Class 11 History Chapter 6 তিনটি শ্রেণী answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 History Chapter 6 তিনটি শ্রেণী and select needs one.
Class 11 History Chapter 6 তিনটি শ্রেণী
Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 History Chapter 6 তিনটি শ্রেণী Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.
তিনটি শ্রেণী
পাঠ: ৬
গ- বিভাগ–পরিবর্তনশীল পরম্পরা
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
1. মধ্যযুগে ইউরোপে কয় প্রকার সামাজিক শ্রেণী ছিল?
উত্তরঃ তিন প্রকার।
2. ‘মধ্যযুগ’ বলতে কোন সময়কালকে বোঝায়?
উত্তরঃ মধ্যযুগ বলতে ইউরোপীয় ইতিহাসের খ্রিস্টীয় পঞ্চম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়কে বোঝায়।
3. ইউরোপের কোন্ যুগকে অন্ধকার যুগ’ বলা হয়?
উত্তরঃ মধ্যযুগকে।
4. কোন সময়কালকে অন্ধকার যুগ বলে?
উত্তরঃ ৫০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে।
5. ‘সামন্তবাদ’ বা ‘Feudalism’ শব্দের উৎস কি?
উত্তরঃ ‘Feudalism’ শব্দের উৎপত্তি জার্মান শব্দ ‘Feud’ থেকে, যার অর্থ ‘এক টুকরো জমি’।
6. ‘Feud’ শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ একখণ্ড জমি।
7. সামন্ত প্রথার উদ্ভব কোথায় ঘটেছিল?
উত্তরঃ ইউরোপে মধ্যযুগে।
8. সামন্তবাদ কখন ইউরোপে গড়ে ওঠে?
উত্তরঃ খ্রিস্টীয় ১১ শতকে।
9. মধ্যযুগে ইউরোপে প্রথম শ্রেণী কাদের বলা হত?
উত্তরঃ যাজক বা পুরোহিতদের।
10. মধ্যযুগে ইউরোপে দ্বিতীয় শ্রেণী কাদের বলা হত?
উত্তরঃ জমিদার শ্রেণীকে।
11. মধ্যযুগে ইউরোপে তৃতীয় শ্রেণী কাদের বলা হত?
উত্তরঃ কৃষকদের।
12. ফ্রান্সের প্রাচীন নাম কি ছিল?
উত্তরঃ গাউল (ম্বল)।
13. একাদশ শতাব্দীর পূর্বে কোন ফরাসী শাসকের শাসনে সামন্তপ্রথার ছাপ পাওয়া যায়?
উত্তরঃ শ্যালম্যাগন।
14. কোন উপজাতির নামে ফ্রান্সের নামকরণ করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ফ্রাঙ্ক।
15. ‘ফ্রান্স’ নামের উৎস কি?
উত্তরঃ জার্মান জনগোষ্ঠী ‘ফ্রাঙ্ক’ থেকে ফ্রান্স নামের উৎপত্তি।
16. রোম সাম্রাজ্যের কোন প্রদেশ ফ্রান্সে পরিণত হয়েছিল?
উত্তরঃ গাউল ল প্রদেশ।
17. মধ্যযুগে ইউরোপে চতুর্থ শ্রেণী’ কাদের বলা হত?
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন সুদক্ষ পেশাদারি গোষ্ঠীর প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে যেমন ব্যাঙ্ক মালিক ও আইনজীবির মতো সুন্দর ব্যক্তিদের উদ্ভব ঘটে। এই গোষ্ঠীকেই ‘চতুর্থ শ্ৰেণী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
18. ত্রিশ্রেণী’ বা ‘তিন শ্রেণী’ কি?
উত্তরঃ ৯ম থেকে ১৬শ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কালে ইউরোপে বিদ্যমান তিনটি সামাজিক শ্রেণিবিভাগকে ‘ত্রিশ্রেণী’ বা ‘তিন শ্রেণী’ বলে অবিহিত করা হয়।
19. Feudal Society বইটির লেখক কে?
উত্তরঃ মার্ক রচ।
20. ম্যানর কাকে বলে?
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় যৌথ কৃষি খামার।
21. ‘পবিত্র রোম সম্রাট’ উপাধি কোন্ সম্রাটকে দেওয়া হয়েছিল?
উত্তরঃ চার্লস মেজ্ঞনিকে।
22. ‘ইংল্যান্ড’ শব্দ কোন্ শব্দের অপভ্রংশ?
উত্তরঃ Angle-land.
23. ইংল্যান্ডের বর্তমান রানি এলিজাবেথ কার বংশধর?
উত্তরঃ প্রথম উইলিয়ামের।
24. মার্ক ব্লচ কে ছিলেন?
উত্তরঃ মার্ক ব্লচ বিখ্যাত ফরাসি ঐতিহাসিক ছিলেন।
25. ভাইকিং শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ সমুদ্র দস্যু।
26. Trades of Marco Polo গ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তরঃ মার্কো পোলো।
27. মার্কো পোলো কত খ্রিস্টাব্দে মোগল রাজপ্রাসাদে এসেছিলেন?
উত্তরঃ ১২৭৫ খ্রিস্টাব্দে।
28. Vassal কি?
উত্তরঃ রাজার সামন্ত।
29. ‘Fief’ বা ‘জায়গীর’ কি?
উত্তরঃ জমিদারদের নিকট থেকে লাভ করা নাইটদের ভূসম্পত্তিকে ‘Fief” বলা হত।
30. ‘নাইট’ বলতে কাদের বোঝানো হয়?
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপে সম্ভ্রান্ত বংশীয় সমরকৌশলে নিপুণ যোদ্ধাদের নাইট বলা হত।
31. ‘তিথ’ (Tithe) কি?
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপে চার্চের অধিকার ছিল কৃষকদের নিকট থেকে সারা বছরে তাদের জমিতে উৎপাদিত ফসলের এক-দশমাংশ সংগ্রহ করা। একেই ‘তিথ’ (Tithe) বলা হত।
32. মঠধারিনী হিল্ডেগার্ড কে ছিলেন?
উত্তরঃ মঠধারিনী হিল্ডেগার্ড ছিলেন একজন ঈশ্বরপ্রদত্ত সংগীতকার যিনি চার্চে সমবেত সংগীতের মাধ্যমে উপাসনা করার প্রথার উন্নতি ঘটিয়েছিলেন।
33. কাদের ‘Friar’ বলা হয়?
উত্তরঃ ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে সন্ন্যাসীদের কয়েকটি দল শুধু নিজেদের মঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ধর্মপ্রচার ও জনকল্যাণের স্বার্থে স্থান থেকে স্থানান্তরে ঘুরে বেড়াতেন, তাদের ‘Friar’ বলা হত।
34. ‘টেইল’ (Taille) কি?
উত্তরঃ কৃষকদের উপর আরোপ করা এক ধরনের প্রত্যক্ষ কর।
35. কোন শব্দ থেকে ইংল্যান্ড নামের উৎপত্তি?
উত্তরঃ ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে মধ্য ইউরোপের ‘এঙ্গল’ এবং ‘সেক্সন’ জনগোষ্ঠী ইংল্যান্ডে বসবাস করতে শুরু করে। ইংল্যান্ড নামটি ‘এঙ্গল ল্যান্ড’ (এঙ্গল ভূমি)-এর অপভ্রংশ।
36. ইংল্যান্ডের সংসদের দুই অংশের নাম কি?
উত্তরঃ ইংল্যান্ডের সংসদের দুই অংশের নাম –
(ক) House of Lords এবং
(খ) House of
37. ‘Black death’ বলতে কি বোঝায় ?
উত্তরঃ চরম সংক্রামক মারণব্যাধি প্লেগকে বোঝায়।
38. ‘The Estates General কি?
উত্তরঃ সমাজের তিনটি শ্রেণীর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটিকে Estates General বলা হয়।
39. কখন শেষ ‘Estates General’ ডাকা হয়?
উত্তরঃ ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দে নাবালক রাজা ত্রয়োদশ লুইয়ের (Child King Louis XIII) রাজত্বকালে ফ্রান্সে Estates General-এর শেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
1. মধ্যযুগ বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ ৫০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে মধ্যযুগ বলে।
2. মধ্যযুগের তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ মধ্যযুগের তিনটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) মধ্যযুগে গির্জা ছিল শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান।
(খ) এই যুগে সামন্ত প্রথার আবির্ভাব ঘটেরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
(গ) মধ্যযুগে কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ ছিল না।
3. মধ্যযুগে শহর গড়ে ওঠার দুইটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ মধ্যযুগে শহর গড়ে ওঠার দুইটি কারণ নিম্নরূপঃ
(ক) মধ্যযুগে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
(খ) শহরে সামন্ত প্রভুর নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ফলে গ্রামের মানুষ শহরে চলে আসে এবং শহর বিকাশে সহায়তা করে।
4. মধ্যযুগে ইউরোপের মঠগুলির যে-কোন দুইটি গুণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ মধ্যযুগে ইউরোপের মঠগুলির দুইটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) মঠগুলি মধ্যযুগে শিক্ষাকেন্দ্ররূপে কাজ করত।
(খ) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ন্যাসীগণ মধ্যযুগের গির্জার প্রতিনিধিরূপে কাজ করত।
5. মধ্যযুগে ক্যাথলিক চার্চের যাজক হওয়ার কি কি গুণাবলী থাকা আবশ্যক ছিল?
উত্তরঃ মধ্যযুগে ক্যাথলিক চার্চের যাজক হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলী নিম্নরূপঃ
(ক) তিনি ভূমিদাস এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী হতে পারবেন না।
(খ) তিনি মহিলা হতে পারবেন না।
(গ) তিনি বিয়ে করতে পারবেন না।
6. মধ্যযুগীয় ইউরোপে চার্চ কেন চরম ক্ষমতাশালী ছিল?
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপে ক্যাথলিক চার্চগুলো প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিল। কারণ চার্চগুলোর নিজস্ব আইন ছিল। তাদের নিজস্ব জমিও ছিল, যেগুলো শাসকরা তাদের দান করেছিলেন। এমবী তাদের খাজনা সংগ্রহ করারও অধিার ছিল। তাই তাদের কোনভাবে রাজার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হত না এবং তারা স্বনির্ভর ছিল।
7. মধ্যযুগীয় চার্চের আয়ের উৎস কি ছিল?
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় চার্চের আয়ের নিম্নোক্ত উৎস ছিলঃ
(ক) কৃষকদের নিকট থেকে সংগ্রহ করা বাৎসরিক শস্য উৎপাদনের এক-দশমাংশ।
(খ) ধনী ব্যক্তিদের দান, যা তারা নিজেদের কল্যাণে এবং তাদের মৃত আত্মীয়-স্বজনের শান্তি কামনায় দিত ইত্যাদি।
8. মধ্যযুগীয় শহরের বৈশিষ্ট্যগুলি কি কি?
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় শহরগুলির বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল নিম্নরূপঃ
(ক) ধর্মীয় উপাষণালয় বা চার্চ থাকবে।
(খ) শহরের মধ্যে একটি মুখ্য কেন্দ্র বা Town Square থাকবে।
(গ) রাস্তা থাকবে যার দু-দিকে দোকান ও বাসগৃহ থাকবে।
(ঘ) একটি আধিকারিক কেন্দ্র বা Office থাকবে যেখান থেকে শহরের শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হবে।
9. ‘তিন শ্রেণী’ কারা গঠন করত?
উত্তরঃ তিন সামাজিক শ্রেণীই ‘তিন শ্রেণী’ গঠন করত-
(ক) যাজক সম্প্রদায় – প্রথম শ্রেণী।
(খ) সম্ভ্রান্ত বংশীয় ভূমি আধিকারিক—দ্বিতীয় শ্রেণী। ও
(গ) কৃষক শ্রেণী–তৃতীয় শ্রেণী।
10. প্রথম শ্রেণী কারা গঠন করত?
