Class 11 Logic and Philosophy Chapter 9 বাস্তববাদ ও ভাববাদ

Class 11 Logic and Philosophy Chapter 9 বাস্তববাদ ও ভাববাদ answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Logic and Philosophy Chapter 9 বাস্তববাদ ও ভাববাদ and select needs one.

Class 11 Logic and Philosophy Chapter 9 বাস্তববাদ ও ভাববাদ

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Logic and Philosophy Chapter 9 বাস্তববাদ ও ভাববাদ Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

বাস্তববাদ ও ভাববাদ

পাঠ:

দ্বিতীয় খণ্ড

 অতি- সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। কয়েকজন বাস্তববাদী দার্শনিকের নাম লেখো।

উত্তরঃ লক্, পেরি, আলেকজাণ্ডার।

প্রশ্ন ২। কয়েকজন ভাববাদী দার্শনিকের নাম লেখো। 

উত্তরঃ বার্কলে, কান্ট, হেগেল, প্লেটো প্রমুখ।

প্রশ্ন ৩। কীসের ফলশ্রুতিতে জ্ঞান উৎপন্ন হয়?

উত্তরঃ জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয় বস্তুর মধ্যে সম্পর্কের ফলে জ্ঞান উৎপন্ন হয়।

প্রশ্ন ৪। জ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্পর্কিত দুটি প্রধান মতবাদের নাম কী? 

উত্তরঃ বাস্তববাদ ও ভাববাদ।

প্রশ্ন ৫। বিজ্ঞানসম্মত বা বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের প্রবর্তক কে?

উত্তরঃ জন লক্।

প্রশ্ন ৬। বাস্তববাদের মূল বক্তব্য কী?

উত্তরঃ জ্ঞানের বিষয়বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন-নিরপেক্ষ।

প্রশ্ন ৭। বাস্তববাদের সরলতম রূপ কী?

উত্তরঃ বাস্তববাদের সরলতম রূপ হল সরল বা লৌকিক বাস্তববাদ। 

প্রশ্ন ৮। ‘সরল বাস্তববাদ’ শব্দটি কে, কখন, কোথায় প্রথম ব্যবহার করেছিলেন?

উত্তরঃ ‘ডুর‍্যান্ট ড্রেক’ ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত তাঁর বই Imitation to Philosophy- তে সর্বপ্রথম ‘সরল বাস্তববাদ’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।

প্রশ্ন ৯। কোন্ দার্শনিক সরল বাস্তববাদকে লৌকিক বাস্তববাদ এবং প্রাকৃতিক বাস্তববাদ বলেছেন?

উত্তরঃ সেলারস্ (R. W. Sellers) নামক দার্শনিক।

প্রশ্ন ১০। সরল বাস্তববাদ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে মতবাদ জ্ঞেয়-বস্তু তার গুণাবলিসহ জ্ঞাতার মন- নিরপেক্ষভাবে অস্তিত্বশীল থাকে বলে বিশ্বাস করে তাকে সরল বাস্তববাদ বলে। 

প্রশ্ন ১১। সরল বাস্তববাদ কি ভ্রান্ত প্রত্যক্ষকে ব্যাখ্যা করতে পারে?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ১২। An Essay Concerning Human Understanding বইটি কার লেখা?

উত্তরঃ জন লক্।

প্রশ্ন ১৩। লক্ কয় প্রকার গুণের কথা উল্লেখ করেছেন?

উত্তরঃ দুই প্রকার—মৌলিক বা মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ।

প্রশ্ন ১৪। মৌলিক গুণ কোথায় থাকে?

উত্তরঃ বস্তুর মধ্যে।

প্রশ্ন ১৫। গৌণ গুণ কোথায় থাকে?

উত্তরঃ মানুষের মনে।

প্রশ্ন ১৬। সরল বাস্তববাদের অপর নামগুলি কী?

উত্তরঃ লৌকিক বাস্তববাদ এবং প্রত্যক্ষ বাস্তববাদ। 

প্রশ্ন ১৭। সরল বাস্তববাদ অনুযায়ী আমরা কি বস্তুকে প্রত্যক্ষভাবে জানতে পারি?

উত্তরঃ হ্যাঁ। 

প্রশ্ন ১৮। বাস্তববাদ অনুযায়ী বস্তুর অস্তিত্ব কি মনের উপরে নির্ভরশীল?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ১৯। বাস্তববাদীদের মতে, জ্ঞান এবং জ্ঞানের বিষয়বস্তুর মধ্যে অন্তর্নিহিত সম্পর্ক আছে কি?

উত্তরঃ না, নেই।

প্রশ্ন ২০। বাস্তববাদের প্রতিষ্ঠাতা কে? 

উত্তরঃ প্রাচীন গ্রিক পরমাণুবাদীগণ।

প্রশ্ন ২১। সরল বাস্তববাদ ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ, স্বপ্ন ইত্যাদিকে কি ব্যাখ্যা করতে পারে?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ২২। কে মৌলিক গুণ ও গৌণ গুণের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করেছিলেন?

উত্তরঃ জন লক্।

প্রশ্ন ২৩। পাশ্চাত্য দর্শনে ভাববাদের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তরঃ গ্রিক দার্শনিক প্লেটো।

প্রশ্ন ২৪। আত্মগত বা আত্মনিষ্ঠ ভাববাদের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তরঃ জর্জ বার্কলে।

প্রশ্ন ২৫। বস্তুগত ভাববাদের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তরঃ হেগেল। 

প্রশ্ন ২৬। ভাববাদ কি জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি মতবাদ?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ২৭। বস্তুগত ভাববাদ মতে জগতের অস্তিত্ব কীসের উপরে নির্ভর করে?

উত্তরঃ ঈশ্বরের প্রত্যক্ষের উপর।

প্রশ্ন ২৮। ভাববাদ কি আধ্যাত্মিকতা সমর্থন করে?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ২৯। জর্জ বার্কলের ভাববাদের নাম কী?

