Class 12 Advance Bengali Chapter 13 মেজদিদি Question Answer | AHSEC Class 12 Advanced Bengali Question Answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Assam Board Class 12 Advance Bengali Chapter 13 মেজদিদি Notes and select needs one.
Class 12 Advance Bengali Chapter 13 মেজদিদি
Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Advance Bengali Chapter 13 মেজদিদি Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Advance Bengali Chapter 13 মেজদিদি Solutions for All Subjects, You can practice these here.
মেজদিদি
Chapter: 13
ADVANCE BENGALI
উপন্যাস
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
পশ্ন ১। ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের রচয়িতা কে?
উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
প্রশ্ন ২। ‘মেজদিদি’ উপন্যাসে মেজদিদির প্রকৃত নাম কী?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী।
প্রশ্ন ৩। ‘মেজদিদি’ কী ধরনের রচনা?
উত্তরঃ এটি একটি উপন্যাস।
প্রশ্ন ৪। ‘মেজদিদি’ উপন্যাস প্রথমে কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায়।
প্রশ্ন ৫। ‘মেজদিদি’ উপন্যাস কয়টি পরিচ্ছেদ আছে?
উত্তরঃ আটটি।
প্রশ্ন ৬। ‘মেজদিদি’র বড় জায়ের নাম লেখো।
উত্তরঃ কাদম্বিনী।
প্রশ্ন ৭। মেজদিদি কে?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী।
প্রশ্ন ৮। “বড় জা বলিলেন, আমরা খেতে দিইনে, শুধু খাটিয়ে নিই, আর তুমি ওকে খেতে দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছ?” – বড় জায়ের নাম কী?
উত্তরঃ বড় জায়ের নাম কাদম্বিনী।
প্রশ্ন ৯। “এ হাতির খোরাক নিত্য জোগাতে গেলে যে আমাদের আড়ত খালি হয়ে যাবে।”- উক্তিটি কার?
উত্তরঃ কাদম্বিনীর।
প্রশ্ন ১০। ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের কেষ্ট বা কেষ্টধনের বয়স কত?
উত্তরঃ ১৪ বছর।
প্রশ্ন ১১। কাদম্বিনীর স্বামীর নাম কী?
উত্তরঃ নবীন।
প্রশ্ন ১২। বিপিনের স্ত্রীর নাম কী ছিল?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী।
প্রশ্ন ১৩। হেমাঙ্গিনী কার মেজদিদি?
উত্তরঃ কেষ্টর।
প্রশ্ন ১৪। কেষ্টর দিদির বাড়ি কোথায় ছিল?
উত্তরঃ রাজহাটে।
প্রশ্ন ১৫। কাদম্বিনীর সঙ্গে কেষ্টর সম্পর্ক কী?
উত্তরঃ বড়দিদি (সৎভাই)।
প্রশ্ন ১৬। হেমাঙ্গিনীর সঙ্গে কেষ্টর সম্পর্ক কী?
উত্তরঃ মেজদিদি।
প্রশ্ন ১৭। কাদম্বিনীর ছেলের নাম কী?
উত্তরঃ পাঁচুগোপাল।
প্রশ্ন ১৮। কাদম্বিনীর মেয়ের নাম কী?
উত্তরঃ পুঁটি।
প্রশ্ন ১৯। হেমাঙ্গিনীর ছেলের নাম কী?
উত্তরঃ ললিত।
প্রশ্ন ২০। হেমাঙ্গিনীর মেয়ের নাম কী?
উত্তরঃ উমা।
প্রশ্ন ২১। “আগমনের হেতু শুনিয়া একেবারে অগ্নিমূর্তি হয়ে উঠিল।” – কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ কাদম্বিনীর।
প্রশ্ন ২২। “মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি।” এটা কার উক্তি?
উত্তরঃ কাদম্বিনীর।
প্রশ্ন ২৩। ‘বড় কুটুম যে গো। তাঁকে তার মত রাখতে হবে তো।’ – বড়কুটুম কে?
উত্তরঃ কেষ্ট।
প্রশ্ন ২৪। ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের কেষ্ট ধনের বৈমাত্রেয় দিদির বাড়ী কোথায় ছিল?
উত্তরঃ বিপিন ধানের কারবার করতেন।
প্রশ্ন ২৬। কেষ্টর মেজদিদির নাম কী?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী।
প্রশ্ন ২৭। ‘ছেলেটি যে অতিশয় লাজুক ও ভীরু স্বভাব, হেমাঙ্গিনী তাহা পূর্বেই টের পাইয়াছিলেন।’ এই ছেলেটি কে?
উত্তরঃ রাজহাটে।
প্রশ্ন ২৫। বিপিন কীসের কারবার করতেন?
উত্তরঃ কেষ্ট।
প্রশ্ন ২৮। “কে দেবতা, কে বাঁদর, সে আমি জানি।” – এটা কার উক্তি?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনীর।
প্রশ্ন ২৯। “দেবতার সঙ্গে বাঁদরের তুলনা? – এটা কার উক্তি?
উত্তরঃ কাদম্বিনীর।
প্রশ্ন ৩০। “সে এক মায়ের এক ছেলে।” এখানে কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ কেষ্টর কথা।
প্রশ্ন ৩১। “আমি গুরুজনের নামে নালিশ করতে চাইনে।” – এটা কার উক্তি?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনীর।
প্রশ্ন ৩২। ‘মেজদিদি’ গল্পের বড় বউ-এর নাম কী?
উত্তরঃ কাদম্বিনী।
প্রশ্ন ৩৩। “সমস্ত দুপুর দোকান পালিয়ে কোথায় ছিলিরে কেষ্ট?” – কেষ্ট দোকান থেকে পালিয়ে কোথায় গিয়েছিল?
উত্তরঃ মেজদির জন্য পেয়ারা আনতে।
প্রশ্ন ৩৪। “তোমার মতো নিষ্ঠুর, তোমার মতো বেহায়া মেয়ে মানুষ আর সংসারে নেই।” – উক্তিটি কার?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনীর।
প্রশ্ন ৩৫। “কেঁচো সাপের মতন চক্র ধরিয়া কামড়াইয়াছে শুনিয়া, তাঁর বিস্ময়ের পরিসীমা রহিল না।” – কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ কেষ্ট সম্বন্ধে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ৩৬। কেষ্টকে কাদম্বিনীর বাড়িতে কে নিয়ে এসেছিল?
উত্তরঃ কেষ্টর পাড়ার নাপিত সম্প্রদায়ের একজন বুড়ো লোক।
প্রশ্ন ৩৭। কেষ্ট তার কোঁচার খুট থেকে হেমাঙ্গিনীকে কী বের করে দিয়েছিল?
উত্তরঃ দুটি আধপাকা পেয়ারা।
প্রশ্ন ৩৮। কী উপলক্ষ করে হেমাঙ্গিনীর মাঝে মাঝে জ্বর আসত?
উত্তরঃ সর্দি উপলক্ষ করে।
প্রশ্ন ৩৯। “এবেলা কেষ্ট আর পাঁচুগোপাল আমার ওখানে খাবে দিদি।” – উক্তিটি কার।
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনীর।
প্রশ্ন ৪০। “আমার দুটি সন্তান ছিল, কাল থেকে তিনটি হয়েছে। আমি কেষ্টর মা।” – উক্তিটি কার?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনীর।
প্রশ্ন ৪১। “শিবুকে বলে দিস ত’ উমা, ওকে না আর ঢুকতে দেয়।” – উমা কে?
উত্তরঃ উমা হলেন হেমাঙ্গিনীর মেয়ে।
প্রশ্ন ৪২। “অকস্মাৎ গৃহস্বামীর আগমনে চোরের দল যেরূপ ব্যবহার করে; এরাও ঠিক সেই রূপ আচরণ করে বসিল।” – গৃহস্বামীটি কে?
উত্তরঃ গৃহস্বামীটি হল হেমাঙ্গিনীর স্বামী বিপিন।
প্রশ্ন ৪৩। “শপথ কচ্ছি, আমি বেঁচে থাকতে তোদের দুই ভাই – বোনকে আজ থেকে কেউ পৃথক করতে পারবে না।” – কে বলেছেন?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনীর স্বামী বিপিন।
প্রশ্ন ৪৪। “এদেশে এমন করে যে কেহ কথা বলিতে পারে, ইহা যেন তার মাথায় ঢুকিল না।” – এখানে কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ এখানে মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর মধুর ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ৪৫। “হেমাঙ্গিনী কিছু আশ্চর্য হলেন, কারণ কেহ তাকে কাঁদিতে দেখে নাই।” – কার সম্বন্ধে এই উক্তিটি করা হয়েছে?
উত্তরঃ কেষ্ট সম্বন্ধে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ৪৬। স্ত্রীর প্রতি বিপিনের মনোভাব কী রকম ছিল?
উত্তরঃ বিপিন মনে মনে স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন।
প্রশ্ন ৪৭। কেষ্টকে পেয়ে কাদম্বিনী কাকে ছাড়লেন?
উত্তরঃ দুটো চাকরের একটাকে ছাড়লেন।
প্রশ্ন ৪৮। “সে এক মায়ের এক ছেলে” এখানে এক মায়ের এক ছেলে কে?
উত্তরঃ কেষ্টর কথা।
প্রশ্ন ৪৯। “মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশী ?” – উক্তিটি কার?
উত্তরঃ কাদম্বিনীর।
প্রশ্ন ৫০। ‘মেজদিদি’ কাহিনি অবলম্বনে মেজদিদির ভাশুরের নাম লেখো।
উত্তরঃ নবীন।
প্রশ্ন ৫১। “এই সেদিনও ঘুড়ি লাটাই কিনবার জন্য দু-মুঠা ভাত বেশি খাইয়া পয়সা আদায় করিয়া লইয়াছিল।” – কার সম্বন্ধে একথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ কেষ্টর সম্বন্ধে।
প্রশ্ন ৫২। “আমি কি কোন সর্বনাশীর নাম মুখ এনেচি” – বক্তা কে?
উত্তরঃ কাদম্বিনী।
প্রশ্ন ৫৩। “এত বড় আশ্চর্য কথা, শুনলে বিশ্বাস হয় না যে, এখন কি করলে রাগ থামবেক’ – বক্তা কে?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। “বড় কুটুম যে গো! তাঁকে তার মত রাখতে হবে তো!” – বড় কুটুম কে? উক্তিটি কার?
উত্তরঃ বড় কুটুম হলেন কেষ্ট। উক্তিটি কাদম্বিনীর।
প্রশ্ন ২। হেমাঙ্গিনীর ছেলে ও মেয়ের নাম কী?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনীর ছেলের নাম ললিত ও মেয়ের নাম উমা।
প্রশ্ন ৩। ‘মেজদিদি’ পাঠটির লেখক কে? মেজদিদির স্বামীর নাম কী?
উত্তরঃ মেজদিদি পাঠটির লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। মেজদিদির স্বামীর নাম বিপিন।
প্রশ্ন ৪। “এ বেলা কেষ্ট আর পাঁচুগোপাল আমার ওখানে খাবে দিদি।” – কে এবং কাকে এ কথা বলেছে?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী কাদম্বিনীকে একথা বলেছে।
প্রশ্ন ৫। “বিপিন সজল চক্ষু হাত দিয়া মুছিয়া বলিলেন, ‘তুমি যা চাও তাই হবে, তুমি ভালো হয়ে ওঠো।” – এই উক্তি কোন্ গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে? ‘তুমি’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ এই উক্তি শরৎচন্দ্রের ‘মেজদিদি’ উপন্যাস থেকে গৃহীত। ‘তুমি’ বলতে ‘মেজদিদি’ হেমাঙ্গিনীকে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ৬। “প্রত্যুত্তরে কেষ্ট কোঁচার খুঁট মুখে গুঁজিয়া প্রাণপণ চেষ্টায় কান্না রোধ করিতে করিতে বলিল, ডাক্তার বলে যে বুকে সর্দি বসেছে।” – ‘প্রত্যুত্তর’ শব্দটির অর্থ কী? কার বুকে সর্দি বসেছিল?
উত্তরঃ ‘প্রত্যুত্তর’ শব্দের অর্থ হল কোনো কথার পাল্টা জবাব দেওয়া। মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর বুকে সর্দি বসেছিল।
প্রশ্ন ৭। “উদ্যত প্রহরণের সম্মুখে রজ্জবদ্ধ জানোয়ারের প্রাণটা যেমন করিয়া উঠে, কেষ্টর বুকের ভিতরটায় তেমনি ধারা করিতে লাগিল।”- কারণ কী? ‘প্রহরণ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ কেষ্ট কাদম্বিনীর বাড়িতে আসার পর থেকেই কাদম্বিনীর আচরণে তার মনে করা এক ভয় তাড়া করতে থাকে। হেমাঙ্গিনীর বাড়ি থেকে কেষ্ট এবং ‘পাঁচুগোপাল খেয়ে গেলে রুইমাছের মাথা কার পাতে পড়েছিল একথা কাদম্বিনী জিজ্ঞাসা করলে, কেষ্ট বুঝতে পারল যে কাদম্বিনী একথা জানতে পারলে তাকে অপমান সহ্য করতে হবে। তাই সে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দেয়। কোনো প্রাণীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে বলি দেবার যখন উদ্যোগ করা হয় তখন সেই প্রাণীর মধ্যে যেমন প্রচণ্ড ভয়ের সৃষ্টি হয়, কেষ্টর অবস্থাও সেরকম হয়েছিল।
‘প্রহরণ’ শব্দের অর্থ প্রহার করা।
প্রশ্ন ৮। “তোমার মত নিষ্ঠুর, তোমার মত বেহায়া মেয়ে মানুষ আর সংসারে নেই।” – কে, কার সম্বন্ধে একথা বলেছে?
