক করতে থাকেন। বিশ্বম্ভর বহু কষ্টে তার শােকোচ্ছাস নিবৃত্ত করলে তিনি শয্যার উপর আছাড় খেয়ে পড়ে উচ্চৈঃস্বরে ডাকলেন, ফটিক, সােনা, মানিক আমার।”

(ঞ) “ফটিক তাের মাকে আনতে পাঠিয়েছি।” উক্তিটি কার ? কখন কেন এ উক্তির অবতারণা ?

উত্তরঃ উক্তিটি ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবুর। ফটিকের জ্বর ভীষণ বেড়ে গেলে ফটিক সারারাত প্রলাপ বকতে থাকে। বিশ্বম্ভরবাবু রুমালে চোখ মুছে সস্নেহে ফটিকের শীর্ণ তপ্ত হাতখানি তার নিজের হাতের উপর তুলে নিয়ে তার কাছে এসে বসেন। পরদিন বিশ্বম্ভরবাবু তার মনের ভাব বুঝতে পেরে তার কানের কাছে মুখ নত করে মৃদুস্বরে বললেন, “ফটিক তাের মাকে আনতে পাঠিয়েছি।

৬। রচনাধর্মী উত্তর লেখাে।

১। “মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।” -উদ্ধৃত উক্তির যথাযথ বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ উদ্ধৃত উক্তিটি ‘ছুটি’ গল্পের কেন্দ্রীয় কিশাের চরিত্র ফটিকের। মামার বাড়িতে মামীর অত্যাচারে ফটিকের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। মামা বিশ্বম্ভরঘাবু বলেছিলেন যে স্কুলের ছুটি হলে তাকে নিয়ে দেশের বাড়িতে যাবেন। স্কুলের ছুটির জন্যে অপেক্ষা করতে না পেরে সে একাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে পথে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ ফটিককে পুলিশ পৌছে দেয় বিশ্বম্ভরবাবুর বাড়িতে। দুজন পুলিশের লােক গাড়ি থেকে ফটিককে ধরাধরি করে নামিয়ে বিশ্বম্ভরবাবুর কাছে উপস্থিত করে। তার সারাশরীর ভেজা, সর্বাঙ্গে কাদা, চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে, থত্থর করে কাপছে তারা শরীর। বিশ্বম্ভরবাবু প্রায় কোলে করে তাকে অন্তঃপুরে নিয়ে যান। ফটিকের জ্বর অত্যন্ত বেড়ে যায়। সে বিড়বিড় করে বকতে থাকে ; বলে, “মা আমাকে মারিস নে মা। সত্যি বলছি, আমি কোনাে দোষ করিনি।” বিশ্বম্ভরবাবু তার মনের ভাব বুঝতে পেরে মৃদুস্বরে বলেন, “ফটিক তোর মাকে আনতে পাঠিয়েছি।”

খবর পেয়ে ফটিকের মা ছুটে আসেন বিশ্বম্ভর বহু কষ্টে তাঁর শোকোচ্ছাস নিবৃত্ত করে বললেন, “ফটিক, সােনা, মানিক আমার!” মা তাকে আবার ডাকলেন “ওরে ফটিক, বাপধন রে!” তখন ফটিক আস্তে আস্তে পাশ ফিরে কাউকে লক্ষ্য না করে মৃদুস্বরে বলেছিল- “মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”

এখানে ছুটি বলতে পৃথিবীর পাঠশালা থেকে ছুটি বা মুক্তি বােঝানাে হয়েছে। এ দুটি হলাে এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যাওয়া অর্থাৎ ইহলােক থেকে পরলােকে মুক্তি।

২। ফটিকের মামির চরিত্র বর্ণনা করাে।

উত্তরঃ ছুটি’ গল্পে ফটিকের মামি অর্থাৎ ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবুর স্ত্রীর চরিত্র বিশ্বম্ভরবাবুর চরিত্রের ঠিক বিপরীতধর্মী। তার ভেতর ছিল চরম স্বার্থপরতা। সার্বজনীনভাবে মাতৃভাব আদৌ তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল না। অর্থাৎ নিজের সন্তানদের প্রতি ভালােবাসা স্নেহ সব মায়েরই থাকে, ফটিকের মামিরও ছিল কিন্তু পরের পুত্রের প্রতি ভালােবাসা স্নেহ তার ছিল না।

