Class 9 Bengali Chapter 3 ধূলামন্দির Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 9 Bengali Chapter 3 ধূলামন্দির and select needs one.
Class 9 Bengali Chapter 3 ধূলামন্দির
Also, you can read SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 9 Bengali Chapter 3 ধূলামন্দির for All Subject, You can practice these here…
ধূলামন্দির
Chapter – 3
ক-বিভাগ পদ্যাংশ
১। শুদ্ধ উত্তরটি বেছে বের করাে।
(ক) প্রকৃতপক্ষে দেবতার আবাস কোথায় ?
১। দেবালয়।
২। মন্দির।
৩। সর্বত্র।
৪। কর্মের মধ্যে।
উত্তরঃ ৪। প্রকৃতপক্ষে দেবতার আবাস কর্মের মধ্যে।
(খ) ঈশ্বর কার কাছে বাঁধা থাকেন ?
১। জীবের কাছে।
২। সৃষ্টির কাছে।
৩। পূজারির কাছে।
৪।পূজার কাছে।
উত্তরঃ ২। ঈশ্বর সৃষ্টির কাছে বাঁধা থাকেন।
(গ) কবির মতে প্রকৃত ধর্ম কী ?
১। সাধনা।
২। পূজার্চনা।
৩। কর্ম।
৪। মন্ত্রপাঠ।
উত্তরঃ ৩। কবির মতে প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে কর্ম।
(ঘ) ঈশ্বরের দু’হাতে কী লেগে থাকে বলে কবি বলেছেন ?
১। ধূলা।
২। চন্দন।
৩। ফুল।
৪। মাটি।
উত্তরঃ ১। ঈশ্বরের দুহাতে ধুলা লেগে থাকে বলে কবি বলেছেন।
(ঙ) কবি পূজারীকে কী ছেড়ে ধুলার পরে আসতে বলেছেন?
১। ফুলের ডালি।
২। বস্ত্র।
৩। ধ্যান।
৪। শুচিবান।
উত্তরঃ ৪। কবি পূজারীকে শুচিবসন ছেড়ে ধুলার পরে আসতে বলেছেন।
২। বাক্য রচনা করাে-
আরাধনা, সৃষ্টিবাঁধন, ফুলের ডালি, ধুলাবালি।
যেমন— রুদ্ধ দ্বার :- পূজারী রুদ্ধদ্বার মন্দিরে পূজা-আরাধনায় মগ্ন।
কর্মযােগ :- গীতায় বলা হয়েছে কর্মযােগই শ্রেষ্ঠ যােগ।
সংগােপনে :- ভক্তের ঈশ্বর আরাধনা সংগােপনে সমাধা হয়।
উত্তরঃ আরাধনা :- আরাধনা করে শুধু ঈশ্বর লাভ হয় না।
সৃষ্টি-বাঁধন :- ঈশ্বর নিজের সৃষ্টি বাঁধনেই নিজে বদ্ধ।
ফুলের ডালি :- মেয়েটি ফুলের ডালি নিয়ে মন্দিরে পুজো দিতে চলেছে।
ধুলাবালি :- ছেলেরা ধুলাবালি মেখে খেলা করছে।
৩। শূন্যস্থান পূর্ণ করাে ।
(ক) ………………………. দেবালয়ের কোণে কেন আছিস ওরে।
উত্তরঃ রুদ্ধদ্বারে দেবালয়ের কোণে কেন আছিস ওরে।
(খ) কাহারে তুই পূজিস ………………….।
উত্তরঃ কাহারে তুই পূজিস সংগােপনে।
(খ) ………………………..তার সাথে এক হয়ে ঘর্ম পড়ুক ঝরে।
উত্তরঃ কর্মযােগে তার সাথে এক হয়ে ঘর্ম পড়ুক ঝরে।
(ঘ) আপনি প্রভু ……………………পরে বাঁধা সবার কাছে।
উত্তরঃ আপনি প্রভু সৃষ্টিবাঁধন পরে বাঁধা সবার কাছে।
৪. অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন-
(ক) ধুলামন্দির কবিতার কবি কে ?
