Class 10 Bengali Chapter 2 বিজয়া দশমী Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 10 Bengali Chapter 2 বিজয়া দশমী and select needs one.
Class 10 Bengali Chapter 2 বিজয়া দশমী
Also, you can read SCERT book online in these sections Class 10 Bengali Chapter 2 বিজয়া দশমী Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 10 Bengali Chapter 2 বিজয়া দশমী These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 10 Bengali Chapter 2 বিজয়া দশমী for All Subject, You can practice these here…
বিজয়া দশমী
Chapter – 2
অনুশীলনীর প্ৰশ্নোত্তরঃ
(ক) অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর লেখ :
১। উমা কে ? তাঁর আরও কি কি নাম রয়েছে ?
উত্তরঃ উমা গিরিরাজ নন্দিনী ।
তাঁর আরও কয়েকটি নাম হল – পার্বতী , দুর্গা , এলোকেশী , গিরিনন্দিনী , অপরাজিতা , কালিকা ইত্যাদি ।
২। গিরীশের রাণী বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ?
উত্তরঃ গিরীশের রাণী বলতে শিবের ঘরণী পার্বতীকে বোঝানো হয়েছে।
৩। নবমী নিশি শেষ হলে কি হবে ?
উত্তরঃ নবমী নিশি শেষে উমা বাপের বাড়ি থেকে বিদায় নেবে।
৪। নবমী নিশিকে কে না যেতে অনুনয় করেছেন ?
উত্তরঃ নবমী নিশিকে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত না যেতে অর্থাৎ শেষ না হতে অনুনয় করেছেন ।
(খ) দীর্ঘ উত্তর লেখো :
১। বিজয়া দশমী সম্পর্কে কী জান লেখো ।
উত্তরঃ শরৎ ঋতু মানেই মায়ের আগমনের দিন সমাগত। ছয়টি ঋতুর মধ্যে তৃতীয় ঋতু হল শরৎ ঋতু । শরতের প্রকৃতি ঘোষণা করে দেয় গিরিরাজের কন্যার আগমন বার্তা । আকাশে বাতাসে ভেবে বেড়ায় পুজোর গন্ধ । কাশফুল, শিউলি ফুল, পদ্মেরা হেসে ওঠে । আকাশে সাদা পেঁজা তুলোর মতো ভেসে বেড়ায় ।
দুর্গাপূজা হিন্দুদের একটি বিশেষ উৎসব । প্রতিবছর বিশেষ আড়ম্বর সহকারে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়। দেবী দুর্গা বা পার্বতী হিমালয় এবং মেনকার কন্যা, প্রতিরূপে বরণ করে নিয়েছিলেন দেবাদিদেব মহাদেবকে । দুর্গাদেবীর প্রথম পুজো করেন রামচন্দ্র — লংকাধিপতি রাবনকে হত্যা1 করার জন্য। দুর্গাপূজা সাধারণত আশ্বিন মাসে শরৎ ঋতুতে হয়ে থাকে । পশ্চিমবঙ্গ , বিহার , আসাম এবং ত্রিপুরায় যে দুর্গাপূজা হয় তাকে বলা হয় আকালবোধন , শারদোৎসব , শারদীয়া পূজা , মহাপূজা বা মায়ের পূজা ।
দুর্গার দুটি মেয়ে এবং দুটি ছেলে ― লক্ষ্মী , সরস্বতী এবং কার্তিক ও গনেশ । লক্ষ্মী , সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির দেবী এবং সরস্বতী , শিক্ষার দেবী। মায়ের পায়ের কাছে থাকে সিংহ । দেবীর ডান পা – টি থাকে সিংহের উপর । মা দুর্গার দশহাতে দশটি অস্ত্র থাকে ।
দুর্গা পূজা শুরু হয় ষষ্ঠী থেকে এবং চলে সপ্তমী , অষ্টমী , নবমী পর্যন্ত । অষ্টমীর দিন মানুষ মায়ের কাছে তাদের প্রার্থনা জানায় । নবমীর রাত থেকেই বেজে উঠে দেবীর বিদায়ের সুর। নবমীর রাত্রি শেষ হওয়ার অর্থই হল দেবীর পিত্রালয় ছেড়ে স্বামীর গৃহের দিকে যাত্রা শুরু । এ যেন আমাদের ঘরের কন্যার বিদায়ের ক্ষণ উপস্থিত হয় । বাঙালি গৃহবধূরা , মায়েরা সিঁদুর , পান , মিষ্টি দিয়ে মাকে বরণ করে বিদায় জানার । কন্যারুপী উমাকে বিদায় দেওয়ার মুহূর্তে বাঙালি বধূরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন । মায়ের মাটির মূর্তি জলে ভাসিয়ে দেওয়ার পর শুরু হয় বিজয়া দশমী পালন । সবাই সবাইকে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান । ছোটরা বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ নেয় । বড়রা ধানদুর্বা দিয়ে ছুটদের আশীর্বাদ করে । সকলেই মিষ্টিমুখ করে । বয়স্করা পরস্পর পরস্পরকে ‘শুভ বিজয়া’ বলে সম্ভাষণ করে । পাড়া প্রতিবেশীরা পরস্পর পরস্পরের গৃহে গিয়ে মিলন সম্ভাষণ করে । সবার মধ্যেই তৈরি হয় প্রেম – প্রীতির পুণ্যবন্টন । পাড়ায় পাড়ায় জলসার আয়োজন করে বিজয়া দশমী পালন করে ।
গ্ৰাম , শহর প্ৰায় প্ৰত্যেক জায়গাতেই বাঙালি বধূরা ঘরে ঘরে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি প্রস্তুত করেন । দুর্গামায়ের আগমনকে কেন্দ্র করে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে প্রায় সকলেই আনন্দে মেতে উঠে এবং সকলের মধ্যেই একতার বাতাবরণ তৈরি হয় ।
২। কবিতাটিতে দেবী দুর্গাকে কী রূপে দেখা হয়েছে ?
