Class 9 Social Science Chapter 7 বায়ুমণ্ডল : গঠন এবং বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ

Class 9 Social Science Chapter 7 বায়ুমণ্ডল : গঠন এবং বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 9 Social Science Chapter 7 বায়ুমণ্ডল : গঠন এবং বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ and select needs one.

Class 9 Social Science Chapter 7 বায়ুমণ্ডল : গঠন এবং বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ

Join Telegram channel

Also, you can read SCERT book online in these sections Class 9 Social Science Chapter 7 বায়ুমণ্ডল : গঠন এবং বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 9 Social Science Chapter 7 বায়ুমণ্ডল : গঠন এবং বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 9 Social Science Chapter 7 বায়ুমণ্ডল : গঠন এবং বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ for All Subject, You can practice these here…

বায়ুমণ্ডল : গঠন এবং বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ

               Chapter – 7

দ্বিতীয় খণ্ড : ভূগোল

● পাঠ‍্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বায়ুমণ্ডল কাকে বলে ? তৎসহ এর গঠন সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ পৃথিবীর উপরিভাগে যে অদৃশ্য গ‍্যাসীয় আবরণ বেষ্টন করে রয়েছে তাকে বায়ুমণ্ডল বলে। এই বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূ-পৃষ্ঠের গায়ে জড়িয়ে থাকে এবং পৃথিবীর সঙ্গে আবর্তন করতে থাকে। পৃথিবীর প্রাণীজগতের কাছে এই বায়ু অপরিহার্য।

বায়ুমণ্ডলের উপদানগুলোকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—– গ‍্যাসীয় উপদান, জলীয় বাষ্প এবং জৈব ও অজৈব উপদান। গ‍্যাসীয় উপদানের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন ৭৮.০৮ ভাগ, অক্সিজেন ২০.৯৪ ভাগ, কার্বন ডাই-অক্সাইড ০.০৩৬ ভাগ ছাড়াও আরগন, হিলিয়াম, মিথেন, নিয়ন, জেনন, ক্রিপটন, ওজোন প্রভৃতি গ‍্যাসও থাকে। এই সমস্ত গ‍্যাসীয় উপাদানের মধ্যে নাইট্রোজেন হিলিয়াম, নিয়ন, আরগন, জেনন, ক্রিপটন গ‍্যাসগুলো পৃথিবীর কোনো কঠিন বা তরল গ‍্যাসের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায় না। বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরে জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা প্রভৃতি দেখা যায়।

প্রশ্ন ২। গ‍্যাসের রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে প্রধানত কি কি স্তরে বিভক্ত করতে পারা যায় ? এই স্তরগুলোর বৈশিষ্ট্যের আলোচনা কর।

উত্তরঃ হোমোস্ফিয়ার হতে উপরের দিকে বায়ুমণ্ডলের গ‍্যাসসমূহের রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন ঘটে। গ‍্যাসের রাসায়নিক স্তরের ভিন্নতার জন্য হোমোস্ফিয়ারের উপরের স্তরটিকে হেটেরোস্ফিয়ার বলা হয়। রাসায়নিক গঠন অনুসারে হোমোস্ফিয়ারের কয়েকটি স্তর দেখা যায়—

(ক) নাইট্রোজেন স্তর।

(খ) অক্সিজেন স্তর।

(গ) হিলিয়াম স্তর।

(ঘ) হাইড্রোজেন স্তর।এবং 

(ঙ) কার্বন ডাই অক্সাইড স্তর।

(ক) নাইট্রোজেন স্তর : নাইট্রোজেন স্তরটি ৮০ কি.মি. হতে প্রায় ২০০ কি.মি. উচ্চতা পযর্ন্ত বিস্তৃত। আয়তন হিসাবে বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন গ‍্যাস  ৭৮.০৮ শতাংশ। এটি একটি নিষ্ক্রিয় গ‍্যাস। প্রাণীজগৎ সরাসরি এই গ‍্যাস ব‍্যবহার করে না। কিন্তু জীবের প্রোটিন জাতীয় খাদ্য তৈরিতে এই গ‍্যাস সাহায্য করে।

(খ) অক্সিজেন স্তর : অক্সিজেন স্তরটি নাইট্রোজেন স্তর হতে প্রায় ১১২৫ কি.মি. উচ্চতা পযর্ন্ত বিস্তৃত। অক্সিজেন জীবজগতের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। অক্সিজেন জীবজগতের দেহের শক্তি ও উত্তাপ বাড়াতে সাহায্য করে। বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন গ‍্যাসের পরিমাণ প্রায় ২০.৯৪ শতাংশ।

(গ) হিলিয়াম স্তর : হিলিয়াম স্তরটি অক্সিজেন স্তরের উপর হতে প্রায় ৩৫৪০ কি.মি. উচ্চতা পযর্ন্ত বিস্তৃত। এই স্তরে নিয়ন, মিথেন, ক্রিপটন, নাইট্রাস অক্সাইড, হাইড্রোজেন, জেনন, ওজোন ইত্যাদি গ‍্যাস আছে। এই গ‍্যাসগুলি বায়ুতে ০.০২ শতাংশ আছে।

(ঘ) হাইড্রোজেন স্তর : হাইড্রোজেন স্তর হিলিয়াম স্তরের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় আছে। হাইড্রোজেন গ‍্যাসের বৈশিষ্ট্য হল যে এই গ‍্যাসটি নিজেই জ্বলে।

(ঙ) কার্বন ডাই অক্সাইড স্তর : বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কম হলেও জীবজগতের জীবন ধারণের জন্য অতি প্রয়োজন। জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে এর বিশেষ ভূমিকা আছে। বায়ুতে কার্বন ডাই- অক্সাইডের পরিমাণ মাত্র ০.০৩ শতাংশ। কার্বন ডাই-অক্সাইডের তাপশোষণ ক্ষমতা অধিক, এজন্য এই গ‍্যাস বায়ুমণ্ডলের তাপ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

উপরি উল্লিখিত গ‍্যাস ছাড়াও বায়ুতে ওজোন গ‍্যাসের একটি স্তর দেখতে পাওয়া যায়। বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ‍্যাস থাকায় সূর্য হতে আসা অতি বেগুনী রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে আসতে পারে না। এই গ‍্যাসীয় স্তর অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করে এবং জীবজগতের রক্ষা করে।

প্রশ্ন ৩। উচ্চতা ও উত্তাপের হ্রাস-বৃদ্ধির ভিত্তিতে কয়টি এবং কী কী স্তরে বিভক্ত করতে পারা যায় ? এই স্তরগুলোর বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লিখ।

উত্তরঃ উচ্চতা ও উত্তাপের হ্রাস-বৃদ্ধির ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলকে ১০টি স্তরে ভাগ করা যায়—-

(ক) ট্রপোস্ফিয়ার বা ঘনমণ্ডল : ভূ-পৃষ্ঠ হতে ১কি.মি. পযর্ন্ত উপরের স্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার বা ঘনমণ্ডল বলা হয়। এই স্তরে আমরা বসবাস করি। এই স্তরটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে ১৬-১৮ কি.মি. এবং মেরু অঞ্চলে ৮-৯ কি.মি. পযর্ন্ত বিস্তৃত।

এই স্তরে ৭৫% গ‍্যাসীয় উপাদান এবং জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণা থাকে। এই স্তরটি ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন হওয়ায় বায়ুতে অধিক জলীয় বাষ্প থাকে। এজন্য এই স্তরে মেঘ, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, ঝড়, তুষারপাত, কুয়াশা, শিশির প্রভৃতি দেখা যায়। এই স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উত্তাপও হ্রাস পায়। উত্তাপ হ্রাসের এই হার হল প্রতি ১ কি.মি. উচ্চতায় ৬.৪° সেন্টিগ্ৰেড।

(খ) ট্রপোপজ : ট্রপোস্ফিয়ার এবং স্ট্র‍্যাটোস্ফিয়ারের মধ‍্যবর্তী স্তরটিকে ট্রপোপজ বলে‌। এই স্থানে তাপমাত্রার কোনো রকম পরিবর্তন হয় না। এই স্তরে তাপমাত্রা থাকে— ৬০° সেন্টিগ্ৰেড।

(গ) স্ট্র‍্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল : ট্রপোস্ফিয়ারের ঠিক ওপরের স্তরটিকে স্ট্র‍্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল বলে। এই স্তরটি ১৮——৫০ কি.মি. বিস্তৃত। এই স্তরে মেঘ, ধূলিকণা না থাকার ফলে ঝড়, বৃষ্টিপাত ঘটে না। এখানে অক্সিজেন কম মাত্রায় থাকাতে শ্বাসকার্য চালান কষ্টকর হয়।

(ঘ) স্ট্র‍্যাটোপজ : স্ট্র‍্যাটোস্ফিয়ার এবং মেসোস্ফিয়ারের মধ‍্যবর্তী অঞ্চলের তাপমাত্রা স্থিতাবস্থায় থাকায় এই অঞ্চলটিকে স্ট্র‍্যাটোপজ বলা হয়। এই স্তরে তাপমাত্রা০° সেন্টিগ্ৰেড হয়। ভূ-পৃষ্ঠ হতে স্ট্র‍্যাটোপজ পযর্ন্ত গড় উচ্চতা প্রায় ৫০ কি.মি.।

(ঙ) ওজোনোস্ফিয়ার : স্ট্র‍্যাটোস্ফিয়ারের ওপর হতে ৩০ কি.মি. পযর্ন্ত বায়ুস্তরকে ওজোনোস্ফিয়ার বা ওজোন মণ্ডল বলে। এই স্তরে ওজোন গ‍্যাসের একটি পর্দা থাকার ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে এবং পৃথিবীতে পৌঁছুতে বাধা প্রদান করে। ফলে এই স্তরের তাপমাত্রা খুব বেশি হয়।

(চ) মেসোস্ফিয়ার : স্ট্র‍্যাটোপজের উপর হতে বায়ুমণ্ডলের যতদূর পযর্ন্ত উষ্ণতা কমে তাকে মেসোস্ফিয়ার বলা হয়। এই স্তরটি ভূ-পৃষ্ঠ হতে উপরের দিকে ৮০ কি.মি.  উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। এখানে তাপমাত্রা প্রায় ৯০° সেলসিয়াস থাকে। মেসোস্ফিয়ারের বিস্তৃতি ৩০ কি.মি.। এই স্তরের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল যে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উত্তাপ কমতে থাকে। মহাকাশ হতে ছুটে আসা উল্কাগুলো এই স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

(ছ) মেসোপজ : মেসোস্ফিয়ারের ওপরের যে উচ্চতায় তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে থেমে যায় সেই স্তরকে মেসোপজ বলে। অর্থাৎ মেসোপজই হল মেসোস্ফিয়ারের ঊর্ধসীমা।

(জ) থার্মোস্ফিয়ার বা আয়নোস্ফিয়ার : মেসোপজের উপরের ভাগে আবার বায়ুর তাপমাত্রা দ্রুতগতিতে বেড়ে যায়। মেসোপজের ওপর ৮০ কি.মি. হতে ৫০০ কি.মি. উচ্চতা স্তরকে থার্মোস্ফিয়ার বা আয়নোস্ফিয়ার বলে এখানকার তাপমাত্রা ১২০০°—১৬৫০° সেন্টিগ্ৰেড হয়। এই স্তর বিদ‍্যুৎযুক্ত অসংখ্য কণা অর্থাৎ আয়ন ও ইলেকট্রনে পূর্ণ। এজন্য এই স্তরটিকে আয়নোস্ফিয়ার বলে।

(ঝ) এক্সোস্ফিয়ার বা বহির্মণ্ডল : আয়নোস্ফিয়ারের উপর দিকে প্রায় ৭৫০ কি.মি. পযর্ন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে এক্সোস্ফিয়ার বা বহির্মণ্ডল বলে। এখানে বায়ুর স্তর পাতলা। এই স্তর ধীরে ধীরে মহাশূন্যে মিলে গিয়েছে।

(ঞ) ম‍্যাগনেটোস্ফিয়ার : এক্সোস্ফিয়ারের ওপরের প্রায় বায়ুশূন‍্য অঞ্চলটিকে ম‍্যাগনেটোস্ফিয়ার বা চৌম্বক মণ্ডল বলে। এই স্তরকে বেষ্টন করে প্রোটন ও ইলেকট্রন চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন ৪। বায়ুমণ্ডলের চাপের তারতম্য ঘটার কারণগুলি উদাহরণসহ আলোচনা কর।

উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলের চাপের তারতম্য বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এদের মধ্যে চারটি কারণ প্রধান।

(ক) বায়ুর উষ্ণতার তারতম্য : পৃথিবীর কোনো অঞ্চল নীতিশীতোষ্ণ, কোনো অঞ্চল শীতল আবার কোনো অঞ্চল উষ্ণ। তাপের এই তারতম্যের ফলে চাপেরও তারতম্য ঘটে। বায়ু উষ্ণ হলে হাল্কা ও প্রসারিত হয়। হাল্কা বায়ুর চাপও কম হয়। অপরদিকে বায়ু শীতল হলে সঙ্কুচিত হয় এবং চাপও বাড়ে। হাল্কা বায়ুর চাপ কম এবং শীতল বায়ুর চাপ বেশি। উষ্ণতার পার্থক‍্যের ফলেই বায়ুমণ্ডলে চাপের তারতম্য ঘটে।