উত্তরঃ কাদম্বিনীকে উদ্দেশ্য করে হেমাঙ্গিনী এ কথা বলেছে।
প্রশ্ন ৯। “কিন্তু তৎক্ষণাৎ ফিরিয়া আসিয়া বলিল, আমাদের গাঁয়ের বিশালাক্ষী ঠাকুর বড় জাগ্রত মেজদি; পুজো দিলে অসুখ সেরে যায়।” – ‘তৎক্ষণাৎ’ শব্দটির অর্থ কী? বিশালাক্ষী ঠাকুর কার গাঁয়ে আছেন?
উত্তরঃ ‘তৎক্ষণাৎ’ শব্দটির অর্থ অবিলম্বে। বিশালাক্ষী ঠাকুরের মন্দির কেষ্টর গাঁয়ে আছে।
প্রশ্ন ১০। “এবার ভাশুর জবাব দিলেন। কেষ্টকে সমুখে টানিয়া আনিয়া তাহার কোঁচার খুট খুলিয়া একটা কলাপাতার ঠোঙ্গা বাহির করিয়া সক্রোধে বলিয়া উঠিলেন, ‘হিংসুক আমরা! – ভাশুরের নাম কী? কেষ্ট তাঁর কে হয়?
উত্তরঃ ভাশুরের নাম নবীন মুখুজ্যে। কেষ্ট তার বৈমাত্রেয় শ্যালক।
প্রশ্ন ১১। “বিপিনকে বল, আমাদের বাড়ির দামটা ফেলে দিক, আমরা আর কোথায় উঠে যাই।” – উক্তিটি কার? ‘বিপিন’ কে?
উত্তরঃ উক্তিটি নবীন মুখুজ্যের। বিপিন হল নবীনের ভাই ও হেমাঙ্গিনীর স্বামী।
প্রশ্ন ১২। “সমস্ত দুপুর দোকান পালিয়ে কোথায় ছিলিরে কেষ্ট ?” – কেষ্ট দোকান থেকে পালিয়ে কোথায় গিয়েছিল এবং কেন?
উত্তরঃ কেষ্ট দোকান থেকে পালিয়ে সমস্ত দুপুরে দুটি পেয়ারা সংগ্রহ করতে গেল। হেমাঙ্গিনীর জ্বর হয়েছে। আর জ্বরের মুখে পেয়ারা খেতে ভালো লাগবে। এজন্য তা সংগ্রহ করে হেমাঙ্গিনীকে দেওয়ার জন্য।
প্রশ্ন ১৩। “ঐ হতভাগাটাকে দিয়ে যত রকমের ছোট কাজ করিয়ে নিয়েও তোমরা আজ পর্যন্ত একদিন পেটভরে খেতে দাও না।” – উক্তিটি কার? ‘হতভাগা’ কে? তাকে বাড়িতে কী কী কাজ করতে হত?
উত্তরঃ উক্তিটি মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর। ‘হতভাগা’ হল কেষ্ট।
তাকে দিয়ে কাদম্বিনী বাসন মাজাত, কাপড় কাচাতো আর নবীনের আড়তে ধান চাল মাপত এবং রৌদ্রে ঘুরে ধানের নমুনা সংগ্রহগ করত।
প্রশ্ন ১৪। “বেশ নধর গোলগাল দেহটি ত” – কে, কার সম্বন্ধে এ কথা বলেছে?
উত্তরঃ নবীন কেষ্ট সম্বন্ধে একথা বলেছে।
প্রশ্ন ১৫। “হেমাঙ্গিনী কিছু আশ্চর্য হইলেন, কারণ কেহ তাহাকে কাঁদিতে দেখে নাই।” – কার সম্বন্ধে এ কথা বলা হয়েছে? সে কাঁদছিল কেন?
উত্তরঃ কেষ্ট সম্বন্ধে এ কথা বলা হয়েছে।
মা-মরা কেষ্ট হেমাঙ্গিনীকে ভীষণ ভালোবাসত। তাই হেমাঙ্গিনী জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়লে সে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ে। অসুস্থ হেমাঙ্গিনীর যদি মৃত্যু হয়ে যায় সে কথা মনে করে কেষ্ট কাঁদছিল।
প্রশ্ন ১৬। “শিবুকে বলে দিস ত’ উমা, ওকে না আর ঢুকতে দেয়।” – উমা কে? কাকে ঢুকতে দিতে নিষেধ করা হয়েছে?
উত্তরঃ উমা হলেন হেমাঙ্গিনীর মেয়ে। কেষ্টকে ঢুকতে দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
প্রশ্ন ১৭। “এমন নিষ্ঠুর আঘাত, এত বড় নির্লজ্জ অপমান, মানুষ মানুষকে যে করিতে পারে ইহা যেন তাহার মাথায় প্রবেশ করিল না।” – কে, কাকে অপমান করেছে?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী কাদম্বিনীকে অপমান করেছে।
প্রশ্ন ১৮। ‘কেঁচো সাপের মতন চক্র ধরিয়া কামড়াইয়াছে শুনিয়া, তাঁর বিস্ময়ের পরিসীমা রহিল না। – কার কথা বলা হয়েছে? কার মনে বিস্ময় জেগেছিল?
উত্তরঃ কেষ্টর কথা বলা হয়েছে। মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর মনে বিস্ময় জেগেছিল।
প্রশ্ন ১৯। “পাঁচুগোপাল বলিল, জানে মেজ খুড়ীমার অসুস্থ শরীর – সন্ধ্যা হলেই ঘুমিয়ে পড়েন- ও কি কম চালাক! – পাঁচুগোপাল কে? মেজ খুড়ীমার কী অসুখ করেছিল?
উত্তরঃ পাঁচুগোপাল কাদম্বিনীর ছেলে। হেমাঙ্গিনীর বুকে সর্দি বসে গিয়েছে। তার একে তো জ্বর আর বুকে ঠাণ্ডা লেগে যায়। ফলে সে বিছানায় শয্যাশায়ী।
প্রশ্ন ২০৷ ‘পাঁচুদা তাকে নাড়ুগোপাল করে মাথায় দুটো থান ইঁট দিয়ে বসিয়ে রেখেছে।’ – কার প্রসঙ্গে এই উক্তি করা হয়েছে? তাকে কেন শাস্তি দেওয়া হয়েছিল?
উত্তরঃ কেষ্ট সম্বন্ধে এই উক্তি করা হয়েছে।
হেমাঙ্গিনী অসুস্থ হলে কেষ্ট তার আরোগ্য লাভের জন্য দোকান থেকে তিন টাকা চুরি করে গ্রামের জাগ্রত দেবী বিশালাক্ষ্মীর পূজা দিতে যায়। তাঁর এই টাকা চুরির জন্য তাঁকে এই শাস্তি পেতে হয়েছিল।
প্রশ্ন ২১। “যাহার জন্য স্বামী-স্ত্রীতে এইমাত্র বিবাদ হয়ে গেল, অকস্মাৎ তাকে সম্মুখে পাইয়া বিবাদের সমস্ত বিরক্তিটি তারই মাথায় গিয়ে পড়িল।” – কাকে কেন্দ্র করে বিবাদ হয়েছিল? স্বামী-স্ত্রী কারা?
উত্তরঃ কেষ্টকে কেন্দ্র করে বিবাদ হয়েছিল। স্বামী-স্ত্রী হলেন বিপিন এবং হেমাঙ্গিনী।
প্রশ্ন ২২। “শপথ কচ্ছি, আমি বেঁচে থাকতে তোদের দুই ভাই-বোনকে আজ থেকে কেউ পৃথক করতে পারবে না।” – কে বলেছেন? ভাই-বোন কারা?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনীর স্বামী বিপিন বলেছেন। ভাই-বোন হল কেষ্ট ও হেমাঙ্গিনী।
প্রশ্ন ২৩। “তিনি দলিতা ভুজঙ্গিনীর মত স্বামীর মুখপানে একটি বার চাহিয়াই চোখ ফিরাইয়া লইয়া কহিলেন, আর এখানে তুই আসিস্ নে যা।” – দলিতা ভুজঙ্গিনীর স্বামীর নাম কী? কাকে তিনি আসতে বারণ করলেন?
উত্তরঃ দলিতা ভুজঙ্গিনীর স্বামীর নাম বিপিন। কেষ্টকে তিনি আসতে বারণ করেন।
প্রশ্ন ২৪। ‘তিনি সুস্পষ্ট দেখিতে লাগিলেন, এই নিরুপায় অনাথ ছেলেটা মা হারাইয়া তাঁকে মা বলিয়া আশ্রয় করিতেছে। তিনি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? – ‘নিরুপায়’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তরঃ তিনি বলতে মেজদিদি হেমাঙ্গিনীকে বোঝানো হয়েছে। ‘নিরুপায়’ শব্দটির অর্থ যার কোন উপায় নেই।
প্রশ্ন ২৫। ‘মেজদিদি’ উপন্যাস অবলম্বনে মেজদিদি ও তাঁর জায়ের নাম লেখো।
উত্তরঃ মেজদিদির নাম হেমাঙ্গিনী ও তার জায়ের নাম কাদম্বিনী।
প্রশ্ন ২৬। ‘‘বিপিন সজল চক্ষু হাত দিয়া মুছিয়া বলিলেন, তুমি যা চাও তাই হবে, তুমি ভাল হয়ে ওঠো।” – উদ্ধৃতিটি কোন্ পাঠের অন্তর্গত? কোন্ প্রসঙ্গে একথা বলেছে বিপিন?
উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি শরৎচন্দ্রের ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের। কেষ্টর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মেজদিদি তাকে নিজের কাছে আনার জন্য অভিমান করে প্রবল জ্বরের ঘোরে মাটিতে পড়ে রয়েছিলেন তখন বিপিন একথা বলেছিলেন।
প্রশ্ন ২৭। মেজদিদি ও তার বড় জায়ের নাম দুটি লেখো।
উত্তরঃ মেজদিদির নাম হেমাঙ্গিনী এবং তার বড় জায়ের নাম কাদম্বিনী।
প্রশ্ন ২৮। মেজদিদির ছেলে ও মেয়ের নাম কী?
উত্তরঃ ছেলের নাম ললীত ও মেয়ের নাম উমা।
প্রশ্ন ২৯। কেষ্টর বৈমাত্র বড় বোন কে? তাঁর স্বামীর নাম কী?
উত্তরঃ কেষ্টর বৈমাত্র বড় বোন কাদম্বিনী। তাঁর স্বামীর নাম নবীন।
প্রশ্ন ৩০। ‘স্বামী-স্ত্রীতে চোখাচোখি হইল। স্বামী একটু হাসিলেন, তাহাতে প্রীতি বিকীর্ণ হইল না।’ – এখানে ‘স্বামী-স্ত্রী’ কারা?
উত্তরঃ এখানে স্বামী-স্ত্রী – বিপিন ও হেমাঙ্গিনী।
প্রশ্ন ৩১। ‘অকস্মাৎ গৃহস্বামীর আগমনে চোরের দল যেমন ব্যবহার করে, ইহারাও ঠিক সেই রূপ আচরণ করিয়া বসিল।’ – ‘ইহারা’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ ইহারা বলতে কেষ্ট ও উমার কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ৩২। ‘‘তোর মেজদিদিকে তুই বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আয় ভাই।” – কে, কার প্রতি উক্তিটি করেছে?
উত্তরঃ বিপিন, কেষ্টর প্রতি এই অনুরোধটি করেছে।
প্রশ্ন ৩৩। “আজ থেকে আমাকে তোর সেই মরা মা বলে মনে করবি।” – কে, কাকে এই কথাটি বলেছে।
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে এই কথাটি বলেছে।
প্রশ্ন ৩৪। “ভারী আমার মাসিমার কুটুমকে ডেকে এনেছেন।’ – বক্তা কে? কার প্রতি এই উক্তি?
উত্তরঃ বক্তা কাদম্বিনীর। পাড়ার যে বুড়ো মানুষটি পথ দেখিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে আসে তার প্রতিই এই উক্তি।
প্রশ্ন ৩৫। ‘পৈত্রিক বাড়িটা দুইভাইয়ে ভাগ করিয়া লইয়াছিল।’ – এই দুই ভাই কে কে?
উত্তরঃ এই দুই ভাই – নবীন ও বিপিন।
প্রশ্ন ৩৬। “থাক-থাক হয়েছে ভাই – চিরজীবী হও।” – কে, কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছিলেন?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেছিলেন।
প্রশ্ন ৩৭। “মুখের ভাব তোমার মতোই দিদি। বলি, বাপের বাড়ির কেউ নাকি ?” – কে, কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছে?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী কাদম্বিনীকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছে।
প্রশ্ন ৩৮। “বড় কুটুম যে গো! তাঁকে তার মত রাখতে হবে ত!’ – ‘বড় কুটুম’ কে? – উক্তিটি কার?
উত্তরঃ বড় কুটুম কেষ্ট। উক্তিটি কাদম্বিনীর।
প্রশ্ন ৩৯। “আড়াল হইতে জবাব আসিল, আমি।” – এই আমি কে? বিষয়টি বিস্তারিত করো।
উত্তরঃ এই আমি হলো কেষ্ট।
একদিন সন্ধ্যার জ্বর বোধ হওয়ায় হেমাঙ্গিনী বিছানায় একা পড়ে রয়েছিলেন, তখন তিনি দেখলেন কে যেন অতি সন্তর্পণে কবাটের আড়ালে দাঁড়িয়ে উঁকি মারছে তখন হেমাঙ্গিনীর ২য় ডাকে সাড়া দিয়েছিল।
প্রশ্ন ৪০। ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের লেখকের নাম লেখো। মেজদিদির প্রকৃত নাম কী?
