Class 11 Political Science Chapter 13 সমতা answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Political Science Chapter 13 সমতা and select needs one.
Class 11 Political Science Chapter 13 সমতা
Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Political Science Chapter 13 সমতা Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.
সমতা
পাঠ: ১৩
দ্বিতীয় খণ্ড
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। “মানুষ প্রাকৃতিকভাবে সমান” একথা কে বলেছেন?
অথবা,
“মানুষ স্বাভাবিকমানেই সমান।” এই উক্তিটি কে করেছেন?
উত্তরঃ জন লক্।
প্রশ্ন ২। যে কোনো এক ধরনের সমতা উল্লেখ করো?
উত্তরঃ আইনগত সমতা।
প্রশ্ন ৩। ইতিবাচক সমতার একটি প্রয়োজনীয় উপাদান লেখো?
উত্তরঃ সকলের জন্য যথোপযুক্ত সুযোগ–সুবিধা।
প্রশ্ন ৪। যে কোনো এক প্রকার অর্থনৈতিক সমতার উল্লেখ করো?
উত্তরঃ জীবিকা অর্জনের সমান সুযোগ।
প্রশ্ন ৫। কে ভারতের বিখ্যাত সমাজবাদী নেতা ছিলেন?
উত্তরঃ রামমনোহর লোহিয়া।
প্রশ্ন ৬। কোন দেশে বর্ণ বৈষম্য নীতি প্রচলিত ছিল?
উত্তরঃ দক্ষিণ আফ্রিকায়।
প্রশ্ন ৭। সামাজিক সমতা কী?
উত্তরঃ সামাজিক সমতা হল, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা।
প্রশ্ন ৮। রাজনৈতিক সমতার একটি উদাহরণ দাও?
উত্তরঃ সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকার।
প্রশ্ন ৯। আইনগত সমতার দাবি কখন উত্থাপিত হয়?
উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকে।
প্রশ্ন ১০। মার্ক্সের মতে বৈষম্যের যে কোনো একটি কারণ উল্লেখ করো?
উত্তরঃ মুষ্টিমেয় কতিপয় মানুষের হাতে সম্পদ কেন্দ্রীয়ভূত হওয়া বৈষম্যের একটি প্রধান কারণ।
প্রশ্ন ১১। রামমনোহর লোহিয়া ভারতের কতপ্রকার বৈষম্যের কথা উল্লেখ করেছেন করেছেন?
উত্তরঃ পাঁচ প্রকার।
প্রশ্ন ১২। সপ্ত ক্রান্তি বা সপ্ত সংগ্রামের প্রবক্তা কে?
উত্তরঃ রামমনোহর লোহিয়া।
প্রশ্ন ১৩। রামমনোহর লোহিয়া কতপ্রকার বিপ্লবের কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তরঃ সাতপ্রকার।
প্রশ্ন ১৪। কে “শ্রেণী সংগ্রাম” তত্ত্বটি উপস্থাপন করেন?
উত্তরঃ কার্লমার্ক্স।
প্রশ্ন ১৫। একজন বিখ্যাত লেখকের নাম লেখো যিনি স্বাধীনতা ও সমতা পরস্পর বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন?
উত্তরঃ লর্ড একটন।
প্রশ্ন ১৬। “আইনের চোখে সকল সমান”– ধারণাটি কোন্ প্রকার সমতার কথা ব্যক্ত করে?
উত্তরঃ পৌর সমতার।
প্রশ্ন ১৭। মার্কসবাদ কোন্ প্রকার সমতার উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে।
উত্তরঃ অর্থনৈতিক সমতার উপর।
প্রশ্ন ১৮। সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটাধিকার প্রবর্তনের মাধ্যমে কোন্ প্রকার সমতা প্রতিষ্ঠা করবার ব্যবস্থা করা হয়?
উত্তরঃ রাজনৈতিক সমতা।
প্রশ্ন ১৯। সমতার একটি বৈশিষ্ট্য লেখো?
উত্তরঃ সমতা চূড়ান্ত নয়, তা আপেক্ষিক।
প্রশ্ন ২০। অর্থনৈতিক সমতার লক্ষ্য কী?
উত্তরঃ সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা।
সঠিক উত্তর বেছে লেখোঃ
প্রশ্ন ১। মার্ক্সবাদীদের মতে মৌলিক সমতা হলঃ
(ক) সামাজিক সমতা।
(খ) রাজনৈতিক সমতা।
(গ) অর্থনৈতিক সমতা।
(ঘ) আইনগত সমতা।
উত্তরঃ (গ) অর্থনৈতিক সমতা।
প্রশ্ন ২। আইনগত সমতার দাবি উত্থাপিত হয়েছিলঃ
(ক) সপ্তদশ শতকে।
(খ) ঊনবিংশ শতকে।
(গ) অষ্টাদশ শতকে।
(ঘ) বিংশ শতকে।
উত্তরঃ (গ) অষ্টাদশ শতকে।
প্রশ্ন ৩। “অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন।” কার উক্তি?
(ক) অধ্যাপক লাস্কি।
(খ) জন লক।
(গ) থমাস হবস্
(ঘ) রুশো।
উত্তরঃ (ক) অধ্যাপক লাস্কি।
প্রশ্ন ৪। “ক্ষুধা ও অভাব হতে স্বাধীনতা” – কি ধরনের সমতা?
(ক) সামাজিক সমতা।
(খ) প্রাকৃতিক সমতা।
(গ) অর্থনৈতিক সমতা।
(ঘ) পৌর সমতা।
উত্তরঃ (গ) অর্থনৈতিক সমতা।
প্রশ্ন ৫। সংবিধানের কোন্ অনুচ্ছেদ মতে “আইনের চক্ষে সকল সমান”?
(ক) ১৪ অনুচ্ছেদ মতে।
(খ) ১১ অনুচ্ছেদ মতে।
(গ) ২২ অনুচ্ছেদ মতে।
(ঘ) ২১ অনুচ্ছেদ মতে।
উত্তরঃ (ক) ১৪ অনুচ্ছেদ মতে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। “সকলের জন্য সমান সুযোগ” বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তরঃ “সকলের জন্য সমান সুযোগ” এর ধারণা আধুনিককালে উদারপন্থিগণ দিয়েছেন। এই ধারণামতে, সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার বংশ, পদমর্যাদা, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমান সুযোগ দেওয়ার কথাই বোঝায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সমতা বলতে সকলে সমান বা সমান হতে হবে একথা বোঝায় না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সমতার প্রকৃত অর্থ হল, সকলকে সমান সুযোগ দিয়ে তাদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ সহজ করে দেওয়া।
প্রশ্ন ২। সমতা অর্থে কী বোঝায়?
অথবা,
সমতার অর্থ কী?