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপে ধর্মীয় যাজক শ্রেণীই ‘প্রথম শ্রেণী’ বলে অবিহিত হতেন। তারা খ্রিস্টধর্ম-বিষয়ক সকল কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন।
11. ‘তৃতীয় শ্ৰেণী’ কারা গঠন করত? এদের শ্রেণীবিভাগ কি কি?
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপে কৃষকরা (যাদের সেবার উপর প্রথম দুই শ্রেণী নির্ভরশীল। ছিল) তৃতীয় শ্রেণী’ গঠন করত।
তৃতীয় শ্রেণী অর্থাৎ কৃষকরা দুই শ্রেণীর ছিল—
(ক) মুক্ত কৃষক। এবং
(খ) ভূমিদাস বা ভূমি শ্রমিক (সার্ক)।
12. ভাইকিং জনগণ কারা ছিল?
উত্তরঃ ভাইকিং জনগণ হল যে সকল মানুষ অষ্টম থেকে একাদশ শতকে নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড প্রভৃতি উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দেশ আক্রমণ করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেছে।
13. জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের যে-কোন তিনটি উপাদান উল্লেখ কর।
উত্তরঃ জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের তিনটি উপাদান নিম্নরূপঃ
(ক) সামস্তবাদের পতন।
(খ) মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শক্তিবৃদ্ধি।
(গ) জাতীয় ভাষা ও সাহিত্যের ভূমিকা।
14. জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের তিনটি অবদান উল্লেখ কর।
উত্তরঃ জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের তিনটি অবদান নিম্নরূপঃ
(ক) সমাজে ভূমিদাস শ্রেণীর উচ্ছেদ ঘটে।
(খ) আন্তর্জাতিক সীমানা বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে।
(গ) জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র মানুষের মধ্যে একতা প্রতিষ্ঠা করে।
15. কেন গাউল (মল) প্রদেশের নাম ফ্রান্স হল?
উত্তরঃ ফ্রাঙ্ক নামক জার্মান জনগোষ্ঠীর নাম অনুসারে ‘গাউল’-এর নাম পরবর্তীতে ফ্রান্সে রূপান্তরিত হয়।
16. ফ্রান্সের তিনটি শ্রেণীর উদ্ভবের উৎস কি ছিল?
উত্তরঃ তা ছিল একজন বিশপ বা উচ্চপদস্থ ধর্মযাজকের বক্তব্য, যেখানে তিনি। বলেছিলেন—“এখানে কেউ প্রার্থনা করে, কেউ-বা যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হয়, আবার কেউ-বা কাজ করে যায়”; অর্থাৎ যাজক সম্প্রদায়, অভিজাত সম্প্রদায় ও কৃষক শ্রেণী।
17. ফ্রান্সের প্রারম্ভিক সামন্তবাদী সমাজের দুইটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তরঃ ফ্রান্সের প্রারম্ভিক সামন্তবাদী সমাজের দুইটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) সমাজে প্রধানত তিনটি শ্রেণী ছিল; যথা—যাজক, অভিজাত ও কৃষক শ্রেণী।
(খ) কৃষক শ্রেণী দুই শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল; যথা— স্বাধীন কৃষক ও ভূমিদাস।
18. কোন ফরাসী শাসককে এবং কখন ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ বলে উপাধি দেওয়া হয়?
উত্তরঃ খ্রিস্টীয় ৮০০ শতাব্দীতে ফরাসী শাসক সম্রাট চার্লস মেজ্ঞনিকে পোপ প্রথম ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ উপাধি প্রদান করেন।
19. ফ্রান্স নামের রাষ্ট্রের পত্তন কিভাবে ঘটে?
উত্তরঃ রোমান সাম্রাজ্যে ‘থল’ একটি উপকূলীয় বনাঞ্চল এবং কৃষিকাজের উপযোগী বিস্তৃত সমতলভূমিতে সমৃদ্ধ প্রদেশ। ষষ্ঠ শতাব্দীতে ‘ফ্রাঙ্ক’ নামক জনগোষ্ঠী মূল অধিকার করে এবং জনগোষ্ঠীর নামাকৃত নতুন রাষ্ট্র ফ্রান্সের পত্তন হয় মার্চে।
20. প্রথম উইলিয়াম কে ছিলেন? তিনি কিভাবে ইংল্যান্ড দখল করেন?
উত্তরঃ প্রথম উইলিয়াম ছিলেন নর্মান্ডির ডিউক। একাদশ শতাব্দীতে তিনি কিছুসংখ্যক সৈন্য নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে ইংল্যান্ডের সেক্সন রাজাকে পরাজিত করেন এবং ইংল্যান্ড দখল করেন।
21. মধ্যযুগীয় ইউরোপের ইতিহাস রচনায় চার্চের ভূমিকা লেখ।
উত্তরঃ চার্চের দ্বারা সংরক্ষণ করা বিভিন্ন লিখিত উপাদান ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। চার্চ থেকে প্রাপ্ত জন্ম-মৃত্যু-বিবাহের নথিপত্র থেকে তদানীন্তন পারিবারিক ও জনসংখ্যাগত গঠন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জানা যায়। চার্চের উৎকর্ণলিপি (Inscription) বাণিজিক সংস্থাগুলোর সম্বন্ধে ধারণা দেয়, সংগীত ও গল্পগাথা সমসাময়িক উৎসব ও সামাজিক কাজকর্ম সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ছবি তুলে ধরে।
22. চতুর্দশ শতাব্দীতে খ্রিস্টীয় সন্ন্যাস জীবনের প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া অসন্তোষের দুইটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ চতুর্দশ শতাব্দীতে সন্ন্যাস জীবনের প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র অসে গড়ে ওঠে। এর দুটি উদাহরণ হচ্ছে—(ক) Piers Plowman কবিতার মাধ্যমে সন্ন্যাসীদের বিলাসী জীবনের বর্ণনা; এবং (খ) Canterbury Tales এ সন্ন্যাসীদের বিলাসী জীবনের ব্যঙ্গচিত্র।
23. দুটি বিখ্যাত মঠের নাম লেখ।
উত্তরঃ দুটি বিখ্যাত মঠের নাম হল –
(ক) সন্ত বেনেডিক্ট-এর তৈরি মঠ, ইটালিতে ৫২৯ খ্রিস্টাব্দে তৈরি। এবং
(খ) ক্লুনির তৈরি মঠ, বার্গান্ডিতে ১১০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি।
24. সেন্ট বেনেডিক্ট দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত মঠ দুটি কী কী?
উত্তরঃ সেন্ট বেনেডিক্ট দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত মঠ দুটি হল –
(ক) মন্টি রোসিনো। এবং
(খ) সেক্র স্পেকো।
25. Piers Plowman এবং Canterbury Tales-এর লেখক কে?
উত্তরঃ Piers Plowman নামের কবিতাটি লেখেন লেংল্যান্ড, এবং Canterbury Tales-এর লেখক চৌসার।
26. খ্রিস্টীয় যাজক হওয়ার ক্ষেত্রে কাদের বাধানিষেধ ছিল?
উত্তরঃ যে-কোন ব্যক্তি চাইলেই যাজক হতে পারতেন না। খ্রিস্টীয় যাজক হওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিতরা বাধানিষেধের আওতায় আসতেনঃ
(ক) ভূমিদাস ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের যাজক হওয়ার নিষেধাজ্ঞা ছিল।
(খ) মহিলারা যাজক হতে পারতেন না।
(গ) পুরুষদের মধ্যে যারা যাজক হতেন তারা বিয়ে করতে পারতেন না।
27. মার্ক ব্লচ (Mare Bloch) -এর উপর একটি সংক্ষিপ্ত টিকা লেখ।
উত্তরঃ ইউরোপে ‘সামন্তবাদ’ নিয়ে গবেষণা করা কয়েকজন প্রারম্ভিক গবেষকের একজন ছিলেন মার্ক ব্লচ। তার মত ছিল যে ইতিহাস শুধু রাজনৈতিক ইতিহাস নয় বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং মহান ব্যক্তিদের জীবনী নয়, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি। ইতিহাসচর্চার পূর্ণতার জন্য তিনি ভূগোলচর্চার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
28. ‘সামন্তবাদ’ কি?
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপে বিশেষ করে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ ইতালিতে গড়ে ওঠা আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক এবং আইনীয় ব্যবস্থা হচ্ছে সামন্তবাদ।
যদিও অর্থনৈতিক ভিত্তি নির্ভর গড়ে করে ওঠা এই ব্যবস্থায় সামাজিক সমৃদ্ধশালী স্বামীদের প্রভুত্ব স্থাপন নিশ্চিত করে, তবে এর মাধ্যমেই তৎকালীন শাসন, সমাজ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে প্রভাবিত এবং নিরূপণ হয়।
29. মঙ্ক কাদের বলা হয়?
উত্তরঃ ঈশ্বরের প্রতি অগাধ বিশ্বাসী কিছু ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিবিশেষ, যারা একাকী বসবাস করতেন। এরা ছিলেন ‘মনাস্টারি’ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
30. মার্কো পোলো কে ছিলেন?
উত্তরঃ মার্কো পোলো ইতালির ডেনিসের একজন প্রখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি একজন | ভ্রমণকারী হিসাবে ১২৭৫ খ্রিস্টাব্দে মোগল রাজপ্রাসাদে আসেন। তিনি Trades of Marco |Polo নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন।
31. ‘Minstrel’ কারা? তাদের ভূমিকা কি ছিল?
উত্তরঃ দ্বাদশ শতাব্দীর ফ্রান্সে চারণ কবিদের Minstrel বলা হত।
Minstrel বা চারণ কবিরা খামার থেকে খামারে ঘুরে বেড়াতেন গান গেয়ে গেয়ে, যে গানের উদ্দেশ্য ছিল সাহসী রাজা ও যোদ্ধাদের নিয়ে কিছুটা ঐতিহাসিক এবং কিছুটা কাল্পনিক গল্প গাথা প্রচার করা। তৎকালীন সময় মানুষের কোন নতুন কিছু ঘটনা বা বিচার জানার উপাদান ছিল অপ্রতুল, সে সময় Minstrel-রাই ছিলেন নানা ঘটনার সামাজিক বার্তাবাহক। তাই ছিল তাদের জনপ্রিয়তা।
32. মুক্ত কৃষক এবং ভূমিদাস বা সার্ফের মধ্যে দুইটি পার্থক্য লেখ।
উত্তরঃ মুক্ত কৃষক এবং ভূমিদাস বা সার্ফের মধ্যে দুইটি পার্থক্য হচ্ছে—
(ক) মুক্ত কৃষকেরা ভূস্বামীর রায়ত হিসাবে তাদের জমি ভোগ করত। কিন্তু সার্ফদের এই ধরনের কোন জমির অধিকার ছিল না। এবং
(খ) সার্ফদের ক্ষেত্রে ভূস্বামীর অনুমতি ছাড়া তার তালুক বা জমিদারি ছেড়ে যাওয়া অসম্ভব। কিন্তু মুক্ত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা ছিল না।
33. ইংল্যান্ড অধিগ্রহণের পর প্রথম উইলিয়াম কি ধরনের প্রশাসনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন?
