Class 11 History Chapter 11 আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 History Chapter 11 আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা and select needs one.
Class 11 History Chapter 11 আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা
Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 History Chapter 11 আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.
আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা
পাঠ: ১১
ঘ- বিভাগ– আধুনিকতার পথে
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
1. এশিয়ার বৃহত্তম দেশ কোনটি?
উত্তরঃ চীন।
2. চীন প্রজাতন্ত্র কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা অক্টোবর।
3. আধুনিক চীনের নির্মাতা বা জনক কাকে বলা হয়?
উত্তরঃ ডঃ সান ইয়াং-সেন।
4. ডঃ সান ইয়াৎ-সেন কত খ্রিস্টাব্দে চীনের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন?
উত্তরঃ ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে।
5. ডঃ সান ইয়াৎ-সেন কখন পরলোক গমন করেন?
উত্তরঃ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে।
6. মাও জে দং কত খ্রিস্টাব্দে চীনের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন?
উত্তরঃ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে।
7. চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রবক্তা কে?
উত্তরঃ মাও জে দং।
8. চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব কখন আরম্ভ হয়?
উত্তরঃ ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে।
9. মাও জে দং কত খ্রিস্টাব্দে চীনে প্রথম কমিউনিস্ট সরকার গঠন করেন?
উত্তরঃ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে।
10. চীনে কখন প্রথম কমিউনিস্ট সংবিধান চালু হয়?
উত্তরঃ ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে।
11. কুওমিনতাং পার্টি কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তরঃ ডঃ সান ইয়াৎ-সেন।
12. চীনের কমিউনিস্ট পার্টি কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে।
13. আফিং-এর যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে।
14. চীনের লং-মার্চ কখন আরম্ভ হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে।
15. চীনে বক্সার যুদ্ধ কখন হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৮৯৯-১৯০১ খ্রিস্টাব্দে।
16. চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লব কখন হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে।
17. চীনে ‘মুক্তদ্বার নীতি কে গ্রহণ করেছিল?
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
18. চীনের প্রধান নৃ-গোষ্ঠী কোনটি?
উত্তরঃ ‘হান’ চীনের প্রধান নৃগোষ্ঠী।
19. চীনে কখন গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে?
উত্তরঃ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে।
20. প্রাচীন চীনের সর্বশ্রেষ্ঠ ইতিহাসকার হিসাবে কাকে গণ্য করা হয়?
উত্তরঃ সিমা কোয়ান।
21. নেইটো কোনান কে?
উত্তরঃ একজন পণ্ডিত। উনি চীনদেশের ইতিহাস সম্বন্ধে গভীর চর্চা করেছেন।
22. চীনে কখন প্রচলিত প্রাচীন পরীক্ষাপদ্ধতি বাতিল করা হয়?
উত্তরঃ রুশো-জাপানী যুদ্ধের পর ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে।
23. ৪-র্থ মে আন্দোলন কোথায় সংগঠিত হয়?
উত্তরঃ চীনে।
24. ড. সান ইয়াত সেন-এর পর কে Kuomintang Party-র নেতা হন।
উত্তরঃ চিয়াং কাই সেক।
25. চীনে কখন প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট নেতা মাও জে দং-এর নেতৃত্বে।
26. প্রথম আফিমের যুদ্ধের সময় চীনে কোন বংশের শাসন ছিল ?
উত্তরঃ কিং বংশ।
27. ‘Red Guards’ বা ‘লাল গ্রহরী’ কি?
উত্তরঃ চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় পুরানো কৃষ্টি, সংস্কৃতি, প্রথা, অভ্যাস ইতালি বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য ছাত্র ও সেনাবাহিনিকে নিয়ে গঠিত দল হে ‘Red Guards’ বা ‘নাল প্রহরী”।
28. Life Weekly সংবাদপত্রের সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তরঃ জাও তাওফেন।
29. জাপানে মেইজি সরকার কখন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
উত্তরঃ ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে।
30. এশিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য শিল্পোন্নত দেশের নাম লেখ।
উত্তরঃ জাপান।
31. জাপান ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ২১ দফা দাবি উত্থাপন করেছিল কার কাছে?
উত্তরঃ চীন।
32. মেইজি সংবিধান কখন প্রণীত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে।
33. চীন-জাপান যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৮৯৪-৯৫ খ্রিস্টাব্দে।
34. ইয়েন কী?
উত্তরঃ জাপানের মুদ্রা।
35. “আদেশ বা নির্দেশ অপেক্ষা স্বাধীনতা অধিক মূল্যবান।” এই উক্তিটি কার?
উত্তরঃ জাপানের সাম্যবাদী নেতা ইউ এ পি ইমেরিয়ের উক্তি।
36. জাপানের সম্রাটের পদবি কি ছিল?
উত্তরঃ মিকাডো।
37. জাপানীরা তাদের দেশকে কোন অপর নামে অবিহিত করে?
উত্তরঃ নিম্নন অর্থাৎ সূর্য উদয়ের দেশ।
38. ‘মাস্তান’ বলতে কি বোঝানো হয়?
উত্তরঃ ‘মাস্তান’ শব্দের অর্থ প্রধান সেনাপতি। ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে এই পদের সৃষ্টি হলে এই পদাধিকারী সম্রাটের হয়ে জাপান শাসন করতেন।
39. তোকুগাওয়া শোগানরা কত দিন শাসন ক্ষমতায় ছিলেন?
উত্তরঃ ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দ।
40. কখন শোগানতন্ত্রের অবসান ঘটে জাপানে?
উত্তরঃ ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে।
41. ‘দাইমিও’ কারা?
উত্তরঃ ‘দাইমিও’ বলতে শক্তিশালী সামরিক সামস্তদের বোঝায়।
42. ‘সামুরাই’ বলতে কাদের বোঝায়?
উত্তরঃ জাপানের যোদ্ধা সম্প্রদায়কে বোঝায়।
43. জাপানের রাজধানীর নাম কি ছিল?
উত্তরঃ সম্রাটের শাসনে কিয়োটো, কিন্তু শোগানতন্ত্রের সময়কালে রাজধানী হয় এড়ো, পরবর্তীতে এর নাম হয় টোকিও। ‘
44. গেঞ্জীর কাহিনী বা Tale of the Genji এর লেখক কে?
উত্তরঃ মুরাশাকি মিকি।
45. ‘টোকিও’ নামের অর্থ কি?
উত্তরঃ প্রাচ্যের রাজধানী।
46. ‘মেইজি’ শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ মেইজি শব্দের অর্থ ‘জ্ঞানদীপ্তি’।
47. জাপানে কখন মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়?
উত্তরঃ ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে (মেইজি প্রতিষ্ঠার পর জাপানের রাজধানী হয় এডো)।
48. হক্কাইডো দ্বীপের অধিবাসীদের কি বলা হত?
উত্তরঃ আইনু।
49. জাপানের আইনসভা বা সংসদের নাম কি ছিল?
উত্তরঃ ডায়েট।
50. ফুকুজাওয়া ইউকিচি কে ছিলেন?
উত্তরঃ ফুকুজাওয়া ইউকিচি ছিলেন একজন মেইজি বুদ্ধিজীবী।
51. দাইমিওদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে শাওন কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?
উত্তরঃ দাইমিওদেরকে রাজধানী এডোতে দীর্ঘকাল থাকতে হত। যাতে তারা কোন ষড়যন্ত্র গড়ে তুলতে না পারে শাওনের বিরুদ্ধে।
52. ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে পারদজনিত বিষক্রিয়া জাপানের কোথায় সংগঠিত হয়?
উত্তরঃ মিনাসতাতে।
53. কখন রুশো-জাপানী যুদ্ধ সংগঠিত হয়?
উত্তরঃ ১৯০৫-০৫ খ্রিস্টাব্দে, যাতে জাপান জয়লাভ করে।
54. হক্কাইডোতে বাস করা স্থানীয় লোকদের কি বলে জানা যায়?
উত্তরঃ হক্কাইডোতে বাস করা স্থানীয় লোকদের ‘আইনু’ বলে জানা যায়।
55. সিনকানসেন’ কি?
উত্তরঃ ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে জাপানে প্রবর্তিত হওয়া দ্রুতগামী বুলেট ট্রেনের নাম সিনকানসেন’। এর ঘণ্টায় গতিবেগ ছিল ৩০০ কিমি।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
1. চিয়াং কাই-শেক কে ছিলেন? তিনি মহিলাদের সম্পর্কে কী বলেছিলেন?
উত্তরঃ চিয়াং কাই-শেক ছিলেন গুয়োমিত্তাং পার্টির নেতা। চিনের উন্নতিতে মহিলাদের অবদান রাখা উচিত।
2. চীনের প্রধান জাতিগোষ্ঠী ও ভাষার নাম উল্লেখ কর।
উত্তরঃ চীনের প্রধান জাতিগোষ্ঠী ছিল হান এবং চীনা ভাষা ছিল প্রধান ভাষা।
3. আফিং-এর যুদ্ধ সম্পর্কে কি জানো?
উত্তরঃ চীনে অবৈধ আফিং-এর ব্যবসার জন্য আফিং-এর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। ব্রিটিশ বণিকগণ চীনে বিপুল পরিমাণ আফিং নিয়ে আসত। এর ফলে চীনের জনগণ আফিং-এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। ফলে তাদের দৈহিক ও মানসিক বিপর্যয় ঘটে।
এইজন্য চীনের জনগণ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। একে আফিং-এর যুদ্ধ’ বলা হয়।
4. কে, কোথায় মুক্তদ্বার নীতি গ্রহণ করেছিল?
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮৯০-এর দশকে চীনে ‘মুক্তদ্দ্বার নীতি’ গ্রহণ করেছিল।
5. সান ইয়াৎ-সেনের তিনটি নীতি কি কি ছিল?
উত্তরঃ সান ইয়াৎ-সেনের তিনটি নীতি হল—
(ক) জাতীয়তাবাদ।
(খ) গণতন্ত্র। এবং
(গ) সমাজবাদ।
6. ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে চীন বিপ্লবের দুইটি কারণ লেখ।
উত্তরঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে চীন বিপ্লবের দুইটি কারণ নিম্নরূপঃ
(ক) মাঞ্চু সরকার অজনপ্রিয় হয়ে যায় এবং এর বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তোষ দেখা দেয়।
(খ) মাঞ্চু সরকারের রেলনীতির ফলে নানাপ্রকার সমস্যা দেখা দেয় যা বিপ্লবের একটি প্রধান কারণ।
7. চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রভাব কি ছিল?
উত্তরঃ চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রভাব নিম্নরূপ ছিলঃ
(ক) সাংস্কৃতিক বিপ্লব চীনে অরাজকতার সৃষ্টি করেছিল, যাহা কমিউনিস্ট পার্টিকে দুর্বল করে তোলে।
(খ) দেশের অর্থনীতি ও শিক্ষার বিস্তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
8. কুওমিনতাং কি ছিল?
উত্তরঃ কুওমিনতাং চীন দেশের জনক সান ইয়াৎ-সেন প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক দল । চীনে এই দল সর্বপ্রথম সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে।
9. চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চারটি আধুনিকীকরণ কি কি ছিল?
উত্তরঃ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চারটি আধুনিকীকরণ নিম্নরূপঃ
(ক) বিজ্ঞানের আধুনিকীকরণ।
(খ) শিল্পের আধুনিকীকরণ।
(গ) কৃষির আধুনিকীকরণ
(ঘ) প্রতিরক্ষার আধুনিকীকরণ।
10. চীনের তিনটি প্রধান নদীর নাম লেখ।
উত্তরঃ চীনের তিনটি প্রধান নদী হল-
(ক) হুয়াংহো।
(খ) ইয়াংসিকিয়াং। ও
(গ) পার্ল নদী।
11. চীন আধুনিকীকরণের জন্য কী নীতি গ্রহণ করেছিল?
উত্তরঃ চীন উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে গাড়ার জন্য বিপ্লবী কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল।
12. চীনের জনগোষ্ঠী কীভাবে গঠিত?
উত্তরঃ চীনের প্রধান নৃগোষ্ঠী হল ‘হান’। কিন্তু হানদের বাইরেও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর লোক আছে, যেমন—উইঘুর, ই, মাঞ্চু, ও তিব্বতী।
13. কে এবং কখন চীন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল?
উত্তরঃ ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের নেতৃত্বে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে চীন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেইজন্য তাকে আধুনিক চীনের নির্মাতা বলা হয়।
14. চীনের গ্রামীণ সমাজের সম্মুখীন হওয়া দুইটি সমস্যার কথা উল্লেখ কর।
উত্তরঃ চীনের গ্রামীণ সমাজের সম্মুখীন হওয়া দুইটি সমস্যা হল-
(ক) প্রাকৃতিক ভারসাম্য। এবং
(খ) আর্থ-সামাজিক অবস্থা।
15. কিং বংশের শাসনকালের দুইজন চীনা সংস্কারকের নাম লেখ।
উত্তরঃ কিং বংশের শাসনকালে দুইজন চীনা সংস্কারক হলেন—
(ক) কেং ইউয়েই। এবং
(ঘ) লিয়াং কিচাও।
16. কখন, কার নেতৃত্বে চীনে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে?
উত্তরঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ড. সান ইয়াত সেন-এর নেতৃত্বে মাঞ্চু রাজবংশের শাসনের পতন হয় এবং চীনে গণরাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়।
17. চীনের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি রাজনৈতিক দলের নাম লেখ।
উত্তরঃ চীনের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি রাজনৈতিক দল হল-
(ক) ওয়োমিনতাং/কুয়োমিনতাং পার্টি (The National People’s Party), যার প্রতিষ্ঠাতা ড. সান ইয়াত সেন। এবং
(খ) চীনা কমিউনিস্ট পার্টি।
18. ‘সান মিন তুই’ বা ‘ত্রিনীতি’ কি?
অথবা,
ড. সান ইয়াত সেনের মুখ্য কার্যসূচি কি ছিল?
