Class 10 Science Chapter 6 জীবন প্রক্রিয়া Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 10 Science Chapter 6 জীবন প্রক্রিয়া and select needs one.
Class 10 Science Chapter 6 জীবন প্রক্রিয়া
Also, you can read SCERT book online in these sections Class 10 Science Chapter 6 জীবন প্রক্রিয়া Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 10 Science Chapter 6 জীবন প্রক্রিয়া These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 10 Science Chapter 6 জীবন প্রক্রিয়া for All Subject, You can practice these here..
জীবন প্রক্রিয়া
Chapter – 6
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
১। মানুষের মতাে বহুকোষী প্রাণীর শরীরে সরল ব্যাপন প্রক্রিয়ার দ্বারা অক্সিজেনের প্রবেশ অপর্যাপ্ত হয় কেন ? প্রক্রিয়ার দ্বারা আহরণ করা পর্যাপ্ত নয় কেন ?
উত্তরঃ আমাদের মতাে বহুকোষী প্রাণীদের সমস্ত দেহকোষ পরিবেশের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক থাকে না। সুতরাং দেহের প্রতিটি কোষ প্রয়ােজনমত অক্সিজেন পায় না পরিবেশের পরিব্যপ্তির মাধ্যমে। সুতরাং জটিল বহুকোষী প্রাণীদের বিশেষ পেশী, অঙ্গ এবং অঙ্গতন্ত্র দ্বারা অক্সিজেন গ্রহণ করা প্রয়ােজন।
২। কোনাে বস্তু জীবিত কি না বােঝার জন্য কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে ?
উত্তরঃ কোনাে কিছু সজীব কি না তা জানার জন্য দৃশ্যমান চলন বা গমনের উপর অথবা অদৃশ্য চলন বা গমনের উপর নির্ভর করতে হয়।
৩। কোনও জীবদেহে প্রয়ােজনীয় কি কি উপাদান বাইরের পরিবেশ থেকে প্রয়ােজন হয় ?
উত্তরঃ কোনাে প্রাণী বা জীবের বাহির হতে সংগ্রহ করা প্রধান দ্রব্যগুলি হল-
(i) খাদ্য ও যা শক্তির সৃষ্টি করে খনিজ, ভিটামিন ইত্যাদির দ্বারা ফলে পেশী এবং কোষগুলি কার্যক্ষম থাকে।
(ii) জল ও শরীরের ভিতরের বিক্রিয়াগুলিকে সচল রাখে।
(iii) অক্সিজেন ও শ্বাসগ্রহণের জন্য প্রয়ােজন।
৪। জীবন ধারণ করার জন্য কোন কোন প্রক্রিয়ার প্রয়ােজন আছে বলে মনে কর ?
উত্তরঃ জীবন প্রক্রিয়া চলার জন্য প্রয়ােজন হল-
(i) পুষ্টি।
(ii) শ্বসন।
(iii) পরিবহন।
(iv) রেচন।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
১। স্বপােষিত এবং পরপােষিত পুষ্টির মধ্যে কি পার্থক্য আছে ?
উত্তরঃ যে প্রক্রিয়ায় জীবেরা নিজেদের দেহে খাদ্য সংশ্লেষণ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে, তাকে স্বভােজী পুষ্টি বলে, যেমন- সবুজ উদ্ভিদ, ইউপ্পিনা, ক্রাইমামিবা ইত্যাদির পুষ্টি।
অপরপক্ষে, যে প্রক্রিয়ায় জীব স্বভােজী জীবদের তৈরি খাদ্য গ্রহণ করে অথবা অন্য কোনও মৃত জৈব বস্তু থেকে খাদ্যরস শােষণ করে বা অপর কোনও আশ্রয়দাতার দেহ থেকে সরল খাদ্যরস শােষণ করে পুষ্ট হয়, তাকে পরভােজী পুষ্টি বলে। যেমন- ছত্রাক, স্বর্ণলতা ইত্যাদির পুষ্টি।
২। সালােক সংশ্লেষণের জন্য প্রয়ােজনীয় কাঁচা সামগ্রী উদ্ভিদ কোথায় পায় ?
উত্তরঃ সালােক সংশ্লেষণের জন্য উদ্ভিদের প্রয়ােজন-
(i) কার্বন ডাই-অক্সাইড- ইহা উদ্ভিদ পরিবেশ থেকে পাতার ষ্টোমা দ্বারা গ্রহণ করে।
(ii) জল-ইহা উদ্ভিদের মূল দ্বারা গৃহীত হয় এবং পাতায় পরিবাহিত হয়।
(iii) সূর্যালোেক-ইহা গাছ সূর্য হতে পায়।
(iv) পত্রহরিৎ-সবুজ পাতার ক্লোরপ্লাষ্টে থাকে।
৩। আমাদের পাকস্থলীতে এসিডের কি কাজ ?
উত্তরঃ পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক গ্রেন্ড দ্বারা নিঃশেষিত হওয়া হাইড্রোক্লোরিক এসিডের ভূমিকা হল-
(i) আম্লিক মাধ্যম সৃষ্টির জন্য পেপসিন্ এনজাইমের সক্রিয়তা প্রয়ােজন।
(ii) খাদ্যে যে জীবাণু থাকে তাদের ধ্বংস করা।
৪। পাচক উৎসচকের কাজ কি ?
উত্তরঃ খাবার পাকস্থলীতে এসে পৌছিলে ওর সঙ্গে পাচক রস বা গ্যাসট্রিক রস মিশে যায়। পাচক রসে থাকা লঘু হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCl) খাদ্যবস্তুকে অম্লধর্মী করে তােলে।পাচক রসে প্রােটিন ভঙ্গক উৎসেচক পেপসিন এবং ফ্যাট ভঙ্গক উৎসেচক লাইপেজ থাকে। পেপসিন প্রােটিনকে পেপটোনে পরিণত করে এবং লাইপেজ ফ্যাটকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে।
৫। ক্ষুদ্রান্ত্র পাচিত খাদ্য শােষণ করার জন্য কিভাবে তৈরি ?
উত্তরঃ ক্ষুদ্রান্ত্রে পরিপাক ও ক্ষুদ্রান্ত্রে খাবার এসে পৌছিলে খাবারের সঙ্গে পিত্তরস, অম্লাশয় রস এবং আন্ত্রিকরস মিশ্রিত হয়। পিত্তরসে খাবার পরিপাককারী কোনও উৎসেচক থাকে না তাই খাবার পরিপাকে পিত্তের বিশেষ কোনাে ভূমিকা নাই! তবে পিত্ত লবণ ফ্যাট জাতীয় খাবারকে অবদ্রবে পরিণত করে পরিপাকে সাহায্য করে।
অগ্নাশয় রসে এমাইলেজ, মলটেজ, ট্রিপসিন এবং লাইপেজ থাকে। আবার আন্ত্রিক রসে এমাইলেজ, মলটেজ, সুক্রেজ, লেটেজ, ইরেপসিন এবং লাইপেজ উৎসেচক থাকে।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
১। শ্বসনের জন্য অক্সিজেন পাওয়ার ব্যাপারে জলজ প্রাণীর থেকে স্থলচর প্রাণীর সুবিধা অনেক বেশি কেন ?
উত্তরঃ জলে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকা অক্সিজেন হতে জলজ প্রাণীরা অক্সিজেন গ্রহণ করে। যেহেতু দ্রবীভূত অবস্থায় থাকা অক্সিজেনের মাত্রা কম সেইজন্য জলজ প্রাণী বা উদ্ভিদের শ্বসনের মাত্রা বেশি হয়।
২। বিভিন্ন জীবের দেহে শক্তি পাওয়ার জন্য কি কি উপায়ে গ্লুকোজ বিজারিত হয় ?
উত্তরঃ গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়াটি সাইটোপ্লাজমে ঘটে। এই পর্যায়ে গ্লুকোজ কয়েক রকমের উৎসেচকের প্রভাবে আংশিক জারিত হয়ে পাইরুভিক এসিড উৎপন্ন করে। এই ক্ষেত্রে পাইরুভিক এসিডের সবাত জারণ ঘটে। ফলে পাইভিক এসিড সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে শক্তির মুক্তি ঘটায় এবং CO₂ এবং জল উৎপন্ন করে।
C₆H₁₂O₆ + 6O₂ – 6CO₂ + 6H₂O + 6>4 কেলরীগণ।
আবার জীবকোষে মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে সবাত শ্বসন হয়। এখানে গ্লুকোজ (C₆H₁₂O₆) সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে সরলতম অংশে অর্থাৎ জল (H₂O) এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বিশ্লিষ্ট হয়ে শক্তি সম্পূর্ণরূপে নির্গত হয়।
আবার অবায়ুজীবী জীবকোষে মুক্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে শ্বসন বস্তু আংশিক রূপে জারিত হয়ে শ্বসনবস্তু মধ্যস্থ শক্তির আংশিক মুক্তি ঘটে যা অবাত শ্বসন।
৩। মানবদেহে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড কি কি ভাবে পরিবাহিত হয় ?
উত্তরঃ পরিবহণতন্ত্রের দ্বারা প্রাণীদেহের কোষসমূহে খাদ্য এবং অক্সিজেন গ্যাস সরবরাহ করা হয় এবং কোষীয় শ্বসনে উৎপন্ন হওয়া CO₂ র সঙ্গে বিপাকীয় কার্যে উৎপন্ন হওয়া অন্যান্য অপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যসমূহ সংগ্রহ করে উৎপন্ন হওয়া স্থান থেকে কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে বহন করে নেওয়া হয়।
অর্থাৎ পরিবহণতন্ত্রের প্রধান কার্য হল একদিকে দেহকোষগুলিকে খাদ্য এবং অক্সিজেন গ্যাস সরবরাহ করা এবং অন্যদিকে তার বিনিময়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস এবং বিপাকীয় কার্যে উদ্ভব হওয়া অপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যসমূহের উৎপত্তি স্থল থেকে নিষ্কাষণ অঙ্গসমূহে প্রেরণ করা।
৪। মানবদেহের গ্যাসের বিনিময়ের প্রয়ােজনীয় স্থান বাড়ানাের জন্য ফুসফুস কিভাবে গঠিত ?
উত্তরঃ মানুষের শ্বাসকার্য প্রক্রিয়াটি প্রশ্বাস বা শ্বাসগ্রহণ এবং নিঃশ্বাস বা শ্বাস ত্যাগের পর্যায়ে সম্পন্ন হয়।
প্রশ্বাস-
(i) এই পর্যায়ে প্রথমে শ্বাসপেশীগুলির সংকোচন হয়।
(ii) মধ্যচ্ছদা সংকুচিত হলে নীচের দিকে নেমে যায়, ফলে বক্ষ-গহুর দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায়।
(ii) পিঞ্জর মধ্যস্থ পেশীগুলি সংকুচিত হলে বক্ষপিঞ্জরগুলাে বাইরের দিকে এবং ওপরের দিকে উত্তোলিত হয়, ফলে বক্ষগহুর প্রস্থে বৃদ্ধি পায়।
(vi) বক্ষ গহুর দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অন্তঃপুরা অঞ্চলের চাপ কমে যায়। কিন্তু এই সময় ফুসফুস মধ্যস্থ চাপ বেশি থাকায় ফুসফুস দুটি প্রসারিত হয়। ফলে ফুসফুসের বায়ুর চাপ কমে যায় এবং বায়ুমণ্ডলের O₂ ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং ফুসফুসের বায়ুথলিগুলাে বায়ু দ্বারা পূর্ণ হয়।
নিঃশ্বাস-
শ্বাসগ্রহণেরপর সমস্ত শ্বাস-পেশীগুলাে শিথিল হয়; ফলে মধ্যচ্ছদা পুনরায় উপরের দিকে উঠে এবং বক্ষপিঞ্জরগুলি আগের অবস্থায় ফিরে আসে। তাছাড়া সমস্ত বক্ষ গহ্বরের প্রাচীর প্রসারিত ফুসফুসের উপর চাপ দেয় ফলে ফুসফুসের CO₂ উল্টোপথে নামা ধর্মের মাধ্যমে দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
১। মানবদেহে পরিবহণতন্ত্রের প্রয়ােজনীয় অঙ্গ কী কী ? এইসব অঙ্গের কাজ কি ?