(খ) ভূ-পৃষ্ঠের উচ্চতা : সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে যতই ওপরে ওঠা যায় ততই বায়ুমণ্ডলের গভীরতা কমে যায়। বায়ুমণ্ডলের গভীরতা কমলে এর ভর কম হয় এবং চাপও কমে যায়। কাজেই উচ্চতা বাড়লে বায়ুমণ্ডলের চাপ কমে। ওপরের দিকে বায়ুর স্তর হাল্কা। বায়ুমণ্ডলের উপদানগুলির ৯০% ভূ-পৃষ্ঠ হতে ১৫ কি.মি. উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত। প্রতি ৯০০ ফুট উচ্চতায় বায়ুর চাপ ১ ইঞ্চি বা ৩৪ মিলিবার হারে কমে। উত্তাপের তারতম্যের জন‍্যই বায়ুমণ্ডলের চাপেরও হ্রাস-বৃদ্ধি হয়।

(গ) বায়ুতে জলীয় বাষ্পের তারতম্য : জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু শুষ্ক বায়ুর তুলনায় অনেক হাল্কা। ফলে চাপও অনেক কম। শুষ্ক বায়ু ভারী বলে এর চাপও অনেক বেশি। বর্ষাকালের বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকায় বায়ুর চাপ কম হয়। 

(ঘ) বায়ুর আর্বতন গতি : পৃথিবীর আর্বতন গতির জন্য বায়ুর চাপের পার্থক্য ঘটে। পৃথিবীর উভয় মেরু অতিরিক্ত শীতল হবার ফলে এই অঞ্চলে উচ্চচাপ বিরাজিত। আর্বতন গতির প্রভাবে উভয় মেরুর উচ্চচাপমণ্ডল হতে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ ও হাল্কা বায়ু আবর্তন গতির প্রভাবে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এই কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুর চাপ কম হয় এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলে বায়ুর চাপ বেশি হয়।

প্রশ্ন ৫। চিত্রের সাহায্যে পৃথিবীর প্রধান চাপবলয় কয়টির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

উত্তরঃ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দুই প্রকার বায়ুচাপ লক্ষ্য করা যায়। 

(ক) উচ্চচাপ। 

(খ) নিম্নচাপ। 

চাপের তারতম্য অনুযায়ী পৃথিবীপৃষ্ঠে মূলত চারটি চাপবলয় বা চাপমণ্ডল সনাক্ত করা হয়েছে।

(ক) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ মণ্ডল : বিষুবরেখা বা নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে ৫° অক্ষাংশ ও ১০° অক্ষাংশের মধ্যে সারা বৎসর ধরে সূর্যের কিরণ লম্বভাবে পড়ে। কাজেই এই অঞ্চলের বায়ু তুলনামূলকভাবে গরম হয়ে হাল্কা হয় এবং এই বায়ুর ঘনত্বও কমে। ফলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই অঞ্চলে স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগের পরিমাণ বেশি। কাজেই উত্তাপ বেশি হবার সাথে সাথে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। কাজেই এই অঞ্চলে বায়ুর চাপও হ্রাস পায়। এই কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদাই নিম্নচাপ বিরাজ করে। নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলে বায়ু উত্তপ্ত হয়ে ঊর্ধ্বগামী হয়। এই অঞ্চলকে নিরক্ষীয় শান্ত বলয় বলা হয়। 

(খ) উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ মণ্ডল : নিরক্ষীয় অঞ্চলের ঊর্ধ্বগামী আর্দ্র ও লঘু বায়ু ক্রমশ উত্তর ও দক্ষিণ দিকে অগ্ৰসর হয়। ধীরে ধীরে এই বায়ুরাশি শীতল ও ভারী হয়। ২৫° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ হতে ৩৫° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ‍্যবর্তী দুই  উপক্রান্তীয় এই শীতল ও ভারী বায়ু নিচের দিকে নেমে আসে। আবার মেরু অঞ্চল হতে শীতল ও ভারী বায়ু উপক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়। কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি অঞ্চলে ভারী ও শীতল বায়ু মিলিত হয়ে উচ্চচাপ অঞ্চলের সৃষ্টি করে। এই অঞ্চলে বায়ু প্রধানত নিম্নমুখী হয়। এজন্য এই স্থানের বায়ুপ্রবাহ অনুভূত হয় না। এই উপক্রান্তীয় অঞ্চলকে অশ্ব অক্ষাংশ বলা হয়। উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ মণ্ডলটি ঋতুভেদে কখনও উত্তরে কখনও দক্ষিণে সরে যায়।

(গ) উপ-মেরুদেশীয় নিম্নচাপ মণ্ডল : সুমেরু ও কুমেরু বৃত্ত অঞ্চলের ৬০°–৭০ অক্ষাংশের মধ্যে উপমেরুদেশীয় নিম্নচাপ মণ্ডল বা বলয়টি অবস্থিত। এই দুই উপমেরু অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন গতি দুই মেরু অপেক্ষা তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে উপমেরু অঞ্চলের বায়ু উপক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে নিক্ষিপ্ত হয় এবং উপমেরু অঞ্চলে বায়ুর পরিমাণ কমে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। অবশ্য ঋতুভেদে এই চাপমণ্ডল বা বলয়টি কখনও উত্তরে কখনও দক্ষিণে কিছুটা সরে যায়।

(ঘ) মেরুদেশীয় উচ্চচাপ মণ্ডল : মেরু অঞ্চল বরফে আবৃত থাকায় এই অঞ্চলে শীতের প্রকোপ অত‍্যাধিক। মেরু অঞ্চলের জলভাগও অধিকাংশ সময়

বরফে পরিণত হয়ে থাকে।ফলে এই অঞ্চলে জলীয় বাষ্প থাকে না। কাজেই মেরু অঞ্চলে সবসময়ই উচ্চচাপ থাকে। এজন্য এই মণ্ডলটিকে মেরুদেশীয় উচ্চচাপ মণ্ডল বলে।

প্রশ্ন ৬। পৃথিবীতে অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব সম্পর্কে লেখো।

উত্তরঃ পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য উপাদান হল বায়ুমণ্ডল। পৃথিবীর অশ্মমণ্ডল, জলমণ্ডল ও জীবমণ্ডলের সঙ্গে বায়ুমণ্ডল পৃথিবীতে বসবাসকারী জীবের অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। জীবজগতের জন্য প্রয়োজনীয় গ‍্যাসসমূহ বায়ুমণ্ডলে যোগান ধরা ছাড়াও ইহা পৃথিবীর উপরিভাগের তাপশক্তির বিতরণ ও সঞ্চালনে সহায় করে। বায়ু প্রবাহিত হওয়ার জন‍্যই অতি উষ্ণ ও অতি শীতল স্থানসমূহের মধ্যে উত্তাপের পার্থক্য অনেকখানি হ্রাস হয়। জীবজগতের জন্য ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মি মহাকাশ হতে পৃথিবী পযর্ন্ত পৌঁছাতে বায়ুমণ্ডল বাধা প্রদান করে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর সৃষ্টি ও পরিবর্তন বায়ুমণ্ডলের ভিতরে সংঘটিত হয়। বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতির জন‍্যই পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিপাতের জন‍্যই পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ বেঁচে আছে। প্রাণীজগতের অস্তিত্ব বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতি ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। বায়ুমণ্ডল ভূ-পৃষ্ঠ হতে প্রায় ১০,০০০ কি.মি. উপর পযর্ন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে‌।

প্রশ্ন ৭। বায়ুপ্রবাহ কাকে বলে ? বায়ুপ্রবাহের উৎপত্তির কারকসমূহ আলোচনা কর।

উত্তরঃ বায়ুর গতিশীল অবস্থাকে বায়ুপ্রবাহ বলা হয়।

বায়ুপ্রবাহের কারকগুলি হল : 

(১) চাপনতি শক্তি।

(২) মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তি।

(৩) অপকেন্দ্রিক শক্তি।

(৪) ঘর্ষণ শক্তি।

(১) চাপনতি শক্তি : ভূ-পৃষ্ঠে থাকা বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পার্থক‍্যের জন্য উদ্ভব হওয়া শক্তিকে চাপনতি শক্তি বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে দুইটি স্থানের মধ‍্যের বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পার্থক‍্যের হারকে চাপনতি বলে। চাপনতির জন্য সৃষ্টি হওয়া শক্তির মান নির্ভর করে স্থান দুইটির মধ্যে থাকা চাপের পার্থক্য ও দূরত্বের উপর। দুইটি স্থানের চাপের পার্থক্য বেশি হলে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ বেশি হয়। আবার দূরত্ব বেশি হলে গতিবেগ হ্রাস পায়। বায়ু সর্বদাই উচ্চচাপ অঞ্চল হতে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। কাজেই চাপনতির সাহায্যে বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতিবেগ সহজেই নির্ণয় করা যায়। চাপনতির মান একেবারে কম হলে সেইস্থানে বায়ুপ্রবাহ প্রায় শূন্য হয় এবং বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থাও শান্ত হয়।

(২) মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তি : পৃথিবীর চতুর্দিকের বায়ুমণ্ডলটিকে পৃথিবীর মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তি ধরে রেখেছে। বায়ুর ওজন বা চাপ মূলত মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তির উপরে নির্ভর করে। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ু হাল্কা হয় এবং বায়ুচাপ হ্রাস পায় কারণ মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তি উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে হ্রাস পায়। উচ্চচাপ হতে নিম্নচাপের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। ভূমিভাগের উচ্চ-নীচ স্থানের উপরেও বায়ুর পার্থক্য হয়। মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বায়ুপ্রবাহ সরলরৈখিক না হয়ে বক্রাকার হয়।

(৩) অপকেন্দ্রিক শক্তি : পৃথিবীর আর্বতন গতির জন্য এর কেন্দ্র থেকে বহিঃমুখী একটি শক্তির উদ্ভব হয়। একে অপকেন্দ্রিক শক্তি বলা হয়।এই অপকেন্দ্রিক শক্তির প্রভাবে বায়ুপ্রবাহের দিকের কিছু বিক্ষেপণ ঘটে। এটি সর্বপ্রথম গেস্পার্ড ডি. কোরিওলিস আবিষ্কার করেন। এজন্য এই শক্তিকে ‘কোরিওলিস’ বলও বলা হয়। বায়ুপ্রবাহের সাথে কোরিওলিস বলের প্রভাবে ভূ-পৃষ্ঠের সকল চলন্ত বস্তু বা পরিঘটনার ক্ষেত্র একই। পৃথিবীর  আবর্তনের ফলে সৃষ্টি হওয়া এই বল উত্তর গোলার্ধে বায়ুপ্রবাহ ঘড়ির কাঁটার দিকে অর্থাৎ ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে অর্থাৎ বামদিকে বিক্ষেপিত হয়। অবশ্য কোরিওলিস বলের মাপ সকল স্থানে একই হয় না। বিষুবীয় অঞ্চলে শূন্য এবং মেরু অঞ্চলের দিকে ক্রমশ বেড়ে মেরুতে সর্বোচ্চ হয়।

(৪) ঘর্ষণ শক্তি : বায়ুপ্রবাহের গতিবেগের ক্ষেত্রে ঘর্ষণ শক্তি ঋণাত্মক ভাবে ক্রিয়া করে। অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহ কি ধরনের ভূ-পৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তার উপরই ঘর্ষণ শক্তির মান নির্ভর করে। উদাহরণ স্বরূপ, যদি ভূ-পৃষ্ঠ পর্বত পাহাড় বা উপত‍্যকা অঞ্চল হয়, অরণ‍্যাঞ্চল হয়, সুউচ্চ অট্টালিকায় পূর্ণ হয় তখন ঘর্ষণ শক্তি বেশি হয়। আবার ভূ-পৃষ্ঠের কিছুটা উপর দিয়ে অথবা জলপৃষ্ঠ বা বরফাচ্ছিত অঞ্চল দিয়ে বায়ু প্রবাহিত হলে ঘর্ষণের মাত্রা যথেষ্ট কম হয়, বাতাসের গতিবেগও বাড়ে। ঘর্ষণ শক্তির ফলে বায়ুপ্রবাহের দিকেরও পরিবর্তন ঘটতে পারে।

প্রশ্ন ৮। বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টির মূল কারণগুলো কী ? এর গতি এবং দিক নির্ধারণের কারকসমূহ সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ বায়ুপ্রবাহের উৎপত্তির মূল কারণ হল বায়ুমণ্ডলের উত্তাপের তারতম্য এবং এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পার্থক‍্যের জন‍্যই বায়ুর উৎপত্তি হয়। বায়ু উচ্চচাপ হতে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।

ভূ-পৃষ্ঠের সকল স্থান সমানভাবে উষ্ণ হয় না। বিষুর অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ায় এই অঞ্চলে উষ্ণতা সর্বাধিক আবার মেরুর দিকে সূর্যরশ্মি ক্রমশ হেলে যায় এর ফলে উষ্ণতাও দূরত্ব অনুযায়ী ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে বায়ু হাল্কা হয়ে উপরে উঠে যায় এবং নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে কম উষ্ণতা থাকা অঞ্চল হতে উচ্চচাপ থাকা বায়ু উষ্ণ অঞ্চলের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়। অর্থাৎ অনুভূমিক বায়ুর ঘনত্বের পরিবর্তন বা চাপের তারতম্যের জন্য চাপনতির সৃষ্টি হয়ে বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে। এই বায়ুপ্রবাহ আপেক্ষিকভাবে উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। বিষুব অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠ হতে উষ্ণ বায়ু উপরের দিকে উঠে এবং উপর দিয়ে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে প্রবাহিত হয়ে মেরু অঞ্চলে নিম্নগামী হয়। আবার সেই বায়ু বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তর দিয়ে মেরু অঞ্চল থেকে বিষুব অঞ্চলের দিকে শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়।

