Class 11 History Chapter 8 বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে দ্বন্দ্ব

Class 11 History Chapter 8 বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে দ্বন্দ্ব answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 History Chapter 8 বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে দ্বন্দ্ব and select needs one.

Class 11 History Chapter 8 বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে দ্বন্দ্ব

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 History Chapter 8 বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে দ্বন্দ্ব Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে দ্বন্দ্ব

পাঠ:

গ- বিভাগ–পরিবর্তনশীল পরম্পরা

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

উত্তরঃ মায়া সভ্যতা।

2. মায়া সভ্যতা কখন প্রসার লাভ করেছিল?

উত্তরঃ প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে। 

3. মায়া সভ্যতায় বছরে কয়টি মাস ছিল?

উত্তরঃ ১৮ মাস।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

4. মায়া সভ্যতার প্রতিটি মাস কত দিনের ছিল?

উত্তরঃ ২০ দিনের।

5. মায়া সভ্যতার মূল ভিত্তি কি ছিল?

উত্তরঃ শস্য চাষ ছিল মায়া সভ্যতার মূল ভিত্তি। 

6. ইনকা সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট কে ছিলেন?

উত্তরঃ ইনকা মান কোকাপাকো।

7. ইনকাদের শহর মাচু পিচু (machu picchu) কখন পুনরাবিষ্কার হয়?

উত্তরঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে। 

8. ইনকাদের রাজধানীর নাম কি?

উত্তরঃ কুজকো (cuzco)।

9. ইনকাদের অপর নাম কি?

উত্তরঃ কিউচুয়া (quechua)। 

10. ইনকা সাম্রাজ্যের ব্যাপ্তি কতটুকু ছিল?

উত্তরঃ ইকুয়েডোর থেকে চিলি পর্যন্ত প্রায় ৩০০০০ মাইল দীর্ঘ।

11. ইনকাদের উত্তম স্থাপত্যের একটি উদাহরণ লেখ। 

উত্তরঃ ইকুয়েডোর থেকে চিলি পর্যন্ত পথ যা পর্বত কেটে তৈরি করা।

12. ইনকা সভ্যতায় বছরে কত দিন ছিল?

উত্তরঃ ২৬০ দিন।

13. ‘আটাহু-য়ালপ’ কে ছিলেন? 

উত্তরঃ শেষ ইনকা শাসক।

14. আজটেক সভ্যতা কখন প্রসার লাভ করেছিল?

উত্তরঃ দ্বাদশ শতকে মায়া সভ্যতা পতনের পর।

15. আজটেক সাম্রাজ্য কয়টি প্রদেশে বিভক্ত ছিল? 

উত্তরঃ ৩৮টি প্রদেশে।

16. আজটেকগণ কখন ক্ষমতা লাভ করে?

উত্তরঃ ১২২০ খ্রিস্টাব্দে। 

17. আজটেক সাম্রাজ্যের রাজধানীর নাম লেখ।

উত্তরঃ ‘টেনোইলান’ (১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে মেক্সিকো হ্রদের কৃত্রিম দ্বীপে এই রাজধানী গড়ে ওঠে।

18. কার নামানুসারে মেক্সিকো দেশের নাম হয়? 

উত্তরঃ আজতেকদের দেবী মেক্সিটলির নামানুসারে মেক্সিকো নাম হয়। 

19. শেষ আজটেক শাসক কে ছিলেন?

উত্তরঃ কুয়ার্টেমোক।

20. দক্ষিণ আমেরিকার সবথেকে বড় স্থানীয় সভ্যতা কোনটি? 

উত্তরঃ পেরুর কিউচুয়া (Quechua) বা ইনকা (Inca) সভ্যতা।

21. ‘হুইজিলপোইলি’ (Huitzilopochtli) কি?

উত্তরঃ আজটেকদের বসন্ত উৎসব।

22. আরওয়াকিয়ান কোথায় বাস করত?

উত্তরঃ ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপপুঞ্জে।

23. দক্ষিণ আমেরিকা ও উত্তর আমেরিকা কার নামে নামকরণ করা হয়েছিল। 

উত্তরঃ আমেরিগো ভেসপুচির নামে।

24. কলম্বাস কোন্ দেশের লোক ছিলেন?

উত্তরঃ ইটালির।

25. ভাস্কো ডা গামা কোন দেশের লোক ছিলেন?

উত্তরঃ পর্তুগালের।

26. ভাস্কো ডা গামা কোন সালে ভারতে আসেন?

উত্তরঃ ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে।

27. ভাস্কো ডা গামা ভারতের কোথায় প্রথম পদার্পণ করেন?

উত্তরঃ কালিকট বন্দরে।

28. ম্যাগেলান কোন দেশের লোক ছিলেন?

উত্তরঃ পর্তুগালের।

29. ফিলিপিনস দ্বীপপুঞ্জ কে আবিষ্কার করেন?

উত্তরঃ ম্যাগেলান।

30. ম্যাগেলান কোন খ্রিস্টাব্দে ফিলিপিনস দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন?

উত্তরঃ ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে।

31. দক্ষিণ আমেরিকা কে আবিষ্কার করেন?

উত্তরঃ ম্যাগেলান।

32. কলম্বাস প্রথম দক্ষিণ আমেরিকার কোন্ স্থানে স্পেনের পতাকা উত্তোলন  করেছিলেন? 

উত্তরঃ দক্ষিণ আমেরিকার ওয়ানহানি নামক স্থানে।

33. মন্টিজুমা কে ছিলেন? 

উত্তরঃ আজটেকের রাজা ছিলেন।

34. পোর্তুগীজগণ দক্ষিণ আমেরিকার কোন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছিল?

উত্তরঃ ব্রাজিল।

35. ‘ব্রাজিল’ নামের উৎপত্তি কোন শব্দ থেকে?

উত্তরঃ দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূলে ‘ব্রাজিলুড’ নামের এক জাতীয় গাছ থেকে ‘ব্রাজিল’ নামের উৎপত্তি। 

36. ব্রাজিল থেকে কখন দাস প্রথার অবসান ঘটেছিল?

উত্তরঃ ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। 

37. ব্রাজিলউড-এর ব্যবসা নিয়ে কোন্ দুই ইউরোপীয় দেশ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল?

উত্তরঃ ফ্রান্স ও পর্তুগাল। পর্তুগালই জয়ী হয়। 

38. ব্রাজিলের পর্তুগীজ সরকারের রাজধানীর নাম কি ছিল?

উত্তরঃ বাহিয়া বা সালভাদোর।

39. ‘টোটনাক’ কারা?

উত্তরঃ ‘টোটকাক’ ছিল আজতেক সাম্রাজ্যে বাস করা একটি গোষ্ঠী। যারা সর্বাবস্থায় আজতেক শাসন থেকে বেড়িয়ে যেতে আগ্রহী ছিল।

40. চুম্বকীয় কম্পাস কখন আবিষ্কৃত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৩৮০ খ্রিস্টাব্দে।

41. বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কখন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে।

42.  ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কখন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে।

43. বিশ্বের দীর্ঘতম নদের নাম কি?

উত্তরঃ আমাজন। (ইহা দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল হয়ে বহমান)।

44. ‘কেনিউ’ (Canoe) কি? 

উত্তরঃ একপ্রকার নৌকা যা ফাঁপা গাছের গুড়ি কেটে তৈরি করা হত।

45. ‘মেক্সিকো’ শব্দটি কোথা থেকে উদ্ভূত হয়েছে?

উত্তরঃ মেক্সিটলি শব্দ থেকে।

46. ইউরোপীয়রা কখন থেকে কম্পাসের ব্যবহার জানে? 

উত্তরঃ ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে।

47. Geography বইটির লেখক কে?

উত্তরঃ টলেমি।

48. কে প্রথম উত্তর আমেরিকায় উপস্থিত হয়? 

উত্তরঃ এগারো শতাব্দীতে নরওয়ের সমুদ্রদস্যুরা (The Vikings of Norway)।

49. কাকে ‘The Navigator’ বলা হয়?

উত্তরঃ পর্তুগালের রাজকুমার হেনরীকে ‘The Navigator’ বলা হয়। 

50. Imago Mundi বইটির লেখক কে?

উত্তরঃ ১৪১০ খ্রিস্টাব্দে কার্ডিলেন গিয়েরে ‘ডি’ এইলী। এই বইটি ভূগোল ও জ্যোতির্বিদ্যার উপর লিখিত বই।

51. ‘নাও’ (Nao) কি? সমুদ্রাভিজানে কলম্বাসের ব্যবহার করা নৌকা জাহাজগুলির নাম কি?

উত্তরঃ ‘নাও’ (Nao) বলতে স্পেনীয় ভাষায় বিশাল জাহাজকে বোঝায়। সমুদ্রযাত্রায় কলম্বাসের জলযানবহরটি ছিল খুব ছোট। এর মধ্যে ছিল একটি ছোট জাহাজ যার নাম ‘সান্তা মারিয়া’ এবং ‘পিটা’ ও ‘নিনা’ নামের দুটো হালকা জাহাজ।

52. True History of the Conquest of Mexico-এর লেখক কে? 

উত্তরঃ বার্নার্ড ডিয়াস ডেল কেসিলো।

53. Capitalism and Slavery বইটির লেখক কে?

উত্তরঃ এরিক উইলিয়ামস্।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. যে-কোন তিনটি আমেরিকীয় সভ্যতার নাম লেখ। 

উত্তরঃ তিনটি আমেরিকীয় সভ্যতার নাম নিম্নরূপঃ 

(ক) মায়া সভ্যতা।

(খ) আজটেক সভ্যতা।

(গ) ইনকা সভ্যতা।

2. মায়া সভ্যতা কখন ও কোথায় গড়ে উঠেছিল?

উত্তরঃ এগারো থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কালে মায়া সভ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছিল মেক্সিকোতে।

3. মারা সভ্যতার মানুষের তিনজন দেবদেবীর নাম লেখ। 

উত্তরঃ মায়া সভ্যতার মানুষের তিনজন দেবদেবী হলেন- বনদেবতা, বরুণদেবতা ও অগ্নিদেবতা। 

4. মায়া সভ্যতার মানুষের প্রধান উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রীর নাম লেখ।

উত্তরঃ মায়া সভ্যতার মানুষের প্রধান উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রীর হল- ধান, সিম, আলু, পেঁপে প্রভৃতি।

5. মায়া সভ্যতায় বছরে কয়টি দিন ও কয়টি মাস ছিল?

উত্তরঃ মায়া সভ্যতায় বছরে ২৬০ দিন ও ১৮ মাস ছিল। 

6. মায়া সভ্যতার দুইটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ মায়া সভ্যতার দুইটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ

(ক) মায়া সভ্যতা কৃষিভিত্তিক ছিল।

(খ) তারা ছবিভিত্তিক লেখা পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। 

7. আজটেক কারা ছিল?

উত্তরঃ আজটেক হল দ্বাদশ শতকে উত্তর আমেরিকা হতে মধ্য মেক্সিকো উপত্যকায় চলে আসা মানুষ।

8. আজটেকাণ কখন ও কিভাবে ক্ষমতা লাভ করেছিল?

উত্তরঃ আজটেকগণ ১২২০ খ্রিস্টাব্দে টোলটেকদের ক্ষমতা ধ্বংস করে ক্ষমতা লাভ করেন।

9. কখন ও কোথায় আজটেক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল?

উত্তরঃ দ্বাদশ শতাব্দীতে মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে আজটেক সভ্যতা গড়ে ওঠে।

10. আজটেকদের ‘চিনামাপা’ কি ছিল?

উত্তরঃ ‘চিনামপা’ হল মেক্সিকো লেকের মধ্যে অবস্থিত কৃত্রিম দ্বীপসমূহ। এইগুলি আজটেকগণ কৃত্রিমভাবে তৈরি করেছিল।

11. ‘ক্যামিকেক’ (Calmecac) এবং ‘টেপোচকালি’ (Telpochcalli) কি?