উত্তরঃ ধুলামন্দির কবিতার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
(খ) কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ?
উত্তরঃ কবিতাটি কবির ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
(গ) প্রকৃতপক্ষে দেবতা বা ঈশ্বরের বাস কোথায় ?
উত্তরঃ প্রকৃতপক্ষে দেবতা বা ঈশ্বরের বাস কর্মযােগে যুক্ত মানুষের মাঝে।
(ঘ) ভক্তরা ভজনা বা পূজার্চনা করেন কেন ?
উত্তরঃ ভক্তরা ভজনা বা পূজার্চনা করেন ঈশ্বর লাভের উদ্দেশ্যে।
(ঙ) প্রকৃত ধর্ম কী ?
উত্তরঃ মানবিকতাকে সঙ্গে করে কর্মযােগে যুক্ত হওয়ার নামই প্রকৃত ধর্ম।
(চ) কবির মতে দেবতা আসলে কোথায় থাকেন ?
উত্তরঃ কবির মতে দেবতা আসলে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যেই থাকেন।
(ছ) ঈশ্বর বা প্রভু কার নিকট বাঁধা থাকেন ?
উত্তরঃ ঈশ্বর বা প্রভু নিজের সৃষ্টি বন্ধনেই বাঁধা থাকেন।
৫. সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন-
(ক) কবিতায় কবি ভগবান রা দেবতাকে কোথায় পাওয়া যেতে পারে বলে প্রকাশ করেছেন ?
উত্তরঃ কবিতায় কবি ভগবান বা দেবতাকে মানুষের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে বলে প্রকাশ করেছেন।
(খ) কবির মতে মুক্তির উপায় কী বর্ণনা করো।
উত্তরঃ কবির মতে মুক্তির উপায় হলাে নরেই নারায়ণের অন্বেষণ করা। শ্রমজীবীদের সঙ্গে যুক্ত হলেই মুক্তির উপায় মিলবে।
(গ) কর্মযােগ বলতে কী বুঝায় ? কর্মের প্রকৃত অর্থ কী ?
উত্তরঃ কর্মযােগ’ বলতে বুঝায় কর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জীবনযাপন করা। ‘জ্ঞানযােগ’, ভক্তিযােগ, কর্মযােগ’ ছাড়া অসম্পূর্ণ থাকে।
কর্মের প্রকৃত অর্থ হলাে কর্মফল শ্রীকৃষ্ণেঃ সমর্পণ করে কিংবা ব্রহ্মো নিবেদন করে কাজ করাকেই প্রকৃত অর্থে কর্ম বলে।
(ঘ) রুদ্ধ দেবালয়ে ভগবান থাকেন কী ? কেন ?