কোনো একটি স্থানের বায়ুপ্রবাহ এবং এর বৈশিষ্ট্য অনেকগুলো কারকের উপর নির্ভর করে। নিম্নে উল্লেখিত চারটি শক্তি বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ এবং দিক্ নির্ধারণ করে। প্রধান শক্তি বা কারকগুলো হল—

(১) চাপনতি শক্তি (Pressure Gradient Force)

(২) মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তি(Gravitational Force)

(৩) উপকেন্দ্রিক শক্তি (Centrifugal Force)

(৪) ঘর্ষণ শক্তি (Frictional Force)

মূলত চাপনতির জন‍্যই ভূ-পৃষ্ঠে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় এবং এই চাপনতিই প্রথমে বায়ুর দিক্ ও গতিবেগ নির্ধারণ করে। কিন্তু বায়ুপ্রবাহের সময় পৃথিবীর মাধ‍্যাকর্ষণ ও উপকেন্দ্রিক শক্তি এবং ঘর্ষণ শক্তির প্রভাবে বায়ুর দিক ও গতিবেগের যথেষ্ট পরিবর্তন আনে। এই চারটি শক্তির যৌথ ক্রিয়ার উদ্ভব হওয়া লব্ধ শক্তি প্রবাহিত বায়ুর দিক্ ও গতিবেগ নির্ধারণ করে। কিন্তু এই প্রবাহিত বায়ুর গতি সরলরেখার পরিবর্তে বক্রাকার হয়। ফেরেলের সূত্র অনুযায়ী উত্তর গোলার্ধের মেরুমুখী বায়ু আপেক্ষিকভাবে উত্তর- পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়। অবশ্য কোরিওলিস বলের মান পৃথিবীর সকল স্থানে একই হয় না। এই বলের মান বিষুব রেখায় শূন্য এবং এই মান মেরু অঞ্চলে সর্বোচ্চ হয়। একমাত্র বিষুব অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর যে-কোনো স্থানের বায়ুপ্রবাহকে পৃথিবীর আবর্তন গতি প্রভাবান্বিত করে। বায়ুপ্রবাহ প্রকৃতপক্ষে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভব হয়।[পাঠ‍্যপুস্তকের ২.৭ চিত্রটি দেখতে হবে]

প্রশ্ন ৯। ‘কোরিওলিস বল’ বলতে কি বোঝো ? বাতাসের গতির দিক্ নির্ধারণে এর ভূমিকা চিত্রসহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ পৃথিবী নিজ মেরুদণ্ডকে আশ্রয় করে ঘোরার সময় এর কেন্দ্র থেকে বহিঃমুখী এক শক্তির উদ্ভব হয়। একে অপকেন্দ্রিক শক্তি বলে। এই অপকেন্দ্রিক শক্তির প্রভাবে বাতাসের গতির দিকের কিছুটা বিক্ষেপণ ঘটে। এই ঘটনার কথা ১৮৪৪ সালে সর্বপ্রথম গেস্পার্ড ডি. কোরিওলিস নামে ফরাসী গণিতজ্ঞ উদ্ঘাটন করায় এই শক্তিটিকে ‘কোরিওলিস বল’ (Coriolis Force) বলা হয়।

বায়ুমণ্ডলের চাপের পার্থক‍্যের জন্য যখন উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়, তখন কোরিওলিস বল সেই বাতাসের দিকের করে কিছুটা পরিবর্তন ঘটায়। মনে রাখা প্রয়োজন যে বায়ুর সাথে কোরিওলিস বলের প্রভাব ভূ-পৃষ্ঠের সকল চলন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে একই।

পৃথিবীর আবর্তনের ফলে সৃষ্টি হওয়া এই বর উত্তর গোলার্ধে বায়ুপ্রবাহকে ঘড়ির কাঁটার দিকে অর্থাৎ ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে অর্থাৎ বামদিকে বিক্ষেপিত করে। অবশ্য কোরিওলিস বলের মান পৃথিবীর সকল স্থানে একই হয় না। এই বলের মান বিষুবরেখাতে শূন্য এবং দুই মেরুতে সর্বোচ্চ। অতএব বায়ুপ্রবাহ প্রকৃতপক্ষে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর পরিপ্রেক্ষিতেই উদ্ভব হয়।

প্রশ্ন ১০। ‘চাপনতি বা চাপের পরিবর্তনশীল শক্তি’ বলতে কি বুঝ ? বায়ুপ্রবাহে এর ভূমিকা কী ?

উত্তরঃ (১) চাপনতি শক্তি : ভূ-পৃষ্ঠে থাকা বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পার্থক‍্যের জন্য উদ্ভব হওয়া শক্তিকে চাপনতি শক্তি বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে দুইটি স্থানের মধ‍্যের বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পার্থক‍্যের হারকে চাপনতি বলে। চাপনতির জন্য সৃষ্টি হওয়া শক্তির মান নির্ভর করে স্থান দুইটির মধ্যে থাকা চাপের পার্থক্য ও দূরত্বের উপর। দুইটি স্থানের চাপের পার্থক্য বেশি হলে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ বেশি হয়। আবার দূরত্ব বেশি হলে গতিবেগ হ্রাস পায়। বায়ু সর্বদাই উচ্চচাপ অঞ্চল হতে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। কাজেই চাপনতির সাহায্যে বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতিবেগ সহজেই নির্ণয় করা যায়। চাপনতির মান একেবারে কম হলে সেইস্থানে বায়ুপ্রবাহ প্রায় শূন্য হয় এবং বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থাও শান্ত হয়।

প্রশ্ন ১১। বায়ুপ্রবাহে পৃথিবীর মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তির ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তি : পৃথিবীর চতুর্দিকের বায়ুমণ্ডটিকে পৃথিবীর মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তি ধরে রেখেছে। বায়ুর ওজন বা চাপ মূলত মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তির উপরে নির্ভর করে। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ু হাল্কা হয় এবং বায়ুচাপ হ্রাস পায় কারণ মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তি উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে  হ্রাস পায়। উচ্চচাপ হতে নিম্নচাপের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। ভূমিভাগের উচ্চ-নীচ স্থানের উপরেও বায়ুর পার্থক্য হয়। মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বায়ুপ্রবাহ সরলরৈখিক না হয়ে বক্রাকার হয়।

প্রশ্ন ১২। বাতাসের নামকরণ বলতে কি বোঝায় ? একটি স্থানের উপর দিয়ে প্রবাহিত বাতাসের নামকরণ কীভাবে করা হয় ?

উত্তরঃ বাতাসের নামকরণ বায়ুপ্রবাহের দিক অনুযায়ী করা হয়। অর্থাৎ যেদিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হয় সেইদিকের নাম অনুসারে বাতাসের নাম দেওয়া হয়।

পশ্চিমদিক থেকে প্রবাহিত বাতাসকে পশ্চিম বাতাস (Westerly wind), উত্তর- পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত বাতাসকে উত্তর-পূর্ব বাতাস(North Easterly) বলে। যে অঞ্চলের উপর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়, বায়ুরাশি সেই অঞ্চলের উষ্ণতা, আর্দ্রতা ইত্যাদি ভৌতিক ধর্মগুলি সংগ্ৰহ করে। ভূ-পৃষ্ঠের যেদিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হয় তাকে পবনমুখী এবং যেদিকে প্রবাহিত হয় তাকে পবনবিমুখ বলা হয়।

প্রশ্ন ১৩। বাতাসের গতিবেগ কিভাবে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে ? বাতাসের গতিবেগের এককগুলোর নাম কী ?

উত্তরঃ বাতাসের গতিবেগ অ্যানিমোমিটার (Anemometer) নামক যন্ত্রের দ্বারা মাপা হয়। বর্তমানে অবশ্য বিভিন্ন ধরনের অ্যানিমোমিটার যন্ত্র বের হয়েছে। অ্যানিমোগ্ৰাফ যন্ত্রটির দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বায়ুর দিক এবং গতিবেগ লিপিবদ্ধ করা যায়। ১৮০৫ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স‍্যার ফ্রেন্সিস বিউফোর্ট-এর প্রস্তুত করা ০-১২ নম্বর স্কেলের সাহায্যে বায়ুর গতিবেগের মান অনুযায়ী এর প্রকৃতি এবং প্রভাব জানতে পারা যায়। একে বিউফোর্ট স্কেল বলা হয়।সাধারণত বায়ুর গতিবেগ নট (Knot) এককে প্রকাশ করা হয়। বাতাসের গতিবেগ ১নট অর্থ ১নটিকেল মাইল প্রতি ঘন্টায়। অর্থাৎ ১.৮৫৪ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় বা ৩০.৯ মিটার প্রতি মিনিটে।

প্রশ্ন ১৪। বাতাসের শ্রেণি বিভাজন কীভাবে করা হয় ? উদাহরণসহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ সমগ্ৰ পৃথিবীতে কত প্রকারের বায়ুপ্রবাহ আছে, এই ব‍্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা হয় খুবই জটিল কাজ। অবশ্য বিস্তৃতির উপর নির্ভর করে বিস্তৃতভাবে বায়ুপ্রবাহকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়—

(ক) মুখ‍্য বা প্রাথমিক বায়ুপ্রবাহ।

(খ) গৌণ বায়ুপ্রবাহ।এবং 

(গ) স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ।

(ক) মুখ‍্য বা প্রাথমিক বায়ুপ্রবাহ : ভূ-পৃষ্ঠে স্থায়ীভাবে থাকা চাপবলয় বিতরণের উপর নির্ভর করে সমগ্ৰ পৃথিবী জুড়ে যে বায়ুর চলাচল হয়ে তাকে তাকে মুখ‍্য বা প্রাথমিক বায়ুপ্রবাহ বলা হয়। প্রাথমিক বায়ুপ্রবাহই অন‍্যান‍্য নিম্ন পর্যায়ের বায়ুপ্রবাহের পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই স্থায়ী বায়ুপ্রবাহ অহরহ পৃথিবীর দুই গোলার্ধে উপক্রান্তীয় ও মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় এবং উপমেরুদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। এই ধরনের বায়ুপ্রবাহকে নিয়ত বায়ু বা নিয়মিত বায়ু বলা হয়। বাণিজ্য বায়ু, পশ্চিমা বায়ু এবং মেরুদেশীয় বায়ু প্রাথমিক বায়ুতন্ত্রের অন্তর্গত।

(খ) গৌণ বায়ুপ্রবাহ : ভূ-অবয়বের প্রকৃতি এবং ভূমি-জলভাগের বিস্তৃতির বিভিন্নতা তথা আঞ্চলিক ও ঋতুভিত্তিক চাপ-তাপের তারতম্যের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া বায়ুপ্রবাহকে গৌণ বায়ুপ্রবাহ বলা হয়। ঘূর্ণিবায়ু বা চক্রবাত, প্রতীপ ঘূর্ণিবায়ু, বায়ুরাশি, বাতাগ্ৰ, মৌসুমী বায়ু ইত্যাদি।

(গ) স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ : সম্পূর্ণভাবে কিছু সংখ্যক স্থানীয় কারক, 

যেমন— ভূ-অবয়বের বিভিন্নতা এবং উচ্চতার তারতম্যের জন্য সীমিত অঞ্চল জুড়ে যে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, তাকে স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ (Local Wind) বা তৃতীয়ক (Tertiary circulation) বলা হয়। একে অস্থায়ী বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহও বলা হয়। স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের ভিতর জলবায়ু স্থলবায়ু, পার্বত্য বায়ু, উপত‍্যকা অঞ্চলের বায়ু ইত‍্যাদি উল্লেখযোগ্য।

প্রশ্ন ১৫। প্রাথমিক বায়ুপ্রবাহ বলতে কি বোঝায় ? একটি চিত্রে প্রাথমিক বায়ু-প্রবাহের বিতরণ বা বিস্তার দেখাও। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।

উত্তরঃ সাধারণত সমগ্ৰ পৃথিবীব‍্যাপী স্থায়ীভাবে থাকা চাপবলয়ের বিতরণের উপর নির্ভর করে সাধারণত যে বায়ু চলাচল করে থাকে তাকে প্রাথমিক বা মুখ‍্য বায়ুপ্রবাহ (Primary wind) বলে। প্রাথমিক বায়ুপ্রবাহ অন্য নিম্ন পর্যায়ের বায়ুপ্রবাহের পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই প্রকারের স্থায়ী বায়ুপ্রবাহ অহরহ পৃথিবীর দুই গোলার্ধের উপক্রান্তীয় এবং মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় এবং উপমেরুদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। এই প্রকারের বায়ুপ্রবাহকে নিয়মিত বায়ু(Permanent Wind) বা নিয়ত।বায়ুপ্রবাহ(Planetary Wind) বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে বাণিজ্য বায়ু, পশ্চিমা বায়ু এবং মেরুদেশীয় বায়ু প্রাথমিক বায়ুতন্ত্রের অন্তর্গত।