উত্তরঃ ইংল্যান্ড অধিগ্রহণ-এর পর তিনি জমি জরিপ করান এবং সেই জমি তার সাথে আসা ১৮০ জন নর্মান অভিজাত ব্যক্তির মধ্যে বণ্টন করেন। এরা রাজার মুখ্য রায়তে পরিণত হন। তারা রাজাকে সামরিক সাহায্য করতে বাধ্য ছিলেন। তাই তাহারে নাইটদের নিজেদের জমিতে স্থান দেন। এঙ্গলো- সেক্সন প্রজারা তাদের রায়তে পরিণত হয় এবং কর প্রদান করে।
34. নতুন নৃপতি গোষ্ঠী’ বলতে কাদের বোঝানো হয়? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ পঞ্চদশ এবং ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপের নৃপতিরা তাদের সামরিক এবং আর্থিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিলেন। এতে তারা যে শক্তিশালী রাজ্য গঠন করতে সক্ষম। হয়েছিলেন তার আধার ছিল তাদের আর্থ-সামরিক ও রাজনৈতিক পরিকাঠামো। ঐতিহাসিকরা ওই সকল নৃপতিদেরই ‘নতুন নৃপতি গোষ্ঠী’ বলে সম্বোধন করেন। এদের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেন –
(ক) একাদশ লুই, ফ্রান্স।
(খ) ম্যাক্সিমিলান, অস্ট্রিয়া।
(গ) সপ্তম হেন ইংল্যান্ড। এবং
(ঘ) ইসাবেল ও ফার্ডিনান্ড, স্পেন।
35. ‘Guild’ বা ‘বাণিজ্য সংঘ’ কি? এর ভূমিকা কি?
উত্তরঃ ‘Guild’ বা ‘বাণিজ্য সংঘ’ হচ্ছে কোন পেশাদার গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সংগঠন। প্রত্যেক শিল্পই একটি ‘Guild’ বা ‘বাণিজ্য সংঘে’ সংগঠিত হত, যার দারা উৎপাদিত দ্রব্যের গুণাগুণ, তার মূল্য ও বিক্রয় প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করত।
“সংঘ গৃহ’ ছিল প্রতিটি শিল্প সংগঠনের কর্তাদের সভা করার জন্য নিয়মিত মিলিত হওয়ার ক্ষেত্র।
36. নিতুন নৃপতি গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যগুলি কি কি?
উত্তরঃ নতুন নৃপতি গোষ্ঠীর মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হচ্ছে—
(ক) স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা।
(খ) স্থায়ী সেনাবাহিনী গঠন।
(গ) স্থায়ী আমলাতন্ত্র গঠন। ও
(ঘ) জাতীয় কর ব্যবস্থা।
37. মধ্যযুগে ম্যানর কি ছিল?
উত্তরঃ ইউরোপের মধ্যযুগে স্বাধীন অথবা পরাধীন কোন কৃষকই ব্যক্তিগতভাবে জমিদারের নিকট হতে জমি বন্দোবস্ত নিতে না পারায় তারা সম্মিলিতভাবে জমিদারের নিকট হতে জমি বন্দোবস্ত নিত। সম্মিলিতভাবে এইরূপ নেওয়া জমিকে ম্যানর বলত। ম্যানরের জমিতে কৃষকের কুটির, চাষের জমি, গোচারণভূমি প্রভৃতি থাকত।
38. সিভালরি বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ মধ্যযুগে ইউরোপে নাইটরা ধর্মরক্ষা, রাজার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন ছাড়াও নারী ও দুর্বলদের রক্ষায় সর্বদা নিজেদের নিযুক্ত রাখতেন। নাইটদের এই সকল গুণাবলীর ও বীরত্বের জন্য তাদের সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সিভালরি আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
1. সামস্তপ্রথা কাকে বলে?
উত্তরঃ রোমক সাম্রাজ্য পতনের পর টিউডর যুগের প্রারম্ভে ইউরোপে রাজনৈতিক অরাজকতা দেখা দেয়। সকল লোকেরা দুর্বলদের উপর অত্যাচার ও অবিচার করতে থাকে। আত্মরক্ষার তাগিদে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এক নব পর্যায়ের রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে ওঠে, যার ফলে সাধারণ কৃষকরা কতকগুলি শর্তে জমিদারদের নিকট আশ্রয়প্রার্থী হয়েছিলেন। এই প্রকার প্রথাকে সামন্তপ্রথা বলা হত।
সামন্তপ্রথা দুই প্রকারের রাজনৈতিক সামন্তপ্রথা এবং অর্থনৈতিক সামন্তপ্রথা। রাজনৈতিক সামন্তপ্রথা বলতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং অর্থনৈতিক সামন্তপ্রথা বলতে ভূ-সম্পত্তির ব্যবহারিক পদ্ধতি বোঝায়।
2. সামন্তপ্রথার স্বরূপ কী ছিল?
উত্তরঃ সামন্তপ্রথা বা ফিউডাল পদ্ধতি অনুযায়ী রাজা হলেন সমগ্র ভূমির অধিকারী। তিনি তার আশ্রিত ও অনুগত ব্যক্তিদের মধ্যে জমিদারী বণ্টন করে দিতেন। জমিদাররা জমির বিনিময়ে রাজার প্রয়োজনে তাকে সৈন্য দ্বারা সাহায্য করতেন। এই শ্রেণীর জমিদারদের বলা হত ‘মুখ্য ভূম্যধিকারী’। এই সকল জমিদাররা প্রায় স্বাধীনভাবেই নিজ নিজ জমিদারির শাসনকার্য চালাতেন। তাদের নিজস্ব আদালত পর্যন্ত ছিল। মুখ্য ভূম্যধিকারী প্রয়োজন মতো অধস্তন প্রজাদের জমি বিলি করে দিতেন। জমির মালিকরা নিজে কৃষিকার্য করতেন না। ‘ভিলেন’ বা ‘সার্ফ’ নামীয় ব্যক্তিরা তাদের প্রভুর জমি বিনা পারিশ্রমিকে চাষ করে দিত। সার্ফদের কোন প্রকার স্বাধীনতা ছিল না। প্রভুর নিকট থেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য সামান্য ভূমি পেত। কিন্তু সেই সকল ভূমি প্রভুর বিনা অনুমতিতে কোন প্রকার অধিকার ছিল না। জমি চাষ ব্যতীত প্রচুর রাস্তাঘাট নির্মাণ, মেষের তত্ত্বাবধান প্রভৃতি বিনা পারিশ্রমিকে করতে হত।
3. সামস্তপ্রথার সুফল কি ছিল?
উত্তরঃ রোমক সাম্রাজ্য ধ্বংসের ফলে দেশে যে রাজনৈতিক অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা দেখ দিয়েছিল, সামস্তপ্রথা প্রবর্তনে দেশে আবার শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে আসে। ভূম্যধিকারী প্রজার ধন-প্রাণ রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করায় একদিকে যেমন রাজার রাজ্যরক্ষার ব্যবস্থা হই অন্যদিকে তেমনি ভূম্যধিকারীদের মধ্যে আত্মনির্ভরতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার ভাব জেগে ওঠে অভিজাত শ্রেণী আত্মনির্ভর ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী হওয়ায় ইউরোপে পরবর্তী সময়ে স্বেচ্ছাচারী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পেরেছিলেন।
4. সামস্তপ্রথার কৃষ্ণল কি ছিল?
উত্তরঃ এই প্রথার প্রধান কুফল হল সার্ফ এবং মধ্য ভূম্যধিকারীর সঙ্গে রাজার প্রভাষ সম্পর্ক না থাকা ফলে মুখ্য ভূম্যধিকারীগণ রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে রাজ সার্ফ এবং মুখ্য ভূম্যধিকারীদের নিকট কোন প্রকার সাহায্য পেতেন না। মুখ্য ভূমধ্যকারীগণ নিজস্ব আদালতে প্রজাদের মামলা-মোকদ্দমার বিচার করতেন; ফলে এক রাজার অধীনস্ব ভূভাগের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে মামলার বিচারকার্য চলত। সার্কদের ব্যক্তি-স্বাধীন মোটেই ছিল না। অধিকন্তু সামস্তরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বহু বাধা দিতেন।
5. সামস্তপ্রথা বিলোপের কারণসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ সামস্তপ্রথা বিলোপের কারণসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) সামস্তপ্রথায় সার্ক ও মধ্য ভূম্যধিকারীর সঙ্গে রাজার কোন সম্পর্ক না থাকায় মুখ্য ভূমাধিকারীগণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে রাজার ক্ষমতা লোপ পাওয়ায়। রাজন্যবর্গ এই প্রথা ধ্বংসের চেষ্টা করেন।
(খ) সার্কদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ায় তারা সামস্তপ্রথার বিরুদ্ধাচরণ করেছিল।
(গ) সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক ব্যবসা- বাণিজ্যের প্রসার হয় এবং ফলে মুখ্য ভূম্যধিকারীদের শক্তি হ্রাস পায়।
(ঘ) ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ‘ধর্মযুদ্ধ’ বাধলে ভূম্যধিকারীদের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
(ঙ) মুখ্য ভূমাধিকারীরা প্রাচীন পন্থায় রণসম্ভার রাখতেন। আধুনিক রণসম্ভার আবিষ্কৃত হওয়ায় তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। সর্বোপরি, ফরাসি বিপ্লব পৃথিবীর সাধারণ লোককে নুতন শিক্ষা দিয়েছিল, যার ফলে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে সামর্থ সমগ্র ইউরোপ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
6. ইংল্যান্ডে সামন্তবাদের উদ্ভব কিভাবে হয়েছিল?
