Class 9 Bengali Chapter 13 আগামী

Class 9 Bengali Chapter 13 আগামী Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 9 Bengali Chapter 13 আগামী and select needs one.

Class 9 Bengali Chapter 13 আগামী

Join Telegram channel

Also, you can read SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 9 Bengali Chapter 13 আগামী for All Subject, You can practice these here…

আগামী

               Chapter – 13

খ – বিভাগ পদ্যাংশ

ক্রিয়াকলাপ-

১। শুদ্ধ উত্তরটি লেখাে।

(ক) আগামী’ কবিতাটির কবি কে ?

১। নজরুল।

২। শঙ্খ ঘােষ।

৩। সুকান্ত ভট্টাচার্য।

৪। মধুসূদন দত্ত।

উত্তরঃ ৩। আগামী’ কবিতাটির কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য।

(খ) কবি সুকান্তের জন্ম সাল কত ?

১। ১৯২৫

২। ১৯২৬

৩। ১৯১৯

৪। ১৯৪৭

উত্তরঃ ২। কবি সুকান্তের জন্ম সাল ১৯২৬।

(গ) কবি সুকান্ত কত সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিয়েছিলেন।

১। ১৯৩০ সালে।

২। ১৯৪৫ সালে।

৩। ১৯৪৭ সালে।

৪। ১৯৫০ সালে।

উত্তরঃ ২। কবি সুকান্ত ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিয়েছিলেন।

(ঘ) কবি কত মাসের জন্য তার কাঙিক্ষত ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তি দেখে যেতে পারেননি।

১। ৪ মাস।

২। ৫ মাস।

৩। ২ মাস।

৪। ৩ মাস।

উত্তরঃ ৪। কবি ৩ মাসের জন্য তার কাঙিক্ষত ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তি দেখে যেতে পারেননি ?

(ঙ) কবি সুকান্তের মায়ের নাম কী ছিল ?

১। সুনীতি দেবী।

২। মায়া দেবী।

৩। ছায়া দেবী।

৪। করুণা দেবী।

উত্তরঃ ১। কবি সুকান্তের মায়ের নাম সুনীতি দেবী।

২। শূন্যস্থানে উপযুক্ত শব্দ বসাও-

(ক) ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই- জানি আমি ভাবী ……………..।

উত্তরঃ ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই- জানি আমি ভাবী বনস্পতি।

(খ) জড় নই, মৃত নই, নই আমি ……………..খনিজ।

উত্তরঃ জড় নই, মৃত নই, নই আমি অন্ধকারেব খনিজ।

(গ) সংহত কঠিন ঝড়ে ……………….প্রত্যেক শিকড়।

উত্তরঃ সংহত কঠিন ঝড়ে দৃঢ়প্রাণ প্রত্যেক শিকড়।

(ঘ) মেলেছি ……………..চোখ, স্বপ্ন ঘিরে রয়েছে আমাকে,

উত্তরঃ মেলেছি সন্দিগ্ধ চোখ, স্বপ্ন ঘিরে রয়েছে আমাকে,

(ঙ) বৃষ্টির, ………………..পাই আমি তারি তে সম্মতি।

উত্তরঃ বৃষ্টির, মাটিব রসে পাই আমি তারি তে সম্মতি।

৩। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন।

(ক) ‘আগামী’ কবিতাটির রচয়িতা কে ?

উত্তরঃ আগামী’ কবিতাটির রচয়িতা সুকান্ত ভট্টাচার্য।

(খ) কত সালে কবি সুকান্ত মৃত্যুবরণ করেন ?

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালের ১৩ মে কবি সুকান্ত মৃত্যুবরণ করেন।

(গ) কবি সুকান্তের পিতা ও মাতার নাম কী ছিল ?

উত্তরঃ কবি সুকান্তের পিতা ও মাতার নাম ছিল যথাক্রমে নিবারণ চন্দ্র ভট্টাচার্য ও সুনীতি দেবী।

(ঘ) কবি সুকান্ত কোন রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন ?

উত্তরঃ কবি সুকান্ত মার্ক্সের মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।

(ঙ) কবির শৈশবকাল কোথায় কেটেছিল ?

উত্তরঃ কবির শৈশবকাল কেটেছিল মামাবাড়িতে, বাগবাজারের নিবেদিতা লেনে।

(চ) কবি কোন রােগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ?

উত্তরঃ কবি ক্ষয়রােগ বা যক্ষ্মারােগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

(ছ) কবি সুকান্ত কার কাছে কুসংস্কার-বিরােধী মনােভাব পেয়েছিলেন ?

উত্তরঃ কবি সুকান্ত তার দাদামশাইয়ের কাছে কুসংস্কার- বিরােধী মনােভাব পেয়েছিলেন।

(জ) কবি সুকান্ত দিদিমার নিকট থেকে কী শক্তি আহরণ করেছিলেন ?

উত্তরঃ কবি সুকান্ত দিদিমার নিকট থেকে দরিদ্র-নিপীড়িতদের প্রতি মমত্ববােধশক্তি আহরণ করেছিলেন।

(ঝ) অঙ্কুরিত বীজ কীসের প্রতীক ?

উত্তরঃ অঙ্কুরিত বীজ আগামীদিনের বনস্পতির প্রতীক।

(ঞ) অনেকের কাছে কবি সুকান্ত কী কবি বলে অভিহিত ?

উত্তরঃ অনেকের কাছে কবি সুকান্ত “বিদ্রোহী কবি” বলে অভিহিত।

৪। সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন-

(ক) কবিতাটিতে কবি কীসের সম্ভাবনার কথা বলেছেন ?

