Class 12 Advance Bengali Chapter 9 পনেরো আনা Question Answer | AHSEC Class 12 Advanced Bengali Question Answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Assam Board Class 12 Advance Bengali Chapter 9 পনেরো আনা Notes and select needs one.
Class 12 Advance Bengali Chapter 9 পনেরো আনা
Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Advance Bengali Chapter 9 পনেরো আনা Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Advance Bengali Chapter 9 পনেরো আনা Solutions for All Subjects, You can practice these here.
পনেরো আনা
Chapter: 9
ADVANCE BENGALI
গদ্যাংশ
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধের লেখকের নাম কী?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ২। ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তরঃ ‘সংকলন’ গ্রন্থের।
প্রশ্ন ৩। ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধটি প্রথমে কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
উত্তরঃ ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায়।
প্রশ্ন ৪। সম্পদের উদারতা কী প্রমাণ করে?
উত্তরঃ অনাবশ্যকতাকেই প্রমাণ করে।
প্রশ্ন ৫। “মরার পরে অল্প লোকই অমর হইয়া থাকেন।” উক্তিটি কোন্ পাঠ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লিখিত ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৬। “সংক্ষেপে বলিতে গেলে মানুষ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত।”
– এই দুই শেণির নাম লেখো।
উত্তরঃ পনেরা আনা এবং বাকি এক আনা।
প্রশ্ন ৭। “আমাদের অফুরান অজস্রতা, আমাদের অহেতুক বাহুল্য দেখিয়া বিধাতার মহিমা স্মরণ করো।” – ‘বাহুল্য’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ প্রাচুর্য বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত।
প্রশ্ন ৮। “পৃথিবীতে ঘাসই প্রায় সমস্ত _____ অল্পই।” (শূন্যস্থান পূর্ণ করো।)
উত্তরঃ ধান।
প্রশ্ন ৯। “পনেরো আনা ______ এক আনা আবশ্যক।” (শূন্যস্থান পূর্ণ করো।)
উত্তরঃ অনাবশ্যক।
প্রশ্ন ১০। “মৃতের সঙ্গে ______ লড়াই বড়ো কঠিন।” (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)।
উত্তরঃ জীবিতের।
প্রশ্ন ১১। “সকল _______ ধান হয় না।” (শূন্যস্থান পূর্ণ করো।)
উত্তরঃ ঘাস।
প্রশ্ন ১২। “যে আমাদের খরচ করবার সঙ্গী সেই আমাদের_______।” (শূন্যস্থান পূর্ণ করো।)
উত্তরঃ বন্ধু।
প্রশ্ন ১৩। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধে কাদের পনেরো আনা বলেছেন?
উত্তরঃ সাধারণ মানুষকে।
প্রশ্ন ১৪। “নীতিজ্ঞেরা আমাদিগকে নিন্দা করেন।”- ‘নীতিজ্ঞ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ নীতিবিদ।
প্রশ্ন ১৫। যে আমাদের খরচ করিবার _____ সেই আমাদের বন্ধু। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ সঙ্গী।
প্রশ্ন ১৬। যে লোক ধনী, ঘরের চেয়ে তাহার _________ বড়ো হইয়া থাকে। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ বাগান।
প্রশ্ন ১৭। “আমরাই সংসারের গতি” – এখানে আমরা কারা?
উত্তরঃ এখানে আমরা মানে সংসারের পনেরো আনা সাধারণ মানুষ।
প্রশ্ন ১৮। “এই পনেরো আনা অনাবশ্যক জীবনই বিধাতার ঐশ্বর্য সপ্রমাণ করিতেছে।” – ‘পনেরো আনা’ কারা?
উত্তরঃ সংসারের অনাবশ্যক লোক বা সাধারণ লোক।
প্রশ্ন ১৯। ‘অনাবশ্যক’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ যার কোনো প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন ২০। সংসার রক্ষা করবার জন্য ভগবান কী বলেছেন?
উত্তরঃ ‘সম্ভবামি যুগে যুগে।
প্রশ্ন ২১। নদীর অধিকাংশ জল কী কাজে লাগে?
উত্তরঃ অধিকাংশ জল নদীর গতি প্রবাহকে অক্ষুণ্ণ রাখে।
প্রশ্ন ২২। বিধাতার ঐশ্বর্য সপ্রমাণ করছে কারা?
উত্তরঃ পনেরো আনা অনাবশ্যক লোকই বিধাতার ঐশ্বর্যকে প্রমাণ করছে।
প্রশ্ন ২৩। ঘাস জাতির মধ্যে কে জোর করে ধান হবার চেষ্টা করেছিল?
উত্তরঃ কুশতৃণ।
প্রশ্ন ২৪। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কর্তা কে?
উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক নিউটন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। “ওঠো, জাগো, কাজ করো, সময় নষ্ট করিয়ো না”
– কারা বলেন ? কাদের বলেন ?
উত্তরঃ নীতিজ্ঞরা এই নীতিবাক্য আমাদের বলেন।
প্রশ ২। “মানুষ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত”- শ্রেণি দুটি কী কী?
উত্তরঃ শ্রেণি দুটি হল পনেরো আনা আর এক আনা।
প্রশ্ন ৩। “যে আমাদের খরচ করবার সঙ্গী সেই আমাদের বন্ধু।”
– বক্তা কে? খরচ করবার সঙ্গী কে?
উত্তরঃ বক্তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। খরচ করবার সঙ্গী উপকারী লোকটি।
প্রশ্ন ৪। “যে লোক ধনী, ঘরের চেয়ে তাহার বাগান বড়ো হইয়া থাকে।” – ঘর বলতে কী বোঝ? ‘বাগান’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তরঃ ‘ঘর’ বলতে গৃহ বা বাসস্থান বোঝায়, যেখানে পরিবারের সকল সদস্য একত্রে বাস করে। ‘বাগান’ শব্দটির অর্থ হলো যেখানে ফুল, ফল, গাছ-সব্জির চাষ করা হয়।
প্রশ্ন ৫। “এই পনেরো আনা অনাবশ্যক জীবনই বিধাতার ঐশ্বর্য সপ্রমাণ করিতেছে।” – ‘অনাবশ্যক’ শব্দটির অর্থ কী? এই অংশটি কোন্ প্রবন্ধের অন্তর্গত?
