Class 9 Social Science Chapter 10 ভারতের রাজনৈতিক দল Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 9 Social Science Chapter 10 ভারতের রাজনৈতিক দল and select needs one.
Class 9 Social Science Chapter 10 ভারতের রাজনৈতিক দল
Also, you can read SCERT book online in these sections Class 9 Social Science Chapter 10 ভারতের রাজনৈতিক দল Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 9 Social Science Chapter 10 ভারতের রাজনৈতিক দল These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 9 Social Science Chapter 10 ভারতের রাজনৈতিক দল for All Subject, You can practice these here…
ভারতের রাজনৈতিক দল
Chapter – 10
তৃতীয় খণ্ড : রাজনীতি বিজ্ঞান
অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরঃ
● অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা রয়েছে এমন একটি দেশের নাম লিখ।
উত্তরঃ চীন।
প্রশ্ন ২। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে কী ধরনের দলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত আছে ?
উত্তরঃ দ্বিদলীয় শাসন ব্যবস্থা।
প্রশ্ন ৩। রাজনৈতিক দলের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তরঃ রাজনৈতিক দলের দুটি বৈশিষ্ট্য হল–
(ক) সংগঠন।
(খ) নীতি-আদর্শ ও পরিকল্পনা।
(গ) জাতীয় স্বার্থের প্রতি সম্মান।
প্রশ্ন ৪। রাজনৈতিক দলের একটি প্রধান কার্যের উল্লেখ কর।
উত্তরঃ রাজনৈতিক দলের একটি প্রধান কার্য হল—-
(১) জনগণকে রাজনৈতিক শিক্ষা প্রদানে শিক্ষিত করা।
(২) জনগণের মনে রাজনৈতিক সজাগতা বৃদ্ধি করা।
প্রশ্ন ৫। অসমের একটি আঞ্চলিক দলের নাম লেখ।
উত্তরঃ অসম গণপরিষদ।
প্রশ্ন ৬। ঝাড়খণ্ডের মুখ্য আঞ্চলিক দলটির নাম কি ?
উত্তরঃ ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা।
প্রশ্ন ৭। ইউ.পি.এ (UPA) এর সম্পূর্ণ নাম লেখ।
উত্তরঃ সংযুক্ত গণতান্ত্রিক মোর্চা।
প্রশ্ন ৮। ভারতবর্ষের প্রথম রাজনৈতিক দল কোনটি ?
উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।
প্রশ্ন ৯। কার নেতৃত্বে ‘দি ইণ্ডিয়ান এসোসিয়েশন’গঠন হয়েছিল ?
উত্তরঃ এস.এন.ব্যানার্জী।
প্রশ্ন ১০। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি কে ছিলেন ?
উত্তরঃ উমেশচন্দ্র ব্যানার্জী।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতবর্ষের দলীয় ব্যবস্থাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ?
উত্তরঃ ভারতবর্ষের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ এখানে সরকার গঠনের জন্য বহু রাজনৈতিক দল একত্রিত হয় এবং গণতান্ত্রিক আদর্শে সরকার গঠন করে। এই ব্যবস্থায় গণতন্ত্রে প্রায়ই অর্থনৈতিক সুস্থিরতার ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা যায়।
প্রশ্ন ২। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পক্ষে কী ধরনের দলীয় ব্যবস্থা সবচাইতে উপযোগী ?
উত্তরঃ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিশেষভাবে উপযোগী। কারণ দ্বিদলীয় ব্যবস্থা থাকা গণতন্ত্র অধিক সুস্থির ও সবল হয়। দ্বিদলীয় ব্যবস্থা থাকা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সহজে রাজনৈতিক সংকট পরিলক্ষিত হয় না। যেমন— আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।
প্রশ্ন ৩। রাজনৈতিক দলের চারিটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ(ক) সংগঠন অর্থাৎ দলের সভ্যগণকে তাদের দলের কার্যসূচী ও নীতি সম্বন্ধে একমত হতে হবে।
(খ) একই আদর্শ এবং নীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত এই সংগঠিত ব্যক্তিসমষ্টিগণকে সাংবিধানিক উপায়ে সরকার গঠনের চেষ্টা করতে হবে।
(গ) প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই জাতীয় কল্যাণে থাকা উচিত।
(ঘ) রাজনৈতিক দলের সদস্যগণকে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে এবং দলীয় স্বার্থরক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন ৪। পাঁচটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নাম লেখ।
উত্তরঃ ভারতের পাঁচটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল হল—
(১) ডি.এম.কে, এর.আই.ডি.এম.কে. (তামিলনাড়ু)।
(২) আকালি দল (পাঞ্জাব)।
(৩) তেলেগু দেশম (অন্দ্রপ্রদেশ)।
(৪) নেশনেল কনফারেন্স(জম্মু কাশ্মীর)।
(৫) অসম গণপরিষদ (অসম)।
প্রশ্ন ৫। মোর্চা সরকার বলতে কী বুঝ ?