উত্তরঃ ড. সান ইয়াত সেনের মুখ্য কার্যসূচি “সান মিন চুই’ বা ‘রিনীতি’ বলে আখ্যায়িত। এই তিনটি নীতি নিম্নরূপ:
(ক) জাতীয়তাবাদ – মানচু ও অন্যান্য বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে উৎখাতের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি।
(খ) গণতন্ত্র – গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা।
(গ) জীবিকার উন্নয়ন – সম্পদ ও জমির সমবণ্টনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সমাজতন্ত্রের স্থাপনা।
19. কখন ও কাদের মধ্যে আফিমের যুদ্ধ সংগঠিত হয়?
উত্তরঃ ১৮৩১-১৮৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রথম আফিমের যুদ্ধ সংঘটিত হয় ইংরেজ এবং চীনা সরকারের মধ্যে।
20. চীনের দুইজন কমিউনিস্ট এবং কুওমিনতাং দলের নেতার নাম লেখ।
উত্তরঃ দুইজন কমিউনিস্ট নেতা হলেন—
(ক) মাও জে দুং। এবং
(খ) চৌ এন লাই ।
কুওমিনতাং দলের নেতা হলেন –
(ক) চিয়াং কাই শেক। এবং
(খ) ড. সান ইয়াত সেন।
21. কুওমিনতাং পার্টি কোন উপাদানগুলিকে মানুষের মৌলিক চাহিদা বলে গণ্য করত?
উত্তরঃ ড. সান ইয়াত সেনের নীতি-আদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল কুওমিনতাং এটি এবং এই দলের দর্শন ও আদর্শ। এই দল—
(ক) খানা।
(খ) বস্তু।
(গ) বাসস্থান। ও
(খ) যোগাযোগ — এই চারটি উপাদানকে মানুষের মৌলিক উপাদান বলে ঘোলা করেছিল।
22. নতুন গণতন্ত্র নীতি কি?
উত্তরঃ চীনে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজের সর্বশ্রেণীর সমন্বয়ে গঠিত সরকারের পরিচালনা ও রাষ্ট্রব্যবস্থার নীতিকেই ‘নতুন গণতন্ত্র নীতি’ বলে অবিহিত করা হয়েছে।
যে ব্যবস্থায় অর্থনীতির জটিল বিষয়গুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়, জমির ব্যক্তিগত মালিকানা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ ক্রমশ লুপ্ত হয়। এই কার্যসূচী ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। এরপর সমাজতান্ত্রিক কার্যসূচি সরকার গ্রহণ করে।
23. ‘The Great Leap Forward Movement’ কখন শুরু হয় ? এর উদ্দেশ্য কি ছিল?
উত্তরঃ ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ‘The Great Leap Forward Movement’ চীনে শুরু হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশে উন্নত শিল্পায়ন তরান্বিত করা।
24. কে, কখন ও কোথায় প্রজাতান্ত্রিক চীন প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তরঃ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে চিয়াং কাই শেক তাইওয়ানে গণপ্রজাতান্ত্রিক চীন প্রতিষ্ঠা করেন।
25. মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠা বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ ১৮৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে জাপানে সোগান শাসনের অবসান ঘটে এবং নুতন বিষয়ক ও উপদেষ্টা দ্বারা শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হতে থাকে। এইসব মানুষ জাপানের সম্রাটের নামে দেশ শাসন করত। এইভাবে সম্রাট দেশে আবার সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। তিনি ‘মেইজি’ উপাধি গ্রহণ করেন। এই ঘটনাকে জাপানের ইতিহাসে ‘মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ বলে অভিহি করা হয়েছে।
26. মেইজি সরকার কর্তৃক জাপানের দুইটি পরিবর্তন উল্লেখ কর।
উত্তরঃ মেইজি সরকার কর্তৃক জাপানের নিম্নোক্ত দুইটি পরিবর্তন সাধিত হয়ঃ
(ক) বিশ বছরের অধিক সকল যুবককে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সামরিক সেবা করতে হত।
(খ) আধুনিক সামরিক বাহিনীকে উন্নতও করা হয়।
27. জাপানের চারটি বৃহৎ দ্বীপের নাম লেখ।
অথবা,
জাপান প্রধানত চারটি দ্বীপের সমষ্টি। এদের নাম কী?
উত্তরঃ জাপানের চারটি বৃহৎ দ্বীপ হল-
(ক) ইনসু।
(খ) কিউসিউ।
(গ) সিকোকু। ও
(ঘ) হাইডো।
28. মেইজি শাসনকালে জাপানের অর্থনীতিকে আধুনিকীকরণ করার জন্য কি কি ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়েছিল?
উত্তরঃ জাপানের অর্থনীতিকে আধুনিকীকরণ করার জন্য মেইজি শাসনকালে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়েছিলঃ
(ক) তহবিল পরিপূর্ণ করিবার জন্য কৃষি কর ধার্য করা হয়েছিল।
(খ) ইউরোপ হতে বনে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়েছিল।
(গ) টোকিও ইয়াকুহামার মধ্যে ১৮৭০-৭২ খ্রিস্টাব্দে রেলপথ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
29. জাপানের উপর ১৯৪৫-৪৭ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন নিয়ন্ত্রণের ফল কি ছিল?
উত্তরঃ ১৯৪৫-৪৭ খ্রিস্টাব্দে জাপানের উপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণের ফল নিম্নরূপঃ
(ক) জাপানকে সামরিক শাসন হতে মুক্ত করা হয়।
(খ) জাপানে ৯টি ধারাযুক্ত একটি সংবিধান বলবৎ করা হয়।
30. জাপানের উত্থানের দুইটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ জাপানের উত্থানের দুইটি কারণ নিম্নরূপঃ
(ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংযোগ ও আদান-প্রদান জাপানের উত্থানের একটি প্রধান কারণ।
(খ) জাপানের শিক্ষার্থী ও যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে দেশপ্রেমের আদর্শ জাগরণ জাপানের উত্থানে যথেষ্ট সহায়তা করে।
31. জাপান কার কাছে, কখন ২১ দফা দাবি উত্থাপন করেছিল?
উত্তরঃ জাপান ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে চীনের কাছে ২১ দফা দাবি উত্থাপন করেছিল।
32. জাইবাতসু বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ জাইবাতসু হল জাপানের বিশাল একচেটিয়া ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যা জাপানের অর্থনীতিতে বিশেষ অধিকার অর্জন করেছিল।
33. জাইবাতসুর দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ জাইবাতসুর দুটি উদাহরণ হল-
(ক) মিতসুবিশি। এবং
(খ) সুমিটমো।
34. বর্তমান কোন দুটি পার্শ্ববর্তী দেশে জাপান তার উপনিবেশ স্থাপন করেছিল?
উত্তরঃ তাইওয়ান (১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে) এবং কোরিয়া (১৯১০ খ্রিস্টাব্দে)।
35. জাপান কোন দুটি পার্শ্ববর্তী শক্তিধর দেশকে পরাজিত করেছিল?
উত্তরঃ চীন (১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দ) এবং রাশিয়া (১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে)।
36. জাপানে কিভাবে ‘শোগানতন্ত্রে’র উদ্ভব হয়?
উত্তরঃ ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে জাপানে একনায়কতন্ত্রের প্রধান জোরিটোমো সম্রাটের কাছ থেকে শোগান অভিধা লাভ করেন এবং সম্রাটের হয়ে শাসন পরিচালনা করেন। এই সময় থেকেই জাপানে শোগানতন্ত্রের উদ্ভব হয়।
37. জাপানের দুটো বৃহৎ শহরের নাম লেখ।
উত্তরঃ জাপানের দুটো বৃহৎ শহরের নাম হল-ওসাকা ও কিয়োটো।
38. “এডোতে লোকেরা এক বাটি নুডুলস্ এর মূল্যের বিনিময়ে একটি বই ভাড়া করতে পারত।” এই উক্তিটির তাৎপর্য কি?
উত্তরঃ এই উক্তি থেকে তৎকালীন জাপানের দুটি দিক ফুটে ওঠে—
(ক) পড়াশুনার জনপ্রিয়তা। এবং
(খ) মুদ্রণশিল্পের প্রচার ও প্রসার ইত্যাদি।
39. কমোডোর ম্যাথিউ পেরী কখন এবং কেন জাপানে এসেছিলেন?
উত্তরঃ ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে কমোডোর পেরী আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দূত হিসাবে জাপানে এসেছিলেন, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে।
40. কমোডোর পেরীর জাপান আগমনের দুটি ফলাফল লেখ।
উত্তরঃ কমোডোর পেরীর জাপান আগমনের দুটি ফলাফল নিম্নরূপঃ
(ক) ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে চুক্তি মাধ্যমে জাপান ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমিত বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এর ফলে জাপানের দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা দূর হয়।
(খ) জাপান সম্রাট পুনরায় একজন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার কেন্দ্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন, যা সাগুনরা নিয়ন্ত্রিত করেছিলেন।
41. জাপানে কখন এবং কোন জায়গাগুলির মধ্যে প্রথম রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়?
উত্তরঃ ১৮৭০-৭২ খ্রিস্টাব্দে, টোকিও এবং ইয়কোহামা বন্দরের মধ্যে।
42. কে এবং কখন জাপানে প্রথম শিল্পকেন্দ্রিক প্রদূষণের প্রতিবাদ করেন?
উত্তরঃ তানাকা সুজো, ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শিল্পকেন্দ্রিক প্রদূষণের প্রতিবাদ করেন।
43. তানাকা সুজো কে ছিলেন?
উত্তরঃ তানাকা সুজো অতি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। তিনি সাংবিধানিক সরকারের দাবিতে, প্রদূষনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাপানে। জাপানের আইনসভা ডায়েটের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। | তিনি।
44. ‘Expel Asia’ মতবাদের প্রবক্তা কে? এর মাধ্যমে কি চাওয়া হয়েছিল?
উত্তরঃ মেইজি বুদ্ধিজীবী ফুকুজাওয়া ইউকিচি হচ্ছেন ‘Expel Asia’ মতবাদের প্রবক্তা। এই মতবাদের মাধ্যমে তার আবেদন ছিল যে জাপান পাশ্চাত্যের দেশগুলির মতো উন্নত ও বিকশিত হয়ে উঠতে হলে তার এশীয় বৈশিষ্ট্যগুলিকে অতিক্রম করে পাশ্চাত্য সভ্যতার পথ অনুসরণ করা প্রয়োজন।
45. দুইজন মেইজি বুদ্ধিজীবীর নাম লেখ।
উত্তরঃ দুইজন মেইজি বুদ্ধিজীবী হলেন—
(ক) মিয়াকে সেতসুরেই। এবং
(খ) ইউকি ইমোরি।
46. নিশিতানি কেইজি কে ছিলেন?
উত্তরঃ নিশিতানি কেইজি ছিলেন একজন জাপানী দার্শনিক। তিনি আধুনিক শব্দটিকে ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনটি ইউরোপীয় চিন্তাধারা—নবজাগরণ, প্রতিবাদী ধর্মসংস্কার আন্দোলন এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের উত্থানের সংমিশ্রণ বলে।
47. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় জাপানের কোন দুইটি শহরের উপর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র আণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিল?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় জাপানের দুইটি শহর—
(ক) হিরোসিমা। এবং
(খ) নাগাসাকির উপর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র আণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিল।
48. জাপান কখন ও কিভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে?
উত্তরঃ জাপান ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পার্ল হারবার নৌঘাঁটি আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে।
49. ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ কেন জাপানের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য বছর?
উত্তরঃ ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে জাপানের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য বছর, কারণ-
(ক) ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে জাপান ওলিম্পিক খেলা আয়োজন করে।
(খ) ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে জাপানে দ্রুতগামী বুলেট ট্রেন যাত্রা শুরু করে। এই দুই উপস্থাপনার দ্বারা জাপান বিশ্বের দরবারে তার অর্থনৈতিক ও কারিগরি প্রযুক্তিগত বা উন্নতির প্রমাণ দেয়।
50. ঊনবিংশ শতকের প্রারম্ভে চীন ও জাপানের রাজনৈতিক অবস্থার তুলনা কর।
উত্তরঃ ঊনবিংশ শতকের প্রথমভাগে পূর্ব এশিয়ায় চীনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। চীনে কুয়াং রাজবংশ নিরাপদে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। অন্যদিকে জাপান একটি ক্ষুদ্র দ্বীপবিশেষ ছিল এবং বহির্জগৎ হতে সম্পূর্ণ পৃথক মনে হত।
51. বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ হ্রাস করার জন্য জাপান কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল?
উত্তরঃ জাপানের জনসংখ্যা ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ছিল ৩৫ লক্ষ। কিন্তু ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে জনসংখ্যা ৫৫ লক্ষে বৃদ্ধি পায়। এই বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ হ্রাস করার জন্য জাপান স্থানীয় লোককে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য স্থানে বসতি স্থাপনের জন্য উৎসাহ যুগিয়েছিল। এর ফলে। জাপানী প্রব্রজন শুরু হয়। এইরূপ প্রথম প্রব্রজনকারী দলটি হক্কাইডো দ্বীপে চলে যায়। পরবর্তীতে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ ও ব্রাজিল যায়।
52. “এশিয়াকে নির্বাসিত কর।” উক্তিটি কে ব্যবহার করেছিলেন? এর দ্বারা কি বোঝানো হয়েছিল?
উত্তরঃ এশিয়াকে নির্বাসিত করতে হবে — উক্তিটি ফুরুজায়া মুকিসি নামে একজন করেছিলেন।
তাঁর একটি মতামতের অর্থ ছিল এই যে জাপান এশিয়া মহদেশের চারিত্রিক গুণসমূহ পরিত্যাগ করে নিজেকে পশ্চিমী দেশের অঙ্গ হিসাবে গণ্য করা উচিত।
53. জাপান কিভাবে আধুনিকতার দিকে অগ্রসর হয়েছিল?