উত্তরঃ আত্মগত ভাববাদ। 

প্রশ্ন ৩০। “অস্তিত্ব প্রত্যক্ষের উপরে নির্ভরশীল।” কোন্ দার্শনিক বলেছিলেন?

উত্তরঃ জর্জ বার্কলে।

প্রশ্ন ৩১। ভাববাদ অনুযায়ী সকল বস্তু কি মনের উপরে নির্ভর করে?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৩২। ভাববাদ অনুযায়ী ঈশ্বর, আত্মা ইত্যাদির কি অস্তিত্ব আছে?

উত্তরঃ হ্যাঁ আছে। 

প্রশ্ন ৩৩। ভাববাদ অনুযায়ী আমরা বস্তুকে না বস্তুর গুণকে প্রত্যক্ষ করি?

উত্তরঃ বস্তুর গুণকে।

প্রশ্ন ৩৪। বার্কলে কি বস্তুর মৌলিক এবং গৌণ গুণের পার্থক্য স্বীকার করেন?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ৩৫। আত্মগত ভাববাদ কি বস্তুর অস্তিত্বের ধারাবাহিকতা, স্থিতি এবং ঐক্য ব্যাখ্যা করতে পারে?

উত্তরঃ না, পারে না।

প্রশ্ন ৩৬। “যা কিছু বুদ্ধিগ্রাহ্য তাই সত্য, এবং যা কিছু সত্য, তাই বুদ্ধিগ্রাহ্য”—উক্তিটি কার?

উত্তরঃ হেগেলের।

প্রশ্ন ৩৭। হেগেলের মতে দ্বান্দ্বিক গতির তিনটি মুহূর্ত কী কী?

উত্তরঃ বাদ, প্রতিবাদ এবং সমন্বয়। 

প্রশ্ন ৩৮। হেগেলের মতে পরমতত্ত্ব কী?

উত্তরঃ ‘পরম ধীশক্তি’ বা ‘পরম প্রজ্ঞা’।

প্রশ্ন ৩৯। ‘আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ’ কী?

উত্তরঃ আত্মকেন্দ্রিকতাবাদে শুধু আমার মন এবং তার ধারণাসমূহকেই স্বীকার করা হয়।

প্রশ্ন ৪০। বার্কলে কি ‘আত্মকেন্দ্রিকতাবাদী’ দার্শনিক?

উত্তর। না।

প্রশ্ন ৪১। বার্কলের ভাববাদকে আত্মগত এবং মনস্তাত্ত্বিক বলা হয় কেন?

উত্তরঃ কারণ বার্কলের মতে ব্যক্তিচেতনাই বহির্জগতের অস্তিত্বের ভিত্তি। 

প্রশ্ন ৪২। “বার্কলে তার ভাববাদকে সসীম মন থেকে অসীম মনে উন্নীত করছেন।” উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৪৩। “সকল বস্তুর ধারণা স্থায়ীভাবে ঈশ্বরের মনে থাকে।” উক্তিটি কার?

উত্তরঃ জর্জ বার্কলে।

প্রশ্ন ৪৪। কার মতে, ‘চিন্তা এবং সত্তা অভিন্ন’?

উত্তরঃ হেগেলের মতে।

প্রশ্ন ৪৫। কোন্ ভাববাদকে ‘পরম ভাববাদ’ও বলা হয়?

উত্তরঃ হেগেলের বস্তুগত ভাববাদ। 

প্রশ্ন ৪৬। ‘পূর্ব প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলাবাদ’ তত্ত্বটির প্রবর্তক কে?

উত্তরঃ লাইবনিজ।

প্রশ্ন ৪৭। বার্কলে কোন্ প্রকারের ভাববাদের প্রবর্তক?

উত্তরঃ আত্মগত ভাববাদ। 

প্রশ্ন ৪৮। হেগেল কোন্ প্রকারের ভাববাদের প্রবর্তক?

উত্তরঃ বস্তুগত ভাববাদ।

প্রশ্ন ৪৯। কান্ট কোন্ প্রকারের ভাববাদের প্রবর্তক? 

উত্তরঃ অতীন্দ্রিয় ভাববাদ বা অবভাসিক ভাববাদ।

প্রশ্ন ৫০। কার মতবাদকে ‘বহুত্ববাদী ভাববাদ’ বলা হয়? 

উত্তরঃ লাইনিজের মতবাদকে।

শুদ্ধ উত্তর দাওঃ

১। বাস্তববাদ অনুযায়ী জ্ঞাত বস্তুর স্বাধীন অস্তিত্ব আছে/নেই।

উত্তরঃ আছে।

২। বাস্তববাদের মতে, বস্তুর অস্তিত্ব মানুষের জ্ঞান-নির্ভর/ জ্ঞান-নির্ভর নয়। 

উত্তরঃ জ্ঞান-নির্ভর নয়।

৩। বাস্তববাদের মতে, মনের বাইরে বস্তুজগতের মন-নির্ভর/ জ্ঞান-নির্ভর অস্তিত্ব আছে।

উত্তরঃ জ্ঞান-নির্ভর অস্তিত্ব আছে।

৪। সরল বাস্তববাদ ভ্রান্ত প্রত্যক্ষ, স্বপ্ন ইত্যাদি ব্যাখ্যা করতে পারে/পারে না।

উত্তরঃ পারে না।

৫। বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের প্রবর্তক লক্/হিউম/বার্কলে।

উত্তরঃ লক্।

৬। মৌলিক গুণ বা মুখ্য গুণ এবং গৌণ গুণের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করেছিলেন লক/বার্কলে/হিউম।

উত্তরঃ লক্।

৭। সরল বাস্তববাদ মর্তে, বস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ-নির্ভর/ প্রত্যক্ষ-নির্ভর নয়।

