Class 12 Advance Bengali Chapter 10 সাহিত্যে খেলা Question Answer | AHSEC Class 12 Advanced Bengali Question Answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Assam Board Class 12 Advance Bengali Chapter 10 সাহিত্যে খেলা Notes and select needs one.
Class 12 Advance Bengali Chapter 10 সাহিত্যে খেলা
Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Advance Bengali Chapter 10 সাহিত্যে খেলা Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Advance Bengali Chapter 10 সাহিত্যে খেলা Solutions for All Subjects, You can practice these here.
সাহিত্যে খেলা
Chapter: 10
ADVANCE BENGALI
গদ্যাংশ
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধের রচয়িতা কে?
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী।
প্রশ্ন ২। ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধ কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তরঃ ‘বীরবলের হালখাতা’।
প্রশ্ন ৩। প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম কী?
উত্তরঃ বীরবল।
প্রশ্ন ৪। প্রমথ চৌধুরী কোন পত্রিকার সম্পাদনা করেছিলেন?
উত্তরঃ সবুজপত্র।
প্রশ্ন ৫। রোড্যার কে?
উত্তরঃ বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি ভাস্কর।
প্রশ্ন ৬। সাহিত্যের উদ্দেশ্য কী?
উত্তরঃ সকলকে আনন্দ দান করা।
প্রশ্ন ৭। ভাস্কর রোঁড্যার সম্পূর্ণ নাম লেখো।
উত্তরঃ Francois Auguste Rodin.
প্রশ্ন ৮। “তাঁরা কুশীলবকে তাঁদের যথাসবর্ষ, এমনকী কৌপীন পর্যন্ত পেলা দিয়েছিলেন”। – ‘কৌপীন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ চীরবসন।
প্রশ্ন ৯। ‘বীরবল’ কোন্ লেখকের ছদ্মনাম?
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরীর।
প্রশ্ন ১০। সরস্বতীর বরপুত্রও যে নট বিটের দলভুক্ত হয়ে পড়েন, তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ কে?
উত্তরঃ ভারতচন্দ্ৰ।
প্রশ্ন ১১। ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী।
প্রশ্ন ১২। “এই পুতুল গড়া হচ্ছে তাঁর খেলা।” – পুতুল গড়া কার খেলা?
উত্তরঃ ভাস্কর রোড্যার।
প্রশ্ন ১৩। ‘বিদ্যাসুন্দর’ খেলনা হলেও রাজার বিলাস ভবনে পাঞ্চালিকা।” বিদ্যাসুন্দর কী?
উত্তরঃ ভারতচন্দ্রের একটি বিখ্যাত কাব্য।
প্রশ্ন ১৪। ‘পৃথিবীর শিল্পমাত্রেই এই _____ খেলা খেলে থাকেন।’ (শূন্যস্থান পূর্ণ করো।)
উত্তরঃ শিল্পের।
প্রশ্ন ১৫। “যখন তখন হাতে কাদা নিয়ে, আঙ্গুলের টিপে মাটির পুতুল তোয়ের করে থাকেন।” – এখানে কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ ভাস্কর রোড্যার কথা।
প্রশ্ন ১৬। খেলার মধ্যে উপরি পাওনা থাকলে একে কী বলে?
উত্তরঃ জুয়াখেলা।
প্রশ্ন ১৭। “সাহিত্যের উদ্দেশ্যে সকলকে আনন্দ দেওয়া, কারো ____ করা নয়।” (শূন্যস্থান পূর্ণ করো।)
উত্তরঃ মনোরঞ্জন করা।
প্রশ্ন ১৮। ব্রাহ্মণ ও শূদ্রের প্রভেদ কোথায় থাকে না?
উত্তরঃ খেলার মাঠে।
প্রশ্ন ১৯। কৃষ্ণচন্দ্র কে ছিলেন?
উত্তরঃ কৃষ্ণনগরের রাজা।
প্রশ্ন ২০। নিজের আয়ত্তের বাইরে গিয়ে উচ্চস্থানে উঠবার অন্তিম ফল কী?
উত্তরঃ মহাপতন।
প্রশ্ন ২২। এক কথায় সাহিত্য সৃষ্টি ______ লীলামাত্র। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ জীবাত্মার।
প্রশ্ন ২১। মানুষের দেহ মনের সকল প্রকার কাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কাজ কোনটি?
উত্তরঃ খেলা।
প্রশ্ন ২৩। কবির মনের নিত্য নৈমিত্তিক কর্ম কী?
উত্তরঃ বিশ্বমানবের মনের সঙ্গে নিত্য নতুন সম্বন্ধ স্থাপন।
প্রশ্ন ২৪। “সাহিত্যের উদ্দেশ্যে সকলকে _____ (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ অবনন্দ।
প্রশ্ন ২৫। ‘সাহিত্যের উদ্দেশ্য মানুষের _____ জোগানো।’ (শূন্যস্থান পূর্ণ করো।)
উত্তরঃ মনকে।
প্রশ্ন ২৬। কিণ্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তরঃ Friedrich Froebel কিণ্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা।
প্রশ্ন ২৭। “সাহিত্য ছেলের হাতের ______ নয় গুরুর হাতের বেতও নয়।” (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ খেলনাও ৷
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। “কাব্যরস নামক অমৃতে যে আমাদের অরুচি জন্মেচে, তার জন্য দায়ী” লেখকের মতানুসারে সাহিত্যের অরুচির জন্য দায়ী কারা?