উত্তরঃ এখানে দেবী দুর্গাকে কন্যারূপে দেখা হয়েছে । রৌদ্রবরণ , মোহন সুন্দর শরতের অনুপম প্রাকৃতিক পটপ্রেক্ষায় আসে শ্রেষ্ঠ উৎসবের আনন্দ লগ্ন । আকাশে বাতাসে ভাসে মাটির কন্যার আগমনী গান । প্রতিদিনের অভ্যস্ত জীবনে লাগে বৈচিত্র্যের স্পর্শ । দিকে দিকে শুরু প্রাণবন্যার কল্লোল উচ্ছ্বাস । নতুন ভাবতরঙ্গে বাঙালির হৃদয় মন প্লাবিত হয় । দুর্গাপূজা তো শুধু ধর্মীয় গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ নয় । সীমিত নয় নিছক আচার অনুষ্ঠানে । নয় শুধু পূজার্চনার ব্যস্ততা । এর শুভ আগমনে সমগ্র জাতির হৃদয় শতবর্ণের কলাপ বিস্তারে ময়ূরের মতো নেচে উঠে । এ উৎসব জাতির জীবনে সৌন্দর্যের নিরুদ্দেশ অভিসাবে বেরিয়ে পড়ার আহ্বান। এ উৎসব প্রবাসীকে ঘরে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি । এ উৎসব প্রীতি প্রেমের পুণ্যবন্টন । সেদিন জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলের সম্মেলনে এই আনন্দযজ্ঞ সার্থক হয় । সেদিন ঈর্ষা – দ্বন্দ্ব – দম্ভ – গরিমা সব তুচ্ছ হয়ে যায় । প্রীতিই সেদিন সকলের বড় । সেদিন বাঙালির সত্য উপলব্ধির এক দুর্লভ মুহূর্ত । যথার্থই দুর্গামায়ের আগমনে “একলার গৃহ সকলের গৃহ হয় , একলার ধন সকলের ধন হয়।” বাঙালির এই উৎসব তাই এক সম্প্রদায়ের হয়েও সকলের , ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়েও সামাজিক উৎসবে মহিমাদীপ্ত । এরই মধ্যে আমাদের হৃদয় মাধুর্যের প্রকাশ ― “এই দিনকে আমরা ফুলপাতার দ্বারা সাজাই , দীপমালার দ্বারা উজ্জ্বল করি , সংগীতের দ্বারা মধুর করিয়া তুলি ” ।
দেবী দুর্গা বাঙালি মনের নরম – কোমল ভাবনায় রূপান্তরিত হয়েছেন ঘরের কন্যায় । বাংলায় এই যে উৎসব এ তো কন্যাকে ঘিরে পিত্রালয়ের আনন্দ আয়োজন , উমার জন্য যে প্রতি বঙ্গজননীরই স্নেহ উৎস উৎসারিত হয়েছে । বৎসরান্তে মেয়েকে কাছে পেয়ে মায়ের স্নেহের বাঁধ ভেঙে যায় । মেতে উঠে আনন্দ উৎসবে । আসে বিদায়ের দিন । দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের অশ্রুপাত । ঘরে ঘরে মায়ের আর্ত হাহাকারে নিরানন্দের আধার । মা মেনকা যেন বাঙালি মায়েরাই প্রীতিনিধি । আবার বাৎসল্য রসের মধ্যেই দেবী আবদ্ধ রইলেন না । দশভুজা নানা প্রহরণধারিণী শত্রু মর্দিনী দেবীই নতুন ভাবচেতনায় হলেন সুবর্ণময়ী বঙ্গ প্রতিমা । বাঙালির দুর্গোৎসব তাই একদিকে বঙ্গজননীরই বন্দনা ।
৩। দুর্গাপূজার তিনটি তিথি কী ? উমার জন্য মায়ের কাতরতা যেভাবে প্রকাশ পেয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো ।
উত্তরঃ দুর্গাপূজার তিনটি তিথি হল সপ্তমী , অষ্টমী ও নবমী । মহাসপ্তমীর দিন সকালে নিকটস্থ নদী বা কোনো জলাশয়ে নবপত্রিকা স্নান করানো হয় । শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয় । পূজামণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপূজার মূল অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয় । এরপর বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা প্রতিমাস্থ দেবদেবীর সাথে পূজিত হতে থাকে । দুর্গা মায়ের দশহাতেদশটি অস্ত্র থাকে ।
মহাষ্টমীর দিন কুমারী পূজা হল তন্ত্রশাস্ত্র মতে কুমারী মেয়ের পূজা । বিশেষত , দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সপ্তমী , অষ্টমী , নবমী , তিথিতে কোনো বালিকাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করার রীতি আছে।
দুর্গাপূজার একটি বিশেষ পূজা হল সন্ধিপূজা । যেহেতু অষ্টমী ও নবমী তিথির সংযোগস্থলে এই পূজা হয় তাই এই পূজার নাম সন্ধিপূজা বা সন্ধিকালীন পূজা । এই সময়ে দেবী দুর্গাকে চামুণ্ডারূপে পূজা করা হয়ে থাকে ।
‘ বিজয়া দশমী ’ কবিতাটির মধ্যে দিয়ে দুর্গামায়ের চলে না যাওয়ার জন্য মাইকেল মধুসূদন দত্ত আকুতি জানিয়েছেন । তিনি দয়াময়ী মায়ের কাছে মিনতি করেছেন যে রাত যেন তারাদের নিয়ে চলে না যায় তাহলেই নবমীর রাত শেষ হয়ে দশমী আসবে এবং কবির প্রাণ চলে যাবে । কবি সূর্যদেবকে নির্দয় বলেছেন । নবমীর রাত শেষে সূর্যের উদয় হলেই কবির নয়ন দুটি নয়নের মণি উমাকে হারিয়ে ফেলবে , কারণ দশমী মানেই উমার চলে যাওয়ার মুহূর্ত ঘোষিত হয়ে যাওয়া । দুর্গাপূজার এই কয়েকটি দিন বাদ দিলে বছরের প্রায় প্রত্যেকটি দিনই আমরা সুখ – দুঃখ মিশ্রণে দিন কাটাই । শুধু এই তিন চারটি দিন সমস্ত ব্যথা – বেদনা ভুলে জগৎ জননীকে আঁকড়ে ধরে সকলে বাঁচতে চায় । আমরা তাঁর চলে যাওয়ার ক্ষণটি যাতে খুব তাড়াতাড়ি চলে না আসে সেজন্য চেষ্টা করি । বাঙালির কাছে পার্বতী যেমন মায়ের রূপ ধরে আসেন তেমনি তাকে কন্যাসমাও মনে করা হয় ।
কবি নক্ষত্রমণ্ডলীর কাছে জানতে চেয়েছেন মাত্র তিনদিনের জন্য মা এসে চলে গেলে আবার দীর্ঘদিন তাঁর জন্য অপেক্ষা করতে হবে । এই বিরহ জ্বালা কিভাবে তিনি জুড়াবেন । উমার স্বামীর ঘরে প্রত্যাবর্তন করার অর্থ শুধু গৃহের প্রদীপ নয় , মনের প্রদীপও নিভে যাওয়া । দশভুজার আগমনে সমস্ত জগৎ আলোকিত হয় । মানুষ আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভেসে যায়। জীবনে আসে কল্লোল উচ্ছ্বাস । নবমীর রাত শেষ হলেই সেই বাঁধভাঙা আনন্দ আমাদের জীবন থেকে বিদায় নেয় । আবার আমরা ফিরে যাই গতানুগতিক আবর্তে । তাই মধুকবি আক্ষেপ করেছেন যে নবমীর নিশি অবসানে গিরীশের রাণী পিত্রালয় ছেড়ে স্বামীর গৃহে ফিরে গেলে তাঁর গৃহের প্রদীপ নিভে যাবে এবং গৃহ দ্বিগুণ অন্ধকারে ডুবে যাবে।