উত্তরঃ জাপানে ১৯৩০ এবং ১৯৪০ দশকে তীব্র জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ঘটেছিল। এই ফলে দেশটি একটি সাম্রাজ্যবাদী দেশে রূপান্তরিত হয়েছিল। এই সময়সীমার মধ্যে জাপান—
(ক) চীন দখল করে একটি আধুনিক রাষ্ট্র ও সাম্রাজ্যবাদী দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছিল।
(খ) ১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে একটি আধুনিক সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র হিসাবে পরিচয় দিয়েছিল।
54. আমেরিকা কেন জাপানে কলোনী স্থাপন করতে চেয়েছিল?
উত্তরঃ আমেরিকা জাপানে কলোনী স্থাপন করার উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) জাপানে ঘাঁটি স্থাপন করে আমেরিকা চীনের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে চীনেও একটি কলোনী বা উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।
(খ) প্রশান্ত মহাসাগরে তিমি মাছ শিকার করতেও তেল ভরার জন্য আমেরিকা জাপানের উপকূলে ভাগে অবতারণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল।
55. আধুনিক দেশ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে জাপান কোন নীতি গ্রহণ করেছিল?
উত্তরঃ জাপানকে আধুনিক রাষ্ট্র গড়ার ক্ষেত্রে ধনতান্ত্রিক নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। তাছাড়া জাপানকে একটি উদ্যোগিক দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাপান সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল।
56. আধুনিক চীনের ইতিহাস রচনার কেন্দ্রস্থ বিষয়গুলি কি কি?
উত্তরঃ চীনের ইতিহাস চর্চায় –
(ক) কিভাবে সার্বভৌমত্ব পুনরায় অর্জন করা যায়।
(খ) কীভাবে বিদেশীদের অপমানজনক আগ্রাসনের সমাপ্তি ঘটে। ও
(গ) কিভাবে সমতা ও উন্নতির পথকে প্রশস্ত করা যায় এ সমস্ত বিষয়বস্তুর উপরই কেন্দ্র করে চীনের আধুনিক ইতিহাস আবর্তিত হয়।
57. চীন ও জাপানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্যগুলি লেখ।
উত্তরঃ চীন ও জাপানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্যগুলি নিম্নরূপঃ
(ক) চীন একটি বিশাল দেশ যেখানে বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া বিভিন্ন ধরনের, অন্যদিকে জাপান একটি দ্বীপমালার দেশ।
(খ) জাপান একটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত, কিন্তু চীন-এর অবস্থান ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে নয়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
1. গণপ্রজাতন্ত্রী চীন কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র চীন ছিল এক প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি। খ্রিস্টপূর্ব ২২১ অব্দ থেকে চীনে রাজতন্ত্র তথা একনায়কতন্ত্রী শাসন চলে আসছিল। ১৯১২ সাল পর্যন্ত অত্যাচারী মাঞ্চু রাজবংশ চীন শাসন করেছিল। ১৯১১ সালে আধুনিক চীনের নির্মাতা ও জনক ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের নেতৃত্বে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের ফলে মাঞ্চু শাসনের অবসান হয় এবং চীনে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। ডঃ সেন ক্যান্টন শহরে গণপ্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। কিন্তু চীনে উত্তর ও দক্ষিণ প্রদেশগুলির মধ্যে ঐক্য স্থাপিত না হওয়ায় ডঃ সেনের পক্ষে শাসনকার্য পরিচালনায় অসুবিধা হয়।। পরে সোভিয়েত রাশিয়ার সহায়তায় চীনে সংহতি স্থাপিত হয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন পূর্ণমাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
2. কুওমিনতাং সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ কুওমিনতাং হল আধুনিক চীনের নির্মাতা ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক দল। ডঃ সেন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানে কুওমিনতাং দল গঠন করেন। চীনে অত্যাচারী মাঞ্চু বংশের পতন ঘটানোই ছিল ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের মূল লক্ষ্য। তিনি ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে চীনে মাঞ্চুবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু এই আন্দোলন ব্যর্থ হলে ডঃ সেন দেশ হতে বহিষ্কৃত হন। তিনি প্রায় ১২ বৎসরকাল বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি জাপানে তার অনুগামী চিয়াং কাই-শেককে নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এই দলই পরে চীনে কুওমিনতাং পার্টি নামে পরিচিত হয়। এই কুওমিনতাং পার্টির নেতৃত্বে চীনে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লব পরিচালিত হয় এবং চীনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
3. ডঃ সান ইয়াৎ-সেন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ আধুনিক চীনের জনক ডঃ সান ইয়াৎ-সেন ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২রা নভেম্বর ক্যান্টন শহরের নিকট একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল হতেই তাঁর মনে দেশপ্রেম জেগে ওঠে। বিপ্লবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করা তাঁর মনে বিপ্লবী চিন্তাধারা বিকশিত হয়। ছাত্র জীবন হতেই রাজনীতির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ঘটে। তিনি চীনের মাঞ্চু বংশের উৎখাতসাধনে বদ্ধপরিকর হন। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘সিন-চু-হুই’ বা ‘চীনের জাগরণ সমিতি’ গঠন করেন। পরে তিনি ‘সান-মিন-চু-আই’ নামে বিপ্লবের তিনটি নীতি ঘোষণা করেন। এই তিনটি নীতি ছিল – (ক) জনজাতীয়তাবাদ, (খ) জনগণতন্ত্র, এবং (গ) জনগণের জীবিকার সংস্থান।
১৯১১ খ্রিস্টাব্দে চীন প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবে ডঃ সেন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল মাঞ্চু শাসনের অবসানক্রমে চীনে প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তাঁর চেষ্টায় চীনে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব জনপ্রিয়তা লাভ করে। ডঃ সান ইয়াৎ-সেন ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে চীনের ক্যান্টন শহরে গণপ্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। সোভিয়েত রাশিয়ার সহযোগিতায় তিনি চীনের সংহতি রক্ষা করতে সমর্থ হন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ডঃ সেন পরলোকগমন করেন।
4. চিয়াং কাই-শেক সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের উত্তরসূরি চিয়াং-কাই-শেক ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীনের সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক পদ গ্রহণ করেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীনে প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি চীনে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। চীনের শাসনকার্যে তিনি ছিলেন সর্বেসর্বা। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে চিয়াং জাতীয় সংবিধান সভার আহ্বান করেন। এই সভাতেই দেশের অন্তবর্তী সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। নূতন সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্র ও সরকার উভয়েরই প্রধান ছিলেন।
চিয়াং কাই-শেক চীনের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কতিপয় সংস্কার সাধন করেন। এর মধ্যে। নিরক্ষরতা দূরীকরণ অভিযান উল্লেখযোগ্য। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে তিনি চীনার ভাষায় অসাধারণ সংশোধন করেন। চীনে বসবাসকারী বিদেশি লোকদের উপর চিয়াং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। দীর্ঘ ১৮ বৎসর অরাজকতার পর চীনে শাসনকার্য সুচারুরূপে সম্পাদন করা কঠিন ছিল। সমগ্র দেশে এক প্রকার শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল না। চিয়াং কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে চীনে সুস্থিতি স্থাপন করতে সফল হন।
5. মাও সে-তুং সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ ।
উত্তরঃ গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রধান মাও সে-তুং (মাও জে-ডং) ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আজীবন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। তিনি চীনে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রবক্তা। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মাও মার্ক্সবাদ গ্রহণ করেন এবং ধীর বিপ্লবের পন্থা পরিত্যাগ করে সশস্ত্র বিপ্লবের নীতি গ্রহণ করেন।
কমিউনিস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে মাও ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে চীনে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ‘গণমুক্তি বাহিনী’ এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টি যৌথভাবে বিরোধী দমনে মাওকে নানাভাবে সাহায্য করে। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে মাও চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেন। বিশাল সংখ্যক ‘লাল বাহিনী’-কে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জন্য নিয়োজিত করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সাংস্কৃতিক বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। সাংস্কৃতিক বিপ্লব চীনে উপকারের চেয়ে অপকারই করে। সারাজীবন ব্যাপী মাও কমিউনিজমের প্রসারে নানাপ্রকার তত্ত্ব প্রবর্তন করেন। তাঁর প্রবর্তিত মাওবাদ হল মার্ক্সবাদের একপ্রকার শোধনবাদ। মাওবাদ ত্রুটিপূর্ণ থাকায় মাওয়ের মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরসূরি মাওবাদ পরিত্যাগ করতে আরম্ভ করেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ই সেপ্টেম্বর মাও পরলোকগমন করেন।
6. চীনে কমিউনিস্ট বিপ্লব কখন ঘটেছিল? এর গুরুত্ব কি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর ফলাফল কি ছিল?
উত্তরঃ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে চীনে কমিউনিস্ট বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হয়। মাও জে দং-এর নেতৃত্বে চীনে কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
গুরুত্বঃ চীনে কমিউনিস্ট বিপ্লবের বিজয় বিশ্বের একটি যুগান্তকারী ঐতিহাসিক ঘটনা। বিশ্বের সর্বাপেক্ষা জনবহুল রাষ্ট্র কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে আসে। ইউরোপীয় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছাড়াও দুইটি শক্তিশালী রাষ্ট্র–সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনে কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। চীনা বিপ্লবের ফলে এশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবঃ গণ প্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি বিরাট পরাজয়। সে চীনের সরকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে, চীনে বৈধ সরকার হল ফরমোসায় চিয়াং কাই-শেকের সরকার।
7. ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের চীন বিপ্লবের ফলাফল ও গুরুত্ব আলোচনা কর।
উত্তরঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে চীন বিপ্লবের ফলে দুটি প্রধান ফলাফল দেখা দেয়। এইগুলি হল মাঞ্চু সাম্রাজ্যের সমাপ্তি এবং গণরাজ্যের প্রতিষ্ঠা। এই বিপ্লবের ফল কেবলমাত্র দুটি বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রকৃতপক্ষে এই বিপ্লব রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রজাতন্ত্রের বিষয়। এই বিপ্লবের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে এটি বিনা রক্তপাতে শেষ হয়েছিল। তাছাড়াও চীনের জনগণ একটি সংবিধান লাভ করেছিল। এই বিপ্লবের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল জনগণ চিয়াং কাই-শেকের প্রতিনিধিকে চীনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে গ্রহণ করেছিল। তা ছাড়াও এই বিচারে বিদেশী শক্তিসমূহ নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেছিল। এই বিপ্লব চীনের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদ বিস্তার করে এবং চীনের জনগণকে শোষণের হাত হতে মুক্ত করে।
8. চীনের মহান সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পর্কে যা জানো লেখ।
উত্তরঃ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হিসাবে মাও চীনের জনগণকে নূতন ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত করেন। তিনি চীনের সকল প্রকার ক্রিয়াকলাপের পথপ্রদর্শক। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেন। বিশাল সংখ্যক ‘লাল বাহিনী’-কে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জন্য নিয়োজিত করা হয়। জনকল্যাণকামী নীতিতে মাও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ার পর জনগণের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য মাও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ধনতন্ত্রে বিশ্বাসী কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চপদে আসীন কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ। মাও এই মর্মে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে লাল বাহিনীকে নির্দেশ দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সাংস্কৃতিক বিপ্লব সাফল্যলাভ করতে পারেনি এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে বিপন্ন করে তোলে। অধিকন্তু রাজনৈতিক কার্যে অধিক সংখ্যক সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্তি দেশের শান্তি ও রাজনৈতিক সুস্থিতি নাই করে।
9. চীনের লং মার্চ বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ চীনে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মাও জেদং এর নেতৃত্বে কমিউনিস্টগণ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর ফলে চিয়াং কাই-শেকের সঙ্গে কমিউনিস্টদের তীব্র মতানৈক্য দেখা দেয়। সেইজন্য চিয়াং কমিউনিস্টদের নিঃশেষ করার জন্য এক অভিযান আরম্ভ করে। কমিউনিষ্টরা কিম্নাংসী থেকে মোনসী পর্যন্ত প্রায় ৬০০০ মাইল পথ যাত্রা করে। একে ‘দীর্ঘযাত্রা’ বা ‘লং মার্চ” বলে জানা যায়। চিয়াং-এর সেনাবাহিনী মাও-এর লাল ফৌজ বাহিনীকে পিছে পিছে। তাড়িয়ে নিয়ে যায়। এই সময়সীমার মধ্যে লাল ফৌজ বা কমিউনিস্টগণ ১৮টি পর্বত, ২৪টি নদী এবং প্রায় ছয় হাজার মাইল দুর্গম পথ অতিক্রম করে। পরিশেষে অবশ্য লাল ফৌজ বাহিনী বা কমিউনিস্টগণই জয়লাভ করে।
10. সান ইয়াত সেনের তিনটি বাণী তথা মূল নীতিসমূহ কি ছিল?
উত্তরঃ আধুনিক চীনের নির্মাতা ডঃ সান ইয়াৎ- সেন নিজ লক্ষে উপনীত হওয়ার উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত তিনটি নীতি ঘোষণা করেছিলেনঃ
(ক) জাতীয়তাবাদ।
(খ) ধণতন্ত্র।
(গ) সমাজবাদ।
প্রথম নীতির উদ্দেশ্য ছিল মাধু রাজবংশ ও বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের পতন। দ্বিতীয় নীতির উদ্দেশ্য ছিল চীনে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তৃতীয় নীতির উদ্দেশ্য ছিল পুঁজি নিয়ন্ত্রণ এবং ভূমির মালিকী স্বপ্নের সম বিতরণ।
11. চীনের অগ্রগতিতে প্রভাব থাকা তিনটি ভিন্নতর মতামত কি কি?