উত্তরঃ ‘অনাবশ্যক’ শব্দের অর্থ যার কোনো প্রয়োজন নেই। অংশটি ‘পনেরো আনা প্রবন্ধের অন্তর্গত।
প্রশ্ন ৬। ‘সম্পদের উদারতা অনাবশ্যকেই আপনাকে সপ্রমাণ করে’ – দুটি উদাহরণ দিয়ে বক্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ সম্পদ প্রত্যেকেরই প্রয়োজন। কিন্তু অধিক সম্পত্তি থাকার জন্য অনেক সময় অনাবশ্যক সামগ্রী আমাদের কাছে বড়ো হয়ে ওঠে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রথমতঃ ছাগলের শিঙ তার প্রয়োজন মতো হলেও হরিণের শিঙের পনেরো আনাই অনাবশ্যক। দ্বিতীয়তঃ ময়ূরের বহুবর্ণ লেজ, যা অন্যান্য পাখির তুলনায় অনাবশ্যক।
প্রশ্ন ৭। ‘নীতিজ্ঞেরা আমাদিগকে নিন্দা করেন। বলেন, আমাদের জীবন বৃথা গেল’ – নীতিজ্ঞেরা আমাদের জীবন বৃথা না যাওয়ার জন্য কী করতে বলেন?
উত্তরঃ নীতিজ্ঞেরা আমাদিগকে তাড়না করে বলেন, – ওঠো, জাগো, কাজ করো, সময় নষ্ট করো না।
প্রশ্ন ৮। “তাঁহারা আমাদিগকে তাড়না করিয়া বলিতেছেন, ‘ওঠো, জাগো, কাজ করো, সময় নষ্ট করিয়ো না।” – ‘তাঁহারা’ কারা? সময় নষ্ট করলে কী হবে বলে তাঁরা ভাবেন?
উত্তরঃ তাঁহারা হলেন নীতিবিদরা। সময় নষ্ট করলে তাদের মতে জীবন বৃথা যাবে।
প্রশ্ন ৯। ‘পৃথিবীতে _____ প্রায় সমস্ত ____ অল্পই।’ (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ ঘাসই, ধান।
প্রশ্ন ১০। ‘মানুষ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত ____ এবং বাকি ____।’ (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ পনেরো আনা, এক আনা।
প্রশ্ন ১১। আমাদের বন্ধু কে? ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা।
উত্তরঃ যে আমাদের খরচ করিবার সঙ্গী সে-ই আমাদের বন্ধু।
প্রশ্ন ১২। রবীন্দ্রনাথ কোন কাব্যের জন্য কত খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ Song Offerings এর জন্য ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
প্রশ্ন ১৩। শূন্যস্থান পূর্ণ করো:
“পনেরো আনা শান্ত এবং এক আনা অশান্ত।
পনেরো আনা ____ এবং এক আনা _____।”
উত্তরঃ অনাবশ্যক, আবশ্যক।
প্রশ্ন ১৪। “তাঁহারা আমাদিগকে তাড়না করিয়া বলিতেছেন, ‘ওঠো, জাগো, কাজ করো, সময় নষ্ট করিয়ো না।” – তাঁহারা কারা? সময় নষ্ট করলে কী হবে বলে তাঁরা জানেন?
উত্তরঃ তাঁহারা বলতে নীতিজ্ঞেরা। সময় নষ্ট করলে সে সময় আর ফিরে যাওয়া যাবে না।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। “ট্রেনের সব গাড়িই যদি রিজার্ভ গাড়ি হইত, তাহা হইলে সাধারণ প্যাসেঞ্জারদের গতি কী হইত।” – কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এই উক্তি করেছেন? বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে, হরিণের শিং ও ময়ূরের পুচ্ছের মতো সংসারের অধিকাংশ মানুষই বাহুল্য। ফলে আমাদের অধিকাংশের জীবন নিয়ে জীবন চরিত লেখার সুযোগ নেই, তার মৃত্যুর পরে পাথরের মূর্তি গড়ার চেষ্টাও করা হবে না। পৃথিবীতে মরার পর খুব অল্প সংখ্যক লোকই অমর হয়ে থাকেন। ফলে পৃথিবীটা বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। যদি মৃত্যুর পর সকল মানুষ অমর হয়ে থাকত তবে তাঁদের জীবনচরিত ও পাথরের মূর্তিতে পৃথিবীটা ভরে যেত। ট্রেনের সব বগিই যদি সংরক্ষিত হত তবে সাধারণ মানুষ তাতে যাত্রী হতে পারত না। এতে সাধারণ যাত্রী ভীষণ কষ্টের সম্মুখীন হতো। সুতরাং পৃথিবীর সব মানুষ যদি বিশিষ্ট ব্যক্তি হয় তবে সাধারণ বলে কিছু থাকত না। সেইজন্য সমাজে যেমন বিশিষ্ট লোকের প্রয়োজন, তেমনি সাধারণ মানুষেরও প্রয়োজন আছে। তা না হরে এক আনা বিশিষ্ট লোকের গৌরবও থাকবে না।
প্রশ্ন ২। “আমাদের অধিকাংশের জীবন জীবনচরিত লিখিবার যোগ্য নহে।” – অধিকাংশ মানুষের জীবন কেন জীবনচরিত লেখার যোগ্য নয়?
উত্তরঃ ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে, হরিণের শিং ও ময়ূরের পুচ্ছের মতো সংসারের অধিকাংশ মানুষই বাহুল্য। ফলে আমাদের অধিকাংশের জীবন নিয়ে জীবন চরিত লেখার সুযোগ নেই, তার মৃত্যুর পরে পাথরের মূর্তি গড়ার চেষ্টাও করা হবে না। পৃথিবীতে মরার পর খুব অল্প সংখ্যক লোকই অমর হয়ে থাকেন। ফলে পৃথিবীটা বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। যদি মৃত্যুর পর সকল মানুষ অমর হয়ে থাকত তবে তাঁদের জীবনচরিত ও পাথরের মূর্তিতে পৃথিবীটা ভরে যেত। ট্রেনের সব বগিই যদি সংরক্ষিত হত তবে সাধারণ মানুষ তাতে যাত্রী হতে পারত না। এতে সাধারণ যাত্রী ভীষণ কষ্টের সম্মুখীন হতো। সুতরাং পৃথিবীর সব মানুষ যদি বিশিষ্ট ব্যক্তি হয় তবে সাধারণ বলে কিছু থাকত না। সেইজন্য সমাজে যেমন বিশিষ্ট লোকের প্রয়োজন, তেমনি সাধারণ মানুষেরও প্রয়োজন আছে। তা না হরে এক আনা বিশিষ্ট লোকের গৌরবও থাকবে না।