উত্তরঃ এ যুগের স্কুল ও তার মাষ্টাররা।
প্রশ্ন ২। ‘‘কৃষ্ণচন্দ্রের মনোরঞ্জন করতে বাধ্য না হলে তিনি বিদ্যাসুন্দর রচনা করতেন না।” – বিদ্যাসুন্দর কে রচনা করেছিলেন? কৃষ্ণচন্দ্র কে ছিলেন?
উত্তরঃ ‘বিদ্যাসুন্দর’ রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচনা করেন। কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন কৃষ্ণনগরের রাজা।
প্রশ্ন ৩। “আসল কথা এই যে, মানুষের দেহ-মনের সকল প্রকার ক্রিয়ার মধ্যে ক্রীড়া শ্রেষ্ঠ।” – ‘ক্রিয়া’ ও ‘ক্রীড়া’ শব্দ দুটির অর্থ লেখো।
উত্তরঃ ক্রিয়া শব্দের অর্থ হল কর্ম বা কাজ; ক্রীড়া হল খেলাধুলা।
প্রশ্ন ৪। “কৃষ্ণচন্দ্রের মনোরঞ্জন করতে বাধ্য না হলে তিনি ‘বিদ্যাসুন্দর’ রচনা করতেন না।” – পাঠটির লেখক কে? ‘বিদ্যাসুন্দর কার রচনা?
উত্তরঃ পাঠটির লেখক প্রমথ চৌধুরী। বিদ্যাসুন্দর ভারতচন্দ্র রায় গুণাকরের লেখা।
প্রশ্ন ৫। ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির রচয়িতা কে? তিনি কোন ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন?
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী। তিনি ‘বীরবল’ ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন।
প্রশ্ন ৬। ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির রচয়িতা কে? তিনি কোন ছদ্মনামে সাহিত্যক্ষেত্রে পরিচিত ছিলেন?
উত্তরঃ ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির রচয়িতা প্রমথ চৌধুরী। তিনি ‘বীরবল’ ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন।
প্রশ্ন ৭। “এমন কি কবির আপন মনের গোপন কথাটিও গীতিকবিতাতে বঙ্গভূমির স্বগতোক্তি স্বরূপেই উচ্চারিত হয়।” – উদ্ধৃতিটি কোন পাঠ থেকে নেওয়া হয়েছে? গীতি কবিতা কী?
উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্যে খেলা’ নামক পাঠ থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবির ব্যক্তিগত অনুভূতি ও কল্পনা, ভাব আবেগ সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রকাশ করার নামই গীতি কবিতা।
প্রশ্ন ৮। ‘কুশীলব’ ও ‘কৌপিন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ ‘কুশীলব’ অর্থ যাচক, নট বা কবি। ‘কৌপিন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে চিরবসন।
প্রশ্ন ৯। ‘বিদ্যাসুন্দর’-এর রচয়িতা কে? এটি কোন কাব্যের অংশ?
উত্তরঃ ‘বিদ্যাসুন্দর’-এর রচয়িতা কবি রায় গুণাকর ভারতচন্দ্র। এটি অন্নদামঙ্গল কাব্যের অংশ।
প্রশ্ন ১০। ‘সাহিত্যের উদ্দেশ্য সকলকে ____ দেওয়া, কারো ______ করা নয়।’ (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ আনন্দ, মনোরঞ্জন।
প্রশ্ন ১১। হীরক ও কাচের সম্বন্ধকে ‘সাহিত্যে খেলা’র লেখক কোন সম্বন্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তরঃ দা এবং কুমড়া।
প্রশ্ন ১২। রোড্যা কোন্ দেশের লোক? তিনি কী কারণে বিখ্যাত?