উত্তরঃ সমতা বলতে সকলে সমান বা সমান হতে হবে তা বোঝায় না। সমতার প্রকৃত অর্থ হল, সমাজে বসবাসরত সকলকেই সমান সুযোগ দিয়ে তাদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ সহজ করে দেওয়া। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে, সমতা বলতে সমাজের সকল ব্যক্তিকে সমান সুযোগ দেওয়ার কথাই বোঝায়।
প্রশ্ন ৩। যে কোনো দুপ্রকারের সমতা উল্লেখ করো?
উত্তরঃ দুপ্রকার সমতা হল–
(ক) পৌর সমতা। এবং
(খ) আইনগত সমতা।
প্রশ্ন ৪। “আইনের চক্ষে সকল সমান” বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তরঃ “আইনের চক্ষে সকল সমান”– এ ধারণাটি ব্যক্ত করে পৌর সমতা। পৌর সমতার অর্থ হল যে প্রত্যেক নাগরিকই আইনের চক্ষে সমান এবং আইন সকলকেই সমানভাবে রক্ষা করবে। কোনো ব্যক্তি বিশেষকে কোনো বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হবে না। আইনের চক্ষে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, প্রতিপত্তি নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিই সমান এবং আইন সকলকে সমানভাবে সুরক্ষা প্রদান করবে। এই সমতা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি।
প্রশ্ন ৫। রাজনৈতিক সমতা কী?
উত্তরঃ রাজনৈতিক অধিকারসমূহ উপভোগের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ ও স্বাভাবিক সকল নাগরিকদের সমতাকে রাজনৈতিক সমতা বলে। সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটাধিকার প্রবর্তনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠা করবার ব্যবস্থা করা হয়। এক কথায় রাজনৈতিক সমতা বলতে রাষ্ট্র পরিচালনার কার্যে অংশ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিককে সমান সুযোগ সুবিধা প্রদান করা বোঝায়।
প্রশ্ন ৬। সামাজিক বৈষম্য সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো?
উত্তরঃ সমাজে জন্ম, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যখন সুযোগ–সুবিধা প্রদান করা হয়, তখন তাকে সামাজিক বৈষম্য বলা হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বৈষম্য বলতে কোনো বিশেষ শ্রেণীর লোকের জন্য কোনো বিশেষ সুবিধার কথা বোঝায়। হিন্দু সমাজে শুদ্র বা অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ের লোকদের তাদের মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত রাখা হত। আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গদের কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় উচ্চ মনে করা হত। যার ফলে কৃষ্ণাঙ্গ লোকেরা নানা অধিকার হতে বঞ্চিত থাকত। কুখ্যাত বর্ণবৈষম্য নীতি ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রচলিত ছিল। এসব বৈষম্য সামাজিক বৈষম্যের উদাহরণ। এ বৈষম্য সমাজ সৃষ্টি করেছে। সামাজিক পদমর্যাদা ও সুযোগ–সুবিধা উপভোগের বিষয়ে যখন সকলের অধিকার সমান হয় না, তখন আমরা এটাকে সামাজিক বৈষম্য বলি।
প্রশ্ন ৭। সমতা সম্পর্কে মার্ক্সবাদী মতামত ব্যাখ্যা করো?
অথবা,
সমতা সম্পর্কে মার্ক্সবাদীদের অভিমত কী?
উত্তরঃ মার্ক্সবাদ অর্থনৈতিক সমতার উপর গুরুত্ব প্রদান করেছে। মার্ক্সবাদ সমাজে থাকা বৈষম্যসমূহ হ্রাস অথবা নির্মূল করতে চায়। মার্ক্সবাদ কয়েকজনের হাতে রাষ্ট্রসম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার বিরোধিতা করে। মার্ক্সের মতে সমাজে আর্থিকভাবে শক্তিশালী শ্রেণী রাজনৈতিকভাবেও প্রভাবশালী হয়। এই শ্রেণী নিজেদের স্বার্থে রাষ্ট্রের কার্যপ্রণালী বা শাসন প্রণালীকেও নিয়ন্ত্রিত করে। সেজন্য মার্কস সম্পদের উৎপাদন ও বণ্টন প্রক্রিয়ায় সামগ্রিক কল্যাণের জন্য রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা বলেছেন। তাঁর মতে এভাবেই অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অর্থনৈতিক সমতা স্থাপিত হলে অন্যান্য বিষয়েও সমতা প্রতিষ্ঠিত হতে বাধ্য।
প্রশ্ন ৮। সমতার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো?
অথবা,
সমাজে সমতার প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ আমাদের সমাজে আমাদর চারিদিকে নানা প্রকার অসাম্য বা বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, লিঙ্গ, প্রতিপত্তি প্রভৃতি বিষয়সমূহের উপর ভিত্তি করে সমাজে নানাপ্রকার বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। সামাজিক মর্যাদা ও সুযোগ–সুবিধা উপভোগের ক্ষেত্রেও বৈষম্য দেখা যায়। রাজনৈতিক, সামাজিক ও আর্থিক অধিকারসমূহের উপভোগের ক্ষেত্রেও বৈষম্য দেখা যায়। সমাজের সকল বৈষম্যসমূহ দূর করাই সমতার লক্ষ্য। তাই সমাজে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করার জন্য সমতার নীতি প্রতিষ্ঠিত করা। আবশ্যক।
প্রশ্ন ৯। কীভাবে আমরা সাম্যের বৃদ্ধি করতে পারি?
অথবা,
সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন পদ্মাগুলি উল্লেখ করো?
উত্তরঃ সমতা নিম্নোক্ত উপায়ে বৃদ্ধি করা যেতে পারেঃ
(ক) আনুষ্ঠানিক সাম্যের প্রতিষ্ঠাঃ “সকলের জন্য সমান অধিকার” – এ নীতি স্বীকৃত হওয়া আবশ্যক। জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, ভাষা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে প্রচলিত আর্থ–সামাজিক বৈষম্য দূর করে সমতার নীতি প্রতিষ্ঠা করা।
(খ) বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে সমতাঃ সমাজে সকল মানুষের প্রতিভা, দক্ষতা বা সামর্থ্য একই ধরনের হয় না। তাই সমাজে সমতা স্থাপনের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। তাই বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সমাজে সমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। যেমন দুর্বল ও দরিদ্র শ্রেণীর জন্য বিশেষ সুযোগ–সুবিধার ব্যবস্থা করা।
(গ) ইতিবাচক প্রক্রিয়াঃ বঞ্চিত বা পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর সুবিধার জন্য পছন্দ মত ব্যয় করার ব্যবস্থা, শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে অনুন্নত শ্রেণীর মানুষকে সমান সুযোগ সুবিধা প্রদান, সংরক্ষণ নীতির ব্যবস্থা রাখা প্রভৃতি ইতিবাচক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ১০। সমাজবাদ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ সমাজবাদ বা Socialism শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Socias’ হতে উদ্ভূত হয়েছে। ‘Socias’ শব্দের অর্থ হল সমাজ বা Society। সমাজবাদ সমাজের আর্থ–সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সমাজবাদ এমন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে শ্রেণী বৈষম্যের কোনো স্থান থাকবে না। সমাজবাদে উৎপাদনের উপায় ও বিনিময়ের উপর সামাজিক মালিকানা সামগ্রিকভাবে নিয়ন্ত্রণ দ্বারা সমাজবন্ধ জনস্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়।
প্রশ্ন ১১। সমতার যে কোনো দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ সমতার দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) সামাজিক ন্যায়ের ভিত্তি হল সমতা।
(খ) সমতা চূড়ান্ত বা স্বতঃসিদ্ধ নয়, তা আপেক্ষিক।
প্রশ্ন ১২। রামমনোহর লোহিয়া চিহ্নিত যে কোনো দু–প্রকার বৈষম্যের উল্লেখ করো?
