Class 12 Economics Chapter 2 জাতীয় আয় গণনা

Class 12 Economics Chapter 2 জাতীয় আয় গণনা | Class 12 Economics Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter AHSEC Board HS 2nd Year Economics Chapter 2 জাতীয় আয় গণনা Notes and select needs one.

Class 12 Economics Chapter 2 জাতীয় আয় গণনা

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Bengali Medium AHSEC Class 12 Economics Chapter 2 জাতীয় আয় গণনা Solutions for All Subject, You can practice these here.

জাতীয় আয় গণনা

Chapter: 2

ক – অংশ (সমষ্টিগত অর্থবিজ্ঞান)

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘An Enquiry into the nature and causes of the wealth of‌ Nation’ নামক গ্রন্থখানি কে লিখেছিলেন ?

উত্তরঃ অ্যাডাম স্মিথ।  

প্রশ্ন ২। চূড়ান্ত দ্রব্যের সংজ্ঞা লেখো।

উত্তরঃ যে দ্রব্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে শেষ ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে তাকে চূড়ান্ত দ্রব্য বলে।

প্রশ্ন ৩। মোট বিনিয়োগ কী ?

উত্তরঃ উৎপাদন কার্যে ব্যবহৃত মূলধনজাত সামগ্রীর মোট পরিমাণকে মোট বিনিয়োগ বলে।

প্রশ্ন ৪। অবক্ষয়ের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ মূলধনজাত সামগ্রী উৎপাদন কার্যে ব্যবহার করলে ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এই ক্ষয় ক্ষতিকে অবক্ষয় বা অবচয় বলে।

প্রশ্ন ৫। মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন (GDP) বলতে কী বোঝ ? 

উত্তরঃ কোন নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে দেশের ভিতরে উৎপাদিত চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা সামগ্রীকে একত্রিত করলে মোট আভ্যন্তরীণ বা ঘরোয়া উৎপাদন (GDP) পাওয়া যায়। এতে দেশের বাইরে অর্জিত আয়ের পরিমাণ ধরা হয় না।

প্রশ্ন ৬। মূলধনী দ্রব্যের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতি অবক্ষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় কি ?

উত্তরঃ মূলধনী দ্রব্যের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতি অবক্ষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় না। মূলধনী দ্রব্যের স্বাভাবিক ক্ষয়ক্ষতিই কেবলমাত্র অবক্ষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়।

প্রশ্ন ৭। শূন্যস্থান পূর্ণ করো।

কোন বছরে একটি অর্থনীতির চূড়ান্ত দ্রব্যের মোট উৎপাদন ভোগকার্য বা ……….  ব্যবহার করা হয়।

উত্তরঃ বিনিয়োগে।

প্রশ্ন ৮। সমষ্টিগত অর্থনৈতিক প্রতিকল্প (Macroeconomic Model) কী ?

উত্তরঃ একটি কাল্পনিক অর্থনীতির কার্যকলাপের বর্ণনা করাকে সমষ্টিগত অর্থনৈতিক প্রতিকল্প বুঝায়। সমষ্টিগত অর্থনৈতিক মডেলের সাহায্যে একটি অর্থনীতির বিভিন্ন কার্যকলাপের বাস্তব রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, যদিও কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ দিক ছাড়া অন্য কোন ধরনের বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে দেখা যায় না।

প্রশ্ন ৯। একটি প্রতিষ্ঠানের মূল্য সংযোজন কী ?

উত্তরঃ উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে উৎপন্ন দ্রব্যের মূল্য এবং উপাদানের মূল্যের যে পার্থক্য বের হয়, তা হল মূল্য সংযোজন। অর্থাৎ শিল্পের মোট উৎপন্নের মূল্য হতে চূড়ান্ত দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহৃত মধ্যবর্তী দ্রব্যাদির মূল্যকে বিয়োগ করতে হবে।

প্রশ্ন ১০। একটি প্রতিষ্ঠানের মূল্য সংযোজন কার মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয় ?

উত্তরঃ ভূমি, শ্রম, মুলধন এবং উদ্যোগীর মধ্যে মূল্য সংযোজন বিতরণ করে দেওয়া হয়।

প্রশ্ন ১১। শূন্যস্থান পূর্ণ করো।

(১) অবক্ষয় হল স্থায়ী মূলধনের …….. ।

উত্তরঃ উপভোগ।

(২) Y = C + I + G + NX সমীকরণে NX কী বোঝায় ?

উত্তরঃ NX = নেট রপ্তানি (Net Exports) |

প্রশ্ন ১২। জাতীয় আয় গণনায় আমাদের কেন সংযোজিত মূল্য গণনা করা প্রয়োজন ?

উত্তরঃ জাতীয় আয় গণনায় মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বের করতে হয়। মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন পরিমাপের জন্য সংযোজিত মূল্য গণনা করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন ১৩। শুদ্ধ না অশুদ্ধ লেখো।

একটি প্রতিষ্ঠানের সংযোজিত মূল্য হল একটি প্রবাহমান চলক।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

প্রশ্ন ১৪। মোট সংযোজিত মূল্য কী ? 

উত্তরঃ মোট সংযোজিত মূল্য হল কোন অর্থনীতির উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবাসমূহের মূল্যের সমান। মোট সংযোজিত মূল্য মোট ঘরোয়া উৎপাদনের (GDP) সমান হয়।

প্রশ্ন ১৫। অর্থনৈতিক কর্মনিৰ্বাহক বা এজেণ্ট মানে কী ?

উত্তরঃ মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ যে সকল ব্যক্তিরা সম্পাদন করে তাদেরকে অর্থনৈতিক প্রতিনিধি বলে। যেমন – পরিবার, ফার্ম বা সরকার হল অর্থনৈতিকয় কর্মনিৰ্বাহক।

প্রশ্ন ১৬। জাতীয় সম্পদ কী ?

উত্তরঃ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সম্পদের সমষ্টিকে জাতীয় সম্পদ বলে। ব্যক্তি বিশেষের ধন সম্পত্তি, জমি-জমা, কোম্পানির শেয়ার, খনিজ ও বনজ সম্পদ, সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি ঋণপত্র ইত্যাদি সবই জাতীয় সম্পদ।

প্রশ্ন ১৭। শুদ্ধ না অশুদ্ধ লেখো।

সম্পদ তালিকা হল এক মজুত চলক ( Stock ) কিন্তু সম্পদ তালিকার পরিবর্তন হল এক প্রবাহ চলক।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

প্রশ্ন ১৮। শুদ্ধ না অশুদ্ধ লেখো।

সম্পদের তালিকা মূলধন হিসাবে ধরা হয়।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

প্রশ্ন ১৯। অর্থাৎ মোট ঘরোয়া উৎপাদন গণনার ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী দ্রব্যের মূল্য অন্তর্ভুক্ত করা হয় না কেন ?

উত্তরঃ মোট ঘরোয়া উৎপাদন হিসাব করার সময় শুধুমাত্র অন্তিম দ্রব্য সমূহের সমষ্টি বের করতে হবে। একই দ্রব্য যাতে একাধিক বার গণনা করা না হয়, তার জন্য মধ্যবর্তী বা অন্তর্বর্তী দ্রব্যগুলির মূল্য অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।

প্রশ্ন ২০। নিচের সমীকরণের কোন্ অংশটিকে ঘাটতি বাজেট সূচায় ?

( I – S ) + (G – T) = M – X

উত্তরঃ (G – T) ঘাটতি বাজেট বোঝায়। (G – T) সরকারি ব্যয় সরকারের কর আয় থেকে কত বেশি তা পরিমাপ করে।

প্রশ্ন ২১। ( IS ) + ( G-T ) = M – X, এই সমীকরণের MX অংশ কী বোঝাচ্ছে ?

উত্তরঃ M – X বলতে বাণিজ্য ঘাটতি বোঝায়। M – X অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতি দ্বারা কোন অর্থব্যবস্থার রপ্তানি আয়ের থেকে আমদানি ব্যয় বেশি বোঝায়।

প্রশ্ন ২২। শূন্যস্থান পূর্ণ করো। 

GNP = GDP + ……… 

(মোট জাতীয় উৎপাদন+ মোট ঘরোয়া উৎপাদন +………….)

উত্তরঃ GNP = GDP + NFIA (মোট জাতীয় উৎপাদন = মোট ঘরোয়া উৎপাদন + বিদেশ থেকে অর্জন করা শুদ্ধ আয়।)

প্রশ্ন ২৩। শূন্যস্থান পূর্ণ করো।

NNP = GNP – ………..

(শুদ্ধ জাতীয় উৎপাদন = মোট জাতীয় উৎপাদন  …….) 

উত্তরঃ NNP = GNP – Depreciation .

(শুদ্ধ জাতীয় উৎপাদন = মোট জাতীয় উৎপাদন – অবচয় পূরণ।)

প্রশ্ন ২৪। জাতীয় আয় কী ?

উত্তরঃ জাতীয় আয় হল দেশের সমগ্র মানুষের সৃষ্টি করা এবং দেশের ভিতরে বা বাইরের থেকে সৃষ্টি হওয়া সেই পরিমাণ আয় যা মুদ্রার সঙ্গে পরিমাপ করা যায়।

প্রশ্ন ২৫। GDP সংকোচক কী ?

উত্তরঃ মূল্যস্তর পরিবর্তনের ফলে মোট ঘরোয়া উৎপাদন অর্থাৎ GDP এর পরিবর্তন পরিমাপ করাকে GDP সংকোচক বলে।

প্রশ্ন ২৬। আধুনিক অর্থবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাপক বা স্তুপয়িতা কে ?

উত্তরঃ আধুনিক অর্থবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাপক বা স্থপয়িতা হলেন অ্যাডাম স্মিথ।

প্রশ্ন ২৭। ধরা হল, বাজার দামে একটি দেশের GDP হল 950 কোটি টাকা। যদি অবক্ষয়ের পরিমাণ 100 কোটি টাকা হয়; তাহলে বাজার দামে NDP নির্ণয় করো।

উত্তরঃ বাজার দামে NDP = বাজার দামে GDP – অবক্ষয়ের পরিমাণ

                                      = 950 কোটি – 100 কোটি টাকা

                                      = 850 কোটি টাকা।

প্রশ্ন ২৮। উপভোগ্য সামগ্রী কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে দ্রব্য বা পণ্য চূড়ান্ত উপভোক্তারা উপভোগ করে অথবা যেটি উপভোক্তার তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ করে তাকে উপভোগ্য সামগ্রী বা ভোগ্য পণ্য বলে। যেমন খাদ্যদ্রব্য, কাপড় ইত্যাদি।

প্রশ্ন ২৯। ভিত্তিবর্ষ কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে বৎসরের দরদাম বাস্তব GDP গণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়, সেই বছরকে ভিত্তি বর্ষ ( Base Year ) বলে। ভিত্তি বর্ষের দাম সূচককে 100 ধরা হয়।

প্রশ্ন ৩০। উপভোক্তার দর সূচক কী ?

উত্তরঃ জীবনধারণের ব্যয় সূচককে উপভোক্তার দর সূচক বলে। এই সূচক প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে জনসাধারণের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহ গ্রহণ করা হয়। দুটি পৃথক সময়ে একই শ্রেণির মানুষের ভোগব্যয়ের তুলনা করাই হল উপভোক্তার দর সূচকের উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন ৩১। সম্পদ তালিকা বা মজুদ ভাঙার কী ?

উত্তরঃ অর্থনীতিতে একটি প্রতিষ্ঠান অবিক্রিত চূড়ান্ত দ্রব্য বা অর্ধ চূড়ান্ত দ্রব্য বা কাঁচামালের যে অংশ একটি বছর থেকে পরবর্তী বছরে টেনে নিয়ে যায়। তাদেরকে মজুদ ভাণ্ডার বা সম্পদ তালিকা বলে। সাধারণতঃ সম্পদ তালিকা মূলধন হিসাবে ধরা

হয়।

প্রশ্ন ৩২। শুদ্ধ সংযোজিত মূল্য কী ?

উত্তরঃ মোট সংযোজিত মূল্য থেকে মূলধনজাত দ্রব্যের ক্ষয় ক্ষতি বিয়োগ করলে শুদ্ধ বা নিগুট সংযোজিত মূল্য পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ৩৩। কী অবস্থায় একটি দেশের GDP, GNP-এর সমান হতে পারে ?

উত্তরঃ GNP গণনার ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে লব্ধ নেট উপাদান আয় (NFIA) অন্তর্ভূক্ত হয়। বিদেশ থেকে অর্জিত নেট উপাদান আয় যোগ না করলে একটি দেশের GDP, GNP-র সমান হবে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর

1. রাষ্ট্রীয় উৎপাদন এবং মোট ঘরোয়া উৎপাদনের পার্থক্য হল –

(ক) রপ্তানি।

(খ) প্রাপ্ত উপাদান আয় – বিদেশে পরিশোধ করা উপাদান আয়।

(গ) বিদেশ থেকে অর্জিত উপাদান আয়।

উত্তরঃ (খ) প্রাপ্ত উপাদান আয় – বিদেশে পরিশোধ করা উপাদান আয়?

