Class 9 Social Science Chapter 5 অসমে ব্রিটিশ প্রশাসনের সূচনা Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 9 Social Science Chapter 5 অসমে ব্রিটিশ প্রশাসনের সূচনা and select needs one.
Class 9 Social Science Chapter 5 অসমে ব্রিটিশ প্রশাসনের সূচনা
Also, you can read SCERT book online in these sections Class 9 Social Science Chapter 5 অসমে ব্রিটিশ প্রশাসনের সূচনা Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 9 Social Science Chapter 5 অসমে ব্রিটিশ প্রশাসনের সূচনা These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 9 Social Science Chapter 5 অসমে ব্রিটিশ প্রশাসনের সূচনা for All Subject, You can practice these here…
অসমে ব্রিটিশ প্রশাসনের সূচনা
Chapter – 5
প্রথম খন্ড : ইতিহাস
পাঠ্য পুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
● শুদ্ধ উত্তর বেছে বের করো :
১। ব্রিটিশ জয়ন্তিয়া রাজ্যের রাজা রাজেন্দ্র সিংহ/ গোবিন্দচন্দ্র/ তিরৎ সিংহকে সিলেটে নির্বাসন দিয়েছিল।
উত্তরঃ রাজেন্দ্র সিংহ।
২। অসমের শেষ অহোম রাজা ছিলেন চন্দ্রকান্ত সিংহ/ কমলেশ্বর সিংহ/ পুরন্দর সিংহ/ যোগেশ্বর সিংহ।
উত্তরঃ চন্দ্রকান্ত সিংহ।
৩। তিরৎ সিং খাসি/মণিপুরি/ জয়ন্তীয়া দেশপ্রেমিক ছিলেন।
উত্তরঃ খাসি।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। গোবিন্দচন্দ্র কোন রাজ্যের রাজা ছিলেন ?
উত্তরঃ গোবিন্দচন্দ্র কাছাড়ী রাজ্যের রাজা ছিলেন।
প্রশ্ন ২। ডেভিড স্কট কে ছিলেন ?
উত্তরঃ ডেভিড স্কট ছিলেন একজন সুদক্ষ ইংরেজ প্রশাসক।
প্রশ্ন ৩। ডেভিড স্কটের পরবর্তী কমিশনার কে ছিলেন ?
উত্তরঃ ডেভিড স্কটের পরবর্তী কমিশনার ছিলেন রবার্ট সন।
প্রশ্ন ৪। তিরৎ সিং কোন রাজ্যের সিয়েম ছিলেন ?
উত্তরঃ তিরৎ সিং খাসি রাজ্যের সিয়েম ছিলেন।
প্রশ্ন ৫। মটক রাজ্যের রাজার উপাধি কি ছিল ?
উত্তরঃ মটক রাজ্যের রাজার উপাধি ছিল বড় সেনাপতি।
প্রশ্ন ৬। জেনকিন্সের পরামর্শ অনুযায়ী কে সিংহাসন হারিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ জেনকিন্সের পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণানন্দ সিংহ সিংহাসন হারিয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৭। জেনকিন্স নিম্ন অসমকে কি কি জেলায় ভাগ করেন ?
উত্তরঃ জেনকিন্স নিম্ন অসমকে গোয়ালপাড়া, দরং ও কামরূপ জেলায় ভাগ করেন।
প্রশ্ন ৮। ব্রিটিশ কাকে পঞ্চাশ টাকা বৃত্তি দিয়ে রাজ্য দখল করেছিল ?
উত্তরঃ ব্রিটিশ গোবিন্দচন্দ্রকে পঞ্চাশ টাকা বৃত্তি দিয়ে রাজ্য দখল করেছিল।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ডেভিড স্কটের রাজস্ব নীতি কেমন ছিল ?
উত্তরঃ পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্রে বিশ্বাসী ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে সামরিক ও অসামরিক শাসনের সঙ্গে রাজস্ব সংগ্ৰহে বেশি গুরুত্ব প্রদান করেছিল। ব্যবসা বাণিজ্য ও নূতন দেশ জয় করতে ইংরেজগণের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। মূলধন সংগ্ৰহের উপর নূতন নূতন কর ও খাজনা আরোপ করেছিল।
ব্রক্ষপুত্র উপত্যকার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ব্রিটিশ এই অঞ্চলের রাজস্ব প্রশাসনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের কথা ভাবেনি। উজান অসমে পাইক প্রথা বিশেষ করে এর পরিবর্তে মাথাপিছু প্রত্যেকের উপর তিন টাকা খাজনা আদায় করেছিল। প্রতিটি জিলাকে কয়েকটি মৌজায় ভাগ করে এক একজন বিষয়ার উপর কর সংগ্ৰহের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
স্কটের শাসনকালে নিম্ন ও উজান অসমের ক্ষেত্রে একই রাজস্ব ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নিম্ন অসমে আগের মতই একজন চৌধুরীর পরিচালনায় একটি পরগণা রাখা হয়। সেরেস্তাদার, তহশীলদার, পাটোয়ারী, ঠাকুরীয়া প্রভৃতি খাজনা আদায়কারী কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। নগাঁও ও রহা অঞ্চলে স্থানীয় কর আদায়ের জন্য একটি আলাদা জোট তৈরি করা হয়। এই জোটকে রাখা হয়েছিল গুয়াহাটীর অধীনে।
স্কটের শাসনকালে নিম্ন অসমে মাটির জরিফ প্রথা প্রচলিত হয়েছিল। প্রত্যেক পাইককে চাষের জমির জন্য তাদের কাছ থেকে দুই টাকা খাজনা আদায় করা হত। এই মাটি বা জমিকে বলা হত ‘গা-মাটি’ এবং খাজনাকে বলা হত ‘গা-ধন’। তাছাড়া প্রত্যেক লোককে মাথাপিছু কর দিতে হত। এ করকে কামরূপে বলা হত ‘পাইক কর’, ছরং-এ ‘জুলাহ কর’।
প্রশ্ন ২। ডেভিড স্কটের প্রশাসন কালে বিচারের ক্ষেত্রে কি ধরণের ব্যবস্থা গ্ৰহণ করা হয়েছিল ?
উত্তরঃ ডেভিট স্কট ব্রক্ষপুত্র উপত্যকার এক বিরাট অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন। স্কটের শাসনকালে স্থানীয় সাধারণ দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলাগুলি নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয় লোকদের নিয়ে কতিপয় পঞ্চায়েত গঠন করা হয়। গুরুতর অপরাধ সমূহ কমিশনার সহকারী বিষয়াগণে পঞ্চায়েতের সাহায্যে বিচার করত। পঞ্চায়েতের বিচারে সন্তুষ্ট না হলে বিষয়াগণে আপিল করার ব্যবস্থা ছিল। এতেও সন্তুষ্ট না হলে কমিশনারকে আপিল করতে হত।স্কট বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে উজান অসমে লম্বোদর বরফুকনকে দেওয়ানী বিচারের ভার দিয়েছিলেন। নিম্ন অসমে দেওয়ানী মামলার জন্য ছিল একটি আদালত। স্কটের প্রশাসনকালে মোয়ামরীয়া, সিংফৌ ও খামতিগণের সঙ্গে সদ্ভাব করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ৩। রবার্টসনের আমলে রাজস্ব ব্যবস্থা কেমন ছিল ?
উত্তরঃ রবার্টসন অসমে রাজস্ব উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি অসমে রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার করে মাটির গুণাগুণ নিদ্ধারর্ণ করে খাজনার নিরিখ ধার্য করেছিলেন। খাজনা সংগ্ৰহে শোষণ বন্ধ করতে মাটির প্রকার, পরিমাণ, কৃষকদের নাম-ঠিকানা প্রভৃতির তথ্য লিপিবদ্ধ করার প্রথা প্রচলন হয়েছিল। এই তথ্যের ভিত্তিতে মাটির নথি বা পাট্টা দেওয়ার নিয়ম প্রচলিত হয়। এই সংস্কারের ফলে রাজকোষে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ বাড়ে রাজস্ব কর্মচারীগণের দুর্নীতি রোধ করতে রবার্টসন জমি, ঘরবাড়ি, বনাঞ্চল প্রভৃতির বিবরণী সংগ্ৰহ করে কর নিদ্বারণ করেছিলেন। তার উপর রায়তকে পাট্টা ও রাজস্বদানের রসিদ দেওয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন ৪। মেজর জেনকিন্স অসমের জন্য কি কি কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন ?
উত্তরঃ অসমে উন্নতি বিধানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করা ইংরেজ কর্মচারী ছিলেন মেজর জেনকিন্স। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে রবার্টসনের পর মেজর জেনকিন্স অসমের কমিশনার নিযুক্ত হন। স্কট-এর ন্যায় জেনকিন্সও অসমের জন্য কয়েকটি প্রকল্প গ্ৰহণ করেছিলেন। অসমের চা, কয়লা এবং তেল উদ্যোগের বিকাশের সাথে জেনকিন্সের নাম ওতঃপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর উৎসাহে অসম চা শিল্প দ্রুত প্রসারলাভ করে। জেনকিন্সের প্রচেষ্টাতেই কেন্দ্রীয় সরকার ব্যক্তিগত মালিকানায় চা উৎপাদনের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গদেশের সঙ্গে অসমের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর জন্যও তিনি সদা সচেষ্ট ছিলেন। তাই তিনি বিভিন্ন সীমান্তচৌকী উঠিয়ে দিয়েছিলেন। জেনকিন্সের প্রচেষ্টায় ব্রক্ষপুত্র নদীতে ষ্টীমার চলাচল পুনরায় শুরু হয়। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। শিক্ষার ব্যাপারে ভীষণ আগ্ৰহী জেনকিন্সের পরামর্শ অনুযায়ী ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে গুয়াহাটিতে এবং ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে শিবসাগরে ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।
মেজর জেনকিন্স কয়েকটি প্রশাসনিক সংস্কারও করেছিলেন। তিনি নিম্ন অসমকে গোয়ালপাড়া, দরং, কামরূপ এবং নগাঁও এই চারটি জেলায় ভাগ করেছিলেন। জেনকিন্স উজান অসমের রাজা পুরন্দর সিংহকে অতি অকর্মণ্য বলে মত প্রকাশ করেন এবং গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যাণ্ডকে তাঁকে বরখাস্ত করবার পরামর্শ দেন। সেই মর্মে গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যাণ্ড ব্যবস্থা নেওয়ায় ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে পুরন্দর সিংহের পতন ঘটে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে জেনকিন্সকে বলা যায় সাম্রাজ্যবাদী। জেনকিন্স ব্রিটিশ সম্প্রসারণবাদী মনোভাবে পরিপুষ্ট হলেও অসমের উন্নতিসাধনের জন্য গ্ৰহণ করা বিভিন্ন প্রকল্পসমূহ তাঁকে যথেষ্ট জনপ্রিয় করে তুলেছিল। তাঁ শাসনকাল ইতিহাসে ‘জেনকিন্সের যুগ’ বলে খ্যাত হয়েছে।
প্রশ্ন ৫। জেনকিন্স কিভাবে অসমকে বিভিন্ন জেলায় বিভক্ত করেছিলেন ?