ফটিকের আগমনের মুহূর্তেই ফটিকের মামি ফটিক সম্পর্কে বিরূপ মনােভাব ধারণ করতে শুরু করেন। ফটিক আসাতে, অনাবশ্যকভাবে পরিবার বৃদ্ধি হওয়াতে তিনি বিশেষ সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তার নিজের তিনটি ছেলে নিয়ে তিনি নিজের নিয়মে ঘরকন্যা করতেন, তার মধ্যে সহসা একটি তেরাে-চোদ্দ বছরের অপরিচিত, অশিক্ষিত, পাড়াগেঁয়ে ছেলে ছেড়ে দিলে যে বিপ্লবের সম্ভাবনা উপস্থিত হয়, সেই বিপ্লব ঘটে যায়। আর সেই বিপ্লব শুরু হয় ফটিকের মামিকে সামনে রেখেই। ফটিকের স্বাভাবিক অনিবার্য ত্রুটিও ফটিকের মামি সহ্য করতে পারতেন না। ফটিক মামিকে সাহায্য করবার চেষ্টা করলেও তার মামি তা উপেক্ষার সঙ্গে পরিহার করতাে। ফটিক আসার পরেই সংসারে অর্থনৈতিক টানাপােড়েন শুরু হয়েছিল সংসারে যেন এমনটি ধারণা হয়েছিল তার মামীর। ভয়ংকরভাবে অসুস্থ ফটিককে দুজন পুলিশের লােক গাড়ি থেকে নামালে বিশ্বম্ভরবাবু প্রায় কোলে করে ফটিককে অন্তঃপুরে নিয়ে যান। কিন্তু ফটিকের মামি দুঃখ তাে দূরের কথা সামান্য সহানুভূতি না দেখিয়ে পরের ছেলেকে নিয়ে সে রাতের কর্মভােগ কেন করতে হবে এই বলে রাগারাগি শুরু করেন। পরের ছেলেকে অবিলম্বে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। শত হলেও ননদের ছেলে তা নিজের ছেলের তুল্যই। অথচ হতভাগ্য ফটিক তার মামির কাছ থেকে না পেল সহানুভতি না ভালােবাসা। ফটিকের মামি ছিলেন এই চরিত্রের মানুষ।

৩। নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটি বিস্তারিত বর্ণনা করাে।

উত্তরঃ বালকদের সর্দার ফটিক চক্রবর্তী। তার মাথায় চট করে খেলে গেল একটা নতুন পরিকল্পনা। নদীর ধারে প্রকাণ্ড শালকাঠ মাস্তুলে রূপান্তরিত হবার অপেক্ষায় ছিল। সেটাকে সকলে মিলে গড়িয়ে নিয়ে যাবে- এই ছিল ফটিকের পরিকল্পনা। প্রয়ােজনের সময় সেই শালকাঠের মালিক সেই শালকাঠটিকে দেখতে না পেলে কতখানি বিস্মিত বিরক্ত এবং অসুবিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে তা বুঝেই অন্যসব বালকেরা ফটিকের প্রস্তাবে সম্মতি দেয়।

কোমর বেঁধে যখন সকলেই শালকাঠ গড়িয়ে নেবার উপক্রম করছে, সেই সময় ফটিকের ছােট ভাই মাখনলাল গম্ভীরভাবে সেই গুড়ির উপর গিয়ে বসে। একজন এসে ভয়ে ভয়ে ফটিকের ভাই মাখনলালকে একটু আধটু ঠেললেও মাখনলাল স্থির হয়ে বসে থাকে। ফটিকের আস্ফালনও কাজ করে না। ততক্ষণে ফটিকের মনে আগের চেয়ে আরও ভালাে একটা খেলা মাথায় উদিত হল। সেই খেলা আরাে মজাদার হবে বলে মনে হয় ফটিকের। প্রস্তাব করলাে মাখনকে শুদ্ধ ঐ কাঠ গড়াতে আরম্ভ করা যাক।

মাখনের মনে হয় এই খেলায় গৌরব আছে ; কিন্তু এর আনুষঙ্গিক বিপদের দিকটা তার মনে উদিত হলাে না। ছেলেরা সকলে মিলে কোমর বেঁধে সেই কাঠের গুড়ি ঠেলতে শুরু করলাে এবং স্বাভাবিকভাবেই একপাক ঘুরতে না ঘুরতেই মাখনলালের আকাঙিক্ষত গৌরববােধ ধূলিসাৎ হলাে।

এমতাবস্থায় অপর বালকের বিশেষ হৃষ্ট হয়ে উঠলেও ফটিক কিছু শশব্যস্ত হলাে। মাখন তৎক্ষণাৎ ভূমিশয্যা ছেড়ে ফটিকের উপর গিয়ে পড়ে তাকে অন্ধভাবে মারতে থাকে। মাখন তার নাকে মুখে চোখে আঁচড় কেটে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে যায় এবং খেলা ভেঙ্গে যায়।

৪। বিশ্বম্ভরবাবু কে ? ছুটি’ গল্পে তার ভূমিকা আলােচনা করাে।

উত্তরঃ বিশ্বম্ভরবাবু ফটিকের মামা।বিশ্বম্ভরবাবুর ‘ছুটি’ গল্পে ভূমিকাটি নিতান্তই গুরুত্বপূর্ণ।

ছােটবােনকে যথেষ্ট ভালােবাসতেন। সেজন্য নিজের থেকেই দূৰ্মুল্যের বাজারেও ভাগ্নে ফটিককে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন তার কলকাতার বাড়িতে। তারা নিজেরা স্বামী-স্ত্রী ব্যতিরেকে তার তিন-তিনটি পুত্র ছিল। তবুও ফটিকের খাওয়া পরা, লেখাপড়ার দায়িত্ব নিজের একার আয়ের উপর নির্ভর করেই গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন এমনই মহৎপ্রাণ, দয়ালু মানুষ।

