Class 9 Bengali Chapter 12 আমরা

Class 9 Bengali Chapter 12 আমরা Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 9 Bengali Chapter 12 আমরা and select needs one.

Class 9 Bengali Chapter 12 আমরা

Join Telegram channel

Also, you can read SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 9 Bengali Chapter 12 আমরা for All Subject, You can practice these here…

আমরা

               Chapter – 12

খ – বিভাগ পদ্যাংশ

ক্রিয়াকলাপ-

১। (ক) সঠিক উত্তর নির্বাচন করাে।

১। আমরা’ কবিতার কবি কে ?

(ক) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত 

(খ) জীবনানন্দ দাশ

(গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

(ঘ) মধুসূদন দত্ত

উত্তরঃ (ক) আমরা কবিতার কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।

২। কবির মতে বাঙালি কোথায় বাস করে ?

(ক) অসম

(খ) বঙ্গ

(গ) বিহার

(ঘ) উড়িষ্যা

উত্তরঃ (খ) কবির মতে বাঙালি বঙ্গে বাস করে।

৩। দশানন জয়ী বলতে কাকে বােঝানাে হয়েছে ?

(ক) দশরথ

(খ) সুগ্রীব

(গ) রাম

(ঘ) লণ

উত্তরঃ (গ) দশানন জয়ী বলতে রামকে বােঝানাে হয়েছে।

৪। বাংলার কবি কাকে বলা হয়েছে ?

(ক) বিদ্যাপতি

(খ) চণ্ডীদাস

(গ) কৃত্তিবাস

(ঘ) জয়দেব

উত্তরঃ (ঘ) বাংলার কবি জয়দেবকে বলা হয়েছে।

৫। ছন্দের যাদুকর’ আখ্যায় কোন কবি ভূষিত হয়েছেন ?

(ক) মধুসূদন দত্ত

(খ) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

(গ) রবীন্দ্রনাথ

(ঘ) জসীমউদ্দিন

উত্তরঃ (খ) ছন্দের যাদুকর’ আখ্যায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ভূষিত হয়েছেন।

(খ) ভুল শব্দ সরিয়ে শুদ্ধ করে বাক্যটি লেখাে।

১। মুক্তবেণীর নর্মদা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে।

উত্তরঃ মুক্তবেণীর গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে।

২। নদী যাহার বন্দনা রচে শত তরঙ্গ ভঙ্গে।

উত্তরঃ সাগর নদী যাহার বন্দনা রচে শত তরঙ্গ ভঙ্গে।

৩। আমাদের ছেলে প্রতাপ সিংহ লঙ্কা করিয়া জয়।

উত্তরঃ আমাদের ছেলে বিজয়সিংহ লঙ্কা করিয়া জয়।

৪। জ্বালিল জ্ঞানের দীপ চীনে বাঙালি দীপংকর।

উত্তরঃ জ্বালিল জ্ঞানের দীপ তিব্বতে বাঙালি দীপংকর।

৫। বাঙালির ছেলে ফিরে এল দেশে জয়ের মুকুট পরি।

উত্তরঃ বাঙালির ছেলে ফিরে এল দেশে যশেব মুকুট পরি।

(গ) কবিতাটি অবলম্বনে শূন্যস্থান পূর্ণ করাে।

১। আমরা বাঙালি বাস করি সেই ………………………বঙ্গে।

উত্তরঃ আমরা বাঙালি বাস করি সেই বাঞ্ছিত ভূমি বঙ্গে।

২। ……………………..সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি।

উত্তরঃ বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি।

৩। এক হাতে মােরা ……………………. রুখেছি, মােগলেরে আর হাতে।

উত্তরঃ এক হাতে মােরা মগেবে রুখেছি, মােগলেরে আর হাতে।

৪। জ্ঞানের নিধান আদিবিদ্বান কপিল…………………….।

উত্তরঃ জ্ঞানের নিধান আদিবিদ্বান কপিল সাংখ্যকাব।

৫। শ্যাম কম্বােজে……………………… মােদেরি প্রাচীন কীর্তি।

উত্তরঃ শ্যাম কম্বােজে ওঁকারধাম মােদেরি প্রাচীন কীর্তি।

৬। মনের গােপনে নিভৃত ………………….. দ্বার ছিল যতগুলি।

উত্তরঃ মনের গােপনে নিভৃত ভুবনে দ্বার ছিল যতগুলি।

২। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।

(ক) আমরা’ কবিতার কবি কে ?

উত্তরঃ আমরা কবিতার কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।

(খ) বাংলা সাহিত্যে কে ছন্দের জাদুকর হিসেবে পরিচিত ?

উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছন্দের জাদুকর হিসেবে পরিচিত।

(গ) গঙ্গা কী বিতরণ করে ?

উত্তরঃ গঙ্গা মুক্তি বিতরণ করে।

(ঘ) রামচন্দ্রের পিতার নাম কী ?

উত্তরঃ রামচন্দ্রের পিতার নাম দশরথ।

(ঙ) লঙ্কা কে জয় করেছিলেন ?

উত্তরঃ লঙ্কা বিজয়সিংহ জয় করেছিলেন।

(চ) বীর সন্ন্যাসী’ বলতে কাকে বােঝানাে হয়েছে ?

উত্তরঃ বীর সন্ন্যাসী’ বলতে বিবেকানন্দকে বােঝানাে হয়েছে।

(ছ) কবি কার ঋণ থেকে মুক্ত হতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ দেবতার ঋণ থেকে কবি মুক্তি হতে চেয়েছেন।

(জ) আমরা’ কবিতায় আমরা কারা ?