উত্তরঃ চুর্ণ রেণুর মতাে ক্ষুদ্র বীজে থাকে সুবৃহৎ বটবৃক্ষের মতাে বিশালতার সম্ভাবনা। সে বৃহতের সূচনাবিন্দু। একটি অঙ্কুরিত শ্যামল বীজ জানে- সে আগামীদিনের বৃহৎ বনস্পতির প্রাণাধার। বীজ বিকাশধৰ্মী। শ্যাম অঙ্কুর থেকে কচি কিশলয়, নবীন কিশলয় থেকে তরুণ তরু, তরুণ তরু থেকে বৃহৎ বনস্পতি- প্রাণের এই বিকাশ ও পরিণতির ধারা অব্যাহত থাকে।

বৃক্ষ-জীবনের মতাে কবির ব্যক্তিজীবনেও এই বিকাশধর্মিতা সত্য। কবিতাটি রচনার সময় কিশাের কবি সাহিত্যরাজ্যে সম্পূর্ণ আত্মপ্রতিষ্ঠ নন। কিন্তু সুদৃঢ় আত্মপ্রত্যয় এবং অভ্রান্ত ভবিষ্যৎদৃষ্টি ছিল তার। তিনি বুঝেছিলেন, তার কবি- জীবনের সূচনা যত সামান্যই হােক- পরিণতি হবে বনস্পতি-প্রতিম। বিশাল মানববিশ্বে ব্যাপ্ত হবে তার কবিতা। কেননা, যে সজীব হৃদয়ের অনুভব তিনি কবিতায় ঢেলে দিচ্ছেন- তা জড় পদার্থ, মৃতদেহ অথবা অন্ধকার খনিগর্ভের নিশ্চল খনিজ পদার্থ নয়। অঙ্কুরিত বীজের মতাে তা জীবন্ত- প্রাণােত্তাপে তপ্ত। কবিতাটিতে কবি উপরােক্ত সম্ভাবনার কথা বলেছেন।

(খ) কবিতায় অঙ্করিত বীজটির অন্তরে কীসের স্বপ্ন ফুটে উঠেছে ?

উত্তরঃ কবি এখানে অঙ্কুরিত বীজের জবানবন্দীতে প্রকৃতির সৃষ্টিধর্মের কথা বলেছেন। বীজ জড় নয়। তা মৃত্তিকার গভীরে লালিত এক জীবন্ত প্রাণ। জীবন্ত প্রাণ মাটির রসে লালিত- পালিত হয়ে সুদূর আকাশের ডাকে চোখ মেলে। তার স্বপ্ন আলােকের দিকে, আকাশের দিকে ডানা মেলেছে। তার স্বপ্নের মধ্যে আছে সঙ্কল্প। দৃঢ় ও প্রত্যয়নিষ্ঠ সংকল্প। এই স্বপ্ন আরণ্য-সমাজের বটবৃক্ষের সমকক্ষ হবার স্বপ্ন। বৃহতের দলে মিশে যাবার স্বপ্ন।

(গ) অঙ্করিত বীজটি বড় হয়ে কী করবে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ?

উত্তরঃ অঙ্কুরিত বীজটি বড় হয়ে সর্বসমক্ষে দৃপ্ত শাখা-প্রশাশা মেলে ধরবে। বীজের প্রয়াসের ফলেই শেষে গাছে ফুল ফুটবে, ফল ধরবে। বনস্পতি হয়ে বীজটি ক্রমে ক্রমে ছায়াবিস্তার করে মানুষের শ্রম অপনােদন করে শান্তি দেবে। কিন্তু জৈবিক তাগিদে মানুষ তাকে কুঠারাঘাতে জর্জরিত করলেও বনস্পতি নিজের চরিত্রগুণে মানুষকে প্রত্যাঘাত করবে না। তরু তার সহিষ্ণুতায় প্রসিদ্ধ। কবির ভাষায়, বৈষ্ণবের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে-

“তরু হতে যেবা হয় সহিষ্ণু”..ইত্যাদি। সংস্কৃত সাহিত্যেও উক্ত হয়েছে “ছেতুং পার্শগতাং ছায়া নােপ সংহরতি ক্রম।” বনস্পতি হয়ে ক্ষমাশীল হয়ে বীজটি বিশ্রামরত মানুষের ছায়া কেড়ে নেবে না। উপরন্তু তাকে ফল-ফুল, প্রদান করে ক্ষুৎপিপাসা নিবারণ করার চেষ্টা করবে। সেইসঙ্গে অধিকন্তু উপহার হিসেবে পাখির কূজন। আগামী প্রজন্মকে উপরােক্ত আশ্বাস দিয়ে অনুপ্রাণিত করবে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অঙ্কুরিত বীজটি। প্রতিশােধের পরিবর্তে প্রীতি দিয়ে শােধ, এককথায় প্রতিশােধ দিয়ে আপ্যায়িত করবে ঔদার্য্যে ভরা অঙ্কুরিত বীজটি।

(ঘ) ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই’—কথাটির অর্থ বুঝিয়ে লেখাে।

উত্তরঃ এই উক্তি অঙ্কুরিত বীজের।

মাটির গর্ভে নিহিত বীজ মৃত্তিকার অন্ধকারের মধ্যে লালিত হয়ে বহির্জগতের স্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্ন দেখে সুদূর আকাশের। সে চোখ মেলে বড় হবার স্বপ্ন দেখে। এই ভাবেই তার স্বপ্ন সঙ্কল্পে পরিণত হয়। সে অরণ্যের বৃহৎ বটবৃক্ষের সমকক্ষ হবার স্বপ্ন দেখে। সে আকারে ক্ষুদ্র, কিন্তু তার মধ্যে বিরাটের চেতনা। তাই তার স্বপ্ন ও সঙ্কল্প বটবৃক্ষ হয়ে ওঠার। ক্ষুদ্র বীজের মধ্যে ভাবী বনস্পতির আভাস নিহিত আছে। বীজের আত্মপ্রত্যয় ও স্বপ্ন বর্ণনা প্রসঙ্গে এই উক্তি করা হয়েছে।

কিন্তু এই ক্ষুদ্র শরীরে বৃহৎ বটবৃক্ষের চেতনা সঞ্চারিত। কারণ এই জীৱই আগামী বনস্পতির সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনার মর্মরধবনি তার সত্ত্বায় মন্দ্রিত হয়। সকলের দৃষ্টির অন্তরালে এই মর্মরধ্বনি বীজের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। বীজ এই মর্মরধ্বনিতে প্রেরণা লাভ করে বনস্পতি হয়ে বেড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে।

(ঙ) কবিতাটির মমার্থ সংক্ষেপে ব্যক্ত করাে।

উত্তরঃ এক অঙ্কুরিত বীজ আত্মকথার জবানীতে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছে। সে জড় নয়, মৃত নয়, অন্ধকার খনিগর্ভে কোনাে খনিজ ধাতুও নয়, সে এক জীবন্ত প্রাণ, এক অঙ্কুরিত বীজ। মাটির গভীরে নিহিত, তাই তার চোখে ভীরুতার স্পর্শ। মাটির রসে লালিত-পালিত এই বীজ আকাশের স্বপ্ন দেখে। অরণ্যের বটবৃক্ষের সমাজে এই বীজ সামান্য ও নগণ্য। তবু তার দেহে বৃহৎ বটবৃক্ষের মর্মরধ্বনি বাজে। মাটির রেখা বিদীর্ণ করে সে বহির্জগতে আলাের রেখা প্রত্যক্ষ করতে চায়। তার শিকড়ে শিকড়ে অরণ্যের বিশাল চেতনা স্পন্দিত হয়। আজ যা ক্ষুদ্র, কাল তা ফুলে ফলে পত্রে বিকশিত হয়ে উঠবে। পার্শ্ববর্তী বৃক্ষরাজির সামনে আনন্দে- বিস্ময়ে ফুল ফুটিয়ে দৃপ্ত শাখা-প্রশাখা মেলে ধরে সে তার সৃষ্টিশীলতাকে প্রমাণ করবে। 