ফটিক যখন মার কাছে যেতে চেয়েছে তখনই মামা ফটিককে আশ্বাস দিয়েছেন। বলেছেন কার্তিক মাসে পুজোর ছুটিতে নিয়ে যাবেন। ফটিককে কোলে করে তার অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে যান বিশ্বম্ভরবাবু। বিশ্বম্ভরবাবুই রাতে চিকিৎসক নিয়ে এসেছিলেন। ফটিক ছুটি হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে বিশ্বম্ভরবাবু চোখ মুছে ফটিকের শীর্ণ হাতটি নিজের হাতের উপর তুলে নিয়েছিলেন। মানবিক হৃদয়ের এক নিঃশব্দ হাহাকার ছড়িয়ে পড়েছিল ফটিকের ঘরে। বিশ্বম্ভরবাবুই ফটিকের মাকেও দ্রুত খবর দিয়েছিলেন। সব দিক থেকে দেখালে, বিশ্বম্ভরবাবু ছিলেন একজন মানবদরদী আদর্শ মানুষ।

৫। বালক ফটিকের চরিত্র বর্ণনা করাে।

উত্তরঃ বালকদের সর্দার ফটিক ছিল দুরন্তপনায় প্রথম । দুষ্টবুদ্ধিও কম ছিল না। পড়াশােনায় তার মনােযােগ ছিল না। প্রকৃতির উন্মুক্ত প্রান্তরে খেলে বেড়াতে সে ভালােবাসে। নিত্য নতুন খেলা উদ্ভাবন করতেও সে খুব ভালােবাসত।

ফটিকের আত্মসম্মানবােধ ছিল তীব্র। সেজন্য মাখন মায়ের কাছে গিয়ে যখন অভিযােগ করল যে কে দাদা মেরেছে তখন সে আর সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদে মুখর হয়। তবুও মাখন যখন বারবার বলতে থাকে যে ফটিক তাকে মেরেছে, তখন সে আর সহ্য করতে না পেরে সবেগে মাখনের গালে এক চড় মারে। ফটিকের মন ছিল খুব সরল, মামার বাড়ি যাবার আনন্দে এই মাখনকে সে তার ছিপ, ঘুড়ি, লাটাই সব দিয়ে দিয়েছিল।

ফটিক ছিল স্নেহকাতর। মামার বাড়িতে সে স্নেহ পায়নি। মামিমার স্নেহহীন চোখে সে দুষ্ট গ্রহের মতাে প্রতিভাত হচ্ছে এইটি ফটিকের মনে বড় বাজত। ফটিক ছিল স্নেহের কাঙাল। মামিমার এতটুকু স্নেহ পাবার জন্যে সে মামিমার কাজ আনন্দের সঙ্গে করে দিত। অনেক সময় মনের আনন্দে যতটা প্রয়ােজন তার থেকে বেশি কাজ করে দিত ফটিক, তবু মামিমার মন সে পায়নি।

প্রকৃতির প্রতি ফটিকের অন্তরের টান ছিল। মামার বাড়িতে মামির অত্যাচার যখন অসহ্য হয়ে উঠত তখন সে গ্রাম্য জীবনের কথা ভাবত। গ্রামের জল, প্রকৃতি, নদী, দলবল তাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকত।

৬। গুড়ি একপাক ঘুরতে না ঘুরতেই মাখনলালের অবস্থা কী হইল? পরে সে কী করিল- তার বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ গুড়ি একপাক ঘুরতে না ঘুরতেই মাখন ভূপতিত হল।

খেলার শুরু হতেই এই ঘটনায় ফটিকের বন্ধুরা হেসে উঠলেও ফটিক কিছু শশব্যস্ত হয়। মাখন তৎক্ষণাৎ ভূমিশয্যা থেকে উঠে ফটিকের ওপর গিয়ে পড়ল, একেবারে অন্ধভাবে মারতে লাগল। ফটিকের নাকে মুখে আঁচড় কেটে কাদতে কাদতে গৃহাভিমুখে গমন করল। ভেঙ্গে গেল খেলা।

বাড়ি ফিরে মাখনলাল মিথ্যে করে ফটিকের নামে তার মার কাছে নালিশ করে। নিজের অন্যায়ের কথা বলল ন! মা মাখনের পক্ষ নিয়ে ফটিককে সবেগে নাড়া দিয়ে তার পিঠে দু-তিনটে প্রবল চপেটাঘাত করলেন। পরবর্তী এই অধ্যায়ের এইভাবেই সূচনা হয়।

৭। ব্যাখ্যা লেখাে।

১। “সুতরাং তাহার চেহারা এবং ভাবখানা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতাে হইয়া যায়।”

উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

পাঠে অমনােযােগী ফটিককে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার জন্য তার মামা বিশ্বম্ভরবাবু কলকাতায় নিয়ে এলেন। কিন্তু মামার বাড়িতে মামিমার অত্যাচারে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। স্নেহহীন, মায়া মমতাহীন কলকাতার মামার বাড়ির পরিবেশে সে হাঁপিয়ে উঠে। কোনাে মতেই সেই স্নেহহীন পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারল না। এই পরিবেশে ফটিকের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উক্তি করেছেন।

২। “বিশেষতঃ তেরাে-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের …স্নেহও উদ্রেক করে না।”

উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’ গল্প থেকে গৃহিত হয়েছে।

ফটিকের মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ বয়ঃসন্ধির সমস্ত লক্ষণ প্রকাশ করেছেন। তেরাে-চোদ্দ বৎসরের ছেলে ফটিকের মতাে পৃথিবীতে এমন বালাই যেন আর ছিল না। তার শােভাও নেই, কোনাে কাজেও লাগে না, স্নেহও উদ্রেক করে না, তার সঙ্গসুখও বিশেষ প্রার্থনীয় নয়। তার মুখের আধাে আধাে কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথা মাত্রই প্রগলভতা। হঠাৎ কাপড়-চোপড়ের পরিমাণ রক্ষা না করে বেমানানরূপে বেড়ে ওঠে; ললাকে সেটা তার একটা কুশ্রী স্পর্ধাস্বরূপ জ্ঞান করে। তার শৈশবের লালিত্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা সহসা চলে যায়, লােকে তাই তাকে মনে মনে অপরাধ না দিয়ে থাকতে পারে না। শৈশব এবং যৌবনের অনেক দোষ মাপ করা যায়, অথচ এই সময়ের কোনাে স্বাভাবিক অনিবার্য ত্রুটিও যেন অসহ্য বলে মনে হয়।

৩। “বেশ করেছ, আমি তােমাকে তাে মাসের মধ্যে পাঁচবার করে বই কিনে দিতে পারি নে।”

উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

একদিন ফটিক তার স্কুলের বই হারিয়ে ফেলে। একে তাে সহজেই পড়া তৈরি হয় না, তারপর বই হারিয়ে একেবারে নাকাল হয়ে পড়ে। মাস্টার প্রত্যেকদিন তাকে অত্যন্ত মারধাের অপমান করতে থাকেন। অসহ্যবােধ হওয়াতে একদিন ফটিক তার মামির কাছে নিতান্ত তাপরাধীর মতাে গিয়ে তার বই হারানাের সংবাদ দেয়। মামি অধরের দুই প্রান্তে বিরক্তির রেখা অঙ্কন করে উপরােক্ত উক্তি কবেন। ফটিক যে পরের পয়সা নষ্ট করছে এবং বই হারানাের দায় যে মামি নেবেন না তা উপরােক্ত উক্তির মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।

৪। “মা, আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”

উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছুটি’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

এখানে ছুটি বলতে পৃথিবীর পাঠশালা থেকে ছুটির কথা বলা হয়েছে। এ ছুটি হলাে জীবন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি। এ ছুটি কর্মক্ষেত্রে চিরকালীন বিশ্রাম গ্রহণ। এ যে পৃথিবী থেকে চিরবিদায়, এ ঘরে থেকেও ঘরে যাওয়া। ছেড়া জামা ফেলে দেওয়া। বাড়ি’ বলতে যমগৃহ, জীবনের ওপার বােঝানাে হয়েছে।

৫। “মা, আমাকে মারিসনেমা। সত্যি বলছি, আমি কোনাে দোষ করিনি।

উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

ফটিকের ভীষণ জ্বর এসেছিল। মামীকে সে চেনে ; জ্বরের কথা বললে তিনি দারুণ বিরক্ত হবেন! হয়তাে দু’চার কথা শুনিয়েও দেবেন। দায়িত্ব এড়িয়ে যাবেন। সেজন্য সে আর মামার বাড়ি ফিরল না। পরদিন প্রাতঃকালে ফটিককে আর দেখা গেল না। সেদিন আবার রাত্রি থেকে মুষলধারে শ্রাবণের বৃষ্টি পড়ছে। বিশ্বম্ভরবাবু বাধ্য হয়ে পুলিশে খবর দিলেন। সন্ধ্যেবেলায় নিদারুণ সুস্থ অবস্থায় এক হাঁটু জল পেরিয়ে দুজন পুলিশের লােক নিদারুণ অসুস্থ ফটিককে ধরাধরি করে নামিয়ে বিশ্বম্ভরবাবুর নিকট উপস্থিত হন ! ফটিকের আপাদ মস্তক ভেজা, সারা গায়ে কাদা, চোখ মুখ লাল টকটক করছে, সে থরথর করে কাপছে। বিশ্বম্ভরবাবু তাকে কোলে করে অন্তঃপুরে নিয়ে গেলেন। ফটিক তাপরাধীর মতাে মামাকে বললাে যে, সে মার কাছে যাচ্ছিল তাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

দেখতে দেখতে ফটিকের জুর অত্যন্ত বাড়ে। সমস্ত রাত্রি প্রলাপ বকতে শুরু করে। বিশ্বম্ভরবাবু, চিকিৎসক নিয়ে আসেন। ফটিক তার রক্তবর্ণ চক্ষু একবার উন্মীলিত করে কড়ি কাঠের দিকে হতবুদ্ধিভাবে তাকিয়ে তার মামাকে জিজ্ঞেস করলাে যে তার ছুটি হয়েছে কিনা। তারপরেই বিড়বিড় করে সে উপরােক্ত কথা কটি বকতে থাকে।

প্রকৃতপক্ষে ফটিকের মন তখন ফেলে আসা স্বগৃহে ফিরে গেছে। ছােট ভাই মাখনলালের মিথ্যে কথার উপর নির্ভর করে তাকে বেধড়ক মার দিতে মাকে সে বারণ করতে থাকে। পৃথিবীর পিতৃহীন ফটিকের কাছে তার মা-ই ছিলেন শেষ কথা। সেই দুর্দিনে, অবচেতন মনে সেজন্য মাকেই স্মরণ করলাে ফটিক। মাকে সঠিক বিচার দিতে অনুরােধ করে। আলােচ্যাংশে এই সত্যই উদঘাটিত হয়েছে।

৮। প্রসঙ্গ বিশ্লেষণ করাে।

১। “আঁ, তুই আমার গায়ে হাত তুলি।”