উত্তরঃ আমরা’ কবিতায় আমরা হলাে বাঙালিরা।

৩। তিন-চারটি বাক্যে উত্তর দাও।

(ক) “এই বাঙলার মাটিতে গাঁথিল সূত্রে হীরক হার”— কে, কীভাবে হার গেঁথেছেন ?

উত্তরঃ ভারতীয় দর্শনের অন্যতম সাংখ্যদর্শনের সূত্রকার মহর্ষি কপিলের কথা বলা হয়েছে বলে সাংখ্যকে কপিল দর্শন হিসাবেও কেউ কেউ গণ্য করেন। কথিত আছে, সাংখ্যসূত্র মহর্ষি এই বাঙলার মাটিতে বসেই কপিল রচনা করেছিলেন। মণিকারেরা যেমন অমূল্য হীরকের মালা গাঁথেন সূত্রের মাধ্যমে, অনুরূপ ভাবে মহর্ষি কপিলও তার সাংখ্যসূত্রের মাধ্যমে, হীরক দ্যুতিতুল্য মহাদ্যুতিময় সাংখ্যদর্শনের ব্যাখ্যা রচিত করেছিলেন। আর সেই সাংখ্যদর্শনের মহামূল্য গ্রন্থন এই বাঙলার মাটিতে বসেই মহর্ষি কপিল রচনা করে আমাদের অর্থাৎ বঙ্গবাসীদের ধন্যবাদার্থ হয়েছিলেন।

(খ) “আমরা বাঙালি বাস করি সেই বাঞ্ছিত ভূমিবঙ্গে।”কবি বঙ্গকে বাঞ্ছিত ভূমি বলেছেন কেন ?

উত্তরঃ স্বর্গের মন্দাকিনী তথা মর্তের মা গঙ্গা বাঙলার বুকের ওপর দিয়ে বয়ে গেছেন। মহাপুণ্যবান, তপস্বী ভগীরথ সগর রাজার ষাট হাজার পুত্রের মুক্তি সাধন করেছিলেন। মহাদেবী গঙ্গার প্রবাহে সেই হাজার হাজার পুত্রের মুক্তি সাধিত হয়েছিল। সেই সঙ্গে ধন্য হয়েছিল বাংলাদেশ। বাঙলাদেশ তীর্থ হয়ে উঠেছিল।

বাম হাতে কমলার ফুল, ডান হাতে মধুকমালা, ভালে সােনার মুকুট পরিহিতা হিমবান পর্বত সােনার আলাে করা। সােনার ধানে, ক্ষেত ভরা, পুস্পালঙ্কারে ভূষিতা সাগরবন্দিতা বাঙলা মায়ের চরণে স্থান পেয়ে আমরা, বাঙালিরা ধন্য। উপরােক্ত পঙক্তিটি এই অর্থে উদ্ধৃত হয়েছে।

(গ) কবি জয়দেবের কোমলকান্ত, পদাবলীর পরিচয় দাও।

উত্তরঃ কবি জয়দেবের লেখা। পদাবলীর নাম ‘গীতগােবিন্দম’।

‘গীতগােবিন্দম’ সম্পর্কে উক্ত হয়ে থাকে যে-

যদি হরিস্মরণে সরসং মনাে

যদি বিলাস – কলাস কুতুহলম

মধুর-কোমল-কান্ত পদাবলীম

শৃনু তদা জয়দেব সরস্বতীম।

অর্থাৎ যদি হরিস্মরণ করে মনকে সরস করে তুলতে কেউ চায়, যদি হরির বিলাস- কলা, জানতে কেউ কৌতুহলী হয়ে থাকে, তাহলে তাকে জয়দেব সরস্বতীর লেখা মধুর কোমলকান্ত গীতগােবিন্দম’ পদাবলী পাঠ শ্রবণ করতে হবে। এমন শ্রুতিরঞ্জন গান, ভক্তের হৃদিরঞ্জন এমন সংগীত নিতান্তই দুর্লভ।

(ঘ) “তপের প্রভাবে বাঙালি সাধক জড়ের পেয়েছে সাড়া।”বাঙালি সাধক বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? তিনি কীভাবে জড়ের সাড়া পেয়েছেন ?

উত্তরঃ বাঙালি সাধক বলতে বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর কথা বলা হয়েছে।

তিনি প্রমাণ করেন, উদ্ভিদ কোনাে জড়বস্তু নয়। উদ্ভিদেরও সুখদুঃখের অনুভূতি রয়েছে। গাছের একটি শাখা কোটি নিলো তারও প্রবল কষ্ট হয়। একটি গাছের শাখা কেটে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেই গাছের ডালে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে একটি অতি ক্ষুদ্র ঘণ্টা তিনি বেঁধে দেন। সঙ্গে ছিলেন তার বৈজ্ঞানিক বন্ধু হাক্সলে! হাজালেকে বৈজ্ঞানিকভাবে জগদীশচন্দ্র দেখান গাছ যন্ত্রণায় কঁপছে বলে ঘণ্টাধ্বনি হচ্ছে মৃদু মৃদু। এই রূপেই জগদীশচন্দ্র বসু জড়ের সাড়া পেয়েছিলেন।

