Class 12 Advance Bengali Grammar | AHSEC Class 12 Advanced Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Assam Board Class 12 Advance Bengali Grammar and select needs one.
Class 12 Advance Bengali Grammar
Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Advance Bengali Grammar Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Advance Bengali Grammar Solutions for All Subjects, You can practice these here.
ব্যাকরণ
বাংলা বিদ্যার জগতে ছন্দ আজ একটি স্বীকৃত, সমৃদ্ধ এবং অবশ্য পাঠ্য বিদ্যা। ‘ছন্দ’ আলোচনায় একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, এই বিষয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। বিশেষ ভাবে প্রবোধ চন্দ্র সেন ও অমূল্যধন মুখোপাধ্যায়ের মতো। তবে বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অনেক যুক্তি সম্মত প্রবোধচন্দ্র সেনের মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
তান প্রধান বা অক্ষরবৃত্ত, ধ্বনি প্রধান বা মাত্রাবৃত্ত, শ্বাসাঘাত বা স্বরবৃত্ত ছন্দ এগুলি আসলে ছন্দ নয় ছন্দ রীতি।
প্রশ্ন ১। ছন্দ কাকে বলে? ছন্দ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ ছন্দ হলো কবিতার একটি স্বাভাবিক অংশ বা বন্ধন। এই ছন্দের মধ্যে থাকে সুরের স্পন্দন ও ঝংকার যা আমাদের মনের মধ্যে আনন্দের অনুভূতি জাগিয়ে তুলে অথবা যে ললিত ও সুমিত পদ স্থাপনায় বাক্যে ধ্বনি তরঙ্গের সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাকেই ছন্দ বলে।
একটা দৃষ্টান্তের দ্বারা আমরা ছন্দ যুক্ত আর ছন্দ বিযুক্ত বা ছন্দহীন রচনার পার্থক্য দেখতে পাব।
“যবে হাসিয়া ধনু তুলিতে, প্রণয় ভীরু ষোড়শী চরণে ধরি মিনতি করিত” এই বাক্যটির একটি শব্দও পরিবর্তন না করে শুধুমাত্র সুমিত পদস্থাপনার দ্বারা কবিগুরু এটাকে কেমন অসাধারণ রূপ দিয়েছেন
“হাসিয়া যবে তুলিতে ধনু প্রণয় ভীরু ষোড়শী
চরণে ধরি করিত মিনতি।”
এখানে একটি ধ্বনি তরঙ্গের সৃষ্টি হচ্ছে এবং এটাই ছন্দের প্রাণ বা ছন্দ স্পন্দন।
ছন্দ তিন প্রকার –
(ক) তান-প্রধান বা অক্ষরবৃত্ত বা পয়ারের ছন্দ।
(খ) ধ্বনি-প্রধান বা মাত্রাবৃত্ত ছন্দ।
(গ) শ্বাসাঘাত-প্রধান বা স্বরবৃত্ত বা ছড়ার ছন্দ।
প্রশ্ন ২। সংজ্ঞা লেখো অথবা ছন্দের উপাদানগুলি আলোচনা করো।
উত্তরঃ (১) অক্ষর: ছন্দের আলোচনায় অক্ষরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমরা মনের ভাব প্রকাশ করে থাকি বাক্য দ্বারা। এই বাক্যকে বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই কতকগুলি পদ বা বিভক্তিযুক্ত ও বিভক্তিহীন শব্দ। আবার এই শব্দকে বিশ্লেষণ করে একেবারে গোড়ায় গেলে পাওয়া যায় কতগগুলি ধ্বনি যার লিখিত রূপ বর্ণ। এখানে একটু সতর্কতার প্রয়োজন আছে। সাধারণতঃ বাংলা ব্যাকরণে ‘বর্ণ’ ও ‘অক্ষর’ সমার্থক বলে বিবেচিত হয়ে থাকে, কিন্তু ছন্দের ক্ষেত্রে এ দুটি শব্দকে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়।
সংজ্ঞা: বাগযন্ত্রের স্বল্পতম প্রয়াসে উৎপন্ন ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে বলে অক্ষর। (ইংরাজিতে যা Syllable) কিন্তু ছন্দের ক্ষেত্রে অক্ষর একটি বিশেষ অর্থে প্রযুক্ত হয়। এক্ষেত্রে স্বরধ্বনি ছাড়া অক্ষর উচ্চারিত হতে পারে না। ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণ করতে হলেও স্বরধ্বনির প্রয়োজন।
অধ্যাপক তারাপদ ভট্টাচার্যের মতে ছন্দশাস্ত্রে আমরা একটা শব্দের যতটুকু অংশ একটি মাত্র ঝুঁকে উচ্চারণ করতে পারি ততটাই এক একটি অক্ষর।
‘ছন্দশাস্ত্র’ শব্দটিকে ভেঙ্গে উচ্চারণ করলে আমরা চারটি মাত্র অক্ষর পাই।
যেমন – “ছন, দ, শাস্, ত্র”। কিন্তু এক্ষেত্রে বর্ণ পাই অনেকগুলো – ছ + অ +ন + দ + অ, শ + আ + স + ত + র + অ। সংখ্যায় ১১ (এগারো)টি।
অতএব বর্ণ ও অক্ষর এক নয় তা বুঝা গেল। এখানে আর একটি জিনিস লক্ষ করতে হবে যে এই ১১টি বর্ণের মধ্যে ৪টি বর্ণ স্বরবর্ণ এবং এই চারটিই অক্ষর।
অক্ষর দুই প্রকার –
(১) স্বরান্ত অক্ষর।
(২) হলন্ত অক্ষর।
যে অক্ষরের শেষে আছে স্বরবর্ণ তাকে স্বরান্ত অক্ষর বলে। যেমন মা, (ম+আ), নি (ন+ই)।
আবার যে অক্ষরের শেষে থাকে ব্যঞ্জনধ্বনি তাকে বলে হলন্ত অক্ষর। যেমন- অন, দুর, বচ্ প্রভৃতি।
স্বরবর্ণ আবার দ্বিবিধ – হ্রস্ব স্বর ও দীর্ঘ স্বর। হ্রস্ব স্বর এক মাত্রা ও দীর্ঘ স্বর দুই মাত্রা।
যৌগিক স্বর ঐ, ঔ (দুই মাত্রা)।
(২) স্তবক: দুই বা ততোধিক চরণ পর পর সন্নিবিষ্ট হলে সেই চরণ সমষ্টিকে স্তবক বলা হয়। যেমন –
যেদিন আমারে ডেকেছিলে তুমি জানি
বীণাখানি মোর দিনু তব হাতে আনি,
ফুলে ফুলে আজ তাই নিয়ে কানাকানি।
তিন চরণের স্তবক।
(৩) মাত্রা: যার দ্বারা ছন্দে ধ্বনির পরিমাপ করা হয় তাকেই বলে মাত্রা। অথবা, একটি অক্ষর উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে, সে সময়টুকুকে আমরা ‘মাত্রা’ বা ‘কলা’ বলতে পারি।