উত্তরঃ রবার্টসনের পর ১৯৩৪ সালে জেনারেল জেন্কিন্স কমিশনার নিযুক্ত হন। জেন্কিন্সের শাসনকাল ভিন্ন ভিন্ন কারণে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই সময়ে ব্রিটিশ সরকারের সরাসরি শাসন অসমের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত হয়। সমগ্ৰ প্রদেশের শাসনব্যবস্থা আরও সুষ্ঠু রূপে সংগঠিত করা হয় এবং কৃষি, শিল্প প্রভৃতির প্রভূত উন্নতিসাধন করা হয়। জেনারেল জেন্কিন্সের সময়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী অসমে রাজ্যবিস্তার নীতি প্রকাশ্যেই গ্ৰহণ করেন। এই নীতির ফলে প্রথমেই জয়ন্তিয়া রাজ্য জেন্কিন্স অধিকার করেন। তারপর মটক, সদিয়া, উত্তর কাছাড় ও দুয়ার অঞ্চল অধিকার করা হয়। ১৮৩৮ সালে পুরন্দর সিংহকে ক্ষমতাচ্যুত করে উত্তর-পূর্ব অসমও ইংরেজ রাজ্যভুক্ত করা হয়। জেন্কিন্সের সময়ে ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ হয়। জেন্কিন্স কঠোর হস্তে তা দমন করেন। তাঁর সময়ে শাসনব্যবস্থার আরও উন্নতিসাধন করা হয়। তিনি নিম্ন অসমকে গোয়ালপাড়া, দরং কামরূপ ও নগাঁও এই চারি জেলায় ভাগ করেন। সমস্ত প্রদেশের শাসনভার একজন কমিশনার, একটি ডেপুটি কমিশনার, ছয়জন প্রিন্সিপাল অ্যাসিস্ট্যাণ্ট, তিনজন জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যাণ্ট ও আটজন সাব- অ্যাসিস্ট্যাণ্ট উপর ন্যস্ত হয়। তার সুদক্ষ শাসনে ব্রিটিশ রাজত্ব এক সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন ৬। তিরৎ সিং কে ছিলেন ? তিনি কেন ব্রিটিশ বিরোধী হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ তিরৎ সিং খাসি রাজ্যের সিয়েম। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে গোমধর কোঁওরের ব্রিটিশ বিদ্রোহের প্রায় সঙ্গে দেখা সঙ্গেই খাসিগণও বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন খাসি নেতা নংখলৌ রাজ্যের রাজা তিরৎ সিং। ব্রক্ষপুত্র উপত্যকায় ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ডেভিড স্কট এই উপত্যকার সঙ্গে সুরমা উপত্যকার যোগাযোগ রক্ষা করতে খাসি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। নংখলৌ রাজ্যের রাজা তিরৎ সিং ডেভিড স্কটের এই প্রস্তাবে রাজি হন।রাস্তার কাজ এগোনোর সাথে সাথে ইংরেজ সৈন্য খাসি পাহাড়ে প্রবেশ করে। তখন স্বাধীনতাপ্রিয় খাসিদের মনে ইংরেজদের মনোভাবের উপর সন্দেহ হতে শুরু করে। খাসিরা সন্দেহ করে যে এই রাস্তা নির্মিত হলে ইংরেজরা খাসি পাহাড় দখল করে তাদের উপর কর বসিয়ে দেবে। এভাবে তিরৎ সিংহের নেতৃত্বে ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা এপ্রিল খাসিগণ ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এক অতর্কিত আক্রমণে তাঁরা নংখলৌতে দুজন ইংরেজ কর্মচারীকে হত্যা করে। এই বিদ্রোহ প্রায় চার বৎসর চলেছিল। খাসি বিদ্রোহ দমন করতে ইংরেজরা শ্রীহট্ট এবং কামরূপ থেকে বেশি সংখ্যক সৈন্যসামন্ত পাঠায়। খাসিগণ যুদ্ধে পরাজিত হয়। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে তিরৎ সিংহ ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে রাজন সিংহ তিরৎ সিংহের স্থলাভিষিক্ত হন। এই নূতন খাসি রাজা চেরাপুঞ্জিতে ইংরেজ সরকারের একজন পলিটিক্যাল এজেন্ট রাখার অনুমতি দিতে বাধ্য হন। ক্যাপ্টেন লিস্টার ছিলেন চেরাপুঞ্জিতে প্রথম ইংরেজ পলিটিক্যাল এজেন্ট। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ঢাকা জেলে তিরৎ সিংহের মৃত্যু হয়। এভাবে খাসি পাহাড়ের ২৫টি ছোট ছোট রাজ্য ইংরেজের অধীনে আসে। ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহের অন্যতম শহীদ হিসাবে তিরৎ সিংহকে আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
সংক্ষিপ্ত টীকা লিখ :
তুলারাম সেনাপতি, পুরন্দর সিংহ, তিরৎ সিং, গোমধর কোঁয়র, ব্রিটিশের চিংফৌ রাজ্য দখল, ব্রিটিশের জয়ন্তিয়া রাজ্য দখল।
উত্তরঃ তুলারাম সেনাপতি : তুলারাম সেনাপতি ছিলেন কাছাড় রাজ্যের সেনাপতি। তাঁর স্বদেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। ইংরেজগণ গোবিন্দচন্দ্রকে আশ্রিত রাজা হিসাবে কাছাড় রাজ্যের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করে। ১৮৩০ সালে গোবিন্দচন্দ্রের মৃত্যু হয়। তিনি নিঃসন্তান হওয়ার জন্য তুলারাম সমগ্ৰ কাছাড় অঞ্চল ব্রিটিশের নিকট দাবি করেন। কিন্তু ইংরাজগণ তুলারামকে করদ রাজা রূপে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তুলারাম সেনাপতির মৃত্যুর পর তাঁর দুই পুত্র নকুল রাম বর্মন ও ব্রজনাথ বর্মন পিতৃরাজ্য শাসন শুরু করে। কিন্তু দুই ভ্রাতার মধ্যে সদ্ভাব না থাকার জন্য পাশ্ববর্তী নাগাদের সঙ্গে বিবাদ শুরু হয়। এই বিবাদের সুযোগে ব্রিটিশগণ কাছাড় রাজ্য ব্রিটিশ শাসনাধীন করে।
পুরন্দর সিংহ : পুরন্দর সিংহ শেষ স্বাধীন আহোম রাজা। তিনি ১৮১৮ সালের মার্চ মাসে সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৮৯৯ সালে তিনি বর্মী কর্তৃক সিংহাসনচ্যুত হন। ১৮২৬ সালে ইয়াণ্ডাবু সন্ধির মাধ্যমে বর্মী শাসনের অবসান ঘটে এবং সমগ্ৰ অসমে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আহোম অভিজাতদের মধ্যে অসন্তোষ ও নানা বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করে ডেভিড স্কট সমগ্ৰ উত্তর- পূর্ব অসমকে কোনো আহোম রাজপুত্রকে প্রত্যার্পণ করবার সুপারিশ করেন। স্কটের পর রবার্টসন অসমের কমিশনার ও গভর্নর জেনারেলের এজেন্ট নিযুক্ত হন। তিনি স্কটের উক্ত প্রস্তাবে সহমত হন। ১৮৩৩ সালে রবার্টসন আনুষ্ঠানিক ভাবে উত্তর-পূর্ব অসম পুরন্দর সিংহকে প্রত্যার্পণ করেন। কিন্তু পুরন্দর সিংহের শাসনে রাজ্যের অধিবাসীদের চরম দুর্গতি শুরু হয়। অধিকন্তু তিনি প্রতিশ্রুত বার্ষিক কর পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতেও অক্ষম হন। অবশেষে জেনারেল জেন্কিন্সের প্রস্তাব অনুসারে ১৮৩৮ সালে এক ঘোষণায় পুরন্দর সিংহকে সিংহাসনচ্যুত করা হয়।
তিরৎ সিং : ব্রক্ষপুত্র উপত্যকায় আধিপত্য স্থাপনের পর ইংরেজ খাসিয়া পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সুরমা উপত্যকার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্ৰহণ করে ১৮২৭ সালে রাণীর কাছ থেকে নংঘ্রৌর- এর মধ্য দিয়ে এক রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ গ্ৰহণ করে। প্রথমে খাসি সিয়েম তিরৎ সিংহ উহাতে অনুমতি দান করলেও ১৮২৯ সালের ৪ঠা এপ্রিল তিরৎ সিংহ তার খাসিয়া অনুচর নংঘ্রৌতে কোম্পানীর জনগণের উপর আক্রমণ চালিয়ে দুজন ইংরেজ এবং ৬০ জন ভারতীয় সিপাহীর মৃত্যু ঘটান এবং খাসিয়া পাহাড়ে ইংরেজদের প্রবেশে বাধাদানের জন্য প্রচুর সৈন্য মোতায়েন করেন। কিন্তু ১৮৩৩ সালের ১৩ই জানুয়ারী তিরৎ সিংহ পরাজিত হয়ে ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এর ফলে খাসিয়া পাহাড় ব্রিটিশের হস্তগত হয়ে যায়।