2. অন্তিম ব্যয় এই ক্ষেত্রে ব্যয় বুঝায় –

(ক) কেবল উপভোগ।

(খ) কেবল বিনিয়োগ।

(গ) উপভোগ ও বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রে।

উত্তরঃ (গ) উপভোগ ও বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রে।

3. বাজার দরে ঘরোয়া উৎপাদন, উৎপাদন ব্যয়ে ঘরোয়া উৎপাদন থেকে কতটুকু বেশি ?

(ক) বিদেশ থেকে অর্জিত শুদ্ধ উপাদান আয়।

(খ) স্থির মূলধনের ক্ষয়ক্ষতি।

(গ) নেট পরোক্ষ কর।

উত্তরঃ নেট পরোক্ষ কর।

4. জাতীয় আয় হল ………….. ।

(ক) প্রকৃত মূল্য।

(খ) উৎপাদন মূল্য।

(গ) মুদ্রাগত মূল্য।

(ঘ) সামগ্রী মূল্য।

উত্তরঃ (গ) মুদ্রাগত মূল্য।

5. মোট জাতীয় উৎপাদন মানে –

(ক) GNP + Net factor income

(খ) GNP + Gross factor income

(গ) NNP + Personal income

উত্তরঃ (ক) GNP + Net factor income

6. সকল উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন করা দ্রব্য ও সেবার মোট মূল্য নির্ণয় করা পদ্ধতিকে বলা হয় – 

(ক) ব্যয় পদ্ধতি।

(খ) উৎপাদন পদ্ধতি।

(গ) আয় পদ্ধতি।

উত্তরঃ (খ) উৎপাদন পদ্ধতি।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর 

প্রশ্ন ১। ধরা হল, একটি দেশের GDP হল 1100 কোটি টাকা (বাজার দরে)। তদুপরি বিদেশ থেকে প্রাপ্ত উপাদান আয় হল 150 কোটি টাকা এবং অবক্ষয় ৪০ কোটি টাকা। এখন যদি পরোক্ষ করে সরকারি সাহায্যের পরিমাণ 120 কোটি টাকা হয়, তাহলে জাতীয় আয় নির্ণয় করো।

উত্তরঃ এখানে, GDPMP = 1100 কোটি টাকা

NFIA (বিদেশ থেকে প্রাপ্ত উপাদান আয়) = 150 কোটি টাকা

অবক্ষয় = 80 কোটি টাকা

নেট পরোক্ষ কর = 120 কোটি টাকা

জাতীয় আয় = GDPMP – অবক্ষয় – নেট পরোক্ষ কর + NFIA

= 1100 – 80 – 120 + 150

= 1100 + 150 – 80 – 120

= 1250 – 200

= 1050 কোটি টাকা।

প্রশ্ন ২। ধরা হল, একটি দেশের NNP (শুদ্ধ জাতীয় উৎপাদন) 1600 কোটি টাকা (বাজার দরে)। যদি পরোক্ষ কর 100 কোটি টাকা এবং সরকার থেকে ভর্তুকির পরিমাণ 80 কোটি টাকা হয়, তাহলে জাতীয় আয় বের করো।

উত্তরঃ এখানে, NNPMP = 1600 কোটি টাকা

মোট পরোক্ষ কর = 100 কোটি টাকা

ভর্তুকি = 80 কোটি টাকা

জাতীয় আয় = NNPMP  — পরোক্ষ কর + ভর্তুকি

= 1600 – 100 + 80

= 1680 -100

= 1580 কোটি টাকা।

প্রশ্ন ৩। কোন অর্থনীতির একটি নির্দিষ্ট বৎসরে নামিক GNP-র মূল্য 2800 কোটি টাকা। সেই বছর GNP ভিত্তি বৎসরের দামে গণনা করলে হবে 3200 কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে বছরের GNP সংকোচক নির্ণয় করো। ভিত্তি বর্ষ ও বিবেচনাধীন বৎসরের মধ্যে কি মূল্যস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে ?

উত্তরঃ নামিক GNP ( Nominal GNP) = 2800 কোটি টাকা 

বাস্তব GNP (Real GNP) = 3200 কোটি টাকা

না, ভিত্তি বছর এবং বিবেচনাধীন বছরের মধ্যে মূল্যস্তর বৃদ্ধি পায়নি। প্রকৃতপক্ষে, দাম 87% এ হ্রাস পেয়েছে।

প্রশ্ন ৪। নামিক GNP র মূল্য কোন একটি দেশের নির্দিষ্ট বছরে 4000 কোটি টাকা। সেই একই দেশের GNP র পরিমাণ স্থির মূল্যে হল 3500 কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে GNP সংকোচক নির্ণয় করো।

উত্তরঃ নামিক GNP (Nominal GNP) = 4000 কোটি টাকা

বাস্তব GNP (Real GNP) = 3500.কোটি টাকা

প্রশ্ন ৫। একটি নির্দিষ্ট বৎসরে একটি দেশের সঞ্চয়ের তুলনায় ব্যক্তিগত বিনিয়োগের আধিক্য ছিল 3000 কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিল (- 800) কোটি টাকা। দেশটির বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কত ছিল ?

উত্তরঃ উদ্ধৃত্ত বিনিয়োগ (I – S) = 3000 কোটি টাকা

বাজেট ঘাটতি (G – T) = – 800 কোটি টাকা

বাণিজ্য ঘাটতি (M – X) = ?

আমরা জানি,

M – X = (I – S ) + (G – T )

= 3000 + (- 800)

= 3000 – 800

= 2200 কোটি টাকা

প্রশ্ন ৬। মধ্যবর্তী দ্রব্যের ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ যে সকল দ্রব্য উৎপাদক পুনরায় বিক্রি করার জন্য ক্রয় করে, সেই সকল দ্রব্যকে মধ্যবর্তী দ্রব্য বলে। উদাহরণস্বরূপ চিনির কলের মালিক চিনি উৎপাদনের জন্য আখ ক্রয় করে। চিনির কলের মালিকের কাছে আখ হল মধ্যবর্তী দ্রব্য। কারণ, সে আখ থেকে চিনি উৎপাদন করে পুনরায় বাজারে বিক্রয় করবে। 

সহজ কথায়, যে সকল দ্রব্য অন্য পণ্য দ্রব্যের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নিঃশেষিত হয়, সেই সকল দ্রব্যকে মধ্যবর্তী দ্রব্য বলে।

প্রশ্ন ৭। বিনিয়োগ কী ? মোট বিনিয়োগ ও শুদ্ধ বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

উত্তরঃ বিনিয়োগ হল এক প্রবাহ ধারণা। মূলধন যখন উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়, সেটাকে বিনিয়োগ বলে। এক লাখ টাকা জমা থাকলে সেটাই মূলধন, কিন্তু এ টাকা দিয়ে যন্ত্রপাতি কিনে বস্তু উৎপাদনের একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হলে তখনই তা বিনিয়োগ হবে। এই বিনিয়োগ থেকে নিয়মিত উৎপাদন এবং উপার্জন হবে। তাই বিনিয়োগকে প্রবাহমান বলা হয়েছে।

একটি নির্দিষ্ট বছরে স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় বাবদ ব্যয় এবং তৎসঙ্গে মজুত ভাঙার যোগ করলেই মোট বিনিয়োগ বুঝায়। যন্ত্রপাতি, উৎপাদনের সাজ সরঞ্জাম, কলকারখানা, পরিবহন সামগ্রী, রাস্তাঘাট এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ইত্যাদি প্রকৃত মূলধন ব্যয় করার জন্য যে ব্যয় করা হয়, তাকে মোট বিনিয়োগ বলে। 

সাংকেতিকভাবে,

মোট বিনিয়োগ = স্থায়ী সম্পত্তির খাতে ব্যয় + মজুত ভাণ্ডার শুদ্ধ বিনিয়োগ বলতে অতিরিক্ত মূলধন সামগ্রীর পরিমাণকে বুঝায়। শুদ্ধ বিনিয়োগ মূলধনী মজুতের ক্ষয়ক্ষতির পুনঃস্থাপন অন্তর্ভুক্ত করে না। অতিরিক্ত বাস্তব মূলধন সৃষ্টির নামই হল শুদ্ধ বিনিয়োগ।

সাংকেতিকভাবে,

শুদ্ধ বিনিয়োগ = মোট বিনিয়োগ – অবচয়।

প্রশ্ন ৮। একটি সরল অর্থনীতিতে আয়ের চক্রীয় প্রবাহের ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ একটি সরল অর্থনীতিতে প্রতিটি- উৎপাদনের উপাদান সামগ্রিকভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় লাভ করে। তারা কোনো সঞ্চয় করে না। কারণ তাদের আয় উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবা ক্রয় করার জন্য ব্যয় করে। এভাবে উৎপাদন থেকে অর্জিত আয়ের পরিমাণ দ্রব্য ক্রয় এবং সেবার ব্যয়ের সাথে এক হয়। যার ফলে একটি অর্থনীতিতে মোট আয় উৎপাদন প্রতিষ্ঠান এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে নিয়োজিত উপাদানের সাথে চক্রীয়ভাবে প্রবাহিত হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ৯। মূল্য সংযোজন, মোট মূল্য সংযোজন এবং শুদ্ধ মূল্য সংযোজনের ধারণা ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ একটি প্রতিষ্ঠানের মূল্য সংযোজন হল প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন মূল্য এবং মধ্যবর্তী দ্রব্যের মূল্যের পার্থক্য। অর্থাৎ একটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন মূল্য থেকে মধ্যবর্তী দ্রব্যের মূল্য বাদ দিলে মূল্য সংযোজন বের করা যায়। মূল্য সংযোজনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ কার্যে মূলধনের ক্ষয়ক্ষতির মূল্য অন্তর্ভুক্ত করলে মোট মূল্য সংযোজন পাওয়া যায়। আবার, মোট সংযোজিত মূল্য থেকে মূলধনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিয়োগ করলে শুদ্ধ মূল্য সংযোজন পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ১০। মোট সংযোজিত মূল্য এবং শুদ্ধ সংযোজিত মূল্যের মধ্যে পার্থক্য দর্শাও।

উত্তরঃ (১) মোট সংযোজিত মূল্য হল ব্যাপক ধারণা কিন্তু শুদ্ধ সংযোজিত মূল্য হল সংকীর্ণ ধারণা।

(২) মোট সংযোজিত মূল্যে মূলধনের ক্ষয়ক্ষতি অন্তর্ভুক্ত থাকে কিন্তু শুদ্ধ সংযোজিত মূল্যে মূলধনের ক্ষয়ক্ষতি বাদ দিতে হয়।

প্রশ্ন ১১। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বছরে 500 টাকার দ্রব্য উৎপাদন করে, এর জন্য 250 টাকার মধ্যবর্তী দ্রব্য ব্যবহার করে। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক মূলধনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যদি 20 টাকা হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানটির মোট মূল্য সংযোজন ও নেট মূল্য সংযোজন গণনা করো।

উত্তরঃ দেওয়া আছে,

উৎপাদন মূল্য = 500 টাকা

মধ্যবর্তী দ্রব্যের মূল্য = 250 টাকা

স্থির মুলধন ভোগ = 20 টাকা

তাহলে,

মোট মূল্য সংযোজন = উৎপাদন মূল্য – মধ্যবর্তী দ্রব্যের মূল্য

= 500 – 250

= 250 টাকা

নেট মূল্য সংযোজন = মোট মূল্য সংযোজন – স্থির মূলধন ভোগ

= 250 – 20

= 230 টাকা।

প্রশ্ন ১২। সম্পদের তালিকা বা মজুত ভাণ্ডার (Inventory) ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ Inventory অর্থাৎ মজুত ভাণ্ডার হল উৎপাদন প্রতিষ্ঠান উৎপাদিত দ্রব্যের একটি অংশ যা ভোগে ব্যবহার না করে এক বছর হতে অন্য বছরে টেনে নিয়ে যায়।

সাধারণ সম্পদের তালিকা বা মজুত ভাণ্ডার তিন ধরনেরঃ-

(১) অব্যবহৃত কাঁচামাল।

(২) অর্ধসমাপ্ত দ্রব্য।

(৩) অবিক্রিত অন্তিম দ্রব্য।

প্রশ্ন ১৩। বৎসরের শুরুতে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে 80 টাকার একটি সম্পদ তালিকা ছিল। বৎসরে প্রতিষ্ঠান 500 টাকা মূল্যের দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন করে 400 টাকা মূল্যের দ্রব্য বিক্রয় করল। বৎসরটিতে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ তালিকার পরিবর্তন নির্ণয় করো।