উত্তরঃ রুদ্ধ দেবালয়ে ভগবান থাকেন না। কেননা ‘যত্র জীব তত্র শিব। নরেই নারায়ণ। আর তাই মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হলে ঈশ্বর লাভ হয় না। রবীন্দ্রের মতে তাই ভগবান ‘হীন পুতিতের। মানুষের সংস্পর্শ পেতে হলে মানুষের কর্মজ্ঞে আত্মনিয়ােগ করতে হয়, যেহেতু সেখানেই ঈশ্বরের অবস্থান।
(ঙ) কবির মতে দেবতা প্রাপ্তির প্রকৃত উপায় কী ?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ একস্থলে লিখছেন—“দেবতারে প্রিয় কবি, প্রিয়েরে দেবতা”। অর্থাৎ মানব শরীরই ঈশ্বরের মন্দির। মানুষের কর্মই মানুষের ধর্ম। কর্মই ধর্মের বর্ম। অতএব সংসারের অসংখ্য বন্ধনের মাঝেই লাভ করতে হবে মুক্তির স্বাদ।
৬। রচনাধর্মী উত্তর লেখাে-
(ক) ধুলামন্দির কবিতার সারাংশ লেখাে।
উত্তরঃ ভজন, পূজন এবং সাধনার মূল উদ্দেশ্য হলাে ভগবানের সান্নিধ্য লাভ। অধ্যাত্ম পিপাসু মানুষের মনে এটাই বদ্ধমূল ধারণা যে দেবতা বা ঈশ্বর দেবালয় বা মন্দিরে বাস করেন। কিন্তু ঈশ্বর সর্বত্রই বিরাজমান। সব কিছুতেই বর্তমান। তিনি প্রকৃত অর্থে ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে, মন্দিরের চার দেয়ালের মধ্যে বদ্ধ হয়ে থাকেন না। তার ব্যাপ্তি তানল-অনিলে, চির- নভােনীলে, জলদের গায়ে, শশী -তারকায় তপনে। তিনি আপামর খেটে খাওয়া মানুষের কর্মের মধ্যেও আছেন। দুহাতে তার কর্মের চিহ্ন বর্তমান। সেজন্য পূজারিদের রুদ্ধদ্বার দেবালয়ে ফুলমালা চন্দন দিয়ে ভগবানের পূজা করার কোনাে যৌক্তিকতা নেই। কবির মতে দেবালয়ের অন্ধকার কোঠায় দেবতার সন্ধান করা নিষ্ফল।
মানস চক্ষু দিয়ে দেখলে ঈশ্বরের অস্তিত্ব মেলে। ঈশ্বর, খেটে খাওয়া মানুষ ও তাদের কাজের মধ্যে লীন হয়ে আছেন। রৌদ্রে-জলে ধুলিকণায় ইট-কাঠ পাথরে গড়া বাস্তব পৃথিবীতে শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের বাস। তাই কবি ভক্তদের দেবালয়ে পরিহিত শুচি বসন ছেড়ে ধুলার পরে নেমে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন। কবি অন্তদৃষ্টি দিয়ে অনুভব করে বলেছেন যে মুক্তি কোথাও নেই। কারণ ঈশ্বর নিজেই তার সৃষ্টির নিকট বাঁধা আছেন। কর্মই ধর্ম। সেইহেতু কবি আলােচ্য কবিতায় বলেছেন ধুলিমাখা হাতে কর্মযােগে ঘর্ম ঝরানাের মাধ্যমেই ঈশ্বর প্রাপ্তি সম্ভব।
(খ) কর্মের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাওয়া যায়-কথাটির মূল বক্তব্য আলােচনা করাে।
উত্তরঃ ঈশ্বর আপামর খেটে খাওয়া মানুষের কর্মের মধ্যে আছেন। দুহাতে তার কর্মের চিহ্ন বর্তমান। সেইহেতু পূজারিদের রুদ্ধদ্বার পূজা ও আরাধনা যুক্তি নেই।