৩০° উত্তর এবং ৩০° দক্ষিণ অক্ষাংশের আশেপাশে অবস্থিত উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত পৃষ্ঠবায়ুকে বাণিজ্য বায়ু (Trade Wind) বলা হয়। কোরিওলিস বলের জন্য এই বায়ু উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। এজন্য একে উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব বাণিজ্য বায়ু(North-East trade wind) বলে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব বাণিজ্য বায়ু(South-East Trade Wind) বলে। ক্রান্তীয় অঞ্চলের এই উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব বাণিজ্য বায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলে মিলিত হয়ে একটি বিভাজকের সৃষ্টি করে। একে আন্তঃক্রান্তীয় অভিসারী মণ্ডল(Intertropical Convergence Zone) বলা হয়। এই অঞ্চলের বায়ুপ্রবাহ দুর্বল ও মন্থর হবার জন্য একে শান্ত বলয় বা নির্বাত অঞ্চল (Calm Zone বা Doldrum)বলা হয়।

উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় হতে উচ্চ অক্ষাংশীয় উপমেরুর দিকে থাকা নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে যে নিয়মিত বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে পশ্চিমা বায়ু(Westerlies) বলা হয়। এই বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম হতে পূর্ব বা উত্তর-পূর্বদিকে যায়। কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে এই প্রবাহ উত্তর-পশ্চিম হতে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে যায়।

উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ের যে অংশ হতে বাণিজ্য বায়ু ও পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয় সেইস্থানে ধীরে বায়ুপ্রবাহের শান্ত বলয় আছে। এই অঞ্চলের মধ‍্যাংশের বায়ু গতিহীন শান্ত অবস্থায় থাকে। পৃথিবীর দুইটি গোলার্ধের ৩০° হতে ৩৫° অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত এই অঞ্চলকে অশ্ব-অক্ষাংশ অঞ্চল (Horse Latitude)বলা হয়।

দক্ষিণ গোলার্ধের ৪০° হতে ৬০° অক্ষাংশ অঞ্চল মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় এই অংশতে পশ্চিমা বায়ুর তীব্রতা অত‍্যধিক। নাবিকগণ চল্লিশ দশকের অক্ষাংশ অঞ্চলকে ‘গর্জনমুখর চল্লিশা’ (Roaring Forties), পঞ্চাশ, দশকের অঞ্চলকে ‘ভয়ঙ্কর পঞ্চাশ’ (Furious Fifties) বলে।

মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় হতে উচ্চ অক্ষাংশে থাকা উপমেরুদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে যে স্বাভাবিক বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে মেরুপ্রবাহ বা মেরুদেশীয় বায়ু(Polar Wind) বলে। মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় অঞ্চলে মেরুদেশীয় বায়ু এবং পশ্চিমা বায়ুর মিলন হয়। এই দুইটি বিপরীতধর্মী বায়ুর সংমিশ্রণে মেরুদেশীয় বাতাগ্ৰ এবং মৃদু চক্রবাত ঝড়ের সৃষ্টি হয়। ক্রান্তীয় অঞ্চলের উচ্চস্তর দিয়ে পশ্চিমা প্রবাহের এক তীব্রবেগী পূর্বমুখী বায়ু প্রবাহিত হয়। একে জেটপ্রবাহ বলে। এর ফলে একটি স্থানের আবহাওয়া ও জলবায়ুর আমূল পরিবর্তন ঘটায়।

প্রশ্ন ১৬। গৌণ বাতাস কাকে বলে ? উদাহরণসহ একটি স্থানের জলবায়ু নির্ধারণে গৌণ বাতাসের ভূমিকা বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ভূ-অবয়ব প্রকৃতি এবং ভূমি-জলভাগের বিস্তৃতির বিভিন্নতা তথা আঞ্চলিক এবং ঋতুভিত্তিক চাপ-তাপের তারতম্যের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সৃষ্টি হওয়া বায়ুপ্রবাহগুলিকে গৌণ বাতাস বলা হয়। বায়ুরাশি, বাতাগ্ৰ, ঘূর্ণীবায়ু, প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু, মৌসুমী বায়ু ইত্যাদি এর অন্তর্গত।

বায়ুরাশি : উত্তাপ, আর্দ্রতা ইত্যাদি সমগুণ সম্পন্ন বৃহৎ আকারের একেকটি বায়ুপুঞ্জকে বায়ুরাশি (Air Mass) বলা হয়। এক বিশেষ গুণসম্পন্ন বায়ুরাশি সৃষ্টি হলেই অপসারী হয়ে যে অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলের আবহাওয়া নির্ধারণ করে। স্বাভাবিকভাবেই অপসারী হওয়া বায়ু অঞ্চলেই বায়ুরাশি সৃষ্টি হয়। উল্লম্বিক তাপ বিতরণে বায়ুর শীতলতা এবং উষ্ণতা ছাড়াও বায়ুরাশি স্থিরতা ও অস্থিরতার বিষয়েও ইঙ্গিত দেয়। গতিশীল বায়ুরাশির প্রবাহের ফলেই উষ্ণ অঞ্চল হতে শীতল অঞ্চলে তাপ পরিবহন হয় এবং বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার সমতা রক্ষা হয়। বায়ুরাশি উচ্চভূমি হতে অপসারী হয়ে আবহাওয়া পরিবর্তন ঘটায় এবং নিজেরও উত্তাপ-আর্দ্রতার পরিবর্তন হয়। বায়ুরাশিকে উৎস স্থান এবং বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়।

(১) ক্রান্তীয় অঞ্চলের মহাদেশীয় বায়ুরাশি।

(২) ক্রান্তীয় অঞ্চলের মহাসাগরীয় বায়ুরাশি।

(৩) মেরু অঞ্চলের মহাদেশীয় বায়ুরাশি।

(৪) মেরু অঞ্চলের মহাসাগরীয় বায়ুরাশি।

এই বায়ুরাশিকে উচ্চতা ও গতিশীলতার স্থিতির উপর নির্ভর করে পুনরায় বিভক্ত করা যায়—

(ক) বাতাগ্ৰ : যখন উত্তাপ, আর্দ্রতা, চাপ, ঘনত্ব ইত‍্যাদির তারতম্য থাকা দুইটি বিপরীত গুণসম্পন্ন বায়ুরাশি পরস্পরের সম্মুখীন হয়, এদের মধ্য সরাসরি মিশ্রণ না ঘটে দুইটির মধ্যে এক বিচ্ছেদক বায়ুপৃষ্ঠের বা বিচ্ছেদরেখার (Line of Discontinuity)  সৃষ্টি হয়, একে বাতাগ্ৰ বলে। এই ধরনের বাতাগ্ৰতে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। বাতাগ্ৰ সৃষ্টি হতে হলে বায়ুরাশি দুইটির বিশেষ অবস্থার প্রয়োজন—

(১) দুইটি বায়ুরাশির একটি অন‍্যটির তুলনায় শীতল এবং ভারী থেকে হবে।এবং

(২) বায়ুপ্রবাহ অভিসারী হতে হবে যাতে দুই বায়ুরাশি বিপরীত দিক হতে পরস্পরের অভিমুখে প্রবাহিত হয়। বিপরীত গুণসম্পন্ন এই প্রকারের বায়ুরাশির মিলন হলে তুলনামূলকভাবে উষ্ণ হাল্কা বায়ু শীতল ভারী বায়ুর উপর অবতরণ করে একটি সাম‍্য বা সুস্থির অবস্থায় থাকে। বাতাগ্ৰ অঞ্চলে চাপনতি বিপরীতমুখী হওয়ার ফলে বায়ুর অপসারণ হয় এবং বাতাগ্ৰ অগ্ৰসর হওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট বায়ুর উত্তাপ এবং আর্দ্রতার পরিবর্তনের ফলে বাতাগ্ৰ অঞ্চলে মেঘের সৃষ্টি হয়।

প্রকৃতি ও গুণাগুণের ভিত্তিতে বাতাগ্ৰগুলিকে প্রধানত চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়–

(১) শীতল বাতাগ্ৰ।

(২) উষ্ণ বাতাগ্ৰ।

(৩) অচল বাতাগ্ৰ। এবং 

(৪) অন্তর্ধৃত বাতাগ্ৰ।

(খ) ঘূর্ণীবায়ু : বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহের একটি নিম্নচাপকে কেন্দ্র করে তীব্রবেগী বায়ু চক্রাকারে অগ্ৰসর হয়, তাকে ঘূর্ণীবায়ু বা চক্রবাত বলা হয়। ঘূর্ণীবায়ুর কেন্দ্রে থাকা নিম্নচাপের তুলনায় চারিদিকের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ অনেক বেশি হওয়ার ফলে বায়ুর গতিবেগ তীব্রতর হয়। ঘূর্ণীবায়ু প্রধানত দুই প্রকারের—

(১) ক্রান্তীয় ঘূর্ণীবায়ু। এবং 

(২) বহিঃক্রান্তীয় বা মধ‍্য অক্ষাংশীয় ঘূর্ণিবায়ু।

(১) ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণীবায়ু : ক্রান্তীয় অঞ্চলের যে নিম্নচাপকে কেন্দ্র করে চতুঃস্পার্শের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে আসা তীব্রবেগী বায়ু চক্রাকারে প্রবাহিত হয়ে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে, তাকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণীবায়ু বলা হয়। টাইফুন, হ‍্যারিকেন, সাইক্লোন, বরদৈশিলা, উইলি-উইলি এই ক্রান্তীয় ঘূর্ণীবায়ুর অন্তর্গত।

(২) বহিঃক্রান্তীয় ঘূর্ণীবায়ু : নাতিশীতোষ্ণ এবং উচ্চ অক্ষাংশ অঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণীবায়ুকে বহিঃক্রান্তীয় ঘূর্ণিবায়ু বলা হয়। এই ঘূর্ণীবায়ু ৩০° থেকে ৩৫° অক্ষাংশ অঞ্চলে উৎপত্তি হয়। ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বায়ুর ঢেউয়ের ফলে সৃষ্টি হওয়া বাতাগ্ৰতে এই ঘূর্ণীবায়ুর উৎপত্তি হয় বলে একে তরঙ্গ ঘূর্ণীবায়ুও বলা হয়।প্রায় সবগুলি নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণীবায়ুর ব‍্যাস ৩০০ কি.মি. থেকে ১৫০০ কি.মি. এবং একেকটি ঘূর্ণীবায়ু প্রায় ১.৬ নিযুত বর্গকিলোমিটার স্থান জুড়ে থাকে। এই বায়ুপ্রবাহের ফলে ঘন মেঘ এবং অবিরত বৃষ্টিপাত হতে পারে।

(গ) প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু : যখন একটি ব‍্যাপক অঞ্চল জুড়ে উচ্চচাপ বলয়ে গঠিত হয়ে তার কেন্দ্র হতে চক্রাকারে অপসারী বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় তাকে প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু বলা হয়। প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ুর কেন্দ্রে চাপ সর্বোচ্চ হওয়ার জন্য একে উচ্চচাপ কেন্দ্রও বলে। এই উচ্চচাপ কেন্দ্র চক্রাকারে না হয়ে কিছুটা দীর্ঘাকৃতি হলে একে ‘ উধান’ বলা হয়। পৃথিবীর দুইটি গোলার্ধের উপক্রান্তীয় এবং উচ্চ অক্ষাংশে প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ুর সৃষ্টি হয়। উত্তর গোলার্ধে প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু প্রধানত দুই প্রকারের—

(১) উপক্রান্তীয় উষ্ণপ্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু।এবং

(২) উচ্চ অক্ষাংশীয় শীতল প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু। উপমেরু অঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া শীতল প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু দক্ষিণদিকে প্রবাহিত হয়। অন‍্যদিকে উপক্রান্তীয় অঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া উষ্ণ প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু পশ্চিম হতে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়। উচ্চ অক্ষাংশীয় শীতল প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ুর ফলে প্রধানত শীতকালে উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম

ইউরোপ প্রভৃতি স্থানে অতিপাত শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়। উত্তর-পূর্ব কানাডা ও উত্তর-পূর্ব ইউরোপে শীতল ঝড়ের (Blizzard) সৃষ্টি হয়। প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ুর ফলে আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে। উপক্রান্তীয় অঞ্চলের প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ুগুলি যদি উষ্ণ সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন জলীয় বাষ্প ও উত্তাপের তারতম্যের ফলে কিছু পরিমাণে বৃষ্টি হয়। উপক্রান্তীয় অঞ্চলের আংশিক-ভাবে স্থায়ী প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ুগুলি পূর্বদিকে প্রবাহিত বায়ু গরম হয়। এই বায়ুপ্রবাহ উষ্ণ তরঙ্গের সৃষ্টি করে এবং এক অস্বাভাবিক উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।

মৌসুমী বায়ু : ঋতুভেদে অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে সামরিক বায়ুপ্রবাহকে মৌসুমী বায়ু বলে। মৌসুমী শব্দটি আরবী শব্দ ‘ মৌসম’ এবং মালায়ান ভাষার ‘মনসিন’ শব্দ থেকে এসেছে। মৌসুমী একপ্রকারের পৃষ্ঠীয় বায়ুপ্রবাহ যার গ্ৰীষ্মকালের গতির দিক শীতকালের ঠিক বিপরীত।

গ্ৰীষ্মকালে সূর্য উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় ফলে সেই স্থানের স্থলভাগ অধিক উত্তপ্ত হওয়ায় সেইস্থানে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়, ফলে সমুদ্র থেকে শীতল ও ভারী বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়, একে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বলা হয়। এই বায়ুর প্রভাবে ভারত, চীন, জাপান, কোরিয়া