উত্তরঃ প্রতিষ্ঠানটির মজুত চলক = 80 টাকা

বছরটির মোট উৎপাদন = 500 টাকা

বিক্রি হল = 400 টাকা

অবিক্রিত দ্রব্যের মূল্য = 500 – 400 = 100 টাকা

বৎসরের শেষে সম্পদ তালিকার পরিবর্তন হল = 80 + 100 = 180 টাকা।

প্রশ্ন ১৪। মজুত ভাণ্ডারের অপরিকল্পিত পরিবর্তনের একটি কাল্পনিক উদাহরণ দাও। অথবা, সম্পদ তালিকায় অপরিকল্পিত পুঞ্জীকরণের একটি কাল্পনিক উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ মনে করি, একটি নির্দিষ্ট বৎসরের শুরুতে একটি প্রতিষ্ঠানের মজুত ভাণ্ডার ছিল 50 একক পূর্ববর্তী সামগ্রী। সেই বৎসর প্রতিষ্ঠানটি আরও 500 একক দ্রব্য বিক্রয়ের লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে নতুন 500 একক দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করল। কিন্তু উৎপাদিত সামগ্রীর 500 এককের মধ্যে মাত্র 400 একক দ্রব্য বিক্রয় করতে পারল। ফলে প্রতিষ্ঠানটির সম্পূর্ণ বছরে পূর্ববর্তী সামগ্রীর পরিমাণ হবে = 50 + (500 – 400) = 150 একক।

এভাবে অপ্রত্যাশিতভাবে মজুত ভাণ্ডারে যে অতিরিক্ত 100 একক দ্রব্য যুক্ত হল এটাই হল মজুত তালিকায় অপরিকল্পিত পুঞ্জীকরণের উদাহরণ।

প্রশ্ন ১৫। নিচের দেওয়া রূপটির ভিত্তিতে মোট ঘরোয়া উৎপাদনের ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ মোট ঘরোয়া উৎপাদন (GDP) = মোট মূল্য সংযোজন (GVA)। এই দুটি ধারণা সমান। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং তৃতীয় খণ্ডের মূল্য সংযোজন করে মোট সংযোজিত মূল্য বের করা হয়। এর মধ্যে মূলধনের ক্ষয়-ক্ষতি অন্তর্ভুক্ত থাকে। যদি N সংখ্যক প্রতিষ্ঠান থাকে তাহলে GDP হবে I থেকে N পর্যন্ত সংখ্যাভুক্ত সকল প্রতিষ্ঠানের মোট মূল্য সংযোজনের যোগফল।

প্রশ্ন ১৬। নিচের দেওয়া রূপটির ভিত্তিতে শুদ্ধ বা নেট ঘরোয়া উৎপাদনের ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ শুদ্ধ বা নেট ঘরোয়া উৎপাদন (NDP) = শুদ্ধ বা নেট মূল্য সংযোজন ( NVA )। নেট মূল্য সংযোজন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও তৃতীয় খণ্ডের মূল্য সংযোজন করে বের করা হয়। এর মধ্যে মূলধনের ক্ষয়-ক্ষতি অন্তর্ভূক্ত থাকে। যদি N সংখ্যক প্রতিষ্ঠান থাকে, তাহলে NDP হবে 1 থেকে N. পর্যন্ত সংখ্যাভুক্ত সকল প্রতিষ্ঠানের শুদ্ধ মূল্য সংযোজনের সমষ্টি।

প্রশ্ন ১৭। মোট ঘরোয়া উৎপাদন থেকে মোট জাতীয় উৎপাদন কীভাবে নির্ণয় করা হয় ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ একটি দেশের উৎপাদন হওয়া চূড়ান্ত দ্রব্যের বাজার মূল্যকে সেই দেশের মোট ঘরোয়া উৎপাদন (GDP) বলে। একটি বিত্তীয়  বছরে দেশের আভ্যন্তরীণ বাজারে  উৎপাদন হওয়া মোট সামগ্রী এবং সেবার মুদ্রা মূল্যকে মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP) বলে।

মোট ঘরোয়া উৎপাদনের সঙ্গে বিদেশ থেকে অর্জিত নেট আয়ের পরিমাণ যোগ করলে মোট জাতীয় উৎপাদন পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ১৮। জাতীয় ব্যয়যোগ্য আয় কী?

উত্তরঃ বাজার দরে শুদ্ধ জাতীয় আয় এবং বিদেশ থেকে প্রাপ্ত হস্তান্তরযোগ্য আয়ের সমষ্টিই হল জাতীয় ব্যয় যোগ্য আয়। জাতীয় ব্যয় যোগ্য আয় শুদ্ধ বা মোট হতে পারে।

মোট জাতীয় ব্যয় যোগ্য আয় = GNPMP + বিদেশ থেকে প্রাপ্ত নেট হস্তান্তরযোগ্য আয় ।

শুদ্ধ জাতীয় ব্যয় যোগ্য আয় NNPMP + বিদেশ থেকে প্রাপ্ত নেট হস্তান্তরযোগ্য আয়।

প্রশ্ন ১৯। উৎপাদন ব্যয়ে নেট রাষ্ট্রীয় উৎপাদন কী ? অথবা, উৎপাদন ব্যয়ের ভিত্তিতে নেট (Net) জাতীয় উৎপাদন কী ?

উত্তরঃ কোন দেশে নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদানের সাহায্যে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবামূলক কাজকর্মের অর্থমূল্যের সমষ্টির সাথে বৈদেশিক বাণিজ্য হতে উপার্জিত‌ আয়কে যোগ করে যা পাওয়া যায় তাকেই উপাদান ব্যয়ের ভিত্তিতে নেট জাতীয়‌ উৎপাদন বলে। উপাদান ব্যয়ের ভিত্তিতে শুদ্ধ জাতীয় উৎপাদন জাতীয় আয়কেই বুঝায়।

প্রশ্ন ২০। প্রকৃত GDP এবং নামিক GDP এর মধ্যে পার্থক্য দর্শাও। 

উত্তরঃ একটি দেশে এক বছরের মধ্যে আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ের উৎপন্ন দ্রব্য এবং সেবা কার্যাদির অর্থমূল্যকে স্থির মূল্যে অর্থাৎ ভিত্তিবর্ষের হিসাবে গণনা করলে প্রকৃত GDP গণনা করা যায়। কিন্তু চলতি দামে মোট ঘরোয়া উৎপাদন গণনা করাকে নামিক GDP (Nominal GDP) বলে।

দেশের উৎপন্ন স্তর বৃদ্ধি হলে প্রকৃত GDP বৃদ্ধি পাবে কিন্তু দেশের উৎপন্ন স্তর বৃদ্ধি না হয়েও নামিক GDP বাড়তে পারে। প্রকৃত GDP এর অন্য নাম হল GDP at constant prices (স্থির দামে GDP)। নামিক GDP এর অন্য নাম হল GDP a current price (প্রচলিত দামে GDP)।

প্রশ্ন ২১। মধ্যবর্তী দ্রব্য এবং চূড়ান্ত দ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য কী ?

উত্তরঃ যে সকল দ্রব্য উৎপাদনের কাঁচামাল বা উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকে মধ্যবর্তী বা অন্তর্বর্তী দ্রব্য বলে। অর্থাৎ উৎপাদক বস্তুই হল মধ্যবর্তী দ্রব্য।‌ যেমন টিন বা লোহার পাত যা মোটরগাড়ি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় তা হল মধ্যবর্তী দ্রব্যের উদাহরণ।

যে সকল দ্রব্য শেষ ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়, তা  থেকে অন্য কোনো পর্যায়ে উৎপাদন সম্ভব নয়, তাকে চূড়ান্ত বা অন্তিম দ্রব্য বলে। অর্থাৎ ভোগ্য বস্তুই হল চূড়ান্ত দ্রব্য। খাদ্যদ্রব্য, ‘কাপড় হল অন্তিম দ্রব্যের উদাহরণ।

প্রশ্ন ২২। ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয় কী ?

উত্তরঃ সরকারকে কর প্রদান করার পর ব্যক্তিগত আয়ের যতটুকু অবশিষ্ট থাকে, তাকে ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য  আয় বলে। অন্যভাবে বলতে বলা যায়, ব্যক্তিগত আয়ের অংশ ভোগ অথবা সঞ্চয়ে পরিবার ব্যয় করে, তাকে ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য  আয় বসে।

প্রশ্ন ২৩। A অংশের সঙ্গে B অংশ মেলাওঃ

AB
(ক) বার্ষিক লাভ বা উৎপাদন(১) মজুত ধারণা
(খ) কারখানা ঘর বা যন্ত্রপাতি(২) মধ্যবর্তী দ্রব্য
(গ) অটোমোবাইল নির্মাণে ব্যবহৃত আকরিক লোহা(৩) প্রবাহ ধারণা

উত্তরঃ 

AB
(ক) বার্ষিক লাভ বা উৎপাদন(৩) প্রবাহ ধারণা
(খ) কারখানা ঘর বা যন্ত্রপাতি(১) মজুত ধারণা
(গ) অটোমোবাইল নির্মাণে ব্যবহৃত আকরিক লোহা(২)মধ্যবর্তী দ্রব্য

প্রশ্ন ২৪। ক্ষয়-ক্ষতি কী ? মোট বিনিয়োগের সাথে ক্ষয়-ক্ষতি কীভাবে জড়িত লেখো।

অথবা, 

রাষ্ট্রীয় আয় গণনার প্রসঙ্গে ক্ষয়-ক্ষতির (মূল্য হ্রাস) ধারণা ব্যাখ্যা করো। 

উত্তরঃ উৎপাদন প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে কলকারখানা, যন্ত্রপাতি ও মূলধন সামগ্রী ক্রমশ পুরাতন ও অকেজো হয়ে পড়ে। উৎপাদন প্রক্রিয়া ক্রমাগত চালু রাখতে হলে ওইগুলো কোন না কোন সময় মেরামত বা পরিবর্তন করতে হবে। এজন্য দেখা যায় উৎপাদনকারী প্রত্যেক বছর তার আয়ের একাংশ মূলধন দ্রব্যাদি ও কলকারখানার ক্ষয়ক্ষতি বা অবচয়  পূরণের জন্য আলাদা করে রেখে দেয়।

যন্ত্রপাতি, কলকারখানা ও উৎপাদনের সাজ সরঞ্জাম ইত্যাদি মূলধনজাত  দ্রব্যসামগ্রীর জন্য ব্যয়কে বিনিয়োগ বলে। মোট বিনিয়োগে ক্ষয়ক্ষতি অন্তর্ভুক্ত থাকে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর

1. মাথাপিছু আয় কী ?

উত্তরঃ একটি দেশের নির্দিষ্ট বছরের জাতীয় আয়কে দেশের জনসংখ্যার দ্বারা ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায়, তাকেই দেশের মাথাপিছু আয় বলা হয়।

2. পাইকারি দাম সূচক কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে সূচক সংখ্যা সাধারণত দামস্তরের  পরিবর্তনকে সূচিত করে, তাকে পাইকারি দাম সূচক বলে।

3. ভিত্তিবর্ষ কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে সময়ের ওপর ভিত্তি করে দাম, পরিমাণ ইত্যাদির হ্রাস-বৃদ্ধির পরিমাপ করা যায়, তাকে ভিত্তি বর্ষ বলে।

4. রাষ্ট্রীয় আয় কী ?

উত্তরঃ একটি দেশের একটি নির্দিষ্ট বিত্তীয় বর্ষে যে সমস্ত প্রস্তুত দ্রব্য বা সেবাসামগ্রী উৎপাদন করা হয় তার মুদ্রামূল্যই হল রাষ্ট্রীয় আয়।

5. একটি উদাহরণসহ হস্তান্তরিত দেনার ধারণাটি দাও।

উত্তরঃ যে সকল ব্যক্তির নিকট থেকে কোনরূপ সেবা পাওয়া যায় না বা যে সকল ব্যক্তি জাতীয় উৎপাদন কার্যে অংশগ্রহণ করে না, তাদের আয়কে হস্তান্তরিত আয়  বলে। যেমন – ছাত্রবৃত্তি, দান ও অনুদান ইত্যাদি।

6. আয়ের চক্রীয় প্রবাহ কী ?