উত্তরঃ ইংল্যান্ডে একাদশ শতক থেকে সামন্তবাদের উদ্ভব ঘটে। ষষ্ঠ শতকে এসে। এবং সেক্সন ইংল্যান্ডে স্থায়ী বসতি স্থাপন করে। ইংল্যান্ড নামটি এঙ্গেল- ল্যান্ড-এর অপভ্রল। একাদশ শতকে ইংল্যান্ডের রাজা স্যাক্সন নরমেনডির সম্রাট প্রথম উইলিয়ামের হাতে পরাজিত হন। এইভাবে প্রথম উইলিয়াম ইংল্যান্ড জয় করেন। তিনি দেশের একটি মানচিত্র অঙ্কন করেন এবং তা মোট ১৮০ জন নরমান অভিজাতের মধ্যে বিলি করেন।এই অভিজাতগণ প্রথম উইলিয়ামের সঙ্গে ইংল্যান্ডে আসেন। এই অভিজাতগণই রাজার প্রধান প্রজারূপে পরিগণিত হন।
জমিদারগণ রাজাকে সামরিক সহায়তা প্রদান করত। তারা রাজাকে কিছু নাইটও যোগান দিত। এই কারণে জমিদার নাইটগণকে তাদের কিছু জমি উপহার হিসাবে দিতেন। কিন্তু তারা নিজের ব্যক্তিগত কল্যাণের জন্য নাইটদের ব্যবহার করতে পারত না। অ্যাংলো-স্যাক্সন কৃষকরা বিভিন্নস্তরীয় জমিদারের প্রজাতে পরিণত হয়। এইভাবে ইংল্যান্ডে সামন্তবাদ বিকাশ লাভ করে।
7. ইউরোপীয় সামন্তবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
উত্তরঃ সামন্তবাদ বলতে একপ্রকার কৃষিজ উৎপাদন বোঝায় যা জমিদার ও কৃষকদের সম্পর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত। রাজা ভূ-সম্পত্তি জমিদারের মধ্যে ভাগ করে দিতেন। জমিদার এই সকল ভূ-সম্পত্তি সামন্ত জমিদারের মধ্যে ভাগ করে দিতেন। সামন্ত জমিদাররা তার প্রভুর প্রতি অনুগত ছিলেন এবং তাকে সামরিক সাহায্য এবং উপহার দিতেন। সামস্ত জমিদারকে তার প্রভু অধিকার মঞ্জুর করতেন। কৃষক-সামন্ত কাঠামোয় কৃষকরা নিম্নশ্রেণীভুক্ত ছিল। তারা দুই শ্রেণীর ছিল; যথা— স্বাধীন কৃষক ও ভূমিদাস। সুতরাং সামন্ত ব্যবস্থায় ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের বিকেন্দ্রীকরণ ছিল। কিন্তু রাজা সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক হারান।
8. ইউরোপে সামন্তপ্রথার ফলে কৃষকদের অবস্থা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপে সামন্তপ্রথার ফলে সমাজ প্রধানত দুই শ্রেণী দ্বারা বিভক্ত ছিল। এই দুই শ্রেণী ছিল –
ক) বৃহৎ জমিদার। ও
(খ) সাধারণ কৃষক।
কৃষকদের অবস্থাঃ মধ্যযুগে সামন্ত জীবনযাত্রা কৃষির উপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু কৃষকরা অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করত। তারা কাদা ও ঘাস দ্বারা নির্মিত ঘরে অত্যন্ত কষ্টে বাস করত। তারা তাদের প্রভুর ব্যক্তিগত জমিতেও কাজ করত। এই কাজের জন্য তারা কোনও প্রকার পারিশ্রমিক পেত না। তাদের উৎপাদিত সামগ্রীর কেবলমাত্র একটি অংশ দেওয়া হত। তাদের স্ত্রী ও কন্যাগণ সামন্ত প্রভুর বাড়িতে কাপড় বোনা ও কাপড় সেলাই প্রভৃতি কাজ করত।
তারা রুটি তৈরির জন্য প্রভুর চুল্লি ব্যবহার করত এবং তার ফলে ময়দা, আটা প্রভৃতি গুঁড়া করত। কিন্তু এর জন্য তাদের পয়সা দিতে হত। সুতরাং এটা প্রতীয়মান যে মধ্যযুগে ইউরোপের সমাজব্যবস্থা অত্যন্ত দীর্ণ ছিল।
9. মধ্যযুগে ইউরোপে সামস্ত ব্যবস্থার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যঃ সামন্ত ব্যবস্থায় কৃষিই ছিল আর্থিক জীবনের ভিত্তি। গ্রামের কৃষিজ জমিকে ম্যানর বলা হত। ম্যানরে একটি পশুচারণ ভূমি ছিল যেখানে পশুরা বিচরণ করত। প্রতিটি ম্যানরে একটি শিল্প বা কারখানা থাকত। ম্যানরে ব্যক্তিগত উদ্যোগের অভাব ছিল। নূতন পদ্ধতি উদ্ভাবনের উৎসাহ দেওয়া হত না।
(খ) রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যঃ সামন্ত ব্যবস্থায় রাজার ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত ছিল। রাজ ও সামস্ত প্রভুদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করা থাকত। সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজার কোন প্রকার সংযোগ ছিল না। সামস্ত প্রভুদের সাধারণ মানুষের কল্যাণের প্রতি কোন দৃষ্টি ছিল না। তারা সদা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে মগ্ন থাকতেন। যার ফলে রাজনৈতিক ঐক্য ধ্বংস হয়েছিল।
10. মধ্যযুগে পশ্চিম ইউরোপে প্রথম শ্রেণী কে ছিল? ক্যাথলিক গির্জায় তাদের ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তরঃ মধ্যযুগে পশ্চিম ইউরোপে যাজক বা গির্জার পুরোহিত ছিল প্রথম শ্রেণী। পোপ, বিশপ এবং যাজকরা এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা ক্যাথলিক গির্জায় একটি বিশেষ স্থানে অধিষ্ঠিত ছিল। পোপ ছিলেন গির্জার প্রধান। তিনি রোম-এ বাস করতেন। বিশপ ও যাজকরা সমগ্র ইউরোপের খ্রিস্টানদের নির্দেশ দিত ও পরিচালনা করত। অধিকাংশ গ্রামে নিজস্ব গির্জা ছিল। প্রতি রবিবার পুরোহিতের ধর্মীয় বাণী শোনার জন্য গ্রামের মানুষ গির্জায় সমবেত হতেন এবং সেখানে তারা প্রভু যীশুর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করতেন।
গির্জার নিজস্ব নিয়মনীতি ছিল। এই সব নিয়মনীতি অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তি গির্জার পুরোহিত হতে পারত। ভূমিদাস, স্ত্রীলোক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী গির্জার পুরোহিত হতে পারত না। ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিশপরা ছিল অভিজাতবর্গ এবং জমিদারের মতো বিশাল সম্পত্তি ছিল। তারা বিলাসবহুল প্রাসাদে থাকত। কৃষকদের নিকট হতে উৎপাদিত সামগ্রীর এক-দশমাংশ গির্জার গ্রহণ করবার অধিকার ছিল। একে ‘তিথে’ (Tithe) বলা হত। সম্রান্তশালী। ব্যক্তি গির্জাকে এককালীন বিশাল পরিমাণ দ্রব্য বা অর্থ দান করতেন। তা গির্জার আয়ের একটি প্রধান উৎস ছিল।
11. ধর্মীয় ক্ষেত্রে বা চার্চ ও যাজক শ্রেণীর (প্রথম শ্রেণী) কর্মকাণ্ডে কিভাবে সামন্ততান্ত্রিক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়? সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপে ধর্মীয় ক্ষেত্রে মুখ্য ছিল চার্চ এবং চার্চগুলির শীর্ষে যিনি অবস্থান করতেন তিনি ছিলেন পোপ। বিশপ ও যাজকরা পোপের হয়ে ধর্মীয় কর্ম সম্পাদন করতেন। বিশপরা ছিলেন ধর্মীয় অভিজাত শ্রেণী, যারা জমিদারের মতো প্রচুর ভূ-সম্পত্তির মালিক ছিলেন এবং বিশাল প্রাসাদে থাকতেন। তাছাড়াও চার্চের বিভিন্ন উৎসবাদিতে সামন্ততান্ত্রিক অভিজাত পদ্ধতি অনুসরণ করেই পরিচালনা করা হত; যেমন—
(ক) হাঁটু গেড়ে বসে জোর হাতে মাথা নত করে চার্চে প্রার্থনা করা। এবং
(খ) ঈশ্বরকে প্রভু সম্বোধন করা ইত্যাদি সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতি অনুসরণ করেই পরিচালিত হত।
12. মধ্যযুগীয় ইউরোপে ধর্মীয় সাধকদের জীবনশৈলী সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ যদিও মধ্যযুগীয় ইউরোপে চার্চ অনুসৃত খ্রিস্টীয় মতবাদই বহুল প্রচলিত ছিল, তবে কিছু গভীর এবং ত্যাগী ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি নির্জনে ঈশ্বর সাধনায় ব্রতী ছিলেন। তারা লোকালয় থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ধর্মীয় সংগঠন বা মঠে বাস করতেন। তারা ঈশ্বরের প্রার্থনা, ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ এবং কৃষিকাজের মতো পরিশ্রমসাপেক্ষ কাজ করেই তারা তাদের জীবন অতিবাহিত করতেন। পুরুষ ও মহিলা উভয়ই এই সাধনার জীবনে ব্রতী হতে পারতেন। পুরুষদের Monk এবং মহিলাদের Nun বলা হত। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা মঠ ছিল, যদিও ব্যতিক্রম ছিল। Monk এবং Nun-রা বিয়ে করতে পারতেন না।
প্রথম অবস্থায় মঠগুলোর আকার ছোট ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে বিশাল আকার ধারণ করে। তাদের সব ঘরবাড়ি ও স্থাবর সম্পত্তি ছিল এবং সেই সঙ্গে ছিল নিজস্ব স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল। কলা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে মঠগুলোর বড় ভূমিকা ছিল।
13. মধ্যযুগীয় ধর্মীয় মঠগুলোর কাজ কী ছিল?
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপে খ্রিস্টানদের চার্চ ব্যতীত আরেকটি সংগঠন ছিল। যাজকেরা যেখানে শহরে বা গ্রামে বসবাস করতেন, সেখানে কিছু প্রকৃত ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান ব্যক্তি নির্জনে বসবাস করতেই ইচ্ছুক ছিলেন। তারা লোকালয় থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ধর্মীয় সংগঠন বা মঠগুলোতে বসবাস করতেন।
মঠের সন্ন্যাসীরা প্রার্থনা, পড়াশোনা ও কৃষিকাজের মতো পরিশ্রমসাপেক্ষ কাজ করেই তাদের জীবন মঠেই অতিবাহিত করতেন। নারী ও পুরুষ উভয়ই এই জীবন অনুসরণ করতে পারতেন। পুরুষদের বলা হত “Monk’ আর মহিলাদের ‘Nun’.
প্রারম্ভিক পর্যায়ে মঠগুলি ছোটো ছিল, পরবর্তীতে বিশালত্ব লাভ করে। এই মঠগুলির নিজস্ব ঘরবাড়ি, স্থাবর সম্পত্তির সঙ্গে ছিল নিজস্ব বিদ্যালয়, কলেজ ও হাসপাতাল। তাছাড়াও কলা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে মঠগুলির বড় ভূমিকা ছিল।
14. ‘নাইট’ কি ছিল?
উত্তরঃ মধ্যযুগে ‘নাইট’ নামে এক বিশেষ শ্রেণীর উদ্ভব হয়। শুধু অভিজাত শ্রেণীর লোকই ‘নাইট’ হবার অধিকারী হত। নাইটের বিশেষ বিশেষ কতকগুলি গুণ ছিল। প্রথমত তার বীরত্ব থাকতে হত অসাধারণ। দ্বিতীয়ত তিনি কখনও প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে পারতেন না। তৃতীয়ত তাকে রাজার অনুরক্ত থাকতে হত। চতুর্থত নারীর মান রক্ষার্থে তিনি এমনকি প্রাণ দিতেও কুণ্ঠিত হতেন না। মোট কথা ‘নাইট’ হতে হলে তাকে আদর্শবাদ পুরুষ হতে হত।
15. জমিদার ও নাইটের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সংক্ষেপে বর্ণনা কর। নাইটরা কি কি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করত?