উত্তরঃ রামমনোহর লোহিয়া চিহ্নিত দু প্রকার বৈষম্য হলঃ
(ক) নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য।
(খ) জাত ও সাম্প্রদায়িক ভিত্তিক বৈষম্য।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। সমতা ও স্বাধীনতার মধ্যে সম্পর্ক সংক্ষেপে আলোচনা করো?
উত্তরঃ লর্ড একটন এবং ডি. টকভিল স্বাধীনতা ও সমতাকে একটি অপরটির পরিপুরক হিসাবে গ্রহণ করেন নি। কারণ তাদের মতে সমতা প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা ব্যক্তির পূর্ণ স্বাধীনতা নষ্ট করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্বাধীনতা বলতে স্বেচ্ছাচারিতা বোঝায় না। কারণ চরম স্বাধীনতা সমতা নষ্ট করে। উৎপাদন ও সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থায় যদি বেশি পার্থক্য হয়, তাহলে মুষ্টিমেয় কতিপয় ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা ও সম্পদ পুঞ্জিভূত হয়ে যাবে। ফলে রাষ্ট্রের কার্যে দরিদ্র ব্যক্তি অংশ গ্রহণ করতে পারবে না। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ব্যতীত সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যহীন। সুতরাং প্রকৃত স্বাধীনতা ও সমতা উভয়ই সমাজে একে অন্যের সম্পূরক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত।
প্রশ্ন ২। সমতা সম্পর্কে উদারবাদীদের মতামত ব্যাখ্যা করো?
অথবা,
উদারবাদ সমতা ব্যাখ্যা করো?
অথবা,
সমতা সম্পর্কে উদারবাদ মতবাদ ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ হবস্ (Hobbes), লক (Locke), রুশো (Rousseau), মিল (Mill), গ্ৰীন (Green) প্রমুখ রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের রচনায় আমরা সমতা সম্পর্কিত উদারবাদের ধারণা পাই। সমতা সম্পর্কে উদারবাদের অভিমতকে নিম্নোক্ত ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারেঃ
(ক) উদারবাদীরা মানুষের প্রকৃতির সমতার উপর গুরুত্ব প্রদান করেছেন। হবসের মতে, প্রকৃতি মানুষকে মোটামোটি সমানভাবে সৃষ্টি করেছে। লকের মতে, – স্বাভাবিকভাবে সকল মানুষ মুক্ত, সমান ও স্বাধীন। রুশোর মতে, – মানুষ স্বাভাবিক কারণেই স্বাধীনতা ও সমতার অধিকারী।
(খ) জন স্টুয়ার্ট মিল সংখ্যা লঘিষ্ঠের উপর সংখ্যা গরিষ্ঠের অত্যাচারের বিরোধিতা করেছেন।
(গ) টি. এইচ. গ্রীন মানুষের নৈতিক সমতাকে সমর্থন করেছেন এবং তাদের সমতার দাবির বিবেচনাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
প্রশ্ন ৩। ইতিবাচক সমতার তিনটি উপাদান লেখো?
উত্তরঃ ইতিবাচক সমতার প্রয়োজনীয় তিনটি উপাদান নিম্নরূপঃ
(ক) ব্যক্তিত্ব বিকাশে সকলের জন্য যথোপযুক্ত সুযোগ–সুবিধার ব্যবস্থা।
(খ) অধিকার সমূহ সমভাবে বণ্টন করা।
(গ) সকলের সমান সুযোগ পাওয়ার অধিকার।
প্রশ্ন ৪। রাজনৈতিক সমতা ও সামাজিক সমতার মধ্যে পার্থক্য দেখাও?
উত্তরঃ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক সমতা সাধারণতঃ রাষ্ট্রের সকল সদস্যকে সমান নাগরিকত্ব প্রদানের মাধ্যমরূপেই গণ্য করা হয়। সমান নাগরিকত্ব প্রদানের সঙ্গে যুক্ত আরও কিছু মূল অধিকার; যেমন– ভোটাধিকার, নির্বাচনে অংশ গ্রহণের অধিকার, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার ইত্যাদি। এক কথায় রাজনৈতিক অধিকার সমূহ উপভোগের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ ও স্বাভাবিক সকল নাগরিকদের সমান অধিকারকে রাজনৈতিক সমতা বলে।
সামাজিক সমতার অর্থ হল জন্ম, ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদি কারণে কোন ব্যক্তি অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না, আবার অর্জিত কোন বিশেষ সুবিধার জন্য কোন ব্যক্তি বিশেষ অধিকারও উপভোগ করতে পারবে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশ, স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সমান সুযোগ– সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব। বিশেষ সামাজিক পদমর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা উপভোগের বিষয়ে সমাজে সকল মানুষের সমান অধিকার – এটি সামাজিক সমতার মূল বক্তব্য।
প্রশ্ন ৫। সমতা ও সমরূপতার পার্থক্য নির্দেশ করো?
অথবা,
সমতা ও একরূপতার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো?
উত্তরঃ সমতা বলতে সমরূপতা বা একরূপতা বোঝায় না। সকল মানুষের সঙ্গে আচরণ এক ধরনের হতে পারে না। কারণ বিভিন্ন মানুষের প্রতিভা, দক্ষতা ও ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। তাই দক্ষ ও অদক্ষকে সমানভাবে দেখা সম্ভব নয়।
সমতা ও সমরূপতার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ
সমতা | সমরূপতা |
(ক) সকলের জন্য যথোপযুক্ত সুযোগ। | (ক) সকলের জন্য একরূপ বা সমান সুযোগ। |
(খ) এটি প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিভা, দক্ষতা ও সামর্থ্যের স্বীকৃতি প্রদান করে। | (খ) এটি প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিভা, দক্ষতা ও সামর্থ্যকে স্বীকৃতি দেয় না। |
(গ) সমতা সমাজে কাম্য। | (গ) সমরূপতা বা একরূপতা সমাজের সকল ক্ষেত্রে কাম্য নয়। |
প্রশ্ন ৬। সামাজিক সমতা কী?