প্রশ্ন ৩। “মৃতের সঙ্গে জীবিতের লড়াই বড়ো কঠিন।” – এই উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
অথবা,
‘‘এই যে জীবিতে জীবিতে লড়াই ইহা সমকক্ষের লড়াই, কিন্তু মৃতের সঙ্গে জীবিতের লড়াই বড়ো কঠিন।” – লেখকের বক্তব্য পরিস্ফুট করো।
উত্তরঃ ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধের লেখক রবীন্দ্রনাথ সত্যদ্রষ্টা। তিনি দেখেছেন পৃথিবীটা খুবই সংকীর্ণ যে, জীবিতের সঙ্গে জীবিতের বেঁচে থাকতে লড়াই করতে হয়। তবে লেখকের মতে এই লড়াই বা যুদ্ধ সবসময় সমানে সমানে হয়ে থাকে। মৃত ব্যক্তি ও জীবিত ব্যক্তির মধ্যে লড়াই সম্ভব নয়। মৃত ব্যক্তিরা সকল দুর্বলতা সকল খণ্ডতার অতীত। তাদেরকে আমরা কল্পনার দ্বারা স্মরণ করি। মৃত ব্যক্তি ও জীবিত ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মৃত ব্যক্তির সকল দোষ চাপা পড়ে যায়। আমাদের মন থেকে তার স্মৃতি মুছে না গেলেও আমাদের জীবনকে তেমন একটা প্রভাবিত করতে পারে না। মৃত ব্যক্তির স্থান হয়ে ওঠে ভাবরাজ্যে। ফলে মৃতের সঙ্গে জীবিতের লড়াই বড়ো কঠিন।
প্রশ্ন ৪। “সকল ঘাস ধান হয় না।” – তবে ঘাসের জীবনের সার্থকতা কোথায় বুঝিয়ে দাও।
অথবা,
বক্তা কে? বক্তার বক্তব্য পরিস্ফুট করো।
উত্তরঃ বক্তা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
‘পনেরো আনা’ পাঠে লেখকের মতে ঘাস ও ধান একই শ্রেণীর উদ্ভিদ। কিন্তু দুটির ধর্ম আলাদা। পৃথিবীতে ঘাসের পরিমাণ বেশি আর ধানের পরিমাণ কম। ধান মানুষের জীবন ধারণের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ফসল। তাই বলে ঘাস যেন আপনার নিষ্ফলতা নিয়ে বিলাপ না করে। কারণ ঘাস পৃথিবীর শুষ্ক ধূলিকে শ্যামলতা দ্বারা আচ্ছন্ন করে রেখে কোমলতা দান করছে। লেখকের মতে, এতে ঘাসের জীবন সার্থক। কেননা, তার দ্বারা সূর্যতাপের উষ্ণতা থেকে আমরা রক্ষা পাই, সে পৃথিবীর বুক ঠাণ্ডা করে তুলে।
প্রশ্ন ৫। “যে আমাদের খরচ করবার সঙ্গী সেই আমাদের বন্ধু।” – ব্যাখ্যা করো।
অথবা,
‘‘উপকারী লোকটির কাছ হইতে আমরা অর্জন করিয়া আনি এবং বাহুল্য লোকটির সঙ্গে মিলিয়া আমরা খরচ করিয়া থাকি?” – ‘উপকারী’ ও ‘বাহুল্য লোক’ কারা? লেখকের বক্তব্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ লেখকের মতে, যে মানুষ নিজের জীবন দিয়েই পরের উপকার করে চলে তিনি আমাদের আদর্শ। কিন্তু তিনি সবার কাছে অনুসরণ যোগ্য নন। অন্যদিকে যে লোকটা বাহুল্য সবাই তাকে ভালোবাসে কারণ এই অনুপকারী মানুষটি বাড়তি বলেই সর্বতোভাবেই আপনাকে দিতে পারে। পৃথিবীর উপকারী মানুষ কেবল উপকারের সংকীর্ণ দিক দিয়েই আমাদের জীবনকে স্পর্শ করে, সে নিজের উপকারিতার মহৎ গুণে আবদ্ধ, আমরা তার দিকে হাত বাড়ালে শুধু উপকারটাই পেতে পারি। কিন্তু বাহুল্য লোকটি কোনো কাজের নয়, তাই তার কোনো বন্ধনও নেই। সে আমাদের কোনো উপকার করতে পারে না শুধু সঙ্গে থাকে। উপকারী লোকটির কাছ থেকে আমরা অর্জন করে বাহুল্য লোকটির সঙ্গে মিলে খরচ করি। ‘উপকারী’ হল যারা মানুষের উপকার করে আর যারা খরচ করে তাকে ‘বাহুল্য লোক’ বলে।
প্রশ্ন ৬। “আমরাই সংসারের গতি।” – ‘আমরা’ কারা? কেন তারা সংসারের গতি?
উত্তরঃ ‘আমরা’ বলতে সংসারের পনেরো আনা সাধারণ মানুষ।
লেখক রবীন্দ্রনাথের মতে, এই পনেরো আনা সাধারণ মানুষই হল জীবন সংসারের গতি। এই মানুষগুলোই মানব সভ্যতার ধারা রক্ষা করে চলেছে। এই ধারা রক্ষা একটা বিরাট সার্থকতা। তাই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, যে সাধারণ মানুষ যেন নিজেদের হেয় জ্ঞান না করেন। কারণ, সংসারের সকল কলগান তাদের দ্বারা ধ্বনিত, সমস্ত ছায়ালোক তাদের উপরেই স্পন্দমান। তারাই বিপুল সংসারের বিচিত্র তরঙ্গলীলার অঙ্গ। তাদের ছোটো-খাটো হাসি-কৌতুকে সমস্ত জনপ্রবাহ ঝলমল করছে, তাদের ছোটো-খাটো আলাপে-বিলাপে সমস্ত সমাজ মুখরিত। তাই পনেরো আনা সাধারণ মানুষই সংসারের গতি।
প্রশ্ন ৭। “মরার পরে অল্প লোকই অমর হইয়া থাকেন, সেইজন্য পৃথিবীটা বাসযোগ্য হইয়াছে।” অন্তর্নিহিত বক্তব্য বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে, হরিণের শিং ও ময়ূরের পুচ্ছের মতো সংসারের অধিকাংশ মানুষই বাহুল্য। ফলে আমাদের অধিকাংশের জীবন নিয়ে জীবন চরিত লেখার সুযোগ নেই, তার মৃত্যুর পরে পাথরের মূর্তি গড়ার চেষ্টাও করা হবে না। পৃথিবীতে মরার পর খুব অল্প সংখ্যক লোকই অমর হয়ে থাকেন। ফলে পৃথিবীটা বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। যদি মৃত্যুর পর সকল মানুষ অমর হয়ে থাকত তবে তাঁদের জীবনচরিত ও পাথরের মূর্তিতে পৃথিবীটা ভরে যেত। ট্রেনের সব বগিই যদি সংরক্ষিত হত তবে সাধারণ মানুষ তাতে যাত্রী হতে পারত না। এতে সাধারণ যাত্রী ভীষণ কষ্টের সম্মুখীন হতো। সুতরাং পৃথিবীর সব মানুষ যদি বিশিষ্ট ব্যক্তি হয় তবে সাধারণ বলে কিছু থাকত না। সেইজন্য সমাজে যেমন বিশিষ্ট লোকের প্রয়োজন, তেমনি সাধারণ মানুষেরও প্রয়োজন আছে। তা না হরে এক আনা বিশিষ্ট লোকের গৌরবও থাকবে না।