গোমধর কোঁয়র : গোমধর কোঁয়র ছিলেন অসমের অভিজাত সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা। তিনি সর্বপ্রথম অসমে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন। ১৮২৫ সালের ৭ই মার্চ ব্রিটিশ সরকার নিম্ন অসমকে ইংরেজদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলে ঘোষণা করে এবং উজান অসম হতে ব্রিটিশ সৈন্য অপসারণ করে। এই অবস্থার সুযোগ গ্ৰহণ করে গোমধর নিজেকে স্বর্গদেও হিসাবে ঘোষণা করে স্থানীয় রাজকর্মচারীদিগকে তার সঙ্গে সহযোগিতার আহবান জানিয়ে মরিয়ানী অভিমুখে সসৈন্যে যাত্রা করেন। এই অভিযান ব্যর্থ করবার জন্য ব্রিটিশ লেপটেন্যান্ট বুথার ফোর্ড নাগাপাহাড়ে অবস্থিত গোমধর সহ অন্যান্য বিদ্রোহীদের বন্দী করলে ব্রিটিশ কমিশনার ডেভিড স্কট গোমধর সহ অন্যান্য বন্দীদের সাত বৎসরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। কিন্তু হরনাথের সাহায্যে শ্রীঘ্রই কারাগার হতে পালান। প্রথমে ইংরাজ সরকার গোমধরকে ফাঁসী দেওয়ার চিন্তা করলেও তার অল্প বয়স বিবেচনা করে কারাগারে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। রংপুর জেল থেকে গোমধর কোথায় গিয়েছিলেন তা জানা যায় নি।
ব্রিটিশের সিংফৌ রাজ্য দখল : মটক রাজ্যের পূর্বে নদিহিং ও টেঙ্গাপানী নদীর মধ্যের সমভূমি অঞ্চলে সিংফৌগণ অবস্থান করত। সিংফৌর সর্দারকে বলা হত ‘গাম’। গামগণ ইংরেজদের বশ্যতা স্বীকার করে চুক্তিপত্রে সই করলে সেই অঞ্চলটি ইংরেজদের করতলগত হয়। সিংফৌদের সঙ্গে ব্রিটিশদের এক সন্ধি হয়। সন্ধি অনুসারে সিংফৌদের ‘গাম’ বা সর্দার আশিজন সৈন্যের এক বাহিনী দিয়ে ইংরেজদের সাহায্য ও বর্মীদের সম্বন্ধে সব সময় সংবাদ সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুত হয়।
ব্রিটিশের জয়ন্তিয়া রাজ্য দখল : অতীতে জয়ন্তীয়ারা কোনো কর দিতেন না। কিন্তু ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার জয়ন্তীয়া পাহাড়ে গৃহকর প্রবর্তন করে। এই ধরনের করের সঙ্গে তাদের কোনো পরিচিতি না থাকায় জয়ন্তীয়ারা ইংরেজ সরকারের শোষণনীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। ইংরেজরা সহজেই এই বিদ্রোহ দমন করা করে। পরে ব্রিটিশ সরকার জয়ন্তীয়া পাহাড়ে উন্নয়নে কিছু ব্যবস্থা গ্ৰহণ করলে এবং গাঁওবুড়াদের বেশি ক্ষমতা ছিল তাদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই শান্তি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। জয়ন্তীয়াদের উপর আয়কর আরোপ করায় তারা পুনরায় ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। জোয়াই পুলিশচৌকীতে অগ্নি সংযোগ করা হয়। কিন্তু ইংরেজরা শক্ত হাতে এই বিদ্রোহ দমন করে জয়ন্তীয়া পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। অসমে প্রাক্-ব্রিটিশ বিরোধী যে কোন দুটি বিদ্রোহের উল্লেখ কর।
উত্তরঃ অসমে প্রাক্-ব্রিটিশ বিরোধী দুটি বিদ্রোহ হলো—
(ক) গোমধর কোঁওরের বিদ্রোহ।
(খ) খাসি বিদ্রোহ।
প্রশ্ন ২। অসমে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহের যে-কোনো দুটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ অসমে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহের দুটি কারণ হলো-
(ক)১৮২৬ সালে অসমে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর হতেই ইংরেজ বিরোধে নানা ষড়যন্ত্র গড়ে উঠতে থাকে।
(খ) অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশ-বিরোধী অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে।
প্রশ্ন ৩। অসমে সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করো।
উত্তরঃ অসমে সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার দুটি কারণ হলো–
(ক) অসমে ব্রিটিশ সরকার মণিরাম দেওয়ানের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন।
(খ) অসমের সাধারণ মানুষ বিদ্রোহের কারণ হৃদয়ঙ্গম করতে পারে নি।
প্রশ্ন ৪। ১৮৬৯ সালের ফুলগুড়ি যুদ্ধের দুটি কারণ লিখ।
উত্তরঃ ১৮৬৯ সালের ফুলগুড়ি যুদ্ধের দুটি কারণ–
(ক) ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পপি চাষ নিষিদ্ধকরণ।
(খ) ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পান সুপারির উপর কর আরোপ।
প্রশ্ন ৫। ইয়াণ্ডাবু সন্ধির দুইটি শর্ত লিখ।
উত্তরঃ ইয়াণ্ডাবু সন্ধির দুটি শর্ত হলো : (ক) বর্মী রাজা আহোম, কাছাড়ী, জয়ন্তিয়া ও মণিপুর রাজ্যের উপর তার অধিকার ত্যাগ করেন।
(খ) এই সন্ধির ফলে অসমে বর্মী শাসনের অবসান ক্রমে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন ৬। আহোম সমাজে কত শ্রেণির লোক ছিল এবং কী কী ?
উত্তরঃ আহোম সমাজে তিন শ্রেণির লোক ছিল—
(ক)অভিজাত।
(খ) কৃষক।ও
(গ) দাস।
প্রশ্ন ৭। ঊনবিংশ শতকে অসমে নবজাগরণ বা রাজনৈতিক চেতনা বিকাশে দুইটি সামাজিক সংস্থার নাম উল্লেখ কর।
উত্তরঃ (ক) রাইজ মেল।
(খ) সার্বজনীন সভা।
প্রশ্ন ৮। ইয়াণ্ডাবু সন্ধি কখন ও কাদের মধ্যে সম্পাদিত হয় ?
উত্তরঃ ইয়াণ্ডাবু সন্ধি ১৮২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মানরাজা ও ইংরেজদের মধ্যে সম্পাদিত হয়।
প্রশ্ন ৯। ঊনবিংশ শতাব্দীতে সংগঠিত ব্রিটিশের বিরুদ্ধে অসমের দুটি উপজাতি বিদ্রোহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ(ক) জয়ন্তিয়া বিদ্রোহ (১৮৬০-৬২) (খ) নাগা বিদ্রোহ (১৮৬৬)।
প্রশ্ন ১০। ব্রিটিশেরা অসমে আফিং চাষ বন্ধ করার দুটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ব্রিটিশেরা অসমে আফিং চাষ বন্ধ করার দুটি কারণ হলো—
(ক) ব্রিটিশদের মজুদকৃত আফিং বিক্রী করতে।এবং
(খ) ব্রিটিশগণ নিজেরা আফিং চাষ করতে অসমের আফিং চাষীদের আফিং চাষ বন্ধ করে।
প্রশ্ন ১১। ১৮৫৮ ও ১৮৬১ সালের মধ্যে অসমে জারি করা দুই প্রকার করের উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ১৮৫৮ ও ১৮৬১ সালের মধ্যে অসমে জারি করা দুই প্রকার কর হলো—–
(ক) লাইসেন্স কর।
(খ) পেশাকর।
প্রশ্ন ১২। ঊনবিংশ শতাব্দীতে অসমে জাতীয় চেতনা বিকাশে অবদানকারী দুটি পত্রিকার নাম লিখ।
উত্তরঃ ঊনবিংশ শতাব্দীতে অসমে জাতীয় চেতনা বিকাশে আবদানকারী দুটি পত্রিকা হলো—
(ক) অরুণোদয়।
(খ) জোনাকী।
প্রশ্ন ১৩। অসমে ব্রিটিশ শাসনের যে কোন দুটি ফল লিখ।
উত্তরঃ(ক) ব্রিটিশ শাসনের সর্বশ্রেষ্ঠ ফল হল অসমের দ্রুত বৈষয়িক উন্নতি।
(খ) ব্রিটিশ শাসনে পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রবাহের মাধ্যমে অসমে এক নূতন সমাজ গঠন শুরু হয়।
প্রশ্ন ১৪। ১৮১৯ ও ১৮২৪- এর মধ্যে মানেরা যে কয়জন আহোমকে অসমের রাজা করেছিল তাঁদের নাম লিখ।
উত্তরঃ (ক) চন্দ্রকান্ত সিং।
(খ) যোগেশ্বর সিং।
প্রশ্ন ১৫। কোন্ সালে এবং কোথায় আমাদের প্রথম ইংরাজী মাধ্যমের বিদ্যালয় স্থাপিত হয় ?
উত্তরঃ ১৮৩৫ সালে গৌহাটীতে আমাদের প্রথম ইংরাজী মাধ্যমের বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।
প্রশ্ন ১৬। কখন এবং কার উদ্দেশ্যে Waste Land Grant Rule প্রবর্তিত হয় ?
উত্তরঃ অহমে চা চাষের বিকাশ ও বিস্তারের জন্য ব্রিটিশ সরকার সুলভ শর্তে চা চাষীদের পতিত ভূমি মঞ্জুর করেন। এই উদ্দেশ্যে জেনারেল জেনকিন্স ১৮৩৮ সালের মার্চ মাসে পতিত ভূমি মঞ্জুর বিধি প্রথমবারের মতো অসমে প্রবর্তন করেন।
প্রশ্ন ১৭। কখন এবং কোথায় চন্দ্রকান্ত সিংহকে মানেরা চুরান্তভাবে পরাস্ত করেছিল ?