উত্তরঃ সমাজিক সমতা হল জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশ, লিঙ্গ, ভাষা, প্রতিপত্তি নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমান সুযোগ–সুবিধা প্রদান করা। জন্মগত ধর্মগত ইত্যাদি কারণে সমাজে কোনো ব্যক্তিকে অযোগ্য বলে বিবেচিত করা হবে না, আবার অর্জিত কোনো সামর্থ্য বা ক্ষমতার জন্য কোনো ব্যক্তি বিশেষ কোনো অধিকারও উপভোগ করবে না। সামাজিক পদ মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা উপভোগের ক্ষেত্রে সকল ব্যক্তিই সমান – এ ধারণা সামাজিক সমতার মূল বিষয়।
প্রশ্ন ৭। রামমনোহর লোহিয়া ভারতে যে পাঁচ প্রকার বৈষম্য বা অসমতা চিহ্নিত করেছেন তা উল্লেখ করো?
উত্তরঃ রাম মনোহর লোহিয়া চিহ্নিত পাঁচ প্রকার বৈষম্য নিম্নরূপঃ
(ক) লিঙ্গ বৈষম্য।
(খ) বর্ণ বৈষম্য অর্থাৎ গায়ের চামড়ার রং-এর ভিত্তিতে বৈষম্য।
(গ) জাতি ও সম্প্রদায়ভিত্তিক বৈষম্য।
(ঘ) রাজনৈতিক বৈষম্য।
(ঙ) আর্থিক বৈষম্য।
প্রশ্ন ৮। রামমনোহর লোহিয়ার সাতপ্রকার বিপ্লব বা ‘সংক্রান্তি’ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ রামমনোহর লোহিয়ার সাতপ্রকার বিপ্লব বা ‘সক্রান্তি’ হল নিম্নরূপঃ
(ক) লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিপ্লব বা ক্রান্তি।
(খ) বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিপ্লব বা ক্রান্তি।
(গ) জাত ও সম্প্রদায় ভিত্তিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিপ্লব বা ক্রান্তি।
(ঘ) রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিপ্লব বা ক্রান্তি।
(ঙ) আর্থিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিপ্লব বা ক্রান্তি।
(চ) ব্যক্তিগত জীবনে অন্যায় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বিপ্লব।
(ছ) অস্ত্র সংবরণের জন্য ক্রান্তি।
প্রশ্ন ৯। সমতার তিনটি মাত্রা বা ধারা বর্ণনা করো?
অথবা,
সমতার তিনটি ধারা বা রূপ বর্ণনা করো?
অথবা,
সমতার বিভিন্ন দিকগুলো আলোচনা করো?
উত্তরঃ সমাজের নানা প্রকার বৈষম্যকে চিহ্নিত করার পর বিভিন্ন চিন্তাবিদগণ সমতার তিনটি মূলরূপ বা ধারাকে নানা নীতির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন সেগুলো হলঃ রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক।
রাজনৈতিকঃ একটি সমাজে রাজনৈতিক সমতা রাষ্ট্রের সকল সদস্যকে সমান নাগরিকত্ব প্রদানের মাধ্যম রূপে গণ্য করা হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় কিছু মূল অধিকার যেমন – ভোটাধিকার, নির্বাচনে অংশ গ্রহণের অধিকার প্রভৃতি।
সামাজিকঃ সমাজের সকল মানুষকে ব্যাক্তিত্ব বিকাশের জন্য সমান সুযোগ–সুবিধার ব্যবস্থা সামাজিক সমতাকে প্রতিষ্ঠিত করে।
অর্থনৈতিকঃ অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে আর্থিক সমতা প্রতিষ্ঠা করা সকল সমাজের মূল উদ্দেশ্য। কারণ অর্থনৈতিক সমতা ব্যতীত সকল ধরনের সমতা অর্থহীন।
প্রশ্ন ১০। সমতার তিনটি রাজনৈতিক ধারা বা রূপ বর্ণনা করো?
উত্তরঃ সমতার বিভিন্ন রাজনৈতিক রূপ বা ধারা আছে। সমতার তিনটি রাজনৈতিক রূপ হলঃ
(ক) রাষ্ট্রের সকল সদস্যকে সমান নাগরিকত্ব প্রদান।
(খ) রাষ্ট্রের সকল প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ নাগরিকের রাষ্ট্রের কার্যে সমানভাবে অংশীদার হওয়ার অধিকার।
(গ) সকল প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ ও স্বাভাবিক নাগরিকদের সমান ভাবে সকল রাজনৈতিক অধিকার উপভোগ করার সুযোগ সুবিধা।
প্রশ্ন ১১। সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্যের একটি তালিকা প্রস্তুত করো?
উত্তরঃ সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্যের একটি তালিকা নিম্নে প্রস্তুত করা হলঃ
সামাজিক বৈষম্য | আর্থিক বৈষম্য |
(ক) শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য। | (ক) আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য। |
(খ) লিঙ্গগত বৈষম্য। | (খ) জীবিকা অর্জনের সুযোগ–সুবিধার ক্ষেত্রে বৈষম্য। |
(গ) জাতি বা সম্প্রদায়গত বৈষম্য। | (গ) উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদানের ক্ষেত্রে বৈষম্য। |
(ঘ) বর্ণগত অর্থাৎ গায়ের চামড়ার রং – এর উপর ভিত্তি করে বৈষম্য। | (ঘ) সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্য। |
(ঙ) সামাজিক পদ মর্যাদার উপর ভিত্তি করে বৈষম্য। | (ঙ) বাসস্থান নির্মাণের ক্ষেত্রে বৈষম্য। |
(চ) ভাষাগত বৈষম্য। |
প্রশ্ন ১২। সমতার ধারণার সাধারণ বিরোধী কী?
উত্তরঃ সমতার ধারণার সাধারণ বিরোধী ধারণা হল বৈষম্য বা অসমতা। যদি সমাজে বৈষম্য না থাকত তাহলে সমতার নীতি প্রতিষ্ঠার কোনো আবশ্যকতাই থাকত না। সমাজে নানা প্রকার বৈষম্য বিদ্যামান। এই বৈষম্য সাধারণ অর্থে সমতার ধারণা–বিরোধী। বাস্তবে সমতা হল স্বাভাবিক এবং বৈষম্য হল যা আমরা আমাদের চারিদিকে লক্ষ্য করি তা প্রকৃতপক্ষে সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট। এই বৈষম্যসমূহ সমাজ দ্বারা সৃষ্টি বলে এগুলো অস্বাভাবিক অবস্থা স্বাভাবিক নয়; এগুলো প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম। সমাজের এই বৈষম্যগুলোকে দূর করে সমতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
প্রশ্ন ১৩। স্বাভাবিক বৈষম্য বা অসাম্য সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো?
