Class 12 Bengali Chapter 3 বঙ্গভাষা – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

Class 12 Bengali Chapter 3 বঙ্গভাষা – মাইকেল মধুসূদন দত্ত | Class 12 Bengali Question Answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board HS 2nd Year Bengali Chapter 3 বঙ্গভাষা Notes and select needs one.

Class 12 Bengali Chapter 3 বঙ্গভাষা

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 12 Bengali Chapter 3 বঙ্গভাষা Solutions for All Subject, You can practice these here.

বঙ্গভাষা – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

Chapter 3

বাংলা (MIL)

গোট : ১ নির্বাচিত পদ্যাংশ

১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নঃ 

( ক ) বাংলা সাহিত্যে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কী কবি নামে পরিচিত ? 

উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যে কবি মাইকেল মধুসূদন ‘ মধুকবি ’ নামে পরিচিত। 

( খ ) কবি মধুসূদনের লেখা ‘ বঙ্গভাষা ‘ কবিতাটির নাম প্রথমাবস্থায় কী ছিল ? 

উত্তরঃ কবি মধুসূদনের লেখা বঙ্গভাষা কবিতাটির নাম প্রথমাবস্থায় ‘ মাতৃভাষা ’ ছিল । 

( গ ) কবির একটি বিখ্যাত নাটকের নাম করো । 

উত্তরঃ মধুসূদনের বিখ্যাত নাটকটির নাম ‘ কৃষ্ণকুমারী ’ । 

( ঘ ) মাইকেল মধুসূদনের একটি বিখ্যাত কাব্যের নাম করো । 

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদনের একটি বিখ্যাত কাব্যের নাম ‘ মেঘনাদবধ কাব্য ‘ । 

২। সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নঃ

( ক ) মাইকেল মধুসূদন দত্তের দুটি প্রহসনের নাম লেখো । 

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের দুইটি প্রহসনের নাম হল – ‘ বুড়ো শালিখের ঘায়ে রোঁ’ আর ‘ একেই কী বলে সভ্যতা ’ । 

( খ ) কুললক্ষ্মী বলতে কী বোঝ ? 

উত্তরঃ মানুষের গৃহে যে লক্ষ্মীদেবী পূজিতা হন , তিনিই কুললক্ষ্মী । এখানে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা ভাষা লক্ষীর কথা বলেছেন । 

( গ ) চতুর্দশপদী কবিতা কী ? 

উত্তরঃ একটি পংক্তিতে চৌদ্দটি অস্তর এবং চৌদ্দটি পংক্তিতে যে কবিতা সম্পূর্ণ হয় । সেই কবিতাকে চতুর্দশপদী কবিতা বোলে । ইংরাজীতে যাকে সনেট ( Sonnet ) বলা হয় । চতুর্দশপদী কবিতায় দুইটি স্তবক বিভাগ আছে । ‘ অষ্টক ’ বা ‘ ষটক ’ আট পংক্তি বিশিষ্ট স্তবককে অষ্টক এবং ছয় পংক্তি বিশিষ্ট স্তবক বা ষট্‌ক ।

( ঘ ) পরদেশে ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি ’ – বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ? 

উত্তরঃ নিজের কাছে যা আছে তাকে অবহেলা করে অপরের সামগ্রী ভোগ করার বাসনাকে কবি এখানে ভিক্ষাবৃত্তি বলেছেন । অর্থাৎ কবি নিজে তাঁর কর্মভাষাকে অবহেলা করেছেন । বঙ্গভাষার নিজস্ব সম্পদ ও প্রাচুর্যকে অবহেলা করে কবি ইংরাজী ভাষার প্রতি অনুরাগী হয়েছিলেন । আর ইংরাজী ভাষাতেই তিনি সাহিত্য সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেছিলেন , এই চেষ্টাকেই কবি ভিক্ষাবৃত্তি বলেছেন । 

৩। দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নঃ 

( ক ) কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যে কীভাবে অর্থাৎ কী কী সাহিত্যকীর্তির দ্বারা আধুনিকতার সূচনা করেছিলেন ? 