উত্তরঃ ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের লেখকের নাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
মেজদিদির প্রকৃত নাম হেমাঙ্গিনী।
প্রশ্ন ৪১। “তিনি দলিতা ভুজঙ্গিনীর মত স্বামীর মুখের পানে একটিবার চাহিয়াই চোখ ফিরাইয়া লইয়া কহিলেন, আর এখানে তুই আসিস্ নে যা।” – দলিতা ভুজঙ্গিনীর স্বামীর নাম কী? কাকে তিনি আসতে বারণ করলেন?
উত্তরঃ দলিতা ভুজঙ্গিনীর স্বামীর নাম বিপিন।তিনি কেষ্টকে আসতে বারণ করলেন।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১।‘‘বিপিনের মনে পড়িল, সেদিনও স্ত্রীর এমনি মুখের ভাব দেখিয়াছিলেন, এমনি কণ্ঠস্বর শুনিয়াছিলেন।” – বিপিন কে? প্রসঙ্গটি বুঝিয়ে দাও।
অথবা,
সেদিনের ঘটনাটি কী? প্রসঙ্গটি বিশদ করো।
উত্তরঃ বিপিন হলেন হেমাঙ্গিনীর স্বামী।
অসুস্থ হেমাঙ্গিনী অসহায় কেষ্টর আশ্রয় ভিক্ষে চেয়েছিলেন স্বামী বিপিনের কাছে। হেমাঙ্গিনী যখন সুস্থ হয়ে পড়ে বিপিন তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। বিপিনের এরূপ আচরণে হেমাঙ্গিনী বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান। হেমাঙ্গিনী বাপের বাড়ি চলে যাবেন এমন কথা বলার পরও বিপিন তার কথায় গুরুত্ব দেননি। হেমাঙ্গিনী সত্যি সত্যি কেষ্টকে নিয়ে যখন গৃহ ত্যাগ করে তখন হেমাঙ্গিনীকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলে হেমাঙ্গিনী বললেন, কেষ্টর জন্য স্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা হলেই হেমাঙ্গিনী গৃহে ফিরবেন। তখন বিপিনের মনে পড়ল, যে সেইদিনও স্ত্রীর এমনি মুখের ভাব দেখেছিলেন এবং এমন কণ্ঠস্বর শুনিয়েছিলেন, যেদিন মতি কামারের নিঃসহায় ভাগিনেয়ের বাগানখানি রক্ষা করবার জন্য তিনি একাকী সমস্ত লোকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।
প্রশ্ন ২। “এমন নিষ্ঠুর আঘাত, এতবড় নির্লজ্জ অপমান মানুষ মানুষকে যে করিতে পারে ইহা যেন তার মাথায় প্রবেশ করিল না।” – কে, কাকে, কীরকম আঘাত ও অপমান করেছিল? প্রসঙ্গ বিশদ করো।
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনীকে কাদম্বিনী জঘন্য ইঙ্গিতের মাধ্যমে আঘাত ও অপমান করেছিলেন।
হেমাঙ্গিনী জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়লে কেষ্ট তার আরোগ্য কামনায় দোকান থেকে টাকা তিনটি নিয়ে তার গ্রামের জাগ্রত দেবী বিশালাক্ষ্মীর পূজা দেয়। কাদম্বিনী সে কথা জানতে পেরে হেমাঙ্গিনীর বাড়িতে এসে বললেন, হেমাঙ্গিনীর মদত পেয়েই কেষ্ট চুরি করার বিদ্যা শিখেছে। তার এরূপ স্বভাব আগে ছিল না। কাদম্বিনীর এ ধরনের মিথ্যা অপবাদে হেমাঙ্গিনী বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেলেন। মানুষ মানুষকে এমন কদর্য অপমান করতে পারে এমন ধারণা হেমাঙ্গিনী স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না।
প্রশ্ন ৩। “তোমার মর্তো নিষ্ঠুর, তোমার মতো বেহায়া মেয়েমানুষ আর সংসারে নেই।” – কে, কাকে, কোন্ প্রসঙ্গে ‘নিষ্টুর’ ও ‘বেহায়া’ বলে উল্লেখ করেছিল? প্রসঙ্গটি বিশদ করো।
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী কাদম্বিনীকে নিষ্ঠুর ও বেহায়া বলে উল্লেখ করেছিলেন।
হেমাঙ্গিনী জ্বরে অসুস্থ হলে কেষ্ট নবীনকে না বলে হেমাঙ্গিনীর জন্য অসময়ের পেয়ারা জোগাড় করতে দোকান ছেড়ে চলে আসে। কেষ্টর এই দোকান পালানোর অপরাধের জন্য কাদম্বিনী তার রাতের আহার বন্ধ করে দেন। হেমাঙ্গিনী পরের দিন একথা জানতে পেরে কেষ্টকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। কাদম্বিনী তা জানতে পেরে হেমাঙ্গিনীর সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেন। তখন হেমাঙ্গিনী বলেন কাদম্বিনী যেন তার ছেলেকে অনাহারে রেখে পরের ছেলেকে শাসন করেন। একথার উত্তরে কাদম্বিনী বলেন যে দেবতার সঙ্গে বাঁদরের তুলনা হয় না। তখন হেমাঙ্গিনী এই উক্তিটি কাদম্বিনীর প্রতি করেছিলেন।
প্রশ্ন ৪। “সে কি করে বুঝাইবে, তার পীড়িত আর্ত হৃদয় দিবারাত্র কাঁদিয়া কাঁদিয়া তার মাকে খুঁজিয়া ফিরিতেছে।” কাকে লক্ষ্য করে কোন্ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই উক্তিটি করা হয়েছে? সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ কেষ্টকে লক্ষ্য করে এই উক্তিটি করা হয়েছে।
মায়ের মৃত্যুর পর কেষ্ট রাজহাটে এসে সৎদিদি কাদম্বিনীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কাদম্বিনী তাকে গলগ্রহ মনে করতেন। কেষ্টকে দিয়ে কাদম্বিনী বাড়ির কাজ করাতেন। কেষ্ট ছিল তার বিধবা মায়ের আদরের ছেলে। কেষ্টর মা গরীব হলেও কেষ্টকে ভালো রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। মায়ের মৃত্যুর পর কেষ্ট অনাথ হয়ে পড়ে। সে মায়ের অনুপস্থিতিতে দিবারাত্রি কেঁদে কেঁদে তাঁর মাকে খুঁজে বেড়াত।
প্রশ্ন ৫। “এ হাতির খোরাক নিত্য যোগাতে গেলে যে আমাদের আড়ত খালি হয়ে যাবে।” – বক্তা কে? বিষয়টি আলোচনা প্রসঙ্গে বক্তার মানসিকতা বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ এখানে বক্তা হলেন কাদম্বিনী।
বিধবা মায়ের মৃত্যুর পর কেষ্ট সৎদিদি কাদম্বিনীর রাজহাটের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কাদম্বিনী কেষ্টকে আপদ বলে মনে করতেন। তিনি সবসময়ই কেষ্টকে গালিগালাজ আর কর্কশ বাক্যে শাসন করতেন। একদিন কেষ্ট ভাত খেতে বসলে কেষ্ট ও নবীন পাশাপাশি বসেছিলেন। নবীন কেষ্টর থালা খালি দেখে কাদম্বিনীকে আরও চারটা ভাত তাকে দিতে বললে। তখন কাদম্বিনী আর এক থালা ভাত এনে কেষ্টর থালায় ঢেলে দিয়ে বললেন এভাবে হাতির খোরাক প্রতিদিন দিলে তাদের ভাঁড়ার শূন্য হতে সময় লাগবে না।
প্রশ্ন ৬। “কেঁচো সাপের মতন চক্র ধরিয়া কামড়াইয়াছে শুনিয়া, তাঁর বিস্ময়ের পরিসীমা রহিল না।” কার কথা বলা হয়েছে? কার মনে বিস্ময় জেগেছিল? বিষয়টি বুঝিয়ে দাও।
অথবা,
এখানে কাকে কেঁচো বলা হয়েছে? কার বিস্ময় জেগেছিল? প্রসঙ্গটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ কেষ্ট সম্বন্ধে এ কথা বলা হয়েছে। মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর মনে বিস্ময় জেগেছিল।
কোন একদিন কেষ্ট ভাত খেতে বসে ভাতের থালা ফেলে উঠে গেলে কাদম্বিনী বললেন কার জোরে কেষ্ট এমন কাজ করার সাহস পায়। কাদম্বিনী বললেন, হেমাঙ্গিনী যেন কেষ্টকে আর না ডাকেন। হেমাঙ্গিনী এসব কথা শোনে কাদম্বিনীকে কিছু বললেন না। কিন্তু তার মনে বিস্ময় জাগল। হেমাঙ্গিনী ভাবতে লাগলেন কত বেশি আঘাত পেলে কারো পক্ষে এমন করা সম্ভব।
প্রশ্ন ৭। “অকস্মাৎ গৃহস্বামীর আগমনে চোরের দল যেরূপ ব্যবহার করে; এরাও ঠিক সেইরূপ আচরণ করে বসিল।” – গৃহস্বামীটি কে? কাদের চোরের দলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে? প্রসঙ্গটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ গৃহস্বামীটি হলেন বিপিন। কেষ্ট ও উমাকে চোরের দলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। উমা এসে যখন তার মা হেমাঙ্গিনীকে জানায় বিপিন আসছেন তখন মেজদিদি হেমাঙ্গিনী বললেন যে বাবু আসছেন। ভাত খেতে বসে কেষ্ট অর্ধেক খাওয়া ভাত ফেলে রান্নাঘরে দরজার আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। কেষ্টকে দেখে উমাও অন্যদিকে পলায়ন করে। কারণ তার মার অপমান সে সহ্য করতে পারে না। গৃহস্বামীর আগমন দেখে চোরের দল যেরূপ ব্যবহার করে, কেষ্ট এবং উমা ঠিক তেমনি ব্যবহার করল।
প্রশ্ন ৮। “কেন তুই পুতুলনাচ দেখতে গেলি না কেষ্ট? গেলে ত এইসব হত না।” কেষ্ট পুতুলনাচ দেখতে না গিয়ে কোথায় গিয়েছিল? এইসব বলতে এখানে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ কেষ্ট পুতুলনাচ দেখতে না গিয়ে অসুস্থ মেজদিদির ঘরে গিয়েছিল তাকে দেখতে।
কেষ্ট পাড়ার দত্তদের বাড়ি পুতুলনাচ দেখতে যাবে বলে কাদম্বিনীর বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল কিন্তু সেখানে না গিয়ে সে হেমাঙ্গিনীকে দেখতে যায়। কাদম্বিনী হেমাঙ্গিনীর পাশে বসা কেষ্টকে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। সে তাকে বজ্জাত, মিথ্যুক বলে গালিগালাজ করে। এতে হেমাঙ্গিনী মনে খুব লাগে। তখন হেমাঙ্গিনী বলেন কেষ্ট যদি তার এখানে না এসে পুতুল নাচ দেখতে যেত তাহলে এমন কথা শোনতে হত না।
প্রশ্ন ৯। “তিনি সুস্পষ্ট দেখিতে লাগিলেন, এই নিরুপায় অনাথ ছেলেটা মা হারাইয়া তাঁকে মা বলিয়া আশ্রয় করিতেছে।” – তিনি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? ‘নিরুপায়’ শব্দটির অর্থ কী? ছেলেটি অনাথ কেন?
উত্তরঃ তিনি বলতে হেমাঙ্গিনীকে বোঝানো হয়েছে। ‘নিরুপায়’ শব্দের অর্থ যার কোনো উপায় নেই।
ছেলেটি বলতে কেষ্টর কথা বলা হয়েছে। কেষ্ট অনাথ কারণ তার মা-বাবা দুজনেই মারা গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন ১০। হেমাঙ্গিনী শশব্যস্তে মাথায় কাপড় দিয়া ঘরের এক পার্শ্বে সরিয়া দাড়াইতেই বড় কর্তা তীব্র কটু কণ্ঠে শুরু করিয়া দিলেন, ‘তোমার জন্যে আর তো আমরা বাড়িতে টিকতে পারিনে মেজবৌমা।” – বড় কর্তার নাম কী? তিনি সম্পর্কে মেজবৌমার কে হন? তিনি মেজ বৌমাকে কেন এমন কথা বলেছেন আলোচনা করো।
উত্তরঃ বড় কর্তার নাম নবীন মুখুজ্জ্যে।
তিনি সম্পর্কে মেজবৌমার ভাশুর। কেষ্ট গয়লাদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা দিয়ে মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর আরোগ্য লাভের জন্য বিশালাক্ষ্মী দেবীর কাছে পূজা দিতে যায়। তাই নবীন ও কাদম্বিনী দোষারোপ করে হেমাঙ্গিনীর শিক্ষার জন্যই কেষ্ট চুরি করতে শিখেছে। ভাশুর কটু কণ্ঠে হেমাঙ্গিনীকে বলতে লাগলেন তার জন্য কি তারা এ বাড়িতে টিকতে পারবেন না।
প্রশ্ন ১১। কেষ্ট কার কাছ থেকে টাকা আদায় করতে গিয়েছিল? ওই টাকা দিয়ে সে কী করেছিল? এর ফলে কী হয়েছিল?
