Class 11 Political Science Chapter 10 সংবিধানের রাজনৈতিক দর্শন

Class 11 Political Science Chapter 10 সংবিধানের রাজনৈতিক দর্শন answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Political Science Chapter 10 সংবিধানের রাজনৈতিক দর্শন and select needs one.

Class 11 Political Science Chapter 10 সংবিধানের রাজনৈতিক দর্শন

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Political Science Chapter 10 স্থানীয় সরকার Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

সংবিধানের রাজনৈতিক দর্শন

পাঠ: ১০

প্ৰথম খণ্ড

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। কে গণপরিষদে উদ্দেশ্য সম্পর্কিত প্রস্তাব উত্থাপন করেন?

উত্তরঃ পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। 

প্রশ্ন ২। সংবিধান খসড়া কমিটির সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ ডা. বি. আর. আম্বেদকর। 

প্রশ্ন ৩। সংবিধান খসড়া কমিটিতে কতজন সদস্য ছিলেন?

উত্তরঃ ৭জন।

প্রশ্ন ৪। আসাম হতে সংবিধানের খসড়া কমিটিতে কে সদস্য ছিলেন?

উত্তরঃ মোহম্মদ শাদুল্লা। 

প্রশ্ন ৫। প্রস্তাবনা কি সংবিধানের অংশ?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ৬। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ভারত কী ধরনের রাষ্ট্র? 

উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ভারত একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক গণরাজ্য।

প্রশ্ন ৭। ভারতের সংবিধান কখন গৃহীত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর। 

প্রশ্ন ৮। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত “সমাজতান্ত্রিক” শব্দ কী ধরনের সমাজবাদের অর্থ বহন করছে?

(ক) বৈজ্ঞানিক সমাজবাদ।

(খ) সাম্যবাদ।

(গ) গণতান্ত্রিক সমাজবাদ। 

(ঘ) এদের কোনোটি নয়।

উত্তরঃ (গ) গণতান্ত্রিক সমাজবাদ।

প্রশ্ন ৯। ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত এবং তাই ভারত একটি –

(ক) গণতন্ত্র।

(খ) গণরাজ্য। 

(গ) সংসদীয় গণতন্ত্র।

(ঘ) উদারবাদী গণতন্ত্র।

উত্তরঃ (খ) গণরাজ্য।

প্রশ্ন ১০। ভারতীয় সংবিধানের দর্শন সংবিধানের কোন্ অংশে প্রতিফলিত হয়েছে? 

উত্তরঃ সংবিধানের প্রস্তাবনায়।

প্রশ্ন ১১। ভারতীয় সংবিধানের আদর্শ ও উদ্দেশ্য সংবিধানের কোন্ অংশে প্রতিফলিত হয়েছে।

উত্তরঃ সংবিধানের প্রস্তাবনায়।

প্রশ্ন ১২। ভারতীয় সংবিধানের যে কোনো একটি রাজনৈতিক দর্শন উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ব্যক্ত–স্বাধীনতা।

প্রশ্ন ১৩। সংবিধানের কোন্ অংশকে কে. এম. মুন্সী ‘রাজনৈতিক গোষ্ঠী’ বলেছেন?

উত্তরঃ প্রস্তাবনাকে।

প্রশ্ন ১৪। কোন্ দেশের সংবিধানকে ‘শান্তি সংবিধান’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে?

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালের জাপানের সংবিধানকে।

প্রশ্ন ১৫। ভারতের একজন ভোটারের নিম্নতম বয়সসীমা কত?

উত্তরঃ ১৮ বছর।

প্রশ্ন ১৬। প্রত্যেক নাগরিকই এক একজন ভোটার কি?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ১৭। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় সন্নিবিষ্ট একটি আদর্শ উল্লেখ করো?

উত্তরঃ সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা।

প্রশ্ন ১৮। ভারতবর্ষ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। (সত্য না অসত্য লেখো)

উত্তরঃ সত্য।

প্রশ্ন ১৯। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কি ধর্মীয় স্বাধীনতার অনুমোদন করেছে? (হ্যাঁ বা না লেখো) 

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ২০। সংবিধানের কোন্ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে প্রস্তাবনায় ‘সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সংহতি’ শব্দ কয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে? 

উত্তরঃ ১৯৭৬ সালের ৪২-তম সংশোধনী আইনের মাধ্যমে।।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ধর্মনিরপেক্ষ বলতে তুমি কী বোঝ?

উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ লিপিবন্ধ করা হয়েছে। শব্দাভিধানিক অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে ‘ধর্ম অথবা ধর্মীয় মতাদর্শের প্রতি উদাসীন বা প্রত্যাখ্যান বা বর্জন বোঝায়’। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে বোঝায় কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতি রাষ্ট্র আনুগত্য দেখায় না, বা ধর্মবিরোধী হবে না বা অধার্মিকতার প্রশ্রয় দেবে না। সকল ধর্মের নাগরিকের সমান সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা এবং ধর্ম সম্পর্কে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হবে। ১৯৭৬ সালের ৪২-তম সংবিধান সংশোষন অনুযারী সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি সংযোজন করা হয়েছে।

প্রশ্ন ২। ভারতীয় সংবিধানের ২টি উৎসের নাম উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের দুটি উৎস হল – 

(ক) ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন।

(খ) ব্রিটিশ সংবিধান। এই সংবিধান হতে সংসদীয় পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। 

প্রশ্ন ৩। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সন্নিবেশিত তিন ধরনের ন্যায়ের উল্লেখ করো?