প্রভৃতি দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। গ্ৰীষ্মকালে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত দক্ষিণ-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমী বায়ু মেঘালয়ের দক্ষিণ অংশ, অসমের পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিমঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।

শীতকালে সূর্য মকরক্রান্তি রেখার নিকটবর্তী অঞ্চলে লম্বভাবে কিরণ দেয়।  ফলে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ অধিক পরিমাণে উত্তপ্ত হয় এবং জলভাগে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় এবং ভূ-ভাগে উচ্চচাপ থাকে। শীতকালে মহাদেশীয় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে শুষ্ক ও ভারী বায়ু জলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। উত্তর গোলার্ধ থেকে প্রবাহিত হওয়ায় এই অধিকমাত্রায় শীতল থাকে। এই কারণে স্থলভাগে শীতের প্রকোপ দেখা যায় এবং জলীয় বাষ্প না থাকায় বৃষ্টিপাত হয় না। কিন্তু সমুদ্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় জলীয় বাষ্প সংগ্ৰহ করে ও দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু উপকূলে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে কিছু বৃষ্টিপাত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল ও দক্ষিণ- পশ্চিম

উপকূল, মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চল, উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি স্থানে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এই বায়ুকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু বলা হয়।

স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ : কিছু সংখ্যক স্থানীয় কারক, যেমন, ভূ-অবয়বের বিভিন্নতা এবং উচ্চতার তারতম্যের জন্য সীমিত অঞ্চল জুড়ে যে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় তাকে স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ বলে। একে অস্থায়ী বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহও বলা হয়। জলবায়ু, স্থলবায়ু, পার্বত্য জলবায়ু, উপত‍্যকা অঞ্চলের জলবায়ু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

জলবায়ু : দিনের বেলায় স্থলভাগ অতি কম সময়ে তাপ শোষণ করে উত্তপ্ত হয় কিন্তু রাত্রিবেলায় অতি শীঘ্রই তাপ কমে শীতল হয়। কিন্তু জলভাগ অতি ধীরগতিতে তাপশোষণ করে এবং ঠিক সেইভাবেই ধীরগতিতে তাপ ছেড়ে দেয়। কাজেই স্থলভাগ ও জলভাগের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য হয়।

দিনেরবেলায় সমুদ্র, হ্রদ বা জলভাগ থেকে যে বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় তাকে সমুদ্র বায়ু বা জলবায়ু বলে। দিনেরবেলায় স্থলভাগের উপরের বায়ু

গরম ও হাল্কা হয়ে উপরে উঠে যায় এবং সেই শূন‍্যস্থান পূর্ণ করার জন্য জলভাগ থেকে যে বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় তাকেই সমুদ্র বায়ু বলে।

স্থলবায়ু : দিনেরবেলায় স্থলভাগ সূর্যকিরণে উত্তপ্ত হয় এবং রাত্রিবেলায় তাপ বিকিরণ করে ঠাণ্ডা হয়। কিন্তু সমুদ্রের বা অন‍্যান‍্য জলাশয়ের জলরাশি উষ্ণ

থাকায় সেইখানে নিম্নচাপ থাকে। এই কারণে স্থলভাগ হতে শীতল বায়ু জলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। একে স্থলবায়ু বলা হয়।

উল্লেখযোগ্য যে নিরক্ষীয়, ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলের প্রায় সকল উপকূল অঞ্চলে এই ধরনের বায়ু প্রবাহিত হতে দেখা যায়।

উপত‍্যকা ও পার্বত্য অঞ্চলের জলবায়ু : পৃথিবীর উপরিভাগের স্থানীয় পর্যায়ে ভূ- প্রকৃতির পার্থক্য এবং উত্তাপের তারতম্যের জন্য বহুসংখ্যক স্থানীয় বায়ু প্রবাহিত হয়। এদের মধ্যে চিনুক, ফ’ন, মিরাক্কো, সিস্ট্রেল, লু ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ সমভুমি অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হওয়ার ফলে পশ্চিমদিক হতে আসা বায়ু যখন রকি পর্বতমালা অতিক্রম করে সমভূমির দিকে প্রবাহিত হয় তখন তাকে চিনুক (Chinook) বলে।

আল্পস পর্বতমালার উত্তর ঢাল দিয়ে প্রবাহিত বায়ুকে ফ’ন প্রবাহ (Foehn) বলে। উত্তর সাহারা মরুভূমি থেকে উৎপত্তি হওয়া অতি শুষ্ক ও উষ্ণ দক্ষিণ বায়ুপ্রবাহকে সিরক্কো (Sirocco) বলে। গ্ৰীষ্মকালে দিবাভাগে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে থর মরুভূমিতে সৃষ্টি হওয়া বায়ুপ্রবাহ যখন উত্তর ভারতের গঙ্গা সমভূমিতে প্রবেশ করে, তখন একে ‘লু’ বলা হয়। ভূমধ‍্যসাগরীয় উপকূল অঞ্চলে প্রবাহিত ভারী শীতল বায়ুকে মিস্ট্রেল (Mistral) বলা হয়।

এই ধরনের বায়ুপ্রবাহ স্থানীয় পর্যায়ে একেকটি অঞ্চলের আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটায়।

প্রশ্ন ১৭।  স্থানীয় বাতাস কাকে বলে ? স্থানীয় বাতাস একটি স্থানের আবহাওয়া নির্ধারণে বা জলবায়ুতে এর প্রভাব কেমন সংক্ষেপে উল্লেখ কর।

উত্তরঃ কিছু সংখ্যক স্থানীয় কারক, যেমন, ভূ-অবয়বের বিভিন্নতা এবং উচ্চতার তারতম্যের জন্য সীমিত অঞ্চল জুড়ে যে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় তাকে স্থানীয় বাতাস বলে। একে অস্থায়ী বা অনিয়মিত বাতাসও বলা হয়। জলবায়ু, স্থলবায়ু, পার্বত্য জলবায়ু, উপত‍্যকা অঞ্চলের জলবায়ু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

প্রশ্ন ১৮। ঘূর্ণীবাতাস কাকে বলে ? এটি কত প্রকারের এবং কি কি ? একটি স্থানের জলবায়ু বা আবহাওয়া নির্ণয়ে এর ভূমিকা কী ?

উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহের একটি নিম্নচাপকে কেন্দ্র করে তীব্রবেগী বায়ু চক্রাকারে অগ্ৰসর হয়, তাকে ঘূর্ণীবায়ু বা চক্রবাত বলা হয়। ঘূর্ণীবায়ুর কেন্দ্রে থাকা নিম্নচাপের তুলনায় চারিদিকের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ অনেক বেশি হওয়ার ফলে বায়ুর গতিবেগ তীব্রতর হয়।ঘূর্ণিবায়ু প্রধানত দুই প্রকারের—

(১) ক্রান্তীয় ঘূর্ণীবায়ু। এবং

(২) বহিঃক্রান্তীয় বা মধ্য অক্ষাংশীয় ঘূর্ণীবায়ু।

প্রশ্ন ১৯। বায়ুপুঞ্জ কাকে বলে ? একে কিভাবে শ্রেণিবিভাজন করা হয় ? একটি স্থানের জলবায়ু নির্ধারণে এর ভূমিকা কী ?

উত্তরঃ উত্তাপ, আর্দ্রতা ইত্যাদি সমগুণ সম্পন্ন বৃহৎ আকারের একেকটি বায়ুপুঞ্জকে বায়ুরাশি (Air Mass) বলা হয়। এক বিশেষ গুণসম্পন্ন বায়ুরাশি সৃষ্টি হলেই অপসারী হয়ে যে অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলের আবহাওয়া নির্ধারণ করে। স্বাভাবিকভাবেই অপসারী হওয়া বায়ু অঞ্চলেই বায়ুরাশির সৃষ্টি হয়। উল্লম্বিক তাপ বিতরণে বায়ুর শীতলতা এবং উষ্ণতা ছাড়াও বায়ুরাশির স্থিরতা ও অস্থিরতা বিষয়েও ইঙ্গিত দেয়। গতিশীল বায়ুরাশির প্রবাহের ফলেই উষ্ণ অঞ্চল হতে শীতল অঞ্চলে তাপ পরিবহন হয় এবং বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার সমতা রক্ষা হয়। বায়ুরাশি উচ্চভূমি হতে অপসারী হয়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটায় এবং নিজেরও উত্তাপ-আর্দ্রতার পরির্বতন হয়। বায়ুরাশিকে উৎস স্থান এবং বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়।

(১) ক্রান্তীয় অঞ্চলের মহাদেশীয় বায়ুরাশি।

(২) ক্রান্তীয় অঞ্চলের মহাসাগরীয় বায়ুরাশি।

(৩) মেরু অঞ্চলের মহাদেশীয় বায়ুরাশি।

(৪) মেরু অঞ্চলের মহাসাগরীয় বায়ুরাশি।

প্রশ্ন ২০। বাতাগ্ৰ বলতে কি বুঝ ? কিভাবে এর সৃষ্টি হয় ? জলবায়ু এবং বাতাগ্ৰের সম্পর্ক সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ বাতাগ্ৰ : যখন উত্তাপ, আর্দ্রতা, চাপ, ঘনত্ব ইত‍্যাদির তারতম্য থাকা দুইটি বিপরীত গুণসম্পন্ন বায়ুরাশি পরস্পরের সম্মুখীন হয়, এদের মধ্যে সরাসরি মিশ্রণ না ঘটে দুইটির মধ্যে এক বিচ্ছেদক বায়ুপৃষ্ঠের বা বিচ্ছেদরেখার(Line of Discontinuity) সৃষ্টি হয়, একে বাতাগ্ৰ বলে। এই ধরনের বাতাগ্ৰতে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। বাতাগ্ৰ সৃষ্টি হতে হলে বায়ুরাশি দুইটির বিশেষ অবস্থার প্রয়োজন—

(১) দুইটি বায়ুরাশির একটি অন‍্যটির তুলনায় শীতল এবং ভারী থেকে হবে।এবং

(২)বায়ুপ্রবাহ অভিসারী হতে হবে যাতে দুই বায়ুরাশি বিপরীত দিক হতে পরস্পরের অভিমুখে প্রবাহিত হয়। বিপরীত গুণসম্পন্ন এই প্রকারের বায়ুরাশির মিলন হলে তুলনামূলকভাবে উষ্ণ হাল্কা বায়ু শীতল ভারী বায়ুর উপর অবতরণ করে একটি সাম‍্য বা সুস্থির অবস্থায় থাকে।বাতাগ্ৰ অঞ্চলে চাপনতি বিপরীতমুখী হওয়ার ফলে বায়ুর অপসারণ হয় এবং বাতাগ্ৰ অগ্ৰসর হওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট বায়ুর উত্তাপ এবং আর্দ্রতার পরিবর্তনের ফলে বাতাগ্ৰ অঞ্চলে মেঘের সৃষ্টি হয়।

প্রকৃতি ও গুণাগুণের ভিত্তিতে বাতাগ্ৰগুলিকে প্রধানত চারিটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়–

(১) শীতল বাতাগ্ৰ।

(২) উষ্ণ বাতাগ্ৰ।

(৩) অচল বাতাগ্ৰ।এবং

(৪) অন্তর্ধৃত বাতাগ্ৰ।

প্রশ্ন ২১। মৌসুমী বাতাস বলতে কি বুঝ ? কীভাবে মৌসুমী বাতাসের সৃষ্টি হয় ? পৃথিবীর কোন কোন অঞ্চলে প্রভাব সুস্পষ্ট।

উত্তরঃ মৌসুমী বায়ু : ঋতুভেদে অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে সাময়িক বায়ুপ্রবাহকে মৌসুমী বায়ু বলে। মৌসুমী শব্দটি আরবী শব্দ ‘মৌসম’ এবং মালায়ান ভাষার ‘মনসিন’ শব্দ থেকে এসেছে। মৌসুমী একপ্রকারের পৃষ্ঠীয় বায়ুপ্রবাহ যার গ্ৰীষ্মকালের গতির দিক শীতকালের ঠিক বিপরীত।

গ্ৰীষ্মকালে সূর্য উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে সেই স্থানের স্থলভাগ অধিক উত্তপ্ত হওয়ায় সেইস্থানে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়, ফলে সমুদ্র থেকে শীতল ও ভারী বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়, একে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বলা হয়। এই বায়ুর প্রভাবে ভারত, চীন, জাপান, কোরিয়া প্রভৃতি দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। গ্ৰীষ্মকালে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত দক্ষিণ-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমী বায়ু মেঘালয়ের দক্ষিণ অংশ অসমের পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিমঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।

শীতকালে সূর্য মকরক্রান্তি রেখার নিকটবর্তী অঞ্চলে লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ অধিক পরিমাণে উত্তপ্ত হয় এবং জলভাগে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় এবং ভূ-ভাগে উচ্চচাপ থাকে। শীতকালে মহাদেশীয় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে শুষ্ক ও ভারী বায়ু জলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। উত্তর গোলার্ধে থেকে প্রবাহিত হওয়ায় এই বায়ু অধিকমাত্রায় শীতল থাকে। এই কারণে স্থলভাগে শীতের প্রকোপ দেখা যায় এবং জলীয় বাষ্প না থাকায় বৃষ্টিপাত হয় না। কিন্তু সমুদ্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় জলীয় বাষ্প সংগ্ৰহ করে ও দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু উপকূলে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে কিছু বৃষ্টিপাত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল, মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চল, উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি স্থানে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এই বায়ুকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু বলা হয়।

প্রশ্ন ২২। কারণ দর্শিয়ে উত্তর লিখ :

(ক) ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে প্রধানত আবহাওয়ার ক্রিয়াকলাপ কেন সংঘটিত হয় ?