উত্তরঃ কেষ্ট গয়লাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে গিয়েছিল। কেষ্ট ওই টাকা দিয়ে অসুস্থ মেজদিদির আরোগ্য কামনায় তাদের গ্রামের জাগ্রত দেবী বিশালাক্ষ্মীর মন্দিরে পূজা দিতে গিয়েছিল। পূজা দিয়ে কলাপাতার ঠোঙায় প্রসাদ নিয়ে ফিরে এলে টাকা চুরির অপরাধে নবীন কেষ্টকে চোরের মার দিলেন। এত বেশি মার খেয়েও কেষ্ট একটুও কাঁদেনি। ক্ষোভে দুঃখে ও বেদনায় তার হৃদয় পাথর হয়ে গিয়েছিল। সে চণ্ডীমণ্ডপে জ্বরে বেহুঁশ হয়ে পড়েছিল।
প্রশ্ন ১২। “ছেলেটি যে অতিশয় লাজুক ও ভীরু স্বভাব, হেমাঙ্গিনী তাহা পূর্বেই টের পাইয়াছিলেন। তখন তাহার মাথায় মুখে হাত বুলাইয়া দিয়া আদর করিয়া ‘দাদা’ বলিয়া ডাকিয়া, আরও কত কি কৌশলে তাহার ভয় ভাঙ্গাইয়া, অনেক কথা জানিয়া লইলেন।” – ছেলেটি কে? সম্পর্কে হেমাঙ্গিনীর সে কী হয়? হেমাঙ্গিনী কৌশল করে তার কাছে। থেকে কী জেনে নিলেন?
উত্তরঃ ছেলেটি হল কেষ্ট।
সম্পর্কে হেমাঙ্গিনীর বড় জা কাদম্বিনীর সে বৈমাত্রেয় ভাই অর্থাৎ সম্পর্কে সে হেমাঙ্গিনীরও ভাই। হেমাঙ্গিনী কৌশল করে তার দেশের অর্থাৎ গ্রামের বাড়ির কথা, মায়ের কথা, মা কিভাবে আদর যত্ন করতেন, খাওয়াতেন, মায়ের মৃত্যুর কথা ইত্যাদি জেনে নেন।
এরপর এখানে দিদির বাড়িতে তাকে কী কী কাজ করতে হয়। খাওয়া দাওয়ার কথা, দোকানে ধান-চাল ওজন দেওয়া, গ্রামে গ্রামে ঘুরে ধানের নমুনা সংগ্রহ করা ইত্যাদি এমন অনেক কথা জেনে নেন।
প্রশ্ন ১৩। “কাদম্বিনী অবাক হইয়া বলিলেন, আমার পাঁচুগোপালের সঙ্গে ওর তুলনা।” – কাদম্বিনী কে? কার কথা শুনে তিনি এত অবাক হয়েছিলেন? পাঁচুগোপালের সঙ্গে কাদম্বিনীর কী সম্পর্ক? পাঁচুগোপালের সঙ্গে কার তুলনা করেছিলেন?
উত্তরঃ কাদম্বিনী মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর বড় জা, কেষ্টর সৎদিদি।
মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর কথা শুনে তিনি এত অবাক হয়েছিলেন।
কাদম্বিনী ও পাঁচুগোপাল মা ও ছেলে। পাঁচুগোপালের সঙ্গে কেষ্ট-এর তুলনা করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ১৪। “ও বাড়ীতে গিয়ে খে গে যা। বলিয়া হেমাঙ্গিনী নিজের রুটির থালায় মনোযোগ করিলেন।” – কাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা হয়েছে? ‘ও-বাড়ী’ বলতে কোন্ বাড়ীর কথা বলা হয়েছে? হেমাঙ্গিনীর এহেন উক্তির কারণ কী আলোচনা করো।
উত্তরঃ কেষ্টকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা হয়েছে। ‘ও বাড়ী’ বলতে কাদম্বিনীর বাড়ীর কথা বলা হয়েছে।
হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন বলে তার বড় জা কাদম্বিনী তাকে সবসময় কটুকথা শোনাতেন। সেদিনও কাদম্বিনী এসে কেষ্টকে নিয়ে হেমাঙ্গিনীকে যা খুশি তা বলে গেলেন। ঠিক সেই সময়ে কেষ্টও সেখানে এসে হাজির হয়। কেষ্টর প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে বললে হেমাঙ্গিনী তার বড় জা কাদম্বিনীর কথায় ত্যক্ত হয়ে কেষ্টকে এমন কথা বলেছিলেন।
প্রশ্ন ১৫। “কিন্তু ছোঁড়াটাকে ভালবাসি বলেই যেন ওরা আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ওকে দিবারাত্র বিধতে থাকেন।” ছোঁড়াটি কে? ‘আমাকে’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে, এবং তাকে দিবারাত্র কেন কথা শুনতে হয় আলোচনা করো।
উত্তরঃ ছোঁড়াটি হল কেষ্ট। ‘আমাকে’ বলতে হেমাঙ্গিনীকে বোঝানো হয়েছে।
মেজদিদি হেমাঙ্গিনী ছিলেন অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের নারী। তিনি কেষ্টকে সন্তানের ন্যায় দেখতেন এবং স্নেহ করতেন। কেষ্টকে সবসময়ই কাদম্বিনীর হাত থেকে বাঁচাবার চেষ্টা করতেন। তিনি তাকে সবসময়ই লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার দিতেন। কেষ্টর প্রতি হেমাঙ্গিনীর এরূপ ভালোবাসা দেখে কাদম্বিনী সহ্য করতে পারতেন না। তিনি কেষ্টকে গালাগালি ও নিপীড়ন করতেন, যা হেমাঙ্গিনীকে ভীষণ ভাবে আঘাত করত।
প্রশ্ন ১৬। “সমস্ত দুপুর দোকান পালিয়ে কোথায় ছিলিরে কেষ্ট?” – কেষ্টকে এই প্রশ্নটি কে করে? কেষ্ট দোকান থেকে পালিয়ে কোথায় গিয়েছিল?
উত্তরঃ কাদম্বিনী কেষ্টকে এ প্রশ্ন করেছিলেন।
কেষ্ট দোকান থেকে পালিয়ে অসুস্থ মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর জন্য অসময়ের দুটি পেয়ারা আনতে গিয়েছিল। কেষ্ট সারা দুপুর রোদে ঘুরে ঘুরে দুটি পেয়ারা জোগাড় করে আনে যাতে জ্বরের মুখে মেজদিদির খেতে ভাল লাগে।
প্রশ্ন ১৭। পাঁচুগোপাল বলিল, “জানে মেজ খুড়ীমার অসুস্থ শরীর – সন্ধ্যা হলেই ঘুমিয়ে পড়েন,- ও কি কম চালাক!” পাঁচুগোপাল কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছে? কেন বলেছে?
উত্তরঃ পাঁচুগোপাল কেষ্টকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছে।
কেষ্ট গয়লাদের নিকট থেকে আদায় করা টাকা দিয়ে মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর আরোগ্য লাভের জন্য তার গ্রামের জাগ্রত দেবতা বিশালাক্ষ্মী দেবীর পূজা দিতে যায়। নবীন ও কাদম্বিনী মেজদিদিকে দোষারোপ করে যে তার শিক্ষার জন্যই কেষ্ট চুরি করতে শিখেছে। তখন ক্রোধে হেমাঙ্গিনী বলে তার ঘরে কেষ্ট চুরি করার মতলবেই আসে। তখন শিবু বলে সে নিজের চক্ষে পরশু রাত্রিতে তাকে তার মায়ের সামনে দেখেছে এবং তাকে দেখেই কেষ্ট ঘর থেকে ছুটে পালিয়ে গেল। সে ঘরে এসে না পড়লে হয়ত কেষ্ট চুরি করত। এ কথা শুনে পাঁচুগোপাল উপরোক্ত উক্তিটি করেছিল।
প্রশ্ন ১৮। ‘মুহূর্তকালের জন্য হেমাঙ্গিনী হতজ্ঞানের মতো স্তম্ভিত হইয়া রহিল।’ – ‘মেজদিদি’ উপন্যাস অবলম্বনে প্রাসঙ্গিক ঘটনার বিবরণ দাও।
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী জ্বরে অসুস্থ হলে কেষ্ট তাঁর আরোগ্য কামনায় তাগদার আদায়ী টাকা নিয়ে কেষ্ট তার গ্রামের জাগ্রত দেবতা বিশালাক্ষীর পুজো দিয়ে প্রসাদ নিয়ে আসার পর কাদম্বিনী তাকে ধরে ফেললেন এবং স্বামী ও পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে অসুস্থ হেমাঙ্গিনীর বাড়ি গিয়ে জঘন্য অঙ্গভঙ্গীর মাধ্যমে আক্রমণ করলেন। কাদম্বিনী বললেন হেমাঙ্গিনীর সান্নিধ্য পেয়েই কেষ্ট চুরি করা শিখেছে। আর দুদিন পর ডাকাত হবে। তার এরূপ স্বভাব আগে ছিল না। আর তোমাদের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে এত কথা বার্তা কিসের? কাদম্বিনীর এধরনের মিথ্যা অপবাদ শুনে হেমাঙ্গিনী ক্ষণকালের জন্য বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন।
প্রশ্ন ১৯। ‘পেটে মেরে আগে তোমার নিজের ছেলেকে শাসন কর, তারপরে পরের ছেলেকে করো।’ – বক্তা কে? কাকে তিনি একথা বলেছেন? ‘নিজের ছেলে’ আর ‘পরের ছেলে’ কারা লেখো।
উত্তরঃ বক্তা মেজদিদি হেমাঙ্গিনী। বড়-জা কাদম্বিনীকে তিনি একথা বলেছেন। কাদম্বিনীর নিজের ছেলে পাঁচুগোপাল, আর পরের ছেলে বলতে কেষ্টকে বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন ২০। ‘‘আমার দুটি সন্তান ছিল, কাল থেকে তিনটি হয়েছে। আমি কেষ্টর মা।” হেমাঙ্গিনী কোন প্রসঙ্গে কথাটি বলেছে?
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনী জ্বর গায়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে রইলে বিপিন ব্যস্ত হয়ে তাকে বিছানায় তুলতে গেলে হেমাঙ্গিনী বিপিনের কাছ থেকে কেষ্টকে আশ্রয় দেওয়ার কথা আদায় করে নেন। কিন্তু স্ত্রীকে সুস্থ দেখে বিপিন যখন পরদিন সকালবেলা সে কথাকে তুচ্ছ করেছিলেন তখন হেমাঙ্গিনী শান্ত দৃঢ় কণ্ঠে বললেন আমি নিয়ে এলে সংসারে কেউ তাকে আটকাতে পারবে না। আজ থেকে তার তিনটি সন্তান হয়েছে তিনি কেষ্টেরও মা।
প্রশ্ন ২১। “শপথ কচ্ছি, আমি বেঁচে থাকতে তোদের দুই ভাই-বোনকে আজ থেকে কেউ পৃথক করতে পারবে না।” – কে বলেছেন? ভাই-বোন কারা? উক্তিটি প্রাসঙ্গিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ হেমাঙ্গিনীর স্বামী বিপিন এ উক্তিটি করেছেন। ভাই-বোন হল হেমাঙ্গিনী ও কেষ্ট।
কেষ্ট নবীনের দোকান থেকে টাকা চুরি করে মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর আরোগ্য কামনায় বিশালাক্ষ্মী মন্দিরে পূজা দিতে যায়। চুরি করার অপরাধে নবীন তাকে মারধর করেন। এতবেশি মার খেয়েও সে কাঁদেনি। সে চণ্ডীমণ্ডপে জ্বরে বেহুঁশ হয়ে পড়লে হেমাঙ্গিনী এ দুঃসহ সংবাদ শুনতে পেরে স্থির থাকতে পারেননি। তখন হেমাঙ্গিনী স্বামীর কাছে কেষ্টর আশ্রয় ভিক্ষে চাইলেন। কিন্তু তাতে বিপিন বিফল হলে হেমাঙ্গিনী অভিমানে কেষ্টকে নিয়ে গৃহত্যাগ করেন। তিনি গরু গাড়ি ধরে যাত্রা করেন। বিপিন পরে হেমাঙ্গিনীর কাছে ক্ষমা চেয়ে শপথ করেন যে তিনি বেঁচে থাকতে তাদের দুই ভাই – বোনকে কেউ পৃথক করতে পারবে না। বিপিন তার বাড়িতে কেষ্টকে আশ্রয় দেয়।