উত্তরঃ যখন কোনো একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করতে অপারগ হয় তখন কয়েকটি রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে সরকার গঠন করে।এই ধরনের সরকারকে মোর্চা সরকার বলা হয়। যেমন— ইউনাইটেড ফ্রন্ট, সংযুক্ত গণতান্ত্রিক মোর্চা সরকার (UPA)।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। সংযুক্ত সরকার বলতে কি বুঝ ? কোন পরিস্থিতিতে সংযুক্ত সরকার গঠিত হয় ?
উত্তরঃ যখন কয়েকটি রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে সরকার গঠন করে, সেই ধরনের সরকারকে সংযুক্ত সরকার বলা হয়।
যখন কোনো একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করতে অপারগ হয় বা সক্ষম হয় না, তখন কয়েকটি রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে সরকার গঠন করে। সংযুক্ত সরকারে যোগ দেওয়া দলগুলোর আদর্শ ভিন্ন হলেও ক্ষমতা দখলের স্বার্থে এই দলগুলো নিজ স্বার্থ ও আদর্শ মোকাবিলা করে এবং সকল ধরনের লক্ষ্য বেঁধে সরকার গঠন করতে জোট বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আমাদের দেশে কেন্দ্রিয় সরকার ১৯৭৭সালে মোরারজী দেশাইর নেতৃত্বে প্রথম সংযুক্ত সরকার গঠন হয়। এই সরকার জনতা দলের সরকার ছিল।
প্রশ্ন ২। সংযুক্ত তথা মোর্চা সরকারের দুটি গুণ এবং দুটি দোষের বিষয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ সংযুক্ত অথবা মোর্চা সরকারের দুটি গুণ দুটি দোষ নিচে উল্লেখ করা হল—-
গুণ :
(১) অস্বেচ্ছাচারী সরকার : একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে একদলীয় সরকার গঠন হলে সরকারটি স্বেচ্ছাচারী হওয়ার আশংকা অধিক। বহু ক্ষেত্রে এই ধরণের সরকার বিধানমণ্ডলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবিধা নিয়ে জনস্বার্থবিরোধী কাজ করতেও সংকোচবোধ করে না। কিন্তু সংযুক্ত বা মোর্চা সরকার এই ধরনের কাজ করতে পারে না। কারণ যে-কোন সিদ্ধান্তই মোর্চার অংশীদার দলগুলোর মধ্যে হওয়া যথোচিত আলোচনার পরে লওয়া সম্ভব। ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারী হওয়ার আশংকা মোর্চা সরকারের ক্ষেত্রে কম।
(২) আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব : একদলীয় সরকার চেয়ে মোর্চা সরকারের বিভিন্ন অঞ্চল জাতি- গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার অধিক সুযোগ লাভ করে। মোর্চাতে অংশগ্ৰহণকারী বিভিন্ন আঞ্চলিক পর্যায়ের দলগুলো তাঁদের স্থানীয় সমস্যাসমূহ সমাধান করার অধিক সুবিধা পায়।
(৩) জাতীয় ঐক্য সংহতি রক্ষা : মোর্চা সরকারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করার ফলে বা একই মঞ্চে আনার ফলে দলগুলো নিজের নীতি-আদর্শে কঠোরভাবে লেগে না থেকে বোঝাবুঝির মধ্যে কাজ করে। ফলে জাতীয় ঐক্য-সংহতি বৃদ্ধি হয়।
দোষ :
(১) ক্ষণস্থায়ী অথবা অস্থির : মোর্চা সরকারের বড় দোষটি হল এর অস্থিরতা। মোর্চা সরকারে অংশগ্ৰহণ করা দলসমূহের নিজের স্বার্থে আঘাত পড়লে সেই দলে যে- কোন সময়ে সমর্থন তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে কার্যকাল সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বা আগে এই ধরনের সরকারের পতন ঘটে।
(২) জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা : সরকার গঠনের স্বার্থে মোর্চা সরকারে বহুক্ষেত্রে ক্ষুদ্র আঞ্চলিক ও সাম্প্রদায়িক স্বার্থকে অগ্ৰাধিকার দিতে হয়। এর ফলে জাতীয় স্বার্থে আঘাত পড়ার আশংকা থাকে।
(৩) ব্যয়বহুল : মোর্চা সরকার বহু ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল হয়। বিশেষ করে সকল অংশীদার দলকে মন্ত্রীসভায় স্থান দেওয়ার স্বার্থে প্রয়োজনহীনভাবে মন্ত্রীসভার কলেবর বৃদ্ধি করতে হয় এবং যা সরকারী ধনের বা অর্থের অপচয় ঘটায়।
প্রশ্ন ৩। গণতন্ত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তরঃ একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভূমিকাগুলো নিচে উল্লেখ করা হল—-