উত্তরঃ মাখনের জন্য অকারণে প্রচণ্ডভাবে মার খাওয়াতে ফটিক প্রচণ্ডভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছিল। মায়ের ব্যবহার তার কাছে বিমাতৃসুলভ ব্যবহার বলে মনে হয়েছিল। তান্যায়কে সমর্থন আর যেই করুক মা যে করবেন এটা ফটিক ভাবেনি। সেজন্য শারীরিক নির্যাতনে নির্যাতিত এবং মানসিক আঘাতে জর্জরিত ফটিক মাকে ঠেলে দেয়। ইতিপূর্বে ফটিক কখনাে এইরকম ব্যবহার তার মায়ের সঙ্গে করেনি। সেজন্য ফটিকের এইরকম ব্যবহারে মা অবাক হয়ে গিয়ে উপরােক্ত উক্তি করেছেন।

২। “মামির স্নেহহীন চক্ষে সে যে একটা দূর গ্রহের মতাে প্রতিভাত হইতেছে”।

উত্তরঃ ফটিককে তার মামি কোনােদিনই সুনজরে দেখেননি। কারণ- ফটিক আসাতে তার পরিবার অনাবশ্যকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল বলে তিনি অসন্তুষ্ট ছিলেন। সেজন্য ফটিকের মামি মাতৃত্ববােধ থেকে সরে এসে শত্ৰুতাবােধে দীক্ষিত হয়েছিল। মামির এতটুকু স্নেহ ছিল না তার প্রতি। কেননা ফটিক সর্বদাই তার মামির চোখে একটা দূর গ্রহের মতাে প্রতিভাত হতো।

৩। মামা, ‘মার কাছে কবে যাব’।

উত্তরঃ ফটিক বুঝতে পেরেছিল মামি তাকে ভালােবাসেন না। মামার বাড়ি সেজন্য তার কাছে নরকতুল্য হয়ে উঠেছিল। চারিদিকে স্নেহশূন্য বিরাগ তাকে পদে পদে কাটার মতাে বিঁধতাে। ফটিকের বয়সে সাধারণত নারীজাতি শ্রেষ্ঠ স্বর্গলােকের দুর্লভ জীব বলে ধারণা হয়ে থাকে। অতএব মামীর কাছ থেকে উপেক্ষা ফটিকের দুঃসহবােধ হলাে। ঘরের মধ্যে এমন অনাদর। এরপর তার হাঁফ ছাড়বার জায়গা ছিল না। দেওয়ালের মধ্যেই আটকা পড়ে তার গ্রামের কথা মনে পড়ত, সেই নদীতীর, দিনের মধ্যে যখন তখন ঝাপ দিয়ে পড়া, সর্বোপরি সেই অত্যাচারিণী-অবিচারিণী মা তার নিরুপায় চিত্তকে আকর্ষণ করতাে। সেজন্য উপরােক্ত উক্তিটি ফটিক মামার উদ্দেশ্যে করেছিল। এর মধ্য দিয়ে তার মানসিক এবং শারীরিক মুক্তির এক প্রবল অন্বেষা প্রকাশ পেয়েছে।

৪। “মামা আমার ছুটি হয়েছে কী ?”

উত্তরঃ পাঠে অমনােযােগী ফটিককে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার জন্যতার মামা বিশ্বম্ভরবাবু কলকাতায় নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু মামার বাড়িতে মামিমার অত্যাচারে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। স্নেহহীন মমতাহীন কলকাতার মামার বাড়ির পরিবেশে সে হাঁপিয়ে উঠে। কোনাে মতেই সে সেই স্নেহ- মমতাহীন, বদ্ধ জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারল না। ফলে মায়ের কাছে যাবার জন্য, গ্রাম্য সবুজে বন্ধুত্ব ও মানসিক মুক্তি পাওয়ার জন্য সে ছুটি পাগল হয়ে উঠে এবং তার মামাকে উপরােক্ত প্রশ্ন করেছিল।

৫। “আমি মার কাছে যাচ্ছিলুম, আমাকে ফিরিয়ে এনেছে।”

উত্তরঃ স্কুল থেকে ফিরে একরাত্রে ফটিকের মাথা ব্যথা করতে লাগে। সেই সঙ্গে গা সিরসির করে আসে। বুঝতে পারে তার জ্বর আসছে, ব্যামাে বাধালে তার মামির প্রতি অত্যন্ত অনর্থক উপদ্রব করা হবে। মামি তার অসুখটিকে যে কীরূপ একটা অনাবশ্যক জ্বালাতনের স্বরূপ দেখবে, তা সে স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারল। রােগের সময় এই অকর্মণ্য অদ্ভুত নির্বোধ বালক পৃথিবীতে নিজের মা ছাড়া অপর কারাে কাছে সেবা পেতে পারে এমন প্রত্যাশা করতে ফটিক লজ্জাবােধ করে। সুতরাং প্রবল বৃষ্টি মাথায় করেও সে মামার বাড়ি ফিরে গেল না। একেবারেই অনভিজ্ঞের মতাে মায়ের উদ্দেশ্যে পা বাড়াল।

কিন্তু প্রবল জ্বর নিয়ে একেবারে বারিসিক্ত অবস্থায়, কাদা মাখা জ্ঞানহীন ফটিককে পুলিশের দুটি লােক গাড়ি করে ফটিকের মামার কাছে পৌছে দেয়। বিশ্বম্ভরবাবু তাকে প্রায় কোলে করে অন্তঃপুরে নিয়ে যান।