উত্তরঃ ১৮২২ সালের ১৩ এপ্রিল যোড়হাটের কাছে মহাগড়ের যুদ্ধে চন্দ্রকান্ত সিংহকে মানেরা চূড়ান্তভাবে পরাস্ত করেছিল।
প্রশ্ন ১৮। কাদের দেওলীয়া পাইক বলা হত ?
উত্তরঃ যে সকল পাইক মন্দির বা কোনো দেব স্থানের কার্যে নিয়োজিত ছিল তাদেরকে বলা হত দেওলীয়া পাইক।
প্রশ্ন ১৯ কোন সন্ধি অনুযায়ী এবং কখন অসমে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ বর্মীরাজা ও ইংরেজদের মধ্যে ইয়াণ্ডাবু সন্ধি অনুযায়ী ১৮২৬ সালে অসমে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন ২০। পুরন্দর সিংহকে কি শর্তে কোন কমিশনারের শাসনকালে সিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয় ?
উত্তরঃ ১৮৩৩ সালের ২৮ এপ্রিল কমিশনার রবার্টসনের শাসনকালে নিম্নলিখিত শর্ত অনুযায়ী অসমের সিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। এর বিনিময়ে পুরন্দর সিংহ—
(ক) বার্ষিক ৫০ হাজার টাকা কর হিসাবে ইংরেজ সরকারকে দিতে হবে ;
(খ) দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করা হবে এবং কোনো বিদেশী রাজার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে না।
প্রশ্ন ২১। ১৮৫৭-এর নিয়ম চৌদ্দ (১৪ আইন) অনুসারে অসমে কাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল ?
উত্তরঃ মণিরাম দেওয়ান ও পিয়লী বরুয়া ১৮৫৭-এর নিয়ম চৌদ্দ অনুসারে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন ২২। ব্রিটিশের খাসি রাজ্য অন্তর্ভুক্ত করার দুটি কারণ প্রদান কর।
উত্তরঃ(ক) ১৮৩২ সালে জয়ন্তিয়া রাজা ব্রিটিশের একখণ্ড জমি দখল করলে জয়ন্তিয়া রাজা ও ব্রিটিশের মধ্যে বিবাদের সূচনা হয়।
(খ) জয়ন্তিয়া রাজার অধীনস্ত গোভার শাসক চারজন ব্রিটিশ বাসিন্দাকে ধৃত করে তাদের কালীর কাছে বলি দেন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘ইয়াণ্ডাবুর সন্ধি’ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লিখ।
উত্তরঃ বর্মী ও ইংরাজদের মধ্যে ইয়াণ্ডাবুর সন্ধি হয়। এই সন্ধির দ্বারা প্রথম ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধের অবসান হয়। ১৮২৬ সালে ২৪শে ফেব্রুয়ারী ইয়াণ্ডাবুর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। ইয়াণ্ডাবুর সন্ধির ফলে বর্মী রাজা আহোম, কাছাড়ী, জয়ন্তিয়া ও মণিপুর রাজ্যের উপর তাঁর অধিকার সম্পূর্ণ ত্যাগ করেন এবং এই সমস্ত রাজ্যে পুনরায় হস্তক্ষেপ হতে বিরত থাকবার প্রতিশ্রুতিও দেন। বর্মী রাজা অনিচ্ছা সত্ত্বেও সন্ধির শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হন। বর্মী রাজা মণিপুরের রাজা গম্ভীর সিংহকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হন। ইয়াণ্ডাবুর সন্ধির ফলে অসমে বর্মী শাসনের অবসান হয় এবং অসমে ব্রিটিশ আধিপত্য স্থাপনের পথ সুগম হয়।
প্রশ্ন ২। আহোম রাজ্যের পতনের প্রধান কারণসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ নিম্নলিখিত কারণে আহোম রাজ্যের পতন ঘটেছিল :
(১) সব জাতির প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী কালক্রমে অবনতিগ্ৰস্ত হয় এবং আহোমদের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছিল।
(২) পরবর্তী আহোম রাজাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা আহোম সাম্রাজ্যের পতনের জন্য বিশেষ ভাবে দায়ী।
(৩) আহোম রাজাগণের অক্ষমতা এবং বিলাসিতার সুযোগে অভিজাত শ্রেণি প্রবল পরাক্রান্ত হয়ে উঠে। তাদের অত্যাচারে জনজীবনে অসন্তোষ ও বিক্ষোভ দেখা দেয় যা আহোম সাম্রাজ্যের ভিত্তি শিথিল করে দেয়।
(৪) মুসলমানদের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুদ্ধ বিগ্ৰহের ফলে আহোম রাজকোষের শূন্যতা আহোম রাজ্যের অবনতির জন্য বহুলাংশে দায়ী।
(৫) আহোম রাজ্যের অবনতি ও পতনের মূল কারণ প্রকৃতপক্ষে আহোম জাতির চরিত্রের অবনতি ও যোগ্যতার হ্রাস।
(৬) আহোম সামরিক বাহিনীর দুর্বলতা ও অক্ষমতা আহোম রাজ্যের পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী।
প্রশ্ন ৩। ডেভিড স্কটের শাসন সংস্কার সম্পর্কে কি জান ?
উত্তরঃ ডেভিড স্কট ছিলেন রংপুরের কমিশনার। ১৮২৩ সালে তাঁকে সমগ্ৰ উত্তর-পূর্ব সীমান্তের গভর্নর জেনারেলের এজেন্ট ও প্রতিনিধি ও নিযুক্ত করা হয়। পরে তিনি পশ্চিম বা নিম্ন অসমের শাসনভার প্রাপ্ত হন। ডেভিড স্কট শাসক হিসাবে সুদক্ষ ছিলেন। শাসনকর্তা হিসাবে তিনি অসমের সীমান্তবর্তী পার্বত্য উপজাতি এবং দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। এই কাজে একজন সহকারী কমিশনার তাকে সাহায্য করতেন। যুদ্ধ বিধবস্ত নববিজিত অঞ্চলে সরকারের আয় বাড়ার জন্য স্কট রাজস্ব সংক্রান্ত কতকগুলি সংস্কার সাধন করেছিলেন। স্কট শারীরিক শ্রমের পরিবর্তে নগদ টাকার বেতন দেবার প্রথা প্রবর্তন এবং বিচার ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করার জন্য নিজ দায়িত্বে তিনটি দেশীয় আদালত এবং নওগাঁওতে কয়েকটি পঞ্চায়েত আদালত স্থাপন করেছিলেন।স্কট আহোম অভিজাতদের অসন্তোষ নিবারণের জন্য উত্তর-পূর্ব অসমকে কোনো আহোম রাজকুমারকে প্রত্যর্পণের প্রস্তাব দেন। সেই অনুযায়ী ১৮৩৩ সালে পুরন্দর সিংহকে উত্তর-পূর্ব অসম প্রত্যার্পণ করা হয়। সমস্যাজর্জরিত নববিজিত অসমে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠা করতে স্কট যা করেছেন তা অতুলনীয়। তাঁর দূরদর্শিতার জন্যই অসমে ব্রিটিশ শাসন কায়েম হয়।
প্রশ্ন ৪। পুরন্দর সিংহ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লিখ।
উত্তরঃ পুরন্দর সিংহ শেষ স্বাধীন আহোম রাজা। তিনি ১৮১৮ সালের মার্চ মাসে সিংহাসন আরোহণ করেন। ১৮৯৯ সালে তিনি বর্মী কর্তৃক সিংহাসনচ্যুত হন। ১৮২৬ সালে ইয়াণ্ডাবুর সন্ধির মাধ্যমে বর্মী শাসনের অবসান ঘটে এবং সমগ্ৰ অসমে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আহোম অভিজাতদের মধ্যে অসন্তোষ ও নানা বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করে ডেভিড স্কট সমগ্ৰ উত্তর-পূর্ব অসমকে কোনো আহোম রাজপুত্রকে প্রত্যার্পণ করবার সুপারিশ করেন। স্কটের পর রবার্টসন অসমের কমিশনার ও গভর্নর জেনারেলের এজেন্ট নিযুক্ত হন। তিনি স্কটের উক্ত প্রস্তাবে সহমত হন। ১৮৩৩ সালে রবার্টসন আনুষ্ঠানিক ভাবে উত্তর-পূর্ব অসম পুরন্দর সিংহকে প্রত্যার্পণ করেন। কিন্তু পুরন্দর সিংহের শাসনে রাজ্যের অধিবাসীদের চরম দুর্গতি শুরু হয়। অধিকন্তু তিনি প্রতিশ্রুত বার্ষিক কর পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতেও অক্ষম হন। অবশেষে জেনারেল জেন্কিন্সের প্রস্তাব অনুসারে ১৮৩৮ সালে এক ঘোষণায় পুরন্দর সিংহকে সিংহাসনচ্যুত করা হয়।
প্রশ্ন ৫। রবার্টসন সম্পর্কে একটি টীকা লিখ।
উত্তরঃ ডেভিড স্কটের পর ১৮৩১ সালে রবার্টসন অসমের কমিশনার ও গভর্নর জেনারেলের এজেন্ট নিযুক্ত হন। স্কটের শাসনকালে যে খাসি বিদ্রোহ হয়েছিল ১৭৩৪ সালে রবার্টসন এর অবসান ঘটান। তাঁর সময়ে ১৮৩২ সালে কাছাড়ী রাজ্যের সমতল অঞ্চল ব্রিটিশ শাসনাধীন হয়। রবার্টসন স্কটের আমলের কয়েকটি ব্যবস্থারও পরিবর্তন করেন। তিনি স্কটের আমলের কয়েকটি কর বিলোপ করেন এবং ভূমি কর ও মাথাপিছু কর, এই দুটি কর রাজয় রাখেন। রবার্টসন শাসনের সুবিধার জন্য নিম্ন অসমকে কয়েকটি জেলায় ভাগ করেন এবং প্রত্যেক জেলায় একজন “প্রিন্সিপাল অ্যাসিস্ট্যাণ্ট” ও “জুনিয়র অ্যাসিস্টাণ্ট নিযুক্ত করেন।