(১) জনসাধারণের এবং দেশের স্বার্থকে সুরক্ষা দিতে ও সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষা করতে বিরোধী দলকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করতে হয়।
(২) শাসনে থাকা দলটি যাতে জাতীয় স্বার্থের বিপরীতে গিয়ে কোনো কার্য করতে না পারে তার প্রতি সতর্ক রাখতে হয়।
(৩) সরকারের কাজকর্ম ও পরিকল্পনাগুলি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজন হলে সরকারকে সংসদের মধ্যে সমালোচনা করা।
(৪) জনসাধারণের অভাব-অভিযোগ, আশা- আকাঙক্ষাকে সংসদের মধ্যে তুলে ধরা।
(৫) প্রয়োজন সাপেক্ষে বিকল্প গঠনের জন্য তৈরি থাকা।
(৬) জনমত গঠন করা।
(৭) সরকার ও জনসাধারণের মধ্যে থাকা পার্থক্য দূর করা।
(৮) জনগণকে রাজনৈতিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক সজাগতা বৃদ্ধি করা।
(৯) জনমতের প্রতি সরকারকে সজাগ, দায়বদ্ধ ও জবাবদিহি করা।
(১০) সরকার যাতে স্বেচ্ছাচারীভাবে শাসনকার্য চালাতে না পারে সেই ক্ষেত্রে তীক্ষ্ণ নজর বা দৃষ্টি রাখা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্তব্য।
(১১) প্রয়োজন সাপেক্ষে উচিত পরামর্শ দেওয়া এবং গঠনমূলক সমালোচনা করে সরকারের কাজ-কর্মের গতিশীলতা প্রদান করা বিরোধী দলগুলির কর্তব্য।
প্রশ্ন ৪। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জন্ম নেবার মূল কারণগুলো আলোচনা কর।
উত্তরঃ আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের জন্মের মূল কারণসমূহ হল—
(ক) সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলির বৈষম্যমূলক নীতি।
(খ) দেশের বিভিন্ন ভাষা ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে ভিন্নতা থাকা।
(গ) সংখ্যালঘু সকলের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার ভাব থাকা।
(ঘ) কেন্দ্রীয় সরকারের অধিক কেন্দ্রীয়করণের প্রবণতা এবং রাজ্যিক সম্পদসমূহের উপরে অধিক কর্তৃত্ব লাভের প্রচেষ্টা।
(ঙ) সকল রাজ্যের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সমান দৃষ্টির অভাব।
(চ) রাষ্ট্রীয় দলের বা কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্যিক নেতার দুর্বলতা ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৫। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা কোথায় আলোচনা করো।
উত্তরঃ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তাগুলি হল—–
(১) জনগণকে রাজনৈতিক শিক্ষা প্রদানে শিক্ষিত করা।
(২) জনগণের মনে রাজনৈতিক সজাগতা বৃদ্ধি করা।
(৩) জনমত গঠন করা।
(৪) জনমতকে সু-সংগঠিতভাবে রূপ দেওয়া।
(৫) তদুপরি গণতন্ত্রে জনগণের সরকার গঠন প্রক্রিয়াতে অংশ লওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করাও রাজনৈতিক দলের আর একটি দায়িত্ব।
নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করা রাজনৈতিক দলটি ছাড়া বিরোধীর আসনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলি সরকারের কাজকর্মের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে এবং জনগণের নিকট সরকারের দোষগুলি ব্যাখ্যা করে। বিরোধী দলের সমালোচনার ফলে সরকার নাগরিকদের সুগ-সুবিধার প্রতি সজাগ হতে বাধ্য হয়। প্রয়োজন সাপেক্ষে বিরোধী দলগুলি গঠনমূলক সমালোচনার দ্বারা সরকারকে উচিত পথে অগ্ৰসর হতেও আহবান জানায়। সুতরাং একটি কথা স্পষ্ট যে একটি সুস্থ সবল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে রাজনৈতিক দলকে হতে হবে অতন্দ্র প্রহরী।
প্রশ্ন ৬। রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলী উল্লেখ কর।
উত্তরঃ রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
(ক) সংগঠন।
(খ) নীতি-আদর্শ ও পরিকল্পনা।
(গ) ক্ষমতা দখলের জন্য আকাঙ্ক্ষা।
(ঘ) জাতীয় স্বার্থের প্রতি সম্মান থাকতে হবে।
(ঙ) দলের সভ্যগণকে তাদের দলের কার্যসূচী ও নীতি সম্বন্ধে একমত হতে হবে।
(চ) রাজনৈতিক দলের সদস্যগণকে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে এবং দলীয় স্বার্থরক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
রাজনৈতিক দলের কার্যাবলী :