৪।  রচনামূলক উত্তরের জন্য প্রশ্ন।

(ক) আমরা কবিতার বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করাে।

উত্তরঃ আমরা কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বাঙালির শৌর্যবীর্য ও গৌরবগাথার কাহিনি বর্ণনা করেছেন। বঙ্গকে কবি তীর্থ বলেছেন। এখানে কলুষ-নাশিনী গঙ্গার মুক্তিধারায় জীবের মুক্তি ঘটে। বঙ্গের মুকুটস্বরূপ কাঞ্চন-শৃঙ্গে সূর্যের স্বর্ণোজ্জ্বল রশ্মিতে ভুবন আলােকিত। ধনধান্যে, পুষ্পে ভরা এ দেশের বুকে রয়েছে অপার স্নেহ-মমতা। এমন দেশের কোলে আমরা বাঙালি বাস করি। দুঃসাহসের পাখায় ভর করে বাঙালি অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। বীর- বিক্রমে রণাঙ্গনে ঝাপিয়ে পড়ে দেশকে মুক্ত করেছে। এ দেশের ধুলিকণায় মিশে আছে সুপ্রাচীন কত কৃতবিদ্যের কাহিনি। জ্ঞানে-বিদ্যায় কপিল, অতীশ দীপঙ্কর, জয়দেব আপন কীর্তিতে আজও ভাস্বর। শিল্প-সংস্কৃতিতে বাঙালির অবদান অসামান্য। স্থপতি, ভাস্কর্যে বিটপাল, ধীমান অজেয়, অমর। 

শ্যাম কম্বােজের ‘ওঙ্কার ধাম’ বাঙালির কীর্তি বহন করছে। অজন্তা, ইলােরার শিল্পকলা আজও সবাইকে বিস্মিত করে। কীর্তন আর বাউলের গানে সবার অন্তরের নিভৃত দরােজা খুলে দিয়েছে। এছাড়াও আধ্যাত্মিক শক্তির বলে বাঙালি মহামারী, মন্বন্তরেও বেঁচে আছে। মানুষের মধ্যে দেবতা বিরাজমান এই বিশ্বাসের ফলেই নিমাই, বিবেকানন্দের বাণীতে বিশ্ববাসী সমন্বয়ের পথ খুঁজে পেয়েছে। বাঙালি সাধক সাধনার ফলে জড়ের মধ্যে প্রাণের সাড়া আবিষ্কার করে বিশ্বের দরবারে আপন স্থান করে নিয়েছে। মানবজাতির মহামিলনের গান কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে। কবি আশাবাদী যে সত্যকে পাথেয় করে ভবিষ্যতে বিধাতার অসম্পূর্ণ কাজ বাঙালি সাধক করতে সক্ষম হবে। সমগ্র মানব জগতকে মিলনের মহামন্ত্রে দীক্ষিত করে দেবতার ঋণ থেকে মুক্ত হতে পারবে।

(খ) আমরা’ কবিতা অবলম্বনে বঙ্গের সৌন্দর্য বর্ণনা করাে।

উত্তরঃ স্বর্গের মন্দাকিনীই ‘গঙ্গা’ নামে মর্তে প্রবাহিত হয়েছেন। গঙ্গা যখন মর্ত্যে অবতবণ করেন তখন তার ঐশ্বর্যশক্তি পরাক্রম, বিক্রম ভয়ংকর ধ্বনিতে জানান দিল মর্তের মানুষকে। গােমুখে গঙ্গার সেই ভয়ংকারিণী মূর্তিকে মহাদেব মানুষের হিতার্থে জটাজালে আবদ্ধ করে রাখলেন। তারপর ভগীরথের অনুরােধে গঙ্গাকে শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত করে দিয়ে মুক্তবেণী করলেন গঙ্গাকে। মুক্তবেণী সেই পূত-পবিত্র মর্তের মন্দাকিনী ধারা বঙ্গভূমিকে, তার মুমুক্ষু মানুষকে পরিবেশন করলাে মুক্তিধারা। মুক্তধারা মুক্তিধারা হলাে। সেই মুক্তি বরােদা গঙ্গার বারিধারায় বঙ্গদেশে জেগে উঠল, “মহামানবের সাগরতীর। সেই সাগরতীরে মহামানব মিলনতীর্থ প্রতিষ্ঠিত হলাে। সেজন্য কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বঙ্গবাসী হিসেবে গর্বিত। মানুষের পরম বাঞ্ছিত এই বঙ্গদেশের মাটিতে বসেই সাংখ্য দর্শনের সূত্র রচনা করেছিলেন মহর্ষি কপিল। বামহাতে কমলার ফুল মায়ের। ডানহাতে তার মধুকমালা। ভাল আলাে করে আছে সােনার মুকুটে মােড়া হিমালয় পাহাড়। ক্ষেত ভরা মায়ের সোনার ফসল। বঙ্গমাতা পুস্পালঙ্কারে অলংকৃতা। সাগরবন্দিতা মা। বঙ্গ-উপসাগর। এইরূপে দেখানাে যেতে পারে যে বঙ্গভূমি ঐশ্বরিক এবং অনুপম সৌন্দর্যের অধিকারিণী।

(গ) বাঙালির শৌর্যবীর্যের কথা কবি কীভাবে বর্ণনা করেছেন ?