৪। নবমী নিশিতে কেন মন বিষাদে আচ্ছন্ন হয় বর্ণনা করো ।
উত্তরঃ আপামর বাঙালি বিশেষত হিন্দুদের সব থেকে প্রিয় ঋতু শরৎ ঋতু । শরৎ ঋতু হল তৃতীয় ঋতু । শরৎ ঋতু মানেই আকাশে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘ ভেসে বেড়ানো , কাশফুলের মাথা দোলানো এবং সমগ্র প্রকৃতির সেজে ওঠা । শুধু প্রকৃতি নয় , ত্রিভুবনধারিণীর শুভ আগমনের অপেক্ষায় আমরাও প্রস্তুতি শুরু করে দিই । গৃহে গৃহে শুরু হয় আয়োজন । সকলে নতুন বস্ত্র পরিধান করে জগৎমাতা ধরণীর ধূলিতে চরণ রাখার জন্য অপেক্ষা করে ।
কিন্তু জগতে জগৎজননীর থাকার সময় মাত্র তিনদিন— সপ্তমী , অষ্টমী এবং নবমী । নবমীর রাত থেকেই বেজে ওঠে বিদায়ের ঘণ্টা । সকলে চেষ্টা করে মাকে দুহাত দিয়ে আঁকড়ে কাছে ধরে রাখতে । কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয় । সকল মায়ের বুক খালি করে মেয়ে যেমন শ্বশুরবাড়ি চলে যায় , তেমনি উমাও অনেক মায়ের দুহাতের বন্ধন ছাড়িয়ে সন্তানদের নিয়ে স্বামীর গৃহে ফিরে যায় । এ যেন এক অমোঘ নিয়ম যাকে পরিবর্তন করা যায় না । মা যতই অশ্রু বিসর্জন করুক মেয়ে ফিরে যাবেই ।
তাই সপ্তমী অষ্টমী চলে যাওয়ার পর নবমীর রাত থেকেই শুরু হয় পার্বতীর চলে যাওয়ার প্রস্তুতি । মন ভরে ওঠে বিষণ্নতায় , মানসিক যন্ত্রণায় । উমা চলে গেলে কবির গৃহের সোনার প্রদীপটি নিভে যায় । গৃহ আরো দ্বিগুণ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় । তাই মধুকবি নবমীর রজনীর কাছে , নক্ষত্রদের কাছে মিনতি করেন এ রাতের যেন অবসান না হয় । নক্ষত্রমণ্ডলী যেন রজনীকে নিয়ে গৃহে ফিরে না যায় । ঘরের মেয়ে যেন পিতা মাতার কাছে আরো কিছু বেশি সময় থাকার সুযোগ পায়। তিনি চলে গেলেই আবার দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা শুরু হবে । বাঙালি মায়েদের চোখদুটি কন্যারূপী উমাকে দেখবার আশায় দিন গুণবে ।
শারদীয়া উৎসবে শিশু , যুবক – যুবতী , বৃদ্ধ সকলেরই মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় । জীবনে লাগে বৈচিত্র্যের স্পর্শ । মাত্র কয়েকদিনের জন্য একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গতানুগতিকতার বাইরে বেরিয়ে দৈনন্দিন কাজের থেকে ছুটি মেলে । কয়েকটা দিন মেলে মুক্তির স্বাদ । জীবনে ফিরে আসে আনন্দের হিল্লোল । এ সবই সম্ভব হয় শুধুমাত্র দেবী দুর্গা মর্ত্যে আবির্ভূতা হলে । তিনিই আমাদের জন্য বহন করে নিয়ে আসেন সুখ , শান্তি ও সমৃদ্ধি । স্নেহময়ী জননীর অকৃপণ স্নেহধারা , আশীর্বাদ আমাদের মধ্যে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে , আমরা উজ্জীবিত হই। ফিরে আসে কর্মচাঞ্চল্য । শরীর ও মন ভরে ওঠে প্রাণচাঞ্চল্যে । তাই শুধু মধুকবি নয় আমাদের মনও চায় না উমাকে যেতে দিতে । তাই নবমীর রাত সকলের কাছেই দুঃখের , বেদনার ।
( গ ) শূন্যস্থান পূরণ করোঃ
১। তিনদিন __________ জ্বলিতেছে ঘরে ।
উত্তরঃ স্বর্ণদীপ ।
২। __________ এ সৃষ্টিতে কর্ণকুহরে ।
উত্তরঃ মিষ্টতম ।
৩। নয়নের মণি মোর __________ হারাবে ।
উত্তরঃ নয়ন ।
৪। গেলে তুমি , __________ এ পরাণ যাবে ।
উত্তরঃ দয়ামযি ।
৯। ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখোঃ
চন্দ্রচূড় , জটাজাল , ত্রিভুবন , স্ববলে , দ্বৈপায়ন
উত্তরঃ চন্দ্রচূড় ― চন্দ্র চূড়াতে যাহার ( শিব ) — বহুব্রীহি সমাস।
জটাজাল — জটারূপ জাল ― রূপক কর্মধারয় সমাস।
ত্রিভুবন — তিন ভুবনের সমাহার ― দ্বিগু সমাস।
স্ববলে — নিজ বলের সহিত ― অব্যয়ীভাব সমাস।
দ্বৈপায়ন — দ্বীপে জন্ম যার ( ব্যাসদেব ) — বহুব্রীহি সমাস।
১০। বাক্য রচনা করোঃ
জটাজাল , দ্বৈপায়ন , সংস্কৃত , তৃষ্ণায় আকুল , পুণ্যবান।
উত্তরঃ জটাজাল — দেবাদিদেব মহাদেবের মাথায় জটাজাল আছে ।
দ্বৈপায়ন — দ্বীপে জন্ম বলে ব্যাসদেবের নাম দ্বৈপায়ন ।
সংস্কৃত — ভারতবর্ষের প্রাচীনতম ভাষা সংস্কৃত ।
তৃষ্ণায় আকুল — চাতক পাখিটি তৃষ্ণায় আকুল হয়ে ডেকে উঠলো ।
পুণ্যবান — পুণ্যবান মানুষ ভালো থাকেন ।
১১। পদান্তর করোঃ
ভারত , সংস্কৃত , রস , কঠোর , গঙ্গা , তৃষ্ণা ।
উত্তরঃ ভারত — ভারতীয় ।
সংস্কৃত — সংস্কার ।
রস — রসালো ।
কঠোর — কঠোরতা , কাঠিন্য ।
গঙ্গা — গাঙ্গেয় ।
তৃষ্ণা — তৃষিত , তৃষ্ণার্ত ।
১২। তুমি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার দরুন অনুপস্থিতির কারণ দর্শিয়ে প্রধান শিক্ষককে সম্বোধন করে একখানি আবেদনপত্র রচনা করো ।
উত্তরঃ মাননীয় প্রধান শিক্ষক
শিলচর বয়েজ হাইস্কুল শিলচর ।
মহাশয় ,
আমি আনন্দ বরুয়া , দশম শ্রেণির ক বিভাগের ছাত্র , ক্রমিক নং ৪। গত ২৯/৯/১৮ থেকে ৫/১০/১৮ পর্যন্ত শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারিনি । অনুগ্রহ করে উক্ত দিনগুলিতে আমার ছুটি মঞ্জুর করলে আমি বাধিত থাকব ।