বৃহতের দলে এই তরুণ তরু এইভাবে মিশে যাবে। কিশলয়কে জয়ধ্বনি দিতে হবে, কারণ কিশলয়ই ভাবী বনস্পতি। কিশলয়ের মধ্যেও মাটির রসের সিঞ্চন থাকে, সেই রসসিঞ্চনে সিঞ্চিত কিশলয় বনস্পতির প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসে। যেদিন এই কিশলয় বনস্পতি হয়ে উঠবে সেদিন তার ছায়ায় মানুষ এসে বিশ্রাম নেবে। গাছ ফল দেবে, ফুল দেবে। পাখির কূজনে মুখরিত হবে দশদিক। একই মাটির রসধারায় পুষ্ট হয়ে বৃহৎ বনস্পতির মতাে তরুণ তরুও বিকশিত হয়ে উঠবে এবং সে হয়ে উঠবে অরণ্য-সমাজের আপনজন।

৫। রচনাধর্মী উত্তর লেখাে।

(ক) আগামী’ কবিতায় কবির বক্তব্য বিষয় আলােচনা কর।

উত্তরঃ আগামী’ কবিতায় কবির বক্তব্যটি নীচে আলােচনা করা গেল।

অঙ্কুরিত বীজ ক্ষুদ্র হলেও তুচ্ছ নয়- সে যে অরণ্যের গৌরব। সে ভাবী বনস্পতি। বৃষ্টির জলধারা ও মাটির স্নেহরসে তার ক্রমপুষ্টি। এ যেন তার বনস্পতি সম্ভাবনার প্রতি প্রকৃতির সানন্দ সমর্থন। বীজ যেদিন বনস্পতি হয়ে উঠবে সেদিন সে বহুজনের আশ্রয় হয়ে উঠবে। তার ছায়াতলে বসে তাপিত জন শীতল হবে। অকৃতজ্ঞজন তার উপর কঠিন আঘাত হানতে চাইবে- তাসত্তেও বনস্পতি সকলকেই আকর্ষণ করবে, আমন্ত্রণ জানাবে। সে বহুজনকে তৃপ্ত করবে ফল-ফুল উপহার দিয়ে, আশ্রিত পাখিদের কল কূজন শুনিয়ে। কারণ বৃক্ষ ও প্রাণী সকলেই তাে একই মা-মাটির স্তন্যরসে পুষ্ট সন্তান—পরস্পরের একান্ত আপনজন।

আলােচ্য কবিতাটিতে কিশাের-কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বীজ ও তরুর রূপকে আপন প্রাণের ব্যাপ্তি, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং বৃহত্তর লােককল্যাণ-কামনাকে বাণীরূপ দিয়েছেন। আয়ুর বিচারে কবি তাে অঙ্কুরিত বীজের মতােই ছােট। অরণ্যসভার মতাে বৃহৎ মানব-সমাজে বনস্পতির মতাে বিশাল ব্যক্তিত্বের মানুষগুলির পাশে তিনি সামান্য বা নগণ্য। কিন্তু সাহিত্যের ও সক্রিয় রাজনীতির মাধ্যমে বৃহৎ পৃথিবীর চেতনার আলাে তাকে প্রতি মুহূর্তে উজ্জীবিত ও উজ্জ্বল করে তুলেছে। তিনি বীজ থেকে কিশলয়ের মতাে কিশাের থেকে তরুণ হবেন। বৃক্ষের দৃপ্তশাখায় কুসুমবিকাশ যেমন তার যৌবনকে ঘােষণা করে, তেমনি ফুলের মতাে পূর্ণবিকশিত সাহিত্য রচনা করে আগামীদিনে কবি তার যৌবনশক্তিকে চিনিয়ে দেবেন। ভাবী বসন্তে পূর্ণ পরিণত হবেন তরুণ কবি- স্থায়ী সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে মানব সমাজে তার গৌরবময় স্বীকৃতি আদায় করে নেবেন। তিনি তাে বিচ্ছিন্ন বা একক নন। তার পরবর্তী প্রজন্মের যারা মানুষ তারা হবে তাঁরই কবিতায় বা সাহিত্যে উদ্দীপিত, অনুপ্রেরিত। তারা কবির জয়ধ্বনি করবে। বৃহত্তর পাঠক সমাজ তাকে স্বীকৃতি ও সম্বর্ধনা জানাবে। কবির সৃষ্টি হবে সর্বমানবের আশ্রয়-অনুরাগী, এবং প্রতিবাদী সকলের পথেই। সাম্যবাদী কবির দৃষ্টিতে দুনিয়ার সকলেই তার আপনজন- একই ধরিত্রীর সন্তান, আত্মার আত্মীয়।

কবিতাটিকে আরাে একটি বৃহত্তর অর্থ তাৎপর্যে গ্রহণ করা যেতে পারে। শুধু কবির ব্যক্তিগত বিকাশ এবং ভাবী স্বপ্নের দিক থেকে নয়- বিশ্বের সকল আপাত- সামান্য মানুষ ও জাতির অনন্ত সম্ভাবনার দিক থেকেও কবিতাটির আবেদন বলিষ্ঠ। যারা জীবনে সামান্য বা তুচ্ছ বলে অবহেলিত, কবি সেই সব মানব- অঙ্কুরের মধ্যেও ভাবী বনস্পতির সম্ভাবনা দেখিয়েছেন। আবার পরাধীন ভারত জগৎসভায় ছিল উপেক্ষিত, অনাদৃত। কবি কল্পনা করে থাকবেন- ভারত একদিন ব্রিটিশের অধীনতার ঝড় কাটিয়ে উঠে স্বাধীন হবে এবং বিশ্বে আপনার যথাযােগ্য গৌরবময় স্থান অধিকার করবে।