উত্তরঃ সুন্দরবন বঙ্গভূমিতে অবস্থিত পৃথিবীখ্যাত বন। তার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ব্যাঘ্র। সেই বাঘের বা ব্যাঘ্রের নিরন্তন রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি বেঁচে থাকে। বঙ্গভূমিতে বিষনাগ গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু দুঃসাহসী বাঙালি সাপুড়ে বিষধর সাপ নিয়ে খেলা করে, সাপের যেন মাথায় পা রেখে নাচে। কেবল তাই নয়, চতুরঙ্গ সেনা সাজিয়ে বাঙালি সেনা বিজয়সিংহ লঙ্কা জয় করেছিলেন। তার নামেই সেই দেশের ‘সিংহল নাম হয়েছে। লুঠেরা দস্যু মগেদের এবং দিল্লীর সম্রাটকে চলতে হত বাংলার বিখ্যাত ‘বারােভুইঞা’- দের কথা মতাে। আলােচ্যাংশে বাঙালির এই শৌর্য-বীর্যের কথাই উক্ত হয়েছে।

(ঘ) বিদ্যা ও জ্ঞানে বাঙালির কৃতিত্বের কথা আলােচনা করাে।

উত্তরঃ মহামতি গােখলে বলেছিলেন,- “What Bengal thinks today. India vill think to-morrow.” অর্থাৎ বাঙলা আজ যা ভাবে, ভারত আগামীদিনে তা ভাববে। বাঙালি চিরকালই আধুনিকতম। ভারত-পথিক রাজা রামমােহন তারই প্রতীক। সােফিয়া তার সম্পর্কে বলেছিলেন “The morning Star of new India.” এশিয়ার প্রথম নােবেল প্রাপ্তি ঘটেছিল বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথেরই।

এতাে উনিশ-বিশের (শতকের) কথা। বিদ্যায়, জ্ঞানে, চিন্তায়, চেতনায়, চিরকালই বাঙালি অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করে এসেছে।

মহর্ষি কপিল ছিলেন জ্ঞানের ভাণ্ডার। তার রচিত সাংখ্যদর্শনই সবচেয়ে প্রামাণিক সাংখ্যদর্শন। মহর্ষি কপিলের হীরকদ্যুতিতুল্য জ্ঞানপ্ৰভায় আলােকিত সাংখ্যসূত্রাবলি রচিত হয়েছিল এই বঙ্গভূমিতেই।

এরপুর কবি লিখেছেন অতীশ দীপংকরের কথা। বাঙালি ছিলেন অতীশ দীপংকর। মহাপাণ্ডিত্য অর্জন করার সুবাদে তাকে “দীপংকর শ্রীজ্ঞান” বলা হত। তিনি একদা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ছিলেন। প্রবল অহংকারী মহাপণ্ডিত পক্ষধর মিশ্রের জ্ঞানপক্ষ ভগ্নদশা লাভ করেছিল বাঙালি বিদ্বানের সঙ্গে তুর্ক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে। বঙ্গদেশে মুসলমান আক্রমণে বহু বৌদ্ধপণ্ডিত তাদের মূল্যবান গ্রন্থাদি নিয়ে বৌদ্ধরাজ্য তিববতের রাজার আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।  তাদের মতাে অতীশ দীপংকর নালন্দা মহাবিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হতে চলেছে, তার মূল্যবান পুস্তকাদিসহ অতিকষ্টে দারুণ শীতের আক্রমণ সহ্য করে বহু উঁচু পর্বত হিমালয় অতিক্রম করে তিব্বতে চলে গিয়েছিলেন। তার মতাে দিকদর্শী পণ্ডিত শুধু ভারত কেন গােটা জগতেই সেকালে সুদুর্লভ ছিল।

বাঙলার কবি জয়দেবকে অতঃপর স্মরণ করেছেন কবি। শ্রীকৃষ্ণের মাহাত্ম্যসূচক প্রথম কাব্য জয়দেবের- সংস্কৃত ভাষায়। সংস্কৃত ভাষার স্বর্ণকমলের সুরভিতুল্য ছিল মহাকবি জয়দেবের লেখা গীতগােবিন্দম্‌। ‘গীতগােবিন্দের শ্রুতিরঞ্জন ঐশ্বর্য, ভক্তের হৃদিরঞ্জন সংগীতের মহিমা গীতগােবিন্দমের’ মর্মকোষ নিষ্কাশিত সুগন্ধ।

(ঙ) ভাস্কর্য শিল্পে বাঙালির অবদান সম্পর্কে আলােচনা করাে।

উত্তরঃ ধ্যেয় বস্তুকে অন্তর দিয়ে, হৃদয় দিয়ে একমনে উপলব্ধি করার নাম ধ্যান। লােকারণ্যে ধ্যান করা বেশ কষ্টকর। সেজন্য ধ্যানীরা চলে যান পাহাড়ে- পর্বতে-অরণ্যে “মনে বনে কোণে।”

কবিতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে কবি words worth বলেছেন, -“Poetry is the spontaneous overflow of powerful feelings” শিল্পের সবক্ষেত্র সম্পর্কেই এই কথাটি খাটে। এক্ষেত্রেও কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত মহাশয় বলতে চেয়েছেন যে শিল্পীর মনে স্বত্যোৎসারীভাবে উৎসারিত চেতন আর মনন সম্পৃক্ত অবাধ উৎসারের মধ্যেই থাকে শিল্পের বীজ। সেই বীজের অঙ্কুরণেই মূর্তি নির্মাণ। বিটপাল এবং ধীমান এই দুই বাঙালি ভাস্কর এই পথেই তাদের ভাস্কর্যে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করতেন। আর প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেই পাথরে আর ধাতবমূর্তিকে প্রাণায়িত করে তুলতেন আলােচ্য দুই ভাস্কর। চঞ্চল হয়ে উঠত সেই মূর্তি প্রাণচাঞ্চল্যে। আঁখির সাড়ায় ইশারায় কুঞ্চনে হস্তপদাদির সঞ্চালনে মূর্তি হত সজীব প্রাণশক্তি। শুধু তাই নয় পরিধেয় বস্ত্র অলংকারে অস্ত্রে কখনাে বা পুস্তকে বীণায় কখনাে সহাস্যে কখনাে বা অট্টহাস্যে নন্দিত, জাগরিত চালিত হত যেন সেই ভাস্কর্য। জগদ্দল, জড়ভড়ৎ যে পাথর প্রায় নিষ্ফল অচল সেই অচলায়তনে বিটপাল আর ধীমানের সৌকুমার্যবােধ যে নান্দনিক সৌরভ ছড়াতে তা অবিস্মরণীয়। এই দুই অবিনশ্বর ভাস্কর ছিলেন বাঙালি আর তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে কবি বিপুলভাবে গর্বিত।