উত্তরঃ রোড্যা ফরাসি দেশের লোক। তিনি ভাস্কর্য শিল্পে বিশ্ব বিখ্যাত।
প্রশ্ন ১৩। যিনি গড়তে জানেন, তিনি ______ গড়তে পারেন _____ গড়তে পারেন। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ শিবও, বাঁদরও।
প্রশ্ন ১৪। শিক্ষাদান ও সাহিত্যের ‘ধর্মকর্ম’ এক নয় স্বতন্ত্র এ নিয়ে প্রমথ চৌধুরী যে যুক্তি দিয়েছেন, তার একটি উল্লেখ করো।
উত্তরঃ একটি যুক্তি হলো – শিক্ষা হচ্ছে সেই বস্তু, যা লোকে নিতান্ত অনিচ্ছা সত্বেও গলধঃকরণ করতে বাধ্য হয়, অপরপক্ষে কাব্যরস লোকে শুধু স্বেচ্ছায় নয়, সানন্দে পান করে, কেননা শাস্ত্রমতে সে রস অমৃত।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। “এ পৃথিবীতে একমাত্র খেলার ময়দানে ব্রাহ্মণ-শূদ্রের প্রভেদ নেই” উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ খেলার মাঠ প্রকৃত অর্থেই ভেদাভেদশূন্য। জাতিধর্ম, ধনী, দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই একযোগে খেলার মাঠে খেলায় অংশ গ্রহণ করতে পারে। সাহিত্য এবং শিল্প সৃষ্টিকেও মানুষ যদি নিষ্ফল আনন্দ স্বরূপ খেলার মতো গ্রহণ করে তার সেখানেও কোনো ভেদাভেদ থাকে না। বড়ো বড়ো শিল্পীরা যেমন ছোট বড়ো সমস্ত ধরনের সৃষ্টির মধ্যেই নিজেদের নিবৃত করে তেমনি সাধারণেরও সে অধিকার আছে কারণ গান গাইতে গেলে ভালো গলা থাকতেই হবে তা নয়, তেমনি লিখতে গেলেও উচ্চস্তরের মননশীলতা থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। মানুষ আপন আনন্দেই, কোনো উদ্দেশ্যহীনভাবেই নিজেকে সৃষ্টি কর্মের মধ্যে নিযুক্ত করতে পারে। সে অধিকার অবশ্যই তার আছে।
প্রশ্ন ২। “সাহিত্যের উদ্দেশ্য সকলকে আনন্দ দেওয়া কারো মনোরঞ্জন করা নয়।” – কোন্ রচনায় এই বাক্যটি আছে উল্লেখ করে অতি সংক্ষেপে লেখকের এহেন উক্তির কারণ নির্দেশ করো।
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্য খেলা’ প্রবন্ধে বাক্যটি আছে।
সাহিত্যের উদ্দেশ্য সকলকে আনন্দ দান করা। কারও মনোরঞ্জন করা সাহিত্যের উদ্দেশ্য নয়। সাহিত্য যদি ব্যক্তি বা সমাজের মনোরঞ্জনের ভূমিকা নেয় তবে সাহিত্য স্বধর্মচ্যুত হয়ে থাকে। উদ্দেশ্যমূলক সাহিত্য রচনার প্রমাণ বাংলা সাহিত্যে বিরল নয়। যেমন – কবি ভারতচন্দ্র কৃষ্ণচন্দ্রের মনোরঞ্জনের জন্য ‘বিদ্যাসুন্দর’ রচনা করেন। এসব রচনা খেলনার সমান। খেলনা পেয়ে পাঠকের মনে সন্তুষ্টি আসতে পারে, কিন্তু তা গড়ে লেখকের মনস্তুষ্টি হতে পারে না। অপরপক্ষে, মনোরঞ্জন করতে হলে অতি সস্তার খেলনা গড়তে হবে, নইলে বাজারে কাটবে না। আর সস্তা করার অর্থ খেলো করা। কিন্তু কবির সৃষ্টি বিশ্ব সৃষ্টির অনুরূপ। তাই সাহিত্য মনোরঞ্জনের জন্য হতে পারে না।
প্রশ্ন ৩। “সাহিত্যের উদ্দেশ্য আনন্দ দেওয়া – কারো মনোরঞ্জন করা নয়।” – উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
লেখক কে? লেখকের অনুসরণে বিষয়টি বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ মনোরঞ্জন আর আনন্দ এই শব্দ দুটির মধ্যে যে আকাশ পাতাল পার্থক্য আছে তা সকল সাহিত্যিকের মনে থাকে না।
কোন বিশেষ ব্যক্তি বা বিশেষ সমাজের মনোরঞ্জন করতে গেলে সাহিত্য তার নিজের ধর্ম থেকে সরে যায়। বিশেষ উদ্দেশ্যে রচিত সাহিত্যের নিদর্শন আমাদের সমাজে প্রচুর আছে কিন্তু সাহিত্যের ধর্ম তা নয়। সাহিত্যে তা হয়ে যায় খেলনা। যা কিছুদিন ভাল লাগবে তারপর ভেঙ্গে ফেলে দেওয়া হবে। ভারতচন্দ্রের ‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্যও এধরনের রচনার উদাহরণ।
সাহিত্যকে জনগণের মনোরঞ্জনের জন্য সৃষ্টি করলে তা ক্ষণিকের লাভ যুগিয়ে চির ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হয়। যারা প্রকৃত সাহিত্য সাধনায় ব্রতী তারা পাঠকের মনোরঞ্জনের বিষয়টি হতে অনেক দূরে থাকেন।
প্রশ্ন ৪।.‘‘এ পৃথিবীতে একমাত্র খেলার ময়দানে ব্রাহ্মণ-শূদ্রের প্রভেদ নেই”। – কোন্ রচনায় এই বাক্যটি আছে? উল্লেখ করে অতি সংক্ষেপে লেখকের এহেন উক্তির কারণ নির্দেশ করো।