(খ) কবিতাটির সারাংশ লেখাে।

উত্তরঃ সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘আগামী’ কবিতায় জীবন-প্রত্যয়ের কথা উজ্জ্বলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রকৃতির জগতে যে সৃজনশীল ধর্ম বিদ্যমান, যে প্রেরণায় অঙ্কুরিত বীজ পরিণত হয় তরুণ তরুতে, এবং তরুণ তরু বিকশিত হয় মহীরূহে, সেই প্রেরণার কথাই কবি এখানে সুন্দরভাবে বলেছেন! সুকান্ত ভট্টাচার্য জীবনবাদী কবি। এই জীবন-প্রত্যয়ে নিহিত আছে আগামী জীবনের আশা ও ভরসা। ‘আগামী’ কবিতায় এই সমুজ্জ্বল আশা-ভরসা বাড়ায় হয়ে উঠেছে।

কবি এখানে অঙ্কুরিত বীজের জবানবন্দীতে প্রকৃতির সৃষ্টিধর্মের কথা বলেছেন। বীজ জড় নয়, মৃত বস্তুও নয়, অন্ধকারে খনি-গর্ভের কোনাে পদার্থও নয়। তা মৃত্তিকার গভীরে লালিত এক জীবন্ত প্রাণ। জীবন্ত প্রাণ মাটির রসে লালিত-পালিত হয়ে সুদূর আকাশের ডাকে চোখ মেলে। তার স্বপ্ন আলােকের দিকে আকাশের দিকে ডানা মেলেছে। তার স্বপ্নের মধ্যে আছে সঙ্কল্প। এই সকল্প দৃঢ় ও প্রত্যয়নিষ্ঠ। এই স্বপ্ন আরণ্য- সমাজের বটবৃক্ষের সমকক্ষ হওয়ার স্বপ্ন। ‘বৃহতের দলে’- মিশে যাবার স্বপ্ন। কিশলয়ের নবীন পল্লব উদ্দাম হাওয়ার তালে তালে, দোলা খায়, মাথা নাড়ে তারপর তরুণ কিশলয় তার দৃপ্ত শাখা মেলে ধরে নিজের প্রাণশক্তি পরিস্ফুট করে তােলে। প্রতিবেশী গাছেদের সম্মুখে সে বিস্মিত ফুল ফুটিয়ে তুলে নিজের অন্তর্নিহিত প্রাণধর্মের জয় ঘােষণা করে। সে তার ক্ষুদ্র সামর্থ্যের গণ্ডীতে বড় বড় বাধা জয় করার সঙ্কল্প বাঁচিয়ে রাখে। প্রকৃতির জগতে ঝড়-বাদল প্রভৃতি নানা প্রতিবন্ধকতা, নানা ব্যাঘাত বার বার আসে। কিন্তু দুপ্ত শাখা মেলে তাকে প্রতিহত করার প্রয়াস তার মধ্যে থাকে। অরণ্যের অভিজাত বৃক্ষের সমাজে স্থান পাবার জন্য তরুণ কিশলয় সঙ্কল্পনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। অঙ্কুরিত বীজ এইভাবে তার অন্যান্য বন্ধুদের নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়। এইভাবেই সে বিশ্বাস করে অঙ্কুরের মিলিত শক্তিতে “নব অরণ্যের গান” রচিত হবে।

ক্ষুদ্র বীজ যখন তরুণ তরুতে বিকশিত হয়ে ওঠে তখন তার বিশ্বাস দৃঢ়মূল হয়ে ওঠে যে আগামী বসন্তে এই ক্ষুদ্র তরু বনস্পতির সমান মর্যাদা পাবে। এই বনস্পতি অরণ্যের সম্পদ- তার ছায়ায় তাপিত মানুষ এসে বিশ্রাম লাভ করে। ফুল দিয়ে, ফল দিয়ে তা মানুষকে আশ্বস্ত করে তােলে। বড় বড় গাছের ডালে ডালে নানা পাখি এসে বসলে তাদের কূজনে মুখরিত হবে অরণ্য। তাই কঠিন কুঠারের আঘাতের সম্ভাবনার মুখেও সে বার বার হাতছানি দেয় আগামী প্রজন্মের দিকে। এইখানে কবিকণ্ঠে আশাবাদ ধবনিত।

(গ) কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে।

উত্তরঃ আগামী’ কবিতায় বীজ থেকে তরুণ তরুর কিশলয় এবং কিশলয় থেকে বৃক্ষে পরিণত হবার কাহিনী ছন্দিত হয়েছে। কবি তার কাব্যসৃষ্টির নৈপুণ্যে একটি আশাবাদী জীবন-প্রত্যয়কে এই কবিতায় পরিস্ফুট করেছেন। প্রকৃতির জগতে সে সৃজনশীলতা বিদ্যমান, সেই সৃজনশীলতার মধ্যে অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রবাহ সূচিত হয়। প্রকৃতির জগতে এক গভীর প্রাণশক্তির দ্বারা চালিত হয়ে ক্ষুদ্র বীজ মাটির অন্ধকারে বড় হয়ে ওঠে। মাটির রস পেয়ে তা পুষ্ট হয়। মাটির অন্ধকারে নিহিত থেকে তা দূর আকাশের স্বপ্ন দেখে। আলােকের স্বপ্নে তন্ময় হয়ে ওঠে। সে উন্নতশির হয়ে আকাশের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়। এই অঙ্কুরিত বীজের স্বপ্ন সার্থক হয়ে ওঠে আগামী প্রজন্মের মধ্যে আত্মবিস্তারে। এইভাবে ‘আগামী’র স্বপ্ন সার্থক হয়ে ওঠে। এইখানেই ‘আগামী’ নামকরণের সার্থকতা।

কবি এই কবিতায় এক মৃত্তিকা-গর্ভস্থ অঙ্কুরিত বীজের স্বপ্ন ও সম্ভাব্য পরিণতি বর্ণনা করেছেন। মাটির রসধারায় পরিপুষ্ট হয়ে বীজ বিকশিত হয়, পরিণত হয় তরুণ তরুতে। পরে সেই তরুণ তরু বিবর্ধিত হয় বিশাল মহীরূপে। এই সৃজনশীলতা প্রকৃতির ধর্ম। আগামী প্রজন্মের মধ্যে বীজ বিকশিত হয়ে উঠবে। এই স্বপ্ন ও সঙ্কল্প কবিতার মধ্যে প্রকাশিত হয়ে উঠেছে। অঙ্কুরিত বীজ জড় নয়, অন্ধকারে খনিজ কোনাে পদার্থ নয়। তা জীবন্ত প্রাণ। মাটির অন্ধকার নিহিত থেকে তা আলাের দিকে উন্মুখ হয়ে থাকে। সে আগামীদিনের স্বপ্নে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