উত্তরঃ গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর মতে, – মানুষের মধ্যে বৈষম্য স্বাভাবিক। মানুষ সমানভাবে জন্মগ্রহণ করে না। প্রতিভা, দক্ষতা ও সামর্থ্যের উপর ভিত্তি করে মানুষের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। দুজন ব্যক্তির প্রতিভা, দক্ষতা বা সামর্থ্য কখনই একরূপ বা সমরূপের হয় না। দৈহিক, মানসিক ও বুদ্ধিমত্তার দিক হতে মানুষের মধ্যের পার্থক্যকে স্বীকার করে নিতে হয়। তাই তাদের মধ্য বৈষম্য থাকাটা স্বাভাবিক। আর এ বৈষম্য দূর করতে পারা যায় না। প্লেটো সমাজকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করেছিলেন। এই ভাগগুলো হল – শাসক শ্রেণী, সৈনিক শ্রেণী এবং উৎপাদক শ্রেণী। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলও নাগরিক ও দাসের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। কিন্তু সমতা স্বাভাবিক হলেও বৈষম্য স্বাভাবিক নয়। প্রকৃত সত্য হল বৈষম্য সমাজের সৃষ্টি।
প্রশ্ন ১৪। লিঙ্গ বৈষম্য সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো?
উত্তরঃ সমাজে পুরুষ ও মহিলা – এ দু শ্রেণীর ভিত্তিতে যে ধরনের অসাম্য বা বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় তাকে লিঙ্গবৈষম্য বলে। প্রকৃত সত্য এই যে প্রতিটি সমাজই পুরুষ প্রধান। পুরুষরা মহিলাদের উৎপীড়ন ও শোষণ করে। ভারতে প্রচলিত কিছু সামাজিক কুপ্রথার মাধ্যমে মহিলাদের উৎপীড়ন ও শোষণ করা হয়। এই প্রথাগুলো হল – সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, কন্যাভ্রুণ হত্যা, যৌতুক প্রথা প্রভৃতি। এই প্রথাগুলোর মূল ভিত্তিই হল লিঙ্গ বৈষম্য।
প্রশ্ন ১৫। নারীবাদ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ নারীবাদ হল নারী ও পুরুষের সমান অধিকার সম্পর্কিত একটি রাজনৈতিক মতবাদ। নারীবাদীরা সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে থাকা নানা প্রকার বৈষম্যের কথা স্বীকার করেন। নারীবাদীরা বিশ্বাস করেন যে সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য স্বাভাবিক নয়, এবং তা আবশ্যকও নয়। সমাজে এই বৈষম্য পুরুষতান্ত্রিকতার জন্য পরিলক্ষিত হয়। নারীবাদীরা লিঙ্গ সনাক্তকরণ ও লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে বৈষম্যতার সমালেচনা করেন। নারীবাদীরা নারীদের পুরুষদের মতো সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যে পারদর্শী বলে মনে করেন। নারীরা ঘর ও বাইরের সকল কার্যে পারদর্শী বলে নারীবাদীরা বিশ্বাস করেন। নারীবাদ সকল ধরনের লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার উপর গুরুত্ব প্রদান করে।
নারীবাদের প্রধান সমর্থক হলেন মেরি উলস্টোনক্রাফট, জন স্টুয়ার্ট মিল, সাইমন ডি বিউভর প্রমুখ চিন্তাবিদগণ।
প্রশ্ন ১৬। সমাজবাদ–সমতা ব্যাখ্যা করো?
অথবা,
সমতা সম্পর্কে সমাজবাদীদের মতামত ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ সমাজবাদ রাষ্ট্রের কার্যকলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ। সমাজবাদ সমাজের আর্থ–সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সমাজবাদের মূল ভিত্তি হল অর্থনৈতিক সমতা। সমাজবাদ সমাজের সকল বৈষম্যসমূহ হ্রাস অথবা নির্মূল করতে চেষ্টা করে। সমাজবাদ এরূপ সমতা প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যেখানে শ্রেণী বৈষম্য থাকবে না। সমাজবাদ উৎপাদনের উপায় ও বিনিময়ের উপর সামজিক মালিকানা সামগ্রিকভাবে নিয়ন্ত্রণের যারা জনস্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করে। সমাজবাদের মূল লক্ষ্য হল সকল ধরনের শোষণ ও বৈষম্যসমূহ নির্মূল করে সমাজে অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতির মত প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ের পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্র করবে যাতে সমাজে প্রকৃত ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
প্রশ্ন ১৭। “সমতা ব্যতীত স্বাধীনতা মূল্যহীন।” তোমার উত্তরের স্বপক্ষে কারণ দেখাও?
অথবা,
স্বাধীনতা ও সমতার মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো?
উত্তরঃ অ্যালেক্সিস ডি টকভিল্ (Alexis de Tocqueville) এবং লর্ড একটন (Lord Acton) স্বাধীনতা ও সমতাকে পরিপুরক হিসাবে স্বীকার করেন নি। তাদের মতে সমতার ইচ্ছা পূর্ণ স্বাধীনতা লাভের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে। যখন রাষ্ট্র আইনের দ্বারা সমতা প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তখনই স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা এসে পড়ে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে রাষ্ট্র যদি অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যক্তির উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে তবে ব্যক্তির অধিক উৎপাদন করার স্বাধীনতা ব্যাহত হয়। কিন্তু সমতার এই ধারণার বাস্তবিক অর্থে কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।
সমাজে সমতা না থাকলে ধনিক শ্রেণীর হাতে অধিক ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত হবে। উৎপাদন ও সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থায় যদি বেশি পার্থক্য থাকে, তাহলে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে ক্ষমতা ও সম্পত্তি কেন্দ্রীভূত হবে। ফলস্বরূপ রাষ্ট্রের কার্যে গরীব শ্রেণীর মানুষ অংশ গ্রহণ করতে পারবে না। এইরূপ রাষ্ট্রে সকল শ্রেণীর মৌলিক স্বাধীনতা থাকে। না। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যহীন। দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ যদি তার ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে না পারে তাহলে সে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হবে না। তার মানসিক বিকাশ সাধনও সম্ভব নয়। সুতরাং স্বাধীনতা ও সমতার মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। “সমতা ব্যতীত স্বাধীনতা মূল্যহীন” –কথাটির যথেষ্ট তাৎপর্য আছে।
প্রশ্ন ১৮। সংক্ষেপে যে কোনো চার প্রকার সমতা বর্ণনা করো?