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্য খেলা’ প্রবন্ধে এই বাক্যটি উল্লেখ আছে।
শিল্প জগতে খেলা করবার সকলের সমান অধিকার আছে। এই পৃথিবীতে একমাত্র খেলার জন্য সাহিত্য জগতে প্রবেশে ব্রাহ্মণ-শূদ্রের কোন প্রভেদ নেই। সেখানে ধনী-গরীব, উঁচু-নীচু সকলের জন্য প্রবেশ দ্বার মুক্ত। সকলেই শিল্প সাহিত্য জগতে আপন প্রতিভার পরিচয় দিতে পারেন।
প্রশ্ন ৫। “আসল কথা এই যে, মানুষের দেহ-মনের সকল প্রকার ক্রিয়ার মধ্যে ক্রীড়া শ্রেষ্ঠ।” – যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ মানুষের দেহ-মনের সকল প্রকার ক্রিয়ার মধ্যে ক্রীড়া অর্থাৎ খেলা শ্রেষ্ঠ। কারণ খেলা উদ্দেশ্যহীন। মানুষ আনন্দের জন্য খেলা খেলে। কিন্তু যে খেলা থেকে কিছু পাওয়ার থেকে যায় তাকে বলে জুয়া খেলা। এ ব্যাপার সাহিত্যে দেখা যায় না। কারণ ধর্মমতে, লক্ষ্মীপূজার অঙ্গ জুয়া খেলা, সরস্বতী পূজার নয়। সাহিত্যের রস আস্বাদন করার সকলের সমান অধিকার রয়েছে।
প্রশ্ন ৬। “যিনি গড়তে জানেন, তিনি শিবও গড়তে পারেন আবার বাঁদরও গড়তে পারেন।” – অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ লেখক এখানে অত্যন্ত সুন্দর উপমার মাধ্যমে বলেছেন যে, যিনি মহৎ স্রষ্টা তিনি যে কোনো কিছু অত্যন্ত সুন্দরভাবে গড়তে পারেন। তিনি শিব অর্থাৎ সৌন্দর্যের মূর্তিও গড়তে পারেন আবার বাঁদর অর্থাৎ নিকৃষ্ট শিল্পও গড়ে তুলতে পারেন। সাধারণ মানের শিল্পীদের সঙ্গে বড়-বড় শিল্পীদের তফাৎ এইটুকু যে মহান শিল্পীরা যা গড়তে চান তা- ই হয়। একটা গড়তে অন্যটা হয় না। এইজন্য সাধারণ শিল্পীদের যে অধিকার নেই উঁচুমানের শিল্পীদের সেই অধিকার আছে। যা খুশি করবার অধিকার কলা রাজ্যের মহাপুরুষদের আছে, অন্যদের তা আদৌ নেই।
প্রশ্ন ৭। “একটু উঁচুতে না চড়লে আমরা দর্শক এবং শ্রোতৃমণ্ডলীর নয়ন মন আকর্ষণ করতে পারিনে। বেদিতে না বসলে, আমাদের উপদেশ কেউ মানে না, রঙ্গমঞ্চে না চড়লে, আমাদের অভিনয় কেউ দেখে না; আর কাঠমঞ্চে না দাঁড়ালে, আমাদের বক্তৃতা কেহ শোনে না।” – অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
‘‘অনেকের পক্ষে নিজের আয়ত্তের বহির্ভূত উচ্চস্থানে ওঠবার চেষ্টাই মহাপতনের কারণ হয়।” – অন্তর্নিহিত ভাব ব্যাখ্যা করো।
অথবা,
অংশটির লেখক কে? লেখকের বক্তব্য বিষয় বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ অংশটির লেখক প্রমথ চৌধুরী।
এখানে লেখক মানুষের মনোভাব বা চিন্তাধারাকে উপস্থাপন করেছেন। মানুষ তার আসন একটু উঁচুতে তৈরি করতে না পারলে দর্শক শ্রোতৃমণ্ডলীর নয়ন-মন আকর্ষণ করতে পারে না। যদি বেদিতে না বসা হয় তবে কেউ উপদেশ মানতে রাজি হয় না। রঙ্গমঞ্চে না চড়লে কেউ অভিনয় দেখে না। তাই সকলের সামনে যাবার লোভে মানুষ সব সময় নিজেকে উঁচু আসনে রাখতে চায়। কিন্তু তা সর্বজনের ক্ষেত্রে অসম্ভব। তাই উঁচু আসনে নিজেকে বসানোর চাহিদা মানুষের মহাপতনের কারণ হয়। ফলে আমাদের মহামানবের পথ অনুসরণ করা কর্তব্য।
প্রশ্ন ৮। “বিশ্বমানবের মনের সঙ্গে নিত্যনূতন সম্বন্ধ পাতানোই হচ্ছে কবি-মনের নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম।” – অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ কবি বা লেখকের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ হল বিশ্বমানবের সঙ্গে নিত্যনূতন সম্বন্ধ স্থাপন করা। কবি নিজের মনের ভিতর লুক্কায়িত কথা ভাবকে গীত কবিতার মাধ্যমে হাজার লোকের কাছে পৌঁছে দেন। যা কানের ভিতর দিয়ে মরমে প্রবেশ করে।
প্রশ্ন ৯৷ ‘‘এ পৃথিবীতে একমাত্র খেলার ময়দানে ব্রাহ্মণ-শূদ্রের প্রভেদ নাই।” – মর্মার্থ বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্য খেলা’ প্রবন্ধে এই বাক্যটি উল্লেখ আছে।