উত্তরঃ উভয়ই আজতেকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ‘ক্যামিকেক’ (Calmecac) হচ্ছে মান = অভিজাত সম্প্রদায়ের বাচ্চাদের জন্য এবং ‘টেপোচকালি’ (Telpochcalli) হচ্ছে সর্বসাধারণের বাচ্চাদের জন্য।

12. চিনাম্পা (Chinampa) কি? এইগুলির সৃষ্টি ও ভূমিকা কি ছিল?

অথবা,

আজটেকরা কৃষিজমি বৃদ্ধির জন্য কি উপায় অবলম্বন করত?

উত্তরঃ ‘চিনাম্পা’ হচ্ছে আজটেকদের তৈরি কৃত্রিম দ্বীপ। জমির পরিমাণ সীমিত থাকায় আজটেকরা পরিত্যক্ত জমিকে ফলনশীল ভূমিতে পরিণত করার কাজে জোর দিয়েছিল। এই চেষ্টায়ই বিরাট নল খাগড়ার মাদুর বুনে এবং এইগুলো কাদা ও গাছ-গাছালি দিয়ে আচ্ছাদিত করে মেক্সিকো হ্রদে কৃত্রিম দ্বীপের (চিনাম্পা) তৈরি করত। এইগুলিতে শহর ও কৃষিভূমি গড়ে উঠেছিল।

13. কে, কখন ইনকা সাম্রাজ্যের পত্তন করেছিলেন?

উত্তরঃ দ্বাদশ শতাব্দীতে মানকো কাপাক (Manco Capac) ইনকা সাম্রাজ্যের পত্তন করেন। ইনিই ছিলেন প্রথম ইনকা শাসক।

14. ইনকারণ কারা ছিলেন? কাজকোতে তাঁদের রাজধানী স্থাপন করা শাসকের নাম লেখ।

উত্তরঃ ইনকারা দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ স্থানীয় জনগোষ্ঠী। ইনকা রাজা মেনকো কেপাদ বুজকোতে রাজধানী স্থাপন করেন। 

15. ইনকা সভ্যতার প্রধান কেন্দ্রগুলি কি কি ছিল?

উত্তরঃ ইনকা সভ্যতার প্রধান কেন্দ্রগুলি ছিল—টিনটিকাকা, ইকুয়েডোর, পেরু ও বলিভিয়া।

15. ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে ইনকাগণ কেন বিদ্রোহ করেছিল? 

উত্তরঃ ইনকা শাসকদের অত্যাচারে, বিশেষত ইনকা সাম্রাজ্যের উত্তর ভাগে, এক বিদ্রোহী মাথা তুলে দাঁড়ায় এবং গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এই গৃহযুদ্ধ তাদের মধ্যে অনৈক্য ডেকে আনে এবং স্পেনীয় শাসক ফ্রান্সিসকো পিজারো এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে।

17. কলম্বাস কে ছিলেন?

উত্তরঃ কলম্বাস একজন ইটালির পরিভ্রমণকারী ছিলেন। সেই সময় স্পেনের সম্রাট তাকে সমুদ্রপথ আবিষ্কারের জন্য পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন তিনি আমেরিকা আবিষ্কার করেন। বাণিজ্য ও দাস ব্যবসা করাই ছিল স্পেনের রাজার প্রধান উদ্দেশ্য। 

18. কলম্বাস কোন্ দেশের মানুষ? তিনি কখন ইন্ডিজ-এ পৌঁছেছিলেন?

উত্তরঃ কলম্বাস ইটালিয় নাবিক। তিনি ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ১২ই এপ্রিল ইন্ডিজ-এ পৌঁছেছিলেন। 

19. কলম্বাস কর্তৃক আবিষ্কৃত দুইটি মহাদেশের নাম লেখ।

উত্তরঃ কলম্বাস কর্তৃক আবিষ্কৃত দুইটি মহাদেশের নাম হল – 

(ক) উত্তর। এবং 

(খ) দক্ষিণ আমেরিকা।

20. কলস্থান মোট কতবার সমুদ্রাভিযানে গিয়েছিলেন। তার বিশাল সাফল্যের স্মৃতি কোথায় আছে? 

উত্তরঃ সর্বমোট চারবার সমুদ্রাভিযানের মাধ্যমে কলম্বাস বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, বৃহত্তর এনটাইলস, দক্ষিণ আমেরিকার মূল ভূ-খণ্ড ও তার উপকূল দখল বা অধিকার করেন।

কলম্বাসের বিশাল সাফল্য শুধুমাত্র তার স্মৃতি রক্ষা করছে- 

(ক) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে একটি ছোট জেলার নাম, তার নামানুসারে কলম্বিয়া। এবং 

(খ) দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পশ্চিমে একটি ছোট দেশ কলম্বিয়া।

21. দুইজন পর্তুগীজ নাবিকের নাম লেখ।

উত্তরঃ দুইজন পর্তুগীজ নাবিকেরা নাম হল – 

(ক) ম্যাগেলান। ও 

(খ) ভাস্কো ডা গামা।

22. কলম্বাস কোন দেশের নাগরিক ছিলেন? তিনি তার সমুদ্রাভিযানে কোন দেশীয় শাসকের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন?

উত্তরঃ কলম্বাস ছিলেন একজন ইটালিয় নাগরিক। কলম্বাস তার সমুদ্রাভিযানে স্পেনদেশীয় শাসকের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। 

23. মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় স্পেনীয় সাম্রাজ্য স্থাপন করা ব্যক্তি কারা?

অথবা,

কলম্বাসের পর আমেরিকাতে স্পেনীয় সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে সবথেকে বড় ভূমিকা নেওয়া স্পেনীয়দের নাম লেখ। 

উত্তরঃ (ক) হার্নান কর্টেজঃ ইনি মধ্য আমেরিকার আজতেক সাম্রাজ্য (মেক্সিকো) দখল করেন।

(খ) ফ্রান্সিসকো পিজারোঃ ইনি দক্ষিণ আমেরিকার ইনকা সাম্রাজ্য দখল করেন। স্পেনীয় শাসকের হয়ে।

24. কসমোগ্রাফি কি ছিল?

উত্তরঃ কসমোগ্রাফি ছিল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মানচিত্র অঙ্কনের বিজ্ঞান। 

25. দক্ষিণ আমেরিকাকে বর্তমানে ল্যাটিন আমেরিকা বলা হয় কেন ?

উত্তরঃ দক্ষিণ আমেরিকাকে বর্তমানে ল্যাটিন আমেরিকা বলা হয় কারণ এই মহাদেশে বহুল প্রচলিত দুটি ভাষা স্প্যানিশ ও পর্তুগীজ ল্যাটিন ভাষার অন্তর্গত। 

26. কোন্ দুইটি জাতি সর্বপ্রথম আটলান্টিক মহাসাগর অভিযান আরম্ভ করেন?

উত্তরঃ যে দুইটি জাতি সর্বপ্রথম আটলান্টিক মহাসাগর অভিযান আরম্ভ করে তারা হল— 

(ক) স্প্যানিশ। এবং 

(খ) পর্তুগীজ।

27. পোর্তুগীজ ও স্পেনের ভ্রমণকারীগণ কখন দক্ষিণ আমেরিকায় এসেছিল? 

উত্তরঃ পোর্তুগীজ ও স্পেনের ভ্রমণকারীগণ ১৫শ ও ১৬শ শতকের মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকায় এসেছিল।

28. দক্ষিণ আমেরিকার ভৌগোলিক পরিসর কী ধরনের ছিল?

উত্তরঃ পেরু অঞ্চল উচ্চভূমি অঞ্চল, ইকুয়েডর উচ্চ-পার্বত্য অঞ্চল, উত্তর চিলি, পশ্চিম, বলিভিয়ার পশ্চিম অংশ এবং আর্জেন্টিনার পশ্চিম অংশকে নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা অবস্থিত ছিল।

29. আমেরিকা বা নতুন বিশ্বে আবিষ্কৃত সভ্যতা/সংস্কৃতিগুলি করা প্রকার? উদাহরণ সহ প্রকারভেদ লেখ।

উত্তরঃ আমেরিকাতে নিম্নোক্ত দু ধরনের সভ্যতা বা সংস্কৃতি লক্ষ্য করা যায়ঃ

(ক) ক্যারিবীয় অঞ্চল ও ব্রাজিল ছিল মূলত ছোট ভরণপোষণ-নির্ভর অর্থনীতি।

(খ) কিছু ছিল শক্তিশালী রাজতান্ত্রিক রাজ্য। যেগুলির ভিত্তি ছিল উন্নত ধরনের কৃষি ব্যবস্থা এবং খনিজ সম্পদ। মধ্য আমেরিকার আজতেক ও মায়া এবং পেরুর ইনকারা এই শ্রেণীর অন্তর্গত।

30. আবাদীকরণ বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ পরিত্যক্ত ভূমি কৃষির জন্য ও বসবাসের জন্য উপযোগী করে তোলাকে আবাদীকরণ বলা হয়।

31. দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকাতে ইউরোপীয়দের অভিযান এবং বসতি স্থাপনের ফলাফল লেখ।

অথবা,

আমেরিকাকে চাষাবাদ ও খনিশিল্পে ইউরোপীয়দের অংশগ্রহণে কি প্রত্যন্ত ফলাফল দেখা দেয়?

উত্তরঃ দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকাতে ইউরোপীয়দের অভিযান ও বসতি স্থাপন ওই অঞ্চলের আদি অধিবাসী ও তাদের সংস্কৃতির জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দাস ব্যবসার সূচনা হয়। যার ফলে ইউরোপীয়রা আফ্রিকার ক্রীতদাসদের চাষাবাদ ও খনি শিল্পের কাজের জন্য আমেরিকায় বিক্রি করা শুরু করেছিল।

32. টুপিনম্বা কারা? তারা কেন কৃষিনির্ভর ছিল না? 

উত্তরঃ দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূলের ব্রাজিল-এর প্রাচীন অধিবাসী হচ্ছে টুপিনম্বারা। টুপিনস্বারা লোহার ব্যবহার জানত না। ফলে লোহার যন্ত্র ব্যবহার করে জঙ্গল পরিষ্কার করে চাষাবাদ তাদের অজানা ছিল। তাছাড়া যে অঞ্চলে বসবাস করত সেখানে প্রচুর পরিমাণ ফলমূল, শাকসবজি এবং মাছ পাওয়া যেত, ফলে কৃষিকাজের উপর তারা নির্ভরশীল ছিল না।

33. টুপিনস্বাদের জীবনশৈলীর দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ।

উত্তরঃ টুপিনম্বাদের জীবনশৈলীর দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ 

(ক) টুপিনম্বারা লোহার ব্যবহার জানত না এবং কৃষিনির্ভর ছিল না।

(খ) তাদের জীবনধর্ম, শাসনব্যবস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল না, তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল।

34. মধ্য আমেরিকায় গড়ে ওঠা সভ্যতাগুলি কি কি? এই সভ্যতাগুলির ভিত্তি কি ছিল?

উত্তরঃ মধ্য আমেরিকায় মেক্সিকোতে মায়া সভ্যতা এবং আজটেক সভ্যতা, আবার পেরুতে ইনকা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। পর্যাপ্ত পরিমাণে শস্য উৎপাদনের উদ্বৃত্ত মধ্য আমেরিকার সভ্যতার মূল ভিত্তি ছিল। 

35. আরাওয়াক লুকেয়ো কারা? তারা কোথায় বাস করত ?

উত্তরঃ আরাওয়াক লুকেয়ো হচ্ছে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের অর্থাৎ বর্তমান বাহামা এবং বৃহত্তর এন্টিলস্-এর আদি অধিবাসী। 

ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের আদি অধিবাসী আরাওয়াক লুকেয়োরা একসময় হিংস্র ক্যারিব উপজাতিদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে ক্ষুদ্রতর এন্টিলস্-এ আশ্রয় নেয়।

36. আরাওয়ার্কদের জীবিকার মূল উৎস কি ছিল?

উত্তরঃ আরাওয়াকরা শিকার, মাছ ধরা এবং কৃষিকাজের মাধ্যমে শস্য, মিষ্টি আলু ইত্যাদি উৎপাদন করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। 

37. অনুর্বর ভূমিকে চাষের উপযোগী করে তুলতে ইনকারা কি পদ্ধতি অবলম্বন করত? 