(১) রাজনৈতিক দলগুলির প্রথম কাজ হল দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য একটি কর্মসূচী স্থির করে জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করে জনমত গঠনের চেষ্টা করা। দেশের এই বিভিন্ন সমস্যাগুলির উপর নিজের নিজের দলের মনোভাব ব্যক্ত করাও রাজনৈতিক দলগুলির কর্তব্য।
(২) রাজনৈতিক দলগুলির নিজ নিজ দলীয় ঐক্য রক্ষার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। সংবাদপত্র, জনসভা, প্রচারপুস্তিকা, ইস্তাহার ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের দলীয় মত ও আদর্শকে জনপ্রিয় করবার চেষ্টা করতে হবে।
(৩) রাজনৈতিক দলগুলির জন্যতম প্রধান কাজ হল নির্বাচনে সাধারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবার জন্য যোগ্য দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন করা এবং ভোটে জয়লাভ করে সরকার গঠনের চেষ্টা করা। যে রাজনৈতিক দল আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, সেই দলই সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর নির্বাচনকালীন কার্যসূচী অনুযায়ী দলীয় নীতিগুলিকে বাস্তবে পরিণত করা রাজনৈতিক দলগুলির মুখ্য কাজ।
(৪) বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সরকারের কার্যসূচী উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবে এবং সরকারের ভূলভ্রান্তি ও কার্যের গঠনমূলক সমালোচনা করবে এবং নিজেদের পক্ষ নিয়ে জনমত গঠনের চেষ্টা করা উচিত।
(৫) রাজনৈতিক দলগুলিকে সরকারী কাজের ধারা আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে জনসাধারণকে রাজনৈতিক জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
(৬) রাজনৈতিক দলগুলি, দলীয় সদস্যদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রেখে দলীয় সদস্যদিগকে একত্রিত রাখতে হবে। শাসক দল সরকারের কার্যের সমর্থন করে কার্য চালিয়ে সরকারের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন ৭। সংযুক্ত সরকার ব্যবস্থা। বর্তমানে কেন বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে আলোচনা কর।
উত্তরঃ বর্তমান সময়ে সংযুক্ত সরকারের ব্যবস্থাটি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করার কারণ কয়টি হল—–
(১) রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বৃদ্ধি।
(২) একক রাজনৈতিক দলের প্রাধান্য হ্রাস।
(৩) একটি নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা খরচ হওয়ার পরে যদি সরকার গঠন জটিলতা আসে তাহালে পুনরায় নির্বাচন করে অর্থের অপব্যয় না হওয়ার চেষ্টায় সংযুক্ত সরকার গঠন হয়।
(৪) সরকারে আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টিও সংযুক্ত সরকারে গুরুত্ব পায়।
আমাদের দেশে (ভারতবর্ষে) কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৭৭ সনে মোরারিজী দেশাইয়ের নেতৃত্বে প্রথম একটি সংযুক্ত সরকার গঠন হয়।
অতিরিক্ত প্রশ্নাবলী ও উত্তর
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। গণতন্ত্র বলতে কি বুঝ ?
উত্তরঃ গণতন্ত্র বলতে সেই শাসন ব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে জনগণই শাসন ক্ষমতার অধিকারী। গণতন্ত্র হচ্ছে প্রজা সাধারণের দ্বারা পরিচালিত সরকার।
প্রশ্ন ২। দলীয় ব্যবস্থা কয় প্রকার ও কি কি ?
উত্তরঃ দলীয় ব্যবস্থা তিন প্রকার। একদলীয় ব্যবস্থা, দ্বিদলীয় ব্যবস্থা ও বহু দলীয় ব্যবস্থা।
প্রশ্ন ৩। একদলীয় ব্যবস্থা থাকা একটি রাষ্ট্রের নাম উল্লেখ কর।
উত্তরঃ চীন। চীন হল একটি সাম্যবাদী রাষ্ট্র।
প্রশ্ন ৪। দ্বিদলীয় ব্যবস্থা থাকা দুটি দেশের নাম লিখ।
উত্তরঃ আমেরিকা ও ইংল্যান্ড।
প্রশ্ন ৫। বহুদলীয় ব্যবস্থা থাকা তিনটি দেশের নাম লেখ—
উত্তরঃ (১) ভারতবর্ষ।
(২) বাংলাদেশ।ও
(৩) পাকিস্তান।
প্রশ্ন ৬। আমেরিকার রাজনৈতিক দল দুটির নাম লেখ।
উত্তরঃ (১) রিপাব্লিকান দল। ও
(২) ডেমোক্র্যাটিক দল।
প্রশ্ন ৭। পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ কোনটি ?