শিল্প জগতে খেলা করবার সকলের সমান অধিকার আছে। এই পৃথিবীতে একমাত্র খেলার জন্য সাহিত্য জগতে প্রবেশে ব্রাহ্মণ-শূদ্রের কোন প্রভেদ নেই। সেখানে ধনী-গরীব, উঁচু-নীচু সকলের জন্য প্রবেশ দ্বার মুক্ত। সকলেই শিল্প সাহিত্য জগতে আপন প্রতিভার পরিচয় দিতে পারেন।
প্রশ্ন ১০। “কবির কাজ হচ্ছে কাব্য সৃষ্টি করা, আর শিক্ষকের কাজ হচ্ছে প্রথমে তা বধ করা, তারপর তার শবচ্ছেদ করা।” – তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ কাব্যরসে পাঠকদের যে অরুচি জন্মেছে তার জন্য দায়ী বর্তমান স্কুল ও তার মাষ্টার। কাব্য পড়বার ও বোঝবার জিনিস। স্কুল মাষ্টারের কাজ হল সে কাব্য পড়ে বুঝিয়ে দেওয়া। যদি স্কুল শিক্ষকরা কাব্যটি ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে না পারেন তবে ছাত্রদের মনে কাব্য নিয়ে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়। ফলে ছাত্ররা কাব্যরস আস্বাদন করতে পারে না। এককথায় বলা যায় শিক্ষকের কাজ হল কবিতার প্রত্যেক লাইনকে ভেঙ্গে-ভেঙ্গে তার তত্ত্বকে আবিষ্কার করে ছাত্রদের সামনে উপস্থাপন করা। এসব কারণে বলা যেতে পারে সাহিত্যের কাজ কারও মনোরঞ্জন করা বা শিক্ষা দেওয়া নয়। সাহিত্য- বস্তু হল জ্ঞান-অনুভূতি সাপেক্ষ, তর্ক-সাপেক্ষ নয়। সাহিত্য ছেলের হাতের খেলনাও নয়, গুরুর হাতের বেতও নয়। সাহিত্যে মানবাত্মা খেলা করে এবং সে-ই খেলায় আনন্দ উপভোগ করে।
প্রশ্ন ১১। “সাহিত্য ছেলের হাতের খেলনাও নয়, গুরুর হাতের বেতও নয়।” যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
“কারও মনোরঞ্জন করাও সাহিত্যের কাজ নয়, কাউকে শিক্ষা দেওয়াও নয়।” – তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর দেখো।
প্রশ্ন ১২। “স্বর্গ হতে দেবতারা মধ্যে-মধ্যে ভূ-তলে অবতীর্ণ হওয়াতে কেউ আপত্তি করেন না, কিন্তু মর্ত্যবাসীদের পক্ষে রসাতলে গমন করাটা বিশেষ নিন্দনীয়।” – যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
স্বর্গ হতে দেবতাদের কী ঘটলে কেহ আপত্তি করে না? মর্ত্যবাসীদের পক্ষে কোথায় যাওয়াটা নিন্দনীয়? কোন্ প্রবৃত্তিটি মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক?
উত্তরঃ স্বর্গ হতে দেবতাদের মর্ত্যে অর্থাৎ পৃথিবীতে অবতীর্ণ হওয়াতে কেউ আপত্তি করে না। কিন্তু মর্ত্যবাসী অর্থাৎ মানবজাতির রসাতলে যাওয়াটা নিন্দনীয়। অথচ অস্বীকার করা যায় না যে, এ জগতের দশটা দিক আছে, আর এই দশটা দিকে যাতায়াত করবার প্রবৃত্তি মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক। মানুষের মন উঁচুতে উঠতে চায়, নিচুতেও নামতে চায়, বরং সত্য কথা বলতে সাধারণ মানুষের মন যেখানে আছে সেখানেই থাকতে চায়, উড়তেও চায় না, ডুবতেও চায় না।
প্রশ্ন ১৩। “সাহিত্যের উদ্দেশ্য যে আনন্দ দান করা – শিক্ষা দান করা নয়।” – উক্তিটি কোন রচনার অংশ? লেখক প্রদত্ত উদাহরণের সাহায্যে বক্তব্যটির সত্যতা নিরূপণ করো।
অথবা,
উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
“শিক্ষা ও সাহিত্যের ধর্মকর্ম যে এক নয়” – লেখক শিক্ষা ও সাহিত্যের কোন্ কোন্ পার্থক্যের কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী তাঁর ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধে শিক্ষা ও সাহিত্যের ধর্ম-কর্ম যে এক নয় তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি মনে করেন কবির মতিগতি শিক্ষকের মতিগতির সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই শিক্ষা ও সাহিত্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। এই পার্থক্যকে লেখক স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। প্রথমতঃ শিক্ষা হল সেই বস্তু, যা লোকে নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও গিলতে চায়, অন্যদিকে কাব্যরস লোকে শুধু স্বেচ্ছায় নয় সানন্দে গ্রহণ করে। দ্বিতীয়তঃ শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মানুষের মনকে বিশ্বের খবর জানানো আর সাহিত্যের উদ্দেশ্য মানুষের মনকে জাগানো। তৃতীয়তঃ অপরের মনের অভাব পূরণের জন্য শিক্ষকের হস্তে শিক্ষা জন্মলাভ করেছে কিন্তু কবির নিজের মনের পরিপূর্ণতা হতেই সাহিত্যের উৎপত্তি।