উত্তরঃ অনুর্বর ভূমিকে চাষের উপযোগী করে তুলতে ইনকারা নিম্নোক্ত উপায় অবলম্বন করতঃ

(ক) টিলাভূমি থাক থাক করে কেটে চাষ করা হত। 

(খ) পয়ঃপ্রণালীর সুসংহত ব্যবস্থা ও বিকাশ করেছিল।

(গ) উন্নত সেচ ব্যবস্থার প্রচলন ছিল।

38. ‘Quipu’ বা ‘কিউপ’ কি?

উত্তরঃ ইনকা সভ্যতায় হিসাব রাখার পদ্ধতির নাম ছিল ‘কিউপু’। এই পদ্ধতিতে রশি যার একদিকে একটি একটি করে গাঁট ছিল যেগুলিকে এক একটি গণনার একক হিসাবে ধরা হত। 

39. ইউরোপীয়রা আটলান্টিক মহাসাগর পার হয়ে দক্ষিণ আমেরিকা বা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সমুদ্রাভিযানে যাওয়ার পিছনে কি কি কারক সহায়ক ছিল?

উত্তরঃ পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইউরোপীয়রা দক্ষিণ আমেরিকা বা ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে সমুদ্রাভিযানে যাওয়ার পিছনে নিম্নোক্ত মুখ্য কারক ছিলঃ

(ক) কম্পাসের ব্যবহার।

(খ) সমুদ্র যাত্রার জন্য ব্যবহার্য জাহাজগুলোর গুণগত মান ও আকার বৃদ্ধি। যার ফলে দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা ও প্রতিরক্ষার রসদ নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। 

(গ) তাছাড়া ভ্রমণ সাহিত্যের বহুল প্রচলন, বিশ্বতত্ত্ব ও ভূগোল-সম্বন্ধীয় বইপত্রের প্রচার ও প্রসারের ফলে পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে মানুষের মনে অজানাকে জানার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। 

40. ১৫-শতাব্দীর সমুদ্রাভিযানে মুখ্য ভূমিকা নেওয়া ইউরোপীয় দেশগুলি কি কি? 

উত্তরঃ ১৫-শতাব্দীর সমুদ্রাভিযানে মুখ্য ভূমিকা নেওয়া ইউরোপীয় দেশগুলি হল— 

(ক) পর্তুগাল। এবং 

(খ) স্পেন।

41. ব্রাজিলের কোন সম্পদ ইউরোপীয়দের আকর্ষিত করেছিল? এর ব্যবহার কি ছিল? 

উত্তরঃ ব্রাজিলের প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষভাবে কাঠ, ইউরোপীয়দের আকর্ষিত করেছিল। গাছ থেকে চমৎকার লাল রঙ পাওয়া যেত, যা ইউরোপীয়দের বিশাল চাহিদা ছিল। ব্রাজিলউড গাছ, যে গাছের নামানুসারে ইউরোপীয়রা ওই স্থানের নাম দিয়েছিল। এই গাছ থেকে চমৎকার লাল রঙ পাওয়া যেত, যা ইউরোপীয়দের বিশাল চাহিদা ছিল।

42. ১৫ এবং ১৬ শতকের ইউরোপের দুজন স্বেচ্ছাচারী রাজা এবং তাদের দেশ দুটির নাম লেখ।

উত্তরঃ ১৫ এবং ১৬ শতকের ইউরোপের দুজন স্বেচ্ছাচারী রাজা হলেন একাদশ লুই ও সপ্তম হেনরী এবং তাদের দেশ দুটির নাম হল ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড।

43. Voyages of Discovery বা আবিষ্কারের সমুদ্রযাত্রা বলতে কি বোঝ? এর পূর্ববর্তী সময় এ ধরনের কোন উদাহরণ পাওয়া যায় কি?

উত্তরঃ পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইউরোপীয়দের দীর্ঘদিন যাবৎ চলতে থাকা অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সমুদ্রাভিযান Voyages of Discovery বা আবিষ্কারের সমুদ্রযাত্রা নামে পরিচিত। 

এর পূর্ববর্তী সময়ও এ ধরনের উদাহরণ পাওয়া যায়। যখন আরবীয়, চীনা ও ভারতীয়রা সমুদ্র যাত্রায় অনেক দুর এগিয়েছিল এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের নাবিকেরা প্রধান প্রধান সমুদ্রগুলি পাড়ি দিয়েছিল। 

44. পর্তুগাল কখন স্বাধীন হয়? সমুদ্রাভিযানে তাদের অগ্রণী ভূমিকার কারণ কি।

উত্তরঃ ১১৩৯ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগাল স্পেনের নিকট থেকে স্বাধীন হয়।

মাছ শিকার ও সমুদ্র যাত্রার বিশেষ দক্ষতার জন্য পর্তুগাল সমুদ্রাভিযানে বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল। 

45. পর্তুগীজরা ব্রাজিল  উপকূলে কি ধরনের শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল?

উত্তরঃ ফ্রান্সের সাথে সংঘর্ষের পর ব্রাজিল উপকূলকে পর্তুগীজরা উপনিবেশে পরিণত করে। ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগালের রাজা ব্রাজিল উপকূলকে ১৪টি বংশানুক্রমিক ক্যাপ্টেন শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করেন। পর্তুগীজরা যারা ওই ক্যাপ্টেন শাসিত অঞ্চলগুলোতে বাস করতে আগ্রহী ছিলেন তাদের জমির মালিকত্ব ও স্থানীয়দের দাসে পরিণত করার অধিকার দিয়েছিলেন।

46. ‘Reconquista’ বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে খ্রিস্টান রাজাদের দ্বারা আইবেরিয় উপদ্বীপকে আরব দখল মুক্ত করাকে বোঝায়। 

47. ‘এল ডোর এডো’ EL DORADO এর অর্থ কি? কোন্ জায়গা এই নামে পরিচিত?

উত্তরঃ ‘এল ডোর এডো’-এর অর্থ হচ্ছে সোনা ও রুপার রাজ্য। ইনকা সাম্রাজ্য ‘এল-ডোর-এডো’ নামে পরিচিত ছিল।

48. মধ্য আমেরিকায় গড়ে উঠেছিল স্পেনীয় উপনিবেশ এমন কয়টি দেশের নাম। লেখ।

উত্তরঃ মধ্য আমেরিকায় যেসব দেশে স্পেনীয় উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল তা হল- 

(ক) মেক্সিকো। 

(খ) গুয়াটেমালা। 

(গ) নিকারাগুয়া। এবং 

(ঘ) হন্ডুরাস।

49. স্পেনীয় ও পর্তুগীজদের মধ্যে স্থানীয়দের দাস হিসাবে ব্যবহারের পার্থক্য কোথায়?

উত্তরঃ পর্তুগীজরা স্থানীয়দের দাসে পরিণত করেছিল কারণ তারা দুঃসহ এবং ক্লান্তিকর কাজে অনাগ্রহী ছিল। কিন্তু স্পেনীয়দের ক্ষেত্রে তার প্রয়োজনীয়তা ওঠেনি কারণ স্পেনীয় উপনিবেশগুলিতে ও ইনকারা খনি ও চাষাবাদে অভ্যস্ত ছিল। তারা কোন ধরনের কাজ অস্বীকার করেনি। 

50. কখন এবং কিভাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়? 

উত্তরঃ ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে উত্তর আমেরিকার ১৩টি উপনিবেশ ব্রিটেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। 

51. ইউরোপীয়রা আমেরিকা থেকে কি কি নতুন কৃষিদ্রব্যের সাথে পরিচিত হয়?

 অথবা, 

আমেরিকা থেকে কি কি নতুন কৃষিজ দ্রব্য ইউরোপীয়রা পৃথিবীর অন্যত্র নিয়ে যায় ? 

উত্তরঃ ইউরোপীয়রা আমেরিকা থেকে তামাক, আলু, আখ, রাবার, কোকো ইত্যাদি নতুন কৃষিদ্রব্যের সাথে পরিচিত হয়।

52. আমেরিকাতে ইউরোপীয়রা কেন জেসুট মিশনারীদের অপছন্দ করত?

উত্তরঃ আমেরিকাতে বিশেষ করে ব্রাজিলে ইউরোপীয়রা জেসুট মিশনারীদের অপছন্দ করত, কারণ—

(ক) জেসুটরা স্থানীয়দের প্রতি স্বাভাবিক মানবিক ব্যবহারের পক্ষে ছিল। এবং 

(খ) জেসুটরা দাসপ্রথার বিরুদ্ধে ছিল।

53. আমেরিকার ইনকা ও আজটেক সভ্যতা ইউরোপীয়দের নিকট পরাভূত হওয়ার কারণ কি?

উত্তরঃ আমেরিকার ইনকা ও আজটেক সভ্যতা ইউরোপীয়দের নিকট পরাভূত হওয়ার কারণ হচ্ছে—

(ক) ইউরোপীয়দের সমরকৌশলে উভয় সভ্যতার লোকেরা মানসিক ও শারীরিকভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। এবং 

(খ) মূল্যবোধের পার্থক্যও একটি কারণ ছিল। স্থানীয়রা সোনা ও রুপার প্রতি ইউরোপীয়দের অত্যধিক লিখার ধারণা ছিল না।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. আমেরিকার সভ্যতাসমূহের সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ। 

উত্তরঃ আমেরিকার সভ্যতাসমূহের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) তারা প্রস্তর শিল্প তৈরিতে অত্যন্ত দক্ষ ছিল। তাদের হাতিয়ার প্রস্তর নির্মিত ছিল। ধাতুর ব্যবহার কেবলমাত্র অলঙ্কার তৈরিতেই হত।

(খ) তারা সবাই কৃষিকার্য করত এবং ধান তাদের প্রধান শস্য ছিল।

(গ) তাদের পশুপালনের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। 

(ঘ)এই সভ্যতার মানুষ বাসনপত্র তৈরি ও কাপড় বোনায় বিরাট সাফল্য অর্জন করেছিল।

2. মায়া সভ্যতার প্রধান কৃতিত্বসমূহ কি কি ছিল? 

উত্তরঃ মায়া সভ্যতার প্রধান কৃতিত্বসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) সৌর ক্যালেন্ডারের মতো মায়া বছরেও ৩৬৫ দিন ছিল। মায়ারা বছরকে ১৮ মাসে বিভক্ত করেন এবং প্রত্যেক মাসে ২০ দিন ছিল। 

(খ) গণিতে মায়া সভ্যতার বিশেষ অবদান পরিলক্ষিত হয়। তারা একটি বিশেষ চিহ্ন। হিসাবে শূন্যের ব্যবহার জানত।

(গ) মায়াদের নিজস্ব বর্ণমালা ছিল। তাদের বর্ণসমূহ ছবিভিত্তিক ছিল। 

(ঘ) মায়া সভ্যতার জনগণ স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রশিল্পে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ছিল। তার বিশাল পিরামিড, মন্দির ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করেছিল।

(ঙ) মায়া সভ্যতার মানুষ মৃৎপাত্র ব্যবহার করত। 

3. মায়া সভ্যতার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ মধ্য আমেরিকার সভ্যতা মায়া সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) মায়া সভ্যতার মূল ভিত্তিই ছিল শস্য চাষ। 

(খ) শস্যের চাষ নির্ভর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান।

(গ) উদ্বৃত্ত উৎপাদনকে স্থাপত্য, জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিত চর্চায় বিনিয়োগ।

(ঘ) চিত্রভিত্তিক লিখন পদ্ধতির ব্যবহার ইত্যাদি।

4. ইনকা ও আজটেক সভ্যতার কৃতিত্ব উল্লেখ কর। 

উত্তরঃ ইনকা সভ্যতার কৃতিত্বঃ ইন্কা সভ্যতার প্রধান কৃতিত্বসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) ইনকা সভ্যতায় একটি সুদক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা ছিল। সমগ্র ইনকা সাম্রাজ্য চার ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রতিটি ভাগ একজন অভিজাত সম্প্রদায় কর্তৃক শাসিত হত।

(খ) ইনকা সাম্রাজ্যে বহু সংখ্যক শহর ও নগর ছিল। এই সকল শহর ও নগরে বিশালাকার প্রাসাদ ছিল।

(গ) চিত্রশিল্প ও হস্তশিল্পে ইনকা সভ্যতা অধিকতর উন্নত ছিল।

(ঘ) ইনকা সভ্যতার মানুষ সোনা, রূপা এবং ব্রোঞ্জ-এর অলঙ্কার তৈরি করতে জানত। হাতিয়ার তৈরিতে তারা ব্রোঞ্জ ব্যবহার করত। 

আজটেক সভ্যতার কৃতিত্বঃ আজটেক সভ্যতার প্রধান কৃতিত্বসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) আজটেক সভ্যতা একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই সাম্রাজ্য মোট ৩৮টি প্রদেশে বিভক্ত ছিল।

(খ) আজটেকদের নিজস্ব ক্যালেন্ডার ছিল। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরে ২৬০ দিন ছিল।

(গ) আজটেকগণ নরম ধাতু গলানোর উপায় জানত। 

(ঘ) তারা বিভিন্ন দেবদেবী; যেমন—সূর্য দেবতা, বারি দেবতা প্রভৃতির পূজার্চনা করত।

5. আজটেকদের শিক্ষানীতি কিরূপ ছিল? 