(চ) “বিধাতার বরে ভরিবে ভুবন বাঙালির গৌরবে”- উদ্ধৃতঅংশের  আলােচনা করাে।

উত্তরঃ আমরা কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বাঙালির শৌর্যবীর্য ও গৌরবের কথা বর্ণনা করেছেন। এখানে কবি তীর্থ বলেছেন বঙ্গভূমিকে। এখানে জীবের মুক্তি সাধিত হয় কলুষনাশিনী গঙ্গার মুক্তিধারায়। ভুবন আলােকিত হয়ে ওঠে বঙ্গের মুকুটস্বরূপ কাঞ্চন-শৃঙ্গে সূর্যের স্বর্ণোজ্জ্বল রশ্মিতে। ধনধান্যে পুষ্পে ভরা এদেশের বুকে অপার স্নেহ-মমতা বিদ্যমান। আমরা বাঙালিরা এমনই দেশের কোলে বাস করি। বাঙালি দুঃসাহসিকতার সঙ্গে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে। রণাঙ্গনে বীর বিক্রমে ঝাপিয়ে পড়ে দেশকে মুক্ত করেছে। বহু সুপ্রাচীন কৃতবিদ্যের কাহিনি এদেশের ধূলিকণায় মিশে রয়েছে। জ্ঞানে-বিদ্যায় অতীশ, দীপঙ্কর, কপিল, জয়দেব আজও ভাস্বর হয়ে রয়েছেন আপন কীর্তিতে। বাঙালির অসামান্য অবদান রয়েছে শিল্প-সংস্কৃতিতে। বীটপাল, ধীমান স্থপতি ও ভাস্কর্যে অজেয় অমর। বাঙালির কীর্তি বহন করছে শ্যাম-কম্বােজের ‘ওঙ্কার ধাম। অজন্তা, ইলােরার শিল্পকলা দেখে আজও সবাই বিস্মিত হয়। 

সবার হৃদয়ের নিভৃত দরজা খুলে দিয়েছে কীর্তন আর বাউল গান। এসব কিছু ছাড়াও বাঙালি আধ্যাত্মিক শক্তির জোরে মহামারী, মন্বন্তরেও বেঁচে আছে। মানুষের মধ্যেই দেবতার বাস, এই বিশ্বাস-এর কথা মাথায় রেখেই নিমাই, বিবেকানন্দের বাণীতে সমন্বয়ের পথ খুঁজে পেয়েছে বাঙালি। সাধনার ফলে বাঙালি সাধক জড়ের মধ্যে প্রাণের সাড়া আবিষ্কার করে বিশ্বদরবারে আপন স্থান করে নিয়েছে। কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে মানবজাতির মহামিলনের গান। কবি আশা রাখেন যে সত্যকে পাথেয় করে ভবিষ্যতে বাঙালি সাধক বিধাতার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হবে। মিলনের মহামন্ত্রে সমগ্র মানবজাতিকে দীক্ষিত করে দেবতার ঋণ থেকে মুক্ত করতে পারবে। কবির আশা আগামীদিনে বিধাতার বরে ভুবন ভরে উঠবে বাঙালির গৌরবে।

৫। সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করাে।

(ক) আমরা বাঙলি বাস করি সেই তীর্থে-বরদ বঙ্গে।

উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা কবিতা থেকে নওয়া হয়েছে।

বাংলার বুকের ওপর দিয়ে স্বর্গের মন্দাকিনী তথা মর্তের মা গঙ্গা বয়ে গেছেন। মহাপুণ্যবান তপস্বী ভগীরথ সগর রাজার ষাট হাজার পুত্রের মুক্তি সাধন করেছিলেন। মহাদেবী গঙ্গার প্রবাহে সেই হাজার হাজার পুত্রের মুক্তি সাধিত হয়েছিল। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ধন্য হয়েছিল। বাংলাদেশ তীর্থ হয়ে উঠেছিল। এই তীর্থ প্রাকৃতিক ঐশ্বরিকতায় সৌন্দর্যে বিভূষিতা৷ শৌর্যে বীর্যে ঐশ্বর্যময়ী। বিদ্যায়, জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, আবিষ্কারে যেন স্বয়ং বাক্‌প্রতিমা। স্থাপত্যে ভাস্কর্যে, চিত্রশিল্পে লৌকিক সঙ্গীতে অনন্যা। হয়তাে বঙ্গমাতা কখনাে রাহুগ্রস্ত তবুও এখানে নর-ই নারায়ণ, এখানেই প্রচারিত হয়েছে বিশ্ববিবেক। সর্বোপরি মহামিলনমঠ সদৃশ এই বঙ্গভূমি সকল সময়েই বরদাত্রী, অভয়দাত্রী।

(খ) বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি,

আমরা হেলায় নাগেরে খেলাই নাগেরি মাথায় নাচি।

উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি কবি সতে নাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