উত্তরঃ প্রত্যক্ষ-নির্ভর।

৮। ভাববাদ অনুযায়ী জাত বস্তুর স্বাধীন অস্তিত্ব আছে/নেই।

উত্তরঃ নেই।

৯। ভাববাদের মতে বস্তুর অস্তিত্ব তাকে জানা বা না-জানার উপর নির্ভর করে/করে না।

উত্তরঃ নির্ভর করে।

১০। ভাববাদ অনুযায়ী মনের বাইরে বস্তু জগতের অস্তিত্ব মন-নির্ভর/মন-নির্ভর নয়।

উত্তরঃ মন-নির্ভর।

১১। ভাববাদের মতে জ্ঞানের ক্ষেত্রে বস্তুর/মনের গুরুত্ব বেশি।

উত্তরঃ মনের গুরুত্ব।

১২। “বস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর” কথাটি লক্/বার্কলে /হিউমের।

উত্তরঃ বার্কলের।

১৩। আত্মগত ভাববাদের প্রবর্তক লক্/বার্কলে/হিউম।

উত্তরঃ বার্কলে।

১৪। বস্তুগত ভাববাদের প্রবর্তক কান্ট/হেগেল।

উত্তরঃ হেগেল।

১৫। বার্কলে মৌলিক বা মুখ্য গুণ এবং গৌণ গুণের পার্থক্য স্বীকার করেন/করেন না।

উত্তরঃ করেন না।

১৬। কান্টের মতে অতীন্দ্রিয় জগতকে জানা যায়/যায় না।

উত্তরঃ যায় না।

১৭। হেগেল বুদ্ধি ও সত্তার অভিন্নতা স্বীকার করেন/করেন না।

উত্তরঃ স্বীকার করেন।

১৮। বার্কলে আত্মকেন্দ্রিক দার্শনিক ছিলেন/ছিলেন না।

উত্তরঃ ছিলেন না।

১৯। হেগেলের মতে চিৎ সত্তার প্রকাশ হয় মানুষের মনে/বিশ্ব প্রকৃতিতে। 

উত্তরঃ মানুষের মনে।

২০। বার্কলে লকের স্বীকৃত জড়বস্তুর অস্তিত্ব স্বীকার/অস্বীকার করেছেন। 

উত্তরঃ অস্বীকার করেছেন।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বাস্তববাদ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে মতবাদ জ্ঞেয় বস্তুর স্বাধীন, মন-নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে বলে স্বীকার করে, তাকে বাস্তববাদ বলে।

বাস্তববাদ মতে, বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল নয়। জ্ঞাতার মনের বাইরে বস্তুর নিজস্ব সত্তা আছে। বাস্তববাদ জ্ঞান- নিরপেক্ষ বা মন-নিরপেক্ষ বস্তুর স্বতন্ত্র বাহ্য সত্তা স্বীকার করে।

প্রশ্ন ২। সরল বাস্তববাদকে কেন ‘প্রত্যক্ষ বাস্তববাদ’ বলা হয়? 

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদ মতে, আমাদের ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বস্তুর প্রত্যক্ষ সংযোগ হলে জ্ঞান সৃষ্টি হয়। আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি বাহ্য বস্তু সম্পর্কে যে তথ্য দেয়, বাহ্য বস্তু হুবহু তাই। তাই সরল বাস্তববাদকে ‘প্রত্যক্ষ বাস্তববাদ’ বলে।

প্রশ্ন ৩। বাস্তববাদ কয় প্রকার ও কী কী? 

উত্তরঃ বাস্তববাদ নিম্নোক্ত চার প্রকারের হয়ঃ

(ক) সরল বাস্তববাদ।

(খ) বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বা প্রতীকবাদ।

(গ) নব্য বাস্তববাদ।

(ঘ) নব্য-সবিচার বাস্তববাদ।

প্রশ্ন ৪। সরল বাস্তববাদ কাকে বলে?

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদ মতে, আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যে বাহ্য জগতকে দেখতে পাই, তার মন-নিরপেক্ষ, স্বাধীন, স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে। এই বস্তুজগৎ আমাদের অর্থাৎ জ্ঞাতার মনের উপরে নির্ভরশীল নয়। বাহ্যজগতকে আমরা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সরাসরি প্রত্যক্ষ করি এবং বাহ্য বস্তুগুলো যেমন, তাদের সেভাবেই প্রত্যক্ষ করি। এই মতবাদ অনুসারে, আমরা বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব যেমন প্রত্যক্ষ করি, তেমনি তার গুণগুলিও অর্থাৎ রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, আকার, ওজন ইত্যাদিও প্রত্যক্ষ করি। আমাদের জ্ঞান বা চেতনা আলোকরশ্মির মতো বাহ্য বস্তুর সঙ্গে তার গুণগুলিকেও উদ্ভাসিত করে।

প্রশ্ন ৫। লকে্র বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদকে প্রতীকবাদ বা প্রতিনিধিমূলক বাস্তববাদ বলা হয় কেন?

উত্তরঃ লকে্র মতে, মন বাইরের কোনো কিছুকে প্রত্যক্ষ করতে পারে না, কোন নিজের ধারণাগুলিকে প্রত্যক্ষ করতে পারে। এই ধারণাগুলি বস্তুর প্রতীক বা প্রতিবিম্ব বা প্রতিরূপ। আমরা প্রত্যক্ষভাবে আমাদের মনের ধারণাগুলিকে জানতে পারি। বস্তু সম্পর্কে আমাদের পরোক্ষ জ্ঞান হয় মাত্র। এই জ্ঞানের সত্যতা জানা যায় তখনই যখন ধারণার সঙ্গে বস্তুর মিল হয়। এই জন্যই লকে্র এই মতবাদকে ‘প্রতীকবাদ’ বা ‘প্রতিনিধিমূলক বাস্তববাদ বলে।

প্রশ্ন ৬। ভাববাদ বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ যে মতবাদ জ্ঞানের বিষয়বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন-নির্ভর বলে বিশ্বাস করে, তাকে ভাববাদ বলে। ভাববাদ মতে, কোনো বস্তুরই জ্ঞান-নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র কোনো সত্তা নেই। জ্ঞাতার মনের বাইরে জ্ঞানের বিষয়বস্তুর স্বাধীন অস্তিত্ব থাকতে পারে না। মানুষের মন বা চেতনাই একমাত্র জ্ঞান-নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র অস্তিত্বময়। আত্মা বা জ্ঞান, পরমতত্ত্ব ও বস্তুসত্তা মানুষের মনের উপরে নির্ভর করে।

প্রশ্ন ৭। ভাববাদ কয় প্রকার এবং কী কী?