অথবা,
প্রশ্ন ১৪। ‘পৃথিবীতে একমাত্র খেলার ময়দানে ব্রাহ্মণ শূদ্রের প্রভেদ নেই’ – সাহিত্যের খেলা প্রবন্ধ অবলম্বনে উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ লেখক প্রমথ চৌধুরী সাধারণের শিল্প সৃষ্টি ও তার অধিকার বিষয়ে কৈফিয়ৎ দিতে গিয়েই আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
খেলার মাঠ প্রকৃত অর্থেই ভেদাভেদ শূন্য। জাতি-ধর্ম ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই একযোগে খেলার মাঠে অংশ গ্রহণ করতে পারে। সাহিত্য সৃষ্টিকেও, শিল্প সৃষ্টিকেও মানুষ যদি নিষ্ফল আনন্দস্বরূপ খেলার মতো গ্রহণ করে তার সেখানেও কোন ভেদাভেদ থাকে না। বড়ো বড়ো শিল্পীরা যেমন ছোট বড়ো সমস্ত ধরনের সৃষ্টির মধ্যেই নিজেদের নিবৃত করে তেমনি সাধারণেরও সে অধিকার, কারণ গান গাইতে গেলে ভালো গলা থাকাটাই যেমন জরুরি নয়, তেমনি লিখতে গেলেও উচ্চস্তরের মননশীলতা থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। মানুষ তাঁর আপন আনন্দেই উদ্দেশ্যহীন ভাবেই, কোন উচ্চাশা না নিয়েই নিজেকে সৃষ্টি কর্মের মধ্যে নিযুক্ত করতে পারে। সে অধিকার তার অবশ্যই আছে।
প্রশ্ন ১৫। ‘এইসব জিনিষে সাহিত্যের বাজার ছেয়ে গেছে।’ কোন্ কোন্ জিনিষে সাহিত্যের বাজার ছেয়ে গেছে বলে প্রমথ চৌধুরী ভেবেছেন, লেখো।
উত্তরঃ সমাজের মনোরঞ্জন করতে গেলে সাহিত্য যে নিজ ধর্মচ্যুত হয়ে পড়ে, তার প্রমাণ বাংলাদেশে আজ দুর্লভ নয়। লেখকের মতে কাব্যের ঝুমঝুমি, বিজ্ঞানের চুষিকাঠি, দর্শনের বেলুন, রাজনীতির রাঙা লাঠি, ইতিহাসের ন্যাকড়ার পুতুল, নীতির টিনের ভেঁপু এবং ধর্মের জয় ঢাক – এইসব জিনিষে সাহিত্যের বাজার ছেয়ে গেছে। মনোরঞ্জনকারী সাহিত্যের এই পরিণতি সমস্ত যুগ, সমস্ত দেশ কালের ক্ষেত্রেই খাটে। তাছাড়া এ যুগে পাঠক হচ্ছে ক্ষুদ্রভাবে ভাবিত জনসাধারণ, এদের অপরিশীলিত ভাবের মনোরঞ্জন করতে হলে সাহিত্যকে অনেক সস্তা ধরনের সৃষ্টি করতে হবে। নতুবা বাজার পাবে না। এমনটাও ভাবে অনেক তথাকথিত সাহিত্যিক। তাই তারা নিজের সৃষ্টিকে সস্তা খেলো করে গড়ে। যারা প্রকৃত সাহিত্য সাধনায় ব্রতী, তাঁরা পাঠকের মনোরঞ্জন করার বিষয়টি থেকে দূরে থাকেন।
প্রশ্ন ১৬। “সাহিত্য খেলাচ্ছলে শিক্ষা দেয়।” এ মন্তব্য সম্বন্ধে লেখক প্রমথ চৌধুরীর অভিমত কী?
উত্তরঃ লেখক প্রমথ চৌধুরী ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধে বলেছেন, তার আলোচনা শুনে লেখকের কোন এক শিক্ষা প্রেমিক, ভক্ত বন্ধু এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে সাহিত্য খেলাচ্ছলে শিক্ষা দেয়। এ কথার উত্তরে লেখকের বক্তব্য, সরস্বতীকে কিণ্ডারগার্টেনের শিক্ষয়িত্রীতে পরিণত করবার জন্যে যতদূর শিক্ষাবাতিক গ্রস্ত হওয়া দরকার, তিনি ততোটা হতে পারেন নি। অর্থাৎ কথাটি তিনি সমর্থন করেন নি।
প্রশ্ন ১৭। “অতএব সাহিত্যে আর যাই কর না কেন, পাঠক সমাজের মনোরঞ্জন করবার চেষ্টা করো না।” – প্রসঙ্গটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ সাহিত্যের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়েই ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধের লেখক এরূপ মন্তব্য করেছেন।