উত্তরঃ ভারতবর্ষ।
প্রশ্ন ৮। কোন সনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জন্ম হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৮৮৫সনে।
প্রশ্ন ৯। কোন সনে ‘ দি ইণ্ডিয়ান এসোসিয়েশনে’ গঠিত হয় ?
উত্তরঃ ১৮৭৬ সনে।
প্রশ্ন ১০। ভারতের প্রথম কংগ্রেস অধিবেশন কোন শহরে বসেছিল ?
উত্তরঃ বোম্বাই (বর্তমানের মুম্বাই) শহরে।
প্রশ্ন ১১। কোন সনে মুসলিম লীগ নামক দলটির জন্ম হয় ?
উত্তরঃ ১৯০৬ সনে।
প্রশ্ন ১২। কোন সনে ‘ হিন্দু মহাসভা’ রাজনৈতিক দলটির জন্ম হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৯১৬ সনে।
প্রশ্ন ১৩। ভারতের স্বরাজ পার্টীর জন্ম কোন সনে এবং কার কার নেতৃত্বে হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৯২২ সনে চিত্তরঞ্জন দাস ও মতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ভারতের স্বরাজ পার্টির জন্ম হয়েছিল ।
প্রশ্ন ১৪। ভারতের প্রথম বামপন্থী দলটির নাম কি ?
উত্তরঃ ভারতীয় সাম্যবাদী দল।
প্রশ্ন ১৫। কোন সনে ভারতীয় সাম্যবাদী দলটির জন্ম হয়েছিল ?
উত্তরঃ১৯২৪ সনে।
প্রশ্ন ১৬। কোন সনে ভারতে প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৯৫২ সনে।
প্রশ্ন ১৭। ভারতের প্রথম আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলটির নাম কি ?
উত্তরঃ ভারতের প্রথম আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলটি হল দ্রাবিড় মুন্নেট্রা কাজাগম (DMK)।
প্রশ্ন ১৮। ভারতে প্রথম মোর্চা সরকার কখন এবং কার নেতৃত্বে গঠন হয় ?
উত্তরঃ ভারতের প্রথম মোর্চা সরকার গঠন হয় ১৯৭৭ সনে মোরারজী দেশাইয়ের নেতৃত্বে।
প্রশ্ন ১৯। তামিলনাড়ুর আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল দুটির নাম লেখ।
উত্তরঃ ডি.এম.কে.ও এ. আই.ডি.এম.কে.।
প্রশ্ন ২০। মিজোরামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলটির নাম লেখ।
উত্তরঃ মিজো ন্যাশনেল ফ্রন্ট।
প্রশ্ন ২১। মহারাষ্ট্রের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলটির নাম লেখ।
উত্তরঃ শিবসেনা।
প্রশ্ন ২২। নাগাল্যাণ্ডের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলটির নাম লেখ।
উত্তরঃ নাগাল্যাণ্ড পিপ্লস্ কনফারেন্স।
প্রশ্ন ২৩। ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কয়টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল।
উত্তরঃ ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে (১৯৫২ সনে) ৫০ টির অধিক রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল।
প্রশ্ন ২৪। বিরোধী দলের সবল ভূমিকা থাকা দুটি উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্রের নাম লেখ।
উত্তরঃ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ড।
প্রশ্ন ২৫। রাজনৈতিক দলের চারটি কার্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ রাজনৈতিক দলের চারটি কার্য হল–
(১) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা।
(২) রাজনৈতিক চেতনা জাগ্ৰত করা।
(৩) জনমত গঠন করা।
(৪) সরকার গঠনে সাহায্য করা।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। সর্বভারতীয় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নাম লেখ।
উত্তরঃ সর্বভারতীয় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নাম হল—
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি, মুসলিম লীগ, স্বতন্ত্র দল, ভারতীয় ক্রান্তি দল, জনসংঘ, মাক্সবাদী সাম্যবাদী দল, জনতা দল,ভারতীয় লোকদল, সি.পি. এম, সি.পি.আই, তৃণমূল কংগ্রেস, ফরোয়ার্ড ব্লক ইত্যাদি।
প্রশ্ন ২। ভারতের কয়েকটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নাম লেখ।
উত্তরঃ ভারতের উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলি হল—- ডি.এম.কে. (তামিলনাড়ু), আকালী দল (পাঞ্জাব), তেলেগু দেশম (অন্দ্রপ্রদেশ), ন্যাশনেল কনফারেন্স (জম্মু কাশ্মীর), অসম গণপরিষদ (অসম), মিজো ন্যাশনেল ফ্রন্ট (মিজোরাম), শিবসেনা (মহারাষ্ট্র), নাগাল্যাণ্ড পিপলস্ কনফারেন্স (নাগাল্যাণ্ড), ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (ঝাড়খণ্ড) ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৩। বর্তমান যুগে কি কি ধরনের সরকার প্রচলিত আছে ?