প্রশ্ন ৮। “নীতিজ্ঞেরা আমাদিগকে নিন্দা করেন। বলেন, আমাদের জীবন বৃথা গেল?” – উক্তিটি কোন্ প্রবন্ধের অন্তর্গত? ‘আমাদিগকে’ বলতে লেখক কাদের বুঝিয়েছেন? মন্তব্যটি বিশদ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধের অন্তর্গত। ‘আমাদিগকে’ বলতে লেখক পনেরো আনা সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েছেন। নীতিজ্ঞেরা পনেরো আনা সাধারণ লোকদের নিন্দা করেন। সাধারণ মানুষ যারা কোনো কাজে লাগে না তাদের সময় নষ্ট না করে কাজ করার কথা নীতিজ্ঞেরা বলেন। কিন্তু লেখক রবীন্দ্রনাথ এই পনেরো আনা সাধারণ মানুষদের সম্পর্কে বলেন, “জীবন বৃথা গেল। যাইতে দাও। কারণ যাওয়া চাই। যাওয়াটাই একটা সার্থকতা।” উদাহরণসহ লেখক বলেছেন যে, দেখ নদী চলছে, তার সকল জলই আমাদের স্নানে, পানে এবং ধানের ক্ষেতে ব্যবহৃত হয় না। অধিকাংশ জলই সমুদ্রে গিয়ে মিশে অর্থাৎ তার প্রবাহ রক্ষা করে চলে। আমাদের অধিকাংশ ব্যর্থ জীবন স্পন্দনকে যা অবিচ্ছিন্ন রাখে।
প্রশ্ন ৯। “জীবন বৃথা গেল, বৃথা যাইতে দাও।”
লেখকের বক্তব্য বুঝিয়ে দাও।
অথবা,
“উপকারকে একমাত্র সাফল্য বলিয়া গণ্য করা দীনতার পরিচয়।’’ দৃষ্টান্তসহ আলোচনা করো।
অথবা,
“জীবন বৃথা গেল। বৃথা যাইতে দাও। অধিকাংশ জীবনই বৃথা যাইবার জন্য হয়েছে।” – উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে মর্মার্থ লেখো।
উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ মনে করেন, এই সমাজ সংসারের অধিকাংশ জীবনই বৃথা যাবার জন্য জন্ম নেয়। এই অধিকাংশ পনেরো আনা জীবন বৃথা যাওয়ার মধ্যেও গতিময়তা বা চলমানতা রয়েছে। উদাহরণ দিয়ে লেখক বলেছেন যে, নদী চলেছে, তার সকল জলই আমাদের স্নানে-পানে আর ধানক্ষেতে ব্যবহৃত হয় না। তার অধিকাংশ জলই সমুদ্রের পানে ছুটে চলেছে, অর্থাৎ তার গতি প্রবাহকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য। কোন কাজ না করে কেবল গতিপ্রবাহকে রক্ষার মধ্যে একটি বৃহৎ সার্থকতা আছে। যেমন যে জল খাল কেটে আমরা পুকুরে আনি তাতে স্নান করা চলে কিন্তু সেই জল পান করা যায় না। কিন্তু যে জল ঘটে করে এনে আমরা ডালায় ভরে রাখি তা পান করা চলে, তার উপরে আলো ছায়ার উৎসব হয় না। সুতরাং উপকারকে একমাত্র সাফল্য বলে জ্ঞান করা কৃপণতার কথা। উদ্দেশ্যকেই একমাত্র পরিণাম বলে গণ্য করা দীনতার পরিচয়।
প্রশ্ন ১০। “আমরা যাহাকে ব্যর্থ বলি, প্রকৃতির অধিকাংশ তাই।” – লেখক প্রদত্ত দৃষ্টান্তগুলি উল্লেখ করো।
অথবা,
উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
“সূর্যকিরণের বেশিরভাগ শূন্যে বিকীর্ণ হয়, গাছের মুকুল অতি অল্পই ফল পর্যন্ত টিকে। – অন্তর্নিহিত ভাব ব্যাখ্যা করো।
অথবা,
উক্তিটির কারণ নির্দেশ করো।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধে অনাবশ্যক পনেরো আনার আবশ্যকতা ও সার্থকতা খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন।
লেখক প্রবন্ধটিতে মানুষকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন।
প্রথমত: এক আনা যারা আবশ্যক।
দ্বিতীয়ত: পনেরো-আনা যারা অনাবশ্যক।
আমাদের ধারণায়, অনাবশ্যক মানেই ব্যর্থ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন, সংসারে আবশ্যকের চেয়ে অনাবশ্যকের কদর ও গুরুত্ব বেশি। অনাবশ্যকদেরও সংসারে প্রয়োজন। তাই পনেরো আনা সাধারণ মানুষ যেন নিজেদের হেয় মনে না করে, কারণ তারাই সংসারের গতি, তাদের সংখ্যাই সংসারে অধিক। এই সকল মানুষের সংসারে থাকা দরকার আছে। কারণ, কেবলমাত্র এক আনা আবশ্যক মানুষ দিয়ে জীবন চলে না। জীবনের স্বাদ পাওয়া যায় না। তাই লেখক উদাহরণস্বরূপ বলছেন, সূর্য কিরণের অধিকাংশ কিরণ আকাশে বিলীন হয়ে যায়। গাছের মুকুল অধিকাংশই ঝরে পড়ে যায়। অল্পই ফল পর্যন্ত টিকে। সংসারে এটাই তার সার্থকতা। এজন্য ঈশ্বর সৃষ্ট প্রকৃতিতে কিছুই ব্যর্থ হয় নয়।
পশ্ন ১১। “আমাদের একমাত্র রক্ষা এই যে, ইহাদের সংখ্যা অল্প।” – কাদের সংখ্যা অল্প? এদের সংখ্যা অল্প হওয়ায় লেখক স্বস্তিবোধ করছেন কেন?