উত্তরঃ আমরা যে স্তরটিতে বসবাস করি সেই স্তরটির নাম ঘনমণ্ডল বা ট্রপোস্ফিয়ার। এর উচ্চতা সকল স্থানে সমান নয়। বিষুবীয় অঞ্চলে ১৬-১৮ কি.মি. এবং মেরু অঞ্চলে ৮-১০ কি.মি. বিস্তৃত। এই স্তরটি ভূ-পৃষ্ঠের সংলগ্ন হওয়ার ফলে বায়ুতে অধিক জলীয় বাষ্প থাকে ফলে এই স্তরে মেঘ, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, ঝড়, তুষারপাত, কুয়াশা, শিশির প্রভৃতি ধরনের আবহাওয়ার ক্রিয়াকলাপ সংঘটিত হয়।

(খ) বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তার ফল কী হতে পারে ?

উত্তরঃ প্রাণীজগতের জীবনধারণ এবং জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে কার্বন ডাই-অক্সাইডের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। কার্বন ডাই- অক্সাইডের তাপ শোষণ ক্ষমতা অধিক এবং কারণে এর সামান্য বৃদ্ধিতে বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ বৃদ্ধি পায়।

(গ) আর্দ্র বায়ু অপেক্ষা শুষ্ক বায়ুর চাপ কেন বেশি ?

উত্তরঃ জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র শুষ্ক বায়ু অপেক্ষা অনেক হাল্কা। হাল্কা বায়ুর চাপও কম হয়। শুষ্ক বায়ু ভারী হওয়ায় এর চাপও অনেক বেশি হয়।

নিরক্ষীয় অঞ্চলের বায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র হওয়ায় এই অঞ্চলে বায়ুর চাপ কম।অপরদিকে ক্রান্তীয় অঞ্চলের শুষ্ক বায়ু ভারী হওয়ায় এই অঞ্চলের বায়ুর চাপ বেশি।

(ঘ) ওজোন গ‍্যাসের স্তর কীভাবে জীবজগতের উপকার সাধন করে ?

উত্তরঃ ওজোন গ‍্যাসের স্তরটিকে ওজোনোস্ফিয়ার বা ওজন মণ্ডল বলে। এই ওজোন গ‍্যাসের একটি পর্দা থাকায় সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করে এবং ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে না। জীবের পক্ষে ক্ষতিকারক এই রশ্মি এই স্তরে শোষিত হওয়ায় জীবজগৎ ধ্বংসের হাত হতে রক্ষা পায়।

(ঙ) সাগরপৃষ্ঠে কেন বায়ুর চাপ সর্বাধিক হয় ?

উত্তরঃ উচ্চতা অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের ঘনত্বের তারতম্য ঘটে। বায়ুমণ্ডলের নিম্ন ভাগটি সমুদ্রপৃষ্ঠের সংলগ্ন এবং বায়ুর ঘনত্ব সর্বাধিক। বায়ুর ঘনত্ব সর্বাধিক হওয়ার জন‍্যই সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ সর্বাধিক।

(চ) ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের উলম্ব বিস্তৃতি মেরু অঞ্চল ও বিষুব অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন কেন হয় ?

উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলের নিম্নতর স্তরটি হল ট্রপোস্ফিয়ার। এই স্তরটি ভূ-সংলগ্ন এই কারণে স্তরটির উচ্চতা বা উলম্ব বিস্তৃতি সকল স্থানে সমান নয়। বিষুব অঞ্চলে এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ১৬ কি.মি. এবং মেরু অঞ্চলে এর সর্বোচ্চ উচ্চতা হল ১০ কি.মি.। অবশ্য গড় হিসাবে এই স্তরের উচ্চতা ১০ কি.মি.বলে ধরা হয় অপর দুটি কারণ হল বিষুব অঞ্চলে আহিক গতির তীব্রতা বেশি এবং অন‍্যটি চন্দ্রের আকর্ষণ।

(ছ) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ে ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালভাবে বাতাস প্রবাহিত হওয়াটা সাধারণত কেন অনুভূত হয় না ?

উত্তরঃ নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ে সমস্ত বৎসর ধরে সূর্যের কিরণ লম্বভাবে পড়ে। ফলে নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে ৫° অক্ষাংশ ও ১০° অক্ষাংশের মধ্যে বায়ু খুব উষ্ণ থাকে। এই অঞ্চলের বায়ু এইজন্য হাল্কা ও কম ঘনত্বের হয়। ফলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে জলভাগের পরিমাণ বেশি। উত্তাপ বেশি হওয়ায় এই অঞ্চলের বায়ুতে অধিক জলীয় বাষ্প থাকে। এই কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বায়ুমণ্ডলে নিম্নচাপ দেখা যায়। নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলে বায়ু উত্তপ্ত হয়ে ঊধর্বগামী হয়। এর ফলে এই অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালভাবে বায়ুর প্রবাহ অনুভূত হয় না।

প্রশ্ন ২৩। নিচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :

(ক) বায়ুমণ্ডল কত উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত ?

উত্তরঃ মোটামুটিভাবে বায়ুমণ্ডল ১০,০০০ কি.মি. উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে।

(খ) ভূ-পৃষ্ঠ থেকে কতদূর উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের গ‍্যাসগুলোর রাসায়নিক গঠন প্রায় একই থাকে ?

উত্তরঃ ভূ-পৃষ্ঠ হতে ৮০ কি.মি. পযর্ন্ত বায়ুমণ্ডলের গ‍্যাসসমূহের রাসায়নিক গঠন প্রায় একই হয়ে থাকে।

(গ) হোমোস্ফিয়ার এবং হেটেরোস্ফিয়ার মধ‍্যিখানের সীমাটির নাম কী ?

উত্তরঃ হোমোস্ফিয়ার এবং হেটেরোস্ফিয়ারের মধ‍্যবর্তী সীমাটির নাম মেসোপজ (Mesopause)।

(ঘ) ফেরেলের সূত্রটা কী ?

উত্তরঃ ১৮৫৯ সনে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আবহবিদ্ উইলিয়াম ফেরেল প্রমাণ করেন যে পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে বায়ু সোজাপথে প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে অর্থাৎ ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে অর্থাৎ বামদিকে বিক্ষেপিত হয়। একে ফেরেলের সূত্র বলা হয়।

(ঙ) বিউফোর্ট স্কেল কী ? উদাহরণসহ এই স্কেলের ব‍্যবহার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ ১৮০০ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স‍্যার ফ্রেন্সিস বিউফোর্ট (Sir Francis Beaufort) দ্বারা প্রস্তুত করা ০-১২ নম্বর স্কেলের সাহায্যে বায়ুর গতিবেগের মান অনুযায়ী প্রকৃতি এবং প্রভাব জানা যায়। একে বিউফোর্ট স্কেল বলে। বিউফোর্ট স্কেলটি নিচে দেওয়া হল :—

(চ) ল‍্যাপস্ হার (অতিপত্তি) কী সংক্ষেপে লেখো ?

উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরটির নিম্নভাগে উষ্ণতা বেশি এবং উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা ক্রমশ হ্রাস পায়। সাধারণত প্রতি কিলোমিটারে ৬.৫ সেন্টিগ্ৰেড হারে উষ্ণতা হ্রাস পায়।

প্রশ্ন ২৪। সংক্ষিপ্ত টীকা লিখ : 

(ক) হোমোস্ফিয়ার : ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৮০ কি.মি. ওপর পযর্ন্ত বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ‍্যাসের অনুপাত ও রাসায়নিক গঠন প্রায় একই থাকে। তাই এই স্তরকে হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল বলে। এই স্তরটিকে উত্তাপ ও উচ্চতার ভিত্তিতে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হল—

(ক) ট্রপোস্ফিয়ার।

(খ) স্ট্রেটোস্ফিয়ার। এবং 

(গ) মেসোস্ফিয়ার।

(খ) হেটেরোস্ফিয়ার : হোমোস্ফিয়ার থেকে উপরের দিকে বায়ুমণ্ডলের গ‍্যাসসমূহের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। গ‍্যাসের রাসায়নিক গঠনের ভিন্নতার জন‍্যই এই স্তরটিকে হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষম মণ্ডল বলে। এই বায়ুমণ্ডলের উধর্বসীমা ১০,০০০ কি.মি.। রাসায়নিক গঠন অনুসারে একে চারিটি স্তরে বিভক্ত করা যায়—

(১) নাইট্রোজেন স্তর। 

(২) অক্সিজেনের স্তর।

(৩) হিলিয়াম স্তর ও 

(৪) হাইড্রোজেন স্তর।

(গ) বায়ুর তাপ,ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা এবং বায়ুচাপের সম্পর্ক :

উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলের চাপ তাপ এবং উষ্ণতা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বায়ু উষ্ণ হলে হাল্কা ও প্রসারিত হয়। হাল্কা বায়ুর চাপও কম হয়। আবার বায়ু শীতল হলে সঙ্কুচিত হয় এবং চাপ বৃদ্ধি পায়। এইজন্যই শীতল বায়ুর চাপ বেশি। ভূ- পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে বৎসরের বিভিন্ন সময়ে উষ্ণতার পার্থক্য ঘটে বলে বায়ুর চাপের তাপের তারতম্য ঘটে। যতই উপরে উঠা যায় বায়ুমণ্ডলের তাপ কমে এবং চাপও কমে।

(ঘ) মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় :

উত্তরঃ দুই মেরু অঞ্চল অতিশয় শীতল হওয়ায় তাপের অভাব ঘটে এবং বাষ্পীভবন অতিশয় কম হয়। মেরু অঞ্চল স্থির হওয়ার জন্য সেখানে অপকেন্দ্রিক শক্তির প্রভাব অতিশয় কম। এইজন্য উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুতে দুটি উচ্চচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়। একে মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় অঞ্চল বলে।

অবশ্য উল্লেখ করা যেতে পারে যে ঋতুভেদে সূর্যের অবস্থানের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাপ বলয়গুলিরও অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে।

(ঙ) বায়ুপ্রবাহ তন্ত্র বা প্রক্রিয়া :

উত্তরঃ বায়ুপ্রবাহ বায়ুমণ্ডলে সংঘটিত বহু ক্রিয়াকলাপের একটি অতি প্রয়োজনীয় মাধ্যম যা অহরহ উত্তাপ, আর্দ্রতা ও বায়ুমণ্ডলের অন‍্যান‍্য বহু ভৌতিক গুণাগুণ একটি স্থান হতে অন্য একটি স্থানে স্থানান্তরিত করতে সাহায্য করে। ব‍্যাপক অর্থে একে বায়ুপ্রবাহ তন্ত্র (Wind System) বলে।

(চ) চাপনতি বা চাপের পরিবর্তনশীলতা :

উত্তরঃ (১) চাপনতি শক্তি : ভূ-পৃষ্ঠে থাকা বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পার্থক‍্যের জন্য উদ্ভব হওয়া শক্তিকে চাপনতি শক্তি বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে দুইটি স্থানের মধ‍্যের বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পার্থক‍্যের হারকে চাপনতি বলে। চাপনতির জন্য সৃষ্টি হওয়া শক্তির মান নির্ভর করে স্থান দুইটির মধ্যে থাকা চাপের পার্থক্য ও দূরত্বের উপর। দুইটি স্থানের চাপের পার্থক্য বেশি হলে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ বেশি হয়। আবার দূরত্ব বেশি হলে গতিবেগ হ্রাস পায়। বায়ু সর্বদাই উচ্চচাপ অঞ্চল হতে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। কাজেই চাপনতির সাহায্যে বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতিবেগ সহজেই নির্ণয় করা যায়। চাপনতির মান একেবারে কম হলে সেইস্থানে বায়ুপ্রবাহ প্রায় শূন্য হয় এবং বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থাকেও শান্ত হয়।

(ছ) বাণিজ্য বাতাস :

উত্তরঃ উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় হতে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে যে বাতাস প্রবাহিত হয় তাকে বাণিজ্য বাতাস বলে। পৃথিবীর আবর্তনের ফলে এই বাতাস উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে গতি পরিবর্তন করে এবং একে উত্তর-পূর্ব দিক হতে আসা বলে মনে হয়। এইজন্য উত্তর গোলার্ধে একে উত্তর-পূর্ব বাণিজ্য বাতাস বলে। দক্ষিণ গোলার্ধে ইহা বাম দিকে গতি পরিবর্তন করে বলে একে দক্ষিণ-পূর্বদিক হতে আসছে বলে মনে হয়। এইজন্য দক্ষিণ গোলার্ধে এই বাতাসকে দক্ষিণ-পূর্ব বাণিজ্য বাতাস বলে। ক্রান্তীয় অঞ্চলের উপর ইহা প্রবাহিত হয় বলে একে ক্রান্তীয় পূর্ব বায়ুও বলে।

নিরক্ষীয় অঞ্চলে দুই গোলার্ধেই বাণিজ্য বাতাসের বিপরীতে প্রবাহিত হয় বলে একে প্রতীপ বাণিজ্য বাতাসও বলে।