ধন্যবাদান্তে
আনন্দ বরুয়া
আনন্দ বরুয়া
শিলচর স্টেশন রোড শিলচর ।
( ঘ ) বিপরীতার্থক শব্দ লেখো :
প্রভাত , বান্ধিল , অর্ধ , ধীর , দুবলা , গোড়ায় , নারী , দুঃখ , মন্দ , মৌন , স্থল , দিবস , জনম ।
উত্তরঃ প্রভাত — সন্ধ্যা ।
বান্ধিল — ছাড়িল ।
অর্ধ — পুরো ।
ধীর — ক্ষিপ্র ।
দুবলা — সবলা ।
গোড়ায় — শেষে ।
নারী — পুরুষ ।
দুঃখ — আনন্দ ।
মন্দ — ভালো ।
মৌন — কোলাহল ।
স্থল ― জল ।
দিবস ― রজনী ।
জনম — মরণ ।
পদান্তর করোঃ
প্রভাত , ধীর , ক্ষিপ্র , দুর্বল , নারী , দুঃখ , আনন্দ , মৌন , স্থল , দিবস , হিম , জন্ম ।
উত্তরঃ প্রভাত — প্রভাতী ।
ধীর — ধীরতা ।
ক্ষিপ্র — ক্ষিপ্রতা ।
দুর্বল — দুর্বলতা বা দৌর্বল্য ।
নারী — নারীত্ব ।
দুঃখ — দুঃখিত ।
আনন্দ — আনন্দিত ।
মৌন — মৌনতা ।
স্থল ― স্থলা ।
দিবস — দিবসীয় ।
হিম ― হৈম ।
জন্ম ― জন্মগত ।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১। ‘ সনেট ’ সম্পর্কে লেখো ।
উত্তরঃ আধুনিক বিশ্ব সাহিত্যে সনেট ইতালির অন্যতম উপহার । ইতালী ও ‘ সনেত্তোর ’ ( Sonetto ) শব্দ থেকে ‘ সনেট কথাটির জন্ম হয়েছে । ইতালিও ভাষায় ‘ সুওনো ’ ( Suono ) বলে একটি শব্দ আছে । এর অর্থ হল ধ্বনি । এই ‘ সুয়নো ’ শব্দে ক্ষুদ্রার্থবাচক রূপ হয় সনেত্তো । অর্থাৎ এর আক্ষরিক অর্থ হল ক্ষুদ্র ধ্বনি , লাতিন ভাষায় ‘ সনুস ’ ( Sonus ) এর অর্থ হল ধ্বনি , সুতরাং ধ্বনিময় কবিতাকে সনেট নামে অভিহিত করা হয়েছিল এবং মহাকবি দান্তের সময় থেকে এই শব্দটি কাব্যজগতের কলাকৃতিরূপে গৃহীত হয়েছে ।
সনেট বিশিষ্ট মিলবন্ধনে গঠিত চতুর্দশ পদের গীতিকবিতা । কলাকৃতি হিসাবে এই রূপবন্ধের উদ্ভব কিভাবে হয়েছে তা আজও জানা যায়নি । ১৮৭০ সালে প্রকাশিত গ্রন্থে দ্য কোনা বলেছেন যে , দুটি একান্ত মিলের অষ্টপদী স্তবকের সঙ্গে ষট্পদী স্তবকের মিলনের ফলেই সনেটের উদ্ভব হয়েছে । উইলকিস মনে করেন যে , ফ্রেডরিক রাজসভায় সনেটের জন্ম এবং তিনি সনেটের রূপ গঠনে আরবী প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন । তবে একথা ঠিক যে , কলাকৃতি হিসাবে সনেট একদিনে আবির্ভূত হয়নি। ইতালীতে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে দ্বিতীয় ফ্রেডরিকের রাজসভায় কোনো কবির হাতে সনেটের জন্ম হয়েছে বলে অনুমিত হয় । ফ্রেডরিক কবি গোষ্ঠী রচিত কবিতার সংখ্যা ২২৫ টি । এর মধ্যে ৩৫ টি সনেট।
সনেটের আদিপর্বে দান্তে ( ১২৬৫-১৩২১ ) প্রথম প্রতিভাবান কবি । তবে দান্তের হাতে সনেটের পূর্ণরূপ উদ্ঘাটিত হয়নি । পরবর্তীকালে পেত্রার্কের হাতে সুসমঞ্জস ভাব বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে সনেটের পূর্ণরূপ প্রস্ফুটিত হল । পেত্রার্ক – এর ( ১৩০৪-১৩৭৪ ) কাব্য সংকলনের বিভিন্ন শ্রেণির যে কবিতা সংকলিত হয়েছে তার মধ্যে সনেটের সংখ্যা ৩১৭। এই সনেটগুলির বিষয়বস্তু হল ব্যক্তিগত কথা , প্রেম সম্পর্কিত ধারণা , সমকালীন রাজনীতি ইত্যাদি । পেত্রার্ক সনেট রচনায় ১১ অক্ষরের ছন্দকে সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করেছেন । তার সনেটের পক্তি চতুৰ্দশ , অষ্টক এবং ষটক এই পর্বে বিভক্ত , অষ্টক এবং ষটক যথাক্রমে দুই চতুষ্ক এবং দুই ত্রিকর সূক্ষ্মস্তর বিন্যাসে গঠিত । মিল বিন্যাসে পেত্রাকার্ণ অষ্টক দুটি মিলের মালা , প্রথম চতুষ্কের মিল দ্বিতীয় চতুষ্কে পুনরাবর্তিত হয়েছে ।
ষটকের মিল সংখ্যাও দুই বা তিন সনেট শিল্পীরূপে পেত্রার্কের অসামান্য কৃতিত্ব সনেটের অষ্টক – যটকে মধ্যবর্তী আবর্তন সন্ধির আবিষ্কার , অষ্টক বন্ধের সুপরিকল্পিত সংবৃত মিল বন্ধনে ভাবকে বিন্যস্ত করে । ‘ আবর্তন ’ সন্ধিতে ভারসাম্য গড়ে তুলে ষটক বন্ধের বিবৃত মিল বিন্যাসে তাকে রূপায়িত করে তোলাই সনেট শিল্পীর পরম সিদ্ধি এবং পেত্রার্ক এই ব্যাপারে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন বলে তাঁকে সনেট শিল্প সুষমার সার্থক রূপকার বলা হয়েছে । পেত্রাকার্ণ সনেটকে বিশুদ্ধ আদর্শ সনেটরূপে গ্রহণ করে সনেটের সংজ্ঞা ও স্বরূপ নির্ণয় করা হয়েছে ।
একই ছন্দোশব্দে বিশিষ্ট মিলন বন্ধনে রচিত চতুর্দশ পক্তির স্বয়ংসম্পূর্ণ গীতিকবিতার নাম সনেট , ফরাসি সনেটের চরণ বারো অক্ষরের , ইংরেজি সনেটের দশ এবং বাংলা ভাষায় চৌদ্দ মাত্রার অক্ষরবৃত্ত ছন্দই সনেট রচনায় সবচেয়ে উপযোগী বলে স্বীকৃত । সনেটের চোদ্দ পক্তি দু’ভাগে বিভক্ত … প্রথম আট পঙ্ক্তির নাম অষ্টক এবং শেষ ছয় পক্তির নাম ষটক । সনেট কলাকৃতিতে অষ্টকে ভাবের বন্ধন আর ষটকে মুক্তির লীলা ।
সনেটের অষ্টক ষটক বন্ধের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে বোঝা যাবে যে , সনেট মূলত চারটি সূক্ষ্মস্তরে বিন্যস্ত । এই চারটি স্তর আবার অষ্টক ও ষটক এই দুই ভাগে গ্রথিত । দুই চতুষ্ক এবং দুই ত্রিকোতে সনেটের আসক্তি ও মুক্তিলীলার পরম প্রকাশ বলেই সনেটের পক্তি সংখ্যা চতুর্দশ ।