যেমন – ‘আমরা’ শব্দে অক্ষর দুটি আছে – ‘আম’, ‘রা’। ‘আম’ বা ‘রা’ উচ্চারণে যে সময় লেগেছে তা হল ‘মাত্রা’ বা ‘কলা’।
বাংলা ছন্দে দু-প্রকার মাত্রার সন্ধান পাওয়া যায়।
যেমন – একমাত্রা, দু-মাত্রা।
একটি মুক্ত অক্ষরা বা অপ্রসারিত অক্ষর উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে তাকে এক-মাত্রা বলে।
একটি রুদ্ধ বা প্রসারিত অক্ষর উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে তাকে দু-মাত্রা বলে।
যেমন – ‘সকল’ শব্দে দুটি অক্ষর রয়েছে- স, কল। লক্ষ্য করা যায় ‘স’ উচ্চারণ করতে যে সময় লেগেছে, কল উচ্চারণে তার থেকে বেশি সময় লাগে ‘স’ মুক্ত অক্ষর। এর উচ্চারণ স্বাভাবিক ও অপ্রসারিত। এটি উচ্চারণ করতে যে সময় লেগেছে, তাকে একমাত্রা বলে। ‘কল’ হলো রুদ্ধ অক্ষর। এটি উচ্চারণ করতে যে সময় লেগেছে, তাকে বলে দু-মাত্রা।
(৪) যতি: সাধারণত কাব্য পাঠকালে ধ্বনি তরঙ্গ সৃষ্টির জন্য নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বাগ্যন্ত্র যে সাময়িক বিরতি লাভ করে তাকে যতি বলে। অথবা, একটি বাক্য এক নিঃশ্বাসে পাঠ করা যায় না। কথা বলবার সময় মধ্যে মধ্যে আমাদের থামতেই হয়। সুতরাং জিহ্বা যেখানে স্বেচ্ছায় বিশ্রাম করে তাকেই বলে যতি। অথবা এক কথায় বলা যায় জিহ্বার বিশ্রামের জন্য যেখানে থামতে নয় তাকে যতি বলে।
যেমন –
আকাশ জুড়ে/ মেঘ করেছে/ সূর্য্যি গেছে/ পাটে
খুকু গেছে/ জল আনতে/ পদ্মদিঘির ঘাটে ৷
যতি দুই প্রকার – অর্ধ যতি ও পূর্ণ যতি।
অর্ধযতি: কবিতার লাইনে ছন্দ তরঙ্গ সৃষ্টিতে স্বল্পক্ষণের জন্য যে বিরতি; তা অর্ধযতি বা হ্রস্বযতি। যেমন – আকাশ জুড়ে/
পূর্ণযতি: কবিতার লাইনের শেষে যে পরিপূর্ণ বিরতি; তা পূর্ণযতি।
যেমন – খুকু গেছে/ জল আনতে/ পদ্মদিঘির ঘাটে ।।
(৫) ছেদ: অর্থকে পরিস্ফুট করবার জন্য বাক্যের মধ্যে বা অন্তে যখন কোনো বিরতি ঘটে তখন তাকে বলে ছেদ। অথবা, বাক্যে ছেদ বলতে অর্থগত বিরামকে বুঝায়।
ছেদ দু-প্রকারের –
(১) অর্ধচ্ছেদ।
(২) পূর্ণচ্ছেদ।
যেমন – (১) তুমি এসো, না, এলে বিপদ ঘটবে।
(২) আজ তুমি কবি শুধু / নহ আর কেহ।
কোথা তব রাজসভা/কোথা তব গেহ। (পূর্ণচ্ছেদ)
বাক্যের মধ্যে থামা অর্ধচ্ছেদ এবং শেষে থামা পূর্ণচ্ছেদ।
(৬) পর্ব: কবিতার চরণ যতি দ্বারা ভাগ করা হয়, এই যতির ভাগগুলিকে ‘পর্ব’ বলে। অর্থাৎ এক যতি হতে অন্য যতি পর্যন্ত শব্দ সমষ্টিকে পর্ব বলে। সহজ ভাষায় বলা যায় – একশ্বাসে যতটুকু বলা হয় তাকেই পর্ব বলে।
যেমন – সকালবেলা / কাটিয়া গেল / বিকাল নাহি / যায়।
পর্ব পর্ব পর্ব
পর্বাঙ্গ: পর্বাঙ্গ বলতে পর্বের অন্তর্গত পৃথক পৃথক শব্দকে বুঝায়। (কয়েকটি পর্বাঙ্গ মিলে একটি পর্ব গঠিত হয়। অর্থাৎ একটি পর্বের অনেকগুলি পর্বাঙ্গ থাকতে পারে।)
(১) (১) (১) (১) (১) (১) (১)
যেমন:- সকাল: বেলা/কাটিয়া : গেল/বিকাল : নাহি/যায়।
(৭) লয়: ছন্দশাস্ত্রে ধ্বনিগুচ্ছ উচ্চারণের গতি বা কাল পরিমাপকে লয় বলে।
লয় তিন প্রকার – দ্রুতলয়, ধীরলয় এবং বিলম্বিত লয়। স্বরাঘাত-প্রধান বা কলাবৃত্ত বিলম্বিত লয় এবং তান-প্রধান বা অক্ষরবৃত্ত হল ধীর লয়।
প্রশ্ন ৩। অক্ষরবৃত্ত বা তান-প্রধান ছন্দ কাকে বলে? উদাহরণসহ তান-প্রধান ছন্দের লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তরঃ যে ছন্দের মধ্যে তান বা একটানা সুরের প্রাধান্য বিস্তার করে থাকে তাকে তানপ্রধান ছন্দ বলে। অথবা, যে জাতীয় ছন্দে চোখে দেখা যুক্ত বা বিযুক্ত অক্ষরকেই মাত্রা গণনার একক রূপে গ্রহণ করা হয় তাকেই বলে ‘অক্ষর বৃত্ত’ ছন্দ। যেমন – ‘ছান্দসিক’, এখানে বর্ণ আছে ৯টি কিন্তু অক্ষর মাত্র ৪টি।
উদাহরণ – (১) মহাভারতের কথা/অমৃত সমান। ৮+৬
কাশীরাম দাস কহে / শোনে পুণ্যবান। ৮+৬
(২) এনেছিলে সাথে কবে/মৃত্যুহীন প্রাণ। ৮+৬
মরণে তাহাই তুমি / করে গেলে দান। ৮+৬
লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য:-
১। অক্ষরবৃত্ত ছন্দের প্রতিটি অক্ষরই একমাত্রার।
২। স্বরের হ্রস্ব বা দীর্ঘ বিচারের কোনো অবকাশ এ ছন্দে নেই।
৩। এই ছন্দে তৎসম, অর্ধ তৎসম শব্দের ব্যবহার হয়।
৪। তানপ্রধান ছন্দ সাধারণত পয়ারের ভিত্তিতেই রচিত হয়।
৫। এই প্রকার ছন্দে ং, ৎ,: প্রভৃতিকে অক্ষর মাত্রা গণনার বাইরে রাখা হয়।
৬। একটানা সুরের প্রবাহ এই ছন্দের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
৭। তানপ্রধান ছন্দ ধীর লয়ের ছন্দ।
প্রশ্ন ৪। কলাবৃত্ত বা ধ্বনি-প্রধান ছন্দ কাকে বলে? উদাহরণস্বরূপ কলাবৃত্ত বা ধ্বনিপ্রধান-ছন্দের লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
অথবা,
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ কাকে বলে? এই ছন্দের চারটি বৈশিষ্ট্য উদাহরণসহ লেখো।