প্রশ্ন ৬। ইংরেজদের জয়ন্তীয়া রাজ্য অধিকার বিষয়ে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তরঃ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা বঙ্গদেশের দেওয়ানী অর্থাৎ খাজনা আদায়ের ক্ষমতা লাভ করে। শ্রীহট্ট সেই সময়ে বঙ্গদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। শ্রীহট্টে ইংরেজ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে শ্রীহট্টের উত্তর অবস্থিত জয়ন্তীয়া রাজ্যের সঙ্গে ইংরেজের রাজনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয়। সীমানার প্রশ্ন নিয়ে জয়ন্তীয়াদের সঙ্গে ইংরেজদের প্রায় বিরোধ হত। এইরূপ একটি সুযোগ নিয়ে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা জয়ন্তীয়া রাজ্য আক্রমণ করে অধিকার করে। পরে জয়ন্তীয়ারাজ ছত্র সিংহ ইংরেজদের জরিমানা দিলে তাঁকে সিংহাসন ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের পর পঞ্চাশ বৎসরকাল ইংরেজদের সঙ্গে জয়ন্তীয়াদের কোনো বিরোধ হয় নি। কিন্তু বর্মী যুদ্ধের অবসানের পর সৃষ্টি হওয়া অনিশ্চিত অবস্থার সুযোগ নিয়ে জয়ন্তীয়ারাজ আহোম রাজ্যভুক্ত নগাঁওয়ের একটি অংশ অধিকার করে নিলেন। ইংরেজরা বার বার এই দখলীকৃত এলাকা ফিরিয়ে দিতে বলা সত্ত্বেও জয়ন্তীয়ারাজ দ্বিতীয় রাম সিংহ নানা অজুহাতে ইংরেজদের এই নির্দেশ উপেক্ষা করতে থাকেন। এই সমস্যা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্ৰহণের আগেই আরেকটি ঘটনায় জয়ন্তীয়াদের উপর ইংরেজরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে জয়ন্তীয়ারাজ আশ্রিত গোভা রাজ্যের রাজা জয়ন্তীয়ারাজের প্ররোচনায় চারজন প্রজাকে ধরে নিয়ে তিনজনকে কালী মন্দিরে বলি দেন। চতুর্থ ব্যক্তি কোনো মতে পলায়ন করে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কর্ণগোচর করে। ইতিমধ্যে রাম সিংহের মৃত্যু ঘটে এবং তাঁর ভাগিনেয় রাজেন্দ্র সিংহ জয়ন্তীয়ার রাজা হন। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের ইংরেজদের হস্তে অর্পণ করবার দাবী নিয়ে দুই বৎসর যাবৎ রাজেন্দ্র সিংহের সঙ্গে ইংরেজ সরকার আলাপ আলোচনা চালিয়ে ব্যর্থ হলে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ক্যাপ্টেন লিষ্টারের নেতৃত্বে একদল সৈন্য পাঠিয়ে ইংরেজরা জয়ন্তীয়া রাজ্য দখল করে নেয়। এর অল্প কয়েকদিন পরে গোভা রাজ্যও ইংরেজরা অধিকার করে। রাজস্ব আদায়ের মূল উৎস ‘জয়ন্তীয়াপুর’ ইংরেজদের দখলে চলে যাওয়ায় রাজেন্দ্র সিংহ পার্বত্য অঞ্চলও স্বেচ্ছায় ইংরেজদের হাতে অর্পণ করেন।
প্রশ্ন ৭। গোমধর কোঁয়রের বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ইয়াণ্ডাবু সন্ধির পর চিরকাল স্বাধীন হয়ে থাকা অসম ইংরেজের পরাধীন হয়। কিন্তু স্বাধীনচেতা অসমের মানুষ সহজে ইংরেজের বশ্যতা স্বীকার করতে রাজি ছিলেন না। বিশেষভাবে আহোম রাজপরিবার এবং অন্যান্য অভিজাত সম্প্রদায়ের লোকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিলেন এবং তাঁরাই ইংরেজের বিরুদ্ধে অগ্ৰণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে আহোম রাজপরিবারের অন্যতম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ফেনা কোঁওরের পুত্র গোমধর কোঁওর অসমে ইংরেজের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সশস্ত্র বিদ্রোহ আরম্ভ করেন এবং নিজেকে রাজা বলে ঘোষণা করেন। গোমধর কোঁওরকে এই বিদ্রোহে ধনঞ্জয় পিয়ালীয়া বরগোঁহাই সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন। কিন্তু লেফটেনেণ্ট বুথার ফর্জের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ সৈন্যবাহিনী শুরুতেই এই বিদ্রোহ দমন করেন। গোমধর এবং ধনঞ্জয়কে বন্দী করে সাত বৎসরের জন্য বঙ্গদেশের রংপুর কারাগারে প্রেরণ করা হয়। কিছুদিন পর ধনঞ্জয় কারাগার থেকে পালিয়ে গিয়ে মটক রাজ্যে আশ্রয় নেন। কিন্তু রংপুরের কারাগার থেকে গোমধর কোঁওর কোথায় গেলেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায় নি। গোমধর কোঁওরের মৃত্যু যেভাবেই হোক না কেন, অসমের মানুষ এই স্বাধীনতা সংগ্ৰামীকে শহীদের মর্যাদা দিয়ে এসেছেন।
প্রশ্ন ৮। পাইক প্রথার বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত রচনা লিখ।
উত্তরঃ আহোম রাজ্যের অর্থনৈতিক ভিত্তির মূল উৎস ছিল এর মাটি ও মানুষ। অর্থাৎ মাটি বা ভূমির মাধ্যমে যে উৎপাদন হত সেটি ছিল রাজ্যের মূল পরিচালিকা শক্তি। আহোম রাজ্যে কোনো স্থায়ী সেনাবাহিনী ছিল না। কিন্তু মধ্যযুগে অসমে যুদ্ধবিগ্ৰহ লেগেই থাকত। রাজ্যের অবস্থিতি ও ভৌগোলিক সম্প্রসারণের জন্য একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর আবশ্যক ছিল।নিয়মিত সেনাবাহিনীর অভাবে রাজ্যের সকল কর্মঠ কৃষক প্রজাকে সেনাবাহিনীর কাজে লাগানো হত। এই ভাবে রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামরিক কার্যে কৃষকদের ব্যবহার করার ব্যবস্থাকে বলা হয় আহোম রাজের পাইক ব্যবস্থা বা “পাইক প্রথা”।
পাইক শব্দের অর্থ : “পাইক” শব্দের অর্থ পদাতিক সেনা বা সাধারণ শ্রেণির কৃষক ও কারিগর।
মধ্যযুগে অসমের বাইরেও পাইক ব্যবস্থা মণিপুর, বাংলাদেশ প্রভৃতিতে ছিল কিন্তু অসমে থাকা পাইক প্রথার সঙ্গে অন্যান্য স্থানের পাইক প্রথার কোনো মিল নেই। এই প্রথা অনুযায়ী ১৬ বছর হতে ৫০ বছর পযর্ন্ত প্রত্যেকটি লোককে বলা হত “পাইক”। রাজেশ্বর সিংহের সময় তিন জন পাইক এনে একটি “গোট” সৃষ্টি হয়। এদের মূল, দেরাল এবং তেরাল বলা হত। এরা পালাক্রমে রাজগৃহে ৩/৪ মাস বেগার খাটত। পাইকরা বিনা করে ক্ষেত্রের জমি ভোগ করত। পাইক প্রথার ফলে সৈন্যদের চাহিদাও পূরণ হত।
পাইক প্রথার পরিচালনা : তিন চার জন কর্মঠ মানুষকে নিয়ে একটি গোট তৈরি করা হত, কয়েকটি গোটের সমষ্টিকে ‘খেল’ বলা হত। ফলে নাওসাজা খেল, সোনা কামোরা খেল প্রভৃতি নানা প্রকার খেল দেখা যেত।
প্রতিটি খেল পরিচালনার জন্য ছিল একজন বিষয়া ছিল। তাঁকে বলা হত ‘খেলদার’। উচ্চতম আধিকারিকের আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলদার তার অধীনস্থ খেলদের সরকারী কাজে নিয়োজিত করত। প্রতিটি খেলে থাকত ১০০০হতে ৩০০০ পাইক। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা খেলদার যেমন—-নাওশলীয়া, খাবখরীয়া, — প্রভৃতি খেলগণ ‘ফুকন’ বা ‘রাজখোয়া’ জাতীয় সামরিক আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে রাখা হত। ছোট খেলকে একজন বরুয়ার তত্ত্বাবধানে রাখা হত।
পাইকের উপর রাজার শাসন ছিল কঠোর। ১৬০৯ সালে মোমাই তামূলী পাইকদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করেন। তিনি ২০জন পাইকের উপর একজন ‘বরা’, ১০০ জন পাইকের উপর একজন ‘শইকীয়া’, ১০০০জন পাইকের উপর একজন “হাজারিকা”, ৩০০০ জনের উপর একজন “রাজখোয়া” এবং ৬০০০ জনের উপর একজন ‘ফুকন’ নিযুক্ত করেছিলেন। আহোম রাজ্যে নিয়মিত সৈন্যবাহিনী না থাকাতে পাইক দ্বারা যুদ্ধ চালানো হত। পাইকরা করমুক্ত জমি ভোগ করলেও জমির উপর তাদের কোনো স্বত্ব ছিল না। পাইকের বয়স ৫০ বৎসর হলে তার জমি অন্য পাইককে দেওয়া হত।