উত্তরঃ বর্তমান যুগে এককেন্দ্রিক সরকার, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার, সংসদীয় সরকার, রাষ্ট্রপতি চালিত সরকার ইত্যাদির প্রচলন দেখা যায়।
প্রশ্ন ৪। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল জন্ম নেবার কারণগুলো আলোচনা করো।
উত্তরঃ গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল—-
(১) জনবহুল রাজনৈতিক দেশে রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে দেশের সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করতে হবে।
(২) গণতন্ত্রে স্থায়ী সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন। দলের নেতৃত্ব জনগণকে নির্দিষ্ট দিকে অগ্ৰসর হতে সাহায্য করে। কিছু নির্দলীয় সদস্য একত্রিত হয়ে সরকার গঠন করলে সে ধরনের সরকার স্থায়ী হয় না।
(৩) গণতন্ত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সরকারের স্বেচ্ছাচারীতাকে বাধা দেয়। ফলে গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় থাকে।
প্রশ্ন ৫। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দেশে জনমত গঠন করার পাঁচটি উপায় উল্লেখ কর।
উত্তরঃ গণতান্ত্রিক দেশে জনমত গঠনের মাধ্যমগুলি হল :
(১) সংবাদপত্র।
(২)রেডিও এবং দূরদর্শন।
(৩) আইনসভা।
(৪) রাজনৈতিক দল।
(৫) সভা সমিতি।
প্রশ্ন ৬। বর্তমান যুগে বিরোধী দলের সবল ভূমিকা থাকা দুটি রাষ্ট্রের নাম লেখ।
উত্তরঃ বর্তমান যুগে বিরোধী দলের সবল ভূমিকা থাকা দুটি উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্র হল— আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ড।
প্রশ্ন ৭। সরকারের তিনটি বিভাগ কি কি ?
উত্তরঃ সরকারের তিনটি বিভাগ হল—-
(১) আইন বিভাগ।
(২) শাসন বিভাগ।ও
(৩) বিচার বিভাগ।
প্রশ্ন ৮। রাজনৈতিক দল কাকে বলে ?
উত্তরঃ যখন কিছু সংখ্যক লোক একটি নির্দিষ্ট নীতি ও কার্যসূচীর ভিত্তিতে সংঘবদ্ধ হয়ে জাতীয় সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করে এবং নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের চেষ্টা করে, তখন সংঘবদ্ধ ব্যক্তিসমষ্টিকে রাজনৈতিক দল বলে। বার্ক-এর মতে ” কোনো নির্দিষ্ট স্বীকৃত নীতির ভিত্তিতে এবং যুক্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ প্রচারের জন্য যে জনসমষ্টি সম্মিলিত হয় তাহাকে রাজনৈতিক দল বলে।”
প্রশ্ন ৯। রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্যসমূহ তাদের কার্যসূচী ও নীতি সম্বন্ধে একমত হতে হবে।
(২) একই আদর্শ এবং নীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত এই সংগঠিত ব্যক্তিসমষ্টিকে সাংবিধানিক উপায়ে সরকার গঠনের চেষ্টা করতে হবে।
(৩)প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই জাতীয় কল্যাণে সচেষ্ট থাকা উচিত।
(৪) রাজনৈতিক দলের সদস্যগণকে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে এবং দলীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন ১০। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তরঃ গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল—-
(১) জনবহুল রাজনৈতিক দেশে রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে দেশের সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করতে পারে।
(২) গণতন্ত্রে অস্থায়ী সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন। দলের নেতৃত্ব জনগণকে নির্দিষ্ট দিকে অগ্ৰসর হতে সাহায্য করে। কিছু নির্দলীয় সদস্য একত্রিত হয়ে সরকার গঠন করলে সেই ধরনের সরকার স্থায়ী হয় না।
(৩) গণতন্ত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সরকারের স্বেচ্ছাচারীতাকে বাধা দেয়। ফলে গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় থাকে।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতীয় গণতন্ত্রে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের অবদান লেখ।
উত্তরঃ ভারতবর্ষে দলীয় ব্যবস্থায় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের আবির্ভাবের দিকটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আঞ্চলিক দলের জন্ম হয় সময় ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। মানুষের মনে সৃষ্টি হওয়া ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টির ফলেই বহু আঞ্চলিক দলের জন্ম বা সৃষ্টি হয়েছে। একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষ সৃষ্টিতে অঞ্চলগুলির সমস্যাসমূহ সমাধানের দ্বারা জনসাধারণের গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ দিতে পারা যায়। এই ধরনের বৃহত্তম স্বার্থে আঞ্চলিক দলগুলি যদি নিষ্ঠা সহকারে কাজ করে তাহলে নিশ্চয়ই এই দলগুলির প্রাসঙ্গিকতা সর্বদা থাকবে।