সে ক্ষুদ্র বীজ, আকারে ক্ষুদ্র ক্ষমতায় কিন্তু ক্ষুদ্র নয়। তাই আজ যা তরুণ কিশলয়, কাল তা বৃহৎ বৃক্ষ। ক্ষুদ্র বীজের স্বপ্ন তারণ্য-সমাজের বৃহৎ বটবৃক্ষের সমকক্ষ হওয়া। আজ যা কচি কিশলয়, কাল তা বনস্পতির মর্যাদা নিয়ে দেখা দেবে। এই আগামীর স্বপ্ন তার বুকে। অরণ্যের মর্যাদা নির্ভর করে বনস্পতির ওপর। কচি কিশলয় তাই আগামীদিনে অরণ্যের মর্যাদা লাভের স্বপ্ন দেখে | বনস্পতি ফল-ফুলে মানুষকে সমৃদ্ধ করবে, তার ছায়ায় বসে তাপিত মানুষ আশ্রয় পাবে, এই আশা ও ভরস’ ক্ষুদ্র বীজের আগামীদিনের স্বপ্ন। তাই ‘বৃহতের দলে স্থান পাবার জন্য তার প্রয়াসের শেষ নেই। সে দৃপ্ত শাখা মেলে প্রতিবেশী গছের সম্মুখে ফুল ফুটিয়ে অরণ্য-সমাজকে সচকিত করে দেবে। তার শাখায় ঝড়ের বিরুদ্ধে দৃপ্ত প্রতিরােধ জেগে ওঠবে! এইভাবে এই সামান্য বীজ বৃহতের দিকে এগিয়ে যাবে। আগামীদিনের দিকে অগ্রগমনের স্বপ্ন কবিতাটিতে পরিস্ফুট হয়েছে। এইজন্য কবিতাটির নামকরণ সার্থক।

(ঘ) “ফল দেব, ফুল দেব, দেব আমি পাখির কূজন”

একই মাটিতে পুষ্ট তােমাদের আপনার জন।”

—উদ্ধৃত কবিতাংশে কবির বক্তব্য আলােচনা করাে।

উত্তরঃ অঙ্কুরিত বীজ ক্ষুদ্র হলেও তুচ্ছ নয়- সে যে অরণ্যের গৌরব, ভাবী বনস্পতি। বৃষ্টির জলধারা ও মাটির স্নেহরসে তার ক্রমপুষ্টি। এ যেন তার বনস্পতি-  প্রতি প্রকৃতির সানন্দ সমর্থন। বীজ যেদিন বনস্পতি হবে সেদিন সে হয়ে উঠবে বহুজনের আশ্রয়। তাপিতজন তার ছায়াতলে শীতল হবে। অকৃতজ্ঞ জন তার উপর কঠিন কুঠারের আঘাত হানতে চাইবে- তবু বনস্পতি সকলকেই আকর্ষণ করবে, আমন্ত্রণ জানাবে। ফল-ফুল উপহার দিয়ে, আশ্রিত পাখিদের কল-কুজন শুনিয়ে বহুজনকে সে তৃপ্ত করবে। কারণ বৃক্ষ ও প্রাণী সকলেই তাে একই মাটি-মায়ের স্তন্যরসে পুষ্ট সন্তান- পরস্পরের একান্ত আপনজন।

কবিতাটিতে কিশাের-কবি বীজও তরুকে আপন প্রাণের ব্যাপ্তি, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং বৃহত্তর লােককল্যাণ কামনাকে বাণীরূপ দিয়েছেন। আয়ুর বিচারে কবি-কিশাের তাে অঙ্কুরিত বীজের মতােই ছােট। অরণ্যসভার মতাে বৃহৎ মানব- সমাজে বনস্পতির মতাে বিশাল ব্যক্তিত্বের মানুষগুলির পাশে তিনি এখন সামান্য বা নগণ্য। কিন্তু সাহিত্যের ও সক্রিয় রাজনীতির মাধ্যমে বৃহৎ পৃথিবীর চেতনার আলাে তাকে প্রতিমুহূর্তে উজ্জীবিত ও উজ্জ্বল করে তুলছে। তিনি বীজ থেকে কিশলয়ের মতাে কিশাের থেকে তরুণ হবেন। বৃক্ষের দৃপ্ত শাখায় কুসুম-বিকাশ যেমন তার যৌবনকে ঘােষণা করে, তেমনি ফুলের মতাে পূর্ণ বিকশিত সাহিত্য রচনা করে আগামীদিনে কবি তাঁর যৌবনশক্তিকে চিনিয়ে দেবেন। তরুণ কবি ভাবী বসন্তে পূর্ণ পরিণত হবেন- স্থায়ী সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে মানব সমাজে তার গৌরবময় স্বীকৃতি আদায় করে নেবেন। তিনি তাে বিচ্ছিন্ন বা একক নন। তার পরবর্তী প্রজন্মের যারা মানুষ তারা হবে তারই কবিতায় বা সাহিত্যে উদ্দীপিত, অনুপ্রেরিত। কবির জয়ধ্বনি দেবে তারা। বৃহত্তর পাঠক সমাজ তাকে জানাবে স্বীকৃতি ও সম্বর্ধনা। কবির সৃষ্টি হবে সর্ব মানবের আশ্রয়-অনুরাগী এবং প্রতিবাদী সকলের পক্ষেই। সাম্যবাদী কবির দৃষ্টিতে দুনিয়ার সকলেই তার আপনজন- একই ধরিত্রীর সন্তান, আত্মার আত্মীয়।

৬। তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।

(ক) তবু ক্ষুদ্র এ শরীরে গােপনে মর্মরধ্বনি বাজে।

উত্তরঃ বসন্তের দিনে যখন প্রকৃতি জগতে দেখা দেবে বাসন্তী উৎসব, তখন কিশলয়ের মর্মরধবনিতে বৃহতের দোলা লাগবে। একই মাটির বুক থেকে জেতে ওঠে কিশলয় ও বনস্পতি। একই মাটির রসধারায় সিঞ্চিত হয় প্রকৃতির এই দুই সৃষ্টি। তাই মাটির রসধারায় সম্মতি পেয়ে তরুণ তরু বৃহৎ হয়ে ওঠে। সে তার নিজের মধ্যে বিরাটের মহিমার অনুধ্যান করে। তখন তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জেগে ওঠে। এই আত্মবিশ্বাসের ফলেই সে জানতে পারে তার অনাগত ভবিষ্যকে।