উত্তরঃ যে ছন্দে চরণের পর্বগুলিতে অক্ষরধ্বনি বিশেষ রূপে প্রাধান্য পায় তাকে ধ্বনি প্রধান ছন্দ বলে। বিশেষভাবে মাত্রার পরিমাপের উপর এই ছন্দ নির্ভরশীল বলে এই ছন্দকে মাত্রাবৃত্ত ছন্দও বলা হয়। এই ছন্দে যৌগিক অক্ষরকে দুই মাত্রার ধরা হয় এবং অন্যান্য সকল একমাত্রার হয়।
উদাহরণ –
| | | | | || | | | | | | | | |
সাগর জলে / সিনান করি / সজল এলো / চুলে ৫ + ৫ + ৫ + ২
| | | | | | | | | | | |
বসিয়াছিলে / উপল উপ / কূলে 5 + 5 + ২
বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ:
১। ধ্বনি-প্রধান ছন্দ সর্বদাই গীতিধর্মী।
২। ধ্বনি প্রধান ছন্দের শোষণ শক্তি নাই, পয়ারে রয়েছে।
৩। ধ্বনি-প্রধান ছন্দ বিলম্বিত লয়ের ছন্দ, এজন্য যৌগিক অক্ষরকে দুইমাত্রার ধরা হয়।
৪। এই ছন্দে মূল পর্ব চার, পাঁচ, ছয় বা সাত মাত্রার হয়।
৫। যুক্ত ব্যঞ্জনের পূর্ব স্বরটি দুই মাত্রার হয়।
৬। ধ্বনি প্রধান ছন্দ মূলত সংস্কৃত ও প্রাকৃত ছন্দের আদর্শে গঠিত।
৭। ং ও ঃ এর পূর্বের স্বর দীর্ঘ হয়।
৮। হলন্ত বা ব্যঞ্জনান্ত অক্ষরের স্বর দীর্ঘ।
প্রশ্ন ৫। স্বরবৃত্ত বা শ্বাসাঘাত-প্রধান ছন্দ কাকে বলে? উদাহরণস্বরূপ স্বরবৃত্ত বা শ্বাসাঘাত-প্রধান ছন্দের বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণগুলি উল্লেখ করো।
উত্তরঃ যে ছন্দের প্রতি পর্বের আদিতে একটি প্রবল শ্বাসাঘাত বা ঝোক পড়ে তাকে শ্বাসাঘাত-প্রধান বা স্বরবৃত্ত অথবা ছড়ার ছন্দ বলে।
উদাহরণ:
| | | | | | | | | | | | | |
কে মেরেছে / কে ধরেছে / কে দিয়েছে / গাল।
| | | | | | | | | | | | | | | | |
তাই তো খুকু / রাগ করেছে / ভাত খায়নি / কাল।
স্বরবৃত্ত বা শ্বাসাঘাত-প্রধান ছন্দের বৈশিষ্ট্য:
১। এই ছন্দে একটা হালকা ভাব থাকে।
২। প্রত্যেক পর্বের গোড়ায় একটি করে শ্বাসাঘাত বা Stress পড়ে।
৩। শ্বাসাঘাত থাকায় এর লয় দ্রুত।
৪। প্রত্যেক অক্ষরকে একমাত্রা হিসেবে গণনা করা হয়।
৫। এই ছন্দে সাধারণ তিনটি পূর্ণ ও একটি অসম্পূর্ণ পর্ব থাকে।
৬। মূল পর্ব চারমাত্রার হয়।
৭। প্রবল শ্বাসাঘাত থাকার জন্য এই ছন্দে সমস্ত যৌগিক অক্ষর একমাত্রার হয়।
৮। শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ নদীমাতৃক বাংলাদেশের ঘরোয়া ছন্দ।
প্রশ্ন ৬। নিম্নলিখিত পংক্তিগুলির ছন্দোলিপি নির্ণয় করো:
(১) কে বলে ঈশ্বর গুপ্ত / ব্যাপ্ত চরাচর, (৮+৬)
যাহার প্রভায় প্রভা / পায় প্রভাকর? (৮+৬)
উত্তরঃ (ক) তান-প্রধান ছন্দ।
(খ) লয় – ধীর, চরণ – দুই
(গ) চরণ – দুটি।
(ঘ) মাত্রা – ৮ + ৬
(ঙ) পর্ব সংখ্যা – দুই পর্বের।
(২) হে মোর দুর্ভাগা দেশ / যাদের করেছ অপমান (৮+১০)
অপমানে হতে হবে / তাহাদের সবার সমান। (৮+১০)
উত্তরঃ (ক) তান-প্রধান ছন্দ।
(খ) লয় – ধীর।
(গ) চরণ – দুটি।
(ঘ) মাত্রা – ৮+ ১০
(ঙ) পর্ব – ২
(৩) একদা জানিতে তুমি / ভারত ঈশ্বর সাজাহান। (৮+১০)
কালস্রোতে ভেসে যায় / জীবন যৌবন ধনমান ৷। (৮+১০)
উত্তরঃ (ক) তান প্রধান ছন্দ।
(খ) লয় – ধীর।
(ঘ) চরণ – দুটি।
(ঘ) মাত্রা – ৮+ ১০
(ঙ) পর্ব – ২
(৪) উঠিল গৌতম ঋষি / ছাড়িয়া আসন (৮+৬)
বাহু মেলি বালকেরে / করি আলিঙ্গন (৮+৬)
কহিলেন অব্রাহ্মণ নহ / তুমি তাত, (৮+৬)
তুমি দ্বিজোত্তম, তুমি / সত্যকুলজাত ৷ (৮+৬)
উত্তরঃ (ক) তান প্রধান ছন্দ। (খ) লয় – ধীর (গ) চরণ – চার। (ঘ) মাত্রা – ৮+৬ (ঙ) পর্ব – ২
(৫) এনেছিলে সাথে করে / মৃত্যুহীন প্রাণ, (৮+৬)
মরণে তাহাই তুমি / করে গেলে দান। (৮+৬)
উত্তরঃ (ক) তান-প্রধান ছন্দ।
(খ) লয় – ধীর।
(গ) চরণ – দুটি
(ঘ) মাত্রা – ৮ + ৬
(ঙ) পর্ব – ২টি।
(৬) গগণে উঠিল রবি/ লোহিত বরণ। (৮+৬)
আলোক পাইয়া লোক / পুলকিত মন। (৮+৬)
উত্তরঃ (ক) তানপ্রধান বা অক্ষরবৃত্ত ছন্দ।
(খ) লয় – ধীর।
(গ) চরণ – দুটি।
(ঘ) মাত্রা – (৮+৬)
(ঙ) পর্ব – ২টি।
(৭) শৈবাল দিঘিরে বলে / উচ্চ করি শির। (৮+৬)
লিখে রাখো, এক ফোটা / দিলেম শিশির। (৮+৬)
উত্তরঃ (ক) অক্ষরবৃত্ত বা তানপ্রধান ছন্দ।
(খ) লয় – ধীর।
(গ) চরণ – দুটি।
(ঘ) মাত্রা – ৮+৬
(ঙ) পর্ব – ২টি।
(৮) সারি সারি বসে গেছে / কথা নাহি মুখে। (৮+৬)
চিন্তা যত ভারি হয় / মাথা পড়ে ঝুকে। (৮+৬)
উত্তরঃ (ক) তানপ্রধান ছন্দ।
(খ) লয় – ধীর।
(গ) চরণ দুটি।
(ঘ) মাত্রা – ৮+৬
(ঙ) পর্ব – ২+২
(৯) কণ্টক গাড়ি কমল সম পদতল
মঞ্জীর চীরহি ঝাঁপি।
গাগরি বারি ঢারী করি পীছল
চলতিহ অঙ্গুলি চাপি ॥
উত্তরঃ (ক) ধ্বনিপ্রধান বা মাত্রাবৃত্ত ছন্দ।
(খ) লয় – মধ্য (বিলম্বিত)।
(গ) পর্ব – অষ্টমাত্রিক, দ্বিতীয় ও চতুর্থ চরণের শেষে পর্বটি অপূর্ণ।
(ঘ) চরণ – ৪টি।
(১০) | | | | | || | | | | | | | | |
সাগর জলে / সিনান করি / সজল এলো / চুলে ৫ + ৫ + ৫ + ২
| | | | | | | | | | | |
বসিয়াছিলে / উপল উপ / কূলে
উত্তরঃ (ক) ধ্বনিপ্রধান ছন্দ।
(খ) চরণ – দুটি।
(গ) লয় – বিলম্বিত।
(ঘ) পর্ব সংখ্যা – তিনটি পূর্ণ পর্ব ও একটি অপূর্ণ পর্ব।
প্রথম চরণে এবং দ্বিতীয় চরণে দুটি পূর্ণ পর্ব ও একটি অপূর্ণ পর্ব।
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৫ + ৫ + ৫ + ২ এবং ৫ + ৫ + ২