উত্তরঃ নিম্নে চার প্রকার সমতা বর্ণনা করা হলঃ
(ক) পৌর সমতাঃ পৌর সমতার অর্থ হল যে প্রত্যেক নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইন সকলকে সমান ভাবে রক্ষা করবে। কোনো ব্যক্তিকে বিশেষ কোনো সুযোগ–সুবিধা প্রদান করা হবে না।
(খ) সামাজিক সমতাঃ এর অর্থ হল সমাজে বসবাসরত সকল নাগরিককে দেখা হবে। জাতি–ধর্ম–বর্ণ–বংশ নির্বিশেষে সকলকেই সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে।
(গ) রাজনৈতিক সমতাঃ রাজনৈতিক সমতা বলতে রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনার কার্যে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমান অধিকারকে বোঝায়। প্রাপ্তবয়স্ক সার্বজনীন ভোটাধিকার নীতি রাজনৈতিক সমতার একটি অন্যতম উদাহরণ।
(ঘ) অর্থনৈতিক সমতাঃ সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করাই অর্থনৈতিক সমতার মূল উদ্দেশ্য। যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার ও উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকার অর্থনৈতিক সমতার উদাহরণ।
প্রশ্ন ১১। সমতার যে কোনো চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ সমতার প্রধান চারটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) সামাজিক ন্যায়ের ভিত্তি হল সমতা।
(খ) চূড়ান্ত সমতা সম্ভব নয়, কাঙ্খিতও নয়।
(গ) সকল নাগরিকের সমান অধিকার।
(ঘ) সমতা ও স্বাধীনতার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।
(ঙ) সমতা সমরূপতা বা একরূপতা নয়।
(চ) সমতা চূড়ান্ত বা স্বতঃসিদ্ধ নয়, তা আপেক্ষিক।
প্রশ্ন ২০। সমান সুযোগ বলতে কী বোঝ?
অথবা,
“সকলের জন্য সমান সুযোগ” – বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ মানুষের সঙ্গে মানুষের নানা রকম পার্থক্য রয়েছে। দৈহিক ও মানসিক গঠন, নৈতিক যোগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তার দিক হতে মানুষের পার্থক্য স্বীকার করতেই হয়। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সমতা বলতে সকলেই সমান বা সকলকে সমান হতে হবে – তাও বোঝায় না। সমতার প্রকৃত অর্থ হল, সকলকেই সমান সুযোগ দিয়ে তাদের ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়তা করা। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সমতা বলতে কোনোও শ্রেণীর জন্য কোনোও বিশেষ সুবিধার কথা বোঝায় না। সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিকে তার বংশ, পদমর্যাদা, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমান সুযোগ সুবিধা প্রদানের কথা বোঝায়।
প্রশ্ন ২১। ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত সমতার অধিকারের বিষয়ে একটি টীকা লেখো?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ১৪ থেকে ১৮নং অনুচ্ছেদে সমতার অধিকারের উল্লেখ আছে। ভারতীয় সকল নাগরিকই আইনের চোখে সমান এবং আইন সকলকে সমান ভাবে রক্ষা করবে। ধর্ম, জাতি, ভাষা, লিঙ্গ বা জন্মের ভিত্তিতে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অবশ্য রাষ্ট্র শিশু ও নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। সামাজিক ও শিক্ষাগত উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র অনান্য অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে অথবা অনুসূচিত জাতি ও জনজাতিদের উন্নতিকল্পে রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। সরকারি চাকুরিতে সকল নাগরিককে সমান সুযোগ প্রদানের কথা বলা হয়েছে। অবশ্য রাষ্ট্র অনুসূচিত জাতি ও জনজাতি এবং অন্যন্য অনগ্রসর শ্রেণীর নাগরিকদের নিয়োগের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারবে। সমাজে সমতার নীতি প্রতিষ্ঠাকল্পে অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সামরিক অথবা শিক্ষাক্ষেত্র ছাড়া আর কোনো ক্ষেত্রে উপাধি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখানে সমতার অধিকার বলতে চূড়ান্ত সমতার কথা বোঝায় না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে সমতার অধিকারকে নিঃসন্দেহে অপরিহার্য উপাদান বলে গণ্য করা হয়। সমতার অধিকারসহ অনান্য মৌলিক অধিকার ভারতীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি।
প্রশ্ন ২২। উদারবাদের উপরে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো?
উত্তরঃ মার্ক্সবাদ এবং উদারবাদ দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মতবাদ। মার্ক্সবাদী এবং সমাজবাদীরা সম্পদের বন্টন ও বিতরণ ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীনের পক্ষে সওয়াল করেন। উদারবাদী মতবাদে এর বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাওয়া যায়। উদারবাদীগণ সম্পদের বন্টন ব্যবস্থা এবং সমাজের পুরস্কারকে সবচেয়ে যোগ্য এবং সুস্থ পথ হিসাবে মনে করেন এবং প্রতিযোগিতার নীতিকে সমর্থন করেন। উদারবাদ রাষ্ট্রের আবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের বিরোধী। উদারপন্থীদের মতে সম্পদের বন্টন এবং বিতরণ নিয়ন্ত্রিত হলে সমাজে ন্যায় এবং সামা প্রতিষ্ঠা পাবে না। সুস্থ এবং স্বাধীন বাতাবরণে মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতাই উপযুক্ত পথ যা সমাজে ফল বন্টন করে। উদারবাদীদের মতে, যতদিন পর্যন্ত প্রতিযোগিতা স্বাধীন এবং অবাধ থাকবে সমাজে অসাম্যের কোন স্থান থাকবে না এবং মানুষ তার মেধা এবং উদ্যোগের জন্য প্রাপ্য পুরস্কার পাবে। উদারবাদীরা সাম্যের মূল্যবোধ থেকে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার দিতে ইচ্ছুক। উদারবাদীরা মুক্ত বাজার এবং রাষ্ট্রের ন্যূনতম ভূমিকার পক্ষপাতি।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। সমতা বলতে কী বোঝ? বিভিন্ন প্রকার সমতা আলোচনা করো?