প্রশ্ন ২২। “এই সেই দিনও ঘুড়ি লাটাই কিনিবার জন্য দু-মুঠা ভাত বেশি খাইয়া পয়সা আদায় করে লইয়াছিল।’ – কার সম্বন্ধে এই উক্তিটি করা হয়েছে? প্রসঙ্গটি বিশদ করো।
উত্তরঃ কেষ্ট সম্বন্ধে এই উক্তিটি করা হয়েছে।
কেষ্টর মা অত্যন্ত গরীব ছিলেন। তিনি কেষ্টকে তা সত্ত্বেও কখনো দুঃখ-কষ্ট দেন নি। কেষ্ট ভাত খেতে না চাইলে তার মা তাকে ঘুড়ি-লাটাই কিনে দেবার পয়সা দিয়ে দুমুঠো ভাত বেশি খাওয়াতেন। মায়ের মৃত্যুর পর কাদম্বিনীর ঘরে যখন কেষ্টকে বেশি খাওয়ার খোঁটা শুনতে হয় তখন এ সব কথা তার মনে পড়ে যায়।
প্রশ্ন ২৩। “তার তখনকার ক্ষুধার তাড়নায় বোধ করি বাঘের মুখ হতেও খাবার কাড়িয়া আনিতে পারিত, কিন্তু দিদিকে ডাকিয়া তুলিবে, এ সাহস হইল না।” – এখানে কার ক্ষুধার কথা বলা হয়েছে? দিদি কাকে বলা হয়েছে? দিদিকে ডেকে তুলবার সাহস কার হল না এবং কেন? প্রসঙ্গটি বিশদ করো।
উত্তরঃ এখানে কেষ্টর ক্ষুধার কথা বলা হয়েছে। ‘দিদি’ কাদম্বিনীকে বলা হয়েছে।
কেষ্ট কাদম্বিনীর স্বামী নবীনের ধান চালের আড়তে কাজ করত। একদিন দুপুরে ভাত খেতে এসে দেরি করে নবীন দোকানে যান। নবীন দোকানে যাওয়ার পর কেষ্ট যখন দুপুর তিনটায় বাড়িতে ভাত খেতে আসে তখন দেখে কাদম্বিনী ঘুমিয়ে পড়েছে। তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ভাত চাওয়ার মতো সাহস কেষ্টর ছিল না। ক্ষুধায় কেষ্টর মনে হচ্ছিল বাঘের মুখ হতেও খাবার কেড়ে নিতে পারে, কিন্তু দিদিকে ডেকে তোলার মতো সাহস কেষ্টর ছিল না।
প্রশ্ন ২৪। “মাতাপুত্র এই নিরাপদ নিরাশ্রয় শিশুকে শাসন করে, লাঞ্ছনা করে, অপমান করে, দত্তক দিয়া চলিয়া গেলেন, সে অন্ধকার ভূমিশয্যায় পড়িয়া আজ অনেকদিন পর আবার মাকে স্মরণ করে মেজদির নাম করে ফুলিয়া কাঁদিতে লাগল।” – মাতাপুত্র কারা? প্রসঙ্গটি আলোচনা করো।
উত্তরঃ মাতা-পুত্র হল কাদম্বিনী ও পাঁচুগোপাল।
উপরোক্ত উক্তিটি কেষ্টর উপর কাদম্বিনীর শাসন প্রসঙ্গে করা হয়েছে।
হেমাঙ্গিনীর জ্বর হলে কেষ্ট দোকান থেকে পালিয়ে গিয়ে হেমাঙ্গিনীর জন্য দুটি অসময়ের পেয়ারা এনে দেয়। কাদম্বিনী কেষ্টকে দোকান থেকে পালিয়ে কোথায় গিয়েছিল তা জানতে চাইলে কেষ্ট কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকায় কাদম্বিনী তার পুত্র পাঁচুগোপালকে দিয়ে কেষ্টর কান মলে দিলেন এবং রাতের খাওয়া নিষিদ্ধ করলেন। সে অপমানে ও ক্ষোভে কাঁদতে শুরু করে। কষ্টের মুহূর্তে আপনজনদের কথা মনে পড়ে। তাই সে সময় দেখা যায় কেষ্ট তার মা এবং হেমাঙ্গিনীর মতো অতিশয় হৃদয়বতী নারীর কথা মনে করে কাঁদতে থাকে।
প্রশ্ন ২৫। “এ দেশে এমন করে যে কেহ কথা বলিতে পারে, ইহা যেন তার মাথায় ঢুকিল না।” – এখানে কার কথা বলা হয়েছে? উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ এখানে মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর সুমধুর কথা বলার কথা বলা হয়েছে।
কাদম্বিনী কেষ্টকে বাড়তি বোঝা বলে মনে করতেন। তিনি সবসময়ই কেষ্টর উপর শাসন, নিপীড়ন ও গালিগালাজ চালাতেন। সেই একই বাড়িতে কাদম্বিনীর জা হেমাঙ্গিনীর কাছ থেকে কেষ্ট মাতৃ-সুলভ স্নেহ, প্রেম, ভালোবাসা পেয়ে অভিভূত হয়ে গেল। কেষ্ট কখনও কাদম্বিনীর কাছ থেকে মিষ্ট কথা শোনেনি। সে জায়গায় হেমাঙ্গিনীর কাছ থেকে এমন সুমধুর ব্যবহার সে কখনও পেতে পারে তা কোনো দিন ভাবতেও পারেনি।
প্রশ্ন ২৬। ‘‘যিনি রাত-দিন কচ্ছেন, তিনিই এর বিহিত করবেন। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি।” – এটা কার উক্তি? কোন্ প্রসঙ্গে এটা করা হয়েছে? সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ এটা কাদম্বিনীর উক্তি।
হেমাঙ্গিনী যখন জানতে পারলেন গতকাল কেষ্ট না খেয়ে সারাদিন ছিল তখন হেমাঙ্গিনী তাকে কিছু খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলেন। তিনি কেষ্টকে বললেন সে যেন তাঁকে তার মরা মা মনে করে। কাদম্বিনী এ সব কথা জানতে পেরে নিজের বাড়ি থেকে হেমাঙ্গিনীকে ডেকে বললেন, “ভাইকে আমি কি খাওয়াতে পারিনে যে, তুমি অত কথা তাকে গায়ে পড়ে বলতে গেছ?” এ ধরনের গা-জ্বালা কথা শুনে হেমাঙ্গিনী সহ্য করতে না পেরে কাদম্বিনীকে বললেন পেটে মেরে আগে নিজের ছেলেকে শাসন করো, তারপর পরের ছেলেকে করো। একথা শুনে কাদম্বিনী মেজ-জাকে অনেক কথা শোনালেন। সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে দাসীকে উপলক্ষ্য করে তিনি উপরোক্ত উক্তিটি করেন।
প্রশ্ন ২৭। “নিজের অবর্তমানে নিজের ছেলেকে এই অবস্থায় হঠাৎ কল্পনা করে ফেলিয়া কান্নার ঢেউ তাঁর কণ্ঠ পর্যন্ত ফেনাইয়া উঠিল। তিনি সেই কান্না চাপিতে – চাপিতে বাড়ি চলিয়া গেলেন।” – এখানে কার কথা বলা হয়েছে এবং কার ছেলের কথা বলা হয়েছে? কে কান্না চাপতে-চাপতে বাড়ি চলে গেলেন? প্রসঙ্গটি বিশদ করো।
উত্তরঃ এখানে হেমাঙ্গিনীর কথা বলা হয়েছে এবং হেমাঙ্গিনীর ছেলে ললিতের কথা বলা হয়েছে।
হেমাঙ্গিনী কান্না চাপতে-চাপতে বাড়ি চলে গেলেন।
কেষ্ট বেলা তিনটা নাগাদ দোকান থেকে বাড়ি এসে দেখল দিদি কাদম্বিনী খেয়ে ঘুমাচ্ছিলেন, তাকে যে কেষ্ট ডাকবে সে সাহস কেষ্টর ছিল না। কাদম্বিনীর মেয়ে টুনি বলল যে রান্নাঘরে ভাত ঢাকা আছে, সে যেন খেয়ে নেয়। হেমাঙ্গিনী কেষ্টর থালায় শুকনো ভাত ও সামান্য ডাল দেখে ব্যথিত হলেন। তিনি বাড়ি গিয়ে এক বাটি দুধ এনে দিলেন। দুধ পেয়ে কেষ্টর মন ভরে গেল। হেমাঙ্গিনীর ছেলে ললিত কেষ্টর সমবয়সী কেষ্টর এ অবস্থায় নিজের ছেলেকে দাঁড় করিয়ে হেমাঙ্গিনীর দু-চোখ অশ্রুতে ভরে গেল। তিনি কান্না চাপতে-চাপতে বাড়ি চলে গেলেন।
প্রশ্ন ২৮। “অনতি পূর্বেই মায়াকান্না কাঁদার অপরাধে বকুনি খাইয়াছিল সেই ধমক তার এত বড় মাতৃশোকেও ঘাড় চাপিয়া রাখিল।” – উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
কে, কার বকুনি খেয়েছিল এবং কেন? প্রসঙ্গটি বিশদ করো।
উত্তরঃ কেষ্ট কাদম্বিনীর কাছে বকুনি খেয়েছিল।
কেষ্ট দীর্ঘপথ হেঁটে দিদি কাদম্বিনীর বাড়িতে এসেছে। তার উপর পূর্বদিনও খায়নি তাই তার ভীষণ খিদে পেয়েছিল। তাই খেতে বসে পাতের ভাত তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলায় নবীন কেষ্টকে আরও ভাত দিতে বললে কাদম্বিনী বলেন, এ হাতির খোরাক নিত্য যোগাতে গেলে তাদের আড়ত খালি হয়ে যাবে। একথা শুনে মর্মান্তিক লজ্জায় কেষ্টর মুখখানি ঝুঁকে পড়ে। তার দু চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে ভাতের থালায় টপটপ করে পড়তে লাগল। কিন্তু দিদির ভয়ে চোখ মুছতে পারল না। কিছু সময় পূর্বেই মায়ের কথা স্মরণ করে কাঁদবার জন্য তাকে ‘মায়াকান্না’ বলে বকুনি খেতে হয়েছিল। দিদির ধমক তার মাতৃশোককে চেপে রাখল।
প্রশ্ন ২৯। “আমি মা – আমার কোলে ছেলে পুলে আছে, মাথার ওপর ভগবান আছেন। এর বেশি আমি গুরুজনের নামে নালিশ করতে চাই নে।” – এটা কার উক্তি? কোন্ প্রসঙ্গে উক্তিটি করা হয়েছে সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ উক্তিটি মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর।
হেমাঙ্গিনী সবসময়ই কেষ্টর প্রতি কাদম্বিনীর করা অন্যায়, অত্যাচারের প্রতিবাদ করতেন। কেষ্ট একদিন কাদম্বিনীকে বলে দিয়েছিল মেজদিদি হেমাঙ্গিনী থাকতে সে কাউকে ভয় করে না। এ ব্যাপার নিয়ে হেমাঙ্গিনীকে কাদম্বিনী গালিগালাজ করেন। তাতে হেমাঙ্গিনীর স্বামী বিপিন বিরক্ত হয়ে স্ত্রী হেমাঙ্গিনীকে এবিষয় নিয়ে অভিযোগ করলে হেমাঙ্গিনী বলেন, সে মা। তিনি কেষ্টকে সন্তানের মতো দেখেন। তার নিজের সন্তান আছে। তিনি গুরুজনের নামে নালিশ করতে চান না। ন্যায়-অন্যায়ের বিচার ভগবানই করবেন।
প্রশ্ন ৩০। “আর দুটি ভাত দাও গো।” – কে, কাকে কোন্ প্রসঙ্গে একথা বলেছে?
উত্তরঃ চোদ্দো বছর বয়সে মাকে হারিয়ে অনাথ কেষ্ট বৈমাত্রের বড়ো বোন কাদম্বিনীর সংসারে এসে উঠে। লোকলজ্জার ভয়ে অনিচ্ছার মধ্যেও দিদি তাকে তার সংসারে ঠাঁই দেয়। সৎদিদির সংসারে তার আপ্যায়নটি ছিল অত্যন্ত কদর্য তবু নিরুপায় বলে নারিকেলের খোলায় করে এনে দেওয়া সামান্য তেল মেখে চান করে সে জামাইবাবুর সঙ্গে ভাত খেতে বসে। কেষ্ট গ্রামের ছেলে বিশেষত মায়ের এক ছেলে তাই ভাতটা একটু বেশি খায়। তার ওপর আগের দিন বিকেল থেকে না খেয়ে পরদিন পথটা অনেক হেঁটে এসেছে। বেলাও হয়েছে। এই নানা কারণে সে তার পাতের ভাতগুলো খেয়ে শেষ করেও তার ক্ষুধা মিটে না। তার জামাইবাবু নবীন মুখজ্জে সামনেই যাচ্ছিল, তা দেখে কাদম্বিনীকে বলে কেষ্টকে আর একটু ভাত দিতে।
প্রশ্ন ৩১। “এই পনেরো-ষোলো বছরের ঘরকন্নায় স্বামীর এত বড় ভ্রাতৃভক্তি তিনি ইতিপূর্বে দেখেন নাই।” – কার এবং কোন ভ্রাতৃভক্তির কথা এখানে বলা হয়েছে?