(১১) | | | | | | | | | | | | | | | | | | | |
মুখে দেয় জল / শুধায় কুশল / শিরে দেয় মোর / হাত ৬ + ৬ + 6 + ২
| | | | | | | | | | | | | | | | | | | |
দাঁড়িয়ে নিঝুম / চোখে নাই ঘুম / মুখে নাই তার / ভাত ৬ + ৬ + 6 + 2
উত্তরঃ (ক) ধ্বনিপ্রধান ছন্দ।
(খ) দুটি চরণ।
(গ) লয় বিলম্বিত।
(ঘ) পর্বসংখ্যা যথাক্রমে – ৩টি পূর্ণ এবং একটি অপূর্ণ প্রতি চরণে।
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৬ + ৬ + ৬ + ২
(১২) | | | | | | | | | | | | | | | | | | | |
বসন বেচিতে / এসেছে কবির / একটা হাটের / বারে, ৬ + 6 + 6 + 2
| | | | | | | | | | | | | | | | | | | |
সহসা কামিনী / সবার সামনে / কাঁদিয়া ধরিল / তারে। ৬ + ৬ + ৬ + ২
উত্তরঃ (ক) ধ্বনিপ্রধান ছন্দ।
(খ) চরণ দুটি।
(গ) লয় – বিলম্বিত।
(ঘ) পর্বসংখ্যা – তিনটি করে পূর্ণ ও একটি অপূর্ণ।
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৬ + ৬ + ৬ + ২
(১৩) | | | | | | | | | | | | | | | | | | | |
ভূতের মতন / চেহারা যেমন / নির্বোধ অতি / ঘোর ৬ + ৬ + ৬ + ২
| | | | | | | || | | | | || | | | | |
যা কিছু হারায় / গিন্নি বলেন /কেষ্টা বেটাই / চোর ৬ + ৬ + ৬ + ২
উত্তরঃ (ক) ধ্বনি প্রধান ছন্দ।
(খ) লয় – বিলম্বিত।
(গ) চরণ – দুটি।
(ঘ) পর্ব – তিনটি করে পূর্ণ একটি করে অপূর্ণ পর্ব।
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৬ + ৬ + ৬ + ২
(১৪) | | | | | | | | | | | | | |
কে মেরেছে / কে ধরেছে / কে দিয়েছে / গাল ৪ + ৪ + ৪ + ২
| | | | | | | | | | | | | |
তাই তো খুকু / রাগ করেছে / ভাত খায়নি / কাল। ৪ + ৪ + ৪ + ২
উত্তরঃ (ক) শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ।
(খ) লয় – দ্রুত।
(গ) চরণ – দুটি।
(ঘ) পর্ব – তিনটি এবং শেষের পর্বটি অপূর্ণ।
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৪ + ৪ + ৪ + ২
(১৫) | | | | | | | | | | | | | |
জলের উপর / রোদ পড়েছে / সোনা মাখা / মায়া। ৪ + ৪ + ৪ + ২
| | | | | | | | | | | | | |
ভেসে বেড়ায় / দুটি হাস / দুটি হাসের / ছায়া। ৪ + ৪ + ৪ + ২
উত্তরঃ (ক) শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ।
(খ) লয় – দ্রুত।
(গ) চরণ – দুটি।
(ঘ) পর্ব – পূর্ণ পর্ব তিনটি এবং একটি অসম্পূর্ণ পর্ব।
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৪ + ৪ + ৪ + ২
(১৬) | | | | | | | | | | | | | |
পাক্কা নতূন / টাটকা ঔষুধ / এক্কেবারে / দিশি। ৪ + ৪ + ৪ + ২
| | | | | | | | | | | | | |
দাম করেছি / সম্ভা বড় / চৌদ্দ আনা / শিশি। ৪ + ৪ + ৪ + ২
উত্তরঃ (ক) শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ।
(খ) লয় – দ্রুত।
(গ) চরণ – দুটি।
(ঘ) পর্ব – পূর্ণ পর্ব তিনটি এবং একটি অসম্পূর্ণ পর্ব
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৪ + ৪ + ৪ + ২
(১৭) | | | | | | | | | | | | | |
খোকা গেছে / মাছ ধরতে / ক্ষীর নদীর / জলে। ৪ + ৪ + ৪ + ২
| | | | | | | | | | | | | |
চিপটি নিল / কোলা বেঙে / মাছটি নিল / চিলে। ৪ + ৪ + ৪ + ২
উত্তরঃ (ক) শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ।
(খ) লয় – দ্রুত।
(গ) চরণ – দুটি।
(ঘ) পর্ব – তিনটি পূর্ণ এবং শেষের পর্বটি অসম্পূর্ণ।
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৪ + ৪ + ৪ + ২
(১৮) | | | | | | | | | | | |
ঠাকুরদাদার / মতো বনে / আছেন ঋষি / মুনি ৪ + ৪ + ৪ + ২
| | | | | | | | | | | | | |
তাদের পায়ে / প্রণাম করে / গল্প অনেক / শুনি ৪ + ৪ + ৪ + ২
উত্তরঃ (ক) শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ।
(খ) লয় দ্রুত।
(গ) চরণ – দুটি।
(ঘ) পর্ব – তিনটি পূর্ণ এবং একটি অসম্পূর্ণ।
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৪ + ৪ + ৪ + ২
(১৯) | | | | | | | | | | | | | |
হেড অফিসের / বড় বাবু / লোকটি বড় / শান্ত ৪ + ৪ + ৪ + ২
| | | | | | | | | | | | | |
তার যে এমন / মাথার ব্যামো / কেউ কখনো / জানত ॥ ৪ + ৪ + ৪ + ২
উত্তরঃ (ক) শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ।
(খ) লয় – দ্রুত।
(গ) চরণ – দুটি।
(ঘ) পর্বসংখ্যা – পূর্ণ তিনটি এবং একটি অসম্পূর্ণ।
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৪ + ৪ + ৪ + ২
(২০) | | | | | | | | | | | | | |
আজ বিকেলে / কোকিল ডাকে / শুনে মনে / লাগে ৪ + ৪ + ৪ + ২
| | | | | | | | | | | | | |
বাংলাদেশে / ছিলাম যেন / তিনশো বছর / আগে। ৪ + ৪ + ৪ + ২
উত্তরঃ (ক) শ্বাসাঘাত ছন্দ।
(খ) লয় দ্রুত।
(গ) চরণ দুটি।
(ঘ) পর্ব সংখ্যা, পূর্ণ পর্ব ৩টি করে এবং অসম্পূর্ণ পর্ব – ২
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৪ + ৪ + ৪ + ২
(২১) | | | | | | | | | | | | | | |