উত্তরঃ ভাববাদ প্রধানত নিম্নলিখিত চার প্রকার।

(ক) প্লেটোর ভাববাদ।

(খ) বার্কলের আত্মগত ভাববাদ।

(গ) কান্টের অতীন্দ্রিয় ভাববাদ।

(ঘ) হেগেলের বস্তুগত ভাববাদ।

প্রশ্ন ৮। প্লেটোর ভাববাদ বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন যে, প্রকৃত জ্ঞান সামান্য বা সাধারণ ধারণার মধ্য দিয়ে লাভ করা সম্ভব। প্লেটো এই কথাটি স্বীকার করেন। প্লেটো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর সত্তা স্বীকার করেন না। তিনি বলেন, একমাত্র সামান্য ধারণার প্রকৃত সত্তা আছে। প্লেটো বিভিন্ন শ্রেণির ধারণা স্বীকার করেন যাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ধারণা হল ‘মঙ্গল’ বা ‘শুভ’-র ধারণা। প্লেটো বলেন, দর্শনের প্রধান কাজ হল ধারণাসমূহের যথার্থ জ্ঞান অর্জন করা।

প্রশ্ন ৯। আত্মগত ভাববাদ বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ আত্মগত ভাববাদ মতে, একমাত্র ধারণাকেই জানা যায় এবং ধারণার সত্তা আছে। প্রত্যক্ষকারীর মনের বাইরে বিশ্বপ্রকৃতির, যাকে সে প্রত্যক্ষ করে, কোনো বাস্তব সত্তা নেই। জর্জ বার্কলে আধুনিককালের সর্বপ্রথম যথার্থ ভাববাদী দার্শনিক বলে পরিচিত। বার্কলে লকের অভিজ্ঞতাবাদকে যুক্তিসম্মত পরিণতিতে পৌঁছে দিয়ে আত্মগত ভাববাদের প্রবর্তন করেন।

প্রশ্ন ১০। বার্কলের ‘প্রত্যক্ষতে বস্তু বিদ্যমান’ বা ‘অস্তিত্ব প্রতক্ষ্য নির্ভর’ কথাগুলোর অর্থ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ বার্কলের মতে, আমরা যা প্রত্যক্ষ করি, তা আমাদের মনের ধারণা, আমরা যা জ্ঞানলাভ করি তা সংবেদন এবং অন্তদর্শনের মাধ্যমে, অর্থাৎ প্রত্যক্ষের মাধ্যমে, প্রত্যক্ষে বস্তুর অস্তিত্ব বিদ্যমান। বার্কলের ঘোষণা ‘অস্তিত্ব প্রত্যক্ষিত হওয়ার ওপরে নির্ভর করে’, কোনো কিছুর অস্তিত্ব তাকে প্রত্যক্ষ করার ওপরে নির্ভর করে’ তাই বার্কলে বলেছেন একটি বস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর (বস্তুটিকে দেখা, তাকে অনুভব করা ইত্যাদির ওপর তার অস্তিত্ব নির্ভরশীল), অর্থাৎ সত্তা হল জ্ঞাততা অথবা দৃশ্যতাই সত্তা।

প্রশ্ন ১১। বার্কলের আত্মগত ভাববাদ বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ জর্জ বার্কলে আত্মগত ভাববাদের প্রবক্তা। বার্কলের মতে, জড়বস্তুর কোনো অস্তিত্ব নেই। বস্তু হল গুণের সমষ্টি। গুণ আমাদের মনের ধারণা ছাড়া কিছুই নয়। শুধু মন ও তার ধারণারই অস্তিত্ব আছে। বস্তুর অস্তিত্ব নির্ভর করে বস্তুর প্রত্যক্ষ হওয়ার উপরে, অর্থাৎ বস্তুকে প্রত্যক্ষ করলেই তার অস্তিত্ব স্বীকার করা সম্ভব, অন্যথায় নয়।

প্রশ্ন ১২। বার্কলেকে আত্মকেন্দ্ৰিকতাবাদী দার্শনিক বলা যায় না কেন? 

উত্তরঃ বার্কলের মতে, জড়বস্তুর ব্যক্তিমন নিরপেক্ষ অস্তিত্ব থাকলেও মন-নিরপেক্ষ অস্তিত্ব নেই। কারণ, তারা ঈশ্বর কর্তৃক দৃশ্য হওয়াতে ঈশ্বরের মনের ধারণা হিসেবে বিরাজ করে। বার্কলে যদি তাঁর মতবাদে ঈশ্বরকে এভাবে না দেখাতেন, তাহলে তাঁর দর্শনকে আত্মকেন্দ্ৰিকতাবাদ বলা যেত।

আত্মকেন্দ্রিকতাবাদে শুধু আমার মন এবং তার ধারণাসমূহকে স্বীকার করা হয়। সেজন্য বার্কলে আত্মকেন্দ্রিকতাবাদী নন। 

প্রশ্ন ১৩। ‘অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর’ কথাটির অর্থ কী?

উত্তরঃ ‘অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর’ কথাটির অর্থ হল বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার প্রত্যক্ষের উপরে নির্ভর করে, অর্থাৎ যে বস্তুকে প্রত্যক্ষ করা যায় না, তার কোনো অস্তিত্ব নেই। 

প্রশ্ন ১৪। দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি কাকে বলে?

উত্তরঃ দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি পরমসত্তার আত্মপ্রকাশের পদ্ধতি। এই পদ্ধতির প্রথম স্তরে বিরোধ, দ্বিতীয় স্তরে দ্বন্দ্ব এবং তৃতীয় বা চূড়ান্ত স্তরে থাকে সমন্বয়। পরমসত্তা নিজের অভ্যন্তরীণ বিরুদ্ধ ভাবসমূহের সমন্বয় সাধন করে জগতের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করেন।

প্রশ্ন ১৫। সরল বাস্তববাদকে কেন লৌকিক বাস্তববাদ বলা হয়? 