উত্তরঃ মানুষের রক্ত সংবহনতন্ত্রের প্রধান উপাদানগুলি হল- হৃৎপিণ্ড, ধমনী, শিরা এবং রক্তজালক।
(i) হৃৎপিণ্ড- এইটি সংবহন তন্ত্রের অন্তর্গত একটি পাম্প বিশেষ। হৃৎপিণ্ড অনবরত ছদবদ্ধ গতিতে স্পন্দিত হয়ে সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন করে।
(ii) ধমনী- যে রক্তবাহের মধ্যে দিয়ে রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে তাদের ধমনী বলে। ধমনীর প্রাচীর বেশ পুরু হয় এবং ধমনীর মধ্যে স্পন্দন অনুভূত হয়।
(iii) শিরা- যে রক্তবাহের মধ্যে দিয়ে রক্ত সারা দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে তাদের শিরা বলে। শিরার প্রাচীর পাতলা। শিরায় স্পন থাকে না। শিরার মধ্যে কপাটিকা থাকে।
(iv) রক্ত জালক- ধমনী ও শিরার সংযােগবাহকে জালক বা ক্যাপিলারি বলে। জালকের প্রাচীর খুব পাতলা হওয়ায় সহজেই ব্যাপন প্রক্রিয়ায় জালক মধ্যস্থ রক্ত এবং জালকের বাহিরের কলারস বা লসিকার মধ্যে প্রয়ােজনীয় বস্তুর আদান-প্রদান ঘটে।
২। স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পক্ষী জাতীয় প্রাণীতে বিশুদ্ধ এবং অশুদ্ধ রক্তে বিচ্ছিন্ন থাকার প্রয়ােজন আছে কেন ?
উত্তরঃ নিখুত রক্ত সঞ্চালনের জন্য অক্সিজেন যুক্ত এবং অক্সিজেন ছাড়া রক্তের সঞ্চালনের পৃথকীকরণ করা হয়। যে সমস্ত প্রাণীর অধিক শক্তির প্রয়ােজন তাদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া খুবই কার্যকর। স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পক্ষী উভয়েরই অধিক শক্তির প্রয়ােজন দেহের তাপমাত্রা ধ্রুবক রাখার জন্য।
৩। উচ্চস্তরের উদ্ভিদের পরিবহণে কি কি অঙ্গ থাকে ?
উত্তরঃ উদ্ভিদের ক্ষেত্রে জাইলেম এবং ফ্লোয়েম হল পরিবহণের পথ।
(i) জাইলেম- উদ্ভিদের মূলরােম দ্বারা শােষিত জল এবং জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ, এককথায় রস বা স্যাপ (Sap) জাইলেম বাহিকার মাধ্যমে অভিকর্যের বিপরীতেউর্ধমুখে বাহিত হয়ে পাতায় পৌছায়। জাইলেম বাহিকাগুলি মূল থেকে পাতা পর্যন্ত একটি অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ গঠন করে। এদের মাধ্যমে রস মূলজ চাপ, শােষণ চাপ, বায়বীয় চাপ ইত্যাদি ভৌত প্রক্রিয়ায় এবং জল ও জলীয়, দ্রবণের অণুগুলির সমসংযােগ ও অসমসংযােগের ফলে এবং প্রস্বেদন টানের ফলে উপর দিকে বাহিত হতে থাকে।
(ii) ফ্লোয়েম- উদ্ভিদের পাতায় উৎপন্ন তরল খাদ্যবস্তু ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে নিম্নাভিমুখী সংবাহিত হয়। ফ্লোয়েম কলার অন্তর্গত সিভনলগুলি পরস্পর খাড়াভাবে অবস্থান করে একটি অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ গঠন করে। সিভালের দুই কোষের অন্তর্বর্তী অনুপ্রস্থ প্রাচীর চালুনীর মতাে ছিদ্রবহুল হওয়ায় ওই ছিদ্রের মধ্য দিয়ে তরল খাদ্যবস্তু সহজেই বাহিত হতে পারে। সিভনল থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় খাদ্যরস উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন অঙ্গে পরিবাহিত হয়।
৪। উদ্ভিদে জল ও খনিজ পদার্থ কিভাবে পরিবাহিত হয় ?
উত্তরঃ জল এবং খনিজ হল উদ্ভিদদেহে রসের উৎস্রোত। রসের উৎস্রোত সম্পর্কে প্রচলিত মতবাদের মধ্যে বিজ্ঞানী ডিক্সন ও জলির (1894 খ্রীষ্টাব্দ) প্রস্বেদন বা বাষ্পমােচন টান ও জলের সমসংযােগ মতবাদটি সর্বজনস্বীকৃত। এই মতবাদটি তিনটি বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভরশীল। যেমন- মূলজ চাপ, সমসংযােগ বল এবং প্রস্বেদন টান।
(i) মূলজ চাপ- এই চাপ মূলরােম দিয়ে শােষিত জলকে জাইলেম বাহিকার মধ্যে দিয়ে উপর দিকে কিছুদূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়।
(ii) সমসংযােগ বল- মুল থেকে পাতা পর্যন্ত বিস্তৃত জাইলেম বাহিকাগুলি কাণ্ডের মধ্যে এক অবিচ্ছিন্ন নলের সৃষ্টি করে। সরু ব্যাসযুক্ত ওই জাইলেম বাহিকার মধ্যে মূল থেকে পাতা পর্যন্ত জল-অণুর এক স্তম্ভ তৈরি হয়। এই স্তম্ভে জলের অণুগুলি নিজেদের মধ্যে তীব্র সমসংযােগ টানে পরস্পর যুক্ত থাকে।;জল-অণুগুলি জাইলেম বাহিকার প্রাচীরের সেলুলােজ অণুর সঙ্গে অণুসঙ্গ টানে যুক্ত থাকে। এই দুই টান জল-অণু স্তম্ভকে ভাঙতে দেয় না।
মূলজ চাপ নিচের দিক থেকে এই জল-অণু স্তম্ভে জল-অণু সংযােজিত করে থাকে।
(iii) প্রস্বেদন টান- বাষ্পমােচনের ফলে পত্ররন্ধ্র দিয়ে এক অণু জল বাষ্পাকারে বেরিয়ে গেলে জাইলেম বাহিকার জল-অণুস্তম্ভে এক ধরনের টানের সৃষ্টি হয় যা মূল পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে থাকে, একে প্রস্বেদন টান বলে। এই টান জল-অণু স্তম্ভকে উপরের দিকে উঠতে সাহায্য করে। এইভাবে পাতা থেকে অণুজল বাম্পাকারে বেরিয়ে গেলে মুলের জল-অণুস্তম্ভে একটি জল-অণুর সংযােজন ঘটে, ফলে জলস্তম্ভটি ধীরে ধীরে উপর দিকে উঠতে থাকে।
৫। উদ্ভিদে খাদ্য কিভাবে স্থানান্তরিত হয় ?
উত্তরঃ উদ্ভিদের খাদ্য পরিবহণের উপায়সমূহ হল- ব্যাপন, অভিস্রবণ, শােষণ বাষ্পমােচন ইত্যাদি ভৌত ও শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলি উদ্ভিদের সংবহনে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে। স্থলজ উদ্ভিদরা অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় মূলরােম দিয়ে জল শােষণ করে এবং ব্যাপন প্রক্রিয়ায় খনিজ লবণ শােষণ করে। জল এবং জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ কোষান্তর ব্যাপন ও অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের জাইলেম বাহিকায় পৌছায় এবং জাইলেম দিয়ে পাতার মেসােফিল কলায় পৌছায়। পাতার পত্ররন্ধ্র দিয়ে বাম্পমােচন হওয়ার ফলে যে প্রস্বেদন টান সৃষ্টি হয় তার ফলে জল ও জলে দ্রবীভূত লবণ উর্ধমুখে বাহিত হয়। পাতায় উৎপন্ন খাদ্যরস ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে নিম্নাভিমুখে বাহিত হয়। ফ্লোয়েম কলা থেকে খাদ্যরস ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদদেহের কলা-কোষে ছড়িয়ে পড়ে।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
১। নেফ্রনের গঠন এবং কার্যকারিতার বিষয়ে বর্ণনা কর।
উত্তরঃ মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রেচন অঙ্গ হল বৃক্ক বা কিডনি। প্রতিটি বৃক্ক অসংখ্য গঠনগত ও কার্যগত একক নেফ্রন নিয়ে গঠিত। নেফ্রনের মধ্যে মূত্র তৈরি হয়। বৃক্কের মধ্যে রেচন পদার্থযুক্ত রক্ত প্রবেশ করলে নেফ্রনের গ্লোমেরিউলাসে তা পরিশ্রুত হয়। নেফ্রনের বৃক্কীয় নলীকায় পরিশ্রুত তরলের প্রয়ােজনীয় অংশের পুনঃশশাষণ হওয়ার পর বাকি তরল মুত্ররূপে বৃক্ক থেকে গবিনী পথে নির্গত হয়ে আসে এবং মূত্রাশয়ে সাময়িকভাবে জমা হতে থাকে। মূত্রাশয় থেকে মূত্র মূত্রনালীর মাধ্যমে দেহের বাহিরে নির্গত হয়।
নেফ্রনের গঠন- নেফ্রন হল বৃক্কের গঠনগত ও কার্যগত একক। প্রতিটি নেফ্রন প্রধানত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত যথা-
(i) ম্যালপিজিয়ান করপাসল।
(ii) বৃক্কীয় নালিকা। এবং
(ii) সংগ্রাহী নালিকা।
(i) ম্যালপিজিয়ান করােসল- নেফ্রনের এই অংশটি দেখতে কতকটা ফানেলের মতাে। এটি বৃক্কের কর্টেক্স অঞ্চলে থাকে। এর দুটি অংশ আছে। যেমন-
(a) বাওমানস ক্যাপসুল- এটি নেফ্রনের বদ্ধ ও স্ফীত অংশবিশেষ যা অনেকটা কাপের মতাে দেখতে। এর মধ্যে গ্লোমেরিউলাসের রক্তজালক থাকে।
(b) গ্লোমেরিউলাস- এইটি বাওম্যানের ক্যাপসুলের মধ্যে অবস্থানকারী রেনাল ধমনীর জালক।
(ii) বৃক্কীয় নালিকা- প্রতিটি বৃক্কীয় নালিকা তিনটি অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে, যেমন-
(a) নিকটবর্তী সংবর্ত নালিকা- এটি বৃক্কীয় নালিকার প্রথম কুণ্ডলীকৃত অংশ ।
(b) হেলীর লুপ- এটি বৃক্কীয় নালিকার মধ্যবর্তী ‘U’ আকৃতির নালিকা।
(c) দূরবর্তী সংবর্ত নালিকা- এটি বৃক্কীয় নালিকার অপেক্ষাকৃত মােটা এবং অল্প কুণ্ডলীকৃত শেষ অংশ, যা সংগ্রাহী নালিকায় উন্মুক্ত হয়।
(iii) সংগ্রাহী নালিকা- প্রতিটি নেফ্রনের বৃক্কীয় নালিকার শেষ অংশগুলি অপেক্ষাকৃত মােটা যে নালির সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাকে সংগ্রাহী নালিকা বলে।পুনঃশােষণের পর পরিত তরল এই নালির মাধ্যমে গর্বিনীতে প্রবেশ করে।
২। উদ্ভিদ কি কি উপায়ে বর্জ পদার্থ অপসারণ করে ?
উত্তরঃ বেশির ভাগ উদ্ভিদ তাদের রেচন পদার্থগুলােকে কেলাস বা কোলয়েডরূপে দেহের বিভিন্ন স্থানের কলাকোষে জমা করে রাখে। পরে নিম্নলিখিত উপায়ে তাদের রেচন পদার্থগুলিকে দেহ থেকে বর্জন করে।
(i) পত্রমােচন- আমড়া, শিমূল, শিরীষ, অশ্বখ প্রভৃতি গাছ পত্রমােচন করে রেচন পদার্থ ত্যাগ করেন
(ii) বাকল মােচন- অর্জুন, পেয়ারা ইত্যাদি গাছ বাকল মােচন করে তাদের রেচন পদার্থ বর্জন করে।
(iii) ফল মােচন- লেবু, আপেল, তেঁতুল প্রভৃতি গাছ ফল মােচন করে ফলের ত্বকে জমিয়ে রাখা রেচন পদার্থ ত্যাগ করে।
(iv) গঁদ নিঃসরণ- বাবলা, শিরিষ, সজিনা প্রভৃতি গাছগদ বা আঠা নিঃসরণ করে রেচন পদার্থ ত্যাগ করে।
(v) রজন নিঃসরণ- পাইন গাছের কাণ্ড, শাখা ও পাতার রজননালীতে রজন নামে হালকা হলুদ রং-এর রেচন পদার্থ সঞ্চিত থাকে। যখন প্রাকৃতিকভাবে বা আঘাতজনিত কারণে পাইন গাছের কোনও অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়, তখন ওই স্থান থেকে রেচন পদার্থ হিসেবে রজন নিঃসৃত হয়।
(vi) তরুক্ষীর নিঃসরণ- বট, ফণিমনসা, আকন্দ ইত্যাদি গাছের কাণ্ডে বা পাতায় তরুক্ষীর কোষ ও নালীতে তরুক্ষীর জমা থাকে। আঘাত পেলে আঘাত প্রাপ্ত স্থান থেকে ওই তরুক্ষীর নিঃসৃত হয়। সেই সঙ্গে জমে থাকা রেচন পদার্থও অপসারিত হয়।
৩। উৎপন্ন হওয়া মূত্রের পরিমাণ কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় ?