(জ) অশ্ব অক্ষাংশ :

উত্তরঃ উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ের যে অংশ থেকে বাণিজ্য বায়ু এবং পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত সেই অঞ্চলে একটি মন্থর বায়ুপ্রবাহের শান্ত বলয় আছে। এই অঞ্চল থেকে বায়ু বহিঃমুখী হয় যদিও এর মধ‍্যাংশে বায়ু প্রায় গতিহীন হয়ে শান্ত অবস্থায় থাকে। পৃথিবীর দুইটি গোলার্ধের ৩০° হতে ৩৫° অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত এই অঞ্চলকে অশ্ব-অক্ষাংশ (Horse Latitude) বলে।

কথিত আছে কোনো এক জাহাজের নাবিকগণ খাদ্য ও তৃষ্ণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং জাহাজের গতি বাড়াবার জন্য তাদের জাহাজের অশ্বগুলিকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করেছিল। এই কারণে এই অঞ্চলটিকে অশ্ব-অক্ষাংশ বলা হয়। 

(ঝ) গর্জনমুখর চল্লিশ :

উত্তরঃ দক্ষিণ গোলার্ধে ৪০° দক্ষিণ অক্ষাংশে জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ অনেক কম থাকায় উত্তর-পশ্চিম প্রত‍্যয়ন বায়ু জলভাগের উপর দিয়ে সারা বৎসর বাধাহীনভাবে সশব্দে পশ্চিম হতে পূর্বদিকে দক্ষিণ অক্ষাংশের ৪০°-৬০° অক্ষাংশের মধ‍্যবর্তী অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। এই পশ্চিমাবায়ুর তীব্রতা অত‍্যধিক। এই কারণে নাবিকগণ এই অক্ষাংশ অঞ্চলকে গর্জনমুখর চল্লিশ বা গর্জনশীল চল্লিশা নাম দিয়াছিল।

(ঞ) প্রতীপ ঘূর্ণীবাতাস :

উত্তরঃ হিমমণ্ডল ও নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের অল্প পরিসর কোনও স্থানে বায়ু শীতল হয়ে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। তখন এক উচ্চচাপ কেন্দ্র হতে বায়ু চারিদিকে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হয়, একে প্রতীপ ঘূর্ণিবায়ু বলা হয়। এই বায়ু উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার গতি অনুযায়ী দক্ষিণাবর্তে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতদিকে প্রবাহিত হয়। শীতকালে মধ্য ও উচ্চ অক্ষাংশে ঘূর্ণীবায়ু বেশি দেখা যায়। প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ুর বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা ঘূর্ণীবায়ুর সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ুর প্রভাবিত অঞ্চলে আকাশ মেঘমুক্ত ও নির্মল থাকে। আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ুর কেন্দ্রের চাপ সর্বোচ্চ হয় বলে একে উচ্চচাপ কেন্দ্রেও বলে‌।

প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু সাধারণত দুই প্রকারের; যথা—

(১) উপক্রান্তীয় উষ্ণ প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু; যথা—-(Subtropical Warm Core Anticyclone) এবং 

(২) উচ্চ- অক্ষাংশীয় শীতল প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু(High-altitude Cold-Core Anticyclone)। 

এই দুইটি প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ুর সৃষ্টিস্থল এবং গতিপথ ভিন্ন। উপমেরু অঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া শীতল ঘূর্ণীবায়ু দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে উপক্রান্তীয় অঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া উষ্ণ প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু পশ্চিম হতে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়। উচ্চ-অক্ষাংশীয় শীতল ঘূর্ণীবায়ুর ফলে প্রধানত শীতকালে উত্তর আমেরিকা , পশ্চিম ইউরোপ ইত্যাদি অঞ্চলে অতিশয় শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়। উত্তর-পূর্ব কানাডা এবং উত্তর-পূর্ব ইউরোপের শীতল ঝড়ের(Blizzard) সৃষ্টি হয়। এই ধরনের শীতল প্রবাহকে শীত তরঙ্গ (Cold Wave) বলা হয়। আবার উপক্রান্তীয় অঞ্চলের আংশিকভাবে স্থায়ী প্রতীপ ঘূর্ণিবায়ুসমূহ পূর্বদিকে প্রবাহিত হওয়া বায়ু গরম হয়। এই বায়ুপ্রবাহ উষ্ণ তরঙ্গের (Hot Waves) সৃষ্টি করে এবং এক অস্বাভাবিক উষ্ণ শুষ্ক বায়ুর সৃষ্টি করে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশে এই ধরনের বায়ু পরিলক্ষিত হয়।

(ট) জেট্ প্রবাহ : বায়ুমণ্ডলের উচ্চ অংশে পশ্চিম হতে পূর্বদিকে অতিশয় অপ্রশস্ত পথে প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়া এক প্রকারের বাতাস আছে। ভূ-পৃষ্ঠ হতে প্রায় ৮,০০০ হতে ১০,০০০ মিটার উচ্চতায় উত্তর গোলার্ধে প্রায় চারটা এবং দক্ষিণ গোলার্ধে একটি বৃত্তাকার জেট্ প্রবাহ আছে। গ্ৰীষ্মকাল অপেক্ষা শীতকালে এর তীব্রতা বেশি। জলবায়ুর উপর এর যথেষ্ট প্রভাব আছে।

(ঠ) সমচাপ রেখা : সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠের যেসব জায়গায় বায়ুর চাপ সমান, সেইসব জায়গাকে যে কাল্পনিক রেখার সাহায্যে যোগ করা হয় তাকে সমচাপ বা সমপ্রেষ রেখা (Isobar Line) বলে।

(১) ক্রান্তীয় ঘূর্ণীবাতাস : ক্রান্তীয় অঞ্চলের যে নিম্নচাপকে কেন্দ্র করে চতুঃস্পার্শের উচ্চতাপ অঞ্চল থেকে আসা তীব্রবেগী বায়ু চক্রাকার প্রবাহিত হয়ে এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে, তাকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণীবায়ু বলা হয়। টাইফুন, হ‍্যারিকেন, সাইক্লোন, বরদৈশিলা, উইলি-উইলি এই ক্রান্তীয় ঘূর্ণীবায়ুর অন্তর্গত।

ক্রান্তীয় ঘূর্ণীবায়ুর গতিবেগ প্রতিঘণ্টায় ১২০ থেকে ২৮০ কিলোমিটার পযর্ন্ত হয়। ক্রান্তীয় ঘূর্ণীবায়ু সম্পূর্ণভাবে সাগরীয় পরিবেশের প্রভাবে কেবল গ্ৰীষ্মকালেই উৎপত্তি হয়। এই ঘূর্ণীবায়ু প্রায় প্রতি বৎসর ধন-জনের প্রচুর ক্ষতি সাধন করে।

প্রশ্ন ২৫। পার্থক্য লিখ :

(ক) আনুভূমিক এবং উল্লম্ব প্রবাহ।

আনুভূমিক প্রবাহউল্লম্ব প্রবাহ
১। ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে আনুভূমিক প্রবাহ বলে।১। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে উল্লম্ব প্রবাহ বলে।
২। আনুভূমিক বায়ুপ্রবাহ ভারী হয়।২। উল্লম্বিত বায়ু উষ্ণ ও হাল্কা হয়।
৩। আনুভূমিক প্রবাহের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এর গুরুত্ব বেশি।৩। উল্লম্ব বায়ুপ্রবাহের পরিমাণ কম। এর  গুরুত্ব কম।
৪। ইহা শীতল অঞ্চলে প্রবাহিত হয়।৪। ইহা উষ্ণ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়।

(খ) বায়ুপ্রবাহ এবং বায়ুপুঞ্জ :

বায়ুপ্রবাহবায়ুপুঞ্জ
১। বায়ুর গতিশীল অবস্থাকেই বায়ু প্রবাহ বলে।১। উত্তাপ, আর্দ্রতা ইত‍্যাদির সমগুণ সম্পন্ন বৃহৎ আকারের এক একটি বায়ুপুঞ্জকে বায়ুরাশি বলে।
২। ইহা পাশ্ববর্তী চাপের উপর নির্ভরশীল।২। এর নিম্নস্থ বায়ু নিম্নস্থ ভূমির দ্বারা প্রভাবিত হয়।
৩। বায়ুপ্রবাহ সর্বত্রই দেখা যায়।৩। অপসারী হওয়া বায়ু অঞ্চলেই বায়ুপুঞ্জের সৃষ্টি হয়।
৪। বায়ুপ্রবাহ পৃথিবীর আর্বতন গতির ফলেই হয়।৪। ইহা শীতলতা ও উষ্ণতার উপর নির্ভর করে।

(গ) ক্রান্তীয় এবং বহিঃক্রান্তীয় ঘূর্ণীবায়ু।

ক্রান্তীয় ঘূর্ণীবায়ুবহিঃক্রান্তীয় ঘূর্ণীবায়ু
১। ইহা ক্রান্তীয় অঞ্চলের নিম্নচাপকে কেন্দ্র করে চারিদিক থেকে আসা তীব্রবেগী বায়ু চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।১। নাতিশীতোষ্ণ এবং উচ্চ অক্ষাংশের সৃষ্টি হয়।
২। ইহা কেবল গ্ৰীষ্মকালেই উৎপত্তি হয়।২। ইহা ব‍ৎসরের যে-কোন সময় সৃষ্টি হতে পারে।
৩। এতে কোনো বাতাগ্ৰের সৃষ্টি হয় না।৩। এতে বাতাগ্ৰের সৃষ্টি হয়।
৪। ইহা স্থলভাগে শুষ্ক ও বৃষ্টিহীন থাকে।৪। এর দ্বারা মেঘ ও বৃষ্টিপাত হতে পারে।

(ঘ) জল বাতাস এবং স্থল বাতাস :

জল বাতাসস্থল বাতাস
১। ইহা দিনেরবেলায় প্রবাহিত হয়।১। ইহা রাত্রিবেলায় প্রবাহিত হয়।
২। ইহা খুব ধীরে ধীরে উষ্ণতাপ্রাপ্ত হয়।২। ইহা খুব শীঘ্র উষ্ণ হয়।
৩। অপরাহ্নে এর গতিবেগ বাড়ে।৩। মধ‍্যরাত্রি থেকে ভোরবেলা পযর্ন্ত এর গতিবেগ বেশি থাকে।

(ঙ) পার্বত্য এবং উপত‍্যকা বাতাস :

পার্বত্য অঞ্চলের বাতাসউপত‍্যকা অঞ্চলের বাতাস
১। এর তাপ শোষণ ক্ষমতা কম।১। ইহা খুব শীঘ্রই উত্তপ্ত হয়।
২। ইহা রাত্রিবেলায় শীতল ও ভারী হয়।২। দিনেরবেলায় উত্তপ্ত হয়।
৩। রাত্রিবেলায় পর্বতের ঢাল দিয়ে নিম্নমুখী হয়।৩। দিনেরবেলায় ঊর্ধ্বমুখী হয়।
৪।এই অঞ্চলে বিকালবেলা ও ভোরবেলায় কুয়াশা দেখা যায় না।৪। এই অঞ্চলে কুয়াশা দেখা যায়।

(চ) শীতল বাতাগ্ৰ এবং উষ্ণ বাতাগ্ৰ :

শীতল বাতাগ্ৰউষ্ণ বাতাগ্ৰ
১। ইহা নিম্নভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উষ্ণ বাতাগ্ৰকে স্থানান্তরিত করে।১। ইহা উচ্চভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নিম্নভাগের শীতল বাতাগ্ৰকে স্থানান্তরিত করে।
২। ইহা উচ্চচাপ সম্পন্ন করে।২। ইহা নিম্নচাপ সম্পন্ন করে।
৩। এর দ্বারা বৃষ্টিপাত হয় না।৩। এর দ্বারা বৃষ্টিপাত হয়।

(ছ) ঘূর্ণীবায়ু এবং প্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু :

ঘূর্ণীবায়ুপ্রতীপ ঘূর্ণীবায়ু
১। সাধারণত ইহা তীব্রবেগী, দ্রুতগামী এবং ক্ষণস্থায়ী।১। সাধারণত ইহা শান্ত এবং অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী।
২। কেন্দ্রের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়।২। কেন্দ্র হতে বহির্মুখী।
৩। উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরে।৩। ইহা উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরে।
৪। কেন্দ্রে নিম্নচাপ থাকে।৪। কেন্দ্রে উচ্চচাপ থাকে।
৫। প্রধানত  ক্রান্তীয় এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে দেখা যায়।৫। ইহা প্রধানত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেই দেখা যায়।
৬। গ্ৰীষ্মকালে এর তাপ কম থাকে এবং শীতকালে তাপ বেশি থাকে।৬। শীতকালে তাপ কম থাকে কিন্তু গ্ৰীষ্মকালে তাপ বেশি থাকে।
৭। এই বায়ু দ্বারা বজ্র,বিদ্যুৎ, বৃষ্টিপাত এবং তুষার বৃষ্টিও হয়।৭। এই বায়ুতে আবহাওয়া পরিষ্কার ও রৌদ্রোজ্জ্বল থাকে।

(জ) ট্রপোস্ফিয়ার এবং স্ট্রেটোস্ফিয়ার :

ট্রপোস্ফিয়ারস্ট্রেটোস্ফিয়ার
১। এই স্তরটি ভূ-পৃষ্ঠের গায়ে লেগে থাকে।১।এই স্তরটি ট্রপোস্ফিয়ারের উপরের স্তর।
২।এই স্তরে উত্তাপ নিম্নভাগ থেকে উপরের দিকে কমতে থাকে।২। এই স্তরে উত্তাপ নিম্নভাগ থেকে উপরের দিকে বৃদ্ধি পায়।
৩। এর ঊর্ধ্বসীমাকে ট্রপোপজ বলে।৩।এর ঊর্ধ্বসীমাকে স্ট্রেটোপজ বলে।
৪।আবহাওয়ার সকল পরিবর্তন এই স্তরে দেখা যায়।৪। এই স্তর সুস্থির।
৫। এই স্তরে অতিবেগুনী রশ্মি দেখা যায় না।৫।এই স্তরে অতিবেগুনী রশ্মি দেখা যায়।

প্রশ্ন ২৬। শুদ্ধ উত্তরটি বেছে নাও :

(ক) ওজোন স্তরটি কোথায় অবস্থিত ?