উত্তরঃ সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে এই মতবাদের সাদৃশ্য আছে বলে একে লৌকিক বাস্তববাদ বলা হয়।

প্রশ্ন ১৬। কোন্ মতবাদকে সাক্ষাৎ বাস্তববাদ বলে এবং কেন? 

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদকে সাক্ষাৎ বাস্তববাদ বলে, কারণ এই মতানুসারে যেহেতু আমাদের মন সাক্ষাৎভাবে বস্তুর আসল স্বরূপ প্রত্যক্ষ করতে পারে।

১৭। সরল বাস্তববাদকে কেন ‘প্রাচীন বাস্তববাদ’ বলা হয়? 

উত্তরঃ সুপ্রাচীনকাল থেকে এই মতবাদ প্রচলিত আছে বলে সরল বাস্তববাদের অপর একটি নাম ‘প্রাচীন বাস্তববাদ’। 

প্রশ্ন ১৮। বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদকে ‘সবিচার বাস্তববাদ’ বলা হয় কেন?

উত্তরঃ লকের বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদটি বাহ্য বস্তুর গুণের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বলে এই মতবাদকে ‘সবিচার বাস্তববাদ’ বলে। 

প্রশ্ন ১৯। কান্টের অতীন্দ্রিয় বা অভাসিক ভাববাদের মূল বিষয় কী? 

উত্তরঃ কান্টের মতে, বস্তুস্বরূপকে আমরা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানতে পারি না। যা কিছুর সত্তা আছে বলে আমরা প্রত্যক্ষ করি, আসলে তা আমাদের মনেরই সৃষ্টি এবং বস্তুস্বরূপের অবভাসিক প্রকাশ। 

প্রশ্ন ২০। হেগলের ‘মূর্তসত্তা’ কী?

উত্তরঃ হেগলের ‘মূর্তসত্তা’ হল পরব্রহ্ম। সেই মূর্তসত্তা নিজেকে সসীম মন এবং সসীম জড়বস্তু হিসেবে প্রকাশ করেন এবং এদের বিরোধের অবসান ঘটান। বিশ্বজগৎ পরব্রহ্মের বাহ্যরূপ আর মন হল অসীম ব্রহ্মের সসীম প্রতিচ্ছায়া।

সংজ্ঞা দাওঃ

১। বাস্তববাদঃ যে মতবাদ জ্ঞেয় বস্তুর মন-নিরপেক্ষ, স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র বাহ্য সত্তা আছে বলে বিশ্বাস করে, সেই মতবাদকে বাস্তববাদ বলে।

২। সরল বাস্তববাদঃ যে মতবাদ অনুসারে বাহ্যজগতের মন- নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে এবং সকল গুণসহ বাহ্য জগৎ যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই তার সম্পর্কে আমরা প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করি, তাকে সরল বাস্তববাদ বলে।

৩। বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদঃ যে মতবাদ অনুযায়ী বস্তুর স্বতন্ত্র এবং মন-নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে এবং আমরা বস্তুর প্রতিরূপ বা প্রতীকের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে, ধারণার মাধ্যমে বস্তুটি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি, তাকে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বলে। 

৪। আত্মগত ভাববাদঃ যে মতবাদ বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব ব্যক্তির মন-নির্ভর বা প্রত্যক্ষ নির্ভর বলে স্বীকার করে, তাকে আত্মগত ভাববাদ বলে। 

 যে মতবাদ জগতের সকল সত্তারই মূল ভিত্তি, পরম মন বা প৫। বস্তুগত ভাববাদঃরম ধারণা বলে বিশ্বাস করে, তাকে বস্তুগত ভাববাদ বলে।

৬। ভাববাদঃ যে মতবাদ জ্ঞেয় বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন-নির্ভর বলে বিশ্বাস করে, তাকে ভাববাদ বলে। এই দার্শনিক মতবাদ বলে যে, জ্ঞাতার মনের বাইরে জ্ঞানের বিষয়বস্তুর স্বাধীন অস্তিত্ব থাকতে পারে না।

৭। পূর্বস্থাপিত শৃঙ্খলাবাদঃ বহুত্ববাদী ভাববাদী দার্শনিক লাইবনিজের মতে, ঈশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ চিৎ পরমাণু বা মোনাড়। ঈশ্বর চিৎ পরমাণুগুলির মধ্যে বিশ্ব সৃষ্টির আগে থেকেই সংহতি স্থাপন করে রেখেছেন। লাইবনিজের এই মতবাদকে ‘পূর্বস্থাপিত শৃঙ্খলাবাদ’ বলা হয়।

রচনাভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ

১। বাস্তববাদের সাধারণ বৈশিষ্টগুলি উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ বাস্তববাদের সাধারণ বৈশিষ্টগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) বাস্তববাদ মানুষের মনের বাইরে বস্তুর একটি স্বতন্ত্র, স্বাধীন জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করে। 

(খ) প্রত্যেক জ্ঞানের কোনো-না-কোনো বিষয়বস্তু আছে। বাস্তববাদ মতে জ্ঞানের এই বিষয়বস্তুর জ্ঞান-নিরপেক্ষ বা মন-নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র বাহ্য সত্তা আছে। জ্ঞানের বিষয়বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন-নির্ভরশীল নয়।

(গ) বাস্তবাদে জ্ঞাতার মনকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না।জ্ঞাতার থেকেও জ্ঞেয় বস্তুকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

(ঘ) বাস্তববাদ মতে, জগৎ দুই রকমের— একটি হল মনোজগৎ এবং অপরটি বাহ্য বস্তুর জগৎ।

(ঙ) বাস্তববাদীরা বলেন জ্ঞানের সঙ্গে জ্ঞানের বিষয়বস্তুর কোনো আন্তর সম্পর্ক নেই। বাস্তববাদ জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় বস্তুর মধ্যে বাহ্য সম্পর্কে বিশ্বাস করে। 