প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর শ্রমজীবী মানুষ ও তাদের কাজের মধ্যে লীন হয়ে আছেন। রৌদ্রে-জলে ধুলিকণায় ইট-কাঠ পাথরে গড়া বাস্তব পৃথিবীতে কর্মরত মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের অধিষ্ঠান। সেইহেতু কবি ভক্তদের দেবালয়ে পরিহিত তথাকথিত শুচিবসন পরিত্যাগ করে ধুলিশয্যায় নেমে আসতে উপদেশ দিয়েছেন। কবি তার অন্তদৃষ্টি দিয়ে অনুভব করেছেন “This poor body is the temple of living
soul.” আর সেই living soul- কে উপেক্ষা করার অর্থ ঈশ্বরকে উপেক্ষা। বেদে বলছে ‘সর্বং খল্লিদং ব্রহ্ম”। স্রষ্টা তার সৃষ্টির মধ্যে অবস্থান করেন। তাই বেশির ভাগ শ্রমজীবী মানুষের কঠোর পরিশ্রমে, কৃচ্ছ সাধনাই সাধনা। আর সেই সাধনায় সেই আরাধনায় ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করা যায়- উপরােক্ত কথাটির এইটিই বক্তব্য।
(গ) ধুলামন্দির কবিতার মূল ভাব ব্যক্ত করাে।
উত্তরঃ ধুলামন্দির কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ নীরবে নির্জনে চিরাচরিত ঈশ্বরের অনুষ্ঠানে ঈশ্বর লাভ করা যায় না বলে ঘােষণা করেছেন। বরং শ্রমজীবী মানুষের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে রােদে পুড়ে জলে ভিজে মাটি আর সংস্পর্শে যেতে বলেছেন। ধুলিধূসা রিত বস্ত্রই কর্মক্ষেত্রের বস্ত্র। সেটাই পরিধান করে নিতে হবে, কেননা কবির ধারণায় সেই কর্মযুক্ত বস্ত্রই শুচিবস্ত্র।
মানুষ মুমুক্ষু। কিন্তু তার ধারণা নেই যে, ঈশ্বর স্বয়ং নিজের সৃজিত বন্ধনে, সৃষ্টি বাঁধনে বাঁধা পড়ে আছেন। সেইহেতু প্রচলিত পূজা পদ্ধতি পরিহার করতে হবে। হয়তাে তাতে পরিধেয় বস্ত্র ছিন্ন হবে, ধুলিধুসরিত হবে ; তাতে কোনাে ক্ষতি নেই। কর্মযােগে যুক্ত হয়ে ঘাম ঝরিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেই ঈশ্বরের পদধুলি লাভ করতে হবে।
(ঘ) ধুলামন্দির কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে।
উত্তরঃ কবিতাটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কবি পৃথিবীর ধুলিতেই ঈশ্বরের মন্দির রচিত হয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন, ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন, সেজন্য মূলভাব-নির্ভর উপরােক্ত কবিতার ধুলামন্দির’ নামকরণ সার্থক হয়েছে।
৭. সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা লেখাে –
(ক) রৌদ্রে জলে আছেন সবার সাথে।
ধুলা তাহার লেগেছে দুই হাতে-
উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা “ধুলামন্দির’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