উত্তরঃ প্রস্তাবনায় সন্নিবেশিত তিন প্রকার ন্যায় হল নিম্নরূপঃ

(ক) সামাজিক ন্যায়।

(খ) অর্থনৈতিক ন্যায়। ও

(গ) রাজনৈতিক ন্যায়।

প্রশ্ন ৪। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত দু ধরনের স্বাধীনতার উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ প্রস্তাবনায় উল্লিখিত দু ধরনের স্বাধীনতা হল নিম্নরূপঃ 

(ক) চিন্তা করার স্বাধীনতা (Liberty of thought) 

(খ) অভিব্যক্তির স্বাধীনতা (Liberty of expression)

প্রশ্ন ৫। “আমরা ভারতীয় জনগণ।” এ কথাটির অর্থ ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতীয় জনগণ সংবিধান গ্রহণ ও বিধিবন্ধ করে নিজেদেরকে অর্পণ করছে। এর অর্থ হল জনগণই প্রকৃত শাসন–ক্ষমতার একমাত্র অধিকারী। ভারত রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতার উৎস হল ভারতীয়গণ। সুতরাং ভারতীয় জনগণই ভারতীয় সংবিধানের মূল ভিত্তি। 

‘আমরা ভারতীয় জনগণ’ কথাটির তিনটি দিশা বিদ্যমানঃ

(ক) সার্বভৌম ক্ষমতা দেশের জনতার হাতে ন্যস্ত।

(খ) সংবিধান নির্মাতাগণ জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি। এবং 

(গ) সংবিধান জনগণের সম্মতিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। গণপরিষদ ভারতের জনমতকে সংবিধানে প্রতিফলিত করেছে। সুতরাং সংবিধানের উৎস হল ভারতবাসী।

প্রশ্ন ৬। ভারতের সংবিধানের ৪২-তম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রস্তাবনায় সংযোজিত যে কোনো দুটি/তিনটি শব্দের উল্লেখ করো?

উত্তরঃ সংবিধানের ৪২-তম সংশোধনের মাধ্যমে প্রস্তাবনায় সংযোজিত দুটি/তিনটি শব্দ হল –

(ক) সমাজতান্ত্রিক।

(খ) ধর্মনিরপেক্ষ।

(গ) সংহতি।

প্রশ্ন ৭। ভারতবর্ষকে একটি প্রজাতান্ত্রিক (গণরাজ্য) রাষ্ট্র বলা হয় কেন?

উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারত একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষিত। ‘প্রজাতন্ত্র’ বা ‘গণরাজ্য’ শব্দের অর্থ হল যে শাসন ব্যবস্থায় রাজা বা রাণীর কোনো স্থান নেই। ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান ভারতের জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত। তিনি রাজা বা রাণীর মতো বংশ পরম্পরাগত প্রথানুযায়ী মনোনীত হন না। ভারতের রাষ্ট্রপতি পরোক্ষ পদ্ধতিতে ভারতের জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন। সুতরাং ভারতে প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থা প্রচলিত। ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি হতে ভারতের সংবিধান কার্যকরী হয়। সেইদিন হতে ভারত একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তাই প্রতি বছর ২৬শে জানুয়ারি দিনটিকে ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে পালন করা হয়। 

প্রশ্ন ৮। ভারতীয় সংবিধানের উৎস হিসাবে গণ্য করা হয় এরূপ দুটি অন্যদেশের সংবিধান উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের উৎস হিসাবে গণ্য করা হয় এরূপ দুটি অন্যদেশের সংবিধান হল–

(ক) ইংল্যাণ্ড (UK)। এবং 

(খ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA)। 

প্রশ্ন ৯। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত দু প্রকার সমতার উল্লেখ করো?

উত্তরঃ প্রস্তাবনায় উল্লিখিত দু প্রকার সমতা হল–

(ক) সম মর্যাদা। ও 

(খ) সমান সুযোগ।

প্রশ্ন ১০। প্রস্তাবনা বলতে তুমি কী বোঝ? 

উত্তরঃ প্রস্তাবনা হল সংবিধানের মুখবন্ধ বা ভূমিকা। একে সংবিধানের চাবিকাঠিও বলা হয়। কোনো গ্রন্থের ভূমিকা পড়ে যেমন গ্রন্থটির মূল বিষয় বস্তুর আভাষ পাওয়া যায় তেমনি প্রস্তাবনা দ্বারাও সংবিধানের মূল উদ্দেশ্যের ও লক্ষ্যের সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। প্রতিটি সংবিধানের একটি নিজস্ব দার্শনিক ভিত্তি থাকে যা প্রস্তাবনার মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়। প্রস্তাবনা বাড়ীত সংবিধান লক্ষ্যহীন হয়ে পড়ে। প্রস্তাবনা ভারতের সংবিধান নির্মাতাদের ইচ্ছা ও আশা–আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছে। 

প্রশ্ন ১১। যে কোনো দুটি রাজনৈতিক দর্শনের উল্লেখ করো যা ভারতীয় সংবিধানে মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর ভিত্তি?