(খ) বৃষ্টির মাটির রসে পাই আমি তারি তাে সম্মতি।

উত্তরঃ একই মাটির বুক থেকে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে কিশলয় ও বনস্পতি। এই মাটির রসধারাতে সিক্ত হয়েই সহস্র সহস্র বছর ধরে বীজ হতে অঙ্কুরে, অঙ্কুর হতে কিশলয়ে, কিশলয় থেকে বনস্পতিতে এগিয়ে চলেছিল, চলেছে এবং চলতে থাকবেও সৃষ্টি ও সৃজন, অঙ্কুরণ। কিশলায়ন এবং বৃক্ষায়ন। একই মাটির রসধারায় এই গােপন অগ্রগতির কাজ হয়ে চলে। বৃষ্টি ভূত্বকের ফাটল দিয়ে মাটির নিম্নতম পর্যায়ে পৌছে যায়। তারপর ধীরে তা রসময় রূপ নিয়ে অঙ্করােদগম থেকে বৃক্ষায়নে সাহায্য করে। মাটির রসের যােগানের যেন সম্মতি মেলে অঙ্কুরের, বনস্পতিতে রূপান্তরিত হবার।

(গ) শিকড়ে আমার তাই অরণ্যের বিশাল চেতনা।

উত্তরঃ বহু বনস্পতি নিয়ে গড়ে ওঠে অরণ্য ! বহু মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলাতে আছে এক সুবিশাল চেতনা প্রবাহ। মাটির গহরে শেকড় চালিয়ে অঙ্কুরকে বহু কষ্ট স্বীকার করে কিশলয় হয়ে তারপর তাকে বনস্পতি হতে হয়। একইভাবে শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে জনারণ্য তৈরি করে নিদারুণ কষ্ট স্বীকার করে। উপেক্ষা সহ্য করে। রক্ত ঝরিয়ে মনুষ্য শৃঙ্খল রচনা করে মালিক আর মজুতদার আর সামন্তপ্রভুদের চারিদিকে। মানুষ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তােলে। দৃঢ় প্রাণ প্রত্যেক শিকড়ও ঝড়-বৃষ্টি সহ্য করে বনস্পতিকে ধরে রাখে। শাসনতন্ত্র তৈরি করে সাধারণ মানুষ নিজেদের মতাে করে। তারপর সময় সুযােগ মতাে প্রত্যাসন্ন বসন্তে বনস্পতির মতাে নিজেদের বিশাল প্রতিবাদী অস্তিত্ব ঘােষণা করে, মেতে ওঠে “নব অরণ্যের গানে।”

৭। টীকা লেখাে।

(ক) সুকান্ত ভট্টাচার্য।

উত্তরঃ ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট ১৩৩৩.বঙ্গাব্দের ৩০ শ্রাবণ দক্ষিণ কলকাতার কালিঘাটে, মহিম হালদার স্ট্রীটে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতার নাম নিবারণ চন্দ্র ভট্টাচার্য, মাতা সুনীতি দেবী। তাদের। আদি নিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মাদারিপুরে। সুকান্তের পিতার বৃত্তি ছিল পৌরােহিত্য, জীবিকার্জনের অনুষঙ্গ হিসেবে গন্থব্যবসাও এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। কবির শৈশব কেটেছিল বাগবাজারের নিবেদিতা লেনে মামার বাডিতে। পরে বেলেঘাটার হরমােহন ঘোষ লেনে নিজের বাড়িতে। সুকান্তের ছাত্রজীবনের প্রথম পাঠ শুরু হয় কমলা বিদ্যামন্দির’ নামে বিদ্যালয়ে। পরে তিনি বেলেঘাটা দেশবন্ধু হাইস্কুলে ভর্তি হন। বেলেঘাটা দেশবন্ধু হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে সুকান্ত পাঠ শেষ করেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্রেরণায় সুকান্তের সুপ্ত কবিপ্রতিভা জাগ্রত হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রাত্যহিক অভাব অনটনের মধ্যে তার বাল্য জীবন কাটে । 

প্রতিকূল পারিবারিক আবহাওয়ায় দুঃখের কাল মুক্তি অনুভব করে তিনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তাকেই তিনি কবিতায় মুক্তি দিতে চেয়েছেন—দুঃখ অনুভূতিগুলোকে সুমধুর গান করে তুলতে চান নি, করে তুলতে চেয়েছে দুঃখের কারণগুলোর প্রতি শ্রেণবের প্রকাশ এবং দুঃখের মূলােচ্ছেদের হাতিয়ার। এ ব্যাপারে তার নিজের তাগিদই এনে দিয়েছিলো পঠনের প্রতি অনুরাগ। বিদ্যালয়ে পাঠকালে সঞ্চয়’ নামে যে হাতে-লেখা পত্রিকা প্রকাশিত হয়, তাতে সুকাও লেখেন একটি হাসির গল্প। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠিকালে সুকান্ত ব’ নামে একটি নাটিকায় প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ছাপার করে প্রকাশিত তাঁর প্রথম রচনা বিবেকানন্দের জীবনী’।পত্রিকাটির নাম ‘শিখা’। ছাত্রজীবনে তার প্রেরণ্যস্থল হয়ে উঠেছিলেন সহপাঠী-বন্ধ তারুণাচল বসু ও তার জননী সরলা বসু সরলা বসুর মাতৃস্নেহে সুকান্ত কাব্যপ্রতিভা মুকুলিত হতে শুরু কর। অল্প বয়সেই মাতৃহারা হলে তার বন্ধুজননী ও জ্যাঠতুতাে ভাইদের সান্নিধ্য তাকে ধিকশিত করে তুলতে সহযােগিতা করে। জ্যাঠতুতাে ভাই রাখাল ভট্টাচার্য ও মনােজ ভট্টাচার্যের সংযােগসূত্রে তিনি কম্যুনিষ্ট মতাদর্শের সঙ্গে পরিচিত হন। 