সুন্দরবন বঙ্গভূমিতে পৃথিবীখ্যাত বন অবস্থিত। ব্যাঘ্রই তার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। সেই ব্যাঘ্রের নিরন্তর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকেন বাঙালি। বঙ্গভূমির গ্রামে গ্রামে বিষনাগ ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু দুঃসাহসী বাঙালি সাপুড়ে সেই সমস্ত বিষধর নাগেদের নিয়ে খেলা করে। তারা যেন সাপের মাথায় পা রেখে নাচে। শুধু তাই নয়, চতুরঙ্গ সেনা সাজিয়ে বাঙালি সেনা বিজয়সিংহ লংকা জয় করেছিলেন। তার নামেই সেই দেশের নাম হয়েছে ‘সিংহল। লুঠেরা দস্যু মগেদের এবং দিল্লীর সম্রাটকে বিখ্যাত বারাে ভুইঞাদের কথা মতাে চলতে হলাে। আলােচ্যাংশে বাঙালির এই শৌর্য-বীর্যের কথাই উক্ত হয়েছে।

(গ) বাঙালি অতীশ লঙিঘল গিরি তুষারে ভয়ংকর,

জ্বালিল জ্ঞানের দীপ তিব্বতে বাঙালি দীপংকর।

উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

মহামতি গােখলে বলেছিলেন- “What Bengal thinks today, India will think to-morrow.” অর্থাৎ বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত আগামীদিনে তা ভাববে। বাঙালি চিরকালই আধুনিকতম। ভারত পথিক রাজা রামমােহন তারই। প্রতীক। সােফিয়া তার সম্পর্কে বলেছিলেন “The morning star of new India.” এশিয়ার প্রথম নােবেল প্রাপ্তি ঘটেছিল বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথেরই।

এতাে উনিশ-বিশ শতকের কথা। বিদ্যায়, জ্ঞানে, চিন্তায়, চেতনায়, চিরকালই বাঙালি অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করে এসেছে। অতীশ দীপংকরের কথা কবি লিখেছেন। বাঙালি ছিলেন অতীশ দীপংকর। মহাপাণ্ডিত্য অর্জন করার সুবাদে তাকে বলা হত “দীপংকর শ্রীজ্ঞান। তিনি একদা বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ছিলেন। প্রবল অহংকারী মহাপণ্ডিত পক্ষধর মিশ্রের জ্ঞানপক্ষ ভগ্নদশা লাভ করেছিল বাঙালি বিদ্বানের সঙ্গে তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে। বঙ্গদেশে মুসলমান আক্রমণে বহু বৌদ্ধ পণ্ডিত তাদের মূল্যবান গ্রন্থাদি নিয়ে বৌদ্ধরাজ্য তিব্বতের রাজার আশ্রয়লাভ করেছিলেন। তাদের মতাে অতীশ দীপংকর নালন্দা মহাবিশ্ববিদ্যালয় ধবংস হতে চলেছে, তার মূল্যবান পুস্তকাদিসহ অতিকষ্টে দারুণ শীতের আক্রমণ সহ্য করে বহু উঁচু পর্বত হিমালয় অতিক্রম করে তিব্বতে চলে গিয়েছিলেন। সে সময় তার মতাে দিকদর্শী পণ্ডিত শুধু ভারত কেন সমস্ত জগতেই দুর্লভ ছিল।

(ঘ) বাঙালির ছেলে ফিরে এল দেশে যশের মুকুট পরি।

উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

বাঙালি চিরকালই চিন্তায় চেতনায় গােটা ভারতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে। জ্ঞানের ভাণ্ডার মহর্ষি কপিল বাঙালি ছিলেন। মগধে বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন দীপংকর শ্রীজ্ঞান বা অতীশ দীপংকর। তিনিও ছিলেন বাঙালি বৌদ্ধ। কবি জয়দেব যার ‘গীতগােবিন্দম্‌’- সংস্কৃত ভাষায় লেখা প্রথম কৃষ্ণকথা। তিনিও ছিলেন বাঙালি। নৈয়ায়িক এবং তার্কিক পক্ষধর মিশ্র- তিনিও বাঙালির সঙ্গে তর্কযুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন। পক্ষধর মিশ্রের যুক্তিবাদ নৈয়ায়িকতা সেদিন বাঙালি ছেলের জ্ঞানের আলােকে ভস্মীভূত হয়েছিল। আলােচ্য অংশে এই বক্তব্যই ব্যাখ্যাত হয়েছে।

(ঙ) স্থপতি মােদের স্থাপনা করেছে বর ভূধরের ভিত্তি

শ্যাম কম্বােজে ‘ওঙ্কারধাম’ মােদেরি প্রাচীন কীর্তি।

উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আলােচ্যাংশে বঙ্গদেশের স্থপতিদের স্থাপত্য কৃতিত্বের কথা বলা হয়েছে। বঙ্গদেশের স্থপতিরা শুধু বঙ্গদেশেই নয়, অন্যান্য রাজ্যেও তাদের স্থাপত্য প্রতিভার অনন্য প্রদর্শন রেখে গিয়েছেন।

অষ্টম শতকে শৈলেন্দ্র বংশীয় রাজাদের দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এক বিশাল সাম্রাজ্য ছিল। তাদের কালজয়ী স্থাপত্য ছিল বরভূধর বা বরবুদুরের বৌদ্ধপ। যবদ্বীপের একটি পাহাড়ের ওপর এই সুবিশাল বৌদ্ধপটি তৈরি হয়েছিল। অনেকের মতে, এটি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বৌদ্ধমন্দির। এই বৌদ্ধপটির অপূর্ব শিল্পশৈলী ও অভাবনীয় স্থাপত্যরীতির জন্য এই স্থূপকে পৃথিবীর ‘অষ্টম আশ্চর্য বলে অভিহিত করা হয়েছে। ঐ সময়ে বঙ্গভূমি ছিল মহাযান বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্রস্থল। 