উত্তরঃ (ক) উদারবান।

(খ) সমাজবাদ। ও 

(গ) গান্ধীবাদ। 

প্রশ্ন ১৩। ভারতীয় সংবিধানের দুটি মৌলিক দর্শন উল্লেখ করো?

উত্তরঃ (ক) জনগণ ক্ষমতার উৎস। এবং 

(খ) সার্বভৌমত্ব। 

প্রশ্ন ১৪। ভারতীয় সংবিধানেরর প্রস্তাবনায় সন্নিবিষ্ট দুটি আদর্শ উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় সন্নিবিষ্ট দুটি আদর্শ হল – 

(ক) সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা।

(খ) সমতার নীতি প্রতিষ্ঠা করা।

(গ) ব্যক্তি স্বাধীনতা।

প্রশ্ন ১৫। ভারতীয় সংবিধানের দুটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের দুটি সীমাবদ্ধতা হলঃ

(ক) কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ আর্থ–সামাজিক অধিকার মৌলিক অধিকারে অন্তরিভুক্ত করা হয়নি। 

(খ) ভারতীয় সংবিধানে রাজাগুলোর ক্ষমতা কেন্দ্রের তুলনায় খুবই সীমিত। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্যের মানকে খর্ব করেছে।

প্রশ্ন ১৬। ভারতীয় সংবিধানের দুটি মৌলিক উদ্দেশ্য উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের দুটি মৌলিক উদ্দেশ্য হলঃ 

(ক) সকল নাগরিককে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায় প্রধান করা। 

(খ) সকলকে সমান মর্যাদা ও সমান সুযোগ প্রদান করা।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতীয় সংবিধানের রাজনৈতিক দর্শনের যে কোনো চারটি বৈশিষ্ট্য লেখো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের রাজনৈতিক দর্শনের চারটি বৈশিষ্ট্য হল নিম্নরূপঃ

(ক) গণতন্ত্র।

(খ) সামাজিক ন্যায়।

(গ) রাজনৈতিক ন্যায়। ও 

(ঘ) ধর্ম–নিরপেক্ষতা। 

প্রশ্ন ২। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত যে কোনো তিনটি উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখিত তিনটি উদ্দেশ্য নিম্নরূপঃ 

(ক) ন্যায়ঃ ভারতীয় সংবিধান ভারতে ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নানা প্রকার ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছে। আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সমাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

(খ) স্বতন্ত্রতাঃ আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় ব্যাক্তি স্বাধীনতার উল্লেখ আছে। স্বাধীনভাবে কথাবলা ও মতামত ব্যক্ত করা, ধর্মাচরণ, পূজার্চ্চনা করা প্রভৃতির উল্লেখ আছে।

(গ) সমতাঃ আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সমতার নীতি বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। আইনের দৃষ্টিতে সকল সমান এবং সকলকে সমান সুযোগ প্রদান করা প্রভৃতি আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

এই উদ্দেশ্যসমূহ রুশ বিপ্লব ও ফরাসি বিপ্লবের প্রতিফলন। 

প্রশ্ন ৩। ভারতীয় সংবিধানের চারটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের সীমাবদ্ধতাগুলো নিম্নরূপঃ 

(ক) ভারতীয় সংবিধানে লিঙ্গ বৈষম্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয় নি।

(খ) আর্থ–সামাজিক কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অধিকার মৌলিক অধিকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি।

(গ) ভারতীয় সংবিধানে রাজ্যগুলোর ক্ষমতা কেন্দ্রের তুলনায় খুবই সীমিত। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্যের মানকে খর্ব করেছে। 

(ঘ) রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সংহতির একটি কেন্দ্রীভূত ধারণা বিদ্যমান।

প্রশ্ন ৪। ভারতবর্ষকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলা হয় কেন? 

উত্তরঃ ভারতবর্ষ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। ভারত আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ব্যাপারসমূহ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রয়োগ করে। ভারতে রাষ্ট্রপরিচালনার কার্যে–যেমন আভ্যন্তরীণ কোনো বাধা বা অবরোধ নেই, তেমনি বৈদেশিক ব্যাপারে ভারত বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত। এক কথায় ভারত সব ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমুক্ত। 

প্রশ্ন ৫। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা আলোচনা করলে আমরা তিনটি মূল উদ্দেশ্য দেখতে পাই। এই উদ্দেশ্য তিনটি কী কী? 