১। ট্রপোস্ফিয়ার।   

২। স্ট্রেটোস্ফিয়ার।

৩। মেসোস্ফিয়ার। 

৪। থার্মোস্ফিয়ার।

উত্তরঃ ২। স্ট্রেটোস্ফিয়ার।

(খ) বায়ুমণ্ডলে আয়তন হিসাবে অক্সিজেন কত শতাংশ থাকে ?

১। ২০.৯৪%       

২। ২৯.০১%

৩। ৩২.৪৭%       

৪। ৭৮.০৮%

উত্তরঃ ১। ২০.৯৪%

(গ) বায়ুপ্রবাহের মূল কারণটি হল—-

১। আর্দ্রতার তারতম্য।  

২। চাপের তারতম্য।

৩। মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তি।   

৪। অপকেন্দ্রিক বল।

উত্তরঃ ২। চাপের তারতম্য।

(ঘ) বাতাসের গতিবেগ নির্ণয়কারী যন্ত্রটি হল—

১। উইণ্ডভেন।         

২। অ্যানিমোমিটার।

৩। বিউফোর্ট স্কেল।

৩। হাইড্রোমিটার।

উত্তরঃ ২। অ্যানিমোমিটার।

(ঙ) বাতাসের গতিবেগের এককটি হল—

১। নট।                     

২। মিলিবার।

৩। শতাংশ।               

৪। ডিগ্ৰি।

উত্তরঃ ১। নট।

(চ) মৌসুমী বাতাস কোন শ্রেণির অন্তর্গত ?

১। স্থানীয় বাতাস।    

২‌। প্রাথমিক বাতাস।

৩। গৌণ বাতাস।

৪। নিয়মিত বাতাস।

উত্তরঃ ৩। গৌণ বাতাস।

(ছ) প্রাচ‍্যের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল অঞ্চলের ঘূর্ণীবাতাসের নাম হল—-

১। সাইক্লোন।       

২। হ‍্যারিকেন।

৩। উইলি।     

৪। টাইফুন।

উত্তরঃ ৪। টাইফুন।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

অতি সংক্ষেপে উত্তর দাও :

প্রশ্ন ১। মোটামুটিভাবে বায়ুমণ্ডল কত উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে ?

উত্তরঃ মোটামুটিভাবে বায়ুমণ্ডল প্রায় ১০,০০০ কি.মি. উচ্চতা পযর্ন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে।

প্রশ্ন ২। ভূ-পৃষ্ঠ হতে কত উচ্চতা পযর্ন্ত বায়ুমণ্ডলের গ‍্যাসসমূহের রাসায়নিক গঠন প্রায় একই থাকে ?

উত্তরঃ ভূ-পৃষ্ঠ হতে ৮০ কি.মি. উচ্চতা পযর্ন্ত বায়ুমণ্ডলের গ‍্যাসসমূহের রাসায়নিক গঠন প্রায় একই থাকে।

প্রশ্ন ৩। হোমোস্ফিয়ার ও হেটেরোস্ফিয়ারের মধ‍্যের সীমাটির নাম কি ?

উত্তরঃ হোমোস্ফিয়ার এবং হেটেরোস্ফিয়ারের মধ‍্যের সীমাটির নাম মেসোপজ।

প্রশ্ন ৪। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ‍্যাস কত শতাংশ অধিকার করে আছে ?

উত্তরঃ৭৮.০৮ শতাংশ।

প্রশ্ন ৫। ভূ-পৃষ্ঠ হতে বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে উপরের দিকে উঠলে কি হারে গড় হিসাবে উত্তাপ হ্রাস পায় ?

উত্তরঃ ভূ-পৃষ্ঠ বায়ুমণ্ডলের প্রতি কিলোমিটার উচ্চতায় গড়ে ৬.৫° সেন্টিগ্ৰেড উত্তাপ হ্রাস পায়।

প্রশ্ন ৬। সাগরপৃষ্ঠে বায়ুর গড় চাপ কত বলে ধরা হয় ?

উত্তরঃ সাগরপৃষ্ঠে বায়ুর প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে গড়ে ১৪.৭ পাউণ্ড বা প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে প্রায় ১ কিলোগ্ৰাম।

প্রশ্ন ৭। ভূ-পৃষ্ঠ হতে বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে উপরের দিকে উঠলে কি হারে বায়ুর চাপ কমে ?

উত্তরঃ ভূ-পৃষ্ঠ হতে উপরের দিকে উঠলে বায়ুর চাপ প্রতি ৯০০ ফুট উচ্চতায় ইঞ্চি বা প্রায় ৩৪ মিলিবার হারে কমে যায়।

প্রশ্ন ৮। হেটেরোস্ফিয়ারের সর্বোচ্চ গ‍্যাসীয় স্তরটি কি ?

উত্তরঃ হেটেরোস্ফিয়ারের সর্বোচ্চ গ‍্যাসীয় স্তরটি হাইড্রোজেন স্তর।

প্রশ্ন ৯। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কত ?

উত্তরঃ০.০৩%

প্রশ্ন ১০। নাইট্রোজেন স্তরটির বিস্তৃতি কত ?

উত্তরঃ নাইট্রোজেন স্তরটি ৮০কি.মি. হতে প্রায় ২০০ কি.মি. উচ্চতা পযর্ন্ত।

প্রশ্ন ১১। অক্সিজেন স্তরটির বিস্তৃতি কত ?

উত্তরঃ ২০০—১,১২৫ কি.মি.

প্রশ্ন ১২। হিলিয়াম স্তরটির বিস্তৃতি কত ?

উত্তরঃ ১,১২৫—৩,৫৪০ কি.মি.

প্রশ্ন ১৩। বায়ুমণ্ডলের কোন স্তর হতে বেতার তরঙ্গ ফিরে আসে ?

উত্তরঃ আয়নোস্ফিয়ার হতে।

প্রশ্ন ১৪। বায়ুমণ্ডলের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য কি ?

উত্তরঃ উত্তাপের তারতম্য ঘটে।

প্রশ্ন ১৫। বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরটি কি ?

উত্তরঃ ট্রপোস্ফিয়ার।

প্রশ্ন ১৬। ট্রপোপজে উত্তাপ কত ?

উত্তরঃ –৬০°

প্রশ্ন ১৭। ট্রপোস্ফিয়ারের গড় উচ্চতা কত ?

উত্তরঃ ১০ কি.মি.

প্রশ্ন ১৮। উইলি-উইলি কি ?

উত্তরঃ অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পশ্চিমদিকে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের উপকূলে যে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় তাকে উইলি-উইলি বলে এবং আসামে একে বরদৈশিলা বলা হয়।

প্রশ্ন ১৯। টর্নেডো কি ?

উত্তরঃ ভূ-পৃষ্ঠ হতে উপরের দিকে প্রসারিত ফানেল আকৃতির যে মেঘ হতে সর্বাধিক ধ্বংসাত্মক ঝড়ের সৃষ্টি হয় তাকে টর্নেডো বলা হয়। বিশ্বের প্রবলতম এবং সর্বাধিক ধ্বংসাত্মক ঝড়ের নাম টর্নেডো। এটি সাধারণত স্বল্প পরিসর স্থান জুড়ে ঝড়ের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ২০। ‘কোরিওলিস্ বল’ কি ?

উত্তরঃ ১৮৪৪ সনে সর্বপ্রথম গেস্পার্ড-ডি-কোরিওলিস্ একজন ফরাসী গণিতজ্ঞ অপকেন্দ্রিক শক্তির উদঘাটন করেন। এই কারণে একে “কোরিওলিস্’ বল” বলে।

প্রশ্ন ২১। বায়ুমণ্ডলে কোন গ‍্যাসের পরিমাণ সর্বাধিক ?

উত্তরঃ নাইট্রোজেন।

প্রশ্ন ২২। বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন গ‍্যাসের পরিমাণ কত ?

উত্তরঃ৭৮.০৮% 

প্রশ্ন ২৩। বায়ুমণ্ডলের কোন অংশে ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি হয় ?

উত্তরঃ ট্রপোস্ফিয়ারে।

প্রশ্ন ২৪। বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কত ?

উত্তরঃ ২০.৯৪%

সংক্ষেপে উত্তর দাও :

প্রশ্ন ১। বায়ুমণ্ডল আমাদের কি কি ভাবে উপকার সাধন করে ?

উত্তরঃ পৃথিবীর অশ্মমণ্ডল, জলমণ্ডল এবং জীবমণ্ডল পৃথিবতে জীবের বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। জীবজগতের জন্য প্রয়োজনীয় গ‍্যাসসমূহ বায়ুমণ্ডলে যোগান ধরা ছাড়াও এটি পৃথিবীর উপরিভাগে তাপশক্তির বিতরণ ও সঞ্চালনে সাহায্য করে। বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর অতি বেগুনী রশ্মি মহাকাশ হতে পৃথিবীতে আসতে বাধা প্রদান করে। বায়ুমণ্ডল আবহাওয়া পরিবর্তনে সাহায্য করে বায়ুপ্রবাহের উপস্থিতির জন্য পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ২। হেটেরোস্ফিয়ারের স্তর কয়টি এবং কি কি ?

উত্তরঃ হেটেরোস্ফিয়ারের স্তর চারটি। নাইট্রোজেন স্তর, অক্সিজেন স্তর, হিলিয়ামের স্তর, এবং হাইড্রোজেন স্তর।

প্রশ্ন ৩। নাইট্রোজেন গ‍্যাস কি উপকার সাধন করে ?

উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলে অধিক পরিমাণে নাইট্রোজেন আছে। কোনো কোনো ব‍্যাক্টিরিয়া নাইট্রোজেন উৎপন্ন করে এবং এই নাইট্রোজেন যৌগ উদ্ভিদমণ্ডলের বিশেষ কার্যে সহায় করে। জীবের প্রোটিন জাতীয় খাদ্য প্রস্তুতে এই গ‍্যাস সাহায্য করে।

প্রশ্ন ৪। কার্বন ডাই-অক্সাইড গ‍্যাস কি কি উপকার সাধন করে ?

উত্তরঃ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ‍্যাস উদ্ভিদ জগতের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। এ ছাড়াও এই গ‍্যাস জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রশ্ন ৫। উত্তাপ বৃদ্ধির ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তর কয়টি এবং কি কি ?

উত্তরঃ উত্তাপ বৃদ্ধির ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তর চারটি। 

(ক) ট্রপোস্ফিয়ার।

(খ) স্ট্র‍্যাটোস্ফিয়ার।

(গ) মেসোস্ফিয়ার। এবং 

(ঘ) থার্মোমিটার।

প্রশ্ন ৬। বায়ুর চাপমণ্ডলগুলি কি কি ?

উত্তরঃ (১) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়।

(২) কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়।

(৩) মকরীয় উচ্চচাপ বলয়।

(৪) সুমেরু বৃত্তের নিম্নচাপ বলয়।

(৫)  কুমেরু বৃত্তের নিম্নচাপ বলয়।

(৬) সুমেরু উচ্চচাপ বলয়।

(৭) কুমেরু উচ্চচাপ বলয়।

প্রশ্ন ৭। নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ে সর্বদাই নিম্নচাপ থাকে কেন ?

উত্তরঃ (ক) নিরক্ষরেখার উভয় পার্শ্বে ৫°–১০ অক্ষাংশে সূর্য সারা বৎসর ধরে লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে এই অঞ্চলের বায়ু খুব উষ্ণ ও হাল্কা। এই কারণে বায়ুর চাপও কম হয়।

(খ) নিরক্ষীয় অঞ্চলে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ বেশি। এর ফলে এই অঞ্চলের বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প থাকে। এই জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুর চাপ কম হয়।

(গ) পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য এই অঞ্চলের উপরের বায়ু উত্তরে ও দক্ষিণে ধাবিত হয়, ফলে বায়ুর চাপ অনেকটা হ্রাস পায়।

প্রশ্ন ৮। শান্তবলয় বা নিরক্ষীয় শান্তবলয় কি ?

উত্তরঃ উত্তরপূর্ব আয়ন বায়ু এবং দক্ষিণ পূর্ব আয়ন বায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরস্পরের সম্মুখীন হওয়ায় এখানে শান্তবলয় থাকে, একে নিরক্ষীয় শান্তবলয় বলে। নিরক্ষরেখার দুদিকে বায়ু উষ্ণ, আর্দ্র ও হাল্কা হয়ে উপরের দিকে উঠে। এখানে বায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বয়ে চলে না। তাই বায়ুপ্রবাহ বোঝা যায় না। এখানকার ঊর্ধ্বগামী বায়ু প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top