উত্তরঃ জমিদারগণ রাজার সঙ্গে যেভাবে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন নাইটগণও জমিদারের নিকট তেমনি সম্পর্কযুক্ত ছিলেন। জমিদার নাইটকে একখণ্ড জমি দিতেন। একে ‘ফিফ বলা হত। তাকে সুরক্ষা দেবারও প্রতিজ্ঞা করা হত। এই ভূমিখণ্ড বা ‘ফিফ’ উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তরও করা যেত। এই ‘ফিফ’ বা ভূমিখণ্ড ১০০০-২০০০ একর বা ততোধিক বিস্তৃত ছিল। ফিফের মধ্যে নাইটের বাসঘর, তার পরিবার, গির্জা, নাইটের পরিবারের অন্যান্য বিভাগ, একটি জলাধার ও একটি সুরাঘর থাকত। সামস্ত ম্যানরের মতো কৃষকরা। ফিফের জমি কর্ষণ করত। বিনিময়ে নাইট তার জমিদারকে নিয়মিত মাশুল দিতেন এবং যুদ্ধকালে যুদ্ধে সহায়তার আশ্বাস দিতেন। নাইটরা দিনের কিছু সময় তাদের দক্ষত অটুট রাখবার জন্য নানাপ্রকার অনুশীলন করতেন। নাইট অন্যান্য জমিদারকে সেবা যোগাে পারতেন। কিন্তু তার প্রধান কর্তব্য হল নিজের জমিদারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন ও সেখ দান। নাইটদের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলি ছিল নিম্নরূপঃ
(ক) কৃষি উৎপাদনের কিছু অংশ জমিদারকে ফি হিসাবে দেওয়া।
(খ) জমিদারের প্রয়োজনীয়তায় সামরিক সাহায্য প্রদান করা।
(গ) সামরিক ও শারীরিক দক্ষতা বজায় রাখতে কৌশলগত অভ্যাস বজায় রাখা।
(ঘ) একজন যোদ্ধা বা নাইট একইসঙ্গে একাধিক জমিদারের সেবা করতে পারত, কিন্তু তার প্রধান আনুগত্য ছিল তার নিজের জমিদারের প্রতি।
16. “The Manorial Estate’ বা ‘জমিদারের খাস ভূসম্পত্তি’ কি? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপের জমিদারদের অধীনে বা নিয়ন্ত্রণে থাকা কৃষিযোগ্য উর্বর ভূমি হচ্ছে “The Manorial Estate’ বা ‘জমিদারের খাস ভূসম্পত্তি, যা তারা শাসকের নিকট থেকে তাদের বাধ্যতা ও আনুগত্যের জন্য লাভ করত। এইগুলির আকারে ছোট বা বড় পার্থক্য ছিল। এর অন্তর্গত গ্রামগুলিকে ভূ-মালিক সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতেন। ‘The Manonial Estate’ বা ‘জমিদারের খাস ভূসম্পত্তির’ বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ
(ক) দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় প্রায় সব দ্রব্যই এগুলিতে পাওয়া যেত।
(খ) এই খামারগুলিতে বিস্তৃত গোচারণভূমি ছিল। তাছাড়াও গাছগাছালি ও বনজঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। যেখানে জমিদাররা শিকার করতেন।
(গ) খামারগুলোর পরিধি এত বিশাল ছিল যে সেখানে চার্চ ও যে-কোন বহিঃআক্রমণের প্রতিরোধের জন্য দুর্গও ছিল।
(ঘ) স্বনির্ভরতার পরিপূর্ণতা ছিল না, কারণ লবণ, যাঁতাকলের পাথর ও ধাতুদ্রব এবং বিলাস সামগ্রী আমদানি করতে হত।
17. চতুর্দশ শতকে ইউরোপের অর্থনৈতিক অবনতির কারণ কি কি? সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ চতুর্দশ শতকে ইউরোপের অর্থনৈতিক অবনতির মুখ্য কারণগুলি নিম্নরূপঃ
(ক) উত্তর ইউরোপে শীতকাল দীর্ঘায়িত হওয়ায় শস্য উৎপাদন ব্যাপক হারে হুম পায়। তাছাড়া সামুদ্রিক ঝড় ও বন্যা মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে দেয়। যার ফলে সরকার এর খাজনা সংগ্রহ হ্রাস পায়।
(খ) পূর্বের অনুকূল আবহাওয়া ব্যাপক হারে বন ও চারণভূমিকে কৃষির আওতা আনতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু কৃষিজমির উপর অত্যধিক চাপ জমির উর্বরত নষ্ট করে ফেলেছিল।
(গ) কৃষিক্ষেত্রে আবর্তন প্রক্রিয়া চালু ছিল, তবে এই পদ্ধতি চালু থাকলেও ভূমিক্ষয় রোধের চেষ্টা করা হয়নি। এতে চারণভূমির পরিমাণ কমে যায় এবং গবাদি পশুর সংখ্যা কমে যায়। তাছাড়াও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সম্পদ বৃদ্ধির হারকে ছাপিয়ে যাওয়ায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
(ঘ) ধাতুমুদ্রার ঘাটতি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি সাধন করে। এই পরিস্থিতিতে সস্তা দস্তার মুদ্রা ব্যবহার শুরু হয় ইত্যাদি।
18. চতুর্দশ শতকের অর্থনৈতিক সংকট ও মহামারীর ফলাফল লেখ।
উত্তরঃ চতুর্দশ শতকের অর্থনৈতিক সংকট ও মহামারীর ফলে নিম্নোক্ত বিপর্যয়কর ফলাফল লক্ষ্য করা যায়ঃ
(ক) অর্থনৈতিক সংকট মিলে অশেষ সামাজিক দূরবস্থার সৃষ্টি করে।
(খ) লোকক্ষয়ের ফলে শ্রমিকের অভাব দেখা দেয়।
(গ) কৃষি ও শিল্পে ব্যাপক ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করে।
(ঘ) জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় দ্রব্যাদির চাহিদা কমে। যার ফলে কৃষিপণ্যের দাম কমে যায়।
(ঙ) চাহিদার তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় শ্রমিকের মজুরি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায় ইত্যাদি।
19. চতুর্দশ শতকের অর্থনৈতিক সংকট ও মহামারীর ফলে কিভাবে সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে? এর ফলাফল লেখ।
উত্তরঃ কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাওয়া, আর্থিক দুরাবস্থা, জনসংখ্যা হ্রাস এই সকল কারণে ভূস্বামীদের আয় কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে নিজের ক্ষমতা ও সমৃদ্ধি বজায় রাখতে ভূস্বামীরা পূর্ববর্তী চুক্তিগুলো পরিত্যাগ করে নতুন শ্রমিক নীতি গঠন করে যাতে কৃষকরা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে এতে সামাজিক অস্থির পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।
কৃষক অসন্তোষ খুব কঠোর হস্তে দমন করা হয়। চূড়ান্ত অত্যাচার সত্ত্বেও তারা এমনভাবে বিদ্রোহ চালিয়ে যেতে তারা পুরোনো সমস্ত প্রথাজনিত পরিস্থিতি উদ্ভব না হয়। ভূস্বামীরা বিদ্রোহ দমন করতে সমর্থ হলেও তারা সামন্ততান্ত্রিক বিশেষ সুবিধাগুলো যাতে তার ফিরে না পান, কৃষকরা অন্তত সেই ব্যবস্থা করতে পেরেছিল।
20. শহরের বাতাস মানুষকে মুক্ত করে দেয়’ (‘Town air makes free ) কথাটা বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ উল্লেখিত উক্তিটি একটি প্রচলিত প্রবাদ, যা তৎকালীন সমাজে ভূমিদাসদের অবস্থা বর্ণনা করে।
ভূমিদাস প্রথায় একটি শর্ত ছিল যে যদি একজন ভূমিদাস শহরে গিয়ে এক বছর লুকিয়ে থাকতে পারত তাহলে সে দাসত্ব থেকে মুগ্ধ হয়ে যেত। যেহেতু ভূমিদাসের অনেকেই তার দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে চাইত তারা শহরে গিয়ে লুকিয়ে থাকত। এর মাধ্যমে এই দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়। যা শহরের বৃহৎ অর্থনীতি ও মানুষের মুক্ত চিন্তাধারার পরিচায়ক। যে পরিচিতি একজন মানুষ তার অস্তিত্বের প্রয়োজনে রক্ষা করতে চায়। দাসত্বের বন্ধন মানুষের স্বাধীন পরিচিতির ব্যতিক্রম। তাই এই পথ অবলম্বনের মাধ্যমে মানুষ নিজের সত্তা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করত।
21. কি কি উপাদান জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র বিকাশে সহায়তা করেছিল?
উত্তরঃ নিম্নলিখিত উপাদানগুলি জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র বিকাশে সহায়তা করেছিলঃ
(ক) সামস্তপ্রথার বিলোপঃ সামন্তপ্রথা বিলোপের ফলে জমিদারদের ক্ষমতা হ্রাস পায়। সুতরাং ক্ষমতাশালী শাসক সকল ক্ষমতা তাদের হাতে তুলে নেয়।
(খ) মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শক্তি বৃদ্ধিঃ ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশের ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শক্তি বৃদ্ধি পায়। মধ্যবিত্ত শ্রেণী আশ্চর্যজনকভাবে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে অবদান যুগিয়েছিল।
(গ) জাতীয় ভাষা ও সাহিত্যঃ জাতীয় ভাষাসমূহ ও সাহিত্য জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র বিকাশে বৃহৎ ভূমিকা পালন করেছিল।
জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ক্ষমতাশালী ও চূড়ান্ত শাসকের হাতে ছিল। ওইরূপ একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা দেশে গড়ে উঠেছিল এবং অরাজকতার পরিসমাপ্তি ঘটেছিল।
22. গাউল (মূল) কিভাবে ফরাসি দেশে পরিণত হয়েছিল?
উত্তরঃ গাউল (ম্বল) রোম সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ ছিল এবং পর্বতমালা, বিস্তৃত সমুদ্র উপকূল, বনভূমি, দীর্ঘ নদ-নদী, কৃষি উপযোগী বিস্তীর্ণ সমভূমি পরিবেষ্টিত ছিল। ‘ফ্রাঙ্ক’ নামক একটি জার্মেনিক’ উপজাতি তাদের নামে এই দেশের ফ্রান্স নামকরণ করেছিলেন। ষষ্ঠ শতকে এই অঞ্চল ফ্রানকিস/ফ্রান্স ফরাসি খ্রিস্টান রাজা দ্বারা শাসিত হয়েছিল। ফরাসিদের গির্জার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ক আরও গভীরতর হয় যখন ৮০০ খ্রিস্টাব্দে রাজা চার্লস মেজ্ঞনিকে পোপ কর্তৃক ‘পবিত্র রোমক সম্রাট’ উপাধি দ্বারা ভূষিত করা হয়। এর ফলে পোপের প্রতি সম্রাটের সমর্থন অব্যাহত থাকে।
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
1. মধ্যযুগে ফ্রান্সে দ্বিতীয় শ্রেণী কোনটি ছিল? সমাজে এই শ্রেণীর মর্যাদা আলোচনা কর।
উত্তরঃ মধ্যযুগে ফ্রান্সে অভিজাতবর্গ ছিল দ্বিতীয় শ্রেণী। এটা সত্য যে যাজক বা পুরোহিতগণ প্রথম শ্রেণীভুক্ত ছিলেন, কিন্তু সামাজিক প্রক্রিয়ার প্রধান ভূমিকা অভিজাত শ্রেণীই সম্পাদন করত। এর কারণ হল জমি অভিজাত শ্রেণী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। ভাসালোজ’ নামক এক প্রকার সামাজিক প্রথার ফলে এই নিয়ন্ত্রণ প্রচলিত ছিল।
ফরাসি রাজাগণ ভাসালোজ দ্বারা জনগণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন। ভাসালোজ রীতি অনুযায়ী কৃষকগণ ছিল অভিজাতবর্গের পোষ্য এবং অভিজাতবর্গ ছিল রাজার পোষ্য। একজন অভিজাত ব্যক্তি রাজাকে তার বয়োজ্যেষ্ঠ বলে গ্রহণ করতেন এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিজ্ঞাবদ্ধতা থাকত। পোষ্য ব্যক্তিরা প্রভু কর্তৃক সুরক্ষিত থাকত এবং প্রভুর প্রতি অনুগত থাকত। অনেকেই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করত এবং গির্জায় বাইবেল হাতে নিয়ে প্রতিজ্ঞা বিনিময় করত। এটা ছিল তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের অঙ্গ। অভিজাত শ্রেণীর মর্যাদাঃ মধ্যযুগে ফ্রান্সে অভিজাত শ্রেণী নিম্নোক্ত উচ্চ মর্যাদা ভোগ করতঃ
(ক) অভিজাত ব্যক্তি তার সম্পত্তির উপর চূড়ান্ত এবং স্থায়ী কর্তৃত্ব ভোগ করত।
(খ) ‘সামস্ত শুল্ক’ নামক এক প্রকার সেনা রাখবার তার স্বাধীনতা ছিল।
(গ) সে তার নিজের আদালত রাখতে পারত, এমনকী নিজ মুদ্রাও তৈরি করতে পারত।
(ঘ) অভিজাত ব্যক্তি তার জমিতে বসবাসকারী সকল মানুষের প্রভু ছিল।
(ঙ) অভিজাত ব্যক্তি বিশাল জমির মালিক ছিল।
2. মধ্যযুগে ইউরোপীয় সমাজে গির্জার প্রভাব কিরূপ ছিল আলোচনা কর।
উত্তরঃ মধ্যযুগে ইউরোপীয় সমাজ ব্যবস্থায় গির্জা একটি প্রধান প্রভাব বিস্তার করেছিল। এটি ইউরোপীয়দের লোকপরম্পরা ও যাদুবিদ্যার প্রতি প্রাচীন বিশ্বাসের উপর নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত করেছেঃ
(ক) যীশুখ্রিস্টের জন্মদিবস ২৫ ডিসেম্বর পালন করা হত। এটি প্রাচীন প্রাক্-রোমান উৎসব পালন পরিবর্তন করেছিল।
(খ) ইস্টারকে যীশুখ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধের প্রতীক বলা হয় এবং এইদিনই যীশুর পুনরুত্থান হয়। কিন্তু ইস্টার-এর তারিখ নির্দিষ্ট ছিল না। পরম্পরাগতভাবে এই দিন প্রত্যেক গ্রামের মানুষ তাদের গ্রামের জমি পরিদর্শনে যেত।
(গ) অত্যধিক কাজে ব্যস্ত শ্রমিকগণ পবিত্র দিনগুলিকে স্বাগত জানাত কারণ এই দিনগুলিতে তাদের কাজ করতে হত না। এই দিনগুলি প্রার্থনার জন্য নির্দিষ্ট থাকত এবং এই দিনগুলিতে তারা আমোদ-প্রমোদ ও খাওয়া-দাওয়া করত।
(ঘ) তীর্থযাত্রা খ্রিস্টান জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল। বহু মানুষ দীর্ঘপথ অতিক্রম করে বৃহৎ গির্জায় যেত।
3. মধ্যযুগীয় ইউরোপে তৃতীয় শ্রেণী অথবা কৃষকদের জীবনী বর্ণনা কর।
অথবা,
মধ্যযুগের ইউরোপীয় সমাজে কৃষকের স্থান কীরূপ ছিল?