পাইক প্রথার প্রভাব বা গুরুত্ব : সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাইক প্রথার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। পাইক ব্যবস্থার ফলে রাজ্যের সকল কাজ সময়মত এবং নিদ্ধারিত ভাবে করা হত। পাইকদের সাহায্যে শত শত রাস্তা, পুকুর, ময়দান, দেবালয়, রাজপ্রাসাদ প্রভৃতি গড়ে উঠেছিল। সকলের জন্য প্রয়োজনমত খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন হত। এর ফলে রাজ্যে একদিকে যেমন দরিদ্র ভিখারী ছিল না, তেমনি কোনো সরকারী কাজ অসমাপ্ত ছিল না।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। পূর্বের আহোম রাজ্যকে কেন্দ্র করে ইংরাজ কর্তৃক গড়ে তোলা অসম সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তরঃ অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্য থেকে আহোম রাজাদের অবনতি শুরু হয়। সম্ভবত প্রথম দিকে ইস্ট-ইণ্ডিয়া কোম্পানীর অসমে আধিপত্য স্থাপনের কোনো ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু অসমের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রক্ষার জন্য ব্রিটিশ অসমে আধিপত্য বিস্তারে মনোনিবেশ করে। মশ্বাগড়ের যুদ্ধে আহোম রাজা চন্দ্রকান্ত সিংহ পরাজিত হওয়ায় বর্মীরা অসমের অন্তর্গত ব্রিটিশ অধিকৃত উত্তর-বঙ্গ, গোয়ালপাড়া, শ্রীহট্ট এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্রিটিশ প্রজাদের উপর আক্রমণ চালাতে থাকায় ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড আমহাস্ট এর প্রতিবাদ করলে বর্মীরা তাতে কর্ণপাত করে নি।
সামরিক শাসনে অসম : ১৮২৪ সালের ১৩ই মার্চ ব্রক্ষপুত্র উপত্যকা থেকে তাড়ানোর উদ্দেশ্যে ইংরেজ সৈন্য অসমে প্রবেশ করে ২৪শে মার্চ গুয়াহাটী উপস্থিত হয়। বর্মীরা ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়ে উজান অসমের মরামুখে পালায়। গুয়াহাটীতে ইংরেজ সৈন্য অবস্থানকালে ডেভিড্ স্কট্ নগাঁও, রজা ও কলিয়াবর অধিকার করে। কিন্তু শেষ অবধি তাদের পশ্চাদপসারণ করতে হয়। ১৮২৫ সালের জানুয়ারী মাসের প্রথমদিকে ইংরেজ মরামুখে দখল করে জোড়হাট অধিকার ও রংপুর আক্রমণ করে। বর্মীরা ব্রক্ষপুত্র উপত্যকা ত্যাগ করে চলে যায়।ব্রিটিশ সেনাপতি রিচার্ডস অসমের যুগ্ম কমিশনার নিযুক্ত হন। ডেভিড স্কট ও রিচার্ডস নিম্ন অসম এবং উত্তর-পূর্ব অসমের শাসনভার প্রাপ্ত হলে আহোমরা ইংরেজ সামরিক শাসনাধীন হয়।
চিংফৌর বিরুদ্ধে ব্রিটিশ অভিযান : বর্মী সৈন্যরা চিংফৌর পক্ষ সমর্থন করেছিল। বরসেনাপতির অনুরোধে ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন নিউভেল সৈন্য পাঠিয়ে চিংফৌদের দমন করে ছয় হাজার আহোম দাসকে মুক্ত করেন।
কাছাড় ও মণিপুর থেকে বর্মী বিতাড়ন : এর পর কাছাড় থেকে বর্মীদিগকে তাড়িয়ে দিয়ে ইংরেজ মণিপুরের গম্ভীর সিংহের সাহায্যে মণিপুর থেকেও বর্মীদিগকে তাড়িয়ে দিয়েছিল।
ইয়াণ্ডাবুর সন্ধি : ১৮২৫ সালের এপ্রিল মাসে ইংরেজ সৈন্য আরাকান জয় করে ব্রক্ষদেশের রাজধানী রেঙ্গুনের কাছে উপস্থিত হয়। স্যার ক্যাম্পবেল ১৮২৫ সালে রেঙ্গুন জয় করেন। ১৮২৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বর্মী এবং ইংরেজদের মধ্যে “ইয়াণ্ডাবুর সন্ধি” হয়। এই সন্ধির ফলে অসমে ব্রিটিশ আধিপত্য স্থাপিত হয়।
নিম্ন অসমে ইংরেজ আধিপত্য বিস্তার : নিম্ন অসমের রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে ইস্ট- ইণ্ডিয়া কোম্পানী নিম্ন অসমে আধিপত্য বিস্তারে মনোনিবেশ করে। অসমের রাজ্যগুলিতে ব্রিটিশরা নিজেরা শাসনকার্য পরিচালনা না করে সেই সকল অঞ্চলের রাজাদের উপর শাসনভার অর্পণ করে। মণিপুরের গম্ভীর সিংহকে এভাবে তারা স্কীকৃতি দিয়েছিল। জয়ন্তীয়া রাজাকেও তারা এভাবে ১৮২৪ সালে সুরমা এবং উত্তর- পূর্ব পর্বত এবং পাহাড়ী অঞ্চলের রাজা হিসাবে স্বীকৃতি দান করে।
প্রশ্ন ২। ব্রিটিশ অধিকৃত অঞ্চল শাসনে ডেভিড স্কটের কৃতিত্ব বিচার কর।
উত্তরঃ বর্মী যুদ্ধের আগে ১৮২৪ সালে এক ঘোষণায় গভর্নর জেনারেল আমহাস্ট অসমের অধিবাসীদের এই আশ্বাস দেন যে, অসমে ইংরেজদের রাজ্য বিস্তারের কোনো অভিপ্রায় নেই। ১৮২৩ সালে উত্তর-পূর্ব রংপুরের কমিশনার ডেভিড স্কটকে সমগ্ৰ উত্তর-পূর্ব সীমান্তের গভর্নর জেনারেলের এজেন্ট বা প্রতিনিধি নিযুক্ত করা হয়। ১৮২১ সালের ইয়াণ্ডাবুর সন্ধির পর তাকে পশ্চিম বা নিম্ন অসমের শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হয়।
ডেভিড স্কট অসমে বর্মীদের যুদ্ধের সময় সেনাপতি ছিলেন। এছাড়াও আগে তিনি অসমের বিভিন্ন স্থানে যথেষ্ট দায়িত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত থাকার দরুন অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। সুতরাং নিম্ন অসমের শাসক রূপেও অব্যবস্থা দূর করে দেশ গঠন কার্যে মনোযোগ দেন।
প্রথমত, তিনি আহোম আমলের “খেল” প্রথার আমূল পরিবর্তন করেন। স্কট ব্যক্তিগত “বেগার” খাটা বিলোপ করে প্রত্যেক পাইকের উপর একটি নিদির্ষ্ট কর ধার্য করেন। পরে ভূমির পরিমাণ অনুসারে পাইকের উপর কর ধার্য করা হয়। সাধারণ সম্পাদক বিচারকার্য পঞ্চায়েতের হাতেই রাখা হয়। গুরুতর অপরাধের বিচার কমিশনারের প্রধান সহকারীর পঞ্চায়েতের সাহায্য করতেন। কমিশনার তাদের কাছ থেকে পুনরাবেদনের বিচার করতেন। এই সঙ্গে তিনি রাজস্ব বাড়ার জন্য বহু পতিত জমি পাইকদের মধ্যে বণ্টন করেন। “ব্রক্ষত্তর” ও “নানকার” জমির উপরও কর ধার্য করা হয়। কিন্তু নানারূপ কর বাড়ায় প্রজাদের আর্থিক অবস্থা সংকটজনক হয়ে উঠে।
উত্তর-পূর্ব অসমে কিন্তু কোরূপ সংস্কার করা হয়নি। পাইক প্রথা তুলে দেবার সিদ্ধান্তে অভিজাত পরিবারগুলি ইংরেজদের উপর খুবই অসন্তুষ্ট হল এবং ইংরেজদের তাড়াবার সংকল্প করতে লাগল। প্রথমে গোমধর কোঁয়র নামে এক রাজকুমারের নেতৃত্বে অভিজাতগণ এক বিদ্রোহের চেষ্টা করে। পরে গদাধর সিংহ নামে অপর একজন আহোম রাজকুমার বর্মী রাজার সমর্থনে বিদ্রোহের চেষ্টা করেন। গোমধরকে সাত বৎসরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এর পর জিউরাম দুলিয়া, পিয়ালী ফুকন প্রভৃতির বিদ্রোহ স্কট কর্তৃক দমন হয়।
স্কটের শাসনকালে খাসিগণও বিদ্রোহাত্মক হয়ে উঠে। স্কট রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে খাসিয়া পাহাড়ের ভেতর দিয়ে সুরমা উপত্যকা পযর্ন্ত এক দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কিন্তু খাসিদের মধ্যে এক ভ্রান্ত ধারণা জন্মে যে ব্রিটিশ সরকার তাদের উপর কর ধার্য করতে পারে। এর প্রতিবাদ স্বরূপ খাসি জনসাধারণ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পরে বিদ্রোহ দমন করা হলেও স্কট রাস্তার কাজ শেষ করে যেতে পারেন নি। আহোম অভিজাতদের মধ্যে নানা অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করে মৃত্যুর পূর্বে স্কট উত্তর- পূর্ব অসম কোনো আহোম রাজপুত্রকে ফিরিয়ে দেবার সুপারিশ করে যান। এর কিছুকাল পর ১৮৩১ সালে স্কটের মৃত্যু হয়। স্কটকে অসমে ব্রিটিশ রাজত্বের স্থাপয়িতা বললে অত্যুক্তি হবে না। আহোম রাজবংশ ও অভিজাতদের প্রতি যে সমবেদনা তিনি প্রদর্শন করেছিলেন, এ ব্রিটিশ শাসনদের মধ্যে বিরল।