আবার মোরে / ডাক দিয়েছে / তুষার মেরু / উত্তরে ৪ + ৪ + ৪ + ৩
| | | | | | | | | | | | | | |
সে-রব শুনে / বিপদ গুণে / কেমন করে / রই ঘরে। ৪ + ৪ + ৪ + ৩
উত্তরঃ (ক) শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ।
(খ) লয় দ্রুত।
(গ) চরণ দুটি।
(ঘ) পর্ব সংখ্যা – পূর্ণ পর্ব তিনটি এবং অসম্পূর্ণ পর্ব – ২
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে – ৪ + ৪ + ৪ + ৩
(২২) | | | | | | | | | | | | | |
আমি যদি / জন্ম নিতেম / কালিদাসের / কালে। ৪ + ৪ + ৪ + ২
| | | | | | | | | | | | | |
দৈবে হতেম / দশম রত্ন / নবরত্নের / মালে। ৪ + ৪ + ৪ + ২
উত্তরঃ (ক) শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ।
(খ) চরণ – দুটি।
(গ) লয় – দ্রুত।
(ঘ) পর্ব – পূর্ণ পর্ব তিনটি এবং অপূর্ণ পর্ব একটি।
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৪ + ৪ + ৪ + ২
(২৩) | | | | | | | | | | | | | |
বৃষ্টি পড়ে / টাপুর টুপুর / নদেয় এলো / বান ৪ + ৪ + ৪ + ২
| | | | | | | | | | | | | |
শিব ঠাকুরের / বিয়ে হবে / তিন কন্যে / দান। ৪ + ৪ + ৩ + ২
উত্তরঃ (এখানে ‘তিন কন্যে’ টেনে পড়ে কনন্যে পড়তে হবে)
(ক) শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ।
(খ) চরণ – দুটি।
(ঘ) পর্ব সংখ্যা – পুর্ণ পর্ব তিনটি, অপূর্ণ একটি।
(গ) লয় – দ্রুত।
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা যথাক্রমে ৪ + ৪ + ৪ + ২
(২৪) | | | | | | | | | | | | | | |
যমুনাবতী / সরস্বতী / কাল যমুনার / বিয়ে ৫ + ৪ + ৪ + ২
| | | | | | | | | | | | | | |
যমুনা যাবে / শ্বশুড় বাড়ি / কাঁজি তলা / দিয়ে ৫ + ৪ + ৪ + ২
উত্তরঃ (ক) শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ।
(খ) চরণ – দুটি।
(গ) লয় – দ্রুত।
(ঘ) পর্ব সংখ্যা – পূর্ণ পর্ব তিনটি এবং একটি অপূর্ণ।
(ঙ) অক্ষর সংখ্যা – ৫ + ৪ + ৪ + ২
এখানে দুটি পর্বে ৫ মাত্রা কিন্তু ছন্দের প্রয়োজনে মাত্রা সঙ্কোচ করে ৪ মাত্রা করতেই হবে ‘যমুনাবতী’, ‘যুম্নাবতী’ এবং ‘যমুনা যাবে’, ‘যুম্না যাবে।
(২৫) | | | | | | | | | | | | | |
পাখিসব করে রব / রাতি পোহাইল।
| | | | | | | | | | | | | |
কাননে কুসুম কলি / সকলি ফুটিল
উত্তরঃ (ক) তানপ্রধান বা অক্ষরবৃত্ত ছন্দ।
(খ) চরণ – দুটি।
(গ) লয় – ধীর।
(ঘ) পর্ব সংখ্যা – দুই।
(ঙ) মাত্রা সংখ্যা – ৮ + ৬
অলঙ্কার
প্রশ্ন ১। অলঙ্কার কাকে বলে? অলঙ্কার কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ কাব্যদেহের যে সমস্ত উপাদান কাব্যের সৌন্দর্য সৃষ্টি করে ও পাঠককে রসের উৎকর্ষ দেয়, তাকে বলে অলংকার।
অলংকার মানে গয়না। যা ‘অলম্’ বা ভূষিত করে, তাই অলংকার। অর্থাৎ অলংকার হলো সেই জিনিস যা অন্য কোনো জিনিসকে ভূষিত করে, সুন্দর করে, আকর্ষণীয় করে।
এই যেমন – এখন যে মেয়েটি আমাদের সামনে বসে আছে সাধারণ শাড়ি পরে, – ওকে এখন এরকম দেখাচ্ছে। কিন্তু বিবাহ উৎসবে ও যখন হার, দুল, বালা, নোলক, মল, সিঁথি ইত্যাদি গয়না পরে, ঝলমলে পোষাক পরে আমাদের সামনে দাঁড়াবে, তখন এই সাধারণ মেয়েটিকেই ভারি সুন্দর দেখাবে। তাহলে এটা তো ঠিক, অলংকার পরলেই সাধারণ মানুষকেও সুন্দর দেখায় তার সৌন্দর্য আমাদিগকে আকর্ষণ করে।
তেমনি সাধারণ কথাকে অলংকার পরালে, তাও সুন্দর হয়ে ওঠে। সাধারণ কাব্যকে অলংকার সাজালে, তাও সুন্দর হয়। মানুষের অলংকারের নানা নাম আছে। হার, দুল, বালা, চুড়ি প্রভৃতি তেমনি কাব্যের অলংকারেরও নানা নাম – অনুপ্রাস, যমক, উপমা, রূপক, শ্লেষ প্রভৃতি। এক একটি অলংকার আমাদের শরীরকে এক এক রকম সৌন্দর্যে মণ্ডিত করে, তেমনি কাব্যের এক একটি অলংকারও কাব্যকে এক এক রকম চমৎকারিত্ব দেয়। কবিরা এইসব অলংকার দিয়ে তাদের সাধারণ কথাকে অসাধারণ সুন্দর করে তুলেন।
অলঙ্কারকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন –
১। শব্দালঙ্কার।
২। অর্থালঙ্কার।
শব্দালঙ্কার (সংজ্ঞা): শব্দের ধ্বনি সাম্যে (ধ্বনি ঝংকারে) যে অলঙ্কারের সৃষ্টি, তাকে শব্দালঙ্কার বলে।
যেমন – “চল চপলার চকিত চমকে করিছে চরণ বিচরণ।” – রবীন্দ্রনাথ।
এখানে ‘চ’ ধ্বনির বারবার ৬ বার ব্যবহারে ধ্বনি সাম্য ঘটেছে। ফলে ধ্বমি ঝংকার উঠেছে। তাই এখানে ‘চ’-ধ্বনির সাম্যে একটি অদ্ভুত, পুর্ব শব্দালংকার গড়ে উঠেছে।
শব্দালঙ্কার পাঁচ প্রকার।
(১) অনুপ্রাস।
(২) যমক।
(৩) শ্লেষ।
(৪) বক্রোক্তি।
(৫) পুনরুক্তবদাভাস।
প্রশ্ন ২। নিম্নলিখিত অলঙ্কার সমূহের সংজ্ঞা ও দৃষ্টান্ত দাও।
১। অনুপ্রাস: একটি বর্ণ বা একগুচ্ছ বর্ণ বারবার ব্যবহৃত হয়ে যে শব্দ বা ধ্বনি সাম্য সৃষ্টি করে, তাকে অনুপ্রাস বলে।
যেমন- (১) ‘গুরু গুরু মেঘ গুমরি-গুমরি গরজে গগনে-গগনে।’
এখানে ‘গু’ বর্ণটি ৪ বার এবং ‘গ’ বর্ণটি ৫ বার ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে ‘গু’ ও ‘গ’ অপরূপ ধ্বনি সাম্য সৃষ্টি করেছে। তাই এটি হল অনুপ্রাস।