উত্তরঃ মূত্র জমা হওয়া নির্ভর করে জলগ্রহণের পরিমাণের উপর এবং রেচনে কতটুকু জল বাহির হয় তার উপর। জল প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করলে রেচনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যদি দেহ হতে অধিক পরিমাণে নাইট্রোজেন জাতীয় দ্রব্য রেচন হয় তবে কম মূত্র জমা হবে। আবার যদি চর্মের মাধ্যমে রেচন কম । হয় তবে মূত্র বেশি জমা হবে এবং প্রস্রাব বেশি হবে। এইভাবে রেচনতন্ত্র দেহের নাইট্রোজেন জাতীয় পদার্থের এবং জলের সমতা বজায় রাখে।
অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরঃ
১। মানবদেহে বৃক্ক থাকেঃ
(a) পুষ্টির জন্য।
(b) শ্বসনের জন্য।
(c) রেচনের জন্য।
উত্তরঃ (c) রেচনের জন্য।
২। উদ্ভিদের জাইলেম কলার কাজ হল-
(a) জল পরিবহণ।
(b) খাদ্য পরিবহণ।
(c) এমিনাে এসিড পরিবহণ।
(d) অক্সিজেন পরিবহণ।
উত্তরঃ (a) জল পরিবহণ।
৩। স্বপােষিত পুষ্টির জন্য প্রয়ােজন।
(a) কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং জল।
(b) ক্লোরােফিল।
(c) সূর্যালােক।
(d) উপরের সবকয়টি।
উত্তরঃ (d) উপরের সব কয়টি।
৪। কার্বন-ডাই-অক্সাইড, জল এবং শক্তি এর উৎপাদনে পাইভেটে ভাঙ্গন ঘটে।
(a) সাইটোপ্লাজমে।
(b) মাইটোকন্ড্রিয়াতে।
(c) ক্লোরােফ্লাষ্টে।
(d) লিউক্লিয়াসে।
উত্তরঃ (b) মাইটোকন্ড্রিয়া।
৫। আমাদের শরীরে চর্বী কিভাবে পাচিত হয় ? এই পাচন কোথায় সংঘটিত হয় ?
উত্তরঃ ক্ষুদ্রান্ত্রে চর্বীজাতীয় খাদ্যের পরিপাক হয়ে থাকে। ক্ষুদ্রান্ত্রে খাবার এসে পৌছিলে খাবারের সঙ্গে পিত্তরস, অগ্নাশয় রস এবং আন্ত্রিক রস মিশে যায়। পিত্তরসে খাবার পরিপাককারী কোনও উৎসেচক থাকে না। তাই খাবার পরিপাকে পিত্তের বিশেষ কোনাে ভূমিকা নেই। তবে পিত্তলবণ, চর্বীজাতীয় খাবারকে অবদ্রবে পরিণত করে পরিপাকে সাহায্য করে।
নীচে ক্ষুদ্রান্ত্রে থাকা উৎসেচকগুলির খাদ্য পরিপাকে ভূমিকা আলােচনা করা হল-
(i) এমাইলেজ শ্বেতসারকে মলটোজে পরিণত করে।
(ii) সুক্রেজ সুক্রোজকে গ্লুকোজ এবং ফুক্টোজে পরিণত করে।
(iii) ল্যাকটেজ ল্যাকটোজকে গ্লুকোজ এবং গ্যালাকটোজে পরিণত করে।
(iv) মলটেজ মলটোজকে গ্লুকোজে পরিণত করে।
(v) ট্রিপসিন পেপটোনকে পেপটাইডে পরিণত করে।
(vi) ইরেপসিন পেপটাইডকে এমাইনাে এসিডে পরিণত করে।
(vii) লাইপেজ চর্বীকে ফ্যাটি এসিড এবং গ্লিসারলে পরিণত করে।
৬। খাদ্যের পাচনে স্যালাইভার ভূমিকা কি ?
উত্তরঃ মুখবিবরে খাবার চিবানাের সময় খাবারের সঙ্গে লালারস মিশে যায়। লালারসে টায়ালিন ও মলটেজ উৎসেচক দুইটি থাকে। টায়ালিন সিদ্ধ শ্বেতসারকে মলটোজে পরিণত করে। (মুখবিবরে কেবল সিদ্ধ শ্বেতসার পাচিত হয়। এখানে প্রােটিন ও ফ্যাট পাচিত হয় না।)
৭। স্বপােষিত পুষ্টির প্রয়ােজন কি কি ?
উত্তরঃ উদ্ভিদের স্বভােজী পুষ্টির সর্তগুলাে হল-
(i) জীবিত কোষে ক্লোরােফিল থাকতে হবে।
(ii) উদ্ভিদের সবুজ অংশে বা কোষে জলের যােগান ধরা মূল বা পরিবেশ থেকে।
(iii) পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যালােকের প্রয়ােজন যার দ্বারা সালােক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্য সংশ্লেষ করা যায়।
(iv) পর্যাপ্ত পরিমাণে CO₂ যােগান ধরতে হয় কারণ সালােক সংশ্লেষণে কার্বোহাইড্রেট উৎপন্ন হয়।
৮। অবাত শ্বসন এবং সবাত শ্বসনের মধ্যে কি পার্থক্য ? অবাত শ্বসন ঘটে এমন কয়েকটি জীবের নাম লিখ।
উত্তরঃ পরজীবি পুষ্টি থাকা কয়েকটি উদ্ভিদ হল- ছত্রাক, স্বর্ণলতা, চন্দন প্রভৃতি। এরা স্বভােজী উদ্ভিদের তৈরি খাদ্য গ্রহণ করে কিংবা মৃত জৈব পদার্থ থেকে পুষ্টিরস শােষণ করে পুষ্টি সাধন করে।
৯। গ্যাসের বিনিময় বেশি করার সুবিধার জন্য ফুসফুসে এ্যালভিওলি (Alveoli) কিভাবে বিস্তৃত হয় ?
উত্তরঃ ঝাঝরা হল পাতলা দেওয়াল বিশিষ্ট রক্তসঞ্চালন তন্ত্রের একটি অংশ যেখানে রক্ত এবং বায়ুভর্তি ঝাঁঝরার মধ্যে গ্যাসের বিনিময় ঘটে।
ঝাঁঝরার গঠন বেলুনের মতাে হওয়ায় ইহা গ্যাসের বিনিময়ের সময় অনেকটা জায়গা দেয়।
১০। আমাদের শরীরে হিমােগ্লোবিনের অভাব ঘটলে কি হতে পারে ?
উত্তরঃ আমাদের দেহে হিমােগ্লোবিনের পরিমাণ গড়ে 100 মি. লি. -এ 14.5 গ্ৰাম। রক্তে হিমােগ্লোবিন কম থাকলে অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কমে যায়। ফলে এনিমিয়া বা রক্তহীনতা রােগ হয়।
১১। মানবদেহে রক্তের দ্বিচক্র (Double Circulation) বর্ণনা কর। এটির প্রয়ােজন হয় কেন ?
উত্তরঃ দ্বি-সঞ্চালন- মানবদেহে রক্ত হৃৎপিণ্ডের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় দুইবার চক্রাকারে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ সমস্ত দেহে একবার রক্ত সঞ্চালনের সময় হৃৎপিণ্ডের মধ্যে দুইবার সঞ্চালিত হয়। সেইজন্য একে রক্তের দ্বি-সঞ্চালন বলে।
দ্বি-সঞ্চালন দুইরকম যথা-
(i) সিষ্টেমিক সঞ্চালন।এবং
(ii) পালমুনারি সঞ্চালন।
দ্বি-সঞ্চালনের ফলে মানুষের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয় এবং শক্তির যােগান দেয়।
১২। জাইলেম এবং ফ্লোয়েম দ্বারা পরিবহণে কি কি পার্থক্য আছে ?
উত্তরঃ
জাইলেম | ফ্লোয়েম |
(i) ইহা সাধারণত ট্রাকিয়া, ট্রাকিড,জাইলেম পেরেনকাইমা এবং জাইলেম বা কাষ্ঠল তন্তু নামে কোষীয় উপাদান দিয়ে গঠিত। | (i) ইহা প্রধানত সিভনল, সঙ্গীকোষ, ফ্লোয়েম পেরেনকাইমা এবং ফ্লোয়েম তন্তু নামে কোষীয় উপাদান দিয়ে গঠিত। |
(ii) কেবল মাত্র জাইলেম পেরেন কাইমা ছাড়া জাইলেমের অন্যান্য কোষীয় উপাদানগুলি মৃত। | (ii) ফ্লোয়েম তন্তু ঘড়া ফ্লোয়েমের অন্যান কোষীয় উপাদানগুলি সজীব। |
(iii) জাইলেমের মাধ্যমে জল এবং দ্রবীভূত খনিজ লবণ পরিবাহিত হয়। | (iii) ফ্লোয়েমের মাধ্যমে খাদ্যরসজলে সংবাহিত হয়। |
(iv) জাইলেমের মাধ্যমে প্রধানত ঊর্ধ্বমুখী সংবহণ হয়। | (iv) ফ্লোয়েমের মাধ্যমে প্রধানত নিম্নমুখী সংবহন হয়। |
(v) জাইলেম কলার কোষ প্রাচীর স্থূল হয়। | (v) ফ্লোয়েম কলার কোষ প্রাচীর পাতলা ও ছিদ্রযুক্ত হয়। |
১৩। ফুসফুসে এ্যালভিওলি এবং বৃক্কে নেফ্রনের কাজের এবং গঠনের তুলনা কর ?
উত্তরঃ
ঝাঝরা (এলভিওলি) | নেফ্রন |
(i) ইহা বেলুনাকৃতি পাতলা আবরণ বিশিষ্ট মসৃণ তল। | (i) ইহা কানের ন্যায় পাতলা আবরণ বিশিষ্ট। |
(ii) ইহাতে কেপিলারি থাকে যার মধ্যে গ্যাসের আদান প্রদান হয়। | (ii) এতে বাওম্যান ক্যাপসুল পরিশ্রত তরলকে সংগ্রহ করে বৃক্কীয় নালীতে প্রেরণ করে। |
(iii) ইহা রক্ত হতে CO₂ এবং বায়ু হতে O₂ এর আদান প্রদানের সময় সারফেস কালি বৃদ্ধি পায়। | (iii) এতেও সারফেস কালি বৃদ্ধি পায় যখন রক্তের পরিস্রাবণ এবং শােষণ হয়। |
(iv) এরা খুবই ছােট এবং ফুসফুসে সংখ্যায় অনেক থাকে। | (iv) বৃক্কের গঠনগত এবং কার্যগত একক হল নেফ্রন। নেফ্রনের মধ্যেই বিশেষ প্রক্রিয়ায় মূত্র উৎপন্ন হয়। |
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১। রেচন কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে জৈবিক প্রক্রিয়ায় জীব তার বিপাকজাত দূষিত পদার্থগুলিকে দেহকোষে অদ্রাব্য কেলাস বা কোলয়েডরূপে সাময়িকভাবে জমা রেখে অথবা সরাসরি দেহ থেকে নির্গত করে দেহকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখে, তাকে রেচন বলে।
২। চলন এবং গমনের প্রধান পার্থক্য কি ?
উত্তরঃ চলনে জীবের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন হয় না, কেবল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন হয় ; গমনে জীবের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন হয়।
৩। ঐচ্ছিক পেশী এবং অনৈচ্ছিক পেশী কি ?