উত্তরঃ সমতার প্রকৃত অর্থ হল, সকলকেই সমান সুযোগ দিয়ে তাদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ সহজ করে দেওয়া। প্রকৃত সমতা মানুষের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করে। সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি আপন যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তিত্ব বিকাশের সমান সুযোগ পাবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সমতা বলতে কোনো ব্যক্তির জন্য বিশেষ কোনো সুবিধার কথা বোঝায় না। সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার বংশ, পদমর্যাদা, জাতি–ধর্ম নির্বিশেষে সমান সুযোগ প্রদানের কথাই বোঝায়।
নিম্নে বিভিন্ন প্রকার সমতার কথা আলোচনা করা হলঃ
(ক) পৌর সমতাঃ পৌর সমতার অর্থ হল, প্রত্যেক নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইন সকলকে সমভাবে রক্ষা করবে। কোনো ব্যক্তিকে বিশেষ কোনো সুযোগ–সুবিধা প্রদান করা হবে না। পৌর সমতা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি।
(খ) সামাজিক সমতাঃ সমাজে বসবাসকারী সকল নাগরিক সমান। সামাজিক মর্যাদা ও সুযোগ–সুবিধা উপভোগ করার ক্ষেত্রে সকল ব্যক্তিই সমান – এটি সামাজিক সমতার মূল কথা।
(গ) রাজনৈতিক সমতাঃ রাজনৈতিক অধিকার উপভোগের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক সকল নাগরিকের সমান সুযোগকে রাজনৈতিক সমতা বলে। ভোটাধিকার, নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার প্রভৃতি রাজনৈতিক সমতা স্থাপনের সহায়ক।
(ঘ) অর্থনৈতিক সমতাঃ সমাজের আর্থিক বৈষম্য দূর করাই হল অর্থনৈতিক সমতার মূল লক্ষ্য। সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের বন্দোবস্ত করা অর্থনৈতিক সমতার প্রধান উদ্দেশ্য। ম্যাথু (Mathew) ও আর্ণল্ড (Amoled)-এর মতে অর্থনৈতিক সাম্যহীন সমাজ জরাগ্রস্থ। অর্থনৈতিক সমতার অর্থ সকল মানুষকে কাজ করার ও জীবিকা অর্জনের সমান সুযোগ প্রদান করতে হবে।
প্রশ্ন ২। নেতিবাচক এবং ইতিবাচক সমতার অর্থ ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ স্বাধীনতার মত সমতাও ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়। নেতিবাচক অর্থে সমতা বিশেষ সুবিধার সমাপ্তি বোঝায় যা বংশ, জাতি, ধর্ম, ও লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। তাই মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রাজনৈতিক অধিকারসমূহ নেতিবাচক সমতার নীতিতে অন্তর্ভুক্ত নয়। এক কথায় নেতিবাচক সমতার নীতি বংশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে না। নেতিবাচক অর্থে জাতি, বর্ণ, ধর্ম, জন্ম ও সম্পতিগত কারণে কেউই সামাজিক বা রাজনৈতিক অক্ষমতা বা অসামর্থ্যের শিকার হবে না। সাধারণ মানুষ চাইলে যে কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চপদে অধিষ্ঠিত হতে পারবে।
সমতার একটি ইতিবাচক দিকও রয়েছে। অধ্যাপক লাস্কির মতে– “ইতিবাচক অর্থে সাম্য বলতে বোঝায় সকলের জন্য যথোপযুক্ত সুযোগ–সুবিধার ব্যবস্থা।” ইতিবাচক অর্থে সমতা হল সকলের জন্য সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা প্রদান করা। যারা সমাজে পিছিয়ে পড়েছে তাদেরকে বিশেষ সুযোগ–সুবিধা ও সুরক্ষা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা আছে। আমাদের দেশে অনুন্নত শ্রেণীর জন্য শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে অনুন্নত শ্রেণীও সমান সুযোগ–সুবিধা পায়। এটা ইতিবাচক সমতার একটি উদাহরণ।
প্রশ্ন ৩। ‘অর্থনৈতিক সমতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন।’ — ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ অর্থনৈতিক সমতার মূল উদ্দেশ্য হল সমাজে থাকা আর্থিক বৈষম্যকে দূর করা। অর্থনৈতিক বৈষম্য কেবলমাত্র সেই সমাজেই থাকতে পারে যেখানে সম্পদ বা আয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষ বা শ্রেণির মধ্যে বিভেদ রয়েছে। তাই অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সমাজে থাকা আর্থিক বৈষম্য দূর করা একান্ত প্রয়োজন।
সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের বন্দোবস্ত করা অর্থনৈতিক সমতার প্রধান উদ্দেশ্য। কারণ অর্থনৈতিক সমতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতাসহ সকল ধরনের স্বাধীনতা অর্থহীন। অর্থনৈতিক সমতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সমাজে অর্থনৈতিক সমতা স্থাপিত হলে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হবে। সুতরাং রাজনৈতিক স্বাধীনতা উপভোগ করার জন্য সমাজে অর্থনৈতিক সমতা স্থাপন করা অত্যন্ত আবশ্যক। কারণ একজন ব্যক্তির যদি পর্যাপ্ত খাবার, পরার মতো কাপড় এবং থাকার মতো উপযুক্ত ঘর না থাকে তবে সেই ব্যক্তির রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে না। যার ফলস্বরূপ তার পক্ষে সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক স্বাধীনতা উপযোগ করা সম্ভব নয়। তাই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। মানুষের প্রাথমিক চাহিদা অর্থনৈতিক সুযোগ–সুবিধা। সেটি নিশ্চিত হবার পরই সে রাজনৈতিক স্বাধীনতা উপভোগ করার প্রতি আগ্রহ বোধ করে। সুতরাং অর্থনৈতিক সমতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। কিছু মানুষ যুক্তি দিয়ে বলেন যে অসাম্য হল স্বাভাবিক (natural) আবার অন্যরা মনে করেন যে সাম্যই স্বাভাবিক এবং অসাম্য যা আমরা আমাদের চারিদিকে দেখতে পাই তা সমাজের সৃষ্টি। তুমি কোন্ মতবাদটি সমর্থন করো? কারণ দেখাও?
উত্তরঃ কতিপয় মানুষের যুক্তি হল অসাম্য স্বাভাবিক বিষয়। তাদের মতে মানুষ অসাম্য সামর্থ্য বা যোগ্যতা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। কোন ব্যক্তি কবি হওয়ার দক্ষতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, কেউ বা গায়ক, আবার কেউ বা অভিযন্তা হওয়ার জন্য জন্মগ্রহণ করেন। তবে বেশির ভাগ মানুষই কোন প্রকার বিশেষ দক্ষতা বা গুণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন না। আমাদের মত হল যে সমতা স্বাভাবিক এবং আমাদের চারিদিকে যে বৈষম্য দেখতে পাই তা সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট। সাম্যের অর্থ হল মানুষ স্বাধীন এবং সমানভাবে জন্মগ্রহণ করে। সুতরাং সকল মানুষই তাদের দক্ষতা ও বিকাশের জন্য সমান অধিকার ও সুযোগ সুবিধা উপভোগ করার অধিকারী। সামাজিক বৈষম্যসমূহ সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট এবং এগুলো কৃত্রিম।
প্রশ্ন ২। একটি মতবাদে বলা হয়েছে যে চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সাম্য কখনও সম্ভব নয় ও কাঙ্খিত নয়। যুক্তি দেখিয়ে বলা হয়েছে খুব বেশি হলে সমাজ চেষ্টা করে ধনীতম এবং গরীবতম সদস্যদের মাঝখানের দূরত্ব কমায়। তুমি কি এতে সহমত রাখো?