আজকালকের সাহিত্যিকরা নিজেদের সৃষ্টিকে মনোরঞ্জন করে তোলে অন্যের হাতের খেলনা রূপে। সমাজের মনোরঞ্জন করতে গিয়ে সাহিত্য যে তার নিজ বৈশিষ্ট্যকেই হারাতে বসে তার প্রমাণ আমাদের সমাজে প্রচুর আছে কিন্তু সাহিত্যের ধর্ম তা নয়। সাহিত্য ভাণ্ডার যত তথ্য তত্ত্ব আর জ্ঞানে পরিপূর্ণ হচ্ছে ততই যেন তার মধ্যেকার আনন্দ বিসর্জিত হচ্ছে। বিজ্ঞান-ধর্ম-রাজনীতি-দর্শনের কৃত্রিমতা জনপ্রিয়তার মোড়কে সন্তুষ্ট করে না। কারণ পাঠক সমাজ যে উদ্দেশ্য, যে নীতি যে মতামতের জনপ্রিয়তাকে আজ প্রশংসা করছে কাল তাকেই ছুঁড়ে ফেলবে। যারা প্রকৃত সাহিত্য সাধনায় ব্রতী তাঁরা পাঠকের মনোরঞ্জন করবার বিষয়টি থেকে শত হাত দূরে থাকেন।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির মধ্যদিয়ে লেখক প্রমথ চৌধুরী সাহিত্য সম্বন্ধে যে ধারণাটি তুলে ধরেছেন তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ মানুষের দেহমনের সকল প্রকার ক্রিয়ার মধ্যে ক্রীড়া অর্থাৎ খেলা শ্রেষ্ঠ। কারণ খেলার মধ্যে কোনো স্বার্থ বা উদ্দেশ্য থাকে না। মানুষ আনন্দ পাওয়ার জন্য খেলা করে। কিন্তু যে খেলা থেকে কিছু পাওয়ার থেকে যায় তাকে বলে জুয়া খেলা। এ ব্যাপার সাহিত্যে দেখা যায় না। কারণ ধর্মমতে, লক্ষ্মী পূজার অঙ্গ জুয়া খেলা, সরস্বতী পূজার নয়। সাহিত্যের রস আস্বাদন করার সকলের সমান অধিকার রয়েছে। এ পৃথিবীতে একমাত্র সাহিত্য জগতে খেলার জন্য ব্রাহ্মণ-শূদ্রের মধ্যে কোনো প্রভেদ নেই। সেখানে ধনী-গরীব, উঁচু-নিচু সকলের জন্য প্রবেশের অধিকার আছে। সকলেই শিল্প সাহিত্য জগতে আপন প্রতিভার পরিচয় দিতে পারেন।
সাহিত্যের উদ্দেশ্য আনন্দ দান করা শিক্ষা দান করা নয়। শিক্ষকের হাতে শিক্ষা অপরের মনের অভাব পূর্ণ করবার উদ্দেশ্যে জন্মলাভ করেছে। আর সাহিত্যের উৎপত্তি ঘটে কবির নিজের মনের পরিপূর্ণতা থেকে। সাহিত্য-বস্তু হল জ্ঞান অনুভূতি সাপেক্ষ, তর্ক সাপেক্ষ নয়। সাহিত্য ছেলের হাতের খেলনাও নয়, গুরুর হাতের বেতও নয়। সাহিত্যে মানবাত্মা খেলা করে এবং সে-ই খেলায় আনন্দ উপভোগ করে।
অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। লেখক প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির মূল বিষয়বস্তু তোমার নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ যিনি যথার্থ শিল্পী তিনি শিব অর্থাৎ সৌন্দর্য যেমন গড়তে পারেন তেমনি বাঁদির অর্থাৎ ইতর কিছুও গড়তে পারেন। বড়-বড় শিল্পীদের সঙ্গে ছোট শিল্পীদের পার্থক্য এইটুকু যে, তাঁদের হাতে এক করতে আর এক হয় না, যা ছোট শিল্পীদের ক্ষেত্রে ঘটে। আমরা দেখি, শিল্প সাহিত্য জগতে খেলা করার সকলের অধিকার রয়েছে। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, শিল্প বা সাহিত্যের জগতে একমাত্র ব্রাহ্মণ-শূদ্রের প্রভেদ নেই, ধনী-গরীব, উঁচু-নিচু সকলের জন্য প্রবেশদ্বার মুক্ত।
সাহিত্য যারা রচনা করেন সেই লেখকরা দশের কাছে হাততালির প্রত্যাশা রাখেন, বাহবা না পেলে মনঃক্ষুণ্ণ হন। কারণ, তাঁরা হচ্ছেন যথার্থ সামাজিক জীব। বিশ্বমানবের মনের সঙ্গে নিত্যনূতন সম্বন্ধ পাতানোই হচ্ছে কবি বা লেখকের নিত্য নৈমিত্তিক কর্ম। কবি আপন মনে লুক্কায়িত কথাগুলি গীত ও কবিতার মাধ্যমে হাজার লোকের কাছে পৌঁছে দেয়, যা কানের ভিতর দিয়ে মরমে প্রবেশ করে।
মানুষের দেহমনের সকলপ্রকার ক্রিয়ার মধ্যে ক্রীড়া শ্রেষ্ঠ, তা উদ্দেশ্যহীন। মানুষ যখন খেলা করে, তখন সে আনন্দ ছাড়া অন্যকিছুর আশা রাখে না। কিন্তু যে খেলার ভেতর আনন্দ নেই, কিন্তু উপরি পাওনার আশা আছে তার নাম জুয়াখেলা। এ ব্যাপার সাহিত্যে চলে না। কারণ ধর্মমতে, জুয়াখেলা লক্ষ্মীপূজার অঙ্গ, সরস্বতী পূজার নয়। সাহিত্যের উদ্দেশ্য সকলকে আনন্দ দেওয়া কারো মনোরঞ্জন করা নয়। সাহিত্য যদি ব্যক্তি বা সমাজের মনোরঞ্জনের ভূমিকা নেয় তবে সাহিত্য স্বধর্মচ্যুত হয়ে থাকে। শিক্ষা ও সাহিত্যের কর্ম এক নয়। কারণ শিক্ষা লোকে অনিচ্ছাসত্বে গলাধঃকরণ করতে বাধ্য হয়। অপরপক্ষে লোকে সাহিত্যের রসকে স্বেচ্ছায় নয়, সানন্দে পান করে। শিক্ষকের হাতে শিক্ষা অপরের মনের অভাব পূর্ণ করবার উদ্দেশ্যে জন্মলাভ করেছে। আর সাহিত্যের উৎপত্তি ঘটে কবির নিজের মনের পরিপূর্ণতা থেকে। সাহিত্য-বস্তু হল জ্ঞান-অনুভূতি সাপেক্ষ। তর্ক সাপেক্ষ নয়। সাহিত্য ছেলের হাতের খেলনাও নয়, গুরুর হাতের বেতও নয়। সাহিত্যে মানবাত্মা খেলা করে এবং সে-ই খেলার আনন্দ উপভোগ করে।