প্রশ্ন ৩। অসমে ব্রিটিশ শাসন কিভাবে বিস্তারলাভ করেছিল সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ অসমে ১৮১৮ সালে সামরিক শাসন অবসান হওয়ার পর ডেভিড স্কট আরও তিন বৎসর কমিশনার ও গভর্নর- জেনারেলের পদে এজেন্ট রূপে কাজ করেছিলেন। এই সময়ে তিনি নিম্ন অসমে কয়েকটি শাসন সংস্কার করেন। তিনি আহোম আমলের “খেল” প্রথার আমূল পরিবর্তন করেন। স্কট ব্যক্তিগত “বেগার” খাটা বিলোপ করে, প্রত্যেক পাইকের উপর কেবল একটি নিদির্ষ্ট কর ধার্য করেন। পরে ভূমিক পরিমাণ অনুসারে হ পাইকদের উপর কর ধার্য হয়। সাধারণ বিচারকার্য পঞ্চায়েতের সাহায্যে করতেন। উত্তর-পূর্ব অসমে কিন্তু কোরূপ সংস্কার করা হয় নি। স্কট আহোম অভিজাতশ্রেণিকে সন্তুষ্ট করতে বহু চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইংরেজ রাজত্ব প্রতিষ্ঠার পর অভিজাতদের নানাবিধ সুবিধা ও অধিকার লুপ্ত করা হয়। ফলে তাদের মধ্যে এক গভীর অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। স্কটের শাসনকালে গোমধরের বিদ্রোহ, খাসি বিদ্রোহ ও তিরৎ সিংহের বিদ্রোহ হয়। স্কট কঠোর হাতে এইসব বিদ্রোহ দমন করেন। আহোম অভিজাতদের মধ্যে অসন্তোষ ও নানা বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করে মৃত্যুর পূর্বে স্কট উত্তর- পূর্ব অসমকে কোনো আহোম রাজপুত্রকে প্রত্যর্পণ করার সুপারিশ করেন। এর কিছুকাল পরেই ১৮৩১সালে স্কটের মৃত্যু হয়।
ডেভিড স্কটের পর রবার্টসন অসমের কমিশনার ও গভর্নর জেনারেলের এজেন্ট নিযুক্ত হন। উত্তর-পূর্ব অসম সম্বন্ধে স্কটের প্রস্তাবের সঙ্গে রবার্টসনও একমত হন। গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেণ্টিঙ্কও এই প্রস্তাব অনুমোদন করেন। রবার্টসন ১৮৩৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর-পূর্ব অসম পুরন্দর সিংহকে প্রত্যর্পণ করেন। কিন্তু পুরন্দর সিংহের রাজত্বকালে বেশিদিন স্থায়ী হয় নি।
রবার্টসনের পর জেনারেল জেন্কিন্স কমিশনার নিযুক্ত হন। জেন্কিন্সের শাসনকাল ভিন্ন ভিন্ন কারণে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই সময় ব্রিটিশ গভর্নমেণ্টের সরাসরি শাসন অসমের আরও বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত হয়। জেনারেল জেন্কিন্সের সময়ে ব্রিটিশ ইস্ট-ইণ্ডিয়া কোম্পানী অসমে রাজ্যবিস্তার নীতি প্রকাশ্যেই গ্ৰহণ করে। এই নীতির ফলে প্রথমেই জয়ন্তিয়া রাজ্য জেন্কিন্স অধিকার করেন। ১৮৩৮ সালে পুরন্দর সিংহকে সিংহাসনচ্যুত করে উত্তর-পূর্ব অসম অধিকার করা হয়। ১৮৩৯ সালে মোটক ও সদিয়া, ১৮৫৪ সালে উত্তর কাছাড়, ১৮৪১ সালে দুয়ার অঞ্চল ব্রিটিশ অধিকৃত হয়।
জেন্কিন্সের পরবর্তী কমিশনার কর্নেল হপকিনসনের সময়ের উল্লেখযোগ্য দুটি ঘটনা হল জয়ন্তিয়ার সিনটেংদের বিদ্রোহ ও ভুটিয়াদের সঙ্গে যুদ্ধ। তার সময় কর ধার্য করার বিরুদ্ধে জয়ন্তিয়ার সিনটেংগণ বিদ্রোহ করে। চারি বৎসর কর এই বিদ্রোহ দমন করা হয়েছিল।১৮৬৪ সালে ভুটানের সঙ্গেও ইংরেজ গভর্নমেণ্টের এক যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধের ফলে ইংরেজ গভর্নমেণ্ট কোচবিচার ও গোয়ালপাড়া জেলায় “দুয়ার” গুলি অধিকার করে। ইংরেজ গভর্নমেণ্ট ভুটানকে প্রদত্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণও সেজন্য বাড়ায়। এভাবে বিভিন্ন গভর্নর জেনারেলের বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ে অসমে ইংরেজ শাসন বিস্তারলাভ করে
প্রশ্ন ৪। ব্রিটিশ শাসনের প্রথমার্ধে জয়ন্তিয়া, নাগা, গারো, মণিপুর এবং লুসাই বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ অসমে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ সরকার অসমের পার্বত্য উপজাতিদের উন্নতিকল্পে কোনরূপ ব্যবস্থা গ্ৰহণ করেনি। এর উপর তারা উপজাতিদের বিভিন্নভাবে শোষণ করতে থাকে। ব্রিটিশের এই অনগ্ৰসর নীতির ফলে অসমের বিভিন্ন পার্বত্য উপজাতি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে লিপ্ত হয়।
জয়ন্তিয়া বিদ্রোহ : ১৮৬২ সালে কমিশনার কর্নেল হপকিনসনের সময় জয়ন্তিয়া বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। তাঁর সময়ে নতুন গৃহকর আরোপের প্রতিবাদে জয়ন্তিয়ার সিনটেডগণ বিদ্রোহ শুরু করে। কিন্তু বিরাট সংখ্যক সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে এই বিদ্রোহ দমন করা হয়। কিছুদিন পর আয়কর আদায়ের প্রতিবাদে জয়ন্তিয়ার জনগণ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। অধিকন্তু জয়ন্তিয়ারা তাদের সামাজিক রীতি-নীতির উপর ব্রিটিশ হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ স্বরূপ বিদ্রোহে রত হয়। চার বৎসর পর এই বিদ্রোহ দমন করা হয়েছিল।
নাগা ও গারো বিদ্রোহ : নাগা ও গারো উপজাতির প্রতিও ব্রিটিশ সরকার অনগ্ৰসর নীতি গ্রহণ করে। ফলে নাগা ও গারো উপজাতির মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। অসমে ব্রিটিশ আধিপত্য স্থাপনের পর আঙ্গামী নাগাগণ উত্তর কাছাড় প্রভৃতি ব্রিটিশ রাজ্যের উপর পুনঃ পুনঃ আক্রমণ করে। অবশেষে আঙ্গামী নাগাদের আক্রমণ বন্ধ করবার উদ্দেশ্যে তাদের অঞ্চলটি অধিকার করা হয় এবং কোহিমা জেলায় ১৮৬৬ সালে প্রধান কার্যালয় স্থাপিত হয়। পরে লোথা, আও ও সেমা নাগাদের অঞ্চলগুলিও ইংরেজ রাজ্যভুক্ত হয়। নাগা অঞ্চলগুলো নিয়ে জেলা গঠনের পর নাগাগণ আর উপদ্রব করেনি।
ব্রিটিশ অনগ্ৰসর নীতির ফলে গারো উপজাতিগণও ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা পাশ্ববর্তী সমতল অঞ্চলগলি ঘন ঘন আক্রমণ করে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করে। সুতরাং নাগা পাহাড় যে কারণে ব্রিটিশ সরকার অধিকার করেন ; প্রায় একই কারণে ১৮৬৯ সালে গারো পাহাড়ও অধিকার করা হয় এবং একেও একটি জেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। এর পর গারোগণ অবশ্য আর বিদ্রোহ করেনি। এভাবে নাগা ও গারো বিদ্রোহ দমন করা হয়।
মণিপুর বিদ্রোহ : ১৮৯১ সালে অসমের প্রতিবেশী রাজ্য মণিপুরে ব্রিটিশ- বিরোধী বিদ্রোহ দেখা দেয়। মণিপুরের জনগণ মণিপুরের গদিতে মণিপুরী রাজপুত্রের পুনঃ অধিষ্ঠানের দাবিতে সোচ্চার হন। ব্রিটিশ সরকার তাদের এই দাবিতে হস্তক্ষেপ করলে তুমুল বিদ্রোহ শুরু হয়। বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন মণিপুরের বীর টিকেন্দ্রজিত। এই বিদ্রোহে অসমের কমিশার মিঃ কুইনটন ও অপর চারজন ইংরেজ অফিসার জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহী মণিপুরীদের হাতে প্রাণ হারায়। ব্রিটিশ সরকার প্রতিশোধমূলকভাবে মণিপুরের বীর সেনাপতি টিকেন্দ্রজিতকে ফাঁসি দেয়। এইরূপে মণিপুর বিদ্রোহের অবসান হয়।
লুসাই বিদ্রোহ : ব্রিটিশ সরকারের অনগ্ৰসর নীতির বিরুদ্ধে লুসাই উপজাতিগণও বিদ্রোহের পথ গ্ৰহণ করে। তারা পাশ্ববর্তী সমতল অঞ্চল বিশেষত কাছাড় জেলায় উপদ্রব শুরু করে। কাছাড় ও পাশ্ববর্তী অঞ্চলে ঘন ঘন উপদ্রব করায় লুসাই পাহাড়ে ১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং লুসাই বিদ্রোহের পরিসমাপ্তি ঘটে।