উত্তরঃ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইংরেজি এবং বাংলা উভয় ভাষাতেই দক্ষতা অর্জন করেছিলেন । ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে বেলগাছিয়া নাট্যশালার মাইকেল মধুসূদন রামনারায়ণ তর্করত্ন … বিরচিত ‘ রত্নাবলী ’ নাটকের অভিনয় দেখতে গিয়েছিলেন । রত্নাবলী নাটকের অভিনয় দেখে মধুসূদন আহত হন , বাংলা সাহিত্যের দীনতা দেখে । তখন মধুসূদন নিজের প্রতিভা বলে ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘ শর্মিষ্ঠা’ নাটক রচনা করে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার নতুন দিগান্ত উন্মোচন করেন । ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে ‘ পদ্মাবতী ’ নাটক , ‘ কৃষ্ণকুমারী ’ নাটক ‘ তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য ’ এবং ১৮৬১ ‘ মেঘনাদ বধ কাব্য ’ ব্রজাঙ্গনা কাব্য , ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দে ‘ বীরাঙ্গনা কাব্য ’ প্রকাশিত হয় । ‘ একেই কি বলে সভ্যতা ’ এবং বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রোঁ ‘ এই দুটি তাঁর বিখ্যাত প্রহসন যা বাংলা সাহিত্যে অনবদ্য । এরপর ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ চতুর্দশপদী ’ কবিতাবলী রচনা করেন । কাব্য , নাটক , প্রহসন সনেট ইত্যাদি বিভিন্ন সাহিত্য সৃষ্টি করে তিনি বাংলা সাহিত্যর আধুনিকতার প্রবর্তন করলেন । 

৩। ‘ বঙ্গভাষা ’ কবিতায় কবির আত্ম – অনুশোচনার কারণ নির্দেশ করো । 

উত্তরঃ মধুসূদন ছোটবেলা থেকেই ইংরেজি ভাষার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন । শেলী , কীটস বায়রণ প্রভৃতি ইংরেজি সাহিত্যের কবিদের কবিতা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনা করে বিখ্যাত হতে চেয়েছিলেন । ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্যারিষ্টারী পড়তে বিলেত যান।এরপর তিনি ফরাসী দেশে ভার্সাই নগরীতে বসবাসকালীন সময়ে ‘ মাতৃভাষা ’ নামে একটি চতুর্দশপদী কবিতা লিখে তাঁর বন্ধু রাজনারায়ণ বসুকে পাঠিয়েছিলেন । পরে এই কবিতাটি ‘ বঙ্গভাষা ’ নামে প্রকাশিত হয় । এই কবিতাটিতে তিনি তাঁর মো আক্ষেপকেই প্রকাশ করেছেন । বাংলা সাহিত্যকে অবহেলা করে ইংরাজি সাহিত্যে নাম – যশ অর্জন করতে গিয়ে যে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন এবং ভুল করেছেন সেই আক্ষেপই এই কবিতায় প্রকাশ করেছেন । 

বিভিন্ন রত্নে পূর্ণ আমাদের এই বঙ্গভাষার ভাণ্ডার । কিন্তু কবি মাতৃভাষাকে অবহেলা করে ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনা শুরু করেন । কবি ভেবেছিলেন ইংরেজি ভাষায় কাব্য রচনা করে তিনি অনেক নাম – যশ প্রতিপত্তি পাবেন । কিন্তু ইংরেজি ভাষায় প্রথম সৃষ্টি ‘ ক্যাপটিভ লেডি ’ রচনা করেই তাঁর ধারণা ভুল বলে প্রমানিত হয় । তখন কবি অনুতপ্ত হয়ে নিজ মাতৃভাষার প্রতি অনুরক্ত হন । কবি ইংরেজি ভাষার প্রতি লোভে মত্ত হয়েছিলেন , কিন্তু সেই ভাষাকে তিনি আয়ত্তে আনতে পারেনি এবং কবির জীবনের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরচুর হয়ে যায় । তাই তখন তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে বঙ্গভাষার প্রতি আকৃষ্ট হন । সম্পদে পূর্ণ বঙ্গভাষার ভাণ্ডার ও বঙ্গ জননীর মাতৃক্রোড়কে কবি বিস্মৃত হয়েছিলেন । পরে কবি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং বঙ্গভাষা কবিতাটি রচনাটি করে আত্ম – অনুশোচনা করেছেন ৷ 