উত্তরঃ মধ্যযুগে ইউরোপে কৃষক বা চাষিরা ছিল তৃতীয় শ্রেণী। তারা প্রথম দুই শ্রেণীর (খ্রিস্টান পুরোহিত ও অভিজাত জমিদার) জীবিকার যোগান দিত। তারা নিম্নোক্ত দুই প্রকার ছিলঃ
(ক) স্বাধীন কৃষকঃ স্বাধীন কৃষকগণ ভাড়াটে হিসাবে তাদের প্রভুর জমিতে বাস করত। তারা বছরে ৪০ দিন সামরিক সেবা দান করত। কৃষকের পরিবারের সদস্যগণও সামন্ত প্রভুর জমিতে শ্রমদান করত। এই শ্রমদানের ফসল সরাসরি প্রভুর নিকট যেত। তাছাড়াও কৃষকরা জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ, পুকুর খনন, বেড়া তৈরি, রাস্তা মেরামত প্রভৃতি মজুরিবিহীন কাজ করতে হত। জমির কাজে সহায়তা ছাড়াও মহিলা এবং তাদের সন্তান-সন্ততিদের মোমবাতি তৈরি, তাঁত বোনা কাপড় এবং মদ তৈরির জন্য আঙুরের রস বের করা প্রভৃতিতে সহায়তা করত। রাজা কখনও কখনও ‘টেইলি’ নামক একপ্রকার কর কৃষকদের উপর আরোপ করতেন। যাজক ও অভিজাতবর্গ কর হতে রেহাই পেত।
(খ) সার্ফ বা ভূমিদাসঃ সার্ফ বা ভূমিদাসরা প্রধানত সামন্ত প্রভুর জমি চাষ করত। এইজন্য উৎপাদিত সামগ্রীর অধিকাংশই সামস্ত প্রভু হস্তগত করতেন। বলপূর্বক শ্রম বা বেকার তাদের নিকট হতে আদায় করা হত। তারা সামন্ত প্রভুর অনুমতি ব্যতীত জমি চাষ ছেড়ে দিতে পারত না। ভূমিদাসগণ প্রভুর কলে তাদের আটা-ময়দা প্রভৃতি তৈরি করতে পারত। সামন্ত প্রভুরা ভূমিদাস কাকে বিয়ে করবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী ছিল।
4. সামন্তপ্রথা বলতে কি বোঝ? আলোচনা কর।
উত্তরঃ রোমক সাম্রাজ্য পতনের পর টিউডর যুগের প্রারম্ভে ইউরোপে রাজনৈতিক অরাজকতা দেখা দেয়। সকল লোকেরা দুর্বলদের উপর অত্যাচার ও অবিচার করতে থাকে। আত্মরক্ষার তাগিদে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এক নব পর্যায়ের রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে ওঠে, যার ফলে সাধারণ কৃষকরা কতকগুলি শর্তে জমিদারদের নিকট আশ্রয়প্রার্থী হয়েছিলেন। এই প্রকার প্রথাকে সামন্তপ্রথা বলা হত।
সামন্তপ্রথা দুই প্রকারের রাজনৈতিক সামন্তপ্রথা এবং অর্থনৈতিক সামন্তপ্রথা। রাজনৈতিক সামন্তপ্রথা বলতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং অর্থনৈতিক সামন্তপ্রথা বলতে ভূ-সম্পত্তির ব্যবহারিক পদ্ধতি বোঝায়।
সামস্তপ্রথা বিলোপের কারণসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) সামস্তপ্রথায় সার্ক ও মধ্য ভূম্যধিকারীর সঙ্গে রাজার কোন সম্পর্ক না থাকায় মুখ্য ভূমাধিকারীগণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে রাজার ক্ষমতা লোপ পাওয়ায়। রাজন্যবর্গ এই প্রথা ধ্বংসের চেষ্টা করেন।
(খ) সার্কদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ায় তারা সামস্তপ্রথার বিরুদ্ধাচরণ করেছিল।
(গ) সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক ব্যবসা- বাণিজ্যের প্রসার হয় এবং ফলে মুখ্য ভূম্যধিকারীদের শক্তি হ্রাস পায়।
(ঘ) ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ‘ধর্মযুদ্ধ’ বাধলে ভূম্যধিকারীদের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
(ঙ) মুখ্য ভূমাধিকারীরা প্রাচীন পন্থায় রণসম্ভার রাখতেন। আধুনিক রণসম্ভার আবিষ্কৃত হওয়ায় তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। সর্বোপরি, ফরাসি বিপ্লব পৃথিবীর সাধারণ লোককে নুতন শিক্ষা দিয়েছিল, যার ফলে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে সামর্থ সমগ্র ইউরোপ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
5. সামন্তপ্রথার গুণ এবং দোষসমূহ আলোচনা কর।
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপে গড়ে ওঠা সামস্তপ্রথার গুণসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) সামস্তপ্রথার উদ্ভবের ফলে সাধারণ মানুষ বহিরাগতদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। যার ফলে একটি সমৃদ্ধিশালী সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
(খ) সামন্ত প্রভুরা শাসনের স্বৈরাচারী শাসন থেকে রক্ষা করে।
(গ) সামস্তপ্রথার ফলে ইউরোপে কৃতদাস প্রথা অস্তিত্ব হারায়।
(ঘ) সামস্তপ্রথার ফলে ইউরোপে সাধারণ মানুষের জীবনের অশান্তি দূর হয়। কারণ সামস্ত প্রভুর প্রতি তাদের কর্তব্য ও আনুগত্য তাদের সুরক্ষা ও জীবিকা সুনিশ্চিত করে। মধ্যযুগীয় ইউরোপে গড়ে ওঠা সামন্তপ্রথার দোষসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) সামস্তপ্রথা সমাজকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে ফেলে- সামস্ত শ্রেণী ও কৃষক।
(খ) সামস্তপ্রণার ফলে ইউরোপ রাজনৈতিক ঐক্য হারায়।
(গ) সামস্তপ্রথা জাতীয়তাবাদ অস্বীকার করে। সামন্ত প্রভুদের মধ্যে ক্রমাগত যুদ্ধ-বিগ্রহ চলতে থাকার ফলে জাতীয় রাষ্ট্রগঠন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।
(ঘ) সামস্তপ্রথার ফলে কৃষকদের জীবন দুঃসহ হয়ে ওঠে। ছোট জমির অধিকারী কৃষকদের জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে ওঠে।
6. সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ দাস-ব্যবস্থার পর সামস্ত প্রথার সূত্রপাত হয়। দাস-মালিক ও দাসগণের মধ্যে শ্রেণীদ্বন্দু উৎপাদন সম্পর্কে যে পরিবর্তন আনে, তাতে দাস-ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে ও তার ধ্বংসাবশেষের উপর সামন্ততান্ত্রিক সমাজ গড়ে ওঠে। সমাজ বিবর্তনের অন্যান্য স্তরের মতো সামন্ততান্ত্রিক স্তরেও সমাজ শ্রেণীভেদ ও শোষণের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। সামন্ততান্ত্রিক সমাজের মূল বৈশিষ্ট্য হল যে, বিত্তবান সামস্তগণ উৎপাদনের উপাদানসমূহের মালিক হলেও সাধারণ মানুষ এই সমাজে ঠিক পুরোপুরি দাস ছিল না। তাদের উপর প্রভুদের সম্পত্তির দাবির অবসান ঘটে এবং উৎপাদনের উপাদান ও যন্ত্রের উপর সাধারণ মানুষের কিছু কিছু অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ভূমিদাসগণ দাসদের মতো সামস্তপ্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল না। কিন্তু তারা বেগার খেটে প্রভুর জমি চাষ করতে বাধ্য থাকত। এর পরিবর্তে ভূমিদাসদের ভাগ্যে জুটত ক্ষুদ্র ভূমিখণ্ড ভোগ করার অধিকার। সেই জমিতে চাষাবাদ করে তাদের অন্ন-সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হত। সামন্ততান্ত্রিক যুগে অনেক ক্ষেত্রে ভূমিদাসদের সপ্তাহের অধিকাংশ সময় মালিকের জমিতে উপস্থিত থেকে প্রভুর হুকুম তামিল করতে হত।
সামন্ততান্ত্রিক ইউরোপে দুটি প্রধান শ্রেণী হল জমিদার বা সামন্ত প্রভু এবং সাধারণ কৃষক বা সার্ফ। এই সার্ফরা ঠিক দাসশ্রেণীতে পড়ে না, আইনত তারা প্রভুদের সম্পত্তি ছিল না। তাদের নিজস্ব কিছু কিছু জমি থাকত এবং সেই জমি চাষ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু ইচ্ছানুসারে গ্রাম পরিত্যাগ করার স্বাধীনতা না থাকায় তাদের ভূমিদাস বলা যায়। সার্ফদের প্রায় অর্ধেক সময় সামন্ত প্রভুর জমিতে হাজিরা দিতে হত বেগার খাটবার জন্য। তারা মালিকের জমি বিনা মজুরিতে চাষ করে দিত এবং অন্যান্য কাজও সম্পন্ন করত।
ব্যক্তিগত জমিতে বেগার খাটানোর প্রথা যে সামন্ততান্ত্রিক যুগের সবক্ষেত্রেই চালু ছিল এমন কথা বলা যায় না। কোথাও কোথাও ক্ষুদ্র চাষিদের নিজ ভূমিখণ্ডে উৎপন্ন শস্যের বৃহদংশ বিনামূল্যে জমিদারদের হাতে তুলে দেওয়ার বাধ্যতামূলক ব্যবস্থাও প্রচলিত ছিল। সামন্ত্রতান্ত্রিক সমাজে উৎপাদনের অধিকাংশ ক্ষেত্র জুড়ে ছিল কৃষিকাজ। অগণিত ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে অসংখ্য ক্ষুদ্র চাষি অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রাচীন প্রথায় জমি চাষ করে কায়ক্লেশে নিজেদের জীবনধারণের ব্যবস্থা করত।
সামন্ততান্ত্রিক যুগে অধিকাংশ লোক গ্রামে বাস করত। এই গ্রামগুলিকে ম্যানর নামে অভিহিত করা হয়। প্রত্যেক ম্যানরের একজন প্রভু বা জমিদার থাকত। গ্রামের কিয়দংশ থাকত তাঁর ব্যক্তিগত দখলে, আর অবশিষ্টাংশ থাকত প্রজাদের হাতে।
সামন্ততান্ত্রিক যুগের শেষ দিকে ক্রমে ক্রমে শহরগুলির বিস্তার ঘটে। শহরের শ্রীবৃদ্ধির মূলে ছিল কারিগরদের কাজের সম্প্রসারণ। সামন্ততান্ত্রিক সমাজে চাষাবাদের কাজের সঙ্গে হাতের কাজ একটি বিশেষ স্থান করে নেয়। ক্রমে কারিগর ও ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কৃষিকাজের যুগ পর্যন্ত উৎপাদন-সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে মানুষ ও প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্কের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ল।
সামন্ততান্ত্রিক যুগে সমাজ-জীবনে সংঘবদ্ধ হবার রীতি প্রচলিত ছিল। প্রতি গ্রামে তার পরিচয় পাওয়া যায়। শহরেও সেই ব্যবস্থা থাকায় সর্বত্র বণিক ও কারিগরদের ‘গিল্ড’ স্থাপিত হয়। এক একটি গিল্ডে এক এক ব্যবসায়ের কারিগরগণ দলবদ্ধ হয়ে স্বীয় স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করত। গিল্ডগুলি প্রভুশ্রেণীর শোষণ প্রতিরোধের একটি হাতিয়ারস্বরূপ ছিল। গিল্ডের আর একটি উদ্দেশ্য হল – প্রতিযোগিতা হ্রাস করা, যাতে গিল্ডের অন্তর্গত কারিগরদের। কোনরকম ক্ষতি না হয়।
কৃষিকাজ সামন্ততান্ত্রিক সমাজের প্রধান উপজীবিকা হলেও কারিগরগণ বিভিন্ন ধরনের পণ্য প্রস্তুত করতে আরম্ভ করে। চাষিদের যেমন নিজস্ব জমি, গোরু, লাঙল ইত্যাদি উৎপাদনের উপাদান ছিল, সেইরূপ কারিগরদেরও নিজ নিজ যন্ত্রপাতি ছিল। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদন-সম্পর্কের ক্ষেত্রে সামন্ত প্রভু হল উৎপাদন উপাদানের মালিক, কিন্তু ভূমিদাসের সম্পূর্ণ মালিক সে নয়। ভূমিদাসকে সে ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারে, কিন্তু হত্যা করতে পারে না।
7. মধ্যযুগে ইউরোপে ক্ষমতাশীল নূতন রাষ্ট্রসমূহ (জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র) কিভাবে আবির্ভূত হয়েছিল? এই সকল রাষ্ট্র অভিজাতদের নিকট হতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল কেন?