উত্তরঃ যে পেশী স্বেচ্ছায় সংকোচনশীল, তাকে ঐচ্ছিক পেশী বলে আবার যে পেশী স্বেচ্ছায় সংকোচনশীল নয়, তাকে অনৈচ্ছিক পেশী বলে।
৪। উদাহরণের সঙ্গে জীবন প্রক্রিয়ার অর্থ বুঝিয়ে লিখ।
উত্তরঃ বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেক জীবের শরীরে কয়েকটি বিশেষ প্রক্রিয়া অনবরত চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়ার ফলেই জীবের একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি হয় এবং জীব জড় পদার্থ হতে পৃথক হয়ে যায়। জীবদেহে অনবরত চলতে থাকা এই প্রক্রিয়াটিকে জীবন প্রক্রিয়া’ (Life Process) বলা হয়।
জীবদেহে অনবরত চলতে থাকা প্রক্রিয়াসমূহ হল- পরিপুষ্টি, শ্বসন, পরিবহণ, রেচন, শরীর কার্যের পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণ, বৃদ্ধি, চলন এবং প্রজনন।
৫। পরিপুষ্টি মানে কী ? পরিপুষ্টির বিভিন্ন দশাগুলি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ যে প্রক্রিয়ার দ্বারা জীব আহার গ্রহণ, পাচন এবং শােষণের মাধ্যমে পুষ্টিলাভ করে, সেই প্রক্রিয়াটিকে পরিপুষ্টি বলে। অর্থাৎ জীবই খাদ্যের পাচন এবং শােষণের দ্বারা দেহের বৃদ্ধি এবং বিকাশের সঙ্গে জৈবিক বিক্রিয়াতে প্রয়ােজন হওয়া শক্তি আহরণের প্রক্রিয়াটিকে পরিপুষ্টি বলে।
পরিপুষ্টির বিভিন্ন দশাসমূহ হল-
(i) খাদ্যগ্রহণ।
(ii) পাচন।
(iii) অবশােষণ।
(iv) আত্মীকরণ বা সাংগীকরণ।
(v) অপাচিত খাদ্যের বহিষ্করণ।
৬। পূর্ণগ্রাসী জীব কাকে বলে ? উদাহরণের সাথে পূর্ণগ্রাসী জীবের বিভিন্ন শ্রেণিসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ সম্পূর্ণ জৈব আহার ভক্ষণ করে সেখান থেকে পুষ্টি আহরণ করা জীবকেই পূর্ণগ্রাসী জীব বলা হয়। অর্থাৎ পূর্ণগ্রাসী পুষ্টিতে খাদ্যগ্রহণ করা জীবসমূহ পূর্ণগ্রাসী জীব। পূর্ণগ্রাসী প্রাণীর পাচিত খাদ্যবস্তু দেহকোষে রক্তে শশাষণ করে নেয়। এই প্রাণীর পাচনকার্য দেহের ভিতরে হয় এবং খাদ্যের হজম হওয়া অংশ মল হিসাবে দেহ হতে ত্যাগ করে।
খাদ্যের প্রকৃতি এবং উৎসের উপর নির্ভর করে পূর্ণগ্রাসী জীবকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়-
(a) তৃণভােজী প্রাণী- এই প্রকার প্রাণীরা ঘাস, লতা-পাতা, তৃণ ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে। উদাহরণ- গরু, ছাগল, হাতী, মহিষ, হরিণ ইত্যাদি।
(b) মাংসভােজী প্রাণী- এই সকল প্রাণীরা অপর প্রাণীর মাংস খেয়ে জীবন ধারণ করে। উদাহরণ- সাপ, মাদ্রাঙা, চিল, বক, বাঘ, সিংহ ইত্যাদি।
(c) পতঙ্গভভাজী প্রাণী- এই সকল প্রাণীরা পােকা-মাকড় ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে। উদাহরণব্যাঙ, টিকটিকি ইত্যাদি।
(d) মৃতভােজী প্রাণী- এই সকল প্রাণীরা অন্য প্রাণীর মৃতদেহ ভক্ষণ করে জীবন ধারণ করে। উদাহরণকাক, শকুন ইত্যাদি।
৭। জীবদেহে খাদ্যের প্রয়ােজনীয়তার মুখ্য কারণগুলি বর্ণনা কর।
উত্তরঃ বেঁচে থাকার জন্য জীবমাত্রেই, সে প্রাণীই হােক বা উদ্ভিদ হােক, নিয়মিতভাবে তাদের খাদ্যের প্রয়ােজন। খাদ্যই প্রাণীদেহের প্রধান শক্তির উৎস। যা প্রাণীদেহের বিভিন্ন জৈবিক কার্য তথা বৃদ্ধি, চলন অঙ্গের মেরামতি ইত্যাদি অতি আবশ্যকীয় কার্যসমূহ সমাধা করে। জীবদেহে খাদ্যের প্রয়ােজনীয়তার মুখ্য কারণ কয়টি হল-
(i) খাদ্যই জীবের শক্তি যােগায়- জীবের দেহে অনবরত চলে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য শক্তি আবশ্যক। শক্তি ব্যতীত জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্ভব নহে। এই শক্তি জীব খাদ্য হতেই সংগ্রহ করে। খাদ্যের অভাবে জীবন প্রক্রিয়া অচল হয়ে পড়ে এবং ফলে জীবের মৃত্যু ঘটে।
(ii) খাদ্যই জীবের বৃদ্ধি এবং বিকাশে সাহায্য করে- খাদ্য হতে আহরণ করা উপাদানসমূহে জীবের ভৌতিক আধার প্রােটোপ্লাজম গঠন করে। প্রােটোপ্লাজমে জীবদেহের গঠন এবং বৃদ্ধি করে। খাদ্যে থাকা পুষ্টিকারক দ্রব্যসমূহের উপরেই জীবের বৃদ্ধি এবং বিকাশ নির্ভর করে। এই দ্রব্যসমূহের উপযুক্ত পরিমাণে যােগান থাকলে জীবের বৃদ্ধি এবং বিকাশ নিয়মিতভাবে হয়।
(iii) খাদ্যই জৈবিক প্রক্রিয়াতে প্রয়ােজনীয় দ্রব্য যােগান দেয়- জীবদেহের জীবন প্রক্রিয়াতে ব্যবহৃত হওয়া বিভিন্ন প্রয়ােজনীয় দ্রব্য- খনিজ লবণ, জল, পটাসিয়াম, সােডিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি খাদ্য হতেই পাওয়া যায়। বিভিন্ন জৈবিক কার্ষ চলার জন্য প্রয়ােজন হওয়া উপাদানগুলি জীবই দেহকোষে জমা করে রাখে এবং প্রয়ােজনমত দেহে ব্যবহার করে।
এই সকল বিভিন্ন কারণে জীবদেহে খাদ্যের প্রয়ােজন।
৮। খাদ্য কাকে বলে ? প্রাণীর খাদ্যে থাকা জৈব উপাদানগুলির কার্যের বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আভাস দাও।
উত্তরঃ যে সকল দ্রব্য হতে জীব শক্তি এবং শরীর বৃদ্ধির জন্য প্রয়ােজনীয় উপাদানসমূহ আহরণ করে সেই দ্রব্যসমূহকে আহার বা খাদ্য বলা হয়। খাদ্য হল নির্দিষ্ট কয়েকটি জৈব এবং অজৈব যৌগের সমষ্টি। এই যৌগসমূহকে কার্য অনুযায়ী ছয়টি উপাদানে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলি নীচে উল্লেখ করা হল-
(i) কার্বোহাইড্রেট (Carbohydrate)- কার্বোহাইড্রেট হল খাদ্যের একটি প্রধান জৈবিক উপাদান। ইহা কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দ্বারা গঠিত। জীবদেহের প্রয়ােজনীয় শক্তির মূল উৎস হল কার্বোহাইড্রেট।
(ii) প্রােটিন- প্রােটিন জীবের খাদ্যে অতি প্রয়ােজনীয় শরীর গঠনকারী জৈব যৌগ। এ ছাড়া জীবের দেহগঠন এবং বৃদ্ধি হয় না। বিভিন্ন প্রােটিন যৌগ জেরাটিন, কোলাজেন, ইলাস্টিন ইত্যাদি দিয়ে দেহের বিভিন্ন কলা গঠন করে। প্রােটিন দেহের অক্সিজেন বহনকারী যৌগ হিসাবে কাজ করে।
(iii) লিপিড বা স্নেহ পদার্থ- লিপিড় বা স্নেহ পদার্থ খাদ্যের এক মুখ্য জৈব উপাদান। বিভিন্ন ধরনের তেল এবং চর্বি জাতীয় খাদ্যসমূহ লিপিডের অন্তর্গত। স্নেহপদার্থ জীবের দেহে ভবিষ্যতে ব্যবহারের উপযােগী শক্তির ভাণ্ডার হিসাবে সঞ্চিত হয়ে থাকে। লিপিডে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কিছু সংখ্যক কোষাঙ্গ ক্ষেত্রে মুখ্য উপাদান হিসাবে অংশগ্রহণ করে।
(iv) খনিজ লবণ- জীবদেহে খনিজ লবণ একটি অতি প্রয়ােজনীয় অজৈব উপাদান। ইহা জীবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং পুষ্টিতে বিশেষ সহযােগিতা করে। খনিজ লবণ জীবদেহে চলে থাকা বিভিন্ন বিপাকীয় কার্যে বিশেষভাবে সাহায্য করে এবং দেহের কলা গঠনে অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন খনিজ মৌলই প্রাণীদেহে স্নায়ু প্রেরণা প্রবাহ এবং পেশীর সঞ্চালন কার্যে সাহায্য করে। খাদ্যে খনিজ লবণের পরিমাণ কম হলে বিপাকীয় কার্যে ব্যাঘাত জন্মে, ফলে বিভিন্ন রােগ দেখা দেয়।
(v) জল- জীবদেহের কোষসমূহে চলে থাকা জীবন-কার্যের জন্য জল অতি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
(a) জল কোষের জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার দ্রাবক রূপে কাজ করে।
(b) খাদ্যের প্রধান জৈব উপাদান কার্বোহাইড্রেট, প্রােটিন, লিপিড ইত্যাদির পাচনে জল সহায়তা করে।
(c) জল ছাড়া প্রােটোপ্লাজম সক্রিয় হয়ে থাকতে পারে না।
(d) জল দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে।
(e) রক্তের প্লাজমায় থাকা খাদ্যের নানাপ্রকার উপাদান এবং রেচন দ্রব্যসমূহের পরিবহণে জল সাহায্য করে।
(f) সালােক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় জুল মুখ্য বিক্রিয়া রূপে অংশগ্রহণ করে শ্বেতসার প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।
(vi) ভিটামিন- ভিটামিন জীবদেহের প্রয়ােজনীয় জৈব যৌগ। ভিটামিনসমূহ প্রাণীদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। ভিটামিনের অভাবে প্রাণীদেহে নানা ধরনের রােগ দেখা দেয়। ভিটামিন প্রাণীর শরীর সুস্থ রাখে এবং দেহের বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করে শরীর বিষয়ে কার্য পরিচালনা করতে সাহায্য করে।
৯। পাচন কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে প্রক্রিয়ার দ্বারা খাদ্যের জটিল উপাদানসমূহকে সরল অবস্থায় পরিবর্তন করা হয়, সেই প্রক্রিয়াকে পাচন বলে।
১০। খাদ্য কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে সকল দ্রব্য হতে জীব শক্তি ও শরীর বৃদ্ধির জন্য প্রয়ােজনীয় উপাদানসমূহ আহরণ করে, সেইসকল দ্রব্যকে খাদ্য বলা হয়।
১১। পুষ্টির দ্বারা জীবদেহে কি কি হয় ?
উত্তরঃ পুষ্টির দ্বারা জীবদেহে সংঘটিত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় প্রয়ােজনীয় শক্তি আহরণ করে। পুষ্টির দ্বারা জীবদেহ বৃদ্ধি এবং কলার গঠন হয়। এর দ্বারা জীব রােগ-প্রতিরােধ ক্ষমতা আহরণ করে। পুষ্টির দ্বারাই জীব ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য দেহে খাদ্য সঞ্চয় করে রাখে।
১২। জীবদেহে চলা সাধারণ জীবন প্রক্রিয়াসমূহ কি কি ?
উত্তরঃ জীবদেহে চলা সাধারণ জীবন প্রক্রিয়াসমূহ হল- পরিপুষ্টি, শ্বসন, পরিবহণ, রেচন, শরীর কার্যের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ, বৃদ্ধি, চলন এবং প্রজনন ।
১৩। জীবন প্রক্রিয়ার জন্য কি প্রয়ােজন ?
উত্তরঃ জীবদেহে যে কোন জীবন প্রক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার জন্য শক্তির প্রয়ােজন, এই শক্তি জীব খাদ্য হতে আহরণ করে।
১৪। পরিবহণ বলতে কি বুঝ ?