(১) আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের জন্মই ভারতবর্ষে ‘একক দলের প্রাধান্যতায় ‘ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশা এসেছে। এই ধরনের দলের সৃষ্টিতে দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন যুগ আসতে সক্ষম হল।
(২) কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলের জন্মই একটি যোগাত্মক দিক প্রদান করেছে। এই বিষয়টি দেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব পাওয়ার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে নতুন রূপ দেওয়ার চিন্তাচর্চা চলেছে।
(৩) আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের জন্মই দেশের রাজনীতিতে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের অংশগ্রহণ অধিক সক্রিয় করেছে।
(৪) কেন্দ্রের রাজনীতিতে আঞ্চলিক দলগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের আধিপত্য কিছু সীমাবদ্ধ করে গণতান্ত্রিক ভাবধারাকে সবল করেছে।
প্রশ্ন ২। মোর্চা সরকারের দোষ ও গুণসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ কয়েকটি রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে মোর্চা সরকার গঠন হয়।
মোর্চাসরকারের দোষসমূহ হল—-
(১) ক্ষণস্থায়ী অথবা অস্থির : মোর্চা সরকারের সবচেয়ে বড় দোষ হল এর অস্থিরতা। মোর্চায় অংশগ্রহণ নিজের স্বার্থে আঘাত পড়লে সেই দল যে-কোন সময়ে সমর্থন উঠিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে কার্যকাল সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বা আগে এই ধরনের সরকারের পতন ঘটে।
(২) দুর্বল সরকার : মোর্চা সরকার সাধারণত দুর্বল হয়। সরকারে অংশগ্রহণকারী সকল দলকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য এই সরকার কোনো বিষয়ে দৃঢ়ভাবে অগ্ৰসর হতে পারে না।
(৩) দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্ৰহণে জটিলতা : মোর্চা সরকার স্থায়ীত্বের ক্ষেত্রে দুর্বল হওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্ৰহণ কার্যকরী করতে জটিলতার উদ্ভব হয়।
(৪) অংশীদারী দলের আকাঙ্ক্ষা : মোর্চা সরকারের অংশীদার দলসমূহে বহু রাজনৈতিক নেতা থাকে এবং অনেক সময়ে তাঁদের মূল লক্ষ্য হয়ে পড়ে রাজনৈতিক সুবিধা লাভ। ক্ষমতালোভী এই সকল নেতার ব্যক্তিগত স্বার্থই সরকারটিকে জনস্বার্থবিরোধী রূপ দেয়।
(৫) জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা : সরকার গঠনের স্বার্থে মোর্চায় বহুক্ষেত্রে ক্ষুদ্র আঞ্চলিক ও সাম্প্রদায়িক স্বার্থকে অগ্ৰাধিকার দিতে হয়। এর ফলে জাতীয় স্বার্থে আঘাত পড়ার আশংকা থাকে।
(৬) ব্যয়বহুল : মোর্চা সরকার বহুক্ষেত্রে ব্যয়বহুল হয়। বিশেষ করে সকল অংশীদার দলকে মন্ত্রীসভায় স্থান দেওয়ার স্বার্থে প্রয়োজনহীনভাবে মন্ত্রীসভার কলেবর বৃদ্ধি করতে হয় এবং যা সরকারী ধনের বা অর্থের অপচয় ঘটায়।
মোর্চা সরকারের গুণসমূহ হল :
(১) পরিস্থিতি ও সময়সাপেক্ষ : মোর্চা সরকার পরিস্থিতি ও সময়সাপেক্ষ। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে মোর্চা সরকার গঠন ভারতবর্ষের মতো একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সুস্থিরতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজন।
(২) অস্বেচ্ছাচারী সরকার : একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে একদলীয় সরকার গঠন হলে সরকারটি স্বেচ্ছাচারী হওয়ার আশংকা অধিক। বহুক্ষেত্রে এই ধরনের সরকার বিধান মণ্ডলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা সুবিধা নিয়ে জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করতেও সংকোচ বোধ করে না। কিন্তু মোর্চা সরকারে এই ধরনের আশংকা কম।কারণ যে-কোন সিদ্ধান্তই মোর্চার অংশীদার দলগুলির মধ্যে যথোচিত আলোচনার পরে লওয়া সম্ভব। ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারী হওয়ার আশংকা মোর্চাসরকারের ক্ষেত্রে কম।