কমিউনিষ্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হিসেবে তিনি যে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন সেই অভিজ্ঞতা দিয়েই।তনি গড়ে তুলেছিলেন তার কাব্যের জগৎ। শােষিত নিপীড়িত জনগণের প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি নিয়ে তিনি লেখেন ‘বিদ্রোহে হবে পাথরেরা থরে থরো। কবে দেখা দেবে লক্ষ প্রাণের খনি। এবং শােষক ধনিক শ্রেণির প্রতি ঘৃণায় উচ্চারণ করেন। অনেক নিয়েছ রক্ত, দিয়েছ অনেক অত্যাচার, আজ হোক তােমার বিচার। কিশাের বয়স থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি তিনি উৎসুক হয়ে ওঠেন। এই ঔৎসুক্য পরবর্তীকালে রাজনৈতিক মতাদর্শের দিকে এগিয়ে দেয়। কৈশাের থেকেই বঙ্কিম- রবীন্দ্রনাথ- শরৎচন্দ্রের সাহিত্যের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আধুনিক সাহিত্যের রথীদের লেখাও গভীর মনােযোগের সঙ্গে তিনি পাঠ করেন। বাল্যকালে তিনি মায়ের কাছে রামায়ণ, মহাভারত শুনেছিলেন, সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত জ্যাঠামশারের তত্ত্বাবধানে বাড়িতে ছিল সংস্কৃতচর্চার পরিবেশ। এই পরিবেশে তিনি যা কিছু সংগ্রহ করেছিলেন, তা তাঁর স্পর্শকাতর কবিমনকে সজীব ও তীক্ষ করে তুলেছিল।

সুকান্তর প্রথম জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব ছিল দুর্বার। এই প্রভাব ছিল স্বাভাবিক। কবি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বাংলা কবিতার প্রধান স্থপতি। কিন্তু পারিবারিক সূত্রে ধীরে ধীরে যখন তিনি ক্যুনিষ্ট আন্দোলনের সঙ্গে পরিচিত হলে তার সামনে এক নতুন ভাবজগৎ খুলে যায়। সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয়ের পর সুকান্ত তার কাব্যচর্চার নতুন পথ খুঁজে পান। সুভাষ মুখােপাধ্যায় কিশাের কবির কবিতা পাঠ করে চমৎকৃত হয়ে লেখেন । “কোনাে কিশােরের পক্ষে বয়সে ছন্দে এমন আশ্চর্য দখল, শব্দের অমন লাগসই ব্যবহার সেদিন ছিল অভাবিত।”-অর্থাৎ কিশাের বয়সেই সুকান্ত কবিতার রূপনির্মাণে দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন।

১৩৫০-এ মন্বন্তরে তিনি দুর্ভিক্ষ- পীড়িত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। এই সময় তিনি একটি উল্লেখযােগ্য কিশাের সংগঠন গড়ে তােলেন। এই সংগঠনটির নাম  কিশাের বাহিনী। এই ‘কিশাের বাহিনী গড়ে তােলার মধ্যে তার অদম্য প্রাণশক্তি, সংগঠনশক্তি ও দেশপ্রেমের আদর্শ উজ্জ্বল হয়ে ফুটে ওঠে। গ্রন্থপাঠ, কাব্য-রচনা, কিশাের সংগঠন গড়ে তােলা—এই সব নানাবিধ কর্মসাধনার মধ্যে সুকান্তর প্রাণশক্তি ব্যয়িত হয় শতধরে। ফলে ১৯৪৬-এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি দুরারােগ্য যক্ষ্মা-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। ১৩৫৪ সালে ২৯ বৈশাখ (ইং ১৯৪৭ সালের ১৩ মে) কবি সুকান্ত তার অনুরাগী বন্ধুজনের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়ে ইহলােক ত্যাগ করেন। মাত্র ২১ বছর সুকান্ত পৃথিবীতে বেঁচেছিলেন। একুশ বছর জীবনে সুকান্ত বহু কবিতাই রচনা করেছেন, তিনি তার কোনাে কাব্যগ্রন্থই প্রকাশিত দেখে যেতে পারেন নি। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ছাড়পত্র প্রকাশিত হয় তার মৃত্যুর পরে ১৯৪৭-এ (আষাঢ় ১৩৫৪)। তার অন্যান্য উল্লেখযােগ্য কাব্যগ্রন্থগুলাে- ঘুম নেই (১৩৫৬), পূর্বাভাষ (১৩৫৭), মিঠেকড়া (১৩৫৮), অভিযান (১৩৬০), হরতাল (১৩৫৯), গীতিগুচ্ছ (১৩৭২)।

(খ) বনস্পতি।

উত্তরঃ ‘বনস্পতি’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ বনের পতি অর্থাৎ মহীরুহ। আলােচ্যাংশে আগামীদিনে বনস্পতি হয়ে ওঠার স্বপ্নে বিভাের এক অঙ্কুরিত বীজ। সে আত্মবিশ্বাসে ভর করে বৃষ্টির মাটির রসের সম্মতি পেয়ে শেকড় চালিয়ে দেয়, মাটির গভীরে ধীরে ধীরে। ক্রমশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতা গজায়। ঝড় সইবার সামর্থ্য অর্জন করে। ধীরে ধীরে কিশলয় হয়ে উঠে শাখা-প্রশাখা ছড়ায়। তারপর বসন্তের প্রাক্কালে বনস্পতি হয়ে উঠে মেতে উঠবে “নব অরণ্যের গানে।” সকলের দ্বারা সম্বর্ধিত হবে।

এ সময়ে মানুষের সহায়তায় সে ছায়া দেবে, ফল-ফুল দেবে। উপরি হিসেবে দেবে পাখির কূজন- এরকমই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উপরােক্ত অঙ্কুরিত বীজ। কেন না আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে সৃষ্টির সমস্ত প্রবাহেই মিশে আছে মার্টিও; তার প্রাণপ্রবাইতুল্য রসপ্রবাহ।