উত্তরঃ বহুকোষী জীবের দেহে শােষিত খাদ্য একস্থান হতে অন্যস্থানে বিতরণ হওয়া প্রক্রিয়াটিকে পরিবহণ বলা হয়।
১৫। পরিপুষ্টি বলতে কি বুঝ ?
উত্তরঃ পরিপুষ্টি হল জীবনের এক জীবন প্রক্রিয়া যার দ্বারা জীব আহার গ্রহণ, পাচন এবং শােষণের মাধ্যমে পুষ্টি লাভ করে। খাদ্যের মাধ্যমে উদ্ভিদ এবং প্রাণী পুষ্টি লাভ করে।
১৬। জীবন প্রক্রিয়ার মূল চালিকাশক্তি কি ?
উত্তরঃ জীবের জীবন প্রক্রিয়ার মূল চালিকাশক্তি হল খাদ্য বা আহার। খাদ্য বা আহার ব্যতীত জীবের দেহে জীবন প্রক্রিয়া সম্ভব নয়।
১৭। কার্য অনুযায়ী পুষ্টিকর দ্রব্যসমূহকে কি কি ভাগে করা হয়েছে ?
উত্তরঃ কার্য অনুযায়ী পুষ্টিকর দ্রব্যসমূহকে নিটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেইগুলি হল-
(i) দেহ গঠনকারী পুষ্টিকর দ্রব্য।
(ii) শক্তির উৎপাদনকারী পুষ্টিকর দ্রব্য।এবং
(iii) দেহের বিপাক কার্য নিয়ন্ত্রণ করা পুষ্টিকর দ্রব্য।
১৮। আত্মীণ বা স্বাংগীকরণ কাকে বলে ?
উত্তরঃ খাদ্যের পাচনের মাধ্যমে জটিল অণুগুলি সরল অণুতে রূপান্তর হয়। এই সরল অণুগুলি দেহকোষে শােষণ করে নিয়ে কোষস্থ পদার্থে পরিবর্তন করা প্রক্রিয়াকে আত্মীকরণ বা স্বাংগীকরণ বলে।
১৯। শর্করা কাকে বলে ?
উত্তরঃ কার্বোহাইড্রেট যৌগগুলি একটি বা একাধিক গােট বা একক দ্বারা গঠিত। এইরূপ একটি গােট বা একককে শর্করা বলে।
২০। একশর্করা কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে শর্করা একটিমাত্র শর্করার একক দ্বারা গঠিত তাকে একশর্করা বলে।
২১। ক্লোরােপ্লাস্টের আকার কিরূপ ?
উত্তরঃ ক্লোরােপ্লাস্ট বিভিন্ন আকৃতিতে থাকে। কিছু সংখ্যক ক্লোরােপ্লাস্ট গােলাকার, ডিম্বাকার থালার মতাে এবং ফিতীকৃতি ইত্যাদি। আবার কিছু সংখ্যক ক্লোরােপ্লাস্ট বহু বাহু যুক্ত হয়ে থাকে।
২২। আলােক নির্ভর বিক্রিয়ার কয়টি ভাগ এবং কি কি ?
উত্তরঃ আলােক নির্ভর বিক্রিয়ায় তিনটি ভাগ আছে-
(i) আলােকশক্তি শােষণ করা।
(ii) ইলেকট্রন এবং হাইড্রোজেন স্থানান্তরের দ্বারা ATP এবং NADPH উৎপন্ন করা।এবং
(iii) বিক্রিয়ার জন্য নির্গত হওয়া ইলেকট্রনের স্থান পূর্ণ করা।
২৩। সালােক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াসমূহ কি কি ভাগে সম্পূর্ণ হয় ?
উত্তরঃ সালােক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার বিক্রিয়াসমূহ প্রধানত দুইটি ভাগে সম্পূর্ণ হয়। সেইগুলি হল-
(i) আলোক নির্ভর বিক্রিয়া (Light Dependent Reaction) বা আলােক বিক্রিয়া (Light Reaction)।
(ii) আলােক অনির্ভর বিক্রিয়া (Light Independent Reaction) বা আন্ধার বিক্রিয়া (Dark Reaction)।
২৪। আলােক নির্ভর বিক্রিয়াতে কি হয় ?
উত্তরঃ আলােক নির্ভর বিক্রিয়াতে সূর্যের আলােকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং এই শক্তি কম সময়ের জন্য ATP এবং NADPH -তে সঞ্চিত হয়।
আলােক নির্ভর বিক্রিয়ার আলােকশক্তি শােষণ হয়। ইলেকট্রন এবং হাইড্রোজেন স্থানান্তরের ফলে ATP এবং NADPH উৎপন্ন হয় এবং বিক্রিয়ার জন্য বের হয়ে আসা ইলেকট্রনের স্থান পূরণ করে।
২৫। জীবদেহে সংবহনের গুরুত্ব কী ?
উত্তরঃ সংবহনের গুরুত্ব- সংবহনের মাধ্যমে জীবদেহে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সাধিত হয়-
১। পুষ্টি- উদ্ভিদদেহে সালােকসংশ্লেষের মাধ্যমে প্রস্তুত তরল খাদ্য ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে এবং উন্নত প্রাণীদের ক্ষেত্রে পৌষ্টিক নালি থেকে শােষিত সরল খাদ্য-উপাদান রক্তের মাধ্যমে সংবহন প্রক্রিয়ায় সমস্ত দেহকোষে পৌছায়।
২। শ্বসন- সংবহনের প্রধান উদ্দেশ্য শ্বাস-অঙ্গের মাধ্যমে সংগৃহীত অক্সিজেন প্রতিটি কোষে প্রেরণ এবং কোষের শ্বসনের ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইডকে শ্বাস-অঙ্গে বহন করে এনে পরিবেশে ত্যাগ করা।
৩। হরমােন পরিবহণ- উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন অগ্রবর্ত অংশ থেকে এবং প্রাণীদেহে বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হরমােন সংবহনের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন কোষে পৌঁছায়।
৪। রেচন- কোষে উৎপন্ন বিপাকজাত বর্জ্য পদার্থসমূহ সংবহনের ফলে রেচন-অঙ্গে আসে এবং দেহ থেকে দূরীভূত হয়।
৫। সঞ্চয়- দেহের প্রয়ােজনাতিরিক্ত খাদ্যবস্তু সংবহনের মাধ্যমে বিভিন্ন সঞ্চয়ী-অঙ্গে পৌছায় এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চিত থাকে।
৬। দেহের সুরক্ষা- উন্নত প্রাণীর ক্ষেত্রে সংবহনের মাধ্যমে বিভিন্ন রক্তকণিকা (যেমন- রক্তের শ্বেতকণিকা) সরাসরি রােগজীবাণু ধ্বংস করে এবং অ্যান্টিবডি বহনের মাধ্যমে দেহের সুরক্ষায় এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৭। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ- উষ্ণ শশাণিত প্রাণীর ক্ষেত্রে সংবহনের মাধ্যমে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়।
৮। দেহের জলসাম্য নিয়ন্ত্রণ- সংবহন ক্রিয়া জীবদেহের জলসাম্যাবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে।
২৬। রক্তের বিভিন্ন উপাদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ রক্তের বিভিন্ন উপাদান রক্তের প্রধান দুটি উপাদান হল রক্তরস ও রক্তকণিকা। রক্তে রক্তরস থাকে 55% এবং রক্তকণিকা থাকে 45%।
১। রক্তরস- রক্তরসে 91-92% জল এবং ৪-9% কঠিন ও গ্যাসীয় পদার্থ থাকে। কঠিন পদার্থে আবার 0.9% অজৈব ও 7-8% জৈব পদার্থ থাকে।
অজৈব পদার্থের উপাদানগুলি হল- সােডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, তামা, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সালফার, লােহা, আয়ােডিন, দস্তা, ক্লোরিন, অ্যামােনিয়া ইত্যাদি।
জৈব পদার্থের উপাদানগুলি হল-
(i) প্রােটিন জাতীয়- সিরাম অ্যালবুমিন, সিরাম গ্লোবিউলিন, ফাইব্রিনােজেন, প্রােগ্রম্বিন।
(ii) নাইট্রোজেনঘটিত জৈব পদার্থ- ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, অ্যামাইনাে অ্যাসিড, ক্রিয়েটিন, ক্রিয়েটিনিন।
(iii) অন্যান্য জৈব বস্তু- গ্লুকোজ, লিপিড, বিভিন্ন হরমােন, উৎসেচক, ভিটামিন, বিলিরুবিন, ক্যারােটিন ইত্যাদি।
২। রক্তকণিকা- রক্তে তিন ধরনের কণিকা থাকে- লােহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকা।
(i) লােহিত রক্তকণিকা- প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে লােহিত রক্তকণিকার সংখ্যা প্রায় 50 লক্ষ। মানুষের লােহিত রক্তকণিকাগুলি গােলাকার, দ্বি-অবতল ও নিউক্লিয়াসবিহীন। (পরিণত অবস্থায়)। লােহিতকণিকায় শ্বাসরঙ্গক হিসেবে হিমােগ্লোবিন থাকায় এটি লাল বর্ণের হয়।
(ii) শ্বেত রক্তকণিকা- প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে এদের সংখ্যা প্রায় 5.10 হাজার। এগুলি দু-প্রকারের—দানাদার (নিউট্রোফিল, ইওসিনােফিল ও বেসােফিল) এবং দানাবিহীন (লিম্ফোসাইট ও মনােসাইট)। এগুলি নিউক্লিয়াসযুক্ত।
(iii) অণুচক্রিকা- প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে এদের সংখ্যা প্রায় 2.5-5 লক্ষ। এগুলি নিউক্লিয়াসবিহীন।
২৭। রক্তের প্রধান কাজগুলি উল্লেখ করাে।
উত্তরঃ রক্তের প্রধান কাজগুলি নিম্নরূপ-
১। পুষ্টিদ্রব্যের পরিবহণ- পরিপাকের ফলে উদ্ভুত সরল খাদ্য-উপাদান, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও জল অন্ত্র থেকে শােষিত হয়ে রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কলাকোষে পৌছেয়।
২। গ্যাসের পরিবহণ- রক্ত শ্বাস-অঙ্গ থেকে অক্সিজেন কলাকোষে এবং কলাকোষ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শ্বাস-অঙ্গে বহন করে।
৩। প্রমােনর পরিবহণ- দেহের বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কোনাে নালি না থাকায় অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি নিঃসৃত পদার্থ (হরমােন) রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষে নীত হয়।
৪। রেচন পদার্থের পরিবহণ- দেহের বিভিন্ন কলাকোশে উৎপন্ন রেচন পদার্থসমূহ রক্তের মাধ্যমে রেচন-অঙ্গে পৌছায় ও পরে দেহের বাইরে নির্গত হয়।
৫। দেহের সুরক্ষা- দেহে রােগজীবাণু প্রবেশ করলে রক্তের শ্বেতকণিকার দ্বারা তা ধবংসপ্রাপ্ত হয়।
৬। অম্ল ও ক্ষারের সমতা- রক্তে উপস্থিত বিভিন্ন বাফার’ বিপাক ক্রিয়ায় উৎপন্ন বিভিন্ন অম্ল ও ক্ষারের প্রশমন ঘটিয়ে দেহের অম্ল ও ক্ষারের সমতা বজায় রাখে।
৭। জলসাম্যের নিয়ন্ত্রণ- রক্তরস ও কলারসের মধ্যে জল বিনিময়ের মাধ্যমে জলের সমতা নিয়ন্ত্রিত হয়।
৮। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ- রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। [ রক্তে জলের পরিমাণ বেশি এবং জলের আপেক্ষিক তাপ হল এক (1)] তাই রক্তের তাপ পরিবাহিতা বেশি।
৯। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রধান ভূমিকা পালন করে রক্তের সান্দ্রতা ও রক্তের মােট পরিমাণ।
১০। রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ- রক্ততঞ্চনের মাধ্যমে রক্তপাত বন্ধ হয়।