উত্তরঃ শিক্ষার ব্যাপারে আজটেকগণ অত্যন্ত সচেতন ছিল। তারা সকল বালক-বালিকাকে স্কুলে পাঠানো সুনিশ্চিত করেছিল। ক্যামিকেক-এ অভিজাত সম্প্রদায়ের বালক-বালিকারা আসত। তাদের সামরিক অথবা ধর্মীয় নেতা তৈরি করবার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। অন্যান্য বালক-বালিকাগণ নিকটবর্তী টেপোচকালিতে পড়াশুনা করত। সেখানে তারা ধর্ম, ইতিহাস, সংগীত প্রভৃতি অধ্যয়ন করত। বালকদিগকে কেবলমাত্র সামরিক শিক্ষাই নয়, কৃষি বিষয়েও শিক্ষা দেওয়া হত। বালিকাগণকে গার্হস্থ্য কার্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হত।

6. আজটেক এবং ইনকা সভ্যতার সাদৃশ্যমূলক বৈশিষ্ট্যসমূহের উল্লেখ কর। দেওয়া হত।

উত্তরঃ আজটেক ও ইনকা সভ্যতার মধ্যে সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) উভয় সভ্যতাই ইউরোপীয় সভ্যতা থেকে অনেকাংশে পৃথক ছিল। 

(খ) ইউরোপীয় সমাজের বিপরীতে এই দুই সভ্যতার সকল মানুষের সম্পত্তির অধিকার ছিল; অর্থাৎ প্রত্যেকেই নিজ নিজ সম্পত্তি ভোগ করত।

(গ) উভয় সভ্যতার লোকজন পুরোহিত সম্প্রদায়কে সম্মান করেছিল এবং স্বর্ণখচিত মন্দির নির্মাণ করেছিল।

(ঘ) উভয় সভ্যতার লোক ইউরোপীয়দের মতো সোনা ও রূপার মূল্য উপলব্ধি করতে পারেনি। 

7. আজটেকদের কৃষি ও জমির বন্দোবস্ত কেমন ছিল? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ আজটেক সাম্রাজ্য ছিল গ্রাম ভিত্তিক। অধিকাংশ কৃষকই শস্য, বীন, স্কোয়াশ, লাউ, আলু ও অন্যান্য শস্য চাষ করত। কোন ব্যক্তিবিশেষ জমির মালিক ছিল না বরং এক একটি গোষ্ঠী মালিকানাধীন ছিল। যারা সার্বজনীন নির্মাণ কাজ পরিচালনা করত।

ইউরোপীয় ভূমিদাসদের মতো চাষিরা অভিজাত সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন জমিগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিল, এবং ফসলের এক অংশের বিনিময়ে তারা এই জমিগুলোতে চাষাবাদ করত। তবে ক্রীতদাস প্রথা তেমন কঠিন ছিল না। তারা সহজেই তাদের স্বাধীনতা ফিরে পেত।

8. আজটেক সমাজে শ্রেণীবিভাজন কেমন ছিল? আজটেক সমাজের কোন শ্রেণী কি ভূমিকা পালন করত? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ আজটেক সমাজব্যবস্থায় শ্রেণীবিভাজন ছিল ক্রমপর্যায়িক। এর 

(ক) অভিজাত শ্রেণী।

(খ) বণিক শ্রেণী। 

(গ) বিভিন্ন পেশায় জড়িত ব্যক্তিরা। এবং 

(ঘ) সাধারণ শ্রেণী ছিল মুখ্য।

তবে এই শ্রেণীগুলির মধ্যে সবথেকে বেশি ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল অভিজাত শ্রেণির। অভিজাত বলতে তাদের বোঝানো হত যারা অভিজাত বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন, অথবা ৰাজক সম্প্রদায়ভুক্ত অথবা যাদের এই পদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জন্মগতভাবে যারা অভিজাতশ্রেণীর অন্তর্গত ছিলেন তাদের সংখ্যা ছিল নগণ্য। কিন্তু তারা সরকারি কাজ, সেনাবাহিনীতে ও যাজক হিসাবে উচ্চপদ অলংকৃত করতেন। অভিজাত সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের মধ্যে একজন নেতা নির্বাচন করতেন যিনি আমৃত্যু শাসন কাজে রত থাকতেন। তাকেই রাজা বলা হত, যিনি সূর্যের প্রতিনিধি হিসাবে পরিগণিত হতেন।

বণিকরা অনেক সুবিধা ভোগ করতেন এবং প্রায়ই দূত এবং গুপ্তচর হিসাবে দেশের সরকারকে সাহায্য করতেন। মেধাবি কারিগর, চিকিৎসক ও জ্ঞানী শিক্ষকরাও যথেষ্ট সম্মান পূর্বক তাদের ভূমিকা পালন করতেন। সাধারণ শ্রেণীর অবদান সর্বক্ষেত্রেই ছিল।

9. নূতন সমুদ্রপথ আবিষ্কারের উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য কি কি ছিল? 

উত্তরঃ নূতন সমুদ্রপথ আবিষ্কারের পর ইউরোপীয়গণ আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য আরম্ভ করে। তারা সম্পদ, ধর্ম ও ভূমি বিকাশের কথা চিন্তা করতে থাকে। এই মহাদেশগুলিতে তারা তাদের উপনিবেশ স্থাপন করে। শীঘ্রই এই সকল মহাদেশের সম্পদ ইউরোপে চলে যায়। দাস কেনা-বেচা শুরু হয়ে যায়। এই সকল দেশে পুরোহিতরা খ্রিস্টধর্ম প্রচার আরম্ভ করে। এর ফলে খ্রিস্টধর্ম বিশ্বের সর্ববৃহৎ ধর্মে পরিণত হয়।

10. ইউরোপীয়গণ সমুদ্রযাত্রায় মনোনিবেশ করেছিল কেন? 

উত্তরঃ ইউরোপীয়গণের সমুদ্রযাত্রায় মনোনিবেশের কারণ নিম্নরূপঃ 

(ক) নূতন স্থান আবিষ্কারের মাধ্যমে সোনা ও রুপার খনির সন্ধান শুরু করা।

(খ) নূতন ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থান অনুসন্ধানের জন্য ইউরোপীয়গণ সমুদ্রযাত্রা শুরু করে।

(গ) ভৌগোলিক আবিষ্কারের সঙ্গে ধর্মীয় দিকটিও জড়িত ছিল।

11. সমুদ্রাভিযানে স্পেনীয়দের আগ্রহের কারণ, সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

উত্তরঃ অর্থনৈতিক কারণ স্পেনের জনগণকে সমুদ্রযাত্রায় উৎসাহিত করেছিল। ধর্মযুদ্ধের স্মৃতি এবং Reconquista-র সাফল্য স্পেনীয়দের ব্যক্তিগত উচ্চাশা বাড়িয়ে তুলেছিল। তাছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ হওয়া, যা স্পেনীয় শাসক দ্বারা স্বীকৃত ছিল। এবং সমুদ্রাভিযানে তাদের জয় করা দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব দাবি করা এবং অভিযানের নেতাদের উপাধি ও অধিকৃত দেশের শাসক হিসাবে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি স্পেনীয়দের সমুদ্রাভিযানে উৎসাহিত করেছিল।

12. কলম্বাস তার দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার পর কোথায় প্রথম পদার্পণ করেন? স্থানীয় অধিবাসীরা কলম্বাসের উপস্থিতিকে কিভাবে গ্রহণ করেছিল?

উত্তরঃ ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ১২ই অক্টোবর কলম্বাস তার সমুদ্রাভিযানের পর প্রথম মাটি স্পর্শ করেন। কলম্বাসের ধারণা ছিল জায়গাটির নাম ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারত, কিন্তু বাস্তবে জায়গাটি ছিল বাহামা দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ।

এই দ্বীপটির নাম কলম্বাস রেখেছিলেন গোয়ানহানি, যার অর্থ অগভীর সমুদ্রের দ্বারা বেষ্টিত জায়গা।

এই অঞ্চলের স্থানীয় অধিবাসী ছিল আরাওয়াকরা। তারা কলম্বাস ও তার দলকে অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়েছিল। আনন্দ ও উৎসাহের সাথে তাদের খাদ্য ও পানীয় কলম্বাস ও তার সহযাত্রীদের সাথে ভাগ করে নিয়েছিল। বস্তুত তাদের এই ব্যবহারে কলম্বাস মুগ্ধ হয়েছিলেন।

13. পর্তুগীজরা কেন ব্রাজিলের স্থানীয়দের দাসে পরিণত করেছিল? দাস সমস্যা সমাধানে তারা কি পদক্ষেপ নিয়েছিল?

উত্তরঃ ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে পর্তুগীজরা ব্রাজিলে আখ চাষ শুরু করে এবং এর থেকে চিনি উৎপাদন শুরু করে। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই স্থানীয়দের কাজের উপর তাদের নির্ভর করতে হত। কিন্তু ধীরে ধীরে স্থানীয়রা এই ধরনের ক্লান্তিকর ও দুর্বহ কাজ করতে অস্বীকার করায় পর্তুগীজ মালিকরা স্থানীয়দের অপহরণ করে দাসে পরিণত করত। কিন্তু ধীরে ধীরে স্থানীয়রা এর থেকে বাঁচতে গ্রাম ছেড়ে জঙ্গলে পলায়ন করলে দাসের সংকট দেখা দেয়। 

এই অবস্থায় পর্তুগীজ মালিকরা দাস সংগ্রহের জন্য অন্য উৎস খুঁজতে বাধ্য হন এবং সেই সূত্র হয়ে ওঠে পশ্চিম আফ্রিকা।

14. আবিষ্কার-বিষয়ক সমুদ্রযাত্রার অন্তরীক্ষে প্রকৃত উৎসাহদানকারী উপাদানসমূহ কি কি ছিল?

উত্তরঃ প্রকৃত উৎসাহদানকারী উপাদানসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) নূতন নূতন অঞ্চল আবিষ্কারের মাধ্যমে অধিক সংখ্যায় মানুষকে দাসত্বে পরিণত করা এবং দাস ব্যবসার মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা।

(খ) বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং অর্থ উপার্জন।

(গ) সোনা ও মশলা সংগ্রহের মাধ্যমে নাম-যশ আহরণ করা। 

(ঘ) দুঃসাহসিক সমুদ্রযাত্রার মাধ্যমে বিদেশে খ্রিস্টধর্ম প্রচার।

15. কলম্বাস কিভাবে সমুদ্র অভিযান যাত্রা আরম্ভ করেছিলেন? 