উত্তরঃ প্রস্তাবনা বিশ্লেষণ করলে ভারতের সংবিধান রচনার মূল তিনটি উদ্দেশ্য দেখতে পাওয়া যায়। 

এগুলো নিম্নরূপঃ

(ক) ভারত সরকারের ক্ষমতার উৎস হল “ভারতীয় জনগণ”। 

(খ) ভারতে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করবার সংকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। 

(গ) ন্যায়, স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠা করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

এই উদ্দেশ্যগুলো রুশ বিপ্লব ও ফরাসি বিপ্লবের প্রতিফলন।

প্রশ্ন ৬। ভারতীয় সংবিধানের চারটি আদর্শ উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য কতকগুলো আদর্শ সংবিধানে বিধিবন্ধ করা হয়েছে। 

এই আদর্শগুলো নিম্নরূপঃ

(ক) সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা।

(খ) চিন্তা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, পূজার্চ্চনা, উপাসনার স্বাধীনতা প্রভৃতির ভিত্তি স্থাপন। 

(গ) সমতার নীতির মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগ–সুবিধা প্রদান।

(ঘ) ব্যক্তির মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সংহতি সুনিশ্চিত করে সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বর্ধিত করা। 

প্রশ্ন ৭। ভারতবর্ষকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা হয় কেন?

উত্তরঃ সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ভারত একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ১৯৭৬ সালের ৪২-তম সংশোধনী আইন দ্বারা প্রস্তাবনায় ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদন ও বণ্টনের সম্পূর্ণ ব্যবস্থা রাষ্ট্রের কর্তৃত্বাধীনে আনা হয়। রাষ্ট্র সমাজের প্রতিনিধিরূপে উৎপাদন ও বণ্টনের ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের দেশে সরকারি এবং বেসরকারি খণ্ড পাশাপাশি পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৭৮ সালের ৪৪-তম সংশোধনী আইন দ্বারা সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের তালিকা হতে বাতিল করে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সূচনা করা হয়। ভারতে বর্তমানে গণতান্ত্রিক সমাজবাদ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

প্রশ্ন ৮। ভারতীয় সংবিধানের আদর্শসমূহ উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের আদর্শসমূহ হল নিম্নরূপঃ 

(ক) সমাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায় বিচার।

(খ) চিন্তা, বাক ও মত প্রকাশের, বিশ্বাসের, ধর্ম ও পূজার্চ্চনা, উপাসনা প্রভৃতির স্বাধীনতা।

(গ) ব্যক্তি স্বাধীনতা, ব্যক্তিসত্ত্বার স্বীকৃতি সুযোগের বিষয়ে সমতার নীতি প্রতিষ্ঠা।

(ঘ) ব্যক্তির মর্যাদা ও রাষ্ট্রের ঐক্য ও সংহতি সুনিশ্চয় করার জন্য ভাতৃত্ববোধ বর্ধিত করা।

প্রশ্ন ৯। সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী আমাদের রাষ্ট্রের প্রকৃতি কী? 

উত্তরঃ সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী আমাদের রাষ্ট্রের প্রকৃতি নিম্নরূপঃ

(ক) সার্বভৌম রাষ্ট্র।

(খ) গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। 

(গ) ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।

(ঘ) সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। 

(ঙ) গণরাজ্য।

প্রশ্ন ১০। ভারতবর্ষকে একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা হয় কেন? 

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি হতে ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হয়। প্রতি বছর ২৬শে জানুয়ারি দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি হতে ভারত একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। প্রজাতান্ত্রিক হল যে শাসন ব্যবস্থায় কোন বংশ পরম্পরায় রাষ্ট্রপ্রধান মনোনীত হন না। রাষ্ট্র প্রধান জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত হন। ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি পরোক্ষভাবে জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত।

প্রশ্ন ১১। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় সংবিধানের দর্শন কিভাবে প্রতিফলিত হয়েছে?

উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা পণ্ডিত জওহর লাল নেহরু কর্তৃক রচিত, উদ্দেশ্য সম্পর্কিত প্রস্তাব, অনুসরণে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় রুশ ও ফরাশি বিপ্লবের প্রতিফলন ঘটেছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়ের আদর্শ রুশ বিপ্লব হতে এবং সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শ ফরাসি বিপ্লব হতে গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রস্তাবনার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করলে সংবিধান রচনা করবার নিম্নোক্ত তিনটি মূল উদ্দেশ্য দেখতে পাওয়া যায়ঃ

(ক) ভারত সরকারের ক্ষমতার উৎস “আমরা ভারতীয় জনগণ’।

(খ) ভারতকে একটি ‘সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র করবার সংকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। 

(গ) ভারতে ন্যায়, স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠা করবার পবিত্র উদ্দেশ্য ঘোষণা করা হয়েছে। 

প্রশ্ন ১২। ভারতীয় সংবিধানের চারটি রাজনৈতিক দর্শন উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের চারটি রাজনৈতিক দর্শন নিম্নরূপঃ 

(ক) জনগণ ক্ষমতার উৎস।

(খ) সার্বভৌমত্ব।

(গ) সমাজতান্ত্রিক।

(ঘ) ধর্মনিরপেক্ষতা।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতীয় সংবিধানের সমালোচনাসমূহ আলোচনা করো।

অথবা,

 ভারতীয় সংবিধানের সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধান কতকগুলো সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। প্রধান প্রধান সমালোচনাগুলো নিম্নরূপঃ

(ক) ভারতীয় সংবিধানের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হয় যে এটি অনিয়ন্ত্রিত এবং প্রয়োজনের তুলনায় অত্যধিক দীর্ঘ। ভারতীয় সংবিধান বিশ্বের দীর্ঘতম সংবিধান। সাধারণত সংবিধান সহজ ও সংক্ষিপ্ত হয় এবং তাতে সংবিধানের গুরুত্ব ও গভীরতা প্রকাশিত হয়। কিন্তু সমালোচকদের এই সমালোচনাকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা যায় না। 