প্রশ্ন ২। “সাহিত্যের উদ্দেশ্য আনন্দ দান করা – শিক্ষা দান করা নয়।” – উক্তিটির যথার্থ বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী তাঁর ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধে শিক্ষা ও সাহিত্যের ধর্ম-কর্ম যে এক নয় তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি মনে করেন কবির মতিগতি শিক্ষকের মতিগতির সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই শিক্ষা ও সাহিত্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। এই পার্থক্যকে লেখক স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। প্রথমতঃ শিক্ষা হল সেই বস্তু, যা লোকে নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও গিলতে চায়, অন্যদিকে কাব্যরস লোকে শুধু স্বেচ্ছায় নয় সানন্দে গ্রহণ করে। দ্বিতীয়তঃ শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মানুষের মনকে বিশ্বের খবর জানানো আর সাহিত্যের উদ্দেশ্য মানুষের মনকে জাগানো। তৃতীয়তঃ অপরের মনের অভাব পূরণের জন্য শিক্ষকের হস্তে শিক্ষা জন্মলাভ করেছে কিন্তু কবির নিজের মনের পরিপূর্ণতা হতেই সাহিত্যের উৎপত্তি।
টীকা লেখো:
১। ভাস্কর রোড্যা: বিখ্যাত ফরাসি ভাস্কর রোঁড্যার সম্পূর্ণ নাম Francois Auguste Rodin। তিনি ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি প্যারিসবাসী তথা সমগ্র বিশ্ববাসীকে তিনি চমক দেন, তাঁর তিনি বিখ্যাত ভাস্কর মূর্তি ‘Man with a Broken Nose’ এর দ্বারা। জীবনে বহু সমালোচনার সম্মুখীন হয়েও তিনি নিজেকে পৃথিবীর অন্যতম ভাস্কররূপে প্রতিষ্ঠিত করেন।
২। বিদ্যাসুন্দর কাব্য: কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর ‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্য রচনা করেন। বিদ্যাসুন্দর ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যের একটি অংশ। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অনুরোধে ভারতচন্দ্র এই কাব্যখানি রচনা করেন। এটি একটি লোকজীবন আশ্রয়ী প্রেমের কাহিনি। রাজকুমারী বিদ্যার সাথে রাজকুমার সুন্দরের গোপন প্রেম, বিদ্যার পিতার মাধ্যমে সুন্দরের প্রাণদণ্ড, কালিকার কৃপায় সুন্দুরের প্রাণরক্ষা ও বিদ্যাসুন্দরের বিবাহ এর উপজীব্য।
৩। কিণ্ডারগার্টেন: ১৮৩৫ সালে জার্মানে Friedrich Froebel প্রথম কিণ্ডারগার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে শিশুদের মানসিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ১৮৫০-১৮৬০ এর মধ্যে আমেরিকায় এই শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়। পরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত হয়।
৪। ভারতচন্দ্র: ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যের কবি রায় গুণাকর ভারতচন্দ্র। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় ১৬৩৪ শকাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়সে পারিবারিক দুরবস্থার জন্য বাস্তুচ্যুত হয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বিদ্যার্জন করেন। তাঁর কবি প্রতিভা বাংলা কাব্যে এক যুগ সন্ধিক্ষণের প্রতিভা। যা প্রাচীন দেবদেবী নির্ভর মঙ্গল কাব্যের সীমার মধ্যে থেকেও আধুনিক যুগকে তুলে ধরে।
৫। যোগ বশিষ্ঠ রামায়ণ: সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থ। এতে যোগধর্ম এবং আত্মজ্ঞান বিষয় আলোচিত হয়েছে। এটি ছয়টি প্রকরণে বিভক্ত। এর বক্তা মহামুনি বশিষ্ঠ আর শ্রোতা শ্রীরামচন্দ্র।
৬। কৃষ্ণচন্দ্র: মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়, ভবানন্দ মজুমদারের বংশধর ও নদিয়ার রাজা ছিলেন। তাঁর জন্ম ১৭১০ খ্রিস্টাব্দে, পিতা রঘুরাম রায়। অষ্টাদশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্রকে নিজের রাজসভায় ঠাঁই দেন ও ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্য রচনার প্রেরণা জোগান।