একজন কবি বলেছেন— A Sonnet is a wave of melody ! ‘ সনেট কলাকৃতিতে পূর্বের সুষম বিলমন লীলা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । কোন অংশে ভাবপ্রবাহ যদি বলবান হয়ে ওঠে , তবে ভারসাম্য বিনষ্ট হয় । বস্তুত সনেটের গুরুত্ব তার সুর সর্বদেহে , প্রতিটি শব্দ প্রতিটি পদ এবং প্রতিটি মিল নিপুণ বিন্যাসে এখানে সনেট দেহে বিলীন হয়ে থাকে । আর এখানেই সাধারণ গীতিকবিতার সঙ্গে সনেটের পার্থক্য । আধুনিককালে গীতিকবিতা কবির আত্মপ্রকাশের যেমন বাহন তেমনি সনেটও কবির আত্মপ্রকাশের বাহন । সাধারণ গীতিকবিতায় শব্দ – ধ্বনি – মিল – মাধুর্য ও অলঙ্কারের বিস্তৃতি সনেট দেহে বর্তমান । কিন্তু সনেট গীতিকবিতা অপেক্ষা অতন্দ্র সম্পন্ন সনেট হল ভাস্কর্যধর্মী শিল্প । সনেটের আপাত কঠিন বন্ধনের মধ্যেই কবিমানস মহানন্দময় মুক্তির স্বাদ লাভ করে ।
ইতালীর সনেটের পর ইয়োরোপীয় সাহিত্যে ফ্রান্স ও ইংল্যাণ্ডে সনেট কলাকৃতির বিবর্তন লক্ষ্য করা যায় । ফরাসি রেনেসাঁস পর্বে ইতালীর অনুপ্রেরণায় সনেট গীতিকাব্যের অন্যতম বাহন হয়ে দেখা দিল । ফরাসী সনেট তুলনাংশে পেত্রাকার্ণ পন্থী হয়েও আপন বৈশিষ্ট্যের স্বকীয় মহিমায় উজ্জ্বল । ফরাসি সনেট মূলত পেত্রাকার্ণ মিল বিন্যাসকেই যথাযথভাবে অনুসরণ করেছে । ষোড়শ শতাব্দী থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত ফরাসি কবিরা গভীর শ্রদ্ধায় সনেট কলাকৃতির অনুসরণ করেছেন । ফরাসি সনেট গঠন রীতিতে ক্লাসিক্যাল ইতালিয়ান সনেটের অনুগত । পেত্রাকার্ণ সনেটের মতোই সনেটের মিল সংখ্যাকে চার থেকে পাঁচের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে সনেটের গভীর ও সুদৃঢ় ভাবমূর্তি রচনায় অধিকতর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন । বিষয়বস্তুর দিক থেকেও ফরাসি সনেট বৈচিত্র্যময় , প্রেম , ধর্ম , সমাজ । ব্যঙ্গবক্রোক্তি , হাস্যরসিকতা ফরাসি সনেটে পরিচ্ছন্ন বাণীমূর্তি লাভ করেছে ।
পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য ভূখণ্ডের মতো রেনেসাঁস উত্তরকালে ইংরেজি সাহিত্য গীতিকাব্যের অন্যতম বাহন হয়ে উঠল সনেট । ইংরেজি গীতিকাব্যের ইতিহাসে সনেটের দাম অপরিসীম । ইংরেজি সাহিত্যের আদি সনেটকার হলেন স্যার টমাস ওয়াট ( ১৫০৩-১৫৪২ ) । সনেট কলাকৃতির ক্ষেত্রে ওয়ার্ট পেত্রাকার্ণ পন্থী । পেত্রার্কা – এর মতই তিনি সনেটের অষ্টকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কখ খক মিল ব্যবহার করেছেন । ষটকের মিল বিন্যাসে অবশ্য তিনি পেত্রার্কা – এর যথাযথ অনুসরণ করেননি ; তবে পেত্রাকার্ণ সনেটের অধিকাংশ মৌল লক্ষণ তিনি অনুসরণ করেছেন । এলিজাবেথান পর্বের অন্যতম কবি স্পেনসার ইংরেজি ( ১৫৪২-১৫৯৯ ) সনেট কলাকৃতির ক্ষেত্রে নতুন ধারার প্রবর্তক। তাঁর অধিকাংশ সনেটে তিনটি একান্তর মিলের সংখ্যা পাঁচের বেশি নয় । তাঁর সনেটের প্রথম চতুষ্কের শেষ পক্তির মিল দ্বিতীয় চতুষ্কের প্রথম ও তৃতীয় পঙ্ক্তিতে এবং দ্বিতীয় চতুষ্কের শেষ পক্তির মিল তৃতীয় চতুষ্কের প্রথম ও তৃতীয় পঙ্ক্তিতে ব্যবহৃত হয়েছে ।
সনেট কলাকৃতি ইংল্যাণ্ডের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা উইলিয়ম শেক্সপীয়ারের কাব্য সাধনায় ( ১৫৬৪-১৬১৬ ) বিশিষ্টতা অর্জন করে । ইংরেজি সনেট শেক্সপীয়রীয় সনেট নামেও পরিচিত । শেক্সপীয়ারের সনেট সংখ্যা ১৫৪। সনেটগুলি ১৫৯৪ সালের মধ্যে লিখিত হলেও গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৬১৬ সালে । শেক্সপীয়ারের সনেটের ভাব ও রীতি সম্পর্কে সমালোচকদের স্তুতি – নিন্দার অন্ত নেই । কেউ বলেছেন , ‘ গীতিকাব্যের মহার্ঘতম মুক্তাবলী ’ ; আবার কেউ এর মধ্যে দেখেছেন অসুস্থ ও বিকারগ্রস্ত মনের ক্লিষ্ট ও ক্লেদাক্ত ইতিহাস । শেক্সপীয়ার তাঁর সমস্ত সনেটের প্রায় একই রকম মিল বিন্যাস অনুসরণ করেছেন । পেত্রাকাণ সনেটের আবর্তন সন্ধি এখানে অনুপস্থিত । অষ্টক ও ষটকের ভেদরেশও এখানে বিলুপ্ত । বারো পক্তিকার ভাবশ্রোতের গতির প্রবাহ যুগ্মকের শক্ত বাঁধুনির মধ্যে দৃপ্ত আকার লাভ করে । শেক্সপীয়ার সনেটে যে কলা – কৃতির অনুসরণ করেছেন তার দ্বারা সনেটে বনেদী রূপ সৃষ্টি করা অসম্ভব । তবুও শেক্সপীয়ারের এই সনেট শেক্সপীয়রীয় রীতি নামে খ্যাতি লাভ করেছে ।
সনেট কলাকৃতির ক্ষেত্রে জন মিলটন ( ১৬০৮-৭৪ ) পেত্রার্কাণ পন্থী ; তাঁর অনেকগুলি সনেটে অষ্টকের দুই চতুষ্কের মধ্যে কোন পূর্ণচ্ছেদ নেই । কোন কোন সনেটের ভাব প্রবাহ অষ্টক থেকে বাহিত হয়ে ষটকের প্রথম বা দ্বিতীয় পঙ্ক্তিতে শেষ হয়েছে । উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ ( ১৭৭০-১৮৫১ ) সনেটের মিল বিন্যাসে নানা বৈচিত্র্য দেখালেও তিনি মূলত পেত্রাকার্ণ পন্থী । ষোড়শ থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বিভিন্ন কবি পেত্রার্কাণ রীতিতে এবং মিল বিন্যাসে সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে অজস্র পেত্রাকাণ সনেট রচনা করেছেন । ইংরেজি রীতির সনেটের অন্ত – প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে যে এই প্রকৃতির সনেট ভাব প্রবাহকে প্রথম পক্তি থেকে বাহিত হয়ে দ্বাদশ পঙ্ক্তিতে ঈষৎ বাঁক নিয়ে অন্তিমে উজ্জ্বল মিত্রাক্ষর যুগ্মকে পরিসমাপ্ত হয় । আধুনিককালে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় সাহিত্যেই সনেট ভাব প্রকাশের অন্যতম বাহনরূপে দেখা দিয়েছে ।