১১। প্রােটিনের সঞ্চয়ভাণ্ডার- রক্তরসের প্রােটিন প্রয়ােজনে কলাকোষীয় প্রােটিনের সঞ্চয়ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে।
২৮। বাম্পমােচনের ওপর প্রভাববিস্তারকারী বিভিন্ন প্রভাবক সম্পর্কে আলােচনা করাে।
উত্তরঃ বহিঃপ্রভাব
১। কার্বন ডাই-অক্সাইড- বাতাসে CO₂,-এর ঘনত্ব বেশি হলে পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়। CO₂, -এর উচ্চ গাঢ়ত্ব সম্ভবত রক্ষীকোষে K⁺ -এর অনুপ্রবেশে বাধা প্রদান করে এবং পত্ররন্ধ্রের উন্মােচনকে ব্যাহত করে।
২। আলােক- আলােক উপস্থিতিতে পত্ররন্ধ্র খােলা থাকে। আলাের তীব্রতা বাড়লে বাষ্পমােচনের হার বাড়ে।
৩। বাতাসের আর্দ্রতা- বায়ুমণ্ডলে আদ্রতা বেশি হলে অর্থাৎ বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বাষ্পমােচনের হার কমে।
৪। বায়ুপ্রবাহ- বায়ুপ্রবাহ বৃদ্ধি পেলে পত্ৰতল থেকে জলীয় বাষ্পের দ্রুত অপসারণ ঘটে। ফলে বাষ্পমােচন বৃদ্ধি পায়।
৫। উষ্ণতা- পরিবেশের উষ্ণতা বাড়লে বাষ্পীভবনের হার বাড়ে এবং বাষ্পমােচনেরও হার বাড়ে।
অন্তঃপ্রভাবঃ
১। পাতার গঠন- উদ্ভিদের পত্রফলক প্রসারিত হলে বাষ্পমােচনের হারও বাড়ে। আবার পাতার ত্বকে পুরু কিউটিকল থাকলে বাষ্পমােচনের হার কমে।
২। পত্ররন্ত্রের গঠন- সংখ্যা- পাতার পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা বেশি হলে বাষ্পমােচনের হার বাড়ে। পাতার উধর্বত্ত্বক বা নিম্নত্বকে পত্ররন্ধ্রের অবস্থান হলে বাষ্পমােচন স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু কাণ্ডের বা পত্ৰত্বকের গভীরে পত্ররন্ধ (নিবেশিত পত্ররন্ধ্র) থাকলে বাষ্পমােচন কমে। জাঙ্গল উদ্ভিদে (Xerophyte) এরূপ নিবেশিত পত্ররন্ধ্র থাকে।
৩। পত্ৰত্বকে রােম বা শঙ্কের উপস্থিতি- পাতার পৃষ্ঠতলে রােম বা শঙ্কের উপস্থিতি আলাে প্রতিফলিত করে পত্ররন্ধ্রের উন্মােচনকে ব্যাহত করে। ফলে বাষ্পমােচনের হার কমে।
৪। হরমােন- রক্ষীকোষে অ্যাস্পাইসিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়লে বাষ্পমােচনের হার কমে। অ্যাস্পাইসিক অ্যাসিড কোষপর্দার ভেদ্যতাকে কমিয়ে রক্ষীকোষে পটাশিয়াম আয়নের অনুপ্রবেশ ব্যাহত করে। ফলে পত্ররন্ধ্রের উন্মােচন হয় না।
২৯। উদ্ভিদের সংবহন পদ্ধতি-
উত্তরঃ উদ্ভিদের সংবহন পদ্ধতি- উদ্ভিদের সংবহন প্রক্রিয়াটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়-
১। রসের উৎস্রোত এবং
২। পাতায় প্রস্তুত খাদ্যের সংবহন।
১। রসের উৎস্রোত- মূলরােম দ্বারা শােষিত জল ও জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ কর্টেক্সের কোষস্তর দিয়ে জাইলেম বাহিকার ভিতর দিয়ে ঊধ্বমুখে প্রবাহিত হয়ে পাতায় পৌছায়। এই জাইলেম বাহিকা মূল থেকে পাতা পর্যন্ত একটি অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ গঠন করে। এই অবিচ্ছিন্ন অঙ্গে শােষিত জল ও জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ মূলজ চাপ, শশাষণ চাপ, প্রস্বেদন টান ইত্যাদি কয়েকটি প্রক্রিয়ার ফলে উপরের দিকে বাহিত হয়ে পাতার মেসােফিল কলায় পৌছায়। এইভাবে মাটির জল রসের উৎস্রোতের মাধ্যমে পাতায় পৌঁছায়।
২। পাতায় প্রস্তুত খাদ্যের সংবহন- পাতায় প্রস্তুত খাদ্যবস্তু ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। ফ্লোয়েম কলার সীভনলের কোষগুলি পরপর সজ্জিত হয়ে একটি অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ গঠন করে। সীভনলের ভেতর অণুপ্রস্থ প্রাচীরে চালুনির মতাে ছােটো ছােটো ছিদ্র থাকায় তরল খাদ্যবস্তু সহজেই পরিবাহিত হতে পারে। এই সীভনল থেকেই খাদ্যরস উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এইভাবেই পাতায় প্রস্তুত খাদ্যবস্তু উদ্ভিদদেহে সংবাহিত হয়।
৩০। রসের উৎস্রোত কাকে বলে ? রসের উৎস্রোত প্রক্রিয়াটি চিত্ৰসহ বর্ণনা করাে।
উত্তরঃ সংজ্ঞা- উদ্ভিদের মূলরােম দ্বারা শােষিত জল ও জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ জাইলেম কার মাধ্যমে অভিকর্ষের বিপরীত দিকে অর্থাৎ ঊর্ধ্বমুখে বাহিত হয়ে পাতায় পৌছানাের শারীরবৃত্তীয় পদ্ধতিকে রসের উৎস্রোত (Ascent of sap) বলে।
উৎস্রোত প্রক্রিয়া- রসের উৎস্রোত প্রক্রিয়াটি তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। পর্যায় তিনটি সংক্ষেপে আলােচনা করা হল।
১। প্রথম পর্যায়- মৃত্তিকাস্থিত কৈশিক জল এবং জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ ব্যাপন অথবা অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় মূলরােমের কোষে প্রবেশ করে। এরপর মুলজ চাপ, শােষণ চাপ এবং বায়বীয় চাপের প্রভাবে কোষান্তর অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় জল এবং জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ কর্টেক্সের মধ্য দিয়ে পারণ কোষ ও পরিচক্র অতিক্রম করে প্রােটোজাইলেম অংশে পৌছায়।
২। দ্বিতীয় পর্যায়- জাইলেম বাহিকার মধ্যে জলের এবং খনিজ লবণ মিশ্রিত জলের অণুগুলি নিজেরা একে অন্যের সঙ্গে সংসক্তি টানে জুড়ে গিয়ে অভগ্ন জল-অণুস্তম্ভ গঠন করে। এ ছাড়া জল-অণুস্তম্ভ এবং জাইলেম বাহিকার কোষপ্রাচীরের সেলুলােজ অণুর মধ্যে আসঞ্জন টানের ফলে একটি অবিচ্ছিন্ন জলস্তম্ভ সৃষ্টি হয়।
৩। তৃতীয় পর্যায়- উদ্ভিদের পাতায় প্রস্বেদন বা বাষ্পমােচনের ফলে জল উদ্ভিদদেহ থেকে বেরিয়ে গিয়ে একটি শূন্যস্থানের সৃষ্টি করে। ওই শূন্যস্থান পূরণের জন্য বাষ্পমােচন টানের ফলে জল-অণুস্তম্ভ ধীরে ধীরে পাতায় পৌঁছায়। ফলে রসের উৎস্রোত ঘটে।
৩১। রসের উৎস্রোত সম্বন্ধীয় মতবাদগুলি আলােচনা করাে।
উত্তরঃ রসের উৎস্রোত সম্পর্কিত মতবাদ- উদ্ভিদদেহে জলের সঙ্গে অজৈব লবণ মিশে থাকে। একে রস বা স্যাপ বলা হয়। উদ্ভিদদেহে রসের উৎস্রোত সম্বন্ধে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। এগুলি হল-
১। মূলজ চাপ মতবাদ- স্টেফান ও হেলস-এর (1727) মতে মূলজ চাপের জন্য জাইলেম বাহিকার মধ্য দিয়ে উদ্ভিদহেহে রসের ঊর্ধ্বমুখী পরিবহণ ঘটে।
২। বায়বীয় চাপ মতবাদ- এই মতবাদ অনুসারে বায়বীয় চাপের দরুন জাইলেম বাহিকার মাধ্যমে মূল থেকে পাতায় রসের উৎস্রোত ঘটে।
৩। অধিপ্রাণ মতবাদ- বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর মতে জাইলেম বাহিকা-সংলগ্ন বহিস্তরের ভিতরের দিকের সজীব কোষের পর্যায়ক্রমিকসংকোচন ও প্রসারণের ফলে জাইলেম বাহিকার মধ্য দিয়ে রসের উৎস্রোত সংঘটিত হয়।
৪। বাষ্পমােচন সংসক্তি টান মতবাদ- বিজ্ঞানী ডিক্সন ও জলির মতবাদ অনুসারে পাতার পৃষ্ঠ থেকে বাষ্পমােচন বা প্রস্বেদন হওয়ার ফলে একটি ঊর্ধ্বমুখী শশাষণ চাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে পরস্পর দৃঢ়ভাবে যুক্ত জলের অণুগুলি উপরের দিকে উঠতে থাকে। জাইলেম বাহিকায় জলের অণুগুলির মধ্যে সংসক্তির সৃষ্টি হয় এবং জলের অণু ও জাইলেম বাহিকার গায়ে আসঞ্জন ক্রিয়ায় নিরবিচ্ছন্ন সূক্ষ্ম: জলস্তম্ভের সৃষ্টি হয়। একদিকে মূলজ চাপ মূলরােম দিয়ে শােষিত জল ও দ্রবীভূত লবণ (রস)-কে জাইলেমে ক্রমাগত সরবরাহ করে, অন্যদিকে বাষ্পমােচন টান জাইলেম বাহিকার জলস্তম্ভের উপর শােষণ চাপজনিত টান সৃষ্টি করে। এই দুটি কারণে জলের সংসক্তি ও আসঞ্জন বল জাইলেম বাহিকায় অখণ্ড জলস্তম্ভ বজায় রেখে জলকে ক্রমাগত উপরের দিকে উঠতে সাহায্য করে।
৩২। বাম্পমােচন পদ্ধতি পরীক্ষার সাহায্যে বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ উদ্ভিদের বাষ্পমােচন পরীক্ষা-
১। উপকরণ- (i) টবসহ একটি সতেজ চারাগাছ।
(ii) একটি বেলজার।
(iii) একটুকরাে পলিথিন পেপার।
(iv) একটি কাচের স্ল্যাব।
(v) ভেসলিন।
(vi) সুতাে।
(vii) একটি টেবিল।
(viii) অনার্স কপার সালফেট।
২। পরীক্ষা পদ্ধতি- (i) রােদ পড়ে এমন জায়গায় টেবিলটিকে রেখে এর উপর কাচের স্ল্যাবটি দেওয়া হল এবং টবসহ চারাগাছটিকে বসানাে হল।
(ii) চারাগাছটির কাণ্ডের গােড়া থেকে টবটিকে পলিথিন পেপার দিয়ে এমনভাবে বেঁধে দেওয়া হল যাতে টব থেকে জলীয় বাষ্প না বেরােতে পারে।
(iii) এবার টবসহ চারাগাছটিকে একটি শুকনাে বেজার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হল এবং বেলজার ও কাচের স্ল্যাবের সংযােগস্থলে ভেসলিন দিয়ে বায়ুনিরুদ্ধ করা হল।
(iv) এই অবস্থায় সমগ্র ব্যবস্থাটিকে কিছুক্ষণ সূর্যালােকে রাখা হল।
৩। পর্যবেক্ষণ- কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল যে বেলজারের ভিতরের গায়ে। বিন্দু বিন্দু স্বচ্ছ তরল জমে গেছে।
৪। সিদ্ধান্ত- বেলজারের ভিতরের গায়ে জমা তরল কণা নিশ্চয়ই চারাগাছ থেকে বাষ্পমােচনের ফলে নির্গত হয়েছে। এটি যে জল তা প্রমাণ করার জন্য ওই তরলকণার উপর সাদা অনার্জ কপার সালফেট ছিটিয়ে দেওয়া হল এবং দেখা গেল তা নীলবর্ণ ধারণ করেছে। এই পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত হল যে উদ্ভিদ তরল নির্গত করেছে তা আসলে বাম্পাকারে বহিষ্কৃত জল। অর্থাৎ প্রমাণিত হল যে উদ্ভিদ বাষ্পমােচন করে।
৩৩। প্যানং-এর পােটোমিটারের সাহায্যে বাম্পমােচনের হার নির্ধারণের পরীক্ষাটির বর্ণনা দাও ?