উত্তরঃ এখানে এক আনা অর্থাৎ মহান ব্যক্তি বা খ্যাতনামা ব্যক্তির সংখ্যা অল্প। এদের সংখ্যা অল্প হওয়ায় লেখক স্বস্তিবোধ করছেন। লেখক সংসারের মানুষকে দুভাগে ভাগ করেছেন – এই দু ভাগ হল এক আনা মহৎ লোক আর পনেরো আনা সাধারণ মানুষ। এক আনা মহৎ লোক মারা গেলে তাদের পাথরের মূর্তি তৈরী করা হয়। সমাধি স্তম্ভের জন্য অধিক জায়গা দখল করা হয়। ফলে এই এক আনার দলের সংখ্যা বেশি হত তাহলে পৃথিবীটা বাসযোগ্য হত না। কারণ সমাধি স্তম্ভে সাধারণ মানুষের কুটির তৈরির স্থান থাকত না।
প্রশ্ন ১২। “এই পনেরো আনা অনাবশ্যক জীবনই বিধাতার ঐশ্বর্য সপ্রমাণ করিতেছে।” – পনেরো আনা কারা? ঐশ্বর্যের প্রমাণ তিনটি উদাহরণের সাহায্যে দাও৷
অথবা,
‘পনেরো আনা’ কারা? উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
অথবা,
সংসারে পনেরো আনা কারা? সংসারে এদের সার্থকতার বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের অভিমত ব্যক্ত করো।
উত্তরঃ লেখক রবীন্দ্রনাথের মতে, সংসারে দুই শ্রেণির মানুষ আছে। একদিকে এক আনা অসাধারণ মানুষ এবং অপরদিকে পনেরো আনা অনাবশ্যক মানুষ। পনেরো আনা সাধারণ মানুষ ঈশ্বরের গৌরব ঘোষণা করে। পনেরো আনা সাধারণ মানুষের ব্যর্থ জীবন প্রমাণ করে ঈশ্বরের সৃষ্ট পৃথিবী যেমন সুন্দর তেমনি তাঁর সৃষ্ট মানুষও সুন্দর। ঈশ্বরের সৃষ্টি যদি সুন্দর হত না তবে পৃথিবীতে তার অজস্র অনাবশ্যক বেঁচে থাকত না। যেমন বাঁশির ছিদ্রের মধ্য দিয়ে সুর ধ্বনিত হয় তেমনি সংসারে পনেরো আনা অনাবশ্যক মানুষদের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের ঐশ্বর্য প্রকাশিত হয়।
ঐশ্বর্যের তিনটি প্রমাণ হলো –
১। নদী – নদীর সব জল আমাদের স্নানে, পানে এবং ধানক্ষেতে ব্যবহৃত হয় না। অধিকাংশ জলই তার প্রবাহ রক্ষা করে।
২। গাছের মুকুল – গাছের সকল মুকুল ফল হয় না।
৩। সূর্যকিরণ – সূর্যের সব কিরণ আমরা পাই না তার অধিকাংশ কিরণই শূন্যে বিকীর্ণ হয়। এইগুলির দ্বারা বিধাতার ঐশ্বর্যের প্রমাণ হয়।
প্রশ্ন ১৩। ‘সূর্য কিরণের বেশির ভাগ শূন্যে বিকীর্ণ হয়’ – বক্তব্য পরিস্ফুট করো।
উত্তরঃ লেখক তাঁর জীবন বীক্ষা ও সত্যাদর্শন দিয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টিলীলাকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি জানেন সূর্যকিরণের বেশির ভাগ মহাশূন্যে বিকির্ণ হয়, তাছাড়া গাছের সমস্ত মুকুলের মধ্যে খুব কমই ফলে পরিণত হয়। সৃষ্টির এই অপ্রয়োজনীয় প্রাচুর্য আমাদিগকে মহিমান্বিত করে। এই অদরকারী বস্তুসম্ভার পৃথিবীর পক্ষে জীবনের পক্ষে অপব্যয় কি না সৃষ্টিকর্তাই বলতে পারেন। সমাজের অন্তর্গত অধিকাংশ মানুষও পরস্পর সঙ্গ দান, পরস্পর জীবনকে প্রবহমান রাখা ছাড়া আর কোন কাজে লাগে না। এর জন্য লেখক নিজেও অন্যকে দোষ দেন না, ছটপটও করেন না। কারণ তিনি জানেন তা হলেই জীবনের সমস্ত উদ্দেশ্যহীনতার মধ্যেই যথার্থভাবে জীবনের উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব হয়ে উঠতে পারে।
প্রশ্ন ১৪। ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধ অবলম্বনে পনেরো আনা ও এক অবস্থান সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য কী তা বুঝিয়ে লেখো।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ সমাজ জীবনে মানুষকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন পনেরো আনা লেখকের ভাষায় বাহুল্য লোক আর বাকি এক আনা উপকারী লোক।
লেখকের মতে যে মানুষ নিজের জীবনকে নিঃশেষে সবার প্রয়োজনীয় করে তুলেছে সে ব্যক্তি আদর্শ পুরুষ। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে অধিকাংশ মানুষই এই ব্যক্তির আদর্শ অনুসরণ করেনা, যদি করতো তবে সমস্ত মানুষের সমাজ শাঁসহীন ফলের মতো হয়ে উঠত। লেখক লক্ষ করেছেন যে লোক শুধুমাত্র উপকার করে তাকে সবাই ভালো বলে, কিন্তু বাহুল্য অর্থাৎ পনেরো আনা লোককে সবাই ভালোবাসে। পৃথিবীর উপকারী মানুষ কেবল উপকারের সংকীর্ণতা দিয়ে মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে কিন্তু কোনো অনুপকারী মানুষ নিজেকে সম্পূর্ণভাবেই অন্য হৃদয়ের পার্শ্বে থাকতে চায়। পৃথিবীর এই ধরনের মানুষের সংখ্যাই বেশি, সে তুলনায় মহৎ এক আনা মানুষের সংখ্যা অতি নগণ্য।
প্রশ্ন ১৫। “কাজ না করিয়া অনেকে সময় নষ্ট করে সন্দেহ নাই, কিন্তু কাজ করিয়া যাহারা সময় নষ্ট করে তাহারা কাজও নষ্ট করে সময়ও নষ্ট করে। তাহাদেরই পদভারে পৃথিবী কম্পান্বিত।” – উক্তিটির যথার্থতা প্রতিপন্ন করো।
উত্তরঃ নীতিবিদ্গণ আমাদের জাগ্রত হতে এবং কাজ করতে উপদেশ দেন। অযথা সময় নষ্ট করতে বারণ করেন। নীতিবিদদের মতে, যারা কাজ করেন না তাতে কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু যারা অকাজ করে সময় নষ্ট করেন তারা কাজ ও সময় দুটোই নষ্ট করে থাকেন। তাদের পদভারে পৃথিবী কম্পিত হয়। তাদের কর্ম প্রচেষ্টায় লিপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে বিধাতা পৃথিবীতে যুগে-যুগে অবতার রূপে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন ১৬। পনেরো আনা মানুষ এক আনার মতো আবশ্যক হয়ে উঠতে চাইলে সংসারে কী ঘটবে?