আলােচ্যাংশে কবি বলতে চেয়েছেন যে পৃথিবীর ধুলিকণায় তিনি আছেন। সেখানেই আছেন শ্রমজীবীরা। তারা রােদে পুড়ে জলে ভিজে ধুলধূসরিত বস্ত্রে পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে কঠিন পরিশ্রম করে ঈশ্বরের সৃষ্টিকে যথার্থ সম্মান জানাচ্ছেন। সেইসব কর্মরত নরেই নারায়ণের অধিষ্ঠান। কেবলমাত্র তাই নয় ঈশ্বর সেই কর্মযজ্ঞে নিজেকেও আহুতি দিয়েছেন। সেজন্য তাঁর দুই-হাতও ধুলিময়। তাই অন্যত্র রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-
মধুময় পৃথিবীর ধুলি অন্তরে নিয়েছি আমি তুলিও
এই মহামন্ত্রখানি চরিতার্থ বুনের বাণী।
(খ) নয়ন মেলে দেখ দেখি তুই চেয়ে- দেবতা নাই ঘরে।
উত্তরঃ আলােচ্য অংশ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘ধুলামন্দির থেকে নেওয়া।
একটা প্রাসঙ্গিক ছােট্ট গল্প দিয়ে আরম্ভ করা যাক। ঈশ্বরের মহান ভক্ত আবু বেন আদম রাত্রিতে নিজের ঘরে নিদ্রা যাচ্ছেন…। চাঁদের আলাে ঘর ভরেছে। হঠাৎ বেন আদমের নিদ্রা ভঙ্গ হলাে। দেখলেন একজন দেবদূত ঘরের মাছে দাঁড়িয়ে খখস্ করে একটি খাতায় কী যেন লিখে চলেছেন। শুদ্ধ আত্মা আদম ভয় না পেয়ে দেবদূতকে তার লেখার বিষয় জিজ্ঞাসা করলেন। দেবদূত আদমকে বললেন যে, তিনি তাদেরই নাম লিখছেন যাঁরা ঈশ্বরকে ভালােবাসেন। তার নাম সেই তালিকায় নেই জেনে আদম একটু দমে যান। পরের দিন রাতে পুনরায় সেই একই চিত্র। দেবদূত কী যেন লিখে চলেছেন। এবারও আদম লেখার বিষয়। জিজ্ঞাসা করাতে দেবদূত উত্তরে বললেন যে তিনি তাদেরই নামের তালিকা প্রস্তুত করছেন যাদের ঈশ্বর ভালােবাসেন। দেবদূত সেই আদমকে জানালেন যে, সেই তালিকায় আদমের নাম আছে সর্বোচ্চে।
আসলে আদম ছিলেন জনহিতব্রতী। যত্র জীব তত্র শিব। সেজন্য জনসেবক হিসেবে ঈশ্বরের করুণা তিনি লাভ করেছেন।
রবীন্দ্রনাথও ছিলেন না গতানুগতিক পূজা পদ্ধতিতে বিশ্বাসী। ঈশ্বর তার মতে অনুভূতিবেদ্য। তিনি দুপ্রেক্ষ চর্মচক্ষুতে। তার জন্য প্রয়ােজন Wordsworth কথিত “inward-eye”. এই অন্তর্দৃষ্টি থাকলে পূজারী অনুভব করতে পারতেন তারা মানুষকে ত্যাগ করে কত বড় অন্যায় করেছেন।-
মানুষের পরশেরে প্রতিদিন ঠেকাইয়া দূরে
ঘৃণা করিয়াছ তুমি মানুষের প্রাণের ঠাকুরে।
লােকাচারে পুজো না করে কর্মাচারেই মিলবে ঈশ্বরের পাদপদ্ম।
(গ) আপনি প্রভু সৃষ্টি বাঁধন পরে বাঁধা সবার কাছে।
উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি বাল্পতি রবীন্দ্রের ধুলামন্দির কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
বাইবেলে বলা হয়েছে, “So God Created man in his our image”. -অৰ্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের প্রতিরূপ | রবীন্দ্রনাথ বলছেন, “আমার মাঝে তােমার লীলা হবে। তাই আমি এসেছি এই ভবে।” সেজন্য যেখানে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি নরদেবতা, সেখানেই দেবতা। কর্মের অসংখ্য বন্ধনে ঈশ্বর স্বয়ং বাঁধা পড়ে আছেন। কেন না সেই জাগতিক কর্মবন্ধনে মানুষও বাঁধা পড়ে আছে। সেজন্য কর্মবন্ধন পবিত্রতম। সেই কর্মবন্ধন প্রকৃতপক্ষে মুক্তির মহাপ্রবেশ তােরণ। রবীন্দ্রনাথ সেজন্য সশ্রদ্ধ স্মরণ করেছেন কর্মবন্ধনকে।