উত্তরঃ বাপমােচনের হার নির্ধারণের পরীক্ষা-
১। উপকরণ- (i) প্যানং-এর পােটোমিটার।
(ii) উদ্ভিদের সতেজ শাখা।
(iii) বিকার।
(iv) জল।
(v) ভেসলিন।
(vi) ছিদ্রযুক্ত রবার কর্ক।
পরীক্ষা পদ্ধতি- (i) প্রথমে পােটোমিটারটি জলপূর্ণ করা হল।
(ii) উদ্ভিদের সতেজ শাখাটিকে সঙ্গে সঙ্গে পােটোমিটারের উধর্বমুখী বাহুটির মুখে রবারের কর্কের মধ্য দিয়ে ঢােকানাে হল এবং ভেসলিন দিয়ে বায়ুনিরুদ্ধ করা হল।
(iii) পােটোমিটারের নিম্নমুখী উল্লম্ব বাহুর প্রান্তভাগ জলপূর্ণ বিকারের জলের মধ্যে রাখা হল।
(iv) ড্রপারের সাহায্যে নিম্নগামী বাহুর মুখ থেকে কয়েক ফোটা জল টেনে অথবা এই প্রান্তটিকে একটু সময়ের জন্য জলের উপর তুলে পােটোমিটারের নিম্নমুখী বাহুতে একটি বুদবুদ ঢােকানাে হল।
(v) অনুভূমিক বাহুটি অংশঙ্কিত অর্থাৎ নির্দিষ্ট স্কেলযুক্ত। পরীক্ষার শুরুতে পােটোমিটারের অনুভূমিক বাহুতে বুদবুদটির অবস্থান চিহ্নিত করা হল।
৩। পর্যবেক্ষণ- কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে যে, বুদবুদটি অনুভূমিক বাহু রাবর ক্রমশ বাঁদিকে সরে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর বুদবুদের সঞ্চালন স্কেল থেকে নির্ণয় করা যাবে।
৪। সিদ্ধান্ত- বাষ্পমােচনের ফলে পাতা থেকে জলীয় বাষ্প নির্গত হলে গাতায় নালিকা বাণ্ডিলের জলস্তম্ভের উপর শশাষণ চাপ সৃষ্ট হয়। এই শােষণ চাপের (টান) ফলেই বুদবুটি ক্রমশ বাঁদিকে এগিয়ে যায়। এভাবে বাষ্পমােচনের হার সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।
৩৪। উদ্ভিদদেহে পাতায় প্রস্তুত খাদ্য কীভাবে সংবাহিত হয় ?
উত্তরঃ পাতায় প্রস্তুত খাদ্যের সংবহন- পাতায় খাদ্যবস্তু উদ্ভিদের ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। ফ্লোয়েম কলার সীভনলের কোষগুলি পরপর সজ্জিত হয়ে একটি অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ গঠন করে। সীভনলের ভিতর অণুপ্রস্থ প্রাচীর চালুনির মতাে ছিদ্রযুক্ত হওয়ায় তরল খাদ্যবস্তু সহজেই পরিবাহিত হতে পারে। এই সীভল থেকেই খাদ্যরস ব্যাপন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এইভাবেই পাতায় প্রস্তুত খাদ্যবস্তু উদ্ভিদদেহে সংবাহিত হয়।
উদ্ভিদদেহে ফ্লোয়েম কলার মধ্য দিয়ে জৈব খাদ্যের পরিবহণ পদ্ধতিটি জটিল এবং বিভিন্ন বিজ্ঞানী এর পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ প্রণয়ন করেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য মতবাদগুলি হল-
১। দলবদ্ধ প্রবাহতত্ত্ব- বিজ্ঞানী হার্টউইগ (Hertwig), মুন (Munch) এবং কার্টিস (Curtis) প্রমুখের মতে, পাতায় তৈরি জৈব খাদ্যমূল থেকে আসা জল শােষণ করে এবং তার ফলে মেসােফিল কলাকোষের রসস্ফীতি চাপ বাড়ে। এই চাপ পার্থক্যের কারণে পাতায় উৎপন্ন জৈব খাদ্য জলে দ্রবীভূত হয়ে ফ্লোয়েম কলার মধ্য দিয়ে কাণ্ড ও মূলের দিকে যায়।
২। সাইটোপ্লাজমীয় প্রবাহতত্ত্ব- বিজ্ঞানী দ্য ভিস (deVries) এবং কার্টিস (Curtis) প্রমুখের মতে, সীলের সাইটোপ্লাজমের আবর্তনের ফলে একটি কোষ থেকে অপর কোষে খাদ্য পরিবাহিত হয়।
৩। তড়িৎ- অভিস্রবণ মতবাদ- বিজ্ঞানী স্প্যানার (Spanner)-এর মতে, সীভনলের সীভপ্লেটের দু-পাশে তড়িৎ আয়নের বিভব পার্থক্যের ফলে জৈব খাদ্য প্রবাহিত হয়। এই বিভব পার্থক্য সৃষ্টির মুলে থাকে K⁺ আয়ন।
৪। সক্রিয় ব্যাপন মতবাদ- বিজ্ঞানী ম্যাসন (Mason) এবং মাসকেল (Maskel) এর মতে, প্রােটোপ্লাজমের সক্রিয়তার ফলে খাদ্যসংশ্লেষের স্থান থেকে বিভিন্ন অংশে খাদ্য ফ্লোয়েম কলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
৩৫। জীবন প্রক্রিয়া মানে কি ?
উত্তরঃ জীবের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য লাভের জন্য জীবদেহে অবিরাম চলিতে থাকা প্রক্রিয়াকেই জীবন প্রক্রিয়া বলে।
৩৬। স্বভােজী জীব কাহাকে বলে ?
উত্তরঃ যে সকল জীব বায়ু হইতে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং মাটি থেকে জল ও খনিজ লবণ শােষণ করিয়া নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করে সেই সকল জীবকে স্বভােজী জীব বলে।
৩৭। পরপােষিত পুষ্টি বলিতে কি বুঝ ?
উত্তরঃ যে পুষ্টিতে জীব উদ্ভিদজগৎ বা প্রাণীজগৎ হইতেআহার গ্রহণ করিয়া পুষ্টি লাভ করে তাহাকে পরপােষিত পুষ্টি বলা হয়।।
৩৮। পূর্ণগ্রাসী পুষ্টি দ্বারা খাদ্য আহরণ করা দুটি প্রাণীর নাম লেখ।
উত্তরঃ গরু, বাঘ, ছাগল।
৩৯। মৃতজীবী পােষী প্রাণীর একটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ এসটাচিয়ার, ইউপ্পিনা।
৪০। মানুষের দেহে অবস্থিত দুইটি পরজীবী প্রাণীর উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ প্লাজমােডিয়াম, এন্টাবিমা, হিস্টালাইটিকা।
৪১। কোন্ পরজীবী প্রাণী মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়া রােগ সৃষ্টি করে ?
উত্তরঃ প্লাসমােডিয়াম ভাইভেক্স।
৪২। কলেরা রােগ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়ার নাম কি ?
উত্তরঃ ভাইব্রিওকোলেরি।
৪৩। মানুষের অ্যামিবীয় আমাশা সৃষ্টি করা জীবটির বৈজ্ঞানিক নাম কি ?
উত্তরঃ এন্টামিবা বা হিস্টোলাইটিকা।
৪৪। মানব শরীরের দুইটি অন্তঃপরজীবীর নাম লিখ।
উত্তরঃ ফিতাকৃমি, গােলকৃমি।
৪৫। কার্বোহাইড্রেট বলিতে কি বােঝ ?
উত্তরঃ কার্বোহাইড্রেট হইল কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দ্বারা গঠিত খাদ্যের একটি প্রধান জৈবিক উপাদান। এই শ্রেণীর উপাদানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হইল যে, ইহাদের সকলতম অণুগুলিতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেম মৌল দুইটি জলের অণুতে থাকা 2:1 অনুপাতের ন্যায় পাওয়া যায়।
৪৬। দেহ গঠনকারী পুষ্টিদ্রব্যের দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ মাছ, মাংস, ডাইল ইত্যাদি।
৪৭। দেহের বিপাক কার্য নিয়ন্ত্রিত করা পুষ্টিদ্রব্যের দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সােডিয়াম।
৪৮। প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকা চার রকম খাদ্যের উৎসের নাম লেখ।
উত্তরঃ চাউল, আটা, ময়দা, চিনি, আলু ইত্যাদি।
৪৯। কার্বোহাইড্রেট যৌগে কি কি মৌল থাকে ?
উত্তরঃ কার্বোহাইড্রেট যৌগে কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন মৌল থাকে।
৫০। কার্বোহাইড্রেটের সূক্ষ্মতম একককে কি বলে ?
উত্তরঃ কার্বোহাইড্রেটের সূক্ষ্মতম একককে শর্করা বলে।
৫১। দুই প্রকার এক শর্করার নাম লিখ।
উত্তরঃ গ্লুকোজ, গেলেকটোজ, ফুকটোজ।
৫২। দুধে থাকা একশর্করাটির নাম লিখ।
উত্তরঃ গেলেকটোজ দুধে পাওয়া যায়।
৫৩। প্রাণীদেহে আছে অথচ উদ্ভিদদেহে নেই, সেই একশর্করাটি কি ?
উত্তরঃ গেলেকটোজ।
৫৪। প্রাণীদেহে অবস্থিত দুই প্রকার বহু শর্করার নাম লিখ।
উত্তরঃ গ্লাইকোজেন এবং সেলুলােজ।
৫৫। কোন প্রকার শর্করা মানুষ কার্বোহাইড্রেটের মুখ্য খাদ্যরূপে গ্রহণ করে ?
উত্তরঃ শ্বেতসার’ বা ‘স্টার্চ’কে মানুষে কার্বোহাইড্রেটের মুখ্য খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে।
৫৬। শ্বেতসারের মুখ্য খাদ্যের উৎস দুটির নাম লিখ।
উত্তরঃ চাউল, আটা, আলু, চিনি ইত্যাদি শ্বেতসারের মুখ্য খাদ্য উৎস।
৫৭। একটি একশর্করা এবং একটি দ্বিশর্করার উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ একশর্করার উদাহরণ- গ্লুকোজ।
দ্বি-শর্করার উদাহরণ- লেক্টোজ।
৫৮। উদ্ভিদজনিত এবং প্রাণীজনিত বহুশর্করার একটি করে উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ উদ্ভিদজনিত বহুশর্করা হইল- সেলুলােজ।
প্রাণীজনিত বহুশর্করা হইল- গ্লাইকোজেন।
৫৯। খাদ্যে অবস্থিত নাইট্রোজেন যুক্ত জৈব উপাদানটির নাম কি ?
উত্তরঃ প্রােটিন।
৬০। রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা দুই প্রকার প্রােটিনের নাম লিখ।
উত্তরঃ ফাইব্রিনােজেন এবং থ্রমবিন।
৬১। রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করার প্রােটিন রঞ্জক দ্রব্যের নাম লিখ।
উত্তরঃ হিমােগ্লোবিন।
৬২। তেল এবং চর্বির পার্থক্য কি ?
উত্তরঃ উদ্ভিদজনিত লিপিড যৌগগুলিকে তেল বলা হয়। প্রাণীজনিত লিপিড যৌগগুলিকে চর্বি বলা হয়। তেল সাধারণ উষ্ণতায় তরল অবস্থায় থাকে এবং চর্বি সাধারণ উষ্ণতায় জমাট অবস্থায় থাকে।
৬৩। জীবদেহে লিপিড় বা স্নেহদ্রব্যের প্রয়ােজন কি ?
উত্তরঃ লিপিড বা স্নেহদ্রব্য জীবদেহে ভবিষ্যতে ব্যবহারের উপযােগী আহাররূপে সঞ্চিত হইয়া থাকে। প্রয়ােজন অনুসারে স্নেহ হইতেও জীবশক্তি আহরণ করে। তদুপরি লিপিডের অণুতে বেশি পরিমাণে তাপশক্তি নিহিত থাকে। লিপিডে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৬৪। খাদ্যের কোন্ উপাদানের অণুতে শক্তির পরিমাণ অধিক ?
উত্তরঃ কার্বোহাইড্রেটে।
৬৫। লালায় অবস্থিত ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংসকারী দ্রব্যটির নাম কি ?
উত্তরঃ লাইসােজাইম।
৬৬। লালার প্রধান দুটি কার্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ লালার প্রধান দুটি কার্য হ’ল-
(i) লালাটিতে থাকা মিউচিন নামক খাদ্যই পদার্থ পিচ্ছিল করে। ফলে খাদ্য। বস্তু সহজে গিলিতে পারি।
(ii) লালাটির টায়েলিন নামক উৎসেচকের সাহায্যে খাদ্যের শ্বেতসার অংশের গাচন হয়।
৬৭। পাকস্থলী গ্রন্থির হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড উৎপন্ন করিতে পারা কোষটির নাম কি ?