( গ ) ‘ ওরে বাছা মাতৃকোষে রতনের রাজি 

         এ ভিখারী দশা তবে কেন তোর আছি এখানে ‘ ওরে বাছা’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? তাঁর ভিখারি দশার কারণ কী ? 

উত্তরঃ এখানে ‘ ওরে বাছা ’ বলতে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে বোঝানো হয়েছে । কবি নিজেই নিজেকে বলেছেন । তিনি একজন বঙ্গজননীর সস্তান হয়েও বঙ্গভাষাকে অবহেলা করে বিদেশি ভাষা ইংরেজি প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন । ইংরেজি ভাষাকেই তিনি বেশি মর্যাদা দিয়েছিলেন । মধুসূদনের প্রিয় কবি শেলী , কীটস্ , বায়রণ প্রভৃতি কবির রচনায় অনুপ্রানিত হয়ে ইংরেজি সাহিত্য রচনায় ব্রতী হন । তারপর তিনি “ The Captiv Lady ‘ কাব্যটি লেখেন এবং ব্যর্থ হন । নাম যশ অর্থ অর্জন করতে গিয়ে তিনি অনিদ্রায় অনাহারে দিন যাপন করেছেন ৷ সেই সময় কুললক্ষ্মী তাঁকে স্বপ্নে আদেশ দেন যে , বাংলা ভাষায় অগাধ রয়েছে । তা সত্ত্বেও কবি কেন ভিক্ষাবৃত্তি করছেন । অর্থাৎ ভিক্ষাবৃত্তি স্বরূপ বিদেশি ভাষায় সাহিত্য রচনা করতে গিয়েছেন । বিদেশি ভাষায় সাহিত্য রচনা করতে গিয়েছেন । কবি তার এই অবস্থাকে ভিখারির দশা বলে উল্লেখ করেছেন ৷ 

( ঘ ) “ মজিনু বিফল তপে অবরণ্যে বরি 

         কেলিনু শৈবালে ভূলি কমল কানন ’ মর্মার্থ বিশ্লেষণ করো । 

উত্তরঃ মধুসূদন বাল্যকাল থেকেই ইংরেজি ভাষার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন তাই ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করে যশস্বী হতে চেয়েছিলেন । এমনকী তিনি ইংরেজি ভাষায় এতটাই প্রভাবিত ছিলেন যে , তিনি হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন । এরপর কবি পাশ্চাত্য সাহিত্য চর্চ করতে গিয়ে বিফল পরিশ্রম করেছেন । তখন তিনি মাতৃভাষার প্রতি সন্মানবশত বিদেশি ভাষাকে অবরণীয় বলে স্বীকার করেছেন । তিনি বুঝতে পেরেছেন ইংরেজি ভাষা গ্রহণ যোগ্য নয় , মাতৃভাষার তুলনায় । তাই তিনি বলেছেন তিনি শৈবাল ভূমিতে ক্রীড়া করেছেন , মাতৃভাষা পদ্মবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে । তিনি এখানে শৈবালকে ইংরেজি ভাষা এবং পদ্মকে মাতৃভাষার সঙ্গে তুলনা করেছেন ।

( ঙ ) ‘ মাতৃভাষা রূপ খনি , পূর্ণ মণিজালে ’ – তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো । 