উত্তরঃ অর্থনীতিতে উৎপাদন ও ভোগ প্রক্রিয়া চলতে থাকার ফলে ফার্ম ও পরিবারের মধ্যে আয়-ব্যয় প্রবাহের সৃষ্টি হয়। আয় ব্যয়ের এই অবিরত প্রবাহকেই অর্থনীতিতে আয়ের চক্রীয় প্রবাহ বলে।

7. আয়ের চক্রীয় প্রবাহে উদ্ভব হওয়া যে কোনো দুটি নির্গমনের বিষয়ে উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (১) পরিবারগুলি ফার্মকে উপাদান সেবা যোগান দিয়ে আয় উপার্জন করে। এই আয়ের দ্বারাই ফার্মের কাছ থেকে দ্রব্য ও সেবাকার্য কেনে। এই প্রক্রিয়ায় পরিবারগুলির সঞ্চয় শন্য ধরা হয় নতুবা ফার্মের মোট ব্যয় এবং পরিবারের আয়ের সমষ্টি সমান হবে না।

(২) আয়ের চক্রীয় প্রবাহে বৈদেশিক বাণিজ্যের অনুপস্থিতির অভিধারণা লওয়া হয়। দেশের অভ্যন্তরের উপাদানের সাহায্যে উৎপাদন ও ভোগ সম্পাদিত হয়। ভারতের মানুষ যদি বিদেশী দ্রব্য ক্রয় করে বা ভারত যদি বিদেশে দ্রব্য বিক্রয় করে তাহলে আয়ের চক্রীয় প্রবাহে নির্গমন হবে কারণ সামগ্রিক চাহিদায় এগুলি প্রভাব ফেলায়।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর 

প্রশ্ন ১। উপভোক্তার দ্রব্য (ভোগ্যবস্তু) এবং মূলধনী দ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করো।

উত্তরঃ যে সকল চূড়ান্ত দ্রব্য উপভোক্তারা উপভোগ করে বা যেটি উপভোক্তার তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ করে, তাকে উপভোক্তার দ্রব্য বা ভোগ্যবস্তু বলে। এটি পরিষেবাকেও অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন – ভাত, রুটি ও কাপড় ইত্যাদি।

যে সকল মধ্যবর্তী দ্রব্য উৎপাদন কার্যে ব্যবহার করা হয়, তাকে মূলধনী দ্রব্য বলে। যেমন – কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি।

প্রশ্ন ২। জাতীয় আয় প্রসঙ্গে মজত এবং প্রবাহের মধ্যে পার্থক্য দর্শাও। 

উত্তরঃ ষ্টক বা মজুত হল নির্দিষ্ট সময় বিন্দুতে অর্থনৈতিক চলকের পরিমাণ নির্ধারণ করা কিন্তু প্রবাহ হল একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অর্থনৈতিক চলকের পরিমাণ কাকে বলে ?

নির্ধারণ করা। ষ্টক হল স্থির ধারণা। যেমন – যন্ত্রপাতির পরিমাণ, টাকার পরিমাণ, মোট অর্থের যোগান; সম্পদের পরিমাণ ইত্যাদি। প্রবাহ হল গতিশীল ধারণা। যেমন – আয়, উৎপাদন, লাভ, নির্দিষ্ট সময়সীমায় ব্যাংক আমানতের পরিমাণ ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৩। উৎপাদনের চারটি কারক বা উপাদানের নাম লেখো এবং তাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখো।

উত্তরঃ উৎপাদনের চারটি উপাদান হল –

(ক) ভূমি।

(খ) শ্রম। 

(গ) মূলধন। 

(ঘ) সংগঠন।

ভূমির বৈশিষ্ট্যঃ

(১) ভূমি প্রকৃতির দান।

(২) ভূমির যোগান সীমাবদ্ধ।

(৩) ভূমি স্থানান্তরযোগ্য নয়।

(৪) জমির উর্বরতা এবং অবস্থিতির ভিত্তিতে ভূমির গুণগত পার্থক্য রয়েছে।

শ্রমের বৈশিষ্ট্যঃ

(১) শ্রম জীবন্ত উপাদান।

(২) শ্রমকে শ্রমিক হতে পৃথক করা যায় না।

(৩) শ্রম গতিশীল।

(৪) শ্রমকে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা যায় না।

মূলধনের বৈশিষ্ট্যঃ

(১) মূলধন মানুষের দ্বারা সৃষ্ট।

(২) মূলধন গতিশীল।

(৩) মূলধনের যোগান দাম আছে।

(৪) মূলধন স্থিতিস্থাপক।

(৫) মূলধন উৎপাদনশীল।

সংগঠনের বৈশিষ্ট্যঃ

(১) বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে সমন্বয় সাধনের ক্ষমতা সংগঠনের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

(২) অনিশ্চিত ভবিষ্যতে ঝুঁকি লওয়া – সংগঠনের এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।

(৩) সংগঠন বা সংগঠককে একজন উন্নতমানের শ্রমিক হিসাবে বিবেচনা করা চলে।

(৪) সংগঠনের যোগান সীমিত।

প্রশ্ন ৪। বিনিয়োগ কাকে বলে ? বিনিয়োগের প্রধান ভাগ্নগুলো কী কী ?

উত্তরঃ অর্থবিদ্যায় বিনিয়োগ বলতে দেশের মূলধন দ্রব্যের বৃদ্ধি সাধনকে বুঝায়। নতুন কলকারখানা স্থাপন, নতুন নতুন মেশিন ও যন্ত্রপাতির আবিষ্কার এবং পরিমাণ বৃদ্ধি, চূড়ান্ত দ্রব্য সামগ্রীর উৎপাদন বৃদ্ধি বা উৎপাদন কার্যে ব্যবহারযোগ্য উপাদান ও দ্রব্য সামগ্রীর পরিমাণ বৃদ্ধি এই সব মিলিয়ে কোন দেশের সামগ্রিক মূলধনের যে বৃদ্ধিসাধন হয়, তাকে বিনিয়োগ বলা হয়। মজুত পণ্যের বৃদ্ধি ও স্থির মুলধনের বৃদ্ধি বিনিয়োগের অন্তর্ভুক্ত।

বিনিয়োগ দুই প্রকারের হতে পারে –

(১) স্বশাসিত বিনিয়োগ।

(২) উদ্দেশ্যগত  বিনিয়োগ।

প্রশ্ন ৫। মোট ঘরোয়া উৎপাদনকে (GDP) একটি দেশের জনসাধারণের কল্যাণের মাপের সূচক বলে গণ্য করা কেন শুদ্ধ নয়, আলোচনা করো।

উত্তরঃ সাধারণতঃ GDP কে আর্থিক কল্যাণের সূচক হিসাবে গণ্য করা হয়। অন্যান্য বিষয় স্থির থাকলে, GDP বৃদ্ধি পেলে জনগণের আর্থিক কল্যাণ সাধিত হবে। তাছাড়া GDP- র কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, যা প্রমাণ করে GDP একটি দেশের জনসাধারণের কল্যাণের মাপের সূচক বলে গণ্য করা শুদ্ধ নয়। নিচে GDP এর সীমাবদ্ধতা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হল।

(১) মোট ঘরোয়া উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও জনসাধারণের কল্যাণ বৃদ্ধি হয়েছে তা বুঝায় না, কারণ যদি বর্ধিত উৎপাদনের বৃহৎ অংশ কতিপয় পুঁজিপতির হস্তে কুক্ষিগত থাকে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের হস্তে এর কোন অংশ পৌঁছেনি।

(২) অর্থের মাপকাঠিতে করা হয়ে থাকে। কিন্তু একটি অর্থনীতির উৎপাদনের একটি মোটা অংশ বাজারে ক্রয় বিক্রয় হয় না। যেমন – কৃষক উৎপন্ন দ্রব্যের একাংশ নিজে ভোগ করে। আবার অনেক সময় সরাসরি বিনিময় চলে। তাছাড়া অনেক সেবামূলক কাজ আছে যার মূল্য ধরা হয় না। এরূপ অবস্থায় অর্থমূল্যে GDP. সঠিকভাবে পরিমাপ করা কঠিন।

(৩) কিছু বাহ্যিক উপাদান আছে যা মূল্যায়ন হয় না অথচ এই উপাদানগুলো জনকল্যাণের পরিমাণ অবনমিত করেছে। কিন্তু এর কোন মুদ্রাগত মূল্যায়ন হয় না। উদাহরণস্বরূপ – মটরগাড়ির সাথে দুই পক্ষ জড়িত আছে। মটরগাড়ি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান এবং মটরগাড়ির মালিক। মটরগাড়ির সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, বায়ু ও শব্দ দূষণের মাত্রা তত বৃদ্ধি পাবে। এই তৃতীয় পক্ষ যার মটরগাড়ির সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক নেই সেই পক্ষের ক্ষতিসাধন হবে। কিন্তু এই ক্ষতিসাধনের কোন মূল্যায়ন হয় না।

(8) GDP যদি প্রকৃত বৃদ্ধি না হয়ে মুদ্রাগত বৃদ্ধি হয়, তাহলে মোট ঘরোয়া উৎপাদন জীবনধারণের মানদণ্ড উন্নতির সূচক হতে পারে না।

(৫) মদ, গাঁজা, বিড়ি-সিগারেট, নেশাজাত ঔষধ এবং অস্ত্রশস্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধি হলে GDP বৃদ্ধি হবে কিন্তু কল্যাণ হ্রাস পাবে।

(৬) অনেক সময় পেশাগত শ্রেণিকরণ করা দুষ্কর। কারণ একই ব্যক্তি একাধিক উৎস থেকে আয় উপার্জন করে থাকে। ফলে GDP এর পরিমাপে অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়।

(৭) GDP বৃদ্ধির হার অপেক্ষা জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ বেশি হলে আর্থিক কল্যাণ বৃদ্ধি পাবে না।

উপরোক্ত কারণে মোট ঘরোয়া উৎপাদন অর্থাৎ GDP একটি দেশের জনসাধারণের কল্যাণের মাপের সূচক বলে গণ্য করা সঠিক  নয়।

প্রশ্ন ৬। পূর্ববর্তী দ্রব্য মানে কী ? উদাহরণ সহকারে পূর্ববর্তী  দ্রব্যের অপরিকল্পিত মজুত বৃদ্ধি এবং অপরিকল্পিত মজুত হ্রাসের  ধারণা  ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ অর্থনীতিতে একটি প্রতিষ্ঠান অবিক্রিত দ্রব্য, অব্যবহৃত  কাঁচামাল অথবা অর্ধ চূড়ান্ত দ্রব্য এক বছর থেকে অন্য বছরে টেনে নিয়ে যায়, সেই দ্রব্যসমূহকে  পূর্ববর্তী দ্রব্য বলে।

পূর্ববর্তী দ্রব্যের পরিবর্তন পরিকল্পিত অথবা অপরিকল্পিত হতে পারে। বিক্রি অপ্রত্যাশিতভাবে হ্রাস পেলে প্রতিষ্ঠানটির অবিক্রিত দ্রব্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং অপরিকল্পিত মজুত বৃদ্ধি পায়। এর বিপরীতে  বিক্রির পরিমাণ আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পেলে পূর্ববর্তী দ্রব্যের মজুত  অপরিকল্পিতভাবে হ্রাস পায়।

প্রশ্ন ৭। দরসূচক  কাকে বলে ? দর সূচক কী কী  ?

উত্তরঃ দর সূচক হল এমন একটি সংখ্যা যার মাধ্যমে আমরা  দামস্তরকে  প্রকাশ করে থাকি। দাম সূচক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দামস্তর বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট সময়ে কিছু নির্বাচিত দ্রব্যের গড় দাম যে সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, তাকে দর সূচক বলা হয়।

দর সূচক দুই ধরনের –

(১) পাইকারি দাম সূচক।

(২) উপভোক্তার দাম সূচকাংক।

প্রশ্ন ৮। দেশের কল্যাণের সূচক হিসাবে মোট ঘরোয়া উৎপাদনের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। বাহ্যিকতার ভিত্তিতে সেগুলো ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ সাধারণতঃ GDP কে আর্থিক কল্যাণের সূচক হিসাবে গণ্য করা হয়। অন্যান্য বিষয় স্থির থাকলে, GDP বৃদ্ধি পেলে জনগণের আর্থিক কল্যাণ সাধিত হবে। তাছাড়া GDP- র কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, যা প্রমাণ করে GDP একটি দেশের জনসাধারণের কল্যাণের মাপের সূচক বলে গণ্য করা শুদ্ধ নয়। নিচে GDP এর সীমাবদ্ধতা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হল।

(১) মোট ঘরোয়া উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও জনসাধারণের কল্যাণ বৃদ্ধি হয়েছে তা বুঝায় না, কারণ যদি বর্ধিত উৎপাদনের বৃহৎ অংশ কতিপয় পুঁজিপতির হস্তে কুক্ষিগত থাকে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের হস্তে এর কোন অংশ পৌঁছেনি।

(২) অর্থের মাপকাঠিতে করা হয়ে থাকে। কিন্তু একটি অর্থনীতির উৎপাদনের একটি মোটা অংশ বাজারে ক্রয় বিক্রয় হয় না। যেমন – কৃষক উৎপন্ন দ্রব্যের একাংশ নিজে ভোগ করে। আবার অনেক সময় সরাসরি বিনিময় চলে। তাছাড়া অনেক সেবামূলক কাজ আছে যার মূল্য ধরা হয় না। এরূপ অবস্থায় অর্থমূল্যে GDP. সঠিকভাবে পরিমাপ করা কঠিন।

(৩) কিছু বাহ্যিক উপাদান আছে যা মূল্যায়ন হয় না অথচ এই উপাদানগুলো জনকল্যাণের পরিমাণ অবনমিত করেছে। কিন্তু এর কোন মুদ্রাগত মূল্যায়ন হয় না। উদাহরণস্বরূপ – মটরগাড়ির সাথে দুই পক্ষ জড়িত আছে। মটরগাড়ি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান এবং মটরগাড়ির মালিক। মটরগাড়ির সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, বায়ু ও শব্দ দূষণের মাত্রা তত বৃদ্ধি পাবে। এই তৃতীয় পক্ষ যার মটরগাড়ির সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক নেই সেই পক্ষের ক্ষতিসাধন হবে। কিন্তু এই ক্ষতিসাধনের কোন মূল্যায়ন হয় না।