উত্তরঃ লেখকের মতে বিধাতা যদি আমাদের ব্যর্থ করেই সৃষ্টি করে থাকেন, তবে উপদেষ্টার তাড়নায় কাজে লাগলে যে উৎকট ব্যর্থতার সৃষ্টি করব তা আমাদের স্বকৃত। তার জবাবদিহি আমাদেরই করতে হবে। লোমহর্ষক নিদারুণ ব্যর্থতার চেয়ে জীবনবৃথা যাওয়াই মঙ্গলজনক। লেখকের কথায়, সংসারে যখন কোনো একদল পনেরো আনা এক আনার মতোই অশান্ত ও আবশ্যক হয়ে উঠার উপক্রম করে, তখন জগতের আর কল্যাণ নেই। যাদের অদৃষ্টে মরণ আছে, তাদের মরার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
প্রশ্ন ১৭। “মরার পরে অল্প লোকই অমর হইয়া থাকেন, সেইজন্য পৃথিবীটা রাসযোগ্য হইয়াছে।” – অন্তর্নিহিত বক্তব্য বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে, হরিণের শিং ও ময়ূরের পুচ্ছের মতো সংসারের অধিকাংশ মানুষই বাহুল্য। ফলে আমাদের অধিকাংশের জীবন নিয়ে জীবন চরিত লেখার সুযোগ নেই, তার মৃত্যুর পরে পাথরের মূর্তি গড়ার চেষ্টাও করা হবে না। পৃথিবীতে মরার পর খুব অল্প সংখ্যক লোকই অমর হয়ে থাকেন। ফলে পৃথিবীটা বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। যদি মৃত্যুর পর সকল মানুষ অমর হয়ে থাকত তবে তাঁদের জীবনচরিত ও পাথরের মূর্তিতে পৃথিবীটা ভরে যেত। ট্রেনের সব বগিই যদি সংরক্ষিত হত তবে সাধারণ মানুষ তাতে যাত্রী হতে পারত না। এতে সাধারণ যাত্রী ভীষণ কষ্টের সম্মুখীন হতো। সুতরাং পৃথিবীর সব মানুষ যদি বিশিষ্ট ব্যক্তি হয় তবে সাধারণ বলে কিছু থাকত না। সেইজন্য সমাজে যেমন বিশিষ্ট লোকের প্রয়োজন, তেমনি সাধারণ মানুষেরও প্রয়োজন আছে। তা না হরে এক আনা বিশিষ্ট লোকের গৌরবও থাকবে না।
প্রশ্ন ১৮। “এই পনেরো আনা অনাবশ্যক জীবনই বিধাতার ঐশ্বর্য সপ্রমাণ করিতেছে।” – ‘অনাবশ্যক’ শব্দটির অর্থ কী? লেখকের নাম উল্লেখ করে ‘পনেরো আনা’ শব্দটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ ‘অনাবশ্যক’ শব্দের অর্থ যার কোনো প্রয়োজন নেই। লেখকের নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
লেখকের মতে, সংসারে দুই শ্রেণির মানুষ আছেন। একদিকে এক আনা অসাধারণ আবশ্যক মানুষ এবং অন্যদিকে পনেরো আনা অনাবশ্যক মানুষ। পনেরো আনা সাধারণ মানুষই ঈশ্বরের গৌরব ঘোষণা করে।
প্রশ্ন ১৯। “ছাগলের যতটুকু শিঙ আছে তাহাতে তাহার কাজ চলিয়া যায়, কিন্তু হরিণের শিঙের পনেরো আনা অনাবশ্যকতা দেখিয়া আমরা মুগ্ধ হইয়া থাকি।” ‘পনেরো আনা অনাবশ্যকতা’ বলতে রবীন্দ্রনাথ কী বোঝতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ আলোচ্য সাধারণ সত্যটি রবীন্দ্রনাথ তাঁর পনেরো আনা প্রবন্ধে ব্যক্ত করেছেন। প্রকৃতির সৃষ্টিলীলার মধ্যে যা কিছু অনাবশ্যক, বহুল্য তথা বাড়তি (Extra) তাই যে সুন্দর এ দর্শন ব্যাখ্যা প্রসঙ্গেই আলোচ্য উক্তি।
রবীন্দ্রনাথ নিজের পরিশীলিত আত্মদর্শনের সপক্ষে উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন যে ধনী লোকের ঘরের চেয়ে বাগান বড়ো। ঘর আমাদের অত্যাবশ্যক – এ না থাকলেই নয়। কিন্তু বাগান অতিরিক্ত না হলেও চলে, তবু সেটা অত্যন্ত বড়ো করতে হয়। কিংবা আমরা দেখি ছাগলের ছোটো শিং-এই তার প্রয়োজন মিটে এমন ছোট শিং-এ হরিণের প্রয়োজন মিটতে পারে, অথচ হরিণের শিং অকারণে বড়ো। তাই আমাদের জীবনে বেশি বেশি এবং সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধ অবলম্বণে সাধারণ মানুষের গৌরব সবিস্তারে লেখো।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধে অনাবশ্যক পনেরো আনার আবশ্যকতা ও সার্থকতা খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন।
লেখক প্রবন্ধটিতে মানুষকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। প্রথমত: এক আনা যারা আবশ্যক, দ্বিতীয়ত: পনেরো-আনা যারা অনাবশ্যক। আমাদের ধারণায়, অনাবশ্যক মানেই ব্যর্থ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন, সংসারে আবশ্যকের চেয়ে অনাবশ্যকের কদর ও গুরুত্ব বেশি। অনাবশ্যকদেরও সংসারে প্রয়োজন। তাই পনেরো আনা সাধারণ মানুষ যেন নিজেদের হেয় মনে না করে, কারণ তারাই সংসারের গতি, তাদের সংখ্যাই সংসারে অধিক। এই সকল মানুষের সংসারে থাকা দরকার আছে। কারণ, কেবলমাত্র এক আনা আবশ্যক মানুষ দিয়ে জীবন চলে না। জীবনের স্বাদ পাওয়া যায় না। তাই লেখক উদাহরণস্বরূপ বলছেন, সূর্য কিরণের অধিকাংশ কিরণ আকাশে বিলীন হয়ে যায়। গাছের মুকুল অধিকাংশই ঝরে পড়ে যায়। অল্পই ফল পর্যন্ত টিকে। সংসারে এটাই তার সার্থকতা। এজন্য ঈশ্বর সৃষ্ট প্রকৃতিতে কিছুই ব্যর্থ হয় নয়।
প্রশ্ন ২। “সংক্ষেপে বলিতে গেলে, মানুষ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত।” – এই দুই শ্রেণীর মানুষের পরিচয় প্রদান করে একটি নীতিদীর্ঘ আলোচনা লিপিবদ্ধ করো।