উত্তরঃ ক্রিস্টোফার কলম্বাস একজন দক্ষ নাবিক ছিলেন। তার দুঃসাহসিক অভিযান করার দৃঢ় আশা ছিল এবং এইভাবে মান-যশ আহরণ করার উদ্দেশ্য ছিল। তিনি ভাগ্যের উপর বিশ্বাস করতেন। এই অনুযায়ী তিনি মনে করতেন তার ভাগ্যে লেখা আছে যে তিনি নৌ-চালনার মাধ্যমে একদিন পূর্ব দিকে ভারতবর্ষ আবিষ্কার করবেন। তিনি তার এই পরিকল্পনা পর্তুগীজ সম্রাটের কাছে পেশ করেন। কিন্তু তা নাকচ হয়ে যায়। সৌভাগ্যক্রমে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ একটি সংক্ষিপ্ত অভিযান মঞ্জুর করেন। কলম্বাস ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ৩রা আগস্ট ‘পালো’ বন্দর হতে তার অভিযান শুরু করেন।

16. পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের যে-কোন তিনজন নাবিকের নাম উল্লেখ কর। তাদের আবিষ্কারের উপর আলোকপাত কর। 

উত্তরঃ পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের তিনজন বিখ্যাত নাবিক হলেন- কলম্বাস, ভাস্কো-ডা-গামা এবং মেগেলান। তাদের আবিষ্কার নিম্নে প্রদান করা হলঃ

(ক) কলম্বাসঃ কলম্বাস ছিলেন বিখ্যাত ইটালীয় নাবিক। তিনি ভারতবর্ষ আবিষ্কারের একটি পথ আবিষ্কার করেছিলেন। ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি আমেরিকা আবিষ্কার করেন।

(খ) ভাস্কো ডা গামাঃ ভাস্কো ডা গামা বিখ্যাত পর্তুগীজ নাবিক ছিলেন। তিনি উত্তমাশা অন্তরীপ দিয়ে ১.৪৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে আসেন। এইভাবে তিন ভারতে আসবার সমুদ্রপথ আবিষ্কার করেন।

(গ) মেগেলানঃ মেগেলানও পর্তুগীজ নাবিক ছিলেন। তিনি ১৫১১ খ্রিস্টাব্দে ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন। তিনি দক্ষিণ আমেরিকাও আবিষ্কার করেন।

17. পোর্তুগীজ ও স্পেনীয়গণ কি কি কারণে সমুদ্রযাত্রা আরম্ভ করেছিল?

উত্তরঃ পোর্তুগীজ ও স্পেনীয়গণের সমুদ্রযাত্রার প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) সোনা ও বিভিন্ন প্রকার মশলা আহরণের জন্য দুইটি দেশ সমুদ্রযাত্রা আরম্ভ করেছিল।

(খ) সামরিক দিক দিয়ে স্পেনীয়গণ শক্তি অর্জনের জন্য সমুদ্রযাত্রা আরম্ভ করেছিল। 

(গ) পোর্তুগীজগণ মৎস শিকারে পারদর্শী ছিল। এ জন্য সমুদ্রযাত্রায় তারা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।

(ঘ) দাস ব্যবসা দুইটি দেশের সমুদ্রযাত্রার অন্যতম প্রধান কারণ। 

18. কলম্বাস স্পেনের জন্য কোন দুইটি দ্বীপ দাবি করেছিলেন? এই দ্বীপ দুই আধুনিক নাম কি? 

উত্তরঃ কলম্বাস স্পেনের জন্য কিউবাসকান বা কিউবা এবং কিসকেয়ালি বা হিসপানিয়া নামক দ্বীপ দুটি দাবি করেছিলেন। বর্তমানে এই দ্বীপ দুটি হাইতি ও ডমিনিকরন প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত।

19. কৃত্রিম দ্বীপ বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ মাটি যেহেতু সীমিত ছিল সেই জন্য আজটেকগণ কৃত্রিম পদ্ধতির দ্বারা মাটির পরিমাণ বৃদ্ধি করেছিল। এই উদ্দেশ্যে তারা বিশাল বিশাল ঢিবি তৈরি করে। ইহার মধ্যে গাছপালা দ্বারা আবৃত করে মেক্সিকো হ্রদে কৃত্রিমভাবে দ্বীপ তৈরি করে। ইহার মধ্যে মধ্যে খাল কেটে দ্বীপের উপর ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে আজটেকের রাজধানী শহর টেনসটিটলান নির্মাণ করেছিল।

20. আমেরিকা আবিষ্কারের পর আবিষ্কারকগণ সেখানে কোন প্রকার সংস্কৃতি দেখেছিল? 

উত্তরঃ আমেরিকা আবিষ্কারের পর আবিষ্কারকগণ সেখানে নিম্নোক্ত দুই প্রকার সংস্কৃতি দেখেছিলঃ

(ক) আমেরিকার অর্থনীতি সুস্থ ও সবল ছিল না। উদাহরণস্বরূপ ক্যারিবিয়ান ও ব্রাজিল অঞ্চলের অর্থনীতির কথা উল্লেখ করা যায়।

(খ) সেখানে শক্তিশালী রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। কৃষি ও খনি তাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল। উদাহরণ হিসাবে মায়া, আজটেক এবং পেরুর ইনকা সভা উল্লেখ করা যায়।

21. আবিষ্কারের যুগ বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ সমুদ্রপথ আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে নুতন নুতন দেশ আবিষ্কার হওয়ার সময়কে আধুনিক বিশ্ব ইতিহাসে আবিষ্কারের যুগ বলে অভিহিত করা হয়। পঞ্চদশ শতকের শেষ  বছর থেকে আরম্ভ করে ষোড়শ শতকের সূচনাকাল পর্যন্ত সময়সীমাকে সাধারণত আবিষ্কারের বা সময় বলে ধরা হয়।

22. বর্তমান আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কার নামে নামকরণ করা হয়েছিল? আমেরিকা নামটি কে এবং কখন আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করেছিলেন?

উত্তরঃ কলম্বাস আবিষ্কৃত আমেরিকাকে আমেরিগো ভেসপুচি নামে একজন ফ্লোরেন্সের ভূগোলবিদ নুতন পৃথিবী বলে অভিহিত করেছিলেন। এরপর তাঁর নামানুসারে নূতন পৃথিবীর নাম আমেরিকা হিসাবে নামকরণ করা হয়। 

আমেরিকা নামটি সর্বপ্রথম ১৫০৭ খ্রিস্টাব্দে একজন জার্মান প্রকাশক ব্যবহার করেছিলেন।

23. দক্ষিণ আমেরিকাকে বর্তমানে কেন ল্যাটিন আমেরিকাও বলা হয়? 

উত্তরঃ দক্ষিণ আমেরিকাকে বর্তমানে ল্যাটিন আমেরিকাও বলা হয় কারণ—

(ক) এই মহাদেশে দুটি প্রধান ভাষা স্প্যানিস ও পোর্তুগীজ ল্যাটিন ভাষা গোষ্ঠীর অংশ। অধিবাসীগণ মুলত আফ্রিকীয়। এবং 

(খ) অধিকাংশ মানুষই ক্যাথলিক সম্প্রদায়ভুক্ত। তাদের ধর্মগ্রন্থগুলি এই ভাষাতেই লেখা। 

24. আরাওয়াক লুকেয়োদের সামাজিক/সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।

উত্তরঃ আরাকওয়াক লুকেয়োদের সামাজিক/সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) আরাওয়াকরা ছিল অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির। তারা সর্বাবস্থায় দ্বন্দ্বের পরিবর্তে সন্ধি প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করত। 

(খ) আরাওয়াক সমাজের মুখ্য সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ছিল তাদের সংঘবদ্ধ উৎপাদন, যাতে সম্প্রদায়ের সবার খাদ্য সরবরাহ সম্ভব হয়।

(গ) আরাওয়াকরা গোষ্ঠীপ্রধানদের দ্বারা সংগঠিত ছিল।

(ঘ) আরাওয়াক সমাজ ব্যবস্থায় বহুবিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। 

(ঙ) আরাওয়াকরা ছিল সর্বপ্রাণবাদ।

(চ) আরাওয়াকরা সোনার অলঙ্কার ব্যবহার করত, কিন্তু সোনার প্রতি তাদের বিশেষ। গুরুত্ব এবং আগ্রহ ছিল না।

(ছ) আরাওয়াকদের বয়ন শিল্প ছিল অতি উন্নত। Hammock বা ঝুলানো শয্যা হচ্ছে তাদের উল্লেখযোগ্য বিশেষত্ব। 

25. ইউরোপীয়দের সংস্পর্শ কিভাবে আরাওয়াকদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলেছিল ? সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ স্পেনীয়রা প্রথম আরাওয়াকদের সংস্পর্শে আসে। আরাওয়াকরা ছিল খুব উদার  প্রকৃতির। ফলে তারা স্পেনীয়দের সাথে মিত্রতার আগ্রহে ব্যবহার করছিল। সোনার খোঁজে তারা স্পেনীয়দের যথেষ্ট সহায়তা করে। কিন্তু লোভী নিষ্ঠুর এবং স্বার্থবাদী স্পেনীয়রা ছিল তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ রক্ষা ও পূরণ করতে বদ্ধপরিকর। ফলে যখন স্পেনার আরাওয়াকদের প্রতি নির্মম নীতি গ্রহণ করে তখন আরাওয়াকরা বাধ্য হয় তা রুখে দাড়াতে। কিন্তু এর পরিণতি তাদের পক্ষে খুবই বিষাদময় হয়ে উঠেছিল। স্পেনীয়দের সাথে তাদের যোগাযোগের পঁচিশ বছরের মধ্যেই তাদের জীবনধারার কিছুই প্রায় অবশিষ্ট ছিল না। 

26. পেড্র আলভারেস কেব্রেল কে ছিলেন? পর্তুগীজরা কিভাবে ব্রাজিল অধিকার করে সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ পেড্র আলভারেস কেব্রেল ছিলেন একজন পর্তুগীজ নাবিক। তিনি ব্রাজিলকে পর্তুগীজ উপনিবেশে পরিণত করছিলেন বা দখল করেছিলেন।

পর্তুগীজদের ব্রাজিল দখলের কাজটি হঠাৎ করে সংঘটিত হয়। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে পে আলভারেস কেব্রেল-এর নেতৃত্বে অনেকগুলো জাহাজের একটি বহর পর্তুগাল থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল। দুর্যোগপূর্ণ সমুদ্রপথ এড়ানোর জন্য পশ্চিম আফ্রিকা ঘুরে রওয়ানা দিলে তিনি আশ্চর্যজনকভাবে ব্রাজিল উপকূলে পৌঁছে যান। পোপ দক্ষিণ আমেরিকার এই পূর্বাঞ্চল পর্তুগালের অধীনে বলে তার মানচিত্রে অনুমোদন রেখেছিলেন, তাই এই অঞ্চলে অর্থাৎ ব্রাজিলে পৌঁছে তাদের ধারণা হয় যে এটা তাদেরই অধীনস্ত স্থান। তাছাড়া বেশি স্থানীয় প্রতিরোধ না থাকায় ব্রাজিলে পর্তুগীজ উপনিবেশ স্থাপন সহজ হয়।

27. টুপিনস্বাগণ কারা ছিল?

উত্তরঃ টুপিনম্বা নামক লোকগণ দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূল ও বনাঞ্চলে বাস করত। এই সকল লোকদের কৃষিকার্যের সরঞ্জাম না থাকায় তারা বনজঙ্গল পরিষ্কার করে খেত করতে পারত না। কিন্তু তারা যথেষ্ট পরিমাণে ফল-মূল, শাকসবজি ও মৎস্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছিল। সেজন্য তারা ক্ষেতের উপর নির্ভর না করে চলতে পারত। 

28. ক্রুসেডের স্মৃতি বা সামরিক বিজয় বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ ক্রুসেডের স্মৃতি বা সামরিক বিজয় বলতে ধর্মযুদ্ধের কথাকে স্মরণ করে দেয়। এই ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের স্মৃতি স্পেনের বহু ব্যক্তিকে সাগরের বীর হতে উৎসাহিত করেছিল। স্পেনের সম্রাট জয় করা রাজ্যসমূহের উপর অধিকার দাবি করে এবং অভিযানের নেতাগণকে উপাধি ও জয় করা স্থান শাসন করতে দিয়ে পুরস্কৃত করে।

29. ইউরোপীয়ানদের সাগরীয় যাত্রা করার ক্ষেত্রে টলেমির ভূগোল কীভাবে উৎসাহিত করেছিল? 