“অসংখ্য বন্ধন মাঝে মহানন্দময় লভিব মুক্তির স্বাদ”।
(ঘ) রাখাে রে ধ্যান, থারে ফুলের ডালি,
ছিড়ক বস্ত্র লাগুক ধুলাবালি।
উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘ধুলামন্দির’ শীর্ষক কবিতা। থেকে নেওয়া হয়েছে।
ধ্যান করে ভক্ত ধেয় বস্তুকে পাবার উদ্দেশ্যে। ভক্তের ধেয় বস্তু ভগবান।। কথায় বলে, ‘ভক্তের ভগবান। কিন্তু ভক্তিধর্ম লােকাচারে বন্ধ থাকলে ধ্যানী ও আরাধ্য একীভূত হতে পারে না। জীবাত্মা পরমাত্মার পবিত্র অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হয়। ‘মােহ’ তত্ত্ব যাইই বলুক ভগবান হীন- পতিতের। তিনি যে দীনেশ। গীতায় কর্মযােগের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অর্জুনকে যুদ্ধকৰ্ম করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কলিতে কর্মই ধর্ম। কর্মই ধর্মের বর্ম। ফল অপ্রত্যাশী কর্ম করে যেতে হবে। চাষী। শ্রমিকেরা ফসল-ফলান। শ্রমিকেরা যাবতীয় অগ্রগতিমূলক নির্মাণ কার্যের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু তাদের কর্মফল তারা পান না। যারা দেন না, ঠকান শ্রমজীবীদের, তারা যতই ধ্যান করুক, পুষ্পে পুষ্পে ভরে তুলুক ঈশ্বরের বিগ্রহ, তারা জানেন না সেই বিগ্রহ মৃন্ময় রয়ে গেলাে, চিন্ময় হলাে না। বরং “নমি নরদেবতারে উদার ছন্দে পরমানন্দে…” তাদের বন্দনা করেন। কারণ “জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর”। সুতরাং শ্রমজীবীদের সাথে একই কাজে হাত লাগাতে হবে। তাতে হয়তাে পরিধেয় বস্ত্র ছিড়ে যেতে পারে। ধুলিজীর্ণ হতে পারে, তা হােক তবু ঈশ্বরের সংস্পর্শ তথাকথিত ভক্তের সেখানেই লাভ করবে বলে রবি-কবি মনে করেন।
৮। তাৎপর্য লেখাে-
(ক) ধুলা তাঁহার লেগেছে দুই হাতে।
উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ বিরচিত ‘ধুলামন্দির কবিতার অংশ।
আলােচ্য ‘ধুলা কর্মের প্রতীক। তাহার অর্থ স্বয়ং ঈশ্বরের। হাত’ কর্মদণ্ড। আর নররূপী নারায়ণ বলে ‘দুই হাত’। উপরােক্ত পঙক্তিটির তাৎপর্য হলো, কর্মযােগে যুক্ত হতে গেলেই মাটিতে পা রাখতে হয় সাধারণত, বিশেষ করে শ্রমজীবী দরিদ্রদের। ধুলা মাটি থেকে উড়ে শ্রমজীবীদের হাত ধুলিময় করে তােলে। স্বয়ং ঈশ্বর শ্রমজীবীদের সঙ্গে অবস্থান করে তাদের কাজে সাহায্য করেন। বলে তার হস্তদ্বয়ও ধুলিমলিন।
(খ) মুক্তি ? ওরে মুক্তি কোথায় পাবি, মুক্তি কোথায় আছে ?
উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ‘ধুলামন্দির কবিতা থেকে নেওয়া ।
মুক্তি একটি বিশেষ অর্থে সাধকরা ব্যবহার করে থাকেন। তা এককথায় পুনর্জন্ম থেকে মুক্তি। এই জীবনচক্রের থেকে মুক্তি। সংসারের কর্মবন্ধন থেকে মুক্তি। সাধকদের কাছে এই মনুষ্যজন্ম ‘কুম্ভীপাক’ নরকের তুল্য। ঈশ্বরকে লাভ করার পথে সর্বপ্রধান বাঁধা। সেজন্য সংস্কারের থেকে সরে গিয়ে মনে, বনে, কোণে নীরবে নির্জনে সাধকেরা ঈশ্বরের সাধনা করতে চান। মানুষের সংস্পর্শ সাধকের কাছে, ভক্তের কাছে বিষতুল্য।
কিন্তু তারা জানেন না-
যারে তুমি নীচে ফেল
সে তােমারে বাঁধিবে যে নীচে
পশ্চাৎ এ রেখেছ যারে
সে তােমারে পশ্চাতে টানিছে।
প্রকৃতপক্ষে পরমমুক্তি পরমেশ্বরেই যদি হয়, আর সেই পরমেশ্বরই যদি রৌদ্র জলে সবার সাথে, মর্ত্যভূমির ধুলিধুসর মাটিতে শ্রমজীবীদের মাঝেই অবস্থান করেন তবে মুক্তি পেতে হলে কর্মবন্ধনেই যুক্ত হতে হবে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন “এককে অতিক্রম করার উদ্দেশ্যেই একের দিকে ধাবিত হওয়া”। সুতরাং মুক্তি পেতে কর্মবন্ধন, মনুষ্যের ভালােবাসার বন্ধন সব বন্ধনেই যুক্ত থাকতে হবে।
(গ) পাথর ভেঙে কাটছে যেথায় পথ, খাটছে বারােমাস।
উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কৃত ধুলামন্দির কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
পাথর ভেঙে পথ তৈরি করেছে মানুষ। সভ্যতার অগ্রগতি না হলে হতাে না। ঈশ্বরের সাধের সৃষ্টি স্থাবর হয়ে থাকত, জঙ্গম হতাে না। কিন্তু ‘চরৈবেতি’ মন্ত্র তাহলে অসার্থক হতাে। লােকাচারের বন্ধনে আস্টেপৃষ্টে বাঁধা পড়ে যেন ঈশ্বরের সাধের জগৎ সংসার। জাতীয় জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠত। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,—
“যে জাতি জীবন হারা অচল অসার।
পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লােকাচার।
সেই লােকাচার বদ্ধ ধর্মাচরণ না করে ঈশ্বর লাভের জন্য কর্মাচরণকে আশ্রয় করতে হবে। পরিশ্রম করে, মাথার ঘাম ফেলে শ্রমজীবীরা সভ্যতার যেন অগ্রগামী রথাশ্ব। পুরাণে বরুণ দেবতা বলেছেন “চলে বেড়াও, চলে বেড়াও।” কর্মই সেই গতি আনয়ন করে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-
“ধর্ম আর ধর্মতন্ত্র এক জিনিস নহে। প্রথমটি হলাে আগুন আর দ্বিতীয়টি হলাে। ছাই। মুক্তির মন্ত্র পড়ে ধর্ম, আর দাসত্বের মন্ত্র পড়ে ধর্মতন্ত্র”। সুতরাং রােদে পুড়ে, জলে ভিজে, ঘাম ঝরিয়ে, সিক্তবস্ত্রে—সব অবস্থাকেই সাগ্রহে মেনে ভগবানের অনুধ্যানে রত হতে হবে।
৯। টীকা লেখাে।
মন্দির :- আভিধানিক অর্থ দেবালয়। এই কবিতাতেও এই অর্থেই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে ভক্তরা ভজন- পূজনসাধন- আরাধনা করে থাকেন ভগবানের। মন্দ + ইর = এইভাবে মন্দির শব্দটি তৈরি হয়েছে।