উত্তরঃ পেরাইটেল কোষ।
৬৮। অগ্ন্যাশয় রসে অবস্থিত প্রােটিন বিশ্লেষীউৎসেচকদুটির নাম লিখ।
উত্তরঃ ট্রিপসিন, কাইমােট্রিপসিন।
৬৯। খাদ্যনালীর কোঅংশে পিত্তস্থলী হইতে পিত্তরস আসিয়া পড়ে ?
উত্তরঃ ডিওডেনামে।
৭০। নিম্নলিখিত বাক্যগুলির মধ্য থেকে শুদ্ধ উত্তর বাছিয়া বাহির কর-
১। সবুজ উদ্ভিদের পুষ্টি পােষিত/পরপােষিত পূর্ণগ্রাসী/মৃতজীবী পােষী পুষ্টি।
উত্তরঃ স্বপােষিত পুষ্টি।
২। প্রাণীর পুষ্টি স্বপােষিত / পরপােষিত / পূর্ণগ্রাসী / মৃতজীবী পােষী পুষ্টি।
উত্তরঃ পরপােষিত পুষ্টি।
৩। এন্টামিবা হিস্টালিটিকার পুষ্টি মৃতজীবীপপাষী/ পরজীবী/ সহজীবী/ মৃতভােজী।
উত্তরঃ পরজীবী পুষ্টি।
৪। ________একপ্রকার অন্তঃপরজীবী (মশা মাছি / জোক /প্লাজমােডিয়াম ভাইভেক্স)।
উত্তরঃ প্লাজমােডিয়াম ভাইভেক্স।
৫। মানুষের শরীরে কলেরা রােগ সৃষ্টিকারী জীবটি _________(একপ্রকার প্রটোজোয়া /ব্যাক্টেরিয়া / কৃমি। পতংগ)।
উত্তরঃ ব্যাক্টেরিয়া।
৬। কার্বোহাইড্রেট একপ্রকার শক্তি উৎপাদনকারী/দেহগঠনকারী/ দেহসংরক্ষক দ্রব্য।
উত্তরঃ শক্তি উৎপাদনকারী।
৭। কোনটি বিপাককার্য নিয়ন্ত্রিত করা পুষ্টিদ্রব্য ? (কার্বোহাইড্রেট/ স্নেহদ্রব্য/ ভিটামিন/ প্রােটিন)।
উত্তরঃ ভিটামিন।
৮। গ্লুকোজ/ সুক্রোজ/ মল্টোজ একপ্রকার শর্করা।
উত্তরঃ গ্লুকোজ।
৯। শুধুমাত্র দুধেই অবস্থিত একশর্করার নাম গ্লুকোজ/ফুকটোজ/ গেলেকটোজ/ মলটোজ।
উত্তরঃ গেলেকটোজ।
১০। কোটি শর্করা প্রাণীদেহে পাওয়া যায় অথচ উদ্ভিদে পাওয়া যায় না। (গ্লুকোজ / ফুকটোজ/ মলটোজ /লেকটোজ)
উত্তরঃ লেকটোজ।
১১। কোন প্রকার যৌগ আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি গঠন করে ? (কার্বোহাইড্রেট/ প্রােটিন / লিপিড)
উত্তরঃ প্রােটিন।
১২। নখ এবং চুলে অবস্থিত প্রােটিন যৌগটির নাম কি ?
উত্তরঃ কেরাটিন।
১৩। উৎসেচকগুলি কার্বোহাইড্রেট/ প্রােটিন/ স্নেহদ্রব্য / ভিটামিন দ্বারা গঠিত।
উত্তরঃ প্রােটিন।
১৪। কোগুলি লিপিড ? (কোলেস্টেরল/ প্রথমবিন/ ফুকটোজ)।
উত্তরঃ কোলেস্টেরল।
১৫। কোন্ খাদ্যের উপাদানের অণুতে সবচাইতে বেশি শক্তি নিহিত থাকে ? (কার্বোহাইড্রেট / প্রােটিন / মেহদ্রব্য)।
উত্তরঃ কার্বোহাইড্রেট।
১৬। দাঁত এবং অস্থির গঠনে ক্যালসিয়াম/ সােডিয়াম/ পটাসিয়াম সালফারের প্রয়ােজন।
উত্তরঃ ক্যালসিয়াম’।
১৭। সােডিয়াম/ পটাসিয়াম/ সালফার/ লােহা শ্বাসরঞ্জক হিমােগ্লোবিনের প্রধান উপাদান।
উত্তরঃ লােহা।
১৮। কোটি আন্ত্রিক রসে অবস্থিত পাচক উৎসেচক ? (পেপসিন/ রেনিন/ ইরেপসিন/ ট্রিপসিন)।
উত্তরঃ ট্রিপসিন।
১৯। পাকস্থলী গ্রন্থির কোন্ কোষ থেকে HCl অ্যাসিড উৎপন্ন হয় ? (অক্সিনটিক / পেপটিক / মিউকাস)।
উত্তরঃ পেপটিক।
২০। মানুষের খাদ্যনালীর কোন্ অংশে খাদ্য শােষণ হয় ? (কলন/ ডিওডেনাম পাকস্থলী ক্ষুদ্রান্ত্র)।
উত্তরঃ ক্ষুদ্রান্ত্র।
২১। কোন্ উৎসেচক অগ্ন্যাশয় রসে পাওয়া যায় ? (এমাইল-পসিন/ ইরেপসিন / পেপসিন)।
উত্তরঃ এমাইলপসিন।
৭১। মানুষের লালা গ্রন্থিগুলির নাম লিখ।
উত্তরঃ মানুষের দেহে থাকা লালাগ্রন্থিগুলি হচ্ছে-
(a) পেরােটিড গ্রন্থি।
(b) সাবম্যাক্সিলারী গ্রন্থি।
(c) সাবলিংগুয়াল গ্রন্থি।
৭২। যকৃতের দুটো মুখ্য কার্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ যকৃতের দুটো কার্য নিম্নরূপ-
(i) শরীরের অতিরিক্ত গ্লুকোজ যকৃতে গ্লাইকোজেন নামে এক ধরঢ়ে যৌগে রূপান্তর করে ভবিষ্যতের ব্যবহারের জন্য সঞ্চয় করে।
(ii) দেহে উৎপন্ন হওয়া অ্যামােনিয়া নামে বিষাক্ত রেচন দ্রব্যকে এটা কম বিষাক্ত পদার্থ ইউরিয়ায় রূপান্তরিত করে।
৭৩। পাকস্থলীর রসে থাকা উপাদানগুলির নাম লেখ।
উত্তরঃ পাকস্থলীর রসে থাকা উপাদানগুলি হচ্ছে পেপসিন, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এবং রেনিন।
৭৪। পিত্তরস পাচনে কিভাবে সাহায্য করে ?
উত্তরঃ পিত্তরস এক ধরনের অতি ক্ষারকীয় পাচকরস। ইহা পাকস্থলী থেকে আসা আম্লিক গুণ সম্পন্ন খাদ্যের আম্লিক গুণ প্রশমিত করে ফলে অগ্ন্যাশয় রসে থাকা উৎসেচকগুলি প্রশম মাধ্যমে ক্রিয়া করতে পারে। তাছাড়া পিত্তরসে থাকা দুই প্রকার পিত্তলবণ স্নেহদ্রব্যের বৃহৎ কণাগুলিকে ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় রূপান্তর করে পাচনে সাহায্য করে।
৭৫। অগ্ন্যাশয় বসে থাকা প্রােটিন বিশ্লেষী এবং স্নেহবিশ্লেষী উৎসেচক দুটোর নাম লেখ।
উত্তরঃ অগ্ন্যাশয় রসে থাকা প্রােটিন বিশ্লেষী উৎসেচকটি হচ্ছে ট্রিপসিন এবং স্নেহবিশ্লেষী উৎসেচক হচ্ছে অগ্ন্যাশয় লাইপেজ।
৭৬। শূন্যস্থান পূরণ কর-
১। যে পুষ্টির দ্বারা জীব নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করে নেয় তাকে _______পুষ্টি বলে।
উত্তরঃ স্বপােষিত।
২। অ্যামিবার পুষ্টি ________ প্রকারের।
উত্তরঃ পরজীবী।
৩। নিজের আহার নিজে প্রস্তুত করিতে না পারা জীবের পুষ্টিকে _________পুষ্টি বলে।
উত্তরঃ পরপােষিত।
৪। পুষ্টির প্রকার অনুযায়ী খরগােস, হরিণ, বাঘ ইত্যাদি প্রাণীর পুষ্টিকে _________পুষ্টি বলে।
উত্তরঃ পূর্ণগ্রাসী।
৫। কাঠফুল ছত্রাকের পুষ্টিকে ________পুষ্টি বলে।
উত্তরঃ মৃতজীবী পােষী।
৬। উদ্ভিদ বা প্রাণীর গলিত দেহের জৈব পদার্থ থেকে পুষ্টি আহরণ করা জীবকে ________বলে।
উত্তরঃ মৃতজীবী।
৭৷ এন্টামিবার পুষ্টিকে ________পুষ্টি বলে।
উত্তরঃ পরজীবী।
৮।_________মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়া রােগ সৃষ্টি করে।
উত্তরঃ প্লাসমােডিয়াম ভাইভেক্স।
৯। অ্যামিবীয় আমাশা ________নামের প্রাণী দ্বারা হয়ে থাকে।
উত্তরঃ এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা।
১০। সানডিউ একপ্রকার________উদ্ভিদ।
উত্তরঃ পতঙ্গভভাজী।
১১। কলসী উদ্ভিদ একপ্রকার _________উদ্ভিদ।
উত্তরঃ পতঙ্গ।
১২। খাদ্যে অবস্থিত ভিটামিন এবং খনিজ লবণ_________দ্রব্য।
উত্তরঃ প্রয়ােজনীয় খাদ্যদ্রব্য।
১৩।_________একপ্রকার দেহ গঠনকারী প্রধান দ্রব্য।
উত্তরঃ প্রােটিন।
১৪।_________জীবদেহের প্রয়ােজনীয় শক্তির মুখ্য খাদ্য উৎস।
উত্তরঃ কার্বোহাইড্রেট।
১৫। গ্লুকোজ, ফুক্টোজ, মলটোজ এবং শ্বেতসারকে একত্রে ________বলে।
উত্তরঃ শর্করা।
১৬। ________এক শর্করা থেকে কোষীয় শ্বসনে শক্তির উৎপাদন হয়।
উত্তরঃ গ্লুকোজ।
১৭।________একপ্রকার উদ্ভিদজনিত এবং________ একপ্রকার প্রাণীজনিত বহু শর্করা।
উত্তরঃ সেলুলােজ, গ্লাইকোজেন।
১৮।_________ প্রােটিনের একক।
উত্তরঃ অ্যামিনাে অ্যাসিড।
১৯। রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা প্রােটিনের নাম _________ এবং __________।
উত্তরঃ ফাইব্রিনােজেন, থ্রমবিন।
২০। নখ এবং চুলে অবস্থিত প্রােটিনের নাম _________।
উত্তরঃ কেরাটিন।
২১। ঘি, মাখন এবং তেলজাতীয় পদার্থকে _________ একত্রে বলা হয়।
উত্তরঃ প্রাণীজ লিপিড।
২২। মানুষের শরীরে অবস্থিত সাধারণ লিপিডের নাম_________।
উত্তরঃ কলেস্টেরল।
২৩। সাধারণ উষ্ণতায় তরল এবং জমানাে অবস্থায় পাওয়া স্নেহদ্রব্যকে ক্ৰমে ________ এবং ________ বলা হয়।
উত্তরঃ তেল, চর্বি।
২৪। দাঁত এবং হাড় গঠনে প্রয়ােজনীয় মৌলটির নাম _________।
উত্তরঃ ক্যালসিয়াম।
২৫।_________পাচকরসে কোন ধরনের উৎসেচক থাকে না ?
উত্তরঃ পিত্তরসে।
২৬। অগ্ন্যাশয় রসে অবস্থিত অ্যামাইলেজকে __________ বলে।
উত্তরঃ কার্বোহাইড্রেট।
২৭। পিত্তরসে অবস্থিত পিত্ত লবণের নাম _________এবং ________।
উত্তরঃ বিশ্লেষী পাচক উৎসেচক।
Please send me the pdf