উত্তরঃ টলেমি ছিলেন একজন মিশরীয় ভূগোলবিদ। ১৪৭৭ খ্রিস্টাব্দে তার ( ১৩০০ ) বৎসর পূর্বে লিখিত) লেখা গ্রন্থ Geography মুদ্রিত হয় এবং এর ফলে ইউরোপে সবাই এই বই পড়ার সুযোগ পায়। টলেমির বর্ণনা মতে পৃথিবীর অঞ্চলগুলো অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ ভিত্তি করে ভাগ করা হয়েছিল। এই বইটি পড়ে ইউরোপের মানুষের মধ্যে পৃথিবীর নানা তথ্য সম্বন্ধে জ্ঞানের বিস্তার ঘটে। তারা মনে করে যে পৃথিবীতে তিনটি মহাদেশ আছে—এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা। টলেমি তার গ্রন্থে এইরকম ইঙ্গিত করেন যে পৃথিবী গোলাকার। কিন্তু তিনি মহাসাগরের দূরত্ব প্রকৃত মাপের চেয়ে অনেক কম দেখিয়েছিলেন। আটলান্টিক অতিক্রম করে কোন জায়গায় যাওয়ার বিষয় ইউরোপীয়দের ভ্রান্ত ধারণাবশত তারা অজানার উদ্দেশ্যে সমুদ্রযাত্রায় রওয়ানা হয়ে যেতেন। 

30. টলেমি কে ছিলেন? 

উত্তরঃ টলেমি হলেন ভূগোল বিষয়ক পুঁথির জনক। তিনি মিশরের পণ্ডিত ছিলেন। ১৪৭৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ভূগোল-বিষয়ক প্রথম গ্রন্থখানা প্রকাশ পায়। টলেমি সর্বপ্রথম অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ গণনা অনুসারে স্থানসমূহের অবস্থান নির্ণয় করেছিলেন। টলেমির মতে পৃথিবী হল একটি মণ্ডলের আকার।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

1. প্রাচীন আমেরিকানদের প্রধান সভ্যতাসমূহের বৈশিষ্ট্যের মূল আলোচনা কর। 

উত্তরঃ প্রাচীন আমেরিকায় নানা প্রকার সভ্যতা প্রসার লাভ করেছিল, কিন্তু এদের মধ্যে এই মায়া, আজটেক এবং ইনকা সভ্যতাসমূহ ছিল উল্লেখযোগ্য।

(ক) মায়া সভ্যতাঃ প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে মায়া সভ্যতা প্রসার লাভ করে এবং মধ্য আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে। চিচেন এবং ইটাজা ছিল এই সভ্যতার কেন্দ্রস্থল। এই সভ্যতার মানুষ ধাতুর ব্যবহার জানত না। তথাপি তাদের গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব ছিল। 

মায়া সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(অ) এই সভ্যতার মানুষ তাদের শস্যক্ষেতের নিকটবর্তী কলোনীতে বাস করত। শস্য, সিম, আলু, স্কোয়াস ও লঙ্কা তাদের প্রধান খাদ্যবস্তু ছিল। তারা সুতির কাপড় পরিধান করত এবং মাটির বাসন ব্যবহার করত।

(আ) কৃষি ছিল মায়া সভ্যতার প্রধান পেশা। তারা অধিক উৎপাদনের জন্য তাদের দেব-দেবীকে সদা সন্তুষ্ট রাখত।

(ই) তারা নানা প্রকার ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিশ্বাস করত। রাবার বলের খেলা ছিল তাদের একটি অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান।

(ঈ) তাদের বর্ণমালা ছবিভিত্তিক ছিল। এক সময় স্বরবর্ণ ব্যবহার করা হত।

(খ) আজটেক সভ্যতাঃ দ্বাদশ শতকে মায়া সভ্যতা পতনের পর আজটেক সভ্যতা বিকাশ লাভ করে। 

আজটেক সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্টসমূহ নিম্নরূপঃ

(অ) আজটেক সাম্রাজ্য দুই লক্ষাধিক বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত ছিল এবং মোট ৩৮টি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। প্রতিটি প্রদেশ গভর্নর দ্বারা শাসিত হত। 

(আ) তারা নানাবিধ দেবদেবীর পূজার্চনা করত। সূর্য দেবতা ও খাদ্য দেবতা দেবদেবীর মধ্যে প্রধান ছিলেন। তারা খাদ্য দেবতাকে অন্যান্য দেবতার মাতা বলে ভারত।

(ই) এই মানুষগুলি ধাতু গলানো ও ধাতুর ব্যবহার জানত। 

(ঈ) তারা ধর্মীয় কার্যাদির জন্য ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিল।

(গ) ইনকা সভ্যতাঃ ইনকা সভ্যতা ইন্‌কা জাতিরা গড়ে তুলেছিল। তারা চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকের মধ্যে আমেরিকার ইন্দো-অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেছিল। 

এই সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ 

(অ) ইনকা বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল যার মধ্যে অনেক শহর ও নগর অবস্থিত ছিল। 

(আ) তারা শহরে সুসজ্জিত দুর্গ, রাস্তা এবং মন্দির নির্মাণ করেছিল।

(ই) তারা পাহাড়ের গায়ে জমি তৈরি করে শস্য, আলু, মিষ্টি আলু প্রভৃতি চার করত।

(ঈ) সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য মজুত করে রাখার ব্যবস্থা ছিল। 

2. আমেরিকানদের স্বদেশী মায়া সভ্যতার জনগণের সমাজ, ধর্ম এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তরঃ আমেরিকার স্বদেশী সভ্যতার মধ্যে মায়া সভ্যতা একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এই সভ্যতার সমাজ, ধর্ম এবং বিজ্ঞান-এর প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হলঃ

(ক) সমাজঃ মায়া সমাজ পুরোহিতশাসিত ছিল। সমাজে পুরোহিতগণ সম্মানিত ছিল। চিচেন ও ইটজা নগর-রাষ্ট্রের সরকার পুরোহিতদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। তারা রাষ্ট্রে স্বেচ্ছাচারির মতো কাজ করত। মায়া সভ্যতার অর্থনীতি ছিল কৃষিভিত্তিক, ধান ছিল প্রধান শস্য। কিছু লোক কাপড় বোনা ও রং দেবার কাজে রত ছিল। ধান, সিম, আলু প্রভৃতি ছিল প্রধান খাদ্যসামগ্রী।

(খ) ধর্মঃ মায়া সভ্যতার জনগণ নানা প্রকার দেবদেবীর পূজার্চনা করত। দেবদেবীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—বন দেবতা, বারি দেবতা, অগ্নি দেবতা ও শস্য দেবতা। মানুষ অধিক বৃষ্টির জন্য মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী জলে নিক্ষেপ করত। কিছু মানুষ ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করবার জন্য তাদের দেহের অংশবিশেষ দান করত। মায়া সমাজে নরবলি প্রচলিত ছিল।

(গ) বিজ্ঞানঃ বিজ্ঞানের উন্নতিতে মায়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তার ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা আবিষ্কার করেছিল। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরে ৩৯ দিন এবং ১৮ মাস ছিল। প্রত্যেক মাসে ২০ দিন ছিল। গণিতে মায়া সভ্যত শূন্যের ধারণা প্রদান করেছিল। কাগজের ব্যবহার মায়া সভ্যতার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব।

বস্তুত মায়া সভ্যতা আমেরিকার অন্যান্য সভ্যতা থেকে পিছনে পড়ে থাকেনি। 

3. পেরুর ইনকাদের বিষয়ে অথবা আজটেকদের বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত চাক লেখ।

উত্তরঃ (খ) আজটেক সভ্যতাঃ দ্বাদশ শতকে মায়া সভ্যতা পতনের পর আজটেক সভ্যতা বিকাশ লাভ করে। 

আজটেক সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্টসমূহ নিম্নরূপঃ

(অ) আজটেক সাম্রাজ্য দুই লক্ষাধিক বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত ছিল এবং মোট ৩৮টি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। প্রতিটি প্রদেশ গভর্নর দ্বারা শাসিত হত। 

(আ) তারা নানাবিধ দেবদেবীর পূজার্চনা করত। সূর্য দেবতা ও খাদ্য দেবতা দেবদেবীর মধ্যে প্রধান ছিলেন। তারা খাদ্য দেবতাকে অন্যান্য দেবতার মাতা বলে ভারত।

(ই) এই মানুষগুলি ধাতু গলানো ও ধাতুর ব্যবহার জানত। 

(ঈ) তারা ধর্মীয় কার্যাদির জন্য ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিল।

4. ইনকা সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক বা রাজভাষা কি ছিল? ইনকাদের প্রশাসনিক পরিকাঠামো কেমন ছিল?

উত্তরঃ ইনকা সভ্যতার প্রশাসনিক বা রাজভাষা ছিল কিউচুয়া (Quechua)। ইনকাদের প্রশাসনিক পরিকাঠামো ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত। 

এর মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) ইনকা সাম্রাজ্য ছিল প্রচণ্ড কেন্দ্রীভূত, যেখানে রাজাই ছিলেন সর্বেসর্বা অর্থাৎ ক্ষমতার মূল স্তম্ভ।

(খ) বিজিত জনগোষ্ঠীগুলিকে রাজকার্যে লাগানো হয়েছিল এবং তারা রাজভাষা কিউচুয়া ব্যবহারে বাধ্য ছিল।

(গ) প্রতিটি জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজস্ব প্রবীণ উপদেষ্টামণ্ডলী শাসন করত আলাদাভাবে। কিন্তু জনগোষ্ঠীকে সর্বতোভাবে রাজার প্রতি দায়বদ্ধ ও অনুগত থাকতে হত।

(ঘ) স্থানীয় শাসকরা রাজাকে প্রয়োজনে সামরিক সহায়তা প্রদান করতেন। এর বিনিময়ে তারা পুরস্কৃত হতেন। 

(ঙ) ইনকা সাম্রাজ্য একটি সংঘের মতো পরিচালিত হত, যার কর্তৃত্বে থাকত ইনকারা ইত্যাদি।

5. ইনকা সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।

উত্তরঃ দক্ষিণ আমেরিকার সর্বাপেক্ষা বৃহৎ এবং উন্নত সভ্যতা ছিল ইনকা সভ্যতা। 

এর মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) ইনকা সভ্যতায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল প্রচণ্ড কেন্দ্রীভূত। সেখানে রাজাই ছিলেন সর্বেসর্বা অর্থাৎ ক্ষমতার মূল স্তম্ভ।

(খ) ইনকারা ছিল উত্তম স্থপতি। পর্বত কেটে রাস্তা ও দুর্গ হচ্ছে এর নিদর্শন।

(গ) ইনকা সভ্যতার ভিত্তি ছিল কৃষি। ইনকারা শস্য ও আলু উৎপাদন করত এবং খাদ্য ও শ্রমের জন্য ইলামাদের ব্যবহার করত। 

(ঘ) ইনকাদের বয়ন ও মৃৎশিল্প ছিল খুব উন্নত মানের।

(ঙ) যদিও লিখন পদ্ধতির কোন ব্যবহার ছিল না ইনকাদের, তবে রশি ব্যবহার করে গণনার একটি পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। 

(চ) ইনকা সাম্রাজ্যের সংগঠনটি ছিল পিরামিডের মতো। যেখানে শাসক ছিলেন সর্বোচ্চ। তার পতন ছিল সাম্রাজ্যের পতন|

6. মেসোপোটামিয়া সভ্যতার সঙ্গে আজতেক সভ্যতার তুলনা কর। 

উত্তরঃ দুই ভিন্ন অঞ্চলে এবং হাজার বৎসরের পার্থক্যে গড়ে উঠেছিল মেসোপোটামীয় সভ্যতা ও আজতেক সভ্যতা। এই সভ্যতাগুলির বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে থাকা সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের তুলনামূলক দিক তুলে ধরে।

মেসোপোটার্মীয় সভ্যতাঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) মেসোপোটানীয় সমাজে তিনটি শ্রেণী ছিল; যথা—উচ্চ শ্রেণী, মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও নিম্ন শ্রেণী।

(খ) উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী সুখী ও বিলাসী জীবনযাপন করত। অন্যদিকে নিম্ন শ্রেণীর জীবনযাত্রা ছিল করুণ। 

(গ) মহিলাগণ পুরুষের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম মর্যাদা লাভ করত।