প্রশ্ন ৫। ব্রিটিশরা কিভাবে অসমে ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেভুক্ত করেছিল আলোচনা কর।
উত্তরঃ অসমে ১৮২৬ সালের ইয়াণ্ডাবু চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে আহোম শাসনের অবসান ঘটে। এই চুক্তির শর্তানুসারে সমগ্ৰ ব্রক্ষপুত্র উপত্যকা কোম্পানী শাসনের অধীনে আসে। প্রথমাবস্থায় বর্মী বিতাড়নই ব্রিটিশদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এই অভিপ্রায়ের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। প্রথমত, তারা নিম্ন অসমকে নিজেদের দখলে রাখার সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করে। আহোম রাজ্য ছাড়া, রাজ্য প্রত্যর্পণের নীতিই সাধারণভাবে ব্রিটিশ সরকার গ্ৰহণ করে।
কাছাড়ী, মণিপুর ও জয়ন্তিয়া রাজ্য প্রত্যর্পণ : কাছাড়ী প্রভৃতি রাজ্যের সঙ্গে ইতিপূর্বে ব্রিটিশ সরকার সন্ধিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সেই সন্ধি অনুসারে রাজা গোবিন্দচন্দ্রকে বার্ষিক দশ হাজার টাকা কর দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ১৮২৬ সালে কাছাড়ী রাজ্য প্রত্যর্পণ করা হয়। জয়ন্তিয়া রাজার সঙ্গেও সন্ধি রক্ষা করা হয় এবং তাকে জয়ন্তিয়া পাহাড় ও সমতলের রাজা হিসাবে স্বীকৃতি দান করা হয়। বর্মী যুদ্ধের সময়ে গম্ভীর সিংহের সাহায্যের পুরস্কার স্বরূপ তাঁকেও মণিপুরে স্বাধীন রাজা হিসাবে স্বীকৃতি দান করা হয়।
মটক ও সদিয়া প্রত্যর্পণ : আহোম রাজ্যের মটক ও সদিয়া অঞ্চলের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকার একইরূপ ব্যবস্থা গ্ৰহণ করেন। ১৮২৬ সালে ব্রিটিশ সরকার মোয়ামরিয়াদের রাজা বড় সেনাপতির সঙ্গে এক সন্ধি করেন। এই সন্ধির ফলে বড় সেনাপতি বাৎসরিক বার হাজার টাকা কর দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ব্রক্ষপুত্র ও বুড়িডিহিং নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের শাসনকর্তারূপে স্বীকৃতি হন।
খামতি রাজ্য : ব্রিটিশ সরকার খামতিদের সর্দার সদিয়াখোঁয়া গোঁহাইকে সদিয়া অঞ্চলের শাসনকর্তা হিসাবে স্বীকার করে নেয়। এক চুক্তি অনুসারে সদিয়াখোঁয়া গোঁহাইকে কর দেওয়া হতে ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ব্রিটিশকে দু’শত সৈন্য প্রয়োজন হলে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুত হন।
সিংফো রাজ্য : সিংফোদের সঙ্গেও ব্রিটিশদের এক সন্ধি হয়। সিংফো উপজাতি বর্মী যুদ্ধের সময় বর্মীদের মিত্র ছিল। পরাজয়ের পর তারা এক সন্ধিতে আবদ্ধ হয়। সন্ধি অনুসারে সিংফোদের “গ্ৰাম” বা সর্দার আশিজন সৈন্যের এক বাহিনী দিয়ে ইংরেজকে সাহায্য ও বর্মীদের সম্বন্ধে সর্বদা সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুত হয়।
নিম্ন অসম : নিম্ন অসমের রাজস্ব তিন লক্ষ টাকার অধিক জানতে পেরে গভর্নর জেনারেল এটা সরকারি ইংরেজ রাজ্যভুক্তির জন্য ডেভিড স্কটকে নির্দেশ দেন। ১৮২৮ সালে স্কট নিম্ন অসমে ইংরেজদের সরকারি শাসন স্থাপন করেন।
উত্তর-পূর্ব অসমের ভাগ্য নির্ধারণ তখন স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু ১৮২৮ সালে এখানেও সামরিক শাসনের বিলোপ করা হয়। ক্যাপ্টেন নিউডভিল উত্তর-পূর্ব অসমে এজেন্ট ও শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। ইতিমধ্যে ডেভিড স্কটের সঙ্গে উত্তর- পূর্ব অসম সম্বন্ধে কোম্পানীর উচ্চ কর্তৃপক্ষের আলোচনা চলতে থাকে।
● শুদ্ধ উত্তরটি বেছে বের করে লেখো :
১। পুরন্দর সিংহের সিংহাসনচ্যুত ঘটে—-
(ক) ১৮৩৮ সালে।
(খ) ১৮৩৯ সালে।
(গ) ১৮৪০ সালে।
(ঘ) ১৮৪২ সালে।
উত্তরঃ (ক) ১৮৩৮ সালে।
২। পুরন্দর সিংহকে সিংহাসনে পুনঃস্থাপন করা হয়—–
(ক) ১৮৩১ সালে।
(খ) ১৮৩২ সালে।
(গ) ১৮৩৩ সালে।
(ঘ) ১৮৩৪ সালে।
উত্তরঃ (গ) ১৮৩৩ সালে।
৩। কার শাসনকালে পুরন্দর সিংহের সিংহাসন পুনঃস্থাপন হয়—–
(ক) হপ্কিন্সনের।
(খ) রবার্টসনের।
(গ) জেন্কিন্সের।
(ঘ) ডেভিড স্কটের।
উত্তরঃ (ক) হপ্কিন্সনের।
৪। কোন্ সন্ধির ফলে অসমে ব্রিটিশ শাসন অধিষ্ঠিত হয় ?
(ক) শরাইঘাটের।
(খ) ইয়াণ্ডাবুর।
(গ) ভার্সাইর।
(ঘ) বর্মী।
উত্তরঃ (খ) ইয়াণ্ডাবুর।
৫। কোন সালে ইয়াণ্ডাবুর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ?
(ক) ১৮২৬ সালে।
(খ) ১৮৩৪ সালে।
(গ) ১৮৮২ সালে।
(ঘ) ১৯২৯ সালে।
উত্তরঃ (ক) ১৮২৬ সালে।
৬। অসমে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়—
(ক) ১৮২০ সালে।
(খ) ১৮২২ সালে।
(গ) ১৮২৪ সালে।
(ঘ) ১৮২৬ সালে।
উত্তরঃ (ঘ) ১৮২৬ সালে।
৭। ইয়াণ্ডাবুর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল—– মধ্যে।
(ক) আহোম ও বর্মীদের।
(খ) আহোম ও ইংরেজদের।
(গ) ইংরেজ ও বর্মীদের।
(ঘ) মণিপুরী ও বর্মীদের।
উত্তরঃ (গ) ইংরেজ ও বর্মীদের।
৮। অসমের শেষ আহোম রাছা ছিলেন—–
(ক) চন্দ্রকান্ত সিংহ।
(খ) কমলেশ্বর সিংহ।
(গ) পুরন্দর সিংহ।
(ঘ) যোগেশ্বর সিংহ।
উত্তরঃ (গ) পুরন্দর সিংহ।
৯। ডেভিড স্কটের শাসনকাল হল—
(ক) ১৮২৬-১৮২৭ সাল।
(খ) ১৮২৫-১৮২৯ সাল।
(গ) ১৮২৬-১৮২৮ সাল।
(ঘ) ১৮২৬-১৮২৫ সাল।
উত্তরঃ (ক) ১৮২৬-১৮২৭ সাল।
১০। কোন অসমীয়া প্রথম উপহাসকারী বিষয়া নিযুক্ত হয়েছিলেন ?
(ক) তরুণরাম ফুকন।
(খ) আনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকন।
(গ) গোপীনাথ বরদলৈ।
(ঘ) বিষ্ণুরাম মেধী।
উত্তরঃ (খ) আনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকন।
১১। কাছাড়ের শেষ রাজা কে ছিলেন ?
(ক) গোবিন্দচন্দ্র।
(খ) রাজেশ্বর সিংহ।
(গ) বদনচাঁদ সিংহ।
(ঘ) পুরন্দর সিংহ।
উত্তরঃ (ঘ) পুরন্দর সিংহ।
১২। আসাম ইতিহাসের সঙ্গে—-নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
(ক) লর্ড মেকলের।
(খ) ক্যাপ্তেন ওয়েলসের।
(গ) লর্ড রিডিং-এর।
(ঘ) ডেভিড স্কুটের।
উত্তরঃ ডেভিড স্কুটের।
১৩। অসমে গভর্নর জেনারেলের প্রথম এজেন্ট কে ?
(ক) ডেভিড স্কট।
(খ) রবার্টসন।
(গ) জেনকিন্স।
(ঘ) হপকিনসন।
উত্তরঃ (ক) ডেভিড স্কট।
১৪। খাসিয়া পাহাড় ব্রিটিশ অধিকৃত হয়—–
(ক) ১৮৩১
(খ) ১৮৩২
(গ) ১৮৩৩
(ঘ) ১৮৩৪
উত্তরঃ (ঘ) ১৮৩৪
১৫। তিরৎ সিংহ ব্রিটিশের নিকট আত্মসমর্পণ করেন—– সালে।
(ক) ১৮৩০ সালে।
(খ) ১৮৩১ সালে।
(গ) ১৮৩২ সালে।
(ঘ) ১৮৩৩ সালে।
উত্তরঃ (ঘ) ১৮৩৩ সালে।
১৬। অসমের সিপাহী বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক ছিলেন——
(ক) মণিরাম দেওয়ান।
(খ) কুশল কোঁয়র।
(গ) গোমধর কোঁয়র।
(ঘ) তিরৎ সিংহ।
উত্তরঃ (ক) মণিরাম দেওয়ান।
১৭। উত্তর-পূর্ব অসমে পুনরায় ব্রিটিশ প্রশাসন চালু হয়েছিল।
(ক) ১৮৩৫ সালে।
(খ) ১৮৩৬ সালে।
(গ) ১৮৩৯ সালে।
(ঘ) ১৮৪০ সালে।
উত্তরঃ (গ) ১৮৩৯ সালে।
১৮। অসমে দেওয়ানী এবং ফৌজদারী বিধি প্রয়োগ হয়েছিল অসমে——-
(ক) ১৮৬০ সালে।
(খ) ১৮৬২ সালে।
(গ) ১৮৭০ সালে।
(ঘ) ১৮৭৪ সালে।
উত্তরঃ (ক) ১৮৬০ সালে।
১৯।উত্তর-পূর্ব অসমে ইংরাজ বিরোধী অভিযান শুরু করেন—-
(ক) মণিরাম দেওয়ান।
(খ) গোমধর কোঁয়র।
(গ) কুশল কোঁয়র।
(ঘ) তিরৎ সিংহ।
উত্তরঃ (খ) গোমধর কোঁয়র।