(খ) ভারতীয় সংবিধান প্রতিনিধিত্বমূলক নয়। অনেকে সমালোচনা করেন যে,গণপরিষদের সদস্যগণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ছিলেন না। তাই গণপরিষ সত্যিকার অর্থে নির্বাচিত সংস্থা ছিল না।

(গ) সমালোচকগণের মতে, ভারতীয় সংবিধান দেশের আর্থ–সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। 

(ঘ) ভারতীয় সংবিধান লিঙ্গ বৈষম্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করেনি।

(ঙ) ভারতের মতো একটি দরিদ্র উন্নয়নশীল দেশে কতকগুলো আর্থ–সামাজিক অধিকার মৌলিক অধিকারের অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এগুলো নির্দেশাত্মক নীতি–বিষয়ক অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে এগুলো আদালত দ্বারা বলবৎ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই গণপরিষদ কর্তৃক এই অধিকারগুলোকে মৌলিক অধিকারের অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত না করে নির্দেশাত্মক নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার কারণ স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না।

প্রশ্ন ২। ভারতের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করো?

উত্তরঃ ভারতের সংবিধান দীর্ঘতম ও বিশালতম। এর প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) ভারতের মূল সংবিধানে ২২টি অংশ (Parts) ৩৯৫টি ধারা (Articles) এবং ১২টি তপশীল (Schedules) আছে।

(খ) ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতকে একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক গণরাজ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। 

(গ) ভারতের সংবিধানে নাগরিকদের জন্য ছয়টি মৌলিক অধিকার বিধিবন্ধ করা হয়েছে (Part III, Articles 12-35) 

(ঘ) ভারতের সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য কতকগুলো নির্দেশাত্মক নীতি সন্নিবেশিত করা হয়েছে (Part IV, Articles 36-51)।

(ঙ) ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্র ও রাজ্যসমূহে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে।

(চ) কাঠামোগত দিক দিয়ে বিচার করলে ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু প্রকৃত অর্থে পর্যালোচনা করলে ভারতবর্ষ এককেন্দ্রিক হিসাবেই প্রতিপন্ন হয়।

(ছ) ভারতের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি নমনীয়তা ও অনমনীয়তার সংমিশ্রণ। 

(জ) ভারতের সংবিধান সকল নাগরিকদের জন্য এক–নাগরিকত্ব (Single–citizenship) প্রদান করেছে।

(ঝ) ভারতীয় সংবিধান ভারতে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার প্রবর্তন করেছে। আমাদের দেশে ভোটারদের নিম্নতম বয়সসীমা ১৮ বছর।

(ঞ) ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের জন্য ১১টি মৌলিক কর্তব্য সংযোজন করা হয়েছে। সংবিধানের ৪২-তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ৫১ 

(ক) ধারার মাধ্যমে ১০টি মৌলিক কর্তব্য সংযোজন করা হয়েছে। পরবর্তীতে ৮৬-তম সংশোধনের মাধ্যমে ১১-তম মৌলিক কর্তব্যটি সংযোজন করা হয়েছে।

(ট) ভারতীয় সংবিধান ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যের জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করেছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের জন্য পৃথক পৃথক বিচার ব্যবস্থা আমাদের সংবিধানে দেওয়া হয়নি।

প্রশ্ন ৩। ভারতের সংবিধানের মৌলিক উদ্দেশ্যগুলো কী কী? 

উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের মৌলিক উদ্দেশ্যসমূহ ‘উদ্দেশ্য–সম্পর্কিত প্রস্তাব’ হতে অনুসৃত হয়েছে। 

এই মৌলিক উদ্দেশ্যসমূহ হল নিম্নরূপঃ

(ক) ভারতে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করা। 

(খ) গণ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা।

(গ) সকলকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায় প্রদান করা।

(ঘ) সকলকে সমান মর্যাদা ও সমান সুযোগ প্রদান করা।

(ঙ) আইনের দৃষ্টিতে সকল সমান–এই সমতার নীতি প্রতিষ্ঠিত করা।

(চ) স্বাধীনভাবে কথা বলা ও মত ব্যক্ত করা ও ধর্মাচরণ করা। 

(ছ) সংখ্যালঘুদের স্বার্থ যথাযথভাবে সুরক্ষিত করা।

অধিকন্তু ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ গ্রহণ করা, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করা প্রভৃতি ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক উদ্দেশ্য। 

প্রশ্ন ৪। সংবিধানের দর্শন বলতে কী বোঝ? ভারতীয় সংবিধানের রাজনৈতিক দর্শনগুলি আলোচনা করো?

অথবা,

ভারতীয় সংবিধানের রাজনৈতিক দর্শনের ওপরে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো?