উত্তরঃ পৃথিবীর ভূগর্ভের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকে মহামূল্যবান সব রত্ন । মানুষ অনেক সাধনায় সেই ভূগর্ভের সন্ধান লাভ করে এবং বহু পরিশ্রমের ফসল স্বরূপ লুকিয়ে থাকা রত্নরাজি লাভ করে । কবি এখানে নিজের মাতৃভাষা বাংলাকে ভূগর্ভের লুকিয়ে থাকা রত্নের সঙ্গে তুলনা করেছেন । কবি বিদেশি ভাষার প্রতি এতটাই আসক্ত ছিলেন যে , মাতৃভাষা বাংলার মধ্যে যে অফুরন্ত রত্নরাজি রয়েছে তা তিনি জানতে পারেননি । যে অমূল্য রত্ন অন্য ভাষায় নেই । আর কবি সেই মোহে মরিচীকা স্বরূপ বিদেশি ভাষায় সুনাম অর্জন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন । ব্যর্থ হয়ে পরবর্তী জীবনে এসে মাতৃভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করেন । বাংলা ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করে তিনি খ্যাতির শীর্ষে পৌছান । তাই তিনি মনে করেছেন মাতৃভাষার রূপ খনি তিনি কঠোর সাধনার মধ্য দিয়ে আবিস্কার করেছেন । 

বাংলা ভাষা আসলেও খনির মতোই অনন্তরত্নে পরিপূর্ণ । আর এই ভাষার খনিতে মহামূল্যবান কাব্য , সব সাহিত্য লুকিয়ে আছে । 

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

১। ‘ বঙ্গভাষা ’ কবিতাটি কার রচনা ? 

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত । 

২। মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম কবে হয়েছিল ? 

উত্তরঃ ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ শে জানুয়ারী ।

৩। মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান কোথায় ? 

উত্তরঃ বাংলাদেশের যশোহর জেলার সাগরদাড়ি গ্রামে ৷ 

৪। মধুসূদন দত্তের পিতা – মাতার নাম কী ? 

উত্তরঃ মধুসূদন দত্তের পিতার নাম রাজনারায়ণ দত্ত এবং মাতার নাম জাহ্নবী দেবী । 

৫। কত খ্রিষ্টাব্দে মধুসূদন বিলেত যান ? 

উত্তরঃ ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে মধুসূদন বিলেত যান । 

৬। মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবে মৃত্যু হয় ? 

উত্তরঃ ১৮৭৩ সালের ২৯ শে জুন । 

৭। বঙ্গের ভাণ্ডারে কি আছে ? 

উত্তরঃ বঙ্গের ভাণ্ডারে বিবিধ রত্ন আছে । 

৮। কবি ইংরেজি ভাষায় বুৎপত্তি লাভের আশায় কিভাবে দিন অতিবাহিত করেছেন ? 

উত্তরঃ কবি ইংরেজি ভাষায় বুৎপত্তি লাভের আশায় অনিদ্রায় অনাহারে দিন অতিবাহিত করেছেন । 

৯। কুললক্ষ্মী কবিকে মাতৃকোষে কি আছে বলে জানিয়েছেন ? 

উত্তরঃ কুললক্ষ্মী কবিকে মাতৃকোষে ‘ রতনের রাজি ’ আছে বলে জানিয়েছেন । 

১০। কবিকে কে স্বপ্নাদেশ দিয়েছেন ? 

উত্তরঃ কবিকে কুললক্ষ্মী স্বপ্নাদেশ দিয়েছেন । 

১১। গ্রন্থাকারে কবির প্রকাশিত প্রথম কাব্যটির নাম কী ? সেই কাব্য কোন ভাষায় কবে প্রকাশিত হয়েছিল ? 

উত্তরঃ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত কবির প্রথম কাব্যটির নাম ‘ The Captive Lady ‘ গ্রন্থটি ১৮৪৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল । 

১২। বাংলা ভাষায় মধুসূদনের প্রথম রচনা কী ? সেটি কবে প্রকাশিত হয়েছিল ? 