মামি তাকে দেখেই যতদূর পারেন বিরক্তি প্রকাশ করলেন। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই ফটিক উপরােক্ত উক্তি করেছে উপরােক্ত কারণে।

৬। “ফটিক তাের মাকে আনতে পাঠিয়েছি।”

উত্তরঃ শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিধবস্ত ফটিক মার কাছে যাবার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল। বিশ্বম্ভর ফটিকের মনের ও শরীরের অবস্থা বুঝে সত্য সত্যই ফটিকের মাকে অবিলম্বে কলকাতার বাড়িতে আসার জন্য খবর পাঠান। এই ঘটনা ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই উপরােক্ত উক্তি নিতান্ত দুঃখকাতর মনােভাব নিয়েই ফটিককে ফটিকের মামা বিশ্বরবাবু করেছিলেন।

(চ) ভাষাবিষয়ক (ব্যাকরণ)-

১। পদান্তর করাে ?

গম্ভীর- গাম্ভীর্য।

বিস্ময়- বিস্মিত।

উদাসীন – ঔদাসীন্য।

আশঙ্কা – আশঙ্কিত।

নিজে করাে :-

কাতরতা ,তাপ ,দীন ,অস্থির ,ব্যাকুল,লজ্জা ,চক্ষু ,অন্তর ,প্রবল ,মন ,শৈশব ,সাহস।

উত্তরঃ কাতরতা – কাতর।

তাপ- তপ্ত।

দীন- দৈন্য।

অস্থির – অস্থিরতা।

ব্যাকুল – ব্যাকুলতা।

লজ্জ- লভিজাত।

চক্ষু – চাক্ষুষ।

অন্তর- আন্তরিক।

প্রবল- প্রাবল্য।

মন- মানসিক।

শৈশব- শিশু।

সাহস -সাহসী।

২। বাক্য রচনা করাে-

সিরসির :- ছেলেটির কাণ্ডটা দেখে আমার গা টা সিরসির করছে।

বিড়বিড় :- জ্বরের ঘােরে বৃদ্ধটি কী যেন বিড়বিড় করছে।

খিটখিট :- সব সময়ে ছেলে-মেয়েদের প্রতি খিটখিট করা ভালাে নয়।

নিজে করাে :-

ফ্যালফ্যাল, থরথর, ঝুপঝুপ, বোঁ বোঁ, মনে মনে, ব্যথা ব্যথা।

উত্তরঃ ফ্যালফ্যাল :- গুরুতর অসুস্থ ফটিক বাড়ি কাঠের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।

থরথর :- ভয়ে থরথব করে সে কাপতে থাকে।

ঝুপঝুপ :- ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি শুরু হলাে।

বোঁ বোঁ :- বোঁ বোঁ করে ঘুড়িটা আকাশ থেকে নীচে নামতে থাকে।

মনে মনে :- সে মনে মনে একটা ফন্দী আঁটল।

ব্যথা ব্যথা :- আমার বুকটা ব্যথাব্যথা করছে।

৩। বিপরীত শব্দ লেখাে।

উদয়- অস্ত।

কনিষ্ঠ- জ্যেষ্ঠ ।

প্রকাণ্ড- ক্ষুদ্র।

স্থির- চঞ্চল।

পার্থিব- অপার্থিব।

নিজে করাে :- মিথ্যা ,সাধ্য ,সশব্দ,সহ্য ,সন্তুষ্ট ,নিবৃত্ত ,আরম্ভ ,অনাদর ,নিরাশা ,উচ্চ।

উত্তরঃ সত্য- মিথ্যা।

সাধ্য – অসাধ্য। 

সশব্দ – নিঃশব্দ।

সহ- অসহ্য।

সন্তুষ্ট – অসন্তুষ্ট।

নিবৃত্ত- প্রবৃত্ত।

আরম্ভ – শেষ।

অনাদর- আদৰ।

নিরাশা- আশা।

উচ্চ- নীচ।

৪। সন্ধি কাকে বলে ? সন্ধি কত প্রকার ও কী কী ? প্রত্যেক প্রকার সন্ধির সংজ্ঞাসহ পাঁচটি করে উদাহরণ সহযােগে বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ পরস্পর সন্নিহিত দুই বনি তথা বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলা হয়।

সন্ধি তিন প্রকার- স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি।স্বরবর্ণের সঙ্গে স্বরবর্ণের মিলনকে বা সন্ধিকে স্বরসন্ধি বলা হয়। 

যেমন :- 

নব + ইন্দ্র = নরেন্দ্র।

কটু + উক্তি = কটুক্তি।

মহা + উৎসব =মহােৎসব

দেব  + ঋষি = দেৱৰ্ষি।

মত+ঐক্য =মতৈক্য।

ব্যঞ্জনের সঙ্গে স্বরের বা ব্যঞ্জনের, কিংবা স্বরের সঙ্গে ব্যঞ্জনের সন্ধিকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলা হয়। 

যেমন :-

পৃথক + অন = পৃথগন্ন।

দিক + নাগ = দিঙনাগ,দিগনাগ।

সৎ + চরিত্র = সচ্চরিত্র।

বিপদ + কাল = বিপৎকাল।

এক + ছত্র = একচ্ছত্র ।

বিশেষ যােগ্যতা :-

১। ছােটোগল্প কাকে বলে ?