(চ) বাস্তববাদ একাধিক বস্তুর মন-নিরপেক্ষ স্বাধীন অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। এই মতবাদ মতে, বিভিন্ন জ্ঞানের বিষয়বস্তু ভিন্ন হতে পারে এবং সকল বস্তুরই জ্ঞানাতীত সত্তা আছে।

প্রশ্ন ২। সরল বাস্তববাদের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) সরল বাস্তববাদ মতে, আমাদের মনের বাইরে একটি বহির্জগৎ আছে।

(খ) আমরা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বহির্জগৎ সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করি।

(গ) আমরা বাহ্যজগৎকে যেভাবে প্রত্যক্ষ করি, বহির্জগৎ ঠিক সেই রকম। আমরা যা প্রত্যক্ষ করি, যেভাবে প্রত্যক্ষ করি, সেটাই যথার্থ বা সত্যজ্ঞান।

(ঘ) আমরা বাহ্য বস্তুর সঙ্গে তাদের গুণগুলিকেও প্রত্যক্ষ করি। 

(ঙ) বাহ্যজগৎ এবং তার বস্তুসমূহের মন-নিরপেক্ষ একটি স্বাধীন অস্তিত্ব আছে। কারও জানা না-জানার উপর সেই অস্তিত্ব নির্ভর করে না। 

প্রশ্ন ৩। সরল বাস্তববাদের সমালোচনামূলক ব্যাখ্যা করো। 

অথবা,

সরল বাস্তববাদের দোষ বা ত্রুটি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদের দোষ বা ত্রুটিসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) সরল বাস্তববাদ ভুল বা ভ্রান্ত প্রত্যক্ষ বা ভ্রান্ত জ্ঞানের কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারে না; যেমন—স্বপ্ন, অধ্যাস, অমূল প্রত্যক্ষণ ইত্যাদি।

(খ) সরল বাস্তববাদ ভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে জ্ঞানের ভিন্নতা স্বীকার করে না, অর্থাৎ জ্ঞানের আত্মনিষ্ঠতাকে অস্বীকার করে। কিন্তু জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে আত্মনিষ্ঠতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা উভয়েরই ভূমিকা আছে।

(গ) সরল বাস্তববাদে প্রত্যক্ষকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষ-নির্ভর সরল বাস্তবাদে জ্ঞানের সার্বিকতা লুপ্ত হয়ে যায়।

(ঘ) সরল বাস্তববাদ অনুযায়ী বস্তুর যে সমস্ত গুণ আমরা প্রত্যক্ষ করি, তা বস্তুতেই বর্তমান। কিন্তু বস্তুর রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ইত্যাদি গুণ আমাদের মন-নির্ভর, এদের বস্তুগত অস্তিত্ব নেই।

প্রশ্ন ৪। বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বা বিজ্ঞানসম্মত বাস্তববাদের প্রবর্তক ব্রিটিশ দার্শনিক জন লক্‌। সরল বাস্তববাদের দোষ-ত্রুটি দূর করার উদ্দেশ্যে লক্ বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের প্রবর্তন করেন।

লকের বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বস্তুর মন-নিরপেক্ষ স্বাধীন অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, আমরা বস্তুকে প্রত্যক্ষভাবে জানতে পারি না। আমরা বস্তুর প্রতিরূপ, প্রতিবিম্ব, প্রতিকল্প বা প্রতীকের মাধ্যমে অর্থাৎ পরোক্ষভাবে ধারণার মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করি। লক্ বলেন, মানব মনের চেতনা আলোকরশ্মির মতো নয়, ক্যামেরার ফিলমের মতো। ক্যামেরার ফিলমে যেমন বাইরের বস্তুর প্রতিচ্ছবি পড়ে, তেমনি মনের মধ্যেও বাইরের বস্তুর ধারণা তৈরি হয়। আমরা সেই ধারণার মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জন করি।

প্রশ্ন ৫। বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ মতে, জ্ঞেয় বস্তুর জ্ঞাতার‌মন-নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে।

(খ) আমরা কোনো বস্তুকে সরাসরি জানতে পারি না, জানতে পারি তার গুণাবলির মাধ্যমে। মুখ্য গুণগুলি জ্ঞাতার মন-নিরপেক্ষ। বিপরীত পক্ষে, গৌণ গুণগুলি জ্ঞাতার মন-নির্ভর।

(গ) আমরা বস্তুকে প্রত্যক্ষ করি না। বস্তুর প্রতিরূপ বা প্রতিকল্পকে দেখতে পাই মাত্র।

(ঘ) বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ মতে, জ্ঞান অর্জন একটি পরোক্ষ প্রক্রিয়া। কারণ, জ্ঞানের বিষয়বস্তুকে জ্ঞাতা সরাসরি জানতে পারে না। জ্ঞাতা তার প্রতিরূপ বা প্রতিকল্পকে জানতে পারে।

প্রশ্ন ৬। বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের সমালোচনামূলক ব্যাখ্যা করো।

অথবা,

বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের ভুল বা ত্রুটি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের ভুল বা ত্রুটিসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) লক্ বলেছেন, ধারণার সঙ্গে বস্তুর মিল থাকলে জ্ঞান সত্য হয়। কিন্তু বস্তু যদি তত্ত্বগত এবং অজ্ঞেয় হয় তাহলে ধারণার সঙ্গে বস্তুর মিল আছে কি না, তা জানা সম্ভব নয়।

(খ) লকের মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের পার্থক্যের বিষয়টিও সন্তোষজনক নয়। বার্কলে মন্তব্য করেছেন যে, গৌণ গুণ যদি মন-নির্ভর হয়, তাহলে মুখ্য গুণও তাই। কারণ, প্রত্যক্ষই এই উভয় প্রকার গুণের উৎস।