(ঘ) জনগণ নানা প্রকার দেবদেবীর পূজার্চনা করত।

(ঙ) জনগণ নানাবিধ মহৎ কৃতিত্বমূলক কাজ সম্পাদন করেছিল। প্রথমেই তারা লিখবার কৌশল আবিষ্কার করে। তারা একটি চন্দ্রপঞ্জিকা তৈরি করে। তাছাড়াও তারা কুম্ভকারের চক্র, কাচ ও নূতন ধরনের ভাস্কর্য আবিষ্কার করে। 

(চ) নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা হলেও তার গ্রামীণ জীবন ছিল অতি উন্নত।

(ছ) স্থানীয়ভাবে উৎকৃষ্ট ধাতুর যোগান ছিল না বলে বহিরাঞ্চল থেকে বিভিন্ন নির্মাণ। কার্যের প্রয়োজনীয়তায় ধাতু আনয়ন করা হত। 

(জ) বহির্দেশীয় এবং অন্তদেশীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ লাভ করেছিল।

(ঝ) সামাজিক শ্রেণী বিভাজনে শাসকরা ছিলেন সবথেকে উচ্চে।

আজটেকদের সভ্যতাঃ আজটেক সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) আজটেক সমাজ ছিল শ্রেণী বিভাজিত। এই সমাজে অভিজাত, যাজক, পুরোহিত, যোদ্ধা, ব্যবসায়ী, কারিগর, চিকিৎসক, শিক্ষক, কৃষক প্রভৃতির অবস্থান ছিল। 

(খ) অভিজাত সম্প্রদায় তাদের মধ্য থেকে রাজা মনোনীত করত। রাজাকে ভূ-পৃষ্ঠে সূর্যদেবতার প্রতিনিধি বলে গণ্য করা হত। জনগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যুদ্ধ দেবতা ও সূর্য দেবতার পূজা করত।

(গ) সীমিত ভূমি থাকার দরুন জনসাধারণ জলাভূমিকে বসবাস ও কৃষি উপযোগ করে তোলে। জলসেচের জন্য নালা ও খাল ছিল। 

(ঘ) জনগণ শস্য, সিম, মটর, মিষ্টি লাউ, স্কোয়াস, আলু প্রভৃতি নানা প্রকার শাকসবজি উৎপাদন করত। 

(ঙ) আজটেক সাম্রাজ্য গ্রামের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়েছিল। সেখানে কোন ব্যক্তিবিশেষ জমির মালিক ছিলেন না, বরং গোষ্ঠীর মালিকানাধীন ছিল জমি। 

(চ) আজটেকরা কোন বিশেষ ধাতুর প্রতি আসক্ত ছিল না। এমনকী সোনা-রুপার প্রতিও তাদের আসক্তি ছিল না। তারা বিভিন্ন ধাতুর ব্যবহার জানত ও করত।

(ছ) আজটেক সমাজে শিক্ষার বিকাশ হয়েছিল এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রচলন ছিল।

(জ) আজটেক সমাজ ছিল যাজক সম্প্রদায়কেন্দ্রীক। সমাজে অভিজাত শ্রেণী ছিল। জন্ম ও কর্ম নির্ভর।

(ঝ) ক্রীতদাস প্রথার প্রচলন ছিল আজটেক সাম্রাজ্যে।

7. কলম্বাস কে ছিলেন? আমেরিকা আবিষ্কারের পথে তাঁর সমুদ্র অভিযান বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ক্রিস্টোফার কলম্বাস একজন ইটালীয় নাবিক ছিলেন। তাঁর জন্ম ১৪৫১ সালে। তাঁর অভিযানের প্রতি আগ্রহ ছিল এবং অভিযানের মাধ্যমে নাম ও যশ পাওয়া তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। তিনি কার্ডিনাল পিয়ের ডিএলির বই ইমাগো মান্ডি পড়ে বিশেষভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন। তিনি অভিযানের উদ্দেশ্যে পর্তুগীজ রাজার কাছে তাঁর পরিকল্পনা পেশ করেন, কিন্তু তা বাতিল হয়। ভাগ্যক্রমে স্পেনীয় কর্তৃপক্ষের কাছে সামান্য কিছু সাহায্য। পেয়ে তিনি পালোস বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেন ১৪৯২ সালের ৩রা আগস্ট।

কলম্বাসের বহর বেশ ছোট ছিল। একটি পালতোলা বড় জাহাজ ও দুটি ছোট জাহাজ নিয়ে তার বহর ছিল। বড় জাহাজটির নাম ছিল সান্তা মারিয়া এবং ছোট জাহাজ দুটির নাম ছিল পিটা ও নিনা। সান্তা মারিয়ার পরিচালন কলম্বাজ নিজেই করেছিলেন। ৪০ জন দক্ষ নাবিক তাকে সহায়তা করেছিলেন। অনুকূল আবহাওয়ায় তিনি যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু এত দূর পথে প্রথম ৩৩ দিন অথৈ সমুদ্রে কোন কূল পাওয়া গেল না। ফলে নাবিকদের একটা অংশ অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকে এবং ফিরে যাওয়ার দাবি তোলে।

অবশেষে ১৪৯২ সালের ১২ই অক্টোবর একটি স্থলরেখা নজরে আসে। কলম্বাস প্রথমে ভেবেছিলেন যে তিনি ভারতবর্ষে (India) পৌঁছেছেন। কিন্তু সেটা ছিল বাহামার ওয়ানাহানি দ্বীপ। গুয়ানাহানি দ্বীপে সেখানকার অধিবাসী আরাওয়াকরা নাবিকদের সাদরে গ্রহণ এবং খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্য করেন। কলম্বাস তাদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হন। এই গুয়ানহানিতে তিনি স্পেনীয় পতাকা প্রোথিত করেন। তিনি এই দ্বীপের নামকরণ করেন সান সালভাদোর। স্থানীয় লোকদের সাহায্যে তিনি আরও বড় দ্বীপ কুমনাস্থান ও কিসকেয়া দর্শন করেন।

8. স্পেনীয় ও পর্তুগীজ শাসকদের সমুদ্রাভিযানে পৃষ্ঠপোষকতার কারণগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা কর। 

উত্তরঃ পঞ্চদশ শতাব্দীতে স্পেনীয় ও পর্তুগীজ শাসকদের সমুদ্রাভিযানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া বা পৃষ্ঠপোষকতার পিছনে সম্মিলিতভাবে নিম্নলিখিত মোট তিনটি উদ্দেশ্যের উপর নির্ভরশীল ছিলঃ

(ক) অর্থনৈতিকঃ চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়। ইউরোপে মারণব্যাধি প্লেগ ও যুদ্ধবিগ্রহে প্রচুর লোকক্ষয়, ব্যবসায়িক মন্দা ও সোনা-রুপার মুদ্রার ঘাটতি দেখা দেয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে উক্ত দেশীয় শাসকরা নতুন গন্তব্যের সন্ধানে ছিলেন।

(খ) ধর্মীয়ঃ আরও বেশিসংখ্যক লোককে খ্রিস্টধর্মের আওতায় নিয়ে আসা যাবে এই সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় অনেক ধর্মপ্রাণ ইউরোপীয়রা ঝুঁকি নিতেও রাজি ছিলেন।

(গ) রাজনৈতিকঃ তুর্কীদের বিরুদ্ধে ইউরোপীয়রা ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হলেও এর ইতিবাচক দিকটা ছিল যে এতে এশিয়ার সঙ্গে তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল এবং তাদের মধ্যে এশিয়ার দ্রব্যাদি বিশেষ করে মশলাপাতির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বিশ্বে ইউরোপীয় রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বেড়ে যাওয়ার ফলে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে উপনিবেশ স্থাপন করায় তাদের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তারা অনেক লাভবান হয় এবং এই অবস্থা বজায় রাখতেই স্পেনীয় ও পর্তুগীজ শাসকরা দূরবর্তী সমুদ্রাভিযানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। 

9. আমেরিকাতে স্পেনীয় সাম্রাজ্যের বিশিষ্টগুলি লেখ।

উত্তরঃ আমেরিকাতে স্পেনীয় সাম্রাজ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) স্পেনীয় সাম্রাজ্য বিস্তারের ভিত্তি ছিল বারুদ ও অশ্বযোদ্ধাদের বলে বলীয়ান সামরিক ক্ষমতা।

(খ) স্থানীয় জনগণ হয়ত রাজস্ব দিতে না হয় সোনা ও রুপার খনিতে কাজ করতে বাধ্য ছিল। 

(গ) প্রারম্ভিক আবিষ্কার পরবর্তী সময়ে স্পেনীয়রা এই দেশে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট জনপদের সৃষ্টি হয়, যেখানে কিছু স্পেনদেশীয় লোক থাকত এবং স্থানীয়দের কাজকর্মের তদারকি করত।

(ঘ) স্থানীয় সর্দারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নতুন বসতি ও সোনার উৎস খুঁজে বের করার।

(ঙ) সোনার উৎস সন্ধানের অত্যধিক লোভে স্পেনীয়রা হিংস্রতা ও দমন নীতি অবলম্বন করে, যাতে স্থানীয় অসন্তোষ গড়ে ওঠে এবং স্পেনীয়রা নির্বিচারে স্থানীয়দের হত্যা করে ইত্যাদি।

(চ) ক্রমপর্যায়ে স্থানীয় আরাওয়াকরা নিজেদের অস্তিত্ব হারায়, যা স্পেনীয় সাম্রাজ্যের সর্বাপেক্ষা বেদনাদায়ক অবদান।

10. আমেরিকা আবিষ্কার বা অজানা সমুদ্র যাত্রার প্রভাব বা ফলাফল লেখ।

উত্তরঃ অজানা সমুদ্রযাত্রা দিয়ে শুরু হওয়া একটি পর্যায় ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকায় একটি চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল।

(ক) পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে ইউরোপের জনগণ এক সমুদ্র থেকে আরেক সমুদ্রে নির্ভয়ে যাতায়াত করার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল হয়ে উঠেছিল। ইতিপূর্বে সমুদ্রের কোনো যাত্রাপথ সম্বন্ধে ইউরোপীয়দের কোনো কিছু জানা ছিল না। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে এবং ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ওই দুরূহ কাজগুলো করা সম্ভব হয়েছিল।

(খ) ইউরোপের পক্ষে আমেরিকা আবিষ্কারের প্রভাব শুধু প্রথম পর্যায়ের অভিযাত্রীদের উপর নয় অন্যান্যদের উপরও পড়েছিল। সোনা ও রুপার আমদানি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং শিল্প বিস্তারে সহায়ক হয়েছিল।

(গ) ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও হল্যান্ড দেশগুলোর ব্যবসায়ীরা তাদের অনেকগুলো জয়েন্ট স্টক কোম্পানি শা অভিযানেও বেরিয়ে পড়েছিল এবং সেই সঙ্গে সেই সব দেশে উপনিবেশ স্থাপন করে ওই দেশগুলোর বিভিন্ন কৃষিব্য: যেমন – তামাক, আলু, আখ, কোকো, রাবার ইত্যাদির সঙ্গে ইউরোপীয়দের পরিচিত করিয়েছিলেন। 

(ঘ) আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত কিছু কৃষিষবা বিশেষ করে আলু এবং লঙ্কার সঙ্গে ইউরোপীয়রা নতুন করে পরিচিত হয়েছিল। ওই মধ্যগুলোকে পরে ইউরোপীয়রা ভারতবর্ষ সহ আরও কয়েকটি দেশেও বয়ে নিয়ে গিয়েছিল।

(ঙ) অপরপক্ষে এই ইউরোপীয় উপনিবেশের ফলে আমেরিকার স্থানীয় অধিবাসীরা যা পেরেছিল তা হচ্ছে নির্মম গণহত্যা, তাদের নিজস্ব জীবনধারার বিলুপ্তিকরণ এবং খনি কৃষিকাজ ও কলকারখানার ক্রীতদাসে পরিণত হওয়া।