(২) ‘চল চপলার চকিত চমকে করিছে চরণ বিচরণ।’
এখানে ‘চ’ ধ্বনিটি ৬ বার ব্যবহৃত হয়ে ধ্বনি সাম্য সৃষ্টি করেছে। তাই এটি হল একটি অনুপ্রাস অলংকার।
অনুপ্রাস পাঁচ প্রকার যথা –
(১) অন্ত্যানুপ্রাস।
(২) বৃত্তানুপ্রাস।
(৩) ছেকানুপ্রাস।
(৪) শ্রুত্যনুপ্রাস।
(৫) লাটানুপ্রাস।
২। যমক: যে শব্দ বাক্যের মধ্যে বার বার ব্যবহৃত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে তাকে যমক বলে।
উদাহরণ :- (ক) “ভারত ভারত খ্যাত আপনার গুণে।”
ব্যাখ্যা – এখানে ভারত শব্দটি দুবার দুটি অর্থে বসেছে। ১ম ভারত = কবি ভারতচন্দ্র, ২য় ভারত = দেশ ভারতবর্ষ।
(খ) “আনা দরে আনা যায় কত আনারস।”
ব্যাখ্যা – এখানে ১ম আনা = ৪ পয়সা, ২য় আনা = আনয়ন করা।
যমক চার প্রকার –
(১) আদ্যযমক।
(২) মধ্যযমক।
(৩) অন্ত্য যমক।
(৪) সর্ব যমক।
(১) আদ্যযমক: চরণের আদিতে যে যমক তাই আদ্য যমক।
যেমন – ভারত ভারত খ্যাত আপনার গুণে। এখানে ১ম ভারত = কবি ভারতচন্দ্র, ২য় ভারত = দেশ ভারতবর্ষ।
(২) মধ্যযমক: চরণের মধ্যে যে যমক থাকে তাকে মধ্য যমক বলে।
যেমন – পাইয়া চরণ তরী তরি ভবে আশা। এখানে ১ম তরী = নৌকা, ২য় তরি = পার হওয়া বা মুক্তি লাভ করা।
(৩) অন্ত্যযমক: চরণের শেষে যে যমক, তাই অন্ত্য যমক।
যেমন – ‘যত কাঁদে বাছা বলি সর সর
আমি অভাগিনী বলি সর সর।’
এখানে প্রথম পংক্তিতে ‘সর’ শব্দের অর্থ দুধের সর এবং দ্বিতীয় লাইনের ‘সর’ শব্দের অর্থে সরে যাওয়া।
(৪) সর্বয়মক – দুই বা ততোধিক চরণের আদি-মধ্য-অন্ত্য শব্দগুলিতে যমক হলে, সর্বযমক হয়।
যেমন – কান্তার আমোদ পূর্ণ কান্ত সহকারে।
কান্তার আমোদ “পূর্ণ কান্ত সহকারে। (ঈশ্বরগুপ্ত)
এখানে প্রথম চরণের – অর্থ বনভূমি বসন্ত সমাগমে সৌরভময় হয়।
দ্বিতীয় চরণের অর্থ – দয়িতা দয়িত সঙ্গে আনন্দপূর্ণ হয়।
৩। শ্লেষ: শ্লেষ হলো শব্দালংকার। যখন একটি শব্দ মাত্র একবার ব্যবহার হয়, অথচ ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে শ্লেষ অলংকার বলে।
যেমন – কে বলে ঈশ্বরগুপ্ত ব্যপ্ত চরাচর।
যাহার প্রভায় প্রভা পায় প্রভাকর ৷। (ঈশ্বরগুপ্ত)
ব্যাখ্যা – (১) এখানে প্রথম ঈশ্বরগুপ্ত – কবি ঈশ্বরগুপ্ত
দ্বিতীয় ঈশ্বরগুপ্ত – ভগবান লুক্কায়িত।
(২) প্রথম প্রভাকর – পত্রিকার নাম।
দ্বিতীয় প্রভাকর – সূর্য।
শ্লেষ দু-প্রকার। যেমন – সভঙ্গ শ্লেষ, অভঙ্গ শ্লেষ।
সভঙ্গ শ্লেষ: যে শ্লেষ অলংকারে শব্দটি অক্ষুণ্ণ থাকে এবং তাকে ভাঙলে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে তাকে সভঙ্গ শ্লেষ বলে।
যেমন – “পৃথিবীটা কার বশ? পৃথিবী টাকার বশ।
এখানে ‘পৃথিবী’ ও ‘টা’ বিশ্লেষিত করে ‘টা’-র সঙ্গে কার যোগে উত্তর পাওয়া যাচ্ছে। এখানে সভঙ্গ শ্লেষ।
অভঙ্গ শ্লেষ: শব্দকে না ভেঙ্গে যে শ্লেষ অলংকারের বিভিন্ন অর্থ পাওয়া যায় তাকে অভঙ্গ শ্লেষ বলে।
যেমন – পূজা শেষে কুমারী বলল, ঠাকুর
আমাকে একটি মনের মত বর দাও।
এখানে ‘বর’ একটি শব্দ; একবার মাত্র ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু দুরকম অর্থ প্রকাশ করেছে।
(১) বর – আশীর্বাদ।
(২) বর – স্বামী।
অর্থালংকার: যে অলংকার অর্থের আশ্রয়ে সৃষ্ট, যা অর্থের উপরই সম্পূর্ণ নির্ভরশীল, তাকেই অর্থালংকার বলে।
অর্থালংকারকে মোটামুটি পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –
(১) সাদৃশ্যমূলক।
(২) বিরোধমুলক।
(৩) শৃঙ্খলামূলক।
(৪) ন্যায়মূলক।
(৫) গুঢ়ার্থমূলক।
সাদৃশ্যমূলক অলংকার
(১) উপমা: উপমা কথাটির সাধারণ অর্থ তুলনা। দুটি ভিন্ন জাতীয় বস্তুর মধ্যে কোনো সমান ধর্ম বা গুণ হেতু তুলনা করা হলে তাকে উপমা অলংকার বলে।
যেমন – মুখখানি চাঁদের ন্যায় সুন্দর।
ব্যাখ্যা – এখানে মুখ ও চাঁদ এই দুই বিজাতীয় বস্তুর মধ্যে তুলনা করা হয়েছে, ‘সুন্দর’ এদের সমান ধর্ম বা সাধারণ গুণ। এবং ‘ন্যায়’ এই সাদৃশ্যবাচক শব্দের সাহায্যে উভয়ের তুলনা করা হয়েছে।
উপমার চারটি উপাদান থাকে –
(১) উপমেয়।
(২) উপমান।
(৩) সাধারণ ধর্ম।
(৪) সাদৃশ্য বাচক শব্দ।
(১) উপমেয় – যে বস্তুকে অন্য কোনো বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হয়।
(২) উপমান – যার সঙ্গে তুলনা করা হয়।
(৩) সাধারণ ধর্ম – যে ধর্ম বা গুণ উপমেয় এবং উপমান উভয় বস্তুতে বর্তমান।
(৪) সাদৃশ্যবাচক শব্দ – যে শব্দের দ্বারা তুলনা বা সাদৃশ্য দেখানো হয়। যেমন – ন্যায়, মত, সম, যেমন, সাদৃশ্য, তুল্য ইত্যাদি।
উদাহরণ – (১) “মুখখানা চাঁদের ন্যায় সুন্দর।”
উপমেয় উপমান সাদৃশ্যবাচক শব্দ সাধারণ ধর্ম।
(২) এও যে রক্তের মতো রাঙা দুটি জবাফুল
উপমান সাদৃশ্যবাচক শব্দ সাধারণ ধর্ম উপমেয়
ব্যাখ্যা – এখানে জবাফুল ও রক্ত দুই বিজাতীয় বস্তু। রাঙা এদের সাধারণ ধর্ম। এ কারণে এখানে উপমা অলংকার হয়েছে।
উপমালংকার চার প্রকার। যেমন –
(১) পূর্ণোপমা।
(২) লুপ্তোপমা।
(৩) মালোপমা।
(৪) প্রতিবস্তুপমা।