উত্তরঃ ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ মানুষকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। একদিকে রেখেছেন এক আনা আর অন্যদিকে পনেরো আনা। এই এক আনার লোক হল মহৎ, আদর্শবান ব্যক্তি এবং অন্যদিকে পনেরো আনার লোক হল সাধারণ মানুষ। সংসারে পনেরো আনা লোকের সংখ্যা বেশি। আর এই পনেরো আনাকে নিয়েই জগৎ সংসার সচল এবং এই পনেরো আনার উপরই এক আনার প্রতিষ্ঠা নির্ভর করে। লেখকের মতে, মানুষ হরিণের শিঙ ও ময়ূরের পুচ্ছ ভালোবাসে যা বাহুল্য। তদ্রূপ সংসারে পনেরো আনা লোকও বাহুল্য। পনেরো আনা লোকের কোন জীবন চরিত লেখার যোগ্য নয়। তাদের মৃত্যুর পর পাথরের মূর্তি তৈরী হয় না। যদি সকল ব্যক্তি মরার পর পাথরের মূর্তি তৈয়ার হত তবে এ পৃথিবী বাস যোগ্য হত না। আমাদের একমাত্র রক্ষা এই যে, এক আনা লোক অর্থাৎ মহৎ বা আদর্শবান লোকের সংখ্যা অতি অল্প।
জীবন বৃথা গেল বলে পনেরো আনা লোক নিজেকে যেন হেয় মনে না করেন। রবীন্দ্রনাথ বলছেন যে, নদীর সমস্ত জল যেমন স্নানে, পানে, ধানের ক্ষেতে ব্যবহৃত হয় না, তেমনি কোনো কাজ না করে কেবল প্রবাহ রক্ষা করবার একটা বৃহৎ সার্থকতা আছে। পৃথিবীর সকল ঘাস যেমন ধান হয় না, তেমনি পৃথিবীর সকল মানুষ কর্মশীল হয় না। অন্ধকার থাকে বলে যেমন আলোর গুরুত্ব বোঝা যায়, তেমনি সংসারে পনেরো আনা আবশ্যক লোকের জন্যই এক আনা লোকের মূল্য নির্ধারিত হয়। শুধু এক আনা আবশ্যক দিয়ে সংসার চলবে না, সংসারের সচলতা আসবে না। সংসারকে সচল রাখতে হলে এক আনা ও পনেরো আনা উভয়েরই দরকার রয়েছে সংসারে।
প্রশ্ন ৩। ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
অথবা,
‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধের নামকরণ কতটুকু যুক্তিযুক্ত এবং তাৎপর্যপূর্ণ তা আলোচনা করো।
উত্তরঃ পৃথিবীতে সকল বস্তুরই নামকরণ করা হয়। আর এই নামকরণ কোনো বস্তুর বা ব্যক্তির পরিচয়ের মাধ্যম হয়। সাহিত্যেও লেখকরা তাদের কাব্য, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ প্রভৃতির নামকরণ করে থাকেন। আর এই নামকরণ করা হয় প্রধান চরিত্রের নামানুসারে, প্রসঙ্গের নাম বা বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে। লেখক প্রবন্ধটির নামকরণ করেছেন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে।
‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধে লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংসারের মানুষকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। একদিকে এক আনা অর্থাৎ আবশ্যক বা খ্যাতনামা ব্যক্তিরা অন্যদিকে পনেরো আনা অনাবশ্যক সাধারণ মানুষ। সংসারে পনেরো আনা লোকের সংখ্যা অধিক। আর এই অধিক পনেরো আনার উপরই এক আনার প্রতিষ্ঠা নির্ভর করে। লেখকের মতে, হরিণের শিঙ ও ময়ূরের লেজের মতো সংসারে অধিকাংশ লোকই বাহুল্য। পনেরো আনা সাধারণ মানুষদের জীবনচরিত লেখার যোগ্য নয়। তাদের মৃত্যুর পর পাথরের মূর্তি বা সমাধি স্তম্ভ নির্মাণ হয় না। যদি সকল ব্যক্তি মরার পর পাথরের মূর্তি তৈরি করা হত তবে এ পৃথিবী বাসযোগ্য হত না। আমাদের একমাত্র রক্ষা এই যে, এক আনা লোকের সংখ্যা অতি অল্প। রবীন্দ্রনাথের মতে, সাধারণ পনেরো আনা লোকই আমাদের সংসারের গতি। জীবন বৃথা গেল বলে পনেরো আনা লোক নিজেকে যেন হেয় মনে না করেন। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, পৃথিবীর সকল ঘাস যেমন ধান হয় না, ধানের পরিমাণ অল্প, তেমনি পৃথিবীর সকল মানুষ কর্মশীল হয় না।
অন্ধকার থাকে বলে যেমন আলোর গুরুত্ব বোঝা যায়, তেমনি সংসারে পনেরো আনা অনাবশ্যক লোকের জন্যই এক আনা লোকের মূল্য নির্ধারিত হয়। শুধু এক আনা আবশ্যক দিয়ে সংসার চলবে না। এক আনা ও পনেরো আনা উভয়েরই দরকার রয়েছে সংসারে। সুতরাং বিষয়বস্তু বিচারে বলা যায় প্রবন্ধটির নামকরণ সঙ্গত, যুক্তিযুক্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ।
অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধের মূল বক্তব্য সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ মানুষকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। একদিকে রেখেছেন এক আনা আর অন্যদিকে পনেরো আনা। এই এক আনার লোক হল মহৎ, আদর্শবান ব্যক্তি এবং অন্যদিকে পনেরো আনার লোক হল সাধারণ মানুষ। সংসারে পনেরো আনা লোকের সংখ্যা বেশি। আর এই পনেরো আনাকে নিয়েই জগৎ সংসার সচল এবং এই পনেরো আনার উপরই এক আনার প্রতিষ্ঠা নির্ভর করে। লেখকের মতে, মানুষ হরিণের শিঙ ও ময়ূরের পুচ্ছ ভালোবাসে যা বাহুল্য। তদ্রূপ সংসারে পনেরো আনা লোকও বাহুল্য। পনেরো আনা লোকের কোন জীবন চরিত লেখার যোগ্য নয়। তাদের মৃত্যুর পর পাথরের মূর্তি তৈরী হয় না। যদি সকল ব্যক্তি মরার পর পাথরের মূর্তি তৈয়ার হত তবে এ পৃথিবী বাস যোগ্য হত না।
আমাদের একমাত্র রক্ষা এই যে, এক আনা লোক অর্থাৎ মহৎ বা আদর্শবান লোকের সংখ্যা অতি অল্প। জীবন বৃথা গেল বলে পনেরো আনা লোক নিজেকে যেন হেয় মনে না করেন। রবীন্দ্রনাথ বলছেন যে, নদীর সমস্ত জল যেমন স্নানে, পানে, ধানের ক্ষেতে ব্যবহৃত হয় না, তেমনি কোনো কাজ না করে কেবল প্রবাহ রক্ষা করবার একটা বৃহৎ সার্থকতা আছে। পৃথিবীর সকল ঘাস যেমন ধান হয় না, তেমনি পৃথিবীর সকল মানুষ কর্মশীল হয় না। অন্ধকার থাকে বলে যেমন আলোর গুরুত্ব বোঝা যায়, তেমনি সংসারে পনেরো আনা আবশ্যক লোকের জন্যই এক আনা লোকের মূল্য নির্ধারিত হয়। শুধু এক আনা আবশ্যক দিয়ে সংসার চলবে না, সংসারের সচলতা আসবে না। সংসারকে সচল রাখতে হলে এক আনা ও পনেরো আনা উভয়েরই দরকার রয়েছে সংসারে।