মুক্তি :- আলােচ্য কবিতায় রাবীন্দ্রিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী মােক্ষ। জীবলােক থেকে মুক্তি। জন্মচক্র থেকে মুক্তি।
কর্মযােগ :- কর্মযােগের ধর্মীয় ব্যাখ্যা নয় ;এর রাবীন্দ্রিক ব্যাখ্যা হলে শ্রমজীবী মানুষের কঠোর পরিশ্রম সাপেক্ষ কর্মের সাথে যুক্ত হওয়া।
প্রশ্ন ১০। ভাষা-ব্যাকরণ –
বাক্যের অর্থমূলক শ্রেণিভেদ
অর্থবােধই বাক্যের মূল বৈশিষ্ট্য। বিভিন্ন ধরনের বাক্য শ্রোতার কাছে বিভিন্ন অর্থ জ্ঞাপন করে। তাই অর্থানুসারে বাক্যকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা যায়। অর্থানুসারে বাক্যকে সাতটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে।
১। নির্দেশক বাক্য-
(ক) অস্ত্যর্থক বাক্য।
(খ) নাস্তাধক বা নঞর্থক বাক্য।
২। প্রশ্নবােধক বাক্য।
৩। অনুজ্ঞাবাচক বাক্য।
৪। ইচ্ছাসূচক বা প্রার্থনাসূচক।
৫। কার্যকারণাত্মক বাক্য।
৬। সন্দেহদ্যোতক বাক্য।
৭। বিস্ময়াদিবােধক বাক্য।
১। নির্দেশক বাক্যকে আবার অস্ত্যর্থক বা সদর্থক (হাঁ-বাচক) এবং নাস্ত্যর্থক বা নঞর্থক (না বাচক) এই দুটি উপরিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
(ক) অস্ত্যর্থক বাক্য :- যে বাক্যে কোনাে ঘটনা, ভাব, অবস্থাদি বিবৃতির দ্বারা স্থাপন করা হয় তাকে অস্ত্যর্থক বা সদর্থক বাক্য বলে।
যেমন :– সৎ ব্যক্তিকে সকলে বিশ্বাস করে। সামান্য কারণেই গ্রামে একটা বিপর্যয় ঘটিয়া গেল। আজ সন্ধ্যেয় যে করেই হােক কাবুল পৌছবেন। রাত্রি বারােটার মধ্যেই ঝড়বৃষ্টির বেগ থামিয়া গেল।
(খ) নাস্ত্যর্থক বা নঞর্থক বাক্য :- যে বাক্যে বক্তা বিবৃতির মাধ্যমে অস্বীকৃত, নিষেধ না-র মনােভাব প্রকাশ করে তাকে নাস্ত্যর্থক বাক্য বলে। একে অপােহনাত্মক বাক্যও বলা হয়।
যেমন :- আমি অন্যায় যুদ্ধ করিনি। বিধিলিপি কেউ খণ্ডাতে পারে না। শুধু শব্দ নয়, পিছনে অর্থও কম নেই। ভিক্ষার দিনে ভিক্ষায় বাহির হয়নি। তােক দেখি না। চৌকি শুনে কুকুর ডাকে না ।
২। প্রশ্নবােধক বাক্য :- যে-বাক্যে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় অর্থাৎ কোনাে কিছু জানার ইচ্ছা প্রকাশ পায় তাকে প্রশ্নবােধক বা প্রশ্নসূচক বাক্য বলে। যেমন- দাদা, আমাকে গাড়ি কিনে দেবে না ? আমাকে চিনতে পারছ না। মহাশয়ের নিবাস কোথায় জানতে পারি ? তাের নাম কী রে ? ব্ল্যাকমার্কেটের সুবিধে না নিয়ে উপায় কী ? ‘হে রক্ষোরথি ভুলিলে কেমনে কে তুমি ?
(খ) বাক্য পরিবর্তন করাে।
১। তাহাকে সকলেই চিনে। (অস্ত্যর্থক)
—তাহাকে, কে না চিনে ? (প্রশ্নাত্মক)
২। রবীন্দ্রনাথ ভারতের শ্রেষ্ঠ কবি। (অস্ত্যক)
—রবীন্দ্রনাথ ভারতের শ্রেষ্ঠ কবি কি ? (প্রশ্নাত্মক)
৩। সকলে ভুল করে। (অস্ত্যর্থক)
—ভুল কার না হয় ? (প্রশ্নাত্মক)
৪। তােমার নাম সকলেই জানে। (অস্ত্যর্থক)
—তােমাকে নাম কে না জানে। (নঞর্থক)