উত্তরঃ মধ্যযুগে ইউরোপের রাজনৈতিক অঙ্গনেও পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল। পঞ্চদশ এবং ষোড়শ শতকে ইউরোপীয় রাজারা তাদের আর্থিক ও সামরিক ক্ষমতা শক্তিশালী করেন। তারা চূড়ান্ত শাসকে পরিণত হন। এই প্রভাবশালী রাজাগণের মধ্যে ফরাসি একাদশ লুই, অস্ট্রিয়ার ম্যাক্সমিলিয়ন, হল্যান্ডের সপ্তম হেনরী এবং স্পেনের ইসাবেল ও ফাড়জিনও উল্লেখযোগ্য। স্পেন ও পর্তুগালের রাজাগণ ইউরোপের সমুদ্র বিস্তারে ভূমিকা পালন আরম্ভ করেন।
নুতন রাষ্ট্র আবির্ভাবের কারণসমূহঃ ক্ষমতাশালী নূতন রাষ্ট্রসমূহ আবির্ভাবের কারণসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) সামাজিক পরিবর্তনঃ দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকে নানাবিধ সামাজিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। জমিদারদের সামন্ত প্রথা ভেঙে পড়ে এবং অর্থনৈতিক উন্নতির হার মন্থর হয়ে পড়ে। ফলে রাজাগণের অভিজাত শ্রেণী ও সাধারণ মানুষের উপর নিয়ন্ত্রণে সুযোগ করে দেয়। এইভাবে রাজাগণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং অভিজাতবর্গের রাজাদের নিয়ন্ত্রণ করবার সাহস ছিল না।
(খ) কর বৃদ্ধিঃ রাজা কর বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব সংগ্রহ করে ছিলেন। সেনাবাহিনীর সহায়তায় তারা সাম্রাজ্যের সীমা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা প্রকাশ করেছিলেন। ফলে রাজ কর্তৃত্বের উপর আভ্যন্তরীণ বাধা প্রতিহত করা সহজ করে তোলে।
অভিজাত কর্তৃক বাধা দানঃ নুতন ক্ষমতাবান রাষ্ট্রসমূহ অভিজাতদের নিকট হতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। কর ও রাজস্বের প্রশ্নই নূতন রাষ্ট্রসমূহের বাধাবিপত্তির প্রধান ভিত্তি। ইংল্যান্ডে ১৪৪৭, ১৫৩৬, ১৫৪৭, ১৫৪৯ এবং ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং তা দমন করা হয়। ফ্রান্সে একাদশ লুই রাজপুত ও সম্রাটের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম করেছিলেন। ক্ষুদ্র অভিজাত সম্প্রদায়গণ সাধারণভাবে তৃতীয় সমিতির সদস্য ছিলেন। তারাও তাদের ক্ষমতার উপর রাজকীয় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে রাজার বিরুদ্ধাচারণ করে। ষোড়শ শতকে ফ্রান্সের ধর্মীয় যুদ্ধ রাজার অধিকার ও স্বাধীনতার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি অংশবিশেষ।
8. চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ইউরোপের অর্থনৈতিক অগ্রগতি পিছিয়ে পড়ার কারণগুলি ব্যাখ্যা কর। এর ফলাফল কি ছিল?
উত্তরঃ চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ইউরোপের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধাক্কা খেয়েছিল নিম্নোক্ত কারসমূহের জন্যঃ
(ক) জলবায়ুর পরিবর্তনঃ ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষদিক থেকে গত প্রায় তিনশো বছরের আবহাওয়া অতিরিক্ত ঠান্ডায় কমে যায়। উচ্চ স্থানে ঠান্ডা এত প্রবল হয় যে শস্য উৎপাদন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক শস্যক্ষেত ঝড় এবং সামুদ্রিক বন্যায় ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে সরকারের ট্যাক্স আদায় তথা রোজগার ভীষণভাবে কমে যায়।
(খ) নিবিড় চাষবাসঃ ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত সহায়ক জলবায়ুর ফলে অনেক বনাঞ্চল কেটে ফেলে তা কৃষিজমিতে পরিণত করা হয়। তা সত্ত্বেও প্রতি বছর তিনটি করে চাষের জন্য জমির উর্বরতা একদম নষ্ট হয়ে যায়। ঠিকমতো ভূমি সংরক্ষণের অভাবে জমির উর্বরতা যেমন কমে যায়, খাদ্যের অভাবে গবাদি পশুর সংখ্যাও যায় কমে।
(গ) ধাতব মুদ্রার অভাবঃ অস্ট্রেলিয়া এবং সার্বিয়ার রূপার খনিতে রূপা উত্তোলনের ঘাটতির ফলে ধাতব মুদ্রার গুরুতর অভাব দেখা দেয়। ফলে বাণিজ্য মার খায়। ফলে এই সংকট থেকে উদ্ধার পেতে সরকার মুদ্রায় রূপার ভাগ কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয় এবং সস্তা ধাতুর মিশ্রণে সংকর ধাতু দিয়ে মুদ্রা তৈরি করে।
(ঘ) প্লেগের প্রাদুর্ভাবঃ ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীতে সমুদ্রপথে বাণিজ্য হত এবং বহু দূর দেশে জাহাজে করে পণ্য পরিবাহিত হত। নানা দেশ থেকে কিছু ইঁদুর জাহাজের খোলের ভিতর আশ্রয় নিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করে এবং প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়। ইউরোপের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, কোন কোন এলাকায় প্রায় দুই-পঞ্চমাংশ লোক এই রোগের শিকার হয়।
ফলাফলঃ নিম্নোক্ত ঘটনাবলী প্লেগের ফলস্বরূপ ঘটেঃ
(ক) প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাবে এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সংকটে এক মহা সামাজিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
(খ) এত বিপুল সংখ্যক লোক মারা যাওয়ায় শ্রমিকের অভাব দেখা দেয়।
(গ) কৃষি এবং শিল্পের মধ্যে অসমতা পরিলক্ষিত হয়।
(ঘ) ক্রেতার অভাবে কৃষিজাত উৎপাদনের মূল্য পড়ে যায়।
(ঙ) জন স্বল্পতার জন্য শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যায়।
9. কিভাবে মধ্যযুগীয় ইউরোপে বিভিন্ন কারক বা উপাদান আর্থসামাজিক পরিবর্তন এনেছিল, সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তরঃ যাজক ও অভিজাত শ্রেণী প্রচলিত আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোকে স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয় বলে মনে করত। কিন্তু বিভিন্ন কারকের মধ্যে পরিবর্তন প্রচলিত পরিকাঠামোতে পরিবর্তন আসে। এই ক্ষেত্রে মুখ্য কারকগুলি নিম্নরূপঃ
(ক) পরিবেশঃ পঞ্চম থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যে ইউরোপের অধিকাংশ স্থানই জঙ্গলাকীর্ণ ছিল কারণ এই সময় প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ চলছিল ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। আবার একাদশ শতাব্দী থেকে উন্নতা বৃদ্ধি পেলে কৃষি জমির পরিধি বৃদ্ধি ও বিস্তার লাভ করে।
(খ) জমির ব্যবহারঃ প্রথম দিকে কৃষি প্রযুক্তি মোটেই উন্নত ছিল না। ফলস্বরূপ কৃষিকাজ অত্যন্ত শ্রমনির্ভর হয়ে উঠেছিল এবং অধিক উৎপাদনের নিমিত্ত জমি কর্ষণ ভিন্নভাবে করা সত্ত্বেও জমির উর্বরতা কমে যায়, যাতে উৎপাদন কমতে থাকে ফলে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল। তার মধ্যে অতিরিক খাজনা আদায়ের জন্য ভূস্বামীদের প্রচেষ্টা ভূস্বামী ও কৃষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
(গ) নতুন কৃষি পদ্ধতিঃ একাদশ শতাব্দী থেকে কৃষিকাজে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ধীরে ধীরে লোহার ভারী ও চোখা লাখল, পশুর ব্যবহার, জমিকে দুফসলা থেকে তিন ফসলা, জলসেচের ব্যবহার ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। এইগুলি ধীরে ধীরে সমাজে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন সূচিত করে।
10. এগারো শতকের পর থেকে কি কি কৃষি প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হয়েছিল। এগুলির প্রভাব উল্লেখ কর।
উত্তরঃ এগারো শতকের পর কৃষি প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়ঃ
(ক) কাঠের তৈরি হালের পরিবর্তে লোহার ভারি ও চোখা হাল ব্যবহার শুরু হয়। এবং সমান্তরাল দণ্ড ব্যবহার-এর ফলে জমির উর্বরতা বেড়ে গিয়েছিল।
(খ) পশুর ঘাড়ের পরিবর্তে তাদের কাঁধকে কাজে লাগিয়ে চাষ শুরু হয়।
(গ) জল ও বায়ু নির্ভর বিদ্যুতের মাধ্যমে ইউরোপে অনেকগুলি শস্য ও আঙুর মাড়াই কারখানা গড়ে ওঠে।
(ঘ) কৃষিজমিকে দু’ফলা থেকে তিন ফসলা জমিতে রূপান্তরিত করা হয়। এতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যে পরিস্থিতি কৃষকদের পক্ষে খুব সন্তোষজনক ছিল।
(ঙ) আবার কিছু প্রযুক্তিগত পরিবর্তন খুব ব্যয়সাপেক্ষ; যেমন- জলচালিত বা বায়ুচালিত কল স্থাপন। তাই জমিদাররাই এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেন ইত্যাদি।
এই পরিবর্তনের ফলে নিম্নলিখিত প্রভাব পরিলক্ষিত হয়ঃ
(ক) সামন্ততন্ত্রের ভিত্তি হিসাবে চিহ্নিত ব্যক্তিগত অঙ্গীকার দুর্বল হতে শুরু করে।
(খ) দুর্বল অর্থনীতিতে লেনদেন পদ্ধতি ক্রমে অর্থনির্ভর হয়ে ওঠে।
(গ) কৃষকরা তাদের ফসল অন্য কোন দ্রব্যের বিনিময়ে বিক্রি না করে অর্থের বিনিময়ে সেগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি শুরু করেন।
(ঘ) নগদ অর্থের বহুল ব্যবহার দ্রব্য সামগ্রীর মূল্যের উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। ফলে কোন বছর ফসল কম হলে তার বিক্রয়মূল্য বৃদ্ধি পেত।
11. একাদশ শতকের পর কিভাবে শহরাঞ্চলীয় বিকাশ ইউরোপে দেখা যায়? এর ফলাফল কি?