কথিত আছে, বাংলার বাঙালি বৌদ্ধশিল্পীরাই এই বৌদ্ধপটি নির্মাণ করে অসামান্য কীর্তির অধিকারী হয়েছিলেন। এতদ্ব্যতীত শ্যামদেশ, কম্বােজ বা কম্বােডিয়াতে বাঙালি স্থপতির অনন্য-সাধারণ স্থাপত্যকীর্তি এখনও বিদ্যমান। চীনাদের কাছে কম্বােজ ‘ফুনান’-বলে পরিচিত ছিল। এই ফুনানের পতনের পর সেখানেই জয়বর্মণ, সূর্যবর্মণ, যশােবর্মণ প্রভৃতি রাজাগণের অধীনে কম্বােজ রাজ্য অত্যন্ত প্রতিপত্তিশালী হয়ে উঠে। শ্যামদেশ, কোচিন, লাওস, মালয় দ্বীপপুঞ্জ ও ব্রহ্মদেশের কিছু অংশ অধিকৃত হয় এবং সমগ্র কাম্বােডিয়া জয় করে নেয়। রাজা সূর্যবর্মণ আঙ্কোরভাটের বিষ্ণুমন্দির নির্মাণ করেন। ওঁঙ্কারধাম এদেরই সম্ভবত। যাই হােক প্রাচীনকালে বাঙালি শিল্পীদের হাতেই ওঙ্কারধামের নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছিল।

(চ) “বীর সন্ন্যাসী বিবেকের বাণী ছুটেছে জগৎময়।”

উত্তরঃ উপরােক্ত অংশটি ছন্দের যাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা শীর্ষক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

“এদেশে বীর এসেছেন বহু, এসেছেন ঈশ্বর-প্রতিম ব্যক্তি একাধিক। কিন্তু বীরেশ্বর আসেননি একাধিক।”  (দীপ্তেন্দ্রনাথ সান্যাল – বীরেশ্বর বিবেকানন্দ, অচলপত্র)।

সেই একমেবাদ্বীতিয়ম স্বামী বিবেকানন্দ জন্মেছিলেন কলকাতার সিমলা অঞ্চলে। শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্য। ১৮৯৩ সালে আমেরিকার শিকাগাে শহরে বিশ্বধর্ম মহা সম্মেলনে যােগদান করে বিবেকানন্দ হিন্দুধর্মের সনাতন আদর্শ সকলের সামনে তুলে ধরেন। বক্তৃতার প্রারম্ভে ‘আমেরিকাবাসী ভগিনী ও ভ্রাতাগণ’- প্রচলিত রীতির পরিবর্তে স্বামীজীর আবেগমথিত কণ্ঠে ঐ সম্বােধন উচ্চারিত হওয়ামাত্রই সহস্র সহস্র শ্রোতা আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। তারপর পূর্ণ দু-মিনিট ধরে করতালির শব্দ সভাগৃহ মুখরিত করে রাখল। এমন করতালির শব্দ হইতে লাগিল যে, কান যেন কালা করিয়া দেয়। সভাগৃহ পুনরায় নিস্তব্ধ হল। শ্রোতৃবৃন্দ উৎকণ্ঠিত হয়ে রইল ভারতাগত সেই তরুণ প্রতিনিধি কি বলেন শােনবার জন্য। স্বামীজী বক্তৃতা আরম্ভ করলেন। পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা প্রাচীনতম সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি বিবেকানন্দ পৃথিবীর নবীনতম জাতিকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করলেন। তার ভাষণ ছিল সংক্ষিপ্ত। আবেগপূর্ণ কণ্ঠে তিনি ঘােষণা করলেন—সনাতন হিন্দুধর্মের বিশ্বজনীন বার্তা, স্মরণাতীতকাল থেকে যে ধর্ম জগৎকে দুটি শিক্ষা দিয়েছে, সমদর্শন, সর্ববিধ মত গ্রহণ’—সকলকে বােঝ! সবাইকে গ্রহণ কর।

রোমা রল্যা লিখেছেন,‘অন্যান্য বক্তারাও প্রত্যেকে ভগবানের কথা বলিয়াছিলেন- কিন্তু সে ভগবান ছিলেন তাহাদের নিজের সম্প্রদায়ের। কিন্তু বিবেকানন্দ- একা বিবেকানন্দ সকলের ভগবানের কথা বললেন, সকলের ভগবানকে বিশ্বসত্তায় মিলাইয়া দিলেন।

‘নরেন লােকশিক্ষা দিবে’- শ্রীরামকৃষ্ণের ভবিষ্যদ্বাণী সফল হল। পরদিন থেকে স্বামী বিবেকানন্দ বিখ্যাত হয়ে পড়লেন। ধর্ম মহাসভায় তিনি আরও কয়েকটি বক্তৃতা দেন। তাকে দেখবার জন্য তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা শােনবার জন্য উদগ্রীব শ্রোতৃবৃন্দ সহিষ্ণুতার সঙ্গে দীর্ঘকাল অপেক্ষারত। ১৯ সেপ্টেম্বর ‘হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে তার লিখিত ভাষণ ছিল অপূর্ব। শিকাগাের পথে পথে তার সুবৃহৎ প্রতিকৃতি জনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করত। বহু পথিক চলবার সময় সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের প্রতিকৃতির প্রতি নতমস্তকে শ্রদ্ধাভিবাদন জানিয়ে যেত। সংবাদপত্রগুলি উচ্ছ্বসিত প্রশংসার সঙ্গে তার বিজয় ঘােষণা করল। সে বিজয়- কাহিনি ‘আচার্য স্বামী বিবেকানন্দ’র, যিনি জগতে শিক্ষাগুরুর স্থান অধিকার করেছিলেন- যে বিশ্ববরেণ্য সন্ন্যাসীর উদারকণ্ঠে সমন্বয় বার্তার ঘােষণা আজ পর্যন্ত পৃথিবীর মনীষী ও চিন্তাশীল ব্যক্তিগণকে আকৃষ্ট করেছে- যিনি পূর্ণ আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘I wave a message to the world and that I shall deliver without fear’—“জগতের কাছে আমার একটি বাণী আছে, এবং নির্ভয়ে আমি উহা প্রচার করিব।