উত্তরঃ চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সমতা কখনো সম্ভব নয় এবং কাঙ্খিতও নয়। চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সমতার আশা করা অযৌক্তিক। মানুষের দক্ষতা, ও প্রতিভাকে অস্বীকার করে সকলকে একই পর্যায়ের ভাবা উচিত নয়। একজন শিক্ষিত অভিযন্তার আর্থিক সচ্ছলতা কখনও একজন অদক্ষ শ্রমিকের সমপর্যায় নয়। তাই চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, এবং কাঙ্খিতও নয়– এই অভিমতের সঙ্গে আমরা একমত।
অর্থনৈতিক বৈষম্য কেবল সেই সমাজেই থাকতে পারে যেখানে সম্পদ বা আয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষ বা শ্রেণীর মধ্যে বিভেদ রয়েছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য পরিমাপ করার একটি পন্থা হল সমাজের ধনীতম শ্রেণী ও দরিদ্রতম শ্রেণীর আয়ের আপেক্ষিক পার্থক্যকে পরিমাপ করা। অন্য আরেকটি উপায় হল দরিদ্র সীমার নীচে থাকা লোকদের হিসেব করা। বিশ্বের অধিকাংশ সরকারই অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সমাজের ধনীতম শ্রেণী ও দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে আয়ের আপেক্ষিক পার্থক্য হ্রাসের উপর গুরুত্ব প্রদান করে। বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আর্থিক সমতা প্ৰতিষ্ঠিত করার জন্য সকল মানুষকে তাদের সার্বিক বিকাশের জন্য সকল ধরনের আর্থিক সুযোগ–সুবিধা প্রদান করে। সম্পদ ও আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার জন্য ধনীতম শ্রেণী ও দরিদ্রতম শ্রেণীর পার্থক্য হ্রাস করার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এর ফলে কতিপয় মানুষের হাতে দেশের সম্পদ ও আয় কেন্দ্রীভূত হতে পারে না।
প্রশ্ন ৩। যথার্থ উদাহরণ দিয়ে নীচের বিষয়বস্তুগুলোর মিল দেখাও।
(ক) ইতিবাচক প্রক্রিয়া।
(খ) সুযোগের সাম্য।
(গ) সমান অধিকার।
(অ) প্রাপ্ত ব্যাঙ্ক নাগরিকের ভোটাধিকার আছে।
(আ) ব্যাঙ্ক বয়ঙ্ক নাগরিকদের অধিকতর সুদের হার দেয়।
(ই) প্রত্যেক শিশুকে বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া উচিত।
উত্তরঃ (ক) – (আ); (খ) – (ই); (গ) – (অ)।
প্রশ্ন ৪। কৃষকদের সমস্যার উপর একটি সরকারি বিবরণে বলা হয়েছে যে ছোটো ও মাঝারি কৃষকরা বাজার থেকে সঠিক দাম পায় না। এই বিবরণটি প্রস্তাব দিয়েছে যে সরকারের উচিত মধ্যস্থতা করে শুধুমাত্র ক্ষুদ্র বা ছোটো এবং মাঝারি চাষীদের ভাল দাম পেতে সাহায্য করা। সাম্যের নীতির সঙ্গে কি এই প্রস্তাবের কোনো সামঞ্জস্য আছে?
উত্তরঃ ছোট ও মাঝারি চাষীদের উৎপাদিত সামগ্রীর উপযুক্ত মূল্য সুনিশ্চিত করতে সরকারি বিবরণে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা সমতার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ বৃহৎ চাষীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ছোটো এবং মাঝারি চাষীদের স্বার্থ রক্ষাকল্পে সরকারি হস্তক্ষেপ অপরিহার্য। আর এ ধরনের সরকারি হস্তক্ষেপ সমতার নীতির পরিপন্থী নয়।
প্রশ্ন ৫। নীচে উল্লেখ করা বক্তব্যগুলের মধ্যে কোনগুলো সাম্যের নীতি লঙ্ঘন করেছে এবং কেন?
(ক) শ্রেণীর (class) সমস্ত বাচ্চাই নাটকের পাঠটি ক্রমান্বয়ে পড়বে।
(খ) কানাডিয়ান সরকার শ্বেত ইউরোপিয়ানদের (Europeans) উৎসাহিত করেছিল কানাডায় এসে বসবাস করার জন্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৬০ইংরেজি পর্যন্ত।
(গ) বয়স্ক নাগরিকদের জন্য রেলে আলাদা সংরক্ষণ কাউন্টার (Counter) আছে।
(ঘ) জঙ্গলের কিছু কিছু জায়গা বিশেষ উপজাতি গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত।
উত্তরঃ (খ) এ বিষয়টি সমতার নীতি ভঙ্গ করেছে। কারণ এ বিষয়টি জাতি ও বর্ণের ভিত্তিতে বৈষম্যের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
প্রশ্ন ৬। এখানে মহিলাদের ভোটাধিকার সম্পর্কে কিছু যুক্তি দেখানো হয়েছে। কোনগুলোর সাম্যের ধারণার সঙ্গে মিল আছে?
(ক) নারী জাতি আমাদের মা। ভোটাধিকার অগ্রাহ্য করে আমরা তাঁদের অসম্মান করতে পারি না।
(খ) সরকারের সিদ্ধান্ত নারী এবং পুরুষ দু শ্রেণীকেই প্রভাবিত করে, সুতরাং নেতা পছন্দের সময় মহিলাদেরও মতামত দেওয়া উচিত।
(গ) মহিলাদের ভোটাধিকারকে স্বীকৃতি না দিলে পরিবারে অসামঞ্জস্য (disharmony) দেখা দেবে।
(ঘ) মানবজাতির অর্দ্ধেকই মহিলা। বেশিদিন তুমি তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখতে পার না।
উত্তরঃ (ক) সমতার ধারণার সঙ্গে মিল নেই।
(খ) সমতার ধারণার সঙ্গে মিল আছে।
(গ) সমতার ধারণার সঙ্গে এই বাক্যটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
(ঘ) সমতার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ মহিলাদের ভোটাধিকার না থাকলে গণতন্ত্র সফল হবে না।