উত্তরঃ সংবিধানের দর্শন বলতে কতকগুলো নৈতিক আদর্শ, মূল্যবোধ ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বোঝায় যার মূল্যায়ন ও অন্তর্নিহিত অর্থ সংবিধানে সংরক্ষিত করা হয় বিভিন্ন বিষয় বিধিবদ্ধ করে। এই সকল মূল্যবোধ ও নৈতিক আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি সংবিধানে রাজনৈতিক দর্শন গঠন করে।

ভারতীয় সংবিধানের রাজনৈতিক দর্শনসমূহ নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ 

(ক) জনগণ ক্ষমতার উৎসঃ ভারতের সংবিধান জনগণের উপর সকল ক্ষমতা ন্যস্ত করেছে। জনগণই ক্ষমতার উৎস। 

(খ) সার্বভৌমত্বঃ ভারত একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। ভারত আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণমুক্ত।

(গ) সমাজতান্ত্রিকঃ ভারতবর্ষ একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। 

(ঘ) ধর্মনিরপেক্ষতাঃ সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ প্রতিষ্ঠাকল্পে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

(ঙ) সার্বজনীন ভোটাধিকারঃ গণতান্ত্রিক ভিত্তি সুদৃঢ় করার জন্য আমাদের সংবিধান ভারতে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার প্রবর্তন করেছে। 

(চ) সামাজিক ন্যায়ঃ ভারতের সংবিধানে সামাজিক ন্যায়ের উল্লেখ আছে। সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠাকল্পে সরকার নানা প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। 

(ছ) ব্যক্তি স্বাধীনতাঃ ভারতীয় সংবিধান ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য্যতাবাদের প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারতীয় নাগরিকের চিন্তা ও মত প্রকাশের, পূজার্চ্চনা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা আছে।

(জ) সমতাঃ ভারতীয় সংবিধান সমতার নীতি প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। রাষ্ট্র জাতি, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ, জন্ম প্রভৃতির ভিত্তিতে কোন প্রকার বৈষম্য করবে না।

(ঝ) গণতান্ত্রিক নীতিঃ ভারতের সংবিধান গণতান্ত্রিক নীতি ও আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত। ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। 

(ঞ) সৌজাতৃত্বঃ ভারতের সংবিধানে সৌভ্রাতৃত্বের আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে।সংবিধান বিভিন্নজাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করার জন্য বহুবিধ ব্যবস্থা অবলম্বন করেছে।

প্রশ্ন ৫। “ভারতবর্ষ একটি সার্বভৌম, সমাজবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, গণরাজ্য।” আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভারতবর্ষ একটি সার্বভৌম, সমাজবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, গণরাজ্য। সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতবর্ষকে একটি সার্বভৌম, সমাজবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক গণরাজ্য রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করা হয়েছে। 

সার্বভৌমঃ ভারতবর্ষ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। ভারত আভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ব্যাপারসমূহ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রয়োগ করে। ভারত সব ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমুক্ত।

সমাজবাদীঃ ভারতবর্ষ একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ১৯৭৬ সালে ৪২-তম সংশোধনী আইন দ্বারা প্রস্তাবনায়, ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র সমাজের প্রতিনিধি রূপে উৎপাদন ও বণ্টনের ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি খণ্ড পাশাপাশি পরিচালিত হচ্ছে। ভারতে বর্তমানে গণতান্ত্রিক সমাজবাদ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ধর্মনিরপেক্ষঃ ১৯৭৬ সালে ৪২-তম সংশোধনী আইন দ্বারা প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি সংযোজন করা হয়েছে। ভারতবর্ষে রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতি আনুগত্য দেখায় না, বা রাষ্ট্র ধর্ম বিরোধী হবে না, বা অধার্মিকতার প্রশ্রয় দেবে না। রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হবে ধর্মীয় ব্যাপারে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। 

গণতান্ত্রিকঃ ভারতের সংবিধান গণতান্ত্রিক নীতি ও আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত। ভারতবর্ষ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। 

গণরাজ্যঃ ভারতবর্ষ একটি গণরাজ্য। ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন। ভারতের রাষ্ট্রপতি জনগণ কর্তৃক পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। তিনি বংশানুক্রমিক মনোনীত হন না।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। নিম্নলিখিতগুলোর কিছু সংখ্যক আইন। এগুলো কি কোনও মূল্যবোধের সঙ্গে সংযুক্ত? যদি হ্যাঁ, তবে এর অন্তর্নিহিত মূল্যবোধ কী? কারণ দর্শাও। 

(ক) পুত্র কন্যা উভয়েরই পারিবারিক সম্পত্তির উপর অংশীদারী থাকবে।

উত্তরঃ হ্যাঁ, কারণ তা সামাজিক ন্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য থাকা উচিত নয়। এটি সমতার নীতির পরিপন্থি। 

কারণ-

(খ) ভিন্ন ভোগ্যপণ্যের উপর ভিন্ন ভিন্ন স্তরের জন্য বিভিন্ন বিক্রয় কর থাকবে।

উত্তরঃ হ্যাঁ, এটি আর্থিক ন্যায়ের নীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

(গ) সরকারি বিদ্যালয়ে ধর্মীয় নির্দেশ থাকবে না।

উত্তরঃ হ্যাঁ, এটি ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। 

(ঘ) কোনো ভিক্ষুক অথবা ক্রীতদাস থাকবে না। 

উত্তরঃ হ্যাঁ, এটি ন্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

প্রশ্ন ২। নিচের উক্তিটিকে পূর্ণ করতে নিম্নলিখিত কোন্ বাক্যগুলো ব্যবহার করা যাবে না? 