উত্তরঃ মূলত নিম্নলিখিত তিন ধরনের মতামতের উপর ভিত্তি করে চীন দেশের যুক্তি ও চিন্তাধারা বিকশিত হয় এবং চীনের অগ্রগতিকে প্রভাবিত করেঃ
(ক) বিদেশি প্রত্যাহ্বান মোকাবিলায় কুটং ইউয়েই ও লিয়াং কিচাও-এর মতো প্রাচীন সমাজ সংস্কারকরা মূলত চিরাচরিত ধারণা বা মতামতের উপর নির্ভরশীল ছিলেন।
(খ) চীন সাধারণতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান ড. সান ইয়াত সেন-এর মতো প্রজাতন্ত্রে বিশ্বাসী বিপ্লবীরা জাপান ও অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশের ভাবধারায় প্রভাবিত ছিলেন।
(গ) চীনের সাম্যবাদী বা কমিউনিস্ট দল দীর্ঘদিনের অসাম্যের সমাপ্তি ঘটাতে ও বিদেশীদের বিতাড়িত করতে সচেষ্ট ছিলেন।
12. ইংরেজরা কিভাবে চীনে আফিম বাণিজ্য গড়ে তুলেছিল? সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা,
কিভাবে ভারত, চীন ও ইংলন্ডের মধ্যে ত্রিমুখী বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল? সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তরঃ ১৯ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপে চীনে উৎপাদিত চা, রেশম, পোর্সেলিন ইত্যাদির চাহিদা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে এক অসম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কারণ চীনে পাশ্চাত্য উৎপাদিত জিনিসের বিশেষ চাহিদা ছিল না। ফলে রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে চীন থেকে জিনিস ক্রয় করতে হত ইউরোপীয় বণিকদের। ইংরাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর প্রেক্ষিতে ভারত থেকে আফিম নিয়ে চীনে বিক্রয় শুরু করে এবং চীনারা ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়লে, লাভের অংশ দিয়েই তারা চীন থেকে চা, রেশম ও পোর্সেলিন কিনত ও তা ইউরোপে বিক্রয় করত। এইভাবেই আফিম বাণিজ্যের মাধ্যমে চীন, ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে ত্রিমুখী ‘বাণিজ্য’ গড়ে উঠেছিল।
13. চীনাদের মধ্যে আধুনিক পাশ্চাত্য জ্ঞান প্রসারের জন্য কিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল? সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ চীনে জনসাধারণকে আধুনিক পাশ্চাত্য বিষয়গুলিতে প্রশিক্ষিত করবার উদ্দেশ্যে ছাত্রদের অধ্যয়নের জন্য পাঠানো হয় জাপান, ব্রিটেন ও ফ্রান্সে। অধায়নপর্ব শেষ করে ছাত্ররা শুধু নতুন চিন্তাধারা নিয়েই স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেনি, তাদের মধ্যে অনেকেই নেতৃস্থানীয় প্রজাতন্ত্রবাদী হিসাবে আত্মসমর্পণ করেন। এমনকি ন্যায়বিচার, অধিকার, বিপ্লব, ইত্যাদি তাৎপর্যপূর্ণ শব্দের জাপানি অনুবাদও চীনারা ধার করেছিল, কারণ তারাও চিত্রগত লিপি ব্যবহার করত।
14. ‘চতুর্থ মে (May) আন্দোলন’-এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় চীনের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিরতা ছিল চরম পর্যায়ে। যুদ্ধোত্তর শান্তি কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে তারিখে বেজিংয়ে ধরনা কার্যসূচী পালন করা হয়। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটেনের নেতৃত্বে বিজয়ী মিত্রশক্তির জোট বন্ধনে থাকলেও চীন তাদের দেশের দখলিকৃত জমি ফিরে পায়নি। চারিদিকে তাই প্রতিবাদী আন্দোলন শুরু হয়, যা যে চতুর্থ আন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলনে আধুনিক বিজ্ঞান, গণতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করে। চীন বাঁচাও আহ্বান জানানো হল। চীনের সম্পদকে বিদেশীদের কবল থেকে মুক্ত করা এবং অসাম্য ও দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য বিদেশীদের উৎখাত করার বৈপ্লবিক আহ্বান চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। সহজ ভাষার ব্যবহার, পায়ের বন্ধন মুক্তি, মহিলাদের প্রতি দমননীতির বিলুপ্তি সাধন, বিবাহের ক্ষেত্রে সমান অধিকার, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ ইত্যাদি আন্দোলনের কার্যসূচী।
এই আন্দোলনে ছাত্র অধ্যাপক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষও সামিল হয়েছিল। দেশের সর্বত্র একমাস ধরে ধর্মঘট ও বিক্ষোভের চাপে শেষ পর্যন্ত সরকার নতি স্বীকারে বাধ্য হয়।
এই আন্দোলনের ফলে কুয়োমিনতাং দলের পুনর্গঠন ও কমিউনিস্ট দলের উদ্ভব হয়। ভাষা-সংস্কার ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফলে গণশিক্ষার দ্রুত প্রসার হয়। প্রাচীনত্বের অবসান হয়ে নতুন চীনের জন্ম হয়। চীনে আধুনিকীকরণের গতি দ্রুততর হয়।
15. কুওমিনতাং দল কেন চীনকে তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়নি? কারণগুলি লেখ।
উত্তরঃ কুওমিনতাং দল চীনকে তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। এর পিছনে নিম্নলিখিত কারণগুলি দায়ীঃ
(ক) সংকীর্ণ সামাজিক ভিত্তি।
(খ) সীমাবদ্ধ রাজনৈতিক দূরদর্শিতা।
(গ) সম্পদের বিধিবদ্ধ সমবণ্টন ও ভূমির সমবণ্টনে বিফলতা।
(ঘ) কৃষকের প্রতি অবহেলা ও সামাজিক অসাম্যের প্রতি নজর না দেওয়া।
(ঙ) সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলোর সমাধানের পথে না গিয়ে দলের সামরিক আদেশ চাপানোর প্রচেষ্টা।
16. ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে জাপানের সংবিধানের চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে জাপানের সংবিধানের চারটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) শাসন বিভাগের প্রধান ছিলেন সম্রাট। তাঁর পদমর্যাদা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সকল মন্ত্রীদের নিযুক্ত করতেন এবং মন্ত্রীগণ সম্রাটের নিকট দায়বদ্ধ ছিলেন।
(খ) সংবিধানে একটি পার্লামেন্টের সংস্থান ছিল যাকে ডায়েট বলা হত। ডায়েটের ক্ষমতা ছিল সীমিত। ডায়েট ধীরে ধীরে সামরিক শক্তির অধীনে আসে।
(গ) জনগণের ভোটাধিকার ছিল সীমিত। মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশকে ভোটাধিকার প্রদান করা হত।
(ঘ) সম্রাটের জ্ঞানী ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা প্রদান করা: হয়েছিল।
17. চীন থেকে জাপান কি শিক্ষা গ্রহণ করেছিল?
উত্তরঃ আফিং-এর দুইটি যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইংরেজের হাতে চীনের পরাজয় ঘটেছিল। ফলে চীনের আভ্যন্তরীণ দিকে ইংরেজগণ হস্তক্ষেপের সুবিধা লাভ করে।
চীনের এ ধরনের ঘটনাবলী জাপানের জনসাধারণ তথা শাসকগণের দৃষ্টি প্রসারিত করে। জাপানের ক্ষেত্রে ইংরেজদের সাম্রাজ্য হতে পারে বলে তাদের মনে আশঙ্কা দেখা দেয়। সেজন্য চীন জনগণের মতো জাপান ইউরোপীয়দের উপেক্ষা না করে ইউরোপীয়গণের নুতন ধ্যান-ধারণার বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার জন্য যত্নশীল হয়। জাপানের কতিপয় লোক ইউরোপীয়দের থেকে দূরে থেকেও তাদের প্রযুক্তি ও কারিগরী জাল আহরণের জন্য চেষ্টা করে। অধিকন্তু জাপান পূর্বে গ্রহণ করা বন্ধ নীতি’ পরিহার করে মুক্ত নীতি গ্রহণের পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ করে।
18. “আদেশ বা নির্দেশ অপেক্ষা স্বাধীনতা অধিক মূল্যবান।” এই উক্তিটি কে, কোন্ প্রসঙ্গে করেছিলেন?
উত্তরঃ জাপানের সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতা একি ইমোরি উক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন। ইমোরি একজন উদারপন্থী নেতা ছিলেন। তিনি ফরাসি বিপ্লবের সাম্য, মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্বের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর প্রচলিত শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। তিনি জাপানে উদারপন্থী শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তাঁর এই উক্তিটি জাপানে এক অভূতপূর্ব ভাবাবেগের সৃষ্টি করেছিল। এর দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে এসাম লোকরা মহিলার ভোটাধিকারের দাবিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে।
19. শোগানতন্ত্র আমলে জাপানের রাজনৈতিক বা শাসনব্যবস্থার বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ জাপান কিয়োটতে অবস্থানরত একজন সম্রাট দ্বারা শাসিত হত। কিন্তু দ্বাদশ শতাব্দী নাগাদ সম্রাটের আধিপত্য খর্ব হয়ে ক্ষমতা চলে আসে সাগুনের হাতে। শোগান সম্রাটের নামে শাসন পরিচালনা করতেন। সমগ্র দেশ ২৫০-এর অধিক এলাকায় ভাগ করে। প্রত্যেকটি এলাকা দায়মিও বলে একজন স্থানীয় শাসকের শাসনাধীন ছিল। এই দায়মিওরা সম্পূর্ণভাবে সোগানের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিলেন।
কোনও রকম সাগুন বিরোধী কার্যকলাপ যাতে তারা (দায়মিওরা) লিপ্ত হতে না পারে, সেজন্য তাদের রাজধানী এডোতে থাকতে হত। সাগুন গুরুত্বপূর্ণ নগর ও খনির নিয়ন্ত্রণ করতেন প্রত্যক্ষভাবে। সামুরাই নামে যোদ্ধা শ্রেণী শাসনকার্যে সোগান ও দায়মিও উভয়কেই সাহায্য করত।
20. ১৭ শতাব্দীর জাপানের উন্নতির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।
উত্তরঃ ১৭ শতাব্দীর জাপানের উন্নতির বৈশিষ্টগুলি নিম্নরূপঃ
(ক) নতুন নতুন শহরের বিকাশ হয়, যার ফলে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি সূচিত হয়।
(খ) অর্থনৈতিক নীতি ও ঋণদান পদ্ধতি গড়ে ওঠে।
(গ) ব্যক্তিগত পদমর্যাদার চেয়ে এখন প্রতিভাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়।
(ঘ) নগরগুলিতে এক সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির প্রস্ফুটন ঘটে। দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত বণিক শ্রেণী দ্বারা নাটক কলাবিদ্যা ইত্যাদি পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে।
(ঙ) লোকেরা বিদ্যাচর্চার প্রতি উৎসাহিত হওয়ায় প্রতিভাবান লেখকেরা একমাত্র লেখনীর মাধ্যমেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হয় ইত্যাদি।
21. ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের কোন দুইটি/তিনটি পরিবর্তন জাপানের ভবিষ্যত উন্নতির ধারাকে প্রতিষ্ঠা করেছিল? সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ ১৬০০ শতাব্দীর শেষভাগে তিনটি বিশেষ পরিবর্তন ভবিষ্যত উন্নতির ধারাকে জাপানে প্রতিষ্ঠা করেছিল।
(ক) কৃষক শ্রেণীকুলকে নিবস্ত্র করে রাখা হয়েছিল, এবং শুধু সামুরাই কেবল তরোয়াল ব্যবহার করতে পারত। এই নিয়ম শান্তিশৃঙ্খলাকে নিশ্চিত করে পূর্ববর্তী শতাব্দীর ঘন ঘন যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল।
(খ) দায়মিওদের আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন প্রত্যেকে সম্পূর্ণ সার্বভৌম ক্ষমতা নিয়ে তাদের অধিকৃত অঞ্চলের রাজধানীতে বসবাস করেন।
(গ) ভূমি জরীপ করে জমির প্রকৃত মালিকদের এবং করদাতাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল। এবং জমিতে উৎপাদন হওয়া ফসলকে গুণগত মানের ভিত্তিতে শ্রেণী বিভাজন করে রাজস্বের পরিমাণ সুনিশ্চিত করা হয়েছিল।
22. তোকুগাওয়া শোগানরা কেন জাপানে মূল্যবান ধাতুর রপ্তানি বন্ধ করেছিলেন? এর প্রেক্ষিতে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল?
উত্তরঃ সোনা ও রুপার বিনিময়ে জাপান বিভিন্ন দেশ থেকে যেমন চীন থেকে রেশম, বিলাসী সামগ্রী আমদানি করত। যা দেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছিল এবং এর ফলে টকুগাওয়া/তোকুগাওয়া সাগুনরা এসব মূল্যবান ধাতুর রপ্তানির উপর বাধা আরোপ করে।
এই পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে জাপান সরকার নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেয়ঃ
(ক) কিয়োটর নিশিজিন অঞ্চলে রেশন শিল্প উদ্যোগ গড়ে তোলা হয়।
(খ) মুদ্রার বহুল প্রচলন করা হয়। বিনিময়ের মাধ্যমে।
(গ) চালের বিনিময় কেন্দ্র স্থাপন করা হয় ইত্যাদি।
23. নিশিজিনে গড়ে ওঠা রেশম শিল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ জাপানের কিয়োট শহরের একটি এলাকা নিশিজিন। ১৬ শতকে মাত্র ৩১টি পরিবারকে নিয়ে একটি তাঁতী সংগঠন ছিল, যা ১৭ শতাব্দীতে দাঁড়ায় ৭০,০০০ তাঁতীতে। ধীরে ধীরে রেশমচাষ-এর প্রসার ঘটলে এবং ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দের সরকারি আদেশ যাতে দেশীয় রেশম সুতা ব্যবহার করা হয়, ইত্যাদি নিশিজিনের রেশম উদ্যোগের প্রসার ঘটায়। নিশিজিনের বিশেষত্ব ছিল উন্নতমানের রেশমবস্ত্র। এই শিল্পকে কেন্দ্র করে একটি আঞ্চলিক উদ্যোগী শ্রেণি গড়ে ওঠে এবং তারা তোকুগাওয়া শাসনকে প্রত্যহ্বান জানায়। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে যখন বিদেশি বাণিজ্য শুরু হয়, তখন রেশম রপ্তানিই হয়ে দাঁড়ায় জাপানের অর্থ উপার্জনের মুখ্য উপাদান।
24. ‘Fukoku Kyohei’ বা ‘ফুকোকু কিয় হেই কি? এর তাৎপর্য লেখ।
উত্তরঃ ‘ফুকোকু কিয় হেই”, যার অর্থ ‘ধনী দেশ, শক্তিশালী সেনাবাহিনী এই শ্লোগানকে অবলম্বন করে জাপান সরকার একটি সুনির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করেছিল।
তৎকালীন পরিস্থিতিতে জাপান সরকার অনুভব করে যে একটি উন্নত মানের অর্থনীতি ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করা প্রয়োজন। কারণ, তাদের আশঙ্কা হয়েছিল যে হয়তো একটি জাপান ও ভারতবর্ষের মতো ইউরোপীয়দের অধীনস্ত হয়ে উঠতে পারে। তাই এই সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই নীতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন এবং যা কার্যকরী করতে হলে মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করা ও প্রজাদের সুনাগরিকে রূপান্তরিত করার প্রয়োজন।
25. ‘সম্রাট পদ্ধতি কি? এর বাস্তবায়নে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল?