(৩) আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব : একদলীয় সরকার হতে মোর্চা সরকারের বিভিন্ন অঞ্চল এবং জাতি-গোষ্ঠীতে প্রতিনিধিত্ব করার অধিক সুযোগ লাভ করে। মোর্চায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন আঞ্চলিক পর্যায়ের দলগুলি তাঁদের স্থানীয় সমস্যাসমূহ সমাধান করার অধিক সুবিধা পায়।
(৪) জাতীয় ঐক্য সংহতি রক্ষা : মোর্চা সরকারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করার ফলে দলগুলি নিজের নীতি-আদর্শে কঠোরভাবে লেগে না থেকে বুঝাবুঝির দ্বারা কাজ-কর্ম করে। ফলে জাতীয় ঐক্য-সংহতি বৃদ্ধি হয়।
(৫) সরকারী ধনের অপব্যবহার হ্রাস : একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর সরকার গঠনে জটিলতা দেখা দিলে দেশে আবার একটি নির্বাচনের সম্মুখীন হতে হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে কম দিনের ব্যবধানে আরও একটি নির্বাচনের সম্মুখীন হওয়ার থেকে মোর্চা সরকার গঠনে দেশকে রক্ষা করে। এইভাবে মোর্চা সরকার গঠনের প্রক্রিয়াই সরকারী ধনের অপব্যবহার রোধ করে।
প্রশ্ন ৩। গণতন্ত্রে রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দলগুলি দেশের বিভিন্ন সমস্যাগুলির প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। জনসাধারণের মধ্যে প্রচারকার্যের দ্বারা রাজনৈতিক শিক্ষা বিস্তারে সহায়তা করে এবং জনসাধারণের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে। তারা জনসাধারণকে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করতে আহবান করে। রাজনৈতিক দলগুলি দেশের জনসাধারণকে সুসংঘবদ্ধ হতে সহায়তা করে এবং তাদের জাতীয়তা বোধ বৃদ্ধি করে। সরকার বিরোধী দলগুলি সরকারের কার্যসূচীর উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে এবং জনগণের নিকট সরকারের দোষ ক্রটিগুলি ব্যাখ্যা করে। বিরোধী দলের সমালোচনার ফলে সরকার নাগরিকদের সুখ-সুবিধার প্রতি সজাগ হতে বাধ্য হয়। সুতরাং রাজনৈতিক দল ছাড়া গণতন্ত্র কৃতকার্য হতে পারে না।
বর্তমান যুগে গণতন্ত্র বলতে প্রতিনিধিত্ব গণতন্ত্রকে বুঝায়। এই প্রতিনিধিগণ দলীয় ভিত্তিতে জনসাধারণের দ্বারা নির্বাচিত হয়। প্রতিনিধি গঠনের কার্বাবলীর দ্বারা জনসাধারণ তাদের গুণাগুণ বিচার করতে পারে। এই ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক দলগুলি জনগণকে সাহায্য করে। সংসদীয় গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য কমপক্ষে দুইটি রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন। একে দ্বিদলীয় শাসন ব্যবস্থা বলে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক নামে দুটি রাজনৈতিক দল আছে। ইংল্যান্ড রক্ষণশীল ও শ্রমিক দল নামে দুইটি রাজনৈতিক দল আছে।ভারতবর্ষে কংগ্রেস (আই), জনতা, ভারতীয় জনতা, সি.পি.এম., সি.পি.আই., প্রভৃতি নানা রকমের দল আছে।
প্রশ্ন ৪। গণতন্ত্রে বিরোধী দলের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ যে রাজনৈতিক দল আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে না তবে ইহা বিরোধী দলের ভূমিকা গ্ৰহণ করে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় বিরোধী দলের ভূমিকা সরকারী দলের মতই গুরুত্বপূর্ণ। আইন পরিষদে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সরকারের কার্য ও নীতির গঠনমূলক সমালোচনা করে এর পতন ঘটাবার চেষ্টা করে। বিরোধী দলগুলি সরকারী নীতি ও কার্যের সমালোচনা করে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষা করে। এর ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না। ফলে গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় থাকে। বিরোধী দলগুলি সরকারী কার্যসূচীর উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে এবং জনগণের নিকট সরকারের দোষক্রটিগুলি ব্যাখ্যা করে। বিরোধী দলের সমালোচনার ফলে সরকার নাগরিকদের সুখ- সুবিধার প্রতি সজাগ হতে বাধ্য হয়। আইনসভায় নিজেদের কার্য দ্বারা বিরোধী দলগুলি জনমতকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। জনমত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্য দ্বারা প্রভাবিত হলে জনতাকে কয়েকটি বিশেষ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। এর ফলে পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলিতে গণতন্ত্র সার্থক করতে সক্ষম হয়।