বাংলা ভাষায় সনেট :- বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচয়িতারূপে মধুসূদনের নাম স্মরণীয় । মধুসূদনের ফরাসি দেশের ভাসাই নগরীতে বসবাসকালে যে কয়টি সনেট রচনা করেন সেগুলি পরবর্তীকালে ‘ চতুর্দশপদী কবিতাবলী ’ নাম দিয়ে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় । মধুসূদন মোট ১০৮ টি সনেট রচনা করেছেন । তার মধ্যে ১০৬ টি এই গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে । মধুসূদনের বিখ্যাত সনেটগুলি যথাক্রমে— কাশীরামদাস , ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর , কপোতাক্ষনদ , কালিদাস ইত্যাদি। মধুসূদন তাঁর সনেটে পেত্রার্কীর্যরীতি অনুসরণ করেছেন । মধুসূদন প্রথম সনেটের নামকরণ করলেন ‘ চতুর্দশপদী কবিতা ’ । তার প্রত্যেকটি সনেট ১৪ অক্ষরের ১৪ পক্তির স্তবক বন্ধে রচিত । তিনি সনেটের অষ্টক ও যটকের গঠন সম্পর্কে বিশেষ মনোযোগী ছিলেন ।
মধুসূদনের পরবর্তীকালে বাংলা সনেটের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের নাম উল্লেখ করতে হয় । রবীন্দ্রনাথ শেক্সপীয়রীয় পদ্ধতিতে সনেট রচনা করেছেন । তিনি সনেটের মিল বিন্যাস সম্পর্কে খুব বেশি মনোযোগ প্রদান করেননি। তাঁর সনেটগুলি সংকলিত হয়েছে , ‘ কড়ি ও কোমল ’ , ‘ মানসী ’ , ‘ সোনার তরী ’ , ‘ চিত্রা ’ , ‘ চৈতালি ’ , ‘ কল্পনা ‘ , ‘ নৈবেদ্য ’ , ‘ উৎসর্গ ’ , ‘ গীতালি ’ , ‘ পরিশেষ ’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থে । রবীন্দ্রনাথের সনেটের সংখ্যা ২৮৮। এর মধ্যে ৭৬ টিতে তিনি সনেটপন্থী মিল যোজনার চেষ্টা করেছেন । কোন কোন সমালোচক তাঁর ‘ কড়ি ও কোমল ‘ কাব্যগ্রন্থের কোন কোন সনেটে ফরাসি সনেটের প্রভাব লক্ষ করেছেন ।
রবীন্দ্রসমকালীন বাংলা কাব্য সাহিত্যে দেবেন্দ্রনাথ সেন , অক্ষয়কুমার বড়াল , কামিনী রায় , প্রমথ চৌধুরী , প্রিয়ংবদা দেবী সনেট রচনায় সবিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী । রবীন্দ্রোত্তর বাংলা সাহিত্যের আধুনিক পর্বে সনেট রচনায় কৃতিত্ব দেখিয়েছেন মোহিতলাল মজুমদার , জীবনানন্দ দাশ , সুধীন্দ্রনাথ দত্ত , অমিয় চক্রবর্তী , অজিত দত্ত , বুদ্ধদেব বসু , বিষ্ণু দে প্রমুখ কবিরা ।
২। মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমিত্রাক্ষর ছন্দ সম্পর্কে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ মেঘনাদবধ কাব্য অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত । সকল যুগের প্রতিভাবান কবি নতুন ছন্দ সৃষ্টি করে নিজস্ব কবিপ্রাণের মুক্তি দান করেন । মধুসূদনও আপন মানস মুক্তির দুর্নিবার অন্তপ্রেরণায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ সৃষ্টি করে বাংলা ছন্দে নতুন যুগের আবির্ভাব ঘটালেন । অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তনা মধুসূদনের কবিমানসের সচেতন প্রয়াসের ফসল । মধুসূদনের জীবনীগ্রন্থ পাঠে জানা যায় , তিনি মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের এক চ্যালেঞ্জের উত্তরে অমিত্রাক্ষর ছন্দ রচনা করেছিলেন ।
ইংরেজি Blank Verse ছন্দের বলিষ্ঠতা ও সৌন্দর্য তাঁর মনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল । এই ছন্দকে বাংলা ভাষায় কিভাবে সার্থকরূপে প্রয়োগ করা যায় , তা নিয়ে তিনি যথেষ্ট চিন্তা করেছিলেন । বন্ধু রাজনারায়ণ বসুকে একটি পত্রে লিখেছিলেন , “ We want the public ear to be attuned to the melody of the Blank Verse .
মধুসূদন পরীক্ষামূলকভাবে অমিত্রাক্ষর ছন্দ সর্বপ্রথম প্রয়োগ করলেন ‘ পদ্মাবতী ’ নাটকের ‘ কঞ্চুকী ’ ও ‘ কলি ’ চরিত্রদ্বয়ের স্বগতোক্তিতে এবং কলি , শচীদেবী এবং নারদের সংলাপে । ‘ পদ্মাবতী ’ নাটকে অমিত্রাক্ষর ছন্দের সফল প্রয়োগে উৎসাহিত কবি এই ছন্দে ‘ তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য ‘ রচনা করতে শুরু করেন ।
মধুসূদন অমিত্রাক্ষর ছন্দের স্রষ্টা হলেও এই নামকরণ তাঁর স্বকৃত নয় , তিনি চিঠিপত্রে এই ছন্দকে Blank Verse রূপেই অভিহিত করেছিলেন। তৎকালীন প্রখ্যাত সাংবাদিক দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণই সম্ভবত প্রথম ‘ অমিত্রাক্ষর ’ ছন্দ কথাটি ব্যবহার করেছিলেন । ‘ তিলোত্তমাসম্ভব ’ প্রকাশের কিছুকাল পরে দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ ‘ সোমপ্রকাশ ’ পত্রিকায় ( ১২৬৭ , ২৩ শ্রাবণ সংখ্যা ) তিলোত্তমাসম্ভব কাব্যের আলোচনা প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন “ বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর পদ্য নাই । কিন্তু অমিত্রাক্ষর পদ্য ব্যতিরেকে ভাষার শ্রীবৃদ্ধি হওয়া সম্ভাবিত নহে । ” এই মন্তব্য থেকে সিদ্ধান্ত করা চলে দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণই সর্বপ্রথম ‘ অমিত্রাক্ষর ‘ শব্দটি ব্যবহার করেন ।