উত্তরঃ প্রখ্যাত সমালােচক প্রয়াত রথীন্দ্রনাথ রায় ছােটোগল্পের কথা’ গ্রন্থে লিখেছেন- “ছােটোগল্প লঘু পক্ষ প্রজাপতি, তার পাখায় পাখায় দ্রুতলয়ের ছন্দ- সে ভারমুক্ত, লঘুছন্দ, অনাবশ্যকের বােঝা তার নেই… ছােটোগল্পের একটি ঘটনায়, একটি চরিত্রের বিশেষ অংশে, একটি মানসিকতায় বিদ্যদ্দীপ্তির যে চকিত উদ্ভাস ঘটে, তারই আলােয় জীবনের গভীর সত্য বাঞ্ছিত হয়ে ওঠে।”

২। ছােটোগল্পের বৈশিষ্ট্য কী ?

উত্তরঃ ছােটোগল্পের বৈশিষ্ট্যগুলি হলাে-

(ক) ছােটোগল্প হবে স্বাভাবিক জীবন-নির্ভর সাহিত্য প্রকরণ।

(খ) ছােটোগল্পের আয়তন হবে বাহুল্য বিহীন, সংহত।

(গ) ছােটোগল্পের একটি স্বাভাবিক, অনিবার্য, যুক্তিসঙ্গত পরিণতি থাকবে।

(ঘ) ছােটোগল্প পড়ে শেষ করার পর মনে হবে “শেষ হয়ে হইল না শেষ।”

(ঙ) ছােটোগল্প সাধারণভাবে আয়তনে ছােট হলেও তা কতপৃষ্ঠা সীমাবদ্ধ হবে তা অনির্দিষ্ট।

(চ) ছােটোগল্প ভাব, ঘটনা চরিত্রের দিক কে একমুখী হবে।

৩। রবীন্দ্রনাথের লেখা পাঁচটি ঘেটোগল্পের নাম লেখাে।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের লেখা পাঁচটি ছােটোগল্প হলাে- ঘাটের কথা, গুপ্তধন, ছুটি, বলাই এবং ক্ষুধিত পাষাণ।

৪। রবীন্দ্রনাথের ছােটোগল্প নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করাে। (১০০০ শব্দের মধ্যে)।

উত্তরঃ ১৮৭৭ সালে রবীন্দ্রনাথের প্রথম সার্থক সুন্দর ছােটোগল্প ‘ভিখারিণী’ ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৮৯১ সালে ‘দেনাপাওনা’ গল্পটি প্রকাশিত হয় ‘হিতবাদী’ পত্রিকায়। তারপর থেকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে অসংখ্য ছােটোগল্প প্রকাশিত হতে থাকে—যেগুলাে আজও পর্যন্ত বিশ্ব সাহিত্যের যে কোনাে ছােটো গল্পের তুলনায় রসসমৃদ্ধ। তার এই গল্পগুলােকে বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যে ও বৈশিষ্ট্যে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। প্রথমত, নরনারীর গভীর প্রেমানুভূতিমূলক ছােটোগল্প। দ্বিতীয়ত, সামাজিক জীবনে মানুষে মানুষে সম্পর্ক বৈচিত্র্যমূলক ছােটোগল্প। তৃতীয়ত, নিসর্গ প্রকৃতির সঙ্গে মানব মনের নিগূঢ় সম্পর্কমূলক ছােটোগল্প। চতুর্থত, জীবনের সঙ্গে অতি প্রাকৃতের স্পর্শমূলক ছােটোগল্প।

‘একরাত্রি’, ‘মহামায়া’, ‘মাল্যদান’, ‘মধ্যবতিনী’, ‘সমাপ্তি’, ‘দৃষ্টিদান’, ‘শাস্তি’, ‘প্রায়শ্চিত্ত’, ‘অধ্যাপক’, ‘মানভঞ্জন’, ‘দুরাশা’, ‘শেষের রাত্রি’ প্রভৃতি গল্পগুলাের মধ্যে প্রেমের বিচিত্র লীলা অভিব্যক্তি লাভ করেছে। এ প্রসঙ্গে ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত প্রণিধানযােগ্য, “রবীন্দ্রনাথ একাধারে কবি ও ঔপন্যাসিক উভয়ের দৃষ্টি লইয়া প্রেমের যে বিচিত্র ও রহস্যময় বিকাশ লীলায়িত করিয়া তুলিয়াছেন, তাহা সাহিত্যজগতে নিতান্ত দুর্লভ। আবার ব্যর্থ, প্রতিহত প্রেমজীবনকে যে একটি বৃহৎ দুঃখে অভিষিক্ত করেও মর্মস্পর্শী করুণসুরে প্লাবিত করিয়া দেয়, তাহাকেও তিনি আচার্য গভীর সহানুভূতির দ্বারা অভিব্যক্তি দিয়াছেন।”

তার পােস্টমাস্টার’, ‘ব্যবধান’, কাবুলিওয়ালা’, ‘দান-প্রতিদান’, ‘মেঘ ও রৌদ্র’, ‘হালদার গােষ্ঠী’, ‘ঠাকুরদা প্রভৃতি ছােটোগল্পে মানুষে মানুষে স্নেহ- প্রেম- প্রীতি- ভালােবাসার বিচিত্র সম্পর্ক পরিস্ফুট হয়েছে। আবার ‘দেনা-পাওনা’, ‘যজ্ঞেশ্বরের যজ্ঞ’, ‘হৈমন্তী’ প্রভৃতি গল্পে সামাজিক প্রথা রীতিনীতির দুঃসহ মর্মন্তুদ পীড়নে অবিমিশ্র করুণ রসের অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে।