উত্তরঃ মেইজি সরকার জাপানে ‘সম্রাট পদ্ধতি প্রবর্তন করে। এটি একটি প্রশাসনিক পরিকাঠামোগত বিষয়, যেখানে আমলাতন্ত্র, সেনাবাহিনী ও সম্রাটকে কেন্দ্র করে একটি সুনির্দিষ্ট সুসংগঠিত ও শক্তিশালী শাসনব্যবস্থার সংগঠন গঠন করা হয়েছে। সম্রাট পদ্ধতির বাস্তবায়নে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলঃ
(ক) সরকারি কর্মচারীদের ইউরোপীয় রাজতন্ত্রের বিষয় অধ্যয়নের জন্য পাঠানো হয়েছিল, যাতে এর উপর ভিত্তি করে তারা তাদের নিজেদের মতো করে নমুনা তৈরি করে।
(খ) সম্রাটের সাথে শ্রদ্ধাপূর্ণ ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি হয়। কারণ তিনি সূর্যদেবীর প্রত্যক্ষ উত্তরসূরী ছিলেন। কিন্তু তাকে পাশ্চাত্যকরণের নেতা হিসাবেও উপস্থাপন করা হয়।
(গ) সম্রাটের জন্মদিনকে জাতীয় ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
(ঘ) তিনি পাশ্চাত্যের ধারা অনুসারে সামরিক পোশাক পরিধান করেন এবং তার নামে নির্দেশ জারি করে চীনে আধুনিক প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে তোলা হয়।
26. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জাপানের কিভাবে নানা প্রশাসনিক পরিবর্তনের সাক্ষ্য হতে হয়? সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হয় এবং এর ফলস্বরূপ ১৯৪৫-১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ অবধি জাপান আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্বাধীন অধিগ্রহণে থাকে। এই সময় নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া হয় জাপানের সামরিক কাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করতে।
(ক) জাপানকে সামরিক শক্তিচ্যুত করা হয় এবং একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করা হয়।
(খ) নতুন সংবিদানের ৯ নং ধারা ‘No War Clause-এর মাধ্যমে যুদ্ধকে রাষ্ট্রনীতির অঙ্গ থেকে বাদ দেওয়া হয়।
(গ) কৃষি সংস্কার ও শ্রমিক সংস্থাগুলোর পুনঃস্থাপন করা হয়।
(ঘ) জাইবাৎসগুলিকে নিষ্ক্রিয় করা হয় এবং |
(ঙ) রাজনৈতিক দলগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা হয় ইত্যাদি।
27. আধুনিকতার ছাপ জাপানের পারিবারিক পরিকাঠামোকে কিভাবে প্রভাবিত করেছিল? সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ আধুনিকতার প্রতিফলন জাপানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থায় একই বাড়িতে পারিবারিক কর্তার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন প্রজন্ম বসবাস করত। কিন্তু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে পারিবারিক নতুন ধারণাগুলো বিস্তারিত হতে শুরু করে। ক্রমে অন্ধ পরিবার প্রথার সৃষ্টি হয় যেখানে স্বামী ও স্ত্রী উপার্জনকারী এবং গৃহ ব্যবস্থাপক হিসাবে বাস করতেন। এই নতুন পারিবারিক গঠনের ফলে নতুন ধরনের সাংসারিক সামগ্রী, পারিবারিক মনোরঞ্জনের সামগ্রী ও নতুন ধরনের বাসস্থানের চাহিদা সৃষ্টি হয়।
28. চীনের উপর জাপানের প্রভাব কিরূপ ছিল?
উত্তরঃ আধুনিক চীন নির্মাণের ক্ষেত্রে জাপানের প্রভাব বিশেষ পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণ হিসাবে ১৯৮০-র দশকে বহুসংখ্যক চীনা ছাত্র ফিরে আসার সময় জাপান থেকে বহু নূতন ধ্যান-ধারণা চীনে আমদানি করেছিল। তারা জাপানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে প্রজাতন্ত্রী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিল। জাপানিগণ ইউরোপের কতিপয় শব্দ; যেমন—ন্যায়, অধিকার, বিদ্রোহী প্রভৃতি জাপানি ভাষায় অনুবাদ করে ব্যবহার করেছিল। চীন ও জাপান উভয় প্রতীক অক্ষর ব্যবহার করেছিল।
29. ‘মুক্তদ্বার নীতি’ বলতে কি বোঝ? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন এবং কিভাবে এই নীতি গ্রহণ করেছিল?
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনে ‘মুক্তদ্বার নীতি গ্রহণ করেছিল। ১৮৯০ – এর দশকে ইউরোপীয় শক্তি চীন বিভাজনে সক্রিয় হয়ে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপলব্ধি করতে পেরেছিল। যে সে হয়তো বিতাড়িত হয়ে যাবে। সে তখন ‘মুক্তদ্বার নীতি’ গ্রহণ করে। এর অর্থ হল যে কোন শক্তিই যেন চীনে অন্য দেশ কর্তৃক বৈষম্যের স্বীকার না হয়। কিছুদিন পর চীনে ক্রমবর্ধমান ইউরোপীয় শক্তির বিরুদ্ধে বক্সার বিদ্রোহ দেখা দেয়। মার্কিন বাহিনী এই বিদ্রোহ দমনের জন্য ইউরোপীয় বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়।
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
1. ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের চীন দেশের কমিউনিস্ট বিপ্লবের সফলতার কারণসমূহ আলোচনা কর।
উত্তরঃ চীন দেশের কমিউনিস্ট বিপ্লবের সফলতার কারণসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) চিয়াং কাই-শেক সরকারের অবক্ষয় এবং বিফলতাঃ চিনে চিয়াং কাই-শেকের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট সরকার দীর্ঘ সময় থেকে ক্ষমতায় থাকার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। চীনা সাধারণ মানুষদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া পূরণে অসমর্থ হয়ে উঠেছিল। দেশের সর্বশ্রেণীর মানুষের সমর্থন পেতে অক্ষম ছিল। এবং বৈদেশিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উপর নির্ভরশীল ছিল।
(খ) কমিউনিস্টদের কৃষকদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারঃ মাও সে তুঙ চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে শহরীয় শ্রমিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রামের কৃষকদের প্রধান ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করলেন। কৃষকরা পূর্ব থেকেই বিভিন্ন বিদ্রোহে জড়িত থাকায় তাদের অভিজ্ঞতার দ্বারা কমিউনিস্ট দলকে এক অদম্য শক্তি হিসেবে মাও সে তুং-এর নেতৃত্বে গড়ে তুললেন।
(গ) সোভিয়েত রাশিয়ার সাহায্যঃ সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর সমস্ত কমিউনিস্ট দলকে বিভিন্ন উপায়ে সমর্থন জানাতে বদ্ধপরিকর ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে নীতিগত সমর্থন ছাড়া সর্বপ্রকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এমনকি চিয়াং কাই-শেককে স্বীকৃতি জানালেও মানচুরিয়া দখলের সম্পূর্ণ সুবিধা তারা মাও সে তুং-এর পার্টিকে দিয়েছিল। এমনকি চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে তারা বিভিন্ন প্রকার সামরিক সাহায্য দিয়েছিল।
(ঘ) কমিউনিস্ট পার্টির সাংগঠনিক শক্তিঃ কমিউনিস্ট পার্টির মূল শক্তি ছিলও তাদের কৃষকদের সামরিক শাখা। এরা যথেষ্ট সুসঙ্গত এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল। সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের প্রশ্নে তারা তাদের বিরোধী কমিনটার্ন সাথে মিলে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ধীরে ধীরে সকল পেশার মানুষের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি তাদের প্রভাব বিস্তার করেছিল।
(ঙ) সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার চীন পরিত্যাগঃ চিয়াং কাই-শেকের কমিনটার্ন বহুলাংশে। আমেরিকার উপর নির্ভরশীল ছিল। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে আমেরিকা চীনকে সাহায্য করত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে আমেরিকা চীন পরিত্যাগ করে।
(চ) সামরিক নীতিঃ মাও সে তুং কৌশলগতভাবে কমিউনিস্ট পার্টির সেনাবাহিনী। এবং অন্যান্য দপ্তর চীনের উত্তরাঞ্চলে সুরক্ষিত জায়গায় স্থানান্তরিত করেন এবং উত্তরাঞ্চলে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
(ছ) জনপ্রিয় নীতিঃ মাও সে তুং বিভিন্ন জনপ্রিয় নীতির প্রচলন করেন। রাজকোষ এবং জমির পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে গঠন করেন কৃষক সভা। নারী সমাজের সমস্যা সমাধানের জন্য নারী সমিতি এবং নতুন বিবাহ আইন প্রণয়ন করেন। যার ফলে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ কমিউনিস্ট পার্টির বিপ্লবে শরিক হন।
2. চীনদেশে নতুন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কারণ এবং তাৎপর্য বর্ণনা কর।
উত্তরঃ চীনদেশে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজের সর্বশ্রেণীর সমন্বয়ে নতুন গণতন্ত্রের নীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল সে সরকার। অর্থনীতির জটিল বিষয়গুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা হল। জমির ব্যক্তিগত মালিকানা বা ব্যক্তিগত উদ্যোগ ক্রমশ লুপ্ত হল। এই কর্মসূচী ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। এরপর সরকার সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের কার্যসূচী ঘোষণা করে। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে The Great Leap Forward আন্দোলন আরম্ভ হয়েছিল। দেশে উন্নত শিল্পায়নের উদ্দেশ্যেই এই আন্দোলন শুরু হয়। বাড়ির পিছনে খালি অঙ্গনে মানুষ অগ্নিকৃত নির্মাণ করতে উৎসাহী হল। গ্রামাঞ্চলে যৌথ মালিকানায় চাষবাস করার জন্য ‘কমিউন’ গড়ে উঠল। নির্ধারিত লক্ষ্যে দলকে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে মাও-সে-তুং জনসাধারণকে প্রভাবান্বিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সমাজতান্ত্রিক মানুষ সৃষ্টি করা যাদের পিতৃভূমি, জনগণ, শ্রম, বিজ্ঞান এবং সরকারি সম্পত্তির প্রতি থাকবে অসীম ভালবাসা। মহিলা, শিক্ষার্থী, কৃষক এবং অন্যান্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর জনগণের জন্য নানারকমের সংগঠন সৃষ্টি করা হল। মহিলা, শিক্ষার্থী, কৃষক এবং অন্যান্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর জনগণের জন্য নানা রকমের সংগঠন সৃষ্টি করা হল। সারা চীন গণতান্ত্রিক মহিলা ফেডারেশন এবং সারা চীন ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭৬ এবং ৩.২৯ মিলিয়ন। কিন্তু এসব উদ্দেশ্য বা পদ্ধতি দলের অনেক সদস্যের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। শিল্প সংগঠন এবং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার জন্য তারা আবেদন জানালেন। নিউসাওচি এবং দেং জিয়াওপিং কমিউন পদ্ধতিতে আরও পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করলেন।
3. সান ইয়াৎ-সেনকে আধুনিক চীনের নির্মাতা বলা হয় কেন?