মধুসূদন বাংলা ভাষা ও ছন্দের অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পদ যথার্থরূপে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন । বাংলা কাব্যের প্রধান বাহন পয়ার ছন্দের ধ্বনি গ্রহণ ক্ষমতা ও স্থিতিস্থাপকতা লক্ষ্য করে বৃহত্তর ক্ষেত্রে এর প্রয়োগের বিষয়টি তিনি চিন্তা করেছিলেন । বাংলা পয়ারের অসামান্য সম্ভাবনা লক্ষ করে তিনি একেই অমিত্রাক্ষর ছন্দের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন ।
কবি অমিত্রাক্ষর ছন্দ সৃজনে পয়ারের কাঠামো গ্রহণ করে তার সাজসজ্জা নির্মাণ করেছেন মিলটনীয় Blank Verse- এর শিল্পকর্ম অনুযায়ী । প্রথমে ‘ পদ্মাবতী ’ পরে ‘ তিলোত্তমাসম্ভব ’ কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেছিলেন । পরে মেঘনাদবধ রচনাকালে তিনি এর অন্তর্নিহিত লিরিক্যাল প্রবণতা অতিক্রম করতে পারেননি । অমিত্রাক্ষর ছন্দের লিরিক্যাল প্রবৃত্তি মহাকাব্য রচনার পক্ষে বাধাস্বরূপ তা তিনি জানতেন , তাই কবি মিলটনীয় ছন্দধ্বনি ব্যবহার করে এই বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা করলেন ।
প্রাচীন পয়ারের লক্ষণ এই যে , এখানে প্রতিটি চরণে চোদ্দটি করিয়া অক্ষর এবং সমসংখ্যক মাত্রা থাকে । উহার দুই চরণে থাকে অন্ত্যানুপ্রাস অর্থাৎ অন্ত্যধ্বনির মধ্যে পরস্পর মিল থাকে । এইজন্য ইহাকে বলা হয় ‘ মিত্রাক্ষর ’ । অধিকন্তু উহার প্রতিটি চরণের অষ্টম অক্ষরে স্বল্প বিরাম এবং পরবর্তী ছয় মাত্রার পূর্ণ বিরাম বা যতি থাকে । কোথাও কোথাও এক চরণের এবং প্রায়শঃই দুই চরণের মধ্যেই ভাবের সমাপ্তি ঘটে ।
যেমন ――
মহাভারতের কথা / অমৃত সমান । ( ৮ + ৬ = ১৪ )
কাশীরাম দাস কহে , / শুনে পুণ্যবান ।। ( ৮ + ৬ = ১৪ )
এখানে ‘ মান’ও ‘ বান ’ অন্ত্যানুপ্রাসযুক্ত অর্থাৎ ইহারা পরস্পর মিত্রাক্ষর। প্রথম চরণে ‘ কথা ’ পরে সামান্য বিরাম এবং ‘ সমান ’ – এর পরে স্বল্প যতি এবং পরবর্তী ছয় মাত্রা ‘ শুনে পুণ্যবান ’ – এর পরে পূর্ণ যতি । অধিকন্তু প্রতিটি চরণই সম্পূর্ণাঙ্গ বাক্য অর্থাৎ উহার মধ্যেই ভাবের সমাপ্তি হয়েছে । প্রথম চরণের ভাবকে দ্বিতীয় চরণ পর্যন্ত কিংবা তারও পরে প্রবাহিত করা পয়ারের রীতিবিরুদ্ধ ।
মধুসূদন এই রীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে অমিত্রাক্ষর ছন্দের উদ্ভাবন করলেন অর্থাৎ পয়ারের চরণান্তিক মিল তুলে দিলেন , ভাবানুযায়ী যতিকে স্বচ্ছন্দ করলেন এবং ভাবকে চরণ হতে চরণে অবাধ ও প্রবহমান করে দিলেন । এখানে চরণ সমূহের অন্ত্যানুপ্রাস থাকে না , এবং ভাব কোনো বিরাম বা যতির অনুগত নয় । দুই থেকে বারো অক্ষরের পরে , যেখানে আবশ্যক , ভাবানুযায়ী যতি থাকতে পারে । ভাবের পরিসমাপ্তি চরণের শেষে বা মধ্যে বা আদিতে যেখানে খুশি বসতে পারে এবং যেখানে ভাবের সমাপ্তি হয় , সেইখানেই পূর্ণচ্ছেদ পড়ে । চরণান্ত এড়িয়ে কাব্যকে এক চরণ থেকে অপর চরণে প্রবাহিত করা যায় । অমিত্রাক্ষর ছন্দে ভাবকে যতদূর ইচ্ছা হৃদয়াবেগের সহিত সংগতি রেখে অগ্রসর করা যায় । এতে ভাব যতির অনুবর্তী হয়ে চলে না , বরং যতিই ভাব অনুযায়ী চলে । দৃষ্টান্ত—
সম্মুখে সমরে , পড়ি * / বীর চূড়ামণি
বীরবাহু , * চলি যবে / গেলা যমপুরে
অকালে , * কহ , * হে দেবি / অমৃতভাষিণি *
কোন্ বীরবরে বরি / সেনাপতি – পদে , *
পাঠাইলা রণে পুনঃ / রক্ষঃকুলনিধি
রাঘবারি ? **
এখানে প্রত্যেক তারকাচিহ্ন স্বল্প যতি এবং যুগ্ম তারক।চিহ্নের পরে পূর্ণ অর্থযতি পড়েছে । প্রথম চরণে চারমাত্রার পরে কোন যতি নেই ; দ্বিতীয় ও তৃতীয় চরণে ৪ মাত্রার পরে , তৃতীয় চরণে ৩ , ৫ ও ১৪ মাত্রার পরে , চতুর্থ চরণে ১৪ মাত্রার পরে অল্প বিরাম এবং পঞ্চম চরণে ৪ মাত্রার পরে পূর্ণ বিরাম । অথচ ইচ্ছা করলে পয়ারের চাল অনুসারে প্রত্যেকটি চরণকেই ৮ + ৬ মাত্রার ছন্দযতি হিসাবেও ভাগ করা যায় ।
অমিত্রাক্ষর ছন্দ নানাবিধ বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ । পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে এই ছন্দের সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য হল ছন্দের অবাধ গতি ও স্বাচ্ছন্দ্য । প্রাচীন পয়ারে অবাধ স্বাচ্ছন্দ্য প্রবাহের কোন সুযোগ নেই। তাকে আবদ্ধ থাকতে হয় নির্দিষ্ট যতি সীমার মধ্যে । কিন্তু অমিত্রাক্ষর যতিকে নির্দিষ্ট সীমানা থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে বলে ছন্দ সেখানে স্বাধীন স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বচ্ছন্দগতি হয়ে ওঠে ।
অমিত্রাক্ষর ছন্দের অপর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য এর verse paragraph বা পঙ্ক্তিব্যূহ । মধুসূদন বাংলা যুক্তাক্ষরের অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন , এবং এই শক্তির সার্থক সদ্ব্যবহার করে অমিত্রাক্ষর ছন্দকে আকর্ষণীয় ও শক্তিশালী করে তুলতে পেরেছেন । মিলটনের Blank Verse ছন্দ রচনার ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার শব্দ ও ধ্বনিজাত যে সকল সুযোগ সুবিধা ছিল মধুসূদন বাংলায় সেই সব সুযোগ সুবিধা না পেলেও শুধুমাত্র অক্ষর ও স্বরবৃত্ত — এই দুই বিষয় সম্বল করে তিনি তাঁর মানস ছন্দকে রূপায়িত করতে অগ্রসর হয়েছিলেন। বাংলা যুক্তাক্ষরের ধ্বনিসৃষ্টির ক্ষমতাকে তিনি অমিত্রাক্ষর ছন্দে কাজে লাগিয়েছেন ।