‘বলাই’, ‘অতিথি’, ‘ছুটি’, ‘শুভা’ প্রভৃতি গল্পগুলিতে মানব প্রকৃতি ও জড় প্রকৃতির নিগুঢ় সম্পর্কের অভিব্যক্তি ঘটেছে। প্রকৃতি যে জড় প্রকৃতি নহে মানব মনের সঙ্গে তাহার যে গূঢ় সম্পর্ক রহিয়াছে, তাহা ‘মেঘ ও রৌদ্র’, ‘অতিথি’, ‘আপদ’ প্রভৃতি গল্পগুলােতে আশ্চর্য তীক্ষ্ণতা লাভ করেছে। তবে এই ধরনের গল্পে প্রকৃতির পটভূমিকা কখনও কখনও চরিত্রের আকারে দেখা দিয়েছে। তখন পাত্র-পাত্রীর জীবনকে আচ্ছন্ন করিয়া প্রকৃতির লিরিক সৌন্দর্য প্রধান হইয়া উঠিয়াছে। (ডঃ অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়)।

রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গল্পের মধ্যে অতি প্রাকৃতের স্পর্শ বিশেষভাবে অনুভূত হয়। সম্পক্তি সমর্পণ’, ‘গুপ্তধন” প্রভৃতি গল্পে তিনি অতিপ্রাকৃত কাহিনিকে সহজ ভৌতিক বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক বিচার বিশ্লেষণে চিন্তাজাত দৃশ্যাবলােকন উৎকর্ষ লাভ করেছে নিশীথে’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘মণিহারা’ প্রভৃতি গল্পে। বাস্তব জীবনের সঙ্গে অতিপ্রাকৃতের সমন্বয় সাধনে রবীন্দ্রনাথ অপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংরেজ কবি কোলরিজকেও অতিক্রম করেছেন। রবীন্দ্রনাথ আশ্চর্য কুহক বলে আমাদের অতি পরিচিত গৃহাঙ্গনের মধ্যেই অতি প্রাকৃতকে আহ্বান করিয়া আনিয়াছেন এবং নৈসর্গিকের সীমা ছাড়াইয়া একপদও অগ্রসর হন নাই (ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়)। কঙ্কাল’ ও ‘জীবিত ও মৃত’ গল্প দুটিতে তিনি এক বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেছেন এবং রসসৃষ্টিতে বৈচিত্র্যের স্বাদ পরিবেশন করেছেন।

এই জাতীয় ছােটোগল্পগুলাের মধ্যে তিনি ভৌতিক পরিবেশকে সুনিপুণ কৌশলে এমনভাবে উপস্থাপিত করেছেন যে প্রাকৃত ও অতিপ্রাকৃতের সূক্ষ্ম সীমারেখা অবলুপ্ত হয়ে গেছে।

অতি আধুনিক চিন্তাসমৃদ্ধ নষ্টনীড়’ গল্পে দুর্দমনীয় অপ্রতিরােধ্য হৃদয়াবেগের প্রেমানুভূতি রূপায়িত করেছেন। অবহেলিত অপমানিতা নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠা ও ব্যক্তি স্বাধীনতা স্পৃহা প্রতিফলিত হয়েছে স্ত্রীর-পত্র’ গল্পে। স্ত্রী-জাতির প্রতি নির্মম বিবেকহীন পুরুষের নিষ্ঠুর ব্যবহারের প্রতিবাদ ধবনিত হয়েছে ‘পাত্র ও পাত্রী গল্পের মধ্যে। দেশমাতৃকার সেবার মাধ্যমে খ্যাতির প্রচ্ছন্ন লােভ এবং অন্তঃসার-শূন্য তাঁন্দোলনের ফাঁক ও ফাঁকির দিকটা তুলে ধরেছেন নামঞ্জুর’ গল্পে। মৃত্যুর এক বৎসর পূর্বে রচিত ‘তিন সঙ্গী’ গ্রন্থে সংগৃহীত ‘রবিবার’, ‘শেষ কথা, ‘ল্যাবরেটরি’, গল্পগুলােতে তিনি অতি আধুনিক যুগের জীবন সমস্যার স্বরূপ বিশ্লেষণ করেছেন।

বিশ্বকবির অনেকগুলাে ছােটোগল্পই যে আধুনিক যুগের খ্যাতনামা পাশ্চাত্য গল্পকার বা টলস্টয়, মােপাসা বা চেকভ-এর গল্পগুলাের সমতুল্য ও উন্নতমানেব -সে বিষয়ে কোনাে মতদ্বৈধের অবকাশ নেই।

ছােটোগল্প রচনার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ‘একম্ এবম্ অদ্বিতীয়ম। এমনকি তিনিই পরবর্তী উত্তরসূরীদের গল্প রচনার পথ সুগম করে দিয়েছেন।

৫। উপর নীচ বর্ণমালা বসিয়ে শব্দ তৈরি করে। যেমন—মণিপুর। তারপর পাশাপাশি কী শব্দ তৈরি হল লেখাে।

উত্তরঃ যেমণ :- 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top