(১) পূর্ণোপমা: যে উপমা অলংকারের উপমেয়, উপমান, সাধারণ ধর্ম ও তুলনাবাচক শব্দ – এই চারটি অঙ্গই বর্তমান, তাকে বলে পূর্ণোপমা। যেমন – মুখখানা চাঁদের ন্যায় সুন্দর।
এখানে উপমেয় – মুখ, উপমান – চাঁদ, সাধারণ ধর্ম – সুন্দর এবং সাদৃশ্যবাচক শব্দ – ন্যায়।
(২) রূপক: উপমেয় এবং উপমানের মধ্যে অভেদ কল্পনা করলে রূপক অলংকার হয়।
যেমন – (১) ‘বাছার মুখচন্দ্র মলিন হয়ে গেছে।’
ব্যাখ্যা – এখানে মুখ উপমেয় ও চন্দ্র উপমানের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয়েছে।
(২) ‘চন্দ্ৰমুখী বালিকা হাসে নিরবধি।’
ব্যাখ্যা – বালিকার মুখ ও চাঁদের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয়েছে।
(৩) উৎপ্রেক্ষা: উৎপ্রেক্ষা অর্থ সংশয়। প্রবল সাদৃশ্যবশতঃ উপমেয়কে যদি উপমান বলে সংশয় হয় তাহলে তাকে উৎপ্রেক্ষা অলংকার বলে।
উদাহরণঃ (ক) “পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।”
ব্যাখ্যা – এখানে উপমেয় পূর্ণিমার চাঁদ। উপমান রুটি। সাধারণ ধর্ম ঝলসানো। সাদৃশ্য বাচক শব্দ যেন। দুটির মধ্যে প্রবল সংশয় দেখা দিয়েছে এবং উপমান ‘রুটি’ যেন প্রাধান্য পাচ্ছে।
(খ) “সীতা হারা রাম যেন মনিহারা ফণী।”
ব্যাখ্যা – এখানে উপমেয় রাম, উপমান ফণী। ‘রাম’ ও ‘ফণী’তে প্রবল সাদৃশ্য। ‘যেন’ সাদৃশ্যবাচক শব্দ।
উৎপ্রেক্ষা দুই প্রকার। যথা –
১। বাচ্যোৎপ্রেক্ষা।
২। প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা।
যে উৎপ্রেক্ষা অলংকারে সংশয়সূচক শব্দ ‘যেন’ থাকে না তাকে প্রতীয়মান উৎপ্রেক্ষা এবং যেখানে সংশয়সূচক শব্দ ‘যেন’ থাকে তাকে বাচ্যোৎপ্রেক্ষা অলংকার বলে।
যেমন: ‘সাধ্বী রমণীর দৃষ্টি সমুদ্যত বাজী।
উপমেয় = দৃষ্টি, উপমান = বাজ, সংশয়সূচক শব্দ ‘যেন’ নেই।
বাচ্যোৎপ্রেক্ষার উদাহরণ-
“ফেনিল সলিল রাশি বেগভরে পড়ে আসি।
চন্দ্রালোকে ভেঙে যেন পড়ে পৃথিবীতে।”
(৪) অপহ্নুতি: অপহ্নব শব্দের অর্থ গোপণ। যে অলঙ্কারে উপমেয়কে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে উপমানকে স্বীকার বা প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকে অপহ্নুতি অলংকার বলে।
যেমন – (১) ‘মুখ নয়, চন্দ্ৰ’,
ব্যাখ্যা – এখানে উপমেয় মুখকে অস্বীকার বা অপহ্নব করে তার জায়গায় উপমান চন্দ্রের কাল্পনিক প্রতিষ্ঠা করায় অপহ্নতি হয়েছে।
(২) এ মেয়েও মেয়ে নয়, দেবতা নিশ্চয় – ভারতচন্দ্র।
ব্যাখ্যা – এখানে উপমেয় মেয়েকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে অপ্রধান বিষয় উপমান দেবতাকে প্রধান রূপে প্রতীয়মান করা হয়েছে। তাই এটি অপহূতি অলংকার।
(৫) ব্যাজম্ভুতি: ব্যাজস্তুতি একটি গুঢ়ার্থমূলক অর্থালঙ্কার। যে অলঙ্কারে নিন্দার ছলে স্তুতি ও স্তুতির ছলে নিন্দা প্রকাশ পায়, তাকে ব্যাজস্তুতি বলে। ব্যাজ শব্দের অর্থ হল, কপট।
যেমন – (১) ‘‘অতি বড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ।
কোন গুণ নাহি তার কপালে আগুন।”
ব্যাখ্যা – এখানে মহাদেবের নিন্দার ছলে স্তুতি করা হয়েছে।
(২) সভাজনশুন জামাতার গুণ বয়সে বাপের বড়।
কোন গুণ নাই, যেথা সেথা ঠাই, সিদ্ধিতে নিপুণ বড়।
ব্যাখ্যা – এখানে বক্তা দক্ষ নিন্দা অর্থেই বাক্যগুলি প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু কবি অপর অর্থ ইঙ্গিত করে শিব নিন্দার ভাগী হতেছেন না। এইভাবে নিন্দাচ্ছলে স্তুতি ব্যজস্তুতি অলংকার হয়েছে।
(৬) সমাসোক্তি: উপমেয়ের উপর উপমানের ব্যবহার আরোপিত হলে সমাসোক্তি অলংকার হয়। অথবা, নির্জীব পদার্থের উপর সজীব পদার্থের ব্যবহার আরোপ করলে তাকে সমাসোক্তি অলংকার বলে।
যেমন – (১) “তটিনী চলেছে অভিসারে”
ব্যাখ্যা – এখানে নির্জীব তটিনীর উপর (রাধিকার) নারীর ব্যবহার আরোপ করা হয়েছে।
(২) “সন্ধ্যা আসিছে অতি ধীর পায়ে দু’হাতে প্রদীপ নিয়ে।”
ব্যাখ্যা – উপমেয় – সন্ধ্যা (অচেতন বস্তু, উপমান – অনুলেখ্য। কাব্যের অংশটি পাঠ করলেই বোঝা যায়, সে হবে একজন গৃহবধূ। এখানে মনুষ্যধর্মের আরোপ হয়েছে।
(৭) বিরোধাভাস: বিরোধাভাস একটি বিরোধমূলক অলংকার। যদি দুটি বস্তুকে আপাত দৃষ্টিতে পরস্পর বিরোধী মনে হয়, অথচ তাৎপর্য বিশ্লেষণে সে বিরোধ থাকে না। তখন তাকে বিরোধাভাস অলঙ্কার বলে।
যেমন – (১) বড় যদি হতে চাও ছোট হও তবে।
ব্যাখ্যা – এখানে বড় অর্থে মহান এবং ছোট অর্থে বিনয়ী সুতরাং প্রকৃত কোন বিরোধ বিরোধ নেই।
(২) ‘মক্ষিকাও গলে না গো পড়িলে অমৃত হ্রদে।
ব্যাখ্যা – হ্রদে পড়া এবং মল্লিকা গলে না যাওয়া পরস্পর বিরোধী ব্যাপার। কিন্তু এখানে হ্রদটি অমৃতের, অমৃত ধ্বংস করে না, অমর করে, সুতরাং এখানে বিরোধের অবসান ঘটেছে।
(৮) অতিশয়োক্তি: উপমান ও উপমেয়ের অভেদত্বের জন্য, যদি উপমান উপমেয়কে সম্পূর্ণ গ্রাস করে ও উপমানই উপমেয় বলে প্রতিপন্ন হয়, তাকে অতিশয়োক্তি অলংকার বলে।
যেমন: (১) “আইল গোধূলি, একটি রতন ভালো।”