উত্তরঃ ঘুমন্ত ও অচেতন চীনকে জাগরণের ডাক যাঁরা দিয়াছিলেন তাঁদের মধ্যে ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ্য। ডঃ সান ইয়াৎ-সেনকে ‘আধুনিক চীনের জনক? (Father of Modern China) বলা হয়।
ডঃ সান ইয়াৎ-সেন ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ফ্রাঙ্কো-চীন যুদ্ধে চীনের পরাজয় তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।
ডঃ সেন উপলব্ধি করেন যে, চীনের যাবতীয় দুর্দশার মূলে ছিল মাঞ্চু বংশের দুর্নীতিপূর্ণ শাসন। তিনি মাঞ্চু শাসন থেকে স্বদেশকে মুক্ত করার ব্রত গ্রহণ করেন। চীনের বহু বিপ্লবী গোষ্ঠী আলাদা আলাদাভাবে কার্যকরী ও সচেষ্ট ভূমিকা পালন করছিল। ডঃ সেন উপলব্ধি করেন যে, চীনের বিভিন্ন বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলিকে সংঘবদ্ধ না করলে মাঞ্চু শাসন হতে চীনের মুক্তি আসবে না। দ্বিতীয়ত, বিপ্লবী দলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রাণশক্তি দিতে হলে কেবলমাত্র নেতিবাচক আদর্শ চীং সরকারের উচ্ছেদের লক্ষ্যে যথেষ্ট নয়। সরকার উৎখাতের পর চীনকে কিভাবে গড়তে হবে তার রূপরেখা না দিলে জনসাধারণের সাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। ডঃ সেন মনে করতেন যে বিপ্লবের আদর্শ না জানালে চীনের তরুণ ছাত্র সমাজের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না। এইজন্য তিনি তাঁর ‘সান-মিন-চু-আই’ বা ডঃ সেনের তিনটি নীতি ঘোষণা করেন। এই তিনটি নীতি ছিল-
(ক) জাতীয়তাবাদ।
(খ) গণতন্ত্র। ও
(গ) জনগণের জীবিকার সংস্থান।
১৯১১ খ্রিস্টাব্দের চীনের প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবে ডঃ সেন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল মাঞ্চু শাসনের অবসানক্রমে চীনে প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। ডঃ সেনের চেষ্টায় চীনে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব জনপ্রিয়তা অর্জন করে। চীনের জনগণ বিপ্লব যারা অনুপ্রাণিত হয়।
জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের ভূমিকাঃ ডঃ সান ইয়াৎ-সেন ক্যান্টন শহরে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠা করে তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। চীনের উত্তর ও দক্ষিণ প্রদেশগুলির মধ্যে ঐক্য স্থাপিত না হওয়ায় ডঃ সেনের পক্ষে শাসনকার্য পরিচালনায় অসুবিধা হয়। সোভিয়েত রাশিয়ার সহায়তায় ডঃ সেন চীনে সংহতি স্থাপনে সমর্থ হন। এই সময় ডঃ সেনের প্রধান সেনাপতি যুয়ান নিজেকে চীনের সম্রাট পদে অধিষ্ঠানের জন্য চেষ্টা করেন। ডঃ সেন তাকে চীনের রাষ্ট্রপদে নিযুক্ত করেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ডঃ সান ইয়াৎ-সেন পরলোকগমন করেন।
ডঃ সান ইয়াৎ-সেন চীনের আধুনিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল চীনে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রবর্তন করা। এই ব্যাপারে তিনি বহুলাংশে সফল হন। তাঁকে নিঃসন্দেহে আধুনিক চীনের নির্মাতা ও চীনের জনক বলা হয়।
4. আধুনিক চীন নির্মাণে চিয়াং কাই-শেক-এর ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা,
আধুনিক চীন নির্মাণে চিয়াং কাই-শেক-এর মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ চিয়াং-কাই-শেক ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের উত্তরাধিকারী ছিলেন। তাঁকে ডঃ সেন-এর দক্ষিণ হস্ত বলা হয়। ডঃ সেন প্রথমে তাঁকে ক্যান্টন শহরের সেনাধ্যক্ষ নিয়োগ করেন। কিশোরকালেই তিনি কুওমিংটাং পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ক্যান্টনের মিলিটারী স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ক্যান্টনের সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক পদ গ্রহণ করেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জেনারেল চিয়াং চীনের দক্ষিণাঞ্চল অধিকার করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীনের উত্তরাঞ্চল দখলের জন্য অগ্রসর হলে সেখানকার সেনাবাহিনী তাঁকে বাধা দান। করে পরাস্ত হলে সৈন্যদল মাঞ্চুরিয়া পলায়ন করে। চিয়াং প্রথমে নানকিং অধিকার করেন। এবং ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে পিকিং অধিকার করেন। কালক্রনে জেনারেল চিয়াং সমগ্র চীন একীকরণ করতে সমর্থ হন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ই অক্টোবর জেনারেল চিয়াং কাই-শেক চীন গণপ্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন।
চিয়াং-এর রাজনৈতিক কার্যাবলীঃ চিয়াং চীনের বিভিন্ন প্রদেশকে একত্র করতে সফল হন। তিনি চীনে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। চীনের শাসনকার্যে তিনি ছিলেন সর্বেসর্বা। তিনি সেনাবাহিনীর অধিনায়ক ও কুওমিনতাং পার্টির সভাপতি ছিলেন। তিনি নিজেকে কমিউনিস্ট প্রভাব হতে মুক্ত রাখেন। এর ফলে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে চীনের কমিউনিস্টদের সঙ্গে তাঁর মতভেদ ঘটে। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে চিয়াং জাতীয় সংবিধান সভার আহ্বান করেন। এই সভাতেই দেশের অন্তর্বর্তী সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। নূতন সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্র ও সরকার উভয়েরই প্রধান ছিলেন। প্রেসিডেন্ট মন্ত্রীগণকে নিয়োগ করতেন। সাধারণ নাগরিক দ্বারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয় এবং দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়।
আভ্যন্তরীণ সংস্কারঃ চিয়াং কাই-শেক চীনের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কতিপয় সংস্কার সাধন করেন। এর মধ্যে নিরক্ষরতা দূরীকরণ অভিযান উল্লেখযোগ্য। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে তিনি চীনাভাষার বর্ণমালা সংশোধন করেন। চীনে বসবাসকারী বিদেশী লোকদের কার্যকলাপের উপর চিয়াং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। আভ্যন্তরীণ সংস্কার কার্যে চিয়াং যথেষ্ট অসুবিধার সম্মুখীন হন। দীর্ঘ ১৮ বৎসর অরাজকতার পর চীনে শাসনকার্য সুচারুরূপে সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। প্রশাসনের অফিসার ও কর্মচারীবৃন্দ দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে পড়ে। প্রাদেশিক শাসকগণ নিজেদের মতানুসারে শাসনকার্য সম্পাদন করতেন। সমগ্র দেশে একপ্রকার শাসন-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল না। চুরি, ডাকাতি, খুনখারাপি নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয় ছিল। এইরূপ অবস্থা সত্ত্বেও চিয়াং কতিপয় বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশে সুস্থিতি স্থাপন করতে বহুলাংশে সফল হয়েছিলেন।
চীন-জাপান যুদ্ধ ও চিয়াংঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে চীন মাঞ্চুরিয়া দখল করে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে। মাঞ্চুরিয়ার নাম পরিবর্তন করে মাঞ্চুকুও করা হয়। মাঞ্চুরিয়ার ঘটনা চীন অপেক্ষা রাশিয়াকে অধিক চিন্তিত করে। রুশো চীন শাস্তি চুক্তির পর চীন ও জাপানের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে জাপান চীন আক্রমণ করে। চীনের অধিকাংশ জাপান অধিকার করে। জাপান অক্ষশক্তি এবং চীন মিত্রশক্তিতে যোগদান করে, ফলে চীন-জাপান যুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়। পরে জাপান মিত্রশক্তির নিকট আত্মসমর্পণ করে। চীন জাপান অধিকৃত সম্পূর্ণ এলাকা ফিরে পায়। সুতরাং চীনের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা রক্ষায় চিয়াং কাই-শেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ব পালন করেন।
5. আধুনিক চীন নির্মাণে মাও-সে-তুং-এর অবদান সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রধান মাও সে-তুং (মাও জেদং) ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে এক ব দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আজীবন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ নায়ক ছিলেন। মাও সে-তুং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের কমিউনিস্ট সরকারের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি নিজের নেতৃত্ব রক্ষার জন্য ও নিজের ভাবাদর্শ সৃষ্টি প্রচারের জন্য ‘লাল বাহিনী’ গঠন করে চীনে ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’ আরম্ভ করেন।
মাও সে-তুং-এর প্রচারিত আদর্শ অর্থাৎ মাওবাদ হল একপ্রকার শোধনবাদ। তিনি ইন সাম্যবাদ তথা মার্ক্সবাদকে বহুলাংশে শোধন করেন। মাও ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মার্ক্সবাদী হন, এবং মন্থর গতিতে বিপ্লবের সূত্র পরিত্যাগ করে শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্ব গ্রহণ করেন। মাও কৃষক আি বিপ্লব ও কৃষি সংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি গেরিলা যুদ্ধ নীতি সমর্থন করতেন। তিনি দীর্ঘ সংগ্রাম নীতির পক্ষপাতী ছিলেন। মাওয়ের প্রবর্তিত ‘নব গণতন্ত্র’ তত্ত্ব চীনকে একটি ক কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করে।
আভ্যন্তরীণ নীতিঃ কমিউনিস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে মাও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বিরোধীদের দমন করতে আরম্ভ করেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ‘গণ মুক্তি বাহিনী” এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টি মিলিত হয়ে বিরোধ দমনে মাও-কে নানাভাবে সাহায্য করে।
প্রথমত, সারা দেশব্যাপী কমিউনিস্ট আধিপত্য কায়েম করবার জন্য কৃষি সংস্কার আরম্ভ হয়। দ্বিতীয়ত, ধনিক শ্রেণী এমনকি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে শ্রেণী সংগ্রামের জন্য মাও চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে সংঘবদ্ধ করেন। তৃতীয়ত, মাও দুর্নীতিপরায়ণ পার্টি সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেন। বহু লোককে ঘুষ নেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। এবং অনেককে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি হস্তান্তর না করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। কয়েক হাজার সদস্যকে দল হতে বহিষ্কার করা হয়। প্রতিবিপ্লবীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়; যার ফলে আট হাজারের অধিক লোক নিহত হয়।
১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে মাওবাদীগণ ক্রুশ্বেভের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি প্রত্যাখ্যান করেন। তারা সোভিয়েত রাশিয়ার ‘নূতন অর্থনৈতিক কার্যক্রম’ (New Economic Policy) -3 প্রত্যাখ্যান করেন। সোভিয়েত হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ১৯৫৮-৫৯ খ্রিস্টাব্দের মাও প্রবর্তিত ‘গ্রেট কীপ ফরোয়ার্ড’ ও ‘কমিউন প্রোগ্রাম’ সূত্র সমগ্র চীনে বাস্তবায়িত হয়। ‘কমিউন’ প্রথার দ্বারা বেসরকারি জমি, গৃহপালিত জীবজন্তু প্রভৃতি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু কমিউন প্রথা চীনের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কোন পরিবর্তন করতে পারেনি। ফলে এই প্রথা কার্যত ব্যর্থ হয়ে যায়। এর ফলে কমিউনিস্ট পার্টি তথা সমগ্র দেশে অসন্তোষ দেখা দেয়।
সাংস্কৃতিক বিপ্লবঃ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হিসাবে মাও চীনের জনগণকে নুতন ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত করেন। তিনি চীনের সকল প্রকার ক্রিয়াকলাপের পথ প্রদর্শক। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেন। বিশাল সংখ্যক ‘লাল বাহিনী’-কে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জন্য নিয়োজিত করা হয়। জনকল্যাণকামী নীতিতে মাও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ার পর জনগণের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য মাও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ধনতন্ত্রে বিশ্বাসী কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চপদে আসীন কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। মাও এই মর্মে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে লাল বাহিনীকে নির্দেশ দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সাংস্কৃতিক বিপ্লব লাভ করতে পারেনি। তা কমিউনিস্ট পার্টিকে বিপন্ন করে তোলে। অধিকন্তু রাজনৈতিক কার্যে অধিক সংখ্যক সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্তি দেশের শাস্তি ও রাজনৈতিক সুস্থিতি নষ্ট করে।
সারা জীবনব্যাপী মাও বিভিন্ন তত্ত্ব প্রবর্তন করে এই সমস্ত বাস্তবায়নে কৃতসংকল্পবদ্ধ হন। তিনি চীনকে একটি প্রজাতান্ত্রিক দেশ ও কমিউনিস্ট দেশে পরিণত করেন। তাঁর চেষ্টায় চীনে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম গণতান্ত্রিক সংবিধান চালু হয়। তিনি নিঃসন্দেহে চীনের অবিসংবাদী কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ই সেপ্টেম্বর মাও পরলোকগমন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরসূরি অধিকাংশ তত্ত্ব ও মতবাদকে শোধন ও আধুনিকীকরণ করেন। কালের ধারায় মাওয়ের মতবাদ ধীরে ধীরে অচল হয়ে যাচ্ছে।
6. বিংশ শতকে জাপান কিভাবে একটি শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হয়েছিল?