উত্তরঃ বাংলা ভাষায় তাঁর প্রথম রচনা ‘ শর্মিষ্ঠা ’ নাটক । এটি . ৮৫৯ সালে প্রকাশিত । 

১৩। পরধন লোভে মত্ত’– বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ? 

উত্তরঃ পরধন বলতে এখানে পাশ্চাত্য সাহিত্যের কথা বলা হয়েছে । ইংরেজি সাহিত্যের ভাবসম্পদে কবি যশস্বী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন । ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করে তিনি পণ্ডিত হতে চেয়েছিলেন , এবং ব্যর্থ হয়েছেন । অথচ কবি তা বুঝতে পারেননি যে আসলে ইংরেজি ভাষা পরদেশের ভাষা , পরের ধন । তাই তিনি লোভ করে বসেন । অথচ মাতৃভাষার ভাণ্ডারে অফুরন্ত সম্পদরাজিকে তিনি উপেক্ষা করেছেন । তাই কবি বলেছেন , পরধনে লোভে মত্ত থেকে তিন ব্যর্থতাছাড় আর কিছুই লাভ করতে পারেননি । 

১৪। সপ্রঙ্গ ব্যাখ্যা :

( ক ) হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন 

        কেলিনু শৈবালে , ভুল কমল – কানন ৷ 

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি কবি মধুসূদনকে ‘ বঙ্গভাষা ‘ শীর্ষক সনেট থেকে গৃহিত হয়েছে । ইংরেজি ভাষায় কাব্য – সাহিত্য রচনা করে মধুসূদন নাম যশ ও প্রতিপত্তি আশা করেছিলেন । কিন্তু তাঁর ধারণা ব্যর্থ হয়েছে । ফলে পাশ্চাত্য সাহিত্যের প্রতি মোহ ভঙ্গ করে তিনি মাতৃভাষার সাহিত্যের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ কবেন । মাতৃভাষার প্রতি সাগ্রহ জন্মালে কবির মানসিকতার পরিবর্তন এখানে ধরা পরেছে । 

বঙ্গভাষা নানাবিধ ভাণ্ডারে পরিপূর্ণ । কিন্তু কবি নিজ মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনা করে বিদগ্ধ হতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করলে তিনি অনেক প্রতিপত্তির অধিকারী হতে পারবেন । এবং এই ধারণার বশবর্তী হয়েই তিনি ইংরেজি সাহিত্যে কাব্য রচনা শুরু করেন । তাঁর ইংরেজি ভাষার প্রথম কাব্য ‘ ক্যাপটিভ লেডি ‘ রচনার পর তার মোহ ভঙ্গ হয়ে যায় । কবির ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয় ৷ এরপর তিনি মাতৃভাষার প্রতি অনুরক্ত হন । 

কারণ পাশ্চাত্য বিজাতীয় ভাষাকে আয়ত্তাধীন করতে কবিকে বহু পরিশ্রম করতে হয় । অনাহারে অনিদ্রায় দিন যাপন করতে হয়েছে । বহু পরিশ্রমের পরেও তিনি ইংরেজি সাহিত্যে সাবাল্য লাভ করতে পারেননি । তাই তিনি মনে করেছেন শৈবাল ভূমিতে তিনি বৃথা ক্রীড়া করেছেন । অথচ বঙ্গ জননীর কমল – কানন অর্থাৎ পদ্মের বাগান তিনি বিস্মৃত ছিলেন । বঙ্গ ভাষার মধ্যেই যে সাহিত্য সৃষ্টির প্রচুর অমূল্য রত্ন লুকিয়ে আছে তা তিনি অনুধাবন করলেন । 

( খ ) “ স্বপ্নে তা ……..পূর্ণ মনিজালে ” 