উত্তরঃ এখানে মেজদিদির স্বামী বিপিনের ভ্রাতৃপ্রীতির কথা বলা হয়েছে। বিপিন বড় শান্তিপ্রিয় মানুষ। তিনি নিজের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শান্তিতে থাকতে পছন্দ করেন। কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত বড় ভাই নবীন ও বিপিনের পরিবার একান্নবর্তী পরিবার ছিল। পরে দুই জা-এর মধ্যে কলহের ফলে আলাদা হয়েছেন। বিপিন স্ত্রীকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসতেন। কিন্তু যখন কেষ্টকে নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া ঝাটি বাড়তে থাকে তখন হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে নিজ সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে শুরু করলে, বিপিন তা মোটেই পছন্দ করতেন না। তিনি কেষ্টকে মোটেই ভালো পেতেন না। যখন কেষ্টকে নিয়ে ঝগড়া চরমে পৌঁছে তখন তিনি কেষ্টকে তার বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছিলেন। এবং দুই পরিবারের ঝগড়া বাঁধলে বিপিন স্ত্রীকে ছেড়ে বড় ভাই নবীনের পক্ষ অবলম্বন করে খলভ্রাতৃভক্তির পরিচয় দেখিয়েছেন। এখানে সেই ভ্রাতৃভক্তির কথাই বলা হয়েছে হেমাঙ্গিনীর মুখ দিয়ে। কারণ হেমাঙ্গিনী স্বামীর সঙ্গে ঘরকন্না করছেন প্রায় পনেরো ষোল বছর যাবৎ।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা,
‘মেজদিদি’ উপন্যসের সারসংক্ষেপ বর্ণনা করো।
অথবা,
‘মেজদিদি’ উপন্যাসটি মাতৃহারা বালকের করুণ কাহিনি। সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ‘‘মেজদিদি’ উপন্যাসে কেষ্ট নামক এক অনাথ বালকের দুঃখ দুর্দশার করুণ কাহিনী বর্ণিত। মেজদিদির প্রকৃত নাম হেমাঙ্গিনী। তিনি কেষ্ট নামক এই বালকটির সৎদিদি কাদম্বিনীর মেজ জা। হেমাঙ্গিনীকে উপন্যাসে সবসময়ই কেষ্টর প্রতি কাদম্বিনীর অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যায়। মায়ের মৃত্যুর পর চৌদ্দ বৎসরের কেষ্টকে রাজহাটে সৎদিদি কাদম্বিনীর বাড়িতে বড়ো করে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। কারণ তার কোন উপায় ছিল না। কাদম্বিনী কেষ্টকে গলগ্রহ ও আপদ বলে মনে করতেন। কেষ্টর সঙ্গে কাদম্বিনীর রক্তের সম্পর্ক কিন্তু তিনি সবসময় তাকে গালিগালাজ, মারধর, অপমান ও লাঞ্ছনা দিতেন। কেষ্টকে দিয়ে তিনি বাড়ির চাকরের কাজ করিয়ে নিতেন। বাড়িতে দুটি চাকর ছিল, কেষ্ট আসার পর একটি চাকরকে ছেড়ে দেন। কাদম্বিনীর মেজ-জা হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে নিজের সন্তানতুল্য মনে করে মনে প্রাণে ভালোবাসতেন। কেষ্টও মেজদিদির মধ্যে তাঁর মাকে খুঁজে পায়। মেজদিদি অসুস্থ হলে তাঁর আরোগ্য কামনায় সে তার গ্রামের জাগ্রত দেবতা বিশালাক্ষ্মীদেবীর মন্দিরে পূজা দিতে চায়। এজন্য সে মেজদিদির কাছে তিনটি টাকা চায়। কিন্তু মেজদিদি টাকা দেওয়ায় সে জামাইবাবু নবীনের দোকানের তাগদার টাকা থেকে টাকা চুরি করে গ্রামের বিশালাক্ষ্মীর মন্দিরে পূজা দিতে যায়।
এই টাকা চুরি এবং দোকান থেকে পালিয়ে যাওয়ায় নবীন ও কাদম্বিনী কেষ্টর উপর অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হলেন। তখন নবীন কাদম্বিনী বিপিনের বাড়ি এসে হেমাঙ্গিনীদের অপমান করে বলেন হেমাঙ্গিনীর শিক্ষার ফলেই কেষ্ট চুরি করতে শিখেছে। তারা কেষ্টর এই কর্মের জন্য হেমাঙ্গিনীকে সম্পূর্ণ দায়ী করে যায়। নবীন বাড়িতে গিয়ে কেষ্টকে অমানুষিক প্রহার করতে লাগলেন। কেষ্ট এত বেশি প্রহার সহ্য করেও কাঁদেনি। সে দুঃখে, ক্ষোভে পাথর হয়ে পড়ে। সে মার খেয়ে চণ্ডীমণ্ডপে জ্বরে বেহুশ হয়ে পড়েছিল। কেষ্টর এই করুণ পরিণতির সংবাদে মেজদিদি স্থির থাকতে পারেননি। তিনি স্বামীর কাছে কেষ্টর জন্য আশ্রয় ভিক্ষা চাইলেন। বিপিন প্রতিশ্রুতি দিলেন কিন্তু হেমাঙ্গিনী সুস্থ হয়ে উঠলে প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে দেন। তখন স্বামীর প্রতি অভিমানে হেমাঙ্গিনী বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হন। বিপিন এসে বাধা দিলে তিনি বললেন কেষ্টকে তার বাড়িতে থাকতে না দিলে তিনি ফিরবেন না। তখন বিপিন বাধ্য হয়ে কেষ্টকে তার বাড়িতে চিরকালের জন্য আশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হেমাঙ্গিনীকে গৃহে নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন।
প্রশ্ন ২। ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের লেখক কে? তাঁর সম্বন্ধে সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী। বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য ঔপন্যাসিকের আবির্ভাব ঘটেছে, কিন্তু শরৎচন্দ্রের মতো কথা সাহিত্যিক অতীতেও আসেননি, ভবিষ্যতেও আসবেন তা খুব একটা আশা করা যায় না। শরৎচন্দ্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী অদ্বিতীয়।
শরৎচন্দ্র ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই সেপ্টেম্বর (৩১শে ভাদ্র ১২৮৩ বঙ্গাব্দ) হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা ভুবনমোহিনী দেবী। প্রভাসচন্দ্র ও প্রকাশচন্দ্র নামে শরৎচন্দ্রের আরও দুই ভাই ছিল। তাঁর দুই বোনের নাম অনিলাদেবী এবং সুশীলা দেবী।
শরৎচন্দ্রের পিতা মতিলাল একটু ভবঘুরে প্রকৃতির মানুষ ছিলেন এবং সাহিত্য বিষয়ে তাঁর অনুরাগ ছিল। পিতার নিকট থেকেই তিনি এই দুটি বিষয় উত্তাধিকার সূত্রে লাভ করেন। শরৎচন্দ্র বাল্যকাল থেকেই প্রতিপালিত হয়েছেন ভাগলপুর মামার বাড়িতে। মামার বাড়ি থেকেই ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাশ করেন। তারপর জুবিলি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু এফ. এ. পরীক্ষার ফি ২০ টাকা জোগাড় করতে না পারায় তাঁর পরীক্ষায় বসা হয়নি। এখানেই তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সমাপ্তি ঘটে।
শরৎচন্দ্রের কর্মজীবনও বিচিত্র। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভাগ্যান্বেষণে রেঙ্গুন পাড়ি দেন। প্রায় দু-বছর বর্মা রেলওয়ের অডিট ক্লার্কের চাকরি করেন। এরপরে বার্মার পাব্লিক ওয়ার্কস অ্যাকাউন্টেন্ট অফিসে চাকুরি নেন। সেখানে অবস্থানকালেই তিনি সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারতী’ পত্রিকায় অনিলাদেবী নামে তাঁর ‘বড়দিদি’ গল্পটি প্রকাশিত হয়। এরপর তাঁর লিখিত ‘রামের সুমতি’ ‘পথ নির্দেশ’ প্রকাশিত হলে শরৎচন্দ্রের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। একে একে তাঁর বিখ্যাত রচনাগুলো প্রকাশিত হতে লাগল। তাঁর সাহিত্য জীবন ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে আছে ‘পল্লীসমাজ’, ‘দত্তা’, ‘শ্রীকান্ত’, ‘দেবদাস’, ‘গৃহদাহ’, ‘পথের দাবী’ ‘মেজদিদি’, ‘বিরাজবৌ’, ‘পণ্ডিতমশাই’ ইত্যাদি। তাঁর ছোটগল্পগুলির মধ্যে হল – ‘মহেশ’, ‘অভাগীর স্বর্গ’, ‘একাদশী বৈরাগী’ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
শরৎচন্দ্র তাঁর সাহিত্য কর্ম ও জনপ্রিয়তার জোরে সামাজিক সম্মানের অধিকারী হয়েছিলেন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর সাহিত্য কর্মের গৌরব হিসেবে তাঁকে ‘জগত্তারিণী’ পদক প্রদান করেন। জীবনের শেষ তিনটি বছর শরৎচন্দ্র দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে ভোগেন। ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই জানুয়ারি কলকাতার পার্ক নার্সিংহোমে এই শক্তিমান কথা সাহিত্যিকের জীবনাবসান হয়।
প্রশ্ন ৩। ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তরঃ গল্প, উপন্যাস, নাটক প্রভৃতির নামকরণ করা হয় চরিত্র, বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গের উপর ভিত্তি করে। বলা বাহুল্য, আলোচ্য উপন্যাসটির নামকরণ করেছেন শরৎচন্দ্র প্রধান চরিত্রের নামানুসারে। ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের উপজীব্য হল পিতৃ-মাতৃহীন বালক কেষ্টর দুঃখ-দুর্দশাপূর্ণ করুণ অবস্থা। মেজদিদি হলেন কেষ্টর সৎদিদি কাদম্বিনীর মেজ জা হেমাঙ্গিনী। তাঁকে সবসময়ই কেষ্টর প্রতি কাদম্বিনীর অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যায়। মায়ের মৃত্যুর পর চৌদ্দ বছরের কেষ্টকে সৎদিদি কাদম্বিনীর বাড়িতে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
কাদম্বিনী কেষ্টকে গলগ্রহ মনে করতেন। তিনি সবসময়ই কেষ্টকে গালিগালাজ করতেন। কেষ্টকে দিয়ে তিনি বাড়ির চাকরের কাজ করিয়ে নিতেন। বাড়িতে দুটি চাকর ছিল, কেষ্ট যাওয়ার পর একটি চাকরকে ছেড়ে দেন। কাদম্বিনীর মেজ-জা হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। মেজদিদি অসুস্থ হলে তার আরোগ্য কামনায় কেষ্ট বিশালাক্ষ্মীর মন্দিরে পুজা দিতে যায় নবীনের দোকান থেকে তিন টাকা চুরি করে। এই টাকা চুরির জন্য নবীন ও কাদম্বিনী কেষ্টর উপর অত্যন্ত খৰ্গ হস্ত হলেন। তারা হেমাঙ্গিনীকে কেষ্টর এই অপরাধের জন্য দায়ী করে যায় এবং কেষ্টকে এত বেশি প্রহার করে। কিন্তু সবকিছু সহ্য করে ক্ষোভে পাথর হয়ে পড়ে। সে মার খেয়ে চণ্ডীমণ্ডপে জ্বরে বেহুঁশ হয়ে পড়েছিল। কেষ্টর এ দুঃসহ সংবাদে মেজদিদি স্থির থাকতে পারেননি। তিনি স্বামীর কাছে কেষ্টর জন্য আশ্রয় ভিক্ষা চাইলেন। বিপিন প্রতিশ্রুতি দিলেন কিন্তু হেমাঙ্গিনী সুস্থ হয়ে উঠলে প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে দেন। তখন স্বামীর প্রতি অভিমানে হেমাঙ্গিনী বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হন। বিপিন এসে বাধা দিলে তিনি বললেন কেষ্টকে আশ্রয় না দিলে তিনি ফিরবেন না। তখন বিপিন কেষ্টকে তার বাড়িতে চিরদিনের জন্য আশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হেমাঙ্গিনীকে গৃহে ফিরিয়ে আনেন।
উপরোক্ত বিষয়বস্তু থেকে সহজেই বোঝা যায় সমগ্র উপন্যাসে মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর ভূমিকা প্রধান। তাঁর সহৃদয়তা, স্নেহশীলতা ও সাহসিকতার জন্য অনাথ কেষ্ট স্থায়ী আশ্রয় পায়। সুতরাং বিষয়ের উপর ভিত্তি করে উপন্যাসের ‘মেজদিদি’ নামকরণ সার্থক হয়েছে।
প্রশ্ন ৪। ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোন্টি? তার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
‘মেজদিদি’ উপন্যাসের হেমাঙ্গিনী চরিত্রটি সংক্ষেপে লেখো।
অথবা,
মেজদিদি কে? তার চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
উত্তরঃ ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘মেজদিদি’ অর্থাৎ হেমাঙ্গিনী। উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদ থেকে শেষ পরিচ্ছেদ অবধি মেজদিদির সক্রিয় ভূমিকা প্রধান ছিল।