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের সংবিধানের প্রয়োজন –

(ক) সরকারের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। 

(খ) সংখ্যাগুরু থেকে সংখ্যালঘুকে রক্ষা করার জন্য।

(গ) ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য।

(ঘ) দীর্ঘকালীন পরিকল্পনায় যাতে সাময়িক ভাবাবেগ নষ্ট না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য।

(ঙ) শান্তিপূর্ণ উপায়ে সামাজিক পরিবর্তন অর্জনের জন্য। 

উত্তরঃ (গ) এটি উপনিবেশিক শাসন হতে স্বাধীনতা আনয়ন করে।

প্রশ্ন ৩। নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর আলোকে ভারতীয় সংবিধান এবং পাশ্চাত্য ধারণার মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করো– 

(ক) ধর্ম–নিরপেক্ষতার বোধ।

(খ) ৩৭০ এবং ৩৭১ অনুচ্ছেদ। 

(গ) সদর্থক ক্রিয়াকলাপ।

(ঘ) সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার। 

উত্তরঃ (ক) ধর্মনিরপেক্ষতার বোধ বা ধারণাঃ ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ভারতবর্ষ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তবে ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার সঙ্গে পাশ্চাত্য ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার অনেক অমিল আমরা দেখতে পাই। পশ্চিমী ধর্মনিরপেক্ষতায় সম্পূর্ণভাবে ধর্মের বিষয়ে রাষ্ট্র-নিরপেক্ষ থাকে। ধর্ম সংক্রান্ত ব্যাপারে রাষ্ট্র কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করে না কিন্তু ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্র ধর্মীয় সংস্কার এবং সমতা, স্বাতন্ত্র্যতা ও সামাজিক ন্যায়ের উন্নতিকল্পে ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এটাই পাশ্চাত্য ও ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার মূল পার্থক্য।

(খ) ৩৭০ এবং ৩৭১ অনুচ্ছেদঃ ভারতের সংবিধান নির্মাতাগণ ভারতবর্ষের সে সময়ের পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে আমাদের সংবিধানে ৩৭০ এবং ৩৭১ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছেন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই রাজ্যগুলোর অবস্থা ও পরিস্থিতিকে বিচার বিবেচনার মধ্যে রেখে রাজ্যগুলোকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানের জন্য উক্ত অনুচ্ছেদ দুটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৩৭০নং অনুচ্ছেদ অনুসারে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়। অধিকন্তু ভারতের একমাত্র রাজ্য হিসাবে জম্মু ও কাশ্মীরের পৃথক সংবিধান আছে এবং ৩৭১নং অনুচ্ছেদ মূলত উত্তর–পূর্বাঞ্চলের জনজাতিদের বিশেষ সুবিধা প্রদানের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

(গ) সদর্থক ক্রিয়াকলাপঃ ভারতীয় সংবিধান রচনাকালে গণপরিষদ কতিপয় সদর্থক ক্রিয়াকলাপ গ্রহণ করেছিল। যেমন– রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিসমূহ সংবিধানের ৪র্থ অধ্যায়ে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এই নির্দেশাত্মক নীতিগুলো নাগরিকের স্বার্থ রক্ষার্থে রূপায়ণ করা রাষ্ট্রের মৌলিক কর্তব্য। ভারতীয় সংবিধানে স্বাধীনতার অধিকার, ধর্মের অধিকার, সামাজিক ন্যায় প্রভৃতি ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই ধারণা পাশ্চাত্য ধারণা হতে অপেক্ষাকৃত ভিন্ন ধরনের।

(ঘ) সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারঃ ভারতে ১৮ বছর বয়স্কের সকল সুস্থ নাগরিকগণ ধর্ম, বর্ণ, জাতি, বংশ, পদমর্যাদা, লিঙ্গ নির্বিশেষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। আমাদের সংবিধানে মহিলা ভোটাধিকার প্রথম থেকেই দেওয়া হয়েছে। পাশ্চাত্য বহুদেশে সংবিধান রচনার অনেক পরে মহিলাদের ভোটাধিকার প্রদান করেছে। 

প্রশ্ন ৪। নিম্নলিখিত কোন্ ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি ভারতীয় সংবিধানে গৃহীত হয়েছে? 