(8) GDP যদি প্রকৃত বৃদ্ধি না হয়ে মুদ্রাগত বৃদ্ধি হয়, তাহলে মোট ঘরোয়া উৎপাদন জীবনধারণের মানদণ্ড উন্নতির সূচক হতে পারে না।

(৫) মদ, গাঁজা, বিড়ি-সিগারেট, নেশাজাত ঔষধ এবং অস্ত্রশস্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধি হলে GDP বৃদ্ধি হবে কিন্তু কল্যাণ হ্রাস পাবে।

(৬) অনেক সময় পেশাগত শ্রেণিকরণ করা দুষ্কর। কারণ একই ব্যক্তি একাধিক উৎস থেকে আয় উপার্জন করে থাকে। ফলে GDP এর পরিমাপে অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়।

(৭) GDP বৃদ্ধির হার অপেক্ষা জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ বেশি হলে আর্থিক কল্যাণ বৃদ্ধি পাবে না।

উপরোক্ত কারণে মোট ঘরোয়া উৎপাদন অর্থাৎ GDP একটি দেশের জনসাধারণের কল্যাণের মাপের সূচক বলে গণ্য করা সঠিক নয়।

প্রশ্ন ৯। 

এর অর্থ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ 

এই সমীকরণ দ্বারা মোট ঘরোয়া উৎপাদনকে বুঝায়। এই মোট ঘরোয়া উৎপাদন হল একটি অর্থনীতির সকল প্রতিষ্ঠানের নেট সংযোজিত মূল্য এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের মোট সমষ্টি।

প্রশ্ন ১০। ব্যক্তিগত আয় এবং ব্যক্তিগত খণ্ডে আয়ের সংজ্ঞা দাও এবং পার্থক্য করো।

উত্তরঃ পরিবার বিভিন্ন উৎস থেকে যে আয় উপার্জন করে, সেই আয়ই হল ব্যক্তিগত আয়।

কোন নির্দিষ্ট বছরে একটি দেশের ঘরোয়া খণ্ড এবং ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের  অর্জিত আয় এবং সরকার ও বিদেশ থেকে লব্ধ হস্তান্তরিত পরিশোধের সমষ্টিকেই ব্যক্তিগত খণ্ডের আয় বলে।

ব্যক্তিগত আয় সংকীর্ণ ধারণা কিন্তু ব্যক্তিগত খণ্ডের আয় ব্যাপক ধারণা। ব্যক্তিগত আয়ে কর্পোরেশন কর এবং অবণ্টিত মুনাফা অন্তর্ভুক্ত হয় না। কিন্তু ব্যক্তিগত খণ্ড আয়ে কর্পোরেশন কর এবং অবণ্টিত মুনাফা অন্তর্ভুক্ত হয়।

প্রশ্ন ১১। উপভোক্তার দাম সূচকাংক এবং পাইকারি দাম সূচকাংকের সংজ্ঞা দাও এবং পার্থক্য দেখাও।

উত্তর। নির্দিষ্ট শ্রেণির লোকের জীবন নির্বাহের ব্যয়ের পরিবর্তন পরিমাপ করার সূচককে। উপভোক্তার দাম সূচকাংক বলে। উপভোক্তার দাম সূচকাংককে জীবন নির্বাহের ব্যয় সূচকাংক বা খুচরা দাম সূচকাংকও বলা হয়। এই সূচকাংকের সাহায্যে অর্থের ক্রয়ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়।

গড় মূল্যস্তর বা মুদ্রার মূল্য পরিবর্তন পরিমাপ করার পদ্ধতিকে পাইকারি দাম সূচকাংক বলে।

পার্থক্যঃ

(১) উপভোক্তার দাম সূচকাংকের সাহায্যে জনগণের জীবন ধারণের মানদণ্ড প্রতিফলিত হয়। পাইকারি দাম সূচকাংকের সাহায্যে সাধারণ মূল্যস্তরের পরিবর্তন পরিমাপ করা হয়।

(২) উপভোক্তার দাম সূচক গঠন প্রক্রিয়ায় দ্রব্যের দাম খুচরা মূল্যে সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু পাইকারি দাম সূচকাংকে দ্রব্যের পাইকারি মূল্য ধরা হয়।

প্রশ্ন ১২। মোট রাষ্ট্রীয় উৎপাদন এবং মোট ঘরোয়া উৎপাদনের মধ্যে পার্থক্য দর্শাও।

উত্তরঃ কোন দেশে কোনও বৎসরে উৎপাদিত চূড়ান্ত সামগ্রী এবং সেবাকার্যের মুদ্রামূল্যকে সেই বৎসরের মোট রাষ্ট্রীয় উৎপাদন (GNP) বলে।

সূত্রাকারে, GNP = C + I + G + (X – M)

এখানে, C = ভোগের জন্য ব্যয়।

I = ব্যক্তিগত খণ্ডের মোট বিনিয়োগ।

G = সরকারি খণ্ডের মোট ব্যয়ের পরিমাণ।

X = রপ্তানির পরিমাণ।

M = আমদানির পরিমাণ।

কোন নির্দিষ্ট বৎসরে কোনও দেশের ভিতরে উৎপাদিত চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবাসামগ্রীকে একত্রিত করলে মোট আভ্যন্তরীণ বা ঘরোয়া উৎপাদন (GDP) পাওয়া যায়। GDP এর ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানির যোগ বিয়োগের প্রশ্ন আসে না।

GNP গণনার ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে অর্জিত নেট আয় অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু GDP গণনার ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে অর্জিত নেট আয় অন্তর্ভুক্ত হয় না।

প্রশ্ন ১৩। একটি বিশেষ বছরে একটি দেশে উপাদান ব্যয়ে নেট রাষ্ট্রীয় উৎপাদন 2100 কোটি টাকা। পরিবারের ব্যয়যোগ্য আয় 1500 কোটি টাকা। তার পরিশোধ করা ব্যক্তিগত আয় করের পরিমাণ 500 কোটি টাকা এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তথা সরকারের সংরক্ষিত আয়ের মূল্য 300 কোটি টাকা। সরকার এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে পরিবারের হস্তান্তর পরিশোধ্যের মূল্য নির্ধারণ করো।

উত্তরঃ ব্যক্তিগত ব্যবহার যোগ্য আয় = উপাদান ব্যয়ে নেট রাষ্ট্রীয় উৎপাদন- প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের সংরক্ষিত আয়ের মূল্য + হস্তান্তরযোগ্য দেনা

⇒ ব্যক্তিগত আয় কর।

⇒ 1500 = 2100 – 300 + হস্তান্তরযোগ্য দেনা – 500

⇒ 1500 = 1300 + হস্তান্তরযোগ্য দেনা

⇒ 1500 – 1300 = হস্তান্তরযোগ্য দেনা

∴ 200 = হস্তান্তরযোগ্য দেনা

হস্তান্তরযোগ্য দেনা = 200 কোটি টাকা।

প্রশ্ন ১৪। প্রতি বছরে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান 1200 টাকার দ্রব্য উৎপাদন করে। প্রতিষ্ঠানটি 750 টাকার মধ্যবর্তী দ্রব্য ব্যবহার করে। যদি প্রতিষ্ঠানটির নেট সংযোজিত মূল্য 400 টাকা হয়, তাহলে মোট সংযোজিত মূল্য এবং স্থায়ী মূলধনের ব্যবহার (অবক্ষয়) নিরূপণ করো।

উত্তরঃ মোট সংযোজিত মূল্য উৎপাদন মূল্য = মধ্যবর্তী দ্রব্যের মূল্য

= 1200 – 750

= 450 টাকা

মোট সংযোজিত মূল্য = মোট সংযোজিত মূল্য – অবক্ষয়

⇒ 400 = 450 – অবক্ষয়

অবক্ষয় = 50 টাকা

∴ মোট সংযোজিত মূল্য = 450 টাকা

অবক্ষয় = 50 টাকা

প্রশ্ন ১৫। নীচের তথ্য থেকে

(i) উপাদান ব্যয়ে মোট / স্থূল ঘরোয়া উৎপাদন 

(ii) বাজার দরে মোট / স্থূল জাতীয় উৎপাদন 

(iii) উপাদান ব্যয়ে নিখুঁত / প্রকৃত জাতীয় উৎপাদন গণনা করো।

(a) উপভোগ ব্যয়2,000 কোটি টাকা
(b) বিনিয়োগ ব্যয়1,200 কোটি টাকা
(c) সরকারি ব্যয়450 কোটি টাকা
(d) রপ্তানি ব্যয়80 কোটি টাকা
(e) আমদানি95 কোটি টাকা
(f) বিদ্ধে থেকে নিট উপাদান আয়60 কোটি টাকা
(g) পরোক্ষ কর90 কোটি টাকা
(h) ভরতুকি80 কোটি টাকা
(i) অবক্ষয়30 কোটি টাকা

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর

1. উৎপাদনীয় উপাদানের আয় ও হস্তান্তর আয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

উত্তরঃ উৎপাদনীয় উপাদানের আয় বলতে খাজনা, মজুরি, সুদ এবং লাভ হতে অর্জিত মোট আয়কে বোঝানো হয়। GDP গণনার আয় পদ্ধতিতে উৎপাদনীয়  উপাদানের আয় অন্তর্ভূক্ত হয়। একটি দেশের বাসিন্দাগণ যে সকল আয় মুক্তভাবে লাভ করে এবং যার বিনিময়ে কোন মূল্য প্রদান করতে হয় না, এরূপ প্রাপ্তিকে হস্তান্তর আয় বলে। যেমন -‌ উপহার, দান, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারিদের পেন্সন ইত্যাদি। হস্তান্তর আয় GDP গণনায় অন্তর্ভুক্ত হয় না।

2. মধ্যবর্তী সামগ্রী, অন্তিম সামগ্রী, ভোগ্য সামগ্রী ও বিনিয়োগ সামগ্রীর উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ যে সকল দ্রব্যসামগ্রী সরাসরি ভোগের কাজে ব্যবহৃত না হয়ে পুনরায় উৎপাদনের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাকে মধ্যবর্তী সামগ্রী বলে। উদাহরণস্বরূপ চিনির‌ কলের মালিক চিনি উৎপাদনের জন্য আখ ক্রয় করে। চিনির কলের মালিকের কাছে আখ হল মধ্যবর্তী সামগ্রী।

যে সকল দ্রব্যসামগ্রী শেষ ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয় অর্থাৎ সরাসরি‌ ভোগের কাজে ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে অন্তিম সামগ্রী বলে। যেমন খাদ্যদ্রব্য,কাপড়। 

যে সকল অন্তিম সামগ্রী উপভোক্তারা উপভোগ করে বা যেটি উপভোক্তার  তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ করে, তাকে ভোগ্য সামগ্রী বলে। যেমন- ভাত, রুটি, মাংস।

যে সকল মধ্যবর্তী সামগ্রী উৎপাদন কার্যে ব্যবহৃত হয়, তাকে বিনিয়োগ সামগ্রী বলে। যেমন – কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী  প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। নিচের তথ্য থেকে ব্যক্তিগত আয় ও ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয় নির্ণয় করো।

(কোটি টাকার হিসাবে)
(১) উপাদান ব্যয় NDP9000
(২) বিদেশ থেকে Net  উপাদান আয়150
(৩) অবণ্টিত  মুনাফা500
(৪) কর্পোরেট কর600
(৫) পরিবার প্রাপ্ত সুদ1200
(৬) পরিবার প্রদেয় সুদ1000
(৭) হস্তান্তরিত আয়400
(৮) ব্যক্তিগত কর600

উত্তরঃ ব্যক্তিগত খণ্ডের আয় (private income)

= উপাদান ব্যয়ে NDP  + বিদেশ থেকে নেট উপাদান আয় + পরিবার প্রাপ্ত সুদ + হস্তান্তরিত আয়-পরিবার প্রদেয় সুদ

= 9000 + 150 + 1200 + 400 – 1000

= 9750 কোটি টাকা।

ব্যক্তিগত আয় (personal income)

= ব্যক্তিগত খণ্ডের আয় – অবণ্টিত  মুনাফা – কর্পোরেট কর

= 9750 – 500 – 600

= 8650 কোটি টাকা

ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয় = ব্যক্তিগত আয় – ব্যক্তিগত কর

= 8650-600 = 8050 কোটি টাকা

প্রশ্ন ২। নিচের তথ্য থেকে ব্যক্তিগত আয় ও ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয় গণনা করো।

কোটি টাকার হিসাবে
(১) বাজার দামে GDP9000
(২) অবক্ষয়500
(৩) বিদেশ থেকে Net উপাদান আয়200
(8) Net পরোক্ষ কর100
(৫) অবণ্টিত মুনাফা1500
(৬) কর্পোরেট কর1000
(৭) পরিবার প্রাপ্ত সুদ1200
(৮) পরিবার প্রদেয় সুদ1000
(৯) হস্তান্তর আয়800
(১০) ব্যক্তিগত / প্রত্যক্ষ কর600

উত্তরঃ উপাদান দামে. NDP = বাজার দামে GDP – অবক্ষয় – নেট পরোক্ষ কর

= 9000 – 500 – 100

= 8400 কোটি টাকা।

ব্যক্তিগত খণ্ডের আয়

= উপাদান দামে NDP + বিদেশ থেকে নেট উপাদান আয় + পরিবার প্রাপ্ত সুদ + হস্তান্তরিত আয় – পরিবার প্রদেয় সুন্দ 

= 8400 + 200 + 1200 + 800 – 1000

= 9600 কোটি টাকা

ব্যক্তিগত আয় = ব্যক্তিগত খণ্ডের আয় – কর্পোরেট কর – অবণ্টিত মুনাফা

= 9600-1000 – 1500

= 7100 কোটি টাকা

ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয় = ব্যক্তিগত আয় – প্রত্যক্ষ কর

= 7100-600 = 6500 কোটি টাকা।

প্রশ্ন ৩। নিচের দেওয়া তথ্য থেকে উপাদান দামে নেট রাষ্ট্রীয় উৎপাদন (NNP ), ব্যক্তিগত আয় এবং ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয় নির্ণয় করো।

(কোটি টাকার হিসাবে)
(১) বাজার দরে GDP15000
(২) অবক্ষয়1000
(৩) বিদেশ থেকে লব্ধ উপাদান আয়800
(৪) নেট পরোক্ষ কর500
(৫) অবণ্টিত লাভ3000
(৬) কর্পোরেট কর2500
(৭) পরিবার প্রাপ্ত সুদ2000
(৮) পরিবার প্রদেয় সুদ1500
(৯) হস্তান্তর আয়3000
(১০) প্রত্যক্ষ কর1000

উত্তরঃ উপাদান দামে শুদ্ধ রাষ্ট্রীয় উৎপাদন (NNP)

= বাজার দরে GDP – অবক্ষয় – নেট পরোক্ষ কর + বিদেশ থেকে লব্ধ উপাদান আয়

= 15000 – 1000 – 500 + 800

= 15800 – 1500

= 14300 কোটি টাকা

উপাদান দামে NDP = বাজার দরে GDP – অবক্ষয় – নেট পরোক্ষ কর

= 15000 – 1000 – 500

= 13500 কোটি টাকা

ব্যক্তিগত খণ্ডের আয় (Private  Income)

= উপাদান দামে NDP + বিদেশ থেকে লব্ধ উপাদান আয় + পরিবার প্রাপ্ত সুদ + হস্তান্তরিত আয় – পরিবার প্রদেয় সুন্দ 

= 13500 + 800 + 2000 + 3000 – 1500

= 19300 -1500

= 17800 কোটি টাকা

ব্যক্তিগত আয় = ব্যক্তিগত খণ্ডের আয় – কর্পোরেট কর – অবণ্টিত মুনাফা

= 17800 – 2500 – 3000

= 12300 কোটি টাকা

ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয় = ব্যক্তিগত আয় – প্রত্যক্ষ কর

= 12300 – 1000 = 11300 কোটি টাকা।

প্রশ্ন ৪। একটি দেশের রাষ্ট্রীয় আয় গণনার সাথে জড়িত তথ্যসমূহ নিচে দেওয়া হল-

(কোটি টাকায়)
(১) উপাদান ব্যয়ে NDP16000
(২) বিদেশ থেকে নেট উপাদান আয়1500
(৩) অবণ্টিত মুনাফা2000
(৪) কর্পোরেট কর800
(৫) পরিবার প্রাপ্ত সুদ1100
(৬) পরিবার প্রদেয় সুদ900
(৭) হস্তান্তর আয়2000
(৮) প্রত্যক্ষ কর1500

নির্ণয় করোঃ

(ক) জাতীয় আয়। 

(খ) ব্যক্তিগত আয়। 

(গ) ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয়।

উত্তরঃ (ক) জাতীয় আয় NNPFC  

= উপাদান ব্যয় NDP + বিদেশ থেকে লব্ধ উপাদান আয়

= 16000 + 1500 = 17500 কোটি টাকা

(খ) ব্যক্তিগত আয়

= উপাদান দামে NNPFC – অবণ্টিত মুনাফা – কর্পোরেট কর + পরিবার প্রাপ্ত সুদ – পরিবার প্রদেয় সুদ + হস্তান্তর আয়

= 17500-2000 – 800 + 1100 – 900 + 2000

= 16900 কোটি টাকা

(গ) ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয়

= ব্যক্তিগত আয় – প্রত্যক্ষ কর

= 16900 -1500 = 15400 কোটি টাকা।

প্রশ্ন ৫। একটি নির্দিষ্ট বছরে একজন ব্যবসায়ী তার উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রি করে 8000 টাকা পায়। তার সাজ-সরঞ্জামের অবক্ষয় মূল্য 500 টাকা। অবশিষ্ট 7500 টাকার মধ্যে, নতুন সাজ সরঞ্জাম কেনায় 800 টাকা বিক্রয় কর প্রদান করে; অবশেষে সে তার আয়ের 10% আয় কর হিসাবে পরিশোধ করে। এই তথ্যের ভিত্তিতে, নিম্নের বিষয়গুলি গণনা করো।

(ক) বাজার দামে GDP 

(খ) বাজার দামে NNP 

(গ) উৎপাদন ব্যয়ে NNP 

(ঘ) ব্যক্তিগত আয় 

(ঙ) ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয়

(ঘ) ব্যক্তিগত আয় (PI) = 6700 টাকা

(ঙ) ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয় = ব্যক্তিগত আয় – প্রত্যক্ষ কর

= 6700 – 10% of 6700

= 6700 – 670 = 6030 টাকা

প্রশ্ন ৬। একটি দেশের কল্যাণসূচক হিসাবে GDP কে বিবেচনা না করার কারণসমূহ কী আলোচনা করো।

উত্তরঃ সাধারণতঃ GDP কে আর্থিক কল্যাণের সূচক হিসাবে গণ্য করা হয়। অন্যান্য বিষয় স্থির থাকলে, GDP বৃদ্ধি পেলে জনগণের আর্থিক কল্যাণ সাধিত হবে। তাছাড়া GDP- র কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, যা প্রমাণ করে GDP একটি দেশের জনসাধারণের কল্যাণের মাপের সূচক বলে গণ্য করা শুদ্ধ নয়। নিচে GDP এর সীমাবদ্ধতা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হল।

(১) মোট ঘরোয়া উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও জনসাধারণের কল্যাণ বৃদ্ধি হয়েছে তা বুঝায় না, কারণ যদি বর্ধিত উৎপাদনের বৃহৎ অংশ কতিপয় পুঁজিপতির হস্তে কুক্ষিগত থাকে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের হস্তে এর কোন অংশ পৌঁছেনি।

(২) অর্থের মাপকাঠিতে করা হয়ে থাকে। কিন্তু একটি অর্থনীতির উৎপাদনের একটি মোটা অংশ বাজারে ক্রয় বিক্রয় হয় না। যেমন – কৃষক উৎপন্ন দ্রব্যের একাংশ নিজে ভোগ করে। আবার অনেক সময় সরাসরি বিনিময় চলে। তাছাড়া অনেক সেবামূলক কাজ আছে যার মূল্য ধরা হয় না। এরূপ অবস্থায় অর্থমূল্যে GDP. সঠিকভাবে পরিমাপ করা কঠিন।

(৩) কিছু বাহ্যিক উপাদান আছে যা মূল্যায়ন হয় না অথচ এই উপাদানগুলো জনকল্যাণের পরিমাণ অবনমিত করেছে। কিন্তু এর কোন মুদ্রাগত মূল্যায়ন হয় না। উদাহরণস্বরূপ – মটরগাড়ির সাথে দুই পক্ষ জড়িত আছে। মটরগাড়ি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান এবং মটরগাড়ির মালিক। মটরগাড়ির সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, বায়ু ও শব্দ দূষণের মাত্রা তত বৃদ্ধি পাবে। এই তৃতীয় পক্ষ যার মটরগাড়ির সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক নেই সেই পক্ষের ক্ষতিসাধন হবে। কিন্তু এই ক্ষতিসাধনের কোন মূল্যায়ন হয় না।

(8) GDP যদি প্রকৃত বৃদ্ধি না হয়ে মুদ্রাগত বৃদ্ধি হয়, তাহলে মোট ঘরোয়া উৎপাদন জীবনধারণের মানদণ্ড উন্নতির সূচক হতে পারে না।

(৫) মদ, গাঁজা, বিড়ি-সিগারেট, নেশাজাত ঔষধ এবং অস্ত্রশস্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধি হলে GDP বৃদ্ধি হবে কিন্তু কল্যাণ হ্রাস পাবে।

(৬) অনেক সময় পেশাগত শ্রেণিকরণ করা দুষ্কর। কারণ একই ব্যক্তি একাধিক উৎস থেকে আয় উপার্জন করে থাকে। ফলে GDP এর পরিমাপে অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়।

(৭) GDP বৃদ্ধির হার অপেক্ষা জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ বেশি হলে আর্থিক কল্যাণ বৃদ্ধি পাবে না।

উপরোক্ত  কারণে  মোট ঘরোয়া উৎপাদন অর্থাৎ  GDP একটি দেশের জনসাধারণের কল্যাণের মাপের সূচক বলে গণ্য করা সঠিক  নয়।

প্রশ্ন ৭। GDP গণনার আয় পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ আয় পদ্ধতি দ্বারা জাতীয় আয় পরিমাপ করতে হলে কোন বৎসরে দেশে উৎপাদনের উপাদানগুলির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির যে আয় হয়, তার সমষ্টি বৈর করতে হয়। উৎপাদনের উপাদান সমূহের আয় বলতে খাজনা, মজুরি, সুদ ও মুনাফা হতে অর্জিত মোট আয়কে বুঝানো হয়। সুতরাং জাতীয় আয় হল খাজনা, মজুরি, সুদ ও মুনাফা এবং অন্যান্য আয়ের সমষ্টি।

এই পদ্ধতি দ্বারা জাতীয় আয় পরিমাপ করলে কতকগুলি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হয় –

প্রথমতঃ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের পেন্সন, দান ও অনুদান ইত্যাদি। হস্তান্তর আয় জাতীয় আয়ের মধ্যে ধরা হবে না। কারণ হস্তান্তর আয় গ্রহণকারী ব্যক্তিরা জাতীয় উৎপাদনের কার্যে অংশগ্রহণ করে না।

দ্বিতীয়তঃ যে সকল দ্রব্যাদি ও সেবামূলক কার্যের জন্য কোনরূপ অর্থপ্রদান করা হয় না, (যেমন – গৃহবধূর সাংসারিক কাজ) তা হিসাব করা সম্ভব হয় না। এজন এটি জাতীয় আয়ের মধ্যে ধরা হবে না।

তৃতীয়তঃ অনেক সময় উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ওদের মুনাফার একাংশ মালিকদের মধ্যে বণ্টন না করে সংরক্ষিত তহবিলে জমা রাখে। ওই অবণ্টিত মুনাফা জাতীয়‌ আয়ের হিসাবের মধ্যে ধরা হবে।

চতুর্থতঃ মালিকের নিজস্ব জমি, শ্রম ও মূলধন প্রভৃতি উৎপাদনে অংশগ্রহণকারী উপাদানের আয় জাতীয় আয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে।

পঞ্চমতঃ সরকারি প্রতিষ্ঠানের মুনাফাকে জাতীয় আয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ষষ্ঠতঃ সুন্দ পরিমাপ করতে সেই সকল ঋণকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যা উৎপাদন কার্যে ব্যবহৃত হয়। উপভোগ্য ব্যয়ের জন্য ঋণ গ্রহণ করার প্রদেয় সুদ রাষ্ট্রীয় আয়ে অন্তর্ভুক্ত হয় না।

আয় পদ্ধতিতে জাতীয় আয় পরিমাপ করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ দরকার।

Step 1: কর্মচারীর ক্ষতিপূরণ (বেতন ও মজুরি) গণনা করা।

Step 2: কার্যকরী উদ্বৃত্ত (খাজনা, সুদ ও লাভ) গণনা করা।

Step 3: মিশ্রিত আয় গণনা করা।

Step 4: অবচয়  অর্থাৎ স্থির মূলধনের ক্ষয়ক্ষতি গণনা করা।

Step 5: নেট পরোক্ষ কর গণনা করা।

প্রশ্ন ৮। ঘরোয়া খণ্ড এবং প্রতিষ্ঠান – এই দ্বিখণ্ডযুক্ত একটি সরল অর্থব্যবস্থায় আয়ের চক্রীয় প্রবাহ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ একটি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান উৎপাদন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ও সেবা ক্রয় করে থাকে। ঘরোয়া খণ্ড অর্থাৎ পরিবারসমূহ এই উপাদান ও সেবার যোগান দিয়ে আয় উপার্জন করে। অপরদিকে প্রতিষ্ঠান তার উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় উপার্জন করে। এইভাবে পরিবার উপাদান ও সেবার মাধ্যমে। আয় করে সেই আয় দ্বারা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রী ক্রয় করে এবং উৎপাদন প্রতিষ্ঠান দ্রব্য বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় করে এবং সেই আয়ের দ্বারা উপাদান ক্রয় করে। এই প্রক্রিয়াকে আয়ের চক্রীয় প্রবাহ বা বৃত্তাকার প্রবাহ বলে। এই প্রক্রিয়ায় পরিবারের সর্বমোট ভোগউৎপাদন প্রতিষ্ঠানের উপাদান ব্যয়ের সমান হবে।