কেষ্টর সৎদিদি কাদম্বিনীর মেজ-জা হলেন হেমাঙ্গিনী। এই সূত্রে কেষ্ট হেমাঙ্গিনীকে মেজদিদি ডাকত। উপন্যাসে কেষ্টর প্রতি অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে সবসময়ই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় মেজদিদি হেমাঙ্গিনীকে। অনাথ কেষ্ট যখন নিরুপায় হয়ে সৎদিদি কাদম্বিনীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়, তখন কাদম্বিনী কেষ্টকে গলগ্রহ বলে মনে করতেন। তিনি কেষ্টর সঙ্গে কখনো ভালো কথা বা ভালো ব্যবহার করেন না সবসময়ই গালিগালাজ করে থাকেন। কেষ্ট আসার পর দিনই কাদম্বিনী দুটি চাকরের মধ্যে একটিকে বিদায় করে দেন। কেষ্টকে দিয়ে চাকরের কাজ করিয়ে নিতেন। অন্যদিকে হেমাঙ্গিনী অত্যন্ত হৃদয়বান ও স্নেহময়ী নারী। তিনি যেভাবে নিজের সন্তানকে ভালোবাসতেন ঠিক সেভাবে এই অনাথ বালক কেষ্টকেও ভালোবাসেন। মাতৃহীন কেষ্টকে শুকনো ভাত খেতে দেখে হেমাঙ্গিনী সে স্থানে তিনি তার নিজের ছেলে ললিতের কথা ভাবেন। হেমাঙ্গিনীকে বাড়ি থেকে কেষ্টকে এক বাটি দুধ এনে দিতে তখন দেখা যায়। হেমাঙ্গিনী শুধু কেষ্টকে নয়, এর আগেও দেখা যায় বাড়ির রাখাল ছেলেকে স্নেহের সঙ্গে পালন করেন। মতি কামারের ভাগ্নের বাগানখানা তার স্বামীকে অসৎ উপায়ে নিতে দেননি। হেমাঙ্গিনীর কাছ থেকে ছেলে-মেয়েরা স্নেহ-মমতা পেত বলেই সকলেই তাঁকে ভীষণভাবে ভালোবাসত।
কোনো প্রকার অন্যায়ের কাছে হেমাঙ্গিনী মাথা নত করেন নি। তিনি সমস্ত শক্তি দিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করেন। কাদম্বিনীর ন্যায় নির্দয় ও নিষ্ঠুর নারী ও হেমাঙ্গিনীকে মনে মনে ভয় করত। তাঁর প্রতিবাদী ও প্রতিরোধ ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায় কেষ্টকে নিয়ে স্বামী বিপিনের গৃহত্যাগের ব্যাপারে। স্বামী, যখন কেষ্টকে চিরদিনের জন্য গৃহে আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন, তখনই হেমাঙ্গিনী সগৃহে ফিরে আসেন। স্নেহশিলা, সহৃদয়তায়, আদর্শ নিষ্ঠায় ও সাহসিকতায় মেজদিদি নিঃসন্দেরে একজন অসামান্য নারী।
প্রশ্ন ৫। ‘মেজদিদি’ উপন্যাস অবলম্বনে কাদম্বিনী চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
কাদম্বিনী কে? তার চরিত্র চিত্রণ করো।
অথবা,
‘‘এ স্তুতিতে পুলিশের দারোগার মন ভেজে। কাদম্বিনী মেয়ে-মানুষ মাত্র।” – কাদম্বিনীর চরিত্র সংক্ষেপে লেখো।
অথবা,
“এ স্তুতিতে পুলিশের দারোগার মন ভেজে। কাদম্বিনী মেয়ে মানুষ মাত্র।” – কাদম্বিনীর চরিত্র সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ কাদম্বিনী হলেন নবীনের স্ত্রী। তিনি হেমাঙ্গিনীর বড় জা ও কেষ্টর সৎদিদি ছিলেন।
‘মেজদিদি’ উপন্যাসে কাদম্বিনী একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি একজন হৃদয়হীনা ও নিষ্ঠুর নারী। মায়ের মৃত্যুর পর কেষ্ট নিরুপায় হয়ে তার বাড়িতে আশ্রয় নিলে তিনি তাকে গলগ্রহ আপদ বলে ভাবতেন অথচ তার সঙ্গে কাদম্বিনীর রক্তের সম্পর্ক। কেষ্টকে দিয়ে তিনি চাকরের কাজ করাতেন। তিনি সবসময়ই কেষ্টর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। কেষ্ট দুমুঠো ভাত বেশি খেত বলে তার খাওয়াকে হাতির খাওয়ার সঙ্গে তুলনা দেন। কেষ্ট মায়ের কথা স্মরণে কাঁদলে তার এ কান্নাকে মায়াকান্না বলে বকুনি দিতেও কার্পণ্য করেন না।
কাদম্বিনী অত্যন্ত কুটিল প্রকৃতির নারী। কেষ্ট ও হেমাঙ্গিনীর একে অন্যের প্রতি ভালোবাসাকে তিনি সহ্য করতে পারতেন না। হেমাঙ্গিনীর সঙ্গে ঝগড়ার সময় কাদম্বিনীর কটু কথা বলতে একটুও বিবেকে বাঁধে না। হেমাঙ্গিনী অসুস্থ হলে তার আরোগ্য কামনায় গ্রামের জাগ্রত দেবী বিশালাক্ষ্মীর পূজা দেওয়ার জন্য কেষ্ট নবীনের দোকান থেকে তিনি টাকা চুরি করার জন্য কাদম্বিনী হেমাঙ্গিনীর উপরে চুরি বিদ্যা শিখানোর অপবাদ দেন। বাড়ি থেকে কাদম্বিনী প্রায়ই কেষ্টকে নিয়ে হেমাঙ্গিনীকে শ্লেষ ও তীক্ষ্ণ বাক্য বাণে জর্জরিত করতেন। কাদম্বিনীর এ ধরনের উক্তি থেকে তার নিচ মনোবৃত্তির পরিচয় পাওয়া যায়।
এককথায় কাদম্বিনী চরিত্র একটি নিষ্ঠুর, নির্দয় ও হীনস্বভাবের চরিত্র।
প্রশ্ন ৬। ‘মেজদিদি’ উপন্যাস অবলম্বনে নবীনের চরিত্র বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
নবীন কে? মেজদিদি উপন্যাসে তার ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তরঃ ‘মেজদিদি’ উপন্যাসে নবীন কাদম্বিনীর স্বামী ও বিপিনের বড় ভাই। নবীন ধনী ও বুদ্ধিমান লোক। উপন্যাসটিতে নবীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কেষ্ট দোকান থেকে তিন টাকা চুরি করে বিশালাক্ষ্মী দেবীর মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রসাদ নিয়ে আসার পর কেষ্টর প্রতি অমানুষিক আচরণের ফলে নবীন কাহিনিতে গতি সঞ্চার করেছে। কাদম্বিনীর মতো তিনিও কেষ্টকে অন্তর দিয়ে মোটেই ভালবাসতেন না। তিনি তার দোকানে কেষ্টকে দিয়ে ধান-চাল মাপাতেন। প্রচণ্ড রৌদ্রের মধ্যে কেষ্টকে তিনি কয়েক ক্রোশ দূরে ধান-চালের নমুনা সংগ্রহ করতে পাঠাতেন। বাড়িতে গিয়ে স্নানাহার ও বিশ্রাম নেওয়ার পর যখন নবীন দোকানে ফিরতেন তখন কোনো কোনো দিন বেলা তিনটা বাজে। তিনি কখনও ভাবেননি চৌদ্দ বছরের ছেলেটি এত বেলা অবধি না খেয়ে রয়েছে।
কেষ্টকে নিয়ে যখন হেমাঙ্গিনী ও কাদম্বিনীর কলহ যখন চরম আকার ধারণ করে তখন নবীনই তাতে ইন্ধন জোগায়। কেষ্টকে নিয়ে তিনি ছোটভাই বিপিন ও হেমাঙ্গিনীকে অনেক কটুকথা বলতেও কার্পণ্যবোধ করেননি। নবীনের অমানুষিক প্রহারের ফলে প্রচণ্ড জ্বর আসে। সে চণ্ডীমণ্ডপে জ্বরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শেষপর্যন্ত হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে নিয়ে গৃহত্যাগ করলে বিপিন তার বাড়িতে কেষ্টকে আশ্রয় দেয়। সুতরাং এটা স্পষ্ট বোঝা যায় নবীনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপন্যাসটির পরিণতিদানে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
প্রশ্ন ৭। ‘মেজদিদি’ উপন্যাস অবলম্বনে বিপিনের চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
উত্তরঃ ‘মেজদিদি’ উপন্যাসে বিপিন চরিত্রটি একটি অন্যতম চরিত্র। তিনি মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর স্বামী ও নবীনের মধ্যম ভাই। বিপিন মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি। তিনি শান্তি প্রিয় মানুষ। নিজের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শান্তিতে থাকতে পছন্দ করেন তিনি। কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত দুই ভাইয়ের পরিবার একই পরিবার ভুক্ত ছিল। পরে পারিবারিক কলহে আলাদা হয়ে যান।
বিপিনের স্ত্রী হেমাঙ্গিনী অত্যন্ত হৃদয়বান মহিলা। তিনি অসহায় সন্তানদের আপন সন্তান হিসেবে কাছে টেনে নিতেন। অন্যদিকে বিপিন হলেন আলাদা ধাঁচের লোক। তিনি ছিলেন আত্মকেন্দ্রিক স্বভাবের লোক। তাই কেষ্টর প্রতি তার কোনো সহানুভূতি ছিল না। কেষ্টকে নিয়ে যখন দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়াঝাটি আরম্ভ হয় তখন বিপিন কেষ্টকে বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছিলেন।
বিপিনের মধ্যে অপরের ধনের প্রতি লোভ লক্ষ্য করা যায়। একবার বিপিন মতি কামারের ভাগ্নের বাগান আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হেমাঙ্গিনীর বিরোধিতার জন্য তা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
বিপিনের মধ্যে সুবিধাবাদী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। হেমাঙ্গিনী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মানসিক শান্তি প্রদানের জন্য বিপিন কেষ্টকে তার বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন হেমাঙ্গিনী সুস্থ হয়ে উঠেন তখন তিনি সেই প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে দেন। হেমাঙ্গিনী বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার কথা বললেও বিপিন তা গ্রাহ্য করেননি। যখন সত্যি সত্যি হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে নিয়ে গৃহত্যাগ করে তখন বিপিন তার কৃতকর্মের জন্য হেমাঙ্গিনীর কাছে ক্ষমা চান এবং শপথ করে বললেন তিনি জীবিত থাকতে তাঁরা দুই ভাই-বোন অর্থাৎ হেমাঙ্গিনী-কেষ্টকে কেউ পৃথক করতে পারবে না। তারপর বিপিন দিদিকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে কেষ্টকে বললেন।
লেখক বিপিন চরিত্রের মধ্য দিয়ে দোষে গুণে মেশানো এক সাধারণ মানুষের বাস্তব চিত্র অঙ্কন করেছেন।
প্রশ্ন ৮। ‘মেজদিদি’ উপন্যাস অবলম্বনে কেষ্টর চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধায়ের ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কেষ্ট। তাঁকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসটি বিস্তার লাভ করেছে। পিতৃমাতৃহীন অসহায় কেষ্ট কাদম্বিনীর সৎভাই। তার বয়স চৌদ্দ বছর। সে আসার পর থেকেই কাদম্বিনী তাকে আপদ বলে মনে করতেন। আর বাড়ির দুটি চাকরের মধ্যে একটি ছেড়ে দেন। কেষ্টকে দিয়ে তিনি চাকরের কাজ করাতেন। বাসন মাজাতেন, কাপড় কাছাতেন। তাছাড়া কেষ্ট নবীনের আড়তে ধান চাল মাপত এবং রৌদ্রে ঘুরে ঘুরে ধান-চালের নমুনা সংগ্রহ করত। কেষ্টর ভাগ্যে সবসময়ই জুটত লাঞ্ছনা, যন্ত্রণা আর অত্যাচার। অন্যদিকে কাদম্বিনীর মেজ-জা হেমাঙ্গিনীর কাছ থেকে কেষ্ট পেয়ে ছিল স্নেহ আর মমতা।
কেষ্ট চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য সহনশীলতা। বড়দিদির অত্যাচার আর আঘাত তার গায়ে লাগত না। কিন্তু মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর কাছ থেকে স্নেহ-মমতা পেয়ে কেষ্ট নতুন জীবন ফিরে পায়। হেমাঙ্গিনীর মাতৃস্নেহ কেষ্টর বুকের আঘাতগুলোকে কান্নারূপে ঝরিয়ে দেয়, তাকে প্রতিবাদী করে তুলে। তার প্রতি বড়দিদি কাদম্বিনীর ভাতের খোটার জবাবে বলতে পারে – “আমার মেজদিদি থাকতে কাউকে ভয় করিনে।” তার এই প্রতিবাদ হেমাঙ্গিনীর মনেও বিস্ময় জাগায়, এটা নিরীহ কেঁচোর সাপের মতো ফণা তুলে কামড়ানোর সামিল হলেও সেটা সম্ভব হয়েছিল যত না কাদম্বিনীর পীড়নে তার থেকে বেশি হেমাঙ্গিনীর স্নেহে।
কেষ্টর সমস্ত যন্ত্রণা সহ্য করবার যে মানসিক জোর তার উৎস হেমাঙ্গিনীর অপরিমিত ভালোবাসার অধিকার। তাই এই একটি তুচ্ছ অনাথ বালক ভালোবাসার প্রতিদানে মা ফিরিয়ে দেয়, হেমাঙ্গিনীর গর্ভে ধরা সন্তান ললীত তা ফিরিয়ে দিতে পারে না। ললিত মায়ের পাঁচ-ছ দিন জ্বরে একবার ও কাছে আসে না আর কেষ্ট পুতুল নাচ দেখতে যাওয়ার বাহানা করে কাদম্বিনীর কাছ থেকে ছুটি নিয়ে আসে হেমাঙ্গিনীর কাছে। দিদির বুকে সর্দি বসার আশঙ্কা নিয়ে চোখের জল ফেলতে থাকে। সবরকম অত্যাচারের ভয়কে দূরে ফেলে মেজদিদির কাছে ছুটে আসার প্রবল আগ্রহ, দূর থেকে অসুস্থ দিদিকে দেখবার জন্য কাতর অনুনয়, চুরির পয়সায় পুজোর প্রসাদ এনে তার অসুখ দূর করবার চেষ্টা এবং এই সমস্ত কাজের জন্যই বিনা প্রতিবাদে ভয়ানক অত্যাচার সহ্য করে কেষ্ট ভালোবাসার মাধুর্য প্রকাশ করেছে। মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর কাছেও সে পেয়েছিল অগাধ ভালোবাসা এবং শেষ পর্যন্ত মেজদিদির বাড়িতে তার স্থায়ী আশ্রয় হয়।