উত্তরঃ পূর্বাভাষঃ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জাপানেও সামস্তরা দেশের মালিকানা ভোগ করতেন। জাপানের সম্রাটকে বলা হত ‘মিকাডো’। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শাসনতান্ত্রিক ব্যাপারে মিকাডোর কোন ক্ষমতা ছিল না। সৈনাবাহিনীর প্রধান ‘সোগুন’ উপাধিধারী ব্যক্তিই সামস্তদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এবং তিনিই প্রকৃতপক্ষে সম্রাটের নামে দেশের যাবতীয় শাসনকার্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দ হতে জাপানে ইউরোপ হতে যাজক, বণিক ও অভিযাত্রীরা আসতে আরম্ভ করলে ষোড়শ শতাব্দীর চতুর্থ দশকে জাপান সরকার জাপান ও বিদেশের মধ্যে যাতায়াত আইনত দণ্ডনীয় বলে ঘোষণা করেন। এর ফলে দীর্ঘদিন জাপানের সহিত বহির্বিশ্বের কোন প্রকার সংস্রব ছিল না।
বিদেশী কর্তৃক জাপান আক্রমণঃ জাপানে উপনিবেশ স্থাপনের উদ্দেশ্যে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপীয়দের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রই সর্বপ্রথম জাপানে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জাপানস্থ সর্বপ্রথম নৌ-বাহিনীর প্যারী সোগুনের নিকট হতে জাপানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা আদায় করতে সক্ষম হওয়ায় অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিরাও সেই পথ অবলম্বন করেন।
সম্রাট কর্তৃক স্বহস্তে ক্ষমতা গ্রহণঃ সোগুনের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে জাপানীরা ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে সোগুনকে পদত্যাগে বাধ্য করলে জাপ সম্রাট মুৎসুহিতো স্বহস্তে যাবতীয় শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
সংস্কার আন্দোলনঃ বিদেশি কর্তৃক জাপানে প্রভুত্ব স্থাপনে জাপানিরা বুঝতে পারলেন। যে সংস্কারমুক্ত হয়ে আধুনিক রাজনীতি ও ভাবধারা গ্রহণ না করলে জাপানের কোনদিনই উন্নতি হবে না। এই সংস্কার আন্দোলনে অভিজাত সামন্তরাই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। তারা তাদের সবরকম রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ত্যাগ করে জনসাধারণের। সঙ্গে এক পর্যায়ভুক্ত হয়ে যান। তারাই সোগুনকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন।
সংস্কার সাধনঃ স্বহস্তে শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে মুসুহিতো ৪৫ বছর রাজত্ব করে যান। এই সময় জাপানের সবদিকে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। সামন্ত প্রথা উঠে যাওয়ায় সম্রাটের কারীরাই দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন। ইউরোপীয়দের শিক্ষানীতি, শাসননীতি ও আইন-কানুনে আকৃষ্ট হয়ে জাপানিরা এর অনুকরণে তাদের জাতীয় জীবনের সঙ্গে মিল রেখে অনেকগুলিই গ্রহণ করল।
ইউরোপের মত জাপানেও রেলপথ, টেলিগ্রাফ, ডাকঘর ও কল-কারখানা স্থাপিত হল। পেশাদার সামুরাই নামক সৈন্যবাহিনী তুলে দিয়ে তার পরিবর্তে জাতীয় সৈন্যবাহিনী ও তৎসঙ্গে বিশাল নৌ-বহর গঠন করা হয়।
জাপানিদের অদম্য উৎসাহের ফলে শিক্ষাদীক্ষা, শ্রমশিল্প ও বাণিজ্যে উন্নতি লাভ করে। জাপান আধুনিক শক্তিশালী একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
জাপানের অগ্রগতিঃ ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়ার অধিকার নিয়ে চীনের সঙ্গে জাপানের যুদ্ধ বাধলে আধুনিক সামরিক অস্ত্রে সজ্জিত জাপানিদের নিকট চীন পরাজিত হয়ে সন্ধিব শর্তানুযায়ী ফরমোসা দ্বীপ এবং মাঞ্চুরিয়ার এক বিরাট অংশ জাপানকে দিতে বাধা হয়। কিন্তু বিদেশি ইউরোপীয়দের চাপে এই স্থানগুলি জাপান ছেড়ে দিতে বাধ্য হলে জাপান সম্রাট জাপানে ইউরোপীয়দের সব সুযোগ ও অধিকার হরণ করে নেন।
মাঞ্চুরিয়ায় রাশিয়া কর্তৃক রেলপথ নির্মাণের অধিকার নিয়ে ১৯০৪-০৫ খ্রিস্টাব্দে জাপান ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাধিলে জাপান স্থল এবং জলযুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করে। জাপান নৌ-সেনাপতি উগো এই যুদ্ধে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন।
এই যুদ্ধে বৃহৎ শক্তি রাশিয়া ক্ষুদ্র দেশ জাপানের নিকট পরাজিত হওয়ায় সামরিক শক্তিতে শুধু জাপানের গৌরব বৃদ্ধি পায়নি, এর ফলে সমগ্র এশিয়াতে নূতন উৎসাহ ও উদ্দীপনা স্থাপন করে, যার ফলে এশিয়াতে জাতীয়তাবাদ দ্রুত প্রসারলাভ করতে থাকে।
7. সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে জাপানের উত্থানের একটি বিবরণ প্রদান কর।
উত্তরঃ ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত জাপান বহির্বিশ্ব হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে মেইজীর পুনরুত্থানের পর জাপান বিচ্ছিন্ন নীতি পরিত্যাগ করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে প্রয়াসী হয়। এর পর জাপানের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে উদারনৈতিক সংস্কার সাধন করা হয়। পশ্চিমী দেশসমূহের ধাঁচে জাপানের সেনাবাহিনী পুনর্গঠন করা হয়। জাতীয় জীবনে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়োগ আরম্ভ হয়। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে জাপান ইংল্যান্ডের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত করে যার ফলে জাপানের জাতীয়তাবাদ দ্রুত প্রসার লাভ করে।
রুশ-জাপান যুদ্ধঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে জাপান ১৯০৪-১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে রুশ-জাপান যুদ্ধে আত্মপ্রকাশ করে। এই যুদ্ধে জাপানের মতো একটি ক্ষুদ্র দেশ বৃহৎ শক্তি রাশিয়াকে পরাজিত করে। এই ঘটনা জাপানকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে সহায়তা করে। রুশ-জাপান যুদ্ধ জাপানকে গৌরবান্বিত করে। জাপানি সৈন্যবাহিনীকে অধিকতর বৈজ্ঞানিক উপায়ে পুনর্গঠন করতে উৎসাহিত করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও জাপানঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার দিকে জাপান নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু পরবর্তীকালে জাপান জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে জার্মান অধিকৃত চীনা ভূখণ্ড অধিকার করে। জাপান চীন হতে সমস্ত বিদেশি বহিষ্কার করবার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই মানি ব্যাপারে জাপান চীনের নিকট হতে সাহায্য সহযোগিতা লাভ করে। এর পর জাপান নিজ দেশের অনুকূলে চীন হতে একগুচ্ছ দাবি আদায় করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানঃ জাপানের ক্ষমতা ও মর্যাদা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এশিয়ায় প্রাধান্য বিস্তারের জন্য জাপান উপযুক্ত সুযোগ লাভ করে। নিরস্ত্রীকরণ ও দূর প্রাচ্যের সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়াশিংটনে একটি সম্মেলনের আহ্বান করা হয়। এই সম্মেলনে জাপানের সামরিক ক্ষমতা সীমিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নৌশক্তিতে জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। জাপানের সৈন্যসংখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের সৈনাসংখ্যা অপেক্ষা ৬২ শতাংশের অধিক হবে না।
জাপান ওয়াশিংটন সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবগুলি প্রত্যাখ্যান করে এবং ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে চীন শাসিত মাঞ্চুরিয়া অধিকার করে। জাপানের এইরূপ কার্যকারিতা চীন জাতিসংঘের নিকট উত্থাপন করে। জাতিসংঘ জাপানকে মাঞ্চুরিয়া চীনকে প্রত্যর্পণ করতে আদেশ দেয়।
কিন্তু জাপান জাতিসংঘের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে এবং প্রতিবাদস্বরূপ জাতিসংঘ ত্যাগ করে।
মাঞ্চুরিয়া অধিকার ও জাতিসংঘের ব্যর্থতা জাপানকে জাতীয়তাবাদ তথা সাম্রাজ্যবাদের পথে উৎসাহিত করে। অস্ত্র-শস্ত্র প্রস্তুতের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে জাপান চীনের উত্তরাংশ অধিকার করে। অধিকন্তু জাপান চীনের অকমিউনিস্ট শাসক চিয়াং কাই-শেককে কমিউনিস্ট শক্তি প্রতিহত করবার জন্য চীনে জাপানের একজন উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি উত্থাপন করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও জাপানঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হলে জাপান জার্মানির হিটলার ও ইতালির মুসোলিনীর পক্ষে যোগদান করে। জাপান-জার্মানি ও ইতালি মিলিত হয়ে অক্ষশক্তি গঠন করে। অক্ষশক্তি দ্বারা উৎসাহিত হয়ে জাপান আগ্রাসন নীতি গ্রহণ করে। অক্ষশক্তির তিনটি দেশের মধ্যে বোঝাপড়া হয় যে তাদের মধ্যে কোন একটি দেশ অন্য কোন শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে অক্ষশক্তিভূক্ত অপর দুটি রাষ্ট্র আক্রান্ত অক্ষশক্তিভুক্ত দেশকে রক্ষা করবে।
এইভাবে জাপান সবদিক দিয়ে একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হয়। জাপানের পরবর্তী অভিপ্রায় ছিল আমেরিকা আক্রমণ। এর কারণ আমেরিকা চীনের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখত যাতে চীনের উপর জাপানের আধিপত্য বিস্তার না হয়। এই অভিপ্রায় সার্থক করবার উদ্দেশ্যে জাপান ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই ডিসেম্বর ‘পার্লহারবার’ আক্রমণ করে। ইতিমধ্যে জাপান চীনের বৃহৎ অংশ, মালয় ও ব্রহ্মদেশ অধিকার করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর জাপানের সাম্রাজ্যবাদী ক্রিয়াকলাপের অবসান ঘটে।
8. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকার বিষয়ে বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত জাপান বহির্বিশ্ব হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে মেইজির পুনরুত্থানের পরে জাপান বিচ্ছিন্ন নীতি পরিত্যাগ করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে প্রয়াসী হয়। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে জাপান ১৯০৪-১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে রুশ-জাপান যুদ্ধে আত্মপ্রকাশ করে। রুশ-জাপান যুদ্ধে জয় জাপানকে গৌরবান্বিত করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার দিকে জাপান নিরপেক্ষ থাকে, কিন্তু পরবর্তীকালে জাপান জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে জার্মান অধিকৃত চীনা ভূখণ্ড অধিকার করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের ক্ষমতা ও মর্যাদা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে চীনশাসিত মাঞ্চুরিয়া অধিকার করে এবং ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে জাপান চীনের উত্তরাংশ অধিকার করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হলে জাপান যোগদান করে জার্মানির হিটলার ও ইটালির মুসোলিনীর পক্ষে। জাপান, জার্মানি ও ইটালি মিলিত হয়ে অক্ষশক্তি গঠন করে। অক্ষশক্তির দ্বারা উৎসাহিত হয়ে জাপান আগ্রাসন নীতি গ্রহণ করে। অক্ষশক্তির তিনটি দেশের মধ্যে বোঝাপড়া হয় যে তাদের মধ্যে কোন একটি দেশ অন্য কোন শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হলে অক্ষশক্তিভুক্ত অপর দুটি রাষ্ট্র আক্রান্ত অক্ষশক্তিভুক্ত দেশকে রক্ষা করবে। জাপানের পরবর্তী অভিপ্রায় ছিল আমেরিকা আক্রমণ। এই অভিপ্রায় সার্থক করার উদ্দেশ্যে জাপান ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ৭ই ডিসেম্বর ‘পার্ল হারবার’ আক্রমণ করে। ফলস্বরূপ আমেরিকা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ই এবং ৯ই আগস্ট জাপানের জনবহুল শহর যথাক্রমে হিরোসিমা ও নাগাশাকিতে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে। এরপর জাপান মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ১৯৪৫-১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে যে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয় তাতে জাপানকে সামরিক শক্তিচ্যুত করা হয়।
9. দ্রুত উদ্যোগীকরণের নিমিত্ত জাপান এবং তার নিকটবর্তী দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার কারণে পরিবেশ নষ্ট হয়েছিল কি? নিজস্ব মতামতসহ একটি টীকা লেখ।
উত্তরঃ হ্যাঁ, দ্রুত উদ্যোগীকরণের নিমিত্ত জাপান ও তার নিকটবর্তী দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার কারণে পরিবেশ নষ্ট হয়েছিল।
(ক) জাপানে প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব ছিল, তাছাড়া কৃষিকাজের উপযুক্ত জমির অভাব ছিল। কিন্তু তার পার্শ্ববর্তী চীন ছিল এই দুইয়ের-ই উপযুক্ত, তাছাড়া চীনের সরকার ছিল দুর্বল।
(খ) জাপানের উদ্যোগের প্রয়োজনে যেমন কাঁচামালের প্রয়োজন ছিল, তেমনিভাবে তৈরি জিনিসের বাজারও প্রয়োজন ছিল। এই উভয়ই পার্শ্ববর্তী অঞ্চল মেটাতে পারত।
(গ) জাপানের শাসনব্যবস্থায় সামরিক বাহিনীর বিশাল কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ ছিল। তারা ভীষণ আগ্রাসী ছিল সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য।
জাপান তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ইউরোপীয় উপনিবেশের অগ্রগতিতে শঙ্কিত হয়ে নিজেকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির সমকক্ষ করে তুলতে প্রয়াসী হয়। এই ক্ষেত্রে তার প্রথম প্রয়োজনীয়তা ছিল তার উদ্যোগিক অগ্রগতি। কিন্তু এই উদ্যোগিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে তারা সম্মুখীন হয়েছিল নানা প্রতিবন্ধকতার। যেগুলি দূর করতে এবং উদ্যোগীকরণের প্রয়োজনীয়তায় তাকে নানা সময় যেমন ১৮৯৪-৯৫, ১৯০৪, ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিবেশীদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়। যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া তথা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে উদ্যোগের বিকাশ ঘটে, যার ফলে বিশাল পরিমাণ কাঁচামাল নির্বিচারে আহরণ করা হয়। যা এই অঞ্চলের পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতি করে।
10. মেইজি শাসনকালে শিক্ষাক্ষেত্রে কখন ও কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ১৮৭০-এর দশকে মেইজি শাসনে একটি নতুন শিক্ষা পদ্ধতি শুরু হয়। নতুন শিক্ষানীতিতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, যা জাপানের উন্নতির দিশা নির্ধারিত করেছিলঃ
(ক) ছেলেমেয়ের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল এবং ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা প্রায় সার্বজনীন হয়ে উঠেছিল।
(খ) শিক্ষা মাসুল ছিল নগণ্য।
(গ) পাঠ্যক্রম তৈরি হয়েছিল পাশ্চাত্যের আদর্শের উপর ভিত্তি করে।
(ঘ) জাপানের প্রতি আনুগত্য ও জাপানের ইতিহাস অধ্যয়নের উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