আয়ের এই বৃত্তাকার প্রবাহ একটি চিত্রের সাহায্যে বর্ণনা করা হল –

এই রেখাচিত্রে দেখা যায়, দেশের পরিবারসমূহ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের নিকট উপাদান সেবার যোগান দিচ্ছে। চিত্রে এটি হচ্ছে উপাদান সেবা প্রবাহ (1 নং প্রবাহ)। উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ওই উপাদান সেবার সাহায্যে দ্রব্যাদি উৎপাদন করছে এবং এটি দেশের পরিবারসমূহ ভোগ করছে। এটি উৎপন্ন দ্রব্যের প্রবাহে দেখানো হয়েছে (2 নং প্রবাহ)। আবার পরিবারসমূহ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের নিকট যে সেবামূলক কার্যাদি যোগান দিয়েছে, এর বিনিময়ে তারা মুনাফা, সুদ, মজুরি ইত্যাদি আয় পেয়েছে। এটি উপাদানের আয় প্রবাহে (3 নং প্রবাহ) দেখানো হয়েছে। পরিবারসমূহ তাদের মোট আয়ের সম্পূর্ণ অংশ উৎপন্ন দ্রব্য ক্রয় করার জন্য ব্যয় করে। ফলে উপাদানের আয় প্রবাহ ও উৎপন্ন দ্রব্যের ব্যয় প্রবাহ পরস্পর সমান হয় (3নং প্রবাহ = 4নং প্রবাহ) । এ থেকে বোঝা যায়, জাতীয় উৎপাদন ও নেট জাতীয় আয় পরস্পর সমান হয়।

প্রশ্ন ৯। রাষ্ট্রীয় আয়ের পরিমাপের ব্যবহার সমূহ লেখো।

উত্তরঃ রাষ্ট্রীয় আয় পরিমাপের ব্যবহার সমূহ হল:

(১) একটি দেশের স্থির মূল্যে রাষ্ট্রীয় আয় পরিমাপ করলে সেটি দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ নির্দেশ করে।

(২) পরিকল্পনার সফলতা ও বিফলতার ছবি জাতীয় আয় পরিমাপের সাহায্যে নির্ধারণ করা যায়।

(৩) জাতীয় আয় পরিমাপ ব্যবহার করে মাথাপিছু আয় বের করা যায়।

(৪) আয় বিতরণের অসমতা পরিমাপ করতে রাষ্ট্রীয় আয় ব্যবহার করা হয়।

(৫) রাষ্ট্রীয় আয় তথ্যের সাহায্যে আন্তর্জাতিক তুলনা অর্থাৎ বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের হার পরিমাপ করা যায়।

(৬) জীবনধারণের মানদণ্ড পরিমাপ করতে রাষ্ট্রীয় আয় ব্যবহার করা হয়।  

প্রশ্ন ১০। GDP গণনার মূল্য সংযোজিত পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো। 

অথবা, 

মূল্য সংযোজন পদ্ধতি দ্বারা জাতীয় আয় গণনা করার প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ একটি দেশের অভ্যন্তরে কোন এক বৎসরে যে পরিমাণ দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন। হয়, তাদের একাধিকবার গণনা না করে যদি তাদের অর্থমূল্য যোগ করা হয় তবে দেশের GDP অর্থাৎ মোট ঘরোয়া উৎপাদন পাওয়া যায়।

GDP গণনার মূল্য সংযোজন পদ্ধতিটি হল উৎপাদনের প্রতিটি স্তরে কতটুকু মূল্য সংযোজিত হল তা নির্ণয় করা এবং এই মূল্য যোগ করে GDP পরিমাপ করা হয়। উৎপাদন পদ্ধতিতে মূল্য সংযোজন হল উৎপন্ন দ্রব্যের মূল্য এবং সেই উৎপাদনে ব্যবহৃত, নিঃশেষিত এবং ওই বছরেই উৎপাদিত কাঁচামালের মূল্যের বিয়োগফল । মূল্য

সংযোজন পদ্ধতিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে । ধরে নেওয়া গেল যে, কোন বছরে 1000 টাকার গম উৎপন্ন হয়েছে । আবার এই সবটাই ময়দায় পরিণত করা হল এবং এই ময়দার দাম হল 1500 টাকা। এখন এই ময়দাকে পাউরুটিতে পরিণত করা হল যার বাজার দাম হল 2500 টাকা। মূল্য সংযোজন পদ্ধতিতে বিচার করলে , গম উৎপাদনে মূল্য সংযোজন হল 1000 টাকা, ময়দায় হল 1500 টাকা – 1000 টাকা = 500 টাকা এবং পাউরুটিতে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ = 2500 টাকা – 1500 টাকা = 1000 টাকা। এখন মোট মূল্য সংযোজন হল = 1000 + 500 + 1000 = 2500 টাকা।

প্রশ্ন ১১। জাতীয় আয় পরিমাপের উৎপাদন পদ্ধতিটি বর্ণনা করো।

উত্তরঃ একটি দেশের অভ্যন্তরে কোন এক বৎসরে যে পরিমাণ দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন। হয়, তাদের একাধিকবার গণনা না করে যদি তাদের অর্থমূল্য যোগ করা হয় তবে দেশের GDP অর্থাৎ মোট ঘরোয়া উৎপাদন পাওয়া যায়।

GDP গণনার মূল্য সংযোজন পদ্ধতিটি হল উৎপাদনের প্রতিটি স্তরে কতটুকু মূল্য সংযোজিত হল তা নির্ণয় করা এবং এই মূল্য যোগ করে GDP পরিমাপ করা হয়। উৎপাদন পদ্ধতিতে মূল্য সংযোজন হল উৎপন্ন দ্রব্যের মূল্য এবং সেই উৎপাদনে ব্যবহৃত, নিঃশেষিত এবং ওই বছরেই উৎপাদিত কাঁচামালের মূল্যের বিয়োগফল । মূল্য

সংযোজন পদ্ধতিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে । ধরে নেওয়া গেল যে, কোন বছরে 1000 টাকার গম উৎপন্ন হয়েছে । আবার এই সবটাই ময়দায় পরিণত করা হল এবং এই ময়দার দাম হল 1500 টাকা। এখন এই ময়দাকে পাউরুটিতে পরিণত করা হল যার বাজার দাম হল 2500 টাকা। মূল্য সংযোজন পদ্ধতিতে বিচার করলে , গম উৎপাদনে মূল্য সংযোজন হল 1000 টাকা, ময়দায় হল 1500 টাকা – 1000 টাকা = 500 টাকা এবং পাউরুটিতে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ = 2500 টাকা – 1500 টাকা = 1000 টাকা। এখন মোট মূল্য সংযোজন হল = 1000 + 500 + 1000 = 2500 টাকা।

প্রশ্ন ১২। মোট ঘরোয়া উৎপাদন গণনার ব্যয় পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো। 

উত্তরঃ আমরা জানি কোনো নির্দিষ্ট বছরে যে পরিমাণ দ্রব্য সামগ্রী উৎপন্ন হয়, তা-ই হল সেই বছরের মোট জাতীয় উৎপন্ন বা জাতীয় আয়। এখন, উৎপন্ন দ্রব্যটি ভোগ্য দ্রব্য বা মূলধনী দ্রব্য হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে । ভোগ্য দ্রব্যের উপর ব্যয়কে আমরা বলি ভোগ ব্যয় এবং মূলধনী দ্রব্যের উপর ব্যয়কে বলি বিনিয়োগ ব্যয়। সুতরাং , সমাজে উৎপন্ন দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বা মোট জাতীয় আয় = মোট ভোগ ব্যয় + মোট বিনিয়োগ ব্যয় অর্থাৎ GNP = C + I। এভাবে, জাতীয় উৎপাদন = জাতীয় আয় = জাতীয় ব্যয়। আবার, GNP থেকে মূলধনের ক্ষয়ক্ষতি বা অবচয় বাদ দিলে NNP পাওয়া যায় , অর্থাৎ NNP = GNP – D = C + (I – D) = C + নিট I। এভাবে, জাতীয় আয় জাতীয় ব্যয়ের সমান অর্থাৎ মোট ব্যয় পদ্ধতির মাধ্যমেও কোনো দেশের জাতীয় আয় পেতে পারি । তাই এই পদ্ধতিকে ব্যয় সুমারি পদ্ধতি বলা হয়। যদি আমরা সরকারি ব্যয় (G) আছে বলে ধরে নেই , তাহলে মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP) = C + I + G। আবার, উন্মুক্ত অর্থনীতিতে GNP পেতে হলে আমাদের রপ্তানির মূল্য (X) যোগ দিতে হবে এবং আমদানির মূল্য (M) বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ GNP = C + I + G+ X – M, এখন GNP থেকে অবচয় (D) বাদ দিয়ে আমরা NNP পেতে পারি, অর্থাৎ NNP = GNP – D বা GNP = NNP + D।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলির উত্তর

প্রশ্ন ১। উৎপাদনের চারটি উপাদান কী কী ? তাদের পারিতোষিক বা পারিশ্রমিককে কী বলা হয় ?

উত্তরঃ উৎপাদনের চারটি উপাদান নিম্নরূপঃ

(ক) ভূমি। 

(খ) শ্রম। 

(গ) মূলধন। 

(ঘ) সংগঠন।

উৎপাদনের উপাদানের পারিতোষিক নিম্নরূপঃ

(ক) ভূমির পারিতোষিক হল খাজনা।

(খ) শ্রমের পারিতোষিক হল মজুরি।

(গ) মূলধনের পারিতোষিক হল সদ।

(ঘ) সংগঠনের বা উদ্যোক্তার পারিতোষিক হল লাভ।

প্রশ্ন ২। কোন অর্থ ব্যবস্থায় সামগ্রিক চূড়ান্ত ব্যয় সামগ্রিক উপাদান খাতে ব্যয়ের সমান হয় কেন ? ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ আয়ের চক্রীয় প্রবাহের ফলেই কোন অর্থব্যবস্থায় সামগ্রিক চূড়ান্ত ব্যয় সামগ্রিক উপাদান খাতে ব্যয়ের সমান হয়। বিস্তৃত ব্যাখ্যার জন্য একটি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান উৎপাদন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ও সেবা ক্রয় করে থাকে। ঘরোয়া খণ্ড অর্থাৎ পরিবারসমূহ এই উপাদান ও সেবার যোগান দিয়ে আয় উপার্জন করে। অপরদিকে প্রতিষ্ঠান তার উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় উপার্জন করে। এইভাবে পরিবার উপাদান ও সেবার মাধ্যমে। আয় করে সেই আয় দ্বারা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রী ক্রয় করে এবং উৎপাদন প্রতিষ্ঠান দ্রব্য বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় করে এবং সেই আয়ের দ্বারা উপাদান ক্রয় করে। এই প্রক্রিয়াকে আয়ের চক্রীয় প্রবাহ বা বৃত্তাকার প্রবাহ বলে। এই প্রক্রিয়ায় পরিবারের সর্বমোট ভোগউৎপাদন প্রতিষ্ঠানের উপাদান ব্যয়ের সমান হবে।

আয়ের এই বৃত্তাকার প্রবাহ একটি চিত্রের সাহায্যে বর্ণনা করা হল –

এই রেখাচিত্রে দেখা যায়, দেশের পরিবারসমূহ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের নিকট উপাদান সেবার যোগান দিচ্ছে। চিত্রে এটি হচ্ছে উপাদান সেবা প্রবাহ (1 নং প্রবাহ)। উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ওই উপাদান সেবার সাহায্যে দ্রব্যাদি উৎপাদন করছে এবং এটি দেশের পরিবারসমূহ ভোগ করছে। এটি উৎপন্ন দ্রব্যের প্রবাহে দেখানো হয়েছে (2 নং প্রবাহ)। আবার পরিবারসমূহ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের নিকট যে সেবামূলক কার্যাদি যোগান দিয়েছে, এর বিনিময়ে তারা মুনাফা, সুদ, মজুরি ইত্যাদি আয় পেয়েছে। এটি উপাদানের আয় প্রবাহে (3 নং প্রবাহ) দেখানো হয়েছে। পরিবারসমূহ তাদের মোট আয়ের সম্পূর্ণ অংশ উৎপন্ন দ্রব্য ক্রয় করার জন্য ব্যয় করে। ফলে উপাদানের আয় প্রবাহ ও উৎপন্ন দ্রব্যের ব্যয় প্রবাহ পরস্পর সমান হয় (3 নং প্রবাহ = 4 নং প্রবাহ) । এ থেকে বোঝা যায়, জাতীয় উৎপাদন ও নেট জাতীয় আয় পরস্পর সমান হয়।

প্রশ্ন ৩। মজুদ ও প্রবাহের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করো। নেট বিনিয়োগ ও মূলধনের মধ্যে কোন্‌টি মজুদ এবং কোনটি প্রবাহ ?