প্রশ্ন ৯। “আঘাত যতই গুরুতর হোক, প্রতিহত করতে না পারলে লাগে না।” – শরৎচন্দ্রের ‘মেজদিদি’ কাহিনী অবলম্বনে উক্তিটির প্রাসঙ্গিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ কেষ্টর উপর কাদম্বিনীর শাসন প্রসঙ্গে এই উক্তিটি করা হয়েছে।
কেষ্ট হেমাঙ্গিনীকে খুবই ভালোবাসত। তাই হেমাঙ্গিনীর জ্বর হলে কেষ্ট দোকান হতে পালিয়ে গিয়ে হেমাঙ্গিনীর জন্য অসময়ের দুটি পেয়ারা এনে দেয়। কাদম্বিনী একথা জানতে পেরে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে। হেমাঙ্গিনীকে পেয়ারা দিয়ে ফিরে আসতেই কাদম্বিনী কেষ্টকে চেপে ধরল – দোকান পালিয়ে সে কোথায় গিয়েছিল। কেষ্ট কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল। তখন কাদম্বিনী পুত্র পাঁচু-গোপালকে দিয়ে কান মলিয়ে দিলেন এবং রাতের আহার বন্ধ করে দিলেন। ক্ষোভে ও অপমানে কেষ্ট কাঁদতে লাগল। হেমাঙ্গিনীর স্নেহ ও ভালোবাসা না পেলে সে হয়তো কাঁদত না। হেমাঙ্গিনীর স্নেহ ও ভালোবাসা কেষ্টর অবলম্বন। তাই আঘাত যতই কঠিন হোক না কেন কেউ যদি তা প্রতিহত না করে তাহলে গায়ে আঘাত লাগে না। পর্বত শিখর হতে পড়লেই হাত পা ভাঙ্গে না। মাটিতে পড়লেই হাত পা ভেঙ্গে যায়। মাটি পতন বেগকে প্রতিহত করে বলেই এরকমটি হয়। কেষ্ট হেমাঙ্গিনীর স্নেহ ভালোবাসা পেয়েছিল বলেই তার নাম করে নিজের ঘরে বসে কাঁদতে লাগল।
প্রশ্ন ১০। ‘মনে পড়িল, এ মেজবৌ সে নয়, যাহাকে চোখ রাঙাইয়া টলান যায়। – এ কথা কার মনে পড়েছিল? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ঘটনার বিবরণ দাও।
উত্তরঃ একথা হেমাঙ্গিনীর স্বামী বিপিনের মনে পড়েছিল।
কেষ্ট তার মেজদিদির অসুখ ভালো করার জন্য সবরকম অত্যাচারের ভয় উপেক্ষা করে দোকানের তাগদার টাকা চুরি করে ঠাকুরের প্রসাদ নিয়ে আসে। এর ফলে কাদম্বিনীর মনে ভয়ংকর আক্রোশের জন্ম দেয়, সে স্বামী-পুত্র মিলে কেষ্টর উপর যে অত্যাচার করে তা শুনে হেমাঙ্গিনীর মাতৃহৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যায়। তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় বিপিন কেষ্টকে তাদের বাড়িতে স্থান দিবে এ প্রতিশ্রুতি দিলে হেমাঙ্গিনী সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু পরে বিপিন তাঁর প্রতিশ্রুতি অস্বীকার করেন। স্বামীর এই দ্বিচারিতা হেমাঙ্গিনীর নারীত্বকে চরম আঘাত করে। অন্যদিকে কেষ্টও মারের চোটে জ্বরে বেহুশ হয়ে পড়ে। এক অনাথ বালকের এই অসহায়তা দূর করবার জন্য হেমাঙ্গিনী নিজের হৃদয়কে শক্ত করে তোলেন। নিজের স্বামী-সংসার পুত্র-কন্যা ছেড়ে অনাথ কেষ্টকে রক্ষা করবার জন্য তাঁর বাবার বাড়ির দিকে কেষ্টকে নিয়ে রওয়ানা দেন।
হেমাঙ্গিনীর এ দৃঢ় পদক্ষেপে বিপিনের হৃদয়ও কেঁপে যায়। তিনি তার পত্নীকে চেনেন, ভালোবাসেন, কোন অসহায়ের পক্ষে দাঁড়াবার প্রশ্নে হেমাঙ্গিনীর স্পষ্ট অবস্থান বিপিনের অজানা নয়। মেজবৌকে যে চোখ রাঙিয়ে টলানো যায় না তাও জানেন। তাই তিনি স্ত্রীর কাছে মাপ চেয়ে বাড়ি ফেরার অনুরোধ করেন।
প্রশ্ন ১১। ‘‘আগেকার দিনে যেমন যবনেরা গরু সম্মুখে রাখিয়া রাজপুত সেনার উপর বাণ বর্ষণ করত, বড় বৌকে আজকাল প্রায় তেমনি জব্দ করিতেছিলেন।” – উক্তিটির প্রাসঙ্গিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘মেজদিদি’ উপন্যাসে হেমাঙ্গিনী ছিলেন অত্যন্ত হৃদয়বান ও কোমল হৃদয়ের নারী। অপরদিকে তারই বড় জা কাদম্বিনী একজন হৃদয়হীনা কুটিল প্রকৃতির নারী। মেজদিদি অনাথ কেষ্টকে সন্তানের ন্যায় দেখতেন এবং স্নেহ করতেন। কেষ্টকে সব সময় কাদম্বিনীর অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাবার চেষ্টা করতেন, তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার দিতেন। কেষ্ট ও হেমাঙ্গিনীর একে অন্যের প্রতি ভালোবাসাকে কাদম্বিনী মোটেই সহ্য করতে পারতেন না। কেষ্টর প্রতি গালিগালাজ, নিপীড়ন হেমাঙ্গিনীকে ভীষণভাবে আঘাত করত।
কেষ্ট হেমাঙ্গিনীকে খুবই ভালোবাসত, তাই হেমাঙ্গিনীর জ্বর হলে সে দোকান হতে পালিয়ে গিয়ে হেমাঙ্গিনীকে অসময়ের দুটি পেয়ারা এনে দেয়। কাদম্বিনী একথা জানতে পেরে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে এবং পুত্র পাঁচু গোপালকে দিয়ে কেষ্টর কান মলিয়ে দিলেন এবং রাতের আহার বন্ধ করে দিলেন। এ ব্যাপারে হেমাঙ্গিনী সব জানলে দুই জার মধ্যে বিবাদ তুঙ্গে উঠে। কাদম্বিনী হেমাঙ্গিনীর স্বামী বিপিনের কান ভারি করে তুলেন। বাড়ি থেকে কাদম্বিনী প্রায়ই কেষ্টকে নিয়ে হেমাঙ্গিনীকে শ্লেষ ও তীক্ষ্ণ বাক্যবানে জর্জরিত করতেন। একদিন বিকেল বেলা বিপিন ঘরে এসে স্ত্রীকে কিছু কথা শুনিয়ে বললেন, ‘দাদা পর্যন্ত ভারী রাগ করেছেন।’ তার কিছু সময় পূর্বে কাদম্বিনী স্বামী নবীনকে উপলক্ষ্য করে এবং হেমাঙ্গিনীকে লক্ষ্য করে চিৎকার করে যেসব অপভাষার তীর ছুঁড়ে দিলেন তা মেজদিদি দেখলেন একটিও নিষ্ফল হয়নি। সবকটি বাক্যবাণ হেমাঙ্গিনীকে বিদ্ধ করেছিল, কিন্তু মধ্যখানে ভাসুর থাকায় হেমাঙ্গিনীর সে বাক্যবাণ সহ্য করা ছাড়া উপায় ছিল না।
এই বাক্যবাণকে লেখক একটি উপমার সাহায্যে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আগেকার দিনে যখন মোঘল-পাঠানের সাথে রাজপুতদের যুদ্ধ হত তখন পাঠানরা গরু সম্মুখে রেখে রাজপুত সেনাদের উপর তীর ছুঁড়ত। কারণ রাজপুত সেনারা গরুর উপর তীর ছুঁড়ত না কেননা এটা তাদের ধর্মে আঘাত হানে, তাই পাঠানরা যুদ্ধে জয়ী হত। এখানে কাদম্বিনী ও হেমাঙ্গিনীকে জব্দ করার জন্য স্বামী নবীনকে উপলক্ষ্য করে বাক্যবাণ ছুঁড়েছিলেন।
টীকা লেখো:
১। কেষ্ট: ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের একটি গুরত্বপূর্ণ চরিত্র কেষ্ট। তাঁকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসটির কাহিনি প্রসারিত হয়েছে। মায়ের মৃত্যুর পর কেষ্ট সৎদিদি কাদম্বিনীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কাদম্বিনী তাঁকে আপদ বলেই মনে করতেন। কেষ্টকে দিয়ে তিনি চাকরের কাজ করাতেন। কেষ্ট নবীনের আড়তে ধান-চালের মাপা-জোকা করত এবং রৌদ্রে ঘুরে-ঘুরে ধান-চালের নমুনাও জোগাড় করত। সে মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর স্নেহ- মায়া-মমতা পেয়ে নতুন জীবন লাভ করেছিল।
২। কাদম্বিনী: ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের একটি প্রধান চরিত্র হল কাদম্বিনী। সে নবীনের স্ত্রী ও কেষ্টর সৎদিদি। মায়ের মৃত্যুর পর কেষ্ট সৎদিদি কাদম্বিনীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কাদম্বিনী তাঁকে গলগ্রহ মনে করতেন। তিনি একজন হৃদয়হীনা নিষ্ঠুর স্বভাবের নারী। কেষ্ট ও হেমাঙ্গিনীর একে অন্যের প্রতি ভালোবাসাকে কাদম্বিনী সহ্য করতে পারতেন না। অসুস্থ হেমাঙ্গিনীর আরোগ্য লাভের জন্য কেষ্ট নবীনের দোকান থেকে টাকা তিনটি নিয়ে বিশালাক্ষ্মীর পূজা দেয়। এর ফলে কাদম্বিনী কেষ্টকে শাস্তি দেন এবং হেমাঙ্গিনীকে কেষ্টকে চুরির শিক্ষা দেন বলে অপবাদ দেন। এতে তাঁর হীন মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়।
৩। হেমাঙ্গিনী: হেমাঙ্গিনী ‘মেজদিদি’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। কেষ্টর সৎদিদি কাদম্বিনীর মেজ জা হলেন মেজদিদি হেমাঙ্গিনী। তাই কাদম্বিনীর মেজ জাকে কেষ্ট মেজদিদি বলত। উপন্যাসে কেষ্টর প্রতি কাদম্বিনীর অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে সবসময়ই সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যায় মেজদিদি হেমাঙ্গিনীকে। হেমাঙ্গিনী অত্যন্ত স্নেহময়ী নারী। তিনি যেমন নিজের ছেলেকে যেভাবে ভালোবাসতেন তেমনি কেষ্টকেও ভালবাসতেন। হেমাঙ্গিনী স্নেহশীলতায়, আদর্শনিষ্ঠায় ও সাহসিকতায় আবৃত এক অমায়িক চরিত্র।
৪। নবীন: নবীন কাদম্বিনীর স্বামী ও বিপিনের বড় ভাই। তিনি বিত্তবান লোক। তাঁর ধান-চালের ব্যবসা। চৌদ্দ বছরের বালক কেষ্টকে দিয়ে তিনি এই ব্যবসা চালাতেন। গল্পের শেষাংশে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কেষ্ট টাকা চুরি করার ফলে নবীন মারধর করায় কেষ্টর জ্বর আসে তখন হেমাঙ্গিনী কেষ্টর এ অবস্থা দেখে স্থির থাকতে পারেন না। তিনি বিপিনের কাছে কেষ্টর আশ্রয় ভিক্ষে চেয়েছিলেন এবং শেষপর্যন্ত বিপিনের বাড়িতে কেষ্ট আশ্রয় পেয়েছিল।
৫। বিপিন: বিপিন হলেন ‘মেজদিদি’ উপন্যাসে মেজদিদি হেমাঙ্গিনীর স্বামী এবং নবীনের ছোট ভাই। তিনি শান্তিপ্রিয় মানুষ। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি শান্তিতে থাকতে পছন্দ করেন। বিপিন কেষ্টকে ভালো পেতেন না। কেষ্টকে নিয়ে যখন উভয় পরিবারে ঝগড়া-ঝাঁটি শুরু হয় তখন তিনি কেষ্টকে তার বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছিলেন। গল্পের শেষে দেখা যায় কেষ্টকে তার বাড়িতে আশ্রয় দিবেন এই প্রতিশ্রুতি স্ত্রীকে দিয়েও সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন, এতে কেষ্টকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বাহির হয়ে গেলে তিনি আবার ফিরিয়ে আনেন এবং কেষ্টকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দেন।
৬। পাঁচুগোপাল: পাঁচুগোপাল নবীন ও হেমাঙ্গিনীর পুত্র। সে পনেরো-ষোল বছরের বালক। কেষ্টর সমবসয়ী ছিল। কিন্তু কেষ্টর সহিত তার সদ্ভাব ছিল না। হেমাঙ্গিনী অসুস্থ হলে তার জন্য কেষ্ট দোকান পালিয়ে অসময়ের দুটি পেয়ারা এনে দিয়েছিল। এই অপরাধের জন্য সে ভাগিনা হয়েও মামা কেষ্টর কান মলে দিয়েছিল।
৭। ললিত: ললিত বিপিন ও হেমাঙ্গিনীর পুত্র। সে কেষ্টকে অন্তর দিয়ে ভীষণ ভালোবাসত। ললিত তা বুঝতে পারে বলেই দত্তদের বাড়ির পুতুলনাচে যাওয়ার আগে সে মার কাছ থেকে টাকা না চেয়ে কেষ্টর সঙ্গে একটু দেখা করে নেওয়ার কথা বলে হেমাঙ্গিনীকে।
৮। উমা: বিপিন ও হেমাঙ্গিনীর মেয়ে উমা। সে কেষ্টকে মামা বলে সম্বোধন করত। সবসময়ই মাকে এসে সে কেষ্টর মামার উপর অত্যাচারের নানা কথা বলত। কাদম্বিনী মেরে কেষ্টর নাক দিয়ে রক্ত বের করে দেওয়ার কথাও উমাই এসে হেমাঙ্গিনীকে জানায়। উমা তার মায়ের খুবই আদরের মেয়ে।
৯। বিশালাক্ষ্মী দেবী: বিশালাক্ষ্মী দেবী কেষ্টর গ্রামের জাগ্রত দেবতা। গ্রামের মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস আপদে-বিপদে তাঁর শরণাপন্ন হলে তিনি বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। হেমাঙ্গিনী অসুস্থ হলে কেষ্ট তাঁর আরোগ্য লাভের আশায় নবীনের দোকান থেকে টাকা চুরি করে এসে বিশালাক্ষ্মী দেবীর এই মন্দিরে পূজা দিতে গিয়েছিল। কেষ্টরও বিশালাক্ষ্মী দেবীর কৃপার উপর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে দেবীর পূজা দিলে তার মেজদিদি হেমাঙ্গিনী সুস্থ হয়ে পড়বে।