(ঙ) শিক্ষামন্ত্রক পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচী নির্বাচন ও পুনর্গঠন ইত্যাদি এবং শিক্ষকের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করত।
(চ) নৈতিক কৃষ্টি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে এবং পাঠ্যবইগুলোতে পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা, দেশের প্রতি আনুগত্য এবং সুনাগরিক হয়ে উঠতে শিশুদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল।
11. জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে মেইজি শাসনকালে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল প্রশাসনিক পরিকাঠামোগত পর্যায়ে? সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তরঃ জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে মেইজি সরকার জাপানের পুরোনো গ্রাম ও রাজ্যের সীমানা পরিবর্তনের সাহায্যে জাপান এক নতুন শাসন পরিকাঠামো গড়ে তুলা হয়। এর ফলে শাসনতান্ত্রিক সংগঠনের স্থানীয় বিদ্যালয়গুলি ও স্বাস্থ্যসেবার সুবিধার্থে এবং সেনাবাহিনীর নিযুক্তি কেন্দ্রগুলি পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত মাত্রার রাজস্ব প্রয়োজন হয়, যা পুরাণ অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া আরও পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
(ক) কুড়ি বৎসরের অধিক বয়সের প্রতিটি লোক (পুরুষ)-কে একটি নির্দিষ্ট সময় সামরিক সেবাদান বাধ্যতামূলক করা হয়।
(খ) একটি আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়।
(গ) রাজনৈতিক দলগুলির গঠন নিয়ন্ত্রণ করতে, জনসমাবেশের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং সংবাদ প্রকাশে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আইনি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।
(ঘ) সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্রকে সম্রাটের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।
12. মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর জাপানের অর্থনৈতিক আধুনিকিকরণে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল? বর্ণনা কর।
উত্তরঃ মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর সংস্কারগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল জাপানের অর্থনীতির আধুনিকিকরণ। এই ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছিলঃ
(ক) কৃষিজাত দ্রব্যের উপর কর ধার্য করে সরকারি আয় বৃদ্ধি করা হয়।
(খ) রেলপথ নির্মাণ করা হয়।
(গ) বয়নশিল্পের যন্ত্রপাতি ইউরোপ থেকে আনা হয়।
(ঘ) শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ও সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের জন্য বিদেশি প্রযুক্তিবিদদের নিযুক্ত করা হয়।
(ঙ) জাপানী ছাত্রদের বিদেশি প্রযুক্তিগত বিদ্যালাভের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়।
(চ) ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে আধুনিক অর্থ লেনদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়।
(ছ) জাহাজ নির্মাণ উদ্যোগকে উন্নত করতে জাপানী নির্মাণ সংস্থাগুলিকে আর্থিক সহায়তা ও কর রেহাই-এর মাধ্যমে সহায়তা করা হয়।
13. জাপানে মেইজিদের পুনরুত্থানের বিষয়ে একটি টাকা লেখ।
উত্তরঃ জাপানে ১৮৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে টকুণ্ডয়া রাজবংশের সম্রাট সগুণ শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং নতুন আধিকারিক ও উপদেষ্টামণ্ডলীর দ্বারা শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। তারা জাপান সম্রাটের নামে শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকে। এমতাবস্থায় সম্রাট। পুনরায় দেশের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। সম্রাট মেইজি পদবি গ্রহণ করেন। এই ঘটনাকে জাপানের ইতিহাসে মেইজি পুনরুত্থান বলে অভিহিত করা হয়।
মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর সরকার নিম্নলিখিত পরিবর্তন সাধন করেনঃ
(ক) কুড়ি বৎসর ঊর্ধ্বে সকল যুবককে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা দিতে হত।
(খ) একটি আধুনিক সামরিকবাহিনী গঠন করা হয়।
(গ) কৃষকদের নিরস্ত্রীকরণ করা হয়। ফলে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
(ঘ) ডাইমোদের তাদের নিজস্ব এলাকার রাজধানীতে অবস্থান করতে আদেশ দেওয়া হয়।
(ঙ) ডাইমোদের রাজধানীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলে বাণিজ্য অর্থনীতি প্রসার লাভ করে।
(চ) মানুষের মধ্যে বইপড়ার অভ্যাস গড়ে উঠে।
কৃষির আধুনিকীকরণ মেইজি সংস্কারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ঃ
(ক) কৃষির উপর কর আরোপ করে রাজস্ব সংগ্রহ করা হয়।
(খ) টোকিও এবং ইয়োকোহামা বন্দরের মধ্যে ১৮৭০-১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম রেলপথ স্থাপিত হয়।
(গ) বস্ত্র শিল্পের উন্নতির জন্য ইউরোপ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়।
(ঘ) বহুসংখ্যক শিক্ষার্থীকে শিক্ষার জন্য বিদেশে প্রেরণ করা হয়।
(ঙ) মিতসুবিসি, সুমিটোমো-এর মতো বহু কোম্পানীকে ভর্তুকি ও কর ছাড় দেওয়া হয়। এই গুলি কালক্রমে প্রধান জাহাজ নির্মাণ কোম্পানিতে পরিণত হয়।
১৮৭০-এর দশক হতে একটি নতুন শিক্ষা পদ্ধতি শুরু হয়। ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। শিক্ষার মাশুল ছিল নগণ্য। নৈতিক কৃষ্টি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে এবং মূল পাঠ্য বইগুলোতে পিতামাতাকে শ্রদ্ধা করতে, দেশের প্রতি অনুগত থাকতে এবং সুনাগরিক হয়ে উঠতে শিশুদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল।
14. চীন ও জাপানের আধুনিকীকরণের ভিন্ন পর্যায়ক্রমিক পথ বর্ণনা কর।
উত্তরঃ শিল্পপ্রধান বা শিল্পবোজিত সমাজগুলো আধুনিক হওয়ার পথ পরিক্রমায় পৃথক পৃথকভাবে তাদের নিজস্ব রাস্তা বেছে নিয়েছে। চীন ও জাপানের ইতিহাস দেখায় যে কিভাবে বিভিন্ন ঐতিহাসিক শর্ত একটা দেশকে স্বাধীন এবং আধুনিক হওয়ার জন্য একাধিক পথের সন্ধান দিতে পারে।
জাপানে আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। পাশ্চাত্য শক্তিকে অনুকরণ করলেও জাপান নিজেদের সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টাও চালিয়েছে। জাপানীদের জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল। জাপানীদের মধ্যে অনেকেই এশিয়াকে পাশ্চাত্য প্রভাব থেকে মুক্ত করতে চাইছিল, আবার উক্ত ধারণাকে কেন্দ্র করে অনারা সাম্রাজ্যবাদ গড়ে তোলাকেই যুক্তিসঙ্গত বলে ভাবতে লাগল। তবে জাপানে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর রূপান্তর এবং দৈনন্দিন জীবনধারণের প্রচলিত প্রথার পুনরাবৃত্তি বা জোর করে রক্ষা করার ব্যাপারে না থেকে সৃজনী শক্তির সাহায্যে প্রচলিত ধারাকে নতুন আভিনায় রূপ দিয়েই জাপান তার সাফল্য লাভ করেছিল।
আবার আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়ায় চীন অন্য পথ অবলম্বন করেছিল। পাশ্চাত্য ও জাপানী সংমিশ্রণে সরকার দুর্বল ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বেশিরভাগ জনগণের দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধপ্রিয় ক্ষমতাবানদের আধিপত্য, লুটতরাজ, গৃহযুদ্ধ, জাপানীদের বর্বর আক্রমণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি জনজীবনে প্রচণ্ড আঘাত হানে। তবে, প্রচলিত প্রথার প্রত্যাখ্যান এবং নতুন পথের সন্ধানের মধ্য দিয়া জাতীয় ঐক্য ও শক্তি গড়ে তুলেই ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর সময়কালে চীন আধুনিকীকরণের সাফল্য পায়।
এইভাবেই চীন ও জাপান ভিন্ন প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিপরীত পরিস্থিতি ও চিন্তাধারা অবস্থান সত্ত্বেও নিজেদের স্বকীয় অস্তিত্ব বজায় রেখে আধুনিকীকরণের পথে সাফল্য পায় এবং বর্তমানে যা সমগ্র বিশ্বের নিকট উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
1. মেইজি সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পূর্বে কি কি বিষয় জাপানের দ্রুত আধুনিকতা সম্ভব করেছিল?
উত্তরঃ মেইজি শাসন ১৮৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে জাপানে দ্রুত আধুনিকতার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি অবলম্বন করা হয়ঃ
(ক) কৃষকদের নিরস্ত্র করা হয়। কেবলমাত্র যোদ্ধা জাতিগণই তরবারি বহন করতে পারবে। তা দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে এবং পূর্বের শতাব্দী ব্যাপী যুদ্ধের অবসান ঘটে।
(খ) ডাইমোদের নিজ নিজ রাজধানীতে বাস করতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তাদের অধিক পরিমাণে স্বাধীনতা প্রদান করা হয়।
(গ) জমির মালিক ও করদাতাদের চিহ্নিত করতে জমি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
(ঘ) ডাইমোদের রাজধানীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে বাণিজ্যিক অর্থনীতির শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।
(ঙ) একজন ব্যক্তির মর্যাদা অপেক্ষা গুদের উপর মূল্য দেওয়া আরম্ভ হয়।
(চ) শহরের দ্রুত বর্ধিত বণিকশ্রেণী যাত্রাগান এবং শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতা করে।
(ছ) মানুষের লেখাপড়ার অভ্যাস বৃদ্ধি পায়।
(জ) মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রীর রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
(ঝ) সিল্ক শিল্পের উন্নতির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
(ঞ) টাকার ব্যবহার বৃদ্ধি পায় এবং ধানের উপর ফাটকা বাজার সৃষ্টি হয়।
2. জাপান উন্নত হওয়ার সঙ্গে দৈনন্দিন জীবন কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে আলোচনা কর।
উত্তরঃ পূর্বে জাপানে পুরুষতান্ত্রিক পরিবারব্যবস্থা প্রচলিত ছিল যেখানে বহু প্রজন্ম একত্রে বাস করত। পরিবারের কর্তার অধীনে সকলেই একত্রে বাস করত। কিন্তু নূতন পরিবার ছিল একক পরিবার যেখানে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই উপার্জন করত। এই নূতন পরিবার ব্যবস্থা নূতন নূতন দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি করে।
নাতিদীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
3. জাপানের দ্রুত শিল্পায়ন নীতি কি ইহার প্রতিবেশীদের সঙ্গে যুদ্ধের এবং পরিবেশ হানির কারণ হয়েছিল?
উত্তরঃ এটা সত্য যে জাপানের দ্রুত শিল্পায়ন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ ও পরিবেশ হানির কারণ হয়েছিলঃ
(ক) শিল্পের অনিয়ন্ত্রিত বিকাশের ফলে কাঠ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। পরিবেশের উপর তা বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে।
(খ) শিল্পের জন্য কাঁচামাল ও উৎপাদিত দ্রব্যের বাজারের জন্য উপনিবেশ-এর চাহিদা দেখা দেয়। যার জন্য জাপান তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য হয়।
4. সান ইয়াৎ- সেনের তিনটি নীতি কি কি ছিল?
উত্তরঃ সান ইয়াৎ-সেনের তিনটি নীতি নিম্নরূপঃ
(ক) জাতীয়তাবাদঃ রাজবংশের ক্ষমতাচ্যুতির কারণ হয়েছিল বিদেশি রাজবংশ।
(খ) গণতন্ত্রঃ দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
(গ) সমাজবাদঃ মূলধন বা পুঁজি নিয়ন্ত্রণ করা এবং জমির মালিকানা সমান করা।
5. পশ্চিমী শক্তিগুলির প্রত্যাহ্বানের মোকাবিলায় কুয়াং রাজবংশ কিভাবে চেষ্টা করেছিল?
উত্তরঃ পশ্চিমী শক্তিগুলির প্রত্যাহ্বানের মোকাবিলায় কুয়াং রাজবংশ ব্যর্থ হয়েছিল। ব্রিটেনের সঙ্গে আফিং-এর যুদ্ধ (Opium War) কুয়াং রাজবংশকে দুর্বল করে দেয়। দেশে কুয়াং রাজবংশ দ্বারা সংস্কার ও পরিবর্তনের দাবি উত্থাপিত হয়। কুয়াং রাজবংশ এই ব্যাপারেও ব্যর্থ হয়। ফলে দেশ গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হয়।
6. তুমি কি মনে কর যে মাও জে দং এবং কমিউনিস্ট চীনের কমিউনিস্ট পার্টি চীনের মুক্তি ও সাম্প্রতিক সাফল্যে সফল হয়েছিল?
উত্তরঃ মাও জে দং এবং কমিউনিস্ট পার্টি নিঃসন্দেহে চীনের মুক্তি ও বর্তমান সাফল্যের ভিত্তি তৈরিতে সাফল্য অর্জন করেছিল।
(ক) ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে সান ইয়াৎ সেনের মৃত্যুর পর চিয়াং কাই-শেক চীনে প্রধান হন। এর পূর্বে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়েছিল। কিন্তু চিয়াং কাই-শেক সান ইয়াত সেনের তিনটি নীতি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হন। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন নীতি অবলম্বন করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন তিনি লাভ করেন। অধিকন্তু তিনি একটি নুতন জমিদার শ্রেণী সৃষ্টি করেন যা কৃষকদের শোষণ করত। ইতিপূর্বে মাও জে দং তার ‘লাল বাহিনী’ দ্বারা কৃষক আন্দোলন শুরু করেন।
(খ) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মাও জে দং চীনে কৃষক এবং শ্রমিক পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং গোপনে সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় হন। তিনি লাল বাহিনী পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে চিয়াং কাই-শেকের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ আরম্ভ করেন। তিনি চারবার চিয়াং-এর বাহিনীকে পরাজিত করেন। কিন্তু পঞ্চমবার তিনি এমন চাপের সম্মুখীন হন যে তিনি ‘লং মার্চ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। এই মার্চে প্রায় এক লক্ষ কমিউনিস্ট অংশগ্রহণ করেছিল। ৩৬৮ দিনে ৬০০০ মাইল পরিক্রমা করে এবং দেশের পশ্চিম প্রদেশের শেনসি ও কানসুতে উপস্থিত হয়। তবে কেবলমাত্র ২০,০০০ কমিউনিস্ট সেখানে পৌঁছেছিল। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে মাও জে দং জাপানের বিরুদ্ধে একটি কমিউনিস্ট ফ্রন্ট গঠন করেন। তিনি মনে করিতেন যে জাপানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম তাকে জনপ্রিয় করে তুলবে এবং তার জনমুখী সরকার অধিক ফলপ্রসূ হবে। সুতরাং মাও সফল হওয়া পর্যন্ত জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
(গ) মাও-এর ক্রমবর্ধমান ক্ষমতায় চিয়াং কাই-শেক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন। তিনি তার সঙ্গে কাজ করিতে চাননি। বিরাট সংকটের পর জাপানের বিরুদ্ধে তিনি মাও-এর পাশে থাকার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। যুদ্ধ যখন সমাপ্ত হল তখন মাও চিয়াং কাই-শেককে সম্মিলিত সরকারের (Coalition Govt.)-এর প্রস্তাব দেন। কিন্তু চিয়াং তা গ্রহণ করেননি। মাও তার সংগ্রাম চালিয়ে যান। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে চিয়াং ফরমোসায় (বর্তমান তাইওয়ান) পলায়ন করে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। মাও জে দং চীন সরকারের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মৃত্যুৰখি তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।