৬। ভাষা ব্যাকরণ-

(ক) প্রত্যয় নির্ণয় করাে।

মুক্তি, ভুবন, জ্ঞানী, ঠাকুরালি, নবীন, দেবতা, জয়।

উত্তরঃ মুক্তি = মুচ্‌ + ক্তি। 

ভুবন = ভূ + অন্। 

জ্ঞানী = জ্ঞান + ইন্।

ঠাকুরালি = ঠাকুর + আলি। 

নবীন = নব + ঈন। 

দেবতা = দেব + তা। 

জয় = জি + অয়।

(খ) এক কথায় প্রকাশ করাে।

উত্তরঃ বর দান করেন যিনি = বরদা। 

যে বস্তু চাওয়া হয় = প্রার্থিত। 

দশটি আনন যার  = দশানন। 

অশ্ব, রথ, হস্তি ও পদাতিকের মিলিত বাহিনী = চতুরঙ্গ। 

এক মনুর শাসনকাল থেকে অন্য মনুর শাসনকালের আরম্ভ = মন্বন্তর। 

যার বিনাশ নাই = অবিনাশী।

পুণ্য কামনায় যেখানে বহুজনের সমাবেশ ঘটে = তীর্থ। 

ধাতু, পাথর ইত্যাদি দিয়ে মূর্তি বানায় যে = স্থপতি।

৭। বাক্য সংকোচন কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ একাধিক কথায় প্রকাশিত কোনাে ভাবকে প্রয়ােজন মতাে একটি শব্দে প্রকাশ করার নাম বাক্য-সংকোচন। স্ত্রী-‘ত্যয়, কৃৎ-প্রত্যয়, তদ্ধিত-প্রত্যয় ও সমাসের সাহায্যে বাক্য- সংকোচন করা হয়। বর্ণানুক্রমে বাক্য- সংকোচনের উদাহরণ দেওয়া হল।

অদিতির পুত্র = আদিত্য।

আতপ চাল = আমান্থ।

আত্ম থেকে জন্মে যে = আত্মজ।

যার প্রসবকাল নিকটবর্তী হয়েছে = আসন্নপ্রসবা।

যা প্রথমে মধুর, কিন্তু পরিণামে নয় = আপাতমধুর।

পরলােকে যার বিশ্বাস আছে = আস্তিক।

ইন্দ্রলােক জয় করেছেন যিনি = ইন্দ্রজিৎ।

ইহার তুল্য = ঈদৃশ ।

হস্তির নেত্র গােলক = ঈর্ষিকা।

অভীষ্ট বস্তুর প্রাপ্তি = ইষ্টাপত্তি।

যা মাটি ভেদ করে ওঠে = উদ্ভিদ।

কূলের নিকটে = উপকূল।

যা বুকে হেঁটে চলে = উরগ।

উপদেশ ছাড়া জাত প্রথম জ্ঞান = উপজ্ঞা।

যা বেলা বা তীর অতিক্রম করে = উদ্বেল।

নীল বর্ণের বানর = উলুক।

শ্বেত পদ বিশিষ্ট মৃগ = ঋষ্য।

ঋতুতে ঋতুতে যিনি যজ্ঞ করেন = ঋত্বিক।

ঋষির মতাে = ঋষিকল্প।

গ্রহের কুদৃষ্টি = ঋষ্টি।

একবার আহার করেন যিনি = একাহারী।

সধবার লক্ষণ = এয়ােতি।

এক মতের ভাব = ঐকমত্য।

একাধিক জনের ভােগ্য = এজমালি ।

পরস্পর একই কাজে লিপ্ত = একক্রিয়।

হরিণের মতাে চোখ যার = এণাক্ষী।

অন্য নামে = ওরফে।

নির্ধারিত সময়ে = ওয়াদা।

ওষুধ পাওয়া যায় যেখানে = ঔষধালয় ।

যে গাছ ফল পাকলে মরে যায় = ঔষধি ।

শুক্রাচার্য প্রণীত গ্রন্থ = ঔকনিস।

উপন্যাস লেখেন যিনি = ঔপন্যাসিক।

বাঘের চামড়া = কৃত্তি।

সন্ন্যাসীদের জলের পাত্র = কমণ্ডুল।

যে উপকারীর উপকার স্বীকার করে না = কৃতঘ্ন।

পশুহত্যা করে যে = কসাই।

যে আধারে শব দেহ রেখে কবর দেওয়া হয় = কফিন।

সৎ কুলে জাত = কুলীন।

আকাশে চরে যে = খেচর।

যে খায় = খাদক।

অপরাধের তথ্য জানবার জন্য গৃহাদি অনুসন্ধান = খানাতল্লাসি।

মাথার টাক = খলতি।

খ = কে দ্যুতিময় করে যে = খদ্যোৎ।

গুড় দিয়ে পচানাে তামাক = খামিরা।

ঘাম ঝরছে এমন = গলদঘর্ম।

মিলের অভাব = গরমিল।

গিন্নির মতাে ভাব = গিন্নিপনা।

গুরুর বাসগৃহ = গুরুকুল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top