11. ফ্রান্সিসকো পিজারোর নেতৃত্বে স্পেনীয়রা কিভাবে ইনকা সাম্রাজ্য দখ করেছিল? সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ফ্রান্সিসকো পিজারো ছিলেন একজন স্পেনীয় সেনাকর্মী। তিনি ছিলেন অশিক্ষিত এবং গরীব। ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে গমন করলে তিনি ইনকা সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির গল্প শুনেছিলেন। তাই পরবর্তীতে তিনি বহুবার চেষ্টা করেছিলেন প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে ইনকা রাজত্বে পৌঁছতে। একবার যাত্রা শেষে ঘরে ফেরার পথে তিনি স্পেনীশীয় রাজার সঙ্গে দেখা করতে পেরেছিলেন এবং সেই সময় ইনকাদের কারিগরী নৈপুণ্যের নিদর্শন চমৎকার স্বর্ণখচিত পাত্র রাজাকে দেখিয়েছিলেন। সেসব দেখে রাজার খুব লোভ হল এবং তিনি পিজারোকে এই মর্মে কথা দিলেন যে তাকে ওই দেশের গভর্নর করে দেবেন।

পরবর্তীতে পিজারো সুযোগ বুঝে ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দের গৃহযুদ্ধের পর আটাওয়ালপা ( Atahualpa) ইনকা সাম্রাজ্যের সিংহাসন দখল করেন। পিজারো ওই সময় সেখানে উপস্থিত হলেন এবং ফাঁদ পেতে ওই রাজাকে বন্দী করলেন। রাজা তাঁর মুক্তিপণ বাবদ একঘর ভর্তি সোনা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু পিজারো তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি বরং তাঁর নির্দেশে ওই রাজাকে মেরে ফেলা হয়। এইভাবেই স্পেনীয়রা পিজারোর নেতৃত্বে ইনকা সাম্রাজ্যে দখল করে।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. আজটেকদের সভ্যতার সঙ্গে মেসোপোটামিয়াদের সভ্যতার তুলনা কর।

উত্তরঃ দুই ভিন্ন অঞ্চলে এবং হাজার বৎসরের পার্থক্যে গড়ে উঠেছিল মেসোপোটামীয় সভ্যতা ও আজতেক সভ্যতা। এই সভ্যতাগুলির বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে থাকা সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের তুলনামূলক দিক তুলে ধরে।

মেসোপোটার্মীয় সভ্যতাঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) মেসোপোটানীয় সমাজে তিনটি শ্রেণী ছিল; যথা—উচ্চ শ্রেণী, মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও নিম্ন শ্রেণী।

(খ) উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী সুখী ও বিলাসী জীবনযাপন করত। অন্যদিকে নিম্ন শ্রেণীর জীবনযাত্রা ছিল করুণ। 

(গ) মহিলাগণ পুরুষের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম মর্যাদা লাভ করত।

(ঘ) জনগণ নানা প্রকার দেবদেবীর পূজার্চনা করত।

(ঙ) জনগণ নানাবিধ মহৎ কৃতিত্বমূলক কাজ সম্পাদন করেছিল। প্রথমেই তারা লিখবার কৌশল আবিষ্কার করে। তারা একটি চন্দ্রপঞ্জিকা তৈরি করে। তাছাড়াও তারা কুম্ভকারের চক্র, কাচ ও নূতন ধরনের ভাস্কর্য আবিষ্কার করে। 

(চ) নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা হলেও তার গ্রামীণ জীবন ছিল অতি উন্নত।

(ছ) স্থানীয়ভাবে উৎকৃষ্ট ধাতুর যোগান ছিল না বলে বহিরাঞ্চল থেকে বিভিন্ন নির্মাণ। কার্যের প্রয়োজনীয়তায় ধাতু আনয়ন করা হত। 

(জ) বহির্দেশীয় এবং অন্তদেশীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ লাভ করেছিল।

(ঝ) সামাজিক শ্রেণী বিভাজনে শাসকরা ছিলেন সবথেকে উচ্চে।

আজটেকদের সভ্যতাঃ আজটেক সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) আজটেক সমাজ ছিল শ্রেণী বিভাজিত। এই সমাজে অভিজাত, যাজক, পুরোহিত, যোদ্ধা, ব্যবসায়ী, কারিগর, চিকিৎসক, শিক্ষক, কৃষক প্রভৃতির অবস্থান ছিল। 

(খ) অভিজাত সম্প্রদায় তাদের মধ্য থেকে রাজা মনোনীত করত। রাজাকে ভূ-পৃষ্ঠে সূর্যদেবতার প্রতিনিধি বলে গণ্য করা হত। জনগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যুদ্ধ দেবতা ও সূর্য দেবতার পূজা করত।

(গ) সীমিত ভূমি থাকার দরুন জনসাধারণ জলাভূমিকে বসবাস ও কৃষি উপযোগ করে তোলে। জলসেচের জন্য নালা ও খাল ছিল। 

(ঘ) জনগণ শস্য, সিম, মটর, মিষ্টি লাউ, স্কোয়াস, আলু প্রভৃতি নানা প্রকার শাকসবজি উৎপাদন করত। 

(ঙ) আজটেক সাম্রাজ্য গ্রামের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়েছিল। সেখানে কোন ব্যক্তিবিশেষ জমির মালিক ছিলেন না, বরং গোষ্ঠীর মালিকানাধীন ছিল জমি। 

(চ) আজটেকরা কোন বিশেষ ধাতুর প্রতি আসক্ত ছিল না। এমনকী সোনা-রুপার প্রতিও তাদের আসক্তি ছিল না। তারা বিভিন্ন ধাতুর ব্যবহার জানত ও করত।

(ছ) আজটেক সমাজে শিক্ষার বিকাশ হয়েছিল এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রচলন ছিল।

(জ) আজটেক সমাজ ছিল যাজক সম্প্রদায়কেন্দ্রীক। সমাজে অভিজাত শ্রেণী ছিল। জন্ম ও কর্ম নির্ভর।

(ঝ) ক্রীতদাস প্রথার প্রচলন ছিল আজটেক সাম্রাজ্যে।

2. পঞ্চদশ শতকে ইউরোপীয় নাবিকদের সহায়তাকারী নূতন ঘটনাবলী কি কি? 

উত্তরঃ পঞ্চদশ শতকে ইউরোপীয় নাবিকদের সহায়তাকারী নূতন ঘটনাবলী নিম্নরূপঃ

(ক) ১৩৮০ খ্রিস্টাব্দে চুম্বকীয় কম্পাস আবিষ্কৃত হয়েছিল। তা সমুদ্রযাত্রার সঠিক গন্তব্যস্থল নির্ণয়ে অত্যন্ত সহায়তা করেছিল।

(খ) ইউরোপীয় সামুদ্রিক জাহাজগুলিকে নানাভাবে উন্নত করা হয়েছিল। বৃহৎ জাহাজ তৈরি করা হয়েছিল। এই জাহাজগুলি বিশাল পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী ও নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রশস্ত্র বহন করতে পারত।

(গ) পর্যটন সাহিত্য এবং সৃষ্টিতত্ত্ব ও ভূগোল বিষয়ক নানাবিধ গ্রন্থাবলী রচিত হওয়ার ফলে মানুষ সাগ্রহে এইগুলি পড়তে থাকে। টলেমির ভূগোলে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল, অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ বিন্যাস করিবার কথা উল্লেখ আছে। এই ধারণা ইউরোপীয় নাবিকদের বিশ্ব সম্পর্কে অনেক জ্ঞান দান করেছিল।

3. পঞ্চদশ শতকে স্পেন ও পর্তুগালের আটলান্টিক মহাসাগরে সর্বপ্রথম অভিযান চালানোর কারণসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ পঞ্চদশ শতকে স্পেনে ও পর্তুগালের আটলান্টিক মহাসাগরে সর্বপ্রথম অভিযান চালানোর কারণসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) স্প্যানিশ ও পর্তুগীজ শাসকগণ সমুদ্র অভিযানের জন্য অর্থ মঞ্জুরে উৎসাহী ছিলেন। তাদের সোনা ও ধনদৌলত এবং গৌরব-এর আকাঙ্ক্ষা ছিল।

(খ) বহু ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান বিভিন্ন দেশের মানুষকে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণে বাধ্য করতে চেয়েছিলেন। সুতরাং তারা যে-কোন প্রকার অভিযানে সদা প্রস্তুত থাকতেন।

(গ) ইউরোপীয় দেশসমূহ অপেক্ষাকৃত উষ্ণ আবহাওয়াযুক্ত অঞ্চলে বসবাস করতে আগ্রহী ছিলেন।

4. কোন্ নূতন খাদ্যসামগ্রীসমূহ দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দিকে প্রেরণ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বিশ্বের অন্যান্য স্থানে প্রেরিত নূতন খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—আলু, কুশিয়ার, গোলমরিচ ও লঙ্কা।

নাতিদীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

5. সতেরো বছরের ধৃত এবং ব্রাজিলে ক্রীতদাসরূপে আনীত এক আফ্রিকান বালকের ভ্রমণ বৃত্তান্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। 

উত্তরঃ দাসত্বে পরিণত করা বালকের কাহিনি অত্যন্ত করুণ। তাকে অন্যান্য ক্রীতদাসের মতো জাহাজে আবদ্ধ করা হয়। তাকে দীর্ঘ দিন শিকল দিয়ে বেঁধে বিনা খাদ্য ও জলে রাখা বালকটি কঙ্গো থেকে তার যাত্রা আরম্ভ করে এঙ্গোলায় পৌঁছায়। তারপর সে আটলান্টিক মহাসাগরে জাহাজে করে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

6. দক্ষিণ আমেরিকা আবিষ্কার কিভাবে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতাবাদ বিকাশের সূচনা করেছিল?

উত্তরঃ ইউরোপীয় দেশসমূহ বিশেষত স্পেন এবং পর্তুগালের স্বর্ণ ও রৌপ্যের প্রতি অত্যন্ত লোভ ছিল। তারা আশা করেছিল যে দক্ষিণ আমেরিকায় প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণ ও রৌপ্য পাওয়া যায়। এই কারণে তারা সেখানে বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। তারা সেখানে তাদের সামরিক শক্তি ও বন্দুকের জোরে শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে। স্থানীয় বাসিন্দা সহিংসভাবে তাদের প্রতিরোধ করে। কিন্তু এই প্রতিরোধ স্প্যানিশগণ নির্বিচারে দমন করে। তারা স্থানীয় লোকদের জোর করে তাড়িয়ে দেয়। তারা নুতন অঞ্চল এবং নুতন স্বর্ণখনি আবিষ্কারের জন্য স্থানীয় নেতাদের ব্যবহার করে। ইউরোপের অন্যান্য জাতি যখন দক্ষিণ আমেরিকায় স্বর্ণ ও রৌপ্যের ভাণ্ডারের কথা জানতে পারে তখন তারা সেখানে চলে যায় এবং স্থায়ীভাবে বসতি বিস্তার করে। তারা স্থানীয় লোকদের দাসে পরিণত করে এবং তাদের খনিতে কাজ করিতে বাধ্য করে। এইভাবে দক্ষিণ আমেরিকা ধীরে ধীরে ইউরোপীয় শক্তির মুষ্ঠিতে আবদ্ধ হয়ে যায়।

প্রতিবন্ধকতা ও পলায়নঃ কলম্বাস ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা সোনার অন্বেষণ করেন, কিন্তু তাদের অভিযান একটি দুর্ঘটনায় বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাঁরা হিংস্র কবির উপজাতির সম্মুখীনও হন। নাবিকরাও যথা শীঘ্র সম্ভব ঘরে ফিরে যাবার দাবি করতে থাকে। কিন্তু ফেরার পথ এত সুগম ছিল না। একদিকে জাহাজ ঘুন পোকার আক্রমণে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নাবিকরাও ক্লান্ত থাকায় প্রায় ৩২ সপ্তাহ লেগে যায় ফিরতে।

পরবর্তীকালে আরও তিনবার অভিযান চালানো হয় এবং এই অভিযানগুলিতে প্রধান জলভূমি আবিষ্কৃত হয় এবং দেখা যায় যে কলম্বাস ভারতবর্ষ আবিষ্কার করেন নি, বরং তিনি একটি নতুন মহাদেশ আবিষ্কার করেছেন। তিনি উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার নামকরণ ক্লোরেন্সবাসী একজন ভৌগোলিক আমেরিগো ভেসপুচির নামে করেন। এটাই কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের কাহিনী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top