(গ) লকের বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বিশ্বপৃথিবীকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে—ধারণার আত্মনিষ্ঠ জগৎ এবং বাহ্য পৃথিবীর বস্তুনিষ্ঠ জগৎ। কিন্তু তিনি এই দুটি জগতের মধ্যে সেতুবন্ধনের যে চেষ্টা করেছেন বস্তুর প্রতিরূপের কথা বলে, তা একটি মিথ্যা প্রচেষ্টামাত্র।

(ঘ) লকের মতবাদ অর্ধেক বাস্তববাদ, অর্ধেক ভাববাদ। বস্তুর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব স্বীকার করাতে বাস্তববাদ এবং ধারণাকে প্রাধান্য দেওয়াতে ভাববাদ। 

প্রশ্ন ৭। ভাববাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভাববাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) ভাববাদের মতে, বস্তু অপেক্ষা মনের প্রাধান্য বেশি। বিশ্বজগৎ নিয়ন্ত্রিত হয় মনের দ্বারা, বস্তুর দ্বারা নয়।

(খ) ভাববাদ মানুষের অস্তিত্বকে প্রাধান্য দেয়। মানুষ বিশ্বজগতের একটি অংশ হলেও সে আধ্যাত্মিক চেতনার আধার। মানুষের মনকে জড়বস্তুতে রূপান্তর করা যায় না।

(গ) ভাববাদীরা বলেন, ঈশ্বর জগৎ থেকে পৃথক নন, তিনি জগতের মধ্যে বিরাজ করেন। 

(ঘ) ভাববাদীরা বলেন, জগৎ উদ্দেশ্য-ধর্মী এবং তার প্রকৃত স্বরূপ আধ্যাত্মিক।

(ঙ) সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে, ভাববাদের বিভিন্ন অবস্থার উপরে নির্ভর করে বিভিন্ন ভাববাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। ভাববাদ সংস্কৃতি ও পরম্পরার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

প্রশ্ন ৮। আত্মগত ভাববাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখো। 

উত্তরঃ আত্মগত ভাববাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) এই মতবাদ অনুযায়ী, মনের সত্তা আছে, বাহ্য বস্তুর প্রকৃত সত্তা নেই।

(খ) বার্কলের মতে, একমাত্র ধারণাই প্রত্যক্ষের বিষয়। 

(গ) আত্মগত ভাববাদে মন ও ধারণার অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে।

(ঘ) বার্কলে বলেছেন, ‘অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ-নির্ভর’, যা প্রত্যক্ষের বিষয় নয়, তার অস্তিত্ব নেই।

(ঙ) জাগতিক বস্তুসমূহ আমাদের বা ঈশ্বরের মনের ধারণা।

(চ) মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। 

প্রশ্ন ৯। বার্কলের আত্মগত ভাববাদ কি একটি সন্তোষজনক তত্ত্ব? যদি না হয়, তাহলে কারণ দর্শাও।

অথবা,

আত্মগত ভাববাদের ত্রুটি বা সমালোচনা উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ নিম্নলিখিত কারণে বার্কলের আত্মগত ভাববাদ একটি সন্তোষজনক তত্ত্ব নয়ঃ

(ক) প্রথমে বস্তু অস্তিত্বশীল, তারপর তাকে জানা বা প্রত্যক্ষ করা হয়। অতএব, বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার প্রত্যক্ষের উপরে নির্ভর করে না।

(খ) বার্কলের মতে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তু এবং তার সংবেদন এক এবং অভিন্ন। কিন্তু তা ঠিক নয়, সংবেদন এবং তার বিষয় অবিচ্ছেদ্য হতে পারে, কিন্তু অভিন্ন নয়। 

(গ) বার্কলের ভাববাদে ঈশ্বরের ধারণার অবতারণা বার্কলেকে আত্মজ্ঞানবাদ থেকে মুক্ত করেছে। কিন্তু এতে বার্কলের মতবাদের দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে।

প্রশ্ন ১০। হেগেলের বস্তুগত ভাববাদ সম্পর্কে আলোচনা করো। 

উত্তরঃ হেগেলের বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদ অনুসারে পরম ধারণা বা পরম মানস বা চিন্তাই জগতের অন্তর্নিহিত সত্তা। যা কিছু অস্তিত্বশীল বা জ্ঞেয়, পরম ধারণা তাদের প্রধান শক্তি। পরমব্রহ্ম মানুষের মন এবং প্রকৃতিতে প্রকাশিত। মন ও প্রকৃতিকে জানবার চেষ্টা করলেই পরমব্রহ্মকে জানা যায়। মন ও প্রকৃতির মধ্যে কোনো ভেদ নেই।

হেগেল বলেন, পরমসত্তা এক সক্রিয় গতিশীল আধ্যাত্মিক তত্ত্ব। চিৎ (মন) ও অচিং (জগৎ)-এর মধ্যে পরমসত্তা প্রকাশিত। এই প্রকাশ ঘটে এক দ্বান্দ্বিক গতিতে। দ্বান্দ্বিক গতিতে বাদ, প্রতিবাদ এবং সমন্বয় নামে তিনটি মুহূর্ত আছে। দ্বান্দ্বিক গতি চলতে থাকে, যতক্ষণ না পরম সমন্বয়ে এসে পৌঁছানো যাচ্ছে। এই পরম সমন্বয়ই পরমব্রহ্ম, যা শুদ্ধ চিন্তাস্বরূপ। বিশ্বজগৎ পরমব্রহ্মের বাহ্যরূপ, আর মন হল অসীম ব্রহ্মের সসীম প্রতিচ্ছায়া। তাই মন ও জড় বস্তুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। যা বুদ্ধির নিয়ম, তাই বিশ্বপ্রকৃতির নিয়ম। তার কারণ, মন বা জড় বস্তুর মূল মর্ম হল বুদ্ধি। তাই হেগেলের বিখ্যাত — ‘সিদ্ধান্ত যা কিছু বুদ্ধিগ্রাহ্য তাই সত্য এবং যা সত্য তাই বুদ্ধিগ্রাহ্য।’

প্রশ্ন ১১। বস্তুনিষ্ঠ বা বস্তুগত ভাববাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ বস্তুনিষ্ঠ বা বস্তুগত ভাববাদের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ

(ক) হেগেলের মতে, পরম সত্তা এক সক্রিয় আধ্যাত্মিক সত্তা। তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন মানুষের মন এবং প্রকৃতির মধ্য দিয়ে। 

(খ) হেগেলের মতে পরম সত্তার প্রকাশ ঘটে দ্বান্দ্বিক নিয়মে। দ্বান্দ্বিক নিয়মে বাদ, প্রতিবাদ এবং সমন্বয় বলে তিনটি মুহূর্ত আছে। বাদ- প্রতিবাদের দ্বন্দ্ব সমন্বয়ে বিলোপ হয়।

(গ) আত্মা এবং আত্মাহীন জড় বস্তু উভয়েই পরমসত্তার প্রকাশ বলে তারা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও অভিন্ন। 

(ঘ) হেগেলের মতে, যা বুদ্ধির নিয়ম, তাই বিশ্বপ্রকৃতির নিয়ম। তাই যা বুদ্ধিগ্ৰাহ্য, তাই সত্য এবং যা সত্য, তাই বুদ্ধিগ্রাহ্য।

প্রশ্ন ১২। কান্টের অতীন্দ্রিয় ভাববাদ বা অভাসিক ভাববাদ বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ কান্ট বস্তুর সত্তা এবং তার অবভাসিক রূপ—এই দ্বৈতবাদ প্রচার করেছেন। কান্টের মতে, বস্তুস্বরূপকে আমরা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানতে পারি না। যা কিছুর সত্তা আছে বলে প্রত্যক্ষ করি, আসলে তা আমাদের মনেরই সৃষ্টি এবং বস্তুস্বরূপের অবভাসিক প্রকাশ।

আমাদের ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বস্তুস্বরূপ আমাদের মনে সংবেদনের সৃষ্টি করে, যে সংবেদনগুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন এবং স্বতন্ত্র। আমাদের মন সক্রিয়ভাবে এই সমস্ত পরস্পর বিচ্ছিন্ন সংবেদনগুলিকে যুক্ত করে এবং অর্থপূর্ণ জ্ঞানের সৃষ্টি করে। এই সংযুক্তিকরণ সম্ভব হয় আত্মার সংশ্লেষণী কার্যের মাধ্যমে। ইন্দ্রিয়ানুভূতির মাধ্যমে যে সংবেদন আমরা পাই, মন তাদের ইন্দ্রিয়ানুভূতির আকার’, ‘দেশ’ এবং ‘কালের’ দ্বারা বিন্যস্ত করে। এগুলি জ্ঞান নয়, জ্ঞানের উপাদান। তারপর মন তার উপরে ‘বোধজাত আকার’, অর্থাৎ দ্রব্য, কার্যকারণরত্ব ইত্যাদি আরোপ করে সুসংবদ্ধ করে এবং জ্ঞানে পরিণত করে। কান্ট বারোটি বোধজাত আকারের উল্লেখ করেছেন। এই সমস্ত ‘বোধজাত আকার’ প্রত্যক্ষ-পূর্ব বা অভিজ্ঞতা-পূর্ব। কান্ট বলেন যে, বস্তুস্বরূপ আছে, কিন্তু আমরা তার অবভাসিক রূপকেই জানতে পারি মাত্র। এইজন্য কান্টের ভাববাদকে ‘অবভাসিক ভাববাদ’ বলে। 

প্রশ্ন ১৩। বাস্তববাদ এবং ভাববাদের মধ্যে পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বাস্তববাদ এবং ভাববাদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ 

(ক) বাস্তববাদ মতে, জ্ঞানের বিষয়বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন-নিরপেক্ষ। অপরপক্ষে, ভাববাদ মতে জ্ঞানের বিষয়বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন-নির্ভর।

(খ) বাস্তববাদে জ্ঞাতার মনকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। কিন্তু ভাববাদে বস্তু অপেক্ষা মনের প্রাধান্য বেশি। 

(গ) বাস্তববাদ জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় বস্তুর মধ্যে বাহ্য সম্পর্কে বিশ্বাস করে। অন্যদিকে, ভাববাদ মতে, জ্ঞাতা এবং জ্ঞানের বিষয়বস্তুর মধ্যে যে সম্পর্ক, তা আন্তরসম্পর্ক, বাহ্য সম্পর্ক নয়।

(ঘ) বাস্তববাদের বিভিন্ন প্রকারগুলি হল— সরল বাস্তববাদ, বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ, নব্য বাস্তববাদ, সবিচার বাস্তববাদ। ভাববাদের বিভিন্ন প্রকারসমূহ হল–প্লেটোর ভাববাদ, বার্কলের আত্মগত ভাববাদ, হেগেলের বস্তুগত ভাববাদ ও কান্টের অতীন্দ্রিয় ভাববাদ।

প্রশ্ন ১৪। বার্কলের আত্মগত বা আত্মনিষ্ঠ ভাববাদ সম্পর্কে আলোচনা করো।

বা,

সংজ্ঞা দাও: “বার্কলের আত্মগত ভাববাদ”।

উত্তরঃ জর্জ বার্কলে আত্মনিষ্ঠ বা আত্মগত ভাববাদের প্রবক্তা। এই মতবাদ অনুসারে মনের স্বাধীন, স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে। বাহ্যজগতের প্রকৃত সত্তা নেই।

লকের বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের সূত্র ধরেই বার্কলে তার আত্মনিষ্ঠ ভাববাদের প্রতিষ্ঠা করেছেন। বার্কলের মতে জড়বস্তুর কোনো অস্তিত্ব নেই। বস্তু হল গুণের সমষ্টি এবং গুর আমাদের মনের ধারণা ছাড়া কিছু নয়। শুধু মন ও তার ধারণারই অস্তিত্ব আছে। বছর অস্তিত্ব নির্ভর করে বস্তুর হওয়ার উপরে, (esse est percipi); অর্থাৎ বস্তুকে প্রত্যক্ষ করলেই তার অস্তিত্ব স্বীকার করা সম্ভব অন্যথায় নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top