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি কবি মধুসূদনকে ‘ বঙ্গভাষা ‘ শীর্ষক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে । ইংরেজি কাব্য রচনা করে প্রতিপত্তি আইন করতে গিয়ে ব্যর্থ কবির মনে নিজ মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধার কথা এখানে বর্ণিত হয়েছে । 

কবি বাল্যকাল থেকেই ইংরেজি ভাষায় আকৃষ্ট হয়েছিলেন । কবির ধারণা ছিল ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করলে তিনি অনেক যশ ও প্রতিপত্তি অর্জন করতে পারবেন । ইংরেজি ভাষাই একমাত্র কবিকে অমরত্ব দিতে পারবে ভেবে কবি সেই ভাষায় অনুসরণ করেন । এবং কঠোর পরিশ্রম করে ইংরেজিতে প্রথম কাব্য ‘ ক্যাপটিভ লেডি ‘ রচনা করেন । কিন্তু কাব্যটির ভাষা উন্নত হলেও কবি এই কাব্য রচনা করে বিশেষ প্রশংসা লাভ করলেন না । কবির পরিশ্রম ব্যর্থ হলে , তিনি পুনরায় মাতৃভাষার প্রতি দৃষ্টি দিলেন । কারণ বঙ্গকুল লক্ষী কবিকে স্বপ্নে বলে দিলেন । কবির চেতনাকে জাগিয়ে তুললেন , যে বঙ্গ ভাঙ্গারে এত অফুরন্ত রত্ন থেকে কবি পরদেশে পরধনে লোভ করে ভিখারির দশা করেছেন । 

তাই কবি কুললক্ষ্মীর আদেশে বঙ্গভাষায় দৃষ্টিনিবদ্ধ করেন । বাংলা যেহেতু কবির মাতৃভাষা কবি তাই খুব অল্প পরিশ্রমেই উক্ত ভাষাকে আয়ত্ত করতে পারেন । যথার্থই কবি বুঝতে পারলেন বঙ্গ ভাণ্ডার মনিমুক্ত রত্নের খনি । এবং এই ভাষাতেই পরবর্তীতে কাব্য সাহিত্য রচনা করে কবি শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করলেন । বঙ্গ সাহিত্যে কবি অনেক সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হলেন । 

( গ ) “ পর – ধন – লোভে মত্ত , করিনু ভ্রমণ 

          পরদেশে , ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি । ” তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো । 

উত্তরঃ উক্ত পংক্তিটিতে পাশ্চাত্য সাহিত্যের কথা বলা হয়েছে । কবি মধুসূদন পাশ্চাত্য সাহিত্য থেকে নানাবিধ ভাবসম্পন্ন সংগ্রহ করে পণ্ডিত হতে চেয়েছেন । ইংরাজি ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করে এই যশস্বী হতে চেয়েছিলেন । কিন্তু পরে কবি অনুভব করলেন যে তিনি পরদেশে ভিক্ষাবৃত্তি করে অখ্যাতি অর্জন করেছেন । তাই কবির অনুশোচনা যে তিনি কোণে কুক্ষণে পরদেশে পরধনের লোভে ভ্রমণ করেছেন । অথচ মাতৃভাষায় অফুরন্ত ভাণ্ডার ছড়িয়ে রয়েছে । নিজ মাতৃভাষা পদ্মবনকে উপেক্ষা করে বিদেশের ভাষায় খ্যাতি অর্জন করতে চেয়েছিলেন । এবং সেই প্রচেষ্টায় কবি ব্যর্থ হয়ে এরূপ উক্তি করেছেন । 

শব্দার্থ : 

ভাণ্ডার – ভাঁড়ার।

বিবিধ – নানারকম।

অবোধ – অজ্ঞ।

অবহেলা – অনাদর।

রতন – রত্ন।

কুক্ষণে – খারাপ লগ্নে বা সময়ে।

আচরি – আচরণ করি।

পরিহরি – বর্জন করে।

মজিনু – অনুরাগী হলাম।

সঁপি – সমর্পন করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top