উত্তরঃ ষ্টক বা মজুত হল নির্দিষ্ট সময় বিন্দুতে অর্থনৈতিক চলকের পরিমাণ নির্ধারণ করা কিন্তু প্রবাহ হল একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অর্থনৈতিক চলকের পরিমাণ কাকে বলে ?

নির্ধারণ করা। ষ্টক হল স্থির ধারণা। যেমন – যন্ত্রপাতির পরিমাণ, টাকার পরিমাণ, মোট অর্থের যোগান; সম্পদের পরিমাণ ইত্যাদি। প্রবাহ হল গতিশীল ধারণা। যেমন – আয়, উৎপাদন, লাভ, নির্দিষ্ট সময়সীমায় ব্যাংক আমানতের পরিমাণ ইত্যাদি।

নেট বিনিয়োগ হল প্রবাহ। কারণ, এটি একটি সময়সীমার মধ্যে পরিমাপ করা হয়। কিন্তু মূলধন হল মজুদ। কারণ, মূলধনের পরিমাণ এক নির্দিষ্ট সময় বিন্দুতে করা হয়। 

প্রশ্ন ৪। পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত মজুত ভাণ্ডার সংযোজনের পার্থক্য কী? কোন ফার্মের মজুত ভাণ্ডার পরিবর্তন ও মূল্য সংযোজনের সম্পর্ক কী লেখো।

উত্তরঃ অর্থনীতিতে একটি প্রতিষ্ঠান অবিক্রিত দ্রব্য, অব্যবহৃত  কাঁচামাল অথবা অর্ধ চূড়ান্ত দ্রব্য এক বছর থেকে অন্য বছরে টেনে নিয়ে যায়, সেই দ্রব্যসমূহকে  পূর্ববর্তী দ্রব্য বলে।

পূর্ববর্তী দ্রব্যের পরিবর্তন পরিকল্পিত অথবা অপরিকল্পিত হতে পারে। বিক্রি অপ্রত্যাশিতভাবে হ্রাস পেলে প্রতিষ্ঠানটির অবিক্রিত দ্রব্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং অপরিকল্পিত মজুত বৃদ্ধি পায়। এর বিপরীতে  বিক্রির পরিমাণ আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পেলে পূর্ববর্তী দ্রব্যের মজুত  অপরিকল্পিতভাবে হ্রাস পায়।

প্রশ্ন ৫। কোন দেশের GDP গণনায় তিনটি পন্থার তিনটি অভিন্নতা কী কী ?

উত্তরঃ (১) উৎপাদন পদ্ধতি। 

(২) আয় পদ্ধতি। 

(৩) ব্যয় পদ্ধতি এই তিন পদ্ধতির অভিন্নতা হলঃ

উপাদান ব্যয়ে NDP + বিদেশ থেকে অর্জিত উপাদান আয় = জাতীয় আয়

প্রশ্ন ৬। ঘাটতি বাজেট ও বাণিজ্য ঘাটতির সংজ্ঞা লেখো। কোনো এক বৎসরে দেশের ব্যক্তিগত খণ্ডের বিনিয়োগ তার সঞ্চয় থেকে 2000 কোটি টাকা বেশি। বাজেট ঘাটতি ছিল (-) 1500 কোটি টাকা। ওই দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কত ছিল?

উত্তরঃ সরকারি বাজেটে যদি মোট আয় হতে মোট ব্যয় বেশি হয়, তখন তাকে ঘাটতি বাজেট বলে।

বাজেট ঘাটতি = মোট ব্যয় – মোট আয়

কোন নির্দিষ্ট বৎসরে রপ্তানিকৃত আয় অপেক্ষা আমদানিকৃত ব্যয়ের যে আধিকা দেখা দেয় তাকে বাণিজ্য ঘাটতি বলে।

এখানে, I – S = 2000 কোটি

G – T = (-) 1500 কোটি

বাণিজ্য ঘাটতি = 2000 + (-1500) = 500 কোটি টাকা

প্রশ্ন ৭। ধরো, কোনো দেশের বাজার দামে GDP কোনো এক বৎসরে 1100 কোটি টাকা ছিল। বহির্বিশ্ব থেকে নেট উৎপাদক উপকরণের আয় ছিল 100 কোটি টাকা। পরোক্ষ কর – ভর্তুকির পরিমাণ ছিল 150 কোটি এবং জাতীয় আয় ছিল 850 কোটি টাকা। সামগ্রিক অবচয় গণনা করো।

উত্তরঃ দেওয়া আছে,

প্রশ্ন ৮। উৎপাদক মূল্যে কোনো অর্থ বৎসরে কোনো দেশের নেট জাতীয় উৎপাদনের মূল্য 1900 কোটি টাকা। এবং সরকার বা ফার্মকে পরিবার কোনো কর বা সুদ দেয়নি আবার সরকার বা ফার্মও পরিবারকে কোনো সুদ দেয়নি। পরিবারের ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয় 1200 কোটি টাকা। পরিবার 600 কোটি টাকা আয় কর প্রদান করে এবং ফার্ম ও সরকারের ধরে রাখা আয়ের মূল্য 200 কোটি টাকা। তাহলে সরকার ও ফার্ম থেকে পরিবার খণ্ডে কত টাকা প্রতিদান শূন্য হস্তান্তকরণ /হস্তান্তরিত দেনা হয়েছে ?

উত্তরঃ ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয় (PDI) = 1200 কোটি টাকা।

ব্যক্তিগত কর (প্রত্যক্ষ কর) = 600 কোটি টাকা

ব্যক্তিগত আয় = PDI + প্রত্যক্ষ কর

                      = 1200 + 600

                      = 1800 কোটি টাকা

ব্যক্তিগত খণ্ডের আয় = ব্যক্তিগত আয় + সংরক্ষিত তহবিল

= 1800 + 200

= 2000 কোটি টাকা

প্রশ্ন ৯। নিচের তথ্য থেকে ব্যক্তিগত আয় ও ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয় গণনা করো।

কোটি টাকার হিসাবে
(ক) উপাদানের মূল্যে নেট ঘরোয়া উৎপাদন (NDPFC)8000
(খ) বিদেশ থেকে লব্ধ নেট উপাদান আয় (NFIA)200
(গ) অবণ্টিত মুনাফা1000
(ঘ) কর্পোরেট কর/নিগম কর500
(ঙ) পরিবার খণ্ডের প্রাপ্ত সুদ1500
(চ) পরিবার খণ্ডের প্রদত্ত সুদ1200
(ছ) হস্তান্তরিত আয়300
(জ) ব্যক্তিগত কর500

উত্তরঃ ব্যক্তিগত খণ্ডের আয়

= NDPFC + NFIA + হস্তান্তরিত আয় + পরিবার খণ্ডের প্রাপ্ত সুদ – পরিবার খণ্ডের প্রদত্ত সুদ

= 8000 + 200 + 300 + 1500 – 1200

= 8800 কোটি টাকা

ব্যক্তিগত আয় = ব্যক্তিগত খণ্ডের আয় – কর্পোরেট কর – অবণ্টিত মুনাফা

= 8800 – 500 – 1000

= 7300 কোটি টাকা

ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয় = ব্যক্তিগত আয় – ব্যক্তিগত কর

= 7300 – 500

= 6800 কোটি টাকা

প্রশ্ন ১০। ক্ষৌরকর্মী রাজু একদিনে চুল কেটে 500 টাকা সংগ্রহ করে। একদিনে তার যন্ত্রপাতির ক্ষয়-ক্ষতির মূল্য 50 টাকা। অবশিষ্ট 450 টাকা থেকে রাজু বিক্রয় কর প্রদান করে 30 টাকা। বাড়িতে দেয় 100 টাকা এবং 220 টাকা রেখে দেয় তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় করার জন্য। তার আয় থেকে সে আরও 20 টাকা আয়কর হিসাবে প্রদান করে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে বের করো

(ক) মোট ঘরোয়া উৎপাদন (GDP)

(খ) বাজার দলে NNP (NNPMP)

(গ) উপাদান দামে NNP (NNPFC)

(ঘ) ব্যক্তিগত আয়। এবং

(ঙ) ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয়।

উত্তরঃ (ক) মোট ঘরোয়া উৎপাদন (GDP) = 500 টাকা।

প্রশ্ন ১১। কোনো এক বৎসরে একটি দেশের নামিক GNP এর মূল্য ছিল 2500 কোটি টাকা। ভিত্তিবর্ষের মূল্যমানে ওই একই বৎসরে GNP এর মূল্য ছিল 3000 কোটি টাকা। ওই বৎসরের GNP সংকোচকের মূল্য শতকরা হিসাবে নির্ণয় করো। ভিত্তিবর্ষ ও বিবেচনাধীন বৎসরের মধ্যে কি মূল্যস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে ?

উত্তরঃ 

না, ভিত্তিবর্ষ ও বিবেচনাধীন বছরের মধ্যে মূল্যস্তর বৃদ্ধি পায়নি।

প্রশ্ন ১২। দেশের আর্থিক কল্যাণের সূচক হিসাবে GDP ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করো।

উত্তরঃ সাধারণতঃ GDP কে আর্থিক কল্যাণের সূচক হিসাবে গণ্য করা হয়। অন্যান্য বিষয় স্থির থাকলে, GDP বৃদ্ধি পেলে জনগণের আর্থিক কল্যাণ সাধিত হবে। তাছাড়া GDP- র কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, যা প্রমাণ করে GDP একটি দেশের জনসাধারণের কল্যাণের মাপের সূচক বলে গণ্য করা শুদ্ধ নয়। নিচে GDP এর সীমাবদ্ধতা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হল।

(১) মোট ঘরোয়া উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও জনসাধারণের কল্যাণ বৃদ্ধি হয়েছে তা বুঝায় না, কারণ যদি বর্ধিত উৎপাদনের বৃহৎ অংশ কতিপয় পুঁজিপতির হস্তে কুক্ষিগত থাকে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের হস্তে এর কোন অংশ পৌঁছেনি।

(২) অর্থের মাপকাঠিতে করা হয়ে থাকে। কিন্তু একটি অর্থনীতির উৎপাদনের একটি মোটা অংশ বাজারে ক্রয় বিক্রয় হয় না। যেমন – কৃষক উৎপন্ন দ্রব্যের একাংশ নিজে ভোগ করে। আবার অনেক সময় সরাসরি বিনিময় চলে। তাছাড়া অনেক সেবামূলক কাজ আছে যার মূল্য ধরা হয় না। এরূপ অবস্থায় অর্থমূল্যে GDP. সঠিকভাবে পরিমাপ করা কঠিন।

(৩) কিছু বাহ্যিক উপাদান আছে যা মূল্যায়ন হয় না অথচ এই উপাদানগুলো জনকল্যাণের পরিমাণ অবনমিত করেছে। কিন্তু এর কোন মুদ্রাগত মূল্যায়ন হয় না। উদাহরণস্বরূপ – মটরগাড়ির সাথে দুই পক্ষ জড়িত আছে। মটরগাড়ি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান এবং মটরগাড়ির মালিক। মটরগাড়ির সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, বায়ু ও শব্দ দূষণের মাত্রা তত বৃদ্ধি পাবে। এই তৃতীয় পক্ষ যার মটরগাড়ির সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক নেই সেই পক্ষের ক্ষতিসাধন হবে। কিন্তু এই ক্ষতিসাধনের কোন মূল্যায়ন হয় না।

(8) GDP যদি প্রকৃত বৃদ্ধি না হয়ে মুদ্রাগত বৃদ্ধি হয়, তাহলে মোট ঘরোয়া উৎপাদন জীবনধারণের মানদণ্ড উন্নতির সূচক হতে পারে না।

(৫) মদ, গাঁজা, বিড়ি-সিগারেট, নেশাজাত ঔষধ এবং অস্ত্রশস্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধি হলে GDP বৃদ্ধি হবে কিন্তু কল্যাণ হ্রাস পাবে।

(৬) অনেক সময় পেশাগত শ্রেণিকরণ করা দুষ্কর। কারণ একই ব্যক্তি একাধিক উৎস থেকে আয় উপার্জন করে থাকে। ফলে GDP এর পরিমাপে অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়।

(৭) GDP বৃদ্ধির হার অপেক্ষা জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ বেশি হলে আর্থিক কল্যাণ বৃদ্ধি পাবে না।

উপরোক্ত  কারণে  মোট ঘরোয়া উৎপাদন অর্থাৎ GDP একটি দেশের জনসাধারণের কল্যাণের মাপের সূচক বলে গণ্য করা সঠিক নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top