(ক) বিষবাদের ধর্মের ব্যাপারে কিছুই করার নেই।

(খ) রাষ্ট্রের ধর্মের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকবে। 

(গ) রাষ্ট্র বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে।

(ঘ) রাষ্ট্র বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে।

(ঙ) রাষ্ট্রের ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে সীমিত ক্ষমতা থাকবে। 

উত্তরঃ (ঙ) রাষ্ট্রের ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে সীমিত ক্ষমতা থাকবে।

প্রশ্ন ৫। নিম্নলিখিত বাক্যগুলোকে অনুরূপভাবে মিলিয়ে সাজাও –

(ক) বিষবাদের চিকিৎসা সমালোচনার স্বাধীনতা। 

(খ) ব্যক্তিস্বার্থ নয়, কারণের ভিত্তিতে গণপরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

(গ) ব্যক্তির জীবনে সম্প্রদায়ের গুরুত্ব স্বীকার। 

(ঘ) ৩৭০ এবং ৩৭১ অনুচ্ছেদ।

(ঙ) পারিবারিক সম্পত্তি এবং শিশুর ব্যাপারে মহিলাদের অ–সম অধিকার। 

(i) স্থায়ী সাফল্য। 

(ii) পদ্ধতিগত সাফল্য। 

(iii) লিঙ্গ বিচারের অবহেলা 

(iv) উদার ব্যক্তিবাদ 

(v) নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রয়োজনের প্রতি মনযোগ।

উত্তর: (ক) — (ii)

(খ) — (i) 

(গ) — (iv) 

(ঘ) — (v) এবং

(ঙ) — (iiiI) 

প্রশ্ন ৭। ভারতীয় সংবিধানের একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, এটি লিঙ্গ বিচারে পর্যাপ্ত নজর দেয়নি। এই অভিযোগের স্বপক্ষে তুমি কী প্রমাণ দেবে? এই সীমাবদ্ধতাকে শোধরাতে তুমি কী ব্যবস্থার সুপারিশ করবে?

উত্তরঃ ভারতের সংবিধান নির্মাতাগণ সংবিধান রচনাকালে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা ও পরিস্থিতি দৃষ্টিগোচরে রেখেছিলেন। কিন্তু সামাজিক অবস্থার কতিপয় বিষয় সম্পর্কে তারা সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। সেই ব্যবস্থাগুলোর অন্যতম বিষয়টি হচ্ছে লিঙ্গ বৈষম্য। লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়নি। অবশ্য সন্তান ও পারিবারিক সম্পত্তির ক্ষেত্রে মহিলা ও পুরুষদের সম–অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমাদের সংবিধানের ৪র্থ অধ্যায়ে রাষ্ট্রপরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। রাষ্ট্রের নির্দেশাত্মক নীতি অনুযায়ী রাষ্ট্র নারী ও পুরুষকে সমান কাজের জন্য সমান পারিশ্রমিক দেওয়ার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করবে। তথাপি আমাদের সংবিধানে লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতি পর্যাপ্ত নজর দেওয়া হয় নি। 

আমরা উপরোক্ত সীমাবদ্ধতা শোধরাতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আমাদের সংবিধানে সংযোজন করার সুপারিশ করতে পারিঃ

(১) তৃতীয় অধ্যায়ে নারী ও পুরুষের জন্য সমান কাজের জন্য সমান অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে সংযোজন করব।

(২) কেন্দ্রীয় সংসদ ও রাজ্যিক আইনসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখব।

(৩) পারিবারিক সম্পত্তির ক্ষেত্রে মহিলা ও পুরুষের সমান অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয় তার জন্য সংবিধানে বিশেষ ব্যবস্থা সংযোজন করব। 

(৪) সকল ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ যাতে সমান অধিকার ও সুযোগ সুবিধা পায় তার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন করব।

প্রশ্ন ৮। কেন বলা যায় যে, ভারতীয় সংবিধানের প্রণয়ন অপ্রতিনিধিত্বমূলক ছিল? সেটি কি সংবিধানকে অপ্রতিনিধিত্বমূলক করেছে? তোমার উত্তরের সপক্ষে কারণ দর্শাও।

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানকে সমালোচকগণ বহুবারই অপ্রতিনিধিত্বমূলক বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে ভারতীয় সংবিধানের নির্মাতা গণপরিষদের সদস্যগণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট দ্বারা নির্বাচিত ছিলেন না অর্থাৎ সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত হননি। অধিকাংশ সদস্যগণ সমাজের অগ্রসর শ্রেণী হতে মনোনীত হয়েছিলেন। দেশীয় রাজাগণ কর্তৃক রাজাগুলো থেকে মোট ৯৩জন সদস্য মনোনীত হন। তাছাড়া আরও চারজন সদস্য চীফ কমিশনার শাসিত রাজ্যগুলো হতে মনোনীত হয়েছিলেন। অধিকন্তু দেশ বিভাজনের পর সদস্য সংখ্যা ৩৮৯জন হতে ২৯৯ জনে হ্রাস পায়। আবার এই ২৯৯ জন সদস্যের মধ্য হতে ২৮৪জন সদস্য সংবিধানে সাক্ষর করে তাদের সম্মতি প্রদান করেন। অনেক সমালোচক এই অভিযোগ করেন যে, যেহেতু ভারতীয় গণপরিষদ ব্রিটিশ সরকারের কেবিনেট পরিকল্পনার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এই সংস্থাকে সার্বভৌম সংস্থা বলা যুক্তিযুক্ত হবে না।

কিন্তু স্বাধীনতার পর গণপরিষদকে সকলপ্রকার কাজের জন্য একটি সার্বভৌম সংস্থা রূপে গণ্য করা হতো। তাছাড়া ভারতের প্রথম নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সংসদ সংবিধানকে অনুমোদন করেছিল। তাই সংবিধান ও সংবিধানসভা অপ্রতিনিধিত্বমূলক ছিল না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top