ব্যাখ্যা – এখানে উপমান = রতন। উপমেয়ের উল্লেখ নেই তবে তা হবে ‘চন্দ্র’। কবি কল্পনার চমৎকারিত্বে ‘রতন’ ও ‘গোধুলি’ দুটি সম্পূর্ণ পৃথকবস্তু অভেদ হয়েছে।
(২) “বন থেকে এল একটিয় মনোহর।
সোনার টোপর শোভে মাথার উপর।”
ব্যাখ্যা – এখানে উপমান – টিয়ে; উপমেয় – আনারস; কিন্তু সেটি উল্লিখিত হয়নি। গভীর সাদৃশ্যহেতু উপমানটি উপমেয় আনারসকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলেছে এবং উপমান টিয়ে এখানে প্রকটিত হয়েছে।
(৯) বিষম: কার্য ও কারণের মধ্যে যদি কোন অসঙ্গতি দেখা দেয় অথবা কারণ হতে যে ফল পাওয়ার কথা তার পরিবর্তে যদি অবাঞ্ছিত ফল দেখা দেয় অথবা যদি দুই অসম্ভব ঘটনার মিলন ঘটে তবে বিষম অলংকার হয়।
“জুড়াইতে চন্দন লেপিলে অহর্নিশ।
বিধির বিপাকে তাহা হয়ে উঠে বিষ।”
অর্থাৎ চন্দনের লেপনে শরীরে শীতলতার অনুভব হয়। কিন্তু এখানে বিধির বিপাকে জ্বালা পাওয়া গিয়েছে চন্দনের লেপনের ফলে। সুতরাং বলা যায় এখানে যে ফল পাওয়ার কথা ছিল তার পরিবর্তে অন্য ফল হয় এটি বিষম অলংকার হয়েছে।
(১০) সন্দেহ: সন্দেহ হল সাদৃশ্যবাচক অর্থালংকার। যে অলংকারে উপমেয় এবং উপমান দুটিতেই সমান সংশয় থাকে, তাকে সন্দেহ অলংকার বলে।
যেমন: “সোনার হাতে সোনার কাঁকন কে কার অলংকার।
উপমেয় = সোনার হাত, উপমান = সোনার কাঁকন, সংশয় শব্দ নেই।
এখানে উপমেয়তে সংশয় আবার উপমানেও সংশয় এইজন্য ‘সন্দেহ’।
(১১) ছেকানুপ্রাস: দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি, একইক্রমে, যদি দুবার মাত্র ধ্বনিত হয়, তবে তাকে ছেকানুপ্রাস বলে।
যেমন – এখনি অন্ধ বন্ধ করো না পাখা।
ব্যাখ্যা – এখানে ‘ন্ধ’ একটি যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ। এটি একই ক্রমে দুবার মাত্র ধ্বনিত হয়েছে, এবং শব্দ সাম্য সৃষ্টি করেছে। তাই চরণটি হয়েছে ছেকানুপ্রাস।
(১২) লুপ্তোপমা: যে উপমা অলংকারকে উপমার চারটি অঙ্গের মধ্যে উপমেয় ছাড়া অন্য একটি বা দুটি অঙ্গ অনুল্লেখিত থাকে, তাকে লুপ্তোপমা বলে।
যেমন – বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।
এখানে সাদৃশ্যবাচক শব্দ ‘যেমন’ লুপ্ত আছে বলিয়া লুপ্তোপমা।
(১৩) কাকু বক্রোক্তি: যখন বক্তার কণ্ঠস্বরের বিশেষ ভঙ্গির জন্য ‘না’ বাচক কথার ‘হ্যা’ বাচক অর্থ হয়, অথবা ‘হ্যা’ বাচক কথার ‘না’ বাচক অর্থ হয়, তখন তাকে কাকু-বক্রোক্তি অলংকার বলে।
যেমন – কে ছেঁড়ে পদ্মের পর্ণ?
এখানে বক্তার কণ্ঠস্বরের ভঙ্গিতেই উত্তরটি রয়েছে। এবং বিপরীত গুণেই তা প্রকাশিত হচ্ছে। ‘পদ্মের পর্ণ’ কে ছেড়ে ? এই প্রশ্নের সঙ্গেই উত্তর বোঝা যাচ্ছে – সুতরাং একি একটি ‘কাকু বক্রোক্তি’।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দাও:
ছন্দ ও অলংকার
১। পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। অলঙ্কারের নাম লেখো।
উত্তরঃ উপমা (পূর্ণোপমা)।
প্রশ্ন ২। একই শব্দ স্বরধ্বনি সমেত ভিন্ন ভিন্ন অর্থে একাধিকবার ব্যবহৃত হলে কী অলংকার হয়?
উত্তরঃ যমক।
প্রশ্ন ৩। “পাইয়া চরণ তরি তরি ভবে আসা।” অলঙ্কারের নাম লেখো।
উত্তরঃ মধ্যযমক।
প্রশ্ন ৪। চরণের যেখানে অর্ধযতি পড়ে সে সব অংশকে কী বলা হয়?
উত্তরঃ পর্ব।
প্রশ্ন ৫। “মধুহীন কর নাগো তব মনঃ কোকনদে।” অলংকারের নাম লেখো।
উত্তরঃ অভঙ্গ শ্লেষ।
প্রশ্ন ৬। যাদের দ্বারা ছন্দের পরিমাপ করা যায় তাকে কী বলে?
উত্তরঃ মাত্রা।
প্রশ্ন ৭। “এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।” – অলংকারের নাম লেখো।
উত্তরঃ বিরোধাভাস।
প্রশ্ন ৮। এক একটি চরণের যেখানে অর্ধতি পড়ে সে সব অংশকে কী বলা হয়?
উত্তরঃ পর্ব।
প্রশ্ন ৯। বাকযন্ত্রের একতম প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছের নাম কী?
উত্তরঃ শব্দালংকার।
প্রশ্ন ১০। একটি বাক্যে একটি শব্দ একবার মাত্র ব্যবহৃত হয়ে যদি একাধিক অর্থ প্রকাশ করে তবে কোন্ অলংকার হয়?
উত্তরঃ শ্লেষ।
প্রশ্ন ১১। সমগ্র বা আংশিক অর্থ পরিস্ফুটনের জন্য ধ্বনি প্রবাহে যে উচ্চারণ বিরতি তাকে কী বলা হয়?
উত্তরঃ ছেদ।
প্রশ্ন ১২। একই বাক্য সাধারণ ধর্ম বিশিষ্ট দুই বিজাতীয় পদার্থের মধ্যে সাদৃশ্য প্রদর্শন করা হলে কোন্ অলংকার হয়?
উত্তরঃ উপমা।
প্রশ্ন ১৩। উৎপ্রেক্ষা অলংকার কয় প্রকারের?
উত্তরঃ উৎপ্রেক্ষা অলংকার দুই প্রকারের।
প্রশ্ন ১৪। সাদৃশ্যমূলক অলংকারে দুটি তুলনীয় বস্তুর মধ্যে তুলনার সময় যার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাকে কী বলে?
উত্তরঃ উপমান।
প্রশ্ন ১৫। যে কোনো দুই প্রকার অনুপ্রাস অলংকারের নাম লেখো।
উত্তরঃ অন্ত্যানুপ্রাস, ছেকানুপ্রাস।
প্রশ্ন ১৬। ‘চাঁদের মত সুন্দর মুখ’ – কোন অলংকার?
উত্তরঃ উপমা অলংকার।
প্রশ্ন ১৭। সাঙ্গ রূপক কী?
উত্তরঃ উপমেয় ও উপমানের অঙ্গী ও অঙ্গে পরস্পর অভেদ কল্পিত হলে সাঙ্গ রূপক হয়। যেমন – দেহদীপাধারে জ্বলিত লেলিহ যৌবনজয় শিখা।
এখানে উপমেয় দেহ অঙ্গী, এবং তার অঙ্গ যৌবন।
প্রশ্ন ১৮। উপমা অলংকার কত প্রকার?
উত্তরঃ চার প্রকার।