বাংলা ভাষায় বাক্য উচ্চারণ করবার সময় প্রতিটি পৃথক শব্দের বা বাক্যাংশের প্রথম অক্ষরে ঝোঁক বা stress দেওয়া হয় । মধুসূদন এই ঝোঁক দেবার প্রবণতাকে প্রয়োজনানুযায়ী বাড়িয়ে নিয়ে ছন্দকে ধ্বনিময় ঊর্মিল করে তুলেছেন । তিনি প্রধানত বাক্যরীতি শব্দের ‘ ভাব – অর্থ – বিষয়ক ’ গুরুত্বের উপর বেশি নির্ভর করেছিলেন । যুক্তাক্ষর প্রধান সংস্কৃত শব্দকে বহুলাংশে ব্যবহার করে কখনও কখনও সংস্কৃত আদর্শে নতুন শব্দ সৃষ্টির দ্বারা ছন্দের মধ্যে সঙ্গীত ধ্বনি সৃষ্টি করেছেন । যৌগিক ক্রিয়াগুলি কাব্যের ভাবগাঢ়বদ্ধতা ও স্বচ্ছন্দগতির পথে প্রায়শ বাধাস্বরূপ হওয়ায় মধুসূদন যথাসম্ভব এগুলি বর্জন করে ভাবানুরূপ নামধাতু ও প্রয়োজনানুযায়ী ক্রিয়াপদ সৃষ্টি করে নিয়েছেন যা অমিত্রাক্ষর ছন্দকে এক নতুন মাত্রা দান করেছে ।
মধুসূদনই অবশ্য বাংলা সাহিত্যে প্রকৃত অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রথম ও শেষ কবি । আজও শক্তিশালী ও অমিত্রাক্ষর এরকম আর একটি কাব্য রচিত হয়নি । অমিত্রাক্ষর ছন্দ একমাত্র তাঁর হাতেই যথাযথ স্ফূর্তি লাভ করেছে । এই প্রসঙ্গে মোহিতলালের বক্তব্য “ ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় পাদে বাঙালীর প্রাণ যে মুক্তি কামনার আবেগে স্পন্দিত হইয়াছিল — ভাব চিন্তার ক্ষেত্রে , নূতন করিয়া যে আত্মপ্রতিষ্ঠার আগ্রহে সে অধীর হইয়াছিল , সেই romantic ভাবোৎসারের ফলে আর সকল আন্দোলনের মতো , কাব্যের আদর্শ কল্পনায় যে বিপ্লব আসন্ন হইয়া উঠিল মধুসূদন তাহারই প্রথম ও প্রধান নেতা । তিনিই , যে বস্তুর সহিত ভাষা অপেক্ষা কবিতার ভাবগত যোগ অধিক , সেই ছন্দের স্বাধীন কাব্যরীতি ও উচ্চারণ রীতির সহিত যুক্ত করিলেন ; তাহাতে সেই পুরাতন অক্ষর , বা স্বরান্ত বর্ণ তাহার ছন্দোজাত বৈশিষ্ট্য বজায় রাখিয়াই , নূতন গুণে সমৃদ্ধিলাভ করিল — বাংলা বর্ণবৃত্ত সত্যকার ছন্দগৌরবের অধিকারী হইল । ”
ব্যাকরণঃ
১। সন্ধি করোঃ
উত্তরঃ উৎ + শ্বাস = উচ্ছ্বাস ।
গণ + ইশ = গণেশ।
নিচ্ + অন্ত = নিজন্ত।
নিঃ + অপেক্ষ = নিরপেক্ষ ।
পো + অক = পাবক ।
ষট + দশ = ষোড়শ ।
অতি + আচার = অত্যাচার ।
বি + অবস্থা = ব্যবস্থা ।
২। প্রকৃতি প্রত্যয় :
উত্তরঃ ঘরামি ― ঘর + আমি ।
বর্তমান ― বৃৎ + শানচ্ ।
তেজস্বী ― তেজস্ + বিন্ ।
বৈমানিক — বিমান + ষ্ণিক্ ।
শ্রীমান — শ্রী + মতুপ ।
প্রসার ― প্র – সৃ + অ ।
৩। এককথায় প্রকাশঃ
উত্তরঃ ( ১ ) বিষ্ণুর শঙ্খ — পাঞ্চজন্য ।
( ২ ) বাঘের চামড়া ― কৃত্তি ।
( ৩ ) একই গুরুর শিষ্য — সতীর্থ ।
( ৪ ) রাত্রিকালীন যুদ্ধ — সৌপ্তিক ।
( ৫ ) গোপন করার ইচ্ছা — জুঘুক্ষা ।
( ৬ ) জীবন সংগ্রামে টিকে থাকা — উদ্বর্তন ।
( ৭ ) জয় করবার ইচ্ছা — জিগীষা ।
( ৮ ) চোখের কোণ ― অপাঙ্গ ।
( ৯ ) যে গমন করে না ― নগ ।
( ১০ ) শিবের বাদ্যযন্ত্র — ডমরু ।
( ১১ ) গম্ভীর ধ্বনি — মন্ত্র ।
( ১২ ) বাসের ইচ্ছা — বিবৎসা ।
( ১৩ ) সংসদের সদস্য ― সাংসদ ।
( ১৪ ) হেমন্তকালে জাত — হৈমন্তিক ।
( ১৫ ) যা দেওয়া যায় না — অদেয় ।
( ১৬ ) পা থেকে মাথা পর্যন্ত — আপাদমস্তক ।
( ১৭ ) নীলবর্ণ পদ্ম — ইন্দিবর ।
( ১৮ ) পরিব্রাজকের ভিক্ষা — মাধুকরী ।
( ১৯ ) ধনুকের ছিলার শব্দ — টংকার ।
( ২০ ) দ্বীপের সদৃশ — উপদ্বীপ ।
( ২১ ) নীর দান করে যে — নীরদ ।
( ২২ ) ক্রমাগত দুলছে ― দোদুল্যমান ।
( ২৩ ) চলছে এমন ছবি ― চলচ্চিত্র ।
( ২৪ ) ঋষির দ্বারা উক্ত — আর্য ।
৪। ব্যাসবাক্য সহ সমাসঃ
উত্তরঃ ( ক ) বজ্রাঘাত ― বজ্র দ্বারা আঘাত (করণ তৎপুরুষ সমাস)
( খ ) সস্ত্রীক — স্ত্রীর সঙ্গে বর্তমান ( সহার্থক বহুব্রীহি সমাস )
( গ ) ধনঞ্জয় ― ধনকে জয় করেছে যে ( উপপদ তৎপুরুষ সমাস )
( ঘ ) দৃঢ়প্রাণ — দৃঢ় প্রাণ যার ( বহুব্রীহি সমাস )
( ঙ ) অষ্টাদশ — অষ্ট অধিক দশ ( মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস )
( চ ) তাস – পাশা — তাস ও পাশা ( দ্বন্দ্ব সমাস )
( ছ ) দানসামগ্রী — দানের নিমিত্ত সামগ্রী ( নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস )
( জ ) মেঘে ঢাকা — মেঘের দ্বারা ঢাকা ( করণ তৎপুরুষ সমাস )
( ঝ ) সন্দেহভঞ্জন — সন্দেহকে ভঞ্জন ( কর্মতৎপুরুষ সমাস )
( ঞ ) দুরাচার ― দুষ্ট ( দু ) আচরণ যার ( বহুব্রীহি সমাস )
( ট ) রাজ্যচ্যুত — রাজ্য থেকে চ্যুত ( অপাদান তৎপুরুষ সমাস )
( ঠ ) সলজ্জ — লজ্জার সহিত বর্তমান ( সহার্থক বহুব্রীহি সমাস )
( ড ) তরঙ্গপ্রপাত ― তরঙ্গের প্রপাত ( সম্বন্ধী সন্ধি তৎপুরুষ সমাস )
( ঢ ) অনুজ — অনুতে ( পশ্চাতে ) জন্মে যে (উপপদ তৎপুরুষ সমাস)
( ণ ) বনস্পতি — বনের পতি ( সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস )
৫। পদ পরিবর্তনঃ
উত্তরঃ ঔৎসুক্য — উৎসুক ।
স্থাপিত — স্থাপন ।
কবল — কবলিত ।
বৈজ্ঞানিক — বিজ্ঞান ।
অৰ্চনা — অৰ্চিত ।
নিরীক্ষণ — নিরীক্ষিত ।
পিতৃত্ব — পিতা ।
ভক্ত — ভক্তি ।
ধাবিত — ধাবন ।
শরীর — শারীরিক ।
পাথর — পাথুরে ।
অভিপ্রায় — অভিপ্রেত ।
আবির্ভাব — আবির্ভূত ।
উপাসক ― উপাসিত ।