৮। ভাষা ব্যাকরণ।

(ক) সন্ধি বিশ্লেষণ করাে।

জীবন্ত = জীব + অন্ত। 

সংহত = সম্ + হত। 

বনস্পতি = বনঃ + পতি।

প্রত্যেক প্রতি + এক। 

নয়ন = নে + অন।

চলন্ত, ঘুমন্ত, শয়ন, নীরেন্দ্র, সমরেন্দ্র, কটুক্তি, গণেশ।

উত্তরঃ চলন্ত = চল + অন্ত।

ঘুমন্ত = ঘুম + অন্তু।

শয়ন = শে + অয়ন |

নীরেন্দ্র = নীর + ইন্দ্র।

সমরেন্দ্র = সমর + ইন্দ্র।

কটুক্তি = কটু + উক্তি।

গণেশ = গণ + ঈশ।

(খ) পদ পরিবর্তন করাে।

কঠিন – কাঠিন্য।

জড় – জড়ত।

ভীরু – ভীরুতা।

অরণ্য – আরণ্যক

বিস্মিত – বিস্ময়, বিস্ময়াপন্ন।

শরীর – শরীরী, শারীরিক।

গােপন, বিশাল, মুখরিত, পুষ্ট, সংবর্ধনা, রস, খনিজ, আকাশ।

উত্তরঃ গােপন – গােপনিয়তা (বিশেষ্য)।

বিশাল – বিশালতা (বিশেষ্য)।

মুখরিত – মুখর (বিশেষ্য)।

পুষ্ট – পুষ্টি (বিশেষ্য)।

সংবর্ধনা – সম্বর্ধিত (বিশেষণ)।

রস – রসিক (বিশেষণ)।

খনিজ – খনি (বিশেষ্য)।

আকাশ – আকাশী (বিশেষণ)।

(গ) বিপরীত শব্দ লেখাে।

অন্ধকার – আলাে।

মৃত – জীবন্ত, জীবিত।

ভীরু – সাহসী।

ক্ষুদ্র – বিশাল, বৃহৎ।

বিশাল, সম্মতি, বিনাশ, বন্ধু, চেতন, গােপন, ইন্দ্র।

উত্তরঃ বিশাল – ক্ষুদ্র।

বন্ধু – শত্ৰু।

সম্মতি – অসম্মতি।

চেতন – তাচেতন।

বিনাশ – অবিনাশ।

গােপন – প্রকাশ্য।

(ঘ) বাংহতি বা বাক্-সংকোচন করাে।

যাহা বেঁচে আছে – জীবন্ত।

আগে জন্ম যার – অগ্রজ।

যাহা নিবারণ করা যায় না – অনিবার্য।

যাহা বিনাশ হবে – নশ্বর।

পতিপুত্রহীন নারী – তবীরা।

ভিক্ষার অভাব – দুর্ভিক্ষ।

মমতা নাই যার – নির্মম।

যাহা হতে পারে না – অসম্ভব।

অল্প কথা বলে যে – মিতভাষী।

যাহা বলার যােগ্য নহে – অকথ্য ।

হরিণের চামড়া – অজিন।

যে নারীর সন্তান হয় না – বন্ধ্যা।

(ঙ) বাক্য-বিবর্ধন বা সম্প্রসারণ।

এক বা ততােধিক পদ দ্বারা বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশকে বর্ধিত বা প্রসারিত করা যায়। যথা-

বালকটি আসিয়াছিল।

সেই বালকটি কাল আসিয়াছিল।

সেই দরিদ্র বালকটি কাল এখানে আসিয়াছিল।

সেই পিতৃহীন দরিদ্র বালকটি কাল কাদিতে কাদিতে আসিয়াছিল।

যে পদ বা পদসমষ্টি দ্বারা উদ্দেশ্যটি বর্ধিত ও প্রসারিত হয়, তাকে বলে উদ্দেশ্যের প্রসারক (Adjuncts to the subject)।

আবার যে পদ বা পদসমষ্টি দ্বারা বিধেয়কটি প্রসারিত হয়, তাকে বলে বিধেয়ের প্রসারক (Adjuncts to the Predicative Verb)।

বিধেয়টি ক্রিয়াপদ, সুতরাং বিধেয়ের প্রসারকটি ক্রিয়া- বিশেষণ বা তৎস্থলীয় পদ বা পদসমষ্টি হবে।

যেমন- তিনি তাড়াতাড়ি’ চলিয়া গেলেন।

তিনি কারও অপেক্ষা না-করিয়া অতি শীঘ্র চলিয়া গেলেন।

পদসমষ্টি বা উপাদানবাক্যের একপদে পরিবর্তন।

অন্য দেশ- দেশান্তর। 

অমৃতের ন্যায় মধুর – অমৃতমধুর। 

অনুসন্ধান করিবার ইচ্ছা- অনুসন্ধিৎসা। 

অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করে না যে- অবিমৃশ্যকারী।

অতিশয় শীতও নয় উষ্ণও নয় – নাতিশীতােষ্ণ। 

অনায়াসে যাহা পাওয়া যায় – অনায়াসলভ্য। 

অল্প কথা বলে যে – মিতভাষী। 

অপত্য হইতে বিশেষ না করিয়া – অপত্যনির্বিশেষে। 

অন্য বিষয়ে মন যাহার – অন্যমনস্ক। 

আমিষের অভাব- নিরামিষ। 

আকাশে উড়িয়া বেড়ায় যে – খেচর। 

আপনাকে কৃতার্থ মনে করে যে – কৃতার্থস্মন্য। 

আপাততঃ মধুর যাহা- আপাতমধুর।

আমার তুল্য – মাদৃশ। 

আদরের সহিত- সমাদরে। 

ইহার তুল্য – ঈদৃশ। 

ইতিহাস জানে যে – ঐতিহাসিক।

উপায় নাই যার- নিরুপায়। 

যার শত্রু (জন্মে) নাই – অজাতশত্র।

একই গুরুর বা তীর্থের শিষ্য – সতীর্থ। 

একই সময়ে বর্তমান – সমসাময়িক।

বাক্য-সম্প্রসারণ (Expansion of Sentences)

একটি বাক্যের অন্তর্গত কোনাে একটি বা একাধিক পদ বা পদসমষ্টিকে উপাদান-বাক্যে পরিবর্তিত করলে বাক-সম্প্রসারণ হয়।

এটা বাক্য-সংকোচনের বিপরীত প্রক্রিয়া। যথা-

১। অনধিকার চর্চা দূষণীয়—যে বিষয়ে অধিকার নাই তাহার চর্চা করা দূষণীয়।

২। নির্দিষ্ট কার্য শেষ করিয়া অন্য কার্য করিবে—যে কার্য নির্দিষ্ট আছে তাহা শেষ করিয়া অন্য কার্য করিবে।

(ঙ) বাক্য সম্প্রসারণ করাে-

পাঞ্চজন্য – ভগবান বিষ্ণুর শঙ্খ। 

অজিন – হরিণের চামড়া।

খেচর – যে আকাশে উড়ে বেড়ায়।

আকণ্ঠ – কণ্ঠ পর্যন্ত।

অনুজ – পরে জন্মগ্রহণ করেছে যে। 

অনুক্ত – যা বলা হয়নি।

সহােদর – একই মায়ের পুত্র। 

অভূতপূর্ব – যাহা পূর্বে কখনও হয়নি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top