উত্তরঃ রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর সেই অঞ্চলে সমৃদ্ধশালী শহরগুলি জনশূন্য হয়ে পড়ে। কিন্তু একাদশ শতকে উন্নত কৃষিব্যবস্থা মানুষের জীবনের মান বাড়িয়ে দেয়। ফলে পুনরায় শহর গড়ে ওঠা শুরু করে। যেসকল কৃষকদের বিক্রয়-এর জন্য উদ্বৃত্ত শস্য থাকত, তা বিক্রয় করার সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রপাতি ও কাপড় কিনতে পারার মতো একটি বিক্রয় কেন্দ্রের প্রয়োজন ছিল। নিয়মিত ব্যবধানে মেলার যেমন প্রচলন হল, তেমনি ছোট ছোট ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্রও স্থাপিত হল যা ধীরে ধীরে সেই সব বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি করত, যা পরবর্তীতে শহরের রূপ নিল। তবে বড় বড় প্রাসাদ বা দুর্গ, বিশপের ভূ-সম্পত্তি বা বড় বড় চার্চকে কেন্দ্র করেও শহর গড়ে উঠেছিল।
নতুন শহর গড়ে ওঠার ফলে –
(ক) শহরে জমিদারের জমিতে বসবাস করার বিনিময়ে অতীতে নানা সেবা প্রদান করত। কিন্তু এখন খাজনা বাবদ অর্থ প্রদান করে। এবং
(খ) শহরে অর্থের বিনিময়ে কাজের রীতি চালু হয়, যার ফলে কৃষকরা জমিদারের বন্ধন থেকে বেরিয়ে আসে।
12. ক্যাথিড্রাল কি? কিভাবে ক্যাথিড্রাল শহরের উদ্ভব হয়?
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ইউরোপে গড়ে ওঠা বিশালকায় চার্চগুলিকে ক্যাথিড্রাল বলা হত। দ্বাদশ শতাব্দী থেকে ফ্রান্সে ক্যাথিড্রালগুলির নির্মাণ শুরু হয়। এই নির্মাণ কার্যে ধনী ব্যবসায়ী ও নানা ধরনের মানুষ ধন, শ্রম ও দ্রব্য সামগ্রীর মাধ্যমে সহায়তা করত। তবে এইসব বিশালকায় ক্যাথিড্রালগুলো পাথর দিয়ে নির্মাণ হয়েছিল। যা সম্পূর্ণ করতে অনেক বছর লেগেছিল। যখন ওই চার্চগুলো সম্পূর্ণ তৈরি হচ্ছিল সেই সময় ওই চার্চগুলোর চতুর্দিকে ঘন বসতির সৃষ্টি হয়েছিল এবং চার্চগুলো সম্পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওইগুলি তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়। এইভাবেই ক্যাথিড্রাল শহরের সৃষ্টি হয়।
13. ‘বিশালকায়’ চার্চ বা ‘ক্যাথিড্রাল’-এর শৈল্পিক পরিকাঠামো সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ ‘ক্যাথিড্রাল’গুলির শৈল্পিক পরিকাঠামো নিম্নরূপ ছিলঃ
(ক) আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে এমন পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয় যাতে একজন যাজকের গলার স্বর হলের চারদিকে বসে থাকা জনগণ/শ্রোতা শুনতে পায়, সংগীত সুন্দরভাবে শোনা যায়।
(খ) চার্চের ঘণ্টা এমনভাবে লাগানো যাতে ঘণ্টার ধ্বনি যা প্রার্থনার জন্য আহ্বান জানায় তা অনেক দূর থেকে শোনা যায়।
(গ) জানালায় রঙিন কাচ লাগানো থাকত, যা দিনের বেলা সূর্যরশ্মি ভক্তদের মুখমণ্ডল আলোকিত করে রাখত।
(ঘ) রঙিন কাচের জন্য সূর্যাস্তের পর মোমবাতির আলো বাইরের লোকদের কাছে দৃশ্যমান হত।
(ঙ) জানালার রঙিন কাঁচে বিভিন্ন ছবির মাধ্যমে অশিক্ষিত লোকদের পড়বার উপযোগী করে গল্পের বর্ণনা থাকত।
14. “নতুন নৃপতি গোষ্ঠীর’ সাফল্যের কারণগুলি লেখ। নিজেদের অবস্থান অক্ষুণ্ণ রাখতে এবং শক্তিশালী করতে তারা কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?
উত্তরঃ পঞ্চদশ ও ষোড়শ খ্রিস্টাব্দে উদ্ভব হওয়া ‘নতুন নৃপতি গোষ্ঠীর’ সাফল্যের মুখ্য কারণগুলি নিম্নরূপঃ
(ক) দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে শুরু হওয়া সামাজিক বিবর্তন প্রক্রিয়াই সম্রাটদের জয়যাত্রার প্রধান কারণ।
(খ) ভূ-স্বামীদের সামন্ততন্ত্র ও দাসপ্রথার পত্তন।
(গ) অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধীর গতি। এই সকল কারকই নৃপতিদের তাদের শক্তিশালী এবং সাধারণ প্রজাদের উপর প্রভাব বৃদ্ধি করতে সুযোগ করে দিয়েছিল।
এই সকল নতুন শাসকেরা নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় ও সবল করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
(ক) সামন্ততান্ত্রিক কর ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়েছিলেন।
(খ) পেশাদারী প্রশিক্ষিত বন্দুকধারী পদাতিক সৈন্য গড়েছিলেন।
(গ) গোলন্দাজ সৈন্যবাহিনীকে সরাসরি তাদের নিজেদের আওতায় নিয়ে এসেছিলেন। ইত্যাদি। এর ফলে অভিজাত সম্প্রদায় এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সমস্ত প্রয়াস ভেঙে পড়েছিল।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
1. ফ্রান্সে সামস্ত সমাজের গোড়ার দিকের দুটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ফ্রান্সে সামন্ত সমাজের গোড়ার দিকের দুইটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) সামন্ত সমাজ প্রভু-চাষি সম্পর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। চাষিদের শ্রমদানের বিনিময়ে সামন্ত প্রভুরা চাষিদের সামরিক সুরক্ষা প্রদান করতেন। সামন্ত প্রভুরা চাষিদের উপর বিচার-বিষয়ক অধিকারও ভোগ করিতেন।
(খ) সামস্ত সমাজ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল; যথা—পুরোহিত, অভিজাত সম্প্রদায় এবং কৃষক। পুরোহিত বা যাজকগণ প্রথম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত এবং অভিজাত সম্প্রদায়গণ দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্গত ছিলেন। কিন্তু বাস্তবে অভিজাত বংশের সামাজিক প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এর কারণ হল জমির উপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল।
2. ইউরোপের সমাজ এবং অর্থনীতিতে জনসংখ্যা স্তরের দীর্ঘকালীন পরিবর্তন কিভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল?
উত্তরঃ নিম্নলিখিতভাবে জনসংখ্যা স্তরের দীর্ঘকালীন পরিবর্তন ইউরোপের সমাজ ও অর্থনীতি প্রভাবিত করেছিলঃ
(ক) উন্নতমানের খাদ্যসহ মানুষের আয়ুষ্কাল দীর্ঘতর হয়েছিল। ত্রয়োদশ শতকের মধ্যে প্রতি ইউরোপীয় অষ্টম শতকের তুলনায় ১০ বছর অধিক দীর্ঘজীবন আশা করতে পেরেছিল।
(খ) ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্ররূপে বহু শহর গড়ে ওঠে।
3. মধ্যযুগে মঠগুলির কার্য কি ছিল?
উত্তরঃ মধ্যযুগে সন্ন্যাসীগণ মঠে বাস করতেন। তাঁরা অধিকাংশ সময়ই পূজার্চনা, পড়াশুনা এবং চাষবাসের মতো দৈহিক পরিশ্রম করতেন, তারা কলা ও সংস্কৃতির বিকাশ ও উৎসাহ দান করতেন। এইভাবে মধ্যযুগের মঠগুলি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।
নাতিদীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
4. মধ্যযুগের ফ্রান্সের একটি শহরের একজন হস্তশিল্পীর একটি দিন কল্পনা ও বর্ণনা কর।
উত্তরঃ মধ্যযুগের ফ্রান্সের কোন শহরের একজন হস্তশিল্পী তার শিল্পকার্যে অত্যন্ত সুদক্ষ ছিল। সে কোন গিল্ড সংঘের সদস্য ছিল। গিল্ড বা সংঘ উৎপাদিত সামগ্রীর গুণ, এর মূল্য এবং বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ করত। এরা সদস্যদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাহিদার প্রতি দৃষ্টি দিত।
5. নাইটগণ কেন একটি পৃথক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিলেন এবং কেন তাদের পতন ঘটেছিল?
উত্তরঃ মধ্যযুগে ইউরোপে নাইট নামে এক বিশেষ শ্রেণীর উদ্ভব হয়। শুধু অভিজাত শ্রেণীই নাইট হবার অধিকারী হত। নবম শতকের পর হতে ইউরোপে প্রায় সময়ই স্থানীয়ভাবে যুদ্ধবিগ্রহ চলত। আপেশাদারী কৃষক-শ্রেণীগণ যুদ্ধ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সামর্থ্য ছিল না। এই চাহিদা নাইটগণ কর্তৃক পরিপূর্ণ হয়েছিল। এইভাবে নাইটরা একটি পৃথক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিলেন। দ্বাদশ শতকে সামস্ত প্রথা বিলোপের সঙ্গে সঙ্গে নাইটদের পতন ঘটে।
6. মধ্যযুগীয় একজন ফরাসি ভূমিদাস (সার্ক) এবং রোমান ক্রীতদাসের জীবনের অবস্থার মধ্যে তুলনা কর।
উত্তরঃ ফরাসি ভূমিদাসগণ প্রধানত প্রভুর জমি চাষ করত। এই কারণে উৎপাদনের অধিকাংশই প্রভু বা জমিদারের হস্তগত হত। ভূমিদাসরা প্রভুর কলে শস্যের গুঁড়া করত এবং নিজের চুলায় রুটি তৈরি করত এবং মদের বোতলে মদ পূর্ণ করত। কোন ভূমিদাস কাকে বিয়ে করিবে এ-বিষয়ে প্রভু সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী ছিল।
রোমান ক্রীতদাসের অত্যন্ত কষ্টকর জীবন ছিল। তাকে একটানা কয়েক ঘণ্টা কাজ করতে হত। তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত যাতে সে পালিয়ে যেতে না পারে। যখন সে ঘুমোতে যেত তখন তাকে বন্ধনমুক্ত করা হত না। তাকে অধিক সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য করানো হত যাতে এইসব সন্তানগণকে ক্রীতদাস করা যায়। অবশ্য কিছুসংখ্যক দাস স্বাধীন ছিল এবং তাদের জীবনযাত্রা অপেক্ষাকৃত উন্নত ছিল।