প্রশ্ন ২। ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ মানুষকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন, এই দুটি শ্রেণি কী কী এবং অনুরূপ শ্রেণিবিভাগ কেন করা হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করো।
উত্তরঃ ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ মানুষকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। একদিকে রেখেছেন এক আনা আর অন্যদিকে পনেরো আনা। এই এক আনার লোক হল মহৎ, আদর্শবান ব্যক্তি এবং অন্যদিকে পনেরো আনার লোক হল সাধারণ মানুষ। সংসারে পনেরো আনা লোকের সংখ্যা বেশি। আর এই পনেরো আনাকে নিয়েই জগৎ সংসার সচল এবং এই পনেরো আনার উপরই এক আনার প্রতিষ্ঠা নির্ভর করে। লেখকের মতে, মানুষ হরিণের শিঙ ও ময়ূরের পুচ্ছ ভালোবাসে যা বাহুল্য। তদ্রূপ সংসারে পনেরো আনা লোকও বাহুল্য। পনেরো আনা লোকের কোন জীবন চরিত লেখার যোগ্য নয়। তাদের মৃত্যুর পর পাথরের মূর্তি তৈরী হয় না। যদি সকল ব্যক্তি মরার পর পাথরের মূর্তি তৈয়ার হত তবে এ পৃথিবী বাস যোগ্য হত না।
আমাদের একমাত্র রক্ষা এই যে, এক আনা লোক অর্থাৎ মহৎ বা আদর্শবান লোকের সংখ্যা অতি অল্প। জীবন বৃথা গেল বলে পনেরো আনা লোক নিজেকে যেন হেয় মনে না করেন। রবীন্দ্রনাথ বলছেন যে, নদীর সমস্ত জল যেমন স্নানে, পানে, ধানের ক্ষেতে ব্যবহৃত হয় না, তেমনি কোনো কাজ না করে কেবল প্রবাহ রক্ষা করবার একটা বৃহৎ সার্থকতা আছে। পৃথিবীর সকল ঘাস যেমন ধান হয় না, তেমনি পৃথিবীর সকল মানুষ কর্মশীল হয় না। অন্ধকার থাকে বলে যেমন আলোর গুরুত্ব বোঝা যায়, তেমনি সংসারে পনেরো আনা আবশ্যক লোকের জন্যই এক আনা লোকের মূল্য নির্ধারিত হয়। শুধু এক আনা আবশ্যক দিয়ে সংসার চলবে না, সংসারের সচলতা আসবে না। সংসারকে সচল রাখতে হলে এক আনা ও পনেরো আনা উভয়েরই দরকার রয়েছে সংসারে।
প্রশ্ন ৩। রবীন্দ্রনাথ পনেরো আনা কাদের বলেছেন? সংসারে এদের সার্থকতার বিষয়ে বরীন্দ্রনাথের অভিমত ব্যক্ত করো।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ সাধারণ মানুষকে পনেরো আনা বলেছেন।
সমাজের তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা সমাজের সাধারণ মানুষের জীবনকে ব্যর্থতার স্বরূপে দেখেন। সাধারণের জীবনটা বৃথা গেল বলে রব উঠে। কিন্তু জীবন পথিক রবীন্দ্রনাথের এক্ষেত্রে ভিন্ন মত, তিনি প্রকৃত দার্শনিকের চোখে দেখেছেন সাধারণের জীবন বৃথা যাওয়াটাই একটা সার্থকতা। জীবন স্রোতের বয়ে যাওয়াটাই সভ্যতার শেষ কথা তা ব্যর্থ কি সার্থক তা বড়ো ব্যাপার নয়। যেমন একটি নদীর চলা, তার সব জল কি আমাদের কাজে লাগে ? লাগে না, কিন্তু সব জল মিলিতভাবে একটা কাজ করে তা হল নদীর গতিকে রক্ষা করা। নদীর যে জল আমরা খাল কেটে পুকুরে আনি তাতে স্নান করা চলে কিন্তু খাওয়া চলে না, আবার নদীর যে জল খাবার জন্য আমরা জালায় ভরে রাখি তাতে পুকুরের আলো ছায়া খেলে না। তাই লেখক প্রকৃতির সমস্ত কিছু সৃষ্টিকে শুধু প্রয়োজনের ভিত্তিতে দেখতে নারাজ। তার মতে উপকারটাই কোন ব্যক্তির সাফল্যের মাপকাঠি হতে পারে না। তা শুধু কৃপণতার কথা, কারণ শুধুমাত্র কোনো এক উদ্দেশ্যকেই জীবনের একমাত্র পরিণাম বলে গণ্য করা মানসিক দীনতাকে বহন করে।
টীকা লেখো:
১। মাধ্যাকর্ষণ: মাধ্যাকর্ষণ বা Law of Gravitation পদার্থবিদ্যার এক অন্যতম সূত্র। পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন আবিষ্কার করেন। ‘আপেল গাছ থেকে পড়ে কেন ?’ – এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই তিনি সুত্রটি আবিষ্কার করেন। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বলেই পৃথিবী সকল বস্তুকে নিজের দিকে আকর্ষণ করছে।
২। খ্রিষ্ট: খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক হলেন যীশুখৃষ্ট। তিনি প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে জেরুজালেমের কাছে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম যোশেফ এবং মাতার নাম মেরী। তিনি প্রেম ধর্ম প্রচার করে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।
৩। গৌতম বুদ্ধ: গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক ও প্রচারক ছিলেন। ৫৬৬ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে নেপালের তরাই অঞ্চলের কপিলাবস্তু রাজ্যে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শুদ্ধোধন ও মাতার নাম ছিল মায়াদেবী। মানুষের মুক্তির চিন্তায় তিনি রাজ্য, সংসারের মায়া ত্যাগ করেছিলেন।
৪। সম্ভবামি যুগে-যুগে: কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অর্জুনের উদ্দেশ্যে শ্রীকৃষ্ণ এই মূল্যবান কথা বলেছিলেন। পৃথিবীতে যখন অধর্ম ও পাপের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তখন সেই দুষ্কৃতকারীদের শাস্তি দেওয়ার জন্যে ও সাধুদের তাদের অত্যাচারের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য তিনি মহামানব রূপে যুগে-যুগে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন।